You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ববংগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ববংগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন

S/10410 ডিসেম্বর ৩, ১৯৭১

বিভিন্ন সূত্র থেকে মহাসচিবের কাছে আসা সাম্প্রতিক প্রতিবেদন গুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তসহ উপমহাদেশের অপরাপর অঞ্চলসমূহে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনা করে মহাসচিব এ পর্যন্ত এ সমস্যার বিষয়ে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। জাতিসংঘ সনদের ধারা ৯৯, যা ব্যক্ত করে যে, “মহাসচিব তার মতানুসারে যা কিছু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে বিবেচনা করবেন তা নিরাপত্তা পরিষদের গোচরীভূত করতে পারেন।”, অনুসারে মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে এ বিষয়ে অবগত রেখেছেন। মহাসচিব মনে করেন পার্টিগুলো নিজেরা অথবা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা পরিষদে এ বিষয়ে উদ্যোগ গৃহীত হতে পারে।

২। এই প্রতিবেদনটিতে ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, উভয়ের জন্য মহাসচিব কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত মানবিক উদ্যোগ সমূহ অন্তর্ভুক্ত নয়। এ সংক্রান্ত তথ্য জুলাই, ১৯৭১ এ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে এবং নভেম্বর, ১৯৭১ এ সাধারণ পরিষদে(তৃতীয় কমিটি) পেশ করা হয়েছে। নভেম্বরের ২২ তারিখে তৃতীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে একটি খসড়া রেযল্যুশন অনুমোদন করেছে যা সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে মহাসচিবের উদ্যোগসমূহ অনুমোদন করবে এবং মহাসচিব ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত হাই কমিশনারকে অনুরোধ করবে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয়ে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে এবং ভারতে শরণার্থীদের এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সাধারণ পরিষদ তৃতীয় কমিটির খসড়া রেযল্যুশনটি অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করেনি।

৩। ২০ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে, মহাসচিব নিম্নোক্ত স্মারকলিপিটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি বরাবর পেশ করেছেনঃ

(ক) বর্তমানে কিছু মাস যাবত, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং জাতিসংঘের আরও বহু সদস্য পূর্ব পাকিস্তান ও সংলগ্ন ভারতীয় প্রদেশ সমূহের পরিস্থিতির পরিণতি অথবা সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। আমি নিজে মার্চ ১৯৭১ এর ঘটনাসমূহের পরপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার উদ্বেগ ব্যক্ত করেছি এবং তখন হতেই পাকিস্তান ও ভারত সরকারের সাথে জাতিসংঘে তাদের সংসদীয় প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সূত্র, উভয়ের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি। এ ক্ষেত্রে আমি মানব কল্যাণ ও মানবিক নীতি উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ সনদের ধারা ২, অনুচ্ছেদ ৭ এর বিধানাবলী পালন করা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সহযোগিতার কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করার বিষয়ে জাতিসংঘ সনদ অনুসারে মহাসচিব সহ জাতিসংঘের দ্বৈত দায়িত্ব সম্পর্কে কঠোরভাবে সচেতন ছিলাম।

(খ) এই পরবর্তী দায়িত্বটির কথা মনে রেখেই আমি ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ, উভয়ের জন্য সহায়তার আবেদন করেছিলাম। ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে পাওয়া সহায়তা সমূহকে সঞ্চালিত করার লক্ষ্যে আমি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে মনোনীত করেছি ভারতে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য, আর পাকিস্তান সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঢাকায় একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে যথাসম্ভব কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য। এই উভয় প্রকার মানবিক সাহায্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন অন্যত্র সবিস্তারে পেশ করা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ উভয় অপারেশনের বিষয়ে পরিষদের কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং আন্ত-সংস্থা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতির ভিত্তিতে ১৬ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে সম্পূর্ণ আলোচনা করেছেন। আমি এ সুযোগে আমার আবেদনে উদারভাবে সাড়া দেয়ার জন্য সরকারসমূহ, জাতিসংঘের সংস্থা ও প্রোগ্রামসমূহ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের প্রতি আমার উষ্ণ কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। একইসাথে আমি এক্ষেত্রে আমার প্রতিনিধিদের সহযোগিতা করার জন্য ভারত ও পাকিস্তান সরকারকেও সাধুবাদ জানাচ্ছি।

(গ) গত মার্চ থেকেই সময় যতই বয়ে যাচ্ছিল, আমি ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি এবং শঙ্কা বোধ করেছি ঐ অঞ্চলে প্রায় সকল ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি লক্ষ্য করে। সহায়তার জন্য আমার আবেদনের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদার সাড়া সত্ত্বেও প্রাপ্ত অর্থ ও সামগ্রীসমূহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং ভারত সরকার এখনও অনির্দিষ্ট সময়কালের জন্য লাখো শরণার্থী, যাদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে, তাদের ভার বহনে ভয়াবহ এবং সংহতিনাশক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে দু’টো পরপর বিপর্যয় মোকাবেলা করতে, যার একটি প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক ও সরকারি উদ্যোগ ক্রমবর্ধমান হারে ব্যাহত হচ্ছে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে উল্লেখযোগ্য উন্নতির অভাব এবং পূর্ব পাকিস্তানে আইন, শাসন ও জনপ্রশাসনের উপর এর প্রভাবের ফলে। সেখানকার জনগণের দুর্ভোগের সাথে শীঘ্রই গুরুতর খাদ্যাভাব, এমনকি দুর্ভিক্ষ পর্যন্ত যুক্ত হতে পারে যদি না বড় মাপের ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকর ভাবে পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন করা যায়। সমানভাবে গুরুত্ববহ এই সন্দেহাতীত বিষয়টি যে, সমঝোতা এবং উন্নত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ত্রাণ প্রচেষ্টার সাফল্য এখন ভারতে আছে এমন উদ্বাস্তুদের যেকোনো বড় অনুপাতে ফিরে আসার জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিয়ামকগুলো দুষ্টচক্রের এমন একটি ধারা সৃষ্টি করেছে যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক মানবিক সমস্যা মোকাবেলার উদ্যোগসমূহকে মারাত্মক ভাবে হতাশাগ্রস্ত করছে।

(ঘ) এসকল মানবিক ট্রাজেডির সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যে হিংস্র আবেগ জাগ্রত হয়েছে, উপমহাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়গুলোর আন্তঃসম্পর্কে তা সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যকার সম্পর্কও এ সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ অঞ্চলের প্রদেশসমূহের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মূলনীতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, তা থেকে প্রায়ই ভ্রাতৃঘাতী শত্রুতার উত্থানের ইতিহাস রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক মানসিক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব ঘটিয়েছে। বর্তমান ক্ষেত্রে, সেখানে বিপদের একটি অতিরিক্ত উপাদান বিদ্যমান, কেননা এ সঙ্কটটি উন্মোচিত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি দীর্ঘস্থায়ী ও অমীমাংসিত বিবাদের প্রেক্ষাপটে , যে বিবাদ মাত্র ছয় বছর আগে তাদের মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। যদিও শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নাতীত, তবু তাদের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের পরিস্থিতি সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগজনক। সীমান্ত সংঘর্ষ, চোরাগোপ্তা হামলা, এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড আরও নিয়মিত হয়ে উঠছে, এবং এর সবই আরও গুরুতর হয়ে উঠছে যেহেতু প্রত্যাবাসিত হতে হলে শরণার্থীদেরকে এই বিপদসংকুল সীমান্ত পাড়ি দিতে হবে। আমরা যারা জাতিসংঘে আছি তারা এটাও ভুলে যেতে পারি না যে একটি বৃহৎ সংঘর্ষ উপমহাদেশে অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

(ঙ) উপমহাদেশে বিরাজমান দুঃখজনক পরিস্থিতিকে নৈতিকভাবে বিচার করা খুবই সহজ। অনেক বেশি কঠিন রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট জনগণকে তাদের ব্যাপক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করা। এই পরবর্তী কর্মপন্থাটিই, আমার মতে, জাতিসংঘকে অনুসরণ করতে হবে।

(চ) আমার মনে হয় না আমি বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর সম্ভাব্য পরিণতির অতিরিক্ত নেতিবাচক চিত্র অঙ্কন করেছি। আমার কাছে থাকা তথ্যের আলোকে, আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, সে সময়টি পার হয়ে গিয়েছে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের অপেক্ষা অব্যাহত রাখতে পারতো এবং পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখতে পারতো এই আশায় যে ত্রাণ কার্যক্রম, মানবিক উদ্যোগ এবং সৎ উদ্দেশ্য মানুষের দুর্ভোগ ও সম্ভাব্য দুর্যোগ লাঘবে যথেষ্ট হবে। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বর্তমান পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে, শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ বিচারে নয়, বরং, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কর্মকাণ্ডের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণেও। আমার মনে হয় বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতি, যাতে মানবিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে, তা সমগ্র জাতিসংঘের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ যা অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। এই ধরণের অন্যান্য পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে। যদি সংগঠনটি এখন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, তাহলে এটি ভবিষ্যতে একই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নতুন দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারবে।

(ছ) নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডায় উল্লিখিত নয় এমন একটি বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে প্রতিবেদন পেশ করার অস্বাভাবিক পদক্ষেপ আমি নিয়েছি এই কারণে যে, এই বিষয়টির রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ সমস্যাটির বিষয়ে অবগত না হওয়া পর্যন্ত মহাসচিব এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের অতি অবশ্যই উচিত শান্তি রক্ষায় এর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সম্প্রীতি ও প্রণোদনায় এর বৈচিত্র্যময় সংস্থানের সহায়তায় মানবিক ট্রাজেডি যা ইতোমধ্যে সংঘটিত হয়েছে তা প্রশমন এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়ানো, উভয় উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করা।

(জ) নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, এমন একটি অবস্থানে আছে যেখান থেকে তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে একটি সর্বসম্মত উপসংহারে পৌঁছাতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, পরিষদের সদস্যদের নিজেদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই আলোচনা আনুষ্ঠানিক হবে না কি অনানুষ্ঠানিক হবে, গোপনে হবে, না কি প্রকাশ্যে হবে। এই পর্যায়ে আমার প্রধান উদ্দেশ্য এই আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং এ বিষয়ে আমার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা যেন, এই দুঃখজনক পরিস্থিতির সমাধান করতে পারে এমন সম্ভাব্য সকল পন্থা এবং উপায়ই বিবেচনা করে দেখা হয়।

৪। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে, সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনে আমার বার্ষিক প্রতিবেদনের ভূমিকায় আমি এই সমস্যাটির প্রতিটি দিক পরিষদের গোচরীভূত করেছি। আমি আমার প্রতিবেদনটি নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ দ্বারা শেষ করেছি-

“এই ব্যাপক দুর্যোগে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং জনগণকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সুস্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু, যা আমি উল্লেখ করেছি, মূল সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হবে কেবল যদি সমঝোতার ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমাধান এবং মানবিক নীতির প্রতি সম্মানবোধ অর্জন করা যায়।”

এই কল্পে, পূর্ব পাকিস্তানে মার্চের ঘটনাবলীর পর থেকেই আমি নানাভাবে আমার প্রভাব ব্যবহার করেছি। এবং অবশ্যম্ভাবীভাবেই, তা করেছি প্রচারের আড়ালে। সমস্যাটির বিশেষ গুরুত্বের কারণে, আমি শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১০ অগাস্ট, ১৯৭১ তারিখে এ সংশ্লিষ্ট নিম্নলিখিত বিবৃতিটি প্রকাশ করেছিঃ

“মহাসচিব মনে করেন এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সূক্ষ্ম ব্যাপার যা একটি সদস্য রাষ্ট্র,এই ক্ষেত্রে, পাকিস্তান এর বিচার ব্যবস্থার কর্মদক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। মানবীয় এবং রাজনৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি অনেকের জন্যই একটি বিশেষ আগ্রহ এবং উদ্বেগের বিষয়। মহাসচিব বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বার্তা পেয়েছেন এবং প্রায় প্রতিদিনই আরও বার্তা পাচ্ছেন এবং সকল বার্তার একটি সাধারণ বক্তব্য এই যে, শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত হবে যদি না উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। প্রতিনিধিদের সাথে মহাসচিব এই মর্মে একমত যে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্যের যে কোনো পরিবর্তন পাকিস্তানের সীমার বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।”

আমি ইতোপূর্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে এই বিষয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেছি।

৫। ২২ অক্টোবর তারিখে মহাসচিব তাঁর ২০ জুলাই এর স্মারকলিপি (উপরে অনুচ্ছেদ ৩ দ্রষ্টব্য) অনুযায়ী এ সমস্যাটির সকল দিক নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার প্রধানদের সাথে ব্যাপক আলোচনার সম্ভাব্য উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে একইরকম বার্তা প্রেরণ করেছেন। বার্তাগুলো নিম্নরূপঃ

(পৃষ্ঠা ৩২২ দ্রষ্টব্য)

৬। ২২ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহাসচিবের ২০ অক্টোবরের বার্তার জবাব দিয়েছেন, যা নিম্নরূপঃ

(পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৩ দ্রষ্টব্য)

৭। ১৬ নভেম্বর তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহাসচিবের ২০ অক্টোবরের বার্তার নিম্নলিখিত জবাব প্রদান করেছেনঃ

(পৃষ্ঠা ৩২৩-৩২৪ দ্রষ্টব্য)

৮। ২২ নভেম্বর তারিখে মহাসচিব ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ১৬ নভেম্বরের পত্রের জবাবে নিম্নলিখিত বার্তা প্রেরণ করেনঃ

আমি অত্যন্ত সম্মানের সাথে আপনার ১৬ নভেম্বরের পত্রের প্রাপ্তিস্বীকার করছি, যাতে আপনি আমার ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখের পত্রের জবাব দিয়েছেন। আমি আলোচ্য পরিস্থিতিতে আমার দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমার প্রস্তাব বিবেচনায় মহামান্যর দৃষ্টিভঙ্গীর সুচিন্তিত ও বিস্তারিত অভিব্যক্তির প্রশংসা করছি, এবং বিশেষ করে সাধুবাদ জানাচ্ছি মহামান্যর এই বক্তব্যকে যে আপনার সরকারের পাকিস্তানের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পরার কোনো অভিপ্রায় নেই। তবে আমি মহামান্যর চিঠির অনুচ্ছেদ ৫ এর বক্তব্য- “পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের রক্ষার বর্তমান প্রচেষ্টা” এবং “মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একে পাক-ভারত বিবাদ হিসেবে বিবেচনা করা কেবল উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে” এর দ্বারা বিভ্রান্ত বোধ করছি। আমি আরও বিভ্রান্ত বোধ করছি অনুচ্ছেদ ৮ এর বক্তব্য দ্বারা যেখানে বলা হয়েছে যে যদি আমি ‘এই দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটি বিচার’ করি তবেই আমি ভারত সরকারের সমর্থন পেতে পারি।

এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি মহামান্যর নিকট আমার প্রস্তাবের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করার প্রয়োজন বোধ করছি। আমার ২০ অক্টোবরের চিঠিটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নিকট ২০ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে পেশকৃত স্মারকলিপির অনুসরণে লিখিত ছিল, যাতে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গীই মহামান্য তাঁর চিঠিতে প্রকাশ করেছেন। কার্যত, আমার উদ্দেশ্য ছিল এই যে এই স্মারকলিপিটি আমার দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।

আমি স্বাভাবিকভাবেই, যথাসম্ভব বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভীষণ গুরুতর পরিস্থিতিটিকে বিচার করতে চেয়েছি এবং আশা করেছি যে উভয় দেশের সরকার প্রধানের সাথে এ বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ পাবো। কোনো একটি মূল ইস্যুকে পাশ কাটানো বা নির্দিষ্ট কোনো ইস্যুতে সমস্যাটিকে সীমিত করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। যদিও, স্বাভাবিকভাবেই, মহাসচিব হিসেবে সনদ অনুসারে আমি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি কোনো সম্ভাব্য হুমকিকে উপেক্ষা করতে পারি না যার অস্তিত্ব বর্তমানে উপমহাদেশে রয়েছে।

মহামান্য অবগত আছেন যে সুনামের সাথে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে, অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে এই অপরিসীম মারাত্মক ও জটিল সমস্যাটিতে মহাসচিবের দাপ্তরিক সুনামের চর্চার কোনো ভিত্তিই দেখা যাচ্ছে না।

৯। ২৩ নভেম্বর তারিখে, মহাসচিব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আরও একটি চিঠি পেয়েছেন যা নিম্নরূপঃ

আমি আপনার কাছে গভীর উদ্বেগের সাথে এই বার্তা প্রেরণ করছি এমন এক গুরুতর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, যা পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বিনা উসকানিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক মাত্রার আক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।

(খ) ২১ নভেম্বর সশস্ত্র হেলিকপ্টার সমর্থিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি কব্জা করেছে এবং পাকিস্তানের সীমার ভেতর প্রায় ১০ মাইল পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। একই দিন, ২৩তম ভারতীয় ডিভিশনের অপর আর একটি ব্রিগেড অবশিষ্ট ডিভিশনের সমর্থন সহকারে পাকিস্তান সীমান্তের আট মাইল অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নোয়াখালী জেলার বেলোনিয়াতে আক্রমণ করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাবডিভিশনেও আক্রমণ করা হয়েছে ৫৭ তম ডিভিশন এর অধীনে এবং আমাদের দুটো সীমান্ত ফাঁড়ি, মুকুন্দপুর ও সালদা নদী, কব্জা করা হয়েছে। সিলেট জেলার মৌলভিবাজার সাবডিভিশনে দুটি ব্যাটালিয়ন গ্রুপ আক্রমণ করেছে এবং তারা ধলাই, অষ্টগ্রাম ও জকিগঞ্জ সীমান্ত ফাঁড়ি কব্জা করেছে। এই ব্যাটালিয়ন গ্রুপে ছিল দুটি গুর্খা কোম্পানি। আরেকটি আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে রংপুর এর ভুরুঙ্গামারি অঞ্চলে যেখানে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান সীমান্তের পনের মাইল অভ্যন্তরে নাগেশ্বরী পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। যশোর জেলায় চৌগাছার বিপরীতে নবম ডিভিশনের একটি ব্রিগেড দ্বারা একটি গুরুতর আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে ট্যাঙ্ক ও এয়ার কভারের সহায়তায়। ভারতীয় টাঙ্ক সেখানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় আট মাইল পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। ভারতীয় একটি বিমান হামলা পাকিস্তান এয়ার ফোর্স প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। একটি ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ধ্বংস হয়েছে এবং আমরা হারিয়েছি দুটি। যুদ্ধে ছয়টি ভারতীয় ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা হয়েছে এবং আমাদের আটটি ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত হয়েছে। যশোর বিমান ঘাঁটিতে থেমে থেমে গোলাবর্ষণ চলছে। ময়মনসিংহ জেলার কড়ইতলায় আমাদের সীমান্ত ফাঁড়িতে পুনঃপুনঃ আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে।

(গ) পূর্ব পাকিস্তানের চতুর্দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ১২টি ডিভিশন মোতায়েন করা হয়েছে। তার সাথে আছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ৩৮টি ব্যাটেলিয়ন। ২য় ও ৫ম ভারতীয় মাউন্টেইন ডিভিশন যা ইতোপূর্বে চীন সীমান্তে মোতায়েন ছিল তা পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের সিলেটের দিকে সরিয়ে আনা হয়েছে নাগাল্যান্ড থেকে যেখানে এখন আর মাত্র একটি ব্রিগেড অবশিষ্ট রয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১২টি স্কোয়াড্রন বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানের চারপাশে রাখা হয়েছে। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ফ্রিগেট, ল্যান্ডিং শিপ ও দু’টি সাবমেরিন সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় একটি বৃহদাকার নৌ বাহিনী চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের জন্য উভচর হুমকিস্বরূপ বিশাখাপট্টমের কাছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়েছে। চালনা বন্দরমুখী জলযানসমূহে ভারতীয় বাহিনীর মাইন হামলার ফলে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য জরুরী সামগ্রী বোঝাই দু’টি  বাণিজ্যতরী বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সরবরাহ গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে।

(ঘ) মহামান্য অবগত আছেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনী গত কয়েক মাস যাবৎ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তসমূহে চাপ বজায় রেখেছে। বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-গোলাবারুদ-রসদ সরবরাহ করা এবং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের সহযোগিতায় পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে হামলা পরিচালনা ছাড়াও, ভারতীয় আর্টিলারি ইউনিটগুলো পূর্ব পাকিস্তান ভূখণ্ডে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, যা আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি যে, গত তিন থেকে চার দিন যাবৎ তারা বিচ্ছিন্ন আক্রমণের পরিবর্তে বিভিন্ন ফ্রন্টে প্রকাশ্য ও বড় মাপের যুদ্ধ শুরু করেছে। সংঘর্ষে তারা ট্যাংক ও বিমানবাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে একে উচ্চতর মাত্রা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর উপর কড়া নির্দেশনা রয়েছে সীমান্ত অতিক্রম না করতে, এবং উপর্যুপরি উসকানির মুখেও সর্বোচ্চ সংযম পালনে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার্থে আমাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করা প্রয়োজন।

(ঙ) আমাদেরকে সময় সময় আশ্বস্ত করা হয়েছে যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি এবং বৃহদায়তন যুদ্ধবিগ্রহ আরম্ভ করতে ইচ্ছুক নয়। এটা এখন স্পষ্ট যে, সংযম চর্চার বদলে ভারত নির্লজ্জচিত্তে এবং বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে। ভারত এখনও এই মর্মে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে যে পাকিস্তানে হানা দিচ্ছে তথাকথিত ‘মুক্তি বাহিনী’- যা কিনা মূলত ভারতের দ্বারা সৃষ্ট, প্রতিপালিত এবং টিকিয়ে রাখা একটি বিদ্রোহী শক্তি। কেউই ভারতীয় এই দাবি দ্বারা প্রতারিত হবে না যা বর্তমানে অপারেশনের মাত্রা দ্বারা এবং এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এমন সরঞ্জামসমূহ যাতে অস্ত্র ও বিমানবাহিনীর অংশবিশেষের অন্তর্ভূক্তি দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

(চ) মহামান্য স্মরণ করতে পারেন যে, গত ২০ জুলাই আপনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে একটি অনানুষ্ঠানিকও গোপনীয় স্মারকলিপি প্রেরণ করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি সম্পর্কে অবহিত করে এবংউপমহাদেশে একটি বৃহত্তর সংঘাতের সম্ভাবনার পপ্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি আপনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলামএবং পূর্ব পাকিস্তানি বাস্তুহারা জনগণের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসা তত্ত্বাবধান করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এর প্রতিনিধিকে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিলাম। সে সময় থেকেই পাকিস্তান উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমনে নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। পরবর্তী একটি সময়ে আমি সীমান্তে একটি দ্বিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতিতেও সম্মত হয়েছিলাম, যে প্রস্তাব অনতিবিলম্বে ১৯ অক্টোবর ১৯৭১ এ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। আরও সাম্প্রতিককালে, আমি আপনার ২০ অক্টোবরের পত্রের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি যাতে আপনি ইন্দো-পাকিস্তান চলতি পরিস্থিতির বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করেছেন এবং একটি মূঢ় ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনায় আপনার উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। সে সময় আপনি সরকারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেকোনো (development) এড়াতে যা পরিস্থিতিকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং আপনি উল্লেখ করেছিলেন যে, আমরা প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময়ে আপনার সহায়তা পেতে পারি। আমি আনন্দের সাথে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলাম এবং এ অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করার উপায় এবং প্রক্রিয়া আলোচনা করবার জন্য আপনাকে ভারত ও পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।

(ছ) আপনি লক্ষ্য করবেন যে পাকিস্তান অব্যাহতভাবে উপমহাদেশের বর্তমান সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং ভারত তা অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।  আমাদের অবস্থান এখনও একই আছে, কিন্তু আমাদের আশংকা যে ভারত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি, যা আমি বর্ণনা করেছি, দ্রুতই এমন একটি দিকে অগ্রসর হচ্ছে যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ থাকবে না। এই সংকটের মুহূর্তে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এখনও এই দুর্যোগকে ঠেকাতে পারে।

(জ) আমি ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের কল্যাণ এবং উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে আপনার অব্যাহত উদ্বেগ সম্পর্কে পরিজ্ঞাত হয়ে আপনার সুপরামর্শের অপেক্ষায় আছি।

১০। ২৬ নভেম্বর, মহাসচিব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে নিম্নরূপ জবাব প্রেরণ করেনঃ

আপনার ২২ অক্টোবর এবং ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ এর পত্রের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার দাপ্তরিক সুনাম সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব এবং আমার পূর্বে উল্লিখিত প্রস্তাবনাসমূহের প্রতি আপনার দ্রুত সাড়া প্রদান আমি প্রশংসার সাথে লক্ষ্য করেছি। উপমহাদেশে উত্তেজনা নিরসনে এবং শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য অন্যান্য পদক্ষেপ সম্পর্কে আপনার ২২ অক্টোবরের পত্রে উল্লেখিত প্রস্তাবনাসমূহও আমি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করেছি। আমার ২০ অক্টোবরের পত্রটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত আমার ২০ জুলাই, ১৯৭১ এর স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে লিখিত হয়েছিল। বৃহত্তর এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি আশা করেছিলাম যে, উভয় সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে পুরো পরিস্থিতিটি পর্যালোচনা করবার একটি সুযোগ পাবো, যাতে কিছু সংখ্যক জরুরী এবং জটিল সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে, যা উভয় সরকারকেই মোকাবেলা করতে হয়।

মহামান্য অবগত আছেন যে, দাপ্তরিক সুনামের চর্চার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি ও সহায়তা প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, অনুতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে মহাসচিবের সুনাম চর্চার কোনো ভিত্তিই এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। তবুও, আমি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর যেকোনো প্রকার সাহায্যে আসতে উৎসুক।

আমি গভীর উদ্বেগের সাথে আপনার ২৩ নভেম্বরের পত্রে বর্ণিত পরিস্থিতির বিবরণ পাঠ করেছি। আমি একান্তভাবে আশা করি যে, জাতিসংঘ এই সহিংসতা তীব্রতর হয়ে একটি মূঢ় ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে উপনীত হওয়া এড়াতে উভয় সরকারের সহায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে।

আমি লক্ষ্য করেছি যে মহামান্যর মতে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এখনও বিপর্যয় রোধ করতে পারে। যদিও আমি এই বিপর্যয় রোধে যেকোনো কিছু করতে উৎসুক, তথাপি আমি এই মুহূর্তে এই উপসংহারে আসতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি জাতিসংঘের সনদ কর্তৃক অনুমোদিত আমার কর্তৃত্বের সীমার মধ্যে যথাসাধ্য কার্যকর এবং অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। মহামান্যর ২৩ নভেম্বরের পত্র অনুসারে, আমি এই বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দের গোচরীভূত করেছি জুলাই এ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত আমার স্মারকলিপির মাধ্যমে, এবং অক্টোবরে, যখন আমি আমার দাপ্তরিক সুনাম চর্চার প্রস্তাব দিই, তখন। আমি অবশ্যই ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখবো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উভয়ের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে জাতিসংঘের সামর্থ্য প্রমাণ করবার জন্য এবং বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতির পেছনে বিদ্যমান মূল সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নির্ণয় করার জন্য।

১১। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে অব্যাহতভাবে অবগত রাখা হয়েছিল মহাসচিবের দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কার্যক্রমের বিষয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নিকট প্রেরিত মহাসচিবের সকল বার্তার অনুলিপি তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর অবগতির জন্য।

১২। ২৯ নভেম্বর তারিখে, জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রেরিত একটি বার্তা মহাসচিব এর নিকট পৌঁছে দেন যা নিম্নরূপঃ

“আমি যথাবিহীত সম্মানের সাথে মহামান্যের নিকট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এর নিম্নোক্ত বার্তাটি পৌঁছে দিচ্ছি। এই বার্তাটি গতকাল গ্রহণ করে হয়েছিল এবং গতকাল রাত ৯টায় মৌখিকভাবে আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এর নিকট পৌঁছানো হয়েছিলঃ

সূচনাঃ

মহামান্য,

আমার ২৩ নভেম্বরের পত্র হতে জেনে থাকবেন, বিনা উসকানিতে ভারতের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মহামান্য অবগত আছেন যে, আপনার দাপ্তরিক সুনাম সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে ভারত ও পাকিস্তান বাহিনীর যুগপৎ অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ভারত, দুঃখজনক ভাবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। শান্তির প্রতি হুমকি অপসারণ এবং পরিস্থিতির অধোগমন রোধে, আমি বর্তমানে মহামান্যকে অনুরোধ করছি অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে আমাদের অংশে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য, যেন তারা আমাদের সীমান্ত লংঘনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পারেন।

জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান

.

13.278.830-831

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন

এস/১০৪১০, অতিরিক্ত ১, ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১

সংযোজন

মহাসচিবের রিপোর্টের সমাপ্তির পর (৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১) (এস/১০৪১০) তিনি দুইটি বার্তা গ্রহণ করেন। একটি পাঠিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অপরটি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।

২। ৩ ডিসেম্বর বিকেলে মৌখিকভাবে প্রাপ্ত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বার্তা ছিল নিম্নরূপঃ

   “(ক) ২ ডিসেম্বর বিকেলে পাঠানকোট, শ্রীনগর ও অমৃতসরে পাকিস্তানী বিমান আক্রমণের পর ৩ ডিসেম্বর সকালে ফরিদকোট (পাঞ্জাব), জয়সালমীর (রাজস্থান) ও যোধপুর (রাজস্থান) এ আরো তিনটি বিমান হামলা চালানো হয়।”

   “(খ) ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় সংসদের এক বিশেষ অধিবেশন আহবান করা হয়েছে।”

   “(গ) আজ মধ্যরাতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন।”

   “(ঘ) পাকিস্তানী সূত্র হতে বলা হচ্ছে, ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

৩। ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট চিঠি পাঠান। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর তা মহাসচিবের নিকট প্রেরণ করেন। চিঠিটি নিম্নরূপঃ

   “(ক) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান যুদ্ধাবস্থা বিষয়ে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করহি। আজ, পশ্চিম পাকিস্তান সময় ১৫.৩০ থেকে ১৬.০০ এর মধ্যে ভারতীয় বাহিনী শিয়ালকোট, জেসার ব্রিজ ও লাহোরের মধ্যবর্তী এক স্থান, রাজস্থান ফ্রন্টের বিপরীতে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের রহিম ইয়ার খান এবং জম্মু ও কাশ্মিরের চাম্বে একসাথে আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ভারতীয় স্থলবাহিনীকে ভারতীয় বিমানবাহিনী সহায়তা প্রদান করে। গত তিন-চারদিন ধরে পশ্চিম পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে আক্রমণাত্মকভাবে রেকি করার পর এই আক্রমণ চালানো হয়।”

   “(খ) পাকিস্তান বাহিনীও প্রয়োজনীয় পালটা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।”

   “(গ) আজ বিকেলে পাকিস্তান বিমান বাহিনী প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ভারত দখলকৃত কাশ্মীর, পাঠানকোট ও অমৃতসরের শ্রীনগর ও অবন্তীপুরে পাকিস্তান বর্ডার সংলগ্ন বিমানঘাটিতে আক্রমণ চালায়।”

   “(ঘ) ভারত দখলকৃত কাশ্মীরের পুঞ্চ ও উরি সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।”

   “(ঙ) মহামান্য আপনি অবগত আছেন যে, ব্যাপক উসকানি সত্ত্বেও আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব নিরসনে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। বহু সপ্তাহ ধরেই পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন এবং বিভিন্ন পয়েন্টে অনধিকারপ্রবেশের ফলে বর্তমানে কৃত্রিম যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু আমরা এই অবস্থা নিয়ন্ত্রণে এবং উত্তেজনা নিরসনে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমার প্রচেষ্টা সম্পর্কে মহামান্য অবগত আছেন। সর্বশেষ আমি পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণের প্রস্তাব দিয়েছি। তারা সীমান্ত পর্যবেক্ষণ এবং আমাদের সীমানা লঙ্ঘনের ব্যাপারে প্রতিবেদন দিবেন।”

   “(চ) বর্তমানে ভারতীয় আগ্রাসন এক বিধ্বংসী অবস্থার সৃষ্টি করেছে যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারণাতীত সমস্যার সৃষ্টি করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নতুবা এর ফলে এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার উপর ভয়ংকর আঘাত আসবে।”

   “(ছ) মহামান্যকে উক্ত অবস্থা জানিয়ে আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ন্যায়বিচার ও শান্তির পক্ষে দাঁড়াবে এবং জাতিসংঘ সনদে সন্নিবেশিত পবিত্র মূলনীতি রক্ষাত্রে সচেষ্ট হবে। এই মূলনীতি ছোট-বড় সকল দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে নিরাপত্তা প্রদান করে এবং এক দেশ কর্তৃক অন্য দেশের উপর শক্তি প্রয়োগ নিষিদ্ধ করে।”

.

13.279.832-837

শিরোনাম সুত্র তারিখ
নিরাপত্তা পরিষদে বিভিন্ন রাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪-৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

যুক্তরাষ্ট্রে কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস ওয়ান ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণের বিবৃতি শুনে উপলব্ধি করেছে যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।

১। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করার জন্য ভারত এবং পাকিস্তানের সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।

২। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে অপরের ভূখন্ডে উপস্থিত সশস্ত্র ব্যাক্তিদের প্রত্যাহার করার আবেদন করছি।

৩। ভারত এবং পাকিস্তান সরকারের অনুরোধের প্রেক্ষিতে যুদ্ধবিরতি এবং সৈন্য প্রত্যাহারের বাস্তবায়নের উপর প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মহাসচিব ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিবেন।

৪। পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায় ফেরত যায় এমন পরিবেশ তৈরী করার জন্য ভারত ও পাকিস্তান এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের আহবান জানাচ্ছি।

৫। এই অঞ্চলের শান্তি নষ্ট করতে পারে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া থেকে সকল রাষ্ট্রকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।

৬। উপমাহাদেশে নিরাপত্তা এবং শান্তি বজায় রাখতে মহাসচিবের দেয়া প্রস্তাবে ভারত এবং পাকিস্তানের সরকারকে ইতিবাচক সাড়া দেয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

৭। এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিবেদন দিতে মহাসচিবের প্রতি অনুরোধ করছি।

বেলজিয়াম, ইতালি এবং জাপান কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

নিরাপত্তা পরিষদ,

৩ ও ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ মহাসচিবের প্রতিবেদন (S/1Q410 and Add. 1 and S/10412) লক্ষ করেছি।

ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণের বিবৃতি শুনে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন যে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে চলতে থাকা যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ। জাতিসংঘের সনদের সংশ্লিষ্ট বিধানে বর্ণিত দায়িত্ব মাথায় রেখে

১। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরকারদের অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি এবং সকল সামরিক ক্রিয়াকলাপ বন্ধ করার জন্য আহবান জানাচ্ছে।

২।  লক্ষ লক্ষ শরণার্থী দ্রুত এবং স্বেচ্ছায় তাদের বাড়িতে ফেরত যেতে পারে এমন অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘ সনদের নীতি অনুসারে সংশ্লিষ্ট সরকারদের তাদের চেষ্টা জোরদার করার আহবান জানাচ্ছে।

৩। শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘব এবং তাদের সাহায্য করার জন্য সকল রাষ্ট্রকে মহাসচিবকে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

৪। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছে।

৫। পরিস্থিতির উপর চোখ রাখা এবং যথাশীঘ্র আবারো সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪১৮, ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

নিরাপত্তা পরিষদের নয় সদস্যের চিঠি এবং মহাসচিবের প্রতিবেদন (এস/১০৪১৮) বিবেচনা করে

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমাধানের আবেদন করছে যা অবধারিতভাবে যুদ্ধবিগ্রহকে বন্ধ করবে।

পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা সকল প্রকার নির্যাতন বন্ধ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানাচ্ছে যা পরিস্থিতির আরো আবনতি ঘটিয়েছে।

আর্জেন্টিনা, নিকারাগুয়া, সিয়েরা লিওন এবং সোমালিয়া কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪১৮, ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

মহাসচিবের ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর প্রতিবেদন (S/10410, S/10410/Add.1) প্রতিবেদন লক্ষ করেছি।

ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণের বিবৃতি শুনে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে চলতে থাকা যুদ্ধবিগ্রহ নিয়ে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন।

উপলব্ধি করেছি ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে চলতে থাকা যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।

যে সকল কারন যুদ্ধবিগ্রহ বাড়িয়েছে সেগুলোকে জাতিসংঘ সনদের মধ্যে থেকে পরবর্তী ধাপে যথাযথভাবে সমাধান করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি।

অবিলম্বে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ এবং সশস্ত্র বাহিনীকে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে নিজেদের পাশে প্রত্যাহার করতে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা আরো উপলব্ধি করছি।

১। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকা সশস্ত্র বাহিনী নিজেদের প্রান্তে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে আহবান জানাচ্ছি।

২। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছি।

আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, বুরুন্ডি, ইতালি, জাপান, নিকারাগুয়া, সিয়েরা লিওন এবং সোমালিয়া কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪১৮, ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

৩ ও ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মহাসচিবের প্রতিবেদন (S/10410 and Add. 1 and S/10412) প্রতিবেদন লক্ষ করে

ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণের বিবৃতি শুনেছি।

ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন যে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে শুরু হওয়া যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।

যে সকল কারন যুদ্ধবিগ্রহ বাড়িয়েছে সেগুলোকে জাতিসংঘ সনদের মধ্যে থেকে পরবর্তী ধাপে যথাযথভাবে সমাধান করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি।

অঞ্চলের স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃস্থাপন এবং শরণার্থীদের তাদের বাড়ি ফেরার জন্য একটা রাজনৈতিক সমাধান উপলব্ধি করেছি।

জাতিসংঘ সনদ, বিশেষ করে প্রবন্ধ ২, অনুচ্ছেদ ৪, এর প্রতি মনোযোগী।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারের উপর ঘোষনা, বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৪,৫ ও ৬, প্রত্যাহার করছি।

অবিলম্বে যুদ্ধ বিগ্রহ বন্ধ এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের নিজেদের প্রান্তে সশস্ত্র বাহিনীদের প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য আশু পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি।

জাতিসংঘ সনদের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদের দায়িত্ব মনে রাখছি।

১। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের অপর প্রান্তে থাকা সশস্ত্র বাহিনী নিজেদের প্রান্তে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে আহবান জানাচ্ছি।

২। স্বেচ্ছায় পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের তাদের বাড়িতে ফেরত যাবার মত অবস্থা দ্রুত তৈরী করার জন্য সনদের নীতি মোতাবেক জোরদার চেষ্টার আহবান করছি।

৩। শরণার্থীদের দুর্দশা লাঘব এবং তাদের সাহায্য করার জন্য সকল রাষ্ট্রকে মহাসচিবকে পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

৪। এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছি।

৫। পরিস্থিতির উপর চোখ রাখা এবং যথাশীঘ্র আবারো সাক্ষাৎ করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

চীন কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪১৮, ডিসেম্বর ৫, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণের বিবৃতি শুনেছি।

বিশেষভাবে লক্ষ্য করছি যে ভারত পাকিস্তানের উপরে বৃহদাকারে আক্রমণ করেছে এবং এভাবে ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের শান্তি অবনমন ঘটাচ্ছে।

ভারত সরকারের তথাকথিত ‘বাংলাদেশ’ গড়ার এবং পাকিস্তানকে পরাজিত ও বিচ্ছিন্ন করার কাজের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

ভারত সরকারকে তার সশস্ত্র বাহিনী ও প্রেরিত সশস্ত্র ব্যাক্তিদের পাকিস্তানী এলাকা থেকে প্রত্যাহার করার অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে আহবান জানাচ্ছি এবং প্রতি-আক্রমণের জন্য ভারতীয় এলাকায় পাঠানো পাকিস্তানী সশস্ত্র বাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।

যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে প্রত্যাহারের জন্য এবং একে অপরের বিরুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার অমিমাংসিত বিষয় শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারত ও পাকিস্তানকে যথাক্রমে আহবান জানাচ্ছি।

ভারতের আঘাত থামানোর জন্য পাকিস্তানের জনগণের ন্যায় সংগ্রামে সকল রাষ্ট্রকে সমর্থন দেয়ার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

এই প্রস্তাবের বাস্তবায়নের উপরে যথাশীঘ্র সম্ভব প্রতিবেদন দেয়ার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছি।

বেলজিয়াম, ইতালি, জাপান, নিকারাগুয়া। সিয়েরা লিওন এবং তিউনিসিয়া কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪১৮, ডিসেম্বর ৫, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন যে ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তে শুরু হওয়া যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।

১। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সরকারদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহবান জানাচ্ছি।

২। এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছি।

৩। এই অঞ্চলে শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য অধিকতর পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে

খসড়া প্রস্তাব এস/১০৪২৫ সংশোধন

৮/১০৪২৬ ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

চলতি অনুচ্ছেদ ১ এ ‘সংশ্লিষ্ট সরকার’ শব্দগুলোকে ‘সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষ’ দিয়ে পুনঃস্থাপিত করুন; একই অনুচ্ছেদের শেষে ‘এবং সকল সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ’ যোগ করুন।

২। চলতি অনুচ্ছেদ ১ এবং ২ এর মধ্যে নিম্নোক্ত লেখাটি অনুচ্ছেদ ২ এবং ৩ হিসেবে যুক্ত করুনঃ

“(২) ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দ্বারা প্রকাশিত ইচ্ছার স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি একইসাথে আহবান জানাচ্ছি”।

“(৩) প্রস্তাবের চলতি অনুচ্ছেদ ১ ও ২ অনুচ্ছেদকে একক হিসেবে ঘোষণা

দিচ্ছি”।

৩। অন্যান্য চলতি অনুচ্ছেদকে এইসাপেক্ষে পুনঃতালিকা করুন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে

 খসড়া প্রস্তাব ৮/১০৪২৫ পুনঃসংশোধন

এস/১০৪২৬, পুনঃ ১, ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

১। চলতি অনুচ্ছেদ ১ এ ‘সংশ্লিষ্ট সরকার’ শব্দগুলোকে ‘সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষ’ দিয়ে পুনঃস্থাপিত করুন; একই অনুচ্ছেদের শেষে ‘এবং সকল যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ’ যোগ করুন।

২। চলতি অনুচ্ছেদ ১ এবং ২ এর মধ্যে নিম্নোক্ত লেখাটি অনুচ্ছেদ ২ এবং ৩ হিসেবে যুক্ত করুনঃ

“(২) ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দ্বারা প্রকাশিত ইচ্ছার স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি একইসাথে আহবান জানাচ্ছি”।

“(৩) প্রস্তাবের চলতি অনুচ্ছেদ ১ ও ২ অনুচ্ছেদকে একক হিসেবে ঘোষণা

দিচ্ছি”।

৩। অন্যান্য চলতি অনুচ্ছেদকে এইসাপেক্ষে পুনঃতালিকা করুন।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪২৬, ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হওয়া যুদ্ধবিগ্রহ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ।

১। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সকল সংশ্লিষ্ট পক্ষকে যুদ্ধবিরতি এবং সকল যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করার আহবান জানাচ্ছি।

২। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ দ্বারা প্রকাশিত ইচ্ছার স্বীকৃতি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পাকিস্তান সরকারের প্রতি একইসাথে আহবান জানাচ্ছি।

৩। প্রস্তাবের চলতি অনুচ্ছেদ ১ ও ২ অনুচ্ছেদকে একক হিসেবে ঘোষণা

দিচ্ছি।

৪। এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবহিত রাখার জন্য মহাসচিবকে অনুরোধ করছি।

৫। এই অঞ্চলের শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপের নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

আর্জেন্টিনা, বুরুন্ডি, জাপান, নিকারাগুয়া, সিয়েরা লিওন এবং সোমালিয়া

 কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে খসড়া প্রস্তাব

এস/১০৪২৯, ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

এস/এজেন্ডা/১৬০৬ নথিতে থাকা আলোচ্যসূচি বিবেচনা করেছি।

নিরাপত্তা পরিষদের ১৬০৬ ও ১৬০৭ তম সভায় স্থায়ী সদস্যদের মিলের অভাব একে আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব পালন থেকে বাধাগ্রস্থ করেছে।

৩ নভেম্বর, ১৯৫০ এর সাধারন অধিবেশন ৩৭৭-এ (ভি) মোতাবেক ২৬তম সাধারন অধিবেশনে এস/এজেন্ডা/১৬০৬ নথিতে থাকা প্রশ্ন পড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

.

13.280.838-840

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সাধারণ পরিষদে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর সাধারণ অধিবেশন নং এ/এল-৬৪৭ এ আর্জেন্টিনা, বুরুন্ডি, কেমেরুন, ঘানা, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, ইটালী, জাপান, নিকারাগুয়া, সিয়েরালিওন, সোমালিয়া, স্পেন, সুদান এবং তিউনেশিয়া প্রভৃতি দেশের রেজ্যুলেশনের খসড়া

এই সাধারণ অধিবেশন

৩রা এবং ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখের সেক্রেটারী জেনারেল মহোদয়ের রিপোর্ট এবং ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখের কাউন্সিল রেজ্যুলেশন ৩০৩ (১৯৭১) এর লিখনী সমৃদ্ধ নিরাপত্তা পরিষদের পত্রখানা আমলে নিয়ে

ভারত এবং পাকিস্তানের শত্রুতার প্রাদুর্ভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এটি একটি অত্যাসন্ন হুমকি হিসেবে চরম উতকন্ঠিত।

এই বৈরী অবস্থা থেকে উদ্ভূত নানা সমস্যা সমূহ পরবর্তী পর্যায়ে জাতিসংঘ সনদের মধ্যে থেকেই যথাযথভাবে সমাধানের প্রয়োজন স্বীকার করে নিয়ে

সংঘাতময় এলাকাসমূহে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান দরকার হতে পারে বলে প্রত্যয় জ্ঞাপন করে।

সনদের অনুবিধিসমূহ বিশেষতঃ আর্টিকেল ২, প্যারাগ্রাফ ৪ এর আলোকে

স্ট্রেংদেনিং অফ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এর ঘোষণা সমূহ বিশেষতঃ প্যারাগ্রাফ ৪, ৫ এবং ৬ স্মরণ করে

আরো প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরী পরিস্থিতির আশু সমাধা এবং সীমান্তের নিজ নিজ পার্শ্বে ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাবর্তনের জন্য ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সনদের আদর্শ এবং নীতিসমূহের মানসে এবং তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্থাপিত ও ১৯৫০ সালের ৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত অধিবেশনের রেজ্যুলেশন ৩৭৭-এ(পাঁচ) এর অধীনে

১) ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং নিজেদের সীমানার বাইরে অবস্থিত সেনা নিজ নিজ সীমান্তে প্রত্যাহারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহবান করছে;

২) পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীগণ যাতে স্বেছায় নিজেদের স্থানে ফেরত যাবার মত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত এবং  সনদের আদর্শ এবং নীতি অনুসারে জোর পদক্ষেপ নেবার জন্য তাগিদ দিচ্ছে;

৩) শরনার্থীগণকে সহায়তা প্রদান এবং দুর্দশা লাগবে মহাসচিবকে সহযোগিতা করার জন্য সকল রাষ্ট্রকে অনুরোধ জানাচ্ছে;

৪) বর্তমান রেজ্যুলেশনের বাস্তবায়নের হাল অবস্থা তৎক্ষণাৎ সাধারণ অধিবেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করার জন্য মহাসচিবের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছে;

৫) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সে অনুযায়ী সমাধান খোঁজার জন্য প্রয়োজনে পুনরায় মিলিত হবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে;

৬) বর্তমান রেজ্যুলেশনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহবান জানাচ্ছে;

————

সাধারণ অধিবেশনে আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বুরুন্ডি, কেমেরুন, চাদ, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ঘানা, গুয়াতেমালা, হাইতি, হন্ডুরাস, ইন্দোনেশিয়া, ইটালী, আইভরি কোস্ট, জাপান, জর্দান, লাইবেরিয়া, লিবিয়ান আরব রিপাবলিক, মরক্কো, নেদারল্যান্ড, নিকারাগুয়া, পানামা, প্যারাগুয়ে, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, স্পেন, সুদান, তিউনেশিয়া, উরুগুয়ে, ইয়েমেন, জাইরে এবং জাম্বিয়া প্রভৃতি দেশ কর্তৃক রেজ্যুলেশনের পুনর্লিখন

এ/এল ৬৪৭/রিভ ১, ডিসেম্বর ৭, ১৯৭১

এই সাধারণ অধিবেশন

৩রা এবং ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখের সেক্রেটারী জেনারেল মহোদয়ের রিপোর্ট এবং ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখের কাউন্সিল রেজ্যুলেশন ৩০৩ (১৯৭১) এর লিখনী সমৃদ্ধ নিরাপত্তা পরিষদের পত্রখানা আমলে নিয়ে

ভারত এবং পাকিস্তানের শত্রুতার প্রাদুর্ভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এটি একটি অত্যাসন্ন হুমকি হিসেবে চরম উতকন্ঠিত।

এই বৈরী অবস্থা থেকে উদ্ভূত নানা সমস্যা সমূহ পরবর্তী পর্যায়ে জাতিসংঘ সনদের মধ্যে থেকেই যথাযথভাবে সমাধানের প্রয়োজন স্বীকার করে নিয়ে

সংঘাতময় এলাকাসমূহে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেবার জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান দরকার হতে পারে বলে প্রত্যয় জ্ঞাপন করে।

সনদের অনুবিধিসমূহ বিশেষতঃ আর্টিকেল ২, প্যারাগ্রাফ ৪ এর আলোকে

স্ট্রেংদেনিং অফ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এর ঘোষণা সমূহ বিশেষতঃ প্যারাগ্রাফ ৪, ৫ এবং ৬ স্মরণ করে

আরো প্রত্যয় ব্যক্ত করেন যে ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার বৈরী পরিস্থিতির আশু সমাধা এবং সীমান্তের নিজ নিজ পার্শ্বে ভারত এবং পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর প্রত্যাবর্তনের জন্য ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

সনদের আদর্শ এবং নীতিসমূহের মানসে এবং তাতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংস্থাপিত ও ১৯৫০ সালের ৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত অধিবেশনের রেজ্যুলেশন ৩৭৭-এ(পাঁচ) এর অধীনে

১) ভারত এবং পাকিস্তান সরকারকে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং নিজেদের সীমানার বাইরে অবস্থিত সেনা নিজ নিজ সীমান্তে প্রত্যাহারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহবান করছে;

২) পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীগণ যাতে স্বেছায় নিজেদের স্থানে ফেরত যাবার মত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত এবং  সনদের আদর্শ এবং নীতি অনুসারে জোর পদক্ষেপ নেবার জন্য তাগিদ দিচ্ছে;

৩) শরনার্থীগণকে সহায়তা প্রদান এবং দুর্দশা লাগবে মহাসচিবকে সহযোগিতা করার জন্য সকল রাষ্ট্রকে অনুরোধ জানাচ্ছে;

৪) বর্তমান রেজ্যুলেশনের বাস্তবায়নের হাল অবস্থা তৎক্ষণাৎ সাধারণ অধিবেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করার জন্য মহাসচিবের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছে;

৫) পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা এবং সে অনুযায়ী সমাধান খোঁজার জন্য প্রয়োজনে পুনরায় মিলিত হবার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে;

৬) বর্তমান রেজ্যুলেশনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহবান জানাচ্ছে;

————

ইউএসএসআর কর্তৃক আনিত সাধারণ অধিবেশন রেজ্যুলেশনের খসড়া

এ/এল ৬৪৮, ডিসেম্বর ৭, ১৯৭১

এই সাধারণ অধিবেশন

ভারত এবং পাকিস্তানের শত্রুতার প্রাদুর্ভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এটি একটি অত্যাসন্ন হুমকি হিসেবে চরম উতকন্ঠিত হয়ে –

১) প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত প্রকার বৈরীতা নিরসনের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আহবান জানাচ্ছে;

২) একইসাথে পাকিস্তান সরকারকে আহবান জানাচ্ছে ডিসেম্বর, ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রকাশিত পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছার যথাশীঘ্র স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে সেখানকার রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য;

৩) এই রেজ্যুলেশনের অনুচ্ছেদ ১ এবং ২ এ বর্ণিত ব্যবস্থাগুলো দ্বারাই গোটা রেজ্যুলেশন ঘোষণা করা হোক।

৪) বর্তমান রেজ্যুলেশনের বাস্তবায়নের হাল অবস্থা তৎক্ষণাৎ সাধারণ অধিবেশন এবং নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করার জন্য মহাসচিবের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছে;

৫) বর্তমান রেজ্যুলেশনের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নিরাপত্তা পরিষদকে আহবান জানাচ্ছে;

.

13.281.841-842

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সাধারণ পরিষদে গৃহীত প্রস্তাব জাতিসংঘ ডকুমেন্টেস ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ৩রা এবং ৪ঠা ডিসেম্বরে মহাসচিবের প্রতিবেদন এবং ৬ই ডিসেম্বর বিরাপত্তা পরিষদের প্রধানের চিঠি কাউন্সিল রেজুলুশান ৩০৩ (১৯৭১) লেখা নোট করা হয়।

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার প্রতিকূল মনোভাব যা আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তাকে হুমকিগ্রস্থ করছে তার জন্য গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

যুদ্ধবিগ্রহ বৃদ্ধি করার কারণ সমূহ জাতিসংঘের চার্টারের কাঠামোর মধ্যে নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে উপযুক্ত ভাবে মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তার স্বীকৃতি প্রদান।

দৃঢ় বিশ্বাস যে সংঘাতপূর্ণ এলাকায় স্বাভাবিকতার শর্তপূরণ এবং শরণার্থীদের নিজ বাসস্থানে ফেরত পাঠানোর জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান প্রয়োজন।

চার্টারের বিধান বিশেষ করে আর্টিক্যাল ২ অনুচ্ছেদ ৪ সম্পর্কে সচেতন।

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৪,৫ এবং ৬ শক্তিশালী করে পরে ঘোষণা স্মরণ।

অবিলম্বে ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থা তাৎক্ষনিক ভাবে অবসান করার ব্যাবস্থা নিতে এবং ভারত পাকিস্তান সীমান্তে তাদের নিজস্ব দিক থেকে সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহারের প্রভাব আবারো স্বীকৃতিপ্রদান।

১৯৫০ সালের ৩রা নভেম্বর এসেম্বলি রেজুলুশানের ৩৯৯-এ(৫) অদীনে চার্টারের উদ্দেশ্য নীতি এবং সাধারণ স্বভাব দ্বায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা।

১. ভারত পাকিস্তানের সরকার কে তাৎক্ষনিক যুদ্ধ বিরতির জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার এবং ভারত পাকিস্তানের সীমান্তের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের নিজ নিজ পার্শ থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান।

২. জাতিসংঘের উদ্দেস্য এবং সনদ নিতি অনুসরণে পূর্ব পাকিস্তানের সকল শরনার্থীদের তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে প্রেরণের প্রচেষ্টা চালানোর আহব্বান।

৩. সহযোগিতা বণ্টন এবং শরণার্থীদের দুঃখ অবস্থা থেকে মুক্তিদানের জন্য সাধারণ সম্পাদককে সকল রাজ্যে পূর্ণ সহযোগিতা করার আহব্বান।

৪. প্রতিটি প্রচেষ্টা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় বেসামরিক জনগণের সুবিধা এবং জীবণ রক্ষাকারী হওয়ার আহব্বান।

৫. সাধারণ সভা রাখার জন্য সাধারণ সম্পাদক এবং নিরাপত্তা পরিষদের এবং বর্তমান রেজুলুশ্যান বাস্তবায়নের ব্যাপারে অবহিত করার অনুরোধ।

৬. পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী প্রশ্ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করার এবং সম্মুখীন হওয়ার আহব্বান।

.

13.282.843-846

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘের ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেবার জন্য স্বীয় প্রচেষ্টার উপর মহাসচিবের প্রতিবেদন জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ডিসেম্বর ৭, ১৯৭১

জাতিসংঘের ও অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেবার জন্য স্বীয় প্রচেষ্টার উপর মহাসচিবের প্রতিবেদন।

এস/১০৪৩৩, ডিসেম্বর ৭, ১৯৭১

জাতিসংঘ মহাসচিব ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘের পূর্ব পাকিস্তান রিলিফ অপারেশন (ইউএনইপিআরও) এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এই রিপোর্টে উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গকে পূর্ব পাকিস্তান হতে সরিয়ে আনতে মহাসচিবের তৎপরতা বর্ণিত হয়েছে। এই তৎপরতা ঢাকায় আটকে পড়া জাতিসংঘের ৪৬ কর্মকর্তাসহ সর্বমোট ২৪০ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গকে সরিয়ে এনেছে।

২। ১৯৭১ সালের নভেম্বরের শেষদিকে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থার ক্রমাবনতি হওয়া সত্ত্বেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে, ইউএনইপিআরও এর তৎপরতা যতটুকু সম্ভব চালিয়ে যাওয়া হবে। ইউএনইপিআরও এর কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। ব্যাংকক ও সিঙ্গাপুরকে অপারেশনের প্রধান কেন্দ্র এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু ৪৭ জন কর্মকর্তা তখনো পূর্ব পাকিস্তানে ছিলেন। তারা ঢাকায় জড়ো হয়েছিলেন।

৩। ডিসেম্বরের ৩ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান শহরগুলোতে বিমান আক্রমণ শুরু হওয়ায় অবস্থার মারাত্মক অবনতি ঘটে। এটা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে ইউএনইপিআরও তার কাজ চালিয়ে যাবার মত অবস্থায় আর নেই। তখন জাতিসংঘের ৪৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৪৭ তম ব্যক্তি, যিনি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এর কর্মকর্তা ছিলেন, তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক। কর্মকর্তাদের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ইউএনইপিআরও এবং ইউনিসেফের অফিস ও যন্ত্রপাতি হেফাজতের দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়েছিল। (দেখুন- এ/পিভি-২০০১)

৪। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে মহাসচিব উক্ত কর্মকর্তাগণের স্থানান্তর প্রক্রিয়ার তৎপরতা শুরু করেছিলেন। এতে ঢাকা, নয়াদিল্লী ও ব্যাংককের জাতিসংঘ প্রতিনিধিগণ সহযোগিতা করেছিলেন। ঐ সময় ঢাকার সাথে সকল সড়ক ও নৌ যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তখন বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ ছিল আকাশপথ। কিন্তু আকাশপথে বেরিয়ে আসাও অনেক কঠিন ছিল। কিছুদিন আগেই ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হয়। এই বিমান হামলায় ইউএনইপিআরও এর দুইটি বিমানও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ঢাকা হতে এবং ঢাকাগামী সকল বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল হয়ে যায় এবং বিমান কোম্পানিগুলো চার্টার ফ্লাইট ব্যবস্থা করতেও অনিচ্ছুক ছিল।

৫। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে জাতিসংঘের ব্যক্তিদের সরিয়ে নেবার জন্য কানাডীয় সরকার একটি সি-১৩০ বিমান দিতে রাজি হয়। বিমানটি ঢাকা থেকে আড়াই ঘন্টা দূরত্বে ব্যাংককে অবস্থান করছিল।    ডিসেম্বরের ৫ তারিখে স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যুদ্ধাবস্থার কারণে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের নিকট হতে বিশেষ ছাড়পত্র নেবার প্রয়োজন হয়। পাকিস্তান ও ভারতীর সরকারের মধ্যে সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়। ঢাকা বিমানবন্দরের ভিতর, চারপাশ এবং ঢাকা-ব্যাংকক আকাশপথ যুদ্ধবিরতির অর্ন্তভূক্ত করা হয়। বিমানের অবতরণ, লোডিং ও উড্ডয়নের লক্ষ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব ডিসেম্বরের ৫ তারিখ ১০.৩০ থেকে ১৮.৩০ (ইপিটি সময়) পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন।

৬। ৪ ডিসেম্বর বিকেলে পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধে রাজি হয়। কিন্তু ভারতীয় সরকার সময়মত সকল আয়োজন করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলে স্থানান্তর প্রক্রিয়া ২৪ ঘন্টার জন্য স্থগিত করতে হয়।

৭। ঢাকায় আটকে পড়া ব্যক্তিদের মধ্যে ইউএনইপিআরও এর সহকারী মহাসচিবও ছিলেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দূতাবাস তার নিকট অনুরোধ করছিল তাদের কর্মকর্তা ও নাগরিকদের সরিয়ে নিতে সহায়তা করতে। নাগরিকদের মাঝে অনেক মহিলা ও শিশু ছিল। মহাসচিবের অনুমতিক্রমে সহকারী মহাসচিব তাদের অনুরোধ মেনে নিতে সম্মত হন। এর ফলে ডিসেম্বরের ৫ তারিখে ৪৬ জাতিসংঘ কর্মকর্তা, রেডক্রসের ৪ কর্মকর্তা, বিভিন্ন দূতাবাসের ৮৭ ব্যক্তি এবং ৮০ জন নারী ও শিশুকে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করা হয়। পরবর্তীতে সর্বমোট ২৪০ ব্যক্তিকে সরিয়ে আনার পরিকল্পনা হয়। এই বৃহৎ দলে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, জার্মানি, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, নেপাল, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, তাঞ্জানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুগোশ্লাভিয়ার নাগরিক ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীদের বহন করার জন্য জাতিসংঘ প্যান-আমেরিকান এয়ারওয়েজের একটি বোয়িং-৭০৭ ভাড়া করে। ৭ ডিসেম্বর, এই দ্বিতীয় বিমানটির ঢাকায় পৌছার সময় নির্ধারণ করা হয়।

৮। ৫ ডিসেম্বর বিকেলে মহাসচিবের অনুরোধে ভারতীর কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে সম্মতি প্রদান করে। কিন্তু এটি খুব অল্প সময়ের জন্য। ৬ ডিসেম্বর ১০.৩০ থেকে ১২.৩০ (ইপিটি) ঘন্টা পর্যন্ত। এই ঘোষণার সাথে সাথেই কানাডীয় সি-১৩০ বিমানকে ভারতীর কর্তৃপক্ষের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশ দেয়া হয়।

৯। ৬ ডিসেম্বর ইউএনইপিআরও ঢাকা থেকে মহাসচিবের নিকট প্রতিবেদন প্রেরণ করে যে, কানাডীয় সি-১৩০ বিমানটি ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ১৭০ মাইল (আকাশপথে ১০ মিনিট) দূরত্বে থাকা অবস্থায় বিমানবন্দর ভারতীয় বিমান আক্রমণের স্বীকার হয়। বিমানবন্দরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থেকে ব্যাপক বিমান-বিধ্বংসী গোলাবর্ষণ করা হয়। ঐ সময় স্থানান্তরের অপেক্ষায় থাকা যাত্রীরা বাসে করে বিমানঘাটির দিকে যাচ্ছিলেন। সামনের বাসটির অধিকাংশ যাত্রীই ছিল নারী ও শিশু। তাদের পরিখাতে আশ্রয় নিতে হয়। তাদের ২৫ মিটার দূরে বোমা বিষ্ফোরিত হয় কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নিয়ন্ত্রণ কক্ষ হতে কানাডীয় বিমানটিকে ফেরত আসার নির্দেশ দেয়া হয় এবং বিমানটি ব্যাংকক ফেরত আসে।

১০। উক্ত অংশটি উল্লেখিত ঘটনা নিয়ে ইউএনইপিআরও এর বিমান উপদেষ্টা কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনের অংশ।

   “(ক) ৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১, আমি ঢাকা বেসামরিক বিমানবন্দরে কানাডীয় সি-১৩০ ৩০৫, ফ্লাইট নং ৫০১ এর আগমনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বিমানটি ব্যাংকক হতে ঢাকা আসছিল। উক্ত ফ্লাইটের উদ্দেশ্য ছিল নারী, শিশু, জাতিসংঘ কর্মকর্তা এবং অন্যান্য মিশনের সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তিবর্গকে সরিয়ে নেয়া।

    (খ) ঢাকার স্থানীয় সময় ১০.৩০ এ ভারতীয় ও পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ স্থানান্তরের অনুমতি দেয়।

    (গ) বিমানটি ঢাকা পৌছার ৪৫ মিনিট পূর্বে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিল। ক্যাপ্টেন স্থানীয় সময় ১০.৫০ এ পৌছার সময় ঠিক করেছিলেন। ০৯.৩০ এ ভারতীয় বিমান বাহিনী কর্তৃক বিমানবন্দরের উপর আক্রমণ শুরু হয়, যা ০৯.৪২ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। দ্বিতীয় আক্রমণ ছিল ৭ মিনিট ব্যাপী। রানওয়েতে বোমাবর্ষণ করা হয় এবং তিনটি স্থান ক্ষতিগ্রস্থ হয়। স্থানীয় সময় ১০.৪১ এ অন্য একটি আক্রমণ পরিচালিত হয়। ঐ সময় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আঞ্চলিক কন্ট্রোলার জানান যে, বিমানবন্দরের আক্রমনটি একটি পূর্ণ শক্তির আক্রমণ এবং বিমানবন্দরে বোমা বর্ষিত হচ্ছে। তিনি বিমানটিকে ব্যাংকক ফিরে যেতে বলেন।

   (ঘ) প্রথম আক্রমণে বোমার আঘাতে শুধু রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বোমার আঘাতে গর্ত তৈরি হয়। সম্ভবত গভীর গর্ত সৃষ্টিকারী এবং দেরিতে বিষ্ফোরিত হয় এমন সব বোমা ব্যবহৃত হয়। আমি বোমার পতন ও বিমান চলে যাওয়ার পরও বিষ্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম।

   (ঙ) স্থানীয় সময় ১৩.১০ এ পুনরায় বোমাবর্ষণ করা হয় এবং এতে রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।”

১১। তৎক্ষণাৎ মহাসচিবের প্রতিনিধিগণ জাতিসংঘে ভারতীর স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আটকে পড়া ব্যক্তিদের সরিয়ে আনার জন্য নতুন পরিকল্পনা করেন। ৭ ডিসেম্বর কানাডীয় সি-১৩০ ও প্যান আমেরিকান বোয়িং ৭০৭ ব্যবহার করে তাদের সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ঢাকা ও এর পাশবর্তী এলাকায় ০৮.৩০ থেকে ১২.৩০ (ইপিটি সময়) পর্যন্ত অস্ত্রবিরতির এবং ঢাকা-ব্যাংকক আকাশপথের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য ভারত ও পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ করা হয়।  উভয় সরকারই অনুরোধ মেনে নিতে সম্মত হয়।

১২। ৭ ডিসেম্বর ঢাকা হতে ইউএনইপিআরও কর্তৃক জানানো হয় যে, ০৯.৩০ (ইপিটি সময়) এর মধ্যে ঢাকা বিমানবন্দরের রানওয়ে উভয় বিমানের অবতরণ উপযোগী করা সম্ভব। জাতিসংঘ সদরদপ্তর থেকে নতুন স্থানান্তর পরিকল্পনা অনুসরণ করার জন্য নির্দেশনা জারী করা হয়। সি-১৩০ বিমানটি প্রথমে ঢাকা রওয়ানা হবে এবং বোয়িং ৭০৭ পৌছার পূর্বে রানওয়ের অবস্থা পরখ করবে।

১৩।  স্থানীয় সময় ০৬.৪৫ (গ্রীনিচ সময় ২৩.৪৫) এ সি-১৩০ বিমানটি ব্যাংকক ত্যাগ করে। কিন্তু এটি ঢাকা পৌছার পূর্বেই আবার ফিরে আসে। বিমান কমান্ডারের প্রতিবেদনের সারাংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

     (ক) বিমানটি গ্রীনিচ সময় ২৩.৪৫ এ ব্যাংকক বিমানবন্দর ত্যাগ করে এবং জাতিসংঘের পরিকল্পনা অনুসারে অগ্রসর হতে থাকে। রেঙ্গুনে থাকা অবস্থার ঢাকা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয় যে, রানওয়ে ব্যবহারযোগ্য না থাকায় অবতরণের অনুমতি দেওয়া হবেনা। রেঙ্গুনের আকাশে এক ঘন্টা ছাব্বিশ মিনিট ধরে চক্কর দেওয়ার পর অবশেষে বিমানটিকে ঢাকা বিমানবন্দরের উপর উড়ে চাক্ষুষ পরিদর্শনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু রানওয়েতে অবতরণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।

    (খ) বিমানটি পূর্বে সম্মত হওয়া পথ অনুসরণ করতে থাকে। বিমানটি গ্রীনিচ সময় ০৩.৪৫ এ ২১.০৫ডিগ্রি উত্তর ও ৯১.১৫ডিগ্রি পূর্বে ২০,০০০ ফিট উচ্চতায় ছিল। বিমানের কমান্ডার দেখতে পান যে, দুইটি এসকর্টসহ একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি দেখতে পান যে, একটি যুদ্ধবিমান ক্যারিয়ারের পাশে উড়ছে। তিনি ধারণা করেন যুদ্ধবিমানটি কানাডীয় বিমানটিকে এসকর্ট করার জন্য এসেছে। তিনি লক্ষ্য করেন যে, দ্বিতীয় আরেকটি বিমান ক্যারিয়ারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং ঐ সময় ক্যারিয়ার থেকে ধোয়া বের হওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয় বিমানটি ক্যারিয়ার পার হয়ে যাওয়ার পর কালো ধোয়ার মেঘ দৃষ্টিগোচর হয়।

    (গ) তারপর বিমানের কমান্ডার লক্ষ্য করেন যে, নিচে বাম পাশ থেকে তার বিমান লক্ষ্য করে বিমান-বিধ্বংসী গোলা ছোড়া হয়েছে। তিনি বাইরে বিষ্ফোরণের শব্দ শোনেন এবং ধারণা করেন বোমাটি বিমানের দিকেই আসছে। অতঃপর তিনি ‘মে ডে’ এবং ‘বিপদ সংকেত’ প্রেরণ করেন এবং বিমানের দিক ব্যাংককের দিকে ঘুরিয়ে দেন।

    (ঘ) ঐ সময়েই ব্যাংকক রেডিও হতে এয়ার ট্রান্সপোর্ট কমান্ড অপারেশনের একটি বার্তা তিনি গ্রহণ করেন। ঐ বার্তায় বিমানটিকে তৎক্ষণাৎ ব্যাংকক ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কোন উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছাড়াই গ্রীনিচ সময় ০৬.৪৫ এ বিমানটি ব্যাংকক পৌছে। তাৎক্ষণিক পরীক্ষায় দেখা যায় যে, বিমানের কোন ক্ষতি হয়নি।

১৪। এটি উল্লেখ করা সঙ্গত যে, উল্লেখিত ঘটনার সময় সি-১৩০ বিমানটি ঢাকা-ব্যাংকক আকাশপথে সম্মত হওয়া পথে নিরাপদে ছিল। বিমানটিকে ফিরিয়ে আনার সাথে সাথে বোয়িং ৭০৭ এর ফ্লাইটটিও বাতিল করা হয়।

১৫। বিমানে স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অন্যান্য সম্ভাবনাসমূহ এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মহাসচিব রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। তিনি ঢাকা প্রতিনিধিকে আন্তর্জাতিক কমিটির সাথে পূর্ণ সহযোগিতার আদেশ দেন এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন।

.

13.283.847-848

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত জাতিসংঘে নিযুক্তপাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধির পত্র জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত জাতিসংঘে নিযুক্তপাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধির পত্র

A 8  7 S 1,  ডিসেম্বর ৯, ১৯৭১

        আমার সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, আমি এই বিবৃতি প্রদানের সুযোগ পাচ্ছি যে যদিও ৭ই ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহিত রেজোল্যুশন ২৭৯৩ (৬) পাকিস্তানে ভারতের আক্রমণের (যা ভারত স্বীকার করেছে) নোট গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে তবুও পাকিস্তান সরকার তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি ও রেজোল্যুশনে উল্লেখ করা সৈন্যদল অপসারণের প্রস্তাব গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু এই রেজোল্যুশনে প্রত্যেক দলকে তার সীমান্ত সংলগ্ন শহরের পাশ থেকে সৈন্য অপসারণের কথা উল্লেখ রয়েছে, এবং তাই রক্তপাত থামাতে, পাকিস্তান ঐ সময়ে এটির অপ্রাচুর্যতা উপেক্ষা করতে ইচ্ছুক। রেজোল্যুশনের পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রারম্ভিক অনুচ্ছেদে পাকিস্তান যথাযথ গুরুত্ব আরোপ করে, যা, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদারকরণ ঘোষণা অধ্যায়ের বিধানগুলো পুনর্ব্যক্ত করে, বিশেষ করে আর্টিকেল দুই, অনুচ্ছেদ ৪, প্রত্যাহার অনুচ্ছেদ ৪, ৫ ও ৬ যা উল্লেখ করেঃ

সাধারণ অধিবেশন।

*                               *                               *                               *

        ৪. বিধিসম্মতভাবে পুনর্নিশ্চিত করে যে রাষ্ট্রসমূহকে অন্যান্য রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও বৈদেশিক সরাসরি বা গোপনীয়ভাবে হস্তক্ষেপ, বলপ্রয়োগ বা অবরোধ, বিশেষ করে শক্তি ব্যবহার বা হুমকি মুক্ত ভাবে জনগণের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারনের অধিকারকে অবসশ্যই সম্মান করতে হবে, এবং আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্র বা দেশের জাতীয় ঐক্য ও ভূমির অখন্ডতা বিনাশের যেকোন প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে;

        ৫. বিধিসম্মতভাবে পুনর্নিশ্চিত করে যে প্রত্যেক রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব হল যে অন্যান্য রাষ্ট্রের রাজনোইতিক স্বাধীনতা ও ভূমিগত অখন্ডতার বিরুদ্ধে সৈন্য ব্যবহারের হুমকি বা ব্যবহার থেকে বিরত থাকা এবং সনদের বিধান লঙ্ঘন করে শক্তি ব্যবহারের ফলস্বরুপ একটি রাষ্ট্রের অঞ্চল সামরিক দখলের বস্তু হবে না, যে শক্তি ব্যবহারের হুমকি বা ব্যবহারের ফল থেকে ভূমি দখল বৈধরুপে স্বীকৃত হবে না এবং অন্যান্য রাষ্ট্রে গৃহবিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড আয়োজন, প্ররোচনা প্রদান, সহায়তা দান ও অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেকটি রাষ্ট্রের দ্বায়িত্ব।

        ৬.  সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে প্রেরণা প্রদান করে যেকোন বিরোধ বা অবস্থা যার ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিপন্ন করতে পারে সেসবের কেবলমাত্র শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য আপস-আলোচনা, অনুসন্ধান, মধ্যস্থতা, তুষ্টিসাধন, সালিসি, বিচারিক মীমাংসা, আঞ্চলিক সংস্থা গঠন বা আয়োজন, জাতিসংঘ মহাসচিবসহ অন্যান্যদের মাধ্যমে মধ্যস্ততা, অথবা তাদের নিজেদের পছন্দের অন্য শান্তিপূর্ণ মাধ্যমসহ সনদে উল্লেখ করা মাধ্যম ও পদ্ধতির পূর্ণ ব্যবহার ও উন্নত বাস্তবায়ন অনুসন্ধান করতে, এটা বুঝা হয় যে এমন বিরোধ বা অবস্থা মোকাবেলায় নিরাপত্তা পরিষদের উচিত আইনী বিরোধসমূহ সাধারণ আইনস্বরুপ দলগুলো কর্তৃক আদালত সংবিধানের বিধানসমূহ অনুসারে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে অর্পণের কথা বিবেচনায় নেওয়া।

এটি পাকিস্তান সরকারের আশা যে এটির সদস্যদের অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নির্ভুল সমর্থনের দ্বারা একটি ঘোষনায় শক্তিশালী করার মাধ্যমে, তাতক্ষনিকভাবে যুদ্ধবিগ্রহ অবসান ব্যবস্থাপনা ও নিশ্চিতকরন, সশস্ত্র সৈন্য অপসারণ ও যুদ্ধবিরতি ও সৈন্য অপসারণ তত্ত্বাবধান করতে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক প্রেরণ করতে জাতিসংঘ এখন বাস্তব ও বাধ্যবাধকতাপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেবে।

যদি এই চিঠিটি প্রমাণপত্ররুপে সাধারণ অধিবেশন ও নিরাপত্তা পরিষদে অবিলম্বে প্রচার করা হয় তবে আমি কৃতজ্ঞ হব।

(Sd.) এ. শাহি

.

13.284.849-852

শিরোনাম সুত্র তারিখ
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধির পত্র জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জাতিসংঘের কাছে, জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে  ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধির চিঠি

A 8 8 S 1, ১২ই ডিসেম্বর, ১৯৭১

        ৭ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ “৪, ৫ এবং ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত, নিরাপত্তা পরিষদের ১৬০৬তম, ১৬০৭তম এবং ১৬০৮তম অধিবেশনে বিবেচিত পশ্ন” এই শিরোনামে ২৭৯৩ (ঙ) রেজল্যুশনটি সাধারন পরিষদে গৃহীত হয়। মহাসচিব কর্তৃক এটি টেলিগ্রাফের মাধ্যমে সরাসরি ভারত সরকারের কাছে পাঠনো হয়েছিল। নিম্ন লিখিত বিষয়ে ভারত সরকারের জবাব পাঠানোর জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছেঃ

        “রাষ্ট্রদূত,

        চার্টার (রাজশাসনপত্র) এর উদ্দেশ্য ও মূলনীতির বিষয়ে ভারতের নিষ্ঠা সুপরিচিত। আমাদের গত ছাব্বিশ বছরের ইতিহাসে এটি প্রতিষ্ঠিত। ভারত শুধু মাত্র জাতিসংঘকে মৌখিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়েই সন্তুষ্ট নয় বরং শান্তি রক্ষায়, উপনিবেশবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একটি নিস্বার্থ সংগ্রামে সবার আগে রয়েছে। ভারতীয় সৈন্যরা কোরিয়া, কঙ্গো এবং পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তাদের জীবন দিয়েছে।

        জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত এবং এর বিভিন্ন অংগ প্রতিষ্ঠান ও প্রতিনিধি কর্তৃক গৃহীত রেজল্যুশ্ন সবসময় আমাদের সর্বাপেক্ষা আন্তরিকতা ও সতর্ক বিবেচনা পেয়েছে। অতএব, ভারত সরকার  ৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১, ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান মারাত্মক পরিস্থিতির উপর সাধারন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত রেজল্যুশন অত্যন্ত যত্নের সাথে পড়েছে।

        আমরা আনন্দিত যে,রেজল্যুশনে উদ্বাস্তুদের সেচ্ছায় তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চরম গুরুত্বকে স্বীকার করা হয়েছে। হয়ত এই লক্ষ্ লক্ষ্ শরনার্থীরা যে পরিস্থিতিতে তাদের স্বদেশ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছে তা সংক্ষিপ্তভাবে স্মরন করা উপযুক্ত।

        ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ এ পাকিস্তান সরকার তাদের পুর্ব প্রদেশের লোকেদের ওপর একটি হামলা চালিয়েছিল, যাদের একমাত্র অপরাধ ছিল তারা গণতান্ত্রিকভাবে ভোট দিয়েছিল। লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ, নিরস্ত্র নাগরিদের তাদের বাড়ি থেকে উৎখাত করা হয় এবং হাজার হাজার মানুষ মারা যায় বা পঙ্গু হয়। যাইহোক, আমাদের পরম উদ্বেগ ন্যায় বিচারের নিয়ে এবং সহানুভুতি মানুষের দুঃখের জন্য, এই ভয়ানক ঘটনাগুলো আমাদের কিছু পূর্ব্ প্রদেশের সীমানা বরাবর না ঘটলে, আমরা হয়ত একটা উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে  থাকতে পারতাম। এখনো পর্যন্ত প্রায় এক কোটির বেশি মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মির হাতে মৃত্যু এবং অসন্মান থেকে বাচাঁর জন্য আমাদের এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। এত অল্প সময়ে এত বড় শরনার্থী প্রবাহের দেখভালের ভার নেওয়া একটি অভিশাপ হয়ে দাড়িঁয়েছে। পুর্বাঞ্চলে আমাদের পুরো প্রশাসন একটি স্থিরাবস্থায় আছে, এবং মানুষের দৈনন্দিন জীবন পরিবর্তন হয়েছে কারন স্কুল, হাস্পাতাল এবং অন্যান্য সরকারি ভবনগুলো শরনার্থীদের দখলে।

৮৫০

সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে, নেতিবাচকভাবে আমাদের প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে। এমনকি আরো গুরুতর, আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে । জাতিসংঘ কি তার এক সদস্য কর্তৃক অন্য সদস্যের জন্য সৃষ্ট এই নজিরবিহীন পরিস্থিতি বিবেচনা করেছে?

        ভারত সব সময়ই একটি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অন্য একটি রাষ্ট্রের একেবারেই হস্তক্ষেপ না করার পক্ষে ছিল। যাইহোক, যদি একটি রাষ্ট্র এর লক্ষ লক্ষ নাগরিককে ইচ্ছাকৃতভাবে অন্য একটি রাষ্ট্রের এলাকায় পাঠিয়ে দেয় এবং সেই রাষ্ট্রের উপর অযৌক্তিক বোঝা চাপিয়ে দেয় তাহলে সেই রাষ্ট্রের জন্য প্রতিকারের আর কি পথ খোলা থাকে যে কিনা জাতিসংঘের একটি সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন নীতির শিকার হয়েছে?

        কোন দেশ কি বিনাদোষে এরকম ভয়াবহ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে? দীর্ঘ নয় মাসের জন্য। ভারত এই ভার বহন করতে হিমশিম খাচ্ছিল এবং সর্বোচ্চ আত্মসংবরন করেছে। এমনকি যদি অন্য দেশগুলো পুর্ব বাংলার লোকেদের দুঃখে বা ভারতের সমস্যাগুলোর প্রতি সাড়া না দিত, আমরা আশা করতাম যে তাদের এই অঞ্চলে শান্তি রক্ষার ইচ্ছা তাদেরকে উত্তেজনা কমাতে কিছু পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করবে।

        যাইহোক, ভারতের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পাকিস্তানের সামরিক শাসকগণ ইতিহাসের শক্তি, এবং ন্যায়ের প্রতি জনগণের গভীর প্রত্যাশা ও গণতান্ত্রিক অধিকারকে বুঝতে পারেনি। সামরিক শাসকগণ এই বিষয়ে অসাড় যে তাদের নিষ্ঠুর নীতি গুলোর মাধ্যমে তারা স্থায়ীভাবে পুর্ব বাংলার জনগনকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।

পাকিস্তান তার প্রচার চালাচ্ছে দুইটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করেঃ

        প্রথমত, এটা ঘোষিত যে, পুরো সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে ভারতের উসকানিতে। এই অভিযোগটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন দ্বারা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে যেখানে আওয়ামী লীগ ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়েছে এবং ঢাকার অনেক বিদেশী সংবাদদাতা দ্বারা যারা সেখানে কি হচ্ছে তার প্রত্যক্ষদর্শী রিপোর্ট পাঠাচ্ছিল। দ্বিতীয়ত পুরো বিষয়টি ধর্মের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হচ্ছিল। এটা মনে করা প্রাসঙ্গিক যে, পুর্ব বাংলার অধিকাংশ মানুষ যারা পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রহ করেছিল, তারা ইসলামে বিশ্বাসী এবং কম অনুগত মুসলিম নয়। প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের উভয় প্রদেশের মোট জনসংখ্যার বেশিরভাগ এর পুর্ব প্রদেশে বাস করত।

        পাকিস্তান সরকারের তাদের অবস্থানকে তথাকথিত হস্তক্ষেপের ফল হিসেবে ব্যাখ্যা করার পরও, এই বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পৌছানো থেকে আটকানর জন্য ভারত তার পক্ষ থেকে সব কিছু করেছে, এবং ক্রমাগত পাকিস্তান সরকার ও প্রকৃতপক্ষে নির্বাচিত পুর্ব বাংলার নেতাদের মধ্যে একটি রাজনৈতিক সমাধানকে সমর্থন দিয়েছে।  যদি বিশ্ব এটাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা নিয়ে চিন্তিত ছিল, তবে তার এটা নিশ্চিত করা উচিত ছিল যাতে পুর্ব বাংলার জনগণের এই বিশাল অংশকে তাদের ঘরবাড়ি ও স্বদেশ ছেড়ে আমাদের দেশে আসতে বাধ্য করা না হয়।

        যখন বিভিন্ন দেশ আমাদের সাথে শান্তির কথা বলেছে, তারা নারী, পুরুষ ও শিশুদের হত্যাকে এড়িয়ে গেছে, তারা এক কোটি শরনার্থীর ভাগ্যকে ভুলে গেছে এবং এভাবেই পাকিস্তানি শাসকদের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্বকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করেছে। শরনার্থীরা স্বেচ্ছায় নিজেদের দেশে ফিরে যাবে, এই আশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে যুদ্ধ বিরতির ডাক দেওয়ায় একটি পুরো জাতির ধ্বংসকে গোপন করা ছাড়া কোন উদ্দেশ্য আছে বলে ভারতের কাছে মনে হয়নি। কিভাবে এই ধরনের ভিত্তির ওপর শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়? ভারত হিংসাত্মকভাবে বাংলাদেশের অবদমিত জনগণের অধিকার হরণের অংশীদার হতে পারবে না। যদি জাতিসংঘ পুরো সত্যটা জানতে আগ্রহী হয় তাহলে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের কথাও শোনা উচিত। এটি কেন এর ঐতিহ্য থেকে সরে আসবে?

৮৫১

যেকোন উদ্দেশ্যের বিবেচনা এটাই প্রকাশ করবে যে, শান্তি পূনঃপ্রতিষ্ঠা ও লাখ লাখ শরনার্থীর ফিরে যাওয়ার জন্য জরুরী অবস্থা শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমেই তৈরী করা সম্ভব। এটা আশা করা নিষ্ঠুরতা যে এই শরনার্থীরা যারা পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে এত অত্যাচার সহ্য করেছে তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ভাবা উচিত যখন এটা এখনো তাদের দখলে। যতদূর ভারতের সশস্ত্র বাহিনী প্রসংগ আসে, একটি যুদ্ধ বিরতি হতে পারে এবং ভারতীয় সৈন্য তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যাবে যদি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগণ বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজেদের সৈন্য সরিয়ে নেয় এবং তাদের সাথে একটি শান্তিপুর্ন সমঝতায় আসে যারা কিছুদিন আগেও তাদের নাগরিক ছিল, কিন্তু এখন বাংলাদেশ সরকারের অনুগত যেটা ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা যথাযথভাবে গঠিত হয়েছে। প্রয়োজনীয় পুর্বশর্ত গুলো বিবেচনা না করে কেবলমাত্র শরনার্থীদের ফিরে আশার প্রত্যাশা করা এই মানুষগুলো যে সীমাহীন দূর্ভোগ সহ্য করেছে তার প্রতি নিদারুন অবজ্ঞা প্রকাশের সমান।

        ভারত সরকার যুদ্ধবিরতি আহ্বান বিবেচনা করতে প্রস্তুত। অবশ্যই ভারত ১৯৪৮ এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে। কেউই শান্তি বজায় রাখার নিশ্চয়তা দেয়নি। সর্বশেষ ১৯৬৫ সালেরটি, যেটি তাশখন্ডে একটি আনুষ্ঠানিক আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি অনুসারে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, আমাদের বহু কাঙ্খিত শান্তিপুর্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে ব্যার্থ হয়েছে।

        ন্যায়সংগত কারনেই ভারত ক্ষুব্ধ যে, যুদ্ধবিরতির আহ্বানে জাতিসংঘ আক্রমনকারী এবং এর ভুক্তভোগীর মধ্যে কোন পার্থক্য করে না। সে কারনেই বিষয়গুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

        ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ এ, যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোলকাতায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী  পাটনায় এবং অর্থমন্ত্রী বম্বেতে ছিলেন, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে আক্রমন চালায়। সেদিন বিকাল ৫-৩০ এর দিকে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী একযোগে নিম্নলিখিত শহরগুলোতে ভারতের বিমানবন্দরে হামলা চালায়ঃ অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, উত্তরলাই, জোধপুর, আম্বালা ও আগ্রা। পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মি সুলেমানকি, খেম করণ, পুঞ্চ ও অন্যান্য বিভাগ সহ আমাদের প্রতিরক্ষামুলক স্থানহুলোতে অনবরত গুলি বর্ষনের মাধ্যমে আক্রমন চালায়। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার অভিযোগ করেছে যে, ভারত দুপুর ১২টায় আক্রমন করেছে, কিন্তু যেহেতু তাদের অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই তাই নিশ্চিতভাবেই তারা জায়গার নাম উল্লেখ করতে পারবে না। কিছু বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই। ভারত, যে কিনা আত্ম্রক্ষার স্বাভাবিক অধিকার প্রয়োগ করছে, কিছুতেই পাকিস্তানের সমকক্ষ হতে পারে না। ভারত এখনো বিনাউস্কানিতে পাকিস্তানের আর একটি আগ্রাসনের শিকার, এবং এর আত্ম্রক্ষার আইনি অধিকারে এর জাতীয় সার্বভৌমত্য ও আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষায় নিযুক্ত। মৌলিক গুরুত্বের আর একটি বিবেচনা আছে যেটিকে ভারত প্ররোচিত করতে চায়ঃ আন্তর্জাতিক আইন স্বীকার করে যে, যখন একটি মূল-রাষ্ট্র বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত এর এত বড় একটি অংশের জনগণের আনুগত্য চিরতরে হারিয়েছে এবং তাদেরকে শাসনের আওতায় আনতে পারছে না, তখন এমন একটি রাষ্ট্রের আলাদা অস্তিত্বের শর্তগুলো বিদ্যমান হয়।  ভারতের ধারনা যে বাংলাদেশে ঠিক এটাই হয়েছে। বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠে নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ দৃঢ়ভাবে নিজেদেরকে পাকিস্তানের মূল-রাষ্ট্র থেকে নিজেদেরকে পৃথক করার পক্ষে ঘোষনা দিয়েছেন এবং বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

৮৫২

ভারত এই রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুন রাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনী দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের প্রতিনিধি যাদের সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে নিযুক্ত তাদের কথা শোনা এবং একই সাথে যুদ্ধ বিরতিতে যাওয়া কি ভারতের পক্ষে বাস্তবসম্মত ভারত আন্তরিকভাবে আশা করে যে, উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর আলোকে, জাতিসংঘ আরো একবার পরিস্থিতির বাস্তবতাকে বিবেচনা করবে, যাতে সংঘাতের মূল কারনগুলো দূর করা যায় এবং শান্তি পুনস্থাপিত হয়। বস্তুনিষ্ঠভাবে এই মূল কারনগুলো অনুসন্ধানের অভিপ্রায়ের প্রতিশ্রুতি দিলে, ভারত তার সর্বাত্মক সহযোহিতা প্রদান করবে না।

                                                                                স্বাক্ষর সমর সেন।

.

13.285.853

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টকে প্রদত্ত জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির পত্র।

জাতিসংঘ ডকুমেন্টস।

 

১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

        যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী প্রতিনিধির নিকট হতে U. N,  নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্টের নিকট পত্র।

ভারতীয় উপমহাদেশের উপর যুদ্ধ অখন্ড আক্রোশে অব্যাহত। নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী প্রচেষ্টা দ্বারা যুদ্ধবিরতি কার্যকর ও প্রত্যাহারের ১৬০৬ তম ১৬০৭তম  ও ১৬০৮ তম সভা ব্যর্থ হয়েছে, তাই “শান্তির জন্য ঐক্য” প্রস্তাবের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাধারণ সভায় পাঠানো উচিত আসন্ন সংকট মোকাবেলার জন্য। সাধারণ সভা এর সমাধি অবস্থা বিবেচনা করেছিল ৭ ই ডিসেম্বর এর ২০০২ তম এবং ২০০৩ তম সভায় এবং ১০ টি ভোটদানে বিরত থাকার পরও ১৪ টির ১০৪ টি ভোটে সংকল্প ২৭৯৩ গৃহীত হয়, যা অন্য সব কিছুর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতি যুদ্ধবিরতি এবং একে অন্যের অঞ্চল থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।

দলগুলোর একটি, পাকিস্থান প্রস্তাবনা মেনে নেয়।  অন্য দল ভারত তা মেনে নেয়নি।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে, নিরাপত্তা পরিষদের একটি দায়িত্ব আছে বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকি এই অবস্থার জরুরী ভিত্তিতে অবসান ঘটানোর।

আমার সরকারের নির্দেশে, আমি অনুরোধ করছি যে আপনি অবিলম্বে নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সভা আহ্বান করুন।

                            (SD.) GORGE BUSH

.

13.286.854-865

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নিরাপত্তা পরিষদে বিভিন্ন রাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাব ও সংশোধনী জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১২-২১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

নিরাপত্তা পরিষদ,

মহাসচিবের ৩রা ও ৪র্থ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর প্রতিবেদন এবং ৬ষ্ঠ ডিসেম্বর ১৯৭১-এর নিরাপত্তা পরিষদের রেজলুশন ৩০৩ সুচিত করা হল, ১০৪-১১-১০ ভোটে গৃহীত গণপরিষদ রেজলুশন ২৭৯৩(৬) ৭ম ডিসেম্বর সুচিত হল,  আরও সুচিত হল যে, গণপরিষদের রেজলুশন ২৭৯৩(৬) অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার যুদ্ধবিরতি এবং অস্ত্র প্রত্যাহারে রাজি হয়েছে এবং ভারতর উক্ত কাজে অপারগতা প্রকাশ করছে। গভীর উদ্বেগপূর্ণ ব্যাপার এই যে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরীভাব এখনও বিদ্যমান যা আন্তর্জাতিক শান্তির পক্ষে হুমকিস্বরূপ। জাতিসংঘ প্রদত্ত অধিকারনামার কাঠামো অনুসারে পরিস্থিতির সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ অনুভব করেই একটি রাজনৈতিক সমাধান সংঘর্ষাক্রান্ত অঞ্চলে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে এবং শরণার্থীদের তাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অতীব জরুরী বলে উপলব্ধি করা হয়েছে। অধিকারনামার উল্লেখ্য বিধানের অধ্যায় ৩, অনুচ্ছেদ ৪ এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সুরক্ষীকরণ সনদের অনুচ্ছেদ ৪, ৫ এবং ৬ মাথায় রেখে, পাকিস্তান ও ভারতের নিজ নিজ সীমান্তে অতিসত্বর অস্ত্র এবং সৈন্য প্রত্যাহার এবং বৈরিভাব সমাপ্তির জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন উপলভ্য হয়। অধিকারনামায় প্রাসঙ্গিক বিধান সমুহের মধ্যে উল্লেখ্য প্রস্তাবনা এবং নীতি এবং নিরাপত্তা পরিষদের উক্ত প্রেক্ষাপটে দায়িত্বসমূহ অনুযায়ী, ১। ভারত সরকারকে, গণপরিষদের রেজলুশন ২৭৯৩(৬) অনুযায়ী অবিলম্বে অস্ত্র এবং সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাবে রাজি হতে হবে, ২। অবিলম্বে ভারত ও পাকিস্তান সরকারকে নিজ নিজ সীমানায় সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে নির্দেশ করে, ৩। দ্রুত জাতিসংঘের অধিকারনামার নীতি এবং প্রস্তাবনা অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের স্বপ্রণোদিতভাবে নিজ বাসভূমিতে ফিরে আসার পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা জোড়াল করার আহ্বান জানায়, ৪। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে অত্র অঞ্চলের জন সাধারণের নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য সকল সম্ভব পদক্ষেপ ও সতর্কতা গ্রহণের আহ্বান জানায়, ৫। মহসচিবকে বর্তমান পরিস্থিতি এবং রেজলুশন বাস্তবায়নের সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদকে অবিহিত করার অনুরোধ করে, ৭। বর্তমান অবস্থানে স্থির থাকার এবং প্রয়োজনে আবারও আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।

.

নিরাপত্তা পরিষদ,

১৯৭১ সালের তৃতীয় ও ৪র্থ ডিসেম্বার মহাসচিবের প্রতিবেদন এবং ১৯৭১ সালের ছয় ডিসেম্বার নিরাপত্তা পরিষদের  সমাধান ৩০৩ (১৯৭১) উল্লেখপূর্বক,

১৯৭১ সালের সাত ডিসেম্বার সাধারণ পরিষদের সমাধান ২৭৯৩ (VI) উল্লেখপূর্বক যা ১০৪-১১-১০ ভোটে গ্রহণ করা হয়,

আরও উল্লেখ যে সাধারণ পরিষদের সমাধান ২৭৯৩ এবং ভারত সরকারের ডকুমেন্ট এস/১০৪৪৫ ঘোষণা মেনে পাকিস্তান সরকার যুদ্ধ বিরতি ও সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহারের সিধান্ত গ্রহণ করেছে,

অনুতাপের বিষয় ভারত সরকার এখনো কোনো নিঃশর্ত এবং অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সশস্ত্র বাহিনী  প্রত্যাহার স্বীকার করেনি যা সাধারণ পরিষদের সমাধান ২৭৯৩ তে ঘোষণা করা হয়েছিল,

গভীর উদ্বিগ্নের বিষয় এই যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চলমান যুদ্ধ আন্তর্জাতিক শান্তি ও  নিরাপত্তার জন্য একটি তাৎক্ষণিক হুমকি,

তাই পরবর্তী সময়ে এই ইস্যুটি যা যুদ্ধের সৃষ্টি করেছে তা উপযুক্তভাবে মোকাবিলা করার জন্য জাতিসংঘ সনদ কাঠামোর মধ্যে স্বীকৃতিপ্রদান করতে হবে,

একটি উপলব্ধির বিষয় এই যে উদ্বাস্তুদের ফেরত পাঠানোর জন্য এবং আক্রান্ত এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরেয়ে আনার জন্য একটা প্রাথমিক রাজনৈতিক সমাধান খুবই জরুরি।

 চার্টার বিধানের আর্টিকেল ২ বিশেষত অনুচ্ছেদ ৪, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার ঘোষণা স্মরণ করে বিশেষ করে ৪,৫ এবং ৬ অনুচ্ছেদ,

ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ তাৎক্ষনিক ভাবে বন্ধ ও ভারত এবং পাকিস্তান নিজ নিজ সীমান্ত থেকে সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অনতিবিলম্বে নিতে হবে

সনদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং নিরাপত্তা পরিষদের দায়িত্ব সম্পর্কে মনযোগী হতে হবে যা সনদের অধীনে প্রাসঙ্গিক

১। পাকিস্তান ও ভারত সরকারকে অনতিবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সশস্ত্র বাহিনী  প্রত্যাহারের জন্য ডেকে ঘোষণা দেওয়া এবং অন্যর সীমান্ত এলাকা থেকে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনী  প্রত্যাহার করা।

২। জাতিসংঘ সনদের লক্ষ্য ও মূলনীতি অনুসারে দ্রুততার ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় ফিরিয়ে আনার  জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

৩। সকল রাষ্ট্র ও মহাসচিবসহ সকলের পুর্ন সহযোগিতার আহ্বান করে উদ্বাস্তুদের মর্মপীড়া  থেকে মুক্তিদানের বাবস্থা নেওয়া

৪। সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সকল সম্ভব ব্যবস্থা এবং সাবধানতা অবলম্বন করে জীবন ও এলাকায় বেসামরিক জনসংখ্যার নিরাপত্তা নিচ্ছিত করতে আহ্বান করা।

৫। বর্তমানে সমাধান বাস্তবায়নের বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের মহাসচিবকে অবহিত করা

৬। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত থাকে যেন ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি পুনরায় মোকাবেলা করা যায়।

.

নিরাপত্তা পরিষদ
সেক্রেটারি জেনারেল এর ৩য় এবং ৪র্থ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর রিপোর্ট লক্ষ করুন এবং
৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর সিকিউরিটি কাউন্সিল রেজুলেশন ৩০৩(১৯৭১),
উদ্দেশ্য এবং চার্টার নীতির সম্পর্কে সচেতন থাকুন এবং এটা চার্টার প্রাসঙ্গিক বিধানের অধিনে নিরাপত্তা কাউন্সিলের দ্বায়িত্,ব
৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর সাধারণ পরিষদের রেজুলেশন (ষষ্ঠ) এর চিঠি যা মহাসচিব কৃতক পাঠানো হয়েছিল সাধারন পরিষদের রেজুলেশন ২৭৯৩(ষষ্ঠ) বিষয়ে এবং উত্তর হিসেবে পাকিস্তান সরকারের কৃতজ্ঞতা লক্ষ করা যায় যা।
অন্তর্ভুক্ত নথি S/10440ভারত সরকারের আরো উত্তর লক্ষ করুন নথি S/10445
ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যে যুদ্ধবিগ্রহ চলছে তা নিয়ে গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন এবং তা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি সরূপ।
এছাড়াও জাতিসংঘ এর সনদ কাঠামোর মধ্যে প্রয়োজনীয় স্বীকৃতিপ্রদান ও একটি ব্যাপার যা এই যুদ্ধবিগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।
স্বীকৃতিপ্রদান যে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির উপর ভিত্তি করে করা উচিত নয়।এটি আমন ভাবে করা উচিত যাতে
পাকিস্তান জনগণের অধিকার এবং স্বার্থ সম্মান রক্ষা হয় ।
আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সুদৃঢ় করার ঘোষনা বিশেষ করে অনুচ্ছেদ ৪,৫,এবং ৬ অনুযায়ী এই যুদ্ধ থামাতে অবিলম্বে ব্যাবস্থা গ্রহন করা হোক এবং সব ধরনের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করা হোক।

.

সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতি আহবান, জাতিসংঘের সনদের অধীনে সকল প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশের অবস্থা খারাপ করার বা আন্তর্জাতিক শান্তি বিপন্ন করার জন্য কোনও পদক্ষেপ বা পদক্ষেপের হুমকী থেকে বিরত থাকা।

সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের কাছে আহবান, প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে অবিলম্বে যুদ্ধের একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং সমস্ত যুদ্ধ অবসান আনার পদক্ষেপ।

ভারত পাকিস্তান উভয়ের প্রতি আহবান, বিচ্ছিন্নতা ও প্রত্যাহার মূলক কার্যক্রম চালিয়ে সকল প্রকার দ্বন্দের অবসান ঘটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা।

একটি বিশাল রাজনৈতিক নিস্পত্তি অর্জনের লক্ষ্যে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য আহবান।

সেক্রেটারি জেনারেলসহ সকল রাজ্যগুলির প্রতি পুর্ন সহযোগিতার আহবান এবং পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের দুর্দশার জন্য সহায়তা প্রদান

সকল পক্ষের প্রতি আহবান, জীবন রক্ষার্থে সম্ভাব্য সমস্ত ব্যাবস্থা ও সতর্কতা গ্রহন করা, এবং বেসামরিক এলাকার জনকল্যাণে জেনেভা সম্মেলনের সকল পর্যবেক্ষন নিশ্চিত করা।

 ভারত ও পাকিস্তান সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

সাধারন সচিবকে অবিলম্বে সিকিউরিটি কাউন্সিল রাখতে এবং সম্প্রতি বর্তমান সমাধান এর বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

এই ব্যাপারে জব্দ করে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়, এবং পরিস্তিতির প্রয়োজনে আবার দেখা হবে।

.

                                           নিরাপত্তা পরিষদে পোল্যান্ডের খসড়া প্রস্তাব,

                                           অনু ১    ৩, ডিসেম্বর ১, ১৯৭১।

নিরাপত্তা পরিষদ,

ভারতীয় উপমহাদেশে সামরিক সংঘাত, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার তাৎক্ষণিক হুমকি সৃষ্টি করেছে, তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শোনা হয়েছে।

সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে

১. সংঘাতের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায়, ক্ষমতা শান্তিপূর্ণভাবে আইনগতভাবে নির্বাচিত শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদের নিকট হস্তান্তর করা হবে।

২. ক্ষমতা স্থানান্তর প্রক্রিয়া আরম্ভের পর হতে তাৎক্ষণিকভাবে সকল এলকায় সামরিক হস্তক্ষেপ স্থগিত করতে হবে এবং ৭২ ঘণ্টাব্যাপী যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায় শুরু হবে।

৩. তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির প্রাথমিক পর্যায় আরম্ভের পর থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সংঘাতের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে উদ্বাসনের উদ্দেশ্যে প্রত্যাহার শুরু করবে।

৪. একইভাবে, পশ্চিম পাকিস্তানের সকল বেসামরিক কর্মী এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যেতে ইচ্ছুক সেইসাথে পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানের সকল বেসামরিক কর্মী এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা ঘরে ফিরতে ইচ্ছুক, তা করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটা সুযোগ দেওয়া হবে, সম্পর্কিত সকল উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দেওয়া হবে যে কেউ পুনরায় বন্দী হবে না।

৫. ৭২ ঘণ্টা সময়কালের মধ্যে উক্ত উদ্দেশ্যের জন্য পাকিস্তানের সেনা এবং তাদের সমাবেশ প্রত্যাহার শুরু হবে, যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হবে। পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্বাসন শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভারত তাদের সামরিক কার্যক্রমের পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে তাদের প্রত্যাহার করা শুরু করবে। আইনগতভাবে নির্বাচিত শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা স্থানান্তরের ফলাফল হিসেবে  নতুন প্রতিস্থাপিত কর্তৃপক্ষের  পরামর্শক্রমে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।

৬. যে নীতি উপলব্ধি করে সেনাবাহিনী ব্যবহার করে যে প্রাদেশিক অর্জন করা হয়েছে তা সংঘাতের কোনো পক্ষ ই অধিকারে রাখতে পারবে না, – যত দ্রুত সম্ভব উক্ত নীতি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সেনাবাহিনীর যথাযথ প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আলাপআলোচনা শুরু করবে।

.

.

নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার খসড়া প্রস্তাব

ডিসেম্বর ১, ১৯৭১

গ্রে এলি উপমহাদেশের ভারত-পাক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন, এটি স্বাভাবিক সান্ত অবস্থার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে

উদ্ধৃতিঃ সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন ২৭৯৩  (ষষ্ঠ) ৭ ম ডিসেম্বর, 1971

১। পাকিস্তান সরকারকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দেয়ের জন্য যাতেকরে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ম্যান্ডেট অনুসারে কাজ আবার শুরু করতে পারেন;

২। সিদ্ধান্ত নিচ্ছে-

  • সকল পক্ষে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হোক
  • সকল যুদ্ধবিরতি সহ ভারত ও পাকিস্তানের নিজ নিজ সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের নিজের সীমান্তের দিকে থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে এবং জম্মু ও কাশ্মিরের সকল গোলাগুলিও বন্ধের অনুরোধ করা হল।

৩। সেক্রেটারি জেনারেলকে নিম্নোক্ত কারণে একজন বিশেষ প্রতিনিধি নিযুক্ত করার জন্য অনুরোধ করা হলঃ

ক) উপর্যুক্ত বিষয়াদি সঠিকভাবে সম্পাদন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ;

খ) সংবিধান সম্মত ভাবে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের এবং পাকিস্তান সরকারের মাঝে গ্রহণযোগ্য সমঝতার জন্য সহায়তা প্রদান;

গ) শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় ফিরে আসার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা;

ঘ) ইন্ডিয়া পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক করণ;

৪। এই প্রস্তাবনা সমূহ বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা পরিষদ যেন চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রাখে সে জন্য মহা-সচিবকে অনুরোধ জানাচ্ছে।

.

নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের খসড়া প্রস্তাব
এস১৭, ১ ডিসেম্বর ১৯৭১

GRA ELY( এটা বুঝি নাই) গুরুত্বপূর্ণ ইন্দে-পাকিস্তান উপমহাদেশে সংশ্লিষ্ট সংঘর্ষ, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য তাৎক্ষনিক হুমকি স্বরূপ।

১। পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ডেকে রাজনৈতিক সমস্যার যুগপৎ সমাধান করতে বলুন।

৩।১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী মানুষের জীবন রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ডাকুন।

৪।পরিষদে গঠিত প্রস্তাব গুলোকে শীঘ্রই বাস্তবায়ন করতে মহাসচিব কে অনুরোধ করুন।

৫।ওই এলাকায় শান্তি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে সার্বিক আলোচনা অব্যাহত রাখুন।

.

জাপান ও ইউ এস এ দ্বারা সংশোধিত খসড়া রেজোলিউশনের নিরাপত্তা পরিষদ এস ১, ৯রেভারেন্ড ১,১ ডিসেম্বর, ১৯৭১ নিরাপত্তা পরিষদের,গভীরভাবে ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশ পরিস্থিতি সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি তাৎক্ষণিক হুমকি গঠন তৈরি করছে।সেই ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের সাধারণ পরিষদের রেজোলিউশন ২৭৯৩ (ষষ্ঠ),বিবৃতি সিকিউরিটি ১৬১৭তম সভায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যে তার দেশের কাউন্সিলের কোন স্থানিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে বলে জানিয়েছে। সেসব হল-

১. emands যে একটি তাৎক্ষণিক এবং টেকসই যুদ্ধবিরতি এবং সকলের শমসংঘাতের সব এলাকায় যুদ্ধবিগ্রহ কঠোরভাবে পালন এবং যতক্ষণ কার্যকারিতা বজায় করা disengagement নেতৃস্থানীয় অধিকৃত অঞ্চল বাহিনীকে অভিযান সঞ্চালিত সশস্ত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ করা।

২. সব সদস্য রাষ্ট্রের ডাকে কোন পদক্ষেপ যা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে এবং বিরত থাকলে উপমহাদেশে পরিস্থিতি বা আন্তর্জাতিক শান্তি বিপন্ন হতে পারে।

৩. সব সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট যারা মানুষের জীবন ও ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশন পালনের জন্য এবং আবেদন করতেপূর্ণ তাদের রসদ প্রস্তুত আহত ও অসুস্থদের যুদ্ধের বন্দীদের সুরক্ষা শুভেচ্ছা এবং বেসামরিক জনসংখ্যা;দুঃখকষ্ট ও পুনর্বাসনের ত্রাণ আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য এগিয়ে আসবে।

৪.উদ্বাস্তু ও নিরাপত্তা এবং তাদের বাড়িতে এবং সম্পূর্ণ জন্য মর্যাদা তাদের ফেরতের সঙ্গে মহাসচিব সহযোগিতা প্রভাব বিস্তার করবেন।

৫.মহাসচিব একটি বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের ধারা তার মানবিক সমস্যার সমাধান করবেন বিশেষ করে ভাল অফিসের মাধ্যমে।

৬. মহাসচিব কাউন্সিল অবিলম্বে এবং বর্তমানে এই রেজল্যুশন রেখে বাস্তবায়নের বিষয়ে অবহিত করবেন।

৭. আরও ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং সম্পূর্ণ এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনুন।

.

নিরাপত্তা পরিষদে আর্জেন্টিনা, বুরুন্ডি, জাপান, নিকারাগুয়া, সিয়েরা লিওন এবং সোমালিয়ার খসড়া বিশ্লেষণ

এস/১০৪৬৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ১৯৭১

প্রতিরক্ষা পরিষদ,

আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ উপমহাদেশের গুরুতর অবস্থা আলোচনা করা।

৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর সাধারণ পরিষদ প্রস্তাবনা ২৭৯৩(xxvi) উল্লেখ করা।

৯ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর পাকিস্তার সরকারের প্রত্যুত্তর উল্লেখ করা।

১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ভারত সরকারের প্রত্যুত্তর উল্লেখ করা।

পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বিবৃতি গ্রহণ,

১৬১৭ তম নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ওয়েস্টার্ন থিয়েটারে একপাক্ষিক যুদ্ধবিরতি ঘোষনার বিবৃতি পুনঃউল্লেখ করা।

১৭ ডিসেম্বর,১৯৭১ থেকে ওয়েস্টার্ন থিয়েটারে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উল্লেখ।

এটা উল্লেখ করা যেন পরিনামে অস্ত্রবিরতী ও সংঘর্ষবিরাম স্থান লাভ করে।

১।ভারত ও পাকিস্তানের জন্য গঠিত জাতিসংঘ সামরিক পর্যবেক্ষণ দলের তত্ত্বাবধানে জম্মু ও কাশ্মীরের যুদ্ধ বিরতি লাইনের প্রতি পূর্ন সম্মান রেখে সকল সশস্ত্র বাহিনী কে নিজ নিজ এলাকা ও অবস্থান থেকে যতদ্রুত সম্ভব, সব এলাকায় স্থায়ী অস্ত্র বিরতি ও সব সংঘর্ষবিরাম যেন কঠোরভাবে পালন করা হয় সে দাবী রাখা এবং প্রত্যাহার সংগঠিত হওয়ার আগে পর্যন্ত তা কার্যকর রাখা।

২। সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উপমহাদেশের অবস্থাকে উত্তক্ত করে কিংবা আন্তর্জাতিক শান্তিকে বিপন্ন করে এমন কোন পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান করা।

৩। সংশ্লিষ্ট সকল কে মানব জীবন রক্ষা ও ১৯৪৯ এর জেনেভা চুক্তি মান্য করার জন্য সব ব্যাবস্থা গ্রহণ এবং যুদ্ধাহত ও অসুস্থ, যুদ্ধবন্দী ও অসামরিক মানুষের পূর্ন সুরক্ষার আহ্বান করা।

৪। শরনার্থীদের দূর্ভোগ দূরীকরণ ও পূনর্বাসনের জন্য এবং তাদের আবাসভূমিতে নিরাপদ ও সম্মানের সাথে ফিরে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা আবেদন এবং এ নিমিত্তে মহাসচিবের পূর্ণসহযোগীতা প্রার্থনা;

৫। মানবিক সমস্যা সমাধানের জন্য মহাসচিব কে – প্রয়োজন হলে, তার সহায়ক অফিসে বিশেষ প্রতিনিধি নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া;

৬। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে কাউন্সিল বা পরিষদ কে অবিলম্বে অবগত রাখার জন্য মহাসচিব কে অনুরোধ করা;

৭। পুরো ব্যাপারটি সক্রিয় বিবেচনাধীন রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া।

.

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্কের সারাংশ জাতিসংঘ ডকুমেন্টস সেপ্টেম্বর- অক্টোবর, ১৯৭১

জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ১১৭ টি দেশ সাধারণ বিতর্কে অংশগ্রহণ  করে।এদের মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান ছাড়াও ৫৫ টি দেশ তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করে। এসব বক্তব্যকে নিচের ছয়টি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে :-

(১) বাইশটি দেশ কোন প্রকার রাজনৈতিক বিবেচনার কথা উল্লেখ না করেই সংকট মোকাবেলার জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর গুরুত্ব আরোপ করে। :-

আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, চিলি, চীন(তাইওয়ান), মিশর, ঘানা, জ্যামাইকা, জাপান, লাসো, লিবিয়া, মেক্সিকো, মাদাগাস্কার, নেদারল্যান্ড, নিকারাগুয়া, সিরিয়া, থাইল্যান্ড, তাঞ্জানিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, উরুগুয়ে, ইয়েমেন(আদেন), ইয়েমেন(সানা) এবং জাম্বিয়া ।

(২) আটটি দেশ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সঙ্কটকে মোকাবেলার কথা বলে এবং শরণার্থীদের ফিরে যাবার পূর্বশর্ত হিসেবে পূর্ব বাংলায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানায়। :-

আফগানিস্তান, সিলন, একুয়াডোর, ফিনল্যান্ড, ইটালি, নেপাল, যুক্তরাজ্য এবং ইয়োগোস্লাভিয়া ।

(৩) চোদ্দ থেকে পনেরটি দেশ তাদের মানবিক উদ্বেকের কথা জানায় এবং পূর্ব বাংলায় সঙ্কট নিরসনের জন্য রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে করতে জোর দেয় ।:-

অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম,সাইপ্রাস, ফ্রান্স, গায়না, অয়ারলান্দ, মাল্টা, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড,  নরওয়ে, পোল্যান্ড, সুইডেন, এউ,এস,এ এবং এউ,এস,এস,আর ।

(৪) পাঁচটি দেশ সংকটের মানবিক দিকটি স্বীকার করে,জাতিসংঘের সহযোগিতা নিয়েই হোক বা ছারাই হোক ভারত ও পাকিস্তানের মাধ্যমেই এর বিহিত করতে হবে বলে মত দেয়।:-

আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লেবানন, সিয়েরা লিওন এবং বেলজিয়াম।

(৫) সৌদি আরব পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেয় ।

(৬) তিনটি দেশ পরোক্ষভাবে এই প্রসঙ্গে কথা বলে :- ইথপিয়া, আইছল্যান্ড, ইসরাইল ।

দশটি দেশ সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে যে পূর্ব বাংলায় যে অবস্থা বিরাজ করছে তাতে মানবিক সংকটের আশঙ্কা রয়েছে এবং এর রাজনৈতিক সমাধান নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের নিয়েই করতে হবে । এই বক্তব্যগুলকে নিম্নের দুই ভাগে ভাগ করা যায় :-

(ক) আটটি দেশ পূর্ব বাংলায় মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে :-

বেলজিয়াম, একুয়াডোর, ইসরাইল, মাল্টা, মাদাগাস্কার, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন এবং উগান্ডা ।
(খ) চারটি দেশ সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করে যে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের নিয়ে সাংবিধানিক ভাবে একটি রাজনৈতিক সমাধানে আসতে হবে :-

ফ্রান্স, মঙ্গোলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন।

.

13.288.868-871

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারদার শরণ সিংহর বিবৃতির অংশবিশেষ জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিংহের বিবৃতির অংশবিশেষ

সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৭১

ভারতের জন্য ১৯৭১ এর শুরুটা ছিল অনেক সম্ভবনাময় । অর্থনৈতিক অবস্থা ভাল কিছুর ইঙ্গিত করছিলো । মার্চের সাধারণ নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধী বিশাল জন সমর্থন নিয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোন যা সমন্বিত সামাজিক-অর্থনৈতিক বিকাশের পক্ষে জনগণের আস্থার প্রতিফলন । বৈদেশিক ভাবে আমরা সচেষ্ট ছিলাম সকল দেশের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপনের , বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে । ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বপ্রথম যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তা ভারত স্বাগত জানায় । আমরা আশা করেছিলাম গণতান্ত্রিক সূচনার মাধ্যমে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সম্পর্কের উন্নতি হবে । যদিও সমগ্র ব্যাপারটি রাতারাতি পরিবর্তিত হয় যখন পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ আকস্মিক ধ্বংসাত্মক দিকে মোর নেয় । একটি আন্তর্জাতিক সমস্যার উদ্ভব ঘটে যা বিশেষ তাৎপর্য পূর্ণ । বেশ কিছু দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সমস্যাটির প্রকৃত রূপটি অনুধাবন করতে পেরেছে । মহাসচিব ইউ টেন্ট সমস্যাটি নিরাপত্তা পরিষদের সামনে উল্লেখ করেন এবং বাৎসরিক রিপোর্টে এই ব্যাপারে তার মতামতও দেন ।

সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ বিদায়ী রাষ্ট্রদূত হেম্ব্র তার ভাষণে এসেম্বলিকে তার আশঙ্কার কথা জানান ।

এপ্রিলের মাঝামাঝি এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে সামরিক শক্তি প্রয়োগ থেকে পাকিস্তান সরে আসবে না এবং পাকিস্তান হতে আসা অগনিত শরণার্থী সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে ভারতকে । শৃঙ্খলাবদ্ধ ভাবে শরণার্থী শিবির এবং শরণার্থীদের বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হয় । রেশন কার্ড এবং ভারতে বসবাসের জন্য অস্থায়ী অনুমতিপত্র শরণার্থীদের মাঝে দেয়া হয় । যদিও এই সকল রেলিফ প্রয়োজনের অতি সামান্যোই পূরণ করে । আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাহায্যের

আবেদন করেছিলাম । যদিও মহাসচিবের আহবান ছিল অত্যন্ত অন্তরিক ভাবেই গৃহীত হয় , আমাদের প্রয়োজনের তুলনাই তা ছিল খুবই নগণ্য ।  এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের তক্তাবধানে ভারতকেই তার অপ্রতুল সম্পদ হতে ব্যয় করতে হচ্ছে ।

আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে একটি শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছি এবং দেখাশুনা করছি । এই বোঝা বইবার ক্ষমতা বা সম্পদ কোনটিই আমাদের নেই ।

যখন তারা জীবন রক্ষার তাগিদে পালিয়ে আমাদের কাছে আসে তখন কেবল মাত্র মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের আশ্রয় দেই । শরণার্থীরা আমাদের কাছে আছে সাময়িক সময়ের জন্য এবং তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে ,  আমরা আমাদের এই বক্তব্য বারবার বলেছি । যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গৃহীত এবং প্রশংসিত হয়েছে । এতে আমাদের কত ব্যয় হবে তার নিরেট হিসাব বের করাটা অসম্ভব হলেও বর্তমান হিসাবে ধারনা করা যায় পরবর্তী মার্চ মাসে তা ৮০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে ।

এই ব্যাপক জনস্রোত,যা কারো মতে ভারতে শরণার্থীদের অসামরিক আক্রমণ- এর পরিমাপ শুধুমাত্র টাকার অঙ্কে নিরূপণ করা যায় না । আমরা ব্যাপক সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি । যে সকল স্থানে শরণার্থীরা বর্তমানে অবস্থান করছেন সেখানে তাদের আশ্রয়ের জন্য আমাদের সকল স্কুল বন্ধ করতে হয়েছে ।

স্থানীয় মানুষের কথা না ভেবে শরণার্থীদের সেবায় সেসব জায়গার হাসপাতাল গুলো নিয়োজিত আছে । উচ্চ চাহিদার কারনে জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে । মজুরি কমে যাচ্ছে । নানান ধরনের অপরাধ বাড়ছে । স্থানীয় পর্যায়ের সংঘর্ষ ও উত্তেজনার কথা কারই অজানা নয় । আমাদের স্থানীয় প্রশাসনকে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ব্যেহত করে শরণার্থীদের সমস্যার প্রতি মনোযোগ দিতে হচ্ছে । মহামারীর ছরিয়ে পড়ার ভয় সর্বত্ত । যদিও কলেরার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে ।

শরণার্থীরা অবিশ্যই দেশে ফিরবে । প্রশ্নটি হচ্ছে কিভাবে ? কেউ কি যৌক্তিক ভাবে তাদের ফিরে যাবার কথা বুজাতে পারবেন যখন প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ একাই স্থান হতে পালিয়ে আসছে । মের ২১ তারিখ, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শরণার্থীদের ফিরে যেতে বলেন, যদিও তার পড়ে ৫০ লক্ষ মানুষ ভারতে প্রবেশ করেছে । তারা তখনই ফিরে যাবে যখন তারা নিজ বাসভূমে নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে বাস করার নিশ্চয়তা পাবে , যখন তারা নিজ ইচ্ছায় জীবিকা নির্বাহের অনুমতি পাবে এবং যখন তাদের নিজ নিজ মালিকানা ফিরে পাবার নিশ্চয়তা দেয়া হবে , তাদের চাকরি নথিভুক্ত হবে এবং প্রতহিক জীবনে হস্তক্ষেপ করা হবে না ।

এই অনাকাঙ্ক্ষিত জনস্রোতের পটভূমি অনুধাবন করতে হলে পাকিস্তানে শুরু হতে পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্যমান অবস্থার কথা স্মরণ করা প্রয়োজন । পাকিস্তানের দুই অংশের মাঝে ১০০০ মাইলের দূরত্ব , যার পুরোটাই ভারতীয় ভূখণ্ড , এই দিক দিয়ে পাকিস্তান অনন্য । লোকসংখ্যার সিংহভাগ ৭ কোটি ৫০ লক্ষ বাস করে পূর্বে এবং ৬ কোটি ৫০ লক্ষ বাস করে পশ্চিমে । রাজনৈতিক , সামরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা কেন্দ্র পশ্চিমে যদিও পাকিস্তানের প্রাথমিক কাঁচামাল পাঁট, চা এবং বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান সহায় পূর্ব । এমনকি সরকার এ কথা স্বীকার করে যে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান দ্বারা পূর্ব পাকিস্তান নিগৃহীত হচ্ছে ।

উদাহরন হিসেবে উল্লেখ করা যায় , সমস্ত পাকিস্তানের বেসামরিক এবং সামরিক প্রশাসনে বাঙ্গালিদের অংশীদারত্ব কখনই ১০ ভাগের উপর যায় নি । পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এই বৈষম্মের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং কোন প্রকার কার্যকারী পদক্ষেপের অভাবে দিন দিন তাদের ভিতর বিক্ষোভ

দানা বেধে উঠে ।

যাই হোক, ১৯৬৯ এ প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের পতনের পর একটি নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । জেনেরাল-প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া দায়িত্ব নেন এবং প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন যেখানে প্রাপ্ত বয়স্করা ভোট দিবে এবং প্রতিনিধিত্ব জনসংখ্যার অনুপাতের ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে । প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের জনগন একটি গণতান্ত্রিক বেবস্থায় পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর এতদিনের অনাচারের সম্ভাব্য প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করে ।

নির্বাচনটি দুবার পেছানোর পর ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় । নির্বাচনের ফলাফলকে পাকিস্তানে বরণ করা হয় গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে এবং বাস্তবিক ভাবেই এটা ছিল বিজয় ।

প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের ফলের কোন গুরুত্বই ছিল না । ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৯ টি আসন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ ছিল যার মধ্যে শেখ মুজিবর রহামানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে ১৬৭ টি আসনে । পূর্ব পাকিস্তানে ৯৮ ভাগ আসনে জয় নিয়ে শেখ মুজিব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেন এবং স্বাভাবিক নিয়মে সরকার প্রধান হিসাবে তারই সরকার ঘটনের কথা । এই নির্বাচনের জন্য আওয়ামীলীগ স্বায়ত্তশাসন এবং বৈষম্ম ও অনাচার হতে মুক্তির লক্ষে ছয় দফা দাবির উত্থাপন করে।

আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানি শাসকদের কাছে নির্বাচনের ফলাফল ছিল অর্থনৈতিক , সামরিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানীদের আধিপত্তের সূচনার আশঙ্কায় পূর্ণ ।

মার্চের ২৫ এবং ২৬ তারিখের সামরিক আভিযান ৭ কোটি মানুষের রায়কে পাশকাটিয়ে  শাসক শ্রেণির সামরিক শাসনকে জারি রাখার যে অভিপ্রায় , তারি প্রকাশ ।

আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে পাকজান্তা পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয় এবং সামরিক বাহিনীকে ত্রাস সৃষ্টির সবুজ সংকেত দেয় ।

বেসামরিক জনসাধারণের উপর পাক বাহিনীর ব্যাপক হামলার বিবরণ বর্তমানে সকলেরই জানা । সেই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলার বিস্তারিত বিবরণ পেশ করে আমি এসেম্বলির সময় ব্যয় করতে ছি না । ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে । আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিব বর্তমানে কারাগারে বন্দি । তাকে গোপনে সামরিক আদালতে এমন এক অভিযোগে বিচার করা হচ্ছে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড । বাক স্বাধীনতা এবং জনসাধারণের অধিকারকে দমন করা হয়েছে , বিদেশী সাংবাদিকদের তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে । আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থাকে আক্রন্ত স্থানে প্রবেশ করতে দেয়া হয় নি , এই রকম আরো অনেক প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে যাতে করে পৃথিবীর এই প্রান্তে কি হচ্ছে সে খবর মানুষ জানতে না পারে , যদিও সে চেষ্টা সব সময় সফল হয় নি । হত্যা , ধর্ষণ , আগুন-লাগানো, লুট সর্বত বিরাজমান । এর অবশ্যম্ভাবী ফলাফল হচ্ছে , মানুষ তাদের সারা জীবনের সম্পদ ফেলে ভারতে পালিয়ে যাচ্ছে । এপ্রিল এর শেষে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ লক্ষ যা মে মাসের শেষে এসে হয়েছে ৪০ লক্ষ এবং জুন শেষ হবার আগেই তা ৬০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায় যা এখনও বাড়ছে । বর্তমানে এই সংখ্যা ৯০ লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং জনস্রোত এখনও বন্ধ হয় নি । যে কোন আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই ধরনের শরণার্থী জনস্রোতের কথা কেউ আগে শুনে নি ।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামরিক আগ্রাসন , ত্রাসের শাসন কায়েম , সকল মানবিক অধিকারকে চূর্ণ করা , যা এখনও চলমান,  মানব জাতির বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে । এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনসাধারণের অংশগ্রহণে প্রতিরোধ চলমান । সেনাবাহিনী , পুলিশ এবং বিভিন্ন সামরিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ ত্যাগ কারী  হাজারো লোক এই প্রতিরোধের তীব্রতা যোগাচ্ছে । তাদের সাথে যোগদান করছে বিভিন্ন বয়সী লোকজন এবং এই সংখ্যা বাড়ছে ।

পাকিস্তানী কর্ত্রীপক্ষ তাদের পূর্বের অঙ্গীকার বদ্ধ সকল অঙ্গীকার ও রীতিনীতি ভঙ্গ করেছে । পাকিস্তান মরিয়া ভাবে চেষ্টা করেছে তার সাঙ্ঘাতিক কাযকালাপ থেকে  সবার দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে । পাকিস্তানের কর্মকাণ্ড জাতিসংঘ সনদের এতো গুলো ধারা ভঙ্গ করেছে যে একে অভ্যন্তরীণ ঘটনা হিসাবে আখ্যা দেওয়াটা হবে আন্তর্জাতিক ন্যায়নীতির প্রতি উপসাহের সামিল । এটা স্পষ্টই একটি আন্তর্জাতিক ঘটনা যখন কেউ বুজতে পারে ভারতে পাকিস্তানী জনগণের বাঁধভাঙ্গা স্রোত যে অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তাতে ভারতকে সাহায্য করার জন্য অন্যান্য দেশও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে ।

নিজেদের সৃষ্ট এই নির্বোধ এবং প্রাণঘাতী কার্যকলাপের দায় পাকিস্তান চাপাচ্ছে অন্যের ওপর । পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী কাজকর্ম রীতিমতো চোখে ধুলো দেবার সামিল । শরণার্থীদের অবস্থা দেখলেই আসল সত্যটি প্রকাশিত হয় । পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অনেকবারই শরণার্থীদের দেশে ফিরতে বলেছেন যদিও ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে । পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি রুপে একটি নাগরিক সরকার সেখানে তৈরি করা হয়েছে যাতে সত্যিকার অর্থে পূর্ব পাকিস্তানের কোন প্রথিনিধি নেই ।এটা নেতৃত্ব শুন্য এবং সামরিক বাহিনীর হুকুমে চলে । সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে যদিও একই সময় মুজিবর রাহমান এবং অন্যান্য নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তুলনা করা এবং বিচার করা হয় দেশদ্রোহী হিসাবে । আমরা দেখতে পাই , পাকিস্তানের সরকার গঠন করার কথা ছিল যে রাজনৈতিক দলের তাকে নিষিদ্ধ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপের জন্য অযোগ্য ঘোষিত হতে । নির্বাচিত অর্ধেক জনপ্রতিনিধিদের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে অংশগ্রহণের অযোগ্য হিসাবে ঘোষিত হয়েছেন । আমাদের মতামত হচ্ছে , যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধের সম্মতি নিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধানের পথ তৈরি করা হবে, ততদিনই ভারতের দিকে শরণার্থীদের জনস্রোত চলতে থাকবে। মহাসচিব উ থান্ট এবং অন্যান্য বিশিষ্ট কূটনৈতিক , রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা এ কথা একাধিকবার বলেছেন যে সমস্যাটি রাজনৈতিক এবং সমাধানার প্রথম পদক্ষেপটিও হতে হবে রাজনৈতিক । আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবকে অনিতিবিলম্বে মুক্তি দিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। এটা নিশ্চিত ভাবেই বলা যায় যে পূর্ব পাকিস্তানীদের পক্ষে কথা বলার জন্য তিনিই সবচেয়ে যোগ্য। তিনি এবং একমাত্র তিনিই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আশা আখাঙ্কার ধারক এবং প্রতিনিধিত্ব করেন । আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য ছাড়াই এ সকল কাজ পাকিস্তানী কর্ত্রীপক্ষই করতে পারে ।  আন্তর্জাতিক  সম্প্রদায় যা করতে পারে টা হচ্ছে ইসলামাবাদের সামরিক সরকারকে এ কথা বুঝানো যে সামরিক পথে সাফল্য আসবে না । সাফল্যের জন্য সামরিক সরকার এবং ইতিমধ্যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সমঝোতা জরুরী । আমরা মনে করি সঙ্কটকে আরো ঘনীভূত হতে দেয়া হবে অদূরদর্শীতা পূর্ণ । দ্বিপাক্ষীওভাবে সকল সরকারের উচিত হবে নিজেদের সর্বচ্চো চেষ্টা করা যাতে সামরিক সরকার অত্যাচার বন্ধ করে , নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা শুরু করে এবং সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় । একমাত্র এই ভাবেই ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের স্রোত বন্ধ হবে এবং যারা আগেই পালিয়ে এসেছেন তারা দেশে ফেরত যাবেন । আমাদের অক্ষমতার জন্য আমরা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে সাময়িক বাসস্থান দিয়েছি । খাদ্যাভাবে  বস্ত্রহীন  অসুস্থ  বৃদ্ধ,  নর নারী , অসহায় শিশুদের অনেকেই সাম্প্রতিক সামরিক বর্বরতার ছাপ শরীরে ধারণ করেন । আমার প্রস্তাবিত বেবস্থার মাধ্যমেই আসন্ন দূরবিক্ষকে মোকাবেলা করা যায় এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব । এই সমস্যার সমাধার না করে যদি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় , তাহলে  ভবিষ্যৎ হবে নৈরাশ্যপূর্ণ । আমরা অনেক সময় নিয়ে এসেম্বেলিতে বসে যত ইচ্ছা আলোচনা করতে পারি , কিন্তু তাতে এই আগ্রাসনের শিকার সন্ত্রস্ত মানুষগুলোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যেতে পারে । তারা আমাদের কখনই ক্ষমা করবে না যদি না এই কঠিন সময়ে আমরা তাদের পাশে দাঁরাই ।

.

13.289.872-879

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে মিঃ মাহমুদ আলীর (পাকিস্তান) বিবৃতি

জাতিসঙ্ঘ ডকুমেন্টস

 

২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দাওয়া একটি বক্তব্যের ভিত্তিতে একটি পয়েন্ট অফ অর্ডার ইস্যু করতে আমার প্রতিনিধিদল আজ বাধ্য হয়েছে। তার বক্তব্যের বেশিরভাগই ছিল আমার দেশের নিতান্ত অভ্যন্তরীণ  বিচারব্যবস্থা কেন্দ্রিক। পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন বিষয়ে এভাবে খোলা হস্তক্ষেপ এর বিষয়ে আমার প্রতিনিধিদল যে অভিযোগ উত্থাপন করেছে তা জাতিসংঘ প্রণীত সংবিধান ৭ নং অনুচ্ছেদ এর আরটিকেল ২ এর আওতাধীন। যেখানে বলা হয়েছে যে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। এই নীতিটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহন করা হয়েছে এবং একি ধরনের নীতি গৃহীত হয়েছে অর্গানাইজেশন অফ আফ্রিকান ইউনিটি, যুক্তরাষ্ট্রিয় সংস্থাগুলো, এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাতেও যেমন নন-এলাইন্ড কনফারেন্স বা অ্যাফ্রো-এশিয়ান কনফারেন্স। আমরা মনে করি এই নীতি মেনে চলা হোক- তার কারন এই নয় যে পাকিস্তান কিছু গোপন করতে চায়- যেভাবে ভারতীয় মন্ত্রী তার বক্তব্যে ইঙ্গিত করেছেন, বরং এই নীতি মেনে চলা দরকার কারন যে নজির আজ ভারতের প্রতিনিধি স্থাপন করলেন তাতে নিয়মতান্ত্রিক ও কার্যকরীভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মেনে চলা কঠিন হয়ে পরবে।  ভারতের পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এ হস্তক্ষেপ সকল আন্তর্জাতিক ব্যবহারবিধি, আন্তর্জাতিক আইন বা জাতিসঙ্ঘ সংবিধানের আইন লঙ্ঘন করছে, কেননা সবখানেই কঠোরভাবে নির্দেশিত আছে যে অন্য দেশের বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা রাখতে হবে। ১৯৬৫ সালের ডিসেম্বর মাসে, জাতিসংঘের সাধারন পরিষদে একটি নীতিমালা গ্রহন করা হয়, যার শিরোনাম ছিল- কোন দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় ও তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় হস্তক্ষেপের অগ্রহনযোগ্যতা- এবং মাত্র একটি ভোট এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিল, বাকি সকলেই এর পক্ষ সমর্থন করেছে।

এর প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

কোন রাষ্ট্র, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, যেকোন কারনেই হোক না কেন, অন্য কোন দেশের আভ্যন্তরীন বা বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।  একিরকমভাবে, কোন দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক উপাদান বা এর বৈশিষ্ট্যের বিষয়ে হুমকি প্রদান, সশস্ত্র আক্রমন বা যেকোন ধরনের হস্তক্ষেপ ও গ্রহনযোগ্য নয়।

২য় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-

কোন রাষ্ট্র দ্বারা অন্য রাষ্ট্রের সরকার উৎখাতের কোন সন্ত্রাসী বা সশস্ত্র ষড়যন্ত্র বা গণআন্দোলনে লিপ্ত হওয়া, সহযোগিতা করা, প্ররোচনা দেয়া, অর্থায়ন করা, ঘটনার উদ্রেক বা ঘটনার প্রতি সহনশীলতা গ্রহনযোগ্য হবেনা।

সর্বশেষ এই অনুচ্ছেদ বলছে-

৪। এই নিষেধাজ্ঞার কঠোর প্রতিপালন প্রতিটি দেশের পারস্পরিক শান্তি বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, কেননা, কোন ধরনের হস্তক্ষেপ শুধু জাতিসংঘের এই নীতিমালাকে লঙ্ঘন ই করেনা, বরং আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে।

এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে এই নীতিমালা গ্রহনের সময় ভারত ও কমিটির সদস্য ছিল। আমি নিশ্চিত যে এখানে উপস্থিত সকল প্রতিনিধিই বর্তমান জটিলতা সম্পর্কে অবগত আছেন পাকিস্তানে যার একটি সুরাহা করার চেষ্টা চলছে। দেশের ভিতরে এধরনের আর্থিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা অঞ্চলভিত্তিক বিরোধের সুরাহা করা পাকিস্তানের জন্য নতুন কিছু নয়।  সকল বহুভাষী, বহুসাংস্কৃতিক ও বহুজাতিক রাষ্ট্রেই এধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এধরনের সমস্যা ভারতেও কম নয়। তারপরও সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলাকে যথার্থ ভাবেন। ভারতে কি হচ্ছে তা নিয়ে অনেক কিছু বলার থাকলেও, আমি এখানে সেসব আলোচনা করবো না। আমরা জানি, সারা পৃথিবী জানে নাগা ও মিজোরামে কি হচ্ছে। আমরা জানি পশ্চিম বাংলার মানুষের বিদ্বেষ ও সেখানের টালমাটাল পরিস্থিতির কথা যেখানে গত চার বছর ধরে কোন গনতান্ত্রিক সরকার কার্যকরীভাবে শাসন করতে পারছেনা। আমরা জানি দক্ষিন ভারত ও পাঞ্জাব তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু, এসব বিষয়ে জড়ানোর আমার কোন ইচ্ছে নেই এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতন আমি এই অগাস্টের ফোরামে পরিষদের সামনে কোন প্রচারনাও চালাবোনা এই বিষয়ে। পাকিস্তানে এই জটিলতার কারন কি, তার মুল বিষয়গুলো এখানে উপস্থিত সকলেই জানেন। যদিও নানা ধরনের প্রচারনায় ও কটুবাক্যে তা অস্পষ্ট হয়ে পরছে, যেমন একটি আজ সকালেই আমরা শুনলাম।

মুল বিষয়টি হচ্ছে গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গোটা পাকিস্তানেই। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার এর ভিত্তিতেই এই নির্বাচন দেয়া হয়। এর পর যা হয়েছে তা হলো একটি আইনসঙ্গত গনমানুশের আন্দোলন যার মুলে ছিল একটি গনতান্ত্রিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের দাবী, যার ফলে দেশের দুই অংশ দুটি সাতবশাসিত রাজ্যে পরিনত হবে, সেই আন্দোলনটি ক্রমশ দুটি রাজ্যকে আলাদা দুইটি দেশে বিভক্ত করার আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। পূর্ব বাংলার সর্বত্র সহিংসতা ও অরাজকতা ছড়িয়ে পরছিল এবং সেইসব জনগন, যারা এই বিভেদ চান না, তাদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ছিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এ সমস্যার সমাধানে নির্বাচনে জয়ী দলটির সাথে আলোচনা চালিয়ে এসেছেন শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, যারা আসলে সংসদে অংশগ্রহন করতে নেয়, বরং এদেশকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র লিপ্ত ছিল। এই পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, যার প্রিষ্ঠপোশকতায় এই নির্বাচন অনুষঠিত হয়, তিনি দেশে অখন্ডতাকে অক্ষুন্ন রাখতে সেনাবাহিনীকে তার দায়িত্ব পালন করার ও এই সহিংসতা দমন করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হন। আমরা দেখলাম যে এই বিষয়ে ভারত তাখনিক প্রতিক্রিয়া জানালো। সেসময়ে ভারতের কোন শরণার্থী বিষয়ক সমস্যা ছিলনা, যা আজকে সকালে সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এধরনের হস্তক্ষেপের মুল কারন হিসাবে বিবৃত করেছেন। সেসময়েই ভারতের সংসদে একটি প্রস্তাব গ্রহন করা হয় যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তথাকথিত বাংলাদেশকে সমর্থন জানান। কলকাতা ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে সুবিস্তৃত ও সুনিয়ন্ত্রিত প্রচারনা চালানো হয়, আর মুলে ছিল মিথ্যাচার, অর্ধসত্য কথা এবং মনগড়া ঘটনা।  বিভিন্ন দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ সঙ্ঘটিত হবার গুজব ছরানো হয়। গনহত্যা ও নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ড কারযকরের গল্প বলা হয়। বলা হয়েছিল যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বুদ্ধজিবিদের খুজে বের করে তাদের পরিবারের সামনেই হত্যা করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে কসাইখানা বানানো হয়েছে। এবিষয়ে ভারতীয় একটি পত্রিকার বক্তব্য আমি উল্লেখ করছি-

গত ৪ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে দিল্লীর স্টেটসম্যান পত্রিকা যা লিখেছে তাতে বেশিরভাগ ঘটনাই অতিরঞ্জিত, যদি তারা একথা বানিয়ে না বলে থাকে, তবে এটা বলা যে কারো জন্যই অসম্ভব হয়ে পরবে যে এই ঘটনাগুলো ঠিক কখন ঘটেছিল। এবিষয়ে আমাদের কাছে যেসব প্রতিবেদন এসেছে, তাতে দেখা যায় এসবের অনেকটাই ইচ্ছাকৃত চিন্তার প্রকাশ, তাদের যারা এসব অভিযোগ করেছেন এবং তাদের যারা বিনা প্রতিবাদে এসব কথা মেনে নিয়েছেন।  আর্মিদের অভিযানের এক সপ্তাহেরও কসময়ের মধ্যে ঢাকা থেকে কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছে। ঢাকা বিশবিদ্যালয়, যা বিরোধিদের ঘাটি ছিল, তা দেশের বাইরে থেকে পাওয়া অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য সংরক্ষন করার অন্যতম স্থান ছিল, তা এখনও অক্ষত আছে এবং ভালভাবেই চলছে। যেসকল বুদ্ধিজীবীদের ভারতের মিডিয়া মৃত বলছে, তারা এখনও জীবিত এবং সুস্থভাবে জীবন যাপন করছে, যেরকমটি কয়েক মাস আগে নিউ ইয়র্কের একটি বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল।

ভারতের এই উৎকণ্ঠার কারন এখন সকলে কাছেই পরিষ্কার এবং তারা নিজেরাই তা স্বীকার করেছে। ২রা এপ্রিলে ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত ভারতীয় একজন কর্মকর্তা বলেন- যা প্রতিবেদনে আসেনি, তা হল এটি একটি মানসিক যুদ্ধ।  মিঃ ব্রুনো ডি হ্যামেল নামক একজন বিদেশী পরিদর্শক ১৭ি এপ্রিল লন্ডন টাইমসে লিখেন, মনে হচ্ছে ভারতীয় মিডিয়া সকল দায়িত্বজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে, তাদের পত্রিকাগুলোতে এখন খবর বলে কিছু নেই, সবি পাগলের প্রলাপ আর গুজব। তারা যা বলছে, তা দশভাগের মধ্যে নয় ভাগই মিথ্যে, অনিশ্চিত এবং পরস্পরবিরোধী।  তারা যেসব মর্মস্পর্শী অরাজকতার কথা বলছে, তা নিঃসন্দেহে বানোয়াট এবং প্রমানহীন।

সেদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বললেন যে তার দেশ পাকিস্তানি শরণার্থীদের ভরন পোষণের দায় বহন করছে। তিনি বলেছেন যে সংখ্যাটি প্রায় ৯০ লক্ষ। এবং তিনি  বলেছেন যে এখনও সীমান্তের ওপার থেকে হাজার হাজার মানুষ আসছেন। আগামী ৬ মাস এদের রক্ষনাবেক্ষনের জন্য প্রায় ৮০ লক্ষ ডলার দাবী করেছেন তিনি। যদি আমি ভুল না বলে থাকি, তবে তার বলা ৯০ লক্ষ শরনারথীর সংখ্যা যথেস্টই অবাস্তব বলা যায়, সেই সাথে দাবীক্রিত এই বিপুল পরিমাণ অর্থ ও। ভারতে প্রায় ৫০ কোটি মানুষ আছেন, যাদের জন্য ভারত সরকার এবছর ৪০০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ করেছে।

ভারতে যে সকল মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে এবং এই মুহূর্তে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা এবং ফিরিয়ে আনা অবশ্যই পাকিস্তানের জন্য অবস্যকরনীয়। আমার সরকার তাদের সংখ্যা গননার কারয সম্পন্ন করেছে, এবং ১লা সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ পর্যন্ত তাদের সংখ্যাটি দাঁড়িয়েছে ২,০০২,৬২৩ জনে। আমরা বলছিনা, আমাদের সংখ্যাটাই আপনাদের বিশ্বাস করতে হবে। বরং আমরা বলব, জাতিসংঘ যেন একটি নিরপেক্ষ দলকে এই সংখ্যাটি যাচাই করার জন্য নিযুক্ত করে। আমরা এধরনের কোন দলকে সরেজমিনে পরিদরশন করার সুবিধাও দিতে প্রস্তুত আছি। আমি আশা করবো, এধরনের আশ্বাস ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকারের পক্ষ থেকে দিবেন। এই নিরপেক্ষ দল তাহলেও এটাও দেখতে পারবেন যে আসলেই হাজার হাজার মানুষ ভারতে আশ্রয় নিতে প্রতিদিন সীমান্ত পার হচ্ছে কি না, বা এরকম কোন ঘটনা আদৌ ঘটেছে কিনা। এধরনের একটি স্বাধীন যাচাই করার প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে আমার উদ্দেশ্য কোনভাবেই এই বিশালাকারের মানবিক সমস্যার গুরুত্বকে ছোট করা নয়। এটি দুক্ষজনক, কিন্তু কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব না যে একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি অসংখ্য মানুষকে তাদের জান মালের নিরাপত্তা সম্পর্কে ভাবিয়ে তুলেছে এবং তারা নিজেদের রক্ষা করতে ঘর ছেড়েছেন। জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং জনমনে যে আতংক স্রিষ্টি করা হয়েছে সে অনুযায়ী এই উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিরুপন করা হয়েছে। এধরনের আতংক তখনি তোইরি করা সম্ভব যখন তাদের বারবার বলা হচ্ছে যে তারা একটি পরিকল্পিত গনহত্যার স্বীকার হতে যাচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এরুপ প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিয়েছেন, কিন্ত তখন তিনি বললেন- আমি এই শরণার্থীদের মরতে যেতে দিতে পারিনা।

এই সময়ে এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় জটিলতা। পাকিস্তান বদ্ধপরিকর যে যারা যেকোন কারনেই হোক না কেন ঘর ছেড়েছেন তারা অতিসত্বর নিজ দেশে এবং নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে যোগদান করবেন। তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে।

গত ১৮ এপ্রিল করা আবেদনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন, “আমার এই আবেদন সকল জাতি, বর্ণ ও ধর্মের পাকিস্তানি নাগরিকদের প্রতি। যেসকল সংখ্যালঘু মানুষ ঘর ছেরেছেন, তারা বিনা দ্বিধায় পূর্ব পাকিস্তানে তাদের গ্রিহে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন। তাদের সকল সুবিধা এবং পূর্ণ সুরক্ষা দেয়া হবে। তারাও পাকিস্তানের নাগরিক এবং কোন ধরনের বৈষম্য করার কোন প্রশ্নই আসেনা। আমি তাদের বলবো বাইরের দেশ থেকে আসা কোন অপপ্রচারে প্রভাবিত হওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখতে। যেসকল শরণার্থীরা গ্রিহে ফিরে আসবেন, তাদের জন্য পাকিস্তান সরকার সীমান্তে প্রায় ২১টি অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করেছে যেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ, যানবাহন ও রসদ সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া, পাকিস্তানি সেনাও সকল স্তরের মানুষের নিশ্চিতি প্রদানের লক্ষ্যে অভিযান বিরতি ঘোষণা করেছে, এমনকি পালিয়ে যাওয়া সৈন্য ও দেশদ্রোহী সন্দেহে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দেয়া হয়েছে”।

তার ২৮ জুন দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন আমরা শরণার্থীদের ঘরে ফিরে আসার সহায়তায় জাতিসংঘের সহায়তা আনন্দের সাথে গ্রহন করবো। একি সাথে পাকিস্তান জাতিসংঘের মহাসচিব ও সেদেশের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারদের শরণার্থীদের গ্রিহে ফিরিয়ে আনার সকল কার্যক্রমে পূর্ণ সহায়তা করে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলো যারা এবিষয়ে কাজ করছেন তাদের সাহায্য করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য সীমান্তের দুই প্রান্তেই প্রতিনিধি দল প্রেরনের যে প্রস্তাব ১৯শে জুলাই দিয়েছিল, তা পাকিস্তান সাথে সাথেই গ্রহন করেছে। এ বিষয়ে অবশ্যই মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন যে ভারত এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ত্রাণ পরিচালনা ও পুনর্বাসন কর্মকাণ্ডে জাতিসংঘের একটি দলকে পূর্ব পাকিস্তানে আনার প্রস্তাবেও সম্মত হয়েছে পাকিস্তান সরকার। আমাদের নাগরিকগন যারা এখন ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের দ্রুত ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল ব্যবস্থাই গ্রহন করেছি। উল্লেখ্য যে শরণার্থীরাও এসকল উদ্যোগের কথা জানতে পেরেছে  এবং এখন তারা ফিরে আসতে শুরু করেছে। আমাদের শেষ গননা অনুযায়ী প্রায় ২ লক্ষ লোক ফিরে এসেছে। যদি ভারত আমাদের জরুরী সহায়তা দেয় তবে এই শনরথীদের প্রত্যাবর্তন আরো দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হবে।

পাকিস্তান সরকার এসকল বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ভারতীয় কর্তৃপক্ষীয় ব্যাক্তিদের একটি সম্মেলনের আহবান জানিয়েছে যেন এই কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার উপায় বের করা যায়। এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং তিনি যেকোন দিন ও যেকোন সময় বসতে প্রস্তুত আছেন। যাই হোক, এখন পর্যন্ত ভারত কোন ধরনের সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, এবং তা শুধু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে  নয়, কোন নিরপেক্ষ জোটকেও  তারা সাহায্য করছেনা। যেমনটি আমি বলেছি, যে জাতিসঙ্ঘ সচিব সীমান্তের দুই পারেই শরণার্থীদের জন্য  প্রতিনিধিদল পাঠানোর প্রস্তাব দিলেও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে, ঠিক যেভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান এসকল সমস্যা সুরাহা করতে প্রতিরক্ষা পরিষদের একটি কমিটি পাঠানোর যে প্রস্তাব পাকিস্তান করেছিল, সেটিও প্রত্যাখ্যান করে।  তারা কোন ইসলামিক সচিব পর্যায়ের প্রতিনিধিকে পশ্চিম বাংলার শরণার্থী শিবিরে যেতে বাধা দিচ্ছে, এবং আমার সরকারের কোন প্রতিনিধির সাথে যেকোন ধরনের আলোচনার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করছে।

এখন এবিষয়ে আমরা সন্দিহান যে ভারতীয় প্রতিনিধি শরণার্থীদের কষ্টের কথা চিন্তা করে আদৌ আমাদের সহমর্মিতা জাগাতে এই ফোরামের সামনে কথা বলেন কিনা। এই সংস্থা সেসব নিষ্পাপ মানুষগুলোর সাহায্য করার জন্য যা যা সম্ভাব্য প্রস্তাব করেছে, ভারত তার সবগুলোই প্রত্যাখ্যান করেছে। কেন, ভারত সরকার মনে করছে যে তাদের সীমান্তে জাতিসংঘের পরিদর্শক কোন দল থাকতে পারবেনা, যেখানে পাকিস্তান, যাদের উপর মানুষের উপর ভয়াবহ রকমের অত্যাচার চালানোর দারুন সব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেই দেশটি তার সীমান্ত এলাকায় জাতিসংঘের পরিদর্শক দলকে আসতে দিতে কোন আপত্তি করছে না?

ভারতের এরকম অসহযোগিতা করাটাই স্বাভাবিক। ভারত বিশ্বের কাছে এবিষয়টি গোপন রাখতে চায় যে তার কারযকলাপে বিশ্বের এ প্রান্তে একটি সশস্ত্র যুদ্ধ পরিস্থিতির সুত্রপাত হয়েছে। মানবিক সাহায্যের আড়ালে ভারত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রদান করে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করছে, প্রশিক্ষন দিচ্ছে এবং তাদেরকে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য সম্ভাব্ব্য সকল রকমের সাহায্য করছে।  এই আপাতবিরোধী পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে এখানে আমি আরো একজন ভারতীয়ের কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন মনে করছি। ১৯৭১ এর ১৮ ই সেপ্টেম্বর, মাত্র এক সপ্তাহ আগে স্বয়ং ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী একটি সভায় বলেন- “শরণার্থীরা তখনি তাদের দেশে ফিরতে পারবে, যখন সেটি একটি স্বাধীন রাজ্যে পরিণত হবে”। তিনি আরো বলেন যে- ‘এটা বিশ্বাস করা কষ্ট যে পাকিস্তান কখনো বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিবেনা, কিন্তু আমাদের এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে যেন তার কাছে আর কোন উপায় না থাকে’।

আজ সকালে পাকিস্তানের এই সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান বলতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কি বুঝাতে চেয়েছেন, সে বিষয়ে এখনও যদি কারো প্রশ্ন থাকে, তবে তার সহকর্মীর এই বক্তব্যই উত্তর হিসেবে যথেষ্ট।

আমার দেশের তরফ থেকে আমি বলতে চাই, কাউকে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে দ্বিধায় ফেলার সুযোগ দেয়ার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই।  আজকে সকালে যেরকমটি আমরা শুনলাম, সেরকম আক্রমনের হুমকিই শুধু নয়, বরং আমার দেশকে বিভক্ত করার একটি পরিকল্পিত সেনা অভিযানেরো মোকাবেলা আমাদের করতে হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম বাংলার আসাম সীমান্তে প্রতিদিন বোমা হামলা হচ্ছে। একাধিকবার ওই এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে, এমনকি এই পরিস্থিতির আগে থেকেই, এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করে ২০০,০০০ উন্নীত হয়েছে এখন, তথাকথিত মুক্তি বাহিনীকেও ভারত সরকার প্রশিক্ষন, অস্ত্র ও অন্যান্য জিনিস সরবরাহ এবং পারিশ্রমিক দিচ্ছে।

টাইমস পত্রিকায় গত ২৯শে এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয়েছে, “ কোলকাতা থেকে উত্তর দিকে ভারতীয় যেসকল রাস্তা সীমান্তের দিকে এগিয়েছে, সেগুলো দেখলে মনে হয় যেন মালামাল সরবরাহের রাস্তা। ভারতীয় শহরগুলোতে প্রতিনিয়ত বাঙ্গালীদের ট্রাক চলাচল করছে তাজা খাবার সরবরাহ যোগান, খালি তেলের ড্রামগুলো পূর্ণ করা বা গোলাবারুদের বাক্স পরিবহন করার জন্য। ভারতের সীমান্ত পোস্টের নিকটবর্তী এলাকাগুলোতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে সম্প্রতি ভারত এবং পাকিস্তানী বাহিনীর মধ্যে সংক্ষিপ্ত গুলিবিনিময়ের মত ঘটনা ঘটছে।

পশ্চিম বাংলার রাজধানী কোলকাতায়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর এইসকল সহযোগিতা নিয়ে নানারকমের গল্প এখন মানুষের মুখে মুখে। একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী এখন ভারতীয় অস্ত্র কারখানাগুলোতে অস্ত্র এবং গোলা নির্মিত হচ্ছে ভারতের প্রতীক ছাড়াই। আরেকটি প্রতিবেদন বলছে গত সপ্তাহে বেশ বড় একটি গেরিলা বাহিনীর সাথে ভারতীয় আর্মিরাও পাকিস্তানি আর্মিদের একটি ঘাটিতে আক্রমন চালানোর জন্য যোগ দেয়।

আমি জানিনা, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এইসকল অভিযোগ অস্বীকার করতে কখন এই মঞ্চে আবার দাড়াবেন। তিনি নিজেই গত ২০ জুলাই ভারতীয় সংসদে বলেন-“মুক্তিবাহিনীদের সহযোগিতা করতে ভারত যথাসম্ভবপর চেষ্টা করছে’। এরপর এখনও তিনি সকালবেলায় বক্তব্য দিচ্ছেন যে ভারত তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রের কোন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেনা এবং তাদের সকল কাজ কেবলি মহৎ উদ্দ্যেশ্য ও উন্নতি সাধনের লক্ষে। তিনি ভারতকে নিষ্পাপ এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার শিকার হিসেবে দেখিয়েছেন সবাইকে।

আমি সাহস করে বলতে চাই যে জাতিসংঘের এই কক্ষে এমন প্রচারনা চলেছে বার বার। আমাকে বলতে দিলে আমি বলবো ভারত ও তার এই সাধুতার প্রচ্ছন্ন বলয় আমাদের সবার মাথার উপরেই ঘুরছিল আজ পর্যন্ত, যতক্ষন পর্যন্ত না বর্তমান সময়ে তার আসল চরিত্র সকলের সামনে না চলে আসতো। ভারতী প্রতিনিধিগণ বা প্রচারদল গত চার মাস ধরে সারা প্রিথিবীতে শরণার্থীদের মানবিক স্বার্থে ঘুরছে না। তারা আসলে তাদের দীর্ঘকালীন, অপূর্ণ সেই আশাটা পুরন করতে চায়, আর তা হল পাকিস্তান জাতিকে শেষ করে দেয়া আর নাহলে দুর্বল করে ফেলা। ভারতের প্রতিরক্ষা সংস্থার মিঃ কে সুব্রামানিয়াম অবশ্য এত কায়দা করে কথা বলার মধ্যে যাননি। তিনি বলেছেনঃ “ভারতের এখনি উপলব্ধি করা প্রয়োজন পাকিস্তান বিভক্ত হলে আমাদেরই লাভ এবং এমন সুযোগ আর কখনোই আসবে না। যদি পাকিস্তান ভেঙ্গে যায়, এবং আমরা বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, তবে তা ভারতের প্রতিরক্ষা সমস্যার সমাধান করতে পারে”।

আরেকজন ভারতীয় রাজনীতিবিদ পাকিস্তানের বিভক্তিকে ভারতের এই উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে পরিণত হবার পথ হিসেবে দেখছেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে শরণার্থীদের আগমনে সেদেশের অর্থনীতি কিভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সে কথা বলছিলেন। পাকিস্তানের তরফ থেকে আমি তাকে নিশ্চিত করছি যে পাকিস্তান তার প্রতিটি নাগরিককে ফিরিয়ে নিতে বিপুল উৎসাহী ও সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত আছে। যদি ভারত এই দায়, তাদের ব্যবস্থাপনার ঝামেলা থেকে মুক্তি নিতে ইচ্ছুক হয়, তবে তারা যেন এর শেষপর্যন্ত আমাদের উদার সহযোগিতা করতে সম্মত হয়।

আমার সরকার বলেছে যে তারা সবচেয়ে উত্তম উপায়ে শরণার্থীদের কিভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে এখনি ভারতের সাথে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক। আমার সরকার প্রতিরক্ষা পরিষদকে বলেছে এ বিষয়ে তারা যেন বিশেষভাবে মনোনীত কল্যান দপ্তরের কমিটিকে সকল সহযোগিতা করে। যদি ভারত যেকোন কারনেই হোক পাকিস্তানের সাথে এক টেবিলে বসতে রাজি না হয়, তবে তারা প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের কল্যান দপ্তরের সাথেই আলোচনায় বসুক।

যেমনটি আমি আগেই বলেছি, পাকিস্তান সরকার এই শরণার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে আনা ও তাদের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নিচ্ছে। সরকার এই বিষয়েও অবগত যে এই শরণার্থী ও বাকি পাকিস্তানের নাগরিকদের ভালো থাকার জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও স্বাভাবিক পরযায়ে নিয়ে আসতে হবে।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট গত ২৮শে জুন জাতির উদ্দেশ্যে তার দেয়া ভাষনে বলেছেন যে গনমানুষের অংশগ্রহন ছাড়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় নেয়া সম্ভব হবে না। তিনি সরকারদলে গনমানুশের প্রতিনিধি উপস্থাপনের কাজেও বেশ ভাল অগ্রগতি অর্জন করেছেন। এর প্রথম ধাপ হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে একটি বেসামরিক প্রশাসন কার্যকর করা হবে যার প্রধান থাকবেন পূর্ব পাকিস্তানেরই একজন বিশিষ্ট ব্যাক্তি এবং এই প্রশাসনে প্রাক্তন আওয়ামীলীগ এর স্থায়ী সদস্যরাও নিযুক্ত হবেন। নির্বাচনে জয়ী যেসব প্রতিনিধির উপর দেশদ্রোহিতা ও অন্যান্য অভিযোগ আনা হয়েছে, তাদের নির্বাচন এলাকায় আবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং তা নভেম্বর মাসে করা হবে বলে নির্ধারিত হয়েছে। একটি শর্তাধীন সংবিধান ও প্রণীত হবে যা মুলত প্রধান দুইটি উদ্দেশ্য পুরন করবেঃ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন এবং দুই অঙ্গরাজ্যের সার্বভৌমত্ব বজায় রাখা। একটি সহজ প্রক্রিয়া সংরক্ষিত হবে শুধুমাত্র জাতীয় সংসদের কাছে, যার মাধ্যমে সংসদ এই সংবিধানের বাতিল করতে পারবে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এসকল উদ্যোগকে সকলের চোখে ধুলা দেয়া স্বরূপ বলে উল্লেখ করেছে।

যদি পাকিস্তানের পরিস্থিতি তার দেয়া বর্ণনার মত থাক্তো, তবে আমরা পত্রিকার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিতাম না। বিদেশী পরিসদরশক, জাতিসংঘের করমকরতাব্রিন্দ, রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যদের পূর্ব পাকিস্তানে আসার অনুমোদন দিতাম না। সহিংসতা এখনও চলার মুল কারন ভারত এর পূর্ব পাকিস্তানের সাথে ষরযন্ত্রে  সহযোগিতা করা এবং উতসাহ প্রদান। সীমান্তে এখনও অস্থিরতা বজায় আছে এবং সীমান্তে ভারত থেকে শেলিং আর মরটারের আক্রমন এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়।

রাজ্যসমুহের সম্পর্ক বজায় রাখার এই নিতীমালার মুল উদ্দেশ্য হল রাজ্যগুলোর সার্বভৌমত্ব টিকিয়ে রাখা এবং একে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। ভারত তার বর্তমান কার্যক্রমের মাধ্যমে এই সকল নিয়ম লঙ্ঘন করছে। এখানে উপস্থিত কোন রাষ্ট্রটি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের একটি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ মেনে নিবে? এই পরিষদের কোন রাষ্ট্রটি নিজ দেশের অঙ্গরাজ্যকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র কার্যক্রম দেখেও কিছু বলবে না? ভারত নিজে কি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এধরনের হস্তক্ষেপ মেনে নিবে? তবে কি বলা যায় যে দেশের ভিতরে বিভক্তি কেবল দেশেই বিদ্রোহ বলে গন্য হয় আর দেশের বাইরে তা জাতিগত নিয়ন্ত্রন বলে গন্য হয়?

আমি আমার পাকিস্তান সরকারের তরফ থেকে খুব স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিতে চাই যে আমরা প্রতিটি নাগরিককে আমাদের দেশে ফিরিয়ে আনবো। আমরা এক জাতি হিসেবে, অভিন্ন ও স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ণভাবে থাকতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু, পাকিস্তান এই বিষয়েও সোচ্চার যে অন্য কোন রাষ্ট্র তার প্রদেশ বা জাতীয় অস্তিত্ব নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলবে না।

যদি ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্ঘাত এড়াতে হয়, তবে অবশ্যই আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে ভারতের নীতিমালার এহেন গুরুতর প্রভাব নিয়ে চিন্তা করতে হবে এবং তাদের এসব নীতিমালা পরিহার করতে বলতে হবে।

মিঃ প্রেসিডেন্ট, গত ২২ শে সেপ্টেম্বর একটি প্রেস কনফারেন্সে আপনি বলেছেন- “এই শরণার্থী সমস্যাটি একটি মানবিক সমস্যা। আমাদের অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে। সারা বিশ্বকে এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আপনি যদি রাজনৈতিক দ্রিষ্টিকোন থেকে এ বিষয়টি দেখেন, তবে দেখবেন এ নিয়ে বিতর্ক আছে, এবং তার কোন শেষ নেই। প্রশ্ন হচ্ছে কি করে দ্রুত এর সমাধান করা যায়। এই জন্যই, আমার ধারনা এক্ষেত্রে আমাদের নেপথ্যে আলোচনা করা দরকার। আমাদের অবশ্যই পাকিস্তান এবং ভারতকে একসাথে করতে হবে এবং দেখতে হবে যে কিভাবে তাদের মধ্যকার রাজনৈতিক কোন্দলগুলোকে কমিয়ে নিয়ে আসা যায়।

আমার সরকার সহযোগিতার যে মনোভাব প্রকাশ করেছে, তাতে এটা খুব স্পষ্ট করেই বোঝা যাচ্ছে যে তারা ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান সমস্যাগুলো কমিয়ে আনতে ইচ্ছুক এবং শরণার্থীদের প্রত্যাবসনের ক্ষেত্রে আমরা সম্পূর্ণভাবে আপনাদের সাথে একমত। আমার সরকারের তরফ থেকে আমি জানাতে চাই, পাকিস্তান শরণার্থী সমস্যা সমাধানে সকল যৌক্তিক উপদেশ গ্রহন করতে প্রস্তুত আছে।

.

13.290.880-886

শিরোনাম সূত্র তারিখ

জাতিসঙ্ঘের সাধারন পরিষদে মিঃ মাহমুদ আলীর  বিবৃতির অংশবিশেষ

 

জাতিসঙ্ঘ ডকুমেন্টস ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

দেশভাগের সময় আমরা (পূর্ববঙ্গের মানুষ) পাকিস্তানের মাত্র একপঞ্চমাংশ ভূমির মালিকানা পাই যা নানান সমস্যায় পূর্ণ ছিল। যেভাবে ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা ভাগ করা হয়েছে তাতে আমাদের ঠকানো হয়েছে নিদারূনভাবে।আমরা আমাদের প্রতিবেশীর সাথে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।স্বাধীনতার মাত্র দুইমাস পরেই ভারত দেশভাগের মূলনীতি সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করে, যখন তারা মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু ও কাশ্মীরে সৈন্য পাঠায়। সেই সৈন্যরা একজন স্বেচ্ছাচারী শাসকের বিরুদ্ধে জনগনের বৈধ প্রতিরোধকে চুরমার করে দেয়।ভারত এইরকম আচরণ করার সুযোগ পায় বিদায়ী সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কারণে।পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার মুসলিম অধ্যুষিত জায়গা যা ভারতকে দিয়ে দেয়া হয় সেটাকে ব্যবহার করে ভারত কাশ্মীরের অনুপ্রবেশের পথ হিসেবে। আমরা কাশ্মীরে ভারতীয় সৈন্য পাঠানোর নিন্দা করি যা ভারত ও আমাদের স্বাধীনতার মূলনীতির বিরোধী এবং উপনিবেশিক শাসকের মত আচরণ। ভারত আমাদের বলেছিল যে এই অনুপ্রবেশ সাময়িক, কাশ্মীরের শাসক যিনি তার জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত তার শাসনের প্রতি ভারতের হস্তক্ষেপ অস্থায়ী এবং কাশ্মীরের জনগণ তাদের নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই এক নিরপেক্ষ গণভোটের মাধ্যমে গড়ে তুলবে। পরবর্তীতে এই বিরোধ যখন জাতিসঙ্ঘে নিয়ে যাওয়া হল, ভারতের এই অঙ্গীকার আন্তর্জাতিক চুক্তিতে পরিণত হল। ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই গণভোটের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের আত্ননিয়ন্ত্রণ এর অধিকার পাওয়ার জন্য জাতিসঙ্ঘের সমাধান মেনে নিল। আজকের দিন পর্যন্ত সেই চুক্তি অবাস্তবায়িত অবস্থায় আছে। এই বিরোধ দুইবার ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সূচনা করেছে। এটি আমাদের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি করেছে যা আমাদের দুই পক্ষেরই ক্ষতি করেছে। অথচ এত ক্ষতির পরও ভারত এখন পর্যন্ত কাশ্মীরের লোকজনকে সাথে নিয়ে কোন সমাধানের উদ্যোগ নেয়নি।

জম্মু ও কাশ্মীর এর দখলকৃত অংশে ভারত একটি পুতুল সরকার টিকিয়ে রেখেছে এবং সেখানে যে-ই জাতিঘসঙ্ঘের সমাধানের দাবি জানায় তাকেই শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। কাশ্মীরের খ্যাতিমান নেতা শেখ আব্দুল্লাহকে ১৫ বছর বন্দী করে রাখা হয়েছিল এবং এখন তাকে তার জন্মভূমিতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে।জনপ্রিয় দলগুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে, যেমন প্লেবিসিট ফ্রন্ট, যারা জম্মু ও কাশ্মীর এর লোকেদের আত্মনিয়ন্ত্রণ এর অধিকার চায়। রাজনৈতিক কর্মীদের উপর নির্যাতন, জনসমাবেশে ক্রমাগত গুলি, দেশপ্রেমিক নাগরিকদের ক্রমাগত হয়রানি করা ভারতের দখলকৃত কাশ্মীরের মানুষের জীবনের ভয়ানক দিক। বহু লোক সেখান থেকে পালিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছে। ভারত সরকার তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কোন ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেছে।

৮৮১

ভারতের এই রকম মানসিকতার আরেকটি পরিচয় পাওয়া যায় গংগা নদীর পানির সমবন্টন নিয়ে বিরোধ সামাল দেয়ার চেষ্টায়। গঙ্গা নদী ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই প্রবাহিত হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তান পড়েছে ভাটিতে। ভারত তার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ফারাক্কা নামক স্থানে একটা ব্যারাজ নির্মাণ করেছে। এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে গঙ্গার পানিকে খালের মাধ্যমে অন্য একটি নদীতে প্রবাহিত করা। এর ফলে শুকনো মৌসুমে পূর্ব-পাকিস্তান খুবই অল্প পরিমাণ পানি পাবে অথবা পাবেই না। ফলে সেই অঞ্চলের অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের নিজেদের ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী এই ব্যারাজ পূর্ব পাকিস্তানের সাতটি জেলার ৩৬ লাখ  একর ভূমির জীববৈচিত্র্য এবং কৃষিকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এটি গঙ্গার পানি প্রবাহ ও এর অসংখ্য খাল ও শাখানদীকেও আক্রান্ত করবে। এটি কৃষি উৎপাদন, শহরের পানির চাহিদা মেটানো, শিল্প-কারখানায় পানির ব্যবহার এবং ফিশারিজ ও বনভূমি বিশেষ করে সুন্দরবনকে হুমকির মুখে ফেলবে। ফারাক্কার পরে, পাকিস্তানের অংশে গঙ্গার পানি প্রবাহ কমে গেলে এটি নদী-তীরবর্তী এলাকায় পলিমাটির জমাট বাড়াবে এবং বর্ষাকালে বন্যার সম্ভাবনা বাড়াবে। এই সমস্ত ব্যাপার গুলি প্রায় আড়াইকোটি লোকের জীবন ও জীবিকাকে আক্রান্ত করবে, যা পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার তিনভাগের একভাগ।

এটি দূর্ভাগ্যজনক হলেও বিস্ময়কর নয় যে, ভারত একই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের লোকেদের জন্য সচেতনতার ভান করেছে, আবার একই সাথে এই অঞ্চলের অর্থনীতি ধ্বংস করার জন্য নানারকম প্রকল্প নিয়েছে। অন্য অনেক ইস্যুর মতই ভারতকে এই ইস্যুতে পাকিস্তানের তরফ থেকে  আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখনই আলোচনার সময় আসে, তারা নানা কৌশলে প্রকৃত সমস্যা এড়িয়ে যায়।

আমি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দুইটি প্রধান বিরোধের কারণ উল্লেখ করেছি। এই বিরোধ ছাড়া এবং পাকিস্তানকে দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন করার অতীত ভূমিকা ব্যতীত, বর্তমান ভারত ও পাকিস্তানের পরিস্থিত এমন এক হুমকির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে যাতে শান্তি স্থাপনের চেষ্টা অচিন্তনীয়। ভারতীয় শাসকরা যদি যুদ্ধংদেহী না-ই হত, তাহলে কি তারা প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নেয়ার অস্বাভাবিক ও বিরক্তিকর চেষ্টা করত? তারা কি বিবেকের পরিচয় দিয়ে আমাদের নিজস্ব ব্যাপারে নাক গলানো থেকে বিরৎ থাকত না? আজকে আমার দেশ ও ভারতের সীমান্তে যে ঘটনা ঘটছে তা সাধারণ ছোটখাট সীমান্ত সংঘর্ষ নয়। এটি জাতিসংঘের এক সদস্য দেশ পাকিস্তানের  ভূমির উপর জাতিসংঘের আরেক সদস্য দেশ ভারতের অস্ত্রসজ্জিত অনুপ্রবেশ।

ভারত গত কয়েকমাস ধরেই পাকিস্তানের সাথে চোরাগোপ্তা যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের নিজের ভূমিতে সরকার যে রকম সামরিক অভিযানই চালাক না কেন, ভারতের তাতে আতংকিত হওয়ার কোন কারণ ছিল না, তারপরও তারা পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে ২,০০,০০০ সৈন্য ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র জমায়েত করেছে। এই বাহিনী পূর্ব-পাকিস্তানে ক্রমাগত গোলা ও মর্টার নিক্ষেপ করে চলেছে। তারা প্রায়ই সশস্ত্র সৈন্যদের পাঠাচ্ছে আমাদের ভূমিতে, যারা ধ্বংস ও মৃত্যুর কারণ হচ্ছে।তারা নানাবিধ অস্ত্র মোতায়েন করছে এবং প্রায় সময়ই তারা নানা অন্তর্ঘাতী কাজ করে পূর্ব-পাকিস্তানের অর্থনীতি পঙ্গু করার চেষ্টা করছে।

৮৮২

সংক্ষেপে বলা যায়, ভারত আমাদের সাথে পুরোপুরি যুদ্ধবাজদের মত আচরণ করছে এবং পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়নি কারণ পাকিস্তান সরকার যথেষ্ট সংযত আচরণ করছে।

গোলা ও মর্টার নিক্ষেপ এবং অন্যান্য সহিংস আচরণ আমাদের সীমান্তে ভারতীয় বাহিনীর নিয়মিত কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাকে এই সভায় দুইটি বাস্তব ঘটনা উল্লেখ করতে দিন যাতে বোঝা যাবে বর্তমানে আমরা কি পরিস্থিতিতে আছি।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী সিলেট জেলার সীমান্তে পাঁচটি স্থানে প্রায় ১০০০ গোলা নিক্ষেপ করে। ভারতীয় গোলার আঘাতে বিধ্বস্ত গ্রামগুলো হচ্ছে মান্তালা, কমলাপুর, জয়পুর,আরামনগর,হর্ষপুর। ১২ জন নারী ও ৮ জন শিশুসহ মোট ২৮ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছে, আহত আরো ৩০ জন।এই হতাহতদের মধ্যে টেলিফোন বিভাগের কয়েকজন কর্মীও আছে যারা সেই সময় সেখানে টেলিফোনের লাইন ঠিক করছিল। টেলিযোগাযোগের লাইনগুলো ভারতীয় বাহিনীর বিশেষ লক্ষ্যবস্তু। গোলা নিক্ষেপের পরে ভারতীয় বাহিনী এই এলাকাগুলোতে অনুপ্রবেশ করে। পাকিস্তান বাহিনী সেখানে অভিযান চালায় এবং নানারকম অস্ত্র উদ্ধার করে যার মধ্যে আছে হালকা মেশিনগান, ১৪৫  বাক্স গোলাবারুদ, ১০০ ইস্পাতের হেলমেট, ৪০ টি মাইন,কয়েকটি ওয়ারলেস সেট এবং ৩৮৭ টি গ্রেনেড।

ভারত পাকিস্তানের খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর সরবরাহ লাইনের উপর হামলা করে একটা দুর্ভিক্ষাবস্থা সৃষ্টি করতে চাইছে। কিছুদিন আগে “চালনা”য় আমেরিকান খাদ্যাবাহী জাহাজের ক্ষতিসাধনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ কয়েকজন দুর্বৃত্তকে আটক করেছে যারা ভারতে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থিত পূর্ব-পাকিস্তানের জন্য আনা খাদ্যাবাহী জাহাজগুলো ডোবানোর জন্য নিয়োজিত। এই দুর্বৃত্তরা ভারত থেকে মাইন এবং এর ব্যবহারের শিক্ষা পেয়েছে। ভারত তার নিজস্ব রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পূর্ব-পাকিস্তানের সাড়ে সাতকোটি জনগণের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ঘটাতে চাইছে এইসব অন্তর্ঘাতী কাজ করে। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব-পাকিস্তানের খাদ্য সংকটের ব্যাপারে সচেতন থাকে তাহলে ভারতকে এইসব অন্তর্ঘাতী কাজ থেকে বিরত রাখা তাদের দায়িত্ব। এইদিকে যদি নজর দেয়া না হয় তবে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের কর্তব্য আরেকটি ধ্বংসযজ্ঞ থেকে দক্ষিণ এশিয়াকে রক্ষা করা।

গত ২০ জুলাই, জাতিসংঘের মহাসচিব উ-থান্ট একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন যেখানে উপমহাদেশের শান্তির প্রতি হুমকির ব্যাপারে তার উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে। মহাসচিব এই অঞ্চলের অবস্থার ক্রমাগত অবনতিতে শংকা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,

“বর্তমান পরিস্থিতে আরো একটি বিপদ আছে, (দুপক্ষের মধ্যে) অমীমাংসিত সমস্যা সমূহ, যেটার কারণে ছয়বছর আগে একটা যুদ্ধ ঘটে গেছে”

৮৮৩

সীমান্তের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন,

“পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের অবস্থা খুবই ঝামেলাপূর্ণ, সীমান্ত সংঘর্ষ,চোরাগোপ্তা হামলা,অন্তর্ঘাতী কার্যকলাপ ক্রমাগত বাড়ছে…”

এবং তিনি শুধু এই অঞ্চল নয়, সমগ্র বিশ্বশান্তির প্রতি হুমকির উল্লেখ করে বলেন,

“জাতিসংঘে আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারব না যে উপমহাদেশের যুদ্ধ খুব সহজেই ব্যাপক আকার ধারণ করতে পারে”

সংক্ষেপে বলা যায়, উ থান্ট পরিষ্কারভাবে বর্তমান অবস্থাকে শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে দেখছেন এবং নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আবেদন করেছেন যে তারা যেন বর্তমান পরিস্থিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

২৯ সেপ্টেম্বরে আমার উত্তরে আমি উল্লেখ করেছি যে আমার সরকার নিরাপত্তা পরিষদের সাথে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত এবং আমাদের দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমানোর জন্য কাউন্সিলের জন্য একটি উপযুক্ত অফিস কমিটি বানানোর প্রস্তাবকে স্বাগত জানাচ্ছে। আমি এখানে আমাদের এই প্রস্তুতির কথা পুনরাবৃত্তি করছি।

অপরদিকে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি যথারীতি বিপরীত। তারা দাবি করে এটি ভারত বনাম পাকিস্তানের সমস্যা নয়। তারা বিশ্ববাসীকে বিশ্বাস করাতে চায় এই সমস্যা সম্পূর্ণভাবে পাকিস্তান তৈরি করেছে এবং ভারত তার পরোক্ষ শিকার হিসেবে অসংখ্য শরনার্থীর বোঝা বহন করছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য কি? ভারতের অনুপ্রবেশ হচ্ছে প্রকৃত সত্য যা আমি আগেই উল্লেখ করেছি।

বিশ্ববাসী পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে গত কয়েকমাসে অনেক শুনেছে। বেশিরভাগ কথাই এসেছে বহিরাগতদের কাছ থেকে। তাদের সবারই সত্য বলার দায় নেই। অনেকে মহত্ত্বের ভান করে থাকে। কিন্তু আমি আমার ব্যক্তিগত মতামতই বলতে চাই। আমি পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছি। ভারতের বিদেশমন্ত্রীর মত আমি ভুল বিবৃতি ও অপপ্রচার এর বিলাসিতা করতে পারি না। এই সম্মেলন থেকে আমি সোজা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাব। আমাকে আমার লোকেদের মধ্যেই বাঁচতে হবে, তাদের মতই কষ্ট সহ্য করতে হবে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সরিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের জন্য যেকোন মানবিক উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাব। আমার দুঃখ এই যে, আমাদের দেশের পরিস্থিত বিশ্ববাসীর কাছে ঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি, অনেক ভুল বুঝছে। বিভিন্ন তথ্য এমনভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে যে মনে হবে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান এর মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এই বেদিতে আজ একজন পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের কন্ঠকে তোলে ধরা হোক যে কন্ঠ ঘোষণা করবে যে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ পরস্পরের ভাই, তাদের ঐক্য অবিনশ্বর, এবং তারা যখন একটি ফেডারেল রাষ্ট্র গঠন করবে সেটি হবে প্রত্যেকের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার সম্বলিত। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এই বাস্তবতা নিয়ে আগেও অনুশোচনা করেনি, এখনও করে না। এটা সত্য যে আমাদের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন নিয়ে সমস্যা আছে, জাতীয় সম্পদের সঠিক বন্টন ও দুই অঞ্চলের তারতম্য দূর করা নিয়ে সমস্যা আছে। কোন বহুভাষী ও বহুজাতি সম্বলিত রাষ্ট্রই এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্ত নয়। এক রাষ্ট্রের সমস্যায় অন্য রাষ্ট্রের খুশি হওয়া উচিত নয়। আমরা পাকিস্তানীরা খুবই দুখজনক অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছি, আমরা চরমপন্থার রুপ দেখেছি, আমরা অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে দিয়ে গেছি। কিন্তু এসবের পরেও আমরা উপলব্ধি করেছি যে আমাদের রাষ্ট্রসত্তার ভাঙ্গন, আমাদের ঐক্যের বিনাশ কোন সমাধান নয়, যা অন্য অনেকে মনে করে।

এটা খুবই দূর্ভাগ্যজনক যে, আমাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি একটি সহিংস পরিস্থিতির তৈরি করেছে। পাকিস্তানের জাতীয় অস্তিত্ব ও ভারতের সাথে এর সম্পর্কের কথা মনে না রাখলে কেন এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বোঝা যাবে না।

৮৮৪

কিন্তু এই সমস্যার মূলে রয়েছে পূর্ব পাকিস্তানীদের স্বায়ত্বশাসনের অধিকারকে দমন করা- এটি কষ্টকল্পনা। পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের লোকেরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, তাহলে তারা অপেক্ষাকৃত কম স্বাধীন হল কিভাবে? যেখানে তারাই কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ক্ষমতা রাখে। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকেরা নিজেরাই পারে তাদের ভুলগুলো ঠিক করতে, নিজেদের মধ্যকার ভারসাম্যহীনতা দূর করতে। একটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ নিজেরাই বের হয়ে যেতে চাইবে এটা অবিশ্বাস্য। বিচ্ছিন্ন হতে চায় সাধারণত সংখ্যালঘুরা। আমি আবারও বলছি পূর্ব পাকিস্তানীরা পাকিস্তানে সংখ্যালঘুও না, আদিবাসীও না। এই অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এই অঞ্চলের জনগণের বৃহৎ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে না। বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু করে তারা নিজেরাৎ(বিচ্ছিন্নবাদীরা) সংখ্যালঘু হয়ে গেছে, তাদের অবস্থান বলে দিচ্ছে যে জনগণের তাদের সাথে নাই। এই রকম বিচ্ছিন্নতা রাষ্ট্রকে অকার্যকর করে দিতে পারে, বিদেশী শক্তির হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিতে পারে। এই রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে পূর্ব পাকিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদীরাই দায়ী থাকবে।

পূর্ব পাকিস্তানের বিশৃংখলা আর ভারতের প্রতিক্রিয়া পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। কয়েকমাস ধরেই ভারতের যুদ্ধ প্রস্তুতি অরক্ষিত সীমান্ত থেকে ধীরে ধীরে পূর্ব পাকিস্থানের অভ্যন্তরে এগোচ্ছে। সকংটের শুরুতেই ভারত তাদের সীমানার উপর দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এর মুলে রয়েছে এক ভারতীয় বিমান ছিনতাই করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা। কিন্তু পরবর্তীতে নিরপেক্ষ তদন্তে দেখা যায় এই ছিনতাই এর সাজানো ঘটনা ঘটিয়েছে ভারতীয় অফিসাররাই, ভারতের উপর দিয়ে পাকিস্তানের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করার একটা অজুহাত তৈরির জন্য। নিষিদ্ধকরণ অবৈধ এবং ভারতের আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার সাথে সাংঘর্ষিক। এখন পর্যন্ত ভারত এই সমস্যা সমাধানের সব আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রত্যাখান করেছে। যখন সমস্যা আরো ঘনীভূত হয়েছে, পাকিস্তান কঠিন বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তখন ভারত আমাদের দুই সীমান্তেই সৈন্য সমাবেশ করেছে।

বাইরের শক্তির এই হুমকি এবং দেশের অভ্যন্তরের গোলাযোগ, এই দুই পরিস্থিতির কারণে দেশের ভিতর নৈরাজ্য ও ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধে পাকিস্তান সরকার নিরুপায় হয়ে সব রকম ব্যবস্থা নিয়েছে। আমি এই সভায় উপস্থিত সকল সম্মানিত প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাই, এই রকম পরিস্থিতে কোন বৈধ সরকারের হাতে আর কি উপায় আছে?

পূর্ব পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের কারণে সৃষ্টি হওয়া বর্তমান পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক। কিন্তু বিশ্ববাসী এখনও সম্পূর্ণ জানে না যে এই পরিস্তিতির পেছনে বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপ কতটা দায়ী। শরণার্থী সমস্যার কারণে ভারতের যে উদ্বেগ তা সম্পূর্ণ মানবিক, কিন্তু এটা সম্পুর্ণ ভিন্ন আলোচনার বিষয়। শরণার্থীদের ঘরে ফেরার বিষয়টি পাকিস্তান সরকারের সহযোগিতা নিয়ে  সমাধান করা যেত। আমাদের ও জাতিসংঘের যৌথ সহায়তায় এটি সমাধান করা যেত,পাকিস্তানের সাথে আলোচনা করা যেত। এখানে রাজনৈতিক প্রভাব না খাটিয়ে,  দুইপক্ষ একসাথে এই শরণার্থীদের তাদের ভি্টেয় ফিরে যেতে সহায়তা করতে পারত।

আমাদের জন্য যেটা সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, ভারত সরকার অপপ্রচার চালিয়ে এবং নানা কর্মকান্ডের মাধ্যমে শরণার্থী ইস্যুকে ব্যবহার করছে। সীমান্তে সংঘর্ষ ঘটিয়ে,মর্টার ও গোলা বর্ষণ করে ভারত আমাদের নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রম করা অসম্ভব করে রেখেছে।ভারত সীমান্তে এদের উপস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্নতাবাদী দলগুলোর জন্য সদস্য সংগ্রহ করে থাকে।

৮৮৫

এইটি হচ্ছে ভারত সরকারের নীতি, যাতে করে আমরা আমাদের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে না পারি। সাধারণ এমেনেস্টির ঘোষণা,আমাদের প্রেসিডেন্টের আবেদন, জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং পূর্ব পাকিস্তানের তার প্রতিনিধির উপস্থিতি, ফিরে আসা শরণার্থীদের গ্রহণকেন্দ্র এবং তাদের পূনর্বাসন প্রকল্পের ব্যবস্থা করা-সকল ভাবেই আমরা ঘোষণা করছি যে, আমরা আমাদের শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি । ১৯ জুলাই তারিখে মহাসচিব উ থান্ট ভারত ও পাকিস্তান সরকার উভয়কে প্রস্তাব দিয়েছেন যে U.N.H.C.R এর সদস্যরা সীমান্তের দুই পাশেই অবস্থান নিয়ে শরণার্থীদের ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে। আমরা সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। আর ভারত, বলাই বাহুল্য, প্রত্যাখান করেছে।

ভারত সরকার সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করার পেছনে যে যুক্তি দেখিয়েছে তা হল শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে আসা নিরাপদ নয়। প্রথমত, ভারত নিজেই এই ফিরে আসা অনিরাপদ করে রেখেছে। দ্বিতীয়ত, “নিরাপদ পরিস্থিতি” বলতে ভারত বুঝিয়েছে, তাদের বিদেশমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, ভারতের পছন্দসই একটি রাজনৈতিক সমাধান। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য নেতারা প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছে যে তারা শরণার্থীদের ফিরে যেতে দিবে শুধুমাত্র যখন তথাকথিত “বাংলাদেশ” প্রতিষ্ঠিত হবে। সোজায় কথায় যখন পূর্বপাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হবে এবং ভারতের অধীনে আসবে।

এক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপের এই চেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ কি আর আছে? মাত্র গত বছরেই ভারত সরকার আমাদের সকলের সাথে জাতিসঙ্ঘের চার্টারে স্বাক্ষর করেছে যেখানে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা শক্তিশালী করণের কথা বলা হয়েছে এবং দেশের আকার, অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থান, সামাজিক, রাজনৈতিক পদ্ধতি নির্বিশেষে কোন রাষ্ট্র অন্য কোন রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না। এবং এই শর্ত সমূহ কোন অবস্থাতেই শিথিলযোগ্য নয়।

ভারতের এই হস্তক্ষেপ পাকিস্থানের একার সমস্যা নয়। এটি সকল রাষ্ট্রের সমস্যা, যারা নিজেদের সার্বভৌমতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায়। পরস্পরের উপর হস্তক্ষেপ না করার নীতির সাথে যদি আপোষ করা হয় তাহলে সকল রাষ্ট্র যারা তাদের প্র্তিবেশীর চেয়ে ছোট বা দুর্বল তাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। আমি এই সভার  নিকট আবেদন করব যাতে তারা ভারতের মনোভাব পরিবর্তন করতে শক্তি প্রয়োগ করে। আমাদের কথা যদি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে  বলব আমরা ভারতের এই বলপ্রয়োগ ঠেকিয়ে আমরা একটি রাজনৈতিক সমাধানে পৌছতে চেষ্টা করব আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায়।

ভারত যে উপমহাদেশে আরো কিছু সমস্যা তৈরি করেছে আমরা যেন তা ভুলে না যাই। নাগা জনগণ যারা ভারতীয় নয় তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ভারত এর নিজের সীমানার ভেতরে ছোট ছোট আদিবাসী সম্প্রদায় গুলোর উপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্রাবিড় জনগণ, শিখ ও বাংগালিরা। কিন্তু আমরা এইগুলোকে ইস্যু বানিয়ে ভারতের নিজস্ব ব্যাপারে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করিনি। আমরা শুধু চাই ভারত আমাদের মতই উপলব্ধি করুক যে নৈরাজ্য ও বিচ্ছিন্নতা তাদের জন্যও বিপদজনক।

৮৮৬

আমি যদি বর্তমান ভারত পাকিস্তানের সম্পর্ক এককথায় বলি, তাহলে বলতে হবে যে, এই পরিস্থিতি শান্তির জন্য ভয়াবহ হুমকি যা অবশ্যই দূর করা উচিত যদি এই দুই দেশ নিজেদের নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করতে চায়। আমরা ভারতের জনগণকে আমাদের শত্রু মনে করি না। যদিও এটা পাকিস্তানের দিকে আক্রমণ, পাকিস্তানের জনগণের প্রতি ভারত সরকার এর বিশ্বাসভঙ্গতা। আমরা আশা করি ভারত উপলব্ধি করবে যে শক্তিশালী পাকিস্তান ব্যতীত দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি অসম্ভব। একইভাবে আমরা আরো আশা করব পৃথিবীর সকল বড় বড় শক্তি এইটি উপলব্ধি করবে যে পাকিস্তানকে দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা এই অঞ্চলের ক্ষমতার ভারসাম্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করবে এবং এর ফলে চির অশান্তি তৈরি হবে।

.

13.291.887-889

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (পাকিস্তানী বিবৃতির জবাব দানে তাঁর অধিকার প্রয়োগে) জাতিসংঘ নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (পাকিস্তানী বিবৃতির জবাব দানে তাঁর অধিকার প্রয়োগে) জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব সমর সেনের বিবৃতি

অক্টোবর,১৯৭১

সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, যখন আমরা আমাদের অধিকার প্রয়োগ করতে পারতাম, এক্ষেত্রে  পাকিস্তান কিছুই বলেনি বরং ভারতকে  নতুন আরেকটি একটি সমস্যায় জড়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। আজকে আমরা আমাদের অধিকার প্রয়োগে মরিয়া হয়ে উঠেছি  পরিষদ এই ব্যাপার নিয়ে সম্পূর্ণরূপে পরিচিত যা লাখ লাখ মানুষের জীবন প্রভাবিত করেছে  যা আন্তর্জাতিকভাবে উদ্বেগ, মতামত সৃষ্টি করেছে। আমরা মনে করি না যে একটি দুঃখজনক পরিস্থিতি  কোন প্রকার দায়ী বা সহায়ক হয়।পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল পাকিস্তানের অসুবিধা এবং দুর্দশার সব জন্য ভারতকে দায়ী করেছেন। আমি পরিষদকে আশ্বাস দিয়ে বলতে পারি,  পাকিস্তান তার সমস্যার সমাধান করতে কোনো ধরণের স্বদিচ্ছা  বা অকটপতা প্রদর্শন করেনি।

তবে  আমি চাই,  দুই বা তিনটি  গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার কথা উল্লেখ করে আমাদের অবস্থানের ব্যাপারে পরিষদে  জানাতে । কাশ্মীর প্রসঙ্গে আমরা বারবার বলেছি যে একমাত্র সমস্যা কাশ্মীরের দখলকৃত অংশ থেকে পাকিস্তানের প্রত্যাহার প্রশ্ন এবং আমরা সর্বদা পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। যেমন ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে  শুধুমাত্র অনেক আলোচনা ও প্রযুক্তিগত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে কিন্তু যখন আমরা কিছু চুক্তির জন্য অনুসন্ধান করেছি, পূর্ববাংলায় উন্নয়নের জন্য এই আলোচনার বন্ধ করা হয়েছে। যাইহোক, এটা এখন পুরো পরিষ্কার যে  ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে পাকিস্তান যে চিৎকার তা শুধুমাত্র  পূর্ব পাকিস্তানে ভারতবিরোধী অনুভূতি উৎসাহিত করার ছিল এবং এই নীতিটি খুব কাজের হয়ে উঠেনি। আমরা অস্বীকার করছি না যে, আমাদের দেশে আইন-শৃংখলা নিয়ে সমস্যা আছে , কিন্তু আমরা তা গণহত্যা চালিয়ে সমাধান করার চেষ্টা করিনি।

অনেক উত্তেজনাপূর্ণ বিবরণ সীমান্তের ঘটনা সম্পর্কে দেয়া হয়েছে। আজ সকালে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল ২৯ সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য প্রেস কনফারেন্স ডেকেছে। তখন আমার কাছে সম্পূর্ন বিস্তারিত ছিলনা, কিন্তু আমি দিল্লীতে টেলিগ্রাম পাঠাই এবং তাঁরা উত্তর পাঠায়।

এই টেলিগ্রাম লেখা আছে: ” ২৯ সেপ্টেম্বর এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।এটা পশ্চিম পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর কাজ যারা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমাদের অঞ্চলের উপর গোলাবর্ষণ করেছে এবং অনেক নিহত ও আহত হয়েছে। এই অভিযোগ মাহমুদ আলী কর্তৃক প্রণীত এবং স্পষ্টত আমাদের অঞ্চলে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণ দিয়ে ভারতের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ শুরু করার চেষ্টা করা হয়।

এই পরিস্থিতিতে ভারত সর্বাধিক সংযত রেখেছে। এটি সারা বিশ্বে প্রশংসা করা হয়েছে। পাকিস্তানকে বলা হয় যে পূর্ব বাংলার জনগণের উপর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে।“

অপরপক্ষে, আমি পরিষদে জানাই যে আমাদের পূর্ব সীমান্তে ৪০০টির ও বেশি আইন লঙ্ঘন পাকিস্তান করেছে। আমি এটা জানাতেও আগ্রহী যে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদের পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরের কার্যকলাপ সম্বন্ধে কোন কিছু বিস্তারিত জানাতে আগ্রহ বা সাহস কোনটিই ছিলনা।

আসলে এটা ভারত নয় যার পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব বা  অখণ্ডতা নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল কিন্তু পাকিস্তানীরা নিজেরাই নিজেদের গঠিত নীতি পশ্চাদ্ধাবন করেছে। তারা তাদের নিজেদের লোকদের কাছে অনেক অঙ্গীকার পালন করতে ব্যর্থ এবং তাঁরা বিভিন্ন পরিণতির সম্মুখীন হচ্ছে । ভারতকে এখানে দোষারোপ করার কোন দরকার নেই।

আমরা সবসময় পাকিস্তানের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষীয় সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। গত বছর এবং অনেক বছর থেকে পাকিস্তানের অনেক দ্বিপাক্ষিক বিষয় আছে কিন্তু আমরা যখন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করতে চেয়েছি তখন কোন সাড়া ছিল না। আজ পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য অনুরোধ করে যা ন্যায়ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্যা এবং যা সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের নিজের তৈরি। আমরা এ সমস্যার মধ্যে আসতে চাই না। আমরা আসতে পারিনা এবং আমাদের আসা উচিত নয়। যারা বিশ্বাস স্থাপন করে যে এই ক্ষেত্রে ভারতীয় সহযোগিতার প্রয়োজন, তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, যখন একটি প্রতিবেশীর সঙ্গে অন্যের সহযোগিতা সবসময় স্বাগত জানায়,কিন্তু  পাকিস্তানের গণহত্যা অব্যাহত রাখা, মানবাধিকার বিলুপ্ত করা, আত্মনিয়ন্ত্রণের বিদ্রুপ করা ব্যাপক নৃশংসতায় সাধনের মধ্যে দিয়ে এসবে কেউ ভারতের থেকে  সহযোগীতা প্রত্যাশা করতে পারেনা।

 পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল আজ এখানে বলেছেন  শরনার্থীদের বাড়ি ফিরতে,যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদিন ভারতে যে ৩৩,০০০ শরনার্থী যাচ্ছে তাদের থামাতে। কিছুই না, এটা একটা ভুয়া উদ্বেগ তাদের নাগরিকদের জন্য যারা নৃশংস পদ্ধতিতে দশ লাখেরও বেশি হত্যা করেছে। এই উদ্বেগ তাদের সঙ্গে দেখানো সংগতিপূর্ণ যারা গত বছর পূর্ব পাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড়ে মারা গিয়েছেন। এই নির্মমতা অনেকের মনে আছে যে পাকিস্তান মৌলিক অধিকার ও মান এর উপর প্রচার চালিয়ে প্রতারিত করার চেষ্টা করেছে।

পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের মুখপাত্র কিছু বিশেষ  দাবি করেছে কারন তিনি পূর্ব পাকিস্তানের থেকে আসা। আমিও জন্মগ্রহণ ও বড় হয়েছি পূর্ব পাকিস্তানে । শুধুমাত্র আমি না, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ লোক তাঁর এই তথ্য ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে অসম্মতি জানাবে।  যাইহোক, আমি মনে করি এটা তার বিবেকের কাছে ছেড়ে দেয়া উচিত।

জনাব প্রেসিডেন্ট, এটি রাজনীতি বা বিতর্কের বিষয় নয়। আমদের এই বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বিতর্কে প্রবেশ করার কোন ইচ্ছা নেই। এটি বিশাল মাত্রার একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। এমনকি পাকিস্তান এটির সমাধান শুরুতে শুরু করতে চায় তাহলে, প্রথম ধাপ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং শেখ মুজিবুর রহমান এর  নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা শুরু হতে হবে। আমাদের মতে, পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিক উপাদানের বিভক্ত করার কোন প্রয়াস যদি নেয়া হয় তবে তা শুধুমাত্র স্ব-পরাজয় হবেনা বরং আরো অনেক কঠিন সমস্যার সৃষ্টি করবে। অত্যাচারকারীদের বিরুদ্ধে বাঙালিরা যে প্রতিরোধ সৃষ্টি করেছে এজন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধিদল ভারতকে দায়ি করছে। প্রতিরোধের  বিষয় হল পূর্ব পাকিস্তানিরা নিজেরাই সংগঠিত হয় এবং তাঁরা তাদের বেঁচে থাকা , মানবিক অধিকারের জন্য লড়াই করতে বদ্ধপরিকর। ভারত সরকার এই প্রক্রিয়া পরিবর্তন করতে পারবে না। একমাত্র উপা্যে এ পরিবর্তন করা যাবে যদি অত্যাচারী এবং নিপীড়িতদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা হয়। আমি দুঃখ প্রকাশ  করছি পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের মধ্যে এমন কোন উৎসাহ দেখতে পাইনি।

.

13.293.895-899

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি (পাকিস্তান) জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১

জনাব আগা শাহী(পাকিস্তান) কর্তৃক জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ভাষণ

অক্টোবর ১৩, ১৯৭১

        সাধারণ বিতর্কের সময় আমরা এখানে যুক্তিতর্ক মেলানো এবং বিতর্কের পয়েন্ট স্কোর না করার জন্য আসার ফলে  আমার প্রতিনিধিদল বেশ কয়েকবার চাপের মুখোমুখি হয়েছে। বর্তমান ভারত-পাকিস্থান পরিস্থিতিকে খুব গুরুতর হিসেবে আমরা বিবেচনা করি এবং শান্তির অপরিহার্যতা এতোটাই বাধ্যতামূলক যে বিতর্কে অনুশীলন করতে বাধ্য করেছে ।

গতকালের আমার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিনিধি দ্বারা প্রতিতক্রিয়ায় বেশ কিছু ভুল বক্তব্য দেয়া হয়েছে এবং পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে যা ইতিমধ্যে খন্ডিত হয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, এই পরিষদের এমন কোন ব্যক্তি নেই যে  উত্তর-প্রত্যুত্তরের স্রোত উপভোগ করবে যা শান্তির উদ্দেশ্য অর্জনের পথ বাধাগ্রস্থ করে কিংবা একটি স্পষ্ট বোধগম্য অবস্থা নিয়ে আসতে ব্যর্থ করে যাতে শান্তি মধ্যস্থতা জড়িত। তবুও, ভারতের প্রতিনিধির দ্বারা পূর্ববর্তী হস্তক্ষেপের প্রেক্ষিতে, তিনি যে চিত্র চিত্রিত করেছেন সেটা সংশোধন করার জন্য আমি আমার সরকারের কাছে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব দ্বারা একটি যুক্তিসঙ্গত ও নিরপেক্ষ উপস্থাপনা করতে বাধ্য।

প্রথমত, ভারতের প্রতিনিধি ক্ষুব্ধ এই জন্য যে, আমি আমার জবাব দেয়ার অধিকারের ব্যবহার করেছি, যা  আমাদের বিরুদ্ধে  তার ভারতের অভিযোগ বিবৃতির সাত দিন পরে। আমি তাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা সবসময় একটি বিরতি গ্রহণ এবং আমাদের বিরুদ্ধে যে কোন অভিযোগের উপর প্রতিফলনে বিশ্বাসী, যার ফলে আমরা কোনো আবেগপূর্ণ জবাব না দিতে পারি, যাতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি না হয় বরং এই সাধারণ পরিষদকে আলোকিত করা। এটি এই কারণে যে, এক মুহূর্ত আগে ভারতের প্রতিনিধির কাছে যে ধরনের বিবৃতি শুনেছি, তার জবাবে  আমরা চিন্তা করেছিলাম বরং আমরা অবশ্যই একটি বিবেচিত উত্তর উপস্থাপন করবো। আমি ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছি যখন ভারতের প্রতিনিধি বলেন যে, ভারত-পাকিস্তান বিষয়ে আমি যে সব পয়েন্ট উত্থাপন করেছি সেসব আফগানিস্তানের প্রতিনিধি উড়িয়ে দিয়েছেন।

আমরা গণনাতীত সময় শুনেছি যে ভারত সরকার পাকিস্থানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে চায় না তবুও ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উপর একটি সুদীর্ঘ বক্তৃতা চালু করেছেন। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার রাজনৈতিক পরিকল্পনা বা সংবিধানের প্রকৃতির ব্যাপারে কিছু নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের উদ্ধৃত করেন। একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সাংবিধানিক উন্নয়নের মন্তব্য একটি রাষ্ট্রের স্বতন্ত্র এখতিয়ার নয় কি?

তিনি  আমার দেশে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার চর্চায় পাকিস্তানের কোন রাজনৈতিক নেতা কি বলেছেন তার জন্য পাকিস্তান প্রেসের উদ্ধৃতি দিলেও আমার সরকারকে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মতামত, শুধুমাত্র সমালোচনামূলক নয় বরং জোরালোভাবে সমালোচনামূলক মতামত প্রকাশ করার জন্য কৃতিত্ব দিতে নারাজ। তিনি এখনও আমার দেশে বিদ্যমান অবস্থার অস্বীকার করেন এবং বলেন যে, আমরা জানি না যে তাঁরা এসব বলেছেন কারণ পাকিস্তানে সেন্সরশিপ আছে। যদি সেখানে সেন্সরশিপ থাকত, তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের নেতাদের মন্তব্য দিনের আলো দেখতে পারত না।

ভারতের প্রতিনিধি আমার ও ওয়াশিংটনের পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতের সম্পর্কের কথা সাধারণ অধিবেশনে বলে ভালোই করেছেন এবং রাষ্ট্রদূত হিলালি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন কিভাবে বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অস্ত্র সংগ্রহ করেছে- সেখানে থেকে উদ্ধৃত করতে চাই। তিনি ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ ও ২৫শে মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থার কথা বলছিলেন যখন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ, আধা-সামরিক বাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানী রেজিমেন্টের বিরাট অংশ আনুগত্য ধ্বংস করে।

আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর আনুগত্য ধ্বংস করা হয়েছে এবং অস্ত্রভান্ডার ও অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির দোকান লুট করতে প্রণোদিত করা হয়েছে। স্বভাবতই, আধা-সামরিক বাহিনী এবং পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সদস্য হওয়ার ফলে অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল এবং তারা যখন পক্ষ ত্যাগ করে এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করে, তারা এই অস্ত্রগুলো সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। কিন্তু ঘটনার শেষ এখানেই নয়। দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয় শক্তির অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। অস্ত্র ও গোলাবারুদ ভারতের সংগ্রহ করছে এবং ভারতই যে পাকিস্তানে পাঠাচ্ছে এটা এখন সাধারণ জ্ঞান হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে ভারতীয় কর্মকর্তা কর্তৃক গেরিলাদের যে তারাই অস্ত্রে সজ্জিত ও সরবরাহ করছে এ ব্যাপারে অস্বীকার করার কোন প্রয়াস দেখা যায় নি। নিউইয়র্ক টাইমসের ভারতীয় প্রতিনিধি সিডনি শ্যানবারগ শুধুমাত্র আজকেরই নিউইয়র্ক টাইমসে চালানের খবর পেয়েছি যেখানে বলা হয়েছে ট্রেনের পর ট্রেন বোঝাই করে অস্ত্র কলকাতায় বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে যাতে তারা পূর্ব পাকিস্তানে তাদের অভিযান আরো জোরদার করতে পারে।

আমি ২৫ মার্চ থেকে বিশ্ববিখ্যাত বিভিন্ন পত্রিকা- দি টাইমস অফ লন্ডন, দি ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্য পত্রিকার সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করতে পারবো যারা তাদের সম্পাদকদের তারবার্তার মাধ্যমে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তায় ও সমর্থনে  বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ও প্রশিক্ষণ এবং ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপ্তি সম্পর্কে বার্তা প্রেরণ করেছেন।

আমরা ভারতীয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে প্রায়ই মূলনীতি ও সনদের উদ্দেশ্য কঠোরভাবে নজরে রাখার প্রয়োজনীয়তা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার করার নীতি, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতির ঘোষণা, আগ্রাসনকে সংজ্ঞায়িত করার নীতি সম্পর্কে  শুনতে পাই এবং আমরা জানি যে ভারতীয় প্রতিনিধিরা আগ্রাসনের সংজ্ঞা প্রণয়নে সক্রিয় অংশ নিয়েছে, আন্তর্জাতিক আচরণের সংজ্ঞা প্রণয়নে নয়, অস্ত্রে সজ্জিত করা ও গেরিলাদের উস্কে দেয়া এবং তাদেরকে আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে অভিযান ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত করার উদ্দেশ্যে পাঠানো- আগ্রাসনের সংজ্ঞানুযায়ী ইহাই আগ্রাসী কর্মকাণ্ড, কিন্তু তারা পাকিস্তানের ব্যাপারে ঠিক এটাই করছে, কিন্তু তারা এখনো বলে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক নয়।

মৃত্যুর ভয়াবহ গাণিতিক হিসাব বা হতাহতের সংখ্যা হিসাবে যেকেনো যুক্তিতে প্রবেশ করা সবসময় বেদনাদায়ক।ভারতের প্রতিনিধি হতাহতের সংখ্যা “আড়াই লাখ থেকে ২০ লাখ” বলে অনবরত বিবৃতি দিচ্ছে। এখন, এটা কি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় যখন তারা আড়াই লাখ থেকে ২০ লাখের একটি মার্জিন তৈরি করার স্বাধীনতা নেয়, যেন তারা শুধু একটা পরিসংখ্যান বা প্রাণহীন একক, এবং জীবিত মানুষ নন? আমরা যদি আমাদের নিজের দেশের আইন বিবেচনা করি, তাহলে প্রতিটি মৃত্যু সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হয়, এবং একটি দেশ সবচেয়ে উদ্বিগ্ন এবং এমনকি একটি হতাহতের ব্যাপারেও বেশ কর্তৃত্বপূর্ণ। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি এখানে আসে এবং পাকিস্তান কর্তৃক বিচ্ছিন্নবাদীদের বিরুদ্ধে গৃহীত ফেডারেল অ্যাকশনের মাধ্যমে আড়াই লাখ থেকে বিশ লাখ নারী, শিশু ও পুরুষ হত্যায় অভিযুক্ত করে। এ ধরনের অভিযোগের জন্য সত্যনিষ্ঠা এবং স্পষ্টতার কতটুকু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সেটা কি কেউ বলতে পারে? ওই পরিসংখ্যান যেগুলো ভারত দ্বারা উদ্ধৃত এবং বিশ্ব মাধ্যমে উদ্ধৃত হচ্ছে সবগুলোই বিদ্রোহীদের ভারতীয় মাধ্যম হতে উদ্বৃত্ত যা গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। সদস্যবৃন্দরা গত নভেম্বরের সাইক্লোন সম্পর্কে অবগত রয়েছেন। সেই সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন করে যার ফলে বন্যায় বেঁচে থাকা মানুষদের জন্য পাকিস্তান সরকার পর্যাপ্ত পরিমাণে সব সম্পদ সংগঠিত করতে পারে নি। সেইসব রাজনৈতিক দলগুলো যারা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, মানবতা ও তাদের নিজের আত্নীয়-স্বজনদের ত্রাণের জন্য দলের কোনো কর্মীকে পরিবর্তন করে নি। তারা নির্বাচনী প্রচারণা, ভোট ভিক্ষা এবং মিছিল বের করার কাজে ব্যস্ত ছিল, তারপরেও তারা দায়িত্বের জন্য পাকিস্তানের ফেডারেল সরকারকে অভিযুক্ত করে। এবং আমি এই সাধারণ পরিষদকে বলতে চাই তারা পাকিস্তান সরকারকে গণহত্যার দায়িত্বে অভিযুক্ত করেছে। স্পষ্টত, বাক্যবাণের এই যুদ্ধে মানুষ বাস্তবতার জ্ঞান হারিয়েছে, শব্দ তাদের অর্থ হারিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বেঁচে থাকা কোন মানুষ অবহেলার কারণে মারা যায় নি। বন্যার কারণেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সবই ঘূর্ণিঝড়ের ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ঘটেছে। তারপরেও পাকিস্তান সরকার ওই রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযুক্তের শিকার হয়েছে যারা পরবর্তীতে গণহত্যার তাদের বিচ্ছিন্নবাদীর রঙকে বিশ্বাসঘাতকতা করে।

আমি পরিষদকে আরও বলতে চাই যে, ২রা থেকে ২৫শে মার্চ, আওয়ামীলীগ একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করে এবং প্রতিষ্ঠিত সরকারের কর্তৃককে অস্বীকার করে। তারা সরকারি কর্মচারীদের অফিসে যোগ না দেয়ার জন্য নির্দেশনা জারি করে, তারা বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে, তারা আদালত এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়। তারা কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্যাক্স না দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় এবং তারাই, বিচ্ছিন্নতাবাদী, নির্দোষ নাগরিকদের হত্যা করা শুরু করে। ওই ঘটনাগুলো নথিভুক্ত করা হয়েছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত না হওয়ার জন্য যখন সশস্ত্র বাহিনী দাঁড়িয়ে ছিল, যারা হত্যাকান্ড দমনের জন্য আদেশপ্রাপ্ত ছিল এবং তাদের একশনের ফলস্বরূপ অনধিক দুই বা তিন ডজনের মানুষ নিহত হয়, তারা গণহত্যার জন্য দায়ী ছিল। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার আর্তনাত ২৫শে মার্চের আগেই শুরু করেছিল যখন সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ মানুষ যারা বিচ্ছিন্নবাদীদের সাথে একই রাজনৈতিক মতামত বহন করে না, তাদের হত্যার দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

সেগুলো হচ্ছে রেকর্ড করা এবং নথিভুক্ত তথ্য, তারপরেও বলা হয় সেখানে তথ্য গোপন করা হচ্ছে। ঐ তথ্য বিশ্বের প্রেসের কাছে এখনো পৌঁছায় নি। তবুও পাকিস্তান সরকার সেন্সরশীপ ও দমনের অভিযোগে অভিযুক্ত। যাই হোক, আমি আপনাদের বলছি ভারতের প্রতিনিধি মৃত্যুর পরিসংখ্যানের যে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন তা ভারতীয় সূত্র হতে উদ্ধৃত। সেই প্রতিনিধিদের এই গল্প শোনানো হচ্ছে। আমি চাই না এটির আরও বিস্তার ঘটুক কিন্তু আমি যদি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই তাহলে আপনাদের সামনে আরও প্রমাণ উপস্থাপন করতে প্রস্তুত আছি। আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি যে, বিদ্রোহীরা এবং সরকার অপসারণের সমর্থকরা – আমাদের সশস্ত্র ও আধা-সামরিক বাহিনীর  ঐসব লোকজন যারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র চুরি করেছে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ দোকান লুট করেছে তাদের থেকে ভিন্ন – যাদের অস্ত্র সরবরাহ ও এতে সুসজ্জিত করেছে এবং আজকে  আমি আজকের নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রবন্ধে পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।

শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে ভারতের প্রতিনিধির এমন অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে এবং এর উত্তরে আমি বলতে চাই আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি সংবাদ আইটেমে বিবৃতি দেয়া হয়েছে যে, পাকিস্তান মিশন থেকে দলত্যাগী একজন কূটনৈতিক পাকিস্তান মিশন হতে বের হওয়ার আগেই বিদেশে অবস্থিত পাকিস্তান মিশনগুলোতে দেয়া হয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে এই বিবৃতি তৈরি করেছে। আমি এখানে একটি শ্রেণীগত বিবৃতি করতে চাইঃ শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের ব্যাপারে না আমার মিশন বা অন্য কোন ধরনের মিশন আমার সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকম তথ্য গ্রহণ করে নি। অতএব, এই মিশন থেকে যেকোনো দলত্যাগী যে প্রেসের সামনে বিবৃতি দেয় যে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ কার্যকর হয়েছে, সে মোটেও সত্য কথা বলছে না এবং আমি কামনা করি ভারতের প্রতিনিধি আমাদের মাঝে এই অভিযোগ নিক্ষেপ করার আগেই যথেষ্ট সাবধানতা ও যত্নশীলতা অবলম্বন করেছেন।

আমি এই পরিষদকে আরও বলবো যে, নির্দিষ্ট দলত্যাগী কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু সম্পর্কে চিঠি ও মেমোরোন্ডা প্রচার করছে। কি উদ্দেশ্যে ভুল বিবৃতি এবং মিথ্যাচার করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্যের বাইরে, কিন্তু, অন্তত, আমরা আশা করি যে, সার্বভৌম দেশের প্রতিনিধিরা অন্যান্য দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ও কটাক্ষের ব্যাপারে চটি লেখক (!!) ও প্রচারক-এর চেয়ে বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করবে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমি আমার জবাব প্রদান করতে চাই, যা আপনাদের মতন আমার কাছেও বেদনাদায়ক এবং বেশ গঠনমূলকও বটে।  বর্তমান ভারত-পাকিস্তান অবস্থার অবনতি থামাতে এবং বাস্তুচ্যুত মানুষদের ফেরত আসার জন্য সহায়ক আত্মবিশ্বাসপূর্ণ একটি পরিবেশ সৃষ্টিতে আমি নিজেকে এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান সরকারের নিবেদন আবার নতুন করে উপস্থাপন করতে চাই।

আমাদের অফার(নিবেদন) নিম্নরূপঃ

প্রথমত, মানুষের সংখ্যা, একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা যারা পূর্বপাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভারতে চলে গিয়েছে – এর সংখ্যা নির্ণীত করতে হবে যাতে পূর্বপাকিস্তান হতে চলে যাওয়া উদ্বাস্তুদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে।

আমাদের দ্বারা গণনাকৃত সংখ্যা এবং ভারতের কথিত সংখ্যার মধ্যে ব্যাপক অসমতা রয়েছে যা কেবলমাত্র একটি নিরপেক্ষ সংস্থা মূল্যায়ন  করতে পারে এবং যা হবে চ্যালেঞ্জের চেয়েও কঠিন।

দ্বিতীয়ত, আমরা অফার করি যে, বাস্তুচ্যুত মানুষদের সহজ পুনর্বাসন ও ফিরে যাওয়ার জন্য ইউনাইটেড নেশন্স হাই কমিশনার ফর রিফুজিস’এর প্রতিনিধিদের জন্য পূর্বপাকিস্তান এবং ভারতের সীমান্তের উভয় পার্শ্বে স্টেশন স্থাপন করার জন্য আমরা অফার করছি। এই প্রস্তাব জাতিসংঘের মহাসচিব কর্তৃক উপস্থাপিত হয়েছিল এবং এটা স্পষ্ট যে, এই ধরনের পদক্ষেপ  অবস্থার উন্নতি এবং আস্থা প্রতিষ্ঠায় একটি দীর্ঘ পথ যেতে সাহায্য করবে। পূর্বপাকিস্তানের শরণার্থীরা যেসব এলাকায় ফিরে এসেছে এবং তাদের সাথে জাতিসংঘের হাই কমিশনারের প্রতিনিধিরা সাক্ষাৎ করার জন্য আমার সরকার সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে। তবে, সীমান্তের ওপারে পর্দা টানা হয়েছে যা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ব্যাহত করছে।

তৃতীয়ত, নিরাপত্তা পরিষদের ভালো অফিসের কমিটিকে ভারত ও পাকিস্তানের উভয় সরকারের সাথে কিভাবে দুই দেশের বর্তমান চাপা উত্তেজনাকে অপসারিত করা যায় এবং পূর্ণ নিরাপত্তার মাধ্যমে ভারত থেকে স্থানচ্যুত পূর্ব পাকিস্তানিদের ফেরত আনা যেতে পারে – এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানাই।

চতুর্থত, আমরা ভারতের সাথে শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে এবং সশস্ত্র সংঘাতের হুমকি নিবৃত করার জন্য যে কোন ধরনের ও স্তরের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য প্রস্তুত।

আমরা আশা করি লম্বা লম্বা তর্কযুদ্ধের পরিবর্তে যা শুধু শুধু তিক্ততা বাড়ায়  ভারত সরকার এসব অফার প্রত্যাখ্যান করবে না। আমি জানি তারা বলতে পারেন, “তারা আগেও এসব অফার করেছে এবং আমরা তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি”, কিন্তু আমরা তাদের প্রত্যাখান পুনর্বিবেচনার জন্য আপীল করছি কারন সেগুলো গঠনমূলক অফার এবং বর্তমান অবস্থার একটি প্রকৃত উৎকর্ষ সাধন করতে পারে, যার মাধ্যমে আমরা মানবিক নীতি এবং শান্তি কর্তৃক দাবীকৃত লক্ষ্যের প্রশমন করতে পারি এবং আমি ভারতের প্রতিনিধিকে আবারও আপীল জানাই এই অফারগুলোকে সামান্যভাবে না নিতে।

.

13.294.900-914

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানী প্রতিনিধি মিঃ আগাশাহীর বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পাকিস্তানের প্রতিনিধি জনাব আগা শাহীর বিবৃতি

ডিসেম্বর ৪, ১৯৭১

এই কাউন্সিল মীটিং, যার কথা শোনা গিয়েছিল, তাতে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি আপনাকে, জনাব রাষ্ট্রপতি, এবং নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

জাতিসংঘের ইতিহাসের অন্যতম গুরুতর পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা পরিষদের এই সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের একটি সদস্যরাষ্ট্র ভারত,  অন্য একটি সদস্যরাষ্ট্র পাকিস্তানের রাজ্যক্ষেত্রের উপর শুধুমাত্র আগ্রাসনই চালু করেনি, উপরন্তু প্রকাশ্যে দাবি জানিয়েছে যে পাকিস্তান যেন নিজেকে বিভক্ত করে এবং তার ভূখণ্ডের যে অংশে জনসংখ্যা বেশি তার উপর দাবি ছেড়ে দেয়।

আমি পরিষদের সামনে যা উত্থাপন করছি তা শুধু একটি অভিযোগ নয়। বিশ্ব জানে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সম্পর্কে, ১লা ডিসেম্বর যা দেওয়া হয়,  যাতে বলা হয় পাকিস্তানের উচিত তার পূর্ব অংশ থেকে সেনা প্রত্যাহার করা। বিশ্ব এটাও জানে যে ভারতীয় সৈন্য পাকিস্তানের রাজ্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে এবং অন্তত ২১শে নভেম্বর থেকে সেখানে আছে। এই দুটি ঘটনা ভারত দ্বারা স্বীকৃত, এবং তর্কাতীত ।

এই দুটি ঘটনাই হল এই পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা যার উপর ভিত্তি করে নিরাপত্তা পরিষদের বিবেচনা করতে হবে। সমসাময়িক কালে এই ঘটনার মত আগে কিছুই ঘটেনি।

জাতিসংঘে এমন অন্য কোন সদস্যরাষ্ট্রের উদাহরণ নেই যা অন্য একটি সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে স্বীকৃত এবং স্বাভাবিক কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকার পরও দাবি করে যে দ্বিতীয় সদস্যরাষ্ট্রটি যেন  নিজস্ব অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করে এবং এইভাবে এটির উপর নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেয় ও দাবি ত্যাগ করে। ভারত শুধুমাত্র চাহিদাই করেনি, এই অনুসারে পাকিস্তানের বিভেদ ঘটানোর জন্য আক্রমনাত্মক কার্যক্রমও বাড়িয়ে দিয়েছে ।এভাবে একটি চ্যালেঞ্জ পাকিস্তানকে দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তান এটি অটলভাবে মোকাবেলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এ দৃষ্টিকোণ থেকে, এই পরিস্থিতি নিরাপত্তা পরিষদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে যেখানে পাকিস্তান একা জড়িত নয়। এটি প্রতিটি রাষ্ট্রকে অন্তর্ভুক্ত করে যারা রাজ্যের অখণ্ডতা নীতিতে বিশ্বাস করে, যা জাতিসংঘের দলিলে অপরিহার্য। এটি সবাইকে উদ্বিগ্ন করে যারা বৃহত্তর, আরো শক্তিশালী এবং শিকারী প্রতিবেশীদের দ্বারা পদদলিত হওয়ার বিপদের মধ্যে আছে।

যতক্ষণ পাকিস্তান  এতে জড়িত, আমি অঙ্গীকার করতে পারি আমরা আত্মসমর্পণ করব না।আগামীকাল যাই হোক না কেন, এটা পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ হবে না। আমাদের স্বাধীনতা এতটাই মূল্যবান যে আমরা এটি বিকিয়ে দিতে পারি না।

আমাদের জাতীয় অখণ্ডতার প্রতি আমাদের পণ এত দৃঢ় যে আমাদের হোঁচট খাওয়া বা বিফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা ই ছিলনা। সে যাই হোক, নিরাপত্তা পরিষদ যদি পরিস্থিতির সঙ্গে সময়োচিত ব্যবহার করত, যদি বাকচাতুরী করত, যদি অচল হয়ে যেত, যদি আগ্রাসন দমন করতে ব্যর্থ হত, একটি ব্যাপার অবশ্যই ঘটত। জাতিসংঘের সনদ অমান্য করা হত। জাতিসংঘের সক্রিয় থাকার পিছনে মৌলিক উদ্দেশ্যগুলো ধূলিসাৎ হয়ে যেত। জাতিসংঘের প্রতীক্রুপ হয়ে থাকা আন্তর্জাতিক বিন্যাসে এমন ক্ষতি হত যা কখনো পূরণ হতো না।

যেহেতু, জাতিসংঘ সনদের ব্যতিক্রম করে পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে বড়মাপের সামরিক শক্তি ব্যবহারের কারণে অভিযুক্ত হওয়ার পর, ভারত এখন নিজেকে পাকিস্তানের পূর্ণস্কেল হামলার বিরুদ্ধে রক্ষা করার কথা বলছে , ২১শে নভেম্বর থেকে গত দুইসপ্তাহের ঘটনাক্রম স্পষ্টভাবে মনে রাখা প্রয়োজন।

পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে ২১শে নভেম্বর থেকে ভারত তাদের নিয়মিত সৈন্য, ট্যাংক এবং বিমান দ্বারা বিরাটাকারের আক্রমণ চালিয়ে আসছিল। আক্রমণটি একযোগে ভারতীয় ভূমি সীমান্তের তিন দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের চারপাশে অর্ধডজন পয়েন্টে চালানো হয়েছিল।

ভারতীয় আক্রমণ বিনা উস্কানিতে ছিল, বিরাটাকারের ছিল, সমন্বিত ছিল, ভারী অগ্নিকামানের নেতৃত্বে অগ্রবর্তী ছিল, এবং এটা এয়ার কভারের মধ্যে পরিচালিত হয়েছিল। ইহা স্পষ্টতই শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলাদের দ্বারা একটি বর্ধিত ক্রিয়াকলাপ  ছিলনা, যেহেতু ভারতীয়রা চেষ্টা করেছিল এটি বজায় রাখার জন্য। পাকিস্তানি ও ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীর মধ্যবর্তী যুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যুর অথবা বন্দী হওয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন ভারতীয় সেনা ইউনিট চিহ্নিত হয়েছে।

২১শে নভেম্বরে, ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনী নিম্নলিখিত হামলা চালিয়াছিল: পূর্ব পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সেক্টরে,সশস্ত্র হেলিকপ্টার দ্বারা সমর্থিত একটি ভারতীয় সেনা ব্রিগেড গ্রুপ পূর্ব পাকিস্তানের পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছিল, আমাদের সীমান্তফাঁড়ি ছারখার করেছিল এবং আমাদের অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ১০ মাইল অনুপ্রবেশ করেছিল। এই সেক্টরের উত্তরে, ২৩ ভারতীয় ডিভিশনের একটি ব্রিগেড গ্রুপ, ডিভিশনের বাকিদের দ্বারা সমর্থিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের নোয়াখালী জেলার বেলোনিয়াতে হামলা চালিয়ে পাকিস্তান সীমানার আটমাইল ভিতরে অনুপ্রবেশ করেছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপ-বিভাগে, বিলোনিয়ার উত্তর-পশ্চিমে মুকুন্দপুর এবং সালদানদী বর্ডার পোস্টে ৫৭’তম  ভারতীয় বিভাগের একটি ব্যাটালিয়ন আক্রমণ চালিয়ে ছারখার করে দিয়েছিল। আরও উত্তরে, পূর্ব পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে, ভারতীয়রা আমাদের ময়মনসিংহের (ময়মনসিংহ জেলা হিসেবে পরিচিত) কাড়িতলা সীমান্তফাঁড়িতে উর্পুযুপুরি আক্রমণ চালিয়েছিল। এই হামলা প্রতিহত করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর-পূর্বকোণে, দুটি ভারতীয় ব্যাটেলিয়ন গ্রুপ সিলেট জেলার মৌলভীবাজার উপ-বিভাগের ধলাই, আটগ্রাম এবং জাকিগঞ্জে আমাদের সীমান্তফাঁড়ি গুলোতে আক্রমণ করে সেগুলো ছারখার করে দিয়েছিল। এই ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে গুর্খার দুটি কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় ভারতীয়রা রংপুর জেলায় আরেকটি হামলা চালায়। এটি ছিল ভুরাঙ্গামারীতে, যেখানে একটি ভারতীয় ব্রিগেড গ্রুপ পাকিস্তান অঞ্চলের নাগেশ্বরীর ১৫ মাইল পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করে। যশোর জেলার তিনদিক সম্পন্ন করে,  সাঁজোয়াবাহিনী এবং এয়ারকভার দ্বারা সমর্থিত ৯ম ভারতীয় ডিভিশনের একটি ব্রিগেড গ্রুপ দ্বারা  দক্ষিণ-পূর্ব সেক্টরে চৌগাছার বিপরীতে একটি বড় আক্রমণ চালানো হয়েছিল। ভারতীয় ট্যাঙ্ক পাকিস্তান সীমানার মধ্যে প্রায় আট মাইল অনুপ্রবেশ করে। পাকিস্তান এয়ারফোর্স ভারতীয় বিমানহামলাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। একটি ভারতীয় বিমান ধ্বংস হয়, এবং আমরা দুটি পাকিস্তানি এলাকার উপর থেকে কতৃত্ব হারিয়েছিলাম। ভারতীয় আর্টিলারি যশোর বিমান ক্ষেত্রে শেল নিক্ষেপ করেছিল। এই সকল হামলা 21 নভেম্বরে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে সীমান্তের পৃথক পৃথক অংশে ছড়িয়ে চালানো হয়েছিল।

 ২১ নভেম্বর রিপোর্ট করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে ১২ টি  ভারতীয় ডিভিশন মোতায়েন করা হয়েছে। উপরন্তু, সেখানে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৮ টি ব্যাটালিয়ন ছিল। ২য় এবং ৫ম ভারতীয় মাউন্টেন ডিভিশন, যারা পূর্বে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত এজেন্সিতে সংস্থিত ছিল, তাদেরও পূর্ব পাকিস্তানের দিকে এগিয়ে আনা হয়েছে। ছয়টি ব্রিগেড দ্বারা গঠিত ৮ম মাউন্টেন ডিভিশনকে নাগাল্যান্ড থেকে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সিলেটের দিকে আনা হয়। নাগাল্যান্ডে আর মাত্র একটি ব্রিগেড ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের চারপাশে ভারতীয় বিমানবাহিনীর বারোটি স্কোয়াড্রন স্থাপন করা হয়। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, কতোগুলো ফ্রিগেট, ল্যান্ডিং জাহাজ, ও দুইটি সাবমেরিনের সমন্বয়ে গঠিত একটি বৃহদাকার ভারতীয় নৌবাহিনী বিশাখাপত্তমের কাছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছিল; যা ছিল চট্টগ্রাম ও চালনা পোর্টের দিকে জল ও স্থল উভয় মাধ্যমে হুমকি। চালনা পোর্টের দিকে ভারতীয় বাহিনীর আক্রমণের ফলস্বরূপ খাদ্যশস্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহ বহনে নিয়োজিত দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল।

এই ছিল ২১ নভেম্বরে তাদের অবস্থান। তদবধি, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক কর্ম অব্যাহত রেখেছে, যার মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক সীমানা পারাপার সহ  আমাদের ভূখণ্ডের উপর প্রতিকূল কার্যক্রম। গত দুই সপ্তাহে পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী সব খাতে ভারতীয় আগ্রাসন প্রতিহত করা অব্যাহত রেখেছে।

বর্তমান যুদ্ধবিগ্রহের প্রকৃতি বোঝার জন্য এ লড়াইয়ের বিবরণ মনে রাখা প্রয়োজন যা অগ্রসর হয়ে ৩রা ডিসেম্বর চরমে পৌঁছে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে পরিণত হয়।

আমি যশোর সেক্টরের প্রসঙ্গ প্রথমে বলব। পূর্ব পাকিস্তানের এই দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রন্টে ২১শে নভেম্বর থেকে ভারতীয়রা ট্যাংক ও ভারী কামান ব্যবহার করেছে। কিছু আক্রমণ ব্রিগেডের মতো শক্তিশালী ছিল। ভারতীয়রা ক্রমে ক্রমে দখল করা পাকিস্তানি অবস্থানের বিরুদ্ধে  কিছু সাফল্য পেয়েছিল, এবং আমাদের এলাকার  ছয় মাইল অভ্যন্তরে চৌগাছা দখল করেছিল, সেইসাথে জীবন নগর। তাদের আক্রমণ বুইন্দা শিমুলিয়া, কৃশানপুর, জামালপুর ও নবগ্রাম এলাকাসমূহে দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। যশোর সেক্টরে ভারতীয়দের প্রায় ১৫০ নিহত এবং ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছিল। বেশ কিছু ভারতীয় ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা হয়েছিল। ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটসমূহ যাদের যশোর সেক্টরে চিহ্নিত করা হয়, তাদের মধ্যে ছিল ১৪তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টে যারা অন্তর্ভুক্ত তারা, এবং ৯ম ভারতীয় পদাতিক ডিভিশনের ৩৫০তম  ব্রিগেডের ১ম জম্মু ও কাশ্মীর ব্যাটালিয়ন।

দিনাজপুর-রংপুর সেক্টরে, এই উত্তর-পূর্ব ফ্রন্টে ভারতীয় আক্রমণ কয়েক দিনের জন্য কেন্দ্রীভূত ছিল দিনাজপুর জেলার পাহাড়ি এলাকায় । অন্যান্য যেসব অঞ্চলে যুদ্ধ সংঘটিত হচ্ছিল সেগুলো হল পঞ্চগড়, নাগেশ্বরী, অউরপাড়া, বান্তারা এবং মির্জাপুর।

ভারতীয় ট্যাংক এবং বিমান এই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল। দিনাজপুর-রংপুর সেক্টরে চিহ্নিত ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ইউনিটসমূহের মধ্যে ছিল ১০ম ভারতীয় মাউন্টেন ডিভিশনের ১৬৫তম মাউন্টেন ব্রিগেড, ৪র্থ রাজপুত রেজিমেন্ট – ৭ম মারহাট্টা লাইট ইনফ্যান্ট্রি এবং ৯ম ভারতীয় মাউন্টেন ডিভিশন।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট সেক্টর, পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আক্রমণের প্রথম দিন থেকেই ভারতের প্রবল আক্রমণের সম্মুখীন হয়। পাকিস্তানের দুই মেইল ভিতরে আটগ্রামের নিকটে, এবং রাকিগঞ্জে ভারী যুদ্ধ চলমান ছিল।

.

[নয়া দল্লিী সরকাররে ফাদে পা আমার পা দয়ো ঠকি হবে না কারণ তারা পাকস্তিানরে অভ্যন্তরীণ সঙ্কট এর উপর বাস করে তাতে তাদরে হস্তক্ষপে ও আক্রমণ এর ন্যায্যতা চায়।আমি আশা রাখি এবং বশ্বিাস করি যে নরিাপত্তা পরষিদ জাতসিংঘরে এখতয়িাররে বাইররে বষিয় নয়িে যে বর্তিক তরৈী হয়ছেে তার বরিুদ্ধে ব্যবস্থা নবে।েনরিাপত্তা পরষিদ আর্ন্তজাতকি শান্তরি সাথে সংশ্লষ্টি, শুধুমাত্র একটি সদস্য রাষ্ট্ররে অভ্যন্তরীণ শান্তি ও রাজনতৈকি জীবনরে সাথে নয়।পাকস্তিানরে ভতিরে তাদরে নজিস্ব যে পরর্বিতনই হোক না কনে, তাদরে অবস্থার ঠকি বা ভুল নয়িে একক বা দলগত যে সদ্ধিান্তই নয়ো হোক না কনে,ভারতরে তাতে হস্তক্ষপে করার কোনো যৌক্তকি ভত্তিি নইে।

শান্তপর্িূণ বশ্বিরে ধারা বজায় রাখতে হলে একটি মূলনীতি প্রয়োজন, এবং তা হল প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষভাবে আগ্রাসনরে ভত্তিস্বিরূপ কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্ররে আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে রাজনতৈকি, র্অথনতৈকি, কৌশলগত, সামাজকি অথবা মতার্দশকিভাবে হস্তক্ষপে করতে পারবে না। আমরা সকলইে জানি যে জাতসিংঘরে সাধারণ পরষিদরে অনকে ঘোষণাই এই মূলনীতকিে স্বীকৃতি প্রদান কর।ে আমি এর সবগুলো উল্লখে করছনিা কারণ এই নীতমিালার স্বীকৃতি এবং জাতসিংঘরে আইনে এর অর্ন্তভূক্তি ওই সব ঘোষণার উপর নর্ভিরশীল নয়। ১৯৬৫ সালে সাধারণ পরষিদ প্রণীত রাষ্ট্রসমূহরে আভ্যন্তরীণ র্কাযক্রমরে মধ্যে মধ্যস্থতার অনুমতি এবং তাদরে স্বাধীনতা ও র্সাবভৌমত্বরে সুরক্ষার উপর ঘোষণাকে উদাহরণ হসিবেে উল্লখে করাই যথষ্ঠে। [এবহবৎধষ অংংবসনষু জবংড়ষঁঃরড়হ ২১৩১ (ঢঢ).]

উক্ত ঘোষণার র্কাযকরী অনুচ্ছদে ১ অনুযায়ী:

“কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্ররে আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যকি কোনো র্কাযক্রমরে উপর কোনো কারণইে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে হস্তক্ষপে করার অধকিার নইে। পক্ষান্তরে সশস্ত্র হস্তক্ষপে এবং রাষ্ট্ররে স্বত্তা অথবা এর রাজনতৈকি, র্অথনতৈকি এবং সাংস্কৃতকি উপাদানরে পক্ষে হুমকস্বিরূপ সকল ধরণরে প্রচষ্টো বা হস্তক্ষপে নষিদ্ধি।‌‌”

কার্যকরী অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী:

কোনো রাষ্ট্র অন্য কোনো রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্খার উপর সহিংস আচরণের জন্য সরাসরি কোনো সশস্ত্র কার্যক্রম অথবা সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালাতে প্রণোদনা দেওয়া, অর্থায়ন করা, সহযোগিতা বা সংগঠিত করতে পারবে না অথবা কোনো রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের সমস্যার ভেতর তাবেদারি করবে না।’

কার্যকরী অনুচ্ছেদ ৪ অনুযায়ী:

হস্তক্ষেপ করার যে কোনো ধরণের চর্চা শুধুমাত্র জাতিসংঘের সনদের চেতনা এবং চুক্তিকে ভঙ্গ করে না বরং সেসব পরিপ্রেক্ষিত তৈরী করে যেগুলো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে।

আমি মনে পড়ে ভারত ও সেই কমিটির একজন সদস্য ছিল যারা রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ের মধ্যে হস্তক্ষেপের অনুুমতির উপর ঘোষণা তৈরি করেছিল। অ-হস্তক্ষেপের নীতির বিষয়ে জাতিসংঘে অধিপরামর্শের জন্য ভারত গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিল। এই অধিপরামর্শের ফলাফল খুব কমই প্রণোদনা সৃষ্টি করেছিল এবং আমরা পাকিস্তানের মানুষ সেটা ভালভাবেই জানি। ঘটনা পরিক্রমায় অসচেতন ভাবে জম্মু এবং কাশ্মীর হত না এবং স্বীকৃতি পেত না যদিনা ভারতের সাথে চুক্তির প্রেক্ষিতে একটি সুষ্ঠু গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের অধীনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত গৃহীত হত। জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আত্ম-পরিচয়ের সংগ্রামে নৈতিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান করার জন্য ভারত অকার্যকরভাবে পাকিস্তানের সাথে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধের দাবি তুলেছিল। এই মুহূর্তে আমি সেই প্রসঙ্গে যাচ্ছি না।

রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের নিষেধাজ্ঞার বৈশি^ক ধারণার উন্নয়নে ১৯৬৮ সালে ২১ শে আগষ্ট চেকোস্লোভাকিয়ায় অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪৪১ তম অধিবেশনে তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ভারতীয় প্রতিনিধি বক্তব্য রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের বিপক্ষে ভারতীয় প্রণোদনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। বক্তব্যের কিছু অংশ নি¤œরূপ:

’শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অত্যন্ত মৌলিক ভিত্তি হল কোনো রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য কোনো দেশের নাগরিকগণের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। আমরা সবসময় বিশ^াস করি যে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কসমূহগুলো ক্ষুদ্র এবং বৃহৎ রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে পরিচালিত হওয়া উচিত। প্রত্যেকটি দেশ যাতে নিজেদের ঐতিহ্য, দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক তৎপরতার প্রেক্ষিতে স্বীয় সত্তা নির্মাণ করতে পারে সেই অধিকারের স্বপক্ষে আমরা সবসময় দাড়িয়েছি। ভারত সবসময় তার স্বর তুলেছে যখনি এইসব নীতিমালার ব্যতয় ঘটেছে।’

এই ছিল অন্যান্য রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিপক্ষে তদানিন্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য। ]

.

এই শত্রুতা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটের সাথে শুরু হয়নি।পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সঙ্কটে এই শত্রুতা কেবল খুঁজে পেয়েছিলো এর নকশা গুলো সম্পাদনের এক শক্তিশালী মাধ্যম,একটি উপলক্ষ,একটি অভূতপূর্ব সুযোগ।ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ফর ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যানালাইসেস এর প্রধান উল্লেখ করেন,”আমাদের যা অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে তা হল পাকিস্তানের এই ভাঙ্গন আমাদের নিজেদের স্বার্থেই,একটি সুযোগ যা কিনা দুবার আসবে না।“

একজন ভারতীয় রাজনৈতিক প্রচারবিদ,মিঃ স স্বামী ১৫ ই জুনের “মাদারল্যান্ড”,নিউ দিল্লীতে লেখেন,”পাকিস্তানের ভাঙ্গন কেবল আমাদের বহিঃনিরাপত্তার স্বার্থেই নয় আমাদের অন্তঃনিরাপত্তার স্বার্থেও বটে।ভারতকে আন্তর্জাতিকভাবে একটি সুপার-পাওয়ার হিসেবে উত্থান করতে হবে এবং যার জন্য আমাদেরকে জাতিগতভাবে আমাদের নাগরিকদের একীভূত করতে হবে।এর জন্যে পাকিস্তানের বিভাজন একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত।“

অথচ আরেকজন প্রচারবিদ,মিঃ জ আ নায়েক পাকিস্তানের ভাঙ্গনে দেখেছিলেন এই অঞ্চলে ভারতের জন্য সেরাশক্তির মর্যাদা অর্জনের পথ।পহেলা এপ্রিলের “হিন্দুস্তান” এর রিপোর্ট অনুযায়ী নিউ দিল্লীতে,পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকটের সূত্রপাতের অব্যবহিত পরেই অনুষ্ঠিত এক রাজনৈতিক সভায় অর্জিত ঐক্যমত্য ছিলো যে ভারতের অবশ্যই “এই সুযোগের যা কিনা শতাব্দীর সেরা সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত,উপযুক্ত ব্যবহার করতে হবে”।

অন্তত এটা চিন্তা করা যেতে পারে যে এগুলো রাজনৈতিক তাত্ত্বিকদের আকাশকুসুম কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়,আমি এখানে ভারত থেকে সরকারিভাবে ঘোষিত কিছু রায়ের কথা বলছি।নিউ দিল্লীর রোটারি ক্লাবকে উদ্দেশ্য করে আগস্টের ১১ তারিখ “স্টেটসম্যান” নিউ দিল্লীতে প্রকাশিত পরের দিনের রিপোর্ট অনুযায়ী,ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মিঃ জগজ্জীবন রাম বলেন,”বাংলাদেশকে অবশ্যই বাস্তব রূপ লাভ করতে হবে এবং তা হবেই,অন্যথায় তারা ভারতের জন্য অনিবার্য বিপদে পরিণত হবে।“এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের প্রাদেশিক অখন্ডতাকে ভারত “অনিবার্য বিপদ”হিসেবে বিবেচনা করে।বস্তুত পহেলা ডিসেম্বর,পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বলেন যে পাকিস্তান প্রদেশ ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

১৯শে সেপ্টেম্বরের দ্য স্টেটসম্যান এর রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮ ই সেপ্টেম্বর,ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আবার বলেন,”এটা ধারণাতীত যে পাকিস্তান,বাংলাদেশকে স্বাধীনতা দিয়ে দেবে,কিন্তু আমাদের এমন এক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এগোতে হবে যাতে পাকিস্তানেরর জন্য অন্য কোন পথ খোলা না থাকে”।

এই পরিস্থিতি কেমন হতে পারে তা বর্ণনা করেছিলেন ফর ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ডিফেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যানালাইসেস(যার কথা একটু আগেই আমি উল্লেখ করেছিলাম)এর প্রধান।তিনি ১৫ই আগস্টের “ইলাস্ট্রেটেড উইকলি”তে “মাস্ট উই গো টু ওয়ার”শিরোনামে লেখেন,”পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ হবে একটি স্বল্পস্থায়ী ব্যাপার”।এ ধরনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের ক্ষেত্রে।অনুক্রমটি নিম্নোধৃতভাবে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট ডিফেন্স স্টাডিজ দৃষ্টিগোচর করেছিলো এবং আমি নিশ্চিত উদ্ধৃতিটি মেম্বারস অব দ্য সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে মজাদার বলে মনে হবে;

“নিঃসন্দেহে সিকিউরিটি কাউন্সিল এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য উভয় জাতিকে ডাকবে।যুদ্ধ কি বন্ধ ঘোষিত হবে নাকি কিছু সময় ধরে চলমান থাকবে তা ভারতের বিবেচ্য বিষয়।এই অবস্থায় ভারতের উচিৎ বাংলাদেশকে এই বিবাদের একটি স্বীকৃত পক্ষে পরিণত করা।বস্তুত বাঙ্গলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের এটিই যথার্থ পথ।এটি পরিষ্কার ভাবে স্থাপন করতে হবে যে,বেঙ্গল-সেক্টরে অস্ত্র-বিরতি স্বাক্ষর করা যাবে না যদি না বাঙ্গলাদেশের কমান্ডারকে অস্ত্র-বিরতির উদ্দেশ্য গুলোর জন্য স্বাধীন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ সরকারকে একটি পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়”।

যে কাগজ থেকে এ উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছিলো তা ১৩ই জুলাইয়ের দ্য টাইমস অব লন্ডন এ পুরোপুরিভাবে রিপোর্ট করা হয়েছিলো।আবারো এ সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে এই চিন্তাধারা সরকারি পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো।

অক্টোবরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মিঃ জগজ্জীবন রাম-এবং আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি বারবার উনাকে উদ্ধৃত করার জন্য,কিন্তু যদিও উনার বাচালতা কিছু ব্যবহার্য উপাদানের যোগান দেয়,এটা ভাবা ভুল হবে যে তিনি এমন কোন সরকারের চিন্তা করেন না যার একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তিনি-বলেন যে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ পাকিস্তানের মাটিতেই হবে এবনগ যুদ্ধের সময় দখল্কৃত জায়গা ভারত ছেড়ে দেবে না।তিনি আরো বলেন,”আমরা সরাসরি লাহোর এবং শিয়ালকোট চলে যাবো এবং ফলাফল যাই হোকনা কেন,আমরা ফিরবো না।“

এটা তাই পরিষ্কার যে ভারতের যুদ্ধংদেহী মনোভাবই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সঙ্গকটকে এমন মাত্রা দিয়েছিলো যা অন্যথায় এটি কখনোই লাভ করতে পারতোনা।বলা যেতে পারে যে এটা কিন্তু আমাদের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে হালকা করা দেখামোর জন্যব বলা হচ্ছে না।যে সঙ্গকটের মুখোমুখি আমরা এ বছর হয়েছিলাম তা ছিলো আমাদের দেশের জন্য চরম দুঃখের বিষয়।কিন্তু আমি কি এই প্রশ্ন করবো না যে যেসকল জাতিরা যারা এওখন সঙ্গযোগের প্রতীক,তারো কি অতীতে এমন দুর্দশাপূর্‌ণ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়নি?একটি পার্থক্য যে পাকিস্তান যে আন্তর্জাতিক প্রচারের বিকৃতির স্বীকার তারা সেই বিকৃতি থেকে রেহাই পেয়েছিলো।অপ্র এবং আরো তীব্র পার্থক্য হলো যে তাদের এমন শত্রুভাবাপন্ন ও বৃহৎ প্রতিবেশী যারা কিনা শুরুতে তাদের গৃহযুদ্ধকে উসকে দেয় পরে একে বর্ধিত করে এবং শেষে আচমকা আক্রমণ করে যা আমাদের ক্ষেত্রে ভারত করেছিলো।

মহাসচিব তার ২০এ জুলাইয়ের স্মৃতিকথায় সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভাপতির দিকে তুলে ধরেন যে,”এই সংকটটি উন্মোচিত হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার দীর্ঘস্থায়ী এবং অমীমাংসিত পার্থক্যের পরিপ্রেক্ষিতে যা কিনা মাত্র ছয় বছর আগেই মুখোমুখি যুদ্ধের সূচনা করেছিলো।“

ভারত-পাকিস্তান প্রশ্নটি ১৯৪৮ সাল থেকেই সিকিউরিটি কাউন্সিলের একটি আলোচ্য বিষয়।দুই দেশের মধ্যকার অনিষ্পন্ন বিরোধ বিশেষত জম্মু ও কাশ্মীর প্রদেশের বিভাজন বিষয়ে যা কিনা সিকিউরিটি কাউন্সিলের অন্তত ১০০ টী মিটিং এ আলোচিত হয় এবং যা কিনা সিকিউরিটি কাউন্সিলের অন্তত ২২ টি ইরাদা ও ২ টি ঐক্যমত্যের বিবৃতির মূল বিষয়বস্তু ছিলো।আমি পরিষ্কার ভাবে বলতে চাই যে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কখনোই প্রকৃত শান্তি আসবে না এবং আমি শান্তি শব্দটি ব্যবহার করছি এমন কিছুর প্রেক্ষিতে যা কিনা যুদ্ধের অনুপস্থিতির চেয়েও বেশি কিছু-যদি না এই বিবাদ মিমাংসিত হয় ভারত আথবা পাকিস্তান কিংবা অন্য কোন বিদেশী শক্তি বা দলগত শক্তির ইচ্ছানুযায়ী নয় বরং জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষের ইচ্ছানুযায়ী।একটি আন্তর্জাতিক চুক্তি রয়েছে-জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষ্কতায় গৃহীত-যে একটী প্রদেশের বিভাজন অবশযই নিশ্চিত করতে হবে জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত নিরপেক্ষ গণভোটের মাধ্যমে।ভারত অবিচলভাবে এই চুক্তি পালনে অসম্মতি জানিয়ে আসছে।তাই পাকিস্তান ও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কে ধরা চিড় গত ২৩ বছরেও প্রশমিত হয় নি এই সামান্য কারনে যে সারা দুনিয়া কাশ্মীর বিরোধের কথা ভূলে গেলেও কাশ্মিরের জনগণ কিংবা পাকিস্তানে তাদের ভাইরা কখনোই ভুলবে না এমনকি যদিও এই বিরোধের কারণ হয় ভারতের উগ্র জাতীয়তাবাধের বহিঃপ্রকাশ এবং একটি ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তিতে মিলিত হতে অসম্মতি যা লিনা দুই দেশের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী প্রতিবেশীমূলক সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে পারতো।

ভারত-পাকিস্তানের মদঝযকার শত্রুতার মূল কারণ তাই এ বছরের ঘটনাগুলো নয়,বরঞ্চ এতদিন ধরে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের অনুসৃত পলিসি-যা কিনা পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক অধিকারকে অস্বীকার করে এবং শান্তিচুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান িস্যুগুলো সমাধানের অসম্মতি তুলে ধরে।দক্ষিন এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে সাংঘর্‌ষিক পরিস্থিতি গুলি সমা্ধানের জন্য ও বিবাদ সমূহ মেটানোর জন্য একমাত্র পন্থা যা বলা যেতে পারে হলো জাতিসংঘের সনদের অনুচ্ছেদ ৩৩ এ বর্ণিত মাধ্যমগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের অংশগ্রহনের দ্বারা,কোন জাদুর ছড়ির দোলার মাধ্যমে নয়,নয় কোন ঘোষনার মাধ্যমে বা “নো ওয়ার”চুক্তির মাধ্যমে।

শত্রুতার উদগিরণ ঠেকাতে পাকিস্তান কেমন সংকিত ছিলো তা যথার্থভাবে বোঝা যায় এই দেখে যে পাকিস্তান সরক্স্র প্রতিটি প্রস্তাবের প্রতি-যা কিনা দুদেশের মাঝে শান্তি আনয়নে সক্ষম-ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করেছিলো।মাসখানিক আগেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী তার তৎপরতা ঘোষনা করেছিলেনযেকোন মুহূর্তে যেকোন স্থানে ভারতের প্রধান্মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের জন্য।ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিলো সম্পূর্ণ নেতিবাচক.২০ শে নভেম্বর পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভারতের প্রধানম্নত্রীর প্রতি বন্ধুসুলভ হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।ভারতের জবাব ছিলো পাকিস্তানের উপর পরদিনের সশস্ত্র আক্রমন।

শেষ পর্যন্ত সিকিউরিটি কাউন্সিল এসব জেনে ২০ শে অক্টোবর মহাসচিব,পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং ভারতের প্রধান্মন্ত্রীর কাছে একটি চিঠি পাঠান এই বলে যে,”এই সম্ভাব্য ভয়ংকর পরিস্থিতিতে একজন মহাসচিব হিসেবে আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য এই দুই সরকারকে সাহায্য করা যেকোন উন্নয়ন এড়াতে যা কিনা ভয়াবহ দুর্যোগের দিকে মোড় নিতে পারে।আমি আপনাদের মহামহিমদের জানাতে চাই যে,আমার অফিস সমূহ সম্পূর্ণ আপনাদের আয়ত্তে যখনই এগুলোকে আপনাদের সহায়ক মনে হয়”।

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট সাথে সাথেই এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানান পাকিস্তান ও ভারতের সীমান্ত হতে উবয় পক্ষের শক্তি সরিয়ে নেবার পন্থা ও মাধ্যম নিয়ে আলোচনা করার জন্য।কিন্তু ভারতের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহাসচিবের চিঠির জবাব দেন ১৬ ই নভেম্বর,একটি ক্রমবর্ধমান দুশ্চিন্তার পরিস্থিতির ২৭ দিন পর,এবং তার চিঠিতে তিনি অভিযোগ করেন যে,”পাকিস্তান আঁটঘাঁট বেঁধে ভারতের সাথে একটি বড় সংঘর্ষের প্রস্তুতি নিচ্ছে”।

এখন যদি এই অভিযোগ সত্য হত তাহলেতো ভারতেরই পাকিস্তানের আগে মহাসচিবকে উপমহাদেশে এসে পরিস্থিতি প্রশমনের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর কথা।

.

কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহাসচিবের কার্যালয়ের ব্যবহারের উপর এমন কিছু শর্তারোপ করেন যা তার সামর্থ্যের অধিক।তিনি ভদ্র অথচ নির্ভুল ভাবে দাবী করেন যে মহাসচিবের “সমস্যাকে পরিপ্রেক্ষিতে দেখতে হবে”,এবং পাকিস্তানের ব্যাপারগুলোতে “পশ্চিম পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আনয়নের প্রচেষ্টা”চালানোর মাধ্যমে হস্তক্ষেপ করতে হবে।বলাই বাহুল্য এই বার্তাটি ছিলো এমন যে যদি মহাসচিব ভারতের রাজনৈতিক নকশা অনুসরণ করেন তবেই তিনি আমন্ত্রিত,অন্যথায় নয়।

বেশ কিছু সপ্তাহ ধরে ভারতের বক্তৃতাগুলোর মূল বক্তব্য ছিলো এমন যে পাকিস্তান ভারতের সাথে বড় পরিসরের সংঘর্ষের পরিকল্পনা করছে।কিন্তু অক্টোবরে,পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পরষ্পরের সীমানা থেকে উভয় দেশেরই সেনা বহর সরিয়ে নেবার প্রস্তাব করেন।যদি ভারতীয় নেতৃবৃন্দ নিজেদের প্রোপাগান্ডায় নিজেরাই বিশ্বাস করতেন,তবে তারা এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানাতেন।কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী সংক্ষিপ্তভাবে এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দেন এই মর্মে যে সীমানায় পাকিস্তানের যোগাযোগের লাইনগুলি ভারতের গুলির চেয়ে ছোট।

বিতর্ক এড়ানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট তার পূর্বোক্ত প্রস্তাবকে কিছুটা পরিবর্তন করেন এবং বলেন যে যদি শান্তি-সময় স্টেশনের দিকে প্রত্যাহার করা সম্ভব না হয় তবে সীমানার উভয় পাশে নিরাপত্তার ভাব তৈরির জন্য অন্তত উভয় সৈন্যবাহিনীকে তাদের সাঁজোয়া এবং অস্ত্রশস্ত্র সহ দুই দেশের পারষ্পরিকভাবে সমর্থিত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে ফেলা হোক।

কোনকিছু কি এরচেয়ে বেশি ন্যায্য হওয়া সম্ভব?ভারতের সাথে যুদ্ধ এড়াতে পাকিস্তানের কামনা কি আর কিছুর মাধ্যমে এর চেয়ে বেশি সুনিশ্চিত করে বলা সম্ভব?সংক্ষেপে সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখোমুখি হওয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি সদস্য প্রদেশ অন্য সদস্য প্রদেশের ভাঙ্গনের জন্য সশস্ত্র আক্রমণ সহ সকল পন্থার শরণাপন্ন হয়েছিলো।যেহেতু দৃঢ়ভাবে প্রতিরুদ্ধ না হলে ভারতের এই আগ্রাসন আগেই সফল হয়ে যেত,পাকিস্তান তাদের যথার্থ প্রতি-আক্রমণের অধিকারকে অস্বীকা র করতে পারছিলো না।এখন ভারতকে তাদের আগ্রাসনের যুদ্ধ হতে বিরত করার উপায় বের করা সিকিউরিটি কাউন্সিলের দায়িত্ব।কেবলমাত্র সিকিউরিটি কাউন্সিলের উদ্ভাবিত পন্থাগুলো যেগুলো আমাদের স্বাধীনতা,সার্বভৌমত্ব,প্রাদেশিক অখন্ডতা ও আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলোতে অন্যান্য প্রদেশগুলোর হস্তক্ষেপের অনধিকার এর মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকবে কেবল সেই পন্থাগুলোই আমার সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভ করবে।

শেষ করার আগে,আমি নিজেকে বাধিত মনে করছি সি বিতর্কের উপর কিছু পর্যবেক্ষণ তৈরি করতে,যেই বিতর্কটি এই কাউন্সিলে তৈরি হয়েছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিনিধির একট তথা-কথিত স্বত্বার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাবের মাধ্যমে।ভারতের প্রতিনিধি কিন্তু ইতোমধ্যেই আলোচনার ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিলেন এই প্রশ্নে হস্তক্ষেপ করে কারণ কেবলমাত্র সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যরাই প্রক্রিয়াগত বিতর্কে অংশ নিতে পারে।প্রক্রিয়ার নিয়মগুলোর ৩৯ তম নিয়মটি জারী করা হয়েছিলো আমন্ত্রণকে বর্ধিত করার পক্ষে।কিন্তু আমি সিকিউরিটি কাউন্সিলকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে প্রক্রিয়ার নীতিগুলোকে অবশ্যই জাতিসংঘের দলিলের অনুচ্ছেদগুলোর অধীন এবং অনুবর্তী হতে হবে এবং সেই দলিলের মৌলিক নীতিগুলোর অন্যতম একটি নীতি হলো সদস্য প্রদেশগুলোর প্রাদেশিক অখন্ডতা।কাউন্সিলের প্রক্রিয়াগত নিয়মের ৩৯ তম নিয়মের অধীনে যেকোন পরিবর্তন যা এই মৌলিক নীতির বিপরত তা হবে জাতি সংঘ ও সিকিউরিটি কাউন্সিলের সামর্থ্যের বহিরভূত,কারণ সিকিউরিটি কাউন্সিলকে জাতি সংঘের দলিলের নীতিগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে।

প্রশ্নের সেই তথা-কথিত প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাবটি ছিলো আপাত নিরীহ।আমাদের বলা হয়েছিলো যে কাউন্সিল লাভবান হবে যেকোন তথ্য থেকে যা পাকিস্তান-ভারতের ক্রম অবনতির দিকে যাওয়া পরিস্থিতি যা পরিনতিতে দু দেশের মাঝে সশস্ত্র যুদ্ধের শুরু করতে পারে এই বিষয় সম্পর্কিত।

কিন্তু এ জাতীয় তথ্য বিষয়ে সিকিউরিটি কাউন্সিল,সাধারণ পরিষদ এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা সেই বিশেষ স্বত্বার তথা-কথিত প্রতিনিধিদের পাঠানো বস্তুগত প্রমান দ্বারা প্লাবিত হয়ে গিয়েছিলেন,এবং এ বিষয়ে প্রেসে এত বেশি প্রচার হয়েছিল যে একে সরকারী স্বীকৃতি ও এর ডকুমেন্টগুলো নিয়ে পরবর্তী কোন প্রস্তাব সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদের কাছে দেওয়া সম্ভব হয় নি।

আমি বলেছিলাম যে এই প্রস্তাবটি কেবল আপাতই নিরীহ ছিলো,কারণ কারণ মৌলিকভাবে এটি সরাসরি বোঝায় যে,সে ধরনের তথা কথিত প্রতিনিধিদের বসিয়ে সিকিউরিটি কাউন্সিল একটি সদস্য প্রদেশের প্রাদেশিক অখন্ডতায় আঘাত করতেন এবং এ ধরণের স্বীকৃতির মাধ্যমে পাকিস্তানকে অসদস্যে পরিণত করার পথ তৈরি করতেন।

কি এই অস্তিত্ব যার পক্ষ থেকে ভারতের প্রতিনিধিরা একটি ডকুমেন্ট তৈরি ক রেন এবং যার কিনা তারা কাউন্সিলের টেবিলে অবস্থান ও শুনানী দাবী করেন?এটি হল ভারতের,যে দেশ কিনা পাকিস্তানের বিভাজন ও তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে সহায়তা করেছিলো এবং যারা এখন পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে মত্ত,সেই ভারতের মতলবে সংঘঠিত,প্রতিষ্ঠিত একদল মানুষ এবং এই মানুষগুলোর সিট হলো কলকাতায়।আমরা জানি যে এই নিউ ইয়র্কেই অনেকগুলো সংঘটন ও স্বত্বা রয়েছে যারা কিনা কিছু নির্দিষ্ট বৈধ সরকার বা তথা কথিত বৈধ সরকারের নামে কথা বলার দাবী করে এবং তার বিভিন্ন বস্তুতে আমাদের ভাসিয়ে দেয় এবং আমাদের অনুরোধ করে আমেরিকার বিভিন্ন অঙ্গের সরকারী ডকুমেন্ট হিসেবে ছড়িয়ে দিতে।আমরা কি সনদের বিরুদ্ধাচরণকারী এই মানুষগুলোর অনুরোধের সাথে সহমত প্রকাশ করব?

অনেক তর্কবিতর্ক হয়েছে একটি মিটিং এর কথা জিজ্ঞেস করে সিকিউরিটি কাউন্সিলের কাছে নয় প্রতিনিধির চিঠি যা ছিলো,”সাম্প্রতিক ক্রম অবনতি‌পূর্ণ পরিস্থিতি যা ভারত-পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধের শুরু করে”প্রসংগে(S/10411)।কি সেই পরিস্থিতি যা নয় প্রতিনিধির মিটিং এর জন্য অনুরোধকে চিত্রায়িত করেছিলো?পাকিস্তানের পরিস্থিতি সিকিউরিটি কাউন্সিলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছিলো মহা সচিবের ২০ই জুলাইয়ের স্মৃতিকথা এবং আবার নভেম্বরেই সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যরা মহা সচিবের প্রেরিত তথ্যের ভিত্তিতে মিলিত হতে অসম্মতি জানান কারণ মহা সচিব তখন বস্তুত,যদিও প্রকাশ্যে নয়,সনদের ৯৯ তম অনুচ্ছেদের অধীনে কাজ চালাচ্ছিলেন।যেখানে,সনদে আর কোন বিধান নেই যার অধীনে মহাসচিব শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করছে এমন কোন পরিস্থিতি সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদের নজরে আনতে পারেন।যেই পরিস্থিতি নয় জন প্রতিনিধিকে চিঠি প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করেছিলো তাহলো পুরোদমে শুরু হয়ে যাওয়া ভারত-পাকিস্তানের মধ্যবর্তী শত্রুতা।আমি দাখিল করবো যে সিকিউরিটি কাউন্সিলের অবশ্যই এই ডকুমেন্টকে দৃঢ়ভাবে ব্যবহার করতে,এবং দূরদর্শী প্রভাবের মাধ্যমে নয়,কারণ এটা ভাবা হয়নি যে এটা সঠিক ভাবে পরিস্থিতিকে সামাল দিতে পারবে যখন বিভিন্ন পরিস্থিতি মহাসচিবের দ্বারা সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্যদের সামনে  আনা হয়।

চুড়ান্তভাবে,আমরা বিশ্বাস করি উদ্বাস্তু সমস্যাটি একটি মানবিক সমস্যা। উদ্বাস্তুদের সম্মান,জীবনের নিশ্চয়তা ও তাদের সম্পদের পুনঃসংরক্ষণের শর্তে মানবিক অভিগমনের ভিত্তিতে তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতৃক অনুরোধ করা যেকোন কিছু করতে রাজি।এবং এখন বলতে যে।উপ মহাদেশে এমন পরিস্থিতিতে,যখন যুদ্ধের শিখা ৭০০ মিলিয়ন মানুষকে হুমকি দেয়,তখন ভারতে থাকা উদ্বাস্তুদের অবশ্যই এমন এক ধরনের স্বীকৃতি সিকিউরিটী কাউন্সিলের ভেতরে ও বাইরে দিতে হবে  যা এমনই অভূতপূর্ব যে সিকিউরীটি কাউন্সিলকে এই কাজের ফলাফল নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা করতে হবে।আমি একটি আবেদন করবো যেন সিকিউরিটি কাউন্সিল সনদের মৌলিক নীতিগুলির প্রতি পূর্ণ সম্মান ও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করবে।এবং যদি কোন ভয়ংকর নিদর্শন স্থাপণ করতে হয়,তবে পাকিস্তানকে সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং জাতিসংঘের সাথে তার সহযোগিতাকে প্রকৃতই প্রশংসা করতে হবে।

.

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৪ ডিসেম্বর, ১১৯৭১

ভারতের প্রতিনিধি জনাব সমর সেনের বিবৃতি

ডিসেম্বর, ১৯৭১

আমি কাউন্সিলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এই গুরুত্বপূর্ন আলোচনায় ভারতকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য, কিন্তু তার আগে আমাকে একটা বিষয় পরিষ্কার জানানো উচিৎ যে আমরা চার্টারের আর্টিকেল ৩১ ধারায় এখানে উপস্থিত হইনি। আমরা এখানে উপস্থিত ধারা নং ৩৭ এবং ৩৮ অনুযায়ী। এই বিষয়টি আমাদের জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পর্কে আমি কিছুটা আলোকপাত করতে চাই।

২১ নভেম্বরের উপরে পাকিস্তানি রাস্ট্রদূতের দীর্ঘ বক্তব্য আমরা শুনেছি, এবং আমার মনে হয়েছে তিনি পূর্বের অনেক ঘটনায় বাদ দিয়ে গিয়েছেন। আমরা কোন সামরিক জান্তার প্রতিনিধিত্ব করছি না এবং কোন সামরিক খুঁটিনাটিতেও যেতে চাই না এই মুহূর্তে। কিন্তু তারপরেও আমি বলতে চাই যে আমাদের কোন নির্দিষ্ট তারিখের ঘটনা থেকে আলোচনা আরম্ভ করা উচিৎ নয়। বিয়োগান্তক এই ঘটনার পেছনের ইতিহাস বহুজনের মাধ্যমে জেনেছি আমরা কিন্তু আমি আজকের এজেন্ডায় থাকা সেক্রেটারি জেনারেলের রিপোর্ট থেকে কয়েকটি লাইন উদ্ধৃতি করতে চাই চাই। সেক্রেটারী জেনারেল  বলেনঃ

“৭. এই কারনে আমি সচরাচরের বাইরে গিয়ে সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করছি এমন একটি ব্যাপারে যা কাউন্সিলের এজেন্ডায় উপস্থিত নয়। বিষয়টির রাজনৈতিক ভাবে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী যে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সকল সদস্য উক্ত ব্যাপারে অবগত হবার আগে সেক্রেটারী জেনারেল কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ সুপারিশ করতে সক্ষম নন।  আমি বিশ্বাস করি জাতিসংঘের দীর্ঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের অভিজ্ঞতার আলোকে যত দ্রুত সম্ভব ঘটে যাওয়া এই মানবিকতা বিবর্জিত ঘটনা নিরসন এবং ভবিষ্যতে অবস্থার অধঃপতন থেকে পরিত্রানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিৎ।” (এস ১ ১)

অতএব, শুরুতেই আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি তা হলো আজকের আলোচ্য পরিস্থিতি কিংবা ঘটনার পিছনে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক এবং বাংলাদেশের জনগনের মধ্যের ইতিহাস। তাই বাংলাদেশের জনগনের প্রতিনিধি ব্যাতীত এই সমস্যার সম্যক ধারনা পাওয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত এই মানুষদের হয় শরনার্থী অথবা বিদ্রোহী হিসেবে অভিহিত করেছেন যেগুলোর কোনটাই তারা নয়। তারা ৭৫ মিলিয়ন মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধি। পূর্ব পাকিস্তানে কোন স্বাভাবিক অবস্থা কিংবা শান্তি কোনটাই বিদ্যমান নয় যার ফলশ্রুতি আমরা দেখতে পেয়েছি আগ্রাসনের পর আগ্রাসন। কাউন্সিল এবং উক্ত দেশের নেতৃবৃন্দ সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি সমাধানে আসতে হলে বাংলাদেশের প্রতিনিধির এখানে উপস্থিত থাকা আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।

পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ২১ নভেম্বর থেকে তার বক্তব্যের গল্প শুরু করেছেন। আমার হাতে কিছুক্ষন আগেই এসে সিকিউরিটি কাউন্সিলের ডকুমেন্ট এস/১০৪১২ এসে পৌঁছেছে যেটার অনুচ্ছেদ ৪ এ বলা হয়েছেঃ

” ৪. ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ জাতিসংঘ কর্তৃক নিযুক্ত সামরিক প্রদর্শকদের প্রধানের রিপোর্ট অনুযায়ী(পশ্চিম পাকিস্তানের লোকাল সময় অনুযায়ী)-

         ” (ক) ৩ ডিসেম্বর সামরিক সময় ১৭৪৫ শ্রীনগর বিমান ঘাঁটিতে বোমাবর্ষন।

          (খ) পুঞ্চে অবস্থিত জাতিসংঘের সামরিক পরিদর্শকদের ২০২০ এ পাঠানো রিপোর্টে বলা হয়েছে পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৯১০ এ ওই এলাকার সিজ ফায়ার লাইন অতিক্রম করেছে। ২১৪৫ এ পুনরায় পাঠানো রিপোর্টে পাকিস্তানি অংশে ভারতীয় বোমাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে, এবং ২২৫৬ এর রিপোর্টে বলা হয়েছে পুঞ্চ এলাকায় পাকিস্তানি আর্টিলারির বোমা বর্ষন করছে।

     (গ) ফিল্ড স্টেশন কোটলি থেকে ২১৪৫ এ পাঠানো রিপোর্টে পাকিস্তান থেকে ভারতের দিকে হাল্কা গুলি বর্ষনের খবর পাওয়া গেছে যা তখনও চলছিল।

      (ঘ) জম্মুতে অবস্থিত ফিল্ড স্টেশনের ২২৪৫ এ পাঠানো রিপোর্টে দুই পক্ষ হতেই ২২১৫ থেকে অনবরত ভারি গোলাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে।

      (ঙ) শিয়ালকোট ফিল্ড স্টেশনের ২২৫০ এর রিপোর্টে আসেপাশেই বোমাবর্ষনের খবর পাওয়া গেছে।

    (চ) রাজৌরিতে অবস্থিত ফিল্ড স্টেশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে স্থানীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে পুঞ্চ থেকে নওশেরা সিজ ফায়ার লাইনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।

      (ছ) প্রধান সামরিক পরিদর্শক সিজ ফায়ার লাইনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে বলে ধারনা করছেন এবং পরিদর্শকদের তাদের স্ব-স্ব ফিল্ড স্টেশনে অবস্থানের নির্দেশনা দিয়েছেন।”

অতএব বলা যেতে পারে যে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের দেয়া তথ্য পুরোপুরিভাবেই মিলিটারি অ্যাকশনের জন্য বানানো। তিনি প্রশ্ন রেখেছেন অধিক শক্তিশালী এবং অধিক জনবহুল ভারতের বিপক্ষে সামরিক ব্যাবস্থা গ্রহন পাকিস্তানের জন্য কেন প্রয়োজনীয়? উক্ত প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ। গত ২৩ বছরে একবারের জন্যও পাকিস্তান ভারতের মাধ্যমে কোনভাবেই আক্রান্ত হয়নি। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা তাদের জনগনকে যেভাবে খুশি শাসন করেছে এবং যখন সেই জনগন তারা কিধরনের সরকার চায় তার পক্ষে মনোভাব প্রকাশ করেছে তখন সেই সামরিক জান্তা জনগনের দাবিয়ে রাখার জন্য সামরিক অপারেশন আরম্ভ করেছে। তাই বলা যেতে পারে, ভারত কোনভাবেই পাকিস্তানকে বিভক্ত করছে না, পাকিস্তানই পাকিস্তানকে বিভক্ত করছে এবং তারই পরিক্রমায় আমাদেরকেও আক্রমন করছে।

সমস্যা প্রথম ধাপ ছিল যখন পাকিস্তানের গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফার ভিত্তিতে নির্বাচন করেন, তখন এমনকি পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের কাছ থেকেও একটা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তারা ছয় দফা মেনে নিয়েছিল এবং সেই অনুসারেই ভোট অনুষ্ঠিত হয়।  এবং ভোট গননার পর যখন জানা গেল শেখ মুজিবুর রহমানের দল ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন লাভ করেছে তখন পাকিস্তানের সামরিক জান্তার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? তারা তখন সর্বাত্মকভাবে নেগোশিয়েট করার চেষ্টা করে গেছে। এই সমঝোতা চেষ্টার ব্যাপারে কিছুই জানত না বহির্বিশ্ব যতক্ষন না ভুট্টো তাঁর বই প্রকাশ না করেন, যা এখন “দ্যা গ্রেট ট্রাজেডি” নামেই পরিচিত।

আমি এখন বইটি পড়ে কাউন্সিলকে ক্লান্ত হতে বলব না, তবে বইটি দেখাতে সক্ষম পূর্ব পাকিস্তানকে জোড়পূর্বক বশে রাখতে কি কি করা হয়েছিল। আমরা বারংবার জাতিসংঘের সদস্যদের দ্বিপাক্ষিকভাবে এবং বিভিন্ন জাতিসংঘের ফোরামে বলেছি যে ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাখা সম্বব না। তখন কি কেউ শুনেছিল?

সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে কাউন্সিল উদ্বেগ প্রকাশ করায় আমরা কৃতজ্ঞ; কিন্তু অগুনতি পুরুষ, মহিলা এবং শিশু নির্দয় ভাবে যখন হত্যা এবং ধর্ষন করা হয়েছে তখন কেউ কোণ পদক্ষেপ গ্রহন করেনি সেটাই অত্যন্ত বিস্ময়কর এবং গভীর পরিতাপের বিষয়। আলোচ্য সমস্যার সঠিক সমধান করতে চাইলে আমরা পেছনের ঘটনা কোনভাবেই ভুলে যেতে পারি না।

নির্বাচনের পরে যে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী বলা হচ্ছিল তিনি আজ জেলে পঁচছেন। কেউ জানেনা তাঁর বর্তমানে কি অবস্থা। আমার সাথে এমন একজন পুরুষ-মহিলা কিংবা শিশুর দেখা হয়নি যে কিনা এখানে এসে বলতে পারবে, “আমি মুজিবুর রহমানকে স্বশরীরে দেখেছি।” তারপরে সামরিক বাহিনী এমনভাবে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে যা সমগ্র মানবজাতির বিবেককে ধাক্কা দিতে বাদ্ধ। গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, খুন হয়েছে শিশু-ধর্ষিত হয়েছে নারী। যারা এই ঘটনাবলীর ভিডিও দেখেছেন তারা সাক্ষ্য দিতে সক্ষম এগুলোর।

পাকিস্তান অনেক বড় ট্রাজেডির সম্মুখীন হয়েছে বলে কেবল সমব্যাথী হয়ে এবং পরবর্তীতে ভুলে গেলে চলবে না। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং যার ফলশ্রুতিতে ১০ মিলিয়ন মানুষ ভারতে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে।

এটা কি আগ্রাসন নয়? যদি অন্য দেশের প্রতি আগ্রাসনের মানে হয় সেটা সেই দেশের সামাজিক সাম্যাবস্থায় আঘাত করে, অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে, শরনার্থীদের যায়গা দেয়ার জন্য নিজেদের যায়গা ছেড়ে দিতে হয়,  স্কুল-হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়, সরকারী কার্যক্রম থেমে যায় তাহলে সেই আগ্রাসন আর যুদ্ধ ঘোষনা করে আগ্রাসনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কিন্তু সেখানেই শেষ নয়, পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত বলেছেন আমরা ২১ নভেম্বরের পর থেকে পাকিস্তানী টেরিটোরিতে প্রবেশ করেছি। হ্যা করেছি, আমি অস্বীকার করব না।

আমরা প্রবেশ করেছি কারন আমাদের আর কোন উপায় ছিল না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের কামান ফ্রন্টলাইনে স্থাপন করে আমাদের বেসামরিক গ্রামে বোমাবর্ষন শুরু করে। তারা তাদের নিজেদের মানুষ হত্যা করে অভ্যস্ত যা আমার মতে একটি বর্বরোচিত ব্যাপার।  নিজেদের জনগন হত্যা করার পর তারা এখন আমাদের দিকে বন্দুক তাক করেছে। ২৫ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮৯০ বর্ডার ভায়োলেশনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সেগুলোর জবাব কি দিয়েছে তারা? সব অভিযোগই প্রত্যাখান করেছে তারা। তারা আমাদের গ্রামে বোমাবর্ষন চালিয়ে গিয়েছে, হত্যা করেছে আমাদের বেসামরিক জনগন। প্রতিকার হিসেবে আমাদের হাতে কি ছিল? তাদের গ্রামের উপর বোমা বর্ষন অথবা সৈন্য পাঠিয়ে তাদের কামান ধ্বংস করা? আমরা বেসামরিক জনগনকে রক্ষা করতে দ্বিতীয়টি বেছে নেই।

পাকিস্তান তাদের বাগাড়ম্বরপূর্ণ বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা কোন সামরিক পদক্ষেপ নেয়নি, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সৈন্য ফিরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা কি বলে? পাকিস্তান ভারতের অনেক আগেই তাদের সৈন্য ফ্রন্টিয়ারে পাঠিয়েছে। আমরা জবাব দিয়েছে আমাদের সৈন্য ফ্রন্টিয়ারে পাঠিয়ে। ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ এ পাকিস্তান জরুরী অবস্থা ঘোষনা করে, যেটা ভারত ঘোষনা করে ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ।  পাকিস্তান পুরপুরি “ভারত দখল” মনোভাব নিয়ে যুদ্ধংদেহী ক্যাম্পেইন চালু করে। জবাব হিসেবে আমরা বলেছি আমরা যুদ্ধে যাব না, আমরা যুদ্ধ করব না; কিন্তু যদি কেউ যুদ্ধ শুরু করে আমরা প্রতিরক্ষা করব।

প্রশ্ন হচ্ছেঃ পাকিস্তান এগুলো কি উদ্দেশ্যে করছে? আমি আগেও বলেছি, উত্তর খুবই সরল; কিন্তু আমাকে ছোট পটভূমির অবতারনা করতে হবে সেজন্য। তাদের ভাষায় বাঙ্গালী বিদ্রোহ, যেটাকে আমরা বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধ বলে থাকি, দমন করতে পুরপুরি ব্যার্থ হওয়ার পর সংকটকে ন্যায্যতা দিতে তারা এই নাটকের অবতারনা করেছে। এমনকি তারা ভারতের সাহায্যও চেয়েছে বাঙ্গালীদের দমন করার জন্য। অন্যভাবে বললে আমাদেরকে তাদের অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে তাদের বর্বরোচিত কর্মকান্ডের। অবশ্যই আমরা প্রত্যাখ্যান করেছি, আমরা এখনো প্রত্যাখ্যান করছি।

তারপর থেকে অনেক চিৎকার চেচামেচি হয়েছে এই সমস্যাকে আন্তর্জাতিকিকরণের জন্যঃ অনেক কূটনৈতিক পদক্ষেপ, জাতিসংঘের ভেতরে অনেক কিছু, পরিদর্শকের প্রস্তাব প্রদানের মাধ্যমে ইত্যাদি ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ হিসেবে চালানোর জন্য। যেই মুহূর্তে এই দ্বন্ধ ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ হিসেবে রূপ পাবে, সেই মুহূর্তে সবাই ভুলে যাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে কি করছে। তারা গ্রাম জ্বালানো, ধর্ষন সবকিছুই চালিয়ে যাবে আর সবাই বলবে এটা একটা ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্ধ। বিষয়টা খুবই অস্বাভাবাবিক যে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপে গ্রহন যখন খুবই জরুরী তখন তার পটভূমিই সবাই ভুলে গেছে।

আমাদের এখানে তিন-চারটি প্রধান ফ্যাক্টর আছে যেগুলোর কোনটাই নিরাপত্তা কাউন্সিল বিবেচনায় নেয় নি। গনহত্যার ব্যাপার্টিতে কি হল? জাতিসংঘ কি কোন পদক্ষেপ নিয়েছে সে ব্যাপারে। গনতন্ত্রের পরিপূর্ণ বিলোপের ব্যাপারে জাতিসংঘ কিভাবে জবাব দিয়েছে? লক্ষ লক্ষ গৃহ থেকে বিতাড়িত শরনার্থী যারা এখন ভারতের বোঝা তাদের কি হবে? কোন সমাধান কি বের হয়েছে? এই অবস্থায় পৌঁছানোর পরে অসংখ্য আপিল করা হয়েছে। “স্বাভাবিক” পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করার জন্য তাদের প্রতি অস্বাভাবিক সব বিবৃতি দেয়া হয়। স্বাভাবিক অবস্থা কতটুকু ফিরে এসেছে সেটা বোঝার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের রিলিফ প্রোগ্রামের দিকে তাকালেই হবে। বারংবার আশ্বাস দেয়া হয়েছে রিলিফের ট্রাক-নৌকা কোন যানবাহনই আর্মি ব্যাবহার করবে না। কিন্তু বারবার একই ঘটনা ঘটেছে, যাদের জন্য রিলিফ প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল তাদের কাছেই ত্রান পৌছাতে পারেনা। কয়েকদিন আগেই জনাব পল-মার্ক হেনরি তৃতীয় কমিটির কাছে ব্যাখ্যা করেছেন ত্রান কার্যক্রম প্রায় অসম্ভব সে ব্যাপারে।  অতএব বলা যেতে সেখানে কোন স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে না, বিরাজ করছে কেবল হত্যাযজ্ঞ।  এই হত্যাযজ্ঞের ফলশ্রুতি আমাদের দেশে আরো মানুষ আসছে।

শরনার্থীদের ফেরত নেবার ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। কৌতুহলদ্দীপক ব্যাপার হচ্ছে যদি পাকিস্তানে স্বাভাবিক, স্বররগীয় অবস্থাই বিরাজ করে তাহলে কেন এখনো শরনার্থী আসছে ভারতে? তারা আসছে কারন তাদেরকে সেখানে হত্যা করা হচ্ছে। এবং আমাদের পক্ষে আরো শরনার্থী গ্রহন করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে। আমরা আন্তর্জাতিক কম্যুনিটিকি বারবার বলেছি যে আমরা আমাদের ক্ষমতার প্রায় শেষ সীমায় পৌঁছে গেছি। প্রতিদিন শরনার্থীদের পিছনে ৩ মিলিয়ন খরচ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না।  তারপরেও তারা আসছে- এমন না যে এটা ভেবে যে আমরা তাদের খুব ভালো দেখভাল করছি ; বরং আমাদের সীমিত সম্পদের মাধ্যমে আমরা তাদের বলতে গেলে দেখভালই করতে পারছি না। শরনার্থী ক্যাম্পের পয়ঃনিষ্কাশন এবং অন্যান্য সুবিধাদি অপ্রতুল, শরনার্থীরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। এতকিছুর পরেও তারা আসছে। কেউই তার নিজের বাড়িঘর ছেড়ে এধরনের অবস্থায় থাকতে চায় না যদি বাধ্য না হয়। এবং সেই কারন হচ্ছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা, ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মানবিক অধিকার অস্বীকার করা , এবং ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে একটি কলোনিয়াল শাষনের অধিনে রাখা যা পাকিস্তানি শোষকরা রেখে এসেছে গত ২৩ বছর ধরে। আমার কাছে সব তথ্য-উপাত্ত আছে এখানে। আমি একটি পরিপুর্ন রিপোর্ট দাখিল করব সেগুলোর উপর ভিত্তি করে। পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে তা হচ্ছে পরিপূর্ণ অধীনতা, পরিপূর্ন সামরিক বর্বরতা এবং এসবের বিরুদ্ধেই জনগন প্রতিবাদ করেছে।

একটি বৈপ্লবিক মতবাদের ব্যাপারে আমরা অনেক কিছুই শুনে থাকিঃ জনতার অধিকার। আমার জানা নেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর, এবং যেটা বাংলাদেশ অবশ্যই হবে এই বিপ্লব কিরূপ থাকবে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই, ভারত বাংলাদেশকে সহায়তা করছে সেই কারনে নয়- বাংলাদেশ স্বাধীন হবে কারন ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। পাকিস্তান সরকরা সবকিছুই চেষ্টা করেছে। তারা সামরিক ভাবে চেষ্টা করেছে, চেষ্টা করেছে কল্পিত প্রশাসন। এমনকি তারা ভুতূড়ে নির্বাচনও করেছে। বুলেটিন, ঘোষনা কোনকিছুতেই কোন কাজ হয়নি।

এখন সিকিউরিটি কাউন্সিলের মিটিং এ আমাদের গেলানো হচ্ছে পাকিস্তান ভাঙ্গা ভারতেরই দুরভিসন্ধি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। যেই স্বার্থ হচ্ছে নিজেরা পরাশক্তিতে পরিনত হওয়া। তারা নিজেরাই নিজেদের ভাঙ্গনের জন্য দায়ী এবং ফলাফল ভোগ করছি আমরা।

এখন একমাত্র প্রশ্ন হচ্ছেঃ কিভাবে আমরা এই সমস্যার সমাধান করব? আমরা আজ পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্য শুনিনি, আমরা শুনেছি অর্ধেক-পাকিস্তানের প্রতিনিধির বক্তব্য। অপর অংশের প্রতিনিধিরা কোথাও অপেক্ষা করছে ডাক পাওয়ার জন্য। যদি সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটা না করে তাহলে অবস্থার উন্নতিতো হবেই না বরং আরো অবনতি হবে।

যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে অনেক কিছুই বলা হচ্ছে। আমি কয়েকটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে চোখ বুলিয়েছি। কাদের মধ্যে যুদ্ধবিরতি? আমাদের কি যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ছেড়ে দেয়া উচিৎ যাতে তারা ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য যায়গায় বেসামরিক মানুষদের হত্যা করতে পারে? এইধরনের যুদ্ধবিরতিই কি আমরা আশা করছি? সৈনিকদের কি তাদের বিশ্বাসের উপরে ভিত্তি করে যুদ্ধ এবং মৃত্যুবরণ করা উচিৎ, হোক সেটা মানবসভ্যতার জন্য কিংবা অন্ধকারের জন্য নাকি তাদেরকে এই বিশেষ কাজের প্রতিজ্ঞা থেকে মুক্তি দেয়া উচিৎ যে প্রতিজ্ঞায় তাদেরকে ১৯, ১৭, ১৫, ১৩, ১১ এমনকি এর থেকেও কমবয়সী মেয়েদের হত্যা ও ধর্ষন করতে যেতে বলে?

আমি গ্যালারী থেকে বেশ কিছু হাস্যকর মন্তব্য শুনতে পেয়েছি। হয়তো আমাদের অনেকেরই এটাকে কৌতুককর লাগতে পারে, কিন্তু এখানে কৌতুকের কিছুই নেই। হয়তো এর পেছনে পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের হাত রয়েছে, ধন্যবাদ।

নারীদের ধর্ষনের মধ্যে আমি কৌতুকের কিছুই দেখি না। এবং সেই ধর্ষন লালসা থেকে নয়, বরং এই ধর্ষন মানুষের মনোবল ভেঙ্গে দেবারই একটি প্রচেষ্টা। আমাদের অঞ্চলে একজন ধর্ষিতা নারীর অনেক ধরনের সামাজিক সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, নাটকীয়ভাবে বললে বলা যায় যে ধর্ষনের থেকে মৃত্যুবরনই শ্রেয়। পাকিস্তানি আর্মি সেটা জানে এবং এই ধর্ষন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মনোবল গুঁড়িয়ে দেবার জন্য একটি পরিকল্পিত পন্থা পাকিস্তান আর্মির।

পাকিস্তান নিজেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির উপায় কি? এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ভারতকে জড়ানো, যা ইতোমধ্যেই করা হয়েছে। প্রথমে শরনার্থীদের সমস্যার মাধ্যমে এবং পরবর্তী সামরিক আগ্রাসনের দ্বারা। পাকিস্তানের দ্বারা আমরা চারবার আক্রান্ত হয়েছি এবং আমরা আর সহ্য করব না। আমি সিকিউরিটি কাউন্সিলকে হুঁশিয়ার করে বলতে চাই আমরা এমন কোন সমাধানের অংশ হব না যার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন নিপীড়িত হবে, তা সে যেপ্রকার সমাধানই হোক না কেন। আমাদের মধ্যে যতক্ষন পর্যন্ত সভ্যতার আলো বিদ্যমান আমাদের উচিৎ তাদের রক্ষা করা। আমরা তাদের যুদ্ধ করব না, অন্যের যুদ্ধ কেউ নিজে করতে পারনা। এই টেবিলেই অনেক পরাশক্তি বিদ্যমান যারা নিজেদের মাধ্যমেই আবিষ্কার করেছেন যে অন্যের যুদ্ধ করা সম্ভব নয়, নিজেদের যুদ্ধ নিজেদেরকেই করতে হয়। কিন্তু আমাদের পক্ষে যেধরনের সাহায্য করা সম্ভব হোক সেটা শরনার্থীদের সাহায্য কিংবা চিকিৎসাসেবা বা অন্যকোনভাবে আমরা সেটা চালিয়ে যাবো। দ্বিতীয়ত আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সবকিছুই করব। পাকিস্তান যদি মনে করে তারা আমাদের গ্রামে বোমা বর্ষন করবে, অভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাকগলানোর অভিযোগ আনবে অথবা ফ্রন্টলাইন অতিক্রম করে যাবে এবং আমরা চুপ করে থাকবো তাহলে তাদের উচিৎ দ্বিতীয়বার চিন্তা করা। আমরা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা আমাদের জীবনযাত্রার নিরাপত্তায় হানিকারক কোনকিছুকেই বরদাস্ত করব না এই ব্যাপারে কোনরূপ সন্দেহের অবকাশ নেই।

আমি আরো একটা ব্যাপার পরিষ্কার করতে চাই, সামরিক এই আক্রমনের সাথে অদ্ভুত কিছু বিবৃতিও প্রদান করা হয়েছে। পাকিস্তান এখন এসে বলছে হাতে হাত মিলিয়ে বন্ধু হয়ে যেতে। তারপরেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্যারিসের ল্যে মনেতে ভাষনে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামে অকথ্য সব কথা বলেছেন, যার কোনটাই আমি মুখে আনতে অক্ষম। এইসব মানুষদের সাথেই আমরা আলোচনা করছি যাদের না আছে কোন সভ্য ব্যাবহার না আছে কোন রাজনৈতীক জ্ঞান।

পাকিস্তান বলছে, “আমরা পরিদর্শক চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছি, আমরা সৈন্য সরাবার প্রস্তাব দিয়েছি” ইত্যাদি ইত্যাদি। প্রথমেই কেন এই সমস্যা তৈরী করা হল এবং তারপরেই কেন এসব প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে? কিন্তু যে ব্যাপারে তারা কিছু করতে পারত সে ব্যাপারে তারা টুঁ শব্দটি পর্যন্ত করেনি। তারা নির্বাচিত নেতাদের সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় আসতে পারত যা হত শান্তিপূর্ন। কিন্তু না, সেটা তারা করেনি। আমাদের বন্ধুরা বলছেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের উপর রাজনৈতিক সমঝোতাত জন্য বিভিন্ন রকম প্রেশার তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু তার ফলাফল কি? শূন্য, একেবারেই শূন্য। সম্ভবত জেনারেল সাহেব অন্য জেনারেলদের কথায় কান দেন না।

পাকিস্তানের হাতে এই মুহূর্তে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই, যেটা তারা করছে ইতোমধ্যে। প্রথমে পূর্বফ্রন্টে আমাদের আমাদের গ্রামগুলোতে বোমাবর্ষন করে এবং পরবর্তীতে পশ্চিমফ্রন্টে আমাদের শহরগুলোতে বিমান আক্রমন করে দ্বিতীয় রাতের মধ্যেই। পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত বলেছেন তারা কেবল ফ্রন্টিয়ারের কাছাকাছি কয়েকটা শহর এবং গ্রামে বোমা বর্ষন করেছেন। কিন্তু তারা ৩০০ মাইল ভিতরে আগ্রা পর্যন্ত আক্রমন করেছে।

এটা কি ভারতের উপরে করা পূর্বপরিকল্পিত সামরিক আক্রমন? ভারতের প্রধানমন্ত্রী যখন কলকাতায় গিয়েছিলেন শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শনে, তখন কি তিনি পাকিস্তান আক্রমনের পরিকল্পনা করেছিলেন? যদি সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটা বিশ্বাস করে, তাহলে সেটা তারা বিশ্বাস করতে পারে। কিন্তু আমি আবারো হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে নিজেদের এলাকা, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং মানবিকতা রক্ষার্থে কোনকিছুই আমাদের বাধা হয়ে দাড়াতে পারবে না।

আশা করছি খুব বেশি সময় না নিয়ে পাকিস্তানি রাষ্টদূতের বক্তব্যের প্রতিউত্তর দিতে সক্ষম হব, এবং আশা করছি জানতে পারব সিকিউরিটি কাউন্সিল এবং অন্যদের কি বলার আছে আমি আগামীবার হাজির হবার আগে। আমার মূখ্য উদ্দেশ্য সবাইকে জানানো যে সামরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক যেকোন প্রকার দ্বন্ধে অবতীর্ন  দুই দল হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তান-পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ যারা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিল সামরিক বাহিনীর পরিপূর্ন সম্মতিতেই।

বিস্ময়করভাবে জনাব ভুট্টো বলেন সামরিক বাহিনীর পূর্ন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তৈরীর পর তারা সাহস করতে পারেনি সংবিধান বাতিলের। যদি এধরনের কোন অনুরোধ হয়েও থাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার পক্ষে সেটা প্রত্যাখ্যান করা অত্যন্ত কঠিন।

অতএব দ্বন্ধ ছাড়া কোন বিকল্প পথ খোলা ছিল না। এবং কিভাবে সেটা গ্রহন করা হয়েছিল? ঢাকায় আপসের জন্য যখন আলোচনা চলছিল সেই মুহুর্তেই পাকিস্তান আর্মি তাদের শক্তিবৃদ্ধি করছিল পূর্ব পাকিস্তানে। আজকে আমাদের বলা হয়েছে যে বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছিল সেটি করেছিল ভারতীয় এজেন্টরা। যদি ভারতীয় এজেন্টরাই বিমানটি হাইজ্যাক করে থাকে তাহলে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমান, লাহোরের রাস্তায় প্যারেড কি উদ্দেশ্যে হয়েছিল দেশব্যাপী সম্প্রচার হয়েছিল যেন এটা কোন সভ্য সমাজের গর্বিত হবার মত ঘটনা? যদি কেউ পাকিস্তানকে চিনে থাকে এবং আমি অল্পবিস্তর চিনি, তাহলে বলতে হবে সরকারী মদত ছাড়া এসব কিছুই সম্ভব না।

আমাদেরকে বলা হচ্ছে গনহত্যা জরুরী ছিল কারন ২৫ মার্চের আগে কিছু একটা ঘটেছিল। যদি কিছু ঘটেই থাকে তাহলে পৃথিবী সে সম্পর্কে জানেনা। পঁয়ত্রিশজন বিদেশী সংবাদদাতাকে ২৮ তারিখ রাতে জড়ো করা হয় লাহোর এবং ঢাকার হোটেলগুলো থেকে। তারা সেখানে থেকে কিছুই লিখতে পারেননি। তারা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিহিংসার ভয় পাননি। আসলে এধরনের কিছুই হয়নি। এধরনের অনেক প্রোপাগান্ডাই পাকিস্তান তৈরী করেছে গত নয়মাসে।

গত নয় মাস ধরে পূর্ব বাংলার অস্ত্রহীন প্রতিরক্ষাহীন মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তান প্রত্যক্ষভাবে এজন্য দায়ী নয়, এজন্য দায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং গুজব আছে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগন অল্পবিস্তর যে খবর পাচ্ছে তাতে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের এসব বিশ্বাসের ইচ্ছা খুব বেশি নেই, তারা ভদ্রলোক। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে সেনাবাহিনী নিয়ে তারা এত গর্বিত সেই সেনাবাহিনী গনহত্যা, ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে দমন করার মত বর্বরোচিত নীচ কাজ করতে সক্ষম।

জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলি অনুযায়ী কখন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলকে স্বশাসিত হিসেবে স্বীকার করা যাবেনা তার কিছু নির্দিষ্ট নির্নায়ক রয়েছে। আমরা যদি সেই নির্ণায়কগুলি গ্রহন করি এবং আমাদের যদি আরেকটি বেশি নৈতিকতা থাকে তাহলে আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে অস্বশাসিত এলাকা হিসেবে ঘোষনা করতে পারি। আমরা খুশি যে এই ব্যাপারটিতে আমাদের পূর্ব বাংলার জনগনকে তাদের দুর্দশা থেকে মুক্ত করা ব্যাতীত আর কোন উদ্দেশ্য নেই।  যদি সেটা অপরাধ হয় তবে সিকিউরিটি কাউন্সিল সেটার বিচার করতে পারে।  কিন্তু আজকের প্রস্তাবগুলো অনুযায়ী যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ভারতকে সেই অন্যায়ের সহযোগী হতে বলা হয় তাহলে আমরা একবাক্যে বলব “না”। আমাদের সংকল্প থেকে আমাদের কেউ বিচ্যুত করতে পারবে না এইসব উপদেশ আর সমাধানের প্রস্তাব করে। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের প্রশ্ন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে না যেটা আমি আগেও বলেছি, যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব হওয়া উচিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী এবং বাংলাদেশের জনগনের মধ্যে। অতএব বিতর্কের আরো গভীরে যাওয়ার আগে আমাদের উচিৎ তাদের কি বলার আছে সেটা শোনা।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!