You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাষ্ট্রপুঞ্জ বিশেষজ্ঞ দলের রিপাের্ট

আন্তর্জাতিক সাহায্য যদি ঢালওভাবে পাওয়া যায়, তাহলেও ভারতে আগত উদ্ধাস্তুদের একাংশ, বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম শিশুদের এবং অসুস্থ মায়েদের প্রাণ রক্ষার পক্ষে তা দেরি হয়ে যাবে। যে বিশেষজ্ঞ দলটি ভারতের উদ্ধান্ত শিবিরগুলি পরিদর্শন করেছেন তারা এই কথা জানিয়েছেন। | গত মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জের সেকরেটারি জেনারেল যুথাটের কাছে ভারত উদ্ধাস্তুদের ব্যাপারে সাহায্যে প্রার্থনা করেছিল। তার পরেই রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্ধান্তু বিষয়ক হাইকমিশনারের একটি দল প:বঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামের উদ্ধান্তু শিবিরগুলি পরিদর্শন করেন। এঁদের সঙ্গে এসেছিলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক শিশু জরুরী তহবিল, বিশ্ব কর্মসূচী এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ। এঁরা তাঁদের রিপাের্ট পেশ করেছেন।  যু থানট এই রিপােট গ্রহণ করেছেন। এবং অপরাপর বিশ্ব সংস্থা এবং উৎসুক সরকার গুলির কাছেও এই রিপােরট গিয়াছে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ এ যাবৎ এই রিপোেরট প্রকাশ করার ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেননি। তবে ওয়াকিবহাল কূটনৈতিক মহলের খবর, গুরুত্বপূর্ণ রাজধানী গুলিতে প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যে ওই রিপাের্টের ভিত্তিতে দ্রুত আন্তজার্তিক সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছেন।  রিপােরটটি এখনও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং তা অত্যন্ত গােপন করে রাখা হয়েছে। ওই রিপােরটে উদ্বাস্তুদের শােচনীয় দুর্দশার কথা বলা হয়েছে। ভারত ওঁদের ত্রানের জন্য যে প্রচণ্ড চেষ্টা চালিয়েছে তারও উল্লেখ করা হয়েছে। | রিপােরটে বলা হয়েছে তারা উদ্ধান্ত শিবিরে গিয়েছিলেন। ওঁরা বলেছেন, পাকসৈন্য গােলাগুলি চালিয়েছে বলেই ওঁরা পালিয়ে এসেছেন। ওঁরা আরও জানিয়েছেন, ওঁদের গ্রামগুলি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবারের বহু লােককে মেরে ফেলা হয়েছে।

স্বদেশ। ১:১ ১৬ জুন ১৯৭১

জাতি সংঘের কাছে ২২ টি সংস্থার আবেদন

আন্তর্জাতিক বেসরকারী ২২ টি সংস্থা বাংলাদেশের পাক জঙ্গী শাহীর নারকীয় ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এবং জঙ্গী ইয়াহিয়া সরকার কর্তৃক বাংলাদেশে মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা লক্সনের ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জাতি সংঘের বৈষম্যমূলক আচরণ এবং সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষা বিষয়ক সাব-কমিটির কাছে আবেদন জানিয়েছেন।

জয়বাংলা (১)১;১ ২৪

৩০ জুলাই ১৯৭১

বাংলাদেশ বনাম রাষ্ট্রসংঘ

সত্যকাম সেনগুপ্ত

বাংলা দেশের মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার ওপর চার মাস কেটে গেছে। এই চার মাসের মধ্যে প্রায় সব দেশেরই মতামত জানা গেছে। কেউ বা মুক্তি যােদ্ধাদের সমর্থন করছে, কেউবা সাহায্য করছে পাক সরকারকে। এই মতপার্থক্য দেখা দেওয়াটা খুবই স্বাভাবিক এবং কারণগত। নানান দেশের বিভিন্ন মতের মূলে রয়েছে মােটামুটি তিনটি কারণ। প্রথমতঃ তাদের কাছে মুক্তি সংগ্রামের উপস্থাপনা ও ব্যাখ্যা কিভাবে করা হয়েছে। 

দ্বিতীয়ত তাদের দেশের তথা বিশ্ব জনমত কি স্রোতে বইছে। তৃতীয়ত : এই মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে তাদের কোনাে স্বার্থসিদ্ধি হবে কিনা। কিন্তু এই চার মাসের মধ্যে যার মতামত সুস্পষ্টভাবে জানা যায়নি সেটি কিন্তু সকল দেশের মুখপাত্র | হিসেবে পরিচিত। তার নাম রাষ্ট্রসংঘ (ইউনাইটেড নেশনস্)। বিগত চার মাসে এই রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্রী উথান্ট মহাশয় বাংলা দেশের মুক্তিসংগ্রাম বিষয়ে যে কটি বিবৃতি দিয়েছেন তা এক হাতের আঙুলেই গুণে ফেলা যায়। শুধু তাই নয়, এ মুক্তি সংগ্রাম যেন ভারত পাকিস্তানের ঘরােয়া ব্যাপার, এ ধরনের মনােভাব নিয়ে তিনি রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে পরিদর্শক নিয়ােগ করার কথা ঘােষণা করেছিলেন। দুর্ভাগ্য বশতঃ সে প্যাচে ভারতকে ঠিক জড়ানাে যায়নি। | এ ধরণের কোনাে প্রস্তাব যে শ্ৰী থান্ট করতে চাইবেন তা একান্তই অকল্পনীয়। তবে, এই চার মাস ধরে শ্ৰী থান্ট নীরব নিশ্চল হয়ে বাংলা দেশের মুক্তি সংগ্রামের যে বিরােধিতা করেছেন, সেটাও নেহাৎ কম নয়। এ ধরণের বিরােধিতা কোনাে দেশ করলে তবু খানিকটা মেনে নেওয়া যায় । কিন্তু পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মুখপাত্র রাষ্ট্রসংঘের প্রধানের এ ধরণের ব্যবহার অত্যন্ত অৰ্মাজনীয়।  প্রশ্ন উঠতে পারে, রাষ্ট্রসংঘ এরকম আচরণ করল কেন। রাষ্ট্র সংঘের নিজস্ব বহু প্রতিনিধি বাংলা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। কাজেই স্বাধীনতা সগ্রামের মিথ্যে উপস্থাপনা বা ভুল ব্যাখ্যাতে আর যে কোনাে দেশ বিশ্বাস করুক না কেন, রাষ্ট্রসংঘ সে রকম ভুল করবে না। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রসংঘের কোনাে স্বার্থ থাকা উচিত নয়, কারণ বিশ্ব জনমনের প্রবক্তা তাে রাষ্ট্রসংঘই। অবশ্য এরকম ঘটনা রাষ্ট্রসংঘের ইতিহাসে খুব নতুন নয়। কাজেই রাষ্ট্রসংঘ সম্বন্ধে উপরােক্ত প্রশ্নগুলাে জিজ্ঞেস করাটা অর্থহীন হবে। এখন একটি মাত্র প্রশ্নই রাষ্ট্রসংঘ সম্বন্ধে করা যেতে পারে । তা হলাে, রাষ্ট্রসংঘ নামক বিরাট আন্তর্জাতিক ধাপ্পা প্রতিষ্ঠানটি কবে করা হবে? রাষ্ট্রসংঘের সনদটা নিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করলেই তাে বােঝা যায় যে রাষ্ট্রসংঘ তার উদ্দেশ্য সম্পূর্ণরূপে হারিয়ে ফেলেছে। | রাষ্ট্রসংঘের সনদের ঘােষণাপত্র একটি বিখ্যাত বস্তু। এ রকম আদর্শ, মানবিকতা ও বড় বড় কথায় বােঝাই ঘােষণাপত্র সম্ভবতঃ আর নেই। সেটা পড়লেই পাঠকের মনে হবে যে তিনি যেন এই সব আদর্শগুলি সফল হওয়ার আশায় বসে ছিলেন। এবং মনে মনে পাঠক রাষ্ট্রসংঘের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হবেন। কিন্তু এই ঘােষণা পত্রকে প্রয়ােজনের সময়ে শিকেয় তুলে রেখে রাষ্ট্রসংঘ চরম স্বেচ্ছাচারিতা করেছে। অন্য সব। উদাহরণ বাদ দিয়ে শুধু বাংলা দেশের ব্যাপারেই রাষ্ট্রসংঘের ব্যর্থতার একটু আলােচনা করা যাক। এ জন্য রাষ্টসংঘের ঘােষণাপত্রের সঙ্গে বাঙলা দেশের ঘটনাবলী তুলনা নীচে দেওয়া হলঃ

রাষ্ট্রসংঘের ঘােষণাপত্রে বলা হয়েছে ঃ বন্ধনীর অন্তর্গত মন্তব্যগুলি আমার-লেখক

আমরা, রাষ্ট্রসংঘের অন্তর্গত জাতিসমূহ, স্থির করিয়াছি পরবর্তী বংশধরদিগকে আমরা যুদ্ধের বিভীষিকা | হইতে রক্ষা করিব, কারণ যুদ্ধ আমাদের জীবিতকালেই দুই দুইবার মানবজাতির প্রতি, অবর্ণনীয় দুঃখ বহন | করিয়া আনিয়াছে…।

বিপ্লবী বাংলাদেশ ১;১

৪ আগস্ট ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!