You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সুত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তানকে বাচাঁনো সম্ভব ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ২০ এপ্রিল, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানকে বাচাঁনো সম্ভব

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ এবং অস্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানিদের এবং তাদের গণতান্ত্রিক নেতাদের হত্যায় ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগকে অবশ্যই পাকিস্তানে অস্ত্র ও সাহায্য সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে যেমনটা তারা ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় করেছিল। সেই  নিষেধাজ্ঞা যুদ্ধকে থামিয়ে দিয়েছিল। এটা এখন পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণের হিংস্র ও নৃসংশ হত্যাকে বন্ধ করতে পারে।

        আপনারা যা করতে পারেনঃ শুধুমাত্র ৯০ এ আপনি ১৫ শব্দের একটি জনমত টেলিগ্রামে পাঠাতে পারেন, ২.৫৫ এ আপনি ১০০ শব্দের একটি নৈশ্য চিঠি পাঠাতে পারেন। অপারেটরকে শুধুমাত্র সিনেটর বা সভা সদস্যের নাম বলুন-কোন ঠিকানার প্রয়োজন নেই। তাদেরকে অনুরোধ করুন পাকিস্তানে অর্থ ও অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে।

        আমাদের এখনি কাজ করতে হবেঃ হাজার হাজার পূর্ব পাকিস্তানিকে প্রতিদিন গেস্তাপোর(জার্মান গুপ্ত পুলিশ) মত উন্মত্ততায় হত্যা করা হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড়ের পড়েই এই দূর্যোগ এসেছে। যুদ্ধের বিশৃঙ্খলায় ধান তোলা হচ্ছে না এবং দূর্ভিক্ষে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারা যেতে পারে। আমাদের সাহায্য করুন, আর একটি বিয়াফ্রা, আর একটি ভিয়েতনাম হওয়াকে আটকান। ওই টেলিগ্রামটি লিখুন এবং আপনাদের বন্ধুদেরও লিখতে বলুন।

ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ, বাঙ্গালি জাতি।

.

13.148.470-474

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাঙালি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রতিবাদে আই. সি. ইউ. ই ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দি ইউনিভার্সিটি ইমার্জেন্সি ২২ এপ্রিল, ১৯৭১

                পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক পূর্বকল্পিতবুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড

ঢাকার ঘটনাবলি “গণহত্যা” হিসেবে আখ্যায়িত, আইসিইউই এর মাধ্যমে ১০ দেশের স্কলারেরা আরো Systematic বিনাশযজ্ঞ থামাতে উদ্গ্রীব।

নিউ ইয়র্ক, এপ্রিল ২২- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অধ্যাপকদের একটি বড় অংশ, তাদের পরিবার এবং বহু ছাত্রকে ২৫-২৬ মার্চের রাতে পুর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগে আজ পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

দশটি ডেসের বিদ্বান ব্যাক্তিরা যারা গণহত্যার অভিযোগ তুলেছিলেন ঘোষণা দেন যে ঃ “জ্ঞানসাধনার পথকে রক্ষা করার জন্য একত্রিত হয়ে আমরা আজ চুপ থাকতে পারিনা যখন বিদ্বানদের জীবন এবং মনন ধ্বংস করা হচ্ছে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে এবং তাদের সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার শংকায়।

বিশ্ববিদ্যালয় জরুরী অবস্থার আন্তর্জাতিক কমিটি, যারা হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে প্রথম ঘটনার বিবরণ প্রদান করে তারা তদের ডেসের প্রতি আহ্বান জানায় বিদ্বানদের বিনাশ করার এই চেষ্টার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করতে।

আইসিইউআই এক বিবৃতিতে জানায় গত হেমন্তেই তৈরি লিস্ট থেকে অধ্যাপকদের স্ত্রী-সন্তান সহ ক্যাম্পাসে বাইরে নিয়ে এসে গুলি করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পশ্চিম পাকিস্তান ধরে নিয়েছিল পুর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালী অধ্যাপকেরা বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের পক্ষের শক্তি।

প্রত্যক্ষদর্শী অধ্যাপক পুর্ব পাকিস্তান থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং প্রকাশনার জন্য পরিচয় প্রকাশে আপত্তি জানান। তিনি এই সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের অধ্যাপক এবং আইসিইউই এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডঃ পল সিবুরি পুঙ্খানুপুঙ্খ রুপে তার সাক্ষাতকার গ্রহন করেন।

অধ্যাপক সিবুরি ফ্রিডম হাউসের ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য যার এক্সিকিউটিভ কমিটি গতদিন হত্যাযজ্ঞ নিয়ে আইসিইউইএর দেয়া বক্তব্যের প্রতি সমর্থন জানায়।

ফ্রিডম হাউসের পৃষ্ঠপোষকতায় গত হেমন্তে যাত্রা শুরু করা আইসিইউই একজন নেত্রিস্থানীয় বিদ্যান, সাতজন নোবেল বিজয়ী নিয়ে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য দশটি দেশে যাত্রা শুরু করে।

(দ্রষ্টব্যঃ আইসিইউই সদস্যদের মুদ্রিত তালিকা সংযুক্ত করা আছে এখানে আরো যোগ হবে থর্স্টেন হুসেন,টিচার্স কলেজ,স্টকহোম; অস্কার হ্যান্ডলিন,হাভার্ড; ওয়ার্নার হেইজেনবার্গ,নোবেল বিজয়ী, মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়, এবং সুং-দাও লি, নোবেল বিজয়ী,কলম্বিয়া।)

আজকের বিবৃতি প্রদানকারী আইসিইউই’র স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়েছে  Francois Bourricaud, প্যারিস; রিচার্ড লৌথাল,বার্লিন; ডোনাল্ড ম্যাকরে,লন্ডন; জিওভান্নি সারতোরি,ফ্লোরেন্স; চার্লস ফ্রাঙ্কল, নিউ ইয়র্কঃ সেমৌর মার্টিন লিপ্সেট,ক্যাম্ব্রিজ; পল সিবুরি,বার্কলেঃ এডোয়ার্ড শিলস,শিকাগো এই অধ্যাপকদের সমন্বয়ে। আইসিইউই এর আজকের সম্পুর্ণ বিবৃতি নিম্নরূপঃ

ঢাকায় জ্ঞানতাপসদের গণহত্যা

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন দি ইউনিভার্সিটি ইমারজেন্সীর

স্টিয়ারিং কমিটি কতৃক প্রদত্ত বিবৃতি

আমরা কথা বলছি জ্ঞানসাধকদের* প্রতিনিধি হয়ে যারা গত হেমন্তে চার মহাদেশে আমাদের ডশটি দেশে শিক্ষার স্বাধীনতা এবং জ্ঞানচর্চার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একত্রিত হয়েছি।

জ্ঞানসাধনার পথকে রক্ষা করার জন্য একত্রিত হয়ে আমরা আজ চুপ থাকতে পারিনা যখন বিদ্বানদের জীবন এবং মনন ধ্বংস করা হচ্ছে নৃশংস হত্যাযজ্ঞে এবং তাদের সংস্কৃতি নিশ্চিহ্ন হওয়ার শংকায়।

গত সপ্তাহে আতঙ্কে পালিয়ে আসা পুর্ব পাকিস্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক আমাদের কাছ বর্ননা দিয়েছেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কতৃক মার্চের ২৫-২৬ তারিখে স্কলারদের ওপর চালান নিধনযজ্ঞের। এই প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ রাতে আক্রমণ করে। একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় আগুনে জলছিল। ৩৬ ঘন্টা ধরে গুলিবর্ষন করা হয়। এই অধ্যাপক রাস্তায় পালিয়ে আসেন কার্ফিউ ২৭ তারিখে কিছুক্ষনের জন্য তুলে নিলে। চারিদিকে ছিল মানুষের আর্তচিতকার। বিশ্ববিদ্যালয়কে মনে হচ্ছিল হাজার হাজার মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এক শ্মশান। ক্যাম্পাসে সদ্য খোড়া কবরের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল।

নিশ্চিতভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল। গত হেমন্তের আগেই তৈরি তালিকা ধরে পুর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালান হয়েছে। তালিকায় সম্ভবত নেতৃস্থানীয় শিক্ষক ছাত্র সহ বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতির সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্পী, সংগীতজ্ঞ এবং লেখকদের নাম ঠিকানা ছিল।

গণহত্যা আপাতদৃষ্টে শিডিউল অনুসারেই এগিয়ে চলে; সিনিয়র অধ্যাপকদের প্রকাশ্যে নিয়ে এসে গুলি করা হয়। নারী ও শিশু সহ তাদের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয়। নিশ্চিতভাবেই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী বিশেষ করে বাংলা সংস্কৃতির বাহক এবং তার audienceএর একটা বড় অংশকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার লক্ষ্যেই এই আচমকা আক্রমণ চালান হয়। গুলি হত্যাকৃতদের মধ্যে ছিলেন নিম্নলিখিত বিভাগসমুহের বিভাগীয় প্রধানেরাঃ দর্শন বিভাগের জি সি দেব, পরিসংখ্যানের ডঃ মনিরুজ্জামান। ইতিহাসের ডঃ এম কবির, ইংরেজীর ডঃ গুহ ঠাকুরতা, পলিটিক্যাল সায়েন্সের মুজাফফর হুসেইন এবং বাংলা একাডেমীর প্রধান কবির চৌধুরী। আরো অনেক সিনিয়র অধ্যাপক প্রক্টর প্রভাষক এবং অন্যান্যদের হত্যা করে বা আহত করে ক্যাম্পাসে রেখে যাওয়া হয়েছিল। তাদের পরিবারের সদস্যদেরও ছাড় দেয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষ্যদর্শীর অনুমান যে ফ্যাকাল্টি এবং ছাত্রদের মধ্যে বাঙ্গালীদের একটা বড় অংশকে এবং প্রায় সকল সিনিয়র অধ্যাপককে হয় হত্যা নয় আহত করা হয়েছে।

We do not presume to judge any aspect of the Bengali secession issue.

জ্ঞানসাধক এবং মানুষ হিসেবে আমরা আমাদের নিজেদের দেশদের প্রতি আহ্বান জানাই জ্ঞানতাপসদের ওপর এই systematic নির্মুলযজ্ঞের প্রতি ঘৃনা জানাতে। এটাকে কোনভাবেই কোন আন্তর্জাতিক বা আভ্যন্তরীন সংঘাত দ্বারা ন্যায্য হিসেবে মেনে নেয়া যায় না। এই মৃত্যু সিভিলিয়ানদের গেরিলা কার্যক্রম থামাতে গিয়ে নয় এটা ছিল একটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিকে তুলে ধরে আমন কিছু ব্যাক্তির ওপর সম্পুর্ন বিনা প্ররোচনায় আক্রমণ। এটা সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং ঘৃণ্য রকমের গণহত্যা।

যদি আমাদের সরকারেরা ধরেও নেয় তারা কেবল সীমিত পদক্ষেপই নিতে পারবে তবু তারা যেন জনসমক্ষে জানায় যে ঢাকায় অমানবিক কার্যক্রম চালান হয়েছে। এবং দায়ীদের প্রতি তিব্র নিন্দা জানান উচিৎ। আমাদের সরকারের চুপ থাকলেও আমরা, জ্ঞানসাধক হিসেবে চুপ থাকতে পারিনা। কারন পুর্ন পাকিস্তানের ঘটনাসমুহ আভ্যন্তরীন হোক আর না হোক নিপতিত সহকর্মীদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করা এবং তার দ্বারা হয়ত এ ধরনের ঘৃন্য কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করা।

——————————————————————————————————-

আইসিইউই স্টিয়ারিং কমিটিতে আছেন Francois Bourricaud, প্যারিস; রিচার্ড লৌথাল,বার্লিন; ডোনাল্ড ম্যাকরে,লন্ডন; জিওভান্নি সারতোরি,ফ্লোরেন্স; চার্লস ফ্রাঙ্কল, নিউ ইয়র্কঃ সেমৌর মার্টিন লিপ্সেট,ক্যাম্ব্রিজ; পল সিবুরি,বার্কলেঃ এডোয়ার্ড শিলস,শিকাগো। এই দলের ১০০ চার্টার সদস্যের মধ্যে রয়েছেন আস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পন্ডিতেরা।

২২শে এপ্রিল,১৯৭১

:

ইস্যু করেছেন ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন দ্যা ইউনিভার্সিটি ইমার্জেন্সী, ২০ পশ্চিম ৪০তম স্ট্রীট নিউইয়র্ক, নিউইয়র্ক ১০০১৮-এলকিউ ৫-৩৩৪৪

বিবৃতিতে প্রদানকৃত স্বাক্ষরঃ

 Jean-Claude Casanova, Political Economy,

জন ডব্লিউ অল্ড্রিজ,ইংরেজী,মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ঃ ডেভিড আর্মস্ট্রং,দর্শন, সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়; ডেভিড টি বেজলন, পলিসি সায়েন্স,সানি, বাফেলো; ড্যানিয়েল বেল, সমাজবিজ্ঞান, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়; সল বেলভ, সামাজিক চিন্তা, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়; রোনাল্ড বারম্যান,ইংরেজী, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান ডিয়েগো; হ্যান্স এ বেথে, পদার্থবিজ্ঞান(নোবেল বিজয়ী), কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়;আলেক্সান্দার এম বিকেল, আইন, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়; ড্যানিয়েল বুরস্টিন,পরিচালক, ইতিহাস ও প্রযুক্তি যাদুঘর, স্মিথসোনিয়ান ইন্সটিটিউশন; Franciois Bourricaud, সমাজবিজ্ঞান প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়; ভিট্টোরি ব্রাঙ্কা,সাহিত্য, পাদোভা বিশ্ববিদ্যালয়; রবার্ট ব্রুস্টেইন, নাট্য, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়; Zbigniew ব্রেযিন্সকি, পরিচালক, রিসার্চ ইন্সটিটিউট,কমিউনিস্ট অ্যাফেয়ার্স, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; জ্যা-ক্লদ ক্সানোভা, পলিটিক্যাল ইকোনমি, প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়; ওলফগ্যাং ক্লিমেন, সাহিত্য, মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়; জন কম্পটন, দর্শন, ভ্যান্ডারবিটল্ট বিশ্ববিদ্যালয়;

আরো রয়েছেন সার্জিও কত্তা, আইন, রোম বিশ্ববিদ্যালয়;নিকোস দেভ্লেতোগ্লৌ, অর্থনীতি, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স; মেরলে ফাইন্সোদ,গভর্নমেন্ট, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়; জ্যাকব জোয়েল ফিঙ্কেলস্টিন, প্রাচীন সাহিত্য, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়; লুইগি ফিরপো পলিটিক্যাল থিওরি,তোরিনো বিশ্ববিদ্যালয়; ওলফ্র্যাম ফিশার, ইতিহাস,বার্লিন মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়;ফ্র্যাঙ্কলিন এল ফোর্ড, কলা ও বিজ্ঞান, হার্ভার্দ বিশ্ববিদ্যালয়; চার্লস ফ্র্যাঙ্কেল, দর্শন এবং পাব্লিক অ্যাফেয়ার্স, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; জন হোপ ফ্র্যাঙ্কলিন, ইতিহাস, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়;ফ্র্যাঙ্ক বি ফ্রিডেল জুনিয়র, ইতিহাস, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়; মিল্টন ফ্রিডম্যান, অর্থনীতি, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়; পল এ ফ্রেউন্দ, আইন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়;

এবং রিচার্ড এন গার্ডনার,আইন, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়;থিওডোর এইচ গাস্টার,ধর্ম, বার্ণার্ড কলেজঃ হ্যারি ডি গিডিওন্সে, অর্থনীতি, নিউ স্কুল ফর সোশ্যাল রিসার্চ; হ্যারি গিরভেটয, দর্শন, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারা; নাথান গ্লেজার, শিক্ষা, হার্ভার্ড  বিশ্ববিদ্যালয়; হারম্যান হার্ট্ম্যান, রসায়ন, ফ্রাঙ্কফুর্ট  বিশ্ববিদ্যালয়; উইলহেল্ম হেনিস, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ফ্রেইবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়; রবার্ট হল্যান্ড্যার, রোমান্স ল্যাঙ্গুয়েজ, প্রিন্সটন; সিডনে হুক,দর্শন, নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়;

এছাড়াও, এইচ স্টুয়ার্ট হিউজেস, ইতিহাস, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়; আর্তুরো কার্লো

ইয়েমোলো, যাজকীয় আইন,  রোম বিশ্ববিদ্যালয়;; হেনরি জেনির, সম্মানসূচক রেক্টর,  ব্রাসেলস বিশ্ববিদ্যালয়;

হ্যারি জি জনসন, অর্থশাস্ত্র, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স; জাসা কেস্লার, ইংরেজি

সাহিত্য, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস; উইলিয়াম আর কিন্টেনার, পরিচালক, ফরেন

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়;  আরভিং ক্রিস্টল, আরবান ভ্যালুজ, নিউ

ইয়র্ক  বিশ্ববিদ্যালয়;হেল্মুট কুন, দর্শনশাস্ত্র, মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়; পল কার্টয, দর্শনশাস্ত্র,

স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্ক, বাফেলো ; ডেভিড ল্যান্ডেস, ইতিহাস, হার্ভার্ড  বিশ্ববিদ্যালয়;; হ্যারল্ড ডি লাসোয়েল,  আইন ও রাজনৈতিক বিজ্ঞান, ইয়েল  বিশ্ববিদ্যালয়;  উইলিয়াম ই লেচটেনবুর্গ, ইতিহাস,

কলাম্বিয়া  বিশ্ববিদ্যালয়;  অ্যারন লেভেনশটেইন, ম্যানেজমেন্ট, বারূক কলেজে CUNY;

গুন্থার লেউই,  সরকার,  ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়; সেমৌর মার্টিন লিপসেট, সরকার

এবং সমাজবিজ্ঞান, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়;   উইলিয়াম ডব্লিউ লকউড, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক

বিষয়াদি,  প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়;   রিচার্ড লৌয়েন্থাল, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ফ্রি ইউনিভার্সিটি. অফ

বার্লিন |

এছাড়াও, হারমান লুইবে, দর্শনশাস্ত্র, বিয়েলোইফেলেড বিশ্ববিদ্যালয়; ডোনাল্ড ম্যাকরে,

সমাজবিদ্যা, লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স; ইয়োইচি মায়েদা, ফরাসি, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় ;

হান্স মাইয়ার, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়; মার্টিন ই মালিয়া, ইতিহাস, ক্যালিফোর্নিয়া  বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে (প্যারিস এখন); নিকোলা মাত্তেউচ্চি, ইতিহাস, বোলোন বিশ্ববিদ্যালয়;

জেমস ম্যাকিউলি, ইংরেজি, তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়; গুইসেপ্পে মরুজ্জি, ফিজিওলজি,

পিসা বিশ্ববিদ্যালয়; ফিলিপ ই মোসেলে, পরিচালক, ইউরোপীয় ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়  .; আর্নেস্ট নাগেল, দর্শনশাস্ত্র, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি. ; এ ই কেইর ন্যাশ, সমাজবিদ্যা, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান্তা বারবারা; রবার্ট এ নিসবেত, সমাজবিদ্যা,  ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রিভারসাইড;

এছাড়াও, আর্নেস্ট নলতে, আধুনিক ইতিহাস, মারবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়; হেনিঞ্জ ডিয়েট্রিখ অর্তলিয়েব,

অর্থনীতি, হামবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়; রবার্ট আর পামার, ইতিহাস, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়; হেনরি পিয়েরে,

ফরাসি, ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়; জিয়াম্পিয়েত্রো পুপ্পি, চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল কমিটি অফ ফিজিক্স, বোলোগ্না

বিশ্ববিদ্যালয়; লুসিয়ান পাই, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট. ইসডর আইজাক রাবি, পদার্থবিজ্ঞান (নোবল বিজয়ী), কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি. ; পল রামসে, ধর্ম, প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ; এডুইন ও রেশ্চরার, ইতিহাস, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়; জন পি রোচে, রাজনীতি, ব্র্যান্ডেইস বিশ্ববিদ্যালয়  .; রৈসারিও রোমিও, আধুনিক ইতিহাস, রোম বিশ্ববিদ্যালয়; জর্জ কে রোমোসার, পলিটক্যাল সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ হ্যাম্পশায়ার ; হেনরি রোসোভস্কি, অর্থনীতি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি. ; ওয়াল্টার এইচ রুয়েগ, সমাজবিদ্যা ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়;

এছাড়াও, আলডো সান্দুলি, আইন, রোম বিশ্ববিদ্যালয়; জিওভান্নি সারতোরি, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ফ্লোরেন্স বিশ্ববিদ্যালয় ; লিওনার্ড শারপিও, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়; এরউইন কে শেডুক সমাজবিদ্যা, কোলন বিশ্ববিদ্যালয়; পল সিবুরি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় , বার্কলে; এডওয়ার্ড শিলস, সমাজবিদ্যা, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়; জন আর সিল্বার, আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়; ফ্রিটজ স্টার্ন, ইতিহাস, কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি. ; গার্ড টেলেনবাখ, ইতিহাস. জার্মান হিস্টোরি ইনস্টিটিউট, রোম; ফ্রেইন্ড্রিখ এইচ টেনব্রুক, সমাজবিদ্যা, টুবিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়; হেল্মুট থিয়েলিকে, ধর্মতত্ত্ব, হামবুর্গে বিশ্ববিদ্যালয়; চার্লস টাউনস, পদার্থবিদ্যা, (নোবেল বিজয়ী),ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে; হ্যারল্ড সি উরে, রসায়ন (নোবেল বিজয়ী), ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে; আর্নেস্ট এইচ ভ্যান্ডার বেউগেল, আইন, লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়  .;

এছাড়াও এন ই এইচ ভ্যান এসভেল্ড, আইন, লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়; ইউজিন পি উইঙ্গার, পদার্থবিদ্যা

(নোবেল বিজয়ী), প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় ; পিটার জন দে লা ফসে ওয়াইলস, রাশিয়ান স্টাডিজ,

লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়; ডেভিড এ উইলসন, পলিটিক্যাল সায়েন্স, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেস; জেমস কিউ উইলসন, সরকার, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি ; উইলিয়াম ব্যারি উড জুনিয়র,

মেডিসিন, এইচ জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়; সি ভ্যান উডওয়ার্ড, ইতিহাস, ইয়েল ইউনিভার্সিটি. ; এবং

গর্ডন রাইট. ইতিহাস, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়.

.

13.149.475

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে আমেরিকার সাহায্য স্থগিত প্রস্তাব সম্পর্কে সিনেটর এডমন্ড মাস্কির চিঠি সিনেটরদের পত্রাবলী ৩০ এপ্রিল, ১৯৭১

মার্কিন সিনেট

ওয়াশিংটন ডি সি ২০৫১০

এপ্রিল ৩০, ১৯৭১

মিসেস এডগার এফ. রোড

৩০ অ্যাপেল ট্রি লেন

বেরিংটন, রোড আইল্যান্ড ০২৮০৬।

প্রিয় মিসেস রোডঃ

পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আপনার মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। এ ব্যাপারে আপনার কথা শুনে প্রীত হলাম।

সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে আপনার উদ্বেগের ব্যাপারে আমি অবগত। আপনি হয়তো আগ্রহী হবেন যে, উক্ত দ্বন্দ্ব না সমাধান হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যেন পাকিস্তানকে কোনরূপ সামরিক সাহায্য না দেয়, এরকম একটি উদ্যোগে আমি যৌথভাবে যোগদান করেছি। এ ব্যাপারে আমার দেয়া একটি সাম্প্রতিক বাণী আমি প্রেরণ করছি, আশা করি আপনি আগ্রহী হবেন।

শুভ কামনায়

নিবেদক,

এডম্যান এস মাস্কি

সিনেটর, যুক্তরাষ্ট্র

.

13.150.476-478

শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিব উইলিয়াম রজার্সকে লিখিত মিঃ উইলিয়াম গ্রিনোর চিঠি উইলিয়াম,বি,গ্রীনো,জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়

৬ মে,১৯৭১

 

          দ্যা জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি

             স্কুল অফ মেডিসিন

              ৬ মে,১৯৭১

জনাব,

বিগত দশ বছর যাবত জন হপকিন্স স্কুল অব মেডিসিন এন্ড হায়াজিন ফ্যাকাল্টির বেশ কিছু সদস্য কলকাতা এবং ঢাকায় গবেষণা এবং প্রশিক্ষন প্রকল্পে নিয়োজিত রয়েছে বিধায় পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

সরেজমিনে এসব এলাকায় তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহীত হয়েছে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সুপরিকল্পিত হামলা বোমা নিক্ষেপ এবং কামান হামলার মাদ্যমে প্রধান বিশ্ববিদ্যালগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতি করেছে।আরো উদ্বেগের বিষয় অধ্যাপক এবং শিক্ষার্থীদের একের পর এক হত্যা করা হয়েছে।আমি আশা করি আপনার কাছে ঢাকায় নিযুক্ত আমেরিকার মহাদুত মিঃ আর্চার ব্লাড এর পরিপূর্ণ নথি রয়েছে।তার তথ্যগুলোকে সম্পূর্ণভাবে সঠিক মনে করা হয় এবং ইংল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানো স্বাধীন দর্শকরাও একে সমর্থন করেন।

যদিও পূর্ব পাকিস্তানের মত দেশের গুটিকয়েক শিক্ষিত এবং নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব কে হত্যা করায় এ ভয়াবহ অপচয় নিন্দিত হওয়া উচিত,কিন্তু আরো কিছু দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার রয়েছে যাতে আমাদের বর্তমানে দৃষ্টি প্রদান করা উচিত।আমি বিশ্বাস করি আমাদের আত্ম-স্বার্থ পরিস্থিতির বাস্তববাদী গুণগ্রাহিতা এবং নির্বিশেষে সকল অঙ্গিকারের ঊর্ধে আমাদের সম্বল সমর্পণ করার সিদ্ধান্ত কে নির্দেশ করে।সেসব বিষয় যা দেখে ধারণা হতে পারে পূর্ববঙ্গ পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি দ্বারা বৈদেশিক কর্মীবাহিনী হিসেবে চালিত হতে পারে না তা হল :

১)সাম্প্রতিক আক্রমন যা বাঙ্গালিদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের কর্তৃত্ব বিষয়ক জনমত কে আরও দৃঢ় করেছে,এর পূর্বে একটি মুক্ত নির্বাচন তাই নির্দেশ করছে যে ৮০ শতাংশের বেশি জনগন শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দৃঢ় ভাবে সমর্থন করেছে।তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বেড়েছে এবং অসহযোগিতা ও সক্রিয় প্রতিরোধ্য কর্মকাণ্ডে তারা একত্রিত হয়েছে।

২)ভারতের সীমান্ত এলাকা কখনই বন্ধ হয়নি এবং যথেষ্ট সৈন্য দ্বারা তা বন্ধ করা সম্ভবও নয়।ভারত আশ্রয়স্থল প্রদান করতে পেরে আনন্দিত।তাই সমগ্র দেশটি জুড়ে গেরিলাদের প্রশিক্ষনস্থল রয়েছে যারা প্রতিশোধ এর ভয় ছাড়াই অতর্কিত হামলা পরিচালনা করতে পারে।

৩)সাম্প্রতিক প্রমানাদি নির্দেশ করে যে সামরিক বাহিনী কেবলমাত্র পরিত্যাক্ত নগরকেন্দ্র ও রাস্তা এবং রেলপথ গুলো নিয়ন্ত্রন করে কিন্তু বাকি গ্রামাঞ্চলের ওপর তাদের কোন নিয়ন্ত্রন কিংবা প্রশাসনিক ক্রিয়ামূলক যন্ত্রপাতি নাই।তার মানে শুধুমাত্র গেরিলাদের জন্য আশ্রয়স্থল নয় বরং গ্রামাঞ্চলের কোন অংশেই টেকসই অর্থনীতি ও সুদুর ভবিষ্যৎ গঠনের সম্ভাবনা নেই।

৪)পুর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির ব্যার্থতা মানে বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ ক্ষতি যা পশ্চিম পাকিস্তান ও সামরিক বাহিনীর অর্থনীতি কে সচল রাখছিল।যা নির্দেশ করে বর্তমানে পুর্বের স্থিতাবস্থা ধরে রাখতে ব্যাপক পরিমানে বহিরাগত সাহায্য প্রয়োজন হবে।বর্তমান সামরিক কর্মকাণ্ডের জন্য অতিরিক্ত বৈদেশিক বরাদ্দ প্রয়োজন যার পরিমান অনেক।

৫)বাংলাদেশে একটি নির্মাণাধীন শর্তাধীন সরকার রয়েছে যারা আর্মি থেকে পালানো স্বাধীন বাংলার অটুট লক্ষ্য রাখা গ্রামাঞ্চলের নেতাদের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক বজায় রাখছে।কূটনীতিক এবং প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষিত বিদেশী কর্মী অস্থায়ী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাকে ব্যাহত করছে।এই সরকারের প্রতিনিধিগন যোগ্য এবং আন্তরিক।শেখ মুজিবুর রহমান এর মুখ্য উপদেষ্টা,মিঃ রহমান সোবহান বর্তমানে এ দেশে রয়েছেন এবং তাকে সরকারের উচ্চ পদাসিন ব্যাক্তিবর্গের নিকট তার তথ্য পোঁছানোর সুযোগ দেয়া উচিৎ।

৬)খাদ্য সরবরাহ হ্রাস পাচ্ছে।১৯৭০ এর সাইক্লোন এর পর ত্রানসামগ্রীর অভিজ্ঞতার প্রমাণাদি নির্দেশ করে যে ইসলামাবাদে বৈদেশিক মুদ্রার গুরুত্বপূর্ণ অপসারণ ঘটেছিলো।বর্তমানে সেসব সাইক্লোন আক্রান্ত এলাকার মানুষের প্রায় এক মাস যাবত কোন খাদ্য সরবরাহ নেই।এসব এলাকার জন্য সঞ্চিত শস্য চট্টগ্রামে আর্মিদের খাদ্য হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে।সাইক্লোনের হামলা থেকেও চড়া মূল্য পরিশোধ করতে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্পষ্টত একটি ধ্বংসাত্মক দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা যাচ্ছে যা অসংখ্য প্রাণের বিনিময়ে সারাবিশ্বের নজর কাড়বে।

    ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাতিত সরাসরি অনুদান অথবা বিশ্বব্যাংক এর পরোক্ষ সহায়তা ছাড়া আর্মির বর্তমান ব্যয় খুব দ্রুতই অসহনীয় হয়ে যাবে এবং অতি শীঘ্রই মীমাংসা ত্বরান্বিত করা প্রয়োজন ছিল।১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের জন্য উদ্যোগটি খুব বেশী অনুকূল ছিল।

    চীন পশ্চিম পাকিস্তানের সাপেক্ষে আমাদের জায়গা গ্রহন করতে পারে এই ভীতি থাকা যুক্তিযুক্ত,কিন্তু এটি আমাদের পক্ষে গভীর রাজনৈতিক এবং যুদ্ধকৌশল সংক্রান্ত সাংঘাতিক ভুল প্রকাশ করতে পারে এবং প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্র কে দমনমূলক সামরিক সরকার যা অদূর ভবিষ্যতে টিক্তে পারবে না; তার বিরুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা সমর্থন করতে দেখা যেতে পারে।এই প্রতিবাদের পক্ষে দাঁড়ানো যুক্তিযুক্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ।

   বর্তমান নেতৃত্বের আপোষের উদ্যোগ এবং বিদেশী সংস্থা গুলোর পশ্চিম পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান অন্তত দুর্ভিক্ষের বোঝা নিরসন করবে এবং সমস্ত জনগনকে করা অস্ত্রসহ গেরিলা যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি দমন করবে যা হবে আমাদের জন্য প্রতিকুল।

    বক্তব্যটি যেসকল তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা তা ব্যাপক,বাস্তব এবং সাম্প্রতিক।তথ্যের কিছু উৎস আপনার পড়ার জন্য সংযুক্ত করা হল।যদিও আমি মনে করি আপনি ইতিমধ্যে তা কনসুল ব্লাড থেকে হাতে পেয়েছেন।

    আমি আশা করি আপনি খুব ভালভাবে পর্জবেক্ষন করে দেখবেন এতে একজোট হয়ে দেশ এবং মানুষের মধ্যে ক্ষমতার সাম্য যা প্রকাশ করছে যা সারাবিশ্বে দ্বিতীয়।দুর্ভিক্ষে এদেশে লক্ষ্য মানুষের মৃত্যু সারাবিশ্বে অবশ্যই নজর কাড়বে।বিষয়টি দমন করতে অতি দ্রুত ব্যাবস্থা গ্রহন করতে হবে।অপেক্ষা করা কেবল সাইক্লোনের পর পশ্চিম পাকিস্তানের ইতিহাস ভেঙ্গে ফেলবে এবং তাদের বর্তমান কর্মকান্ডে ধারনা করা যায় এ পথে কোন সাহাজ্যই কার্জকরী হবে না।আন্তর্জাতিক সাহাজ্য আবশ্যক।

নিবেদনে,

উইলিয়াম বি গ্রিনাফ , ৩ , এম ডি

প্রধান

সংক্রামক রোগ বিভাগ।

.

13.151.479

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ওয়াশিংটনে পাকিস্তান চ্যান্সারির সম্মুখে অনুষ্ঠিতব্য বিক্ষোভের সংবাদ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ ৬ মে, ১৯৭১

৪৯০ ফ্রাঙ্কলিন স্ট্রিট,

কেমব্রিজ, ম্যাস ০২১৩৯

৬ মে, ১৯৭১

সম্পাদক, সিটি ডেস্ক,

এই সংযুক্তিগুলো পাকিস্তান চ্যান্সারী, শেরীডন সার্কেল, ম্যাস অ্যাভিনিউ, ওয়াশিংটন ডিসি এর সম্মুখে সকাল ৯ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য বিক্ষোভের পটভূমি ব্যাখ্যা করবে।

বিক্ষোভের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমেরিকান অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তায় সংঘটিত সামরিক হত্যাকাণ্ড এবং নৃশংসতা এবং পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) আসন্ন দুর্ভিক্ষের মুখে সরকারের নিষ্ক্রিয় অবস্থানের প্রতিবাদ।

বিক্ষোভে অনশন এবং জাগরণ করা হবে মিসেস আনা ব্রাউন টেইলর এর নেতৃত্বে, যিনি বেলসেন বুরগেন কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফিরেছেন, পাকিস্তানে তিন বছর অতিবাহিত করেছেন এবং এখন “ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ” এর সমন্বয়কারী। এই অনশন এবং জাগরণ ১০-১৫ দিন স্থায়ী হবে।

আরও তথ্যের জন্য আপনি ওয়াইডব্লিউসিএ, ১৭ স্ট্রিট, ওয়াশিংটন এ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা ফোন করতে পারেন ডঃ ডেভিড নালিন ৬১৭-৪৯২-২৪৪৫ বা ৪২৪-৫৩২৫ (হার্ভার্ড মেডিক্যাল সার্ভিস, বোস্টন সিটি হাসপাতাল)।

ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ

বোস্টন

.

13.152.480

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ডাক্তার নালীন ও মিসেস এবি টেইলর কর্তৃক প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের আহ্বান ডাঃ নালিন,মিসেস এনা ব্রাউন টেইলর (হাভার্ড মেডিকেল স্কুল) ৮মে,১৯৭১

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল- মেডিসিন বিভাগ
বোস্টন সিটি হাসপাতাল

৮১৮ হ্যারিসন এভিনিউ
বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস  ০২১১৮
এরিয়া কোড ৬১৭ ৪২৪
৮ মে, ১৯৭১

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি,
রিচার্ড এম নিক্সন,
হোয়াইট হাউস,
ওয়াশিংটন ডিসি.

মাননীয় রাষ্টপতি,

আমেরিকার সাহায্যকৃত টাকা এবং অস্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে পুর্ব পাকিস্তানিদের গনহত্যায় এবং তাদের গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নেতাদের হত্যাকাণ্ডে বিলিয়ন ডলারের মার্কিন সাহায্য ধ্বংস করা হচ্ছে। দুর্ভিক্ষের কারনে মৃত্যুর সম্মুখীন হচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা সামরিক হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে গিয়েছে।

আপনার কাছে আবেদন করছি-

(১) সকল অস্ত্রের উপর নিষেধাজ্ঞা  দিয়ে পাকিস্তানি গণতন্ত্র উদ্ধার করুন এবং সাহায্য করুন ঠিক যেভাবে আমরা ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় করেছিলাম। যার ফলে সে যুদ্ধ থেমে গিয়েছিল। এটাই এখন পারে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড বন্ধ করতে।

(২) দুর্ভিক্ষ প্রতিহত করতে আমেরিকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপ ব্যবহার করে মজুদে থাকা শস্য সরবরাহ করুন এবং রেডক্রসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ এবং উদ্বাস্তুদের পরিচর্যার ব্যাবস্থা করুন।

(৩) জাতিসংঘের সাথে এই সংকটের মোকাবেলায় একটি আলোচনা শুরু করার জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে আপনাকে সম্মানের সাথে ধন্যবাদ জানাই।

স্বাঃ / –
ডঃ ডেভিড আর নালিন
স্বাঃ / –
মিসেস আনা ইসলাম টেলর

.

13.153.481-482

শিরোনাম  সূত্র  তারিখ
নিউইয়র্ক টাইমস সিডনী সেনবার্গকে লিখিত মিঃ জন রোডের চিঠি ১১ মে, ১৯৭১

নিউইয়র্ক টাইমস প্রতিনিধি সিডনি সেনাবার্গকে লিখিত মি. জন রোডের চিঠি। তারিখ ১১মে,১৯৭১

                               ৪০০৫ এভারিট স্ট্রিট

          কেনসিংটন,মেরিল্যান্ড ২০৭৯৫। মে ১১,১৯৭১

জনাব সিডনি সেনাবার্গ

নিউইয়র্ক টাইমস

দিল্লী

প্রিয় সিডনি সেনাবার্গ,

গত ডিসেম্বরের সাইক্লোনের পর মনপুরার ওপর লেখা তোমার নিবন্ধটি পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ জানানো মূলত আমার কাছে কালক্ষেপণ। ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার প্রচেষ্টার সময় আমাদের কাছে কথা রাখা একমাত্র সাংবাদিক হিসাবে তোমার কুখ্যাতি আছে।৩০ডিসেম্বরের নিবন্ধটি  পূর্বপাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর আগামীকালের সভায় আমার সাক্ষ্যের অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির সামনে উপস্থাপিত হবে।

এই বিভ্রান্তিকর সময়ের ভেতরেও তোমাকে লেখার কারণ হচ্ছে তোমার বর্তমান চমৎকার সাংবাদিকতার প্রভাব সম্পর্কে জানানো ও তোমাকে আরও লেখা পাঠানোর জন্য উৎসাহিত করা।

৯ই জুন তুমি তোমার বিবৃতি  এনওয়াইটি(NYT) তে  মালিয়াম ব্রাউনের পরেই সন্নিবেশিত করেছ।দুঃখের বিষয় হচ্ছে সেখানে কোথাও শরনার্থীদের বিষয়টির বাস্তবিক অবস্থা তুলে ধরা হয় নি এবং পূর্বপাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে সেখানে কিছুই উল্লেখ নেই।সভায় সভাসদেরা জোর দিয়ে বলেছে ব্রাউন পাকিস্তানিদের দারাপ্রতিপালিত হচ্ছে। তুমি হয়ত জানো এখানে সত্য বলার মতো তেমন কেউ নেই।সরকারি কর্মচারীদের কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং খুব অল্পসংখ্যক লোকই আছি আমরা যারা এখানে ঘটনার সাক্ষী।  স্কট বচারের মতো লোক যার সাথে তুমি ২৫তারিখে কথা বলেছিলে তার এখানে কিছু বলার মতো অবস্থান নেই।সভায় তোমার রিপোর্ট খুবই গুরুত্বের সাথে দেখা হয়েছে এবং এটিও একটি কারণ। পাকিস্তানিরা বাঙালিদের কোনা সাগায্য দিতে পারছে না এবং দিচ্ছে না এটা প্রমাণ করার জন্য আমি আমার সাক্ষ্যের সাথে তোমার ৩০তারিখের আর্টিকেল সংযুক্ত করেছি।আমি এবং আমার স্ত্রী প্রচুর চেষ্টা করছি কিন্তু এটি আসলে একটি ক্ষুদ্র পরিসর। আমরা saxb(R-ohio) এবং church ( D-idaho) এর দ্বিদলীয় সহযোগীতায় সিনেট এবং হোয়াইট হাউজ উভয়ের সাপেক্ষে আন্তর্জাতিক সাহায্য আইনে সংশোধনী আনতে সক্ষম হয়েছি।কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে  যতক্ষণ না পর্যন্ত পূর্বপাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সাহায্য কার্যকর করা ও তাদের পূনর্বাসিত করা না হচ্ছে ততক্ষণ সকল সাহায্য বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রণীত আইনের সম্পর্কে টাইমস পত্রিকায় তুলে ধরা হয় নি। আমাদের চাপ সৃষ্টি করতে হবে।ব্রাউনের পাকিস্তানের পক্ষে ওই আবর্জনা লেখালেখি কোনো কাজে আসবে না।

বাংলার বাইরে থেকে আমরা অনেক ভালোমানের ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছি যা আমাদের অবস্থান তৈরী করতে সাহায্য করছে কিন্তু সবাইকে আরও প্রভাবিত করার জন্য আমাদের ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন। আমরা ধারনা করছি একমাসের মধ্যে আমরা হয় আরও সামনে এগুবো নয়ত আরো ব্যাপক দুর্ভিক্ষের মধ্যে পরব। আমরা অবশ্যই আশা করব তুমি নিয়মিত শরণার্থীদের ভৌগলিক অবস্থান এবং তাদের উপর সামরিক বাহিনীর আচরণ সম্পর্কিত নিবন্ধ পাঠাবে যাতে আমেরিকা সাহায্য পাঠাতে থাকলেও কনগ্রেস এর সম্পর্কে অবহিত থাকে।

স্পষ্ট ভাবেই দেখা যাচ্ছে যে কনগ্রেস সদস্য গালাঘর ২জুন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ছিলেন এবং তিনি  আমেরিকাকে একটি অবস্থান নেওয়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছেন কারণ সেখানকার অবস্থা দেখে ও জেনে তিনি আতংকিত হয়ে ফিরে এসেছেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর মীমাংসার জন্য আমেরিকার নির্বাচিত প্রতিনিধির আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন ও প্রচার করতে হবে যা এখনো করা হয় নি যদিও রাউটার টেপে তথ্য মুদ্রিত হয়েছে এবং অফিসিয়াল প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রচারিত হয়েছে।

এই সাইক্লোনের স্ময় তোমার নিবন্ধগুলো পূর্বপাকিস্তানের হাজারো মানুষের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তুমি যা করছ তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য এবং তা অনুধাবন করার জন্য তোমাকে অনুপ্রাণিত করছি। যদিও আমরা দুজনেই পূর্বপাকিস্তানে চলমান মর্মান্তিক  পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্ণ সজাগ কিন্তু কংগ্রেস এবং জনগণ এর সম্পর্কে জানতে পারছে না।

শুধুমাত্র নিয়মিত এর উপর প্রতিবেদন পাঠ করলেই তারা সমস্যাটির পরিধি অনুধাবন করতে পারবে এবং এই মর্মান্তিকতা প্রশমনে আমেরিকার ভূমিকা কি হতে পারে তার সম্পর্কে ধারণা করতে পারবে যা ইতোমধ্যেই প্রক্রিয়াধীন আছে।

ক্যান্ডি এবং আমি তোমাকে শুভেচ্ছা জানাই এবং আশা করি আমরা শীঘ্রই তোমার সাথে দিল্লী সফরে মিলিত হব।

সে পর্যন্ত ভালোবাসা

জন রোড

.

13.154.483

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের প্রতি জুক্ত্রাস্ট্রের নীতি পরিবরতনের আহবান জানিয়ে এ.ডি.এ কনভেনশন আমেরিকান্স ফর ডেমোক্রেটিক একশন ১৫ মে ১৯৭১

                                                                                                            নংঃ৩৬২

১৯৭১ এ.ডি.এ কনভেনশন

আমেরিকান্স ফর ডেমোক্রেটিক একশন

১৪২৪ সিক্সটিন স্ট্রীট,

ওয়াশিংটন ডিসি ২০০৩৬

প্রাপকঃকনভেনশন

প্রেরকঃ পররাষ্ট্র ও সামরিক নীতি কমিশন

বিষয় ঃপাকিস্থান গৃহযুদ্ধ

যেহেতু পূর্ব পাকিস্থানের মর্মান্তিক  অবস্থার কারণ হিসেবে নির্যাতন,সামরিক আইন এবং বাঙালি নেতাদের কৌশলগত অপসারণকে চিহ্নিত করা হচ্ছে।

যেহেতু, ভারতীয় হুমকির সম্মুখীন যেখানে ভারত,চীন,সোভিয়েত ইউনিয়ন এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্তর্ভুক্ত।

এবং যেহেতু যখন কিনা,জাতিসঘের অতিবাধ্যতা ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের রক্তাক্ত দ্বৈরথ মেটাবার জন্য সম্ভাব্য সব করা

এখন কাজেই বিভিন্ন নীতি পরিবরতনের মাধ্যমে এডিএ যুক্তরাস্ট্রকে পূর্ব পাকিস্থানের গৃহযুদ্ধ হতে সকল

১/পাকিস্থান সরকারের সাথে সকল প্রকার সামরিক বেসামরিক প্রাণঘাতি অস্ত্র বেচাকেনা ও অন্য সরকার হতে অস্ত্র কেনা বেচার সকল সম্ভাব্নার পথ রোধ।

২/ যেহেতু বৈদেশিক সমর্থনই পূর্ব পাকিস্থানের ওপড় সামরিক অত্যাচারের মুল উৎসাহ তাই সকল প্রকার অর্থনৈতিক,দ্বিপার্শ্বিক ও বহুপারহশিক সাহায্যের পথ অতি দ্রুত বন্ধ করা।নৃশংসতা আর সহিংসতার পালা শেষ করে ৭০ এর ২১শে নভেম্বরে পাকিস্তান আর্মি  পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে নিজেদের  আগের অবস্থানে ফিরে গিয়ে যথারীতি স্বাধীনভাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে পূর্ব পাকিস্তানের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ পার্টি নাগরিক আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ঢাকায় ফিরে যায় এবং রাজধানী ইসলামাবাদে ন্যাশনাল এসেম্বলি বসে।  এরপর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে পাকিস্তানের প্রতি তাদের অর্থনৈতিক সহায়তা প্রোগ্রামটি পুনর্বিবেচনা ও পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে, বিশেষ করে খাদ্য সরবরাহ, চিকিৎসা গবেষণা ও সরঞ্জামের ব্যাপারে;

৩/সেসকল বাংলাদেশীদের সাহায্য ও সান্ত্বনা প্রদান কর যারা বর্তমানে আমেরিকায় বসবাস করছে ও একদিন স্বদেশের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য ফিরে আসবে|

 4/সাধারণ সম্পাদককে প্রস্তাব কর পূর্ব পাকিস্তানের শহর ও গ্রামীণ  অঞ্চলে যে ক্ষয়-ক্ষতি ,ধ্বংসকার্য ও অত্যাচার হয়েছিল তার ব্যাপ্তি নির্ণয়ের জন্য একটা ইউ.এন তদন্ত কমিটি গঠন করতে এবং জাতীয় সমাবেশে তার প্রেক্ষিতে একটা প্রতিবেদন প্রদান করতে.( জাপান,ইন্দোনেশিয়া ও মরিশাস্ অথবা অন্যান্য উপযুক্ত দলের দ্বারা কমিটিটি গঠিত হতে হবে, দলগুলোর নিজস্ব মতানুযায়ী কমিটি পরিচালিত হবে)

.

13.155.484-486

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে যুক্ত্রাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তনের আবেদনঃ মিসেস নিকসনকে লিখিত এম। এফ। ডানহামের চিঠি ২৪ মে, ১৯৭১

ব্যাপকভাবে বিক্ষিপ্ত ভৌগলিকতা অনাড়ম্বরভাবে যেসব সংগঠনের জন্য আমরা নিরূত্তর কাজ করি তারা আমাদেরকে চুপ করিয়ে দিয়েছে যার ফলে আমাদের পক্ষে তাদেরকে শোনা কঠিন হয়েছে।তবুও আমাদের কাছে কিছু অর্ন্তদৃষ্টি এবং তথ্য আছে যা শুধুমাত্র যারা কিছু সময় বাংলায় ছিলতারা জানে।আমরা শিক্ষিত এবং বুদ্ধিমান আমেরিকান, ইউ এস সরকার , আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিভিন্ন মিশন , ব্যক্তিগত ফাউন্ডেশন ও কোম্পানির সাবেক কর্মচারী এবং অধ্যাপক, ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ।আমাদের অনেকেই আমাদের কাজ থেকে ছুটি গ্রহণ করতেছি এবং নিজেদের চেষ্টায়  রিস্ক নিয়ে পাকিস্তান আমাদের ফিরে যাবার ব্যাপারে ওয়াসিংটনে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানের নির্দ্ধিধায় প্রবেশযোগ্য প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলছি।বাঙালিরা নিজেদের সরকারী চ্যানেলের মাধ্যমে কথা বলার অনুমতি নেই।বেশিরভাগ সরকারি আমেরিকান বিশেষজ্ঞদের যারা পাকিস্তানে আছে কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানে আছে এবং তারা বিপথগামী পূর্ব প্রদেশের উপর মন্দ ওয়াকিবহাল।আমরা যারা সেখানে বসবাস করি তারা পশ্চিম এবং পূর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ভুল বোঝাবুঝি ও আমেরিকা থেকে অতিমাত্রায় সরলীকৃত এইড প্যাটার্ন যা শুধুমাত্র তাদের মধ্যে একটি অর্থনৈতিক ব্যাবধানে উৎসাহিত করে।পাকিস্তানে আমাদের মনোযোগী ছি্লাম না এবং এখন আমরা নিদারুণভাবে মনোযোগী হতে চাই।অনেক মিলিয়ন মানুষের জীবন এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী সংস্কৃতির অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে।ধন্যবাদ মিডিয়া কভারেজকে যা বর্তমান সময়কালের ট্র্যাজেডিকে তুলে ধরেছে ফলে জ্ঞানী আমেরিকানদের চিন্তার মূল বিষয় এখন বাংলা।যাইহোক, খুব অল্প বিদেশী আছেন যারা এই এলাকার ব্যাপারে জানে এবং এখনও অনেক আছেন যারা বুঝতে পারছেন না যে পাকিস্তান দুটি ভিন্ন ধরণের এলাকার সমন্বয়ে গঠিত।তহবিল এর দায়িত্বপ্রাপ্ত আমেরিকানরা সাধারণত ছিল ওয়াশিংটনে বা পশ্চিম পাকিস্তানে।তারা কখনো কখনো পূর্ব পাকিস্তান পরিদর্শন করতেন তাও সংক্ষেপে এবং তারা সাধারণত সেখানকার জটিল পরিস্থিতি সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিলেন বা ভূল জানানো হত যা আসলেই এত অল্প সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে জানা অসম্ভব।এখানে লক্ষ ডলারের রাজনীতিও জড়িয়ে পড়েছিল।

.

13.156.487

শিরোনাম সুত্র তারিখ

বাংলাদেশের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকার

পাকিস্তান পরিণতির উপর রাখার আশ্বাস ডঃ

নালিনকে লিখিত সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির চিঠি

সিনেটরদের পত্রাবলী ২৬ মে, ১৯৭১

এডয়ার্ড.এম.কেনেডি
ম্যাসাচুসেটস.

                                     ইউনাইটেড স্টেইটস সিনেট

                                    ওয়াশিংটন,ডি.সি. ২০৫১০

ডঃ ডেভিড.আর.নালিন                                             মে ২৬,১৯৭১

হার্ভার্ড মেডিক্যাল ইউনিট

বোস্টন সিটি হসপিটাল

৮১৮ হ্যারিসন এভিনিউ

বোস্টন,ম্যাসাচুসেটস ০২১১৮

জনাব ডাক্তার নালিন,

      পূর্ব পাকিস্তানের উপরে নেমে আসা দুঃখজনক ঘটনা নিয়ে আপনার সুচিন্তিত বক্তব্য পেশ করে পত্র প্রেরনের জন্য ধন্যবাদ।

উদ্বাস্তুদের জুডিশিয়ারি সাবকমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে,পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিকভাবে সংঘটিত যুদ্ধের কারণে মানবিক সঙ্কটে আমি বরাবরই পাশে আছি।আমি আপনাদের এই উদ্বেগের কারন বুঝতে পারছি এবং আপনাকে এই বিষয়ে আশ্বস্ত করতে পারি যে এই ক্রমবর্ধমান সমস্যার ব্যাপারে আমি কিংবা আমার সাবকমিটির এখনও অনেক কিছু বলার বাকি আছে।

পূর্ব পাকিস্তানের এই পটভুমির উপরে আপনার অগ্রগামী ভুমিকা প্রশংসাযোগ্য।আমরা এই ব্যাপারে আমেরিকার জড়িত থাকার বিষয়টি ও এর ধরন সম্পর্কে তদন্ত অব্যাহত রাখব।

পত্র প্রেরনের জন্য এবং নেপথ্য তথ্যের জন্য আরও একবার অসংখ্য ধন্যবাদ।আমি আমার সেক্রেটারিকে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যাপারে আমার বিবৃতির অনুলিপি সংগ্রহের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।

অনুলিপি                                                                                                বিনীত

                                                                                                এডওয়ার্ড.এম.কেনেডি

.

13.157.488

শিরোনাম সূত্র তারিখ

পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বন্ধের প্রচেস্টায়

সিনেটর ডব্লিউ.এফ.মন্ডেল

সিনেটরদের পত্রাবলী ৩ জুন, ১৯৭১

ওয়াল্টার মন্ডেল
মিনেসোটা

                                                 ইউনাইটেড স্টেইটস সিনেট

                                                    ওয়াশিংটন,ডি.সি. ২০৫১০

ডঃ.ডি.নালিন                                                                                            জুন ৩,১৯৭১

হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজ

ক্যামব্রিজ,ম্যাসাচুসেটস

জনাব ডঃ নালিন,

       পূর্ব পাকিস্তানের ট্র্যাজেডি সংক্রান্ত ব্যাপারে চিঠির জন্য ধন্যবাদ।

এই সমস্যার আশু সমাধানের জন্য খুব শীঘ্রই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আমি আশাবাদী।পাকিস্তানের বিবাদ মিটবার আগ পর্যন্ত ইউ এস অস্ত্র চালানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি।

বাংলাদেশে সমসাময়িক আরও একটি জরুরি অবস্থা ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের মোকাবেলার জন্যও পুর্ব প্রস্তুতি প্রয়োজন।এই সমস্যার প্রতি উপেক্ষা আমাকে মর্মাহত করেছে এবং আমি প্রশাসনের প্রতি আহব্বান জানাচ্ছি অতিসত্বর ত্রানের প্রয়োজনীয়তার পরিমান নির্ধারন করে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে।

আরও একবার আপনার উদ্বেগ আর সমর্থন প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ।পাকিস্তানের বিপর্যয় ঠেকানোর ব্যাপারে আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব সামনের দিনগুলোতেও আমি সেটা অব্যাহত রাখব।

উষ্ণ শুভেচ্ছায়                                                                                     বিনীতভাবে

                                                                                              ওয়াল্টার.এফ.মন্ডেল

                               ————————————————————-

.

13.158.489-491

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পররাষ্ট্র বিভাগের উপসচিবকে লিখিত মিঃ উইলিয়াম বি গ্রীনোর চিঠি পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির অসারতা ব্যাখ্যা

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়

 

৩ জুন, ১৯৭১

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়

মেডিক্যাল স্কুল

৩ জুন, ১৯৭১

মি ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন

উপ সহকারি সচিব

নিকট প্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়া সংক্রান্ত বিভাগ,

ওয়াশিংটন ডি সি ২০৫২০

জনাব মি ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন

আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছে এই জেনে যে আপনি কষ্ট করে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা সম্বন্ধে সচিব রজার্সের নিকট আমার চিঠির উত্তর দিয়েছেন। এই জেনে খুবই ভাল লাগছে যে, আপনি ব্যক্তিগতভাবে সময় নিয়ে আমার বক্তব্যে সাড়া দিয়েছেন, এছাড়াও কলেরা গবেষণা ল্যাবরেটরির সহকর্মী বিশেষ করে ডা লিঙ্কন চেন এবং জর্জ কারলিনের সাথে আলোচনা করেছেন।

প্রথমত, আমি আপনাকে হলপ করে বলতে চাই যেসব খবর আমার কাছে রয়েছে সেগুলো পদাধিকারবলে আপনি ঢাকা থেকে প্রতিদিন সরাসরি পেয়ে থাকেন। সেহেতু আমার কাছে বাস্তব অথবা চাক্ষুষ তথ্য ছাড়া আমি কোন গালগল্প আপনার সামনে তুলে ধরব না। আমি একজন সামান্য মানুষ হিসেবে আমি এটা বুঝতে পারছি না যে কোন নির্দেশের কারণে আপনি এরকম ব্যাপক আধেয়গুলোকে ব্যবহারে বাধা দিচ্ছেন। বিশেষ করে, এটাও বুঝছি না যে কেন আপনি প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে ব্যবহার করে কংগ্রেসে বিবৃতি প্রদানে বাধা দিচ্ছেন। এই ব্যাপারটি আমাকে বিশেষভাবে দুশ্চিন্তায় ফেলছে যে, যখন আমাদের অনেক আইনবিদ অসমর্থিত সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে তুলে ধরছেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে আমরা এসব তথ্যাদি তালিকাভুক্ত করেছি।  সৌভাগ্যক্রমে তথ্যগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে নির্ভুল, সত্যতা নির্ণয় করা হয়েছে  তাই এগুলো বিশ্বাসযোগ্য। আমি এটাও পরিস্কারভাবে বুঝতে পারছি না যে কিভাবে আমাদের নির্বাচিত আইন প্রণেতারা তাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি না পেলে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারবেন। সম্ভবত আপনি আমাদের এই বিষয়টি পরিস্কার বোঝাতে পারবেন।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের থেকে বের হওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সকলেই শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ‘আশা’, ‘অবগত’, এবং ‘আকাঙ্ক্ষা’ করতে পারেন এবং ‘আলোচনা’ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যদিও এই সংবাদ আসলে প্রকৃত ঘটনায় জড়িতদের জন্য কোন গুরুত্বই বহন করে না। ইউ এস সি-১৩০ মিলিটারি পরিবহন বিমানপোত (তুরস্কের জন্য মঞ্জুরীকৃত ) পূর্ব পাকিস্তানে যেকোনো সামরিক আক্রমণের জন্য অস্ত্র পরিবহন সহায়তার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করছে এবং অত্যাধুনিক হুয়েই কোবরা জঙ্গি হেলিকপ্টার(সর্বশেষ মার্কিন সরঞ্জাম) ইতালি থেকে ইরানের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে যা কিনা শান্তির জন্য আশা, আকাঙ্ক্ষা থেকে জোরে কথা বলছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা এতই নিশ্চিত এবং একপাক্ষিক যে বিশ্বাস করা কঠিন আমরা সরাসরি কোন এক পক্ষের হয়ে নাক গলাচ্ছি না বিশেষ করে এই নৃশংস গৃহযুদ্ধে। ভিন্নপথে একটি সাধারণ সামরিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।

এখানে প্রশ্নের কোন অবকাশ নেই যে, পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বৈধ সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করছে, এছাড়া, অসংখ্য উপাত্ত দেখাচ্ছে সরকারের এই নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নবিদ্ধ। কেন রাতের অন্ধকারে ট্রাকভর্তি পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে? কিভাবে সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত এবং নিরাপদ বৃহৎ নৌপথে বাংলাদেশি যোদ্ধারা জাহাজ দখল করছে এবং গত সপ্তাহে প্রধান জলপথে পাটের চালান ধ্বংস করা হয়েছে? কেন বিগত দুই মাসে খাদ্য বোঝাই কোন জাহাজ গত নভেম্বরে সাইক্লোন আক্রান্ত অঞ্চলে পৌঁছায়নি? কেন প্রধান বন্দর চট্টগ্রাম দিয়ে কোন জাহাজ চলছে না? কেন সেনাবাহিনী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যানবাহন চালাতে পারছে না? নিয়ন্ত্রণ যদি বাস্তবেই হয়ে থাকে তাহলে কেন প্রতিদিন গ্রাম জ্বালিয়ে এবং মানুষ হত্যা করা হচ্ছে?

সুনির্দিষ্টভাবে এরকম মারাত্মক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চিত্রকে অগ্রাহ্য করা হয় এগুলো ‘হিন্দু দুর্বৃত্তদের’ কারসাজি। এটা কি পরিস্কার নয় যে এরকম অটল নীতির ক্ষেত্রে ভারত অবশ্যই হস্তক্ষেপ বা আগ্রাসী অবস্থান গ্রহন করবে না? আমরা কি ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি যুদ্ধের মদদ দিতে চাচ্ছি? এখন অবশ্যই স্বাভাবিক কূটনৈতিক আচরণের সময় নয় যখন এসব নীতি অবধারিতভাবে ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্ভিক্ষ এবং যুদ্ধ ডেকে আনছে।

এটি অবশ্যই ভ্রান্ত বক্তব্য যে অর্থনৈতিক সাহায্য সামরিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছে না অথচ এই অর্থ নাগরিক চাহিদা পূরণে ব্যয় হতে পারত, যা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি। এছাড়াও জনগণ অবগত আছে যে মানবিক সাহায্যের পরিবর্তে সামরিক উদ্দেশ্যে সহায়তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। আপনি জানেন যে ত্রাণ সহায়তার জন্য ৫০ টি নৌকা সাইক্লোন আক্রান্ত অঞ্চলে দেওয়ার পরিবর্তে সামরিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।  পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার এই অপসারণ গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নি নৌকাগুলোর ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করে যেখানে পাঞ্জাবি সৈন্যরা ‘হিন্দু দুর্বৃত্তদের’ শাস্তি দিচ্ছিল।

মানবিক এবং ত্রাণ সহায়তা কর্মকাণ্ড সম্পর্কে, ইউএসএআইডির কর্তাব্যক্তিরা গত সপ্তাহে নিম্ন কক্ষের প্রতিনিধিদের পূর্বে স্বীকার করেছেন যে পূর্ণ আন্তর্জাতিক সহায়তা দেয়া হলেও পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় এককোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাওয়ার হুমকিতে রয়েছে। এরকম অবস্থায় ক্ষুধার্ত মানুষ খাদ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পরে। রাস্তার পাশে মানুষের মৃতদেহ ১৯৪৩ সালে বাংলার দুর্ভিক্ষের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এমতাবস্থায় যদি প্রস্তাবিত খাদ্য সহায়তা প্রত্যাহার করা হয় তাহলে ভারতীয় সীমান্তের হাজার হাজার মানুষ যারা পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাকাণ্ড থেকে পালিয়ে আসছে এর সংখ্যা লক্ষাধিক হয়ে যাবে। ভারত কোনভাবেই যৌক্তিক কারনেই এই অবস্থা মেনে নিবে না। এরপর সমস্যার সমাধান ভয়ঙ্কর ও অসম্ভব হয়ে পড়বে। যেকোনো দৃষ্টিভঙ্গিতেই এটি অগ্রহণযোগ্য যে একদিকে পূর্ব পাকিস্তানি ১ কোটি জনগণকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ‘হিন্দু দুর্বৃত্ত’ আখ্যা দিয়ে নির্যাতনকে সমর্থন করা, অন্যদিকে যারা অত্যাচার ও নিপীড়ন সহ্য করে ভারতীয় সীমান্তে গিয়েছে তাদের ‘মানবিক’ সাহায্য প্রদান করা।

এটি প্রত্যাশিত যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ’স্বাভাবিক’ কূটনৈতিক চর্চা এবং অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা (সেন্টোর মাধ্যমে) পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তাকে সফলভাবে এক থেকে দেড় কোটি বাঙালিকে নিপীড়ন করতে সাহায্য করছে এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও ভারতকে উত্তেজিত করার মাধ্যমে পরিশেষে একটি রক্তাক্ত ও বিধ্বংসী যুদ্ধের প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। এই অস্বাভাবিক চিত্র সাধারণের চেয়ে অতিরিক্ত কূটনৈতিক তৎপরতা নির্দেশ করছে। আমি বিশ্বাস করি যদি স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বিশেষ শাখা গাঙ্গেয় বদ্বীপের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির জন্য যথেষ্ট না হয় তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানীদের জন্য নিষেধাজ্ঞা এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের আশার জন্য কংগ্রেসকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সুনির্দিষ্ট বিধি প্রণয়ন করে ওই অঞ্চলে দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক নির্ধারণ করতে হবে। যদি তাই প্রয়োজন হয়, আপনার বিভাগ কতৃক হঠকারী কর্মকাণ্ড দ্বারা অর্জনের মত দ্রুত বা নেতিবাচক নাও হতে পারে।

আমি ইতোমধ্যেই স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতির বিভিন্ন পয়েন্টে বিস্তারিত মন্তব্য করেছি, এছাড়াও মি ডেভিড এম আবসহায়ার থেকে সিনেটর জে গ্লেন বেল জুনিয়রের নিকট সংশ্লিষ্ট বিষয়ের  যোগাযোগের দলিলগুলো চিঠির সাথে সংযুক্ত করেছি। আমি এই প্রতিবেদনগুলো এই কারণে সন্নিবেশিত করেছি যাতে আপনি বুঝতে পারেন যে কেন পাকিস্তানের দূতাবাসের সাথে স্টেট ডিপার্টমেন্টের যোগাযোগকে সামান্য মনে করা হচ্ছে যেখানে প্রথম শ্রেণির তথ্য কংগ্রেস এবং প্রেসের রেকর্ডে রয়েছে। আমি আশা করব যে পরবর্তীতে কংগ্রেসের সাথে যোগাযোগের সময় অধিক হারে সত্য ও নির্ভুল তথ্য আপনাদের কাছ থেকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রেরিত হবে।

চূড়ান্তভাবে, আমি এই প্রশ্ন করতে চাই যে আমাদের রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শক্তির ঘাটতিগুলোকে পর্যালোচনা করতে হবে, কেননা গত বিশ বছর বা তারও অধিক সময় ধরে আমাদের  বৈদেশিক নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যেমন ভিয়েতনাম, যে কারমে আমাদের অবশ্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে যার ভিত্তি ব্যক্তির অধিকার এবং স্বাধীনতা, অন্যান্য সামরিক শাসন, একনায়ক অথবা বর্তমানের পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে নৈতিক অবস্থান নিতে হবে কেননা তা আমাদের চর্চিত বিশ্বাসের বিপরীত। আমরা কি দুর্ভিক্ষ ও অস্ত্রের দ্বারা নিরীহ মানুষের উপর গণহত্যাকে মৌন সম্মতি দিব? আপনি এবং আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানেন যে এটিই এখন পূর্ব পাকিস্তানের আইন? কি ধরনের হ্রসদৃষ্টির কারণে আমাদের সরকারের বিশেষ শাখার মেধাবী সদস্যরা ইতিহাসে আমাদের স্বার্থের জন্য সর্বোত্তম উপায়কে দূরে ঠেলে বিশৃঙ্খল দিনগুলিকে সামনে নিয়ে আসছেন?

আমি বিশ্বাস করি যে উঠতি ফোরাম আমাদের নীতিগুলোর পরিবর্তনে নির্দেশনা দিবেন। আমি এটি দেখেছি যখন আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এই মহান জাতির জন্য গৃহীত হয়েছে। এই শক্তি এবং অন্যান্যরা যারা বাংলাকে জানেন কথা বলবেন, এবং আমি ক্ষীণ আশা করি যে, পূর্ব পাকিস্তানে এই মর্মান্তিক অবস্থাকে তুলে ধরবেন এবং অতীব জরুরী পরিবর্তনগুলো সাধন করে ট্রাজেডির হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করা হবে।

                                                                                               বিনীত

উইলিয়াম বি গ্রিনোগ, এম. ডি.

প্রধান, সংক্রামক রোগ বিভাগ।

.

13.159.492

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাঙালীদের অধিকার স্বীকার করে নেয়ার সুপারিশঃ সিনেটর এইচ. এইচ. হামফ্রের চিঠি সিনেটরদের পত্রাবলী ৪ জুন, ১৯৭১

হুবার্ট এইচ হামফ্রে

মিনেসোটা

জাতিসংঘ সিনেট

ওয়াশিংটন ডিসি ২০৫১০

জুন ৪, ১৯৭১

ড. ডেভিড আর নালিন

৮৭২, ম্যাস. এভিনিউ,

কেমব্রিজ ম্যাস. ০২১৩৯

শ্রদ্ধ্বেয় ড. নালিন,

        পুর্ব পাকিস্তানে ইদানিংকালে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমি নিজেও গভীরভাবে বিব্রত। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নয়,  আমি মাত্র একজন মানুষ, বাঙ্গালিদের উপরে চলমান অন্যায়ের বিষয়ে অন্যান্য ব্যাথিত ব্যক্তিদের মত আমিও একই অনুভূতি জানাচ্ছি। রাষ্ট্রীয় সচিব এবং সরকারী পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছে আমি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধানে পৌছাতে যেটা বাংলার মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠা করবে, সাম্প্রতিক নির্বাচনে যার সত্যতা দেখা গিয়েছে। আমি ঐ মানুষগুলোর জন্য কিছু পরামর্শ তৈরি করেছি যা তারা ব্যবহার করতে পারবে যেকোন গঠনমূলক কাজের মূলনীতি হিসেবে। আমি সচিবের উত্তরের অপেক্ষা করছি।

        একেকটা দিন ব্যয়িত হচ্ছে মানে মানবজাতির জন্য ভয়ংকর ক্ষতি। আমি প্রার্থনা করি অদূর ভবিষ্যতে এর শেষ হবে। আমার সাথে যোগাযোগ করা এবং এই দুঃখজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার অনুভূতি ভাগ করে নেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

বিনীত,

হুবার্ট এইচ হামফ্রে

.

13.160.493-496

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান সংকটে আমেরিকান সাহায্যের ভূমিকাঃ এনা ব্রাউন টেইলর এর একটি প্রতিবেদন এনা ব্রাউন টেইলর ১৪ জুন, ১৯৭১

পাকিস্তানের সংকটের সন্ধিক্ষণে সাহায্য প্রেরণের দুরদর্শিতা

অর্থনৈতিক ও মানবিক বিষয়াদি কখনই রাজনৈতিক আলোচনার বহির্ভুত কোনো বিষয় নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী অন্যান্য রাষ্ট্র সমূহের পাকিস্তানকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে সুদুর প্রসারী প্রভাব নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।

পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা খুব একটা আশাব্যাঞ্জক নয়। এর দুটি প্রদেশ কেবল যে ১০০০ মেইল বিস্তৃত ভারতীয় অঞ্ছল ও সম্পূর্ণ আলাদা দুটি সংস্কৃতি দ্বারা বিভাজিত- শুধু তাই ই নয়, বরং দুটি প্রদেশের সম্পৃতির মাঝে বাধ সেধেছে পারস্পারিক ঘৃণা এবং ভয়।

 পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মতবিরোধ সত্বেও পাকিস্তানী সরকার একঘেয়েভাবে “সবই ঠিক আছে” আউড়ে যাচ্ছে। যেখানে পূর্ব পাকিস্থানে বসবাসরত আমেরিকান এবং করাচি থেকে পলায়নরত বাংগালিদের চিঠি ও দলিল সম্পুর্ণ ভিন্ন গতি নির্দেশ করে। এসব চিঠি ও দলিল বেলুচিস্তান, সিন্ধু ও উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক দৈন্যদশার আভাস আরও দৃঢ় করেছে। লাহোর ও পিন্ডির হাস্পাতাল গুলো যুদ্ধাহত সৈনিকে পরিপুর্ণ। ব্যাবসায়ীগণ যারা কিনা পুর্বে সরকারকে মদদ যুগিয়েছে, বর্তমানে রাষ্ট্রের দেউলিয়া ভাবাপন্ন অবস্থার কারণে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের মনোভাব সর্বদাই তাচ্ছিল্য ও অবজ্ঞাপূর্ণ ছিল যা পরবর্তীতে নিষ্ঠুরতায় রূপ নেয়। পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি এই তাচ্ছিল্য পশ্চিম পাকিস্তানকে কিছু বিশাল ভুলের দিকে ঠেলে দেয়; যেমন-

 পাকিস্তানী সামরিক শক্তি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুর রহমানের জনপ্রিয়তা অনুধাবন করতে পারেনি, বিধায় তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে সমর্থন দেয়। ফলশ্রুতিতে শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় পরিষদে সংখ্যা গরিষ্ঠ পদলাভ করেন। ২৪ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করার ফলস্বরূপ শেখ মুজিবের এই বিজয় সামরিক শক্তির কাছে অত্যন্ত বিস্ময়কর ছিল।

তাদের পরবর্তী ভুল ছিল পুর্ব বাংলাকে নির্মমতা এবং বর্বরতা দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করা। সামরিক বাহিনী যুদ্ধ পরিচালনার খরচ এবং বাংগালিদের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অবমুল্যায়ন করেছিল। পুর্ব বাংলা ছিল একটি আদর্শ গেরিলা যুদ্ধক্ষেত্র এবং গতানুগতিক সৈন্যবাহিনীদের জন্য জাহান্নাম স্বরূপ। এখানে গমনীয় রাস্তার অভাব ছিল এবং বন্যাকালে ধানক্ষেত গুলো নদীর মত হয়ে যেত।

গ্রামাঞ্চল আধুষ্যিত পুর্ব বংলায় বোম্বিং কোনো উপযোগী যুদ্ধকৌশল ছিলনা। ততকালীন সুত্র থেকে জানা যায় যে এই অঞ্চলে গেরিলা যুদ্ধ বেড়েই চলেছিল এবং ঢাকা বিমানবন্দর ধ্বংস হয়ে গেলে পাকিস্তানী সেনা বাহিনী প্রচন্ড প্রতিকুল পরিবেশে নিক্ষিপ্ত হতে পারতো।

সামরিক নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই যথেষ্ট নিষ্ঠুরতা ও নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়ে ফেলেছিল। একমাত্র আমেরিকা ও এর সহযোগি রাষ্ট্রগুলোরই এ মুহুর্তে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সৈন্যবর্গ সরবরাহ করা সম্ভব ছিল।

এ ভুলগুলো থেকে বাচার একমাত্র উপায়, ধারণামতে, ছিল তত্ত্বাবধায়ক সাহায্য। যদিও গবেষণামুলক ভাবে এর সাফল্য ব্যাপক, কিন্তু কোনোভাবেই এটি বাস্তবসম্মত ছিলনা। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সাহায্য বলতে মুলত বোঝানো হয়েছিল কতিপয় বিদেশী কুটনৈতিক ঢাকা আসবেন এবং দেশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন। সামরিক তত্ত্বাবধানের অধীনে তাঁদের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল এ থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং যাতায়াতের জন্য সামরিক গাড়ী ব্যবহারের সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়াও বাঙ্গালি গেরিলাদের হাত থেকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও দেওয়া হবে।

এসকল বিদেশী তত্ত্বাবধায়কদের উপস্থিতি সত্ত্বেও কোন উপযুক্ত সাহায্য ততক্ষণ পর্যন্ত পাওয়া যাবেনা যরক্ষণ পর্যন্ত সামরিক শক্তি পুর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করে চলেছে। পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের মনোভাব কেমন ছিল তা সেই বছরের নভেম্বরে সাইক্লোন আক্রান্ত বাংগালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানীদের সহানুভুতিহীন মনোভাব থেকে সম্ভবত খুব ভালোভাবেই বোঝা যায়। নয় সপ্তাহ ব্যাপী জনগণের উপর অত্যাচার চালানো সৈন্যদের সাহায্যার্থে টিক্কা খানের ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল এর কাছে সাহায্য প্রার্থনাও এর বড় একটি উদাহরণ। এসব সেনাদের পণ্য সাহায্য প্রদানও বর্বরতার সমান অন্যায়, কারণ উক্ত পণ্য সাহায্য সেনাদের বর্বরতায় সহায়ক হিসাবে কাজ করবে। আমেরিকা থেকে পূর্ব বাংলায় আসা একটি চিঠিতে উল্লেখিত, পশ্চিম পাকিস্তানের একজন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ব্রিটিশদের মত করে তাদের অনাহারে রেখে মেরে ফেলবো। ” বাংগালিরা এ চিঠির প্রতিক্রিয়া স্বরূপ আমেরিকার কাছে পশ্চিম পাকিস্তানকে কোনরূপ সাহায্য না পাঠানোর জন্য আহব্বান জানায়। কারণ তাদের কাছে সেনাদের অত্যাচারে মরার চেয়ে অনাহারে মারা যাওয়া কম কষ্টের মনে হয়েছিল।

সমস্ত সাহায্য সরাসরি সামরিক নেতাদের হাতেই পৌঁছাতো। ফলে সাহায্যদাতারা পুনরায় তাদের সাহায্য দানের প্রক্রিয়াটি ভেবে দেখতে বাধ্য হন। কারণ নির্মম সামরিক নেতাদের হাত দিয়ে দেশের গরিব সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সম্ভব নয়। পশ্চিমা বিশ্ব পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের এ হেন ব্যাবহার থেকে শিক্ষা না নিলে ভবিষ্যতে এর কু প্রভাব আরও অনেকদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।

ফস্টার ডিউলাসের সময় থেকে সামরিক সাহায্য ব্যবহারের একমাত্র শর্ত হল তা কেবল বহিরাগত কমিউনিস্ট আক্রমণ থেকে বাচার জন্যেই ব্যভৃত হতে পারবে। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান প্রায় ২ বিলিয়ন দোলারের সামরিক সাহায্য পায় যা ১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং এখন ৭৫ মিলিয়ন নিরীহ বাংগালির বিরুদ্ধে ব্যভৃত হচ্ছে।

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে চীনের একটি উষ্ণ সম্পর্ক বজায় থাকলেও ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে ইলেক্ট্রনিক নজরদারি সংক্রান্ত জটিলতার কারনে আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।

বৈদেশিক সাহায্যের সিংহভাগ অংশই পাকিস্তানী শাসকদের পকেটে চলে যেত। এ ঘটনার আত্ম পক্ষ সমর্থন করা হয়েছিল এভাবে যে পাকিস্তানী শাসকেরা সেসব টাকা ব্যবসায় খাটালে তা শেষ পর্যন্ত গরিবের কাজেই লাগবে, যদিও শেষ পর্যন্ত ব্যবসায়ের লাভ গরিব দের বদলে সুইস ব্যাংক এবং হংকং এ চালান করা হয়।

হার্ভার্ডের প্রফেসর ডোর্ফম্যানের হিসাব অনুযায়ি, এগারো বছরে পাকিস্তান প্রায় তিন বিলিয়ন দোলার বৈদেশিক অনুদান পায়, যার ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ৭৫ এবং পুর্ব পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ৪৫। সুতরাং পাকিস্তানের বৈদেশিক অনুদানের ব্যবহার দেশের পক্ষে অনুকুল ছিলনা।

১৯৬৫ সালে আমেরিকা, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং অন্যান্য সহযোগি রাষ্ট্র অস্ত্র ও অনুদান সরবরাহে বাধা শাপন করে এবং ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ কিছুদিনের জন্যে রহিত হয়। এখন যদি আমেরিকা ও সহযোগি রাষ্ট্ররা অনুদান স্থগিত করে এবং ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ঋণ আদায়ে অতঃপর হয়, তাহলে পাকিস্তানী সেনাবাহীনিওকে পুর্ব বাঙ্গলা থেকে সরিয়ে নেওয়া ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে অন্য কোণো উপায় থাকবেনা।

কিন্তু তার ফলে পশ্চিম পাকিস্তান চীনের তালুবন্দি হয়ে যেতে পারে। চীন ইতিমধ্যে পাকিস্তানকে সর্বাত্মক সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কারণ পশ্চিমাদের কাছে পাকিস্তানের আবদ্ধতা চীনের কুটনৈতিক দুর্বতার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে।

ক্ষণস্থায়ী ভীতির বশবর্তী হয়ে ভুল পক্ষ সমর্থন করলে পরবর্তীতে ভিয়েতনাম অবস্থার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। শেখ মুজিবুর রহমান একজন মডারেট পশ্চিমাবাদী ছিলেন। তাঁর ছয়দফা দাবি পুর্ব বাঙ্গলার সমস্যাবলির প্রতি আলোকপাত করা সত্ত্বেও সমগ্র পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রাখার প্রয়াস পেয়েছিল। পুর্ব বাংলায় কম্যুনিস্ট মতবাদ খুব বেশি প্রচার পায়নি। বামপন্থী জাতিয় আওয়ামী দলের তেমন একটা সমর্থন ছিলনা। ফলে পসছিম বাঙ্গলার মাও নক্সালরা পুর্ব বাঙ্গলায় খুব বেশি অগ্রগতি করতে পারেনি। কিন্তু আওয়ামী প্রতিনিধিদের অপসারন সেই সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলতে পারে।

যদি আমেরিকা পশ্চিম পাকিস্তানকে পুর্ব বাঙ্গলায় সৈন্য মোতায়েন রাখতে সাহায্য করে, তবে শরণার্থীদের প্রস্থান অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যেই ভারতে ৬০ লক্ষ শরনার্থী আশ্রয় নিয়েছে এবং প্রতিদিন ১ লক্ষ হাতে শরনার্থী সংখ্যা বাড়ছে। ইহা ভারতের পক্ষে বোঝা হওয়া সত্ত্বেও ভারত যথেষ্ট রাজনৈতিক সঙ্গযম দেখিয়েছে।

কিন্তু ওয়াশিঙ্গটনে বসবাসরত ভারতীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে যে পশ্চিমা বিশ্ব যদি পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ না করে তাহলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পুর্ব বাঙ্গলায় অভিযান চালানো অপরিহার্য হয়ে উঠবে। ফলস্বরূপ আমেরিকা, চীন ও রাশিয়া যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এমতাবস্থায় অতিসুক্ষ বুদ্ধিমত্তা ও সংযম ছাড়া হলোকাস্ট এড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।

তাই এখন নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহন করে প্রজ্ঞা ও স্থিরতার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৯৬৫ সালের ন্যায় পাকিস্তানের অনুদান স্থগিত করাই সবচেয়ে নিরাপদ কৌশল।

এ ব্রাউন টেইলর

কেমব্রিজ, জুন ১৪।

.

13.161.497

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে সামরিক ও অর্থিক সাহায্য স্থগিত প্রাস্তাবের সমর্থনে সিনেটর হ্যারল্ড হিউজেস সিনেটরদের পত্রাবলী ২৪ জুন, ১৯৭১

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট

সশস্ত্র বাহিনীর কমিটি

ওয়াশিংটন, ডি.সি. ২  ১

২৪ জুন, ১৯৭১

ডেভিড আর নলিন, এম.ডি.

মিস অ্যানা ব্রাউন টেইলর

জেমস ও. টেলর, এম.ডি.

৮১৮ হ্যারিসন এভিনিউ

বস্টন, ম্যাসাচুসেটস ০২১১৮

প্রিয় বন্ধুরা:

        পূর্ব পাকিস্তানের উপর আপনার সাম্প্রতিক চিঠির জন্য ধন্যবাদ। আমি সেখানে উন্নয়ন সম্পর্কে আপনার উদ্বেগের কথা উল্লেখ করেছি এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান না হয় এবং পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী না দেয়া হয়, ততক্ষণ আমেরিকান সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ রাখার নিয়ম আছে।

        এটা দুঃখজনক যে আমাদের সরকার এই সমস্যাটিকে খুব কম গুরুত্তের সাথে দেখছে এবং এখানে ত্রাণসামগ্রীর পরিমাণ এতই কম যে, আমরা ভিয়েতনাম যুদ্ধে প্রতিদিন এর দ্বিগুণ পরিমাণ ত্রাণ ব্যাবহার করি। আমি সহ-স্পন্সর করেছি এমন কোন আইন বা অন্য যে কোন পদক্ষেপ যখন সিনেটের সামনে আসে তখন আপনি নিশ্চিত থাকেন যে, আমার ব্যাপারটা আমার মাথায় থাকবে।

আন্তরিক শুভেচ্ছা,

হ্যারল্ড ই হিউজেস

.

13.162.498

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তানীদেরকে আর্থিক সাহায্য প্রদানের আবেদন ইস্ট পাকিস্তান রিলিফ জুন, ১৯৭১

একটি আবেদন

পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে অনেকেই এখনো বিভ্রান্ত এবং অনিশ্চিত। কিন্তু মার্কিন  যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ পর্যবেক্ষকের কাছে কিছু ব্যাপার একদম স্পষ্ট।

        ১. ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ স্বায়ত্তশাসনের পক্ষপাতী প্রার্থীদের ভোট দিয়েছে।

        ২. পাকিস্তান সরকার মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক কর্মকর্তাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে তারা নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রভাব গ্রহণ করতে অস্বীকার করে এবং পরিবর্তে বলপূর্বক পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের জন্য ক্রমবর্ধমান আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত এই সামরিক আন্দোলনে আমেরিকান সরঞ্জাম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

        ৩. এই যুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তান তাদের অনেক জনগণ হারায়, অনেক সম্পত্তি নষ্ট হয় এবং অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তি শহর থেকে গ্রামে কিংবা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পূর্ব ভারতে চলে যায়। পূর্ব পাকিস্তান ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র এলাকায় পরিণত হয় এবং এর  দক্ষিণ দিকের জেলাগুলো সবেমাত্র ১৯৭০ সালে ঘটে যাওয়া একটি প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতিসমূহ কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল। এই নতুন মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগটি পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলে দেয় এবং এদের বেশিভাগই চরম অনাহারে ভুগে।

        আমরা এই আপিলের মাধ্যমে এই আবেদন করছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য খাদ্য, ওষুধ, এবং অন্যান্য সাহায্য প্রেরণ করা হোক। সংগৃহীত অর্থ একজন আমেরিকান ব্যাংকে রাখা হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত এই অর্থ একটি বৈধ এবং কার্যকর ত্রাণ সংগঠনের মাধ্যমে প্রয়োজনের মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিতরণ করা না হচ্ছে। এই অর্থ কোন প্রকার অস্ত্র কেনা কিংবা এই টাকা পাকিস্তান সরকার বা অন্য কোন সরকার, যারা এই যুদ্ধের সাথে সরাসরি জড়িত, তাদেরকে দেয়া যাবেনা। আমরা মূলত রেডক্রস, আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটি বা এইরকম অন্যান্য নিরপেক্ষ গ্রুপ ব্যবহার করার প্রত্যাশা করি।

        প্রয়োজনটি গুরুত্বপূর্ণ। অনুগ্রহ করে আপনার অনুদান পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ তহবিল, অ্যান আর্বর ব্যাংক, সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শাখায় জমা দিতে পারবেন। আপনার অনুদান হবে শুল্কমুক্ত।

হাওয়ার্ড শ’ম্যান

চেয়ারম্যান,

পূর্ব পাকিস্তান ত্রাণ তহবিল

.

13.163.499-500

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলার জনগণের সমর্থনে বিক্ষোভে যোগদানের আহবান সেভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটি জুন, ১৯৭১

হত্যাকান্ড গণহত্যা রক্তগঙ্গা সন্ত্রাস

এবং বর্তমানে অনাহার

‘সবকিছুই একটি খেলার অংশ’

পূর্ব পাকিস্তানের(বাংলাদেশ)ট্রাজেডি

এই বিধ্বস্ততার ফলে যুদ্ধ, বন্যা, সাইক্লোন ইত্যাদি সৃষ্ট হয়। এহাড়াও পরবর্তী কয়েক মাসে মধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানের অনাহারী মানুষের সংখ্যা ৭৫ মিলিয়ন থেকে আরও ১০-৩০ মিলিয়ন বৃদ্ধি পায়। এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখপাত্ররা কেবল আশ্বাসবাণী দিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য একটি বড় অঙ্কের আন্তর্জাতিক ত্রাণ সাহায্য দরকার ছিল।

        এই মাসের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। নাহয় সময় বাড়ার সাথে সাথে মজুদকৃত খাদ্য দ্বারা সকলের চাহিদা পূরণ করা যাবে না। মূলত যে বিষয়গুলোর জন্য দুর্ভিক্ষ হয়, সে বিষয়গুলো একটি নির্দিষ্ট সময় পর আর পরিবর্তিত হয় না। যখন অনাহারী পরিবারগুলোর প্রথম ছবি ও গল্প প্রকাশ হবে, ততদিনে আরও হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। পূর্ববাংলার জনগণের এখন একমাত্র প্রতিরক্ষা হচ্ছে অবিলম্বে শক্তিশালী কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য।

        ১২ মে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের জন্য  ইউ এন মহাসচিবের সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

        সব ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস ঘটনার পরও তিনি জনগণকে ক্ষুধায় মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন।

        নভেম্বরে একটি ঘূর্ণিঝড় ঘটে যার ফলে অনেক মানুষ মারা যায়। প্রকৃতিও বিরূপ ছিল। মার্চ মাসে বাংলাদেশে আরেকটি দুর্যোগ আঘাত হানে। এর ফলে পরিকল্পিতভাবে দেশটির যুবক, বুদ্ধিজীবী এবং লক্ষ লক্ষ নির্দোষ মানুষকে মেরে ফেলা হয়। এই সময়কার মূল অপরাধী ছিল ইয়াহিয়া খান।

—————–

বাংলাদেশের আমাদের সাহায্য দরকারঃ ১২ জুন, শনিবার

        দুপুরে কলম্বাস সার্কেল থেকে রোড নং ২ই/৬৫ এ অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসে এবং পরবর্তীতে ম্যাডিসন অ্যাভেনিউ এর ৪২ নং স্ট্রিট থেকে প্রথম অ্যাভেনিউতে ইউএন প্লাজা এবং ৪৭ নং স্ট্রিটে স্পিকার কংগ্রেসম্যান এবং অন্যান্য গণ্যমান্য নাগরিকদের সাথে দেখা করবেন।

        বাংলাদেশের আপনার সাহায্য প্রয়োজন। মিটিংঃ বৃহস্পতিবার, ১০ জুন ৮ টায়, কমিউনিটি চার্চ, ৪০ই/৩৫ নং স্ট্রিট

        স্পিকার: – জয় প্রকাশ নারায়ণ

        বিষয়: – বাংলাদেশের সংগ্রামরত মানবিক দিক।

আপনার কংগ্রেসম্যান, সিনেটর এবং রাষ্ট্রপতির নিকট বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য চিঠি লিখুন। বাংলাদেশের শোষিত এবং ক্ষুধার্ত মানুষরা যতদিন পর্যাপ্ত ত্রাণ ও স্বাধীনতা না পাবে, ততদিন পাকিস্তানে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত রাখতে বলুন।

        আপনার দান পূর্ব পাকিস্তানের সাহায্যের জন্য ব্যাবহার করা হবে। এই অনুদানটি হবে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত। দয়া করে আমেরিকা পূর্ব পাকিস্তান লীগে একটি চেক প্রদান করুন। আপনার নাম ও ঠিকানাসহ চেকটি নিচের ঠিকানায় প্রেরণ করুনঃ সেভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটি ৩জে. ৫০ কেনিলওয়র্থ প্লেস, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক, এনওয়াই ১১২১০।

.

13.164.501-503

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানী সমরাস্ত্রবাহী জাহাজের প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন ও শ্রমিকদের অসহযোগের সংবাদ ১৬ জুলাই,১৯৭১

পাকিস্তানী সমরাস্ত্রবাহী জাহাজের প্রতি বিক্ষোভ প্রদর্শন ও শ্রমিকদের অসহযোগের সংবাদ

বাল্টিমোর (এপি) – বিক্ষোভকারীরা আজও  বাল্টিমোরে পদ্মার ভেরানো বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল, একটি  পাকিস্তানি জাহাজ তার যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে অস্ত্র ও অন্যান্য মালামাল বহন করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়।

পুলিশ গত রাতে  ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে যারা তিনটি নৌকা এবং একটি কায়াক ব্যবহার করে জাহাজটির আগমন অবরোধের চেষ্টা করেছিল ।

একজন অফিসার বলেন,সকলকে একটি নৌকার নৌযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। তিনি আরো বলেন যে, “তাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

এদিকে, পদ্মার লোড কৃত নির্ধারিত জাহাজী মাল  অন্য দেশে স্থাপন করা হবে কি না তা নিয়ে  বিতর্ক অব্যাহত।

আন্তর্জাতিক Longshoremen সমিতি  বাল্টিমোরের স্থানীয়দের ক্রমাগত লোড না করার আদেশ দিচ্ছিল, কিন্তু প্রতিবাদকারীদের দাবি পাকিস্তানে শিমের চালানের পরিবর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রীয় সামরিক অস্ত্রসমূহ বহন করছিল ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি ইস্ট-ওয়েস্ট পরিবহনের একজন কর্মকর্তা কোনো সামরিক জাহাজ দেশের বাইরে যাচ্ছিল বলে  স্বীকার করে নি। [ওয়াশিংটন স্টার, শুক্রবার, ১৬ জুলাই,১৯৭১]

DOCK UNION REFUSES TO LOAD ARMS-LADEN PAKISTANI SHIP
By Antero Pietila

আজ লংশোরম্যান জাহাজ ভেরাতে অস্বীকার করার পর পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মা যেটি স্বদেশে অস্ত্র বহন করছিল দূরপ্রান্তের জন্য যাত্রা করে।

ইউনিয়ন সভাপতি,থমাস জি গ্লিসন আন্তর্জাতিক লংশোরম্যান সমিতির স্থানীয় ৮২৯ জন সদস্যদের  covington পোর্টে জাহাজটিতে  কাজ না করার নির্দেশ দেন,যিনি বলেছিলেন পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন নিরপক্ষ থাকতে চায়।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর অনুমান অনুযায়ী, যে যুদ্ধে অন্তত ২০০,০০০ পূর্ব পাকিস্তানি মারা গেছে এবং যার কারণেছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু ভারতে পালিয়ে গেছে।

ওয়াশিংটনে, ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি, করাচী, পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রের দালাল, ফেডারেল সামুদ্রিক কমিশনের কাছে লিংশোরম্যানের কর্ম গঠন “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের সঙ্গে সরাসরি হস্তক্ষেপ” ভারার্পণ করে একটি দুরবার্তা পাঠান।

টেলিগ্রামে বিসেনটেলি কমিশনের চেয়ারম্যান মিসেস হেলেন ডেলিখকে বিতর্কে হস্তক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

একজন মুখপাত্র জানান যে, যদিও কমিশন অবিলম্বে কোনো ব্যবস্থা  নিবে না কিন্তু পরিস্থিতি অধ্যয়ন করবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা তার যোগাযোগে, শিপিং সংস্থা জানায় ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সির দ্বারা পদ্মার মালামালে নিম্নলিখিত চালানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে: ফার্মাসিউটিক্যাল সরবরাহ, কীটনাশক, অগ্নিকাণ্ড সরঞ্জাম, এবং বৈদ্যুতিক  জেনারেটর।

তবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিশ্চিত যে, একটি অস্ত্র চালান অন্তর্ভুক্ত ছিল যার জন্য ২৫শে  মার্চ নিষেধাজ্ঞার আগেই একটি রপ্তানি লাইসেন্স  প্রকাশ পেয়েছে যেখানে পাকিস্তানের জন্য চালান কার্যকর হয়েছে।

নিম্নলিখিত একটি শুমার ও পদ্মা মালামালে সামরিক চালানে যেমন স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত মূল্যনির্ধারণ হয়: বিমান খুচরা যন্ত্রাংশ $ ৯২৫,৩২৯; সামরিক যানবাহন জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, $ ১৮৪,১৮৭; ইলেকট্রনিক খুচরা যন্ত্রাংশ, $ ২৫,৪১৭; জাহাজ জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ, $ ৪৫,১১৭; এবং কামান খুচরা যন্ত্রাংশ, $ ২,৮৩০।

স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেন,সকল সামরিক উপাদান যা কামান সরবরাহের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ২২-ধীশক্তি গোলাবারুদের ২০০ রাউন্ড গুলি, গত মাসে নিউ ইয়র্কে পদ্মায় লোড করা হয়েছে।

জাহাজ তারপর মন্ট্রিলে ভাসানো হয়েছিল যেখানে এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরবরাহকৃত স্যাবর জেটের  জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ ৪৬ বিমান গ্রহন করা হয়েছিল। কানাডিয়ান সরকার দ্বারা বিমানের বোঝা আটকানো হয়েছে।

শিপিং এজেন্ট বলেন, বাল্টিমোর মধ্যে পদ্মা, যা খুব দ্রুত চলছিল এবং অর্ধেক খালি মনে হচ্ছে, অ-সামরিক পণ্য বহন করছিল।

এসব পণ্য একটি অজানা মাত্রার তড়িৎবিশিষ্ট টিনের পাত অন্তর্ভুক্ত যেগুলো এখন গুদামে পায়ার উপর,তাদের প্যাকেজে পরিচিতি ক্রস হ্যান্ড যুক্ত এআইডি প্রতিক বহন করছে।

সামুদ্রিক সূত্র জানায়,ইস্পাত পণ্যের আরেকটি চালান চলনশীল জাহাজের অপেক্ষা করে।

প্রায় ৩০ জন সদস্য এবং ফিলাডেলফিয়া-ভিত্তিক পূর্ববাংলার বন্ধুদের সমর্থকরা গতকাল অস্ত্র চালানে তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখে। পোর্ট: কভিংটন ফটকে পিকেটিংয়ের চেষ্টাকালে বিভিন্ন জাহাজের কাছাকাছি নৌকোগুলি একটি ছোট নৌবহর থেকে তাদের লক্ষণ ধারণ করে।

কারাগারে রাত যাপন

পদ্মা-নামের অর্থ  উর্দুতে “পদ্ম” পোর্ট বোঝায়; বুধবার রাতে পোর্ট কভিংটোনে দুইটি নৌকাতে করে সিটি পুলিশ তিনটি ছোট নৌকা পূর্ন বিক্ষোভকারী গ্রেফতার করে।

দক্ষিণ প্রান্তের জেলার কারাগারে  রাত যাপনের পর, সব ফিলাডেলফিয়ার মধ্যে ছয়জন নৌ-উত্তরণে হস্তক্ষেপের জন্য রায় ছাড়া শিক্ষানবিশ গ্রহণ করে এবং একটি পুলিশের আদেশ অমান্য করে। অন্য এক বিক্ষোভকারীকে অভিযুক্ত  করা হয়নি।

গতকাল পোর্ট কভিংটন এর কাছাকাছি একটি সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভকারীরা বলেন, তারা তাদের প্রতিবাদ কর্ম প্রসারিত করার পরিকল্পনা করছিল। (বাল্টিমোর সূর্য, ১৬ জুলাই, ১৯৭১)

6  FREED IN BLOCKING OF SHIP FOR  PAKISTAN

বাল্টিমোর-ছয় ফিলাডেলফিয়ান, এখানে গ্রেফতারের পর পাকিস্তানের জন্য অস্ত্র সঙ্গে জাহাজী-মাল
বোঝাই প্রতিরোধ করতে নৌকোগুলি এবং কায়াক ব্যবহার করে, গতকাল একটি সতর্কবার্তা সঙ্গে ছেড়ে দেওয়া হয়।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দলের নেতা ডাঃ চার্লস খান বলেন, তাঁর অনুসারীরা আবার পদ্মার ভেরানো প্রতিরোধ করবে যখন এটা ফিলাডেলফিয়া আসবে।

[দ্যা ইভেনিং বুলেটিনঃ ফিলাডেলফিয়া শুক্রবার জুলাই ১৬, ১৯৭১ ]

.

13.165.504

     শিরোনাম       সূত্র     তারিখ
পররাষ্ট্র সচিবের মাধ্যমে শেখ মুজিবের প্রতি অনুকম্পা প্রদর্শনের জন্য যৌথ  আহবানঃ কংগ্রেস সদস্য মিঃ ব্রেডফোর্ড মর্স- এর চিঠি প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের  পত্রাবলী ২৩ জুলাই, ১৯৭১

মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের কংগ্রেস

প্রতিনিধিদের লোকসভা

ওয়াশিংটন ডি.সি.২০৫১৫

২৭ জুলাই, ১৯৭১

প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ,

সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের একটি সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে পরিবর্তন করা হবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী সামরিক আদালত গোপনে মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে ধারা ঘোষণা করতে যাচ্ছে।

রাজ্য সচিব প্রস্তাব রাখেন যে, পাকিস্তান সরকার শেখ মুজিবের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করবে।

এই পত্রখানি যদি আপনি সচিব- রজারের কাছে পৌছাতে আমাকে সাহায্য করতে চান তাহলে আমি আপনাকে বিল মেনক এর সাথে ৩০ জুলাই শুক্রবার দেখা করতে অনুরোধ করছি।

আপনার বিশ্বস্ত,

এফ। বেডফোর্ড মোর্স

কংগ্রেস সদস্য

————

.

13.166.505

     শিরোনাম    সূত্র        তারিখ
বাংলাদেশের জন্য তহবিল গঠন ও চাঁদা আদায়ের আহবানঃ বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের পক্ষে জনাব মুহিতকে চিঠি । ।    ………… ২৬ জুলাই, ১৯৭১

ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

সোয়াইন হল, ১১৭-পশ্চিম

ব্লোমিংটন, ইন্ডিয়ানা ৪৭৪০১।

 জুলাই ২৬, ১৯৭১                             টেলিঃ ৮১২-৩৩৭-৩৭০৯

মুহিত,

পূর্ব পাকিস্তানে যা হচ্ছে সেটি আপনি জানেন। লাখো মানুষ গৃহহীন হয়েছে এবং হাজারো গ্রাম মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। ভারতে প্রায় সত্তর লক্ষ শরনার্থী রয়েছে এবং এদের অনেকেই কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছে। এক থেকে তিনকোটি মানুষ অনাহারে ভুওগছে। এমন কি

এই শান্ত মধ্য পশ্চিমা সম্প্রদায় খুব উদ্বিগ্ন এবং একটি স্থানীয় কমিটি হয়ে গেছে ছাত্র, ডীন, ৩-৪ টি বিভাগের প্রধানদের নিয়ে। আমাদের আবেদনপত্র এবং সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা হয়েছে।

যদি সম্ভব হয় তবে ঐ রকম একতি কমিটি গঠন করুন এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে তহবিল গঠন করুন। প্রকাণ্ড মাত্রার এই দুর্ভিক্ষ থামাতে এবং.খাদ্য ও পোশাকের জন্য প্রচুর পরিমানে অর্থ প্রয়োজন। আপনি যদি সাহায্য করতে চান তবে ঐরুপ একটা সংগঠন চালু করে এবং আমাদের আবেদন পত্র ব্যবহার করে সংবাদপত্র, গীর্জা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহ করুন। “দ্যা বাংলাদেস এসোসিয়েশন” একটি নিবন্ধিত সম্পূর্ণ অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটি সরাসরি সংযুক্তঃ

১) অক্সফাম, ব্রিটিশ ত্রান সংস্থা

২) ভারত সরকার

৩)বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার

আপনি একটি তহবিল বৃদ্ধিকারী প্রচারণা সংগঠিত করতে পারেন, এই অ্যাসোসিয়েশন আপনাকে একটি উপযুক্ত রসিদ বই সরবরাহ করবে।আমি ব্যক্তিগতভাবে এই সংগঠন খুব ভাল জানি।

আপনার বিশ্বস্ত

এফ. বারী মালিক

.

13.167.506-511

শিরোনাম সূত্র তারিখ
কিছুসংখ্যক মার্কিন নাগরিক কর্তৃক পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্যবাহী জাহাজ অবরোধের উপর প্রতিবাদ রিচার্ড টেইলর, দি প্রগ্রেসিভ জুলাই, ১৯৭১

ঠিক তার কোণায় ছিল বিখ্যাত ফোর্ট ম্যাকহেনরি যেটি, যেহেতু সময় ছিল সন্ধ্যা সাতটার পর, খুব শীঘ্রই “ গোধূলির শেষ ছটায়” স্নান করবে। বিদ্যালয়ের কর্মচারিরা, কিছু কিশোরেরা, একজন ডাক্তার, জেলে যাওয়ার পথে একজন সম্ভাব্য প্রতিরোধকারী,  একজন শান্তিকর্মী, একজন কলেজ ছাত্র- আমরা সবাই চেয়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রকে পাকিস্তানী সামরিক একনায়কতন্ত্রের প্রতি এর সমর্থন বন্ধ করতে।

“তোমরা একটি জাহাজ গতিপথ অবরোধ করে বন্দরের নিয়মকানুন ভঙ্গ করছ” একটি জোরালো অধৈর্য কণ্ঠ ভেসে এল। “ তোমরা সবাই গ্রেপ্তার হবে যদি এখান থেকে সরে না যাও”

টেলিভিশন ক্যামেরা এবং  প্রতিবেদকদের দ্বারা পরিপুর্ন একটি বিশাল সাদা ইয়ট গর্জন করে উঠল। একজন টেলিভিশন প্রতিবেদক পেছনে তার ক্যামেরা কর্মীর সাথে জাহাজের ছোট একটি ইনবোর্ড চালিয়ে আসছিল একটি নিকতবর্তী দৃশ্য নেয়ার জন্য। দ্বিতীয় একটি পুলিশের নৌকা এবং দুইজন কোস্টগার্ড আমাদের এবং পদ্মার, যেটি ২০০ গজের মাঝে সরে এসেছিল, মাঝে ত্রিশ ফুটের প্রান্তে ছিল। জাহাজের শিঙা একটি গগনবিদারী বিস্ফোরণ ছাড়ল এবং এটির টাগবোট তাদের নিজেদের তীক্ষ্ণ বাশির শব্দ যোগ করল।

যখন একটি আওয়াজ বলল, “ঠিক আছে, তাদের গ্রেপ্তার কর” আমরা জানতাম আমরা আমাদের লক্ষ্য পুরন করতে পারবনা, কিন্তু আমরা নৌকাগুলোর মাঝে দিয়ে যেতে লাগলাম, বিভিন্ন চিৎকার দিয়ে যেমন, “আমরা আবেদন করছি আপনাদের কাছে কোটি পাকিস্তানির মৃত্যু প্রতিরোধে আমাদের সাহায্য করতে”। দক্ষ কোস্টগার্ডের পথপ্রদর্শন এবং আঁকড়িয়ে ধরা আঁকড়ির সাহায্যে, যাইহোক, শীঘ্রই আমাদের সবাইকে বড় নৌকায় উঠানো হল।

একজন নগর পুলিশ, নম্রভাবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে আমাদের প্রহরা দিয়ে নিয়ে চললেন নৌকার অন্যতম একটি কামরায় এবং আমরা দেখলাম পদ্মা, এখন আমাদের উপরে, ৮নং জেটিতে সটান নিল। গরম এবং জনাকীর্ন কামরায়, আমাদের একমাত্র সান্ত্বনাটি আসল একজন তরুন কোস্টগার্ড নাবিকের কাছ থেকে, যিনি ঝুকে ফিসফিস করে বললেন, “ আমাদের এই কাজটি করতে হবে, কিন্তু আমরা শতভাগ তোমাদের সাথে আছি, তোমরা ঠিক জিনিসটি করছ” শীঘ্রই আমরা আমদের পেলাম বাল্টিমোর সিটি জেলে, সংকীর্ন কাঠের সাথে এবং চিন্তা করতে লাগলাম আমরা কিভাবে এই পরিস্থিতিতে নিজেদের জড়ালাম।

আমাদের মধ্যে অনেকেই ১৯৭১ এর বসন্ত এবং আসন্ন গ্রীষ্ম কাটিয়েছে যুদ্ধনিবৃত্তি মুলক  ফিলাডেলফিয়া এলাকায় একটি নতুন সংস্থা গঠনে যার নাম, “ দ্য মুভমেন্ট ফর এ নিউ সোসাইটি (এমএনএস)”। এটি “নিউ আমেরিকান মুভমেন্ট” এর সাথে সাদৃশ্যপুর্ন যা সম্প্রতি এই পৃষ্ঠাগুলোতে বর্ণনা করা হয়েছে ( জেরেমি রেফকিন, “ দ্য রেড, হোয়াইট, এন্ড ব্লু লেফট, দ্য প্রগ্রেসিভ নভেম্বর, ১৯৭১), কিন্তু একটু বিশদ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন গঠনে অহিংস প্রত্যক্ষ কার্যক্রমের ভুমিকার উপর।

আমাদের এমএনএস প্রচেষ্টা ছিল “ওভারসিজ ইমপ্যাক্ট গ্রুপ” নামক একটি ছোট অধ্যয়ন –কর্ম দল, যার সদস্যরা অন্যান্য দেশের উপর ইউএস সরকারের নীতি ও বাণিজ্য সম্পর্কের প্রকৃত প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রীষ্মের মাঝামাঝির দিকে আমরা পত্রিকার প্রতিবেদনে পুর্বপাকিস্তানে গনহত্যা এবং ভারতে বৃহদাকারে শরনার্থীদের যাত্রা সম্পর্কে পড়তে শুরু করলাম। পাকিস্তানের ব্যাপারে প্রায় কিছুই না জেনে, আমরা দেশটি এবং এর উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা সম্পর্কে অধ্যয়ন শুরু করলাম।

একটি জনপ্রিয় আমেরিকান কলেজ পাঠ্য (লুকাস এবং হোয়াইটবি’র কম্পারেটিভ ইকোনমিক সিস্টেমস হারপার, ১৯৬৯) পাকিস্তানকে বর্ণনা করেছে “বিশ্বের অন্যতম প্রাথমিক পুঁজিবাদী দেশ” এর “গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক তন্ত্র” এর প্রশংসা করেছে এবং উপসংহার টেনেছে যে এর অর্থনৈতিক উন্নয়ন “উল্লেখযোগ্যভাবে সফল”। অন্যান্য প্রতিবেদন, যাইহোক, দেখিয়েছে যে, পাকিস্তান সামরিক একনায়কতন্ত্র দ্বারা শাসিত (জেনারেল ইয়াহিয়া খান প্রধান শাসক) যারা পুর্ব পাকিস্তানকে একটি উপনিবেশ হিসেবে গন্য করে, এবং সেই পুজিবাদি-কেন্দ্রিক উন্নয়ন একটি অঢেল ধনী মালিক শ্রেণী তৈরি করেছে, বেশিরভাগ জনগণকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে।

সমসাময়িক ঘটনাগুলো অন্তত মনে হচ্ছে এই স্ববিরোধী কিছু বর্ণনাগুলোকে বাতিল করছে। পাকিস্তানী গনতন্ত্রের এই নাটকের সমাপ্তি হল যখন জেনারেল খান, পুর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের জেতা সার্বজনিন নির্বাচনের জবাবে পুর্বে সামরিক নির্যাতনের আদেশ দিলেন। এই জঘন্য নিষ্ঠুর সামরিক কার্যকলাপ কোটি শরনার্থীকে প্রানভয়ে ভারতে পালাতে বাধ্য করল।

ক্রমবর্ধমান গবেষণার সাথে পাকিস্তানী ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। এটি আমাদের দেশ থেকে অনেক দূরে কোন সাধারণ দুঃখজনক ঘটনা ছিল না যেটিতে আমাদের কোন অংশগ্রহণ ছিল না, কিন্তু ছিল এমন একটি ঘটনা যেটির সৃষ্টিতে আমাদের নিজেদের সরকার সাহায্য করছিল।

যদিও পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীর কিছু অস্ত্রাদি অন্যান্য দেশ থেকে এসেছিল, একটি বড় অংশ এসেছিল ১০০ কোটির বেশী ইউএস সামরিক সহায়তা রুপে- জেট ফাইটার্স, হালকা কামান, সি-১৩০ ট্রান্সপোর্ট প্লেন, বন্দুক, এবং গোলাবারুদ- পাকিস্তানে ১৯৫৫ সাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। একটি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ইন্দ-পাকিস্তান সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে ১৯৬৫-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান উভয় দেশের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল কিন্তু অনেক লক্ষ ডলার ইউএস সামরিক সহায়তা হিসেবে পাঠানো হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার পর।

ইউএস এর অর্থনৈতিক সহায়তাও প্রচুর ছিল, ১৯৫৪ সাল থেকে যা ছিল ৪০ কোটি তাকার বেশী। ইউএস বার্ষিক অর্থনৈতিক সহায়তার (প্রায় ২০০০ কোটি) মোটামুটিভাবে অর্ধেকের মত দেশের বৈদেশিক সহায়তা সরবরাহ করে, সেটি সহ যেটিকে দশ জাতি বিশ্ব ব্যাংক উন্নয়ন সহচর্যের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জ্ঞাপন করেছিল (মে ৩০,১৯৭১) যে, পাকিস্তানের উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে গভীরভাবে পাশে থাকবে এবং দেশের মুদ্রা এবং বাজেট অব্যাহত রাখবে।

পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর নির্যাতন এবং সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ওয়াশিংটন জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত ছিল। প্রথমে, রাষ্ট্র বিভাগ এই চালান অব্যাহত রাখার তথ্য অন্ধকারে রাখার চেষ্টা করে,কিন্তু যখন এই অব্যাহত সহায়তার ধারা কংগ্রেস এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পায়, সরকার এই অব্যাহত সহায়তা রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করে এই বলে যে, পাকিস্তানী সরকারের উপর “লিভারেজ” প্রয়োগের  জন্য এই সহায়তা। এপ্রিলে রাষ্ট্র বিভাগ স্বীকার করে যে, ইউএস কামান এবং এফ-৮৬ ফাইটার্স পুর্ব পাকিস্তানে ব্যবহার করা হচ্ছিল। এটি পরিষ্কার হয় যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেরিত অস্ত্র বাঙালিদের চুর্ণ করার কাজে সাহায্য করছিল এবং ইউএস সহায়তার ধারা অব্যাহত থাকবে যদিও এটি স্বল্পমাত্রায় থাকবে।

“ লিভারেজ প্রয়োগের জন্য সহায়তা প্রদান” এই তর্কটি গ্রিসের সাথে আমাদের সরকারের সম্পর্কের ব্যাপারে নেয়া নীতির মত শোনাচ্ছিল, এবং আমরা সন্দেহ করছিলাম যে, এটির পাকিস্তানের উপরও সমান প্রভাব থাকবে, বিশেষত জনসমক্ষে নির্বাহী শাখার কেউ অস্বীকার করছিল না কি হচ্ছে সে ব্যাপারে অথবা এর সমালোচনার পরামর্শ দিচ্ছে। কিন্তু সাধারণ জনগন এই নীতির বিরোধিতা করার জন্য কি করতে পারে?

পত্রপত্রিকা এবং কংগ্রেশনাল দপ্তরের সাথে যোগাযোগ ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, পাকিস্তানী জাহাজগুলো আমাদের পুর্ব উপকূলে নোঙ্গর করছে, অর্থনৈতিক এবং সামরিক মাল্পত্রের চালান তোলার জন্য।আমরা বুঝেছিলাম, আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ এবং পরিস্থিতির উপর প্রচারনার স্পটলাইট ফেলার একটি উপায় ছিলএই জাহাজগুলোকে অবরোধের প্রচেষ্টা যেহেতু তারা মালপত্র তোলার জন্য নোঙ্গর করেছিল।

এটি জেনে যে কিছু ফিলাডেলফিয়ানস ইতোমধ্যেই পাকিস্তানের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন, আমরা ফ্রেন্ডস অফ ইস্ট বেঙ্গল নামক একটি স্থানীয় দলে যোগদান করলাম এবং এটির প্রত্যক্ষ কার্যক্রম কমিটি হয়ে গেলাম। আমরা পোতাশ্রয় কার্যকলাপ সম্পর্কে সম্পুর্নরুপে অজ্ঞাত ছিলাম, কিন্তু গ্রন্থাগার গবেষণা এবং টেলিফোন কল গুলো শীঘ্রই আমাদের চালানের তথ্যের প্রধান উৎস গুলো সম্পর্কে একটি ধারণা দিল। কিছু সময় পরে আমাদের একটি পুর্নাঙ্গ “সংবাদ যন্ত্র” প্রস্তুত হল যাতে যুক্ত ছিলেন একজন নান যিনি জাহাজ আগমনের সংবাদ প্রতিবেদনের উপর নজর রাখতেন, সহানুভূতিশীল বন্দরশ্রমিকগন এবং জাহাজ চালকদের সংগঠন এবং যখন প্রয়োজন তখন বন্দরের ঘাটিগুলোতে বাইনোকুলার সহ স্পটারেরা। ( তথ্যসমুহের উভয় সরকারি এবং বেসরকারি উৎসসমূহতে হঠাৎ গোপনীয়তার এই পর্দা নিক্ষেপ আরেকটি কাহিনী, এতটাই বিস্তারিত যে বর্ননা এখানে নিষ্প্রয়োজন)

জুলাই ৮ তারিখে আমরা শুনতে পেলাম যে, পদ্মা মন্ট্রিলে জেট ফাইটার্সের অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ চালানের চেষ্টা করছে। দ্য মন্ট্রিল স্টার (জুন ২৮-৩০) প্রতিবেদনে দেখাল যে, জাহাজে মাল লেনদেনকারীরা দাবি করে যে শুধুমাত্র কোবাল্ট এবং খাদ্যদ্রব্য জাহাজে উঠানো হয়েছে, কিন্তু যখন আন্দোলনকারীরা পরীক্ষণের জন্য জোরাজুরি করল, তখন ৪৬ ক্যারেট সাব্রেজেট এর অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ খুজে পাওয়া গেল। কানাডিয়ান সরকার এই লেনদেনকারীদের অনুমতিপত্র বাতিল করে পদ্মাকে অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ ছাড়াই বাল্টিমোর অভিমুখে যেতে বাধ্য করে। এভাবে, এই প্রকল্প “দ্য পারসুট অফ দ্য পদ্মা” যেটি  চালিত করল এক রাত বাল্টিমোর জেলে এবং ত্রিশ দিন মেয়াদি কারাবাস যার মুল অভিযোগ চিল “বিশৃঙ্খল আচরন” এবং “অন্যায়ভাবে স্রোতে ইতস্ততভাবে ভাসমান অবস্থায় বাধন আলগা করা অথবা একটি বস্তু রসিকতাস্বরুপ একটি ক্যানু স্থাপন করে এস ফাইভ পদ্মা গতি রোধ করা”

পদ্মার নোঙ্গর প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হওয়ার আমাদের আত্মবিশ্বাসহীনতার চেয়েও বেশী ছিল আমাদের উল্লাস যা একটি চমৎকার দেশব্যাপী সংবাদমাধ্যম, রেডিও এবং টেলিভিশনে এই অবরোধের প্রচারের মাধ্যমে আমরা অনুভব করেছিলাম। যখন পররাষ্ট্র বিশয়ক মন্ত্রণালয় কমিটি গ্রিস এবং পাকিস্তানে সহায়তা্ বন্ধের ব্যাপারে একটি বিল উত্থাপন করল, একজন কংগ্রেসনাল উৎস এবং একজন সুপরিচিত নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রতিবেদক আমাদের বললেন যে আমাদের বাল্টিমোর কার্যকলাপ এই নজিরবিহীন উদ্যোগ নিতে কমিটিকে প্রভাবিত করায়একটি প্রধান কারন ছিল।

জেটিশ্রমিকদের সাথে নিকটবর্তী হয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল যখন আমাদের আবেদন সত্ত্বেও বাল্টিমোর সমিতির সিদ্ধান্ত ছিল জাহাজে মালপত্র বোঝাই করা। তাই আমরা একটি দল গঠন করলাম যাতে ছিলেন দুইজন বাঙালি এবং দুই জন আমেরিকান এবং ছুটে গেলাম মিয়ামির ডিলিডো হোটেলে আন্তর্জাতিক জেটিশ্রমিক সমিতির সম্মেলনে। সেখানে আমরা আইএলে এর সদস্যদের আমাদের অবস্থান সম্পর্কে বোঝালাম এবং, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের সাথে সাক্ষাতের এবং সম্মেলন স্থলে একটি ভাষণের পরে, আমরা প্রতিশ্রুতি পেলাম যে,  আইএলএ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাওয়া কোন সামরিক সরঞ্জামাদি বোঝাই করবে না।

আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন যোগাযোগ, যেটি প্রমাণ হল, ছিলেন, রিচার্ড আস্কেউ, ফিলাডেলফিয়ার আইএলএ লোকাল ১২৯১ এর সভাপতি। তিনি বাঙালিদের প্রতি অবিলম্বে সহমর্মিতা প্রকাশ করলেন এবং তার বিশ্বাস ব্যক্ত করলেন যে একটি ছোট দল সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামকে দাবিয়ে দেবার চেষ্টা করছিল। একজন কৃষ্ণাঙ্গ নেতা হিসেবে, তিনি নিপীড়িত লোকদের দুর্দশা বুঝেছিলেন যারা শুধুমাত্র তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ব্যক্ত করার চেষ্টার কারণে নিপীড়িত হয়। যেখানে আন্তর্জাতিক আইএলএ পাকিস্তানের জন্য সামরিক দ্রব্যাদি বোঝাই না করার প্রতিজ্ঞা করেছিল, আস্কেউ নির্দেশ করেছিলেন যে তার স্থানীয় জনগন অর্থনৈতিক সহায়তাও প্রদান নাও করতে পারে, এই বিশ্বাসে যে একনায়কতন্ত্রের জন্য কোন সাহায্য পুর্ব বাংলায় শুধু যন্ত্রনার পরিমাণই বৃদ্ধি করবে।

যখন এই ছোট দল মিয়ামিতে কাজ করছিল, প্রত্যক্ষ কার্যক্রম কমিটির বাকি সদস্যরা অন্যান্য বন্দর নগরীতে দলগুলোকে উদ্বুদ্ধ করছিল সেখানে অবরোধ করার জন্য, এবং পদযাত্রাশুরু করা এবং পাকিস্তানী জাহাজের ফিলাডেলফিয়া এজেন্টদের দপ্তরে পিকেটিং বা বাধা ডান করার জন্যও।

আগস্টের প্রথম দিকে আমরা জানতে পারলাম যে আরেকটি পাকিস্তানী জাহাজ, আল আহমাদি, ফিলাডেলফিয়ার দিকে আগাচ্ছে। আগস্ট ১২ তারিখে আমরা ফিলাডেলফিয়ার ৮০ নং জেটিতে এটির মুখোমুখি হওয়ার জন্য অবরোধ স্থাপন করলাম, কিন্তু এটি ডেলাওয়ার নদির দিকে ঘুরে বাল্টিমোর চলে গেল। আমরা এটিকে সেখানে ধাওয়া করলাম এবং জল ও স্থলে পিকেটিং এর সাথে এটির মুখোমুখি হলাম, তখন জানতে পারলাম এটি ফিলাডেলফিয়ার দিকে এগোচ্ছিল।

আগস্টের ১৭ তারিখে আমরা ডেলাওয়ার নদীতে আল আহমাদির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমাদের নৌকা সংগ্রহের জন্য ভোর ৪ টায় জেগে উঠলাম, আল আহমাদির সম্ভাব্য পৌঁছানোর সময় ছিল সকাল সাতটা। চারটি ক্যানু এবং একটি ক্যায়াক চালিয়ে ৮০ নং জেটিতে পোঁছানোর জন্য তিন মাইল চালিয়ে গেলাম যেখানে ত্রিশটি পিকেট ঘাটের পাশে বিশালাকৃতির গুদামঘরের সামনে তৈরি করা হয়েছিল। আমরা পাকিস্তানে ইউএস এর অস্ত্র চালানের চিত্র সম্পর্কে বর্ননা করে একটি ত্রিশ ফুট ম্যুরাল নির্মান করেছিলাম এবং শীঘ্রই জেটিশ্রমিক, চালক (যাদের ট্রাক আমাদের পিকেট দ্বারা সমর্থিত ছিল) এবং জাহাজ কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে, যারা অভিযোগ করছিলান যে আমরা তাদের পুরো কার্যকলাপ বন্ধ করে দিয়েছি এবং তাদের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করছি, তাদের সাথে গভীর আলোচনা এবং দরকষাকষিতে লিপ্ত হলাম। আমরা শেষ পর্যন্ত একটি ফটক পিকেট মুক্ত করে ছেড়ে দিতে রাজি হলাম ( যেখানে একটি জাপানি জাহাজ নোঙ্গর করা ছিল)।

এই ক্ষুদ্র অহিংস বহর আলোকিত পানির উপর পাঁচটি অন্ধকারের রৌপ্যমুর্তির মত ছিল, যেগুলো নদীতীরের পাশে অবস্থিত ঘাটের প্রবেশদ্বারের থেকে ২০০ গজ দূরে পানির উপর ভাসছিল। বেশকিছু পুলিশের নৌকা আমাদের উপর কড়া নজর রাখছিল। গুদামঘরটি নদীর দিকে পিকেটারদের দৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল, কিন্তু তারা জানত যে এই মোকাবিলা অনিবার্য ছিল যখন তারা দেখল দুইজন ক্যানুর যাত্রী হঠাৎ তাদের মাথার উপর কার্ডবোর্ড উচিয়ে  সংকেত দিল এবং বহির্গামী স্রোতের দিকে ইশারা করল।

কিছু মুহুর্তের মধ্যে আল আহমাদি জাহাজের বিশাল অগ্রভাগ গুদামঘরের প্রান্ত ঘেঁষে অতিক্রম করল, দুটি বিশাল হেচকা ঠেলার সাহায্যে। আমাদের ক্ষুদ্র নৌকাগুলো সরাসরি প্রান্তভাগের দিকে চালিয়ে নেয়া হল, কিন্তু পুলিশ, স্পষ্টত গ্রেপ্তার না করার  আদেশের ভিত্তিতে আমাদের পাশাপাশি চলল, তাদের পাকড়াও করল এবং জাহাজের প্রান্তভাগের আড়াআড়ি রাস্তা থেকে সরিয়ে তেনে নিয়ে গেল। যখনই তারা আমাদের ছেড়ে দিল, যাইহোক, আমরা পুনরায় বৈঠা চালিয়ে ফিরে এলাম, টাগবোটের ঢেউ এবং উত্তাল আবহাওয়ার সাথে লড়াই করার মাধ্যমে জাহাজের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য । বিশ মিনিটের একটি ভাল সময়ের মধ্যে এই বহর আক্রমণ করল এবং  এই বহরকে পিছনে টানা হল, যখন জেটিশ্রমিক, চালক, আন্দোলনকারীরা, সংবাদপত্রের প্রতিবেদক, টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান এবং পাকিস্তানী নাবিকেরা রেলিং এ হেলান দিয়ে স্তব্ধ হয়ে দেখছিল। শেষ পর্যন্ত আল আহমাদি জেটিতে নোঙ্গর করার জন্য রজ্জু বাধতে সমর্থ হল।

জেটিশ্রমিকদের হাতে ছিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত; আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম এটি দেখার জন্য যে তারা মাল বোঝাই করবে কি করবে না। এই পর্যন্ত কেউ পিকেট এর রেখা অতিক্রম করেনি, এবং পরবর্তী কর্মীদলের ফটক অতিক্রমের নির্ধারিত সময় ছিল দুপুর একটা। ১২:৩০ এর দিকে তারা আসতে শুরু করল এবং এ পিকেটিং আরও তীব্রতর হল। ১২:৪৫ এ রিচার্ড আস্কেউ গুদামঘরের ফটকের সামনে বর্ধিষ্ণু জনতার মাঝে একটি বিশাল কালো গাড়ি চালিয়ে এলেন। তিনি ধীরে গাড়ি থেকে নামলেন এবং অতিসত্বর মাইক্রোফোন  এবং প্রতিবেদকদের প্রশ্নের মাঝে বেষ্টিত হলেন।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বলার জন্য, তিনি বললেন, “ আমি এখানে জনতাকে বলতে এসেছি কি করতে হবে। আমার মনে হয় তারা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে কি করতে হবে। আই এখানে আমার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করতে এসেছি। এই কোম্পানিকে এই ঘাটে জাহাজ স্থাপনের জন্য লজ্জিত হওয়া উচিত। পশ্চিম পাকিস্তান পুর্ব পাকিস্তানে গনহত্যা চালাচ্ছে। যদি আমরা এই জাহাজে মাল বোঝাই করি, এটি এমন হবে যে আমরা গনহত্যা সংঘটনে সাহায্য করছি”।

একজন প্রতিবেদক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলেন যেটি সকাল থেকে সকল আন্দোলনকারীর দিকে নির্দেশ কড়া হয়েছেঃ “ জনাব আস্কেউ আপনার লোকেরা মাল বোঝাই করতে না দিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতি করছে না?”

…… “ এই কর্মকান্ডগুলো জনগনের কাছে পাকিস্তানে ইউএস এর ভূমিকা সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেছে। তারা একটি উদাহরন ও স্থাপন করেছে যে কিভাবে সাধারণ জনগন একটি অসহায়তার অনুভুতির গণ্ডি অতিক্রম করে তাৎপর্যপুর্ন কার্যক্রমে সেটিকে রুপান্তর করতে পারে……”

বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছাড়াই তিনি জবাব দিলেন, “ যদি আমার মনে হত যে অর্থ আমি উপার্জন করছি সেটিতে অন্যের রক্ত মেশানো আছে, তাহলে আমি এই অর্থ আমার কাছে মূল্যহীন হয়ে যেত,” এবং তিনি তার গাড়ির দিকে ফিরে সেটি চালিয়ে চলে গেলেন।

একজন জেটিশ্রমিকও সীমারেখা পার করে নি, তখনও অথবা পরবর্তী ২৮ ঘন্টার মধ্যে, যে সময় একটি লাগাতার দিবারাত্রি আন্দোলনের আয়োজন করা হয়েছিল।অল্প কিছু জেটিশ্রমিক জাহাজ কোম্পানির কর্মীদের কাজ করার জন্য বারবার আহবান করছিল, এবং  পরবর্তী সময়ে কোন শ্রমিক না থাকায় আল আহমাদি জেটিতে হাজার টনের উপর পন্য রেখে চলে যায়।

স্পষ্টত, এই কার্যক্রম ফিলাডেলফিয়া বন্দরকে পাকিস্তানী জাহাজগুলোর জন্য বন্ধ করে দিয়েছিল, যেটির জন্য পরবর্তীতে, ডিরেক্ট অ্যাকশন কমিটি  একজন প্রস্তুতকারক এবং একজন উকিলের কাছ থেকে ফোন পেয়েছিল , এই কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য যাতে তারা পাকিস্তানে চালান পাঠাতে পারে। বোস্টনে আরও একটি দল একটি অহিংস বহরের আয়োজন করেছিল এবং এই পোতাশ্রয় ব্যবহার থেকে একটি নির্ধারিত জাহাজকে নিরুৎসাহিত করেছিল।

অক্টোবরে আমরা নর্দমার নালীর আটটি প্রতিরুপ তৈরি করেছিলাম ( ইনডিয়াতে বাংলাদেশী শরনার্থীদের ঘর হিসেবে যেটি ব্যবহৃত হয় তার সমরুপ) এবং সেগুলোকে লাফায়েট পার্কে স্থাপন করেছিলাম, যেটি ছিল হোয়াইট হাউসের আড়াআড়ি পার্শ্বে অবস্থিত। ডিরেক্ট অ্যাকশন কমিটির একটি দল সেগুলোতে এক সপ্তাহের বেশী বাস করেছিল, উপবাস করে অথবা বাঙালি প্রবাসীদের দেয়া সামান্য খাবার গ্রহণ করে, শরনার্থীদের দুঃখ দুর্দশা উপস্থাপনের জন্য। এই পর্ব থেকে আমরা পাকিস্তান দুতাবাসে একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছিলাম, ক্যাপিটাল হিল এ একটি তদবির কার্যক্রমের দিন, জাতিসংঘে বাংলাদেশী প্রতিনিধিদের দ্বারা আয়োজিত একটি আন্তঃধর্মীয় সেবা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য একটি শরনার্থী আহার।

কার্যকর গণমাধ্যম প্রচারের কারণে, এই কর্মকান্ডগুলো জনগনের কাছে পাকিস্তানে ইউএস এর ভূমিকা সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেছে। তারা একটি উদাহরন ও স্থাপন করেছে যে কিভাবে সাধারণ জনগন একটি অসহায়তার অনুভুতির গণ্ডি অতিক্রম করে তাৎপর্যপুর্ন কার্যক্রমে সেটিকে রুপান্তর করতে পারে.

ইন্ডিয়াতে আমাদের সূত্রের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে,এই রকম কার্যক্রম ইন্ডিয়ান গণমাধ্যমে ফলাওভাবে বর্ননা করা হএই কর্মকান্ডগুলো জনগনের কাছে পাকিস্তানে ইউএস এর ভূমিকা সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা পালন করেছে। তারা একটি উদাহরন ও স্থাপন করেছে যে কিভাবে সাধারণ জনগন একটি অসহায়তার অনুভুতির গণ্ডি অতিক্রম করে তাৎপর্যপুর্ন কার্যক্রমে সেটিকে রুপান্তর করতে পারে.য়েছে এবং ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে নিদর্শন হিসেবে যে, যদিও ইউএস সরকার সহানুভূতিহীন ছিল, কিছু আমেরিকান জনগন গনহত্যার সমর্থনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য পদক্ষেপ নিতে তৈরি ছিল। জাতিসংঘে ইন্ডিয়ান এবং ইউএস প্রতিনিধিগণ এখন কথা বলার অবস্থায় না থাকলেও জেটি ৮০ এর মুহুর্ত মনে করতে পারেন যখন জেটিশ্রমিক এবং আন্দোলনকারীরা একত্রিত হয়েছিল এবং পৃথিবীর অপর প্রান্তে হতে থাকা স্বৈরশাসন এবং গনহত্যার জন্য তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল।

.

13.168.512-513

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের সমর্থনে ‘ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল’- এর ভূমিকা ফ্রেন্ডস অব ইস্ট বেঙ্গল জুলাই, ১৯৭১

পূর্ববাংলার বন্ধুরা

সাধারণ জ্ঞাতব্য

উদ্দেশ্য: পূর্ববাংলার  বন্ধুরা একটি অলাভজনক নিবেদিত সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে-

(1) সামরিক পদক্ষেপ দ্বারা পূর্ববাংলার জনগণের উপর আরোপিত অপরিসীম দুর্ভোগ উপশমে সাহায্য করতে।

(2) আরো বেশি স্বাধীনতা এবং পূর্ববঙ্গের লোকদের রাজনৈতিক আত্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে

(3) উক্ত উদ্দেশ্যে নীতি নির্দেশ পরিচালনা করতে ইউ এস সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তার করা.

ক্রিয়াকলাপের তারিখ:কংগ্রেস সদস্যদের তদবিরের একটি দল অনেক সেনেটর ও কংগ্রেস দেখতে ওয়াশিংটনের মার্কিন কংগ্রেস পরিদর্শনে যায়।তদবির প্রচেষ্টা প্রাথমিকভাবে হাউসে  Gallagher সংশোধনী এবং সেনেটে  চার্চ-স্যাক্সবি সংশোধনীর দিকে পরিচালিত করা হয়েছে.উভয় সংশোধনী পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য নিষিদ্ধ করে,যতক্ষন না পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব বাঙালিদের উপর দমন কার্যক্রম বন্ধ হয়.

নিপীড়নের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই বিক্ষোভ শুরু হয় কারণ ইউ.এস সরকার লাইসেন্স করা অস্ত্রের চালানকে স্বীকৃতি দেয়।তৎকালীন পাকিস্তানের অস্ত্র চালান বন্ধ করতে অনেক পরিকল্পিত বিক্ষোভ করা হয়। বিক্ষোভ হচ্ছিল ইউ.এস বন্দরে বোঝাই হওয়া পাকিস্তানি জাহাজে,কিছু জাহাজ বোঝাই করতে দেরী করা হয় অথবা বলা যায় জাহাজ বোঝাই থামিয়ে দেয়া হয়। কিছু কিছু বন্দরে কর্মীরা সম্মত হয় জাহাজ বোঝাই না করতে।

জনমত-উক্ত সংগঠন পূর্ব পাকিস্তানের বিভীষিকাময় ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু লিফলেট ও খবরের পাতা তৈরী করলো এবং এই দেশে কিছু দলীয় কাজও করলো।এই পত্রগুলো পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ট্যাম্পল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত উৎসবের মতো জায়গায় বিতরণ করা হলো।সংবাদ,নিবন্ধ,সম্পাদকীয় ইত্যাদি ধারণকারী তথ্যের একটি বিরাট ভান্ডারকেই তথ্যের উৎস হিসেবে প্রস্তুত করা হলো।

ক্রমবর্ধমান তহবিল-এই কার্যক্রম করতে প্রয়োজনীয় মন্টেস এসেছে বোতাম পোষ্টার বিক্রি করে ও অন্যান্য ছোট অনুদান থেকে।নিজে থেকে কোনো ত্রাণ সংস্থা নয় বরং পূর্ব বাংলার বন্ধুরাই ওই সংস্থার তদন্ত করলো যারা কিনা পূর্ব পাকিস্তানিদের সরাসরি সাহায্য করার জন্য অনুদান দিতে আগ্রহী।বিভিন্ন সংস্থার তালিকা প্রণীত হয়েছে এবং পরীক্ষণ অব্যাহত রেখেছে।

ভবিষ্যত কার্যক্রম:তদবির-কারণ চার্চ স্যাক্সবি সংশোধনী সিনেটের সামনে আসা সত্বেও তদবির অব্যাহত থাকবে।কারণ সরকার নিবেদিত ত্রাণের প্রয়োজনীয়তাও অনেক।

513

বিক্ষোভ-আরো জাহাজ পাকিস্তানে অস্ত্র ও অন্যান্য পণ্য বহনে নির্ধারিত করা হয়;এই জন্য বিক্ষোভের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসের জন্য পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাএবং স্পিকার ব্যুরো শিক্ষার পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং অন্যান্য স্কুল তাদের অণুসরণ করবে।কিছু বক্তা ইতিমধ্যে পাওয়া যায় যদিও, একটি বক্তা সংগঠন ও অন্যান্য পিউবিক দলের প্রোগ্রামে প্রদানের জন্য একটি ব্যুরো স্থাপনের প্রচেষ্টা ভবিষ্যতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে.

তথ্য যোগাযোগ: Dr.  C.  H.  Kahn,  4621  Larchwood  Ave.,  Phila.  Pa.,  GR  23969.  Judith  Beinstein,  345  S.  18th  St.,  Phila.  Pa.,  K15-  1907. Chuck  Goodwin,  5001  Willowns  Ave.,  Phila.  Pa.,  GR  6-4437. Dick Taylor, 4719 Cedar St.. Phila. Pa., SA 4-7398.

.

13.169.514-515

শিরোনাম সূত্র তারিখ
শরণার্থী সমস্যার ওপর ডঃ কার্ল ই. টেইলর এর প্রতিবাদ ডঃ কার্ল ই. টেইলর জুলাই, ১৯৭১

ডঃ উইলিয়াম গ্রিনফের প্রস্তাবে আমি আমার সাম্প্রতিক ভারত সফরের উপর একটা সংক্ষিপ্ত বিবরণ লিখছি যা আমাদের গবেষণা প্রকল্পের সাথে সম্পর্কযুক্ত।আমি ভারতে জন্মগ্রহণ করেছি এবং জীবনের প্রায় অধিকাংশ সময় সেখানকার বিভিন্ন গ্রামে গবেষণা,শিক্ষাদান সহ সেবামূলক কর্মকান্ডে নিয়োজিত ছিলাম।এই সফরে আমি খুব সহজেই বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ ও সুদূরপ্রসারী সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলাম।

এখন আমরা ‘আমেরিকা বিরোধী’ বিরোধীতার যে তীব্রতা তৈরি করতে পেরেছি তা আমি আগে কখনো দেখি নি।এমনকি উচ্চ কর্মকর্তারাও স্বাভাবিকের চেয়েও সংবেদনশীল আচরণ করছেন যাতে বিদ্যমান বিস্ফোরক পরিস্থিতি আরও তীব্র না হয়।আন্তর্জাতিক ঔদাসীন্য ও ভুল বুঝাবুঝির জন্য জনগণ ও সদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বাধা ও অব্যাহত চাপ ভারত সরকার যেভাবে সতর্কতার সঙ্গে সামাল দিচ্ছে তা প্রশংসার দাবীদার।

এটা আমার স্ববিবেচনাপ্রসূত বিচার যে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান নীতি বিপদজনক এবং অদূরদর্শী।কারণ আমরা এশিয়ার সংহতিনাশ এবং এখানে আরেকটি দীর্ঘকালীন যুদ্ধের ক্ষত সৃষ্টিতে কাজ করছি।পাকিস্তানকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহয়তা ভারতকে কিছু সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করছে।এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ সামরিক আক্রমন করলে ভারতকে পাকিস্তান বিভক্তি তরান্বিত করার জন্য আন্তর্জাতিক নিন্দার স্বীকার হতে হত।বাঙালিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিদ্বেষের পরিচয় পাওয়া যায় তাদের সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুর জ্বালাও-পোড়াও এবং হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে।পাকিস্তানের শাসন নীতিই হল উদ্ভূত যে সমস্যার জন্য ভারত সরকার ও এক কোটি হিন্দুদের দোষারোপ করা।যদিও ৯৮ শতাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া সত্ত্বেও মুসলমান পরিচালিত দল “আওয়ামীলীগ” সরকার গঠন করতে পারে নি।আর যদি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যদি তাদের এই দোষারোপের নীতি প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয় তাহলে তা পশ্চিম পাকিস্তান প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে রক্ষা করার অন্যতম নিয়ামক হবে।ভারত সরকারও যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে।তারা প্রত্যক্ষ সামরিক পদক্ষেপ নিতে প্রলুদ্ধ নয় বরং বিদ্যমান অস্বস্তিকর অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পরোক্ষ উপায় অবলম্বন করতে আগ্রহী।জরিপ অনুযায়ী শরনার্থী শিবিরের অধিকাংশই বৃদ্ধ,নারী ও শিশু। দীর্ঘায়িত গেরিলা যুদ্ধ ক্রমশ তার তাৎপর্য হারাচ্ছে।পাকিস্তানের প্রতি চীনের অঙ্গীকারের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রও একসময় অচল সামরিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে বরং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানাতে পারে।

দিল্লীর বিক্ষুব্ধতা যুক্তরাষ্ট্রের কপটতামূলক অবস্থানের জন্য।তারা স্পষ্ট ভাবেই জিজ্ঞাসা করে কিভাবে আমরা বন্ধ করে দিয়ে আবার অস্ত্রের চালান শুরু করলাম দুই পক্ষকে বোকা বানিয়ে।যখন ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের জন্য ৭ কোটি ডলার অনুদানের ঘোষণা এল এবং পরের দিনই দুইটি যুদ্ধোপকরণ ভর্তি জাহাজ পাঠানোর খবর ছড়িয়ে পড়েছিল; তাদের প্রতিক্রিয়া তখন ছিল “তারা কি মনে করে যে তারা আমাদের কিনে নিতে পারবে?”তারা তখন আমাদের ত্রাণের অপ্রতুলতার একটা সহজ হিসেব দিল।ভারতীয় কর্মকর্তারা হিসেব করেছিল ১^১/৪ মিলিয়ন ডলার প্রতিদিন খরচ হবে শুধু ৬ মিলিয়ন  এর বেশি শরণার্থীকে খাওয়াতে।অর্থাৎ পাঁচজনের একটি পরিবারের জন্য প্রতিদিন ১ ডলার করে।যদি এখন বরাদ্দকৃত ২ কোটি এর বদলে পুরো ৭ কোটি ডলার  শরণার্থীদের খাবারে খরচ করা হয়, তবুও তা মাত্র দু’মাসের কমেই শেষ হয়ে যাবে।উপরন্তু সেখানকার ভঙ্গুর সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থা পুনর্নির্মাণের জন্য প্রয়াস দরকার।কিছু কিছু জায়গায় গড় দৈনিক ভাতা ৩ রুপি থেকে ১ রুপিতে নেমে এসেছে।এত সমস্যার সম্মুখীন হওয়াটা একটা বিপর্যয়ের চিহ্ন বহন করে কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে একটা ক্রমশ উদ্দীপনা দানকারী অর্থনৈতিক উন্নতির অগ্রযাত্রাকেও নির্দেশ করে।

সর্বোপরি, পূর্ব পাকিস্তানের ১০ মিলিয়ন হিন্দুর উপর চালানো ভয়ানক গণহত্যা থেকেই অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।কতদিন পর্যন্ত সরকার বিপুলসংখ্যক ভারতীয় মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়া থেকে বিরত রাখতে পারবে তা নিয়ে আসলে সন্দেহ আছে।এটাই বেশি পীড়া দেয় যে এমন একটি বেদনাদায়ক ঘটনা যেটিতে নাৎসিদের ‘ফাইনাল সল্যুশন’ এর চেয়ে বেশী মানুষ জড়িত তাতে বাকী বিশ্বের স্পষ্টত অনুভূতিহীনতা এবং ঔদাসীন্য।আমেরিকানদের বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে এবং যদি সম্ভব হয় সহয়তা করা উচিত।কিন্তু অবশ্যই সামরিক জান্তাকে সাহায্য করে উত্তেজনা বাড়ানো এবং সমস্যা দীর্ঘায়িত করে নয়।

.

13.170.516

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য অক্সফাম আমেরিকার চাঁদা সংগ্রহের প্রচারপত্র। অক্সফাম আমেরিকা ১২ আগষ্ট, ১৯৭১

                                                                                                                                        অক্সফাম আমেরিকা

  অন্তর্ভূক্ত

আগষ্ট ১২, ১৯৭১

                                                                                                    ১০২৮ কানেকটিকাট এভ.

এন.ডব্লিউ.

সুইট ৫০৯

 ওয়াশিংটন, ডি.সি.

২০০৩৬

প্রিয় বন্ধু,

ধরুন আপনি এবং ৭ মিলিয়ন অন্যান্য আমেরিকানদের (প্রায় পুরো নিউ ইয়র্ক সিটি) হঠাৎ মেক্সিকো সীমান্ত অতিক্রম করে পালাতে হয়েছিল, with no possessions but the clothes on your back. আপনি কি সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকতে পারতেন? এবং আপনি কি আশা করেন যে মেক্সিকো একা আপনাকে এবং অন্যদের সাহায্য করতে পারবে?

ঠিক এমন একটি পরিস্থিতি ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থীদের মধ্যে আজ রয়েছে। এই নিদারুণভাবে অভাবগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে খাদ্য, আশ্রয়, এবং জরুরী চিকিৎসা সেবা দিয়ে ভারত সরকার তার সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে, কিন্তু এটা একা ভারত সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়।

আমরা যারা ধনী জাতি রয়েছি তারাই এই হাজারো নিরুপায় শিশু ও বৃদ্ধের অনাহার ও রোগজনিত মৃত্যু থেকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র অবলম্বন। ইতিমধ্যে অক্সফাম, ননপলিটিকাল সংস্থা যেটা ১৯৪২ থেকে বিপর্যস্ত মানুষের সাহায্যে নিয়োজিত, এর মাধ্যমে অনেক আমেরিকানরা, কানাডিয়ানরা এবং ব্রিটিশ নাগরিক তাদের অনুদান পাঠিয়েছেন। আপনার পাঠানো ডলারের সর্বোচ্চ উপকারিতা নিশ্চিত করতে অক্সফাম কাজ করবে।

অনুগ্রহপূর্বক আপনার শুল্কমুক্ত চেক অক্সফামকে পাঠান, অক্সফাম আমেরিকা, ১০২৮ কানেকটিকাট এভ., এন.ডব্লিউ., সুইট ৫০৯, ওয়াশিংটন, ডি.সি., ২০০৩৬।

সত্যিকার অর্থে আপনি আপনার হাতে জীবন ও মৃত্যুর ক্ষমতা ধরে আছেন, আপনার কলম নিন এবং একটি জীবনের পক্ষে লিখুন।

বিনীত নিবেদক,

এস ডি/

থিওডোরা সি ফস্টার

এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর

________

.

13.171.517

শিরোনাম সূত্র তারিখ
কানাডায় অনুষ্ঠিত এশীয় সম্মেলনে মার্কিন নাগরিকদের বিবৃতি সূত্র বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ২১ আগষ্ট, ১৯৭১

কানাডার টরন্টোতে দক্ষিণ এশিয়া সম্মেলনে আমেরিকান নাগরিকদের দ্বারা বিবৃতি, আগস্ট ২১, ১৯৭১

        আমরা, টরন্টোতে দক্ষিণ এশিয়া কনফারেন্সে (আগষ্ট ১৯-২১, ১৯৭১) উপস্থিত, নিম্নে স্বাক্ষরকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, যুক্তরাষ্টের সরকারকে নিন্দা জানাই তাদের সেনাবাহিনী ও অর্থনৈতিক সহায়তা পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য অব্যাহত রাখায়। এই সাহায্য দক্ষিণ এশিয়ায় শুধু সহিংসতাই বড়াবে। এটা আমেরিকার জাতীয় স্বার্থ পরিপন্থী। এটি বিশ্বের নৈতিকতা লঙ্ঘন করে।

আমরা আমাদের সরকারের উপর চাপ প্রদান করছি যাতে তার বর্তমান পথ পরিবর্তন হয় এবং Concern- এর টরন্টো ঘোষণাপত্রের সুপারিশ অনুসরণ করে।

স্বাক্ষর –

জনাব টমাস এ ডাইন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ নির্বাহী সহকারী.

প্রফেসর রবার্ট দর্ফ্ম্যান, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়.

ডঃ জন রোহডে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল.

মিসেস কর্নেলিয়া এফ রোহডে, ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিশন.

ডাঃ হান্না পাপানেক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়.

প্রফেসর স্টেনেলে ওলপার্ট, ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়.

অধ্যাপক গুস্তাভ পাপানেক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়.

জনাব হোমার জ্যাক, সচিব, ইন্টার্নেশাল রিলিজিয়ান ফর পিছ.

জনাব হরম্যান ডাহল, ফোর্ড ফাউন্ডেশন.

.

13.172.518-521

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সমর্থক আমেরিকানদের তৎপরতা বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ আগষ্ট, ১৯৭১

ওহাইয়ো- পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

        ওহাইয়ো হতে বি. চন্দ্রশেখরন এর রিপোর্টঃ

        আমরা গর্বের সাথে এই রিপোর্টের মাধ্যমে আপনাদের জানাতে চাই যে, আমরা কলম্বাসে একটি সংগঠন চালু করতে যাচ্ছি যার নাম হচ্ছে ‘পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ’।

        বাংলাদেশের মর্মান্তিক ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনার জন্য ২৯শে জুলাই ১৫ জন আগ্রহী ব্যক্তি যারা মূলত ওহাইয়ো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও অনুষদ সদস্য একত্রিত হয়। প্রথম সাক্ষাতে সিদ্ধান্তের ফলস্বরূপ আমাদের বিশাল সভাটি আয়োজিত হয়। আগষ্টের ৫ তারিখে ২য় সভাটি যা মূলত দলের নথিভূক্ত সভা ছিল, সেখানে তখন ৬০ জনেরও অধিক ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল যারা বৃহৎ সংমিশ্রিত জনগোষ্টীর প্রতিনিধিত্ব করছিল। আমরা সৌভাগ্যবাব যে প্রধান বক্তা হিসেবে আমরা ওহাইয়ো অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ জে. কে. ভট্টচার্য্যকে পেয়েছিলাম যিনি বাংলাদেশ বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয় আছেন এবং একই রকম আরও অনেক সংগঠনের সাথেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। একটি কমিটির হয়ে কাজ করা বা অন্য অর্থে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে যাওয়ার বিষয়ে অধিকাংশ উপস্থিতিরা সম্মত হওয়ায় সভাটি দূর্দান্তভাবে সফল ছিল।

        আমরা ইতোমধ্যেই পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধের জন্য কংগ্রেসম্যান ও রাষ্ট্রপতি বরাবর ‘পিটিশন সাইন’ কার্যক্রম আয়োজন করে ফেলেছি। স্থানীয় একেশ্বরবাদী ও ক্যাথলিক গীর্জা বরাবর আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ১০০ এর চাইতেও অধিক টেলিগ্রাম পাঠানো হয় এবং স্থানীয় কংগ্রেসম্যানকে অনুরোধ করা হয় যেন গালাঘের সংশোধনীর সমর্থনে ভোট প্রদান করেন। প্রদর্শন ও তথ্য এই দুইই কলম্বাসের অনেকগুলো কেন্দ্রে প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে স্থানীয় গীর্জা গোষ্ঠি হতে তহবিল সংগ্রহ করা নিয়ে মনোযোগী হওয়া। এছাড়াও এই কাজের জন্য টেলিভিশন ও রেডিওতে জনসেবামুলক ক্রীড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

        এই মুহূর্তে তিনটি প্রধান কমিটি কার্যক্রম চালাচ্ছেঃ

        ১। ত্রাণ, ২। প্রচার এবং তথ্য সংগ্রহ ও ৩। চ্যারিটি শো, বৃহৎ সভা ইত্যাদি সংগঠিত করা।

        এই গোষ্ঠির ঠিকানা হচ্ছেঃ

        পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

        পি.ও. বক্স- ৩০৩৫

        কলম্বাস, ওহাইয়ো- ৪৩২১০

ওহাইয়ো- পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

        এ্যারিজোনা হতে জন মারকৌলিস লিখেছেনঃ

        আমরা এ্যারিজোনার টেম্পে ‘পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ’ গোষ্ঠি চালু করেছি। এই পর্যন্ত আমরা সংবাদ সম্মেলন ডেকেছি এবং ফিনিক্স ফেডারেল ভবনের সামনে এর উদ্বোধন করেছি।

পাতা নংঃ ৫১৯

উদ্দেশ্য হচ্ছে এই এলাকার জনগণকে অবহিত করা কারণ স্থানীয় পত্রিকাগুলো এই ঘটনাকে প্রকাশ করছে না। টিভির মাধ্যমে আমরা যতটুকু দেখতে পাচ্ছি তা অতোটা পর্যাপ্ত নয়। গোষ্ঠিগতভাবে আমরা দাবী জানাচ্ছি যে পশ্চিম পাকিস্তানে সহায়তা বন্ধ করতে হবে এবং এর পরিবর্তে এশিয়াতে বিদ্যমান সেই বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্থানের জনগণের যেখানে প্রয়োজন সেখানে খাদ্য ও চিকিৎসা সাহায্য প্রদানে ব্যবহার করা হোক। আমরা এই পর্যন্ত ১০০ এর মতো সংগ্রহ করেছি যা ইউনিসেফকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

        টেম্পে ও ফিনিক্স পিস সেন্টার, ক্যাথলিক সেন্টার ফর পিস এন্ড জাস্টিস, ডব্লিউ আই এল পি এফ এবং ইউনিসেফ আমাদের গোষ্ঠির সাথে একাত্ম হয়েছে। পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে সেপ্টেম্বরে আমরা ‘প্যানেল আলোচনা’র আয়োজন করতে চলেছি। এই গোষ্ঠির ঠিকানা হচ্ছেঃ পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ, ১৪১৪ এস. ম্যাক্‌এ্যালিস্টার, টেম্পে, এ্যারিজোনা।

        মিল্বৌকী                                                                                 ১২ই আগষ্ট, ১৯৭১

        মিল্বৌকী পিস এ্যাকশন কমিটি হতে রন ডিনিকোলা লিখেছেনঃ তুলনামূলকভাবে মঙ্গলবার রাতে হওয়া সভাটি সাফল্যমন্ডিত ছিল। আন্তর্জাতিক স্টুডেন্ট ক্লাবের মারক্বেট স্থানীয় ভারতীয় ছাত্ররা সহ বিশ জন ব্যক্তি সেখানে অংশগ্রহণ করে।

        আমরা দলটিকে দুইট  নীতিতে আলাদা করি, এর একটু হচ্ছে ত্রাণ এবং অন্যটি বিশদভাবে রাজনোইতিক কার্যক্রম ও শিক্ষার উপর। আগামী মঙ্গলবার রাত ৮টায় আমাদের দ্বিতীয় সভাটি অনুষ্ঠিত হবে যা মূলত আভ্যন্তরীন কর্মশালাকে নিয়েই হবে। সভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে যেহেতু এর উদ্দেশ্যই হচ্ছে আমাদের নিজেদেরকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষিত করার জন্য। আমি আশা করছি আপনি বা বিডিএল এর প্রতিনিধি এতে উপস্থিতি থাকবেন।

        বুধবার আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছিলাম যেখানে আমরা জনসম্মুখে বিবৃতি দেই যে পূর্ব পাকিস্তানের ত্রাণ এবং শিক্ষাগত প্রচেষ্টাতে প্রভাব রাখাটা মিল্বোকীর পি.এ্যা.ক. এর কেন্দ্রীয় প্রচেষ্টা হবে এবং এর জন্য কমিউনিটির নিকট সহায়তার দাবী করা হচ্ছে। এ নিয়ে শুধুমাত্র একটি টিভি ষ্টেশনই ভালমতো প্রচার করেছে আর সেটি হচ্ছে- চ্যানেল ৬।

        বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন  অব কানাডা

        টরন্টো

        ‘বাংলাদেশে সংকটকাল’ শীর্ষক একটি আলোচনাসভা  ১৯৭১ সালের ৫ই আগষ্ট সন্ধ্যা ৭:৩০ এ বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন, টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বক্তারা ছিলেনঃ

        ১। জনাব এন্ড্র্যু ব্রিউইং- কানাডিয়ান সংসদ সদস্য,

        ২। জনাব ফ্রেডেরিক নস্যাল- টরন্টো টেলিগ্রামের সহযোগী সম্পাদক,

        ৩। জনাব পল ইগ্নেট্যিফ- টরন্টো ইউনিসেফের পরিচালক,

        ৪। জনাব লেসলি স্মিথ- খাদ্য ও ঔষধ অধিদপ্তর, জাতীয় স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বিভাগ।

        জনাব ব্রিউইং হচ্ছেন সেই তিনজন কানাডিয়ান সংসদ সদস্যের একজন যারা সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তান সরকারের আমন্ত্রণে ভারত ও বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি বারংবার নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এই বলে যে, পূর্ব বাংলায় কোন প্রকারের রাজনৈতিক সমাধান মানেই হচ্ছে জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে এমন যা গত ডিসেম্বরের নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছিল।

পাতা নংঃ ৫২০

জনাব ইগ্নেট্যিফ ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের ব্যাপক ত্রাণের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন যাকে তিনি ‘সংকটের ভিতরে সংকট’ বলে অভিহিত করছেন। শরণার্থীরা যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিনাতিপাত করছে তার চাক্ষুষ বর্ণনা দেন জনাব স্মিথ। একটি তথ্যভিত্তিক চলচ্চিত্রও প্রদর্শিত হয় যা জনাব স্মিথ ধারণ করেছিলেন।

        ক্যালিফোর্নিয়াঃ

        জোয়ান বায়েজ বেনিফিট কনসার্ট

                বাংলাদেশের ৭০ লক্ষ শরণার্থীদের উপকারের জন্য জনপ্রিয় লোকসঙ্গীত শিল্পী জোয়ান বায়েজ ২৪ শে জুলাই স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি গানের কনসার্ট প্রদর্শন করেন। এই কন্সার্টটিতে সান ফ্রান্সিসকো বে এলাকা হতে প্রায় ১২,০০০ এরও অধিক লোক উপস্থিত হয়েছিল। এই কনসার্টটি শীমতি রানু বসু এবং স্ট্যানফোর্ড ইন্ডিয়া এ্যাসোসিয়েশন হতে অন্যান্যরা মিলে আয়োজন করেছিলেন।  আমেরিকান লীগ ফর বাংলাদেশ এর সদস্যরা, পিউপলস ইউনিয়ন এবং ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ নন-ভায়োলেন্স এই কনসার্টের প্রচার ও অনুষ্ঠিত করার জন্য প্রচন্ডভাবে সাহায্য করেছিলো।

        এই কন্সার্টে, আমেরিকান লীগ ফর বাংলাদেশ এর সদস্যরা এবং স্ট্যানফোর্ড ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন ৮,( ) এরও অধিক প্রচারপত্র বিলি করেছিলেন যা বাংলাদেশের গণহত্যায় ইউনাইটেড স্টেইটসের দুষ্কর্মের সহকারিতাকে প্রকাশ করে দিয়েছিল। প্রচারপত্রটি ইউনাইটেড স্টেইটসের সাম্প্রতিক অস্ত্রের চালান যা নিষ্ঠুর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল এবং প্রশাসনিকভাবে তা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্ধারিত নীতির প্রতি দিকপাত করেছিল। মিসেস জোয়ান বায়েজ হ্যারিস প্রশাসনের এই অনৈতিক এবং লজ্জাজনক নীতির প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ইসলামাবাদের দমনমূলক শাসনের সকল প্রকারের সাহায্যার্থ বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে কনসার্টে উপস্থিত ১২,০০০ সদস্য শ্রোতাকে পিটিশন স্বাক্ষর করতে বলেন। শ্রোতাদের কয়েক হাজার এই পিটিশনে স্বাক্ষর করেন।

        নিউইয়র্কঃ পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ

                পূর্ববাংলার বন্ধুবর্গ (নিউইয়র্ক) আগষতের ১৪ তারিখে বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকার সমন্বয়ে নিউইয়র্কে এক বিশাল র‍্যালির সংগঠিত করে। এই র‍্যালিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি অংশগ্রহণ করেছিল যা ইউ.এন. প্লাজায় দিনের মধ্যভাগ হতে দুপুর ৩টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই র‍্যালির আহ্বায়ক ছিলেন বাংলাদেশ লীগের ডঃ আলমগীর, পশ্চিম পাকিস্তানের দুই বিদ্বান ডঃ ইকবাল আহমেদ এবং ইজাজ আহমেদ এবং কোয়েকার প্রোজেক্টের জনাব এস.জে. এ্যাভেরি।

        পরবর্তীতে ছোট ছোট বিভিন্ন কর্মশালা দ্বারা বাংলাদেশের সংকট নিয়ে বক্তৃতা প্রদান করা হয়।

        ১৯৪৭ সাল হতে পাক-বাংলাদেশ বিরোধ নিয়ে ঐতিহাসিক সারসংক্ষেপ সম্বলিত আশি পৃষ্ঠার একটি পুস্তিকা অন্যান্য প্রচার পত্রের সাথে র‍্যালিতেই পূর্ববাংলা বন্ধুবর্গ দ্বারা বিতরণ করা হয়। পূর্ববাংলা বন্ধুবর্গ (নিউ ইয়র্ক) এর ঠিকানা হচ্ছেঃ ১৩ ই, ১৭তম সড়ক, ৭ম তলা, এন.ওয়াই., এন.ওয়াই. ফোন- (২১২) ৭৪১-০৭৫০।

        ঘোষণাঃ

                (১) আমরা বাংলাদেশের জরুরী মঙ্গল আহ্বান প্রচারপত্র এই সংবাদপত্রের সাথে নমুনা অনুলিপি হিসেবে সংযুক্ত করছি। অনুগ্রহ করে আমাদের জানান আপনি আপনার এলাকায় কতজন সম্ভাব্য দাতার নিকট তা বিলি করতে চান।

পাতা নংঃ ৫২১

                (২) “কেন বাংলাদেশ” পুস্তিকার জন্য যারা আমাদের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছেন, তারা অনুগ্রহ করে আমাদের আরও এক সপ্তাহ সময় দিন যাতে তা আমরা আপনার নিকট পৌঁছে দিতে পারি।

                (৩) অনুগ্রহ করে আপনার গোষ্ঠির কার্যক্রমের রিপোর্ট আমাদের সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য পাঠান। সেই সাথে আপনাদের স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টের ‘পেপার কাটিং’ও পাঠান।

                (৪) “বাংলাদেশে পাকিস্থানের গণহত্যা বন্ধ কর” বৃহদাকার স্টিকার আমরা প্রচুর পরিমাণে পুনঃমুদ্রিত করেছি। বাংলাদেশ গোষ্ঠিকে সমমূল্যমানে আমরা তা যোগান দেবো।

.

13.173.522-526

শিরোনাম সূত্র তারিখ
উপমহাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে লিখিত খোলা চিঠি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস কালচারাল অরগানাইজেশান আগস্ট, ১৯৭১

প্রেসিডেন্ট নিক্সনের প্রতি খোলা চিঠি

ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস কালচারাল অরগানাইজেশান

আগস্টের চার তারিখের বক্তব্যে আপনি পাকিস্তানে সহায়তা প্রেরণ অব্যাহত রাখা সমর্থন করেছেন, সাম্প্রতিক বক্তব্যের বিরুদ্ধে নিম্নসভার সিদ্ধান্তকে গ্রাহ্য করেননি এবং পাকিস্তানি কূটনীতিকদের যারা কিনা ইসলামাবাদ সামরিক জান্তার ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের প্রতি ঘৃণা জানিয়ে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন জোরালো প্রতিবাদকে আমলে নেননি, এমনকি এইদেশে ও বিশ্বজুড়ে নৈতিক গণ বিক্ষোভের  বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।

        এই বিষয়ে প্রশাসনের ঋজু অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, আপনি পাকিস্তানীদের সাহায্য প্রদানের সপক্ষে আপনার বক্তব্যের একজন সমর্থক দাড় করাতে পারেননি, এমনকি আপনার নিজের দলের পক্ষ থেকেও গতদিন বৈদেশিক সাহায্য বিল সংক্রান্ত আলোচনায় এই সহায়তা বন্ধের প্রস্তাব উথাপন করা হয়েছে। এই অসমর্থিত সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা কি এটাই অনুমোদন করে যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করে শাসন বিভাগ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে অপ্রীতিকর কাজ সম্পাদন করছে?

        আইন পরিষদের আপিলের প্রেক্ষিতে এই বিষয়ে সবাই অবগত হলেও চলুন আমরা ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করি। কোনভাবেই এটি কোন সাধারণ বিষয় নয় যেটি আপনার বক্তব্যে উঠে এসেছে এমনকি মিস্টার কিসিংঞ্জারের প্রখর প্রজ্ঞার উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়।আমেরিকা এবং বিশ্বের বিবেক পূর্ব বাংলার নারকীয় অত্যাচারে পদদলিত হয়েছে এবং এই মামলার জন্য উন্মুক্ত আদালতে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। অসংখ্য পরিবারের এই সংকটজনক অবস্থায় চোখ বুঝে থাকা ও সবার অলক্ষে নিষ্ঠুর অঞ্চলে অস্ত্রবাহী জাহাজ প্রেরণ আমলাতান্ত্রিক ভুল সিদ্ধান্ত ও চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দেয়।

বিপুল নৈতিকতার দায় ছাড়াও, আপনি বক্তব্যে বলেছেন এই সাহায্য প্রত্যাহার করা হলে পূর্ব পাকিস্তানের রিফিউজি সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করবে, জাতিসংঘের সাথে পাকিস্তানের কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে,’ এবং বর্তমানে এটি খাদ্য সরবরাহের কাজে নিয়োজিত থাকবে, এবং পাকিস্তানের প্রতি এই আনুকূল্য ‘ভারতীয় উপমহাদেশের সংগঠিত ঘটনাবলীকে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যে কাজ করবে’ যা কিনা প্রতারণাপূর্ণ।

        পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক সমস্যার স্থায়ী মিমাংসা পাশ কাটিয়ে রিফিউজি সমস্যা নিরসনের কোনমতেই সম্ভব নয়। এবং কোন রাজনৈতিক ফয়সালা সম্ভব নয় যেখানে এই সত্য অস্বীকার করা হয়েছে যে, মনস্তাত্ত্বিক, নৈতিক, বাস্তবিকভাবে পূর্ব বাংলার মানুষ পাকিস্তানীদের গণহত্যা, স্বৈরাচার এবং নিপীড়নকে সহ্য করে তথাকথিত স্থুল বানোয়াট ঐক্য বজায় রাখবে। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণ দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির ধারক যারা হাজার মাইল দূরে বিভক্ত এবং সেই বিভেদ অকল্পনীয়ভাবে বেড়েই চলেছে!

        বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ১৭ এপ্রিল “বিশ্বের মানুষের প্রতি” নিবেদনে বলেন, পাকিস্তান এখন মৃত এবং অসংখ্য লাশের স্তূপে চাপা পড়েছে। হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে সৈন্যবাহিনী বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণের মধ্যে অমোচনীয় দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। পূর্বপরিকল্পিতভাবে গণহত্যার সূচনা করে ইয়াহিয়া নিজেই পাকিস্তানের কবর খুঁড়েছেন। তার ০১১ নির্দেশেই পেশাদার খুনিরা ‘জাতির ঐক্য রক্ষার নৃশংসভাবে মানুষ হত্যার বৈধতা পেয়েছে। তাদের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও হিংস্র কর্মকাণ্ডে মানবতার লেশমাত্র ছিল না। পেশাদার সৈন্যরা উপরের মহলের আদেশ পেয়ে মিলিটারি নিয়মকানুন লঙ্ঘন করে সভ্যতার ইতিহাসের চরম পাশবিকতার সাথে শিকারি পশুর মত খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসে নিয়োজিত হয়। তাদের এই কর্মকাণ্ডের ফলে বোঝা যায় যে দুইটি ভিন্ন রাষ্ট্রের চিন্তা ইয়াহিয়া ও তার দোসরদের মনের গভীরে প্রোথিত ছিল, কেননা নিজের দেশের মানুষের প্রতি কেউ কখনই এরকম নির্মম আচরণ করতে পারে না।

        জনাব প্রেসিডেন্ট, আপনি কি দেখতে পারছেন না নৈতিকভাবে এই ভাবনা বা ধারণা কতটা ভোঁতা যে, এতকিছু সহ্য করেও জনগণ পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে এবং নিজেদের হিংস্র পশুদের দয়ার উপর ভরসা করবে যারা কিনা নিষ্ঠুর, নির্দয়ভাবে তাদেরকে নিপীড়ন করেছে?এই অরাজকতার রাজত্বের সাড়ে চার মাস গত হয়েছে, আক্রান্ত পক্ষের কূটনীতিকরা আমাদের সকলের চেয়ে ভালোভাবে সামগ্রিক  ঘটনাবলীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়ে ঘোষণা করেছেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সামরিক বা অর্থনৈতিক সম্পর্কের প্রশ্নই আসে না। এই  সহযোগিতাই এই গণহত্যাকে বৈধতা প্রদান করে।

        প্যাত্রিক হেনরির, ‘আমাকে হয় স্বাধীনতা দাও, নয় মৃত্যু’শুনে যারা বড় হয়েছি তাদের জন্য এটি মেনে নেওয়া খুব কঠিন যারা নিজের চোখে বাবা-ভাইকে হত্যা হতে দেখেছে, বোনকে গণধর্ষিত, ঘরবাড়ি জ্বালানো, কলকারখানা, প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তাদের নেতাদের নিয়মতান্ত্রিকভাবে হত্যা করা হয়েছে, এই দুঃশাসন থেকে তারা মৃত্যুবরণকে শ্রেয় গণ্য করবেন। জাতিসংঘের কতিপয় পর্যবেক্ষকরা কি সেগুলো দেখেছেন? এরকম ভয়ঙ্কর শাসনের অধীনে যেতে বলার দুঃসাহস আপনার হবে তো?

আমেরিকার সামরিক বাহিনীর সহযোগীর বিরুদ্ধে কি কিছুই করা হবে না যতই তারা অকথ্য নির্যাতন করুক? আপনি বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানের সরকারের উপর কোন চাপ প্রদান করব না। (এর মানে কি আপনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, আপনি বাংলাদেশকে চিনেন এবং অবচেতনভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারকে স্বীকার করে নিয়েছেন?) আপনি আরও বলেছেন, ‘তাহলে সেটি হিতে বিপরীত হবে। এই বিষয়ে আমাদের ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা করতে হবে।’

        এই দোসরদের কর্তৃক হাজার হাজার মানুষ হত্যা, মানবতার চরম অবমাননা স্বত্বেও আপনারা সকল ধরনের দায়-দায়িত্ব সচেতনভাবে এড়িয়ে যাবেন? এভাবে বিচার করলে, চায়না সমর্থন লাভ করতে পারে, আমাদের বদলে বন্ধু হিসেবে তাদের নিকট ট্যাঙ্ক, জেট, অগ্নি প্রক্ষেপক, মেশিনগান  ইত্যাদি আনুগত্য লাভের জন্য কাজে লাগানো হতে পারে যার মাধ্যমে কমুনিজমের অবাধ প্রবাহ প্রতিহত করা সম্ভব হবে!

  আপনি কি গণহত্যা বন্ধের জন্য আপনার প্রভাবকে আসলেই কাজে লাগিয়েছেন আপনার কথিত ‘ব্যক্তিগত পর্যায়ে’ যেমনটি আপনি চার মাস পূর্বে উল্লেখ করেছিলেন? যদি করে থাকেন, তাহলে বুঝতেই পারছেন আপনার মনোনীত পন্থাটি কতটা কার্যকরী! এটি কল্পনা করাও কঠিন যে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান কর্তৃক মানবতার বিরুদ্ধে কত অসংখ্য অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এর চেয়ে খারাপ শাসন আর কি হতে পারে? আপনি বরং প্রভাব বিস্তারের জন্য ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করুন জনাব নিক্সন,

         যদি না করেন, তাহলে আপনার বৈদেশিক নীতির অসাধারণ নৈতিক ও মানবিক তাৎপর্য থাকলেও বাংলাদেশের সাথে ভুল সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এছাড়াও অভিনব শান্তি প্রণেতা হিসেবে স্মরণীয় হওয়ার স্বপ্নের কি হবে? বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বৈদেশিক নীতিকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখার সময় কি হয়নি? এখন কি সময় নয় পেশাদার শক্তির রাজনীতির ময়দানে ঘুঁটি উল্টানোর? আত্ম অহমিকায় অন্ধ হওয়া বিশ্বশান্তির পক্ষে অন্তরায়। পেন্টাগন পেপার উন্মোচন করেছে যে, যথাসময়ে নীতিনির্ধারক যারা মানুষের জীবন ও ভাগ্য নিয়ে পরিকল্পনা করে তাদের সতর্ক করা হলে সেই বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা যেত। তাদের চাতুর্যপূর্ণ পদস্থলনে কতইনা ভাল হত! অধিকাংশ সময়ই তারা এতই জ্ঞানী, তথ্যসমৃদ্ধ যে প্রজ্ঞার জন্য তাদের ঘাটতি থেকে যায়। এই কারনেই মগজ ধোলাইকারিদের মানুষ অবিশ্বাস করে।

        জনতার সম্মতিই একমাত্র একটি সরকারের অস্তিত্বকে বৈধতা প্রদান করে। এই হিসেবে ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান, তাদের বাহিনী এবং সাঙ্গপাঙ্গরা পূর্ব বাংলায় থাকার বৈধতা হারিয়েছে। মি প্রেসিডেন্ট, আপনি যদি অবিশ্বাস্যভাবে সন্ত্রাসের এই রাজত্ব কায়েমের বিরুদ্ধে একটি শব্দও জনতার সম্মুখে উচ্চারণ না করেন বরং উল্টো প্রতিরক্ষা ও আক্রমণের মাধ্যমে ঐক্য বজায় রাখতে চান, কংগ্রেসের সমালোচনা স্বত্বেও তখন সঙ্কটের সময় আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়। আমাদের নতুন ১৮-২৫ বয়সি ভোটাররা কি ভাববে এব্যাপারে?

এখন আসুন ইয়াহিয়া খানের অসাধারণ ঘোষণায়, যেখানে তিনি বিশ্বের কাছে বলেন আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারীদের হাতে ১০০,০০০ বাঙ্গালী নিহত হওয়ার দরুন তিনি মার্শাল আইন জারি করতে বাধ্য হয়েছেন যাতে করে এই রক্তাক্ত অভ্যুথানের অবসান ঘটে! এই বিশাল মিথ্যার কারণ খুবই সরল। যেখানে বিদেশি এবং পাকিস্তানী সাংবাদিকরা পঁচিশে মার্চের রাতের পর থেকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের রিপোর্ট করতে ব্যর্থ হন, সেখানে ইয়াহিয়া খান নিজেই কিভাবে সে গল্প বিশ্বের কাছে তুলে ধরেন, প্রতিবার উপস্থিত থেকে, সেই দিনের পূর্ব পর্যন্ত, আওয়ামীলীগের শেখ মুজিবুর রহমানের আলোচনা চলাকালীন জনসমক্ষে তিনি ‘পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন? আমরা এখন জানি যে, ইয়াহিয়ার আলোচনা চালানোর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল যে সেনাবাহিনীকে গণহত্যার জন্য প্রস্তুতির সময়ক্ষেপণ করা, অথচ সম্প্রতিই পাকিস্তানআনুষ্ঠানিকভাবে মানবাধিকার রক্ষার সার্বজনীন ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে!

        একটি শঠতার কথা প্রচলিত আছে যে পাকিস্তান দুইবার(১৯৪৭ এবং ১৯৬৫) আত্মরক্ষার খাতিরে আক্রমণ করেছে, বিশেষ করে কম্যুনিস্ট আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে। এরকম সহযোগী কি আমেরিকা কিংবা ‘মুক্ত বিশ্বের’ নিরাপত্তার জন্য কোন অবদান রাখতে পারে? যদি মানুষ হত্যা, গণতন্ত্রে বিশ্বাসঘাতকতা, মানবতার সকল সীমা লঙ্ঘনের কোন রাজত্ব থাকলে এই সেই রাজত্ব, যেটি মি প্রেসিডেন্ট নিক্সন আপনি সমর্থন করছেন। যদি কোন শাসক দ্বারা তার নিজের জনগণ অপশাসনের শিকার হয়, তাদের রক্ষা করতে অপারগতা জানায়, স্বৈরাচারী হয়ে অত্যাচার করে তাহলেও কি ‘আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য’ এই ভিত্তিতে সমর্থন করবেন?

.

নৈতিক বিষয়গুলো ছাড়াও, যদি আমরা সেনাবাহিনী এবং সিয়াটো হিসেবে গঠিত সামরিক জোট গুলোর তাদের গঠিত হওয়ার পর থেকে এই পর্যন্ত অন্যান্য সকল  উন্নতি বিবেচনা করি, তাহলে এইরকম একটি সময়ে পুনরায় এই প্রশ্নের সম্মুক্ষীন হওয়াই কি যুক্তিসংগত নয় যেঃ প্রশাসন কি শুধুমাত্র তাদের পুরানো অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করছে? ৭,৫০,০০,০০০ বাংলাদেশি  ও ৫৫,০০,০০,০০০ ভারতীয় এবং আমেরিকান ও বিশ্ব নৈতিকতার মানদন্ডের বিরোধীতার ঝুঁকি নিয়ে আপনি এর আনুগত্য পাওয়ার জন্য যে মুল্য দেবেন পাকিস্তান কি আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার যথার্থতা প্রমান করার মত গুরুত্বপুর্ণ? তাহলে এক্ষেত্রে  “মানবসমাজের অভিমতের প্রতি যথাযোগ্য সন্মান” কি নির্দেশ করে? এবং যদি একজনকে রাজনৈতিক সদস্যের থেকেও বেশি কিছু হতে হয় তাহলে এরকম পরিস্থিতিতে একজনের প্রতিজ্ঞার প্রতি যে বিশ্বাস এবং একজন খৃস্টান হিসেবে যে মান বজায় রাখাতে হয় তা কি নির্দেশ করে?

        আর একটি গুরুত্বপুর্ণ প্রশ্ন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আপনি এবং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উভয়ই আমাদেরকে এই আভাস দিয়েছেন যে, বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে চায়না যা করবে তা আপনার ওপর ভীষন চাপ সৃষ্টির আশংকা আছে, তাই নয় কি? আপনি ধরে নিন যে যদি, উদাহরন সরূপ, অন্য কোন যুক্তিসংগত সমাধান না থাকায়, বাংলাদেশের জনগণের তাদের নিজেদের সরকার গঠন সম্ভব করতে তার সীমিত অভিপ্রায়ের ঘোষণা দিয়ে এবং লক্ষ লক্ষ হতভাগ্য শরনার্থীদের স্বাধীন ভাবে নিজের দেশে ফিরে যেতে সাহায্য করতে ভারতকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য পরিচালিত করা হত, তাহলে চীন তাতে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

        স্পষ্টতই আপনি এবং জনাব কিসিঞ্জার অন্যান্য বিষয়ে তার পান্ডিত্যপূর্ণ দক্ষতা থাকা সত্বেও পীকিং শাসনব্যাবস্থার ধরন সম্পর্কে সাধারন বিপদজনক ধারনা পোষণ করেন। এটা ব্যাপকভাবে অনুমিত যে মাও এর শাসনব্যাবস্থা রাশিয়াকে অনুসরন করে, এমনকি নির্দয় নিপীড়নের জন্য প্রস্তুতির স্ট্যালিনবাদী প্যাটার্ন, তথাপি আক্রমনেও।

 কিন্তু মাও এর পন্থা নিম্নোক্তভাবে বোঝার জন্য প্রচুর দলিলপত্র  আছেঃ ১৯২০ সালে তার আন্দোলনের শুরু থেকেই, চুড়ান্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লবে, এবং বর্তমান নতুন কূটনীতিতে বিশ্বের চৈতন্য আনতে, মাও তার লোকেদের পুঙ্খানুপঙ্খভাবে শিখিয়েছেন যে, একদিকে হয়ত যে শাসনব্যাবস্থার বিরোধিতা তারা করে তাদেরকে সেই শাসনব্যাবস্থার মোকাবেলা করতে হবে, তা সেটা যতই একটি সাময়িক কৌশলের ব্যাপার হোক না কেন, অপরদিকে “যে-ই সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করে বা বিপ্লব ঘটায় তার বহিঃসমর্থন থাকে” যেমনটা ১লা আগস্ট সামরিক দিবসে পীকিংয়ের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে।

সংগ্রামী জনতার স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য কমিউনিস্ট চীনের একটি বিশাল ইতিহাস আছে, কিন্তু সেটা হয়েছে যখন নিজের সীমান্ত হুমকির সম্মুখীন এটা বোঝার পর তার উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশ এবং পরবর্তীতে ভারতের সাথে তার সীমান্তে কিছু বিতর্কিত এলাকায় দখল নেওয়ার পরেও অনেকটা আক্রমনাত্মক পদক্ষেপের মাধ্যমে। পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশ জটিলতায় তার আচরন বিবেচনা করলে, যখন চীন বস্তুত ভারতকে “পূর্ব বাংলা থেকে সরে দাড়ানোর” জন্য হুমকি দিচ্ছে, এই অবস্থায় ভারতের বিরুদ্ধে ইয়াহিয়া খানকে সমর্থন করে, তিনি আদর্শিক, নৈতিক, রাজনৈতিক আত্মঘাত ছাড়া একটি অধিকার পরিপন্থি উদ্ধত শাসনব্যাবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে খুব বেশি দূর যেতে পারবে না। আমাদের এখন প্রয়োজন দক্ষিন এশিয়া উপমহাদেশর চীনা আক্রমনকে ভয় না পাওয়া। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মাও এর কৌশলগত অবস্থানের অর্থ হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশকে মুক্ত করা থেকে ভারতকে যুদ্ধে প্রতিহত করতে চান, যাতে শুধুমাত্র পূর্ব বাংলা নয় পশ্চিম বাংলাও মরিয়া হয়ে ওঠে এবং আর একটি ভিয়েতনামে পরিনত হয় যার জন্য ক্ষেত্র তৈরী আছে, যেমনটা “ চীনের কৌশল, একটি নতুন ভিয়েতনাম” এ লেখক চিত্রিত করেছেন।

যখন বাংলাদেশে সেই মরিয়া অবস্থা আসবে, এবং পাকিস্তানের অনুকূলে ওয়াশিংটনের অবস্থান এবং দিল্লির মারাত্মকভাবে বাংলাদেশ পলিসিকে বিলম্বিত করন সরাসরি এতে অবদান রাখবে- বিশৃঙ্খলাকে নিজেদের কাজে লাগাতে ওস্তাদ পশ্চিম বাংলার সুসজ্জিত ও শক্তিশালী প্রো-চায়না কমিউনিস্ট এবং “উত্তরপূর্ব আগ্নেয়গিরির” অন্যান্য অংশগুলো দেখবে যে কমিউনিস্ট চীন যেভাবে ভিয়েতনাম সংগ্রামকে ব্যাপকভাবে সহায়তা করেছে সেভাবে তাদেরকেও সহায়তা করছে, এবং মাও তখন ইয়াহিয়া ও তার সংগঠনকে ত্যাগ করবে।

        এখনকার জন্য এটা যথেষ্ট, কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি আপনার এবং জনাব কিসিঞ্জারের উচিত ছিল চীন সংক্রান্ত বিষয়াবলি আরো গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করা এবং বোঝা যে আপনারা ভুল পথে আছেন, দক্ষিন এশিয়ার দাবা খেলায় আপনি নিঃসন্দেহে ভুল ঘোড়াকে বাচানোর চেষ্টা করছেন। হেনরির কাছে পীকিং এর একটি “উত্থানের” মূল্য কতখানি? যদি আপনার বর্তমান কার্যকলাপের মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশের ব্যাপারটিকে দূর্বল করে দেন এবং দক্ষিন এশিয়ার আরো এক চতুর্থাংশ মানুষকে হুমকির মুখে ফেলে, চীনকে একটি নতুন ও আরো অবনত ভিয়েতনামকে উৎসাহ ও সমর্থন প্রদানে প্রলুব্ধ করেন, সেটা কি আমাদের বিশ্ব পরিবারে জাতিসংঘের একটি দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে প্রকৃত চায়নাকে দেখার প্রত্যাশাকে ভীষনভাবে ব্যাহত করে না?

        ভারতের বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে যাওয়াকে যুক্তিযুক্ত করার জন্য তিনি বাংলাদেশি জনগণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী শাসনের, যারা বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জাতি গঠন করবে তাদের ভয়াবহ ও ব্যাপক আগ্রাসনের প্রতি মারাত্মকভাবে দেরি করার পর একেবারে শেষে সাড়া দেবেনঃ ভারতের বিরুদ্ধেও আগ্রাসন, ঐতিহাসিকভাবে একটি সাধারন সীমানা লঙ্ঘন বা যুদ্ধের অন্যান্য গ্রহনযোগ্য কারনগুলোর বেশিরভাবের থেকে অনেক বেশি গুরুতর। সর্বোপরি এই ইচ্ছাকৃত গণহত্যার আগ্রাসন সভ্যতা, শালীনতা এবং মানবতা ও বিশ্বাসযোগ্য মানব সম্পর্কের চাদরে একটি ভয়াবহ আক্রমনে পরিনত হয়েছে, বর্বর অবস্থার থেকেও একটি খারাপ অবস্থায় প্রত্যাবর্তন।

        হাম্পটি ডাম্পটি(একটি রুপকথার চরিত্র, এখানে ব্যাঙ্গার্থে ব্যবহৃত) যা কিনা পাকিস্তান- দুইটি ভিন্ন জাতির জন্য অদ্ভুত রাজনৈতিক কৌশল, হাজার মাইল দূরত্বে অবস্থিত এবং শুধুমাত্র একই ধর্মের কারনে একত্রীত বলে অনুমিত, একটি সম্পর্ক যা ৭৫০০০০০০ কোটির সংখ্যাগরিষ্ট পূর্ব পাকিস্তানকে বৃটিশ অধীনাধীন থাকা অবস্থার থেকেও নিম্ন ওপনিবেশিক মর্যাদা দিয়েছে, এটা হাম্পটি ডাম্পটিকে আবার জোড়া দিয়েছে- এমনকি পেন্টাগণ ও রাষ্ট্রীয় বিভাগের সাহায্য ছাড়াই।

        না, আপনি রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান না করে শরনার্থী বা সাহায্যের সমস্যার সমাধান করতে পারবেন না। এটা মূলত কঠিন সত্য যা থেকে প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কত্বকে একটি নতুন নীতির রূপ লাভ করতে হবে।

জ়ে হোমেস স্মিথ

আন্তর্জাতিক ছাত্র সাংস্কৃতিক সংগঠন

কক্ষ নং ৪১১ এস্কেল হল

পশ্চিম ৬০৫, ১১৫নং সড়ক

নিউ ইয়র্ক। নিউ ইয়র্ক ১০০২৫

.

13.174.527-529

শিরোনাম সূত্র              তারিখ
বাংলাদেশের অনুকূলে জনমত সৃষ্টিকারী মহলের উপর নির্দেশাবলী ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ সেপ্টেম্বর ১৬, ১৯৭১

                                     তদবিরকারিদের জন্য নির্দেশাবলী (সংশোধিত ০৯/১৬/৭১)

১. অফিসে হিল এনকাউন্টারস তৈরির জন্য নিম্নোক্ত তথ্যাদি ব্যবহার করার অনুমতি দেয়া গেল।

     ক. নিম্নকক্ষ এবং উচ্চকক্ষের সদস্যদের সাথে আমাদের যোগাযোগের সংক্ষেপিত কার্ড  ফাইল।

     খ. বিভিন্ন সূচকীয় বিষয়ে তাদের মতামত প্রদানের নথিসমূহ।

     গ. তদবিরকারীদের জন্য কোকারদের পুস্তিকা।

     ঘ. অঙ্গরাজ্য, দল, অফিসের রুম নম্বর এবং টেলিফোন নম্বরসহ কংগ্রেস সদস্যদের বর্ণমালা অনুসারে সাজানো তালিকা।

     ঙ.  বৈদেশিক সহায়তা আইনে সাক্সবে-চার্চ সংশোধনী এবং গালাঘার সংশোধনীর কো-স্পন্সরদের তালিকা এবং নথিপত্র।

     চ. সংসদীয় তথ্যসংবলিত পঞ্জি (জীবনচরিত, পরিষদ ইত্যাদি)।

     ছ.সংবাদপত্রের নথি যেগুলোতে সংসদ সদস্যদের এলাকার বিভিন্ন সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, সংবাদ থাকতে পারে।

      জ. পুনর্মুদ্রিত নথিপত্র যেগুলোতে দরকারি তথ্য আছে এবং সংসদ সদস্যদের অফিসে পাঠানো বিলিপত্রের জন্য উপযোগী ।

২. ভবন এর অবস্থান মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবেন (অফিস ভবন অনেকগুলো এবং আকারে বড়)।

   ৩. সময়ের পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যেই উপস্থিত হওয়ার মত সময়ানুবর্তীতা দেখানো উচিত। যদি দেরি হয় তবে একটা চটপটে ব্যাখ্যা (ভাল হয় অ্যাপয়েন্টমেন্টের আগেই ফোনে জানানো নাহলে পৌছে যত তাড়াতারি সম্ভব) দেরিতে দেখা করার চেয়ে বেশি গ্রহণীয় হবে। ফোনকলের মাধ্যমে দরকার হলে কাজের সময় আবারও ঠিক করে নেয়া যায়।

   ৪.সংসদসদস্য অথবা সিনেটরকে প্রথম দেখাতেই পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা এবং সাক্সবে-চার্চ (গালাঘার) সংশোধনী সম্পর্কে বলেন যদি সে দেখা করার সময় দিতে না পারে।তারপর তার সাথে কথা বলতে চাইবেন যে বৈদেশিক বিষয়ে ওই সংসদসদস্যের মতামত এর বিষয় দেখভাল করে।

   ৫. যে ব্যক্তির সংগে কথা বলবেন তার নাম(নামের বানান জেনে নিতে লজ্জা করবে না) এবং পদমর্যাদা জেনে নেবে এবং তা প্রতিবেদনে (প্রশ্নাবলী) অন্তর্ভুক্ত করবেন যাতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়।

   ৬. যার সংগে কথা বলবেন তার কাছে নিজের পরিচয় সংক্ষেপে দিয়ে দেবেন যে যুক্তরাষ্ট্রের কোথ্থেকে, কি করছেন (যেমনঃ ভার্সিটিতে শিক্ষকতা),কোন সংসদসদস্যর এলাকা অথবা সিনেটরের কেটের ভোটার এসব তার কাছে পরিস্কার করুন (সে যাতে বুঝতে পারে আপনি .. …  সংখ্যক ভোটার তার পক্ষে নিতে পারেন)।

   ৭. সংসদসদস্য অথবা ঐ ব্যক্তি পূর্ব পাকিস্তান কিংবা বৈদেশিক সহায়তা বিলের সাক্সবে-চার্চ সংশোধনীর বিষয়াদির সাথে কতটা ঘনিষ্ঠ তা স্টাফ সদস্যদের জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে।বিবেকবান কর্মকর্তাগণ সময় পেলে অকপট, বুদ্ধিমান এবং সংক্ষেপে বলতে পারা লোকের কাছে কিছু জানার সুযোগ কাজে লাগায়।এছাড়া কর্মীদের বাইরে যোগাযোগ বহুল শ্রমসাধ্য, তাই তদবিরকরিগণ তাদের তথ্যের মূল্যবান উৎস, কখনো কখনো একমাত্র উৎসও বটে।এভাবে তাদের কাছে কিছু দেয়ার মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করা যাবে, তাদের অনুগ্রহে নয়।তাদের জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করার পর তাদের কাছে পাকিস্তানের ‘গৃহযুদ্ধে’ যুক্তরাষ্ট্রের কেন নিষ্ক্রিয় অবস্থান গ্রহন করা উচিত তা ব্যাখ্যা করবেন।

   ৮.’সাক্সবে-চার্চ (গালাঘার) সংশোধনী-না’ এটাকে সিনেটর সমর্থন করবে কিনা জিজ্ঞাসা করো, কারণ ভবিষ্যতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিবর্তিত হলেও এটা তাকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রাখতে চাইবে।বেশিরভাগ মানুষই বাংলাদেশের দুঃখভারাক্রান্ত অবস্থার প্রতি সমব্যথী ;এছাড়া অন্য কোন কারণেও তারা বিলটির বিপক্ষে ভোট দিতে পারে।যদি ওই ব্যক্তি বিরুদ্ধাচরণ করে বা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে না চায় তবে জিজ্ঞাসা করো কেন।এটা কোন হতবুদ্ধিকর অবস্থায় ফেলে দেয়ার মত কোন প্রশ্ন নয় কারণ কংগ্রেস সদস্য এবং তাদের কর্মকর্তাগণ এরকম সমালোচনামূলক বিষয়ে তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য তৈরি থাকেন।ততই তাদের মতে আনতে প্ররোচিত করা যাবে যখন তাদের আপত্তির বিষয় সম্পর্কে জানা যাবে।

আমাদের অধিকতর কাজ করতে হলে কি কি অবস্থান নেয়া হয়েছে তা অবশ্যই জানতে হবে।তাদের মতভেদ এবং উদ্বেগের ক্ষেত্রসমূহ সম্পর্কে আমাদের জানাতে হবে যাতে আমরা পরবর্তীতে তার কাছে যাওয়ার সময় প্রস্তুত থাকতে পারি।(প্রশ্নবিবরণীতে এসব মন্তব্য লিখে নিতে হবে। Your  recollections are……………….  shdst  if  noted  briefly  before  continuing  on  to  your  next  appointment.) যোগাযোগের ব্যক্তিকে মুখে বলে কিংবা লিখিত কোন তথ্য দিয়ে জানানো বা বোঝানোর চেষ্টা করাই বেশি কাজে দেবে।

   ৯. কংগ্রেস সদস্যের অবস্থান এবং সহয়তাকরী ব্যক্তির মতামতের মধ্যে নিশ্চিতভাবে পার্থক্য করতে হবে।

   ১০. বাংলাদেশের দুঃখজনক ঘটনায় সমব্যাথী হলেও অনেক সদস্যেরই বৈদেশিক বা প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত ব্যাপারে সরকারের অবস্থানকে সমর্থন করার বাধ্যবাধকতা থাকে কিংবা অন্য কোন বিষয়বস্তুতে আপত্তি থাকতে পারে।সেক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলির ব্যাখ্যা কাজে লাগতে পারে।

   ক. নিম্ন এবং উচ্চকক্ষের দ্বারা প্রণীত আইনসমূহের উদ্দেশ্যই হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রকে দুই পক্ষের এক পক্ষকে পক্ষপাতিত্ব করা থেকে বিরত রাখা যাতে এশিয়ায় আরেকটি গৃহযুদ্ধ (আমাদেরকে সাহায্যের সম্পৃক্ততা থেকে সরে আসা আরেকটি সম্ভাব্য ভিয়েতনাম সৃষ্টি করতে পারে) না বাঁধে।বিশেষ করে যখন সরকারের ভেতর ও বাইরের ওয়াকিবহাল পর্যবেক্ষক দ্বারা এক দেশের স্বাধীনতা অনিবার্য প্রমাণিত।

খ. আমলাগণ রাষ্ট্রপতিকে উপরের নীতিটাই গ্রহন করার জন্য প্ররোচিত করছে।কারণ সিস্কো অঙ্গরাজ্যের সহকারী সচিব বৈদেশিক সম্পর্ক পরিষদকে জানান যে পাকিস্থানের একত্রিত অবস্থায় টিকে থাকার সম্ভবনা ৫০% এর নিচে।

গ. The  only  ones  to  gain  in  the  present  can…………………..  are  Mao  tse-Tung  and chaos-  whereas……osers  will  be  U.S.,  India,  Russia,  and  moderate  democratic Awami League  leaders.

ঘ. এই অবস্থা লাখো শরণার্থীকে উত্তেজিত করে তুলছে যেটা ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থাকে আরো উস্কে দেবে এবং এর ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মদ্ধ্যে আরেকটি অনাবশ্যক যুদ্ধ বাধার উচ্চ সম্ভবনা আছে।

ঙ.সহয়তা প্রত্যাহার বিশেষ করে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রত্যাহার পূর্ববঙ্গের শরণার্থীদের চালানোর কাজ পশ্চিমবঙ্গের জন্য আর্থিকভাবে অনেক কঠিন হবে।

চ.এটা অনিশ্চিত যে পাকিস্তান আসলেই বন্ধুভাবাপন্ন মিত্র দেশ নাকি আমেরিকান সহায়তা লাভই তাদের উদ্দেশ্য। চীনের ক্ষমতা অতিমূল্যায়িত।এটা দেখা যায় তাদের স্বল্প পরিমাণ সাহা্য্যের প্রতিশ্রুতি এবং খুব বেশি কিছু দিতে না পারা থেকে (উত্তর ভিয়েতনামকেও তারা নামমাত্র সহয়তা দিয়েছিল)। পশ্চিম পাকিস্তান চীনের নয় তাদের নিজস্ব স্বার্থই দেখবে, যেমনটা তারা পূর্বে করেছিল।

ছ.পাকিস্তান গত গ্রীষ্মে পূর্বেকার ঋণের আদায়ের দায় আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে।এর সাথে আবার ৩১শে অক্টোবর ও এর পরের অনুদানের বকেয়া অর্থও চাপাতে চাচ্ছে। তাদের এমন জোর করে চাপানো অর্থনৈতিক সহয়তার দয় বাংলাদেশের উপর তাদের সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রমের পরিচয় বহন করে।তাই আমাদের উচিত সহয়তা কার্যক্রম চালিয়ে এই হুমকির পাশে না দাড়ানো, এবং ভালো অর্থনীতির পরিচয় দেয়া।

জ. বর্তমান সামরিক এবং অসামরিক শাসনব্যবস্থা চালু থাকলে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষণমূলক প্রত্যাশা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসও খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে অপব্যবহার করা থেকে বিরত রাখতে অপর্যাপ্ত হবে।গ্রামবাসীদের কাছে আকাশপথে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী পাঠালেও তা নিরপেক্ষ এবং কার্যকর ভাবে বন্টিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত  না একটি সঠিক এবং প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক নিষ্পত্তি অর্জন করা যাবে।ত্রাণের প্রয়োজনীয়তা কিছু পরিমাণে কমে গেছে কারণ মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগেরও বেশি পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।ভারতের সাথে সংযুক্ত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি কারণ পাকবাহিনী এখানেই বেশি ধ্বংসলীলা চালিয়েছে। তাই আমাদের ভারতের শরণার্থীদের জন্য ৪৮০ পিএল খাদ্যসামগ্রী পাঠানো জরুরি যাতে সীমান্তের ওপারেও কিছু খাবারের জোগান যেতে পারে।

১১.যদি সহায়তাকারী কোন কংগ্রেসসদস্য প্রণীত আইনটি কিংবা পাকিস্তানের অবস্থার ব্যাপারে আরও নির্দিষ্ট কোন তথ্য জানতে চান যেটা আপনি তাকে জানাতে পারছেন না, তবে সেটা অবশ্যই আমাদের জানাবেন। প্রশ্নাবলী সংবলিত বিবরণীতও এটা উল্লেখ করবেন যাতে ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাওয়া যায়। আপনি যদি আদৌ তথ্যটি জানাতে না পারেন তবে লক্ষ রাখবেন যেন তার কাছে এটা পরে পৌছায়।

১২.হিল অফিসের গোচরে যাওয়া উচিত এমন কোন তথ্য পেলে তার কপি অবশ্যই আমাদের কাছে পাঠাবেন।

.

13.175.530-534

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশকে সমর্থনদানের কারন ব্যাখ্যাঃ বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশকে সমর্থনদানের কারন

মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে বীভৎস নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে তা এখন সবারই জানা। –

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের মতে, পূর্ব বপাকিস্তান থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নয় মিলিয়ন ছুঁয়েছে। এখন পর্যন্ত খুন হওয়া বাঙালির সংখ্যা ৫০০০০ বা দুই মিলিয়ন আমরা যেটাই বিশ্বাস করি না কেন, এই গনহত্যার মাত্রা তুলনা করতে ভিয়েতনাম বা ১৯৫৬-৬৬ সালের ইন্দোনেশিয়ার গনহত্যার  কথা মনে করিয়ে দেয়।

এখানের এবং বাইরের জনপ্রতিনিধিরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন, অনেকেই তাদের অবিলম্বে সংযম প্রদর্শনের আহবান জানিয়েছেন এবং কেউ বলছেন যে তাদের সেই পরিবেশ তৈরী করতে হবে যেন শরণার্থীদের ফেরত যাওয়া সম্ভব হয়। জুনের শুরুতে পূর্ব পাকিস্তানে সফর করা বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল জানিয়েছে যে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর দৃশ্যমান এবং পারতপক্ষে উপস্থিতি বহুলাংশে হ্রাস না পেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে না। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে তেমন কিছুই বিবেচনা করা হয়নি।

আমি যেমনটি দেখছি, সাতটি কারণবশত বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করা উচিত।

        প্রথমত, এবং মূল ব্যাপার এটাই যে বাংলাদেশ এর আন্দোলনকে চাপা দেওয়ার অবিরত চেষ্টাটি কাঠের টুকরোর মতোই অর্থহীন হয়ে যাবে। সাম্প্রতিক ডিসেম্বরের স্বাধীন ও প্রতিযোগীতামূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন ১৬২টি আসনের ১৬০টিতেই জয়ী হয়, তখন দেখা গেছে যারা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পূর্ব পাকিস্তানে তাদের প্রবল জনসমর্থন আছে । এবং সামরিক বাহিনীর বাঙালী ইউনিটের প্রায় প্রতিটি মানুষ বিদ্রোহ করায়, সংক্ষিপ্ত ও তাৎক্ষণিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলনটিকে নস্যাৎ করার যে প্রচেষ্টা চলছিলো তা ব্যর্থ হয়েছে। তখন থেকেই ইয়াহিয়া খান বার বার বলছেন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা পাকিস্তান সংসদে আসনগ্রহনের মাধ্যমে তার শাসন ব্যবস্থায় সম্মত হয়েছেন, কিন্তু ১৬০ জনের মাত্র ২২ জন এই প্রস্তাবে সম্মত হয়েছেন।

        শেষ কয়েকমাসে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থান এর সুযোগ পেয়েছিলেন এমন কিছু স্বাধীন পর্যবেক্ষক এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে বিভিন্ন এলাকার সামরিক কর্তৃপক্ষ এখনো ভয়াবহ পাশবিক কর্মকান্ড চালানোকে প্রয়োজনীয় ভাবছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সিডনী শ্যানবার্গ, যিনি গত মাসের শেষ সময়টায় পাকিস্তানে অবস্থান করছিলেন, এর মতে ঐ এলাকার পঙ্গু অর্থনৈতিক অবস্থা, ভেঙে পড়া সরকার প্রশাসন, বাঙালি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গেরিলা আক্রমন,  সত্ত্বেও, ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্ষয়ক্ষতি এবং বিচ্ছিন্ন জনগন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে থাকা সত্ত্বেও তারা তাদের কাজেই অটল থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে।

এমতাবস্থায়, শরনার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত যাওয়া সম্ভব করতে তারা উপায় খুঁজছে- পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষের এমন নিশ্চয়তা শুধু মাত্র তাদের বালখিল্যতা কিংবা সত্য চাপা দেওয়ার কুটিল চেষ্টা হিশেবেই বিবেচিত হতে পারে । (সেপ্টেম্বর ২৩, ১৯৭১ নিউ ইয়র্ক টাইমস দেখুন)

        দ্বিতীয়ত, পূর্ব বাংলার স্বাধীন রাষ্ট্র আন্দোলন ইতিহাসকে সমর্থন করে। সেই পরিবেশ যা ১৯৪৭ এর পাকিস্তান তৈরীর মাধ্যমে চূড়ান্ত পরিনতি পেয়েছিল- মূলত ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের আতঙ্ক যে তারা হিন্দু-অধ্যুষিত স্বাধীন ভারতে বৈষম্য এবং নিপীড়ন এর শিকার হবে- তা যৌক্তিকভাবে একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দাবী তোলেনি। ১৯৪০ এর বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব, যেখানে উপমহাদেশ বিভাজনের ধারনায় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ অটল ছিলো,  বাস্তবে তাতে একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো দাবী করা হয়নি বরং সেক্ষেত্রে দাবী ছিলো, ‘ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলি ‘স্বাধীন রাজ্য গঠন’ করার জন্য দলভুক্ত করা উচিত’। কিন্তু, মূলত পশ্চিমা মুসলিম লীগের নেতারা বিগত বছরগুলোতে পূর্ব বাংলায় প্রচলিত প্রবল হিন্দু-বিরোধী মনোভাবকে ব্যবহার করে একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিছু মুষ্টিমেয় বাঙালীর আনুগত্য জয় করতে সমর্থ হয়েছিলো এবং ১৯৪৭ সালে ব্রিটেন এই দাবীতে শেষপর্যন্ত সম্মত হয়।

        তা সত্ত্বেও , নতুন দেশের দুই অর্ধাংশের মাঝে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা ও সাংস্কৃতিক আচরণে প্রবল পার্থক্য , যার এক অর্ধাংশ মধ্য-প্রাচ্য করে অনুসরন করে , অন্য অর্ধাংশ মৌলিক সংস্কৃতিতে পুরোপুরি ভারতীয় এবং উৎসাহিত যেমনটা বিখ্যাত মুসলিমদের সাহিত্যের জন্য হিন্দু বাঙ্গালী কবি রবীন্দ্রনাথ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরে ইসলামের শক্তিতে দ্রুতই তাদের মাঝে একই পরিচয়ের ধারনা গড়ে উঠেছিল এবং তারা খুব দুঃখজনক ভুল এর দিকে চালিত হয়েছেন- একথা বুঝতে প্রাচ্যের নেতাদের খুব বেশী সময় প্রয়োজন হয়নি।

        নবগঠিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনিতে পশ্চিমাদের প্রাধান্যের সাথে পূর্ব বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রশাসকদের স্বল্পতা (যা মূলত বিভাজনের সময় দেশান্তরী হিন্দুদের জন্য ঘটে) মিলিয়ে স্বাধীনতার পর পরই পূর্ব অঞ্চলে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করতে পশ্চিম পাকিস্তানীরা সক্ষম হয় এবং এই অবস্থা এই বছরের শুরু পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিলো। ১৯৪৭ থেকে শুধু মাত্র কেন্দ্রীয় সরকারই পশ্চিমা অধ্যুষিত ছিলো না , বরং একই অবস্থা পূর্ব বাংলার সরকারী চাকুরীতেও বহুলাংশে সত্য ছিলো এবং এটা এ সত্ত্বেও হয়েছিলো যে পূর্ব অঞ্চলে জনসংখ্যা ৭৫ মিলিয়ন এবং পশ্চিম অঞ্চলে জনসংখ্যা মাত্র ৫৮ মিলিয়ন।

        ফলাফলস্বরূপ দুই অর্ধাংশের মাঝে অর্থনৈতিক ভারসাম্যের ব্যাপক স্থানান্তর হয়। পূর্ব পাকিস্তানের রপ্তানীকৃত কাঁচামাল, বিশেষত পাঁট, ‌ থেকে পাওয়া বৈদেশিক মূদ্রা ব্যবহার করা হয়েছে পশ্চিমের জন্য কাঁচামাল ও ভোগ্যপন্য ক্রয় করতে এবং পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋনের প্রায় ৭০%-ই পশ্চিমে ব্যয় হয়। একারনবশত, পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নতি তরান্বিত হয়েছে এবং  পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং রাজনৈতিক অধীনতার ধারনার সাথে অর্থনৈতিক দারিদ্র্যতার তীক্ষ্ণ ধারনাও মিশে গেছে।
তৃতীয়ত, স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ সব ধরনের কার্যকারিতার দাবী পূরণ করবে। বিগত কয়েক মাসের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করতে দেশটির অবশ্যই খুব ভালো পরিমানের আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রয়োজন হবে।  কিন্তু ভবিষ্যতে দেশটি পাঁট এবং চা রফতানির থেকে আয় করা বৈদেশিক অর্থে তার প্রয়োজনীয় চাহিদার বড় অংশ পূরন করতে সমর্থ হবে। ভারতের সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধি করলে তারা স্পষ্টত লাভবান হবে, এই বাণিজ্য পূর্ব ওপ শ্চিম পাকিস্তানের ভেতরকার বাণিজ্যের চেয়ে অনেক বেশী অনুকূল শর্তে হবে। এবং  সমগোত্রীয় সংস্কৃতি আরও সমৃদ্ধ হবে।

        স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ যুক্তি হলো পূর্ব পাকিস্তানে কোনো আন্দোলন সুসংগঠিত হবে যা বিচ্ছিনতাবাদী আন্দোলনে দখলকৃত অন্য প্রায় সকল এলাকার মতো নয়। কেননা আজকের অপাকিস্তানের পশ্চিমা এবং পুর্বের অংশদুটো প্রায় ১০০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত, তাই নতুন বিভাজনের রেখা কোথায় হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বায়াফ্রার বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পরিস্থিতি থেকে এক্ষেত্রে এটি স্পষ্টত বিপরীত।

        পঞ্চমত, পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদের সফলতা আন্তর্জাতিকভাবে বিপর্যয়মূলক হবে না। মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে বেরিয়ে নতুন রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে এটি হবে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভৌগলিক সীমারেখা পরিবর্তন করতে সফল হয়েছে। আবার বায়াফ্রার ঘটনার সাথে তুলনা করলে, এটি অন্য কোনো স্থানের সুপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদকে জাগিয়ে তুলবে- এমন সম্ভবনা কিন্তু খুব বেশী নয়। এটা অংশত একারনে যে আফ্রিকার তুলনায় এশিয়াতে রাজনৈতিক সীমারেখা, নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক রূপরেখার সাথে বেশী সংগতিপূর্ণ হয়। এবং এটাও যে, বিচ্ছিনতার আন্দোলন হতে পারে এমন নতুন স্বাধীন দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আন্দোলন মৌলিক, এমন অঞ্চলের ক্ষেত্রে যেখানে যা তার ‘মাতৃ-দেশ’ থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। সকল ধরনের গুরুত্ব বিবেচনায় এটা আসলে ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী আন্দোলন (ইউরোপিয়ান শক্তির বিরুদ্ধে নয়- তা ব্যতিত)।

        ষষ্ঠত, বাংলাদেশ যদি শুধু মাত্র একটি গেরিলা ধারনা হিশেবেই রয়ে না যায় তাহলে তুলনামূলক ভারতের অস্থিতিশীল পরিণতি আরও সীমিত মাত্রার হবে। সার্বভৌম বাংলাদেশের সফল বাস্তবায়ন এর কারনে অনেক পশ্চিম এর বাঙালিই আশা করবে যে বৃহত্তর বাংলা গঠনের জন্য একদিন তাদের প্রদেশও বাঙ্গালদেশের সাথে একীভূত হবে। কিন্তু পশ্চিম বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসঃ এবং মিলিয়ন সংখ্যক পশ্চিম বাঙালি ভারতের অন্যান্য প্রদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক জীবনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাতে করে ভারত থেকে পশ্চিম বাংলার বিচ্ছিন্ন হবার আন্দোলন হওয়াটা খুবই অসম্ভব।

        এমন কি বাংলাদেশেই বৃহত্তর বাংলার জন্য কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনের কোনো চেষ্টা নেই। বাংলার উপর কলকাতার কর্তৃত্বের বিরোধীতা পূর্ববাংলার জাতীয়তাবাদের ভিত্তির শেকড় এবং কাছাকাছি সংকৃতি ও অর্থনীতি সত্ত্বেও একথা বিশ্বাস করার কোনো কারন নেই যে নিজেদের জাতীয় পরিচয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য অসংখ্য জীবন বিসর্জন দেওয়া ৭৫ মিলিয়ন বাংলাদেশী তাদের দেশকে পশ্চিম বাংলার সাথে একীভূত করার ইচ্ছেপোষন করবে। এটাও উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সেই দেশগুলোর একটি যাদের জাতীয়তাবাদ তাদের জাতীয় পতাকায় ভৌগলিকভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া আছে।

        বিপরিত দিকে, বর্তমান পরিস্থিতি ভারতের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকীস্বরূপ। শরণার্থীরা শুধু ভারতের অর্থনৈতিক সম্পদের জন্য ভারী বোঝাই নয়, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একই সাথে সামাজিক ও রাজনৈতিক ভাবেও তারা উদ্বেগের কারন। এবং  এটা মনে করা হাস্যকর যে তাদের মধ্যকার খুব উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ পূর্ব পাকিস্তানে তাদের ঘরে ফিরে যাবে যখন কি না পাকিস্তান সামরিক বাহিনী সেখানে অবস্থান করছে। তাই যতক্ষন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের ধারনাটুকু বাঙালির উপর পাকিস্তানিদের অত্যাচারের[ যেহেতু হিন্দুরা বিশেষভাবে এই অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন] কারনে চালিত হচ্ছে , এটা খুব সম্ভবপর নয় যে মিসেস গান্ধীর সরকার তাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলোতে মনোযোগী হতে পারবেন যার জন্য নির্বাচনে তাদের সাপ্রতিক বিজয় অর্জিত হয়েছিলো।

পরিশেষে, শাসনতান্ত্রিক কারনে পাওয়া অর্থনৈতিক সুবিধার ব্যাপারটি বিবেচনা না করলে,  বিদ্রোহী-পূর্বাঞ্চলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে তা নিশ্চিত ভাবেই পাকিস্তানের নিজের জন্যও ভালো হবে। এটা শুধু মাত্র একারনেই নয় যে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে চালানো দীর্ঘমেয়াদী সামরিক অভিযানের খরচ তাদের বহন করতে হবে না, বরং এটাও যে এতোদিন ধরে পাকিস্তানের চেয়ে নতুন খন্ডিত দেশে স্থিতিশীলতা রক্ষা করা উল্লেখযোগ্যভাবে সহজতর হবে।

        এটা সত্য যে, যেকোনো ধরনের উপায়েই বাংলাদেষের স্বাধীনতা অর্জিত হোক না কেন, এটি ভারতের বিপরীতে পাকিস্তানের অবস্থানকে দূর্বল করবে। কিন্তু খন্ডিত দেশটি অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এটি হুমকী হবে না, যে কারনে তারা তাদের সামরিক বাহিনীর শক্তির উপর নির্ভর করতে পারে। এবং বর্তমান সময়ে পাকিস্তান অবশ্যই ভারতের সাথে তাদের মুখোমুখি অবস্থানে কিছুটা নমনীয় হতে পারে। কেননা প্রেসিডেন্ট নিক্সনের পিকিং সফরের ঘোষণা এইসম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের সুবিধা এনে দিয়েছে।

বিশ্ববাসীর করনীয়ঃ

সত্যি বলতে বাংলাদেশের হাতে কোনো বিকল্প নেই। এর ভবিষ্যৎ ভাগ্য ভিয়েতনামের মতোই, দেশের মাঝে নির্বিচারে হত্যাকান্ডের মাধ্যমে শৃঙ্খলা বজায় রাখার অসম্ভব এক প্রচেষ্টা যেখানে হয়ত মাত্র একজন যোগ্য নেতা আছেন যিনি সরকারি কর্তৃত্বের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে নিজের সাথে আপোষ করতে বাধ্য হবেন।  বৃহৎ শক্তি শান্তি রক্ষার চেষ্টায় থাকা অবস্থায় , পাঁচ থেকে দোষ বছরের সহিংসতার পরে কি এই প্রচেষ্টা বন্ধ হবে? বহির্বিশ্ব ইয়াহিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করলে এখনই এই অবিবেচনাপূর্ণ সহিংসতা সত্যিই এড়ানো যায়।

        ইয়াহিয়া সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ দেওয়া হলে তা পূর্ব বাংলা থেকে তাদের প্রত্যাহারের ক্ষেত্রেও ফলপ্রসু হবে। পূর্ব বাংলার অর্থনীতি ধ্বসে পড়ায় এবং সামরিক বাহিনীর শিবিরে বড় ধরনের রসদ প্রয়োজন হওয়ায় ইসলামাবাদ সরকারের এখন বহির্বিশ্ব থেকে জরূরীভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। এমন সহায়তা যদি অনবরত প্রত্যাখ্যান করা হয়, ইসলামাবাদ হয়ত পূর্বাঞ্চল ছেড়ে আসতে বাধ্য হবে।

        পশ্চিমা বিশ্বের এমন চাপের মুখে ইসলামাবাদ সরকারের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত বিরোধপূর্ণ হতে পারে, এমনও কি পাকিস্তানের সাথে চীনের আরও বেশী ঘনিষ্ট সমঝোতার হুমকীও এতে থাকতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ের চেয়েও বেশী যে সহায়তা চীন দিতে পারে তা অত্যন্ত সীমাবদ্ধ। অন্ততপক্ষে ইয়াহিয়া খানের জন্য এই পশ্চিমা-অপমান চীনের প্রভাবকে আরও বিস্তৃত করে তুলবে, এটাই সম্ভব্য যে বাংলা দেশে এবং পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মাঝে লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ চললে তাতে পিকিং যথেষ্ট সুবিধা পাবে, এতোটাই যে এটি বাংলাদেশের ধারনাকে আরও বিচ্চিন্নতাবাদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যে কারনেই হোক ইয়াহিয়া গোষ্ঠীর সামাজিক চরিত্রই সেই সীমারেখা টেনে দেবে যতটুকু পর্যন্ত পিকিং পশ্চিম পাকিস্তানকে সমর্থন করতে পারে। এটির সম্ভাবনা কম যে, যখন পূর্বে প্রভাব বিস্তার আরও আকর্ষনীয় হয়ে উঠব, তখন জেনারেল, জমিদার, আমলা এবং বিত্তবান-অধ্যুষিত শাসনের জন্য তারা অতি-উৎসাহী হবে ।

        সম্ভবত খুব শীঘ্রই ইসলামাবাদ সরকারকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করা যেতে পারে, যদি বৈশ্বিক মতের চাপ অব্যাহত থাকে এবং ইয়াহিয়ার ধামাচাপা দেওয়ার ব্যবস্থার জন্য এটি বিচ্ছিন্নভাবে সংশয়ী হয়।

        পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই জানেন যে তাদের শাসন পূর্ব অঞ্চলে ঘৃনিত হয়ে আসছে। অনিচ্ছুক বাঙ্গালীদেরকে তাদের নিজেদের রাস্তায় যেতে দেওয়াই যৌক্তিক- এমন ধারনা কোনো ভাবেই খুব নতুন কিছু নয়।

        এবং এ ব্যাপারে পূর্ব দৃষ্টান্তও আছে। প্রায় একই পরিস্থিতিতে ১৯৪৯ সালে ডাচ-রা ইন্দোনেশিয়ার উপর থেকে তাদের নিয়ন্ত্রন ছেড়ে দেয়। ১৯৪৮ এর ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়া রিপাবলিকের বিরুদ্ধে তারা আক্রমনের বেপরোয়া চেষ্টা চালায়। পরবর্তিতে মার্চে র ভেতরই এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে তারা ইন্দোনেশিয়ান জাতীয়তাবাদীদের মনোবল ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এরপর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ গেরিলাদের বিপক্ষে দীর্ঘসময় ব্যাপি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে জাতিসংঘ প্রভাবিত করে। দশ বছর পর ফ্রান্স নিজেদের আলজেরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেয় যখন এটা স্পষ্ট হয় যে তাদের সামরিক বাহিনী কখনোই আলজেরীয় জাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে জিততে পারবে না যদিও এক মিলিয়ন মানুষ সেখানে বসবাস করে এবং আলজেরিয়া ফ্রান্সের একটি অংশ ছিলো- এমন বিতর্ক দীর্ঘদিন চলে আসছে। এবং আজকাল ইন্দো-চায়নাতে অ্যামেরিকা যুক্তরাষ্ট্রকে যেমন ভাবে নিজেদের আত্মঅহংকার সংবরণ করতে হচ্ছে- এমন উপমা দেখতে পাওয়া খুব বেশি বিরল নয় ।

        ইয়াহিয়ার সরকারকে প্রভাবিত করতে আন্তর্জাতিক চাপ ফলপ্রসু হতে পারে, বিশেষত যদি এটি পূর্বাঞ্চল ত্যাগ করার জন্য চাপ হয়। কিন্তু এটি বলা মিথ্যে হবে না যে, পূর্বাঞ্চলে গনতন্ত্রের পুনঃস্থাপন এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকেপরামর্শপ দেওয়া এখনই বহির্বিশ্বের জন্য সম্ভব না। তাহলে হয়ত ঘটনা আরও ধামা চাপা দেওয়ার প্রবনতার দিকে যাবে।

        কঠিন সত্য এটাই যে, পূর্ব বাঙলায় মার্চ ১৯৭১ পরবর্তী সময়ে ইসলামাবাদ সরকারের মত দূর্বল অবস্থানে থাকা সরকারের জন্য একমাত্র বিকল্প হলো বর্তমান সময়ের মত আরও বেশী দমন নিপীড়ন চালিয়ে যাওয়া এবং সম্পূর্ণ নিরস্ত্রকরণ।

বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র

৪১৮ সেনওয়ার্ড স্কয়ার, এস ই

ওয়াশিংটন ডিসি ২০০০৩
(২০২)৪৭-১৯৪

——-

.

13.176.535

শিরোনাম সূত্র তারিখ
হোয়াইট হাউজের  সামনে পূর্ব বাংলার পাকিস্তানী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আয়োজিত বিক্ষোভে অংশগ্রহনের আহ্বান। বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার ৭ অক্টোবর, ১৯৭১

বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র

৪১৮ শেওয়ার্ড স্কয়ার

ওয়াশ. ডি সি ২০০০৩

টেলি. ৫৪৭-৩১৯৪

পূর্ববঙ্গে পাকিস্তানিদের সন্ত্রাসী প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ

বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ১৯৭১

১৪-২৪ অক্টোবর থেকে ভারতে নয় মিলিয়ন বাঙ্গালি সম্বোলিত শরণার্থী শিবিরের অনুরূপভাবে ওয়াশিনটোন ডি.সি তে একটি শরণার্থী শিবির খোলা হবে যেন বাংলার জনগণের দুর্দশা থেকে আমেরিকান জনগন দেশে ফিরতে পারে।

        বাঙ্গালী এবং আমেরিকান সহানুভূতিশীলদের একটি গ্রুপ শিবিরে বাস করবে (যা নির্মাণ করা হবে অথবা নিষ্কাশন পাইপে) এবং খেয়ে জীবন ধারণের মতো চাল দেয়া হবে।

দশদিন মেয়াদি, প্রতি কার্যদিবসে শিবির থেকে একজন প্রতিনিধিকে হোয়াইট হাউজের পূর্ব গেইটে নিয়ে যাওয়া হবে যেখানে তারা প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে।

পাকিস্তান সরকারের পূর্ববাংলার সামরিক দখলদারিত্ব মধ্যে ইউ এস এইড ফান্ডের সঞ্চালনের প্রতিবাদে শনিবার, ১৬ অক্টোবর, পাকিস্তান দূতাবাসে বিকল করে দেওয়া পাইপ অবস্থান থেকে একটি বিরাট মিছিলের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।

 রবিবার, ১৭ অক্টোবর, বিজ্ঞ বিশপ, দরবেশ ও যাজকদের নেতৃত্বে একটি ধর্মীয় স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। পরদিন একটি দল সিনেট অফিস ভবন থেকে মিছিল বের করবে এবং পাকিস্তানে সব সাহায্য বন্ধে তাদের আইনপ্রণেতারা বিচারাধীন বৈদেশিক সহায়তা আইন সংশোধনী সমর্থনে আপিল করবেন।

পাকিস্তান সরকারের পূর্বকল্পিত বিধ্বংসী প্রচারণা এবং বর্তমান সংগ্রামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার এবং সাহায্যে যারা ক্ষুব্ধ, তাদের সবাইকে অংশগ্রহনের আহবান করা যাচ্ছে।

পূর্ববাংলার ফিলাডেলফিয়া বন্ধুরা বর্তমানে জাতীয় উদ্দানের পুলিশের সাথে সমোঝতা করছে, শিবিরের পাশে হোয়াইটের হাউজেরর সামনে লাফায়েট পার্কের দক্ষিণ প্রান্ত ব্যবহারের জন্য।

পাকিস্তানি নির্মম সামরিক জান্তাদের নৌ বাহিনী ও অস্ত্র সাহায্য বরাদ্দ রাখার ব্যপারে মার্কিন যুক্তরাষ্টের সরকারকে ছাড় দেয়া চলে না। যদি আমরা অবিলম্বে উদ্দোগ না নেই, ভিয়েতনাম ভুলের একটা পুনরাবৃত্তি করা হবে এবং তা অনেক বড় আকারে হবে। আমাদের আপনার সাহায্য চাই।

আরও তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: ডিক টেলর, বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার।

.

13.177.536-537

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব বাংলায় “ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের” অধীনে কাজ করতে বিশ্বব্যাংক স্থপতির অবস্থান ঘোষনা। বাংলাদেশ নিউজ লেটার

২৫ অক্টোবর, ১৯৭১

 

বিশ্ব ব্যাংক পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর জন্য কাজ করতে রাজি নয়

Stanley Tiger man, 40, শিকাগো স্থপতি যিনি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পূর্ববাংলার একটি প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত হন, ২৮ সেপ্টেম্বর ঘোষনা দেন যে, তিনি আর পাকিস্তানের “ফ্যাসিবাদী সামরিক শাসক” এর অধীনে কাজ করবেন না। এক সংবাদ সম্মেলনে দেয়া এ স্থপতির পূর্ণ বিবৃতি নিচে দেওয়া হয়:

আমি একজন স্থপতি। আমি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই।

পাঁচ বছর আগে, ১৯৬৬ সালে, পাকিস্তানি সরকার বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পূর্ব বাংলায় বরিশাল, বগুড়া, পাবনা, রংপুর এবং সিলেট, এ পাঁচ জায়গায় পাঁচটি পলিটেকনিক প্রতিষ্ঠানের নকশা করে দেবার জন্য আমাকে নিয়োগ করে। যথাযথভাবে নকশা মানদণ্ড স্থাপনের লক্ষ্যে (যা কিনা সে সময়ে ছিলো না) জলবায়ুগত, সমাজবিজ্ঞান, আবহবিদ্যা, ভূকম্পবিদ্যার উপর ভিত্তি করে আমার নকশা কে গড়ে তুলি। প্রাকৃতিক সম্পদ, নির্মাণ পদ্ধতি, বিল্ডিং কোড এবং মান, শ্রম এবং উপাদানের দাম, ইত্যাদি সম্পর্কে ধারণা নেই যাতে আমি দেশটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারি। এ পাঁচ বছরে আমি ষোলো বার ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অংশগুলোতে ভ্রমন করি, যা কিনা দেশের মানুষের সাথে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে।

মার্চ, ১৯৭১-এ পাঁচটি প্রকল্প নির্মাণাধীন ছিল। ২৫ মার্চ ও তার পরবর্তী ঘটনাগুলো আমার কাজের সাথে আমার সম্পৃক্তা নিয়ে সন্দেহ জাগায়। আমি আমার সন্দেহ বিশ্বব্যাংকে জানাই। যাই হোক, আমি কিছু প্রমাণ চাইছিলাম এ বিষয়ে যে আমি আমার কাজটা ঠিক ভাবে করতে পারব কি পারব না। যখন কিনা আমি এটার প্রয়োজনবোধ করলাম তখন ১৮ই সেপ্টেম্বর আমি ঢাকা যাই এবং তখনকার পরিস্থিতি ও পলিটেকনিকের উন্নয়ন করতে যে সমস্যা রয়েছে তা এক সপ্তাহ যাবত পর্যবেক্ষণ করি। সেই ঢাকা আমার পরিচিত ঢাকা-র মতো ছিলো না। সেখানে চরম পর্যায়েরর ভীতি কাজ করচ্ছিলো যা কিনা সবচেয়ে জাগতিক প্রযুক্তিগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা করাকেও কঠিন করে তুলেছিলো। মার্শাল ল কর্তৃপক্ষ তোল্লাশি এবং চেক পয়েন্ট দ্বারা এবং সারাদেশে পুলিশ ও আর্মি দিয়ে এমন এক পরিবেশ তৈরি করেছিলো যেন এ এক “পুলিশি রাজ্য”।

পলিটেকনিক প্রকল্প আমার খুব পছন্দনীয় ছিলো। তবু, আমার কাছে এটা মনে হয়েছিলো যে, আমার পেশাগত সেবার সম্মানার্থে সরকারের কিছু পরিমাণ নৈতিকতা প্রদর্শন আবশ্যক ছিলো। শ্রমিকদের জোড় করে হুমকি দিয়ে কাজ করানো এবং তারা কাজ না করলে তাদের উপর প্রভাব পড়বে এবং সরকারের শত্রু হয়ে যাবে। এটাকে আমি “স্বাভাবিক” মনে করি না।

আজ আমি পাকিস্তানি সরকার ও বিশ্বব্যাংকে টেলিগ্রাম করেছি যে আমার চুক্তির অধীনে, আমি পরিসমাপ্তি দফা প্রয়োগ করচ্ছি। যা আমি ইচ্ছে করে করি নাই।

সে সকল মানুষ যারা খাটেন এবং ভবন নির্মাণে নিয়োজিত রয়েছে, তাদের দেখাশোনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ও তাদের শারীরিক অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করার অধিকার কি আমার নাই? প্রকৃতপক্ষে তাদের অনেকের জীবন এমন ঝুঁকিপূর্ণ।

সামরিক সরকারের এসব প্রভাবের সাথে কাজ করার কোন ইচ্ছে আমার নেই। এমনকি, আমি আর কোনদিন পূর্ব পাকিস্তান ভ্রমণে আসবো না। সবশেষে, আমি আবার আসবো এখানে যখন তা স্বাধীন হবে এবং আশা করি আমি বাংলাদেশের হয়ে কাজ করবো, কারণ আমি এদেশের মানুষ এবং তাদের এ দেশকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি একজন স্থপতি। আমিও একজন মানুষ।

.

13.178.538

শিরোনাম  সূত্র

তারিখ

 

পাইপের শহরে দশ দিন বাংলাদেশ নিউস লেটার

২৫ অক্টোবর, ১৯৭১

 

                                 পাইপের শহরে দশ দিন

        ওয়াশিংটন ডিসির লাফায়েত পার্ক আমাদের শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্বিপাককে উপহাস করার একটি সুযোগ পেয়েছে।পার্কে একটি ক্ষুদ্র শরণার্থী শহরের উদ্ভব হয় যা ওয়াশিংটনের নাগরিকদের নিকটে ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পের সাথে সাদৃশ্যমান মনে হয়।পূর্ব বাংলার ফিলাডেলফিয়ার বন্ধুদের দ্বারা এবং ঐ অণ্ঞলের কিছু সংখ্যক বাংলাদেশী গ্রুপের সমর্থনে ১৪ অক্টোবর থেকে দশ দিনের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ড্রেন পাইপের সারি স্থাপন করা হয়।নাটকীয় এই উদ্বস্তুু পরিস্থিতি ওয়াশিংটনের জনসাধারন ও প্রেস এর দৃষ্টি আকর্ষন করে।নিউইয়র্ক,ফিলাডেলফিয়া,বল্টিমার এবং বেটসন থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক দশ দিনের এই কর্মসূচিতে যোগদানের জন্য ওয়াশিংটনে হাজির হয়।

      ১৬ অক্টোবর শনিবার তারা কর্মসূচির অংশ হিসেবে পাকিস্তান দূতাবাসে যাত্রা করে,রবিবার একটি ধর্মীয় স্মারক পত্র প্রদান করে এবং সোমবার সিনেটে একদল তদবির করে।

  এই দশদিন ক্যাম্প পরিচালক কর্তৃক শরণার্থী ক্যাম্প চলতে থাকে।ডিক টেইলর যিনি পাকিস্তান আর্মি কর্তৃক পরিচালিত জাহাজ পদ্মা অবরোধ সংগঠিত করেন। ডেভিড হার্টসোফ এবংবিল মোয়ার ডিক টেইলরকে সহযোগিতা করেন।

.

13.179.539-542

          শিরোনাম           সূত্র                তারিখ
বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের ওপর একটি প্রতিবেদন ইস্ট পাকিস্তান ইমার্জেন্সী রিফিউজী ফান্ড          ১ নভেম্বর, ১৯৭১

১ নভেম্বর,১৯৭১

                                             ইস্ট পাকিস্তান ইমার্জেন্সী রিফিউজী ফান্ড

                                                                 3308 এস সিডার স্ট্রিট – সুইট 12 বি

                                                                  Lansing, মিশিগান 48910

                                                                                 (517) 393-7666

                                                         ব্যক্তির সঙ্গে কথা: জনাব কমলেশ পারেখ

পাকিস্তানি উদ্বাস্তু হিসেবে ঘোষিতদের জন্য উত্থাপিত জাতীয় তহবিল চালনার অগ্রগতি

পূর্ব পাকিস্তানের নয় মিলিয়নেরও বেশি উদ্বাস্তুদের জন্য পূর্ব পাকিস্তান জরুরী উদ্বাস্তু তহবিলের উত্থাপন করে ও এর অগ্রগতি সাধন করে যার সারগর্ভই আসে ব্যক্তিগত অনুদান থেকে। প্রতিটি প্রধান সহায়তাকারী সংস্থা ভারতে গৃহহীনদের সাহায্য করে এবং পূর্ব পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য যোগ দিতে আহ্বান জানায়। তিনটি প্রধান সংস্থা -কেয়ার, ইউনিসেফ এবং ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি তাদের প্রতিনিধিদের নাম ঘোষনা করে একশত সদস্যের একটি উপদেষ্টা বোর্ড গঠন করে। আমেরিকা রেড ক্রস, চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস এবং প্রধানমন্ত্রীর (ইন্দিরা গান্ধী) ত্রান তহবিল সহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই অর্থ বিতরন করা হয়।

নতুন গ্রুপ হিসেবে নিযুক্ত স্পন্সরসমূহ:

১.হন. চেস্টার বোলস,ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত

২.রিপ. ড্রিন্যান ম্যাসাচুসেটস

৩.রিভ. হোমার জ্যাক, ধর্মীয় শান্তির জন্য বিশ্ব সম্মেলন

৪.মি. হেনরি নিলস, বাল্টিমোর লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান

৫.মি. উইলিয়াম প্লাইমেট, ডেস মইনস,লোয়ার উপস্থাপিত ঝুঁকি বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান।

৬.মি. মরিস দেস, একজন Montgomery ও আলাবামা আইনজীবী

 ৭. মি. ম্যাক্সওয়েল ড্যান,  নিউইয়র্কের একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডেয়ল ডেন বার্নব্যাখ

৮.মি. থমাস কলিন্স, নিউইয়র্কের একটি সরাসরি প্রতিক্রিয়া বিজ্ঞাপনী সংস্থা র্যাপ ও কলিন্স

৯.প্রফেসর নোম চমস্কি (এম আই টি ইউনিভার্সিটি)

সারাদেশে ব্যক্তিদের মেইলিং এর মাধ্যমে ওয়াশিংটনের একটি ব্যাংক একাউন্টে সর্বমোট তিন লাখ ডলার জমা হয়।প্রতিদিন এভাবে বিভিন্ন হারে কয়েক হাজার ডলার জমা হচ্ছে।একাধিক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এই কাজে অবদান রাখতে ব্যাংকের ফান্ডে সরাসরি অর্থ প্রদান করতে আগ্রহী হচ্ছে।চেকগুলো প্রদানযোগ্য করতে ইস্ট পাকিস্তান ইমার্জেন্সী রিফিউজী ফান্ড,পোস্ট অফিস বক্স  1776, ওয়াশিংটন ডিসি 20013 এই ঠিকানায় পাঠানো হয়।নতুন সরাসরি এই মেইল আপিল বিভিন্ন স্কুল এবং উচ্চ শিক্ষা কর্মকর্তাদের,সাংগঠনিক নেতাদের,দানশীল ও পৌর গ্রুপগুলোতে পাঠানো হয়েছে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তাদের সম্প্রদায়ের মাঝে এই তহবিল উত্থাপন চালনার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা কি করতে পারি যেখানে বিশ্বের সেরা মাথারাই এর সমাধান বের করতে পারছে না? আমাদের এই সমস্যা সমাধানের পথ হতে পারে ইউনাইটেড স্টেটস এর জন সাধারনকে এটাই বোঝানো যে আমাদের ক্যাম্পেইন এর উপজাত কার্যক্রমকে দশ মিলয়ন আমেরিকান নাগরিকের কাছে পৌঁছানো যারা একজন উদ্বাস্তু শিশু বা মা অথবা বাবাকে বাঁচানোর জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হবে যেটা বাঙ্গালি জনগনকে জীবিত রাখার জন্য করণীয় সবশেষ পন্থা এবং এই প্রক্রিয়ায় বাঙ্গালি জনসাধারন, তাদের সংস্কৃতি ও তাদের জন্মভূমি সম্পর্কে আরো অনেক বেশি কিছু জানা সম্ভব হবে।

আামরা এই ক্যাম্পেইনেরই অংশ হিসেবে প্রত্যেক বুধবার জাতীয় উপবাস ধারনাকে বিবেচনা করতে পারি যা ত্রান প্রকল্প ও অক্সফাম আমেরিকা স্পন্সর করবে এবং যেটি কলেজ ক্যাম্পাস ও মাধ্যমিক স্কুল গুলোতে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। আমেরিকান পরিবারগুলোর প্রতি বুধবার উপোস না করতে পারার এমনকি প্রতি সপ্তাহে এক ডলার করে প্রদান করতে না পারার কোনো কারন নেই যা ১০ জন উদ্বাস্তু বাঙ্গালির খাদ্যাভাব পূরণ করতে পারে। কল্পনা করুন যদি ২০০ মিলিয়ন আমেরিকান শুধু মাত্র এক বেলা খাদ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকে তাহলে তা দিয়ে আমরা ১০ মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে দুইশ দিন বা ছয় মাস খাওয়াতে পারি। উপবাসের এই ধারনাটিতে ব্যক্তিগত সংশ্লিষ্টতা খুবই প্রয়োজন কেননা যদি আমরা এক মিলিয়ন অংশগ্রহনকারীও পাই এর প্রভাব জনশিক্ষা ও অন্যান্য জন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করতে পারে।

উপরোক্ত এই দুইটি ধারনার মাধ্যমে আমরা তাৎক্ষনিকভাবে বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন মানুষের এই অন্তর্বেদনার পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারি এবং এভাবে  মানব ইতিহাসে সত্যিকারের উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি।

অতএব, বাংলাদেশের এই সুন্দর মানুষগুলোর জন্য এক মাসে ১০ ডলার করে পরবর্তী কমপক্ষে ছয় মাস এবং প্রতি সপ্তাহের বুধবার এক বেলা উপোস এই উভয় ত্যাগ বিবেচনা সাপেক্ষে আপনার ব্যক্তিগত মতামত জানানোর জন্য অনুরোধ করছি যা আামাদের মধ্যে অনেকেই এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে অবগত।

আমি আশা করি আপনি আমাকে আাপনার সিদ্ধান্ত জানাতে একটি নোট প্রদান করবেন।

                                                                   আন্তরিকতার সঙ্গে ইতি,

                                                           শ্রীকুমার পোদ্দার, চেয়ারম্যান

                                          পূর্ব পাকিস্তান ইমার্জেন্সী রিফিউজি ফান্ড

এসপি: কিমি.

পি. এস. আপনার ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তার সাথে মিলে এমন ত্রান সংগঠনে আপনি অবদান রাখতে পারেন যার উদ্দেশ্য মানুষের কাছে পৌঁছানো।

ভারত এবং বাংলাদেশে এই সংগঠনটির কোন মাঠ পর্যায়ের কর্যক্রম নেই কিন্তু তহবিল চালিত হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ত্রান সংস্থার মাধ্যমে তার মধ্যে উল্লেখিত আমাদের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ত্রান তহবিল যা আমাদের এক লক্ষ ডলারের তহবিলের বৃহত্তম প্রাপকে পরিণত হয়েছে।

নিন্মোক্ত বরাদ্দ অনুযায়ী  অর্থ কমিটি প্রম নগদ এক লক্ষ ডলার অনুদান হিসেবে ঘোষনা করে:

১. ইউনিসেফ এর নিকট $২০,০০০

২.কেয়ার Inc. এর নিকট $২০,০০০

৩.ইন্টারন্যাশনাল কমিটি এর নিকট $২০,০০০

৪.আমেরিকান রেড ক্রস এর নিকট $১০,০০০

৫.চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এর নিকট $১০,০০০

৬.ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস রেসকিউ এর নিকট $১০,০০০

৭.প্রাইম মিনিস্টার’স রিলিফ ফান্ডে $১০,০০০

নিউইয়র্কের একটি অসামান্য বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডয়েল ডেন বার্নব্যাখ রেডিও,টেলিভিশন,সংবাদপত্র এবং ম্যাগাজিনগুলোর জন্য একটি পাবলিক সার্ভিস প্রচারনার উদ্যোগ নেয়।

সারা দেশ  জুড়ে নেটওয়ার্ক ও পত্রিকা প্রতিনিধিদের কাছে এই প্রচারনা পেশ করা হচ্ছে।সংগঠনটি সকল মিডিয়াকে ১৩ সপ্তাহ জুড়ে এই একই প্রচারনার জন্য বলেছে।

প্রতিদিন গড়ে ত্রিশ হাজার উদ্বাস্তু ভারতে প্রবেশ করছে। যদি বৃহদায়তনে তাদের জন্য ত্রানের যোগান দেয়া না যায় তাহলে শত শত হাজার হাজার মানুষ অনাহারে ও রোগাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।

শুধুমাত্র তেত্রিশ দিনের জন্য একটি বাঙ্গালি শিশুকে নিয়ে খাদ্য দেয়া,কলেরার টিকা দেয়া,তাকে ভালো স্থানে রাখা এবং তার বেঁচে থাকা নিশ্চিত করা সম্ভব।আগামী ছয় মাসের জন্য,এক মাসে এর পরিমান ১০ ডলার।

এই সময়ের মধ্যে এটা আাশা করা যায় যে,একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো যাবে যেখানে উদ্বাস্তুরা তাদের জন্মভূমিতে নিরাপদে ফিরে যাওয়ার অনুমতি পাবে।

” আমরা মানুষের সাথে মানুষের একটি প্রচারনা গড়ে তুলতে চাই। ” মি. পোদ্দার বিবৃতি দিলেন। ” আমরা যদি অন্তত একটি শিশু বা একজন মা অথবা বাবাকে দেখাশুনা করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ অন্তত একটি আমেরিকান পরিবারও পাই তাহলে এটাই হবে মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উদ্ধার কর্যক্রম। “

উদ্বিগ্ন নাগরিকদের তাদের স্থানীয় এলাকায় তহবিল উত্থাপন প্রচেষ্টার আয়োজন করা উচিত। এছাড়া তারা একটি বৃহদ সম্প্রদায় চালনার জন্য  নেতৃত্ব গঠনে বিশিষ্ট গির্জা,নাগরিক ও শিক্ষাগত দলের সভা আহ্বান করতে পারে।

প্রত্যেকের জাতীয় গণমাধ্যম প্রচারাভিযানের জন্য বিনামূল্যে সময় ও স্থান নির্ধারনে তাদের স্থানীয় গণমাধ্যমে যোগাযোগ করা উচিত।

তাদের এলাকার মূল সমর্থকদের সাথে ল্যান্সিং এর জাতীয় সদর দপ্তর একাধিক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে সজ্জিত  করতে পারে সেই সাথে স্থানীয় তহবিল উত্থাপন প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে পেশাগতভাবে একে উপকরণ হিসেবেও তৈরি করতে পারে।

                                       গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

প্র: অবদান শুল্কমুক্ত আছে কি?

উ: হ্যাঁ।আপনার বাতিল করা প্রাপ্ত চেক রশিদ হিসেবে সংরক্ষন করুন।

প্র: কে তহবিলের অর্থ বন্টন নির্ধারন করে?

উ: মি. বোলস. রিপ. ড্রিন্যান, রিভ. জ্যাক, মি. প্লাইম্যাট এবং মি. পোদ্দার সমন্বয়ে গঠিত একটি অর্থ কমিটি প্রয়োজন এবং ব্যবহারের সামর্থ্য অনুযায়ী তহবিলের অর্থ বন্টন করে।

প্র: প্রশাসনিক খরচ এবং তহবিল সংগ্রহের খরচগুলো কী?

উ: উপরস্থ প্রশাসনিক উত্থাপিত তহবিল ২% এরও কম। ল্যান্সিং এর জাতীয় সদর দপ্তরে ব্যাপকভাবে স্বেচ্ছাসেবক কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয় এবং তহবিল উত্থাপনের মোট খরচ ১০% এর নিচে রাখা হয়।

প্র: প্রত্যয়িত আর্থিক বিবৃতি কি সঙ্গে পাওয়া যাবে?

উ: হ্যাঁ। ২৫ ডলার বা তার বেশি কোন অবদানকারী  প্রত্যয়িত আর্থিক বিবৃতির একটি কপির জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

.

13.180.543-544

    শিরোনাম        সূত্র      তারিখ
বাংলাদেশের অভ্যন্তর গুহীত চলচ্চিত্রের উপর একটি প্রতিবেদন এন.বি.সি নিউজ ৮ নভেম্বর,১৯৭১

                   এন.বি.সি নিউজ

[প্রেস অধিদপ্তর/ন্যাশনাল ব্রডকাস্টিং কোম্পানি/30 রকফেলার প্লাজা/নিউ ইয়র্ক, এন ওয়াই 10020 / ব্রডকাস্টিং বৃহত্তম সংবাদ সংস্থা]

                              নভেম্বর ৮, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের উপর বিস্তীর্ন ফিল্ম প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে এনবিসি নিউজের উপস্থাপনায় “ক্রোনোলগ”  ২৬ নভেম্বর।

পূর্বপাকিস্তানে কি ঘটেছিল এবং কেন ঘটেছিল তা নিয়ে প্রথম বিস্তারিত তথ্যচিত্র প্রচার করবে এন.বি.সি নিউজ।

বব রজার্স, যিনি রিপোর্টটি তৈরী করেছেন , প্রায় দুই মাস অতিবাহিত করেন ভারতে এবং পাকিস্তান গল্প চিত্রগ্রহনের উদ্দ্যশে। জনাব রজার্স বলেন, “পূর্ব পাকিস্তানে যেটি রাজনৈতিক দাঙ্গাল হয়ে শুরু হয়েছিল সেটি গত মার্চ মাসে প্রধান মানবিক ট্র্যাজেডি হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছে”। “ঐতিহাসিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানে দৃশিত হয়েছে

প্রাকৃতিক দুর্যোগ-বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও দুর্ভিক্ষের। এবারকার দূর্যোগটি কঠোরভাবে মানবসৃষ্ট এবং এটি প্রকৃতির সকল প্রচেষ্টাকে অতিক্রম করে মানুষের মৃত্যু, ধ্বংস এবং দুঃখকষ্টের মাত্রার মধ্য দিয়ে”।

জনাব রজার্স ভারতে শরণার্থী শিবিরে চিত্রগ্রহন করেন, যেখানে নয় মিলিয়ন থেকে বেশি

পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি নাগরিকদের পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে গেছে বলে খবর হয়, যার বেশিরভাগ পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা গঠিত.
জনাব রজার্স বলেন, “আমরা সীমান্ত জুড়ে নিপতিতও হয়েছিলাম এবং কয়েকশ শরণার্থীর অনুষঙ্গী হয়েছিলাম ঝুঁকিপূর্ণ ভারতগামী ফ্লাইটে”। আমরা তৈরি করেছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে আরেকটি গোপন এন্ট্রি পায়ে হেঁটে এবং নৌকায় চড়ে এবং পেয়েছি একটি অনন্য চলচ্চিত্র প্রতিবেদন মুক্তি বাহিনীর উপর, বাংলা স্বাধীনতা আন্দোলনের গেরিলা বাহিনীর উপর।পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীরা পূর্ব পাকিস্তানিদের বহিস্কার করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আমরা চারদিন অতিবাহিত করেছিলাম একটি ব্যাটেলিয়ন আকারের গেরিলা বাহিনীর সাথে যেটি পূর্ব পাকিস্তানের একটি বৃহৎ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে।
পূর্ব পাকিস্তানে একটি পৃথক ট্রিপ এর উপর, জনাব রজার্স এবং তার ফিল্ম ক্রু ধারন করেন দেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা “রিস্টোর নরমালিটি” এর মাধ্যমে, সেনাদল স্থাপন পরিদর্শন এবং মাঠে সেনাদলদের অনুষঙ্গ এর উপর।তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নৃশংসতার অস্বীকার করা সত্ত্বেও আমরা বাংলার যেসকল গ্রাম ধ্বংস করা হয়েছিল তা চিত্রায়িত করতে পেরেছিলাম।

প্রতিবেদনে আরও ঘটনা রয়েছে যা বর্তমান ট্রাজেডির সন্ধান দেয়।.

মি. রজার্স বলেন, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলিতে গত ১০ বছরের নৃশংস্তার দিকে তাকালে দেখা যায়, “এটিই সবচেয়ে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি যার সম্মুখীন হই আমি”। এবং সবচেয়ে দুঃখের বিষয় যে, পৃথিবী তাকিয়ে দেখছে এবং এমনটি হতে দিচ্ছে।

বব রজার্স তৈরী করেছেন পর্যায়ক্রমিক অত্যন্ত প্রশংসিত প্রতিবেদন “ফার্স্ট টিউজডে” (এখন “ক্রোনোলগ”), ইসরাইলী বিমান বাহিনীর গল্পসহ, সোভিয়েত মিশরীয় বিমান প্রতিরক্ষা, আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাণিজ্য, এবং ক্যাস্ট্রোর কিউবার।
আরও যোগকৃত গল্প ঘোষনা করা হবে নভেম্বরে ২৬ “ক্রোনোলগ” সংস্করণে.

এনবিসি নিউজ সংবাদদাতা গ্যারিক আটলে প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী এবং ইলিয়ট ফ্রাঙ্কেল হলেন নির্বাহী প্রযোজক।

এনবিসি-নিউ ইয়র্ক, ১১-৮-৭১

.

13.181.545-546

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে আমেরিকার বুদ্ধিজীবী মহলের আবেদন বাংলাদেশ ডিকুমেন্ট ১২ নভেম্বর, ১৯৭১

পাকিস্তানে সাহায্য বন্ধের জন্য প্রেসিডেন্ট নিক্সনের কাছে আমেরিকার বুদ্ধিজীবী মহলের আবেদন

আমেরিকান বুদ্ধিজীবীমহলের নিন্মলিখিত শতাধিক সদস্য থেকে দেশটির বিশ-এর অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করা হয়-

নোবেল বিজয়ীদের পল স্যামুএলসন  এবং এম.আই.টি. এর সালভাদর লুরিয়া  এবং হার্ভার্ড শিমোন খাজনেটস ; প্রধান একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের গ্যাব্রিয়েল আল মুখ (স্ট্যানফোর্ড), জেমস টবিন(ইয়েল), টাল্কেট পারসন্স, ওয়াসিলি লিয়নটিফ ড্যানিয়েল বেল, সিমুর লিপ্সেট(হার্ভার্ড), জর্জ রাতজেন্স, ফ্রাঙ্কো মোডিগ্লিয়ানি এবং রবার্ট সলোহ (এম.আই.টি.); বিশিষ্ট এশীয় বিশেষজ্ঞ হেনরি রোসভস্কি,  জন মন্টোগোমারি, বেঞ্জামিন শোয়ার্জ (হার্ভার্ড), লুসিয়ান পাই। ম্যারুন উইনার, হ্যারল্ড আইজেক্স পৌল রোজেন্সটাইন রোডেন  (এম.আই.টি)। অ্যালেক্স ইনকাল্স, জন ডব্লিউ লুইস, রবার্ট সি উত্তর (স্ট্যানফোর্ড), রিচার্ড এল পার্ক(মিশিগান), ডেভিড ম্যেন্ডেলবাম, লিও রোজ, জেরাল্ড বিয়ারম্যান, রালফ রার্টস্লাফ  (বার্কলে), এবং অন্যান্য।
রাষ্ট্রপতি রিচার্ড এম নিক্সন, রাজ্য সচিব উইলিয়াম পি রজার্স, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনসভার সদস্যদের প্রতি:

পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের হুমকি মার্কিন সংকলনের উপর একটি ভারী দায়িত্ব অর্পণ করে।গত মার্চে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পূর্ব বাংলার জনগণের উপর ব্যাপক হামলা শুরু করে যারা মাত্র কয়েক মাস আগেই সিংহভাগ পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন পক্ষপাতিত্ব একটি রাজনৈতিক দল সমর্থন করেছিলো।প্রায় ৩০০,০০০ বাঙালিদের হত্যা করা হয়েছে এবং প্রায় নব্বই লক্ষ পূর্ব বাংলা শরণার্থীদের ভারত সীমানা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে।প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০০০ হাজার শরণার্থী ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নেয়।এই অসহায় মানুষের খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে ভারত সরকার হিমশিম খায়।পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের হামলার ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় ভারত সরকার প্রাণপন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। পশ্চিম পাকিস্তানের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি হুমকির সম্মুখীন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধে শুধুমাত্র ভারত ও পাকিস্তান নয়; চীন, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রও শঙ্কিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের একটি সামরিক মিত্র এবং পাকিস্তানের সামরিক সরকার সমর্থনকারী নীতি অনুসরণ করছে। ।আমরা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখি।নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা সত্ত্বেও, আমরা পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য সরবরাহ অব্যাহত রাখি।একমাত্র এভাবেই আমরা পাকিস্তানকে প্রভাবিত এবং শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারি;এ যুক্তির ভিত্তিতে আমাদের এরূপ কর্মপন্থা গৃহীত হয়েছিলো।কিন্তু এই নীতি শুধুমাত্র ভারত এবং বাংলাদেশের জনগনকে পাকিস্তানের সাথে কেবল বিচ্ছেদই সৃষ্টি করে,পাকিস্তান সরকারকে অত্যাচার বন্ধ করে রাজনৈতিক সমঝোতা স্থাপনে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি।

নীতিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এমন একটি সরকারের পাশে দাঁড় করায় যারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করেছে।তারা পূর্ববাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণের সমস্ত মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত করেছে এবং নিরস্ত্র নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে নির্মম গণহত্যা চালিয়েছে। যে কারণে জাতীয় স্বার্থের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এর নীতির ন্যায্যতা প্রতিপাদন করা যায় না। তাছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি কঠোর জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে যৌক্তিক হতে পারে না। একটি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থাকে সমর্থন করা, যারা কিনা নিজস্ব সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের বিপক্ষে সংগ্রাম করে, তা নিতান্তই মূর্খতা। ন্যায়বিচারের প্রতি বিবেচনা,মানবতা, এবং জাতীয় স্বার্থের ব্যাপারে স্পষ্টভাবে আরেকটি আবেদন এই যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের  ক্ষমতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নমনীয় হতে নীতিতে আমুল রদবদল আনতে হবে।আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছি যে:

১. পাকিস্তানকে জানান হোক , যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বা অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করবে না, পাইপলাইনে বর্তমানে সহায়তা বহাল থাকবে না, কিংবা যতক্ষণ না সেখানে পূর্ববাংলার নির্বাচিত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়,ততক্ষণ পর্যন্ত স্থগিত ঋণ পরিশোধ হবে না।
২. ভারতে আশ্র্য় নেওয়া পুর্ববাংলার শরণার্থীদের পাকিস্তানের অনুরূপ সাহায্য করা যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা পূর্ববঙ্গে ফেরত আসতে সমর্থ হয় এবং উল্লেখযোগ্যভাবে শরণার্থীদের পরিত্রাণের খরচের জন্য ভারতের সহায়তা বৃদ্ধি করা।
৩. জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্ববাংলার জণগনকে সহায়তা প্রদান।
৪. ভারতের সাথে যুদ্ধের বিষয়ে পাকিস্তানকে জানানো হোক পাকিস্তানের এরূপ ভাবার কোন কারণ নেই যে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের মত এবারও ভারতের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন প্রত্যাহার করবে।
৫. মুসলিম অধ্যুষিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র বিশেষত ইন্দোনেশিয়া,মালয়েশিয়া,ইরান ও তুরস্ককে জানান যে,পাকিস্তান সরকারকে পূর্ববাংলার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মধ্যস্ততা বন্দবস্ত করতে উৎসাহিত করার জন্য আমরা তাদের পক্ষ থেকে যেকোনো প্রচেষ্টা স্বাগত জানাই।

আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থ এবং নৈতিক উদ্বেগ পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন প্রত্যাখ্যান করা উচিত।বাঙালীদের দাবীকে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে এবং শরণাত্থী সংকট কাটাতে ভারত সরকারকে ব্যাপক পরিসরে সাহায্য করা হবে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপনের ঐতিহাসিক প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে।বর্তমান পরিস্থিতি দাবী  করে যে, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতি আমরা আমাদের নীতি পুনঃনিরীক্ষণ ও পুনর্বিবেচনা করবো,যেখানে শান্তি হুমকির সম্মুখীন।

.

13.182.547-550

শিরোনাম সুত্র তারিখ
শরণার্থীদের জন্য অর্থ সংগ্রহের উপর আরেকটি প্রতিবেদন ইস্ট পাকিস্তান ইমারজেন্সী রিফিউজী ফান্ড ২৩ নভেম্বর, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তান জরুরী শরণার্থী তহবিল

সাউথ পয়েন্ট প্লাজা, লান্সিং, মিশিগান

নভেম্বর ২৩, ১৯৭১

অংশগ্রহন করার জন্য আপনার প্রতি আমন্ত্রন রইল

জাতীয় গণ ক্যাম্পেইনের জন্য জরুরী কৌশলগত সভা

আজ ভারতীয় শরণার্থী ক্যাম্পে প্রায় ৪০০০ শিশু মারা গেছে যাদের বেশীরভাগই ছোট বাচ্চা। (উৎসঃ সিনেটর কেনেডির ভাষণ, ৪ঠা নভেম্বর)

গত ২৬ শে অক্টোবর ব্রাসেলসে প্রদত্ত শ্রীমতী গান্ধীর ভাষ্য অনুযায়ী সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৩৫ মিলিয়ন ডলারের সাহায্য আসার কথা থাকলেও ভারতে পৌঁছেছে ৩০ মিলিয়ন ডলারের থেকেও কম। ভারত ইতোমধ্যে আনুমানিক ৩৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে এবং আগামী মার্চ এর মধ্যে আরও ৫০০ মিলিয়ন খরচ হবে।

হাউজ অফ সিনেটে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের শরনার্থী ত্রান বিল পাশ হওয়া এবং বাঙ্গালীদের জীবন বাঁচানোর জন্য সেই অর্থ প্রশাসন কতৃক পাঠাবার সিদ্ধান্ত নিতে নিতে বাংলার অপুস্টিতে ভোগা রোগাক্লিষ্ট শিশুগুলো বেঁচে থাকবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।

আমাদের অবশ্যই ভারতে এবং বাংলাদেশের যুদ্ধবিহীন এলাকায় শরণার্থীদের সাহায্যার্থে যথেষ্ট পরিমানে এবং অত্যন্ত দ্রুত উক্ত অর্থ ছাড় করতে হবে। যেখানে আমাদের মতই রক্ত মাংসের কিছু মানুষ এমন নিদারুন যন্ত্রণায় ভুগছে আর ধুঁকে ধুঁকে মরছে সেখানে আমাদের অন্য দিকে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই।

যদি আমরা একটি মারাত্মক বিপর্যয় এড়াতে চাই তাই দেশজুড়ে এই পিপল-টু-পিপল প্রচারনার কৌশলগত সভায় আপনার অংশগ্রহণ অপরিহার্য।

একেতো বাঙ্গালীরা গত বছর বয়ে যাওয়া শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ঘুর্নিঝড়ে বিরাট মুল্য দিয়েছে তার উপর মানব সৃষ্ট এই দুর্যোগ সেটিকেও ছাড়িয়ে গেছে যেখানে দশ লক্ষাধিক নিরীহ মানুষ জীবন দিয়েছে।

পিপল-টু-পিপল শুরু করার হয়েছে কয়েকটি গ্রুপ এবং আমেরিকার হাজার হাজার ব্যক্তির সহযোগিতায় যার একমাত্র উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের জনগণের ভয়াবহ যন্ত্রণা মুক্তিতে সাহায্য করা।

সকল সক্রিয় একক ব্যক্তি এবং সংগঠনসমুহের সাথে আমরা জাতীয় কৌশল নির্ধারণ এবং এই প্রচারণা শুরুর জন্য করনীয় সম্পর্কে আলোচনার জন্য একটি জরুরী সভা করতে চাই।

এই প্রচারনার উদ্দেশ্য হল ১ কোটি আমেরিকান খুঁজে বের করা যারা পরবর্তী ৬ মাস প্রতিদিন ৩৩ সেন্ট অথবা প্রতিমাসে ১০ ডলার করে দিতে রাজী হবে।

একবার ভেবে দেখুন, আমরা যদি সমগ্র আমেরিকার ২০ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ৫% লোক খুঁজে বের করতে পারি যারা প্রত্যেকে একজন শরনার্থী শিশু, একজন মা কিংবা একজন বাবার দায়িত্ব নিবেন তাহলে আমরা মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্ধার অভিযান শুরু করতে পারবো।

“মাত্র ৫ ডলারে আপনি একটি ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিতে পারেন যে এশিয়ানদের বাঁচা মরায় আমেরিকানদের কোনো আগ্রহ নেই”

আমরা স্বীকার করি যে অনেক পরিবারের জন্যই এই ত্যাগ অনেক কিছু, কিন্তু আমাদের মন বলছে অন্তত ৫% জনগন এই প্রচারনায় অংশগ্রহণ করবে।

পরিবারসমুহ, চার্চ গ্রুপ, স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বুধবার (অথবা অন্য যেকোনো দিন) রোজা-উপবাস থাকতে পারে এবং তাদের খাবারের এই অর্থ “বুধবারের মানুষ” ব্যানারে বাংলাদেশের জনগণের জন্য দান করতে পারে।

এই ক্যাম্পেইন এমন একটি মাত্রার বিরাট বিপর্যয় যে, (এতই বিরাট এক বিপর্যয় যে অনেকেই এর ভয়াবহতা অনুধাবন করতে পারছেন না) একজন সাধারন মানুষও কিছু না কিছু করতে পারে। তিনি একটি শিশুর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারেন।

রোজার দ্বারা একজন মানুষ ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত হতে পারেন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি বাঙ্গালী সংস্কৃতি এবং জীবন যাপনের সাথে পরিচিত হয়ে নিজেকে আলোকিত করতে পারেন।

আপনি এই ক্যাম্পেইনে স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে জরুরী এবং মোক্ষম ভুমিকা পালন করতে পারেন।

জাতীয় পিপল-টু-পিপল ক্যাম্পেইনের নীতিনির্ধারক কমিটি এই ধারনাটি দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চায় এবং আপনার দিকনির্দেশনা, সাহায্য এবং সহযোগিতা প্রার্থনা করে।

এখানে সংযুক্ত আলোচ্যসুচী থেকে আপনারা ধারণা পাবেন যে কি ধরনের আইডিয়া নিয়ে আপনারা আসতে পারেন এবং আপনার স্থানীয় কমিউনিটিতে কি ধরনের পদক্ষেপ কাজে লাগতে পারে।

আমরা প্রচুর পরিমানে সাহিত্য, স্লাইড, চলচ্চিত্র, পোস্টার, বাংলাদেশ ক্রিসমাস কার্ড, বই ইত্যাদি আশা করছি। তবে আপনারা যে যা পারেন অনুগ্রহপূর্বক নিয়ে আসবেন।

অনুগ্রহপুর্বক ১লা ডিসেম্বর, বুধবার এর আগেই আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করুন।

– ই পি ইমারজেন্সি রিফিউজি ফান্ড

অন্যান্য স্পন্সর সংস্থাসমুহঃ

বেওয়া, প্রজেক্ট রিলিফ, বিডিএল, অক্সফাম, বিআইসি

লান্সিং আসার নির্দেশনাঃ

ডেট্রয়ট মেট্রো এয়ারপোর্ট থেকে – গাড়িতে ১ ঘন্টা ১৫ মিনিট। পূর্ব লান্সিং ধরে, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি হয়ে ট্রোব্রিজ সড়ক দিয়ে বেরিয়ে যান। প্রথম বাতিতে বামে আসুন। শপিং সেন্টার পর্যন্ত এসে ডানে পিছনের চার্চ পার্কং লটে আসুন।

শিকাগো এবং ডেট্রয়ট থেকে এয়ার মিশিগান এবং ট্রান্স মিশিগান নামের কমিউটার এয়ারলাইন্সেও আসতে পারেন।

আলোচ্যসুচী

৩ রা ডিসেম্বর, শুক্রবার

সকাল ৯টা – দুপুর ১২টা                  রেজিস্ট্রেশন

দুপুর ১২টা – দুপুর ১ টা                   মধ্যাহ্ন ভোজঃ স্বাগত বক্তৃতা, বর্তমান পরিস্থিতির উপর রিপোর্ট

১টা ৩০ মিনিট – ৩টা ৩০ মিনিট         দলীয় আলোচনাঃ আলোচনার বিষয়

                                 ১। জাতিসংঘের ভূমিকা

        ২। ত্রান কার্যক্রম

        ৩। যুদ্ধ

        ৪। শরনার্থীরা কি ফিরে যাবে?

        ৫। আমেরিকার নীতি

        ৬। বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ

        ৭। বাংলাদেশ এবং মুক্তিবাহিনীর ভবিষ্যৎ

বিকাল ৪টা – ৫টা                 দলীয় আলোচনার প্রতিবেদনঃ আমেরিকায় কার্যক্রমের সারসংক্ষেপ

সন্ধ্যা ৭ টা – ৯ টা                 পিপল-টু-পিপল ক্যাম্পেইন এবং বুধবারের রোজা – এর কৌশলঃ

                                            এস পোদ্দার – চেয়ারম্যান, ইপিইআরএফ

                                            শেইলা ডোয়াম এবং রন ইন্ডেন – ন্যাশনাল ফাস্ট কমিটি

                                            আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্ব

৪ই ডিসেম্বর, শনিবার

সকাল ৯ টা- ১০টা      ন্যাশনাল ক্যাম্পেইনের কতিপয় প্রকল্প কার্যকরকরণ

১০টা ৩০ মিনিট – ১২টা ৩০ মিনিট     ওয়ার্কশপঃ মিডিয়া, যুবসমাজ, গণশিক্ষা, তদবির, তহবিল সংগ্রহ কৌশল

১টা ৩০ মিনিট – বিকাল ৩টা   ওয়ার্কশপ প্রতিবেদন এবং আলোচনা

বিকাল ৩ টা – বিকাল ৫ টা     দায়িত্ব বন্টনঃ সময়সুচী, ন্যাশনাল ক্যাম্পেইনের সমন্বয়

সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ – ৯ টা ৩০ মিনিট       বাংলাদেশ রাত্রিঃ বিনোদনমূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

৫ই ডিসেম্বর, রবিবার

সকাল ১০টা- দুপুর ১২টা

মুক্তালোচনা

আমন্ত্রিত অতিথিদের কয়েকজন নিন্মরুপঃ

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি

জনাব কে আহুজা, কনসাল জেনারেল অফ ইন্ডিয়া, নিউইয়র্ক

জনাব এম কে রাসগোত্রা, মিনিস্টার অফ পলিটিক্যাল এফেয়ার্স, ভারতীয় দুতাবাস

জনাব এম এস সিদ্দীকি, আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

জনাব চেস্টার বোলস, ভারতে সাবেক রাষ্ট্রদূত

সম্মানিত রবার্ট ডিরিনান, ইউ এস কংগ্রেসম্যান-মাস

ডঃ হোমার জ্যাক, ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অফ রেলিজিওন ফর পিস

জনাব উইলিয়াম প্লাইম্যাট, প্রিফার্ড রিস্ক বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান

জনাব জর্জ ওয়াল্ড, নোবেল বিজয়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়

জনাব হেনরি নাইলস, চেয়ারম্যান, বাল্টিমোর লাইফ ইনস্যুরেন্স কোঃ

জনাব থমাস কলিন্স, এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাপ এন্ড কলিন্স

জনাব ম্যাক্সওয়েল ডেইন, প্রেসিডেন্ট, ডয়েল, ডেইন এন্ড বেমব্যাচ

জনাব রবার্ট রিস, ডয়েল, ডেইন এন্ড বেমব্যাচ

জনাব ইকবাল আহমেদ

জনাব কেনেথ স্মিথ, লিগ্যাল এডভাইসর, ইস্ট পাকিস্তান ইমারজেন্সি রেফিউজি ফান্ড, ইনকরপরেশন

জনাব স্টেইনলি বুর্কে, অক্সফাম- কানাডা

জনাব রবার্ট ফিঙ্ক, অক্সফাম- আমেরিকা

জনাবা শিলা ডাহম, প্রজেক্ট রিলিফ

জনাব রিচার্ড ফার্নান্দেজ, ভিয়েতনামের ক্লারগি এন্ড লেয়মেন সংশ্লিষ্ট

ডঃ ডব্লিউ বি গ্রিনাফ, ডঃ লিঙ্কন চেন এবং জনাব ডেভিড ওয়েসব্রড, বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার

জনাব রন ইন্ডেন, বাংলাদেশ ইমারজেন্সি ওয়েলফেয়ার এপিল

জনাব রিচার্ড ওয়েনার, রিচার্ড ওয়েনার, ইনক।

রেভারেন্ড ডব্লিউ জে ডেয়, চেয়ারম্যান, লান্সিং এরিয়া ইমারজেন্সি রেফিউজি ফান্ড

জনাব ইসলাম তরফদার, বাংলাদেশ ইমারজেন্সি ওয়েলফেয়ার এপিল

জনাব টিনু পুরী

জনাব সুব্রত ঘোষ

জনাব হক

জনাব সামসুল বারী, বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ

ইউনিসেফ

কেয়ার

আমেরিকান রেডক্রস

ইন্টারন্যাশনাল রেস্কিউ কমিটি

ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস

চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস

আমেরিকান্স ফর চিল্ড্রেন্স রিলিফ

সেইভ দ্য চিল্ড্রেন ফেডারেশন ইমারজেন্সি ফান্ড

স্থানঃ ইউনাইটেড মিনিস্ট্রি অফ হাইয়ার এজ্যুকেশন

১১১৮ এস, হ্যারিসন রোড, ইস্ট লান্সিং, মিশিগান ৪৮৮২৩

.

13.183.551

শিরনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের সমর্থনে কবিতা পাঠের আসর বাংলাদেশ নিউজ লেটার ১০ দিসেম্বর,১৯৭১

গিন্সবার্গ এবং আ্যন্ড্রি ভজনেসেন্সস্কি এর দ্বারা কবিতা পঠন

নিউ ইয়র্কঃ প্রথমবারের জন্য প্রখ্যাত রাশিয়ান কবি আ্যলেন জিন্সবার্গ এবং আ্যন্ড্রি ভজনেসেন্সস্কি একত্রে কবিতা আবৃত্তি করবেন। কবিতা পঠন অনুষ্ঠিত হবে শনিবার,২০শে নভেম্বর সন্ধ্যা ৭টায়, সেন্ট জর্জ চার্চ,২০৭ই,১০ স্ট্রীট,যেখানে বাংলাদেশের সমস্যা এবং আমেরিকানদের এই সমস্যা নিঃরসনের পরিকল্পনা সম্পর্কে জনসচেতনতার প্রকাশ ঘটবে বলে মনস্থ করা যায়।

জনাব গিন্সবার্গ,সম্প্রতি যিনি ভারতের একটি উদবাস্তু ক্যাম্প সফর করে ফিরে এসেছেন তিনি উদ্বৃত করেন,

Millions of brothers in woe,

Millions of sisters nowhere to go,

Millions of children in the rain..

Millions of mothers in pain-

September flood over Jessore road.

তাদের সাথে জোগদান করেন কেনেথ কোচ, এড স্যান্ডার, গ্রেগ্রী করসো, পিটার অরল্ভোস্কি,অ্যনা ওয়াল্ডম্যান, মাইকেল ব্রাঊনস্টেইন, ডিক গ্যালাপ এবং রন প্যাজেট।

আমেরিকানরা কবিতা পঠন অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করেন বাংলাদেশীদের জন্যে।একদল সচেতন নাগরিক কাজ করে যাচ্ছে জনগণদের বাংলাদেশ সম্পর্কে জানাতে এবং বাংলাদেশের ত্রাণ তহবিল বৃদ্ধি করতে।

             ইংল্যান্ডে কবিতা পাঠ

১৪নভেম্বর,১৯৭১-এ অভিনেত্রী গ্লেন্ডা জ্যাকসন স্যাডলার ওয়েলস থিয়েটারে একটি বাংলা কবিতা আবৃত্তি করেন এবং শেক্সপিয়ের ও ইয়টসের রচনাংশও পড়েন বাংলাদেশী শরণার্থীদের জন্য সাহায্যের চাঁদা তোলার উদ্দেশ্যে।জনপ্রিয় লোকশিল্পীসহ আরও বাঙ্গালীশিল্পী এবং রবি শংকরের ভাগ্নে বিরেন্দর শংকর সেতারা বাজিয়েছিলেন।

.

.

13.184.552-554

    শিরোনাম      সূত্র      তারিখ
ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের মন্তব্যের উপর একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার ১৩ দিসেম্বর,১৯৭১

.

বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার

৪২৩-হেলায় স্ট্রিট, এস.ই. ওয়াশিংটন, ডিসি ২০০০৩. ২০২-৫৪৭-৩৮৭৩

১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দক্ষিন এসিয়ার শংকট সম্পর্কে উদ্বিগ্ন আমেরিকানদের একটি দলকে প্রতিনিধিত্ত্ব করে বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার।ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের ৭ ডিসেম্বর হোয়াইট হাউজে প্রেস এর বক্তব্যের উপ্র নিম্নোক্ত বিবৃতি জারি করেন।(ডঃ হেনরী কিসিঞ্জারের সম্পূর্ণ বক্তব্যটি যা ৯ ডিসেম্বর মহাসভায় হয়েছিল তা সিনেট সভার সদস্য বেরীগোল্ড ওয়াটারের দ্বারা রেকর্ড হয়েছিল।)

৭ ডিসেম্বর প্রেস ব্রিফিং এ প্রধান উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার উপস্থাপন করেছিলেন প্রথমবারের মত দক্ষিণ এশিয়ার সংকট নিয়ে হোয়াইট হাউস সংস্করণে

যুক্তরাষ্ট্রের পালিত ভূমিকা।

কিসিঞ্জারের বিবৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান সংঘাতে ভারত যে “প্রধান দায়িত্ব বহন করে” এবং “প্রধান হল আগ্রাসক” পূর্বের এ দুটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ঘোষিত বিবৃতিকে সংযুক্ত করে।It demonstrates the

Nixon Administration’s refusal to perceive the flight of 10 million refugees and the

Pakistan Army massacre of a repotted I million civilians inside East Bengal as the

root causes of the war.

এরকম সাতটি “আনুষাঙ্গিক বিষয়াবলী” যা ইউ.এস এর সাথে তার সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত করে।কিসিঞ্জার শুধুমাত্র সংকটের ভুল বোঝাবোঝি প্রকাশ করেননি বরং উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকের অদূরদর্শী পক্ষপাতিত্তের প্রচেষ্টা প্রকাশ করেন।

কিসিঞ্জার দাবি করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিম্নলিখিত ফলাফল অর্জনে সাহায্য করেছিলঃ

কিসিঞ্জার দাবি ১: পূর্ব পাকিস্তানে সকল ত্রাণ সরবরাহ করা হয় আন্তর্জাতিক সংস্থার বিতরণের মাধ্যমে।

কিন্তু বাস্তবে, নভেম্বরের মাঝখানে এবং এক সপ্তাহের কম সময়ের আগেই তার সমগ্র বাহিনী পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৯ নভেম্বর ইউ এন কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রেস রিলিজ অনুযায়ী,জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তান

রিলিফ অপারেশন (ইউএনইপিয়আরও) এখন পর্যন্ত প্রকৃত ত্রাণ বিতরণ শুরু করে নি।

বেশীরভাগ সাহায্যের পিছনে অবদান ছিল মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের, পিএল 480 খাদ্যশস্য আকারে বিতরনের মাধ্যমে।(সেক.  নিউ ইয়র্ক টাইমস. ১৭ নভেম্বর ও

২০।বাল্টিমোর সান ১১ নভে.)

কোন খাদ্যশস্য বা অন্যকোন সহায়তা মুক্তিবাহিনীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিতরণ করা হয় নি।

কিসিঞ্জার দাবি ২: বেসামরিক শাসনের কাছে ফেরত পাঠানোর জন্য পাকিস্তান সরকার একটি সময়সূচী ঘোষনা করে।

কিন্তু বাস্তবে, ডিসেম্বরে নতুন নির্বাচনী তফসিলে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করে, নির্বাচনী অবৈধ ঘোষনা করা হয় কারণ জয়লাভকারী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়।বাল্টিমোর সান এর জন.ই ঊডরফ ১২নভেম্বর পুর্বপাকিস্তানের গোপালগঞ্জ থেকে রিপোর্ট করে যে, ৭৮টী জাতীয় পরিষদে আসন থাকার কথা ছিল যার সম্ভবত মাত্র ২০টি ভোটিং প্রতিযোগিতার জন্য স্থির করা হয়।

৬জন পন্থি স্প্লিন্টার দলের একটি জোটের প্রতিটি জেলার একজন লোকের প্রার্থীতার উপর ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে অবশিষ্ট আসন নিজেদের মধ্যে ভাগ করার পরিকল্পনা ছিল যারা তারপর বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় প্রভাব বিস্তার করবে।

কিসিঞ্জার দাবি ৩: পাকিস্তান সরকার বেসামরিক গভর্নরের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর প্রতিস্থাপন করতে সম্ভব হয়।

পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর টিক্কা খান মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরে পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের জনপ্রিয় বিক্ষোভে তার নির্মম আচরণ দমনের জন্য “বেলুচিস্তানের কসাই” শিরনাম অর্জন করে।

সেপ্টেম্বরে বাঙ্গালী বেসাম্রিক গভর্ণর ডঃ এ এম মালিক কর্তৃক খাঙ্কে প্রতিস্থাপন করা হয় কিন্তু এটি পাকিস্তানের  দূর্বল অবস্থানকে ব্যাখ্যা করতে পারে না কারণ সন্ত্রাসী সেনা অভিযান তখনও প্রশমিত করা হয় নি এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা নিরবিচ্ছিন্নভাবে ধ্বসে পড়েছিল যার সাক্ষ্য হচ্ছে প্রতিদিন প্রদেশ থেকে হাজারও উদ্বাস্তুর ক্রমাগত পলায়ন।

যদিও ডঃ মালিকের পূর্ব পুরুষ থেকেই ভয়ংকর রকম খ্যাতি ছিল না কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক সমাজে তার কিছু যোগ্যতার জন্য তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত হন। ডঃ মালেক,

(ক) তিনি কখনও তার জীবনে কোন পদে বহাল ছিলেন না।

(খ)তিনি ইয়াহিয়া খান কর্তৃক মনোনীত ছিলেন।

(গ)মার্শাল ল এর অধীনে পূর্ব বাংলাকে শাসন করতেন এবং

(ঘ) বাঙ্গালী দেশবাসীর জন্য তিনি একজন বিশ্বাসঘাতক হিসেবে তার মেয়ে কর্তৃক সমালোচিত ছিলেন।

কিসিঞ্জার দাবি ৪: পাকিস্তান সরকার একটি রাজক্ষমার ঘোষনা করে।

বাস্তবতাঃ অব্যাহত সন্ত্রাসীমূলক পরিবেশে রাজক্ষমার ঘোষনাটি একটি ফাঁকা অংগভঙ্গি যা গুটী কয়েককে অনুপ্রাণিত করে। যদিও কোন উদবাস্তুকে ফিরে আসার এবং পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ চাপা উত্তেজনা নিরসনে কোন অবদান রাখে নি।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেয়ায় ক্ষান্তি দেয়নি এবং বেশুমার নৃশংসতা সংগঠিত করে যা এখন বিস্তারিতভাবে বিশ্বের প্রেস দ্বারা নথিভুক্ত হয়েছে।

কিসিঞ্জার দাবি ৫:পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে সম্মত ছিল “এমনকি তারা কারা ছিল সম্ভবত এ ধরনের কোন বিতর্ক ছিল”।

বাস্তবতাঃ ইউ.এস. এর গন্যমান্য ব্যাক্তিদের বিরুপ মনোভাবের পরও পাকিস্তান সরকার কোন দিক থেকেই বাংলাদেশি সরকারের কোন প্রতিনিধিদের সাথে মধ্যস্থতা করতে সম্মত হয়নি।

যদিও ডঃ কিসিঞ্জার তার প্রথম ব্রিফে নোট করেন যে পাকিস্তান সরকার ইউ.এস. কর্তৃক প্রস্তাবিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে মধ্যস্থতার বিষয়টি গ্রহন করে পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তান সরকার সম্মত বলে তা নিয়ন্ত্রণ করে।পরে তিনি ক্ষমতা অর্জন করেন এই উক্তিটি বলার যে পাকিস্তানি সরকার সম্মত হন “শুধুমাত্র সেইসব বাংলাদেশি মানুষের সাথে কথা বলার যারা কোন প্রকার অপরাধের সহিত অভিযুক্ত নন”। এই সঙ্গায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সকল নেতা,  অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদসহ অনেকে বহির্ভূত হয়ে পড়বেন।

পরবর্তী ব্রিফিং এ ডঃ কিসিঞ্জার এইসব অস্বীকার করেন এই বলে যে, “আমরা পাইনি

পাকিস্তান সরকারের চুক্তি… আমি শুধু বলছি আমরা কি করার চেষ্টা করছিলাম”.

কিসিঞ্জার দাবি ৬: পাকিস্তান সরকার তার প্রতিরক্ষা আটর্নির সঙ্গে কথা বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি প্রদান করে মুজিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে।

বাস্তবতাঃ বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি একটি বাস্তব সমাধানকে ব্যাতিরেকে ইঙ্গিত করেছিল সন্দেহাতীত ব্যর্থতার।

সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে পাঠানো অব্যাহত রাখা হয় যাতে তার লিভারেজ না হারান হয় এবং কঠোরভাবে জন নীরবতা বজায় রাখা অনুচ্চারিত বর্বরতার একটি ভাষ্য যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মুজিবের সাথে সাক্ষাত করার অনুমতিকে প্রত্যাখান করে।আমাদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এমনকি ভগ্ন প্রমাণ গুলোও বের করতে ব্যর্থ হয়েছে এখনো মুজিব মৃত বা জীবিত কিনা।

কিসিঞ্জার দাবি ৭ঃ পাকিস্তান সরকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন পূর্ব পাকিস্তাঙ্কে দেওয়া হবে।

বাস্তবতাঃবাস্তবের এই দাবি শুধুমাত্র একটি গভীর সংকটাপূর্ন ভুল বোঝাবুঝির প্রমান নয় বরং কিভাবে একটি জাতি পাকিস্তান কর্তৃক আরোপিত নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রকাশ ঘটাবে তার উপলব্ধির অক্ষমতাও।

রাষ্ট্রপতির আপস পরিকল্পনা ভাঙ্গনের জন্য কিসিঞ্জার ভারতীয় সরকারকে দায়ী করে যা এতই দ্রুতবেগে সম্পন্ন হয় যে তা রাজনৈতিক বিবর্তনে খুব দীর্ঘস্থায়ীভাবে কার্যকর না হলেও রাজনৈতিক পতন সম্পন্ন হয়।

এটা আশ্চর্যজনক ছিল যে, একজন রাজনৈতিক বুঝদার হওয়া সত্ত্বেও কিসিঞ্জার বুঝেনি পাকিস্তানের ধ্বংস ছিল নিশ্চিত যখন আর্মিরা তাদের নিজ জনগণদের উপর নির্মম অত্যাচার শুরু করে।

এপ্রিল বা মে এর দিকে ডঃ কিসিঞ্জারের এটা অক্ষম হওয়া মানুষ হিসেবে তার একটা ত্রুটি বলেই ধরে নেয়া যায়। জুন এ তার ভারত যাত্রার সময় শরণার্থী ক্যাম্পগুলোয় যেতে অস্বীকৃতি জানানো যখন ৪ মিলিয়ন শরণার্থী ইতোমধ্যেই বর্ডার পার হয়ে অপাড়ে যায়, এটা প্রমাণ কোরে আরো বড় একটি  বিরুপকতার।কিন্তু পাকিস্তানের নির্মমতার কোনরুপ উপশমের চিহ্ন না থাকার পরও এবং মহাসভায়ও প্রকাশ্যে হুমকি দেয়া সত্ত্বেও তার একইভাবে ৮ মাস ধরে প্রত্যত্তর দেয়া অব্যাহত রাখার ঘটনা ছিল অমার্জনীয়। এখন পর্যন্ত জেনারেল ইয়াহিয়া খান মুজিবের সাথে একতরফা আলোচনার ইতি ঘটান,যদিও গত মার্চে পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে স্বায়ত্তশাসনের ভিত্তিতে শান্তিচুক্তি্তে আসা অসম্ভব কিছু ছিল না।

কিন্তু একসময় সৈন্যবাহিনী সরানো হয়েছিল, একসময় সৈনিকদের ধ্বংসলীলা চালানোর জন্য খালাস করা হয়েছিল এবং শুরু হয়েছিল গণহত্যা, অবিভক্ত পাকিস্তানের সকল আশা চূর্ন হয়েছিল। ২৫শে মার্চ এর পর আর সন্দেহ থাকলো না যে স্বায়ত্তশাসন নয়, স্বাধীনতাই এর ইস্যু।

.

13.185.557

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে সামরিক বল প্রয়োগে সোভিয়েত প্রতিক্রিয়া। ইয়াহিয়ার কাছে সুপ্রীম সোভিয়েত সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি নিকোলাই পদগোর্নির বার্তা।

প্রভাদা

উদ্ধৃতিঃ সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা- ‘বাআংলাদেসশ সংগ্রাম ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা।

 

৪ এপ্রিল, ১৯৭১

.

সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সেভিয়েতের সভাপতিমন্ডলীর সভাপতি নিকোলাই পদগোর্নি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে নিম্নোক্ত বার্তা পাঠিয়েছেন

“মাননীয় প্রেসিডেন্ট মহাশয়, ঢাকার আলোচনা ভেঙ্গে যাওয়ার খবর এবং সামরিক প্রশাসন চূড়ান্ত ব্যবস্থা অবলম্বন প্রয়োজন মনে করে পুর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের বিরুদ্ধে সামরিক বলপ্রয়োগ করেছেন- এই মর্মে খবর সোভিয়েত ইউনিয়নে গভীর উদ্বেগ সঞ্চার করেছে।

“এই ঘটনার ফলে পাকিস্তানের অগণিত মানুষের প্রাণহানি, নিপীড়ন ও দুঃখকষ্টের খবরে সোভিয়েতের জনগণ বিচলিত না হয়ে পারে না। মুজিবর রহমান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বন্দী করায় এবং নির্যাতন করায়ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উদ্বেগ বধ করছে। এইসব নেতারা হালের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সন্দেহাতীত সমর্থন লাভ করেছিলীন। সোভিয়েত জনগণ সর্বদাই পাকিস্তানের মানুষের মঙ্গল কামনা করেছে এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের জটিল সমস্যার সমাধানের তাদের সফলতায় আনন্দিত হয়েছে।

“পাকিস্তানের জনগণের কঠিন পরীক্ষার দিনে খাঁটি বন্ধু হিসেবে আমরা দুয়েকটা কথা না বলে পারি নাআ। আআম্রা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানের বর্তমানে যে জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়েছে, বলপ্রয়োগ না করে রাজনৈতিকভাবে তার সমাধান করা যায় এবং করতে হবে। ঊর্ব পাকিস্তাণের দমননীতি এবং রক্তপাত যদি চলতে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে সমস্যার সমাধান আরো কঠিন হয়ে উঠবে এবং তাতে পাকিস্তানের সমস্ত মৌল স্বার্থেরই বিরাট ক্ষতি হবে।

“প্রেসিডেন্ট মহাশয়, সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমন্ডলীর পক্ষ থেকে আপনাকে কিছু বলা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। পূর্ব পাকিস্তানের রক্তপাত বন্ধ করার জন্য, সেখানকার মানুষের নিপীড়নের অবসান ঘটানোর জন্য এবং সমস্যা সমাধানের একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উপায় উদ্ভাবনের জন্য অত্যন্ত জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আপনাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানেরসমস্ত মানুষের স্বার্থ এবং সে অঞ্চলের শান্তিরক্ষার স্বাআর্থ এর ফলে রক্ষিত হবে।

“উদ্ভুতসমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানকে সমগ্র সোভিয়েত জনগণ সন্তোষের সাথে গ্রহণ করবেন।”

আপনাকে আবেদন জানাবার সময়ে আমরা মানবাধিকার সংক্রান্ত সর্বজনীন ঘোষণায় লিপিবদ্ধ সর্বজনস্বীকৃত মানবিক নীতির দ্বারা এবং পাকিস্তানের বন্ধু জনগণের কল্যাণের জন্যে উদ্বেগের দ্বারা পরিচালিত হয়েছি।

“প্রেসিডেন্ট মহাশয়, আপনাকে এই অনুরোধ জানাতে আমরা কোন নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়েছি, আশা করি আপনি তা সঠিকভাবে বুঝতে পারবেন। আমাদের একান্ত কামনা অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানেশান্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হোক।”

ক্রেমলিন, মস্কো, ২ এপ্রিল ১৯৭১             প্রাভদা, ৪ এপ্রিল, ১৯৭১

.

13.186.558

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশঃ সুপ্রীম সোভিয়েতের নির্বাচনের প্রাক্কালে প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের বক্তৃতা

প্রাভদা

উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস

১০ জুন, ১৯৭১

নির্বাচনের প্রাক্কালে সুপ্রীম সোভিয়েত অব ইউ.এস.এস.আর দের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী কোসিগিনের দেওয়া বক্তব্যের সারাংশ

কোসিগিন সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে তার বিশিষ্ট দক্ষিণদিগস্থ প্রতিবেশী ভারতের অনুকূল সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।

ভারতীয়-পাকিস্তানি সম্পর্কের কাঠামো দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি বিরাজ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, পূর্ব-পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া বিদিত ঘটনাবলীর কারণে এই দুইটি দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৈরিতা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি সোভিয়েত সরকারের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজমান পরিস্থিতি লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের ভূমি,  ঘরবাড়ি এবং সম্পত্তি ছাড়তে এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতে আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য করেছে। তাদেরকে সাহায্য প্রদান করা হলেও এই বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু অত্যন্ত সঙ্গীন অবস্থায় রয়েছে।

এইসকল ঘটনা বিশ্বের মানুষের মধ্যে গভীর শঙ্কার সৃষ্টি করেছে। যারা মানবতার নীতিগুলোকে মূল্য দেয় তাদের সবার দাবি করা উচিত যেন উদ্বাস্তুদের তাদের গৃহে ফিরে যাওয়ার মত পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়, যেন তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং পূর্ব-পাকিস্তানে তাদের শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করা এবং বেঁচে থাকার সুযোগ  নিশ্চিত করা হয়।

আমাদের মত হল এই যে যেন অবশ্যই এই সকল পদক্ষেপগুলো অবিলম্বে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক গৃহীত হয়।

আমরা মনে করি অতীতে আমরা যেমন ভারত এবং পাকিস্তানের সম্পর্কের  ক্ষেত্রে উদ্ভূত সকল সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করতে পেরেছি তেমনি একটি  নীতি এক্ষেত্রে গ্রহণ করা হবে যা হবে ভারত এবং পাকিস্তানের জনগণের জাতীয় স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং যা ভারতীয় উপমহাদেশে শান্তি বজায় রাখার জন্য কাজ করবে। যে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক শক্তিগুলো ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের স্বার্থের প্রতিকূলে কাজ করছে এবং নিজ হীন স্বার্থান্ধ উদ্দেশ্যগুলো সিদ্ধি করছে তাদের দ্বারা যেন অন্য এক নতুন অবস্থার সূচনা ঘটে।

.

13.187.559-560

          শিরোনাম       সূত্র      তারিখ
সোভিয়েত পররাষ্ট্র মন্ত্রীর ভারত সগর শেষে প্রকাশিত সোভিয়েত-ভারত যুদ্ধ বিবৃতি  বাংলাদেশ ডকুমেন্টস  ১২ আগস্ট, ১০৭১

                  সোভিয়েত ইউনিয়ন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বরাতে ভারত সোভিয়েত যৌথ বিবৃতি

মি. এ.এ. গ্রোমাইকো’র ভারত সফর

আগস্ট ১২, ১৯৭১।

ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সোভিয়েত ইঊনিয়নের মাননীয় পররাষ্ট্রমত্রী মি. এ.এ. গ্রোমাইকো ৮ আগস্ট থেকে ১২ই আগস্ট ১৯৭১ ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে আসেন।

নিউ দিল্লিতে অবস্থানকালীন সময়ে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী. ভি ভি গিরি সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে আহ্বান জানান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী উনাকে স্বাগতম জানান। এছাড়াও তিনি খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী ফকরুদ্দীন আলী আহমেদ, অর্থমন্ত্রী শ্রী উয়াই. বি. চৌহান এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম প্রমুখের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাছাড়া উনি সাক্ষাৎ এবং বার্তালাপন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার শরণ সিং এর সাথে।

উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ আবহের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। খুব সন্তোষজনক ভাবে উল্লেখ করা হয় যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, প্রযুক্তিগত এবং বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে ভারত-সোভিয়েত যৌথ ভাবে অগ্রসর হচ্ছে। এই শান্তি চুক্তির জন্য রাজনৈতিক ও আইঙ্গত ভিত্তি আরো শক্তিশালী হচ্ছে। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার চুক্তি যেটি সাক্ষরিত হয়েছিল ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে।

উভয় পক্ষই বিবেচনা করে যে চুক্তিটি  তাদের দুই দেশের জন্যই ঐতিহাসিক ঘটনা। চুক্তির সম্পর্কের একটি যৌক্তিক পরিণতি হিসেবে যে আন্তরিক বন্ধুত্ব, পারস্পরিক আস্থা ও তারতম্য বন্ধন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এটা ভারত ও সোভিয়েতের মধ্যে মৌলিক স্বার্থ তথা, জাতি ও মধ্যবর্তী ফলপ্রসূ সহযোগিতার উত্থাপন জন্য ব্যাপক সম্ভাবনা খুলে দিবে। দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে অন্যান্য বিধানাবলীর পাশাপাশি সোভিয়েত-ভারত সম্পর্ক, চুক্তি দুই পক্ষের নিয়মিত বজায় রাখার জন্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সমস্যা মোকাবিলার জন্য এটি একটি যথাযথ পদক্ষেপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও  ভারতের মধ্যে চুক্তিটি মূলত শান্তি নিশ্চয়তা, এশিয়া এবং বিশ্বের সর্বত্র এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষার জন্য, নিরাপত্তা.জোরদার করার লক্ষ্যে। চুক্তিটি U.N. চার্টার মূলনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে করা হয় যেটি কারো বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়নি এবং এটি বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশীসুলভ সহৃদয়তার জন্যই সাক্ষরিত হয়েছে।

ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সরিকার সুনিশ্চিত যে শান্তি, বন্ধুত্ব ও সহযোগীতার এ চুক্তি সম্পূর্ণ অনুমোদন পাবে তাদের কাছ থেকে যারা সত্যিই এশিয়ায় শান্তি সংরক্ষণে আগ্রহী । মিটিং এবং আলোচনায়, উভয় পক্ষের সন্তুষ্টি সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোচনা বিভিন্ন সমস্যার উপর তাদের অবস্থানের অভিন্ন বা খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন যে ৭ লক্ষেরও বেশি শরণার্থী ভারতে প্রবেশ করার কারনে তাদের সম্পদের উপর বোঝা পড়ছে। উভয় পক্ষই বিস্তারিত আলোচনার পর তাদের দৃঢ় বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেন যে, একটি রাজনৈতিক সমাধান এবং শরণার্থীদের নিরাপদ অবস্থার সৃষ্টির জন্য ও পাকিস্তানের সমগ্র মানুষ এবং এলাকায় শান্তি সংরক্ষণের কারনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ভারতের সমস্যা বোঝার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি ভারতের  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ স্পষ্ট ছিল।

উভয় পক্ষই মনে করেন যে ভারত-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে বাইরের হস্তক্ষেপ হয় সেটি অবিলম্বে থামা উচিত। তারা মনে করেন যে এই আরোপের প্রচেষ্টা গ্রহনযোগ্য নয়। তারা দক্ষিন ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী  সরকারের প্রস্তাবিত ৭ দফাকে স্বাগত জানান যেটি একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ভিত্তিতে গঠন করতে পারে। উভয় পক্ষ পশ্চিম এশিয়ার উপর 22 নভেম্বর, 1967-এর নিরাপত্তা পরিষদের রেজোলিউশন বাস্তবায়নের পক্ষে জরুরী প্রয়োজন এর বিশ্বাসে ছিল।

উভয় পক্ষই বিবেচনা করে যে সকল সীমান্ত বিরোধ সহ আন্তর্জাতিক সমস্যা শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে

করা এবং তাদের নিষ্পত্তির জন্য বলপ্রয়োগের বা ব্যবহারের হুমকি আবশ্যক নয়।

উভয় পক্ষই ঘোষণা করে যে তারা প্রাথমিক একটি প্রাথমিক চুক্তির পক্ষে জোরালোভাবে আছে এবং উভয় পারমাণবিক ও প্রচলিত অস্ত্র সহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরনে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রনের অধীন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকার কর্তৃক তাঁকে দেয়া সম্মানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

..                       …………………………………………….     ………                  …..

.

13.188.561

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের পুর্নাঙ্গ সভায় সোভিয়েত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

.

১৯৭১, ২৮ সেপ্টেমবর রাষ্ট্রসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৬শ অধিবেশনের পূর্ণাঙ্গ সভায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এ. গ্রোমিকোর ভাষণ থেকে

.

‘…ভারতীয় উপমহাদেশের পরিস্থিতি যথেষ্ট পরিমাণ ঘোরালো হয়েছে। এ কথা স্বীকার না করে উপায় নেই যে, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনার গতিতে ভারতের উৎকন্ঠা প্রকাশের কারণ আছে। ভারতে শরণার্থীর স্রোত গুরুতর অসুবিধা ও সমস্যা জন্ম দিয়েছে, সেগুলির প্রকৃতি শুধু অর্থনৈতিক নয়। আমাদের স্থির বিশ্বাস, পাকিস্তানে উদ্ভূত প্রশ্নাদির রাজনৈতিক মীমাংসার মাধ্যমেই সেই শুধু এই এলাকায় সমগ্রভাবে উত্তেজনার প্রশমন ঘটানো যায়। আর সেখানে অবস্থিত সমস্ত রাষ্ট্ররই এতে আগ্রহী হওয়া উচিৎ। শরণার্থীরা যাতে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যতে পারেন সে ব্যাবস্থা অবশ্যই করতে হবে। আর এটা সম্ভব হবে কেবলমাত্র সেখানে তাঁদের জন্য নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবার পর। বর্তমানে এই অঞ্চলে পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ আর এটা শুধুমাত্র একটা অভ্যন্তরীণ প্রশ্ন নয়। সোভিয়েত সরকার এই আশা প্রকাশ করতে চায় যে, ব্যাপারটা সামরিক সংঘাত পর্যন্ত গড়াবে না এবং সংযম ও যুক্তিরই প্রধান্য প্রতিষ্ঠিত হবে। …’

.

13.189.562-565

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সভিয়েত-ভারত যুক্ত বিবৃতি (মস্কো থেকে প্রকাশিত) বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

দুই পক্ষই পুরোপুরিভাবে একমত হয়েছিল যে এই চুক্তির প্রভাব অসামান্য এবং উভয় রাষ্ট্রের জন্যই ঐতিহাসিক গুরুত্ববহ এবং এই চুক্তি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্ব পারস্পারিক সম্মান, আস্থা এবং প্রতিবেশিসুলভ সহযোগিতাকে শক্তিশালী করবে। এই চুক্তি নিশ্চিত করে যে শভিয়েত-ভারত বন্ধুত্ব কোন ক্ষনস্থায়ী পরিস্থিতির উপর নয় বরং দুই দেশের জনগণের দীর্ঘমেয়াদী পারস্পারিক উন্নতি এবং অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অগ্রগতির জন্য বহুমুখী পারস্পারিক সহযোগীতা এবং দুই দেশের শান্তি এবং নিরাপত্তার জন্য প্রতিষ্ঠিত।

দুই পক্ষই চুক্তির শর্ত এবং মূলনীতি অনুসারে সোভিয়েত-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের দৃঢ় সংকল্পের ঘোষনা দিল।  তারা সন্তোষের সাথে লক্ষ্য করলেন পারস্পরিক অর্থনৈতিক এবং কারিগরি সহযোগীতার উন্নতি এবং গুরুত্বারোপ করলেন পারস্পারিক সহযোগীতা উন্নয়নের সম্ভাবনার ওপর বিশেষত লোহা এবং ইস্পাত শিল্পে ইস্পাতের সঙ্কর ধাতু এবং অলৌহ ধাতুবিদ্যা এবং পেট্রো-কেমিক্যাল শিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের অনুসন্ধান, জরিপ এবং পরিশোধনের ক্ষেত্রে।

মহাকাশ গবেষণা, পারমাণবিক শক্তির শান্তিপুর্ণ ব্যাবহার, পরস্পরের শিল্প বাণিজ্যের উন্নতির মত ক্ষেত্র গুলোতে পারস্পারিক সহযোগীতার স্বরুপ নিরুপনে গৃহীত পদক্ষেপসমুহে উভয় পক্ষই সন্তোষ প্রকাশ করলেন। তারা সহযোগীতার নতুন ক্ষেত্র চিনহিতকরনকে গুরুত্বপুর্ন হিসেবে বিবেচনা করলেন।

এই যোগাযোগে মতৈক্যে পৌছান হয়েছিল যে দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা মিলিত ভাবে কাজ করবেন উপরিল্লিখিত বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়নে। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক এবং কারিগরি সহযোগীতার লক্ষে একটি আন্ত-সরকারি কমিশন প্রণয়নে।

প্রধান আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলো নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময় এবং বোঝার জন্য চুক্তি অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন স্তরে চুক্তি এবং সম্পর্ক তৈরির গুরুত্ব  উভয় পক্ষই অনুধাবন করল।

চুক্তির প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের জনগণের অকুন্ঠ সমর্থন এবং বিশ্বব্যাপী এই চুক্তিকে স্বাগত জানানোয় তারা সন্তোষ প্রকাশ করলেন।

এশিয়া সহ সারা বিশ্বে স্নায়ুচাপ কমানো এবং বিশ্বব্যাপী শান্তি ও সহযোগীতাকে জোরদার করার লক্ষ্যে ভারতের জোটভুক্ত না হওয়ার নীতিকে সম্মান জানায় সোভিয়েত পক্ষ।

ভারত পক্ষও বিশ্বব্যাপী শান্তি সহযোগীতা এবং বন্ধুত্বকে জোরদার করার লক্ষ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তিপুর্ন পররাষ্ট্র নীতির প্রতি তাদের সম্মান জানায়। তারা চলমান আন্তর্জাতিক সমস্যাসমুহের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময় বিষয়গুলো নিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারতের অবস্থানের নৈকট্য প্রকাশ করে। উভয় পক্ষই প্রধানত এশিয়ার পরিস্থিতির পরিবর্তন, সামরিক সংঘাতের সম্ভাবনার স্নায়ুচাপ এবং আগ্রাসন প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের মাধ্যমে শান্তিপুর্ন এশিয়া গঠনের দিকেই প্রধানত মনযোগ দিচ্ছিল।

উভয় পক্ষই পুর্ববাংলায় সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী থেকে উদ্ভুত মর্মান্তিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং এই অঞ্চলে শান্তি রক্ষায় কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যাক্ত করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোভিয়েত পক্ষকে অবহিত করেন যে পুর্ব বাংলা থেকে আগত ৯০ লক্ষাধিক শরণার্থীর উপস্থিতি ভারতে সামাজিক এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং অর্থনৈতিক চাপের সৃষ্টি করছে। যার ফলে ভারতের আর্থসামাজিক কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে।

পুর্ব বাংলা থেকে শরণার্থীর আগমনে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে ভারতের মানবিক তৎপরতার ভুয়সী প্রশংসা করেন সোভিয়েত পক্ষ এবং শরণার্থী স্রোতে বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সমস্যা তারা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে ব্যক্ত করেন।

শরণার্থী আগমন ঠেকাতে এবং ভারতে অবস্থানকারী সকল শরণার্থীদের অনতিবিলম্বে তাদের নিজদেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকার প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে বলে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকেও সোভিয়েত পক্ষ বিবেচনায় নেয়।

২রা এপ্রিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের কাছে সুপ্রিম সোভিয়েত প্রেসিডিয়াম ,সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দেয়া বার্তায়  সোভিয়েত পক্ষ শরণার্থী সমস্যা এবং পুর্ব বাংলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী থেকে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থান পুনরায় ব্যাক্ত করেন।

২৫শে মার্চ ১৯৭১ থেকে পুর্ব বাংলায় পরিস্থিতির পরিবর্তন বিবেচনায় নিয়ে উভয় পক্ষই শান্তি রক্ষার জন্য এবং শরণার্থীদের নিজ দেশে দ্রুত, নিরাপদে এবং সসম্মানে প্রত্যাবর্তনের জন্য পুর্ব বাংলার জনগণের আকাঙ্ক্ষা, অধিকার এবং বৈধ স্বার্থের কথা মাথায় রেখে যেসব সমস্যা থেকে এই পরিস্থিতির উদ্ভব তার রাজনৈতিক সমাধানের লক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।

ভারতীয় উপমহাদেশে উদ্ভুত পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে উভয় পক্ষই পারস্পারিক যোগাযোগ বজায় রাখা এবং চলমান বিষয়াদি সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গী বিনিময়ে একমত হয় উভয় পক্ষ।

দুই পক্ষ দক্ষিন-পুর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে তাদের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ইন্দোচীন এলাকার শান্তি এবং সেখানকার মানুষের নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ এবং বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া নিজ ভবিষ্যৎ গঠনের অধিকারের জন্য সেখান থেকে সকল বিদেশী বাহিনী সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে নিজেদের অবস্থান ঘোষণা করে।

তারা দক্ষিন ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারের ৭ দফা প্রস্তাবনাকে শান্তিপুর্ন রাজনৈতিক নিষ্পত্তির ভিত্তি হিসেবে স্বাগত জানায় এবং প্রস্তাবনার পক্ষে নিজেদের সমর্থন ব্যাক্ত করেন।

মধ্যপ্রাচ্যের tense পরিস্থিতি নিয়ে দুই পক্ষ তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৯৬৭ সালের ২২শে নভেম্বরে প্রণীত প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি দীর্ঘমেয়াদী, স্থিতিশীল এবং ন্যায়সংগত শান্তির জন্য সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

নিরাপত্তা এবং পারস্পারিক সহযোগিতার প্রশ্নকে একটি গুরুত্বপুর্ন পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে শুধু ইউরোপে নয় বরং সারাবিশ্বে চলমান স্নায়ুচাপ নিরসনে একটি সর্ব ইউরোপীয় সমাবেশ আহ্বানের প্রস্তাবনাকে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির উন্নয়নে অবদান রাখতে ইচ্ছুক ভারত সরকার  স্বাগত জানায়।

  উভয় পক্ষই বিশ্বাস করে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করা এবং দৃঢ় আন্তর্জাতিক নজরদারিতে সকল পারমানবিক এবং কনভেনশনাল অস্ত্রের সম্পুর্ন নিরস্ত্রীকরন অর্জনই শান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষা এবং শক্তিশালী করার জন্য প্রধানত গুরুত্বপুর্ন।

জরুরী নিরস্ত্রীকরন সমস্যার সমাধানের গ্রহণযোগ্য এবং বাস্তবসম্মত উপায়ের জন্য সব রাষ্ট্রের অংশগ্রহণে বিশ্ব নিরস্ত্রীকরন সম্মেলন আহ্বান করা দুই পক্ষের মতেই অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। অদুর ভবিষ্যতে সকল জৈব ও রাসায়নিক অস্ত্রের উন্নয়ন, উৎপাদন এবং মজুদ নিষিদ্ধকরন এবং তাদের ধ্বংস করার মতৈক্যে পৌছানকে যুদ্ধের জৈব ও রাসায়নিক পদ্ধতি ব্যাবহার বন্ধের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দুই পক্ষই গুরুত্বপুর্ণ বলে বিবেচনা করে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী পুনঃব্যক্ত করেন যে ভারত মহাসাগর কে শান্তি এলাকা হিসেবে প্রতিষ্টিত করা উচিৎ। সোভিয়েত পক্ষ জানায় যে তারা এ বিষয়কে যাচাই করে দেখতে এবং অন্যান্য শক্তির সাথে সমতার ভিত্তিতে একসাথে বসে সমাধানে পৌছাতে প্রস্তুত রয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারত সাম্রাজ্যবাদের পদচিহ্ন দ্রুত এবং সম্পুর্নভাবে বিলুপ্তকরন এবং কলোনিয়াল রাষ্ট্র এবং তার জনগণের স্বাধীনতা প্রদানের জন্য জাতিসঙ্ঘের ঘোষণা বাধাহীনভাবে বাস্তবায়নের আহ্বান জানায় । তারা সব ধরনের জাতিবিদ্বেষ এবং বর্ণবাদের প্রতি তাদের ঘৃণা দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রকাশ করে।

দুই পক্ষ ভিন্ন ভিন্ন সামাজিক ব্যাবস্থার দেশের শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের নীতির প্রতি তাদের আনুগত্য পুনঃব্যাক্ত করেন এবং নিজেদের রাষ্ট্রসমুহের মধ্যে বিদ্যমান ইস্যুসমুহ শান্তিপুর্ণ পথে সমাধানের পক্ষে বলে ঘোষনা দেয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারত জাতিসঙ্ঘের ভুমিকার প্রতি গুরত্ব আরোপ করে। উভয় পক্ষই জাতিসংঘকে শক্তিশালী করতে এবং জাতিসংঘের সনদ অনুসারে বিশ্বব্যাপী শান্তিরক্ষায় এর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে তাদের সংকল্প ব্যাক্ত করে।

উভয় পক্ষ আশাবাদ ব্যাক্ত করেন যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সোভিয়েত ইউনিয়ন সফর এবং সফরকালে সোভিয়েত নেতাদের সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠক এবং আলোচনা দুই দেশের মধ্যেকার বন্ধুত্বপুর্ন সহযোগীতা বৃদ্ধিতে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তাকে জোরদার করতে সাহায্য করবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়ন কম্যুনিস্ট পার্টির সাধারন সম্পাদক এলআই ব্রেঝনেভ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কাউন্সিল অফ মিনিস্টারের সভাপতি এএন কসিগিনকে ভারতসফরের জন্য আন্তরিক আমন্ত্রন জানান। আমন্ত্রন ধন্যবাদের সাথে গৃহীত হয়।

.

13.190.566

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নয়াদিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি কর্তৃক আয়োজনিত ভোজসভায় সোভিয়েত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমন্ডলীর সভাপতি এন,ভি, পদগোর্নির ভাষণ সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা ১ অক্টোবর, ১৯৭১

.

১৯৭১, ১ অক্টোবর তারিখের নয়াদিল্লীতে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি. গিরি কর্তৃক আয়োজনিত ভোজসভায় সোভিয়েত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমন্ডলীর সভাপতি এন,ভি, পদগোর্নির ভাষণ থেকে

‘…সোভিয়েত জনগণ হিন্দুস্থান উপমহাদেশে কঠিন ও বিপদজনক পরিস্থিতিকে ঘনিষ্ঠভাবে লক্ষ্য করেছেন। আমার মনে করি যে সামরিক সংঘর্ষের দিকে পরিস্থিতি আরও গড়িয়ে যাওয়াকে অবশ্যই ঠেকাতে হবে এবং সেই অঞ্চলের জনসাধারণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার ও স্বার্থকে যথোপযুক্ত বিবেচনার মধ্যে রেখে একটি ন্যায়সঙ্গত রাজনৈতিক মীমাংসার মাধ্যমে সেখানে উত্তেজনাকে অপসারিত করতে হবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন তার দিক থেকে ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনায় এরূপ একটি মীমাংসায় উপনিত হবার ব্যাপারে সম্ভাব্য সর্বপ্রকার সহায়তা দান করতে চায়…’

.

13.191.567

            শিরোনাম                        সূত্র                      তারিখ
 পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কিত সোভিয়েত নারী কমিটির বিবৃতি

                প্রাভদা।

উদ্বৃতি: বাংলাদেশ ডকুমেন্টস

         ৪ অক্টোবর,১৯৭১

গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সোভিয়েত মহিলা কমিটি একটি বিবৃতি প্রদান করে এবং পাকিস্তানের উন্নয়নের প্রতি শঙ্কা প্রকাশ করে।

প্রতিহংসা,নিপীড়ন, মানবাধিকার ও গনতন্ত্রের প্রাথমিক নীতির লঙ্ঘন পূর্ব পাকিস্তানের নয় মিলিয়ন জনগনকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে।বিপুল সংখ্যক উদ্বাস্তু,গৃহহীন এবং জীবিকা নির্বাহে নিরুপায় জনসাধারণ  অনাহার এবং মহামারি মৃত্যুর মতো বিপদের মুখে হতাশায় পরিপূর্ণ হয়। পূর্ব পাকিস্তানের অনেক প্রগতিশীল ব্যক্তি প্রতিহিংসার শিকার হয়।

সোভিয়েত নারীরা বিভিন্ন দেশের মিলিয়নের চেয়েও বেশি সংখ্যক জনগনের আন্দোলনের প্রতি কর্ণপাত করা এবং সর্ব দলীয় পাকিস্তান পিপল্ স  লীগের চেয়ারম্যান এম রহমান ও পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত প্রতিহিংসার অবসানের জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করে, এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের ইচ্ছা,অধিকার ও বৈধ স্বার্থ রক্ষায় উত্থিত সমস্যা নিরসনে একটি রাজনৈতিক বিবৃতি অর্জনের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য প্রস্তাব করে সেই সাথে উদ্বাস্তুদের অতিসত্তর নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করে।

                                                                 (প্রাভদা,মস্কো,অক্টোবর ৪,১৯৭১)

.

13.192.568

                   শিরোনাম                        সূত্র                     তারিখ
সোভিয়েত ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী সভার উপর সাংবাদিক প্রতিবেদন         বাংলাদেশ টুডে ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১

                                           সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রতিবাদী সভা

                                          ইয়াহিয়ার নিপীড়নে গড়ে ওঠা সংবাদ সমালোচনা

সোভিয়েত সংবাদপত্রগুলো পাকিস্তানের ওপর তাদের আক্রমনকে তীব্র  করে তোলে এবং “পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও লৌকিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তানি জনসাধারণের ওপর পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের পাইকারি দমন নীতির” বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন এক প্রতিবাদী সভায় ব্যাপক বিবরন প্রদান করে।

সরকারী সংবাদ সংস্থা টাস রিপোর্ট করে যে, মস্কোর লেনিন গার্ডে প্রতিবাদী সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

সোভিয়েতে পাকিস্তানের সংবাদ সমালোচনার লক্ষণীয় প্রভাব হিসেবে গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী  মস্কো পরিদর্শন করেন।

২৯ সেপ্টেম্বর পূর্ব বাংলার জনসাধারণের “অবিচ্ছেদ্য অধিকার” রক্ষায় পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধানের উন্নতিকল্পে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য একটি যৌথ আবেদন জারি করে।

আজ সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা “প্রাভদা,” ভারত থেকে শরণার্থীদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানায়।

সংবাদপত্রটি ব্যক্ত করে সোভিয়েত সরকার উদ্বদস্তুদের সহায়তা প্রদান করবে এবং আরো বলে,”পূর্ব পাকিস্তান থেকে লাখ লাখ উদ্বাস্তু একটি বাস্তব নাটকের সম্মুখীন হচ্ছে।”

“এই অসহনীয় মর্মান্তিকতা এই মানুষগুলোর সহ্যের বাইরে কিন্তু বিশ্বের প্রগতিশীল লোকদের উদ্বেগের কারন।” এটি বলে।

“পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের কর্মকান্ড লক্ষ লক্ষ বেসামরিক জনসাধারণকে তাদের সম্পত্তি ছেড়ে যেতে বাধ্য করে এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে আশ্রয় চাইতে ধিক্কারজনক সার্বজনীন আহ্বান জানায়।”

.

13.193.569-570

শিরোনাম সূত্র তারিখ
উপমহাদেশের অবস্থা সম্পর্কে ‘তাস’-এর বিবৃতি সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

তাস-এর বিবৃতি

হিন্দুস্থান উপদ্বীপে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাস-প্রচারিত বিবৃতির পূর্ণ পাঠ নিচে দেওয়া হলোঃ হিন্দুস্থান উপদ্বীপে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির খবর আসছে। ৩রা ডিসেম্বর উওর-পশ্চিম ভারতের অনেকগুলো শহরে পাকিস্তানী বিমান বহর বোমা ফেলে ও গোলাবর্ষণ করে। ভারত-পাকিস্তানের সীমান্তে সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে।

এটা সকলেরই জানা আছে যে, পাকিস্তান সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবলম্বন করায় উক্ত অঞ্চলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিস্থিতিই সম্প্রতি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উত্তেজনা সৃষ্টির প্রধান কারণ।

সম্প্রতিকালে স্বশাসন, প্রাথমিক নাগরিক অধিকার এবং স্বাধীনতার জন্য পূর্ব পাকিস্তানে এক গণ আন্দোলন দানা বেঁধে উঠে। ১৯৭০ সালে আইনসভার যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই নির্বাচনে মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করে। নির্বাচনের পর পূর্ব পাকিস্তানে স্বশাসনের বিষয় বিবেচনার জন্য ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়।

কিন্তু কোনরকম ফয়সালা করার আগ্রহ না দেখিয়ে পাকিস্তান সরকার হঠাৎ ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ, সমস্ত আলাপ-আলোচনা ভেঙে দেন। মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের বন্দী করা হয় এবং তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। তারপরই শুরু হয় জনগণের উপর নিষ্ঠুর পীড়ন। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ নাগরিক প্রাণভয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে আসেন। পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক সন্ত্রাস ও অরাজকতার রাজত্ব শুরু হয়।

ব্যাপক সন্ত্রাস ও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতিরোধ যখন ক্রমশ দৃঢ় হয়ে উঠল তখন পাকিস্তান সরকার এই অবস্থার জন্য ভারতের কাঁধে দোষ চাপাল এবং ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাল।

শান্তি রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে সোভিয়েত সরকার বার বার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এবং পাকিস্তান সরকারের কাছে হিন্দুস্তান উপদ্বীপের পরিস্থিতির জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে অত্যাচার ও উৎপীড়নের নীতি গ্রহনের জন্য নিন্দা করে পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পাকিস্তান সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সোভিয়েত পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয় সোভিয়েত সরকারের স্থির বিশ্বাস যে উৎপীড়নের নীতি ত্যাগ করে, মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দিয়ে, এবং ১৯৭০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রকাশিত মনোভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে একটি সমাধানের জন্য অবিলম্বে আলাপ-আলোচনা আবার শুরু করা উচিত। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভার আগত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দেশে ফিরে যাওয়ার উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

এই সব বিচার বিবেচনার জন্য পাকিস্তান সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে সোভিয়েত সরকার মানবিক নীতি অনুযায়ী কাজ করেছে এবং দেশে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সেই সমস্যার সমাধানে পাকিস্তানের জনগণের সাফল্য কামনা করেছে।

যেহেতু পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করল না, এবং ভারতের বিরুদ্ধে সামরিক প্রস্তুতি চালিয়ে গেল, সেইজন্য সোভিয়েত নেতৃবৃন্দ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে জানিয়ে দেন যে, যে কোনো অজুহাতে ভারতের উপর পাকিস্তানের সশস্ত্র আক্রমণকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কঠোরভাবে নিন্দা করবে।

এই সমস্ত ঘটনাবলীর প্রতি সোভিয়েত ইউনিয়ন উদাসীন থাকতে পারে না কারণ এই সব ঘটনা ঘটছে সোভিয়েত সীমান্তের নিকটবর্তী এক অঞ্চলে এবং সেই জন্য তার নিরাপত্তার স্বার্থ জড়িয়ে।

 হিন্দুস্থান উপদ্বীপে শান্তি রক্ষার জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে সোভিয়েত সরকার পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দকে সুস্পষ্টভাবে তাদের এই বিপজ্জনক পথে চলার গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত করে দেওয়া প্রয়োজন মনে করে।

বর্তমানে হিন্দুস্থানে যে বিপদ সামরিক দেখা দিয়েছে- যে সামরিক বিপদের দিকে কোন শান্তিকামী দেশই উদাসীন থাকতে পারে না- সেই বিপদের মুখে সোভিয়েত ইউনিয়ন অবিলম্বে এই রক্তক্ষয় বন্ধের জন্য, এবং আইনসংগত অধিকারের ভিত্তিতে এবং সে দেশের জনগণের স্বার্থে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধানের আহবান জানিয়েছে।

সোভিয়েত সরকার এ কথাও বিশ্বাস করে যে, পৃথিবীর সব দেশের সরকারেরই এই বিরোধের সঙ্গে কোনো না কোনো ভাবে জড়িত হওয়া থেকে- যা হিন্দুস্থান উপদ্বীপের পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাবে-বিরত থাকা উচিত।

.

13.194.571

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাক ভারত সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহবান: পোলিশ কমিউনিস্ট পার্টি ষষ্ঠ কংগ্রেস সোভিয়েত নেতা লিওনিদ ব্রেজনেভের বক্তৃতা টাইমস অফ ইন্ডিয়া ৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পোলিশ কমিউনিস্ট পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেসে মিঃ লিওনিদ ব্রেজনেভ এর ভাষণ, ওয়ারশো ডিসেম্বর 7,1971

সমাজবাদী দলের নেতা মিঃ লিওনিজ ব্রেজনেভ, আজ ( 7 ডিসেম্বর) ইন্দো – পাকিস্তান সংঘাত ” কোনোরকম বহিরাগত হস্তক্ষেপ ব্যতীত ” শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বলেছেন, রয়টার রিপোর্ট।

মিঃ ব্রেজনেভ পোলিশ কমিউনিস্ট পার্টির ষষ্ঠ কংগ্রেসে একটি পাক বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন ” সোভিয়েত ইউনিয়ন দৃঢ়ভাবে রক্তপাত সমাপ্তির পক্ষে কথা বলে ” জাতি সমূহের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বহিরাগত বাহিনীর কোনরূপ হস্ত ক্ষেপ ব্যতীত বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করা উচিত। যা এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে অনুকূল হবে।

মিঃ ব্রেজনেভ বলেন গত কিছুদিন আগে এশিয়ার দুটি প্রতিবেশী দেশের যে সংবাদটি বেড়িয়েছে তা সকল শান্তি ও স্বাধীনতাকামী জাতিসমূহের পক্ষে আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে নিয়েছি। তিনি বলেন ” এটি ছিলো ” প্রয়োজনীয় অধিকার সমূহের ” রক্তাক্ত ” দমন এবং পরিষ্কারভাবে পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষ ও শরনার্থীর দুর্দশার বহিঃপ্রকাশ

.

13.195.572-573

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের সংগ্রাম জাতীয় মুক্তি আন্দোলনঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা আনন্দবাজার পত্রিকা ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১

রাশিয়ার প্রথম প্রকাশ্য ঘোষণা

বাংলাদেশের সংগ্রাম জাতীয় মুক্তি আন্দোলন

(দিল্লী অফিস থেকে)

 ৯ই নভেম্বর- ভারত সফররত সোভিয়েত সংসদীয় প্রতিনিধিদলের নেতা শ্রী ভি কুদরিয়াভেৎসেভ আজ এখানে বলেন, বাংলাদেশের যে সংগ্রাম চলছে তা জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এবং তার মধ্যে গৃহযুদ্ধের উপাদান রয়েছে।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম সোভিয়েত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভের উক্তিতেই প্রথম একজন সোভিয়েত নেতার কাছ থেকে বাংলাদেশের আন্দোলন জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম বলে প্রকাশ্য স্বীকৃতি লাভ করল। শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভের মন্তব্য এই কারণে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ যে, তন শুধু একজন সফররত সংসদীয় হিসাবে এ কথা বলেননি, বলেছেন সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র ও তার সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যে কোন সমাধানের সম্ভাবনা বাতিল করে দেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেন, যে সমধানই নির্ণয় করা হোক না কেন তা করতে হবে জনগণের ইচ্ছা, তাদের আইনসঙ্গত অধিকার ও জাতীয় আশা আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে।

তাঁর ধারণা, এই উপমহাদেশের ঘটনাবলীর প্রতি চীন এক অযৌক্তিক মনোভাব গ্রহন করেছে। তবে চীন-সোভিয়েত সম্পর্ক বিষয়ে তিনি আশা করেন, চিন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য হওয়ায় এই সম্পর্ক এখন স্বাভাবিক হবে।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ তাঁর পূর্ব মন্তব্য সত্ত্বেও আশা করেন যে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনাবলী দু’দেশের মধ্যে কোনন সশস্ত্র সংঘর্ষ ডেকে আনবে না। তবে সংঘর্ষ হবে কিনা তা তিনি বলতে পারেন না। তাঁর মতে, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা এখনও বিস্ফোরণের মুখে থাকায় পৃথিবী তৃতীয় একটা সংঘর্ষের বিলাসিতায় মাততে পারে না। তার চেয়েও বড় কথা, একবার সংঘর্ষ শুরু হলে অধিক থেকে অধিকতর দেশ জড়িয়ে পড়তে চায়। তাঁর এই মন্তব্য চীনকে উপলক্ষ করে কিনা তা তিনি ব্যাখ্যা করেননি।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ আশা করেন, পাকিস্তান বাস্তব অবস্থা উপলব্ধি করবে এবং একটা সমাধানে উপনীত হবে ও সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে, জাতে উদ্বাস্তুরা আস্থা অর্জন করে স্বদেশে ফিরে যেতে পারে। তবে কী সেটা করা যেতে পারে তা তিনি বলিতে পারেন না। সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র অথবা অন্য কোন দেশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। সমাধান নির্ণয় করতে হবে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী আর বাংলাদেশের নেতাদের।

তিনি স্বীকার করেন যে, যদিও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সমস্ত রকম সামরিক সাহায্য দেওয়া বন্ধ করেছে, তবুও তার সঙ্গে বৈষয়িক সম্পর্ক বজায় আছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বৃদ্ধি না পেলেও চলছে। …

তি আরও বলেন, কথায় কিছু যায় আসে না, আসল জিনিস হচ্ছে কাজ।

শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ ভারতের জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, তাদের শান্তির জন্য চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু তাই বলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অবহেলা করা ঠিক হবে না। সকল অবস্থাতেই প্রতিরক্ষা জোরদার করতে হবে।

আগ্রা থেকে ইয় এন আই জানাচ্ছেনঃ  শ্রী কুদরিয়াভেৎসেভ গতকাল সেখানে ভারত সোভিয়েত সাংস্কৃতিক সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত এক সভায় বলেন যে ভারত যদি আক্রান্ত হয় তাহলে তাঁর দেশ তাকে সাহায্য করবে।

তিনি আরও বলেন, তাঁর দেশ ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে চান।

 তিনি এই বলে সতর্ক করে দেন যে, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি’, যতো ভারত ও সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বন্ধুত্বে ভীত হয়ে পড়েছে, তারা সম্প্রতি স্বাক্ষরিত ভারত-সোভিয়েত চুক্তির বিরুদ্ধে প্রচারকার্যে লিপ্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানী শাসকদের যুদ্ধংদেহি মনোভাবের দরুন ভারতের অখন্ডতা যখন বিপন্ন হয়ে পড়ে তখনই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

.

13.196.574

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সংঘাত নিরসনে কার্যকরী রাজনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণের আগ্রহ প্রকাশঃ আফগানিস্তানের রাজার সম্মানার্থে প্রদত্ত ভোজ সভায় সর্বোচ্চ সোভিয়েতের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি নিকোলাই পদগোর্নির বক্তৃতা। সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত পুস্তিকা। ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

১৯৭১, ১৪ ডিসেম্বর মস্কোতে আফগানিস্তানের রাজা মহম্মদ জহীর শাহ-এর

সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় সোভিয়েত জাতিসংঘের সর্বোচ্চ সোভিয়েতের

সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি এন. ভি. পদগোর্নির ভাষণ থেকে

“এশীয় উপমহাদেশে সম্প্রতি পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় জনসাধারন অতিমাত্রায় আতঙ্কিত। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্মমভাবে পূর্ব পাকিস্তানের জনসমষ্টির মৌল অধিকারসমূহের ও সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত ইচ্ছার দমন দেশের সেই অংশে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটিয়েছে। প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারতে পালিয়ে আসতে হয়েছে। এশিয়ার দু’টি প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সংঘর্ষ দানা বেঁধে উঠেছে।”

“সোভিয়েত ইউনিয়নে আমরা অবিচলভাবে দাঁড়িয়েছি রক্তপাত বন্ধ করার পক্ষে, বাইরের শক্তিগুলির কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই জনসাধারণের আইনসম্মত অধিকারসমূহ বিবেচনার মধ্যে রেখে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মীমাংসার পক্ষে। সেই এলাকায় স্থায়ী ও ন্যায়সঙ্গত শান্তি প্রতিষ্ঠার উপযোগী অবস্থা সৃষ্টির জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন চাপ দিচ্ছে।”

“আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, যুদ্ধবিরতির প্রশ্নটিকে যে সব কারণ হিন্দুস্থান উপমহাদেশে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে সেগুলি দূর করার বৈপ্লবিক উপায় হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক মীমাংসার প্রশ্ন থেকে বিচ্ছিন্ন করা চলে না।”

পদগোর্নি বলেন : “আমাদের গতকালের কথাবার্তা দেখিয়ে দিচ্ছে যে বর্তমান সংঘর্ষের এলাকার একেবারে সন্নিকটবর্তী হওয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আফগানিস্তান এই সংঘর্ষের মূলোচ্ছেদের সবচেয়ে কার্যকরী রাজনৈতিক ব্যবস্থাদি গ্রহণে গভীরভাবে আগ্রহী।“

পদগোর্নির বলেন : “জটিল আন্তর্জাতিক প্রশ্নসমূহের সমাধানের প্রতি আফগানিস্তান কাণ্ডজ্ঞানপূর্ণ ও যুক্তিপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছে বলে, এশিয়া মহাদেশে উদ্ভুত সমস্যাদির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার কামনা দেখিয়েছে বলে আমরা আনন্দিত।”

.

13.197.575-576

শিরোনাম সূত্র তারিখ
উপমহাদেশে শান্তি পুনঃস্থাপনে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকাঃ ১৮ ডিসেম্বর তারিখে                    পররাষ্ট্র বিভাগের বিবৃতি  সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত
পুস্তিকা
 ১৮ ডিসেম্বর , ১৯৭১

১৯৭১, ১৮ ডিসেম্বর তারিখে প্রচারিত সোভিয়েত পররাষ্ট্র বিভাগের  বিবৃতি

     হিন্দুস্তান উপদ্বীপে বিদ্যমান বর্তমান পরিস্তিতি সম্পর্কে সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিভাগকে নিম্নলিখিত
বিবৃতিটি প্রচারের অনুমতি দেওয়া হয়েছেঃ

    অন্যান্য শান্তিকামী দেশের  মতো সোভিয়েত ইউনিয়নও পাক-ভারত উপমহাদেশে সশস্ত্র সংঘর্ষের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন এই সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে তার মূল্যায়ন ও মত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছে। বিভিন্ন দেশের জনগণের মধ্যে  নিরাপত্তা ও শান্তি বিধানের উদ্দেশ্যে যে পররাষ্ট্র নীতি পাকিস্তানের ঘটনাবলীর জন্য পাক-ভারত উপমহাদেশে যে জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে , সেই জটিল সমস্যার সমাধাকল্পে  নিষ্ঠার সঙ্গে এবং দৃঢ়ভাবে ১৯৭০ সালের  ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যক্ত পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের  ইচ্ছা ও অভিলাষ অনুযায়ী একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছে ।

    এই পরিস্থিতিতে যে সংঘর্ষ ও রক্তপাত শুরু  হল সেই সংঘর্ষ ও রক্তপাত বন্ধের  জন্য, জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের ভিত্তিতে অনিলম্বে শান্তি স্থাপনের  জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রানপণ চেষ্টা করছে । এই নীতি ও মনোভাবের সাথে  সঙ্গতি রেখে সে অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে এবং জাতিসংঘের সংগঠন মারফত যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। শান্তি স্থাপনের এই প্রচেষ্টায় নিরাপত্তা পরিষদে কয়েকটি দেশের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েও সোভিয়েত ইউনিয়ন নিষ্ঠার সঙ্গে তার অবস্থানের  প্রতি অবিচল থেকেছে  যা পরিস্থিতির বাস্তব মূল্যায়ন করতে সক্ষম এবং যা ন্যায়সঙ্গত এবং কার্যকরভাবে অবিলম্বে এই সংঘর্ষের অবসান ঘটানো সম্ভব করে তুলবে।

   তথাপি শান্তির  দিক থেকে বিচার করে সোভিয়েত ইউনিয়ন জনগণের ন্যায়সঙ্গত স্বার্থ করে এই সমস্যা  সমাধানের প্রচেষ্টা চালাতে কোনরকম শৈথিল্য দেখায়নি। বর্তমানে এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে উত্তেজনা হ্রাসের দিকে একটা পরিবর্তনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এ বছর  ডিসেম্বর মাসের  ১৬ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটে । তার ফলে ন্যায়সঙ্গতভাবে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সেইদিনই ভারত এবং পশ্চিম পাকিস্তানের  সীমান্তে এবং ১৯৬৫ সালে নির্ধারিত কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি সীমান্তে একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার সিদ্ধান্ত ভারত সরকার গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ঘোষণা করেন যে , অন্য দেশের ভূখন্ড অধিকার করার কোন অভিপ্রায় ভারতের নেই । শান্তিপূর্ণ অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ভারত যে তাৎপর্যপূর্ণ উদ্যেগ গ্রহণ করেছে, সোভিয়েত ইউনিয়ন তাকে স্বাগত  জানায়। ভারতের গঠনমূলক এই উদ্যেগে সারা দিয়ে পাকিস্তান সরকার ১৭ই ডিসেম্বর পশ্চিম সীমান্তে যুদ্ধবিরতির যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে তাতেও সন্তোষ প্রকাশ করা হয় ।

    এভাবে পাক-ভারত উপমহাদেশে সশস্ত্র সংঘর্ষ  সম্পূর্ণভাবে বন্ধের এবং যে সমস্যাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ  সৃষ্টি হয়েছে সেই সংঘর্ষের সমস্যার একটা রাজনৈতিক সমাধান উপযোগী পরিবেশ ধীরে ধীরে সৃষ্টি হচ্ছে। পাক-ভারত উপমহাদেশে যুদ্ধ বন্ধ হলে সেই অঞ্চলের জনগণের  মূল স্বার্থ রক্ষিত হবে, তার ফলে জাতীয়

বিকাশের এবং অগ্রগতির পথে তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় অবস্থা সৃষ্টি হবে এবং চরম উত্তেজনার
যে স্থানটিতে সকলের দৃষ্টি নিবন্ধ তা দূরীভূত হবে।

   পাক-ভারত উপমহাদেশে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শান্তি পুনঃস্থাপনের জন্য বিশ্বের সমস্ত দেশকে সর্বপ্রকার
সহয়তা করতে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পক্ষে ক্ষতিকর, এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা থেকে বিরত
থাকতে সোভিয়েত ইউনিয়ন আহবান জানিয়েছে।
.

13.198.577-579

           শিরোনাম             সূত্র        তারিখ
  সোভিয়েত গণসংগঠনসমূহের বিবৃতি  সোভিয়েত তথ্য বিভাগ প্রচারিত
পুস্তিকা
       …

(১) সোভিয়েত শান্তি কমিটির বিবৃতি

    পাকিস্তানের বিখ্যাত প্রগতিশীল নেতা ও আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার ও মৃত্যদণ্ডের আশঙ্কা সম্পর্কে সোভিয়েত শান্তি-সংগ্রামীরা গুরুতর উদ্বেগ পোষণ করেন। এই আওয়ামী লীগই সাধারণ নির্বাচনে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। এই নির্বাচনের অনতিকাল পরেই, পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলীর ব্যাপারে মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয় এবং এখন তিনি সামরিক আদালতের রুদ্ধদ্বার কক্ষের অধিবেশনে বিচারাধীন।

    মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্যায় ও নিষ্ঠুর ব্যবস্থায় এবং পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাদের উপর নির্যাতনে সোভিয়েত নেতারা  ক্ষুব্ধ । পৃথিবীর সংবাদপত্রের খবরে জানা যায়, মুজিবুর রহমানের সামনে এখন মুত্যদন্ডের বিপদ উপস্থিত। পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাজকর্মকে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের আইনসঙ্গত মানবিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ এবং পাকিস্তানী জনগণের সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত ইচ্ছাকে অস্বীকার করা বলেই গণ্য করা যায়।

   পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতা ও জননেতাদের নির্যাতন এবং জনসাধারণের উপর নিপীড়নের ফলে লক্ষ লক্ষ শান্তিপ্রিয় মানুষ নিজেদের দেশে ছেড়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। পূর্ব পাকিস্তান থেকে শরণার্থীদের বিরাট স্রোত পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির ক্রমাবনতি ঘটাচ্ছেঃ আর এই শরর্ণার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অনাহার আর মহামারীর প্রকোপ।

    সোভিয়েত শান্তি কমিটি ঘোষণা করেছেন যে এশিয়ার শান্তিরক্ষার স্বার্থে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা , আইনসঙ্গত অধিকার ও স্বার্থকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভূত সমস্যাবলীর রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক। লক্ষ লক্ষ সোভিয়েত জনগণের পক্ষ থেকে আমরা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাই, তাঁরা যেন মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে এবং পূর্ব পাকিস্তানের  অন্যান্য জননেতার বিরুদ্ধে হিংসাত্নক ব্যবস্থা বন্ধ করেন এবং এমন ব্যবস্থা পালন করেন  যা  এই অঞ্চলে শান্তিকে শাক্তিশালী করবে।

                   (২) সোভিয়েত  ট্রেড ইউনিয়নসমূহের বিবৃতি

   সোভিয়েত ট্রেড ইউনিয়নসমূহ কর্তৃক প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ সোভিয়েত ইউনিয়ন ট্রেড ইউনিয়নসমূহ এবং কারখান ও অফিস কর্মীরা অধুনা নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের ঘটনা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন!’ এই আওয়ামী লীগই সাধারণ নির্বাচনে জাতীয় এসেম্বলিতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের এসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানের শ্রমজীবী জনগণের সমর্থনপুষ্ট মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী জনগণের আইনসঙ্গত নির্বাচিত নেতা হিসাবে, নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা যোদ্ধা হিসাবে সুপরিচিত। মুজিবুর রহমানের বিচার এবং তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা গ্রহণের যে প্রস্তুতি চলেছে, তা কেবলমাত্র দেশের উক্ত অংশের এবং তার সীমান্তের পরিস্থিতিই জটিল করে তুলবে।

    “পাকিস্তানের শ্রমজীবী জনগণের গুরুত্বপূর্ণ অধিকারসমূহের জন্য, উপনিবেশবাদীদের জোয়ালের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিকাশের জন্য এবং সমাজ প্রগতির জন্য তাদের সংগ্রামের আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতি বিশ্বস্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ট্রেড ইউনিয়নসমূহ সর্বদাই পাকিস্তানের শ্রমজীবী জনগণের  পক্ষ নিয়েছে।”

    বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের এবং নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিহিংসামূলক উৎপীড়নের অবসান ঘটানোর, এবং শরণার্থীদের তাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পরিস্থিতি সৃষ্টির দাবি সোভিয়েত শ্রমজীবী জণগন জানাচ্ছে।”

                               (৩) সোভিয়েত আফ্রো-এশীয় সংহতি কমিটির বিবৃতি

   সোভিয়েত আফ্রো-এশীয় সংহতি কমিটি প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ অধিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক উৎপীড়নের এবং প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর নির্যাতনের অবসান ঘটানোর, মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে বিচাপরের প্রহসন বন্ধ করার এবং শরণার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টির ও তাদের পূর্ণ নিরাপত্তার  এবং শান্তিতে জীবনযাপনের ও কাজ করার গ্যারান্টির ব্যবস্থা করার দাবি আমরা জানাচ্ছি।”

    বিবৃতিতে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান হয়েছে যে, “বিশ্ব জনমতের প্রতি কর্ণপাত করার এবং পূর্ব পাকিস্তান জনগণের ইচ্ছা, অধিকার ও আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক উপায়ে সমস্যাটির একটি ন্যায্য  সমাধানের সম্ভবনা খুঁজে বের  করতে হবে, আর সেটাঈ হবে আফ্রো-এশীয় সংহতির উদ্দেশ্যে ও নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।”

   বিবৃতিতে কমিটি জোর দিয়ে বলেছে যে, “ যে সব জাতি ঔপনিবেশিক জোয়াল ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে এবং শান্তি ও প্রগতির পরিস্থিতির মধ্যে উন্নততর জীবনযাত্রার জন্য সংগ্রাম করছে, সোভিয়েত জনগণ সর্বদাই তাদের বিশ্বস্ত বন্ধু ছিল ও থাকবে।’’

                          (৪) সোভিয়েত সাংবাদিকদের ইউনিয়নের বিবৃতি
সোভিয়েত সাংবাদিকদের ইউনিয়নও পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিহিংসামূলক উৎপীড়নের অবসান ঘটানোর এবং মুজিবুর রহমানকে বিচারের নামে হত্যা থেকে নিবৃত্ত হওয়ার” দাবি জানিয়েছেন।

                           (৫) সোভিয়েত রেডক্রসের বিবৃতি

    সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সমিতিসমূহের ইউনিয়নের কার্যনির্বাহক কমিটি পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনাবলী সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতি দিয়েছে।

    বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোভিয়েত রেডক্রস মানবিক নীতিসমূহ অনুসরণ করে ক্রমাগত উৎপীড়নের বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার সংক্রান্ত ঘোষণা ও মানবিক নৈতিকতার সর্বজনস্বীকৃত মানগুলিকে নগ্নভাবে লংঘন করার জন্য ক্ষুব্ধ ঘৃণা প্রকাশ করছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের রেডক্রস ও রেডক্রিসেন্ট সমিতিসমূহের লক্ষ লক্ষ সদস্যের পক্ষ থেকে কার্যনির্বাহক কমিটি দৃঢ়ভাবে এই দাবি করছেন যে, দেশের প্রগিতিশীল ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে উৎপীড়ন ও প্রতিহিংসা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ বন্ধ করুন, রাষ্ট্রসংঘ কর্তৃক ঘোষিত মানবাধিকার ও আইনানুগতা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করুন এবং পূর্ব পাকিস্তানের অসামরিক জনসমষ্টির কষ্ট লাঘব করুন ।

                        (৬) সোভিয়েত যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলির বিবৃতি

    সোভিয়েত জাতিসংঘের যুব সংগঠনগুলির কমিটি এবং ছাত্র পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সোভিয়েত যুব ও ছাত্রসমাজ আশঙ্কা ও উদ্বেগের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাবলী লক্ষ্য করে যাচ্ছে।

     পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ সন্ত্রাস ও হিংসার পরিবেশে জনগণের আইনসম্মতভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের নেতা মুজিবুর রহমানকে শেষ করে দিতে চাইছে।

    পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বীকৃত নেতা, সমগ্র পাকিস্তানী জনগণের অতি জরুরী স্বার্থ ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য সংগ্রামরত যোদ্ধা মুজিবুর রহমানের লজ্জাজনক বিচার পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসার উপর আঘাত হানছে, দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনাকে আরও ঘোরালো করে তুলছে এবং পূর্ব পাকিস্তানী শারণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের সমস্যার সমাধানের পথে ও দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার পক্ষে অতিরিক্ত অসুবিধাসমূহের সৃষ্টি করছে ।

   পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ও যুবসমাজের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও  হিংসার এইসব কাজ সম্পর্কে সোভিয়েত যুব ও
ছাত্রসমাজ ক্রোধ প্রকাশ  করছে।

   বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সমগ্র পৃথিবীর প্রগতিকামী জনগণের , বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ও ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একযোগে আমরা দাবি করছি, মুজিবুর রহমানের বিচার বন্ধ করা হোক, পূর্ব পাকিস্তানী দেশভক্তদের মুক্তি দেওয়া হোক ও তাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করা হোক এবং শরর্ণার্থীদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী অবস্থা  সৃষ্টি করা হোক ।

    আইন সম্মত অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে পূর্ব পাকিস্তনের জনগণের ও  যুবসমাজের সঙ্গে আমরা সংহতি জ্ঞাপন করছি।

                     (৭) সোভিয়েত রাষ্ট্রসংঘ সমিতির বিবৃতি

     পূর্ব পাকিস্তানের বিশিষ্ট রাজনৈতিক ও জননেতা, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমানকে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পক্ষ সমর্থনকারী ও  তাঁদের ন্যায়সঙ্গত অধিকারের প্রবক্তা অন্যান্য প্রগতিশীল নেতাকে কারারুদ্ধ করায় সোভিয়েত জাতিসংঘের রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক সমিতি গভীর উৎকণ্ঠা প্রকাশ  করছে।

    মানবাধিকার সম্পর্কিত রাষ্ট্রসংঘের ঘোষণাপত্রের মানবিক মূলনীতি দ্বারা চালিত হয়ে সোভিয়েত জাতিসংঘের রাষ্ট্রসংঘ বিষয়ক সমিতি পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই ঘোষণাপত্রের মূলনীতিগুলির স্থুল লংঘনের তীব্র প্রতিবাদ করছে এবং দাবি করছে যে মুজিবুর রহমানের ও পূর্ব পাকিস্তানের অন্যান্য প্রগতিশীল নেতার বিচার বন্ধ করা হোক এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ইচ্ছা, অলংঘনীয় অধিকার ও আইনসম্মত স্বার্থগুলি  বিবেচনার মধ্যে রেখে বিদ্যমান সমস্যাদির রাজনৈতিক সমাধান বের করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানী শরণার্থীদের দ্রুত ও নিরাপদে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের উপযোগী অবস্থা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা হোক।

.

13.199.580-581

         শিরোনাম              সূত্র           তারিখ
 বাংলাদেশের জনগণের উপর নির্যাতন বন্ধ
করার জন্য সোভিয়েত শ্রমিকদের দাবি
    সোভিয়েত তথ্য বিভাগ
প্রচারিত পুস্তিকা
             …..

দমন-পীড়নের অবসানের জন্য সোভিয়েত শ্রমিকদের দাবি

    পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে ঢালাও উৎপীড়নে সোভিয়েত জনগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানী  কর্তৃপক্ষকে তাঁরা যুক্তির প্রতি কর্ণপাত করার এবং পূর্ব পাকিস্তানের দেশপ্রেমিকদের উপর  নির্যাতন বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন।

    মস্কো বৈদ্যুতিক যন্ত্রনির্মাণ কারখান ‘ডায়নামো’র শ্রমিকদের এক সভায় ফিটার আলেকজান্দার কারিশেভ বলেন,
“ আমরা পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি, তাঁরা যেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের  লক্ষ লক্ষ মানুষের কণ্ঠস্বর কর্ণপাত করে দেশে স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করেন, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনসঙ্গত স্বার্থকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান অর্জনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।”

   সভায় গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছেঃ “পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাজকে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণের মৌলিক মানবিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বলে মনে করি”। সভায় অংশগ্রহণকারীরা পূর্ব পাকিস্তানের ঢালাও উৎপীড়নের অবসান দাবি করেন এবং শরণার্থীদের যথাশীঘ্র সম্ভব স্বদেশে ফেরার মতো অবস্থা সৃষ্টি করতে বলেন।

    মস্কোর লিখাভচ অটো ওয়ার্কসে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ফিটার বোরিস কোরনেভ উপস্থিত সকলের মনোভাব প্রকাশ করেন। তিনি বলেন , “ আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা ও জননেতাদের উপর নির্যাতনের  খবর জেনেছি। আমরা জানতে পেরেছি যে  সামরিক ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের বিচারের আয়োজন করেছেন। এই বিশিষ্ট  প্রগতিশীল নেতা পাকিস্তানী জনগণ কর্তৃক আইনসঙ্গতভাবে নির্বাচিত হয়েছিল । তিনি যে আওয়ামী লীগের সভাপতি, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সেই আওয়ামীলীগই দেশের জাতীয় পরিষদে এবং পূর্ব পাকিস্তানের বিধান পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করেছিল।

    তরুণ শ্রমিক ভিকতর ফাদায়েভ বলেন যে পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষকে স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছে।

     সভায় বিভিন্ন ভক্তা বলেন,  “পূর্ব পাকিস্তানের শান্তিপ্রিয় জনসাধারণের উপর ঢালাও উৎপীড়নের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ জানাই। দেশে উদ্ভূত সমস্যাবলী সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন এবং সমস্ত শরণার্থী যাতে স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।”

     সোভিয়েত ইউনিয়নের সমবায় সমিতিগুলির ৬ কোটি সদস্যের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ইউনিয়নের পর্ষদ পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমানের লজ্জাজনক বিচার বন্ধ করার দাবি করেছেন।

    বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে সমবায় সমিতিগুলির সদস্যরা পৃথিবীর মানুষের উদ্দেশ্যে আহবান জানাচ্ছেন,  তাঁরা যেন পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও উচ্ছৃঙ্খলতার নিন্দা করেন এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সমবায় সমিতিগুলোর সদস্যদের অধিকার রক্ষার স্বপক্ষে এগিয়ে আসেন।

    মস্কোর তিউরুপ ময়দা কলের শত শত শ্রমিক-কর্মচারী এক সভায় রিপেয়ার শপের শ্রমিক এ.ভি. দুদোভ বলেন, “আমরা সোভিয়েত জনগণ উদ্বেগের সঙ্গে পাকিস্তানের বিয়োগান্তক ঘটনাবলী লক্ষ্য করছি। সেদেশে পাইকারী পীড়ন, গণতন্ত্রের প্রাথমিক নীতিগুলি লঙ্ঘন পূর্ব পাকিস্তানের নিযুক্ত মানুষকে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করছে। আমরা দাবি করছি অবস্থা স্বাভাবিক করা হোক। পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল নেতাদের বিরুদ্ধে দমন পীড়ন বন্ধ করা হোক।”

   লেলিনগ্রাদ ক্রাসলেগভার্দেয়েৎস ফার্মের শ্রমিকদের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত এক প্রস্তাবে বলা হয়েছেঃ “আমরা দাবি করছি যে পাকিস্তান সরকার অবিলম্বে শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করুক, নিযুত  নিযুত শরণার্থীর স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের প্রয়োজনীয় অবস্থা  সৃষ্টি করুক।”

   শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির উপর পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের নির্মম মনোভাবের বিরুদ্ধে, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাদের উপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ক্রুদ্ধ প্রতিবাদ জানান সমাজতান্ত্রিক শ্রমবীর দলনেতা ভি. ভি. পেদ্রোভ, ফিটার ভি. এ. বুকানোভ , ফার্মের কমসোমল কমিটির সদস্য আনাতোলী উসানস্কিক, এসেম্বলী শপের ভি. ভি. বিস্ত্রোভা ও ইঞ্জিনিয়ার ভি. এ. মিখাইলোভা।

    ভোইকভ ঢালাই লোহা ফাউন্ড্রির প্রতিটি শপ, বিভাগ ও সার্ভিসের প্রতিনিধি এক সভায় পূর্ব পাকিস্তানে গণপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়। সভার উদ্বোধন করেন ট্রেড ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি এ. বেস্পালোভ। ফিটার এস. গুমেনি, টেকনিক্যাল রেটিং ব্যুরোর প্রধান আই. পোরপেল্কিন , ইলেট্রিকাল শপের শ্রমিক ও যুব কমিউনিস্ট লীগের কমিটির সদস্য জি. জাইৎসেভা প্রমুখ। বক্তারা পূর্ব পাকিস্তানে সন্ত্রাস ও দমন-পীড়ন বন্ধ করার এবং উদ্ভূত সমস্যার রাজনৈতিক  মীমাংসা অর্জনের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

    তাশখন্দের অক্টোবর বিপ্লব আশঙ্কিত ডিজেল ইঞ্জিন ও গাড়ি সারাই কারখানায় এক বিরাট সভায় শ্রমিকরা পূর্ব পাকিস্তানে শান্তিপূর্ণ জনসমষ্টির উপর পাইকারী দমনপীড়নে এবং দেশ ভক্তদের উপর নির্যাতনে গভীর আশঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

    মিনস্ক মোটর কারখানায় শ্রমিকদের এক সভায় গৃহীত প্রস্তাবে পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষের কাছে বিভিন্ন দেশের জনগণের  দাবিতে কর্ণপাত করতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের  জনগণের ইচ্ছা, অধিকার ও আইনসম্মত স্বার্থকে যথোপযুক্ত বিবেচনার মধ্যে রেখে সমস্যার রাজনৈতিক মীমাংসা অর্জনের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে  আহবান জানানো হয়েছে।

    কুইবিশেভে চতুর্থ কেয়ারিং কারখানায় অনুষ্ঠিত এক বিরাট সভায় দমন পীড়ন বন্ধ করার জন্য এবং পাকিস্তান প্রগতিশীল নেতাদের উপর নির্যাতন বন্ধ করার  জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে দাবি জানান হয়।

    আলসা আতা ফাউন্ড্রি ও মেশিন শপের এক সভায় শ্রমিকরা পাকিস্তানের ঘটনাবলী সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রস্তাবে আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে  দেশে ন্যায় বিচার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ জরুরী ব্যবস্থাদি গ্রহণ করবেন।

                               —————————–

.

13.200.585-586

শিরোনাম সূত্র তারিখ
স্বাধীন বাংলাদেশের সংগ্রামে ভারতীয় ভূমিকা সম্পর্কে পিপলস ডেইলীর ভাষ্য পিপলস ডেইলি উদ্ধৃতি: চায়না পাকিস্তা এন্ড বাংলাদেশ- আর.কে. জৈন ১১ এপ্রিল, ১৯৭১

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীরা কি করার চেষ্টা করছে ? নিবন্ধে ” পিপলস ডেইলি “র বিবরণদাতা ,   ১১ই এপ্রিল , ১৯৭১

সম্প্রতি ভারত সরকার পাকিস্তান সরকারের পুনঃপুন তীব্র প্রতিবাদ উপেক্ষা করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার প্রচেষ্টা দ্বিগুণ করেছে ।

বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাবলি যা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কর্তৃক গৃহীত হয়েছে , তা একান্তই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় , যার উপর কোন দেশের নাক গলানোর অধিকার নেই এবং

 তা উচিতও নয় । তথাপি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলগণ ত্বরিত গতিতে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে এসেছে যার মধ্যে ভারত সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যেমন

প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী , সংসদ সদস্যগণ এবং রাজ্য সরকারের প্রধানগণ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য একটা হায় হায় রব তুলেছেন । ভারতের জাতীয় সংসদ এবং

বিধানসভায় প্রকাশ্যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা ও প্রস্তাব গৃহীত হচ্ছে । ভারত সরকার এই বিষয়ে দুই পরাশক্তির সাথে মিলে একটা আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনায় ব্যস্ত আছে ।

ইতোমধ্যে , ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা তাদের সম্পূর্ণ প্রচারণাযন্ত্র পাকিস্তান বিরোধী জাতীয়তাবাদ উস্কে দিতে নিযুক্ত করেছে । এসব উন্মত্ত কার্যাবলী ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের বিকাশের পরিচায়ক ।

প্রতিবেশি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য  ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা এই ধারণা প্রচার করছে যে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ” ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তার

জন্য হুমকি ” ।  এটা প্রশ্ন উঠতে পারে ঃ এটা কি পাকিস্তান যে ভারতের নিরাপত্তার জন্য হুমকি , নাকি এটা ভারত যে পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য হুমকি ? যখন ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা

পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর জ্বালাময়ী বক্তব্য দিচ্ছে  তখন ভারতসরকার পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সৈন্য জমায়েত করছে  এবং উপরন্তু সাদা পোশাকে সশস্ত্র মানুষ পাঠাচ্ছে পাকিস্তানের ভেতরে

বিশৃঙ্খলা ও নাশকতা সৃষ্টির জন্য । এই শক্তির প্রকাশ কি পাকিস্তানের নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ হুমকি নয় ?

ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলেরা আরও দাবি করছে যে ” ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের পক্ষে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কেবলমাত্র পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে দেখাটা অসম্ভব করে তুলেছে। ” এধরণের

বক্তব্য পুরোপুরি অযৌক্তিক । একটি ভৌগোলিক অবস্থানের পাশাপাশি প্রতিটি দেশের প্রতিবেশি থাকে । যদি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের এই  ” তত্ত্ব ” সঠিক হয় , তবে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রতিক্রিয়াশীল যেসব দেশে আছে

তারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভৌগলিক কারনের দোহাই দিয়ে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে । এহেন পরিস্থিতিতে , দেশগুলোর মাঝে কি করে স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকবে ?

ইহা উল্লেখযোগ্য যে এই দুটি পরাশক্তি , যারা ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় রেখে কাজ করছে , তারা অমার্জিতভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে । যুক্তরাষ্ট্রের

স্বরাষ্ট্র দপ্তর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার নাক গলানোর জন্য একটি স্টেটমেন্ট জারি করেছে  যেখানে সোভিয়েত সরকার আর স্থূলভাবে কাজ করেছে । প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে পাঠানো

চিঠিতে , সোভিয়েত ইউনিয়নের সভাপতিমণ্ডলীর সভাপতি এস. আর. পদ্গরনি ভারতীয় প্রতিক্রিয়াশীলদের পাকিস্তানের প্রতি হুমকির কোন উল্লেখ করেননি , কিন্তু এর বিপরীতে তিনি তিব্রভাবে পাকিস্তান

সরকারের নিন্দা করেছেন । তারা নিজেদের “বন্ধু ” বলে দাবী করে এবং ভণ্ডামি করে ” পাকিস্তানের জনগণের স্বার্থ ” নিয়ে উদ্বেগ জানায় । এটা সবারই জানা , যদি কোন দেশের স্বাধীনতা , সার্বভৌমত্ব ,

একতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা বিঘ্নিত হয় , তবে তার জনগণের স্বার্থ বলতে আর থাকে কি ? সোভিয়েত ইউনিয়ন চেকোস্লোভাকিয়ার উপর কি করেছিল সেটা বিচার করলেই দেখা যায় , সোভিয়েত নেতৃত্ব

কিসের পক্ষে ,কিসের বিপক্ষে , এবং তারা কোন পক্ষ অবলম্বন করে ।

মহান নেতা চেয়ারম্যান মাও এটা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেনঃ ” আমরা দৃঢ়ভাবে এটা মেনে চলবো যে সকল দেশ পারস্পরিক সম্মানের সেই ৫টী মূলনীতি চর্চা করবে যা হলো সার্বভৌমত্ব এবন আঞ্চলিক অখণ্ডতা ,

অনাগ্রাসন এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা , সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান । ” জাতিসমূহের মধ্যে সম্পর্ক বজায় রাখার এটাই পূর্বশর্ত । যে নিজের স্বার্থের

উদ্দেশ্যে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সে কোন ভাল ফলাফল বয়ে আনে না ।

পাকিস্তানের জনগণের আধিপত্যবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করার বিপ্লবী ঐতিহ্য আছে এবং বহিরাগত আগ্রাসী ও হস্তক্ষেপবাদিদের বিরুদ্ধে  অনমনীয় সংগ্রাম করেছে । চীন সরকার ও জনগণ বরাবরের মত

পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে তাদের জাতীয় স্বাধীনতা এবং প্রাদেশিক সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার এবং বিদেশী আগ্রাসন ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে এই ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম  সমর্থন জানিয়েছে ।

.

13.201.587

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষায় চীনা সমর্থনের আশ্বাস,প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান-এর কাছে প্রেরিত প্রধানমন্ত্রী চৌ-এন-লাই-এর বার্তা। পাকিস্তান হরাইজন
উদ্ধৃতি: সাউথ এশিয়ান ক্রাইসিস-রবার্ট জ্যাকসন
১৩ এপ্রিল,১৯৭১।

চৌ এন লাই এর ইয়াহিয়া খানকে বার্তা, ১২ এপ্রিল,১৯৭১।

আমি মান্যববের চিঠি এবং মান্যববের  তার সাথে কথোপকথননের উপর রাষ্ট্রদূত চ্যাং টাং এর প্রতিবেদনটি পড়েছি। আমি মান্যববের চীনা সরকারের উপর আস্থার জন্য কৃতজ্ঞ।

চীন ও পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী।  চীনা সরকার ও জনগণ খুবই উদ্বেগের সঙ্গে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করছে। মান্যবর এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলের নেতারা পাকিস্তানের একীকরণে এবং এটির বিভক্তি রোধে প্রচুর প্রয়োজনীয় কাজ করেছেন।

আমরা বিশ্বাস করি যে মন্যববের বিজ্ঞ পরামর্শ এবং পাকিস্তানের বিভিন্ন মহলের নেতাদের প্রচেষ্টায় পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা স্বাভাবিক হবে।

আমাদের মতে, পাকিস্তানের একীকরণ এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের ঐক্যই পাকিস্তানেনের সমৃদ্ধি ও শক্তি অর্জনের প্রাথমিক প্রতিশ্রুতি।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল বিপুল জনগণের মধ্য থেকে কতিপয় ব্যক্তি যারা পাকিস্তানের ঐক্য বিনষ্ট করতে চাচ্ছে তাদের  পৃথক করা।

পাকিস্তানের একটি অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে মান্যবরের প্রসংগ উদ্ঘাতের জন্য এসব মতামত উপস্থাপন করতে চাই।

একই সময়ে, আমরা লক্ষ করেছি যে, ভারত সরকার আপনাদের দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যপারগুলোতে ব্যাপক হস্তক্ষেপ করছে। আর সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও একের পর এক একই করছে।

চীনা প্রেস যেমন অযৌক্তিক হস্তক্ষেপের প্রতিবেদন বহন করছে এবং Podgorny এর  জবাবে মান্যবরের চিঠি প্রকাশ করেছে।

চীনা সরকার বিশ্বাস করে যে পাকিস্তানে যা  কিছু হচ্ছে তা পুরোপুরি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার,যেটা শুধুমাত্র পাকিস্তানের জনগণই ঠিক করতে পারে এবং এক্ষেত্রে কোনো বৈদেশিক হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না।

মহামান্য মান্যবর আশ্বস্ত করতে পারেন যে, ভারতীয় সম্প্রসারণবাদী পাকিস্তানের বিপক্ষে আগ্রাসন আরম্ভ করতে সাহস করবে না। যেহেতু চীনা সরকার ও জনগণ সর্বদা, এবং দৃঢ়ভাবে পাকিস্তান সরকার ও জনগণের তাদের রাষ্ট্র এর সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার ন্যায়সঙ্গত  সংগ্রামে সমর্থন করে।

-পাকিস্তান  হরাইজন, XXIV নং ২, পৃ ১৫৩-১৫৪

.

13.202.588

শিরোনাম সূত্র তারিখ
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়  স্বাধীনতা রক্ষায় সংগ্রামে পাকিস্তানের প্রতি সংহতি প্রকাশ:
ভুট্টোর সম্মানে প্রদত্ত ভোজসভায় গণচীনের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী চী পেং ফি-এর বক্তৃতা।
পাকিস্তান হরাইজন
উদ্ধৃতি: সাউথ এশিয়ান ক্রাইসিস-রবার্ট জ্যাকসন
৯ নভেম্বর, ১৯৭১।

.

ভুট্টোর  সম্মানার্থে ভোজসভায় চি-পেং-ফিই এর ভাষণ, ৭ নভেম্বর,১৯৭১।

পাকিস্তানি  রাষ্ট্র তার সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য, তারা পাকিস্তানের জনগণ বিদেশী হানাদার, হস্তক্ষেপকারী এবং গার্হস্থ্য বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে অবিরাম সংগ্রামের রত চালিয়েছে।  পাকিস্তানী সরকার তার স্বাধীনতার পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলেছে  এবং এশিয়ায় শান্তির প্রতিরক্ষায় ও আফ্রো-এশীয় সংহতির প্রচারে অবদান রেখেছে।

ইদানীং, ভারত সরকারের কৌশলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রশ্ন কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ও সামরিক হুমকি অব্যাহত রেখেছে। চীনা সরকার ও জনগণ উপমহাদেশের বর্তমান চাপা উত্তেজনা নিয়ে ব্যপকভবে উদ্বিগ্ন। যে কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় তার নিজের লোকদের দ্বারা পরিচালিত হবে এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি।পূর্ব পাকিস্তানের প্রশ্ন হল, পাকিস্তানের জনগণ নিজেরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং একটি যুক্তিসঙ্গত বন্দোবস্ত নিজেরাই চাইবে এবং এটা যে কোনো অজুহাতে ধ্বংস ও যে কোনো হস্তক্ষেপ কোন বিদেশী দেশের জন্য একেবারে অস্বীকার্য। ধারাবাহিকভাবে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচ মূলনীতি  মান্যকারী, চীনা সরকার কখনোই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না এবং দৃঢ়ভাবে কোনো দেশ অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বিরোধিতা।
এটা আমাদের দৃঢ় এবং অটল অবস্থা। আমরা বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের মানুষ ব্যাপক দেশপ্রেমিক এবং তারা জাতীয় ঐক্য এবং দেশের একীকরণ আমরা বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানের মানুষ ব্যাপক জনগণের দেশপ্রেমিক এবং তারা জাতীয় ঐক্য এবং দেশের একীকরণ, অভ্যন্তরীণ বিভক্ত এবং বাইরের হস্তক্ষেপ বিরোধিতা রক্ষা করতে চায়। এটা আমাদের আশা যে পাকিস্তানি জনগন তাদের ঐক্য জোরদার এবং অসুবিধা  অতিক্রম এবং নিজস্ব সমস্যার সমাধান করতে যৌথ প্রচেষ্ট হবে। আমরা লক্ষ করেছি যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তি তাদের ভবিষ্য অভিপ্রায় উপলব্ধি করে একটি বন্য চেষ্টায় উপমহাদেশের উত্তেজিত পরশ্রমজীবী দ্বারা পাকিস্তানের উপর নিষ্ঠুরভাবে চাপ প্রয়োগ করেছে। চীনা সরকার ও জনগণ অনুষ্ঠিত করেছে যে, রাজ্যের মধ্যে বিরোধ বলপূর্বক অবলম্বী দ্বারা না হয়ে, আলোচনা মাধ্যমে এবং সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের দ্বারা নিষ্পত্তি করা উচিত। যুক্তিসঙ্গত সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান দ্বারা পেশ করা হয়েছে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর  জন্য এবং পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে প্রতাহার করা হয় এবং বিচ্ছিন্ন উপমহাদেশের টান ঢিলা করা সহায়ক  এবং সাদরে গ্রহণ করা উচিত। আমাদের পাকিস্তানি বন্ধুরা আশ্বস্ত হতে পারে যে,পাকিস্তানে বৈদেশিক আগ্রাসনের ক্ষেত্রে চীনা সরকার এবং জনগণ বরাবরের মতই অতলভাবে পাকিস্তান  সরকার এবং জনগণের তাদের রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম সমর্থন করবে।

.

13.203.589-590

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে চীন ‘ন্যায়সঙ্গত সমাধান’ চায় স্টেটসম্যান ৭ নভেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশ প্রশ্ন ‘ন্যায়সঙ্গত সমাধান ‘ চায় চীন সীমান্ত প্রশ্নে ইন্দো-পাক বৈঠক প্রস্তাব

পিকিং,৭ নভেম্বর – ভারত ও পাকিস্তান কে সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে সলা করতে হুমকি দিলো আজ চীন। আরও,পাকিস্তান কে বাংলাদেশ প্রশ্নে “ন্যায়সঙ্গত সমাধান ” খুঁজতে বলা হয়েছে,সূত্র এএফপি এবং রয়টার। জনাব চেং পেং ফেই,বর্তমান চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানী প্রতিনিধিদল এর সম্মানে পেকিং এ আয়োজিত ভোজ এ ইসলামাবাদ এর প্রতি আহবান জানান বাংলাদেশ সমস্যা যেন তারা নিজেরা সমাধান করেন।তিনি বলেন এটি পাকিস্তান এর কাঠামো র মধ্যেই এর দেশটির সংহতি ও ও অখণ্ডতা বজায় রেখেই করা সম্ভব। জনাব চেং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সীমান্ত হতে “সংগত দুরত্বে ” সৈন্য প্রত্যাহার এর “সংগত প্রস্তাব ” এর প্রতি সমর্থন জানান।তিনি বলেন-“রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার দ্বন্দ্ব উভয়পক্ষের অংশগ্রহণ এ সমাধা হওয়া উচিত এবং অহংকার এর অবলম্বন এ নয়। ” উক্ত বক্তব্য সম্পর্কিত রেডিও পাকিস্তান এর রিপোর্ট এ অবশ্য দাবী করা হয়েছে যে চীন পাকিস্তান এর প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যাক্ত করেছে ভারত এর ইউ এন আই সহ যেকোন বিদেশী হামলার প্রশ্নেই। রেডিও পাকিস্তান এ আরও বলা হয়েছে যে,জনাব চেং অভিযোগ করেছেন যে, ভারত পাকিস্তান এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।জনাব চেং কে উদ্ধৃত করে আরও বলা হয় যে,চীন নিজে অন্য কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনা এবং এ ধরনের হস্তক্ষেপ এর বিরোধী। তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভারত এবং পাকিস্তান উভয় রাষ্ট্রের সীমান্ত হতে সৈন্য প্রত্যাহার এর প্রস্তাব এর ন্যায্যতা প্রদান করে বলেন,উপমহাদেশ এ শান্তি আনয়ন এর জন্যই এটি প্রয়োজন। চীন এই পরিস্থিতি তে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, তিনি যোগ করেন। রেডিও অনুযায়ী জনাব চেং বলেন- ভারত পূর্ব বাংলার পরিস্থিতির অন্যায্য সুবিধা নিচ্ছে।এই চীনা নেতা,চীন পাকিস্তান কে কোন ধরনের সাহায্য দিতে পারে সে সম্পর্কে অবশ্য কোন ইঙ্গিত দেননি। উক্ত ভোজ এ চীনা প্রধানমন্ত্রী জনাব চউ এন লাই ও উপস্থিত ছিলেন। জনাব ভুট্টো,যিনি পাকিস্তানী কূটনৈতিক দলের প্রধান ছিলেন চীন এর সমর্থন এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। চীন সফর এর তৃতীয় দিনে আজ,জনাব ভুট্টোর জনাব চউ এন লাই এর সহিত কয়েক দফা বৈঠক এর কথা ছিল। পাকিস্তানী তিনজন পদস্থ কর্মকর্তার তাদের অনুরূপ চীনা কর্মকর্তাদের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করার কথা।

পরে এক সংবাদ সম্মেলন এ জনাব ভুট্টোকে তার পাকিস্তান সফর এর ফলাফল এবং পাকিস্তান এর প্রতি চীনা সাহায্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়।

.

পরে একটি সংবাদ সম্মেলনে জনাব ভুট্টোকে সফর ও পাকিস্তানে চায়না সাহায্যের ফলাফল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। ‘আমাদের ক্ষমতা প্রকাশ’ কে অস্বিকার করে জনাব ভুট্টো বললেন, “আমরা সবকিছু পরিমাপ করেছি। আমরা ভীষণভাবে আশ্বস্ত আমাদের সব সম্ভাব্যতা সম্পূর্ণরূপে হিসাবে আনতে পেরে”। যাহোক, অবশেষে তিনি সরাসরি চাইনিজ সরকারের প্রতিস্রুতির দ্বন্দে শাসন জারি করলেন, যে কোন সিদ্ধান্তই হবে ‘আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টা’।

জনাব ভুট্টো দাবি করলেন তার প্রতিনিধি যারা কাল খুব সকালে পিকিং ছেড়ে যাবে, তারা চাইনিজ নেতাদের সাথে ‘পরিপূর্ণ পরিচয়ে’ পৌঁছেছে।

তিনি আরো দাবি করলেন এই সফর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্য থেকে বিরত থাকতে দৃঢ় অবদান তৈরি করেছে’। সফর শেষে কোন প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হবেনা কারন জনাব ভুট্টো বলেছেনঃ

“আমরা কোন প্রজ্ঞাপনের প্রয়োজন দেখছিনা। চুক্তির কোন দরকার নেই”।

জনাব ভুট্টো স্বেচ্ছায় আরো বললেন, তিনি যা বলেছেন তা তার “ব্যক্তিগত অভিমত” যা “উদ্বেগের মধ্যে” জাতিসংঘ সিকিউরিটি কাউন্সিলের সমাধানে অকালপক্ক হতে পারে। “জাতিসংঘের বাইরেও সমাধান থাকতে পারে” তিনি বলেন।

তিনি বলেন পাকিস্তান ভারতের সাথে সম্পর্কের “একটি নতুন অধ্যায়” এর ব্যাপারে আশাবাদী এবং দাবি করেন পাকিস্তান কোন অস্ত্র দ্বন্দ্ব চায়না এবং “গতিশীলতা” চায় যখন ভারত “সন্ত্রাসবাদ, অন্ধ দেশহিতৈষিতা ও হস্তক্ষেপমূলক পররাষ্ট্রনীতি তে বিশ্বাস করে”।

তিনি পূর্ব বাংলা সমস্যার সমাধানে পাকিস্তানের সম্মতি ঘোষণা করেন “ সদ্বিবেচনা, অপ্রমাদ ও ধীরে সুস্থে”। মিসেস গান্ধীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরকে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভারত তার বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করছে। আমরা আমাদের বন্ধুদের সাথে। গণপ্রজাতন্ত্রী চায়নার সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি”।

                                             ………………

.

13.204.591

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে রাজনৈতিক সমাধানে পৌছার জন্য পাকিস্তানের প্রতি চীনের পরামর্শ স্টেয়স্ম্যান ১২ নভেম্বর, ১৯৭১

রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে পাকিস্তানকে চীনের পরামর্শ প্রদান

নয়াদিল্লী, নভেম্বর ১২- চীন সংযমের সঙ্গে কাজ করতে এবং পূর্ববাংলার সমস্যার একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করতে পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছে, লন্ডন টাইমসের রাওয়ালপিন্ডি সংবাদদাতা বলেছেন, রিপোর্ট করেছে ইউ এন আই।

চীনারা বলেছেন যে পাকিস্তানের কোন ক্ষেত্রেই ভারতের আক্রমণ করা উচিত নয়, এবং পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করবার জন্য সময়টি মোটেও উপযুক্ত ছিল না, বিবিসিকে উদ্ধৃত করে প্রতিনিধি জানান।

ডেইলি টেলিগ্রাফ তার ঢাকা সংবাদদাতা থেকে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে পূর্ববাংলায় ৬,০০০ পশ্চিম পাঞ্জাবি পুলিশ মনোবল দমে গেছে এমন লক্ষণসমূহ সেখানে ছিল। তাদের পূর্ববাংলায় আনা হয়েছিল বাঙালি পুলিশদের প্রতিস্থাপন করতে যারা বাংলাদেশের কারণে চলে গেছে। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশদের পূর্ববাংলার আনা হয় এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে যে তাদের সেপ্টেম্বরে ফেরত পাঠানো হবে। তারা এখন দাবি করছে যে তাদের প্রত্যাবর্তনের একটি পাকা তারিখ তাদের দিতে হবে।

লন্ডনে পরিদর্শনকারী অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জনাব উইলিয়াম ম্যাকমাহান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব ডগলাস-হোমের সঙ্গে একটি এক ঘণ্টার বৈঠক করেন। আলোচনার বিষয়বস্তুতে ভারতীয় উপমহাদেশের সমস্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে বেতারবার্তা সংযোজন করে।

.

13.205.592

শিরোনাম সুত্র তারিখ
জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের পাকিস্তানী শরণার্থী বিষয়ক কমিটিতে গনচীনের প্রতিনিধি ফ হাও-এর বক্তৃতা চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ ১৯ নভেম্বর, ১৯৭১

ভারতে পাকিস্তানি শরনার্থীদের বিষয়ে জাতি সংঘের সাধারন অধিবেশনের তৃতীয় কমিটিতে চীনের প্রতিনিধি ফ হাও এর বক্তৃতা, ১৯শে নভেম্বর, ১৯৭১

চীন সরকার এবং জনগণ সবসময় ভেবে এসেছে যে, কোন দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়গুলো সেই দেশের জনগণের নিজেদেরই ঠিক করা উচিত। পূর্ব পাকিস্তানে যে প্রশ্নটি উদ্ভূত হয়েছে তা সম্পুর্নভাবে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয় যেটা কেবলমাত্র পাকিস্তানের জনগণ নিজেরা সমাধা করতে পারে এবং কোন অজুহাতেই এতে হস্তক্ষেপ করার অধিকার অন্য কোন দেশের নেই।

পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তুদের প্রসংগ উঠেছে এবং সেটা এই অবস্থায় এসেছে  পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট দেশের  হস্তক্ষেপের কারনে, যার ফলে উপমহাদেশে বর্তমান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান সরকার বারবার উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য এবং শরনার্থীদের বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু এই সবগুলো প্রস্তাব সংশ্লিষ্ট দেশ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। এটা পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীদের প্রসংগকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিধ্বংসী কর্মকান্ড সংঘটিত করার জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানি শরনার্থী প্রসংগে একটি যুক্তিসংগত সমাধানে পৌছানোর বিষয়টিকে অসম্ভব করে তুলে পুর্ব পাকিস্তানি শরনার্থীদের তাদের স্বদেশে ফিরে আসায় বাধা দিচ্ছে। চীন সরকার এবং জনগণ ভালভাবেই জানে যে এগুলো অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপের কৌশল। আমাদের দেশের তিব্বত অঞ্চলে একটি  নির্দিষ্ট প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বিগ্রহের পরিকল্পনা করা ও বিধ্বংসী কর্মকান্ড চালানোর অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। যখন চীনের জনগণ এর পরিকল্পিত বিগ্রহকে বানচাল করে দিল, এটি চীনের প্রতি প্রচন্ড বিরোধিতায় তথাকথিত তিব্বত শরনার্থীর প্রশ্ন তুলে হাজার হাজার চীনবাসীকে তার দেশে চলে যেতে বাধ্য করেছিল। আমরা বিশ্বাস করি যে পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থী প্রশ্নে একটি যুক্তিসংগত নিষ্পত্তিতে পৌছানোর জন্য সবার আগে অবশ্যই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। একমাত্র এভাবেই পূর্ব পাকিস্তানি শরনার্থীদের সত্যিকার অর্থে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে সাহায্য করা হবে।

চীন সরকার সবসময় শান্তিপুর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতি মেনে চলেছে, কখনো অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি এবং কোন দেশ তথাকথিত ‘শরনার্থী প্রশ্নে’ বা অন্য কোন অজুহাতে অন্য দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলে দৃঢ ভাবে তার বিরোধিতা করেছে। প্রদেশগুলোর মধ্যকার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে, আমরা সবসময় মনে করি যে, সেগুলো সংশ্লিষ্ট দেশেগুলোর মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি যে, পাকিস্তানি জনগণের বিপুল জনগোষ্ঠী দেশপ্রেমিক, বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধি, এবং তারা অবশ্যই তাদের নিজেদের সমস্যা সমাধানে সক্ষম হবে।

.

13.206.593

শিরোনাম সুত্র তারিখ
আলবেনীয় সম্বর্ধনা সভায় উপমহাদেশীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে গণ-চীনের উপ-প্রধান মন্ত্রী লী শিয়েন নিয়েন-এর বক্তৃতা চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

আলবেনীয় সম্বর্ধনা সভায় গণ-চীনের উপ-প্রধান মন্ত্রী লী শিয়েন নিয়েন-এর বক্তব্য, ২৯শে নভেম্বর, ১৯৭১

        গত কয়েকদিনে, সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা সমর্থিত ও উৎসাহিত ভারত সরকার বিধ্বংসী কর্মকান্ড সংঘটিত করায় এবং পূর্ব  পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্ররোচনার কারনে উপমহাদেশের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। চীন সরকার এবং জনগণ বর্তমান ভারত পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন। আমরা বজায় রাখছি যে, দুটি প্রদেশের মধ্যকার দ্বন্দ্ব সংশ্লিষ্ট পক্ষ দুইটির শান্তিপুর্ণ আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা উচিত এবং অবশ্যই বল প্রয়োগ করে নয়, যেকোন অজুহাতেই, বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র সৈন্যবাহিনীকে ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের সীমানা পাড় হওয়া ও আক্রমন করা এবং অন্য একটি দেশের এলাকা দখল করার জন্য নিয়োজিত করা একটি দেশের জন্য সব থেকে বেশি নিন্দনীয়। চীন সরকার এবং জনগণ, পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে বৈদেশিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের ন্যায়সঙ্গত সংগ্রাম এবং তাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। বর্তমান উত্তেজনাকে কমানোর

জন্য আমরা মনে করি যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের ভারত এবং পাকিস্তানের স্ব স্ব সশস্ত্র বাহিনীকে সীমান্ত থেকে প্রত্যাহার ও সরিয়ে ফেলার যৌক্তিক প্রস্তাবকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

.

13.207.594-595

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গণচীনের প্রতিনিধি মিঃ হুয়াং হুয়ার ভাষণ চায়না,পাকিস্তান এ্যন্ড বাংলাদেশ ৪ ডিসেম্বর,১৯৭১

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চায়না প্রতিনিধি হুয়াং হু এর বিবৃতি

ডিসেম্বর,১৯৭১

ইদনীংকালে ভারতীয় সরকার কোনো গোপনীয়তা ছাড়াই পশ্চিম পাকিস্তান আক্রমণ করার জন্য সেনা পাঠাচ্ছে এবং বিশাল পরিসরে সশস্ত্র যুদ্ধ ঘটাচ্ছে। এইভাবেই ভারত পাকিস্তান উপমহাদেশ ও এশিয়ার মাঝে সম্পর্ক ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে উঠলো।এ ব্যাপারে চায়না সরকার ও জনসাধারণ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলো এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের আশা ব্যক্ত করলো।

১)পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রহ পুরোপুরিভাবেই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে নিবদ্ধ ছিলো,যেখানে কিনা নাক গলানোর অধিকার কারোরই নেই।পশ্চিম পাকিস্তানের আগ্রহের অজুহাতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা চালানো ভারতীয় সরকারের জন্য অবৈধ.

২)ভারতীয় সরকার দাবী করলো তারা পশ্চিম পাকিস্তানে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী প্রেরণ করেছে। এটি নিছক বেপরোয়া যুক্তি।The facts show that it is a India which has committed aggression against Pakistan and not Pakistan which has ‘menanced’ the security of India.ভারতীয় সরকারের যুক্তি অনুসারে,অন্য কোনো দেশকে আক্রমণ করার জন্য যেকেউ “আত্মরক্ষা”র অজুহাত ব্যবহার করতে পারে।এ ক্ষেত্রে,বিভিন্ন দেশের সার্বভৌম ক্ষমতা ও রাষ্ট্রাধীন অখন্ডতার নিশ্চয়তা কি?

৩)ভারতীয় সরকার দাবী করলো,সেনাবাহিনী পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো পশ্চিম পাকিস্তানকে আক্রমণ করে পশ্চিম পাকিস্তানের শরণার্থীদের সাহায্য করে তাদের নিজ দেশে পাঠানো।এটি নিতান্তই অসমর্থনীয়।বর্তমানে তিব্বত,চায়না থেকে বিশাল সংখ্যায় তথাকথিত “আশ্রয়প্রার্থী”ভারতে আছে,ভারতীয় সরকার দালাইলামাকে পরিচর্যা করছেন যিনি কিনা তিব্বতীয় পাল্টা বিপ্লব বিদ্রোহের প্রধান। ভারতীয় সরকারের দাবী অনুসারে,তারা কি এর উপর ভিত্তি করে চায়নার বিরুদ্ধেও হামলা চালাবে?

৪)পাকিস্তানি সরকার পর্যায়ক্রমে দুইপাশের সীমান্ত থেকে সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার ও বিচ্ছিন্ন করার এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শরণার্থীদের স্থায়ী হওয়া প্রসঙ্গে দুই সরকারের মাঝে আলোচনার প্রস্তাব দিলো।এটি সম্পুর্ণরূপে যুক্তিসংগত। যাই হোক,ভারতীয় সরকার অকস্মাৎ তা নাকচ করে দিলো।এ থেকে দেখা যায় যে,পশ্চিম পাকিস্তানের শরণার্থীদের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ভারতীয় সরকারের কোনো উদ্দেশ্যই নেই উপরন্তু এই সমস্যাকে পুঁজি করে অজুহাত হিসেবে নিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধ্বংস ও আক্রমণ করতে চায়।

জাতিসংঘের দলিল অনুসারে চাইনিজ প্রতিনিধি দল মনে করে,নিরাপত্তা পরিষদের উচিৎ ভারতীয় সরকারের আক্রমণাত্মক আচরণের তীব্র নিন্দা করা এবং ভারতীয় সরকার যেন অবিলম্বে ও নি:শর্ত ভাবে পাকিস্তান থেকে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করে সেই দাবি করা।

 পরিশেষে,চায়না সরকারের পক্ষ থেকে আমি বলতে চাই যে,চায়না সরকার ও জনসাধারণ কঠোরভাবে পাকিস্তান সরকারকে সমর্থন করে এবং তাদের জনসাধারণ শুধু ভারতের হামলার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ করে।এখানে আমি নিরাপত্তা পরিষদ,জাতিসংঘ ও পৃথিবীর জনসাধারণকে ইঙ্গিত করে বলতে চাই যে,ভারতীয় সরকারের সাম্প্রতিক আক্রমনাত্বক কার্যক্রম সংগঠিত হয়েছে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের সমর্থনে।সত্য ঘটনার প্রাচুর্যে এটি সমর্থিত। এই ব্যাপারে আরো বেশি কিছু না বলে আমার কথা এখানেই শেষ করছি।

.

13.208.596-597

শিরোনাম সূত্র তারিখ

উপমহাদেশীয় যুদ্ধে পাকিস্তানকে দৃঢ় সমর্থন দিবে চীন। ব্রিটিশ সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েলের সাথে সাক্ষাতকারে চীনা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য।

 

– স্টেটসম্যান ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পাকিস্তানকে দৃঢ় সমর্থনের ব্যাপারে চৌ এর অঙ্গীকার

  এস নিহাল সিং

লন্ডন, ডিসেম্বর ৪ – পাক-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে চীনের অভিব্যক্তির ব্যাপারে চৌ এন লাই যা বলেছেন,তাতে পাকিস্তানকে অর্থ এবং অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার যে গুজব রটেছিল সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।

আগামীকাল সানডে টাইমসে প্রকাশিতব্য নেভিল ম্যাক্সওয়েলের নেওয়া চীনা প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে মি. চৌ উপমহাদেশীয় যুদ্ধের ক্ষেত্রে তার দেশের কেবলমাত্র “দৃঢ় সমর্থনের” কথাই ব্যক্ত করেন।

এই দৃঢ় সমর্থনের ধরণ কী হবে সেটা অনুচ্চারিত রয়ে গেছে, যদিও তিনি এ অবস্থার জন্যে ভারতকে দায়ী করেন এবং পূর্ববঙ্গ সমস্যা উপমহাদেশে যুদ্ধের পর ও অস্থিরতা টিকিয়ে রাখার জন্যে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেনের রেখে যাওয়া একটি টাইম বম্ব।

পূর্ব পাকিস্তান এবং তিব্বত থেকে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের সমস্যার মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে বলে জানান মি. চৌ। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট নিক্সনের চীন সফরের কথা ঘোষণা করার পর দুই বছর ধরে ঝুলে থাকা ভারত-সোভিয়েত চুক্তি তড়িঘড়ি করে স্বাক্ষর করা হয়। ১৯৬২ তে ইন্দোচীন সমস্যার জন্যেও তিনি  রাশিয়াকে আংশিক দায়ী করেন। মি. চৌ এর মতে,১৯৬২ সালে চীন যে পালটা আঘাত হানবে না, সেটা রাশিয়াই ভারতকে জানিয়েছিল।

এই সাক্ষাৎকার যদিও ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের ক্ষেত্রে চীনের অবস্থানকে স্পষ্ট করে কিন্তু এটা আসলে চীনের এক ধরণের রণকৌশল কারণ পশ্চিমা বিশ্বে এই যুদ্ধের প্রতি একটি সহানুভূতিশীল প্রতিক্রিয়া ছিল।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হয়,তিনি যেন মিসেস গান্ধী এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে যুদ্ধ বিরতির কথা বলেন। কিন্তু পাক ভারতের ক্ষেত্রে ব্রিটেনের এ ধরণের প্রভাব বিস্তারের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পেরে হোয়াইট হল এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া থেকে বিরত থাকতে চাইছিল বলে মনে হয়।

                    প্রবাসী ভারতীয়

ব্রিটেনে প্রবাসী  ভারতীয়রা তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখাল যে তারা দেশে ফিরে গিয়ে দেশের জন্যে যুদ্ধ করতে চায় এবং ভারতীয় হাইকমিশনে প্রচুর কল আসতে লাগলো।

 ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে পাকিস্তানের অতর্কিত বোমা হামলার বিষয়টি আজকে ব্রিটিশ প্রেসের প্রায় সব রিপোর্টে এসেছে।তবু ব্যাপারটি যে সম্পূর্ণ যুদ্ধাবস্থায় পরিণত হয় নি সে ব্যাপারটাতে জোর দেয়ার প্রবণতা ও লক্ষ করা গেছে, উদাহরণ হিসেবে টাইমস লিডারের কথা বলা যায়।

অপরদিকে, দি গার্ডিয়ান,যারা উপমহাদেশের এই যুদ্ধের প্রতি সহানুভূতিশীল তাদের মতে ইয়াহিয়া-মিসেস গান্ধীর একটি বৈঠকই যুদ্ধ পুরোমাত্রায় বন্ধ করে দেয়ার একমাত্র উপায়। দি টেলিগ্রাফের মতে,ভারতীয় বিমানবন্দরে পাকিস্তানি বোমা হামলা মিসেস গান্ধীর প্রতি পাকিস্তানের সতর্কবার্তা। কিন্তু এর সম্পাদকীয় তে বলা হয়,ইয়াহিয়া চাইলে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে পূর্ব পাকিস্তান সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে পারেন।

NONA’র উদ্ধৃতি দিয়ে পিটিআই বলেছে,চীন ভারতের সম্প্রসারণবাদী মনোভাব এবং ভারতকে সোভিয়েত সমর্থনের নিন্দা জানায় এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যার ব্যাপারে নিজেদের সমর্থন জ্ঞাপন করে।

চীনের দাপ্তরিক সংবাদ সংস্থা বলছে- ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রী মি.চি পেং ফেই মৌরিতানিয়ান রাষ্ট্রদূত কর্তৃক প্রদত্ত এক সংবর্ধনায় এসব বলেন। মৌরিতানিয়ার একাদশতম স্বাধীনতা বার্ষিকীতে মোহাম্মদ কুইদ সিদি আলি বলেন- একজন ভারতীয় নেতা পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তানি সৈন্য প্রত্যাহারের যে দাবি জানিয়েছেন তা অযৌক্তিক। ভারত কর্তৃক পাকিস্তানের মাটি দখল করা কি নির্লজ্জতার পরিচয় নয়? এরকম দাবি ভারতীয়দের সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে তিনি ঘোষণা করেন।

.

13.209.598

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের প্রশ্নে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত খসড়া প্রস্তাবের ব্যাখ্যায় গণচীনের প্রতিনিধি হুয়াং হুয়ার বক্তৃতা চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

চীনা প্রতিনিধি দল নিরাপত্তা পরিষদের কাছে একটি খসড়া প্রস্তাব(এস/১০৪২১) উপস্থাপন করেছে এই পরিষদের সদস্য বিবেচনার প্রশ্নে।এখন আমি এই খসড়া প্রস্তাবটি সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ব্যাখা করতে চাই।এর প্রভাবে একটি যুক্তি উত্থাপিত হয়েছে যে প্রথমেই ভারত ও পাকিস্তানের কাছে একটি অনুরোধ করা যেতে পারে যুদ্ধ বিরতি ও সামরিক পদক্ষেপ অবসানের জন্য,যদিওবা সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের প্রশ্ন পরবর্তী তারিখ পর্যন্ত স্থগিত রাখা যেতে পারে।এই যুক্তিতে আমরা স্পষ্টভাবে একমত হতে পারিনা কারণ বর্তমানে বাস্তব অবস্থা এই যে ভারতীয় সরকার নির্লজ্জভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ধ্বংস ও আক্রমণ সম্পন্ন করেছে এবং প্রকাশ্যে সৈন্য পাঠিয়েছিল পাকিস্তানি অঞ্চল আক্রমণের জন্য।এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সরকারের ধ্বংস ও আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে যা একমাত্র উপমহাদেশে শান্তি ও নিরাপত্তা আদায়ের চাবিকাঠি। ভারতীয় সৈন্য অবিলম্বে পাকিস্তানি অঞ্চল থেকে নিঃশর্তভাবে এবং সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করতে হবে।

দুই পক্ষের দ্বারা জায়গাটিতে শুধুমাত্র একটি যুদ্ধ বিরতির চাহিদা রয়েছে।ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের চাহিদা ছাড়া কার্যত এই সমপরিমাণ উপেক্ষা ও উৎসাহিত আক্রমণ, পাকিস্তানে অবশিষ্ট চেভারতীয় আগ্রাসক সৈন্যের আইনিভাবে স্বীকৃতির শামিল।এটা করলে তা ভারত ও পাকিস্তানের অস্ত্র সংঘাত বা ঐ এলাকার উত্তেজনা শিথিলকরণে কোন সাহায্য করবেনা।অন্যদিকে এটি শুধু চরম সমাধি ও বিপদজনক ফলাফল বয়ে আনবে।শুধু সোমালিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে গতকাল বললেন,মধ্যপ্রাচ্য প্রশ্নে প্রস্তাব না জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে যা আরবীয় অঞ্চল থেকে ইসরাইল আগ্রাসক সৈন্য প্রত্যাহারের দাবিতে ব্যর্থ কিন্তু জায়গাটিতে যুদ্ধ বিরতির কথা বলা হয়েছে।আগ্রাসনের বৈধতা এবং তাদেরকে আরব দেশ ও সেই দেশের মানুষের উপর আরোপ করার ফলে মধ্যপ্রাচ্য বিপদজনক আগ্রাসন ও বৃহদাকার যুদ্ধ ক্ষেএে পরিণত করেছে।

জাতিসংঘের কোনভাবেই বারবার নীতির একটি বড় ভুল পুনরাবৃওি করা উচিত নয়।এটা কি করা উচিত,সারা বিশ্বের মানুষ যারা নীতি সমর্থন করে, তাদের নিরাপত্তা পরিষদের উপর অপবাদ আরোপ করার যথেষ্ট কারণ থাকবে ভারতের প্রকল্প সহযোগী,পেছনের দৃশ্যে কর্তৃত,সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ, পাকিস্তানি অঞ্চল আক্রমণ ও দখল করা এবং পাকিস্তানি রাষ্ট্র বিভাজনের জন্য।আমরা পৃষ্ঠপোষক রাষ্ট্রকে এমন মন্দ পরিণতির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনার জন্য আহবান করি।অতএব আমরা প্রস্তাব করি যে ধারা দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আগ্রাসনের নিন্দা করে এবং অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে ভারতীয় সৈন্যের প্রত্যাহারের দাবি জানায় যা নির্মানাধীন খসড়া প্রস্তাব যোগ করে পাকিস্তানি অঞ্চল আক্রমণ করেছে।

.

13.210.599-601

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ প্রশ্নে চীনের ভাষ্যঃ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গণচীনের প্রতিনিধি চিয়াও কুয়ান হুয়ার বক্তৃতা চায়না, পাকিস্তান এন্ড বাংলাদেশ ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গণচীনের প্রতিনিধি চিয়াও কুয়ান হুয়ার বক্তৃতা, ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ভারত ও পাকিস্তান চীনের নিকটতম প্রতিবেশী। চীন সরকার ও জনগণ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সশস্ত্র সংঘাতের ব্যপারে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। চীনের প্রতিনিধি এই ব্যপারে কিছু বিষয় তুলে ধরবে।

১। ভারতীয় সরকার একটি সরাসরি আক্রমণকারী।

এখানে উপস্থিত আমাদের সহকর্মীবৃন্দ সকলেই জানেন কিভাবে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। ভারত সরকার বার বার বলে আসছে যে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বাস্তু প্রশ্ন যা এমন পরিস্থিতিতে নিয়ে আসে যা পাকিস্তানে আক্রমণ করার জন্য সৈন্য দল প্রেরণ ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না। এটি প্রকৃতপক্ষে বিচ্ছিরি চরমপন্থা। কিছুদিন আগেও ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বলপূর্বক চাইনিজ তিব্বতের দশ হাজারের মত অধিবাসিকে ভারতে যেতে দিয়েছে এবং চীনের বিশ্বাসঘাতক দালাই লামাকে প্রধান করে তথাকথিত নির্বাসিত সরকার তৈরি করে। তথাকথিত উদ্বাস্তু প্রশ্নের অজুহাতে ভারত সরকারের পাকিস্তান আক্রমনকে সমর্থনযোগ্য বলে মেনে নিলে একইভাবে তথাকথিত “তিব্বতী উদ্বাস্তু” প্রশ্নের অজুহাতে ভারত সরকারের চীন আক্রমনকে সমর্থনযোগ্য বলে মেনে নিতে হবে। এই ধরনের অজুহাত সম্পূর্ণরূপে অদ্ভুত নয় কি?

একটি বিশেষ ক্ষমতার ছত্রছায়ায়, ভারত সরকার অনেক যুদ্ধংদেহী ও প্রভাববিস্তারকারী হয়ে উঠছে। এটি স্পষ্টত গোলমেলে যে যখন থেকে পাকিস্তান ভারতের প্রতিবেশী, পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানী সৈন্যদলের অবস্থান ভারতের জন্য হুমকি। এটি নিছক ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ড। ভারত চীনেরও প্রতিবেশী, ভারতে ভারতের সেনাবাহিনীর অবস্থান কি চীনের জন্য হুমকি তৈরি করে না?

ভারতের ক্ষমতাশীল দল দাবী করে যে ভারত একটি দেশ যা গনতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং শান্তি ভালবাসে। এসবের সাথে যার যোগসূত্র নেই তাদের জন্য এটি হতে পারে কেবল ছলাকলা অথবা প্রতারণা। আজকের বিশ্বে, কেবল ভারতে দশ মিলিয়নের বেশী অস্পৃশ্য পাওয়া যাবে। আফ্রিকা ও এশিয়ার নতুন স্বাধীন হওয়া দেশগুলোর মধ্যে কেবল ভারতে রয়েছে একটি “আশ্রয় রাজ্য”। প্রায় সকল প্রতিবেশী রাষ্ট্র একবার কিংবা বারবার ভারত কর্তৃক নিপীড়িত হয়। এ কেমন গনতন্ত্র? এ কেমন স্বাধীনতা? এবং এ কেমন শান্তি?

ভারতের সম্প্রসারণবাদের ইতিহাস অনেক লম্বা। নেহরু তার ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া বইয়ে নগ্নভাবে দাবী করেন যে দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশ ও ভারত মহাসাগর ভারতের প্রভাব বলয়ের মধ্যে আছে। এই বছরগুলোতে ভারতের ক্ষমতাশীল দল তাদের প্রচেষ্টা “পরাশক্তি” কিংবা “প্রাক- পরাশক্তি” হওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে কখনো ছেঁড়ে দেয় নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাদের বর্তমান আগ্রাশন এমন সম্প্রসারণ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নে অনিবার্য পরিণতি।

২। ভারতের আগ্রাসনের পেছনে সোভিয়েত সরকারই প্রধান।

ভারতীয় স্বভাবত বর্ধনশীলতার এত সাহস নেই। তারা এখন এত চরমপন্থি হয় কেন? কারণ হল একটি পরাশক্তি, সোভিয়েত সমাজ-সাম্রাজ্যবাদ, তাদের পেছনের যোগান দিচ্ছে। যেমনটি আমি আগে বলেছি, তথাকথিত ভারতীয় সোভিয়েত শান্তি চুক্তি। বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা সামরিক সংঘের শান্তি চুক্তির একটি প্রভাব। যখন থেকে এই চুক্তির উপসংহার টানা হয়, ভারতীয় সরকার আরও চরমপন্থি হয়ে উঠে, কোন সংকোচ না রেখে পাকিস্তানের উপর বিধ্বংস এবং আগ্রাসন চালায়। ৫ই ডিসেম্বর, টিএএসএস একটি বিবৃতি প্রকাশ করে যাতে সম্পূর্ণই ছিল উত্তেজনার গন্ধ। এটি গোলমেলে যে ভারত ও পাকিস্তানের টানাপড়েন সোভিয়েত ইউনিয়নের তথাকথিত নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে এবং তারা উদাসীন থাকতে পারে নি। এটি প্রতারণা এবং চীনকে ভীতিপ্রদর্শন করা একই সাথে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে। বিশিষ্ট সোভিয়েত প্রতিনিধি, আসলে আপনারা কি পরিকল্পনা করছেন? এখানে আমাদের বলতে পারেন।

নিরাপত্তা পরিষদের সভায় ৪,৫,৬ ডিসেম্বর সোভিয়েত প্রতিনিধি জনাব মালিক ও ভারতীয় প্রতিনিধি একে অন্যকে পুনরাবৃত্তি করেন, নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিনিধিগণ তথাকথিত “বাংলাদেশ”কে উপস্থাপন করাতেই বেশী জোর দেয়। বেশিরভাগ পরিষদ সদস্য কর্তৃক স্বীকৃত দুটি খসড়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিনিধি ভেটো দেয়। তিনি সকলের সাথে অননুমিত বিদ্রুপ করেন যারা তার সাথে ভিন্নতা প্রদর্শন করেন। তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেন যে তিনি একাই সকল খসড়ায় ভেটো দিবেন। এটি আক্রমনাত্বক ও নিষ্ঠুর চরমপন্থা। তার আচরণ বর্ণনা করতে আমি কদাচিৎ যথাপোযুক্ত শব্দ পাই।

এটা কোন বিস্ময়ের ব্যপার না যে সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ দল ভারতীয় আগ্রাসীদেরকে এমন নগ্ন সমর্থন দিবে। এমনকি সোভিয়েতের শীর্ষ দল মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং পরিবর্তনের বীজ বপন করে, এটি সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদের অনুগমন পন্থা। এটি সকল জায়গায় অন্য দেশের উপর আগ্রাসন, বিধ্বংস, কর্তৃত্ব ও প্রভাব বিস্তার করেছে। ১৯৬৮ সালে, এটি নিদারুনভাবে চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ এবং দখল করতে সৈন্য প্রেরণ করে। এই বছর এটি প্রকাশ্যে আফ্রিকার একটি দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাত করতে প্রদক্ষেপ নেয়। এই বাস্তবতাগুলো এখানে আমাদের অনেক সহকর্মীদের ভাল ভাবেই জানা। আমি এটি সহজ করছি। ভারতের আদিপত্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যকে কাজে লাগিয়ে, বিশ্বের আরেকটি পরাশক্তি হওয়ার চেষ্টায় সোভিয়েত সর্বোচ্চ দল ভারতকে আরও নিয়ন্ত্রণ করার উদেশ্যে এবং পরবর্তীতে ইন্দো-পাকিস্তান উপমহাদেশ এবং ভারতীয় উপসাগর নিয়ন্ত্রণ করতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় সৈন্যের আগ্রাসনের সমর্থন করছে।

৩। লীগ অব নেশনসের ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি করা জাতিসংঘের উচিৎ হবে না।

বর্তমান ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি আমাদের ৩০-এর সময়কার পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। ১৯৩১ সালে, জাপানী সেনাবাহিনী আমাদের উত্তর-পূর্ব তিনটি প্রদেশে আক্রমণ ও দখলের মাধ্যমে চীনের বিরুদ্ধে একটি আগ্রাসী যুদ্ধের অবতারণা করে এবং তথাকথিত “মাঞ্চুকু” স্থাপন করে। জার্মান ও ইতালিয়ান ফ্যাসিস্টরা তথাকথিত অঞ্চলের “স্বীকৃতি” দানের মাধ্যমে সর্বাত্মকভাবে তাদের সাহায্য করে। লীগ অব নেশনস, যা কিনা তখন ব্রিটেন, ফ্রান্স ও অন্যান্য শক্তির অধীনে নিয়ন্ত্রিত ছিল, ভুল-সঠিক ও আক্রমণকারী-ভোক্তভোগীদের মাঝে কোন প্রভেদ করে নি এবং তারপর চীন অসহায় হয়ে পড়ে এবং জাপান তাদের নিজের মত করে অনুমোদিতভাবে চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়। এটি ছিল আগ্রাসনের উৎসাহপ্রণোদনার একটি প্রভাবস্বরূপ। এই পারিপার্শ্বিকতায় জাপান আবারও চীনের বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসী যুদ্ধ বিস্তার করে, ইতালিয়ান ফ্যাসিস্টরা ইথিওপিয়ার বিরুদ্ধে তাদের আগ্রাসী যুদ্ধের অবতারণা করে এবং হিটলার একের পর এক ইউরোপিয়ান রাষ্ট্র জার্মানির অধিভুক্ত করে। ফলস্বরূপ, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং তারপর, লীগ অব নেশনস ধ্বংস হয়।

ঐতিহাসিক শিক্ষা মনোযোগের যোগ্য। জাতিসংঘ এখন ৩০-এর একই অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। আক্রমণাত্মক যুদ্ধয়ের আগুন এখন ভারত চালনা করে এশিয়া ও বিশ্বের শান্তি বিনষ্ট করছে। জাতিসংঘকে অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়নের বাঁধা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং দ্রুত এই বিপদজনক পরিস্থিতি থামানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্ব প্রথমেই, অবশ্যই আক্রমণকারী ও ভোক্তভোগির তফাৎকারী দাগ টানতে হবে, শক্তভাবে আক্রমণকারীর নিন্দা ও আগ্রাসনে ভোক্তভোগিকে অবশ্যই দৃঢ় সমর্থন জানাতে হবে। অস্পষ্ট অবস্থান আক্রমণকারীকে লালন ও তার ঢাল হওয়ার শামিল। একটি অথবা দুইটি পরাশক্তির শক্তি প্রদর্শনের কাছে, বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্রকে লঙ্ঘনের মাধ্যমে জাতিসংঘ অতীতে বেশ কিছু ভুল করে। জাতিসংঘের অবশ্যই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া এবং অবশ্যই লীগ অব নেশনসের পুরাতন পথে না হাঁটা উচিৎ।

৪। চীন মানে যে জাতিসংঘঃ

(১) কঠোরভাবে পাকিস্তানের উপর ভারতের আগ্রাসনের নিন্দা জানাবে ও সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় আগ্রাসনকে নির্লজ্জ সমর্থনকারী সামাজিক-সাম্রাজ্যবাদীদের দুষ্কর্মের প্রকাশ করবে।

(২) পাকিস্তান সরকার ও জনগণকে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রামের সমর্থন জানাতে সকল দেশকে আহ্বান করবে।

(৩) পাকিস্তান ভূখণ্ড থেকে ভারতের সকল সেনা ও পাঠানো কর্মীবৃন্দকে অতি দ্রুততার সাথে ও বিনাশর্তে সরিয়ে আনতে ভারতীয় সরকারকে আহ্বান করবে ও প্রতি আক্রমণে পাকিস্তান যে বাহিনী ভারতীয় ভূখণ্ডে পাঠিয়েছে তা প্রত্যাহার করতে পাকিস্তানী সরকারকে আহ্বান করবে।

(৪) ভারত ও পাকিস্তান উভয়কে অতি দ্রুততার সাথে একে অন্যের ভূখণ্ড থেকে তাদের নিজ নিজ বাহিনী প্রত্যাহারের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি করতে আহ্বান করবে।

(৫) সুপারিশ করবে যে, যথাক্রমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা থেকে দুই পক্ষের সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করতে ও একে অন্য থেকে আলাদা হয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিবাদের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে।

জনাব প্রেসিডেন্ট,

সারগর্ভে বলছি, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সংঘাত ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের পরবর্তী অবস্থা। চীন সরকার সব সময়ই চায় নতুন আফ্রো-এশিয়ান দেশগুলো তাদের মধ্যবর্তী সমস্যাগুলো পরামর্শ গ্রহনের মাধ্যমে একটি সম ভিত্তিতে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে সমাধান হোক। তারা সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত না হোক। এটিই আজ আমাদের অবস্থান। ভারত সরকার কি তার একগুঁয়ে ধারা বজায় রাখবে, ভারত তার নিজের তৈরি তিক্ত ফল একাই ভোগ করবে। যদি সোভিয়েত সরকার একটি কায়দা অনুসরণ করে, তবে এর শেষ ভাল কিছু নিয়ে আসবে না।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!