You dont have javascript enabled! Please enable it!

২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার ১৯৭১

সেই কালােরাত যে রাতে বাংলার বুকে নেমে আসে মৃত্যুর ঘনতমসা। রাতের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাশব শক্তিতে ঝাপিয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকার নিরীহ-নিরস্ত্র-অসহায় বাঙালি জনসাধারণের ওপর। মেশিনগান-মর্টারট্যাঙ্ক নিয়ে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে হানাদাররা নির্মমভাবে হত্যা করে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ঘুমন্ত নাগরিককে। রাতে ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রাবাস, শিক্ষক কলােনি, পুলিশ ও ইপিআর ব্যারাকসহ নতুন ও পুরনাে ঢাকার আবাসিক এলাকা এবং বস্তির বাসিন্দাদের ওপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে সূচনা করে মাসব্যাপী ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যা, অত্যাচার, নিপীড়ন, নারী ধর্ষণ, অগ্নিসংযােগ, লুটতরাজ। পাকিস্তানি বাহিনী বিপ্লবী বাংলাদেশকে অগ্নিবলয়ে নিক্ষেপের মাধ্যমে শুরু করে মানবতার হৃৎসব। নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর কাপুরুষােচিত সশস্ত্র হামলার নির্দেশ দিয়ে প্রেসিডেন্ট ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খান রাতের অন্ধকারে শেষবারের মতাে ঢাকা ত্যাগ করেন। আর সেই সাথে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান স্বয়ং স্বহস্তে সমাধি রচনা করে যান অখণ্ড পাকিস্তানের। দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনারা ছাউনি থেকে বের হয়ে নিরস্ত্র বাঙালির বিরুদ্ধে অঘােষিত যুদ্ধ শুরু করলে মধ্যরাতের পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে মুক্তিসংগ্রামের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘােষণা করেন। “পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। ছাত্র-জনতা-পুলিশ ইপিআর শত্রুর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরােধ গড়ে তুলেছে। সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছে। আমি ঘােষণা করছি, আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ একটি স্বাধীন। রাষ্ট্র। সর্বস্তরের নাগরিকদের আমি আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যে যেখানে যে অবস্থাতেই থাকুন যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত প্রতিরােধ গড়ে তুলুন। সম্মিলিতভাবে শক্রর মােকাবিলা করুন। এই হয়তাে আপনাদের কাছে আমার শেষ বাণী হতে পারে । আপনারা শেষ শত্রুটি দেশ থেকে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান। আল্লাহ আমাদের সহায় । জয় বাংলা।” 

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সারা বাংলায় যথারীতি অসহযােগ পালিত হয়। সরকারি অফিস, আদালত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। সারা বাংলায় বেসরকারি ভবন শীর্ষে কালাে পতাকার পাশাপাশি স্বাধীন বাংলার পতাকা তােলা হয়। সারাদিন সভা-শােভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যথারীতি মিছিলকারীরা গিয়ে নেতার প্রতি তাদের সমর্থন ঘােষণা করে। ঢাকায় মতিঝিলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা সভা ও মিছিল বের করেন। বিকেলে পূর্ব বাংলা শ্রমিক ফেডারেশন ও বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে পল্টন ময়দানে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। জনসভায় শ্রমিক নেতা কাজী জাফর আহমদ সভাপতিত্ব করেন। রাত আটটায় সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ক্যান্টিনে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাত নয়টার পর ছাত্র-জনতা সারা ঢাকায় ব্যারিকেড রচনা শুরু করেন। সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে ভুট্টো-ইয়াহিয়া এবং প্রেসিডেন্ট ও পিপলস পার্টির উপদেষ্টাদের মধ্যে আলােচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত নয়টায় গােটা ঢাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে ইয়াহিয়া খান ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সেনানিবাসে সৈন্যরা যুদ্ধ সাজে তৈরি হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বিকেলে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে সেনানিবাসে যান। রাত ৮ টায় তিনি করাচি রওয়ানা হন। আর সেই সাথে সেনাদের দিয়ে যান বাঙালি নিধনের ঢালাও লাইসেন্স। রাত নয়টার পর হােটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সাংবাদিকরা জনাব ভুট্টোকে প্রেসিডেন্টের ঢাকা ত্যাগের খবর দিলে তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, পরিস্থিতি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আমি আগামীকাল করাচি ফিরে যাব।

বঙ্গবন্ধুর কাছে ইয়াহিয়ার ঢাকা ত্যাগের খবর আগেই পৌঁছেছিল। রাত ৯টার পর বঙ্গবন্ধু তাঁর বাসভবনে উপস্থিত দলীয় নেতা, কর্মী, সমর্থক, ছাত্র নেতৃবৃন্দ ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, আমরা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কিন্তু জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট অখণ্ড পাকিস্তানের সমাপ্তি টানতে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু আরও বলেন : আমাকে হয়তাে ওরা হত্যা করতে পারে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, আমার সমাধির ওপর একদিন স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করবেই। বঙ্গবন্ধু ঘােষিত স্বাধীনতার ফরমান “পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানার ইপিআর ঘাঁটি রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লােকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন  করছি। আমাদের মুক্তিযােদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে।”  “সর্বশক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান। আপনাদের পাশে এসে যুদ্ধ করার জন্য পুলিশ, ইপিআর, বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও আনসারদের সাহায্য চান।” “কোন আপস নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল আওয়ামী লীগ নেতা, কর্মী এবং অন্যান্য দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতাপ্রিয় লােকদের এ সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।”

-শেখ মুজিবুর রহমান

২৫শে মার্চ, ১৯৭১

রাত ১০টায় বঙ্গবন্ধু সত্যাগ্রহী বাংলার উদ্দেশে বিভিন্ন বিভাগের কার্যক্রমের ওপর কিছু নির্দেশ জারি করেন। এর আগে সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতিতে দেশের বর্তমান সঙ্কট সমাধানে দুঃখজনক কালক্ষেপণ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে নিরস্ত্র জনগণের ওপর সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণ ও নির্যাতনের কঠোর নিন্দা করে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি সামরিক বাহিনী ও নিরস্ত্র অসামরিক নাগরিকদের মধ্যে মােকাবিলার পরিস্থিতি সৃষ্টি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, এই আহ্বান অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক সমাধান বানচালের উদ্দেশে সামরিক মােকাবিলার নীতি অনুসরণ অব্যাহত রাখা হলে এর অবশ্যম্ভাবী ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট মহলই দায়ী হবেন।  বঙ্গবন্ধু বলেন, সেনাবাহিনীর এ কথা উপলব্ধি করা উচিত যে, সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান চাইলে তাদেরকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিলম্ব দেশ ও দেশবাসীকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখেই ঠেলে দেবে। তিনি বলেন, ঢাকায় প্রেসিডেন্টের উপস্থিতি ও তার আলােচনায় গণমনে এই প্রত্যাশাই দানা বেঁধেছিল, যে সঙ্কট জাতিকে গ্রাস করেছে একমাত্র রাজনৈতিকভাবেই তার সমাধান সম্ভব। আর এ কারণেই আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে মিলিত হয়েছিলাম। ইয়াহিয়া সাহেবও এই অভিমতই ব্যক্ত করেছিলেন যে, সঙ্কটের কেবল রাজনৈতিক সমাধানই হতে পারে। আর সে প্রক্ষিতে এই সমাধানের ভিত্তিস্বরূপ কিছু মৌলিক নীতি প্রেসিডেন্ট স্বীকার করে নেন। এরপর এই নীতিমালা বাস্তবায়নের পন্থা নির্ধারণের উদ্দেশে আমার সহকর্মীরা প্রেেিডন্টের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। এভাবেই আমরা আমাদের দায়িত্ব   সম্পাদন করে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানাের পর। এখন আর বিলম্বের কোনাে কারণ বা যুক্তি নেই।

 জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা বঙ্গবন্ধু বলেন, সংশ্লিষ্ট মহল যদি সঙ্কটের একটি রাজনৈতিক সমাধান চান তাহলে তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, বিষয়টি তাদের অবিলম্বে চূড়ান্ত করতে হবে।  বিকেলে সংবাদপত্রে পাঠানাে অপর এক বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনীর কর্তৃক গণহত্যার প্রতিবাদে আগামী ২৭ মার্চ সারা। বাংলায় হরতাল পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নিরস্ত্র জনগণকে এভাবে অবাধে গুলি করে হত্যা ও তাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন চালাতে দেওয়া হবে না ।  সৈয়দপুর, রংপুর, জয়দেবপুর ও চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের নিন্দা জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, বেসামরিক জনগণের ওপর বেপরােয়া গুলিবর্ষণ ও নৃশংস নির্যাতন চালানাে হচ্ছে। পুলিশের ভূমিকাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সর্বত্র সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমন এক সময় এসব ঘটনা ঘটেছে যখন প্রচণ্ড রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের ঘােষিত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সেনাপতি ইয়াহিয়া খান স্বয়ং ঢাকায় অবস্থান করছেন। আমি অবিলম্বে সামরিক তৎপরতা বন্ধের নির্দেশ দানের জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে আমি প্রেসিডেন্টকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশের নিভকি জনগণ মুক্তির চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে-কোনাে পরিস্থিতি মােকাবিলা করতে প্রস্তুত। বঙ্গবন্ধু বিবৃতিতে বীর জনতার প্রতি সংগ্রাম চালিয়ে যাবার আহ্বান জানান।  রাত ১১টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘অপারেশন সার্চ লাইট”-এর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে। রাত সাড়ে ১১টায় তারা ছাউনি থেকে বেরিয়ে আসে। ফার্মগেটের মুখে হানাদার বাহিনী প্রথম প্রতিরােধের মুখােমুখি হয়। এখানে তারা লাউড স্পিকারে গােটা ঢাকায় কারফিউ জারির ঘােষণা দেয়। ছাত্রজনতা সেনাবাহিনীকে বাধা দিলে তারা মেশিনগান ব্যবহার করে পাখির মতাে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গুলি করে হত্যা করে। ডিনামাইট দিয়ে ব্যারিকেড উড়িয়ে দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় খণ্ড যুদ্ধ। সেনাবাহিনী। প্রতিরােধকারী বাঙালি যােদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাংক-মর্টার-রকেট ব্যবহার করে। শুরু হয় চারদিকে গুলি আর গােলার বিস্ফোরণ । মানুষের আর্তচিৎকার। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণার পর বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে ঘােষণা করেন : আজ থেকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র। সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম শুরু হয়েছে । চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র সংগ্রাম চলবে। আমার এই ঘােষণা ঘরে ঘরে পৌঁছে দিন। শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তুলুন। বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠে এই ঐতিহাসিক ঘােষণা রাত ১২টার পর বেতারে একবার শােনা যায়  পিলখানা। 

ইপিআর ব্যারাক ও অন্যান্য স্থান থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার লিখিত-বাণী ওয়ার্লেসের মাধ্যমে সারাদেশে ম্যাসেজ আকারে পাঠানাে হয়। এই ওয়ার্লেস চট্টগ্রাম ইপিআর সদর দফতরে পৌঁছায়। চট্টগ্রাম উপকূলে নােঙর করা একটি বিদেশি জাহাজও এই ম্যাসেজ গ্রহণ করে। চট্টগ্রামে অবস্থানকারী আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘােষণার বাণী সাইক্লোস্টাইল করে রাতেই শহরবাসীর। মধ্যে বিলির ব্যবস্থা করেন। রাত একটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি দল বঙ্গবন্ধুর বাস ভবনের অদূরে শুক্রাবাদে ব্যারিকেডের মুখােমুখি হয়। এখানে প্রতিরােধ বুহ্য ভেঙে হানাদাররা রাত দেড়টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে আসে। সেনারা বাসভবনে এলােপাতাড়ি গুলি নিক্ষেপ শেষে ভেতরে প্রবেশ করে। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে শেরেবাংলানগরস্থ সামরিক বাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুকে সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে আদমজী কলেজের একটি কক্ষে আটক রাখা হয় পরদিন সকাল পর্যন্ত। মধ্যরাতেই সেনাবাহিনী পিলখানা রাজারবাগ, নীলক্ষেত আক্রমণ করে। সেনারা পিলখানা ও নীলক্ষেতে প্রচণ্ড প্রতিরােধের মুখােমুখি হয়। রাত দুটোর সময় ট্যাঙ্ক, বাজুকা, মর্টারের মাধ্যমে নীলক্ষেত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা দখল করে। প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পিলখানা ইপিআর ব্যারাকের পতন হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইন হামলাকারীদের কবজায় আসে রাত দুটায়। সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাঙ্ক মর্টারের গােলায়, আগুনের লেলিহান শিখায় একদিকে নগরীর রাত হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়, অপরদিকে এই রাতের ওপর উপ্ত হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। পরের দিন নব সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে সূচিত হয় নতুন প্রতিজ্ঞার ইতিহাস। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!