টিটো বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে
বর্তমানে ভারত সফররত যুগােশ্লাভ প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটো বাংলাদেশ প্রশ্নে ভারতের নীতির প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। গত ১৭ই অক্টোবর নয়া দিল্লীতে ভারতীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি প্রদত্ত এক ভােজ সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে মার্শাল টিটো বলেন, শরণার্থীরা যাতে তাদের ফেলে আসা বাড়ীঘরে ফিরে যেতে পারেন তার জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে এবং সেখানে উপযুক্ত রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এটাই সমস্যার একমাত্র সম্ভাব্য ও স্থায়ী সমাধান। তার মতে এ সমস্যা লাখাে লাখাে লােকের জীবনে দুঃখ-দুর্দশা ডেকে আনা ছাড়াও একটা ব্যাপকভাে রাজনৈতিক তাৎপর্য ও রয়েছে। প্রেসিডেন্ট টিটো উপমহাদেশে শান্তি রক্ষার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সমস্যার ফলে সৃষ্ট বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবেই, বরং তা তার বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। | পূর্বাহ্নে মার্শাল টিটোকে স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি ভি গিরি বলেন যে, শরণার্থীরা এমন একটা সমস্যার সৃষ্টি করেছে যার দায়িত্ব সারা বিশ্ব সমাজেরই বহন করা উচিৎ। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশ সমস্যার এমন একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান চায় যা সেখানকার জনগণও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযােগ্য হবে। | তিনি বলেন, শরণার্থী সমস্যা ভারতের আর্থিক সঙ্গতির উপর একটা প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারতের পক্ষে শরণার্থীদের ভরণ পােষণের দায়িত্ব আর বেশীদিন বহন করা সম্ভব নয়।
জয়বাংলা (১) ১; ২৪ | ২ অক্টোবর ১৯৭১
ভিয়েতনাম বাঙলাদেশের পক্ষে
ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ভারতস্থ কন্সাল জেনারেল নগুয়েন আন ভূ নয়াদিল্লীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলিয়াছেন, পূর্ব বঙ্গে জনগণের জাতীয় স্বাধীনতা ও উন্নততর জীবন যাপনের সংগ্রামের প্রতি তাহার সরকার এবং জনগণের গভীর সহানুভূতি রহিয়াছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হইতে এই সংবাদ প্রচারিত হয়। | দুনিয়া জোড়া সাম্রাজ্যবাদ বিরােধী জাতীয় মুক্তি বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু ভিয়েতনাম; আর উহার সুরক্ষিত দুর্গ গণ ভিয়েতনামের বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামের প্রতি এই সহানুভূতি ও সমমর্মিতা প্রকাশ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাঙলাদেশ সরকারে কৃতজ্ঞতা বাংলাদেশে সরকারে রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব আবদুস সামাদ আজাদ বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি দ্বথ্যহীন সমর্থনের জন্য ভিয়েতনামের জনগণ ও সরকারকে সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ জান, ইয়াছেন।
মুক্তিযুদ্ধ। ১; ১৬। ২৪ অক্টোবর ১৯৭১
যুগােশ্লাভিয়া
প্রেসিডেন্ট টিটোর ভারত সফর শেষে ভারত-যুগােশ্লাভিয়া যুক্ত ইশতেহারে বাঙলাদেশের জনগণও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট গ্রহণযােগ্য রাজনৈতিক সমাধানের দাবি জানান হইয়াছে। যুক্ত ইশতেহারে বলা হয়, ইহাই বাঙলাদেশের সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ। বৃটিশ ও পােলিশ জাহাজ বাংলাদেশ আসবে না দুটি ব্রিটিশ ও একটি পােলিশ জাহাজ কোম্পানী বাংলাদেশে আসতে আর রাজী নয় বলে পাক সরকারকে অবহিত করেছে। কারণ মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের জন্য ইতিমধ্যেই অনেক জাহাজ নিমর্জিত হয়েছে, সেহেতু এই কোম্পানীগুলাে নিরাপত্তার অভাব বােধ করছেন।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১:১৬ ২৪ অক্টোবর ১৯৭১
পূর্ব ইয়ােরােপ বৈষয়িক সাহায্য দিতে প্রস্তুত
সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব ও সারা বিশ্বের জনমত বাঙলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের পক্ষে। পূর্ব ইয়ােরােপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি একযােগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সুদৃঢ় নৈতিক সমর্থন জানাইয়াছে এবং বৈষয়িক সাহায্য প্রদানেরও নিশ্চয়তা দিয়াছে। মুক্তিযুদ্ধে বৈষয়িক সাহায্য প্রদানের বিষয়টি বাঙলাদেশের সরকার ও ঐ সকল দেশসমূহের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলােচনার দ্বারা স্থির হইবে। জাতিসংঘে বাঙলাদেশে প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ন্যাপ প্রধান অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ নিউইয়র্ক হইতে ফিরিয়া আসিয়া মুজিব নগরে সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করেন। অধ্যাপক আহমদ বাঙলাদেশ মন্ত্রী সভার উপপরিষদের অন্যতম সদস্য। অধ্যাপক আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বাঙলাদেশের প্রতিনিধি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে যােগদানকারী সকল দেশের প্রতিনিধিদের আলােচনা করিয়া তাঁহাদের তুলিয়া ধরিয়াছেন এবং তার প্রচেষ্টা সফল হইয়াছে। তিনি জানান, আফ্রিকা ও ইয়ােরােপের দেশসমূহে হইতে বাংলাদেশ প্রশ্নে উল্লেখযােগ্য সাড়া পাওয়া গিয়াছে ও তা অনেকের মনােভাব আমাদের সংগ্রামের অনুকূলে। জার্মান গণতান্ত্রিক রিপাবলিকের সােশ্যালিস্ট ইউনিট পার্টির প্রতিনিধি কমরেডদের সঙ্গেও আমাদের। আলােচনা বেশ ফলপ্রসূ হয় । | তাহারা বিভিন্ন প্রশ্ন করিয়া আমাদের দেশের মুক্তি সংগ্রামের অবস্থা তাহার শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কে। এবং মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্য ইত্যাদি সম্পর্কে বিশদভাবে জানিয়া নিতে চেষ্টা করেন। আমরা তাহাদিগকে সব কিছু সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করিতে চেষ্টা করি।
আলােচনা শেষে তাহারা যে বক্তব্য আমাদের নিকট উপস্থিত করেন, তাহা আমাদের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়ােজনীয়। তাহারাও পাক-ভারত যুদ্ধের আশঙ্কা সম্পর্কে উল্লেখ করেন এবং পাক-ভারত যুদ্ধ বাধিয়া উঠিলে যে জটিলতা সৃষ্টি হইবে সেই সম্পর্কে বিশেষ হুশিয়ার থাকার জন্য বলেন। | তাহারা মুক্তি সংগ্রামকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংগ্রাম পরিচালনার প্রয়ােজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। একটি সুস্পষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচী নয়া অগ্রসর হওয়ার উপর তাঁহারা বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন। কেবল জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠনই নয়, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট গঠনের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্যও প্রয়ােজনীয় কর্মসূচী ও বাস্তব কার্যক্রম গ্রহণের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন। রাজনৈতিক সমাধান এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলিতে গিয়া তাহারা ইহা সুস্পষ্টভাবেই বলেন যে, ‘রাজনৈতিক সমাধান জনগণের আশা, আকাঙখা ও ইচ্ছা অনুযায়ী হইবে এবং রাজনৈতিক সমাধানের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম বন্ধ করার প্রশ্ন আসে না। হাঙ্গেরী, বুলগেরিয়া, রুমানিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া পোল্যান্ড, যুগোশ্লাভিয়া মঙ্গোলিয়া প্রভৃতি সামজতান্ত্রিক দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে ও আমাদের আলােচনা হয়। সকল সমাজতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিরাই বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের প্রতি তাঁহাদের পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন এবং মুক্তি সংগ্রামের পরিস্থিতি জানার জন্য বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন। রুমানীয় কমরেডের মনে কিছু প্রশ্ন, সম্ভবত কিছটুটা দ্বিধাগ্রস্তও ছিল। আমরা উহা অপনােদনের চেষ্টা করি। আলাপ-আলােচনার পর রুমানিয়ার পার্টির পক্ষ হইতে আমাদিগকের সমর্থনের আশ্বাস দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও ১; ১৬ ২৪ অক্টোবর ১৯৭১
ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমনে ইন্দোনেশিয়া সব করতে রাজী
(সংবাদদাতা প্রেরিত) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সম্ভাব্য সব কিছু করতে ইন্দোনেশিয়া প্রস্তত। অবশ্য যদি তাকে মা হবত বা হয়, ‘ ইন্দোনেশিয়ান “ম ও শরুম সুলতান হেমেনকু নুয়ানস এ কথা বলেন। ভারতও পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সহজ করতে তার দেশ মধ্যস্থতা করবে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে ইন্দোনেশীয় মন্ত্রী বলেন “আমরা মধ্যস্থতা করতে চাই না। কিন্তু কোন দেশ চাইলে আমরা আমাদের যথা সাধ্য চেষ্টা করব।”
বাংলাদেশ (১)১:১৯ ১ নভেম্বর ১৯৭১
দিনে দুপুরে তিনি যশােরে যুদ্ধ দেখেছেন
(কলকাতা প্রতিনিধি প্রেরিত) অপারেশন ওমেগার সদস্য মিঃ জিম স্কারলেট সম্প্রতি বাংলাদেশে সাহায্যাদি বিতরণ শেষে কলিকাতায় ফিরে। গিয়ে বলেন যে, তিনি দিনে দুপুরে যশােরের তিনটি স্থানে যুদ্ধ চলতে দেখেছেন। তিনি মুক্তিবাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত এক পাক-সামরিক আস্তানার এক মাইলের মধ্যে গিয়েছিলেন। তাঁর অবস্থানের চার দিনে তিনি গ্রামবাসীদের মধ্যে কাপড়-জামা, কলেরার প্রতিষেধক এবং খাদ্যাদি বিতরণ করেন। তিনি আরাে বলেন যে পাক-সামরিক বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত বাড়ীঘর তিনি তখনও ধােয়াচ্ছন্ন দেখেছেন। গ্রামবাসীগণ তাকে আরাে জানান যে পাক-সামরিক বাহিনীর গুলিতে ঐ গ্রামে চৌদ্দজন নিহত হন। অধিকাংশ গ্রামবাসীই গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আবার তাদের অধিকাংশই ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
পাক-সামরিক শাসক গােষ্ঠী ১১ই অক্টোবর অপারেশন ওমেগার দুজন সদস্য মিস্ এলন কনেট এবং মিঃ গর্ডন প্লাভেনকে দু’বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করার পরে এই প্রথম ওমেগার একজন সদস্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। কারাদণ্ডে দণ্ডিত সদস্যদ্বয় বর্তমানে যশােরের জেলে আছেন। মিস্ জয়েস ফেসিওয়েল, যিনি পাক-সামরিক বাহিনীর কাছে তাদের সাহায্যাদি বিতরণের বিরােধীতার জন্য ইচ্ছাপূর্বক আত্মসমপর্ণ করেছিলেন, তিনি বলেন যে, তারা তাদের কার্যক্রম কোন প্রকারেই বন্ধ করবেন উপরােক্ত পূর্ণদ্দমে চালিয়ে যাবেন। মিঃ স্কারলেট আরাে বলেন যে তাদের দু’জন সদস্য এ-সপ্তাহেই সাহায্য দ্রব্যাদিসহ আবার বাংলাদেশে গমন করবেন।
জয়বাংলা (১)১:২৬ ৫ নভেম্বর ১৯৭১
কেনিয়া বাংলাদেশের পক্ষে
২রা নভেম্বর তারিখে নয়াদিল্লী থেকে প্রচারিত এক বিবৃতিতে কেনিয়ার হাই কমিশনার এস,কে, কিমালেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ও শাসনতান্ত্রিক পদ্ধতি অবিলম্বে প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়ােজন।
জয়বাংলা (১)।১; ২৬
৫ নভেম্বর ১৯৭১
পাকিস্তানকে আর অস্ত্র দেয়া চলবে না।
ফরাসী সরকারের প্রতি ৮০ জন বুদ্ধিজীবীর আবেদন ৮০ জন ফরাসী বুদ্ধিজীবী তাদের সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন যে, বাঙলাদেশে সমস্যার সমাধান। হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে ফ্রান্স কর্তৃক সর্বপ্রকার সাহায্যদান বন্ধ করা হােক। তারা বাঙলাদেশের সমর্থনে একটি ঘােষণা পত্র প্রকাশ করেছেন এবং ফ্রান্সে বাঙলাদেশ সহায়ক সংসদ গঠন করেছেন। এই সংসদে রয়েছে দুইজন নােবেল প্রাইজ প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিক আলফ্রেট কাসটলার ও অদ্রে ভলক। এছাড়া আছে আরাে অনেক খ্যাতনামা সাহিত্যিক, ধর্মীয় নেতা ও ফার্সী জাতীয় সভায় সদস্য। ম্যানিফেস্টোতে পাকিস্তানকে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য প্রদান বন্ধ করে দিতে বলা হয়েছে। বলা হয়েছে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাকে দাবীয়ে রাখবার নীতিকে কোন মতেই সমর্থন করা যায় না। ঘােষণা পত্রটিতে শরণার্থীদের সাহায্যের জন্য অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ বাড়িয়ে দেবার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এখানে উল্লেখযােগ্য যে ফ্রান্সের কাছ থেকে পাকিস্তান মিরােজ জেট বিমান লাভ করেছে এবং বিমান বাহিনীর শক্তি বাড়াবার জন্য পাকিস্তান ফ্রান্সের কাছ থেকে আরাে বিমান কিনতে ইচ্ছুক। পাকিস্তান বিমান
হিনীতে কম পক্ষে দুই স্কোয়াড্রণ মিরােজ আছে। এগুলাের যন্ত্রাংশের জন্য পাকিস্তান ফ্রান্সের উপর
জয়বাংলা (১) ১: ২৬
নভেম্বর ১৯৭১
রুশ কানাডা যুক্ত ইশতেহার
দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান চাই 4 ! প্রধান মন্ত্রী ফোসিগনের সফর শেষে কানাডা ও সােভিয়েট রাশিয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘােষণা করেছে। যে, বাংলাদেশ সমস্যার দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান প্রয়ােজন। এই সমাধান হতে হবে বাঙলাদেশের নির্বাচিত
নেতাদের সাথে আলােচনার মাধ্যমে। রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে বাঙলাদেশের জনসাধারণের ইচ্ছা ও থের থাযথ মূল্য দিতে হবে। সমাধান এমন হতে হবে যাতে শরণার্থীরা দ্রুত নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে। যুক্ত ঘােষণায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সমস্যা সারা বিশ্বের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।
জয়বাংলা (১) ১; ২৬ ৫ নভেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশের জনগণ চীনের সাহায্য চায়। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি নির্যাতিত, নিগৃহীত ও শােষিত মানুষ তাদের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে চীনের সাহায্য চায় । চীনের জাতিসংঘ ভূক্তি উপলক্ষ্যে চেয়ারম্যান মাও সেতুং এর কাছে প্রেরিত এক অভিনন্দন ৰাণীতে বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
অভিনন্দন বানীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এটা এমন একটা জাতির বিজয় যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক শক্তির কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। অভিনন্দন বাণীতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আরাে বলেন, বাংলাদেশের জনগণও আজ অনুরূপ একটি সশস্ত্র সংগ্রামে নিয়ােজিত রয়েছে। সুতরাং তাদের স্বাধীনতা ও স্ব-শাসনের এই সংগ্রামে তারা চীনের সাহায্য আশা করে।
জয়বাংলা (১) ১ : ২৫ ৫ নভেম্বর ১৯৭১
সি পি আই কংগ্রেসে বাংলাদেশ সম্পর্কে
ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টি গুলির প্রতিনিধিরা যা বলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় কমিটির সম্পাদক এবং রাজনৈতিক কমিটির সদস্য জেমস, ই, জ্যাকসন ঃ
“…বাঙলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবির প্রতি আমরা সংহতি ও ঐকান্তিক সমর্থন ঘােষণা করিতেছি । বাঙলাদেশের জনগণের অধিকার আদায় ও সংরক্ষণের প্রচেষ্টার মাধ্যমে যাহাতে বিপ্লবী শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থ এবং মৌলিক কৃষি সংস্কারের প্রশ্ন (যাহা হইল জাতীয় সংগ্রামের কাঠামাের ভিতরকার আসল মর্মবস্তু) যাহাতে সামনে আসে তাহার গুরু দায়িত্ব ন্যস্ত রহিয়াছে পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টদের উপর ।…”
মঙ্গোলিয়ার পার্টির প্রতিনিধি “…গণতান্ত্রিক অধিকার, ফরী স্বার্থ রক্ষা ও শান্তিপূর্ণ জীবনযাত্রা প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ব বাঙলার জনগণের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রামকে মঙ্গোলিয়ার জনগণ সমর্থন করে ।…” সিংহলের কমিউনিস্ট পার্টির প্রন্থিনিধি। “…পূর্ব পাকিস্তানের ইয়াহিয়া থানচক্র যে বর্বর সামরিক সন্ত্রাসের সৃষ্টি করিয়াছে, আমাদের পার্টি তাহার বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করিতেছে। ইহা শুধু গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যক্ত পাকিস্তানের জনগণের আকাকেই পদদলিত করে নাই, পরন্ত এশিয়ার শান্তির পক্ষে ইহা বিপদ স্বরূপ। আমরা বিশ্বাস করি, পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণ কর্তৃক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ব্যাপক সমর্থনদানের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতির সমাধান রাজনৈতিক পন্থায়ই করিতে হইবে। যাঁহারা শেখ মুজিবর রহমানের বিচার বন্ধ করার দাবি করিতেছেন আমরা তাঁহাদের সহিত একমত।…” নিউজিল্যাণ্ড পার্টির প্রতিনিধি ..ইয়াহিয়া খান কর্তৃক জনগণের অধিকার অস্বীকার এবং তাহাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালনার ফলে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করার জন্য আমাদের পার্টি সর্বশক্তি নিয়ােগ করিবে…।” মুক্তিযুদ্ধ। ১; ১৯ ১৪ নভেম্বর ১৯৭১ চীনে ভূট্টোর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চীন সফরকালে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা জুলফিকার আলী ভূট্টোর বিরুদ্ধে চীনা তরুণরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে বলে, বি, বি, সি জানিয়েছেন। চীনা তরুণেরা বিক্ষোভ প্রদর্শনকালে পূর্ব বাংলার গণহত্যার নায়ক ফিরে যাও।’ পূর্ব বাংলার গণহত্যা বন্ধ কর।’ ‘মুজিবের হাতে ক্ষমতা দাও’। পাকিস্তানের ধ্বংস হউক’ প্রভৃতি শ্লোগান দেয়।
আমার দেশ ।১:১১ ১১ নভেম্বর ১৯৭১
ফ্রান্স রাজনৈতিক সমাধান চায় ফরাসী সরকার
বাঙলাদেশের জনগণের ইচ্ছানুযায়ী বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ফ্রান্স সফরকালে ফরাসী সরকারের এই মনােভাব সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়।
গত ৮ই নভেম্বর প্যারিসে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সম্মানে আয়ােজিত এক ভােজসভায় ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট জজ পড়ি তাহার ভাষণে বাঙলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান সেখানকার জনগণের ইচ্ছানুযায়ী করার আহ্বান জানান। | ফরাসী প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, পূর্ববঙ্গের সমস্যা রাজনৈতিক ধরনের তাই উহার সমাধানও। রাজনৈতিকভাবে করিতে হইবে। অন্যথায়, সমগ্র ভারত উপমহাদেশের এক অকল্পনীয় কঠিন অবস্থার সৃষ্টি হইবে।
মুক্তিযুদ্ধ ১; ১৯৪ ১৪ নভেম্বর ১৯৭১
স্বাধীন বাংলাদেশ এখন বাস্তব সত্য।
-ফরাসী অভিমত। ফরাসী নেতৃবৃন্দ ও জনগণ এখন ভাবতে আরম্ভ করেছেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশ একটি বাস্তব সত্য। পাকিস্তান থেকে বাঙলাদেশের বিচ্ছেদের ব্যাপারটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ফরাসী প্রেসিডেন্ট পম্পিডু বাঙলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ফরাসী মহলের ধারণা, বাঙলাদেশ সমস্যার কোন সামরিক সমাধান ইসলামাবাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, বাঙলাদেশ সমস্যা একটি সামরিক সমস্যা নয়, রাজনৈতিক সমস্যা। ফ্রান্স মনে করে, জনগণের ইচ্ছাই এক্ষেত্রে হওয়া উচিৎ চূড়ান্ত। ফ্রান্স পশ্চিম পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে দুটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক সত্তা হিসেবে দেখতে আরম্ভ করেছে।
ফ্রান্স পাকিস্তানের অন্যতম অস্ত্র যােগানদার। ফ্রান্সের কাছ থেকে পাকিস্তান সরকার ৬০টির মত মিগ জঙ্গী বিমান ক্রয় করেছে। মিগ বিমান খুব নীচু দিয়ে উড়ে যেতে পারে ও শেল ছুঁড়তে পারে। মিগ বিমান র্যাডারে ধরা পড়ে না। বাঙলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে ফ্রান্সের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন তাই বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহায়ক হবে। ফ্রান্স পাকিস্তানকে আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না বলে খবরে প্রকাশ। ফ্রান্স থেকে যদি পাক সরকার যন্ত্রাংশ না পায় ও নতুন যন্ত্র কিনতে না পারে, তবে পাকসামরিক বাহিনীকে গুরুতর অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে।
জয়বাংলা (১) ১: ২৮ ২৯ নভেম্বর ১৯৭১
সুইডেনের লিবারাল পার্টির বক্তব্য
সুইডেনের লিবারাল পাটি তার ২৫ শে সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এর জেনারেল কনফারেন্সে প্রস্তাব পাশ করে যে শরণার্থী সমস্যার শেষ সমাধান হলাে তাদের দেশে ফিরে যাওয়া। সে জন্য শীঘ্রই একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রয়ােজন। পাকিস্তানকে সবসময় অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে চাপ দেওয়া এবং জাতিসঙ্ঘের হস্তক্ষেপ এ ব্যাপারে প্রয়ােজন। | লিবারাল পার্টির এই কনফারেন্সে আরও দাবী করা হয় যে, বাংলাদেশে শীঘ্রই সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ করা, শেখ মুজিবকে মুক্তি দেওয়া এবং বাংলাদেশে অসামরিক জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি হয়েছে বলে যে অভিযােগ করা হয়েছে সে ব্যাপারে যে জাতিসংঘ অনুসন্ধান করে বাংলাদেশের ভবিষ্যত সেখানকার জনগণের ইচ্ছানুযায়ী করতে হবে বলেও কনফারেন্স দাবী করে।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১:১৪ ২১ নভেম্বর ১৯৭১
নেদারল্যাণ্ড ও নিউজিল্যাণ্ড বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান চায়
(সংবাদদাতা প্রেরিত) সংবাদে প্রকাশ নেদারল্যাণ্ড ও নিউজিল্যাণ্ড উভয় রাষ্ট্র যৌথভাবে রাষ্ট্রসংঘের বিশেষ কমিটির কাছে এক প্রস্তাব | দিয়েছেন। এই প্রস্তাবে বাংলাদেশের সমস্যার অতি আশু রাজনৈতিক সমাধানের জন্য রাষ্ট্রসংঘ ও পাক সরকারকে অনুরােধ জানানাে হয়েছে।
বাংলাদেশ (১) ১: ২২৪ ২২ নভেম্বর ১৯৭১
সিংহল সরকারের সুমতি
(সংবাদ প্রেরিত)। | সিংহল সরকার পাকিস্তান সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, যে অতঃপর পাকিস্তান সরকার পশ্চিম পাকিস্তান হইতে বাংলাদেশে যুদ্ধের সরঞ্জাম ও সৈন্য চলাচলের ক্ষেত্রে সিংহলে যাত্রা বিরতির যে সকল সুযােগ সুবিধা এতদিন পেয়ে আসছিল তা এখন থেকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ (১) ১; ২২২২ নভেম্বর ১৯৭১
বাঙলাদেশের জন্য হাঙ্গেরীয় শান্তি সংসদের ত্রাণ-সামগ্রী। বেতার যােগে প্রাপ্ত খবরে জানা যায় , গত ২০ শে নভেম্বর কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে হাঙ্গেরীর শান্তি সংসদের পক্ষ হইতে বাঙলাদেশের শরণার্থীদের জন্য প্রচুর কম্বল, ৪৭ বাক্স ব্লড জমা, কিছু-ঔষধ পত্র প্রভৃতি ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। হাঙ্গেরীর শান্তি সংসদের সহ সভাপতি মিঃ টিবর পেথাে ঐ সব সামগ্রী বাংলাদেশ শান্তি সংসদের সাধারণ সম্পাদক জনাব আলী আকসাদের হাতে অর্পণ করেন।
এই প্রথম একটি বিদেশী শান্তি সংসদ সরাসরি বাঙলাদেশ শান্তি সংসদের কাছে ত্রাণসামগ্রী উপহার দিল । অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গ শান্তি সংসদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ ১: ২১ ২৮ নভেম্বর ১৯৭১
পােলিশ ইউনাইটেড ওয়ার্কাস পার্টির কংগ্রেসে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি আমন্ত্রিত। পােল্যাণ্ডের ইউনাইটেড ওয়ার্কস’ পার্টি তাহাদের পার্টি কংগ্রেসে যােগদানের জন্য বাংলাদেশের কমিউনিস্ট | পার্টিকে আমন্ত্রণ জানাইয়াছে। আগামী কাল হইতে ওয়ারশ’তে এই পার্টি কংগ্রেস শুরু হইবে।
মুক্তিযুদ্ধ ।১:২২৫ ডিসেম্বর ১৯৭১
জঙ্গী চক্রের প্রতি আমাদের চ্যালেঞ্জ
মিথ্যা প্রচারণার জন্য গােয়েবলস ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। তার এ প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য ছিল একই মিথ্যা বার বার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে হবে এবং বিশ্বাসযােগ্য করে বলতে হবে। কিন্তু বিশ্বাসযােগ্য করে বলার বিষয়টা পাকিস্তানের গােয়েবলসরা যেন ভুলে গেছেন বা জানেন না। তাই তারা কখন কি বলছেন তা নিজেরাই বুঝেন না। | সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির আশা আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করতে গিয়ে পিণ্ডির জঙ্গী শাহী মহাবেকায়দায় পড়েছে। তারা যে সমস্যার সৃষ্টি করেছে তা আজ তাদেরই গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেবারে যেন ব্যাঙের হাতি গেলা অবস্থা। সেজন্য তারা দিবিদিক জ্ঞানশূন্য। বাংলাদেশে পরিচালিত গণহত্যার যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য অপচেষ্টায় মত্ত। ২৫শে মার্চ রাতের অন্ধকারে সারা বাংলাদেশ ব্যাপী তারা নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের উপর লেলিয়ে দেয় সামরিক বাহিনী। অভিনীত হয় বিশ্বের ইতিহাসে জঘন্যতম মর্মান্তিক নাটক। তারা ভেবেছিল কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই ২৬শে মার্চ পাকিস্তান বেতার থেকে। বুঝানাে হচ্ছিল যে বাংলাদেশে সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন এবং অফিস-আদালত, কাজ কারবার যােগাযােগ ব্যবস্থা সব কিছু স্বাভাবিক চলছে। কিন্তু অচিরেই বিশ্ববাসী জানতে পারল যে বাংলাদেশে কোন। কিছুই স্বাভাবিক ভাবে চলছে না; বরং পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী সেখানে কয়েক লাখ মানুষকে খুন করেছে। তাদের একমাত্র অপরাধ তারা বাঙালি। | তাই তারা বলতে চাইলাে যে, সামরিক বাহিনী কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতিকারী’কে শায়েস্তা করছে। ইত্যবসরে জানাজানি হয়ে গেল, মুক্তি বাহিনীর হাতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, বগুড়া, যশােরের পতনের কথা। এছাড়াও প্রকাশ হয়ে পড়ল বাংলাদেশের অপরাপর স্থানে মুক্তি বাহিনীর হাতে পশ্চিম পকিস্তানী সেনা বাহিনীর বেদম মার খাওয়ার কথা। সুতরাং, পাকিস্তানী গােয়েবলসরা কিছু সংখ্যক দৃষ্কৃতিকারীর সাথে যােগ করল ভারতীয়দের অনুপ্রবেশের কাহিনী। কিন্তু কোথাও হালে পানি-পেল না তাদের আজগুবী যুক্তি। দুনিয়ার মানুষ দেখল এবং বুঝল নিপীড়িত ও নিস্পেষিত বাঙ্গালিরাই চালাচ্ছে প্রতিরােধ সংগ্রাম। এটা তাদের জাতি হিসাবে বেঁচে থাকার জীবন মরণ সংগ্রাম।
| গণহত্যার দায়ে ইয়াহিয়ার জঙ্গীচক্র আজ বিশ্ব বিবেকের কাছে ধিকৃত, নিন্দিত। আত্মপক্ষ সমর্থনের কোন সৎ যুক্তি খুঁজে না পেয়ে দিশেহারা পশ্চিম পকিস্তানী গােয়েবলসরা আজ উথাপন করেছে নয়া অজুহাত । তারা বেছে নিয়েছে সাম্প্রদায়িকতার জঘন্য পথ । তারা বিশ্ববাসীকে বুঝাতে চাচ্ছে যে ‘লাখাে লাখাে অবাঙালিকে কতল হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যই ইয়াহিয়া খান তার সেনা বাহিনী লেলিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। তারা বলতে চাচ্ছে যে শেখ মুজিবের অসহযােগ আন্দোলনের সময় বাঙালিরা নির্বিচারে তথায় বসবাসকারী অবাঙালিদের হত্যা করেছে। এই যুক্তি তুলতে গিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানী জল্লাদ গােষ্ঠী কি সর্বনাশা পথ বেছে নিয়েছে তা বােঝার মতাে মগজ তাদের নেই। | তাদের এ অজুহাত যে কত মিথ্যা, কত অসার একটু চিন্তা করলে যে কোনও মানুষের পক্ষে তা বােঝার কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। | বাংলাদেশে ইয়াহিয়া-টিক্কা চক্রের গণহত্যা অভিযান শুরু হয় ২৫শে মার্চ রাতে ২৬শে মার্চ রাত আটটায় এ অভিযানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া এক দীর্ঘ ভাষণ দেন। তাতে তিনি আওয়ামী লীগ ও তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কত কাল্পনিক-কত আজগুবি অভিযােগ করেছিলেন, কিন্তু অবাঙালিদের হত্যার কোনও কথাই বলেন নি। আওয়ামী লীগ কর্মীরা যদি সত্য সত্যই লাখাে লাখাে অবাঙালিকে হত্যা করে থাকে তবে তা গােপন করে রাখার কি কারণ ইয়াহিয়া সাহেবের ছিল। বাঙালিরা ইয়াহিয়া সাহেবের চেয়ে কম মানব প্রেমিক নয় । ইয়াহিয়া সাহেব যদি সেদিন এ অভিযােগ তুলতেন এবং তা সত্য বলে প্রমাণিত হতাে তা হলে বাঙালিরাই রুখে দাঁড়াত কথিত খুনীদের বিরুদ্ধে। ইয়াহিয়া সাহেব যে তা জানেন না এমন নয়। | দ্বিতীয়ত নিজের নরমেধ যজ্ঞ অভিযানের যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য আধুনিক যুগের সীমার টিক্কা খান। বেতার ও টেলিভিশন ভাষণ দিয়েছেন। কিন্তু কই তিনিও তাে এ সম্পর্কে একটি কথা বললেন না।
সর্বোপরি, ২৫শে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রায় অর্ধশত বিদেশী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী | লীগ তাদের কারাে মাথা কিনেন নি বা সে ক্ষমতা কারাে নেই। আওয়ামী লীগের অসহযােগের সময় সংবাদ পত্রের উপর কোনাে বিধিনিষেধ ছিল না, বিদেশে সংবাদ প্রেরণের উপর ছিল না কোনও সেন্সরশিপ। তবু, কোন বিদেশী সাংবাদিকের প্রেরিত সংবাদে লাখাে লাখাে অবাঙালি হত্যার কাহিনীতাে দূরের কথা অনুরূপ কোন ঘটনার আভাসও তাে তারা দেন নি? সামরিক চক্রের কাল্পনিক দৃষ্টিতে বাংলাদেশের ঘটনাবলি অবলােকন করতে পারেন নি বলেই কি তাদের আনা হয় নি? আমাদের এসব অকাট্য যুক্তির পরও যদি সামরিক চক্রের অভিযােগ সম্পর্কে কারাে মনে কোনও সন্দেহ থাকে তা অপনােদনের জন্য আমরা ব্যাপারটা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক তদন্তের প্রস্তাব দিচ্ছি এবং তা গ্রহণের জন্য সামরিক চক্রকে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি। পরিশেষে বাংলাদেশে বসবাসকারী অবাঙালিদের প্রতি আমাদের দু’টো কথা। বিদ্রোহী মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের শাসন করার (Divide & rule) নীতি ঔপনিবেশিক শাসকরা সবদেশেই অনুসরণ করে থাকে। পিণ্ডির ঔপনিবেশিক শাসকগােষ্ঠী আজ সেই নীতিরই আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাঙালি অবাঙালির মধ্যে ভাষাগত সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের উপর তাদের শাসনের যাঁতাকল বহাল রাখতে চাচ্ছে। যাদের জন্য আজ তারা মায়া কান্না কাঁদছে এ ঘৃণা, মিথ্যা প্রচারণা যে দুদিন পরে তাদের সর্বনাশের কারণ হতে পারে, তা তারা আজ ভেবে দেখছে না। অবশ্য তা ভেবে দেখার প্রয়োজনও তাদের নেই। | পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদীদের লেলিয়ে দেয়া সেনা বাহিনীকে বাঙালি আজ যেভাবে রুখে দাড়িয়েছে তাতে বাংলাদেশ থেকে দু’দিন আগেই হােক আর দুদিন পরেই হােক তাদেরকে তল্লিতল্লা | গােটাতেই হবে। কিন্তু যাবার সময় তারা বাংলাদেশে বসবাসকারী অবাঙালিদের প্রতি তাকাবেও না। যেমনটি ঘটেছিল পাকিস্তান অর্জনের পর। ভারতের ১০ কোটি মুসলমান অধিবাসীর আবাসস্থল হিসাবে পাকিস্তান। অর্জন করে নেতারা যখন পাকিস্তানে পাড়ি জমালেন তখনও ভারতে পড়ে রইলাে সাড়ে ৩ কোটি মুসলমান। তাদের জন্য এতটুকু দরদও পাকিস্তানের স্রষ্টাদের অন্তরে জাগে নি। | সুতরাং, বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষকেই বাংলাদেশে থাকতে হবে। বাংলাদেশের সুখদুঃখের সমান ভাগী হতে হবে। এ প্রশ্নে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যই আমাদের শেষ কথা। তিনি বলেছেন বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ-সে যে ভাষায় কথা বলুক, তার আদি বাসস্থান বা ধর্ম যাই হােক সে বাঙালি। আমরাও বাংলাদেশে বসবাসকারী প্রতিটি মানুষকে আজ বঙ্গবন্ধুর এই কালজয়ী বাণীতে উদ্বুদ্ধ হওয়ার এবং তদানুযায়ী নিজেদেরকে বাঙালি স্বার্থের সাথে একাত্ম করার আহ্বান জানাচ্ছি। কোনও কারণে যদি কেউ আমাদের পক্ষে সক্রিয় সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে নাও পারেন অন্তত আমাদের বিরুদ্ধে কাজ না করার জন্য তাদেরকে আমরা অনুরােধ করবাে।
জয়বাংলা (১) ১:৩। ২৬ মে ১৯৭১
শান্তি, মানবতা ও স্বাধীনতার দাবী
পশ্চিম পাকিস্তানের জল্লাদগােষ্ঠী আজ এক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তির শাশ্বত অধিকার স্তব্ধ করতে গিয়ে আজ তারা চোখে সর্ষের ফুল দেখতে শুরু করেছে। ঘরে ভাত নেই, তুনে হাতিয়ার নেই আর থলেতে নেই পয়সা। বাস্ত ঘুঘুরা এ ভাবে যে ফাদে পড়বে তা তারা আগে ভাবতেই পারে নি। বার বার এই সব ঘুঘুর দল বাংলাদেশের ফসল খেয়ে গেছে। কিন্তু ফাদ কখনও দেখে নি। শুধুমাত্র প্রতিবাদ ও প্রস্তাবের মধ্যেই ছিল বাঙ্গালির প্রতিক্রিয়া সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাঙ্গালি আজ জেগেছে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ বাস্তঘুঘুদের সবংশে নির্ধন করতে ঝাপিয়ে পড়েছে। কোনও অত্যাচার, নির্যাতন, রাইফেল, মেশিনগান ও কামানের গুলিগােলা আজ তাদের স্তব্ধ করতে পারছে না। যুদ্ধ শুরুর পর দু’মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেল, কিন্তু বাস্ত ঘুঘুরা বাঙালিদের বশে আনতে পারে নি। বরং মরণজয়ী বাঙালি দিন দিন যুদ্ধকে তীব্রতর করে তুলছে।
বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রতিরােধ সংগ্রামে নাস্তানাবুদ হয়ে গণহত্যার নায়ক জল্লাদ ইয়াহিয়া দেশে দেশে দূত পাঠিয়েছে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। অর্থ দাও, অস্ত্র দাও, খাদ্য দাও আর বাঁচাও বাঁচাও বলে চীৎকার শুরু করে দিয়েছে। খুনী জল্লাদ-ভেজেনি। কেউ কেউ আবার বাংলা দেশ সমস্যার “রাজনৈতিক সমাধানের” (Political Settlement) নামে জল্লাদ গােষ্ঠীকে সাহায্য দানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। | বাংলাদেশ সমস্যার ‘রাজনৈতিক সমাধান” বলতে এঁরা কি বােঝাতে চাচ্ছেন না কি বুঝেছেন তা। আমাদের জানা নেই। রাজনৈতিক সমাধান বলতে তারা যদি বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা বুঝে থাকেন তাহলে তাতে আমাদের আপত্তি কিছু নেই। কেননা, সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালি আজ একমাত্র স্বাধীন। সার্বভৌম বাংলাদেশ ছাড়া আর কিছু বােঝে না এবং বুঝবেও না। কিন্তু রাজনৈতিক সমাধানের প্রবক্তারা এ ছাড়া যদি অন্য কিছু বুঝে থাকেন বা বােঝাতে চান, তাহলে তারা এক মারাত্মক ভুল করবেন। বুঝতে হবে। তারা বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের মন ও মানসের সতিকার খবর রাখেন না। এ প্রসঙ্গে তাদের। অবগতির জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের জনৈক মুখপাত্রের মন্তব্যের উল্লেখ করছি। তিনি এ ধরনের প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখান করে বলেছেন যে, একমাত্র পূর্ণ স্বাধীনতা ছাড়া বাঙ্গালি আজ আর অন্য কিছু শুনতে বা বুঝতে প্রস্তুত নয়। জয়বাংলা’র প্রথম সংখ্যায় আমরা লিখেছিলাম: “ইয়াহিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানী নেতাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও সেনা বাহিনীর নরঘাতী আক্রমণ বাঙ্গালিকে বাধ্য করছে অস্ত্র ধারণ করতে। স্বাধীন সরকার গঠন করতে। বাঙ্গালি আর কোনাে চক্রান্তের শিকারে পরিণত হতে চায় না। খুনের উত্তর খুন…….। রক্ত দিয়ে আমরা রক্তের বদলা নেবাে। বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নিয়েছে এক নতুন পতাকা। বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তরে পড়ছে লাল রক্তের দাগ। এ রক্তের কথা আমরা ভুলবাে না। বাঙ্গালিদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেবাে না।” আর “জয় বাংলার দ্বিতীয় সংখ্যায় আমরা লিখেছিলাম : “লাখাে শহীদের লাশের তলায়, লাখাে মায়ের তপ্ত অশ্রুর অতল তলে কবর হয়ে গেছে পাকিস্তানের। আমরা ঘােষণা করেছি। স্বাধীনতা। আমাদের সন্তানরা ধরেছে অস্ত্র। বহাচ্ছে খুনের বন্যা। আমরা লিপ্ত হয়েছি এক মরণপণ সংগ্রামেহয় স্বাধীন জাতি হিসাবে বাঁচবাে, না হয় মরবাে…।”
অতএব, আমাদের বক্তব্য অতি স্পষ্ট এবং দ্ব্যর্থহীন। বিশ্বের রাষ্ট্রবর্গের প্রতি আমাদের আবেদন, একটি জাতি হিসাবে বাঙ্গালিদের নিশ্চিহ্ন করতে আপনারা ইয়াহিয়া চক্রকে কোনও সাহায্য দেবেন না। দেবেন না, পাকিস্তানের নামে কোন সামরিক বা আর্থিক সাহায্য। কেন না, পাকিস্তান আজ আর বেঁচে নেই। বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘােষণা করেছে। এটা শুধু আমাদের আহ্বান মাত্র নয়, এটা শান্তি, প্রগতি ও বিশ্ব মানবতারও দাৰী। বিশ্বের কোনও মানবপ্রেমিক ও স্বাধীনতাকামী ব্যক্তি এ দাবী অগ্রাহ্য করতে পারেন না। | শান্তি, প্রগতি, মানবতা ও মানব স্বাধীনতার এ দাবী অগ্রাহ্য করে কোনও রাষ্ট্র যদি পশ্চিম পাকিস্তানের জঙ্গী চক্রকে সাহায্য দিতে এগিয়ে আসে তাদের উদ্দেশ্যে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে আমাদের জীবন-মরণের এ সংগ্রামে আমাদের দুষমনদের যারা সাহায্য করবেন তারা চিরকালের জন্য সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির প্রীতি, ভালােবাসা ও বন্ধুত্ব হারাবেন। | প্রসঙ্গত আমরা বাংলাদেশের সর্বস্বহারা মানুষের ত্রাণকার্যের বিষয়টাও পরিষ্কার করে দিতে চাই। আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ত্রাণকার্যের বিরােধী নই। বরং যতবেশি সাহায্য আমাদের মানুষ পেতে পারে তার। পক্ষপাতী। নরখাদক ইয়াহিয়া মাত্র সেদিনও বাংলাদেশে কোনও সাহায্যের প্রয়ােজন নেই বলে দাবী করেছে। এমন কি, আন্তর্জাতিক রেডক্রসের ত্রাণ ও সাহায্য সামগ্রী বােঝাই একখানা সুইস বিমানকে করাচী থেকে জেনেভায় ফেরৎ পাঠাতেও জল্লাদ ইয়াহিয়ার বিবেকে বাধে নি। অথচ আজ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের দুর্গত মানুষের নামে সাহায্য লাভের জন্যে তারা পাগল হয়ে উঠেছে। অতীত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে তাদের এ প্রচেষ্টাকে আমরা সন্দেহের চোখে না দেখে পারছি না। কেননা, ইতিপূর্বে বরিশাল, নােয়াখালী ও চট্টগ্রামের। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলােচ্ছাসের পর যে ত্রাণ সামগ্রী, নৌযান ও হেলিকপটার বিদেশ থেকে এসেছিল ইয়াহিয়া খানরা ওগুলাে সামরিক কাজে ব্যবহার করেছে। ত্রাণকার্য পরিচালনার জন্য প্রেরিত নৌযানগুলােকে রূপান্তিত করা হয়েছে গানবােটে আর হেলিকপটার গুলােকে ব্যবহার করা হয়েছে মুক্তিকামী
বাঙালির উপর বােমাবর্ষণের কাজে। ত্রাণ কার্যের জন্য যে কোটি কোটি টাকা বিদেশ থেকে এসেছিল তার একটা ফুটো পয়সাও বাংলাদেশে আসে নি। সবই রয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাঙ্কে এম, এস, আহমদের হেফাজতে। | তাই আমাদের দাবী কোনও ত্রাণ সামগ্রীই ইয়াহিয়া সরকারের হাতে দেয়া যাবে না। অথবা এ কাজের জন্য প্রেরিত কোনও নৌযান বা হেলিকপটার জঙ্গীশাসকচক্রের কর্তৃত্বে ন্যস্ত করা চলবে না। বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্বাধীনে আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও অনুরূপ অন্যান্য সংস্থার মাধ্যমেই পরিচালনা করতে হবে। এ ত্রাণকার্য।
জয়বাংলা (১) ১:৪ ০২ জুন ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০