You dont have javascript enabled! Please enable it!

১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ১৯৭১

সারাদিন যুদ্ধের পর সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী কৌশলগত কারণে টাঙ্গাইল শহরের নিয়ন্ত্রণ ত্যাগ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ঘাটি করে। দেশের অধিকাংশ মহকুমা সদর মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। দলে দলে লোক সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। পাকসেনারা বিভিন্ন এলাকায় দখল প্রতিষ্ঠার পর হত্যাযজ্ঞ চালায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে এক বিবৃতিতে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি বলেন, পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের পরিণতিতে সেখানে বিপুলসংখ্যক বেসামরিক নাগরিককে আত্মহুতি দিতে হয়েছে। সেখানে অবর্ণনীয় গণহত্যা চলছে। পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা আমেরিকানদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক। কেননা, সেখানে আমাদেরই সরবরাহকৃত সমরাস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ব্যবহৃত হচ্ছে। আমাদের কামান, ট্যাঙ্ক, বিমান জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বাড়িয়ে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য সংক্রান্ত চুক্তির শর্তাবলি লঙ্ঘন করেই এ কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কাউকে দোষারােপ করার জন্য অথবা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও মানবিক সমস্যা বিস্ময়করভাবে সমাধানের কোনাে সূত্র দেওয়ার জন্য আমি বক্তৃতা দিতে উঠিনি। উদ্বাস্তু বিষয়ক সিনেটের বিচার বিভাগীয় সাবকমিটির সভাপতি হিসেবে আমি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুঃখ-দুর্দশায় নিজের ব্যক্তিগত উদ্বেগ প্রকাশ করতে উঠেছি। বিশ্বের সর্বত্র যে অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত জনগণ রয়েছেন—এরাও তাদের দলভুক্ত হলেন বলে আমার মনে হয়।  তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাওয়া খবরে যদিও বলা হয়েছে, হিংসাত্মক কার্যকলাপ ব্যাপকহারে হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তবুও রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে, জনগণ ও কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনীর মধ্যে উত্তেজনা যথেষ্ট রয়েছে। সেখানে যথেচ্ছ হত্যা, বিরােধী রাজনীতিকদের গুম, ছাত্র ও বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করার কাহিনী খবরের কাগজে আসছে।
তিনি বলেন, রিপাের্টে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়, পাকিস্তানের মােট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই সম্ভবত চিরকালের জন্য পৃথক হয়ে গেছেন। রিপাের্টে এ ইঙ্গিতও পাওয়া যায়, সেনাবাহিনী শহর নিয়ন্ত্রণ করছে বটে, তবে পল্লী অঞ্চলের অধিকাংশ স্থানে সরকারি প্রশাসন বলতে কিছু নেই। তিনি বলেন, এ বেদনাদায়ক পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ভারতে ছড়িয়ে পড়ছে। বলা হয়েছে, প্রতিদিন ৫০ হাজার উদ্বাস্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে প্রবেশ করছেন। আমার বিশ্বাস, আমাদের সরকার ও জাতিসংঘ এ বিষয়ে উদ্যোগী হয়ে পূর্ব  পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও মানবিক সমস্যাগুলাের সমাধানে সাহায্য করতে পারেন। আর সে উদ্যোগ জাতিসংঘের মাধ্যমেই হওয়া উচিত।  যুক্তরাজ্যের কমন্সসভার সদস্য রাসেল জন স্টোন লন্ডনে এক বিবৃতিতে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে যাই ঘটুক না কেন, সেখানকার দুটি বিষয় উপেক্ষা করার মতাে নয়। আর তা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণ পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা দাবি করছেন এবং পাকিস্তান সরকার তাদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি, ব্রিটেন বিষয়টিকে পাকিস্তানের ঘরােয়া ব্যাপার হিসেবে মেনে নিয়ে নিক্রিয়তা অবলম্বন করতে পারে না। কমনওয়েলথের প্রবীণ সদস্য হিসেবে ব্রিটেনের এ ব্যাপারে দায়িত্ব রয়েছে।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!