শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ওয়াশিংটন, স্পেশাল একশন গ্রুপের ৮ ডিসেম্বর’৭১-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্য বিবরণী | নিউইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন;উদ্ধৃতিঃ রবার্টজ্যাকশন লিখিত ‘সাউথ এশিয়ান ক্রাইসিস’ | ১৫ জানুয়ারী, ১৯৭২ |
৮ই ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরনী
গোপনীয়তা সংবেদনশীল
দি জয়েন্ট স্টাফ
দি জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ
ওয়াশিংটন, ডি. সি. ২০৩০১
৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১
নথিভুক্ত করার জন্য বিবরণী
বিষয়ঃ ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের ইন্দো-পাকিস্তান লড়াই সংক্রান্ত বৈঠক; ৮ই ডিসেম্বর ১৯৭১।
১. এন.এস.সি. ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ ৮ই ডিসেম্বর বুধবার সকাল ১১ টায়, হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে, ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি বিষয়ক এক বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ডঃ কিসিঞ্জার।
২. বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
এ. মুখ্য ব্যক্তিবর্গঃ ডঃ হেনরী কিসিঞ্জার, মিঃ রিচার্ড হেমস, সি.এল.এ., জেনারেল জন রায়ান, জে.সি.এস., মিঃ ডোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড, এ.আই.ডি., মিঃ ডেভিড প্যাকার্ড, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, রাষ্ট্রদূত ইউ. এলেক্সিস জনসন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বি. অন্যান্যঃ মিঃ মরিস উইলিয়ামস, এ.আই.ডি., মিঃ জন ওয়াকার, সি.আই.এ., কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এন.এস.সি., মিঃ স্যামুয়েল হস্ক্যান্সন, এন.এস.সি., মিঃ হ্যারল্ড সন্ডার্স, এন.এস.সি., মিঃ আর্মিস্টেড সেল্ডেন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মিঃ জেমস নয়েজ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মিঃ ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মিঃ স্যামুয়েল ডি পামা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মিঃ ব্রুস ল্যানিগেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মিঃ ডেভিড স্নাইডার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মিঃ জোসেফ সিসকো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রিয়ার এডমিরাল রবার্ট ওয়েল্যান্ডার, ও.জে.সি.এস., ক্যাপ্টেন হাওয়ার্ড কে, ও.জে.সি.এস.।
৩. সারাংশঃ ডঃ কিসিঞ্জার ধারণা প্রকাশ করেন ভারত হয়তো চেষ্টা করছে, পাকিস্তানের সাঁজোয়া এবং বিমান বাহিনীকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার মাধ্যমে, পাকিস্তানকে অক্ষম করে তুলতে। তিনি অনুরোধ করেন পাকিস্তানকে সহায়তা করার ব্যপারে জর্ডানের আগ্রহকে নিরুৎসাহিত না করে, বরং আপাতত স্থগিত করে রাখা হোক। তিনি কাশ্মীরে পাকিস্তানের সক্ষমতা যাচাই করার আদেশ দেন।
৪. মিঃ হেমস বর্তমান পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে বৈঠকের সূচনা করেন। পূর্ব বঙ্গে, ভারতীয়রা কুমিল্লাতে সীমানা অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র প্রধান নদী পারাপারের অসুবিধা তাদেরকে ঢাকায় পৌঁছতে বাঁধা দিচ্ছে। ভারতীয়রা পুরো পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। পূর্ব বঙ্গে, পাকিস্তানের সব প্রধান সামরিক নিয়ন্ত্রণ রেখা এখন অরক্ষিত। পশ্চিম দিকে পাকিস্তানীরা পুঞ্চ দখল করে নিয়েছে বলে দাবী করছে, ভারতীয় সীমান্তের ভেতরে। তবে, যুদ্ধে পাকিস্তানীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। সিন্ধ/রাজস্থান এলাকায় ট্যাঙ্ক যুদ্ধ হচ্ছে। মিসেস গান্ধী ইঙ্গিত দিয়েছেন যে জাতিসংঘের যুদ্ধ-বিরতির আহ্বানে সাড়া দেয়ার আগে, তিনি আজাদ কাশ্মীরের দক্ষিণ সীমান্তটি ঠিক করে নিতে চান। এরকম প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে যে, চলমান যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করার আগে, মিসেস গান্ধী পাকিস্তানের সাঁজোয়া এবং বিমান বাহিনীর সক্ষমতা নিঃশেষ করার চেষ্টা করতে চান। তাই শুধুমাত্র ভারত এবং ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে সোভিয়েতরা স্বীকৃতি প্রদান থেকে বিরত রয়েছে প্রধানত পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্ক বিনষ্ট না করার স্বার্থে। তবে স্বীকৃতি প্রদান বিষয়ে সোভিয়েত পদক্ষেপ, সম্ভবত, খুব শীঘ্রই আসছে অদূর ভবিষ্যতে।
৫. মিঃ সিসকো জানতে চান পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তানে আর কতক্ষণ টিকে থাকতে পারবে বলে আশা করা যায়, যার উত্তরে মিঃ হেমস জানান ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা। নদী পারাপারের সময় কি কি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হবে তার উপর অন্তিম সময়ে পোঁছানো নির্ভর করবে।
৬. পশ্চিমের পরিস্থিতি যাচাই করে, জেনারেল রায়ান ইঙ্গিত দেন যে ভারতীয়রা এই মুহূর্তে খুব বেশী বলপ্রয়োগ করছে বলে তাঁর মনে হচ্ছে না, বরং তারা দখলকৃত এলাকার দখল বজায় রেখেই সন্তুষ্ট বলে মনে হচ্ছে।
৭. ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চান ভারতীয় বাহিনী গুলোকে পূর্ব দিক থেকে সরিয়ে পশ্চিমে আনতে কত সময় লাগতে পারে। জেনারেল রায়ান বলেন সব বাহিনীগুলোকে সরিয়ে আনতে যথেষ্ট লম্বা সময়ের প্রয়োজন হবে, তবে ছত্রীসেনা ব্রিগেড গুলোকে খুব দ্রুতই সরানো সম্ভব, হয়তো পাঁচ বা ছয়দিনের মধ্যেই।
৮. ডঃ কিসিঞ্জার শরনার্থি সাহায্যের ব্যপারে জানতে চান। মিঃ উইলিয়ামসের সাথে আলোচনার পর এটাই প্রতীয়মান হয় যে শরনার্থিদের সাহায্যার্থে আলাদা করে রাখা ডলারের একটি খুবই নগন্য অংশ ভারতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বিগত বৈঠকের আলোকে সম্পুর্ন বিপরীত, শরনার্থিদের দেখভাল করতে গিয়ে ভারতীয়রা বরং বৈদেশিক মুদ্রা হারিয়েছে। যাই হোক, পুরো ত্রাণ তৎপরতাই আপাতত স্থগিত রয়েছে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় দেশেই।
৯. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর জোর দেন যে প্রেসিডেন্ট এটি একদম পরিস্কার করে দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের অনুমোদন ছাড়া ভারতের জন্য আর কোন বৈদেশিক মুদ্রা, পিএল-৪৮০ পণ্যসামগ্রী, বা উন্নয়নমূলক ঋণ বরাদ্দ করা হবে না। মিঃ উইলিয়াম জানান যে এর মধ্যে কোনোকিছু পিছলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
১০. ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চান চাপ প্রয়োগের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে। মিঃ উইলিয়ামস বলেন যে অন্য আর একমাত্র সম্ভাব্য উপায় রয়েছে যেসব ত্রাণ সামগ্রী এখনো চুক্তিবদ্ধ রয়েছে সেগুলোর ব্যপারে কোন অবস্থান নেয়া। তবে এটি একটি খুবই নোংরা সমস্যা হবে কতকটা অপ্রত্যাহারযোগ্য ঋণপত্র নিয়ে কাজ করার মতো। মিঃ উইলিয়ামস আরো বলেন যে, আমাদেরকে সেইসব পণ্যের অধিগ্রহন করতে হবে যেগুলো মার্কিন ঠিকাদাররা ভারতীয়দের জন্য পাঠাচ্ছে এবং তাই মার্কিন ঠিকাদারদেরকে মূল্য পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবে, ফলশ্রুতিতে মার্কিন সরকারের প্রতি দাবী উত্থাপিত হবে।
১১. মিঃ প্যাকার্ড জানান যে এর সবকিছুই করা যাবে, কিন্তু এটাও স্বীকার করেন যে এটি খুবই শ্রমসাধ্য এবং কঠিন সমস্যা। তিনি আরো বিশদ ব্যাখ্যা করে বলেন যে যতগুলো সামগ্রী এতে জড়িত রয়েছে তার সবগুলোর অবস্থান নিরূপণ করতে হবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে, সেগুলোর মালিকানা গ্রহণ করতে হবে, সরবরাহকারীদেরকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে, মালামালগুলোকে গুদামজাত করতে হবে, ইত্যাদি। তবুও চাইলে এরকম করা যাবে। মিঃ উইলিয়ামস জানান যে খুবই সীমিত আকারে এই ধরণের পদক্ষেপ মধ্য-প্রাচ্যের কিছু দেশের বিরুদ্ধে নেয়া হয়েছিল, কিন্তু দাবীগুলো নিষ্পত্তি করতে কয়েক বছর সময় লেগেছিল।
১২. ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চান ভারত কিভাবে তার আগামী বছরের উন্নয়নমূলক ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে যাচ্ছে, যার উত্তরে মিঃ উইলিয়ামস জানান এই মুহুর্তে কোনোকিছু আলাপ-আলোচনার আওতায় নেই।
১৩. ডঃ কিসিঞ্জার আগামী বছরের [এ.আই.ডি.] বাজেট সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ উইলিয়ামস জানান বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা কোন প্রতিশ্রুতির প্রতীক নয়। ডঃ কিসিঞ্জার বলেন বর্তমান আদেশ হচ্ছে যে এ.আই.ডি. বাজেটে ভারতের জন্য কোন বরাদ্দ না রাখা। এই কথা ফাঁস করা যাবে না যে এ.আই.ডি. বাজেটে ভারতের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল, শুধুমাত্র দুষ্ট হোয়াইট হাউসকে তা সরিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য।
১৪. ডঃ কিসিঞ্জার ইঙ্গিত দেন যে ভারত যদি পশ্চিম পাকিস্তানের উপর চড়াও হয় তাহলে আজাদ কাশ্মীর একটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করবে। ভারতীয়রা যদি পাক বিমান বাহিনী এবং সাঁজোয়া বাহিনী ধ্বংস করে দিতে পারে তাহলে পাকিস্তানকে বিভক্তিকরনের একটি সুচিন্তিত ভারতীয় চেষ্টা আমরা দেখতে পাব। তাদের বিমান বাহিনী এবং সাঁজোয়া বাহিনীর ধ্বংস হয়ে যাওয়া পাকিস্তানকে অরক্ষিত করে তুলবে। পশ্চিম পাকিস্তান একটি আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এই সম্ভাবনা কয়েকটি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আমরা কি একটি মার্কিন মিত্র রাষ্ট্রকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে দিতে পারি যেখানে আমরা ঐ অবরোধে অংশগ্রহণ করছি? আমরা কি ভারতীয়দেরকে এই ভয়ের মধ্যে রাখতে পারি যে, যদি মার্কিন সরবরাহ প্রয়োজন হয় তাহলেও তা প্রদান করা হবে না?
১৫. মিঃ সিসকো বলেন যে ডঃ কিসিঞ্জার যেরকম ইঙ্গিত দিচ্ছেন পরিস্থিতি যদি সেদিকেই মোড় নেয় তাহলে, অবশ্যই, পশ্চিম পাকিস্তানের সক্ষমতার উপর মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। মিঃ সিসকো সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, ভারতীয়রা এমনটাই করবে বলে তাদের লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছে। তিনি ইঙ্গিত দেন, ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মিঃ সিং রাষ্ট্রদূত কিটিং কে বলেছেন যে পাকিস্তানী এলাকা দখল করার কোনো ইচ্ছা ভারতের নেই। মিঃ সিসকো বলেন আমাদের এটা অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে কাশ্মীর একটি সত্যিকারের বিতর্কিত এলাকা।
১৬. মিঃ হেমস তখন বলেন যে আগে তিনি জনাবা গান্ধীর কথা বলেননি, যিনি চীনকে উদ্দেশ্য করে, আশা প্রকাশ করেন যে পশ্চিমে চীন কোনধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন যে সোভিয়েতরা তাঁকে এব্যাপারে সাবধান করে দিয়েছে যে চীন তাদের লাদাখ সীমান্তে শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু সোভিয়েতরা তাঁকে আশ্বস্ত করেছে যে এরকম হলে তারা পাল্টা-ব্যবস্থা নেবে। মিঃ হেমস জানান যে এই মুহূর্তে চীন কোন সৈন্যসমাবেশ করছে না তবে, তাসত্ত্বেও, সৈন্যসমাবেশ ছাড়াও তারা শক্তি প্রদর্শন করতে পারে।
১৭. এরপর পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা প্রদানের প্রশ্নে, ডঃ কিসিঞ্জার পাকিস্তানকে এফ ১০৪ জঙ্গিবিমান সরবরাহের ব্যপারে বাদশাহ হুসেইন-এর আগ্রহ প্রকাশের কথা উল্লেখ করেন এবং জানতে চান কিভাবে জর্ডানকে আপাতত অপেক্ষায় রাখা যায় যাতে করে প্রেসিডেন্ট এ বিষয়টি বিবেচনা করার সময় পান। ডঃ কিসিঞ্জার আরো জানতে চান আমাদের উচিত হবে কিনা ভারতীয়দের এবং সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয়া যে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর বড়ধরণের কোন আক্রমণ করা হলে এ দেশে সেটিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে নেয়া হবে।
১৮. মিঃ প্যাকার্ড ব্যাখ্যা করে বলেন যে আমরা জর্ডানকে এমন কিছু করার অনুমতি দিতে পারি না যেটা মার্কিন সরকার নিজেও করতে পারবে না। যদি মার্কিন সরকার পাকিস্তানকে ১০৪ জঙ্গিবিমান দিতে না পারে, তাহলে আমরা জর্ডানকে তা করতে দিতে পারি না। যদি তৃতীয় পক্ষের কাছে এমন সামগ্রী থাকতো যেটা মার্কিন সরকারের কাছে নেই, তাহলেও এক কথা ছিল। কিন্তু আমরা জর্ডানকে ১০৪ জঙ্গিবিমানগুলো হস্তান্তর করতে দিতে পারি না যদি না আমরা এমন কিছু খুঁজে বের করতে পারি যাতে করে পাকিস্তানীরা, নিজেরাই, আমাদের কাছ থেকে সরাসরি এগুলো কেনার জন্য যোগ্য বিবেচিত হয়।
১৯. ডঃ কিসিঞ্জার মত প্রকাশ করেন যে আমরা যদি পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করে না দিতাম তাহলে আর এই চলমান সমস্যা থাকতো না। মিঃ প্যাকার্ড এব্যপারে সম্মতি প্রকাশ করেন।
২০. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন যে আমরা হয়তো কখনোই সত্যিকার ভাবে পর্যালোচনা করে দেখিনি যে আসলেই সত্যিকার বিপদ কোনটি যখন আমরা পাকিস্তানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করা বন্ধ করে দিই।
২১. মিঃ প্যাকার্ড মত প্রকাশ করেন জর্ডান বিষয়ে আরেকটি বিবেচনা হতে পারে যে জর্ডান যদি এই সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করে তাহলে তারা আশা করবে যে আমরা এগুলো প্রতিস্থাপন করে দিব। রাষ্ট্রদূত জনসন জানান যে আমাদের আর কোনো এম.এ.পি. বাকি নেই।
২২. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন যে আমরা এমন এক পরিস্থিত দেখছি যেখানে সোভিয়েত সহায়তাপুস্ট এবং সরঞ্জামে সজ্জিত একটি দেশ হয়তো পাকিস্তানের অর্ধেক অংশকে অক্ষম রাষ্ট্রে এবং বাকি অর্ধেককে প্রজা রাষ্ট্রে পরিণত করতে যাচ্ছে। অন্য দেশগুলো আমাদের কার্যক্রমের ব্যপারে কি চিন্তা করছে তা আমাদের অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে।
২৩. মিঃ হেমস পাকিস্তানের সাথে আমাদের সিইএনটিও (CENTO) সম্পর্কের ব্যপারে জানতে চান। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন সিইএনটিও প্রসঙ্গে পাকিস্তানের প্রতি আমাদের কোন আইনগত দায়বদ্ধতা নেই। ডঃ কিসিঞ্জার ঐক্যমত প্রকাশ করেন কিন্তু আরো বলেন যে ১৯৬২ সালে আকাশ প্রতিরক্ষা চুক্তি করার সময় ভারতের প্রতিও আমাদের কোন আইনগত দায়বদ্ধতা ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতি বৃহত্তর ক্ষেত্রে বৈশ্বিক বিষয়ে কি প্রভাব ফেলতে পারে তা আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে।
২৪. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন যে আমাদেরকে সমস্যাটি নিরাপত্তা পরিষদের প্রদত্ত নিশ্চয়তার আলোকে দেখতে হবে মধ্য-প্রাচ্য এবং অন্যান্য এলাকায় তার কি প্রভাব পড়ছে। আমাদেরকে অবশ্যই সামরিক সরবরাহ পরিস্থিতিও দেখতে হবে। কেউ হয়তো বলতে পারে, তিনি যুক্তি দেখান, যে আমরা সব কিছুই করেছি কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দুই সপ্তাহ দেরী করে।
২৫. মিঃ প্যাকার্ড বলেন আমাদের জন্য হয়তো একমাত্র সন্তোষজনক পরিণতি এটাই হতে পারে যে আমরা আমাদের অবস্থানে অনড় থাকতে পারি, এই আশায় যে পশ্চিম পাকিস্তানীরা নিজেরাই নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে।
২৬. রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন যে পাকিস্তানকে আরো সরঞ্জাম দিলে তার কি প্রভাব পড়তে পারে আমাদেরকে তা অবশ্যই পরখ করে দেখতে হবে। এরকম হতে পারে যে আটটি এফ ১০৪ জঙ্গিবিমান হয়তো কোন প্রভাবই ফেলতে পারবে না পশ্চিম পাকিস্তানে সত্যিকার যুদ্ধ শুরু হলে, এগুলোকে হয়তো শুধুমাত্র নিদর্শন হিসেবেই গণ্য করা হবে। যদি বাস্তবে, আমরা পশ্চিম পাকিস্তানে ঢুকে পড়ি তাহলে সেটা নতুন এক ভিন্ন কার্যক্ষেত্র হবে।
২৭. রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন একটি সম্ভাবনা হতে পারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিঃ সিংয়ের প্রতি আমাদের জবাব, যেটিতে আমরা এলাকা দখল না করার ভারতীয় অঙ্গীকারকে মেনে নিতে পারি। তিনি আরো বলেন যে আমাদেরকে অবশ্যই এই বাস্তবতাও বিবেচনায় রাখতে হবে যে পাকিস্তানীরা নিজেরাই হয়তো কাশ্মীর দখল করার চেষ্টা করতে পারে।
২৮. ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ের প্রতি বিভিন্ন সম্ভাব্য প্রতিশ্রুতির বিষয়ে আলোচনার পর, মিঃ প্যাকার্ড বলেন বাস্তব সমস্যার সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিবেচনার বিষয় হচ্ছে হয় কার্যকর কিছু করা অথবা কিছুই না করা। যদি জেতার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে জড়িত হওয়া যাবে না। আমাদের যদি কিছু করার ইচ্ছা থাকে তাহলে এই নিশ্চয়তা নিয়েই করতে হবে যে ফলাফলের উপর এর প্রভাব থাকবে। আমরা যদি জানিই যে আমরা হেরে যাব তাহলে আমরা আর এর মধ্যে না যাই। জড়িত না হওয়ার উপায় খুঁজে বের করি।
২৯. মিঃ উইলিয়ামস মত প্রকাশ করেন যে আমরা এখন পশ্চিম পাকিস্তানে একটি যুদ্ধ-বিরতি কায়েম করার জন্য আমাদের চেষ্টা কেন্দ্রীভূত করতে পারি। রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন এতে করে, হয়তো, পাকিস্তানীরা কাশ্মীরে প্রবেশ করতে বাধাগ্রস্থ হবে।
৩০. ডঃ কিসিঞ্জার কাশ্মীরে পাকিস্তানের সক্ষমতা এবং সম্ভাবনা যাচাই করার আদেশ দেন। তিনি সি.আই.এ. কে মিসেস গান্ধীর বর্তমান কর্মকান্ডের আন্তর্জাতিক প্রভাবের উপর একটি মূল্যায়ন করতে বলেন। তিনি ইঙ্গিত দেন যে সামরিক সরবরাহ প্রশ্নে আমাদের একটি প্রাথমিক অবস্থান প্রস্তুত করা উচিত। তিনি পুনরাবৃত্তি করেন যে তিনি বাদশাহ হুসেইন কে “অপেক্ষায়” রাখতে চান। এটি পাকিস্তানকে সাহায্য করার ব্যপারে তাঁর আগ্রহ প্রকাশের সাথে সম্পর্কিত এবং তাঁকে নিরুৎসাহিত করা ঠিক হবে না। মার্কিন সরকারের উচিত বাদশাহ হুসেইন কে এরকম ইঙ্গিত দেয়া যে এ বিষয়ে তাঁর অনুভুতিকে তুচ্ছ বলে গণ্য করা হচ্ছে না।
৩১. অবরোধ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত জনসন বলেন যে ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই অবরোধমূলক কর্মসুচি নিয়েছে, যদিও পাকিস্তানী অবরোধটি কার্যত কাগুজে অবরোধ। ডঃ কিসিঞ্জার বলেন আমাদের পাকিস্তানের প্রতিও আপত্তি প্রকাশ করা উচিত। রাষ্ট্রদূত জনসন ইঙ্গিত দেন অবরোধের প্রতিবাদ জানানোর মতো আইনগত ভিত্তি আমাদের নেই। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ দেশগুলো একে অপরকে অবরোধ করার অধিকার রাখে। আমরা হয়তো ভাবতে পারি যে এটি হঠকারী একটি কাজ এবং এটি কিভাবে সম্ভব হচ্ছে এব্যপারে প্রশ্ন তুলতে পারি। আমরা, অবশ্য, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। অন্যদিকে এস.এস. বাকআই স্টেট সংক্রান্ত ঘটনায় আপত্তি প্রকাশে কোন বাঁধা নেই।
৩২. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন যে আমরা নিরপেক্ষ থাকার চেষ্টা করছি না। প্রেসিডেন্ট কি চান এব্যপারে কোন সন্দেহ থাকতে পারে না। প্রেসিডেন্ট নিরপেক্ষ থাকতে চান না। প্রেসিডেন্ট মনে করেন এক্ষেত্রে ভারত হচ্ছে আগ্রাসী রাষ্ট্র। আমরা এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছি যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাঁর সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করেছে। ডঃ কিসিঞ্জার বলেন যে ভারতকে আমরা নিশ্চিন্তে থাকতে দিতে পারিনা। এই ভদ্রমহিলা অত্যন্ত ঠাণ্ডা-মাথার ও অনমনীয় এবং সামান্য বিরোধিতায় সে সোভিয়েত পন্থা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে না। তাঁকে নিশ্চিন্তে থাকতে দেয়া আমাদের উচিত হবে না। তিনি এই বিষয় নিয়ে প্রেসিডেন্টের কাছে যাওয়ার ব্যপারে কারো কোন আপত্তি থাকলে তা উত্থাপন করার আহ্বান জানান। রাষ্ট্রদূত কিটিং, তিনি মত প্রকাশ করেন, তাঁর মতো করে পর্যাপ্ত আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।
৩৩. পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের প্রশ্নে সংক্ষিপ্তভাবে, ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চান এমন কেউ আছে কিনা যে নিশ্চিত করে বলতে পারবে এই দ্বন্দ্বের কারণে সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। মিঃ হেমস ইঙ্গিত দেন যে আমরা হয়তো তাৎক্ষনিকভাবে তা জানতে পারবো না, কিন্তু গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার পর আমরা অবশ্যই জানতে পারবো।
৩৪. বৈঠকটি ১২ টা ১০ মিনিটে মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
এস/এইচ. এন. কে
এইচ. এন. কে
ক্যাপ্টেন, ইউ.এস.এন.
দক্ষিন এশিয়া/এম.এ.পি. শাখা, জে৫
এক্সটেনশন ৭২৪০০
সূত্রঃ নিউ ইয়র্ক হেরাল্ড ট্রিবিউন, প্যারিস সংস্করণ, ১৫ই জানুয়ারী ১৯৭২
বিঃদ্রঃ
এই দলিলে ব্যবহৃত নাম তালিকা
এ.আই.ডি. – এজেন্সী ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট।
এ.এস.ডি. (আই.এস.এ) – অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্স।
আজাদ কাশ্মীর – মুক্ত কাশ্মীর, পাকিস্তানি-দখলে থাকা কাশ্মীরের অংশ।
সিইএনটিও (CENTO) – সেন্ট্রাল ট্রিটি অর্গানাইজেশন।
সি.আই.এ. – সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সী।
সি.জে.সি.এস. – চেয়ারম্যান, জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ।
ডি.এ.এস.ডি. এন.ই.এ.এস.এ. এন্ড পি.পি.এন.এস.সিএ. – ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স, নিয়ার ইস্টার্ন, আফ্রিকান এন্ড সাউথ এশিয়ান এফেয়ার্সঃ ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ডিফেন্স, পলিসি প্ল্যানস এন্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এফেয়ার্স।
ডেপ. ডির. এন.এস.সি.সি. এন্ড পি.পি.এন.এস.সি.এ. – ডেপুটি ডিরেক্টর, পলিসি প্ল্যানস এন্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এফেয়ার্স।
ডেপসেকডেফ – ডেপুটি সেক্রেটারি অব ডিফেন্স।
এফ-১০৪ – স্টার ফাইটার জেট এয়ারক্রাফট।
আই.এস.এ. – ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্স অব ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট।
জে.সি.এস. – জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ।
এল.ও.সি. – লাইন(স) অব কমিউনিকেশন।
এম.এ.পি. – মিলিটারি অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রাম।
এন.এফ.এ. – নিয়ার ইস্টার্ন এফেয়ার্স, সেকশন অব স্টেট ডিপার্টমেন্ট।
এন.ই.এস.এ. – নিয়ার ইস্ট এন্ড সাউথ এশিয়া।
এন.এস.সি. – ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
ও.জে.সি.এস. – অফিস অব জয়েন্ট চীফস অব স্টাফ।
পাকস – পাকিস্তানী।
পিএল ৪৮০ – পাবলিক ল ৪৮০, গভের্নিং সারপ্লাস সেন্ট আব্রড এজ এইড।
পি.ডি.এ.এস.ডি. (আই.এস.এ.) – প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অব ডিফেন্স, ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্স।
পি.ও.এল. – পেট্রোলিয়াম, অয়েল এন্ড লুব্রিকেন্টস।
পি.এল. – পাবলিক ল।
আর & সি ফাইলস – রেকর্ডস এন্ড কন্ট্রোল ফাইলস
সেকডেফ – সেক্রেটারি অব ডিফেন্স।
এস. এস. বাকআই স্টেট – আমেরিকান জাহাজ যেটির উপর পাকিস্তানী বন্দরে গুলিবর্ষন করা হয়।
ইউ.এস.জি. – ইউনাইটেড স্টেটস গবর্মেন্ট।
ডব্লিউ.এস.এ.জি. – ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপ, আর্ম অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল।
.
সি.জে.সি.এস চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ
ডি.এ.এস.ডি..এনই.এস.এ পি.পি.এন.এস.সিএ ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স. নেয়ার ইস্টার্ন. আফ্রিকান এন্ড সাউথ এশিয়ান এফেয়ার্স: ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স. পলিসি প্ল্যান্স এন্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এফেয়ার্স.
ডিপ ডির… এন এস সি সি পি.পি.এন.এস.সিএ ডেপুটি ডিরেক্টর পলিসি প্ল্যান্স এন্ড ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এফেয়ার্স.
ডিপসেকডেফ (Depsecdef) ডেপুটি সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স
এফ-১০৪ স্টার ফাইটার জেই এয়ারক্র্যাফট
আই.এস.এ. ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্স অফ ডিফেন্স ডিপার্টমেন্ট
জে.সি.এস. জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ
এল.ও.সি. লাইন(স) অফ কমিউনিকেশন
এম.আ.পি. মিলিটারি এসিসট্যান্ট প্রোগ্রাম
এন.এফ.এ. নেয়ার ইস্টার্ন এফেয়ার্স. সেকশন অফ স্টেট ডিপার্টমেন্ট
এন.ই.এস.এ. নেয়ার ইস্ট এন্ড সাউথ এশিয়া
এন.এস.সি. ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল
ও.জে.সি.এস. অফিস অফ জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ
পাক্স পাকিস্তানিজ
পি.এল ৪৮০ পাবলিক ল ৪৮০ গভার্নিং সারপ্লাস সেন্ট এব্রোড এজ এইড
পি.ডি.এ.এস.ডি. ( আই.এস.এ) প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট অফ ডিফ্যান্স ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি এফেয়ার্স
পি.ও.এল. পেট্রোলিয়াম, ওয়েল এন্ড লুব্রিকেন্টস
পি.এল. পাব্লিক ল
আর সি ফাইলস রেকর্ডস এন্ড কন্ট্রোল ফাইলস
সেকডেফ secdef সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স
এস.এস. বুকেকেয়ে স্টেট আমেরিকান ভেসেল স্ট্র্যাফড ইন আ পাকিস্তান পোর্ট
ইউ.এস.জি. ইউনাইটেড স্টেট গভার্মেন্ট
ডাব্লিও.এস.এ.জি. ওয়াশিংটন স্পেশাল একশন গ্রুপ আর্ম অফ ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল
.
13.69.270
(পরিশিষ্ট ক)
পাক মার্কিন পারস্পারিক প্রতিরক্ষা চুক্তি সুত্রঃ শ্লোসিংগার সম্পাদিত
‘দি ডাইনামিক্স অব ওয়ার্ল্ড ওয়ার
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও পাকিস্তান সরকার।
জাতিসংঘের নীতিমালা অনুযায়ী কাঠামোগত পদক্ষেপের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ইচ্ছুক এমন জাতিগোষ্ঠির দক্ষতা আরো বাড়িয়ে তুলবে যারা সনদের উদ্দেশ্য ও নীতিমালার প্রতি নিবেদিত, যেনো সেই উদ্দেশ্য ও নীতির সমর্থনে ব্যাক্তিগত ও সামষ্টিক আত্নপ্রতিরক্ষামূলক ব্যাবস্থাগুলিতে কার্যকর ভাবে অংশগ্রহন করতে পারে।
সনদ অনুযায়ী জাতিসংঘকে সশস্ত্র বাহিনী সরবরাহ করা এবং যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থা ও নিয়ন্ত্রনে জাতিসংঘে যোগদান এবং সর্বজনীন নীতিমালার উপর চুক্তি গ্রহন এবং সার্বজনীন নীতিমালার চুক্তি প্রত্যাহার এবং সৈন্য হ্রাসের মাধ্যমে কোন প্রকার খেলাপী ও ছল চাতুরীর বিপরীতে পর্যাপ্ত নিশ্চয়তার ভিত্তিতে তাদের পুর্ন সহযোগীতা প্রদানে তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যাক্ত করা।
সংশোধিত; পারস্পারিক সহায়তা আইন ১৯৪৯ এবং সংশোধিত পারস্পারিক নিরাপত্তা আইন ১৯৫১ প্রনয়নের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই নীতি সমুহে যেসব সমর্থন এসেছে তা বিবেচনা করে এমন শর্তাদি নির্ধারন করতে চায় যে এই ধরনের সহায়তা প্রদানের জন্য শাষন করবে।
সম্মত হয়েছে;
ধারাঃ ১
শর্তাবলী অনুযায়ী সম্মত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার, পাকিস্তান সরকার এর জন্য যেমন সরঞ্জাম, উপকরণ সেবা বা অন্যান্য সহায়তা সরবরাহ করার অনুমোদন দিতে পারে। সৈন্যসজ্জা এবং এই ধরনের সহায়তা সমূহ জাতিসংঘের সনদ অনুযায়ী সাদৃশ্য পূর্ন হতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এর অনুযায়ী এই ধরনের সহায়তা প্রদান করা হতে পারে এই চুক্তির ভিত্তিতে
এই চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার হয়তো এই সহায়তা প্রদান করবে যা বিধিমালা অনুসারে ১৯৪৯ সালের পারস্পারিক প্রতিরক্ষা আইন এর অধীনে সমস্ত শর্তাবলী এবং অবসানের বিধান এবং ১৯৫১ সালের পারস্পারিক নিরাপত্তা আইন সংশোধনী বা সম্পূরক হিসেবে সমস্ত শর্তাবলী, শর্তাদি এবং পরিসমাপ্তি বিধান মতে সাজানো হয় এমনকি, এটির অধীনে যে কোনও প্রযোজ্য বিধানিক বিধানগুলির অধীন উহা কার্যধারক থাকিবে।
উভয় সরকার সময়মত, এই অনুচ্ছেদের বিধানগুলি বহন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা আলোচনা করবে।
২. পাকিস্তান সরকার তাদের এই সহায়তা নিজেদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, নিজেদের আত্মরক্ষা অথবা কোন এলাকার নিরাপত্তায় অথবা জাতিসংঘের সাথে থাকা যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যবহার করবে এবং অন্য কোন দেশের উপর আক্রমণ করবে না। মার্কিন সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ থাকা বিষয়গুলো ছাড়া অন্যকিছুতে তারা এইগুলো ব্যবহার করবে না।
৩. চুক্তিগুলোতে কি কি উপকরন এবং সামগ্রী আছে তাঁর উল্লেখ থাকতে হবে এবং প্রয়োজনহীন এবং অব্যবহৃত গোলাবারুদ মার্কিন সরকারকে ফেরত দিতে হবে।
৪. পাকিস্তান সরকার মার্কিন সরকারকে অবহিত করা ছাড়া কোন অফিসার বা এজেন্টের মাধ্যমে এই চুক্তির অধীনে প্রাপ্ত কোনও সরঞ্জাম, উপকরণ, সম্পত্তির, তথ্য, বা পরিষেবাগুলির অন্য কোনও দেশের শিরোনাম বা তাদের দখলে পূর্বের সম্মতি ছাড়াই হস্তান্তর করবে না।
৫. পাকিস্তান সরকারকে দুই সরকারের মতামত নিয়ে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতেএই চুক্তি অনুযায়ী সজ্জিত সামরিক নিবন্ধ, পরিষেবা বা তথ্য প্রকাশ বা সংঘাত প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
৬. চুক্তি অনুযায়ী উভয় সরকারই জনগনকে তাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবহিত করবে।
৭. উভয় সরকার সম্মত হবে পাকিস্তান সরকার কোথায় তাদের তহবিল জমা রাখবে, বিতরন করবে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার পরিচালিত অন্য জায়গায় এই তহবিলগুলি ব্যবহার করা হবে। তবে কিছু কিছু বিষয় যেমন বাজেয়াপ্তকরণ কোন ব্যক্তি, খামার, সংস্থা, কর্পোরেশন, প্রতিষ্ঠান বা সরকার কর্তৃক সংযুক্তি, আটক বা অন্যান্য আইনি প্রক্রিয়া দ্বারা, সে সব বিষয়ে অমত থাকতে পারে।
নিবন্ধ ২
উভয় সরকার প্রয়োজনে তাদের মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে প্রতিরক্ষার অধিকার এবং প্রযুক্তিগত তথ্য বিনিময়ে এবং এই ধরনের বিনিময় দ্রুততর হবে এবং একই সময়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ রক্ষা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
নিবন্ধ ৩
১. এই চুক্তির মূল উদ্দেশ্য পূরণে পাকিস্তানের প্রশাসনিক ও অপারেটিং ব্যয়ের জন্য পাকিস্তান সরকার মার্কিন সরকারের এই অর্থ ব্যবহার করবে। উভয় সরকারই দ্রুততার সাথে এই অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবে এবং এই ধরনের তহবিল পরিচালনার জন্য আলোচনা শুরু করবে।
২. কিছু ব্যতিক্রম বাদে উভয়ের সম্মতিক্রমে আমদানি বা রপ্তানির উপর শুল্কমুক্ত চাঁদা প্রদান এবং অভ্যন্তরীণ করদাতাদের পণ্য, যথোপযুক্তভাবে, উপকরণ বা সরঞ্জাম এই চুক্তির সাথে সংযুক্ত করা বা এই চুক্তির মধ্যে যে কোনও চুক্তির সাথে সম্পর্কযুক্ত তাদের ছাড় দেওয়া হবে যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং অন্য যেসকল দেশের সরকার থেকে সামরিক সহায়তা পাচ্ছে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ।
৩. পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকার বা মার্কিন সরকার দ্বারা পরিচালিত সাধারণ প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন বিদেশী সাহায্যের জন্য খরচকে কর মুক্তি দেয়া হবে, পাকিস্তান সরকার উভয়ের জন্য সন্তোষজনক পদ্ধতি স্থাপন করবে সরকার যাতে এই ধরনের ব্যয় করের মাধ্যমে শোধ করা যায়।
নিবন্ধ ৪
১. পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের কয়েকজন কর্মীদেরকে এই বিভাগের অধীনে নিয়োগ দিবে যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের দায়িত্ব পালন করবে এবং অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করবে। এই চুক্তিতে,যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক, যারা সাময়িকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী , পাকিস্তানের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক রয়েছে, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অংশ হিসাবে কাজ করে তাদের এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট পদমর্যাদা অনুযায়ী অন্যান্য কর্মচারীদেরকে একই সুবিধাদি এবং অনাস্থাভোগী হিসাবে গণ্য করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক যথাযথ বিজ্ঞপ্তিতে, পাকিস্তান সরকার পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক প্রদান করবে সিনিয়র সামরিক সদস্য এবং ঊর্ধ্বতন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের এবং তাদের নিজ নিজ আশু ডেপুটিসদের কাছে।
২. পাকিস্তান সরকার কর্মচারী বা তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আমদানি করা ব্যক্তিগত সম্পত্তি, আমদানি ও রপ্তানিকতে ছাড় প্রদান করবে এবং এই ধরনের ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত ও তাদের পরিবার সম্পত্তির আমদানি ও রপ্তানিকে সহজতর করার জন্য যুক্তিসঙ্গত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
নিবন্ধ ৫
১. পাকিস্তান সরকার –
ক. আন্তর্জাতিক চিন্তাধারা এবং শুদ্ধতা প্রচার এবং বিশ্ব শান্তি বজায় রাখতে যোগদান করবে;
খ. আন্তর্জাতিক চাপ দূর করার জন্য পারস্পরিক সম্মতি হিসাবে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে;
গ. আত্মনির্ভরশীল শক্তি এবং মুক্ত বিশ্বের আত্মরক্ষামূলক শক্তি উন্নয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জনশক্তি, সম্পদ, সুবিধা এবং সাধারণ অর্থনৈতিক অবস্থার দ্বারা পূর্ণ অবদান রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখবে;
ঘ. প্রতিরক্ষা ক্ষমতার উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হতে পারে এমন সমস্ত যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ নিবে; এবং
১.পাকিস্তানি সরকার হয়ত আপত্তি করবে নয়তো,পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে আমদানি রপ্তানিতে শুল্ক সেবায় অনুমতি দিবে এবং পণ্যের উপর অভ্যন্তরীণ করারোপণ থেকে রেহাই দিবে।আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও সামরিক সহায়তা ভোগকারী অন্য যেকোন দেশের সরকারের মধ্যে চুক্তি বা অনুরুপ চুক্তি অনুযায়ী উপকরণ ও সামগ্রী বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানি করা হয়।
২.ত্রাণের কর সকলের জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে,সাধারণ প্রতিরক্ষা প্রচেষ্টার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার কর্তৃক অথবা তার পক্ষ হতে পাকিস্তানে ব্যয়িত অর্থ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন বৈদেশিক দাতব্য কার্যক্রমে ব্যয়িত অর্থ,পাকিস্তান সরকার উভয় সরকারের সন্তোষজনক কার্যপ্রণালী প্রস্তুত করবে যেনো এমন ব্যয়িত অর্থের কর নেট হয়.
ধারা- ৪
১) পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেইসকল সৈন্যদের নিয়োগ দিবেন যারা তার এলাকায় এই চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন এবং চুক্তি অনুযায়ী তাদের সহায়তা ও উন্নতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিধা দিবে,কর্মীদের যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক এমনকি অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারীসহ পাকিস্তান সরকারের সাথে তাদের একটি সম্পর্ক হবে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি অংশের কাজের দিকনির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণের কাজ পরিচালনা করবেন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান এবং তার বিশেষ অধিকার ও স্বাধীনতা একই থাকবে যেমনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের পদে সংশ্লিষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়তার অন্য কর্মীদের দেয়া হয়।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের উপযুক্ত ইশতিহারের পর পাকিস্তান সরকার নিযুক্ত জ্যেষ্ঠ সামরিক সদস্য ও সিনিয়র সেনা,নৌ ও বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা ও তাদের নিজ নিজ বর্তমান জ্যেষ্ঠ ডেপুটির অধীনে কূটনৈতিক নিবন্ধটি দান করবেন।
২) পাকিস্তান সরকার, ব্যক্তিগত কর্মী বা তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আমদানি কৃত সম্পত্তি আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক থেকে রেহাই দিবে এবং এই ধরনের ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তির সহজতর আমদানি ও রপ্তানি ত্বরান্বিত করতে যুক্তিগত প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে।
ধারা – ৫
পাকিস্তান সরকার-
১)আন্তর্জাতিক সমঝোতা ও শুভেচ্ছা বিনিময় এবং বিশ্বশান্তি রক্ষায় যোগদান করবে
২)আন্তর্জাতিক সমস্যা নিরসনে উভয়পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহণ করবে
৩)রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে এবং নিজস্ব প্রতিরক্ষা শক্তি ও উন্মুক্ত বিশ্বের প্রতিরক্ষা শক্তির উন্নতি ও ভরণপোষণে মানবসম্পদ,উৎস,সুবিধাদি ও সাধারণ অর্থ অবস্থার পূর্ণ অবদান অনুমোদন করবে
৪)প্রতিরক্ষা ক্ষমতার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সকল যৌক্তিক পদক্ষেপ নিবে, এবং
৫) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রদত্ত অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তার কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
২(ক)পাকিস্তান সরকার, জাতিসংঘের সনদের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা এধরনের অন্যান্য সরকার তার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত স্ব প্রতিরক্ষা বাড়ানোর জন্য এবং সমষ্টিগত নিরাপত্তায় তাদের কার্যকর অংশগ্রহণ এর জন্য এই ধরনের সরঞ্জাম, উপকরণ, সেবা কিংবা অন্যান্য সহায়তায় সম্মত হতে পারে।
( খ)পারস্পরিক সহায়তা নীতিকে সাথে নিয়ে, পাকিস্তান সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাথে এমন চুক্তি করবে যা কিনা উৎপাদন এবং হস্তান্তর সহজতর করবে, এবং যেখানে সময়,পরিমাণ এবং শর্তাদির উপর যেনো দুপক্ষই একমত হতে পারে অথবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সম্পদে ঘাটতি কিংবা সম্ভাব্য ঘাটতির জন্য প্রয়োজনীয় কাচামাল কিংবা আধা প্রক্রিয়াজাত উপকরণ যেগুলো পাকিস্তানে পাওয়া যায় তা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করে সাংসারিক ব্যবহার এবং বাণিজ্যিক রপ্তানির মাধ্যমে পাকিস্তানের প্রয়োজনীয়তা মেটাবে।
ধারা – ৬
পারস্পরিক নিরাপত্তার স্বার্থে পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সাথে বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করবে ,যা কিনা বিশ্ব শান্তি রক্ষণাবেক্ষণে হুমকিস্বরূপ।
ধারা – ৬
১.এই চুক্তিটি স্বাক্ষরের তারিখে কার্যকর হবে এবং একপক্ষ অন্যপক্ষের এটি বিনষ্ট করার অভিপ্রায়ের লিখিত নোটিশ সম্বলিত ফরমাশ জারি করার এক বছর পর্যন্ত এটি বহাল থাকবে।এছাড়া নিবন্ধ 1, অনুচ্ছেদ ২ ও ৪ এবং নিবন্ধ 1 এর অধীনে যে বিলিব্যবস্থা করা হয়েছে, অনুচ্ছেদ ৩, ৫ ও ৭ এবং নিবন্ধ ২ এর অধীনে প্রবেশকৃত বিধান বহাল থাকবে যদি না অন্যথায় দুই সরকারের সম্মতি থাকে।
২.উভয় সরকার, যে কোন একজনের অনুরোধের ভিত্তিতে এই চুক্তিটির যে কোন সংযোজন অথবা সংশোধনী সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে পরামর্শ করবে।
৩.এই চুক্তিটি জাতিসংঘের সচিবালয়ের সাথে নিবন্ধিত হবে।
১৯৫৪ সালের ১৯ মে করাচিতে দুই কপিতে করা হয়েছে।
বিঃদ্রঃ
THE DYANAMICS OF WORLD POWER:
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিমালার তথ্যসংবলিত ইতিহাস ১৯৪৫-১৯৭৩
ভল্যুম- ৪
পৃষ্ঠা-৭৩৬-৭৪০
সম্পাদনায় এ.এম.শ্লেসিংগার,১৯৭৩,নিউ ইয়র্ক,চেলসিয়া হাউস প্রকাশন।
.
13.70.274
পরিশিষ্ট-খ
ভারত ও পাকিস্তানে
অস্ত্র পরিবহন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিনিধি
গোল্ডবার্গের বিবৃতি*
(সারমর্ম)
১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৫
** ** ** ** ** **
ভারত পাকিস্তান উভয়ের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যুক্তরাষ্ট্র উপভোগ করে এবং ভবিষ্যতেও উপভোগের আশা রাখে, আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে, আমরা উভয় দেশেই অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছি, যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশনের সমর্থনে আমরা চাই যে, এই দ্বন্দ্বের একটি সমাপ্তি টানতে এবং এটাকে আর বাড়তে না দেওয়ার সাহায্যার্থে একটি যুদ্ধ-বিরতি ঘোষণা করা হোক। এটা নিরাপত্তা পরিষদের রেজল্যুশনের উদ্দেশ্য যে অবিলম্বে একটি সমাপ্তি ঘটুক এবং যুদ্ধ আরো ঘনীভূত না হোক।
আনুষ্ঠানিক চুক্তি লঙ্ঘন করে এই যুদ্ধে আমাদের সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহারে দুঃখ প্রকাশ করছি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিঃ বর্তমান দলিল ১৯৬৫, পিপি, ৮০৪-০৫, (পৃষ্ঠাঃ ৭৫৩)
.
13.71.277-278
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্থানে শোকাবহ ঘটনা ঘটছেঃ সিনেটর হ্যারিসের মন্তব্য ও পররাষ্ট্র সিচিব উইলিয়াম রজার্সের এর লিখিত চিঠি | সিনেটের কার্যবিবরনী | এপ্রিল ১, ১৯৭২ |
APRIL 1, 1971 CONGRESSIONAL RECORD—SENATE S 4387
APPALLING TRAGEDY IN EAST PAKISTAN
মি হ্যারিসঃ মি. প্রেসিডেন্ট, পুর্ব পাকিস্থানে একটি মর্মান্তিকারক ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে, যার ব্যাপারে পুরো পৃথিবী অজ্ঞ রয়ে আছে; কারন পশ্চিম-পাকিস্থান কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সাংবাদিক বৃন্দদের অত্যন্ত চতুরভাবে এসব বিষয় সম্পর্কে অবহিত করা থেকে বিরত রেখেছে। তারা এমন ভাবে উপস্থাপন করেছে, যেন তাদের সৈন্যগন এভাবে শান্তিতে মৃত্যু বরণ করবে।
দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস, নিউ দিল্লী’এর এক “নির্ভুল-স্বাধীন উৎস” এর বরাত দিয়ে, উল্লেখ করেছে, পাকিস্থানী সৈন্যরা, পুর্ব পাকিস্থানের নেতাদের জোরপূর্বক রাস্তায় এনে, নির্মম ভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। এমন আরো অনেক অসমর্থিত প্রতিবেদন আছে, যেখানে উল্লেখ্য, পঊর্ব পাকিস্থান যেন আর কোন দিন মাথা তুলে দাড়াতে না পারে, এজন্য তথ্যদাতার সমন্বয়ে পরিকল্পনা মাফিক দেশের বুদ্ধিজীবীদের খুজে বের করা হচ্ছে এবং খুন করা হচ্ছে।
আর এসব হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে, “ধর্ম এবং অবিভক্ত পাকিস্থান” এর নামে।
কিছু কিছু প্রতিবেদন আবার চাঞ্চল্যকর বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে এগুলোকে প্রদর্শিত করছে; যেহেতু পাকিস্থানি সরকার প্রেস এবং মিডিয়া বহিস্কার করেছে, তাই আমরা নিশ্চিত ভাবে কিছুই বলতে পারছি না। কিন্তু, যেহেতু, পাকিস্থানি সরকারের আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ব্যাপারে, অনাগ্রাহত দেখে, এতটুকু কমপক্ষে বলা যায় যে, এসব সংবাদের কিছুটা হলেও সত্যি।
পৃথিবীর এখন এই মৌনতা থেকে বের হয়ে আসা দরকার। এমত অবস্থায় একমাত্র ইন্ডিয়ান সরকার, পাকিস্থানের এসব ব্যাপারে নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। তবে ইন্ডিয়ার একার নিন্দা এবং প্রতিবাদ এর কার্যকারিতায় প্রান্তিয় ভুমিকা রাখবে, তাছাড়া, ইন্ডিয়া-পাকিস্থানের দীর্ঘ দিনের শত্রুতা, এই ঘটনা বিশ্বের সামনে ভুল ভাবে উপস্থাপন হওয়ার সম্ভবনা আছে। এটা খুবই দুঃখজনক, যে ভিয়েতনামে আমাদের কর্তৃক বিপুল মানব বিপর্যয়ের কারনে, আমেরিকা এর নৈতিক দায়িত্ব পালনে সক্ষম হচ্ছে না।
তবে তার মানে এই না যে, আমরা নিষ্কৃয় থাকবো।আমার স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা উচিৎ যে, আমরা পাকিস্থানে সকল প্রকার সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহোযোগীতা স্থগিত করছি। মধ্যবর্তী সময়ে, আমরা অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে, এশিয়ার দেশগুলোকে, জাতিসঙ্ঘের দেশগুলোর মতো করে নৈতিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে বলতে পারি।
আমি সিনেটরদের কাছে বিনীত নিবেদন করবো, যাতে তারা আমার সাথে প্রশাসনের কাছে পকিস্থানের বিষয়টিকে সর্বচ্চ গুরুত্ব প্রদানের প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপন করেন। যেখানে পূর্ব পাকিস্থানের নেতৃবৃন্দ মৃত্যুর দিন গুনছেন সেখানে আমরা এভাবে হাতের উপর হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না……
- S. SENATE,
COMMITTEEONGOVERNMENTOPERATIONS.
Washington, D. C.. April 1, 1971.
HON WILLIAM P. ROGERS,
Secretary of State,
Department of State,
Washington, D. C.
জনাব সচীব মহাদয়ঃ
আমি আতংকিত এবং আমি বিশ্বাস করি যে, পূর্ব-পাকিস্থানে এরুপ বিপুল গনহত্যা এবং বাছবিচারহীন হত্যাজজ্ঞে আপনিও আতংকিত।
দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস, নিউ দিল্লী’এর এক “নির্ভুল-স্বাধীন উৎস” এর বরাত দিয়ে, উল্লেখ করেছে, পাকিস্থানী সৈন্যরা, পুর্ব পাকিস্থানের নেতাদের জোরপূর্বক রাস্তায় এনে, নির্মম ভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। এমন আরো অনেক অসমর্থিত প্রতিবেদন আছে, যেখানে উল্লেখ্য, পঊর্ব পাকিস্থান যেন আর কোন দিন মাথা তুলে দাড়াতে না পারে, এজন্য তথ্যদাতার সমন্বয়ে পরিকল্পনা মাফিক দেশের বুদ্ধিজীবীদের খুজে বের করা হচ্ছে এবং খুন করা হচ্ছে।
যেহেতু পাকিস্থান সরকারের আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের পূর্ব-পাকিস্থান থেকে অব্যাহতি দেয়ার কারনে, এটা কনগ্রেস মেম্বার এবং পৃথিবীর অন্যদের পক্ষে জানা অসম্ভব, পূর্ব-পাকিস্থানে আসলে কি হচ্ছে। কিন্তু যদি পাকিস্থান সরকারে আরো ভালো কিছু বলার থাক্তো, তবে তারা অবশ্যই সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার দিতেন, যারা আরো ভালো ভাবে বিশ্বকে জানাতে পারতো।
যতক্ষন পর্যন্ত না, পূর্ব-পাকিস্থানে এসব হত্যাকান্ড এবং এমন হত্যাযজ্ঞ সম্পর্কে সরকারি ভাবে কোন সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, আমি বিনীত নিবেদন করছি, যেন আমাদের সরকার, পাকিস্থানে প্রেরিত সকম মিলিটারি এবং অর্থনৈতিক সাহায্য বন্ধ করে দেয়া হোক। আমার মনে হয় না, পূর্ব-পাকিস্থানের নেতৃবৃন্দদের ধুলিস্বাৎ করার লক্ষ্যে চালিত হত্যাজজ্ঞে, আমেরিকার অস্ত্র এবং টাকা ব্যাবহার হয়েছে, এমন গঞ্জনা বিশ্বব্যাপী উঠুক।
তাছাড়া, ভিয়েতনামে আমাদের সম্পৃক্তাতায়, পৃথিবীময় যে প্রতিক্রিয়া উঠেছে, এতে আমার মতে, পাকিস্থানের বিরুদ্ধে, জাতিসঙ্ঘের দেশ গুলোর মতো নৈতিক নেতৃত্ব প্রদান, আমাদের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু, আমি এটাও বিশ্বাস করি না যে, আমরা অন্যান্য দেশ গুলোকে, বিশেষ করে এশিয়ার দেশ গুলোকে সোচ্চার হতে বলবো এবং জাতিসঙ্ঘকে সমর্থন জানাতে বলবো।
বিনীত নিবেদন
ফ্রেড হ্যারিস
ইউ এস সিনেট
.
13.72.279
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে সিনেটর কেনেডি |
সিনেটের কার্যবিবরণী
|
১ এপ্রিল ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর সিনেটর কেনেডির মন্তব্য
মিঃ কেনেডিঃ মিঃ প্রেসিডেন্ট,পূর্ব পাকিস্তান থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণ চলমান সংঘাতের জন্য চড়া মূল্য দিচ্ছে। এ এক নির্বিচার হত্যা আর ভিন্ন মতাবলম্বী রাজনীতিক ও ছাত্রদের প্রাণনাশের গল্প, প্রতি ঘন্টায় হাজার হাজার বেসামরিক জনগণের দুর্ভোগ আর মৃত্যুর গল্প। এ গল্প ঘরহারা উদবাস্তু মানুষের, খাদ্য আর পানীয়ের অভাবের। প্রাকৃতিক দুর্যোগের করালগ্রাসের ঠিক পরপর পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমানে চলমান সহিংসতা এবং প্রায় সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়া সরকারী কর্মকান্ড ইতোমধ্যে সংকটময় পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। লক্ষ-লক্ষ মানুষ আজ রোগ, মহামারী আর দুর্ভিক্ষের হুমকির মুখে।
আমি আজ কাউকে দোষারোপ করতে বা নিন্দা প্রকাশে বক্তব্য দিব না, বা পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও মানবিক সমস্যা সমাধানে কোন ঐন্দ্রজালিক সমাধানও দিব না। কিন্তু শরণার্থী বিষয়ক বিচার বিভাগীয় সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সংকটাবস্থায়, যা সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে চলমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত জনগণের তালিকায় আরেকটি নতুন সংযোজন বলেই মনে হচ্ছে।
অবধারিতভাবেই, এই যুদ্ধের ফলাফলের উপর যাদের বিশাল লাভ-লোকসান জড়িত, তাদের স্বার্থের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানের বেসমারিক জনগণের অবস্থা চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গৌণ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকার, চট্টগ্রামের, সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা গ্রাম আর শহরের মানুষের, সবারই স্বার্থ এতে জড়িত। অনেকের জন্যই এটি বেচে থাকার, টিকে থাকার লড়াই। পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতি আমাদের, মার্কিনীদের, জন্য অস্বস্তিকর হওয়ার কথা, কেননা, এই মানুষগুলোর দুঃখ-দুর্দশার পিছনে আছে আমাদের সমরাস্ত্র-আমাদের তৈরি বন্দুক, ট্যাঙ্ক আর বিমান। এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এটি ঘটেছে মার্কিন সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের সাথে আমাদের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে।
মিঃ প্রেসিডেন্ট, আমি পূর্ব পাকিস্তান ইস্যুতে গভীর সংকট অনুধাবন করছি। কুটনীতিক ও মানবতার কর্মীদের জন্য এ এক জটিল পরিস্থিতি। কিন্তু আমাদের সরকারের কি উচিত না এই হত্যার নিন্দা জানানো? আমাদের কি এই সংঘাতের ডামাডোলে ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভাগ্য নিয়ে আরো সচেতন হওয়া উচিৎ না? আমাদের কি উচিৎ না এই সংঘাত থামাতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করা, অন্ততঃপক্ষে অন্যদের এরকম প্রচেষ্টা উতসাহিত করা এবং সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়া?
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে মার্কিন জনগণের ক্রমবর্ধিষ্ণু উদবেগের সাথে একাত্নতা প্রকাশ করে মার্কিন সরকার কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
.
13.73.280
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্তানের প্রশ্নে আমেরিকার করণীয় সম্পর্কে কংগ্রেস সদস্য হলপারণে এর বক্তব্য | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী |
৭ই এপ্রিল,১৯৭১
|
পাকিস্তানি প্রশ্নের জবাবদিহিতা করা প্রয়োজন
জনাব হলপারনে,মাননীয় স্পিকার,আমি জানি যারা পত্রিকা পড়েছেন এবং গনমাধ্যমে সামরিক যুদ্ধের খবর শুনেছেন কিংবা দেখেছেন তারা পাকিস্তানের উপর ক্ষুব্ধ এই ভেবে যে আমরা উক্ত যুদ্ধের ব্যাপারে সামগ্রিক খবর পাচ্ছি না।যা আমরা দেখতে পাচ্ছি তা হল হাজারো মানুষ এই যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করছেন যা কোন অর্থ বহন করে না।
এটি আমার কাছে খুবই পরিষ্কার যে যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে অংশ নিতে পারছে না।এটি বলা খুবই সহজ যে বর্তমান পাকিস্তান সরকার আমাদের জন্যে কাজ করেছে এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে দেশদ্রোহীদের দমন করার প্রশ্নে আমরা তাদের পাশে থাকব।কিন্তু আমি বিশ্বাস করি,এ ধরনের সিদ্ধান্ত একটি বড় ধরনের ভুল হবে।
আমাদের যুক্তরাষ্ট্রীয় সকল সামরিক প্রতিশ্রুতি এবং পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা বন্ধ করা এবং সতর্কতার সাথে বেসামরিক সহায়তা পরিমাপ করা উচিত যাতে এতে পশ্চিম পাকিস্তান এই যুদ্ধে অধিক সুবিধাজনক অবস্থান না পায়।উদাহরণস্বরূপ,পাকিস্তান সরকার নয় বরং CARE এর পর্যবেক্ষণে পাকিস্তানি বন্যাদুর্গতদের নিকট আমাদের প্রতিজ্ঞাকৃত গম সরবরাহের উপায় খোজা উচিত।
পরিশেষে,আমাদের নীতি হওয়া উচিত পাকিস্তানের বর্তমান চলমান দন্দে নিজেদের জড়িত না করা। আমি বিশ্বাস করি, এ ধরনের নীতি অসংখ্য এশিয়ান এবং মধ্যপ্রাচ্যিয় দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক উন্নত করবে।
.
13.74.281-283
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মার্কিন সামরিক সাহায্য কর্মসূচীর পুনরালোচনা দাবীঃ সিনেটর মন্ডেল এর বিবৃতি ও চিঠি | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ৮ই এপ্রিল ১৯৭১ |
ওয়াশিংটন ডিসি, ৮ এপ্রিল- সিনেটর ওয়াল্টার এফ মন্ডেল (ডি-মিন) পূর্ব পাকিস্তানের আত্মকলহের উপর মন্তব্য করেন যে আজ সময় হয়েছে সম্পূর্ণ মার্কিন সামরিক সাহায্য কর্মসূচীর পুনঃপর্যালোচনা করার।
মন্ডেল তার দপ্তর থেকে প্রেরণ করা এক প্রেস বার্তায় বলেন যে, ‘ইতিমধ্যে আমরা আবিষ্কার করেছি, আমাদের অধিকাংশ সামরিক সাহায্য শুধুমাত্র করদাতাদের অর্থ অপচয়ই নয়, বরং তা কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিকর হিসেবেই বেশি প্রতীয়মান হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী হচ্ছে আরেকটি কারণ, যা মার্কিন কংগ্রেসকে আমাদের সম্পূর্ণ মার্কিন সামরিক সাহায্য কর্মসূচীর পুনঃপর্যালোচনা করতে বাধ্য করে’।
একই সাথে মন্ডেল, সিনেটর মুসকি, ব্রুক এবং হ্যাটফিল্ড সেক্রেটারি অফ স্টেট উইলিয়াম পি রজার্সের কাছে প্রেরিত এক চিঠিতে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সাম্প্রতিক রক্তপাতের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ও পাকিস্তানে প্রেরিত মার্কিন সাহায্যের ব্যাপ্তি, বিশালতা ও সময়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ অবমুক্ত করার আহবান জানান।
মন্ডেলের বিবৃতি এবং রজার্সের কাছে প্রেরিত চিঠির ভাষ্য এখানে ক্রমানুসারে দেয়া হলঃ
“অন্যান্য বহু গৃহযুদ্ধের মতই, পূর্বপাকিস্তানের দ্বন্দ একটি জটিল ট্র্যাজেডি।
যদি আমরা পূর্বের ব্যয়বহুল ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি না চাই, যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ হবে এই সংঘর্ষে দুই পক্ষের যে কোন পক্ষ অবলম্বন থেকে বিরত থাকা। এ কারণে আমি প্রশাসনের যেকোন বিবাদে রাজনৈতিক অথবা সামরিক ভাবে জড়িত না হবার নীতিকে দৃঢ় ভাবে সমর্থন করি।
কিন্তু এই নীতি হতে হবে কূটনৈতিক বাগাড়ম্বর এর চেয়ে বেশি অর্থবহ। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যখন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র, ট্যাংক এবং বিমান যাদের রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করার কথা তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হয়। এই সামরিক সাহায্য নীতির সমস্যা ফুটে ওঠে, যখন একই সমস্যার অনুকরণ বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশে দেখা যায়।
স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে আমাদের নিরপেক্ষতা ঘোষণা করা এক জিনিস। কিন্তু আপনি যদি বাঙালি, ব্রাজিলিয়ান অথবা গ্রীক হন, এবং মার্কিন অস্ত্র বা মার্কিন বিমান দ্বারা আক্রান্ত হন, এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে আপনার জীবনে হস্তক্ষেপ করেছে।
আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিৎ, পাকিস্তানে কেন এমন হচ্ছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে এখন আর পাকিস্তানে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়, যেহেতু ইতিমধ্যে সেই অস্ত্র সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমরা ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন সরবরাহকৃত অস্ত্রের অপব্যবহার ঠেকাতে সচেতন হতে পারি।
আমরা আমাদের সামরিক সাহায্যের ব্যাপ্তির উপরে আলোকপাত করতে পারি। আমরা জিজ্ঞেস করতে পারি এই সাহায্য কি আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে, নাকি নিছক অন্তর্দেশীয় আভ্যন্তরীন কোন্দলে ব্যবহৃত হচ্ছে যা আমাদের নিরাপত্তার জন্য কোন হুমকি নয়।
ইতিমধ্যে আমরা আবিষ্কার করেছি, আমাদের অধিকাংশ সামরিক সাহায্য শুধুমাত্র করদাতাদের অর্থ অপচয় ই নয়, বরং তা কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিকর হিসেবেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী হচ্ছে আরেকটি কারণ, যা মার্কিন কংগ্রেসকে আমাদের সম্পূর্ণ মার্কিন সামরিক সাহায্য কর্মসূচীর পুনঃপর্যালোচনা করতে বাধ্য করে।
পরিশেষ, এটি অমার্জনীয় যে যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানে ভয়ংকর প্রাণহানির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করতে এত বেশি সময় নিয়েছে।
যে রাষ্ট্রটি মূলত মানবাধিকার ও মানবিকতার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ঘটনা প্রবাহের সাথে সাথেই তার উদ্বেগ প্রকাশ কাম্য ছিল। কিন্তু যখন সেই রাষ্ট্রের সরবরাহকৃত অস্ত্র দ্বারা অভ্যন্তরীন বিবাদে এক পক্ষ হত্যার শিকার হয়, তখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল তার প্রতিবাদ করা।
যখন আমলাতান্ত্রিক নীরবতা ও রাজনৈতিক দ্ব্যর্থ মানবিকতাকে স্তব্ধ করে দেয়, তখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতির সবচেয়ে সৎ এবং উৎকৃষ্ট অধ্যায়টি হারিয়ে ফেলি।”
প্রিয় সচিব মহোদয়,
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রক্তপাতে আমরা গভীরভাবে চিন্তিত। সাংবাদিক এবং অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা অনুযায়ী সেখানে বাছবিচার ছাড়া নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে।
পূর্বপাকিস্তানের বর্তমান সামরিক এবং রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিরপেক্ষ নীতি বজায় রাখার স্বার্থে এই গৃহযুদ্ধে যুক্তরাষ্টের যেকোন প্রকার অংশগ্রহণ বা দায়িত্ব, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, বিশদ আলোচনার দাবি রাখে। নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রদান করলে আমরা আপনার নিকট কৃতজ্ঞ থাকবোঃ
১। বর্তমান ও পরবর্তী অর্থবছর সমূহে পাকিস্তানে প্রেরিত ও আশ্বাস দেওয়া মার্কিন সামরিক সাহায্যের ব্যাপ্তি, বিশালতা ও সময়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ, যার মধ্যে অনুদান এবং সামরিক বাণিজ্য উভয় ই অন্তর্ভুক্ত, প্রাণঘাতি ও প্রাণঘাতি নয় এমন উপকরণ এবং নিয়মিত সামরিক উপকরণ এর বিবরণ। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কি পাকিস্তানের এই গৃহযুদ্ধে নিরস্ত্র নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে? পাকিস্তান সরকার যদি আরো সামরিক সাহায্য চায় তাহলে আমাদের অবস্থান কি হবে?
২। বর্তমান ও পরবর্তী অর্থবছর সমূহে পাকিস্তানের সাথে আমাদের দ্বিপার্শিক অর্থনৈতিক সাহায্যের ব্যাপ্তি, বিশালতা ও সময়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ (পি এল ৪৮০ এবং ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার সাহায্য বাদে)। বহুপাক্ষিক সংস্থা সমূহের দ্বারা পাকিস্তানকে প্রদেয় সাহায্যের ব্যাপ্তি কি? কোনভাবে কি এই সাহায্য বর্তমান গৃহযুদ্ধে বিবদমান কোন পক্ষের কাজে এসেছে বা আসতে পারে?
৩। বর্তমান ও পরবর্তী অর্থবছর সমূহে পাকিস্তানকে প্রদেয় আমাদের পি এল ৪৮০ সাহায্যের ব্যাপ্তি, বিশালতা ও সময়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ। এর কি কোন প্রমাণ আছে যে এই সাহায্য বর্তমান গৃহযুদ্ধে বিবদমান কোন পক্ষের কাজে এসেছে?
৪। পূর্বপাকিস্তানে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা কার্যে আমাদের অঙ্গীকার এর উপর শ্রদ্ধা রেখে জানতে চাইছি, আমরা কি আশা করতে পারি যে বর্তমান অবস্থায় এই সাহায্য কেবলমাত্র ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের ই কাছে পৌছাবে?
এই সাহায্য কি কোন আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা যেমন রেড ক্রস বা এইডের দ্বারা কি সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের কাছে পৌছানো সম্ভব?
এই প্রশ্নগুলি অবশ্যই এই সাংঘর্ষিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার সাথে সাথে সতর্ক নজরদারি সম্পর্কিত আমাদের রাষ্ট্রীয় নীতিকেও প্রতিফলন করে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের এই বিষয়ে আগেই কোন ধরণের মন্তব্য করার কোনরূপ ইচ্ছা আমাদের নেই।
আমরা আপনার উত্তরের দিকে চেয়ে আছি।
বিনীত
এডওয়ার্ড ডব্লিউ ব্রুক ওয়াল্টার এফ মন্ডেল
মার্ক ও হ্যাটফিল্ড এডমন্ড এস মুসকি
.
13.75.284
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের প্রশ্নে সিনেটর মাস্কি | সিনেটের কার্যবিবরনী | ১৪ই এপ্রিল, ১৯৭১ |
কংগ্রেশনাল রেকর্ড, ১লা এপ্রিল, এস ৭৯
পূর্ব পাকিস্তান
জনাব মাস্কি। মহামান্য রাষ্ট্রপতি। আমি ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সাথে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ঘটনা নিয়ে দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদন গুলো পড়ছি এবং উপলব্ধি করছি। সেই হতভাগ্য অঞ্চলে সাম্প্রতিক মাস গুলোতে এটা দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাণ নাশের ঘটনা। যেখানে দৃশ্যপট পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আমি বিশ্বাস করি যে, এই দুঃখজনক ঘটনার মাত্রার বিষয়ে যথেষ্ট তথ্য আছে এটা স্পষ্ট করার জন্য যে, সংশ্লিষ্ট আমেরিকানদের মুখ খোলা উচিত।
আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তা এবং পাকিস্তানে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামরিক অবস্থার মধ্যকার সম্পর্কটি আমার কাছে একটি চিন্তার বিষয়। এই প্রসংগে গত সপ্তাহে, আমি স্লেট সচিবকে একটি চিঠি প্রেরণে মিনেসোটার সিনেটর (জনাব মন্ডেল), ম্যাসাচুসেটস এর সিনেটর (জনাব ব্রুক) এবং ওরেগনের সিনেটর (জনাব হাটফিল্ড) এর সাথে যুক্ত হই। সেই চিঠিতে আমরা পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ ও হত্যাকান্ডে আমেরিকার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতার ব্যাপ্তি নিয়ে একটি ব্যাখ্যার অনুরোধ করেছি। আমরা এখন একটি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।
আমি নিউজার্সির বিশিষ্ট সিনিয়র সিনেটর (জনাব ক্যাসি) এর প্রস্তাবিত পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত রেজল্যুশনকেও সমর্থন করি।
১৯৫০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ইউ. এস. সরকার পাকিস্তানে অস্ত্রের প্রধান সরবরাহকারী। এ বিষয়ে খবর/প্রতিবেদন আছে যে আমেরিকার সরবরাহকৃত প্লেন, ট্যাংক, অস্ত্র, অন্যান্য শুষ্ক সামগ্রী কেন্দ্রীয় সরকারের বাহিনী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের শহর এবং গ্রাম দুই জায়গাতেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আমেরিকার জন্য দ্ব্যর্থহীনভাবে ও অবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে এই পরিস্থিতিতে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র সরবরাহের যেকোন পরিকল্পনা বাতিলের সময় এসে গেছে – অস্ত্র যা শুধুমাত্র উত্তেজনা ও রক্তপাতকে বৃদ্ধি করবে। পাকিস্তান সরকারকে সকল প্রকার সামরিক্ সহায়তা অবিলম্বে স্থগিত করা উচিত। ভারত ও পাকিস্তানে প্রাণঘাতী সরঞ্জাম বিক্রয়ে আমাদের ১৯৬৫ সালের নিষেধাজ্ঞার “এককালীন ব্যাতিক্রম” ১৯৭০ সালের অক্টোবরে অনুমোদিত হয়। সাঁজোয়া বাহিনীর গাড়ি সরবরাহের প্রস্তাব করা হয়েছিল। স্টার ফায়ার জেট এবং বি৫৭ বোমারু বিমান। এই বিলিবন্টন গুলো সম্পন্ন করা উচিত হবে না।
আমাদের একটা দায়িত্ব আছে, বিশ্বে উত্তেজনা এবং সংঘাত নিরসনে আমাদের পক্ষে যা কিছু করা সম্ভব তা করার। যেহেতু আমরা নিজেদেরকে ইন্দোচায়না দ্বন্দ্ব থেকে বাঁচাতে চাই, আমরা কি আমাদের সামরিক সহায়তাকে দক্ষিন এশিয়ায় উত্তেজনা বাড়াতে ব্যবহৃত হতে দিতে পারি?
আমি বলি আমাদের সেটা করা উচিত হবে না। আমি ক্যাসি রেজল্যুশনের সমর্থন চাচ্ছি এবং আমি এর সহ-পৃষ্ঠপোষকতায় যুক্ত হতে পেরে গর্বিত।
.
13.76.285-286
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বন্ধের জন্য সিনেটর মন্ডেল ও সিনেটর কেস এর প্রস্তাব-২১ | সিনেটের কার্যবিবরণী | ১৫ই এপ্রিল, ১৯৭১ |
কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট, ১৫ এপ্রিল ১৯৭১
পাকিস্তানে সামরিক সাহায্য বন্ধের জন্য সিনেটর মন্ডেল ও কেস এর প্রস্তাবঃ
মিস্টার কেসঃ
মিস্টার প্রেসিডেন্ট, সিনেটর মন্ডেল এবং আমি পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংঘাত পূর্ণ পরিস্থিতি নিরসন না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানে সব ধরনের সামরিক সাহায্য ও সামরিক চুক্তি স্থগিত করার একটি প্রস্তাব উথাপন করছি। আমাদের সাথে আরো রয়েছেন সিনেটর বায়েহ, ম্যাকগভার্ন, মুসকি এবং স্যানবি।
পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংঘাত পূর্ণ পরিস্থিতিতে আমরা গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। এবং এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক এবং সামরিক ভাবে কোন হস্তক্ষেপ না করার রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করছি। কিন্তু একইসাথে অনুভব করছি যে কথার মত কাজেও আমাদের নিরপেক্ষ নীতি দেখানো উচিৎ।
আমরা খুব ই উদ্বেগের সাথে এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র এবং অন্যান্য সামরিক উপকরণের ব্যবহার লক্ষ্য করছি যা আমাদের নিরপেক্ষ নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের হাতে ইতিমধ্যে সরবরাহকৃত অস্ত্রের ব্যবহারের ব্যাপারে কিছু করার ক্ষমতা রাখে না, কিন্তু আমরা অন্তত ভবিষ্যতে আর কোন অস্ত্রের সরবরাহ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে পারি।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে পাকিস্তানের নিকট সামরিক খুচরো যন্ত্রাংশ বিক্রয় করছে যার মধ্যে প্রাণঘাতি ও প্রাণঘাতি নয় এমন দুই ধরনের ই উপকরণ রয়েছে। এসবের মধ্যে গোলাবারুদও আছে। উপরন্তু ১৯৭০ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দেয় যে ওয়ান শট প্রকল্পের আওতায় পাকিস্তানের নিকট আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার, মডিফাইড পেট্রোল এয়ারক্রাফট, এফ-১০৪ যুদ্ধবিমান ও বি-৫৭ বোম্বার বিক্রয় করা হবে। এই সমরাস্ত্র সমূহ এখনো সরবরাহ করা হয়নি, কিন্তু এগুলোর সরবরাহ বাতিল ঘোষণাও করা হয়নি, যদিও বর্তমানে পাকিস্তানের সাথে এই ব্যাপারে আমাদের কোন আলোচনা হচ্ছে না।
পাকিস্তান কে বর্তমানে প্রদেয় একমাত্র সামরিক সাহায্য হল যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানী সামরিক অফিসারদের একটি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম…………….
নিম্নোক্ত প্রস্তাবটি (কংগ্রেসের ২১ নম্বর প্রস্তাব) আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির কাছে প্রেরণ করা হয়ঃ
২১ নং প্রস্তাব
যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত সংঘর্ষের তীব্র নিন্দা জানায় এবং যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত ধ্বংসযজ্ঞের ভয়াবহতা বৃদ্ধিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপকরণের ব্যবহার এর বিরোধীতা করে
সিনেট এই ব্যাপারে স্থির প্রতিজ্ঞ যে (হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টিটিভদের সম্মতিতে)
১। পূর্ব পাকিস্তানের সংঘাত এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে প্রদেয় যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সামরিক সাহায্য স্থগিত থাকবে।
২। পূর্ব পাকিস্তানের সংঘাত এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান এর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সামরিক ক্রয় বিক্রয় এর লাইসেন্স স্থগিত থাকবে।
.
13.77.287-288
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
সিনেটর প্রক্সমায়ার – এর বিবৃতি | প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ১৭ই এপ্রিল, ১৯৭১ |
সিনেটর উইলিয়াম প্রক্সমায়ার (D-Wis.) শনিবার রাতে বলেছেন, “পূর্ব পাকিস্তানের রক্তাক্ত গৃহ যুদ্ধ আরো একটি কারণ কেন আমাদের পাকিস্তান, ভারত ও অন্যান্য দেশে বৈদেশিক সামরিক সহায়তার পরিমাণের “গোপন স্ট্যাম্প” পরিহার করতে হবে।“
প্রক্সমায়ার সিনেট অনুমোদন উপকমিটির বৈদেশিক কর্মকাণ্ডের চেয়ারম্যান যিনি সামরিক সহায়তার অনুরোধ আইনগত পর্যালোচনা করেন। প্রক্সমায়ার বলেন,
“পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র ও গোলাবারুদ এখন ব্যবহার করা হচ্ছে বেঙ্গল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে থামানোর জন্য। এই সাহায্য রাশিয়ান বা চীনা হুমকির বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার পরিবর্তে পাকিস্তানিরা তাদের নিজেদের লোকেদের বিরুদ্ধে এটি ব্যবহার করছে। অতীতে ভারতীয় ও পাকিস্তানিরা একে অপরকে আক্রমণ করার জন্য আমাদের সামরিক সহায়তা ব্যবহার করেছে।”
“কয়েক বছর ধরে এশিয়াতে ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল, এবং নিকটস্থ পূর্বের ইজরায়েল, জর্ডান, লেবানন এবং সৌদি আরবের কাছে সামরিক সাহায্যের পরিমাণ স্থায়ী ভিত্তিতে গোপন রাখা হয়েছে। ১৯৫০ সাল থেকে তাদের কাছে পাঠানো পরিমাণগুলি আনুষ্ঠানিকভাবে কখনও প্রকাশ করা হয়নি। উপরন্তু, গোপন স্ট্যাম্প আমরা প্রতি বছর অন্যান্য দেশে সাহায্য পাঠাতে প্রস্তাবিত পরিমাণের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং তহবিল বাজেট করার বছর পর্যন্ত গোপন স্ট্যাম্প উত্তোলিত হয় না।”
“বৈদেশিক কর্মসূচী উপকমিশনারের চেয়ারম্যান হিসাবে, আমি এই অনুশীলন শেষ করার জন্য যা করতে পারি তা করতে চাই যেসকল ক্ষেত্রে আমেরিকার নিরাপত্তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।”
“ এটি একটি হিংস্র অভ্যাস যার জন্য কোন যুক্তি নেই।”
“পাকিস্তানি যুদ্ধ সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ কেন এই অনুশীলনটি ঐতিহাসিক ভুল এবং আজও ভুল। বিদেশে পাঠানো অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং গোলাবারুদের বেশিরভাগই অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হয় এবং কমিউনিস্ট হুমকি থেকে রক্ষার জন্য নয়।”
“কিন্তু আমেরিকান করদাতা দ্বারা অস্ত্রের অর্থ প্রদান করা হয়। তিনি কি জানেন কে কত পায়। এটি পাবলিক বিতর্ক এবং পাবলিক সিদ্ধান্তের জন্য একটি সঠিক ইস্যু। যদি আমরা সকল তথ্য মুক্ত অবস্থায় পাই, আমেরিকান জনগণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে এ সব করা উচিত নয় কিনা। কমপক্ষে, ভিয়েতনামে আমাদের বিপর্যয়ের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে এই সিদ্ধান্ত বন্ধ দরজা পিছনে করা উচিত হবে না।”
“গোপন ডাকটিকিট যথাযথভাবে ব্যবহার করার আর্গুমেন্টগুলি কেবল অস্পষ্টই নয় আমার মতে, শান্তি অর্জন করার অন্তরায়। এটি দাবি করা হয় যে যদি ঘটনাগুলি প্রকাশিত হয় তবে এটি একটি বিদেশী দেশকে ‘বিব্রত’ করতে পারে। বলা হয়, যদি এক দেশ যদি অন্যের চেয়ে বেশি পেয়ে থাকে অথবা কংগ্রেস যদি এক দেশের ঐতিহ্যগত প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় জন্য প্রস্তাবিত পরিমাণ বেশি হ্রাস করে তবে বিব্রত অবস্থা তৈরি হবে।”
“ এই ধরনের আর্গুমেন্টগুলি পাবলিক পরীক্ষায় দাঁড়াতে পারে না। সেনেটরদের রাখার জন্য বছরব্যাপী একই ধরনের আর্গুমেন্টগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল এবং কংগ্রেসম্যানদের বেতনগুলি গোপন ছিল। কিন্তু এখন তারা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে, কংগ্রেসের জন্য এটি ভাল হয়েছে।”
“আফ্রিকা, নিকটবর্তী পূর্ব, ল্যাটিন আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশগুলিতে সামরিক সহায়তার জন্য প্রস্তাবিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হলে যদি তাদের কাছে বিব্রতকর মনে হয়, তারা সাহায্য নেয়া বন্ধ করে দিক। এটি কেবল আমেরিকান করদাতাদের কোটি কোটি ডলারের সঞ্চয় করবে না বরং সম্ভবত একটি শান্তিপূর্ণ জগত তৈরি হতে পারে সাহায্য করবে।”
“আমরা আমাদের নিজস্ব সামরিক বাজেট পাবলিক করেছি। আমরা অন্যান্য দেশে যে পরিমাণ সাহায্য পাঠাই তা নিয়মিতভাবে গোপন করার কোন কারণ নেই।”
.
13.78.289-290
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কংগ্রেস সদস্য মিঃ শিউয়ের বিবৃতি ও প্রস্তাব | প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী | ২১ এপ্রিল ১৯৭১ |
ALBAB
এপ্রিল ২১, ১৯৭১-কংগ্রেসনাল রেকর্ড-এক্সটেনশন অফ রিমার্ক্স ই ৩৩২১
পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধ
প্রতিনিধি পরিষদ
মিঃ শিউয়ের, মিঃ স্পিকার, জন্মগতভাবে মানুষ হিসেবে যে অধিকারগুলো প্রাপ্য, পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ আজ সেসব অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক তিক্ত রক্তাক্ত সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছে। প্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শেকল থেকে মুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষার ফলে আজ তারা সামরিক শাসকের ব্যাপক অত্যাচারে সীমাহীন দুর্ভোগের স্বীকার। নিকট ইতিহাসে বেসামরিক নাগরিকের উপর এ ধরনের নির্বিচার গণহত্যা নজিরবিহীন।
এ সংঘাত গৃহযুদ্ধেরই আরেক রূপ এবং কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানী জনগণকে নিজেদের রাজনৈতিক সমস্যা নিজেদেরই সমাধান করতে দেওয়া উচিৎ। তবে, আমরা পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখ-দুর্দশা এবং মৃত্যু কমাতে যেকোন ধরনের উদ্যোগে সক্রিয় নেতৃত্ব দিতে পারি, দেয়াই উচিৎ ; কোন রাজনৈতিক পছন্দ বা বিবেচনা থেকে নয়, বরং এ কারণে যে এটাই জাতির জন্য অনুসরণীয় সঠিক, শুদ্ধ এবং মানবিক পথ ।
এ বছরের ২ এপ্রিল রেডক্রসের ব্যানারে খাদ্য ও ঔষধ নিয়ে একটি বিমান পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশ করার অনুমতি চায়, এমন এক মিশন নিয়ে যার পিছনে নিরপেক্ষ মহতী উদ্যোগ ছাড়া প্রশ্নাতীত ভাবেই আর কিছু ছিল না। পশ্চিম পাকিস্তান সরকার রেডক্রসের এই মিশনের প্রবেশাধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জনাব এস এন কুতুবের সাথে আলাপ করে আমি জানতে পারি পশ্চিম পাকিস্তান সরকার তাদের মনে করছে যে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সাইক্লোন পরবর্তী সময়ে রেডক্রসের সরবরাহ করা ত্রাণসামগ্রীই তাদের বর্তমান চাহিদা পূরণে সক্ষম। তারা এও মনে করে যে এই মুহুর্তে বর্ধিতহারে রেডক্রস বা অন্য কোন একক রাষ্ট্রের সহায়তা গ্রহণ করার মত প্রশাসনিক সামর্থ্য তাদের নেই।
যেখানে মানুষের বাচা-মরার প্রশ্ন জড়িত, সেখানে এ ধরনের উত্তর সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। এ ঘটনা আমাকে মনে করিয়ে দেয় রোগ আর ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাওয়া সে সব হাজার হাজার বায়াফ্রান নর-নারী আর শিশুদের কথা, যাদের নাইজেরিয়ান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও ঔষধ পাবার সুযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল।
মানবতার ধ্বজাধারী বলে নিজেদের দাবী করে পুর্ব পাকিস্তানে বায়াফ্রার করুণ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে আমরা পারিনা।
এসব কিছু মাথায় রেখে আমি আজকে এই প্রস্তাব উত্থাপন করছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টঃ
প্রথমতঃ পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহবান জানাবেন যেন তারা নিরুদ্বেগভাবে এবং সবার জীবনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক রেডক্রস সংস্থা অথবা এ ধরনের যেকোন অরাজনৈতিক ও কল্যাণকর সংস্থা ও রাষ্ট্রকে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের দুর্গত জনসাধারণের জন্য খাদ্য ও ঔষধ সহ চিকিৎসা সুবিধা পরিবহনের অনুমতি প্রদান করে।
দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুসারে শুভ কামনার নিদর্শন স্বরূপ এ ধরনের ত্রাণ কার্যে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ঔষধ সরবরাহের প্রস্তাব দিবেন।
আমি আশা করি এই পরিষদে আমার সহকর্মীবৃন্দ এ প্রস্তাবে সাড়া দেবেন এবং এও আশা করি শীঘ্রই ন্যায়বিচারের আশায় সংগ্রামরত এক জনগোষ্ঠী আর তাদের কথায় কর্ণপাত না করা এক সরকারের মধ্যে চলমান সংঘাত থামানোর একটি পথ খুজে পাওয়া যাবে।
.
13.79.291-293
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ থেকে ডঃ জন, ই, রোড কর্তৃক সিনেটর উইলিয়াম বি, স্যাক্সবীকে লিখিত চিঠি | সিনেটের কার্যবিবরণী | ২৯ এপ্রিল ১৯৭১ |
এস ৫৮৪০ কংগ্রেসনাল রেকর্ড-সিনেট এপ্রিল ২৯, ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ
মিঃ স্যাক্সবী- মিঃ প্রেসিডেন্ট, সাম্প্রতিক সময়ে আমি পূর্ব পাকিস্তানে ইউএসএআইডি তে কর্মরত এক ডাক্তারের চিঠি পেয়েছি। তার চিঠিতে পুর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের গুরুত্বপূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে। আপনি জানেন যে আমি গত বছর পাকিস্তানের কাছে ১৫০০০ ডলার সমমূল্যের সামরিক সরঞ্জামাদি বিক্রয়ের বিরোধিতা করেছিলাম, কেননা সেগুলোর দ্বারা সম্ভাব্য দুঃখজনক ঘটনার ব্যাপারে আমি ভীত ছিলাম। আমি মাত্রই সিনেটের সমসাময়িক প্রস্তাবনা ২১ এর সহ-পৃষ্ঠপোষক হিসেবে এই সংঘাত থামার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানে সব ধরনের সামরিক সহায়তা প্রদান বন্ধের আহবান জানিয়েছি।
আমি ডাঃ জন ই রোড এর কাছ থেকে পরিষদের কার্যবিবরণীতে এই চিঠির ছাপানো কপি সংযোজনের জন্য যথাযথ অনুমতি নিয়েছি কেননা আমি মনে করি সকল সিনেটরের এই চিঠি থেকে প্রাপ্ত ভিতরের খবর জানা উচিৎ।
হাডসন, ওহাইও, এপ্রিল ১৭, ১৯৭১
মাননীয় উইলিয়াম বি স্যাক্সবী
নিউ সিনেট অফিস বিল্ডিং
ওয়াশিংটন, ডিসি
প্রিয় সিনেটর স্যাক্সবীঃ দুই দিন আগে আমি সস্ত্রীক আমার তিন বছরের কর্মস্থল পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা থেকে অপসারিত হয়েছি, যেখানে আমি ইউএসএইডের অধীনে একজন চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমি জানি যে আপনি ২৫শে মার্চের সামরিক অভিযানের পূর্ববর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। পুরোদস্তুর সেন্সরশীপ, সাংবাদিকদের অপসারণ, প্রধান রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক জনগণের উপর সামরিক অভিযানের তথ্য গোপন করার কারণে এর পরের ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া নিশ্চিতভাবেই কঠিন হয়ে গিয়েছে। সামরিক অভিযানের শুরু থেকেই ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন কনসাল জেনারেল এবং তার সহকর্মীগণ নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রত্যক্ষদর্শীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিস্তারিত প্রকৃত তথ্য প্রেরণ করছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানোর আগে সব কটি রিপোর্ট অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সংগ্রহ ও যাচাই করা হয়। জনসম্মুখে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলছে তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য নেই, কিন্তু আমি প্রতিদিন ঢাকা থেকে প্রকৃত তথ্যসমৃদ্ধ রিপোর্ট পাঠাতে দেখেছি। করাচিতে অবস্থিত মার্কিন কনসাল আমাকে জানিয়েছেন যে তারা সাম্প্রতিক সময়ে পূর্ব পাকিস্তান সংক্রান্ত রিপোর্ট পাওয়া শুরু করেছেন, যদিও আমি দেখেছি ঘটনার একদম শুরু থেকে ঢাকা অফিস তথ্য পাঠানো শুরু করেছে।
যদিও কোনাল ব্লাডের রিপোর্টে বর্তমান পরিস্থিতির অনেক বিস্তারিত বিবরণ আছে, গত সপ্তাহে ঢাকায় আমার পর্যবেক্ষণগুলো আমি আপনাদের জানাতে চাই। আমি এবং আমার স্ত্রী ২৫শে মার্চ রাতে আমাদের ছাদ থেকে গোলন্দাজ বাহিনীর গোলার আঘাতে জ্বলতে থাকা ঢাকা শহরের আগুনের শিখা আর রক্তিম আলোয় দেখেছি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ঢাকার রাস্তায় নেমে আসা ট্যাঙ্কের সারি, দেখেছি জনাকীর্ণ বস্তি আর বাজারে মুহুর্মুহু মর্টার শেল নিক্ষেপ। দুই দিনব্যাপী চলমান বিকট বিস্ফোরণ এবং মেশিনগানের অবিশ্রান্ত গর্জনের পর আমরা কারফিউর বিরতির মাঝে শহরের রাস্তায় নেমে আসি। শরণার্থীর বহরের মাঝ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় গুলশান-মহাখালী রেলক্রসিং এর দুপাশে পুড়ে যাওয়া খুপড়ি ঘর দেখেছি আমরা। কাছেই বাস করা আমার এক বাঙ্গালী বন্ধু দেখেছে আর্মিরা কিভাবে এই ঘর গুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আর আগুনের হাত থেকে বাচার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসা মানুষগুলোকে “কুকুরের মত” গুলি করে মেরেছে। সে তার ১২ জনের পরিবার সহ আমাদের বাসায় এসে থাকার প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। পুরান ঢাকার নায়ের বাজারে গিয়ে আমরা শুধু দেখেছি লোহা লক্কড়ের স্তুপীকৃত জঞ্জাল, অথচ সেখানে প্রচুর হিন্দু-মুসলিম কাঠুরেরা কাজ করতো। গোলার আঘাতে ঝাঝরা হয়ে যাওয়া শাঁখারীবাজারে বেচে থাকা হিন্দু দোকানদার ও কর্মকারেরা আমার কাছে তাদের সাহায্য করার জন্য রীতিমত মিনতি জানাচ্ছিল, যেখানে আমি যাবার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেই আর্মি অভিযান চালিয়ে গেছে সবাইকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। এদের একজন পেটে গুলি খেয়ে আমরা পৌছার মাত্র আধা ঘন্টা আগে মারা গেছে, বাকিরা রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছিল। আমাদের সরিয়ে দেবার আগের দিন আমি দেখেছি শাখারি বাজারে টিকে থাকা বাড়িগুলোতে উর্দুতে লেখা মুসলিম নাম ঝুলছে, অথচ এই পুরো এলাকাটি ছিল হিন্দু অধ্যুষিত। ২৯ তারিখে রমনা রেসকোর্সের মাঝে অবস্থিত প্রাচীন হিন্দু মন্দির রমনা কালী বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আমি দেখেছি মেশিনগানের গুলিতে ছিন্ন ভিন্ন আর পোড়া নর-নারী আর শিশুর লাশের স্তুপ, যাদের সেদিন ভোরেই হত্যা করা হয়েছে। তার কয়েক ঘন্টা পরে আমি সেখানে দাঁড়িয়ে সেসব দৃশ্যের ছবি তুলি।
সদরঘাট, শাখারিপট্টি, রায়ের বাজার, নায়ের বাজার, পাইলপাড়া আর ঠাটারি বাজারের হাজার হাজার মানুষের থাকার ঘরবাড়ি সব মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে।
২৯ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আমরা দুটি ছাত্রাবাস, জগন্নাথ হল আর ইকবাল হলের ভিতর দিয়ে হেটে গিয়েছি – যেখানে ট্যাঙ্ক থেকে গোলা নিক্ষেপ করেছে সামরিক বাহিনী। ভিতরে থাকা সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যে দেয়াল ভেঙ্গে ট্যাঙ্ক ঢুকেছি, ট্যাঙ্কের চাকার ছাপ আর হলের সামনে বিশাল গণকবর দেখেছি। একজন লোক, যাকে আর্মিরা বাধ্য করেছিল নিহতদের লাশ টানতে, তার গণনা মতে ১০৩ জন হিন্দু ছাত্রকে সেই গণকবরে চাপা দেয়া হয়েছে। বাইরে গোলার আঘাতে বড় বড় গর্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রাবাসের দেয়াল, আর ভিতরে তখনো বারুদের গন্ধ আর মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে থাকা রক্তের পুরু আস্তর। আমরা ইকবাল হলেও ট্যাঙ্ক আক্রমণের প্রমাণ দেখেছি, যেখানে মৃতদেহগুলো তখনো সমাহিত হয়নি।
পরবর্তী দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ অধ্যাপক সহ প্রচুর বুদ্ধিজীবিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়, এদের মধ্যে দর্শন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডঃ জি সি দেব, পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, ইংরেজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ডঃ নাকভী ও ইতিহাস বিভাগের প্রধান ডঃ আলী, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ইন্নাস আলী, অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক, প্রাক্তন গভর্নর ও অর্থমন্ত্রী ডঃ এম এন হুদাকে তাদের নিজ নিজা বাসভবনে গুলি করে ফেলে রাখা হয় মৃত্যুর জন্য। এসব অধ্যাপকের অনেকের পরিবারের সদস্যদেরও গুলি করা হয়। ঢাকা ত্যাগের প্রাক্কালে আর্মির কথোর তল্লাশীর কারণে এদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করা বেশ কঠিন ছিল। সংবাদপত্রের কন্ঠ সম্পূর্ণভাবে রোধ করা হয়েছে, তিনটি বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকার অফিস – The People, দৈনিক ইত্তেফাক এবং দৈনিক সংবাদ – সম্পূর্ণভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।
প্রথম দুই দিনের আক্রমণের পরও সামরিক অভিযান অব্যাহত আছে। আমরা শুনেছি ১ এপ্রিল এও দুই ঘন্টা অনবরত কামান দেগে ঢাকার অদুরে বুড়িগঙ্গার ওপারে অবস্থিত, সন্ত্রস্ত ঢাকা শহর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া লক্ষাধিক বেসামরিক জনগণের ভীড়ে জনাকীর্ণ জিঞ্জিরাকে রীতিমত ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে। রেডিও পাকিস্তান অব্যাহতভাবে ভাবে বলছিল যে ঢাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে, কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রায় জনশূন্য এক শহর দেখেছি।
আমরা যেখানে থাকতাম, ঢাকার সেই উপশহর গুলশানে আমরা দেখেছি রাস্তার ওপারে শিশুপার্কে অবস্থিত ইপিআর স্টেশনে ইপিআর সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ, আশেপাশের মার্কেট থেকে আর্মির খাদ্যদ্রব্য লুট করে নেয়া এবং সবশেষে কিছু ইপিআর সদস্যকে হত্যা, যাদের পাঞ্জাবী সৈন্যরা ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যাচ্ছিল। কয়েক হাজার বাঙ্গালী পুলিশ এবং ইপিআর সদস্যদের হত্যার বিষয়টি ইতোমধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে। আমাদের এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে আমরা গুলশান লেকে সাতার কাটতে থাকা কিছু ছোট ছেলের দিকে আর্মি সদস্যকে তিন রাউন্ড গুলিও ছুড়তে দেখেছি। প্রায় প্রতি রাতে আমাদের বাসার পাশে বিক্ষিপ্ত গোলাগুলির আওয়াজ পেয়েছি, যা আমাদের বাসায় থাকা ২৬ জন শরণার্থীর ভয় কেবল বাড়িয়ে দিয়েছে। দিনের বেলা মাথার উপর উড়ে যেত পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান, তাদের বোমা হামলার লক্ষ্যবস্তুর দিকে।
আমার পক্ষে হয়তো আরো অনেক সুনির্দিষ্ট নৃশংসতার বিবরণ দেয়া সম্ভব হত, কিন্তু আমরা আমাদের অনেক কাছের বন্ধুকে সেখানে ফেলে এসেছি, যাদের জীবন হয়তো তাতে আরো সংকটাপন্ন হবে। এটা স্পষ্ট যে পূর্বপাকিস্তানে এখন জঙ্গলের আইন বিরাজমান, যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে বেসামরিক জনগণের উপর নির্বিচার গণহত্যা, বুদ্ধিজীবি নিধন আর হিন্দু সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার প্রক্রিয়া।
কনসাল ব্লাডের রিপোর্টে সমস্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আছে, যা কংগ্রেসম্যান হিসেবে আপনারা দেখতে পারেন। একই সাথে তিনি আমাদের সরকারের পক্ষে করণীয় গঠনমুলক পদক্ষেপ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনাও জমা দিয়েছেন। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কোন ধরনের প্রস্তাবনা না দিয়েও তিনি বলেছেন, যা আমরাও সমর্থন করি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনভাবেই নীরবতার মাধ্যমে এই সামরিক অভিযানকে উপেক্ষা করা অব্যাহত রাখা যাবে না। আমরা ঢাকা অফিসিয়াল কমিউনিটির পক্ষ থেকে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো খোলা বার্তাও আপনাদের পড়ে দেখবার আহবান জানাবো, যেটা সবার জন্য উন্মুক্ত এবং যাতে পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা সম্পর্কে নির্মোহ সত্য বর্ণিত হয়েছে।
কোন বিবৃতি না দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাঙ্গালী জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অনৈতিক অভিযানকেই প্রকারান্তরে সমর্থন দিচ্ছে।
পাকিস্তানের বাণিজ্যিক বিমান দিয়ে আমাদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের এমন বিমানে চড়ানো হয়েছে যা মাত্রই বিমানভর্তি সৈন্য আর সামরিক রসদ নামিয়েছে। আমেরিকান এইডের ডলারে এই সামরিক অভিযানের রসদ জোগাড় হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে পাকিস্তানের সমর্থন থাকায় আমি তেহরানে থাকা অবস্থায় আপনাকে এই তথ্যগুলো টেলিগ্রাম করতে পারিনি।
আমাদের সরকারের পক্ষে বাঙ্গালির উপর চালানো মরিয়া আগ্রাসনের সক্রিয় বিরোধিতা বা হস্তক্ষেপ করার অসমর্থতার কথা আমি বুঝতে পারছি। তা সত্ত্বেও, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি যেন কংগ্রেস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি জনগণের উপর চলমান অমানবিক অত্যাচারের প্রতিবাদ করার জন্য আহবান জানান।
কোন রাজনৈতিক বিবেচনাই মানবতার পক্ষে দাড়ানোর জন্য বাধা হতে পারে না, প্রতিটি মানুষের জীবনের মুল্য এবং সরকার গঠনের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গী পুনর্ব্যাক্ত করেই আমি এ কথা বলছি। পূর্ব পাকিস্তানের ৯৮% ভোটারের ম্যান্ডেট নিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যা কাজ করছেন, তাতে নিজেদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে গর্বিত একটি দেশের উদ্বিগ্ন হওয়াই উচিৎ।
পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক নাগরিকের উপর চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করার জন্য আমরা আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।
আপনার বিশ্বস্ত,
জন, ই, রোড, এমডি।
.
13.80.294-295
শিরোনামঃ বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষের হুমকি মোকাবেলার জন্য সিনেটের কেনেডীর আহ্বান।
সূত্রঃ সিনেটের কার্যবিবরণী
তারিখঃ ৩ মে, ১৯৭১
৩ মে, ১৯৭১ কংগ্রেসিয় কার্যবিবরণীঃ সিনেট এস ৬০৮৯
পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কিত ভাবনা
জনাব কেনেডি। প্রেসিডেন্ট, এই কক্ষে ১ এপ্রিলে আমার পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলাম।
দমিয়ে রাখা তথ্যসূত্র থেকে আমাদের সরকার অবগত হয় যে, চলমান সংগ্রামের কারণে সাধারন জনগণকে চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে। কাহিনী গুলো অবিচারে হত্যার, ছাত্র ও ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার এবং লাখ লাখ নির্দোষ সাধারন মানুষের ভোগান্তির। এ কাহিনী পরিবারের বাসস্থান চ্যুত হওয়ার। এ কাহিনী সীমিত পানি ও খাবারের। এরপর এসবের সাথে যুক্ত হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগের হঠকারিতা, হানাহানির সর্বত্র ছড়িয়ে পড়া এবং সরকারি সেবার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে জটিল পরিস্থিতির মাঝে আরও বাধা বিপত্তির। পরিস্থিতি লাখো মানুষকে দুর্ভিক্ষের মুখে ফেলে দিয়েছে। তার সাথে মহামারী আর রোগ শোকের হুমকি তো আছেই।
বিগত মাসে আমি আমার এই ভাবনার বিষয়ে পররাষ্ট্র অধিদপ্তর এবং সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি। এর উদ্দেশ্য ছিল যাতে আমাদের সরকার এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জরুরি রাজনৈতিক এবং মানবিক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনে আরও সোচ্চার এবং তৎপর হয়।
আফসোসের বিষয় যে, কার্যবিবরণী থেকে জানা যায় যে তেমন কোন উদ্যোগই আসলে নেয়া হয়নি। এবং তাই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দশার ক্রমশ দুঃস্বপ্নের মত অবনতি ঘটছে আর সে সাথে আসছে আরো দুর্ভোগ ও লাখ লাখ মৃত্যু।
যদিও রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে সহিংস্রতা অনেকাংশে কমে গিয়েছে। রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায় যে জনগণ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সেনাবাহিনীর মাঝে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। জনগণের এক বিরাট অংশ সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারণে ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যা কিনা গত সপ্তাহে ঢাকায় ঘটে গেছে এবং বিক্ষিপ্তভাবে এখনো চলছে।
এছাড়াও রিপোর্টে আরও বলা আছে যে সেনাবাহিনী ঢাকা এবং যশোরের বাইরে খুব কম এলাকা দখল করে আছে। এবং এসব শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো, সরকারি দপ্তর এবং প্রশাসন প্রকৃতপক্ষে বিলুপ্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি গত শরতের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়া এলাকাতে পরিবহন এবং সহজলভ্য খাদ্য, চিকিৎসা সরবরাহ নিথর হয়ে পড়েছে। যদিও রক্ষণশীল প্রতিবেদন থেকে এটা ধারণা করা হয় যে প্রায় দশ লাখের মতো মানুষ ওসব জায়গায় শুধুমাত্র ত্রাণ সামগ্রির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালী জনগণের এ দুর্ভোগ ভারতেও ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতে ইতোমধ্যে প্রায় দশ লাখের উপর শরণার্থী আশ্রয় করে নিয়েছে।
সম্মানিত রাষ্ট্রপতি, পূর্ব পাকিস্তানে হাজার হাজার বা খুব সম্ভবত লাখ লাখ মানুষ ধীরে ধীরে অনাহার এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমরা এ বিশ্বে এসব দুর্ভোগ ও অবিচার মেনে নিতে বাধ্য-বিশেষত আমাদের সময়ে যখন নৃশংসতা আর অরাজকতা অনেকগুলো অঞ্চলে বিরাজমান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ত্রয়োদশ খণ্ড ২৯৫
কিন্তু আমরা যে নতুন বিশ্বের সন্ধানে আছি সেটা আমরা যদি এসব নেতৃত্বের হুমকিকে এড়িয়ে যাই এবং অতীতের মতো জাগতিক আঙ্গিকে ও মনোভাবে শরণার্থী নিয়ে সন্তুষ্ট থাকি তবে সেই বিশ্ব কোনদিনই গঠিত হবে না।
পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষেত্রে-সংঘর্ষের মাঝে পড়ে যাওয়া জনগণের সাহায্যের জন্য়-আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমাদের সরকার এবং আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী এখনো এই নির্মম পরিহাস মোকাবেলায় স্থির দাঁড়িয়ে আছে। এ অবস্থা আর এড়িয়ে যাওয়া চলে না। এখানে শুলে চড়ে আছে মানুষের জীবন-নির্দোষ মানুষের জীবন- পাকিস্তানী হাজার অথবা লাখ মানুষের জীবন যা ধ্বংস হয়ে গেলে সমগ্র মানবজাতির উপর তার ভার এসে বর্তায়। যদি না এ অবস্থা উত্তরণে আরও বড় কিছু করা হয়।
পূর্ব পাকিস্তানে অরাজকতা আর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নিয়ে আক্ষেপ করা সহজ। ক্রমশ নিম্নগামী মানুষের দুর্দশা নিয়ে আক্ষেপ করাও সহজ। দুশ্চিন্তার জন্য কর্মপন্থা অবলম্বন করাও সহজ। সংঘর্ষ থেকে উন্নতি লাভ করার জন্য এবং মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ পরিচালনা করাও সহজ।
কিন্তু এসব বাগাড়ম্বর কোনভাবেই প্রকৃত কাজের বিকল্প হতে পারে না। এবং আমি এটা দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, আমাদের সরকার পূর্ব পাকিস্তানের মানবিক প্রয়োজনে যেসব করেছে, তা যতটুকু দরকার ছিল তার চেয়ে কমই। যেমনটা আমাদের নীতিবান এবং জনদরদি নেতারা সাম্প্রতিক বছরে কোন কৌশল, নতুনত্ব অথবা নিপীড়িতদের প্রয়োজনে গভীর সমবেদনা ছাড়াই করে এসেছেন।
এবং তাই আজকের দিনে, আমাদের পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদের মর্যাদা এবং রক্ষার জন্য এবং সচেতন আমেরিকান হিসেবে আমি জাতিসংঘের কাছে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানাচ্ছি। কিন্তু এই জাতিসংঘ এতদিন নেতৃত্বের চেয়ে নিরবতাকে প্রাধান্য দিয়েছে। আমি পাকিস্তানের শাসকদের কাছে, অন্যান্য রাষ্ট্রের পরিচালকদের কাছে, আমার দেশের সরকারের কাছে বিপর্যস্ত অঞ্চলে একটি করুণা মিশন এবং আকাশপথে সাহায্য পাঠানোর সমর্থন দেবার আবেদন জানাই। এবং আশা করা যায় যে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে শরণার্থীদের চাহিদা মেটাতে ভারত সরকারের আবেদন সংশ্লিষ্ট সকলের সহমর্মী প্রত্যুত্তর পাবে।
আসুন এই উদ্দেশ্য সফল করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি। কিন্তু বর্তমান চাহিদা মেটাতে আসুন আমরা তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহন করি এবং সেই সাথে মানবতার এই চরম সংকট মোকাবেলা করার জন্য যথার্থ আগ্রহ নিয়ে এ কাজ সম্পন্ন করি।
.
13.81.296-298
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশে সংগঠিত নৃশংস্তাঃ কংগ্রেস সদস্য ওয়াল্ড- এর মন্তব্য ও ক্যালিফোর্নি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের প্রতিবাদ | কংগ্রেসের কার্যবিবরোণী | ৫ মে, ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তা্নে রক্তক্ষয়ী/পাশবিকতা দমনে প্রতিনিধিসভার সদস্যবৃন্দ
মিঃ ওয়াল্ডি।মাননীয় স্পিকার আমাকে সাম্প্রতিক পত্রিকার বিবৃতিতে পাকিস্তান আর্মির সাম্প্রতিক বিদ্রোহর দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের চিকিৎসার বর্ণনায় আমি মর্মাহত এবং মন: ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
আমি বার্কলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদের সদস্য,সহকর্মী ও ছাত্রদের কাছ থেকে এই চিকিত্সার প্রতিবাদের একতট আবেদন পেয়েছি এবং আমাদের সরকারের জন্য একটি পরামর্শআর কার্যকর ব্যবস্তা নিয়া অবশ্যক।
আমি বিশ্বাস করি এই আবেদন মনোযোগ দেওয়ার যোগ্য।
আবেদন আর স্বাক্ষরের অনুসরন :
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের চিকিত্সা সম্পর্কিত প্রতিবাদের একটি আবেদন
আমরা বার্কলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দক্ষিণ আর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া গবেষণার সাথে জড়িত অনুষদের সদস্য,সহকর্মী এবং এর সঙ্গে যুক্ত ছাত্ররা নিম্নস্বাক্ষরকারী।মার্চ ২৫, ১৯৭১-এর থেকে পাকিস্তান আর্মির দ্বারা পূর্ব বাংলার মানুষের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ড বহন করা হয়েছে তার জোরের সাথে প্রতিবাদ করার কামনা করি।সন্তুষ্ট সাদামাটাভাবে এটার কর্তৃপক্ষ পুনরায় দাবি করতে এলাকার উপরে সাথে না, ইয়াহিয়া খানের সরকার সব বাংলা সামরিক অফিসার, ছাত্র, আর বুদ্ধিজীবীদের নিয়মতান্ত্রীকভাবে খুন করে একটি নীতি আর অসামরিক চাকুরে যা ভবিষ্যতে বাংলার জন্য কিছু নেতৃত্ব দিতে পারতো।তারা প্রদর্শিত ভাবে বিশেষ ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বাছাই করেছে ঢাকা ও অন্যান্য পূর্ব বাংলার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বাংলা অধ্যাপক ও বিভাগের প্রধানদের।এই নীতি একমাত্র এটার ফলে একটি পতিত জমিতে একটি ভীতু আর সমর্পিত মানুষের দ্বারা বসবাস করা পূর্ব পাকিস্তানের হ্রাস/নিচু থাকতে পারে।এই ধরনের একটি নীতি যথেষ্ট ভয়ঙ্কর যখন একটি ছোট গ্রাম বা প্রত্যন্ত উপজাতীয় এলাকায় প্রয়োগ হয় , মহা বর্ণনাতিত হয় যখন একটি সুবিশাল নিরস্ত্র উপর একটি দূরবর্তী সামরিক শাসকদের শাসন টিকিয়ে করার নির্দেশ জনসাধারণের যা মাত্র তিন মাস আগে সিংহভাগ ধ্বনিত হয়েছিল সমৃদ্ধিসহকারে প্রাপ্য আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন একটি পরিমাপ জন্য তাদের ইচ্ছা।
আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সরকার ভারত আর সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকারের সাথে যোগ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে ঘটা ঘটনাচক্রের ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং পরবর্তী প্রভাব ও পদক্ষেপ নিম্নলিখিত :-
(১) পাকিস্তানে একেবারে সব সামরিক সাহায্য যেকিনা গোলাবারুদ অনাবশ্যক অংশ বা সরঞ্জামের সাহায্য বন্ধ;একটি সরকার পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা প্রতিক্রিয়াশীল বজায় রাখার জন্য যাতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের সে প্রদেশে পুনঃস্থাপন করা পর্যন্ত;
(২)পাকিস্তানে অর্থনৈতিক এইড স্থগিত করার অন্তত সংবাদদাতাদের যেমন সময় পর্যন্ত এবং পণ্ডিতদের পূর্ববাংলার প্রধান শহরে বিনামূল্যে প্রবেশের জন্য অনুমতি দেওয়া হয় যাতে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক মার্চ ও এপ্রিল ১৯৭১ এর ঘটনা সম্পর্কে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে পারে; এবং
(৩) যখন অর্থনৈতিক সাহায্য পূর্ব বাংলার চাপে থাকা মানুষের উপশম আর পুনর্বাসনে অনুরূপ সাহায্য-এর অতিরিক্ত আয়তন পরিচালনা করতে পুনরায় শুরু করা হয়,জরুরী উপশমের প্রণালীর ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রাধিকার,একটি কর্মসূচী স্বাবলম্বী প্রগতিশীল বাংলা অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত করে নিশানা করা একটি বিস্তৃত সীমার দ্বারা অনুসরন করে নেয়া উচিত।
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রতিবাদের আবেদনের স্বাক্ষর
জেমস এন অ্যান্ডারসন,অধ্যাপক নৃবিজ্ঞান বিভাগ।
জেরাল্ড ডি বেররেম্যান,অধ্যাপক নৃবিজ্ঞান বিভাগ।
জে দাশগুপ্ত,অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
জোসেফ ফিশার,সামাজিক বিজ্ঞান প্রজেক্টর ইন্দোনেশীয় ।
উইলিয়াম গিওগেগ্যান, অধ্যাপক নৃবিজ্ঞান বিভাগ।
এলেন এম গুর্নপের্জ,সমন্বিত প্রভাষক সামাজিক বিজ্ঞান।
জন জে গুম্পের্জ,অধ্যাপক নৃবিজ্ঞান বিভাগ।
এলিস এস ইলছম্যান, শিক্ষা প্রভাষক।
ওয়ারেন ইলছম্যান, অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
জেমস মেটিসফ,অধ্যাপক ভাষাতত্ত্ব বিভাগ।
টমাস আর মেটকাফ,অধ্যাপক ইতিহাস বিভাগ।
লিওনার্ড নাথান,চেয়ারম্যান/সভাপতি অলঙ্কারশাস্ত্র বিভাগ।
ব্রুস প্রে,অধ্যাপক দক্ষিণ এশীয় ভাষাসমূহর ।
গর্ডন সি রোদার্মেল,অধ্যাপক দক্ষিণ এশীয় ভাষা ও সাহিত্য।
লিও রোজ,অধ্যাপক রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ।
জেমস সচুবের্ট,অধ্যাপক দক্ষিণ এশীয় ভাষাসমূহর।
জে ফ্রিটস স্ট্যাল,অধ্যাপক দর্শন ও দক্ষিণ এশীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ।
পিটার আনন্দ,গ্রন্থাগারিক।
ডর, অস্টিন ডটি,সহকর্মী।
সুসান ব্র্যাডফোর্ড,ছাত্র।
হানা এস ব্রান্সটেট্টর,সহকর্মী।
কেনেথ ব্রায়ান্ট,ছাত্র।
লি অ্যান ব্রায়ান্ট,ছাত্র।
জন ভি চেপলক, ছাত্র।
বেটসি এম কব, ছাত্র।
ডরোথিয়া গিয়েলো, ছাত্র।
ইভন কিন্স,সহকর্মী।
কেনেথ লোগান, গ্রন্থাগারিক।
মাইকেল মেছলিটস, ছাত্র।
উইলিয়াম রোসফ, ছাত্র।
লেনেথ শিভেরস,ছাত্র।
ক্রেগ স্টার্ক, ছাত্র।
লিভি স্টেইন, ছাত্র।
এস জর্জ ভিঞ্চেন্তনাথান, ছাত্র।
মেরি প্যাট্রিসিয়া উইলিয়ামস, ছাত্র।
.
13.82.299
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের ঘটনা সম্পর্কে সিনেটর পীল-এর মন্তব্য | সিনেটের কার্যবিবরণী | ৬ মে, ১৯৭১ |
কংগ্রেসনাল রেকর্ড-সিনেট মে, ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনা
জনাব পীল, জনাব প্রেসিডেন্ট। পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক ঘটনার সংবাদ সমূহ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আমি খুব ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। সেই সাথে আমি ওইসব ঘটনার চাক্ষুস সাক্ষীও পেয়েছি। সবকিছু দেখে কিছুটা সন্দেহ হয় যা ঘটেছে তা ভয়াবহ ধ্বংসের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
জনাব প্রেসিডেন্ট, বাক্য খুবই সংক্ষিপ্ত, এই মানব সংহার শেষ করতে বিশেষ করে অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে আমাদের নিজেদের ব্যাস্ত করা উচিত নয়। এবং এখন পর্যন্ত আমাদের সরকার, এসব ঘটনায় কার্যত চুপ থেকেছে। কূটনৈতিক যুক্তি যা ই হোক না কেন, প্রশাসনের এই নিরবতা ভেঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে হাজারো জীবনের জন্য আমাদের সরকার ও জনগনের তা বিবেচনায় আনা দরকার।
আমি আশা রাখি প্রশাসন খুব শীঘ্রই কথাগুলো বুঝতে পারবে এবং সারা বিশ্বকে আমেরিকান অনুভুতি বোঝানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
.
13.83.300-301
শিরোনামঃ বাংলাদেশের বিপর্যয়কর পরিস্থিতি : সিনেটর মন্ডল এর বিবৃতি ও পররাষ্ট্র সচিব রজার্সকে প্রেরিত টেলিগ্রাম
সুত্র-সিনেটের কার্যবিবরণী
তারিখ-৬মে,১৯৭১
জনাব মন্ডল:মহামান্য রাষ্ট্রপতি, পূর্বপাকিস্তানের জনসাধারণ ইতোমধ্যেই সাইক্লোনে বিধ্বস্ত এবং বর্তমান সময়ের চলমান গৃহযুদ্ধ তাদের জন্য আরও বিশাল আকারের হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শুধুমাত্র আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশের সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে হাজারো মানুষকে অনাহারে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতির প্রমাণাদি সংগ্রহ করে তার সারসংক্ষেপ একটি চিঠি আকারে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রায় ৩৫মিলিওন বাঙালিকে তাদের জীবন মৃত্যুর এক অনিশ্চিত সামাঞ্জস্য রক্ষা করতে আমদানিকৃত খাবারের উপর নির্ভর করতে হয়।
ফেব্রুয়ারি থেকে খাদ্য আমদানিতে বিঘ্ন ঘটছে। অভ্যন্তরীণ বণ্টন বন্ধ হয়ে গেছে।
ইতিহাস আমাদের আগেই মর্মান্তিক পরিস্থিতির সতর্কবার্তা দিয়েছে।১৯৪৩ সালে যখন এই অঞ্চলে খাদ্যের ঘাটতি ছিলো প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং এখন খাদ্যদ্রব্য চালানে অনুরূপ বিপর্যয় দেখে দেয়ার মানে হচ্ছে লাখো মানুষের মৃত্যু।প্রচার বা আমলাতান্ত্রিক নিষ্ক্রিয়তার উপর দুর্ভিক্ষ অপেক্ষমাণ নয়।বণ্টন প্রকৃয়াকে পুনর্জীবিত করার জন্য শীঘ্রই ব্যাপক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার কাজ হাতে নিতে হবে এবং যৎসামান্য মজুদ ফুরিয়ে যাবার আগেই অভাবী লোকদের কাছে পৌঁছাতে হবে।
আমরা এই সময়ের অনাহারে থাকা শিশুদের ছবি দেখছি কিন্তু এমন না হয় যেনো তাদের বাঁচাতে অনেক দেরী হয়ে যায়।
এখনো,এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ইউএস সরকার একটি অযৌক্তিক অবহেলা প্রদর্শন করছে।
আমরা একটি অস্পষ্টতা সৃষ্টি করেছি।সাহায্যের সাধারণ প্রস্তাব করা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় ত্রান কার্যক্রম গ্রহণ করার নিমিত্তে পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে ব্যার্থ হয়েছি।
আন্তর্জাতিক রেডক্রস পর্যবেক্ষকদল-যাদের নিরপেক্ষ মানবিক কার্যক্রম বিশ্বজোড়া স্বীকৃত তারা যখন পূর্বপাকিস্তানে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায় তখনও আমরা নীরব ছিলাম।
গৃহযুদ্ধ শুরু হবার পর রাষ্টে ‘পাকিস্তান ওয়ার্কিং গ্রুপ ’ এর বিভাগ খোলা হয়েছিলো যা যুদ্ধশুন্য অবস্থায় বিযুক্ত করা হয়। দৃশ্যত এই সসরকারের ‘বিশেষ প্রচেষ্টা ’ লাখো মানুষের অনাহারে থাকাকে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য হিসাবেই বিবেচনা করছে না।
কিন্তু কিছু অন্তত করার আছে।
সরকারের সাহায্য সংস্থা যা পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান করে থাকে তারাও সভায় আছেন। তাদের পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংকট কাটাতে একটি বিবেচনাযোগ্য আর্থিক সাহায্যের জন্য বলা হয়েছে।
সিনেটরদের দ্বিপাক্ষিয় দলের সম্মতিতে গতকাল পররাষ্ট্র সচিব রজার্স্কে এটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে টেলিগ্রাম করেছি যে আমেরিকা এই প্রস্তাবে সম্মত নয় এবং অন্য অনুদান প্রদানকারী দেশের প্রতিও একইভাবে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে বলা হবে।যতক্ষণ না পর্যন্ত,প্রথমত, পাকিস্তান প্রশাসন পূর্বপাকিস্তানে সৃষ্ট সংকটের প্রয়োজন অনুযায়ী জরুরি ত্রাণ বিতরণ শুরু না করে এবং দ্বিতীয়ত, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থাকে পূর্বপাকিস্তানে দ্রুত প্রবেশাধিকার দেয়া হয় যাতে তারা পাকিস্তান প্রশাসনের।সাথে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক খাদ্য বণ্টন ব্যাবস্থা ও চিকিৎসা সামগ্রীর ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনা করতে পারে।
আমি।আশা।করি সচিব সাহেব পাকিস্তানী ত্রাণ নির্বাহকদের ও আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সংস্থার কাছে আমেরিকার সরকারের উদারভাবে জরুরি খাদ্য সাহায্য এবং হেলিকপ্টার সহ যানবাহন পরিবহণ যা ধার হিসাবে দেওয়া হবে তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেবেন।
অবিশ্বাস্যভাবে আমরা আরেকটি বায়াফ্রা সীমান্ত দেখতে পাচ্ছি -আরেকটি যুক্তিপ্রয়োগ করা নিষ্ক্রিয়তা ও নৈতিক অসমতার সংযোগ যা লাখো মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
যদি নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের দাবিদার হয়,যদি পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তান পরিস্থিতির জন্য দায়ী হয় তবে তবে উভয় সরকারের একমাত্র কাজ হচ্ছে আরেকটি শিশুপ্রজন্মের সমাধি দেখার আগেই অতিসত্বর শক্তিশালী মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আমি অবিসন্বাদিতরূপে বলছি সেক্রেটারি রজার্সের কাছে একটি টেলিগ্রাম কার্যবিবরণীতে ছাপানো হোক।
মে ৪,১৯৭১
উইলিয়াম পি রজার্স
পররাষ্ট্র সচিব পররাষ্ট্র বিষয়ক বিভাগ
প্রযত্নে স্প্যানিশ এম্বাসি
জনাব পররাষ্ট্র সচিব
পূর্বপাকিস্তানের কোটি মানুষ কোনো জরুরী সাহায্য ব্যাবস্থা এবং আমদানিকৃত পন্যের বণ্টন ছাড়া অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
পাকিস্তান সাহায্যসংঘের ইউএস প্রতিনিধিকে পরবর্তি সবরকম বৈদেশিক বিনিময় সাহায্য করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমরা আপনাকে নির্দেশ দিতে বলছি এবং অন্যান্য দাতাদেরও অনুরূপভাবে সাহায্য প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে বলছি। যতক্ষণ না পাকিস্তান সরকার (১) পূর্বপাকিস্তানের প্রয়োজন অনুযায়ী দ্রুত জরুরি ত্রাণ বিতরণ, এবং (২) ICRC পর্যবেক্ষকদলকে পূর্বপাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি প্রদান যাতে তারা পাকিস্তান প্রশাসনের সাথে সমন্বিত খাদ্য বণ্টন ব্যাবস্থা ও চিকিৎসা সামগ্রী বিতরণের জন্য পরিকল্পনা করতে পারে।
আমরা এগুলোকে অসাধারণ পদক্ষেপ হিসাবে দেখছি কিন্তু যখন সরকার এই অবস্থা প্রতিরোধ করতে চাচ্ছে এমতাবস্থায় পূর্বপাকিস্তানের লাখো অনাহারী মানুষের ভয়াবহ অবস্থায় পড়ার সম্ভাবনা চিন্তা করে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা জরুরি
বিনীত
ওয়াল্টন এফ মন্ডল,ক্লীফোর্ড পি কেইস,ফ্রেড আর হ্যারিস,থ্রোনস এফ এগাল্টন,জর্জ ম্যাক গভার্ন,উইমান প্রক্সমায়ার,হ্যারল্ড ই হিউজ,হিউবার্ট এইচ হার্মফ্রী,বিরিচ বাই এবং এডমন্ড মেক।
.
13.84.302-303
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কংগ্রেস সদস্য ম্যাকেভিটকে লিখিত শ্যামেল পরিবারের চিঠি | কংগ্রেস এর কার্যবিবরণী | ১২ মে, ১৯৭১ |
১২ মে, ১৯৭১ কংগ্রেসনাল রেকর্ড- মন্তব্য ৪২৪৫
একটি আমেরিকান পরিবারের লিখা চিঠি যাদের পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্থানান্তর করা হয়ঃ
১১ ই মে, ১৯৭১
মিঃ ম্যাক-ভিট মিঃ স্পিকার, পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব আমেরিকানদের সরিয়ে নেয়া হয় তাদের মধ্যে ছিলেন ডেনভারের মিঃ এবং মিসেস এডওয়ার্ড সামাল। সামাল পরিবার তাদের পাঁচ সন্তান নিয়ে নভেম্বরের শেষে ঢাকা, তথা পূর্ব পাকিস্তান পৌঁছান, যেখানে মিঃ শ্যামেল আমেরিকার সাহায্য মিশনের সাথে ছিলেন।
আমি হাউজের সাথে একটি মিসেস শ্যামেলের লেখা একটি চিঠি যা ডেনভার পোস্টে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছেঃ
ডেনভার পোস্টের মতে-
আপনি নিঃসন্দেহে শুনে থাকবেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেসব আমেরিকানদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে……… এবং তাদের ভিতর আমরাও ছিলাম।
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালি এবং তাদের বাংলাদেশের জন্য আমাদের ভিতর অধিকাংশই খুবই উদ্বিগ্ন এবং ব্যাথিত।
সেই সাথে আমরা উদ্বিগ্ন কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরস্ত্র নাগরিক হত্যা এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠদের দমনকে নিন্দনীয় উল্লেখ করে কোন বিবৃতি জারি করে নি।
আমরা প্রত্যক্ষ করেছি গণহত্যা আসলে কেমন। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর ট্যাঙ্ক, ভারী কামান, মেশিন বন্দুক ব্যবহার করে, সেনানিবাসে ঘুমন্ত ১৬০০ পুলিশ হত্যাকরে (এভাবে একমাত্র সশস্ত্র প্রতিরোধ ক্ষমতা দমন করে), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনিবাস বিধ্বস্ত করে, হাজারো ছাত্রদের জন্য বিশাল কবর খনন করা হয়, তারা ধারাবাহিকভাবে দেশের বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হত্যা করে এবং পুরো গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেয় — আমি এরকম আরও বহু বলতে পারবো। এরকম হয়েছে এটা বিশ্বাস করা কঠিন।
শুধুমাত্র তুলনার খাতিরে আমি আপনাকে অনুরোধ করবো শুধু কল্পনা করুন শেষ নির্বাচনে নিক্সন নির্বাচিত হবার পর জনসন অভিষেকের মুলতবী ঘোষণা করে ক্যালিফোর্নিয়া চলে গেলেন নিক্সনের সাথে আলোচনা করার জন্য, এবং পরবর্তী তিন সপ্তাহে সমস্ত সেনাবাহিনী সেখানে নিয়ে গেলেন। তারপর হঠাৎ এক নিমিষে নিক্সনকে গ্রেফতার করে ফেলা হল, রিপাবলিক পার্টিকে অবৈধ ঘোষণা করা হল এবং পার্টির নেতাদের বহিষ্কার করা হল। অতঃপর তারা হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠল।
তেহরানে আমার প্রথম দিকের দিনগুলি খুব ভয়ের ভিতরে কাটছে। আমি সবাইকে বলছি মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসম্যানদের বরাবর লিখতে বা টেলিগ্রাম করতে বা ফোন করতে যাতে তারা একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে যদিও এটি হচ্ছে স্বীকার করে নেয়া হয়, আপাতদৃষ্টিতে তা ছিল ভণ্ডামি পূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্র করেনি, সম্ভবত মেই লাই ও লেফটেনেন্ট কেলির প্রতি বিমূঢ়তা থেকেই আমাদের অনিচ্ছার জন্ম।
মিসেস এডওয়ার্ড “প্যাট” সামেল
তেহরান, ইরান