You dont have javascript enabled! Please enable it!

সাম্রাজ্যবাদের বিষ দাঁত ভেঙ্গে দাও

(বিশেষ প্রতিনিধি)। মার্কিন সাম্রাজ্যেবাদের নগ্ন চেহারাটা বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের নিকট আরও পরিষ্কার হইয়া উঠিয়াছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ আরও নগ্নভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম দমনে নবঘাতক ইয়াহিয়ার পণ্ড জান্তার পাশে আসিয়া দাড়াইয়াছে। এক্ষণে তাহারা ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের একটি চক্রান্ত কার্যকরী করার জন্য উঠিয়া পড়িয়া লাগিয়াছে। অর্থাৎ একদিকে অন্ত্র ও ডলারের বন্যা বহাইয়াও যখন সাড়ে ৭কোটি বাঙ্গালীর মুক্তি সংগ্রাম দমনে ইয়াহিয়াকে সফল করা। সম্ভব হইলনা, ‘লুজ ফেডারেশন’, কনফেডারেশন’ প্রভৃতির প্রস্তাব ধােপে টিকিল না, তখন তাহারা নিজেদের পকেট হইতে আরও ডলার দান করিয়া হইলেও শরণার্থীদের ভারতেই স্থায়ী করিয়া ভারতকে, পর্যবেক্ষক মহলের মতে, শান্ত করার একটি তথাকথিত সম্ভাবনা দেখিতেছে। | বলা বাহুল্য, বাংলাদেশ ও ভারতের মানুষ ঘৃণাভরেই আমেরিকার এই নয়া চক্রান্তকে প্রত্যাখ্যান করিবে। ইহার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইবে। বাংলাদেশের মানুষ আজ রক্ত মূল্যে চিনিয়াছে যে, মার্কিণ সাম্রাজ্যবাদ তাহার শত্রু -তাহার জানি দুষমন। এই জানি দুষমন সম্প্রতি পাকিস্তানের সহিত আলাপ-সালাপ করিয়া পাকিস্তানের অনুমতিক্রমে বিশ্বকে ও খােদ আমেরিকার যুদ্ধ বিরােধী গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধোকা দেওয়ার জন্য এই মর্মে ঘােষণা করিয়াছে যে, পাকিস্তানের আর অস্ত্র দেওয়া হইবে না। কিন্তু একই সঙ্গে এই বর্বর যুদ্ধরাজ আবার সৌদী আরবও ইরানের মাধ্যমে পাকিস্তানকে জঙ্গী বিমান হইতে শুরু করিয়া সকল প্রকার বিষাক্ত মরনাস্ত্র সরবরাহ করিয়া চালিয়াছে বাংলাদেশে ইয়াহিয়া নরহত্যা চালাইয়া যাওয়ার জন্য।

খেলার এখানেই শেষ নহে। আমরা পূর্বে লিখিয়াছি যে, এই যুদ্ধবাজ আমেরিকান সরকার ভারতও। বাংলাদেশে বহু ছদ্মবেশধারী এজেন্ট ও রিলিফ সংস্থাকে পাঠাইয়াছি। ইহারা কেহ রিলিফ কাজের নামে, কেহ যুদ্ধের খবর সংগ্রহের নামে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও শরণার্থীদের মধ্যে মার্কিন সমর্থক না হইলেও “অ-মার্কিন-বিরােধী মনােভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নানা চক্রান্ত চালাইয়া যাইতেছে। কিন্তু একটা কথা আজ সংশ্লিষ্ট সকলকেই অনুধাবন করিতে হইবে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিতে না পারিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নহে। অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যদি সাহায্য ও মদত না দেয়, তাহা হইলে ইয়াহিয়ার মত ক্ষুদে শয়তানের পক্ষে এক সেকেন্ডও বাংলার মাটিতে থাকা সম্ভব নহে। বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ আজ মুক্তি সংগ্রামের সৈনিক। আমেরিকার অস্ত্রেই ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ছাড়খার হইয়াছে, শ্রমিক কৃষক ছাত্র বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হইয়াছে, সােনার বাংলার হাজার হাজার সবুজ গ্রাম আগুনে পুড়িয়া ছাই হইয়া গিয়াছে, লক্ষ লক্ষ সুখের সংসার নিশ্চিহ্ন হইয়াছে এক কোটি মানুষ ভারতে আশ্রয় লইয়াছে, ততােধিক মানুষ নিরাশ্রয় হইয়া পথে প্রান্তরে বনে জঙ্গলে ঘুরিতেছে- এক কথায় বাংলাদেশ আজ রক্ত গঙ্গা প্রবাহিত হইতেছে-বাংলাদেশ আজ জ্বলিতেছে। এমতাবস্থায় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিষ দাঁত ভাঙ্গিয়া দিতে যদি কাহারও মনে কোন বিভ্রান্তি থাকে বা কেহ যদি মনে ব্যথা পাইয়া থাকেন, সঠিক পথে আসার পূর্বে তিনি শুধু আত্মহত্যা করিয়াই বাঁচিতে পারেন-অন্যথা তাহার বাঁচার কোন পথ নাই । মনে রাখিতে হইবে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিষদাতকে ভাঙ্গিয়াই স্বাধীনতা আসিবে-অন্যভাবে নহে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদই হইল ইয়াহিয়ার মূল শক্তি। অনেকেই আশঙ্কা করিতেছেন যে ইয়াহিয়ার তথাকথিত বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত সম্পন্ন। হওয়া মাত্র মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ তথাকথিত গণতন্ত্র রক্ষার নামে বাংলাদেশে সশরীরে আসিয়া হাজির হইবেযেমনভাবে হাজির হইয়াছে ভিয়েনামে। অতএব, বাংলাদেশের সাড়ে কোটি মানুষকে আজ তাহার এই জানি। দুষমনের বিরুদ্ধে সমভাবে লড়িতে হইবে তাহার বিষদাত ভাঙ্গিয়া দিতে হইবে।

নতুন বাংলা ॥১:১৪ # ১৮ নভেম্বর ১৯৭১

আমেরিকার গােপন আঁতাত

(নিজস্ব ভাষ্যকার) মার্কিন সরকার পাক জঙ্গীশাহীকে অস্ত্র শস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করেছে বলে ঘােষণা করলেও এই ঘােষণার সত্যিকার মূল্য কতটুকু সে বিষয়ে নানা মহলে সন্দেহের সঞ্চার হয়েছে। সংবাদ পাওয়া গেছে এই ঘােষণার পরও মার্কিন সরকার ইরাণের মারফত পাক সরকারকে বেশ কিছু সংখ্যক জেট ফাইটার দিয়েছে। আর অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার ঘােষণাও সম্পূর্ণ স্পষ্ট নয়। | পাকিস্তানকে আধুনিক ধরণের অস্ত্রশস্ত্র বিমান সরবরাহের ব্যাপারে মার্কিনী সরকার অন্য কয়েকটি রাষ্ট্রকে গােপনে কাজে লাগিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য দেশ হলাে ইরাণ ও সৌদি আরব। যদিও মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে আর অস্ত্র সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে কিন্তু এই সাহায্য অন্য কোন দেশের মাধ্যমে গােপনে চলবে কিনা সে কথা ঘােষণায় বলা হয়নি।

খবরের সূত্রে আরও প্রকাশ পাক সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আলাপ আলােচনা শুরু করার জন্য মার্কিনীমহল গােপনে যে চেষ্টা চালাচ্ছিল আওয়ামী লীগ তা সরাসরি বাতিল করে দিয়েছেন। সংবাদে আরও প্রকাশ পাক সরকারের মুরব্বী মার্কিন সরকারের তরফ থেকে আলাপ আলােচনার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ। নেতৃবৃন্দ মােটেই পছন্দ করেন না। তাদের ধারণা আওয়ামী লীগ ও নেতাদের মধ্যে ফাটল ধরাবার এটা। একটা অপচেষ্টা মাত্র।

বাংলাদেশ (১) ১: ১২ ২২ নভেম্বর ১৯৭১

নিক্সনের বাংলাদেশ-নীতি হতবুদ্ধিকর

 -সাংবাদিক কেনেডি গত ১৬ই নভেম্বর বােম্বাইতে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে নান টাইমসূ’ এর সহযােগী সম্পাদক, মিষ্টার রবার্ট ই কেনেডি বলেন যে, বাংলাদেশ সম্পর্কে মার্কিণ প্রেসিডেন্টের নীতি তাঁর কাছে হতবুদ্ধিকর। তার ধারণা, প্রেসিডেন্ট নিক্সন সমস্যার প্রতি মনােযােগ দিচ্ছেন না। | সাংবাদিক কেনেডি আরও বলেছেন যে, মাকির্ন জনসাধারণের কোন ধারণাই নেই যে, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মােৎসর্গ করেই লড়ছে। আর একথাও সত্য যে, আগামী মাসগুলিতে মুক্তিবাহিনী আরও সাফল্য অর্জন করবে কিন্তু তাও মার্কিণ জনগণের অজানা। | সম্প্রতি সাংবাদিক কেনেড়ি পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে এসেছেন এবং তাঁর। ধারণা, পূর্ববঙ্গে ফিরে যাবার উপযােগী অবস্থা হলে প্রত্যেক শরণার্থীই দেশে ফিরে যাবেন।

ভারত শরণার্থীকে বসতি দেবার ব্যবস্থা করলে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র ভারতে বিস্তর সাহায্য দিতে রাজী বলে যে প্রচার চলছে সে সম্পর্কে সাংবাদিক কেনেডি মন্তব্য করেন, ‘কোন দেশের পক্ষেই অন্য দেশ থেকে আসা। এক কোটি শরণার্থীকে বসতি দেয়া সম্ভব নয়।’

জয়বাংলা (১) ১: ২১। ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

নিক্সনের প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস্

সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস্ -এর এক সম্পাদকীয় প্রবন্ধে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মার্কিণ নীতির কঠোর সমালােচনা করা হয় এবং সমস্যার সমাধানের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে  একটা বােঝাপড়া করানাের জন্য ইসলামাবাদের উপর মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও জোরদার করা দরকার বলে মন্তব্য করা হয়।  উক্ত সম্পাদকীয় প্রবন্ধে অভিযােগ করা হয় যে, ভারতও পাকিস্তানের সীমান্ত পরিস্থিতি আজ যে এমন সাংঘাতিক পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে তাতে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনেকখানি দায়ী। | উক্ত প্রবন্ধে আরাে বলা হয় যে, সম্প্রতি পাকিস্তানকে দেয় সামরিক সাহায্যের পরিমাণ কমানাের জন্য যে আদেশ দেওয়া হয়েছে সেটা খুবই নামমাত্র ব্যবস্থা। কেননা ইসলামাবাদের জঙ্গী শাসকদের অন্যান্য দ্রব্য সরবরাহ এবং আদর্শগত সমর্থন জানিয়ে যাবার যে সাংঘাতিক নীতি মার্কিণ প্রশাসন গ্রহণ করেছে তার ফলে। অবস্থার আরও অবনতি হবে।

জয়বাংলা (১) ১; ২৯ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

আমেরিকা এখন বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে চায়

২৬ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া চক্রকে বেশ ভালাে রকম সাহায্য করার পর নিকসন প্রশাসন যেমন একদিকে প্রকাশ্যে ভূট্টো সাহেবকে সমর্থন করে চলেছেন তেমনি আবার বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং তাঁদের পরিচিত বিদেশী বন্ধুদের সঙ্গেও যােগাযােগ স্থাপন করেছেন। নিকসন প্রশাসনের অভিলাষ, ঢাকা ইসলামাবাদের সঙ্গে। সামান্যতম যােগাযােগ অন্তত রাখুক এবং বাংলাদেশের সঙ্গে আমেরিকা যেন বাণিজ্যিক সংযােগ রক্ষা করতে পারে। এবং এর জন্য কিছুদিনের জন্য অন্তত আইনসম্মত স্বীকৃতি দেওয়া হবে। | এদিকে শ্রীমতী গান্ধী গত ২৪ ডিসেম্বর আমি বাংলায় সময়মত সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। এর থেকে রাশিয়া ও ব্রিটেন বুঝতে পেরেছে বাইরের থেকে ভারতের প্রতি কোন হুমকি এলে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এবং আমেরিকাই ইচ্ছাকৃতভাবেই রাশিয়াকে হয়ত সেই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবে। রাশিয়া আমেরিকা এবং চীনকে এমনভাবে সতর্ক করে দিয়েছে যে সেখানে ভুল বােঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই। কিন্তু ব্রিটেন এতটা তিক্ততার সঙ্গে কিছু করেনি যদিও উদ্দেশ্য একই। বাংলাদেশ এখন বুঝতে পেরেছে এখন দেশে ও বিদেশে সমস্ত মতভেদ ভুলে তাদের দেশ গড়ার কাজে মনােনিবেশ করতে হবে। তা না হলে ভূট্টো সাহেবের হাতই শুধু শক্ত হবে। ভূট্টোর সর্বশেষ নরম গরম বা বলা যেতে পারে দুধে জল মেশানাে বেতার ভাষণ থেকে বােঝা যায়…।

 বিপ্লবী বাংলাদেশ : ১: ১৯ ও ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ 

পিকিং বিশ্বাসঘাতক

ট্রটদ্ধীপন্থী চতুর্থ ইন্টারন্যাশনালের সক্রিয় সদস্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ছাত্রনেতা জনাব তাৰে “i বলেছেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে পিকিংয়ের ম; মিশন ঘাতকতা এবং মস্কোর নিষ্ক্রিয় অবিশ্বাসে ! রেখেই চতুর্থ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের প্রণাটি আলােচনা করছেন। এক মাত্র আন্তর্জাত্ত্বিক হিসেবে চতুর্থ ইন্টারন্যাশন্যাল নিঃশত্তে বাংলাদেশের মানুষকে সমর্থন জানাচ্ছে।

 তারেক আণির মতে ভূট্টা পয়লা নম্বরের প্রতিক্রিয়াশীল’ বলে তিনি মনে করেন । তিনি আরও | যে, তার দলের উর্দ মুখপত্র ‘জেহাদ’ তিনি পশ্চিত পাকিস্তানে পাচার করবেন। এবং এই সংস” সেখানকার গণ মানুষ বুঝতে পারবে যে, সংগ্রামের জন্য তৈরী না থাকলে ইয়াহিয়ার বর্বর নি। বাংলাদেশের মত তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়বে।

কানাডার অস্ত্র পদ্মা জাহাজে তােলা গেল না। মনটীল, ৩০ জুন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জন্য কিছু যন্ত্রাংশ করাচীতে ডেলিভারি দেবাৰ ৰা .aখ ।। যন্ত্রাংশ ‘পদ্মায় তােলার আগেই এই হ র হয়। কানাডা করে নির্দেশই ই ন ** ** হয়নি।

কানাড়া এ fণর মুখপাত্র বলেন, কানাডা সরকার পাকিস্তানকে আন্ত্র সহ অনির্দিষ্টকা। ‘তুষ্টি রাখার সিদ্ধান্ত নেয় এফ-৮৬ স্যাবার জেট জঙ্গী বিমানের জন্য ৪৬ টি বাক্স বােঝাই যন্ত্রাংশ আটক করা

এর আগে কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ মিচেল সার কানাডার কমনসভায় জানান পদ্মা জাহাজে যাতে কানাড়া থেকে কোন অস্ত্রশস্ত্র বােঝাই করা না হয় তার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকাশ ঐ জাহাজে পাকিস্তানের জন্য মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

স্বদেশ ১:২: ১৬ জুন ১৯৭১

বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন। | পূর্ববঙ্গ জুড়ে ভীতি, অনিশ্চয়তা, দুর্ভিক্ষের হাতছানি ওয়াশিংটন, ১৩ জুলাই-বিশ্ব ব্যাংক মিশনের এক গােপন প্রতিবেদনে পূর্ববঙ্গের অতি করুণ, ভয়াবহ ছবি ফুটে উঠেছে। ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনী ত্রাসের রাজ্য সৃষ্টি করেছে। সেখানকার মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত। সারা রাজ্যে দুর্ভিক্ষের করাল ছায়া। পরিবহন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ভেঙ্গে-পড়া অর্থনীতি আবার গড়ে তুলতে স্থানীয় প্রশাসন শােচনীয়ভাবে ব্যর্থ। সর্বত্র ভীতি ও অনিশ্চয়তা। মিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জুলুমে ওই অঞ্চলে এতই ব্যাপক ধ্বংসলীলা হয়েছে যে, অন্তত আগামী বছরে জন্য নতুন উন্নয়ন প্রচেষ্টা বন্ধ রাখতে হবে। রিপাের্টে বলা হয়েছেঃ বাংলাদেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে পাকসেনার সংখ্যা শুধু ভীষণভাবে কমালেই চলবে না, তাদের সরিয়ে নেওয়াই দরকার, আর দরকার অসামরিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

স্বদেশ । ১: ৩ ১৪ জুলাই ১৯৭১

বাংলাদেশে উন্নয়নের কাজ স্থগিত রাখতে বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশ

গােপন রিপাের্টে বাংলাদেশের ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ ও পাকিস্তানের তীব্র সমালােচনা নিউইয়র্ক, ১৩ই জুলাই (রয়টার) বাংলা দেশের অবস্থা দেখার জন্যে বিশ্ব ব্যাঙ্কের যে মিশন ওখানে গিয়েছিলেন, | সেই মিশনের এক রিপাের্ট ‘দি নিউইয়ক টাইমস’ প্রকাশ করেছেন। রিপাের্টের উপসংহারে বলা হয়েছে যে,

পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী কর্তৃক এই দেশের উপর দিয়ে এমন হত্যা, লুণ্ঠন ও অত্যাচারের ঝড় বয়ে। গেছে যে, কোন নতুন উন্নয়ন প্রচেষ্টা শুরু করার জন্য অন্ততঃ আগামী বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই অপূরণীয় ক্ষতি দূর করতে কোন সরকার সক্ষম হবে কিনা-তারা এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। | এই রিপাের্টে আরও বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের অপসারণ বা হ্রাস ও বে-সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে না। | রিপাের্টটির রাজনৈতিক দিক খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিশ্ব ব্যাংকের ডাইরেক্টর রবার্ট ম্যাকনামারা ও রিপাের্টটি গােপন রাখতে চেয়েছিলেন। তার ধারণা ছিল এই রিপাের্ট প্রকাশিত হ’লে পাকিস্তানকে সাহায্যকারী দেশগুলি তাকে আর সাহায্য দিবে না ও রিপাের্টটি সরাসরি পাকিস্তানের প্রতি বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনাস্থার প্রকাশ। কিন্তু এর কিছু অংশ ‘ওয়াশিংটন পােস্টে’ প্রকাশিত হবার পর রাজনৈতিক সমালােচনা…

বাংলাদেশ (১)১: ৯ ১৯ জুলাই ১৯৭১

পাক পরিস্থিতির তিক্ত সমালােচনা

লণ্ডন থেকে রয়টার পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্বন্ধে বিশ্ব ব্যাংকের রিপাের্ট তিক্ত সমালােচনা করা হয়েছে। এই রিপাের্টের অনুলিপি ব্যাংকের সকল একজিকিউটিভ ডিরেক্টরদের হাতে দেয়া হয়েছে।

জয়বাংলা (১)১:১১ ২৩ জুলাই ১৯৭১

বাংলাদেশের জন্যে পােপের উদ্বেগ প্রকাশ

খৃষ্টান জগতের ধর্মগুরু মহামান্য পােপ বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও স্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হতে হবে। কলকাতার আর্চবিশপ ফাদার পিয়ারে ফেলােনকে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাবার জন্য মহামান্য পােপের কাছে পাঠানাে হয়েছিলাে। | ভ্যাটিকান সিটি থেকে ফিরে ফাদার পিয়ারে বলেন, মহামান্য পােপ বলেছেন বাংলাদেশের জনগণ সত্য। ন্যায় ও স্বাধীনাতর জন্য যুদ্ধ করছেন। তাঁদের জয় হবেই। | ফাদার ফ্রান্স, হল্যাণ্ড, বেলজিয়াম, পশ্চিম জার্মানী, সুইজারল্যাণ্ড সফর করে সে সব দেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করেন। তিনি রেডিও, টেলিভিশন ও সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করেন এবং এসব প্রচার সংস্থার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও বর্বরতার চিত্র তুলে ধরেন। ফাদার ফেলােন বলেন, মহামান্য পােপ বাংলাদেশের অসহায় জনগণের দুঃখ দুর্দশায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সকলের কাজ করা উচিত।

জয়বাংলা (১)১:১৩৬ আগস্ট ১৯৭১

বাঙলাদেশের প্রতি পূর্ব জার্মানির সমর্থন

“পূর্ব বাঙলার জনগণের আশা-আকাঙ্খকে স্বীকার করিয়া নিয়াই কেবলমাত্র বাংলাদেশ প্রশ্নের রাজনীতিক সমাধান হইতে পারে” । পূর্ব জার্মানির তিন সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদল সম্প্রতি ভারত সফর শেষে নয়াদিল্লীতে এই দ্ব্যর্থহীন মন্তব্য করেন বলিয়া আকাশবাণীর খবরে জানা যায়। | প্রতিনিধি দল বাঙলাদেশে হইতে যাওয়া উদ্বাস্তুদের অবস্থা পরিদর্শন করার উদ্দেশ্য ভারত সফরে গিয়াছিলেন। | প্রতিনিধিদল বলেন, “আমরা শেখ মুজিবরের বিচার প্রহসনের নিন্দা করি এবং অবিলম্বে তাহার মুক্তি চাই” । তাহারা বলেন, গণতান্ত্রিক জার্মানি পাকিস্তানে কখনও অস্ত্র সরবরাহ করে নাই ভবিষ্যতেও করিবে না । 

উল্লেখযােগ্য যে, পশ্চিম জার্মানি, পাকিস্তানী সামরিক চক্রের অন্যতম প্রধান পৃষ্ঠপােষক। পক্ষান্তরে পূর্ব | জার্মানি প্রথমাবধি বাঙলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করিয়া আসিয়াছে।

মুক্তিযুদ্ধ। ১: ৮! ২৯ আগস্ট ১৯৭১

মুক্তি সংগ্রাম দমবার নয়

ডঃ হার্বাট ২৯শে আগষ্ট-ভারত, আমাদের ভারতীয় প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাচিত বিশ্বশান্তি পরিষদের সমর্থন জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রাম ব্যর্থ হতে পারেনা। এবং এ সংগ্রামকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবেনা । তিনি বিশ্বের সকল জাতিকে বঙ্গবন্ধুর প্রাণরক্ষা করতে সচেষ্ট হতে বলেছেন। মিঃ হাবটি ভারতীয় শরণার্থী শিবিরে হিন্দু মুসলমান, খ্রীষ্টানদের একসাথে অবস্থান করতে দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। বর্তমানে ইনি শরণার্থী শিবিরগুলি পরিদর্শন করছেন, সাথে রয়েছেন ইতালীয় পার্লামেন্টের সদস্য ডঃ কারলাে মুসা ইনভালদি।।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ! ১:৪ | ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম হতে দেওয়া উচিত নয়

গলব্রথ ।

(ভারতীয় প্রতিনিধি প্রেরিত) ১৪ই সেপ্টেম্বর, নয়াদিল্লী, ভারতের প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত অধ্যাপক জন কেনেথ গলব্রেথ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশকে আর একটি ভিয়েতনাম হতে দেওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে চাপ সৃষ্টি করলে তার দেশের মনােভাব ভিয়েতনামের মত পরিবর্তন হতে পারে। দেশে। ফিরে গিয়ে তিনি তার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবেন। তিনি শরণার্থীদের দেশে ফেরার ব্যাপারে বলেন, শরণার্থীর তাদের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানেক নিয়েই তবে দেশে ফেরবে।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ১: ৬/ ১০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বহু মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার আলােকে আঁদ্রে মালরাে বলছেন,..

যে কজন ফরাসী সাহিত্যিকের নাম আজ বিশ্ব জোড়া, আদ্রে মালরাে তার অন্যতম । মালরাের জীবন খুবই ঘটনা বহুল। মালরাে তার যৌবনে স্পেনের গৃহ যুদ্ধে যান। লড়াই করেন সাহসিকতার সঙ্গে ফ্রাঙ্কোর সেনাবাহিনীর সাথে। স্পেনের গৃহ যুদ্ধ শেষ হবার পর মালরাে যান চীনে। সেখানে চীনের পক্ষ নিয়ে লড়াই করেন বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে। তারপর চীন থেকে নিজে দেশে ফিরে অংশ নেন, নাৎসিবাহিনীর বিপক্ষে তার দেশবাসীর প্রতিরােধ সংগ্রামে। এই সংগ্রামের সময় তার পরিচয় হয় জেনারেল দ্যাগােল-এর কর্মধারার সাথে। মালরাে এর আগে ছিলেন বামপন্থি। কিন্তু এখন থেকে হয়ে ওঠেন দ্যাগলের ত স্বদেশ পন্থি। যার গােড়ার কথা হল, দেশের স্বাধীনতা ও ক্ষমতাকে বিলুপ্ত করে আন্তর্জাতিক অর্থ হন। জাতীয় রাষ্ট্র (Nation-State) আজকের পৃথিবীতে বিরাট রাজনৈতিক স্বত্তা। তাকে বাদ দিয়ে বিশ্বের রাজনীতির কথা, মানুষের মুক্তির কথা ভাবতে যাওয়া অবাস্তর। দ্যাগলের আমলে মালরাে মন্ত্রি হন। তার উপর ভার পড়ে সাংস্কৃতিক দপ্তরের। মালরাে-র নেতৃত্বে ফরাসী দেশের বিভিন্ন চিত্রশালারও মিউজিয়ামগুলি নব-জীবন লাভ করে। তার পৃষ্ঠপােষকতায় লিখিত হয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিল্পকলা সম্পর্কে আধুনিকতম জ্ঞানের উপর। ভিত্তি করে বহু খণ্ডের একাধিক গ্রন্থ। মালরাে-র মতে, মানুষের ইতিহাস বুঝাবার ক্ষেত্রে শিল্পের ইতিহাস অপরিহার্য। কারণ, শিল্পের মধ্যে ধরা পড়ে মানুষের চেতনা। শিল্পের মধ্যে সেই মানুষ গভীরভাবে জানতে পারে, অনুভব করতে পার নিজেকে। একটা সভ্যতাকে। মালরাে সাহিত্যিক। তার উপন্যাসের খ্যাতি জগত জোড়া। মালরাে শিল্পরসিক। মালরাে যােদ্ধা। 

*1-T! ‘আবার কাকনীতির সাথে থেকেছেন ওতপ্রােত ভাবে জড়িত। আর এই রাজনীতি কেবল তার নিজের দেশে নখ স্পেন (২ক চীন তার বাণ্ডী । ‘সাহিত্যিক মালরাে ভাই ব্যক্তি হিসাবেও স্থান করে নিতে পেরেছেন

‘t » মানুষের মনে । মালরে। এ যুগের একজন বিশিষ্ট শক্তিমান ৰওঁ ।

iii. t iণ সভা সাহিত্যিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে কতগুলি মূল্যবান মন্তব্য *.*? ওন | মধ্যে *লেছেনঃ বাংলাদেশের ঘটনা বিশ্বের করুণতম ঘটনাবলীর অন্যতম । কিন্তু বাঙালীদের

ঝ, দেশ পালন যুদ্ধ তাদের অস্তিত্ত্বর লড়াই। হয় তারা জাতি হিসাবে জিতবে, নয়ত চিরতরে বিলীন স) । “, “নন নিবেদনে কোন ফল হবে বলে মনে হয় না। বাঙালীকে তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে । এখন বাঙালীরা কেবল নির্ভর করতে পারে আত্ম সাহস ও রণ শক্তির উপর। অবশ্য মুক্ত

| সমরে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া উচিত হবে না বাঙালীদের। বর্তমানে তা সম্ভব ৮ দের উচিৎ হবে গেরিলা যুদ্ধই ভালভাবে চালিয়ে যাওয়া। বিদেশের কাছে গণতন্ত্র ও মানবতার নামে দরখাস্ত দাখিলের চাইতে বাঙালীদের আজ বেশী প্রয়ােজন, সামরিক সংগঠন। … বছর চল্লিশেক আগের অাগো-স্যাকসন উদার নৈতিক বিবেক এখন আর বাস্তব নয়। আপন ভােলা আমেরিকানদের শুভেচ্ছার উপর নির্ভর করতে যাওয়া হবে ভুল…”

লারে উপরের কথাগুলি লিখেছেন একটি চিঠিতে ভারতের বিখ্যাত নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ এর

খুন এপে মালরে আমেরিকার বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘টাইম’ এর একজন সাংবাদিককে বলেন? “”মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অচিরে এশিয়া ভূখণ্ডে একটি নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। সমস্যাটি হল,

দেশ। ভিয়েতনামের অনুরূপ রূপ নিয়ে দেখা দেবে এই সমস্যা। কিন্তু ভিয়েতনামের সাথে ব্যতিক্রম মাছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা ৭৮ মিলিয়ন। আর এই জনসংখ্যা মাওবাদ দ্বারা নয়, অনুপ্রাণীত

* F1 ল ল। আমেরিকানদের বাংলাদেশ সম্পর্কে বর্তমান শান্ত অচঞ্চল ভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে

শবপর এই উক্তির কোন ফল হয়নি বলেই সম্ভবত জয় প্রকাশের কাছে লিখিত চিঠিতে তিনি উল্লেখ না,দু, সভা করে আবেদন নিবেদন করবার নিস্ফলতার কথা। | বাঙালীরা আজ এক জীবন মরণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে । দূর বিদেশে বসে সংবেদনশীল সাহিত্যিক মন’- পক্ষে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না সেকথা। যুদ্ধ ও যুদ্ধ জয় ছাড়া বাঙালীর সম্মুখে আজ আর কোন শহ! খালা নেই !

জয়বাংলা (১)! ১: ২০৫ ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

“জাপানে বাংলাদেশ সম্পর্কে আন্দোলনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কূটচক্রান্ত চালাচ্ছে কলকাতা, ২৪শে সেপ্টেম্বর-বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম ব্যর্থ করে দেবার জন্য পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর নতুন চক্রান্তের সংবাদ এসেছে জাপান থেকে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে যে, জাপান-বনা শত্রী সমিতি গড়ে উঠেছে তার কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য টোকিওর পাকিস্তানী দূতাবাসের দশজন জাপানী কর্মীকে

শানী এজেন্ট হিসাবে নিয়ােগ করা হয়েছে বলে অভিযােগ করেছেন জাপান -বাংলা মৈত্রী সমিতির’র 1. নি অধ্যাপক শীওসী নারা।

| বাংলা ভাষার সাত তরুণ অধ্যাপক নারা আরও অভিযােগ করেন যে, জাপান বাংলা মৈত্রী সমিতি আয়ােজিত জাপানের জনসভা ভেঙ্গে দেবার জন্য টোকিওর পাক দূতাবাস বেশ কিছু সংখ্যক স্থায়ী ভাড়াটিয়া তাকে কাজে লাগাচ্ছে।

নেপান-বাংলা মৈত্রী সমিতির জরুরী বক্তব্যগুলি আড়ি পেতে টেপ করা ছাড়াও পাকিস্তান জাপানের ‘ননি :: জাপান-বাংলা মৈত্রী সমিতির সদস্য না হবার জন্য অনুরােধ জানিয়ে জাপানী ও ইংরেজী ভাষায় 

অধ্যাপক নারা আরও জানিয়েছেন যে, এছাড়া পাকিস্তানের অগ্রগতি সম্পর্কে রাজধানী টোকিওতে খুব ঘনঘন সেমিনার করা হচ্ছে। জাপান-বাংলা মৈত্রী সমিতির সদস্যরা পাক চক্রান্ত ব্যর্থ করে দেখার জন্য জাপানের শহরে-বন্দরে গ্রামে গঞ্জে ব্যাপক প্রচার অভিযান শুরু করেছেন। পাকিস্তানী অপকৌশলের নমুনা দিয়ে অধ্যাপক নারা বলেছেন, শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসক চক্র এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে পাক-জাপান মৈত্রী সমিতি স্থাপনের জন্য মরিয়া হয়ে লেগে পড়েছে।

সাপ্তাহিক বাংলা #১:২৫ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

ওমেগা দল পাক কর্তৃত্ব মানে না

(দিল্লী প্রতিনিধি)। নয়াদিল্লী ২৩ শে সেপ্টেম্বর “ওমেগা দল বাংলাদেশে পাকিস্তানের দখলকে মানেন না এবং তারা লক্ষ লক্ষ দুর্গত মানুষকে অবশ্যই সাহায্য করে যাবেন।” ওমেগা দলের মিসেস এলেন কনেট গত ২০ শে সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ সম্মেলনে এই তথ্য জানান। . উল্লেখযােগ্য যে, দুটি ওমেগা দলকে পাকিস্তানী দখলদার কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করলেও অপারেশন ওমেগা কয়েকবার বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে দুর্গত জনসাধারণের মধ্যে দুই টন পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বন্টন করেন। গত আগষ্ট মাস থেকে ঐ দলটি ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন।

সাপ্তাহিক বাংলা ১; ২ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বাঙলাদেশের সংগ্রামী জনগণের সহিত আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সংহতি জ্ঞাপন

(বিশেষ প্রতিনিধি) বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের দৃঢ় সমর্থন ও সংহতি ভারতের। কমিউনিস্ট পার্টির নবম কংগ্রেসের মধ্য দিয়া পরিষ্কাররূপে ফুটিয়া উঠিয়াছে। কংগ্রেসে গৃহীতব্য সি পি আই জাতীয় কাউন্সিলের রাজনৈতিক রিপাের্ট ও খসড়া প্রস্তাবে বাঙলাদেশের সংগ্রামের প্রতি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সর্বাত্মক সমর্থন পুনরায় ঘােষণা করা হয়। ইহা ছাড়া কংগ্রেসে যােগদানকারী সােভিয়েত ইউনিয়ন, গ্রেট বৃটেন, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া গণতান্ত্রিক জার্মানি, হাঙ্গেরী প্রভৃতি বহু দেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদল তাহাদের ভাষণে বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও সংগ্রামী জনগণের সহিত সংহতি জ্ঞাপন করেন। বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলকে যেরূপ বীরােচিত সম্মান দেওয়া হয় উহার মধ্য দিয়া বাঙলাদেশের সংগ্রামের উচ্চ মূল্যায়নের আন্তরিক অভিব্যক্তিই প্রকাশ পাইয়াছে।  ভারতের কেরালা রাজ্যের ঘাটে নগরে (কোচিন) গত ৩রা অক্টোবর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির এই গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস শুরু হয় । ১৫ই অক্টোবর কংগ্রেস সমাপ্ত হইবে। বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড আবদুস সালামের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এই কংগ্রেসে যােগ দিয়াছেন। ইহা ছাড়াও আরও বিশটি বিদেশী ভ্রাতৃসুলভ পার্টির প্রতিনিধিবর্গ এই কংগ্রেসে অংশ গ্রহণ করিতেছেন।

কমরেড সালাম বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড আবদুস সালাম কংগ্রেসের প্রতিনিধি, দর্শক ও অতিথিদের তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে বাঙলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের পটভূমি ও প্রগতিশীল চরিত্র ব্যাখ্যা করেন। তিনি এই সংগ্রামকে জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আদায়ের ন্যায্য লড়াই বলিয়া অভিহিত করেন এবং আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট ও শ্রমিক আন্দোলন এবং পৃথিবীর সকল প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে ইহার সমর্থনে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াইবার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। কমরেড সালাম বাঙলাদেশের শ্রমিক কৃষক মেহনতী মানুষের আন্দোলনে কমিউনিস্ট পার্টির অগ্রণী ভূমিকার কথা উল্লেখ করিয়া বলেন, সাম্প্রদায়িকতা, স্বৈরাচারী শাসন ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের সংগ্রামে কমিউনিস্ট পার্টি সর্বদা সর্ব-অবস্থায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিয়াছে। বর্তমান স্বাধীনতার লড়াইয়েও কমিউনিস্ট পার্টি অন্যান্য সংগ্রামী শক্তির সহিত কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া অস্ত্র হাতে লড়াই করিতেছে। | কমরেড সালাম বাঙলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির একটি অভিনন্দন বাণী ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টির হাতে অর্পণ করেন। অভিনন্দন বাণীতে বাংলাদেশের পার্শ্বে সর্বশক্তি লইয়া দাড়াইবার জন্য ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি, সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ও ভারতের জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান হয় । উহাতে বলা হয় ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি সর্বহারার আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রতি আনুগত্যের উজ্জ্বল ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছে। কমরেড সালাম তাঁহার ভাষণের উপসংহারে বলেন, আমরা জানি বাঙলাদেশের সংগ্রাম কঠিন ও কঠোর। বাঙলাদেশের জনগণ এই কঠোর সংগ্রামের মধ্যে দিয়াই জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারও স্বাধীনতা কায়েম করিবেন। বিজয় আমাদের অনিবার্য। সােভিয়েত প্রতিনিধি।

সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড দীন মােহাম্মদ কুনায়েভ বাংলাদেশের নিপীড়িত জনগণের প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করিয়া বলেন, সােভিয়েত ইউনিয়ন প্রথমাবধি ইয়াহিয়ার সামরিক সরকারের নির্যাতন ও দমননীতির বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সহিত প্রতিবাদ জানাইয়াছে এবং পূর্ব বাংলার জনগণের ইচ্ছা ও অলঙ্খনীয় অধিকারের ভিত্তিতে সমস্যাটির রাজনৈতিক সমাধান দাবি করিয়াছে।  ফরাসী পার্টির সমর্থন ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি দলের নেতা কমরেড গাই বেসসি তুমুল হর্ষধ্বনির মধ্যে ঘােষণা করেন। যে, বাঙলাদেশের জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের বিজয় সম্পর্কে তাঁহাদের পার্টির বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি পুরাপুরিভাবে বাংলাদেশের সংগ্রামের পক্ষে। ফরাসী কমিউনিস্ট পার্টি ফ্রান্সের এক-চতুর্থাংশ ভােটদাতার আস্থাভাজন বিধায় তাহাদের পার্টির মাধ্যমে ফ্রান্সের অন্তত এক চতুর্থাংশ জনসংখ্যা বাঙলাদেশের সংগ্রামের সমর্থনে ঐক্যবদ্ধ। তিনি দৃঢ়তার সহিত ঘােষণা করেন যে, জনগণের আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতির ভিত্তিতেই এই সমস্যার সমাধান করিতে হইবে। হাঙ্গেরী হাঙ্গেরীর প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড আন্দ্রে গাইনেস ইসলামাবাদের জঙ্গী শাসকদের বর্বর নির্যাতনের নিন্দা করিয়া বলেন, কেবলমাত্র জাতীয় গণতান্ত্রিক বিধি ও মানবিক অধিকার মানিয়া নেওয়ার মধ্য দিয়াই বাঙলাদেশ সমস্যার সমাধান সম্ভব। গণতান্ত্রিক জার্মানি। গণতান্ত্রিক জার্মানির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড অ্যালবার্ট নর্ডন বাঙলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি দাবী করেন। ভ্রাতৃত্বমূলক সংহতি পশ্চিম জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড কুর্ট অরেকন বাঙলাদেশের সংগ্রামী জনগণের সহিত ভ্রাতৃত্বমূলক সংহতি জ্ঞাপন করেন।  ন্যায্য সংগ্রাম। বৃটিশ কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের নেতা কমরেড উইলিয়াম ওয়েনরাইট বাঙলাদেশের আন্দোলনকে ন্যায় সংগ্রাম’ বলিয়া অভিহিত করেন। এই রিপাের্ট লেখার সময় পর্যন্ত অন্যান্য দেশের ভ্রাতৃপ্রতিম পার্টিগুলির প্রতিনিধিদের বক্তব্য জানা যায় নাই।

মুক্তিযুদ্ধ ! ১: ১৪ ১০ অক্টোবর ১৯৭১

বাংলাদেশের যুদ্ধ জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ

বিশ্বশান্তি পরিষদ মস্কো ১২ই অক্টোবর গতকাল হেলিসিংকি থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, বিশ্ব শান্তি পরিষদের সেকরেটারিয়েট বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রামকে একটি জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ বলে বর্ণনা করেছেন।

৪৫০ টি শব্দ সম্বলিত এই বিবৃতিকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে মুক্তির পথ অনুসরণ করতে বলা হয়। তারা বলেন ইয়াহিয়া খান যেন শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দেন এবং বাংলাদেশের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করেন।

বাংলাদেশ (১)১:১৬ ১১ অক্টোবর ১৯৭১

কানাডা কি বলে?

কানাডার পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ মিচেল শার্প বলেছেন, পূর্ববাংলা সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের কোনাে সম্ভাবনা তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। কমন্স সভার বৈদেশিক কমিটির এক বৈঠকে মিঃ শার্প বলেন, ক্রমাগত শরণার্থী আগমনের মধ্যে তিনি উদ্ভুত সমস্যাটার নিষ্পত্তির কোনাে পথ দেখতে পাচ্ছেন না। মিঃ শার্প আরাে বলেন, উহা ভারতের অর্থনীতির ওপর দারুণ চাপ সৃষ্টি করছে। শরণার্থীদের সংখ্যা সম্পর্কে ভারতও পাকিস্তানের ভিন্ন মত থাকলেও এতে সন্দেহ নেই যে একটা দারুণ অসহনীয় অবস্থার মধ্যে পড়েই শরণার্থীরা ভারতে আশ্রয় চেয়েছেন।

মুক্তবাংলা (১)১; ৪। ১১ অক্টোবর ১৯৭১

ওমেগার দুইজন সদস্য দন্ডিত

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ত্রান প্রতিষ্ঠান অপারেশন ওমাগার দুইজন সদস্য অধিকৃত বাংলাদেশে ত্রান সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী তাদেরকে গ্রেপ্তার করে জেল খানায় আটক রাখে।

রয়টারের এক খবরের প্রকাশ ঐ দুইজন ওমেগা সদস্যকে মিলেটারী জান্তার বিচারে দুই বৎসর করে কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। লন্ডনের বহু পত্রিকায় এই সংবাদ ছাপা হয়। তাহারা পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম অত্যাচারে সর্বহারা বাঙ্গালীদের মধ্যে ঐ সমস্ত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করার জন্য এসেছিলেন।

জাগ্রত বাংলা : ৪। ১৪ অক্টোবর ১৯৭১

বাঙলাদেশের সংগ্রামের প্রতি উত্তর ভিয়েতনামের সমর্থন

কন্সাল জেনারেল নগুয়েন আন ভুর ঘােষণা। ভিয়েতনাম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের কসাল জেনারেল নগুয়েন আন ভূ-বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি তার সরকারের এবং ভিয়েতনামী জনগণের সহানুভূতির কথা ঘােষণা করেছেন। | মিঃ আন ভূ বলেন, ভিয়েতনামী জনগণ জাতীয় স্বাধীনতা ও উন্নততর জীবনের জন্য সমস্ত সংগ্রামকে সমর্থন করেন।

বিপ্লবি বাংলাদেশ ১; ৯ ১৭ অক্টোবর ১৯৭১ 

আন্তর্জাতিক কমুনিটি সমস্যা সমাধানে ব্রতী না হলে। বাংলাদেশ প্রশ্নে পাক-ভারত যুদ্ধ অনিবার্য

| আল্ আহরাম। কায়রাের আধা-সরকারী সংবাদপত্র ‘আল-আহরাম’ এক বিশেষ নিবন্ধে এই মর্মে সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেন যে আন্তর্জাতিক কমুনিটি অবিলম্বে প্রতিরােধে অগ্রসর না হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। | পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক ডঃ ক্লোভিস মকসুদ নিজ নামে এই নিবন্ধটি লিখেন। তিনি সম্প্রতি নয়। দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাংলদেশ সম্পর্কিত আন্তজার্তিক সম্মেলনে যােগদান করেছিলেন। নিবন্ধে ডক্টর মকসুদ বাংলাদেশ সঙ্কটের একটা রাজনৈতিক সমাধানের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন যাতে ভারত থেকে শরণার্থীরা পূর্ণ নিরাপত্তাবােধ নিয়ে স্বদেশে ফিরতে পারে।

কায়রাের সংবাদ পত্রগুলোতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রশ্নে যে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে তন্মধ্যে সম্ভবত ঃ ডক্টর মকসুদই সর্ব প্রথম একটা স্পষ্ট মনােভাব প্রকাশ করেছেন। নিবন্ধে ডঃ মকসুদ বাংলাদেশ সঙ্কটের একটা রাজনৈতিক সমাধানকে উৎসাহীত করার জন্য আরবদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। | রাজনৈতিক সমাধান বলতে তিনি কি বুঝেন ডঃ মকসুদ তাও পরিষ্কার করে বলেছেন। তিনি বলেন যে, এ প্রশ্নে প্রথম যে করণীয় তা হচ্ছে অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের। নির্বাচনের বৈধতার ফিরে যাওয়া। তিনি বলেন, আমরা যদি পূর্ণ, সার্বিকও সমান অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তানীদের জাতীয় ঐক্য। বজায় রাখতে চাই তাহলে এটাই একমাত্র পয়েন্ট যেখান থেকে আমরা ও সারা বিশ্ব আমাদের নৈতিক ও রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের যাত্রা শুরু করতে পারি। বিশ্ব শান্তি পরিষদ ইত্যবসরে বিশ্ব শান্তি পরিষদ হেলসেন্ধিতে প্রদত্ত এক আবেদনে বাংলাদেশের সশস্ত্র সংগ্রামকে “জাতীয় মুক্তি যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন।  আবেদনে বলা হয় যে, ভারতের সংযম সর্বত্র প্রশংসা লাভ করলেও পাশ্চাত্য জগত সমস্যার মৌলিক বিষয়গুলােকে এড়িয়ে গেছে।

৪৫০ শব্দ বিশিষ্ট এই আবেদনে বিলম্বে হলেও যুক্তির ভাষা অনুধাবন করে শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তিদান এবং সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধানে ব্রতী হওয়ার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়াকে অনুরােধ করা সমগ্র আবেদনের একটি জায়গা ছাড়া অন্য সবখানে পরিষদ বাংলাদেশ’ কথাটি ব্যবহার করেছেন। সেই জায়গাতেও অবশ্য পূর্ব পাকিস্তান কথাটির পাশে বন্ধনীতে ‘বাংলাদেশ’ ব্যবহার করা হয়েছে।  বিশ্ব শান্তি পরিষদের এই আবেদনে বলা হয় যে, বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীর অবিসম্বাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কারান্তরালে থাকা পর্যন্ত শরণার্থীদের সসম্মানে ও পূর্ণ নিরাপত্তা সহকারে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টা স্বপ্নই থেকে যাবে।

জয়বাংলা (১): ১: ২৪ ২ অক্টোবর ১৯৭১

 

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!