You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
গণচীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চী-পেং ফেই- এর বক্তৃতা চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতি গত কয়েকদিনে আরও অবনতি হয়েছে।ভারতীয় সরকার চারিদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আক্রমণ চালু করেছে এবং ত্বরিত ও বেপরোয়াভাবে বাংলাদেশ নাম দিয়েছে যা ভারত সরকার নিজেই এক হাতে উদ্ভাবন করেছে।ভারত সরকারের কাজ সম্পূর্নভাবে তার বন্য সম্প্রসারণবাদী উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূর্ব পাকিস্তান সংযুক্তির বিষয়ে তুলে ধরেছে।ভারত সরকারের কর্মশক্তিসম্পন্ন সমর্থন এবং রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামরিক ক্ষেএে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সমন্বয় সাধন আছে যার কারণে ভারত সরকারের আক্রমণাত্মক দাম্ভিকতা এমন সীমা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ অপ্রচ্ছন্নভাবে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের অভিভাবকের ভূমিকা গ্রহণ করেছে এবং নিষ্ঠুর ও একরোখা পদ্ধতিতে অভিনয় করেছে।তারা বৈচিএ্যময় লজ্জাহীন প্রদর্শনী পেশ করেছে তাদের সম্পূর্ণ অরুপ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে যা বড় শক্তির উগ্র সাম্রাজ্যবাদ এবং স্বৈরতন্ত্র অনুশীলন করে।কিন্তু সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারতীয় সম্প্রসারণের দ্বারা বাধা সত্বেও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অবশেষে একটি অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগুরু দ্বারা একটি যুদ্ধ বিরতির আহ্বান ও সেনা প্রত্যাহারের জন্য সমাধান গৃহীত হয়েছে।অধিকার ও ন্যায় আসলে দেশের নিরষ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কর্তৃক সমর্থিত যা সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ও ভারত সম্প্রসারণবাদ অভূতপূর্ব অবিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে অবতরণ করেছে।এটি সাধারণত প্রবণতা ও বিশ্বের জনপ্রিয় অনুভূতির প্রতিনিধিত্ব করে।

সম্প্রসারণবাদের অপরাধ মূলক কাজ ও সশস্ত্র আক্রমণের জন্য চীনা সরকার ও জনগণ দৃঢ়ভাবে ভারত সরকারের নিন্দা করে এবং ক্ষমতার রাজনীতি ও স্বৈরতন্ত্র দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করে।ভারত সরকারের অবিলম্বে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করতে হবে এবং আক্রমণাত্মক সৈন্য অবিলম্বে শর্তহীনভাবে পুরোপুরি পাকিস্তান অঞ্চল থেকে প্রত্যাহার করতে হবে।আমরা বিশ্বাস করি ভারত সরকার নিশ্চিতভাবে তার সৈন্য প্রত্যাহার করবে যারা পাকিস্তানি অঞ্চলে প্রবেশ করে পাল্টা আক্রমণের জন্য এবং তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে।বিশ্বের শান্তিপ্রেমময় দেশ ও মানুষকে সংগে নিয়ে চীনা সরকার ও জনগণ দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক শান্তি ও ন্যায় প্রতিরক্ষার জন্য অবদান রাখবে।

আমরা পরামর্শ দিতে চাই যে ভারত সরকারের সৎ ভাবে জাতিসংঘের সমাধান মেনে নেওয়া ও পৃথিবীর সকল মানুষ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে না দেওয়া উচিত।তারা যদি ইচ্ছাকৃতভাবে বিবেকবর্জিত কাজ বজায় রাখে এবং হাল না ছাড়ে তাহলে তারা শেষে নিশ্চিতভাবে তাদের তৈরি তিক্ত ফল ভোগ করবে।

.

13.212.603-604

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ প্রশ্নে ভেটোর সমালোচনা:জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গণচীনের প্রতিনিধি হুয়াং হুয়ার বক্তৃতা চায়না,পাকিস্তান এ্যন্ড বাংলাদেশ ১৫ ডিসেম্বর,১৯৭১

এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় একত্রিশ থেকে উনচল্লিশের জাতীয় পরিষদের কথা।জাতিসংঘ এখন ইতিহাসের মুখোমুখি  দাঁড়িয়ে আছে।দুটির মধ্যে কোনটি জাতিসংঘ?সকল দেশ ও জনসাধারণ যারা শান্তি ও ন্যায়কে তুলে ধরতে ভালোবাসে,তাদের গভীর চিন্তায় যথেষ্ট রসদ যোগানোর মতো প্রশ্ন এটি।

বিশ্ব মতামতের অবাধ্য হয়ে ও সকল পরিণতি উপেক্ষা করে,সোভিয়েতের নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠী ভারতের পাকিস্তান বিরোধী আক্রমণকে সমর্থন যোগাচ্ছে।ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের উগ্র উচ্চাকাঙক্ষা কাজে লাগিয়ে ইন্দো-পাকিস্তান উপমহাদেশ ও ভারতীয় মহাসাগর নিয়ন্ত্রণ করা ও মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে সীমান্তবর্তী আন্দোলনে  উপমহাদেশে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা,অন্য মহাশক্তির মোকাবেলা করে মধ্যপ্রাচ্যে ও পৃথিবীর অন্যান্য অংশে তাদের অবস্থান জোরদার করা এবং যুদ্ধ শুরু করে পৃথিবীর নেতৃত্বের জন্য অন্য মহাশক্তির সাথে প্রচন্ডতম সংগ্রাম করাই তাদের উদ্দেশ্য।

কিন্তু সোভিয়েত সংশোধনবাদী সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী ও ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীদের খুব তাড়াতাড়ি আনন্দে আত্মহারা হওয়া উচিত হয় নি। এই সমস্যা দূর হওয়া তো দূরে থাক।ভারতীয় শাসক গোষ্ঠী নিজেই এখন তার ঘরের শত্রু বিভীষণ এবং এর জন্য  ভারতীয় জনগণই সবার আগে ভুক্তভোগী হবে।সেদিন খুব বেশি দেরি নয় যেদিন অন্যদেশের সদস্যপদ বাতিল করানোর গুরুতর ফলাফল ভারত নিজেই ভোগ করবে।এত নিষ্ঠুর আচরণ করে,সোভিয়েত শাষকগোষ্ঠী শুধু আফ্রো-এশিয়ানজনগণের সমর্থন পাবে এবং সারা পৃথিবীর মানুষ পরিষ্কারভাবে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সত্য বৈশিষ্ট্য দেখবে এবং তাদের রাজনৈতিক উপলব্ধি অধিকতর জাগরিত হবে এবং এভাবেই অবধারিত ধ্বংসের দিকে এর অশুভ যাত্রা ত্বরান্বিত হবে।

ভারত পাকিস্তান পরিস্থিতির উন্নয়ন চায়না গভীর উদ্বেগ নিয়ে অনুসরণ করছে।ভারত পাকিস্তান উপমহাদেশে যাই হোক না কেনো,চায়না সরকার ও জনসাধারণ কঠোরভাবে পাকিস্তান সরকারকেই সমর্থন করবে এবং সেখানকার মানুষজন ভিনদেশি আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে এবং জাতীয় স্বাতন্ত্র্য ও ঐক্য প্রতিরক্ষা করবে।আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি যতই বাঁধা বিপত্তি আসুক না কেনো,যুদ্ধ শেষে জয়ের মালা পাকিস্তানি জনগণই পড়বে।

চীনা প্রতিনিধিদল ধারাবাহিকভাবে এটি তুলে ধরেছে যে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ত, স্বাধিনতা,জাতীয় ঐক্য এবং অখণ্ডতা সম্মান করতে হবে।ভারতীয় আগ্রাসন দ্রুত শেষ করার জন্যে চীনা প্রতিনিধিদল ভারত ও পাকিস্তানের একে অপরের রাজ্যক্ষেত্র থেকে সৌন্য প্রত্যাহারকেকে কেন্দ্র করে ভারত পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহবানের খসরার বিরোধিতা করবেন না। বিবেচনাধীন খসড়া বিধানটি সাধারণ পরিষদের পূর্ণাঙগ সভায় ১০৪ দেশের ইচ্ছার প্রতিফলন করতে ব্যার্থ হয়। পক্ষান্তরে এমন নিয়ম  দ্বার করায় যেটি জাতিসংঘের দলিলপত্রের আদর্শের লঙ্ঘন করে এবং যা হানাদারদের আংশিক ধারন করে।চীনা প্রতিনিধিদল ঘোষণা করে যে কোনো খসড়া প্রতিবেদন যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হোশটক্ষেপ করে এবং পাকিস্তানের জাতীয় ঐক্য ব্যাহত করে এবং পুতুল সরকার তথাকথিত বাংলাদেশ কে সমর্থন করে, চীনের এতে কোন ভূমিকা থাকবে না।

.

13.213.605-608

শিরোনাম সুত্র তারিখ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ও প্রাসঙ্গিক ঘটনাবলী সম্পর্কে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের বিবৃতি চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ- আর. কে. জইন সম্পাদিত ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

                                গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকারের বিবৃতি,

                                        ১লা ডিসেম্বর, ১৯৭১

সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের প্রচন্ড উৎসাহ এবং সক্রিয় সমর্থনে ২১শে নভেম্বর, ১৯৭১ এ ভারত সরকার পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নির্লজ্জভাবে একটি বড় মাপের যুদ্ধ আরম্ভ করে। এটা একটি প্রচন্ড ধাক্কা দিয়ে দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশের শান্তিকে গভীরভাবে বিঘ্নিত করেছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের মনে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।৭ই ডিসেম্বর ১০ জন বিরত থাকাসহ ১০৪ থেকে ১১ জনের অপ্রতিরোধ্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা গৃহীত জাতি সংঘের সাধারন সম্মেলনে একটি অতি জরুরী রেজল্যুশন, যা ভারতের প্রতি খুবই সদয় হয়ে ভারত পাকিস্তানের প্রতি যুদ্ধবিরতি আনার এবং ভারত পাকিস্তানের নিজস্ব বর্ডারের দিকে নিজেদের সশস্ত্র বাহিনীদের প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়।এই রেজল্যুশনটি সারা বিশ্বের মানুষের এবং সেই সকল দেশ যারা শান্তি ভালবাসে ও আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করার জন্য ন্যায়ের পক্ষ নেয়, জাতি গুলোর নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত হয় এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও বিশ্বের দেশ গুলোর প্রাদেশিক অখন্ডতা রক্ষা করে তাদের একটি সাধারন প্রতিফলন ঘটায়।

        এটা গ্রহনের পর, জাতিসংঘের সাধারন সম্মেলনের এই রেজল্যুশনটি পাকিস্তান সরকার কর্তৃক তাৎক্ষনিক ভাবে গৃহীত হয় কিন্তু ভারত সরকার কর্তৃক সুনিশ্চিতভাবে প্রত্যাখ্যাত হয় কে শান্তি চায় এবং কে যুদ্ধ চায়? কে আত্মরক্ষা করছে এবং কে যুদ্ধের সুত্রপাত করছে? এটা কি একদম পরিষ্কার নয়? বিশ্বের বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ গুলোর বিরোধিতা উপেক্ষা করে, ভারত সরকার পুর্ব পাকিস্তানের রাজধানী, ঢাকায় বিপুল সৈন্যবাহিনী পাঠিয়ে, তার নৌবাহিনী দিয়ে পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমুদ্রবন্দর ও সমুদ্রপথ অবরোধ করে, এবং পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার বিমান বাহিনীর সাহায্যে অবিরাম অবাধ বোমা বর্ষন চালিয়ে, সবচেয়ে নৃশংস পাশবিকতার কোন কিছুতে না থেমে, তার আগ্রাসনের যুদ্ধকে প্রসারিত করে যাচ্ছে। এই কার্যকলাপ ভারত সম্প্রসারণবাদীদের প্রচন্ড উচ্চাকাঙ্খাকে পুরোপুরি উন্মুক্ত করেছে। একটি বৃহত্তর ভারতীয় সম্রাজ্যের স্বপ্ন লালন করে, তার শুধুমাত্র পুর্ব পাকিস্তানকেই গ্রাস করতে চায়না বরং পাকিস্তানের অখন্ডতা নষ্ট করতে চায়। যদি সময়মত ভারত সরকার কর্তৃক সংঘটিত এই আগ্রাসন থামানো না যায়, তাহলে পাকিস্তানই একমাত্র ভুক্তভোগী দেশ হবে না, অবধারিত ভাবে ভারতের অন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোও বিপন্ন হবে। জাতি সংঘের চীন এবং ভারত প্রবর্তিত শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতির আলোকেই হোক বা এশিয়ান-আফ্রিকান বান্দুং সম্মেলনের দশটি মূলনীতির আলোকেই হোক, এই রকম একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাপার একেবারেই অবৈধ।

        ভারত সরকার দাবি করে যে, তারা পুর্ব পাকিস্তানের জনগণের জাতীয় আকাঙ্খাকে অনুধাবন করে এবং পুর্ব পাকিস্তানি উদ্বাস্তুদের তাদের মাতৃভুমিতে ফেরত আনতে যুদ্ধের সুত্রপাত করেছে। এই দাবি অবশ্যই চরমভাবে অযৌক্তিক। বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয়তার সমস্যা আছে, যেগুলো জনগণের ইচ্ছা ও স্বার্থ অনুসারে সঠিকভাবে ও যুক্তিসংগত ভাবে সমাধান করা প্রয়োজন, কিন্তু এইগুলো সেই সকল দেশের অভ্যন্তরিন বিষয়, যেগুলো শুধুমাত্র তাদের সরকার ও জনগণের দ্বারা সমাধান করা যায়, এবং যাতে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অধিকার নেই।

                                                                                                ৬০৬

পাকিস্তান সরকার পুর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে বারবার সহানুভুতিশীলতা ও সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে একটি রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। ভারতের কি অধিকার আছে অন্যের বিষয় নিজের হাতে তুলে নেওয়ার, অযাচিত ভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরিন বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং এমনকি শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ দিয়ে আক্রমন ও পুর্ব পাকিস্তান দখলের? এটা সবাই জানে যে, ভারতেরও জাতীয়তা নিয়ে নিজস্ব সমস্যা রয়েছে, যার জটিলতা ও প্রকটতা পৃথিবীর অন্যত্র খুব কমই দেখা যায়। ভারতকে এটা জিজ্ঞেস করা যায় যে, যদি অন্য দেশ গুলো ভারতের সাথে একই আচরন করে যা তারা পাকিস্তানের সাথে করছে এবং ভারতের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে তাহলে তাদের প্রতিক্রিয়া কি হবে। ভারত সরকার ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পুর্ব পাকিস্তানের জনগণের আকাঙ্খার তথাকথিত  অনুধাবনের জন্য এই “চিন্তাশীল উদ্বেগ” দেখায়।  কিন্তু জনগণের স্মৃতিশক্তি এত ক্ষীণ নয় যে ভুলে যাবে যে, ভারত এবং পাকিস্তান অনেক আগেই কাশ্মিরের মালিকানার সিদ্ধান্ত নিতে সেখানে একটি গণভোটের আয়োজন করেছিল কিন্তু পিতা নেহেরু ও তাঁর কন্যা উভয়ের সরকারই তাদের কথার খেলাপ করেছে এবং তা করতে অস্বীকার করেছে। ভারত সরকার কেন তাহলে কাশ্মিরের জনগণের আকাঙ্খার প্রতি এতটা উদাসীন?

        প্রশ্নটা পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের তাদের মাতৃভুমিতে ফিরে যাওয়ার হলে, সেটা হওয়া উচিত এবং সেটা শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের আলোচনার মাধ্যমেই হতে পারে এবং বলপ্রয়োগ করা একেবারেই অসঙ্গত। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে গত দুই দশক থেকে অনেক বেশি উদ্বাস্তু আদান প্রদান হয়নি এবং ভারত পাকিস্তান বিভাজনের পর কি সেটা আরো বেশি না? এই কারনে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে প্রায়শই দ্বন্দ্ব লাগে। ভারত-পাকিস্তানের জনগণের এই সকল দুর্ভোগ এর মূল হলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর বৃটিশ সম্রাজ্য কর্তৃক ভারত পাকিস্তানের বিভাজন পরবর্তী অস্থিরতা। উপনিবেশবাদ আমাদের আফ্রো-এশিয়ান মানুষদের উপর বিপর্যয় নিয়ে এসেছে।  এই তিক্ত  ক্ষত কি যথেষ্ট ছিল না সাম্রাজ্যবাদের প্রতি আমাদের  জাতীয় ঘৃনাকে তুলে ধরার জন্য। আমাদের কি এর পরিবর্তে একে অপরকে হত্যা করা উচিত? যাইহোক, ভারত এখন ব্যাপকভেব সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করছে এবং আগ্রাসনের যুদ্ধের শিখা সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এরফলে এটা শুধুমাত্র পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে উদ্বাস্তুই করছে না বরং ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের জনগণের উপরেই দুর্ভোগ বয়ে আনছে। ভারত সরকার এককভাবেই একটি তথাকথিত “বাংলাদেশ” তৈরী করেছে এবং এবং সশস্ত্র বাহিনীর মাধ্যমে একে পূর্ব পাকিস্তানে সন্নিবেশিত করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সৌরান সিংহ বলেছেন যে, ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানে থাকবে যত দিন এই শাসন ব্যবস্থায় তাদেরকে প্রয়োজন। এটা প্রমান করে যে, এটি একটি পুতুল সরকার, যেটা ভারতীয় বেয়নেটের সুরক্ষা ছাড়া টিকতে পারবে না। এই অর্থে এটা ঠিক ৩০ ও ৪০ দশকের তথাকথিত “মানচুকো” এর মতই, যা জাপানী সামরিকতন্ত্রের আশ্রয়াধীন ছিল।

        সোভিয়েত সরকার এই ভারত কর্তৃক চালু করা পাকিস্তান বিরোধী আগ্রাসনের যুদ্ধে একটি লজ্জাজনক ভুমিকা পালন করেছে। সমগ্র বিশ্ব পরিস্কার ভাবে দেখেছে যে এটা ভারতের সম্প্রসারবাদীদের একটি গোপন ব্যবস্থা। অনেক বছর ধরে, সোভিয়েত সরকার  সক্রিয়ভাবে ভারতের প্রতিক্রিয়াশীলদের লালন করছে এবং ভারতকে এর বাহ্যিক সম্প্রসারনের জন্য সাহায্য করছে। গত আগস্টে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত একটি চুক্তি সাক্ষর করে, যেটাকে “শান্তি, বন্ধুত্ব এবং সহযোগিতা” এর তকমা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তা আসলে প্রকৃতপক্ষে সামরিক জোটের চুক্তি। তারা দাবি করে যে এই চুক্তি কোন দেশের বিরুদ্ধে নয়, কিন্তু এটা সুনির্দিষ্টভাবে তাদের যৌথ ষড়যন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উতখাত, হস্তক্ষেপ ও আগ্রাসনকে তীব্র করা হয়েছে। আগ্রাসনের যুদ্ধের সুত্রপাতের পর থেকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন  ভারতের আগ্রাসনের যুদ্ধকে চাঙ্গা করার জন্য ও এর উদ্দীপনা বাড়ানোর জন্য ভারতে অস্ত্র ও সরঞ্জাম অবিরাম সরবরাহ চালিয়ে যাওয়ার  প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।

                                                                                                ৬০৭

যেটা জনগণকে অত্যন্ত রুষ্ট করেছে তা হল, জাতিসংঘে সোভিয়েত সরকারের প্রতিনিধি। নিরাপত্তা পরিষোদের সময় ছিল এবং আবারো যুদ্ধ বিরতি ও সেনা প্রত্যাহারকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য সরকারি নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করছে, যা প্রবল সংখ্যা গরিষ্ঠ দেশ ও সারা বিশ্বের মানুষের প্রত্যাশা। সোভিয়েত সরকার যথেচ্ছভাবে চীনের নিন্দা করেছে, অভিযোগ করে যে, চীনই ভারত ও পাকিস্তান দ্বন্দ্বকে আন্দোলিত করেছে এবং “এশিয়দেরকে এশিয়দের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে”। আসলে এটা সোভিয়েত সরকার নিজেই যে কিনা প্রকৃতপক্ষে এবং সত্যিকার অর্থে “এশিয়দেরকে এশিয়দের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত করেছে”। সোভিয়েত ইউনিয়নের এমন করার উদ্দেশ্য সবার জানা, আর সেটা হল ভারতের ওপর তার নিয়ন্ত্রন আরো জোরদার করা, এবং এর মাধ্যমে সমগ্র দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশ ও ভারত মহাসাগরের ওপর কর্তৃত্ব করার জন্য অন্যান্য পরাশক্তিগুলোর সাথে বিবাদের সুত্রপাত করা এবং একইসাথে ভারতকে প্রতিপালন করা ও দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশে এর সহকারী হিসেবে ভারতকে একটি উপ-পরাশক্তিতে পরিনত করা ও এশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসনের অংশীদার করা। বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় ভারতের হঠাৎপাকিস্তান আক্রমন নিঃন্দেহে ১৯৬৮সালে সোভিয়েতের দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশের উপর আক্রমনের ও চেকোস্লাভিয়া দখলের পুনরাবৃত্তি। সোভিয়েত সরকারের এই আচরন আবারো এর সাম্রাজ্যবাদী বৈশিষ্ট্য এবং এর সম্প্রসারনবাদী উচ্চাকাঙ্খা প্রকাশ করল।  আমাদেরকে অবশ্যই সর্বদা সাম্রাজ্যবাদ ও সম্প্রসারনবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, এবং আমরা আমাদের দক্ষিন এশিয়া  উপমহাদেশের বন্ধু প্রতিম দেশ গুলোর পাশাপাশি বিশ্বের সকল দেশকে পরামর্শ দেব যারা উপ-পরাশক্তির পরাশক্তি দ্বারা আঘাত বা হুমকির শিকার হতে পারে যে, তাদের কোন অবস্থাতেই তাদের সতর্ক নজরদারি শিথিল করা উচিত না বরং ধারাবাহিকভাবে তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করা উচিত এবং সবসময় শত্রুকে প্রতিঘাত করার জন্য তৈরী থাকতে হবে যারা কিনা তাদেরকে আক্রমন করার সু্যোগ খুঁজবে।

        চীন সরকার ও জনগণ ধারাবাহিকভাবে সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারনবাদ, উপনিবেশবাদ, ও নব্য-উপনিবেশবাদের বিরোধিতা করছে  এবং দৃঢ়ভাবে পৃথিবীর সকল দেশের জনগণকে তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব, এবং আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষায় ও বৈদেশিক আগ্রাসন, পরাভব, হস্তক্ষেপ, নিয়ন্ত্রন এবং বিদ্রুপের  বিরুদ্ধে তাদের ন্যায়সংগত সংগ্রামকে সমর্থন করে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ একটি আগ্রাসন ও আগ্রাসন বিরোধীর মধ্যকার, বিভাগ ও বিভাগ বিরোধীর মধ্যকার এবং পরাভব ও পরাভব বিরোধীর মধ্যকার সংগ্রাম। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে, পাকিস্তানের জনগণ ও সশস্ত্র বাহিনী এই সংগ্রামে বীরত্বের একটি প্রশংসনীয় উদ্দম প্রদর্শন করেছে। চীন সরকার এবং জনগণ পাকিস্তান সরকার এবং এর জনগণকে তাদের আগ্রাসন, বিভাজন ও পরাভবের বিরুদ্ধে সংগ্রামে  দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে; আমরা এটা শুধু রাজনৈতিকভাবেই করছি না বরং তাদেরকে বস্তুগত সাহায্যও দিয়ে যাব। চীন সরকার দৃঢ়ভাবে মেনে চলে যে, ১৯৭১ এর ৭ই ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সাধারন সম্মেলনে গৃহীত রেজল্যুশন অতি দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি যে, আগ্রাসন বনাম আগ্রাসন বিরোধী, বিভাজন বনাম বিভাজন বিরোধী ও পরাভব বনাম পরাভব বিরোধীর প্রশ্নে কোন নিরপেক্ষতা থাকতে পারে না। কিছু ক্ষমতাধরেরা ভাল ও মন্দের মধ্যে কোন পার্থক্য করছে না এবং নিষ্ক্রিয় ও নিরব থাকছে, সবকিছু ক্ষমা করে গেছে এবং আগ্রাসকদের শোষনের অনুমতি দিয়েছে। এর ফলাফল হতে মিউনিখ এবং জাতি গুলোর সাবেক লীগ এর ভুল পথেই আবার হাটা।

        ইতিহাসে বারবার প্রমানিত হয়েছে যে, কোন আগ্রাসকের শেষ পরিনতি ভাল হয় না। সোভিয়েতের সংশোধনবাদী সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনের ওপর নির্ভর করে ভারতের সম্প্রসারনবাদীরা এখন পাকিস্তানের বড় এলাকা আক্রমন ও দখল করেছে এবং উপমহাদেশের উপর কর্তৃত্ব করার একটি বন্য প্রয়াশে হিংস্র আচরন করছে, এই কল্পনায় যে তারা তাদের পথ পেয়ে যাবে।

                                                                                                ৬০৮

যাইহোক, ভারত সরকারের বিষয়ী আশার বিপরীতে, এর আগ্রাসনের অপরাধ আরো শক্তিশালী অসন্তোষের এবং পাকিস্তান অংশের জনগণের ও ভারতীয় জনগণসহ দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশের অন্যান্য জাতির মধ্যে প্রতিরোধের জন্ম দেবে, অতঃপর এর জন্য দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশে কোন  শান্তি থাকবে না। যে আগুন নিয়ে খেলবে, আগুন তাকে গ্রাস করবে। ভারতীয় সম্প্রসারনবাদী ও তাদের গোপন পরিচালকদের অবশ্যই তাদের কৃতকর্মের তিক্ত ফল ভোগ করতে হবে। জয় নিশ্চয়ই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা মহান পাকিস্তানি জনগণের অধিকার, জয় নিশ্চই মহান ভারতের এবং দক্ষিন এশিয়ার অন্যান্য দেশের জনগণের অধিকার যারা স্বাধীনতা, শান্তি এবং সাচ্ছন্দ্য ভালবাসে, জয় অবশ্যই বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার যারা শান্তি ভালবাসে এবং ন্যায়কে সমর্থন করে।

.

13.214.611

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার মেনে নেয়া উচিৎ : যুগোশ্লাভ লীগ ফর পীস, ইন্ডিপেন্ডেন্স এন্ড ইকুয়ালিটি অব পিপলস -এর বিবৃতি। যুগোশ্লাভ লীগ উদ্ধৃত :বাংলাদেশ ডকুমেন্টস। ১৩ এপ্রিল, ১৯৭১।

            ১৩ এপ্রিল,১৯৭১ যুগোশ্লাভ লিগ ফর পীস, ইন্ডিপেন্ডেন্স এন্ড ইকুয়ালিটি অব পিপলস  এর ইস্যুকৃত বিবৃতি।

১৩ এপ্রিল পুর্ব পাকিস্তান স্টেশন থেকে যুগোশ্লাভ লীগ ফর পীস, ইন্ডিপেন্ডেন্স এবং ইকুয়ালিটি অব পিপলস এর সম্পূর্ণ বিবৃতি নিম্নে উল্লেখ করা হল।

সকল বিদেশি সাংবাদিককে বহিষ্কার ও কঠোর সেন্সরশিপ চালুর পর, পাকিস্তান সরকারের সরকারি বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে, পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।

যাই হোক, বিশ্ব সংবাদ সংস্থা ও প্রেস টিম প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতির উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরী করে, এই মর্মে যে গৃহযুদ্ধ এখনও চলছে, যাতে জনগণের দুর্ভোগ দিনের পর দিন বাড়ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহিংসতা চলছাই এবং পূর্ব পাকিস্তানের গণহত্যা বন্ধ হয়নি।

সাম্প্রতি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভোটের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রকাশ এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে তাদের ইচ্ছা পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তানের উভয় অংশের স্বায়ত্তশাসন ও সমতার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সম্পর্ক স্থায়ী করার।

জরুরী অবস্থা ঘোষনা এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য তাদের শ্বাসঘাত উপলব্ধি করা থেকে মানুষকে বিরত রাখার জন্য সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা  দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা বিশেষ গুরুত্বর উদ্বেগের কারন।

মিলিটারি ফোর্স জটিল অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে কখনই সফল হয় নি বরং তারা পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা নতুন ঘৃণা ও শুন্যতা সৃষ্টি করে এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের সম্পর্কের সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান অসম্ভব করে তোলে।

আত্ননিয়ন্ত্রণ প্রতিটি জাতির অধিকার সমর্থন করে যুগোশ্লাভ লীগ ফর পিস, ইন্ডিপেন্ডেন্স এন্ড ইকুয়ালিটি অব পিপলস বিবেচনা করে যে এই অধিকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি স্বীকৃত করতে হবে, তাছাড়া সামরিক বাহিনীর দ্বারা প্রচেষ্টা পাকিস্তানের জনগণের সম্পর্কের সমস্যা নিস্পত্তির জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী ও স্থিতিশীল বন্দোবস্ত হতে পারে না। কিন্তু খোদকার চলনশীল একটি বিপদ উদ্ভব করতে পারে যা বিশ্বের ঐ অংশে শান্তি বিপন্ন করতে পারে।

.

13.219.619-620

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের শরনার্থীদের সাহায্যের জন্য আর্জেন্টিনীয় বুদ্ধিজীবী মহলের আহবান বাংলাদেশের ডকুমেন্টস ১১ জুন, ১৯৭১

আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীমহল পশ্চিমবঙ্গের শরনার্থীদের জন্য সাহায্য পাঠাতে সরকারকে আহব্বান জানায়। সুত্র জুন ১১ ১৯৭১

আর্জেন্টিনার বুদ্ধিজীবীমহলের একটি প্রতিনিধিদল ১৯৭১ সালের ১১জুন সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি:লুইস মারিয়া ডি পাবলো পার্ডো এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পশ্চিমবঙ্গের যে সব শরনার্থী ভারতে এসেছিল তাদেরকে জরুরি সাহায্য সহযোগিতা পাঠানোর অনুরোধ করে একটি স্মারকলিপি পেশ করেন। আর্জেন্টিনার প্রথম সারির লেখক ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ,চিত্রশিল্পী ,বিচারক এবং জাতীয় ও আন্তজার্তিক ব্যাক্তিত্ব ,সাথে স্বনামধন্য লেখক মাদামি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো এবং জর্জ লুইস বার্জেস এবং শ্রদ্ধেয় ফাদার ইসমাইল কুলিস ,ইএল সালভাদর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।

এটা স্মারকলিপির পাঠযোগ্য অংশ যা সেই সময় আর্জেন্টিনার পত্রিকায় গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়েছিল।

পূর্ববঙ্গের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশাল জনগোষ্ঠী নারী ,পুরুষ শিশু পালিয়ে প্রতিবেশি দেশ ভারতে গিয়েছে এবং বিশাল জনসংখ্যা সমস্যা তৈরী হয়েছে। নিজেদের ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ভারত তার শান্তি ,সহ অবস্থান ও পারস্পরিক সহযোগিতা নিবেদন করছে।

শরনার্থীরা খাদ্য ,বস্ত্র ,বাসস্থানের জন্য কঠিন সংগ্রাম করছে। এই দূর্ভাগা শরনার্থীর সংখ্যা ইতিমধ্যে চার লাখ ছাড়িয়েছে। ভারত যারা নিজেরাই নিজেদের জাতিগঠনে কাজ করছে ,তারা এই বিশাল জনগণ সংখ্যাকে একা আশ্রয় দিতে পারছে না।

 আন্তর্জাতিক সমস্যা

মানুষের দুঃখদূর্দশার ঘটনা কোন সীমারেখা মানে না। পৃথিবীর যে কোন স্থানের দুঃখ ,মৃত্যু ,দারিদ্র্যতা পুরো মানবজাতির জন্য উদ্বেগের্।তবুও এটা দুঃখজনক যে পূর্ববঙ্গের ঘটনায় এখনো বিশ্ববিবেক জাগ্রত হয়নি অথবা মানবিক সমস্যা যেগুলো অন্যকোথাও সৃষ্ট এবং যার উপর কোন হাত নেই সেগুলো সমাধানের জন্য ভারতকে সাহায্য করার ব্যাপারেও যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নাই।ভারতকে এই অসহায় শরনার্থীদের চাহিদা পূরন করতে হচ্ছে এবং এটা করতে হচ্ছে নিজেদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। এটা সত্যি যে কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কিছু দেশ সাহায্যে করছে কিন্তু পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুরো মানবজাতির মিলিত সাহায্য প্রয়োজন কারন এটি ভারতের নিজস্ব তৈরি করা বা তাদের সাথে সম্পর্কিত নয় ,তাই এটা এখন জাতীয় নয় আন্তর্জাতিক সমস্যা।

এই নির্দিষ্ট ঘটনায় প্রতিক্রিয়া শুধুমাত্র কেতাবি পারস্পারিক নির্ভরতা ও শ্রদ্ধার প্রমান হিসাবে নয় ,এটা হতে হবে নির্দিষ্ট ও সরাসরি সাহায্য হয়ত টাকা বা পন্যসামগ্রী।

অথবা সবার মিলিত দায়িত্বের অংশ হিসাবে সাহায্য করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে অবদান রাখাও যুক্ত হতে পারে।

আশা করছি যে আমাদের সরকার নিজেদের সার্বজনীন ও পারস্পরিক সংহতির ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দ্রুততার সাথে যথাসাধ্য সবোর্চ্চ সাহায্য করবে ,যেন অবস্থার প্রক্ষিতে গনপ্রজাতন্ত্রী ভারতের উপর আরোপিত এই অবস্থার সমাধান হয়।

.

13.220.621

শিরোনাম সূত্র তারিখ
শরণার্থীদের স্বাস্থ সম্পর্কে লীগ অব রেডক্রস সোসাইটি’র উদ্বেগ প্রকাশ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৮ জুন, ১৯৭১

লীগ অফ রেড ক্রসের পূর্ববঙ্গের শরনার্থীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ। প্রকাশিত সংবাদ ১৮ জুন ১৯৭১

 ডা: লারস ট্রয়েল নামে একজন সুইডিশ মেডিকেল বিশেষজ্ঞকে লীগ অফ রেড ক্রস সোসাইটির পক্ষ থেকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল ,যিনি পশ্চিমবঙ্গে পাকিস্তান শরনার্থীদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন।

ডা: ট্রয়েল তার দুই সপ্তাহ ভারত সফরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন শরনার্থী শিবির ঘুরে দেখেন এবং আজই লীগের সদর দপ্তরে প্রতিবেদন পেশ করেন যা ভারতীয় রেড ক্রস ,সরকারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দাপ্তরিক কর্মকর্তাবৃন্দ ,এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি বিশেষ করে জাতিসংঘের শরনার্থী সম্পর্কিত হাই কমিশনারের সাথে আলোচনার পর তৈরি করা।

ডাঃ ট্রয়েল প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন ভারতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা ,রেড ক্রস ও অন্যান্য সংস্থার সাথে মিলিতভাবে কলেরা এবং অন্যান্য অসুখ যেমন টাইফাস ও টাইফয়েড এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে লড়াই করছে ,তখনই শিবিরের বাজে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ,ক্রমাগত নতুন শরনার্থীদের আগমন ও মৌসুমি বৃষ্টির ফলে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

ভারতের ডাক্তার ও সেবিকারা প্রসংশার যোগ্য কাজ করছে ,কিন্তু তাদের সীমাবদ্ধতার রয়েছে। তিনি আরো বলেন ,সেখানে ক্রমাগত ঔষুধ তৈরির জিনিষপত্র ও মেডিকেল সরঞ্জাম প্রয়োজন। যেমন পানিশূন্যতা পূরনে মুখে তরল খাবারের জন্য নল এবং বাচ্চাদের কলেরা রোগে তরল ব্যবহার করার বিশেষ সুচ।

ডাঃ ট্রয়েল বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ভারতীয় স্বাস্থ্য সংস্থা খুবই অভিজ্ঞ কলেরা রোগ মোকাবেলায় , সেখানে পর্যাপ্ত ঔষুধ তৈরির সরঞ্জাম এর জাহাজ পাঠানো প্রয়োজন কারন দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা বেশিদিন এই চাহিদা মেটাতে পারবে না।

তিনি আরো বলেন , শরনার্থী শিবিরগুলোতে আরো দাতব্য চিকিৎসালয় খোলার প্রয়োজন।

ডাঃ ট্রয়েলের প্রতিবেদন ভিত্তিতে লীগ পর্যালোচনা করছে কিভাবে রেড ক্রস  স্বাস্থ্য অবস্থার উন্নতিতে সবোর্চ্চ ভূমিকা রাখতে পারে।

.

13.221.622

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের শরণার্থীদের সম্পর্কে ‘ফ্রেঞ্চ এপিসকপেট’- এর বিবৃতি বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ২২ জুন, ১৯৭১

ফ্রান্স এপিসকপেট এর স্থায়ী পরিষদ মঙ্গলবার ১৯৭১ সালের ২২ শে জুন প্যারিসে একত্রিত হয়েছিল এবং পূর্ববঙ্গের শরনার্থী সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন অইদিনই প্রকাশ করেছিল।

এটা প্রতিবেদনের পূর্নাঙ্গ অংশ যেটা ক্যাথেলিক দৈনিক ‘la croix ‘ এ ২৪ শে জুন প্রকাশিত।

স্থানীয় সমস্যাগুলোর জন্য আমাদের দূরবর্তী ভাইদের কথা ভূলে গেলে চলবে না।বিশ্বের কোন এক এলাকা এই মূহূর্তে   বিশেষভাবে চেষ্টা করছে পূর্ববঙ্গের একটি প্রদেশ। একটা মরনাপূর্ন ঘূর্নিঝড়ের পর একটা বেসামরিক যুদ্ধের কারনে ছয় লক্ষ শরনার্থী ভারতে  চলে গেসে। কলেরার প্রাদুর্ভাবে আশা করা যাচ্ছে সামনের দীর্ঘ মাসগুলোতে পর্যাপ্ত খাদ্যের অভাবের মুখোমুখি হতে হবে। যেটা এই অঞ্চলকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ফেলবে। একই সাথে প্রতিটা মানুষের ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে।কিছু এলাকায় হত্যাকাণ্ডকে নিপীড়নের অন্তর্ভুক্তি করা হয়েছে। অনেক বাঙালি অফিসারকে নিষ্পন্ন করা হয়েছে এবং দেশ পালাতে জোড়পূর্বক বাধ্য করা হয়েছে।

ফ্রেঞ্চ বিশপের স্থায়ী পরিষদ মনে হয়ে করে এইটা সব সচেতন খ্রিস্টানদের দায়িত্ব। এই মূহুর্তে প্রয়োজনীয় বিশেষ পদক্ষেপ নিয়ে লক্ষ শরনার্থী ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাহায্য করা। যদিও সহায়তা করা একার বিষয় নয়। এই মর্মান্তিক ঘটনার ব্যপকতায় প্রয়োজন  রাজনৈতিক সমাধান।এটা বিভিন্ন জাতির কাছে আবেদন যে নিজেদের সম্পৃক্ত করে এই সমস্যা শেষ করে। এখন এমন অবস্থা পূনরুদ্ধার করা ,যেন শরনার্থীদের ফিরে যাওয়া সম্ভব হয়। এই দাবী পূর্ববঙ্গে বসবাসরত প্রতিটি নাগরিকের প্রতি সম্মান দেখানো ও তাদের মৌলিক অধিকার্।

এটাই কষ্টের যে বিভিন্ন দেশ যাতে ফ্রান্সও যুক্ত আছে ,পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে ,যেটা সম্ভবত এই ভয়ঙ্কর নিপীড়নে সাহায্য করছে।

ফ্রেঞ্চ নাগরিকের রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক তাদের দায়িত্ব নিজেদের জানানো ,সচেতনভাবে যুক্ত হওয়া ,এবং নিজেদের উপলব্ধি করা এই মর্মান্তিক ঘটনায় নিপীড়িত মানুষের সাথে ,এবং গ্রহনযোগ্য সমাধান খুজতেক একত্রিত হওয়া।

Chat Conversation End

.

13.222.623

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের শরনার্থীদের সমস্যার ন্যায়সঙ্গত ও মানবিক সমাধানের জন্য আফ্রো এশীয় গণ সংগতি সংস্থার প্রস্তাব এ.এ.পি.এস.ও ২৩-২৪ জুন, ১৯৭১

“পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানের জন্য অাফ্রো-এশিয়ান মানুষের সংহতি সংগঠন ১৯৭১ সালের জুনে সিরিয়ার দামাস্কাসে অনুষ্ঠিত হয় এবং দশম নির্বাহী কমিটির অধিবেশন এ তা গৃহীত হয়”

জুন ২৩-২৪, ১৯৭১।

এ. এ. পি. এস. ও. মন্ত্রনালয়ের নির্বাহী কমিটির দশম অধিবেশন ১৯৭১ সালের ২৩-২৪ এ জুন অনুষ্ঠিত হয়। দামাস্কাসে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এবং উদ্বাস্তুদের পরিতাপের বিষয় সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা  হচ্ছে।

— সাম্রাজ্যবাদ ও শোষনের বিরুদ্ধে অাফ্রো-এশিয়ান জনগন মুক্তির সংগ্রামের তাৎপর্যের জন্য সচেতন হচ্ছে।

মহান মানব বিপর্যয় এর প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে যে উপনিবেশবাদ, নব্য-উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ, তৃতীয় বিশ্বের জঙ্গি লোকদের উপর অারোপ করা হয়।

নিম্মলিখিত অাদায় অাহ্বান করা হয়ঃ

১) উদ্বাস্তুদের সম্যসার একটি ন্যায়পরায়ণ ও মানব সমাধান দেখতে হবে যাতে তারা উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে সক্ষম হয় এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে অাসতে পারে।

২) এ. এ. পি. এস. ও. এর মহাসচিব পরিস্থিতির উন্নয়ন অনুসরন করতে অনুরোধ করেন।

.

13.223.624

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশে ধ্বংস ও হত্যাযজ্ঞের নিন্দাঃ ভেনেজুয়েলান বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার পরিষদ এর বিবৃতি ভেনেজুয়েলান কাউন্সিল ফর ওয়ার্ল্ড পীস এন্ড হিউম্যান রাইটস ২৪ জুন, ১৯৭১

বিশ্বের শান্তি চাহিদা ও মানবাধিকারের জন্য ইএনই ইউনিয়ন পরিষদ দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের গনহত্যা বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দেয়া হয়।

১৯৭১ সালের ২৪ এ জুন এক সংবাদ ঘোষনায়, জেনারেল সেক্রেটারি ডাঃ রিকার্ডো মোলিনা মাইতি,  বিশ্ব শান্তি ও মানবাধিকারের জন্য ভেনিজুয়েলা কাউন্সিলের পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের গনহত্যার নিন্দা এবং অভিযুক্তদের প্রতিক্রিয়াশীল চেনাশোনা এবং গনহত্যায় পশ্চিম পাকিস্তানের মিলিটারিষ্ট ফ্যসিষ্ট বাহিনীর মাধ্যমে পাঠানো হয়।

.

13.224.625

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্তর্জাতিক সমাজ কল্যাণ পরিষদ এর বিবৃতি ভারত সরকারের প্রেস বিজ্ঞপ্তি ৭ জুলাই, ১৯৭১

আন্তর্জাতিক সমাজ কল্যাণ পরিষদ শরণার্থীদের দুর্দশার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে।

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত ইহার আঞ্চলিক সভার সমাপনী বিবৃতিতে আন্তর্জাতিক সমাজ কল্যাণ পরিষদ যে সকল শরণার্থী পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে এসেছে তাদের দুর্দশার প্রতি তীব্র ক্ষোভ ও বেদনা প্রকাশ করেছে। বিবৃতিটি তাদের এই এলাকার ব্যাপক রক্তপাতের শিকার হিসাবে বর্ণনা করেছিল।

পরিষদটি পাকিস্তানের দুর্ভাগ্যজনক কাহিনী উল্লেখ করেছে এবং বলেছে যে, মানব জীবণহানি ও করুণ অবস্থার দ্বারা আলোরিত না হয়ে থাকা যে কোন ব্যক্তির পক্ষে কঠিন ছিল। ইহা তার বিভিন্ন কমিটির কাছে শরণার্থীদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও ঔষধের আবেদন করেছে।

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত পরিষদটির মিটিং এ যে দেশগুলো  যোগ দিয়েছিল সেগুলো হলোঃ তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া ও ভারত।

.

13.225.626-646

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক এর দক্ষিণ এশীয় দপ্তর ৮ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানে দরিদ্রতম দেশসমূহকে সামান্য সুদে টাকা ধার দিবার আন্তর্জাতিক ব্যাঙ্ক মিশনের প্রতিবেদন

(দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, বিশ্ব ব্যাংক দ্বারা প্রস্তুতিত, জুলাই ৮,১৯৭১)

(ঝ) বিশ্ব ব্যাংক মিশনের সদস্যদের জুন মাসের প্রথম দিকে পূর্ব পাকিস্তানে বারো দিন ব্যাপী সফরকালে সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। ( বন্ধনীর মধ্যে থাকার দৈরঘ):

আই.পি.এম. কারগিল, পরিচালক, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, আইবিআরডি (জুন ৬-১০), জন ডব্লিউ. গান্টার, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, মধ্যপ্রাচ্য ডিপার্টমেন্ট, আইএমএফ (জুন ৬-১০), ম্যানফ্রেড জি. ব্লবেল, প্রধান অর্থনীতিবিদ দক্ষিণ এশিয়া বিভাগ, আইবিআরডি (জুন ৬-১০), উইলিয়াম এইচ. এডওয়ার্ড, কৃষি বিশেষজ্ঞ, ইসলামাবাদ অফিস, আইবিআরডি ( মে ৩০-জুন ১১) ডগলাস এইচ. কেয়ারি , অর্থনীতিবিদ, ঢাকা অফিস, আইবিআরডি (মে ৩০- জুন ১১), শিগেনমিটসু কুরিয়ামা, সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি, ঢাকা অফিস, ইবিআরডি (মে ৩১- জুন ১০) ।

জে. হ্যান্স পিচলার, অর্থনীতিবিদ, ইসলামাবাদ অফিস, আইবিআরডি (মে ৩০- জুন ৩০), জন ও. রোজ, অর্থনীতিবিদ। আইএমএফ(মে ৩১ – জুন ১০), মাইকেল এইচ. উইহেন, চিফ, পাকিস্তান বিভাগ, আইবিআরডি (মে ৩১- জুন ১০)।

(খ)  ঢাকায় সফরকালে আমরা প্রায়শই ভ্রমণরত এবং পূর্ব পাকিস্তানের উনিশটি জেলার বারোটিতে কোন কোনটিতে একবারের বেশিবার সফরকৃত  ঢাকার এক থেকে তিন দলের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা  করেছি।মৌসুমি আবহাওয়ার কারণে সাইক্লোন এলাকায় (নোয়াখালী ও পটুয়াখালী) একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম অভীষ্ট সফর বাতিল করা হয়েছে- তালিকার শুধুমাত্র পরিদর্শনের জন্য সুলভ সময়ের স্থানগুলো ভ্রমণ করা হয়েছে। সরকার আমদের পরিবহন ব্যবস্থা এমনকি গভর্নরের বিমানসহ বিভিন্ন প্রদেশ সফর এবং প্রতিটি জেলা ভ্রমণের অনুরোধ রক্ষা করতে সর্বচ্চ  সহায়তা করেছেন ।

(গ)   যদিও পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই, এই প্রতিবেদনের জন্য তথ্যের যথাযথতা এবং দৃঢ়তা প্রাপ্তির জন্য  ভ্রমণ, নিরীক্ষণ, জিজ্ঞাসা, উত্তর যাচাই এবং মূল্যায়ন করার ধরণটাও স্বাভাবিক নেই। অধিকাংশ ব্যাংক মিশনের মুখোমুখি হওয়ার থেকে এটি অবশ্যই আরও কঠিন কাজ এবং এটি বলতে হবে যে কঠিন আইনের অনুপস্থিতিতে সেই পরিস্থিতিতে সাধারণ প্রভাবের জন্য আমাদের কে প্রায়শই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে হচ্ছিলো। জনশ্রুতি আছে যে, প্রযুক্তিগতভাবে কিছু তথ্য ( উদাহারনস্বরূপ সেনাবাহিনীদের করম বিষয়ক এবং বিদ্রোহী কার্যকলাপ)অফিসিয়াল বিবৃতি বা বিবরণ যা আমদের কাছে সহজলভ্য তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি: যাই হোক , পূর্ব পাকিস্তানের এই পরিস্থিতির একটি চক্রাকার বিবরণ সুসম্পন্ন করার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন, এবং আমরা শুধুমাত্র সেইসব তথ্য অন্তর্ভুক্ত করেছি যা আমরা দেখেছি এবং চিনহিত অবস্থানে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রদর্শিত এবং পরিলক্ষিত।

(৪)সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলা যায় যে, যে পরিস্থিতিতে এই মিশনটি এসেছে তাতে একে মোটেও উত্সাহিত করা হয় নি। সর্বোপরি, বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রদেশেরদ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ব্যাপারটি কষ্টসাধ্য হয়ে পরে। সার্বিক পরিস্থিতি বিচারে দেখা যায় যে, প্রদেশের সমগ্রিক পরিকাঠামো অত্যন্ত গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।বিশেষ করে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থারক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।অর্থনীতিকে আবার পুনরুদ্ধার করার সমস্যাগুলোর জটিলতা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষেরকিছুটা ধারনা ছিল। অবশ্যবাধা পাওয়ার ভয়ে তারা কোনকার্যকর ব্যবস্থা অথবা সমস্যাটি সমাধান করার জন্য কোন কার্যক্রমও পরিচালনা করেনি।এই কার্যক্রমে একে অপরের পুনর্বহালের ব্যাপারটি অর্থনৈতিক সমস্যাটিকে আরও ভয়ঙ্কররুপে বাড়িয়ে তোলে।

(৫) প্রায় সমগ্র প্রদেশ ভ্রমণ করার পর মিশনটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রদেশের অবস্থা অত্যন্ত আশংকাজনক। তাছাড়া প্রধান প্রধান এলাকাগুলো ভ্রমণের সময় একে অপরের পুনর্বহালের ফলে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হত্তয়াপ্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। এ থেকে এটি অনুমান করা যায় যে, এদের মধ্যে একজনের অধিক উন্নতিতে “স্নোবল” প্রভাব থাকতে পারে। সুতরাংমিশন যেভাবে চিন্তা করেছে, রেলওয়ের পক্ষে তার চেয়ে ভালোভাবে কাজ করা সম্ভব ছিল। যদি উপকূলীয় নৌবহরের বহনক্ষমতা পুনরায়যথেষ্ট বৃদ্ধি করা হয়, তবে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু, এর ফলে তাদের কতিপয় মানসিক সীমাবদ্ধ্যতা তৈরী হয়। একইভাবে, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের ধবংসপ্রায় অর্থনীতির দুরাবস্থা সম্পর্কে সকলেই অবগত ছিল। সুতরাং, এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমত তাদের শারীরিক সমস্যাকে বাধা বলে মনে হলেও একসাথে কাজ করার মনোবল এবং সঠিক নেতৃত্ব দ্বারা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারত। সুতরাং যদি কোনভাবে সকলের মন থেকে ভয়, অবিশ্বাস ও অনিশ্চয়তার ব্যাপারগুলো সরানো যেত এবং প্রশাসনকে সম্পূর্ণভাবে কাজ করার ক্ষমতা দেয়া হত, তাহলে তাদের শারীরিক সমস্যাগুলো আরও কম সমস্যা হিসেবে বলে মনে হত। তা সত্ত্বেও,মিশণের সফরের সময় সেখানে কোন শক্ত প্রমাণ ছিল না যে, উক্ত ঘটনাটি ঘটতে যাচ্ছে। অত:পর মিশন নিজেই বুঝতে পারলো যে, তারা দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

বর্তমান অবস্থা

১। বর্তমান এই অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য মিশন চারটি সমস্যাকে দায়ী বলে মনে করে। প্রথমটি হল শহর এবং গ্রামের মধ্যকার সম্পত্তি বণ্টনের অসামঞ্জস্যতা। এলাকাগুলোকে ছোট ছোট অংশে বিভক্ত করে সেগুলো বিদ্রোহীদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা কেবলমাত্র শহরের প্রধান প্রধান এলাকাগুলোতে তাদের সামরিক কার্যকলাপচালিয়েছিল। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, যুদ্ধের প্রথম দিকেবিদ্রোহীদের দ্বারাপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যাবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি।তৃতীয় কারণ হচ্ছে জাহাজ এবং অন্যান্য যানবাহণের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। চতুর্থ কারণ হচ্ছে, প্রদেশের পরিবেশ পুনরায় শান্তিপূর্ণ হওয়া নিয়ে জনসাধারণের মধ্যকার ভয় ও অনিশ্চয়তা।

        ২। বড় বড় শহরগুলোকে ভেঙ্গে ছোট ছোট মার্কেট এবং শ্রমিক আবাসনের ব্যাবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল অনেক বেশি।প্রধান প্রধান সড়ক ও রেলপথের উপর অননুমোদিত ঘরবাড়ি ও দোকানপাট বেশিরভাগ শহরকে ধ্বংস করেছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গ্রামগুলোর। বিশেষ করে গ্রামের বাজার গুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল মারাত্মক।বিভিন্ন জেলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল বিভিন্নরকম। তবে বেশিরভাগ গ্রামগুলোকেই সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল।

        ৩। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যাবস্থার। দশটি প্রধান সড়ক এবং তেরটি প্রধান রেলওয়ে সেতু ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। এছাড়াও প্রদেশের বেশিরভাগছোটছোট ব্রিজ এবং কালভার্ট নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। এমনকি কিছু কিছু রেলওয়ে সেতু এবং রাস্তা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছিল। উপরন্তু, যুদ্ধের সময় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল রেলগাড়ির ইঞ্জিন, ফেরী এবং জাহাজ। টেলিযোগাযোগ ব্যাবস্থা কিছুটা ঠিক থাকলেও রেলওয়ে ব্যাবস্থা প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।

        ৪। সেসময় অসংখ্য জাহাজ এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত কিংবা ধ্বংস করা হয়েছিল।এসব ক্ষয়ক্ষতি অর্থনীতিতে অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলে। উদ্ধার পাওয়াজাহাজ এবং যানবাহন বিদ্রোহীদের দ্বারা সীমান্ত পার করে দেশে নিয়ে আসা হয়েছিল। তার মধ্যে যেসকল ব্যাক্তিমালিকানাধীন যানবাহনের মালিকগণ পালিয়ে গিয়েছিল তার বেশিরভাগ পরিত্যাক্ত হয়েছিল। সবেচেয়ে বেশি ট্রাক এবং ল্যান্ড-রোভার্সসম্ভবত সেনাবাহিনী দখল করে নিয়েছিল। যেসকল এলাকাতে ভারী যুদ্ধ হয়েছে, বিশেষ করে ঢাকার উত্তর ও পশ্চিম দিক এবং চট্টগ্রামের বেশিরভাগ যানবাহন সেনাবাহিনীর অনুরোধেবাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সেখানে, ঠিকাদারদের নতুন গাড়িগুলোকে অন্যান্য প্রদেশ এবং বন্দর থেকে নিয়ে নেয়া হয়। জিপ এবং এলসিটিগুলোকে ঘূর্ণিঝড় কবলিত এলাকায় ত্রাণ কাজে ব্যাবহার করার জন্যনিয়ে নেয়া হয়েছিল। বর্তমানে আর্মি জীপ ও ট্রাকগুলোকে উত্তরচট্টগ্রামের এলাকাগুলোতে সড়ক ও রেলপথে নামানোর জন্যে অপেক্ষা করে রাখা হয়েছিলো। অবশ্য রিকুইজিশন করা যানবাহন এখনও তাদের মালিকের কাছে ফেরত দেয়া হয়নি।

        ৫। সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল মানুষ উদ্যোক্তা হতে ভয় পাচ্ছিলো। এর ফলে ব্যাবসা বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি সহ দেশের অর্থনীতিতে ভাটা পরে গিয়েছিল। এটা স্পষ্ট যে, প্রদেশের কিছু কিছু এলাকার অর্থনৈতিক উন্নতি হলেও তখনও লোকদের মধ্য থেকে যুদ্ধের প্রাথমিক ভয় কেটে যায়নি। বরং এমনটা মনে হচ্ছিলো যে সেনাবাহিনীগ্রামাঞ্চল এবং প্রধান প্রধান মহাসড়কগুলোর মধ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করছিলো। যদিও সেসময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতিই জনগণের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট ছিল। যাহোক, সেসময় সেনাবাহিনী জনগণের উপর ক্রমাগত অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছিলো। বিশেষ করে পরিচিত বা সন্দেহভাজনআওয়ামী লীগের সদস্য, ছাত্র এবং হিন্দুদের মধ্যে এই অত্যাচারের ভয় ছিল বেশি। কিন্তু তারা একই সময় বিদ্রোহী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। এটা কেবলমাত্র তাদের নিজেদের ঐক্য নষ্ট করছিল না, বরং সৈন্যদের মধ্যেও প্রতিশোধস্পৃহা জাগিয়ে তুলছিলো। সংক্ষেপে বলা যায় যে, দেশের তৎকালীন অবস্থা ছিল অত্যন্ত উত্তেজনাকর এবং সামগ্রিকভাবে প্রদেশের স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করাটা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল।

খ. ফলাফল

৬. এর মধ্যে যে জিনিস ঢাকায় বা গ্রামাঞ্চলে সফর করে মনে হয় সেখানে খুব কম লোকই আছে। ঢাকায় অবস্থা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়, প্রমাণিত হয় যেখানে দিনে স্বাভাবিক জনসংখ্যায় আমাদের সমষ্টিগত ছাপ ৫০ শতাংশের বেশি ; চট্টগ্রাম, যেখানে শুধুমাত্র একতৃতীয়াংশ জনসংখ্যা আবির্ভূত হবে এবং এটি মনে হয় যে যানবাহনে পাকিস্তানী পতাকা  তাদের ‘আনুগত্য’ প্রদর্শনের জন্য প্রয়োজন। কুষ্টিয়া যেখানে জনসংখ্যা সাভাবিকের থেকে ১০ শতাংশের বেশি নয়; ভোলা, যেখানে কার্যত মোট জনসংখ্যার স্থান হবে বলে মনে হয়। একটি অশুভ উন্নয়ন হচ্ছে যে, পটুয়াখালী এবং অন্যান্য উপকুলীয় অঞ্চল জেখাঙ্কার খাদ্য পরিস্থিতি ইতিমধ্যে সমালোচনামুলক, সেখানকার জনসংখ্যা নির্ভরযোগ্যভাবে  দ্বিগুণ  হয়েছে বলে জানা যায়, এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে আগামী মাসে এমনকি স্বাভাবিক অতিপ্রজতায় খাদ্যশস্য সরবরাহ করা যেতে পারে।

৭. এই এক ছাপ দিনে দিনে অরজন হয়। সবকিছুর পরেও পরিস্থিতি এখনো অস্বাভাবিক। অধিকাংশ এলাকায় কারফিউ আছে। সিলেটে সন্ধ্যা ৭.৩০ টা থেকে ভোর ৫.০০ টা; চট্টগ্রামে রাত ১০.০০ টা থেকে ভোর ৬.০০ টা; ঢাকায় ১১ই জুন কারফিউ তুলে নেয়া হয়। কারফিউ ঘণ্টা যাই হোক, মধ্য বিকেলেই রাস্তা পরিশকার এবং অন্ধকারে পরিত্যাক্ত করা হয়।

৮. পূর্ব পাকিস্তান জীবিকা অর্থনীতির অবস্থা যেখানে হাজার সাধারণ আয়ের মানুষ (বর্ধিত পরিবার, গ্রাম, ইউনিয়ন ইত্যাদি) অল্প অর্থনীতি থেকে আরও অথবা কম স্বয়ংসম্পূর্ণ তা ঢিলেঢালাভাবে একটি বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক যা সম্পূর্ণরূপে ভাঙ্গা হয়েছে তার একটি কঠিন ভূখণ্ডে সংযুক্ত করা হয়, এবং অর্থনীতি শুধু সাময়িকভাবে বন্ধ হয়নি মৌলিকভাবে স্থানচ্যুত হয়েছে। প্রায় তিন মাস ধরে সেখানে পাটে, চায়ে, অথবা অন্যান্য রপ্তানি ফারম থেকে ফ্যাক্টরিতে অথবা খুব অল্প পরিমাণে বিদেশে রপ্তানিতে কার্যত কোন আন্দোলন ছিলনা। এবং ঢাকা এলাকা ো কার্যত কেউ কেন্দ্রীয় সংগ্রহ থেকে মধ্য প্রদেশে ঘাটতি এলাকার মধ্যে ফেরত। সাধারণত, আন্তঃপ্রাদেশিক, আন্তঃপন্থী ওবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায় এবং এখন পর্যন্ত সবে আবার কাজ করতে শুরু করেছে। ক্ষুদ্র অর্থনীতির একটি সাধারণ হ্রাস স্তরে সর্বস্বান্ত হয়েছে তবে, বিশেষভাবে কৃষিতে- চাল উৎপাদনে বাধাগুলো আসে সেইসাথে তিন মাসের জন্য অসৎ খাদ্য শম আন্দোলনের মানে এই যে, এক্ত খুঁতেল পরিবহণ, বাণিজ্য এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা যে সব স্বাভাবিক সময়ের মধ্যে স্থির ছিলনা সেখানে অতিরিক্ত খাদ্য আমদানি ো বণ্টন প্রয়োজনীয়তা আরোপ করা উচিত নয়। একই সময়ে গত কয়েক মাসের জন্য স্বাভাবিক পরিমানের থেকে বেশি পরিমাণ পাট, চা ইত্যাদি সরানোর প্রয়াশের পদ্ধতির দাবি স্থাপন করা হয়।

৯. যদিও মে মাসের শুরুর দিকে “সংগঠিত প্রতিরোধ” এর শেষ উচ্চহার দ্বারা ছাঁটাই করা হয়, এবং কেন্দ্রীয় প্রদেশের জনসংখ্যা আইন প্রশাসনের অধীনে দৃঢ় আছে তদবধি যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হতে থাকে। টেলিযোগাযোগ ও মেইল ​​সেবা আংশিকভাবে অধিকাংশ এলাকায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে, কিন্তু মানুষের শহর এলাকায় ভ্রমণ এবং পণ্য সরবরাহ ছাড়া সেখানে কিছুই চলাচল করছে না। ঢাকা জন্য আমাদের অনুমান যে সম্ভবত অর্ধেক রিকশা এবং এক-তৃতীয়াংশ ক্ষুদ্র ট্যাক্সি, গাড়ি ও বাস রাস্তায় ফিরে এসেছে; যখন ১৫ শতাংশ ট্রলি এবং ট্রাক পন্য নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। সর্বত্র অন্য পরিসংখ্যান কম, কিন্তু ঘটনাটি বিশেষ করে জনসংখ্যা কেন্দ্র মধ্যে চিহ্নিত করা হয়। কোথাও জানবাহন ট্রাফিক স্বাভাবিক মাত্রা ৫ থেকে ১০ শতাংশ স্বাভাবিক। দেশে নৌকা উধাও হয়ে গিয়েছে।

১০. বাণিজ্য ব্যহত ঠিক যেমন সম্পূর্ণ এবং মৌলিক এবনহ সেখানে এখনো পুনরুদ্ধআরের কোন চিহ্ন নেই। দ্বন্দ্বের সময়কালে অনেক গ্রাম্য বাজার ধ্বংস হয়ে গেল এবং জনসংখ্যায় অর্থনৈতিকভাবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দল যেমন- ব্যাপারী, মধ্যদেশের পাট ব্যাবসায়ী আছেন তারা কার্যত উধাও হয়ে গেলেন। যেহেতু সেখানে লুটপাট দ্বন্দ্ব হচ্ছে এবং ব্যাবসায়ীরা কাজে ফিরে যেতে অনিচ্ছুক। এই পরিস্থিতিতে একজন পাট ক্রেতা, পাট ব্যবসা চালানর জন্য ক্তহিন চেষ্টা করেছিলেন, ের খরচ ৫০০০০০(১০ থেকে ৫০ টাকার নোট ) বহন করার বাধ্যকতা  অনুভব করেছেন। খুব সম্প্রতি মধ্য প্রদেশ তেকে পাট বিক্রির জন্য পাট ব্যবসায়ী খোঁজা হবে।

১১. ব্যাংকিং সম্পর্কে পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন ছিল। তবে মার্চে সারগর্ভ তোলা সেখানে পরিচিত ছিল এবং মার্চের শুরু থেকে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত  কিছু লুটপাট এবং কর্মীদের ক্ষতি হচ্ছিল। তদবধি , শহর এবং ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অর্ধেকের বেশি ব্যাংকের শাখা খোলা হয়েছে কিন্তু আমানত ব্যবস্থার বাৎসরিক পুনরুদ্ধার করা হয়নি এবং সক্রিয়তাও খুব কম।

১২.সর্বক্ষেত্রে ভাঙ্গন এবং তার অধ্যবসায় তীব্রতার কারণে শারীরিক কারনের থেকে মানসিক কারণ অনেক বেশি আছে। চট্টগ্রামে খুব অল্প ব্যতিক্রম পাটের গুদাম দগ্ধ হয়েছে,সিলেটে এক চা কারখানা, চট্টগ্রামে এক চায়ের পেটি কারখানা, টঙ্গি তে কাগজকল বড় কারখানার প্রাকৃতিক উদ্ভিদের সামান্য ক্ষতি হয়েছে। আসলে ২৫ মার্চে অসাব্ধানি যে ক্ষতি হয়েছেঃ   প্রথম সপ্তাহে তীব্র ভোল্টেজ ওঠানামায় অনেক বৈদ্যুতিক মোটর পুরে গেছে, কর্ণফুলী পেপার মলের রেয়ন গাছ অনেকদিনের ছাড়তে থাকা এসিডে খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছীবং কিছু গাছ হ্রাসকরণ অথবা ত্রুটিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ বহন করছে। বিশেষত নরসিংদী ো উত্তরপশ্চিম বাংলার উল্লেখযোগ্য ছোটও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ধ্বংস এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় যেমন- সয়া মিল, ইটের ভাটা এবং তন্তু কিন্তু কোন বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। যে কোন ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবিত শিল্প এবং ব্যবস্থাপনা ও শ্রম, আর্থিক সমস্যা, পন্য পরিবহণ, সরবরাহের ও বিক্রির অক্ষমতা বেশি প্রভাব ফেলে।

১৩. ব্যাবস্থাপক কর্মী এবং শ্রমিক যারা পালিয়ে গিয়েছিল তারা গ্রামে ফিরছে। তারা সম্ভবত সেনাবাহিনীদের উপস্থিতি ও কাজ অব্যাহত রেখেছিল এবং বিদ্রোহীদের হুমকি যা তারা সমর্থন করেনি তার দ্বারা ভীত থাকার কারণে কাজে ফরে আসে। যারা ভীত অবস্থায় ফিরে এসেছে এবং বিদ্রোহীদের পোস্টারে আরোপ করা হুমকি ঘোড়াশাল ও চট্টগ্রাম এবং অন্যত্র  প্রচেষ্টা মারাত্মক পিছিয়ে পড়া সৃষ্টি করছে। অবাঙ্গালী এবং হিন্দের খুন  কিছু বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত দৃষ্টান্ত রেখেছে, যার ফলে অনেকেই পাকিস্তান ত্যাগ করেছে এবং তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা কম।

১৪. এই পরিস্থিতিতে, প্রশাসনিক ব্যর্থতা সঠিকরূপে চালনা অধিগম্য। সর্বাধিক আমি এবং দ্বিতীয় কর্মকর্তা কাজে ফিরে এসেছে; এবং সম্ভবত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অর্ধেক কর্মকর্তা গুরুতর অন্ত্রায় কারজকর প্রশাসন হতে অসম্ভাব্য বলে অনেক এলাকায় অনুপস্থিতিতি অব্যাহত রয়েছে। যাই হোক কিছু সংখ্যক কারণে, যারা উপরি সময়ের সেরা কাজ করছে তাদের অধিকাংশ ফিরে এসেছে। মিশন পূরণের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে কেউ তাদের দায়িত্বের নির্দিষ্ট এলাকার অবস্থা দেখতে প্রদেশে ব্যপকভাবে ভ্রমণ করেছেন।প্রাদেশিক সরকারের অধীনে কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ বিদ্যমান। জেলা ও থানা পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা তাদের অফিস ছেড়ে দিতে যথেষ্ট বন্দনীয় এবং মানুষ শহরে আসতে ভীত। একই সময়ে অনিবার্য বিষয়গুলোতে স্বাভাবিকভাবেই বেসামরিক প্রশাসনের সামরিক হস্তক্ষেপ এবং ক্রমাগত প্রভাবশালী সামরিক উপস্থিতি অনিবার্য।এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদের নিয়োগ , উন্নয়ন কর্মসূচী কঠোর সংকোচন, এবং প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত , বিশেষ করে ওই সমস্ত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত অর্থনীতির, স্বার্থ কমাতে তাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া সেদিকেই ঝুঁকে পড়ছে।

১৫. প্রকৃতি এবং যুদ্ধ অবশ্যই প্রদেশের এক অংশ থেকে অন্য অংশে পরিবর্তিত হচ্ছিলো, এবং সেখানে বিদ্রোহ এবং অর্থনৈতিক নিষ্ক্রিয়তার মধ্যে পার্থক্য যুক্ত হচ্ছিলো। সীমান্ত সম্পূর্ণ দীর্ঘে বেশি অথবা কম খোলা ছিল এবং তাই সন্নিহিত বিশেষভাবে অসুরক্ষিত ছিল। বেশিরভাগ ক্ষতি প্রথমদিকে ঘটেছে এবং বেশিরভাগ বিদ্রোহ ঘটেছে রামগড় থেকে শ্রীমঙ্গলের চন্দ্রকলায় পূর্ব সীমান্ত বরাবর এবং অপ্রবেশধ্য ময়মনসিংহ এবং সিলেটের দুইপাশে। খুলনা, যশোর, কুষ্টিয়া, পদ্মা, বগুড়া, রংপুর ও দিনাজপুরে বিধ্বংস সহ সেনাবিহিনিদের সবথেকে গুরুতর লড়াই এবং শ্রেষ্ঠ ধ্বংস ঘটে যমুনা/পদ্মার পশ্চিম দিকে । এটি সর্বাধিক জনসংখ্যা খতির এলাকা এবং অধিকাংশ কৃষি প্রতিবন্ধকতা ও কার্যকলাপ এখানে। দৃশ্যত নোয়াখালীর দক্ষিণ এবং উপকূলীয় এলাকা, বাকেরগঞ্জ এবং পটুয়াখালী হচ্ছে অন্তত কম ক্ষতিগ্রস্থ। যদিও রাজধানী এবং প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে ঢাকায় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে, তবুও এটি সম্ভবত নিকটতম ‘স্বাভাবিক’ রয়েছে; যাইহোক সকল জেলার একটি সাদৃশ্য হচ্ছে সবগুলই ১১ই জুন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের দুর্ভিক্ষের সময়ে স্বাভাবিকতার থেকে খুব দূরে ।

গ.প্রধান অর্থনৈতিক খাতে প্রতিক্রিয়া

১৬. কৃষি- যদিও এই মিশনের খাতে কোন শারীরিক ক্ষতি হয় নি, এটি স্পষ্ট যে কৃষি খাত এই সংঘাতের ফলে ক্ষতি ভগ করেছে। অনেক কৃষক পালিয়ে গেছে এবং অন্যরা খুন হয়েছে; সব কৃষকের খামার অপারেশন বিলম্ব, অবহেলা এবং নিবেশাভাব আছে।

১৭. ধান, বোরো (যা গত বছর উতপাদনের ১৬% ছিল) গত বছর গড়ে প্রায় ১৫% ছিল। এখানে কিছু বিলম্বী বোরো ফসল শুরুর দিকের বৃষ্টি এবং ক্রিশকের অন্তর্ধানের জন্য এখনো জমিতেই রয়ে গেছে, এটি নির্দিষ্ট নয় যে সব চাষের শস্য সংগ্রহ করা হবে। আউশ স্বাভাবিক বছরগুলতে রোপণকৃত আগাছার থেকে দেরিতে রোপণ করা হয়েছিল যেখানে ক্রিসক্রা পালিয়ে গেছে এবং সেখানে সারের অভাবের কারণে অনেক হলুদ হয়েছে।

 এডিসি এর কর্মচারীবৃন্দ এবং কৃষি বিভাগের মতে এবং আমাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মোট খাতে রোপণের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে ১৫% নীচে এবং মোট খাতের গড় ফলন ও কমে সর্বনিম্ন ১৫% এ এসেছে। এটি সর্বনিম্ন উৎপাদনকে ২৮% এ নামিয়ে দেয়।

১৮. আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে, অত্যাবশ্যক আমন শস্য যথেষ্ট প্রভাবিত হতে পারে। এই বিষয়টি এড়িয়ে গেলে বিলম্বের জন্য গুরুতর সমস্যা, বীজ এবং নিবেশ প্রদানের অভাব সমস্যার সৃষ্টি হবে। স্বাভাবিকভাবে সময়সূচীর পরেই আমন লাগানর সমগ্র প্রক্রিয়া গুরুত্বের সাথে আসতে পারে। সর্বচ্চ উৎপাদনের জন্য মধ্য জুলাই থেকে মধ্য আগস্ট কিন্তু মধ্য জুলাইয়ে রোপণ করা বাঞ্ছনীয়ভাবে সুপারিশ করা হয়। নার্সারিতে এক মাসের জন্য , অর্থাৎ চারা মধ্য জুনে নার্সারিতে যাওয়া উচিত তবে নার্সারি বেড অথবা জমিতে খুব সামান্য প্রস্তুতি বিভিন্ন প্রেদেশের ভ্রমণ পর্যবেক্ষণ করছিল। আরেকটি ব্যপার হচ্ছে, গোড়ারা দিকে ভারী বর্ষণের জন্য, খেতে আউশ দেরীতে রোপণ করা হয়েছে এবং পরবর্তী আউশ আগস্টের শেসের দিকে রোপণের সম্ভাবনা নেই। এই উপায়ে সর্বনিম্ন উপায়ে আউশ ধান আবাদ স্থগিত হতএ পারে এবং ফলন সংগতিপূর্ণভাবেই কমতে পারে। কোন কোন এলাকায় আমন আবাদ পুরপুরি পরিহার করা হতে পারে।

১৯. বিভিন্ন কারণে কৃষকের ঘর ও হাটবাজারে  সেনা ‘অধিজাচন’ , উদ্বাস্তুদের ফ্লাইট যারা খাদ্যের জন্য তাদের সাথে বীজ স্টক নিয়েছে ইত্যাদি অনেক আমন বঈজ প্রদেশে জুড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এবং প্রদত্ত প্রশাসন, পরিবহণ ও বিতরণ ব্যবস্থার ভাঙ্গন। যদিও প্রদেশে সাড় সহজলভ্য , বাড়ার সময় সংরক্ষিত সাড়ের পর্যাপ্ত ব্যবহার খুব বেশি হলে কিছুদিন চালিয়ে যাওয়া যায়। সমগ্র প্রক্রিয়া তাই সমালোচকদের পরিবহণ ও বিতরণ ব্যাবস্থার উপর নির্ভর করে, এটা খুব অস্বাভাবিকভাবে উঠে আসে যে সার সথিক জায়গায় সথিক সময়ে পাওয়া যাবে। সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ, যা স্বাভাবিক সময়ের জন্য কঠিন তা কম ই আশা করা যেতে পারে।

২০. বিশেষ করে সাইক্লোন এলাকা এবং পশ্চিমসীমান্ত এলাকা এলাকার পরিস্থিতি গুরুতর । সাবেক এলাকায়, জমির জন্য খসড়া পশুদের সরবরাহ প্রস্তুতি, যেখানে মানুষ ইতিমধ্যে ক্ষুধার্ত এবং অবিলম্বে খাদ্য ো বীজের জন্য কার্যকর ত্রাণ অপারেশন স্থাপন করা দরকার। পরবর্তী এলাকায় কৃষকের অভাব এবং হয়রানি উভয় অব্যাহত থাকা সত্ত্বেও যথেষ্ট চাষ হচ্ছে । কৃষি কার্যক্রম অবিলম্বে স্বাভাবিকভাবে সাধন করা হয়, এবং কৃষকদের সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা হয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমন  শস্যের উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব ফেলা সম্ভব হবে। বর্তমান অবস্থা যাই হোক না কেন। এটি মিশনের বক্তব্য যে মোট খেতে আমনের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে কম এবং খুব সম্ভবত ফলন ২০-৩০% কমে যেতে পারে । সব দিক বিবেচনা করে বলা যায় কৃষি উতপাদন সব দিক থেকে ৩০% কমে গেছে।

২১. একথাও ঠিক যে, বিশেষকরে এই মূল্যায়ন এমন যে, পরীক্ষামূলকভাবে আমন বৃহত্তম ফসল, যেখানে ফসল উন্নতি নির্ধারক আদালতের রায় এখনো সহজ এবং প্রম্পট নিরাময়কারি কর্ম এখনো কার্যকর। যাইহোক যদি এই মূল্যায়ন সঠিকভাবে সক্রিয় হয়, তাহলে প্রদেশে খাদ্য পাওয়ার পরিমাণ ১৯৭০/৭১ এবং ১৯৬৯/৭০ মিলিয়ন টন কম হবে। দুটি সিদ্ধান্তে অনুসরণ: প্রথম, এবং অবিলম্বে কর্মক্ষম তাৎপর্য, জুলাই-ডিসেম্বর 1971 সাল সময়ের আমদানি  খাদ্যশস্য ১৯৭০/৭১ থেকে ৫৫০.০০০  মিলিয়ন টন থাকতে হবে। যদি দৈনিক সরবরাহ জনপ্রতি ১৫.৪ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় এবং মোট সংগ্রহ যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখা হয়। যেকোনো পরিমাণ অভ্যন্তরীণ বিতরণ প্রদেশের পরিবহণ ব্যবস্থা ো প্রশাসনিক ক্ষমতা দাবী করে। দ্বিতীয় সম্ভাবনা আমদানির অন্য ২ মিলিয়ন তন ১৯৭১/৭২ ের দিতিয়ারধেক প্রয়োজন হতে পারে, আমন শস্যের  অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য একটি অবিচ্ছিন্ন দেখাশোনা থাকবে।

২২. পাটের সম্মানে ছবি জেলা থেকে জেলায় তারতম্যঃ তবে রিপোর্ট করা হয় মোট খেতের পরিমাণ ব্যপকভাবে কমে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। যুদ্ধ এবং আসন্ন অনিশ্চয়তার ভয়ের সময় অনেক আগাছা এবং তরলিকরন কাজ অবহেলা করা হয়েছে। সার প্রয়োগের ঘটনা নুন্যতম হয়েছে এবং চাষ নষ্ট হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শুরুর দিকে ভারী বৃষ্টি ও অবহেলা আগাছা বৃদ্ধি এবং কিছু এলাকায় ( উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহ ) অস্বাভাবিকভাবে ভারী ব্রিস্তির কারণে জলাবদ্ধতা ও উৎপাদনের হার কমিয়ে দিয়েছে। আমাদের সামগ্রিক রায় এই যে, মোট খেতের পরিমাণ ২০% ের নিচে নেমে জাওায় ফলন ১০% কমে গেছে। লক্ষ্য চিত্রে ১৯৭০/৭১ যৌগিক হ্রাস ৬.৯ মিলিয়ন বেল, শস্য ২৮% হ্রাস ৫ লাখ বেল। যেহেতু স্বাভাবিক চাষের কোন নিশ্চয়তা নেই সেজন্য স্বাভাবিকভাবে সামনে অগ্রসর হওা এবং ফসলের জন্য পর্যাপ্ত শ্রম উপলব্ধ করা এবং এই চিত্র কাঁচা পাটের জন্য সর্বচ্চ হিসাবে গন্য করা হবে। এমন কি সব ফসল মিল থেকে সরানোড় জনয় খুঁতে পরিবহ্ন ব্যাবহার করার কোন অর্থ নেই।

২৩. বেশ কিছুদিন আগে চা-বাগানের অবস্থা আশ্চর্যজনক ভাবে ভালো হয়। সেখানে প্রিথম চা-বছরের এপ্রিল মে প্রথম দুই মাসে কার্যত কোন অবচয় হয়নি এবং প্রক্রিয়াজাত হয়নি অথবা কম পক্রিয়াজাত হয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী সীমান্ত সত্ত্বেও যে এলাকায় শক্তিশালী যুদ্ধ এবং হিন্দুদের উচ্চ শ্রমশক্তি, আমাদের সফরের সময় জনসংখ্যা বৃদ্ধি এলাকা হতে প্রায় দুই ত্রিতিয়াংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন। কেবলমাত্র অরদেক জমি, কারখানা এবং অফিস কর্মচারী জুনের প্রথম সপ্তাহে উপস্থিত ছিল, এখনো অনুপস্থিত তাদের একটি ব্রিহত সংখ্যা ফিরতে শুরু করেছে।

২৪. জুনের প্রথম দশ দিনে, নীলকরদের দুই প্রবাসী তৃণভূমি অদৃশ্য এবং নির্ভরযোগ্য ভাবে দ্বিতীয়দের হত্যা করা হয়েছে বলে জানা যায়। ফলস্বরূপ, এবং যুক্তরাজ্য হাইকমিশনের পরামর্শে সেই প্রবাসী নীলকরদের

যারা বাগানে কাজ করছিলেন এখন সিলেট ত্যাগ করেছেন।

২৫. যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা ছাড়া, এটা সবচেয়ে অসম্ভাব্য যে দক্ষতার উপর চা উৎপাদন চলতে পারে না । সম্ভবত এটি সব সময়ে ঘটতে পারে না। তাই অন্ততপক্ষে , জুলাইয়ের মাধ্যমে এপ্রিলে উৎপাদন বা বার্ষিক স্বাভাবিক উৎপাদন ৪০ শতাংশ যথেষ্ট বা সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট, প্রথমত, ব্যবস্থাপনা ও শমিকদের ফেরার জন্য পুরুদ্ধার প্রক্রিয়ার চাকুরীটিড় উপর নিরাপত্তা। এমনকি যদি এটি  শীঘ্রই মোটামুটি সম্পন্ন করা যেতে পারে, দুর্দান্ত বাড়ন্ত সমস্যা পরাস্ত করতে যাবে। শ্রমশক্তি পুনরায় সংগঠিত করতে হবে এবং আগাছা কেটে সাফ করার বকেয়া কাজ যা বেশি পরিমাণে উপেক্ষা করা হয়েছে তা ২৫ মার্চের উৎপাদনের কাজের আগে সম্পন্ন করতে হবে। সম্ভবত সবচেয়ে আশার পরিণতি হচ্ছে যে বছরের অর্ধেক ফলন ফলান যেতে পারে যা মোট বিশ মিলিয়ন পাউন্দ ের কিছু, দিতে পারে উল্টোদিকে যা গত বছর ৬৯ মিলিয়ন পাউন্দ ছিল।কম আশার কথা, এটা সম্ভব রয়ে যায় যে পুরো বছরের যথেষ্ট উৎপাদন বিনষ্ট হবে এবং কেটে সাফ করার জন্য পরবর্তী বছর উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি গাছপালা হ্রাস পাবে।

২৬. পরিবহণ- এটি সম্ভবত সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত খাত। প্রধান স্থানচ্যুতি নিয়ে, ভূমিকাতে সাধারনভাবে বলতে গেলে, বিশ্লেষণ প্রকার আলোচনা করা হয়েছে।

২৭.  চট্টগ্রাম ও চালনা দুটি প্রধান বন্দরে যুদ্ধে সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ  যাইহোক, তারা মার্চে স্বাভাবিকভাবে মাত্র ৪০ শতাংশ এবং এপ্রিলে কার্যত নয়।সামরিক সেনার মাধ্যমে এপ্রিলে পোর্টগুলো নিয়ে যাওয়া হয় , মে মাসে অপারেশন ১০% সাভাবিকে নেমে আসে এবং বকেয়া কাজের একটি অংশ ও গুদামের বকেয়া ও পোর্ট এলাকা সাফ করা হয় যাতে পোর্ট এখন একটি অবস্থানে আছে যেখান থেকে দক্ষতার সাথে কয়াজ করা যায়। বর্তমানে পোর্ট স্বাভাবিক শ্রম সরবরাহের প্রায় ১৫%  নিয়ে কাজ করছে। নৌ বাহিনী প্রশাসকরা দাবি করে যে শ্রমিক পাওয়া যায়, কিন্তু প্রয়োজন হয় না, এরসাথে তাদের উচ্চতর ব্যবস্থাপনা, তারা কম শ্রমশক্তি দিয়ে আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ এবং স্বাভাবিক চাপ সাম্লাতে পারেন। স্মভবত এই কতক সত্য , তবে এটি করা উচিত বলা যেতে পারে যে এই ‘নতুন ব্যাবস্থাপনার পোর্ট’ এখনো নিরীক্ষণের জন্য আনশিকভাবে নতুনত্বের সাথে পাথান হয়নি।

২৮. এই সন্ধিক্ষণে বলা যেতে পারে যে, জাহাজ দুই-ত্রিতিয়াংশ স্বাভাবিক ধারঙ্খমতা ধারণ করতে সক্ষম নয় তাই ,একটি বোতলের গলা পদ্ধতি গঠন করে অথবা তারা অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থার যেমন সময় পর্যন্ত কিছু স্বাভাবিক ভলিউম সমীপবর্তী মিটমাট করতে সক্ষম হয়। চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে কয়েক্তি যোগ্যতা বলা হয়।
প্রথমত, খাদ্যশস্যের আমদানি সাথে, উভয় চালনা এবং চট্টগ্রাম-এর জন্য সকল অন্তর্মুখী জাহাজ  চট্টগ্রামে হাল্কা করা আবশ্যক, এই জন্য, একই “কোস্টার” (বা উপকূলীয় স্টিমার) এবং “উপসাগর পারাপার” বার্জ অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনীয় চলাচলে ব্যবহার করা হয়। দ্বিতীয়ত , এই কোস্টার ো বার্য ব্যবহার শুধুমাত্র চট্টগ্রামের সিলো পর্যবেক্ষণের তিনটি নিশ্চয়তার ব্যপারের উপর সীমাবদ্ধ। তৃতীয়ত, সম্ভবত প্রশিক্ষিত অপারেটর এবং মিস্ত্রির অভাবে  বন্দর সাম্লানর যন্ত্রপাতি  বর্তমানে মাত্র ৪০%। চতুর্থত, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, অতিরিক্ত সংরক্ষনের জায়গা পাওয়া না যাওয়া এবং বন্দরে পন্যের প্রয়োজন না হওয়ার কারণে সিম্মিলিত অভ্যন্তরীণ পরিবহণ বন্ধের থেকে দ্রুততর হারে চট্টগ্রামে আমদানি করা যাবেনা।

২৯. অভ্যন্তরীণ রেল এবং সড়ক উভয় পরিবহণ বর্তমানে নগন্য অবস্থায় আছে, একটি অসম্ভব সিমিত বোঝা ভার ধারণ খমতাসম্পন্ন শক্তিশালী জল পরিবহণ হাল্কা পন্যের ডাই এবং মধ্যদেশে চলাচলের ফলস্বরূপ চত্তগ্রামে একটি বোতলগলা পদ্ধতি যোগ হতে পারে, চালনা জাহাজের পরিস্থিতি সম্ভবত অথবা ভবিষ্যতে পরিচালনীয় হবে। এখানে চট্টগ্রামের উল্টোদিকে আমদানি ো রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্যহীনতা খুব বেশি নয়, যেমন পানির ঐতিহ্যগত ভূমিকা অভ্যন্তরীণ পরিবহন মোড তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং সংযোগ রেল এবং রাস্তা কম ক্ষতি ভোগ করে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতে কার্যকলাপ কম বিদ্রোহী প্রবন থাকবে ।
চট্টগ্রামে অবশ্য পরিস্থিতি অনেক কম সম্ভাবনাময়. এই প্রায় একচেটিয়াভাবে, একটি “আমদানি” পোর্ট হয়, স্বাভাবিক সময়ের চত্তগ্রাম-ঢাকা সড়ক ো রেল যোগাযোগ ঢাকার অন্যান্য জায়গায় পণ্যসম্ভারে দুই-ত্রিতিয়াংশ সরানো হয়েছে। যতক্ষণ না এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্ক পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং

কিছু স্বাভাবিক ট্রাফিক সমীপবর্তী তাদের উপর চলন্ত হয়, বন্দরে স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা সমীপবর্তী কাজ হবে না, এমনকি যদি উপকূলীয় বহর বৃদ্ধি করা হয় তা যথেষ্ট আপতকালীন উপায় হিসাবে হবে।

৩০. সব মিলিয়ে ১৩টি  প্রধান রেলওয়ে সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশই

মেরামত হয়েছে বা জুনে শেষে হবে বলে আশা করা যায়। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম সেতু

সিলেটের কাছাকাছি ফেঞ্চুগঞ্জ যা ক হিসাবে এখনো অনারব্ধ। গার্ডার অবশ্যই রেলা দিয়ে সরানো হবে এবং রেলয়ে এখনো সমগ্র চট্টগ্রাম-সিলেট লাইন ধরে অকার্যকর। উপরন্তু অত্যাবশ্যক ফেনি নদি অবশেষে একটি প্রশবোধক  রাখে; এবং এটি মেরামত করা বিদ্রোহীদের লক্ষ্য হয়ে যাবে। অনেক ছোট ছোট সেতু ো সাঁকো প্রতি বছর ধ্বসে যাচ্ছে। এগুলো গারদারের মাধ্যমে মেরামত করা হচ্ছে, তবে প্রদেশের রেললাইন গুলোো হারিয়ে যাচ্ছে।

৩১. এমনকি যেখানে লাইন অক্ষত সেই অংশে, অবমুক্ত স্বাভাবিক অনুপাতে মুখোমুখি ট্রেন অপারেশন বাঁধা থাকে, এই সাভাবকি গতি ো স্বাভাবিক ভার বহন। প্রথমত, যা মেরামত করা হয়েছে সেগুলো অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ট্রেন শুধুমাত্র গতি হ্রাস করতে সক্ষম হবে এবং ভার এই ব্রীজ বাঁ সাঁকোর উপর চলাচল করবে। দ্বিতীয়ত সেখানে নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। এটি প্রায় নিশ্চিত যে ছোট ছোট সেতু প্রস্ফুতিত হওা চলতে থাকবে, প্রদেশে যে রেল হারিয়ে যাওয়া অব্যাহত থাকবে এবং সীমান্ত অংশে অপারেশন পাস চলমান সম্ভব হবে। দিবাগত সময় পর্যন্ত অপারেশন সীমাবদ্ধ থাকবে, এই সিস্টেমের ধারণ ক্ষমতা স্বাভাবিকের থেকে অর্ধেক কমে যাবে। উপরন্তু রেলওয়ে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস – অর্ধেক মেরামতের কথা রিপোর্ট করা হয়- রেল পর্যবেক্ষণ করে যে ধারণক্ষমতা আবার গতি সীমাবদ্ধতার জন্য অর্ধেক কমে যায়।

৩২. মোটের উপর, আমাদের মূল্যায়ন এই যে, প্রতি ত্রাকের বয়সের এক-ত্রিরিয়াংশে কোন অপারেশন হয়নি। যখন অপারেশন বাকির উপর সাভাবকি ১৫ শতাংশের বেশি নয়। ের অর্থ এই যে, প্রতি সেরা খমতার ১০ শতাংশ সঞ্চালনকারী, এবং এই এবং এই ক্ষমতা ঠিক জায়গায় অগত্যা না বা স্থানান্তরিত পন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, রেলুয়ে স্বাভাবিকভাবে  চালু হবে না জতক্ষন পর্যন্ত অত্যাবশ্যকীয় চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়ক সঞ্চালিত হয়নি এবং কিছু সারি ধরে স্বাভাবিক অপারেশন সমীপবর্তী করা হয়নি; বর্তমানে এই উদ্দেশ্য সিদ্ধি করা দৃষ্টিগোচর হয়নি।

   .

৩৩। রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে রেলওয়ের মতই। দশটি প্রধান সেতু এবং অসংখ্য ছোট ছোট সেতু ও কালভার্ট উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো এবং যেহেতু মূলত এগুলো কংক্রিটের তৈরী তাই এগুলো দ্রুত মেরামত করাও সম্ভব নয়। তার বদলে বিকল্প হিসাবে ঝুলন্ত সেতু, ভাসমান পোতাশ্রয় বা ফেরি চালু করতে হবে। এগুলো অবশ্য গতি কমিয়ে দেবে এবং কম ওজন বহন করতে হবে। এছাড়াও, অন্তত একটি ফেরি খোয়া গেছে এবং অনেকগুলোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইতিমধ্যে এগুলো এখন আংশিকভাবে কাজ করছে, কিন্তু কয়েকটার ইঞ্জিন রুম ও স্টিয়ারিং – এর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার কারনে এগুলো সারতে কয়েকমাস লেগে যাবে। এই কারণে সব জায়গায় নদী পারাপারে ফেরীর সংখ্যা কম থাকার সম্ভবনা প্রবল।  যাই হোক সড়ক পরিবহনের মূল সমস্যা হচ্ছে এই অঞ্চলের অধিকাংশ ট্রাক বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্যে প্রত্যাহার করা হয়েছে।  নির্দিষ্ট খাতে সামগ্রিক বাধা উপেক্ষা করে, আমাদের পর্যবেক্ষন হচ্ছে এই অঞ্চলে ট্রাক পরিবহনের হার কোন ভাবেই সাধারন সময়ের তুলনায় ৫%-১০% এর বেশি নয়।

৩৪। নৌ পরিবহন খাতই লড়াইয়ে সবচেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২৪টি উপকূলীয় পরিবহনের মধ্যে, যার মাধ্যমে সারা বছর চট্টগ্রাম ও নৌবন্দরের যোগাযোগ রক্ষা করা হয়, একটি ডুবে গেছে মনে হচ্ছে। কিছু জাহাজ ছোটখাটো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, যা হিসাব করলে দেখা যাবে মাত্র ১৬টি চলাচল করছে; যদিও কর্মকর্তারা বার বার দৃঢ়ভাবে বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে চলাচল করা জাহাজের এক চতুর্থাংশ নষ্ট হয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের ভেতরের মোটর চালিত নৌ পরিবহন সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত হচ্ছিলো; যাই হোক, অর্ধেকের মত জাহাজ এখন বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে লভ্য। যুদ্ধের সময় দেশী নৌকা বস্তুত পূর্ব পাকিস্তানের নৌপথ থেকে নিলীন হয়ে গিয়েছিলো। সকলের কথা অনুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ৫০ শংতাশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন হয়তো বর্তমানে মালামাল বহনের কাজ করছে।

৩৫। পিআইএ ধ্বংস ও ক্ষয়ক্ষতির থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে গেছে; যাই হোক, এর চলাচল হাতে গোনা কয়েকটি বড় শহরে সীমাবদ্ধ।  ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, যশোর, সিলেট, ঈশ্বরদী, এবং কুমিল্লায় অভ্যন্তরীন সেবা নিয়মিত দেওয়া হলেও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে (সাধারন সময়ের ৩০ শতাংশ)। এই হ্রাসকৃত সেবার হার কোন বিমানের ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয় নি, কিংবা যেমন শোনা যায় সাধারন সময়ের ৬০-৭০ শতাংশ কর্মচারী কাজে ফিরে এসেছে তার সাথে এটাকে মেলানও যায় না। এই হ্রাসকৃত সেবার ব্যাপারটা হয়তো অন্ধকার নামার পর বিমান চলাচল বন্ধ রাখার জন্যে, সীমিত সংখ্যক মেকানিক, এবং জরুরী প্রয়োজনের ক্ষেত্রে যদি লাগে তাই কিছুটা “ঢিল” দেওয়া হচ্ছে বলেই হচ্ছে।  এমন কি এই হ্রাসকৃত সেবাও মাঝে মাঝে মিলিটারি অপারেশনে সাহায্যের জন্যে ফকার ও এসটিওএল (শর্ট টেকঅফ এন্ড ল্যান্ডিং) বিমান গুলো ব্যবহারের সময় ব্যাহত হয় – আমাদের থাকার সময়ই যেমন একবার হয়েছিলো। এবং নিরাপত্তাজনিত কারনে বানিজ্যিক ফ্লাইট গুলোতে মালামাল পরিবহনের অনুমতি নেই।

৩৬। ১০ই জুন পর্যন্ত আমাদের হিসাব অনুযায়ী আঞ্চলিক পন্যবহনকারী সামর্থ্য বর্তমানে সাধারন সময়ের তুলনায় এক চতুর্থাংশ। এবং যেহেতু এই সামর্থ্য চাহিদার সাথে মিলছে না এবং পরিপূর্নভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে না এটা কার্যত কোন কাজেই আসছে না। অধিকন্তু, যদিও সময় মত বা এর কাছাকাছি ব্রীজ গুলো মেরামত করা সম্ভব হয় মালামাল পরিবহন ক্ষমতা জুলাইয়ের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বাড়বে এবং বিদেশী সাহায্য পেলেও বছর শেষে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। এমন হতাশাব্যাঞ্জক মতামতের কারন হচ্ছে, যদিও সড়ক ও রেল পথ তুলনামুলক সহজ প্রযুক্তিগত ব্যাপার, এবং ইতিমধ্যে এর কাজও চলছে – কোন সংহত কর্যকরী পদ্ধতির কাঠামো, যা এটাকে পুরিপূর্ন রূপ দিবে, ছাড়া লভ্য শক্তি পুরোপুরি ব্যবহার করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, এবং এমন কোন কার্যক্রমের অস্তিত্ব নেই। এখন পর্যন্ত যা মেরামত এবং বিকল্প পথের কাজ করা হয়েছে তা অস্থায়ী এবং তা নুন্যতম বর্ষার আগে শেষ করা সম্ভব না, এবং কিছু এলাকায় নিরাপত্তা অবস্থার উন্নতি না হলে হবে না; এবং বিদ্রোহী কার্যক্রম বিভিন্ন এলাকায় পথেঘাটে ছোটখাটো বিঘ্ন অব্যাহত রয়েছে। আরো গুরুতর হচ্ছে, যানচলাচলের অনুপস্থিতি এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারনে যোগাযোগ ব্যবস্থায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা সীমাবদ্ধ হয়ে পরবে। এমন কি সেনাবাহিনী যদি সিদ্ধান্ত নেয় তারা সকল যান ও নৌ যান পুরোপুরি বানিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে ফিরিয়ে দিবে – যা এখনো হয়নি – তারপরেও ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা গুরুতর ক্ষতি হওয়া, সীমান্তের ওই পারে নিয়ে যাওয়া যান অথবা সেনাবাহিনীর রক্ষনাবেক্ষন ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারনে অকার্যকর হয়ে পরায় আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে নাঃ না যেসব বাহন কার্যক্ষম আছে তাদের মালিকদের খুজে বের করে সেবা চালু রাখা সম্ভব হবে। পরিশেষে, জল যাতায়াত ব্যবস্থা বাড়াতে হলে, যা স্থলের কমে যাওয়া চলাচল ক্ষমতাকে পূরন করতে লাগবে, সর্বাঙ্গীণ পরিকল্পনা লাগবে এবং কিছু অত্যাবশ্যক ব্যাপারে কালক্ষেপন না হয় এমন পদ্ধতি লাগবে।

৩৭।(iii) বাণিজ্য – বানিজ্যিক খাতের ব্যাপারে আমাদের অবস্থানকালে খুব কম প্রমানই সংগ্রহ করা গেছেঃ যাই হোক, পন্যদ্রব্যের সাথে সংশ্লিষ্ট খাত এবং তার যাতায়াত ব্যবস্থা ছাড়াও, অর্থনৈতিক এবং কেনাবেচার খাতও গুরুতর ভাবে, গঠনগত, বিশেষ করে মনস্তাত্বিক ক্ষতির শিকার হয়েছে যা অর্থনৈতিক গতি পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গুরুতর সমস্যা করছে। এই পতন স্থানীয় পাইকারী ও খুচরা বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিলক্ষিত হয় উদাহরণঃ আভ্যন্তরীণ, আন্তর্বিভাগীয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন; এবং ব্যাংকিং সিস্টেম ও অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সাধারনভাবে পরিলক্ষিত।

৩৮। মালপত্র সমেত বাজার, দোকান ও গ্রাম্য বাজার যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তা নথিভুক্ত করা হয়েছেঃ এর ফলে এবং অন্য কিছু কারন মিলিয়ে অনেক ছোট ব্যবসায়ী পালিয়ে গেছে। এই অবিরত অভ্যন্তরীণ ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের কারনে ব্যবসা নষ্ট হচ্ছে, যার প্রমান পাওয়া যায় শহরগুলোতে যেখানে বেশিরভাগ খুচরা দোকান ও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এখনো বন্ধ রয়েছে। মিশনের সদস্যদের সরেজমিনে দেখা অধিকাংশ জায়গাতেই এই সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অর্ধেকের কম ব্যবসার জন্যে খোলা ছিলো, এবং যারাও খোলা ছিলো তারাও যে খুব একটা ব্যবসা করছিলো তা মনে হচ্ছিলো না।

৩৯। যুদ্ধের অন্যতম একটি নিদারূন মনস্তাত্বিক প্রভাব হচ্ছে সাধারন আস্থা হারিয়ে যাওয়া যা বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক উভয় সম্পর্কতেই প্রভাব ফেলে। অনেক ব্যবসায়ীই উধাও হয়ে গেছে, অন্তত কিছু সময়ের জন্য; কিন্তু যারা আছে তাদের জন্যেও বাণিজ্যিক সংযোগ, আমদানীকারক ও তৈরীকারক; পরিবেশক ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধারে বিক্রয়ের সুবিধা ব্যহত হচ্ছে; এমন অবস্থায় অসম্পন্ন লেনদেনগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, পাওনাদাররা নতুন সুযোগসুবিধা দিতে চাচ্ছে না বা পারছে না। যার প্রতিফলন ঘটছে আন্তর্বিভাগীয় এবং বৈদেশিক বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে। পরিবহন সমস্যা ছাড়াও, বাকির হিসাবের অনিশ্চয়তা পশ্চিম অংশের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে (বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানী রপ্তানীকারকদের), কিছু বৈদেশিক রপ্তানীকারক বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে মাল পাঠাতে টাকা পরিশোধের বিশেষ জমানত চাইছে।

৪০। বাণিজ্যিক সম্পর্কের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা এখনো পরীক্ষা করে দেখা হয়নি যেহেতু এখন পর্যন্ত মালামাল পরিবহনের প্রধান অন্তরায় হওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে এবং চাহিদাও খুব কম। কিন্তু পাট চাষী, মধ্যবর্তী বাজার, ঘরোয়া পাটজাত বস্তু প্রস্তুতকারক এবং পাট লেনদেনকারীদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নিকট ভবিষ্যতে পরীক্ষায় পরবে, তারা যদি নিজেদের প্রমাণ করতে না পারে এর প্রভাব হবে গুরুতর।

৪১। বাকিতে লেনদেনের মূলে ব্যাংকের মনোভাব খুব গুরুত্বপূর্ন। ব্যাংকিং প্রক্রিয়া মার্চের প্রথম সপ্তাহে এবং ২৫ মার্চের পর গুরুতর ভাবে বিঘ্নিত হয়েছে; যদিও এখন মূল শহরাঞ্চলে এখন কার্যক্রম চলছে, গ্রামের শাখা গুলো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কর্মচারীদের অনুপস্থিতি, স্থাপনা এবং নথির ক্ষয়ক্ষতি এবং যোগাযোগের অভাব এখন ব্যাংকের উপর নির্ভর করে ২০ – ৫০% এর বেশি শাখা এখনো সক্রিয় না। যেখানে ব্যাংকগুলো আশা করেছিলো তারা হয়তো তাদের সেবা এবং সুযোগ সুবিধা সমীচীন সময়ের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারবে, নতুন ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক পুঁজি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা সহ সামগ্রিক ব্যাবসায়িক কাঠামো আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া কোন সন্দেহ ছাড়াই বলা যায় আরো অনেক বেশি সময় নেবে।

৪২। বিক্রয়যোগ্য সম্পদের অভাবে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরদ্ধারের সম্ভবনা গুরুতরভাবে ব্যাহত হবে। পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাংকিং পরিসংখ্যান আলাদাভাবে নেইঃ যাই হোক, প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব জমা দিতে অস্বীকার জানানো হয়েছে এবং তা পুরোপুরি পুনরোদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। পাকিস্তানী ব্যাংকের অবস্থা অবদমিত হয়েছে এবং করাচী ভিত্তিক ব্যাংকগুলো ইঙ্গিত দিয়েছে, আপাতত পূর্ব পাকিস্তানে তাদের কার্যক্রম আঞ্চলিক জমার উপর চলবে, যা সবসময়ই অপ্রতুল ছিলো। উপরন্তু, বর্তমান অবস্থায় ব্যাংক কতটা ধার দিতে প্রস্তুত তাও পরিস্কার না। সাম্প্রতিক “মুদ্রারহিতকরণ” অনিশ্চয়তার আরো একটি উপাদান এনে এবং চলমান মুদ্রা হঠাৎ করেই কমিয়ে ” অবশ্যই এই সকল সমস্যাকে এনে কার্যত বাড়িয়েছে। ১০০ ও ৫০০ টাকার সকল নোট বৈধমুদ্রা হিসাবে স্থগিত করা হয়েছিলো এবং তিনদিনের মধ্যে জমা দিতে হচ্ছিলো। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান এবং বিদেশের অবৈধ সম্পদের উপরে কি রকম প্রভাব ফেলেছিলো সেটা হিসাব করার কোন ভিত্তি নেই। স্টেট ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী মুদ্রারহিতকরণ মুদ্রা সমস্যায় অর্ধেকেরও বেশি, কিংবা ৮,২০০ মিলিয়ন টাকার মধ্যে ৪,৩০০ মিলিয়ন টাকায় প্রভাব ফেলছে। বৈদেশিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হতে, হয়তো একচতুর্থাংশ কিংবা ১০০০ মিলিয়ন টাকাও জমা পরে নি, এই বড় অংশ শুধু মাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে থাকা টাকা নয় বরং ভারতে অনেক ফ্লাইটের সংখ্যার মাধ্যমে, পুরো পূর্ব পাকিস্তানের অস্থির অবস্থাকে ফুটিয়ে তোলে। সরকার পুনরোদ্ধারযোগ্য টাকার পরিমান ১,০০০ থেকে বাড়িয়ে ১০,০০০ করে দিয়েছেঃ বেশি টাকা জমাদানকারীদের জন্যে জমাদানের উপর ভিত্তি করে কর; যা গড়ে ৪০ শতাংশের মত হয়, অথবা তাদের জমাকৃত টাকা সাম্ভাব্য কর হিসাবের জন্যে দেওয়ার স্বাধীনতা আছে;

৪৩। (iv) শিল্প – ম্যানুফ্যাকচারিং সাধারন ভাবেই খুব বাজে অবস্থায় আছে। মার্চের প্রথম দিনেই অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং বাকিগুলো খুব সীমিত কাজ করেছে। এপ্রিল এবং মে মাসের প্রথম দিকে বাস্তবিকভাবেই কোন উৎপাদন হয়নি। এরপরে থেকে বেশ কিছু কারখানা আবার কাজ শুরু করলেও উৎপাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক পার্থক্য বিবেচনাযোগ্য। ঢাকা শিল্পাঞ্চলের বাইরে চট্টগ্রাম ও টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে ধীরে ধীরে কাজ শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রামে ২৫% এর কম কারখানা খোলা কিন্তু আসলেই কাজ করছে এমন সংখ্যা এর থেকে অনেক কম; টঙ্গীতে ১২০০০ কর্মীর মধ্যে মাত্র ২০০০ কর্মী কাজে ফিরেছে। ঢাকার নারায়নগঞ্জ এলাকা এবং খুলনার অধিকাংশ কারখানা খোলা। যশোন, বগুড়া এবং কুমিল্লায় হয়ত অর্ধেকের মত খোলা। যে সব কারখানা উৎপাদন পুনরায় শুরু করেছে বেশির ভাগই, সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে, খুব কম দক্ষতা ও ফলাফল দেখাতে পারছে, হয়তো তাদের আগের তুলনায় ১০-২০% সর্বোচ্চ। হাতেগোনা কয়েকটি কারখানা তাদের আগের উৎপাদনের তুলনায় ৫০% এর বেশি কাজ করছে;  এই সব প্রতিষ্ঠান, যার অনেকগুলো প্রবাসী মালিকাধীন এবং বেশির ভাগই তুলনামুলক অনেক বড় পুঁজি বিনিয়োগকৃত, তাদের উৎপাদিত পন্য বিক্রি করতে পারছে না এবং হয়তো অপ্রতুল চাহিদা এবং রাখার জায়গার অভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে যদি অর্থনীতির এই অচল অবস্থা বেশিদিন চলে।

৪৪। আগেই যেমনটা বলা হয়েছে, কায়িক ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম এবং মূল সমস্যা হচ্ছে শিল্পখাতের শ্রমিক, ব্যবস্থাপনা, অর্থায়ন, যোগাযোগ এবং চাহিদা ইত্যাদির সম্মুখীন হওয়া। পরিদর্শন করা বেশির ভাগ কারখানাই অর্ধেকেরও কম শ্রমশক্তি কাজে ফিরে এসেছিলো। অনেক ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ছিল ১০-১৫ শতাংশ। এই কম উপস্থিতি আরো বাজে হয়েছে ফিরে আসাদের মধ্যে প্রশিক্ষিত শ্রমিকের সংখ্যা খুব কম। কারখানাগুলোতে গত কয়েক সপ্তাহে আন্দোলন হয়েছে, যদিও তা ধীর এবং বিক্ষিপ্ত ছিলো। হিন্দু কর্মচারীরা বেশিরভাগ সময়ই দক্ষ কর্মচারীদের বড় অংশ জুড়ে থাকে তারা ফিরবে বলে মনে হয় না, এবং অন্যরাও শ্রমিকদের কলোনী ধ্বংস, কর্মজীবিদের বাসে সেনাবাহিনীর লাগাতার তল্লাসী এবং অনেক শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি বহুল সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ইত্যাদি কারনে আস্তে আস্তে ফিরবে।  একই সাথে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ কারখানার আশে পাশে বিদ্রোহীদের হুমকিমূলক পোস্টার ও কর্মচারীদের একই ধরনের বার্তা সম্বলিত চিঠি কিছু এলাকায় (উদাহরণ, ঘোড়াশাল এবং চট্টগ্রাম) শ্রমিকদের আসা এবং যারা আছে তাদের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে।

৪৫। অনেক কারখানায় অবাঙ্গালীরা ব্যবস্থাপনা ও তদারকি কর্মীদের বড় অংশ জুড়ে আছে। আন্দোলনের সময় অনেকেই হত্যা করা হয়েছে এবং আরো অনেকে পালিয়ে গেছে এবং খুবই ধীর গতিতে কাজে ফিরছে। যাদের হত্যা করা হয়েছে এবং যারা ফিরবে না তাদের বদলি লোক পাওয়াটা খুবই কঠিন কাজ।

৪৬। যাতায়াত ও বাণিজ্যের ভঙ্গুর অবস্থার কারনে কাচামাল এবং জোগান এমনকি তৈরী পন্য চলচালে স্থবিরাবস্থার কারনে অধিকাংশ শিল্প এবং কারখানায় প্রভাব পরছে।

৪৭। বিশেষ করে পাট শিল্পের জন্যে মিলগুলোতে কাচা পাটের সরবরাহ বন্ধ থাকাটা তেমন মারাতম কোন ক্ষতির কারন হচ্ছে না, যেহেতু এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সাধারনত ফসল হয় না এবং মৌসুমি মন্দাভাব মিলিয়েই কাচা পাট সরবরাহ কম থাকে। তাছাড়াও, বেশির ভাগ কারখানারই, কিছু বিশেষ ক্ষেত্র বাদে, তিন থেকে চার মাস সাধারন কার্যক্রম চালানোর মত পর্যাপ্ত মজুত আছে। এছাড়াও কর্তৃপক্ষের চেষ্টা এবং সাহায্যের মধ্যমে (বিশেষ করে যদি পাট শিপ্লের ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দেওয়া হয়) যেই অল্প উৎপাদন এখন হচ্ছে তার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা করা হয়তো সম্ভব হবে। যদিও বর্তমানে পাটশিল্পের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থা কোন প্রতিবন্ধকতা বলে মনে হচ্ছে না। তবে, মধ্যবর্তী বাজার থেকে সর্বশেষ ফলিত পাটের অবশিষ্টাংশ, রপ্তানীর যোগ্য কাচা পাট এবং পাটজাত দ্রব্য বন্দরে পৌছানোর জন্যে এটি প্রতিবন্ধকতা হিসাবে কাজ করছে। আসছে মৌসুমের (জুলাই/আগস্টে শুরু হবে) পুর্বাভাস খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয় এবং যানবহনের অপ্রতুলতা পাটশিল্পের জন্যে মারাত্মক সমস্যা তৈরী করবে।

৪৮। চা শিপ্লের জন্যে বাহন ইতিমধ্যেই একটি মারাত্মক সমস্যার রূপ নিয়েছে। চা পাতা সংগ্রহ আবার শুরু হয়েছে। কারখানাগুলো চালাতে এবং আভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্যে জ্বালানী লাগবে। জ্বালানী সরবরাহ এখন স্বল্প এবং পুনঃসরবরাহ একটি মারাত্মক সমস্যা। সিলেট স্থলপথে বাস্তিবিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেছে। একমাত্র সড়ক পথ ও রেলওয়ে উভয়ই প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন গোলযোগ চলতেই থাকবে মনে হচ্ছে। যার ফলে জ্বালানী সরবরাহ এবং প্রক্রিয়াজাত চায়ের চালান হুমকির সম্মুখীন। আরো একটি সমস্যা হচ্ছে প্রতি চারটিতে একটি কারখানা ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় এবং ব্যাবস্থাপকরা পালিয়ে যাওয়াতে বর্তমানে চায়ের পেটি তৈরীর ক্ষমতা অর্ধেক হয়ে গেছে।

৪৯। বেশ কিছু বড় কারখানা সীমিতভাবে উৎপাদনের পরেও অতিসত্বর সরানর কোন সম্ভবনা ছাড়াই তৈরী মালের বিপুল মজুত হয়ে গেছে। ছাতক সিমেন্ট এবং ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা তাদের সংরক্ষানাগার ব্যবহার করে ফেলেছে এবং জলদিই হয়তো উৎপাদন আরো কমিয়ে দিতে বাধ্য হবে। আটটি ইপিআইডিসি চিনি কারখানা বিপুল পরিমান মজুদ রয়েছে এবং তারা সেগুলো চাহিদা ও স্বল্পতা থাকার পরেও সরাতে পারছে না। বিক্রয় ছাড়া ইপিআইডিসি চাষীদের আখের দাম পুরোপুরি দিতে পারছে না এবং জলদিই একদমই দিতে পারবে না।  জুনের ৭ তারিখ পর্যন্ত চট্টগ্রামের স্টিল মিলের নিতান্ত অপ্রতুল শ্রমিকরা সামর্থ্যের ২০ শতাংশ কাজ করছিলো, এবং লোহার মজুত বেড়েই চলছিলো যেখানে চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো লোহার অভাবে খুলনার রিরোলিং কারখানাগুলো বন্ধ ছিলো। পাকিস্তান টোবাকো চট্টগ্রামে বেশ ভালো ব্যবসা করছে যেখানে যশোরের সিগারেট কারখানাগুলো মারাত্মক কাগজের অভাবে ভুগছে। এমন আরো অনেক শিল্পের উদাহরণ দেওয়া যাবে যা এই ব্যাহত যাতায়াত ব্যবস্থার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।

৫০। অনেক কারখানাই হয়তো অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক লাভের কথা চিন্তা না করেই আবার খুলতে “উদ্বুদ্ধ” হয়েছে কিন্তু যুদ্ধের আরো দুইটি অতিরিক্ত প্রভাব আছে যা এখনো সম্মুখীন হতে না হলেও নিকট ভবিষ্যতে সম্মুখীন হতে হবে। এগুলো হলো নষ্ট হয়ে যাওয়া স্বল্প মেয়াদী ঋণ সুবিধা এবং নিশ্চিতভাবে, বর্তমানে হ্রাসপ্রাপ্ত উৎপাদন, কমে যাওয়া বিক্রয় ইত্যাদি সত্বেও যে সব কারখানা চালু আছে তাদের মারাত্মক ক্ষতি হবে শুধু তাই নয় অনেক বড় নেতিবাচক আয়ব্যায়ের হিসাব হবে। যার ফলে তারা বেতন, কর এবং ধার পরিশোধ দিতে অপারগ হবে।

৫১। (v) অন্যান্য খাত- মূল উপযোগিতামূলক সেবাগুলো সন্তোষজনকভাবেই চলছে মনে হচ্ছে; যাই হোক, এইখাতে বিপুল পরিমানে তৈরীর কোন চাহিদা নেই এবং এমন লম্বা সময় ধরে চলছেও না যার কারনে নষ্ট হয়ে যাবে এবং ঠিক করাতে পালিয়া যাওয়া কর্মী বা ব্যাহত যোগাযোগ ব্যবস্থা সমস্যা তৈরী করবে। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সরবরাহ অনেক সময় সমস্যা করলেও এখন গ্যাস সরবরাহ ঠিক আছে বলেই মনে হচ্ছে। এবং কিছু ক্ষেত্রেও ব্যাতিরেকে বিদ্যুতের বর্তমান চাহিদা (ছয় মাস আগের চাহিদার তুলনার ৪০ শতাংশ) সরবরাহ হচ্ছে। অন্তত ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পানি সরবারহ পর্যাপ্তভাবেই কাজ করছে।

৫২। যাতায়াত ছাড়াও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে এবং তা পুরোপুরি ঠিক করা যায় নি। প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি জেলা এবং ৬০টির মধ্যে ৬টি মহকুমা ব্যতীত সব জায়গায় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনঃস্থাপন হয়েছে; তবে এই সেবার অবস্থা খুব নিম্নমানের, তবে তা এমন না যে খুব ভালো পরিস্থিতিতেও সেবা খুব ভালো থাকে এবং বিভিন্নি জেলা ও মহকুমায় সেবা সবসম্যই বিঘ্নিত থাকে। ডাক যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি বিঘ্নিত হয়েছিলো এবং এখন ধীরে ধীরে ঠিক হচ্ছে। বেশির ভাগ গ্রাম, বিশেষ করে সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা এখনো অনেক কঠিন।

.

৫৩. ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বছরের গুরুত্বপূর্ণ  অংশ হারিয়েছে, হারিয়েছে অনেক ট্রাক এবং কিছু অন্যান্য সরঞ্জাম। এটার আর্থিক অবস্থা, যেটা কিনা সবসময় নিরাপত্তাহীন ছিলো, এখন সংকটপূর্ণ এবং বেশিরভাগ সংস্থাগুলো তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে অক্ষম। তারা এখন পুরোপুরি মনোবলহীন এবং ভীত, কিছু ব্যাতিক্রম বাদে সব সংস্থাগুলো কাজে যোগ দিতে ব্যার্থ হয়েছে; এমনকি এ অবস্থায় তারা ফিরে আসার চিন্তা করতেও অনিচ্ছুক।

৫৪. প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো অনেক জায়গাই খুলেছে কিন্তু ছাত্রছাত্রী উপস্থিতি খুবই কম। জুন মাসের শুরুর দিকে করা অনুরোধে, বেশিরভাগ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এসেছেন, কিন্তু তারা ভীত ও মনোবলহীন এবং কেউই বলছে না যে ২-ই আগষ্ট থেকে চলা সূচি অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসবে।

ডি. গণ রাজস্ব এবং বিনিয়োগ

৫৫. বর্তমান অবস্থা- প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও রাজনৈতিক অবস্থা একত্রে মিলিতো হয়েছে, যা কিনা সাম্প্রতিক সংঘাত তৈরি করেছে। যার ফলে গুরুতরভাবে এই অর্থবছরে সর্বত্র প্রাদেশিক সম্পদের অবস্থান এবং পাবলিক বিনিয়োগের গতি প্রভাবিত করেছে।

৫৬. প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে মোট বাজেটের মাত্র ৫০% আসবে (৩৮০ মিলিয়ন হতে মাত্র ১৯০ মিলিয়ন রূপিতে নেমেছে), এবং এর থেকেও নিচে নেমে যেতে পারে। কর ব্যতীত অন্যান্য রসিদও যথেষ্ট পরিমাণ কমেছে। সবচেয়ে বেশি বিপত্তি ভূমি রাজস্বে নিবন্ধিত হয়েছে, সব থেকে বড় একক কর গ্রহন করা হয় মে মাসের মাঝামাঝি যাও কি না ২৩ মিলিয়ন রূপির বেশি ছিলো না এবং পুরো অর্থ বছরে মে মাসে বেশি কর গৃহীত হয় যা কি না প্রায় ৪০ বা ৫০ মিলিয়ন রূপি, যেখানে বাজেট ছিলো ১৫০ মিলিয়ন। এই সঙ্গতিহীন রেকর্ড, নির্বাচনের সময় ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গড়ে উঠা আন্দলোনের প্রতিফলন। সে জন্য কর সংগ্রহের এই দূরাবস্থা ২৫ মার্চের অনেক আগেই দেখা যায়।

৫৭. মার্চের শুরু দিকে কর সংগ্রহ একরকম বন্ধ হয়ে যায়। মে মাসের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে তারা কর কমিয়ে দিয়ে প্রাদেশিক পর্যায়ে কর গ্রহন পুনোরায় শুরু করে। Apart  from  provincial  taxes,  this  disruption  of  tax  collectionsclosely  linked  with  the  general  disruption  of  the  overall  administrative  system-has further  affected  the  generation  of  centrally  collected  taxes  with  direct  repercussions on  public  resources  at  the  national  level. প্রাথমিক অনুমান ইঙ্গিত দেয় যে, এই বছর প্রাদেশিক কর সংগ্রহের পরিমান কম করে হলেও ৪০ শতাংশ কম ১৯৬৯/৭০ সালের তুলনায়। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে, কেন্দ্রীয় কর থেকে এই প্রদেশ কম পরিমাণ কর পেয়েছে।

৫৮. এই ঘটনার পরে, প্রদেশের জন্য বর্তমান উদ্বৃত্ত বাজেটে একটি বৃহদাকার ঘাটতি ধরা পড়েছে, প্রায় ২০০ মিলিয়ন রূপি। উপরন্তু, রেলপথ এবং অন্যান্য পাবলিক সত্ত্বা আর্থিক অবস্থা (যেমন EPWAPDA, EPIDC, EPADC, 1WTA, EPSIC, EPRTC, ইত্যাদি.) – নিরাপত্তাহীন এবং গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। সব মিলিয়ে ঘাটতি এখন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন রূপি ধারণা করা হচ্ছে, যা কিনা এ প্রদেশকে সম্পদের উপর কঠোর অবস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

৫৯. এই পরিস্থিতিতে, সরকারি বিনিয়োগ কর্মসূচি ব্যাহত হবে কিছু কারণে যা কিনা বাহ্যিকভাবে কিংবা অন্যকোনভাবে, প্রকল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করছে। ফলস্বরূপ, এই বছরের উন্নয়ন কর্মসূচি (বন্যা নিয়ন্ত্রণ সহ) এখন প্রায় এক-চতুর্থাংশ কমে দাঁড়িয়েছে, প্রায় ২৬০০ মিলিয়ন হয়েছে ৩৪০০ মিলিয়ন হতে (বাজেটের নিম্নগামীতা বিবেচনায় রেখে)।

স্বায়িত্বশাসিত সংস্থাগুলোর দ্বায়বদ্ধতার জন্য ৫৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার কাটিয়ে উঠার পর সরকারের নিজস্ব সম্পদের অভাবের কারনে অর্থায়ন করা হয় (অধিকাংশ ঋণ সেবায় কিন্তু অন্যান্য খাতেও), বিনিয়োগ বরাদ্দের মাধ্যমে, ফলে বাস্তব মূলধন কমে দাঁড়ায় ২০০ মিলিয়ন রূপির কাছাকাছি। তবুও এই অর্থবছরের জন্য এটি আশাবাদী হতে পারে।

৬০. আসন্ন বছরের সম্ভাবনাগুলো অনিশ্চয়তার চাদরে ঘেরা। বর্তমান পরিস্থিতি যে অর্থবছরের দ্রুত উন্নয়ন সম্পর্কে ভালো ইঙ্গিত বহন করে না, তা প্রায় নিশ্চিত। সাধারন পরিস্থির জন্যও এটি অসন্তোষজনক।

৬১. এ বছরের প্রকৃত অনুমোদিত বাজেটের চেয়ে সরকারের ১৯৭১/৭২ অর্থবছরের প্রাক বাজেটের আনুমানিক প্রাদেশিক রাজস্ব (কর ও অন্যান্য) উন্নয়নের ইঙ্গিত দেয়। প্রকৃত করের পরিমান কিছুটা কম ধরা হলেও অন্যান্য রাজস্ব খাত ১৯৭০/৭১ অর্থবছরকে ছাড়িয়ে যাবে আশা করা যায়। সব দিক বিবেচনা করে এমন অনুমান অবাস্তবই মনে হয়। এমন হলে ১৯৭১/৭২ অর্থবছরের মোট রাজস্বের পরিমান ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের রাজস্বের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি হবে। স্পষ্টত, সমগ্র প্রদেশ জুড়ে যা প্রায় অবিশ্ববাস্য অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের আভাস দেয়, অবশ্যই তা করের ভিত্তি, রাজস্ব প্রদানের সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রেখে এবং সমগ্র রাজস্ব ব্যবস্থার সক্ষমতার কথা চিন্তায় রেখে।

৬২. মিশন অদূর ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থির বাস্তবতার কোন প্রমানই খুঁজে পেল না। উপোরন্ত অনুমানগুলোকে গ্রহন করা দুষ্কর। মোটামুটি একটি ধারণা থেকে প্রাদেশিক রাজস্বের পুনরুত্থানও যদি হয়, ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের আয় দুই-তৃতীয়াংশ হলেও আমাদের বর্তমান বিচারে, আশাবাদীর দৃষ্টিকোণ থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে তা একটি প্রশংসনীয় প্রচেষ্টা হবে। এই প্রত্যাশা যদিও বেশি এবং কর উপশমের কোন সুযোগ রাখে না তবু পরিস্থির বিচারে দ্রুত অর্থনৈতিক আরোগ্য লাভের জন্য এটি প্রয়োজন।

৬৩. কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী, ১৯৭১/৭১ অর্থবছরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাভাবিক দায়ের সম্বনয়ের ফলে সরকারি কার্যক্রম পরিচারনার জন্য প্রাদেশিক রাজস্ব থেকে সংগৃহীত, কেন্দ্রীয়ভাবে আদায়কৃত কর এবং কেন্দ্রীয় কিছু ঋণ থেকে, ২১৬০ মিলিয়ন রূপি সম্পদ বরাদ্দ পাবে। একে ১৯৭০/৭১ অর্থবছরে অনুমিত ২২৬০ মিলিয়ন রূপির প্রকৃত সম্পদের সাথে তুলনা করা যায়। সরকারের প্রত্যাশানুযায়ী, এই ১২২০ মিলিয়ন রূপি, ১৯৭০/৭১ অর্থবছরে ১৩৪০ মিলিয়ন রূপির মতো, অ-উন্নয়ন খাতে প্রয়োজন হবে (১৯৭০/৭১ অর্থবছরে যার পরিমাণ ছিল ৯২০ মিলিয়ন রূপি)। ফলে উন্নয়ন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা এবং সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারনে ধ্বংশ হওয়া সম্পদগুলোর পুনর্বাসনের জন্য ১০৪০ মিলিয়ন রূপি অবশিষ্ট থাকবে। প্রদেশের ৫৭০ মিলিয়ন রূপি সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে (১৯৭০/৭১ অর্থবছরে যা ছিলো ২৪০ মিলিয়ন রূপি) এমন অনুমানের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানের ১৯৭১/৭২ অর্থবছরে উন্নয়নের জন্য ১৬১০ মিলিয়ন রূপি নির্ধারন করে (পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন সহ যা উল্লেখিত হয়েছে) যা এখন অনুমিত ১৯৭০/৭১ অর্থবছরের জন্য। এই অনুমানগুলো সম্পদের পরিমান ও তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে মন্তব্যের দাবিদার।

৬৪. সম্পদের হিসেব অনুযায়ী, রূপির প্রাপ্যতা অনুযায়ী মিশনটি লক্ষ্যমাত্রাকে ছুঁতে পারে নি। এটা ভাবা হয়েছিলো যে পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে ১৫৫০ মিলিয়নের কাছাকাছি রূপি রয়েছে, সরকারে হিসেব মতে যা কিনা ২১৬০ মিলিয়ন রূপি এবং সত্যিকার অর্থে ১৯৭০/৭১ এ তাদের কাছে ২২৬০ মিলিয়ন রূপি ছিলো। মিশন এবং সরকারের অনুমানের মধ্যে প্রায় অর্ধেক পার্থক্য প্রাদেশিক রাজস্বের ক্ষেত্রে এবং উপরে অনুচ্ছেদ ৬১ ও ৬২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত কার্যাবলীর ক্ষেত্রে। অন্য অর্ধেক কেন্দ্র থেকে স্থানান্তর, বিভিন্ন মাধ্যমে, সম্পর্কিত। ১৯৭০/৭১ সালের তুলনায় বিদ্যমান হারের ভিত্তিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সরকার ১০ শতাংশ বেশি কর সংগ্রহ করে দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। কারন, এটি পশ্চিম পাকিস্তানে করযোগ্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপ সম্প্রসারণ সম্পর্কিত সরকারের অনুমানের অনুপস্থিতি অনুধাবন করে না এবং সংশ্লিষ্ট আমদানির পরিমাণ উপলব্ধি করা যায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান বিদেশের তুলনায় আরো বেশি পণ্যদ্রব্যের সহায়তা পাওয়ার উপর।

৬৫. এটা বলা কঠিন যে, পূর্ববঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের প্রশাসন কীভাবে ১৯৭১/৭২ এর কার্যকারিতায় কার্যকরী কোনও সম্প্রসারণ হবার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। ১৯৭১/৭২ সালে সাধারণ কর্মকাণ্ডের দিকে সরকারী কার্যকলাপের চিন্তাভাবনা, প্রশাসনের পাশাপাশি, সাধারণ অর্থে উন্নয়নের দিকে পরিচালিত হওয়ার ক্ষেত্রে  কতটা অর্থপূর্ণ তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে এবং স্বাভাবিক উন্নয়ন কর্মসূচির কাঠামোর মধ্যে এবং প্রাথমিকভাবে প্রকল্পগুলির অগ্রগতির সাথে সংশ্লিষ্টতার সাথে জড়িত, যেহেতু মিশন এর ভ্রমণের সময় পাওয়া আর্থিক প্রোগ্রামটি প্রস্তাবিত ছিল। তবুও, এই কথা বলা হয়েছে, এতে কোন প্রশ্ন নেই যে, পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করার কাজটি জনসাধারণের সম্পদসমূহের উপর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্নভাবে নির্ভর করবে। কিছু কিছুর মধ্যে বড় কোন প্রশাসনিক বিনিয়োগ দরকার হবে না, যেমন খাদ্যশস্য বিক্রি না করে বরং বিনামূল্যে বিতরণ কেননা প্রদেশে ক্রয় ক্ষমতা খুব কম হতে পারে। অন্যান্য, যেমন পাবলিক সেক্টর পুনর্বাসন এবং পুনর্নির্মাণের একটি ব্যাপক প্রোগ্রাম এবং একই উদ্দেশ্যে বেসরকারী খাতে আর্থিক এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান, পরিকল্পনা, সংগঠন এবং মৃত্যুদন্ডের প্রধান সমস্যা জাহির করা হবে। দুর্ভাগ্যবশত, ৩০০ মিলিয়ন টাকা ছাড়া, যেটা কিনা সম্ভবত জনসাধারণের পূনর্বাসনের, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের অত্যাবশ্যক কাজের জন্য সর্বাধিক সরকারি সহায়তা প্রদান প্রকল্প এখনো বিদ্যমান না, এমনকি প্রাথমিক ফর্মেও না।এমন একটি প্রোগ্রাম প্রস্তুতি অবশ্যই প্রথম অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। যাইহোক, এটি স্পষ্ট যে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মিশন যে প্রত্যাশাগুলো দেখায় তা রুপীর সম্পদ পরিস্থিতিগুলির চাহিদা পূরণে সম্পূর্ণরূপে অপর্যাপ্ত এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে পূর্বের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করার উপায়গুলি তাতক্ষণিক বিবেচনা করা উচিত যাতে করে পর্যাপ্ত জনশক্তির অভাবে অর্থনৈতিক অবস্থা ফিরে পাওয়া ব্যাহত না হয়।

||

  1. The Near  Term  Outlook

৬৬. এই সকল পরিসংখ্যান এমন এক পরিস্থির জন্য যা কিনা অস্বাভাবিক এবং যেখানে কোন প্রকার নিয়ামক নেই যা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে। এমন নিয়ামকগুলো কাজ করবে যদি দূর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা গুলো কাটিয়ে উঠা যেতো এবং যদি সরকার অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের সাহায্যে সক্রিয়ভাবে একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক প্রোগ্রাম চালু করে।

.

13.226.647-648

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্তর্জাতিক বিষয়ক চর্চা কমিশন এর বিবৃতি বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ৯-১২ জুলাই, ১৯৭১

পাকিস্তানের উপর প্রদানকৃত বিবৃতি আন্তর্জাতিক বিষয়ক চার্চ কমিশনের,কার্যনির্বাহী কমিটির দ্বারা অনুমোদিত হয়,জুলাই ৯-১২,১৯৭১

২৬তম জেনেভা কনভেনশন,জুলাই ৯-১২,১৯৭১ সময়ে পাকিস্তানি জনগণের দূর্দশা আন্তর্জাতিক বিষয়ক চার্চ নির্বাহী কমিশন কমিটির জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়,ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অফ চার্চের সদস্যদের
এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় বিশেষ করে যারা ভারত ও পাকিস্তানের। মানুষের জীবন নাশ,যার পরিমাণ হয়ত কখনই জানা যাবে না।উদ্বাস্তুদের উপরে চলতে থাকা অসহনীয় দূর্ভোগ এবং এছাড়াও যাদের
জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়েছে দরিদ্রদের সহজাত সহিংসতার প্রকাশের মাধ্যমে যা পাকিস্তানীদের উপমহাদেশীয় প্রতিবেশিদের উপরও প্রভাব ফেলে।

দারিদ্র ও নিপিড়িতদের পাশে দাঁড়ানো ক্রিস্টানদের জন্য অন্যতম দ্বায়িত্ব।তাছাড়া আমাদের উদ্বেগ সেসকল ভাই বোনদের নিয়ে যারা মারা গেছে,নিজেদের গৃহ থেকে বিতাড়িত হয়েছে,যাদের ভবিষ্যৎ বিদেশি মাটিতে উদ্বাস্তু ক্যাম্পে ঘুরে ঘুরে কাটবে এবং যারা এখনও দারিদ্রতা এবং নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে।
আমরা জাতির মাধ্যমে,যাদের অপরিমেয় শক্তি ও সম্পদ আছে এবং চার্চের মাধ্যমে অসহনীয় দূর্ভোগের পরিসমাপ্তির জন্য যা এখনও সংশোধনযোগ্য তার জন্য পাকিস্তানি কর্তিপক্ষের কাছে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেবার জন্য আবেদন করছি।ক্ষতি মোকাবেলার পূর্বশর্ত অতিসত্বর পুর্ব পাকিস্তানে ঘটে চলা নিপীড়ন বন্ধ করা এবং উদ্বাস্তুদের তাদের ঘরে ফিরে যেতে সহায়তা করা।এবং এই কাজ পাকিস্তানের শাসকগনের হস্তক্ষেপ ছাড়া সম্ভবপর নয়,তাই আমরা তাদের কাছ থেকে যত দ্রুত সম্ভব সহায়তা আশা করছি।

এটি অবশ্যই একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং এটি নির্ভর করবে যারা এই কাজে এখন পর্যন্ত সহায়তা করে আসছে তাদের মানসিকতার উপরে নির্ভর করে,জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সংস্থা,ভারতে অবস্থিত উদ্বাস্তুদের কস্ট লাঘব করতে।চার্চকে তাদের উপর অর্পিত কাজের ভার গ্রহন করতে বলা হয়েছে এবং আমরা উদারভাবে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছি।

উদ্বাস্তুরা তাদের দেশে শান্তিতে ফিরে যাবে এই আশায় জরুরি ত্রাণ বিতরণ বন্ধ করা হয় নি।এবং এই ত্রাণ বিতরণ চালিয়ে যেতে হবে কারণ এর মাধ্যমে মানুষের দূর্দশার জন্য দায়ী অবস্থার নিবারণ করা সম্ভব।এই ত্রাণ বিতরণ দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে চালিয়ে যেতে হবে এতে কোন সন্দেহ নেই।যাদের কাছে দেবার মত তহবিল আছে তাদের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে ত্রাণ বিতরণ করা।এই বিয়োগান্তক ঘটনার স্বদ্ব্যবহার করে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের স্বার্থ স্বিদ্ধি করা তাদের উচিত হবে না।

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তানি সরকারের দ্বায়িত্ব উপলব্ধি করে,আমরা বিশ্বাস করি যে বর্তমান সংকট মুহুর্তে

আন্তর্জাতিক বিষয়ে সরকারের আরও গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি রয়েছে এবং আমরা দৃঢ়ভাবে এটাও বিশ্বাস করি যে,

মানুষ তাদের জাতির ভবিষ্যৎ নির্ধারনে স্বাধীন হওয়া দরকার।আমরা বিশ্বাস করি পাকিস্তান সরকার মানুষের কাছে তাদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে এই মতবাদের সত্যতা প্রদর্শন করবে।এবং একই সাথে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত নেতাকে সমগ্র জাতির দ্বায়িত্ব নিতে হবে।বিশেষ করে পূর্ব ও পশ্চিমের অধিবাসী যারা নূন্যতম মৌলিক চাহিদার যোগানের মাধ্যমে মানবিকভাবে নিজেদের জীবনযাত্রায় ফিরতে চাইছে।

আন্তর্জাতিক বিষয়ক চার্চ কমিশনের অনুসারে;

সর্বত্র খ্রিস্টান চার্চগুলোর উপরে নির্দেশ জারি করা হয় যেন সকল প্রত্যভিযোগের অথবা রাজনৈতিকভাবে ভিন্নমতের জন্য কারাবাসের বিপরীতে পাকিস্তানের সকল উদ্বাস্তুদের নিরাপদে এবং নিশ্চয়তা সহকারে বাড়ি ফিরে যাবার ব্যাপারে চার্চগুলো মৌলিক সমর্থন দেয়।

পাকিস্তান থেকে খাদ্য ও আশ্রয় ছেড়ে আসা ভারতের উদ্বাস্তু দের কস্ট লাঘবের জন্য চার্চগুলোর কাছে উদারভাবে সাড়া প্রদানের এই আহ্ববান ইতমধ্যে আন্তঃগীর্জা সাহায্য কমিশন,উদ্বাস্তু এবং বিশ্ব সহায়তা সাহায্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন লাভ করে।

নিজেদের সরকারকে প্রভাবিত করতে জাতীয় সংগঠকদের প্রতি আহব্বান করা হয় যেন পাকিস্তান সরকারকে চাপে রাখার জন্য যেন পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের সাথে বৈঠকে বসে রাজনৈতিক মধ্যস্ততার মাধ্যমে পাকিস্তানে ভবিষ্যত নিপীড়নের বিরুদ্ধে নিশ্চয়তা প্রদান করা সহ,বিধ্বস্ত এলাকার পূনর্গঠন করতে সরকারক অকাতরে দান করে এবং রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌছানোর পর পূর্ব পাকিস্তানের নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা উন্নয়নে সহায়তা করার জন্য চাপের মুখে রাখা।

.

13.227.649-650

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের জনগণের সাহায্যার্থে ভেনেজুয়েলার শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের আবেদন বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৪ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুর্দশা বিশ্ব মানবতার জন্য অবশ্যই উদ্বেগঃ

ভেনেজুয়েলার ২৯ জন বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীর মিনতি,

প্রকাশের তারিখ ১৪ই জুলাই, ১৯৭১

জুলাই ১৪, ১৯৭১ তারিখে দৈনিক লা রেলিজিয়ন এ প্রকাশিত ২৯ জন বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীর সনির্বন্ধ অনুরোধ নিন্মরূপঃ

সময় গড়াচ্ছে আর পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দুর্ভোগ ক্রমেই ফিরে ফিরে অধিকতর শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে। হাজার হাজার ডাক্তার আর নার্স প্রতিনিয়ত মহামারী ঠেকাতে, হাজার হাজার নারী-পুরুষ আর শিশুদের মৃত্যুরোধে যেন নিরলস যুদ্ধ করছে। আবাসন, খাদ্য, পরিবহন প্রভৃতি যাবতীয় সমস্যা ঘন্টায় ঘন্টায় তীব্রতর হচ্ছে যা গুটিকয়েক সরকারী এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়, সম্ভব নয় প্রথাগত একাত্মতা জানিয়েও। সকলের শ্রদ্ধেয় এবং প্রশংসিত, যীশুর মত অহিংস মানুষ গান্ধীজীর মাটিতে এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তাঁর দীক্ষা ও বাণীই যেন বিগত সময়ের তুলনায় সর্বাপেক্ষা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভগ্নিপ্রতিম আর্জেন্টাইন রিপাবলিকের মত ভেনেজুয়েলাতেও আমাদের কার্ডিনাল বিশপ জোসে হামবিয়েতো কুইন্তেরো এবং ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো, জর্জ লিসিস বগ্রগেস,এডুরাডো মাই লিয়া আর্নেস্টো সাবাতো, ফ্রিডা স্কুটজ ডি মন্টভানি হেক্টর বাসালডুয়া, এডলফো ডি অবিয়েতা প্রমুখের নেতৃত্বে বুদ্ধিজীবী এবং শিল্পীবৃন্দ ইতোমধ্যে সোচ্চার কন্ঠ হয়েছেন এটি জোর দেওয়ার জন্য যে মানবতার বিপর্যয়ের কোনো সীমানা নেই এবং এই ভোগান্তি, মৃত্যু আর নিরাপত্তাহীনতা তা পৃথিবীর যে প্রান্তেই হোক না কেন তা উদ্বেগের বিষয়।

কিন্তু পূর্ব বাংলার এই হৃদয় বিদারক পরিস্থিতিতে সার্বজনীনভাবে এবং মহৎ মানসে বিশ্ব মানবতা এখনো জাগ্রত হচ্ছে না সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এমন সংকটময় মুহুর্তে যে বিশাল পরিমাণে মানবিক সহায়তা অতীব জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োজন তা ভারতকে এখনো দেয়া হয়নি। সবসময় মনে রাখতে হবে যে এখানে আমরা ভারতের নির্দিষ্ট কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলছিনা বরং আন্তর্জাতিক চরিত্রের একটি মানবিক সমস্যার মোকাবেলা করছি এবং এ সমস্যা আধ্যাত্মিকতাবাদী এবং বস্তুবাদী ক্ষেত্রের ভেদাভেদ নয় বরং সমগ্র মানবজাতির। কোন ভাববিলাসী ঘোষণা বা অতিশয়োক্ত সূত্র নয় পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের জন্য আমাদের গণতান্ত্রিক একতা এবং সাধারণ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে নির্ভীকভাবে অবিরত সংগ্রাম চালিয়ে যাবার জন্য শক্তিশালী এবং স্পষ্ট আন্তর্জাতিক চেতনা জাগ্রত করতে হবে।

আমরা নিশ্চিত যে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের আবেগ এবং দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত মতামত বিবেচনায় এবং সৌহার্দ্য, ন্যায় এবং শান্তির বলিভারিয়ান আন্তর্জাতিক নীতির প্রতি সৎ থেকে প্রজাতন্ত্রের সরকার শুধুমাত্র বস্তুগত সহায়তা দানেই সীমাবদ্ধ থাকবেনা বরং তার প্রতিনিধিগণের মাধ্যমে জাতিসংঘের কাছ থেকেও আদায় করার চেষ্টা করবে যা শুধুমাত্র মানবিক মূল্যবোধের নিদর্শনস্বরূপ হবে না। এটি হতে হবে দৃঢ় ও সহযোগীতামূলক ঐক্যের মাধ্যমে নিয়মিত অর্থনৈতিক এবং সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ যার আকার হবে সত্যিই বিশাল, এবং যা হবে নিরন্তর এবং ক্রমবর্ধিষ্ণু। বিংশ শতাব্দীর এই ভারতের সংগ্রামে, যে সংগ্রাম যুদ্ধসংক্রান্ত নয়, জাতিসংঘ সেখানে তার চরম দায়িত্বপালন থেকে বিরত থাকতে পারে না। কোনো অহংবোধ বা লালসা থেকে নয় বরং সহৃদয়তার সাথে এই ঐতিহাসিকভাবে ভাগ্যবঞ্চিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের রোগ, মৃত্যু থেকে উদ্ধারের জন্য বিশ্ববাসীকে তাগাদা দিতে হবে।

সত্যিকার এবং সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ভারত আন্তর্জাতিক দায়িত্ববোধের গভীর সচেতনতার দাবীদার। এই সেই ভারত যা অসংখ্য মানবতাবাদের নেতৃত্বপূর্ণ, তীব্র সংকটের মাঝেও সোচ্চার পবিত্র কন্ঠ এবং অনেক ন্যায্যতার ধারণা যার শক্তি এবং যা লক্ষ লক্ষ খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়হীন অকালবৃদ্ধ মৃতপ্রায় পূর্ব পাকিস্তানী যারা কাঁদার সময় স্বান্তনাও পায় না তাদের প্রতি সমস্ত হৃদয় বিলিয়ে, অসম্ভব মমতা আর শ্রদ্ধার সাথে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।

.

13.228.651-652

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলার শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিপাইনীয় ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের আবেদন বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৬ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব বাংলার শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ফিলিপাইনীয় ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের আবেদনঃ ১৬ জুলাই, ১৯৭১-এ প্রকাশিত বিবৃতি

নিম্নের লিখিত বিবৃতি ফিলিপাইনের ম্যানিলায় একত্রিশ মিলিয়ন ক্যাথলিকের উপস্থিতিতে ক্যাথলিক বিশপের সম্মেলনে প্রকাশ করা হয় ১৬ জুলাই, ১৯৭১

আমরা, ক্যাথলিক বিশপরা ফিলিপাইনের প্রায় ৩১ মিলিয়ন ক্যাথলিকের প্রতিনিধিত্ব করছি, হলি ফাদারের থেকে গোলযোগ ও মারাত্মক সংঘর্ষের দরুন বাড়ি ছেঁড়ে চলে যাওয়া দশ লাখ পূর্ব বাঙালি উদ্বাস্তুদের সাহায্যের তাড়নার দুইটি আকুল আবেদন শুনেছি, যারা বর্তমানে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। এশিয়ান ভাই এবং বোনদের পক্ষ থেকে কলকাতার আর্যবিশপ এল টি পিকাচির আবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। আমরা, বিশপেরা, বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর আবেদন হাতে পেয়েছি এবং ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি মাননীয় জনাব ফেরডিনান্ড ই মারকস-এর প্রকাশ্য বিবৃতি ও আকুল আবেদন, একইসাথে জাতিসংঘের মাননীয় সেক্রেটারি জেনারেল উ-থান্ড, জাতিসংঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার মাননীয় প্রিন্স সারউদ্দিন আগা খান এবং ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রের মাননীয় চ্যান্সেলর জনাব উইলি ব্রান্ডট-এর বিবৃতি।

এই তীব্র বর্ষা ছয় লক্ষ পূর্ব বাঙালি উদ্বাস্তুর ভয়ানক দুর্ভোগ প্রবলভাবে প্রভাবিত করছে যাদের মধ্যে অনেকেই আহত, আশ্রয়ের অভাবে ধুঁকছে এবং এখন তীব্র কলেরায় বিধ্বস্ত। আমরা গভীর দুঃখের সাথে স্মরণ করছি আক্রান্ত কিছু পুরোহিতসহ হাজারো পূর্ব বাঙালির মর্মান্তিক মৃত্যুকে। আমরা দুঃখ বোধের সাথে সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে এই আক্রান্তদের চিরন্তন শান্তির জায়গার জন্য প্রার্থনা করছি।

“এটা পরিষ্কার যেঃ উদ্বাস্তুদের মানবিক সহায়তা যদিও খুবই আগ্রহের সাথে প্রাধান্যের বিষয় কিন্তু কোন স্থায়ী সমাধান নয়। এটিও পরিষ্কার যে উৎপীড়ন নিপীড়ন ও মৃত্যুর ভয়হীন একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থার পুনঃস্থাপনের জন্য বিরোধী দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন এবং অপরিহার্য।”

“হলি ফাদারের কথার মাধ্যমে যথাযোগ্যভাবে ও পরিষ্কারভাবে অতি প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ বর্ণীতঃ

আমরা আলাদাভাবে তাদের কাছে ভালবাসা ও শান্তি প্রার্থনা করছি যারা মানুষের শক্তি কেড়ে নিয়েছে, যাতে উদ্বাস্তুরা তাদের ঘরে ফিতে যেতে পারে এবং শত্রুতা ও টানাপড়েনহীন একটি বোঝাপড়া ও সহযোগিতামূলক পরিবেশে শান্তিতে বসবাস করতে পারে। মানবতার নামে, গনতন্ত্রের নামে, আমাদের প্রভু যীশুর নামে, আমরা আবেদনটি পুনরাবৃত্তি করছি এবং পোপ চতুর্থ পাউলের পবিত্র দৃষ্টি কামনা করছি এবং রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রার্থনা করছি তাদের শক্তি সক্ষমতার ভেতর ধ্বংস প্রতিহত করে পূর্ব পাকিস্তানে শান্তি ও শৃঙ্খলা পুনঃস্থাপন করতে।”

“আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম উদ্বেগ ও সহানুভূতির দৃষ্টিকোণে আমরা আমাদের ফিলিপাইনের জনগণকে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের ভাইদের দুর্দশা লাঘবে সহায়তা করতে নিঃস্বার্থ অবদানে বলছি। পরিশেষে আমরা, ফিলিপাইনের সকল ক্যাথলিক বিশপেরা ”

.

13.229.653

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব-বাংলার সংকট সমাধানের জন্য নরওয়ের ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট সংস্থার প্রস্তাব এসোসিয়েশন অব ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট, নরওয়ে ৮ আগস্ট, ১৯৭১

পূর্ব-বাংলার সংকট সমাধানের জন্য নরওয়ের ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট সংস্থার প্রস্তাব, ৮ আগস্ট, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের সংকট

পূর্ব বাংলা(পূর্ব পাকিস্তান) অঞ্চলের উদ্বাস্তু যারা ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে তাদের চরম দুর্ভোগ এবং থেকে যাওয়াদের উপর সন্ত্রাস নির্যাতনের সংকেত।

এইসকল উদ্বাস্তু ভারতের উপর ফেলা প্রচুর অর্থনৈতিক চাপের ব্যপারে চিন্তিত যারা অনিচ্ছুক আন্তর্জাতিক জটিলতা ও শক্তির সংঘাতে লিপ্ত হয়ে উদারভাবে তাদের গ্রহণ করেছে, এবং যুদ্ধের হুমকি যা পূর্ব পাকিস্তানের এই মর্মান্তিক অবস্থার সহজাত।

নিশ্চিত করে যে, পূর্ব পাকিস্তান সংকটের যেকোনো সমাধানের ভিত্তি যেন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা ও ভবিষ্যতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অবস্থা অবশ্যই যেন স্বাধীন পছন্দের উপর হয়।

সেক্রেটারি-জেনারেল উ-থান্ড নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই সংকটকে “বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি” বলার উদ্যোগকে এডব্লিউএফ পরিষদ স্বাগত জানায়।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের পক্ষে থেকে জাতিসংঘকে এই মনুষ্য দুর্যোগ ও যুদ্ধ-বিপদে পূর্ণভাবে সাড়া দেয়ার দায়িত্ব নিতে বলে।

নিরাপত্তা পরিষদ ও জাতিসংঘের অন্যান্য যথাযথ অঙ্গ সংগঠনকে দেরী না করে পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন।

জাতিসংঘের সদস্য ও অ-সদস্য সকল সরকারকে পশ্চিম পাকিস্তানে সকল সামরিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধ করতে বলতে যতক্ষণ সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যায়।

পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃপক্ষে তাদের সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিপীড়ন বন্ধ করতে বলে এবং আলোচনার মাধ্যমে এই সংকটের দ্রুত রাজনৈতিক সমাধান চায়।

সকল সরকারকে সর্বাত্মকভাবে ভারতের সহায়তায় এগিয়ে আসতে বলে, যা উদারভাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের দায়িত্ব নিয়ে প্রবল ও ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বোঝা বহন করছে এবং জাতিসংঘের শক্ত তত্ত্বাবধানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মানবিক সহায়তা ও রিলিফ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করতেও বলে।

এখন ভারতে অবস্থানরত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ও পূর্ব পাকিস্তানে স্থানান্তরের পরিকল্পনার দায়িত্ব গ্রহণের একই সাথে বিধ্বস্ত এলাকার পুনর্ঘটনের জন্য অর্থনৈতিক সহায়তার করতে জাতিসংঘকে বলে।

.

13.230.654

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারত বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য রেডক্রস লীগের ত্রান তৎপরতা রেডক্রসের তথ্যবিবরণী ৯ আগস্ট, ১৯৭১

রেডক্রস সংবাদ ও বৈশিষ্ট্য

সোমবার, ৯ আগস্ট, ১৯৭১ প্রকাশিত

ভারতে উদ্বাস্তু শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে রেড ক্রসের তৎপরতা

ভারতে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু শিবিরের শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি সংখ্যার নাটকীয় বৃদ্ধি রেড ক্রসের জন্য এখন এক নতুন চ্যালেঞ্জ।

ইতোমধ্যে শিবিরে ৮০০টি দুধ কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে, ইউনিসেফ ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের একান্ত সহায়তায় ভারতীয় রেড ক্রস অপর্যাপ্ত পুষ্টি ও অনূর্ধ্ব সাত বছরের শিশু ও দুগ্ধ্যদায়ী মায়েদের রোগের প্রকোপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের সম্পূরক খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রায় ২০০,০০০ জন অসুস্থ-অপুষ্টি-রোগাক্রান্তের জন্য যথাযথ চিকিৎসা সেবা ও ভিটামিন, উচ্চ আমিষ জাতীয় খাদ্য, দুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর লক্ষ্যমাত্রা বিশ লাখে পৌঁছেছে।

মধ্য আগস্টের দিকে, মোট এক মিলিয়ন প্রয়োজনীয় সামগ্রীর জন্য আরও ১,২০০ কেন্দ্র চলনা করতে হবে বলে ভারতীয় রেড ক্রস আশা করছে, তাই বর্তমান পরিকল্পনা মতে এখনের কেন্দ্র গুলোর সামর্থ্য দ্বিগুণ ও নতুন কেন্দ্র খুলতে হবে। ইউনিসেফ এই কার্যক্রমের জন্য সরঞ্জাম, আর্থিক ও যৌক্তিক সহায়তা প্রদান করছে। এটি তার সকল সামর্থ্য উদ্বাস্তুদের দ্রব্যাদি সরবরাহে প্রয়োগ করছে, যার সাত মিলিয়ন সদস্য যার মধ্যে ভারতীয় রেড ক্রসের ৫,০০০ কর্মী মাঠে রয়েছে। যদিও এই কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ৪৩টি দেশের রেডক্রস লীগ ও জাতীয় সম্প্রদায় প্রায় ২০ মিলিয়ন সুইস ফ্রাংক সহায়তা দিয়েছে। এগুলো দুধ কেন্দ্র ছাড়াও চলমান ৩৮টি অস্থায়ী চিকিৎসা দলে ও তিনটি হাসপাতালে যুক্ত করা হয়েছে। রেড ক্রসের স্বেচ্ছাসেবী ডাক্তার ও সেবিকা প্রায় ৬০০,০০০ জনকে কলেরা ও অন্যান্য রোগের টিকা দান করেছে।

সিস্টার সোসাইটি থেকে পাওয়া সহায়তার মধ্যে ছিল ৮০টি এ্যাম্বুলেন্স, ৩০,০০০ মানুষের আশ্রয়ের জন্য টিন ও প্লাস্টিকের ছাউনি, গুঁড়োদুধ, শিশু খাদ্য, কলেরা প্রতিরোধী ভ্যাকসিন, চিকিৎসা সামগ্রী, মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট, কম্বল ও কাপড় এবং স্থানীয় ব্যবহার, খরচ ও যাতায়াতের জন্য টাকা, একটি সাথে কলকাতা থেকে অন্য প্রান্তে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত যেখানে উদ্বাস্তুরা সংখ্যায় বেশী সেখান পর্যন্ত একটি বিমান।

.

13.231.655

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান সরকারের কাছে প্রদত্ত বাংলাদেশ সংহতি কমিটি সিলোন-এর প্রতিবাদলিপি সিলোন কমিটি ফর সলিডারিটি উইথ বাংলাদেশ ১৭ আগস্ট, ১৯৭১

পাকিস্তান সরকারের কাছে প্রদত্ত বাংলাদেশ সংহতি কমিটি সিলোন-এর প্রতিবাদলিপি

১৭ আগস্ট, ১৯৭১

পাকিস্তান ও গনতন্ত্র হত্যা করে এবং একটি সম্পূর্ণ জাতির বিরুদ্ধে গণহত্যায় লিপ্ত হয়ে ইয়াহিয়া খানের অধীনে নেতৃত্বাধীন  সামরিক জান্তা সার্বভৌম খণ্ড ও স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের এক হাস্যকর বিচারের অবতারণা করছে, যা আন্তর্জাতিক নীতি ও সাধারণ মানবতার আদর্শের বিশাল লঙ্ঘন। যখন এই অসভ্য কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিব্র আন্দোলন গড়ে উঠে এবং সামরিক জান্তা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভূখণ্ড থেকে নিয়োজিত বাহিনী সরিয়ে নেয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, আমরা পূর্বাভাস দিয়েছিলাম যে সামরিক জান্তার অনবরত কর্মকাণ্ড কেবল দেশের মানুষের আধিপত্যের জন্যই নয় বরং এই অঞ্চলের শান্তির জন্যও হুমকি।

সিলোনের প্রতিনিধিগণ ইয়াহিয়া খান ও সামরিক জান্তার অন্যায়ে গভীর অসন্তুষ্ট এবং এর আশু সমাপ্তির দাবী জানায়।

.

13.232.656

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানী সামরিক জান্তার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ল্যাটিন আমেরিকার পার্লামেন্টের প্রস্তাব বাংলাদেশ ডিকুমেন্টস ২৭ আগষ্ট, ১৯৭১

২৭ শে আগস্ট ১৯৭১ ভেনেজুয়েলা, সর্বসম্মতিক্রমে কারকাসের ল্যাটিন আমেরিকার পার্লামেন্ট কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাব

ল্যাটিন আমেরিকার পার্লামেন্ট

বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনাপত্রের বিধানবলী, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক নীতি ও উদ্দেশ্য কে বিবেচনায় এনে;

জেনোসাইড কনভেনশন /গনহত্যা

জাতি,ধর্ম,ভাষা,ভৌগলিক ও মতাদর্শের সীমা ছাড়িয়ে, মানব সংহতির এই সচেতনতা,

তীব্র নিন্দাপ্রকাশ করই এই  নৃশংস ভাবে এই মানবাধিকার লংঘনের, ব্যাপক গনহত্যার, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক উপাদান ও বুদ্ধিজীবিদের বিলোপ সাধনের এবং পাকিস্তানী আর্মি দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের সন্ত্রাসে রাজত্ব কায়েম করার ফলে দেশত্যাগ করে ভারতে শরনার্থী সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৭ লক্ষ এর বেশি।এবং এই দেশত্যাগ অব্যাহত থাকে। যার ফলে সীমান্ত এলাকায় বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়, কোন প্রকার মানবাধিকার, আইন ও বিচার লংঘন থেকে বিরত থাকার, সামরিক নির্যাতন বন্ধের, বর্তমান সামরিক বিচারের আওতায় থাকা শেখ মুজিবর রহমান কে সম্মাননা প্রদান এবং অবিলম্বে জনগন নির্বাচিত প্রতিনিধি দের সাথে পূর্ববাংলার সমস্যার একটি গ্রহনযোগ্য  রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু।

ধারনা করা যায়, এই ধরনের সমস্যা সমাধান সামরিক উপায়ে অর্জন করা সম্ভব না, এবং শরনার্থীদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিজ নিজ মাতৃভুমিতে পাঠানোই ছিলো একটি নুন্যতম অপরিহার্য শর্ত।

চিকিৎসার সম্প্রসারনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানানো হয়, পাশাপাশি যেমন সরাসরি আন্তর্জাতিক সংস্থা গুলোকেও। ভারতের আশ্রিত শরনার্থীদের মানুষ হিসাবে গন্য করে এবং পূর্ব বাংলার নিপীড়িত জনগন এর জন্য, একটি দ্রুত রাঝনৈতিক সমাধান লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকারের উপর তাদের প্রভাব দূর করা।

.

13.234.658-662

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্যারিসে অনুষ্ঠিত উনষাটতম আন্তঃ পার্লামেন্টারী সম্মেলনের কার্যবিবরণী আন্তঃ পার্লামেন্টারী সম্মেলনের কার্যবিবরণী ৩-১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

প্যারিসে অনুষ্ঠিত ঊনষাটতম আন্তঃ সংসদীয় সম্মেলনের কার্যবিবরণী

২ নম্বর সারাংশ হতে উদ্ধৃত

উদ্বোধনী অধিবেশন

প্যারিস, ৩-১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

সেপ্টেম্বর ৩, শুক্রবার সকাল

সম্পূরক আইটেম গ্রহণে বিবেচনার জন্য ভোট গ্রহণ

সম্মেলনের সভাপতি বলেছেন, ভারতীয় দল বাংলাদেশের বিষয়ে একটি সম্পূরক জিনিস গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, এই অনুরোধ সম্মেলন দ্বারা গৃহীত হওয়ার জন্য দুই- তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রয়োজন। জনাব জি এস ঢিল্লন(ভারত), সম্পূরক জিনিসের প্রস্তাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান ১,১০০ মাইলের বেশি দুরত্ব দ্বারা বিভক্ত ছিল এবং দুই অংশের মধ্যে সংস্কৃতি, বর্ণ ও ভাষার পার্থক্য ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকে সেখানে অনেক বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে মত পার্থক্য দেখা দেয়। প্রকৃতপক্ষে, কিছু বছর পূর্বে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা গ্রহণ না করার জন্য সংগ্রাম করেছে। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৬ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করতেন।

সামরিক শাসনের কয়েক বছর পরে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদে ১৬৯ এর মধ্যে ১৬৭ টি আসনে এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ টি আসনে জয়লাভ করে। মার্চ মাসে সংসদ তলব করার আগে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে সেনা মোতায়েন এবং সংসদ অধিবেশন স্থগিত করেন।

সামরিক অভিযানের ফলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ নিহত হয় ও প্রচন্ড ভীতি নিয়ে উদ্বাস্তুরা ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তে প্রতি সপ্তাহে ৫০,০০০ জন করে আশ্রয় নিচ্ছে এবং প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ বর্তমানে ভারতের শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। কিছু কিছু প্রদেশে, উদ্বাস্তুর সংখ্যা স্থানীয় জনসংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

প্রথমত, এটি একটি মানবিক সমস্যা এবং অনুমান করা হয় যে, এই পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে ভারতের ছয় মাসের জন্য কমপক্ষে ৬০ কোটি ডলারের প্রয়োজন হবে। ভারত এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং অন্যান্য উৎস থেকে শুধুমাত্র ১৫ কোটি ডলার পেতে সক্ষম হয়েছে। তিনি প্রতিনিধিদের এটিকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করতে আহবান জানান এবং বলেন যে, এটি ভারতের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। কোন দেশ তার অর্থনীতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন ব্যতিত এই ভারী বোঝা বহন করতে পারবে না। একমাত্র স্থায়ী সমাধান ছিল শরণার্থীদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া। এটি অর্জন করার জন্য, তাদের প্রত্যাবর্তন সম্ভব করার জন্য পাকিস্তান সরকারের উচিত অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা । তাই, শরণার্থীরা তাদের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার আগেই বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাপূরণের বন্দোবস্ত করতে হবে।

তিউনিশিয়ার M. Ahmed Chtourou  সম্পূরক আইটেমের আলোচনার বিরোধিতা এই মর্মে করেন যে, এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল হবে। তিনি শরণার্থীদের প্রতি তার মহান সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন এবং একই সাথে উল্লেখ করেন যে, অনুরূপ ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য অংশেও ঘটে যাচ্ছে এবং সেগুলোও যদি আলোচনা করা হয় তাহলে অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা করার সময় থাকবে না। অনেক সংস্থা উদ্বাস্তুদের সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করছে এবং পাকিস্তানের পুনরায় একসাথে আসার যে প্রচেষ্টা সেটি ইন্টার-পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে আলোচনার ফলস্বরূপ তাদের এই প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্থ করা উচিত হবে না।

রোল কল দ্বারা ভোট গ্রহণের সারাংশ নিম্নে দেয়া হলঃ

ভোট সংখ্যা                             ৫৭২

দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা     ৩৮০

হ্যাঁ ভোট                                ৪৯৮

না ভোট                                ৭৪

ভোটদানে বিরত                         ১৯৫

সম্মেলনের সভাপতি ঘোষণা করেন যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সাধিত হয়েছে এবং অতিরিক্ত আইটেমটি গৃহীত হয়েছে। সাধারণ বিতর্কে উক্ত বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হবে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করা হবে। সংশোধনী ৮ সেপ্টেম্বরে, বুধবার সকাল ১০ টার মধ্যে পেশ করা যেতে পারে এবং চূড়ান্ত ভোট সম্মেলন দ্বারা ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলের মধ্যে গৃহীত হবে।

সম্মেলনের সভাপতি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে এজেন্ডায় একটি অতিরিক্ত আইটেম যোগ করার ব্যাপারে ভারতীয় দলের অনুরোধক্রমে রোল কল ভোটের ফলাফল ঘোষণায় একটি ভুল হয়েছে। ফলাফল ছিলঃ

ভোট সংখ্যা                             ৭৬৭

দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা     ৫১০

হ্যাঁ ভোট                                ৪৯৮

না ভোট                                ৭৫

ভোটদানে বিরত                         ১৯৫

ফলস্বরূপ, দুই- তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় সম্মেলন অতিরিক্ত আইটেমটি গ্রহণ করে নি।

                                  চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, সকাল

কনফারেন্সের সভাপতি আকিলে পেরেতি’র আসনে উপবিষ্ট থাকা অবস্থায় সভা শুরু হয়।

সম্পূরক আইটেমটি গ্রহণে বিবেচনার জন্য ভোট গ্রহণ

সম্মেলনের সভাপতি গত সকালে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে উপস্থাপিত দৃঢ় সংকল্পের উপর গৃহীত রোল কল ভোটের ফলাফলের প্রতি ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন যে, দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সম্পূরক আইটেমটি এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত হয়, কিন্তু পরে এটি আবিষ্কৃত হয় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ভোট গণনা হিসেব করতে ভুল হয়েছে এবং ভোটদানে বিরতদের এই উদ্দেশ্যে বিবেচনা করা হয়েছে, সেই ভিত্তিতে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় নি। পরবর্তীতে জনাব ঢিল্লন(ভারত) প্রতিবাদ করেন এবং বলেন যে, প্রথম সিধান্ত বজায় রাখা উচিত ছিল।

এটি প্রতীয়মান যে, নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের তাঁরা যেভাবে ভোট প্রদান করেছেন এর সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে পর্যাপ্ত নির্দেশনা দেয়া হয় নি। অতএব তিনি প্রকৃত রোল কল ভোট অকার্যকর বিবেচনার প্রেক্ষিতে একটি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের জন্য সম্মেলনের কাছে প্রস্তাব পেশ করেন। এটি যদি কনফারেন্স দ্বারা অকার্যকর বলে গণ্য করা হয় তাহলে ভারতের অনুরোধে একটি নতুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে। তিনি যোগ করেন যে, যা ঘটেছিল এর জন্য ইউনিয়নের নতুন নিয়মের দায়িত্ব নিতে হবে।

রোল কল দ্বারা ভোট গ্রহণের সারাংশ নিম্নে দেয়া হলঃ

ভোট সংখ্যা                             ৭৫৮

নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা           ৩৮০

হ্যাঁ ভোট                                ৬৪০

না ভোট                                ৮৩

ভোটদানে বিরত                         ৩৫

সম্মেলনের সভাপতি ঘোষণা করেন যে, প্রয়োজনীয় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছে। অতএব, পূর্ববর্তী দিনে গৃহীত ভোট অকার্যকর ঘোষণা করা হল। তাই কনফারেন্সকে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রস্তাবিত আইটেমটি এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে আবার ভোট প্রদানের জন্য বলা হবে। এই ভোটে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন এবং ভোট গণনায় ভোটদানে বিরতদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সম্মেলনের সভাপতি ঘোষণা করেন যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রাপ্ত হয়েছে এবং ভারতীয় প্রতিনিধিদলের অনুরোধে এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্তির জন্য গৃহীত হবে। ফলাফল নিম্নরূপঃ

ভোট সংখ্যা                             ৭৭৫

দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা     ৫১৬

হ্যাঁ ভোট                                ৬২৭

না ভোট                                ৫৯

ভোটদানে বিরত                         ৮৯

সম্মেলনের সভাপতি ঘোষণা করেন যে, প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়েছে এবং আইটেমটি ভারতীয় প্রতিনিধিদলের অনুরোধক্রমে এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্তির জন্য গ্রহণ করা হবে। এবং এটি শুক্রবার সকালে তার ঘোষিত পদ্ধতি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জর্ডানের জনাব রিমাওি ফিলিস্তিনের শরণার্থী সমস্যায় তার বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় প্রতিনিধিদলের পাকিস্তানী শরণার্থী সমস্যায় সমর্থন দিয়েছেন।

ষষ্ঠ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৪, সন্ধ্যা

সভা শুরু হয় রাত ৯.৫০ এ আসনে অধিষ্ঠিত জনাব মাকাদি (ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক)(কনফারেন্সের একজন সহ-সভাপতি)দিয়ে।

জনাব ঢিল্লন বলেন যে, ভারত মহাসাগরে কেউ উত্তেজনা তৈরি করুক এটা ভারত চায় না। ভারত একটি পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল এবং শান্তি ও সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র রূপে পরিচিত হতে চায়। দুর্ভাগ্যবশত, পূর্ব বাংলায় একটি গণহত্যা সংঘটিত হয় এবং উপরন্তু সেখানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট দ্বারা ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধের হুমকি পুনরাবৃত্তি হয়। সিলন (শ্রীলংকা)-এর জনাব নভরত্নম মন্তব্য করেন যে, আন্তঃ পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন যদি ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই পরিস্থিতি বিচার করত তাহলে পৃথিবী অনেক যুদ্ধ ও দুর্দশা এবং জীবন ও সম্পদের বিনাশ হতে রক্ষা পেত। ইউনিয়নের উচিত পাকিস্তানের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা। ইউনিয়ন যদি এই সমস্যার সমাধান না করতে পারে তাহলে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখনো সম্ভাব্য সমাধানের পর্যায়ের বাইরে যায় নি। ইউনিয়ন যদি হস্তক্ষেপ না করেন, তাহলে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে এবং এখন যা গৃহযুদ্ধ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে তা একটি সশস্ত্র সংঘাতে পরিণত হবে এবং ভিয়েতনাম বা মধ্যপ্রাচ্যের চেয়ে একটি খারাপ অবস্থার অবতারণা ঘটবে। ইউনিয়নের শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তির জন্য হস্তক্ষেপ করা উচিত যিনি সমগ্র পাকিস্তানের প্রধান নির্বাহী হতেন যদি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর সামরিক শাসন থেকে ক্ষমতা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে স্থানান্তরিত হত।

নেদারল্যান্ডের জনাব ডি নিয়েত বর্ণনা করেন যে, সম্মেলন দ্বারা গৃহীত জনাব ঢিল্লন দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে প্রস্তাবিত খসড়া রেজুলেশনের পদ্ধতির বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধিদল দৃঢ়ভাবে আপত্তি জানাচ্ছে। রেজুলেশনটি সম্মেলনের কাছে দ্বিতীয়বারের মতন উপস্থাপন করা হয় এবং এখানে এটি খুব বিপজ্জনক নজির হিসেবে গণ্য করা হবে। যদিও উভয় সময়েই তাদের প্রতিনিধিদল রেজুলেশনটি এজেন্ডায় যুক্ত করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, খসড়া প্রস্তাব অবশ্যই গৃহীত হবে কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও শরণার্থীদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা – আইটেমটির এই শিরোনাম পরিত্যাগ করা হোক।

ইরানের জনাব রাশতি ব্যাখ্যা করেন যে, ইরানের সংসদ সমুদ্রের শান্তিপূর্ণ ব্যবহার এবং ছিনতাইয়ের ব্যাপারে জাতিসংঘ ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য আইন পাশ করেছে।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও সেখানে কোন প্রকৃত শান্তি নেই যাতে ওই এলাকার মানুষ নিরাপদে বাস করতে পারবে। যতদিন ফিলিস্তিনে বর্তমান দখল অবস্থা অব্যাহত থাকবে, ততদিন প্রকৃত শান্তি অর্জন করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তি আলোচনার মধ্যে একমাত্র অচলাবস্থার কারণ ছিল এই অব্যাহত দখল। পূর্ব পাকিস্থানে সমাধানের লক্ষ্যে সদস্যদল এমন কোন একশনে না যায় যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপের শামিল হয়।

রেজুলেশনটি প্যারিসে অনুষ্ঠিত ৫৯-তম ইন্টার-পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে গৃহীত হয়

সেপ্টেম্বর ১০, ১৯৭১

 ৫৯-তম ইন্টার-পার্লামেন্টারি কনফারেন্স

পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনা এবং সর্বনাশা অবস্থার প্রতি উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব এটিকে “মানব ইতিহাসের পাতায় একটি খুব ভয়ানক কলঙ্ক” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

এছাড়াও তিনি ভারতে লাখ লাখ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অভিগমন, উদ্বাস্তুদের ক্রমেই সংখ্যাবৃদ্ধি এবং পূর্ব পাকিস্তানের এরচেয়ে বৃহত্তর সংখ্যার মানুষের পরিত্যক্ত অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন।

তিনি ঘোষণা করেন যে, এইসব মানুষ যারা পূর্ব পাকিস্থান থেকে পালিয়েছে এবং ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, যা সম্পূর্ণ বিশ্ব প্রাক-দখলের উৎস এবং এই শরণার্থীদের দুঃখ কষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যে এই অনুভূতি সকল দেশকেই সমানভাবে ভাগ করে নিতে হবে।

ইতিমধ্যে গৃহীত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানান এবং সরকার ও অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাকে শরণার্থী ত্রাণ প্রচেষ্টা এবং পূর্ব পাকিস্থানে ত্রাণ প্রোগ্রামে অকাতরে দান করার জন্য আহবান জানান।

অনুরূপভাবে সকল জাতীয় দল এবং তাদের সরকারকে উদ্বাস্তুদের তাদের নিজের মাতৃভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদেরকে স্বাধীন অবস্থায় তাদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত জীবিকা ও নিরাপত্তা’র গ্যারান্টির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করতে উৎসাহ প্রদানের জন্য আহ্বান জানান।

.

13.235.663-664

শিরোনাম সূত্র তারিখ
কোরিয়া টাইমস সম্পাদকের নিকট ‘বাংলাদেশ রিলিফ কমিটী অফ কোরিয়া’ এর সাধারন সম্পাদকের চিঠি বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

মি. হং সুক-জা, মহাসচিব,

বাংলাদেশ ত্রান কমিটি কোরিয়া,

প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৯, ১৯৭১.

আমি অত্যন্ত আগ্রহের সাথে আপনার চিঠিটা পড়ছি যেখানে পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) এর মর্মান্তিক ঘটনার শুরু এবং কোরিয়ার তৎপর ভুমিকার কথা উল্লেখ আছে। কোরিয়ার বাংলাদেশ ত্রান কমিটির মহাসচিব এর মতে – এটা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ছিল কিছু ভুল বোঝাবুঝির অবসান করা।

আমি মি. কিম মু চাং এর সাথে একমত যে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) সাথে পাশবিক নির্যাতনের মূল কারন ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে ১২০০ মাইল দূরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের আচারণ ছিল উপনিবেশিক এর মত।

যদিও পূর্বাঞ্চলের লোকসংখ্যা পশ্চিমাঞ্চল থেকে বেশি ছিল। নির্দিষ্ট উদাহরণস্বরুপ, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ৬০-৭০ ভাগ আসত পূর্ব পাকিস্তানের উৎপাদিত পন্য (চা,পাট ইত্যাদি) থেকে। কিন্তু সমস্ত মিল-কলকারখানা গড়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে।

বৈদেশিক সহযোগীতার ক্ষেত্রেও একই ধরনের বৈষম্য দেখা যায়। বৈদেশিক অনুদান বা সহযোগীতার সিংহভাগই অযথা ব্যায় করা হত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আর অবশিষ্ট ক্ষুদ্রাংশ বরাদ্দ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জন্য। এখানে উল্লেখ্য যে, পশ্চিম পাকিস্তানের মাত্র ২০টির মত পরিবার (বেশি হবে না) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) এর প্রায় সাড়ে ৭ কোটি মানুষের অর্থনীতি!

উল্লেখিত সত্য যে, পঁচিশ বছরের বেশি সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) জনগন অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়ে আসছিল এবং এই ব্যাপারটা তারা আর মেনে নিতে পারছিল না।

রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসের আগ পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটদানের মাধ্যমে নির্বাচিত কোন গণতান্ত্রিক সরকার ছিল না। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর মাসে, প্রথম প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেই নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামিলীগ এর পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিনিধিত্ব করেন এবং ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। সেই সাথে পূর্বাঞ্চলের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে আওয়ামিলীগ ১৬৭ টি আসনে জয়লাভ করেন। গণতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী শেখ মুজিবুর রহমান তার দলের ১৬৭ জন প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সমাবেশে অংশগ্রহন করার কথা এবং সেখানে শেখ মুজিবুর রহমান শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয় বরং সমগ্র পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল।

আওয়ামি লীগের ৬ দফা দাবী যা পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) এর শায়ত্বশাসনের মূল দলিল হিসেবে পরিচিত, এই দলিল সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তান এর মিলিটারী শাসকরা খুব ভালোভাবে অবগত ছিল। এবং এই কাগজের দশ লক্ষাধিক কপি করানো হয় যা নির্বাচনের সময় প্রচারনার কাজে ব্যাবহার করা হয়।

সাম্প্রতিক নির্বাচনের পর আওয়ামিলীগ এর সায়ত্বশাসন এর দাবী না ছিল হঠাৎ উন্নয়নের পদক্ষেপ না ছিল কোন গোপন আন্দোলন। কিন্তু যা ঘটেছিল তা হল পাকিস্তানী মিলিটারী শাসকরা শেখ মুজিবুর রহমান এর জনপ্রিয়তা ও তার আওয়ামিলীগ কে পূর্বাঞ্চলে অবমূল্যায়ন করেন এবং এই দুর্বার বিজয়ে তারা এতটাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিল যে, তারা কিছুই ভাবতে পারল না এবং তাদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাত থেকে তারা নরপিচাশীয় গণহত্যা শুরু করে যেটা ছিল কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ। সামনের দিকে দেশ বিভাজিত হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারী শাসকরা এই দেশে তারা আত্নঘাতি হামলার পথ বেছে নেয়।

যার ফলস্বরূপ পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৮ মিলিয়ন লোক প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়। কিন্তু চিন্তার বিষয় এই যে, এই উদবাস্তু বা শরণার্থীদের সংখ্যা সুইজারল্যান্ড আর নিউজিল্যান্ড এর দুই দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।

এই বিশাল আশ্রয়প্রাপ্ত জনসংখ্যা ভারতের জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে হুমকিস্বরূপ। এটা একটা ভয়ংকর ব্যাপার। অনির্দিষ্ট সময়ে জন্য এই বিশাল জনগোষ্ঠীর খাবার, আশ্রয় এবং মেডিকেল সুবিধা প্রদান করা অপ্রত্যাশিত।

বহির্বিশ্ব থেকে প্রাপ্ত সাহায্য (যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রাপ্ত কিছু সহায়তা সহ) এই বিশাল জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় সাহায্যের তুলনায় খুবই নগন্য।

আমরা কোরিয়ায় বাংলাদেশ ত্রান কমিটি করার ব্যবস্থা করলাম, আর আমাদের আশা ছিল এই রকম যে, গরিবের পয়সা ধনীর পাউন্ড থেকে বেশি দামী। আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত ছিলাম কিন্তু আমরা অবশ্যই সাহায্য করব যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগন্য হয়।

অতঃপর কিছু মাস পরে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের ১৬৭ জনপ্রতিনিধি তাদের দেশের নাম ঘোষনা করল এবং নাম দিল বাংলাদেশ। এই এলাকার গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সিদ্ধান্তকে আমাদের সম্মান করতেই হবে।

প্রাসঙ্গিকভাবে এটা স্মরণ করা দরকার যে জাপানের শাসনামলে আমাদের কে “জাপানের উপদ্বীপ ” হিসেবে অভিহিত করা হত, এবং একইভাবে তাইওয়ান কে “জাপানের দ্বীপ” হিসেবে উল্লেখ করা হত। আমি কতটা আনন্দ অনুভব করতাম যখন বহির্বিশ্ব আমাদের কোরিয়ান হিসেবে জানত, জাপানের উপদ্বীপ হিসেবে না। আমরা ওইদিনগুলোর কথা ভূলে যাই নি।

আমরা পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) এর স্বাধীনতার জন্য অন্তত এইটুকু করতে পারি, সারাবিশ্ব যাতে তাদেরকে তাদের নিজস্ব পরিচয়ে ডাকে যেই নামে তারা পরিচিত হতে চায়।

.

13.236.665

           শিরোনাম                     সূত্র                 তারিখ
বাংলাদেশের জনগনের ইচ্ছানুযায়ী রাজনৈতিক সমাধানের আহ্বানঃ লন্ডন সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর বিবৃতি       বাংলাদেশ ডকুমেন্ট       ১১ সেপ্টেম্বর,১৯৭১

  লন্ডন সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল এর বিবৃতি

    সেপ্টেম্বর ১১, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে সৃষ্ট মানবতার চরমতম বিপর্যয় নিয়ে সুগভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে লন্ডন সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল। পূর্ব পাকিস্তান হতে ভারতে শরণার্থীর স্রোত কোনভাবেই কমানো যাচ্ছেনা এবং এটি ভারত সরকারের উপর একটি চরম বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।

সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে এই চরমতম মানবিক বিপর্যয়ের একটি রাজনৈতিক সমাধান চায় এবং পাকিস্তানি সামরিক সরকার কর্তৃক পরিচালিত এই মানবাধিকার লংঘনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল আহবান জানাচ্ছে:

১। অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক নিপীড়ন বন্ধ করা

২। অবিলম্বে শেখ মুজিবুর রহমান সহ গনতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচিত অন্যান্য নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তিদান।

সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল মনে করে ভারতীয় উপমহাদেশে  সৃষ্ট পরিস্থিতি বিশ্বশান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।

বিশ্ব-সম্প্রদায় গুরুত্ব সহকারে এই সংকট মোকাবেলায় সাড়া দেয়নি বলে সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল অত্যন্ত গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করছে এবং আহবান জানাচ্ছে:

        ১। পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারনের মতানুযায়ী একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জাতিসংঘের সরাসরি নিজেকে জড়িত করার জন্য।

        ২। জাতিসংঘ কর্তৃক পরিচালিত ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচীর পুর্ণ দায়ভার জাতিসংঘের গ্রহণ করা এবং সকল দেশের সরকারের প্রতি আহবান জানানো উচিত যেন তারা সকলে মিলে বোঝাটি ভাগ করে নেয় যেটি ভারত একা বহন করছে।

        ৩। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান না আসে, ততক্ষণ পর্যন্ত সকল রাষ্ট্র বিশেষ করে পাকিস্তানকে সাহায্যকারী দেশসমূহের পাকিস্তানকে কোন প্রকার অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা না দেয়ার জন্যে।

.

13.237.666

         শিরোনাম                সূত্র             তারিখ
কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি এইচ. সি. টেম্পলটন এবং গায়ানা প্রতিনিধি মি. বিসেম্বর-এর বক্তব্য বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে নিউজিল্যান্ড প্রতিনিধি এইচ. সি. টেম্পলটন -এর বক্তব্য

১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

আমরা একটি রাষ্ট্র হিসেবে এটাই মনে করি যে, ভারত ও পাকিস্তানের জনগনের এই সমস্যা দূর করার জন্য কমনওয়েলথ ও জাতিসংঘের কাজ করা উচিত। আমরা এই ব্যাপারে সরাসরি পাকিস্তান সরকারকেও বলেছি। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের অধিকার রক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। আমরা মনে করি পাকিস্তান সরকারের অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনায় বসা এবং পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত জননেতার প্রহসনমূলক বিচার অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। পাকিস্তান সরকারের উচিত তাঁর(জননেতার) অধিকারকে স্বীকৃতি দান করা এবং আমাদের সবারই এই শাসনপন্থা পরিবর্তন করার জন্য বলা অত্যাবশ্যক।

কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি সম্মেলনে গায়ানা প্রতিনিধি মি. বিসেম্বর -এর বক্তব্য

১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

আমি আন্তর্জাতিক মানদন্ডে এটা বিশ্বাসও করিনা আবার অবিশ্বাসও করিনা যে আমাদের স্বাধীন কোন অঞ্চলের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে কি না। কিন্তু আমি এটাই পেশ করছি জনাব সভাপতি,যে যেখানে সাধারন মানুষের দুর্ভোগ, যেখানে মানবতার অবমূল্যায়ন এবং যেখানে নৈতিকতার বিসর্জন হয়ে পড়ে এবং একই সাথে সকল আন্তর্জাতিক নিয়মের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়, তখন এটা আমাদের মত সকল কমনওয়েলথ সদস্যের একটি অধিকার ও কর্তব্য হয়ে পড়ে এমন কোন সভায় নিজেদের মত ব্যক্ত করা।

………………আমি মনে করেছিলাম, মি. জাফর(কয়েক বছর আগে পাকিস্তানের তৎকালীন আইনমন্ত্রি)) এবং পাকিস্তানে বসবাসকারী মানুষজন সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যেকারণে তারা এই সভাটি তাদের দেশে অনুষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল। মি. চেয়ারম্যান, পাকিস্তানে বসবাসকারী মানুষের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমরা কীভাবে এই সভা পাকিস্তানে করার চিন্তা করতে পারি যেখানে তারা একে নির্বাচন বলে, এবং সেই নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান জয়লাভ করার পরেও পাকিস্তানে কোন সরকার গঠন করার তারা কোন অনুমতি পায়না।

মি. চেয়ারম্যান, আমি এটা বলেছি কারন, আমার এক বিশেষ বন্ধু আমাকে জানিয়েছে যে নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়নি। কিন্তু মি. চেয়ারম্যান, মূলকথা হল, লালচীন যেভাবে জাতিসংঘে রয়েছে সেভাবে পূর্ব পাকিস্তানও নির্বাচনে অংশগ্রহন করেছে, বিপুল জনসমর্থন পেয়ে তারা জয়লাভ করেছে এবং সিংহভাগ আসন তারাই পেয়েছে। সুতরাং চীন যেকারনে জাতিসংঘে সয়েছে, সেকারণেই পূর্ব-পাকিস্তানকেই তাদের দেশ চালানো উচিত। আমরা কুয়ালালামপুরে বসে কলোম্বের কোন মানুষকে তার ঘরের আসবাবপত্র সে কিভাবে রাখবে তা বলে দিতে পারিনা। কিন্তু যদি আমরা এমন কিছু ঘটতে দেখি যা আন্তর্জাতিক মানদন্ডে অগ্রহনযোগ্য, আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী ইত্যাদি তাহলে আমি মনে করি কমনওয়েলথ সদস্য হিসেবে এটা আমাদের অধিকার সে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার বা হস্তক্ষেপ করার এবং একই সাথে আমাদের নিজ নিজ সরকারপ্রধানকে এটা বলা যেন তারা জাতিসংঘে উক্ত ব্যাপারটি নিয়ে কথা বলে। কারন ভারত এবং পাকিস্তানে যা ঘটে চলেছে প্রতিনিয়ত, এর থেকে দুঃখজনক ঘটনা বর্তমান পৃথিবীতে আর কিছু নেই…

………………………………সুতরাং মি. চেয়ারম্যান, আমি মনে করি আমার জানামতে আমরা যারা এখানে ৩০টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, তাদের কোনভাবেই এই ভয়াবহ নৃশংসতার নিন্দাপ্রকাশ থেকে পিছিয়ে আসা উচিত নয়। নিন্দাপ্রকাশ করা উচিত তাদের প্রতি যারা গণতান্ত্রিক বিধিবিধান লঙ্ঘন করেছে এবং একই সাথে লঙ্ঘন করেছে সংবিধানকে এবং ভারতীয় জনগণের উপরে বয়ে এনেছে সীমাহীন নৃশংসতা ও ভয়াবহ দুর্ভোগ।

.

13.238.668-690

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে দিল্লী আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রস্তাব এবং বিভিন দেশের প্রতিনিধিবৃন্দের ভাষণ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রতিবেদন উদ্ধৃতিঃ ওয়ার্ল্ড মীট অন বাংলাদেশ ১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের গৃহীত প্রস্তাব

১৮ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানব সভ্যতার ইতিহাসের এক ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে আলোচনা এবং এর সন্তোষজনক সমাধানের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শের জন্য বিগত ১৮-২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সকল মহাদেশ থেকে এবং বিশ্বের ২৪ টি দেশ থেকে একশত পঞ্চাশ জনের অধিক প্রতিনিধিগণ নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন।

২.  পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। এই সম্মেলন বাংলাদেশের জনগণ বিশেষ করে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত রায়ে জয়ী আওয়ামী লীগ, বুদ্ধিজীবী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিচালিত নির্দয় সামরিক অভিযানের নির্মম ধ্বংসযজ্ঞ, গণহত্যার ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। যার ফলশ্রুতিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে ও আট মিলিয়নেরও বেশী মানুষ দেশত্যাগ করে উদ্বাস্তু হিসেবে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে এবং যা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং ফলশ্রুতিতে তা ভারতের উপরও ব্যপক অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা রূপে প্রতীয়মান।

৩. এই সম্মেলন ভারতীয় সরকার ও জনগণ কর্তৃক বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী প্রদানের প্রশংসনীয় কর্মকাণ্ড ও এই গভীর মানবিক কাজে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার প্রতি অকুণ্ঠ প্রশংসা জ্ঞাপন করে।

৪. এই সম্মেলন ঘোষণা করে যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত বাংলাদেশের জনগণের এই রাজনৈতিক সংগ্রামকে স্বাধীনতার জন্য জাতীয় সংগ্রাম হিসেবে বিবেচনা করা।

৫.  এই সম্মেলন বিশেষভাবে পাকিস্তানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপন করে যা অদ্যাবধি অব্যহত রয়েছে এবং জাতিসংঘের সদস্যগণের প্রতি আর্জি জানায় যে, তারা যাতে জাতিসংঘের সবগুলো অঙ্গ সংগঠনের সম্মুখে এই সমস্যাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকি রূপে তুলে ধরে।

৬. এই সম্মেলনে এটা স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের জনগণ ও শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতিত্বে গঠিত বাংলাদেশ সরকারের নিকট গ্রহণযোগ্য একটি রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা জরুরী প্রয়োজন। এই সম্মেলন আরও স্বীকার করে যে, উদ্বাস্তুদের নিরাপদে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে তাঁদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসা এরূপ একটি বন্দোবস্তের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল এবং তা চলমান সংকট নিরসনের অপরিহার্য পূর্বশর্ত।

৭. বিশ্বের সরকারগণের নিকট এই সম্মেলনের পরামর্শ থাকবে যে, যেহেতু সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় সমুদয় বৈশিষ্ট্য সমুহ যেমন ভৌগলিক, ঐতিহাসিক, জাতিগত ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান, তাই বিশ্বের সরকারগণের উচিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া।

৮. এটা সম্মেলন স্বীকৃত যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। এই নৈতিক সমর্থনকে কার্যকর ক্রিয়ায় রূপান্তর করতে, এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণের নিকট আবেদন জানায় যে, তারা যেন অনতিবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে যাবতীয় অস্ত্র, গোলাবারুদ, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং সকল প্রকার সামরিক সুবিধা সরবরাহ করা বন্ধ করে দেন। সেইসাথে এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণ, আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান ও দাতা সংস্থাগুলোর নিকট আরও আবেদন জানায় যে, অনতিবিলম্বে তারা যেন পাকিস্তান সরকারকে যাবতীয় অর্থনৈতিক সাহায্যসমূহ দেয়া বন্ধ করে দেন।

৯. এই সম্মেলন বিশ্বের সরকারগণ ও জনগণের নিকট আরও আবেদন জানায় যে, তারা যেন বাংলাদেশ সরকারকে জরুরী ও কার্যকর সহায়তা প্রদান করেন; যা ক্ষেত্রবিশেষে সামরিক সাহায্য; অন্যান্য ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ধরণের অহিংস কর্ম সম্পাদনে সহায়তা হতে পারে।

১০. জাতিসংঘ ও সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহের নিকট এই সম্মেলন আবেদন জানায় যে, তারা যেন, বাংলাদেশ সরকারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক তত্ত্বাবধানে এটা সুনিশ্চিত করে যে, যাদের কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে এই সহায়তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তা যেন তাঁদের নিকট পৌছায়।

১১. এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটিকে অনুরোধ জানায় যে, তারা যেন অবিলম্বে ১৯৪৯ সালের চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের তৃতীয় অনুচ্ছেদের অধীনে বাংলাদেশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণের সরাসরি দায়িত্ব গ্রহণের উদ্যোগ নেয় যা বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র করনীয়। বাংলাদেশ সরকারের অংশগ্রহণ উক্ত কনভেনশনের শর্তাবলীর সাথে অপরিহার্য ও সঙ্গতিপূর্ণ। কোন অবস্থাতেই এই কাজের দায়িত্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন কর্তৃপক্ষের নিকট ন্যস্ত করা উচিত হবে না।

১২. যেহেতু বাংলাদেশের শিশুদের জীবন ও স্বাস্থ্য এর সাথে জড়িত এবং যেক্ষেত্রে জাতীয় স্বাধীনতা ও বেঁচে থাকার মাঝে যেকোন একটিকে বেছে নেয়ার কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সেক্ষেত্রে সকল সরকারগণ, আন্তঃ সরকারি সংস্থাসমূহ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিকট সম্ভাব্য সকল উপায়ে বাংলাদেশ ও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শিশুদের জীবন রক্ষায় সকল প্রতিবন্ধকতা যতদূর সম্ভব পরিহার করে এগিয়ে আসার জন্য এই সম্মেলন আবেদন জানায়। সেক্ষেত্রে এই সম্মেলন বাংলাদেশের অভ্যন্তরের শিশুদের জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীন সম্ভাব্য জরুরী আশ্রয়স্থল সৃষ্টির পরামর্শ দেয়।

১৩. বাংলাদেশের বন্ধুদের নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণ, সরকার ও বেসরকারি সংস্থাসমূহের নিকট প্রামাণিক উৎস ভিত্তিক তথ্য প্রচার এবং অন্যান্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জনসমর্থন গড়ে তুলতে এই সম্মেলন পরামর্শ দেয়।

জাতি কমিটিসমূহের বিবৃতি

উদরাতুল্লাহ হাদাদ

আফঘানিস্তান

বাংলাদেশের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের আমন্ত্রণের জন্য আমার সংগঠন আফগান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটের পক্ষ থেকে আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সংগঠন ও আফঘানিস্তানের অনেক জনসাধারণ খুবই সহানুভূতিশীল।

আমাদের সংগঠন আফগান সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট জাতীয় সংস্কৃতি, জাতীয় অর্থনীতি, জাতীয় ঐতিহ্য এবং জাতীয় ইতিহাস এবং এশিয়ার হৃদয়ে অবস্থিত আফঘানিস্তানের মহান ঐতিহাসিক মহিমার প্রতি পশতুনের সংঘবদ্ধ অনুভূতির উপর নির্ভরশীল। আফঘানিস্তানকে আফঘানদের জন্য রাখার এই একটিমাত্র উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তবাদের বিরুদ্ধে এর সংগ্রাম অব্যহত রয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি যে, জাতীয় গণতন্ত্র ও জাতীয় অর্থনীতি অর্জনের পর, আমরা শোষণ ও পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের গতিশীল জাতীয় আফঘান সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম অব্যহত রাখব।

আমাদের উদ্দেশ্য কেবল বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নয় বরং আভ্যন্তরীণ শোষণের বিরুদ্ধেও লড়াই করা।

আমরা বিশ্বাস করি যে, মহান ও ঐতিহাসিক আফঘানিস্তানের প্রতি ইঞ্চির জন্য আমরা রক্ত ঝরাব এবং আমরা একটি জাতীয় রাষ্ট্র ও জাতীয় বিপ্লবের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব।

আমাদের মহান জাতি ১০০ বছরেরও অধিককাল যাবত ব্রিটিশ ও অন্যান্য অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত। আমাদের জাতীয় নেতা প্রয়াত আমানুল্লাহ ৫০ বছর পূর্বে ১৯২১ সালে যখন ব্রিটিশদের থেকে কাবুলের স্বাধীনতার চুক্তিস্বাক্ষর করেন তখন ব্রিটিশ মিশন বলেছিলেন, “ সাধারনভাবে আমরা সকল জাতির স্বাধীনতার পক্ষে এবং কোন জাতির স্বাধীনতা হারানোর ব্যপারে আমরা সবসময় উদ্বেগ প্রকাশ করি।”

যেহেতু আমদের সংগঠনের লক্ষ্য ও নীতি এবং আফঘানিস্তানের অনুভূতি সর্বত্র স্বাধীনতা ও জনগণের স্ব-নিয়ন্ত্রণের পক্ষে সেহেতু, স্বাভাবিকভাবে আমরা বাংলাদেশের জনগণের সংগ্রামকে সমর্থন করি এবং এই নীতি অব্যহত থাকবে কারন আফঘানিস্তানের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি হল সাম্রাজ্যবাদ ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা।

অপরদিকে, পশতুনিস্তান ও বাংলাদেশের সমস্যার মধ্যে দৃশ্যগত একটি মিল রয়েছে। তেমন কোন পার্থক্য ছাড়াই, পশতুনিস্তানও বাংলাদেশের মত, পাঞ্জাবের কতিপয় পরিবার কর্তৃক শোষণ ও চাপের স্বীকার। আজ বাংলাদেশের জনগণ কষ্টভোগ করছে কারন সেখানে নৃশংসতা বিদ্যমান। একইভাবে অতীতে, পশতুন ও বালুচও কষ্টভোগ করেছে তাদের স্ব-নিয়ন্ত্রণের ন্যয্য সংগ্রামের কারনে যদিও ২০ মিলিয়ন সশস্ত্র পশতুনের উপর বিদেশী ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়া খুব সহজ নয়।

আমরাও বাংলাদেশ প্রসঙ্গে মনযোগী কারন এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা, এটি একটি মুসলমানদের সমস্যা, এটি একটি মানবাধিকার সমস্যা তেমনি এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংশ্লিষ্ট একটি সমস্যা।

_সেপ্টেম্বর আইবি. ১৯৭১ এর পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে বিবৃত বক্তৃতা।

.

আমরা কখনই ভুলব না, যে তিন বছর পূর্বে, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীরা পশতুনিস্তানের মধ্যভাগের শহর পেশওয়ারের বক্তৃতায় বলেছিলেন যে, “বাংলাদেশের জনগণ বিপ্লবী পশতুন ভূমিকে তাঁদের সংগ্রামের কারণে দ্বিতীয় মক্কারূপে (মুসলিমদের পবিত্র শহর) গণ্য করে এবং পশতুনবাসীদের প্রতিরোধের চেতনা দ্বারা আমরা সবসময় অনুপ্রাণিত হই।”

উনিশ শতকে যখন থেকে ব্রিটিশরা সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পশতুনিস্তানকে এর পিতৃভূমি থেকে পৃথক করেছিল তখন থেকে বাংলার জনগণ যেমন পাকিস্তানের মধ্যে সংখ্যালঘু হিসেবে সংগ্রামরত তেমনি পশতুনের জনতার সংগ্রামও অব্যহত রয়েছে। পুনরায় পিতৃভূমিতে যোগদান করে বৃহত্তর পশতুন রাজ্য গঠনের মাধ্যমে এশিয়া অঞ্চলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভূমিকা পালনের জন্য তাঁরা সবসময় স্বপ্ন দেখে।

বলাবাহুল্য যে, ১৬ই এপ্রিল, ১৯৭১ সালে প্রয়াত ইপ্পির ফকিরের (মির্জা আলী খান) বাসভূমি ওয়াজিরিস্তানে মুক্ত উপজাতীয় এলাকার পঞ্চাশ হাজার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় বৃহত্তর আফঘানিস্তানকে সমর্থনের লক্ষ্যে পশতুনিস্তানের সুনির্দিষ্ট স্বাধীনতার প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছিল।

যেহেতু ভৌগলিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তার কোনটিই পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে মিলে না তাই বাংলার জনগণের পক্ষে সহজেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে গণতন্ত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জন করা সম্ভবপর ছিল; কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁরা তা বিগত ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে অর্জন করতে পারেনি এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর পাশবিক দমন পীড়নের সম্মুখীন হয়েছেন, যা আফঘানিস্তানের জনগণের নিকট গভীর উদ্বেগের কারন ও নিন্দনীয়।

আফঘান জাতির অনুভূতির প্রতিনিধিত্বকারী আমাদের সংবাদপত্র আফঘান মিল্লাত ও অন্যান্য সংবাদপত্র বাংলাদেশের জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণ অর্জনের সংগ্রামকে সমর্থন করে। আমাদের জনগণ কাবুল ও জালালাবাদের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পক্ষে তাঁদের উষ্ণ সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

পরিশেষে পাকিস্তানের সামরিক সরকারের নিকট আমাদের পরামর্শ থাকবে পূর্ব পাকিস্তানের এই বিয়োগান্ত নাটক সমাপ্ত করার এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশাপাশি পশতুন ও বেলুচের জনগণের অধিকারকেও স্বীকৃতি প্রদান করার।

বাংলাদেশের জনগণকে আমরা আশ্বাস দিচ্ছি যে, সমগ্র বিশ্বের অনুভূতি তাঁদের সাথে আছে এবং আমরা আশ্বস্ত করছি যে, বিজয় তাঁদের হাতের নাগালে এবং আমরা এটাও বিশ্বাস করি যে, তাঁদের ভাইবোনেরা যারা দমনের কারনে ভারতে পালিয়ে গেছেন তাঁরা মাতৃভূমিতে ফিরে আসবেন।

বি.পি. কৈরালা

নেপাল

বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া একটি গভীর বিয়োগান্ত নাটকের ছায়ায় আমরা আজকের এই সভায় মিলিত হয়েছি। পঁচাত্তর মিলিয়ন নিরস্ত্র বা সামান্য অস্ত্রসজ্জিত বাঙ্গালীকে নৃশংস সামরিক যন্ত্র দ্বারা গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে এবং হানাদার বাহিনী দ্বারা সর্বপ্রকার ভাবে অপমানিত ও নিগৃহীত করা হচ্ছে। প্রায় আট মিলিয়ন বাঙ্গালীকে তাঁদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়িত করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি গভীর বিয়োগান্তক ঘটনা।

তবে পাকিস্তানের শক্তিমান সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের এই সংগ্রামের একটি বীরত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। এটি এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি যা এখন আমাদেরকেও সম্পৃক্ত করা উচিত। আমরা কিভাবে তাঁদের সাহায্য করতে যাচ্ছি? এই দুর্যোগে রেজুলেশন পাসের মাধ্যমে আমাদের উদ্বেগ প্রদর্শন পর্যাপ্ত নয়। আমাদের আরও অধিক কিছু করা প্রয়োজন। যদি এটা নিছক আট মিলিয়ন মানুষের ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় সংক্রান্ত বিষয় হত তবে হয়তো আমরা এই বিষয়ে সম্পৃক্ত হতাম না এবং বলে দিতাম যে, এটা ভারতের একান্তই নিজস্ব সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়নের বিষয়। যদি এটা পূর্ব বাংলার নিছক কিছু সাংবিধানিক অর্জনের লড়াই হত, তবে তা আমাদের সম্পৃক্ত করত না। এটা বাংলাদেশের জনগণের নীতি সমুন্নত রাখার লড়াই, মানুষের মর্যাদা সমুন্নত রাখার লড়াই, গণতান্ত্রিক জীবনধারা সমুন্নত রাখার লড়াই। এগুলো আমাদের জন্যও লড়াই এর উপযুক্ত বিষয়।

এজন্যই আমরা নেপালে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাংলাদেশের ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলাম। সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি যাই হোক না কেন, সামগ্রিকভাবে নেপালের জনগণ প্রাণবন্তভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করেছেন। কিন্ত, এরকম হল কেন? কারন, যদি বাংলাদেশের জনগণ এই যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং যদি আলো নির্বাপিত হয়, নেপালে আমাদের আলোও নির্বাপিত হবে। এমনকি ভারতেও যেখানে গণতন্ত্র বিদ্যমান, আমি আমার ভারতীয় বন্ধুদের সতর্ক করতে চাই যে, যদি বাংলাদেশের আলো নির্বাপিত হয় তবে তাদেরও কিছু আলো নিভে যাবে। গণতন্ত্রের উজ্জ্বলতা ও ভারতীয় জনগণের জীবনধারাও প্রভাবিত হবে। এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আমাদেরকে এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হবে। এটি নিছক ভারতে আশ্রয় গ্রহণকারী উদ্বাস্তুদের বিষয় নয়।

প্রভাবশালী রাষ্ট্রের অনুরোধ বা কূটনৈতিক চাপ কিংবা পরামর্শ স্বৈরশাসকরা আমলে নেবেন এটা আশা করা একটি বিভ্রম ছাড়া আর কিছু নয়। যদি বলতেই হয় আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যে স্বৈরশাসকরা অস্ত্র ছাড়া আর কোন চাপের মুখেই নতি স্বীকার করবে না। তারা কেবল অস্ত্রের ভাষাই জানে। বাস্তবিক অর্থে এই সভা বাংলাদেশের জনগণের জন্য কি করে তা দেখতে আমি গভীরভাবে উৎসাহী।

মাননীয় চেয়ারম্যানের বক্তব্য আমি সম্পূর্ণরূপে অনুমোদন করি। তিনি যেরূপভাবে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন আমার মনে হয় না এর চেয়ে ভালভাবে তা তুলে ধরা সম্ভব। এই সভায় কি কি সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে তা দেখতে আমি উদগ্রীব। যদি আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সাহায্য করতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করি, তবেই প্রকৃতপক্ষে তাঁদের জন্য কিছু করা হবে। আমি আবারো বলতে চাই যে, যদি বাংলাদেশ হেরে যায়, তবে গণতান্ত্রিক জীবনধারা অর্জনের জন্য জনতার লড়াই অন্যত্র হারিয়ে যাবে। আমরা নেপালবাসিরা জানি যে, যদি বাংলাদেশের জনগণ জয়ী হন, তবে ইতিমধ্যেই আমাদের সংগ্রামের অর্ধাংশ অর্জিত হয়ে যাবে।

নাড নিলসেন

ডেনমার্ক

সমগ্র স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখার এই সুযোগ নিঃসন্দেহে আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। এটি একটি বড় দায়িত্ব। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অফ ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি একটু ভিন্নমাত্রায় কথা বলবো। বিশ্ব সংগঠন বাংলাদেশের সঙ্কটে খুবই উদ্বিগ্ন ছিল। কেবল জাতিসংঘই একমাত্র জায়গা যেখানে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করবে। ধারা ২১ দিয়ে জাতীয় সার্বভৌমত্ব বোঝায়। এটি এমন একটি অধিকার যা জাতিসংঘের সংরক্ষণ করা উচিত। নিজের ভেতরের স্বাধীনতার মাধ্যমে প্রতিটি জাতি, প্রতিটি সংস্কৃতির প্রস্ফুটিত হওয়া উচিত।

বর্তমান জাতিসংঘ নিয়ে আমরা কি করতে পারি? বর্তমান আন্তর্জাতিক সমাজ কি? চুক্তিসমূহের সর্বোচ্চ বাস্তবায়ন ও আমাদের প্রভাব বিস্তারে জাতিসংঘকে আমরা একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে পারি এবং আমি এটাই চাই যে তা ঘটুক। এখন কি আমরা তা করতে পেরেছি? পৃথিবীর মহান সংগঠন গুলোর মাঝে আমরাও রয়েছি, ২২ টি প্রতিষ্ঠান, এগুলোর মধ্যে আমার নিজের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই বিষয়টি জাতিসংঘের নিকট উপস্থাপন করেছে। মাত্র এক সপ্তাহ পূর্বে বিষয়টি এই সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে মানবাধিকার কমিশনের নিকট উপস্থাপিত হয়েছে। কিছু দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় সত্তেও বিষয়টি এজেন্ডাতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। এটি সেখানে রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, গত মাসে ওয়ার্ল্ড ফেডারেলিস্টগণ তাদের কাউন্সিল সভায় একটি আপিল আবেদন পেশ করেন যেখানে নয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুদের বোঝা বহনে অংশ নিয়ে ভারতের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য তারা বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। অতি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক নয় মিলিয়ন উদ্বাস্তুর খাদ্য ও আশ্রয়ের বিপুল পরিধি ও বোঝা প্রদর্শন করে একটি অর্থনৈতিক প্রতিবেদন জারি করেছে। পাকিস্তানের উপর চাপসৃষ্টির জন্য এবং সেখানে অস্ত্র ও সামরিক সরবরাহ বন্ধ করতে আমরা বিশ্বের সরকারদের কাছে আহ্বান জানিয়েছি। পরিশেষে আমরা জাতিসংঘের সংস্থাসমূহকে আহ্বান করেছি গৃহহীন ব্যক্তিদের যারা ভারতে এসেছে এবং যারা পূর্ব বাংলায় রয়েছে তাদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করার জন্য।

পূর্ব পাকিস্তানের এই সংকটের সমাধান ঐ অঞ্চলের ভবিষ্যৎ ধর্ম ও রাজনৈতিক অবস্থা বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বাধীন পছন্দের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। আমার নিজের সংগঠন সহ আরও কিছু সংগঠনের জাতিসংঘে পরামর্শ প্রদানের ক্ষমতা রয়েছে। সেখানে ফেডারেলিস্টদের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, আমাদের চাপ প্রয়োগ অব্যহত থাকবে। আমাদের ফেডারেশনের সংসদীয় দল রয়েছে এবং আমরা জাতিসংঘে আমাদের প্রতিনিধিদের নির্দেশনা দিয়েছি যে তারা দেখবে যে তাদের রাষ্ট্রদূতগণ সেখানে উপস্থিত রয়েছে এবং তারা একত্রে বসে বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির, দমন পীড়ন থেকে মুক্তির অধিকারের স্বপক্ষে ইতিবাচক সমর্থনের জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি মনস্তাত্ত্বিক পটভূমি তৈরি করতে পারে। এটা করা কি সম্ভব হবে? আমি জানি না। আগামি সাধারণ নির্বাচনে জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ বিষয়ক আলোচনা থাকবে। আমরা সেজন্য অপেক্ষা করব।

হোমার. এ. জ্যাক

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

বিগত ছয় দিন ঢাকা, করাচী ও কোলকাতা সীমান্তে থাকায় আমি সম্ভবত এই কক্ষে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের সংগে সন্দেহজনক মতপার্থক্য পোষণ করি। তা করতে গিয়ে আমি প্রায় ১০,০০০ মাইল পথ ভ্রমণ করেছি এবং আমার দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশে আমি বেশী সময় নেব না। আমি কেবল একটি মাত্র ঘটনা সংযুক্ত করতে চাই। গত রাত্রে ঢাকার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল, যা আপনাদের কেউ কেউ জানেন যে মার্চের ২৫ তারিখে অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছিল, সেখানে অবস্থান করার সময়, দরজায় করাঘাত হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হন, যিনি আমাকে কোলকাতার একজন ভদ্রমহিলাকে উদ্দেশ্য করে লিখিত ইংরেজিতে টাইপ করা একটি বার্তা প্রদান করেন। তারা জানত যে আমি যাচ্ছি এবং সেখানে লেখা ছিল, অতীব দুঃখের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, চট্টগ্রামে পুলিশ আপনার ছেলেকে গুলি করেছে, ঠাণ্ডা মাথায় কেটে ফেলেছে, না ২৫শে মার্চে নয় বরং সেপ্টেম্বরের ২ তারিখে। সেখানে পরিশেষে লেখা ছিল, অনুগ্রহ করে আমাদের অনুশোচনা গ্রহণ করুন এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানের নিকট আমাদের অনুশোচনা পৌঁছে দিন। এটা বেনামি বন্ধুদের দ্বারা স্বাক্ষরিত ছিল। দুই দিন পূর্বে যখন আমি ভারতীয় অংশে যাই তখন উক্ত চিঠি ঐ মায়ের কাছে পৌঁছে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। শুধু একটি ভয়ংকর বর্বরতা, শুধুমাত্র অতীতেই নয় বরং তা অব্যহত রয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে করাচি ভ্রমনের সময় সেখানকার সম্প্রদায়ের বুদ্ধিজীবীদের সাথে দেখা করার সময় তাঁদের মাঝে যে অব্যহত নিঃস্পৃহতা উপলদ্ধি করেছি, আশা করি তা আপনাদের জানানোর মত সময় থাকবে। শুধুমাত্র যশোর কোলকাতা সীমান্তের একটি অংশে গতকাল ৬০০,০০০ উদ্বাস্তুদের যে দুর্ভোগ দেখেছি আশা করি তা আপনাদের জানানোর মত সময় থাকবে। মনে হয়েছে যে, কেবল রাজনৈতিক দমন পীড়নের কারণে উদ্বাস্তুই যথেষ্ট নয়, বরং সেখানে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। এক সপ্তাহ পূর্বে, ঢাকায় যখন আমাকে নোয়াখালীতে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিস্তারিত বিবরণ জানানো হয়, তখন ঐ অঞ্চলে গান্ধীজীর জীবন সায়াহ্নে বলা কথা গুলো আমার মনে পরে। আমি ভাবতে চাই হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা যা নিয়ে গান্ধীজী কাজ করতেন এবং যার জন্য তিনি মারা গিয়েছিলেন। মানবতার এই স্বপ্ন মরে নি, এবং গান্ধীজী ও শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্যের সেই চেতনাতেই এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বৃহৎ প্রত্যাশা নিয়ে এবং মহান মানবতার স্বার্থে আমরা সকলে একত্রিত হয়েছি।

সুয়োশি নারা

জাপান

মাননীয় চেয়ারম্যান, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,

        এই মহান দেশে এটি আমার দ্বিতীয় সফর। এবারের সফরে আমার সুনির্দিষ্ট দুটি উদ্দেশ্য রয়েছে; এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে চলমান পরিস্থিতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা অবশ্যই তার মধ্যে একটি। পূর্ব বাংলা অঞ্চলের উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধান ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা পুনঃ স্থাপনে অন্যান্য দেশের মানুষের মতামত শোনা উপকারী অন্যথায় তা শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নয় বরং বৃহৎ ক্ষমতাগুলোর সমর্থনপুষ্ট এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলেও দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে দেবে।

আমার সফরের অপর উদ্দেশ্য হল শরণার্থী শিবির গুলো ঘুরে দেখা ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের সামগ্রিক ভাবে দেখার জন্য সীমান্ত পরিদর্শন করা এবং এই সমস্যা সম্পর্কে শরণার্থীগণ, বাংলা মিশন ও ভারতীয় জনগণের বক্তব্য শোনা। আমার এবারের সংক্ষিপ্ত ভারত সফরে আমি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি তা আমাকে এবং জাপান-বাংলা মৈত্রী সংঘকে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সাহায্যে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে পর্যাপ্ত তথ্য দেবে। জাপানে আমি বাংলাদেশের জনগণের ব্যপারে অনেক করুণ গল্প শুনেছি। যেকোন ব্যক্তি বা জাতির পক্ষে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে কেবল ভিন্নমতাবলম্বী হওয়ার কারণে বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানবাধিকারের দাবী জানানোর অপরাধে সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সর্বাধিক কাপুরুষোচিত ও অসভ্য আচরণ। তবে, সেইসাথে আমি আশা করি ও বিশ্বাস করি যে, এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বিশ্ববাসীর ঘৃণার উদ্রেক করা নয়। এটা পশ্চিম পাকিস্তানের নেতাদের মনে করিয়ে দেয়ার জন্য যে, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা প্রয়োজন এবং বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের সাহায্যার্থে বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিতে বিশ্ব জনমত তৈরি করা যাতে অতি শীঘ্র এশিয়ায় যেখানে অব্যহত ভাবে বঞ্চনা ও দ্বন্দ্ব বিদ্যমান সেখানে সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন ও চিরস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। এটা খুবই বৈশিষ্টপূর্ণ যে, গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমি এখানে এসে প্রথমেই রাজঘাট দর্শন করেছি ও মহান গান্ধীজীর প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।

বাংলাদেশের স্বীকৃতির বিষয়টি অবশ্যই মানবাধিকার ও মর্যাদার দৃষ্টিকোন থেকেও বিবেচনা করা উচিত। আমি মনে করি আমি ইতিমধ্যেই এই সম্মেলনের প্রতি জাপানের মনোযোগ আকর্ষণে সফল হয়েছি কারন টোকিওর পাকিস্তান দূতাবাস জাপান সরকারকে আমার এখানে যোগদানের ব্যপারে প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ক্লোভিস মাকসুদ

ইউ. এ. আর.

মাননীয় চেয়ারম্যান ও বন্ধুগণ,

আমার মনে হয়, এই সম্মেলন যা গান্ধী শান্তি ফাউন্ডেশন আহ্বান করেছে তা সময়াতীত হয়েছে। প্রায় ৮ মিলিয়ন পূর্ব বাঙ্গালীর অতিথিপরায়ণ ভারতে আশ্রয় গ্রহণের বিয়োগান্ত ঘটনা অবশ্যই মানব মাত্রা বহির্ভূত এবং ফলশ্রুতিতে তা মানবতাকে নাড়া দিয়েছে। পূর্ব বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের নিষ্ঠুরতা সংক্রান্ত ঘটনাবলী প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের মধ্যে যারাই এই বিয়োগান্ত ঘটনার কথা শুনেছেন বা এর অংশ বিশেষ দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই পূর্ব বাঙ্গালীদের দুর্ভোগের সাথে নিজেদেরও সম্পৃক্ত করবেন। এটা আমাদের একান্তকর্তব্য যে, আমরা পূর্ব বাংলার জনগণের শান্তি ও তাঁদের অবস্থার উন্নতিবিধান ত্বরান্বিত করি।

যদিও নিজেদের মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে চিহ্নিত করছি তবুও আমরা কেবল প্রাথমিক দায়িত্ব পালনের ডাক পালনের পরিকল্পনা করছি। এধরণের পরিস্থিতিতে কেবল প্রাথমিক দায়িত্ব পালন যথেষ্ট নয়। ফিলিস্তিনি শরণার্থীরাও বাংলাদেশের জনগণের মত ইসরাইল ও জর্ডানীদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। দীর্ঘদিন যাবত পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা ইচ্ছাকৃতভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। তারা তাঁদের অধিকার এবং দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পূর্ণ অংশগ্রহণের আকাঙ্খা থেকে বঞ্চিত। এরকম একটি পরিস্থিতি অবশ্যই সংশোধন হওয়া উচিত। আমাদের এ বিষয়ে জোর দিতে হবে যে, পূর্ব বাংলা রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের কোন অংশ নয় এবং হতে পারে না এবং হওয়া উচিত নয়। যদি ঐক্য বজায় রাখতে হয়, তবে অবশ্যই তা ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে করা বাঞ্ছনীয়। সেক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের মুক্তির আকাঙ্খাকে পরিপূর্ণ ভাবে প্রশংসা করি।

তেমনিভাবে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত যে, এশিয়ার ৭৫ মিলিয়ন মানুষ মানবিক মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এটি কোন আভ্যন্তরীণ ব্যপার নয়। এটি সামগ্রিক ভাবে বিশ্ববাসীর মানব বিবেকের একটি ব্যপার। এটা সত্য যে, সেখানে একটি সংগ্রাম হয়েছে এবং বাঙ্গালী জনগণ অবশ্যই সমতা অর্জনের পাশাপাশি মুক্তিলাভ করবে। সুতরাং শেখ মুজিবুর রহমানকে অবশ্যই মুক্তি দেয়া উচিত। এটি কোন রাজনৈতিক কারন নয় বরং মানবিক কারন। মার্চে যখন পাকিস্তানের উভয় অংশেই মুক্তভাবে নির্বাচন হয়েছিল তখন অনেকেই এই অগ্রগতিকে পাকিস্তানের জন্য একটি শুদ্ধি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরে নিয়েছিলেন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সিংহল, ভারত ও পাকিস্তানে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল। যেহেতু বাঙ্গালীরা দীর্ঘদিন যাবত বৈষম্যের স্বীকার, পাকিস্তানের এই উন্নয়নকে আমরা স্বাগত জানিয়েছিলাম। নির্বাচনের পর একটি নতুন পাকিস্তান জন্ম নিয়েছিল। আমার মনে হয়, বাঙ্গালীদের মর্যাদা ও সমতার বিষয়টি তাঁদের সংগ্রামের মূল কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। শুধুমাত্র সকল ক্ষেত্রে মানুষের সমতার অধিকার রক্ষার এই প্রেক্ষাপটে আমরা লড়াই করি। বন্ধুরা, এই বিষয়ে আরও জানতে আমরা এখানে এসেছি এবং শুরুতে যেমন বলেছিলাম আমরা বুঝতে চাই। হয়তো আমাদের জানা যতটুকু সম্পূর্ণ হওয়া উচিত ছিল ততটুকু নয়। পূর্ব বাংলার সাড়ে ৮ মিলিয়ন জনগণ যাদের গৃহ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল তাঁদের মর্যাদা ফিরিয়ে আনা আমাদের সর্বাপেক্ষা ইতিবাচক অবদান হওয়া উচিত।

রেভ. ফাদার. ইসমাইল ইউয়িলস

আর্জেন্টিনা

        * পর্যবেক্ষক হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

.

ল্যাটিন আমেরিকা এবং আর্জেন্টিনার হয়ে কথা বলতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি।আমি রাষ্ট্রপতি গিরির কথাই পুনরায় বলব যে এটি একটি বিশাল মানবীয় সমস্যা।এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশেরই সমস্যা নয় বরং সমগ্র মনুষ্যজাতির সমস্যা কারন মনুষ্যজাতির সমস্যা মানে সর্ব জাতির সমস্যা ।এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করা সম্ভব?এই ব্যাপারে অধিবেশনের মাথা ঘামানো উচিত।বাংলাদেশের জন্য জাতিসংঘ বিশ্বের বিবেক অবশ্যই জাগ্রত করতে হবে।গান্ধীজির ভগবত গীতা সম্পর্কিত মন্তব্যটি উল্লেখযোগ্য ।তিনি বলেছিলেন আমাদের সত্যকে অনুসরন করতে হবে,বাস্তবতা কে অনুসরন করতে হবে।কিন্তু সেটা মানব মর্যাদা রক্ষার লড়াই থেকে আমাদেরকে বিরত রাখার জন্য নয়।সেহেতু আমি মনে করি আমরা আন্তর্জাতিক নীতিবোধ জাগ্রত করে বাংলাদেশের মানুষদের সাহায্য করতে পারি এবং তখনই আমরা নিশ্চিত হতে পারব যে সত্য রক্ষা হবে।মিসেস গান্ধীর ভাষ্যমতে,বিশ্ব অভিমত এতটাই কার্যকরী যে এটি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রভাব ফেলতে পারে।অর্থাৎ এই সম্মেলন থেকে আমরা বিশ্ব অভিমত চালনা করতে পারি।

সিনেরাত গুনাওয়ার্ডেনা

সিলন

জনাব সভাপতি এবং সহ প্রতিনিধি:
আমাকে আপনার প্রতিবেশি দেশ সিলনের জনগনের চিন্তাধারা প্রকাশ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি সম্মেলনের সংগঠকদের কাছের কৃতজ্ঞ।বাংলাদেশের জনগনের মানবিক অধিকারের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি,বানিজ্য সংস্থা এবং ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ রয়েছে।আমি এই কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি এবং এই বেসরকারী সম্মেলনের দায়িত্ব আমার উপর অর্পিত হয়েছে।

আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেব,সেটি হল বিশ্ব জনতার সঠিক পথে পরিচালিত অভিমতের উপর বিশ্বের মানুষের স্বাধীনতা নির্ভর করে।এদেশে আগত ৮০ লক্ষ শরনার্থীর বিষয়টি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ উদ্বেগ হয়ে উঠুক এটাই এদেশে সমর্থনযোগ্য।এটা বলতে হবে না যে এটি আলজেরিয়া,ইন্দোনেশিয়া বা অন্য কিছুর অভ্যন্তরীণ বিষয়ের মত।আমি এটি প্রত্যাখান করছি।জাতিসংঘে আত্ম-নিরূপণের অধিকার সন্নিবেশিত হয়েছে।

এটি একটি পবিত্র নীতি।আমি বিশেষ করে ক্ষুধার প্রশ্ন উল্লেখ করছি।এটি অভ্যন্তরীন বিষয় ছিল না।তাই বাংলাদেশ একটি অভ্যন্তরীন প্রশ্ন এই অবস্থা মানতে আমি অস্বীকার করব।জাতিসংঘের বিষয়সূচীতে এটি অন্তর্ভূক্ত করা যুক্তিযুক্ত।বাংলাদেশ তার আত্ম-নিরূপণের অধিকার কোন সন্দেহাতীত বিনয় ছাড়াই ব্যবহার করেছে।

এটি একটি মানবিক প্রশ্ন।এই কারনে ১০ লক্ষ মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে এবং ৮৬ লক্ষ মানুষকে তাদের মাতৃভূমি থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে।অবশ্যই এটি একটি বিরাট দুঃখজনক ঘটনা।এখানে আরো বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আছে যা এত অল্প সময়ের মধ্যে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।এটা বলার জন্য যথেষ্ট যে এই প্রশ্নটি যাতে জাতিসংঘের সামনে আনা হয় সেটি দেখতে হবে।বাস্তবে আমি কোন কারন দেখি না কেন ভারত সরকারের মনোভাব নির্বিশেষে জাতিসংঘে এই বিষয়টি সঠিকভাবে তুলে ধরা হল কিনা এবং এই জাতিকে সাহায্য করার জন্য যে সকল সমর্থন ও সহযোগীতা প্রস্তুত করা হয়েছে তা প্রদান করা হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য একটি পর্যবেক্ষক দল থাকবে না।এটি একটি মারাত্মক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।আমাদের আরো দাবি করতে হবে যেন প্রত্যেক সৈন্যকে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রত্যাহার করা হয়।তাদের নেতা শেখ মুজীবুর রহমানকে অনতিবলম্বে মুক্তি দেওয়া উচিত ।যত দিন সামরিক দখলদারিত্ব শেষ না হবে কোন শান্তি আসবে না।এই সমস্যায় কোন সামরিক সমাধান সম্ভব নয়।এমনকি রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রেও আমি ভীত যে এই দিনে এটি যথেষ্ট দেরি হয়ে গেছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার কোন কমতি থাকা উচিত নয় এবং আমি এই বিষয়কে সমর্থন করার জন্য সকল বিভাগের প্রতি জোরালো আবেদন করছি যাতে এই বিজয় নৈতিকতার,ঔচিত্যের এবং সভ্যাতার  বিজয় হয়।

সিগরিড হ্যানিসদাল
অথবা

জনাব রাষ্ট্রপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
এখানে থাকা সুবিধার এবং বাংলাদেশের তীব্র সমস্যার সমাধানে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।আমি        এর সভাপতি।সারা বিশ্বের সকল দেশের জনগনের মত আমাদের দেশের জনগন খবরের কাগজ,রেডিও ও টেলিভিশন থেকে প্রতিনিয়ত শোনা এই অবিশ্বাস্য দুঃখদায়ক ঘটনা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তিত।আইএনজিও কমিটির সভাপতি হিসেবে আমি মনে করি আমাদের বর্তমান কাজ হতে পারে জনমত তৈরি করার জন্য বেসরকারী সংস্থার মাধ্যমে কঠোর পরিশ্রম করা এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তদাতাদের প্রভাবিত করার জন্য দলগুলোর প্রতি প্রবল দাবি জানানো।এবং সর্বশেষ কিন্তু ন্যূনতম নয়,আমি বিশ্বের নারীদের চ্যালেঞ্জ করছি: চলুন আর হাতাশাগ্রস্থ না থাকি।চলুন অগ্রগামী হই এবং আমাদের গ্রহের উপর সর্বকালের ক্রমবর্ধমান আক্রমনের বিরুদ্ধে চেঁচিয়ে “না” বলি।আমাদের দেশে সবচেয়ে গৌরবান্বিত উদাহরন আছে যা একজন নারীর ক্ষমতা এবং ইচ্ছাশক্তির দ্বারা সম্পন্ন করা সম্ভব।আপনাদের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পথনির্দেশক তারকা হতে দিন।

জন ডানহ্যাম
অস্ট্রেলিয়া

জনাব সভাপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
আমি মন্তব্য করব আংশিভাবে খুব সংক্ষিপ্ত কারন বাংলাদেশের সমস্যার আকার অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার অবদান সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ নয় এবং আংশিকভাবে কারন অস্ট্রেলিয়ার সম্ভাবনা।আমাকে এই বিষয়ে জোর দিতে হবে।অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে আমরা এই সম্মেলন থেকে ঠিকভাবে জানতে চাই এই সমস্যায় যারা আগ্রহী তাদের সাথে সঠিকভাবে সমন্বয় করতে হলে কি পদক্ষেপ নিতে হবে এবং কোন পথে এগোতে হবে। অস্ট্রেলিয়ানরা দুর্ভাগ্যবশত উটপাখির মত আচরন দেখিয়েছে যা সভাপতি তার উদবোধনী সম্ভাষনে উল্লেখ করেছে।আমাদের সরকার অন্যান্য সরকারের মত দৃঢ়তাসহকারে বলেছে যে এটি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।এটি উদবাস্তুদের ত্রাণসামগ্রীতে কিছু অবদান রেখেছে।প্রধানমন্ত্রী সংসদে একটি প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য কিছু ধারণা ও বিষয় জানিয়ে তিনি ইয়াহিয়া খানকে কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছেন।অনানুষ্ঠানিক পর্যায়ে আরো পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায় এবং বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে নিয়মানুগ প্রচারণা রয়েছে।অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশকে সমর্থন করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা প্রাথমিকভাবে অস্ট্রেলিয়ার জনগনের সুবিধার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে এই  সমস্যার অতীব মানবীয় বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিকভাবে আরো সম্পৃক্ত করতে তথ্য প্রকাশ করার কাজ করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের শর্তাধীন সরকারের সাথে অস্ট্রেলিয়ার আরো বেশি তথ্য ও যোগাযোগ দরকার।সংবাদপত্রগুলো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে কারন ভারতে অস্ট্রেলিয়ার কোন স্থায়ী সংবাদপত্র প্রতিনিধি নেই।এই কমিটিগুলো ভারতে সংবাদপত্র প্রতিনিধি পাঠানোর চিন্তা করছে এবং বাংলাদেশকে সমর্থন জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় তে সংবাদপ্রচারের ব্যাবস্থা নিচ্ছে।আমি এই বিস্তারিত প্রতিবেদনটি একটি আবেদনের কথা উল্লেখ করে বন্ধ করব যা ৪০০ জনেরও বেশি শিক্ষাবিদ এবং অন্যান্য পেশাদার ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ দ্বারা স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

ফ্রেড ভান্স
বৃটেন
জনাব সভাপতি,ভদ্রমহিলা এবং ভদ্রমহোদয়গণ:
ইহা সত্য যে আমি ইউনাইটেড কিংডমের পার্লামেন্ট এর একজন সদস্য,একজন সমাজতান্ত্রিক সদস্য কিন্তু জোর দিয়ে বলব যে এখানে আমি পার্লামেন্টের একজন হয়ে আসিনি।আমি আনন্দিত যে এটি একটি অ-দাপ্তরিক সম্মেলন।আমি এখানে আমার গ্রেট বৃটেনের খুব ছোট একটি অংশ ওয়েলস এর নিজস্ব ক্ষুদ্র ভূমিকায় বাংলাদেশ সংস্থার একটি উপস্থানা হিসেবে এসেছি।ইহা সবার পরিচিত থাকা উচিত বিশেষ করে সারা পৃথিবীতে,আপনাদের দেশে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ইতোমধ্যে পরিচিত বলে আমার মনে হয় কারন ওয়েলস আতিথেয়তার জন্য সুপরিচিত।অন্যান্য বিভিন্ন কারনের জন্যও ইহা সুপরিচিত।এখানে স্বাজাতিকতা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।এটি একটি দেশ যাকে আমার বৈশিম্যহীন দেশ বলতেই হবে।এখানে বসবাসকৃত জনগনও তাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ব্যাপারে সচেতন।ইহা একটি দেশ যা সারা পৃথিবীজুড়ে এর বিশিষ্ট সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। ইহা এর সংগীতের জন্যও পরিচিত।

আমরা ওয়েলস এ একটি বাংলাদেশ সংস্থা খুলেছি যেখানে ওয়েলস এর সকল রাজনৈতিক দল ওন্তর্ভুক্ত এবং প্রসংগক্রমে ওয়েলস এ একটি জাতীয়তাবাদী দল আছে। এই দলের লক্ষ্য হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে বিচ্ছেদ হওয়া। আমি একজন সমাজবিদ এবং আমার কাছে মানুষের স্বাধীনতা ও সমতা অবিভাজ্য যেহেতু বিশ্বশান্তি অবিভাজ্য। আজ বাংলাদেশে চরম ট্রাজেডি চলছে।আমি মাঝে মাঝে এর মনোবিজ্ঞান বোঝার চেষ্টা করেছি।সেখানকার ট্রাজেডির মাপকাঠি এতই বিশাল যে জনগন চিন্তা করার সাহস পায় না।আমি পূর্ব বাংলা ওরফে পূর্ব পাকিস্তানের কিছু দৃশ্য দেখেছি।মাঝে মাঝে তাদের আবেগ এতটাই জরাজীর্ণ যে খুবই সামান্য প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।আমাদেরকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে।সারা বিশ্বের জনগনের বিবেক জাগ্রত করতে হবে এবং আমার নিজের দেশে এটি বাস্তাবায়নের জন্য সুদৃঢ় প্রচেষ্টা অবশ্যই চালানো হবে।এই অবস্থা থেকে আমি শুধু আমার নিজের দেশের জন্য বলতে পারব।যেহেতু আপনারা জানেন,বৃটিশরা সর্বদাই সংকীর্ণচিত্ত,শুধুমাত্র ভৌগলিক দিক থেকেই নয় বরং সম্ভত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভূগোল এবং বিশ্বের অন্যান্য বিষয়ের ব্যাপারে।এই সংকীর্ণচিত্তের কারনে আমাদের দেশের সাধারন জনগনের মধ্যে যে ধারণা দ্বারা তারা কাজ করতে উৎসাহী হয় তা ছড়িয়ে দেয়া বেশ কঠিন।কিন্তু যা ঘটছে –মানে বংলাদেশের চরম দূর্ভোগ ,তাতে দ্ব্যর্থহীনভাবে বৃটিশ সরকারের নিন্দা জানাই।আমাদের সংসদীয় প্রতিনিধি দল আছে যা আমার সহকর্মী আর্থার বটমলি দ্বারা পরিচালিত।সম্প্রতি আমার অন্য একজন সহকর্মী পিটার শোর এর সাথে আপনাদের দেখা হয়েছে। আমরা হাউজ অফ কমন্স এ একটি সমাধানপত্র পাঠিয়েছি যেমনটি আজ সকালে আপনারা জাতীয় বিচারের স্বার্থে শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এবং একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য পাঠিয়েছেন।

এই সব কিছুই সাধারন পদক্ষেপ এবং আমার নিজের দল হাউজ অফ কমন্স এ এর চেয়ে বেশি কিছু ছাপাতে পারেনি।এই ধরনের ঘোষণা তৈরিতে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।এই ধনের মারাত্মক সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের সহযোগীতা দ্বারাই সম্ভব।আপনারা জানেন দুদিন আগে মিঃ বটমলি কমনওয়েলথ পার্লামেন্ট এসোসিয়েশনের মিটিং এ জোরালোভাবে বলেন যে তিনি তাদের ইয়াহিয়া খানকে জাগ্রত করেছেন যিনি এখন বলছেন যে সিপিএ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।

.

যুক্তরাষ্ট্রে প্রশাসনের সফল প্রভাবশালী আন নীতি নির্ধারক আমেরিকান কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হতো। তুলনামুলকভাবে কম পরিচিত সরকারী নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেশ বড় একটা দল ছিল যারা হয় ব্যক্তিগতভাবে নয়ত কাজের মাধ্যমে নিজেদের প্রকাশ ঘটিয়েছিল যেখানে তারা বিগত কংগ্রেস সেশনে পাকিস্তান কে সকল প্রকার ভবিষ্যৎ সহযোগিতা থেকে বিতারিত করেছিল। আমি বলতে পারি যা ছিল এযাবতকালে যে কোন তাৎপর্যপূর্ণ কাজের মধ্যে অত্যন্ত বাস্তব সম্মত।

কংগ্রেসের নতুন অধিবেশন চলছে এবং পাকিস্তান কে সর্বোপরি সকল প্রকার আর্থিক সহযোগিতা প্রত্যাখ্যানে সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করে যেতে সম্মত হয়েছি। কতটুকু সফল হতে পারি দেখার বিষয়। আগে থেকেই অনুমান করা কঠিন।

তা সত্ত্বেও আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন আমেরিকার সাধারণ মানুষ প্রবলভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। আপনারা যদি ব্যতিক্রম কিছু শুনে থাকেন আমি বলছি তা সঠিক নয়। বুদ্ধিজীবি, ছাত্র, তরুন আর অন্যান্যরা প্রশ্নাতীতভাবে জানে বাংলাদেশে কি ঘটছে। যদি এটা জনসাধারনের মতামত না হয় তবে এটা সম্পূর্ণ ভিন্ন কাহিনী।

পরিশেষে কিছু সতর্কবাণী। আপনাদের বুঝতে হবে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার সাধারণ জনগনের মধ্যে তিক্ত আর নেতিবাচক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা আশা করতেই পারে যা ঘটছে তা অচিরেই সমাপ্তির মুখ দেখবে। আমরা বলতে পারি না তারা নিজেদের সাথে আরও একবার প্রতারণা করবে কিনা। তারা নিশ্চিতভাবে এর শেষ চাই। তারা দেখতে চাই ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকার সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ অপসারণের মাধ্যমে এর সমাপ্তি ঘটুক। যতক্ষন এর সাথে বাংলাদেশের সম্পৃক্ততা রয়েছে ততক্ষণ এর প্রভাব বিদ্যমান এবং আমি মনে করি আপনারা তা বুঝতে সক্ষম। বিগত দশকে নয় বরং বিগত শতকে এক ভিয়েতনামেই যথেষ্ট অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিসরে সম্ভাব্য সম্পৃক্ততা উদ্বেগ আর প্রতিক্রিয়া বাড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশে যা ঘটছে আর ভিয়েতনামে আমেরিকার অভিজ্ঞতা এ দুইয়ের মধ্যে তুলনা চলেনা তা আমরা জানি। ইহা সত্য। কিন্তু সিংহভাগ মানুষ এসব নিয়ে ভাবতে পারেনা এবং যদি তা ভুলভাবে অগ্রসর হয় আর মনে করতে থাকে তারা কোন সামরিক অভিযানের দিকে প্রতারিতভাবে অগ্রসর হচ্ছে তবে তারা কঠোরভাবে এর প্রতিক্রিয়া জানাবে। আমি আশা করি এটা সবাই বুঝবে।

এছাড়া আমি আবারো বলতে চাই – এটা আমার শেষ কথা – কোন ভুল নয়, রাওয়ালপিন্ডির শাসনব্যাবস্থায় আমেরিকার জনগনের কোন সহানুভূতি নেই, মোটেই নেই। সেনানায়ক আর নেতাদের দ্বারা চলতে থাকা গনহত্যায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভ্যাব্য যে কোন সহানুভূতি হারিয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত সাধারণ জনগন সচেতন কেউ এটা সমর্থন করেনা। যদি প্রশাসন এই নীতি চালিয়ে যায় এতদিন ধরে যা চলে আসছে তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে যার কৌশলগত কোন গুরুত্ব রয়েছে। চায়নার ক্ষেত্রে প্রশাসন একটি নতুন পন্থা চালু করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেখুন, জনমতে যে বিভক্তি তা ঠিকমত সংহত অথবা সংগঠিত করা হয়নি এবং রাজনৈতিক বিষয়ে প্রশাসন যে ছায়ামূর্তি তা আমাদের কেউ কেউ ঠিকেই বুঝতে পারে। বাংলাদেশের জন্য যারা কাজ করে যাচ্ছে যদি তারা সফল হয়, আশা করি হবে, সেক্ষেত্রে ধারনা করা যায়, জনমত আবার নিয়ন্ত্রক হবে। এটাই হবে ভবিষ্যৎ ইস্যু যা হবে পরবর্তী বছরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারণা। আমি ফলাফল অনুমান করতে পারছি না। আমি এটুকু বলতে পারি যুক্তরাষ্ট্রে ক্রমবর্ধমান মানুষ এসব সমস্যা বুঝতে পারে এবং ফলাফল অনুকূলে আনতে তারা তাদের সর্বোচ্চ করে যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি একদিন আমেরিকার কৌশল বদলে যাবে যা হওয়া উচিত ছিল একদম শুরুতে। পশ্চিম পাকিস্তানের অপরাধীর শাসনের দিন আর বেশিদিন চলবে না।

মোহাম্মদ রোয়েম*

ইন্দোনেশিয়া

জনাব সভাপতি এবং বিশিষ্ট প্রতিনিধিঃ

আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এখানে এসেছি। আমি সেই ব্যক্তি কে জানি যিনি সমিতির প্রধান এবং যার আমন্ত্রন আমি অস্বীকার করতে পারি না। আমি যা বলতে যাচ্ছি তা একান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমি আশা করছি এই সম্মেলন যে গুরুতর সমস্যার মুখোমুখি তার সমাধানে এটা অবদান রাখবে। পূর্ব পাকিস্তানের স্বীকৃতি অনেক ইন্দোনেশিয়ানের কাছে ব্যাপক আগ্রহের বিষয়। কিন্তু আমি আকৃষ্ট হয়েছি যখন আপনি জাকার্তা যান আর পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে বৈদেশিক সম্পর্ক সমিতিতে বক্তৃতা দেন এবং অধিবেশনে আপনি যা বলেন তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। আপনি বলেছিলেন পাকিস্তানের বন্ধু ইন্ডিয়ার বন্ধু। আর ইন্দোনেশিয়া পাকিস্তান, ভারত উভয়ের বন্ধু, আমাদের মনে ছিল অবিভক্ত পাকিস্তান।

যদি কেউ সমস্যা সমাধানের আশা করে তবে তাকে সমাধানের পথ খোঁজার অংশিদার হতে হয়। কাজেই আমরা মনেপ্রানে সমর্থন দিয়েছি যাতে এই সম্মেলন কোন সমাধান বয়ে নিয়ে আসে। কোন এক সময় জাকার্তায় দুই বন্ধুর মধ্যে আলাপ চলছিল – একজন ইন্দোনেশিয়ান, অন্যজন পশ্চিম পাকিস্তানের। ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু বলল শেখ মুজিবর রহমান কে গ্রেপ্তার সবচাইতে বিপদজনক ব্যপার। পাকিস্তানের বন্ধু সম্মতি জানাল।

জনাব সভাপতি, আমি মনে করি না বাংলাদেশ পাকিস্তানের কোন অভ্যন্তরীণ সমস্যা। যদি তাই হত তবে ইন্দোনেশিয়ার অস্তিত্ব থাকতো না।

আমি আজ আপনাদের একটা গল্প বলতে চাই যা আজ ইতিহাস এবং মাঝে মাঝে বলা হয়ে থাকে যা জাতিসংঘের অল্প কিছু সফলতার মধ্যে একটা। এটা ইন্দোনেশিয়ার সমস্যায় জাতিসংঘের সফল হস্তক্ষেপের গল্প। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ হতে পারত ভাল দপ্তর নিশ্চিত করা, ক্ষমতা নিষ্পত্তির মধ্যস্থতার প্রয়োজন ছিল না। ভাল দপ্তর সাথে করে অধিক ক্ষমতা নিয়ে আসে আর পৃথিবীর জনমতের সমর্থন ও পায়। আমি মনে করি এটা একটা পন্থা জা আমরা অনুসরণ করতে পারব। ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র আর ওলন্দাজ এর মধ্যে বিরোধ চলছিল। হয়ত সেই দ্বন্ধ পূর্ব পাকিস্তানের শোকাবহ ব্যপারের চাইতে কিছু অর্থে ব্যতিক্রম। কিন্তু সুদীর্ঘ পরিসরে ব্যপারটা একই। যদি কোন দেশের অবস্থা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি হহয়ে দাঁড়ায়, তা আর অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকতে পারে না। এটা পরিষ্কার যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ। এটা আরও ভয়াবহ হতে পারে। জাতিসংঘ আর নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ না করার কোন কারণ থাকতে পারে না। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে ওলন্দাজ দাবি করেছিল এটা ওলন্দাজ সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যপার কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদ তাতে একমত ছিল না এবং একটি সমিতি নিযুক্ত করেছিল যার অস্তিত্ব ইন্দোনেশিয়ায় অপরিহার্য ছিল। তাই আমি এই ধারণা এই সম্মেলনে পেশ করতে চাই। আমি মনে করি এক্ষেত্রে শুধু ইন্ডিয়া একমাত্র দেশ নয় বরং আরও অনেক সহানুভূতিশীল দেশ আছে যেসব দেশ এই সমস্যা জাতিসংঘের সামনে নিয়ে আস্তে ইচ্ছুক।

*পরিদর্শক হিসেবে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

.

ডেন্টেল মেয়ার

ফ্রান্স

মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও প্রতিনিধিবর্গ

দয়া করে আমাকে মাফ করবেন যদি আমি ফরাসী বলে ফেলি। আমাদের প্রথম অবশ্যই সাধারন মানুষকে জানাতে হবে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে কোন সংঘাত নেই। কোন দেশেরই পাকিস্তানকে আর  কোন অস্ত্র দেয়া উচিত নয় যা কিনা সেখানে ভাতৃঘাতী গণহত্যা ঘটা হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই শরনার্থীদের ত্রান সরবরাহ করতে হবে এবং এটা শুধুমাত্র ভারতীয় সীমানার ভেতরে নয় বাংলাদেশের ভেতরেও করতে হবে। আমরা যুদ্ধে না জড়াই কারণ যুদ্ধ ভাগ্যাহত শরনার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি ব্যাতীত কোন সমাধান নিয়ে আসবে না।

শিশুদের ন্যায় ছোট বালিকাদের দ্বারা অভ্যর্থনা পাওয়া অত্যন্ত আনন্দের বিষয়।  এ দ্বারা বোঝা যায় আমার মনে হয় আমাদের অবশ্যই মানুষের উন্নয়নের দায়িত্ব নিতে হবে এবং রাজনৈতিক জীবন গঠনের দায়িতে বাঙ্গালি জনসাধারনের উপর ছেরে দিতে হবে। এই নির্মম নৃশংসতার বিরুদ্ধে আমাদের ঘৃণা অসন্তোষ পাকিস্তান সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া উচিত এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি অথবা বেসামরিক বিচারের আহবান জানানো উচিত। আমাদের জানতে হবে তিনি জীবিত আছেন। পশ্চিমা গণতন্ত্রের দায়িত্ব সায়ত্বশাসনের ইস্যুতে বাঙ্গালিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নির্বাচনকে রক্ষা করা।

পেভলে জেভরেমোভিক

যুগোস্লাভিয়া

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থকে আমরা কোনধরণের অতিরঞ্জন ছাড়াই বলতে পারি তারা মানব সভ্যতাকে কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে দিয়েছে। এই শরনার্থীরা কেন তাদের দেশ ছেড়েছে। আমি মনে করি তারা একটি গণতান্ত্রিক সমাজে বাস করতে চেয়েছে যেখানে তারা তাদের দেশের সম্পদ ব্যবহার করে তাদের পশ্চাদপদতা থেকে মুক্তি পাবে। তার পরিবর্তে বাংলাদেশের মানুষ একটি বর্বর যুদ্ধের সম্মুখীন হচ্ছে। কেউ বিশ্বাস করবে না এই মাত্রায় গনহত্যা সম্ভব,লক্ষ লক্ষ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শরনার্থীদের অব্যাহত স্রোত আমার দেশে চরম উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে এবং আমি বিশ্বাস করি অন্য দেশের মানুষের মাঝে একই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। এখানে দুইটি দিক রয়েছে এবং একটি সম্পূর্ন মানবিক। ভারতে শরনার্থীদের জন্য আমরা যা পারি ইতিমধ্যে তার চেয়ে বেশি করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সুনির্দিষ্টভাবে জাতিসংঘের কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া উচিত। আমি মনে করি একত্রিত হয়ে আমরা কিছু করতে পারি কিন্তু এটা কখনোই স্থায়ী সমাধান হবে না,গৃহহীনদের বাড়িঘড় ফিরিয়ে দেবে না। আমাদের উচিত তাদের ফিরে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি করা। আইনী তত্ব একপাশে সরিয়ে আমি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থকে আলোচনা করতে চাই। বাংলাদেশের মানুষের আত্বনিয়ন্ত্রনের মৌলিক অধিকারকে অস্বীকার করা উচিত হবেনা এবং মানুষের মতামতকে কোনভাবেই সামরিক নিপীড়নের মাধ্যমে দমিয়ে রাখা যায়না। পাকিস্তান সরকারকে এটা অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে।

আমরা বলতে পারিনা কি ধরণের পরিবর্তন হবে। এটা অনেকগুলো অঅনুমেয় বিষয়ের উপর নির্ভর করে যে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে কি হবে। কিন্তু আগে হোক পরে হোক সেটা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অধিকার এবং আমি মনে করি কোন বৈষম্য ছাড়া অবশ্যই সেটা ফিরিয়ে দেয়া উচিত। যুগোস্লাভিয়াতে ইতিমধ্যে আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের ব্যপারে বিবৃতি দিয়েছি। আমরা দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারিনা এবং এই সম্মেলন থেকে আমাদের কিছু সম্মিলিত পদক্ষেপ বিবেচনা করা উচিত। অবশ্যই এই পদক্ষেপগুলো এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভিন্ন হবে।

৬৮৪

রিশিকেশ সাহা

নেপাল

বাংলাদেশে থেকে ভারতগামী শরনার্থীদের সহায়তা করতে আমরা কাঠমান্ডুতে একটি কমিটি গঠন করেছি। আমি মনে করি ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক দিক থেকে ভারতের পরে নেপাল অন্য যেকোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তুলনায় নিকটবর্তী। আমি এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বলতে চাই পুর্ব বঙ্গের ঘটনা নেপালের মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে।  নেপালের পক্ষ থেকে আমরা পুর্ব বঙ্গ বা এই ব্যাপারে সমগ্র পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে কারণ আমরা মনে করি একমাত্র তার মুক্তিই পুর্ব বঙ্গের স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।

আমি মনে করি না, এটা জাতিসংঘ সনদের আওতাধীন কোন বিষয় নয়। এটা আমার দীর্ঘ দিনের অভিমত যে মানুষের স্বাভাবিক অধিকারের সাথে সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর প্রতি  আমরা যদি যথাযথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গুরুত্ব না দিলে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যেমন  দক্ষিন আফ্রিকায় তার জনগনের একটি নির্দিষ্ট অংশের অধিকার অস্বীকারের ব্যাপারে আমরা কোন ত্রুটি খুজতে পারিনা। আমি নিশ্চিত এই সম্মেলন এই দৃষ্টিকোন থেকে সমস্যাকে দেখবে।

আমাদের কমিটি বেশকয়জন প্রতিনিধিকে এই সম্মেলনে পাঠিয়েছে এবং আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই পুর্ব বঙ্গের সমস্যায় সহায়তা করতে  আমরা আমাদের সম্ভাব্য সবকিছু করবো। অবশ্যই আমরা একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক দল। আমরা সর্বোচ্চ জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলোর কাছে বাংলাদেশের নতুন সরকারের স্বীকৃতির  ব্যাপারে আবেদন জানাতে পারি।

ভি. ডেভিড

মালয়েশিয়া

মাননীয় সভাপতি ও সহকর্মী প্রতিনিধিবর্গ

বাংলাদেশে বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য মালয়েশিয়ার জনগনের পক্ষ থেকে উষ্ণ শুভকামনা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশের জনগনের সংগ্রামের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও অনুভুতি প্রদর্শন করতে আমরা এখানে এসেছি। ১৯৭১ এর মার্চ থেকে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ হনহত্যা চলছে তার প্রতি আমাদের উদ্বেগ জানাতে ও আপনাদের মতামতকে সুদৃঢ় করতে এখানে এসেছি। আমি নিশ্চিত এই সঙ্কটজনক মুহুর্তে আমার সাথে একমত পোষন করবে যে বাংলাদেশ বিষয়ক তথ্য মালয়েশিয়াতে কখনোই সহজলভ্য ছিলোনা। আমাদের সরকার এই ব্যাপারে একদমই নীরব। কিন্তু জনসাধারণ উদ্বিগ্ন। তারা বাংলাদেশে স্বাধীনতার উচ্ছ্বাস দেখতে চায়। সেখানে বিভিন্ন চিন্তাধারার মত চালু রয়েছে। কেউ বিশ্বাস করে এটা ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ। আবার অন্যরা বিশ্বাস করে বাংলাদেশের জনগন স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। যদি আমরা আত্ননিয়ন্ত্রনের অধিকারকে মর্যাসা দেই তবে কোন জাতি কোন মানুষ বাংলাদেশের মানুষের অধিকারের ব্যাপারে নীরব থাকতে পারেনা। দ্বিতীয়ত,যদি কেউ বাংলাদেশ বিষয়ে কথা বলতে চায় সেখানে একজন নেতা রয়েছেন, শেখ মজিবুর রহমান,তিনিই একমাত্র আইনসম্মত ও জনপ্রিয় ভোটে নির্বাচিত গনতান্ত্রিক নেতা। যদি এশিয়াতে শান্তি ও সমৃদ্ধি অক্ষুণ্ণ রাখতে হয় তবে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং কোন শক্তির দ্বারা যদি আলোচনা করতে হয় তবে তা অবশ্যই তার সাথে করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কাজ করছে তাতে মালয়েশিয়াতে আমরা বিচলিত ও বিরক্ত। যদি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অনেকেওই গত কয়েক মাসে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদশের মানুষের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে,নিক্সন প্রশাসন অত্যন্ত ধুর্ত ভুমিকা পালন করছে এবং এটা আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকারের যেকোন আলোচনাকে নিঃসন্দেহে প্রভাবিত করছে। সুতরাং যতক্ষণ এটি উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপুর্ন হয় সেই পর্যন্ত সামনে এগিয়ে যেতে প্রস্তুত হওয়া দরকার। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে মানবতা। মানুষের প্রতি এই নৃশংসতা,গণহত্যা ও ভয়াবহ পরিস্থিতির বিচার হওয়া প্রয়োজন আর আমরা মালয়েশিয়ার জনগন স্বাধীন মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার বাংলাদেশের মানুষের এই ন্যায়সম্মত ও যৌক্তিক আন্দোলনে তাদের পাশে থাকব।

জনাব সুরিয়ান

মালয়েশিয়া

আমরা ডেমোক্র্যাটিক এ্যাকশন পার্টি মালয়েশিয়া কিছুটা বিস্মিত যে আমাদের সরকারের নেতারা এখনো মনে করে যে বাংলাদেশের বিষয়াবলী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন সমস্যা।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষনা করার পর কোনভাবেই পাকিস্তানের অংশ নয়। বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে সকল আন্তর্জাতিক নীতি ও শর্তাবলী পূরন করেছে। একটি স্বাধীন হিসেবে আত্নপ্রকাশ করতে যেসকল বৈশিষ্ট থাকা দরকার তার সবই রয়েছে।

সুনির্দিষ্ট সীমানার সাথে রয়েছে নেতৃত্বের প্রতি জনসাধারণের চরম আনুগত্য। তাদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা এবং সকল শাখার বেসামরিক প্রশাসনের জাতীয় সরকার রয়েছে। তাদের রয়েছে জাতিগত ও ভাষাগত সমসত্বতা। সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগের শেখ মুজিবুর রহমান গনপরিষদের ১৬৯ আসনের ১৬৭টিতে জয় লাভ করেছেন যা প্রায় ৯৯ শতাংশ ।

বাংলাদেশের জন্মের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল জাতির নতুন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের মাধ্যমে পুর্ব বঙ্গের মুজিবনগরে ।  ইতিহাস রচিত হয়েছিল ঠাকুরের “আমার সোনার বাংলা” গানের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উন্মোচনের মাধ্যমে। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেছেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল কতিপয় গোষ্ঠী ও সকলের জন্য যে প্রাদেশিক সরকারের আর কোন কাগুজে অস্তিত্ব নেই।

এই অনুষ্ঠানে সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে জাতীয় পরিষদের সদস্যবৃন্দ,টেলিভিশনের চিত্রগ্রাহক ও বিদেশী প্রতিনিধি ও প্রায় ১০০০০ মুক্তিযোদ্ধা যোগ দিয়েছিলেন।

মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণার বিধান ২০(৩) এ বলা হয়েছে,’’ জনগণের ইচ্ছাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি,এই ইচ্ছার বহিপ্রকাশ হবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ও প্রকৃত নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং গোপন ভোট বা সুষম নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো হয়নি। তার পরিবর্তে সেনাবাহিনী নামানো হয় জনতার আকাংখাকে দমন করতে,কিন্তু ইয়াহিয়া ও তার সহচরেরা যে বিষয়টি উপেক্ষা করেছেন তা হল আপনি হয়তবা কিছু মানুষকে হত্যা করবেন কিন্তু তাদের নিজের কথা বলার ও আত্ন-সম্মানের ইচ্ছাকে হত্যা করতে পারবেন না। ভিন্নমতাবলম্বীদের বিনাশ করে সমস্যার সমাধান হয়না। এমন প্রত্যেক শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবন্দী করলে আর নতুন ১০ জন তার জায়গা নেবে এবং একই কারণে লড়াই করবে।

৬৮৬

সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষনার ২০(৩) এর প্রস্তাবনার উপ-অনুচ্ছেদ যা নারী-পুরুষের সমানাধিকারের কথা বলছে তা পুনরায় আশ্বস্ত করছে,’’ মৌলিক মানবাধিকার,মানুষের মর্যাদা ও ব্যাক্তি মানুষের মূল্যে বিশ্বাস।” মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা প্রস্তাবনায় আরও নিহিত আছে সদস্য রাষ্ট্রগুলো,’’মৌলিক স্বাধিনতা ও মানবাধিকার পালনের সার্বজনীন মর্যাদা প্রচারে’’ তাদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। অতএব, বাংলাদেশের এই ঘটনা কখনো তাদের অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবে ব্যাখ্যা করা যাবে না। বর্নবাদের চর্চা করা হচ্ছে আর মৌলিক মানবাধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। এটা আন্তর্জাতিক উদ্বেগের বিষয়। যদি জাতিসংঘ দক্ষিন আফ্রিকায় হস্তক্ষেপ করতে অধিকার প্রাপ্ত হয়,যদি আর সমর্থনযোগ্য না হয় তবে পুর্ব বঙ্গের ক্ষেত্রেও সমভাবে হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে। এটা দুঃখের বিষয় যে জনাব ভুট্ট যিনি জাতিসংঘে রোডেশিয়া আর দক্ষিন আফ্রিকায় স্বাধীনতাকামী সংখ্যাগুরু আফ্রিকানদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে তারস্বরে চিৎকার করে মাথায় তুলছেন,তিনি ইয়ান স্মিথ আর জন ভরস্টার এর ভিন্ন কোন পথ অনুসরণ করছেন না। এটা চালুন বলে সুচ তোমার পিছন কেনো ছেদা এধরণের বিষয়। এটা কি বলা যেতে পারে যে পশ্চিম পাকিস্তানী জান্তা পাকিস্তানের আওতার ভেতর থেকে নিয়মতান্ত্রিক বিনাশ   ও বাংলাদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের প্রতি সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে বলে বিশ্বের অন্যদেশগুলোর হস্তক্ষেপের কোন আইনী বাধ্যবাধকতা নেই ?

বাংলাদেশের উপর দিয়ে একে একে যে নিদারূন ও ভায়ানক অত্যাচার বয়ে চলেছে তাতে নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে বসে থাকা কঠিন। ইয়াহিয়া খান প্রকৃতপক্ষে যা করছে তা হল গনহত্যা যেটা আন্তর্জাতিক আইনে ঘোষিত অপরাধ। ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের ঘোষণা বলছে গনহত্যা একটি অপরাধ ও দায়ী ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক আইনে শাস্তিযোগ্য। পাকিস্তানের যদি মানবাধিকার রক্ষার কোন আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা থাকে তবে এধরণের বিধি ভঙ্গ কোনভাবেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় হতে পারেনা।

  পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকান্ড আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করছে। ৩৯ ধারার ৭ম অধ্যায় অনুযায়ী যেকোন প্রকার শান্তির বিচ্যুতি নির্ধারনের জন্য জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে এবং ৪১ ও ৪২ ধারা অনুযায়ী একই ধরণের দায়িত্ব রয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা পুনর্বহালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের ক্ষেত্রে। পৃথিবীর এই অংশ এখন আরেকটি ভিয়েতনাম হয়ে গেছে এবং এটা আরো দুঃখের বিষয় যে পশ্চিম পাকিস্তান যে ভিয়েত্নামে হত্যাকান্ডের ব্যাপারে নিন্দা জানিয়ে উচ্চকিত হয়েছে কিন্তু এখন মেশিঙ্গান তাক করে চার দিনের মধ্যে ভিয়েতনামে চার বছরে নিহত মানুষের চেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করেছে।

বাংলাদেশের এই ব্যাপক হত্যাকান্ড ভারতে শরর্নার্থী সমস্যা সৃষ্টি করে অনিবার্য বাড়তি খরচের চাপ তৈরি করেছে। ৮০ লক্ষের অধিক মানুষ ভারতে পালিয়ে গেছে। দরিদ্র একটি দেশে এই সংখ্যা প্রতিদিন ৪০ হাজার করে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই শরনার্থী সমস্যা অন্যান্য দেশের ঐক্যমতের ভিত্তিতে মোকাবেলা করা উচিত। এতা আনন্দের যে স্ক্যান্ডীনেভিয়ান দেশগুলো শরনার্থীদের অর্থ সহায়তা দিয়েছে কিন্তু এটা পর্যাপ্ত নয়। পশ্চিম বঙ্গের বন্যা পস্থিতিকে আরো খারাপ করেছে।

আশা করা যায় আমাদের বৈঠক ফল্প্রসু হবে এবং নিরর্থক চর্চা হবে না। আমরা ফলাফল দেখতে চাই-বাস্তব ফলাফল।

আমাদের সুপারিশ

.

13.239.691

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্নে ফিনল্যান্ডের ছাত্র সমাজ ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

শিরোনামঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ফিনল্যান্ডের ছাত্রসমাজ

সূত্রঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

তারিখঃ ৫ অক্টোবর, ১৯৭১

                বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে ফিনল্যান্ডের ছাত্রসমাজ

মুজিবনগর, ৪ অক্টোবরঃ বাংলাদেশি শরণার্থীদের ভারত থেকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হলো একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা, বলে অভিমত প্রকাশ করেছে ফিনল্যান্ডের স্টুডেন্টস ন্যাশনাল ইউনিয়ন।

সম্প্রতি তারা তাদের নির্বাহী কমিটির এক সভায় ফ্যাসিস্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানায়। তারা আজকে বাংলাদেশ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন কর্তৃক প্রকাশিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্র তুলে ধরে বলেন, এই গণহত্যাই ভারতে আশি লক্ষ শরণার্থী আশ্রয় নেয়ার মূল কারণ।

তারা আরও বলেন,”গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামকে দমনের জন্য চালানো কঠোর নিপীড়ন, রাজনৈতিক অধিকার লংঘন, দেশকে আর্থিকভাবে চরম বিশৃঙ্খলার মাঝে ঠেলে দেয়া এবং দেশবাসীর উপর চালানো অমানুষিক নির্যাতন দেখার পর এটা সবার কাছেই স্পষ্ট, পূর্ব বাঙলার জনগণের সামনে স্বাধীনতা ঘোষণা করা এবং তা অর্জনের জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই।”

তারা বাংলাদেশের ছাত্রদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ আপনাদের সামনে এছাড়া আর কোন রাস্তা খোলা নেই”।

.

13.241.694-695

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটির ম্যানিফেস্টো বাংলাদেশের ডকুমেন্টস অক্টোবর, ১৯৭১

ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটির ম্যানিফেস্টো- অক্টোবর, ১৯৭১।

পূর্ববাংলার আগের অপরিমেয় মর্মপীড়া এবং দু:খজনক অবস্থা সামনের মাসে আরো খারাপের দিকে যাবে, বিশেষত কৃষিক্ষেত্রের ধ্বংসের হিসেব সাপেক্ষে, ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটি নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর উপর ফ্রান্সের জনগণ এর মতামত আহবান করে।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে পশ্চিম পাকিস্তান বাঙ্গালীদের ঔপনিবেশিক ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে রেখেছিল। একটি খুবই ব্যাপক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের জন্য, দেশে সংগঠিত সার্বজনীন ভোটাধিকার এর উপর ভিত্তি করে প্রথম অবাধ নির্বাচনের সময় প্রায় নিজেরাই সর্বসম্মতিক্রমে ঘোষিত। ১৯৪০ সালের গোড়ার দিকে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কর্তৃক এই স্বায়ত্তশাসন প্রদত্ত ( Resolution of Lahore).

এই নির্বাচন কর্মসূচীতে আওয়ামিলীগ পুনরায় স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্তাপন করে।  এই আইনত কর্মপন্থার উপর নির্ভর করে, পূর্ববাংলার ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে ওরা জয় লাভ করে, পুরো পাকিস্তানে ৩১৩ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসনে নিরন্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গণপরিষদের অধিপতি হিসেবে নিশ্চিত হয়। গণতান্ত্রিক এবং সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার মধ্যে, ৫৫ মিলিয়ন পশ্চিম পাকিস্তানীর বিরুদ্ধে, ৭৫ মিলিয়নেরও বেশী বাঙালী জনতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সম্মুখে। ইসলামাবাদের সামরিক সরকার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে  স্বায়ত্তশাসনের জন্য সংকল্পবদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের রক্তের মধ্যে ডুবাতে চেষ্টা করে। আসলে, বাঙালী জাতির স্বাধীনতার জন্য সংকল্পই একমাত্র অনূসৃত পরিবর্তন, যা এটাকে সহযোগীতার প্রতি প্রত্যাখ্যান ব্যাক্ত করে, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের সংবিধান অনুযায়ী,  এবং গেরিলা দ্বারা গত ছয় মাসে প্রমাণিত হয় বাঙালী জনগণের  ক্ষমাহীন সংকল্প।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে এই বর্বর নিপীড়ন অব্যাহত, যার কারণে, ইতিমধ্যে কয়েক লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটেছে, এটি উদ্রেককর দুর্দশা এবং দুর্ভিক্ষ,  লক্ষ্যহীনভাবে ইন্ডিয়ায় ৯ মিলিয়ন বাঙালী প্রস্থান করেছে। শরণার্থীদের স্রোতের পরিমাণ এখনো প্রতিদিন দশ হাজারেরও বেশী।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গঠিত একটি স্বেচ্ছাকৃত এবং নিয়মিত ব্যাতিক্রমধর্মী গাম্ভীর্যের লঙ্ঘন এবং সুযোগ, এবং বিশদভাবে:

১. মানুষের অধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা,  অনুচ্ছেদ – ২১;

২. জাতিসংঘের দলিল, রাজনৈতিক এবং নাগরিকের অধিকার সচেতন আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুচ্ছেদ ১ এবং ২৫।

৩. প্রতিরোধ ও গণহত্যা অপরাধ দমনের জন্য সম্মেলন ( ৯ ই ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালের জাতিসংঘ পরিবেশ  পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত এবং ১ ই ডিসেম্বর ১৯৫১ সালে প্রাণশক্তি পায়)।

আসলে সব হিসেবে এটা প্রমাণিত যে, সেখানে নিয়মকানুন বর্জন করে অভিজাত এবং বাঙালী জনগণের নেতাদের এবং পুরো দেশের জনগণের উপর ধ্বংসকরণ চলছে।

দশ মিলিয়ন লোকের ভাগ্য ঝুঁকির মুখে, কেবল যেহেতু অপরিহার্য নীতি এবং দাম জড়িত, একটি জাতি জোড় এবং নিপীড়ন দ্বারা বঞ্চিত এটাকে মীমাংসা  করা এর অধিকার।একটি একক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারের অন্যত্রস্থীতি পেছন থেকে ভরসা করা দীর্ঘসময় ধরে সম্ভব নয়।এই দু:খজনক ঘটনার বিভিন্ন মাত্রা এটাকে আন্তর্জাতিক ব্যাপারে রুপ দিয়েছে। অধিকাংশ সরকারের নিরবতায় আমাদের এটা নিয়ে কথা বলতে এবং ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করে।আমাদের কার্যকলাপ অবশ্যই নিম্নলিখিত নির্দেশনাবলী অনুযায়ী বিশেষভাবে প্রয়োগ করা হবে।

১) প্রাণবধের জন্য সাহায্য। আমাদের সরকারের বরাদ্দের পরিমাণ যতদূর চাহিদা, তার অনুপাতের বাইরে, এবং সামান্য পরিমাণে আন্তর্জাতিক সহায়তা সরবরাহ করা হয়।যার ১০ ভাগই ব্যয় করা হয় ইন্ডিয়ায় আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের বেঁচে থাকার জন্য। আমাদের দেশ খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব বেশী কিছু করতে প্রস্তুত। পূর্ববাংলার জনগণের কাছে শুভেচ্ছা হিসেবে সহায়তা পাঠানো হয়েছে, এটা যুক্তিযুক্ত নিশ্চিয়তা যে পাকিস্তানী সরকারের রাজনৈতিক চাপের কারণে এটার পরিবর্তন হবে না।

২) একটি রাজনৈতিক সমাধান কামনা। এটি অবশ্যই প্রকৃত এবং বাঙালী জনগণের মনোনীত প্রতিনিধির সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে হতে হবে। এর দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির কথা প্রকাশ পায়।শরণার্থীদের, সম্মতিক্রমে অবাধে প্রত্যাবর্তন করা গেলে প্রমাণিত হবে যে একটি সন্তোষজনক নিষ্পত্তিতে পৌঁছানো গেছে।

৩) অস্ত্র সরবরাহে বিলম্ব। আমাদের দেশ পাকিস্তানী  আর্মীদের অস্ত্র সরবরাহকারীদের মধ্যে প্রধানতম, শেষ চুক্তিতে কয়েক ডজন ” Mirages” অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, আমরা বিদেশী উৎস থেকে জেনেছি যে আমাদের সরকার এই চুক্তি নিষ্পত্তি এবং অস্ত্র না দেওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে।আমাদের সরকার থেকে এই বিষয়ে সরকারী ঘোষণা অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ। যতক্ষন না পর্যন্ত পূর্ব বাংলায় সামরিক অপারেশন বন্ধ হবে, পাকিস্তানে সকল প্রকার অস্ত্র, যুদ্ধোপকরণ এবং অতিরিক্ত অংশের সরবরাহের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিৎ।

৪) অর্থনৈতিক সহায়তার চাপ, ফ্রান্সের, আন্তর্জাতিক সহায়তা কেন্দ্র থেকে পাকিস্তানের প্রতি, উত্তাপন করা উচিৎ, সহায়তা কেন্দ্রের বিলম্বিত প্রভাব বজায় রাখা, সেইসাথে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার বরাদ্দ ইসলামাবাদে বন্ধ করে দেওয়া, যতক্ষণ পর্যন্ত, পাকিস্তানি সরকার বাঙালি জনগণের উপর নিপীড়ন অব্যাহত রাখবে।

ফ্রান্সের বাংলাদেশ সংহতি কমিটি,উপরিউক্ত বিষয়ে শিল্পমন্ত্রীর ব্যবস্থা  গ্রহণকে  উৎসাহিত করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, পূর্ববাংলার পরিস্থিতির উপর ফ্রান্সের জনগণের মতামত অবহিত করা এবং যারা অত্যধিক সহজে শক্তিহীনতায় মারা যাওয়ার পথে তাদের মধ্যে যোগাযোগ নিশ্চিত করা।

.

13.242.696-697

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের শরণার্থী প্রশ্নে হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের প্রধানের বিবৃতি বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ১১ নভেম্বর, ১৯৭১

হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের সভাপতির বিবৃতি।

নভেম্বর ১১, ১৯৭১।

এই বিবৃতিটি সাবেক হাঙ্গেরীয় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক মন্ত্রী এবং হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের সভাপতি, লেনিন নোবেল বিজয়ী ড: এন্ডার সিক প্রকাশ করেন।পূর্ববাংলার শরণার্থীরা ইন্ডিয়ায় প্রস্থানের সমস্যাগুলো এবং কারণের বিষয় নিয়ে।

আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এই কারণে যে, ইন্দো- পাকিস্তানের সীমান্ত দিনদিন খারাপ থেকে খারাপ হচ্ছে।সম্ভবত  বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বে এমন কোন জায়গা নেই,  যেখানে এরকম সামরিক দ্বন্দ্ব বেঁধেছে। আমরা নির্বিকার ছিলাম। ইন্দো – পাকিস্তান উপ মহাদেশের জনগন বিশেষভাবে আমাদের কাছের।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, Sandor Korisi Csoma, Anrel Stein এবং Ervin Baktai ঐতিহ্যগত এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্কে শক্তিশালী অবদান রেখেছে, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ীক সম্পর্ক দ্বারা।শুধুমাত্র ইন্ডিয়াতেই নয় বরং পাকিস্তানেও। হাঙ্গেরীয় জনগনের কাছে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান ভালো বন্ধু  এবং সীমান্তের উভয় পাশের পরিখাগুলোতে শুয়ে থাকা মানুষ গুলোর জীবন আমাদের কাছে খুব দামী।

আমরা এই বিষয়ে আরো বেশী উদ্বিগ্ন যে, বর্তমানে এই যুদ্ধটি স্থানীয় পর্যায়ে থাকবে তার কোন  নিশ্চয়তা নেই। বিপদজনক, ছোট মনমানসিকতা এই যুদ্ধটিকে মহাদেশ পর্যন্ত সহজেই ছড়িয়ে দিতে পারে এবং যে দ্বন্দ্বটি সহজাত প্রবৃত্তি থেকে উৎপত্তি হয় তা আরো ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। আমরা খুব কাছ থেকে দেখছি কিভাবে উদ্বিগ্নতা বাড়ছে। গতবছর পাকিস্তানে কি হয়েছিল তা আমরা দেখেছি এবং বিশেষত এই বছর বসন্তকালে যখন পূর্ব পাকিস্তানের বৈধভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে হত্যা করার জন্য।মার্চের শেষদিকে ঢাকায় যে ভয়ানক হত্যাকান্ড ঘটেছিল এবং তারপর প্রায় এক কোঠি মানুষ ইন্ডিয়াতে পালিয়ে গিয়েছিল তা আমরা অবগত আছি। আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন  এই মানবিক বিপর্যয়ে, যেটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল শরণার্থী শিবিরে, এবং লাখ লাখ লোক ঘর আর দেশ ছেড়ে, ক্ষুদা আর দুর্দশায়  বসবাসের চিত্র।এই বিষয়ে আমাদের জনগণের  উদ্বেগ সুস্পষ্ট, যে কারণে হাঙ্গেরীয় শান্তি পরিষদের প্রতিনিধি দ্বারা আমরা ৮৫০০০ ডোজ কলেরা ভ্যাক্সিন শরণার্থী শিবিরে পাঠিয়েছিলাম।ইতিপূর্বে, একটি হাঙ্গেরীয় শান্তি প্রতিনিধিদল ইন্ডিয়ায় ছিল।এবং ওরা তাদের সাথে ব্লাড প্লাজমা,ঔষধ, কম্বল শরণার্থীদের জন্য নিয়ে গিয়েছিল। আমাদের মোট জনসংখ্যা ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত শরণার্থীর সংখ্যার চেয়ে বেশী নয়। আমরা অবগত যে, ইন্ডিয়ার জন্য এটি কত বিরাট বোঝা এবং সে জন্য আমাদের পরিমিত সামর্থ্য দ্বারা আমরা প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নিয়েছি সাহায্যর জন্য।

ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান উভয় দেশের সকল জনগণ আমাদের বন্ধু। জাতীয় স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরশীলতা এবং সামগ্রিক আত্ম- নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের চেষ্টা, আমাদের সহানূভুতি আহবান করে, এবং আমরা তাদের পাশে আছি।কিন্তু পাকিস্তানে সৃষ্ট বর্তমান উদ্বিগ্নতা নিয়ে আমাদের প্রত্যয় লুকায়িত রাখতে পারিনা।একমাত্র পাকিস্তানকেই এর একটা সমাধান বের করতে হবে, শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার সাথে সম্পর্কের জন্য নয়, এটা আমাদের মতামতের মধ্যে কেবল দ্বিতীয় প্রশ্ন,

কিন্তু সবাইকে তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

পেজ:- ৬৯৭

ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যাওয়া লাখো মানুষের ভাগ্যে নিয়ে পাকিস্তান নির্বিকার থাকতে পারে না।

এই বিতর্কের বিষয়ে সমাধানে তারা যতদিন পর্যন্ত কোন সম্ভাব্যতা খুঁজে বের করবে না ততদিন এই উপমহাদেশে কোন শান্তি বিরাজ করবে না। পূর্ব পাকিস্তানে বৈধভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে জনগণের অধিকারের জন্য কথা বলেন।পাকিস্তান সরকার যদি মার্চের অনুকরণীয় নীতি পুনর্বিবেচনার বিষয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিত, তাহলে হয়ত সমাধানের পথে আসতো, যদি তারা পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধিকে ছেড়ে দিত এবং তাদের সাথে আলোচনা করতো, পুরো পৃথিবী তাদেরকে সম্মান এবং শ্রদ্ধার চোখে দেখতো, পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে সমাধান হয়ে যেত, শরণার্থীরা ঘরে ফিরে যাওয়ার সাহস এবং নিশ্চয়তা পেত, এটাই যুদ্ধ এড়ানোর একমাত্র সম্ভাবনা ছিল।

একটা ছোট দেশ  এবং ছোট জাতি হিসেবে আমরা জ্ঞ্যত যে, আমাদের কথা, দুইটি জাতির মধ্যে এরকম মারাত্মক দ্বন্দ্ব সমাধান করতে পারবে না।কিন্তু বর্তমান এই খারাপ অবস্থায় এটা প্রত্যেকটা মানুষের শুধুমাত্র অধিকার নয় বরং দায়িত্ব যে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। হাঙ্গেরীয়ান শান্তি পরিষদের বক্তব্য এবং অবস্থান, দশ লক্ষ হাঙ্গেরীয়ান মানুষের মতামত উপস্থাপন করে।

এই মতামতটি একেবারেই দ্ব্যর্থহীন, এই উদ্বিগ্নতার বিষয়ে এটি শিথলীকরণ এবং লাগবকরণ ব্যতীত একটি রাজনৈতিক সমাধান আশা করে যা এই উপমহাদেশের কাছে কল্পনাতীত। আমরা দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু উচ্চ রাষ্ট্রনায়কত্ব এবং সংযম দ্বারা যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব এখনো থামানো সম্ভব।

.

13.243.701-717

         শিরোনাম              সূত্র            তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র        নেতৃবর্গের বিবৃতি      ‘বাংলাদেশ ডকুমেন্টস’      এপ্রিল-ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২২শে এপ্রিল,ক্যানবেরায় প্রতিনিধিবর্গের সভায়,অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী        মাননীয় উইলিয়াম ম্যাকমোহানের বিবৃতি
২২শে এপ্রিলের সভায়,মাননীয় ব্রায়ান্টের প্রশ্ন,কেনো তিনি পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের ব্যাপক হত্যায় কোনো প্রকাশ্য প্রতিবাদ করেননি,এর উত্তরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর জবাবে বলেনঃ

অবশ্যই আমরা এই প্রাণহানিতে দুঃখপ্রকাশ করি,এবং এই সভায় আমি এটা জানাতে পারি যে এই রক্তপাতে আমরা কতটা অনুতপ্ত,বিশেষ করে যেহেতু আমরা চিহ্নিত করেছি,সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান,উভয় দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ হতে জোরালো সমর্থন পেয়েছে।পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির বিবৃতিকে আমরা সাধুবাদ জানাই যেখানে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি যত শীঘ্র সম্ভব অসামরিক শাসন পুনরারম্ভ নিশ্চিত করবেন।আমরা আশা করছি যে তিনি খুব দ্রুত তার বক্তব্যকে কাজে প্রয়োগ করতে পারবেন এবং,সর্বোপরি,এই মত জ্ঞাপন করবেন যে,সেখানে আর কোনো প্রাণহানি হবে না ও আওয়ামী লীগের নেতাকে পূর্ণ ক্ষমতা অর্পণ করা হবে যাতে পাকিস্তানের গণপরিষদে বেসামরিকভাবে তাদের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন।

নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি
২৪শে মে, ১৯৭১

নিম্নলিখিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অধিকার সম্মানিত মাননীয় কিথ হ্যালইয়র্কে-এর ২৪শে মে,১৯৭১ এর বিবৃতির উপর ভিত্তি করেঃ

“পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনায়,নিউজিল্যান্ড নিশ্চুপ বা উদাসীন নয়”,প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
জনাব কিথ-কে বক্তব্য দিতে বলা হয়েছে বিরোধী দলের নেতার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে,যখন তিনি নিউজিল্যান্ড ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে ছিলেন।প্রতিবেদনে জানা যায় জনাব কির্ক বলেছেন, “কোনো প্রকাশ্য প্রতিরোধ না নিয়ে,আমরা শুধু নিজেদের দোষারোপ করতে পারি যদি জনগণ ভাবে আমাদের নীরবতা উদাসীনতার প্রাচীর”।

যখন তিনি তাঁর বক্তব্য দিয়েছিলেন,জনাব কির্ক সম্ভবত অবগত ছিলেন না যে ১৪ই এপ্রিল বদলি প্রধানমন্ত্রী একটি সর্বজনীন বিবৃতি জারি করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভোগ ও প্রাণহানি যার সাথে যুক্ত হয়েছে আত্মবিরোধ,তাতে সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ করে।এই পরিস্থিতিতে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির উপর জোর দিয়ে,জনাব মার্শাল দ্রুত এই রক্তপাত বন্ধের এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক এবং সামরিক নেতাদের দ্বারা আলাপ-আলোচনা ও আপোষের মাধ্যমে চুক্তি সম্পন্নের প্রয়াস পুনরারম্ভের আহবান জানিয়েছেন।

৭০২

“জনাব মার্শাল-এর বিবৃতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে”, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকলেন। “এটা পাকিস্তানের সরকারের-ও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ক্যানবেরায় এর দূতাবাসের মাধ্যমে।

মাননীয় কিথ যোগ করলেন যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের সাম্প্রতিক অধিবেশনে ভারতের প্রশ্ন উত্থাপনের অধিকার কে নিউজিল্যান্ড সমর্থন করেছে।৭ই মে পরিষদের সামাজিক সমিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী নিয়ে নিউজিল্যান্ডে যে গভীর উদ্বেগ অনুভূত হয়েছে নিউজিল্যান্ড স্থায়ী প্রতিনিধি তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।“এই পরিস্থিতির মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি হল এই যে,এই রক্তপাত ও দুর্ভোগ,নিউজিল্যান্ডবাসীর সবচেয়ে বেশী মর্মপীড়ার কারণ হয়েছে”,জনাব স্কট বলেছেন, “কিন্তু উপমহাদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর তাৎপর্য নিয়েও আমরা সমানভাবে উদ্বিগ্ন”।

“সরকার পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে এই দেশে যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে শুধু তাই উল্লেখ করেননি” প্রধানমন্ত্রী বললেন, “আমরা এটা চিহ্নিত করেছি যে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ-ও প্রয়োজন।এখন এখানে পূর্ব পাকিস্তানের ৩০ লক্ষ শরণার্থী ভারতের প্রতিবেশী অঞ্চলে রয়েছে এবং তাদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে না যদি না বিদেশ হতে বৃহদায়তনের সাহায্য আসে।আমি অনুধাবন করছি নিউজিল্যান্ড এর ভিতরে ইতিমধ্যে একটি প্রকাশ্য আবেদন বিবেচনা করা হচ্ছে;মাননীয় সরকার প্রস্তুত এই মানবিক প্রচেষ্টায় সহযোগিতা প্রদান করতে এবং সাধ্যমতো অবদান রাখতে”।

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য মাননীয় ধর্মযাজকের আবেদন
২ই জুন, ১৯৭১

অর্থনৈতিক পরিত্রাণের উপর আলোচনা হওয়ার পর,২রা জুন,১৯৭১-এ সাধারণ শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়,ষষ্ঠ পল বিশ্বাসীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিলেন যুদ্ধের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক পরিণতির দিকে।নিচের বক্তব্য ধর্মযাজকেরঃ

এখন আমাদের অনুমতি দিন একটি অন্য বিষয়ে কথা বলার।

এই পর্যায়ে পরীক্ষার মধ্যে যা আমাদের এখন পীড়ন করছে তা হল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দুঃখজনক অবস্থা।এটার কারণসমূহ জানা এবং এর রাজনৈতিক মূল্যায়ন করা আমাদের কর্ম নয়।আমরা দেখতে পাই এই অঞ্চলের অবস্থা ইতিমধ্যে ভয়ংকর হয়েছে গত বছরে গঙ্গার বিধ্বংসী বন্যার প্রকোপে যার জন্য আমরা কিছু সাহায্য প্রদানের চেষ্টাও করেছিলাম এবং বিশ্বজুড়ে চার্চে সাহায্যের আহবান জানিয়েছিলাম।তখন ক্যাথলিক গুরুভাইদের দান ও ক্যাথলিক সাহায্য সংস্থা তাদের উদারতার প্রমাণস্বরূপ এই সাংঘাতিক দুর্যোগে পাকিস্তানের আঘাতের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসেছিলেন।আমরা-ও,আমাদের বিশেষ কৌতূহলে গত নভেম্বরে আমাদের ফিলিপাইন যাওয়ার পথে,সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম রাতে ঢাকায় একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি নেয়ার যাতে কর্তৃপক্ষ ও জনগণের নিকট সাক্ষ্য আনতে পারি।কিছু মাস পরে,আরেকটি ও আরো গুরুতর ঝামেলা দেশটির পূর্বাঞ্চলকে বিশৃঙ্খল করেছে,একটি বেসামরিক দ্বন্দ্ব আন্দোলিত হচ্ছে যা কোনো ছোট অনুপাতে নয়।দুই,যন্ত্রণাদায়ক ঘটমান বিষয়টি কল্যাণের প্রতি উৎকণ্ঠিত বার্তা;বিশাল পরিমাণে নিবাসীদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা, ২০ বা ৩০ লক্ষ গরীব মানুষ যারা এখন খুব করুণ হালে আছে বলে জানা যায়।অন্য চলমান  চিন্তার বিষয় হল যারা নিজেদের এলাকায় রয়ে গেছে,এবং সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলো ধরে যাদের কষ্টকর ও গুরুতর
৭০৩

পরিস্থিতি সার্বজনীন মতামতে পর্যাপ্ত অবহিত করা হয়েছে এবং বেদনাগ্রস্ত।আমরা জানি যে সাহায্য পাঠানোর বিভিন্ন প্রয়াস ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে,শরণার্থীগণ ও জনগণ যারা নিজেদের এলাকায় অবস্থান করছে উভয়ের জন্য।মানবিক সংহতি আরও একবার নিজেকে বিচক্ষণ ও উদার প্রমাণ করলো এবং আমরাও আমাদের সঙ্গতি ও আমাদের পরামর্শ দিয়ে এটাকে উৎসাহিত করি যদিও সত্য এটাই যে এতো বিশাল চাহিদা মেটাতে এটা হয়তোবা যথেষ্ট হবে না।

কিন্তু যা সবচেয়ে জরুরি তা হল শান্তি,এবং আমরা প্রার্থনা করি শান্তি যেন দ্রুত পুনর্প্রতিষ্ঠা হয় ও ব্যাপক দ্বন্দ্বের বিপদ থেকে সর্বোত্তম উপায়ে জনগণের নির্দিষ্ট পরিস্থিতি এবং সাধারণ দরকার বিবেচনায় এনে এশিয়া তে নতুন ও বিপদজনক দ্বন্দ্ব দ্বারা বিঘ্ন ঘটা রোধ করতে সম্ভাব্য ব্যবস্থা নিতে হবে,ও যাতে এশিয়া আধুনিক সভ্যতার প্রতি তার স্বাধীন ঐক্য এবং স্বাভাবিক বিবর্তনের মধ্যে সংরক্ষিত হয়।

এল ওসারভাতোরে রোমানো-৩রা জুন, ১৯৭১)
১৪ই জুন, ১৯৭১ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বন ভ্রমণ শেষে
জার্মানির ফেডারেল রিপাবলিক এর বিবৃতি পাঠ

যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আমন্ত্রণে,ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জনাব সোরান সিং তাঁর বিশ্ব ভ্রমণের পথে ৯ই ও ১০ই জুন,১৯৭১-এ জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র পরিদর্শন করেন।

১০ই জুন,মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী কথা বলেছেন মাননীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রধানমন্ত্রী,পররাষ্ট্র বিষয়াবলীর মাননীয় যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রী এবং মাননীয় রাষ্ট্র সচিব ডঃ ফ্রাঙ্ক এর সাথে।

৯ই জুন,উত্তর রাইন ওয়েস্টফ্যালিয়ার সরকার মাননীয় মন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানায় এবং দুপুরে ত্রাণ সংস্থার প্রতিনিধি ও সংবাদ ও টেলিভিশন-এর প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ অনুস্থান ছিল।বিকালে তাঁর সংসদের মাননীয় বক্তা(হার ভন হ্যাসেল),অর্থনৈতিক সমবায় মন্ত্রী(হার এপলার),সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি(ডক্টর শ্রোডার) এবং অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়।

যুক্তরাষ্ট্রীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে আলোচনায়,পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারতে শরণার্থীদের বিপুল অন্তঃপ্রবাহ নিয়ে তাঁর সরকারের বৃহৎ উদ্বেগের বিষয় ব্যক্ত করেন,যা পূর্ব পাকিস্তানের পরিণতির ফলাফল স্বরূপ কিছু সপ্তাহে ৫০ লক্ষ সংখ্যায়ন হয়েছে।মাননীয় মন্ত্রী চিহ্নিত করেছেন যে এটা ভারত সরকারের উপর শুধুমাত্র অর্থনৈতিক গুরুভার চাপিয়ে দেয় নি বরং আর্থ-সামাজিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং এই এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি প্রতিপন্ন হয়েছে।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার কে সকল সরকারি ও ব্যক্তিগত সহায়তা যা শরণার্থী ত্রাণ প্রসঙ্গে প্রদান করা হয়েছে এবং জার্মানির যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র সরকার ভারতে যে কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রতি যে সহানুভূতি ও
৭০৪

উদ্বেগ দেখিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন।জার্মানির পক্ষ থেকে উপমহাদেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং গভীর উদ্বেগের সাথে কঠোর সমালোচনা করেছেন যে এটা উন্নতির পশ্চাৎধাবন করছে ও সেই অঞ্চলের নিরাপত্তাব্যবস্থার ঝুঁকি নিয়ে সচেতন ছিলেন।সেখানের চুক্তিতে ভারত একা শরণার্থীদের তত্ত্বাবধানের প্রকাণ্ড দায়িত্ব পালনের অবস্থানে ছিল না।জার্মান পক্ষ চিহ্নিত করেছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সচিবের আবেদনে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ইতিমধ্যে শরণার্থীদের জন্য ইউএন দূতাবাসে প্রথম অনুদান দিয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় মন্ত্রীপরিষদ শরণার্থীদের আরও সহায়তার ব্যাপারে ১০ই জুন এর সভায় বিবেচনা করবেন।
দুই মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী একমত হয়েছেন যে শরণার্থীদের নিজের ঘরে ফেরার জন্য এই সমস্যার একটি আশু রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।
বৈদেশিক বিষয়াবলীর পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাঁর ভারতীয় অতিথির কাছে জার্মানি এবং বার্লিন ও জার্মানির সাথে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর সম্পর্কের সমস্যাগুলোতে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ভারত সরকারের তরফ থেকে ইউরোপে যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্রের নেতৃত্বে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মধ্যে বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে পুনর্মিলন ও সহযোগিতার উদ্দেশ্যে যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার বিশেষ সমাদর জানিয়েছেন।

এই আলোচনা সংঘটিত হয়েছিলো জার্মান যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র ও ভারতের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও সমঝোতার সম্পর্কের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করার মানসে।

ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতি ফার্দিনান্দ ই মারকস এর বিবৃতি
১৫ই জুন, ১৯৭১
নিম্নলিখিত লেখাটি ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর চিঠি হতে নেয়া।মাননীয় কার্লোস পি রমুলো,ভারতীয় রাষ্ট্রদূত শ্রী দেবা রাও কে বলেছেন, “আমি আপনাকে জানাতে সম্মানিত বোধ করছি যে ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে ১৫ই জুন ভারতের মহামান্যা প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো চিঠির জবাবে,১৮ই মে,১৯৭১ এ মাননীয় রাষ্ট্রপতি নিম্নোক্ত বিবৃতি সাংবাদিকদের নিকট জারি করেছেন”।

“ফিলিপাইনের সরকার এবং জনগণ পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি জাতির দ্বন্দ্বের কারণে বিরূপভাবে আক্রান্ত মন্দাবস্থার প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে”।

“যদিও প্রথমদিকে এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শাসনে রাজনৈতিক সমস্যা হওয়ায়-ফিলিপাইন এর অংশী হতে চায় নি-এটা এখন লাখো বাঙালির দুর্ভোগ,প্রতিনিয়ত তার তীব্রতার পটভূমিতে একটি মানবিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের পূর্ব বাংলা থেকে ভারতের পশ্চিম বাংলা অঞ্চলে যাত্রা জোয়ারের অনুপাতে পঞ্চাশ লক্ষের কাছে পৌঁছেছে এবং কলেরার মহামারী প্রকোপ তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে”।

“এই পরিস্থিতিতে ফিলিপাইন মনে করে সকলেরই দ্রুত ও সারগর্ভ ত্রাণ শীঘ্রই প্রস্তুত করা প্রয়োজন।পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ,ভারত সরকার যার পশ্চিম বাংলার উপর আইনগত অধিকার রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সকল সদস্য সহ পুরো

৭০৫

জাতি উদ্বিগ্ন”।

“মানবতার খাতিরে,ফিলিপাইন বাঙালিদের কষ্ট উপশমে এবং শান্তির জন্য যদি সেই এলাকায় বিপর্যয় প্রতিহত করতে হয় তবে প্রয়োজনীয় অবস্থা ফিরিয়ে আনার সম্মিলিত কার্যে সচিব-জেনারেল ইউ থান্ট ও তাঁর পবিত্র ধর্মযাজক ষষ্ঠ পল এর সাথে একটি আহ্বানে মিলিত হয়েছে”।

“এই উদ্বেগের প্রতীক স্বরূপ ফিলিপাইন সরকার,পশ্চিম বাংলায় শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ কার্যের জন্য,ফিলিপাইন ন্যাশনাল রেডক্রস এর মাধ্যমে এক জাহাজবোঝাই পণ্যদ্রব্য পাঠাচ্ছে,প্রধানত এক হাজার টন চিনি ভারতীয় রেড ক্রস এর মাধ্যমে ভারত সরকারকে হস্তান্তর করা হবে”।

মাননীয় মিশেল শার্প এর বিবৃতির প্রতিলিপি,
বৈদেশিক বিষয়াবলীর রাষ্ট্র সচিব,
কানাডা, সাধারণ সভা,
১৬ই জুন, ১৯৭১।

মাননীয় বক্তা,আমরা সকলে একটি রাজনৈতিক সমাধানের চাপ অনুভব করছি।এটাই একমাত্র সম্ভাব্য রাস্তা এই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক মীমাংসা হচ্ছে শরণার্থীরা ভারতেই অবস্থান করবে এবং শান্তির পথে কাঁটা হয়ে থাকবে,যদি এভাবেই রাখা হয়।সুতরাং আমরা সকলে আমাদের সর্ব ক্ষমতা দিয়ে কাজ করছি এবং পাকিস্তান সরকার কে মীমাংসার গুরুত্ব বোঝাতে প্রতিটি সম্ভাব্য পথ ব্যবহার করছি,যা গণতান্ত্রিক ও অসামরিক নিয়ন্ত্রণে গঠিত।

হ্যাঁ মাননীয় বক্তা,আমরা এই সমস্যা বিবেচনা করছি।আগামী সপ্তাহের শুরুতে পাকিস্তানে সাহায্য-সংঘ নিয়ে একটি সভা আছে।আমি আশা করছি আগামী বুধবারের মধ্যে আমি মাননীয় সদস্যের উত্থিত বিষয় সহ,সকল বিষয়ের উপর একটি বিবৃতি তৈরি করতে সমর্থ হব।সম্ভবত আমি আরো যোগ করব যে জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, অন্টারিও সরকারের দান করা কিছু এ্যাম্বুলেন্স সহ জরুরি সরবারাহ পরিবহণের জন্য দুটি হারকিউলিস বিমান-ও প্রদান করেছেন।এই হারকিউলিস বিমানগুলো আগামীকাল সকালে সরাসরি পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।

*                   *                   *

মাননীয় বক্তা,আপনি যদি একটি সংক্ষিপ্ত জবাব দেন,অবশ্যই এর কাংখিত মিমাংসা্য়‌,সেই ব্যাক্তিগণ যারা পাকিস্তানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে অনুবর্তী নির্বাচিত হয়েছে,তাদের-ই পাকিস্তান শাসনের দায়িত্ব দেয়া হবে,বিশেষত পূর্ব পাকিস্তানের।

(ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের তর্কবিতর্কের মুদ্রিত বিবরণী হতে উৎকলিত-১৬ই জুন,১৯৭১)
.

পূর্ব পাকিস্তানের মানবিক এবং উদ্বাস্তু পরিত্রাণ  প্রচেষ্টার উপর ভারতের একটি বিবৃতি।

                                   ১৮ মে,১৯৭১

যুক্তরাষ্ট্রের সরকার দূর্ভোগ এবং অসচ্ছলতা নিয়ে গুরুত্বের সাথে উদ্বিগ্ন হয়ে পরেছেন যেটি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক বিশৃঙ্খলার উদয় ঘটিয়েছিল।

এই সমস্যার দুইটি দৃষ্টিকোণ থেকে জড়িত আমাদের নির্দিষ্ট মনোযোগের প্রথমটি হলো চুক্তির পুনঃপ্রতিষ্ঠা যেটিতে নির্বাসনের পুনরুদ্ধারে প্রশাসন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যকলাপে অনুমতি দেওয়া হবে যাতে খাদ্য বন্টন এবং অন্যান্য অপরিহার্য সেবা পুনরায় শুরু করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, উদ্বাস্তু যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে গেছে তাদের তদারক করতে হবে।যত দ্রুত সম্ভব আমরা আমাদের উদ্বেগ সর্বসমক্ষে এবং গোপনে প্রকাশ করেছিলাম শান্তিপূর্ণ বাসস্থানের যেটি পূর্ব পাকিস্তানে স্বাভাবিক জীবন ধারনের অনুমতি মিলবে এবং উদ্বাস্তুরা নিজেদের ঘরে ফিরবে।

পরিত্রাণ প্রচেষ্টার মত লোকহিতকর কাজে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ার সাথে আমরা আলোচনা করেছি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অন্যান্য আগ্রহী দেশসমূর্হকে আকস্মিক ঘটনার পরিকল্পনায় যথাযথ দায়িত্ব গ্রহনে আহবান জানিয়েছি। এই একটি সমস্যা মূলত সরকারের প্রধান সমস্যা হিসেবে আমরা স্বীকৃতি দিয়েছি এবং জনগন অবিলম্বে তা সমাধানে উদ্বিগ্ন। তাদের প্রচেষ্টা অপরিহার্য কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদের প্রচেষ্টায় এবং তাদের সম্পদ প্রতিস্থাপনে মহান সহায়ক হতে পারে।

পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক মুক্তির পহেলা এপ্রিলের উৎসর্গে জাতিসংঘ মহাসচিব উ-থান্টস এর সাথে আমরা নিজেদেরকে সর্বসমক্ষে এবং গোপনে যুক্ত করেছি।পাকিস্তানের সরকারের সাথে আমরা বারবার আলোচনা করেছি।

সচিব রজার বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ২৭ শে এপ্রিল একটি বার্তায় সাধারন সভায় যোগদান করেন। মানবিক সহায়তায় তার প্রস্তাব তিনি পুনঃআরম্ভ করার পরামর্শ দিয়েছেন।

বন্টনের ৭.৫ মিলিয়নের উপর এবং ১০০ মিলিয়নের বেশী মার্কিন মালিকানাধীন পাকিস্তানি মুদ্রা পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুত করেছিলেন। ঘূর্নিঝড়ে দুর্যোগপূর্ন এলাকায় পুনর্বাসনের জন্য চুক্তির সাথে দ্রুত খাদ্য শস্যের ১৫০০০০ টন প্রদানের জন্য আমরা সামনের দিকে এগুতে পারি। আমরা আরো দ্রুত ১৭০০০০ টন গম দখলের জন্য মোটামুটি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্বের চুক্তির ভারসাম্যে রাখতে প্রস্তুতি নিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব বন্দরে প্রেরণ করতে এবং বিতরন সুবিধার জন্য অনুমতি নিতে হবে।

পূর্ব পাকিস্তান থেকে বহু সংখ্যক উদ্বাস্তু ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। ইন্ডিয়ার সরকার ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং তিনি উদ্বাস্তুদের সাহায্য করতে ক্রোড়পত্রে এটি নিজেদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা হিসেবে তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে দ্বিপার্শ্বিক সহায়তা চেয়েছিলেন। উদ্বাস্তুদের আন্তর্জাতিক মুক্তি প্রচেষ্টার সমর্থনে আমরা নেতৃত্ব দিয়েছি যেটি জাতিসংঘের হাই কমিশনার দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল। আমরা খুব আন্তরিকভাবে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর সাথে কাজ করছি যেটি মুক্তি প্রচেষ্টায়  জাতিসংঘের হাই কমিশনারের সাথে আরো সহযোগী হবে।

যত দ্রুত সম্ভব ইন্ডিয়ার মার্কিন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তুর স্রোতের সংখ্যা অটলভাবে বলিষ্ঠ করতে অামরা একটি কর্মসূচী শুরু করেছি।এই সপ্তাহের সবশেষে অামরা একটি ক্যাথলিক ত্রান সেবা “কেয়ার” বিশ্বের গির্জা সেবার জন্য অপেক্ষা করেছি। এবং লুথেরান বিশ্ব সংঘ যত বেশী সম্ভব ৩০০০০০ উদ্বাস্তুদের “পি এল- ৪৮০ খেতাব খাদ্য অাইটি” ব্যাবহার করে প্রতিপালন করবে।এই জন্য এবং অন্যান্য মুক্তির উদ্দেশ্যে অামাদের অাছে অনুমোদিত ২.৫ মিলিয়নের বেশী খাদ্য এবং অন্যান্য সহায়তা অামাদের প্রাথমিক অবদান হিসেবে জরুরী মুক্তি কার্যকলাপকে সচল করতে পথ খুঁজে পেয়েছি।  যখন অান্তর্জাতিক মুক্তি প্রচেষ্টা সংগঠিত হচ্ছে একটি “ইউ এন এইচ সি অার ” দল হিসেবে সম্প্রতি ভারতে মুক্তির প্রয়োজনে পরিমাপন দরকার। অামরা বিবেচনা করব কি ধরনের অতিরিক্ত অবদান অামাদের গ্রহন করতে হবে যখন এই দল এটির অাবিষ্কারকে রিপোর্ট করেছে।

১৯৭১ সালের ২১ শে নভেম্বরে জার্মান গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান উইল স্টফ জনসাধারণের কাছে তার এক বিবৃতিতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সামরিক দ্বন্ধ প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্ব পাকিস্তান ও তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ন রাজনৈতিক সমাধান আনতে ইচ্ছাপোষণ করেন এবং তাদের দেশের শরানার্থীদের দ্রুত নিরাপদে স্বদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়।

পাকিস্তানের কাছে যথেষ্ট দায়িত্বশীল সরকারের উদাহরণ ছিল বিশ্বশান্তি  প্রতিষ্ঠার জন্য।

যাতে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিকরণ নিশ্চিত করা যায়।

সেভেয়েত সরকার সেই উদ্দীপনা থেকে বার বার পাকিস্তান সরকারের কাছে আবেদন করে।

ভারত সরকারও বারংবার শান্তি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য প্রস্তাবনা তৈরী করে।

দুঃখজনকভাবে পাকিস্তান সেনা কতৃপক্ষ পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারটি নাকচ করে দেয়।

তারা ভারতের সাথে তীব্র সংবেদনশক্তি হয়ে উঠে এবং সক্রিয়ভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়।

সাম্রাজ্যবাদী তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গিতে ভারতীয় উপমহাদেশে আক্রমণাত্মক সশস্ত্র বিদ্রোহের প্রকৃত কারণ লুকায়িত এবং বিকৃত।

এটি অবশ্যই বর্ণিত যে সামরিক দ্বন্ধের প্রধান কারণ পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নীতির বিপরীতে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থান।

এটা জানা যে ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে দেশের সাধারণ সংসদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামীলীগ বিপুল জয়ে নিমজ্জিত হয়।

প্রগতিশীল সামাজিক অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সাম্রাজ্যবাদী সামরিক জোট “দ্যা সাউথইস্ট এশিয়া ট্রিটি অর্গানাইজেশন” এবং “দ্যা সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন” থেকে পাকিস্তানের প্রত্যাহারের জন্য

পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলের এই নির্বাচন  স্বায়ত্বশাসনের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করেছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ, পাকিস্তানের সামরিক কতৃপক্ষ নিরবিচ্ছিন্নভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে, সংসদীয় সমাবর্তন রোধ করে এবং আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে দেয়।

পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক এককগুলো পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার দখলদারিত্ব দমন করে এবং

তখনকার আওয়ামীলীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে।

পূর্ব পাকিস্তানি জনসংখ্যার ১৩ শতাংশের প্রায় ১০ মিলিয়ন লোক পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী আতঙ্কে ভারতে পালিয়ে যায়।

তাদের খাবার এবং বাসস্থানের ব্যবস্থা করা ভারতের জন্য প্রায় অসম্ভব ছিল এবং একটি সামাজিক সমস্যায় পরিনত হয়ে গিয়েছিল।

ভারতীয় উপমহাদেশের সক্রিয় অবস্থা শিথিল হওয়ার পেছনে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের ফেরত দেয়ার সমস্যা।

পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তি নিঃসন্দেহে ৭৫ মিলিয়ন অধিবাসীদের স্বার্থ এবং সমর্থনযোগ্য দাবীগুলো নিয়ে তাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সম্ভব।

 ভারতীয় এবং পাকিস্তানি জনগনের জন্য শান্তিপূর্ন এবং স্বাধীন উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য গোটা ভারতীয় উপমহাদেশের রক্তপাত ও ক্ষতচিহ্ন অনতিবিলম্বে আরোগ্য করা উচিত এবং পূর্ব পাকিস্তানে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মাধ্যমে নিস্পত্তির ব্যবস্থা করা উচিত।

ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি সুহার্তো এর বিবৃতি, জার্কাটা

নিম্নলিখিত বিবৃতিটি একটি প্রতিবেদন থেকে নেয়া:

রাষ্ট্রপতি সুহার্তো গতকাল (৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১) বলেন

-ইন্দোনেশিয়া ইন্দো-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত আছে যদি যুদ্ধরত দুই পক্ষ অনুরোধ করে।

রাষ্ট্রপতি গতকালের বিবৃতিতে জানান ভারত পাকিস্তানের মধ্যে বর্তমান সময়ের চলিত সংকট এবং বিনা গ্রাওয়ার বিল্ডিংয়ের সীমিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে।

ইন্দোনেশিয়া, ভারত পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সবসময় ভারত-পাকিস্তানী সম্পর্কের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন।

“বর্তমান সময়ে দুই দেশের মধ্যে উন্মুত্ত যুদ্ধ উদ্বেগকে বৃহত্তর করছে।” রাষ্ট্রপতি সুহার্তো বিবৃত করেন।

রাষ্ট্রপ্রধান বলেন- ইন্দোনেশিয়া উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সমস্যা যেমন: বিদ্রোহ এবং বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনের মুখোমুখি হয়ে বুঝতে পেরেছে যে, যুদ্ধই সকল সমস্যার সমাধান অর্জনের একমাত্র পন্থা নয়।

তিনি আরোও বলেন যে, যুদ্ধ জনগনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং বৃহত্তর দূর্দশা নিয়ে আসে।

ইন্দোনেশিয়ান সরকার আশা করে যে যুদ্ধরত দুটি দেশ, যুদ্ধের ফলাফল উপলব্ধি করবে এবং একটি শান্তিপূর্ণ মিমাংসার প্রচেষ্টা করবে।

                     (জার্কাটা টাইমস- ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১)

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী জনাব মি. লী কুয়ান ইউ

-ক্ষমতাসীন জনগনের ১৭ তম কংগ্রেস দল, সিঙ্গাপুর।

১৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জনাব লী জনসাধারণের জন্য তৈরী প্রথম ঘোষনাপত্রে বলেন, যদিও পশ্চিম এবং পাকিস্তান একই ধর্মমতে বিশ্বাসী তবুও তাদের আলাদা সংস্কৃতি এবং প্রতিযোগিতায় লিপ্ত অংশগ্রহনকারী একদিকের অসম চিকিৎসা ব্যবস্থা চূড়ান্ত দুঃখজনক অবস্থায় উপনীত করে।

ক্ষমতাসীন জনগনের দল ১৭তম কংগ্রেসে যারা প্রস্তুতকৃত লেখার বাইরে বলেছিলেন তার মধ্যে উনার দ্বিতীয় সেক্রেটারী অন্যতম।

জনাব লী জোর দিয়েছিলেন, সিঙ্গাপুরের বাসিন্দা বহুসংখ্যক লোকজনের সহনশীলতার প্রয়োজনের জন্য।

বৈদেশিক মন্ত্রী জনাব রাজারাথনাম বলেন, বাংলাদেশের দ্বন্ধ হল ঘরোয়া দ্বন্ধ কীভাবে শীতল যুদ্ধে পরিণত হতে পারে তার সাম্প্রতিক চিত্র।

তিনি ইউ এন এর সাধারণ পরিষদের ভোটদান কালে   যুদ্ধবিরতির সমাধানে বলেন, এটি একটি শীতল যুদ্ধ যা শুধু সারিবদ্ধ বাস্তবতা নির্ধারণ করে।

পূর্ব বাংলার জনগণের দুঃখ-দূর্দশার জন্য উদ্বেগ নয়, সঠিক বা ভুল বিবেচনা করেনা।

তিনি আরোও বলেন, এ কারণেই সিঙ্গাপুর নিজেকে নিবৃত্ত করে রেখেছিল।

.

13.244.721-722

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে বিশেষ আদালত গঠনের বিরোধীতায় জেনেভাস্থ আন্তর্জাতিক আইনবিদ পরিষদের (ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্ট) সংবাদ বিজ্ঞিপ্তির অনুলিপি জাতিসংঘ ১৪ এপ্রিল, ১৯৭১

আন্তর্জাতিক জুরিস্টস কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি-

এপ্রিল ১,১৯৭১ : পাকিস্তানের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক জুরিস্টস কমিশন গতকাল নিম্নলিখিত শর্তসাপেক্ষে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে একটি টেলিগ্রাম পাঠান।

অধিকতর আমার ২ এপ্রিলের টেলিগ্রাম জুরিস্টস কমিশনের আওয়ামীলীগ নেতাদের রিপোর্টড অভিব্যক্তিরর বিশেষ মিলিটারি ট্রাইব্যুনালকেকে শোচনীয় করে তোলে। সম্মানের সাথে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে সভার কার্য বিবরণীর পূর্বে নিম্ন আদালত সন্তুষ্ট হবে, আন্তর্জাতিক মতামতের ভিত্তিতে যাতে আইনের শাসন পরিলক্ষিত হয়।

ম্যাকডারমেট

সেক্রেটারি এনারেল

জুরিস্টস আন্তর্জাতিক কমিশন সবসময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার নীতির বিরোধিতা করেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের হত্যার বৈধতা প্রদানে যথাযথভাবে গঠিত আদালতের বিজ্ঞ বিচারকদের প্রশিক্ষণ দ্বারা নিন্দিত না থাকায় স্বাধীনতা বিরোধী হিসেবে যে তারা এটি করবে তা সহজেই অনুমেয় ছিলো বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে। যদি শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা আওয়ামীলীগের অন্য কোন নেতা পাকিস্তানের আইনের ভেতরে কোনো অপরাধ করতো তবে কেনো তাদেরকে দেশের সম্মানিত বেসামরিক আদালতে আনা উচিত হবে না ।

উপরের টেলিগ্রামের একটি নিম্নরূপ টেলিগ্রাম ২ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়।

আন্তর্জাতিক কমিশন অফ জুরিস্টস গভীরভাবে উদ্বিগ্ন পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা নিয়ে  আইনের সংযম ও সম্মানের তাড়নবোধ থেকে সম্ভাবপর সকল পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ কিতা হয় মৃতের সংখ্যা কমাতে ও রাজবন্দীদের চিকিৎসার জন্য।

ম্যাকডারমেট

সেক্রেটারি এনারেল

জেনেভায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক কমিশন অফ জুরিস্টস এর প্রধান কার্যালয়ে জাতিসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংস্থা,ইউনেস্কো এবং ইউরোপীয় কাউন্সলের সাথে একটি পরামর্শমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এটা আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠনের এনজিওগুলোর একটি বিশেষ তালিকা।মূলত এর কাজ হচ্ছে বিশ্বের সর্বত্র আইনের শাসন রক্ষা করা এবং বিশ্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণাপত্র প্রতিষ্ঠা করা। এটি পুরোপুরি একটি বেসামরিক সংস্থা যা বিগত ১৫ বছর যাবত নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ করে যাচ্ছে স্বাধীন এবং নিরপেক্ষভাবে। এটি এমন একটি কর্তৃপক্ষ যা আইনত এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডল থেকে সব মহাদেশের জুরিস্টদের সমর্থন কুড়াতে সক্ষম হয়েছে।

.

13.245.723-727

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জেনেভায় সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের শরণার্থীদের সবন্ধে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দীন আগা খানের বিবৃতি জাতিসংঘ ডকুমেন্টস ৫ মে, ১৯৭১

০৫ মার্চ ১৯৭১  জেনেভায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের নিয়ে জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খাঁনের বিবৃতি-

আমি নিশ্চিত আপনারা সবাই পৃথিবীর অপর প্রান্তের সাম্প্রতিক অগ্রগতি  সম্পর্কে জানতে অত্যন্ত উন্মুখ হয়ে আছেন।জেনেভায় গত সপ্তাহে আপনাদের সাথে সাক্ষাতের সময় মহাসচিব অন্যান্য বিষয়ের সাথে পত্রিকায় বহুল প্রচারিত ও স্বীকৃত ,পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখে বাস্তচ্যূত মানুষের ব্যাপক স্রোতের কথা উল্লেখ করেছেন।আমি আপনাদের বলতে পারি ভারতীয় সরকার ভারতে এই অসংখ্য বাস্তুহারা মানুষের জন্য সহায়তা চেয়ে পুনর্বাসন মন্ত্রালয়ের মাধ্যমে আমাদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।এই অনুরোধ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পর্যালোচনা করে আমি জাতিসংঘের আমার অন্যন্য সহকর্মী বিশেষ করে মহাসচিবের সাথে আলোচনা করে আমি দ্রুত একটি প্রতিনিধিদল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।ডেপুটি হাইকমিশনার চার্লস ম্যাকের নেতৃত্বে আজ রাতেই নয়াদিল্লীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া এই প্রতিনিধি অন্যদের আরো রয়েছেন আমাদের অপারেশন বিভাগের পরিচালক জেমলেসন যিনি তিব্বতের শরনার্থী বিষয়ে বেশ কয়েকবার ভারত সফর করেছেন এবং  আমাদের আইনি পরামর্শক ডঃ ওয়েইস। ভারতে বাস্তুচ্যুত মান্যুষের কারণে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে আমরা কিভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারি সে ব্যাপারে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবে।এখানে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই অতীতের সকল অনুরোধ এবং কার্যক্রমের ন্যায় এবারো ইউএনএইচসিআর অত্যন্ত জোড়ালো অরাজনৈতিক ও মানবিক ভুমিকা পালন করবে। হতে পারে এটি একটি রাজনৈতিক সমস্যা কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমার দপ্তর ও জাতিসংঘের মানবতা বিষয়ক অন্যান্য সংস্থা যেমন খাদ্য ও কৃষিসংস্থা,বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি,ইউনিসেফ,বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা সহ অন্য সকল সংস্থা অরাজনৈতিক ও মানবিক মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাদের ভূমিকা পালন করবে। এখানে অবশ্যই সমন্বয়য়ের প্রয়োজন পড়বে আর আমরা জানি ত্রান কার্যক্রম অনেকাংশে সমন্বয়ের উপর নির্ভর করে। কারণ আমরা দেখেছি নাইজেরিয়ার মত দেশে এমনকি সম্প্রতি পূর্ব পাকিস্তানে ঘুর্নিঝড়ের প্রাকৃতিক দূর্যোগে সমন্বয়হীনতা ত্রাণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করে দিতে পারে। আমি আশা করি এই প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে দেখতে পারব অন্যরা কি করছে এবং জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে আরও সমন্বিত করে সমস্যার যথাযথ মূল্যায়নের মাধ্যমে আমরা কি করতে পারি। আর আমরা অবশ্যই আগের শরনার্থী সমস্যাগুলোর ন্যায় স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে অত্যন্ত আগ্রহী ;আমরা অবশ্যই তা করব।আমাদের দপ্তর স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করে। আমরা ব্যপক অস্থায়ী আবাসনের কর্মসূচি নিতে পারিনা যা তাদের স্থায়ী হতে উদ্বুদ্ধ করে। আমরা পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে দেখে তা অবস্থার সৃষ্টি করে। আমাদের দ্রুত খুজতে হবে এর চূড়ান্ত সমাধান কি হতে পারে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এই সমস্যার চেয়ে ভাল সমাধান হতে পারে  মানুষগুলোকে তাদের বাড়ি ফিরত সাহায্য করা এবং এটা বলতে মহামানব হতে হয় না ।

Page 724

আমার কাছে মনে হয় বিভিন্ন পক্ষের সদিচ্ছা নিয়ে এই বাস্তুহারা মানুষুগুলোকে সাহায্যের পদক্ষেপ নেয়ার উচিত যাতে করে দীর্ঘ মেয়াদে স্থায়ী উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় শিবিরে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে না হয়। সীমান্তের উভয় পাশেই জনসংখ্যার সমস্যা রয়েছে আর যদি মানুষগুলো ফিরে যেতে পারে আমাদের অবশ্যই তাতে সাহায্য করা উচিত।আমার দপ্তর অতীতের এইধরনের সমস্যার ন্যায় এখানেও ভূমিকা রাখতে পারে যেমনটি আমরা করেছিলাম নাইজেরিরায় সংঘাত শেষে নাইজেরীয়দের বিশেষ করে শিশুদের ফিরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা হবে অন্তর্বর্তী মঙ্গলজনক কিছু করার ক্ষেত্রে সংলাপ শুরু করার ব্যাপারে। আমাদের পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা উচিত এবং একই সাথে যারা ঘরে ফিরতে চায় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত এমনকি নিজভূমিতে ফিরে আসার পরেও তাদের এমনভেবে গ্রহণ করা উচিত যাতে তাদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত ত্রান দেয়া যায়। আর এইসকল পদক্ষেপ কেবল ঘটনাস্থলেই মূল্যায়ন করা সম্ভব। আমরা এখন সংশ্লিষ্ট উভয় সরকার এবং অবশ্যই একই সাথে আমাদের জাতিসংঘের সকল অন্যান্য সকল সহকর্মী, বিভিন্ন সংস্থার প্রধান নির্বাহীদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রাখছি। আমি অবশ্যই আপনাদের এই প্রতিনিধিদলের সফরের ফলাফল জানাবো। আর এগুলোই আজকের প্রধান বিষয় যা আমি আপনাদের কাছে উপস্থাপন করতে চাই। একই সাথে আমি আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই আপনাদের উপলব্ধি এবং ধারাবাহিক সহযোগিতার জন্য। কারণ এটি এমন একটি কাজ যেখানে সমস্যা অনুধাবন ও সমাধানের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মতামত আপনাদের সহয়তা ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। এবারে উন্মুক্ত আলচনার জন্য আহবান জানাচ্ছি।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ সেখানে শরনার্থীর সংখ্যা নিয়ে আপনার কোন ধারণা আছে আর আপনারা কি ধরণের সমন্বয়কারীর ভূমিকা পালন করবেন?

হাইকমিশনারঃ বেশ, প্রথমত আপনার প্রথম অংশের উত্তরে আমি বলব শরনার্থী বিষয়ক যেকোন সমস্যা সেটা হতে পারে এই ক্ষেত্রে বা অন্যক্ষেত্রে যেটা আমরা  আফ্রিকায় দেখেছি সুনিদির্ষ্টভাবে এই সংখ্যা অনুমান করা খুবই কঠিন। আমি যতদূর জানি এই মুহুর্তে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এসব মানুষের মধ্যে পরিচয়পত্র বিতরণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে,এটা সম্ভবত একটি সুনিদির্ষ্ট ধারণা দিতে পারে। আমাদের একটি গোষ্ঠীকে শরনার্থী বলার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আপনারা সকলেই জানেন  ব্রিটেন যখন ভারত ভাগের মাধ্যমে উপমহাদেশের স্বাধীনতা প্রদান করে সেই সময় থেকেই ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের মধ্যেই স্থানচ্যুত মানুষদের নিয়ে একটি সমস্যা রয়েছে। শরনার্থী সমস্যা এমনকিছু যার সাথে উভয় দেশ গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাস করতে শিখে আসছে। তাই আমরা যখন শরনার্থীদের নিয়ে কথা বলি তখন আমাদের ঠিক করতে হবে, আমরা ঠিক কাদের বোঝাতে চাই যারা অনেক আগে এসেছে, যারা সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোর গোলযোগপূর্ন সময়ে এসেছে নাকি যারা মার্চের অবস্থার পরিবর্তনের সময় থেকে এসেছে। একটি নির্দিষ্ট জনসংখ্যা প্রতিষ্ঠা করা খুব কঠিন যারা ভারত বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে কলকাতায় এসেছে তারা অধিকাংশ একই এলাকায় বসবাস করছে। কিছু মানুষ এই অর্থে এখনও উদ্বাস্তু কারণ তাদের স্থায়ী পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রশ্ন হল তারা কখন এসেছে। তাই সংখ্যা নিয়ে আমি বেশ কিছু অনুমান শুনেছি। আপনারাও একটা সংখ্যা উল্লেখ করেছেন,বিবিসি একটি সংখ্যা বলেছে যেটা গতকাল আমি শুনেছি প্রায় তা প্রায় ৬ লক্ষ। জেনেভায় বসে এগুলোর পর্যালোচনা করা আসলে খুব কঠিন তাই আমরা ভারতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছি। এবার আসা যাক ২য় বিষয়ে, আমি জেনেছি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা পৃথক পৃথক আবেদন করেছে। খাদ্য ও কৃষি সংস্থা,বিশ্ব খাদ্য কর্মসুচি ইতিমধ্যে সাড়া দিয়েছে।আর দিল্লীতে ইউনিসেফের অফিস আছে তারা সেখান  থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে,কিছু সরবরাহ ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে,কিছু

page 724

পাঠানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে কিছু খাদ্যের মজুদ যা স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য তা জরুরীভিত্তিতে সংস্থান করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে কিছু দ্বিপক্ষীয় সহয়তা বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের পক্ষ থেকেও পাঠানো হয়েছে। আমি জানি কিছু বেসরকারি সংস্থা যাদের উল্লেখযোগ্য পরিমান সম্পদ রয়েছে তারা সেখানে রয়েছে কিন্তু ভারতীয় সরকার এসব কিছুর মাঝে নিজেদের কার্যকর সমন্বয় প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং এসকল প্রস্তাব অত্যন্ত সতর্কতার সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাদের সাথে সঠিক সমন্বয় করাটা খুব স্বাভাবিক। আমি মনে করি পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণের ব্যাপারে একই ভাবে চিন্তা করবে। আমি মনে করি এই প্রবণতা পরিবর্তন হচ্ছে। আপনাদের মনে আছে নাইজেরিয়ায় সংকটের সময় কঠিন অবস্থার কথা,যেখানে অনেক সংস্থা, অনেক বেশি স্বেচ্ছাসেবী গোষ্ঠী,দেশ ব্যাপী অনেক মানুষ সমস্যা তৈরি করছিল।অনেক সময় এই সমস্যা ছিল দক্ষতার আবার অনেক সময় রাজনৈতিক। তাই আমার মনে হয় আমাদের অত্যন্ত সজাগ থাকা উচিত এসব ব্যাপারে এবং যদি পর্যাপ্ত তহিবল বা ত্রান সরবরাহ করা হয় তবে অবশ্যই যেদেশে সাহায্য প্রয়োজন সেই সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে সমন্বয় করা উচিৎ।

ভয়েস অফ আমেরিকাঃ আপনার দপ্তরের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট পরিমান কত হবে?

হাইকমিশনারঃ আমাদের ৫ লক্ষ ডলারের একটি আপদকালীন তহবিল আছে যদিও সমস্যার গুরুত্ব বিবেচনায় এটা খুবই অপ্রতুল এবং এই অর্থে খুব বেশি দিন যাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের হাতে জরুরী অবস্থা মোকাবেলার জন্য শুধু মাত্র এই পরিমান তহবিলই রয়েছে। দিল্লীতে আমাদের প্রতিনিধি দল পর্যালোচনা করে নিরূপণ করবে আমরা এবং জাতিসংঘ মিলে কি মোট পরিমাণ তহবিল প্রদান করতে পারি। আপনারা জানেন ভারতীয় সরলার সরকার সরাসরি জনাব উথান্ট এর শনাপন্ন হয়েছেন,এর পূর্বে নিউইয়র্কের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ইউএনএইচসিআর বরাবর সরাসরি আবেদন করেছিলেন সুতরাং জাতিসঙ্ঘের এখানে পালন করার মত ভুমিকা রয়েছে।

ফিনিশ রেডিওঃ স্যার আমি এর সাথে কিছু যোগ করতে চাই । আমি জানতে চাচ্ছি দুই আর দুইয়ে কি আসলেই চার হয়, আসলে আমি আপনার সাম্প্রতিক ভারত আর পাকিস্তান সফরের ব্যাপারে উল্লখ করতে চাচ্ছিলাম।

হাইকমিশনারঃ সোজাসুজি বললে আমার মনে হয় সেটা বলার সময় এখনও আসেনি। আমাদের প্রতিনিধিদল আজ রাতে দিল্লীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে সেখানে প্রকৃত আলোচনার পর পর্যালোচনা করে দেখতে পারব আমাদের প্রত্যকের ভুমিকা কি হবে। যতক্ষণ জাতিসংঘ সম্পৃক্ত আছে ততক্ষন আমরা প্রত্যেকে নিয়মিত এসম্পর্কে অবগত করছি। অধিকাংশ মানুষের ধারণা এটি উদ্বাস্তু মানুষের সমস্যা তাই তারা প্রতিনিয়ত আমাদের যোগাযোগ করে জানাছে তারা কি করছে বা তাদের কি করা উচিত এই বিষয়ে পরামর্শ চাচ্ছে।

ফিনিশ রেডিওঃ তাহলে কি ইউএনএইচসিআর সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করতে যাচ্ছে?

হাইকমিশনারঃ আসলে আমাদের মধ্যস্থতা করাকে সমন্বয়কারীর ভুমিকা বলা খুব অপরিপক্ব হবে। প্রথম কথা সমন্বয়কারী দ্বারা পনি ঠিক কি বুঝাতে চাচ্ছেন। আমাদের দেখতে হবে ভারতীয় সরকার প্রকৃতপক্ষে কি চায়। এটা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয় এবং আমার মনে হয় এটা শুধুমাত্র নয়াদিল্লিতেই সম্ভব।

অস্ট্রেলিয়ান রেডিওঃ উদ্বাস্তু এবং অন্যদের মধ্যে কিভাবে পার্থক্য করা সম্ভব?

হাইকমিশনারঃ জর্জ আমি অত্যন্ত আনন্দিত জে আপনি এই প্রশ্ন করেছেন কারণ এটা আসলে খুব মৌলিক একটা বিষয়। এটা সুনির্দিষ্ট করা বলা আসলেই খুব কঠিন যে এই মানুষগুলো ঠিক কারণে ঘড় ছেড়েছে। কিছু মানুষ হয়তবা সেখানকার দূর্ভিক্ষের ভয়ে পালিয়ে এসেছে। এই মুহুর্তে পৃথিবীর ঐ প্রান্তে বর্ষা মৌসুমের কারণে অবস্থা খুবই শোচনীয়।

Page 726

আর অনেক মানুষ রাজনৈতিক কারণে তাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। শুধুমাত্র এই বিষয়ের উপর ভিত্তি করেই আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা একজন মানুষ ইউএনএইচসিআর নীতিমালা অনু্যায়ী উদ্বাস্তু কিনা। যে পরিমান মানুষ আর যে দুরত্ব এর সাথে জড়িত তারা নির্যাতনের ভয়ে দেশ ছেড়েছি কি ছাড়েনি এবং নীতিমালার আওতায় আসবে কিনা তা চিহ্নিত করার চেষ্টা হবে অনর্থক। এটা সম্পুর্ন মানবিক মধ্যস্থতা কার্যক্রম। রেডক্রস সোসাইটিও একটি অনুসন্ধানী দল পাঠিয়েছে। আপনারা জানেন তারা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। আমরা দেখতে চাই জাতিসংঘ এখানে কি করতে পারে, যেমনটি রেডক্রস সেখানে গেছে। এই সফর শুধুই মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে সেখানে কি ধরনের মানুষ আছে তার উপর ভিত্তি করে নয়।

ও.ক্লবো, রিওডিজেনিরোঃ আপনারা কি পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছেন?

হাইকমিশনারঃ আবারো বলছি আমার কাছে মনে হয় যদি এই মানুষগুলো দেশে ফিরে যেয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারে সেটাই হবে সবদিক থেকে সন্তোষজনক সমাধান। তার অর্থ আমরা অবশ্যই পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ রাখছি। আমার দপ্তর সবসময় যেসকল দেশ থেকে শরনার্থী আসছে এবং যেদেশে যাচ্ছে সব সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখতে সজাগ আছি। যদি আপনি সত্যিই গুরুত্বপুর্ন মানবিক ভূমিকা রাখতে চান, যদি সম্ভব হয় তবে অবশ্যই আপনাকে প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করতে সচেষ্ট হতে হবে। সেখানে প্রতিনিধির মাধ্যমে অথবা আমি নিজে পাকিস্তান সরকারের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখছি। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন হবে যদি আমরা মানুষের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে পরিস্থিতি উন্নয়নে কার্যকর সহায়তা করতে পারি।

ও.ক্লবো, রিওডিজেনিরোঃ সেখানে রেডক্রসের ভূমিকা কি হবে?

হাইকমিশনারঃ আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি পুর্বপাকিস্তান  সংকটের শুরুর দিকে একটি বিমান পাঠিয়েছিল এবং সেটি ফেরত আসে। আমার মনে হয় এধরনের একটি গুরুত্বপুর্ন বিষয়ে ভারতীয় রেডক্রস যদি তাদের অনুরোধ করে তবে তারা অবশ্যই সক্রিয় হবে। যতদুর আমি মনে হয় দিল্লিতে তাদের এই মিশন শুধুই অনুসন্ধানী দল। আমি মনে করি এটা  অনেক বড় একটা সমস্যা এবং রেডক্রসের একার পক্ষে এর মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। আর যেহেতু ভারত সরকার জাতিসংঘ মহাসচিব এবং আমাদেরসহ অন্যান্য সংস্থার কাছে আবেদন করেছে আমাদের অন্তত যথাযথভাবে দেখা উচিত তারা আমাদের কাছে কি চায় এবং আমরা কি করতে পারি। আমি মনে করি রেডক্রস সোসাইটির সাথে আমাদের অংশীদারিত্ব বিশ্বের অন্যন্য প্রান্তের মত এই পরিস্থিতিতেও চলমান থাকবে।

এজেন্সী ফ্রান্স প্রেসঃ আমার তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে,তবে আমার বিশ্বাস এই প্রতিনিধিদল পাঠাতে আপনাকে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়েছে ।

হাইকমিশনারঃ মহাসচিব ওক সপ্তাহ আগে বার্নে আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। রাষ্ট্রদূত সেন যিনি নিউইয়র্কে ভারতের প্রতিনিধি তিনি জনাব উথান্টের সাথে সাক্ষাত করে একটি প্ত্র দিয়েছিলেন এবং প্রাথমিক আলাপচারিতায় জাতিসংঘ পরিবারের পক্ষ থেকে সাহায্য সহাছিল। এই পত্রটি মহাসচিব বরাবর প্রদান করা হয়েছিল। প্রথমত এগুলো এক সপ্তাহ আগে ঘটেছিল। দ্বিতীয়ত আমাদের দিল্লি অফিসের একজন প্রতিনিধি রয়েছেন যিনি নিয়মিত ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনি পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলেছেন যারা ভারতে উস্বাস্তুদের সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।

Page 727

এই ধরনের প্রাথমিক পর্যায়ের  আলাপচারিতায় সবসময়ই হয় তাদের অবগত করা হয় আমরা কি করতে পারি এসম্পর্কে। সেটা কখনোই আনুষ্ঠানিক অনুরোধ ছিল না। আনুষ্ঠানিক অনুরোধ আমরা মাত্র দুইদিন আগে পেয়েছি। পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে আমি মহাসচিবের সাথে এবিষয়ে কথা  বলে দেখব তিনি তারপক্ষ থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ নেন। আমি জানতে চাই অন্যান্য বিশেষায়িত সংস্থা কি কাজ করে যাচ্ছে এবং আমরা কিধরণের  সমন্বিত প্রয়াস নিতে পারি। তাদের তাৎক্ষণিক সহায়তার পরপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার অনতি বিলম্বে সকল দায়িত্ব গ্রহন করেছে। যারা ভারতে এসেছে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বিভিন্ন উপায়ে ভারতে  যা পাওয়া গেছে টা থেকে এবং খুব সম্ভবত একটি দ্বিপাক্ষিক উৎস থেকে কিছু সহায়তা করা হয়েছে । আমি বিশ্বাস করি তারা এটি চলমান  রাখবে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে ভারত সরকার সব কার্যক্রমে নিশ্চিতভাবে তার নিয়ন্ত্রন বজায় রাখতে সচেষ্ট হবে। আমরা সেখানে তাদের অনুরোধে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী সহয়তা করতে অবস্থান করছি। আর এখন পর্যন্ত সকল কার্যক্রম ভারতীয় কর্তৃপক্ষের তদারকি ও সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে।

ফিনিশ রেডিওঃ আপনার কি পাকিস্তানের সাথে যোগাযোগ আছে?

হাইকমিশনারঃ পাকিস্তান সরকারের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগেও আমি যখন সেখানে ছিলাম আমি বৈপ্লবিক কোন পদক্ষেপ নেই নি। আমরা প্রায় সার্বক্ষনিক এই সমস্যা নিয়ে কথা বলেছি। আমার যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে এবং আমি বিশ্বাস করি যে মানুষের প্রত্যবাসনের ব্যবস্থা করাই একমাত্র সমাধান। এমনকি হেরাল্ড ট্রিবিউনে শ্রীমতি গান্ধীকে উধৃতি দিয়ে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। আমি জানিনা আপনারা এটা পড়েছেন কিনা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনে করেন এটা একটি অস্থায়ী সমস্য এবং তিনি আশা করেন মানুষ খুব দ্রুতই দেশে ফিরে যাবে।

ফিনিশ রেডিওঃ সারাংশ হচ্ছে ইউএনএইচসিআর নেতৃত্ব নিতে যাচ্ছে।

হাইকমিশনারঃ কারন এটি বাস্তচ্যূত মানুষদের একটি বিষয়। আপনারা প্রত্যেকেই দেখেছেন সবাই উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে কথা বলছে তাই মানুষ এই দপ্তরের কথা চিন্তা করছে। এটা একদমই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের প্রথম দেখতে হবে ভারতীয় সরকার কি চায় এবং যতক্ষন পর্যন্ত আমরা যথাযথভাবে না জানছি ততক্ষন পর্যন্ত আমি আমাদের দপ্তরকে সমন্বয়ের কেন্দ্র বলতে রাজি নই। এই হচ্ছে অবস্থা এবং যা ভারত সরকার চায়। যতক্ষন পর্যন্ত জাতিসংঘ সজাগ থাকবে অবশ্যই মানুষ  আমাদের অবগত করবে এবং কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে আমাদের কিছু এডহক উপায় রয়েছে।

একজন প্রতিবেদকঃ জাতিসংঘ পরিবারের অন্যান্য সদস্য নয়াদিল্লীর সাথে আলোচনায় অংশ নেবে কিনা?

হাইকমিশনারঃ আমি যতদূর জানি তাদের অধিকাংশই নয়াদিল্লিতে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি জনাব ম্যাক ডায়ারমিড রয়েছেন যিনি বিশেষায়িত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিছু বিশেষায়িত সংস্থার লোক সেখানে আছেন।

আমি জানি ডব্লিউএফপি, ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা সেখানে রয়েছেন। আমি জানিনা তারা পৃথক দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিনা  অথবা আমাদের দলের   সফরের সুবিধা নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা তাদের স্থানীয় কর্মীদের দিয়ে সাড়বেন কিনা। এটা তাদের সিদ্ধান্তের বিষয় কিন্তু আমার মনে হয় সম্ভবত এটাই ঘটবে।

.

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!