২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ১৯৭১
ঢাকায় কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটির আহ্বায়ক খাজা খরুদ্দিন এক বিবৃতিতে রাষ্ট্রবিরােধীদের (মুক্তিযােদ্ধা) কার্যকলাপ প্রতিরােধ ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সর্বাত্মক সহযােগিতা করার জন্য প্রদেশের (বাংলাদেশ) দেশপ্রেমিক নাগরিকের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে ভয় পাবার কোনাে কারণ নেই। তিনি উপদেশ দেন, সেনবাহিনীর সদস্যরা যেখানে যাবে সেসব এলাকায় দেশপ্রেমিক নাগরিকরা যেন পাকিস্তানের পতাকা নিয়ে তাদের স্বাগত জানান এবং সর্বাত্মক সহযােগিতা করতে এগিয়ে আসেন। চট্টগ্রামের দোহাজারীতে দখল প্রতিষ্ঠা নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ম্যাকমােহন ক্যানবারায় বলেন, জীবনহানির জন্য আমরা নিশ্চয়ই দুঃখিত। আমরা চাই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ঘােষণা করুন, যত শীঘ্র সম্ভব তিনি আসামরিক কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবেন এবং তা প্রতিষ্ঠা করবেন। আমরা আশা করি, আর কোনাে জীবনহানি হবে না এবং পাকিস্তানের পার্লামেন্টে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতৃবর্গকে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব বাংলার মুক্তিসংগ্রাম পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হতে পারে না। অবিভক্ত ভারতের ১০ কোটি মুসলমান যে ঐতিহাসিক লাহাের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানিরা তাকে অবজ্ঞা করেছে। পাকিস্তান আন্দোলনের এই মৌলিক প্রস্তাবটিকে অবজ্ঞা করে বিগত ২৩ বছর ধরে তারা পূর্ব বাংলাকে তাদের কলােনি করে রাখে। এই সংগ্রাম বীর বাঙালি জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম। শশাষণ থেকে মুক্তি ও হৃত স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের লড়াই।
মওলানা ভাসানী নবগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারকে অবিলম্বে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বিশ্বের সকল শান্তিকামী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকার ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি দলমত, পেশা, বয়স নির্বিশেষে সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তার এজেন্ট কতিপয় স্বার্থবাদী ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে ধর্ম ও অখণ্ডতার নামে মুক্তিসংগ্রামের বিরােধিতা করছে। তাদেরকে তিনি বাংলাদেশের মীরজাফর’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, জনগণকে এসব দেশদ্রোহীর সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। বিজয় আমাদের অনিবার্য । সুখী ও সমৃদ্ধ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই।
২৩ এপ্রিল শুক্রবার ১৯৭১
ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে দখল প্রতিষ্ঠা নিয়ে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘােষণা করেন, এসব এলাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে এনেছে। আরও বলা হয়, সেনাবাহিনী পুরাে সীমান্ত এলাকা নিয়ন্ত্রণে এনে সীমান্ত সিল ও অনুপ্রবেশকারীদের পকেটগুলাে ধ্বংস করে দিয়েছে। পাকিস্তান সরকার আগামী ২৬ এপ্রিল রাত ১২টা থেকে কলকাতার পাকিস্তানি ডেপুটি হাইকমিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং একই সময় ঢাকার ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মুক্তিবাহিনীর বিভিন্ন গ্রুপ যশাের, কুষ্টিয়া ও খুলনার অবস্থান ত্যাগ করে। বেনাপােল সীমান্ত এলাকায় প্রতিরােধ ব্যুহ গড়ে তােলে। কৃষক শ্রমিক পার্টির এ, এস, এম, সােলায়মান, নেজামে ইসলামের সাইদ মােঃ মােস্তফা আল মাদানী, প্রাক্তন এম, এন, এ. রহিমুল্লাহ চৌধুরী ও প্রাক্তন এম. পি. এ. আবদুস সােবহান ঢাকায় পৃথক পৃথক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টা দেশপ্রেমিক জনগণ ও সেনাবাহিনী নস্যাৎ করে দিয়েছেন। আমরা আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য গর্বিত। তারা অনুপ্রবেশকারীদের নির্মূলে সশস্ত্র বাহিনীর সাথে সহযােগিতা করার জন্য। জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। যুক্তরাজ্যের কমন্সসভায় লেবার পার্টির সদস্য ও অর্থনৈতিক সাহায্য বিষয়ক কমিটির সাবেক সচিব পিটার সাের লিঙ্কন বলেন, পূর্ব বাংলায় পাকিস্তান সরকারের আচরণ সর্বপ্রকার নীতিবহির্ভূত বন্য আচরণ। এ অত্যাচার-উৎপীড়ন উপেক্ষা করা লজ্জাজনক হবে। আমি অনুরােধ করছি, লেবার পার্টি যেন এ বিষয়ে দৃঢ়তার সাথে কথা বলেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানকে সর্বপ্রকার অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যদান অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
২৪ এপ্রিল শনিবার ১৯৭১
পাকিস্তানি বাহিনী বেনাপােলে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্বের সাথে সে হামলা প্রতিহত করেন। সারাদিন ধরে যুদ্ধ চলে। রাতে পাকবাহিনীর দ্বিতীয় দফা হামলার পর মুক্তিবাহিনী নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে অবস্থান ত্যাগ করেন। মুক্তিবাহিনী ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে করের হাটে পাকবাহিনীর হামলা প্রতিহত করে। ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৬,৫৫,৮৭৪ জন। শান্তি কমিটির ১৮টি ইউনিট আহ্বায়কের নাম ঘােষণা করা হয়। আহ্বায়করা হচ্ছেন তেজগাঁও (পূর্ব-মমাঃ ফজলুর রহমান, ধানমন্ডি-এস, এম. হাবিবুল হক, নারায়ণগঞ্জ শহর])-এ. এ. আই. সরদার, দিলখুশা-মােঃ মনসুর আলী, জোয়ারসাহারা—আলী আহসান, শরাফতগগিয়াসউদ্দিন। আহমদ, খিলগাঁও-ডা, আইয়ুব আলী, নবীনগর (কুমিল্লা-মৌলভী সেকেন্দার আলী, জয়দেবপুর-আবদুল মজিদ সরকার, জয়দেবপুর (থানা)-মােঃ মস্তান খান, রেকাবী বাজার-ইদ্রিস বেপারী, মােহাম্মদপুর-দেওয়ান ওয়ারসাত আলী, দিলুরােডে—জি, এ. খান, নিউ ইস্কাটন-মজিবুর রহমান, ধানমন্ডি (পূর্ব)—এম. এ. খালেক, মহাখালী-এ, কে, এম, আবদুল্লাহ, মিরপুর-মােঃ সফিউদ্দিন খান ও শাজাহানপুর-এম. এ. খালেক। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট লেবার পার্টির সদস্য উড্রো ওয়াট বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে। ব্যাপক হত্যার প্রতিবাদে আমরা সবাই এত চুপচাপ কেন? পূর্ব পাকিস্তানে যেসব ঘটনা ঘটছে তা অত্যন্ত জঘন্য। হিটলার ও স্ট্যালিনের পর এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের কথা আর কখনাে শােনা যায়নি। আমরা এ বিষয়ে কি করছি? জেনারেল ইয়াহিয়াকে এখনও আমরা সাহায্য দিচ্ছি। সারাদেশ উজাড় করার বিষয়টি মমাটেই ঘরােয়া ব্যাপার নয়। আমরা বিষয়টি জাতিসংঘে উত্থাপন করছি না কেন?
২৫ এপ্রিল রবিবার ১৯৭১
সামরিক কর্তৃপক্ষ খ-অঞ্চলকে (বাংলাদেশ) তিনটি সামরিক সেক্টরে ও ১০টি সাবসেক্টরে ভাগ করেন। সেক্টর তিনটি হচ্ছে ঢাকা, কুমিল্লা ও বগুড়া। সিলেটের গােলাপগঞ্জ ও দিনাজপুর-রাধিকাপুর সীমান্ত এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাক সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। প্রচণ্ড লড়াই শেষে পাকসেনা বরিশাল শহর কজা করে । তুমুল যুদ্ধের মধ্যে করের হাট প্রতিরক্ষা ব্যুহের পতন হলে মুক্তিবাহিনী রামগড়ে গিয়ে চট্টগ্রাম সেক্টরের সদর দফতর স্থাপন করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিশেষ দূত হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়া আরশাদ হােসেন মস্কো যাত্রা করেন। দশ জন মার্কিন সিনেটর ওয়াল্টার মন্ডেল, এডওয়ার্ড মাস্কি, হিউবার্ট হামফ্রে, বার্চ বে, জর্জ ম্যাকগভার্ন, ফ্রেড হ্যারিস, হ্যারল্ড হিউস, উইলিয়াম প্রক্সমায়ার, টমাস এগ্রেটন ও ক্লিফোর্ড কেস এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তান সরকার যতদিন না বাংলাদেশের জন্য আপদকালীন ভিত্তিতে ত্রাণকাজের ব্যবস্থা করবে এবং আন্তর্জাতিক রেডক্রসকে সেখানে কাজ করতে দেবে, ততদিন পাকিস্তানকে সাহায্যদাতা পাশ্চাত্য দেশসমূহ ও জাতিসংঘের উচিত তাদের সমস্ত বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া।
২৬ এপ্রিল সােমবার ১৯৭১
শান্তি কমিটির জেলা আহ্বায়কদের নাম ঘােষণা করা হয়। এরা হলেন বরিশাল-মওলানা বশিরউল্লাহ আতাহরী ও প্রাক্তন এম, এন, এ, নূরুল ইসলাম সিকদার এডভােকেট, দিনাজপুর-মৌলবী মতিউর রহমান চৌধুরী ও আহমদ জান মােক্তার, ঈশ্বরদী (পাবনা)-মমতাজুর রহমান, পটুয়াখালী—প্রাক্তন এম, এন, এ. কসিমউদ্দিন সিকদার এবং বগুড়া, খুলনা, মাদারীপুর ও পটুয়াখালী জামে মসজিদের ইমামবৃন্দ। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রংপুর পুনর্দখল করে। সামরিক কর্তৃপক্ষ ঘােষণা করে, সশস্ত্র বাহিনী প্রদেশের সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় দখল পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। সামরিক কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করে, কেউ যােগাযােগ ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে তাকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। যেখানে ক্ষতিসাধন করা হবে তার আশপাশের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে পাইকারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাবেক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ও মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) সহ-সভাপতি মফিজুদ্দিন আহমদ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মওলানা আবদুল মান্নান ঢাকায় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ওলেমারা গৌরবময় ভূমিকা পালন করবেন। তারা বলেন, পাকিস্তানকে রক্ষা এবং দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযােদ্ধা) সহ সমাজ ও রাষ্ট্রবিরােধীদের নিশ্চিহ্ন করে পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক নাগরিকরা দেশের পশ্চিমাংশের সাথে একত্রিত হতে যে প্রস্তুত আছেন সে ব্যাপারে তাদের কোনাে সন্দেহ নেই। তারা এ ব্যাপারে সরকারকে সহযােগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
২৭ এপ্রিল মঙ্গলবার ১৯৭১
ইসলামাবাদে পাকিস্তান সরকারের জনৈক মুখপাত্র জানান, কলকাতায় ৫০ জন পূর্ব পাকিস্তানি কূটনীতিক তাদের দায়িত্ব ত্যাগ করে তথাকথিত বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের হাইকমিশন গঠন এবং কলকাতায় দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একজন নতুন ডেপুটি হাইকমিশনার পাঠালে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে ২৬ এপ্রিল থেকে কলকাতার পাকিস্তান মিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র আরও বলেন, নিউইয়র্কে পাকিস্তানের ভাইস কন্সাল মাহমুদ আলী তার চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করায় তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও পাকিস্তান বিমান বাহিনীপ্রধান এয়ার মার্শাল রহিম খান সামরিক ইউনিট পরিদর্শনের জন্য ঢাকায় আসেন। অধিকৃত ঢাকার গভর্নর লে. জেনারেল টিক্কা খান পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক বাহিনী (ইপিসিএফ) নামকরণ করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী চট্টগ্রামের মহালছড়িতে মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি আক্রমণ করে। প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর পাকবাহিনী মুক্তিযােদ্ধাদের কাছ থেকে নােয়াখালী, সান্তাহার, সিরাজগঞ্জ ও মৌলভীবাজার পুনর্দখল করে। ব্রিটিশ এমপি, জন স্টোনহাউস লন্ডনে বি. বি. সি.-র সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পূর্ব বাংলায় মারাত্মক ও ভয়ঙ্কর সব ব্যাপার ঘটছে। ঢাকায় ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন করা হয়েছে। সেখানে সেনাবাহিনী যা করেছে নিঃসন্দেহে গণহত্যা ও নির্বাচনে শতকরা ৯৮ ভাগ ভােটার যে রায় দিয়েছেন, সামরিক জান্তা সেই গণতান্ত্রিক রায়কে কেবল প্রত্যাখ্যানই করেননি তা ভেস্তে দেবার পরিকল্পনা এঁটেছেন। এ বিষয়টি কখনােই উপেক্ষা করা যায় না। এ ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য রয়েছে। আমাদের নিক্রিয় থাকা উচিত নয়।
২৮ এপ্রিল বুধবার ১৯৭১
পার্বত্য চট্টগ্রামের মহালছড়িতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে সম্মুখ সমরে মুক্তিবাহিনীর তরুণ অফিসার ক্যাপ্টেন কাদের শহীদ হন। ভােরে ঢাকার মিরপুর ও মােহাম্মদপুরে গেরিলারা টহলদার পাক সেনাদের ওপর আক্রমণ চালালে বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন গেরিলা শহীদ হন। সােভিয়েত প্রধানমন্ত্রী আলেক্সি কোসিগিন পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠানাে এক বার্তায় অবিলম্বে দেশের পূর্বাঞ্চলে গণহত্যা বন্ধ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারকে বিনাশর্তে অস্ত্র সাহায্য ও স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের জন্য প্রতিবেশী দেশসমূহের সরকারের প্রতি আবেদন জানান। বিশ্বশান্তি পরিষদের সম্মেলনে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশে রক্তগঙ্গা বন্ধ করার জন্য বিশ্ব জনমত ও বিশ্বের সর্বত্র শান্তিকামী শক্তিগুলােকে অবিলম্বে তৎপর হতে হবে। আওয়ামী লীগ নেতৃবর্গ এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন রক্ষা করতেই হবে। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত নেতা।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান