২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ১৯৭১
চট্টগ্রামের রামগড়ের কাছে হিয়াকুতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। প্রথম দফা আক্রমণে পাকবাহিনীদের প্রচুর জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়। বিকেলে পাকবাহিনী দ্বিতীয় দফা আক্রমণ করে। দুঘণ্টা প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর মুক্তিবাহিনী সরে গিয়ে চিকনছড়ায় নতুন ঘাঁটি গড়ে। উত্তরাঞ্চলের হিলি সীমান্তে মুক্তিযােদ্ধা ও পাকসেনার মধ্যে দিনব্যাপী গােলাগুলি বিনিময় হয়। করাচি প্রেসক্লাবে মুসলিম লীগ (কাইউম) প্রধান খান আবদুল কাইউম খান। এক সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, যেসব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে শিগ্গিরই ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছিল সেসব দলকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘােষণা করা উচিত। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির সদস্য ব্রুস ডগলাসম্যান ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে এক বিবৃতিতে বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ববঙ্গের মাটি চায় কিন্তু জনগণকে নয়। তারা বাংলাভাষী জনগণের সংখ্যা হ্রাস করার নীতি হিসেবে সেখানে সামরিক তৎপরতায় গণহত্যা শুরু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে মার লেশমাত্র সন্দেহ নেই।
৩০ এপ্রিল শুক্রবার ১৯৭১
মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রামের রামগড়ে শক্ত প্রতিরােধ ব্যুহ গড়ে তােলে। ঢাকায় সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘােষণা করেন, স্বাভাবিক কৃষিকাজে হস্তক্ষেপ করা হলে কঠোর শাস্তিদান করা হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে বকেয়া খাজনা পরিশােধ করতে হবে। সিলেট শান্তি কমিটির আহ্বায়ক নজমুল হােসেন ও যুগ্ম-আহ্বায়ক খন্দকার আবদুল জলিল সিলেট বেতার কেন্দ্র থেকে ভাষণে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযােগিতা এবং মুক্তিযােদ্ধাদের খতম করার আহ্বান জানান। নেপালের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বি, পি, কৈরালা কাঠমণ্ডুতে এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনসাধারণের অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামীরা জয়ী হবেনই ।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান