You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রতিনিধি পরিষদে ই গ্যালাঘের এর বক্তৃতা ও উদ্বৃতি। কংগ্রেসের কার্যবিবরনী ১৩ মে, ১৯৭১

                                ই ৪৩৫৪ মহাসভা-সম্পর্কিত দলিল – নজিরের ব্যাপ্তি মে ১৩, ১৯৭১

                                                         শকুনের উদর উড়বার পক্ষে অধিকপূর্ণ

                                                                  জনপ্রতিনিধিদের অধিবেশনে

                                                                                 ১২ মে, ১৯৭১।

মাননীয় স্পীকার,জনাব গ্যালঘর আমি আজ বাঙ্গালি এবং তদের সমর্থক হতে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা প্রদান করতে চাই।১১ মে,  এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিষয়ক আমার পররাষ্ট্র উপসমিতি এই বিষয়ে একটি শুনানি নির্ধারন করেন। রাজ্য দপ্তর ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা নির্বাহী অধিবেশন এবং মুক্ত অধিবেশনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রবার্ট ডর্ফম্যান এর পক্ষ থেকে ১৩ মে আমাদের সাক্ষীদের সাথে সাক্ষাত করার সময় নির্ধারন করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত সেদিন শুনানি স্থগিত করা আবশ্যক হয়ে পড়ে এবং এটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুনঃনির্ধারিত করা হয়। যাই হোক না কেন রাজনীতি এই অঞ্চলে জড়িত।

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতাম যে, এই আধুনিক সময়ে এটি মানুষের বিয়োগান্তক একটি বড় ঘটনা সৃষ্টি হওয়ার প্রক্রিয়া হতে পারে। আমেরিকানদের ভূমিকার ওপর অব্যহত বিতর্কের প্রেক্ষাপটে অতিরিক্ত উপাদান হিসেবে এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে একটি মানবিক সহায়তা কর্যক্রম হিসেবে অবলম্বন করা হয়। এডওয়ার্ডের সিনেটর মি. কেনেডি এর প্রমান স্বরূপ আমি আমার সহযোগিদের মনোযোগ আকর্ষন করতে চাই যা গতকাল আমার উপসমিতির নির্ধারিত ৩ এপ্রিলের পূর্বে রিপন সোসাইটির একটি অবস্থানপত্র প্রকাশ করে এবং ১২ মে ওয়াশিংটন স্টার থেকে একটি সংবাদ প্রেরন করে।

“শকুনের উদর উড়বার পক্ষে অধিক শক্তিশালী” প্রবাদের মত দ্রুত ছড়িয়ে পড়া খবরের বুলি ইতিহাস অজ্ঞাত অনেক ব্যক্তি ই কুরুচিপূর্ণ বলে গন্য করে।যাইহোক, এটি গ্রাফিক্যালি অনেকের অবস্থানকে প্রতিফলিত করে যারা অতীত ঘটনার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত এবং ভবিষ্যতবাণী সম্পর্কে অবগত।

                                                 [ওয়াশিংটন ইভিনিং স্টার থেকে।১২ মে, ১৯৭১]

                                                 VULTURES TOO FULL TO FLY- পূ্র্ব পাকিস্তান

                                                                বিপদ বিশ্বাসকে উপেক্ষা করে

                                                                   ( By Moit Rosenblum)

ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান – গঙ্গা নদীর তীর বরাবর শকুনেরাও ভয়ানক সন্তুষ্টি নিয়ে উড়ে এসে ঠাই নিয়েছে। তারা মার্চ থেকে সম্ভত অর্ধেকেরও বেশি মিলিয়ন সংখ্যক মৃতদেহ ভক্ষন করেছে। জাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়ে ২৫ মার্চ  তাদের নিঃস্ব করার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের পূর্ব দেশীয় পক্ষের মধ্যে গৃহযুদ্বের এক বিষবাষ্প ঢুকিয়ে দেয়া হয়। হত্যা ও ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করে।

নাটোরে একটি কূয়া থেকে হাড় ও পঁচা মাংসের স্তূপেরর চারদিকে গন্ধযুক্ত গ্যাসের বুদবুদ উৎপন্ন হয়। একটি ছোট শিশু কচুরিপানার আস্তরণে ঢাকা পুকুরের পানিতে ভাঙ্গা ল্যাভেন্ডার গাছটির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেখানে তার বাবা-মায়ের লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে।

                                                               টোল মিলিয়ন হতে পারে।

কেউ জানে না কত বঙ্গালি পরিবারকে সৈন্যবাহিনী মেশিনগানে কীভাবে হত্যা করেছে, অনেক অভিবাসী ঔপনিবেশিক বাঙ্গালি বিচ্ছিন্নবাদীদের ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করেছে। কিন্তু মৃতের পরিসংখ্যান ছয় থেকে মিলিয়নের পরিসীমায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চট্টগ্রামের বন্দর নগরীতে একটি পাটকল বিনোদন ক্লাবের গাদ ও কাপড়ের স্তূপে থাকা পুতুল গড়িয়ে রক্তের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে যেখানে ১৮০ জন বাঙ্গালি নারী ও শিশুকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কলের রাস্তা বরাবর ব্লকে অবস্থিত ঘরবাড়ি, দোকানপাট গুলোতে বিস্ফোরন ঘটিয়েছে এবং পুড়িয়ে সব মাটিতে মিশিয়ে ফেলেছে।

২৬ শে মার্চ থেকে সাংবাদিকদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিষিদ্ধ করা হয় যেখানে ৪০ জন সংবাদ কর্মীকে আটক করে তাদের নোট ও ফিল্ম ছিনতাই করা হয় যতক্ষন না সরকার ৬-১১ মে পরিচালত সফরে ছয় জনকে রক্ষা করে।

সুস্পষ্ট প্রমান ও প্রত্যক্ষদর্শীকে কর্মকর্তার নির্দিষ্ট দূরুত্বের জিজ্ঞাসাবাদ অনুযায়ী নিন্মলিকিত বিবরন:

মার্চের সর্বত্র শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে আওয়ামী লীগ স্বায়ত্বশাসন ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অন্যান্য সুবিধার দাবিতে একটি অসহযোগ প্রচারনার মাধ্যমে সামরিক সরকারকে জব্দ করে। উগ্র জাতীয়তাবাদীদের বিশৃঙ্খলায় বাঙ্গালিরা কিছু পশ্চিম পাকিস্তানিদের হত্যা করে। মুজিব দল জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে কিন্তু প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আলাপ আলোচনা বাতিল করেন এবং ইয়াহিয়া ২৫ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যান। সে রাতে সৈন্যবাহিনী ব্যারাকের বাইরে গর্জে ওঠে ও পূর্ব পাকিস্তানকে রক্তাক্ত করে।

                                                                             প্রফেসর হত্যা

 সৈন্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রাবাসে অতর্কিতে হামলা চালায় যেখানে ছাত্ররা তাদের সদর দপ্তর তৈরি করছিল।

তারা রেকোলেস রাইফেল, তারপর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র ও বেয়োনেট ব্যবহার করে। তারা নির্ধারিত প্রফেসর ও ছাত্রদের আবাস কপর্দকশূন্য করে দেয়। তারা অন্তত ভুলবশত নয় আরো ১৪ টি অনুষদের সদস্যদের ওপর একি কাজ সম্পাদন করে।মোটের ওপর ২০০ -র ও বেশি ছাত্র নিহত হয়।

 সৈন্যরা শেল একত্রিত করে ও দুটি সংবাদপত্রের অফিসে আগুন দেয় এরপর বাঙ্গালি জনসাধারনের ওপরও আগুন দেয়। এক ডজনেরও বেশি বাজারে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং ঢাকার কমপক্ষে ২ টি ব্লক ধ্বংস হয়ে যায়। শাখারি পট্টির হিন্দু বাঙ্গালিদের স্বর্ণের দোকানেও এই আক্রমান স্ফীত হয়। ঢাকা রেসকোর্সের ভেরতরে দুটি গ্রামে জিহাদি উন্মত্ততার সাথে মোসলেম বাহিনী আক্রমন চালায়। গনকবরে অভিক্ষিপ্ত মৃতদেহের সংখ্যা অনুযায়ী এটাই নির্দেশিত হয় যে, ঢাকায় প্রথম কয়েক রাতে ১০,০০০ এর ও বেশি লোককে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

 সরকারি মুখপাত্র সন্তুষ্ট ছিলেন যে, সেনাবাহিনী পরিকল্পনা অনুযায়ী পরবর্তী সকালে ৩ টায় রাষ্ট্রদ্রোহ থামাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবে। তারা জোর দিয়ে বলেছিল যে, সেনাবাহিনী কাউকে হত্যা করে নি কিন্তু সৈন্যদের গুলিতে অনেকে নিহত হয়। কিন্তু অন্যান্য কর্মকর্তারা বলেন রাজদ্রোহের চক্রান্ত শুধু একটি ধৃষ্টতা ছিল মাত্র। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিকারদের মধ্যে কমপক্ষে শত শত নারীও ছিল এবং হাজার হাজার নিরস্ত্র নাগরিকদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। সামরিক শাসনের গভর্নর লেফট্যানেন্ট জেনারেল টিক্কা খান বলেন,” আমি এই ভয়াবহ হতাহত প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করব”। ঢাকাকে দ্রুত সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু সেনা কর্মকান্ড ৫৮,০০০ বর্গ মাইল ও ৭৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার এই প্রদেশকে বিস্মিত করে তোলে। সেনা, পুলিশ, বেসামরিক বাহিনী ও সীমান্ত বাহিনীর হাজার হাজার বাঙ্গালি বিদ্রোহ করে। বাঙ্গালি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নিশানায় দলত্যাগী ও সেনা সেচ্ছাসেবকেরা পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়মিত ১১০০০ এর মত এলাকা জব্দ করে যুদ্ধে ফিরে আাসে।

বাঙ্গালি বেসামরিক এবং ” স্বাধীনতা সৈন্য” মোহাজিরের??? পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১৯৪৭ সালে ভাগ হওয়া ভারতীয় অভিবাসীদের একটি গনহত্যা শুরু হয়।

তারা প্রবলবেগে বাজারে ছুটে গিয়েছে এবং ছুরিকাঘাত, গুলিবর্ষণ এবং জ্বলাও পোড়াও কখনও কখনও ধর্ষন, লুন্ঠন রোধের ব্যবস্থা করেছে। সেনাবাহিনী শহরে শেল নিক্ষেপ করে এবং যা কিছু ছিল তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড নইজেরিয়ান গৃহযুদ্ধে দেখা ভয়াবহতার চেয়েও বেশি বর্বর ছিল।

ইউরোপীয়ানরা এই ধ্বংসযজ্ঞকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের  ভক্ষকদের প্রতি কঠিন আঘাত স্বরূপ বলে  তুলনা করেন।

.

13.86.307-310

শরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের সামরিক সাহায্য স্থগিত করণ প্রশ্নে সিনেট পররাষ্ট্র সম্পর্কে কমিটির রিপোর্ট সিনেটের কার্যবিবরণী ১৩ মে, ১৯৭১

পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য সাময়িক স্থগিত রাখা

১৩মে, ১৯৭১

রিপোর্ট ঃ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষক কমিটি যা পাকিস্তানে সামরিক সহযোগিতা স্থগিতের জন্য সমবর্তী রেজুলেশন ( এস কন বেস ২১) করা হয়েছিল, যার প্রতিবেদন সুবিধাজনকভাবে সংশোধনী ও সুপারিশসমূহসহ ,সংশোধিত রেজুলেশন হিসেবে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে ।

উদ্দেশ্য ঃ

সংশোধনী হিসেবে এস কন রেস ২১ নেয়ার উদ্দেশ্য , কংগ্রেশ সহ সকল আমেরিকানদের মত পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করতে,দূর্বল পূর্ব পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধের মিমাংসা না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার সামরিক সহায়তা এবং পাকিস্তানের কাছে সামরিক বিক্রির অনুমতিপত্র স্থগিত করা উচিত এবং ঐ এলাকায় ত্রান সরবরাহ কর্মসূচী নেয়া উচিত ।

পটভূমি ঃ

পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের দলাদলির মধ্যে দীর্ঘ মতপার্থক্যের ফলে,পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের  রাজধানী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় তা সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তান থেকে সকল বিদেশী সাংবাদিক কর্মীদের বহিস্কার করা হয়, বিভিন্ন উৎস থেকে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা নির্দেশ করে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যারা সামরিক অস্ত্রাদি দ্বারা সজ্জিত তারা বিশৃংখলা এবং বেসামরিক মানুষ হত্যায় জড়িয়ে পড়ছে , যা যুক্তরাষ্ট্র মানুষের সামনে প্রকাশ করতে শুরু করেছে । রাষ্ট্রীয় দপ্তরের মুখপাত্র বলেছিল, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক যন্ত্রপাতি পূর্বপাকিস্তানীদের হত্যা করতে ব্যবহৃত হছে তা নিশ্চিত করতে তারা অসামর্থ্য । ইহা ১৯৭১ পর্যন্ত ছিল না, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী পূর্বপাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রায় ১ মাস পর এই চিঠি রাষ্ট্রীয় দপ্তর কর্তৃক পাওয়া গিয়েছিল , এই তথ্যের উপর যখন একটি তদন্ত শুরু করেছিল তার প্রেক্ষিতে এই তথ্য এসে পৌছায় যা নির্দেশ করে, এম-২৪ ট্যাঙ্ক এবং এফ-৮৫ এয়ারক্র্যাফট সাম্প্রতিক সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছে । এটা ছিল এই বিষয়ের উপর প্রথম সরকারী যোগাযোগ যা বৈদশিক সম্পর্কের উপর গঠিত কমিটি দ্বারা করা হয়েছে । এই প্রতিবেদনের সাথে চিঠিটি পূনমূদ্রন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।

পৃষ্ঠা নং – ৩০৮

যুক্তরাষ্ট্রীয় সামরিক সহযোগিতা অনুক্রম

সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ,সামরিক সহযোগিতার শ্রেণি এবং পরিমাণ যাহা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানী সরকারের জন্য যোগান দেয়া হয়েছে তা শ্রেণিবিভক্ত । তথাপি এটা বলা যেতে পারে,১৯৬৫ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পূর্বে ,যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দিতে রাজি হয়েছিল ,যার মধ্যে ছিল হাজার হাজার পাকিস্তানীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেয়া যার পরিমাণ ছিল ১০০ মিলিয়ন ডলার । পাকভারত যুদ্ধের ফলে ,১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের জন্যই পরবর্তী সামরিক যন্ত্রপাতি পাঠানোর উপর অবরোধ আরোপ করে । এই সময় যে কোন প্রকারে কমিউনিস্ট চীনারা পাকিস্তানের জন্য অস্ত্র সরবরাহের প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করে, যুক্তরাষ্ট্রও পাকিস্তানকে কিছু অস্ত্র যোগান দেয়।উদাহরণসরূপ ২৩শে এপ্রিলের চিঠিটি সংযুক্ত করা হল ।

আমরা স্পষ্ট ভাবে সম্পূর্ণ সহযোগিতা সীমাবদ্ধ করেছি এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ইন্ডিয়ায় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বন্ধ করেছি । ১৯৬৬-৬৭ সালে সীমিত পরিসরে সামরিক যন্ত্রপাতি উভয় দেশে পূর্ণবার বিক্রি শুরুর পর, ভাল মূল্য পাওয়ার জন্য শুধুমাত্র অপ্রাঙঘাতী যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রপাতির অংশ এবং পূর্বে আমাদের কর্তৃক সরবরাহকৃত অস্ত্রের জন্য গোলাবারুদ আমরা পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করেছি । অপ্রাণঘাতী দ্রব্যসমূহের মধ্যে রয়েছে,প্রশিক্ষণ এবং পন্যবাহী বিমান,যোগাযোগের যন্ত্রপাতি যেমন ট্রাক এবং জীপ এবং যোগাযোগ,স্বাস্থ্য এবং প্রকৌশল যন্ত্রপাতি । ১৯৬৫ সালে নিষেধাজ্ঞার পূর্বে, বিভিন্ন ব্যাসের অস্ত্রের জন্য গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়, তা সব মিলিয়ে ১৯৬৬ সালের সম্পূর্ণ বিক্রির অনুক্রমের ১৫ শতাংশেরও কম ।আমাদেরকে যন্ত্রপাতির অংশ এবং গোলাবারুদ বিক্রি চলমান রাখতে হয়েছে, পূর্বে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সরবরাহকৃত যুদ্ধে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির জন্য । এই বিশ্বাস নিয়ে যন্ত্রপাতিগুলো দেয়া হয়েছে ,যাহাতে যন্ত্র অচল হলে পাকিস্তানকে বাধ্য হতে হয়,আরও ব্যয়বহুল ও আধুনিক যন্ত্র দ্বারা প্রতিস্থাপণ করতে , উপমহাদেশে সম্পদশালী প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে একটি জাতি পেতে ।

২৩ এপ্রিলের চিঠি আরও বলে যে, ১৯৭০ সালের অক্টোবরে প্রশাসন ঘোষনা করে “ একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ সংক্রান্ত বানিজ্যনীতি নির্দেশ করে, পাকিস্তানে সীমিত পরিমাণে বিক্রি করতে।’ সিনেটর হিসেবে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়,যখন তিনি এস কন রেস ২১ সূচনা করেছিল,যন্ত্রপাতিসমূহের অন্তর্ভূক্ত ছিল মানব বহনের সাজোয়া যান,রূপান্তরিত তহল বিমান,যুদ্ধ বিমান(এফ-১০৪) এবং বোমারু বিমান( বি-৫৭এস) এগুলোর কোনাটিই সমর্পন করা হয় নাই এবং পাইপলাইনেও নেই । ইহা লক্ষ্য করা উচিত, যাহোক যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যদিও এই বিক্রির ব্যাপারে আলোচনা বন্ধ করছে,সরঞ্জাম বিক্রির প্রস্তাবটি বাতিল করা অয় নি ।

তথ্য পাওয়ার দূর্লভতা

দূর্ভাগ্যজনকভাবে রাষ্ট্রীয় বিভাগ,উন্নয়নের যবানিকা টানতে প্রত্যাখ্যান করেছে।পূর্ব পাকিস্তানে উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্যের জন্য কমিটিকে বেসরকারী তথ্যের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে । এই ব্যাপারে কমিটি একটি চিঠি (১৯৭১ এর ৯এপ্রিল তারিখে) পেয়েছে,যা জনাব জন ই রোড কর্তৃক লিখিত যিনি জনস্বাস্থ্য বিভাগে যুক্তরাষ্ট্রের একজন কর্মচারী, যা নিচের অংশে বর্ণনা করা হল ঃ

আমেরিকান সরকারী দলিলপত্রের দ্রষ্টব্য ঃ

সম্পূর্ণ সংবাদ প্রকাশের উপর বিবাচক এবং সাংবাদিক নির্বাসন করা হয়েছে, পাকিস্তানে বৃহত্তর রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ফলে এবং পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক অভিজানেরর তথ্য ধবংস করা হয়েছে , এই তারিখে ঘটিত ঘটনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া সম্ভবত আপনার জন্য কষ্টসাধ্য হবে । সেনা অভিজানের শুরু থেকে, আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জনাব আর্চার ব্লাড এবং ঢাকাতে কর্মরত তার কর্মচারীরা প্রাথমিক সমীক্ষায় তথ্যপূর্ণ গণনাসহ তথ্য পাঠাতে থাকে। এইসব তথ্য সাবধানতার সাথে সংগ্রহ এবং সত্যতা যাচাই সহ রাষ্ট্রীয় বিভাগে পাঠানো হয় ।

পৃষ্ঠা নং-৩০৯

আমেরিকান রাষ্ট্রদূত জনাব ব্লাড এর সমীক্ষা ( সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের কাছে যা রয়েছে) আরও বিস্তৃত এবং অবস্থার পুর্ণ হিসাব বহন করে । যোগ করা যেতে পারে তিনি একটি বাস্তব সম্মত প্রস্তাবও উপস্থাপন করেছেন ,যাহাতে সরকার গঠন মূলক পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারে। অন্য কোন উপায় নেই, জনাব ব্লাড নিশ্চিত করে বলেছে এবং আমাদের তাকে সাহায্য করা উচিত । যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই নিশ্চুপতার সাথে সামরিক অভিজানকে সমর্থণ করে যেতে পারে না। আমরা আপনাকে ঢাকার সরকারী সরকারী করমকর্তাদের সাথে রাষ্ট্রীয় বিভাগের মুক্ত তারযোগাযোগের মাধ্যমে অগ্রসর হতে বলছি । ইহা সীমাহীন বিতরণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় ব্যাপার সম্পর্কে । বিবৃতি না দিয়ে ,রাষ্ট্রীয় বিভাগ বাঙ্গালদের উপর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী , নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর নীতিহীন কার্যকলাপকে সমর্থণ করে যাচ্ছে । অগ্রগামী হতে এবং সংবাদদাতার উপর ধারনা করতে, জনাব রোড ,ঐ সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানদের এই সকল সমীক্ষা থাকবে,কমিটি রাষ্ট্রীয় বিভাগকে জজ্ঞেস করেছিল , সমীক্ষাটি সাজাতে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের ডাক হতে যা পাওয়া গেছে এবং মুক্ত তার বার্তা যা ঢাকার সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা পাঠানো হয়েছিল । রাষ্ট্রীয় বিভাগ উত্তর দিয়েছিল এই অনুরোধের সাথে সম্মত হতে অসামর্থ্য “ প্রচলিত ব্যবাস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া ছাড়া । ´ (সাংবাদিকের লেখা এই সমীক্ষায় সংযোজিত রয়েছে) এই প্রত্যাখ্যান পূর্বের ব্যবস্থার পরিপন্থী । এখানে অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। যখন শ্রেণিবিভক্ত সমীক্ষা এবং তথ্য অতীতের কমিটির সদস্যদের কাছে দেওয়া হয়েছে ,বিশেষত যখন এটি রাষ্ট্রীয় বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী ছিল ।

কমিটির দর্শণে রয়েছে, অনুরোধকৃত তথ্যাদি পাওয়া না যায়,তাহলে স্বাধীনভাবে বিচারের ভিত্তি থাকে না এবং এ কারনে সাংবিধানিক বৈদশিক দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়া অবস্থায় থাকে না। রাষ্ট্রীয় বিভাগের এই কার্যপদ্ধতিতে তথ্য অপ্রাপ্ত হওয়া গুরুতর খারাপ লক্ষণ ,শুধুমাত্র সিনেটের জন্য নহে বরংচ সকলের জন্য ,যেমন নির্বাচিত ঐ সকল সদস্যদের জন্যও যারা জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেন । চাহিদানুযায়ী কমিটি তথ্য অর্জন করতে পারেনি কারন তথ্য প্রাপ্তির অস্বীকৃতিতে । অবস্থার পরিবর্তনের উন্নয়ন ঘটাতে সঠিক পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতের সহযোগিতা বৃদ্ধির অনুপস্থিতিতে কমিতি ইহা খুজে বের করবে ।

কমিটির কার্যাবলী

সিনেট দ্বারা এস কন রেস ২১ উপস্থাপিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল এবং ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় দপ্তরে মন্তব্যের জন্য পাঠানো হয়েছিল । পরবর্তীকালে, নিম্নোক্ত সিনেটরগন রেজুলেশনের সহপ্রণেতা ছিলেন ঃ সিনেটর ব্রুক, ক্রুচ ইয়াগলেটন,হার্টকে, হার্টফিল্ড,হুগেস,জেভিট,কেনেডি,পিয়ারসন,পেল,প্রক্সামির,রিবিকফ এবং স্টিভেনশন ।

৩০ এপ্রিল যখন একটি কার্যকরী পরিষদের সভা হয়েছিল তখন রেজুলেশনটি সংক্ষিপ্তকারে আলোচনা করা হয় ,তখন ক্রিস্টোকার রাজ্যের উপ সহকারী সচিব ভ্যান হোলেন এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ সহকারী সচিব জেমস নোয়ে ,পাকিস্তানের অবস্থার সাক্ষ্য দিলেন । এই সময়ে জনাব ভেন হোলেন কমিটিকে জানালেন রেজুলেশনে কার্যকারী শাখা কোন অবস্থায়ই গঠন করা হয় নাই ।  কমিটি ৬ মে কার্য নির্বাহী সভায় দেখা করল এবং একটি কন্ঠভোটের মাধ্যমে এস কন রেস ২১ সিনেটর সংশোধনী সহ পাশ করা হল । কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে রাষ্ট্রীয় দপ্তরে সংক্ষিপ্তভাবে রেজুলেশনের উপর বিবৃতি প্রদান করা হল ।

পৃষ্ঠা নং-৩১০

ত্রাণ সরবরাহ বিতরণ

কমিটি এস কন রেস ২১ একটি সংশোধনী যোগ করেছিল যা প্রশাসনকে উৎসাহ যুগিয়েছিল এমন সব ব্যবস্থা নিতে যাহাতে, পূর্ব পাকিস্তানে সঠিকভাবে ত্রাণ সরবরাহ বিতরণ তরান্বিত করা যায় । রাষ্ট্রীয় দপ্তরের অনুসারে পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ রয়েছে। যাহোক অন্যান্য সুবিধাদি এবং বিতরণের অন্য পথ পরিষ্কার করা হয়ছে। এখানে একটি প্রচ্ছন্ন বিপদ হচ্ছে, একটি তীব্র খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে এং যার ফলে দূর্ভিক্ষ হতে পারে ।

কার্যকরী শাখার অবস্থান

রাষ্ট্রীয় দপ্তর এস কন রেস ২১ আইনের বিরুদ্ধে ছিল । ১৯৭১ সালের ৬ মে তারিখের একটি চিঠিতে দপ্তর এটা বের করেছে “ অনেক কিছুই করা হয়ে গিয়াছে ।’ যা বর্তমান রেজুলেশনের মৌলিক দিকগুলোর সাথে সমান্তরাল। যোগ করা যেতে পারে দপ্তর এটা বিবৃতি দিচ্ছে, পাকিস্তানে সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ চলমান রাখার কারন দৃশ্যমান যাহাতে গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে সাহায্য নিশ্চিতকরনে যাহাতে পাকিস্তান বাধ্য হয়ে অন্য উৎস থেকে সরবরাহ বৃদ্ধি করতে না থাকে । রাষ্ট্রীয় দপ্তরের চিঠিটি এই সমীক্ষার আপেনডিক্স এ সংযুক্ত করা হল ।

উপসংহার এবং সুপারিশসমূহ

১৯৬১ সালের বৈদশিক সাহায্য আইনের ২নং অধ্যায় অনুসারে সংশোধনীতে বৈদশিক দেশসমূহে সামরিক সহযোগিতা সজ্জিতকরন অনুমোদিত হয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় । যোগ করা যেতে পারে সেকশন (a) (1) (c)  আইনটি এটা উপলব্ধি করে, “ কোন প্রতিরক্ষা নিবন্ধ যে কোন দেশের জন্য অনুদান হিসেবে সজ্জিত করা হবে, যদি অনুদান হিসেবে গ্রহন করতে রাজি না হয় ইহা দেয়া হবে না ´ ব্যবহার করা অথবা অন্য যে কোন উদ্দেশ্য এই রকম নিবন্ধ ব্যবহারের অনুমতিও সজ্জিত করা রয়েছে । পরন্তু সেকশন ৫০৫ এর উপধারা (d) নিম্নে দেয়া হলঃ

  1. d) যে কোন দেশ, এই আইনের আওতায় সজ্জিত কোন দেশে প্রতিরক্ষা নিবন্ধ বা প্রতিরক্ষা সহায়তা ব্যবহার করলে,১৯৫৪ সালের পারস্পারিক নিরাপত্তা আইন সংশোধনীসহ অথবা পূর্বের যেকোন বৈদশিক সহায়তা আইন, সারগর্ভে বলা যায় এই অধ্যায় ভং করলে অথবা যেকোন চুক্তি যা এই আইনের পরিপন্থী তৎক্ষণাৎ ভাবে তা পরবর্তী সহযোগিতার জন্য অযোগ্য হবে ।

পাকিস্তানে সামরিক সহায়তা দেয়ার একটি নায্য যুক্তি হল ঐ দেশকে সক্রিয় করতে , বাইরের কমিউনিস্ট আগ্রাসনের হুমকি থেকে রক্ষা করতে এবং আভ্যন্তরীণ কমুনিউস্ট অনুপ্রবেশ এবং পরাভাব প্রতিরোধ করতে ।

কল্পনার প্রসারণ না ঘটিয়ে যাহোক ইহা দৃঢ় সংকল্প থাকতে হবে ,মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী কাউকে দমনের উদ্দেশ্যে এবং নিষ্পাপ নাগরিকদের হত্যায় এই সহযোগিতা ব্যবহৃত হবে না ।

এখানে কিছু বড় রকমের ভুল হয়ে যায় যখন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক সরবারহকৃত বন্ধুক, ট্যাংক এবং বিমান সেই সব মানুষদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয় যাদেরকে রক্ষা করার কথা ছিল ।

কমিটির মতে, পূর্ব পাকিস্তানে যে পন্থায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে তা ১৯৬১ সালের বৈদশিক সহায়তা আইনের ২ অধ্যায়কে প্রায় স্পস্ট ভঙ্গ করে’ সংশোধনীতে ,  এটা সুপারিশ করা হল সিনেট এস একন রেস ২১ দেরী না করে অনুমোদন দিয়ে দেয় ।

.

পরিশিষ্ট

সম্মানিত, উইলিয়াম পি. রজার্স,                                  ৬ এপ্রিল,১৯৭১
রাষ্ট্র সচিব,
ওয়াশিংটন, ডি.সি.

জনাব সচিব পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসনের খবর পাওয়া পূর্বক আমি মনে করি পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত সামরিক রসদ কোন পর্যায় পর্যন্ত ব্যাবহার করা হয়েছে তার একটি পূর্ণ হিসাব জরুরি দরকার।

        আমি মনে করি এখানে বৈদেশিক সাহায্য আইনের অধ্যায় ২, অংশ ২ ব্যাবহার করা যেতে পারে, যেটা কোন ধরনের  সামরিক সাহায্য একটি দেশকে দেয়া হবে এবং সেটার দায়ভার ও তারা কিভাবে ব্যাবহার করবে তার উদেশ্য ব্যাখ্যা করে।

        এছাড়াও বর্তমানে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রস্তাবিত সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আলোচনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আপনি যদি এই চিঠির জবাবে ইতিমধ্যে পাকিস্তানে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরঞ্জাম, যন্ত্রাংশ ও রসদ এবং ইহা প্রাণঘাতী কিনা এরকম অস্ত্রের সর্বশেষ অবস্থা যুক্ত করে দেন তাহলে তা সহায়ক হবে।

আপনার অনুগত,
জে.ডব্লিউ.ফুলব্রাইট, চেয়ারম্যান।

সম্মানিত, উইলিয়াম পি. রজার্স,                                  ২৩ এপ্রিল,১৯৭১
রাষ্ট্র সচিব,
ওয়াশিংটন, ডি.সি.

        জনাব সচিব,  পরের সপ্তাহের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী শুনানির প্রস্তুতিতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান সংকট সম্পর্কিত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। এছাড়াও আমি জানতে পেরেছি যে ঢাকার সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা একটি খোলা চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। চিঠিটি কমিটির নিকট পাঠানো হলে এটি প্রশংসিত হবে।

        আপনি যদি দ্রুততার সাথে এই অনুরোধ গুলো রাখতে পারেন তাহলে আমি আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকবো।

আপনার অনুগত,
জে.ডব্লিউ.ফুলব্রাইট, চেয়ারম্যান।

                                                        ব্যারিংটন, আর১, এপ্রিল ১৫, ১৯৭১

সিনেটর জে.ডব্লিউ ফুলব্রাইট,

চেয়ারম্যান, পররাষ্ট্র নীতি কমিটি,

ইউ.এস সিনেট, ওয়াশিংটন, ডিসি।

        প্রিয় সিনেটর ফুলব্রাইটঃ যেহেতু আপনি পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান সেহেতু আমি জানি আপনি পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ যেটি ২৫ মে থেকে চলমান সে বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত। আমি এবং আমার স্বামী কিছুদিন আগেই আমার ছেলের(যে ঢাকায় বিগত ৩ বছর যাবত থাকে) সাথে পাচ সপ্তাহব্যাপী ভ্রমন শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এসেছি। যদিও আমরা শত্রুতা শুরু হওয়ার আগেই চলে এসেছি তবুও আমরা গত ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক টানাপড়েন সম্পর্কে অবহিত ছিলাম। আমাদের হাতে আমাদের পুত্র জন, যাদের তেহরান, ইরানে ৭ এপ্রিল আরো অনেক আমেরিকান নাগরিকের সাথে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল এর একটি চিঠি এসে পৌঁছেছে। সে চিঠিটি বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির নিকট পাঠানোর অনুরোধ করেছে। চিঠিটি নিজেই কথা বলে। কিন্তু আমি চিঠিটির একটি প্যারা(তৃতীয় পৃষ্ঠা) উল্লেখ করতে চাই, যেটির সাথে আমি এবং আমার স্বামী সম্পূর্ণ একমত।

        “বাঙালীদের উপর এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের অপারদর্শিতা থাকা সত্ত্বেও, পূর্ব পাকিস্তানের সারে সাত কোটি জনতার উপর চালিত অমানবিক আচরনের বিরুদ্ধে আমি অনুরোধ করব কংগ্রেসে এবং প্রেসিডেন্ট কে একটি নিন্দা প্রস্তাব দিতে। আমাদের সরকারের নীরবতা পাকিস্তানী সেনাদের এই আক্রমণের সমর্থনমূলক ধরা হচ্ছে।

                                                                                আপনার অনুগত,

                                                                             এডগার এফ. রহোড

আমেরিকান এমব্যাসি

এপিও নিউ ইয়র্ক, এন.ওয়াই. এপ্রিল ৯, ১৯৭১

        দুই দিন আগে আমি এবং আমার স্ত্রী ঢাকা, পূর্ব পাকিস্তান যেখানে আমি বিগত তিন বছর ধরে ইউএস এইড এর কাজে নিয়োজিত ছিলাম, সেখানে থেকে উদ্ধার হই। আমি নিশ্চিত যে আপনি ২৫ শে মার্চ সামরিক ক্র্যাকডাউনের পরের রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত আছেন। সম্পূর্ণ সাংবাদিক সেন্সরশিপ ও সাংবাদিক বিতারনের জন্য এবং বেসামরিক লোকজনদের উপর সামরিক অভিযোগের তথ্য অবদমিত করার ফলে সম্পূর্ণ ব্যাপারের একটি পূর্নাঙ্গ চিত্র পাওয়া আপনার জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেনাবাহিনীর অপারেশনের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের কনসাল জনাব আর্চার কে ব্লাড এবং তার কর্মীরা ঢাকায় কি ঘটছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত এবং তথ্যবহুল  রিপোর্ট পাঠাচ্ছে। এই রিপোর্ট গুলো সেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানোর আগে সতর্কতার সহিত সংগ্রহ ও যাচাই বাছাই করা হয়েছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট জনসম্মুখে বলে যে তাদের হাতে পর্যাপ্ত তথ্য নেইঃ কিন্তু আমি নিজে দেখে ঢাকা থেকে পাঠানো দীর্ঘ তথ্যবহুল রিপোর্টসমুহ। করাচীর আমেরিকান কনসাল সম্প্রতি আমাকে বলেছে যে তারাও পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠিত ঘটনাবলীর তথ্য পেতে শুরু করেছে, যদিও ঢাকার কনস্যুলেট একদম শুরু থেকে তথ্য পাঠাচ্ছিল।

        যদিও কনসাল ব্লাড এর রিপোর্টে বর্তমান অবস্থার বিশদ বর্ননা আছে, তবুও আমি বিগত সপ্তাহ গুলোতে আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণ সমুহের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই।

.

13.87.315

শিরোনাম সুত্র তারিখ
পাকিস্তানে অস্ত্র সাহায্য বন্ধের ব্যাপারে প্রতিনিধি পরিষদের প্রস্তাব-৩০৩ প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরনী ১২ মে, ১৯৭১

৩২ডি কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন

প্রতিনিধি পরিষদে

এইচ. সমবর্তী প্রস্তাব (রেজল্যুশন)-৩০৩

১৭ মে, ১৯৭১

        জনাব গ্রস নিম্ন উল্লেখিত সমবর্তী প্রস্তাব (রেজল্যুশন ) জমা দেন যা পররাষ্ট্র কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছিল।

সমবর্তী প্রস্তাব (রেজল্যুশন)

        যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্টের কংগ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সংঘাতের জন্য গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করে, এবং

        যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্টের কংগ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকান সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের বিরোধিতা করেছেঃ সেক্ষেত্রে এখন এটা

প্রতিনিধি পরিষদ কর্তৃক সমাধা করা হোক। সিনেট একমত যে, –

(১) যতক্ষন না পূর্ব পাকিস্তানের সংঘর্ষের সমাধান হচ্ছে এবং ত্রান সামগ্রী বিতরন কার্যক্রম গৃহীত হচ্ছে পাকিস্তানে সকল আমেরিকান সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ রাখা উচিত।

(২) যতক্ষন না পূর্ব পাকিস্তানের সংঘর্ষের সমাধান হচ্ছে এবং ত্রান সামগ্রী বিতরন কার্যক্রম গৃহীত হচ্ছে পাকিস্তানে সামরিক ও অন্যান্য পণ্য বিক্রয়ের লাইসেন্স স্থগিত করা উচিত।

.

13.88.316

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে অস্ত্র সাহায্য বন্ধের জন্য প্রতিনিধি পরিষদের প্রস্তাব-৩০৪ প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ১৭ মে, ১৯৭১

৯২ তম কংগ্রেস

১ম সেশন

হাউজ কনকারেন্ট রেজোল্যুশন ৩০৪

হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এ উপস্থাপিত

মে ১৭, ১৯৭১

মিঃ হ্যালপার্ন (নিজের এবং মিসেস অ্যাবযাগ, মিঃ বাডিলো, মিঃ বিংহ্যাম, ম্যাসাচুসেট্‌স্‌ এর মিঃ বার্ক, মিঃ বার্টন, মিঃ কফলিন, মিঃ ডেলামস, মিঃ ড্রিনান, মিঃ গুড, মিঃ হ্যারিংটন, মিঃ কক, মিঃ মিকভা, মিঃ মিচেইল, মিঃ মর্স, মিঃ মস, মিঃ র‍্যাংগেল, মিঃ রাইগেল, মিঃ রোজেনথাল, এবং মিঃ রায়ানের পক্ষে) নিম্নবর্তী সংসদীয় উভয়কক্ষীয় প্রস্তাবনা পেশ করেন, যা পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে প্রেরণ করা হয়।

উভয়কক্ষীয় প্রস্তাবনা

পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সংঘাতে মার্কিন কংগ্রেস গভীরভাবে ব্যথিত; এবং মার্কিন কংগ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহারের বিরোধিতা করে।

অতএব, হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস (সিনেটের সহমত সহ) এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুক যে–

(১) পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাতের অবসান ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রতি সকল সামরিক সাহায্য স্থগিত রাখা হবে।

(২) পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাতের অবসান ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত পাকিস্তানের কাছে সব প্রকার অস্ত্র বিক্রির লাইসেন্স স্থগিত রাখা হবে।

.

13.89.317-320

                  শিরোনাম            সূত্র       তারিখ

পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ অবশ্যই বন্ধ করতে

হবে: সিনেটর চার্চ-এর বক্তৃতা

সিনেটের কার্যবিবরণী   ১৮ মে, ১৯৭১

.

এস ৭১২৮                   কংগ্রেসের রেকর্ড-সিনেট       মে ১৮,১৯৭১

                    আমাদের অবশ্যই পাকিস্তানে অস্ত্র পাঠানো বন্ধ করতে হবে

                                   পূর্ব পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ড

জনাব চার্চ,জনাব প্রেসিডেন্ট, আজ আমি সিনেটের ঐক্যমত্য প্রস্তাবনা ২১ এর পক্ষে কথা বলছি।পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ রাত থেকে যা ঘটে চলেছে,যখন অবর্ণনীয় মাত্রায় রক্তপাত শুরু হয়,তা বিশ্বাস করা কষ্টকর।আমরা জানি যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী অধিকাংশই আমেরিকান অস্ত্রদ্বারা সজ্জিত এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রশিক্ষিত অফিসারদ্বারা পরিচালিত,সহ মুসলিমদের উপর মারাত্মক ধরণের হিংস্রতা শুরু করেছে।অভ্যন্তরীণ সংঘাতের প্রথম সপ্তাহের পর,ফ্রান্সের সাধারণত শান্ত সংবাদপত্র লা মুণ্ডে,পাকিস্তানের ঘটনার শিরোনাম করেছে “রক্তস্নানের সপ্তাহ।”ধারাবাহিকভাবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা প্রকাশের পর শিকাগো সান টাইমস ঘটনাটির নামকরণ করে “পাকিস্তানের সুসংগঠিত হত্যা ও লুণ্ঠন।” এবং মে মাসের ৬ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সামরিক আইন প্রশাসক লে জেনারেল টিক্কা খান স্বীকার করেন যে বর্তমান সংঘাত চলাকালে সেখানে “ সত্যই বেশ কিছু নির্দয় হত্যাকাণ্ড” হয়েছে।

ওয়াশিংটনে ক্রমাগতভাবে ঘটনাস্থল থেকে আসতে থাকা আমেরিকান,ইউরোপিয়ান ও উপ-মহাদেশের মানুষের বিবরণ বিস্তৃত ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পেগি ডার্বিনের এরকমই একটা বিবরণ নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছুদিন পূর্ব পাকিস্তানে থাকার পরে তিনি মে মাসের ২ তারিখে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও আওয়ামী লীগের যথাযথ ভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যেকার আলোচনা ভেস্তে যাবার পরে ঢাকা ও অন্যান্য শহরে সংগঠিত হওয়া নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে লিখেছেন। এই বাঙ্গালি রাজনৈতিক দলটি সম্প্রতি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা জিতেছেঃ৩১৩ আসনের জাতীয় পরিষদে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সম্ভাব্য ১০০ সিটের মধ্যে ১৬৭ টি আসন লাভ করেছে যা সম্ভব হয়েছে পূর্বের জন্য আরো বেশি রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করার মাধ্যমে।জনাবা ডার্বিন বলেন যে-

যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাঙ্গালিরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সেটা দমনে পশ্চিমের স্বার্থ-যুক্ত মহল ও পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরশাসক- রাষ্ট্রপতির প্রস্তুতি আধুনিক সময়ের অন্যতম রক্তাত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সর্বোচ্চ সীমায় উপনীত হয় যখন পাকিস্তানের সৈন্যবাহিনী চূড়ান্ত নির্মমতার সাথে ইসলামাবাদের কর্তৃত্ব পুনঃ-স্থাপনের উদ্দেশ্যে অভিযান শুরু করে।

যত বেশি তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে ততই প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে শুধু মাত্র প্রচুর হত্যাকাণ্ডই সংগঠিত হয় নাই বরং কেন্দ্রীয় সরকার বাঙ্গালিদের নেতৃত্ব প্রদানকারী অংশগুলোকে নির্বাচিত করেছিল নিশ্চিহ্ন করার জন্যে। পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ও পাকিস্তানের সীমানা নিরাপত্তা বাহিনীর,স্থানীয় পুলিশের বহু সদস্যের সাথে হাজারো বাঙ্গালি বেসামরিক-অধ্যাপক,নির্বাচিত নেতা,ব্যবসায়ী,আইনজীবী,ইঞ্জিনিয়ার,রাজনীতিবিদ,সরকারি চাকুরীজীবী, ডাক্তার, শ্রমিক, ছাত্র, মহিলা, শিশুদের নির্মূল করা হয়েছে।

.

Saima-h-Putul

৩১৮

উচিৎ ভবিষ্যতে পূর্ব পাকিস্তানের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা , সাধারণত সেখানে কেবল অনেক আওয়ামী লীগ এর নেতা অথবা বুদ্ধিজিবি হবেনা দায়িত্ব নিয়ে নিতে। এক খুনে সপ্তাহে আর্মি একটা শুন্যতা সৃষ্টি করেছে, যা পুরন হতে একটা অথবা কয়েকটা প্রজন্ম সময় নিবে ।

যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা

জনাব চার্চ, জনাব প্রেসিডেন্ট, এই আশ্চার্য ঘটনায় আমেরিকার কি সম্পৃক্ত হয়েছে ? এটার রদবদল কিভাবে সম্ভব হবে?

বাঙালীদের উপর এটার কঠোর বর্বরোচিত হামলায় , পাকিস্তানী আর্মি আমদানীকৃত বন্দুক, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, মটার, আর্টিলারি, ট্রাক,   সাজোয়া যান, ট্যাঙ্ক, উড়োজাহাজ, এবং গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে । অফিসার ইন চার্জদের প্রশিক্ষন দেওয়া হয়েছে যুক্ত্ররাষ্ট্র অথবা গ্রেট ব্রিটেনে । অধিকাংশ তোপ এবং সরবরাহ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, অর্জিত হয়েছে বছরের পর বছর ধরে সামরিক সহায়তার মাধ্যমে এবং ভর্তুকি অস্ত্র বিক্রয় কর্মসুচিতে । অন্যদিকে বাঙালীরা প্রতিহত করতে ব্যবহার করেছে তীর , ধনুক, ছুরি, পাথর ঘরে তৈরি বোম এবং দখলকৃত অস্ত্র ।

১৯৫৪ থেকে, যখন জন ফস্টার স্বরাষ্ট্র সচিব পাকিস্থানের সাথে একটা বিশাল অস্ত্র চুক্তি সম্পন্ন করে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি(জেনালেরদের)-র সাথে একটা বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে, সেই ভূষ্ঠামিরা তাদের অর্জিত সম্পদের ৮০ ভাগ ব্যয় করে মুষ্টিমেয় সরকারী কর্মচারিদের কল্যাণের জন্যে । আমরা তাদের সজ্জিত করেছি অগাধ পরিমান অস্ত্র  এবং ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ ও খাদ্য সহায়োতা দিয়ে, যার অধিকাংশ পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

সামরিক উপহার, যুক্তরাষ্ট্রে হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার মুল্যের অস্ত্র , বহু বছর ধরে কংগ্রেস এবং আমেরিকার জনগনের সমর্থনে একটা ঢান হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে তাদের পাকিস্তান রক্ষা করার জন্যে এবং যুক্তরাষ্ট্র কে সম্রাজ্যবাদ আগ্রাশন থেকে বাচাতে। পয়াকিস্তান সেটো এবং সেনেটো তে যোগদান করে; বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটা সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং একটা বিমান বন্দর গড়ে তোলে পাকিস্তানের পেশোয়ারে মধ্য এশিয়া থেকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে, যা রাশিয়ান বেয়ার ও চাইনিজ ড্রাগন ধারীদের থেকে অনেক দূরে।  যাইহোক পাকিস্থান ব্যবহার করেছে তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে । প্রথমত ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে এবং এখন তাদের নিজেদের জনগনের বিরুদ্ধে সামরিক সজ্জায় সজ্জিত হয়েছে , প্রকৃতপক্ষে, ১৯৬৯ সালে পাকিস্তান পেশোয়ারে বিব্রত হওয়া ছাড়াই আমাদের ইলেকট্রনিক শ্রবন পদ বন্ধ করে দেয় রাশিয়ান ও চাইনিজ সরকারকে খুসি করতে । তারপর সকল দিক থেকে, আমাদের সামরিক সহায়তা নীতি ভেঙে পড়ে – কিন্তু আমলাতন্ত্র এবং পাকিস্তান সামরিক জান্তার অনুরোধে  এটাকে বাচিয়ে রাখা হয়েছিল।

১৯৭০সালের অক্টোবরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় পাকিস্তানে প্রাণঘাতী অস্ত্রের উপর যেটা আরোপ করা হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ইনো-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে । যখন এই নীতি ঘোষণা করা হয় , আমি সিনেটে সতর্ক করেছিলাম, যে আমি ১৯৬০ সালে পাকিস্তান ভাতর দন্দের মদদে যেটা পেয়েছিলাম, যে সমস্যা ও সহিংসতা ই হবে এর শেষ ফল। “এটা হতে পারে” আমি গতবছরের অক্টোবরের ১৪ তারিখ বলেছিলাম, “ একমাত্র সময়ের ব্যবধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে  বর্তমান ইতিহাস পুনরাবৃত্তি হওার আগে ।” এটাই ঘটেছে অন্য একটি একটি, অপরিণামদর্শী উপায়ে।

এই সম্পর্কে নতুন সর্বসাধারনের তথ্য প্রকাশ করে পাকিস্থানের ক্ষেত্রে .১৯৬৭ সালের এপ্রিলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সামরিক লেনদেনের ক্ষেত্রে তার অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা রদবদল করে। আমর বাণিজ্যিক বিক্রয় অনুমতি দেই যা অভিহিত করতে পারতো

৩১৯

“অমারাত্মক শেষ-পদ” এবং এখানে এই ব্যাখ্যা করা হয়েছে যেমন আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও পরিবহং সরঞ্জাম, এটা এখন পরিষ্কার যে পাকিস্তানে আপমার প্রত্যেক বছর গড়ে ৩১০ মিলিয়ন প্রায়, একমাস আগে রাষ্ট্র বিভাগ স্বীকার করে ২.৫ মিলিয়ন অর্থ গোলাবারুদের জন্যে খরচ হয়েছে ।সমিক্ষাকারিরা দেখেছে ওগুলো আমাদের অস্ত্র, যদিও একটি প্রাণঘাতী “শেষ পদ” ছিল না ।

আক্রমনের প্রায় একমাস পরে, ৫মে ১৯৭১ তারিখে রাষ্ট দপ্তর স্বীকার করেছে যে পাকিস্থান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ট্যাংক ও জেট ফাইটার ব্যাবহার করছে তাদের অধিকাংশ মানুষদের উপর সামরিক শাসন আরপ করতে যারা পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করে। সাম্প্রতিক আমি ঢাকা থেকে একটা চিঠি পেয়েছি, এক আমেরিকান পর্যবেক্ষক লিখেছেন যে পাকিস্থান আর্মির শাফল তারা মুল সহরগুলো দখল করে ফেলেছে। “এটা প্রচন্ড ভাবে সি-১৩০ মানুষ এবং উপাদান ব্যাবহারের পদক্ষেপের সাথে জড়িত

১৩ খণ্ড

৩২০, ৩২১

সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডিঃ শরণার্থী সিনেট উপকমিটির সভাপতি এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন……

জনাব চার্চঃ এছাড়াও, পাকিস্তান সরকার ভারতকে প্রতিনিয়ত এসব অশান্তির জন্য দোষারোপ করে, এই সমস্যাটিকে আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত করেছে যা যুদ্ধের ব্যাপকতাকে আরও বিস্তৃত করে তুলতে পারে। ২১শে এপ্রিলের নিউ ইয়র্ক টাইমস এই বিপদ সম্বন্ধে উদ্ধৃত করেছেঃ

যথেষ্ট ন্যায়সঙ্গত কারণ রয়েছে যাতে বিশ্ব সম্প্রদায় অচিরেই হস্তক্ষেপ করে পূর্ব পাকিস্তানে এই রক্তপাত বন্ধ করে এবং আন্তর্জাতিক শান্তি সংস্থাসমূহের কার্যক্রম শুরু করে।

পাকিস্তান সরকার নিজেই এই যুদ্ধে বাঙালিদের প্রতিরোধকে প্রতিবেশি ভারতের উপর দোষ দিয়ে আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত করেছে। যদি বাঙালিদের সুদৃঢ় এবং গভীর তাৎপর্যপূর্ণ দাবি দাওয়াগুলো পূরণের অনুমতি দেয়া না হয় তবে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে উদ্বেলিত উত্তেজনা যুদ্ধে পরিণত হতে পারে যা খুব দ্রুতই এক বা একাধিক বড় শক্তিকে তাতে যুক্ত করে নিতে পারে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এবং এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শুধুমাত্র অধিকার রয়েছে তা নয় বরং তাদের দায়িত্ব হল তাদের পক্ষে সম্ভব এমন যে কোন উন্নয়নের জন্য সবকিছু করার চেষ্টা করা।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপর এক বিরাট দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে যখন থেকে ওয়াশিংটন অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে এবং মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্য পাকিস্তান সরকারের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ক্রমশ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ণ উন্নয়নকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। ইসলামাবাদে সেনাবাহিনীর অব্যাহত শাসন ভারতীয় উপমহাদেশে এই দেশের জন্য শুধুমাত্র ধবংসই বয়ে আনতে পারে।

তৃতীয়ত, আমাদের সামরিক সহায়তা কর্মসূচি সামনে পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে। গ্রীস এবং তুরস্ক, জর্ডান এবং ইসরায়েল, হন্ডুরাস এবং এল সালভাদর, ইরান এবং ইরাক, ভারত এবং পাকিস্তান, ফ্রান্স এবং আলজেরিয়া, পর্তুগাল এবং এর আফ্রিকান উপনিবেশ এবং আরও অনেক যুদ্ধের  সাম্প্রতিক ইতিহাসে মার্কিন সমরাস্ত্র তাদের মধ্যেকার সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে এক বিরাট ভূমিকা পালন করেছে। “অন্যদের অস্ত্র প্রদান”, বাল্টিমোর সানের সম্পাদকীয়তে, “সবরকম সম্ভাব্যতা প্রকাশ করা হবে, কিন্তু এটি প্রয়োজনীয় নয় যে তা আপনাদের নির্দেশ অনুসারে প্রকাশিত হবে।” এই কারণেই ভবিষ্যতে কংগ্রেসের মার্কিন অস্ত্র রপ্তানি বহুলাংশে পরিবর্তন করতে হবে। নিঃসন্দেহে পাকিস্তানের ঘটনাটি এক্ষেত্রে একটি নিদারুণ উদাহরণ। আমি এই বছরের শেষের দিকে এই ধরণের আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করার পরিকল্পনা করছি এই আশায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র কূটনীতির প্রতি আসক্তি শেষ হবে, এবং অন্য দেশকে যুদ্ধোপকরণ প্রদান হতে বিরত হবে।

.

13.90.321-328

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রতিনিধি পরিষদ পররাষ্ট্রের উপকমিটি কর্তৃক গৃহীত শুনানিঃ রবার্ট ডরফম্যান-এর বিবৃতি প্রতিনিধি পরিষদ পররাষ্ট্র উপকমিটির রিপোর্ট ২৫ মে, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট

মঙ্গলবার, ২৫ মে, ১৯৭১

ভারতবর্ষের লোকসভা,

পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি,

এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক উপকমিটি।

২২০০ নং কক্ষে দুপুর ৩.২০ ঘটিকায়, রায়বার্ণ অফিস ঘর ভবনে করনেলিয়াস ই.সালাঘের (উপকমিটির সভাপতি) নেতৃত্বে উপকমিটির  সদস্যগণ মিলিত হয়।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক রবার্ট ডরফম্যান-এর রিপোর্টের বিবৃতি

জনাব ডরফম্যানঃ আমাকে এখানে আসার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। আমার উদ্বেগ আপনাদের পূর্ববর্তী সাক্ষ্য হতে শোনা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার নিয়ে, কিন্তু এদের ভেতর একটি ঘনিষ্ঠ এবং দুঃখজনক সংযোগ রয়েছে।

সিনেটর কেনেডি এবং অন্যান্যরা ইতিমধ্যে পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গ উভয় স্থানের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর থাকা খাওয়ার উপর আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। আমার ব্যক্তিগত সহানুভূতি এবং উদ্বেগ ছাড়া এখানে আর আমার নতুন কোন কিছু যোগ করার নেই। কিন্তু এই লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্ট যন্ত্রণা এখন চলমান গৃহযুদ্ধের একটি বড় কারণ, এবং আমি আমার কয়েকটি মুহূর্ত এই যুদ্ধে আমেরিকার ভূমিকা এবং মনোভাবের প্রতি উৎসর্গ করছি।

আমি নিজের পরিচয় দিচ্ছি। আমার নাম রবার্ট ডরফম্যান। আমি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক, আমেরিকার অর্থনীতি সমিতি পরিষদের সদস্য, ব্যবস্থাপনা বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সাবেক সভাপতি ইত্যাদি। আমার বেশ কয়েকটি বই প্রকাশিত হয়েছে, এবং আমার সবরকম প্রাতিষ্ঠানিক প্রশংসাপত্র রয়েছে। আমি গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান সহ অন্যান্য স্বল্প উন্নত দেশসমূহের অর্থনীতি নিয়ে পেশাগতভাবে উদ্বিগ্ন রয়েছি। ১৯৬০ সালে যখন রাষ্ট্রপতি কেনেডি আমাকে প্যানেল সদস্য হিসেবে পাকিস্তান সরকারকে সিন্ধু অববাহিকার গুরুতর সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য নিয়োগ করেছিলেন তখন থেকে আমার আগ্রহের শুরু। আমি নিজেকে বুঝিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি প্যানেল এই এলাকার কৃষি অবস্থার উনয়নে এক বৃহৎ অবদান পালন করেছে। আমরা কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কিছু যুক্তিসম্মত পরিকল্পনা প্রস্তাব করি, যেখানে পরিবেশগত অবক্ষয় রোধ সহ আরও বেশ কিছু চমৎকার কাজ পাকিস্তার ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। পরিকল্পনাটি ছিল পরবর্তী কয়েক বছরে মেক্সিকান উচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন গম প্রবর্তন এবং সাথে কিছু প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, তথাকথিত সবুজ বিপ্লবের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন, সে সমাজে নিয়ে আসা হবে যেখানে শুধু হতাশাই ছেয়ে রয়েছে।

.

পরবর্তীকালে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উপদেষ্টা হিসেবে, হাভারড ইউনিভার্সিটির উন্নয়ন পরামর্শক হিসেবে এবং বিশ্ব ব্যাংক এ কাজ করে আমি পাকিস্তানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আগ্রহ ধরে রেখেছি।

যেকোন সন্দেহ দূর করতে আমি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষের ব্যাপারে প্রভাবিত হই। এখানে উল্লেখ করা উচিত যে কার্যত পশ্চিম পাকিস্তানের সমস্যা এবং উন্নয়নে আমার সম্পূর্ণ সহযোগিতা গুরুত্ব দিবে । যখন আমার নীতিগুলো সমালোচনার সুযোগ থাকে , আমি সবার মধ্যে নিজেকে সমালোচনা করি যে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতির উন্নয়ন পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যাগুলোকে অবহেলিত করে। আমি ও এ নীতিগুলোর একটি পক্ষ ছিলাম, যদিও ছোট পক্ষ। আমার মনোভাব অন্য সবার মতই ছিল।

একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে আমি শুধু বর্তমান সঙ্কটের অর্থনীতির দিকগুলো নিয়ে বলতে পারি। কিন্তু অর্থনীতির দিকগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ , যা আওয়ামিলিগের ছয় দফা কর্মসূচীতে নির্দেশিত আছে, যার ভিত্তিতে আওয়ামীলীগ ১০-১ এর সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সদ্য নির্বাচনে জয়লাভ করে, যে কর্মসূচীর অর্ধেকই ছিল অর্থনীতি ও রাজস্ব সংস্কার ।  বর্তমান সঙ্কটের সুত্রপাত, উদ্দেশ্য, সমাধান সবকিছুই অর্থনীতির বিষয়গুলোর উপর নির্ভর করে। আমি অর্থনৈতিক অবস্থাকে আমার প্রথম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করতে চাই , যার কারনে বিদ্রোহ ঘটছে, তারপর আমি অর্থনীতির সেই বিষয়গুলোকে নির্ধারণ করব যার উপর প্রকৃত ফল নির্ভর করছে। পরের বিষয়গুলো উপসভার বিশেষ বিবেচনার বিষয় , কারণ, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা আভাস দেয় যে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব ও কার্যক্রম এই যুদ্ধের উপর গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত নিষ্পত্তিমূলক প্রভাব ফেলবে। তাই এ ব্যাপারে আমাদের দেশের অপরিহার্য কিন্তু অবাঞ্ছিত দায়িত্ব রয়েছে। এর সাথে আমাদের জাতীয় স্বার্থও জরিয়ে আছে বলে আমি মনে করি।

আমি যেসব গুরুতর বিষয় নিয়ে চিন্তিত তা আপনাকে আগে জানাতে চাই, সেসব বিষয় পূর্ব পাকিস্তানের দারিদ্র্য এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আয়ের সমতার সাথে জড়িত। পূর্ব পাকিস্তানের দারিদ্র্য এত ভয়াবহ যে শুনতে হাস্যকর শোনায়। অর্থনীতির দিক থেকে দেখলে পূর্ব পাকিস্তান একটি সাধারন ভুল।  প্রায় ৭০ মিলিয়নের বেশি লোক ২২ একর জায়গা এবং খুবই সামান্য প্রাকৃতিক সম্পদ নিয়ে লড়াই করে বেচে আছে। প্রতি গৃহস্থ পরিবারের জন্য দেড় একর বরাদ্দ আছে, যা প্রায় গড়ে আমেরিকান ফার্মের ১ শতাংশের অর্ধেক। তার উপর রয়েছে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা আর খরা।

গত বছর ঘূর্ণিঝড়ে অন্তত ৩০০,০০০ লোক মারা যায়, …/ বন্যা ততটা ভয়ংকর নয়, কিন্তু অর্থনীতির জন্য অনেক ক্ষতিকর। প্রতি বার্ষিক মৌসুমে পূর্ব পাকিস্তানের এক তৃতীয়াংশ জমি প্লাবিত হয়, এর ফসল বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। মৌসুম এর মাঝে বেশিরভাগ জমিতে সেচ ছাড়া ফসল ফলানোর মত পর্যাপ্ত বৃষ্টি হয় না। জমির উৎপাদন এবং আয় আপনারা যা ভাবেন তার থেকেও বর্ণনাতীত কম ভয়াবহ, যেখানে দেশের ৬০ ভাগ লোক কৃষিকাজে নির্ভরশীল। ফলে তাদের বার্ষিক মাথা পিছু আয় ৪৫ ডলারের বেশি না, যা আমাদের প্রত্যাশার অনেক কম।

পশ্চিম পাকিস্তানও দরিদ্র, তাদের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ৭৫ ডলার, এটিও কম তবে পূর্ব পাকিস্তানের থেকে অন্তত ৬০ ভাগ বেশি।দুই দেশের আয়ের এই ব্যাপক ব্যবধান এবং দারিদ্র্যের মাত্রা পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের সমস্যাগুলোর একটি এবং বর্তমান সমস্যার গুলোর মূল কারন। পাকিস্তানের উল্লেখিত অফিসিয়াল নীতি এই ব্যবধান ধ্বংস করে এবং আয়ে সমতা আনে কিন্তু বাস্তবে এই নীতি পালনের কোন উন্নতি নেই । অন্যদিকে এই পার্থক্য বেড়েই চলছে। গত দশকে প্রতি বছর পশ্চিম পাকিস্তানের মোট জাতীয় আয় ৬ শতাংশ করে বেড়েছে, অথচ পূর্ব পাকিস্তানে যেখানে বেড়েছে প্রতি বছরে মাত্র ৪ শতাংশ, যার বেশিরভাগই জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারনে শেষ হয়েছে।

এরমধ্যে একটি তিক্ত সমস্যা হল, পাকিস্তান তাদের আয়ের ব্যবধান কমানোর অফিসিয়াল নীতি আন্তরিকভাবেই বাস্তবায়ন করছে। পলিসিটা যে সম্পূর্ণ হতাশজনক তা নিয়ে কেউ তর্কে যায় না। দুই পক্ষের তর্ক বিতর্কের অনেক প্রমান ও নমুনা আছে , তাই আমি আমার এই অল্প সম তা সমাধান করতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে ভাল নির্দেশ হল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিনিয়োগ বণ্টন করা। কারণ জাতীয় বিনিয়োগ সরাসরি সরকার নিয়ন্ত্রন করে এবং ব্যক্তিগত বিনিয়োগ পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয় শিল্প অনুমতি ও বৈদেশিক বিনিময় বণ্টন দ্বারা। পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় বিনিয়োগ কখনই পশ্চিম পাকিস্তানের মত বৃহৎ নয়,যদিও ৫৫ ভাগ জনগন পূর্ব পাকিস্তানের। গত ছয় বছরে …। বেসরকারি বিনিয়োগ ও অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পশ্চিম পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে ৩ গুন বেশি। সবকিছু মিলিয়ে মোট বিনিয়োগের ৬০ ভাগই হয় পশ্চিম পাকিস্তানে যেখানে জনগন রয়েছে ৪৫%। বিনিয়োগের এই বণ্টন আমার কাছে চরম ইঙ্গিত বহন করে, যেখানে দিন দিন সরকারের কার্যাবলী ও কর্মসূচি আয়ের ব্যাবধান কমানোর জন্য ঘোষিত নীতির বাস্তবায়ন করে না। এখানে আরও লক্ষন আছে যা বেশ অসঙ্গত। যে কোন ভাবেই হোক, পূর্ব পাকিস্তানিরা এর ফলে ভেঙ্গে পড়ে, এবং তারা বুঝতে পারে সরকারের এই বিশাল কর্মসূচি পশ্চিম পাকিস্তানের অনুকুলে, যেন তারা অর্থনৈতিক উপনিবেশ। আমাকে বলতে হয় যে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সাথে আছি।

অগ্রিম তথ্য গুলো কমাতে এখানে উল্লেখ করা উচিত , পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে প্রচুর পরিমান ভবিষ্যৎ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দাতা গোষ্ঠী প্রকল্প সহায়তার স্বাভাবিক নীতি অনুযায়ি তাদের তহবিল বণ্টনে আগ্রহি হয়েছে, যার বেশিরভাগ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বণ্টনের কথা ছিল। তাই পশ্চিম পাকিস্তান অসামঞ্জ্যপুরন বৈদেশিক সাহায্য গ্রহন করে। আমাদের খুব কমই বলা হত যে কার প্রকল্পে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অবদান রাখতে হবে। পাকিস্তানের মোট দ্বিখন্দিত দেশে এটা খুবই জটিল প্রশ্ন যেখানে দেশের এক অংশের প্রকল্প গুলো অন্য অংশের উন্নয়নে কোন অবদানই রাখে না। এই স্বাভাবিক নীতিমালা অনুসরন করে,  আমরা পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ক্ষতিপুরনে অবদান রাখি। আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি যে অই নীতি টা মারাত্মক ভুল ছিল যা বর্তমান সংকট ও ইতিহাসের জন্য অনেকখানি দায়ী।

আমি আমার ভুমিকায় উল্লেখ করেছি যে আমরা আমাদের এত বড় দায়িত্ব এবং বর্তমান সংগ্রামের পরিণতি এড়িয়ে যেতে পারি না। মূলত এটা পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যার মধ্যস্ততা করা থেকে এড়িয়ে যেতে চাইছে, তবুও আমরা আমাদের ভুলশুদ্ধ বুঝতে পারি। সমস্যা হল আমরা পাকিস্তান অর্থনীতির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে ছিলাম যে আমরা নিরপেক্ষ থাকতে যতই চেষ্টা করি তা সামরিক বাহিনীর ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক মাত্রায় প্রভাব ফেলবে।

.

সমস্যা হল আমরা পাকিস্তানি অর্থনীতির সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে রয়েছি যে আমরা যতই নিরপক্ষভাবে অবদান রাখতে চেষ্টা করি , তা সামরিক বাহিনীর ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই, আমাকে কিছুদিনের জন্য অর্থনীতি থেকে সামরিক শাসনের বর্তমান অবস্থারদিকে সরে যেতে হবে ।

যুদ্ধ কিছুদিনের জন্য শেষ হয়েছে , পশ্চিম পাকিস্তানের ট্যাঙ্ক, বিমান, কামান, শৃঙ্খলাবদ্ধ সৈন্যবাহিনী সবকিছু জয় করে নিয়েছে। সৈন্যরা ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বড় শহরগুলোতে অবস্থান করে , এরপর তাদের করনীয় ছিল দেশের অবশিষ্ট জনবহুল স্থান গুলো দখলে। কিন্তু আমরা জানি তা তাদের জন্য কঠিন। তাই ৩০০০ মাইল ব্যাপ্তি জুড়ে তাদের ৫০০০০ এর বেশি সৈন্যবাহিনি প্রয়োজন । তারা ইতোমধ্যেই বেশ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে। গত বছর তাদের বৈদেশিক বিনিময় হার ৩০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৭০ মিলিয়ন ডলারে নেমে যায়।  কোন ব্যয় এবং যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি ছাড়াই তাদের বার্ষিক বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি ৫০০ মিলিয়নের বেশি। ফলে তাদের বর্তমান সঞ্চিতি বাৎসরিক পরিকল্পনার এক তৃতীয়াংশ বা প্রযাপ্ত কার্যনির্বাহী ব্যালেন্সের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষত এই মুহূর্তে মনে হল পাকিস্তান তাদের এই মাসের বকেয়া দেনা স্থগিত রাখতে তৎপর হয়ে উঠেছে । অর্থাৎ এইভাবে যুদ্ধ কয়েক মাস চলতে থাকলে এবং পর্যাপ্ত আমদানি সম্ভব হলে, বহিরাগতরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ধন সম্পদ এর যোগান দিতে থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র হবে পাকিস্তানের বৈদেশিক অর্থায়নের মুল নিয়মিত উৎস। মোটকথা , আমাদের IDA ও UNDP র অবদান ছাড়াই আমেরিকার অনুদান এবং ঋণ বাতসরিক প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের বানিজ্য ঘাটতির প্রায় অর্ধেক  মন্দাভাব দূর করে।  তাই মিলিটারি কার্যক্রম চালানো পর্যন্ত আমেরিকার অনুদান এবং ঋনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা পশ্চিম পাকিস্তানের কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

তাই এই বিপদ সংকুল মুহূর্তে আমেরিকার যে দ্বিধা ছিল তা হল – কিভাবে নিরপেক্ষতা অনুসরন করবে, ধারাবাহিক সাহায্য আসতে থাকলে কিভাবে পাকিস্তান সরকারের দমনমূলক চেষ্টায় অপরিহার্য সহায়তা দেয়া হবে, সহায়তা বন্ধ হলে তা নিয়মিত সম্পর্কের বাধা হয়ে দাঁড়াবে যার উপর পাকিস্তান সরকার ভরসা করে থাকবে।  যদিও যেকোন পলিসিই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমরা এমন ভাবে জরিয়ে পরেছিলাম, যে আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সরে আসতে পারছিলাম না। অন্যদিকে আমাদের জাতীয় স্বার্থও জরিয়ে রয়েছে।

যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আগত এবং যেখানে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল ভারত, পাকিস্তান, মেইনল্যান্ড চায়না এবং বার্মা, যা রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং ক্ষমতার ভারসাম্যর উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের জাতীয় স্বার্থ ছিল মূলত দক্ষিন এশিয়ায় শান্তি এবং স্থির অবস্থা বজায় রাখা ,আমি বলিনা এটা উচ্চ মানসিকতা বা মানবিক উদ্দেশ্যের বাইরে। পূর্ব পাকিস্তানের এই দীর্ঘ যুদ্ধ ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের মনোযোগকে ব্যস্ত রাখছে, উভয় দেশকেই দুর্বল করে দিচ্ছে এতে তাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান এর শক্তি গুলো অন্য খাতে চলে যাচ্ছে । ফলে পুরো উপমহাদেশের স্থিতিশীল অবস্থার পরিনতি এমন ক্ষতিগ্রস্থ হবে যা অনুমান করাও কঠিন।

দ্বিতীয়ত, সংগ্রাম যতদিন চলতে থাকবে ততই তা অশুভ এবং দুঃখজনক দিকে মোড় নিবে। এই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের আন্দোলন পশ্চিমা শিক্ষা ও পশ্চিমা ধাচের মধ্যবিত্ত শ্রেনির দ্বারা পরিচালিত হয়। এটা কিছু ভাবাদর্শ নিয়ে আংশিক সংগ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  কিন্তু অভিজ্ঞতা বলে, এই জ্বালাময়ী এবং ঘৃণা সঞ্চারক সংগ্রাম কে গনতান্ত্রিক ইচ্ছা নিয়ে নিয়ন্ত্রন করা বেশ কঠিন।   এ ধরনের সংগ্রামে নেতৃত্ব এমন চরমপন্থি চক্রের দিকে ঝুকে পড়ে যাদের ঘৃণ্য লোকদের নিযুক্ত করার ব্যাপারে কোন বাধা থাকে না ফলে সংগ্রাম আরো বিপদ্গ্রস্থ হয়। এধরনের দল ইতোমধ্যেই পূর্ব পাকিস্তানে রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাতীয় আওয়ামি পারটির একাংশ, আর পশ্চিম বঙ্গে অবৈধ মাওবাদী দলের সাথে যুক্ত নকশাল।   দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত অবস্থায় চলতে থাকলে বিপ্লবের নিয়ন্ত্রন তাদের হাতে যাবে এবং  তাহলে বিপদের সম্ভাবনা সিংহভাগ। তখন তুমি নিজেই পূর্ব পাকিস্তানে মাওবাদী বিপ্লব বাস্তবায়নের চিত্র দেখতে পাবে।

তাই যত দ্রুত সম্ভব আমেরিকার প্রবল আগ্রহ পূর্ব পাকিস্তানে শান্তি বজায় রাখা। অতএব আমরা কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারি না এবং তা উচিত ও না। কিন্তু আমরা এর মধ্যেই দেখেছি যে আমরা এমন অবস্থানে আছি যে চাইলেও আমরা ঘটনার প্রভাব এড়িয়ে যেতে পারি না। আমাদের উচিত সামরিক চাপ না দিয়ে আমাদের প্রভাব কাজে লাগিয়ে সমঝোতার দিকে যাওয়া। সামরিক শাসনে অর্থায়নে অস্বীকার করে আমরা তা করতে পারি।

আমি বিশ্বাস করি না যে এসব অন্তর্গত যুদ্ধ চালিয়ে অর্থ ও সম্পদের যোগান নিশ্চিত করতে নিরপেক্ষতা আমাদের বাধ্য করবে, যে অর্থ ও সম্পদ দেশের অর্থনৈতিক দিকে সহায়তা করে এবং বাইরের আগ্রাসন থেকে মুক্ত রাখে। আমাদের পরিস্কার ভাবে নিশ্চিত করতে হবে, আমেরিকার অর্থায়ন যেন অর্থনৈতিক খাত থেকে সামরিক কার্যক্রম খাতে না চলে যায়। এবং সবশেষে প্রতিটা অর্থায়নের সময় আমাদের এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা উচিত যাতে তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনাভাবেই যুদ্ধের কাজে ব্যবহার না হয়। এবং আমাদের পূর্ব পাকিস্তানে খাবার এবং চিকিৎসার সহায়তা দিতে প্রস্তুত থাকা উচিত, যেখানে দুর্যোগের কারনে বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চিত। এ ধরনের সহায়তা সামরিক আক্রমন থেকে সুরক্ষিত রাখবে।

যেসব লক্ষ্য আমরা অনুধাবন করতে পারছি সেগুলো জোরালো ভাবে সুপারিশ করছি। এসবের পথ বা উপায় নিয়ে ভাবি নাই। এসব বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সম্ভবত পাকিস্তানের Commodity and Program Aid এবং আংশিক করবে Project Aid .কিন্তু কঠিন বাস্তব হল পাকিস্তানে উন্নয়নের উদ্দেশ্যে আমরা যে অর্থ বা পন্যই যোগান দেই তা সামরিক কার্যক্রম কাজে লাগতে পারে অন্যথায় তা বিদেশি পণ্য ক্রয়ে কাজে লাগবে। তাই উন্নয়নে সহায়তা দেয়া আসলে পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধেরই অর্থায়ন করা। উন্নয়নে সহায়তা প্রকৃত ভাবে কমে গেলে তা দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা হবে, কিন্তু সহায়তা অব্যাহত থাকলে যতদিন পর্যন্ত কোন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না আসে এবং উন্নয়নের দিক জোরদার না হয় ততদিন তা বিফলে যাবে।

আমি বিশ্বাস করি এই পলিসি অনুসরণ করে পাকিস্তান সরকারেকে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে বাধ্য করবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও গনতন্ত্রের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে সত্যিকার সমতা নিশ্চিত হবে। এর ফলে পুরো মহাদেশে ও প্রত্যেকের স্বার্থে স্থিরতা আসবে।

আমি সবাইকে আমার মত প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

জনাব গালাঘার , ধন্যবাদ , ডঃ ডরফম্যান , চমৎকার বিবৃতি এবং এখানে আসার জন্য ধন্যবাদ।

পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং জনগনের কাছে কোন ধরনের রাজনৈতিক মীমাংসা গ্রহনযোগ্য বলে আপনি মনে করেন?

.

মি. ডর্ফমেন.  আমি মনে করি যে, উভয় প্রতিদ্বন্দ্বী দলের তাদের দৃষ্টিকোণ হতে অসংবর্ধিত কিছু করা,  কিন্তু অামার চিন্তা করা উচিত যে, পূর্ব বাঙ্গালীরা যুক্ত পাকিস্তানের যৌক্তিক অংশ হিশেবে থাকার জন্য রাজী হবে, যদি অাওয়ামী লীগের ছয় দফা দাবির অস্তিত্ব তাদের প্রদান করা হয়।

অামি মনে করি পশ্চিম পাকিস্তানে বিরোধ অব্যাহত রাখার চাপ এতোটাই তীব্রতর হবে যে, তারা নিজেদের পুনর্মিলিত করতে প্রায় যেকোনো মিমাংসা করবে যাতে দেশের পূর্ব প্রান্ত ত্যাগ করে যায়। তাদের চিন্তা, তাদের বিচ্ছেদ এড়িয়ে চলতে হবে।

মি. গেলাঘের.  অপনি কি মনে করছেন রাজনৈতিক মিমাংসা পাওয়ার জন্য এবং টেকসই জাতি থাকার জন্য পাকিস্তানের উভয় দলের অাগ্রহতেই এমনটা হচ্ছে??

মি. ডর্ফমেন.  অামি জানি না কতোদিন পর্যন্ত একটা রাজনৈতিক মিমাংসা টিকে থাকে। যে ঘৃণা বেড়েই চলেছে সেটা বাস্তবিক। দেশগুলো অবশ্যই ভৌগলিক ভাবে, সাংস্কৃতিক ভাবে, জাতিগত ভাবে, এমনকি অাগে ভাষার দিক দিয়েও ব্যাপকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল। এই কারনে মানুষ অনেকদিন যাবৎ ভবিষ্যৎবাণী দিচ্ছিলো যে, অাগে বা পরে এই একতা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কতোটা অাবেগপূর্ণ ভাবে, অামি অনুমান করছি কেউই প্রত্যাশা করেনি। কিন্তু অামি মনে করছি অামি ঐ অবস্থাতে তখন সমাপ্ত করার জন্য যুদ্ধ করার চেয়ে বরং তাদের সমঝোতা করার চেষ্টা করা উচিত ছিল এবং এটা নিয়ে কাজ করা উচিত ছিল।

মি. গেলাঘের.  অাপনি অাপনার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার অালোকে এই কাজের কোনো সম্ভাবনা দেখছেন??

মি. ডর্ফমেন. হ্যাঁ অামি দেখছি, যদিও এটা উভয়দিকে অারও সন্তোষজনক অাদেশের প্রয়োজনবোধ করবে, যতদূর তারা প্রদর্শন করেছে তার তুলনায় এখিনে ব্যক্তিগত প্রভাবের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যদি পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণের অনুমতি দিতে সক্ষম হয় যেটা কিনা পশ্চিমাদের নয় বরং পূর্ব পাকিস্তানের অনুকূলে, এবং যদি অন্যান্য জাতি অনুশোচিত হয়, এবং অামি নিশ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তাদের অতিরিক্ত এলোমেলো অবস্থা নিয়ে অামরা কাজ করছি। অামি নিশ্চিত তারা একসাথে থাকতে পারবে।

অামি অাপনার বিবৃতিতে জেনেছি যে, ” তবুও পূর্ব পাকিস্তানকে খাবার এবং মেডিকেল সহায়তা সরবরাহ করার জন্য অামাদের তৈরি থাকা উচিত।”  কিভাবে বন্টন প্রস্তুত করা উচিত বলে অাপনি মনে করেন??

মি. ডর্ফমেন.  এখন পূর্ব পাকিস্তানে??

মি. গেলাঘের. অামি বলতে চাইছি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কি উচিত পূর্ব পাকিস্তানে দ্বিপক্ষীয় ভাবে বন্টন করা??

মি. ডর্ফমেন.  অামি মনে করি,  অামাদের উচিত না। ইউনাইটেড নেশন কর্তৃক তত্ত্বাবধান পরিচালনা করা কিংবা অান্তর্জাতিক রেড ক্রসকে প্রয়োজন হতে পারে।

মি. গেলাঘের. এই কাজের একমাত্র বাস্তব কার্যকর উপায় কি সেটা নয়??

মি. ডর্ফমেন. এই উপায়ে অনানুষ্ঠানিক স্বীকৃতি সংযোজনীয়, ভারতের নিকটবর্তী এলাকায় প্রেরিত সেই ত্রাণ সরবরাহ সীমান্ত জুড়ে অবাঞ্ছিত প্রবেশের পথ থাকার সম্ভবানা অাছে। এটি সম্পূর্ণ ভাবে একটি দীর্ঘ এবং মুক্ত সীমান্ত।

মি. গেলাঘের. কিভাবে বন্টন করা হতো যদি অামরা ঐ উপায়ে এটা শেষ করতাম??

মি. ডর্ফমেন. খুবই সামান্য তথ্য।

মি. গেলাঘের. বন্টনের গতিপথ বিপর্যস্ত হওয়া কি বর্তমানে অন্যতম অাসল সমস্যা নয়??

মি. ডর্ফমেন. অামি বিশ্বাস করি, ভারতের সীমান্ত এলাকার অনেক এলাকায় স্বাধীন সরকারের শাসন ব্যবস্থার অবয়বের মতো কিছু একটা অাছে।

মি.গেলাঘের. অাপনি কি মনে করেন পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বন্টন করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটা সম্ভবপর হবে??

মি. ডর্ফমেন. অানুষ্ঠানিক ভাবে নয়।

মি. গেলাঘের. কিন্তু অামরা যদি তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে বন্টন করতাম, উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতায় যা ঘটা উচিত বলে অাপনি মনে করেন অামরা কি তার বিপরীতে কাজ করতাম না??

মি. ডর্ফমেন. অামি তাদের মধ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে বন্টন করতাম না, না।

মি. গেলাঘের. যদি তাদের মধ্যে সত্যিই বিচ্ছেদ হয়ে যায়, অাপনি কি মনে করেন, এর সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে টিকে থাকা পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে সম্ভব হবে??

মি.ডর্ফমেন. অামি ঠিক এখন পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির গবেষনায় জড়িত অাছি। অাপনি অবশ্যই বুঝবেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তাদের সংযুক্তি অতীতে তাদের সুপ্রতিষ্ঠিত দেশ হিশেবে তৈরি হতে সাহায্য করেনি। অপরদিকে তারা খুব সম্ভবতো পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন যোগান দেয়। সুতরাং তারা বর্তমানের তুলনায় অধিক ধনী হতে পারবে। তারা সুপ্রতিষ্ঠিত কিনা সেটা অন্য ব্যাপার।

অামার প্রামাণিক বিবৃতিতে, অামি বলেছিলাম তারা ভুল করেছিল,

কিভাবে যে অনেক মানুষকে দেশ সমর্থন করতে পারে ধারনা করাই যায় না। কিন্তু বিচ্ছেদ উভয়ের স্বাধীন অর্থনীতি গঠনে কিংবা বৈধ বিচ্ছেদ কোনো ক্ষতি সাধন করবে না।

মি. গেলাঘের.   মি. বিংঘাম??

মি. বিংঘাম. ধন্যবাদ,  মি. চেয়ারম্যান। অামার মনে যে প্রশ্নগুলো ছিল তার বেশিরভাগ প্রশ্নই অাপনি অাসলে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছেন। কিন্তু অামি অন্য অারেকটি প্রশ্ন করতে পারি।

অাপনি উল্লেখ করেছেন যে যদি একতা চলমান থাকে, পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে একটি রাজনৈতিক মিমাংসা অাসতে পারে, পশ্চিম পাকিস্তানের উচিত এমন অর্থনৈতিক কর্মনীতি পরিত্যাগ করা যা কিনা পশ্চিম পাকিস্তানের অনুকূলে কাজ করে, এবং পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষে নয়। অাপনি কি সেটা অারও একটু সম্প্রসারণ করবেন?? অালোচ্য বিষয়ে ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দিষ্ট ব্যাপারগুলো কি কি??

মি. ডর্ফমেন. অামার প্রস্তুতকৃত বিবৃতিতে উপায়ের নির্দিষ্ট ধরণের একটি অামি উল্লেখ করেছিলাম যে পাকিস্তানে উভয় সরকারী এবং বেসরকারি বিনিয়োগের বরাদ্দ, যেটা কিনা বর্তমান নাগাদ পশ্চিম পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। যেটা অবশ্যই বিকেন্দ্রীভূত করা উচিত যাতে বৈদেশিক অর্থ সংগ্রহের যুক্তিসঙ্গত বরাদ্দ পূর্ব পাকিস্তানে তৈরি হয় এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক প্রশাসন পরিচালিত হয়, উভয়েই স্বাধীনভাবে অথবা সমগ্র পাকিস্তানী সরকারের অঙ্গস্বরূপ হিশেবে।

ক্ষমতা দেয়ার পদ্ধতিসমূহ এখন কেন্দ্রীভূত  ১,০০০ এয়ার মাইলস্ এবং এই মূহুর্তে পূর্ব পাকিস্তান হতে ৩,০০০ এয়ার মাইলস্। শুল্ক তালিকা এবং ভর্তুকির গঠণ যেটা কিনা অাবার কেন্দ্রীয় সরকার কার্যক্রমের অংশ ছিলো,

স্থানীয় উৎপাদন রক্ষার অভিমুখে প্রচন্ড ভাবে ক্রমশ চালু হচ্ছিল। যেগুলির প্রায় সব পশ্চিম পাকিস্তানে একাগ্র ছিল, এবং পূর্ব পাকিস্তানীদের প্রয়োজন হয়, প্রভাবে বহির্বিশ্বে হতে ক্রয় করার চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তান হতে ক্রয় করা, একটা নীতি যেটার বিরোধীতা অামরা করেছিলাম স্বাধীনতা যুদ্ধ পূর্ব অামাদের ইতিহাসে, যখন অামাদের অনুরূপ বাধ্যবাধকতা ছিল গ্রেট ব্রিটেনে উৎপাদন নিয়ে, একই অনেক ফলাফল নিয়ে, উভয় অর্থনীতি এবং অামাদের অনুভূতির মতো।

পূর্ব পাকিস্তানে অামদানি সম্ভবতো অনুমোদিত হওয়া উচিত যা এর প্রয়োজন বহির্বিশ্ব হতে সন্তোষজনক শর্তাবলীর অধীনে নিতে পারে। এগুলো পশ্চিম পাকিস্তান হতে অাসছে কিনা অথবা হংকং হতে কিংবা অন্যত্র। যেটা তাদের প্রকৃত বোঝা উপশম করবে। এখানে অসংখ্য অর্থনীতির কর্মনীতির বিস্তারিত রয়েছে। ফলাফল কিছু একটা মনে হয় যেটা কিনা যথাযথ ভাবে পিন অাটকানোর মতো অনেক কঠিন। কারন পশ্চিম পাকিস্তানী সরকার যথেষ্ট সতর্ক তোমার প্রয়োজনীয় সকল পরিসংখ্যান প্রকাশ না করার জন্য। কিন্তু এটা প্রতীয়মান হয় যে এই নীতিগুলোর ফলে প্রায় ৯০ মিলিয়ন এক বছরে অাশঙ্কনীয় গরীব পূর্ব পাকিস্তানী হতে “খুব একটা গরীব নয়” পশ্চিম পাকিস্তানীতে স্থানান্তর হচ্ছে। বাস্তবিকপক্ষে নিঃশেষ করা।

মি. বিংঘাম. এটা অবশ্যই খুবই অাকর্ষণীয় বিবৃতি। ঐ উপাদান সমূহ ব্যতীত অামি মোটেও সন্তোষ হতাম না ইহার নিজের দেয়া বিবৃতিতে,  যে সরকারী বিনিয়োগ পূর্ব পাকিস্তানের উর্ব্ধে পশ্চিম পাকিস্তানে অসামঞ্জস্য কারন সেটা পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদ হতে অাসে। যদি বিনিয়োগ পশ্চিম পাকিস্তানের সম্পদ হতে অাসে, তাহলে অাপনি এটার অতিরিক্ত সমালোচনা করতে পারেন না, যদি সেটা ঐ অনুপাতে বরাদ্দ করে দেয়া হয়।

যদি এটা গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ স্থানান্তর করা হতে অাসে, তবে সেটা অন্য ব্যাপার। ঐ স্থানান্তর গুলোর প্রকৃতি কি?? পূর্ব পাকিস্তানে কোন সম্পদ গুলো রয়েছে যেগুলো স্থানান্তরিত হওয়ার উপযোগী?? এটা কি অর্থ শুল্ক??

মি. ডর্ফমেন. এই ধরণের ব্যবসায় অর্ধ-শুল্ক, অর্ধ-মুনাফা রয়েছে অামরা উল্লেখ করেছি। ঐ দুটিই প্রধান কলকব্জা। এবং পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত স্থানীয় শিল্প কারখানা হতে অাংশিকভাবে কিছু মুনাফা দেশে প্রেরণ করে যেহেতু মালিক পশ্চিম পাকিস্তানে থাকে।

এটা খুবই অদ্ভূত পরিস্থিতি যে বেশিরভাগ বৈদেশিক পণ্যবিনিময় যা মোটামোটি পাকিস্তান অর্জন করে, উভয়ই সারি অাকারে পাট হতে অাসে এবং পাট শিল্পজাত হতে অাসে। ঐ গুলোর উভয়ই পশ্চিম পাকিস্তানের পূর্বেই পূর্ব পাকিস্তানে অারম্ভ হয়েছিল, তাই দেশের দরিদ্র অংশটি বৈদেশিক পণ্য বিনিময়ে বড় উপার্জক হয়েছে। এটা হলো তহবিলের স্থানান্তরিত করা পশ্চিম পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে পাট উপার্জন কে অারোপ করেছে।

মি. বিংঘাম. এই কারনগুলো পাকিস্তান সরকার কেন পূর্ব পাকিস্তানকে অাঁকড়ে ধরতে এতো সংকল্পিত ছিল তা ব্যাখ্যায় সহায়ক হবে, এটা কি সত্য??

মি. ডর্ফমেন. কিছুটা হ্যাঁ এবং অাংশিকভাবে সত্য। অামি মনে করি, এটা হলো সকল সরকারের স্বাভাবিক দায়িত্ব তাদের প্রদেশের অংশকে স্বদেশের বাইরের বিবেচনা না করা। অাপনি জানেন চার্চিল কি বলেছিলো, এবং প্রত্যেক দায়িত্ববান সরকার নেতা ঐ রকমই অনুভব করে, দেশ বিভাজন দেখতে চায় না।

মি. বিংঘাম.  ধন্যবাদ।

.

13.91.329-331

বিষয় সূত্র তারিখ
ভারতে বাংলাদেশের শরনার্থীঃ কেনেডীর বক্তৃতা ও চিঠি সিনেটের কার্যবিবরনী ২ জুন, ১৯৭১

২ জুন ১৯৭১                                                                           এস ৮০০১

কংগ্রেসনাল রেকর্ড- সিনেট

ভারতে পাকিস্তানি শরনার্থী

জনাব কেনেডীঃ জনাব প্রেসিডেন্ট, ভারতগামী পূর্ব পাকিস্তানের শরনার্থী সংখ্যা এখন ৪ মিলিয়ন (৪০ লক্ষ)-এর বেশী, এবং এই সংখ্যা বেড়ে দৈনিক ১ মিলিয়ন (১০ লক্ষ) দাড়িয়েছে। এদের প্রায় ৩ মিলিয়ন (৩০ লক্ষ) শরনার্থী পশ্চীম-বঙ্গের কলকতায় অবস্থানরত রয়েছে এবং বাকিরা পূর্ব-পাকিস্তানের এবং ভারতের সীমান্তবর্তী জায়গায় অবস্থানরত; যার অধিকাংশ রয়েছে পশ্চীম ত্রিপুরাতে, জনসংখ্যা প্রায় ১.৫ মিলিয়নের কাছাকাছি, কিন্তু এই শরনার্থীদের কারনে, জনসংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়ে গেছে।

কিছু কিছু শরনার্থীদের তাদের আত্নীয়রা স্বাগত জানালেও, অধিকাংশের আশ্রয় হচ্ছে সীমান্ত নিকটবর্তী শরনার্থী শিবির, সরকারী বিল্ডিং যেমন, স্কুল অথবা খোলা মাঠে। প্রতিবেদনে উল্লেখিত এসব শরনার্থীর ৭০ ভাগ মহিলা এবং শিশু। শরনার্থীদের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসার চাহিদা ব্যপক। এবং তাদের দেশে ফিরিয়ে নেবার কোন লক্ষন দেখা যাচ্ছে না।

এসব শরনার্থীদের ভরন-পোষোনের যাবতীয় খরচ উৎস এবং তার ব্যাবহৃত মানের সাথে পরিবর্তনশীল।

ভারত সরকার এই ৪ মিলিয়ন শরনার্থীদের খাওয়া বাবদ ৩ মাসের জন্য প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করে, যা ৭৮ থেকে ৯২ বিলিয়ন ডলারে উন্বিত হয় প্রায় ৬ মাসের জন্য। এই খরচ ধরা হয়েছে, প্রতি শরনার্থী ২০০০ ক্যালোরী খাবারের দাম হিসাবে।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম, এসব শরনার্থীদের খাবার বাবদ, ৩ মাসের জন্য ৩২-৩৬ মিলিয়ন ডলার এবং ৬ মাসের জন্য ৬৫-৭২ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দকৃত করেছে। এই হিসাব করা হয়েছে, জন প্রতি ১৬০০ ক্যালরী হিসাবে।

আমাদের নিজেদের সরকার, জন প্রতি ১৬০০ ক্যালরী খাবার হিসাবে, ৪ মিলিয়ন শরনার্থীর, তিন মাসে ৩০ মিলিয়ন ডলার এবং ৬ মাসে ৬০ মিলিয়ন ডলার হিসাব করেছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আমাকে জানিয়েছে যে, আমাদের সরকার এক খরচের অর্ধেক বহন করতে সক্ষম। যাইহোক, এখন পর্যন্ত মাত্র ২.৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এই হিসাবে, আমেরিকার স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা, যেমন কেয়ার, ক্যাথলিক ত্রাণ সেবা এবং বিশ্ব চার্চ/বিশ্ব লুথার্ণ ফেডারেশন বর্তমানে ২ লক্ষ ৮০ হাজার শরনার্থীদের খাদ্য সরবরাহ করছে। কিন্তু পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহের শর্তে এসব সংস্থা, প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শরনার্থীদের খাবার সরবরাহের ধারনক্ষমতা রাখে।

এপ্রিল মাসের ২৩ তারখে ইন্ডিয়ান সরকার জাতিসঙ্ঘের কাছে মানবিক সহোযগীতার জন্য আবেদন করেছে। আজকে, প্রায় ৬ সপ্তাহ পরও আন্তর্জাতিক ত্রান সরবারহ শুরু হয়নি, এবং আফসোসের সাথে জানাচ্ছি, অনুসন্ধানের জবাবে, না জাতিসংঘ, না আমাদের সরকার, কোন উত্তর প্রদানে আগ্রহ দেখায় নি, কবে নাগাদ এই ত্রান কার্যক্রম শুরু হতে পারে। ইতিমধ্যে, ইন্ডিয়ান সরকার, তাদের সীমিত সম্পদ এবং অন্যান্য ব্যাক্তিগত স্বেচ্ছাসেবক সংস্থার সাহায্য নিয়ে, এসব শরনার্থীদের যতটা সম্ভব মানিবিক চাহিদা গুলো পূরন করার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

জনাব প্রেসিডেন্ট, দিন দিন এটা খুবই স্পষ্টতর যে, পূর্ব-পাকিস্তানের অস্থীরতা এবং সংঘাতের কারনে খুব বড় এক মানবিক বিপর্যয় সংঘটিত হচ্ছে। কতদিন বিশ্ববাসী এভাবে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকবে, যেখানে অঞ্চলটি দিন দিন বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে? আর কত দিন জাতিসঙ্ঘ, এভাবে সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষন করবে যেখানে মানবিক চাহিদাগুলো এত সুস্পষ্ট পরিলক্ষিত?

আর কতদিন আমাদের সরকার এমন নিস্ফল আন্তর্জাতিক ত্রান কার্যক্রম গঠনের প্রচেষ্টা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে যা কিনা এখন পর্যন্ত শুধু কাগজ-কলমে রয়ে গেছে? আর কত দিন, আমরা ভারতের তাবু, ত্রান সরবরাহের জন্য সি-১৩০ এবং হেলিকাপ্টারের আবেদনেকে সময়োপযোগী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবো, যেখানে পুরো দক্ষিণ-এশিয়াকে সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত মজুত আমেরিকার আছে?

আর যেখানে প্রতিদিন হাজারো শরনার্থী ভারতে পাড়ি দিচ্ছে, আর কতদিন পাকিস্তান সরকার দাবী করবে, পুর্ব-পাকিস্থানের অবস্থা স্থীতিশীল?

জনাব প্রেসিডেন্ট, এই আশংকাজনক অবস্থা আমাকে বাধ্য করেছে, রজার স্টেটের সচিবকে আবারো অনুরোধ করে চিঠি লিখতে, যেন আমাদের সরকার, পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের অবস্থা এবং ভারতে আশ্রয়রত শরনার্থীদের কথা সমবেদনার সাথে বিবেচনা করে; এবং যত দ্রুত সম্ভব অন্যদের সাথে মিলে, এই স্থানের প্রয়োজনীয় শান্তি এবং ত্রান সরবরাহে পদক্ষেপ নেয়। আমি চাই, ২৭ মে’র এই চিঠিতে উল্লেখিত বিষয়বস্তু সর্বসাধারনের সম্মতির সাপেক্ষে আমার মন্তব্যের অংশ হিসাবে নথিভুক্ত করা হোক!

২৭ মে ১৯৭১

মাননীয় উইলিয়াম পি রজার্স

স্টেট সচিব

ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট

ওয়াশিংটন ডিসি

জনাব সচিব মহাদয়, পূর্ব-পাকিস্তানের অবস্থা এবং ভারতে আশ্রয়রত বিপুল সংখ্যক শরনার্থী- বিষয়টি সর্বসাধারন এবং কংগ্রেশনাল উদ্বেগ হিযাবে এখন কার্জত রয়েছে। যেহেতু আপনি জানেন, আমি এই ব্যাপারটি নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন আছি, এবং এই বিপর্যয়ের সেই শুরু থেকে আমাদের সরকার এবং অন্যান্য রাষ্ট্র, বিশেষ করে জাতিসংঘের, রাজনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহের কার্যক্রমের প্রচেষ্টাকে খুব দৃঢ়ভাবে সম্মত এবং সমর্থন জানিয়ে এসেছি।

রেকর্ড বলছে খুব সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। অবস্থা দিন দিন বেগতিক হচ্ছে। প্রায় সব প্রতিবেদন, এমনকি আমাদের সরকারের প্রেরিত গুলো, মানুষের চাহিদা, বিক্ষিপ্ত সামরিক দ্বন্দ, সরকারের সেবামুলক কাজের অভাব এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে পুর্ব-পাকিস্তানের মানুষের দৃঢ় বিভেদের খবর জানাচ্ছে। ভারত এবং পাকিস্তানের রাজনৈতিক অসন্তোষ প্রতিদিন বাড়ছে, যা ঐ এলাকার শান্তি এবং স্থিতীশীলতার জন্য হুমকি স্বরুপ। ভারতে গমনরত শরনার্থীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে, যা বর্তমানে দিনে ১ লক্ষে দাড়িয়েছে। ভারতে সর্বোমোট শরনার্থীদের সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ৩.৫ মিলিয়নে দাড়িয়েছে। ২৩ শে এপ্রিল, ভারতের আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যের আবেদন, এখন পর্যন্ত নাম মাত্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, কারন পৃথক সরকার এবং জাতিসংঘ, এরুপ বিরাট বিপর্যয়ে মন্থর হয়ে আছে।

খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বিশেষ করে, অন্তত এই ৪ ক্ষেত্রে।

প্রথমত, কেন্দ্রিয় সরকার এবং পূর্ব-পাকিস্তানের রাজনৈতকবৃন্দের মধ্যে রাজনৈতিক অধিকার সহজতর করার লক্ষ্যে, দৃঢ় প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে করে ইন্ডিয়াতে পলায়নকৃত শরনার্থী প্রবাহ বন্ধ করা যায় এবং ইতিমধ্যে আশ্রয়কৃত শরনার্থীদের ফিরিয়ে আনা যায়।

দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রিয় সরকারকে আমারেকার পক্ষ থেকে সাধারন অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের শর্তে, পূর্ব-পকিস্তানে জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সরবরাহে আমাদের সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে। এই লক্ষ্যে, আমাদের সরকারকে, পাকিস্তান সরকার এবং আন্তর্জাতিক কর্মীবৃন্দ দ্বারা, পাকিস্থান সরকারের বিবৃত খাদ্য এবং চিকিৎসার চাহিদা এবং ওই সকল ত্রান বিতরনের জন্য নদীবাহিত যান প্রদানে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

তৃতীয়ত, পাকিস্তান এবং ভারতের মাঝে বিরাজকৃত রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা কিনা শান্তি এবং স্থিতীশীলতার জন্য ঝুকিস্বরুপ, শান্ত করার জন্য আমাদের সরকার এবং অন্যান্য সরকারের যথাপোযক্ত কূটনেতিক পথ ধরে আগাতে হবে।

চতুর্থত, ২৩শে এপ্রিল ভারতের আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্যে প্রার্থনায় জাতিসঙ্ঘ নিরুত্তর বসে থাকলেও, আমরা এভাবে চুপচাপ বসে থাকতে পারি না। এখন পর্যন্ত, ভারতে জাতিসঙ্ঘের কোন ত্রাণ ব্যাবস্থা বাস্তবায়িত হয়নি। যতক্ষন পর্যন্ত এটা করা হয়, দ্বিপাক্ষিক ভিত্তিতে, আমাদের সরকারের, ভারতের এই আবেদনে সাড়া দেয়া উচিত। ভারত ইতোমদ্ধ্যে তাদের মানবিক চাহিদাগুলোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছে; এবং একটি অসংহত আন্তির্জাতিক সংস্থায় আমাদের তহবিল বরাদ্দ, শুধুমাত্র ভারত সরকার কর্তৃক সম্মুখীত মানবিক সংকটের অবনতি ঘটায়।

আমি খুবই আশাবাদী যে আমাদের সরকার পূর্ব-পাকিস্তানের মানুষের অবস্থা এবং ভারতে আশ্রয়রত শরনার্থীদের কথা সমবেদনার সাথে বিবেচনা করবে; এবং যত দ্রুত সম্ভব অন্যদের সাথে মিলে, এই স্থানের প্রয়োজনীয় শান্তি এবং ত্রান সরবরাহে পদক্ষেপ নেবে।

বিনীত

এডওয়ার্ড এম কেনেডি

চেয়ারম্যান

শরণার্থী সংক্রান্ত সাবকমিটি

.

13.92.332-333

শিরোনামঃ শরণার্থী শিবির পরিদর্শনান্তে ই. গালাঘের বিবৃতি

সূত্রঃ প্রেস বিজ্ঞপ্তিঃ প্রতিনিধি পরিষদ, পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি

তারিখঃ ৯ জুন ১৯৭১

প্রেরকঃ কংগ্রেসম্যান কর্নেলিয়াস ই গালাঘের (সি,এন,জে),

সভাপতি, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপকমিটি,

প্রতিনিধি পরিষদ, ইউএস।

“পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য ও সহায়তা স্থগিত রাখা উচিত।”

-গালাঘের ভারতে অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে এসে একথা বললেন।

“এই মুহূর্তে পাকিস্তান সরকারকে কোন ধরনের সহায়তা প্রদান করাটা হবে খুন-খারাবি ও মহামারীর ন্যায় ছড়িয়ে পড়া মরণব্যাধিকে প্রণোদনা দেয়ার শামিল,” এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি কংগ্রেস সদস্য গালাঘের আজ এই কথা বললেন।

সম্প্রতি তিনি ভারতে অবস্থিত পূর্বপাকিস্তানের একটি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে ফিরেছেন। সেখানে ৫০ লক্ষাধিক শরণার্থী রয়েছে যারা পূর্বপাকিস্তানের সংকটপূর্ণ অবস্থার কারণে ওখানে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। মে মাসে গালাঘের সাহেবের এই সংকট বিষয়ক দুই দিনের শুনানী ছিল এবং তিনি জুনের প্রথমদিকে দুই দিনের সফরে শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলেন।

“শরণার্থীদের এহেন দুরাবস্থা অনুধাবনের জন্য দুটি বিষয়ই যথেষ্টঃ

১) নির্বাচনে জয়ী দলের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে পিষে ফেলার জন্য পাকিস্তান সরকার যে কী ভয়ানক নীতি অবলম্বন করেছে, তা বুঝার জন্য শরণার্থীদের এই সুবিশাল সংখ্যাই এক অনস্বীকার্য দলিল।

২) বিগত সপ্তাহে হিন্দু শরণার্থীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতে এটাকে এখন একটি ‘ধর্ম যুদ্ধ’ বলেই মনে হচ্ছে।

গালাঘের আরো বললেন, “আমাদের কখনোই ভুলে গেলে চলবে না যে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রচলিত নিয়মানুসারে ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত হয়ে উভয় পাকিস্তানের জন্য একটি সাংবিধানিক পরিষদ গঠনে সফলতার সাথে কাজ করে আসছিল। তাই প্রচলিত অর্থে এই নেতাকর্মীদের কোনভাবেই বিচ্ছিন্নতাবাদী বা বিদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করা উচিৎ হবে না।

প্রতিনিধি পরিষদের একটি বক্তৃতা প্রস্তুতির প্রাক্কালে গালাঘের তাঁর সহকর্মীদের বলেছিলেন, “অবর্ণনীয় ভয়াল সব ঘটনা- বিচ্ছিন্ন হাত নিয়ে শিশুরা ঘুরছে” এবং সেই সকল ঘটনা যা তিনি ১০০ (এক শত)-র অধিক শরণার্থীদের সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে বলেছিলেন।

তাঁরা সকলেই একটি ব্যাপারই বারবার বলছিলো, “পাকিস্তানী সেনারা অধ্যাপক ও ছাত্রদের হত্যার মাধ্যমে বাঙালি জাতির বুদ্ধিভিত্তিক জীবনকে ধ্বংসের পায়তারা করেছে।” এটাকে আমি আমার বিবেচনায় গণহত্যার অভিযোগ বলে বিশ্বাস করি। অধিকন্তু, ভারতে এখন গণহারে প্রবেশকারী শরণার্থীরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। এই নিষ্পাপ লোকজন সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উস্কে দেয়ার জন্য আর্মির একটি হিসেবী সন্ত্রাসবাদের শিকার।

.

13.94.336-343

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তান সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদে ই গালাঘের-এর বক্তৃতা প্রতিনিধি পরিষদ-এর কার্যবিবরণী ১০ জুন, ১৯৭১

      ১১ জুন, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল রেকর্ড- ই ৭৯ মন্তব্যের বর্ধিতাংশ

               পাকিস্তান সমস্যা নিয়ে আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

      হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভ-এ

                                                              ১০ জুন,১৯৭১

সন্মানিত কর্নেলিয়াস ই. গালাঘের,-‘মিস্টার স্পিকার, “আজ আমি এখানে দাঁড়িয়েছি মূলত পূর্ব পাকিস্থানের অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করতে এবং ইন্ডিয়ায় রিফিউজি ক্যাম্পে আমার বর্তমান সফর সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন জমা দিতে।

এটা আমাকে বলতেই হচ্ছে যে, ফরেইন অ্যাফিয়ার্সের হাউস কমিটিতে আমার চাকুরির ১২ বছরে সাড়া বিশ্বের মধ্যে আমার দেখা এই পরিস্থিতিটাই সবচেয়ে বেশি খারাপ। বিশ্বের কোন দেশে আমাকে এই অবস্থা দেখতে হয় নি। গত মে তে এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক বিষয়ক আমার সাব কমিটির ২ দিন ব্যাপী শুনানির আয়োজন করা হয়েছিলো এবং আমাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হচ্ছে যে, আমি ভেবেছিলাম এই রিপোর্টে গণহত্যা, নৃশংসতা, এবং সীমাহীন মানব দুর্ভোগ সম্পর্কে বাড়াবাড়ি রকমের উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাকে যদি কিছু বিবৃত করতে হয় তবে আমি আমার সহকর্মীদের বলতে পারি যে এই প্রতিবেদনে বাস্তবতার থেকে কমই উল্লেখ হয়েছে।[ আমি বিশ্বাস করি না আমাকে একজন পিশাচ অথবা – বলে ডাকা হবে এবং আমি আমার উত্তরসুরী –…]

আমি মাত্রাজ্ঞানহীনভাবে সাধারণীকরণকে অবিশ্বাস করতে শিখেছিলাম এবং স্ফীত আড়ম্বরপূর্ন ভাষাগুলোকে বাদ দিয়েছেলাম।

পূর্ব পাকিস্থানের সমস্যাটা এতোটাই সর্বনাশা ও ভয়ংকর যে এটা আর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একার পক্ষে সমাধানের বিষয় নাই। কিন্তু, এমনটাও নয় যে এটা শুধুমাত্র পাকিস্তানের একার অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা এখন পুরো ভারত উপমহাদেশের শান্তির জন্যই হুমকিস্বরূপ, যা সমাজতান্ত্রিক আদর্শে উজ্জীবিত আন্দোলনের জন্য উর্বর প্রজনন ক্ষেত্র তৈরিতে সহায়তা করছে[–] এবং মানবজাতির জন্য একটি ভয়ংকর নৈতিক পছন্দের দুয়ার খুলে যাচ্ছে।

যাইহোক, [—]

২৫ মার্চ, ১৯৭১ এর সন্ধ্যায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার পরের অধিকাংশ পদক্ষেপই আমার বক্তব্যে সমালোচনামূলক হিসেবে উঠে আসবে। কিন্তু এটাও সত্য যে শুরুতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের ডাকে দেয়া কর্মবিরতি থেকে তাদের নিবৃত্ত করা যায় নি যা পূর্বপাকিস্তানের অন্যান্য সাধারণ জনগন হত্যার কারণ হিসেবে বাঙ্গালীরা তা অস্বীকার করতে পারবে না এবং বিশ্ব সমাজ তাদের চেষ্টার মাধ্যমে এটা করতেও সামর্থ্য হয় নি।

গতানুগতিক মনস্তাত্ত্বিক-সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে আমি আর কোন বিষয় পুনারাবৃত্তি করতে দ্বিধা বোধ করছি। সত্যি বলতে কী বাস্তবিক অর্থেই আমরা প্রত্যেকেই অসচেতন ভাবে এবং বিনা আপত্তিতে [পশ্চিমপাকিস্তানীদের?]কৌশলগুলো মেনে নেয়াই এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দায়ী।

পেইজ- ৩৩৭

    ঘটনা সংঘটনের পরের বোধদয় এ ব্যাপারে একেবারে স্পস্ট ধারনা দিচ্ছে। জীবনের এই নিম্নমূখী গতি সত্যিকারের ভয়ংকর এক পরিস্থিতির দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে যেখানে পুর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়া আজ মুখোমুখি। এবং জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ও বস্তুত পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রই হয় সক্রিয়ভাবে নয়তো অনিচ্ছুকভাবে এর অংশীদার।

পটভূমি

মিস্টার স্পীকার! এ-বিষয়ে আমাকে রাজনৈতিক পটভূমিটি ব্যাখ্যা করতে দিন। পূর্ব পাকস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান কম করে হলেও ১১,০০ মাইল  ইন্ডিয়ান ভূমি দ্বারা বিভক্ত। এবং আমরা এখন জানি তারা সামাজিকভাবে, বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবে, এবং দর্শনগতভাবে একেবারেই পৃথিবীর ভিন্ন মেরুতে। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে স্পস্টভাবেই জয়ী হয়েছে। যারা সংবিধান লেখার মাধ্যমে বেসামরিক আইন প্রণয়ন করবে। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টি আসন পায় এবং যারা মাধ্যমে তারা পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান মিলে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তানের সামরিক সরকার দ্বারা পরিচালিত এ ভোটে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ এর প্রার্থীরা প্রায় ৮০ শতাংশ ভোট পায়।

আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা ও তার সমর্থকরা পুরো পাকিস্তানে সিস্টেমের মধ্যে থেকেই কাজ করেছে। সুতরাং সাধারনভাবে আমরা বিচ্ছন্নতাবাদী বা বিদ্রোহী শব্দগুলো যে অর্থে ব্যবহার করি তা তাদেরকে বলা উচিৎ নয়।

উপরন্তু, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার দেয়া প্রতিশ্রুতি মতো ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের নির্বাচন জয়ের পরপরই আওয়ামী লীগ নেতাদের সরকার গঠন করা কথা ছিলো এবং তন্মধ্যে একজনের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা। এটাই সত্যি যে তিনি [/বঙ্গবন্ধু] এটা চান নি, এটাই সত্য যে তিনি নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কথার উপর নির্ভর করে ছিলেন; এবং এটাও সত্য যে তিনি কখনোই বিচ্ছিনতাবাদ নিয়ে কিছু বলেন নি। তিনি পাকিস্তানের মধ্যে থেকেই স্বাধীন যুক্তরাষ্ট্র হিসেবে শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলেন। সম্ভবত এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণ পৃথিবী কেউ কখনোই জানতে পারবে না যার উপর আওয়ামী লীগ এরুপ আস্থা রেখেছিলো। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা এটাই সাক্ষ্য দেয় যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কখনোই “বাঙলাদেশ” প্রশ্নে অনড় থাকেনি যতক্ষণ পর্যন্ত না সেনাবাহিনী বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে।

এশিয়া এন্ড প্যাসিফিক বিষয়ক কমিটির সন্মুখে দেয়া হাভার্ড ইউনিভার্সিটির ড. রবার্ট ডোর্ফম্যানের দেয়া প্রামাণিক সাক্ষ্যপত্র পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পটভূমি উন্মোচন করে। তিনি পাকিস্তানের দু’অংশে সম্পদের বন্টন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয় উল্লেখ করেন। তিনি অত্যন্ত সততার সাথে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন, বেশ ব্যাপক কিন্ত অদূরদর্শী ঘটনাবহুল ভাবে। যাতে দেখা যায় আমেরিকান সাহায্য সহ প্রতিশ্রুতিশীল অধিকাংশ বিনিয়োগ সম্ভাবনা পশ্চিম পাকিস্তানকে দেয়া হতো। এতে করে পূর্ব পাকিস্তান নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটি কলোনী হিসেবে বিবেচনা করতো, যা উত্তেজনাকে বর্ধিত করে।

                নজীরবিহীন ভয়াবহ কর্মযোগ্য

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের মুখপাত্র দাবী করেছে যে ২৫ মার্চের সামরিক অভিযান পাকিস্তানের আইন-শৃঙ্খলা পুনঃস্হাপনের জন্য দরকার ছিলো এবং এটা ছিলো একটা দ্রুত, স্বচ্ছ, এবং ছোটখাটো সামরিক ছেদন মাত্র। তারা এটাও দাবী করছে যে যা কিছু এখনো অবশিষ্ট আছে তা শুধুমাত্র পূর্বপাকিস্তানকে একীভূতপাকিস্তানে তার স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসতে।

.

ঐ বিতর্কে দুটি সাধারণ তথ্য সজোরে উপস্থাপন করা হয়। প্রথমত, যারা নির্বাচন জিতেছে তাদের দমন করতে পাকিস্তান সরকার দ্বারা অনুসৃত নিছক শরণার্থী সংখ্যাই পাশবিক নীতির অকাট্য প্রমাণ। এবার গত কয়েক সপ্তাহে হিন্দু শরণার্থী দের পরিষ্কার বৃদ্ধিতে জেহাদের দায়িত্ব নিয়েছে বোঝা যায়। এখন ভারতে ৫ মিলিয়ন শরণার্থী রয়েছে সাথে প্রতিদিনই অনেকেই বর্ডার পার হচ্ছে। শরণার্থী দের প্রস্থচ্ছেদের সাথে আমার পরিচালিত ইন্টার্ভিউ এর ভিত্তিতে,আমি এখন বিশ্বাস করি যে, বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী দের জীবন ধ্বংস করতে একটি পূর্ব নির্ধারিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে কারণ বহু পরিমাণে প্রফেসর, ছাত্র ছাত্রী এবং আর্মি দ্বারা যেকোনো পার্থক্যে হত্যা।

উপরন্তু, আর্মি দ্বারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করতে একটি পূর্ব নির্ধারিত সন্ত্রাস রাজত্ব আকস্মিক হিন্দু প্রধান শরণার্থী দের উত্থান থেকে প্রসূত হয়। এই উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান, ১০ মিলিয়ন হিন্দু ছোট সংখ্যালঘু ছিল এবং এটা তর্ক করা বোকামি যে বাঙ্গালী তার ভূখণ্ডে অবাঙ্গালিদের বিরুদ্দগে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যাহক আমি বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘ সংরক্ষিত ভাবাবেগ মানুষের ইচ্ছার ব্যাহত হওয়াত জ্বলে উঠেছিল। এবং বাঙ্গালির সংরক্ষিত হিংস্রতার মতোই ভয়ংকর ছিল সম্ভবত,কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো পদক্ষেপ যাচাই করতে তারা ব্যবহৃত হয়নি।

      মানবজাতির একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়:

বিতর্ক অগ্রসর হয়েছে যে বিশ্ব-সমাজ ভোগান্তি উপশম করতে কোনো ব্যাবস্থা নিতে পারেনা এবং নেয়া উচিত নয় কারণ এটি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।

পূনরাবৃত্তির ঝুকিতে আমাকে আবার শরণার্থী দের দিকে যেতে দিন। ভারতীয় উৎস হতে সমসাময়িক, একমাত্র উৎস যে সত্যিই কথা বলতে পারে কর্তৃত্বের সাথে, এখন ৫ মিলিয়ন দাড়িয়েছে। এটা তর্ক করা যায় না যে,একটি নীতি যা পর্যাপ্ত সন্ত্রাস উৎপাদন করে ৫ মিলিয়ন মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে উড়ে যেতে বাধ্য করে তা যথাযথ ভাবেই একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি শব্দার্থক নিরর্থক অভ্যন্তরীণ নীতি ডাকা যা শুধুমাত্র শরণার্থী তৈরি অব্যাহত রাখে এবং যার আকার দিনে ১০০,০০০ দাঁড়ায়। এটা তর্ক করা যায় না যে এই অবস্থাকে ভারতে রাখা অবিশ্বাস্য আলিঙ্গন বিশ্বের বৈধ উদ্বেগ হতে পারেনা।

সম্পূর্ণ নিশ্চয়তায়, জনাব স্পীকার, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।

উপরন্তু, আমাকে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির এশিয়ান এবং প্যাসিফিক এফেয়ার উপকমিটি ১১ মে’র পূর্বে উদ্ধৃত করতে দিন।

আমরা সিনেটর কেনেডিকে প্রদর্শন করতে বলেছি কারণ শরণার্থী দের উপর অসমাপ্ত কাহ তার উপকমিটি কর্তুক করা হয়েছে।সিনেট কমিটিতে মানুষের উপর এবং যুদ্ধ পরিচালিত এলাকায় মানবিক চাহিদায় আইনজীবী নীতির প্রভাব প্রকাশ করতে। সিনেটর পরিক্ষিত

নিরপেক্ষতার নামে, আমাদের সরকারের মধ্যে কেউ বলেছে আমরা অবশ্যই আজ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত নই। কিন্তু আমরা যুক্ত।আমাদের অস্ত্র হিংস্রতায় যুক্ত হয়েছে। আমাদের সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অবদান রেখেছে এবার আজ আমাদের সরকার, সর্বোচ্চ অবস্থায়,সাহায্যের চেয়ে বেশি আলোচনায় যুক্ত। অতএব আমরা যুক্ত।

| পার্ট ১৩, ৩৩৮ পৃষ্ঠা |

ঐ বিতর্কে দুটি সাধারণ তথ্য সজোরে উপস্থাপন করা হয়। প্রথমত, যারা নির্বাচন জিতেছে তাদের দমন করতে পাকিস্তান সরকার দ্বারা অনুসৃত নিছক শরণার্থী সংখ্যাই পাশবিক নীতির অকাট্য প্রমাণ। এবার গত কয়েক সপ্তাহে হিন্দু শরণার্থী দের পরিষ্কার বৃদ্ধিতে জেহাদের দায়িত্ব নিয়েছে বোঝা যায়। এখন ভারতে ৫ মিলিয়ন শরণার্থী রয়েছে সাথে প্রতিদিনই অনেকেই বর্ডার পার হচ্ছে। শরণার্থী দের প্রস্থচ্ছেদের সাথে আমার পরিচালিত ইন্টার্ভিউ এর ভিত্তিতে,আমি এখন বিশ্বাস করি যে, বাঙ্গালী বুদ্ধিজীবী দের জীবন ধ্বংস করতে একটি পূর্ব নির্ধারিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে কারণ বহু পরিমাণে প্রফেসর, ছাত্র ছাত্রী এবং আর্মি দ্বারা যেকোনো পার্থক্যে হত্যা।

উপরন্তু, আর্মি দ্বারা সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা অনুপ্রাণিত এবং উজ্জীবিত করতে একটি পূর্ব নির্ধারিত সন্ত্রাস রাজত্ব আকস্মিক হিন্দু প্রধান শরণার্থী দের উত্থান থেকে প্রসূত হয়। এই উত্তেজনা স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান, ১০ মিলিয়ন হিন্দু ছোট সংখ্যালঘু ছিল এবং এটা তর্ক করা বোকামি যে বাঙ্গালী তার ভূখণ্ডে অবাঙ্গালিদের বিরুদ্দগে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যাহক আমি বিশ্বাস করি যে, দীর্ঘ সংরক্ষিত ভাবাবেগ মানুষের ইচ্ছার ব্যাহত হওয়াত জ্বলে উঠেছিল। এবং বাঙ্গালির সংরক্ষিত হিংস্রতার মতোই ভয়ংকর ছিল সম্ভবত,কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো পদক্ষেপ যাচাই করতে তারা ব্যবহৃত হয়নি।

      মানবজাতির একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়:

বিতর্ক অগ্রসর হয়েছে যে বিশ্ব-সমাজ ভোগান্তি উপশম করতে কোনো ব্যাবস্থা নিতে পারেনা এবং নেয়া উচিত নয় কারণ এটি পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।

পূনরাবৃত্তির ঝুকিতে আমাকে আবার শরণার্থী দের দিকে যেতে দিন। ভারতীয় উৎস হতে সমসাময়িক, একমাত্র উৎস যে সত্যিই কথা বলতে পারে কর্তৃত্বের সাথে, এখন ৫ মিলিয়ন দাড়িয়েছে। এটা তর্ক করা যায় না যে,একটি নীতি যা পর্যাপ্ত সন্ত্রাস উৎপাদন করে ৫ মিলিয়ন মানুষকে পার্শ্ববর্তী দেশে উড়ে যেতে বাধ্য করে তা যথাযথ ভাবেই একটি অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি শব্দার্থক নিরর্থক অভ্যন্তরীণ নীতি ডাকা যা শুধুমাত্র শরণার্থী তৈরি অব্যাহত রাখে এবং যার আকার দিনে ১০০,০০০ দাঁড়ায়। এটা তর্ক করা যায় না যে এই অবস্থাকে ভারতে রাখা অবিশ্বাস্য আলিঙ্গন বিশ্বের বৈধ উদ্বেগ হতে পারেনা।

সম্পূর্ণ নিশ্চয়তায়, জনাব স্পীকার, পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়।

উপরন্তু, আমাকে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির এশিয়ান এবং প্যাসিফিক এফেয়ার উপকমিটি ১১ মে’র পূর্বে উদ্ধৃত করতে দিন।

আমরা সিনেটর কেনেডিকে প্রদর্শন করতে বলেছি কারণ শরণার্থী দের উপর অসমাপ্ত কাহ তার উপকমিটি কর্তুক করা হয়েছে।সিনেট কমিটিতে মানুষের উপর এবং যুদ্ধ পরিচালিত এলাকায় মানবিক চাহিদায় আইনজীবী নীতির প্রভাব প্রকাশ করতে। সিনেটর পরিক্ষিত

নিরপেক্ষতার নামে, আমাদের সরকারের মধ্যে কেউ বলেছে আমরা অবশ্যই আজ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত নই। কিন্তু আমরা যুক্ত।আমাদের অস্ত্র হিংস্রতায় যুক্ত হয়েছে। আমাদের সাহায্যে পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অবদান রেখেছে এবার আজ আমাদের সরকার, সর্বোচ্চ অবস্থায়,সাহায্যের চেয়ে বেশি আলোচনায় যুক্ত। অতএব আমরা যুক্ত।

# এখন সেখানে ৫ মিলিয়ন শরণার্থী দ্বারা ভারতের ভিতর পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত সমূহের উপর সিনেটরের বিবৃতি থেকে দ্বন্দ্ব দূর হয়েছে।আমার উপকমিটির সাক্ষ্যের পূর্বে প্রকাশ হয় যে, আমেরিকান সাহায্য পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণে কাজে লাগে। আমাদের ৫ বিলিয়নের সহায়তা অকথ্য অন্তর্বেদনায় এখন সেই অঞ্চলে চলমান।

উদাহরণস্বরূপ,  হ্যারিকেন এবং বন্যা দূর্গতদের জন্য গত শীতে ত্রাণ বণ্টনের জন্য সরবরাহকৃত আমেরিকান নৌযান বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞের অভিযানে সৈন বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে।

আমি তর্ক করেছি যে, এগুলো এর অনেক বিষয় ধারণাটি ধ্বংস করে যে এটি কেবলমাত্র পাকিস্তানের একটি অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বরং এটি এখন মানবতার অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায় অবশ্যই আইন সর্বস্বতার পিছু হটবে না।সামরিক সরকারে আমেরিকার সকল সহায়তা বন্ধ করতে হবে।

জনাব স্পীকার, শোকাবহ ঘটনার মাত্রার আলোর ভেতর এটি নির্দয় প্রতীয়মান হতে পারে এবং নিষ্ঠুর সামরিক সরকারে আমেরিকান সাহায্য বন্ধ করা।অনেকেই শুনেছেন এবং জানেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ এই অকথ্য নির্মমতার ব্যাপারে সম্পূর্ণ জাগ্রত রয়েছে এবং তাদের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলো কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য চালিয়ে যাওয়া এবং বৃদ্ধি করা। এটা সর্বোপরি এখন পর্যন্ত সার্বভৌম জাতির বৈধ সরকার এবং যখন এই শাস্তিদান বোধগম্য হবে যে, প্রিয় চাবকানি অপ্রতিহত ভাবার মাধ্যম এবং সামরিক সাহায্যের পরম বিলম্ব এবং এমনকি খাদ্য সহায়তা একই আলোয় দেখা যায়নি।

কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের চলমান যুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিদিন ২ মিলিয়ন করে খোয়াতে হচ্ছে। এমনকি উপযুক্ত সময়ে তারা পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদেশিক সঞ্চয় করেনি। অতএব আমেরিকা কিংবা বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থনৈতিক সাহায্য বধ করার ধারাবাহিতা রক্ষা প্রয়োজন। জেনারেল ইয়াহিয়া সম্প্রতি কিছু বন্ধুত্বপূর্ণ বিবৃতি তৈরি করেছেন এবং আমি বুঝেছি তিনি যুক্তরাষ্ট্র কে সাহায্যের জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।যাহক, আমাদের নিরপেক্ষ হতে হবে দলিলে যথাযথ কথায় এবং কারণ আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক তৎপরতা অর্থযোগান কিংবা ভর্তুকি দিতে পারব না। আমেরিকার সহায়তা, আমার উপকমিটিরর পূর্বে প্রফেসর ডরফম্যানের সাক্ষ্যের অবগতিশ সামরিক তৎপরতার ধারাবাহিতার জন্য পূর্বশর্ত।  এটা অবশ্যই, অতএব, কলস্টবল বন্ধ থাকবে যতক্ষণ না বাইরের স্বাধীনতা পর্যবেক্ষকরা নীতির পরিবর্তন নিশ্চিত করছেন কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা।

.

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পুলিশের ঘাটতি ছিল কারন বেশির ভাগ পুলিশ নদী পাহারা দিচ্ছিল যাতে কলেরায় মারা যাওয়া কারো লাশ নদীতে না ফেলা হয়।
স্টার রিপোর্ট , কৃষ্ণ নগর, ভারত এই ভয়াবহ বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেন-
এই গুজব টি ছড়িয়ে পরেছে যে পাকিস্তানি এজেন্টরা বর্ডার এর ২০ মেইল এলাকা জুড়ে পানিতে কলেরার জীবাণু মেশাচ্ছিল যাতে তা মহামারির আকার ধারন করে।
গতকাল এক মুসলিম ৫০০ লোকের হাতে গন পিটুনি খায় যখন এই খবর টি ছড়িয়ে পরে যে সে কলেরা জীবানুর একটি বোতল নিয়ে তা কূয়ার পানিতে মিশিয়েছে।
মাননীয় স্পিকার, আমার ধারনা এসব গুজব মোটেও সত্যি নয়, কিন্তু মানুষ এসব বিশ্বাস করছে। কিন্তু এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, কলেরা মহামারি আকার ধারন করেছে এবং আমাদের অতি দ্রুত কোনো ব্যাবস্থা নিতে হবে।
এই রোগ যাতে মহামারি আকার ধারন না করতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে।

এটি কখনোই একতরফা ভাবে যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে করা সম্ভব ছিলনা। এদিকে পূর্ব পাকিস্তানের রেফ্যুজি দের সংখ্যা কমার বদলে বেড়েই যাচ্ছল যা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা স্বাভাবিক হচ্ছেনা।

এছাড়া এটাও সহজে বোঝা যাচ্ছিল যে পূর্ব পাকিস্তানে কলেরা আক্রান্ত দের সংখ্যা অনেক। আমরা আসলে ভারতে কলেরা আক্রান্ত দের দেখার মধ্যে দিয়ে নামে মাত্র একটি পরিমান দেখতে পাচ্ছি।

পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া বাকি ছিল-

পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা আরেকটু স্থির হবার কথা ছিল অথবা অবস্থা হয়ত আরো খারাপের দিকেই যাচ্ছিল, আমি প্রচন্ড ভাবে দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছিলাম, যেভাবে রেফ্যুজি দের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছিল তাতে বিশ্ব সংস্থার পক্ষে তাদের আর খাদ্যের যোগান দেয়া অস্মভব হয়ে পরছিল।

এছাড়া শুধু খাবার ই নয়, বাসস্থান,চাকরি, পয়নিষ্কাশন ব্যাবস্থা আরো অন্যান্য যেসব সুবিধা মানুষের বেচে থাকার জন্য দরকার সব কিছুর ই অভাব ছিল।

পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের খাবার এর চাহিদা মেটানোর জন্য রিলিফের ব্যাবস্থা করা গেলে তাহলে তা এত ব্যায়বহুল হতনা।

এই দুর্ভিক্ষের সমূহ সম্ভাবনা ও তাতে ৩০ লাখ মানুষ যদি মারা যায় তাহলে পূর্ব পাকিস্তান আর স্বাভাবিক জীবন যাত্রায় ফিরে যেতে পারবেনা।

মহামান্য স্পিকার, আমাদের এটাও ভাবতে হবে, পূর্ব পাকিস্তানের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না হলে সেখানে রাজনৈতিক অবস্থা কেমন হবে। আর্মিদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে থাকা পূর্ব পাকিস্তান দিন দিন একটি ভুতূরে শহরে পরিণত হচ্ছিল।

আওয়ামিলীগ এর নেত্রিত্ত থেকে আমরা শিখতে পারি গন্তন্ত্র আসলে কি এবং তারা কিভাবে সঠিক উপায়ে গনতন্ত্রের প্রয়োগ করেছিল।

বন্যা ও সাইক্লোন এর সময় সেই দূরযোগ মোকাবেলায় পাকিস্তান বাহিনি উপযুক্ত কোনো পদক্ষেপ গ্রহন করেনি, ২৫ মার্চ , ১৯৭১ এর বর্বরতার মাধ্যমে তারা আসলে প্রমান করেছিল, রিলিফ এর ব্যাপারে তাদের উপর ভরসা করা যাবেনা,

এই মিলিটারি সরকারের আমেরিকার কোনো সাহায্য গ্রহন করার মানে হল, মানুষের বহু আকাঙ্কখিত গনতন্ত্রের বিলুপ্তি ঘটা, সাধারন নির্বাচন প্রথার বিলুপ্তি ঘটা, কারন এই একরোখা সামরিক সরকার তা চায়না।

ভারতের চমকপ্রদ জবাব

পাকিস্তান সরকারের তৈরি করা দুর্দশা গ্রস্থ পরিস্থির জবাব ভারত অনবদ্য ভাবে দিয়েছিল। পাক হানাদার বাহিনির বর্বরতার বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করে ও রেফ্যুজিদের আশ্রয় দেয়। ভারত সরকার এর ব্যাবহার ছিল নৈতিক ও মানবতাবাদি। প্রথম রিফ্যজি যখন ভারত সীমানার কাছে আশ্রয় গ্রহন করে তখন ই ইন্দিরা গান্ধী যথাযথ ব্যাবস্থা নিয়েছিল।

কিন্তু ভারতের পক্ষে প্রতিদিন লাখ লাখ রেফ্যুজিকে আশ্রয় দেয়া সম্ভব ছিলনা। ভারতের বিভিন্ন এলাকা বিশেষ করে যেটি পূর্ব পাকিস্তান দ্বারা বেষ্টিত ছিল, তারা ধন সম্পদে অতটা সমৃদ্ধশালী ছিলনা। তাদের নিজেদের ই ছিল ছিল খুব অল্প যা তারা রফ্যিজদের সাথে ভাগাভাগি করে নিয়েছিল। রেফ্যুজিদের জন্য কোনো চাকরির সুযোগ ও ছিলনা। কলেরা ও তাদের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল,গত কিছুদিন ধরেই আমি লক্ষ্য করছিলাম যে বর্ডার এর কাছে রেফ্যুজিদের ৫ মাইল লম্বা লাইন ছিল।

আমেরিকা সাহায্য পাঠালেও ১৫ মিলিয়ন রেফ্যজি কে ৩/৪ দিন এর বেশি খাদ্য পাঠানো সম্ভব ছিলনা। তাই ভারত সরকার জানায় এই অবস্থার একমাত্র সমাধান পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা।

পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আসলে কি ঘটছিল-

মহামান্য স্পিকার আমি এটা জানার চেষ্টা করেছি পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে আসলে কি ঘটছে, বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সাথে কথা বলে , আমি জানতে পেরেছি যে,দেশে ‘শান্তি কমিটি” প্রবেশ করেছিল, যারা আমাদের বাড়িঘর এ আগুন দিচ্ছিল ও লুটপাট চালাচ্ছিল, আর আমরা বাঁধা দিলে পাঞ্জাবী সৈন্যরা আমাদের গুলি করে মারছিল।

‘শান্তি কমিটি’ আসলে কি? আসলে তারা ছিল স্থানীয় দুষ্কৃত কারি যারা পাকিস্তানি আর্মির নির্দেশে এমন লুটপাট ও অরাজকতা তৈরি করছিল। পাকিস্তান সরকার বলেছিল দুষ্কৃত কারি দের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা নেয়া হবে, কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনি বরং এসব নাশকতায় উশকানি যোগাচ্ছিল।

আরেকটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল, রেফ্যুজিদের বেশিরভাগ ছিল হিন্দু ধর্মের । ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনি যে গনহত্যা চালিয়েছিল, যেটাকে তারা ‘আইন এর প্র্য়োগ’ বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে, এখনো সেই অবস্থা বিদ্যমান ছিল এবং তারা নির্বিচারে হিন্দুদের হত্যা করছিল।

এই অবস্থায় এটা আশা করা ভুল যে পূর্ব পাকিস্তান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে বা পাকিস্তান সরকার নির্বাচিত আওয়ামীলীগ সরকার এর হাতে ক্ষমতা তুলে দিবে। এর জন্যি তারা মার্শাল ল- ১৪৮ জারি করে। পাকিস্তান অবজারভার এ ২৭ এপ্রিল প্রকাশিত একটি সংবাদ এর ক্ষুদ্র অংশ তুলে ধরা হল-

সরকারি সম্পত্তি বিনষ্টকারিদের মৃত্যু দন্ড দেয়া হবে।।

১- যেকোনো ব্যাক্তি বা সংগঠন যারা সরকারি রাস্তাঘাট, রেলপথ, টেলিযোগাযোগ, টেলিগ্রাফ, হ্রদ বা যেকোনো রকম সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করেছে বা করার চেষ্টা চালিয়েছে, MLR- 1414 এর অধীনে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।

২- সেই এলাকা বা আশেপাশের এলাকায় বসবাস্কারী বাসিন্দা দের কেও শাস্তি ভোগ করতে হবে।

মহামান্য স্পিকার, সরকারের বিরুদ্ধে এমন কর্মকাণ্ড আমাদের ইউরোপ ট্র্যাজিডির কথা মনে করিয়ে দেয়। এছাড়া আমার মনে হয় পূর্ব পাকিস্তানের রিলিফ এর খাদ্য বন্টন কর্মসূচী কোনো আন্তরজাতিক সংস্থার মাধ্যমে করা উচিত ছিল, আর্মিরা পূর্ব পাকিস্তানে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তাতে মনে হয়না যে তারা খাদ্যের সুষম বন্টন করবে। এর চেয়েও বড় বিষয় হল, পূর্ব পাকিস্তানের ভীত সন্ত্রস্ত লোকেরা এসব পাক হানাদার বাহিনীর কাছথেকে খাবার সংরহ করার মত সাহস পাবে কিনা। নভমবরের ভয়াবহ বন্যা ও সাক্লোন এর পরে খবর পাওয়া গিয়েছিল যে বাঙ্গালিরা পাক বাহিনীর কাছ থেকে কোনো রিলিফ নেয়নি। ২৪ মে, ১৯৭১ এ একজন বাঙ্গালির কাছেই গোপন সূত্র এই খবর পাওয়া গেছে।

তাই এভাবে সাহায্য পাঠানোর কোনো দরকার নেই কারন তা শুধু আর্মিদের কাছেই থেকে যাবে। পূর্ব পাকিস্তানের অনেক রেফ্যজিদের সাথে কথা বলে, আমি জানতে পেরেছি যে তারা কেউ ই আর্মিদের কাছ থেকে রিলিফ নিতে আগ্রহী নয়।

উপসংহার

জনাব স্পিকার পূর্ব পাকিস্তানের উপর ঘটে যাওয়া এই নারকীয় অত্যাচার, বন্যা, সাইক্লোন এসব কিছু মোকাবেলা করে তারা যেনো এগিয়ে যেতে পারে বিশ্বের অন্যান্য জাতিকে ও এ ব্যাপারে সাহায্যের হাত বাড়াতে হবে।

.

.

13.96.347-348

            শিরোনাম         সূত্র        তারিখ
সিনেটর কেনেডী কর্তৃক আমেরিকার পাকিস্তান নীতির সমালোচনা      সিনেটের কার্যবিবরণী       ২২শে জুন, ১৯৭১।

এস৯৬৪০         কংগ্রেস-সম্পর্কিত বিবরণী সিনেট     ২২শে জুন,১৯৭১
পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি

জনাব কেনেডী,মাননীয় রাষ্ট্রপতি,আমেরিকার জনগণ ও কংগ্রেস আবার-ও ভুলে পথে চালিত হয়েছে-এবার পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতির প্রশ্নে।
যেহেতু এপ্রিলে একদম গোড়ার দিকে,আমাকে বার বার-ব্যক্তিগত আলোচনা এবং সরকারী পত্রাবলিতে নিশ্চিত করা হয়েছে-যে আমাদের সরকার পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছিলো না।আমি জানি অন্যান্য সিনেটরদের-ও একই নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।উদাহরণস্বরূপ,২০শে এপ্রিল আমাকে একটি চিঠিতে রাষ্ট্রবিভাগ বলেছেঃ
১৯৬৫ সালে যেহেতু আমরা পাকিস্তানে মানচিত্র সহায়তায় একটা সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি,আমরা পাকিস্তানে সামরিক উপকরণের কোনো মারাত্মক মারণাস্ত্র সরবরাহ করিনি।গত অক্টোবরে আমরা একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ মারণাস্ত্র পাকিস্তানের নিকট বিক্রয় করার একবার একটি ব্যতিক্রম ঘোষণা করেছিলাম।এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছুই প্রদান করা হয়নি বা এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।গত ৬ সপ্তাহে এই বিষয়ে কোনো প্রায়োগিক আলোচনা সংগঠিত হয়নি।বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছে।
উপরন্তু,আমাদের নগদ ও ধারে পাকিস্তানের নিকট অ-প্রাণঘাতি সামরিক মারণাস্ত্রের সাথে সাথে কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ ও গুলি বিক্রয়ের একটি পরিমিত কর্মসূচি আছে।প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে ২৫-২৬শে মার্চে যখন থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব আরম্ভ হয়েছে এই সামগ্রীগুলোর কোনোটাই পাকিস্তান সরকার বা তার সংস্থার কাছে বিতরণ করা হয়নি।এবং বর্তমানে এমন কোনো বিলির পরিকল্পনা নেই।
মাননীয় রাষ্ট্রপতি,এখন আমরা সংবাদ লিপি থেকে জানতে পেরেছি,গত রাতে পদ্মা নামে একটি পাকিস্তানী জাহাজ,বৈদেশিক সামরিক বিক্রয় চুক্তির অধীনে পাকিস্তানের নিকট বিক্রীত মার্কিন সামরিক সামগ্রী নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে করাচীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।স্পষ্টতই,এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃত নীতির উলঙ্ঘন না,এবং কিছু সূত্রমতে,এটাই শেষ না।
এটা দ্বিমুখীতা,অযোগ্যতা বা দুটোই হোক না কেনো,পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের চালান পাঠানোতে নীতির উলঙ্ঘন হয়।এবং আরো খারাপ,এটা সামরিক ক্রিয়াকলাপে আরো ইন্ধন জোগাবে,যা ইতিমধ্যে ৬০ লক্ষেরও বেশি শরনার্থী ও অগুনিত সাধারণ জনগণের মৃত্যুর কারণ।গত শুক্রবার,পূর্ববাংলার জনগণের উপর মার্কিনদের কর্তৃক ব্যাপক হারে সরবরাহকৃত পাকিস্তানী সৈন্যের কর্মকান্ডে আমাদের সরকারের নীরবতা এবং আপাত উদাসীনতায় আমি আবারো আতংক প্রকাশ করেছিলাম।আজকে আমরা বুঝেছি যে এটা কেবল নীরবতা ও উদাসীনতা না,বরং কুকর্মে সহায়তার ধাপ,যা অযৌক্তিক।
কিন্তু মাননীয় রাষ্ট্রপতি,সবচেয়ে দুঃখজনক সত্য হল,আমাদের মহান রাষ্ট্র মানবিক সাহায্যের ব্যবস্থা করার থেকে সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠানোতে অনেক বেশি উদগ্রীব। গত রাতে পাকিস্তানের জন্য সামরিক সামগ্রী দিয়ে বোঝাই করা একটি জাহাজ ছেড়েছ যখন পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত,উভয় দেশে জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন-যা দীর্ঘসূত্রিতা ও আমলাতন্ত্রের স্রোতে আটকে আছে।
কখন আমাদের মধ্যে একই মাত্রার অগ্রাধিকার,গুরুত্ববোধ জাগবে,যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা পাঠানোতে যা স্পষ্টতই তৈরি হয়েছে বন্দুকের সংযুক্তির কারণে?
এবং,আরো গুরুত্বপূর্ন,কখন আমরা অগ্রাধিকার দেয়া শুরু করব মিলিতভাবে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়ে এমন ব্যাপক মানব সংকট যে দ্বন্দ্বের ফলস্বরূপ তৈরি হয়েছে সেই শক্তিকে সামলানোর?
মাননীয় রাষ্ট্রপতি,যদি কংগ্রেস আর কার্যনির্বাহী শাখার কথায় বিশ্বাস রাখতে না পারে,যদি তাদের প্রতিজ্ঞা ও নিশ্চয়তা তাদের নিজেদের কর্মকান্ড দ্বারা লঙ্ঘিত হয় তাহলে আমরা অনিচ্ছাপূর্বক এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি যে কংগ্রেসের সেসব প্রতিজ্ঞা ও নিশ্চয়তা আইনমোতাবেক লিখিত দেয়া উচিত,যা সহজে লঙ্ঘন করা যাবে না।

.

13.97.349-355

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র সাহায্যঃ সিনেটর ফ্রাংক চার্চ-এর বক্তৃতা ও প্রাসংগিক দলিল উদ্ধৃতি সিনেটের কার্যবিবরণী ২২ জুন, ১৯৭১

আর্মস টু পাকিস্তান: ফ্রাঙ্ক চার্চের রিপোর্ট এস৯৭২৪ :-

 পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন-কামী বাঙালিদের মধ্যকার যুদ্ধের সুত্র ধরে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট সিনেট ফরেন রিলেশন কমিটিকে অফিশিয়াল নীতি হিসেবে জানায় যে- যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে অস্ত্রের চালান স্থগিত করবে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট আরো বলে, ডিপার্টমেন্ট অব ডিফেন্স তাদের আরো জানিয়েছে যে ২রা মার্চ যুদ্ধ বাধবার পর থেকে পাকিস্তান বা তাঁর এজেন্টদের কোনো সামরিক পণ্য পাঠানো হয়নি এবং পরবর্তীতে পাঠানোর কোনো তালিকাও তাদের নেই। এ রকম পরিকল্পনা না থাকলেও সেসব চালান যে পাঠানো হয়েছে  তা সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ করেন। তিনি সুন্দরবন ও পদ্মা নামে দুটি পাকিস্তানী জাহাজের চালানপত্র দেখান যা নিউ ইয়র্ক বন্দর থেকে ৮মে ও ২২ জুন ছেড়ে যায়। নিচে ২২ জুনের কংগ্রেসনাল রেকর্ড থেকে সিনেটরের মন্তব্য অতিরিক্ত দলিল-পত্র সহ দেয়া হল।

মি: চার্চঃ “মিঃ প্রেসিডেন্ট, আজ সকালের নিউ-ইয়র্ক টাইমস অনুসারে, প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ উপকরণ পাকিস্তানে পাঠানো হয়েছে।

আমি জিনিসপত্র এবং এয়ারফোর্সের এসব চালান অন্তর্ভুক্ত করে ডেলিভারির তালিকাভুক্তির বিলগুলো দেখেছি এবং টাইমস আর্টিকেল এর সঠিকতা আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত করতে পারি।আমি আজ যুক্তরাষ্টের রাষ্ট্রপতি হতে সরাসরিভাবে উপযুক্ত যুক্তরাষ্টের সংস্থা এবং কর্মকর্তাদের ডেকেছি মিলিটারি উপকরণগুলোর চালান বন্ধ করতে শীঘ্রই কার্যকলাপ গ্রহণের যা আটকানো ও সরানো এখনো আমাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মাটি আজ বিকেলে নিউ ইয়র্কের পোতাশ্রয় ছেড়েছে এবং পূর্বনির্ধারিত, আমি অবগত আছি, আগামীকাল মন্ট্রিল ডক থেকে। যদি কোস্টগার্ড আমেরিকান জলে পদ্মা রুখতে অক্ষম হয়, তাহলে আমাদের এই নিষিদ্ধ চালান পুনরুদ্ধার করতে কানাডিয়ান সরকারের সহযোগিতা অনুরোধ করা উচিত।

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর মিস্টার টেড এর প্রকাশিত কথার গুরুত্ব এর উপরে বেশি জোর দিতে পারা যাচ্ছেনা। পাকিস্তান সরকার এর প্রতি পাঠানো এই অস্ত্রের চালানগুলো সরাসরি আমেরিকান নীতির প্রতি অবজ্ঞা যা নিক্সন প্রশাসন দ্বারা সংজ্ঞায়িত ও ঘোষনাকিত।২৩ এপ্রিল,১৯৭১  বৈদেশিক সম্পর্কিত সিনেট কমিটির চেয়ারম্যান এর নিকট পাঠানো একটি চিঠিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট খোলাখুলিভাবে বিবৃতি দেয় যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রলায় থেকে আমাদের জানানো হয়েছে কোনরূপ সামরিক সরঞ্জামাদি পাকিস্তান সরকার বা তার দোসরদের নিকট সরবরাহ করা হচ্ছেনা যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানে একটি যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে ২৫ মার্চ থেকে এবং এরকম অস্ত্রের কোন ডেলিভারি তাদের সম্ভাব্য তালিকায় ও নেই। এখানে স্পষ্টত মিস্টার জুলস এর দেয়া তথ্যের সাথে আমেরিকান পলিসি নিয়ে আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর অফিসিয়াল বিবৃতি পারস্পরিক বিরোধী এবং এই পারস্পরিক বিরোধী বক্তব্য এই নিক্সন প্রশাসনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই অবস্থার পরিপেক্ষিতে, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি সবাইকে আহবান করছি সর্বসম্মতিক্রমে তাদের মতামত এর জন্য যে নিচের তথ্য উপাত্ত গুলোকে প্রিন্টেড রেকর্ড এ সংরক্ষণ এর জন্য।

প্রথমত, জনাব জুলসির নিউইয়র্ক টাইমস থেকে আর্টিকেল

দ্বিতীয়ত, করাচীর ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশন থেকে মালপত্রে একটি বিল, পাঠানো হয়েছিলো পাকিস্তানের এম্বেসী, তারিখ ৮ এপ্রিল ১৯৭১,  সুন্দরবনে পাকিস্তানি জাহাজ করে মিলিটারি সামগ্রীর চালান অন্তর্ভুক্ত করে যেটা ৮ মে নিউ ইয়র্ক থেকে যাত্রা করেছিলো।

তৃতীয়, একই কর্পোরেশনের একই বিল, সুন্দরবনের অতিরিক্ত মিলিটারি সামগ্রীর চালান অন্তর্ভুক্ত করে, তারিখ ১৬ এপ্রিল।

চতুর্থত, ডেক রশিদের একটি কপি, পূর্ব-পশ্চিম শিপিং সংস্থা থেকে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রতিরক্ষা আসাদন বিভাগ, তারিখ ২১ মে, পাকিস্তান হতে স্পষ্টত পদ্মায় চালানের জন্য গৃহীত মিলিটারি সামগ্রী তালিকাভুক্ত করে।

পঞ্চমত, একটি চিঠির কপি আমি আজকে প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পাঠিয়েছিলাম, তাঁর ঘোষিত নীতি জোরদার করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পণ্য নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাকিস্তান পাঠানো

( Tad Szulc)

ওয়াশিংটন , জুন ২১ঃ

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পাকিস্তানে পাঠানো হল আমেরিকান সামরিক সরঞ্জাম । প্রশাসনিক ভাবে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পাকিস্তানের পতাকাবাহী ভাড়া করা একটি জাহাজ নিউ ইয়র্ক থেকে করাচীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

তদন্তে পররাষ্ট্র বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান করেন, বিক্রিত বৈদেশিক সামরিক সরঞ্জামাদি নিয়ে অন্তত আরও একটি জাহাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে। তাঁদের ভাষ্যে উল্লেখিত সকল সামরিক সামগ্রীসমূহ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত মজুদ এর অংশ এবং এই চালানের কারণ হিসেবে আপাতত পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহের উপর  তিনমাসব্যাপী নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়বন সংক্রান্ত প্রশাসনিক  বিভ্রান্তিকে দায়ী করেন।

.

মধ্য আগস্টে নিউইয়র্ক থেকে করাচির উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য জাহাজ পদ্মা আটটি বিমান, প্যারাসুট এবং হাজার পাউন্ড ওজনের শত শত অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র সহ জায়গা ও সামরিক যানবাহনের উদ্দেশ্যে তৈরি হচ্ছিল।

পাকিস্তানি নিবন্ধন করা আরেকটি জাহাজ সুন্দরবন অন্যান্য সামরিক সামগ্রী সহ সাঁজোয়া যানের কর্মীদের জন্য প্যান নিয়ে জাহাজের ম্যানিফেস্টো এবং সহযোগী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রপ্তানি লাইসেন্স মোতাবেক নিউইয়র্ক থেকে ৮ মে রওনা দেয়। এটা করাচিতে বুধবার পৌঁছানোর কথা।

যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনী এসব জিনিসপত্র পাকিস্তানের কাছে বৈদেশিক সামরিক বিক্রয় আইনের বিধান অনুযায়ী বিক্রি করে। গত ২৫ মার্চ পাকিস্তানি ফৌজের সৈন্য, বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানিদের আদেশ করা হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে পাকিস্তানের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে এবং ১৯৬৭ সালে প্রবর্তিত কর্মসূচি “পর্যালোচনার অধীনে” রয়েছে।

আজ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা পদ্মা ও সুন্দরবনের যাত্রার ব্যাপারে জবাব দিয়েছেন, তারা বলেন যে বসন্তে পশ্চিম পাকিস্তানে কঠোর নিপীড়নবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন শুরুর কিছু পরেই পাকিস্তানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটি প্রশাসনের সরকারি নীতি অনুযায়ী বজায় রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের হিসেব অনুযায়ী অন্তত ২ লাখ পশ্চিম পাকিস্তানি পরের যুদ্ধে মারা যায় আর ৬ মিলিয়ন শরণার্থী ভারতে পালিয়ে যায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আজ এক সাক্ষাতকারে বলেন যে তারা ২৫ মার্চের পরে পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জামের চালানের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না।

তারা স্বীকার করেছেন যে এই ধরনের চালানে ঘোষিত নীতির লঙ্ঘন হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাগণ বলেন যে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের জানানো হয়েছে যে ২৫ মার্চ থেকে কোন সামরিক সরঞ্জাম বৈদেশিক বিক্রয় নীতির অধীনে “পাকিস্তানি সরকার অথবা এর প্রতিনিধির” কাছে  বিলি করা হবেনা।

কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। তারা বলেন যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সাথে আলোচনায় এই নীতি পুনরব্যক্ত করেছে। পাকিস্তানি দুতাবাসের কাছে পেশকৃত মালবোঝাই এর বিল অনুযায়ী, সুন্দরবনে তুলে দেয়া মালামাল নিউ ইয়র্কের ডকে ২৩ এপ্রিল এবং পদ্মার মালালাল সমূহ ২১ মে গৃহীত হয়, পেন্টাগনের বিবৃতি কিভাবে এর সাথে পুনর্মিলিত হয় তা তারা ব্যাখ্যা দিতে পারেনি।

পাকিস্তান দূতাবাসের প্রতিরক্ষা আসাদন বিভাগের লেফটেন্যান্ট কর্নেল ম আম্রাম রাজার কাছে জাহাজিদের থেকে যোগাযোগের ২টি জাহাজের ডক রসীদ সহ ২১মে পাঠানো হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, চালানের ব্যাপারে গত শনিবার এবং আজ আবার সব তদন্তের উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কাছে। কর্মকর্তারা লোকসানের মুখেও চালানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিরক্ষা বিভাগের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানে কোন বিক্রয় বা বিলির অধিকার নেই এবং বিদেশ থেকে ক্রয়কৃত সরঞ্জামের উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সিনেটর চার্চের জিজ্ঞাসায় তারা কোন মন্তব্য করেনি যেহেতু ডক্সাইড বিলি ও আসল চালান মার্চের ২৫ তারিখের পরে হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ, আইডাহোর ডেমোক্র্যাট সেক্রেটারি স্টেট উইলিয়াম পি রজারসকে অনুরোধকৃত তথ্য অর্থাৎ সামরিক সরঞ্জামের পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় লাইসেন্সের অধীনে চালানের ব্যাপারে ১৭ জুনের চিঠির এখনও জবাব দেয়নি।

সিনেট বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সদস্য চার্চ জনাব রজারসকে উপদেশ দেন যে তিনি বুঝতে পেরেছেন যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু সরঞ্জামের জন্য লাইসেন্স নং ১৯২৪২ ইস্যু করেছে।

সুন্দরবন জাহাজে বোঝাই মালামালের বিলের চেক দেখিয়েছে যে এই লাইসেন্সের অধীনে
১১.৮৯৫ পাউন্ড ওজনের ২৮ স্কিড যন্ত্রাংশ রয়েছে। এর বেশি বর্ণনা পাওয়া যায়নি।

কিন্তু সুন্দরবন জাহাজের বিশেষ করে সামরিক বাহনের জন্য যন্ত্রাংশ ও জিনিস্পত্রের জন্য অপর একটি লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র বিভাগ থেকে। সুন্দরবন জাহাজ ডক্সাইড বিতরন তালিকা অনুযায়ী মোট ২১ টি আইটেম বহন করে, যার আবরন ও কারটন গুলো “যন্ত্রাংশ ও জিনিসপত্র’’, “স্কিড ও যন্ত্রাংশ” , “বাক্স” ও “যন্ত্রাংশ” হিসেবে নির্দিষ্ট করা ছিল।

বিমান ও প্যারাসুট তালিকাভুক্ত ছিল।

পদ্মার জন্য ডকসাইড বিতরন তালিকায় দুটিতে চারটি করে উড়োজাহাজ, ১১৩টি প্যারাসুট ও যন্ত্রাংশ, অটো যন্ত্রাংশ, অন্যান্য জিনিসপত্র, স্কিড এবং কাঠের বাক্স লিপিবদ্ধ রয়েছে।

১৪,১১৩ পাউন্ডের ক্রেট, বান্ডেল ও যন্ত্রাংশ তালিকাভুক্ত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র রবার্ট জে ম্যাকক্লস্কির ভাষ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের কাছে সামরিক বিক্রয় শুরু হয় ১৯৬৭ সালে, যা প্রতি বছর ১০ মিলিয়ন এর কাছাকাছি। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরে সামরিক চালানের উপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারত উভয়ের কাছে অমারাত্মক সরঞ্জাম বিক্রয়ের ব্যাপারে ওই বছর রাজি হয়।

.

অক্টোবর,  ১৯৭০ সালে প্রশাসন একটি “ব্যতিক্রমী” অপ্রকাশিত এফ-১০৪ যুদ্ধ বিমান, বি-৫৭ বোমারু বিমান এবং বহনযোগ্য oshro-shosro(বাংলাটা লিখতে পারছিনা) পাকিস্তানে বিক্রয় করতে সম্মত হয়েছিল। যাইহোক, পররাষ্ট্র দপ্তর(state department: the department in the US government dealing with foreign affairs.) জানিয়েছিল যে, কোন ধরনের “ব্যতিক্রমী” সরঞ্জাম বিতরন করা হয়নি।

কিন্তু প্রামাণিক সুত্র, যাদের চিহ্নিত করা যায় নি, জানায় যে ১৯৬৭ সাল থেকে ৩০ এপ্রিলের মাঝে বিমান বাহিনী একাই ৪৭,৯৪৪,৭৮১ পরিমাণের সামরিক সরঞ্জামাদি পাকিস্তানে বিক্রয় করেছে।

ডেনভারে বিমানবাহিনীর হিসাব ও অর্থ কেন্দ্রের সদরদপ্তর থেকে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রতিরক্ষা সমন্বয় বিভাগকে পাঠানো একটি বার্তার প্রতিবেদন “সকল বিদেশী সামরিক বিক্রয়ের তালিকা অবমুক্ত-করন, ঘটনার মূল্য, সংগৃহীত অর্থ, উদ্ধার ও অনুদ্ধারিত অবস্থা দেখানো।

ডেনভার সদরদপ্তররের প্রধান বৈদেশিক সামরিক বিক্রয় শাখার হিসাবাধাক্ষ ইলাইন বি. লভেনথল কর্তৃক সাক্ষরিত বার্তাটির শিরোনামঃ সামরিক বিক্রয়ের লেনদেন এবং বিতরনের বিস্তারিত তালিকার USAF বাবৃতি।

অবস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল, পূর্বে ধার্যকৃত পাকিস্তানের সামরিক ক্রয়ের পরিমাণ ২৫,৬৭৯,৬৫৪.১০, মোট অনুদ্ধারিত অর্থের পরিমাণ ২১,৭৩০,৭৪০.০৭ এবং তারিখানুযায়ী নগদের পরিমাণ ২৪,৩৪২,৭৮২.৩৭।

পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা কখন এই প্রতিবেদনটি করা হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলতে পারেনি।

বিমানবাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী পাকিস্তান সরকার ৩১ মে ১৯৭১ সালের মাঝে বা এর আগে প্রয়োজনীয় নগদ অর্থের জন্য আরও ৩,৩৭৬,২৫৩.৫১ পরিমাণ স্থানান্তর করতে হয়েছিল।

প্রতিবেদনের  মুল বিষয় দেখায় যে, ১৯৭১ সালের মে মাসে ৪০৪,১১৬.৪৯ পরিমাণের একটি চেক পাকিস্তান থেকে গ্রহন করেছিল।

প্রামাণিক সুত্র জানায় যে পাকিস্তানে অতিরিক্ত বিক্রয়ের “সকল সম্ভাবনা” সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী দ্বারা হয়ে থাকতে পারে।

ইস্ট-ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সির মুখপাত্র, পদ্মা ও সুন্দরবনের জন্য নিউ ইয়র্ক এজেন্ট, ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, পদ্মায় সম্প্রতি কয়েকটি যাত্রায় পাকিস্তানে সামরিক সরঞ্জাম এসেছিল, অতিসম্প্রতি ২২মার্চ করাচিতে প্রদান করেছিল যা পূর্ব পাকিস্তানে সেনা হামলার তিনদিন আগে।

২৫ মার্চ নিষেধাজ্ঞা জারির পর পদ্মার উপর দিয়ে প্রথম যাত্রায় করাচিতে সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার পর সুন্দরবনের উপর দিয়ে চলতি যাত্রাটিও এধরনের সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ায় প্রথম। কিন্তু প্রমাণিক সুত্র জানায় যে পাকিস্তানের জন্য সামরিক সরঞ্জামাদি সহ অন্যান্য জাহাজ পূর্ব ও পশ্চিম উপকুল বন্দর থেকে ২৫ মার্চ জলপথে যাত্রা করতে পারে।

বহনপত্র/মালপত্রের রসিদ

Forwarding agent-shipper’s references: Ref. Exp: 63942MVF Inter-Maritime Forwarding Co., Inc.. 30 Church St., N.Y.

Shipper: Embassy of Pakistan (Defense Procurement Div.), Washington, D.C.

Consigned to order of: C/O Embarkation Headquarters, Karachi. Pakistan.

Address arrival notice to: Commandant Officer, Central MT Stores Depot Golra. C/O Embarkation Headquarters, Karachi, Pakistan.

Also notify: None.

Vessel: S.S. Sunderbans (National Shipping Corp.).

Pier: No. 36 East River.

Port of loading: New York, N.Y.

Mark and numbers: E P: 63942 ; BAC-1/19, BAF-I/8, BAD-1. Number of packages: 28.

Description of packages and goods: Skids, parts and accessories for military vehicles (claw screw can control).

Gross weight in pounds: 11,895.

Dated at New York: 4-8-71.

বহনপত্র/মালপত্রের রসিদ

Forwarding agent-shipper’s reference:

Ref Exp: 53950 MVP, Inter-Maritime Forwarding Co., Inc., 30 Church St., N. Y.

Shipper: Embassy of Pakistan (Defense Procurement Division),Washington, D.C.

Consigned to order of: C/O Embarkation Headquarters, Karachi, Pakistan.

Address arrival notice to: Commandant Officer, Central MT Stores Depot Golra, C/O Embarkation Headquarters, Karachi, Pakistan.

Also notify: None.

Vessel: SS. Sunderbans (National Shipping Corp.) Pler: No. 36 East River.

Port of loading: New York.

Marks and numbers: E P: 63950, BAG-1/9, UNI-I/13, BAD-I.

Number of packages: 23 Description of packages and goods: Pieces (22 skids, Ictn.), parts and accessories for military vehicles (shaft, screw, mount knob).

Gross weight in pounds: 18, 171.

Dated at New York: 4/16/71.

( রসিদের ঠিকানা বাংলা করিনি।)

.

ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি. বিভাগ

নিউ ইয়ার্ক এন. ওয়াই.

পাকিস্তাত দূতাবাস, ওয়াশিংটন ডি.সি. সতর্কতাঃ লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকরাম রাজা

যুক্ত করা হয়েছে

প্রতিরক্ষা সংবাদ বিভাগ

জনাব – গত সপ্তাহে বীপনন কারীর তথ্য অনু্যায়ী বন্দর রশিদের প্রেরিত অনুলিপি পেয়ে আমরা খুসি হয়েছি। ২১ মে ১৯৭১

আমরা আপনাকে উল্লেখিত প্রাপ্ত তথ্যের উপর নির্ভর করতে অনুরোধ করছি, আপনার একান্ত বাধ্যগত

ইস্ট ওয়েস্ট শিপিং এজেন্সি. বিভাগ

————–

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিনেট

ওয়াসিংটন ডি. সি. ২২ জুন ১৯৭১

রাষ্ট্রপতি

হোয়াইট হাউজ

ওয়াসিংটন ডি.সি

শ্রদ্ধেয় রাষ্ট্রপতিঃ এটা আমার নজরে এসেছে যে আজ বিকালে মন্ট্রিয়ালের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানি জাহাজ পদ্মা নিউ ইয়ার্ক বন্দর ত্যাগ করেছে, যেটা মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র, অস্ত্রশস্ত্র ও আনুসাঙ্গিক খুচরা যন্ত্রপাতি বহন করছে, যা এই সময় পাকিস্তান সরকারের জন্যে সকল অস্ত্র সামগ্রী নিষিদ্ধ বিষয়ক আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও নিতি লঙ্ঘন করছে।

আমি পদ্মায় বোঝাই করা এই অস্ত্র সমূহ প্রতিরোধ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যার্থয়ায় সর্বোচ্চ প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি । নিশ্চই আমাদের সরকারের প্রকাশ্যে এর বিরুদ্ধে  ঘোষণা নীতি জারী করা উচিৎ ।

জানা গেছে যে, পদ্মা মনট্রিয়াল বন্দরে ভিড়বে আরও অগ্রসর হওয়ার আগে যদি উপকূল রক্ষাকারি বাহিনী আমেরিকার জলসীমার পথিমধ্যে এটাকে বাধা না দিতে পারে, তাহলে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি এই নিষিদ্ধ চালান আটকাতে আপনি কানাডা সরকারের সহযোগীতার গ্রহন করুন ।

আমি আশা করছি যে আপনি ওই মামেরিকান অস্ত্রগুলো পদ্মা থেকে সরাতে দ্রুত এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন

আপনার একান্ত বাধ্যগত

ফ্রাঙ্ক চার্চ

.

13.98.356

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাকিস্তানের অস্ত্রের নতুন চালান- সিনেটর হার্টের মন্তব্য সিনেটের কার্যবিবরণী ২৩ জুন ১৯৭১

\\পাকিস্তানে অস্ত্রের নতুন চালান প্রসংঙ্গে সিনেটর হার্টের মন্তব্য//

কংগ্রেশনাল রেকর্ড-সিনেট

এস ৯৭৬৪ তারিখ                                                                       ২৩ জুন, ১৯৭১

পাকিস্তানে পুনরায় মার্কিন সাহায্য প্রদান প্রসঙ্গে

সিনেটর হার্ট বলেন, “মিঃ প্রেসিডেন্ট, আজ প্রেস থেকে সংবাদ পেলাম, আমাদের প্রশাসন পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের চালান পুনরায় অনুমোদন করেছে।

এ খবর গভীর বেদনার ও হতাশার।  সারা পৃথিবীর সামনেই এটি আর এখন কোন গোপন বিষয় নয় যে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর পাইকারি হারে হত্যাকাণ্ড চালানো হচ্ছে। আমি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছি না যে, এই অবস্থায় আমাদের সরকার পাকিস্তান সরকারের হাতে আরো বেশী করে সামরিক সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছে।

মিঃ প্রেসিডেন্ট, এটা অন্যান্যবারের মতো ‘স্বাভাবিক ব্যবসা’র সময় নয়। আমি জানি না কেন সরকার বুঝতে চাইছে না যে, বেশীরভাগ মার্কিন নাগরিক এই গণহত্যায় মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্টতায় অসুস্থ বোধ করছেন। নিশ্চিতভাবেই এটা এমন এক সংকটকালীন মুহূর্ত, যখন শুধু কিছু ত্রাণ সরবরাহ করে আমরা বসে থাকতে পারি না বরং বিশ্ব-বিশৃঙ্খলার বিপরীতে এবং বিশ্বশান্তির পক্ষে জোরালো পদক্ষেপ নেয়া আমাদের দায়িত্ব।

এর সাথে সাথে এটাও আশংকার বিষয় যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট বারবার তাদের বক্তব্যে সত্য গোপন করছে। তারা বিবৃতি দিয়েছিলো “২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হবার পর পাকিস্তান সরকার বা তার কোন এজেন্টকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয় নি এবং আগামীতেও এরকম কোন কর্মসূচি নেই।“

সরকারী নীতি নিয়ে গত সপ্তাহে এরকম সত্য গোপন ও ভুল তথ্য দেয়ার ঘটনাকে অত্যন্ত গভীরভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। তার মানে এই দাঁড়ায় যে, পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বিষয়ে কংগ্রেস ও জনগণের উদ্বেগ জানা সত্ত্বেও স্টেট ও নিরাপত্তা ডিপার্টমেন্ট এটাকে পাত্তা দেয় নি। হয় তাঁরা এ বিষয়ে সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে এড়িয়ে গেছে অথবা এই চালান সংক্রান্ত অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়াদিকে তাঁরা গ্রহণ করেছে।

দু’টো ব্যাখ্যাই সমসাময়িকভাবে মার্কিন কংগ্রেস ও জনগণের প্রতি নির্বাহী বিভাগের বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটি তথ্য উন্মুক্তকরণের বিষয়ে সর্বোচ্চ বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

গতকাল এ প্রসংঙ্গে আলোচনা উত্থাপন করায় আমি ইডাহোর সিনেটর মহোদয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং উনার সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে এই অস্বস্তিকর ব্যাপার সম্পর্কে নির্বাহী বিভাগের পূর্ণ ব্যাখ্যা দাবি করছি।

ঠিক কোন নির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলো যে, ২৫ মার্চের পর কোন অস্ত্র ‘সরবরাহ’ করা হয় নি এবং এরকম আর কোন চালান প্রেরণের জন্য ‘তালিকাভুক্ত’  করা হয় নি, তার ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য আমি বিশেষভাবে অনুরোধ করছি।“

.

13.99.357

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রস্তাব নয়, আইনের মাধ্যমে অস্ত্র প্রেরন বন্ধ করতে হবে : সিনেটর সিমিংটন সিনেটের কার্যবিবরনী ২৪ জুন, ১৯৭১

জুন ২৪, ১৯৭১                 কংগ্রেশনাল খতিয়ান – যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট                          এস৯৮৮৯

ইউ এস সামরিক সামগ্রী পাকিস্তানে পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা

জনাব স্যমিংটন, জনাব রাষ্ট্রপতি , এই প্রবন্ধে উল্লেখিত “ইউ এস সামরিক সামগ্রী পাকিস্তানে পাঠানোর নিষেধাজ্ঞা” টেড স্যুলস দ্বারা লিখিত, যা উপস্থাপন করে ধারণাতীত আমলাতান্ত্রিক সংবেদলশীলতার  চিত্র ।

এটি নির্বাহী শাখার আরো একটি গল্প যা কংগ্রেস বলছে এটা একই জিনিস করছে, তখন আমরা খুজে পেলাম  ভিন্ন কিছু হচ্ছে ।

জনাব স্যুলস প্রতিবেদন দেন নিউ ইয়ার্ক টাইমস এ তার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বিভাগের কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে যে নূন্যতম একটি জাহাজ পাকিস্থানের পথে আছে যেটি সামরিক সরঞ্জাম বহন করছে যখন মালবাঈ বিমানের সাহায্যে আরেকটি চালান তৈরি করা হচ্ছিলো পাঠানোর জন্যে, যেখানে প্যারাসুট, বিমান ও সামরিক যানবহনের খুচরা যন্ত্রাংশ ছিলো ।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিবৃতি সত্ত্বেও এই চালান তৈরি করা হয়েছে, সিনেট রেজুলেশানের ২১  কমিটিতে যেটা অনুলিপি করা হয়েছে, যে –

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোন অস্ত্র পাকিস্থান সরকারকে বা এদের দালালদের দেওয়া হবেনা যতক্ষন না পূর্ব পাকিস্থান থেকে যুদ্ধদশার প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তি না পাচ্ছে, মার্চ ২৫-২৬, এবং ওইটাই এখন সিডিউল করা হয়েছে পাঠানোর জন্যে ।

আরো যোগ করা হয়েছে,ব্যাপার হচে যে চালানটি রাষ্ট্রীয় দপতর বরাবরয়ে গিয়েছিল অন্যথায় বোঝা যাচ্ছিলোনা না হচ্ছিলো অথবা  অন্যথায় যখন পথভ্রষ্ট কংগ্রেস সহকারী সেক্রেটারি এ্যাবশার, পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কমিটির চেয়ারম্যানের কাছে লিখছিলো এপ্রিলের ২৩ তারিখে, বিয়নের সাথে পাকিস্তানে সামরিক চালানে ব্যাপারে বলেন যে –

পরিকল্পনায় আর কিছুই ছিল না

জনাব স্যুলসের খবর অনুযায়ী, এমনকি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা এখন স্বীকার করেন যে এই চালানে ঘোষিত নীতির লঙ্ঘন করে, কিন্তু তারা মধ্যকার দন্দ্বের জন্যে  কোন প্রস্তাব ও নিতিমালার ব্যাখ্যা দেয়নি

পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক উপ কমিটিরর চেয়ারম্যানের হিসেবে, আমি গতকাল টেলিফোন করে রাজ্য এবং প্রতিরক্ষা সচিবের হয়ে একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে  অনুরোধ করি; এবং সিনেট রিপোর্টে যখনেই ব্যাখায় গৃহীত হয়। তাদের রসিদ অপেক্ষারত রেখে, আমাদের চুড়ান্ত রায় পেতে দিন ; কিন্তু এটি প্রদর্শিত হবে যে আমরা পদক্ষেপগুলিতে চিন্তা করে পা দিব যেটা কংগ্রেস এর দ্বারা গৃহীত হয়েছিল আইনানুসারে, অন্যথায় রেজুলেশানের অনুচ্ছেদ মোতাবেক, নিশ্চিত করা  যা নির্বাহী শাখা এর রাষ্ট্রীয় নীতির মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ।

.

13.100.358-361

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মিঃ প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানে আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পরেছি;সিনেটর টানি সিনেটর কার্যবিবরণী ৭ জুলাই,১৯৭১

প্রথম খন্ডঃপৃষ্ঠাঃ ৩৫৮ অনুবাদকঃ ইমরান খান ইমন।

জুলাই ৭,১৯৭১                       মহাসম্মেলন সম্পর্কিত সিনেটর নথি                        S10541

                                              পূর্ব পাকিস্তান যুদ্ধ

জনাব টানি:

জনাব রাষ্ট্রপতি, আমরা পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছি। আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করিনি এবং পাকিস্তানে আমাদের কোন সৈন্যবাহিনী নেই তবুও পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের মতে আমরা যুদ্ধ করছি। এটা আমাদের নিজস্ব জাহাজ ছিল যা দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিমা সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ হয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল জীর্ণ, হতাশ,ক্ষতবিক্ষত পূর্ব পাকিস্তান খুজ করা এবং সর্বশেষ আমাদের অবশিষ্ট রাইফেল, বন্দুক, গুলি কম দামে পাইকারি দরে তাদের কাছে বিক্রি করা। আমাদের সাহায্য ছাড়া যুদ্ধে শক্তি তৈরিতে পাকিস্তান ব্যর্থ হবে এবং ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে কারণ আমরা নিজেরাই একটি যুদ্ধমান গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পরেছি এবং আমাদের কার্যকলাপ যথেষ্ট সমালোচনার দাবিদার।

এই অবস্থায় যুক্তরাষ্টের জন্য করণীয় কাজ একটিই আর তা হচ্ছে শান্তি স্থাপনের জন্য মধ্যস্থতা  করা। অসুস্থ ও ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য কঠোর শান্তিকামী মধ্যস্থতা করা। এই প্রেক্ষিতে পাকিস্তানকে শান্তি স্থাপনের পরিকল্পনায় আসার জন্য আমি সাক্সি-চার্চ সংক্রান্ত পররাষ্ট্র সহায়তা সম্পর্কিত সংশোধনী উত্থাপন করি। এই সংশোধনী পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহার করবে। এই সময়ের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে কার্যকর ভাবে আন্তর্জাতিকভাবে ত্রাণ কার্যক্রম স্থাপন করতে হবে। জনাব, রাষ্ট্রপতি শান্তি স্থাপনের জন্য হস্তক্ষেপ করবে যুদ্ধের জন্য নয়। এই হস্তক্ষেপ হবে জীবনের জন্য ;মৃত্যুর জন্য নয়। এই হস্তক্ষেপ হবে খাদ্য ও ঔষধের জন্য বন্দুক বা বিমানের জন্য নয়। অত্র এলাকায় শান্তি কার্যক্রম চালানোর কোন সম্ভাবনা আমি দেখছিনা যেখানে আমরা নিজেরাই যুদ্ধে সরবরাহকারী হিসাবে নিয়োজিত। আমি বিশ্বাস করি, প্রকৃতপক্ষে ত্রাণ ব্যাবস্থা বল পূর্বক বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তান সরকারকে আমাদের সামর্থ অনুযায়ী চাপ প্রয়োগ করা যা ন্যায্য কাজ হবে।

কিন্তু এই সমস্যায় নতুন আরেকটি মাত্রা যুক্ত হয়েছে।

৫-ই জুলাই, ১৯৭১ সোমবার ওয়াশিংটন পোষ্ট পাকিস্তানের সাথে আমাদের বাণিজ্য নিয়ে একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। সম্পাদকীয়র শিরোনাম হচ্ছে “পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্টের অস্ত্রঃ একটি লজ্জাজনক তথ্য। সম্পাদকীয় এইটাও উদঘাটন করেছে যে রাষ্ট্র কিভাবে এবং কি বলে যাচ্ছে দিনের পর দিন।এতে এটাও বর্ণনা করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় বিভাগ কিভাবে দিক পরিবর্তন করে আসছে। আমরা সবাই জানি এই পুরনো ইতিহাস।

এদিকে রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী ডাঃ হেনরি কিসিঞ্জার নয়া দিল্লীতে তেমন একটা ভাল উষ্ণ সংবর্ধনা পায়নি। কারণ যাই হোক তা সুস্পষ্ট ছিল। ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধ ও শান্তির মাঝে সূক্ষ্ম বাণিজ্য করছে এবং একই সাথে আমরাও পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছি।এদিকে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক দ্রুত অবনতি হচ্ছে। একই সাথে আমরা সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছি পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করার জন্য। এতে করে কে লাভবান হচ্ছে? যুদ্ধ-বিগ্রহ নাকি পশ্চিম পাকিস্তান? বিয়াফ্রান বিপর্যয় থেকে কি আমরা কিছুই শিখিনি? আমরা নির্জীব বসে থাকবো?

প্রথম খণ্ডঃ পৃষ্ঠাঃ ৩৫৯ অনুবাদকঃ ইমরান খান ইমন

অনর্থক না কিন্তু আমরা অঘুষিতভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছি,সাহায্য করছি পূর্ব পাকিস্তানের লাখো জনতার দুর্দশা  ও মৃত্যুর জন্য?

পাকিস্তানে যদিও ক্রমাগত বলা হচ্ছে যে,কোন অস্ত্র জাহাজে আনা হচ্ছেনা কিন্তু আমরা অহরহ তারই উপস্থিতি পেয়েছি। আমাদের কি অধিকার আছে যে পশ্চিম পাকিস্তানকে অস্ত্র সজ্জিত করবো বাংলাদেশে যুদ্ধ করার? যেই কারণই থাকুক না কেনো ; আমরা কোন অধিকারে একটা সামরিক যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করছি মানবিক ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম ছাড়া? পররাষ্ট্র বিভাগ যদি প্রশ্নগুলির উত্তর দিতে পারে তবে আমি নিশ্চিত আমাদের সকলেই এই ব্যাপারে আগ্রহী হবে। কিন্তু এমনকি যদি পররাষ্ট্র বিভাগ প্রশ্নগুলির উত্তর দিতেও পারে তথাপি আমরা এটা কিভাবে আশা করবো যে আমেরিকান জনগণ তা শুনবে? আমরা এটা কেনো ভাববো যে আমরা সত্যটাই শুনছি? মাননীয় রাষ্ট্রপতি, মূল সমস্যা হচ্ছে, এই জাতির বহির্বিশ্ব সংক্রান্ত কার্যাবলীর উপরে হয় পররাষ্ট্র বিভাগের নিয়ন্ত্রণ নেই অথবা তারা এটা কপ্রবে বলে ঠিক করেছে যে এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং অন্য হাতে জনগণকে তথ্য সরবরাহ করবে।

আমাদের পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের ক্ষমার অযোগ্য অদক্ষতার কারণে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক কোণঠাসা হয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে মিসেস গান্ধী তার জনগণকে যুদ্ধে জড়িয়ে পরা থেকে প্রতিহত করে যাচ্ছে আর আমরা পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করছি যা পরিস্থিতিকে উত্তেজিত করে তুলছে। মাননীয় রাষ্ট্রপতি আমি একেবারেই বুঝতে পারছিনা পাকিস্তানে আমাদের কার্যক্রম দিয়ে আমরা আসলে কার হয়ে কাজ করছি। আমরা এটা করতে পারি যে, পাকিস্তান যুদ্ধ চালিয়ে যাক যা ভারতকে ধীরে ধীরে একটি যুদ্ধের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং সব শেষে পূর্ব পাকিস্তানের লাখো মানুষ মারা যাবে বা উদ্ভাস্থু হবে। এটা এমন কোন কাজ নয় যার জন্য আমরা গর্ব করতে পারবো।

মাননীয়া রাষ্ট্রপতি, আমি চাই এই সম্পাদকীয়টি সর্ব সম্মতিক্রমে মুদ্রিত করে সংরক্ষণ করা হোক।

             পাকিস্তানের জন্য ইউএস এর অস্ত্রসামগ্রীঃ একটি লজ্জাজনক দলিল/তথ্য/নথি

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ এ মার্চ দায়িত্ব নেয় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনকে পিষে ফেলার জন্য। তদপরবর্তী সময়ে সেনাবাহিনী ভয়াবহ ও নির্বিচারে হত্যাযগ্য শুরু করে। ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রশ্ন করা হয়েছে, অস্ত্র কোথায় বিক্রি করা হয়েছে বা আমেরিকা কর্তৃক কাকে অস্ত্র ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে বা অস্ত্রের সরবরাহ চলছে কিনা। এই সকল প্রশ্নের উত্তর এখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে।

এপ্রীল-২ঃ আমেরিকান পররাষ্ট্র অধিদপ্তর বলেছে যে প্রতিবেদন মোতাবেক এটা নিশ্চিত নয় বা অস্বিকার করা যাবেনা যে আমেরিকান সরঞ্জামাদি ব্যবহার হচ্ছে।

এপ্রীল ২০ তারিখ; ব্যপারটি আর অস্বিকার করা যায়না কারণ পররাষ্ট্র অধিদপ্তর সিনেটর কেনেডি কে নিশ্চিত করে যে, পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র ব্যাবহার সম্পর্কিত ব্যাপারে এই কথা যোগ করা হয়েছে যে,” অস্ত্র সরঞ্জাম বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে চায়নাসহ,ইউএসএসঅার এবং যুক্তরাজ্যের অস্ত্রও ব্যবহার হচ্ছে”।

তিন দিন পরেই পররাষ্ট্র অধিদপ্তর সিনেটর ফুলব্রাইটের কাছে ব্যাপারটা স্বীকার করে নেয় যে, “বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে কিছু এম-২৪ ট্যাংক এবং এফ-৮৬ এয়ারক্রাফট পূর্ব পাকিস্তানে দেখা যাচ্ছে। এর দ্বারা এটা প্রতীয়মান হয়না যে এইসব ট্যাংক বা বিমান জীর্ণ বিক্ষুব্ধ অস্ত্রধারী বড়জোর রাইফেলধারী মানুষের উপরে প্রয়োগ করা হচ্ছে; যদি হয়

প্রথম খণ্ডঃপৃষ্ঠাঃ ৩৬০ অনুবাদকঃ ইমরান খান ইমন

এপ্রীল-৬ঃ জনাব ফুলব্রাইট পররাষ্ট্র সচিব রজার্সকে জিজ্ঞেস করেছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য সরঞ্জামাদীর “বর্তমান সরবরাহের অবস্থা” সমপর্কে।

ঐ সপ্তাহেই, পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র প্রতিবেদকের কাছে অস্বীকার করেন যে “পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার একটি দীর্ঘ সামরিক সহায়তা কার্যক্রম রয়েছে”। তিনি এটাও বলেন যে, ” অক্টোবর ১৯৭০ এর অস্ত্র চুক্তি অনুযায়ী পুনরায় কোন অস্ত্র বা সরঞ্জাম পাঠানো বা সরবরাহ করা হয়নি”। তিনি আরোও উল্লেখ করেন।যে, ১৯৬৭ সালে করা সাধারণ বিক্রয় চুক্তি অনুযায়ী “প্রাণঘাতহীন সামরিক সরঞ্জামাদি, যন্ত্রাংশ ও গোলাবারুদ পাকিস্তানের হাতে রয়েছে”। তিনি বলেন ” এই চুক্তি অনুযায়ী সরবরাহের ব্যাপারটাতে তারা পর্যবেক্ষণ করছেন “।

এপ্রিল-১৪ঃ ওয়াশিংটন পোষ্টে প্রকাশিত একটি অসমর্থিত প্রতিবেদন হতে জানা যায় যে, অস্ত্রের চালান নিয়মিত হচ্ছে কিন্তু তেমন একটা প্রকাশ্যে নয়।” যাইহোক পরেরদিন পররাষ্ট্র অধিদপ্তরের একজন মুখপাত্র এই বিষয়ে তাদের পর্যবেক্ষণের সাড়াংশে বলেন ” এক কথায় সংকট চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানে কোন অস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি এবং সরবরাহের বিষয়টি আপাতত অবস্থার উন্নতির সাথে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে”।

এপ্রিল-২০ঃ পররাষ্ট্র অধিদপ্তর সিনেটর কেনেডিকে জানায় যে,পূর্ব পাকিস্তানে ২৫-২৬ মার্চে চলা ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের সময়ে  কোন প্রকার সরঞ্জামাদি (১৯৬৭ সালের প্রাণঘাতহীন সামরিক সরঞ্জামাদি, যন্ত্রাংশ ও গোলাবারুদ) পাকিস্তান সরকার বা তাদের প্রতিনিধিকে সরবরাহ করা হয়নি এবং বর্তমানে সরবরাহের ব্যাপারে এখন কোন সময় ঠিক করা হয়নি”।

মে-৬ঃ সিনেটর ফুলব্রাইট বলেনঃ “সংকট চলাকালীন সময়ে কোন প্রকার অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হয়নি এবং সরবরাহের ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণে আছে”।

মে-৮ঃ “সুন্দরবন ” একটি পাকিস্তানি অস্ত্রবাহী জাহাজ যা নিউইয়র্ক থেকে যাত্রা শুরু করে কোন কোনপ্রকার গণপ্রচার বা জনগণকে না জানিয়ে “।

জুন-১৭ঃ পররাষ্ট্র অধিদপ্তর প্রতিবেদককে যা জানায় তা পরেরদিন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ পায় তা হচ্ছে, ২৫-এ মার্চে শুরু হওয়া যুদ্ধের আগ পর্যন্ত আমেরিকা পাকিস্তানে কোন সামরিক সরঞ্জামাদি পাঠায়নি”।

জুন-২২ঃ নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র অধিদপ্তর স্বীকার যায় যে, অস্ত্রবাহী দুটি জাহাজ পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। সেই সাথে উল্লেখ করে যে, জাহাজ দুটি ২৫-এ মার্চের পূর্বে অনুমতিপ্রাপ্ত। ঐদিনই দ্বিতীয় জাহাজ “পদ্মা” রওনা দেয়।

ছয় দিন পরে প্রশাসন জানায় যে, ২৫-এ মার্চের পূর্বে অনুমতিপ্রাপ্ত হলে সামরকি সরঞ্জামাদি জাহাজ পাঠানোর অনুমতি দেয়া হবে। এর প্রথম উদ্ভূত কারণ হচ্ছে উদ্দেশ্য সাধণের জন্য পাকিস্তান সরকারকে প্রভাবিত করা (১) পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সহাবস্থান তৈরি করা (যা এখনো চলছে) ২। ভারতে ভেসে বেড়ানো ৬ লাখ উদ্বাস্তুদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা (যাত্রা অব্যাহত রয়েছে,প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে ৪০,০০০)। প্রশাসন কর্তৃক উদ্ভূত দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, ইতিমধ্যে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত নিম্নমানের আমেরিকান অস্ত্রের সাথে সাথে বলা হচ্ছে সুভিয়েত,চাইনা ও ব্রিটিশ অস্ত্রও ব্যবহার হচ্ছে। পাকিস্তানকে অন্য সরবরাহির কাছে না যেতে নিরুৎসাহী করার জন্য।

জুন-২৯ঃ এটা উদঘাটিত হয়ে যায় যে আরোও ৪-৫ টার বেশি অস্ত্রবাহী জাহাজ তালিকাভুক্ত আছে। ‘কাপ্তাই ‘রওনা দেয় ২রা জুলাই।

দুটি কারণে আমরা এই বিষ্ময়কর ও লজ্জাজনক তথ্য প্রকাশ করেছি। প্রথমটি হচ্ছে, আমেরিকা রাজনৈতিক হীন স্বার্থের কারণে এই সামরিক সরঞ্জামাদি সরবরাহ কিরছে সেই বর্বর শাসকগুষ্ঠীকে যারা তাদের ২ লাখ নাগরিককে হত্যা করেছে এবং ৬ মিলিয়নেরও বেশি নাগরিককে দেশত্যাগ করিয়েছে।

প্রথম খণ্ডঃ পৃষ্ঠাঃ ৩৬১ অনুবাদকঃ ইমরান খান ইমন

দ্বিতীয় কারণটি অবশ্যই পড়তে হবে যা পেন্টাগন পত্রিকার বর্তমান বিতর্কিত বিষয় প্রসঙ্গে, এটি জনগণের জানার অধিকার এবং রাষ্ট্রের তা প্রকাশ করা কর্তব্য। এখানে আমরা পাই একটি ধ্রুপদী উদাহরণ কিভাবে লোকচক্ষুর সুবিবেচনার আড়ালে, প্রশাসনের কর্মচারীরা অস্ত্র সামগ্রী পাকিস্তানে সরবরাহ করছে অথচ তারা সরল এবং দৃঢ় ভাবে বলছে যে সরবরাহটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে এই জোয়াচুরিটি একটি ভুল বুঝাবুঝির সাংগঠনিক যোগসাজশ এবং কুটিল কূটনৈতিক এবং ইচ্ছাকৃত প্রতারণা নয়। ঘটণা হচ্ছে যে,অস্ত্রবাহী জাহাজ এখনো সমুদ্রে বহমান। এটা বন্ধ করা এখন রাষ্ট্রপ্তির উপরে যদি সরকার তার ঘুষিত নীতির ব্যাপারে বদ্ধপরিকর হয়।

.

13.101.362-364

শিরোনাম সূত্র তারিখ
অস্ত্রের চালান পাঠানো একটি মারাত্মক ভুলঃ সিনেটর স্যাক্সবীর বক্তৃতা সিনেটের কার্যবিবরণী ১২ জুলাই, ১৯৭১

জুলাই ১২,                                                                              এস ১০৭২৭

১৯৭১ সিদ্ধান্ত বিবরণী-সিনেট
পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির বিপর্যয়

মি স্যাক্সবে। পূর্ব পাকিস্তানের ক্রমাবনতির দিকে যাওয়া ঘটনাবলীর সাম্প্রতিক উত্তরণের প্রতি প্রেসিডেন্ট মহোদয় সিনেটরদের মনোযোগ আহবান করেছেন।

গত শনিবার ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয় বিশ্ব ব্যাংক কারগিল রিপোর্ট বিতরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, কারণ প্রতিবেদনটিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার শাসন ব্যবস্থার প্রতি কটাক্ষ করা হয়েছে। রিপোর্টটটিতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আছে বলে বলা হয়েছে:

ইয়াহিয়ার পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর চাপিয়ে দেয়া ত্রাসের রাজত্ব এখন পূর্ব পাকিস্তানে বিরাজ করছে; দেশটির পূর্বাংশের প্রান্তিক জনজীবন ছারখার হয়ে গেছে এবং এর অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গেছে; ইয়াহিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় গেরিলা প্রতিরোধ অব্যাহত আছে; সেখানে ব্যাপক খাদ্য সংকটের আভাস পাওয়া যাচ্ছে এবং ইয়াহিয়ার প্রশাসন বিশ্ব জনমত ও পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোর প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করছে।

ওয়াশিংটন পোস্টে রয়টার্স বার্তা সংস্থা এবং ওয়াশিংটন স্টার দুটি পত্রিকাই গত রবিবার তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে কারগিল রিপোর্ট আটকে রাখার নিষ্ফল চেষ্টার পর অবশেষে বিশ্ব ব্যাংক প্রতিবেদনটি বিতরণ করেছে। প্রতিবেদনটি আমি দ্বি-জাতি পাকিস্তান এইড কন্সোরটিয়ামে প্রেরণের সুপারিশ করছি এবং বিশ্বব্যাংককে তার প্রতিবেদনের অনুলিপিগুলো কংগ্রেসের কাছে দিতে বলার জন্য অনুরোধ করছি।

২৫ শে মার্চ রাতে সামরিক হস্তক্ষেপের পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনাবলীর পর থেকে পাকিস্তানের সাথে আমাদের সরকার যে অব্যাহত সহযোগিতা রেখে চলেছে তার আলোকে এই প্রতিবেদনটি প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, সিনেট এপ্রোপ্রিয়েশন কমিটির বৈদেশিক কার্যক্রম উপকমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সামরিক ও আর্থিক সহযোগিতার হার দশগুণ বৃদ্ধি করতে অর্থাৎ ৫০০,০০০ মার্কিন ডলার থেকে ৫,৫০০,০০০ মার্কিন ডলার করার জন্য আমাদের প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছে। এটা বৈদেশিক সামরিক বিক্রয়ের জন্য মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিক্রয় মঞ্জুরী এবং পুলিশী প্রশিক্ষণের জন্য ২৫০,০০০ মার্কিন ডলার মঞ্জুরী সীমা লঙ্ঘন করেছে।

গত সপ্তাহে আইডাহো থেকে আগত সিনেটর (মি. চার্চ) এক বাগ্মিতাপূর্ণ বক্তৃতায় বলেছেন পাকিস্তানের কাছে হস্তান্তরের জন্য তখনও প্রায় ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম তাদের সরবরাহ লাইনে প্রস্তুত রয়েছে। সংবাদ মাধ্যমে এই বক্তৃতাটি নিয়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। সরবরাহ লাইনে সামরিক সহায়তা থাকার প্রেক্ষাপট এবং সেইসাথে ১৯৭২ অর্থ বছরে মঞ্জুরীর জন্য অনুরোধ জানানোর আলোকে আমি মনে করি বিশ্ব ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত কারগিল প্রতিবেদনটি কংগ্রেসের জন্য আমাদের পরবর্তী আলোচনা সিদ্ধান্ত ঠিক করতে অনেক বড় সহায়ক হবে।

মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমি বিশ্বব্যাংক এর প্রতিবেদন এর একটি বিশেষ বিষয়ের উপর জোর দিব- সেটা হলো দুর্ভিক্ষাবস্থা। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সূত্র থেকে আমার কাছে প্রতিবেদন এসেছে যে, সেখানে ০.৫-৩ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য ঘাটতি দেখা দিবে। উপরন্তু যদি খাদ্য হস্তান্তর করা হতো তাহলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া চাইলেও তা বিতরণ করতে পারতেন না কারণ খাদ্য বিতরণের জন্য কোন সক্রিয় সংস্থা নেই।

মহামান্য প্রেসিডেন্ট, আমি আশা করি হেনরি কিসিঞ্জার পাকিস্তানি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে তার বর্তমান পথ থেকে সরিয়ে আনতে কিংবা বিকল্প উপায় হিসেবে আমেরিকাকে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ত্রাসের রাজত্বের প্রতি অব্যাহত সমর্থন দেয়ার নীতি থেকে সরে আসার জন্য সহযোগিতা করতে সমর্থ হবেন। মি. প্রেসিডেন্ট, ইয়াহিয়া কোন নীতিতে চলছেন তা একবার দেখা যাক, এটা হলো এডলফ হিটলারের পর এ যাবত কালের সবচেয়ে নৃশংস পরিকল্পিত গণহত্যা।

এ্যান্থনী লুইস আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসে এর একটি বিভৎস তুলনা তুলে ধরে বলেছেন:

এই সময়ে এখানে কি ঘটছে তা কেউ অবহিত হওয়ার পরও যদি বুঝতে ব্যার্থ হন তবে তার জন্য কোন ক্ষমা থাকতে পারে না, সমসাময়িক চিত্র কল্পনায় উঠে আসবে খুব সামান্যই। এরপরও কিছু কিছু দায়িত্বশীল ব্যক্তি তা দেখেন না। তবে আমেরিকার স্বার্থ বাস্তববোধকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাপী অস্পৃশ্য সরকারগুলোকে ভালো আচরণের পথে ফিরিয়ে আনতে আমেরিকার সক্ষমতার বিষয়ে আমরা আর বেশি ধুম্রজাল সৃষ্টি করতে পারবো না, তবে সেখানে এমন একটি জায়গা আসে যেখানে স্ব-শ্রদ্ধাবোধ আমাদেরকে তাদের সহায়তা বন্ধ করার তাগিদ দেয়।

ক্রমাগত অস্ত্র সরবরাহ করে যাওয়ার আমাদের নীতিটা ঠিক নয়। এটা একটা ভয়ংকর ভুল। আমাদের অবস্থাটা এমন যে মনে হচ্ছে আমরা ভারত এবং পাকিস্তান উভয়কেই শান্ত করার চেষ্টা করছি যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতের পক্ষ নিয়েছে আর চীন পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে। ঠিক যেমনটি ফ্লোরা লুইস বলেছিলেন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায়:

এটা বিচারীক ব্যর্থতা, শুধুমাত্র ভারত আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রেই নয়। এবং এটাকে অনেক বেশি মনে হচ্ছে যে অতীতের দক্ষিণ ভিয়েতনামের মত ভেঙে পড়ার পরিবর্তে বরং এর অবসানের সাথে সাথে খুব বেশি কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে সমাজতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ছড়িয়ে পড়বে। একটাই কেবল মহা কৌশলের কারনে জাতীয় স্বার্থ ও জরুরী মানবিক প্রয়োজনগুলো একই পাশে আছে। কেন যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধাণ মিত্রদের সাথে নিয়ে এর পাশে নেই?

আমি বিশ্বাস করি সবচাইতে জটিল সমস্যাটি মীমাংসার জন্য পাকিস্তানি পক্ষ যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও প্রজাতান্ত্রিক চায়নাকে একটি উদ্যোগ নেয়ার সুযোগ দিতে পারে আর এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের অভিন্ন চেষ্টাকে আরও জোরালো করতে পারে। এই সমস্যাটি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ইচ্ছা করলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকতে পারেন।

গত বৃহস্পতিবার, ১ লা জুলাই, কানাডা পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে যাওয়া একটি অস্ত্রের চালান আটকে দেয়। সেখানকার কাস্টমস কর্মকর্তারা বলেছেন তারা পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে পাঠানোর জন্য এফ- ৮৬ সার্বি জেট বিমানের ৪৬ ক্রাটিজ যন্ত্রাংশ লোডিংয়ের অর্ডার আটকে দিয়েছেন, যেগুলো তখনও যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে যায় নি, এমনকি আমরা যদি লাইসেন্সসহ বা অন্য কোন অস্ত্র মাধ্যমেও পাঠাতাম তাহলেও এর ব্যত্যয় ঘটতো না, আমরা কেন তাদের চালান আটকাতে পারি না? আইনে এমন কোন বিধি নাই যেখানে বলা আছে যে আমাদেরকে এই কাজ করতেই হবে। উদাহরণ স্বরুপ, আমরা আমাদের সরকারি নীতি সকল চুক্তি আইনের উর্ধে চলে গেছে একথা মেনে নিয়ে কানাডার নেতৃত্বকে অনুসরণ করতে পারতাম। কোন লাইসেন্স যদি সরকার নীতির বিরুদ্ধে যায় তাহলে তা সব সময়ই প্রত্যাহার করে নিতে হয়, উদাহরণ – আইন পেশার লাইসেন্স ও চিকিৎসা পেশার লাইসেন্স।

আজকে কেউ কেউ আমাদের বলেছেন যে, আইনের শাসন পাকিস্তানে ফিরে গেছে। যদি তাই হয়, তাহলে কেন গত ৩০ শে জুন,বুধবার পূর্ব পাকিস্তান থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমস’র প্রতিনিধি সিডনী এইচ. শ্যানবার্গকে বহিষ্কার করা হলো? যদি আইনের শাসন ফিরে গিয়েই থাকে, তাহলে কেন একদল পাকিস্তানি সেনা বলিয়াদীর হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হানা দিয়ে নির্বিচারে লোকজনকে গুলি করলো, কেন বাড়িঘর গুড়িয়ে দিল আর গ্রাম হাটবাজার সব জ্বালিয়ে দিল?

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মহোদয়, নৈতিক ব্যবস্থা নেয়ার সময় এসেছে। বৈদেশিক সহায়তা আইনে স্যাক্সবি-চার্চ আইনের ১৫৯ থেকে এস. ১৬৫৭ নং সংশোধনীর প্রতি আমি সিনেটরদের মনোযোগ আহবান করছি। এটা দাখিল করা হয় ১০ জুন, ১৯৭১ ইং তারিখে আর বর্তমানে এটা বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির কাছে বিবেচনাধীন রয়েছে। আমাদের সংশোধনীর জন্য আমরা ২৯ জন কো-স্পন্সর পেয়েছি । ১৫৯ থেকে এস. ১৬৫৭ নং সংশোধনীর কোস্পন্সর হতে নিম্নলিখিত সিনেটরদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আমি সকলের ঐক্যবদ্ধ সম্মতি কামনা করছি : স্কট, টান্নি, কেস, পাস্টর, বেনেট, পেল, বেলমন, হার্ট, রথ, বায়হ, বগস, চ্যান্সটন, ব্রুক, মেটক্যালফ, গার্নি, ম্যাকগভার্ন, ইগলটন,স্টিভেনসন, মস, মন্ডেল, হিউজেস, হার্টকী, মাস্কি, প্রক্সমায়র, হামফ্রে, ম্যাগনুসন, উইলিয়ামস, রান্ডলফ এবং রিবিকফ।

.

13.102.365-366

শিরোনামঃ বাংলাদেশের ঘটনায় শোকাভিভূত ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কতিপয় অধ্যাপকের পত্র

সূত্রঃ সিনেটের কার্যবিবরণী

তারিখঃ ২০ জুলাই, ১৯৭১

কংগ্রেস সম্পর্কিত সিনেট কার্যবিবরণী

পাকিস্তানের শোকগাঁথা

২০ জুলাই, ১৯৭১                                                                              স ১১৬১১

জনাব কার্স্টন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, পাকিস্তানের অবস্থা দিনকে দিন গুরুতর হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ আজ গৃহহারা, হাভাতে কারণ তারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে উদ্ভূত যুদ্ধের শিকার।

পাকিস্তানে কর্মরত এবং বসবাসরত আমেরিকান আমাকে জানিয়েছেন যে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আমাদের করণীয় হল আমাদের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে এবং সমানভাবে যাদের সত্যিকার অর্থে প্রয়োজন তাঁদের কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করা। সেই মর্মে, ওহাইও এর সিনেটর (জনাব স্যাক্সবি) এবং আইডাহোর সিনেটর (জনাব চার্চ) এর পেশ করা ১৫৯ নং সংশোধনীতে আমি সহ অনুমোদন দিয়েছি।

পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে সকলের সম্মতির লিখিত নথি নিয়ে লস এঞ্জেলেস টাইমের সম্পাদকের নিকট একটি পত্র পাঠানোর অনুরোধ করছি। পত্রটি লিখেছেন লস এঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলীর একটি দল। পত্রটি আমাদের পূর্ণ মনোযোগ পাওয়ার যোগ্য।

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়

লস এঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া, মে ১৭, ১৯৭১

সম্পাদক,

লস এঞ্জেলেস টাইমস

জনাব, আমরা নিম্নে স্বাক্ষরিত বিদ্বানরা হলাম ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, লস এঞ্জেলেসের এশিয়ান স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষকমণ্ডলী। আমরা ২৫ মার্চ, ১৯৭১ হতে বাঙ্গালী জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর চালিয়ে যাওয়া হিংস্র ও অমানবিক অত্যাচারের সংবাদ পড়ে এবং নিজেরা পেয়ে আমাদের বেদনা এবং শোক প্রকাশ করতে আপনাকে লিখছি। প্রতিটি বিশ্বাসযোগ্য খবর থেকেই এটা জানা যায় যে, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সেনাদল তাঁদের আগ্নেয়াস্ত্র এর সকল শক্তি ‘প্রতিরোধ’ এর দুর্গ গড়ে তুলতে ব্যবহার করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্ত্রহীন শিবিরে। কমপক্ষে পাঁচ জন বিভাগীয় প্রধান কে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের সাথে মারা গেছেন আরও অসংখ্য গবেষণা সহযোগী, ছাত্র, কর্মচারী এবং তাঁদের পরিবার।

যদি এবং যতক্ষন না পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী রেড ক্রস বা জাতিসংঘ বা এমন আরো যা নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের বর্তমান বিধ্বস্ত পূর্ব পাকিস্তানে (যাকে সিংহভাগ বাংলাভাষী অধিবাসী এখন “বাংলার দেশ”, বাংলাদেশ বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে) প্রবেশের অনুমতি দেয়, ততদিন পর্যন্ত এই দক্ষিণ এশীয় হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হিসাব মেলা অসম্ভব। তা সত্বেও, ইতোমধ্যে আমরা যা জেনেছি, তা হতে এটা বুঝা যায় যে বাঙ্গালীদের মৃত, আহত এবং আতঙ্কিতদের সংখ্যা যতই হোক না কেন, সামরিক গুলিবর্ষণে হত্যার এক নতুন রেকর্ড পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী বিগত ছয় সপ্তাহে স্থাপন করেছে।

.

১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আমাদের দেশ পাকিস্তানে ট্যাঙ্ক, বিমান, কামানসহ দুই বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের সামরিক ‘সাহায্য’ সরবরাহ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর সীমান্ত সম্ভাব্য কম্যুনিস্ট আগ্রাসন থেকে ‘ঠেকিয়ে’ রাখার জন্য পাকিস্তান সিয়াটো (দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় মৈত্রী সংগঠন) তে যোগ দেয়ার পর থেকে এই সামরিক ‘সাহায্য’ দেয়া হয়। যদিও গত মাসের হত্যাকাণ্ডের আগে পাকিস্তান সেসব মার্কিন সামরিক সামগ্রী ব্যবহার করেছে কেবল ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে ইন্দো-পাক যুদ্ধে। এই যুদ্ধের পর আমাদের সরকার পাকিস্তানে পাঠানো সামরিক চালানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু ১৯৭০ সালের অক্টোবরে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এবং আমরা আরো ৩০০ সাঁজোয়া সৈন্যবাহী বাহন, ৪ টি সমুদ্র পরিভ্রমণকারী বিমান, ৬ টি এফ – ১০৪ যুদ্ধবিমান এবং ৭ টি বি – ৫৭ বোমারু  বিমান পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছি।

আমরা সরকারের নিকট যারপরনাই তীব্র আবেদন জানাই, যাতে সরকার পাকিস্তানের পাঠানো অস্ত্রের চালানের উপর যে পুনরায় সীমিত আকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেটা পুরোপুরিভাবে করে অনির্দিষ্টকালের জন্য চালু রাখে। আমরা আরও অনুরোধ জানাচ্ছি যে, যেকোনো রকম অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ রাখা উচিৎ যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জেনারেল খানের প্রশাসনকে অর্থ জোগাবে এবং যা দিয়ে তারা হয়তো অন্য কোথাও থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় করতে পারবে। আপাতত যতদিন না কোন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা মার্কিন জনগণকে আশ্বস্ত করতে পারছে যে বাঙ্গালী জনগণ হত্যা বন্ধ হয়েছে এবং যেসব পাকিস্তানী বাহিনী ঢাকাসহ বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তাদেরকে অত্র এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে ততদিন এই নিষেধাজ্ঞা চালু রাখা উচিৎ।

আমাদের আশঙ্কা যে আমাদের প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক নেতাদের মত পরিবর্তন হবে তার আশা খুবই ক্ষীণ। কিন্তু এটা বিশ্বাস করুন যে আমরা যেমন পন্থা প্রস্তাব করছি তা বাস্তবায়ন করা হলে বাঙ্গালীদের গণহত্যার ব্যাপারে আমেরিকার সর্বাত্মক সহযোগিতার ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকবে না।

বিনীত

স্ট্যানলি এ ওয়েলপার্ট, অধ্যাপক, ভারতীয় ইতিহাস;

ডঃ আর সার দেসাই, অধ্যাপক, দক্ষিণপূর্ব এশিয় ইতিহাস;

জে রিচার্ড সিসন, অধ্যাপক, ভারতীয় রাজনীতি;

রুপার্ট এমারসন, বহিরাগত অধ্যাপক, এশিয় রাজনীতি;

হান্স এইচ বায়েরওয়াল্ড, অধ্যাপক, জাপানি রাজনীতি;

ফ্রেড জি নশেলফার, অধ্যাপক, জাপানি ইতিহাস;

জে লেরয় ড্যাভিডসন, অধ্যাপক, ভারতীয় কলা;

ড্যাভিড এম ফারকুহার, অধ্যাপক, চায়নিজ ইতিহাস;

রবার্ট এ উইলসন, অধ্যাপক, জাপানি ইতিহাস।

.

13.103.367-370

শিরোনামঃ বাংলাদেশে মর্মান্তিক ঘটনার প্রতি সিনেট সদস্য স্যাক্সবীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ উল্লেখ

সূত্রঃ সিনেটের কার্যবিবরণী

তারিখঃ ২০ জুলাই, ১৯৭১

কংগ্রেস সম্পর্কিত সিনেট কার্যবিবরণী

পূর্ব পাকিস্তানের মর্মান্তিক ঘটনা

২০ জুলাই, ১৯৭১                                                                              স ১১৫৯১

জনাব স্যাক্সবী। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার পরবর্তী প্রভাব এবং হিসাব সম্পর্কে সিনেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। কোন দীর্ঘ বক্তব্যের প্রয়োজন নেই। অনুচ্ছেদ গুলো নিজেরাই কথা বলে। আমি শুধু এটাই পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধ করতে স্যাক্সবী-চার্চ সংশোধনীতে ৩১ টি অনুমোদন পাওয়া গেছে। এই অনুমোদনকারীগণ, সাথে আইডাহোর সিনেটর (জনাব চার্চ) এবং আমি মার্কিন সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ গঠন করে। আগামীকাল অন্তত একজন সিনেটর এই বর্ধমান অনুমোদনকারী তালিকাতে নাম লেখাবেন। আমরা শুধু চাই আমেরিকা আবার কোন গৃহযুদ্ধের কবলে না পড়ুক।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমি পাকিস্তান সম্পর্কে অনুচ্ছেদ গুলোতে সকলের সম্মতির লিখিত অনুলিপি দাবী করছি।

[বোস্টন সানডে গ্লোব, ১১ জুলাই, ১৯৭১ হতে গৃহীত]

পূর্ব পাকিস্তান – একটি ক্রমবর্ধমান সঙ্কট – মৃত্যু আর ধ্বংসের চাক্ষুষ বিবরণী

ঢাকা থেকে শুরু করে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত নদীর কূল ঘেঁষে ছড়িয়ে থাকা পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর ফেলে যাওয়া ধ্বংসযজ্ঞের চাক্ষুষ বিবরণী নিম্ন লিখিত বিশেষজ্ঞ কলামে বলা হয়েছে যা মে মাসের শেষ দিকে ঐ এলাকায় ধারণ করা হয়েছে।

উইলিয়াম এইচ এলিস, জনৈক কানাডিয়ান প্রকৌশলী যিনি বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী বাঁধ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি তাঁর কর্মক্ষেত্রে একটি অনানুষ্ঠানিক এবং খুবই বিপদজনক একটি সমীক্ষা চালান এবং তাতে নিজের মন্তব্য লিপিবদ্ধ করেন। এই বার্তা ডঃ জন রোডের নিকট পাঠানো হয় যিনি এক সময় ঢাকাতে কলেরা গবেষণাগারে কর্মরত ছিলেন এবং বর্তমানে বোস্টনের শিশু হাসপাতালে আছেন।

ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় হতে জলবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী এলিস এখন পাকিস্তান ত্যাগ করেছে।

এলিস চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রাকারী একটি শিপিং সংস্থার জলযানে(কোস্টার) করে নারায়ণগঞ্জ ত্যাগ করে যা বরিশালে যাত্রা বিরতি করেছিল। বাঁধানো চিঠিটি নিম্নরুপঃ

জাহাজ মোটামুটি ৬০০ জনের মত যাত্রী বহন করছিল। তারা ছিল সর্বত্র। লাইফবোটের নিচে, উপরে, কেবিনের উপরে, জাহাজের পাটাতনের মাঝখানে, গুদামের মধ্যে, করিডরে – সর্বত্র। আমি ইঞ্জিন কক্ষের দিকে যেতে চেষ্টা করছিলাম, কিন্তু আমার বিস্কুট ছুঁড়ে না দিয়ে আমি যেতে পারছিলাম না তাই আমি আবার পাটাতনের উপরে ফিরে এলাম।

আমরা আরো দুটি বিপরীত দিক থেকে আসা কোস্টারের দেখা পেলাম যেগুলো সামরিক যানবাহন দ্বারা পূর্ণ ছিল। চাঁদপুরে একটি তেলবাহী জাহাজ নোঙ্গর করে ছিল। কিছুদূর সামনে ডজনখানেক বোঝাই করা  স্থানীয় নৌকার দেখা মিলল।

হত্যাযজ্ঞ

নদীর তীর ধরে সত্যিকার অর্থে কোন কর্মকাণ্ড চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে কোন লোক দাঁড়িয়ে আছে, কখনো বা নৌকা বয়ে যাচ্ছে, মাঠে কোন কাজ হচ্ছে না, কোন চাষাবাদ নেই, রাখালের গরুর দল চড়াচ্ছে ক্ষেতে – এইই চোখে পড়ছে কেবল।

বরিশাল প্রায় জনশূন্য ছিল। কারফিউ শুরু হবার দেড় ঘণ্টা আগেও কেবল কুকুর গুলো ছিল রাস্তায়।

আমি যখন নামলাম তখন বুঝতে পারলাম কেন ওরা আমাকে নামতে দিতে চায় নি। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন তারা ১০ থেকে ২০ জন মানুষ এখানে হত্যা করছে। স্থানীয় একজনের কাছ থেকে এই তথ্য আমি পেয়েছি। প্রতিদিন বিকাল ৪ টায় এখানে ১০-২০ টি বিরতি নিয়ে নিয়ে একক গুলির শব্দ পাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে তারা খালে মৃতদেহ দেখতে পায়।

আপাতদৃষ্টিতে এই হত্যাযজ্ঞ গত সপ্তাহ থেকে বন্ধ আছে, নিদেনপক্ষে গুলিবর্ষণ বন্ধ হয়েছে। কিন্তু তারপরও তারা আরো মৃতদেহ দেখতে থাকে এবং যা বুঝা যাচ্ছে যে তারা এখনো বন্দীদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েই যাচ্ছে (বেয়নেট দিয়ে)।

আমি পোস্টারে (লুটপাট করা দোকান ঘরে) হিন্দুবিরোধী অভিযানের প্রমান পেয়েছি। যেখানে বলা আছে “যুদ্ধকালীন আইনের কর্তৃপক্ষের অধীনে”। আমি আমার স্থানীয় গাইডকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলেছিল, ওগুলো হিন্দুদের দোকান ছিল। এই অভিযান অত্র এলাকায় দুই বা তিন সপ্তাহ ধরে চলছে।

পশুসম

এখানে এখন বহু হিন্দু পলায়নপর অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারত চলে যেতে পারছে না। যখন একদিকে তারা পালাতে চায়, দেখে সে দিকে পাকিস্তানী সেনা তাদের পথরোধ করে আছে। তারা অন্যদিকে পালায়। তাদেরকে পশুর মত তাড়া করে বেড়ানো হচ্ছে।

এই অঞ্চলে একেক পরিবারে ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য থাকে, কিন্তু তাদের জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই। এখানে প্রচুর কাহিনী শুনতে পাওয়া যায় যে কিভাবে মুসলিমরা কথা গোপন করেছিল, হিন্দুদেরকে লুকিয়ে রেখে নিজের বিপদ নিজে ডেকে এনেছিল। এক গ্রামে তারা মুসলিম দের প্রধানকে ডেকে এনে হিন্দুরা কোথায় আছে জানতে চায়।

তিনি বলতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁকে পাট দিয়ে মুড়িয়ে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়…। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিতে প্রচুর আবেদন দেখা যাচ্ছে – শিল্প কারখানার শ্রমিকদের কাজে ফিরতে, সরকারি চাকুরীজীবীদের তাঁদের দায়িত্বে ফিরে আসতে। কিন্তু সবাই এটা জানে যে যদি কেউ কাজে ফিরে তবে সে গুলি খেয়ে মরবে।

…… এটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল যে সেনাবাহিনী তিনটি বিষয় এই ক্রমে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দিবেঃ প্রথমে, অন্তর্ঘাতক এবং ভারতের হিন্দু, দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের সকল সদস্য, তৃতীয়ত, গেরিলা যোদ্ধারা এবং অন্যান্য “অসামাজিক” বিষয়।

নিরন্তর দহন

দক্ষিণে সমুদ্রের দিকে যাওয়া ছাড়া ওদের আর কোন পথ নেই। তারা সাগর আর ক্রমশই এগিয়ে আসতে থাকা সেনাবাহিনীর মাঝখানে আটকা পড়ে গেছে।

বরিশাল থেকে ডাকের নৌকায় করে আমি খুলনা পৌঁছুলাম। এলাকাটি প্রহেলিকার মতো শান্ত। এখানকার ভূমি অতিশয় সবুজ আর সতেজ কিন্তু কোথাও কোন প্রাণের সাড়া নেই। কিছু সময় পর পর আমরা মরদেহ পড়ে থাকতে দেখলাম।

অন্য সময় আমরা গন্ধ পেতাম কিন্তু কচুরিপানা হতে তাদের তুলতাম না এগুলো পানির নিচে ভাসত।

……… আমরা আগুনে পুড়তে থাকা গ্রামের মধ্য দিয়ে যেতাম।যে আগুন মাইল ব্যাপী চলত।জঙ্গলগুলো এত ঘন ছিল যে জমির পর এর ভিতর দিকে কিছু দেখা যেত না কিন্তু আকাশের দু’পাশে আমরা ধোয়া দেখতে পেতাম।মাঝে মাঝে সার্চলাইটের আলোতে নদী তীরের দিকে দৌড়াতে থাকা নগ্ন মানুষকে দেখা যেত।তারা তাদের মাথায় অল্প কিছু সংখ্যক নিজের জিনিপত্র বহন করত।

এরপর যখন আমি লঞ্চের উপরের অংশে বসে ছিলাম তখন একজন কর্মচারী আমার পাশে বসে এবং বলে যে এই জ্বালাওপোড়াও গত দুই সপ্তাহ ধরে চলছে, প্রতি রাতে ………

এমনকি এই এলাকা যেটি জলোছ্বাস(নভেম্বর, ১৯৭০) হতে অনাক্রান্ত ছিল সেখানে হয়তোবা সাধারণ শস্যের ১০ শতাংশ থাকতে পারে –এই কারণে অধিকাংশ মানুষকে পালাতে হয়েছে অথবা খুন হয়েছে………

আমরা কুনাতে পৌছলাম।পরেরদিন সকালে- সেখানকার চলমান কর্মকান্ডের কিছু অংশ এখানে দেয়া হল………

এই এলাকাতে পরিস্থিতি হল নিছক চরম বিশৃংখল এর কাছাকাছি এর কারণ এই কুনা সীমান্তের পাশের এলাকা এবং ব্যাপক সংখ্যকের প্রভাবে এমনকি যারা কাজ করতে ফিরতে চায় তাদের জন্য এটি কার্যত অসম্ভব।

সেখানে ব্যাপক লুটপাট এবং জ্বালাওপোড়াও চলছিল কারণ সেখানে কোন আইন এবং শৃংখলা ছিল না……….. প্রতিদিন দিনের আলোতে ১০ থেকে ২০ জন ছুরিকাঘাত করা হত। আমি সেখানে থাকাবস্থায় একজন পুরুষ আর তার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করা হয়………

যখন সেনাবাহিনি আসে মুসলিম লীগ ,আওয়ামী লীগ এবং হিন্দুদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে। সেনাবাহিনী আসে আওয়ামী লীগ এবং হিন্দুদের নিশ্চিহ্ন করতে…… গ্রামের মধ্যে…সরকারি চাকুরিজীবিরা খুন হওয়ার ভয়ে অফিসে যেত না, তাদের সেনাবাহিনী হিন্দুদের খুন করতে বেশী ব্যস্ত ছিল…………

আমি যশোর ভ্রমণ করেহি ……… একটি রাস্তা যেটিতে আমি আগে অনেক বার ভ্রমণ করেছি…… আমি সেটিকে খুব ভালোভাবে চিনতাম ,আমি গ্রামটিকে চিনতাম এবং আমি কর্মকান্ড জানতাম…………… সেটি জনমানবশূন্য।

রাস্তার দু’পাশে গ্রামগুলো পুড়ে গিয়েছিল।আমরা গ্রামগুলো এ কোথায় দেখতে পাচ্ছিলাম না…………… তালগাছগুলোর দিকে তাকালে আপনারা দেখতে পাবেন যে তালগাছের পাতাগুলো সব ঝলসানো এবং গাছের গুড়িগুলো কালো বর্ণে রজিত।

কিছু গ্রাম সাতিশয়ে বাদ গিয়েছে এবং তাতে কিছু মানুষ আছে যারা আনমনে আপনার যাওয়ার পথে আপনার দিকে তাকিয়ে থাকবে।

সাধারণত কলগুলো কালো ধোঁয়া উদগিরণের কাজ করে; আমরা শুধুমাত্র একটি কলকে দেখলাম ধোঁয়া বের করতে………সেখানে পথের ধারে অসংখ্য ইটভাঁটা আছে, সবগুলোই জনমানবশূন্য।

পূর্বের মত মাঠের মধ্যে কার্যত কোন কাজকর্ম চলছিল না………চাষবাসের একমাত্র চিহ্ন ছিল চারণরত গবাদিপশু।

আপনি যখন কোন প্লেনে (যশোরে ) উঠেন তখন এটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়……… আপনার মালপত্র খোলা হয়েছে প্রতি অংশে তল্লাশি চালানো হয়েছে, আপনার সম্পূর্ণ শরীর তল্লাশিতে গিয়েছে…………তারা আমার পকেট চাকু খুযে পেয়েছিল এবং তা আমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছিল……আপনি প্লেনে উঠলে দু’জন সশস্ত্র গার্ডকে পাবেন।

                                                           ৩৭০

আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পেয়েছিলাম পিষিয়ে দেয়া এলাকাগুলোর আশপাশ।অধিকাংশ ঘরবাড়ি দেখতে ছাঁদ ছাড়া বাক্সের মত দেখাচ্ছিল।

                   সবকিছু অচল

১০,০০০ হাজার ফুট উচ্চতা হতে এটি সুস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল যে নদী, রাস্তা কিংবা চলার পথে কোনো যানবাহন নেই।কিছুই চলছিল না, কোন নৌকা তীরে বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়নি।

আমরা ঢাকার পশ্চিমে গঙ্গা অতিক্রম করলে, সেখানে অল্প কিছু সংখ্যক মাল বোঝাই নৌকা ছিল হয়তোবা পাঁচটি কিংবা ছয়টি, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে আপনি ডজনখানেক দেখতে পেতেন।আমরা নিচের দিকে গেলে পরিস্থিতি তূলনামূলক স্বাভাবিক দেখলাম ঢাকার কাছাকছি যাওয়া পর্যন্ত এবং এরপর আমি আবার মুখ ছাড়া বাক্সের নমুনা দেখতে পেলাম, যেখানে ছাঁদগুলো সব পোঁড়া……… এবং তখনও নিষ্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্য বিরাজমান।

ঢাকায় ফেরত যাওয়া হল।এটি স্পষ্ট যে পরিস্থিতি একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করেছিল যেখানে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে শহরের ,রাস্তার যানচলাচলের এবং এখানে হিন্দুদের নির্মলে বড় ধরণের অপারেশন চালাচ্ছে………যে সরকার দেশ চালাচ্ছে; জেনারেলদের গুপ্ত সমিতি ;তারা তাদের নিজেদের প্রোপাগান্ডা এমনভাবে গিলেছে যে তারা সত্যিকারে বিশ্বাস করে যে, প্রতি ঘটনার পিছনে একজন ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী দায়ী এবং প্রতিটি হিন্দু সন্দেহভাজন এবং দেখামাত্রই গুলি চালাতে হবে।

যেটি আমার কাছে এসেছে, পুরো দেশে এমন কোন পরিবার নেই যেটী ক্ষতিগ্রস্থ হয়নি-কোন সদস্যকে হারায়নি অথবা লুঠিত হয়নি অথবা তাদের নারীরা ধর্ষিত হয়নি; কিংবা কিশোরী মেয়েদের নিয়ে যাওয়া হয়নি।

এবং এটি স্বত্তেও ,কিংবা শুধুমাত্র এই কারণে এই সরকার সাধারণ মানুষ হতে কোন সমর্থন পায়নি।

সকলেই জানে পাকিস্তানের পত্রিকায় যা তারা পড়ছে সবই মিথ্যে এবং অভিজ্ঞতা হতে জানে যে অল ইন্ডিয়া রেডিও তে যা শুনে তা সত্য।

এটি উল্লেখযোগ্য তারা যেভাবে সকল গ্রামের খবর খুঁজে বের করে আনে।

এটি স্পষ্ট যে ঢাকার অবস্থা অন্যান্য জায়গা হতে অনেক বেশী স্বাভাবিক এবং এই স্বাভাবিক শব্দটি পূর্ব পাকিস্তানে সাবার কাছে একটি চলমান কৌতূক হয়ে দাড়িয়েছে………এমনকি ঢাকায়ও এখন তারা দিনের আলোতে হামলা চালাতে উদ্দ্বত।

গত সোমবার ১ টার দিকে তারা হাত গ্রেনেড ছোড়ে এবং ব্যাংকে ক্ষয়ক্ষতি দেখে গ্রেনেডই বলা যায়।

যাহোক ১টার দিকে তারা ঢাকার সাতটি জায়গায় আক্রমণ চালায়………… এবং অতএব তারা ঢাকাতেও আক্রমণ শুরু করে দিয়েছে; যেটিকে এই দেশের স্বাভবিক এলাকা বলে মনে করা হয়।

অন্যান্য বিষয়দি যা আমি আগে বর্ণনা করেছি যে, বাঙ্গালীদের সাথে আমি সময় কাটিয়েছি এবং তারা আমাকে বলেছে, “দয়া তোমার দেশ হতে যেন কোন সাহায্য না পাঠায়, এমনকি “খাদ্যও…….. খাদ্যগুলো শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর কাছে যাবে এবং আমাদের যন্ত্রণাকে বাড়াবে”। একজনের বেশী লোক আমাকে বলেছে “আমি এখন যে যন্ত্রণা চলছে তাতে মরার চেয়ে অনাহারে মরে যেতে চাই”।

.

13.104.371-375

শিরোনাম সূত্র তারিখ

অস্ত্রের জোরে ক্ষমতাসীন সরকারকে মদদ যোগানোর বিলাসিতা আমাদের সাজেনাঃ

সিনেটর ম্যাকগভার্ন

সিনেটের কার্যবিবরণী ২৩ জুলাই, ১৯৭১

কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট

পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি

জনাব ম্যাকগভার্ন. জনাব প্রেসিডেন্ট, পূর্ব পাকিস্তানের রক্তক্ষয় ও দমনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল হওয়া উচিত। গত বছরের ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত এই ভূমি এখন আনুষ্ঠানিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। কেবল বিশ্বব্যাংক মিশনের রিপোর্ট পড়লেই যে কেউ বাঙালীদের দুর্ভোগের সাথে একাত্ম হবেন, উদাহরণ স্বরূপ, যশোর শহরে, যেখানে কয়েক মাস পূর্বে ৮০,০০০ জন বসবাস করতেন, সেখানে এখন মাত্র ১৫,০০০ থেকে ২০,০০০ জন বসবাস করেন; ২০,০০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে এবং অবশিষ্টরা গ্রামাঞ্চলে পালিয়ে গেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আমরা যেমন শিখেছি, যাই হোক, এই জাতির উচিত আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও গণ শত্রুতার সময়ে আনুষ্ঠানিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। তবে, নিরপেক্ষতা মানে এই নয় যে, আমরা আরও সাহায্যের চালানের সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায্য নীতি সমর্থন করব।

এই মুহূর্তে, পাকিস্তানের জন্য আমেরিকার সাহায্য, যা পশ্চিম পাকিস্তানে যায়, তা অব্যহত রয়েছে। এই মাসে পাকিস্তানী জাহাজ পদ্মা ২ মিলিয়ন আমেরিকান সামরিক সরঞ্জাম করাচিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই জাতির এরূপ কোন সরকারকে ভর্তুকি প্রদানের বিলাসিতা করার সামর্থ্য নেই, যারা বলপ্রয়োগের মাধ্যমে এর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে দমন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকে।

উপরন্তু, বিশ্বব্যাংক মিশনের এই মাসে পূর্বে প্রদত্ত রিপোর্ট অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানে অর্থনৈতিক বিপর্যয় এমন আকার ধারণ করেছে যে, এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক সহায়তা অকার্যকর হতে বাধ্য। এই জাতির উচিত ব্যাংকের নেতৃত্ব অনুসরণ করা এবং পরিস্থিতির উত্তরণ না ঘটা পর্যন্ত সাহায্য প্রদান বন্ধ রাখা। গৃহযুদ্ধের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা আর্থিক সাহায্য যা পশ্চিমে ধাবিত হবে তার দ্বারা পূরণ করা যাবে না।

যাই হোক, এই অঞ্চলের দুটি জরুরী পরিস্থিতি তাৎক্ষণিক মনোযোগ আকর্ষণ করে। বর্তমান বিশৃঙ্খল রাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তান যেখানে অধিকাংশ জনগণ গ্রামাঞ্চলে আত্মগোপন করে রয়েছে এবং ৭ লক্ষেরও বেশি মানুষ দেশ * ছেড়ে পালিয়ে গেছে, সেখানে দুর্ভিক্ষের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফসল অযত্নে পরে রয়েছে এবং জাতির বাণিজ্যিক জীবন বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা বিশৃঙ্খল হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আর্থিক সহায়তা অব্যহত রাখা নয়, বরং বাঙালিদের জন্য রেড ক্রস, বা অন্য কোন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা সরঞ্জাম, শস্য এবং অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করার উদ্যোগ গ্রহণ করাই হবে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত আমেরিকান পদক্ষেপ। এটি নিশ্চয়তা প্রদান করবে যে, আমেরিকান সহায়তা শুধুমাত্র পাকিস্তানের গোড়ালি নিষ্পেষণে যারা নিষ্পেষিত হচ্ছে তাঁদের জন্য অনুমোদন করা হবে এবং আশা করা যায় যে, বাঙালিরা অন্তত একটি দুর্দশা থেকে পরিত্রাণ পাবে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের শরণার্থী পরিস্থিতির ব্যপারেও পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। উদ্বাস্তুদের এই সুবৃহৎ ঢলের কারনে নিশ্চিতভাবে ভারতের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাসমান বাঙালীদের সহায়তায় ভারতের এই মানবিক কার্যক্রমের প্রতি আমাদের সমর্থন প্রসারিত করা উচিত। এজাতীয় অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আমাদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে, তবে নিরপেক্ষতা নিপীড়ন ও শোষণে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বাধা হতে পারে না। ভারতীয়দের জন্য খাবার ও চিকিৎসা চালান এবং বরাদ্দকৃত শরণার্থী ত্রাণ তহবিল অনুমোদন করা উচিত যাতে তারা যেই গভীর সংকটের মুখোমুখি তা মোকাবেলা করতে পারে।

___________

13.105.

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ আজ গণহত্যার দৃষ্টান্তঃ সিনেটর প্রক্সমায়ার সিনেটের কার্যবিবরণী ২৭ জুলাই, ১৯৭১

এস১২১৯৮                                                                                ২৭ জুলাই, ১৯৭১

কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট

পূর্ব পাকিস্তানে চলমান ব্যপক গণহত্যা

জনাব প্রক্সমায়ার. জনাব প্রেসিডেন্ট, যারা গণহত্যা চুক্তি অনুমোদনে কালক্ষেপণ করেন তারা আমাদের উপকূল থেকে ৮০০০ মাইল দূরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ট্রাজেডি উপেক্ষা করতে পারেন না।  মার্চ থেকে শুরু করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দৃশ্যত দেশকে বলাতৎকার করছে, হাজার হাজার পুরুষ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে যাদের একমাত্র অপরাধ এই যে তারা হিন্দু।

এদেশ ত্যাগ করে যাওয়া সাংবাদিকদের চোখ দিয়ে আমরা বৃদ্ধ ও শিশু, গরীব চাষী, জনতা যাদের কখনই কোন বিদ্রোহী বাহিনীর সঙ্গে কোনো সংযোগ ছিল না তাদের হত্যা করতে দেখেছি। আমি ১৩ জুন লন্ডন সানডে টাইমসে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেই:

পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী মার্চের শেষ থেকে শুরু করে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিকের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই হল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সরকার কর্তৃক মার্চের শেষ থেকে আরোপিত সংবাদ নিষেধাজ্ঞার পিছনের ভয়ংকর বাস্তবতা। এ কারণেই পাঁচ মিলিয়নের অধিক উদ্বাস্তু পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতের উদ্দেশ্যে স্রোতের মত চলে গিয়েছে, কলেরা এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি নিয়ে।

জনাব প্রেসিডেন্ট, এই নিবন্ধটির নামকরণ করা হয়েছে শুধুই “গণহত্যা।” পূর্ব পাকিস্তানে কি ঘটে যাচ্ছে ঐ শব্দ তা বর্ণনা করে।

আমি ১৩ জুন লন্ডনের সানডে টাইমসে “কেন শরণার্থীগণ পালিয়ে গিয়েছিল” শিরোনামে একটি নিবন্ধ থেকে আবার  উদ্ধৃত দেই:

হাড়-চূর্ণ করা সামরিক অপারেশনের দুটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর একটি হল গণহত্যা, কর্তৃপক্ষ যাকে “নির্মূল অভিযান” বলতে পছন্দ করে। আরেকটি হল “পুনর্বাসন প্রচেষ্টা”। এটি হল পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তানের অধীন একটি উপনিবেশে রূপান্তর করার পদক্ষেপ সমূহ বর্ণনার একটি মাধ্যম। এই বহুল ব্যবহৃত বিশেষণ সমূহ এবং সরকারী দলিলাদিতে পুনঃ পুনঃ ‘দুষ্কৃতিকারী’ ও ‘অনুপ্রবেশকারী’ উল্লেখ করাও এই হেঁয়ালিরই একটি অংশ যা বিশ্ব কল্যাণে প্রণীত হচ্ছে। অপপ্রচারের আড়ালে বাস্তবতা হল উপনিবেশ স্থাপন এবং হত্যা করা।

গণহত্যা কেবল অতীতের বিষয় নয়। শুধুমাত্র দেখুন পাকিস্তানে এই মুহূর্তে কি ঘটছে। গণহত্যা কনভেনশন নিয়ে কাজ করতে আমরা আর কত দেরি করতে পারি?

___________

13.106.

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের পরিস্থিতিঃ সিনেটর ফুলব্রাইটের ভাষণ সিনেটের কার্যবিবরণী ২৮ জুলাই, ১৯৭১

                                                                                                   এস১২৩৮১

কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট

পূর্ব পাকিস্তান

জনাব ফুলব্রাইট. পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহের ভয়ানক পুনরাবৃত্তি শুধুমাত্র গুরুতর অপব্যবহারই চিহ্নিত করে না যার সাথে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা সম্পৃক্ত। এটি পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং আপাতদৃষ্টিতে প্রেক্ষাপট নির্বিশেষে স্থিতাবস্থা বজায়ের সমর্থনে অনিবার্য প্রতিক্রিয়ার সাথে মার্কিন নীতির অসংবেদনশীলতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।

মার্কিন সামরিক সহায়তা ছিল কমিউনিজমের বিরুদ্ধে সুরক্ষায় পাকিস্তানকে সজ্জিত করা। পরিবর্তে এটি ব্যবহৃত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, এবং পরবর্তীতে গণতন্ত্রের দিকে ধাবমান পাকিস্তানের নিজের দুর্বল পদক্ষেপকে দমন করতে।

মার্কিন সহায়তার এই স্বেচ্ছাচারিতা সত্ত্বেও, আমরা বিস্মিত যে, সামরিক পণ্যের চালান এখনো চলমান, দৃশ্যত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উপর ভ্রান্ত প্রভাব বা “লিভারেজের” কারনে। এই বেদনা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে কারন প্রশাসন ফরেন রিলেশনস কমিটিকে আশ্বস্ত করেছে যে ২৫ মার্চ থেকে কোন সামরিক সরঞ্জাম পাকিস্তানে সজ্জিত হয়নি এবং তা সরবরাহের জন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়নি। এটি বেসরকারী নির্বাহী পররাষ্ট্রনীতি সিদ্ধান্তের আরেকটি বেদনাদায়ক বিষয় যে, এই সিদ্ধান্ত কোন কারণ ছাড়াই কোনরূপ প্রকাশ্য আলোচনা ও বিতর্ক থেকে কঠোর বিচ্ছিন্নতায় গৃহীত হয়েছে।

পূর্ব পাকিস্তানের মূল্যে পশ্চিম পাকিস্তানে অসম উন্নয়নের ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত আর্থিক সহায়তার অপব্যবহার করেছে, যা পক্ষান্তরে সমস্যাসমূহ বৃদ্ধি করেছে যেটি এখন পরিষ্কার ভাবে উম্মোচিত। উদীয়মান প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারকে ধ্বংস এবং নির্মম সামরিক অভিযানের মুখে, যা প্রধানত হিন্দু ও বুদ্ধিজীবী ও বাঙালী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছে, শত হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে, তথাপিও আমরা পাকিস্তান সরকারকে অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে সমর্থন করি। আরও সাহায্যের বিরুদ্ধে বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশ ও বিশ্বের অন্যান্য দাতা দেশ গুলোর বিপরীতমুখী মনোভাবের মুখে এই সমর্থন চলমান রয়েছে।

কথিত আছে যে, আমরা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করব না-এটি একটি নীতি, যা ১৯৬৪ সালে আরও ভালভাবে বোঝা উচিত ছিল, বা ১৯৪৯ সাল থেকে চায়নাতে ঐ বিষয়ের জন্য যে আর্থিক সহায়তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা আমাদের উচিত হবে না। তবে, গৃহযুদ্ধে জড়িত একটি সরকারকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে সমর্থন করা অপর পক্ষকে সাহায্য করার ন্যয় হস্তক্ষেপের শামিল। এটি দেখতে হতাশাজনক যে, ইসলামাবাদে সাহায্য অব্যহত রাখার মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও সামরিক একনায়কতন্ত্রের অনুগমন নীতিসমূহের সাথে নিজেদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা খুজে পেল, যা ঐ সকল বিষয়ের সম্পূর্ণ পরিপন্থী যেসব ক্ষেত্রে আমরা বলে থাকি যে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

দুর্ভাগ্যবশত আত্মবিরোধিতার এই সামাজিক চাপের প্রভাব পাকিস্তানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পাকিস্তানি সামরিক অভিযানের দ্বারা উদ্ভূত শরণার্থীদের ভারত অভিমুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে যেখানে তারা একটি গভীর সমস্যা ধারণ করে, এবং, অবশ্যই এই পরামর্শ দেয়া অতিরঞ্জন নয় যে এটি বিশ্ব শান্তির জন্য একটি সম্ভাব্য বিপদ, ইতিপূর্বে যেরূপ ২০ বছর পূর্বে ফিলিস্তিনে এর উদ্ভব হয়েছিল। এই অসহায় বাঙ্গালী শরণার্থীরা ভারতের একটি এলাকার মধ্যে নিষ্পেষিত যেখানে বিপ্লব ও অস্থায়িত্ব ইতিমধ্যেই ব্যপকভাবে বিদ্যমান এবং দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্র্য সমস্যা খুবই প্রকট। ভারত কোনক্রমেই শরণার্থীদের পণ্যদ্রব্য, বাসস্থান, কর্মসংস্থান, এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যপক চাহিদার এই বোঝা বহন করতে পারবে না। এই পরিস্থিতি সহজেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দ্রুততর বিপ্লবী কার্যকলাপকে পুনরায় ত্বরান্বিত করতে পারে যা ভারতের নিজেদের ভবিষ্যতের প্রতি বা আরেকটি ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ সংঘটনের হুমকি বহন করে।

এ অবস্থায় প্রশাসন বলছে যে পূর্ব পাকিস্তানে একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য এটি গোপনে পাকিস্তানীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। তবে, পাকিস্তান একনায়কত্বের ভর্তুকি অব্যহত রয়েছে। এ আই ডি জুনের ১০ তারিখে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্য বিতরণের জন্য জাহাজ ভাড়া করতে পাকিস্তানকে ১ মিলিয়ন দিচ্ছে, নিঃসন্দেহে এটি একটি উপযুক্ত উদ্দেশ্য। তবে, বিশ্লেষণ সাপেক্ষে সেখানে কিছু গুরুতর প্রশ্ন রয়েছে। ইতিপূর্বে পাকিস্তানকে ঘূর্ণিঝড় ত্রাণের জন্য অনুরূপ জাহাজ সরবরাহ করা হয়েছিল এবং এরূপ প্রকাশিত হয়েছে যে, সে এগুলো সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, নতুন জলযানের জন্য এই ১ মিলিয়ন কি সামরিক লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিদ্যমান জাহাজ ব্যবহার করার অনুমতি প্রদানের একটি উপায় নয়?

তাছাড়া আমাদের জন্য কি নিশ্চয়তা রয়েছে যে, আমরা এখন যেই ১ মিলিয়ন দিচ্ছি তা দিয়ে পাকিস্তান সামরিক উদ্দেশ্য সাধনে জাহাজ ভাড়া করবে না?

পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি অসহনীয়, তেমনি পররাষ্ট্রনীতি যা বাস্তবে সেখানে স্থিতাবস্থা জোরদার করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বরং সীমিত হলেও সমুদয় প্রভাব ব্যবহার করা উচিত যাতে তারা একে একটি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারে। এ প্রসঙ্গে, সামরিক পণ্য, খুচরা যন্ত্রাংশ সহ, পাকিস্তানে না পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া উচিত এবং গত হেমন্তে প্রস্তাবিত এফ-১০৪, বি-৫৭, টহল বিমান এবং সাঁজোয়া কর্মীবাহনের প্রস্তাব অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানীরা উভয়েই একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধানে একমত না হওয়া পর্যন্ত এবং ভারতে অবস্থিত শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করা উচিত। প্রশাসন যদি তার নিষ্ফল স্থিতাবস্থা পরিত্যাগ না করে, তাহলে সে উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে আমি কংগ্রেসের হস্তক্ষেপ সমর্থন করব।

.

13.107.376-377

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মন্ডেল- ফ্রেজার যৌথ প্রস্তাব সিনেটের কার্যবিবরণী ৩০ জুলাই, ১৯৭১

S.J. Res 143 পাকিস্তানের শান্তি সম্পর্কিত একটি যৌথ উদ্যোগ, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে অর্পিত।

Mr. MONDALE, মি. প্রেসিডেন্ট, ব্যাপক মৃত্যু ও দুঃখ-দুর্দশার এই বিশ্বেও পূর্ব-পাকিস্তানের এই ভীতিকর পরিস্থিতির কোন সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় না। শত হাজার মানুষ রোগ, অনাহার ও সামরিক বাহিনীর পাশবিক নিপীড়নে মৃত্যুবরণ করে। বিশ্ব ব্যাংকের একটি প্রামাণ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বাধিক বিলম্বহীন কোন উদ্যোগও হাজার হাজার মানুষকে অনাহারে মারা যাওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে না।

এখন প্রায় ৭০ লক্ষেরও অধিক মানুষ চরম হতাশায় ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।

এটা যেন প্রায় মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের দ্বিগুণ জনসংখ্যার মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি থেকে কোন হতদরিদ্র ও রোগবাহী কোন বিদেশী ভূমিতে নির্বাসিত অথবা যেন মিনিয়াপলিস সে.পল বা সে.লুইস বা ডেনভার বা সান ফ্রান্সিসকোর অধিকাংশ জনগণ হত্যাকাণ্ডের শিকার বা মৃত্যবরণ করতে বসেছে।

আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মধ্যে প্রায় সবাই এই হৃদয়বিদারক অবস্থার প্রকৃত চিত্র উপলদ্ধি করতে ব্যর্থ হবে, পৃথক পৃথক মর্মান্তিক অসংখ্য ঘটনা-প্রিয়জন হারানো, কর্মজীবন ধ্বংস- যা মহা সংখ্যাতাত্ত্বিক বিপর্যয়ের জলজ্যান্ত বাস্তবতা।

কিন্তু আমি মনে করি, আমেরিকার জনগণ এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির একটা বিশেষ ব্যাপারে উপলদ্ধি করতে পেরেছে-এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রতি আমাদের সরকারের অযৌক্তিক অবহেলা।

মিথ্যা বর্ণনা আর অসার প্রতিশ্রুতি যা যুক্তরাষ্ট্র করে এসেছে যখন তারা পূর্ব পাকিস্তানের দমনমূলক সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করছিল আর লক্ষাধিক মানুষ নিপীড়িত হওয়া সত্ত্বেও তারা নির্মম নীরবতা বজায় রেখেছিল, তা আর এখানে বর্ণনা করার কোন প্রয়োজন নেই।

কিন্তু দক্ষ রাষ্ট্রপরিচালককে এই ভয়ানক সমস্যায় আহ্বান করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায় নি। মানুষের জীবন ও শান্তিপূর্ণ প্রজন্মের ব্যাপারে সদা উদ্বিগ্ন, এমন অলঙ্করণে প্রসিদ্ধ এই জাতি যা আমরা জানি, তাকে বাস্তব প্রমাণ করার সময় এখনও ফুরিয়ে যায় নি।

কংগ্রেসম্যান FRASER  আমি যৌথভাবে এই সিনেট হাউজে উপস্থাপন করছি একটি সমাধান যা ঘোষণা করে যে এটি কংগ্রেসের উপলদ্ধি যে প্রেসিডেন্ট অতিসত্ত্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সাথে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ ও হত্যাকাণ্ড বন্ধে একসঙ্গে কাজ করতে তৎপর হবেন।

  1. J. Res.  1 3.

যেহেতু এ গৃহযুদ্ধ পূর্ব পাকিস্থানের হাজারো মানুষের মৃত্যু এবং প্রচুর সংখ্যক মানুষের দুর্দশা ডেকে আনছে; এবং যেহেতু এই শত্রুতার অস্তিত্ত্ব এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি পরিষ্কার হুমকিস্বরূপ এবং একইভাবে গোটা বিশ্বের শান্তির প্রতি এক প্রবল হুমকি; এবং

যেহেতু প্রেসিডেন্ট মানবজাতির জন্য একটি শান্তিপূর্ণ প্রজন্ম গঠণে USSR   ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সহযোগিতা পাওয়ার ইচ্ছা ব্যাক্ত করেছেন,

এবং সেহেতু

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সিনেটসভা ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ কর্তৃক সমাধানকৃত”

অর্থাৎ এটা কংগ্রেসের উপলদ্ধি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ পাকিস্তান সরকারকে যেকোনভাবে পূর্ব পাকিস্তানে চলমান গৃহযুদ্ধ নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণে বাধ্য করতে জরুরীভিত্তিতে USSR ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের কূটনৈতিক সহযোগিতা কাম্য করা; উক্ত অঞ্চলে একটি আইনসিদ্ধ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারকে কোন প্রকার বিদ্বেষ ছাড়াই শাসনভার ন্যাস্ত করা, কোন ধরণের প্রতিহিংসা ছাড়াই সব শরণার্থীদের, যারা পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধের কারণে উদ্বাস্তু হয়েছে, তাদের বসতবাড়িতে দ্রুত ও বাধাহীনভাবে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়া সহজতর করা এবং পূর্ব পাকিস্তানে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন দ্রুত পুনরারম্ভ করার জন্য যথাসাধ্য উপযুক্ত পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

.

13.108.378-379

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশে বায়াফ্রার ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছেঃ সিনেটর পিয়ার্সের ভাষণ

সিনেটের কার্যবিবরণী

 

৩০ জুলাই, ১৯৭১

 

এস ১২৬২৪                                                                     ৩০ জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানঃ বায়াফ্রার ঘটনার পুনরাবৃত্তি

( সিনেটর মিঃ পিয়ারসনের ভাষণ)

মি. পিয়ার্সনঃ মিঃ প্রেসিডেন্ট, পাকিস্তানের ধারাবাহিক অরাজকতার কারনে প্রায় দুই লাখ মানুষ তাদের জীবন হারিয়েছে, ষাট লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, এবং পূর্ব পাকিস্তানের রবি শষ্যের ফলনের সম্ভাবনা এতটাই কমে গিয়েছে যে তা সেখানকার মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য অপর্যাপ্ত। আসছে শরতে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যপক দুর্ভিক্ষের যে মূর্তিমান আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তা বায়াফ্রার ঘটনার চেয়েও বেশিমাত্রায় প্রাণহানির সৃষ্টি করে নির্মমভাবে বাস্তবে ধরা দিতে পারে। যেহেতু এই ব্যপক প্রাণহানির ঘটনা প্রতিরোধ করা যেত তাই এটি সবাইকে আরো বেশি দুঃখভারাক্রান্ত করেছে। উদ্বৃত্ত খাদ্যের এই পৃথিবীতে রাজনৈতিক বিরোধের জন্য অনাহারে মানুষ মারা যাওয়াটা এক কথায় মানুষের প্রতি মানুষের চরম অসভ্যতা।

ত্বরিত পদক্ষেপ প্রতীয়মান হওয়া স্বত্বেও আমেরিকানদের কাছ থেকে পাকিস্তানিদের নিকট জরুরি খাদ্য সরবরাহ কেবলমাত্র খাদ্যদ্রব্য পরিহনের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়। জনগণের কাছে খাদ্য পৌছানোর জন্য খাদ্য সরবরাহের স্বাভাবিক বণ্টনব্যবস্থাকে অবশ্যই পুনঃস্থাপন করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত না পাকিস্তান সরকার ও পূর্ব পাকিস্তানের মতবিরোধ সৃষ্টিকারী বিষয়সমূহের রাজনৈতিক সমঝোতা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই যোগসূত্র পুনঃস্থাপন করা সম্ভব নয়। এটি দূর করার জন্য রাজনৈতিক মীমাংসার লক্ষ্যে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কাছে সহজে ত্রাণ পৌছানোর উদ্দেশ্যে আমাদের সরকারকে অবশ্যই প্রতিটি আইনসংগত পথ অবলম্বনের জন্য সুসচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্র নাইজেরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের মত একই ধরনের নৈতিক-রাজনৈতিক উভয় সঙ্কটে রয়েছে। একদিকে, আমেরিকানদের জন্য হাজার হাজার মানুষের অনাহারে অকারণ বীভৎস মৃত্যুর মাঝে চুপচাপ বসে থাকা নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য। অপরদিকে, আমাদের এটাও অনুধাবন করা উচিত যে বিরোধী শক্তির সাথে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানোর জন্য পাকিস্তান সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ করা একটি সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপের সামিল।

তাহলে এখন কি আমরা পাকিস্তানের জনগণের জন্য আমাদের উদ্বেগকে পৃথিবীর যেকোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে আমাদের বিরত থাকার আকাঙ্ক্ষার সাথে সমতায়ন করব?

আমাদের পররাষ্ট্র নীতিমালার সাধারণ নীতি অনুযায়ী, অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়টি দুটি মৌলিক ধারণার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমত, অন্য সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দ্বারা আমেরিকার জনগণ কদাচিৎ সরাসরি প্রভাবিত হয়। দ্বিতীয়ত, আমেরিকা এটা অনুধাবন করতে পেরেছে যে বিশ্ববব্যাপী তাদের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা সীমিত; যুক্তরাষ্ট্র চাইলেই পৃথিবীর সকল মানুষের সমস্যা সমাধানের জন্য মধ্যস্থতা করতে পারে না।

যাইহোক, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এসব সাধারণ নীতিমালার কোনটিই বৈধ নয়। পূর্ব পাকিস্তানে অনাহারে মানুষের অনর্থক মৃত্যু আমেরিকার জনগণের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে, সম্ভবতঃ যার প্রভাব দৃষ্টি আকর্ষক বাইজেন্টাইনের চেয়েও বেশি, সরকারের সহিংস পরিবর্তন কূটনীতিকদের শক্তি ও সময় নিঃশেষ করে দেয়। প্রত্যেক আমেরিকান, যে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে অবগত, প্রতিদিনই একথা চিন্তা করে নিঃশেষিত হয়ে যায় যে তার সরকার সেখানকার অবস্থা দূর করতে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

দ্বিতীয় নীতির কথা বিবেচনা করলে, এক্ষেত্রে বর্তমানে, পাকিস্তান সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সহযোগী দাতা দেশসমূহের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে অন্যান্য সহযোগী দাতা সংস্থাগুলোর সদস্যদের দ্বারা বৈদেশিক সাহায্যের আকারে সরবরাহকৃত পুঁজি ও দ্রব্যসামগ্রীর উপর পাকিস্তান সরকার নির্ভরশীল। আমেরিকা ও অন্যান্য দাতা দেশসমূহের করদাতাগণ নিশ্চয়ই এমন কোন সরকারকে অর্থনৈতিক সাহায্য করাকে, সামরিক সাহায্য তো নয়ই, উপেক্ষা করতে পারবে না যে কিনা তার জনগণের একাংশকে উক্ত সাহায্য থেকে বঞ্চিত রাখে বরং আরো খারাপভাবে জনগণকে হত্যার জন্য উক্ত অর্থ ব্যবহার করে। এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার, অন্যান্য সহযোগী দাতা সংস্থাগুলোকে সাথে নিয়ে, পাকিস্তান সরকারকে স্পষ্ট করা উচিত যে সাহায্য অব্যাহত রাখার বিষয়টি পূর্ব পাকিস্তানে ধর্ম ও রাজনৈতিক যোগাযোগ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষ হত্যা বন্ধ করা এবং সবাইকে পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী সরবরাহের উপর নির্ভরশীল।

মিঃ প্রেসিডেন্ট, আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কি পাকিস্তানের জনগণকে একথা বুঝাতে ব্যর্থ হওয়া উচিত যে আমেরিকার অনেক মানুষ এই অপ্রয়োজনীয় অনাহার ও মানুষের এই নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞকে উপেক্ষা করতে পারছে না? কংগ্রেস, আইনসঙ্গতভাবেই, পাকিস্তানে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্যকে বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ করতে পারে।

.

13.109.380

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের পরিস্থিতির ক্রমাবনতিঃ সিনেটর স্যাক্সবীর আবারও বাষণ সিনেটের কার্যবিবরণী ২ আগষ্ট, ১৯৭১

মি. প্রেসিডেন্ট, পূর্বপাকিস্তানে দ্রুত অবনতিশীল ঘটনাগুলো ক্রমাগত মহামারি, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা এবং যুদ্ধের দিকে চালিত হচ্ছে.. প্রতিদিন ভারতীয় সীমান্তে ৪০০০০ থেকে ৫০০০০ শরণার্থী ভীড় জমাচ্ছে, যার আসন্ন সংখ্যা হতে পারে ভারতীয় সীমান্তে মোট ৭,৩৫০০০ উদ্বাস্তু। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন : ভারতের সাথে আমার যুদ্ধ প্রত্যাসন্ন। তাদেরকে(ভারত) এবং বিশ্বকে সতর্ক করা যাক,মানে এটা সম্পূর্ণ যুদ্ধ। বস্তুত এটা সঠিক হতে পারে। C.L. sulzeburger ১৮ই জুলাই নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেছেন, কিসিঞ্জার ভ্রমণ বিপদের ছাপ ফেলে গেছে যে, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রমশ খারাপ হতে থাকা সম্পর্কই শান্তির পথে ব্যাপক ঝুঁকি এবং সম্ভাবনা রয়েছে যে, চীন ও রাশিয়া দ্বারা সমর্থিত এই যুদ্ধ দক্ষিণ এশীয় প্রতিবেশিদের মধ্যে বিস্ফারণ ঘটাবে। এতে করে নতুন আন্তর্জাতিক সাম্যাবস্থা সৃষ্টিতে ওয়াশিংটনের একই সঙ্গে মস্কো এবং পীকিং এর সাথে সম্পর্ক উন্নতি করার প্রচেষ্টা ধ্বংস হতে পারে। এখনো কেন ইয়াহিয়া যুদ্ধের হুমকি দেয়? আবুল মাল আব্দুল মুহিত, নিউইয়র্কে পাকিস্তান দূতাবাসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এবং ইয়াহিয়া মন্ত্রীসভার সাবেক উপ-সচিব পক্ষত্যাগ করেন এবং বলেন ইয়াহিয়া শাসন “বৈধতার সব দাবি হারিয়েছে।” তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে “১৫ মিলিয়ন পূর্ব পাকিস্তানি পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অনাহার মারা যাবে। ভারত ইয়াহিয়ার শোষণ রাজত্বের প্রায় সাত মিলিয়ন উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়। তা সত্ত্বেও, ইয়াহিয়া বলেছেন তাঁর ধৈর্যের একটা সীমা আছে।” কি ধৈর্য? আমি আনন্দিত যে জাতিসংঘ পূর্ব পাকিস্তানে ১৫৬ বেসামরিক ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠাতে পারে এবং ১৫ আগস্ট জাতিসংঘ শিশু তহবিল পূর্ব ভারতে এক হাজার কেন্দ্র খুলে উচ্চ প্রোটিন যুক্ত খাবার বিতরণ করার জন্য। নিউইয়র্ক টাইমস সম্পাদকীয় গতকাল বলেছিলেন: এই সময়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে ত্রাণ সহায়তা বন্ধ করে সকল আমেরিকান ইয়াহিয়া সরকারকে সহয়তা করা উচিত। প্রতিবেদনে প্রকাশিত জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকদের পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর আমেরিকা-সমর্থিত পরিকল্পনাটি বাঙালির দূর্দশা লাঘবে হয়ত সহায়তা করতে পারতো। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশের এই বিস্ফোরণকে ঠেকানোর জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট রাজনৈতিক সমর্থন তা পায়নি যা হিমালয়ে আমেরিকান-চাইনিজ-সোভিয়েত সম্মুখযুদ্ধের অনাকাঙ্ক্ষিত সূচনা করতে পারে। এখনই সময় আমাদের নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার। আমি পাকিস্তানকে সাহায্য স্থগিত করার জন্য পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির যে প্রস্তাব তা সংসদে গ্রহণ এবং সিনেটকে একই রকমের স্যাক্সবি-চার্চ সংশোধনী গ্রহণ করার জন্য তাড়া দিয়েছিলাম।

এখনই সময় আমাদের নীতি সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়ার। আমি পাকিস্তানকে সাহায্য স্থগিত করার জন্য পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির যে প্রস্তাব তা সংসদে গ্রহণ এবং সিনেটকে একই রকমের স্যাক্সবি-চার্চ সংশোধনী গ্রহণ করার জন্য তাড়া দিয়েছিলাম।

.

13.110.381-383

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে এক নতুন নামঃ কংগ্রেস সদস্য রায়ান প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ৩ আগস্ট, ১৯৭১

স্পিকার মি. রায়ান, বিশ্ব সম্প্রদায়ে “বাংলাদেশ” একটি নতুন নাম। বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) এমন একটি জায়গা যেখানে ট্রাজেডি অব্যাহত, তা সত্বেও এশিয়ায় যা ঘটছে এ নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় ভীত। সকল বিবেচনা অনুসারে পূর্ব পাকিস্তান একটি দুর্যোগপূর্ণ এলাকা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বা আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীরা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে একটি অদৃশ্য সাম্প্রদায়িক সহিংসতা আরোপ করতো। শহরগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে, শিশু ও নারীরা জবাই হয়েছে। তাদের নিষ্ঠুর অবিচার সকল কিছুকে ছাড়িয়ে গেছিলো। অনুমান করা হয় যে ২৫০,০০০ বা আরো বেশি পূর্ব পাকিস্তানি বা বাঙালি মারা গিয়েছিল। সাত লক্ষেরও বেশি মানুষ উদ্ভাস্তু হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছিলো যাদের সাহায্য করার মত পর্যাপ্ত সম্পদ ছিলোনা। নিউজউইক ম্যাগাজিনের আগস্ট ২, ১৯৭১, ইস্যু থেকে একটি উদ্ধৃতি দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া কিছু মর্মান্তিক ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। এটি তাদের একটি প্রাত্যহিক কাজের মত ছিল। পূর্ব পাকিস্তানে হালুয়াঘাট গ্রামের যুবকদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা তাদের অবহিত করেন যে, তার আহত সৈন্যদের জরুরিভাবে রক্ত ​​প্রয়োজন, তারা কি দাতা হতে চায়? যুবকদেরকে অস্থায়ী বেদির উপর শুইয়ে তাদের শিরায় সূঁচ ঢোকানো হত এবং তারা মারা যাওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে রক্ত ​​বের করা হত। এটা স্পষ্ট যে যা ঘটেছিলো তা পরিকল্পিত কাজ ছিল। খুব অল্প দ্বন্দ্ব বাকি ছিল। পাকিস্তানি সরকার- পশ্চিম পাকিস্তান এর সরকার এর অধিন- এযাবৎ তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্টেপ চাইল্ড কে রুপান্তরিত করছে- পূর্ব পাকিস্তান একটি অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কার্যকলাপ। এটা করাতে, কোন আচরনই সহাই হয়নি। সহিংসতা ও নিষ্ঠুরতার কারণে উচ্ছিন্ন হয়েছে। নিজেদের সমর্থন জোগাড়ের জন্য প্রাথমিক কাজ হিসেবে নতুন পাকিস্তানি সরকার পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানকে একত্র করতে চেয়েছিল। বিপরীতে, বিভিন্ন প্রমাণ থেকে দেখা যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন একটি সংকটের পূর্বাভাস যা এখন পূর্ব পাকিস্তানে লক্ষিত যেখানে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে পারে। যেটা দৃশ্যত পরবর্তীকালে অনুপ্রাণিত করে। এভাবে, পূর্ব পাকিন্তান পতিত জমিতে পরিনত হচ্ছে। এই অবস্থা খুব স্বল্প উন্নতির প্রতিশ্রুতি ধারন করে। পূর্ব পাকিস্তান দুর্ভিক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়। জনাব আবুল মাল আব্দুল মুহিত- পাকিস্তানি দূতাবাসের অর্থনৈতিক-উপদেষ্টা ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান- যিনি পক্ষত্যাগ ও বাংলাদেশি বাহিনি যোগদান করেন এর কেবিনেট এর সাবেক উপ-সচিব, এর মতে আগামি ৩ মাসের মধ্যে ১৫ লক্ষ বাঙালি অনাহারে মৃত্যু বরণ করতে পারে। এইদিকে, ভারত শরণার্থী দ্বারা আবিষ্ট হচ্ছে, এবং এই শরণার্থী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হবে বলে আশঙ্খা করা যেতে পারে।

.

একই সময়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকল, ঐতিহ্যগত ভাবে শত্রুতাপরায়ণ এই দুই প্রতিবেশী হয়ত যুদ্ধের একটি বিন্দুতে এসে পৌছাবে। পরম শক্তির জন্য অশুভ ইঙ্গিতের এমন সম্প্রসারন আশংকাজনক।

বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থাকে চলতে দেওয়া যায় না। প্রশাসন আপাতত কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে এবং আমি সেগুলোর প্রশংসা করি। ১লা আগষ্ট, রবিবার ঘোষণা করা হয় যে, ১৫৬ জন বেসামরিক নাগরিকের একটি আন্তির্জাতিক দল জাতিসংঘের ত্বত্তাবধায়নে পুর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য একটি ত্রান ও পুনর্বাসন কমিটি গঠন করেছে।

এই দলে ৭৩ জন উপদেষ্টা থাকবেন যারা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনার চারটি আঞ্চলিক অফিসে এবং ৬৯টি অন্যান্য এলাকায় সংস্থিত হবেন। তাদের কাজ হবে স্থানীয় অবস্থা সম্পর্কে রিপোর্ট করা।আশা করা যায় তাদের উপস্থিতি সহিংসতা ও প্রতিহিংসা হ্রাস করতে সাহায্য করবে।

উপরন্তু, জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় গঠিত দলটি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে দুর্ভিক্ষ, রোগের আশংকা রোধে এবং ঘরবাড়ি পুনর্বাসন ও লক্ষাধিক গৃহহীনের আশ্রয়ের ব্যাপারে সাহায্য করবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই প্রচেষ্টাকে চালু রাখতে সহায়তা করছে, আমি বিশ্বাস করি এটা সচেতনতার সাথে এবং সঠিকভাবে কাজ করবে।

যাই হোক, প্রশাসনের অন্য পদক্ষেপ গুলোকে সমর্থন করা যায় না।

প্রশাসন পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এটা স্পষ্টতই আমেরিকান জনগণকে এর পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রতারিত করতে চাচ্ছে। ১২ই এপ্রিলে একটি রাজ্যের দপ্তরের মুখপাত্র দাবি করেন যে, সেখানে পাকিস্তানে সামরিক সহায়তার উপর “১৯৬৫ সাল থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল” এবং ১৫ এপ্রিল বিভাগের মুখপাত্রের একটি অনুবর্তী বিবৃতিতে বলা হয়ঃ

সংক্ষেপে বলতে গেলে, এই সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকারের কাছে কোন অস্ত্র সরবরাহ করা হয় নাই, এবং বিলির বিষয়টি উন্নয়নের আলোকে পর্যালোচনা করা হবে।

২৩শে এপ্রিল, রাজ্যের সহকারী সচিব আবশির সিনেট কূটনৈতিক কমিটির চেয়ারম্যান, সিনেটর ফুলব্রাইটকে লেখেন এবং বলেনঃ

আমাদেরকে প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে জানানো হয়েছিল যে, ২৫শে মার্চ পুর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে পাকিস্তান সরকার বা এর কোনো প্রতিনিধিকে কোন সামরিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়নি এবং এখন সরবরাহের জন্য কিছু নেই।

৬ই মে, সহকারী সচিব আবশির আবারও সিনেট কূটনৈতিক কমিটির চেয়ারম্যানকে এই দাবি করে লিখেনঃ

যেমনটা আপনারা জানেন, আমরা ১৯৬৫ সালের ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের সুত্র ধরে পাকিস্তান ও ভারতে সকল সামরিক সহায়তা বাতিল করেছি। তখন থেকে আমরা এই দুই রাষ্ট্রের কোন রাষ্ট্রেই কোনো অস্ত্র সরবরাহ করিনি। ১৯৬৫ সাল থেকে আমরা সামরিক সহায়তার শুধুমাত্র একটি বিষয় পুনঃবহাল করেছি আর তা হল সামরিক প্রশিক্ষনের একটি পরিমিত কার্যক্রম।

সামরিক সরবরাহ সম্পর্কে, ১৫ই এপ্রিল দপ্তরের মুখপাত্র যেমনটা ঘোষনা করেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ আমাদের জানিয়েছে যে, সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে কোন খুচরা যন্ত্রাংশ বা গোলাবারুদ সরবরাহ করা হয়নি এবং সরবরাহের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

তা সত্ত্বেও যে সময় রাজ্য দপ্তর দাবি করছিল যে, পাকিস্তানে কোন অস্ত্র পাঠানো হয়নি ঠিক সেই সময়ই পশ্চিম পাকিস্তান সরকারকে অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছিল।

এবং এমনকি এটাও এখন জানা গিয়েছে যে ভবিষ্যতে আরো চালান আসবে, ধারণা করা হচ্ছে কারন যে অস্ত্র গুলো পাঠানো হচ্ছে সেগুলোর চুক্তি ২৫শে মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই করা হয়েছিল।

সুতরাং রাজ্য বিভাগ যখন পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক সহায়তার কথা অস্বীকার করছিলেন তখন অস্ত্র গুলো পথেই ছিল।

আবারো প্রতিহিংসা এবং সহিংসতাকে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সহায়তা পাঠানো হল।  আবারো রাজনৈতিক সুযোগ নেওয়া-এবং  আমি ধরে নিচ্ছি যে এটাই হল সেটা যা প্রশাসনকে উৎসাহিত করছে, যেখানে স্পষ্টতই মনুষত্ব্য  সেটা পারছেনা, এর কার্যক্রমকে বৈধতা দেওয়া-নীতি নিয়ন্ত্রনের  ভিত্তি।

এই চালান অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। ২৫শে মার্চের পুর্বের কোন তারিখের কোন কাগজীয় চুক্তি এই অস্ত্র সরবরাহকে বৈধতা দিতে পারে না, যার অনেক গুলোই নিঃসন্দেহে পুর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা চালু রাখতে ব্যবহার করা হবে।

এই পর্যন্ত পৌছাতে আমি যুগ্ম রেজুল্যিউশন ৭৬৫ এর  সংশ্লিষ্ট সভায় যোগ দেই, যা পাকিস্তানে “সকল সামরিক সহায়তা এবং সকল সামরিক যন্ত্রপাতি ও অস্ত্রের বিক্রয় ও সরবরাহকে” স্থগিত করে, এমনকি  ৩৬৫ দিনের জন্য “ইতমধ্যে  অনুমদিত বিক্রয়সহ সকল সামরিক বিক্রয়ের লাইসেন্স ” বাতিল করে “যতক্ষন পর্যন্ত না রাষ্ট্রপতি নির্ধারন করেন যে, এই ধরনের সহায়তা, বিক্রয় অথবা সরবরাহ  অগ্রাহ্যকর জাতীয় স্বার্থের জন্য প্রয়োজন এবং কংগ্রেসও সেই রিপোর্ট দেয়। এই বিল গুলো দ্রুত পরিষদ করা উচিত।

আমি এটা দেখে আনন্দিত যে, ১৯৭১ এর  বৈদেশিক সহায়তা আইন, এইচ. আর. ৯৯১০, বস্তুত  পাকিস্তানে সহায়তাকে স্থগিত করে। এটি কূটনৈতিক কমিটি পরিষদের একটি অতি গুরুত্বপুর্ণ পদক্ষেপ। আমি শুধু এটাই আশা করব যে, রসিদের ভাষা আরও শক্তিশালী হবে যেহেতু এটার এখনকার ভাষা “কার্যকর সীমা পর্যন্ত” পুর্ব পাকিস্তানের  শরনার্থীদের দেওয়া তাদের গৃহে ফিরে যাওয়ার এবং তাদের জমি ও সম্পদ ফিরে পাবার অনুমতির স্থগিত আদেশকে রদ করে।  যাই হোক এই স্থগিত আদেশের পরেও এই বিধান এখনো কংগ্রেসকে সেটা করার সুবর্ণ সু্যোগ দেবে যা প্রশাসন করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

আমি আরো উল্লেখ করব যে, ১৯৭১ এর বৈদেশিক সাহায্য আইন, এইচ. আর. ৯৯১০, পুর্ব পাকিস্তানের শরনার্থীসের জন্য ১০ কোটি টাকার ত্রানের অনুমতি দেন এবং এটা বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। অন্য পদক্ষেপ গুলোও অবশ্যই নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবশ্যই স্পষ্টভাবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গৃহীত এই পদক্ষেপের নিন্দা জানাতে হবে। এটাকে অবশ্যই এই বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত নির্বাচন বাতিলের আমাদের অসমর্থনকে স্পষ্টভাবে উত্থাপন করতে হবে। এটার জাতিসংঘের একটি বড় ত্রান প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত ও সহায়তা করা উচিত।

১৯৭১ এর ২৪শে জুলাই ওয়াশিংটন পোস্টের সংকলনে লী লিসজি এর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, “পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সাহায্য ভীত বাঙ্গালীদের হতভম্ব করেছে” একজন বাঙ্গালী থেকে বিবৃত এই উদ্ধৃতি দিয়ে

গণতন্ত্রের আলিঙ্গন……………………… আমাদের বিপক্ষে।

সব থেকে দুঃখের যে, প্রশাসন, জনগণের অবস্থার যে অনুমান করেছিল তা কোন ত্রুটিপুর্ণ  মুল্যায়ন নয়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বর্তমান অবস্থা বাংলাদেশের জনগণের মুখে অনিশ্চয়তার ভয়।  এটা পরিবর্তন হতেই হবে।

.

13.111.384-390

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আমেরিকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিনেটর কেনেডির বক্তৃতা প্রেস বিজ্ঞপ্তি ২২ আগষ্ট, ১৯৭১

ম্যাসাচুসেটস এর সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি-র কার্যালয় থেকে

জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি-র বক্তৃতা

আগস্ট ২৬, ১৯৭১

ভারতে আমার সপ্তাহব্যাপী শরণার্থী শিবির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সাথে ভাগ করতে পারছি বলে আমি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি| যে দৃশ্য আমি প্রত্যক্ষ করেছি বর্তমানে এর চেয়ে আতঙ্ককর কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই|

এপ্রিলের শুরুতে পূর্ববঙ্গে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৮,০০০,০০০ মানুষ পালিয়ে ভারতে চলে এসেছে| এই বিবাদের রেশ ধরে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয়েছে, হয়েছে গৃহহীন| আরো লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত আতঙ্ক, ব্যাধি আর ক্ষুধার সাথে লড়ছে| তাৎক্ষণিকভাবে ত্রাণের ব্যবস্থা না হলে যার হাত থেকে তাদের পরিত্রাণ নেই|

এই সার সত্য কথাটা সারা পৃথিবী এখনো বুঝতে পারছে না| যদিও শুরু থেকেই আমার এবং সিনেটর উপ-কমিটির জন্য এটি উদ্বেগের বিষয় ছিল, তাও আমি বলব নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত কেউ এর ভয়াবহতা আঁচও করতে পারবে না| একমাত্র সেখানে উপস্থিত হয়েই তাদের সঙ্কটাপন্ন দশা বোঝা যায়| কী ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে প্রতিনিয়ত শরণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে এবং হতাহতের সংখ্যাও বাড়ছে তা উপলব্ধি করা যায়|

ভারতে গিয়ে আমি পূর্বে ত্রিপুরার আগরতলা, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরে জলপাইগুড়িসহ সীমান্তবর্তী সকল শরণার্থী শিবিরে গিয়েছিলাম| সেখানে গিয়ে আমি শিবিরে জড়ো হওয়া শরণার্থীদের কথা শুনেছি, শুনেছি কীভাবে তারা খোলা মাঠে বা পাবলিক বিল্ডিং এর পিছনে দিনাতিপাত করছে, কীভাবে তারা পশ্চিমবঙ্গের রাস্তা ধরে দিনের পর দিন ক্লান্তিভরে হেঁটে আসছে| তাদের সে করুণ কাহিনী মানবতার জন্য লজ্জাস্বরূপ  |

আমি লক্ষ্য করেছি, শিবির থেকে শিবিরে বিস্তর ফারাক|কিন্তু অধিকাংশের অবস্থাই বর্ণনাতীত| সাহায্যের অপ্রতুলতা, শৌচাগারের অভাব, ঘনবসতির কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে পাঁচ বছরের কমবয়সী শিশু এবং বৃদ্ধরা| যা সাহায্য আসছে তা দিয়ে কেবলমাত্র পঞ্চাশ শতাংশ শরণার্থীকে সাহায্য করা সম্ভব| ইতোমধ্যে অনেক শিশু এবং বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে| অনেককে দেখেই তার ক্ষীণ আয়ু অনুমান করা যাচ্ছে|

আপনার এমন সব কঙ্কালসার শিশুদের চোখে পড়বে যাদের মাথা নাড়ানোর শক্তি পর্যন্ত নেই| অপুষ্টিতে অনেকের হাত-পায়ে পানি এসেছে, নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে মায়ের কোলে| ভিটামিনের অভাবে অনেক শিশু অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ঘা শুকোচ্ছে না| তাদের বাবা-মায়ের চোখে কেবলি হতাশা| সবচেয়ে কষ্টকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় যখন আপনার চোখে পড়বে গতরাত্রে মারা যাওয়া শিশুর মৃতদেহ|

শিবির থেকে শিবিরে একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি এবং দিন দিন পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে| সীমিত স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে মৃত্যুহার কমানো যাচ্ছে না| অধিকাংশ  আহত ব্যক্তি আসছে অন্য শরণার্থীর মাধ্যমে| এছাড়া সীমান্তবর্তী অনেক  ভারতীয় জনপদ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণের শিকার হচ্ছে, পূর্ববঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে নির্যাতিত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ|

ভারতীয় সরকার শুরতেই শরণার্থীদের আসা রোধ করতে সীমান্ত ঘেরাও করতে পারত| কিন্তু তা না করে সহানুভূতির পথ বেছে নেওয়াতে তাদের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে| শরণার্থীদের স্থান করে দিতে তারা যে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে তা অবিস্মরণীয়|

কিন্তু এই দুর্যোগে যে পরিমাণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা সামাল দিতে গিয়ে এই মহান কর্মযজ্ঞও হার মেনে যাচ্ছে| দুমাস আগে প্রতিদিন শরণার্থী আগমনের হার ছিল ১,৫০,০০০| এখনও প্রতিদিন প্রায় ২৫,০০০ জন করে আসছে| পালিয়ে আসা প্রত্যেকের হৃদয়স্পর্শী কাহিনী কল্পনাকেও হার মানায়|

এক পঞ্চান্ন বছর বয়সী মুসলিম রেলওয়ে কর্মী যিনি ৩৫ বছর ধরে চাকরি করে আসছিলেন, রেলওয়ে স্টেশনে পাকসেনাদের অতর্কিত আক্রমণের কথা বলতে গিয়ে বলেন, “আমাকে গুলি করার কী কারণ থাকতে পারে আমি জানি না|  আমি রাজনীতি করি না, আমি সামান্য একজন রেলের কর্মী মাত্র|” এখন তিনি আর্থিক দৈনতার মধ্য দিয়ে শরণার্থী  শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন| আগামী মাস থেকেই উনার সরকারি পেনশন পাওয়ার যে কথা ছিল তা নিয়ে আজ আর তার কোন আশা নেই|

সহজ-সরল, নিরক্ষর গ্রামবাসীর অবস্থা আরো করুণ| উত্তর কলকাতার বয়রা-বনগাঁ রোডের শরণার্থীদের সাক্ষাৎকার এভাবে তাদের দুর্দশার করুণ চিত্র উঠে আসে|

যেদিন আমরা এই ২০ মাইল দীর্ঘ রাস্তাটি ধরে অগ্রসর হয়েছিলাম, কমপক্ষে ৭০০০ নতুন শরণার্থী বয়রা নদীর পাড় বেয়ে আসছিল| তাদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া কৃষক| তাদের মধ্যে বেশির ভাগই হিন্দু , তারা আসছিল ঢাকার দক্ষিণস্থ খুলনা এবং বরিশাল থেকে; গত বন্যায় যে স্থানগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল|

এই ক্লান্তিকর দিন-রাত্রির যাত্রায় সবচেয়ে বেশি পরিশ্রান্ত শিশু এবং বৃদ্ধরা| অধিকাংশের চোখে কেবলি শূণ্যতা, অসহায়ভাবে বসে আছে রাস্তার পাশে| তারা কেউই জানে না তাদের ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে| পশ্চিম পাকিস্তানিদের নির্মমতা, গণহত্যা, লুন্ঠন, নির্যাতনের করুণ কাহিনীর প্রতিচ্ছবি তারা |বহু শিশু পথিমধ্যে মারা গেছে, তাদের বাবা-মায়ের কণ্ঠে কেবল করুণ আর্তি আর সাহায্যের জন্য প্রার্থনা| মৌসুমী বৃষ্টিতে গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় তাদের দুর্ভোগ আরো বাড়ছে| বৃষ্টির দিন আমাদের কাছে বাইরে যাওয়া মানে কেবল এক প্রস্থ কাপড় পাল্টে নেওয়া| কিন্তু এসব মানুষের কাছে সেটি খাদ্য, বিশ্রাম, আশ্রয় ছাড়া আরো একটি করুণ দিন।

.

বেশভূষার পরিবর্তন ছাড়া আর কিছু হত না। কিন্তু এই মানুষদের কাছে আরেকটি বিশ্রাম, খাদ্য এবং আশ্রয় বিহীন রাত ছাড়া বৃষ্টির আর কোন মানে ছিল না।

কোমরের নিচ থেকে অবশ হয়ে যাওয়া কোন শিশুর মুখ যে কখনো হাঁটতে পারবে না, কিংবা বাবা-মা, ভাই-বোন সবাইকে নিজের চোখের সামনে হত্যা হতে দেখা শিশুটি যে একটি ছোট তাঁবুর মেঝেতে চাদরের উপর ভয়ে কেঁপে কেঁপে উঠছে, অথবা দশ বছর বয়সী বালিকার হন্তদন্ত হয়ে আমাদের আসার একটু আগে কলেরায় মারা যাওয়া তাঁর শিশু ভাইকে ঢাকার জন্য ছুটে বেড়ানো- এর কোনটাই চাইলেও মন থেকে মুছে ফেলা অনেক কঠিন। যখন একটি শরণার্থী শিবির পরিচালককে আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কোন বিষয়টা আপনার এখানে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়, যার উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “শ্মশান”। তিনি পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ একটি শরণার্থী শিবিরের পরিচালক ছিলেন। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষের কথা মাথায় রেখে এটি তৈরি করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এখানে প্রায় ১৭০০০০ এর মত শরণার্থী বাস করছে।

সময় এসেছে… সময় আসলে পার হয়ে গেছে… এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় কিভাবে সম্ভব হল সেটা আমেরিকানদের বুঝা উচিৎ এবং আমাদের দেশের দেউলিয়া প্রতিক্রিয়া স্বীকার করে নেয়া উচিৎ।

প্রথম থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের সমস্যা হল স্বনিয়ন্ত্রন এবং গণতান্ত্রিক নীতি। এত বছর ধরে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের পর…এত বছর ধরে সামরিক শাসন ও অপূর্ণ রাখা রাজনৈতিক ওয়াদার পর… অবশেষে বিগত ৭ ডিসেম্বর পুরো পাকিস্তানে একটি সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সামরিক আইনের অধীনেই নির্বাচনটি হয় এবং সেই সময়ে ইয়াহিয়া খানের সরকার একে জোরে সোরে অবাধ ও সুষ্ঠু বলে ঘোষণা দেয়। এতে পূর্ব পাকিস্তানে অভাবনীয় ৮০% ভোট পায় আওয়ামী লীগ ও এর নেতা শেখ মুজিবুর রহমান।

আসন্ন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ অধিবেশনে তাই আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় যে তারা নতুন করে সংবিধান প্রস্তুত করে দেশকে নাগরিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে। কিন্তু এরপরে একের পর এক বিলম্ব ও প্রহসন তৈরি হতে লাগল, যার পর আবার সামরিক আইন জারি করা হল। লীগের ছয় দফা দাবীর আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান এবং ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার সমঝোতা দীর্ঘায়িত হতে থাকল এবং ক্রমশ অবনতি ঘটল… যা আচমকা ২৫ মার্চ রাতে অরাজকতা ও রক্তপাতের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।

যখন পূর্ব পাকিস্তানিরা গণতন্ত্র আর স্বায়ত্বশাসন নিয়ে সমঝোতা করছিল, তখন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিপীড়ন ও সংঘবদ্ধ হামলার পরিকল্পনা করছিল। ২৫ মার্চ থেকে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে লাখ লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। ভারতে আমি গত সপ্তাহে যা দেখেছি তা হল সেই ভয়াল রাত ও এর পরবর্তী দিনগুলোর হিংস্রতায় আতংকিত মানুষের ধ্বংসাবশেষ। সামরিক হত্যাযজ্ঞের সাথে সামরিক আইনও তখন জারি ছিল। “সমন্বিত দায়িত্ব” … একটি নীতি যা দিয়ে আওয়ামী লীগ বা বাঙ্গালী গেরিলাদের লুকিয়ে রাখার সন্দেহে পুরো গ্রাম উজাড় করে দেয়া হত… সামরিক আইন এখন এটাকে অনুমোদন দিয়েছে। এবং ক্রমাগত শরণার্থীদের আগমন থেকেও সেটা স্পষ্ট বুঝা যায়।

দুর্ভাগ্যজনক হলেও ক বছর আগে দক্ষিন পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার যে ভাবমূর্তি ছিল এখন দক্ষিণ এশিয়াতে সেই মনোভাব খুব একটা ভিন্ন নয়। এই ভাবমূর্তি এমন যে আমেরিকা সামরিক নিপীড়ন কে সমর্থন দেয় এবং সামরিক হিংস্রতাকে মদদ যোগায়। ভাবমূর্তিটা এমন যে আমেরিকা স্বৈরাচারী শাসকদের সাথে সহজেই হাত মিলাচ্ছে। বা এমন একটি আমেরিকা যা তাদের বিপ্লবী অতীতকে স্মরন করছে এবং সর্বদা তাদের স্বনিয়ন্ত্রনের প্রতিশ্রুতি নিয়ে বড়াই করছে কিন্তু অপরদিকে তারা মানুষের চেতনা দমিয়ে রাখতে, পরিবর্তন ঠেকাতে সামরিক জান্তাদের সাহায্য করে যাচ্ছে।

.

পূর্ব বাংলার পরিস্থিতির কারণে আমেরিকানদের মর্মপীড়া হওয়া উচিত, কেননা এগুলো আমাদের সামরিক যন্ত্রপাতি। আমাদের বন্দুক, ট্যাংক এবং আকাশযান একদশকের বেশী সময় ধরে দেওয়া হচ্ছে। আর এসবই এই ভোগান্তির সৃষ্টির পেছনে দায়ী। আরো বড় দুঃখের বিষয় হলো স্পষ্টত আমাদের এখানকার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নির্দেশে এই সামরিক সরবরাহ এখনও চলমান। আমেরিকান বন্দর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের জন্য আমেরিকান সামরিক সরবরাহ ভর্তি পাকিস্তানী জাহাজ ত্যাগ করা চলমান রয়েছে। এগুলো সবই লজ্জাজনক এবং দুঃখের। এগুলো সামান্য একটা কলমের খোঁচায় বন্ধ করা সম্ভব।

এটা যুক্তি দেখানো হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানে এই চলমান সামরিক সাহায্য পূর্ব বাংলায় গঠনগতভাবে পাকিস্তানী সামরিক নীতি বজায় রাখতে কোনভাবে আমাদের ক্ষমতা প্রদান করে। ভালো, তাহলে কোথায় সেই ক্ষমতা? আমেরিকান অস্ত্র যা উদ্বাস্তু আর বেসামরিক ক্ষতিগ্রস্তের পরিমাণ বাড়াচ্ছে তা বন্ধ করার সে ক্ষমতা কোথায়? এইসব ক্ষতিগ্রস্তদের সমর্থন দেওয়ার সেই ক্ষমতা কোথায়? শেখ মুজিবর রহমান, যার একমাত্র অপরাধ কিনা নির্বাচনে জেতা তার গোপন বিচার বন্ধ করার ক্ষমতা কোথায়? কোথায় সেই ক্ষমতা যখন আমেরিকান মানবিক সাহায্য সামরিক যন্ত্রে–আমেরিকান ত্রাণের জাহাজ যুদ্ধজাহাযে রূপ নিচ্ছে তা বন্ধ করার? যদি পাকিস্তান সরকারকে প্রভাবিত করার সেই ক্ষমতাই থাকত, তাহলে আমাদের এই মহান রাষ্ট্র কেন হীন এবং লজ্জাজনক কাজে সাহায্য করছে?

এখন সময় আমেরিকানদের তাদের নেতা জিজ্ঞেস করা, “কি ধরণের সরকারকে আমরা প্রভাবিত করতে চাইছি এবং কিইবা উদ্দেশ্য?”

দশ বছরেরও বেশী বেদনায়ক সময় ধরে আমাদের সমুদ্র সৈকত থেকে দশহাজার মাইল দূরে আমেরিকাদের জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক নীতির ধারণাকে তুলে ধরার জন্য  ১০০ বিলিয়ন অর্থ এবং ৪৫,০০০ জীবন দিতে হয়েছে।   আজ বারোহাজার মাইল দূরে এবং পাঁচগুণের বেশী জনসংখ্যা সমৃদ্ধ দেশের নেতারা আমেরিকার নিকট থেকে জাতিগত আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দমনে সাহায্য চাচ্ছে। অবাধ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সমর্থন দেওয়ার জন্য সাহায্য চাচ্ছে।

আরেকটা তুচ্ছ সমন্তরাল ঘটনা দেখুনঃ দক্ষিণ ভিয়েতনামে আমাদের সর্বোপরি ত্যাগ এবং প্রচেষ্টা। আমরা সেখানে সম্মুখীন হই এক তথাকথিত “গণতান্ত্রিক” শাসকের সাথে, যে এখনও একটা মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন দিতে পারেনা। এরা এমন একটা নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছিল যেটি সব গুরুত্বপূর্ণ বিরোধই দলকে বাদ দিয়ে দলমুক্ত নির্বাচন। আর এখন, সাইগন থেকে দুইহাজার মাইলেরও কমদূরে পূর্ববাংলায় একটা অবাধ নির্বাচন দিতে উপেক্ষা করি।

আপনারা বলতে পারেন যে আমাদের জড়িত মতো ব্যাপার এখানে নেই। আমরা সারা পৃথিবীকে পাহাড়া দিতে পারি না। এগুলো সত্য হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো আমরা ইতিমধ্যে পূর্ব বাংলার সাথে জড়িত হয়ে গিয়েছি। আমাদের অস্ত্র জড়িত, আমাদের অর্থ দুইদশক ধরে অর্থনৈতিক সহযোগিতা হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আমরা জড়িত কিনা সেই প্রশ্ন এখন নয় বরং আমাদের জড়িত হওয়া উচিত। আমরা তহবিল জোগাবো কিনা এটাও কোন প্রশ্ন নয়। বরং আমরা তহবিল কোন খাতে খরচ করব সেটাই আসল। একটি নিদারুণ সমস্যাযুক্ত এলাকায় শান্তি এবং মুক্তি আনতে আমরা কি বন্দুক সরবরাহ করব নাকি মানবিক প্রকল্পে সাহায্য করব?

আমি পূর্ব বাংলার কিছু নেতা যারা নিজেরা বাংলাদেশের সরকার হিসেবে গঠিত হয়েছে তাদের সাথে কথা বলে তাদের কন্ঠে একধরণের বিদ্রুপ লক্ষ্য করেছি। এই নেতা গুলো আমেরিকাতে সাহায্য চাইতে আসবে না। একজন আওয়ামী লীগ নেতার কথা অনুযায়ী, “অনেক রাষ্ট্র এবং মানুষ আরো অস্ত্রের জন্য বিলিয়ন বিলয়ন ডলার চাইতে আমেরিকায় আসে।

আমরা বাঙালিরা চাই শুধু আপনারা যেন উভয়পক্ষকে অর্থ-অস্ত্র-কোন কিছু  প্রদান না করেন। আপনারা শুধু নিরপেক্ষ থাকুন।“ আমার কাছে দুটোই আসলে রাজনৈতিক এবং নৈতিক অবস্থান হিসেবে ভালো। দক্ষিণ এশিয়ার সৈন্যদলের সাথে পুরোনো অভ্যাস অনুযায়ী অমানবিক এবং অযথা কর্মকান্ডের চেয়ে বরং নিরপেক্ষতা আমাদের দিতে পারে প্রকৃত ও কার্যকর সুবিধা।

ঐ অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো আজ অনেক ঝামেলার মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক সরকার অর্জনের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আমেরিকায় বসে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনা কিভাবে গণতন্ত্রের চেতনা সেখানে ছড়িয়ে পড়বে? কয়েকমাসে আগে ভারতে চতুর্থবারের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্বাচন হয়ে গেল। পাকিস্তান একটি অবাধ নির্বাচনের অনেক সময় নিয়েছে।  কিন্তু গত ডিসেম্বরের ভোটের গুরুত্ব কারো কাছে কম নয় এমনকি যারা পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেছিল। তারা গর্বভরে এবং ন্যয়ত এই নির্বাচনকে পাকিস্তানের ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে। এই নির্বাচন প্রথম পাকিস্তানকে আঞ্চলিক বিভাগগুলো মধ্যে সেতু গড়ে তোলার এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়নের প্রথম সুযোগ করে দিয়েছিল।

এটা ছিল পাকিস্তানে উদিত এমন বেসামরিক নেতৃত্ব যা পাকিস্তানের অঞ্চল গুলোর একতা এবং স্থায়িত্ব রক্ষায় সক্ষম। একতার সবচেয়ে ভালো আশা জলাঞ্জলি দিয়ে মানুষ যা ঠিক করেছিল তা পূর্বের অবস্থানে ফিরিয়ে নেওয়া দেখেই বুঝতে পারা যায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মুর্খতা।

যদি কোন রাজনৈতিক সমাধানে না পৌছানো যায় এবং এই উত্তপ্ত অবস্থা ঠান্ডা করার জন্য কোন প্রক্রিয়া না পাওয়া যায় তাহলে পূর্ব বাংলা পাকিস্তান এবং পূর্ব ভারতের ভেতরে ক্যান্সার হিসেবে রূপ নেবে। ১৯৪৭ সালের পরে এরচেয়ে বড় ঐক্যনাশক প্রভাব এই উপমহাদেশে পড়েনি।

আমেরিকার বৈদেশিক নীতির অর্থ স্পষ্ট।

প্রথমত, পাকিস্তান এবং ভারতে চলমান মানব বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে জাগাতে হবে। পূর্ব বাংলার এই বিপর্যয় শুধু  পাকিস্তান বা ভারতের নয়। এটা পুরো বিশ্বসম্প্রদায়ের এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের দায়িত্ব এই সংকট দূর করার জন্য একত্রে চেষ্টা চালানো। যদি আমেরিকা মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে নেতার আসনে বসতে চায়, তবে আন্তর্জাতিক সাহায্য ও ত্রাণ এই লক্ষ লক্ষ শরনার্থী এবং সংঘর্ষের ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে পৌছে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমেরিকাকে অবশ্যই নেতৃত্ব দিতে হবে।

যাই হোক, আমরা জানি আমেরিকা এবং আনর্জাতিক সম্প্রদায় এই কর্মকান্ড থেকে অনেক দূরে। আজ পর্যন্ত জাতিসংঘ ১৫০ মিলিয়নের চেয়ে কম ত্রাণ দিয়েছে। এর মধ্যে আমেরিকা ৮০০ মিলিয়নের মত দিতে প্রতিশ্রুত হয়েছে।

প্রশাসন গর্বের সাথে উল্লেখ করেছেন, আমরা গোটা বিশ্বের সবগুলো দেশ যোগ করলে যা হয় তার চেয়ে বেশি দিতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। কিন্তু এই গর্ব খুব তাড়াতাড়ি গায়েব হয়ে যায় যখন দেখি শুধু ভারত সরকার এবং ভারতের জনগণ এককভাবে এখন এরকম বিশাল বড় একটা বোঝা বহন করে যাচ্ছে। আমরা যখন দেখি ভারতের পরবর্তী বাজেটে শুধু শরণার্থী ত্রাণের জন্যই ৫০০ মিলিয়ন থেকে ১ বিলিয়ন বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন বুঝতে পারি বাইরের বিশ্ব আসলে কতটা ক্ষুদ্র কাজ করছে এবং আমেরিকার অবদান কতটা তুচ্ছ।

সাধারণ মানবিকতায় বলে যে আমেরিকা এবং জাতিসংঘকে এই সত্য মেনে নিতে হবে এবং এই বিপুল বোঝা শুধু ভারতের কাঁধে ছেড়ে না দিয়ে পুরো বিশ্বকে বহন করতে হবে।

ঐতিহ্যগতভাবে আমরা অতীতে অবিরতভাবে অর্থনৈতিক সমর্থনসহ জাতিসংঘে সাহায্য ও ত্রাণকর্মে অংশ নিয়েছি এবং বর্তমানে আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্য হিসেবে যে সাহায্য বিশ্বের সেই অংশে দিচ্ছি, যুক্তরাষ্ট্রকে কমপক্ষে ৩০-৪০ ভাগ পূর্ববাংলার ত্রাণ কর্মকান্ডের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যদি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হয়, তাহলে আমেরিকার শুধু জাতিসংঘের চাহিদাপূরণের সাহসীকতা নয়, আমেরিকান অবদান হিসেবে ৩০০/৪০০ মিলিয়ন ডলারও প্রদান করতে হবে। সেপ্টেম্বরে আবার যখন সভা হবে, আমি এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যথাপোযুক্ত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব প্রদান করব।

দ্বিতীয়ত, আমাদের ঐ অঞ্চলের রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে উল্টো দিকে ঘুরে দাড়াতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের ভারতর প্রতি “নিয়ন্ত্রণ”এমন প্রচার বন্ধ করে পাকিস্তানের প্রতি “নিয়ন্ত্রণ” প্রদর্শন করতে হবে। জরুরীভাবে আমাদের পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে প্রেরিত সকল আমেরিকান অস্ত্র চালান বন্ধ করতে হবে। যারা মানবিকতার প্রাথমিক শর্তগুলো ভেঙ্গে ফেলছে তাদের সকল অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করতে হবে। আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানের জেনারেলদের তথা পুরো বিশ্বের মানুষকে জানাতে হবে পূর্ববাংলার উপর বর্ষিত পর্বত প্রমাণ হত্যাকান্ডের প্রতি আমেরিকার রয়েছে তীব্র এবং স্থায়ী ঘৃণা।

গত সপ্তাহের মাঠের অভিজ্ঞতা আমার মতামতকে তীব্র ভাবে শক্তিশালী করেছে। যেসব আমেরিকান দেখেছে যে বাচ্চারা এতই দুর্বল যে কাঁদতে পারছে না, এতই ক্লান্ত যে জীবন-যাপন করতে পারছে না, এত শোকাহত যে কোনকিছু খেয়ালই করছে না, তারা এর চেয়ে কম কিছু করতে রাজি হবে না। প্রত্যেক আমেরিকনাই এই সরকারের বিরুদ্ধে এর চেয়ে কম বিরুদ্ধতা সমর্থন করবে না, কেননা এই সরকার অবাধ নির্বাচনে জেতার অপরাধে গোপনে একজন রাজনৈতিক নেতাকে যত ইচ্ছা ভয় দেখিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে।

আমেরিকার নাগরিকেরা কার্জতভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যে কারণে জীবন বিলিয়ে দিয়ছে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন নীতি দ্বারা পরিচালিত কোন অঞ্চলকে আমেরিকানঅরা সমর্থন দেবে না।

আমি বলব না যে পাকিস্তানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক এই মূহুর্ত থেকে ছিন্ন করা হোক।

আসুন আমরা জরুরীভিত্তিতে কথা বলি। আমরা আমাদের স্পষ্ট মতামত প্রকাশ করি। আমরা প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে প্রেসিডেন্ট ইহাহিয়া খানের সাথে এই সঙ্কটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলতে বলি। অবরুদ্ধ ভারতকে বলব, আমাদের পুনরায় আমাদের সেই বিশ্বাসকে নিশ্চায়তা দিন যেন আমরা সবখানে একত্রে সংকট মোকাবেলা করতে পারি।

তৃতীয়ত, পূর্ব বাংলাকে দমানোর জন্য গৃহীত নিষ্ঠুর নীতির পরিবর্তনে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারকে যতটা সম্ভব চাপ প্রদান করার জন্য আমেরিকার উচিত দক্ষিণ এশিয়া চুক্তি সংস্থার কাঠামোর মধ্যে কাজ করা।   যদি কোনভাবেই তাড়াতাড়ি এই নীতির পরিবর্তন না হয়, তাহলে সংগঠনে পাকিস্তানের সদস্যপদ বিরোধী অন্য সিয়াটো সদস্যরাষ্ট্রেকে আমেরিকার নেতৃত্ব দেওয়া উচিত।

একইভাবে, আমাদের পাকিস্তানের সাথে স্থাপিত প্রত্যেক দ্বিদেশীয় এবং বহুদেশীয় সম্পর্ক আবার পরীক্ষা করতে হবে। এই রাষ্ট্রের কোন ফোরাম কিংবা এই বিশ্বের ফোরামের দক্ষিণ এশিয়ায় সংগঠিত সন্ত্রাস এবং অমানবিকতার বিকট দুঃস্বপ্নের তথ্যভিত্তিক মতামতের উল্লেখযোগ্যতার ব্যাপারে দৃষ্টি দিতে দ্বিধা করা উচিত না। শরণার্থী বিষয়ক উপকমিটির সভাপতি হিসেবে, আমি আমার সাম্প্রতিক তদন্তের ফলাফলগুলোর একটি আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরিকল্পনা করছি। আমাদের উপকমিটি সেপ্টেম্বরের শেষে চুড়ান্ত শুনানি পরিচালনা করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও মুক্তি আনতে প্রয়োজনীয় নেতৃত্ব প্রদানে আমাদের সরকার কি করছে, কি করতে প্রস্তুত আছে এবং কি করতে সক্ষম এই শুনানি হবে তা লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা।

পূর্ব বাংলার মানুষের প্রার্থনা ও স্বপ্ন যেন এক প্রজন্ম আগে বাঙালির সবচেয়ে বড় কবি ও দার্শনিক ঠাকুরের চমৎকার পংক্তির মধ্যে অলংকৃত। পুর্ব বাংলার আকাঙ্ক্ষা আজ শব্দে অলংকৃত করা যায় ঠাকুরের এক অমর শান্তি ও মুক্তির গাঁথার সাথে,

“চিত্ত যেথা ভয়শূণ্য, উচ্চ যেথা শির,

জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর

আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী

বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি,

ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।

 এই শব্দগুলোকে অনুপ্রেরণা করে আমেরিকা এই স্বপ্নপূরণের সংকল্প খুঁজে পেতে পারে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!