You dont have javascript enabled! Please enable it! রাষ্ট্রসঙ্গে  বাংলাদেশ প্রশ্ন উঠবে -ডঃ মালিক বাঙলাদেশ বিতর্কের বিরােধী - জাতিসঙ্ঘের দরবারে বাঙলাদেশের প্রতিনিধিদল - স্থায়ী যুদ্ধবিরতি পালনের আহ্বান - সংগ্রামের নোটবুক

রাষ্ট্রসঙ্গে  বাংলাদেশ প্রশ্ন উঠবে

(নিউইয়র্ক প্রতিনিধি)। রাষ্ট্রসংঘ, নিউইয়র্ক, ২৪ শে সেপ্টেম্বর-বর্তমানে এখানে রাষ্ট্রসজ্ঞের যে ২৬তম অধিবেশন চলছে, তার বিভিন্ন বিভাগীয় বৈঠকে এমন কি সাধারণ পরিষদের সভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উঠবে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষখ মহলের ধারণা। সাধারণ পরিষদের সভা শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন রাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাষণদানকালে অনেকেই বাঙলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির উল্লেখ করবেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের অর্থনেতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং মানবাধিকার কমিশনে ও অনিবার্যভাবে বাংলাদেশে প্রসঙ্গ উঠবে। অনেকের ধারণা, হয়ত রাষ্ট্র-সঙ্রে নিরাপত্তা পরিষদেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তােলার চেষ্টা হতে পারে। ভারত এ ব্যাপারে আশান্বিত যে, এ প্রসঙ্গ উঠলে অন্তত কানাডা, সােভিয়েত ইউনিয়ন, যুগােশ্লাভিয়া ও নিউজিল্যাণ্ড রাজনৈতিক সমাধানের দাবিতে সমর্থন জানাবে। পাকিস্তানের পক্ষেও অবশ্য চিরাচরিত প্রথায় মরক্কো প্রমুখ কয়েকটি আরব রাষ্ট্র এই মর্মে ওকালতি করতে পারে যে, বাঙলাদেশের ব্যাপার পাকিস্তানের ঘরােয়া ব্যাপার এবং একমাত্র পাকিস্তানের শাসকরাই তার সমাধান করতে পারেন। কল-উথান্ট সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রশ্ন আলােচিত গত ২০ শে সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব শ্রীটি, এন, কল রাষ্ট্রসমের মহা সচিব উথান্টের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় তাদের মধ্যে বাংলাদেশ সমস্যা এবং উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ আলােচনা হয় বলে জানা গেছে।

সাপ্তাহিক বাংলা ১: ২

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ 

ডঃ মালিক বাঙলাদেশ বিতর্কের বিরােধী

(নিউইয়ক প্রতিনিধি) রাষ্ট্রসংঘ, ২৪ শে সেপ্টেম্বর-রাষ্ট্রসংঘের নবনির্বাচিত সভাপতি ডঃ আদম মালিক (ইন্দোনেশিয়া) গত ২২ শে, সেপ্টেম্বর এখানে বলেন যে, তিনি সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে পূর্ববঙ্গের সমস্যার উপর বিতর্কের পক্ষপাতী নন, কারণ-একবার শুরু হলে এ বিতর্কের শেষ হবে না। তাছাড়া বিতর্কের দ্বারা দ্রুত ও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ভারত ও পাকিস্তানকে এই রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে একত্রে বসতে হবে। | ডঃ মালিক পরিষদের সভাপতি রূপে সাংবাদিক বৈঠকে ভাষণদান কালে এই অভিমত ব্যক্ত করেন।

সাপ্তাহিক বাংলা ॥ ১:২ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

জাতিসঙ্ঘের দরবারে বাঙলাদেশের প্রতিনিধিদল

 (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)। বাঙলাদেশে পাকিস্তানী জঙ্গী শাহীর গণহত্যা, বাঙালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং বাংলাদেশ সরকারের নীতিও বক্তব্য জাতি সংঘ সদস্যদের কাছে উপস্থিত করার জন্য ১৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিউইয়র্ক। গমন করিয়াছেন। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করিতেছেন রাষ্ট্রসংঘ ও লণ্ডনে বাঙলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরি।

 প্রতিনিধিদলে অপরাপর সদস্যরা হইতেছেন : ১) জনাব এম, এ সামাদ, জাতীয় পরিষদ সদস্য ও বাঙলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ২) অধ্যাপক মােজাফফর আহমদ, বাঙলাদেশ ন্যাপ-এর সভাপতি ও মন্ত্রিসভার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, ৩। জনাব সিরাজুল হক, জাতীয় পরিষদ সদস্য, ৪) জনাব সৈয়দ আবদুস সুলতান, ঐ, ৫। ডঃ মফিজ চৌধুরি ঐ, ৬। ডাঃ আসাবুল হক, ঐ, ৭) শ্রীফণীভূষণ মজুমদার, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য, ৮) জনাব ফকির সাহাবুদ্দিন, ঐ ৯) জনাব এফ, এম, আবুল ফতেহ, ইরাকে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত, ১০) জনাব খুররম খান পন্নি, দূরপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় বাঙলাদেশের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত (ফিলিপাইনে পাকিস্তানের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত), ১১) ডঃ এ.আর, মল্লিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ১২) জনাব এম,আর, সিদ্দিকী, জাতীয় পরিষদ সদস্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাঙলাদেশের প্রতিনিধি, ১৩) জনাব রেহমান সােবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ও সরকারের অর্থনীতি বিষয়ক বিশেষ দূত, ১৪) জনাব এস,এ. করিম, জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী সহকারী প্রতিনিধি এবং ১৫) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনের উপদেষ্টা জনাব এ,এ. মুহিত। | প্রতিনিধিদলের প্রথমােক্ত ১১ জন সদস্যা গত মঙ্গলবার মুজিবনগর হইতে নয়াদিল্লী হইয়া নিউইয়র্ক গিয়াছেন এবং শেষােক্ত চার জন পূর্বাহ্নেই নিউইয়র্কে ছিলেন। দলের নেতা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি লণ্ডন হইতে নিউইয়র্ক গমন করিয়াছেন। | গত ২২ শে সেপ্টেম্বর ১৩০ সদস্য বিশিস্ট জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের যে ২৬ তম অধিবেশন শুরু হইয়াছে তাহাতে বাংলাদেশ প্রশ্ন উত্থাপিত হইবে এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কের বিষয় হইবে বলিয়া আশা করা যাইতেছে। রাষ্ট্রসজ্ঞের নতুন সদস্য ভুটান বাঙলাদেশে প্রশ্ন উত্থাপন করিতে পারে। | পাকিস্তান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় সাধারণ পরিষদে বাঙলাদেশ প্রশ্ন উত্থাপনে বাধা দেওয়ার পাঁয়তারা করিতেছে। অপরদিকে ভারত ও সােভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় বাঙলাদেশ প্রতিনিধিদল সাধারণ পরিষদে এই প্রশ্নে আলােচনা উত্থাপনের চেষ্টা করিবে।

মুক্তিযুদ্ধ। ১;১২ ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

জাতিসংঘে রাশিয়া, ফ্রান্স ও সুইডেনের বক্তব্য

রাষ্ট্রসংঘ, ২৯শে সেপ্টেম্বর-গতকাল সকালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সুইডেন, ফ্রান্স ও সােভিয়েত রাশিয়ার প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উল্লেখ করিয়া বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চাহেন। তাহারা বলেন, মানব অধিকারের এবং ভােটের মাধ্যমে অভিব্যক্ত জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মানের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সমস্যার সমাধান হইতে পারে। সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ক্রীসটার ভিকম্যান এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান না হইলে সেখানকার সংকট বিস্তার লাভ করিতে পারে। ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মরিস সুম্যান পাকিস্তানী জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সমাধানের কথা বলেন। বাংলাদেশের পরিবর্তে পাকিস্তান শব্দটি ব্যবহার করিলেও তিনি একই সঙ্গে বলেন, মূলে যদি অন্যায়ের প্রতিবিধান করা না হয় তাহা হইলে ভারতে শরণার্থী আসা বন্ধ করা যাইবে না। সােভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মি. গ্রোমিকো বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চাহেন।

বাংলার বাণী ! ৬ সংখ্যা : ৫ অক্টোবর ১৯৭১

বেলজিয়াম কর্তৃক বাঙলদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান দাবি

(নিউইয়র্ক প্রতিনিধি) রাষ্ট্রসংঘ, ৪ঠা অক্টোবর -আজ রাষ্ট্রসঙ্রে সাধারণ পরিষদে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তৃতায় বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের মনােভাব প্রতিফলত হয়েছে। বেলজিয়াম বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এবং ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার রক্ষার গ্যারান্টি পেয়ে শরণার্থীরা যাতে দেশে ফিরে যেতে পারেন। | পররাষ্টমন্ত্রী বক্তৃতায় এও বলেন যে, বাংলাদেশ সমস্যার ব্যাপারে রাষ্ট্রসঙ্ যদি নীরব থাকে তাহলে রাষ্ট্রসংঘ তার অনেক কৃতিত্বের সুযোেগ থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি অবিলম্বে এ ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান।

সাপ্তাহিক বাংলা ১: ৩ ১০ অক্টোবর ১৯৭১

কার্যকর রাজনৈতিক সমাধান প্রয়ােজন

জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রশ্নে যুগােশ্লাভিয়া ও বেলজিয়াম যুগােশ্লাভিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিরদো টেপাভাক বলেন, বাংলাদেশে এমন রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করা প্রয়ােজন। যাহার ফলে যে সকল কারণে শরণার্থীরা পালাইয়া যাইতেছে সেই সকল কারণ দূর হয়। জাতিসংঙ্রে সাধারণ পরিষদে বক্তৃতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, শরণার্থী সমস্যাকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা হইতে আলাদা করা যায় না। তিনি আরাে বলেন, আন্তর্জাতিক গােষ্ঠিকে এই সমস্যা সম্পর্কে উদাসীন থাকিলে চলিবে না। বেলজিয়াম ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ও মানবিক অধিকার রক্ষার নিশ্চয়তার প্রয়ােজনে বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আহ্বান জানাইয়াছেন। | গত ৪ঠা অক্টোবর জাতিসঘের সাধারণ পরিষদে বক্তৃতাদান কালে বেলজিয়ামের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ পিয়ের হারমেল বলেন, বাংলাদেশ সমস্যার ব্যাপারে জাতিসংঘ যদি নিশ্চেষ্ট থাকে তবে জাতি সংঘ তাহার কৃতিত্বের স্বীকৃতি হইতে বঞ্চিত হইবে। তিনি এই সমস্যা সমাধানের জন্য আজো প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের গুরুত্ব আরােপ করেন।

বাংলার বাণী ৭ সংখ্যা ১২ অক্টোবর ১৯৭১

জাতিসংঘে পাক দালাল নাজেহাল চাবি দেওয়া পুতুলের মতাে বাংলাদেশের কীটদ্রংষ্ট দালাল মাহমুদ আলী (জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা) তার প্রভু ইয়াহিয়া জঙ্গী শাহীর নির্দেশ অনুযায়ী পাকিস্তানের কদর্য বীভৎস রূপ ঢেকে রাখার জন্য ১০ লক্ষ শরণার্থীর আশ্রয়দানকারী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রস্তুতির অভিযােগ তুলেছেন।  পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম বাঙালী নামধারী এক ব্যক্তিকে জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা মনােনীত করা হয়েছে। ইয়াহিয়া শাহী বাংলাদেশে তাহার হিংস্রতম ও বর্বরতম কার্যকলাপ একজন বাঙালী বেঈমানকে দিয়ে বিশ্বের কাছে চেপে রাখবার মধ্যযুগীয় প্রচেষ্টায় মাহমুদ আলী মতাে ঘৃণ্য কীটকে প্রতিনিধিদলের নেতা করেছে। মাহমুদ আলীর গুণ অনেক। তার রাজনৈতিক জীবনে কোন দিন সে বাঙ্গালীর আবেগ অনুভূতির সাথে নিজেকে একাত্ম করেনি। এই গুণধর মাহমুদ আলী জাতিসংঘে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করার দুঃসাহস প্রর্দশন করেছিল। মাহমুদ আলী নাকি প্রথমে বিশ্ব সংবাদপত্র প্রতিনিধিদের মুখােমুখি হতে রাজী হয়নি। কিন্তু প্রতিনিধিদলের আসল নেতা পাঞ্জাবী আগাশাহী তাকে সাংবাদিক সম্মেলনে চাবি দিয়ে বসিয়ে দেয়। মাহমুদ আলী কথা বলতে শুরু করতেই সাংবাদিকরা তাকে নানাবিধ প্রশ্নবান জর্জরিত করে। কি গুণে। তিনি জাতিসংঘে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতার পদে মনােনীত হয়েছেন এ প্রশ্ন তাকে করা হয়। তাকে আরও প্রশ্ন করা হয়, যে ব্যক্তি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে তার মতাে লােককে কেন নেতা নির্বাচিত করা। হয়েছে। অর্থাৎ জনগণ যাকে আবর্জনার স্তুপে নিক্ষেপ করেছে সে জাতীয় গণ ধিকৃত পদ পায় কিভাবে? কাদের প্রতি কঠোর নীতি গ্রহণ করেছেন এবং কেনই বা এ দুটি দেশ পাকিস্তানের বক্তব্য বিশ্বাস করছে না। এবার মাহমুদ আলী মুখ খােলে। কুইসলিং কণ্ঠ থেকে একটি বাক্য বেরিয়ে আসেঃ “এ প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারবে।” মাহমুদ আলী এরপর আগাশাহীর নির্দেশক্রমে ভারতের বিরুদ্ধে অভিযােগ করে বলেন যে, ভারত। সীমান্ত এলাকায় গােলযােগ সৃষ্টি করছে। আন্তর্জাতিক সমাজ এ ব্যাপারে ভারতকে নিবৃত্ত করতে না পারলে “তৃতীয় মহাসমর” বেধে যেতে পারে।  মাহমুদ আলী তার বক্তব্য শেষ করার আগেই একজন বিদেশী সাংবাদিক উত্তেজিত হয়ে তাকে প্রশ্ন করে বসেন যে, আপনি তাে ভারতের গােলযােগ সৃষ্টির প্রচেষ্টা সম্পর্কে বলেছেন কিন্তু দয়া করে বলবেন কি যে, কি কারণে ৯০ লাখ বাঙ্গালী দেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে? এ জাতীয় প্রশ্ন অনবরত বর্ষণ হতে শুরু করলে মাহমুদ আলীর সাংবাদিক সম্মেলন ভেঙ্গে যায়।

জয়বাংলা (১) এ ১:২৩। ১৫ অক্টোবর ১৯৭১

জাতিসংঘের উদাসীনতার নিন্দা বেলজিয়ামের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিষ্টার পিয়ের হার্সেল জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দানকালে বলেন যে, বেলজিয়াম পূর্ব বাংলা’ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান চান যাতে করে শরণার্থীরা ভবিষ্যতে নিরাপত্তা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিশ্চয়তা নিয়ে ফিরে যেতে পারেন। তিনি বলেন, ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের চরম মানবিক বিপর্যয়ের গুরুত্বের ব্যাপারে জাতিসংঘ উদাসীন থাকলে জাতিসংঘের সুনাম বহুলাংশে খর্বিত হবে।

 জয়বাংলা (১) ১: ২৩। ১৫ অক্টোবর ১৯৭১

পাকিস্তানকে আর মানবাধিকার লঙ্ন করতে দেয়া যায় না কার্যকরী ব্যাবস্থা গ্রহণে জাতিসংঘের প্রতি ভেনেজুয়েলা পার্লামেন্টের সর্বসম্মত আহবান ইয়াহিয়া খানের জঙ্গী সরকারের ঘৃণিত কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আজ বিশ্বের সর্বত্রই প্রবল ধিক্কার-ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। বিশ্বের শান্তিকামী মানুষ আজ বাংলাদেশের নির্যাতীত জনগণের মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছেন।

সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্টে পাকিস্তান সরকার যাতে নুতন করে মানবাধিকার লঙ্ন না করতে। পারে তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য জাতিসংঘকে হস্তক্ষেপ করতে অনুরােধ করেছেন। 

ভেনেজুয়েলার পার্লামেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে ‘পূর্ব বাংলায় নাটকীয় পরিস্থিতি এবং | ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধসুলভ উত্তেজনার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

 জার্মান ডক শ্রমিকদের দাবী | রােষ্টক-এ অবস্থিত জার্মান ডেমােক্রেটিক রিপাবলিকের সর্ব বৃহৎ জাহাজ কারখানার প্রায় ৬ হাজার ডক

শ্রমিক সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে অবিলম্বে পূর্ববাংলা সমস্যার শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধান এবং পূর্ববাংলায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবী করেন।

 জয়বাংলা (১) ১: ২৬ ৫ নভেম্বর ১৯৭১

প্রিন্স সদরুদ্দিন এখন কি বলেন

(সংবাদদাতা প্রেরিত) রাষ্ট্রসংঘের শরণার্থী এ ত্রাণ সংক্রান্ত বিসয়ের কর্মকর্তা প্রিন্সা সদরুদ্দিন আগাখান এদ্দিনে স্বীকার করেছেন | যে, বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের আগমন স্রোত অব্যাহত চলছে এবং অবস্থা ক্রমশঃই অবনতির দিকে | যাচ্ছে। শরণার্থীদের স্বগৃহে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের গৃহীত নীতিও যে কার্যকরী হয়নি সে কথাও তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন।

বাংলাদেশ (১) ১: ২২ ২২ নভেম্বর ১৯৭১

উ-থন্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান।

 (ভারতীয় প্রতিনিধি) | নয়াদিল্লী, ১৮ই নভেম্বর ‘আপনি যদি সমস্যাটি সরকারে দেখার জন্য প্রস্তুত থাকে তবে আপনার উদ্যোগ

আমাদের সমর্থন লাভ করবে।” পাক-ভারত উত্তেজনা প্রশমনে জাতিসংঘের সেক্রেটারী উথান্ট গত … শে। অক্টোবর শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে যে চিত্র দেখিয়েছিলেন, তার সুদীর্ঘ বিদেশ সফর শেষে গত ৬ই নভেম্বরের জবাবী চিঠিতে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী উপরােক্ত মন্তব্য করে ইউ, এন, আই জানিয়েছে ঐ জবাব কার্যত উথান্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের সামিল।

শ্রীমতি গান্ধীর চিঠিটি আজই প্রকাশ করা হয়। তিনি তাঁর চিঠিতে সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন পূর্ব বাংলার | জনগণের ঘােষিত ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্য রক্ষা করে উথান্ট যদি কোন রাজনৈতিক মীমাংসা করতে চান তবে তিনি ভারতের পূর্ন সমর্থন পাবে।

উত্তাল পদ্মা। ১:১ ২৪ নভেম্বর ১৯৭১

 পূর্ণাঙ্গ আলােচনার জন্য ভারত কর্তৃক জাতিসংঘে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থাপনের প্রস্তুতি

(কূটনৈতিক সংবাদদাতা) ২১শে সেপ্টেম্বর হইতে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে ভারত পূর্ণাঙ্গ আলােচনার জন্য বাংলাদেশ সমস্যা উত্থাপন করিবে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হইতেছে বিশ্ববিকেকে জাগ্রত করিয়া বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ সমস্যার সমাধানে আগ্রহী করিয়া ভােলা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করিবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী শ্রীশরণ | সিং। এখানে উল্লেখযােগ্য যে ভারতের বৈদেশিক নীতি নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান শ্ৰী ডি.পি, ধর ও পররাষ্ট্র দপ্তরের সেক্রেটারী শ্ৰী টি.এন. কাউল সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। আলােচনায় মিলিত হন। | পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা এই আলােচনা অবশ্যই সাধারণ পরিষদের আসন্ন বৈঠানেল উ « করি? হইয়াছে।  

বাংলাদেশ সরকারও তাহাদের একজন প্রতিনিধি সাধারণ পরিষদের বৈঠক চলাকালে নিউইয়র্ক পাঠাইবেন।

বাংলার বাণী ৪ ৫ সংখ্যা। ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

জাতিসংঘ অধিবেশনে জাপানের বাংলাদেশ প্রসঙ্গ উত্থানের উদ্যোগ

 (বিশেষ প্রতিনিধি)। জাপান জাতিসংঘে বাংলাদেশ ইস্যুটি উত্থাপন করিবে। গত বুধবার নয়াদিল্লীতে একটি জাপানী সংসদীয় প্রতিনিধি দল ভারতের কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী মিঃ সিদ্ধার্থশংকর রায়ের কাছে এই কথা প্রকাশ করেন। | জাপানের প্রতিনিধি সভার বৈদেশিক কমিটির সভাপতি মিঃ সাকুরাউচির নেতৃত্বে চারজনের একটি প্রতিনিধিদল কয়েকটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে মিঃ রায়ের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তাহাকে প্রতিশ্রুতি দান করেন যে জাপান শরণার্থী সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে ভারত সরকারকে সবরকম সাহায্যপ্রদান করিবে। | পরে প্রাপ্ত এক সংবাদে আরও জানা গিয়াছে যে প্রতিনিধি দলটি জাপানে ফিরিয়া গিয়া জাপানী প্রধান মন্ত্রীর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তাহাদের মনােভাবের কথা ব্যক্ত করেন।

বাংলারবাণী । ৫ সংখ্যা ৪ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

বাঙলাদেশ জাতিসংঘ সনদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে। বাঙলাদেশ সরকার সম্প্রতি ঘােষণা করেছেন যে, যদিও বাঙলাদেশ এখনও জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করেনি, তথাপি তারা জাতিসংঘ সনদের নীতি গুলােকে যথাযােগ্য মর্যাদা দেবেন। বাঙলাদেশ সরকার আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের সমস্ত কর্মচারী এবং কূটনীতিক সহ সকল বিদেশী নাগরিক -যারা বাঙলাদেশ ত্যাগ করতে ইচ্ছুক, তাদের সকলকে স্ব স্ব স্থানে নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের সর্বপ্রকার সুযােগ দান করা হবে।

অভিযান। ১; ৪ ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

স্থায়ী যুদ্ধবিরতি পালনের আহ্বান

 (নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গত মঙ্গলবারে গৃহীত এক প্রস্তাবে পাক-ভারত সীমান্তে স্থায়ী যুদ্ধ বিরতি পালনের আহ্বান জানান হইয়াছে। প্রস্তাবে বলা হইয়াছে, সৈন্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত এই যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে পালন করিতে হইবে। প্রস্তাবে “অবিলম্বে সৈন্য অপসারণের কথা না বলিয়া “যথাশীঘ্র সম্ভব” সৈন্য প্রত্যাহার করিতে বলা হইয়াছে। প্রস্তাবের পক্ষে ১৩টি রাষ্ট্র ভােট দেয়। সােভিয়েত ও পােল্যান্ড ভােটদানে বিরত থাকে।

মুক্তিযুদ্ধ ॥ ১: ২৫ ২৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

সূত্র : গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ – খন্ড – ১০