১১ মার্চ বৃহস্পতিবার ১৯৭১
স্বাধীন বাংলার দাবিতে অবিচল সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী সরকারের সাথে সবধরনের অসহযােগিতা অব্যাহত রাখেন। বঙ্গবন্ধু আহুত অসহযােগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শরিক হয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি ও সচিবালয়ের সচিবসহ সারা বাংলায় সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন। জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে স্টেট ব্যাংক, তফসিলি ব্যাংক ও সরকারি ট্রেজারিতে স্বাভাবিক লেনদেন চলে। বাংলাদেশের ভেতরে ডাক, তার ও টেলিফোন যােগাযােগ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল ছাড়া সড়ক, রেল ও নৌ চলাচল অব্যাহত থাকে। নগরীর বিপণিগুলাে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত খােলা থাকে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে রাজধানীতে সভা, সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ প্রভৃতি সরকারি ও আধাসরকারি ভবন, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ ও যানবাহনে কালাে পতাকা উড়ানাে হয়। সারাদেশে বেসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে। প্রেক্ষাগৃহগুলােতে প্রমােদ কর ছাড়া বাংলা ছায়াছবি দেখানাে হয় । নারায়ণগঞ্জে ছায়াছবি প্রদর্শনীর আগে প্রেক্ষাগৃহগুলােতে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের বদলে ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশন করা হয়। বরিশালে জেলখানা ভেঙে ২৪ জন কয়েদি পালিয়ে যায়। এখানে পুলিশের গুলিতে ২ জন কয়েদি নিহত হয়। কয়েদি-কারারক্ষী সংঘর্ষে ২০ জন কয়েদি ২৫ জন রক্ষী আহত হয়। কুমিল্লায় জেলখানা ভেঙে পালাবার সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ৩ জন কয়েদি নিহত হয়। সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক আসামী ও কয়েদি আহত হয়। ন্যাপ (ওয়ালী) বাংলাদেশ শাখার সভাপতি অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম, খুরশীদ, কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন ও ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি কে, উলফ বাংলাদেশের অনানুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে পৃথক পৃথক আলােচনা বৈঠকে মিলিত হন। রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ১১৪ নম্বর সামরিক আদেশ জারি করেন।
সামরিক নির্দেশে বলা হয়, কেউ প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে অথবা সশস্ত্র সেনাবাহিনীর রক্ষণাবেক্ষণে বা সেনাবাহিনীর গতিবিধিতে অন্তরায় সৃষ্টি করলে তাদের কার্যকলাপ আক্রমণাত্মক কাজের শামিল হবে, যা সংশ্লিষ্ট সামরিক বিধি অনুযায়ী শাস্তিযােগ্য। সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়ােজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহের ক্ষেত্রে সংগ্রামী জনতা বাধা সৃষ্টি করে। সিলেটে রেশন নেবার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেওয়া হয়। যশাের ও অন্যান্য এলাকায়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সামরিক কর্তৃপক্ষ অপর এক ঘােষণায় রংপুর শহরে আরােপিত রাত্রিকালীন কারফিউ প্রত্যাহার করে নেয়। ‘ভিনটেজ হরাইজন’ নামে গমবাহী একটি জাহাজের গতিপথ চট্টগ্রাম বন্দরের বদলে করাচি বন্দর অভিমুখে পরিবর্তনের নির্দেশ দেওয়া হয়। জাহাজটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের জন্য ৩২ হাজার টন গম নিয়ে আসছিল।
টাঙ্গাইলে বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বঙ্গবন্ধু ঘােষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ঘােষণা করেন। মওলানা ভাসানী তার সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাত কোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই এক সাথে হয়ে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলাের মধ্যে কোনাে রকম বিভেদ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের। জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। জাতীয় লীগ প্রধান আতাউর রহমান খান পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে স্থানীয় সংবাদপত্রে একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি। বলেন, জোর করে কৃত্রিম সম্প্রীতি রক্ষার প্রচেষ্টা হতে বিরত থাকুন। ভাবাবেগে বিহ্বল না হয়ে বাস্তব সত্যক উপলব্ধি করুন। আসুন আমরা ভাই ও বন্ধুর মতাে। কোলাকুলি করে পরস্পরের কাছ থেকে বিদায় নেই। পিপলস পার্টি চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি তারবার্তা পাঠান। তারবার্তায় ভুট্টো বলেন, উদ্ধৃত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি। আমরা আজ বিরাট সঙ্কটের মুখােমুখি। দেশের ভবিষ্যৎ আজ অনিশ্চিত। এ ব্যাপারে আমাদের উভয়ের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। ধ্বংস এড়ানাের জন্য মানুষের সাধ্যায়। সবকিছুই আমাদের করতে হবে। দেশকে রক্ষা করতে হবেই এবং তা যে-কোনাে মূল্যের বিনিময়ে। পিপলস পার্টি প্রধান তারবার্তায় আওয়ামী লীগ প্রধানকে জানান, আমি শীঘ্র আবার ঢাকায় যেতে রাজি আছি এবং আপনার সাথে আলােচনা করে উদ্ভূত সমস্যার একটি সমাধান বের করার জন্যও তৈরি আছি । ইতিহাসে যেন বলতে না। পারে, এ কাজে আমরা ব্যর্থ হয়েছিলাম। মুসলিম লীগ (কাইয়ুম) প্রধান সকালে রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার সাথে বৈঠক করেন। করাচিতে গণঐক্য আন্দোলনের নেতা এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, খুব দ্রুত পটপরিবর্তন হচ্ছে। দেশকে বিচ্ছিন্নতার হাত থেকে রক্ষা করতে হলে যথাশীঘ্র ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানই এখন কার্যত ঢাকার সরকার। সেখানে সব সরকারি কর্মচারী ও সচিবরা তাঁর নির্দেশ পালন করছেন। ঢাকায় কেবল সামরিক সদর দফতরে পাকিস্তানি পতাকা উড়ছে। আর কোথাও পাকিস্তানের পতাকা দেখা যায় না। দেশের পূর্বাঞ্চল এখন একটি আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে বসে রয়েছে। প্রেসিডেন্টের এখন উচিত আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া শর্ত মেনে নিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে অবিলম্বে ক্ষমতা ছাড়া না হলে দেশের দুঅংশকে এক রাখা কোনােভাবেই সম্ভব হবে না।
করাচি শিল্প ও বণিক সমিতি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে একটি জরুরি তারবার্তা পাঠায়। বার্তায় অবিলম্বে উভয় অঞ্চলের মধ্যে স্বাভাবিক ব্যাংকিং সার্ভিস পুনরায় চালুর ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানানাে হয়। বার্তায় উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক দুর্ভোগের মুখােমুখি হয়েছেন। শীঘ প্রতিকারের ব্যবস্থা না হলে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে দুটি বিবৃতি দেওয়া হয়। পরিষদ নেতা নূরে আলম সিদ্দিকী, শাজাহান সিরাজ, আ, স, ম, আবদুর রব ও আবদুল কুদুস মাখন যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, গত ১০ মার্চ ভােরে চট্টগ্রাম বন্দরের ১৭ নং জেটিতে এম, এন, সােয়াত নামে একটি অস্ত্রবাহী জাহাজ নােঙর করেছে। বন্দর শ্রমিকরা সেই জাহাজ থেকে সমরাস্ত্র খালাসের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই সমরাস্ত্র বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে পাঠানাের জন্য বন্দরের বাইরে রেল ওয়াগান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে এই সমরাস্ত্র জাহাজ থেকে খালাস ও রেল ওয়াগনে তােলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। | ছাত্র নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীন বাংলার নিরস্ত্র জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যই এই সমরাস্ত্র বাংলাদেশে আনা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা বাংলাদেশের জনসাধারণকে সজাগ করে দিচ্ছি। পাশাপাশি এই সমরাস্ত্র সরবরাহের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি। সমরাস্ত্র ও সৈন্যবােঝাই আরও পাঁচটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে নােঙর করবে বলে জানা গেছে। এসব সমরাস্ত্র ও সৈন্য যাতে বাংলাদেশে না নামতে পারে তা প্রতিহত করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতা অপর এক যুক্ত বিবৃতিতে সরকার প্রদত্ত যাবতীয় খেতাব ও পদক বর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এই বিবৃতিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর চলাচলের ব্যাপারে কোনাে সহযােগিতা না করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানাে হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য খাদ্যদ্রব্য ও অন্যান্য প্রয়ােজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা থেকে বিরত থাকার জন্যও জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানানাে হয়। বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে আলােচনা বৈঠকের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্টকে তার ৬ মার্চের ভাষণ। প্রত্যাহার করার দাবিও জানানাে হয়।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে আওয়ামী লীগ কর্তৃপক্ষ হরতালের ক্ষেত্রে অব্যাহতির আওতা আরও সম্প্রসারিত করেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন, বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছেন চুড়ান্ত বিজয়ের জন্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কঠোর শৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের জনগণের নামে বঙ্গবন্ধু যে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণ নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সে নির্দেশ পবিত্ৰজ্ঞানে কার্যকর করে তুলছেন। জনগণের আন্দোলন নজিরবিহীন তীব্রতা লাভ করেছে। স্বাধীনতার সংগ্রাম। অব্যাহত রাখার স্বার্থে আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের অর্থনীতিকে পূর্ণভাবে চালু রাখার জন্য নিজেদের সর্বশক্তি নিয়ােগ করতে হবে। বাংলাদেশের দৃশ্যত সরকার প্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে এই বিবৃতির মাধ্যমে নির্দেশ জারি করা হয় ১. বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলাে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যে-কোনাে অঙ্কের অর্থ।
ডিপােজিট হিসেবে গ্রহণ এবং যে-কোনাে পরিমাণ অর্থের আন্তঃব্যাংক ক্লিয়ারেন্সসহ সব ধরনের ব্যাংকিং কাজ করতে পারবে। বাংলাদেশের। ভেতরে আন্তঃব্যাংক স্থানান্তর ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে টি টি অথবা মেইল ট্রান্সফারের মাধ্যমে টাকা উঠানাে যাবে। তবে মজুরি ও বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে সমস্ত পে-বিল সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সার্টিফায়েড হতে হবে অথবা চেকের সাথে ওয়েজ রেজিস্টার জমা দিতে হবে। ব্যক্তিগত টাকা ওঠানাের পরিমাণ সপ্তাহে ১ হাজার টাকার বেশি হবে না। আখ ও পাটসহ শিল্পকারখানার কাঁচামাল কেনার পেমেন্ট অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের জনসাধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় জিনিস ক্রয়সহ প্রকৃত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট হবে। নগদে বা ক্যাশ ড্রাফটে এই টাকা ড্র করা যাবে। বাংলাদেশের মধ্যে যে-কোনাে অ্যাকাউন্ট ক্রস চেক এবং ক্রস ডিম্যান্ড ড্রাফট ইস্যু ও ডিপােজিট করা যাবে। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান সমগ্র বাংলাদেশে এর টি টি রি-ডিসকাউন্টিং ব্যবস্থা অব্যাহত রাখবে যাতে অন্যান্য ব্যাংক তাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। যে-কোনাে অনুমােদিত ডিলার ও বিদেশি পর্যটক চেক ক্যাশ। করাতে পারবে। কূটনীতিকরা অবাধে তাদের অ্যাকাউন্ট চালাতে এবং বিদেশি নগরিকরা তাদের বৈদেশিক মুদ্রা অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে পারবেন। লকারসমূহ বন্ধ থাকবে। স্টেট ব্যাংকের মাধ্যমে অথবা অন্য কোনােভাবে বাংলাদেশের বাইরে অর্থ পাঠানাে যাবে না ।
২. অন্যান্য ব্যাংকের মতাে স্টেট ব্যাংকও উল্লিখিত বিধিনিষেধ মেনে। বাংলাদেশের মধ্যে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভােলা থাকবে। “পি’ ফরম অনুমােদন করা যাবে। ধান, পাটবীজ, সার ও কীটনাশক সংগ্রহ, পরিবহন ও বিতরণ অব্যাহত থাকবে। কৃষি খামার ও ধান গবেষণা কেন্দ্র এবং এর গবেষণা কাজ চালু থাকবে। পাওয়ারপাম্প ও কৃষির অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং এর জন্য। প্রয়ােজনীয় তেল, জ্বালানি ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম পরিবহন ও বিতরণ প্রভৃতি কাজ অব্যাহত থাকবে। নলকূপ খনন ও চালু এবং খাল খননসহ অন্যান্য সেচব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রাদেশিক সমবায় ব্যাংক, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক এবং এদের সাথে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিসমূহ ও থানা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি কর্তৃক ঋণ প্রদানের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় সুদমুক্ত ঋণদান এবং কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংক কর্তৃক কৃষকদের জরুরি ঋণদান অব্যাহত থাকবে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও শহর রক্ষা, ই পি ওয়াপদা ও অন্যান্য সংস্থার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, শহর রক্ষা ও পানি উন্নয়ন কাজ চলবে। ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও মেরামত কাজ এবং এর চলাচল ক্লিয়ারেন্স ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম চলবে। পাইলটেজসহ পাের্ট কর্তৃপক্ষ কাজ চালিয়ে যাবে। কিন্তু বহির্গামী ও বহিরাগত জাহাজসমূহের সুষ্ঠু বন্দোবস্তের জন্য পাের্ট কর্তৃপক্ষের কেবল প্রয়ােজনীয় বিভাগ কাজ করবে। সেনাবাহিনীর চলাচল অথবা জনসাধারণের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সামগ্রী খালাসের ব্যাপারে কোনাে সহযােগিতা করা চলবে না। ই পি আই ডি সির সমস্ত কলকারখানায় কাজ চলবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। ঘূর্ণিদুর্গত এলাকায় বাঁধ নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজসহ সমস্ত সাহায্য, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠন কাজ অব্যাহত থাকবে। পল্লী অঞ্চলে উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকবে। সরকারি ও আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন পাওনা হলে তা পরিশােধ করতে হবে। ৯. প্রাইমারি স্কুল শিক্ষকদের বেতন সময় মতাে প্রদান করতে হবে। ১০ বেতন ও বিল পরিশােধ এবং লেনদেন পরিচালনার জন্য এজি অফিসে আংশিক কাজ চলবে। ১১. জেলখানার ওয়ার্ডে ও অফিসে কাজ চলবে । ১২. আনসাররা যথারীতি কর্তব্য পালন করবে। ১৩. বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিযুক্ত শাখাগুলাে কাজ করবে। ১৪, সমস্ত ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ভােলা থাকবে।
সূত্র : দিনপঞ্জি একাত্তর – মাহমুদ হাসান