শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সামাজিক সমিতির আলোচ্য সূচী ৫ (ক)ঃ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন- এর উপর জাতিসংঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেনার বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১২ মে, ১৯৭১ |
জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সামাজিক সমিতির আলোচ্য সূচী ৫(ক):মানাবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনের উপর জাতিসঙ্ঘে নিযুক্ত ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সমর সেনের বিবৃতি।/ সূত্র:জাতিসঙ্ঘ ডকুমেন্টস্ তারিখ/১২ মে,১৯৭১।
জনাব চেয়ারম্যান, আমার প্রতিনিধি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য উপযুক্ত মনে করছেন।কমিশনের চলতি রিপোর্ট স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে,মানবাধিকার রক্ষার সমস্যাটি এখনো একটি গুরুতর বিষয়।প্রকৃতপক্ষে,সাধারণ পরিষদের ২৫তম অধিবেশনে গৃহীত ‘স্মারক ঘোষণা’ররিপোর্টের ৮ নং প্যারায় এ বিষয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশিত হয়েছে।প্রাসঙ্গিক বাক্য বলা হয়েছে,”যদিও কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েঝে,তারপরও বিশ্বের বিভিন্ন অংশের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে চলেছে।এই লঙ্ঘনের প্রতিটি কারণ দূর করার মাধ্যমে,জাতি-বর্ণ-লিঙ্গ-ভাষা-ধর্ম নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের সম্মান বৈশ্বিকভাবে উন্নীত করার মাধ্যমে এবং নির্দিষ্টভাবে চার্টার অনুযায়ী জাতিসঙ্ঘের সকল সুযোগ সুবিধার ব্যাপক ব্যবহার করে সকল মানবাধিকার এবং মানুষের মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমাদের চলমান এবং সুনির্দিষ্ট যুদ্ধের অঙ্গীকার করছি।” এই চার্টারের ১(৩),৫৫(গ), এবং ৫৬ নং অনুচ্ছেদে মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে।১৯৬৮ সালে যা মানবাধিকারের জন্য আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসেবে ঘোষিত হয়েছিলো,জাতিসঙ্ঘ ‘Human Rights,A Compilation Of International Instruments Of The UN’- শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেছিলো।এই পুস্তিকার শেষ পৃষ্ঠায় মানবাধিকানের বিষয়ে সম্পর্কযুক্ত ৩৪টি উপাদানের একটি তালিকা দেয়া হয়।এছাড়া বিগত ৩ বছরে আরো অনেক দলিল,ঘোষণা,রেজ্যুলুশন গৃহীত হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ আমি উল্লেখ করছি ১৯৬৯ সালে গৃহীত সামাজিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন ঘোষণা,২৫তম অধিবেশনের ঘোষণা যা ইতোমদ্যে উল্লেখিত,জাতিসঙ্ঘের চার্টার অনুযায়ী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতার বিষয়ে আন্তর্জাতিক আইনের মূলনীতি ঘোষণা-এ সবগুলোই মাত্র ৬ মাস আগে গৃহীত হয়েছে।এছাড়াও তেহরান ঘোষণাও প্রাসঙ্গিক।১৯৪১ সালের জেনেভা কনভেনশনও যুদ্ধের সময় সিভিলিয়ানদের রক্ষার সাথে সম্পর্কিত।সশস্ত্রযুদ্ধে মানবাধিকার প্রশ্নে গত বছর সাধারণ পরিষদে চারটি রেজ্যুলুশন গৃহীত হয়-২৬৭৪,২৬৭৫,২৬৭৬,২৬৭৭।ভারত মানবাধিকার কমিশনের সদস্য হয়েছে এবং কমিশন ও জাতিসঙ্ঘের অন্য ফোরামে বৃহৎ ও সংঘটিত উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তাদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে।এ বিষয়ে অধিকাংশ উদাহরণ উধৃত করছি-
মে,১৯৬৮ সালে তেহরান ঘোষণার ৫ নম্বর প্যারায় বলা হয়েছে- “মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় জাতিসঙ্ঘের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের সবোচ্চ স্বাধীনতা এবং সম্মানের মাধ্যমে তা অর্জন করা।এ বিষয়টি উপলব্ধি করে প্রত্যেক দেশের আইন প্রত্যেকের জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ-রাজনৈতিক বিশ্বস নির্বিশেষে মত প্রকাশের,তথ্যের,বিবেকের,ধর্মের স্বাধীনতা এবং দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক,সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক জীবনে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করে গৃহীত হওয়া উচিত।” এজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভিন্ন রাষ্ট্রের দায়িত্বের লঙ্ঘনগুলো তদারকি করার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে নচেৎ মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা সম্বন্ধে আমরা যা বলেছি তা উপহাসে পরিণত হবে।এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন ফোরামে প্রকাশিত হয়েছে এবং আমি এটা দেখে খুশি যে পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ প্রতিনিধি দূত আগা শাহীকে দেখে যিনি কলোনিয়াল আফ্রিকা এবং প্যালেস্টাইনের মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে সামাজিক কমিটির মিটিঙে ২০মে,১৯৭০ তারিখে বক্তব্য রাখেন- “…সেখানে এমন কিছু পরিস্থিতি হয়েছে যে মারাত্মক পর্যায়ে মানাবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা চলছে যার জন্য নিরীক্ষা,তদন্ত এবং রিপোর্ট প্রদানের জন্য আহ্বান জানাই যদি মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের বাধ্যতামূলক দায়িত্বের চরিত্রের তদ্রুপ না হয় তাহলে বিষয়টি উপহাসমূলক এবং একাডেমিক বিতর্কে পরিণত হবে।” এ প্রসঙ্গে এবং গভীর যন্ত্রণার সাথে ভারত সরকার লক্ষাধিক মানুষের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের চলমান উদাহরণে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চায়।আপনাদের নজরে আনার পূর্বে প্রথমেই আমার দেশের দ্রুত মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন এই লক্ষাদিক মানুষের জন্য যারা ক্রমবর্ধমান শরাণার্থী হিসেবে ভারতে প্রবেশ করছে।এই সমস্যাটি এমন অনুপাতে বেড়েছে এবং এই মানুষগুলোর দূর্দশা এতবেশি যে তা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয় না হলে উপায় নেই।এই মর্মান্তিক মানবিক সমস্যা বুঝতে হলে এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।এটি বিশ্ব সম্প্রদায়কে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে তার তারিফ করতে এবং যদি দূর করা নাও যায় অন্তত এই লক্ষাধিক মানুষের দূর্দশা কমানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সম্ভবপর করবে। পাকিস্তান সরকার মানবাধিকার বিষয়ে অধিকাংশ ঘোষণা,রেজ্যুলুশন এবং কনভেনশন গ্রহণ অথবা সমর্থন করেছে এবং এটা অবশ্যই বিশ্ব সম্প্রদায়ের গভীর উদ্বেগের বিষয় যে সাম্প্রতিক সপ্তাহে এই আন্তর্জাতিক দায়িত্বগুলো ছিন্ন করে পূর্ব বাংলা ভয়াবহ সামরিক আক্রমণ চালানো হচ্ছে।এই অবস্থায় যে দূর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি সেখানে চলছে এর গভীরতা ও ব্যাপকতা বিশ্লেষণ করার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।কারণগুলো সুপরিচিত এবং প্রকৃতপক্ষে বছরের পর বছর ধরে চলে আসা দূর্দশা-বৈষম্য এবং পুঞ্জীভূত হতাশা থেকে তাদের এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির সৃষ্টি।
এই হতাশা এবং অবিচার যা তাদের দ্বারা সংঘটিত তা সকল দলিলের লঙ্ঘন করতে পারে।পূর্ব বাংলায় এই ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড আমি উধৃত করছি।এ বছর মার্চের শেষ দিকে আমাদের আশা ছিলো পূর্ব বাংলার মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার প্রকাশকে বিবেচনা করে এই মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা দূর করা হবে।কিন্তু সমগ্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পাল্টে গেল এবং সকল রাজনৈতিক কর্মকাণাড অপনোদন করতে সামরিক বাহিনী নামানো হয়।একটি সম্প্রচারিত বিবৃতিতে ২৬মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন- “আমি সারাদেশের সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।এজন্য আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো।আমি সংবাদমাধ্যমে সম্পূর্ণ সেন্সরশিপ প্রদানের সিদ্দান্ত নিয়েছি।এই সিদ্ধান্ন্ত বাস্তবায়নের জন্য মার্শাল ল’ এর আওয়াতধীন করে ইস্যু করা হলো।” এ প্রসঙ্গে আমি কমিটির দৃষ্টি আকর্সণ করতে চাই মানবাধিকার ঘোষণার প্রতি যা পাকিস্তান কর্তৃক সম্পূর্ণ গৃহীত তার তিন নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রত্যেকের বাঁচার,স্বাধীনতার এবং নিরাপত্তার অধিকার আছে।”৫ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-“কাউকে নির্যাতন,নির্মম অত্যাচার,অমানবিক বা দমনমূলক শাস্ত দেয়া যাবে না।”আন্তর্জাতিকক সংবাদমাধ্যমে যে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে তাতে পরিশেষে এটাই প্রমাণিত হয় যে সকল অধিকারকে বিদ্রুপ করা হয়েছে।অনুচ্ছেদ-৭,৮,৯,১২,১৩,১৭,১৮,১৯,২০,২১ ও একই ভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।জনাব চেয়ার ম্যান মানাবাধিকার বিষয়ক যেকোনো দলিল নির্বাচন করুন,যেখানে পাকিস্তানের সমর্থন আছে বিভিন্ন মাত্রায় এবং কোনো বিতর্ক ছাড়াই বলা যায় যে সকল মূলনীতি ভাঙা হয়েছে। বিভিন্ন জাতি এবং সাস্কৃতিক পরিমণ্ডলের পূর্ব বাংলার মানুষের জীবন ও সম্পদের উপর নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মিরা যা ৯ ডিসেম্বর ১৯৪৮ এ প্রস্তাবিত ও স্বাক্ষরিত কনভেশনের ২ নম্বর অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।(Resolution 260A(III))।পাকিস্তান কনভেনশনের সদস্য।অনুরূপভাবে ঘোষিত মার্শাল ল’ অার সাথে মৃত্যু পরোয়ানাদিয়েছে যা জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক মৌলিক বলে স্বীকৃত সেসব স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে দমন করা হচ্ছে। ১২ অাগস্ট,১৯৬৯এ জেনেভা কনভেশনের ৩ নম্বর আর্টিকেল যা সিভিলিয়ানদের যুদ্ধাবস্থায় নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে তাও এখানে মানা হয় নি।এটি সুনির্দিষ্টভাবে প্রতিটি মানুষের জীবনহানি,হত্যাকাণ্ড,অঙ্গহানি,নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অমানবিক ও দমনমূলক পন্থা অসম্মানজনক আচরণের মাধ্যমে অত্যাচার নিষেধ করা হয়েছে।একটি সাংবিধানিক আদালত যা সকল বিচারিক নিশ্চয়তা প্রদানে সমর্থ হয় যেটি সিভিলিয়ানদের জন্য অপরিহার্য-তার আদেশ ছাড়া কোনো ফাঁসির হুকুম এবং কার্যকর করার বিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।এটা খুব আশ্চর্যের বিষয় যে,পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টের আপীল/অনুরোধ/আহ্বান নূন্যতম গুরুত্বই দেয় নি।আমি তাদের টেলিগ্রমাটি পড়তে চাই।২ এপ্রিল,১৯৭১ টেলিগ্রামে বলা হয়েছে-
“ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনাপ্রবাহে গভীেভাবে উদ্বগ্ন।মৃত্যুহার কমানো এবং রাজনৈতিত বন্দীদের বিচারে আইনের সঠিক ও সংযমী ব্যবহার করার সম্ভবপর সব চেষ্টা গ্রহণের অনুরোধ করা হচ্ছে।” ১৫ এপ্রিলের টেলিগ্রামে বলা হয়েছে- “২রা এপ্রিলের টেলিগ্রামের পর ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের জন্য বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগের রিপোর্টে দুঃখ প্রকাশ করছে।সম্মানের সাথে জানানো হচ্ছে যে সাধারণ সিভিল আদালত একই আন্তর্জাতিক মতামত সন্তুষ্ট করতে পারবে যার আইনের ধারা নিরীক্ষত।” রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কথিত অপরাধের বিচারে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট সবসময়ই পৃথক বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বর্জন করেছে।রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে নিন্দিত করে গুপ্তহত্যাকে আইনত বৈধতার আভাস দেয়ার চেয়ে সহজ কিছু নেই।সেখানে নেই স্বাধীনতা কিয়বা সাংবিধানিক বিচার ব্যবস্থার আইনগত নীতি ও প্রশিক্ষিত বিচারক।যদি শেখ মুজিবুর রহমান বা অন্য আওয়ামীগ নেতারা কোনো রাজনৈতিক অপরাধ সংঘটন করেও থাকেন তাঁদের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত দেশের সাভিলিয়ান আদালতের মুখোমুখি না করার কোনো কারণ নেই। এ অবস্থায় আমাদের আন্তর্জাতিক মতামত বিবেচনা করতে হবে যা ইতোমধ্যেই শঙ্কিত এবং ধাক্কা খেয়েছে।এই কমিটির মাধ্যমে কোনো অনিশ্চয়তা প্রকাষ করা উচিত হবে না যেহেতু অর্থনৈতিক এবং সামাজিক পরিষদ জাতিসঙ্ঘের সম্পূর্ণ সাংবিধানিক অঙ্গ যা মানবাধিকান ও মৌলিক স্বাধীনতা সম্পর্কে সচেতন।ভয়াবহ ম্যাসাকার,নারী ও শিশুসহ নিরস্ত্ সাধারণ মমানুষকে ননির্বিচারে হত্যা,নৃশংসতা ও নির্মমতা,ব্যাপক হারে ব্যক্তিসম্পদে অগ্নিসংযোগ ও ধ্বংস সাধন,পূর্ব বাংলার মানুষের ওপর আক্রমণ ম-এমন মাতায় বেড়েছে যে এখন বিশ্ব বিবেকের অবশ্যই প্রজ্বলিত হওয়া উচিত এবং আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা থাকা উচিত দুনিয়ার একটা অংশে সভ্যতার অস্তিত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠায়। ***************************************************************
.
13.249.735-736
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব বাংলায় সাহায্যের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবের আবেদন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ জুন, ১৯৭১ |
১৬ ই জুন ১৯৭১ প্রকাশিত জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ডের পূর্ব পাকিস্থানের সহায়তা চেয়ে আবেদন নিন্মরুপ –
স্মরন করা যেতে পারে ২২ এপ্রিল, আমি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে পূর্ব পাকিস্থানের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্দেগ প্রকাশ এবং মানবিক দৃস্টিকোন থেকে পূর্ব পাকিস্থানের দুর্দশাগ্রস্থ জনগনের জন্য জরুরী ত্রান আনার জন্য তার সরকারকে জাতিসংঘ পরিবারের সকল সংগঠন থেকে সাম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি লিখি। ৩ মে ১৯৭১ এ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একটি চিঠিতে বলেছেন পাকিস্থানের জন্য আমার উদ্দেগ সর্ম্পকে তিনি অবগত হয়েছেন এবং আরো বলেন তিনি থাকাকালীন বিদ্যমান অবস্থায় ঔষধ, খাদ্যসামগ্রি এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল এবং ভবিষ্যতে সাম্ভাব্য আন্তজার্তিক সহায়তার একটি মুল্যায়ন – যা প্রয়োজন হতে পারে তা প্রস্তুত করা হচ্ছে। ১৭ ই মে প্রেসিডেন্ট এর অর্থনৈতিক উপদেস্টা আমাকে ত্রাণ সামগ্রীর পরিমান ব্যাখ্যা করেন যা পাকিস্থানের স্থায়ী প্রতিনিধি থেকে প্রাপ্ত- পরবর্তী ২২ শে মে পাঠানো হবে।
একই সময়ে পূর্ব পাকিস্থান সংলগ্ন ভারতীয় প্রদেশে বড় অংকের অব্যাহত বিশেষ করে নারী ও শিশু শরণার্থির প্রবাহ সম্পর্কে বিশ্ব সম্প্রদায়ের উদ্দেগ পরিলক্ষিত হয়। আমি সরকার, আন্ত সরকার এবং বেসরকারী সেই সাথে ব্যাক্তিগত সুত্রকে এই দু:খ জনক পরিস্থিতি উপশম করার জন্য জরুরী মানবিক সহায়তা সরবরাহর আবেদন করি। এবং আমি এটাও সিদ্ধান্ত নেই যে, উদবাস্তুদের জন্য জাতিসংঘ হাইকমিশনার এর জাতিসংঘের সব সংগঠন ও কর্মসুচি সহায়তা সমন্বয়ের কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে কাজ করা উচিত। আমি খুবই কৃতগ্ন যে খুবই ইতিবাচক এবং উদার প্রতিক্রিয়ায় আমার আবেদন গৃহীত হয়েছে এবং আন্তজার্তিক সম্প্রদায় থেকে যা সমস্ত সহায়তা দেয়া হয়েছে তা কার্যকর করতে যে পদক্ষেপ আয়োজন করা হয়েছে তাতে আমি সন্তুস্ট। খুব তারাতারি ২২ মে আমি পাকিস্থানের স্থায়ী প্রতিনিধি হতে চিঠি পেলাম। আমি আন্ত এজেন্সি বিষয়ক সহকারি সেক্রেটারি কে ত্রাণ সামগ্রী জাতিসংঘের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্থানে কার্যকর করার জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য পাকিস্থান ভ্রমন করতে বলি। তাঁকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অভ্যার্থনা জানান এবং উভয় সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ইসলামাবাদ এবং ঢাকা উভয় স্থানে আলোচনা অনুস্ঠিত হয়। সেখানে ত্রান বিতরন পদ্ধতি কি হওয়া উচিত তা নিয়ে একটি পূর্ন চুক্তি ছিল এবং প্রেসিডেন্ট আমার উদ্দেগের অংশিদার হন যে জাতিসংঘকে একটা অবস্থানে থাকতে হবে যেন আন্তজার্তিক সম্প্রদায় এবং দাতা গোস্ঠিরা এই আশ্বাসটা পায় যে, ত্রাণ সামগ্রীর সবটাই তার উদ্দিস্ঠ গন্তব্য স্থল পূর্ব পাকিস্থানের মানুষের কাছে পৌছেছে। প্রেসিডেন্ট জাতিমংঘের সকল ব্যাবস্থাকে স্বাগত জানালেন এবং আমি একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলাম
পশ্চিম পাকিস্থানে জাতিসংঘের সকল এজেন্সি এবং কর্মসুচির সুস্থ সমন্বয়ের লক্ষ্য কেন্দ্র বিন্দু হিসেবে কাজ করার জন্য। পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট আমাকে আসস্ত করেছে যে জাতিসংঘ যে সমস্ত ব্যাক্তি দ্বারা এই ত্রাণ কর্মসুচির পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন করবেন তাদের তার সরকার পূর্ন সহযোগীতা করবেন। পাকিস্থানের স্থায়ী প্রতিনিধির একটি চিঠিতে সহায়তার প্রয়োজনিয়তার মুল্যায়ন এবং বর্তমানে এই ধরনের সহায়তার আরও মুল্যায়ন পাকিস্থান সরকার করছে এবং জাতিসংঘের সংস্থা গুলো খাদ্য এ ত্রাণ সামগ্রি পরিবহনে দ্রুততা বিষয়ে উদ্দিগ্ন তা জানান। যদিও উদবাস্তু দের জন্য হাইকমিশনার কেন্দ্রবিন্দু তে থেকে একটি আলাদা কার্যক্রম পুর্ব পাকিস্থান থেকে ভারতে আসা উদ্বাস্তুদের জন্য পরিচালনা করছে, দুটি কার্যক্রমই অবশ্যই সম্পর্ক যুক্ত যেন পুর্ব পাকিস্থানের অবস্থার উন্নতি হয় যাতে শরনার্থির প্রবাহ বন্ধ ও ফেরতের সম্ভাবনা থাকে। আমি নিশ্চিত যে সরকারী, আন্ত সরকারী এবং বেসরকারী সংগঠন এবং বেসরকারি প্রতিস্ঠান পুর্ব পাকিস্থানের দুদর্শা গ্রস্থ জনগনের উপশমে প্রয়োজনিয়তার সর্ম্পকে সচেতন আছে এবং আমি তাদের কাছে এই সকল অবদান নগদে দিতে বলি এবং এই মানবিক প্রচেস্টার প্রতি সচেস্ট হতে বলি। আমি আশা করি যে, জাতিসংঘের বৃহত্তম প্রয়োগ পদ্ধতির ব্যাপ্তি বিষয়ে দাতারা উপকৃত হতে পারেন বিশেষত ঐ সব খাদ্য কর্মসুচি এবং ইউনিসেফ, যে সমিতি গুলি ত্রান বিষয়ক পরিকল্পনা ও সংগঠন করছে যা পাকিস্থান সরকার স্বাগত জানিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি যে বিশ্বসম্প্রদায় মানব সংহতি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার উপলক্ষে আবারও জেগে উঠবেন যা তারা সনদে অংগীকার করেছেন।
.
13.250.737-742
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার- এর সাংবাদিক সম্মেলনের রেকর্ড | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ২৩ জুন, ১৯৭১ |
১৯৭১ সালের ২৩শে জুন জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের হাইকমিশনার-এর শরণার্থী বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডঃ
নিচে বর্নিত রেকর্ডটি ১৯৭১ সালের ২৩শে জুন জাতিসংঘে প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান কর্তৃক আয়োজিত, আগা খানের ভারত ও পাকিস্তান মিশন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের রেকর্ডঃ
একটি উদ্ভোধনী বক্তব্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেছেন যে, তিনি সংবাদ সম্মেলন কে স্বাগত জানিয়েছেন কারন শরণার্থী বিষয়ক যেকোন ধরনের প্রশ্নে গণমাধ্যমের সহায়তা কে অন্তর্ভূক্ত করা ছিলো সম্পূর্ণরূপে অপরিহার্য। কার্যকরী পরিত্রাণের জন্য সর্বসাধারণের মতামত বুঝতে পারা প্রয়োজনীয় ছিলো যা সরকারের ঔদার্যতা, স্বেচ্ছাসেবী দল ও সংস্থাগুলোর সুবিশাল নেটওয়ার্ককে প্রভাবিত করেছে।
পাকিস্তানি শরণার্থী বিষয়ক সমস্যাটি ছিলো বিশাল মাত্রায় এবং এটি ছিলো জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তিনি গনমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন কারন তিনি এই দুঃখজনক মানবীয় বিষয়ে জাতিসংঘ এবং নিজের অবস্থান সম্পর্কিত যেকোন ধরনের মতানৈক্য পরিহার করতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, মহাসচিবের নিকট ভারত সহযোগিতা প্রার্থণা করেছে। এই অনুরোধটি বার্ন (Berne) এ ACC আলোচনা করেছেন এবং তাকে জাতিসংঘের গঠনতন্ত্রের মাধ্যমে সকল প্রকার ত্রান সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। একটি ৩-সদস্য বিশিষ্ট মিশন ভারতে গিয়েছিলো একটি মূল্যায়ন করার জন্য। তারা ভারতের যেসব এলাকায় শরণার্থী রয়েছে সেসব এলাকা ঘুরে দেখেন এবং ত্রান সরবরাহের কেন্দ্রীয় ব্যক্তির কাছে রিপোর্ট করেন যা পরবর্তীতে তিনি মহাসচিবের কাছে জানান। নিযুক্ত সদস্যরা ভারত সরকারের কাছ থেকে ছয় মাসের জন্য প্রাথিমিক প্রয়োজনীয়বস্তুর একটি তালিকা পেয়েছিলেন যা শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান অন্তঃপ্রবাহের কথা চিন্তা করে এখন পরিমার্জন করা হয়েছে। সেখানে এই সমস্যা সমাধানের কোন তাৎক্ষণিক প্রত্যাশা পাওয়া যায়নি।
ত্রাণ সংক্রান্ত সহযোগিতা সঞ্চালনের ক্ষেত্রে যেকোন ধরনের অধিক্রমণ এড়ানোর জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা্র অন্তর্ভূক্তিতে জেনেভায় একটি স্থায়ী দল গঠন করা হয়েছে। তিনি উললব্ধি করেছেন যে, জাতিসংঘের ইতিহাসে এই প্রথমবার এই মানবিক প্রকল্পে জড়িত সবাই একসঙ্গে এতো ঘনিষ্ট সমন্বয়ে কাছে করেছেন। তিনি অনুধাবন করেছেন এই বিষইয়টি ভারত সরকারের দ্বারা সমাদৃত হয়েছে এবং বিষয়টিকে দৃঢ়তা সহকারে আন্তর্জাতিক ত্রাণের সমন্বয়ে পুরোপরি নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে জোর দিয়েছেন। শরণার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সমাধানের জন্য ভারতের সম্পদ ও প্রশাসনের উপর কর আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও, ভারত দৃঢ়ভাবে জানান, এটি তাদের দায়িত্ব যা প্রাথমিকভাবে পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট। দিল্লীতে কেন্দ্রীয় ব্যক্তির প্রতিনিধি জনাব জেমিসন ভারত সরকার ও জাতিসংঘের সকল সহযোগী প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান স্মরণ করেছিলেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি মে মাসে বলেছিলেন, সকল বিশ্বস্ত পাকিস্তানিরা পাকিস্তানে ফেরত যেতে পারবেন। এই বিবৃতির পেছনে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য জানার জন্য তিনি নিজেই পাকিস্তানে গিয়ে এই বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন।পাকিস্তান তাকে নিমন্ত্রণ জানায় এবং পাকিস্তানি সরকারের সাথে বিয়ষটির সারগর্ভ আলোচনা করেন। তিনি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির সাথেও সাক্ষাৎ করেন। পাকিস্তানি শরণার্থীরের ফেরত আসার বিষয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যমূলক সিদ্ধান্তসমূহ করেন এবং কিভাবে এগুলো কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।
তারপর তিনি ঢাকা গিয়েছিলেন যেখানে তিনি পূর্ব পাকিস্তা্নি শাষকগোষ্ঠীকে দেখেছিলেন। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তের দিকে গিয়ে কিছু অভ্যর্থনা কেন্দ্র দেখেছেন এবং মানুষের ফেরত যাওয়া এবং শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্ররনের ব্যপারে হাই কমিশনারের অবস্থান ও কার্যক্রম মূল্যায়ন করেছেন।
হাই কমিশনার ‘স্বেচ্ছায়” শব্দিটিতে জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন তার অফিসের মোলিক কাজের মধ্যেই রয়েছে যে, কোন শরণার্থী এমন কোন দেশে ফেরত যাবেনা যেখানে সে আবদ্ধ অথবা যেখানে তার নিপীড়নের ভয় আছে। প্রত্যাবাসন হতে হবে মুক্ত এবং স্বেচ্ছায়। তিনি বলেন তিনি বিষয়টি তীব্রভাবে উপলব্ধি করেছেন যেভাবে ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উপলব্ধি করেছিলেন যে, শর্তসাপেক্ষে শরণার্থীদের যার যার নিজের দেশে ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করার অনুমতি দেওয়াই সবচেয়ে ভালো সমাধান।
প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান বলেন, ভারত সরকার জোর দিয়ে বলেছে শরণার্থীরা ভারতে থাকতে পারবেনা। শুধুমাত্র সাময়িকভাবেই এই উদার মনোভবপূর্ণ সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও, ভারতে তাদের পূনর্বাসনের কোন প্রশ্নই ছিলোনা এবং তাদের ভারতের নির্ধারিত অঞ্চলে থেকে যাওয়া অবশিষ্ট সাধারণের মতো বিবেচনা করা হবেনা।
তিনি আরো বলেন, মানবিক দিকটিকে ভিত্তি করে পাকিসস্তানের সাথে তিনি শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের কার্যবিধি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করেছেন। এই বিষয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শাষকগোষ্টীর পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছেন।
তিনি বলছেন যে হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি বিভিন্ন অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন তার পাইলটকে বলে তিনি বারংবার গমনপথ পরিবর্তন করিয়ে তিনি মূল প্ল্যানের বাইরে থাকা অঞ্চল গুলোও পরিদর্শন করেন। হেলিকপ্টারটির গমনপথ কম উচ্চতায় ছিলো বিধায় তিনি খুব স্পষ্টভাবেই দেখতে পেয়েছিলেন যে কিভাবে মানুষ তাদের জমিতে শস্য বপন করছে এবং বাজারে বিভিন্ন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করছে। তিনি দেখতে পেয়েছেন যে এসকল অঞ্চলে ধীরে ধীরে জীবনমান স্বাভাবিক হচ্ছে। এছাড়াও তিনি বলেন, যেহেতু তিনি পাকিস্তান পুরোপুরি ঘুরে দেখেননি সেহেতু অন্যান্য অঞ্চলের সার্বিক অবস্থার কোন প্রকার সাক্ষ্য দিয়ে পারছেন না।
তিনি বলেছে, তিনি এমন সব গ্রামও দেখেছে যেখানে পুড়ে যাওয়া বাড়িঘর ও উত্ক্ষেপের চিহ্ন সুস্পষ্ট। তিনি সেখানে বড় পরিসরে সেনা মোতায়েনের অথবা কোন নির্দিষ্ট দিকে মানুষকে কেন্দ্রীকরণের কোন আলামত দেখেননি। তিনি যে হেলিকপ্টারে ভ্রমন করেছেন তার সর্বস্বত্ব পূর্ব পাকিস্তান সেনাবাহিনীর। এর উপস্থিতিতে গ্রামের মানুষজন ভেঙ্গে পড়েনি বরং তারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে হাত নাড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছে। ছোট ছোট বাচ্ছারা হেলিকপ্টার দেখে হাত নাড়িয়ে তাদের উচ্ছ্বাস দেখিয়েছে যা তারা যেকোন জায়গাতেই রবে।
এছাড়াও, পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কে সম্পূর্নরূপে কোন নিশ্চয়তা দিতে পারবেন বলে দাবি করতে পারছেন না জাতসংঘের হাইকমিশনার। তবে তিনি এইটুক বলতে পারেন যে যেকল অভ্যর্থনা কেন্দ্রে তিনি দেখে এসেছেন সেগুলো ছিলো নানাবিধ উপকরণ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও বেসামরিক কর্মীদ্বারা সঠিকভাবে পরিপূর্ণ এবং সেখানে প্রত্যাবাসনের সকল প্রস্তুতির জন্য একটি সঠিক অবকাঠামো বিধ্যমান বলেই তার ধারণা।
তাছাড়াও অভ্যর্থনা কেন্দ্র গুলো নির্মাণকালে, শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের আহবান করে পাকিস্তানী রাষ্ট্রপ্রধানের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণার বিষয়টি প্রশংসাযোগ্য হলেও তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তা খুবএকটা কার্যকরী হয়নি। সব ধরনের শরনারথিদের ক্ষেত্রেই সে বলেছে যে, লোকেদের যেটা ফেরত এনেছে সেটা হলো রাজনৈতিক সমাধান। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে পাকিস্তানও এই বিষয়টিতে সহমত প্রকাশ করবে।
সে যা বলেছে, অবশ্যই তার ভিন্ন ব্যাখা ছিলো, মানে রাজনৈতিক সমাধান বলতে সে কি বুঝিয়েছে, সেটার অনেকগুলো মানে হতে পারে। এটা হতে হয়েছে এমন, যেটা ভবিৎষতে আত্নবিশ্বাস ও আস্থা যোগাবে এবং এটা ছিলো শরনার্থিদের নিজ দেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে প্রকৃত উদ্দীপনা। সে বলেছে যে, সে এটা স্পষ্ট করে বলেছে যখন পাকিস্থানে সে তার নিখাদ মানবিক ভূমিকার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছিলো।
প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেছিলো, ভারতের সরকারের আমন্ত্রনে যে পাকিস্থান থেকে সরাসরি দিল্লী গমন করেছে। সেখানে সে আলোচনা করেছে, ত্রানের পুরো প্রশ্ন, আন্তজার্তিক গোষ্ঠি কর্তৃক আরোও সহায়তার প্রয়োজনীয়তা, জাতি সংঘের সহায়তা, এবং নগদ প্রদান ও আন্তরিক হওয়াসহ এই ধরনের সহায়তার ধারাবাহিকতাকে অক্ষুন্ন রাখার সহযোগীতার ব্যাপারে বিশদ আলোচনা সে করেছে।
সে বলেছিলো, তাঁর মিশন পুরোপুরিভাবে মানবিক এবং রাজনৈতিক কোন কিছুর সাথে সংযুক্ত নয়, এবং অবশ্যই উপড়ে ফেলাটা একটা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলো। সে বলেছে, সংবাদ মাধ্যমের ব্যাপারে সে দায়ী নয়, কেননা ভারতের সংবাদ মাধ্যম খুবই স্বাধীন এবং সক্রিয়। সে তাঁর ব্যাপারে সংবাদ পত্রের শিরোনাম দেখেছে যে, সে নাকি শান্তির বার্তা নিয়ে এসেছে এবং তার লক্ষ্য ছিলো সমস্যার মধ্যস্থতা করা। সে বলেছে যে, সে জানতো না যে তার মধ্যস্থতা করার কথা ছিলো এবং সে পাকিস্থান – পূর্ব পাকিস্থান কিংবা পাকিস্থান-ভারতের মধ্যে কোন ধরনের মধ্যস্থতা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি।
সে বলেছে যে, ভারতের শরনার্থী পরিস্থিতি নিয়ে সে মারাত্নক রকমের ব্যথিত। সে কখনই এই ধরনের কোন উচ্চতা দেখেনি, যেটা এমন একটা জাগায় ঘটছে যেটা ইতোমধ্যেই অনুভব করা গেছে সম্ভাব্য সবচাইতে খারাপ ধরনের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বিস্ফোরণ। সেখানে ক্রমাগত ত্রানের প্রয়োজনীয়তা ছিলো, এবং সেখানে ক্রমাগত কলেরা, আলসার আর ম্যালেরিয়ার হুমকি ছিলো। অবশ্যই ত্রান নির্ভর করেছে জাতি সংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ঔদার্যের উপরে। জাতিসংঘ একটি চমৎকার কার্যকর যন্ত্র হতে পারতো, কিন্তু তারা মালামাল সরবরাহ করতে পারতো না, যদি না তা তাদেরকে দেয়া হতো।
সেক্রেটারি জেনারেলের আপিলের প্রায় পর পরই সে বল্ল যে, সে ফলাফলগুলো দেখে খুবই আগ্রহ উদ্দীপিত হয়েছে এবং সেগুলো অনুমোদন করেছে স্বয়ং ভারত সরকার। প্রায় ৪৫ মিলিয়ন ডলার সাহায্য এসেছে ফোকাল পয়েন্টে এবং আরো ৩০ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমান সাহায্য আসছে ত্রান হিসেবে। (সে আশা করেছে যে, ভারত এবং পাকিস্থানে জাতি সংঘের ভূমিকা শেষ পর্যন্ত শান্তি ও সম্প্রতী গড়ে তুলতে সাহায্য করবে এই ধরনের বিস্ফোরক পরিস্থিতিতেও।)
প্রিন্স সদরুদ্দিন এর পর প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো।
একজন জনপ্রতিনিধি বলেছিলো যে, মানুষের জীবনযাত্রা যে আবার স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, তার প্রমান সে স্বচক্ষে দেখেছে। তবুও বলেছে যে, একটি মিশনের শেষে আরো শরনার্থি সেনাবাহিনীরা সরিয়ে নিয়েছে, হাই কমিশনার পূর্ব পাকিস্থান ত্যাগ করার পরে। সে জিগেস করেছিলো, সৈন্যরা কেন জুনের ৫ এবং ১২ তারিখে ৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং জুনের ১২ এবং ১৯ তারিখে চার লাখ শরনার্থিকে ভারতের দিকে ঠেলে দিয়েছিলো? প্রিন্স সদরুদ্দিন বল্ল, এই পরিসংখ্যানগুলো তার কাছে ছিলো এবং তার অফিস এই তথ্যগুলোর উপরে নির্ভর করেছে যেগুলো উভয় পক্ষ থেকেই তার কাছে সরবরাহ করা হয়েছিলো। সে বল্ল, মানুষের হৃদয়ে যখন একবার ভয় ঢুকে যায়, তখন সেটা স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে অনেক সময় নেয়। পরিস্থিতি এখনো পূর্বের অব্স্থায় ফিরে আসেনি। সে বলেনি যে, এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিলো না সারা দেশে, সে বলেছে যে, উক্ত এলাকায় খুব ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
”আমি আরো এ্যাকশন নেবার ব্যাপারে অনুশোচনা করি, যেটা আরো শরনার্থি তৈরী করবে, শরনার্থিদের হাই কমিশনার কি করে আরো শরনার্থি তৈরী করার ব্যাপারে খুশী হতে পারে?” এই ধরনের পরিস্থিতিকে আরো কাছ থেকে দেখতে হেবে, ভারতকে সাহায্য দিতে হবে এবং এই শরনার্থী সমস্যার একটা আশু সমাধান জরুরী। তার পূর্ব পাকিস্থান সফরকালে তার কাছে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছিলো, সে বলেছিলো সে সময় সে সেখানে ছিলো, মানে জুনের ১১, ১২, ও ১৩ তারিখে। সে ঢাকা থেকে পশ্চিমের সীমান্তে একদম কেন্দ্রে চূয়াডাঙ্গায়, যেখানে সে যশোর এবং বেনাপোলের কেন্দ্র দেখেছিলো। ঢাকা ফিরে আসার পর, পরের দিনই সে কুমিল্ল, ফেনি আর নোয়াখালি গিয়েছিলো।
একজন সংবাদদাতা জানালেন যে, রয়টারের একজন প্রতিনিধিকে গতকাল ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে, সেই প্রতিনিধি বল্ল যে, কুমিল্লাতে এখনো গৃহযুদ্ধ হচ্ছে। প্রিন্স সদরুদ্দিন বল্ল, পরিস্থিতি যে কোন মূহুর্তে বদলে যেতে পারে। সে যখন কুমিল্লাতে ছিলো তখন কি পরিস্থিতি ছিলো সে শুধুমাত্র তাই বলতে পেরেছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, সে যখন ঢাকায় ছিলো, তখন সেখানে ৮টা বোমা মারার ঘটনা ঘটেছিলো কিনা, হাই কমিশনার সাহেব বল্লেন, ঢাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছিলো, কিন্তু সে যখন ঢাকায় ছিলো, তখন সেই কারফিউ উঠিয়ে নেয়া হয়েছিলো। ঢাকাতে তখনো ঝামেলা চলছিলো, ২৫ মার্চ রাতে যা হয়েছিলো তার সূত্র ধরে। তাঁর মনে হচ্ছিলো, সে যখন সেথায় ছিলো, তখন ঢাকার পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক ছিলো না, এমনকি তা স্বাভাবিক হওয়ার দিকেও যাচ্ছিলো না। এবং জনগনের একটা অংশ তখন রাজধানীতে ছিলো না। কিন্তু এই শহরকে এই সমস্ত ঘটনা দ্বারা খুবই আক্রান্ত মনে হচ্ছিলো।
একজন সাংবাদিক জিগেস করলো, সে যখন ঢাকায় ছিলো তখন সে কোন ধরনের বোমা হামলার ঘটনা দেখেছে কিনা, এবং এরপর সে কোন কূটনৈতিক মহলের সাথে যোগাযোগ করেছে কিনা, সে বল্ল, সে যা শুনেছে, সেটা অবশ্যই একটা স্থানে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ ছিলো। সেখানে অন্যান্য কিছু ঘটনার গুজবও ছিলো। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানালো, এইসব তারাই করেছে যারা সম্প্রতি এইসব ঝামেলার সুযোগে জেল থেকে পালিয়েছে। সে জানালো, সে ঢাকা থাকাকালীন কারফিউ তুলে নেয়া হয়েছিলো। সে এও বল্ল যে, কূটনৈতিক মহল এবং জাতি সংঘের কয়েকজন সদস্যের সাথে যোগাযোগ করেছিলো। যদিও সে মাত্র তিন দিনের জন্য পূর্ব পাকিস্থানে ছিলো, যার দুই দিনই সে হেলিকপ্টারে করে সারা দেশ ঘুরেছে।
তাঁকে জিগেস করা হয়েছিলো যে, কূটনৈতিকদের প্রমান কি ছিলো? সে বল্ল, তাদের দৃষ্টিভংগির বৈচিত্রতা রয়েছে। কেউ কেউ ভেবেছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আবার কেউ এর উল্টোটা ভেবেছে। ২৫ মার্চের ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভংগির ভিন্নতা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, একটা রাজনৈতিক সমাধান আশু দরকার। এরপর তাঁকে জিগেস করা হলো, ফোকাল পয়েন্টে যে ৪৫ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়েছিলো, সেগুলো দিয়ে কতদিন চলবে? সে বল্ল, ভারতে পৌছাঁনোর প্রায় সাথে সাথে এই টাকার সমুদয় খরচ হয়ে গেছে অথবা প্রায় শেষ হবার পথে। কারণ, ভারতের যে পরিমান অর্থের এখন দরকার, এই টাকার পরিমানটা তার চাইতে অনেক কম ছিলো।
দাবিদাওয়ার একটা হিসাব চাওয়া হয়েছিল এবং তিনি বলেছিলেন ভারত ১৭৫ মিলিয়ন ডলারের একটা চূড়ান্ত দাবি করেছিল। এই প্রস্তাবনাটা তৈরি হয়েছিল যখন সেখানে উদ্বাস্তু-জ্বর চলছিল এবং যেভাবেই হোক ছয় মাস সময় শেষও হয়ে গিয়েছিল। নতুন দাবিটা আলোচিত হয়েছিল দিল্লিতে। ভারত বলেছিল ৫ মিলিয়নেরও অধিক উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের দেশে।
জিগেস করা হলো, সে সময় কলেরায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট কত ছিলো। সে জবাব দিলো, সে যখন ভারতে ছিলো, তখন আক্রান্তের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিলো।
তাকে জিজ্ঞেস করা হল, পাকিস্তান কলেরার বিপদের কথা স্বীকার করেছে কিনা। তিনি বললেন, পাকিস্তান করেনি এবং এ সম্পর্কে খুব সচেতন ছিল। অভ্যর্থনা কেন্দ্রে কলেরা ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছিল। পাকিস্তানে কলেরা ছিল কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাকিস্তানে ছিল না। তিনি পাকিস্তানে কলেরা ছিলো কিনা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিন্তু পাকিস্তানে কলেরার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট হিসাব তাঁকে দেওয়া হয়নি।
একজন সংবাদদাতা বলেন, এটি পরিষ্কার যে কলেরা পাকিস্তান থেকে এসেছিল । বাদশাহ পুত্র সাদ্রুদ্দীন বলেন, এটি তাঁর চাকরি ছিল ভারতে ত্রাণ দেখাশোনা করা। কোন উল্লেখযোগ্য প্রত্যাবাসন ছিল না পাকিস্তানে উদ্বাস্ত ক্ষেত্রে । তাঁর অফিস ভারতে জরুরী অবস্থার সম্মুখীন ছিল। তিনি আলোচনা করেছিলেন উদ্বাস্তুদের ফিরে আসতে কি প্রয়োজনীয় ছিল । প্রশ্নে কলেরার বিষয়ে আলোচনা করা ছিল কিন্তু বিস্তারিত ছিলো না। যদি পাকিস্তানে কলেরা থাকতো তাহলে তা পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য একটা সমস্যা হাতো, কিন্তু হাই কমিশনারের জন্য নয় ।
একজন সংবাদদাতা জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় মূল্যায়ন কমপক্ষে ৫০ সেন্টস প্রয়োজন ছিল প্রতিটি উদ্বাস্তুর একটি দিনের ভাতার জন্য। এই মাসে ভারতে শরণার্থীদের জন্য সাহায্য সংক্রান্ত পরিমাণ হবে ৯০ মিলিয়ন ডলার। এমন সাহায্যের কোনো আশার আলো ছিল? প্রিন্স সদরুদ্দিন এই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া উপর নির্ভরশীল হয়ে বলেন। এই সংখ্যাগুলো সহায়তা পাবার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে আবারো আলোকপাত করেছে।
হাইকমিশনারকে জিজ্ঞাসা করা হল, যেখান থেকে উদ্বাস্তুরা আসছে, সেখানে সে কোন স্থানচ্যুতি দেখেছে কিনা। প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেন, তিনি সব শরণার্থী এলাকা দেখতে চেয়েছিলেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় কিন্তু সে সময় তাঁর ছিল না। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে এলাকায় ফিরতে সক্ষম হবে। এটা খুবই সম্ভব যে উদ্বাস্তুদের আন্দোলন ছিল সে সব এলাকাতে, যেগুলো তিনি দেখার সময় পান নি। তিনি তর্ক করেননি যে সেখান আরও উদ্বাস্তু আন্দোলন ছিল । সে বলতে সীমিত এলাকায় পরীক্ষামুলক ভাবে দেখলেন যে সেই নতুন দেখতে পাইনি অন্তঃপ্রবাহ যে দিনে। তবে বেশ কিছু পরিস্থিতি অস্থির ছিল এবং উদ্বাস্তুদের আন্দোলন সংঘঠিত হচ্ছিলো।
একজন সংবাদদাতা জানালো যে, পূর্ব পাকিস্থানের লন্ডন প্রবাসীরা হাই কমিশনারকে সরাসরি অভিযুক্ত করেছে পক্ষপাতিত্ব করার দোষে, কারণ তারঁ ও তার পরিবারের বড় ধরনের বিনিয়োগ ছিলো পাকিস্থানে।
তাঁর ভাষ্যমতে তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক কর্মচারী। তিনি আশা করেছিলেন তাঁর তৈরিকৃত নিয়ম-কানুন আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে নিরেপেক্ষভাবে মূল্যায়ন করা হবে। তিনি ১০ বছর যাবত শরনার্থীবিষয়ক কাজে জড়িত ছিলেন এবং রাষ্ট্রদূত হিসেবে ৫ বছর কর্মরত ছিলেন। তাঁর গৃহীত তিনটি সমারোহ হাই কমিশন কতৃক প্রশংসিত হয়ছিল। তিনি সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন তার নথি ইহার জন্য কথা বলবে। তার ব্যাক্তি নিরপেক্ষতা সম্পর্কে কখনও কোন প্রশ্ন উঠেনি নাইজেরিয়া, চেকোস্লোবাকিয়া, সুদান, ইথিউপিয়া, পর্তুগাল অঞ্চল কিংবা অন্যত্র। তিনি বলেছিলেন তার পরিবার এবং তার সম্প্রদায় ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান উভয়ের প্রতিই আগ্রহী ছিলেন। হতে পারে ইন্ডিয়া অধিক শক্তিধর। তিনি একজন ইরানী ছিলেন,পাকিস্তানি নন। তাঁর মতে, তাঁর ভাই ছিলেন নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি।কিন্তু সেখানে অনেক পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান সিনিয়র অফিসার এবং রাষ্ট্রদূত ছিলেন যারা একে অন্যের ভাই এবং আত্মীয়। ইহা ছিল উপ-মহাদেশীয় বিভক্তিকরণ।
তিনি বলেন” আমি পাকিস্তানেও নেই, ইন্ডিয়াতেও নেই, আমি উদ্বাস্তু। আমি উদ্বাস্তুদের সংঘটক।”……………
একজন সংবাদদাতা বলেছে, হাই কমিশনার বলেছিলেন ৭৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তায় বেড়েছিল। যদিও সমস্যার বিশালতা পরিমাপ করা যাচ্ছিল না বিপরীত সহায়তার জন্য। রাজপুত্র সাদরুদ্দিন বলেছিল, তিনি আগামীকাল ওয়াশিংটন যাবেন এবং পরের সপ্তাহে অন্য রাজধানীগুলোতে যাবেন আরো সহায়তার জন্য। কিন্তু যন্ত্রপাতি খুব ধীরে সরানো হচ্ছিল এবং করসমূহ সাধারণত জনগণের মতামতের উপরই নির্ভর করতো। তবে তিনি এতটাই অণুপ্রাণিতবোধ করেছিলেন যে করসমূহ একমাসের আগেই উঠে এসেছিল সেক্রেটারী জেনারেলের আবেদনের আগেই। কিন্তু সমস্যাটা ছিল যে, এইটুকু সহায়তা পুরোপুরি যথেষ্ঠ ছিলো না।
প্রিন্স সদরুদ্দিনকে আরো জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে তিনি প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলার পর তাঁর এটা মনে হয়েছিলো কি না যে এর একটি বাস্তব রাজনৈতিক সমাধান আশা করা যায়। উত্তরে তিনি বলেন, এটা নির্ভর করে রাজনৈতিক সমাধান বলতে আসলে কি বোঝায় তার উপর। উদ্বাস্তুরা কত তাড়াতাড়ি নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন পাকিস্তান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সাধ্যের ভেতর কিন্তু বাস্তব অবস্থা বড়ই জটিল। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করবে জুনের ২৮ তারিখে যেখানে রাজনৈতিক সমাধানের কিছু খসড়া তিনি আশা করছেন। উদ্বাস্তুরা একমাত্র তখনই ফিরে আসবে যখন তারা একটি রাজনৈতিক সমাধানের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারবে।
জাতিসংঘ রাজনৈতিক সমাধান দিতে চাইলে কি হতো? তিনি উত্তর দিলেন- সেক্রেটারি জেনারেল এই সমস্যার ব্যাপারে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। এটি অবশ্য একটি সঠিক ছোট পদক্ষেপ ছিল পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিনিধি স্বীকার করেছিল তার অফিস, সেখানে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বাধ্যবাধকতার সাথে কাজ করছিলো। তিনি আশা প্রকাশ করেন এই যে, একটি জাতি সংঘের উপস্থিতি ছিল একটা অনুভূতির অবদান এবং যে উপস্থিতি বর্ধিত করা যেতে পারে। যেটা মানুষকে তাদের বাড়িতে ফিরে উৎসাহিত করতে পারে।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, সাহায্য যদি না আসে, কি হবে? প্রিন্স সদরুদ্দিন বলেন, এখানে মিশনগুলোর জন্য না-বলা কিছু রহস্য ছিলো যা হয়তো ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া ভয়ানক অবস্থাকে আরো উসকে দিতে পারতো।
তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের এই নিয়ে দু:খবোধ আছে কিনা যে তাঁর দেশের ৫ মিলিয়ন লোক পাকিস্তান ত্যাগ করাকে জরুরি মনে করেছিলো। হাইকমিশনার উত্তর দেন যে এতে কেউ খুশি হবেন না বা এ তথ্য কেউ উপেক্ষাও করতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তানে যা হয়েছে এ সম্পরকে তাঁর পরিষ্কার ধারণা ছিলো। চলে আসা উদ্বাস্তুরা প্রেসিডেন্ট ও সরকারের উপর বিরাট চাপ হয়ে ছিলো। সরকার ও প্রেসিডেন্ট তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।
অন্য এক জায়গায় প্রিন্স সদরুদ্দিনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, সে সেক্রেটারী জেনারেল হতে চায় কি না। তিনি প্রেসের সব কিছু বিশ্বাস করতে পরামর্শ দেন। তিনি তাঁর প্রার্থীতা নিয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো ইঙ্গিত দেননি। তিনি উ-থান্টের তত্তাবধানে জাতিসংঘকে সেবা দিয়ে গেছেন। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো, তিনি কি সেক্রেটারি জেনারেলের অফিস বড় বড় শক্তির আহ্বানে গ্রহণ করেছিলেন কি না। তিনি এর উত্তর না দিয়ে বলেন যে তিনি ইতিমধ্যেই তাঁর উত্তর দিয়ে দিয়েছেন।
(মূল দলিলের পাতা নং – ৭৪২)
.
13.251.743
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের ৫১ তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৫ জুলাই, ১৯৭১ |
ইকোনোনিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিলের ৫১ তম অধিবেশনে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি, ৫ জুলাই, ১৯৭১।
১৯৭১ সালের ৫ জুলাই জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি থেকে উদ্ধৃতাংশ অনুসরন হয় যে “ইকোসক” (৫১ তম অধিবেশনে) পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের জাতীয় দূর্যোগ ও সমতুল সংক্রান্ত জরুরী পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয় বিষয়ে সচিবালয়ের ফোকাল পয়েন্ট রেফারেন্স এর অধীনে প্রণীত হয়।
তা স্বত্তেও সাম্প্রতিক দূর্যোগ এ সাহায্যো করার জন্য উদ্বিগ্ন একটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে হতাশা বাড়ছে এবং ধারনা করা হয় এই ধরনের বিপর্যয়ের সময়ে আন্তর্জাতিক যে প্রচেষ্টা তা চাহিদার তুলুনায় সংক্ষিপ্ত।
এই উদ্বেগ আসলে ভারত সংলগ্ন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু উল্লেখযোগ্য অন্তঃপ্রবাহ থেকে পূর্ব পাকিস্তান নিজেই জনসংখ্যার দূর্দশা লাঘব করার প্রয়োজনীতা থেকে গৌন দুঃখজনক এবং অভূতপূর্ব পরিস্থিতির দ্বারা তীব্রতর হয়েছে।
কোন সন্দেহ নেই যে, সম্পদ ও প্রযুক্তিগত ক্ষমতা আধুনিক সমাজ পর্যন্ত সুদৃঢ় করার জন্য অনিবার্য হিসাবে জাতিসংঘ ব্যবস্থার মধ্যে বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোর জন্য একজন প্রধান জরুরি এবং ব্যবস্থা করা আন্তর্জাতিক কর্ম।
প্রকৃতপক্ষে কাউন্সিল বিবেচনা করা হবে কিনা তা এই কারনগুলো রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত করে বিনয়ী প্রস্তাব করে উর্ধ্বগামী পুনর্বিবেচনার জন্য কল না চাওয়ার সিদ্ধান্ত।
.
13.252.744
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার প্রিন্স সদুরুদ্দিন আগা খানের বিবৃতির পূর্ন বিবরণ | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৫ জুলাই, ১৯৭১ |
“ইকোনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার প্রিন্স সদুরুদ্দিন আগা খানের বিবৃতির পূর্ন বিবরন”
জনাব রাষ্ট্রপতি হিসেবে আপনি ভাল কল্পনা করতে পারেন, আমি সব হস্তক্ষেপের নিরতিশয় বিবরন মনযোগ দিয়ে শুনেছি।
এখানে আমার মনে হয়েছে, একটি স্পষ্ট পদ্ধতিগত সমস্যা রয়েছে যা একটি সংখ্যক স্পিকার দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে।
১৯৬৯ সালে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ কতৃর্ক গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ রুপরেখা এখানে জোর দিয়ে করা হয়েছে এবং জাতিসংঘের হাইকমিশনার অবশ্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেজিসলেটিভ অঙ্গ এক হতে নিবেচনা করেন যা সিদ্ধান্তের অধীনে দায়ী থাকে।
যদি হাইকমিশনারকে আহব্বান করা হয় তার রিপোর্টের উপর মন্তব্য করতে বা কোন প্রশ্ন বা উত্তর যা রিপোর্ট এর ভিত্তিতে তাকে তা নির্দেশ করা যাবে, তিনি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সামনে তা প্রদর্শিত করতে পারবেন।
আমি তাই করেছি, আসলে যেহেতু এই সিদ্ধান্ত আফ্রিকায় উদ্বাস্তদের একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সম্পর্কে কিছু কিছু বিবরনের মধ্যে দিয়ে ১৯৬৯ সালে গৃহীত হয়।
তবে যতোদূর প্রশ্ন উদ্বিগ্ন হয়, পাকিস্তানের বিশিষ্ট প্রতিনিধি দ্বারা স্পষ্টভাবে ১৯ শে মে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্মলিখিত মহাসচিব দ্বারা ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে ন্যস্ত রুপরেখার দ্বারা উত্থাপিত।
এই বিশেষ ফাংশন কেবল সব নথিতে এ রিপোর্ট করা হয় না, প্রথমত আপনি এটি আগে গ্রহন করা হয়নি। কঠোরভাবে বললে, উদ্বাস্তুদের জন্য হাই কমিশনার এর রেফারেন্সে স্বাভাবিক শর্তাবলীর অধীনে কিন্তু এইড চ্যানেলিংসব জাতিসংঘের উপাদান এর জন্য চ্যানেল হিসেবে, ভারত এবং দ্বিতীয়ত কারন এই বিশেষ সংকট এর সূত্রপাত।
ন্যায়ত রিপোর্ট দ্বারা আচ্ছাদিত বিশেষ সময়ের শেষে পরে, অন্যান্য ভাষাভাষী দ্বারা নির্দেশিত হয় সংকটের সূত্রপাত।
অতএব জনাব প্রেসিডেন্ট, আমি ভেবেছি বিকেলে আপনার প্রগতি ও উন্নয়নের এখানে একটি খুব শক্ত অবদান রাখার।
আসল কথা হলো, যতটা সমস্যা পদ্ধতিগত দিক সংশ্লিষ্ট হয়, আমি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সাথে।
আমি অবশ্যই প্রস্তুত আছি এবং বেশ ইচ্ছুক এবং সংবিধি অধীনে আমার ফাংশনের কোন দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আপনাকে রিপোর্ট করা যায় কিন্তু এই জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ অর্থাৎ যার একটি সার্বভৌম স্বত্তা আছে তার থেকে ক্লিয়ারেন্স পেতে হবে।
ধন্যবাদ জনাব মোঃ রাষ্ট্রপতি।
.
13.253.745
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
ইকনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে ভারতীয় পর্যবেক্ষক দলের নেতা রাষ্ট্রদূত এন. কৃষ্ণন এর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৯ জুলাই, ১৯৭১ |
“ইকনোমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে ভারতীয় পর্যবেক্ষক দলের নেতা রাষ্ট্রদূত এন. কৃষ্ণন এর বিবৃতি” ৯ জুলাই ১৯৭১।
এই প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধির প্রবণতা ভারতীয় দৃশ্যের বৈশিষ্ট্যর সঙ্গে কয়েক বছর নেতৃস্থানীয় বিভিন্ন নতুন নির্দেশাবলীর মধ্যে একটি সাফল্যে এবং দেশ টেকসই ও সারগর্ভের উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।
সাধারন নির্বাচন যা এই বছর ফেব্রুয়ারীতে সংঘটিত হওয়ার পর, আমাদের সরকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার উপর একটি নির্ধারিত আক্রমনের জন্য প্রস্তুত হয়ে ছিল।
আমাদের পরিকল্পনা অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য একটি এক্সিলারেটেড। তবে পূর্ববাংলার দুঃখজনক ঘটনার কারনে পরিস্থিতি একটি কঠিন রুপ পেয়েছে এবং সেখান থেকে উদ্বাস্তুদের একটি বৃহৎ অংশ ভারতে অন্তঃপ্রবেশ ঘটেছে।
অন্তঃপ্রবেশ এখনও নির্বিঘ্নে চলতে থাকে এবং জুন নাগাদ ৬. ৩ মিলিয়নের একটি বিস্ময়কর চিত্র পৌঁছেছে। এটা পরিষ্কার যে খাদ্য, আশ্রয় এবং তাদের ঔষধ প্রদানের কাজটি অবশ্যই উচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে।
এমনকি ৮০ মিলিয়ন এই কাজের জন্য বর্তমান বছরের জন্য আমাদের বাজেট এর টোকেন বিধান একটি অতিরিক্ত কর আমাদের মানুষের উপর ৩০ শতাংশ বোঝা বোঝানো হয়েছে।
সুতরাং আমরা আমাদের সাথের এই বোঝা এবং এই সহায়তা চ্যানেলের জাতিসংঘ ব্যবস্থার প্রচেষ্টার ভাগ বিশ্ব সম্প্রদায়ের সহানুভূতিশীল সারা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে প্রকাশ করছি।
যাই হোক, ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তুদের অনেকে এখনও রাক্ষুষে এবং এই সংখ্যার সাথে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হবে। একই সময়ে ত্রান প্রচেষ্টা, এমন কি একটি প্রসারিত এবং ত্বরিত স্কেলে এ সেরা কেবলমাত্র একটি অস্থায়ী উপশমকারী হতে পারে।
বাস্তব এবং সত্যি মানবিক সমাধান হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, চিনতে এবং গ্রহন করতেই এসেছে।
উদ্বাস্তু প্রবাহ বন্ধ করা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো উদ্বাস্তুদের পূর্ন স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং ভবিষৎ এর জন্য আস্থা ও বিশ্বাস সৃষ্টি করে এবং তাদের স্বদেশের কাছে তাদের প্রত্যাবর্তন করা।
আমাদের প্রতিনিধিদল এর উদ্যেগে কাউন্সিলের বর্তমান সেশন এবং সমর্থন সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, হাঙ্গেরী, নরওয়ে এবং অন্যদের প্রতিনিধি দ্বারা তাদের বিবৃতি প্রকাশের সময় এই আইটেমটি যুগোস্লাভিয়া এবং নিউজিল্যান্ড কর্তৃক হওয়ায় কৃতজ্ঞ।
আমরা বিবৃতির জন্য আগ্রহী এবং অপেক্ষা করছি যা ইউ এন উদ্বাস্তু আগামী সপ্তাহে পরিষদে উত্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আমরা নিশ্চিত যে এই আলোচনার সূত্রে আরও সহায়তা সচল হবে এবং এইসব দুর্ভাগা উদ্বাস্তুদের ত্রান চাহিদা পুরন এবং তাদের দ্রুত এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন এর বিষয় হাইলাইট হবে
আমরা আশা করি ইকোসক তার সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি এর সমস্যা বিবেচনা করে এবং একটি টেকসই ও স্থায়ী সমাধান অনুমোদন করবে।
.
13.254.746-749
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে ইন্টার এজেন্সী এ্যাফেয়ার্সের সহকারী মহাসচিব মিঃ ইসমত টি. কিত্তানীর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ জুলাই, ১৯৭১ |
১৬ জুলাই, ১৯৭১ এ ইকনমিক এ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে ইন্টার এজেন্সী এ্যাফেয়ার্সের শককারী মহাসচিব মিঃ ইসমত টি. কিত্তানীর বিবৃতি
মি. প্রেসিডেন্ট
পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ ও এটির মহাসচিবের পরিষদের প্রচেষ্টার কথা জানানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
বক্তব্যের শুরুতে এই উদ্যোগের পটভূমির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া আমার জন্য সহায়ক হতে পারে, যাতে অনেক সংগঠক ও প্রোগ্রামার সম্মিলিতভাবে কাজ করছে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও পূর্ব পাকিস্তানের জরুরী ত্রাণ প্রয়োজনীয়তা মেটাতে জাতিসংঘের অধিভুক্ত সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে বিশুদ্ধ মানবিক ভিত্তির উপর পাকিস্তান সরকারকে সম্ভাব্য সকল সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে ২২শে এপ্রিল মহাসচিব প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে চিঠি পাঠান। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের কল্যানের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়নপত্র (১২ মে প্রকাশিত হয়) তৈরি হচ্ছে বলে ৩রা মে গৃহিত একটি চিঠিতে জানায়। পরবর্তীকালে, ১৭ই মে, পাকিস্তান প্রেসিডেন্টের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবকে ফোন করেন এবং, আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রস্তাবটি গ্রহন করে ত্রাণ প্রয়োজনীয়তার দিকসমূহ ব্যাখ্যা করেন। জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধির যোগাযোগের মাধ্যমে এগুলোর বিস্তারিত ঘোষণা করা হয়, যা অনুষ্ঠিত হয় ২২শে মে (প্রকাশিত হয় ২৬শে মে)। একই চিঠিতে পাকিস্তান সরকার মহাসচিবকে অবহিত করেন যে যেসব বিদেশি ও জাতিসংঘ প্রকল্প কর্মকর্তা পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেছে তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে ফিরে আসতে পারেন।
এটা উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক যে একইস সময়ে, ১৯শে মে জাতিসংঘ মহাসচিব পূর্ব পাকিস্তান থেকে তার পার্শ্ববর্তী ভারতে উল্লেখযোগ্য ও ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তু প্রবাহের কষ্ট ও দূর্ভোগ দূরীকরণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। যদিও এটি আন্তর্জাতিক সহায়তা চেষ্টার ভিন্ন দুটি কার্য, অবশ্যই, পরিস্থিতি অনুযায়ী পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতি হলে, সেখানে গ্রেপ্তারের ও উদ্বাস্তু প্রবাহ ফেরানোর ভাল সম্ভাবনা থাকবে।
নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের স্থায়ী জাতিসংঘ প্রতিনিধির নিম্নোক্ত পরামর্শ, মহাসচিব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে আমার উচিত পূর্ব পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক ত্রাণ সহায়তায় কার্য জড়িত পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে পরামর্শ করার জন্য পাকিস্তানে যাওয়া। আমি ইসলামাবাদে ৩রা জুন পৌছাই এবং পরবর্তী সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আমাকে গ্রহণ করেন। ত্রাণ কার্য কার্যক্রম কিভাবে সংগঠিত হবে তা নিয়ে পূর্ণ ঐক্য ছিল, এবং পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট আমাকে অনুরোধ করেন যে জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে এই বার্তা পৌছাতে যে জাতিসংঘ তার থেকে ও তার মাধ্যমে আসা সকল ত্রাণ তার গন্তব্য তথা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে পৌছাবে এমন নিশ্চয়তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে দাতাদের প্রদান করার অবস্থায় থাকবে।
এই চুক্তি অনুসারে ও ত্রাণ কার্য পরিকল্পনার প্রথম পদক্ষেপ রুপে মহাসচিব পূর্ব পাকিস্তানে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ করেন, যিনি অবিলম্বে তার দ্বায়িত্ব গ্রহনের জন্য ঢাকা ভ্রমণ করেন। তার প্রধাণ কাজ হল কেন্দ্র রুপে এজেন্সি ও জাতিসংঘ পরিবারের প্রোগ্রামসমূহের সমন্বয় সাধন করা যা তাদের নিজ-নিজ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান করবে। একই সময়ে পরিপূরক হিসেবে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের নিয়ে পাকিস্তান সরকারের আন্তঃবিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়, এবং এই দুই দল ত্রাণ কার্য পরিকল্পনা ও সংগঠন নিয়ে একসাথে কাজ করছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা, নিউ ইয়র্ক ও জেনেভা দপ্তরের মাঝে সরাসরি ও বিশ্বাসযোগ্য যোগযোগ পথ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮ই জুন জাতিসংঘ মহাসচিব সদর দপ্তর সমন্বয় সাধক নিয়োগ করেন যিনি আন্তঃ এজেন্সি বিষয়ক দপ্তরের কাঠামোতে তার কার্য সম্পাদন করেন। জুনের শেষ হতে তিনি জেনেভায় তার কার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থায়ী ইন্টার-এজেন্সি ইউনিটের গঠনের সাথে মিলিয়ে একটি ইন্টার-এজেন্সি ওয়ার্ক গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৬ই জানুয়ারিতে জাতিসংঘ মহাসচিব সকল সরকার, আন্তঃসরকার ও বেসরকারি সংগঠনের কাছে ও ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠান ও দাতাদের কাছে আবেদন পাঠান, অর্থ বা এ ধরণের কিছু দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের উপর আরোপিত হওয়া দুর্ভোগ দূর করতে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে দাতারা সর্বোচ্চ সম্ভাব্যভাবে জাতিসংঘ পরিবারের প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়ায় নিজেদের জড়িত করবে, বিশেষ করে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ও ইউনিসেফের সাথে। এবং তিনি আস্থা রাখেন যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরও একবার মানবিক ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগীতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবে যা জাতিসংঘ সনদে সন্নিবেশিত আছে।
ত্রাণ সহায়তার বিধিবিধানে মৌলিক কাঠামো এভাবে জাতিসংঘ থেকে এবং এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মহাসচিবের আবেদন পাঠানোর একমাস পর মানবিক সহায়তার মাত্রা ও প্রকৃতি মূল্যায়ন পর্যালোচনা করতে সরকারের সাথে পারস্পরিক সহায়তায় একটি টেকসই প্রচেষ্টা হয়। পূর্ব পাকিস্তানে বিদ্যমান থাকা পরিস্থিতিতে খাদ্য, পরিবহন ও স্বাস্থ্য বিষয়ক জমা হওয়া তথ্যসমূহ এবং সেখানকার মানুষের কষ্ট দূর করতে প্রয়োজনীয় সহায়তার সূচকসমূহ এই রিপোর্টে আছে যা আজ প্রকাশিত হয়েছে। মহাসচিব নিজেকে মানবিক প্রচেষ্টায় অবদান রাখতে তার জরুরি আবেদন পুনরারম্ভ করার কাজে অবদান রাখায় নিয়োজিত করেন যা হল জাতিসংঘ প্রক্রিয়ার সংগঠন ও প্রোগ্রামসমূহের মুখোমুখি হওয়া সবচেয়ে বড় সমস্যাসমূহের মধ্যে অন্যতম।
যেহেতু উপরোক্ত প্রতিবেদন এখন সহজলভ্য, তাই আমার পূর্ব পাকিস্তানের খাদ্য, পরিবহন ও স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিস্তারিত বর্ণনা ও সহায়তা প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব বোঝানোর প্রয়োজন নাই। কিছু বিষয়, যাইহোক, গুরুত্ব অনুযায়ী বিশেষ মনযোগ আকর্ষণ করে এবং এগুলো উল্লেখ করতে আমার কিছু সময় নেয়া উচিত।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ ১৯৭০ সালের ১১ ও ১২ মার্চ বদ্বীপ এলাকায় আঘাত হানায় বড় বন্যা ও সাইক্লোনে কষ্টে ভোগেছে এবং ভোগেছে মার্চ ১৯৭১ এ শুরু হওয়া গৃহবিবাদের ফলেও। পুর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিনিধির রিপোর্ট ইঙ্গিত দেয় যে শস্যের ক্ষতি, শক্তি ক্রয় ও পরিবহন বিচ্ছিন্নতার কারণ হয়ে গুরুত্বপুর্ণ সংখ্যক মানুষ গ্রাম্য এলাকায় যাচ্ছে। এখন ও নিকট ভবিষ্যতে এই অবস্থা খাদ্য ও ত্রাণ কার্যক্রম জটিল করবে কিন্তু উচ্ছেদ মানুষের বড় জমায়েত প্রতিবেদনে আসেনি।
পরিস্থিতির প্রাথমিক পর্যালোচনা পরামর্শ দেয় যে প্রাথমিক সমস্যা হল খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণ সহায়তার বন্টন। পাকিস্তান সরকারের এই বিষয়ক পরিপুরক কমিটি মহাসচিবের প্রতিনিধিকে জানায় যে চট্টগ্রাম বন্দরকে পূর্ণ কার্যক্ষম ও কার্যকর করতে পাকিস্তান সরকার বড় বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। যাইহোক, রেল ও রোড পরিবহন ক্ষমতা উদ্বেগজনকভাবে কমে গেছে এবং এটি পরিস্কার যে খাদ্য ও ত্রাণ সরবরাহের জন্য অবশ্যই জলপথে আস্থা রাখতে হবে।
পূর্ব পাকিস্তানের মহাসচিবের প্রতিনিধি ও ফুড ও এগ্রিকালচারে, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ও ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ক পাকিস্তান সরকারের কমিটির সাথে পূর্ব পাকিস্তানে বড় মাত্রার আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টার পরবর্তী পরিকল্পনা ও সংগঠনের জন্য কাজ করছে। সহায়তা প্রদানের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতিসংঘের খাদ্য মজুদ ও তহবিলের হিসাবনিকাশ ইঙ্গিত দেয় যে প্রাথমিকভাবে এখন মোট ২৮,২০০,০০০ মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
FAO এর মহাপরিচালকের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আরও জরুরী খাদ্য সহায়তার পরামর্শ দিবেন কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক পূর্ব পাকিস্তানে থাকা FAOA VFP দলের তথ্যের আশায় আছেন। ঢাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত FAO-এর জ্যেষ্ঠ কৃষি অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম বন্দর ও তার সংরক্ষণ সুবিধার উপর কিছু পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার মতে পরিবহন বিচ্ছিন্নতা এখনও একটি সীমাবদ্ধতা এবং ফলন ও বিলির অনিশ্চয়তার জন্য শস্য হিসাব করা কঠিন। পুষ্টির অভাবের কারণে স্বাস্থ্য সমস্যা হওয়ার প্রবল আশংকা আছে। তার কাজ শেষ হওয়ার পর আরও ব্যাপক প্রতিবেদন তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।
পূর্ব পাকিস্তান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাথে মিলিতভাবে মহাসচিবের অনুরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. ক্যান্ডাউয়ের পাঠানো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরীপকারী দল একটি প্রাথমিক জরীপ সম্পন্ন করে এবং ২৯শে জুন থেকে ৯ই জুলাইয়ের মধ্যে চিকিৎসা সমস্যা হবে এই অনুমান করে। প্রগ্রামের প্রাথমিক অবস্থায় পূর্বানুমিত প্রধান সংক্রামক রোগ সমস্যা ও যথাসম্ভব পুষ্টি সমস্যা মোকাবেলা সামলাতে সহায়তার পাশাপাশি প্রধান রোগ প্রতিরোধ, চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নেয়া হয়। সরকারের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতায় দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও চাহিদার হিসাব এখন বর্ণনা হবে।
সরকারের একটি নির্দিষ্ট আমন্ত্রণের সাড়ায়, ঢাকার ইউনিসেফ অফিস পূর্ব-স্কুল ও অল্পবয়সী স্কুল শিশুদের মাঝে খাদ্য বন্টনের যোগান প্রদান ও সংগঠনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করেন। সরকার প্রস্তাব দেয় যে স্কুল্গুলোকে খাদ্য কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতে এবং এটি ইঙ্গিত দেয় যে যদিও বর্তমান ব্যবস্থা এই কার্যক্রম সামলাতে পারবে, তবুও প্রস্তাবিত প্রোগ্রামের প্রাথমিক ১ বছর সময়ে পরিবহন ও বিশেষ খাদ্য যোগানের প্রয়োজন যাতে ইউনিসেফ সকল প্রাথমিক স্কুলের মদ্ধ্যে কমপক্ষে ২৫% স্কুলের মাধ্যমে পূর্ব-স্কুল ও স্কুলগামী বয়সের শিশুদের কাছে পৌছানোর লক্ষ্যে সংযুক্ত থাকবে। আশা করা হয় যে এটি ১,২০০,০০০ অল্পবয়সী শিশুদের কাছে পৌঁছাবে এবং প্রতিদিন প্রাক-রান্নার উচ্চ প্রোটিনযুক্ত ১০০ গ্রাম শিশু খাবারের পরিপূরক প্রদান করবে। ভোজন প্রোগ্রামে ঘটনা পরস্পরায় একটি পুষ্টি শিক্ষা উপাদান থাকবে, আশা করা হয় যে এটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার দিকে নিয়ে যাবে যা প্রাথমিক জরুরী অবস্থা দূর হওয়ার পর সরকার ইউনিসেফ নয় এমন উৎসের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। একই বিশেষ খাদ্য প্রদান প্রোগ্রামে, ইউনিসেফ বর্তমানের সহায়তা প্রকল্পসমূহ বিশেষ করে স্বাস্থ্য, গ্রাম্য পানি সরবরাহ এবং শিক্ষা খাতের প্রকল্পসমূহ জোরদার করতে একমত হয়েছে। দেশের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে এবং, পরবর্তী কোন পর্যায়ে, ভারত থেকে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের জন্য, যদি, আশা অনুযায়ী, উদ্বাস্তু সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও সম্প্রতি প্রতিষ্ঠিত হওয়া অভ্যর্থনা কেন্দ্রসমূহ শক্তিশালী ও বিস্তৃত করার প্রয়োজন হয়।
অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টাসমূহ যেমন লীগ অফ রেডক্রস সোসাইটিজ, যা তাদের সাইক্লোন দূর্যোগ প্রকল্পসমূহ অব্যাহত রাখবে এমন শর্ত দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের তাদের দুজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে যারা পাকিস্তান রেডক্রস সোসাইটির সাথে একটি জরিপ করবে। কেয়ার সহায়তা প্রোগ্রাম তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং গতিবেগ বাড়াচ্ছে। কিছু সংখ্যক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের বর্তমান কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অথবা নতুন সহায়তা প্রোগ্রাম তৈরি করছে।
এটি, মি. প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানে হওয়া মানবিক ত্রাণ কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা। আমি পূর্বে যেমন বলেছি, পরিস্থিতি ও প্রয়োজন পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে গ্রহণ করা অবদানসমূহ এই প্রতিবেদনে আছে যা আজ ইস্যু করা হয়েছে। আমি কি শুধুমাত্র এটি নির্দিষ্ট করে বলতে পারি যে এই কার্য এখনও বৃহতভাবে পর্যালোচনা ও পরিকল্পনার পর্যায়ে আছে। সহায়তা প্রয়োজনীয়তার সকল হিসাব, যাইহোক, ত্রাণ কার্যের জন্য বাহ্যিক উৎসসমূহের সংহতি বিধানের আশু প্রয়োজনীয়তার দিকে নজর দেয়।
উপসংহারে আমি এই পরিষদে মহাসচিবের গভীর কৃতজ্ঞতা ও উপলব্ধি গৌরবমণ্ডিতভাবে জানাতে চাই যাতে সকল জাতিসংঘ প্রোগ্রাম ও এজেন্সি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মসৃণ ও ঐক্যের সাথে কাজ করেছে।
.
13.255.750-751
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকনমিক এ্যান্ড সোশাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে যুগোশ্লাভ প্রতিনিধি মিঃ এল. মেঝব-এর বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ জুলাই, ১৯৭১ |
১৬ জুলাই, ১৯৭১-এ ইকনমিক এ্যান্ড সোশাল কাউন্সিল-এর ৫১তম অধিবেশনে যুগোশ্লাভ প্রতিনিধি মিঃ এল. মেঝব-এর বিবৃতি
মি. চেয়ারম্যান
প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খান, হাই কমিশনার ফর রিফিউজি, তার চমৎকার ও বিস্তৃত বক্তব্যে কঠিন পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছেন যাত বলা হয়েছে অনেক মিলিয়ন পাকিস্তানি উদ্বাস্তু ভারতে আছে এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে তিনি যেসব কার্যকর সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন সেসব। HCR বর্ণনা দিয়েছে “একটি করুন হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি যা অসংখ্য মানুষের জীবনে প্রভাব রাখছে।” সংক্ষিপ্ত সময়ে হঠাত অসংখ্য লোকের প্রবাহ বস্তুতঃ সাম্প্রতিককালে নজিরবিহীন। উদ্বাস্তুদের সংখ্যা ৬ মিলিয়ন পেরিয়েছে এবং সম্ভবত দূর্ভাগ্যজনকভাবে আরো বাড়তে পারে। অভিযোজন, খাদ্য ও স্বাস্থ্য রক্ষার পদক্ষেপসমূহের খড়চ বিশাল পরিমান এবং নিশ্চিতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতের প্রদেশসমূহ এই ব্যয় বহন করতে পারবে না। এই বিশাল পরিমান ব্যয় যা ভারত করতে বাধ্য হয়েছে, তার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্প ও অগ্রাধিকারের ক্ষতি করে এই ব্যয় স্বভাবতই এই দূর্ভাগা লোকদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। অধিকন্তু, তৃণ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষ কিছুতেই এই প্রবাহের জন্য প্রস্তুত থাকতে পারে না, অথবা তারা আন্দাজ করতে পারবে না যে এই ধরণের স্থানচ্যুতি তাদের নিম্নবিত্তদের জন্য এি সামাজিক সমস্যা তৈরি করবে। এবং যদি এই বস্তুগত ব্যয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্যে কিছুটা ক্ষতিপূরণ করা যায় তবুও প্রশ্ন থাকে সর্বোপরি এই জটিল সমস্যার মানবিক দিক মনে রেখেকিভাবে সামাজিক এমনকি রাজনৈতিক ফলাফল সমাধান করা যাবে অথবা কমানো যাবে যেগুলো এই পরিস্থিতিতে অবশ্যম্ভাবী। এবং আমরা কি বলি এই মানুষদের দূর্ভাগ্য নিয়ে, যাদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু আছে, যারা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে নিজেদের মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে না পারার অবস্থায় পড়েছে এবং যাদের জীবন ভয়ানক স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা পরিস্থিতির দ্বারা বিপদাপন্ন হয়েছে। এই কারণে, যুগোস্লাভ সরকার ও জনগণ, মানবিক বিবেচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে, ভারত উপমহাদেশে উন্মুক্ত হতে থাকা চরম উদ্বেগপূর্ণ নাটকের অনুভূতি ও যে অনিষ্টের কারণে লক্ষ লক্ষ পুরুষ, মহিলা ও শিশু দূর্দশায় পতিত হয়েছে তা লক্ষ্য রাখছে। আমরা অনেক আন্তর্জাতিক বক্তার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত যে এমন একটি সমাধান বের করা বাধ্যতামূলক যার ফলে উদ্বাস্তুরা তাদের ঘরে ফিরে যেতে পারে, যেহেতু এটি এইসব মানুষের সমস্যার এবং একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী আগ্রহের সবচেয়ে স্বাভাবিক ও মানবিক পথ হবে।
যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট হোসিপ ব্রোজ টিটো একই বিবেচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর কাছে পাঠানো বার্তায় উদ্বাস্তুদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
যেহেতু হাইকমিশনার ফর রিফিউজি জাতিসংঘ পদ্ধতির সকল সংস্থা ও প্রোগ্রামের সহায়তা কার্য সমন্বয়ের কেন্দ্ররুপে কাজ করছে, সেহেতু আমরা আশা করি যে তিনি তার বিজ্ঞ অভিজ্ঞতা ও কর্তৃত্ব উদ্বাস্তুদের প্রকাশিত ইচ্ছা ও তাদের আগ্রহ প্রাথমিক বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদী সমাধান পেতে ব্যবহার করবেন। ভারত ও পাকিস্তানের দ্বায়িত্ববান লোকদের সাথে তার যোগাযোগ ও কথাবার্তা এই আশা করা ন্যায় করে যে এই সমস্যা, যার ভার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর বর্তায় এবং এর সাথে জড়িত প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যে বোঝা হয়, শেষ পর্যন্ত ইতিবাচকভাবে সমাধান হবে। এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও যারা তাদের ক্ষমতার মধ্যে উদ্বাস্তুদের তাদের ঘরে ফেরাতে সক্ষম করতে চায় তাদের দ্বায়িত্ব। এই কার্যের সফল প্রয়োগ একই সঙ্গে এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি বুঝায় যা আরও উদ্বাস্তু প্রবাহ বন্ধ ও তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে।
এতে অংশ নিতে, যুগোস্লাভ সরকার তার সম্ভপর সীমায় উদ্বাস্তুদের জন্য সহায়তা বৃদ্ধির অনুমোদন করেছে। এইই সহায়তা ইতিমধ্যেই জাতিসংঘ হাইকমিশনার ফর রিফ্যুজির মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়েছে। যুগোস্লাভ রেড ক্রস ও সহায়তা তোলার আবেদন ইস্যু করেছে যা পরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। ভারতের ভূমিতে উদ্বাস্তুদের সহায়তা করতে জাতিসংঘ পদ্ধতির সহায়তা সমন্বয়ে হাই কমিশনারকে যুগোস্লাভ সরকার প্রয়োজনীয় সমর্থন সহায়তা করতে প্রস্তুত। এই পথে হাইই কমিশন কর্তৃক গৃহীত অন্যান্য কার্যক্রমও আমরা অনুমোদন করি। আমরা তার বক্তব্যে গভীর অভিভূত যে পূর্ব পাকিস্তানের ত্রাণ কার্যক্রম “আমাদের সময়ের অন্যতম বড় ও কঠিন কার্যের” প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে এই বড় ও জটিল কার্য সংগঠনে এইচসিআর ECOSOC এর অনুমোদন প্রাপ্য।
জাতিসংঘ পদ্ধতির সদস্য দেশসমূহ,বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা ও স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের জাতিসংঘ মহাসচিব উ. থান্টের আবেদনের পক্ষে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এই আশা বজায় রাখে যে মানবিক কার্যক্রম সফলতায় শেষ হবে এবং এভাবে উদ্বাস্তু সমস্যার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানে যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এই সম্পর্কে, আমরাও মহাসচিবের প্রতিনিধি মি. কিত্তানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, ত্রাণ কার্য সূচনায় তার অবদানের জন্য পরিষদে তার অসাধারণ প্রতিবেদনের জন্য।
.
13.256.752-754
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইকনমিক এন্ড সোশ্যাল কাউন্সিল এর ৫১ তম অধিবেশনে নিউজল্যান্ড প্রতিনিধি মিঃ জে. ভি. স্কটের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ জুলাই, ১৯৭১ |
জুলাই ১, ১৯৭১ এ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের প্রথম অধিবেশনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি মিস্টার জে. স্কটের বিবৃতি
আমরা আগ্রহ এবং মূল্যায়নের সাথে ভারতে অবস্থানরত পুর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে হাইকমিশনারের ভূমিকার বিস্তৃত বিবৃতি শুনেছি ।
আমরা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি তার কাজের বিশালতার বর্ননা দ্বারা এবং সঙ্গে প্রায় সাত লাখ শরণার্থীর আকস্মিক ক্রমাগত আগমনে ভারত সরকারের উপর পতিত প্রচণ্ড বোঝার বর্ননা দ্বারা। আমরা আবারও উদ্বাস্তুদের পক্ষ হতে তার হস্তক্ষেপসমুহের আবশ্যকতা স্বীকার করছি এবং এই অতুলনীয় মানবিক ট্র্যাজেডির কঠিন চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করছি ভারতীয় কর্তৃপক্ষসমূহকে, বেসরকারি এবং আন্তঃ সরকারি সংগঠনসমুহকে এবং বেসরকারী নাগরিকদের প্রতি।
আমরা হাইকমিশনারের প্রতি কৃতজ্ঞ ত্রাণ কার্যক্রমের এমন একটি সুস্পষ্ট ও বিস্তারিত চিত্র প্রদানের জন্য, যার জন্য তিনি কেন্দ্রবিন্দুতে এবং কিছু দিন আগে আমার প্রতিনিধিদলের করা জিজ্ঞাসাসমুহে সাড়া দেয়ার জন্য।আমরা আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় বিষয়ে তার বক্তব্য থেকে আস্থা গ্রহণ করতে পারি।আমরা আশ্বাস বোধ করতে পারি সম্পদ ও ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা সঙ্গে তার আপোষ না করাতে। তার ভাষ্যমতে এ এমন এক গুরুতর মানবিক দুর্দশার পরিস্থিতি যা লাখ লাখ চরম নি:স্ব এবং শারীরিক অবসাদগ্রস্থ মানুষের অপ্রতিরোধ্য আগমনের দ্বারা নির্মিত।বিশেষভাবে আমরা জাতিসংঘের সংস্থাসমুহের মধ্যে বিদ্যমান অকৃত্রিম সহযোগিতার বাতাবরণ এবং যৌথ উদ্যোগ বিষয়ে তার মন্তব্য শুনে আনন্দিত হয়েছিলাম।
যদিও ইতিমধ্যে অনেক কিছু সম্পন্ন হয়েছে কিন্তু অনেক কিছুই এখনও করতে হবে।
আমরা এই ক্রমবর্ধমান মানব প্রবাহের পরিবর্ধিত চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বাসস্থান এবং আশ্রয়, পরিবহন, খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহের জন্য অতিরিক্ত সহযোগিতার প্রয়োজনের সম্মুখীন। অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন, অপুষ্টি, বিশুদ্ধ পানি ও চিকিৎসা সামগ্রী এবং সুযোগ-সুবিধার অভাবে খুব দ্রুত মহামারি এবং সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুব স্পষ্ট। এই জরুরী অবস্থা মেটাতে ভারত সরকারের সাহায্যার্থে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, এফ এ ও, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বেসরকারী সংস্থাসমূহের কার্যক্রম প্রশংসনীয়।
হাইকমিশনারের বক্তব্য মানুষের দুর্দশার উপর নতুনভাবে আলোকপাত করে। জরুরি সহায়তার প্রয়োজন রয়ে গেছে, যদি তা অপর্যাপ্ত থেকে যায় তবে তা খুব দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া নিশ্চিত । ভারতীও সীমান্ত জুড়ে উদ্বাস্তু প্রবাহ অব্যাহত সঙ্গে সঙ্গে সাহায্যের প্রয়োজনের পরিমাণ বেড়েছে।এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের চোখ মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেনা।
(৭৫৩ পৃষ্ঠা)
নিঃসন্দেহে যে মানব দুর্দশা সৃষ্ট হয়েছে তা দূর করতে সাহায্য সঞ্চালনের করার জন্য হাইকমিশনারের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । তিনি যা বলেছেন তা একটি আশঙ্কাময় পরিস্থিতিতে অন্যদের পক্ষ থেকে সমবেদনা ও প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে। তার প্রভাব ওপর পক্ষে তীব্র অনুভূতি তৈরি করা সমস্যাসমূহ মোকাবেলার এক পক্ষকে নিয়ন্ত্রন করছে। আমরা আশা করি যে কাউন্সিলের অনুপ্রেরণায় হাইকমিশনারের প্রচেষ্টার একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ উন্নীত হবে যেখানে উদ্বাস্তু সমস্যার কারনসমুহ যা ইতোপুর্বে সমাধান করা হয়নাই তা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
আমি 8 জুলাই আমার সাধারণ বিতর্ক বক্তৃতায় বলি যে, ” কেন এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে এটা এই কাউন্সিলে বিবেচনা করা ফলপ্রসূ হবে না, উদ্বাস্তুদের তাদের ঘরবাড়িতে ফিরিয়ে নেয়ার আগে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক অবস্থার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করাও নয় । ইতিমধ্যে সৃষ্ট কঠিন পরিস্থিতি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে এমন যেকোন কর্ম এড়ানোর প্রয়োজন সুস্পষ্ট। নিউজিল্যান্ড নিজেও ভারত বা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়সমুহে জড়িত হতে চায় না।
তা সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড, উদ্বাস্তু সংকট দ্বারা সৃষ্ট ভোগান্তি এবং জীবনের ক্ষতিতে গভীরভাবে পীড়িত এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে এর প্রভাব নিয়ে সচেতন । আমাদের কাছে স্পস্ট মনে হয়, স্বস্তির জলবায়ু প্রতিষ্ঠা ছাড়াই পূর্ব পাকিস্তানে নিতান্ত অপরিহার্য ত্রাণ অর্জন করা যেতে পারে যা বর্তমানে যারা ভারতে উদ্বাস্তু গ্রহণ করছেন তাদের ভয়কে প্রশমিত করবে। মানবিক নির্দেশনাসমূহ খাদ্য এবং আশ্রয় পর্যন্তই ক্ষান্ত হয়না এবং সেই পরিমণ্ডলে এখনও যথেষ্টই কাজ বাকী আছে। এটা হতভাগ্য উদ্বাস্তুদের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ এবং বিশেষভাবে তাদের স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরে যাবার অধিকার পর্যন্ত প্রসারিত যা তাদের একটি স্বাভাবিক জীবন এবং নাগরিক হিসেবে সমাজে সম্পূর্ণরূপে অংশগ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয়। এই সহজ বার্তাটি একটি মানবিক উদ্বেগ, কোন সমাধানের পরিকল্পনা নয় যা কাউন্সিলের কর্মদক্ষতার উপর নির্ভরশীল নয়, আমার প্রতিনিধিদলের আশা যা এই কাউন্সিলের আলোচনা থেকেই উত্থিত হবে।
হাইকমিশনার তার বক্তব্যের শেষের দিকে উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রেরণের আশু প্রয়োজনীয়তা থেকে তার গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় বিষয়সমুহ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এবং আমি তা উদ্ধৃত করি।
“আমি এই সুবাদে উল্লেখ করেছি, যেহেতু উদ্বাস্তুগণ ভারতে স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করতে পারবে না তাই ভারত সরকার জরুরি ভিত্তিতে শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার উপর জোর দিয়েছেন। আমি উদ্বাস্তুদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে পাকিস্তান সরকারের অবস্থানও উল্লেখ করেছি। আমি কাউন্সিলকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমি শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবর্তন যে কোন উপায়ে সহজতর করার জন্য প্রস্তুত। যা প্রকৃতপক্ষে, একটি মানবিক লক্ষ্য যা আমাদের প্রচেষ্টার পথ প্রদর্শন করে। আমি শুধুমাত্র পরিস্থিতির জটিলতায় অত্যন্ত সচেতন। সর্বোপরি এমতাবস্থায় একটি আস্থাপুর্ন পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে শরণার্থী নিজেই স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ইচ্ছুক হবে”।
আমরা স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে তার গুরুত্বপুর্ন অভিমতকে সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান হিসেবে সমর্থন করি।
(৭৫৪ পৃষ্ঠা)
এই মানবিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনার হ্রাসের উপর নির্ভরশীল। আমরা উপলব্ধি করি যে বর্তমান পরিস্থিতিতে আপোস ও সমঝোতার একটি পরিবেশ তৈরি করা বিশেষ কঠিন।
আমরা সবাই নির্দ্ধিধায় উপলব্ধি করে যে, শরণার্থী সঙ্কটের গোঁড়ার সমস্যাসমূহ সমাধান করা সহজ নয় এবং তা বিশেষভাবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সৃষ্ট ঘটনাসমূহ দ্বারা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আমাদের কেউ সমাধানের প্রকৃতির উপর পরামর্শ দেয়ার অবস্থানে নেই। তবে কাউন্সিলের মাধ্যমে, যা করা যেতে পারে, দীর্ঘমেয়াদী নিষ্পত্তির জন্য আপোষ ও সমঝোতার একটি পরিবেশের তৈরির জন্য মনোযোগের দেয়ার দিকে ফোকাস করা যায়। সমস্যা আগে থেকেই অভূতপূর্ব মাত্রার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন এটার সম্মুখীন না হলে তাদের এটা পরে করতে হবে যখন এর মাত্রা অনেক বড় এবং আরো গুরুতর হবে।
এই মৌলিক প্রয়োজন মাথায় রেখে আমি শরণার্থীদের জন্য হাই কমিশনারের প্রচেষ্টার বিশেষভাবে প্রশংসা করছি। আমি তাকে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন ও কল্যাণে তার অব্যাহত প্রচেষ্টাকে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে পারি ।
.
13.257.755
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারত সরকার কর্তৃক জাতিসংঘ মহাসচিবের ত্রাণ সংক্রান্ত স্মরকের জবাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৯ জুলাই, ১৯৭১ |
জুলাই ১৯, ১৯৭১ সাল,ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিবের এইড মেমোয়্যার
ভারতে এখন পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের স্বদেশ প্রত্যাবাসনের বিষয়টি পরম উদ্বেগের এবং জরুরী। সংশ্লিষ্ট সচিব পরিপূরক সরকারগুলির সহযোগিতায় তাদের নিজেদের প্রচেষ্টায় একটি নিরাপদ এবং সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে শরণার্থীদের
স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সহজতর করতে সম্ভাব্য সবকিছু করতে উদ্বিগ্ন। একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি হতে পারে, উভয় সীমান্তে উদ্বাস্তুদের জন্য হাইকমিশনারের একটি নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধিত্ব প্রতিষ্ঠা। শরণার্থীদের জন্য হাইকমিশনার ইতিমধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থীদের প্রচেষ্টার একটি কেন্দ্রীয় বিষয় হিসাবে কাজ করছে। হাইকমিশনারের প্রতিনিধিগণ ভারতের দিকে শরণার্থীদের সংগ্রহের পয়েন্ট, উভয় পক্ষের সীমান্ত ক্রসিং পয়েন্ট এবং পাকিস্তানের দিকে শরণার্থীদের গ্রহণ কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। মহাসচিবের অনুভূতি যে, বৃহৎ পরিসরে এরুপ একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার আগে সীমিত উপায়ে বাস্তবে এটা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্যে কতটা সুবিধাজনক তা পরীক্ষা করা কাম্য ।
মহাসচিব শরণার্থীবিষয়ে উদ্বিগ্ন উভয় সরকারকে পরামর্শ দেয়ার আশা প্রকাশ করেন যে, সীমান্তের উভয় পাশে দুটি কিংবা তিনটি নির্বাচিত এলাকায় হাইকমিশনারের প্রতিনিধিগণ গৃহীত হবে, সরকার এলাকাসমূহ হাইকমিশনার সঙ্গে পরামর্শক্রমে প্রস্তাব করবে। এই ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হলে, এটি ধীরে ধীরে সর্বাধিক অথবা সকল প্রত্যাবাসন পয়েন্ট অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রসারিত হবে । মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন যে, ভারত সরকার এই প্রাথমিক প্রচেষ্টা সম্ভব করতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার দিতে প্রস্তুত থাকবে। অনুরূপ একটি পরামর্শ ১৯শে জুলাই ১৯৭১ এ পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধিদের কাছেও করা হয়েছে।
.
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ উপসংস্থার (ইউ এন সাব কমিশন) কাছে বেসরকারি বিশ্বসংস্থাসমুহের আবেদন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ২০ জুলাই,১৯৭১ |
জুলাই ২০,১৯৭১ তারিখে জাতিসংঘ উপসংস্থা (ইউ এন সাব কমিশন) এর কাছে বেসরকারি বিশ্বসংস্থাসমুহের আবেদন
২২ টি আন্তর্জাতিক বেরসরকারি প্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান ও বৈষম্য দুরীকরনের আবেদন নিয়ে জাতিসংঘ উপসংস্থার অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের কাছে পেশ করবেন বলে একটি পরামর্শে এসেছেন। যেন এই বিষয়ের উপরে অগাস্ট ২,১৯৭১ এর ২৪ তম সেশনে একটি গঠনমুলক পদক্ষেপ নেয়া হয়।
এই রিপোর্টটি “পুর্ব পাকিস্তানে সৃষ্ট সামগ্রিক অনাচার, মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা ‘’বিষয়ক।
জুলাই ২০ ,১৯৭১ নিউ ইয়র্ক থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত ,এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলে যে, তারা এই রিপোর্টটি দেখে খুব অবাক হয়েছেন। । ‘ইউ থান্ট’ এর এক বর্ননায় একটি সাম্প্রতিক ঘটনা উঠে এসেছে, যেখানে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু পুর্ব বাংলা থেকে ভারতে আসছে। এই ঘটনাকে ‘মানব ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজিক ঘটনা ‘ হিসেবে বলা হয়েছে। তারা বিস্ময়ের সাথে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে যে, এই দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের মানবাধিকারের প্রতি জাতিসংঘের কোনো সংস্থা নজর দেয়নি ও একটি কথাও বলেনি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয় যে, তাদের সংস্থা বুঝে গেছে যে, জাতিসংঘ তাদের নিজেদের সার্থে পুর্ব বাংলার মানুষ এবং বাস্তুহারাদের মানবাধিকারের বিষয়ে তারা বিরক্তি দেখাচ্ছে। ২৪ তম সেশনে সাব কমিশন কতৃক নিম্নোক্ত বিষয় সমুহে আলোক পাত করার জন্য বলা হচ্ছেঃ
(১) আলোচ্য এরিয়ার আক্রান্ত মানুষদের অধিকার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানানো।
(২)মানবাধিকার লংঘন ও মৌলিক স্বাধীনতার সম্পর্কিত আনা অভিযোগ সমূহ যাচাই বাছাই করা।
(৩) পুর্ব বাংলার স্বাধীনতা ও মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য সাব কমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রনয়ন করা।
(৪)অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের রিজোলিউশনের অধীনে একটা কর্মগোষ্ঠী (ওয়ার্কিং গ্রুপ) নিয়োগ করুন ও আদেশ করুন যেন তারা আলোচনার মাধ্যমে পুর্ব বাংলার মানুষের মানবাধিকারের অবস্থা পর্যবেক্ষন করে।
(৫) সমস্ত দিক বিবেচনা করে আক্রান্ত এলাকা পর্যবেক্ষোণ করুন এবং সংখ্যালঘুদের, সেসব দেশের মানুষদের উপর গনহত্যার বিষয়টি বিশ্লেষণ করুন।
সাবকমিশনে পাকিস্তান ছাড়াও অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,ইঊএসএসআর,কানাডা,ফ্রান্স,ফিলিপিন্স,যুগোস্লাভিয়া,সুদান,রোমানিয়া,নাইজেরিয়া,কেনিয়া,তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়া
প্রতিষ্ঠানসমুহের মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক আইনশাস্ত্র কমিশন,আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংঘ, আন্তর্জাতিক নারী স্বাধীনতা ও শান্তি পরিষদ, বিশ্ব খ্রিষ্টান শিক্ষার্থি সংঘ, বিশ্ব নারী ক্যাথলিক ঐক্য সমিতি,আন্তর্জাতিক নারীআইনজ্ঞ সংঘে এবং আন্তর্জাতিক ক্যাথলিক ইউনিয়ন অফ প্রেস।
.
13.258.756
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারত সরকার কর্তৃক জাতিসংঘ মহাসচিবের ত্রাণ সংক্রান্ত স্মারকের জবাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ২ আগস্ট, ১৯৭১ |
১. বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নেওয়া পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের পুনরায় স্বদেশে পুনর্বাসন করা যে এখন অত্যন্ত উদ্বেগ ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ব্যাপারে মহাসবিবের সাথে ভারত সরকারও একমত প্রকাশ করছে। এর চেয়েও আরো বেশি উদ্বেগের বিষয় হলো পূর্ব পাকিস্তানে চলমান সামরিক নৃশংসতা বন্ধ করা এবং এর প্রভাবে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে ইতিমধ্যে ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থিদের ফিরে যাওয়াও অসম্ভব। ভারত সরকার গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে শরণার্থীদের ফিরে যেতে উৎসাহিত করা, থামানো বা আরো আগমন বন্ধের চেষ্টার পরও ২০শে মে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানের নাগরিকদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণার পরপরই প্রায় ৪০ লক্ষ শরণার্থীর আগমন ঘটেছে।
২. ৭০ লক্ষাধিক শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন এবং দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে এর মূল কারণ হলো পূর্ব পাকিস্তানে তাদের নিজ বাসস্থানে ফিরে যাওয়ার মত অনুকূল পরিবেশের অনুপস্থিতি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের নিয়মিত পাঠক মাত্রই এখন এই বিষয়ে জ্ঞাত আছেন যে পূর্ব পাকিস্তান বিশৃঙ্খলা, সামরিক দমন পীড়ন এবং বাংলাভাষীদের উপর হত্যাযজ্ঞ এখনো চলমান। নিরপেক্ষ বিদেশী পর্যবেক্ষকগণ পূর্ব পাকিস্তানে গিয়ে এবং ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের দূর্দশার চিত্র সরেজমিনে দেখে যে রিপোর্ট দিয়েছেন এবং বিশ্বব্যাংকের দেয়া রিপোর্ট থেকেও এসব তথ্য প্রমাণিত হয়।
৩. লক্ষাধিক শরণার্থী যারা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন, এবং এই সংখ্যা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে, এদের দেখভাল করা যে ভারত সরকারের উপর বোঝাস্বরূপ হয়ে উঠেছে তা ইতিমধ্যেই সবার গোচরীভূত হয়েছে। এরই সাথে এই বিষয়েটিও সকলের নজরে এসেছে যে সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া পরপর দুটি দূর্যোগ পরবর্তী অবস্থা মোকাবেলায় সকল চেষ্টাই বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে, এই দুই দূর্যোগের একটি প্রাকৃতিক, একটি মানুষসৃষ্ট এবং এর মূল কারণ হলো রাজনৈতিক সমন্বয়ের জন্য বাস্তবসম্মত উপায়ের অনুপস্থিতি যার প্রভাব পড়েছে পূর্ব পাকিস্তানের আইন, অনুশাসন ও জনপ্রশাসনের উপর। শরণার্থীদের ভারত থেকে ফিরিয়ে নেয়ার অপরিহার্য শর্ত হলো পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতিসাধন করা। পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখন্ডতা ও স্বাধিকারের মূলনিতির মধ্যকার দ্বন্দ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিকভাবেই চলে আসে যেখানে সামরিক বাহিনী সংখ্যাফরিষ্ঠ জনগণকে দমিয়ে রেখেছে, এই সামরিক জান্তাই গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বিকৃতি জানিয়েছে এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষের উপর নির্বিচারে গণহত্যা, সাংস্কৃতিক নিপিড়ণ, নির্যাতন আরম্ভ করেছে। এই মূল সমস্যার যদি সমাধান করা না হয় তাহলে শরণার্থীবিষয়ক এই সমস্যার সমাধানের জন্য নেয়া সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হতে বাধ্য। সকল চেষ্টাই যে ব্যর্থ হবে তাই শুধু নয়, এর ফলে মূল বিষয় থেকেও আন্তর্জাতিক নজর সরে যাবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে শুরু হওয়া এই বিস্তৃত এবং ভয়ঙ্কর আকারের সামরিক নির্যাতনেরও সম্প্রসারণ ঘটবে।
৪. কিছুদিন পূর্বে যুবরাজ সদরুদ্দিন ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেন যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত হতে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচিত বিভিন্ন জাতিসত্ত্বা ও বিভিন্ন ভাষাভাষী সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়োগ স্বদেশ পুনর্বাসনের পুরো প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করবে। UNHCR গত ১৬ জুলাই জেনেভায় অনুষ্ঠিত ECOSOC সম্মেলনে এই বিষয়ে কোনো প্রস্তাব দেয় নি যে সীমান্তের উভয় পাশে শরনার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রতিনিধিদের অবস্থান শরণার্থীদের তাদের নিজ বাস্থানে ফিরিয়ে নিতে কোন ধরণের সাহায্যে আসবে।
৫. এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকার বুঝতে পারছে না যে ভারতের সীমান্তে গুটিকয়েক সৈন্যের উপস্থিতি কি সুফল বয়ে আনবে। আমাদের বিশ্বাস যে শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাবার ব্যাপারে এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শক্তির মোকাবেলা করতে তারা কোনরূপ সাহায্য করতে পারবে না। পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি জনগণকে দমনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সরকার পাশবিক শক্তি প্রয়োগ করেছে এবং উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এর ফলে ইতিমধ্যেই ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যাওয়া যেমন অসম্ভব হয়ে পড়েছে তেমনি আরো শরণার্থীদের ভারতে নেয়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে।
৬. ভারত সরকার শরণার্থীদের নিজদেশে ফেরত পাঠানোর বিপক্ষে নয় বরং আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে উদ্বিগ্ন এবং তাদের ফেরত পাঠানোর পূর্বশর্ত হলো পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থার উন্নতি সাধন করা যাতে শরনার্থীদের পরবর্তীতে ভারতে আসতে না হয়। প্রসঙ্গক্রমে, মহাসচিব নিশ্চয় ৩০ জুন UNHCR এর করা প্রতিবেদনটি দেখেছেন যাতে ভারত সরকার শরণার্থীদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে পাকিস্তানের এই মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। যুবরাজ সদরুদ্দিন বলেন যে ভারত সরকার শরণার্থীদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে বাধা দিচ্ছে এই অভিযোগের কোন প্রমাণ নেই। ৩০ জুলাই আবার এক প্রশ্নের জবাবে যুবরাজ বলেন যে ভারত সরকার শরণার্থীদের ফেরত যেতে বাধা দিচ্ছে এমনটা বলা যৌক্তিক হবে না। ১৯ জুলাই, কাঠমন্ডুতে ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’ নামে একটি বৃটিশ সংস্থার দুজন স্বেচ্ছাসেবক ভারত সরকার শরণার্থীদের জিম্মি করে রেখেছে এবং তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে বাধা দিচ্ছে পাকিস্তানের এই অভিযোগকে ‘ছাইপাঁশ’ বলে মন্তব্য করেন। ১০ জুলাই যুক্তরাজ্যের নিম্নকক্ষের সদস্য জনাব কর্ণেলিয়াস ই. গালাগার নিম্নকক্ষে একটি ভাষণ দেন যাতে তিনি উল্লেখ করেন ‘পাকিস্তান সরকারের নেয়া পদক্ষেপের কারণে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার প্রতিশ্রুতিতে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত প্রশংসার দাবিদার। পাকিস্তান সেনাবাহিনী পাশবিক শক্তি প্রদর্শন করে যে উসকানী মূলক পরিস্থিতির সূচনা করেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অবিশ্বাস্য সংযম প্রদর্শন করেছে এবং শরণার্থীদের প্রতি অপরিসীম সহানুভূতি দেখিয়েছে। যদি কোন সরকারকে সৎ এবং মানবদরদী বলা যায় তাহলে প্রথম শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করার পরের কয়েক সপ্তাহ থেকেই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার এই সম্মান অর্জন করেছেন। শরণার্থীদের উর্ধমুখী সংখ্যা এই অকাট্য প্রমাণ দেয় যে পাকিস্তান সরকার নির্বাচনে জয়ী দলকে দমন করার জন্য নিষ্ঠুর নীতির আশ্রয় নিয়েছে। শরণার্থীদের কিয়দংশের সাথে বিভিন্ন সময়ে সাক্ষাতকারের উপর ভিত্তি করে আমি এখন বিশ্বাস করি যে, বাঙালির বুদ্ধিজীবী জীবনকে ধ্বংস করার জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করা হয়েছে কারণ সেনাবাহিনী ছাত্র-শিক্ষক এবং অন্যদের উপর নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আমার মতে, এই ঘটনা গণহত্যার নামান্তর। উপরিউক্ত প্রতিবেদনসমূহ এবং এই বিষয়ক অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে দায়িত্বশীল এবং গ্রহণযোগ্য একটি প্রতিবেদনও পাওয়া যায় নি যাতে শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যার্থতা বা তাদের ভারতে আগমনের কারণ হিসেবে পূর্ব বাংলায় বর্তমান আসহনীয় ও দুঃখজনক ঘটনা ব্যাতীত অন্য কোন কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।
.
13.260.762
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে জেনেভাস্থ ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিষ্টস দ্বারা প্রদত্ত টেলিগ্রামের অনুলিপি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১০ আগস্ট, ১৯৭১ |
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস, জেনেভা থেকে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে ১০ আগস্ট ১৯৭১ তারিখে দেয়া একটি টেলিগ্রামের কপি
১০ আগস্ট ১৯৭১
Ref. 2/103/2
NMD/ks
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান,
রাষ্ট্রপতি ভবন,
রাওয়ালপিন্ডি,
পাকিস্তান
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস শেখ মুজিবুর রহমানেকে গোপন সামরিক আদালতে বিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। বিচারের কিছুই লুকানোর নাই।
.
13.261.763-768
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা এবং তাদের প্রতি বৈষম্য প্রতিরোধ করার জন্য গঠিত উপসংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিষ্টস এর প্রতিনিধি মিঃ জন সালজবার্গের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ আগস্ট, ১৯৭১ |
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এর প্রতিনিধি John SALZBERG র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও বৈষম্য প্রতিরোধে গঠিত সাব-কমিশনে বিবৃতি, তারিখ আগস্ট ১৬ আগস্ট, ১৯৭১
১৬ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে নিচের বিবৃতি ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এর প্রতিনিধি John SALZBERG দিয়েছেন সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও বৈষম্য প্রতিরোধে গঠিত জাতিসংঘের সাব-কমিশনে । সাব-কমিশন নিউইয়র্কে ইউ এন সদর দপ্তরে মিটিং করে। বিবৃতি দেয়া হয়েছে ২২টি বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থার পক্ষ থেকে যাদের জাতিসংঘের কনসাল্টিভ স্ট্যাটাস রয়েছে (জাতিসংঘ ডকুমেন্ট নং ই / সিএন. 4 সাব. 2 / এনজিও, 46 জুলাই ২৩, ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ), পূর্ব পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বিবেচনা করতে সাব-কমিশনের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
জনাব চেয়ারম্যান, আমি নথিটির সাথে যেটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সঙ্গে জাতিসংঘের কনসাল্টিভ স্ট্যাটাস রয়েছে এমন বাইশ আন্তর্জাতিক বেসরকারী সংস্থা দ্বারা উপ-কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার এই সুযোগ গ্রহণ করতে চাই (ডকুমেন্ট E / CN.4 / SUB.2 / এনজিও 46)। আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠনগুলোর এই ডকুমেন্ট সারা বিশ্বের ধর্মীয়, আইনগত, শিক্ষা, নাগরিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পর্কিত। আমার নিজের প্রতিষ্ঠান, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস বিশ্বের সব অংশে মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, সম্মান এবং আইনের শাসন দেখতে চায় এবং এটির ন্যাশনাল সেকশন রয়েছে এবং ৬০টির বেশি দেশে বিভিন্ন গ্রুপের সাথে জড়িত।
বেসরকারি সংগঠন বিবৃতির অধিকাংশ বিষয় জরুরী এবং উদ্বেগের ব্যাপার: পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনা যা রিপোর্ট মতে সম্ভবত ২00,000 ব্যক্তির মৃত্যু, অগণিত ঘরবাড়ি ধ্বংস ও গ্রামে গণহত্যা এবং আরো ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু সৃষ্টি করে। মহাসচিব “মানব ইতিহাসের সবচেয়ে দুঃখজনক একটি পর্ব ” বলে উল্লেখ করেন। গত সপ্তাহেই মহাসচিব ত্রাণ সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে বিবৃত দেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক পুনর্মিলনের অগ্রগতির অভাব এবং এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে আইন, শাসন ও সরকারি প্রশাসন বাধাগ্রস্ত হতেই আছে ,এমন এক অবস্থা যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলির ব্যাধিযুক্ত বৃত্ত সংশ্লিষ্ট কর্ত্রিপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই অমানবিক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার প্রচেষ্টাকে হতাশ করে দিচ্ছে, এই মানবঘটিত ট্রাজেডির প্রভাব আরো বড় পরিসর পর্যন্ত যাবে। সৃষ্ট সহিংসতাকে উপমহাদেশের ধর্মীয় এবং জাতিগত গ্রুপ গুলোর সাথে সম্পর্ক এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের সাথে সম্পর্ক আরো জটিল করে তুলেছে (জাতিসংঘ প্রেসরিলিজ, SG/SM 15162, আগস্ট ১৯৭১)
মহাসচিব উপসংহারে বলেন, “অতীতে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অবস্থা ছিল পর্যবেক্ষকের, অবনতি দেখা এবং আশা প্রকাশ করা যে ত্রাণ কর্মসূচী, মানবিক প্রচেষ্টা এবং মানুষের ভাল উদ্দেশ্য মানব দুর্বিপাক এবং সম্ভাব্য দুর্যোগ পরাহত করবে। আমি গভীরভাবে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন শুধুমাত্র মানবিক অর্থে না, শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে এবং এর ফলাফল জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং কাযযাবলির একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসেবেও। এটা আমার মনে হচ্ছে যে বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতি, যেখানে মানবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যা এমনভাবে মিশেছে তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা কঠিন, এটি একটি চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করেছে যা পূরণ করা জাতিসংঘের জন্য আবশ্যক। এই ধরনের পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও ঘটতে পারে। সংগঠন এখন এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে, এর নতুন আবরণ এবং নতুন শক্তি দরকার হয় ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলায়।“
কীভাবে বৈষম্য ও সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা প্রতিরোধ কমিটি মহাসচিব এর জরুরী আবেদনের জবাব দিতে পারে? মহাসচিব পরিস্থিতির মানবিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সমস্যার মধ্যকার সম্পর্ক উল্লেখ করেন। আমি বিশ্বাস করি না যে এই সমস্যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতাকে সম্মান ছাড়া সফলভাবে সমাধান করা যেতে পারে।
বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং গ্রুপ দ্বারা জাতিসংঘে প্রেরিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যাচাই করে দেখার জন্য এবং যোগাযোগের নিয়মাবলীর খসড়া তৈরীর জন্য একটি কর্মশীল গ্রুপ তৈরির জন্য সাব-কমিশনের প্রশংসা করা হয়। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ জাতিসংঘের কর্মপন্থার একটি বড় ত্রুটি যেটি জন্মলগ্ন থেকেই মানবাধিকার রক্ষার বাধা ছিল, ভবিষ্যত নাগরিকগণ তাদের সরকারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে পিটিশনের মাধ্যমে যৌক্তিক ক্ষোভ প্রকাশ করার অধিকার পেল। যাইহোক যোগাযোগের এই কর্মপন্থা ১৯৭২ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত সাব-কমিশনের পরবর্তী সেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত কাজ শুরু করবে না। পূর্ব পাকিস্তানের চরম পরিস্থিতি যা জেনারেল সেক্রেটারির বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, এটি নিয়ে সাব কমিশন এই সেশনেই কাজ শুরু করবে।
সাব-কমিশন এই অধিবেশনে মানবাধিকার কমিশন এবং অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কাউন্সিলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে কাজ করবে। মানবাধিকার কমিশন রেজল্যুশন 8 (Xxiii) অনুযায়ী ১৬ মার্চ ১৯৬৭ তারিখে উপ-কমিশনকে আমন্ত্রন জানায়, কমিশনের যে কোনো পরিস্থিতি যা এটা বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যে কোন দেশে মৌলিক স্বাধীনতা জাতিগত বৈষম্য, পৃথকীকরণ এবং জাতিবিদ্বেষ নীতি সহ, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা গোচরে এসেছে, ঔপনিবেশিক ও অন্যান্য বিশেষ নির্ভরশীল এলাকার রেফারেন্স উল্লেখ করা হয়। একই সমাধানে, কমিশন সাব-কমিশনকে এরকম একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করার রিকমেন্ডেশন করেছে, যেখানে পাওয়া যেতে পারে এরকম সকল সোর্স থেকে মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের রিপোর্ট থাকবে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে 1235 (XLII) ধারায় ৬ জুন ১৯৬৭ তারিখে কমিশনের এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয় এবং কমিশনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পরিস্থিতি প্রকাশ করতে একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ গবেষণা করতে ও সুপারিশ সহকারে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের কাছে প্রতিবেদন করার অনুমোদন দেয়।
পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ সমর্থনে কি তথ্য আছে? সাব-কমিশন সদস্যদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তি দ্বারা ইউ এন এ পাঠানো অভিযোগের তথ্যাবলীর এক্সেস আছে। সদস্যদের কাছে সেই সব সাংবাদিকদের প্রতিবেদনে এক্সেস ছিল যারা স্বচক্ষে নৃশংসতা দেখেছে অথবা নৃশংসতা স্বচক্ষে দেখেছে এরকম লোকের সাথে কথা বলেছে, বেসরকারি পাশাপাশি আন্তঃ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো মাঠ পর্যায়ের অনুসন্ধানের উপর ভিত্তি করে এরূপ পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে, অবশেষে পাকিস্তান সরকার মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। তথ্যগুলোর উৎসগুলোর সবগুলো পারবে না এমনকি অধিকাংশই আদালতে গ্রহনযোগ্য হবে না কিন্তু সাব-কমিশন একটি আদালত নয় কিংবা এটা পরিস্থিতির উপর একটি চূড়ান্ত রায় তৈরীর জন্য দায়ী নয়। সাব-কমিশন শুধুমাত্র একটি পরিস্থিতির পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা প্রকাশ করতে অনুমোদিত। স্পষ্টত সেখানে উপ-কমিশনের পরিস্থিতি তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা জন্য যথেষ্ট তথ্য পাওয়া যায়।
মানবাধিকার লঙ্ঘন যা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটেছে সেগুলো কি এবং এই সাব-কমিশন সদস্যদের কোন অভিযোগ বিবেচনা করা উচিত? প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে নিম্নলিখিত লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, হত্যা ও নির্যাতনের, নারী ও শিশু, সশস্ত্র সংঘাত, নিরীহ নাগরিকদের হয়রানি, ধর্মীয় বৈষম্য, গ্রেফতার ও আটক, নির্বিচারে সম্পত্তি বঞ্চনা, বক্তৃতা, প্রেস ও সমাবেশ, রাজনৈতিক অধিকার দমন এবং দেশান্তর হতে বাধা দেয়া।
পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক একটি মিশন দ্বারা একটি রিপোর্ট, যার উদ্ধৃতাংশে, নিউ ইয়র্ক টাইমস এর জুলাই ১৩তম সংস্করণে বেসামরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী কর্তৃক গৃহীত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বর্ণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, যে যশোর শহরে জনসংখ্যা ৮0,000 থেকে নেমে ছিল ২0,000/ ১৫,000 এ। বিশ হাজার লোক নিহত হয়েছে. প্রতিবেদনে বলেন যে, “সেনাবাহিনী জনসাধারণকে ভীত করে তুলেছে, বিশেষ করে হিন্দু ও আওয়ামী লীগের সন্দেহভাজন সদস্যদের নিশানা করেছে।“
আরেকটি প্রামাণিক প্রতিবেদন লন্ডনের সানডে টাইমসে জনাব এন্থনি মাসকারেনহাস দ্বারা, ১৩ জুন, ১৯৭১ তারিখে উপস্থাপন করা হয়। জনাব মাসকারেনহাস আট সাংবাদিকদের একজন ছিলেন যিনি পাকিস্তানি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উড়ে সরাসরি এলাকায় কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন। জনাব মাসকারেনহাস ১৯৪৭ সালে দেশ প্রতিষ্ঠার পরই পাকিস্তানের নাগরিক হয়েছেন। তিনি পাকিস্তানের একজন শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিক হয়েছেন, করাচির মর্নিং নিউজ এর সহকারী সম্পাদক থাকাকালে পূর্ব পাকিস্তানে তার ট্রিপ এর বর্ননা তিনি লিখেছিলেন। সানডে টাইমস পূর্ব পাকিস্তানের একটি অবস্থানে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে তার অ্যাকাউন্টের সত্যবাদিতা খতিয়ে দেখে যে তার সাথে কোন কূটনৈতিক সূত্র ছিল কিনা। আমি মাসকারেনহাস এর রিপোর্ট যা তিনি বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অমানবিক কাজ পরিলক্ষিত করেছেন তা থেকে উদ্ধৃত করতে চাই।
“ছয় দিনে আমি কুমিল্লার ৯ম ডিভিশনের সদর দপ্তর এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভ্রমণ করে আমি হত্যাকান্ড অতি নিকটে থেকে দেখেছি।
আমি গ্রামে গ্রামে এবং দ্বারে দ্বারে হিন্দুদের শিকার করতে দেখেছি, চট করে গুলির পর একটি দ্রুত ছোট বাহু পরিদর্শন করে দেখা তাদের খৎনা আছে কিনা। আমি কুমিল্লার সার্কিট বাড়ির সীমানায় মৃত্যুর কাছাকাছি থাকা পুরুষের চিৎকার শুনেছি (সিভিল প্রশাসনিক সদর দপ্তর)। আমি ট্রাকভর্তি টার্গেট করা মানুষ ও তাদের সাহায্য করতে চাওয়া হৃদয়বান মানুষ দেখেছি “নিষ্পত্তির জন্য”। আমি “মিশন হত্যা ও পুড়ানো” দেখেছি, আর্মি বিদ্রোহীদের পরিষ্কার করার পর শহরে ও গ্রামে সুসংগঠিত হত্যাসাধন ও লুন্ঠন করেছে।
আমি “শাস্তিমূলক ব্যবস্থা” হিসেবে পুরো গ্রাম ধ্বংস হতে দেখেছি এবং রাতে অফিসারদের মেসে আমি সাহসী এবং সম্মানিত লোকদের সদম্ভে দিনের হত্যাকান্ডের বর্ননা দিতে শুনেছি।
“আপনি কত পেতে পারেন?”
“উত্তরগুলো আমার স্মৃতিকে অসাড় করে দিয়েছে।”
জনাব মাসকারেনহাস, সেইসাথে অন্য সাংবাদিকরা হিন্দু জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং অনুষদ ও আওয়ামী লীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে গণহত্যার নীতি অনুসরণ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করেছে । সম্প্রতি চৌদ্দ কূটনীতিক ওয়াশিংটন ডি.সি.-তে পাকিস্তান দূতাবাস থেকে পদত্যাগ করেছে এবং পাকিস্তান মিশন জাতিসংঘে দাবি করেছে যে তাদের সরকার “সভ্য আচরণের প্রাথমিক নিয়ম লঙ্ঘন করেছে এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটিত করেছে।” অন্য অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর মতানুসারে উপ-কমিশন যা ইঙ্গিত দেয় যে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটছে।
পাকিস্তান সরকার কর্তৃক জারীকৃত শ্বেতপত্র যে অভিযোগ করেছে তা হল, “ ১লা মার্চ থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছড়িয়ে পড়া সন্ত্রাসে সরকারি ও বেসরকারি ভবন, পরিবহন এবং যোগাযোগ এবং শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধারণাতীত ক্ষতি ঘটাচ্ছে, এ ছাড়াও লক্ষ নারী, পুরুষ ও শিশুদের জীবনহানি ঘটিয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের সক্রিয় সহায়তায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী অবর্ননীয় নৃশংসতা সংঘটিত করছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভীতিপ্রদর্শন একটি প্রচারাভিযান চলে। আওয়ামী লীগ জঙ্গিরা প্রদেশের প্রায় প্রতিটি শহরে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা আগ্নেয় অস্ত্রের দোকান অভিযান চালিয়ে লুট করেছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ল্যাবরেটরিজ থেকে অ্যাসিড, রাসায়নিক ও বিস্ফোরক লুটপাট করা হয়। বিশেষত কেন্দ্রীয় সরকার ও যোগাযোগ কেন্দ্রসহ সরকারের সম্পত্তির উপর আক্রমন প্রত্যাহিকসূচী হয়ে ওঠে। ট্রেন লাইনচ্যুত করা হয় এবং যাত্রীদের টেনে বাইরে আনা হয় এবং সহিংস দাঙ্গায় কেউ কেউ নিহত হয়।
আওয়ামী লীগের মারকুটে জওয়ানরা হামলা চালায় এবং পৌর এলকায় শত শত লোক একসঙ্গে তাদের বিরোধীদের সমগ্র কলোনি পুড়িয়ে ফেলে। “আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব রিপোর্ট ও অভিযোগ সাব-কমিশন দ্বারা তদন্ত করা উচিত।
কিছু ব্যাক্তি আছে যারা এই সাব-কমিশনের ব্যাপারে তর্ক করতে পারে যে এই অংশে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা উচিত নয়।
তাদের বক্তব্য হচ্ছে যে মানবাধিকারের লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি- যা হত্যাকাণ্ড হয়েছে তা আইন ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।
যাইহোক, এমনকি পাকিস্তান সরকারও দাবি করেছে যে সরকারি বাহিনী দ্বারা এই ক্ষেত্রে ১০০০০০ জন নিহত হয়। যারা এই পরিস্থিতিতে উপ-কমিশনের বিবেচনার বিরোধিতা করবে তারা বলবে মানবাধিকার অভ্যন্তরীন আইনগত বিষয় এবং সেইজন্য জাতিসংঘের এখতিয়ারের বাইরে বিষয়। সাধারণ অধিবেশন, যাইহোক, রেজোলিউশন 2144 (XXI) ২৬ অক্টোবর ১৯৬৬ তারিখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ এবং মানবাধিকার কমিশনে “মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যেখানেই ঘটতে পারে তা থামানোর জাতিসংঘের উপায় এবং ক্ষমতা উন্নত করার সামর্থ জরুরী ভিত্তিতে বিবেচনা করতে” এই অধিবেশনেই সাব-কমিশন পরিস্থিতিতে যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার রিপোর্ট প্রকাশ করে তার ম্যান্ডেট নিয়ে একত্রে মানবাধিকার পর্যালোচনার জন্য একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।
জাতিসংঘ এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত করেছে যে যেকোন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘটনা প্রকাশ পেলে তা একচেটিয়াভাবে সদস্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না, কিন্তু জাতিসংঘের এখতিয়ারের মধ্যেও পড়ে।
আমরা বিশ্বাস করি যে, পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের রিপোর্ট যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, এই পরিস্থিতিতে সাব-কমিশনকে তার কর্তৃত্বকে ব্যবহার করা প্রয়োজন। সাব-কমিশনের পূর্ব পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিভিন্ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত অথবা এটা মানবাধিকার কমিশনের নিকট সুপারিশ করা উচিত যে একটি পর্যবেক্ষক দল স্থাপন করা দরকার, জনাব মোহাম্মদ খলিফা ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক থেকে আসা উপ-কমিশনের বিশিষ্ট সদস্য, এই অধিবেশনে একটি বাক্যবাগীশ এবং প্রাণবন্ত বিবৃতি দেন যা সাব-কমিশন সদস্যদের এই প্রশ্ন মনে রাখার বিবেচনা করতে বলেন। মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা লঙ্ঘন এই এজেন্ডার উপর মন্তব্য করতে যেয়ে জনাব খলিফা বলেছিলেন যে, ” উপ-কমিশন কে তাদের মৌলিক দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিয়েছি, যা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং বৈষম্য প্রতিরোধ। ব্যক্তির নিরাপত্তা ও মানবিক মর্যাদার নীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। ব্যক্তিকে সরকারি সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা যাবে না। তবুও তারা কর্তৃপক্ষের মুখে অরক্ষিত ছিল এবং কখনো কখনো তাদের একমাত্র আশ্রয় মানবজাতির বিবেক। যদিও দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি হস্তক্ষেপ হওয়ার সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে দেয়, কিন্তু আবেদনকারীদের পক্ষে তাদের কথা জাতিসংঘ শুনতে পারে এবং তাদের নৈতিক সমর্থন দিতে পারে, শেষ বিশ্লেষণটি বিশ্বের মতামত জানানো এবং অমানবিক বৈষম্যমূলক ধর্মীয় কুসংস্কার বা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের জাতির উপর ভিত্তি করে নীতি গ্রহণ করার আগে সরকারগুলোকে দ্বিধায় ফেলার একমাত্র উপায় হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে নির্দিষ্ট ঘটনার উপর তার মতামত প্রকাশ করেছে। ১৫ এপ্রিল আমাদের টেলিগ্রামে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস বিবৃত করেন যে ” সামরিক ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের চেষ্টাতে অনুতাপ প্রকাশ করাটাই হতে পারে স্বাভাবিক বেসামরিক আদালতের কাজ শুরু করার পূর্বে আন্তর্জাতিক মতামত সন্তুষ্ট করতে পারে যে আইনের মেনে চলা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস সবসময় অভিযোগ করে আসছে যে রাজনৈতিক অপরাধের জন্য রাজনৈতিক বিরোধীদের আঘাতের চেষ্টায় বিশেষ ট্রাইবুনাল এর প্রতিষ্ঠানসমূহের অনুমোদন হয়েছে। স্পেশাল ট্রাইবুনাল করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার থেকে সহজ কিছু নাই যেখানে বৈধ বিচারক দ্বারা স্বাধীনতা এবং আইনকে রক্ষা করা হয় না।
শেখ মুজিবুর রহমান বা অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, দেশের আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত বেসামরিক আদালতে না আনার কোন কারণ নাই। “
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস “পাকিস্তানের বিপক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা ‘ও অন্যান্য অপরাধের জন্য একটি গোপন সামরিক আদালতে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিচারের চেষ্টার পাকিস্তান সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস জরুরিভাবে পাকিস্তান সরকারকে আবেদন জানায় শেখ রহমানের সামরিক বিচার বন্ধ করতে এবং এই সাব-কমিশনকে বিশেষ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যে এটি যেন একটি অনুরূপ আবেদন পাঠায়। জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক ইতিমধ্যে এই বিচারের ব্যাপারে এবং এ এলাকায় শান্তির জন্য তার প্রভাব প্রকাশ করে সসম্মানে তার নিজের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস এবং অন্যান্য একুশটি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংগঠন যারা এই উপ-কমিশনের সামনে বিবৃতিসহ একসাথে জরুরিভাবে আবেদন করেছিল এই অংশ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সন্মান প্রদর্শন প্রশ্নে এই অধিবেশনে গঠনমূলক পদক্ষেপ নিবে। “
.
13.262.769
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কাছে পাঠানো ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অফ জুরিষ্টস এর টেলিগ্রাম | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৭ আগস্ট, ১৯৭১ |
রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস, জেনেভা থেকে আগস্ট ১৭,১৯৭১ তারিখে পাঠানো টেলিগ্রাম
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান,
রাষ্ট্রপতি ভবন,
রাওয়ালপিন্ডি।
বিশ্ব মতামত শঙ্কিত যে সামরিক ট্রাইব্যুনালে শেখ মুজিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিবে। এটি কি হওয়া উচিত? ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস সসম্ভ্রমে মান্যবরের কাছে জোরালো আবেদন জানায় ক্ষমাশীলতা, শক্তি ও প্রজ্ঞার দেখানোর জন্য যেন দন্ড লঘু করে সহিংসতা, সন্ত্রাস ও দুর্ভোগ বাড়ানোর সম্ভাবনা রোধ করা হয়।
MACDERMOT,
মহাসচিব।
.
13.263.770-773
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেনেভায় অনুষ্ঠিত “ইউ-এন-এইচ-সি-আর” এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৪ অক্টোবর,১৯৭১ |
“প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি, জেনেভায় অনুষ্ঠিত “ইউ-এন-এইচ-সি- আর” এক্সিকিউটিভ কমিটির সভায় জাতিসংঘে শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার”।
৪ অক্টোবর,১৯৭১
জনাব চেয়ারম্যান, ফ্রীডটজফ নানসেন আন্তর্জাতিক শরণার্থী নিয়ে কার্য সূচনার অর্ধশতাব্দীর পর এবং আমার কার্যালয়ে শরনার্থী সমস্যা সমাধানের জন্য চ্যালেঞ্জিং টাস্ক চালু হওয়ারো বিশ বছর পরও, এটি আমার কাছে রিপোর্ট করার জন্য বেদনাদায়ক যে, বিস্বেরযে শরণার্থী অবস্থা রয়েছে বা যদি থেকে থাকে তা প্রতিনিয়ত ভয়ানক এবং ক্রমবর্ধমান বিস্ফোরোক রুপ ধারণ করেছে।বছরের পর বছর, আমরা আদর্শবাদী আশার সাথে বাস করছি যে ইউ-এন-এইচ-সি-আর এর মানবিক কাজগুলো শরণার্থী সমস্যার অবসান ঘটাবে। এটি লক্ষণীয় যে এই বছর আমাদের বিংশ শতাব্দীর বার্ষিকী পালনের সময়, বর্তমান ঘটনাগুলো আমাদেরকে কঠোর মনে করিয়ে দেয় পৃথিবীর কঠো্র এবং করুণ বাস্তবতা,যা আমাদের আশাপূরণ থেকে বহু দূরে। এই সংকটাপন্ন দশা উদ্বাস্তুদের বিশাল জনগোষ্ঠী অতীত ইতিহাস নয়; এটি একটি বর্তমান খুব অবশেষ ঘটমান বিষয়।
যদিও ইউএনএইচসিআর-এর মৌলিক কাঠামো একই রয়ে গিয়েছে, তবে বাস্তুহারা মানুষদের নিয়ে সমস্যাটি ব্যাপকভাবে এবং আরো ভিন্নমাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে।বাস্তুচ্যুত মানুষের অবস্থার পরিবর্তিত প্রকৃতির ফলাফল স্বরুপ, ক্রমবর্ধমান সমাবেশে আমাকে কর্তব্য পালনে বলা হয় যখন এর মূল আদেশপত্র অভিব্যক্ত হওয়ার পূর্বাভাস ছিল না।ইউএনএইচসিআর এর “গুড অফিস” ভূমিকা ব্যবহার একটি প্রাকৃতিক উপাখ্যান এই বিবর্তনের।
সংগ্রাম করার মাধ্যমে শরণার্থী সমস্যাগুলোর দ্রুত সময়াধান করার প্রচেষ্টায়, ইউএনএইচসিআর নিঃসন্দেহে রাজ্যের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে অবদান রাখে।একটি পরিস্থিতি যত জটিল এবং রাজনৈতিক ক্ষীণসুর দ্বারা বেষ্টিত থাকবে, আমাদের ঠিক তত বেশী আমাদের কর্মক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে এবং আমাদের পদ্ধতিতে কূটনৈতিক হতে হবে।যেখানে শরণার্থীদের অবস্থা নিরীক্ষণ একটি দেশের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল, সেখানে আমাদের কোন প্রকার প্রচেষ্টা ব্যতিরাকা উচিত নয় মানুষের দুঃক্ষ-দুর্দশা লাঘবের জন্য।
যদিও উৎসাহের সাথে স্মরণ করা যায় যে, নাইজেরিয়ার শিশু প্রত্যাবর্তন বা সাধারণ কর্মকান্ডগুলো আফ্রিকাসহ পৃথিবীর আরো বিভিন্ন অংশের দূর্বল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্য দ্বয়ীয়ে হয়েছিল,তবুও এটি ভীতিকর ও দুঃক্ষজনক যে এই তথাকথিত সাফল্যগুলো অভিনব চ্যালেঞ্জের দ্বারা নিঃগৃহীত হয়েছে, যা এই বছর আন্তর্জাতিক সম্প্রদ্বায়ের মত সবার জন্য উদ্বেগজনক।আমি নিশ্চিত যে, এটি আমাকেও আচ্ছন্ন করেছে যখন আমি চিন্তা করেছি যে বিপুল জনগোষ্ঠীকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত ও তার প্রতিবেশী রাজ্যে স্থানান্তরের মাধ্যমে যে ভয়ংকর সমস্যার সৃষ্টি হয়।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল সেক্রেটারী জেনারেল ইউএনের কাছে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা চেয়েছিলেন যেন এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের দূর্ভোগ কমানো যায় এবং ভারতীয় অর্থনীতির উপর সৃষ্ট চাপ লাঘব করা যায়।পূর্ব পাকিস্তানে গত মার্চের কর্মসূচীর পর, ভারত সরকার নিজ দেশে যায়।পূর্ব পাকিস্তানীদের জনস্রোতের এক সংকটজনক পরিশ্তিতির সম্মুখীন হয়য় যা প্রাক্কালে তাদের উপস্থিতি অনিবার্যভাবে তার মধ্যে বহন করে।২৬ এবং ২৭ এপ্রিল বার্নে ইউ-থান্টের সভাপতিত্বে এই অনুরোধটি জাতিসংঘের এজেন্সি এবং প্রশাসনিক কমিটি সভায় সকল প্রধানদের নজরে আনা হয়। বৈঠকটির সময় এটি অত্যন্ত পরিষ্কার ছিল যে, এই বিশাল সমস্যাটির প্রয়োজন ইউনাইটেড নেশনস সিস্টেমের সব সদস্যদের একটি সংশ্লিষ্ট এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা।খাদ্য, আশ্রয়স্থল বা চিকিৎসা
সেবার মত নানাবিধ এবং বিপুল প্রকৃতির তাৎক্ষনিক ত্রাণ ব্যাবস্থার চাহিদা এত বেশি ছিল যে, শুধুমাত্র ইউএনএইচসিআর
এর একার পক্ষে তার আর্থিক বা কারিগরি সাধ্যের অনেক খানি বাইরে ছিল।অতএব, সেক্রেটারী জেনারেল কোন প্রকার বিলম্ব ছাড়াই একটি প্রয়োজনীয় সমন্বিত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করলেন। তাঁর সিদ্ধান্ত ভারতের সরকারের চিন্তাভাবনার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল
যা তার অনুরোধে, সমগ্র জাতিসংঘের সংস্থার কাছে নিজেকে উপস্থাপন করে।সকল কার্যনির্বাহী প্রধানের সাথে আলোচনার পর সেক্রেটারী জেনারেল ২৯ এপ্রিল এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে,শরণার্থীদের হাইকমিশনার কেন্দ্র বিন্দুতে থেকে ইউএন প্রাপ্ত সহযোগীদের সমন্বয় সাধন করবেন।তখন থেকে ক্রমবর্ধমান বিশাল সংখ্যক শরণার্থীরা বহু ত্যাগ স্বীকার করে আসছে ভারত ও তার প্রশাসনের উপর এবং আরো অনেক কিছু এখনো আসা বাকি।
অবিলম্বে এই অতিরিক্ত ফাংশন ধরে রাখার পরে, ভারতে আমি ডেপুটি হাই কমিশনারের নেতৃত্বে তিন জ্যেষ্ঠ কর্মী সদস্যের একটি দল পাঠালাম তদন্ত এবং পরিস্থিতির মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে।সরকারের সহজলভ্যতার জন্য এই মিশনের প্রাপ্ত ফলাফলগুলো নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছিল।জড়িত থাকা প্রধান দুইটি দেশের, বলা যায় ভারত ও পাকিস্তানের সরকারের অবস্থা এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শুরু থেকেই তাদের মতে দুইটি বিষয়ের উপর ইউনাইটেদ ন্যাশনের কার্্যসমূহের প্রাধান্য দেয়া উচিতঃ
প্রথমত, ভারতে উদ্বাস্তুদের জন্য তাত্ক্ষণিক ত্রাণ ব্যবস্থা এবং যখনই সম্ভব তাদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের প্রচার ঘটানো, যা একমাত্র সাধারণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার সমাধান হিসেবে সম্মত হয়। ফলস্বরূপ, 1971 সালের মে 19, সচিব-মহাপরিচালক
পূর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের সাহায্যের জন্য একটি আপিল উত্থাপন করেন।তাদের দুর্দশার প্রতি গভীর উদ্বেগের প্রকাশ ঘটানোর সময় ইউ-থান্ট এই আশা ব্যক্ত করেন যে,এই শরনার্থীরাই হবে “প্রথম স্বেচ্ছায় পূনর্বাসিত”।আমি বুঝলাম, “এইরকম প্রত্যাবর্তন মুলতবী রাখলে, জরুরী ভাবে বিশাল বাহ্যিক সাহায্যের প্রয়োজন হবে” এবং আবেদন করলাম সরকার, আন্তঃসরকার এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে, এছাড়াও অনেক নিজস্ব উৎসের কাছে।যাতে তারা আমাদের জরূরী প্রয়োজন মেটেতে সাহায্য করে।
আমি সক্রিয়ভাবে এই আপীল অনুসরণ করেছি এবং নিজেকে ধন্য মনে করছি এটি ব্যক্ত করতে যে,ভারতের চাহিদা অনুযায়ী তা অপর্যাপ্ত হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল উদার।আমি নিজেকে এই সুযোগে কাজে লাগাবো আমার কৃতজ্ঞতা এবং সমাদর জানানোর জন্য সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে, যারা সার্বক্ষনিকভাবে দ্রুত টাকা দিয়ে এবং দয়াবান হয়ে অবদান রেখেছে।বিদেশী সংস্থাগুলোর শরণার্থী সমস্যার ক্ষেত্রে সাড়া দেয়ার বিষয়টি যেখানে নগদ এবং তেমনিভাবে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার দ্বয়ীয়ে সাহায্য করা হয় অভূতপূর্ব বিশালতার যে নজির দেয় তা বিশেষভাবে লক্ষনীয়।কিন্তু আমি এটাও বলব আরো বেশী গুরুত্ব আরোপ করা এখনো প্রয়োজন।
কেন্দ্রবিন্দুতে প্রকৃত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য,অবিলম্বে দায়িত্ব গ্রহনের পর আমি জেনেভাতে একটি স্থায়ী আন্ত-এজেন্সি পরামর্শদাতা ইউনিট স্থাপন করার দায়িত্ব পালন করেছি।
নামঃ নাজমুন নাহার প্রীতি
.
13.264.774-777
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেনেভায় অনুষ্ঠিত ‘ইউ-এন-এইচ-সি-আর’ এর একজিকিউটিভ কমিটির ২২তম অধিবেশনে ভারত সরকারের পুনর্বাসন সচিব শ্রী জি এস কাহলন এর বিবৃতি
|
জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৫ অক্টোবর, ১৯৭১ |
জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউএনএইচসিআর এর নির্বাহী কমিটির ২২ তম অধিবেশনে
ইন্ডিয়া সরকারের পুনর্বাসন সচিব শ্রী জি এস কাহলন এর বিবৃতি
অক্টোবর ৫, ১৯৭১
জনাব সভাপতি, আমি আপনাকে এবং আপনার কমিটির সদস্যদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই আপনাকে সম্বোধনের এই সুযোগ আমাকে প্রদান করার জন্য। আমি কি জনাব আমার প্রতিনিধিদল এবং আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনার এই কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় আপনাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করতে পারি? আপনি, জনাব, এবং আপনার দেশ শরনার্থী সমস্যা উপর গভীর আগ্রহ নিয়েছেন এবং সেখানে জড়িত সকল মানবিক বিষয়ের উপর আপনাদের গভীর জ্ঞান আছে। আমি আপনাকে এবং আপনার সহকর্মীবৃন্দ, সহসভাপতি এবং দূতসকল এর সাফল্য কামনা করি এবং আপনার আগত কঠিন দায়িত্বসমুহ পালনে আমাদের পুর্ন সহযোগিতার হাত বাড়াই।
আমি কি অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দের সাথে যোগদান করে হাই কমিশনার, প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খানকে অভিনন্দন জানানোর সুযোগ নিতে পারি তার বহুল চিত্তাকর্ষক এবং তথ্যবহুল বিবৃতির জন্য। তিনি এবং তার কর্মীদলের সদস্যবৃন্দের পুরো বিশ্বে অনেক সংকটময় এবং চাহিদাপুর্ন কাজ সম্পন্ন করার আছে এবং ইন্ডিয়াতে আমরা, আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের প্রতি আমাদের প্রশংসা জ্ঞাপন করতে চাই যে দ্রুত এবং কার্যকর সহায়তার জন্য যা তারা আমাদের অকুণ্ঠচিত্তে সদয়ভাবে দিয়েছেন।
আপনাদের বর্তমান সভার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে, কারন এটি ইউএনএইচসিআর এর ২০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সাথে সম্পর্কযুক্ত। যাইহোক, এটি দুর্ভাগ্যজনক যে আজকে বিশ্বকে মুখোমুখি হওয়া উচিত ভয়ানক দুঃখজনক মানবিক পরিস্থিতির সাথে যেখানে ৯ কোটির বেশী মানুষ জড়িত যাদের নিজেদের ভিটামাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে এবং অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হয়েছে, এবং যাদের দুর্দশা আমরা উপশমের চেষ্টা করছি। যেহেতু বিশিষ্ট হাইকমিশনার নিজেই তার বিবৃতিতে গতকাল নির্দেশ করেছিলেন। “সাধারণ উদ্দেশ্য- জাতিসংঘের ভিতরে ও বাইরে হওয়া উচিত শরনার্থী সমস্যার কারণ অনুসন্ধান করে সেটি দূরীকরণের উপায় বের করা এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যার সমাধান করা যেটি জনসংখ্যার বিরাট গতিবিধিকে চালিত করে”। এটি শুধুমাত্র কারণগুলোর মূলোৎপাটন যেটির মাধ্যমে এই জটিল সমস্যার সমাধান সম্ভব; শুধুমাত্র তখনই শরনার্থীদের স্বতস্ফুর্ত প্রত্যাবাসন আনা যেতে পারে পারে তাদের মত যারা লাখে লখে ইন্ডিয়ায় পাড়ি দিয়েছে।
যেহেতু আপনারা জানেন, জনাব, ইন্ডিয়া অত্যাবশ্যকভাবে এবং ব্যাপকভাবে পুর্ব পাকিস্তান থেকে শরনার্থীদের অন্তঃপ্রবাহের বর্তমান সমস্যা নিয়ে উদ্বিগ্ন যে আমি মনে করি এটি প্রয়োজনীয় এই কমিটিকে এই সমস্যার কিছু অপরিহার্য অংশ সম্পর্কে অবগত করা যা ইন্ডিয়া করেছিল এবং এখনও করছে, এই পরিস্থিতিতে এবং পন্থায় যেভাবে সে এটির মোকাবিলা করছে, অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা নিয়ে।
দুর্ভাগ্যজনক এবং অতুলনীয় পরিস্থিতি যা মানুষকে ব্যাপক দুঃখদর্দশার দিকে ধাবিত করেছে যেটি মার্চের শেষ দিক থেকে পুর্ব পাকিস্তান থেকে ব্যাপক মাত্রায় এই প্রস্থানের কারণ ছিল, বাকিটা ইতোমধ্যে সকলেরই জানা। এই পীড়াদায়ক পরিস্থিতে ইন্ডিয়াকে সম্পুর্নরুপে মানবতার ভিত্তিতে আশ্রয় এবং ত্রাণ সাহায্য কোটি মানুষকে বাড়িয়ে দিতে হয়েছিল যারা পশ্চিম বাংলা, আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা প্রদেশের সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পুর্ব পাকিস্তান থেকে আসছিল। এই অন্তঃপ্রবাহ এত অপ্রত্যাশিত এবং এবং এত দ্রুত ছিল যে শুরু থেকেই ইন্ডিয়ার অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক সম্পদের উপর একটি বিশাল পরিমাণ চাপ পড়েছিল।এভাবে মার্চের শেষভাগের শুরু থেকে, কয়েক মাসের মধ্যে ইন্ডিয়াতে শরনার্থীদের সর্বমোট অন্তঃপ্রবাহ প্রায় চল্লিশ লাখ ঘরে চলে গিয়েছিল, এবং আজকে এটি ইতোমধ্যে ৯০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, পুর্ব পকিস্তানে ফেরার কোনরুপ নিশানা ছাড়াই। প্রতিদিন গড় প্রবাহ এখনও ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ পর্যন্ত চলছে, এবং যদি এই হার এই মাত্রায় চলতে থাকে, আমাদের হাতে বছর শেষে ১২০ লাখের উপর শরনার্থী থাকতে পারে।
অধিক সংখ্যক শরনার্থীর ত্রাণ সরবরাহের জন্য বিশাল কর্মযজ্ঞ আয়োজনের জন্য, ইন্ডিয়া সরকারকে কলকাতায় একজন খুব অভিজ্ঞ একজন কর্মকর্তার অধীনে বিশেষ শাখা সচিবালয় স্থাপন করতে হয়েছিল। এই সচিবালয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল কেন্দ্রীয় পুনর্বাসন বিভাগের নির্বাহী চৌকি এবং তাদের প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য দরকারি ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য যেমন ত্রাণ বিষয়ক ব্যবস্থাসমুহ, খাদ্য এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরবরাহের যেমন চিকিৎসা সরবরাহ জন্য ক্যাম্প স্থাপন করা এবং অন্যান্য প্রাদেশিক সরকার এবং অন্যান্য সম্পর্কিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাথে সমন্বয় স্থাপন। এছাড়াও, দিল্লিতে একটি কেন্দ্রীয় বিভাগ স্থাপন করা হয়েছে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সাথে যার কাজ হল সরকারি নীতিমালার বাস্তবায়ন এবং এই নিমিত্তে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রচেষ্টার জন্য সংযোগ, পরামর্শ এবং সহায়তা প্রদান।
ইন্ডিয়া সরকার ডিসেম্বর ১৯৭১ এর শেষ পর্যন্ত এই সমস্ত ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য ২৬০ কোটির (ইউএস ডলার ৩৬০ মিলিয়ন) বরাদ্দ রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রত্যাশিত ৫০ কোটির ( ইউএস ডলার ৬৯ মিলিয়ন) বৈদেশিক সাহায্য। যাইহোক, এখন শিবিরে অবস্থানরত ৮০ লক্ষ শরনার্থীর জন্য ( যেটি, এখন বিবেচনা করা হচ্ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই বর্ধমান অন্তঃপ্রবাহের কারণে এই সংখ্যায় পরিণত হবে এবং যারা বন্ধু এবং স্বজনদের কাছে এসেছিল তাদের চাহিদাও এখন সরকার পূরণ করবে) এটি অনুমান করা হচ্ছে যে ছয় মাস সময়ের মধ্যে আমাদের দরকার পড়বে ৪১৯ কোটি বা ইউএস ডলার ৫৫৮ মিলিয়ন। সর্বমোট ৪,১৮৭.৮৯ মিলিয়ন অথবা বলা যায় ৪,১৮৮ মিলিয়ন। এটি ৫৫৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারের সমতুল্য।
এই হিসাবের সকল খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু ইন্ডিয়াতে সতর্কতার সাথে করা হয়েছে এবং দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে যথাযথভাবে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন এলাকায় চাপ কমানো জরুরি হয়ে পড়েছে যেখানে এটি অসহনীয় হয়ে পড়েছে, এবং তাই ইন্ডিয়া সরকারকে ত্রিশ লক্ষ শরনার্থীকে কেন্দ্রিয় শিবিরের অভ্যন্তরে স্থানান্তর করতে হয়েছিল যেখানে কেন্দ্রের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সঠিকভাবে আয়োজিত ব্যবস্থা করা হচ্ছিল।
ইন্ডিয়াতে ব্যাপকহারে অন্তঃপ্রবাহ সত্ত্বেও, আমরা আমদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি শরনার্থীদের কিছুটা হলেও আশ্রয় প্রদানের, আমাদের সম্ভাব্য সকল প্রকার উপায়ে। এটিতে আমরা জাতিসংঘের কেন্দ্রবিন্দু থেকে খুবই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা পেয়েছি প্রয়োজনীয় আশ্রয় উপকরণ ক্রয় করতে।ফলাফলস্বরুপ ৫০ শতাংশ পরিবারকে উন্নত ঘরে স্থানান্তর করা হবে, এবং বাকিরা তাবু, পলিথিন শিট, ত্রিপল ইত্যাদির সুবিধা পাবে।
পর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্যের সুবিধাসমুহেরও শুরু থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেকারণেই আমরা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে কলেরার প্রাদুর্ভাবকে মোকাবেলা করতে সমর্থ হয়েছিলাম যখন শরনার্থীরা তাদের সাথে ব্যাপকহারে বিস্তৃত সংক্রমণ নিয়ে এসেছিল এবং এটির আশেপাশের সকল পল্লি এলাকায় ছড়িয়ে দেয়ার হুমকিও বহন করছিল। সেপ্টেম্বর ২০, ১৯৭১ পর্যন্ত কলেরার ৪৬,৭৫২টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এদের মধ্যে ৫,৮৩৪ জন মানুষ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং শিবিরে মৃত্যুবরণ করেছে। এই প্রচেষ্টায়ও আমরা সকল আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্যের অতিশয় তারিফ করি যারা অতীব জরুরিভাবে সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করেছেন।
ইন্ডিয়া সরকার শিবিরগুলোতে ছোট ছোট বাচ্চাদের মাঝে অপুষ্টির ঘটনা নিয়েও বিশেষভাবে চিন্তিত। সুতরাং উচ্চ পর্যায়ের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের একটি দল, অল ইন্ডিয়া মেডিকেল সাইন্সের প্রধানের অধীনে স্থাপন করা হয়েছে এই সমস্যা জরিপ করার জন্য এবং দক্ষতার সাথে এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য কর্মসুচি সুপারিশ করার জন্য। ইউনিসেফ সংস্থাগুলোর কাছেও অনুরোধ করা হয়েছিল সম্পুরক প্রতিপালনের কর্মসুচি সুপারিশ করার জন্য। এই প্রসঙ্গে সকল প্রস্তাবনা ইন্ডিয়া সরকার দ্বারা অবশেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং “অপারেশন লাইফলাইন” শুরু করা হয়েছে। এই কর্মসুচি বিশ লক্ষের বেশী বাচ্চার দেখাশোনা করবে এবং এতে খরচ হবে প্রায় তিন কোটি টাকা (ইউএস ডলার ৪.১ মিলিয়ন)। সকল কর্মসুচি প্রনয়নের সময় পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিষেধক এবং চিকিৎসা সরঞ্জামাদি উভয়ের প্রতি পুর্ন মনোযোগ দেয়া হয়েছে। সকল চিকিৎসা এবং এর পরিপূরক প্রয়োজনীয়তায়, এই দেশেই, ইন্ডিয়ার সকল জায়গা থেকে কারিগরি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আমরা সর্ব বিষয়ে ভাল সাড়া পেয়েছি। এই কারণে আমাদের বাহিরের সংস্থাগুলো থেকে প্রাপ্ত কিছু অত্যন্ত মহৎ প্রস্তাবকে সবিনয়ে প্রত্যাখান করতে হয়েছে, যদিও আমরা এই প্রস্তাবগুলোর পেছনের উদ্দিপনাকে তারিফ করি।
শরনার্থীদের খাদ্য প্রদানের জন্য, ইন্ডিয়া সরকার প্রাপ্তবয়স্ক এবং বাচ্চাদের জন্য পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে খাদ্য বরাদ্দের অনুপাত নির্ধারন করেছে। এভাবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিদিন মাথাপিছু ৩০০ গ্রাম চাল, ১০০ গ্রাম আটা, ১০০ গ্রাম ডাল, ২৫ গ্রাম ভোজ্যতেল, এবং ২৫ গ্রাম চিনি বরাদ্দ পাবে; এবং প্রতিটি ১-৮ বছর বয়স্ক শিশু প্রতিদিন মাথাপিছু ১৫০ গ্রাম চাল, ৫০ গ্রাম আটা, ৫০ গ্রাম ডাল, ১২ গ্রাম ভোজ্যতেল এবং ১৫ গ্রাম চিনি বরাদ্দ পাবে। এছাড়াও, প্রত্যেক শরনার্থীর জন্য শাকসবজি, মসলা, জ্বালানি, সাবান ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য প্রতিদিন মাথাপিছু একটি ক্ষুদ্র অংকের নগদ টাকা প্রদান করা হবে। সমানভাবে, বস্ত্রের জন্য, শিবিরে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সুতি অথবা উলের কাপড় দেয়া হবে। শীতের আগমনের সাথে এখন উলের কম্বলের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন যেটির জন্য আমরা বিশেষভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছি।
এই শিবিরগুলোতে বাচ্চাদের প্রাথমিক শিক্ষাপ্রদানের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে শরনার্থী শিক্ষকদের দ্বারা যাদের এই কাজের নিদর্শস্বরুপ দক্ষিনা প্রদান করা হবে।স্থায়ী শিবিরগুলোতে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৃশ্য-শ্রাব্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাইহোক, কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি এই তথ্যের প্রেক্ষিতে যে শীঘ্রই এই শরনার্থীদের ( যারা বিদেশী হিসেবে নিবন্ধিত) দেশে ফিরতে হবে। শরনার্থীরা নিজেরাই শিবিরগুলোতে আত্ম-নির্ভরশীলতার ভিত্তিতে বিনোদন এবং কল্যাণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হচ্ছে। অবিবাহিত মহিলা নিবাস এবং অনাথাশ্রমও এই শরনার্থী শিবিরগুলোর নিকটে স্থাপন করা হয়েছে এই মহিলা এবং বাচ্চাদের তাদের নিজস্ব পরিবেশে এবং আত্মীয়তা এবং সংস্কৃতির সূত্রে রাখার জন্য।
আমরা ইন্ডিয়ায় শরনার্থীদের ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য বিভিন্ন সরকারের, যাদের মধ্যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো এবং অন্যান্য স্বেচ্ছসেবি সংগঠনগুলো ও আছে, এই পর্যন্ত কড়া প্রচেষ্টাগুলোর জন্য গভীরভাবে কৃতজ্ঞ। এই মুহুর্তে, সর্বশেষ সংখ্যার হিসেবে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
এটি, যাইহোক, কমিটি নিজেই উপলব্ধি করবে, এবং বিশিষ্ট হাই কমিশনার তার বক্তব্যে গতকাল নির্দেশ করেছিলেন, এই অঙ্ক প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল যেটি আজকে দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার। এমনকি খরচ হওয়া ১৫৪ মিলিয়ন ডলার এর মধ্যে আমরা এইপর্যন্ত নগদ পেয়েছি মাত্র ২৫ কোটি (ইউএস ডলার ৩৪৭ মিলিয়ন)
জনাব, আমি সংক্ষেপে সকল ব্যবস্থা সম্পর্কে বর্ননা দিয়েছি যেটি ইন্ডিয়া সরকারকে গ্রহণ করতে হয়েছে এই ব্যাপক সমস্যার সাথে মোকাবেলা করার জন যেটি হঠাৎ এর উপর এসে পড়েছে। ইন্ডিয়াকে এই বিস্ময়কর কাজ সম্পুর্ন মানবিক খাতিরে নিতে হয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর বিশ্বাস করে, শরনার্থীরা যাদের মূল দায়িত্ব ছিল। কিন্তু অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং প্রশাসনিক যে চাপ এই গুরুতর সঙ্কট ইন্ডিয়া এবং তার অর্থনীতি এবং সাধারণ উন্নয়নের উপর আরোপ করেছে, আমি নিশ্চিত যে, এই সমস্যার অসামান্য ব্যাপকতার উপর এটি বিবেচিত হবে। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের উত্তম যোগাযোগের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথাযথভাবে এই সমস্যার ব্যাপকতা উপলব্ধি করবে। অবশ্যই সকল পরিস্থিতির চূড়ান্ত প্রকৃত সমাধান শুধুমাত্র শরনার্থীদের অস্থায়ী ত্রাণ সরবরাহের মধ্যে সীমিত নয়, লাখো শরনার্থীর জন্য, সেটি যত বৃহৎ অনুপাতেই হোক না কেন, এই লাখো শরনার্থীদের নিরাপত্তা, শান্তি ও রাজনৈতিক সন্তোষের পরিস্থিতির মাঝে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে সমর্থ করার জন্য স্থায়ী সমাধান খোঁজার মাঝে রয়েছে। এর জন্য, জনাব, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবিলম্বে তাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে এবং সচেষ্ট প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে, পাছে এই বিস্ফোরক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয় এবং অপরিবর্তনীয় দিকে মোড় নেয়।
তাহলে আপনার অনুমতি নিয়ে, জনাব সভাপতি, আমি কি এই শ্রদ্ধেয় দলের কাছে অনুরোধ করতে পারি বিশদভাবে বিশ্বের কাছে আবেদন করার জন্য যাতে তারা এই পরিস্থিতে প্রয়োজন মত ব্যাপক ত্রাণ সহায়তা দিয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবেলার দায়িত্ব হাতে নেয় এবং পাকিস্তান সরকারকে তাগিদ প্রদান করে একটি বিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টির জন্য যেটি এই লাখো দুর্ভাগ্যপীড়িত মানুষের স্বাধীন প্রত্যাবাসনে সাহস প্রদান করবে যাতে তারা শান্তি এবং নিরাপত্তার সাথে তাদের বাসভূমিতে ফিরতে পারে।
.
13.265.778-779
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেনেভায় শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সাদরুদ্দীন আগা খানের সাংবাদিক সম্মেলন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১ |
প্রিন্স সদরউদ্দিন আগা খানের প্রেস কনফারেন্স
ইউএনএইচসিআর জেনেভা
১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের হাইকমিশনার, প্রিন্স সদরউদ্দিন আগা খান, নয়াদিল্লীতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের অপারেশনের প্রধান জনাব থমাস জ্যামসনের সাথে ১৩ অক্টোবর জেনেভার প্যালিস ডেস নেশনসে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সহায়তা করার জন্য তিনি তার অফিসটিকে জাতিসংঘের সহায়তা কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যাবহার করতে দেন।
ভারত সরকার তখন অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানদেরকে ভবিষ্যত চাহিদার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিচ্ছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের ৮০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের ৬ মাসের পর্যাপ্ত সাহায্যের জন্য প্রায় ৫৫৮ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন ছিলো।
ভারত সরকার কতৃক উদ্ভাস্তুদের জন্য শক্তি, সময় এবং পণ্য ব্যায় করার জন্য হাইকমিশনার চাপ দিয়েছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে সরকার তৎকালীন সময়ে ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, তৎকালীন সময়ে ত্রাণ সাহায্য ছিলো অনেক গুরুত্তপূর্ন এবং শরনার্থী শিবিরের সকলের উত্তেজনা কমানোর জন্য এটি দরকার ছিলো। তিনি এটিও দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, কেবল ত্রাণ প্রদান করাই সকল সমস্যার সমাধান নয়। ভারত ও পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের অবস্থানের উপর নির্ভর করে স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করলে সমস্যাটির সমাধান হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ইউএনএইচসিআরএই স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার সাহায্য করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
তিনি পূর্ব পাকিস্তানে থাকা ইউএনএইচসিআর কর্মকর্তাদেরকে শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সকল প্রকার সাহায্য করার নির্দেশ দেন।
তারপর হাইকমিশনার অন্যান্য দেশগুলো শরনার্থীদের যেসকল উপায়ে সাহায্য করতে পারে, তা বর্ননা করেন। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ যে, নগদ অর্থ সাহায্য পাওয়াতে ত্রাণ সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু পণ্য ভারতেই পাওয়া যেতে পারে। উপরন্তু,ভারতীয় সরকার শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য যেসকল ত্রাণসামগ্রী প্রয়োজন, সেগুলো ইউনিসেফের সাহায্যে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের মাধ্যমে সমগ্র পৃথিবী থেকে ক্রয় করা সম্ভব।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সঠিকভাবে চালনা করার জন্য জনসাধারণের মতামত সংগ্রহ করা এবং সকল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন ছিল। রেড ক্রস সোসাইটি ইতিমধ্যেই প্রধান কার্যালয়ের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলো। এটি ইতিমধ্যে ভারতীয় রেড ক্রসকে লজিস্টিক সমর্থন প্রদান করেছিল।
মিস্টার জেমসন বলেন যে, ভারতে প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যাতে নিজেদেরকে ত্রাণ তৎপরতার সাথে যুক্ত করতে পারে সেজন্য ভারত সরকার কলকাতায় ভারতীয় রেড ক্রস এবং ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত যৌথ সভার আয়োজন করেছিলো।
হাই কমিশনার ব্যাখ্যা করেন যে ভারত সরকার তাকে পরামর্শ দিয়েছিল, যেহেতু ভারত থেকেই পর্যাপ্ত পরিমান যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মী সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে, সুতরাং বৈদেশিক সাহায্যকারীর কোন প্রয়োজন নেই। বরাবরের মতই ইউএনএইচসিআর তার প্রধান কার্যালয় থেকে ভারতের বেসরকারী খাত থেকে প্রাপ্ত দানগুলো দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল।
হাই কমিশনার এবং মিস্টার জেমসন উভয়েই জেনেভায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় কার্যালয়টিকে জাতিসংঘের কর্মের সমন্বয়কারী হিসেবে এবং ভারতে, ভারত সরকার এবং জাতিসংঘের মধ্যকার সংযোগকারী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। এই বিশেষ ব্যবস্থাটি খুব সুন্দর ও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়েছিলো।
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রশ্নগুলোর জবাবে তারা বলেন, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থেকে প্রায় ১১৫ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য দেয়া হয়, এর মধ্যে ১১.৭ মিলিয়ন ডলার নগদ অর্থ ভারত সরকারের নিকট হস্তান্তরিত হয়েছে, ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করা হয়েছে এবং বাকিগুলো এখনো জমা আছে। সেগুলো এই বছর শেষ হওয়ার আগেই বিতরন করা হবে।
এছাড়া ভবিষ্যতের জন্য ৬.৫ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২ মিলিয়ন শিশুর জন্য ১৫.৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বস্ত্র ও কম্বল কেনার দিকে মনোযোগ দেয়া হয়েছিলো।
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকমিশনার বলেন যে, নেদারল্যান্ডস কমিটি ফর এইড টু রিফিউজিস তাকে বলেছেন যে, ইতিমধ্যে কেবল পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয়ের উত্তর অংশের ৬০০,০০০ প্রাপ্তবয়স্কদের এবং ৩০০,০০০ শিশুর কাপড় কেনার জন্য ১,৯২৯,০০০ ডলার বরাদ্ধ করা হয়েছে। এই পোশাক ছাড়াও আরও ৪ মিলিয়ন মানুষের জন্য ৪৩ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করারও প্রয়োজন ছিল, যেমনটি যেমনটি “অপারেশন লাইফাইন” দেওয়া হতো এবং যেখানে আরও ৯২,৫০০ মেট্রিক টন প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের প্রয়োজন ছিল।
.
13.266.780-786
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খান প্রদত্ত বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৮ নভেম্বর , ১৯৭১ |
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খান প্রদত্ত বিবৃতি
নভেম্বর ১৮, ১৯৭১
মাননীয়া চেয়ারম্যান, এর পূর্বেও এই কমিটির সামনে আমার বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এপর্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে দেয়া এটি আমার ষষ্ঠ রিপোর্ট। প্রতি বছর আমি অভিবাসী পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা উল্লেখ করেছি, এবং এই সংকট উত্তরণের ক্ষেত্রে আমাদের নেয়া পদক্ষেপগুলোর দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিগত বছরগুলোতে যখনই কোথাও পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে, অথবা কোথাও নতুন কোনো সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, তখনই আন্তর্জাতিক মহল আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এবং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। আপনাদের এহেন সহায়তা পেয়ে আমি অত্যন্ত অভিভূত এবং কৃতজ্ঞ। সংকটের মুহূর্তগুলোতে আপনারা পাশে দাঁড়ান বলেই আমাদের পক্ষে তা মোকাবেলা করা সহজ হয়, বিশেষ করে যখন কোনো সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর প্রয়োজন হয়, যা এই পদে থাকাকালীন আমার মূল লক্ষ্য ছিলো। দুঃখজনক ভাবে আজও আমি এক সুগভীর সংকটের দিকে আপনাদের জরুরী মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। এটি এমন এক সংকট যা বাড়তে বাড়তে এরই মধ্যে সহ্যের সকল সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে, এবং এর বুদ্ধিবৃত্তিক সমাধান ক্রমশ দূরহ হয়ে পড়ছে। পরিহাসের ব্যাপার হলো, এই ঘটনাটা ঘটছে এমন একটি সময়ে যখন আমরা ইউএনএইচসিআর এর বিশতম বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছি। ঠিক যখন শরণার্থী সমস্যা থেকে আমাদের স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানোর কথা ছিলো। চার মাস আগে, ১৬ই জুলাই তারিখে আমি জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের হিউম্যানিটারিয়ান এফোর্টকে জানিয়েছি ভারতে আশ্রয় নেয়া পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ লাঘবের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এছাড়া গত অক্টোবর মাসের শুরুতে সেসময়ে চালু থাকা আমাদের রেগুলার প্রোগ্রামের নির্বাহী কমিটির সাথেও আমি কথা বলেছি। কিন্তু এটি এমন এক বেদনাদায়ক পরিস্থিতি যা প্রতিনিয়ত খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষের দুর্ভোগ কমছে তো না, বরং বাড়ছে। চাহিদা এবং সামর্থ্যের ভেতর যে বিশাল ফারাক তৈরি হয়েছে, পরিস্থিতি ক্রমশ যেভাবে আমাদের প্রতিকূলে চলে যাচ্ছে, তাতে মনে হয় আমরা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সাক্ষী হতে চলেছি। সমস্যা সমাধানে ভারতের সরকার ও জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি সত্ত্বেও যে প্রশ্নটা এখন সকলের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, তা হলো, এই সংকটের শেষ কোথায়?
আপনাদের কাছে যদি মনে হয় বক্তৃতার শুরুতেই কেন আমি আশংকার বাণী শোনাচ্ছি, আসলে পরিস্থিতিই আমাকে বাধ্য করেছে এই বিষয়টি আপনাদের সামনে উত্থাপন করতে। অন্তত আজ আমি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বা সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে কার দ্বারা অথবা কিভাবে এই সংকটের উদ্ভব হলো তার বিচার করতে আসিনি। মাননীয় মহাসচিবের নেতৃত্বে জাতিসংঘের নিজস্ব পর্যালোচনা, যা রিপোর্টের সূচনাতে যুক্ত করা আছে, তাতে খুব স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে এই ব্যাপারে (নথি এ/৮৪০১/এডিডি। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ সালের ১নং)। আমি এখানে যা বলতে এসেছি তা সম্পূর্ণভাবেই একটি হিউম্যানিটারিয়ান টাস্ক, জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে যে দায়িত্ব পালনে আমি দায়বদ্ধ। এবং এই কাজে আমি এখন এমনভাবে আপনাদের অকুণ্ঠ সহায়তা চাই, যেভাবে পূর্বে কখনো হয়তো চাইনি। কারণ এর সাথে লাখো নিরীহ শরণার্থীর ভাগ্য জড়িয়ে আছে, একটি গোটা উপমহাদেশের শান্তি পুনরুদ্ধারের প্রশ্ন এর সাথে জড়িয়ে আছে। এই শরণার্থীদের থেকে আমরা আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারি না। আমাদের কাছ থেকে, জাতিসংঘের কাছ থেকে তাদের অনেক প্রত্যাশা। এপ্রিলের ২৩ তারিখে ভারতের সরকার জাতিসংঘের মাননীয় মহাসচিবের কাছে যখন সাহায্যের আবেদন জানালেন, শরণার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যেন জাতিসংঘের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয় এবং ভারত সরকারের উপর থেকে বোঝা কিছুটা কমানোর ব্যবস্থা করা হয়,তখনই স্পষ্ট হয়ে গেছে, গুরুত্ব বিবেচনায় এই সংকটটি জাতিসংঘের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী রাখে। আর এই সংকটের ব্যাপ্তি এতোটাই বিশাল আর ঘটনাপ্রবাহ এত দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে যে ইউএনএইচসিআর এর একার পক্ষে খাদ্য, বাসস্থান বা লজিস্টিক সাপোর্ট প্রদান করাটা অর্থনৈতিক বা টেকনিকাল উভয় ক্ষেত্রেই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। অতএব, ২৯শে এপ্রিল তারিখে, সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কমিটির মিটিং এ আলোচনার ফলশ্রুতিতে, মাননীয় মহাসচিব সিদ্ধান্ত নেন যে, জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সহায়তার বিষয়টি সমন্বয়ের কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালন করবেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার। জাতিসংঘে ভারত সরকারের বক্তব্যের যে সহায়তার অনুরোধ জানানো হয়েছিলো, এই সিদ্ধান্তটি তার সাথেও মিলে গেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাৎক্ষনিক ভাবে আমি ডেপুটি হাই কমিশনারের নেতৃত্বে একটি দলকে ভারতে পাঠিয়েছিলাম সেখানকার বাস্তব চিত্র পর্যবেক্ষণের জন্য। এই দলটির পর্যবেক্ষণের উপর প্রস্তুত করা একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট ইতোমধ্যেই দুদেশের সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশের সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বিচার করে তৈরি একটি পর্যালোচনায় খুব স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে এই ব্যাপারে জাতিসংঘকে দুইটি উদ্দেশ্য সাধনে মনোনিবেশ করতে হবে। প্রথমত, ভারতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীদের জন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শরণার্থীদেরকে পুনরায় নিজ ভূখণ্ডে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে, স্থায়ী সমাধানের স্বার্থে তাদেরকে স্ব-ইচ্ছাতে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে প্রাথমিকভাবে ঐকমতে এসেছি আমরা। ইতোমধ্যে, ১৯৭১ সালের ১৯শে মে তারিখে শরণার্থীদের সংখ্যার ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে মাননীয় মহাসচিব আশা প্রকাশ করেন, “যত দ্রুত সম্ভব তাদের স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো” সম্ভব হবে, এবং “ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া যেহেতু আপাতত ঝুলে আছে, সেক্ষেত্রে ত্রাণ সহ জরুরী সহায়তা প্রয়োজন” এবং তিনি “সরকারী, আন্ত-সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ সহ অন্যান্য ব্যক্তিগত সোর্সের উদ্দেশ্যেও” আবেদন পেশ করেন, যেন এই জরুরী সহায়তা প্রদানে তারা হাত বাড়িয়ে দেন। সেই সময়ের হিসেব মতে, ধারণা করা হয়েছিলো তিরিশ লক্ষ শরণার্থীদের ছয় মাসের ন্যুন্যতম ভরণ পোষণের জন্য ভারত সরকারের প্রায় সাড়ে সতের কোটি ডলার প্রয়োজন। এরপর সময় অতিবাহিত হয়েছে, চাহিদা এবং সংখ্যা শুধু বেড়েই চলেছে এই সময়ে, আর আমাদের ক্ষুদ্র প্রয়াসকে দৌড়াতে হয়েছে সময়ের বিপরীতে। চলতি বছরের জুন মাসের ২৬ তারিখে ভারত সরকারের দেয়া তথ্য ও হিসাব মতে, ৬০ লক্ষ শরণার্থীর জন্য ছয় মাসের সহায়তা প্রদানে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছিলো ৪০ কোটি ডলার। পরবর্তীতে ১লা অক্টোবর তারিখে ভারত সরকারের কাছ থেকে পাওয়া আরো বৃহৎ কলেবরের রিপোর্টে আমরা দেখতে পাই খরচের সম্ভাব্য অংকটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ কোটি ৫৮ লক্ষ ডলারে এবং তা ৮০ লক্ষ শরণার্থীর ছয় মাসের ভরণপোষণের ব্যয়। খুব সম্প্রতি, বিশ্বব্যাংকের আয়োজনে ভারতের সরকার এবং ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠান সমূহের অংশগ্রহণে প্যারিসে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৬শে অক্টোবর ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত সেই সভার ঘোষণা অনুযায়ী, “সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের ব্যাপক প্রবেশের ফলে ভারতকে যে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করতে হচ্ছে তার মোট ব্যয় ১৯৭২ অর্থবছরের মার্চ নাগাদ প্রায় ৭০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে।”
আমি এই পরিসংখ্যানটি বিশ্বব্যাংকের মূল ঘোষণাপত্র থেকে উল্লেখ করলাম। উল্লিখিত কনসোর্টিয়াম সভা অনুষ্ঠানের পূর্বে বিশ্বব্যাংক শরণার্থীদের উপর একটি রিপোর্ট প্রস্তুত করেছিলো, যাতে ১৯৭১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর নাগাদ ক্যাম্পে শরণার্থীর সংখ্যা ৯০ লক্ষ ধরা হয়েছে। এখানে প্রকৃত ব্যয় নিঃসন্দেহে উল্লিখিত তারিখে ক্যাম্পে অবস্থান করা শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যার সমানুপাতিক হবে। শরণার্থীদের ত্রাণ সহায়তার মূল ব্যয়ভার নিয়ন্ত্রণে সাধারণত তিনটি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়। প্রথমত, শরণার্থীদের প্রকৃত সংখ্যা, দ্বিতীয়ত, কতদিন ধরে ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে, এবং তৃতীয়ত, সহায়তার ধরণ। প্রথম এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ শরণার্থীদের সংখ্যা এবং সময় নির্ধারণে, ভারত সরকার শরণার্থীদের নিবন্ধন সম্পর্কিত বিগত সাত মাসের তথ্য আমাদেরকে প্রদান করেছে, এবং এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান আছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ১২ই নভেম্বর পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা ৯৭,৪৪,৪০৪ জন। এছাড়া পাকিস্তানের সরকার জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন ২রা সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান থেকে দেশ চ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০,০২,৬২৩ জন। আমি এখন নিজ উদ্যোগে কোনো তথ্য সংগ্রহে নামতে চাচ্ছি না, কারণ উল্লিখিত সূত্রগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই তথ্যের ব্যাপারে অনুমানের আশ্রয় নিতে হয়েছে। আর সত্যি বলতে আমি এটা করতে চাই না, কারণ আমি আশাবাদী যে দেশত্যাগ করা মানুষগুলো শীঘ্রই আবার তাদের বাসগৃহে ফেরত যেতে পারবে। তথাপি, একটি কার্যকর হাইপোথিসিস ছাড়া আমাদের পক্ষে প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা কষ্টকর, এবং আমি এই কমিটিকে আশ্বস্ত করতে চাই যে আমরা সম্ভাব্য ঘটনাবলী সম্পর্কে সচেতন। তৃতীয় ফ্যাক্টর, অর্থাৎ সহায়তার ধরণ সম্পর্কে যদি বলি, এর সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত। এবং পূর্বে আমি যে প্রত্যাশিত ব্যয় এবং অন্যান্য হিসাব দিলাম তার মূল খাত এটি। আরেকটু পরিষ্কার করে বলি, এই নীতি অনুসারে আমাদের ব্যয়ের ধরন হচ্ছে দুই প্রকারের, প্রাত্যহিক ব্যয় (যেমন খাদ্য, ঔষধ, ত্রাণকর্মীদের বেতন, ইত্যাদি খাতে খরচ) এবং এককালীন ব্যয়, (যেমন শেল্টার নির্মাণ, চিকিৎসার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য সামগ্রী, যাতায়াত ইত্যাদি খাতে খরচ)। এ পর্যন্ত তৈরি করা সমস্ত খরচের হিসাবে এককালীন ব্যয়কে এককালীন হিসেবেই দেখানো হয়েছে। কিন্তু যদি এই সংকট দীর্ঘমেয়াদী হয় সেক্ষেত্রে এককালীন ব্যয়ের খাতগুলোতেও পুনরায় খরচ করতে হতে পারে, যেমন, বেশকিছু অংশে শেল্টার তৈরিতে পলিথিন ব্যাবহার করা হয়েছে। মানের দিক দিয়ে বিচার করলে তা অবশ্যই যথার্থ। এই সব ক্ষেত্রে ফোকাল পয়েন্ট এবং অন্যান্য জাতিসংঘের এজেন্সি সমূহের সহায়তা নেয়া হয়, যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করেছি, রিলিফ কার্যক্রমের গড় ব্যয় আপাতত ধরা হয়েছে দৈনিক ২.৭৪ টাকা প্রতি ক্যাপিটা (মার্কিন ডলারের হিসাবে প্রায় ৩৭ সেন্ট)।
সংক্ষেপে বলতে গেলে, এগুলোই রিলিফ প্রোগ্রামের প্রত্যক্ষ ব্যয়, যা আপাতত আমাদের ভাবনার মূল বিষয়। এছাড়া আরও কিছু অপ্রত্যক্ষ ব্যয় আছে, যা ভারতের অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখতে সক্ষম। এই বিষয়গুলো সাম্প্রতিক ভারতের কনসোর্টিয়াম আয়োজিত সভায় আলোচিত হয়েছে, যেখানে আমার অফিসের প্রতিনিধিত্ব ছিলো। এবং আমি খুব পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, এই অপ্রত্যক্ষ মূল্যের বিষয়টি, দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাব এবং ব্যাপক পরিসরে শরণার্থীদের আগমনের মতো বিষয়গুলো ফোকাল পয়েন্ট খুব গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। এখানে আমি শুধুমাত্র রিলিফ অপারেশনের প্রত্যক্ষ ব্যয়ের দিকেই বেশী জোর দিতে চাই। এবং এই খরচগুলো, তিনটি শ্রেণীর ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে, যার কথা আমি আগে বলেছি, শরণার্থীদের সংখ্যা, কতদিন পর্যন্ত তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন এবং সেই সহায়তার ধরণ, এক্ষেত্রে যা বলছিলাম, প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রায়শই আমাদের পূর্ব-অনুমানের বাইরে চলে যাচ্ছে। এটা বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে খাদ্য বস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার এই বিশাল ত্রাণ কর্মযজ্ঞ এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রমের সকল নজিরকে ছাপিয়ে গেছে। আর আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তার কথা যদি বলি, জাতিসংঘের অভিজ্ঞতা বিচারে এই দৃষ্টান্ত অনন্য এবং আপনাদের কাছে আমি আমার কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। ১৬ই নভেম্বর ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত ফোকাল পয়েন্ট সর্বমোট ১৬১৪১২৮৬.৮৪ ডলার সমমূল্যের ত্রাণ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৮৯২৬১৭৫৩ ডলার এবং বাকী ৭২১৫১২৩৩.৪৯ ডলার সমমূল্যের ত্রাণ সামগ্রী এবং অন্যান্য বস্তু। এই খাতে সমস্ত সহায়তা এবং হিসাব নিকাশ একসাথে করে প্রস্তুত করা একটি তথ্য সূচী আমি পূর্বেই কমিটির কাছে প্রদান করেছি। এই পেপারটি মূলত গত মাসে জেনেভাতে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আমি যে তথ্য উপস্থাপন করে ছিলাম তারই হালনাগাদ করা সারসংক্ষেপ। এছাড়া এই পেপারে ৩১শে অক্টোবর ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত জাতিসংঘের তরফ থেকে ভারতে বিলিকৃত প্রকৃত এবং প্রত্যাশিত সহায়তার বিস্তারিত হিসাব বর্ণনা করা আছে। আমি সমস্ত সরকারী এবং বেসরকারি সংস্থা এবং যেসকল ব্যক্তিবর্গ নিজ উদ্যোগে এই সহায়তা জাতিসংঘের মাধ্যমে পাঠিয়েছেন তাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
যারা সরাসরি বা দ্বিপাক্ষিক ভাবে এই কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে চাই। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যা নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক সহায়তার দাবী রাখে, এবং এই সহায়তা যত বেশী হয়, আমাদের জন্য পরিস্থিতি সামলানো তত সুবিধাজনক হয়। সকল হিসাব একত্র করে, বাইরের উৎস থেকে মোট প্রাপ্ত সহায়তার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ কোটি ৭৬ লক্ষ ডলার। ত্রাণের অপ্রতুলতার বিষয়ে আর কি কিছু বলার অবকাশ আছে? এই সহায়তা অপর্যাপ্ত হওয়ায় ১৯শে মে মাননীয় মহাসচিবের আবেদনের পর আমি একটু ব্যাপক পরিসরে বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোর সাথে বৈঠক করি এবং পরবর্তীতে ১১ই অক্টোবর তারিখে রেডিও এবং টেলিভিশনে পুনরায় ত্রাণ সহায়তা প্রেরণের জন্য আবেদন জানাই। স্বতন্ত্রভাবে, সহায়তা প্রেরণের সুবিধার্থে আমি নগদ অর্থ সাহায্য গ্রহণ করতে শুরু করি এবং এর উপর জোর দিতে থাকি। এছাড়াও ফোকাল পয়েন্ট এবং ভারত সরকারের সদিচ্ছার প্রেক্ষিতে জানাতে চাই, দ্রুত প্রয়োজন মেটানোর সুবিধার্থে কিছু দ্রব্য (যেমন চাল,ডাল,চিনি) ইত্যাদি ক্রয়ের জন্য আমরা এখন নগদ অর্থ সাহায্যও গ্রহণ করছি।
অক্টোবরের মাঝামাঝিতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সংগ্রহীত নগদ টাকা বা অন্যান্য প্রায় সমস্ত প্রকার ত্রাণ সামগ্রী হয় ভারত সরকারকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে, অথবা এই বছরের শেষ নাগাদ ভারতে পৌঁছানোর জন্য পাইপলাইনে অবস্থান করছে। শেল্টার নির্মাণ সামগ্রী, ঔষধ, খাদ্যদ্রব্য, কাঁথা, কাপড় চোপড় সহ লজিস্টিক সাপোর্ট ক্রয় এবং স্থানান্তরের কাজ এই সহায়তা ব্যবহার করে সম্পন্ন করা হয়েছে।
এর ফলশ্রুতিতে, সহায়তার জন্য গচ্ছিত অর্থ ও সামগ্রীর মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি অত্যাসন্ন হয়ে পড়েছে। সহায়তা প্রদানের সর্বশেষ আবেদনের পর থেকে দানের ক্ষেত্রে দাতারা যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছেন বটে, তবে পরিস্থিতি এখনো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। কার্যক্রমের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ বর্ণনা করে এই কমিটিকে বিব্রত করবো না, তথ্য সূচীতে এসম্পর্কিত সমস্ত তথ্য দেয়া আছে, তারচেয়ে বরং জাতিসংঘের সহায়তা কার্যক্রম থেকে একেবারে দৃশ্যমান কিছু উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই: খাদ্য: প্রায় ১৪২০০০ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, এবং ৬২৬৭১ টন ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ট্রান্সপোর্টের জন্য ২২০০টির অধিক যানবাহন অর্ডার দেয়া হয়েছিলো যার দুই-তৃতীয়াংশ ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। শেল্টার: তিরিশ লক্ষাধিক শরণার্থীর মাথার উপর পলিথিনের তৈরি ছাউনি তৈরি করা হয়েছে যা বাইরে থেকে আনা হয়েছিলো। কাঁথা: বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রাপ্ত প্রায় তিরিশ লক্ষ কাঁথা ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ঔষধ: ৭০০ টনের অধিক ঔষধ এবং মেডিকেল সাপ্লাই ভারতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে যা ছিলো সম্ভবত আকাশ যোগে ত্রাণ সামগ্রী স্থানান্তরের দীর্ঘতম লাইন। স্বাস্থ্য: সীমান্তের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ক্যাম্পগুলোতে প্রাথমিক স্টেজের পুষ্টি হীনতা রোধ এবং আরোগ্যের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। জাতিসংঘের দাপ্তরিক বিভাগের সাথে আমার অফিসের চমৎকার বোঝাপড়া এবং পারস্পারিক সমন্বয় ছাড়া অবশ্য এতো কাজ সম্পন্ন করা একেবারেই সম্ভব ছিলো না। যার উপর ভর করেই আমি ফোকাল পয়েন্টের কার্যক্রম দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে। এই পদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই আমি জেনেভাতে একটি আন্ত-এজেন্সি কনসালটেন্সি ইউনিট গঠন করি। এর কাজ হলো প্রথমত, প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তাকে চলমান রাখে এবং নিরাপত্তা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত, সহায়তা সংগ্রহের জন্য নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রাপ্ত সহায়তাকে ভারত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। তৃতীয়ত, খুব সক্রিয়ভাবে ভারত সরকারের সাথে লিঁয়াজো বজায় রাখা। এই কনসাল্টেশন ইউনিটের সাথে সাথেই, ভারত সরকারের উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো, ফোকাল পয়েন্ট সহ জাতিসংঘের অন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের নিয়ে দিল্লী ভিত্তিক একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দিল্লী এবং জেনেভার এই দুই তরফা তদারকি কার্যক্রম বেশ সফলতার সাথেই প্রত্যাশিত ফলাফল এনে দিচ্ছে। আমি জাতিসংঘের বিশেষ এজেন্সিগুলোর তড়িৎ সক্রিয়তা এবং ফলপ্রসূ সহায়তার জন্য তাদেরকে উষ্ণ অভিনন্দন জানাই। জাতিসংঘের দাপ্তরিক বিভাগের সাথে আমার অফিসের চমৎকার বোঝাপড়া এবং পারস্পারিক সমন্বয় ছাড়া অবশ্য এতো কাজ সম্পন্ন করা একেবারেই সম্ভব ছিলো না। যার উপর ভর করেই আমি ফোকাল পয়েন্টের কার্যক্রম দাড় করাতে সক্ষম হয়েছে। এই পদের দায়দায়িত্ব সম্পর্কে জানার সাথে সাথেই আমি জেনেভাতে একটি আন্ত-এজেন্সি কনসালটেন্সি ইউনিট গঠন করি। এর কাজ হলো প্রথমত, প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সহায়তাকে চলমান রাখা এবং নিরাপত্তা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত, সহায়তা সংগ্রহের জন্য নিয়মমাফিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং প্রাপ্ত সহায়তাকে ভারত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। তৃতীয়ত, খুব সক্রিয়ভাবে ভারত সরকারের সাথে লিঁয়াজো বজায় রাখা। এই কনসাল্টেশন ইউনিটের সাথে সাথেই, ভারত সরকারের উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রমের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রণালয়গুলো, ফোকাল পয়েন্ট সহ জাতিসংঘের অন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের নিয়ে দিল্লী ভিত্তিক একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যৌথ প্রয়াসের এই ত্রাণ কার্যক্রমকে ভালোভাবে বোঝার জন্য একটি বিষয় পরিষ্কারভাবে জানানো প্রয়োজন, এখানে জাতিসংঘের ভূমিকা মোটেই অপারেশনাল নয়। ভারতের সরকারের ইচ্ছার ভিত্তিতেই, আমরা অপারেশনাল কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়েছি। আমার প্রতিনিধি এবং ফোকাল পয়েন্ট টিমের কাজ মূলত দিল্লীর ডিউটি স্টেশন এবং অন্যান্য পক্ষের ভেতর সমন্বয় ও লিঁয়াজো বজায় রাখা। সেখান থেকে তারা বিভিন্ন প্রদেশ ভ্রমণ করেছেন, যেখানে শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে, এবং প্রতিটি প্রদেশে এমন অগণিত ক্যাম্প আছে। এছাড়া ইউনিসেফ, ডাব্লিউএফপি এবং ডাব্লিউএইচও এর বিভিন্ন মিশনের কাজে শরণার্থীদের এলাকায় যারা নিয়োজিত রয়েছেন এমন স্টাফ সদস্যগণও তাদের সাথে ছিলেন। কোলকাতায় ইউনিসেফের একটি অফিস আছে, এবং পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাতে তাদের অধীনে লিঁয়াজো অফিসাররা কর্মরত আছেন। এখানে জাতিসংঘের দায়িত্ব মূলত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে ত্রাণ সহায়তার ব্যাপ্তি বৃদ্ধি করা, এবং সেই সহায়তা ভারতের সরকারের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং সামগ্রিক কার্যক্রম সমন্বয় করা যেন ভারত সরকারের সাহায্য নিয়ে ফোকাল পয়েন্টের পক্ষে দাতাগোষ্ঠীর কাছে তাদের দেয়া সহায়তার পূর্ণ বিবরণ পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়। এছাড়া, দিল্লীতে অবস্থান করা দলের সদস্যবৃন্দ প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণের কাজে নিয়োজিত আছে, বিশেষ করে বাইরে থেকে আসা ত্রাণ সাহায্য কোন খাতে ব্যাবহার করা যুক্তিসংগত তা নির্ধারণের কাজটি তারা করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রত্যাশিত সাফল্য আসার বিষয়টিই নিশ্চিত করে দলটির পারস্পারিক ঐক্য কতটা দৃঢ়। তথ্য ও কার্যক্রম তদারকির কাজে জাতিসংঘের পক্ষে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছে এই দলটি। এর ফলে সরকারী এবং বেসরকারি উভয় প্রকার প্রতিষ্ঠানের সাথে আন্তঃযোগাযোগ রক্ষা করা সহজতর হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের তরফ থেকে মূলত শেল্টার নির্মাণ সামগ্রী, যানবাহন, কাঁথা ইত্যাদি পণ্য সংগ্রহ করাটা একটু দুঃসাধ্য ছিলো। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বিপদের মুহূর্তে এই পদ্ধতির কারণেই ত্রাণ কার্যক্রম যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে। এর ফলে আমরা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সুবিধাজনক দামে বিশ্ববাজার থেকে কিনে নগদ অর্থসাহায্যের সর্বোচ্চ ব্যাবহার নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। এই সমস্ত সুবিধার পাশাপাশি, একটি আশংকার কথাও আপনাদের মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন, জাতিসংঘের পক্ষে অনির্দিষ্টকাল ধরে এই ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া মোটেই সম্ভব নয়, এবং এমন কোনো পরিকল্পনাও আমাদের নেই। তাই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার মাধ্যমে এই কার্যক্রমকে স্থায়ী রূপ দেয়ার প্রচেষ্টা মোটেই আমাদের কাম্য নয়, বিশেষ করে আশ্রয় দানকারী দেশের স্বার্থে এই ঝুঁকি যদি আমাদেরকে নিতে না হয়, সেটাই বরং আমাদের জন্য মঙ্গল। এমনটি হলে আন্তর্জাতিক মহলকেও সীমাহীন অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বোঝা বহন করতে হবে। এটি শরণার্থীদের মনোবলে আঘাত হানবে, এবং ক্রমে তা পরিণত হবে হতাশ স্বীকারোক্তিতে। এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, দ্রুততার সাথে ভলান্টারি কার্যক্রমের দিকে বেশী করে ঝুঁকে পড়া। অপরদিকে নন-অপারেশনাল হওয়ার ফলে সহায়তার জন্য গৃহীত পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিক ভাবে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট করা কিছুটা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে, আবার সংগত কারণেই সাহায্য গ্রহীতাদের হাতে ত্রাণ সামগ্রী কিভাবে পৌঁছচ্ছে বা তার ব্যাবহার কিভাবে হচ্ছে সেই ব্যাপারে দাতাদের স্বাভাবিক আগ্রহকে উপেক্ষা করাটাও আমাদের কাছে সমীচীন মনে হয় না। এই ক্ষেত্রে, আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি ভারত সরকারের পূর্ণ সহায়তার বিষয়টি সকল প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করতে সকল পরিসংখ্যানের বিপরীতে গিয়ে ভারতের নারী-পুরুষদের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার কথা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ত্রাণ কার্যক্রম কিভাবে পরিচালনা হচ্ছে বা কি পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন এবং কি পরিমাণ আমাদের হাতে এসেছে, সেসব আপনারা ইতোমধ্যেই শুনেছেন। এখন আপাতত সমাধান হতে পারে যদি আমরা আমাদের প্রচেষ্টার দ্বিগুণ শ্রম দিতে পারি, কারণ দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের পথ এখন অনেক দূরে বলেই মনে হচ্ছে।
এ হলো বর্তমান পরিস্থিতির এক বিরাট এক প্যারাডক্স। আমরা সবাই জানি এবং মানি যে, এই বিশাল এবং নির্মম সংকটের সমাধান হতে পারে একটি মাত্র উপায়ে এবং তা হলো শরণার্থীদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কিভাবে এই কর্মটি সুসম্পন্ন করা যায়, যখন দুই দেশের সরকারও শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে নীতিগতভাবে একমত। নিঃসন্দেহে, নিজভূম থেকে বিতাড়িত একজন শরণার্থীর জীবন অত্যন্ত বেদনার এবং কষ্টের, এবং তার দুর্দশা লাঘবের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে তাকে শান্তিপূর্ণভাবে নিজের দেশে ফেরত যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া, যেখানে সে নিজের পরিবেশে আগের মতো বসবাস করতে পারে। আমার অফিসের গত প্রায় বিশ বছরের অভিজ্ঞতা এমনটাই বলে, এবং তৃতীয় কমিটির বক্তাদের মুখেও এই একই কথা বার বার উচ্চারিত হয়েছে। আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, কোনো দেশে যদি কখনো বসতি স্থাপনের ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে ইউএনএইচআর এর সক্রিয় অংশগ্রহণে দ্বিপক্ষীয় একটি সমন্বয় কার্যক্রম শুরু করা যেতে পারে, যারা মূলত পুনর্বাসনের দিকে বেশী জোর দিবে। যতদিন পর্যন্ত আমরা সেই ধাপে পৌছাতে না পারছি, তত দিন পর্যন্ত বড় পরিসরে সংগঠিত প্রত্যাবর্তন কার্যক্রম সফল হবে না এবং এই কার্যক্রম একবার শুরু করলে তা থেকে ফিরে আসাটাও দুরূহ ব্যাপার, এখানে একটি বিষয় আপনাদের মনে করিয়ে দেয়া প্রয়োজন, ইউএনএইচআর তখনই পুনর্বাসন কার্যক্রম অনুষ্ঠানে সফল হয়েছে যখন দুই দেশ আন্তরিকভাবে এই কার্যক্রমের চালানোর ব্যাপারে একমত হতে পেরেছে। এই ঐকমত শুধু সমাধানে পৌঁছানোর ব্যাপারে হলেই হবে না, বরং কার্যক্রম কখন এবং কিভাবে হবে, সে ব্যাপারেও একটা সিদ্ধান্তে পৌছাতে হবে। এই বিষয়টি আমাদের চিন্তার ভেতর আছে, এবং আরও দুইটি উদ্দেশ্যের কথা পূর্বে উল্লেখ করেছি, গত ছয় মাসে আমি দুইবার ভারত এবং পাকিস্তান সফর করেছি, গত সপ্তাহেই আমি সফর শেষে ফিরলাম। ভারত সফরে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে এবং মেঘালয়ের শরণার্থী শিবির গুলোর সর্বশেষ অবস্থা নিজ চোখে দেখার সুযোগ আমার হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখেছি শরণার্থীদেরকে সুশৃঙ্খল ভাবে রেজিস্ট্রি করে প্রত্যেককে রেশন কার্ড দেয়া হয়েছে, এবং তাদের রেশন প্রদানের সময়ও আমি নিজে উপস্থিত ছিলাম। এরপর আমি দিল্লীতে ফিরে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছি। এছাড়া কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সিনিয়র অফিসারদের সাথে বিভিন্ন টেকনিকাল বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগও আমার হয়েছে। আমি ভারতের প্রশাসনকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই আমার প্রতিনিধিদের এবং বিশেষ করে আমাকে এভাবে সহযোগিতা করার জন্য। পাকিস্তানে গিয়ে আমি রাষ্ট্রপতি এবং সিনিয়র অফিসারদের সাথে পুনরায় দেখা করেছি। আপনারা জানেন, ঢাকায় অবস্থিত আমার প্রতিনিধিকে সরকার পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করছে। আমার সর্বশেষ ভ্রমণের সময় সে ফিল্ড সহকারীদের একটি ছোট দলকে নিয়ে কাজ করছিলো। সেই প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছে যে সকল শরণার্থীরা ফেরত এসেছিলো, তাদেরকে সীমান্ত সংলগ্ন রিসিপশন সেন্টারগুলোতে পাঠানো হয়েছে। সেখানে তাদের রেজিস্ট্রেশন এবং সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে, এবং একদিন বা দুইদিনের ভেতর তাদের প্রত্যেককে নিজ গ্রামে পৌঁছানোর জন্য বাসের টিকেট, প্রয়োজন অনুসারে কাপড়, পনেরো দিনের খাবার, এবং নগদ পাঁচ রূপী করে দেয়া হয়েছে। আমাকে সে আরও জানিয়েছে যে, সরকারের তরফ থেকে শরণার্থীদের গ্রামের কর্তৃপক্ষকে নোট দেয়া হয়েছে যেন তারা এই পুনর্বাসন প্রক্রিয়াতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। পাকিস্তান সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ২ লক্ষ শরণার্থী যার ভেতর অন্তত ৩০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য ইতোমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত গেছে, এর মধ্যে ৬৪ হাজার শরণার্থী ফেরত এসেছে সরকারী রিসিপশন সেন্টারের মাধ্যমে এবং বাকীরা নিজ উদ্যোগে। আমাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের সময় এই কমিটি গতকাল আবারও এই অফিস এবং আমাদের কার্যক্রমের ব্যাপারে তাদের নীতিগত সমর্থন প্রদান করেছেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যখন আমার অফিসের নীতিমালার মুসাবেদা করা হয়, তখন হাই কমিশনারকে নিজ কার্যক্রমে পুরোপুরিভাবে মানব হিতৈষী ভূমিকা পালনের জন্য বলা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষেই অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ বলে মনে করি। আপনারা যেভাবে চান তার প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাবো। যখন শরণার্থীদের ফেরত যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হবে, তারা একমাত্র তখনই স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে শুরু করবে, যখন তাদেরকে শান্তি এবং নিরাপত্তার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হবে, ততদিন পর্যন্ত আমি সরকার গুলো এবং বিশ্বের মানুষের কাছে আবেদন জানাই তাদের প্রতি উদার হওয়ার জন্য। নিজের বাড়ী থেকে বহুক্রোশ দূরে গিয়ে হতাশা এবং অনিশ্চয়তার ভেতর এভাবে বেঁচে থাকা একজন শক্ত সামর্থ্য বান মানুষকেও ভেঙ্গেচুরে দিতে সক্ষম, এই মানুষগুলো একজন সাধারণ মানুষের সহ্যসীমার অনেকগুণ বেশী কষ্ট সহ্য করছে। তাই উদারতা বিবর্জিত এবং তাদের সমস্যা সমাধানের সাথে সংশ্লিষ্ট নয় এমন কথা বলাটা প্রকৃতপক্ষে এই মানুষগুলোর বুকে এখনো জিইয়ে থাকা আশার প্রতি পরিহাসেরই নামান্তর। এখন আমাকে যদি আরও কিছু যোগ করতে হয়, তাহলে বলবো এই চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, আমাদেরকে সম্ভাব্য সবগুলো পথেই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। আজ যদি আমি বলতে পারতাম যে এই সমস্যার সমাধান সন্নিকটে এবং আমরা একদম ঠিক পথেই এগুচ্ছি, তাহলে খুব ভালো লাগতো। কিন্তু এখন এই কথা বলার একেবারেই কোনো উপায় নেই। তারমানে আবার এই নয় যে পরিস্থিতি শুধু খারাপই থাকবে। সংকটে ভুগতে থাকা লাখো মানুষ শান্তি প্রত্যাশা করে। ঠিক অডেন যেভাবে জাতিসংঘের সংগীতে লিখেছেন “শান্তির জন্য” “সঠিক সময়ে পরিবর্তনের জন্য”। আমি আশাবাদী সেই পরিবর্তন একদিন আসবে, এবং খুব শীঘ্রই। একদিন না একদিন শান্তি ফিরে আসবেই, কিন্তু খুব বেশী দেরী হয়ে গেলে তা হবে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
.
13.267.787-793
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমীটিতে ইউ.এন.এইচ.সি. আর এর প্রতিবেদনের উপর ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ সমর সেনের বিবৃতি | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে ইউএনএইচআরও (UNHCRS) এর রিপোর্টের ওপর জনাব সমর সেনের বিবৃতি-
নভেম্বর ১৮,১৯৭১।
ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীর বর্তমান পরিস্তিতি নিয়ে শরণার্থী বিষয়ক মহামান্য হাই কমিশনারের বিবৃতি আমরা অত্যন্ত আগ্রহের সহিত পড়েছি।কূটনৈতিক গোচর এবং দক্ষতা সত্ত্বেও হাই কমিশনার এই ভয়ংকর সমস্যার মখাবয়ব উন্মোচনের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব নিশ্চিত করেছে।এটি আমাদের জন্য বিশেষভাবে সন্তোষ বিধান করে।তিনি মাত্রই ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করেছেন যেখানে তিনি কিছু সংখ্যক শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন এবং বোধগম্যভাবে তার অপ্রতুল সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য তাকে সকল প্রকারের সুবিধা প্রদান ক্রা হয়েছিল।আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রিন্স সদর উদ্দিন আগা খান কৃত কাজের মূল্যয়ন করেছি।ভারতে তিনি ও তার প্রতিনিধি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ভারত সরকারকে কাছে পেয়েছেন এখানে তার এই বিবৃতিতে আবারও ভারতের পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করেছে।আমরা পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে চাই না।যা পাকিস্তানের নাগরিকদের এক বিশাল অংশক তাদের কঠিনতম সময়ে তাদের আবাস স্তল ত্যাগ এবং ভারতে আসতে বাধ্য করেছিল।পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক আমাদের ওপর আরোকৃত অসহ্নীয় বোঝা বিহিত করার জন্য ভারতের প্রচেষ্টা সম্পর্কে কথা বলাই আমাদের ইচ্ছা।এইসব প্রচেষ্টার একটি লিখিত বিবৃতি সম্প্রতি জেনেভায় অনুষ্ঠিত ইউএনএইচসিআর(UNHCR) এর পরিচালনাকারী পরিষদের বৈঠকে উপস্তাপিত হয়েছে।বর্তমানে আমরা এই শরণার্থূদের দুর্দশা লাগবে জাতিসংঘ কর্তৃক নেওয়া পদক্ষেপ গুলা মনোনিবাস করব।
এই সমস্যার বিশালতা ও মর্মান্তিকতা হাই কমিশনারের ভাষায় বর্ণনা করা যায়।এই বছরের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ইকোসোকের বৈঠকে তিনি বলেছিলেন-
“আমরা আধুনিক ইতিহাসের গণআন্দোলন গুলোর অন্যতম একটি আন্দোলনের মুখমুখি হয়েছি যেখানে মানবিক দুর্দশা ও ভোগান্তির সকল মুখাবয়ব জড়িত,এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
তিন মাস পর অক্টোবরে তার কার্যনির্বাহী কমিটিকে দেয়া বিবৃতিতে তিনি এটিকে “নজিরবিহীন প্রকান্ড চ্যালেঞ্জ” বলে অভিহিত করেন।
এবং একই সময়ে তিনি অল ইন্ডিয়া রেডিওতে সম্প্রচারিত বার্তায় একই কথা উল্লেখ করেন।
গত ছয় মাসে বাস্তুহারা মানুষের যে ঢল ভারতে অব্যন্তরমুখী হয়েছে তার বিশলতা বিশ্ব আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি।
এটা সবার জানা আছে যে, কেউ কখনও কারো অনুভূতি বা বস্তুনিষ্ঠতাই আঘাত করার পর কখনো আগে এত অনেক মানুষ এমনভাবে একটি ছোট সময়ে একটি আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা অনুরূপ পীড়াদায়ক অবস্থায় পালিয়ে গিয়েছে।১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল আমরা প্রাণ হারানো শরণার্থীদের জন্য সহযোগিতার প্রয়োজনতার জন্য প্রথম জাতিসংঘের নিকটবর্তী হলাম,যা তখন অর্ধ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেল।এই সংখ্যা আরো বাড়তে থাকল যখন পাকিস্তানী সামরিক সরকার হত্যা, লুম্ঠন, ধর্ষন আর অন্য অকথনীয় পাশবিকতা নির্যাতন অব্যাহত রাখল।
২৬শে অক্টোবর প্যারিসে বিশ্ব ব্যাংক সভা-এর বিশেষ কনসোর্টিয়াম ঘোষনা করল যে”৯.৫ মিলিয়নের এর বেশী অনেক উদ্বাস্তু এখন ভারত প্রবেশ করেছেন এবং যা এখনও অন্তঃপ্রবাহ অব্যাহত”। সর্বশেষ চিত্রে ৫-ই নভেম্ব্রের চিত্র অনুযায়ী ৯,৬০৮,৯০১।সেপ্টেম্বরে দৈনিক গড় অন্তঃপ্রবাহ ২৭,০০০ এবং অক্টোবর যা ছিল ১৭,০০০।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত এই সভার ভারতীয় অর্থনীতির উপর প্রভাব এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে উদ্বাস্তু ও অব্যাহত অন্তঃপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা চলে।আপনি অনুমতি প্রদান করলে উক্ত ইশতেহার প্রকাশ করতে পারি,যা ততটা দীর্ঘ নয়।
বিশ্ব ব্যাংক-এর সভাপতিত্বে অক্টোবর ২৬, ১৯৭১ভারত-এর অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্যারিসে ভারত সরকার আর আগ্রহী প্রতিষ্ঠান-এর একটি বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়।সাম্প্রতিক কালের পূর্ব পাকিস্তান থেকে অন্তঃপ্রবাহ শরর্ণথীরা অবহ্যাত থাকাই তা ভারতের অর্থনীতির উপর প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয় এবং ডলারের হিসাবে এই ত্রান খরেচের মূল্যায়ন মার্চ ১৯৭২ অর্থ বছরের শেষে ৭০০ মিলিয়ন হয়। এই সভায় অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম,কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইতালি, জাপান, ফেডারেল প্রজাতন্ত্র
নেদারল্যান্ডস. নরওয়ে, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল(আইএফএম),জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), জাতিসংঘ হাই কমিশনারের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন(ইউএনএইচসিআর), জাতিসংঘ শিশু তহবিল(ইউনিসেফ) এবং ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন(ওইসিডি)প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলে।অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর সরকারী প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ভারত সরকারের অর্থ মন্ত্রনালয়ের সচিব আই.জি. পাটেল ও জাতিসংঘ প্রতিনিধী চ্যারিস মেস(Charies Mace)শরণার্থীদের নিয়া দিয়া বিবৃতি শুনেন এবং উদ্বাস্তু উপশমের জন্য বিশ্ব ব্যাংক-এর গৃহিত মূল্য-এর ওপরে একটি প্রতিবেধন উপস্তাপন করা হল। ৯.৫ মিলিয়নের বেশী অনেক উদ্বাস্তু এখন ভারত প্রবেশ করেছে এবং অন্তঃপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে।
প্রতিনিধিরা এই পরিস্থিতির গুরুতর পরিণাম-
এর ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন-এর জন্য প্রয়োজনে আরো বিশেষ সাহায্য-প্রদান ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃতি দেন যাতে উদ্বাস্তু উপশম-এর বোঝা পুষিয়ে নিতে পারে। সদস্যরা গুরুত্তারোপ করল যে উদ্বাস্তু উপশম-এর জন্য সাহায্য স্বাভাবিক উন্নয়ন সহযোগিতা্র অতিরিক্ত হওয়া উচিত। ।সমস্যার আকার আর প্রকৃতি বিবেচনা করে এই সাহায্য মন্জুরি-এর থাকা উচিত। ।উন্নয়ন ব্যয়-এর কঠোর হ্রাসকরণ ঠেকাতে ভারতে, বিশেষ সাহায্য প্রতিজ্ঞা অত্যাবশ্যকীয়ভাবে দরকার যার আকার আরেকটি ভারতীয় সরকার আর ভারতীয় অর্থনীতি-এর বাজেটে তৎক্ষণাৎ সাধারন প্রক্রিয়ায় সমর্থন দিতে পারে।
এই সভায় ভারতে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে আন্তরিকতা ছিল একটি
আন্তর্জাতিক দায়িত্ব।সভায় উল্লেখ করা হয়েছে যে বিশ্বব্যাপী এই তারিখে অঙ্গীকার করল ২শ মিলিয়ন ডলার বেশি অংশগ্রহণ করে।
প্রতিনিধিরা ইউএনএইচসিআর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ এই বিষয় নিয়ে যেন তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার জন্য আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে আনুমানিক ৭০০ মিলিয়ন ডলার ত্রাণ খরচ আবৃত করতে পারে।সভায় প্রতিনিধিত্ব দেশ তাদের বিশেষ আগ্রহের কারণে ভারত সম্পূর্ণ প্রয়োজন একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পূরণ করার প্রচেষ্টা করবে।
ভারতের এসে দেওয়া প্রস্তাবে আমরা গভীরভাবে মূল্যায়ন করেছি সেই সাথে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপন করছি সব সরকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারী সংগঠন., ঐচ্ছিক সংস্থা আর ব্যক্তিগত ভাবে যারা সাহায্য করতে এসেছে।কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া উদার হিসাবে এটা আমাদের চাহিদা অনুযাইয়ী একটি ছোট অংশ হিসাবে বিবেচনা করব।প্রয়োজনীয়তা হিসাবে বিশ্বব্যাংক ও অঙ্গীকার দ্বারা মূল্যায়ন মধ্যে এখনও পর্যন্ত করা প্রায় 500 মিলিয়ন ডলার পার্থক্য। যেহেতু প্রকৃত ব্যবধান ব্যাপকতর তাই সব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি এখনো সম্পূর্ণরূপে রাখা হয় নি।
লাখ লাখ শরণার্থীর উপস্থিতিতে ভারতে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবন এবং ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য অব্যাহত হুমকি এবং নিরাপত্তা উপর যন্ত্রণাদায়ক প্রভাব বয়ে এনেছে।আমরা ভাবছি কিভাবে এই পরিস্তিতিতে বিশ্বের প্রায় দশ মিলিয়ন শরণার্থী গ্রহণ করে,আরো যে দিন আসছে্,এখনও ছয় মাসের জন্য ঠিকে আছে।একটি পদ্ধতিতে প্রতিবেশী দেশে হওয়া আর অনুরূপ অবস্থায় গৃহিত অবস্তা জীবন বিপদগ্রস্থ করত মিলিয়ন উপরে মিলিয়ন মানুষের চালনা কিন্তু একটি দেওয়ানি আক্রমণ কিছুই আর এটার ঘরোয়া ব্যাপারে একটি অসহনীয় হস্তক্ষেপ না।
যা আমরা আজ সম্মুক্ষন হচ্ছি ভারত পাকিস্তান-এর সামরিক সরকারের দ্বারা আগ্রাসনেরএকটি নতুন রকমের একটি শিকার হয়েছে। হাই কমিশনার ক্রিয়া এর দুটো প্রধান মাঠ: প্রথমটা ভারতে উদ্বাস্তু-এর জন্য জরুরী উপশম পদক্ষেপ, আর ২য়টা তাদের ঐচ্ছিক প্রত্যাবাসন-এর পদন্নোতির জন্য।উনাকে এখন পর্যন্ত উপশম পদক্ষেপের ক্রিয়ার জন্য নিয়া হাই কমিশনার-এর বিবৃতি পুরোপুরি বর্ণনা করা হয়েছে । স্বেচ্ছাসেবী-এর প্রত্যাবাসন হচ্ছে সমস্যায় একমাত্র স্থায়ী সমাধান। আমরা গুরুত্তারোপ করি যে এটা কিন্তু একটি অপরিহার্য সমাধান শুধুমাত্র সবচেয়ে ভালো না। আর যা শীঘ্র আসা উচিত। একটি সমগ্র হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হচ্ছে দায়ী উদ্বাস্তু-এর জন্য টানছে জন্য, আর যদি আজ ভারত পাকিস্তানী উদ্বাস্তু-এর বিশাল মিলিয়ন-এর পরে তাকাত, তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-এর পক্ষ-এর ওপরে আর কঠোরভাবে সবচেয়ে ছোট সময়-এর সম্ভব জন্য এত একটি ন্যাসরক্ষক হিসেবে করছেন। এই অবস্থা যা তাদেরকে ঘরে ফিরতে রাজি করাবে আরো দেরী না করে তৈরি করতে হবে।
আমরা পারি না আর ভারতে তাদের অনির্দিষ্ট উপস্থিতি মেনে নেইনা। আমরা হাই কমিশনার-এর সাথে সম্মত হই যে উপশম কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-এর ওপরে আরেকটি স্থায়ী রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক বোঝা তথাপি হওয়া উচিত না।হাইকমিশনার বলেন সত্য এই যে যেহেতু বোঝা অধিকাংশ ভারত বহন করতে হয়েছে যা আরো অনেক কিছু ভারতের নিজের জন্য।
মহাসচিব তার বার্ষিক প্রতিবেদন ভূমিকায় বলেন যে, “প্রচেষ্টা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন এবা এতদূর অকার্যকর হয়েছে।যেহেতু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার মতৈক্য ঘোষনা করলেন পূর্ব পাকিস্তান উদ্বাস্তু মে ২৫-এর ওপরে ফিরতে অনুমতি দিতে, ভারতে উদ্বাস্তু-এর সম্পূর্ণ সংখ্যা ধীরস্থিরভাবে বেড়েছে। যে পূর্ব পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক আর সরকারকে প্রচেষ্টা ক্রমবর্ধমানভাবে একটি রাজনৈতিক মিটমাট-এর দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি-এর অভাব-এর দ্বারা ব্যাহত করা হয় হচ্ছে বিষয়-এর মূল কথা।অগ্রগতি-এর অভাবের জন্য এই কারণের প্রত্যাবাসনে,অন্তঃপ্রবাহ এই ছয় মাসের উপরে চলতে ছিল আরেকটি আর বেশী অনেক প্রাথমিক ব্যাখ্যা যোগ করা হয়। এটা একটি রক্তস্রাব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। যদি না আমরা সমস্যা নির্ণয় করতে পারি, আমরা যেকোনো কার্যকর উপশম দিতে পারি না। নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক যে কারণ ব্যাখ্যা করে থেকে বিবৃতির আয়তন বিদ্যমান হয়, কিন্তু আমাদের সময় নেই সব খুঁটিনাটী আলোচনা করতে; সবচেয়ে বেশী মৌলিক মানব অধিকার-এর, জীবন-এর এটা অধিকার সহ বিশাল, নিয়মতান্ত্রিক আর বিরামহীন লঙ্ঘনে পেতে হচ্ছে মুখ্যত, মানুষ-এর এই অভূতপূর্ব চলন-এর প্রাথমিক কারণ। এটা একটি গণহত্যালোভী শাস্তিতে পরিমাণ যা ৭৫ মিলিয়ন মানুষে। খুবই কম সময় আগে, আর অবশ্যই কখনো পরে জাতিসংঘ দলিল প্রকাশ করেছিল, মানব অধিকার আর মৌলিক স্বাধীনতা এমনভাবে একটি বিশাল স্কেল-এর ওপরে আর এত অনেক নিষ্ঠুরতার সাথে লঙ্ঘন করা আছেন যেহেতু জায়গা নিয়েছে এই বছর পূর্ব পাকিস্তানে। বিংশ শতক -এর এই পরবর্তী অর্ধেক, যখন মানুষ জায়গা আর সময় জয় করতে প্রাণপণে চেষ্টা করছেন আমাদের দুর্ভাগ্য ছিল মধ্যযুগীয় রক্ত স্নাতের একটি অতিকায় কার্যকলাপ দেখতে। একটি চেষ্টা একটি মানুষকে দমন করা তে আর অপদস্হ করতে সাদামাটাভাবে একটি চেষ্টায় তাদের মুক্ত আর গণতান্ত্রিকভাবে বিশেষ উদ্দেশ্যে অভিলাষ দমন করতে আছে। আমি ঘটনা বলতে যে এই কঠোর নাটকে দিক নির্দেশনা দেয় মার্চের ২৫-এর মধ্য রাতে থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটাল যদিও আমরা সহজে আর তাৎক্ষণিকভাবে পুরো পরিস্থিতির সত্যতা অনাক্রমে আগে কামনা করি নাই যদিও এটা দিন থেকে দিন ভাঁজ খুলল। কিন্তু, আমরা গুরুত্তারোপ করেছি যে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে মানব অধিকার-এর বিশাল লঙ্ঘন-এর প্রকৃতি আর মাত্রা আলোচনা করে
পূর্ব পাকিস্তান উদ্বাস্তু-এর সমস্যায় কোন সমাধান দিতে পারি নাই।
যখন থেকে শোকাবহ ঘটনা শুরু করল, জনসংখ্যার এই অভূতপূর্ব চলন-এর মৌলিক আর মূল কারণ বিপথে চালিত করতে আরো বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা বেপরোয়া আর অর্বাচীন মানুষের মর্মহতা বুঝি। আমরা পারি না তাদের প্রতি দ্যাবান হতে।প্রথমত সব ঘরোয়া এখতিয়ার আর অভ্যন্তরীণ ব্যাপার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করতে হলো। পরপরই, নাছোড়বান্দা প্রচেষ্টা একটি ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান-এর ভেতরে সমস্যা নিবেদন করতে তৈরী হয়েছে। তথাপি যে ভারত উদ্বাস্তু-এর প্রত্যাবর্তন ঠেকাচ্ছে, যেন ভারত যেকোনো পরিস্থিতি-এর নীচে সমর্থ হতে পারে, সময়-এর যেকোনো দৈর্ঘ্য-এর জন্য প্রায় দশ মিলিয়ন উদ্বাস্তু-এর পরে খাওয়াতে বা থাকতে হচ্ছে আরেকটি যুক্তি, আর এখন প্রতিষ্ঠিত সত্য বিকারগ্রস্তভাবে আশায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয় যে প্রকাশ্য নিন্দার প্রভাব ছড়িয়ে দেয়া হবে, আর তা কমানো হবে। কিন্তু, সত্য গোপন করাটা কঠিন, উদ্বাস্তু-এর জন্য পাকিস্তান-এর প্রোপাগান্ডা সংখ্যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান-এর দ্বারা অস্বীকার করা হয়েছে, প্রশ্নে আলোচনা করার সময় তিনি বলেন :, “দু বা তিন মিলিয়ন, এমনকি চার মিলিয়ন হয়তো থাকবেন।” প্রেসিডেন্ট আছেন স্পষ্টত সন্দেহে আর হচ্ছেন জ্ঞাত অপবার্তার যার একমাত্র উদ্দেশ্য একটি প্রক্রিয়ায় ভারত সংশ্লিষ্ট করা হচ্ছে যা যেকোনো উদ্বাস্তু সমস্যায় অনুসরন করা হয়েছে না, আর তথাপি তার প্রতিনিধিদল সংখ্যা দিতে যেন রাজনৈতিক কল্পনা ছাড়া যা কিছু-এর ওপরে ভিত্তি করা হয় তাদেরকে চলতে আছে। এটা সত্যিই একটি চমকপ্রদ কৃতিত্ব অনুপস্থিত মানুষকে গুনতে হত। এটা আছে উপরন্তু উল্লেখযোগ্য যে পাকিস্তান-এর সংখ্যা ২০০,০০০ উদ্বাস্তু-এর আগের তিন মাস-এর উপরে অপরিবর্তিত ছিল তাদের ঘরে ফেরা থাকতে। আর তখন সংখ্যা অভূতভাবে ভাগ করা হয় আর ১৪০০০০ মুসলমানে আর ৬০,০০০ হিন্দুতে ধরপাকড়ও করা হয় একই সময়ে যেহেতু হাই কমিশনার জানানো হয়েছে যে ৬৪০,০০১ অভ্যর্থনা কেন্দ্র আর ১৩৬,০০০ -এর মধ্য দিয়ে পাশ করা তাদের-এর ওপরে নিজেরা ফিরে আসল,। এখানে কেউ কাউ কে জানেন না,যেভাবে তারা আসলেন আরেকটি দৃষ্টান্ত; কিন্তু তখন মানুষক প্রথমে“ অপকর্মা ” , “ রাষ্ট্র-বিরোধী ” উপাদান, – “ “ ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী ” হিসেবে সব উদ্বাস্তুকে বর্ণনা করেন, যেহিসেবে সব মুক্ত ভোটার
নিরূপণ করে যে সব স্বাধীনতা ডাকে, হতে ও নীতিপরায়ণ সত্য-এর ব্যাপারে আশা করা হয় না।
জেনেভায় আগের মাস হাই কমিশনার তার নির্বাহী কমিটিতে একটি সংগত মন্তব্য তৈরি করেন ।প্রত্যাবাসন-এর ঙ্গতি প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করতে প্রাথমিক অবস্থা তৈরি প্রত্যাবাসন সম্ভব আর সাধ্য, তৈরি করা হচ্ছে অবাস্তবানুগ আর আক্রান্ত না হওয়া উদ্বাস্তু-এর প্রত্যাবাসন সহজতর করা ব্যাপার নিয়ে।তিনি একই মন্তব্য পুনরায় বললেন- আমাদের গত অভিজ্ঞতায় যখন একটি নিষ্পত্তি উৎস-এর দেশে ঘটেছিল, পারস্পরিক সহযোগিতা আর সাহায্য-এর একটি পদ্ধতি ইউএনসিএইচআর -এর সক্রিয় অংশগ্রহণে যা প্রত্যাবাসন সহজতর করল সাথে আরো প্রতিষ্ঠিত করা হলো। যতক্ষন না এই পর্যায়ে পৌঁছানো হয়, উল্লেখযোগ্য আর ভাল সংগঠিত করা প্রত্যাবাসন যেকোনো বোধ বানাতে না পারে তখন তার গতিধারা হচ্ছে কঠিন উল্টাতে।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানে দুর্যোগ আর উদ্বাস্তু-এর বিরামহীন প্রবাহ মৌলিক কারণে আবার, ফিরি। “ প্রাথমিক সমস্যা ” নিয়ে মহাসচিব লিখেন, “ সমাধান করা হয় একমাত্র যদি মিটমাট আর মানবিক নীতি-এর শ্রদ্ধা একটি রাজনৈতিক সমাধান অর্জন করা হয় ”। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করতে যদি কাজ করা হয় থাকতে প্রাথমিক ইস্যুতে যেকোনো সমাধান, যা এই মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ-এর সাথে ছিল। আমরা কোন কার্যকর চেষ্টা থাকা সে নির্দেশে বানানো দেখিনা; বিপরীত-এর ওপরে, অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ হচ্ছে উপস্থিত যে বড় ঠিক আর বড় ভ্রান্তি-এর মধ্যে কূটতর্কআর দিদ্বাদন্ধ আছে উৎসাহিত করা হচ্ছে সাহসের একটি অভাব গোপন করতে আর নিষ্ক্রিয়তা ন্যায্যতা প্রতিপাদন করতে। নিন্দিত সরকার-এর বোধগম্য জনপ্রিয় প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে গত মাস আর এটার পদ্ধতি যা পূর্ব পাকিস্তান-এর ভেতরে ধীরস্থিরভাবে বাড়াচ্ছে ঘটনা, এখন এটা পরিস্কার বানানো উচিত যে আত্মবিশ্বাস-এর একটি জলবায়ূ পূর্ব পাকিস্তানে বানানো হয় শুধু মধ্য দিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচিত করা আর পূর্ব বাংলার মানুষ-এর মেনে নেয়া নেতার সাথে মিটমাট। এটা আছে একটি কম বছর ফিরে যে পূর্ব পাকিস্তানী একটি নিশ্চিত নেতৃত্ব আর একটি ভাল নির্দিষ্ট জন্য প্রায় একটি মানুষে ভোট দিলেন, আর তারা হচ্ছেন পাকিস্তান-এর সমগ্র-এর জনসংখ্যার বেশিরভাগ প্রায়ই ৭৫ মিলিয়ন। দুঃখের সাথে, একমাত্র চেষ্টা যা পাকিস্তান-এর সরকার-এর দ্বারা এই নির্দেশে বানানো হয়েছে এই নির্দেশেতে হচ্ছে প্রোপাগান্ডা পদক্ষেপ একটি রাজনৈতিক সমাধান-এর জন্য বাড়ানো আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ছলনাময়তে। এই উদ্বেগ ছিল ব্যাপকভাবে আর সমাবেশ-এর জেনারেল বিতর্ক-এর সময় নিশ্চিতভাবে প্রকাশ করল। একই সময়ে, সামরিক দমন প্রতিশোধ গ্রহণ হিসেবে সম্পূর্ণ গ্রাম-এর পোড়ানো-এর সাথে চলতে আছে ভিতরে, আর অন্য নিষ্ঠুরতা নির্দিষ্ট সময় পরপর আর ঘন ঘন পররাষ্ট্র প্রেসে বিবৃতি প্রচার করা হয়।
সমস্যার এই প্রধান কারণ থেকে গতিপথ পাল্টে দেয়া মনোযোগ আমাদের আগে সমস্যা সমাধান করবে না। ভারত-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ সজোরে নিক্ষেপ করতে আর ইচ্ছাপূর্বক ভারতীয় সীমান্তে ওপরে সামরিক সমাহরণ-এর মধ্য দিয়ে টান বানাতে যা হচ্ছে সম্পূর্নভাবে নেতিবাচক আর বিপজ্জনক নীতি। আমরা পূর্ব পাকিস্তানে মানব অধিকার-এর লঙ্ঘন হিসেবে এইটা ব্যক্ত করি।
আমরা প্রথম কমিটি এর আগে:, ডেনমার্ক-এর বিশিষ্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রী-এর প্রত্যেক শব্দ-এর সাথে সম্মত হই যখন তিনি নভেম্বার ১৬, ১৯৭১-এর ওপরে, যখন ডেনিশ সরকার আবেদন যেহেতু অন্যান্য পরিমিতাচার আর সংবরণ-এর জন্য পাকিস্তান-এর সরকারে একটি দৃষ্টিভংগী-এর সাথে করেছে, একটি শেষ পর্যায়ে আনতে পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা। মানব অধিকার-এর জন্য শ্রদ্ধা আর মানুষের স্বাধীনভাবে একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তি পূর্ব পাকিস্তান-এর পরিস্কারভাবে সমস্যা সমাধান করতে পারে। উপমহাদেশ আর বিশ্বের বড় উৎসাহে দৃষ্টিভংগী-এর এমনভাবে একটি অভিব্যক্তি সমজতার একটি কাজ হিসেবে বলা হয় কি? কোন প্রোপাগান্ডা ভারত আর পাকিস্তান-এর মধ্যে একটি দ্বন্ধের একটি সমস্যা, যা হচ্ছে সম্পূর্ণভাবে আর অপরিহার্যরূপে পাকিস্তান-এর সরকার আর পূর্ব পাকিস্তান-এর মানুষ মধ্যে একটি সমস্যা, বদলাতে পারে না। প্রাথমিক সমস্যা পূর্ব পাকিস্তান-এর ভেতরে আর সেখানে সমাধান করা হয় এটা এত যে উদ্বাস্তু জীবন, সম্পত্তি আর সম্মান-এর নিরাপত্তার জন্য বিশ্বাসযোগ্য প্রতিশ্রুতি-এর নিশ্চয়তায় অধীনে যেতে পারেন ।
আমার প্রতিনিধিদল উপরন্তু কার্যকলাপ গভীর উৎসাহ-এর সাথে ইউএনইপিআরও লিপিবদ্ধ করছে- ইউনাইটে্ড নেশান্স ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ অফ অপারেশন।
কিন্তু, আমি খুব সংক্ষিপ্তভাবে বিবেচনা করেছি ইউএনইপিআরও একটা বা দুটো অবস্থান তৈরি করা উচিত। প্রথমে সব বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানে নিশ্চিত উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে জাতিসংঘ উপশম কার্যকলাপ সেখানে ভূলবশত সামরিক সরকার সাহায্য করতে পারে।উদাহরনস্বরূপ,নভেম্বর ১৭ পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিউইয়র্ক টাইমস-এর আমাকে একটি প্রতিবেদন নির্দেশ করে লিখেন মিঃ বাউনি।
একদা জিনিসপত্র সর্বশেষ ভাণ্ডার পৌঁছায় বিদেশী উপশম সংস্থার দায়িত্ব শেষ
করে আর বন্টন বাহিনী বা এটার রাজনৈতিকভাবে নির্ভরযোগ্য ` শান্তি কমিটি ‘ এই বিষয় শুধু জাতিসংঘের দ্বারা অনিয়মিত স্পট যাচাই কর্মকর্তার দ্বারা সামাল দেয়া হয়। এটা ধারণ করতে বিদ্রোহী এলাকা থেকে ব্যাপকভাবে অভিযুক্ত করা যে বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করছে থেকে সত্যই মানবিক উদ্দেশ্যে।
মিঃ বাউনি মন্তব্য করেন- ” খাওয়ানো সাহায্যে পূর্ব পাকিস্তানিদের ছিল সমস্যা,একটি বিদেশী ত্রাণ কর্মী সম্প্রতি রংপুরের উত্তর জেলা পরিদর্শন করে গুরুত্ব আরোপ করেন,পরিবহনের অভাব প্রতীয়মান করা হলো,যেখানে কাছের দুর্ভিক্ষের ক্ষোভ বিবৃতি করা হয়েছে করা হয়েছে।
আমরা ব্রীজের স্তম্বের পাশে অপেক্ষারত ছিলাম তখন অন্য দিক থেকে একটি ট্রাক আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে।এই ট্রাক রংপুর থেকে দূরে দক্ষিণে যাচ্ছিল, এবং তারা তাতে বাসমতী চাল বোঝাই করেছে।
যদিও পূর্ব পাকিস্তান সবসময় চালের অভাব ছিল,এই প্রদেশের খুব উচ্চ বৃদ্ধি মানের বাসমতি চাল যা ভাল বাজার সচরাচর তা বিদেশে ভোগ করে,পাকিস্তান এই রপ্তানি দ্রব্য চাল অনেক মূল্য বিক্রি করে,চীন ও অন্যত্র থেকে সস্তা চাল নিজের খরচে তারা আমদানি করে।
পূর্ব পাকিস্তানে চাল পাঠাতে দাতা দেশ গুলোর খুব বেশি বেগ পেতে হত না,যে কারনে ইসলামাবাদ সরকার
দেশে উৎপন্ন চালের উপর মুনাফা করতে থাকে।
সরকারকে খাদ্য শষ্য ও অন্যন্য সাহায্য দিয়া বাঙালীদের কাছে ততটাই বিতর্কিৎ ছিল,যতটা যুক্ত্ররাষ্ট্রের পশ্চিম
পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক বিমান পরিবহনের আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা ছিল।
অপারেশন এই দিকে ক্রমাগত প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করা হবে।আমরা আনন্দিত যে ইউএনইপিআরও প্রতিনিধির
বিবৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সমস্যার স্বীকৃতি দিয়েছেন।সংভাদটি পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছে কিন্তু তা
ভরসাজনক নয়।
দ্বিতীয়ত ভারতে ইউএনএইচসিআর এর অপারেশন এবং ইউএনইপিআরও এর মধ্যে বর্তমান সম্পর্ক বৈশিক
অথবা বুদ্ধিবৃত্তি সম্পন্ন কিনা এই ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ আছে।সাধারণ সম্পাধক ইউএনইপিআরও একটি
মানবিক অপারেশন হিসাবে শুরু করেছিল এবং এটা কখনও পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরাকার রাজনৈতিক
সমাধানের পরিপূরক হতে পারে না।যদি দাতা দেশ গুলো ইউএনইপিআরও কে ভারতে শরণার্থী সমস্যা
সমাধানের উপায় হিসাবে মনে করে তবে তা একই সাথে অবাস্তব ও দূর্ভাগ্যজনক।আমি নিশিত যে এই
কমিটি এই ধরণের প্রভাবকে এড়িয়ে যাবে।পূর্ব পাকিস্তানে চাল ও অন্যন্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও জনগণ এর
বাইরে শরণার্থী হত এবং তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসতে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যক্ষান করত যতক্ষণ পর্যন্ত
রাজনৈতিক অস্তিরতা বিরাজ করছে।লোকজন ভারতে পালিয়ে ছিল কারণতারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিল এবং
খুন,গুম বিভিন্ন উপায়ে হেনস্ত হচ্ছিল।
ম্যাডাম চেয়ারম্যানের সংকলনে ভারতের উপর পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দ্বারা আরোপিত উদ্বাস্ত বাড়তে
থাকে এবং তা অসহনীয় হয়ে উঠেছে যদিও আমরা জানি স্বল্প সময়ে এটি মানব ইতিহাসের সবছেয়ে ব্যাপক
আন্দোলন।২৬ তন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অসংখ্য প্রতিনিধি তার বিবৃতি মূল্য্যন করেন।এট স্পষ্টভাবে
প্রদর্শিত হয়েছে যে আমাদের সংগঠন সম্পূর্ণ পদক্ষেপে বর্তমান প্রবণতাইয় পাকিস্তান সরকারের বিপরীত করা
উচিত।অবশ্যই এটাও না গভীর হতাশা এই যে জাতি সংঘ কিংবা যুক্তরাষ্ট্র পৃথক যে এখনও সরকারের
পদক্ষেপ নিয়ে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে।আমরা ভারত, যারা অন্য কোন দেশ দ্বারা নির্মিত সমস্যার অধিকাংশ
বিদ্বেশপূর্ণ প্রভাবে সম্মুখীন হয়েছি,মানবিক সম্ভবতার দিক দিয়ে মোকাবেলা করার চেষ্টা করেছি যা নিজেদের
জন্য মহান কর্ম।সমস্যাটা গোলকদাধার মত,না একা দ্বারা সহানুভূতি প্রকাশ করা না আর্থিক বা অন্য কোন
জরুরি সহায়তা উপস্তাপন করা এবং না সেই সাথে স্পষ্টাস্পষ্টী সিদ্ধান্ত যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যথারূপ প্রতি
১০ লাখ অসহায়ের জন্য কাজ করতে এবং দুঃখজনক ভাবে উদ্বাস্তরা অস্তায়ী ভাবে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ
করছে।কারণ এটি করতে পাকিস্তান সরকার মানাবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা স্বীকার নীতিগুলোর সঙ্গে\
সংগতিপূর্ণ।আইনে স্পষ্ট যুক্তি যে মৌলিক সমস্যার উপল্বদ্ধিকে এবং কমিটি একটি নির্ধারিত প্রচেষ্টা করবে যে
বা জাতিসংঘ এই বিষয়ে সত্যিই পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ সহন প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করতে
পারবেন।পরিশেষে আমি আবারো বলতে চাই যে কারণ পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট মিথ্যাও হতে পারে, তবে এটা
শুধু মাত্র পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নির্বাচিত ও গৃহিত নেতাদের সঙ্গে শযোগিতার মধ্য দিয়ে তাদের অবাধে
প্রকাশের ইচ্ছা অনুযায়ী সমধান করা যেতে পারে।এদিকে যতদিন আমরা খাব ততদিন শরণার্থীরাও কাবে।
——————————-
.
13.268.794-801
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব বাংলার শরণার্থীদের ত্রাণ সাহায্য জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রণীত ইউ.এন.এইচ.সি. আর প্রতিবেদনের উপর আলোচনার সারাংশ | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৮-১৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘের তৃতীয় সাধারণ অধিবেশনে পুর্ব বাংলার শরনার্থীদের সাহায্যের জন্যইউ.এন.এইচ.সি.আর. এর দ্বারা উপস্থাপিত রিপোর্টের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
১৮ ও ১৯ নভেম্বর ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সমস্যার ব্যাপারে১৯৭১ সালের ১৮ ও ১৯ নভেম্বর তৃতীয় কমিটিতেএকটি বিতর্কের আয়োজন করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানসহ উক্ত বিতর্কে প্রায় ৩১টি দেশ অংশগ্রহণ করে। ইউ.কে., ফ্রান্স, তিউনিসিয়া ও ভারত দুইবার করে বক্তব্য প্রকাশ করে। প্রতিনিধিদলগুলোর গঠনমূলক বিতর্কের চুম্বক অংশ নিচে দেয়া হলঃ
১. ইউ.এস.এ.-রাষ্ট্রদূত ডব্লিউ. ট্যাপলি বেনেট:শরণার্থীদের ক্ষেত্রে আমরা স্বীকার করি যে ভারতের উপর আসলেই একটু বেশি চাপ যাচ্ছে। এই বিবেচনা করে,
প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবএবং অপ্রত্যাশিত জরুরী অবস্থার মোকাবিলা করা সহ এই বিশাল চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে, ভারতীয়রা যেভাবে শরনার্থীদের সাহায্য করে যাচ্ছে, সেটা আসলেই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। এই শরণার্থীদের কারনেভারতের বর্তমানঅর্থনীতি এবং ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপর গুরুতর প্রভাব পরবে সে ব্যাপারে আমরা সচেতন।বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে যে, ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য অর্থ ব্যয় করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে,সমগ্র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই খরচ মেটানোর জন্যভারতকে সাহায্য করা। সচেতনতা এবং বিবেকবোধই সকলকে এই কাজ করতে প্ররোচিত করবে। শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সাহায্যের জন্য ২ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থের যোগান দেয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনকংগ্রেসকে নির্দেশ দিয়েছেন। দেশের এই মানবিক প্রয়োজনের সময় অবশ্যই আমার দেশকে অনুপস্থিত পাওয়া যাবে না।আমরা এই বিষয়ে একমত যে, প্রয়োজনের তুলনায় সাহায্যের পরিমান হতাশাজনক।শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করাপর্যন্তআন্তর্জাতিক সাহায্য থেকে পাওয়া আর্থিক এবং অন্যান্য সাহায্যের কোন অভাব হবে না। শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করার জন্য পাকিস্তান সরকারের ২৫ টি বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন এবং শরনার্থীদের সেখানে খাদ্য, বস্র ও পুনর্বাসনের ব্যাবস্থা করার ব্যাপারটিও আমরা নোট করেছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর জন্য ইউএনইপিআরও এর কার্যকলাপগুলো একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এই কার্যকলাপগুলো চালিয়ে নেয়ার জন্য সাধারণ সচিবের আরও অনেক সাহায্যের প্রয়োজন।শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত করাই হচ্ছেএই মানবিক সমস্যাটির সমাধান। আমরা আশা করি শরনার্থীদের স্বদেশে পুনর্বাসিত অবশ্যই সম্ভব হবে। যেকোনো একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছানোর আগে, আমার প্রতিনিধিদল ভারত ও পাকিস্তান সরকারের কাছে ভারত ও পাকিস্তানে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ সহায়তা প্রদানের প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের ভূমিকা সহজতর করার জন্য সম্ভাব্য সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।এই দুর্ভাগা শরণার্থীদের মাধ্যমে আমরা সমগ্র পৃথিবীতে মানবতার চরম অবক্ষয়ের সাক্ষী হলাম।
২. ইউএসএসআর রাষ্ট্রদূত, এস স্যাফরনচকঃ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা জটিল হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যাবে না।সীমান্তে শরণার্থীদের প্রবাহের কারণে ভারতে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যারসৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে এই নিপীড়ন বন্ধ করা উচিত এবং সকল জনগণের স্বার্থে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া উচিত।পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার প্রধানের মধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়া উচিত। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে শরণার্থীরা ফিরে আসতে পারবেন। আমরা আশাবাদী যে এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রন বজায় থাকবে এবং সশস্ত্র সংঘাতের ফলে ঐ অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে না। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, তার সবই সোভিয়েত ইউনিয়ন করবে।
৩. ইউ.কে.-গওরির আর্ল: দুবার বক্তব্য রেখেছেন:এইরূপ মানবিক বিষয়গুলোর দায়ভার স্পষ্টতই তৃতীয় কমিটির, যদিও আমরা সকলেই এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির পিছনের কারণগুলোর ব্যাপারে সম্পুর্নরূপে জ্ঞাত। স্বেচ্ছায় স্বদেশে প্রতাবর্তন এবং ক্ষুধা ও দুর্ভোগহ্রাস করে শরণার্থীদের সকল সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান খোজা উচিত। কিন্তু এই রাজনৈতিক সমাধানটি কীভাবে অর্জন করা যায়, সেটি নিয়ে ভাবা এই কমিটির কাজ নাতাই, আমার বক্তব্য নির্দেশিত হচ্ছে মানবতার দিকে।বর্তমানে নিরপরাধ মানুষগুলো বিপদে আছে এবং কমিটি তাদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছে। যুক্তরাজ্যভারতে অবস্থানরতপূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের সহায়তার জন্য১৪.৭৫মিলিয়ন ইউরো এবং পূর্ব পাকিস্তানে সাহায্যের জন্য২ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছিল। সাহায্যের প্রয়োজন ছিল প্রচুর এবং সে তুলনায় সাহায্য ছিল অপ্রতুল। পুর্ব পাকিস্তানের এইরূপ বিধ্বস্ত জীবনব্যাবস্থ্যার সাথে মোকাবিলা করার জন্য ইউএনইপিআরও এর প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা পেশ করছি। সীমান্ত এলাকার মত সংবেদনশীল এলাকায় জনসাধারণের জন্য ত্রাণের ব্যাপারটি গুরুত্তপূর্ন ছিলো। আমার সরকার ঘোষণা দিচ্ছে যে, ইউএনইপিআরও কে তার কাজে সম্পুর্ন সাহায্য সহযোগীতা দেয়া হবে।
৪. ফ্রান্স-মুন. জে. কস্কিউস্কো মরি, এমপিঃ দুবার বক্তব্য রেখেছেন: ভারতের উপর পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে ভারতের উপর যে অসহনশীল বোঝা চেপে বসেছে, সেজন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং ভারতে অবস্থিত পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদেরকে মানবিক সাহায্যের জন্য আপিল করার আহ্বান জানান।পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যার সহায়তার বিষয়ে, এটি দুর্ভাগ্যজনক ছিল যে ইউএনইপিআরওসহায়তা প্রদানের সময় অনেক সমস্যা এবং এমনকি বিপদেরও সম্মুখীন হয়েছিলো। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন যে, সেখানে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতে পারে, যার ফলে জনগণকে সাহায্য করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি ঘোষণা করেন যে ভবিষ্যৎ বিপদসংকুলএবং আমাদেরকে অবশ্যই সতর্কবানীটিকে গুরুত্তের সাথে নিতে হবে। আমাদের লক্ষ্য করা উচিত যে, যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সহানুভূতিশীল, কিন্তু তবু অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সাহায্যের পরিমান থাকবে সীমিত। এই কঠিন বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে একটি শান্তিপূর্ণ ও উদার সমাধান দেয়ার জন্য তাদের নিকট আপিল করেন।
৫. পোল্যান্ড-জনাব. ডব্লিউ. নেনম্যান:একটি নাটকীয় মানবিক সমস্যা তৈরি করা হয়েছে।বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে হয়ত সমস্যাগুলোর সাময়িক একটি সমাধান করা যাবে কিন্তু কেবলমাত্র উদ্বাস্তুদের সফলভাবে প্রত্যাবর্তন করাতে পারলেই সমস্যাটির সম্পূর্ণ সমাধান হবে। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধান হচ্ছে উদ্বাস্তুদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার মাধ্যমে দেশে প্রত্যাবর্তন। আমরা আশা করি পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদেরকে পূর্ব পাকিস্তানেফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাবে। এটাই হবে শান্তির জন্য শ্রেষ্ঠ পন্থা।
৬. নেদারল্যান্ডস-রাষ্ট্রদূত আর. ফাকঃ আমরা বুঝতে পারছি যে ভারতীয় ভূখণ্ডের উপর পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের অবস্থান নেয়ার ফলে সমগ্র বিশ্ব একটি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে এবং লাখো জনগণের দুর্দশা বেড়েই চলছে। আমি আজকে ঘোষণা করছি যে, আমার সরকার ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের জন্য১০ মিলিয়ন গিল্ডার (প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার) এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্যআরও ১০ মিলিয়ন গিল্ডার (যার অর্ধেক খাদ্য সহায়তা দিতে ব্যাবহার করা হবে) উপহার হিসেবেদেয়া হল। বিশ্বের সহায়তা যথেষ্ট নয়। এই সমস্যার সমাধান করার জন্য কমিটি এবং সাধারণ পরিষদ যা করতে পারে তা হল, সমস্যাটি সমাধানের একটি উপায় খুঁজে বের করতে বা সমাধানের উন্নয়নে সাহায্য করতে পারে যা ভারতে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে এবং একই সাথে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে।এত দ্রুত এবং এরূপ উদার প্রতিক্রিয়ার জন্য ভারত সরকার প্রশংসার দাবী রাখে।শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন করাই যে এই সমস্যাটির একমাত্র সমাধান, এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দেয়া সমাধানটি ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই মেনে নেয়। যেহেতু বড় আকারের প্রত্যাবর্তন কোন লক্ষণ নেই, সেহেতুবিশ্ব সম্প্রদায় দুটি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। সমস্যা দুটি হচ্ছে, প্রথমত পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত এবং ভারতে অবস্থানরতপূর্ব পাকিস্তানী শরনার্থীদের জন্য প্রচুর পরিমাণে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা এবং দ্বিতীয়ত, স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন মাধ্যমে একটি তাৎক্ষনিক সমাধান। কমিটির উচিত বড় পরিমান সাহায্য সহযোগীতার জন্য পূর্বের করা আপিলের ক্ষমতা পুনরায় ব্যাবহার করা। এরই সাথে সাথে কমিটির আরও মাথায় রাখতে হবে যে, সমাধানটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের ইচ্ছার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। কারণ বিশ্বে নির্দিষ্ট কিছু শরণার্থী সমস্যাগুলোর সমাধানের ব্যাপারে সকলেরই আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু যদি অনেকদিন ধরেও কোন সমাধান না পাওয়া যায়, তাহলে তহবিল সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে ওঠে এবং তাদের নিছক উপস্থিতি একটি আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতায় পরিণত হয়। অতএব, কমিটি এবং সচিব মিলে শরণার্থীদের স্বার্থে এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের ঘোষিত মতামতের ভিত্তিতে, একই সময়ে প্রশ্নের দুটি দিক মোকাবেলা করে।পরিশেষে নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধিদল এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিদল একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।উপমহাদেশের এই দুঃখজনক ঘটনাটির মূল কারণ হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক ভয়। সম্ভবত কারণগুলো অযৌক্তিক, কিন্তু তবুও মূল কারণটি হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক ভয়। অন্যরা এই খসড়াটিকে সম্পূর্ণভাবে অসাংবিধানিক বলে বিবেচনা করে।দুই সরকারের প্রতি এই আপিলগুলো ঘোষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী কঠোরভাবে পালন হয়।
৭. নিউজিল্যান্ড-রাষ্ট্রদূত জে. স্কটঃ শরনার্থীরা সীমান্ত অতিক্রম করে ক্রমাগত ভারতে আসার কারনে শরণার্থী সমস্যা আরও প্রবল আকার ধারণ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের এবং জনগণের জন্য বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। তারা দেখতে চান যে, ইসিওএসওসি পরবর্তীতে এই পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছে। ভারত অনির্দিষ্ট কাল ধরেউদ্বাস্তুদের ভার বহন করতে পারেনা। সমস্যাটির একমাত্র সমাধান হচ্ছে উদ্বাস্তুদেরকে যথেষ্ট নিরাপত্তা এবং আস্থাসহ তাদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানো। পূর্ব পাকিস্তানের এমন কিছু শর্ত দেয়া প্রয়োজন ছিল, যাতে করে শরণার্থীরা তাদের নিজের দেশে ফিরে দেশটির উন্নয়নে অংশ নিতে উৎসাহ পায়। এটিই ছিলএকটি স্থিতিশীল সমাধান অর্জন করার একমাত্র উপায়।এখন পর্যন্ত, অপেক্ষাকৃত কম শরণার্থীই তাদের বাড়িতে ফিরে এসেছেএবং গত কয়েক সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তার অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছিল, সীমান্ত সংঘর্ষ আরও ঘনঘন হয়ে গিয়েছিল এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি কঠিন যুদ্ধ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিজস্ব বিষয়গুলির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাই ছিল সমস্যাটির মূল কারণ। এই সমস্যাটি কেবলমাত্র পাকিস্তান সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনার দ্বারা সমস্যার সমাধান হতে পারে। এই অবস্থায় প্রয়োজনীয় সম্পদের তুলনায় সরবরাহকৃত সম্পদের পরিমান ছিল অনেক কম। মজুদকৃত সম্পদের পরিমান ছিল প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সাধারণ পরিষদ সমস্যাটিকে একটি মানবিক সমস্যারূপে তুলে ধরে এবং প্রতিনিধি দল সমস্যাটির একটি খসড়া প্রকাশ করে। খসড়াটির উদ্দেশ্য ছিল মানবিক। এর ফলে সমস্যাটির সাথে আরও গভীর উদ্বেগ যুক্ত হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানে উত্থানের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশাকে উপড়ে ফেলার লক্ষ্যে লক্ষ্যে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা হবে।
৮. যুগোস্লাভিয়া-মিস্টারবি. অসোলনিক, এম পি:আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কেবল বস্তুগত সহায়তার জন্য তাদের সম্পৃক্ততা কমাতে পারে না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য শরণার্থীদেরকে শীঘ্রই স্বদেশেপ্রত্যাবর্তনের জন্য তৈরি করা আবশ্যক।এটি স্পষ্ট ছিল যে শরণার্থীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য সহায়তা করা সম্ভব হবে না।প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করা আবশ্যক ছিল।
৯. সুইডেন-রাষ্ট্রদূত ও. বাইডব্যাক:বর্তমানে ভারতে শরণার্থীর সংখ্যা, ইউএন এর বেশীরভাগ সদস্য রাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার তুলনায় বেশি।গুণগত এবং পরিমাণগত উভয়ভাবে, শরণার্থী সমস্যাটি আরও বিপদজনক রূপ নিচ্ছে। প্রত্যেক দেশের উচিত তাদের নিজস্ব অর্থনৈতিক সামর্থ্য অনুযায়ী ত্রাণ কাজে সাহায্য করা। আমরা ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণের দ্বারাশরণার্থীদের দুর্দশার পরিমান কমানোর প্রচেষ্টার প্রশংসা করি।আগে কখনও একটি দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশ এমন একটি বিশাল কর্মের মুখোমুখি হয়নি, যাতে করে সে দেশের অভ্যন্তরীণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর গুরুতর প্রভাব পরতে পারে। তখন মানবিক পরিস্থিতির অবস্থা ছিল অনেক বাজে। এটা শুধুমাত্র সমাধান করা যেতে পারে যদি শর্তগুলি তৈরি হয় যা শরণার্থীদের সম্ভাব্য স্বেচ্ছায় পুনর্বাসন প্রদান করে।২৮ শে সেপ্টেম্বর সুইডেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর বক্তব্য উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রদূত বলেন “পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতার অবসান ঘটানোর জন্য সুইডিশ সরকার তাদের সাথে যোগ দেয় এবং পাকিস্তান সরকারকে সামঞ্জস্য ও ধৈর্য দেখানোর জন্য আবেদন করে।মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা ও জনগণের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে কেবল একটি রাজনৈতিক সমাধান ভোটের মাধ্যমে প্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাটির সমাধান করতে পারে।”আমরা আজ একই কাজ করছি। আমরা তাই নেদারল্যান্ডস এবং নিউজিল্যান্ডের প্রতিনিধিদের উদ্যোগকে সমর্থন করছি এবং তাদেরকে খসড়া প্রস্তাবের একটি সহ-পৃষ্ঠপোষক হসেবে খসড়া টি প্রকাশ করেছি।
১০. সাইপ্রাস-জনাব. সি পিপ্যাডাস:এই কমিটি উদ্বাস্তুদের মানবিক দুঃখজনক ব্যাপারগুলো নিরসনের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং মনবটাকে কর্মে পরিণত করার অবশ্যই কোন না কোন উপায় সেখানে ছিল। শরণার্থী তাদের জীবনরক্ষার ভয়ে ভারত পালিয়েছে।শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৯ মিলিয়নে পৌঁছেছে এবং এই পরিমাণটি যেকোনো দেশের জন্যই নিজের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি। তাঁর দেশ ভারত ও তার জনগণের প্রতি সহানুভূতিশীল, কারণ এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে আশ্রয় দেয়ার মত একটি মহৎ কাজ করছে। এটি কেবলমাত্র একটি মনুষ্যসৃষ্ট সমস্যা যেটি কিনা অনেক বড় সমসসায় পরিনত হয়েছে।
১২। কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির সভাপতিঃ
আমি একজন কানাডিয়ান ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং দলকে ভারত ও পাকিস্তানে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং তার প্রভাব ছিল গভীর ও অন্ধকারাচ্ছন্ন । পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে লাখ লাখ শরণার্থী বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং উপমহাদেশে শরণার্থীদের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা স্পষ্ট যে খাদ্য, আশ্রয় ও চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ভারত এর প্রচেষ্টা সম্পূরক অংশ ।
উদ্বাস্তুদের যত্ন ভারত এর সীমিত সম্পদ উপর একটি গুরুতর বোঝা হয়েছে এবং সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন জন্য তার নিজস্ব পরিকল্পনা সাধন পতনের হুমকি হয়েছিল । স্পষ্টতই, উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় ফেরত আসা চূড়ান্ত সমাধান ছিল । কানাডিয়ান সরকার অনুরোধ করে ভারত ও পাকিস্তানকে এই সমস্যার সমাধান করতে এবং দুশ্চিন্তা কমাতে, এই যুক্তিতে বলা হয় যে যুদ্ধে অশোভন শারীরিক ধ্বংস এবং এইসব দেশের অর্থনীতির ব্যাপক অবনতি ঘটবে ।
১৩। জাপান- মিস সি সানোঃ
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, গ্রেট এশীয় দেশগুলি ইউএনএইচসিআর অফিসের মাধ্যমে একটি চুক্তি করবে ।
১৪। মিশর- জনাব এ. এম. মুসাঃ
শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় ফেরত যাওয়া পর্যন্ত শরণার্থী প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত সহায়তা এবং প্রচেষ্টার প্রয়োজন। হাইকমিশনার কর্তৃক স্বীকৃত, যা ভারত ও পাকিস্তানের সহযোগিতায় একমত যে শরণার্থীদের প্রবাহ ভারতে ভারসাম্য বজায় রেখেছে , তার সরকার কর্তৃক প্রশংসিত হয়। মিশরীয় রাষ্ট্রদূতদের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি পাকিস্তানের সমাধানের আহ্বান জানান যা তার ঐক্য রক্ষা করবে ।
১৫। উগান্ডা- জনাব পি. জে. ওকিয়াঃ
এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে এশিয়া মহাদেশের প্রায় ৮ মিলিয়ন লোকের মধ্যে শরণার্থীর পরিমাণ বিশাল পরিসরে ইতোমধ্যেই বৃদ্ধি হয়েছে । প্রকৃতপক্ষে ভারতীয় জনগণ এবং ভারত সরকার উদ্বাস্তুদের ইতিহাসে অপ্রতুল একটি বোঝা বহন করেছে। আমরা আশা করি এই উদ্বাস্তুদের একটি প্রাথমিক প্রত্যাবাসন দ্বারা ভারত সরকারের এই ভারী বোঝা উচ্ছেদ করা হবে ।
আমার প্রতিনিধিদল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলির মধ্যে প্রবেশ করতে চায় না, যা এই অকথিত দুঃখকষ্ট সৃষ্টি করেছে । আমরা মনে করি এই একটি সমস্যা ভারত ও পাকিস্তান দ্বারা নিষ্পত্তি করা যায়, কিন্তু দ্রুত সমাধানের জন্য দুই দেশের পার্থক্যগুলি সমাধান করার জন্য অনুরোধ করতে আমরা থামতে পারিনা । পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে, এবং মধ্যপ্রাচ্যে, আমরা আশা করি যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি স্থায়ী রাজনৈতিক নিষ্পত্তি হবে ।
১৬। হাঙ্গেরি- জনাব জি. বদিঃ
তাঁর প্রতিনিধিদল বিশ্বাস করতেন যে মনুষ্য প্রজ্ঞা শরণার্থীদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের জন্য এগিয়ে আসবে ।
১৭। গ্রীস- মিসেস ই. এ. ডায়েসঃ
আমরা শেষ ইসিওএসওসি (ECOSOC) বৈঠকে পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে বক্তব্য রাখলাম এবং আশা প্রকাশ করেছিলাম যে এটি একটি অস্থায়ী সময়ের জন্য হবে । তারপর থেকে, আমাদের জানানো হয়েছে যে সবচেয়ে দুঃখজনক পরিস্থিতির মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের লাখ লাখ শরণার্থী নিজেদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে এবং ভারতে পালিয়ে গেছে এবং সম্প্রতি এই সংখ্যা না কমে বরং বৃদ্ধি পেয়েছে । আমার প্রতিনিধিরা মানবিক কারনে ভারতে যারা শরনার্থী হিসেবে ছিলেন তাদের দুঃখকষ্টের অবসান ঘটাতে খুব উদ্বিগ্ন ছিলেন ।
১৮। তিউনিসিয়া- রাষ্ট্রদূত আর. ড্রিসঃ
নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডের খসড়া প্রস্তাবটি ভারত ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বের মধ্যে একটি অসম্মানজনক নির্বাচন উপস্থাপন করে, যখন গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি ছিল দুই দেশের মধ্যে পুনর্মিলন বা সন্ধি করা ।
বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতার মনোভাব প্রকাশ করে আপিল আহ্বান করার জন্য পরিষদের সভাপতিকে একটি সুপারিশ করা উচিত এবং যা কেবল উত্তেজনাকে হ্রাস করতে পারে, এবং তারা বিশ্বাসের জলবায়ু স্থাপনের প্রচেষ্টাকে আরো জোরালো করবে এবং উদ্বাস্তুরা স্বেচ্ছায় ফেরত আসবে । আবার বলছি, রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন যে তিনি তার সুপারিশে কোনও ভোট গ্রহণ করবেন না, বরং আসন্ন একটি ঐক্যমত্যের সাথে পুনঃমতামত তুলে ধরবেন ।
তিনি ইউ.এন ডেলিভারির সম্মুখীন সমস্যাটির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিলেন একটি চুক্তিতে পৌঁছান এবং একত্রীকরণের উপাদান পরিচয় করিয়ে দিতে হবে, এবং কোনও মুখোমুখি হতে হবে না । এখানে সমাধান শব্দটি পাওয়া যায় নি । সেক্রেটারি জেনারেলের আপিল একমাত্র বিদ্যমান দলিল ছিল । ইসিওএসওসি’র (ECOSOC) সভাপতি উভয় পক্ষকে বোঝানো কঠিন বলে মনে করেন যে, এটি তাদের স্বার্থে ছিল যে ডকুমেন্টটি মানবতার দিকের সমস্যাগুলির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে পারবে। এখন এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর নির্ভর করে তার দায়িত্ব গ্রহণ করতে। এই শেষ পর্যন্ত, তিনি তিনটি কো-স্পন্সরদের এই আহ্বান প্রত্যাহার করার আহ্বান জানান যাতে সবাইকে একসাথে মানবতার মনোভাব ও সহযোগিতার সুপারিশ করতে পারে ।
১৯। বুরুণ্ডি- জনাব এ. ন্যানকিয়েঃ ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তানের নির্যাতিত ব্যক্তিদের প্রতি তার দেশ সহানুভূতিশীল ছিল, এটি শরণার্থী পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা ছিল । তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ভারত ও পাকিস্তান শান্তিচুক্তি মোকাবেলা করবে। একটি রাজনৈতিক সমাধান দুটি সরকারের মধ্যে সম্ভব, এবং তারা পারস্পরিক আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য ধীরে ধীরে প্রচেষ্টা করতে হবে। “আসুন আমরা এই দুর্যোগের উৎস সন্ধান না করে কেবলমাত্র অসহায়দের সাহায্য করি ।”
২০। অস্ট্রিয়া- জনাব এস. এরমাকোরাঃ
সমস্যা শুধুমাত্র একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ মধ্যে সমাধান করা যাবে না কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও এটি রাজনৈতিক ঘটনার সাথে জড়িত ছিল । তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কেবল মানব সমস্যার সমাধান করার জন্য একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে । যে বিতর্ক বিতর্কিত হওয়া উচিত নয়, তবে তিনি মনে করেন যে তিউনিশীয় উদ্যোগটি একটি গ্রহণযোগ্য চুক্তির প্রতিনিধিত্ব করে ।
২১। লিবিয়া- জনাব আই. বাবাঃ
শুধুমাত্র জাতীয় ঐক্য ও পাকিস্তানের আঞ্চলিক ঐক্যের প্রতি শ্রদ্ধার মাধ্যমে শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন বাস্তবিক হতে পারে । তিনি তিউনিশিয়ার প্রস্তাবিত প্রস্তাবের সমর্থন করবেন ।
২২। নাইজিরিয়া- জনাব এ. মোহাম্মদঃ
তিনি শরণার্থী সমস্যা সম্পূর্ণভাবে এবং একেবারে মানবিক ভাবে দেখেছেন এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। যে বিষয়গুলি বিবেচনায় নেওয়া উচিত সেগুলি তুলে ধরা উচিত ছিল পাকিস্তান সার্বভৌম রাষ্ট্র ছিল এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ছিল । এছাড়াও ভারতের শরণার্থী সমস্যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে খারাপ ছিল । “আমরা এই সমস্যার কোনও রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতে পারিনি কারণ এটি চার্টারের অধ্যায় ৬ এর অধীনে নিরাপত্তা পরিষদের দ্বারা পরিচালিত ছিল ।
আমরা সুপারিশ করি যে সমস্ত দেশকে ভারতকে আরও বেশি অবদান রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত, তবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সমস্যাগুলির মধ্যে আমাদের কোনও আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই । দুই দেশের মধ্যে সমস্যা শরণার্থীদের দ্বারা সৃষ্ট হয়নি কিন্তু তা ভারত বিভাগের সাথে সাথে শুরু হয়েছিল । এমনকি যদি জাতিসংঘ শরণার্থী সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়, তবে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা যেমন ধর্মীয়, হায়দ্রাবাদ, সিন্ধু, কাশ্মীর, জুনাগড় প্রভৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব বজায় থাকবে। যতদিন আমরা কোনও দেশের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করি , এর মধ্যে সব অভ্যন্তরীণ সমস্যা জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের বিষয় নয় ।”
তিনি প্রস্তাব করেন যে-
(ক) কমিটি সমস্যাটির কথা আলোচনা করে এবং কোনও রেকর্ড রাখবে না, যথা, কোন সংকলন;
(খ) চেয়ারম্যানের ঐকমত্যের ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত;
(গ) তিউনিশিয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা উচিত; এবং
(ঘ) তিনটি পাওয়ার ড্রাফট রেসোলিউশন সংশোধিত করে যাতে অনুচ্ছেদ ৩ মুছে ফেলা উচিত যা অত্যন্ত রাজনৈতিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। অনুচ্ছেদ ৪ সংশোধনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সরকারকে একটি অবস্থায় উন্নীত করা উচিৎ যাতে শরনার্থীরা তাদের বাড়িতে দ্রুত ফেরত আসতে পারে ।
২৩। আয়ারল্যান্ড- জনাব টি. কোরকরানঃ
তাঁর সরকার প্রায় ৭ মিলিয়ন মানুষ, নারী ও শিশুদের (ইয়ারের জনসংখ্যার তুলনায়) ক্ষুধা, রোগ এবং মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হতাশাজনক দূর্দশার আক্রান্ত হয়েছিল । এটি এই শতাব্দীতে ঘটিত সর্বোচ্চ মানব বিপর্যয়ের মধ্যে অন্যতম এবং এটি বিশ্ব সম্প্রদায়ের গভীর সহানুভূতি জাগিয়ে তুলতে ব্যর্থ হতে পারে; যে সহানুভূতি ছিল তা যথেষ্ট ছিল না । পুনর্মিলন উপর ভিত্তি করে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান হতে পারে যা উপলব্ধিযোগ্য । তাঁর প্রতিনিধিদল তিনটি পাওয়ার ড্রাফট রেজোলিউশনকে সমর্থন করে ।
২৪। আলজেরিয়া- মিস এস. সেনামিঃ
উদ্বাস্তু পরিস্থিতি দ্রুত দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে এবং শত্রুতা ও সন্দেহের কারণে সব সংশ্লিষ্টকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। উভয় সরকারের সঙ্গে তার দেশের বন্ধুত্বের ফলে শরণার্থীদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন, পাকিস্তানের মধ্যে কার্যকরী মানবিক সাহায্য এবং জাতীয় পুনর্মিলন আশা করা হতো। তিনি তিউনিশিয়ার সুপারিশটি সমর্থন করেছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে এটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হবে ।
২৫। ঘানা- জনাব কে. সেকাইয়ামাঃ
ভারতের পরিস্থিতি শরণার্থী প্রবাহের আকস্মিকতা ও মাত্রা দ্বারা আবর্তিত হয়েছে । পাকিস্তানী বা ভারতীয় পরিসংখ্যানে গৃহীত হোক না হোক, পরিস্থিতি কম ভয়ানক বা বিরক্তিকর নয় । আমরা দৃঢ় সমর্থন করছি যা স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে এবং এই স্বেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসন উন্নীত করে একটি সামাজিক পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতার জন্য দুটি সরকারকে আহ্বান জানায় ।
২৬। ইতালি- জনাব ডি. বার্নার্ডোঃ
বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নতির কোন লক্ষণ এবং সামাজিক ও মানবিক প্রাক-পেশা দেখানো হয়নি যা তিন ড্রাফট রেজ্যুলেশন প্রস্তাবের বিরোধিতার মতামতকে প্রতিফলিত করেছিল যে শরণার্থীদের তাদের ঘরে ফিরে আসার জন্য প্রচেষ্টা করা উচিত । লক্ষ লক্ষ লোকের দুর্দশাকে দূর করার জন্য এবং শরণার্থী প্রত্যাবর্তন বাড়ানোর জন্য যেকোনো উদ্যোগ অতি দ্রুততার সাথে নেওয়া উচিত ।
২৭। মরোক্কো- মিসেস এইচ. ওয়ারা এইঃ
রাজনৈতিক উপাদানগুলির বর্জন করে কমিটির ইতিবাচক প্রস্তাব প্রণয়ন করা উচিত যা সর্বসম্মত সমর্থন অর্জন করতে পারে । তিন ড্রাফট রেজ্যুলেশন প্রস্তাবের মধ্যে কিছু মৌলিক রাজনৈতিক উপাদান রয়েছে যা ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাছেই এটি গ্রহণযোগ্য নয় । মানবিক সমাধান খুঁজে পাওয়া উচিত, তবে রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বিভিন্ন সূত্রগুলি তৃতীয় কমিটিতে স্থান পায়নি, যা শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের শর্তাবলী তৈরির প্রয়োজনে পাকিস্তানের মনোযোগ আকর্ষণের কোন প্রয়োজন নেই ।
২৮। কুয়েত জনাব কে. আল বাবতিনঃ
উল্লেখ্য যে, উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন হিসাবে পাকিস্তান নিশ্চয়তা প্রদান করেছে । সমস্যাটির মোকাবেলা করার জন্য ভারত ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছিল । দুঃখের অবসান অবশ্যই অত্যাবশ্যক ছিল, কিন্তু এই শরণার্থীদের প্রত্যাশা দেবার জন্য একটি প্রণয়ন আবশ্যক ।
২৯। অস্ট্রেলীয়- আর.এই পিইচিঃ
জড়িত ব্যক্তিদের সংখ্যা এতটা অবাক করার মতো ছিল যে মাঝে মাঝে তাদের লক্ষ লক্ষ লোকের পরিবর্তে জনসাধারণের মত মনে করার প্রবণতা দেখা দিতে পারে । শরণার্থীরা যা সব কিছে ছেড়ে চলে এসেছিল যেমন তাদের পরিবার এবং তাদের বন্ধুদের , তাদের বাড়ি এবং সমাজে ফিরে যেতে যা দরকার তা বিনামূল্যে হতে হবে । দুঃখজনক অবস্থার মুখোমুখি দ্বিপাক্ষিক দ্বন্দ্বকে প্রত্যাখ্যান করে, এবং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রারম্ভিক সমাধান সম্পর্কে শ্রমসাধ্য/ উৎসাহী প্রচেষ্টা করা হবে ।
৩০। ফিলিপাইন- জনাব এইচ. জে. প্রিলিইয়াটসঃ
এই বিষয়টিতে রাজনীতির একটি উপাদান প্রাণবন্ত ছিল যা অমঙ্গলজনক । তিন ড্রাফট রেজল্যুশন প্রত্যাহার করা উচিত । পরিবর্তে, চেয়ারম্যানকে এই সংকলনকে সমর্থন করার জন্য জেনারেল অ্যাসেম্বলি সভাপতির কাছে রেখে রেকর্ডের জন্য একটি সমষ্টি তৈরি করতে হবে।
৩১। নেপাল- জনাব জে. লিয়াঃ
এই মানবিক সমস্যা এই অঞ্চলের একটি প্রধান দ্বন্দ্ব রূপে বপিত হয়েছে । অতএব, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ ছিল । আন্তর্জাতিক সহায়তা, যদিও অভূতপূর্ব, স্পষ্টতই অপর্যাপ্ত ছিল । স্পষ্টতই আরো উদার সহায়তার প্রয়োজন ছিল । সমস্যাটির একমাত্র সমাধান উদ্বাস্তুদের স্বেচ্ছায় পুনর্বাসনের জন্য রাখা এবং সেইসাথে সাধারণ পরিষদ তাদের শর্ত মঞ্জুরের শর্তগুলির জন্য আপীল করতে হবে । কোনও আপিল ততক্ষণ না কার্যকর হবে যতক্ষণ এটা দলগুলি মনোযোগ সহকারে বিবেচনা করে ।
.
13.269.802-804
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যন্ডের সংশোধিত খসড়া প্রস্তাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘের সাধারন সম্মেলনের তৃতীয় কমিটিতে নেদারল্যান্ডস ও নিউজিল্যান্ডের জমা দাওয়া পুনঃব্যবহৃত খসড়া রেজল্যুশন, ১৮ নভেম্বর, ১৯৭১
সাধারন সম্মেলন,
জাতিসংঘের শরনার্থী হাই কমিশনের ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রান সহায়তার সমন্বয়ে তার কার্যক্রমের উপর তৈরী করা রিপোর্টের উল্লেখ করেঃ
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের জন্য জাতিসংঘের ত্রান সহায়তা কর্মসূচির মহাসচিবের তৈরী করা রিপোর্টও উল্লেখ করেঃ
শরনার্থী মহাসচিব এবং হাই কমিশনারকে ও তাদের কর্মচারীদেরকে কঠিন পরিস্থিতিতে তারা যে কাজ করেছেন সে জন্য শ্রদ্ধা জানানোর অভিপ্রায়ঃ
মানুষের দুর্ভোগের ব্যপকতা যা পূর্ব পাকিস্তান সংকটের কারনে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর সম্ভাব্য পরিনতি নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্নঃ
ভারতের উপর আরোপিত গুরু ভার এবং এই এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সাধারন পরিস্থিতির বিরুপ প্রভাব নিয়েও উদ্বিগ্নঃ
দূর্ভোগ থেকে পরিত্রানের জন্য তহবিল সংগ্রহে বেসরকারি সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টাসহ সংকট থেকে উদ্ভূত প্রয়োজন গুলোর প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দ্রুত ও উদারভাবে সাড়া দেওয়ার কথা প্রশংসার সাথে উল্লেখ করেঃ
উপলব্ধি করে যে, সেচ্ছায় স্বদেশে প্রেরণ শরনার্থী সমস্যার একমাত্র সন্তষজনক সমাধান এবং এটা সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে গ্রহনযোগ্যঃ
বিশ্বাস করে যে, উদ্বাস্তুদের সেচ্ছায় পূনর্বাসনের বিষয়টি শুধুমাত্র তখনি উত্থাপন করা যায় যদি একটি আস্থাপুর্ণ পরিবেশ তৈরী করা হয়ঃ
আশ্বস্ত যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং ভারতে শরনার্থীদের প্রয়োজন পূরনের জন্য আরো বড় পরিসরে আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রয়োজনঃ
১. তাদের প্রতি এর গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করে যারা এই এলাকার পরিস্থিতির ভুক্তভূগী।
২. পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং শরনার্থীদের দূর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সকল সরকারি, আন্তঃ সরকারি সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থার কাছে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সাহায্যের জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে আরো জোরদার করার, আবেদন।
৮০৩
৩. পাকিস্তান সরকারের কাছে এমন একটি অবস্থা তৈরী করার আবেদন যা স্বেচ্ছায় স্বদেশ প্রেরনকে তরান্বিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আস্থার পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে।
৪. ভারত সরকারের কাছে একটি ভাল প্রতিবেশীসুলভ পরিবেশ গড়ে তোলার আবেদন যা এলাকায় সৃষ্ট উত্তেজনা কমাবে এবং শরনার্থীদের তাদের ঘরে ফিরে যেতে উৎসাহিত করবে।
৫. শরনার্থী মহা-সচিব এবং জাতিসঙ্ঘের হাই কমিশনারের কাছে তাদের আন্তর্জাতিক সাহায্য সমন্বয়ে তাদের প্রচেষ্টা অব্যহত রাখার এবং এটা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও ভারতে শরনার্থীদের দূর্ভোগ সর্বাধিক লাঘবের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অনুরোধ
13.270.804
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের তৃতীয় কমিটি কর্তৃক সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত প্রস্তাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ২২ নভেম্বর, ১৯৭১ |
জাতিসংঘের রেজল্যুশন সর্বসম্মতিক্রমে জাতিসংঘের সাধারন সভার তৃতীয় কমিটি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে, ২২শে নভেম্বর ১৯৭১
তৃতীয় কমিটি
জাতিসংঘের শরনার্থী হাই কমিশনারের সমন্বয় কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রমের ওপর এবং পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের ত্রান কার্যক্রমের (UNEPRO) উপর মহাসচিবের প্রতিনিধি জনাব পল মারি হেনরি এর রিপোর্ট মনযোগ সহকারে শোনার পর, মহামান্য প্রিন্স সদরউদ্দিন আগা খাঁনঃ
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে অভূতপূর্ব সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে তা মোকাবেলার মানবিক কারন গুলোর জন্য বৃহত্তর পরিসরে গৃহীত প্রচেষ্টাকে উপলব্ধি করেঃ
শরনার্থী পরিস্থিতির তীব্রতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন যা বিপজ্জনক অংশের আশংকা করছেঃ
সুপারিশ করে যে, সাধারন সম্মেলনের সভাপতির নিম্ন লিখিত বিষয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া উচিতঃ
১. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ, যা কদাচিত ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরনার্থীর মত অতিমাত্রায় শরনার্থী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
২. মহা-সচিব ও তার প্রতিনিধিদের সহায়তার লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছায় অংশগ্রহন অব্যাহত রাখা উচিত এবং আরো তীব্র করা উচিত। শরনার্থী হাই কমিশনার তাদের পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও শরনার্থীদের দূর্ভোগ লাঘবের প্রসংশনীয় মানবিক কাজে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
৩. এই চরম শরনার্থী সমস্যার একমাত্র সমাধান হলো, শরনার্থীদের নিরাপদে তাদের ঘরে ফিরে যাওয়া এবং এটার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন যেটাতে জাতিসংঘের বক্তার নীতিমালার প্রতি শদ্ধার মনভাব আনতে সকল সম্মানিত ব্যক্তিদের কাজ করা উচিত।
.
13.271.805-806
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
তৃতীয় কমিটির প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৬ ডিসেম্বর,১৯৭১ |
তৃতীয় কমিটির প্রতিবেদনের উপর জাতিসংঘের সাধারন পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব,১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের প্রতি ইউনাইটেড নেশনস ফোকাল পয়েন্ট এর মাধ্যমে ইউনাইটেড নেশনস এর সহায়তা এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি ইউনাইটেড নেশনস এর মানবিক সাহাজ্য।
সাধারন পরিষদ,
ভারতে পুর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে আন্তর্জাতিক ত্রান সাহায্য সমন্বয়কারী হিসেবে ইউনাইটেড নেশনস এর হাই কমিশনারের প্রতিবেদন পর্জবেক্ষনপুর্বক
পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি ইউনাইটেড নেশনস এর ত্রান সহায়তা কর্মসুচির সাধারন সচিব এর প্রতিবেদন ও উল্লেখপুর্বক
প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করবার জন্য সাধারন সচিব,হাই কমিশনার এবং তাদের কর্মচারিদের প্রতি সম্মাননা জানাতে ইচ্ছুক
সাম্প্রতিক সঙ্কটে পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের ক্রমবর্ধমান ভোগান্তি এবং এর ফলাফল নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন
ভারতের উপর এসে পড়া অতিরিক্ত ভার এবং ওই এলাকার আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের ব্যাঘাত ঘটা নিয়েও উদ্বিগ্ন
উক্ত সঙ্কটে উদ্ভূত চাহিদা মেটাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীদের দ্রুত সাড়া এবং বেসরকারি সংস্থাগুলোর ত্রান সাহায্য তুলতে সহায়তা করাকেও প্রশংসার সাথে উল্লেখ করে
শরণার্থী সমস্যার একমাত্র কার্জকরি সমাধান হিসেবে প্রত্যাবাসন এবং সকল চিন্তাবিদদের নিকট গ্রহণযোগ্য অনুধাবনপুর্বক
শরনার্থিদের সেচ্ছাসেবী প্রত্যাবাসন তখনি সম্ভব যদি আত্মবিশ্বাসের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায় এটি বিশ্বাসপুর্বক
পরবর্তীতে বিশাল আকারে পুর্ব পাকিস্তানের জনগন ও ভারতীয় শরনার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে আন্তর্জাতিক সাহাজ্য প্রয়োজন হতে পারে অনুধাবন করে
১)এসব এলাকার জনগনের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে
২)শরনার্থীদের জন্য ইউনাইটেড নেশন্স এর হাইকমিশনের সাধারন সচিবের পদ কে ভারতে পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের ইউনাইটেড নেশনের মাধ্যমে ইউনাইটেড নেশন রিলিফ অপারেশন পরিচালনার জন্য ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে অনুমোদন দিচ্ছে
৩)সাধারন সচিব এবং হাইকমিশনার কে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয় বজায় রাখতে এবং তা যেন দুর্দশাগ্রস্থদের সর্বোচ্চ সহজোগীতায় ব্যাবহার হয় তার প্রতি লক্ষ্য রাখতে অনুরোধ জানাচ্ছে
8)ভারতের সরনার্থী ও পুর্ব পাকিস্তানের আক্রান্ত জনগনের দুর্দশা লাঘব এর জন্য সরকারী,আধা-সরকারী এবং বেসরকারী সংস্থা গুলোকে সরকারের সাথে একত্র হয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ভূমিকা পালনের আবেদন জানাচ্ছে
৫)ইউনাইটেড নেশনের উদ্দেশ্য এবং নীতি অনুযায়ী,শরনার্থীদের প্রত্যাবাসনের জন্য দ্রুত এবং সেচ্ছাসেবী উদ্যোগ নেবার জন্য সকল সদস্য কে জরুরি আহবান জানাচ্ছে
মানবিক কারনে এহেন নজিরবিহীন সমস্যা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর নেয়া বড় ধরনের ভুমিকা বিবেচনা করে
শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান ভোগান্তিকর পরিস্থিতির তীব্রতা সম্পর্কে অবগত হয়ে
সাধারন পরিষদের সভাপতির এই মর্মে বিবৃতি দেয়া উচিত বলে সুপারিশ করছে –
১)আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর উদ্বেগ যারা ভারতে পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থী সমস্যার মত জটিল বহুমাত্রিক পরিস্থিতির সম্মুখীন খুবই কম হয়েছে
২)সাধারন সচিব ও তার অনুগতদের সহায়তা করার লক্ষ্যে ও পুর্ব পাকিস্তানের জনগন ও শরনার্থিদের জন্য অসাধারণ মানবিক কর্মকান্ডের জন্য ইউনাইটেড নেশন এর হাইকমিশনের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে কাজ করার জন্য সরকার এবং সংস্থা গুলোর সেচ্ছাসেবী কর্মকান্ড চলমান রাখা
৩)গভীর শরনার্থী সমস্যার একমাত্র সমাধান তাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন যা একটি অনুকুল পরিবেশ কামনা করে এবং এর জন্য প্রয়োজন সকল মঙ্গলকামীদের ইউনাইটেড নেশন এর নীতির উদ্দীপনায় একসাথে কাজ করা
.
শিরোনাম |
সূত্র
|
তারিখ
|
পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট-এর কাছে জাতিসংঘের মহাসচিবের উ-থান্ট- এর স্মারকলিপি
|
জাতিসংঘ ডকুমেন্টস |
১৯জুলাই, ১৯৭১ |
13.272.809-811
৭. সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের নিকট জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট এর স্মারকলিপি
বর্তমান সিকিউরিটি কাউন্সিলের সদস্য এবং জাতিসংঘের অন্য সদস্য দেশ কয়েকমাস যাবত পূর্ব পাকিস্তান ও সংলগ্ন ভারতীয় অংশে ঘটে যাওয়া বিষয় এবং তার পরবর্তী সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া বা পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ঘটনার অতি স্বল্প সময় পরপরই আমার উৎকন্ঠা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান-কে জানাই এবং জাতিসংঘে ভারত ও পাকিস্তানের সংসদ প্রতিনিধি ও অন্যান্যদের মাধ্যমে অবিরত যোগাযোগ রেখে চলেছিলাম। আর এই মতবিনিময়ে আমি মহাসচিব হিসেবে জাতিসংঘ দলিলের প্যারা ৭ অনুচ্ছেদ ২ এর বিধান ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা দ্বারা মানবজাতির কল্যান ও মানবিক নীতি প্রতিষ্ঠায় দ্বৈত দায়িত্ব পালন করা বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ ছিলাম।
পর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থানরত জনগণের সাহায্যের জন্য আবেদনকরাকে প্রথম পরবর্তী দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছিলাম। এই সকল আবেদনকে গতি দেয়ার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারকে ভারতে থাকা শরণার্থীদের ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করেছিলাম এবং পাকিস্তানের সম্মতিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিকট ত্রাণ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য ঢাকায় একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলাম। এই দুই মানবিক প্রচেষ্টা অপর জায়গায় বিস্তারিত লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং ১৬ জুলাই ১৯৭১ তারিখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে এই উভয় কার্যক্রম নিয়ে পর্ণাঙ্গ আলোচনা হয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ও আন্ত সংস্থা বিষায়ক এর সহকারী মহাসচিবের কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে সরকারকে আমার উষ্ণ কৃতজ্ঞতা জানানোর সুযোগ গ্রহণ করেছি। আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের এজেন্সী, বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কিছু স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা যারা এগিয়ে এসেছে আমি তাদের আমার উষ্ণ কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতিনিধিদের তাদের কর্মক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের জন্য ভারত ও পাকিস্তানের সরকারকে আমি সাধুবাদ জানাই।
মার্চের শেষে সপ্তাহ গড়াতে লাগল আর আমার অস্বস্তি বাড়তে লাগল এবং সর্বদিক দিয়ে ঐ নির্দিষ্ট এলাকায় অটল ধ্বংস উপলব্ধি করতে লাগলাম। ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আমার আবেদনের প্রেক্ষিতে করা সহায়তার প্রতি দয়ালু প্রতিক্রিয়া সত্ত্বেও অর্থ ও অন্যান্য সরবরাহ পর্যাপ্ত নয় এবং ভারত সরকার এখন পর্যন্ত অপরিমাপযোগ্য সময়ের জন্য ক্রমবর্ধমান লাখো শরণার্থীদেও দেখাশুনার ক্ষেত্রে সমস্যাসঙ্কুল অবস্থায় মুখোমুখি হচ্ছে।
একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ পূর্ব পাকিস্তানের পরর্বতীতে আসন্ন দুটি দূর্যোগ রাজনৈতিক স্থিরতা ও জনপ্রশাসন,আইন শৃংখলায় প্রকৃত উন্নতির কমতির কারণে আন্তর্জাতিক ও সরকারী সকল প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। যেখানে বৃহৎ পরিসরে ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা নিতে পারত সেই স্থানে উন্নতি না ঘটাতে পারলে চরম খাদ্যসংকট দূর্ভিক্ষে পরিবর্তিত হয়ে বিপদ বয়ে আনতে পারে। একইভাবে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত বৃহৎ সংখ্যক শরণার্থী ফেরত আনার অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসেবে উন্নত রাজনৈতিক স্থিরতা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের সফলতা সন্দেহাতীতভাবে খুব গুরুত্বপর্ণ। এই অবস্থাটা এমন ছিল যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ধারক দুষ্টচক্রের ক্রম তৈরি করেছিল যা বৃহৎ আকারে যা মানবিক সমস্যা নিরোধে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক মহলের কাজ বিপর্যস্ত করছিল।
এই সকল মানবিক বিপর্যয়ের ফলাফল সুদর প্রসারী। সংঘাতের অনুভূতি উপমহাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীদের সম্পর্কে এবং ভারত পাকিস্তানের সরকারের সম্পর্ককে অবনতি ঘটানোর একটি গুরুত্বপর্ণ উপাদান হতে পারে। রাষ্ট্রের ভূখন্ডের অখন্ডতা এবং আÍপরিচয়ের সংঘাত পর্বেও ভ্রাতৃহত্যার আকাংখার উত্থান ঘটিয়েছে। আর সমসাময়িক কয়েক বছর আন্তর্জাতিক মহলে এটি মানবিক প্রতিক্রিয়াকে উসকে দিচ্ছে। এই বর্তমান বিষয়ে আরেকটি অতিরিক্ত বিপদ হলো যে ভারত দীর্ঘ সময়ের এবং অমীমাংসিত সংকটের বৈপরীত্য অবস্থান যা ছয় বছর আগেও একটি উন্মুক্ত যুদ্ধের উত্থান ঘটিয়েছিল। যদিও উভয় সরকারের শান্তির বিষয়ে দৃঢ় ইচ্ছা নাই এবং দুই দেশের অস্থিরতা নিরসন বিষয়ক কোন ইঙ্গিতও নাই। পূর্ব পাকিস্তানের সীমানার অবস্থাটি নিয়মিতভাবে সমস্যাময় ছিল। সীমানা সংঘাত,গুপ্ত হামলা এবং চরমপস্থীদের কার্যক্রম প্রায়শই ঘটত আর শরণার্থীদের এই সংঘাতময় সীমানা দেশে প্রবেশের জন্য পার হতে হতো। জাতিসংঘের কারো কাছে এটি উপেক্ষা করার মতো ছিল না যে, উপমহাদেশে এই সংঘাত সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উপমহাদেশে বহাল থাকা এরূপ সংকটময় অবস্থায় নৈতিক রায়ে খুব সহজেই পৌঁছানো যায়। রাজনৈতিক ও মানবিক সভ্যতায় এই অবস্থা মেনে নেয়া এবং অগণিত সমস্যায় জড়িত জনগণকে পথ দেখানোতে সাহায্য করা অতীব কষ্টের ছিল। জাতিসংঘ পরবর্তীতে তা অবশ্যই অনুসরণ করবে বলে মনে হয়।
আমি মনে করি না যে, বর্তমান অবস্থার কোন চিত্রকে এবং সম্ভাব্য পরিণতিকে খুব রূঢ় করে উপস্থাপন করেছি। প্রাপ্য তথ্যের আলোকে আমি অনায়েসে এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে, আন্তর্জাতিক মহল এই অবনতির অবস্থা ধারাবাহিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম, মানবিক সাহায্য এবং সদিচ্ছা এই মানবিক দুর্দশা ও দুর্যোগকে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট। বর্তমান অবস্থার সম্ভাব্য পরিণতি শুধুমাত্র মানবিক বোধ থেকে নয় বরং শান্তি ও সুরক্ষার প্রতি প্রকৃত হুমকি হিসেবে দেখছি এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কার্যক্রমে জাতিসংঘকে কার্যকর সংস্থা হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়ে আমি আশাবাদি।
মানবিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক সমস্যা মিলিত হয়ে বর্তমানে যে সংকটময় অবস্থার সৃস্টি হয়েছে তা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে জাতিসংঘকে মোকাবিলা করতে হবে। এরূপ অবস্থা ভবিষ্যতেও উদ্ভব হতে পারে। যদি এখন এই সংস্থা এরূপ অবস্থা মোকাবিলা করতে পারে, তবে তা ভবিষ্যতে নতুন দক্ষতা ও নতুন শক্তির বিকাশ করতে পারবে।
এটি এই কারণে যে আমি এমন একটি বিষয়ে কথা বলছি যে বিষয়টি কাউন্সিলের আলোচ্যসচীতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু এত দূরবর্তী গুরুত্ব বহন করে যে, মহাসচিব সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ নিরাপত্তা পরিষদকে দিতে পারেন না। তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি যে, ইতোমধ্যে সংগঠিত মানবিক বিপর্যয়রোধে এবং অবস্থার অবনতি ঠেকানোর জন্য জাতিসংঘের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাময় শান্তিকামী এবং বিভিন্ন সমন্বয় সমৃদ্ধ একটি সংস্থা হিসেবে অবশ্যই এবং অধিকতরভাবে অগ্রগ্রামী ভূমিকা পালন করা উচিত হবে।
পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতর সংস্থা হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ মনোযোগের জায়গা হলো বর্তমান এই অবস্থা এবং যে সকল পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেই স্থানে পৌঁছাতে সম্মত হওয়া। সাধারণভাবে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যরা ঠিক করবেন যে, এরূপ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক বা অনুষ্ঠানিকভাবে নেয়া হবে কিনা। এই পর্যায়ে আমার প্রাথমিক মনোযোগের বিষয় এই বিপর্যয় অবস্থার সমাধান করতে পারে এরূপ সম্ভাব্য সমাধান বের করার একটি ভিত্তি এবং সুযোগ তৈরি করা।
পরামর্শটি সরলভাবে এই যে, হাইকমিশনারের একটি ছোট প্রতিনিধিদল কঠোর সীমিত কার্যবিবরণে এবং পরীক্ষণ হিসাবে কার্যপরিধি হাতে নিবে। জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনের সাথে পরামর্শক্রমে এই প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট সরকারের সিদ্ধান্তের উপর কার্যক্রম চালাবে। যদি সম্ভব হয় শরণার্থীদের নিজ রাষ্ট্র পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করাই এই পরামর্শটির একমাত্র লক্ষ্য।
অপর দলিলটিতে (নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নিকট উথান্ট এর স্মারকলিপি) প্রাথমিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সক্ষমতা এবং জাতিসংঘ দলিলে মহাসচিব এর সক্ষমতার বিষয়টি সরিয়ে রেখে আন্তর্জজাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে কাজ করা হয়েছে। ১৯৬৬ সালে ২ ডিসেম্বর ১৩২৯তম সভায় আমি এটি পুনরায় উপস্থাপন করি। মহাসচিব এর অবস্থানকে সম্মান করে এই সংস্থা যে সকল মুল বিষয়ের মুখোমুখি হয়েছে এবং তাদের নজরে আসার পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তের অস্থির বিকাশকে উপস্থাপন করে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা সর্বসম্মতভাবে তার কার্যক্রমকে বিবৃত করে একটি বিবৃতি প্রদান করেন।
এই স্মারকলিপি নিরাপত্তা পরিষদের একটি আনুষ্ঠানিক দলিল নয় এবং ঐ অঞ্চলে ব্যাপক ও প্রকৃত বিপদ বিষয়ে আমার গভীর উদ্বেগ উপস্থাপনের জন্য লিপিবদ্ধ হয়েছে এবং তাতে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা অত্যন্ত গভীর দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় করেছেন।
.
13.273.812-815
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘের কার্যধারার উপর প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদনে মহাসচিবের মুখবন্ধের অংশবিশেষ
|
জাতিসংঘ ডকুমেন্টস |
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
|
পূর্ব বাংলার পরিস্থিতি বিষয়ে জাতিসংঘের
কার্যক্রমের উপর প্রণীত বার্ষিক প্রতিবেদনে
মহাসচিবের মুখবন্ধের মূল অংশবিশেষ
পূর্ব পাকিস্তানে
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় এবং তার পরিণতি জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমার কাছে গভীর উদ্বেগের বিষয়। এই গৃহযুদ্ধ পাকিস্তানে একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট এর থেকে উদ্ভূত কিছু সমস্যা খুব জরুরীভাবে উদ্বেগের কারণ ছিল। গত নভেম্বরে ঘূর্ণিঝড়ের পরে পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা বহু মৃত্যু, ধ্বংস ও বিধস্ততা ডেকে এনেছিল। বিপুল সংখ্যক জনগণের এই ঝুঁকি মারাত্মক ছিল এবং তারা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল এবং তা ভারতের কর্তৃপক্ষের সীমিত সম্পদের উপর অসহনীয় বোঝা স্বরূপ স্বাস্থ্য ও ত্রাণ সংক্রান্ত সীমাহীন সমস্যা বয়ে এনেছিল। নজিরবিহীন মাত্রায় আন্তর্জাতিক সহায়তা পূর্ব পাকিস্তানে দুর্দশাগ্রস্থ জনগণের জন্য জরুরীভাবে প্রয়োজন ছিল।
১৯৭১ সালে মার্চ মাসে এই ঘটনা ঘটার অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে আমার উদ্বেগ আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানকে জানিয়েছিলাম এবং আমি অবিরতভাবে ভারত ও পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিসহ অন্যান্যদের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলছিলাম।
আর এই মতবিনিময়ে আমি মহাসচিব হিসেবে জাতিসংঘ দলিলের প্যারা ৭ অনুচ্ছেদ ২ এর বিধান ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহযোগিতা দ্বারা মানবজাতির কল্যাণ ও মানবিক নীতি প্রতিষ্ঠায় দ্বৈত দায়িত্ব পালন করা বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ ছিলাম।
পূর্ব পাকিস্তানে থেকে আগত শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত জনগণের সাহায্যের জন্য আবেদন করাকে আমার প্রথম পরবর্তী দায়িত্ব হিসেবে মনে করেছিলাম। এই সকল আবেদনকে গতি দেয়ার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারকে ভারতে থাকা শরণার্থীদের ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত করেছিলাম এবং পাকিস্তানে সম্মতিতে পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের নিকট ত্রাণ পাওয়া নিশ্চিত করার জন্য ঢাকায় একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছিলাম। এই দুই জরুরী ত্রাণ ব্যবস্থার পাশাপাশি, আমার পূর্ণ সম্মতিতে হাইকমিশনার যারা বর্তমানে ভারতে আছেন তাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাগমনকে সহায়তার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছিলেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ও আন্তঃসংস্থা বিষয়ক এর সহকারী মহাসচিবের কাউন্সিলে দেয়া বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে ১৬ জুলাই ১৯৭১ তারিখে অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলে এই উভয় কার্যক্রম নিয়ে পূরনাঙ্গ আলোচনা হয়েছে। আলোচনা শেষে, মহাসচিব কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমকে কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট পূর্ণ সমর্থন করেন।
ভারতের শরণার্থীদের প্রতি আমার আবেদনে তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ অনুদানের প্রস্তাব পাওয়া যায়। যদিও বা, যতখানি অর্থ ও সরবরাহ পাওয়া গিয়েছিল তা পর্যাপ্ত ছিল না এবং ভারত সরকার এখন পর্যন্ত অপরিমেয় সময়ের জন্য ক্রমবর্ধমান লাখো শরণার্থীদের দেখাশুনার ক্ষেত্রে সমস্যা সংকুল অবস্থার মুখোমুখি হয়।
আমার আবেদনে সাড়া দিয়ে মূলতঃ প্রাথমিক পর্যায়ে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরিত ত্রাণ কার্যক্রম প্রয়োজনীয় চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত ছিল। এই প্রসঙ্গে আমি উল্লেখ করতে চাই যে, পাকিস্তানে সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তান ত্রাণ বিষয়ে আমার কার্যক্রমে যে সকল দেশ জড়িত হয়েছিল তাদের অবদান যেন পূর্ব পাকিস্তানে জনগণের নিকট পৌঁছে যায় তার নিশ্চয়তার জন্য আমি সর্বদা তাদের সজাগ রেখে চলেছিলাম।
শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তন করানোর প্রচেষ্টায় সফল হওয়া যাচ্ছিল না। কারণ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে শরণার্থীদের ২৫ মে এর মধ্যে প্রত্যাবর্তন করে আনতে সম্মতি দিয়েছিল, যদিও তা অপর্যাপ্ত শরণার্থী সাড়া দিয়েছিল এবং ভারত ও অন্যান্য উৎস হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায়, শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমশঃ বেড়েই চলেছিল।
সবচেয়ে জটিল বিষয় এই যে, রাজনৈতিক স্থিরতা, জনপ্রশাসন, আইন শৃঙ্খলায় প্রকৃত উন্নতির কমতির কারণে আন্তর্জাতিক ও সরকারী সকল প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল। যেখানে বৃহৎ পরিসরে ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকর ভূমিকা নিতে পারত সেই স্থানে উন্নতি না ঘটাতে পারলে চরম খাদ্যসংকট দূর্ভিক্ষে পরিবর্তিত হয়ে বিপদ বয়ে আনতে পারে। একইভাবে বর্তমানে ভারতে অবস্থানরত বৃহৎ সংখ্যক শরণার্থী ফেরত আনার অনিবার্য পর্বশর্ত হিসেবে উন্নত রাজনৈতিক স্থিরতা এবং ত্রাণ কার্যক্রমের সফলতা সন্দেহাতীতভাবে খুব গুরুত্বপর্ণ। এই অবস্থাটা এমন ছিল যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ধারক দুষ্টচক্রের ক্রম তৈরি করেছিল যা বৃহৎ আকারে যা মানবিক সমস্যা নিরোধে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক মহলের কাজ বিপর্যস্ত করছিল।
এই সকল মানবিক বিপর্যয়ের ফলাফল সুদর প্রসারী। সংঘাতের অনুভূতি উপমহাদেশের ধর্মীয় ও প্রান্তীয় গোষ্ঠীদের সম্পর্কে এবং ভারত পাকিস্তান সরকারের সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর একটি গুরুত্বপর্ণ উপাদান হতে পারে। রাষ্ট্রের ভূখন্ডের অখন্ডতা এবং আত্মপরিচয়ের সংঘাত পর্বেও ভ্রাতৃহত্যার আকাংখার উত্থান ঘটিয়েছে। আর সমসাময়িক কয়েক বছর আন্তর্জাতিক মহলে এটি মানবিক প্রতিক্রিয়াকে উসকে দিচ্ছে। এই বর্তমান বিষয়ে আরেকটি অতিরিক্ত বিপদ হলো যে ভারত দীর্ঘ সময়ের এবং অমীমাংসিত সংকটের বৈপরীত্য অবস্থান যা ছয় বছর আগেও একটি উন্মুক্ত যুদ্ধের উত্থান ঘটিয়েছিল। যদিও উভয় সরকারের শান্তি বিষয়ে দৃঢ় ইচ্ছা নাই এবং দুই দেশের অস্থিরতা নিরসন বিষয়ক কোন ইঙ্গিতও নাই। পূর্ব পাকিস্তানে সীমানার অবস্থাটি নিয়মিতভাবে সমস্যাময় ছিল। সীমানা সংঘাত,গুপ্ত হামলা এবং চরমপস্থীদের কার্যক্রম প্রায়শই ঘটত আর শরণার্থীদের এই সংঘাতময় দেশে প্রবেশের জন্য সীমানা পার হতে হতো। জাতিসংঘের কারো কাছে এটি উপেক্ষা করার মতো ছিল না যে, উপমহাদেশে এই সংঘাত সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে।
উপমহাদেশে বহাল থাকা এরূপ সংকটময় অবস্থায় নৈতিক রায়ে খুব সহজেই পৌঁছানো যায়। রাজনৈতিক ও মানবিক সভ্যতায় এই অবস্থা মেনে নেয়া এবং অগণিত সমস্যায় জড়িত জনগণকে পথ দেখানোতে সাহায্য করা অতীব কষ্টের ছিল। জাতিসংঘ পরবর্তীতে তা অবশ্যই অনুসরণ করবে বলে মনে হয়।
আমি মনে করি না যে, বর্তমান অবস্থার কোন চিত্রকে এবং সম্ভাব্য পরিণতিকে খুব রূঢ় করে উপস্থাপন করেছি। প্রাপ্য তথ্যের আলোকে আমি অনায়েসে এই উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে, আন্তর্জাতিক মহল এই অবনতির অবস্থা ধারাবাহিক ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং ত্রাণ কার্যক্রম, মানবিক সাহায্য এবং সদিচ্ছা এই মানবিক দুর্দশা ও দুর্যোগকে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট। বর্তমান অবস্থার সম্ভাব্য পরিণতি শুধুমাত্র মানবিক বোধ থেকে নয় বরং শান্তিও সুরক্ষার প্রতি প্রকৃত হুমকি হিসেবে দেখছি এবং ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কার্যক্রমে জাতিসংঘকে কার্যকর সংস্থা হিসেবে কাজ করার সম্ভাবনা নিয়ে আমি আশাবাদী। মানবিক, অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক সমস্যা মিলিত হয়ে বর্তমানে যে সংকটময় অবস্থার সৃস্টি হয়েছে তা একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে জাতিসংঘকে মোকাবিলা করতে হবে।
এই কারণে মহাসচিব হিসেবে এই সমস্যাটি নিরাপত্তা পরিষদের নজরে নিয়ে আসা আমার দায়িত্ব বলে মনে করেছি। ২০ জুলাই নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট বরাবর একখানা স্মারকলিপি পেশ করি। উক্ত স্মারকলিপিতে উপরিউক্ত বিবেচনা মাথায় রেখে আমি উল্লেখ করি যে, এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিষয়বস্তু এত দূরবর্তী গুরুত্ব বহন করে যে, মহাসচিব সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম গ্রহণের পরামর্শ নিরাপত্তা পরিষদকে দিতে পারেন না। তাছাড়া আমি বিশ্বাস করি যে, ইতোমধ্যে সংগঠিত মানবিক বিপর্যয়রোধে এবং অবস্থার অবনতি ঠেকানোর জন্য জাতিসংঘের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাময় শান্তিকামী এবং বিভিন্ন সমন্বয় সমৃদ্ধ একটি সংস্থা হিসেবে অবশ্যই এবং অধিকতরভাবে অগ্রগ্রামী ভূমিকা পালন করা উচিত হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে উচ্চতরের সংস্থা হিসাবে নিরাপত্তা পরিষদের সর্বোচ্চ মনোযোগের জায়গা হলো বর্তমান এই অবস্থা এবং যে সকল পদক্ষেপ নেয়া দরকার সেই স্থানে পৌঁছাতে সম্মত হওয়া। সাধারণভাবে নিরাপত্তা কাউন্সিলের সদস্যরা ঠিক করবেন যে, এরূপ সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক বা অনুষ্ঠানিকভাবে নেয়া হবে কিনা। এই পর্যায়ে আমার প্রাথমিক মনোযোগের বিষয় এই বিপর্যয় অবস্থার সমাধান করতে পারে এরূপ সম্ভাব্য সমাধান বের করার একটি ভিত্তি এবং সুযোগ তৈরি করা।
এই সমসাময়িক সময়ে আমি আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষা বিষয়ক একটি স্মারকলিপি দাখিল করি। আমি মহাসচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনকালে একটি মানবিক প্রস্তাব দাখিল করি যার মূল লক্ষ্য ছিল জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার দুই দেশের সীমানায় সীমিত প্রতিনিধির মাধ্যমে স্বেচ্ছায় শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনকে সহযোগিতা করা। প্রাথমিক পর্যায়ে, আমার পরামর্শ এরূপ যে, দুই সরকারের সম্মতিতে ও আলোচনায় দুই বা তিনটি জায়গায় এই কাজে প্রতিনিধিদের স্থাপন করা। পাকিস্তান সরকার আমার এই পরামর্শ মেনে নিলেও শরণার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত যাওয়াকে প্রতিরোধ করছে না মর্মে ভারত সরকার এই পরামর্শ মেনে নেয় না।
সাম্প্রতিক সময়ে, পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য আমি কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ঢাকায় অবস্থানরত আমার প্রতিনিধির সুপারিশমতে জাতিসংঘে কর্মরত কর্মকর্তাদের সংখ্যা এই অপারেশনে বৃদ্ধি করি এবং তাতে কার্যকারিতা যথেষ্ট উন্নত হয়। এতে করে এই সংস্থা এমন একটি উন্নতর অবস্থানে পৌঁছেছে যে, যে সকল দেশ দাতা হিসেবে অবদান রাখছে, তাদের এই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পেরেছে যে তাদের দান, তাদের লক্ষ্য পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের নিকট পৌছে যাচ্ছে। আমি আশা রাখি যে, জাতিসংঘের কার্যক্রম শক্তিশালী হওয়ায়, পূর্ব পাকিস্তানের জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য আরো ত্রাণ অর্জন করতে সক্ষম হব।
এরূপ ব্যাপক আনুপাতিক দুর্যোগে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্ট সরকার ও জনগণকে সম্ভাব্য প্রতি ক্ষেত্রে সাহায্য করার নির্দিষ্ট দায়বদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু, আমার মতে, মূল সমস্যা তখনই সম্ভব যখন ভ্রাতৃত্বের সূত্রপাত ও মানবিকতার মূলনীতির বিবেচনায় রাজনৈতিক সমাধান হবে।
.
13.274.816
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে প্রদত্ত জাতিসংঘ মহাসচিবের পত্র | জাতিসঙ্ঘ ডকুমেন্টস | ২০ অক্টোবর , ১৯৭১ |
১৯৭১ এর ১৯ জুলাই আমি নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট এর কাছে পূর্ব পাকিস্তান এবং তার সংলগ্ন ভারতীয় সীমান্তের পরিস্থিতি নিয়ে একটি স্মারকলিপি প্রদান করি । সেখানে আমি ঐ অঞ্চলের পরিস্থিতির উপর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রভাব নিয়ে শঙ্কা জানাই ।
বর্তমান পরিস্থিতি ঐ অঞ্চলের ব্যাপারে আমাকে শঙ্কিত করে তুলছে কারণ তা শুধু দুটো দেশের মধ্যেই বৈরিতা গড়ে তুলবে না বরং বিশ্বশান্তির উপরেও প্রভাব পরতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি ঘটছে এবং পশ্চিম পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়ার জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে ।
আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে দুই দেশের সরকারের মধ্যেই যুদ্ধ এড়িয়ে জাওয়ার প্রচেষ্টা রয়েছে এবং প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থেকেও সরকার প্রধানগণ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন । এমত অবস্থায় খুব সামান্য ঘটনাও অনেক খারাপ পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে ।
UNOMOGIP এর প্রধান সামরিক পর্যবেক্ষক আমার সহযোগিতা নিয়ে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন । পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে এবং পশ্চিম পাকিস্তান-ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক সীমান্তে উনার সমকক্ষ ইউ.এন প্রতিনিধি আর নেই ।
এমন পরিস্থিতিতে মহাসচিব হিসেবে আমার দায়িত্ব এটাই যে পরিস্থিতির আবনতি যেন না ঘটে সেজন্যে দুই দেশের সরকারকে যথাসাধ্য সাহায্য করা । আমি আপনাকে এটুকুই বলতে চাই যে আমার সব ধরনের সাহায্য আপনারা পাবেন । স্বাভাবিকভাবেই UNOMOGIP এর প্রধান সামরিক পর্যবেক্ষক আপনাদের সকল ধরনের সাহায্য- সহযোগিতা করবেন শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্যে ।
আমি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী/ প্রেসিডেন্ট এর কাছেও একই ধরনের অনুরোধ করেছি এবং আপনার কাছে আমার সর্বোচ্চ সহযোগিতার নিশ্চয়তা প্রদান করছি ।
.
13.275.817
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের জবাব | জাতিসঙ্ঘ ডকুমেন্টস | ২২ অক্টোবর , ১৯৭১ |
আমি ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ এ আপনার প্রেরিত সংবাদ দূত মারফত পেয়েছি ।
আমি ইন্দো-পাক সীমান্তের অচলাবস্থা নিয়ে আপনার চিন্তার সাথে সহমত জ্ঞাপন করছি এবং দুই দেশের মধ্যবর্তী শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষায় চিন্তিত বোধ করছি । এখন পর্যন্ত আমাদের সীমান্তে গোলাবর্ষণ এর ফলে শতাধিক নারী-পুরুষ এবং শিশু নিহত এবং বিপুলসঙ্খক আহত হয়েছে, অসংখ্য মানুষ হয়েছে বাস্তুহারা ।
দুঃখের বিষয় এই যে ১৯ অক্টোবর , ১৯৭১ এ দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে সৈন্য প্রত্যাহার এর প্রস্তাব নাকচ করেছেন । আমি এই মুহূর্তে এ ব্যাপারে বিতর্কে যেতে চাইনা তবে পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী সৈন্য প্রত্যাহার এর ব্যাপারে প্রস্তাব করছি । এমনকি সীমান্ত থেকে নিরাপদ দূরত্বে সৈন্যরা অবস্থান নিলেও দুই পক্ষই নিরাপদ বোধ করবে, একই সাথে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তে গোলাবর্ষণ বন্ধে প্রস্তাব করছি ।
আমি আরও সুপারিশ করছি যে ইউ.এন পর্যবেক্ষকগণ এই প্রত্যাহার কর্মসূচী দেখভাল করবেন এবং উভয় সীমান্তে শুধুমাত্র নিয়মিত সীমান্তরক্ষী বাহিনী মোতায়েন থাকবে ।
আমি আপনার সাহায্যের প্রস্তাবকে স্বাগত জানাই এবং ইন্ডিয়া–পাকিস্তানে এই ব্যাপারে আলোচনার জন্যে আপনাকে আমন্ত্রন জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আপনার এই উদ্যোগ দুই দেশের শান্তি স্থাপনে ব্যাপক ভুমিকা পালন করবে ।
১৯ অক্টোবর , ১৯৭১ এ দিল্লীতে এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্ডিয়ান প্রধানমন্ত্রী সীমান্তে সৈন্য প্রত্যাহার এর প্রস্তাব নাকচ করেছেন এবং লাহোর- শিয়ালকোট দখল করার হুমকি দিয়েছেন। এমতবস্থায় আপনার আগমনের এবং আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম এর ব্যাপারে সবাইকে জানাবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা ।
শেষ এ এটুকুই বলতে চাই আমার দেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে । আমাদের অনুরোধ গ্রহণ করে বাধিত করবেন এটাই কামনা ।
.
13.276.818-819
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জবাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ নভেম্বর ১৯৭১ |
২০ অক্টোবরের আপনার প্রেরিত পত্রটি আমার দীর্ঘ সফরের ২ দিন আগে আমার ডিপার্টমেন্ট এ গ্রহণ করা হয় সেকারণে আমার দিল্লী ফেরত আসার আগে আর কোন জবাব দেয়া সম্ভব হয় নাই । আমার সফরে আমি এই সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব নেতাদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ হয় ।
আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাথে কোন ধরনের সঙ্কটে পতিত হবার মত পদক্ষেপ থেকে দূরে থেকেছি । আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে আপনি আমাদের ইস্যু বুঝতে পেরেছেন কারণ পাকিস্তানী মিলিটারি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনচেতা জনগনের দাবিকে পরোয়া না করে অত্যাচার চালাচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষকে আমাদের দেশে তাড়াচ্ছে। জার ফলে আমাদের উপর প্রচণ্ড সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে । যদিও তারা ঘোষণা করেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং সবাইকে ফিরে আসার কথা বলছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৌলিক চাহিদাগুলো মানুসের পূরণ হবার মত পরিস্থিতি নেই পূর্ব পাকিস্তানে । পাকিস্তানী সামরিক জান্তার এই কার্যক্রম আমাদের দেশের উপর সঙ্কট ঘনীভূত করছে ।
পাকিস্তানী সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতা না দেয়ার জন্যে বারবার এই সম্পূর্ণ ঘটনাকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বিরোধ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করছে । যার উদাহরণ হোল সীমান্তে তাদের সৈন্য ও গোলাবারুদ মোতায়েন এবং যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করা । তাদের কার্যক্রম এর কারনে আমাদেরকে বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হচ্ছে ।
আপনাকে আমি এটুকু বলতে পারব যে আমরা কোন ধরনের সশস্ত্র অভিযান এ যেতে চাই না । আমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যেই সব পদক্ষেপ নিচ্ছি কারণ পাকিস্তানীরা আক্রমণ করার সব পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে । তারা সৈন্য মোতায়েন করছে সীমান্তে যদিও তাদের ক্যান্টনমেন্ট সীমান্ত থেকে কয়েক ঘণ্টার দুরুত্ত্বে যেখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট কয়েক দিনের দূরত্বে । আমরা যথেষ্ট সময় ধৈর্য ধরেছি আমাদের সৈন্য মোতায়েনের পূর্বে ।
এই সমস্ত সঙ্কটের মূল হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের ৭.৫ কোটি মানুসের ভাগ্য এবং তাদের মানবাধিকার যা আমাদের এখন অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে । আসল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে যদি ইন্দো-পাক সমস্যায় এটাকে রুপান্তর করি তবে ফলাফল শান্তি আসবেনা ।
এমতবস্থায় আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি এবং বারবার বলছি এই সমস্যার সমাধান পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে । এর প্রথম পদক্ষেপ হছে জনতার দাবি মোতাবেক শেখ মুজিবর রহমান কে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া । কিন্তু তার বদলে আরেকটি ছায়া সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে জেকাহ্নে ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন । এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোন সমাধান বয়ে আনবে না শুধুই তিক্ততা বাড়াবে ।
যদি পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তা তাদের কার্যক্রম এভাবে অব্বাহত রাখে তবে কোন সমস্যার সমাধান হবেনা এবং রাজনৈতিক সমাধান ও আসবেনা । বিশ্ব নেতারাও রাজনৈতিক ভাবে একটা সমাধান প্রত্যাশা করেন এই সঙ্কট দূর করার জন্যে । আপনি নিজেও এরকম প্রত্যাশা করেন বলে ব্যাক্ত করেছেন বেশ কয়েকবার । দুঃখের বিষয় পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বারবার কর্ণপাত করেন নি এই ব্যাপারে । আপনার পদক্ষেপ এই সমস্যার সমাধান করতে অনেক উপযোগী হবে আমরা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আপনার সাথে দেখা হওয়াটা আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের বিষয়। আপনি পূর্ব পাকিস্তানের এই সঙ্কট সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্যে সব ধরনের সাহায্যই আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে ।
আমি আমার চিন্তা ভাবনা মুক্তমনে আপনাকে জানালাম এবং আশা করছি আপ্নিও সেভাবেই করেছেন । কারণ আমি জানি আপনি পূর্ব বাংলার এই সঙ্কটের ব্যাপারে ব্যাথিত এবং চিন্তিত । আমি আপানের সাথে নিউইয়র্ক এই কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার অসুস্থতার খবর শুনে চিন্তিত হয়েছিলাম । আমি আশা করছি এখন আপনি সুস্থ আছেন ।
.
13.276.818-819
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জবাব | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ১৬ নভেম্বর ১৯৭১ |
২০ অক্টোবরের আপনার প্রেরিত পত্রটি আমার দীর্ঘ সফরের ২ দিন আগে আমার ডিপার্টমেন্ট এ গ্রহণ করা হয় সেকারণে আমার দিল্লী ফেরত আসার আগে আর কোন জবাব দেয়া সম্ভব হয় নাই । আমার সফরে আমি এই সঙ্কট নিরসনে বিশ্ব নেতাদের সাথে আলোচনা করার সুযোগ হয় ।
আমরা বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সাথে কোন ধরনের সঙ্কটে পতিত হবার মত পদক্ষেপ থেকে দূরে থেকেছি । আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে আপনি আমাদের ইস্যু বুঝতে পেরেছেন কারণ পাকিস্তানী মিলিটারি পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনচেতা জনগনের দাবিকে পরোয়া না করে অত্যাচার চালাচ্ছে এবং লাখ লাখ মানুষকে আমাদের দেশে তাড়াচ্ছে। জার ফলে আমাদের উপর প্রচণ্ড সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ পড়ছে । যদিও তারা ঘোষণা করেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে এবং সবাইকে ফিরে আসার কথা বলছে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৌলিক চাহিদাগুলো মানুসের পূরণ হবার মত পরিস্থিতি নেই পূর্ব পাকিস্তানে । পাকিস্তানী সামরিক জান্তার এই কার্যক্রম আমাদের দেশের উপর সঙ্কট ঘনীভূত করছে ।
পাকিস্তানী সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতা না দেয়ার জন্যে বারবার এই সম্পূর্ণ ঘটনাকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বিরোধ হিসেবে প্রমান করার চেষ্টা করছে । যার উদাহরণ হোল সীমান্তে তাদের সৈন্য ও গোলাবারুদ মোতায়েন এবং যুদ্ধাবস্থা সৃষ্টি করা । তাদের কার্যক্রম এর কারনে আমাদেরকে বড় কোন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হচ্ছে ।
আপনাকে আমি এটুকু বলতে পারব যে আমরা কোন ধরনের সশস্ত্র অভিযান এ যেতে চাই না । আমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্যেই সব পদক্ষেপ নিচ্ছি কারণ পাকিস্তানীরা আক্রমণ করার সব পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে । তারা সৈন্য মোতায়েন করছে সীমান্তে যদিও তাদের ক্যান্টনমেন্ট সীমান্ত থেকে কয়েক ঘণ্টার দুরুত্ত্বে যেখানে আমাদের ক্যান্টনমেন্ট কয়েক দিনের দূরত্বে । আমরা যথেষ্ট সময় ধৈর্য ধরেছি আমাদের সৈন্য মোতায়েনের পূর্বে ।
এই সমস্ত সঙ্কটের মূল হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানের ৭.৫ কোটি মানুসের ভাগ্য এবং তাদের মানবাধিকার যা আমাদের এখন অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে । আসল ইস্যু থেকে সরে গিয়ে যদি ইন্দো-পাক সমস্যায় এটাকে রুপান্তর করি তবে ফলাফল শান্তি আসবেনা ।
এমতবস্থায় আমরা প্রস্তাব দিচ্ছি এবং বারবার বলছি এই সমস্যার সমাধান পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমেই হতে হবে । এর প্রথম পদক্ষেপ হছে জনতার দাবি মোতাবেক শেখ মুজিবর রহমান কে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া । কিন্তু তার বদলে আরেকটি ছায়া সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে জেকাহ্নে ৫৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হয়েছেন । এ ধরনের কর্মকাণ্ড কোন সমাধান বয়ে আনবে না শুধুই তিক্ততা বাড়াবে ।
যদি পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তা তাদের কার্যক্রম এভাবে অব্বাহত রাখে তবে কোন সমস্যার সমাধান হবেনা এবং রাজনৈতিক সমাধান ও আসবেনা । বিশ্ব নেতারাও রাজনৈতিক ভাবে একটা সমাধান প্রত্যাশা করেন এই সঙ্কট দূর করার জন্যে । আপনি নিজেও এরকম প্রত্যাশা করেন বলে ব্যাক্ত করেছেন বেশ কয়েকবার । দুঃখের বিষয় পাকিস্তানী সামরিক জান্তা বারবার কর্ণপাত করেন নি এই ব্যাপারে । আপনার পদক্ষেপ এই সমস্যার সমাধান করতে অনেক উপযোগী হবে আমরা এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করছি।
আপনার সাথে দেখা হওয়াটা আমাদের জন্যে অনেক আনন্দের বিষয়। আপনি পূর্ব পাকিস্তানের এই সঙ্কট সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এ জন্যে সব ধরনের সাহায্যই আমাদের পক্ষ থেকে করা হবে ।
আমি আমার চিন্তা ভাবনা মুক্তমনে আপনাকে জানালাম এবং আশা করছি আপ্নিও সেভাবেই করেছেন । কারণ আমি জানি আপনি পূর্ব বাংলার এই সঙ্কটের ব্যাপারে ব্যাথিত এবং চিন্তিত । আমি আপানের সাথে নিউইয়র্ক এই কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আপনার অসুস্থতার খবর শুনে চিন্তিত হয়েছিলাম । আমি আশা করছি এখন আপনি সুস্থ আছেন ।
.
13.277.820-829
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ববংগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন | জাতিসংঘ ডকুমেন্টস | ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
নিরাপত্তা পরিষদে পূর্ববংগ পরিস্থিতি সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদন
S/10410 ডিসেম্বর ৩, ১৯৭১
বিভিন্ন সূত্র থেকে মহাসচিবের কাছে আসা সাম্প্রতিক প্রতিবেদন গুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তসহ উপমহাদেশের অপরাপর অঞ্চলসমূহে পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বিবেচনা করে মহাসচিব এ পর্যন্ত এ সমস্যার বিষয়ে যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন সে বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাছে প্রতিবেদন পেশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। জাতিসংঘ সনদের ধারা ৯৯, যা ব্যক্ত করে যে, “মহাসচিব তার মতানুসারে যা কিছু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে বিবেচনা করবেন তা নিরাপত্তা পরিষদের গোচরীভূত করতে পারেন।”, অনুসারে মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে এ বিষয়ে অবগত রেখেছেন। মহাসচিব মনে করেন পার্টিগুলো নিজেরা অথবা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের দ্বারা পরিষদে এ বিষয়ে উদ্যোগ গৃহীত হতে পারে।
২। এই প্রতিবেদনটিতে ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অবস্থিত দুর্দশাগ্রস্ত জনগোষ্ঠী, উভয়ের জন্য মহাসচিব কর্তৃক ইতোমধ্যে গৃহীত মানবিক উদ্যোগ সমূহ অন্তর্ভুক্ত নয়। এ সংক্রান্ত তথ্য জুলাই, ১৯৭১ এ অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে এবং নভেম্বর, ১৯৭১ এ সাধারণ পরিষদে(তৃতীয় কমিটি) পেশ করা হয়েছে। নভেম্বরের ২২ তারিখে তৃতীয় কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে একটি খসড়া রেযল্যুশন অনুমোদন করেছে যা সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে মহাসচিবের উদ্যোগসমূহ অনুমোদন করবে এবং মহাসচিব ও জাতিসংঘের শরণার্থী সংক্রান্ত হাই কমিশনারকে অনুরোধ করবে আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয়ে তাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে এবং ভারতে শরণার্থীদের এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুর্ভোগ লাঘবে এর সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সাধারণ পরিষদ তৃতীয় কমিটির খসড়া রেযল্যুশনটি অনুমোদনের জন্য বিবেচনা করেনি।
৩। ২০ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে, মহাসচিব নিম্নোক্ত স্মারকলিপিটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি বরাবর পেশ করেছেনঃ
(ক) বর্তমানে কিছু মাস যাবত, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ এবং জাতিসংঘের আরও বহু সদস্য পূর্ব পাকিস্তান ও সংলগ্ন ভারতীয় প্রদেশ সমূহের পরিস্থিতির পরিণতি অথবা সম্ভাব্য পরিণাম সম্পর্কে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। আমি নিজে মার্চ ১৯৭১ এর ঘটনাসমূহের পরপর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার উদ্বেগ ব্যক্ত করেছি এবং তখন হতেই পাকিস্তান ও ভারত সরকারের সাথে জাতিসংঘে তাদের সংসদীয় প্রতিনিধি এবং অন্যান্য সূত্র, উভয়ের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে আসছি। এ ক্ষেত্রে আমি মানব কল্যাণ ও মানবিক নীতি উন্নয়ন ও নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘ সনদের ধারা ২, অনুচ্ছেদ ৭ এর বিধানাবলী পালন করা এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সহযোগিতার কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করার বিষয়ে জাতিসংঘ সনদ অনুসারে মহাসচিব সহ জাতিসংঘের দ্বৈত দায়িত্ব সম্পর্কে কঠোরভাবে সচেতন ছিলাম।
(খ) এই পরবর্তী দায়িত্বটির কথা মনে রেখেই আমি ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থী এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ, উভয়ের জন্য সহায়তার আবেদন করেছিলাম। ঐ আবেদনের প্রেক্ষিতে পাওয়া সহায়তা সমূহকে সঞ্চালিত করার লক্ষ্যে আমি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারকে ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে মনোনীত করেছি ভারতে অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য, আর পাকিস্তান সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ঢাকায় একজন প্রতিনিধি নিযুক্ত করেছি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে যথাসম্ভব কার্যকরভাবে আন্তর্জাতিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য। এই উভয় প্রকার মানবিক সাহায্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন অন্যত্র সবিস্তারে পেশ করা হয়েছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ উভয় অপারেশনের বিষয়ে পরিষদের কাছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং আন্ত-সংস্থা বিষয়ক সহকারী মহাসচিব কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতির ভিত্তিতে ১৬ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে সম্পূর্ণ আলোচনা করেছেন। আমি এ সুযোগে আমার আবেদনে উদারভাবে সাড়া দেয়ার জন্য সরকারসমূহ, জাতিসংঘের সংস্থা ও প্রোগ্রামসমূহ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহের প্রতি আমার উষ্ণ কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করছি। একইসাথে আমি এক্ষেত্রে আমার প্রতিনিধিদের সহযোগিতা করার জন্য ভারত ও পাকিস্তান সরকারকেও সাধুবাদ জানাচ্ছি।
(গ) গত মার্চ থেকেই সময় যতই বয়ে যাচ্ছিল, আমি ক্রমবর্ধমান অস্বস্তি এবং শঙ্কা বোধ করেছি ঐ অঞ্চলে প্রায় সকল ক্ষেত্রে পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি লক্ষ্য করে। সহায়তার জন্য আমার আবেদনের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদার সাড়া সত্ত্বেও প্রাপ্ত অর্থ ও সামগ্রীসমূহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এবং ভারত সরকার এখনও অনির্দিষ্ট সময়কালের জন্য লাখো শরণার্থী, যাদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে, তাদের ভার বহনে ভয়াবহ এবং সংহতিনাশক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে দু’টো পরপর বিপর্যয় মোকাবেলা করতে, যার একটি প্রাকৃতিক, আন্তর্জাতিক ও সরকারি উদ্যোগ ক্রমবর্ধমান হারে ব্যাহত হচ্ছে রাজনৈতিক সমঝোতার পথে উল্লেখযোগ্য উন্নতির অভাব এবং পূর্ব পাকিস্তানে আইন, শাসন ও জনপ্রশাসনের উপর এর প্রভাবের ফলে। সেখানকার জনগণের দুর্ভোগের সাথে শীঘ্রই গুরুতর খাদ্যাভাব, এমনকি দুর্ভিক্ষ পর্যন্ত যুক্ত হতে পারে যদি না বড় মাপের ত্রাণ কার্যক্রম কার্যকর ভাবে পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন করা যায়। সমানভাবে গুরুত্ববহ এই সন্দেহাতীত বিষয়টি যে, সমঝোতা এবং উন্নত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং ত্রাণ প্রচেষ্টার সাফল্য এখন ভারতে আছে এমন উদ্বাস্তুদের যেকোনো বড় অনুপাতে ফিরে আসার জন্য অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এটি এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিয়ামকগুলো দুষ্টচক্রের এমন একটি ধারা সৃষ্টি করেছে যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক মানবিক সমস্যা মোকাবেলার উদ্যোগসমূহকে মারাত্মক ভাবে হতাশাগ্রস্ত করছে।
(ঘ) এসকল মানবিক ট্রাজেডির সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যে হিংস্র আবেগ জাগ্রত হয়েছে, উপমহাদেশের ধর্মীয় ও জাতিগত সম্প্রদায়গুলোর আন্তঃসম্পর্কে তা সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, এবং ভারত ও পাকিস্তান সরকারের মধ্যকার সম্পর্কও এ সমস্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ অঞ্চলের প্রদেশসমূহের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের মূলনীতির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব, তা থেকে প্রায়ই ভ্রাতৃঘাতী শত্রুতার উত্থানের ইতিহাস রয়েছে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক মানসিক প্রতিক্রিয়ার উদ্ভব ঘটিয়েছে। বর্তমান ক্ষেত্রে, সেখানে বিপদের একটি অতিরিক্ত উপাদান বিদ্যমান, কেননা এ সঙ্কটটি উন্মোচিত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি দীর্ঘস্থায়ী ও অমীমাংসিত বিবাদের প্রেক্ষাপটে , যে বিবাদ মাত্র ছয় বছর আগে তাদের মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিল। যদিও শান্তি প্রতিষ্ঠায় উভয় দেশের সরকারের সদিচ্ছা প্রশ্নাতীত, তবু তাদের মধ্যকার উত্তেজনা প্রশমনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের পরিস্থিতি সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বেগজনক। সীমান্ত সংঘর্ষ, চোরাগোপ্তা হামলা, এবং নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড আরও নিয়মিত হয়ে উঠছে, এবং এর সবই আরও গুরুতর হয়ে উঠছে যেহেতু প্রত্যাবাসিত হতে হলে শরণার্থীদেরকে এই বিপদসংকুল সীমান্ত পাড়ি দিতে হবে। আমরা যারা জাতিসংঘে আছি তারা এটাও ভুলে যেতে পারি না যে একটি বৃহৎ সংঘর্ষ উপমহাদেশে অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।
(ঙ) উপমহাদেশে বিরাজমান দুঃখজনক পরিস্থিতিকে নৈতিকভাবে বিচার করা খুবই সহজ। অনেক বেশি কঠিন রাজনৈতিক ও মানবিক বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া এবং সংশ্লিষ্ট জনগণকে তাদের ব্যাপক দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করা। এই পরবর্তী কর্মপন্থাটিই, আমার মতে, জাতিসংঘকে অনুসরণ করতে হবে।
(চ) আমার মনে হয় না আমি বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর সম্ভাব্য পরিণতির অতিরিক্ত নেতিবাচক চিত্র অঙ্কন করেছি। আমার কাছে থাকা তথ্যের আলোকে, আমি অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, সে সময়টি পার হয়ে গিয়েছে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের অপেক্ষা অব্যাহত রাখতে পারতো এবং পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে দেখতে পারতো এই আশায় যে ত্রাণ কার্যক্রম, মানবিক উদ্যোগ এবং সৎ উদ্দেশ্য মানুষের দুর্ভোগ ও সম্ভাব্য দুর্যোগ লাঘবে যথেষ্ট হবে। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন বর্তমান পরিস্থিতির সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে, শুধু মানবিক দৃষ্টিকোণ বিচারে নয়, বরং, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে, এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও কর্মকাণ্ডের কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণেও। আমার মনে হয় বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতি, যাতে মানবিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সমস্যা এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে এদের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে, তা সমগ্র জাতিসংঘের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ স্বরূপ যা অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে। এই ধরণের অন্যান্য পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে। যদি সংগঠনটি এখন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, তাহলে এটি ভবিষ্যতে একই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নতুন দক্ষতার উন্নয়ন ও প্রয়োজনীয় শক্তি অর্জন করতে পারবে।
(ছ) নিরাপত্তা পরিষদের এজেন্ডায় উল্লিখিত নয় এমন একটি বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে প্রতিবেদন পেশ করার অস্বাভাবিক পদক্ষেপ আমি নিয়েছি এই কারণে যে, এই বিষয়টির রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই সুদূরপ্রসারী যে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দ সমস্যাটির বিষয়ে অবগত না হওয়া পর্যন্ত মহাসচিব এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা সুপারিশ করতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করি, জাতিসংঘের অতি অবশ্যই উচিত শান্তি রক্ষায় এর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং সম্প্রীতি ও প্রণোদনায় এর বৈচিত্র্যময় সংস্থানের সহায়তায় মানবিক ট্রাজেডি যা ইতোমধ্যে সংঘটিত হয়েছে তা প্রশমন এবং পরিস্থিতির আরও অবনতি এড়ানো, উভয় উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করা।
(জ) নিরাপত্তা পরিষদ, বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষণাবেক্ষণের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, এমন একটি অবস্থানে আছে যেখান থেকে তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ মনোযোগ ও সতর্কতার সাথে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে একটি সর্বসম্মত উপসংহারে পৌঁছাতে পারে। স্বাভাবিকভাবেই, পরিষদের সদস্যদের নিজেদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই আলোচনা আনুষ্ঠানিক হবে না কি অনানুষ্ঠানিক হবে, গোপনে হবে, না কি প্রকাশ্যে হবে। এই পর্যায়ে আমার প্রধান উদ্দেশ্য এই আলোচনার জন্য একটি ভিত্তি এবং সুযোগ তৈরি করে দেয়া এবং এ বিষয়ে আমার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা যেন, এই দুঃখজনক পরিস্থিতির সমাধান করতে পারে এমন সম্ভাব্য সকল পন্থা এবং উপায়ই বিবেচনা করে দেখা হয়।
৪। ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে, সাধারণ পরিষদের ২৬ তম অধিবেশনে আমার বার্ষিক প্রতিবেদনের ভূমিকায় আমি এই সমস্যাটির প্রতিটি দিক পরিষদের গোচরীভূত করেছি। আমি আমার প্রতিবেদনটি নিম্নলিখিত পর্যবেক্ষণ দ্বারা শেষ করেছি-
“এই ব্যাপক দুর্যোগে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং জনগণকে সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি সুস্পষ্ট বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু, যা আমি উল্লেখ করেছি, মূল সমস্যাটির সমাধান সম্ভব হবে কেবল যদি সমঝোতার ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক সমাধান এবং মানবিক নীতির প্রতি সম্মানবোধ অর্জন করা যায়।”
এই কল্পে, পূর্ব পাকিস্তানে মার্চের ঘটনাবলীর পর থেকেই আমি নানাভাবে আমার প্রভাব ব্যবহার করেছি। এবং অবশ্যম্ভাবীভাবেই, তা করেছি প্রচারের আড়ালে। সমস্যাটির বিশেষ গুরুত্বের কারণে, আমি শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষেত্রে এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ১০ অগাস্ট, ১৯৭১ তারিখে এ সংশ্লিষ্ট নিম্নলিখিত বিবৃতিটি প্রকাশ করেছিঃ
“মহাসচিব মনে করেন এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং সূক্ষ্ম ব্যাপার যা একটি সদস্য রাষ্ট্র,এই ক্ষেত্রে, পাকিস্তান এর বিচার ব্যবস্থার কর্মদক্ষতার অন্তর্ভুক্ত। মানবীয় এবং রাজনৈতিক উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই এটি অনেকের জন্যই একটি বিশেষ আগ্রহ এবং উদ্বেগের বিষয়। মহাসচিব বিভিন্ন সরকারের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন বার্তা পেয়েছেন এবং প্রায় প্রতিদিনই আরও বার্তা পাচ্ছেন এবং সকল বার্তার একটি সাধারণ বক্তব্য এই যে, শান্তি এবং স্বাভাবিক অবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা সুদূরপরাহত হবে যদি না উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়। প্রতিনিধিদের সাথে মহাসচিব এই মর্মে একমত যে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্যের যে কোনো পরিবর্তন পাকিস্তানের সীমার বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে।”
আমি ইতোপূর্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে এই বিষয়ে একটি চিঠি প্রেরণ করেছি।
৫। ২২ অক্টোবর তারিখে মহাসচিব তাঁর ২০ জুলাই এর স্মারকলিপি (উপরে অনুচ্ছেদ ৩ দ্রষ্টব্য) অনুযায়ী এ সমস্যাটির সকল দিক নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সরকার প্রধানদের সাথে ব্যাপক আলোচনার সম্ভাব্য উপযোগিতার কথা বিবেচনায় রেখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে একইরকম বার্তা প্রেরণ করেছেন। বার্তাগুলো নিম্নরূপঃ
(পৃষ্ঠা ৩২২ দ্রষ্টব্য)
৬। ২২ অক্টোবর তারিখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মহাসচিবের ২০ অক্টোবরের বার্তার জবাব দিয়েছেন, যা নিম্নরূপঃ
(পৃষ্ঠা ৩২২-৩২৩ দ্রষ্টব্য)
৭। ১৬ নভেম্বর তারিখে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহাসচিবের ২০ অক্টোবরের বার্তার নিম্নলিখিত জবাব প্রদান করেছেনঃ
(পৃষ্ঠা ৩২৩-৩২৪ দ্রষ্টব্য)
৮। ২২ নভেম্বর তারিখে মহাসচিব ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ১৬ নভেম্বরের পত্রের জবাবে নিম্নলিখিত বার্তা প্রেরণ করেনঃ
আমি অত্যন্ত সম্মানের সাথে আপনার ১৬ নভেম্বরের পত্রের প্রাপ্তিস্বীকার করছি, যাতে আপনি আমার ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখের পত্রের জবাব দিয়েছেন। আমি আলোচ্য পরিস্থিতিতে আমার দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আমার প্রস্তাব বিবেচনায় মহামান্যর দৃষ্টিভঙ্গীর সুচিন্তিত ও বিস্তারিত অভিব্যক্তির প্রশংসা করছি, এবং বিশেষ করে সাধুবাদ জানাচ্ছি মহামান্যর এই বক্তব্যকে যে আপনার সরকারের পাকিস্তানের সাথে সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়িয়ে পরার কোনো অভিপ্রায় নেই। তবে আমি মহামান্যর চিঠির অনুচ্ছেদ ৫ এর বক্তব্য- “পাকিস্তানের সামরিক শাসকদের রক্ষার বর্তমান প্রচেষ্টা” এবং “মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে একে পাক-ভারত বিবাদ হিসেবে বিবেচনা করা কেবল উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে” এর দ্বারা বিভ্রান্ত বোধ করছি। আমি আরও বিভ্রান্ত বোধ করছি অনুচ্ছেদ ৮ এর বক্তব্য দ্বারা যেখানে বলা হয়েছে যে যদি আমি ‘এই দৃষ্টিকোণ থেকে সমস্যাটি বিচার’ করি তবেই আমি ভারত সরকারের সমর্থন পেতে পারি।
এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে আমি মহামান্যর নিকট আমার প্রস্তাবের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করার প্রয়োজন বোধ করছি। আমার ২০ অক্টোবরের চিঠিটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নিকট ২০ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে পেশকৃত স্মারকলিপির অনুসরণে লিখিত ছিল, যাতে বর্ণিত দৃষ্টিভঙ্গীই মহামান্য তাঁর চিঠিতে প্রকাশ করেছেন। কার্যত, আমার উদ্দেশ্য ছিল এই যে এই স্মারকলিপিটি আমার দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের রেফারেন্স হিসেবে কাজ করবে।
আমি স্বাভাবিকভাবেই, যথাসম্ভব বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে এই ভীষণ গুরুতর পরিস্থিতিটিকে বিচার করতে চেয়েছি এবং আশা করেছি যে উভয় দেশের সরকার প্রধানের সাথে এ বিষয়টি পর্যালোচনার সুযোগ পাবো। কোনো একটি মূল ইস্যুকে পাশ কাটানো বা নির্দিষ্ট কোনো ইস্যুতে সমস্যাটিকে সীমিত করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না। যদিও, স্বাভাবিকভাবেই, মহাসচিব হিসেবে সনদ অনুসারে আমি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি কোনো সম্ভাব্য হুমকিকে উপেক্ষা করতে পারি না যার অস্তিত্ব বর্তমানে উপমহাদেশে রয়েছে।
মহামান্য অবগত আছেন যে সুনামের সাথে দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি এবং সহযোগিতা প্রয়োজন। বর্তমান পরিস্থিতিতে, অত্যন্ত পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করছি যে এই অপরিসীম মারাত্মক ও জটিল সমস্যাটিতে মহাসচিবের দাপ্তরিক সুনামের চর্চার কোনো ভিত্তিই দেখা যাচ্ছে না।
৯। ২৩ নভেম্বর তারিখে, মহাসচিব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে আরও একটি চিঠি পেয়েছেন যা নিম্নরূপঃ
আমি আপনার কাছে গভীর উদ্বেগের সাথে এই বার্তা প্রেরণ করছি এমন এক গুরুতর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, যা পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশে বিনা উসকানিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্যাপক মাত্রার আক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়েছে।
(খ) ২১ নভেম্বর সশস্ত্র হেলিকপ্টার সমর্থিত ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ব্রিগেড পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশ করে আমাদের সীমান্ত ফাঁড়ি কব্জা করেছে এবং পাকিস্তানের সীমার ভেতর প্রায় ১০ মাইল পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। একই দিন, ২৩তম ভারতীয় ডিভিশনের অপর আর একটি ব্রিগেড অবশিষ্ট ডিভিশনের সমর্থন সহকারে পাকিস্তান সীমান্তের আট মাইল অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নোয়াখালী জেলার বেলোনিয়াতে আক্রমণ করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাবডিভিশনেও আক্রমণ করা হয়েছে ৫৭ তম ডিভিশন এর অধীনে এবং আমাদের দুটো সীমান্ত ফাঁড়ি, মুকুন্দপুর ও সালদা নদী, কব্জা করা হয়েছে। সিলেট জেলার মৌলভিবাজার সাবডিভিশনে দুটি ব্যাটালিয়ন গ্রুপ আক্রমণ করেছে এবং তারা ধলাই, অষ্টগ্রাম ও জকিগঞ্জ সীমান্ত ফাঁড়ি কব্জা করেছে। এই ব্যাটালিয়ন গ্রুপে ছিল দুটি গুর্খা কোম্পানি। আরেকটি আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে রংপুর এর ভুরুঙ্গামারি অঞ্চলে যেখানে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান সীমান্তের পনের মাইল অভ্যন্তরে নাগেশ্বরী পর্যন্ত অনুপ্রবেশ করেছে। যশোর জেলায় চৌগাছার বিপরীতে নবম ডিভিশনের একটি ব্রিগেড দ্বারা একটি গুরুতর আক্রমণ পরিচালিত হয়েছে ট্যাঙ্ক ও এয়ার কভারের সহায়তায়। ভারতীয় টাঙ্ক সেখানে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রায় আট মাইল পর্যন্ত প্রবেশ করেছে। ভারতীয় একটি বিমান হামলা পাকিস্তান এয়ার ফোর্স প্রতিহত করার চেষ্টা করেছে। একটি ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ধ্বংস হয়েছে এবং আমরা হারিয়েছি দুটি। যুদ্ধে ছয়টি ভারতীয় ট্যাঙ্ক ধ্বংস করা হয়েছে এবং আমাদের আটটি ট্যাঙ্ক বিধ্বস্ত হয়েছে। যশোর বিমান ঘাঁটিতে থেমে থেমে গোলাবর্ষণ চলছে। ময়মনসিংহ জেলার কড়ইতলায় আমাদের সীমান্ত ফাঁড়িতে পুনঃপুনঃ আক্রমণ প্রতিহত করা হয়েছে।
(গ) পূর্ব পাকিস্তানের চতুর্দিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্তত ১২টি ডিভিশন মোতায়েন করা হয়েছে। তার সাথে আছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ৩৮টি ব্যাটেলিয়ন। ২য় ও ৫ম ভারতীয় মাউন্টেইন ডিভিশন যা ইতোপূর্বে চীন সীমান্তে মোতায়েন ছিল তা পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের সিলেটের দিকে সরিয়ে আনা হয়েছে নাগাল্যান্ড থেকে যেখানে এখন আর মাত্র একটি ব্রিগেড অবশিষ্ট রয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ১২টি স্কোয়াড্রন বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানের চারপাশে রাখা হয়েছে। একটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ফ্রিগেট, ল্যান্ডিং শিপ ও দু’টি সাবমেরিন সমন্বয়ে গঠিত ভারতীয় একটি বৃহদাকার নৌ বাহিনী চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দরের জন্য উভচর হুমকিস্বরূপ বিশাখাপট্টমের কাছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান নিয়েছে। চালনা বন্দরমুখী জলযানসমূহে ভারতীয় বাহিনীর মাইন হামলার ফলে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য জরুরী সামগ্রী বোঝাই দু’টি বাণিজ্যতরী বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য সরবরাহ গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে।
(ঘ) মহামান্য অবগত আছেন, ভারতীয় সামরিক বাহিনী গত কয়েক মাস যাবৎ পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তসমূহে চাপ বজায় রেখেছে। বিদ্রোহীদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র-গোলাবারুদ-রসদ সরবরাহ করা এবং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের সহযোগিতায় পাকিস্তান সীমান্তের ভেতরে হামলা পরিচালনা ছাড়াও, ভারতীয় আর্টিলারি ইউনিটগুলো পূর্ব পাকিস্তান ভূখণ্ডে ক্রমাগত গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, যা আমি ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি যে, গত তিন থেকে চার দিন যাবৎ তারা বিচ্ছিন্ন আক্রমণের পরিবর্তে বিভিন্ন ফ্রন্টে প্রকাশ্য ও বড় মাপের যুদ্ধ শুরু করেছে। সংঘর্ষে তারা ট্যাংক ও বিমানবাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে একে উচ্চতর মাত্রা দিয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর উপর কড়া নির্দেশনা রয়েছে সীমান্ত অতিক্রম না করতে, এবং উপর্যুপরি উসকানির মুখেও সর্বোচ্চ সংযম পালনে। তবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে, আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার্থে আমাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ভারতীয় আক্রমণ প্রতিহত করা প্রয়োজন।
(ঙ) আমাদেরকে সময় সময় আশ্বস্ত করা হয়েছে যে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি এবং বৃহদায়তন যুদ্ধবিগ্রহ আরম্ভ করতে ইচ্ছুক নয়। এটা এখন স্পষ্ট যে, সংযম চর্চার বদলে ভারত নির্লজ্জচিত্তে এবং বিনা উস্কানিতে আগ্রাসনের পথ বেছে নিয়েছে। ভারত এখনও এই মর্মে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে যে পাকিস্তানে হানা দিচ্ছে তথাকথিত ‘মুক্তি বাহিনী’- যা কিনা মূলত ভারতের দ্বারা সৃষ্ট, প্রতিপালিত এবং টিকিয়ে রাখা একটি বিদ্রোহী শক্তি। কেউই ভারতীয় এই দাবি দ্বারা প্রতারিত হবে না যা বর্তমানে অপারেশনের মাত্রা দ্বারা এবং এখন ব্যবহৃত হচ্ছে এমন সরঞ্জামসমূহ যাতে অস্ত্র ও বিমানবাহিনীর অংশবিশেষের অন্তর্ভূক্তি দ্বারা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
(চ) মহামান্য স্মরণ করতে পারেন যে, গত ২০ জুলাই আপনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে একটি অনানুষ্ঠানিকও গোপনীয় স্মারকলিপি প্রেরণ করেছিলেন পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতি সম্পর্কে অবহিত করে এবংউপমহাদেশে একটি বৃহত্তর সংঘাতের সম্ভাবনার পপ্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি আপনার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছিলামএবং পূর্ব পাকিস্তানি বাস্তুহারা জনগণের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসা তত্ত্বাবধান করার জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এর প্রতিনিধিকে গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছিলাম। সে সময় থেকেই পাকিস্তান উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমনে নিরাপত্তা পরিষদের প্রভাবক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। পরবর্তী একটি সময়ে আমি সীমান্তে একটি দ্বিপাক্ষিক অস্ত্রবিরতিতেও সম্মত হয়েছিলাম, যে প্রস্তাব অনতিবিলম্বে ১৯ অক্টোবর ১৯৭১ এ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়। আরও সাম্প্রতিককালে, আমি আপনার ২০ অক্টোবরের পত্রের প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি যাতে আপনি ইন্দো-পাকিস্তান চলতি পরিস্থিতির বাস্তবসম্মত মূল্যায়ন করেছেন এবং একটি মূঢ় ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের সম্ভাবনায় আপনার উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন। সে সময় আপনি সরকারকে তাৎক্ষণিক সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যেকোনো (development) এড়াতে যা পরিস্থিতিকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং আপনি উল্লেখ করেছিলেন যে, আমরা প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময়ে আপনার সহায়তা পেতে পারি। আমি আনন্দের সাথে এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলাম এবং এ অঞ্চলে শান্তি নিশ্চিত করার উপায় এবং প্রক্রিয়া আলোচনা করবার জন্য আপনাকে ভারত ও পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।
(ছ) আপনি লক্ষ্য করবেন যে পাকিস্তান অব্যাহতভাবে উপমহাদেশের বর্তমান সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের সহায়তা গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে, এবং ভারত তা অব্যাহতভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের অবস্থান এখনও একই আছে, কিন্তু আমাদের আশংকা যে ভারত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে আগ্রহী নয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি, যা আমি বর্ণনা করেছি, দ্রুতই এমন একটি দিকে অগ্রসর হচ্ছে যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ থাকবে না। এই সংকটের মুহূর্তে আপনার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এখনও এই দুর্যোগকে ঠেকাতে পারে।
(জ) আমি ভারত ও পাকিস্তানের জনগণের কল্যাণ এবং উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে আপনার অব্যাহত উদ্বেগ সম্পর্কে পরিজ্ঞাত হয়ে আপনার সুপরামর্শের অপেক্ষায় আছি।
১০। ২৬ নভেম্বর, মহাসচিব পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে নিম্নরূপ জবাব প্রেরণ করেনঃ
আপনার ২২ অক্টোবর এবং ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১ এর পত্রের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আমার দাপ্তরিক সুনাম সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব এবং আমার পূর্বে উল্লিখিত প্রস্তাবনাসমূহের প্রতি আপনার দ্রুত সাড়া প্রদান আমি প্রশংসার সাথে লক্ষ্য করেছি। উপমহাদেশে উত্তেজনা নিরসনে এবং শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি মোকাবেলায় সম্ভাব্য অন্যান্য পদক্ষেপ সম্পর্কে আপনার ২২ অক্টোবরের পত্রে উল্লেখিত প্রস্তাবনাসমূহও আমি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে লক্ষ্য করেছি। আমার ২০ অক্টোবরের পত্রটি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত আমার ২০ জুলাই, ১৯৭১ এর স্মারকলিপির প্রেক্ষিতে লিখিত হয়েছিল। বৃহত্তর এই দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি আশা করেছিলাম যে, উভয় সরকারের নেতৃবৃন্দের সাথে পুরো পরিস্থিতিটি পর্যালোচনা করবার একটি সুযোগ পাবো, যাতে কিছু সংখ্যক জরুরী এবং জটিল সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে, যা উভয় সরকারকেই মোকাবেলা করতে হয়।
মহামান্য অবগত আছেন যে, দাপ্তরিক সুনামের চর্চার জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সম্মতি ও সহায়তা প্রয়োজন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, অনুতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে মহাসচিবের সুনাম চর্চার কোনো ভিত্তিই এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না। তবুও, আমি সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর যেকোনো প্রকার সাহায্যে আসতে উৎসুক।
আমি গভীর উদ্বেগের সাথে আপনার ২৩ নভেম্বরের পত্রে বর্ণিত পরিস্থিতির বিবরণ পাঠ করেছি। আমি একান্তভাবে আশা করি যে, জাতিসংঘ এই সহিংসতা তীব্রতর হয়ে একটি মূঢ় ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধে উপনীত হওয়া এড়াতে উভয় সরকারের সহায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবে।
আমি লক্ষ্য করেছি যে মহামান্যর মতে আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এখনও বিপর্যয় রোধ করতে পারে। যদিও আমি এই বিপর্যয় রোধে যেকোনো কিছু করতে উৎসুক, তথাপি আমি এই মুহূর্তে এই উপসংহারে আসতে বাধ্য হচ্ছি যে আমি জাতিসংঘের সনদ কর্তৃক অনুমোদিত আমার কর্তৃত্বের সীমার মধ্যে যথাসাধ্য কার্যকর এবং অর্থপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। মহামান্যর ২৩ নভেম্বরের পত্র অনুসারে, আমি এই বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যবৃন্দের গোচরীভূত করেছি জুলাই এ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত আমার স্মারকলিপির মাধ্যমে, এবং অক্টোবরে, যখন আমি আমার দাপ্তরিক সুনাম চর্চার প্রস্তাব দিই, তখন। আমি অবশ্যই ভারত এবং পাকিস্তানের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখবো আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উভয়ের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে জাতিসংঘের সামর্থ্য প্রমাণ করবার জন্য এবং বর্তমান দুঃখজনক পরিস্থিতির পেছনে বিদ্যমান মূল সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নির্ণয় করার জন্য।
১১। নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিকে অব্যাহতভাবে অবগত রাখা হয়েছিল মহাসচিবের দাপ্তরিক সুনামসমৃদ্ধ কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত কার্যক্রমের বিষয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের নিকট প্রেরিত মহাসচিবের সকল বার্তার অনুলিপি তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল তাঁর অবগতির জন্য।
১২। ২৯ নভেম্বর তারিখে, জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রেরিত একটি বার্তা মহাসচিব এর নিকট পৌঁছে দেন যা নিম্নরূপঃ
“আমি যথাবিহীত সম্মানের সাথে মহামান্যের নিকট পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এর নিম্নোক্ত বার্তাটি পৌঁছে দিচ্ছি। এই বার্তাটি গতকাল গ্রহণ করে হয়েছিল এবং গতকাল রাত ৯টায় মৌখিকভাবে আন্ডার সেক্রেটারি-জেনারেল এর নিকট পৌঁছানো হয়েছিলঃ
সূচনাঃ
মহামান্য,
আমার ২৩ নভেম্বরের পত্র হতে জেনে থাকবেন, বিনা উসকানিতে ভারতের সামরিক বাহিনীর ব্যাপক আক্রমণের ফলশ্রুতিতে বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে এক গভীর সংকটময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মহামান্য অবগত আছেন যে, আপনার দাপ্তরিক সুনাম সমৃদ্ধ কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব গ্রহণ করার পাশাপাশি আমি জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকগণের তত্ত্বাবধানে ভারত ও পাকিস্তান বাহিনীর যুগপৎ অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ভারত, দুঃখজনক ভাবে সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। শান্তির প্রতি হুমকি অপসারণ এবং পরিস্থিতির অধোগমন রোধে, আমি বর্তমানে মহামান্যকে অনুরোধ করছি অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে আমাদের অংশে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক দল মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য, যেন তারা আমাদের সীমান্ত লংঘনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং এ বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে পারেন।
জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান