You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৮ জুন সােমবার ১৯৭১

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল আগা মােহাম্মদ ইয়াহিয়া খান রেডিও পাকিস্তান থেকে এক ভাষণে বলেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য ইতিপূর্বে ঘােষিত জাতীয় পরিষদে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে আলােচনা করে শাসনতন্ত্রের চূড়ান্ত রূপদান করার পর তা জাতীয় পরিষদে পেশ করা হবে। পরিষদে তা সংশােধন করা যাবে। তিনি ঘােষণা করেন, কেন্দ্র ও প্রদেশে জনগণের সরকার কায়েম হবার পর একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বলবৎ থাকবে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা হলেও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে সদস্যপদে বহাল। থাকবেন। নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্ন ওঠে না। তবে অযােগ্য বিবেচিত সদস্যদের আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যারা রাষ্ট্রবিরােধী কাজে অংশ নিয়েছেন তাদের পরিষদ সদস্যপদ থাকবে না।  ইয়াহিয়া খান বলেন, দেশে পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সামরিক ছত্রচ্ছায়ায় থাকবে, তবে ৪ মাসের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।  তিনি আওয়ামী লীগপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ, কপটতা ও পৃথক বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের অভিযােগ করে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ দেশকে খণ্ড-বিখণ্ড করার জন্য ভােট দেয়নি, ভােট দিয়েছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য। ইয়াহিয়া খান বলেন, সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় পূর্ব পাকিস্তানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। পাকিস্তানের অভ্যন্ত রীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপ পূর্ব পরিকল্পিত। আওয়ামী লীগের চরমপন্থী, বিদ্রোহী ও ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে যােগসাজশ ছিল। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত। ডেমােক্রেটিক পার্টির সভাপতি নূরুল আমিন, প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সভাপতি খাজা খায়রুদ্দিন, প্রাদেশিক জামায়াতের প্রধান অধ্যাপক গােলাম আজম, মুসলিম লীগ নেতা খান এ. সবুর ও নেজামে ইসলামী পার্টির মহাসচিব মওলানা আশরাফ আলী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানান। গােলাম আজম বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘােষিত কর্মসূচিই জাতির জন্য একমাত্র পথ, যা অবশিষ্ট রয়েছে।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!