You dont have javascript enabled! Please enable it!
      শিরোনাম              সূত্র          তারিখ
সিনেটর কেনেডীর কাছে লিখিত পররাষ্ট্র দপ্তরের পত্রগুচ্ছ সিনেট জুডিশিয়ারী কমিটির শরণার্থী উপকমিটির রিপোর্টঃপরিশিষ্ট-৪       ২৮ জুন, ১৯৭১

(সিনেট জুডিশিয়ারী কমিটির শরণার্থী উপকমিটির রিপোর্ট পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতের ত্রাণ সমস্যাঃ পরিশিষ্ট ১, ২৮শে  জুন, ১৯৭১)
রাষ্ট্র বিভাগ,
ওয়াশিংটন,ডি.সি.,২০শে এপ্রিল,১৯৭১
মাননীয় এডওয়ার্ড এম কেনেডি,সভাপতি,
শরণার্থী উপকমিটি
জুডিশিয়ারী কমিটি
সিনেটর
ওয়াশিংটন,ডি.সি.।
প্রিয় সিনেটর কেনেডিঃ মাননীয় সচিব আমাকে আপনার ৬ই এপ্রিল,১৯৭১-এর চিঠির উত্তর দিতে বলেছেন যা আপনি পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক দ্বন্দ্ব ও এই অবস্থায় আপনার দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করার উদ্দেশ্যে পাঠিয়েছেন যা যুক্তরাষ্ট্র সরকার সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি হিসেবে বিবেচনা করবেন।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানের এই পরিস্থিতিতে আমাদের সকল তথ্য সম্পূর্ণরুপে আপনার সাথে ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।সেই সূত্রে আমি আনন্দিত যে ডেপুটি সহকারী সচিব ক্রিস্টোফার ভ্যান হোলেন-এর অনুষঙ্গী হয়ে এইড-এর মাননীয় হারবার্ট রীস ও বিভাগের মাননীয় ক্লিভ ফুলার পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির বিভিন্ন দিক নিয়ে গত সপ্তাহে আলোচনা করেছেন কমিটি সদস্য মাননীয় ডেল ডা্হ্ হানি ও মাননীয় জেরী টিনকার এর সাথে।সহকারী সচিব সিসকো আপনার চাহিদা অনুযায়ী অন্যান্য তথ্য সরবরাহ করবেন।
মাননীয় ভ্যান হোলেন সভায় যেভাবে গুরুত্ব আরোপ করেছেন,আমরা পূর্ব পাকিস্তান সম্বন্ধে আপনার উদ্বেগ অনুধাবন করছি এবং সেখানকার এই পরিস্থিতি সম্বন্ধে নীরব নই।২৫শে মার্চ সামরিক যুদ্ধ শুরুর সময় থেকে এই এলাকায় মৃত্যু ও ধ্বংসের কারণে আমাদের যে উদ্বেগ,বিভিন্ন উপলক্ষে রাষ্ট্রের মুখপাত্র বিভাগ তাতে গুরুত্ব আরোপ করেছে,আমাদের ইচ্ছা পাকিস্তান সরকারকে সহায়তা করা একটি আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে,এবং আশা রাখি একটি রাজনৈতিক বাসস্থানের।
পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবহারেও আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছি,যদিও,উল্লেখ্য,আমাদের তথ্য অনুযায়ী এই সকল অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত।এটা ধারণা করা যাচ্ছে যে অস্ত্র বেশ কিছু সংখ্যক দেশ থেকে সংগ্রহ করা হচ্ছে,যার মধ্যে চীন ইউএসএসআর-ও অন্তর্ভুক্ত,এবং যুক্তরাজ্য থেকেও অস্ত্র আসছে।যেহেতু ১৯৬৫ সাল থেকে আমরা পাকিস্তানের মানচিত্রের আভিমুখ্যের উপর একটি সামগ্রিক নিষেধাজ্ঞা স্থাপন করেছি,আমরা কোনোরকম মারাত্মক সামরিক মারণাস্ত্র পাকিস্তানে পাঠাইনি।গত অক্টোবর-এ আমরা একবার পাকিস্তানকে সীমিত পরিমাণে মারণাস্ত্র বিক্রয় করার ব্যতিক্রমী ঘোষণা দিয়েছিলাম।এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কিছুই প্রদান করা হয়নি এবং এমনকিছু প্রক্রিয়াধীন-ও নেই।গত ছয় সপ্তাহ যাবত এই বিষয়ে কোনো প্রায়োগিক আলোচনা হয়নি।বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে।
উপরন্তু,আমাদের একটি ছোট কার্যক্রম রয়েছে যার মাধ্যমে নগদ ও ধারে অপ্রাণঘাতী কিছু সামরিক অস্ত্রের সাথে কিছু অতিরিক্ত যন্ত্রাংশ ও গুলি পাকিস্তানে বিক্রয় করব।প্রতিরক্ষা দপ্তর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে যে এইসব বস্তুর

২১৮

একটাও পাকিস্তান সরকার বা তার প্রতিনিধিদের প্রদান করা হয়নি যখন ২৫শে,২৬শে মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের প্রাদুর্ভাব হয়েছে এবং বর্তমানে এমন কোনো বণ্টন তালিকাভুক্ত হয়নি।
আপনার মত,আমরা পূর্ব পাকিস্তানে আসন্ন খাদ্যসংকট ও সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের খবর সুচিহ্নিত করেছি।আমরা এই সম্ভাব্য সমস্যা খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।শেষ হিসাব অনুযায়ী,পাকিস্তান সরকারের তহবিলে খাদ্যশস্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ লক্ষ টন।অথবা স্বাভাবিক হারে শহুরে এলাকার চার মাসের যোগান।যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশ হতে ২ লক্ষ টনের অধিক যাওয়ার পথে।আরও ৩ লক্ষ টন যুক্তরাষ্ট্রের শস্য অনুমোদন করা হয়েছে এবং যত শীঘ্র পূর্ব পাকিস্তানে মাল খালাসের ও শস্য চালনের স্থান সংকুলান হবে তত শীঘ্রই সেসব পাঠানোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।এই মুহূর্তে সমস্যা যোগান নয়,বণ্টন।তাই,আমরা পাকিস্তান সরকার কে তাড়না দিচ্ছি যাতে শস্য খালাসের সবরকম পদক্ষেপ নেয় ও বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করে যাতে পুরো পূর্ব পাকিস্তানে দ্রুত ও ন্যায়সঙ্গত উপায়ে খাদ্য বিলি করা সম্ভব হয়।যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়ে,আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্যই অতিরিক্ত চালান পিএল-৪৮০ পাঠানোর বিষয়ে বিবেচনা করব।
মাননীয় ভ্যান হোলেন-এর সভার সময়,আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখে কোনো শরণার্থীদের বাস্তবিক প্রবাহ ছিল না।তখন হতে,সংবাদ প্রতিবেদনসমূহ ইঙ্গিত করছে যে পাকিস্তানি সৈন্য তাদের অবস্থান দৃঢ় করছে এবং ভারত সীমান্তের দিকে সরে এসেছে।তার ফলে,ভারত অভিমুখে শরণার্থীদের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ তৈরি হয়েছে।আমরা ভারত সরকারকে এই পরিস্থতির হালনাগাদ তথ্য প্রদান করতে বলেছি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার,রেডক্রস সোসাইটি সংঘ,বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এদের পক্ষ হতে যেকোনো প্রয়োজনীয় ত্রাণসংক্রান্ত সহযোগিতা করতে আমরা আমাদের আগ্রহ পুনর্ব্যক্ত করেছি।
এই সম্ভাব্য গুরুতর পরিস্থিতির আলোকে শরণার্থীদের চাহিদা ও খাদ্যসংকট চাহিদার যতটা উন্নতি হচ্ছে যদিও,পূর্ব পাকিস্তান ও শরণার্থীদের জন্য ত্রাণের একটি সক্রিয় ও একটানা আন্তঃনিয়োগ পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।আমরা ব্যবহার্য সম্পদ তালিকাভুক্ত করছি যাতে আমরা ও অন্য দেশ এইসব চাহিদা পূরণ লক্ষ্যের নিকটস্থ হতে পারে।
আমরা পূর্ব পাকিস্তানের উপর রাষ্ট্রবিভাগের বিবৃতির একটি সংকলন অনুলিপির ভিতরে রেখে আপনার কর্মচারীদের প্রদান করেছি।এটি সেখানকার পরিস্থিতির বিষয়ে আমাদের দুর্ভাবনা-সম্বন্ধীয়,আমাদের আশা যে পাকিস্তান সরকার নিজেকে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা প্রদানে উৎসর্গ করবেন এবং আমাদের উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহারে।আমরা এই উদ্বেগ বিভিন্ন উপলক্ষে এখানে ও ইসলামাবাদ,উভয় স্থানে পাকিস্তান সরকারকে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি,এবং ভবিষ্যতেও তা করে যাব।
আমরা পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতিতে খুব নিবিড়ভাবে নজর রাখব এবং এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আপনার সদস্যদের সাথেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখব যাতে আপনি ও আপনার কর্মচারীগণ আগ্রহী।

আপনার অনুগত,
ডেভিড এম অ্যাবশায়ার
কংগ্রেশনাল রিলেশন এর সহকারী সচিব

সংযুক্তিঃ
সংবাদ মুখপাত্রের বিবৃতি।

২১৯
রাষ্ট্রবিভাগ
ওয়াশিংটন, ডিসি , ১০ই মে, ১৯৭১
মাননীয় এডওয়ার্ড এম কেনেডি
চেয়ারম্যান,শরণার্থী উপসমিতি
বিচারকবর্গ সমিতি
ইউএস সিনেট
ওয়াশিংটন, ডিসি।

মাননীয় চেয়ারম্যানঃ আমি আপনাকে অগ্রগতির বিষয়ে হালনাগাদ করতে চাই যেহেতু আমার ২০শে এপ্রিলের চিঠি  পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হওয়া মানবিক সহায়তার চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমাদের পারস্পরিক আগ্রহকে প্রভাবিত করে।আমি প্রাথমিকভাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতগামী ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের জরুরি ত্রাণ উদ্যোগের দিকে লক্ষ্য রাখছি।
ভারতে পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থী
পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারত অভিমুখী শরণার্থী প্রবাহ গত তিন সপ্তাহে যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।ভারত সরকার জানিয়েছে মোট সংখ্যা এখন ১৮ লক্ষ।যদিও আমাদের কাছে কোনও সঠিক সংখ্যা নেই,তবু ক্যাম্পে অন্ততপক্ষে ৫ লক্ষ ২৬ হাজার রয়েছে বলা হচ্ছে-যার বেশিরভাগ-ই পশ্চিমবঙ্গে।
ইউএন-এর প্রধান সচিব ইউ থান্ট এর নিকট ভারতের ইউএন প্রতিনিধি সেন এর পাঠানো একটি চিঠিতে ভারত ২৩শে এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে শরণার্থীদের জন্য ইউএন এর সহায়তার আবেদন জানিয়েছেন।মাননীয় প্রধান সচিব এই আবেদন অর্পণ করেছেন শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার-এর প্রিন্স সাদরুদ্দিন আগা খান কে,যিনি ৫ই মে নয়াদিল্লিতে প্রয়োজনীয় বস্তুর চাহিদা ধার্য করতে এবং আন্তর্জাতিক কাজের পরিকল্পনা উন্নয়ন করতে একটি বিশেষ তিন-ব্যক্তির দল প্রেরণ করেছেন।আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকার ও হাই কমিশনার উভয়কেই বলেছি যে আমরা এই শরণার্থীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগে অংশ নিতে চাই।আমরা বিশ্বাস করি যে এই ত্রাণ উদ্যোগ সম্পূর্ণ আন্তর্জাতিক ও অরাজনৈতিক হওয়া উচিত,আন্তর্জাতিক ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের সংশ্লিষ্ট প্রদত্ত সুবিধার সাথে চাহিদার বৈষয়িক পরিমাপ তৈরি এবং ত্রাণ যোগান সুবিধার ন্যায়সঙ্গত তদারকির মাধ্যমে।
যখন এই ইউএনএইচসিআর উদ্যোগ সংগঠিত হচ্ছে,একই সাথে আমরা পশ্চিমবঙ্গের ২ লক্ষ ১৭ হাজার শরণার্থীদের জরুরি খাদ্য সহায়তা প্রদান করা শুরু করেছি।এই সহায়তা তিনটি আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন-কেয়ার,ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিসেস এবং চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস/লুথেরান ওয়ার্ল্ড রিলিফ-যারা ইতিমধ্যে ভারতে কাজ করা শুরু করে দিয়েছে,তাদের মাধ্যমে বিলি করা হচ্ছে।এই স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো ভারতে বিদ্যমান পিএল-১৫০ সত্ত্ব ২ তহবিলের নিকটস্থ হচ্ছে,যেগুলো পুনরায় পূর্ণ করা হচ্ছে।এই পরিস্থিতিতে খাদ্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বস্তু যা আমরা সরবরাহ করতে পারি,এবং এই প্রত্যাশিত চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।এইসব খাদ্য সহায়তা শরণার্থী ইউএন হাই কমিশনার-এর দ্বারা সংগঠিত আন্তর্জাতিক ত্রাণ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রদান করা হবে।আমরা পাকিস্তান সরকারকে শরণার্থীদের জন্য সত্ত্ব ২ সহায়তার কথা জানিয়েছি এবং শরণার্থীদের ত্রাণ সুবিধা বণ্টনে আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের নিযুক্ত থাকাতে কোনো আপত্তি ওঠেনি।
এই পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগে প্রাথমিক অনুদান হিসেবে ২৫ মিলিয়ন পর্যন্ত খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার অনুমোদন পেয়েছি।
সেই সময় যেসব আমেরিকান স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রতিনিধিরা কিছু শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন তারা কোনো গুরুতর খাদ্য সংকট ও কোনো অস্বাভাবিক রোগের লক্ষণ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেননি,যেমন কলেরা বা বসন্ত।
২২০
অতিরিক্ত শরণার্থী প্রবাহ বৃদ্ধি অবিরত থাকতে পারে,বিশেষ করে,অন্ততপক্ষে কিছু সপ্তাহের মধ্যে বর্ষাকালের শুরু পর্যন্ত,যখন সামরিক ক্রিয়া ও ভ্রমণ দুটোই অধিক কষ্টসাধ্য হবে।এই কারণে,আমরা ইউএনএইচসিআর ও ভারত সরকার উভয়কেই আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগ যত দ্রুত সম্ভব মঞ্চস্থ করার তাড়না দিয়েছি।বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এতে সাড়া দিয়েছে ভারতে চর্বিহীন গুড়ো দুধ ও ভোজ্যতেলের সকল মজুত শরণার্থীদের ভোজনের জন্য ভারত সরকারকে অনুমোদন প্রদানের মাধ্যমে।গম ও চালের প্রসঙ্গে,ঐ সরকার বলেছে তাদের যথেষ্ট মজুত আছে এবং শরণার্থীদের জন্য তা সহজলভ্য করা হবে,এই প্রত্যাশার সাথে যে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি দ্বারা এই সরবরাহ পুনরায় পূর্ণ করা হবে।

পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ

পূর্ব পাকিস্তানের জনজীবনে বেসামরিক বিশৃঙ্খলা ও সাধারণ ভাঙ্গনের কারণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আমরা তা নিয়ে গুরুতরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে আছি।আপনি অবগত আছেন যে,আমরা আমাদের উদ্বেগ বিভিন্ন উপলক্ষে প্রকাশ্যে এবং পাকিস্তান সরকার,যুক্তরাষ্ট্র,অন্যান্য আগ্রহী দেশের সরকার,এবং আমেরিকান ও আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা কে ব্যক্তিগতভাবে জানিয়েছি।মানবিক ত্রাণ উদ্যোগ নিয়ে আমরা তাদের সকলের সাথে আলোচনা করেছি এবং অনিশ্চয়তা পরিকল্পনায় যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি।
এসব উদ্যোগ নিতে ও অনিশ্চয়তার জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়ে,আমরা বুঝতে পারি যে মূল সমস্যা হল সরকার ও জনগণের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া।যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের সম্পদ সহজলভ্য হচ্ছে,ততক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সমিতি একা এসব চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।

আমরা এতদিন পর্যন্ত যা যা করেছি তার সারসংক্ষেপ প্রদান করছি,আমরাঃ

যদি পাকিস্তান সরকার অনুরোধ করে,তবে ইউএন প্রধান সচিব ইউ থান্ট এর পয়লা এপ্রিলে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আন্তর্জাতিক মানবিক তহবিলের প্রস্তাবের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সংযুক্ত করেছি।
আশাবাদ ব্যক্ত করেছি যে,আন্তর্জাতিক সমিতির হয়ে পাকিস্তান সরকার নিজে সহায়তার প্রস্তাব দিবে।

পূর্ব পাকিস্তানে খাদ্যশস্য পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ চাহিদা পুনরায় পরিদর্শন করেছি এবং পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিমাপ নিশ্চিত করেছি যে প্রধান স্বল্পমেয়াদী সমস্যা হল উন্নত অভ্যন্তরীণ বণ্টনব্যবস্থাঃ নির্বাপক বন্দরে ভীড়,অন্তর্দেশীয় যাতায়াত পুনঃনির্মাণ,সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য তাদের কাজ পুনরায় চালু করার প্রকল্প।

পাকিস্তান কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের সাথে আলোচনা করেছি কিভাবে এই বণ্টন সমস্যার সমাধান করা যায়,এবং কিভাবে অন্যান্যদের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকার-ও সহযোগী হয়ে উঠতে পারে।

যত শীঘ্রই স্থানীয় পরিস্থিতি ঘূর্ণিঝড় বিপর্যস্ত এলাকার সাথে পূর্ব পাকিস্তান উপকূলে পুনর্বাসনের অনুকুল হয়,তখনই আমরা পদক্ষেপ নেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছি,যেখানে খাদ্যযোগানের জরুরি চাহিদা তৈরি হয়েছে।আমরা ৭.৫ মিলিয়ন ডলার ও ১০০ মিলিয়নের অধিক যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন পাকিস্তানি মুদ্রা যা পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য কংগ্রেস সহজলভ্য করে দিয়েছে,তার উপর ভরসা করতে পারি।আমরা ১,৫০,০০০ টন খাদ্যশস্য বিতরণ চুক্তি স্বাক্ষরের পদক্ষেপ নিতে পারি  ঘূর্ণিঝড় বিপর্যস্ত এলাকা পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে।

.

ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেইট

ওয়াশিংটন ডিসি, জুন ১৫, ১৯৭১

জনাব এডওয়ার্ড এম কেনেডি, চেয়ারম্যান,

রিফিউজি বিষয়ক উপকমিটি

আমেরিকান সিনেটের আইন বিষয়ক কমিটি

মাননীয় চেয়ারম্যানঃ পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারতগামী শরণার্থীদের বিষয়ে ২৭ মে লেখা চিঠি এবং এই ভয়ানক সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক ব্যবস্থা বিষয়ে পরামর্শের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রথমেই, আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের দুরবস্থা এবং ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের বিষয়ে আপনার সমবেদনাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার একমত। আমরা সরাসরি এবং অন্যান্য দেশের সহযোগিতায় উক্ত এলাকায় শান্তি ও মানবিক ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছি। আমাদের এই তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

আমি এখানে ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেইটের ১২ জুনের প্রেস রিলিজ সংযুক্ত করছি। যা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের বিষয়ে নেয়া আমাদের পদক্ষেপ সমর্থন করে। এটি পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সংক্রান্ত ইউ,এস নীতির তিনটি মৌলিক উপাদানও বর্ণনা করে। এটা প্রমাণ করে যে, দুই দেশের জরুরি চাহিদার জন্য যখনই আমাদের অনুরোধ করা হয়েছে তখনই আমরা দ্রুত ও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছি। নিম্নলিখিত অতিরিক্ত মন্তব্য আমাদের কার্যক্রমকে হালনাগাদ করবে এবং আপনার উত্থাপিত নির্দিষ্ট পয়েন্টে সাড়াদানে সহায়তা করবে।

আপনার চিঠিতে আপনি পৃথক সরকার এবং পূর্ব পাকিস্তানে জাতিসংঘের সহায়তায় রাজনৈতিক সমাধানের কথা বলেছেন। আমরা পাকিস্তান সরকারের সাথে প্রকাশ্য এবং গোপন আলোচনায় এই ধরণের একটি সমাধানের জন্য আলোচনা করে যাচ্ছি। আপনি হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে, করাচিতে ২৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভিপ্রায় জানিয়েছেন। আপনি জানেন যে, যদিও জাতিসংঘ এই পরিস্থিতির রাজনৈতিক দিকে হস্তক্ষেপ করতে পারেনা কিন্তু পূর্ব পাকিস্তান ও ভারতে মানবিক ত্রাণ সহায়তা এই অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হতে পারে।
আমরা ভারতে শরণার্থীদের পালিয়ে আসার প্রেক্ষাপট স্বীকার করছি এবং যারা পালিয়ে এসেছে তাদের পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত যাওয়ার কথা চিন্তা করছি। আমরা এই বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের সাথে কথা বলেছি এবং খেয়াল করা জরুরী যে দেশে ফেরত আসতে চাওয়া রিফিউজিদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে এবং শরণার্থীদের জন্য সীমান্তে অভ্যর্থনা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। আমরা এটা লক্ষ্য করে সন্তুষ্ট যে, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান পাকিস্তান ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই পরিদর্শন করছেন এবং রিপোর্ট হয়েছে যে শরণার্থীদের প্রথম দলটি পূর্ব পাকিস্তানে ফেরত আসতে যাচ্ছে।

এই সময়ের মধ্যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাব সহায়তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি, যা আপনার দ্বিতীয় পরামর্শ ছিল। আমরা একমত যে, অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য এই ধরণের কর্মকাণ্ড শুরু করা জরুরী। আপনার বর্ণনানুসারে পাকিস্তান খাদ্যশস্য ও জল পরিবহনে সাহায্য চেয়েছে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি সমন্বিত ত্রাণ তৎপরতা চালানোর জন্য আমরা যথাযত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। চিকিৎসা সরঞ্জাম সহায়তার জন্য পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোন অনুরোধ করা হয় নি।

তৃতীয়ত, আপনি পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা নিরসনে কূটনৈতিক তৎপরতার কথা বলেছেন। উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসন করে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আমরা যথাযথ কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করেছিলাম এবং তা এখনো চালিয়ে যাচ্ছি।

শেষত, ভারতে শরণার্থী সমস্যার প্রেক্ষিতে যেকোন চাহিদা তৈরি হওয়ার সাথে সাথেই তা পূরণে আমরা সাড়া দিচ্ছি।  আন্তর্জাতিক সহায়তা প্রচেষ্টা কাঠামোর মাঝে প্রাথমিকভাবে আমাদের প্রচেষ্টা শুরু হয় এবং এতে কোন প্রকার বিলম্ব করা হয় নি। অন্তর্বর্তী সময় অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে আমরা ভারতে অবস্থারত উদ্বাস্তুদের জন্য খাদ্য যোগান দেয়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে টাইটেল ২ খাদ্য সরবরাহ করেছি। এরপর থেকে আমরা প্রতিদিন ১২,৫০,০০০ রিফিউজিদের খাদ্য সরবরাহ করছি। একইভাবে রিফিউজিদের ত্রিপুরা থেকে আসাম নিয়ে আসা এবং আসাম থেকে ত্রিপুরায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য আমরা চারটি সি-১৩০ বিমান দিয়েছি। ভারত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের মাধ্যমে আমাদের নিকট এই অনুরোধ পাঠায়। উদ্বাস্তুদের মধ্যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া কলেরা প্রতিরোধের জন্য বিমানের মাধ্যমে ইউএস উৎপাদিত দশ লক্ষ কলেরা ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়েছে। অব্যাহত জরুরী অবস্থার স্বীকৃতিস্বরূপ আমরা আরো ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা অনুমোদন করেছি। এর ফলে আমাদের প্রদত্ত সাহায্যের পরিমাণ দাড়িয়েছে সর্বমোট ১৭.৫ মিলিয়ন ডলারে।

আপনি জানেন যে, জাতিসংঘ মহাসচিবের অনুরোধের সাথে সাথেই ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীদের ত্রান সহায়তার জন্য ইউএস সরকারের বরাদ্দকৃত ২.৫ মিলিয়ন ডলার হতে ৫ লক্ষ ডলার ইউএনএইচসিআরকে দেয়া হয়েছে। আমরা হাইকমিশনের কিছু কার্যক্রম ও ব্যয়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাব। কিন্তু আমরা আন্তর্জাতিক সহায়তা কাঠামোর মধ্যে ইউএস স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে সরাসরি ত্রাণ সহায়তাও অব্যাহত রাখব।

অনুরূপভাবে, পূর্ব পাকিস্তানে আমরা একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে দ্বিপাক্ষিকভাবে কার্যক্রম প্রসারিত করছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, বন্দরে অবস্থানরত নৌযান হতে খাদ্যদ্রব্য অভ্যন্তরীণ বিতরণ পয়েন্টে বহন করার জন্য আমরা পাকিস্তান সরকারকে ছয় মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছি। আরো খাদ্যদ্রব্যের চালান বন্দরে আসার সাথে সাথেই আমরা দ্রুত তা সরবরাহ করার জন্য তৈরি আছি।

২২ মে ত্রাণ সহায়তার জন্য জাতিসংঘের নিকট পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব একজন বিশেষ দূতকে ইসলামাবাদ পাঠিয়েছেন। আমরা বুঝতে পারি যে, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে এবং ইউএন এর একজন বিশেষ প্রতিনিধিকে আন্তর্জাতিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ঢাকায় সংস্থাপন করা হয়েছে।

আপনার মত আমাদেরও উদ্দেশ্য হল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এবং ভারতে পালিয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের জন্য কার্যকর ত্রাণ নিশ্চিত করা। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার মানবিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে সকল সম্পদ দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সরবরাহ করছে।

দক্ষিণ এশিয়ার শরণার্থী ও ত্রাণ বিষয়ে আপনার বোধগম্য ও প্রকৃত আগ্রহের কারণে আমরা এই বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সাথে আপনাকে জানাব।

যখনই আপনি মনে করেন, আমরা কোনরূপ সহায়তা করতে পারি তখনই দয়াকরে আমাদের অবগত করুন।

বিনীত

ডেবিড এম এবশিরস

কংগ্রেশনাল রিলেশনসের সহকারী সচিব

সংযুক্তি

প্রেস রিলিজ, জুন ১২।

.

13.58.224-225

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির রিপোর্ট (অংশ) পররাষ্ট্র দপ্তর ২জুলাই, ১৯৭১০

ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেট
এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট
ওয়াশিংটন ডি.সি. ২০৫২৩

দুর্যোগ মেমোঃ ৩ নম্বর                                                   ২০জুলাই, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তান বেসামরিক খন্ডযুদ্ধ ও সাইক্লোন ক্ষতিগ্রস্থ

পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি

সাধারনঃ দিনে প্রায় ৫০ হাজার পাকিস্তানি উদ্বাস্তু বর্ডার পার হয়ে ভারতে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।১৪ জুলাই পর্যন্ত সর্বমোট এর সংখ্যা প্রায় ৬৮ লাখ। যাদের মধ্যে ফিরে আসার সংখ্যা খুবই নগণ্য ,মাত্র ৫০ হাজার এর মত।

২৮ জুন পাকিস্তানি রাস্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান তার বক্তব্যে উদ্বাস্তুদের দেশত্যাগ বন্ধে ও ভারতে থাকা পাকিস্তানিদের ফিরে আসতে উৎসাহিত করতে পাকিস্তান সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপঃ সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা , অভ্যর্থনা কেন্দ্র নির্মাণ, পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা,প্রত্যাগত হিন্দুদের (উদ্বাস্তুদের বৃহদাংশ) নিরাপত্তা প্রদান , জাতিসংঘের উপস্থিতি চুক্তি, আসন্য উদ্বাস্তু ও ত্রান কার্যক্রমের জন্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে পর্যালোচনা করেন।

উত্তর-পশ্চিম পূর্ব পাকিস্তান- একটি জরিপ দল পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া ও শহর ধ্বংস করাকে মানুষের স্থানচ্যুত হবার কারণ হিশেবে চিহ্নিত করে।পাবনা,বগুড়া, দিনাজপুর এবং পাকশিতে তীব্র জনশুন্যতা প্রতীয়মান হয়। একমাত্র ব্যাতিক্রম রংপুর ছিল স্থিতিশীল এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ছিল খুবই কম। স্থানীয় নিয়ন্ত্রণের অভাবে এসব এলাকাতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় প্রথাগত বিবাদ প্রবল আকার ধারন করে। যে সকল উদ্বাস্তু এই এলাকা ছেড়ে গিয়েছিল তাদের প্রায় কেউই আর তাদের বাড়ীতে ফিরে আসেনি। সাধারন রেল ও সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনো বিপর্যস্ত । গুরুত্বপূর্ন আমন ধান যা অক্টোবর/নভেম্বর মাসে উত্তলিত হয় তা পূর্বের প্রত্যাশিত লক্ষমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হবে। যদি বিপুল সংখ্যক ঘরহারা মানুষ ফিরেও আসে, তাহলে খাদ্য সমস্যা আরো প্রবল আকার ধারণ করবে । প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয় যে বিদ্রোহী বাহিনীগুলো পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে স্বাভাবিকতা রোধে খাদ্য পরিবহন ও কৃষি উৎপাদন ব্যহত করতে পারে।

এই এলাকার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ আছে এবং উপস্থিতির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ৫-১০ শতাংশ। কিছু লোকজনকে মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। নদীপথে সর্বত্র যাতায়াত সম্ভব না হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে রেল ও সড়ক পথ সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।
শষ্য উৎপাদন বিবেচনায় সাধারনত দিনাজপুর , রংপুর, রাজশাহী এবং বগুড়াতে উদ্বৃত্ত থাকে প্রকারান্তরে পাবনা ও কুষ্টিয়ায় ঘাটতি থাকে। যেহেতু যেসকল এলাকায় সাধারণত উদ্বৃত্ত থাকে সেসব এলাকায় এখন মানুষ কম সুতরাং সেসব এলাকায় দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা নাই কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদন পাকিস্তানের সামগ্রিক উৎপাদনকে ব্যহত করবে। এই অপেক্ষাকৃত কম উৎপাদনের কারণগুলির মধ্যে পরিবহনের অক্ষমতা এবং পানি,সার,বীজ, কিটনাশক প্রভৃতির বিতরণ ব্যবস্থা এবং অপ্রতুল জনশক্তি ও ঋণ অন্যতম। নিম্নে শরৎকালীন কৃষি উৎপাদনের পর্যালোচনাঃ

আমনঃ দিনাজপুরে স্বাভাবিকের মাত্র ১০ শতাংশ; রংপুরে স্বাভাবিকের ৮০ শতাংশ।

পাটঃ ১৫ শতাংশ এর কম।
বোরো (পানিতে রোপিত ধান)-প্রায় স্বাভাবিক।

চিনিঃ ভাল কিন্তু শ্রমিক সংকট ও একটি মিল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কারখানার সক্ষমতা অনিশ্চিত।

রাসেল এস ম্যাক ক্লার

দুর্যোগ ত্রান সমন্বয়কারী

.

13.59.226-227

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পররাষ্ট্র দপ্তর কর্তৃক পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ প্রশ্নে কংগ্রেস সদস্য মাইকেল হ্যারিংটনের পত্রের জবাব ও  এতদ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রতিনিধি পরিষদের কার্যবিবরণী ২৬ জুলাই, ১৯৭১

পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র প্রেরণ

স্বরাষ্ট্র দফতর

ওয়াশিংটন ডি.সি, ২১ জুলাই, ১৯৭১

সম্মানিত মাইকেল জে. হ্যারিংটন

প্রতিনিধি পরিষদ

ওয়াশিংটন ডিসি।

জনাব হ্যারিংটনঃ পাকিস্তানে আমাদের সামরিক সরবরাহ নীতির বিবৃতি প্রদানের জন্য আপনার ২৯ জুলাইয়ের চিঠির প্রত্যুত্তর দিতে সেক্রেটারি আমাকে বলেছেন।

এই বিষয়টির ওপর জনগণের আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে এবং এই সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি দূর করার জন্যে আমরা আমাদের বিবৃতিটি প্রস্তুত করেছি। পূর্ব পাকিস্তানে যে যুদ্ধ চলছে তার ফলে আমরা যে সকল ব্যবস্থা নিয়েছি তার ব্যাখ্যাও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি আমাদের পূর্বতন সামরিক সরবরাহ নীতিটির দিকেও আপনার দৃষ্টিগোচর করানোর ইচ্ছে রাখি যে নীতিটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে উনিশশো একাত্তরের ২৫ মার্চের পরে তাদের পররাষ্ট্র সামরিক বিক্রয় কর্মসূচির আওতায় থাকা সামরিক সাজসরঞ্জামের সরবরাহ স্থগিত করেছে। যদিও সামরিক দিক থেকে বিবেচনাক্রমে, এই নীতিটি গোলাবারুদসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহের বিষয় আওতায় এনেছে, কিন্তু এটি এফএমএস এবং আগের লাইসেন্সকৃত এবং সামনে লাইসেন্স করা হবে এমন বানিজ্যিক সরবরাহগুলো আওতাভুক্ত করেনি। এরপরেও আমি আপনাকে এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত করতে চাই যে আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে আপনার থেকে স্বেচ্ছায় কোনকিছু গোপন করা বা আপনাকে দিগভ্রষ্ট করার কোন অভিপ্রায় আমাদের নেই।

পুরো বিষয়টির ওপর আমাদের অবস্থানের সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা বিবৃতিটিতে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি এতে প্রদত্ত তথ্য আপনার সাহায্যে লাগবে। আপনার কোন কাজে লাগতে পারি এমন বিশ্বাস থেকে যেকোন সময় আপনি আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

আপনার একান্ত,

ডেভিড এম. এবশায়ার

সভাসংক্রান্ত সম্পর্কের সহকারী সম্পাদক

ভুক্তিঃ সামরিক সরবরাহ নীতির বিবৃতি

১ জুলাই ১৯৭১ – পাকিস্তানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সরবরাহ নীতি

১৯৬৫ সালে যখন ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্বেষভাব ছড়িয়েছিলো তখন উভয় দেশেই সামরিক সাজসরঞ্জাম সরবরাহের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুনরায় শুরু করা কিছু সাধারণ সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাদে সকল ধরণের সাহায্য বন্ধ করা হয়েছিলো।

১৯৬৬ সালে নিষেধাজ্ঞাটি কিছুটা শিথিল করা হয় যার ফলে উভয় দেশেই অক্ষতিকর এবং যোগাযোগ, চিকিৎসা ও পরিবহনের জন্য সরঞ্জাম বিক্রয় করার অনুমতি দেয়া হয়।

১৯৬৭ সালে নীতিটি আরো কিছুটা শিথিল করে গোলাবারুদ এবং ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আগে যুক্তরাষ্ট্র বিমান ও ট্যাংকের মত যে সামরিক সরঞ্জামগুলো সরবরাহ করতো তার অতিরিক্ত অংশগুলো বিক্রয়ের জন্যে অনুমতি দেয়া হয়। উনিশশো সত্তরের অক্টোবরে, এককালীন ব্যতিক্রম হিসেবে মারণাস্ত্রের ওপর নিষেধাজ্ঞাটি জারি রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এসকল সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তানে তিনশ সাঁজোয়া যান এবং প্রায় বিশটি বিমান পাঠানো অনুমোদিত হয়।

পাকিস্তানের সাথে একটা গঠনমূলক রাজনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই পরিমিত পরিমাণের সামরিক সরবরাহ জারি রাখার নীতিটি গ্রহণ করা হয়। আমরা এও নিশ্চিত করতে চাইছিলাম যে পাকিস্তানে যেন অন্য কোন সামরিক সরবরাহের উৎসের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল হতে বাধ্য না হয়।

পররাষ্ট্র সামরিক বিক্রয় কর্মসূচি (এফএমএস) অথবা উৎপাদক কিংবা পরিবেশকদের কাছ থেকে পাকিস্তান সরকার বাণিজ্যিকভাবে যুদ্ধোপকরণের তালিকা ক্রয় করে থাকে। এফএমএস কর্মসূচির আওতায়, প্রতিরক্ষা দফতরের মজুদ থেকে সরাসরি কিংবা প্রতিরক্ষা দফতরের বানিজ্যিক ঠিকাদারদের কাছ থেকে উপকরণগুলো ক্রয় করা হয়। রফতানির আগে, যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধির কাছে এফএমএস কর্মসূচির আওতায় সরবরাহকৃত অথবা বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহকৃত সকল উপকরণ রফতানির জন্য স্বরাষ্ট্র দফতরের লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে।

কিছু কিছু উপকরণ সামরিক এবং বেসামরিক উভয় ক্ষেত্রেই কাজে লাগে (যেমনঃ নির্দিষ্ট ধরণের গাড়ি এবং ট্রাকের অতিরিক্ত অংশ)। যদিও এগুলো যুদ্ধোপকরণের তালিকায় নেই তবুও বাণিজ্য দফতরের লাইসেন্সের প্রয়োজন হতে পারে।

পূর্ব পাকিস্তানে ২৫-২৬ মার্চে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে, পাকিস্তানে সামরিক সরবরাহের ক্ষেত্রে আমরা কিছু নির্দিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নিয়েছি। কোন আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করা হলেও, নিম্নলিখিত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থাগুলো এপ্রিলের প্রারম্ভেই নেয়া হয়েছেঃ

(ক) প্রতিরক্ষা দফতরের মজুদ হতে এফএমএস উপকরণের সরবরাহের ওপর লাগাম দেয়া হয়েছে; এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে এই ধরণের কোন উপকরণ ছাড় পায়নি।

(খ) এফএমএস অথবা বাণিজ্যিক বিক্রয় উভয় ক্ষেত্রেই যুদ্ধোপকরণের তালিকায় যে সকল উপকরণ আছে সেগুলোর নতুন লাইসেন্স প্রদান এবং মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্সের (একবছরের জন্য বৈধ) নবায়নের ওপর স্বরাষ্ট্র দফতরের যুদ্ধোপকরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যালয় হতে স্থগিতাদেশ দেয়া হয়েছে।

(গ) অক্টোবরে ঘোষিত এককালীন ব্যতিক্রম হিসেবে অস্ত্র সরবরাহের নীতির ওপর যেকোন ব্যবস্থা নেয়া স্থগিত করা হয়েছে; এর আওতাভুক্ত কোন উপকরণ পাকিস্তানে বা পাকিস্তানের কোন প্রতিনিধির কাছে সরবরাহ করা হয়নি। সরবরাহের জন্য কোন তফসিলও ঘোষনা করা হয়নি।

এপ্রিলের প্রারম্ভে এসকল অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা নেবার আগে, পাকিস্তান সরকার অথবা এর প্রতিনিধিরা কিছু উপকরণের বৈধ অনুমতি এবং অধিকার নিয়েছে যা এখনো যুক্তরাষ্ট্রে বলবত আছে। এ ছাড়াও, এপ্রিলের প্রারম্ভে এসব ব্যবস্থা নেবার আগে, এফএমএস-র ডিওডি বাণিজ্যিক ঠিকাদার এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সরবরাহকারীদের ইস্যুকৃত বৈধ লাইসেন্সগুলো এখনো বলবত আছে। কিছু কিছু উপকরণ যা পাকিস্তান সরকারের বৈধ সম্পত্তি সেগুলো যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তানে জাহাজের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া বৈধ লাইসেন্সের মাধ্যমে আরো সামরিক সরবরাহ ভবিষ্যতে পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে।

পাকিস্তানে আমাদের সামগ্রিক সামরিক সরবরাহের নীতি ঘনিষ্ঠ পর্যালোচনায় থাকবে।

কম্পাইলারঃ রোকেয়া সামিয়া

পৃষ্ঠাঃ ২২৬-২২৭

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ ত্রয়োদশ খন্ড

জমা দেবার তারিখঃ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

.

13.60.228

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রেসিডেন্ট নিক্সনের সংবাদ সম্মেলন নিউ ইয়র্ক টাইমস্ আগস্ট ৫, ১৯৭১

ওয়াশিংটন, আগস্ট ৪ – প্রেসিডেন্ট নিক্সনের আজকের সংবাদ সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যের বিবরণ নিচে তুলে ধরা হলো:

খোলা বক্তব্য

ভদ্র মহিলা ও ভদ্র মহোদয়গণ, এই মাত্র স্টেট সেক্রেটারি সাহেবের সাথে যেই বিষয়গুলো নিয়ে আমার কথা হয়েছে, তার কিছুটা পূর্ব রেশ টেনে আমি আমার বক্তব্য শুরু করতে চেয়েছিলাম, কারণ আমি জানি যে, এই বিষয়গুলো যেকোন অনুষ্ঠানেই সম্ভবত উঠে আসতে পারে।

আমাদের আলোচনার বিষয় হলো পাকিস্তানের উদ্বাস্তু পরিস্থিতি নিয়ে, আমরা কি কি করলাম তার পাঠ পর্যালোচনা করা। এখন পর্যন্ত ভারতে যেসব উদ্বাস্তু রয়েছে তাদের নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন, এসব উদ্বাস্তুর সহায়তায় অদ্যাবধি পর্যন্ত আমরা ৭০ মিলিয়ন ডলার প্রদান করেছি এবং এর চেয়েও বেশি সহায়তা দেয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। এই প্রসঙ্গে বলে রাখতে চাই যে, বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যে সহায়তা দিয়েছে এটা তার সমষ্টিক পরিমাণের চাইতেও বেশি, ফলে এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ পরিমাণের অর্থ।

পূর্ব পাকিস্তানে যারা রয়েছে তারা নিজেরাও কতোটা উদ্বিগ্ন, যেহেতি আপনারা জানেন যে, সেখানে এখন দুর্ভিক্ষ জারির সম্ভাবনা রয়েছে, সময়টা এমন যে শস্য উৎপাদন যতোটা খারাপ হবে বলে ধারনা করা হয়েছিল ঠিক ততোটাই খারাপ হয়েছে, ঠিক এই সময়ে আমরা সেখানে ৩,৬০,০০০ টন শস্য পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রেখেছি। এছাড়াও আমরা মানুষের ভিড়ে উপচে পড়া পোর্টগুলোতে এসব শস্য পৌছে দেয়ার জন্য বিভিন্ন নৌযান ভাড়া করতে আরও ৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছি।

পরবর্তী পদক্ষেপ হিশেবে স্টেট সেক্রেটারি সাহেব আমার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘে গিয়ে সেখানকার দায়িত্বশীল ও সংশ্লিষ্ট সদস্যবৃন্দ সহ জাতিসংঘ হাই কমিশনারের সাথে তার অফিসে এই বিষয়ে কথা বলার পরিকল্পনার কাজ শেষ করেছেন, সেখানে তারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি দেয়া উদ্বাস্তুদের সহায়তাসহ পূর্ব পাকিস্তানে রয়ে যাওয়া যেসব জনগোষ্ঠী দুর্ভিক্ষপীড়িত অবস্থার মুখোমুখি হচ্ছেন, তাদের সহায়তার জন্য আরও অতিরিক্ত সম্ভাব্য উপায়গুলো খুজে বের করবেন।

গতকাল হাউজ যে সমস্যার কথা অবতারণা করেছে সে সম্পর্কে বলতে চাই- যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পাকিস্তানে আর্থিক সহায়তা প্রদান বন্ধ করে দেয়ার মতো কোন সিদ্ধান্তের পক্ষে আমরা নই। এ ধরণের কোন কাজ উদ্বাস্তু সমস্যাকে আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাবে, কারণ এ কাজের অর্থ হলো যে, খাদ্য ও অন্যান্য রসদ-খোরাকী বন্টনের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের সাথে একত্রে কাজ করার যে আগ্রহ দেখিয়েছে সেখানে কিছুটা স্থিতিশীলতা আনয়নের চেষ্টায় দেশটির সামর্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আমরা অনুভব করি সবচেয়ে বেশি যে গঠনমূলক ভূমিকাটি আমরা পালন করতে পারি তা হলো পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখা আর এর মাধ্যমে ঘটনা পরিক্রমাকে এমন একটি পথে চলতে প্রভাবিত করা যা পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষুধার সমস্যাকে একটি রফায় নিয়ে আসবে, যা ভারতে উদ্বাস্তুদের ঢল কমিয়ে আনবে এবং যেটা আমরা বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে সমস্যাটির একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক নিষ্পত্তি খুঁজে বের করার দিকে দৃষ্টি দেবে।

পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের উপর জনগণের চাপের সাথে আমরা যুক্ত হতে যাচ্ছি না। এটা সম্পূর্ণভাবে বিপরীত ফলদায়ক হবে। এগুলো এমন সব ব্যাপার যা নিয়ে আমরা কেবল আমাদের নিজস্ব মাধ্যমেই আলোচনা করবো।

.

13.61.229-230

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মার্কিন আন্তঃ এজেন্সী শরণার্থী ত্রাণ সম্পর্কিত রিপোর্ট পররাস্ট্র দপ্তর আগস্ট ১৭,১৯৭১

ইন্টার এজেন্সী কমিটি অন পাকিস্তানি রিফিউজি রিলিফ

পরস্থিতি পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট ১০

আগস্ট ১৭,১৯৭১

ইউনাইটেড স্টেটস ভলান্টারি এজেন্সিজ ইন একশন

“প্রতি দশ অথবা  বিশটি  পরিবারের   মধ্যে  একটির সাথে  ঘুমানোর  জন্য  বিছানোর  মাদুর আছে , এবং  প্রতি ত্রিশটি পরিবারের   মধ্যে  একটি পরিবারের   সাথে  যে কোন ধরণের   ধাতব ব্যবহার্য   সামগ্রী আছে বলে  মনে  হচ্ছে , তারা স্থায়ী  শকের  ভেতর আছে  এক গ্রাম থেকে পরবর্তী গ্রামের  উদ্দেশ্যে  চলেছে  আর চলার  ওপরেই  আছে “

চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এর একজন  কর্মকর্তা এভাবেই  পাকিস্থান  থেকে  ভারতে  আশ্রয় নিতে আসা শরণার্থীদের   অবস্থা র বর্ণনা দেন ।

শরণার্থীর  সংখ্যা  এখন সাড়ে সাত (৭.৫) মিলিয়ন  অতিক্রম  করেছে , চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের  এই কর্মকর্তা  তার  টিম নিয়ে  শরণার্থীদের   কিভাবে  সাহায্য  করা যায় তার  তদারকিতে  ছিলেন । চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস  হলো  উদ্বাস্তুদের  সাহায্য  করার জন্য  ১৭ (সতেরো)টি আমেরিকান  সংস্থার  একটি , যারা  আড়াই মিলিয়ন (২.৫) ডলারের   অর্থ এবং  ত্রানসামগ্রী  পুরো পৃথিবীব্যাপী   প্রচেষ্টা  চালিয়ে  জোগাড়  করেছিল  ।

বিভিন্ন  ত্রাণ সংস্থা  বিভিন্ন  চাহিদার  উপর  লক্ষ্যস্থির   করে  কাজ করছে, যেমন  CARE তাদের  সবধরনের   জনবল  খাদ্য , বাসস্থান, এবং পয়নিস্কাশনের  ব্যবস্থা  করার  কাজে  নিয়োজিত করেছে । কেয়ার  জরূরী  ভিত্তিতে প্রাপ্ত ৪৮০০০০ ডলারে  ১৮০০০০ মানুষ কে আশ্রয়  দেবার  উপযোগী  ১২০০০ তেরপল  কিনে ছে।

CARE এছাড়াও গম ও অন্যান্য  খাবার  বিতরণ  করায়  ভারত সরকারের   ত্রান ও পুনর্বাসন  মন্ত্রণালয়ের  সঙ্গে  একযোগে কাজ করছে।

The  International  Rescue  Committee (দ্য ইন্টারন্যাশনাল   রেসকিউ  কমিটি )শরণার্থী  চিকিৎসক ও শিক্ষকদের  সাহায্যার্থে  কাজ করছে  যাতে তারা  ক্যাম্পে  অন্যান্য  উদ্বাস্তুদের  সাহায্য করতে পারেন ।

এছাড়াও তারা রিফিউজি  লেখক  ও শিল্পীদেরও  সাহায্য  করছে।

Catholic  Relief  Services (CRS) ক্যাথলিক  রিলিফ  সার্ভিস (সি আর  এস) তাদের  অঙ্গসংগঠনের  মাধ্যমে  কাজ করে যাচ্ছে, এবং প্রাপ্তবয়স্ক  এবং শিশুদের  জন্য (৫০০০০০)পাঁচ লক্ষ  মানুষের  উপযোগী  খাদ্য, ঔষধ, শিশুখাদ্য  ও চিকিৎসা  সামগ্রী  (CARE) কেয়ারের  কাছে  দিয়েছে।

Church  World  Service (চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস) মহামারীর  সময়ে  কলেরা ভ্যাকসিন  পানি বিশুদ্ধকরন  ট্যাবলেট   সিরিঞ্জ  এবং আশ্রয়কেন্দ্র  নির্মাণের  জন্য  তারপুলিন  কেনার  টাকা দিয়েছে  এবং রিফিউজিদের  খাবারের  ব্যবস্থা  করতেও Mennonite Central Committee(মেনোনাইট  সেন্ট্রাল  কমিটি)Lutheran World Relief(লুথেরান  ওয়ার্ল্ড রিলিফ) এবং the Christian Agency for Social Action (CASA) দ্য ক্রিশ্চিয়ান এজেন্সি ফর সোস্যাল  একশন (কাসা) র সাথে  একত্রে কাজ করে  যাচ্ছে ।

Lutheran World Relief (লুথেরান  ওয়ার্ল্ড রিলিফ) কাসা (CASA)র  সাথে  একত্রে শরণার্থীদের   খাবার  চিকিৎসা  ও অন্যান্য  সাহায্য  মুলক  কাজ করছে।The  Cooch  Behar  Refugee  Service (দ্য  কোচবিহার  রিফিউজী সার্ভিস) দ্য  লুথেরান  ওয়ার্ল্ড ফাউন্ডেশন (the Lutheran World Federation) এবং অন্যান্য  জাতীয় লুথেরান  সংস্থাসমূহের   সাথে  মিলে  সরাসরি  ভারত সরকারের  সাথে  কাজ করছে ।

The World Vision Relief Organization (দ্য  ওয়ার্ল্ড  ভিশন রিলিফ অর্গানাইজেশন) অনাথদের  পুনর্বাসন , শিশুদের  জন্য দুধ  ও খাবার স্যালাইন  সরবারহ  কলেরা  প্রতিরোধ  এবং আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের  জন্য  তারপুলিন  প্রদান সহ  বিভিন্ন  প্রজেক্ট  শুরু  করেছে  ।

আরও অনেক আমেরিকান প্রতিষ্ঠান এই সতেরোটি প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করছে, তাদের নাম ঠিকানা এবং অনুদানের পরিমান এই রিপোর্টের শেষে লিপিবদ্ধ করা হলো। আমেরিকান সরকার Interagency Committee on Pakistani Refugee Relief (ইন্টার এজেন্সি কমিটি অন পাকিস্তানি রিফিউজি রিলিফ)এর মাধ্যমে এইসকল সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে কাজ করে চলেছে।

এদের ভেতর ছয়টি প্রতিষ্ঠান  American National RedCross(আমেরিকান ন্যাশনাল রেডক্রস) CARE(কেয়ার)Catholic Relief Services(ক্যাথলিক রিলিফ সার্ভিস)Church World Service(চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস)Lutheran World Relief(লুথেরান ওয়ার্ল্ড রিলিফ) Mennonite Central Committee(মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) ১৯৫১ সালের ইন্দো আমেরিকান চুক্তি অনুসারে ভারতে তাদের পন্যসমুহের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, এবং অন্যান্য আমেরিকান সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান সমুহ তাদের পন্যসামগ্রী এই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সুবিধা ব্যাবহার করে ক্যাম্পগুলোতে পাঠাচ্ছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাবলিক ল ৪৮০ টাইটেল ২(Title II of Public Law 480) এর অধীনে বেশীরভাগ খাদ্যসামগ্রী বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিতরন করছে । প্রাথমিক ভাবে শরণার্থীদের খাদ্য সরবরাহের কাজ শুরু হয়েছে বিভিন্ন সংস্থার চালু করা বিভিন্ন প্রোগ্রামের যেমন কাজের বিনিময় খাদ্য (food for work) স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য খাদ্য ( school feeding) জন্য গত বসন্তে ভারতে জমাকৃত তাদের মজুদ খাদ্যসামগ্রী দিয়ে পাবলিক ল ৪৮০ (PL 480) এর মাধ্যমে।

এই মজুদ শরণার্থীদের ব্যাপক হারে আগমনের দ্বারা দ্রুতই শেষ হচ্ছে, কিন্তু মার্কিন সরকার কর্তৃক নতুন চালান দিয়ে ঘাটতি পুনরায় পূরণ করা হবে।

Mr.Frank L.Kellogg(মিস্টার ফ্রাঙ্ক এল কেলোগ)ইন্টার-এজেন্সি কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে, যিনি উদ্বাস্তুদের জন্য মার্কিন সরকার এর ত্রাণ প্রচেষ্টার কোঅরডিনেটর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর ব্যাপারে বলেন ” তাদের অভিজ্ঞতা ব্যাক্তিগত জ্ঞান এবং ত্রান উপকরনসমুহ ভারতীয় পরিবেশে দুর্ভিক্ষ, অপুষ্টি এবং অসুস্থতা বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে শরণার্থীদের জন্য একটি অমুল্য অবদান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে । স্বেচ্ছাসেবীরাও অসুস্থ হয়ে পরছে, সেই অসুস্থতার মাঝেও তারা ত্রানকাজে তাদের মানবিক অবদান টুকু রাখছেন,যেটা ছাড়া মার্কিন সরকারের হাতে আর কোন বিকল্প নেই ”

মিঃ কলোগ বুঝতে পেরেছেন অনেক আমেরিকান উদ্বাস্তদের সাহায্য করতে চান, এবং তাদের কে বলেন এইসব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসমুহ সাহায্য করার জন্য চমৎকার মাধ্যম। যারা ইন্ডিয়ায় অবস্থানরত পূর্ব পাকিস্তানি রিফিউজিদের সাহায্য করতে চান তাদেরকে নগদ অর্থ সাহায্য নিম্ন তালিকাভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সমূহের মাধ্যমে পাঠাতে বলেন। অনুদানসমুহ আয়করমুক্ত।

আমেরিকান ত্রান প্রচেষ্টা অবশ্যই, উদ্বাস্তুদের সাহায্য করার জন্য পৃথিবীব্যাপী প্রচেষ্টার একটি অংশ।

সরকারি এবং বেসরকারী মিলিয়ে এখন পর্যন্ত অনুদানের পরিমান ($151,000,000) প্রায় ১৫১০০০০০০ ডলার । এর মধ্যে ($70.5 million) ৭০.৫ মিলিয়ন মার্কিন সরকারের অনুদান । তথাপি পরিবহন ব্যয় ($350 to $400 million)৩৫০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার যা ছয় মাসের মধ্যে আরও ($200 million) আরও ২০০ মিলিয়ন বেড়ে যাবে বলে বোঝা যাচ্ছে।

যদিও, অর্থ জনবল এবং কায়িক শ্রমের সবচেয়ে বড় বোঝাটা সরকারী এবং বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে ইন্ডিয়াকেই বহন করতে হচ্ছে।

Frank L. Kellogg:

Chairman, Interagency Committee

on Pakistani Refugee Relief.

ফ্রাঙ্ক এল কেলোগ

চেয়ারম্যান,ইন্টারএজেন্সি কমিটি

অন পাকিস্তানি রিফিউজি রিলিফ

এই প্রশ্নগুলো অবশ্যই কেবল মাত্র আমাদের রাষ্ট্রীয় নিরপেক্ষ নীতি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রসূত। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন দ্বন্দ নিয়ে আমাদের কোন মূল্যায়ন নয়।

আপনার উত্তরের প্রত্যাশায়।

আপনার বিশ্বস্ত,

এডওয়ার্ড ডাব্লিউ ব্রুক                       ওয়াল্টার এফ মন্ডেল

মার্ক ও হ্যাটফিল্ড                          এডমুন্ড এস মুসকি

.

62.231-233

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আন্তর্জাতিক উন্নয়ন এজেন্সির রিপোর্ট (অংশ) পররাষ্ট্র দপ্তর ২৩ আগস্ট ১৯৭১

DEPARTMENT OF STATE

AGENCY FOR INTERNATIONAL DEVELOPMENT

Washington D.C. 20523

August 23,1971

Disaster Memo, Number Four

East Pakistan Civil Strife and Cyclone Victims.

SITUATION SUMMARY

জাতিসংঘ ত্রাণ কার্যক্রমের ভূমিকাঃ

পূর্ববর্তী প্রতিবেদন অনুযায়ী ২২ মে ১৯৭১ তারিখে পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে জাতিসংঘকে অনুরোধ করে। জাতিসংঘ এই দায়িত্ব গ্রহণে রাজি হয়, এবং পাকিস্তান সরকারের সাথে সমন্বিত ভাবে একটি ত্রাণকার্য পরিচালনার   রূপরেখা ঠিক করতে বিশেষ দূত হিসেবে জনাব ইসমাত কিট্টানিকে প্রেরণ করা হয়।

জুন মাস জুড়ে জাতিসংঘ এই ত্রাণ কার্য সফল ভাবে পরিচালনার জন্য বেশ কিছু কর্মী নিয়োগ করে। এর মধ্যে ছিলেন ঢাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত জাতিসংঘের ত্রাণ কার্য সমন্বয় বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি জনাব বাহগাত-এল- তাউইল, নিউইয়র্ক ও জেনেভায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সদর দপ্তর প্রতিনিধি ও জনাব কিট্টানির সহযোগী জনাব স্টিফেন আর ট্রিপ, এবং জনাব গ্লেন হেইডন, যার দায়িত্ব ছিল ঢাকায় কয়েক সপ্তাহ অবস্থান করে জনাব এল-তাউইল কে ত্রাণ এর পরিমাণ নির্ধারণ করতে সহায়তা করা। এরমধ্যে আরো অন্তর্গত ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি বিশেষ দল, খাদ্য এবং কৃষি বিষয়ক সংস্থা সমূহ এবং বিশ্ব খাদ্য কার্যক্রম যাঁদের দায়িত্ব ছিল খাদ্য ও স্বাস্থ্য সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা তদারক করা। একই সময়ে ইউনিসেফ পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ, WFP এবং WHO এর সাথে সমন্বিত ভাবে মা ও শিশুদের খাদ্য চাহিদা পূরণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে।

১৫ জুলাই, ১৯৭১ তারিখে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাথমিক ত্রাণ সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার উপরে জাতিসংঘ একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেস রিলিজ প্রেরণ করে। এটি কয়েকটি বিশেষ ভাগে বিভক্ত ছিল। ১১ আগষ্ট জাতিসংঘ প্রতিবেদন দেয় যে তাঁরা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নিয়োগ সম্পন্ন করেছেন এবং তাঁদের কার্যক্রমের প্রথম ধাপ অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে। এই ধাপের অন্তর্গত ছিল ৩৮ জন কর্মীকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রেরণ করা। জাতিসংঘ জানায় যে এই ৩৮ জনের কেউ কেউ ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন, বাকিরা গন্তব্যের কাছাকাছি রয়েছেন। আশা করা হয় যে শূন্য পদ গুলো মাস শেষের আগেই পূর্ণ হয়ে যাবে। এই দলে ছিলেন ঢাকায় অবস্থিত সেক্রেটারি জেনারেলের অফিসের জন্য নিয়োজিত অতিরিক্ত কর্মীবৃন্দ, কৃষি মন্ত্রণা বিষয়ক একটি দল, বন্দর এবং নৌ যোগাযোগ নিয়ন্ত্রক, স্বাস্থ্য এবং সাধারণ ত্রাণ সমস্যা সমাধানের জন্য একটি অপারেশন ইউনিট, যার অন্তর্গত ছিলেন ৪ জন আঞ্চলিক সমন্বয়কারী, এবং একটি প্রশাসনিক ইউনিট যাঁদের মধ্যে ছিলেন আর্থিক সংস্থান, পরিবহন এবং যোগাযোগ বিষয়ে দক্ষ কর্মীবৃন্দ।

পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় জাতিসংঘকে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র।

মূল সমস্যা সমূহ সনাক্তকরণঃ

দুর্গতদের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছে দেবার পথে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল ভেঙ্গে পড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর কারণ হল পর্যাপ্ত পরিমাণ জলযানের অভাব, এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়াও আরো কিছু সমস্যা সমাধানের অপেক্ষায় ছিল। যেমনঃ ১) আমদানিকৃত খাদ্যের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করা, ২) বিভিন্ন সমবায় সমিতি, ঋণ প্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্প পুনরায় চালু করে গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, ৩) সার, বীজ ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ, ৪) সেচের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধি। ধারণা করা হয় যে প্রতি টন সারের স্বল্পতার ফলে পরবর্তীতে ৫ টন খাদ্য শস্য আমদানী করা লাগবে।

পরিবহন এবং বিতরণঃ সাম্প্রতিক সাফল্য সমূহ

২৬ জুলাই তারিখে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তান সরকার উপকূলীয় জলযান সমূহের সদ্ব্যবহার সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা পেশ করেছে। ২৮ জুলাই তারিখে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গভর্নর অভ্যন্তরীন নৌ যোগাযোগের জন্য একটি সমন্বয় কমিটি নিয়োগ দিয়েছেন। এই কমিটির উদ্দেশ্য হল অভ্যন্তরীন নৌ যোগাযোগ যত বেশি সম্ভব বৃদ্ধি করা। সরকার নৌ যোগাযোগের সমন্বয়ের জন্য নারায়ণগঞ্জে একটি সদর দপ্তর ও চট্টগ্রামে একটি আঞ্চলিক দপ্তর স্থাপন করে। আশা করা হয় যে এই কার্যক্রমের ফলে বিদেশ থেকে আগত ত্রাণবাহী জাহাজগুলো সুবিধা পাবে, এজন্য পাকিস্তান সরকারের সাথে ৩টি চুক্তির মাধ্যমে এই প্রজেক্টে ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হয়। এছাড়াও এই চুক্তি অনুযায়ী ২৬ টি কোস্টার লিজ নেওয়া হয় যাদের প্রথম টি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করতে অগাস্টের ১ তারিখ পূর্ব পাকিস্তান পৌছায়। অক্টোবর এর ১ তারিখের আগে আরো ৮টি কোস্টার পৌছানোর চুক্তি হয়। এই ৯টি জাহাজের সম্মিলিত ধারণ ক্ষমতা ছিল ৬,৩০০ টন এবং আশা করা যাচ্ছিলো যে এগুলি মাসে ৩ বার যাতায়াতের মাধ্যমে ত্রাণ কার্য পরিচালনা করতে পারবে।

ইউনিসেফের প্রতিবেদনে জানা যায় যে তাঁদের ২৪টি জলযান জুলাই এর শেষভাগে নিরাপদে ভাল অবস্থায় ফিরে আসে। এই জাহাজ গুলো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আদেশে পরিচালিত হয়েছিল।

শরনার্থীঃ

৬ অগাস্ট পাকিস্তান সরকারের প্রদেয় হিসাব অনুযায়ী ১০৭,০৯৮ জন শরনার্থী ভারত থেকে পাকিস্তানে ফিরে এসেছেন। এরমধ্যে ২৫০০৬ জন ফিরেছে্ন শরনার্থী অভ্যর্থনা কেন্দ্রের মাধ্যমে, এবং ৮২,০৯২ জন ফিরেছেন অচেনা পথ ধরে। এদের মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার জন অমুসলিম বলেও দাবি করা হয়। ১০ জুন তারিখ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ২৯টি শরনার্থী কেন্দ্র স্থাপন করে পাকিস্তান সরকার।

অর্থনীতিঃ

অর্থনীতির অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে, যা কিনা ১১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলন এর ফলে করুণ অবস্থায় পতিত হয়েছিল, এবং এই আন্দোলন জুলাই মাসের দিকে থিতিয়ে এসেছে। বেশিরভাগ শিল্প কারখানা চালু হয়, কিন্তু শ্রমিকদের মাত্র ৫০ ভাগ কাজে যোগদান করে। উৎপাদনের হার ছিল স্বাভাবিক অবস্থার ৪০ শতাংশ। বড় শহরে ব্যবসা বাণিজ্যের এক তৃতীয়াংশ পুনরায় চালু হয়। আশা করা হয় যে কৃষিজ উৎপাদন ১০ থেকে ১৫ ভাগের চেয়ে হ্রাস পাবে না। সম্পূর্ণ অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়া যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এই খাতে উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এই অর্থনীতি এভাবেই স্থবির থাকবে।

কৃষিঃ

হাজার হাজার কৃষক তাঁদের জমি ছেড়ে চলে গেছেন যা পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি খাতকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কৃষকদের এই প্রস্থানের ফলে সীমান্তবর্তী এলাকা ছাড়াও অভ্যন্তরীন কিছু এলাকাও প্রচন্ড ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে খুলনা, দিনাজপুর এবং রাজশাহী জেলা।

জুলাই ১৯৭১ এর ইউ এস এইডের এক জরিপ অনুযায়ী ১৯৭২ অর্থবছরে চাল উৎপাদন হবে ৯.৬৪ মিলিয়ন টন, যা ১৯৭০ অর্থবছরের রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন থেকে ১২ শতাংশ কম। গড় শস্য উৎপাদন বছরে ১১ মিলিয়ন টন। উপরন্তু অতিরিক্ত দেড় থেকে দুই মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য অতিরক্ত আমদানী করতে হয় চাহিদা মেটাতে। অর্থনীতির এই বেহাল দশার ফলে এবার অতিরিক্ত আরো দেড় মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য আমদানী করতে হবে যার অর্থ মোট আমদানীর পরিমাণ দাঁড়াবে ৩ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি। এর আগে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ আমদানি ছিল দেড় মিলিয়ন টন, ১৯৭০ সালে।

১৯৭২ অর্থবছরে এই পরিমাণ খাদ্যশস্য যোগান দিতে ব্যাপক এবং প্রচন্ড প্রচেষ্টার প্রয়োজন, যেখানে পরিবহন ও বিতরণের বহুল সমস্যা রয়েছে, এরপরেও ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতি এড়াতে হলে এই ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান আবশ্যক।

ভোলা দ্বীপের পরিস্থিতির উপর বিশেষ প্রতিবেদনঃ

কৃষি ক্ষেত্রের এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ইউ এস এইডের দুজন প্রতিনিধি জুলাই এর ২৪ তারিখ ভোলা দ্বীপের কৃষিক্ষেত্রের অবস্থা ও বিতরণ ব্যবস্থা পর্যালোচনা করেন। তাঁরা দেখেন, খাদ্য শস্য বিতরণ ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অর্ধেক, তবে অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। তাঁদের প্রতিবেদনে দেখা যায় যে প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় চাল উৎপাদন এর সম্ভাবনা বেশী, কারণ প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার একর জমিতে আউস ধান রোপণ করা হয়েছে ও ফসল সংগ্রহ করা হয়েছে। ইউ এস এইডের দুজন প্রতিনিধি মন্তব্য করেন যে, যদিও নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড় ও মার্চের বিশৃংখল অবস্থার প্রভাব থেকে ভোলার খাদ্য পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি লাভ করছে, তবে অন্যান্য ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার অবস্থা এমন হবার সম্ভাবনা কম। বর্ষাকালে অন্যান্য দ্বীপ অঞ্চল যেমন মনপুরা বা অন্যান্য দ্বীপ এর তুলনায় ভোলা অঞ্চলে যাতায়াত তুলনামূলক সহজ।

Russel S. McClure

Disaster Relief Coordinator.

.

13.63.234

শিরোনাম সূত্র তারিখ
কংগ্রেসের নিকট অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের আবেদনকারী বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রেসিদেন্ট নিক্সন সিনেটের কার্যবিবরণী অক্টোবর ৬, ১৯৭১

অক্টোবর ৬, ১৯৭১ কংগ্রেশনাল রেকর্ড – সিনেট এস ১৬০০৭

রাষ্ট্রপতির বিবৃতি

আমি আজ কংগ্রেসকে অনুরোধ করছি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের চাহিদা পূরণ করার জন্য যথাযথ অতিরিক্ত তহবিলের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ার মানবিক এবং শান্তির পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

সাম্প্রতিককালে পূর্ব পাকিস্তানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে তা মানুষের দুর্ভোগ ব্যাপকভাবে কঠিন করে তুলেছে। বৃহত্তর দুর্যোগ আকারে অবারিত এই পরিস্থিতি দুর্ভিক্ষ বা এমনকি যুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতির প্রতিহত করতে সাহায্য করা এবং কষ্ট উপশম করা প্রশাসনের একটি প্রাথমিক উদ্দেশ্য।

এই অবস্থার ভুক্তভোগী যারা তাদের দুর্দশার উপরে বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিবেক এবং শাসনের বিকল্প হিসেবে জাতিসংঘের মহাসচিবের নেতৃত্বে দৃষ্টি নিবন্ধ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ঢাকা এবং নতুন দিল্লীতে এটি একটি বিশেষ মিশন, এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ মানুষের সরাসরি রিলিফ সরবরাহের জন্য কর্মক্ষম কাঠামো প্রদান করেছে যা ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তান উভয়ের জন্য প্রয়োজন।

অনেক দেশ এবং ব্যক্তিগত দাতারা সাড়া দিচ্ছে এই বৃহৎ চ্যালেঞ্জকে। যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে জাতিসংঘের সাহায্যের সমর্থনে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য এবং বৈদেশিক মুদ্রা প্রদান করেছে ভারতের লক্ষ শরণার্থীর সাহায্যে এবং পূর্ব পাকিস্তানের লাখো মানুষের জন্য যারা অনাহারের সম্মুখীন হতে পারে।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দাতা দ্বারা আরও চাহিদা সম্পন্ন করা হবে। আশা করা যায়, এই সমস্যা মোকাবেলার খরচ এই অর্থবছরের মাধ্যমে পাওয়া যাবে যা শতকোটি মার্কিন ডলারের বেশি হতে পারে, এটি ভারত এবং পাকিস্তানের সাধ্য বহির্ভূত। ৩রা অগাস্ট, ১৯৭১ এ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অস্বাভাবিক মানবিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিধি সভা পূর্বেই অনুধাবন করেছিল। বিদেশী সহায়তা আইনের অধীনে ১০০ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত তহবিল অনুমোদন করেছিল। সে সময় থেকেই আমরা আমাদের সঠিক ভূমিকা পালনে সক্ষম। এছাড়াও, এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে, যদি শীঘ্রই রিলিফ অপারেশন সুযোগ তৈরি হয়, আমরা আমাদের সঠিক ভূমিকা পালনে সক্ষম।
সুতরাং, আমি ইচ্ছা পোষণ করি যে, “হাউজের” উদ্যোগে অতিরিক্ত সমাপ্তির কর্ম হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা আইনের অধীনে কংগ্রেস উপযুক্ত ক্ষমতাপ্রদান করুক ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি অতিরিক্ত পরিমাণ রিলিফ পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ বিতরণের জন্য। এবং সম্মিলিতভাবে খাদ্য সরবরাহ জনআইন ৪৮০ এর অধীনেও। এই তহবিল মানুষের সংকট নিরসনে আমাদের অংশ পূরণ করতে সমর্থ হবে। গভীর দু:খজনক ঘটনা গুলো আমরা খুব সহজেই এড়াতে পারি এগুলো অনুসরন করে।

.

13.64.235-237

     শিরোনাম         সূত্র       তারিখ
পররাষ্ট্র দপ্তর কর্মকর্তা কর্তৃক সিনেটর বার্চ বে’র পত্রের জবাব    সিনেটের কার্যবিবরণী ২৭ অক্টোবর, ১৯৭১

এস ১৬৯২৪ কংগ্রেস-সম্পর্কিত দলিল-সিনেট        ২৭ অক্টোবর,১৯৭১
রাষ্ট্র বিভাগ
ওয়াশিংটন,ডি.সি.,২৬শে অগাস্ট,১৯৭১.
মাননীয় বার্চ বে,
ইউ.এস. সিনেট,
ওয়াশিংটন,ডি.সি.

প্রিয় সিনেটর বেঃ মাননীয় সচিব আমাকে অনুরোধ করেছেন পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিষয়ে আপনার ১২ই অগাস্ট-এর চিঠির উত্তর দিতে।
এই সংকটে আপনার চিঠি অনেক দৃষ্টিভঙ্গির আভাস দেয়।আপনি যে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তা কঠিন যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অতীব জটিল ও গম্ভীর নীতির প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।আমি আশা করছি,আপনি সম্মত হবেন যে এর সমাধান-ও কঠিন,আমাদের সকলের জন্যই,যেহেতু এই সরকার এমন নীতি অনুসরণ করতে ইচ্ছুক যা আমাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে এবং এই সংকট উপশমে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
শুরু থেকেই এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের পথ ছিল মূলত ত্রৈমাত্রিক।প্রথমত,মানবজাতির এই বিশাল দুঃখজনক ঘটনায় লাখো মানুষের দুর্ভোগ উপশম করায় মানবিক ত্রাণ প্রয়াসে আমরা সীমান্তের উভয় পার্শ্বে পুরোভাগে ছিলাম।আমরা এই দায়িত্ব পালনে মনঃস্থ হয়েছি।দ্বিতীয়ত,ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে অবশ্যম্ভাবী দ্বন্দ্বের ঝুঁকি রয়েছে তা এই সংকটকে প্রচণ্ডভাবে খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে,তার কারণে আমরা উভয় দেশকে সংবরণ করতে পরামর্শ দিয়েছি।আমরা সেটাই জারি রেখেছি।তৃতীয়ত,এই সমস্যার গোঁড়ার কেন্দ্রবিন্দু চিহ্নিত করাটা অপরিহার্য,আমরা পাকিস্তান সরকারকে তাড়না দিয়েছি যাতে যত দ্রুত সম্ভব একটি শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে জরুরি আলোচনা শুরুর পদক্ষেপ নেয়।যতক্ষণ পর্যন্ত,আমরা এই প্রক্রিয়ায় কোনো অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারব,আমরা এই চেষ্টা জারি রাখব।
আমরা বিশ্বাস করি যে এই পরিস্থিতিতে এটাই সঠিক পদ্ধতি।এই নীতি তৈরিতে আমরা বিভিন্ন প্রয়াসের উদ্যম নেয়ার মনঃস্থির করেছি,এমন একটি সংকটের মুহূর্তে এটা করতে উভয় সীমাবদ্ধতা ও বাধ্যবাধকতা সম্মন্ধে অবগত আছি যে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রক্রিয়ায় বাইরের কোন শক্তি প্রভাব ফেলতে পারে ও এমন দুঃখজনক ঘটনার সাথে সঙ্গতি রেখে পুরো মানব সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়াশীল হতে হবে।
এখন আমি আপনাকে আমাদের নীতির বিভিন্ন উপাদানের ব্যপারে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছি।
এখানে একটি বহুবিস্তৃত ও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যে,১৯৭১ সালের মার্চ মাসের সংকটপূর্ণ দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল পরিমাণে অস্ত্র যোগান দিয়েছে পাকিস্তান কে।বাস্তবে,আমরা কোনো মারাত্মক সামরিক মারণ-সামগ্রীর

যোগান দেইনি যখন থেকে পাকিস্তানে ১৯৬৫ সালে সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের সামরিক অনুদান কর্মসূচি স্থগিত (পরে বাতিল) হয়।পাকিস্তান সেই সময় হতে চীন, ইউএসএসআর ও ফ্রান্স সহ বিভিন্ন সরবরাহকারী থেকে উপকরণ সংগ্রহ করতে থাকে।আমরা ধারণা করতে পারি যে এই সরঞ্জাম এর কিছু ও যেগুলো আমরা আগে সরবরাহ করেছি তা পূর্ব পাকিস্তানে ব্যবহৃত হয়েছে,কিন্তু আমাদের এই বর্তমান সংকটে তার পরিমাণের অনুপাত জানার কোনো পন্থা নেই।ইউ.এস. এর সরঞ্জাম এর ব্যপক ব্যবহারে আমরা অনুতপ্ত এবং পাকিস্তান সরকারকে তাই পরামর্শ দেয়া হয়েছে,তা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ সুরক্ষায় সামরিক শক্তির ব্যবহারকে সার্বভৌম অধিকার রক্ষার শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে ভাবে।
১৯৬৫ সাল হতে পাকিস্তানের কাছে পূর্বের পাঠানো ইউএস সরঞ্জামে যেসব মারণ সামগ্রী যেমন পরিবহন ও যোগাযোগ সামগ্রী এবং খুচরা যন্ত্রাংশ আমরা বিক্রয় করেছি,তা বিশাল অনুপাতে কমানো হয়েছে।কিছু গোলাবারুদ-ও বিক্রয় হয়েছিলো।এই বছরে মার্চ-এর শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার পর,আমরা ভবিষ্যতে সকল বিক্রয় বাতিলের ব্যবস্থা নিয়েছি-শুধুমাত্র সেইসব সামগ্রী ছাড়া যেখানে বৈধ অনুমতিপত্র বিশেষভাবে লক্ষণীয়।সেই সময় পর্যন্ত বৈধ অনুমতিপত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানে যা হয়েছে,প্রায় পুরোটাই অতিরিক্ত অংশে হয়েছে এবং,যেহেতু অনেক অনুমতিপত্র হয় মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা কাজে লাগানো হয়নি তা ত্রিশ থেকে চল্লিশ লক্ষের বেশি না।কোনো সামরিক গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।সাম্প্রতিক সময়ে যা যাত্রাপথে রয়েছে তার সংখ্যা চল্লিশ লক্ষের নিচে,আর এই সংখ্যাটা কমতে থাকবে যেহেতু বাকি অনুমতিপত্র ব্যবহার করা হয়ে গেছে অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ।
অতঃপর আমরা যে ব্যাপারে আলোচনা করছি তা শুধু একটি ছোট সংখ্যা নয় কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে এর সামরিক প্রভাব সামান্য।আমাদের ধারণা হয়নি যে অবশিষ্ট চালানের উপর আমাদের পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কারণ আমাদের ইচ্ছা পাকিস্তান সরকারের সাথে অবাধ যুদ্ধ এড়ানো যা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমাদের যে ভূমিকা তা পালনে সীমাবদ্ধতা তৈরি করতে পারে।
অর্থনৈতিক সহায়তায় আমরা একভাবে আমাদের পথে চালিত হয়েছি।যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হতে আমরা নতুন কোনো দ্বিপার্শ্বিক সহায়তা প্রদান করি নি(শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা ছাড়া),কিন্তু আমরা ধারণা করছি যে আনুষ্ঠানিকভাবে চলমান কোনো প্রকল্পকে বন্ধ করাটা শুধুমাত্র পাকিস্তানের সাথে সামগ্রিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে যে নমনীয়তা আমরা আশা করি তাতে বিপরীত ফল আনবে তা নয়,চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পাকিস্তানের জনগণের জন্য-ও ক্ষতিকারক হবে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবস্থা এমন,সবক্ষেত্রে না হলেও,পাকিস্তানে অন্যান্য সাহায্যদাতাদের ক্ষেত্রে।যেহেতু ভবিষ্যতের জন্য আমরা বলেছি যে আমরা আমাদের সাহায্য আবার শুরু করার আশা রাখছি যার উন্নয়ন মার্চ এর ঘটনাবলির আগে আশাপ্রদ ছিলো,কিন্তু আমরা তা শুধুমাত্র করতে পারব জাতীয় উন্নতি পরিকল্পনার প্রসঙ্গে উভয়পক্ষ দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পুনরালোচনার মাধ্যমে।পাকিস্তানের দ্বারা এমন পুনরালোচনা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পূর্ণ দায় নিবে।আমরা বিশ্বাস করি না যে অন্যসব দাতা থেকে আদতে এই পরিস্থিতি আলাদা।
আপনি মানবিক সহায়তায় আমাদের ভূমিকা দেখুন।সেখানে আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার এবং,আশা করছি,অক্ষুণ্ণ থাকবে-যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মানুষের ভোগান্তি কমানো ও ভবিষ্যতে দুর্ভিক্ষ আটকাতে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কার্যকর ও দৃঢ়ভাবে সহায়তা করেছি।রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও সচিব উভয়ই এই প্রয়াসে পূর্ণ সহায়তা করার সংকল্প ব্যক্ত করেছেন।পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা করতে গিয়ে নিশ্চিতভাবে অঙ্গীকার করা মুশকিল,যে আমাদের ত্রাণ বিতরণ প্রত্যেকক্ষেত্রে পূর্ণ ও কার্যকরভাবে                                                           কাজে লাগবে,কিন্তু আমরা এইটুকু নিশ্চিত যে আমাদের ও অন্যান্যদের ত্রাণ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।এই বিশ্বাস দৃঢ় হবে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানের মাটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে পূর্ণ ও বাস্তব সাহায্য প্রদানের সক্রিয়তার মাধ্যমে।
এটা আমাদের দৃঢ় আশা ও বিশ্বাস যে যেহেতু পূর্ব পাকিস্তানে ইউএন দ্বারা পরিচালিত হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসন এর প্রয়াস চলছে তা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের বিশ্বাস পুনুরুদ্ধারে সাহায্য করবে,যা পালাক্রমে ভারতে থাকা শরণার্থীদের ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে অবদান রাখবে।আমাদের এই হিসাবে কোনো ভ্রম নেই,যাহোক,যদিও আমরা খুব ভালভাবে জানি যে লাখো শরণার্থীর উল্লেখযোগ্য হারে ফিরে যাওয়া হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি শরণার্থীদের বিশ্বাস কে উদ্বুদ্ধ করে।
এই সকল সমস্যা আপনার চিঠিতে উল্লেখিত মৌলিক দুটি বিষয় কে বর্ণন করে,যা হল,পাকিস্তানের দুই অংশকে পুনর্মিলনে উদ্বুদ্ধ করতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শান্তি বজায় রাখতে অবদান রাখতে পারি।দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের নীতিতে এগুলো মৌলিক উদ্দেশ্য।আমরা বিশ্বাস করি যে এসব কাজ নিষ্পাদনে কোনো উন্নতি চাইলে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের সাথে সক্রিয়ভাবে সহকারী মনোভাব বজায় রাখতে হবে।তারা কিভাবে তাদের সমস্যার সমাধান করবে তাতে যেমন আমরা নির্দেশ দিতে পারি না এবং আমাদের অবশ্যই আমাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত।কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি যে এটা শুধুমাত্র তাদের প্রত্যেকের সাথে সতন্ত্র সম্পর্ক রাখা যাতে আমরা কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রিত উপদেশ দিতে পারি এবং এই বিশাল সমস্যার সমাধানে উদ্বুদ্ধ করতে পারি যার কারণে এই দুই দেশের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে ও উপমহাদেশের শান্তিকে বিঘ্নিত করেছে।
আমি জানি যে এই বিভাগের প্রত্যক্ষ কর্মকর্তারা আপনার বা আপনার কর্মচারীবৃন্দের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দিত হবেন যদি আপনি এই সকল বিষয়ের কোনো বিষয়ে বিবরণাদি চান।দয়া করে যখনই এই বিভাগ কোনো সহায়তা প্রদান করতে পারবে নির্দ্বিধায় তখনি আমাদের আহ্বান করুন।
আপনার একান্ত বাধ্যগত,
হ্যারিসন এম স্যামস,
কংগ্রেসসম্পর্কিত সম্পর্কের জন্য
কার্যনির্বাহক সহকারী সচিব।

.

13.65.238

পাক ভারত সংঘর্ষ থেকে দূরে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু করবে-রজার্স দি স্টেটস ম্যান ১৪ই নভেম্বর, ১৯৭১

“ওয়াশিংটন, নভেম্বর ১৩: গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজারস বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্ট যে কোনো যুদ্ধাবস্থায় “জড়িয়ে পড়া এড়াতে” যুক্তরাষ্ট্র সবকিছু করবে। খবর এপি ও রয়টার।
.
ন্যাশনাল জার্নালিজম সোসাইটির বার্ষিক সভায় বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, “আর কোনো যুদ্ধে জড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী নয়।“
.
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উভয়পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনা সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন,
.
…”সীমান্তে সংগঠিত সংঘর্ষের রেশ ধরে আগামীতে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে।“…
.
রজারস উল্লেখ করেন, ১৯৬৫ সালে এই দুই দেশের যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো পক্ষকেই উল্লেখযোগ্য কোনো সামরিক সহায়তা দেয় নি। বর্তমানেও এই দুই দেশকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে না।
.
দুই দেশের সঙ্গে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
.
পাকিস্তানে সামরিক যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়ে রজারস তাঁর বক্তব্যে জানান, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে পাকিস্তান সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে যে, পাকিস্তানের কাছে এই ধরনের ছোটখাটো সরবরাহের কারনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের গুরুতর ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হচ্ছিলো।“

.

13.66.239-250

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রেসিডেন্ট নিক্সন এর জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরী কিসিঞ্জারের ৭ই ডিসেম্বর’৭১ এর সাংবাদিক সম্মেলন সিনেটর কার্যবিবরণী ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

এস ২১০১২                              কংগ্রেশনাল রেকর্ড সিনেট                       ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১

[ নিচের তথ্যগুলো ৭ ডিসেম্বর প্রেসিডেন্ট নিক্সনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের দেয়া একটি ব্রিফিং থেকে নেয়া হয়েছে। অ্যারিজোনার সিনেটর ব্যারি গোল্ডওয়াটার হোয়াইট হাউস থেকে এই প্রতিলিপিটি পান এবং ৯ ডিসেম্বর এটি কংগ্রেশনাল রেকর্ডের অন্তর্ভুক্ত করেন।]

ভারত-পাকিস্তান

(হেনরি কিসিঞ্জারের সাথে ব্রিফিং)

ড. কিসিঞ্জার, আমি ভেবেছিলাম দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যাগুলো নিয়ে আমরা কতটা চিন্তিত, সে সম্পর্কে আপনার সাথে কথা বলতে হবে। এছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘের আনুষ্ঠানিক মুখপাত্র যেসব ঘোষণাগুলো দিয়েছেন, সেগুলোর কতটুকু আমরা সম্পন্ন করেছি, সেটা নিয়েও আলোচনা করা দরকার।

এই ব্যাপারে যেহেতু আমার কাছে কোনকিছু সাজানো নেই, সুতরাং আমি আপনার সাথে কোন প্রকার পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই কথা বলতে যাচ্ছি এবং আমি আজকের সাক্ষাৎকারটি একটি পত্রিকায় উল্লেখ করতে পারি।

প্রথমত, আমি আপনাকে কিছু ব্যাপার স্পষ্ট বলে দিতে চাচ্ছি। কোন কোন জায়গায় বলা হয়েছে যে, প্রশাসন ভারতবিরোধী। এটি সম্পুর্ন ভুল ধারনা। ভারত একটি বৃহৎ দেশ। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর মধ্যে একটি। এটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি দ্বারা পরিচালিত।

যুদ্ধোত্তর সময়ে আমেরিকানরা অন্যান্য সকল প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে ভারতের অগ্রগতি ও উন্নয়ন করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে এবং আমেরিকান জনগণ ১০ বিলিয়ন পরিমাণ অর্থ সাহায্য দেয়। গত বছর ভারত এই প্রশাসন থেকে সর্বমোট ১.২ বিলিয়ন সাহায্য পায়, যার মধ্যে ৭০০ মিলিয়ন আসে কেবল যুক্তরাষ্ট্র থেকে। অতএব, ভারতের উন্নতি এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে, ভারতের সাফল্য এবং গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি অনুন্নত বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

অতএব, ভারতের সাথে আমাদের যখন মতবিরোধ হয়েছিলো, যেমন সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আছে, আমরা অত্যন্ত দুঃখ এবং হতাশার কারণে এগুলো করেছিলাম।

আমার দেখামতে ২৫ মার্চ কেমন ছিল সেটা নিয়ে আলোচনা করা যাক। ২৫ মার্চ পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব বাংলায় সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং পরিস্থিতি বর্তমানের রূপে নিয়ে এসেছিল।

এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটানোর মত কর্মকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই সমর্থন করেনি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখেছে যে এই ধরনের ঘটনা ভারতের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। আমরা সবসময় দেখে এসেছি যে, ভারতে উদ্বাস্তুদের অনুপ্রবেশের ঘটনা সবসময়ই বিপজ্জনক। এতে করে সাম্প্রদায়িক বিবাদের সম্ভাবনা থেকে যায়। আমরা জানতাম যে এই ঘটনাগুলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়।

অতএব, ভারতে শরণার্থীদের ভোগান্তি প্রশমনে এবং উদ্বাস্তুদের অন্তঃপ্রবাহ রোধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একই সাথে দুইটি কাজ করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রথমত, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে এবং শরণার্থীদের ফেরত আনতে; এবং দ্বিতীয়ত, আমরা একটি রাজনৈতিক সংঘাতের সমাধান করার চেষ্টা করছি, যেখানে শরণার্থীদের প্রথম স্থানে নিয়ে আসার কথা হয়েছিলো।

এটি করার জন্য যেসকল সমস্যা হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম হল রাজনৈতিক বিবর্তন আনার জন্য প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে বেশি সময় লাগা। কিন্তু এই বিবর্তনটি ছিল মানুষের দুঃখকষ্ট কমানোর জন্য সবচেয়ে বেশি দরকারি।

শরণার্থী সমস্যার দুটি দিক ছিল; প্রথমত, ভারতের ভিতর যেসকল শরণার্থী আছে তাদের ঠিকমত দেখাশোনা করা; এবং দ্বিতীয়ত পূর্ব পাকিস্তানের উপর আরোপিত যেসকল শর্তগুলোর জন্য শরণার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেগুলোর পরিবর্তন করা, বিশেষ করে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করারই হল উদ্দেশ্য। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ এড়াতে জন্য ৯০ মিলিয়ন এবং ভারতের শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য ১৫৫ মিলিয়ন সাহায্য দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। আমাদের এই সাহায্যের পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সকল দেশ কর্তৃক যত সাহায্য এসেছে তার সমষ্টির চেয়েও বেশি।

আমি এখানে আরও কিছু যোগ করতে পারি, ভারত সরকারের অনুরোধে পূর্ব পাকিস্তানের দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য যে সাহায্য দেয়া হয়েছিল, তার জন্য ভারতে শরণার্থীদের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে এবং এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছে আরও ২৫০ মিলিয়ন বেশি সাহায্য পাঠানোর জন্য, যাতে করে আমাদের প্রস্তুতকৃত খাবারগুলো শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য পাঠানো যায়। অন্যভাবে বলা যায়, শরণার্থীদের নিয়ে ভারতের সমস্যার সমাধান এবং ভারতে আরও শরণার্থীর অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কতৃক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৫০০ মিলিয়ন।

সমুদ্র বন্দর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে খাবার ও অন্যান্য সাহায্য পরিবহন করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব পাকিস্তানকে ২৬টি জাহাজ দিয়ে সাহায্য করেছিল।

১৯৭১ সালের মার্চে যা ঘটেছিলো সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনো ক্ষমা করেনি। পক্ষান্তরে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে পাকিস্তানের উপর নতুন কোন উন্নয়ন ঋণ দেয়নি।

দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানকে সামরিক সাহায্য দেয়ার জন্য একটি বড় চুক্তি সম্পাদিত হয়। তবে এই বিষয়টি সত্য যে গত বছরের মার্চের শেষের দিকে পূর্ব পাকিস্তানের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের নতুন লাইসেন্সগুলো স্থগিত করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে সকল সামরিক পণ্যের চালান আমেরিকার বাইরে থেকে হয়েছিল বা আমেরিকান সরকারি নিয়ন্ত্রণে হয়েছিলো। পাকিস্তানে পুরাতন লাইসেন্সের উপর ভিত্তি করে বাণিজ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে যেসকল অস্ত্র প্রেরণ করা হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল কেবলমাত্র অস্ত্রগুলোর অতিরিক্ত অংশ। সেখানে মারাত্মক কিংবা প্রাণঘাতী কোন অস্র ছিল না।

পূর্ববাংলায় এই ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালানোর পরপরই মার্চের শেষ কিংবা এপ্রিলের শুরুতে ৩৫ মিলিয়ন মূল্যমানের অস্রের মধ্যে মাত্র ৫ মিলিয়ন সমমূল্যের অস্র চালান দেয় এবং বাকি সব অস্র রেখে দেয়া হয়। অন্যদিকে, আমরা ৪টি সশস্ত্র ডিভিশন তৈরী করেছি। আসল ব্যাপার হল ৩৫ মিলিয়ন মূল্যমানের অস্র রেখে দেয়া হয়েছিল এবং কেবলমাত্র ৫ মিলিয়ন সমমূল্যের অস্র চালান দেয়া হয়েছিল – আমার সঠিক পরিমাণটা জানা নেই। আমার মনে হয় এটি ৪ – ৫ মিলিয়নের মধ্যেই হবে, যেগুলো বাণিজ্যিক চ্যানেলের মাধ্যমে পুরাতন লাইসেন্স ব্যাবহার করেই অস্রের বিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে পাঠানো হয়েছিলো।

সুতরাং, আমি বিশ্বাস করি, এটি সঠিক যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কর্মকান্ডের মাধ্যমে এই বছরের মার্চ মাসে তাদের নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করে। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার কাজকর্মের মাধ্যমে বিশ্বের বাকি দেশগুলোকে সাথে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের দুর্ভোগ এড়ানোর জন্য, বিশেষ করে মার্চের শেষের দিকে পূর্ববাংলার উপর যে দুর্ভোগ নেমে আসে সেটি সমাধানের জন্য অবদান রাখতে চেয়েছিল।

এখন রাজনৈতিক বিবর্তনের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যাক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক বিবর্তনের জন্য কি অবসান রেখেছে?

এটা সত্য যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক বিবর্তনের উপর সরাসরি কোন মতামত ঘোষণা করেনি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিল্লি এবং ইসলামাবাদ উভয়ের সাথে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা চেয়েছিল যাতে করে শরণার্থীরা পুনরায় ফিরে যেতে সক্ষম হয়। রাষ্ট্রপতির অনুরোধে, জুলাই মাসের প্রথম দিকে আমি যখন দিল্লি ছিলাম তখন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিকট এই ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করতে হয়েছিল এবং তারা উভয়েই বলেছেন যে তারা আমাদের পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণরূপে বুঝতে পেরেছেন এবং আমাদের সিদ্ধান্তের কোনরূপ সমালোচনা করেননি।

তারা অস্ত্রের চালানের ব্যাপারটি নিয়ে সমালোচনা করেছিল। দ্বিতীয়ত, আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের প্রভাব ব্যাবহার করেছি যাতে করে পাকিস্তান সরকার একটি রাজনৈতিক বিবর্তনের দিকে ধাবিত হয়। আমরা পাকিস্তান সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই এবং তারা পূর্ব পাকিস্তানে এই ব্যাপারে কোন সমালোচনা না করে, তাদের জন্য প্রেরিত সাহায্যগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা বিতরণ করার সিধান্তে রাজি হয়। পাকিস্তান আরও মনে করে যে এর ফলে পাকিস্তান বেসামরিক শাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন হবে। ডিসেম্বরের শেষের দিকে এটি ঘটার কোথা ছিল।

আমরা সীমান্ত থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ভারত সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে, তখন আমরা পাকিস্তানকে একতরফাভাবে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাই এবং পাকিস্তান আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ভারত এই বিষয়ে কোন সাড়া দেয়নি।

আমরা সকল শরণার্থীদের জন্য একটি সাধারণ ক্ষমার আহ্বান জানাই এবং আমাদের আহ্বানটি গৃহীত হয়েছিল।

প্রশ্নঃ কার দ্বারা?

পাকিস্তানের ড. কিসিঞ্জার। পাকিস্তানে ভারতের কোন শরণার্থী ছিল না।

সকল শরণার্থীদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আমরা পাকিস্তানকে অনুরোধ করি যাতে করে তারা কোনরূপ প্রতিহিংসার শিকার হওয়ার ভয় ছাড়াই ফিরে আসতে পারে।

        আমরা আরও গিয়েছিলাম। আমরা কলকাতায় বাংলাদেশের মানুষদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম এবং এই বছর আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৮ বারেরও বেশিবার যোগাযোগ করেছিলাম।

        বাংলাদেশ মানুষের সাথে সন্ধিস্থাপনের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সাথে আমরা তিনবার সাক্ষাত করেছিলাম। পাকিস্তান সরকার আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। কলকাতায় থাকা আমাদের নিজস্ব সংবাদবাহক আমাদের জানিয়েছিল যে ভারতীয় সরকার এই আলোচনার ব্যাপারে সম্পূর্ণরূপে নিরুৎসাহিত।

.

অন্য কথায়,আমরা একটি রাজনৈতিক মীমাংসার প্রয়াস করেছি,এবং আমি যদি আমাদের ও ভারত সরকারের মধ্যকার যে বিভেদ আছে তার সারমর্ম করি,তাহলে এটা হলঃ

আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে ভারত সরকারকে বলেছি- মাননীয় রাষ্ট্রসচিব ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে ১৮বার সাক্ষাৎ করেছেন;আমি অগাস্ট মাসের শেষ হতে রাষ্ট্রপতির হয়ে সাত বার সাক্ষাৎ করেছি।আমরা সকলে জানিয়েছি যে রাজনৈতিক বিবর্তনে পূর্ব বাংলার জন্য রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন-ই অনিবার্য ফলাফল ছিল,এবং আমরা সকলে তা সমর্থন করেছি।পার্থক্য হয়ত এটাই ছিল যে ভারত সরকার সব এতো দ্রুত চেয়েছিলেন যে এটা আর রাজনৈতিক বিবর্তনের না বরং রাজনৈতিক পতনের আলোচনায় পরিনত হয়েছিলো।

ভারত সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা-কল্পনার চেষ্টা না করে,বিষয়টার প্রকৃত ঘটনা,যেভাবে তারা আমাদের সামনে নিজেদের উপস্থাপন করেছে তাই মেনে নিয়ে,আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যখন এখানে ছিলেন তখন তাঁকে সীমান্ত থেকে তাঁদের সৈন্যদল উঠিয়ে নেয়ার পাকিস্তানের একতরফা প্রস্তাবের ব্যাপারে বলেছিলাম।সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়া ছিলো না।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী যখন এখানে ছিলেন তখন আমরা তাঁকে জানিয়েছিলাম যে আমরা পাকিস্তানী ও আওয়ামী লীগের সদস্যদের মধ্যে একটি আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব,বিশেষত মুজিবুরের সম্মতিতে,যিনি এখন জেইলে।ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভারতে ফিরার পরপর-ই আমরা তাঁকে জানিয়েছিলাম যে আমরা তাঁদের সাথে একটি রাজনৈতিক সময়সূচী নিয়ে আলোচনা করতেও প্রস্তুত ছিলাম,একটি যথাযথ সময়সূচী পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।এই কথোপকথনটি ১৯শে নভেম্বরে হয়েছিলো।২২শে নভেম্বর পূর্ব বাংলায় সামরিক কার্যকলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিলো।

কাম্য ছিলো ১৫ই নভেম্বর,যখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব এখানে ছিলেন আমরা তাঁকে বলেছিলাম যে আমরা ধারণা করছি এবার পাকিস্তানের সময় সর্বাধিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা।তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ২২শে নভেম্বরের সপ্তাহ পর্যন্ত আমাদের কোনো উত্তর দিতে পারবেন না,যখন তিনি তাঁর দেশে ফিরবেন।তিনি আমাদের এ-ও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন হবে,সেই সময়ে মুজিবুরের মুক্তির মত বিষয়গুলো তুলে ধরা সহজ হবে,যার কারাদন্ড সামরিক আইনে হয়েছিলো।

তথ্যটি প্রেরণ করা হয়েছিলো,এবং তাসত্ত্বেও ২২শে নভেম্বরের সপ্তাহে সামরিক শাসন শুরু হয়েছিলো।সুতরাং যখন আমরা বলি যে এখানে সামরিক শাসনের প্রয়োজন ছিলো না,তখন আমরা বলি না ভারতের ভোগান্তি হয়নি,আমরা বলি না ভারতের সমস্যায় আমরা অনুভূতিহীন বা ভারত কে আমরা মুল্যা্যন করি না।

এই দেশের,ভারতের জন্য বিভিন্ন আঙ্গিকে ভালোবাসা রয়েছে,তাই প্রচন্ড দুঃখ নিয়ে এই ঘটনাটি মেনে নিয়েছি যে আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া সামরিক শাসন নেওয়া হয়েছে এবং আমরা যদি এই মতামত যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ করি,যেটা আমরা করবো না কারণ আমরা উপমহাদেশের একটা নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোণ কে সমর্থন করতে চাই বা পৃথিবীর বিশিষ্ট দেশগুলোর মধ্যের একটি দেশের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই,কিন্তু যেহেতু আমরা কিছু উক্তিতে বিশ্বাস করি যে,সামরিক আক্রমণের বৈধতা নির্ধারিত হয় অংকশাস্ত্রের মাধ্যমে,যদি রাজনৈতিক জ্ঞান এটা বলে যে আক্রমণকারীর আছে ৫০ কোটি এবং প্রতিরোধকারীর রয়েছে ১০ কোটি,সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র সবসময় সংখ্যাগত দিক দিয়ে শক্তিশালীর পাশে থাকবে,আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করছি যেখানে সুদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক নৈরাজ্য তৈরি হবে এবং শান্তির সময় প্রতিষ্ঠা,যা রাষ্ট্রপতির সবচেয়ে বড় ইচ্ছা;তা ক্ষুণ্ণ হবে,আবশ্যকভাবে প্রথমেই আমেরিকানদের জন্য না,কিন্তু পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য।

আমি আমাদের দৃষ্টিকোণ স্পষ্ট করতে এখানে আসার সুবিধা গ্রহণ করেছি।আপনি এই নেপথ্য ভিত্তির প্রয়োজনীয়তা দেখতে পারেন,কারণ এখানে আমরা কি করেছি এবং আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে ভুল ধারণা রয়েছে।আমি আপনাকে পুর্বপ্রস্তুতিহীন সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়েছি এবং এখন আমি আপনাকে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে বা আরো বিস্তারে যেতে খুশি হব।

প্রশ্ন। কেনো ভারতের নিন্দায় আমেরিকার অবস্থান নিয়ে প্রথম আংশিক-প্রকাশ্য ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিলো এবং কেনো আপনি এখন এই বিলম্বিত ব্যাখ্যা দিচ্ছেন?বিশ্ববাসীর উপলব্ধি হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে বিবেচনা করেছে,যা ভারত-বিরোধী,এবং আপনি একটি নিরপেক্ষ প্ররোচক অবস্থা এখানে তৈরি করেছেন যা এখানের ঘটনা নয়।তাহলে কেনো এই বিলম্ব?
ডঃ কিসিঞ্জার। এটা এখন পর্যন্ত পিটার লিসাগর হতে পাওয়া আমার সর্বোচ্চ প্রশংসা। (হাসি)
আমরা অনেকটা সময় এটা বিশ্বাস করতে অনিচ্ছুক ছিলাম যে এই বিষয়টি প্রকাশ্য ক্ষমতার আশ্রয়েই এতটা অবতীর্ণ হয়েছিলো এবং সামরিক সক্রিয়তার প্রথম দুই সপ্তাহ আমরা দেখছিলাম রাষ্ট্রবিভাগের কূটনৈতিক পরিচালনায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটা থামাতে কি করা যায়।
আমরা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি আবেদন করেছি।আমরা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিও আবেদন রেখেছি
এখন,তারপর শুক্রবারে পরিস্থিতি পূর্ণ-বিকশিত যুদ্ধে বিস্ফোরিত হয় ও এই ঘটনাটি জনগণের আগে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।এখন এই ঘটনাগুলোকে সামনে রাখতে আপনি যে বৈশিষ্ট্যপ্রদান করেছেন,যা ভারত-বিরোধী হিসেবে সামনে রাখা হয়েছে,অবশ্যই আমি তা মেনে নিতে পারব না।

প্রশ্ন। আমি বলেছিলাম বিশ্ববাসীর ধারণা যে যুক্তরাষ্ট্র ভারত-বিরোধী ছিলো শুক্রবারে রাষ্ট্রবিভাগে দেয়া প্রথম নেপথ্য বিবরণীর বৈশিষ্ট্যের কারনে।
ডঃ কিসিঞ্জার। আমরা এই সংকটে সামরিক শক্তি ব্যবহারে বিরোধিতা করেছি,এবং আমরা বিশ্বাস করি না যে সামরিক যুদ্ধে নিযুক্ত হওয়াটা জরুরি ছিলো।আমরা বিশ্বাস করি যে পূর্ব বাংলায় যে দুঃখজনক ঘটনার সূচনা হয়েছিলো এখন তা একটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভাজনের প্রয়াসে পরিণত হয়েছে।
সুতরাং শনিবারে যে দর্শন ব্যক্ত করা হয়েছিলো তা আজকের দর্শনের সাথে অসঙ্গত নয়।যা আজ করা হয়েছে তা শনিবারে দেয়া বিবৃতির নেপথ্যের ব্যাখ্যা ছিলো,এবং হয়তোবা এটাই ভালো হবে যদি আমরা এই পুরো বিষয়টাকে সামনে রাখি।

প্রশ্ন।যদি আপনি যা বলেছেন তা থেকে আমি ধরে নেই, পুর্বে ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে পূর্ণমাত্রার প্রতিদ্বন্দ্বীতার প্রাদুর্ভাবে আপনি বলেছিলেন পাকিস্তান সরকার যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বাস দিয়েছে যে এতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে যার মধ্যে এই মাসের শেষে বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া,কলকাতায় বাংলাদেশের যে প্রতিনিধি রয়েছে তার সাথে আলোচনায় যাওয়া,একতরফাভাবে সীমান্ত থেকে সৈন্যদল সরিয়ে নেয়া।আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে পাকিস্তান সরকারের করা এই প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে কোনো একটিও এখন বলবৎ কিনা?যদি কোনোভাবে এই যুদ্ধ থামানো যায়,তারা কি সেইসব কাজ করতে এখনো ইচ্ছুক?
ডঃ কিসিঞ্জার। এই বিভিন্ন বিষয়গুলিকে আমায় সততার পরিপ্রেক্ষিতে নিতে দিন।

এই একতরফা প্রত্যাহার,এটার কোনো পরিবর্তন নেই।বাংলাদেশের জনগণের সাথে কথা বলার ইচ্ছায় একদিকে ভারত ও বাংলাদেশ একপক্ষে এবং পাকিস্তান অপরপক্ষে থেকে অসম্মতিতে লিপ্ত হয়েছে।ভারতীয়দের অভিমত যে আলোচনা মুজিবুরকে দিয়ে শুরু হতে হবে,যিনি এখন কারাগারে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম বাংলাদেশের জনগণের সাথে একটি আলোচনা শুরু করতে যারা কারাবাস করছে না এবং যারা কলকাতায় ছিলো।পাকিস্তানীরা জানিয়েছিলো যে তারা শুধুমাত্র সেইসব বাংলাদেশিদের সাথে কথা বলবে যাদের উপর পাকিস্তানে নির্দিষ্টভাবে কোনো অন্যায় করার অভিযোগ নেই এবং আমার ধারণা নেই যে এতে কে বাদ পরছে।
কিন্তু আমি মনে করি সেই অংশটা,ভাঙ্গনের ছিলো না।যা আমাদের মাঝে গুরুতর পার্থক্য সৃষ্টি করেছে-যার এতখানি আমরা না,কারণ আমরা কোনো দল ছিলাম না,আমরা শুধু তথ্য প্রেরণ করছিলাম তাদের মাঝে যারা আলোচনা শুরু করতে চায় এবং ভারতীয় পক্ষের মত ছিলো যে এই আলোচনাটি মুজিবুরের মাধ্যমে শুরু হতে হবে।

এক মিনিটের জন্য আমি এই নথি থেকে সরে আসছি।

আমরা বিবেচনা করেছি যে একবার এই আলোচনা শুরু হলে,মুজিবুরের মুক্তি কিছু সময়ের মধ্যে একটি অনিবার্য ফলে পরিনত হবে আর তাই আমাদের মনে হয়েছে যে এই মুহূর্তে আলোচনা শুরু করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
এই অংশে আমি নথি বিবেচনা বন্ধ করছি।এটা আপনার বোধগম্যতার জন্য সরবরাহ করছি।আমি মনে করি এটা বলা নিরাপদ যে ভারতের দিক থেকে সর্বোচ্চ দ্রুততা আশা করেছিলো এবং সম্ভবত পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া বরদাস্ত করার থেকেও দ্রুত গতিতে।আমরা অনুভব করেছি যে এটা সমাধানের একটা উপায় হতে পারে ভারতীয়রা যদি তাঁদের হিসাবে কোনো যৌক্তিক একটা সময়সূচী আমাদের দেয়,এবং এটা হতাশার জন্ম দিয়েছিলো যখন আমি গ্রীষ্মকালে সেখানে ছিলাম,ও কোনো সদুত্তর পাইনি।এটা ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিদায়ের আগেই আবার উত্থাপন করা হয়েছিলো,ও এটার উত্তর দেওয়া হয়নি।
সুতরাং আমরা কোনো বাস্তব অভিব্যক্তি পাইনি যে সময়ের কি পার্থক্য ছিলো।তাঁরা জানতেন যে আমরা বিশ্বাস করতাম আলোচনার যৌক্তিক পরিনতি রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন ছিলো।এই প্রস্তাব এখনো আছে কিনা?আমি জানি না। (নথি সমাপ্ত)
যদি এই যুদ্ধ থামে ও সৈন্যবাহিনী প্রত্যাহার করা হয় ,আমি যেই দিকে ইঙ্গিত করেছি সেদিকে বিষয়টিকে নেয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে যেকোনো কিছুর মাধ্যমে দ্বিগুণ করতে নিশ্চয় আমরা আমাদের তরফ থেকে প্রস্তুত হবো।

প্রশ্ন।এটা সত্য যে আপনার উদ্বোধনী মন্তব্যে আপনি আরো দুটি বিষয় নিয়ে এখানে বলেননি যা মূখ্য কারন ছিলো আপনার এবং মাননীয় রাষ্ট্রপতির ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে ধরে নেয়ার-তা হল,ভারতকে আগ্রাসক হিসেবে দায়ি করা-প্রকৃত ঘটনা (১)অন্যভাবে মাননীয় রাষ্ট্রপতির চীন সফর অকৃতকার্য হতে পারে এবং প্রায়-ই জেনারেল খানের হয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি ও আপনার ব্যক্তিগত পক্ষপাতে বিবৃতি ছাপা হত যা কিনা নয়াদিল্লিতে অবাস্তব নেতাদের উপর বিবেচনা করা হত?
ডঃ কিসিঞ্জার। প্রথম প্রশ্নের প্রতি সম্মান রেখে বলছি,গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সমস্যায় আমাদের সাথে চুক্তিকে সফল অভ্যাগমনের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করবে আমাদের সেই প্রভাব নেই,অতএব,গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের জনগণের আমাদের নীতির উপর নিষেধাজ্ঞা আছে বলে আমরা বিবেচনা করি না।

.

সংক্ষেপে, আমাদের নীতি হল সামঞ্জস্যপূর্ণ। সমগ্র গ্রীষ্মকাল ধরে আমরা ভারতীয় সরকারকে বলেছি যে আমরা এমন রাজনৈতিক বিবর্তন চাই বা সমর্থন করি যা স্বায়ত্তশাসনের পথে পরিচালিত হয়; এবং দ্বিতীয়ত,  আমরা সামরিক শক্তি ব্যবহারের বিরোধী ছিলাম, এবং আমরা এটি করেছিলাম চাইনিজদের মতামত কি হতে পারে তা থেকে স্বতন্ত্র থেকে, চাইনিজগণ জাতিসংঘে কি অবস্থান গ্রহণ করবে সে সম্পর্কে আমাদের কাছে কোনো আগাম তথ্য ছিল না, এবং আমরা অনেক স্বাধীনভাবে কাজ করেছি।

দ্বিতীয়ত,  আমার সম্পর্কে প্রথমে বলতে গেলে, আমি যখন প্রথমবার ভারতীয় উপমহাদেশ সফর করি যখন আমি ছিলাম আলোচনার বিষয়বস্তু, ১৯৬২ সালে, পত্রিকার নথিগুলোতে যা খুব ভালোভাবেই খুঁজে দেখা যাবে, পাকিস্তানের পত্রিকায় অত্যন্ত উগ্রভাবে আমার সমালোচনা করা হয়েছিল, ভারতীয়দের প্রতি আমার হার্ভাড কর্তৃক তৈরীকৃত পক্ষপাতিত্বের কারণে,  এবং এটি এত বেশি মাত্রায় ছিল যে আমাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে আমি যেন আমার পাকিস্তান সফর বাতিল করি।

পাকিস্তানের প্রতি আমার কোনো ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব নেই, এবং সেই মতামতগুলো যেগুলো আমি শুরুতে প্রকাশ করেছি,  আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে,- অর্থাৎ,  বিশ্বের একটি দেশ হিসেবে এবং এই উপমহাদেশে ভারতের চরম গুরুত্ব সম্পর্কে – যেগুলো আমি সবসময়ই অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছি, এবং সেজন্য, আমি অনুরাগ সহকারে সেগুলো সমর্থন করি যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার দ্বিদলীয় নীতির একটি অভিব্যক্তি হিসেবে।

প্রেসিডেন্টের কথা বলতে গেলে, ভারতীয় নেতাদের তুলনায় পাকিস্তানি নেতাদের প্রতি তাঁর অধিক অনুরক্তি রয়েছে  এ ব্যাপারে আমি জ্ঞাত ছিলাম না, এবং সেজন্য আমি আজ সকালে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছি যে এটি কিসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠতে পারে। তিনি ব্যাখ্যা করেন- যেমনটা আপনি জানেন, তাঁর বর্তমান পদের পূর্বে রাষ্ট্রপতির সাথে আমি পরিচিত ছিলাম না- কিন্তু তিনি আমার কাছে ব্যাখ্যা করেন যে ১৯৬৭ সালে তাঁর সফরে,  তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অত্যন্ত উষ্ণভাবে অভ্যর্থনাপ্রাপ্ত হয়েছিলেন, এবং তিনি কোনোক্ষেত্রে উপেক্ষিত হয়েছিলেন এমন প্রতিবেদনগুলোর কোনো ভিত্তি নেই, এবং যে কোনো ক্ষেত্রে, পাকিস্তানে হামলা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা যে উষ্ণ অভ্যর্থনা প্রসারিত করেছি,  তা যেকোনো ক্ষেত্রে এই বিষয়টিকে পরিষ্কার করে যে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের  প্রতি আমরা কি ব্যাপক মূল্য জ্ঞাপন করি।

যদিও আমি বুঝতে পারছি যে কোন বিজ্ঞ কার্যধারা গ্রহণ করা হবে সে ব্যাপারে মতামতের আন্তরিক পার্থক্য থাকতে পারে, আমি মনে করি না আমরা আমাদের প্রতি ন্যায়বিচার করব যদি আমরা ব্যক্তিসাধারণের ব্যক্তিগত মতামতের বিরুদ্ধে তাদের উপর নীতিগুলো চাপিয়ে দেই। পাশাপাশি,  আগ্রাসনের অভিযোগ এই অঞ্চলে প্রথম করা হয়নি।

প্র: প্রধানমন্ত্রী যখন গতমাসে এখানে ছিলেন তখন কি রাষ্ট্রপতির সাথে তাঁর বোঝাপড়ায় কোনো ব্যর্থতা ছিল,  এই দেশ কি চায় এবং তিনি কি করার পরিকল্পনা করছিলেন সেক্ষেত্রে বোঝাপড়ার কোনো ব্যর্থতা?

ড.কিসিঞ্জার.  আমাদের প্রকৃত অবস্থান কি তা আমরা ভারতীয় নেতাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছিলাম,  রাষ্ট্রপতিও করেছিলেন এবং সেই সাথে করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীও। যে প্রস্তাবগুলো তৈরি করা হয়েছে আমরা সেগুলো উল্লেখ করেছিলাম – এই প্রস্তাবগুলোর কোনো উত্তর আমরা পাইনি, এবং এমন একটি সামরিক অপারেশন যে ঘটতে পারে তার বিন্দুমাত্র আভাসও আমাদের দেওয়া হয়নি; বস্তুত, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রস্থান এবং সামরিক অপারেশনগুলোর সূচনার মধ্যবর্তী সময়ে আমরা তিনটি কাজ করেছিলাম:

প্রথমত, আমরা ইসলামাবাদ সরকার এবং মুজিবুর কর্তৃক অনুমোদিত বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা অগ্রসর করতে চেয়েছিলাম,  আমরা ইসলামাবাদ সরকারের সম্মতি পাইনি।

আমি শুধু বলছি আমরা কি করার চেষ্টা করছিলাম।

দ্বিতীয়ত, যখন তিনি এখানে ছিলেন তখন আমরা অত্যন্ত অক্লান্তভাবে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম যে সর্বোচ্চ যতটা ত্যাগ করা সম্ভব তা অত্যন্ত জরুরিভিত্তিতে করা প্রয়োজন, এবং আমাদের একটি উত্তর দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, এবং তারপর দেখা গেল,  সেই সপ্তাহে সামরিক আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে।

তৃতীয়ত,  আমি এর আগে এটা উল্লেখ করিনি, মুজিবুরের পক্ষসমর্থন আইনজীবীর মাধ্যমে তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের ব্যাপারে আমরা পাকিস্তান সরকারের অনুমোদন পেয়েছিলাম, এসকল বিষয়ই ভারতীয় সরকারকে জানানো হয়েছিল, এবং তা সত্ত্বেও সামরিক আক্রমণ সংঘটিত হয়।

প্র.ড.কিসিঞ্জার,  আপনি এক মুহূর্ত আগে যে কথাগুলো বললেন আমি সে বিষয়টির ব্যাখ্যা পাওয়ার নিমিত্তে একটি প্রশ্ন করতে চাই।

আপনি বললেন যে আগ্রাসনের অভিযোগ এই বিল্ডিং এ করা হয়নি। এ ব্যাপারে দুইটি প্রশ্ন আছে, প্রথম,

ড.কিসিঞ্জার.  আমরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করিনা, কিন্তু এই বিষয়টি বলা হয়েছিল এই প্রসঙ্গে যে আমার এবং রাষ্ট্রপতির একটি ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে।

প্র.এটি কি এই তাৎপর্য বহন করে যে আপনি সেই প্রকৃত আগ্রাসনের অভিযোগ পররাষ্ট্র বিভাগের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন? এটি আমার প্রথম প্রশ্ন।

ড.কিসিঞ্জার. না। এ ব্যাপারে সরকারের একটি অভিন্ন অভিমত রয়েছে।

প্র.দ্বিতীয়ত,  আমি এখনো মি.লিসাগো এবং অন্যদের মনে যে  প্রশ্নটি রয়েছে তা ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি, মি.জিয়েগলার শনিবারে ফ্লোরিডাতে বলেছেন যে ভারত একটি বৃহদায়তন সামরিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত হয়েছিল, এবং তিনি ‘বৃহদায়তন’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন যা আমাদের কাছে এই বিল্ডিংটির মত শোনায়।

ড.কিসিঞ্জার: কিসের মত শোনায়?

প্র: এই বিল্ডিং থেকে আগ্রাসনের অভিযোগের মত, অন্তত,  আমার কাছে।

ড.কিসিঞ্জার : আমরা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করিনা। আমি এটি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছিলাম যে এটি কোনো ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র চিন্তাধারা নয়। ‘বৃহদায়তন সামরিক কর্মকান্ড’ -এই বাক্যটি যা রন জিয়েগলার ব্যবহার করেছিলেন সেটি হল একটি আনুষ্ঠানিক ভারতীয় বিবৃতি হতে উদ্ধৃতি যা বলছে, যে পূর্ব পাকিস্তানে বৃহদায়তন সামরিক অপারেশন শুরু হয়েছে এবং রন কেবলমাত্র ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হতে এই উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করেছিলেন।

প্র:ড.কিসিঞ্জার,  আপনি কি ইসলামাবাদ সরকার এবং বাংলাদেশের মধ্যে আলাপ-আলোচনার অবস্থার বিষয়টি ব্যাখ্যা করবেন?  আলাপ-আলোচনা করতে তারা কতটা সম্মত?  আপনি যা বলেছেন আমি সে ব্যাপারে পুরোপুরি বিভ্রান্ত।  সরকার কি মুজিবুর কর্তৃক অনুমোদিত প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ-আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে?

ড. কিসিঞ্জার : না। এটি হল এমন এটি হল এমন একটি বিষয় যা আমরা এখনো নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করছি, তাঁরা বলেছিলেন তাঁরা বিষয়টি বিবেচনা করবে। তাঁরা বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলতে সম্মত হয়েছে।

প্র: তাহলে, কেন আপনি এতটা নিশ্চিত ছিলেন যে এই আলাপ-আলোচনার ফলাফল হবে স্বায়ত্তশাসন,  যে আলোচনার ব্যাপারে আপনার কাছে কোনো সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা নেই?

ড.কিসিঞ্জার : এক মিনিট। বাংলাদেশের প্রতিনিধি এবং ইসলামাবাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ব্যাপারে আমাদের কাছে নিশ্চয়তা ছিল। তবে তখনো আমাদের কাছে এই নিশ্চয়তা ছিলনা যে এই আলোচনাকারীদের নির্বাচন করবেন মুজিবুর।

প্র: তাহলে, এই আলোচনার ফলাফল যে হবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন আপনার এই বিশ্বাসের ভিত্তি কি ছিল?

ড. কিসিঞ্জার : আমি বলিনি যে এটিই ঘটবে। আমি এটা বলেছি যে আমরা বলেছিলাম আমরা এটি সমর্থন করব, এবং এটি যাতে ঘটে সেজন্য পাকিস্তানের উপর আমাদের যে প্রভাব আছে আমরা তা ব্যাবহার করব, এবং আমরা একটি নির্দিষ্ট সময়-পর্যায় অনুসরণ  করতে আগ্রহী।

প্র: আমি ভেবেছি যে আপনি এটা বলেছিলেন যে-

ড. কিসিঞ্জার : আমি বলেছিলাম যে এটি হল আমাদের ব্যক্তিগত অভিমত এবং এটা প্রমাণ করা সম্ভব ছিল না;

এবং এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি ছিল না যে, যদি একবার আলাপ-আলোচনা শুরু হয় এবং কিছু উন্নতি প্রদর্শন করা শুরু করে, তবে তা মুজিবুরের মুক্তির পথে পরিচালিত করবে -এমন সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে জোর দেইনি।

প্র: আমি ভেবেছিলাম আপনি বলেছেন এটা হল অনিবার্য।

ড.কিসিঞ্জার : আমি বলেছি এটা কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না, যে আমাদের অভিমত হল এই যে আলোচনার অনিবার্য ফলাফল হবে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন এবং আমরা এই ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের সাথে কথা বলেছি এবং তাঁরা ঘোষণা করেছিলেন যে পররাষ্ট্রনীতি,  প্রতিরক্ষা এবং মুদ্রা এই বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য সকল ব্যাপারে তাঁরা পূর্ব-পাকিস্তানকে রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন প্রদান করতে প্রস্তুত।

প্র: আপনি যা বলছেন তা থেকে বলা যায় এই আলাপ-আলোচনার ব্যাপারটায় আমরা খুব বেশি জড়িয়ে পড়ছি।

ড.কিসিঞ্জার : বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে না।

প্র: বিষয়বস্তুর ব্যাপারে না?

পূর্ব-পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন,  ইত্যাদি।

ড.কিসিঞ্জার : বস্তুত,  এই ধরণের আলাপ-আলোচনা কখনো শুরুই হয়নি।

প্র: ঠিক আছে, সবকিছু ঠিকভাবে সাজালে যে প্রশ্নটা আমি প্রকৃতপক্ষে করতে চাই তা হল: আজকে একটি প্রতিবেদন রয়েছে যে ইয়াহিয়া খান একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করার জন্য পূর্ব-পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছেন। এটি কি যে পথ আমরা অনুসরণ করছি এবং যা আমাদের লক্ষ্য তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ?  আমরা কি

 এটি অনুমোদন করছি এবং এটি কি কোনোভাবে উৎসাহব্যঞ্জক?

ড.কিসিঞ্জার : আমরা এই অবস্থানটা গ্রহণ করতে পারি না যে আলাপ-আলোচনার প্রতিটা খুঁটিনাটির জন্য আমরা দায়ী। আমরা বেসামরিক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টিকে উৎসাহিত করেছি।  যে সকল রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে আমি সে ব্যাপারে কোনো বিস্তারিত আলোচনায় যেতে চাই না। একটি দেশ হিসেবে আলাপ-আলোচনার প্রতিটি পদক্ষেপের দায়িত্ব নেওয়ার মত অবস্থানে আমরা ছিলাম না। আমি শুধুমাত্র এটি ব্যাখ্যা করতে চাচ্ছিলাম যে, প্রথমত আমরা মানবিক উদ্বেগ প্রদর্শন করেছি, দ্বিতীয়ত মার্চের শেষে আমরা পূর্ব -পাকিস্তানের অবস্থার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম।  তৃতীয়ত,  আমরা পূর্ব পাকিস্তানে সেই ড়াজনৈতিক অবস্থাগুলো তৈরি করতে চাচ্ছিলাম যা শরণার্থীদের ফিরে আসাটা সম্ভব করবে।

আলোচনার খুঁটিনাটি বিষয়গুলো আলোচিত হতে হবে ইসলামাবাদ এবং ভারতের মধ্যে এবং কোনো একটি নির্দিষ্ট সরকার যথাযথ নাকি অন্য কোনো সরকার যথাযথ সেটি হল এমন একটি বিস্তারিত বিষয় যে বিষয়ে আমরা আলোচনা করতে পারিনা। বিশেষত যখন আমি এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেইনি।

প্র: আমরা কি এই বিষয়ে আরো আলোচনা করতে পারি?  তাহলে কি আমরা প্রকৃতপক্ষে দক্ষিণ এশিয়াতে সেই একই ভূমিকাটি পালন করছি যা আমরা মধ্যপ্রাচ্যে পালন করেছিলাম।

একজন সৎ দালালের ভূমিকা?  আপনি কি আমাদের এটাই বলতে চাচ্ছেন?

.

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

আমরা একটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের চেষ্টা করছি যা যুদ্ধের পথকে অপ্রয়োজনীয় করবে। আমরা ভারতের একটি প্রধান সমস্যা ছিলো বলে সনাক্ত করেছি। আমরা শনাক্ত যে পূর্ব বাংলার অবস্থা উদ্বাস্তুদের ফিরে যাওয়াতে কঠিন করেছে এবং একটি মানবিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্পর্কে আনার জন্য আমরা মানবিক এবং অন্যান্য কারণে শৃঙ্খলা শান্তি বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করেছি।

        আমরা এখন যা বলেছি এবং শনিবারে যা বলেছিলাম, শান্তিপুর্ন সমাধানের আশা এখনো শেষ হয়নি, ২২ থেকে ২৯ তারিখের পরিস্থিতিতে সামরিক শক্তির ব্যবহার সমর্থন যোগ্য নয়। এটা আমদের অবস্থান এবং এর সাথে কোন দেশের পক্ষপাতের কোন সম্পর্ক নেই। এটা বিশ্বশান্তির উপর কেমন প্রভাব সৃষ্টি করে তার সাথে সম্পর্কিত।

প্রঃ      এটি ভারতীয়রা বাংলাদেশের জন্য কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বায়ত্তশাসন আগ্রহী ছিল না, কিন্তু এটা (সামরিক হস্তঃক্ষেপ) চেয়েছিলেন এ ব্যাপারে আপনার রায় কি?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

        আমি এ বিষয়ে কোন অনুমান করতে পারবে না। আমরা অবশ্যই শুরু থেকে তাদের বলেছি যে আমরা কি ইচ্ছুক এবং আমি অনুমান করতে চাই না।

প্রঃ      শান্তি আলোচনার অচলাবস্থার জন্য যেই দায়ি হোক না কেন আপনি বা রাষ্ট্রপতি কী একান্তভাবে মনে করেন যে বর্তমান যুদ্ধবিগ্রহের জন্যে ভারতই একমাত্র আগ্রাসক?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

আমি এটা পুনরায় বলতে চাই- আমি আবেগের বশে বলতে চাই না যে সামরিক হস্তঃক্ষেপ সমর্থন যোগ্য। আমরা বলতে চাই একটি যুদ্ধবিরতি এবং সেনা প্রত্যাহার আবশ্যক এর পর আমার পূর্বে বর্নিত রাজনৈতিক পরিবর্তন আরোও বলিষ্ঠতার সাথে পরচালনা করা উচিত।

প্রঃ      হেনরি , যদি থাকে, যুক্তরাষ্ট্র কী ভারত থেকে সামরিক পথ অবলম্বন করার কোন ব্যক্ষা পেয়েছ?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

আমরা কোন ব্যক্ষা পাই নি।

প্রঃ      হেনরি শুরুতে আপনি পাকিস্তানিদের সাথে প্রকাশ্যে কিছু না করে গোপনে আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করার কথা বলেছেন। আপনি কি আমাদের একটি দৃঢ় উদাহরন দেখাতে পারবেন যেখানে, প্রতিশ্রুতি যেগুলি রাখা হয়নি বা পরবর্তি সমস্যার কারনে রাখা সম্ভব নয়, গোপন রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার সফল হয়েছে?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

এখন, দারাও, আমারা এখানে ঐ প্রতিশ্রুতির আলাপ করতেছি না যেগুলা আমরা…… রেখেছি। আমাকে মে মাস থেকে যেগুলো সম্পন্ন হয়েছে তার মাঝে থেকে কতগুলো বলি। পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সামগ্রী আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করার ব্যাপার টা, বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তনের জন্য একটি সময়সূচি ঘোষণা; পূর্বপাকিস্তান আর্মির সামরিক গভর্নরকে মার্চের শেষে প্রতিস্থাপন, পুর্ব পাকিস্তানের সামরিক গভর্নর প্রতিস্থাপন এবং বেসামরিক গভর্নর স্থাপন, ক্ষমার ঘোষনা, বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করার ঘোষণা, যদিও তাদের সম্পর্কে কিছু বিতর্ক ছিলো, এটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছায় নি কারন এটি বাংলাদেশের প্রার্থী উপস্থাপনের আগেই বাতিল হয়ে গিয়ছিলো, অথবা পাকিস্তানিরা বাতিল করে দিয়েছে। তারা কখনো কাউকে প্রত্যাখ্যান করে নি, আমাদেরকে মুজিবুরের সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার ডিফেন্স এটোর্নির সাথে কথা বলায় সম্মতি, পূর্ব পাকিস্থানে রাজনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের ইঙ্গিত ইত্যাদি। আমি এটা বলছিনা যে এটা আমাদের আহ্বানে তারা এটা করেছে, কিন্তু এটা সত্যি যে তারা আমাদের আহ্বান জানানোর পরে এগুলো হয়েছে।

কিন্তু আমি পাকিস্তান সরকারের হয়ে কথা বলতে চাই না এবং এটাও দাবি করতে চাই না যে তারা আমাদের আহ্বানএর পরিপ্রেক্ষিতে এ কাজ করেছ, কিন্তু এইকাজ গূলো আমদের সুপারিশ করার পর হয়েছে।

প্রঃ আপনার কী মনে হয় গান্ধী সাহেবা আমাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

আমি এমন শব্দ ব্যবহার করতে চাই না।

প্রঃ তিনি কী শান্তিপুর্ন সমাধান ব্যাতিত অন্য কোন পথ ক খোজা্র ইঙ্গিত দিয়েছেন?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

        আমি এতটুকু বলতে পারি যে আমাদের সামরিক পন্থাই একমাত্র উপায় হিসাবে বিশ্বাস করার কোন কারন নেই এবং শান্তি পূর্ন সমাধানের জন্য কাজ শুরু করারজন্য আমদের কাছে কোন সময় ছিল না।

আমি পরিষ্কার করে বলি যে আমরা বিশ্বাস করি আমাদের অফুরন্ত সময় ছিল না, কিন্তু তারা আমাদেরকে একটি সময়সুচি দিতে পারতেন অথবা বেসামরিক শাসনের প্রত্যাবর্তন বর্তমান সমস্যার জন্য দায়ী ব্যাক্তিদেরকে সামনের সারির ব্যাক্তিদের সরিয়ে কি পরিবর্তন নিয়ে আসতো তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে পারতো যা মাত্র তিন সপ্তাহ দূরে ছিল।

প্রঃ আপনি আগে বলেন যে আমরা সেখানের সমস্যা প্রসঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা কি আমাদার কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মার্চের শুক্রবারের গোলাগুলি শুরু হবার আগপর্যন্ত আশাবাদি ছিলো?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

        আমি মনে করি তারা অবহিত ছিলো।

প্রঃ      তাদের কি অবহিত করা হয়েছিল?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

        আচ্ছা, হয়তো আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত ছিলো না কিন্ত আমাদের সাধারন পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত ছিলো।

প্রঃ      আপনি কি আমাদের বলতে পারেন যতটুকু আমাদের জানানো হয়েছিলো এ সম্পর্কে তাদের মনোভাব কী ছিল?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

তারা একটি আনুষ্ঠানিক দায়সারা মনোভাব রেখেছে যা অন্তত যা ঘটেছে তাকে নিরুৎসাহিত না করার হয়তো  ব্যবহারিক ফলাফল।

প্র:      এই সঙ্কট সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে কী প্রভাব ফেলবে বলে আপনি মনে করেন?

ডঃ কিসিঞ্জারঃ

আমরা বিশ্বাস করি সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি এই যে দুটি দেশ বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার সঙ্কটে স্বল্পমেয়াদি এবং দীরঘমেয়াদী শান্তির স্বার্থে সংযম প্রদর্শন।

আমরা অবশ্যই অনেক চেষ্টা করছি। আমরা সবসময় সফল না হতে পারি কিন্তু আমরা দক্ষিন এশিয়া সহ সর্বত্র সমস্যার সমাধানের জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। আমি বিভিন্ন বক্তৃতায় অনেক বার তুলে ধরেছি একতরফা সুবিধা অর্জনের চেষ্টা নিকট ভবিষ্যতে সমষ্যা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা আশা করি সোভিয়েত ইউনিয়ন একই চেতনায় তার অবিতর্কিত প্রভাবের ব্যবহার করবে উপমহাদেশের সমস্যার সমাধান করার জন্য। এবং এই স্বল্পমেয়াদী প্রচেষ্টাকে বিপন্ন করবে না। কিন্তু আমরা এখনো অপেক্ষা করছি। আমাদের এখনো কনো মন্তব্য নেই।

প্রঃ      প্রায় ২৫ বছর ধরে দক্ষিন এশিয়াতে নিরোপেক্ষতা বজায় রাখা এই মহান জাতির জন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে একটি পক্ষ সমর্থন করাটা কি সঠিক ভুমিকা হবে?

ডঃ কিসিঞ্জার

আচ্ছা, আমারা যন্ত্রনা কমানোর চেষ্টা করেছি এবং আমাদের মানুষ্কে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নির্ধারন আদর্শের প্রতি সত্য থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমারা এটি প্রভাবখাটিয়ে করার চেষ্টা করি নি। আমরা উভয় পক্ষের সমর্থন সাপেক্ষে শান্তি বজায় রাখার জন্য করেছি। শান্তি রক্ষার স্বার্থে জাতিসংঘের সামনে উপস্থিত এই আশু সমস্যার জন্য আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই জাতিসংঘের সদস্য হিসাবে সামরিক শক্তির ব্যবহার কে সমর্থন করি না।

        তাই পিটার তোমাকে এই আশু সমস্যার সাথে সামগ্রিক সমস্যার প্রতি আমাদের আচরন কে আলাদা করতে হবে। আশু সমস্যা এই যে নিরাপত্তা পরিষদের ভোটে ১১-২ এ আমাদের অবস্থান ভেটো পেয়েছে। সোভিয়েত অউনিয়ন এবং পোল্যান্ড আমদের বিরোধিতা করেছে।  এটা আমাদের অবস্থান নয় এটা আমাদের এবং ভারতের মাঝের দ্বন্দ্ব নয়। এটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে নিজেদের কে বিতর্কের শান্তি পুর্ন সমাধানে আমাদের অবস্থা প্রকাশ করতে। এবং এটা বলা ভুল হবে যে একপক্ষ ৬ কোটি সাধারন মানুষ কে আঘাত করে এবং যারই এই সমস্যা সমাধান করার শক্তি আছে তাদের করা উচিত। এটা আন্তর্জাতিক অরাজকতার দিকে নিয়ে যাবে।

তাই শনিবারে যা বলা হয়ছিলো তা সামরিক হস্তঃক্ষেপ এর সম্পর্কে বলা হয়েছিল, এবং আজকে যা বলা হয়েছে তা আমাদের সামগ্রিক দৃষ্ট্ভঙ্গিকে সঠিক দিকে পরিচালনা করার জন্য।

প্রেসঃ আপনাকে ধন্যবাদ।

.

13.67.251-263

শিরোনাম সূত্র তারিখ
ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের ৩,৪ ও ৬ ডিসেম্বর ’৭১-এ অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যবিবরণী নিউইয়র্ক টাইমস্‌ ৫-৬ জানুয়ারি, ১৯৭২

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ ১৯৭১ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের গোপন দলীলপত্রের লেখা

নিউ ইয়র্ক টাইমস বিশেষ প্রতিবেদন।

ওয়াশিংটন, জানুয়ারি। কলাম লেখক জ্যাক এ্যান্ডার্সন কর্তৃক প্রকাশিত ভারত পাকিস্তান সংকটের উপর জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের ওয়াশিংটন স্পেশাল এ্যাকশন গ্রুপের কার্যবিবরণীর তিনটি গোপন দলিল নিচে দেওয়া হলঃ

ডিসেম্বর ৩, মিটিঙয়ের মেমো

গোপন স্পর্শকাতর।

প্রতিরক্ষা সহকারী সচিব।

        ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়।

        নির্দেশ করেঃ ১-২৯৬৪৩/৭১ নথির জন্য স্বারকলিপি।

        বিষয়

ডবিউএসএজি ভারত/পাকিস্তান নিয়ে মিটিং।

        অংশগ্রহনকারীরা

প্রেসিডেন্টের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়সমূহের সহকারী- হেনরি এ. কিসিঞ্জার।            পররাষ্ট্র দপ্তরের অধীনে- জন এন. আরউইন                                             প্রতিরক্ষা দপ্তরের সহকারী- ড্যাভিড প্যাকার্ড।                                              গোয়েন্দা সংস্থার মহাপরিচালক মহাপরিচালক- রিচার্ড এম. হেম্‌স।                                সহকারী প্রশাসক (এআইডি)- মরিস যে. উইলিয়ামস।

চেয়ারম্যান, জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফ- এডমিরাল থমাস এইচ. মুরার।                               এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ স্টেট (এনইইএআর)- জোসেফ যে. সিসকো।                এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স (আইএসএ)- জি. ওয়ারেন নাটার।                          প্রিন্সিপাল ডেপুটি এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স (আইএসএ)- আর্মইস্টিড আই, শেলডন জুনিয়র                                                                                               এসিস্ট্যান্ট এডমিনিস্ট্রেটর (এআইডি/এনএওএসএ)- ডোনাল্ড জি। ম্যাকডোনাল্ড।

সময় ও অনুস্থান

৩ ডিসেম্বর ১৯৭১, ১১০০ ঘন্টা। সিচুয়েশন রুম, হোয়াইট হাউজ।

252

সারাংশ

পশ্চিম অংশের প্রধান ঘটনা সম্পর্কে সাংঘর্ষিক প্রতিবেদন হাতে এসেছে। সিআইএ আমরা ভারতে উপর যথেষ্ট কঠোর নই। সে মাত্রই আমাকে আবার কল দিয়েছে। সে, ৯৯ মিলিয়ন ডলার সংক্রান্ত সংযোজিত চিঠি ইস্যুকরণে প্রেসিডেন্টের আদেশ বজায় রাখে, এবং ৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার পিএল ৪৮০ ক্রেডিট প্রয়োগে পরবর্তী কার্যক্রম বজায় রাখে। নিরাপত্তা পরিষদের ডাকা মিটিং এই বিকালে পাক রাষ্ট্রদূতের সাথে শর্তসাপেক্ষ আলোচনার পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানের প্রকৃত অবস্থা পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছে। কিসিঞ্জার মার্চ ১৯৫৯, ইউএস-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় চুক্তির গোপন বিশেষ প্রতিবেদনের ব্যাখ্যা চেয়েছে।

কিসিঞ্জারঃ প্রতি আধাঘন্টা পরপর আমি প্রেসিডেন্টের নিকট থেকে ধমক খাচ্ছি যে আমরা ভারতের উপর যথেষ্ট কঠোর নই। তিনি মাত্রই আমাকে আবার ফোন দিয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করেন না যে আমরা তার ইচ্ছা পূরন করছি। তিনি পাকিস্তানের পক্ষে কাত হতে চান। তিনি অনুভব করেন আমরা যা কর তার ফল অন্যরকম হয়।

হেম্‌সঃ পশ্চিম অংশের প্রতিবেদিত কার্য বিবেচনায়, সেখানে উভয় পক্ষ থেকেই সাংঘর্ষিক রিপোর্ট আছে এবং একমাত্র সাধারণ ভিত্তি হল পাকিস্তান অমৃতসর, পাঠানকোট ও শ্রীনগর এয়ারপোর্টে আক্রমণ করে। পাক বলে ভারত পুরো সীমান্ত জুড়ে আক্রমণ করে; কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন এটি মিথ্যা। পূর্ব অংশে এই কার্য বড় হচ্ছে এবং পাক দাবি করে সেখানে এখন সাতটি আলাদা ফ্রন্ট রয়েছে।

কিসিঞ্জারঃ ভারতীয়রা কি ভূমি দখল করছে?

হেম্‌সঃ হ্যাঁ, ভূমির সামান্য অংশ, অবশ্যই।

সিসকোঃ এটা সহায়ক হবে যদি আপনি ভারত কর্তৃক দখলকৃত অংশ মানচিত্রে চিহ্নিত করে দেখান। পশ্চিমে কী হচ্ছে। পূর্ণমাত্রার আক্রমণের মত কিছু?

মুরারঃ বর্তমান ধরণ বিভ্রান্তিকর যে পাকরা মাত্র তিনটি এয়ারফিল্ডে আটকে আছে যাতে তাৎপর্যমূলক ভারতীয় যুদ্ধবিমান নাই।

হেম্‌সঃ ১.৩০ এ বেগম গান্ধীর বক্তব্য বাংলাদেশের ভাল স্বীকৃতি হতে পারে।

মুরারঃ পাকদের আক্রমণ বিশ্বাসযোগ্য নয়। এটা পড়ন্ত বিকেলে করা হয়েছে, যা অর্থ তৈরি করে না। মনে হয় আমাদের নিকট এখনও এটা নিয়ে যথার্থ তথ্য নাই।

কিসিঞ্জারঃ এটা কি সম্ভব যে ভারতীয়রা প্রথমে আক্রমণ করেছে এবং পাকিস্তান তার প্রতিউত্তর দিয়েছে যা তারা পূর্বেই অন্ধকারে করতে পারত?

মুরারঃ এটি নিশ্চিতভাবেই সম্ভব।

কিসিঞ্জারঃ ৯৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার ধারের অধীনে ইস্যুকৃত আর কোন অরপত্যাহারযোগ্য ধারের চিঠি প্রেসিডেন্ট চান না। তিনি চান যে ৭২ মিলিয়ন ইউএস ডলার পিএল-৪৮০ ধারও গৃহিত হোক।

উইলিয়ামসঃ পৃথিবী একসাথে হবে যখন আমরা এটি করি। প্রেসিডেন্ট কি এটি বুঝেন?

কিসিঞ্জারঃ  এটি তার আদেশ, কিন্তু আমি প্রেসিডেন্টকে আবার জিজ্ঞেস করব। যদি জিজ্ঞেস করে, আমরা বলতে পারি যে আমরা আমাদের পুরো অর্থনৈতিক কার্যক্রম পূণর্বিবেচনা করছি এবং যে উপমহাদেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন সাহায্য অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তী ইস্যু হল জাতিসংঘ।

২৫৩

আরউইনঃ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতকে আজ বিকালে ডাকছেন, এবং তিনি জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেওয়ার দিকে ঝুঁকছেন।

কিসিঞ্জারঃ এই বড় মাত্রার নতুন কার্যের ব্যাপারে আমরা কিছু সমর্থন পাওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট এর পক্ষে আছেন। যদি এই ধরণের পরিস্থিতিতে জাতিসংঘ ফলপ্রসূভাবে কার্যক্রম চালাতে না পারে, তবে তার উপযোগ সমাপ্তিতে আসতে হবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের নিশ্চয়তা নিয়ে ভাবার কোন অর্থ নাই।

সিসকোঃ আজ বিকালে আপনার জন্য আমরা একটি সুপারিশ পাব, রাষ্ট্রদূতের সাথে আলোচনার পর। দেশে তারবার্তা প্রেরণের সময় দিয়ে আমরা পরীক্ষাচ্ছলে আগামীকাল নিরাপত্তা পরিষদের সভা ডাকার প্লান করতে পারি।

কিসিঞ্জারঃ আমাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রেসিডেন্ট আমাদেরকে দোষারুপ করছেন, কিন্তু আপনারা নিরাপদ আছেন।

সিসকোঃ এটাই আদর্শ!

কিসিঞ্জারঃ বুশের জন্য তৈরি পূর্ব খসড়াটিও জমা দেওয়া হয়েছে।

সিসকোঃ আলোচনা করতে, পাক রাষ্ট্রদূত দেখার পর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনার কাছে রিপোর্ট করবে। আমরা বুশের জন্য খসড়া বক্তব্য হালনাগাদ করব।

কিসিঞ্জারঃ আমরা বলতে পারি আমরা রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের আসল কাজ হল সামরিক পদক্ষেপ প্রতিরোধ করা।

সিসকোঃ আমরা কসিজিন অথবা বেগম গান্ধী থেকে কখনও কোন প্রতিউত্তর পাইনি।

উইলিয়ামসঃ আমরা কি পাকিস্তানের সাথে অর্থনৈতিক পদক্ষেপও নেব?

কিসিঞ্জারঃ প্রেসিডেন্টের সাথে আমার কথা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তিনি পাকিস্তানের সাথে এই সমস্যার সংযুক্তি নিয়ে এখনও পাকিস্তানের সাথে আলোচনা শুরু করেননি।

সিসকোঃ যদি আমরা ভারতীয় পক্ষের উপর কাজ করি, আমরা বলতে পারি আমরা পাকিস্তানের পরিস্থিতি বিবেচনায় রাখছি।

কিসিঞ্জারঃ যদি আমরা ভারতের প্রতি পদক্ষেপের সাথে পাকিস্তানের প্রতি পদক্ষেপ মিলাতে চাই তবে পাকিস্তানের দিকে ঝোঁকা কঠিন। যদি আপনি সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করেন তবে আমি প্রেসিডেন্টের একটি সিদ্ধান্ত পেতে পারি।

প্যাকার্ডঃ স্থগিত কার্যের সাথে জড়িত থাকা ব্যাংককে জানানো আমাদের জন্য সহজ হওয়া উচিত যেহেতু আমরা সপ্তাহান্তিক ছুটির খুব কাছে আছি।

কিসিঞ্জারঃ সকালে আমাদের ডব্লিউএসএজি দরকার। চুক্তি নীতিমালাসমূহ আমাদের চিন্তা করা দরকার। বিশেষ ভারতীয় অবস্থা নিয়ে বজায় থাকা একটি চুক্তির ব্যাখ্যার চিঠি বা মেমো আমি মনে করতে পারি যখন আমি জানুয়ারি ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সফর করি, একটি গোপন দলিল অথবা সিয়াটো প্রসঙ্গে উঠা ঘটনা নিয়ে মৌখিক বোঝাপড়ার কথা আমাকে জানানো হয়। সম্ভবত এটি ছিল প্রেসিডেনশিয়াল চিঠি। এটি ছিল মার্চ ১৯৫৯ দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিশেষ ব্যাখ্যা।

২৫৪

তৈরি করেছেনঃ

(স্বাক্ষর দিয়েছেন).                                                                 জেমস এম. ময়েস                                                            নিকটবর্তী পূর্ব, আফ্রিকা দক্ষিণ ও এশিয়ার অনুমোদনকৃত বিষয়ের ডেপুটি  এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিঃ                                                      (অস্পষ্ট স্বাক্ষর)।

জি. ওয়ারেন নাটার, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ফর ইন্টারন্যাশনাল সিকিরিউটি এফ্যায়ার্‌স এর পক্ষে।

পরিবেশনঃ Secdef, Depsecdef, CIJS, ASD (ISA), PDAASD (ISA), DASD: NEASA & PPNSCA, Dep Dir: NSCC & PPNSCA, CSD files, R & C files, NESA.

৪ ডিসেম্বর মিটিঙয়ের হিসাব

        স্বরণীকা পরিচ্ছদ.

স্টাফ ওয়াশিংটন ডিসি ২০৩০১

                        এর যৌথ প্রধান।

গোপন স্পর্শকাতর।

নিম্নোক্তদের জন্য স্বারকলিপিঃ

                চিফ অফ স্টাফ, ইউএস আর্মি.

                চিফ অফ স্টাফ, ইউএস এয়ার ফোর্স.

                চিফ অফ স্টাফ, ইউএস নাভাল অপারেশন.

কমানড্যান্ট অফ দ্যা মেরিন কর্প্‌স।

বিষয়

        ইন্দো-পাকিস্তান দ্বন্দ নিয়ে ওয়াশিংটন স্পেশাল একশন গ্রুপ মিটিং;

        ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১.

১. আপনাকে জানিয়ে দিতে বিষয় বৈঠক নথিভুক্ত করার জন্য এই স্বরণিকা সংযুক্ত করা হয়েছে।

২. এনএসসি ব্যবস্থায় তথ্যের স্পর্শকাতরতাএবং  স্বারকলিপির বিশদ বর্ণনার বৈশিষ্টের ভিত্তিতে, কঠোর প্রয়োজনের ভিত্তিতে জানার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রবেশাধিকার সীমাবদ্ধ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।

জেসিএস এর চেয়ারম্যানের জন্যঃ

এ. কে. নইহেন

ক্যাপ্টেন, ইউএস ন্যাভি।

জয়েন্ট চিফ অফ স্টাফের চেয়ারম্যানের নির্বাহী সহকারী.

        সভার প্রতিবেদন

গোপন স্পর্শকাতর।

.

যুগ্ম প্রধান কর্মকর্তা

ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১

৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

বিষয়ঃ ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের উপর ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা

৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

১। এনএসসি ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপ ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি বিবেচনা করারর জন্য, শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ১১০০ এর হোয়াইট হাউসের সভাকক্ষে মিলিত হয়েছিল। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ কিসিঞ্জার

২। অংশগ্রহণকারীঃ

ক। মুখ্য বক্তা

ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার

ডঃ জন হান্নাহ, এআইডি

জনাব রিচার্ড হেল্মস, সিআইএ

ডঃ জি ওয়ারেন্ট নাটার, প্রতিরক্ষা নৌপ্রধান এলমো জুমওয়েল্ট, জেসিএস

জনাব ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন, রাষ্ট্রবিভাগ

খ। অন্যান্য বক্তা

জনাব জেমস নয়েস, প্রতিরক্ষা বিভাগ

জনাব আরমিস্টেড সেল্ডেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ

প্রধান সেনাধ্যক্ষ রবার্ট ওয়ালেন্ডার, ওজেসিএস

ক্যাপ্টেন হওয়ার্ড কে, ওজেসিএস

জনাব হ্যারল্ড সন্ডার্স, এনএসসি

কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এনএসসি

জনাব স্যামুয়েল হসকানসন, এনএসসি

জনাব সনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড, এআইডি

জনাব জন ওয়ালের, সিআইএ

জনাব স্যামুয়েল ডি পামা, রাষ্ট্র বিভাগ

জনাব ডেভিড স্নেইডার, রাষ্ট্র বিভাগ

৩। সারাংশ। এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে ইউএস নিরাপত্তা পরিষদে একটি জরুরি সভা আহবান করবে। ইউএস এর প্রস্তাবনাসমুহ যথাসম্ভব শীঘ্রই রাষ্ট্রদূত বুশ কর্তৃক তার বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে।পাকিস্তানের প্রতি ইউএসজি-জাতিসংঘের অভিগমন সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া হবে, পাকিস্তানে সাম্প্রতিক কার্যকর অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করা হবে না। জেএসসি এর উপর কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি।

৪। জনাব হেল্মস সভার উদ্বোধন করেন এই ইঙ্গিত দ্বারা যে ভারত বর্তমানে পুর্ব পাকিস্তানের সাথে কোনরূপ বাধা ছাড়াই আক্রমণে যুক্ত হয়েছে এবং তারা আজ সকালে সকল দিক থেকে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। যখন ভারতীয়রা আটটি পাক বিমানঘাটিতে অতিক্রম করেছে পশ্চিমে এখনও পর্যন্ত কোন স্থল হামলার আভাস পাওয়া যায়নি, যদিও যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা জারি করা ছাড়াই রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া ব্যক্ত করেছেন যে, “ভারতের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধ আমাদের উপর ঘনিয়ে আসছে যার জবাবে মিসেস গান্ধী বলেছেন যে পাকিস্তানের যুদ্ধের এই ঘোষণা চূড়ান্ত বোকামির পরিচয় দেয়। ভারতীয়রা যুদ্ধ ঘোষণা না করার একটি দফা তৈরি করেছে। ভারতীয় হামলা করাচিতে একটি গুরুত্ত্বপুর্ণ রাজনৈতিক এলাকায় আঘাত হেনেছে যা একটি ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে রুপ নিয়েছে যেটি একটি উল্লেখযোগ্য সময় ধরে জ্বলছে এবং এভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি উত্তম লক্ষ্যবস্তু প্রদান করার মাধ্যমে। জনাব হেল্মস আভাস দিয়েছেন যে সোভিয়েত অনুমান এটি যে বর্তমান সংকটময় অবস্থায় বৃহৎ ক্ষমতা প্রদর্শনের খুব বেশী সুযোগ নেই।

৫। ডঃ কিসিঞ্জারের মন্তব্য যে যদি ভারতীয়রা পুর্ন মাত্রায় আক্রমনের ঘোষণা দেয় এই তথ্য অবশ্যই জাতিসংঘের বক্তব্যে প্রতিফলিত হতে হবে।

৬। জনাব হেল্মস ইঙ্গিত করেছিলেন যে আমরা জানিনা কারা বর্তমান পরিস্থিতির সুচনা করেছিল অথবা আমরা এটিও জানিনা যে গতকাল পাকিস্তানিরা চারটি ছোট বিমানঘাঁটিতে আঘাত হেনেছিল।

৭। ডঃ কিসিঞ্জার অনুরোধ করেছিলেন যে সোমবার নাগাদ সিআইএ প্রতিবেদন তৈরি করবে কে কাদের প্রতি কি করেছিল এবং কখন।

৮। জবা দ্য পামা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে যদি আমরা জাতিসংঘে আমাদের আলোচনায় ভারতের যুদ্ধ ঘোষণাকে উল্লেখ করি তাহলে আমাদের ইয়াহিয়ার বিবৃতিকেও অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।

৯। ডঃ কিসিঞ্জার প্রত্যুত্তরে বলেছিলেন যে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বিশেষ নির্দেশনা পেয়েছেন এবং আমলাদের মধ্য থেকে কাউকে এইভাবে বক্তব্য তৈরি করতে হবে যেটি নির্দেশ করবে যে এটি হোয়াইট হাউসে করা হবে।

১০।  জনাব হেল্মস ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে “নো হোল্ডস বার্ড” মন্তব্য এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দেয়া মন্তব্যেও অনুরুপ মন্তব্যের উল্লেখ করেন।

১১। ডঃ কিসিঞ্জার জানতে চেয়েছিলেন ভারতীয়রা এই প্রসঙ্গে কিছু ব্যক্ত করেছে কিনা যে তারা পুরোমাত্রায় যুদ্ধে যুক্ত আছে কি নেই।

১২। জনাব হেল্মস বলেছিলেন যে উল্লেখ্য পরিভাষা ছিল “নো হোল্ডস বার্ড”

১৩।ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করেছিলেন পাকিস্তানিরা কি বলেছে। অনাব হেল্মস জবাব দিয়েছিলেন যে তাদের পরিভাষা ছিল “ভারতের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধ” ।ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এটি কোন আপত্তিকর উক্তি ছিল না। এটি মনে করা অসংযত হবে না যে তারা (পাকিস্তানীরা) নিজেদের সমর্থনের চেষ্টা করছিল।

১৪। ডঃ কিসিঞ্জার তখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে জাতিসংঘে কি হচ্ছে যার জবাবে দ্য পামা বলেছিলেন যে ইউকে, বেলজিয়াম, জাপান এবং সম্ভবত ফ্রান্স নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহবান করার জন্য মিলিত হচ্ছে। জাপানিরা অধিকতর মৃদু প্রস্তুতিকে প্রাধান্য দিয়েছিল। যাইহোক আমরা এখনও জাপানিদের প্রতি কোন প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করিনি।

১৫। ডঃ কিসিঞ্জার চিঠিটি দেখার জন্য অনুরোধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি জাতিসংঘে আমাদের পদক্ষেপ বর্ননা করে প্রস্তুত করতে হবে যারজবাবে দ্য পামা ইতিবাচক জবাব দিয়েছিলেন।

১৬। ডঃ কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে যেহেতু চিঠির উপর তার কোন দৃঢ় মতামত নেই আমাদের অবস্থান বক্তব্যে পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরতে হবে

১৭। ডঃ কিসিঞ্জার বলেছিলেন যে তৃতীয় পক্ষ কিভাবে প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করতে পারে সে বিষয়ে তিনি পরোয়া করেননা যতক্ষন রাষ্ট্রদূত বুশ বুঝতে পারেন তার কি বলা উচিত।

১৮। ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে, যারা বর্তমান পরিস্থিতির সাথে সম্পর্কযুক্ত নেপথ্যের তথ্য প্রচার করছে তারা রাষ্ট্রীয় ক্রোধকে প্ররোচনা দিচ্ছে। রাষ্ট্রপতি এই বিভ্রান্তিতে আছেন যে তিনি নির্দেশনা দিচ্ছেন; এটি নয় যে বিষয়গুলোর অগ্রগতির সাথে তাকে শুধুমাত্র অবগত করা হচ্ছে। ডঃ কিসিঞ্জার এই বিষয়টি মাথায় রাখতে বললেন।

১৯। জনাব দ্য পামা ইঙ্গিত দিলেন যে তিনি এখনও পর্যন্ত জানেন না যে (এই দিনে) নিরাপত্তা পরিষদ দুপুরে অথবা সন্ধ্যায় আহবান করা হবে কি না। যাইহোক সভায় প্রথম বক্তব্য ভারতীয় এবং পাকিস্তানীদের দ্বারা হতে পারে। তার ধারণামতে, রাষ্ট্রদূত বুশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের বক্তব্যের পর প্রথম বক্তা হওয়া উচিত। তার মতে আমাদের বক্তব্যের প্রভাব আরও পরিষ্কার হবে যদি এটি শুরুর দিকে করা হয়। ডঃ কিসিঞ্জার এতে কোন আপত্তি করলেন না।

২০। জনাব দ্য পামা জানতে চাইলেন আমরা আমাদের প্রস্তাবনা উপস্থাপনের পুর্বে অন্যদের আমাদের সাথে একত্রিত করতে চাই কিনা। যাইহোক, এটি সময়বহুল বিষয়। ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিলেন এই কার্যপদ্ধতি অনুসরণ করতে, আমাদের প্রস্তাবনা যতদ্রুত সম্ভব দাখিল করা উচিত, যদি দরকার হয় তবে এককভাবে। ডঃ কিসিঞ্জারের মতে, বর্তমানে আমাদের জন্য একটি উপায় আছে সেটি হল আমাদের বৃহৎ কৌশলের সাথে মিল রেখে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করা। সবাই জানে কিভাবে এসকল কিছু কিভাবে ঘটবে এবং সবাই জানে যে ভারতীয়রা অবশেষে পুর্ব পাকিস্তান দখল করবে। সে কারণে, আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে, আমাদের প্রস্তাবনাকে উত্থাপন করতে হবে। আমরা একটি প্রস্তাবনা চাই যেটি রাষ্ট্রদূত বুশের একটি ভাষণের সাথে উত্থাপিত হবে। যদি কেউ আমাদের সাথে থাকতে চায়, উত্তম; কিন্তু যেভাবেই হোক আমরা এই প্রস্তাবনা রাষ্ট্রদূত বুশের ভাষণ দ্বারা উত্থাপন করব।

২১। ডঃ কিসিঞ্জার এই বলে তার বক্তব্য জারি রাখলেন যে এটি গুরুত্বপুর্ন যে আমরা আমাদের অবস্থানকে তুলে ধরি। জাতিসংঘে এই চর্চা সম্ভবত ব্যর্থ একটি চর্চা হতে পারে যেহেতু সোভিয়েতদের পক্ষ থেকে ভেটোর আশা করা যায়। জাতিসংঘ, সকল সম্ভাব্যতায়, নিজে থেকে এই যুদ্ধ বন্ধের জন্য খুব কম কিছু করবে। তিনি অগ্রবর্তী ভাষণকে সারসংক্ষেপে বললেন যে তিনি ধারণা করছেন যে জাতিসংঘে আমাদের প্রস্তাবনা একটি ভাষণ দ্বরা উত্থাপিত হবে এবং কোন বিলম্ব হবে না। আমরা পুর্ব পাকিস্তানের প্রতি রাজনৈতিক সুপারিশের সাথে সম্পর্ক রেখে সাধারণ ভাষায় অগ্রসর হব কিন্তু আমরা অবশ্যই কোন বিশেষ বিষয়ে যেমন মুজিবের মুক্তি,পরামর্শ দেব না বা আভাস দেব না।

২২। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন যে ভারতীয়রা পরিষদে তাদের কার্যক্রমে কতক্ষন বিলম্ব করতে পারে? জনাব দ্য পামা বললেন তারা আমাদের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লম্বা ভাষণ দিতে পারে। জনাব ভ্যান হলেন বললেন তারা যতক্ষন সম্ভব তাদের বক্তব্যকে দীর্ঘায়িত করবে যেটি তাদের পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির উপর আলোকপাতে সহায়তা করবে। জনাব দ্য পামা বললেন যে তারা তিন অথবা চার দিন পর্যন্ত এটিকে দীর্ঘায়িত করবে, যেটি। জনাব হেল্মসের মতে,যথেষ্ট হবে তাদের জন্য পুর্ব পাকিস্তান দখল করার। জনাব দ্য পামা বললেন যে আমরা সবসময়ই একটি ভোতের জন চাপ প্রয়োগ করতে পাড়ি। ডঃ কিসিঞ্জার পুনরাবৃত্তি করলেন যে জাতিসংঘে কার্যকর কিছু পাওয়ার কোন সুযোগ নেই।

২৩। জনাব দ্য পামা পরামর্শ দিলেন যে, সকল ক্ষেত্রে কোন না কোন ভাবে ভোট হবে।

২৪। অর্থনৈতিক সহায়তার ব্যাপারে, ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে রাষ্ট্রপতি নির্দেশ দিয়েছেন যে এই বিচ্ছিন্নতা শুধু ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তিনি আভাস দিলেন যে, যাইহোক, তিনিএই ঘোষণা রাষ্ট্রপতিকে পড়ে শোনাতে চেয়েছিলেন, যাতে পরবর্তীতে বোঝা যায় তিনি আসলে কি বলতে চেয়েছিলেন। এই মুহুর্তে  জনাব উইলিয়ামস জিজ্ঞাসা করলেন  পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা বিচ্ছিন্ন না করার ব্যাখা করে বক্তব্যে কিছু উল্লেখ থাকবে কিনা। ডঃ কিসিঞ্জার বললেন যে, এই তথ্য শুধুমাত্র নেপথ্যের ঘটনার জন্য রাখা হবে।

২৫। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে, কৃষি বিভাগ ইঙ্গিত দিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্রে ভোজ্যতেলের দাম কমে যাচ্ছে। এটি ভারতে পিআই-৪৮০ সামগ্রীকে বিচ্ছিন্ন করছে যার ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, সেকারণে, গমের পরিবর্তে তেলের চালান হতে পারে কিনা। ডঃ কিসিঞ্জার জবাব দিলেন যে এর উত্তর সোমবার নাগাদ অফিস শুরুর আগে থাকবে।

২৬। এরপর ডঃ কিসিঞ্জার সামরিক পরিস্থিতির উপর সংক্ষিপ্ত বিবরণ জানতে চাইলেন। সেনাপ্রধান জুমওয়াল্ট জবাব দিলেন যে  তিনি ভেবেছিলেন পাকিস্তানীরা রসদ সমস্যা প্রকট হওয়ার পুর্বে এক অথবা দুই সপ্তাহের কাছাকাছি পুর্ব পাকিস্তানে তাদের নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে পারবে। তিনি আশা করেছিলেন যে সোভিয়েতরা ভারতের প্রতি তাদের দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখবে এবং ভাইজাগে নৌঘাঁটির চিরস্থায়ী ব্যবহারের জন্য চাপ প্রয়োগ করবে। তিনি অনুমান করেছিলেন যে সোভিয়েতদের আশু স্বল্প স্থায়ী উদ্দেশ্য হবে ভারতের সাথে তাদের বর্তমান সম্পর্কের মাধ্যমে  সামরিক সুবিধা অর্জন করা।

২৭। ডঃ কিসিঞ্জার আভাস দিলেন যে পরবর্তী সভা সোমবার সকালে আহবান করা হবে (ডিসেম্বর ৬)

(স্বাক্ষর) এইচ এন কে

ক্যাপ্টেন, ইউএসএন

দক্ষিণ এশিয়া/এমএপি শাখা, জে৫ এক্সটেনশন ৭২৪০০

ডিসেম্বর ৬ সভার প্রতিলিপি

যুগ্ম প্রধান কর্মকর্তা

ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৩০১

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

নথিভুক্ত করার জন্য স্মারকলিপি

বিষয়ঃ ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের উপর ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১

১। এনএসসি ওয়াশিংটন স্পেশাল গ্রুপ ইন্দো-পাকিস্তান পরিস্থিতি বিবেচনা করারর জন্য, শনিবার, ৬ ডিসেম্বর, ১১০০ এর হোয়াইট হাউসের সভাকক্ষে মিলিত হয়েছিল। এই সভায় সভাপতিত্ব করেন ডঃ কিসিঞ্জার

২। অংশগ্রহণকারীঃ

ক। মুখ্য বক্তা

ডঃ হেনরি কিসিঞ্জার

জনাব ডেভিড প্যাকার্ড, প্রতিরক্ষা

রাষ্ট্রদূত ইউ অ্যালেক্সিস জনসন, রাষ্ট্র বিভাগ

জেনারেল উইলিয়াম ওয়েস্টমোরল্যান্ড, জেএসসি

জনাব রিচার্ড হেল্মস, সিআইএ

জনাব ডোনাল্ড ম্যাকডোনাল্ড, এআইডি

খ। অন্যান্য বক্তা

জনাব ক্রিস্টোফার ভ্যান হলেন, রাষ্ট্রবিভাগ

জনাব ব্রুস ল্যাঙ্গিজেন, রাষ্ট্রবিভাগ

জনাব জোসেফ সিসকো, রাষ্ট্রবিভাগ

জনাব জেমস নয়েস, প্রতিরক্ষা বিভাগ

জনাব আরমিস্টেড সেল্ডেন, প্রতিরক্ষা বিভাগ

প্রধান সেনাধ্যক্ষ রবার্ট ওয়ালেন্ডার, ওজেসিএস

ক্যাপ্টেন হওয়ার্ড কে, ওজেসিএস

জনাব হ্যারল্ড সন্ডার্স, এনএসসি

কর্নেল রিচার্ড কেনেডি, এনএসসি

জনাব স্যামুয়েল হসকানসন, এনএসসি

জনাব জন ওয়ালের, সিআইএ

জনাব স্যামুয়েল ডি পামা, রাষ্ট্র বিভাগ

জনাব মরিস উইলিয়ামস, এআইডি

৩। সারাংশঃ আলোচনার মূল আলোচ্য ছিল বাংলাদেশের জাতি হিসেবে মুখোমুখি হওয়া  ব্যাপক সমস্যাগুলো। ডঃ কিসিঞ্জার নির্দেশনা দিলেন যে এই সমস্যা এখন নিরীক্ষা করা উচিত।পাকিস্তানে সম্ভাব্য সামরিক সহায়তার বিষয়টিও নিরীক্ষা করা উচিত, কিন্তু গোপনীয়তার সাথে। পুর্ব থেকে পশ্চিমে ভারতীয় পুনঃসংস্থাপনের বিষয়টি ভারতের বর্তমান সমুদ্র “অবরোধের” বৈধতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

৪। জনাব হেল্মস বর্তমান পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বর্ননা দিয়ে সভা শুরু করলেন। তিনি বললেন যে ভারতীয়রা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং পাকিস্তানীরা ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। পুর্বে বড় ধরনের যুদ্ধ এখনও চলছে কিন্তু ভারত পশ্চিমের সাথে স্থিতি কার্যক্রমে নিয়োজিত আছে। জনাব হেল্মসের মতে ভারত পুর্বে ১০ দিনের মাঝে একটি সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। ভারতের বর্তমানে পুর্বে প্রায় সকল জায়গায় বিমান বাহিনীর প্রাধান্য আছে যেখানে তারা পাকিস্তানী স্থল বাহিনী এবং রসদ এলাকা গুলোতে তাদের একশর কাছাকাছি বিমান প্রয়োগ করতে পারে। যাইহোক, ভারতীয়রা পুর্ব পাকিস্তানের প্রেক্ষিতে এখনও কব্জা করতে পারেনি। ভারতীয় প্রচেষ্টার একটি বড় অংশ প্রদেশের উত্তর পশ্চিম দিকে হয়েছে। ধাকার বিমানঘাঁটি পুরোপুরি বন্ধ। ভারতীয়রা যশোর এলাকায় শুধু কিছু ক্ষুদ্র অংশ দখলের বিবরণ দিয়েছে, কিন্তু তারা কমলাপুর দখলের দাবি করছে। পশ্চিমে ভারতীয় কার্যক্রম মুলত বিমান আক্রমনের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। পাকিস্তানীদের  এই প্রেক্ষিতে আক্রমণাত্মক মনে হচ্ছে এবং তারা পাঞ্জাবে বিমান হামলা করেছে। সামগ্রিকভাবে, পাকিস্তানীরা ৬১টি ভারতীয় উড়োজাহাজ ধ্বংসের দাবি করেছে; ভারতীয়রা ৪৭টি পাকিস্তানী উড়োজাহাজের দাবি করেছে। নৌকার্যক্রমে একটি পাকিস্তানী ডেস্ট্রয়ার ভারতীয়রা ডুবিয়ে দিয়েছে এবং আরেকটিও ডুবে যাওয়ার দাবি করেছে। ভারতীয়রা  পুর্বদিকের সমুদ্রে একটি পাকিস্তানী ডুবোজাহাজের ডুবিয়ে  দেয়ারও দাবি করেছে। মস্কো ভারতের পক্ষে ক্রমবর্ধমান সমর্থনে সোচ্চার এবং যুদ্ধ বিরতির জন্য জাতিসংঘের কোন পদক্ষেপকে সমর্থন করছেনা। চাইনিজ সংবাদমাধ্যম ভারতীয়দের উপর একটি শক্তিশালী আক্রমণ করেছে।

৫। ডঃ কিসিঞ্জার এরপর একটি সামরিক শক্তি যাচাইয়ের কথা বললেন এটি জিজ্ঞাসার মাধ্যমে যে পাকিস্তানীরা কতদিন পুর্বে তাদের দখল রাখতে সমর্থ। জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড  জবাব দিলেন যে এটি তিন সপ্তাহের মত হতে পারে।

৬। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন বাংলাদেশের ব্যাপারে কি করা যেতে পারে। জনাব হেল্মস বললেন যে সকল প্রায়োগিক উদ্দেশ্যের দিক থেকে এটি এখন ভারত স্বারা স্বীকৃত একটি স্বাধীন দেশ।

৭। রাষ্ট্রদূত জনসন পরামর্শ দিলেন যে, পুর্ব পাকিস্তানে অবস্থানরত পাকিস্তানী সৈন্য বাহিনীকে জিম্মি করতে পারে।জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড সমর্থন দিলেন যে বিশেষত ভারতীয় নৌ প্রাধান্যের ভিত্তিতে পুর্ব অংশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদলকে সরিয়ে নেবার কোনদিক থেকেই কোন উপায় নেই।

৮।ডঃ কিসিঞ্জার ব্যক্ত করলেন যে পরবর্তীতে রাজনৈতিক গতিপথ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের মনোভাবের নির্ধারণকে অন্তর্ভুক্ত করবে।

৯। জনাব উইলিয়ামস উল্লেখ করলেন পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় সাড়ে দশ লাখ উর্দু ভাষাভাষীদের (বিহারি) যাদের জিম্মি করা হতে পারে।

১০। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন এই লোকগুলো ইতোমধ্যে কোন গণহত্যার শিকার হয়েছে কিনা। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে, তিনি মনে করেন অবশ্যই হবে। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন আমরা কিছু করতে পারি কিনা যার জবাব জনাব উইলিয়ামস বললেন যে হয়তবা তাদের পক্ষে একটি আন্তর্জাতিক মানবিক প্রচেষ্টার আরম্ভ করা যেতে পারে। ডঃ কিসিঞ্জার জিজ্ঞাসা করলেন আমাদের এই মানুষদের দুর্দশার প্রতি মনোযোগ আকর্ষন করা উচিত কিনা। জনাব উইলিয়ামস বললেন যে অধিকাংশ মানুষ আসলে রেল প্রতিষ্ঠান গুলোকে কেন্দ্র লরে বসতি স্থাপন করেছিল; যে তারা নগর বাসিন্দা এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে তাদের জন্য কিছু প্রচেষ্টা আরম্ভ করা যেতে পারে। ডঃ কিসিঞ্জার পরামর্শ দিলেন যে এটি একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এড়ানোর জন্য শীঘ্রই করা যেতে পারে। জনাব সিসকো বললেন যখন ইউএন এই সময়ের প্রেক্ষিতে কিছু করতে পারছেনা, সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে এই পরিস্থিতির উপর সাধারণ মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করা যেতে পারে।

১১। জনাব উইলিয়ামস উল্লেখ করলেন পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থানরত ৩০,০০০ বাঙালির কত্থা এবং তারাও একই বিপদের মধ্যে আছে। জনাব সিসকো বললেন এই মানবিক বিষয়টি সাধারণ পরিষদের জন্য খুবই চিত্তাকর্ষক হতে পারে এবং আমরা পরিষদের কার্যক্রমের উপর নজর রাখতে শুরু করব।

১২।সামরিক চিত্রের প্রতি পুনরায় মনোযোগ দিয়ে জনাব উইলিয়ামস ব্যক্ত করলেন যে তিনি মনে করেন যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাথমিক বিশ্বাস হল চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা এবং পুর্বে এখনও অবস্থারত পাকিস্তানীদের জন্য রসদ সরবরাহের সামর্থ্যকে ধ্বংস করা। তিনি বললেন যে তার মতে পুর্বে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় আঘাত হবে পাকিস্তানী নিয়মিত সৈন্যদলকে ধ্বংস করা। তিনি মনে করেন যে পুর্বে বিশাল একটি কাজ হবে শৃংখলা ফিরিয়ে আনা যেহেতু এটি গনহত্যার সম্মুখীন হবে যেটি বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত হওয়া কোন গনহত্যার মতই ব্যাপক।

১৩। জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড পরামর্শ দিলেন যে  ভারতীয়দের সম্ভবত তিন অথবা চার ডিভিশন সৈন্যের দরকার পড়বে মুক্তি বাহিনীর সাথে কাজ করার জন্য। বাকি সৈন্যদের পশ্চিমে বিমান বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।

১৪। জনাব সিসকো মত দিলেন যে ভারতীয়রা তাদের অধিকাংশ সৈন্যদের সরিয়ে নেবে যখন পাকিস্তানীরা নিরস্ত্র হবে, যেহেতু ভারতীয়রা যতদুর সম্ভব বন্ধুভাবাপন্ন জনসংখ্যার সাথে কাজ করবে; এভাবে তারা সামরিক প্রচেষ্টাকে যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি বাহিনীর দিকে ফিরিয়ে দেবে। তিনি মনেকরেন যে পুর্ব থেকে পশ্চিমে সকল অথবা অধিকাংশ সৈন্যদলকে সরিয়ে নিতে এক মাসের মত সময় লাগতে পারে।

১৫। একটি প্রশ্নের জবাবে, জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড বলেন যে পশ্চিম থেকে পুর্বে ভারতীয় পরিবহন ক্ষমতা সীমিত, এবং এক পদাতিক ডিভিশনকে সরিয়ে নিতে অন্তত এক সপ্তাহ লাগতে পারে। পুর্ব থেকে পশ্চিমে সকল অথবা অধিকাংশ সৈন্যদলকে সরিয়ে নিতে এক মাসের মত সময় লাগতে পারে।

.

১৬. মিঃ সিসকো বলেছেন, বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর দীর্ঘ উপস্থিতির সমাধান প্রয়োজন। মিঃ ভ্যান হলেন মন্তব্য করেন, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসার পর যদি ২-৩ সপ্তাহের বেশি ভারতীয় বাহিনী সেখানে অবস্থান করে, তাহলে তারা বাঙালীদের চোখে হিন্দু দখলদার বাহিনীতে পরিণত হবে।

১৭. মিঃ ভ্যান হলেন ভারত থেকে শরণার্থীদের ফিরে আসা সংক্রান্ত সমস্যাটিকে তুলে ধরেন। বাংলাদেশে মুসলিমদের যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা, সেখানে ফিরে আসা দশ মিলিয়ন শরণার্থী, যাদের অধিকাংশই হিন্দু, তারা আর একটি জটিল সমস্যার অবতাড়না করবে।

১৮. জেনারেল ওয়েস্টমোরল্যান্ড মন্তব্য করেন, পশ্চিমে ভারতীয় অবস্থান অসুবিধাজনক ছিল না। তিনি সংক্ষেপে পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধাবস্থা ব্যাখ্যা করেন এবং মন্তব্য করেন যে ভারত তুলনামূলক ভাল অবস্থানে আছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রধান শক্তিপ্রয়োগ কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের দিকে আশা করা যায়। তার মতে, ভারতীয়রা প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা (LOC: line of communication) থেকে করাচীকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য হায়দ্রাবাদের দিকে আক্রমণ করবে। ভারতীয়রা করাচী পর্যন্ত ধাবিত হবে বলে তিনি মনে করেন নি। তিনি আরও মন্তব্য করেন, ভারতীয়দের এদিকে আগ্রাসন বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য হতে পারে, যাতে পাকিস্তানীরা কাশ্মীর থেকে তাদের বাহিনী ফিরিয়ে নেয়।

১৯. মিঃ প্যাকার্ড পাকিস্তানের জ্বালানী (POL: Petroleum, Oil, Lubricants) সরবরাহের ব্যাপারে জানতে চান। মিঃ হেলমস বলেন, বর্তমান সময়ে তা খুব খারাপ বলেই মনে হয়। উদাহরণস্বরূপ স্থলপথে ইরানের সাথে যোগাযোগের রাস্তাসমূহ অত্যন্ত ভঙ্গুর ছিল।

২০. মিঃ উইলিয়াম মন্তব্য করেন, দক্ষিনে ভারতীয়দের আগ্রাসন ছিল রাজনৈতিক। ভারত যতই সিমান্তে যুদ্ধ করতে অনাগ্রহী হোক, তাদের কাশ্মীরে পিছু হটতে হবে। পার্লামেন্টে সমালোচনা এড়াতে মিসেস গান্ধী হয়তো দক্ষিনের কিছু পাকিস্থানী আবাসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

২১. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর জাতিসংঘের উদ্যোগসমূহ সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ সিসকো বলেন, আমরা রাষ্ট্রদূত বুশের সঙ্গে পর্যালোচনা করছি। সোভিয়েত কর্তৃক দুটি সমাধানের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে ভোট দেয়া হয়েছে। এদিকে ‘শান্তির বিরুদ্ধে হুমকি’ এই বিধান অনুসারে সাধারন পরিষদের জরুরি সভা আহবানের পক্ষে নিউইয়র্কে একটি জনমত তৈরি হয়েছে। সমস্যাটি একটি সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভোটে সভায় স্থানান্তরিত হতে পারে।

২২. ডঃ কিসিঞ্জার এবং মিঃ সিসকো একমত হয়েছেন যে সাধারন পরিষদে উত্থাপিত যেকোন রেজল্যুশনে দুটি বিষয় থাকতেই হবেঃ অস্ত্রবিরতি ও সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার। ডঃকিসিঞ্জার একমত হয়েছেন যে আমাদের জাতিসংঘের প্রতিনিধিদল এখন পর্যন্ত অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অবস্থা সামাল দিয়েছেন। মিঃ সিসকো বলেন, যদিও সমস্যাটি সাধারন সভায় উত্থাপনের সম্ভাবনা খুব বেশি, আমাদের মনে রাখতে হবে সেখানে ১৩৬টি দেশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং আমরা সব ধরনের চাপ আশা করতে পারি। মিঃ ডি পালমা মতামত ব্যক্ত করেন এই বলে যে যখন রেজল্যুশনটি সভায় উত্থাপন করা হবে, সেখানে ঘটনা নতুন মোড় নিতে পারেন ভারত আর রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকবে না। ততক্ষণে ব্যাপারটি আর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হবে না।

২৩. মিঃ পালমা বলেন যে আজ তিনটা ত্রিশ মিনিটে পরিষদের একটি মিটিংয়ের সমিয় নির্ধারন করা হয়েছে এবং আমরা চেষ্টা করতে পারি যাতে সাধারন সভায় স্থানান্তরের জন্য পরিষদ ইস্যুটিকে ছেড়ে দেয়, যেহেতু এটি পরিষ্কার যে নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে আমরা যুদ্ধবিরতি পাবো না।

২৪. দিন শেষে ইস্যুটিকে সামনে নিয়ে আসার (Gel the issue) সাধারন সভার কাছে আশা করা যায় কিনা তা জানতে চেয়েছেন ডঃ কিসিঞ্জার, যার উত্তরে মিঃ ডি পালমা বলেন, সম্ভবত সেটাই হতে যাচ্ছে।

২৫. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে আমাদের উত্থাপিত একই বক্তব্য নিয়ে আমরা সাধারন পরিষদে যাবো। অবশ্য তিনি শরণার্থী ও আমাদের বিশ্লেষনের ব্যাপারে কিছু যোগ করতে আগ্রহী ছিলেন।

২৬. ডঃ কিসিঞ্জার আরও নির্দেশ দেন, ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সাথে এতদিন যে উদার আচরন করা হয়েছে, সেই উচ্চপর্যায়ের আচরন আর করা হবে না।

২৭. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর ভারতের বর্তমান সামুদ্রিক অবরোধের আইনী দিক সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ সিসকো বলেন, আমেরিকান জাহাজ জড়িত আছে এমন দুটি ঘটনারই আমরা প্রতিবাদ করেছি। তবে যুদ্ধঘোষণার ব্যাপারে দৃশ্যত কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয় নি। এটি এখনো অঘোষিত যুদ্ধ এবং ভারত এই সামরিক অবস্থান গ্রহনের ব্যাপারে তাদের অধিকার আছে বলে দাবি করছে। রাজ্য অবশ্য ব্যাপারটির আইনগত দিক নিয়ে দলিল তৈরি করবে।রাষ্ট্রদূত জোনাথন বলেন, তার জানা মতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে ভারতের কোন আইনগত অবস্থান নেই।

২৮. ডঃ কিসিঞ্জার একটি খসড়া প্রতিবাদলিপি প্রস্তুত করতে বলেন। যদি আমরা মনে করি এটি অবৈধ, তাহলে আমরা আনুষ্ঠানিক কুটনৈতিক প্রতিবাদ জানাবো। মিঃ সিসকো প্রতিবাদলিপি তৈরির দায়িত্ব নেন।

২৯. ডঃ কিসিঞ্জার জর্ডান বা সৌদী আরবের সামরিক শক্তি পাকিস্তানে স্থানান্তরের অনুমোদন দানের ব্যাপারে আমাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে চান। মিঃ ভ্যান হলেন বলেন, পাকিস্তানের মত যে সকল চুড়ান্ত গ্রহীতার কাছে আমেরিকা সরাসরি অস্ত্র বিক্রির অনুমতি দেয় না, সেখানে আমাদের সরবরাহকৃত অস্ত্র কোন তৃতীয় পক্ষকে স্থানান্তরের অনুমতি দেয়া সম্ভব নয়। গত জানুয়ারি পর্যন্ত আমরা পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেই। মিঃ সিসকো বলেন এধরণের পদক্ষেপে জর্ডান তার নিজের অবস্থান দূর্বল করে ফেলবে, এবং তারা কৃতজ্ঞ থাকবে যদি তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়। পাকিস্তানের উপর যেহেতু চাপ বাড়ছে, তারা আমাদের কাছে সংকটকালিন আবেদন করবে বলেও মিঃ সিসকো মত দেন।

৩০. ডঃ কিসিঞ্জার বলেন, রাষ্ট্রপতি ওইসব আবেদনকে গুরুত্ব দিতে আগ্রহী হতে পারেন। ঘটনাগুলো রাষ্ট্রপতির নজরে আনা হয় নি, তবে এটা পরিষ্কার যে রাষ্ট্রপতি পাকিস্থানকে পরাজিত হতে দিতে ইচ্ছুক নন। মিঃ প্যাকার্ড তখন বলেন, আমাদের কি কি করণীয় তা খতিয়ে দেখা উচিত। মিঃ সিসকো একমত পোষণ করেন, তবে তিনি বলেন এটি অত্যন্ত গোপনে করা উচিত। ডঃ কিসিঞ্জার পরের দিনের মধ্যে (৭ ডিসেম্বর) একটি দলিল আশা করেন বলে জানান।

৩১. মিঃ সিসকোর মতে, আমরা যে জিনিসের প্রতি আসলেই আগ্রহী তা হল সহজলভ্য করা যায় এমন সরবরাহ ও উপকরন, এবং এইসব উপকরণ পৌছানোর উপায়। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের প্রচেষ্টা হওয়া উচিত পশ্চিম পাকিস্তানকে নিঃশেষ করা থেকে ভারতীয়দের বিরত রাখা।

৩২. ডঃ কিসিঞ্জার ত্রানের ব্যাপারে আলোকপাত করেন এবং অনুরোধ করেন যেন এখন থেকে লেটার অফ ক্রেডিটসমূহ প্রত্যাহারের অযোগ্য না করা হয়। মিঃ উইলিয়াম বলেন, আমরা সাধারন অর্থনৈতিক সহায়তা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের জন্য প্রতিশ্রুত না, তা স্থগিত করেছি। এটি এর মাত্রাকে ১০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে এনেছে। তিনি মন্তব্য করেন, ভারত যেভাবে তাদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সচল করেছে আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য অবশিষ্ট সহায়তা সার ও মানবিক সহায়তার জন্য নির্দিষ্ট রয়েছে, সে তুলনায় আমরা পাকিস্তানের জন্য যা করেছি তা যৌক্তিক নয়। কৌশলগত, রাজনৈতিক ও আইনগতভাবে একটি যুক্তি দাড় করানো যায় যে ভারত ও পাকিস্তানকে দেয়া সাহায্যের মধ্যে একটি পার্থক্য রয়েছে।

৩৩. ভারতকে দেয়া কোন সহায়তা বন্ধের সময় যেন যে যে সহায়তা চলমান আছে, তার চেয়ে যে যে সহায়তা বন্ধ করা হয়েছে তার উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়, ডঃ কিসিঞ্জার সেই দিকে নজর রাখতে বলেছেন।

৩৪. ডঃ কিসিঞ্জার এরপর ঢাকা খালি করার ব্যাপারে জানতে চাইলেন। মিঃ সিসকো জানালেন ঢাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়েছে।

৩৫. ডঃ কিসিঞ্জার পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে জানতে চাইলেন। মিঃ উইলিয়াম জানালেন আপাতত বড় কোন সমস্যা হবে না, তবে পরবর্তী বসন্তের দিকে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশকে প্রত্যাখ্যান করার আবেদন আমাদের কাছে আসবে কিনা জানতে চাইলেন ডঃ কিসিঞ্জার। মিঃ উইলিয়াম বলেন, আমরা যদি মাসে ১৪০ টন খাবার চট্টগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করাতে পারি, তাহলে সমস্যা প্রকট হওয়ার কথা নয়, কিন্তু বর্তমানে কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সব ধরনের সাহায্য দরকার হবে। রাষ্ট্রদূত জনসন যোগ করেন, বাংলাদেশ হবে একটি আন্তর্জাতিক ঝুড়ি। ডঃ কিয়াইঞ্জার অবশ্য বলেন, এটি ‘আমাদের’ ঝুড়ি হবে না। মিঃ উইলিয়াম বলেন, শরণার্থী পূণর্বাসন, জনগণকে পরিবহনো খাদ্য সরবরাহের জন্য ব্যাপক সাহায্যের দরকার হবে। ডঃ কিসিঞ্জার তৎক্ষনাৎ এই সমস্যাটি বিশ্লেষন শুরু করতে বলেন।

৩৬. মিঃ উইলিয়াম বলেন, ভারতীয়রা সবসময় নগদ অর্থে শরণার্থীদের জন্য সহায়তা চেয়েছে। বিনিময়ে ভারতীয়রা শরণার্থীদের খাদ্য ও সহায়তা প্রদান করবে। এটি ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। ডঃ কিসিঞ্জার আগামীকালের মধ্যে খতিয়ে দেখতে বলেছেন নগদ অর্থের পরিবর্তে পণ্যসামগ্রী সরবরাহ করা যায় কিনা। আমরা মানবিক সহায়তা বন্ধ করতে চাই না। তবে আমরা নগদ অর্থের পরিবর্তে পণ্যসামগ্রী দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।

৩৭. সভাটি এরপর মুলতবি করা হয়।

(সাক্ষর) এইচ,এন,কে

ক্যাপ্টেন, ইউ,এস,এন

দক্ষিন এশিয়া/এম,এ,পি ব্রাঞ্চ, জে-৫

এক্সটেনশন ৭২৪০০

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস

বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারি, ১৯৭২

.

.

13.68.264-269

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!