You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.03.27 | কুমিরায় যুদ্ধ | কারফিউয়ের পরের পরিস্থিতি | অপারেশন সার্চলাইট - সংগ্রামের নোটবুক

২৭ মার্চ শনিবার ১৯৭১

সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকা শহরে কারফিউ তুলে নেওয়া হয়। বিদেশি সাংবাদিকদের কড়া সেনা প্রহরায় হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে সরাসরি বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়ে বিশেষ বিমানে ঢাকা ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ঢাকায় সাময়িক কারফিউ প্রত্যাহারের পর পরই নাগরিকরা শহর ত্যাগ করা শুরু করে। গােটা শহরে বিক্ষিপ্তভাবে হতভাগ্য বাঙালিদের লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। বুড়িগঙ্গার ওপারে জিঞ্জিরায় মুক্তিযােদ্ধারা সমবেত হতে থাকেন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযােদ্ধারা দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলেন। চট্টগ্রাম শহরের চারদিকে মুক্তিবাহিনীর সাথে হানাদার বাহিনীর বিক্ষিপ্ত লড়াই চলে। কুমিরায় তুমুল যুদ্ধ হয়। সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়াউর রহমান ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘােষণা পাঠ করেন। | ঘােষণাটি নিমে দেওয়া হলাে :

“The government of the sovereign state of Bangladesh on behalf of our Great Leader, the Supreme Commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman, we hereby proclaim the independence of Bangladesh. And that the government headed by Sheikh Mujibur Rahman has already been formed. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representatives seventy five million people of Bangladesh, and the government headed by him is the only legitimate government of the people of the independent sovereign state of Bangladesh, which is legally and constitutionaly formed, and is worthy of being recognised by all the governments of the world. I therefore, appeal on behalf of our great leder Sheikh Mujibur Rahman to the governments of all the democratic countries of the world, specially the big powers and the neighbouring countries to recognise the legal government of Bangladesh and take effective sets to stop immediately the aweful genocide that has been carried on by the army of occupation from Pakistan.

“The guiding principle of the new state will be first neutrality, second peace and third friendship to all and enemity to none. May Allah help us. Joy Bangla.”

(‘আমাদের মহান নেতা, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আমরা, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘােষণা করছি। ইতােমধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের সরকার  গঠিত হয়েছে। এই সঙ্গে আমরা আরও ঘােষণা করছি যে, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকারই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের একমাত্র আইনসম্মত সরকার, যা বৈধ এবং সাংবিধানিকভাবে গঠিত হয়েছে। এ সরকার বিশ্বের সকল সরকারেরই স্বীকৃতি পাবার যােগ্য। সুতরাং আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আমি বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বিশেষত বৃহৎশক্তি ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সরকারের প্রতি বাংলাদেশের বৈধ সরকারকে স্বীকৃতি প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি। একই সাথে অবিলম্বে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বীভৎস গণহত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানাই। নতুন রাষ্ট্রের মূলনীতি হবে প্রথমত নিরপেক্ষতা, দ্বিতীয়ত শান্তি ও তৃতীয়ত সকল দেশের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে শত্রুতা নয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হােন। জয় বাংলা।’)।  ভারতীয় পার্লামেন্ট লােকসভায় ভাষণদানকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের প্রতিরােধ যুদ্ধ প্রসঙ্গে বলেন, পূর্ববঙ্গের সমগ্র জনসাধারণ একবাক্যে গণতান্ত্রিক কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে। একে আমার অভিনন্দন জানাই। শ্রীমতী গান্ধী বলেন, ভারত সরকার পূর্ববঙ্গের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ রয়েছে এবং যথা সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। তিনি আরও বলেন, আমরা কেবল এর তাত্ত্বিক দিকটাই দেখব না, আন্তর্জাতিক রীতি-নিয়ম মেনে চলতে হবে। যা হােক, আসল কথা হলাে, পূর্ববঙ্গের নিরস্ত্র জনসাধারণকে ট্যাঙ্ক দিয়ে আক্রমণ করা হয়েছে।  পরে রাজ্যসভায় ভাষণদানকালে শ্রীমতী গান্ধী বলেন পূর্ববঙ্গে নিত্যনতুন ঘটনা ঘটছে। এক বাক্যে পূর্ববঙ্গের জনসাধারণ গণতান্ত্রিক কর্মপন্থা বেছে নিয়েছে। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নাক গলানাের উদ্দেশ্যেও নয়, বরং যে মূল্যবােধ আমরা সর্বদা কামনা করি এবং নির্ভীকভাবে প্রচার করি, তারই জন্য আমরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছি। আমরা আশা করছি, আমাদের এ পদক্ষেপ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে এমন এক নতুন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, যে পরিস্থিতিতে আমরা একে অপরের ঘনিষ্ঠ হব এবং সে নতুন পরিস্থিতি এদেশের জনসাধারণকে আরও ভালােভাবে সেবা করতে সাহায্য করবে।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান