পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিতে নাটকীয় মােড় পরিবর্তন ইয়াহিয়ার পতন ভুট্টোর মঞ্চে প্রবেশ ও প্রতিশােধ গ্রহণের শাসানি
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) পাকিস্তানের রাজনীতির এক নাটকীয় মােট পবিরর্তনের ফলে ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার পতন ঘটিয়াছে এবং “পিপলস” পার্টির নেতা লারকানার নবাবজাদা ভূট্টো পাকিস্তানের নয়া প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক সেনা প্রধান পরিচালক নিযুক্ত হইয়াছেন। | ভারতের সহিত দুই সপ্তাহের যুদ্ধে পাকিস্তানের শােচনীয় পরাজয় এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্র ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত আক্রমণে বাঙলাদেশে পাক জঙ্গীশাহীর কতৃত্ব লােপ পাইয়া স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রের উদ্ভবের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানে ইয়াহিয়া-চক্রের পদচ্যুতি ও প্রকাশ্য বিচারের দাবিতে প্রবল জনমত সৃষ্টি হয়। উহারই ফলশ্রুতিতে এই নাটকীয় পরিবর্তন। পাক জঙ্গীশাহী নির্জলা মিথ্যা প্রচারের দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণকে এরূপভাবে বিভ্রান্ত করিয়া রাখিয়াছিল যে, বাঙলা দেশে পৌণে এক লক্ষ পাক সেনার আত্মসমর্পণের খবর শুনিয়া তাহারা স্তম্ভিত হইয়া পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে যুদ্ধ বিরতি ঘােষণার পরই জনসাধারণ প্রকৃত অবস্থা বুঝিতে পারে এবং তীব্র বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে। গণবিক্ষোভের সামনে ইয়াহিয়া খান পদত্যাগ করে এবং ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক শাসন পরিচালক নিযুক্ত হয়। পঙ্গপ্রায় বৃদ্ধ বাঙ্গালী দালাল নূরুল আমীন ভাইস প্রেসিডেন্ট নিযুক্ত হইয়াছে। ভূটো জেনারেল হামিদ, পীরজাদা, ওমর প্রভৃতি ছয় জন জেনারেলকে বরখাস্ত করিয়াছে এবং লে. জেনারেল গুল হাসানকে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করিয়াছে। এদিকে সীমান্ত প্রদেশ সিন্ধু ও পাঞ্জাবের সামরিক গভর্নরদিগকে বরখাস্ত করিয়া ভূট্টো স্বদলীয় লােকদের নিযুক্ত করিয়াছে। রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের অব্যবহিত পর এক বেতার ভাষণে ভূটো পাকিস্তানের দুর্দশার জন্য সামরিক চক্রকে দায়ী করে এবং ভারতের বিরুদ্ধে এই শােচনীয় পরাজয়ের প্রতিশােধ গ্রহণের সঙ্কল্প ঘােষণা করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ভুট্টো উগ্র ভারত-বিরােধীতার বস্তা পচা নীতিকেই সম্বল করিতে চাহিতেছে।
ভূট্টো দাবি করে যে, “পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীঘ্যই একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কথাও সে ঘােষণা করিয়াছে। | ভূট্টোর নাটকীয় উত্থানের চমক যতই হউক না কেন, পর্যবেক্ষকদের মতে পাকিস্তানের মৌলিক নীতির আশু পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাই বলিলেই চলে। ভূট্টো গণতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক সরকার কায়েমের পরিবর্তে সামরিক ডিক্টেটরশীপের স্থলে সামরিক বাহিনীর একাংশের সমর্থণক্রমে অসামরিক ডিক্টেটরশীপ চালু করার চেষ্টা করিতেছে। শাসকশ্রেণীও ইয়াহিয়াকে বলির পাঠা করিয়া ভূট্টোর মারফত নিজেদের সঙ্কীর্ণ শ্রেণীস্বার্থ বজায় রাখার জন্য সচেষ্ট। পর্যবেক্ষকদের মতে, গত নয়মাসের ঘটনাবলীর জন্য ইয়াহিয়ার ন্যায় ভূট্টোও সমপরিমাণে দায়ী। কাজেই ইয়াহিয়ার যদি বিচার হয় তাহা হইলে ভূট্টোর হওয়া উচিত। পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থে কেন্দ্রে ও প্রদেশগুলিতে অবিলম্বে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তিদান ও বাঙলাদেশের বাস্তবতাকে স্বীকার করিয়া নেওয়া এবং ভারতবিরােধীতার বন্ধ্যা নীতি পরিত্যাগ করা দরকার। কিন্তু ভূট্টো সরকার সেদিকে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে নতুন বােতলে পুরাতন মদ পরিবেশনের নীতিই গ্রহণ করিতে যাইতেছে ।
মুক্তিযুদ্ধ। ১: ২৫ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
দুনিয়াকে বিভ্রান্ত করার পাকিস্তানী নির্দেশ
বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র, সেক্রেটারী মি: এম,এম, কাজিম সি, এস, পি এর বিগত ১৬।১০।৭১ ইং তারিখের এক সার্কুলার আমাদের হস্তগত হয়েছে। ঐ নির্দেশ নামায় স্বরাষ্ট্র সেক্রেটারী তার অধীনস্ত সকল বিভাগকে ‘Rebels’ বিদ্রোহী, মুক্তি বাহিনী, মুক্তিফৌজ, মুক্তি সেনা শব্দগুলাের স্থলে । (enemies) ‘শত্রু’ নামে উল্লেখ করার এবং ভারত’ কথাটার স্থলে ‘হিন্দুস্তান’ শব্দ সকল ব্যাপারে ব্যবহার করার নির্দেশ জারি করিয়াছেন।
মুক্তবাংলা । ১:১০ ১২ অগ্রহায়ণ ১৩৭৮
জঙ্গীশাহীর প্রতি নিন্দা প্রস্তাব
মুক্তনগর ও খবরে প্রকাশ যে, বাংলাদেশে পাকসামরিক সরকারের গণহত্যার নিন্দা করে ভারত আন্ত:সংসদীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলে একটি প্রস্তাব করেছে। ভারতের লােকসভার স্পীকার শ্রী জে, এস, ধীলন এই প্রস্তাবটি পেশ করেন। বৃটেন ও সােভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও বাংলা দেশে পাক জঙ্গীশাহীর কাৰ্যকলাপের তীব্র সমালােচনা করে বলে খবরে প্রকাশ।
বাংলার কথা। ১; ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ভারত-রাশিয়া মৈত্রী চুক্তি বাঙলাদেশ সরকারের অভিনন্দন জ্ঞাপন
(নিজস্ব প্রতিনিধি) গত ৯ই আগস্টে নয়াদিল্লীতে ভারত ও সােভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে এক শান্তি মৈত্রী ও সহযােগিতা চুক্তি (প্রতিরক্ষা ধারা সম্বলিত) সম্পাদিত হয়েছে। সােভিয়েত রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ গ্রোমিকোর ভারত সফরকালে উভয় পক্ষের মধ্যে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও চীনের প্রদত্ত অস্ত্রশস্ত্রে পুষ্ট পাক জঙ্গীশাহী যখন বাঙলাদেশের ব্যাপক গণহত্যা চালাচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভারতের প্রতি যুদ্ধের হুমকী দিচ্ছে-ঠিক সেই সময়ে এই মৈত্রী চুক্তি সম্পাদন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং এই মৈত্রীচুক্তি পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর যুদ্ধের লালসাকে অনেক খানি স্তব্ধ করবে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। ভারত-সােভিয়েত মৈত্রীচুক্তি সম্পাদনের পর পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীর রক্তাক্ত হাতকে সাহায্যকারী দুটি রাষ্ট্র আমেরিকা এবং চীন সরকারীভাবে এখন পর্যন্ত নীরব। অপরদিকে বাঙলাদেশ সরকার এই চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভারতের কমিউনিষ্ট পার্টি (সি,পি, আই) সহ ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জনগণ এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছে।
বস্তুত ভারত-রাশিয়ার এই চুক্তি শুধু মাত্র পাক-ভারত উপমহাদেশেই উত্তেজনা প্রশমিত করবে তা নয়, বিশ্বের বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশে শান্তি স্থাপনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমেরিকায় একজন ভারতীয় প্রতিনিধি শ্রী এল, কে, সা চুক্তি সম্পর্কিত এক প্রশ্নোত্তরে জানান রুশ ভূমিকা শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী।
বাংলাদেশ ১:২ ৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ভারত-নেপাল মতৈক্য
কাঠমধু, ৫ই সেপ্টেম্বর-ভারতের বহির্বিষয়ক মন্ত্রী স্বরণ সিংহ এবং নেপালের প্রধানমন্ত্রী কীতিনিধির মধ্যে আলােচনার ফলে ভারত-নেপাল যুক্ত ইস্তাহার প্রকাশ করা হয় তাতে দুটি দেশই বাংলাদেশের শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার মত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির উপর গুরুত্ব আরােপ করেছে এবং সেই পরিবেশ গড়ে তােলার প্রয়ােজন বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। বিভিন্ন দিক থেকে দুটি দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে বিস্তৃত আলােচনা হয়েছে। এই উদ্যোগে উভয় দেশের সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখা ও সৌহাৰ্য্য বৃদ্ধি ব্যাপারে সহায়ক হবে।
জন্মভূমি।১: ৭ ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশের প্রশ্নে ঃ “চুড়ান্ত মুহূর্ত এসে গেছে -ইন্দিরা
(জন্মভূমির কলকাতাস্থ প্রতিনিধি) কলকাতা, ৫ই সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী গত মঙ্গলবার স্পষ্টভাবে ঘােষণা করেছেন, বাংলাদেশের ব্যাপারে চূড়ান্ত মুহূর্ত’ এখন প্রায় এসে গিয়েছে। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলােচনার সময় তিনি এই কথা প্রকাশ করেন। সম্প্রতি ইসলামপুরে দারভিটায় শরণার্থীদের এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, বাংলাদেশে “মুক্তিবাহিনী যে ভাবে ত্যাগ স্বীকার করছেন তাতে তাদের জয় হবেই। তিনি শরণার্থীদের বলেন, “যে দিন আপনারা নিরাপদে দেশে ফিরতে পারবেন, সেদিই আপনাদের ফেরত পাঠানাে হবে। তবে কবে নাগাদ শরণার্থীরা দেশে ফিরতে পারবেন, সে সম্পর্কে এখনই তিনি কিছু বলতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে ভারত সরকার আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি শুরু করেছেন।
জন্মভূমি ।১; ৭ ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
যুদ্ধের মালপত্র খালাস করতে অস্বীকার। বােম্বাই, ৩রা সেপ্টেম্বর আন্তজার্তিক পরিবহণ শ্রমিক সভা বিশ্বের সমস্ত নাবিক ও ডক শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে এক নির্দেশ পত্র প্রকাশের মাধ্যমে আবেদন করেছেন যে, তারা যেন সাধ্যমত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য প্রেরিত যুদ্ধের মালপত্র বহন এবং খালাস করতে অস্বীকার করেন। ভারতের জাতীয় নাবিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিঃ লিও বার্নেসের নিকট থেকে এই নির্দেশপত্র সম্পর্কে জানা গেছে।
জন্মভূমি।১: ৭ ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশকে দমানাে যাবে না
শ্ৰীমতী ইন্দিরা গান্ধী।
(ভারতীয় প্রতিনিধি প্রেরিত) জম্মু, ৬ই সেপ্টেম্বর প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সীমান্ত শহর রাজৌরীতে এক বিরাট জনসমাবেশে তেজদৃপ্ত ভাষণে বলেন, পাক ও জঙ্গীশাহী বাংলাদেশে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। তিনি বলেন জনগণের দাবী কোনদিন কোন সরকার দাবিয়ে রাখতে পারেনি। পৃথিবীর ইতিহাস তার সাক্ষ্য দেয়। বাংলাদেশে যা। ঘটেছে তাতে আমরা দর্শক হয়ে থাকতে পারি না। বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রকারান্তরে আমাদেরও ব্যাপার; যেহেতু ৮০ লক্ষ শরণার্থী আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি আরাে বলেছেন, যদি পাকিস্তান আমাদের আক্রমণ করে তবে আমাদের দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী তার সমুচিত জবাব দিতে সর্বদা প্রস্তুত আছে।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ১:৫। ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
ভারতসহ কয়েকটি রাষ্ট্র শীঘ্রই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন
বাংলাদেশের মন্ত্রীদের সঙ্গে কল-এর বৈঠক। ৭ই সেপ্টেম্বর মুজিবনগর- আজ মুজিবনগরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্ৰী টি এন কল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দিন আহম্মদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী খােন্দকার মােস্তাক আহম্মদের সঙ্গে দুটি বৈঠকে মিলিত হন। জানা গেছে বাংলাদেশে নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বাংলাদেশের স্বীকৃতি ও পূনর্গঠন সম্পর্কে আলােচনা হয়। | নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে শ্রীকল দিল্লীতে ফিরে গিয়ে প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নিকট একটি রিপাের্ট দেবেন। ওয়াকিবহাল মহল থেকে জানা যায় ভারত সরকার খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেবেন। বিশ্বস্তসূত্রে জানা গেছে, ভারতের স্বীকৃতি দেবার সঙ্গে সঙ্গে আরাে কয়েকটি রাষ্ট্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবেন।
বিপ্লবী বাংলাদেশ ।১:৫১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
বাংলাদেশ নিয়ে সর্বভারতীয় সম্মেলন
(ভারতী প্রতিনিধি প্রেরিত)। নয়াদিল্লী, ৮ই সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি ভারতের জনগণের ও বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রচেষ্টায় আগামী ১১ ই সেপ্টেম্বর দু’দিনব্যাপী এক সর্বভারতীয় সম্মেলনের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সম্মেলনের সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থমন্ত্রী শ্রীউমাশঙ্কর দীক্ষিত। বিপ্লবী বাংলাদেশ ১; ৬।
১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
সাংবাদিক সম্মেলনে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ নিয়ে ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলােচনা চাই না
(নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত)। ১৯শে অক্টোবর আজ এখানে বিজ্ঞান ভবনে এক বৃহৎ সাংবাদিক সম্মেলন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী প্রশ্নোত্তর প্রসঙ্গে বলেন, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের দুই দিকেই সৈন্য সমাবেশ হওয়ায় সীমান্ত পরিস্থিতি খুবই গুরুতর হয়ে উঠেছে, কিন্তু সশস্ত্র সংগ্রাম এড়াবার জন্য ভারত চেষ্টা করে এসেছে এবং চেষ্টা করে যাবে। পাক-প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যে মিসেস গান্ধীর সঙ্গে আলােচনা করতে চেয়েছিলেন, সে সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যাপার নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আমার আলােচনা করার কিছু নেই, কারণ এটাতাে আর ভারত পাকিস্তান সমস্যা নয়। জঙ্গীশাহী আগে সৈন্য সরিয়ে নিক। সীমান্তে সমাবেশ করা সৈন্য পারস্পরিক ভাবে অপসারণের যে প্রস্তাব ইয়াহিয়া খান করেছেন সে সম্বন্ধে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মিসেস গান্ধী বলেন, “শুভেচ্ছার ইঙ্গিত হিসাবে পাকিস্তানের জঙ্গীশাহীকে প্রথমে বাংলাদেশে তার অমানুষিক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে এবং চেষ্টা করে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের গ্রহণযােগ্য বা স্বীকারযােগ্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ইয়াহিয়া খানের সামরিক আমলে পূর্ববঙ্গে ‘অবাধ ও নিদ্দোষ’ নির্বাচন-ই হয়েছিল, যে কোন অবাধ নির্বাচনে বৃহ্ম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ প্রতিনিধিগণকে নির্বাচন করলে যা হয় এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল, এই নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করা যায় না। যে কোন সমাধানই হউক না কেন, তা এমন হওয়া চাই যেন বাংলাদেশের জনগণ, তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ সন্তুষ্ট হন। রাষ্ট্রসঙ্গের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রসজ্ঞের পর্যবেক্ষক দল নিয়ােগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘের পর্যবেক্ষকদের কোন প্রয়ােজন নেই। রাষ্ট্রসক্সকে দেখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যাতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয় যে শরণার্থীর মর্যাদা ও নিরাপত্তাবােধ সহকারে সেখানে ফিরে যেতে পারেন। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আলােচনা করতে প্রস্তুত বলে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে মিসেস গান্ধী বলেন, দু’ দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্য উভয় দেশের বহু সমস্যা নিয়েই আলােচনা হতে পারে এবং বাংলাদেশে সমস্যার সমাধান বাংলাদেশই করতে হবে। মিসেস গান্ধী বলেন, একটি তাবেদার সরকার গঠন করে ঐ সমস্যার সমাধান করা যাবেনা। | প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবেই বলেন, ভারত কখনও পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ বাধাতে ইচ্ছুক নয়, অথবা ভারত এখন এমন কিছুই করতে চায় না যাতে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ লাগতে পারে। প্রধানমন্ত্রী এর পরেই বলেন, তবে এটাত আর এক পক্ষের ব্যাপার নয়। তিনি বলেন, যে হাত মুঠো করা আছে সে হাতের সঙ্গে করমর্দন করা যাবে না।
বাংলাদেশ (১)১:১৮: ২৫ অক্টোবর ১৯৭১
ইন্দিরা-টিটো যুক্ত ইশতেহারের তাৎপর্য
জনগণের ব্যক্ত’ ইচ্ছার নিরিখেই বাংলাদেশ সমস্যার সমাধান করতে হবে । ভারত এবং যুগােস্লাভিয়া বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে শরণার্থী সমস্যার মীমাংসার বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি গুরুতর রূপ নিতে পারে। | প্রেসিডেন্ট টিটো এবং শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে আলােচনা শেষে প্রকাশিত এক যুক্ত ইশতেহারে বলা হয় যে পূর্ব বাংলার সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা অত্যন্ত গুরুতর এবং শরণার্থী সমস্যা জিয়ে রাখা হলে তা আপনাআপনি আত্রাঞ্চলে স্থিতিহীনতাও উত্তেজনার একটা সূত্র হিসাবে প্রমাণিত হবে। উভয়পক্ষই এব্যাপারে একমত হয়েছে যে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযােগ্য একটা রাজনৈতিক সমাধানের দ্বারাই কেবল বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান সম্ভব।
গত ২০ শে অক্টোবর তারিখে যুগােশ্লাভিয়া প্রেসিডেন্ট টিটোর ৪ দিন ব্যাপী সরকারীভাবে ভারত সফর শেষে কায়রাে যাত্রার অব্যবহিত পরে এই যুক্ত ইশতেহার প্রকাশিত হয়। | ইশতেহারে বলা হয়, কয়েক মিলিয়ন (৯০ লক্ষাধিক) শরণার্থীর আগমনের ফলে ভারতে যে রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে এবং ভারতের অর্থনীতির উপর যে প্রচণ্ড চাপ পড়েছে সে ব্যাপারে ভারতের গভীর উদ্বেগের সাথে যুগােশ্লাভিয়া সম্পূর্ণ একমত। ইশতেহারে পরিস্থিতিটা “সত্যই গুরুতর” বলে মন্তব্য করা হয়।
উভয় পক্ষই এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমস্যাটা “অবশ্যই জনগণের ইচ্ছা, জন্মগত অধিকার ও আইনানুগ অধিকার মাফিক” হতে হবে। সাথে সাথে উভয় পক্ষ এই মতও প্রকাশ করেন যে “ইতিপূর্বে জনগণের সুস্পষ্টভাবে প্রদত্ত ইচ্ছাকে পাশ কাটানাের যে কোন প্রচেষ্টা পরিস্থিতিকে আরাে ঘােরালাে করে তুলবে। উভয় পক্ষ আরাে অভিমত প্রকাশ করেন যে সমস্যার সমাধান আরও বিলম্বিত হলে পরিস্থিতি আরাে গুরুতর হয়ে উঠবে। যুগােশ্লাভ পক্ষ শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্যের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে “এই প্রখ্যাত জননেতার প্রতি প্রদশির্ত বর্তমান ব্যবহার বহুবিধ প্রতিকূল পরিণামের সৃষ্টি করতে পারে। প্রেসিডেন্ট টিটোর মতে “শেখের প্রতি মানবিক আচরণ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান এবং উপমহাদেশে শান্তি ও স্থায়ীত্বের অনুকূলেই কাজ করবে।” | পক্ষান্তরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বলেন যে, ‘সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের পূর্বশর্ত হিসাবে জনগণের নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই বিনাশর্তে মুক্তি দিতে হবে।”
শ্রীমতি গান্ধী দৃঢ়তার সাথেই বলেন যে, শরণার্থীদের অবশ্যই অবিলম্বে স্বদেশ ফিরে যেতে হবে। সেজন্য অবশ্যই জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে, শরণার্থীদের সত্তর স্বদেশে ফিরে যাওয়া সাপেক্ষে যুগােস্লাভ পক্ষ এই ব্যাপারে একমত হন যে এই লাখাে লাখাে শরণার্থীর দায়িত্ব বিশ্ব সমাজকেই নিতে হবে।
জয়বাংলা (১)১:২৫। ২৯ অক্টোবর ১৯৭১
মুক্তিবাহিনীর সাফল্যে
| ডি.পি,ধরের সন্তোষ ভারতের বৈদেশিক মন্ত্ৰকদপ্তরের পরিকল্পনা কমিটির চেয়ারম্যান শ্ৰী ডি, পি, ধর কলকাতার সাংবাদিকদের কাছে মুক্তি বাহিনীর ক্রমাগত বিজয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গত মঙ্গলবার িিন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করে ফেলেছেন।
সাবানল !১ : ৪ ৩১ অক্টোবর ১৯৭১
তখন এ বন্ধুরা কোথায় ছিলেন?
-ইন্দিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সীমান্তের উত্তেজনার ব্যাপারে যে সব রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানকে একই মানদণ্ডে বিচারের চেষ্টা করছেন, সম্প্রতি ভিয়েনায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী তাদের তীব্র সমালােচনা করেন। তিনি বলেন যে, এই ধরণের এক করে দেখার চেষ্টা কখনই বরদাস্ত করা হবে না। শ্রীমতী গান্ধী প্রশ্ন করেন যে, যে-সব রাষ্ট্র আজ মুরুব্বীর মতে পাক-ভারত সীমান্তের দুদিক থেকেই সৈন্য সরিয়ে নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন, তাঁরা সেদিন কোথায় ছিলেন যেদিন আমাদের সীমান্তে পাকিস্তানী সৈন্য সমাবেশ করা হয়েছিল। তখন কেন জাতিস অথবা এই সব রাষ্ট্র উদ্বেগ প্রকাশ করেন নি? শ্রীমতি গান্ধী তীব্র ক্ষোভ ও ব্যাঙ্গের সুরে বলেন আমরা আজ যখন আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তৎপর হয়ে। উঠেছি তখনই দেখছি এই সব বন্ধুদের উদ্বেগের নাড়ী টন টন করে উঠেছে। শ্রীমতী গান্ধী বলেন, পাকিস্তান যেভাবে যুদ্ধের হুমকী দিচ্ছে এবং যখন ভারত থেকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজনৈতিক চাপ প্রবল হচ্ছে, তখন তাকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। পৃথিবীর কোন দেশকে এমন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়নি। বস্তুতঃ ভারতের এই আত্মসংযম মৌখিক প্রশংসা পেয়েছে মাত্র। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান যে অপরাধ করে চলেছে তার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সম্পর্কে শ্রীমতি গান্ধী বলেন, তিনি। বেঁচে আছেন কিনা আমরা জানি না। তিনি বেঁচে থাকলে এবং তাঁর সঙ্গে আলােচনা হলে সমস্যার সমাধান হতে পারে।
স্বীকৃতি প্রশ্নে ইন্দিরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সম্প্রতি অস্ট্রিয়ায় এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, বাংলাদেশ সমস্যা সমাধানের সহায়ক হলে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতিদানের প্রশ্ন ভারতকে ভেবে দেখতে হবে। তিনি এই প্রসঙ্গে এ অভিমত প্রকাশ করেন যে, পূর্ব বঙ্গের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আকাথা অনুযায়ী রাজনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা বর্তমানে আগের চাইতে অনেক কম। কারণ পূর্ববঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ ইয়াহিয়ার কারাগারে বন্দী। এখন যারা ইয়াহিয়া খানের দ্বারা নিযুক্ত হয়েছেন তারা জনপ্রতিনিধি নয়, গত সাধারণ নির্বাচনে তাদের কেউই কোন ভােট পান নি।
জয়বাংলা (১)১:২৬৫ নভেম্বর ১৯৭১
পূর্ববাংলা স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না
-ইন্দিরা পাকিস্তানের এক অংশ অপর অংশের ধ্বংস সাধনে মেতে উঠেছে, কিন্তু স্বাধীনতা স্পৃহাকে কোনক্রমেই হত্যা করা যায় না। পাকিস্তান দেরী করিয়ে দিতে পারে কিন্তু পূর্ব বাংলার স্বাধীনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ও ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলােচনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সম্পর্কে উপরিউক্ত মন্তব্য করেন। শ্রীমতী গান্ধী বলেন, পাকিস্তানের সামরিক চক্র পূর্ববাংলার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের টুটি টিপে ধরেছেন। অথচ সেখানকার জনসাধারণ বাঙালী গেরিলাদের পূর্ণ সমর্থন দিতে চলেছেন। আক্রান্ত হলে বহু দেশ ভারতে অন্ত্র দেবে নিউইয়র্ক থেকে প্রাপ্ত অপর এক খবরে জানা গেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী গত ৬ই নভেম্বর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভারত আক্রান্ত হলে, আমাদের বিশ্বাস সােভিয়েট রাশিয়ারসহ বহু দেশ আমাদের অস্ত্র সাহায্য করবে। | তিনি বলেন, ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে নিশ্চয় যুদ্ধ বাধাবে না। কিন্তু তাই বলে ভারত কোন হুমকির কাছে নিজের স্বাধীনতা বিকিয়েও দিতে পারে না।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ঘটনাবলীর দরুণ ভারতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, এখানে এসে তিনি দেখতে পাচ্ছেন-আমেরিকা ভালভাবেই তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শ্রীমতী গান্ধী বলেন, আমরা সহজে ভারসাম্য হারাই না। কাজেই আমেরিকা ভারতের স্বার্থ বিরুদ্ধ কোনাে কাজ করলে আমরা স্বভাবতঃই দুঃখিত হয়। কিন্তু তার জন্য আমরা মাথা গরম করব না। বৃহৎ শক্তিবর্গের জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার প্রশ্নে এই উপমহাদেশে বৃহৎশক্তিবর্গের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে শ্রীমতী গান্ধী। বলেন-এ সম্পর্কে সুনিশ্চিত ভাবে কিছু বলা যায় না। চীন সম্পর্কে ভারত-চীন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের মনােভাবের অনেক পরিবর্তন ঘটেছে, ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি, চীন এধরনের কোন (ভারত-পাক) সংঘর্ষে জড়িত হবে না। তবে একথাও ঠিক, ওদের সম্পর্কে কিছু আগাম বলা চলে না। যদি বাংলাদেশের জনগণের গ্রহণযােগ্য হয় শ্ৰীমতী গান্ধী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পূর্ববাংলা সম্পর্কে সব মীমাংসাই গ্রহণযােগ্য, যদি বাংলাদেশের জনগণের তা গ্রহণযােগ্য হয়। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমেরিকা ও অপরাপর বৃহৎ শক্তিগুলি পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের উপর চাপ দিতে পারেন।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১:৪। ১১ নভেম্বর ১৯৭১
শ্ৰীমতী গান্ধীর প্রাণনাশে পাক প্রচেষ্টা
মুজিবনগর, ১৫ই নভেম্বর ইসলামাবাদে জঙ্গী শাসকচক্র নাকি শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে বিশ্বে তাদের ১লা নম্বর শত্রু মনে করেন এবং সেজন্য তার প্রাণনাশের উদ্দেশ্য নানারকম ভয়াবহ চক্রান্ত আবিষ্কারের মেতে উঠছেন। | ইয়াহিয়া তার বংশবদ ইয়াদুর দল নাকি শ্রীমতি গান্ধীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরকালে তাঁর বিমান ধ্বংসের পরিকল্পনা এঁটেছিল। অবশ্য ভারতী গােয়েন্দা বিভাগ পাকশাহীর এ সব হীন চক্রান্তের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। শ্রীমতি গান্ধীকে অনর্থক অপ্রয়ােজনীয় ঝুঁকি না নেবার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের এই লােমহর্ষক গােপন সাংবাদিক পাকিস্তানের বিদেশস্থ কোনাে এক রাষ্ট্রদূতাবাসে দায়িত্বশীল পদে সমাসীন জনৈক বাঙ্গালী কূটনৈতিকের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১:৫! ১৮ নভেম্বর ১৯৭১
তিনটি পাক সামরিক বিমান ভূপাতিত
(আকাশবানী পরিবেশিত]। রৌমারী ।। ২৩ শে নভেম্বর : আজ নূতন দিল্লীতে লােক সভার অধিবেশনে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন মন্ত্রী শ্রী শুঙ্কা বলেন যে, গত কল্য-পশ্চিম বাংলার ২৪ পরগনা জেলার বয়রা অঞ্চলে চারিটি পাকিস্তানী সেবর জেট বিমান অনুপ্রবেশ করলে ভারতের আকাশ সীমানায় অতন্দ্র প্রহারায় বিমান গুলি এগিয়ে যায় এবং সেগুলির দিকে গুলি বর্ষণ করে। ফলে ৪টি বিমানের মধ্যে ১টি বিমান পাকিস্তানের অভ্যন্তরে পালাতে সক্ষম হয় এবং বাকী তিনটি বিমান গুলি বিদ্ধ হয়ে ভারতীয় ভূখন্ডে পতিত হয়। বিমানগুলি ভূপাতিত হওয়ার পূর্বেই তার বৈমানিকগণ প্যারাসুটের সাহায্য মাটিতে অবতরণ করে এবং ভারতীয় সেনা বাহিনী। কর্তৃক ধৃত হয়। তারা এখন মিলিটারী হেফাজতে আছে বলে সংবাদে জানা গেছে।
অগ্রদূত ১:১৩ ২৫ নভেম্বর ১৯৭১
ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পাকিস্তান একা হবে
পাক-ভারত যুদ্ধ হলে যুদ্ধে পাকিস্তান একা, হতাশ এবং নিন্দিত হবে বলে লণ্ডনের প্রভাবশালী উদারপন্থী। পত্রিকা গার্ডিয়ান মন্তব্য করেন। পত্রিকাটি আরও বলে যে ঘটনা প্রবাহ ভীষণ ভাবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে যাচ্ছে।
উত্তাল পাম ।১:১। ২৪ নভেম্বর ১৯৭১
পাক শাসকদের জ্ঞানােদয় হােক বাংলাদেশ সমস্যা সম্পর্কে
– শ্রী গিরি
ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী ভি, ভি, গিরি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়ের জন্য লড়ছেন। আমি নিশ্চিন্ত শেষ পর্যন্ত তারা বিজয়ী হবেন।’ শ্রী গিরি গত ১৭ই নভেম্বর পশ্চিম বঙ্গের ২টি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করতে গেলে হাজার হাজার শরণার্থী শ্রী গিরি ও “বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতীক শেখ মুজিব” এর নামে জয়ধ্বনি দিয়ে তাকে সম্বর্ধনা জানান। | শ্ৰী গিরি তার ভাষণে বলেন, আমরা চাই পাকিস্তানী শাসক ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা রাজনৈতিক মীমাংসা অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সন্তোষজনক মীমাংসা হতে হবে।’ | এই মীমাংসা যে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধি ও জননেতাদের সঙ্গে করতে হবে, কোনও ক্রীড়ানক দালালের সঙ্গে নয়, পাক সরকারের সেই জবান এখনও হয়নি। তিনি শুধু এই আশাই করতে পারেন যে, পাকিস্তানের শাসকরা তাদের নিজেদের স্বার্থেই’ এটা উপলব্ধি করবেন। | সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ৬টি দেশ সফরের উল্লেখ করে শ্রী গিরি বলেন, এর ফলে ঐ সব দেশের মানুষ ও রাষ্ট্র নায়কেরা বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের ন্যায্যতা সম্পর্কে অবহিত। হয়েছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, এর ফলে পাকিস্তান বুঝবে যে, বিশ্বজনমত বাংলাদেশের পক্ষে এবং বিশ্বজনমতের চাপ পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করবে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ও জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলােচনায় বসতে।
শ্রী গিরি শরণার্থীদের আগামী কয়েক সপ্তাহে কী ঘটে সেজন্য ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করার আবেদন জানান।
তিনি ঘােষণা করেন, বিভিন্ন ফ্রন্টে ভারত বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন, তা সত্ত্বেও ভারতে বাংলাদেশের। শরণার্থীদের সাময়িক অবস্থানকালে তাদের কষ্ট না হওয়ার জন্য ভারত যে কোন স্বার্থত্যাগে প্রস্তুত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘যে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তেমনি এক সরকারের বর্বরােচিত কার্যলাপের ফলে। আপনারা যারা নিজেদের দেশ ছেড়ে চলে আসতে বাধা হয়েছেন তাঁদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি। জানাবার জন্যই তিনি এসেছেন।
জয়বাংলা (১) /১; ৩০ ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১।
ইন্দিরার দাবী হানাদার হটাও বাংলাদেশ সমস্যর সমাধানের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ হিসাবে হানাদার পাকিস্তানের বাংলাদেশ থেকে সমস্ত সৈন্য। সরিয়ে নিতে হবে এবং সেটাই হবে শান্তির পথে প্রথম পদক্ষেপ। গত ৩০ শে নভেম্বর রাজ্যসভায় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বক্তৃতা প্রসঙ্গে বলেছেন, “আগামী মাস (ডিসেম্বর মাস) ভারত ও বাংলাদেশের জনগণের চরম সমস্যার মাস। তবে ভারত ও বাংলাদেশের জনগণ যে বর্তমান অন্ধকার কাটিয়ে সুষ্ঠু ও স্বচ্ছন্দ জীবন গড়ে তুলতে পারবে সে বিষয়ে আমি নিঃসন্দেহ।
জয়বাংলা (১) ১: ৩০। ৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
ভারতীয় শসস্ত্রবাহিনী সর্বাধিনায়কের হুসিয়ার বাণী
(আকাশ বাণী প্রচারিত) রৌমারী। ৭ই ডিসেম্বর : আজ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল বাংলায় অবস্থানরত পাক সেনাদের উদ্দেশ্যে এক বাণী প্রচার করে বলেছেন যে এখন তারা চারিদিক থেকে মিত্র সেনাদের দ্বারা পরিবেষ্টিত, তাদের বিমান শক্তি নিঃশেষিত, বাহির থেকে কোন সামর্থ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় সুনিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে এখন তাদের একমাত্র উপায় ভারতীয় সেনা বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পন করা। যদি অতি শীঘ্র তারা আত্মসমর্পণ না করে তবে সুনিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে তাদের অব্যাহতি নেই। খবরে আরও প্রকাশ সর্বাধিনায়ক এই বলে আশ্বাস দিয়েছেন যে যদি পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে তবে তাদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করা হবে।
অগ্রদূত।১:১৫ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১
পাকিস্তানের নগ্ন ভারত হামলার বিরুদ্ধে ভারত-বাংলামিত্র শক্তি গঠন
(আকাশ বাণী প্রচারিত | রৌমারী। ৬ই ডিসেম্বর : গত শুক্রবার পাকিস্তানের বর্বর সেনা বাহিনী ভারতের আকাশ সীমলংঘন করে। ভারতের বিভিন্ন বিমান ঘাটিগুলির উপর হামলা চালায়, ফলে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের এক সর্বাত্মক যুদ্ধ সূচিত হয়। | বর্বর পাক সেনাদের নাগপাশ থেকে বাংলাকে মুক্ত করার জন্য এবং তাদের সীমাহীন ঐদ্যত্ব খর্ব করার জন্য ভারত বাংলা মৈত্রী গঠিত হয়েছে। এখনই এই মিত্রে শক্তির দূর্বার সাহসী বাহিনীর বীর জোয়ানগণ বাংলকে মুক্ত করার জন্য পাক সেনাদেরকে খতম করতে করতে ঝটিকা গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকাকে মুক্ত করার জন্য। প্রকৃতপক্ষে নিঃশেষিত আকাশ শক্তি সম্পন্ন দস্যু পাকবাহিনী জলে ও স্থলে মিত্র বাহিনীর দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে আসন্ন মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছে।।
অগ্রদূত ! ১:১৫ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১
ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে থাকবে না
-ইন্দিরা। নয়াদিল্লী ঃ গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী পার্লামেন্টে দৃঢ়তার সহিত ঘােষণা করেন, প্রয়ােজনে অতিরিক্ত একটি মিনিটও ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে থাকবে না। তিনি বলেন, ভারতীয় বাহিনীর লক্ষ্য অতি সীমিত। কারণ বাংলাদেশের জনগণকে পৈশাচিক শাসকচক্র থেকে মুক্ত করার জন্য ভারত সাহায্য করেছে মাত্র। বাংলাদেশের ১ ইঞ্চি জমিও দখল করার ইচ্ছা ভারতের নেই। তিনি সদ্যমুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান এবং তাদের সমৃদ্ধি কামনা করেন।
বাংলাদেশ (১): ১:৮ ! ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
ভারত ক্ষুব্ধ হওয়ায় আমেরিকা দুঃখিত। বর্তমান পাক ভারত সংঘর্ষ ভারতকে আক্রমণকারী’ বলে অভিহিত করার ভারত সরকার মার্কিন উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলে মার্কিণ স্বরাষ্ট্র বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করেন।
মুখপাত্র আরও জানান, আক্রমণ কারী শব্দটি বেসরকারী সূত্রে ব্যবহৃত হয়েছে, কিন্তু মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র। ভারতকে আক্রমণকারী বলে অভিহিত করতে জাতিসংঘকে সুপারিশ করে নি। ম্যাকলসকি আরাে জানান যে, ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব অক্ষুন্ন রাখতে মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা সব সময়ই স্পষ্ট। মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জনৈক উচ্চপদস্থ কর্মচারী গত মঙ্গলবার জানান যে হােয়াইট হাউস কখনাে ‘আক্রমণকারী’ কথাটি ব্যবহার করেনি। | মার্কিণ সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা বিশ্লেষণ করে ম্যাকলসকি বলেন যে, বর্তমান রাজনৈতিক সমাধানে মার্কিণ সরকার দুটো দেশের সাথে একশাে বারের চেয়েও বেশীবার যােগাযােগ করেছেন। | তিনি আরাে বলেন যে, যেহেতু জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে উভয় পক্ষে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেইহেতু মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্র এই উদ্দেশ্য সাধনে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র আরাে জানান যে মার্কিণ সরকার পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক সমাধান কার্যকর করতে পাকিস্তানকে অনুরােধ জানিয়েছে। একই সাথে জাতিসংঘও ভারতকে অনুরােধ করেছে, যেহেতু বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠ যােগাযােগ রয়েছে সেহেতু ভারত যেন বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দকে সমঝােতার যেতে প্রভাবিত করে। | পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর অত্যাচারে যেমন আমরা কখনই ক্ষমার চোখে দেখিনি তেমনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে প্রবেশ করাটাও সঠিক মনে করি না।। পাকভারত সংঘর্ষে নিক্সন প্রশাসন পাকিস্তানকে সাহায্য করছে বলে যে খবর বেরিয়েছে সেনেটর হামফ্রে তাতে দুঃখ প্রকাশ করেন।
অভিযান ॥ ১: ৪ ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১
বাঙলাদেশের বিজয়ে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অভিনন্দন
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি বাঙলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিজয় উপলক্ষে বাঙলাদেশের সংগ্রামী জনগণ ও বীর মুক্তিযােদ্ধাদের অভিনন্দন জানাইয়াছে। পার্টি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও নির্যাতিতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। | ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভাবানী সেন গত ১৬ই ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ঢাকায় পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণকে একটি যুগান্তকারী ঘটনা বলিয়া অভিহিত করেন। এই প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বীরত্বের প্রশংসা করেন। | ভবানী সেন তাহার বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ হইল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে। জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষতার, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অসাম্প্রদায়িকতার এবং মিলিটারি কিক্টেরশিপের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জয়। এই জয় চিরস্থায়ী হউক, এই উপমহাদেশে শান্তি হউক অক্ষয়। | ভবানী সেন তাহার বিবৃতিতে বাঙলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য এবং সােভিয়েতের সহযােগিতা গ্রহণ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করিয়া দেওয়ার জন্য ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাঙলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে সােভিয়েত ইউনিয়ন সহ সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির সাহায্যের কথা স্মরণ করিয়া বলেন যে, ভারতও বাঙলাদেশ দুই দেশের সর্বসাধারণ তাহাদের বন্ধুত্বের মূল্য চিরকাল স্মরণ করিবে। | বিবৃতিতে বলা হয়, “কমিউনিষ্ট পার্টি আশা করে যে, বিজয়ী বীর মুক্তিবাহিনী এখন বাঙলাদেশে অবস্থিত। | অবাঙ্গালীদের প্রতি মানবতাপূর্ণ উদার ব্যবহার করিবে…।
মুক্তিযুদ্ধ।১: ২৫ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০