You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী প্রতিক্রিয়া - মুক্তিযুদ্ধে জাতিসংঘ এর ভূমিকা - মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন রাষ্ট্রের ভূমিকা ০২ - বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক
                  শিরোনাম                         সূত্র                     তারিখ
বাংলাদেশ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান অবশ্যই করতে হবে:কমনস সভার পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি         কমনস সভার কার্যাবলি              ২৩ জুন, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ২৩ জুন হাউজ অব কমনস সভায় যুক্তরাজ্য সরকারের পররাষ্ট্র সচিব এলেক ডগলাস হোম এর বিবৃতির সারসংক্ষেপ।

২১  জুন সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মি. শরণ সিং এর সাথে আমিসহ আমার ডান দৃষ্টান্তমূলক বন্ধু প্রধানমন্ত্রীর একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, আলোচনা চলাকালীন ভারতে ব্যাপকভাবে ক্রমাগত উদ্বাস্তুু প্রবেশ যে একটি স্থায়ী বিপদ ও বোঝার সৃষ্টি করছে এবং পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা নিয়ে সরকার তাদের যে  উদ্বেগ প্রকাশ করছে সে বিষয়টি তিনি আমাদের কাছে স্পষ্ট করেন।

ইন্ডিয়া এইড কনসরটিয়ামের সাম্প্রতিক বৈঠকের পর ওনার সরকার উদ্বাস্তুদের সহযোগিতা ও ভারতীয় সরকারের অর্থনৈতিক বোঝার উপশমের জন্য সরকার পাঁচ মিলিয়ন টাকা সুলভ করে।

কনসরটিয়ামের অন্যান্য সদস্যদের মত আমরাও এই অবদানে সাহায্য করি এবং আমাদের স্বাভাবিক উন্নয়নের উপর ভারত সহযোগিতা করে।উপরন্তু ভারতে উদ্বাস্তুদের সরাসরি ত্রান প্রদানের জন্য সরকারের সহযোগিতায় আরও ১ মিলিয়ন টাকা প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়।

ওনার সরকার ত্রানের জন্য সকল ধরনের সহযোগিতাকে সহজলভ্য করে এবং ভারতে পুনর্বাসনের জন্য এর পরিমান ৮ মিলিয়নে বর্ধিত করে।এটি একটি মানবিক কাজ যার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই যেখানে আমি আশা করি ইউনাইটেড ন্যাশনের বেশিরভাগ বেশিরভাগ সদস্যই তাতে অংশগ্রহন করবে।এই পর্যন্ত প্রায় ২৩ জন অংশ নিয়েছে।

২১ জুন পাকিস্তান কনসরটিয়ামের সদস্যদের একটি অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট গুলো বিবেচনা করা হয় এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রতিনিধিগন যারা পূর্ব পাকিস্তান পরিদর্শন করেন এবং ইসলামাবাদের সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেন।

নতুন যেকোন সহযোগিতায় যেকোন কিছু দানের জন্য কোন অঙ্গীকারবদ্ধতার কথা বলা হয় নি যদিও সকলেই পূর্ব পাকিস্তানের এই মানবিক মুক্তির জন্য ইউনাইটেড ন্যাশনের কার্যকর নজরদারিতে অবদানে সম্মতি প্রকাশ করে।

মহামান্য সরকারের নীতি সেই অবস্থান প্রকাশ করে যে পাকিস্তান ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্প যতদূর সম্ভব ক্রমাগত চালনা করছে কিন্তু সত্যিকারের একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে অগ্রগতির বিষয়ে একটি দৃঢ় প্রমান না পাওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রতি নতুন ব্রিটিশদের সহযোগিতার ক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন থাকতে পারে না।

পূর্ব পাকিস্তানের এই বিশৃঙ্খল অবস্থা অব্যাহত রয়েছে। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে দুইজন ব্রিটিশ নাগরিক মি. পি. জে. চালমার্স ও জে. ওয়াই বয়েড যারা উভয়ই সিলেট জেলার চা-রোপন এস্টেট এ কর্মরত থাকা সত্ত্বেও তাদের অনুপস্থিতির তথ্য আইন সভায় আমাকে রিপোর্ট করতে হয়।

পূর্ব পাকিস্তান ও ভারত উভয়েরই ব্রিটিশ প্রতিনিধিদের শত চেষ্টা সত্ত্বেও পাকিস্তানের মার্শাল ল শাসন ও ভারতীয় সরকারের মাঝে অনুসন্ধান করে তাদের কোনো সংবাদ সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।

এই পরিস্থিতিতে তাদের নিরাপত্তার জন্য গভীর শংকার তৈরি হয় এবং আমি মহামান্য সরকারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করছি এবং এই উদ্বগময় সময়ে দেশে তাদের স্বজনদের নিকট আইনসভা ১টা নিশ্চয়তা প্রদান করে।

 পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট যারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে পালিয়ে গেছে তারা তাদের বাড়িতে ফিরে আাসবে এই আাশাই পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং এমন ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন যে তারা যে শংকা বোধ করছে তাদের সেই শংকার কোনো কারন নেই।

মাহামান্য সরকার তার নিকট একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা পুনরুদ্ধারের গুরুত্বকে প্রকাশ করে যেখানে আস্থাই পারে তাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং স্বাভাবিক রাজনৈতিক জীবন পুনরুদ্ধার করতে।

আমার দেয়া বিবৃতির মাধ্যমে আমি এই ডানপন্থী ভদ্রলোক কে তার সাধারন অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।

রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ফলাফল বা রাজনৈতিক ভবিষ্যত কি হতে পারে প্রকাশ্যে আমার এই বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার জন্য এই সময় সহায়ক হবে না।

আমাদের ব্যক্তিগত অনেক পরামর্শের ভিত্তিতে ২৮ জুন প্রেসিডেন্ট একটি বিবৃতি প্রদান করেন। একটি আশা ছিল এবং আমরাও তার কাছে এই আশাই প্রকাশ করেছিলাম যে তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পশ্চিম পাকিস্তানে একত্রিত করতে সক্ষম হবেন। আমরা মনে করি এটি অপরিহার্য।

ভারতীয় সরকার এ ধরনের কোনো প্রস্তাবনা উত্থাপন করে নি এবং আমার মনে হয় যে অতঃপর আমাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করাই উত্তম এবং উদ্বাস্তুদের  একটি বৃহদাংশ পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা পরবর্তীতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি তার বিবৃতিতে প্রকাশ করেন,এছাড়াও সেই অংশে ইউনাইটেড ন্যাশনের যুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতভাবে অকালীন হবে।

যেখানে একটি রাজনৈতিক বিবৃতি আবশ্যক।সেখানে একটি বেসামরিক সরকারও বহাল থাকতে হবে।সরকারের প্রশাসনিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন অবশ্যই হতে হবে।দৃষ্টান্তমূলক সদস্যরাই চিহ্নিত করবে যে একমাত্র সেনাবাহিনীই খাদ্য বিতরনের মাধ্যমে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে।

.

13.12.95-99

শিরোনাম সুত্র তারিখ
বাংলাদেশের শোচনীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি ও সংক্রান্ত বিতর্ক কমনস সভার কার্যবিবরনী ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

হাউজ অফ কমনস

বৃহস্পতিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

পুর্ব বাংলা

মি। হীলে (এক ব্যাক্তিগত বিজ্ঞপ্তিতে) পররাষ্ট্র এবং কমোনওয়েলথ সচিবকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি এবং তার সরকার কি পূর্ব পাকিস্থানের বর্তমান অবস্থা নিয়ে নীতি প্রনয়নে কোন বিবৃতি প্রাদান করবেন কি না।

স্যার এলান ডগলাস হিউম, সচিব, বৈদেশিক এবং কমনওয়েলথ বিষয়ক দপ্তরঃ

ইস্ট বেঙ্গলের বর্তমান অবস্থা আমাদের অত্যন্ত ভাবিয়ে তুলছে; ২৩শে জুন পার্লামেন্ট হাউজে আমার বক্তব্যের পর বেশ কিছু উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। পূর্বের বেসামরিক প্রশাসন এবং সরকার গঠনের  লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান প্রস্তাব করেছেন। একজন বেসামরিক গভর্নর এবং বেশ কিছু বেসামরিক মন্ত্রীর নাম ঘোষনা করা হয়েছে; প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, নির্বাচিত সরকার গঠনের জন্য, সাধারন নির্বাচনের ঘোষনা দিয়েছেন; ১৯৭১ সালের ১ম মার্চ থেকে ৫তম সেপ্টেম্বরের ঘটনার জন্য সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেছেন। তবে ধারনা করা হয়, এই প্রস্তাব থেকে লাভবান হওয়া, অনেক ব্যাক্তিই ইন্ডিয়াতে পালিয়ে গেছেন।

আমরা এসব উন্নয়নকে নির্বাচিত সরকার গঠনের একটি ধাপ মনে করে স্বাগত জানাই এবং আদেশক্রমে পুর্ব পাকিস্তানকে তাদের সাধারন অবস্থায় ফিরে আসার জন্য আহবান জানাই।

যদিও ইস্ট পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থায় আমরা অত্যন্ত চিন্তিত; ইন্ডিয়াতে পালিয়ে যাওয়া উদ্বাস্তুদের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে, যা বর্তমানে, ইন্ডিয়ান সরকার মতে, প্রায় ৮ মিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে; এত সংখ্যাক উদ্বাস্তুদের চাহিদা পূরন করা ইন্ডিয়ান অর্থনীতি এবং তার সম্পদের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে; তবে ইন্ডিয়ান সরকার যে ভাবে এত বিশাল জনগোষ্ঠির অন্তঃপ্রবাহকে অবিচ্ছেদ্দ সমর্থন করে যাচ্ছেন, তার জন্য ইন্ডিয়ান সরকারকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই; তবে এরুপ সমস্যা সমাধান শুধু ইন্ডিয়ার একার দায়িত্ব নয়; ইতিমধ্যে ইন্ডিয়ান সরকার ৮মিলিয়ন পাউন্ড, রিলিফ এবং ইন্ডিয়াতে পুনর্বাসনের জন্য লিন্ড প্রদান করেছেন; ইউ থ্যান্টের সাহায্যের আবেদনে, আমরাও ইতমধ্যে প্রায় ১ মিলিয়ন পাউন্ড ইস্ট পাকিস্তানে পাঠিয়েছি; আমরা আশা করছি, জাতিসংঘের অন্যান্য দেশও ইউ থ্যান্টের এই সাহায্যে আবেদনে এগিয়ে আসবেন।যেহেতু সংসদে আমি আগে বলেছি, আমরা আরো সাহায্য প্রেরনের জন্য প্রস্তুত আছি।

আমি নিশ্চিত যে, সংসদ আমার এই গভীর উদ্বেগকে গুরুত্বারোপ করে, ইস্ট-পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়াতে আসন্ন খাদ্য সংকট, শিশু মৃত্যুহার এবং রোগ-ব্যাধিকে, রিপোর্টে উল্লেখ করবেন। এটা আমাদের দৃঢ় দৃষ্টি যে, আন্তর্জাতিক রিলিফ ব্যাবস্থাপনা এবং ভবিষ্যতের কোন মানবিক দূর্যোগ প্রতিহত করার জন্য, ইউনাইটেড ন্যাশনস ভুমিকা অনসিকার্য; আমাদের সকলেরই উচিত ইউনাইটেড ন্যাশনস’এর রিলিফ অপারেশনের এমন চেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো এবং তাদের সাহায্যে সপুর্নভাবে এগিয়ে আসা; এই লক্ষ্যে আমি আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে ইউনাইটেড ন্যাশনের সাধারন-সচিবের সাথে বৈঠকের সিন্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে এক যোগে, উপমহাদেশের এহেন সমস্যা দূরকর এবং যথা সম্ভব উদবাস্তুদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে এনে, সাধারন জীবন-যাপনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে কাজ করা।

মি. হিলেঃ প্রথমত আমি ফরেইন সক্রেটারি কে তার বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভনন্দন জানাতে চাই, বিশেষ করে, যে আন্তরিকতার সাথে তিনি বক্তব্যটি উপস্থাপন করলেন। আমি বলতে চাই, আমরা সকলেই এটা মানি যে, তার মহিমান্বিত সরকার এই বিয়গান্তক সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকেবেহাল আছেন, কিন্তু, তিনি নিজেই বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান, ইন্ডিয়া বা ব্রিটেইন বা অন্য কোন রাষ্ট্রের পক্ষে বা কিছু রাষ্ট্রের পক্ষে একা সমাধান সম্ভব নয়।

ইউনাইটেড ন্যাশনের সংস্থাগুলো কতৃক, সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন না করা গেলে, ক্রিসমাসের আগে, লক্ষাধিক কিংবা তারো বেশী মানুশ মারা জেতে পারে, এ ব্যাপারে মাননীয় বিশিষ্ট সদস্যরা কি অবগত আছেন?

মাননীয় বিশিষ্ট সদস্যরা কি আরো অবগত আছেন যে, এক মাস পুর্বে আমি তাকে বলেছিলাম, মৌসুমি বায়ু শেষ হওয়ার সাথে সাথে, পুর্ব পাকিস্থানে যুদ্ধ লাগার সম্ভবনা আছে, যার ভয়াবহতা শুধু উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না? তাই তিনি যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংহ যাবেন, তিনি কি  এটা নিশ্চিত করবেন, জাতিসংহ, শুধু রিলিফের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেবেন না, বরং তার চেয়ে ভয়াবহ এবং গুরুত্বপুর্ন, রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে দায়ত্ব নেবেন?

স্যার এলেক ডগলাস হোমঃ আমি মি. হীলের কাছে, তার বক্তব্যের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। যেহেতু তিনি বললেন, এই সমস্যার পরিধি অনেক বেশী, এটি সত্যি আমাদের মাথা ব্যাথার কারন। আমার মনে হয়, পুর্ব পাকিস্থানের এক মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ্য শুরু হতে যাচ্ছে। যদিও আমাদের পক্ষে একেবারে সঠিক তথ্য যোগার করা খুব কঠিন, তবে, রিপোর্ট বলছে, যদিও মোটামুটি পর্যাপ্ত পরিমান খাবার মজুদ আছে, তবে তা সবার কাছে পৌছে দেয়ার জন্য, যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই করূন। তাই, জাতিসংঘের কাছে, অনেক সমস্যার একটি হচ্ছে, কিভাবে এই খাবার, দরকারী জায়গাগুলোতে পৌছে দেয়া।

আগামী সপ্তাহে ইউ থ্যাণ্টের সাথে বৈঠকে, আমি এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব এবং তার সাথে, আমেরিকান রাষ্ট্র সচিব এবং অন্যান্য যারা এই সমস্যার রিলিফ এবং মানিবিক ব্যাপারে আলোচনায় আগ্রহী, তাদের সাথেও বৈঠক করবো।

রাজনৈতিক ব্যাপারে, একটা বন্দোবস্ত দরকার, যাতে, ইন্ডিয়া থেকে পাকিস্থানে ফেরা উদবাস্তুদের সার্থ্য রক্ষা হয়। এটা আরো জটিল বিষয়, এবং উভয় পক্ষের সম্মতি ব্যাতিত, জাতিসংঘের একার পক্ষে এই ব্যাপারে কিছু করা সম্ভব নয়।করব।যেহেতু, যতদূর আমি জানি, পাকিস্থান, উদবাস্তূদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে, তাদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের যে কোন সংখ্যক কর্মীবৃন্দকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইন্ডিয়া এই ব্যাপারে জাতিসংঘের সাথে কাজ করতে অমত প্রকাশ করেছে, এবং তাদেরকে পাকিস্থানে ফিরে গিয়ে, পাকিস্থানের সাথে কথা বলার আহবান করেছে।

মি। হীলেঃ আমি পররাস্ট্র সচিবের সাথে একমত যে, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান উভয়ের সম্মতি ছাড়া, জাতিসংঘের একার পক্ষে এই সমস্যা সমাধান খুব জটিল, কিন্তু, তিনি কি এই ব্যাপারে অবগত নন, যদি জাতিসংঘ তার নিজের মহাসচিবের কথা মত কাজ না করে, তবে, তা শান্তি এবং লক্ষ্যাধিক মানুশের জীবনের জন্য মারাত্নক ঝুঁকির কারন হতে পারে? যদি ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান, উভয়ের সম্মতিতে কোন সমাধানে না পৌছানো যায়, তবে, তিনি যখন আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের অধিদপ্তরে যাবেন, তিনি কি নিরাপত্তা পরিষদে এই ব্যাপারে সম্পুর্ণ আলোচনা করবেন?

স্যার আলেক ডগলাস হোমঃ নিউ ইয়র্কে আমি ইন্ডিয়ান পররাষ্ট্র মন্তীর সাথে দেখা করবো এবং এই ব্যাপারে আলোচনার চেষ্টা করবো। আমি জানি না, এই ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনা কতটা সাহায্য করবে, তবে, আমি নিশ্চিত, যদি ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান এই ব্যাপারে জাতিসংঘের সাথে সহোযগীতা না করে, তবে তার পরিনতি যুদ্ধ দিয়ে হবে।

মি। ব্রেইনীঃ এটা কি সবসময় সঠিক যে, পর্যাপ্ত পরিমান খাবার থাকা সর্তেও, শুধুমাত্র, যোগাযোগ ব্যাবস্থার কারনে, সঠিক ভাবে বিতরণ না করার জন্য দুর্ভিক্ষ্য শুরু হয়? আমার সন্মানিত প্রিয় বন্ধুরা কি এই ব্যাপারে অবগত আছেন যে, পুর্ব পাকিস্থানে জাতিসংঘের মাঠ কর্মীরা বলছে, যদি জাতিসংঘ কোন পদক্ষেপ না নেয় তবে, কল্পনাতীত এক বিপর্যয়ের জন্ম দেবে আর এই বিপর্যয়ের ফলে, পাকিস্থান থেকে ইন্ডিয়াতে গমনরন উদ্বাস্তু দের সংখ্যা আরো বাড়িয়ে দেবে, কারন, ক্ষুদার্থ মানুশ এক জায়গায় থেমে থাকে না? তাই আমি কি আমার সন্মানীত বন্ধুকে, তার পেশকৃত বক্তব্য বাস্তবায়নে জোর দিতে পারি? আমি নিশ্চিত যে, তিনি, আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের মিটিংএ, যে সকল সরকার, ইউ থান্টের আপীল, যা কিনা শুধু পুর্ব পাকিস্থানের মানবীক রিলিফ সম্পপর্কীত না বরং ইন্ডিয়ার এই অসহনীয় উদবাস্তু সমস্যা সমাধানের ব্যাপার্‌ উদাসীন ছিলেন, তাদের মনোযোগ আকর্ষনে সক্ষম হবেন।

স্যার আলেক ডগ্লাস হোমঃ আমি আমার মাননীয় বন্ধুর আবেদনকে সমর্থন জানাই। আমি শুধু ইউ থ্যান্টের সাথেই দেখা করবো না, বরং এই সকল বিষয় উপস্থাপন করে, সমাবেশে বক্তব্য উপস্থাপন করবো। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন বিষয়, এই সমস্যা সমাধানে, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্থান, উভয় পক্ষের সহযোগীতা।এক পক্ষের অমতে, এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

মি। স্টোনহাউজঃ পররাষ্ট্র সচিব কি এই বিষয়টি উত্থাপন করবেন যে, তিনি এই সমস্যায় যেভাবে মানবিক এবং সহানুভুতিপুর্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে তিনি এবং সংসদ, উভয়ই ব্যাপকভাবে প্রস হয়েছে? তিনি কি সাধারন সভায় তার বিবৃতিতে, এই ভয়ংকর অবস্থার কথা উল্লেখ করে, জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের আবেদন করবেন, তা পাকিস্থান কর্তৃপক্ষের অমতে গেলেও, কারন যতদুর শোনা যায়, পুর্ব পাকিস্থানে বেসামরিক যুদ্ধের সম্ভবনা আছে, আর যেহেতু, পাকিস্থান আর্মি সম্পুর্ন পুর্ব পাকিস্থান নিয়ন্ত্রন করে না, কারন তার অনেক বড় একটা অংশ বাংলাদেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়? তিনি কি তার বিবৃতির আলোকে স্বীকার করবেন না যে, শেখ মুজিবকে মুক্তি না দিলে এবং তাকে এই আলোচনার সামীল না করলে, এই অবস্থার নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ মাননীয় মহাদয়, যেহেতু আপনারা জানেন যে, আমরা ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে পাকিস্থানের প্রেসিডেন্টের কাছে বিচারে ক্ষমাশীলতা প্রদানের আবেদন করেছি এবং বিষয়টি এখন দেখা হচ্ছে। আমরা মনে হয়, আমরা এর চেয়ে বেশী কিছুই করতে পারি না, তবে আমরা বেশ আশাবাদী।মানিনীয় মহাদয়, আমি এই সকল বিষয় নিয়ে ইউ থ্যান্টের এবং জাতিসংঘের সাথে আলোচনায় উপস্থাপন করবো এবং আশারাখি ফিরে এসে সংসদে বিবৃতি পেষ করবো।

মি। পার্ডোঃ আমি মাননীয় অ্যালেক ডগলাস্কে আন্তরিক অভিনন্দন জানাতে চাই, ব্রিটিশ সরকারের এমন সাহাজ্যের জন্য। কিন্তু তিনি কি আমাদের, বর্তমানে শেখ মুজিবের শারিরীক অবস্থা এবং তিনি কবে নাগাদ মুক্তি হতে পারেন, এই অবস্থা সম্পর্কে ধারনা দিতে পারেন, যেহেতু তার মুক্তি ব্যাতীত, অবস্থা নিয়ন্ত্রের কোন সম্ভবনা নেই? পররাষ্ট্র সচিব কি আমাদের আরো বলতে পারেন যে তিনি কমোনওয়েলথ ভুক্ত দেশের সাথে, সম্মিলিতভাবে পাকিস্থানের উপর জোর করার ব্যাপারে কি বলেছেন?

স্যার অ্যালেক ডগলাসঃ অনেক দেশই পাকিস্থানের প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছে। এটাই আমি জানি। আমার মনে হয়, এর চেয়ে বেশী প্রকাশ্যে কিছুই বলা আমার পক্ষে অনুচিত।

মিঃ বিগস-ড্যাভিসনঃ পুর্ব পাকিস্থানে  দুর্ভিক্ষের প্রভাব এড়ানোর জন্য সকল ব্যাবস্থা কি গ্রহন করা হয়েছে? আমি জতদুর জানি, পাকিস্থান সরকারের যানবাহন ক্রয়ে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল এবং কিছু চালান বাতিল হয়ে গিয়েছিল। আমার মানিনীয় বন্ধু কি, এই ব্যাপারটা একটু দেখবেন যে, কি করা জেতে পারে?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাসঃ আমরা ইতিমধ্যে রিলিভ বিতরনের জন্য ভাসমান নৌকা দিয়েছি, এবং আমাদের সাধ্যের ভিতরে আর যা যা বিতরণ করতে পারি, আমরা তা করবো; কিন্তু যেহেতু আমার মাননীর বন্ধু বলেছেন, এই মুহুর্তে যাতায়াত ব্যাবস্থাটা প্রধান সমস্যা, খাদ্য বিতরন না।

মিঃ প্যাজেটঃ আমার প্রিয় বন্ধু কি একমত প্রকাশ করবেন যে, দুর্ভিক্ষ এবং উদবাস্তু সমস্যা সমাধানের পর, প্রধান ইস্যু হবে, পুর্ব পাকিস্থানের অধিকাংশ মানুশ, অপ্ল সংখ্যাক পশ্চিম পাকিস্থানিদের এমত আচরনের কারনে, পাকিস্থানী আর্মির শাষন ব্যাবস্থা আর মেনে নেবেন না? আমরা কি, ১৫০০ মাইল দূরে অবস্থিত এই দুটি রাষ্ট্রের, ভংগন ঠেকাতে কিছু করতে পারি?

স্যার আলেক ডগ্লাস-হোমঃ আমি জানি না, আমরা এই দুটি রাষ্ট্র পৃথক হয়ে গেলে, শান্তি-শৃংখলা প্রতিষ্ঠায় আমরা আসলেও কিছু করতে পারি কি না। আমি মনে করি, অনেক ব্যাক্তি, আশংকার সাথে এই ব্যাপারটি দেখছেন। প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, সাধারন নির্বাচন এবং নির্বাচিত সরকার গঠনে তার উদ্দেশ্যের কথা জানিয়েছেন। আমি মনে করি, তার এই উদ্দেশ্য পুরনের উপর এই অবস্থার সার্বিক অবস্থা নির্ভর করছে।

মি। মৌলেঃ আমি জনাব স্টোন হাউজের সাথে একমত হয়ে, মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব কে, এরুপ বিষাদগ্রস্থ অবস্থায় তার এই মানবিক এবং দ্রুত উদ্যোগকে স্বাগত জানাই; কিন্তু, মানিনীয় সচিব কি অবগত আছেন যে,   প্রসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এই গনতান্ত্রিক সরকার গঠনের আলোচনা কি সত্যিই তাদের কাছে স্বাগত হবে, যারা দেখেছে, শেখমুজিবের অপরাধ এবং তার কারাবরনের কারন ছিল, গনতান্ত্রিক সরকার গঠন এবং তার অধিকাংশ সংখ্যা প্রাপ্তি? মানিনীয় সচিব কি আরো অবগত আছেন যে, পাকিস্থানী আর্মি অনেক সেচ্ছা সেবক সংস্থা, বিশেষ করে, ওয়ার অন ওয়ান্টএর মত সংস্থাদের বাংলাদেশে রিলিফ এবং ত্রান প্রদানে জেতে দিচ্ছেন না?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ আমি জতটুকু জানি, পাকিস্থানী সরকার, স্বেচ্ছা সেবক সংস্থাদের ব্যাপারে খুব আশাবাদী, তবে তারা চায়, যেসব জাগয়া বন্যা দ্বারা ক্ষতিগ্রাস্থ সে সব যায়গা, সে সব যায়গায় রিলিফ এবং ত্রাণ কার্যক্রম চলুক। তবে আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে চাই, জাতিসংঘের পুরা ত্রান ব্যাবস্থাকে পর্যালোচনা করা উচিত। এছাড়া এখানে অনিশ্চয়তা রয়ে যাবে। কিন্তু আমি আশাবাদী, স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা গুলোকে কাজে লাগানো হবে।

মিসেস। হার্টঃ মি। হিলের এ যাবত বিবৃতি থেকে এটা কি আমরা বলতে পারি, তিনি এই ব্যাপারে একমত যে, সুষ্ঠূভাবে খাদ্য বিতরনের জন্য একটি আন্তর্জাতিক উপস্থিতি দরকার, তানাহলে এই, কোন পদ্ধতি  অবলম্বন না করে, ত্রান বিতরন করা হলে, তা সামরিক উদ্দ্যশে ব্যাবহার হতে পারে?

দ্বিতীয়ত, মি। হীলে, কি সম্পূর্ণভাবে অবগত আছেন, ওইসব প্রশ্নের ব্যাপারে, যা ব্রিটেইনের বিভিন্ন সাহায্যকারী সংস্থা দ্বারা উল্লেখিত হয়েছে?

তৃতীয়ত, জনাব হীলে যখন নিউ-ইউর্কে যাবেন, তিনি কি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পাকিস্থান এইডের কন্সোরটিয়ামের সাথে আলোচনায় করবেন, যেন ইয়াহিয়া খানকে এই রাজনৈতিক অস্থিরতা স্থীতিশীল করার জন্য একটি অকৃত্রিম ব্যাবস্থা গ্রহন করতে তাড়না প্রদান করা হয় এবং ইন্ডিয়াকে অতিরিক্ত অর্থনৈতক সাহায্য প্রদান করা হয়?

স্যার অ্যালেক ডগ্লাস হোমঃ আমার মনে হয়, একটি গুরুত্বপুর্ণ আন্ত্ররজাতিক উপস্থিতির প্রয়োজন হবে।পুর্ব পাকিস্থানে ইতিমধ্যে ৪০ জন কর্মী কর্মরত আছেন, এবং আমার মনে হয় আরো কর্মীর প্র্য়োজন হবে, বিশেষ করে যারা, যোগাযোগ এবং যাতায়াতের ব্যাপারে অভিজ্ঞ। আমি আগামী কাল স্বেচ্ছা-সেবক সংস্থাগুলোর সাথে সাক্ষাৎ করবো এবং মিসেস হার্টের উপস্থাপিত প্রশ্নগুলোর নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করবো; দেখা যাক তারা কতদুর কি করতে পারে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছি না যে, আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবো কি না, তবে আমি চেষ্টা করবো। পাকিস্থানের সার্বিক সাহায্যের ব্যাপারে, কোন্সোর্টিয়ামের পুরো পাকিস্থানের সার্বিক উন্নয়নে, একটি পরিকল্পনা প্রনয়নের চেষ্টা করছেন। মিসেস হার্ট, আমি মনে করি, পাকিস্থানের সম্মতিক্রমে, কনসোর্টিয়ামে একটি সর্বসম্মত নীতি প্রনয়ন হয়েছিল যে, অধিকাংশ সাহায্য পুর্ব-পাকিস্থানে প্রদান করা হবে, তবে, সেটা নির্ভর করছে সেখান কার রাজনৈতিক গঠন্ততন্ত্রের উপর যাকি না ভবিষ্যত রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা আনবে।

.

13.13.100

শিরোনাম সুত্র তারিখ
বৃটিশ ত্রান তৎপরতা সম্পর্কে পররাষ্ট্র সচিবের বক্তব্য কমনস সভার কার্যবিবরনী ১৮ই অক্টোবর,১৯৭১

যুক্ত রাজ্যের হাউস ওফ কমন্সে  পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সচিব, স্যার এলেক ডগলাস হিউমের বিবৃতি

১৮ই অক্টোবর,১৯৭১

মি. করম্যাক পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সচিবকে তৎকালীন সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের শরণারথীদের জন্য সরকার কর্তৃক কৃত সহযোগীতা্র ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন ।

স্যার এলেস ডগলাস হিউম- পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পাকিস্তান সরকার ও জনগনের রাজনৈতিক মীমাংসার দ্বায়িত্বের ব্যাপারে আমি বার বার বলেছিলাম। প্রকৃতপক্ষে মানবিকতার ক্ষেত্রগুলই আন্তর্জাতিক চাপা উদ্বেগের মূল কারন, এবং উ থান্ট এর বর্তমান আবেদন এবং ১১ই অক্টোবরের যুবরাজ সাদরুদ্দিন খানের আবেদন এর প্রেক্ষিতে আমি সন্তুষ্টি জ্ঞাপন করছি যে, গভর্নমেন্ট ভারতে শরণার্থী দের জন্য ৭.৫ মিলিয়ন পাউন্ড এবং পূণরায় পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ১ মিলিয়ন পাউন্ড ত্রাণের ব্যবস্থা করা হয়েছে ।

এতে আমাদের পক্ষ থেকে সর্বমোট ১৪,৭৫০,০০০ পাউন্ড শরণার্থীদের ত্রাণের জন্য এবং ২ মিলিয়ন পাউন্ড পূর্ব  পাকিস্তানের সাহায্যের জন্য দেয়া হয় । আমি আশা করব অন্যান্য দেশ গুলোও উ থন্ট এর এই আবেদনে মহত্বের পরিচয় দিবে।

মিঃ প্রিন্টিস – পররাষ্ট্র সচিব কি সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবের সঙ্গে সম্মত হবে যে শরণার্থীদের জীবিত রাখার জন্য প্রতিদিন ১ মিলিয়ন পাউন্ডের চেয়েও বেশি খরচ হচ্ছে এবং যতটা সাহায্য বাইরের দেশ থেকে এসেছে গত ছয় মাসের খরচ তার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়েছে।

অদূর ভবিষ্যতে ব্রিটেন ও অন্যান্য দেশ থেকে এর চেয়ে আরও বৃহত্তর পরিসংখ্যান প্রয়োজন হতে যাচ্ছে ।

স্যার এলেস ডগলাস হিউম- আমরা আমাদের মতো যথাসাধ্য করে যাবো কিন্তু আমি মনে করি অন্যান্য দেশের প্রচেষ্টা ও আমাদের প্রচেষ্টার সাথে যেন মিলে ।

.

13.14.101-102

শিরোনাম সূত্র তারিখ
উপমহাদেশীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায় পররাষ্ট্র সচিবের মন্তব্য কমনস সভার কার্যবিবরণী ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১

ব্রিটিশ হাউয অভ কমনস-এ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক সচিব, স্যার অ্যালেক ডগলাস-হোম এর বিবৃতি

নভেম্বর ৪, ১৯৭১

ভারতীয় উপমহাদেশ প্রসঙ্গে, কমনওয়েলথ এর সদস্য বৃহৎ দু’টি দেশ, যাদের সাথে বন্ধুত্বকে আমরা মূল্যবান মনে করি, বর্তমানে যেন কোনো এক গ্রিক ট্রাজেডির মত, তাদের নিজেদেরকে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কুণ্ডলির দিকে ধাবিত হতে দেখছে যাতে কীনা যুদ্ধের ঝুঁকিও বিদ্যমান। মানুষের দুর্দশা, যা কীনা এখানে ব্যাপক মাত্রায় বিদ্যমান, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মানব সভ্যতার এই শিক্ষা লাভে ব্যর্থতার কথা যে, মানুষ রাজনীতির চেয়ে বরং খাদ্য চায়, এবং যুদ্ধের চেয়ে শান্তি চায়। গত সপ্তাহে মিসেস গান্ধী যখন লন্ডনে ছিলেন তখন তাঁর সাথে প্রধানমন্ত্রী এবং আমার আলোচনা হয়েছে। আমি আশা করি যে হাউয বুঝবে যে, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি তা গোপনীয় এবং আমি সে আলোচনার পূর্ণ বিবরণ পেশ করতে অপারগ। এ বিষয়ে পাকিস্তান সরকারের মনোভাব সম্পর্কেও আমাদের অবগত রাখা হয়েছে।

ভারতে শরণার্থীরদের বন্যার দ্বারা সৃষ্ট এই জরুরী অবস্থায়, আমাদের বুঝতে হবে এই পরিস্থিতিটি বিভিন্নভাবে ভারতের জীবনযাত্রায় যে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে তাকে, যা সরকারের এ সংক্রান্ত নীতিকে দু’টি লক্ষ্য অভিমুখে পরিচালিত করেছে। প্রথমত, দুর্দশা, যা মর্মান্তিক এবং ব্যাপক, তা লাঘবের চেষ্টা। আমরা ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড সহযোগিতা পাঠিয়েছি ভারতে শরণার্থীদের এবং ২ মিলিয়ন পাউন্ড পাঠিয়েছি পূর্ব পাকিস্তানে। এটি করার পর, আমি মনে করি যে আমরা অন্য দেশগুলোকেও আহ্বান জানাতে পারি এই পর্যন্ত যতটুকু তারা করেছেন তার চেয়ে আরও ব্যাপকভাবে আমাদের সাথে মানবিক উদ্যোগে অংশগ্রহণের জন্য।

দ্বিতীয় হচ্ছে এই পরিস্থিতির রাজনীতি। এই দু’টি রাষ্ট্রের যুদ্ধের মতো সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার বিপদটি গুরুতর এবং বাস্তব।এই পরিস্থিতিতে, আমাদের প্রথম দায়িত্ব আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সকলের সংযম কামনা করা। আমি অব্যাহতভাবে আমার দৃষ্টিভঙ্গী ব্যক্ত করেছি যে, উত্তেজনা প্রশমন এবং শরণার্থী প্রত্যাবর্তনে সত্যিকারের উন্নয়ন তখনি আসবে যখন অখণ্ড পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে।

কিন্তু এটা বলে আমাকে এটাও যোগ করতে হবে যে, পাকিস্তানিরা ছাড়া অন্য কেউ পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য সাংবিধানিক আদর্শ কি হবে তা নির্ধারণ করতে পারবে না। পাকিস্তানিদের দ্বারা নির্ধারিত না হলে কোনো সমাধানই টিকবে না।

গৃহযুদ্ধের দুর্বিপাকের পর, ঐক্য ফিরিয়ে আনা দুষ্কর। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান একজন বেসামরিক গভর্নর নিযুক্ত করেছেন। তিনি ডিসেম্বরে উপনির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন, এবং ২৭ ডিসেম্বরকে ঘোষণা দিয়েছেন নতুন জাতীয় সংসদের বৈঠক এর তারিখ হিসেবে। তিনি সাধারণ ক্ষমার ব্যবস্থা করেছেন। ভারত থেকে ফেরত আসা শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের অভ্যর্থনা কেন্দ্র তিনি মেনে নিয়েছেন। আমি তথ্য হিসেবে এগুলো ঘোষণা করছি। শরণার্থীরা ভারত থেকে পাকিস্তানে ফেরত আসার মত পরিস্থিতি তৈরিতে এই পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট হবে কীনা তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি না। কিন্তু এরকম একটি সমাপ্তি টানার জন্য আমাদের সকলকে কাজ করে যেতে হবে। শরণার্থীদের ফেরত যাওয়া ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট। আপাতত আমরা পাকিস্তান ও ভারত উভয়কে আহ্বান জানাতে থাকবো উপমহাদেশের শান্তির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করে এমন যেকোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকতে। ইতোমধ্যে বিদ্যমান দুর্বিপাকের সাথে যুদ্ধ যুক্ত করা হবে চূড়ান্ত দুর্যোগ।

পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে এমন কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাকিস্তান দিয়েছে। তার মধ্যে প্রথম হলো সীমান্তে একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত সেনা প্রত্যাহার। দ্বিতীয় হলো, ঘটনাস্থলে জাতিসংঘের প্রতিনিধি গ্রহণের সদিচ্ছা প্রকাশ, প্রথমত, পর্যবেক্ষণের জন্য, এবং দ্বিতীয়ত, ফেরত আসা শরণার্থীদের গ্রহণ এবং তাদেরকে তাদের বাসস্থান পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য। আমি নিশ্চিত নই এই বিষয়টি ভারতে অবস্থানরত শরণার্থীরা বুঝতে পারছে কীনা। কিন্তু, ভারত মনে করে এই ধরণের যে পদক্ষেপগুলো আমি উল্লেখ করেছি তা ততক্ষণ পর্যন্ত কার্যকর হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থীর ধারা অব্যাহত আছে। পাকিস্তান থেকে কী পরিমাণ শরণার্থী এখনও ভারতে প্রবেশ করছে সে সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী তথ্য রয়েছে। আমি জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে জানতে চেয়েছি, এ বিষয়ে সত্যটি তিনি উদ্ঘাটন করতে পারবেন কীনা, কারণ, এই পর্যায়ে অন্য রাষ্ট্রগুলো কোনো সুসংহত কৌশল উদ্ভাবনের পূর্বে এটি জানা জরুরী যে এই স্রোত বন্ধ হয়েছে না কি চালু আছে।

আরও একবার বলছি, এখানে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হলো পশ্চিম পাকিস্তান এর শাসক গোষ্ঠী এবং পূর্ব পাকিস্তানে নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম এমন পক্ষের মধ্যে আলোচনা, এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেও আলোচনা।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা সংঘটনে আমাদের যদি কিছু করার থাকে আমরা তা আনন্দের সাথে করবো।

.

13.15.103-104

শিরোনাম সূত্র তারিখ

“পাক ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি”

 

দি টাইমস ৭ ডিসেম্বর ১৯৭১

“পাক ভারত পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায় ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব এলেক ডগলাস হোম এর বিবৃতি”

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধবিগ্রহের প্রকোপ স্থানীয় সরকারের ও তার সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রের কাছে একটি গভীর উদ্বেগের বিষয়। গত কয়েক মাসে আমরা দেখেছি পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে দেশ দুটির মাঝে সম্পর্কের ক্রমান্বয় অবনতি ঘটেছে। আমাদের ও অন্যান্য ক্ষমতাসীন দেশগুলোর চেষ্টা সত্বেও ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধের দিকে এগিয়ে গিয়েছে। আমাদের এখন তাৎক্ষণিক ভাবনার বিষয় এটাই, যুদ্ধটা বন্ধের চেষ্টা করা এবং একটি সঙ্গতিপূর্ণ ও সভ্য সমাধানে পৌছতে দুপক্ষের ইচ্ছেগুলোকে আমলে নিয়ে সাহায্য করা।

আমরা যখন প্রথম ভারত ও পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে ৩ জানুয়ারীর আক্রমণ ও যুদ্ধের বিষয়ে জানতে পারি তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও মিসেস গান্ধীর কাছে আবেদন করে তারা যেন তাদের ক্ষমতার মধ্যে সমস্ত কিছু করার চেষ্টা করে এই যুদ্ধের বিস্তার রোধ করার জন্য। আমরা অন্যান্য দেশগুলোর সাথেও যোগাযোগ রাখছি।

বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদনসমূহ

সামরিক পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনগুলো বিভ্রান্তিকর। এটা পরিষ্কার যে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে এবং ভারত-পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্ত অঞ্চলে ব্যাপক লড়াই চলছে। আর দুটো দেশেরই বিমান ও নৌবাহিনী এতে বিদ্যমান আছে।

আধুনিক যুদ্ধাবস্থায় যেটা সম্ভব সেটা লক্ষ করা যাচ্ছে যে, আকাশ থেকে হামলার সময় সাধারন জনগণকে নিশানা করা হচ্ছেনা।

হাউসকে জানানো যাচ্ছে যে, এই বিষয় নিয়ে ৪ ডিসেম্বর এবং গতকাল নিরাপত্তা পরিষদে সভা হয়েছে। এটা শুরু থেকেই পরিষ্কার ছিল, যে কোন প্রকার যুদ্ধবিরতি বা সেনা প্রত্যাহারের আহবানে রাশিয়া তার “ভেটো”(Veto) ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।

স্থানীয় সরকার পক্ষ থেকে বিষয়টি এভাবে দেখা হচ্ছে, এই মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে কোন ব্যর্থ সমাধান উপস্থাপন করে কোন লাভ নেই, যখন এটা জানাই যে সমাধানটি একটি বা অন্য আরেকটি দেশের ভেটো ক্ষমতা দ্বারা নাকচ হয়ে যাবে।

আমরা আমাদের সাধ্যের সমস্ত কিছু দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছি এই প্রতিকূলতা সমূহকে অতিক্রম করে যাওয়ার এবং নিদারুণভাবে জটিল এক পরিস্থিতির সমাধান খুঁজে বের করার যে পরিস্থিতির কারণে যুদ্ধের বিস্তার হয়েছে।

এই প্রচেষ্টা সমূহ এখন পর্যন্ত লাভবান হয়নি, কিন্তু আমরা সেগুলো অব্যাহত রাখবো। জাতিসংঘের অবশ্যই এই পরিস্থিতিতে একটা ভূমিকা থাকতে হবে। সেটা শুধু যুদ্ধ বন্ধের জন্য নয়, যুদ্ধ পরবর্তী উন্নয়নের জন্যও।

যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের কিংবা যুক্তরাজ্যের সম্পত্তিতে কোন ক্ষতিসাধন হয়েছে, ভারতে কিংবা পাকিস্তানে এমন কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। যদিও চা বাগানের ক্ষতি অনিবার্য হতে পারে। ২৩ নভেম্বর ইসলামাবাদে অবস্থিত হাই কমিশনার পাকিস্তানের সীমান্ত জেলায় অবস্থিত যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের নিরাপদ জায়গায় সরে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিল। যখন এটা সম্ভবপর ছিলো।

লড়াই এর বিস্তার লাভের পর থেকে আকাশ থেকে আক্রমণের, চলাফেরার উপর আরোপিত বিধিনিষেধ, সাধারণ বিমান পরিবহনের স্থতিকরণ, এসব বিষয় আমলে নিয়ে পরবর্তীতে তিনি স্ব স্বস্থানে অবস্থানের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।

বর্তমানে কোন উদ্ধার কার্যই ভারত বা পাকিস্তানে করা হচ্ছেনা। যদিও আমি পরিস্থিতি পর্যালোচনার মধ্যে রেখেছি এবং প্রয়োজনে যেকোন পদক্ষেপ নেয়া হবে।

উপমহাদেশের জনসাধারনের জন্য যুদ্ধ শুধুমাত্র বিয়োগান্ত ঘটনা। আমি হাউসকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আমরা আমাদের ক্ষমতার মধ্যে সবকিছুই করবো। এই উদ্বেগকর পরিস্থিতি সমাধান এবং প্রয়োজনিয় সমঝোতা কাজটি সাধনের জন্য।

(দি টাইমস, ৭ ডিসেম্বর,১৯৭১)

.

13.16.105-106

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পাক-ভারত যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে কমনস সভায়  ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিবের বিবৃতি কমনস সভার কার্যবিবরণী ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১

  স্যার এলেক্স ডগলাস স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারি ব্রিটিশ    হাউজ অফ কমনস ডিসেম্বর ১৩, ১৯৭১

ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে চলছে প্রচন্ড শত্রুতা। ভারতীয় বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ভেতর পর্যন্ত প্রবেশ করেছে, যশোর শহর পুরোটা দখল করে নিয়েছে এবং রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে ফেলেছে। শুধু তাই নয় বরং ভারতীয় ও পাকিস্তানী বাহিনীর মাঝে প্রচন্ড যুদ্ধ চলছে বিভিন্ন বর্ডার এলাকাতেও, যেখানে পাকিস্তানী বাহিনী ঢুকে পড়েছে ভারতের অভ্যন্তরে।

আপনারা জানেন ডিসেম্বর এর ৯ তারিখে করাচীতে একটি ব্রিটিশ জাহাজ আক্রান্ত হয়েছিল। সেখানে ৭ জন ব্রিটিশ নাগরিক মারা গিয়েছে এবং ৬ জন আহত হয়েছে। অবশ্য এই ব্যাপারে ইতোমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী দু:খ প্রকাশ করেছেন। আমরাও এর ক্ষতিপূরণ দাবি করি। তবে এই ঘটনা ছাড়া আর কোন ব্রিটিশ নাগরিকদের হতাহতের খবর পাওয়া যায় নি।

                             এয়ারলিফট

আমি অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে করাচী, ইসলামাবাদ ও ঢাকা থেকে বিমানযোগে সকল ব্রিটিশ ও অন্যান্য বিদেশিদের ফিরিয়ে আনা হয়েছে। খুলনা ও চট্টগ্রাম এ কোণো আমেরিকান রয়ে গিয়েছে কিনা সে বিষয়ে আরো নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। কেউ কেউ অবশ্য নিজ ইচ্ছায়ই পাকিস্তানে অবস্থান করছে। এছাড়া সকল ব্রিটিশ নাগরিক যারা ফিরে আসতে চেয়েছিলেন তাদেরকে বিমানযোগে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মাত্র তিন দিনে ১৩০০ এর অধিক মানুষকে রয়্যাল এয়ার এর মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এটা খুব সহজ কাজ ছিল না। বিশেষত এমন একটা সময় যখন ঢাকা শহর এরকম প্রচন্ড হুমকীর সম্মূখীন। আমার বিশ্বাস হাউজের সবাই আমাদের এই অসাধারণ অর্জনে যারা সম্পৃক্ত ছিল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ দিতে কার্পণ্য করবে না। আমাদের ডেপুটি হাইকমিশনার এবং কিছু স্টাফ এখনও ঢাকা রয়েছে।

                                অস্ত্র বিক্রয়

যুদ্ধ শুরুর পর আমরা অস্ত্রবিক্রির নীতিমালায় কিছু রিভিউ করেছি। আমি ডিসেম্বর এর ৬ তারিখে দেওয়া কথামত সেইসব রাষ্ট্রের সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছি যারা ভারত ও পাকিস্তানে অস্ত্রের মূল যোগানদাতা। এ ব্যাপারে আমি বলতে চাই, এমন যোগাযোগের কারণে অস্ত্র বিক্রির উপর সাধারন নিষেধাজ্ঞা আসার কোন সম্ভাবনা নাই। এমতবস্থায় আমাদের আচরন কেমন হবে তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আপনারা সবাই জানেন ভারতের জন্যে কোন সামরিক সহায়তা নেই। অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রীর জন্যে ভারতীয় সরকারের সাথে বিভিন্ন কোম্পানীর দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি রয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতি, উপমহাদেশের বর্তমান শত্রুতামূলক অবস্থান, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এর আচরণের উপর ভিত্তি করে উক্ত অস্ত্র সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়মিত পর্যবেক্ষন করা হচ্ছে। বিগত কয়েকটি বছর ধরে আমরা পাকিস্তানকে নিয়মিত অস্ত্র সরবারহ করছি না। তাই পাকিস্তানের সাথে আমাদের এমন কোন চুক্তি নাই।

                           যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা

এই হাউজ ইতোমধ্যেই জেনে থাকবে যে রাজনৈতিক উপায়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব একাধিকবার দেয়া হয়েছে। ডিসেম্বর এর ৭ তারিখে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল এসেম্বলি তে ভোটাভুটি হয়েছিল। যেখানে ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশকেই যুদ্ধবিরতি ও নিজ নিজ সেনাবাহিনীকে ফিরিয়ে নেবার আহবান জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে সব উদ্যোগই ব্যার্থ হয়।

এমতবস্থায় বাস্তবতার আলোকে যুদ্ধ সমাপ্ত করার জন্যে একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান প্রয়োজন। এই জন্যে আমরা সিকিউএইটি কাউন্সিলের সকল সদস্যের সাথেও যোগাযাওগ রাখছি যেন দ্রুততম সময়ে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো যায় এবং একটি গঠনমূলক প্রাতিষ্ঠানিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়।

.

13.17.109

শিরোনামঃ বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধের দাবিতে লর্ড সভার সদস্য লর্ড ফেনার ব্রকওয়ের ভাষণ

সূত্রঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস

তারিখঃ ৪ এপ্রিল,১৯৭১

এপ্রিল ৪,১৯৭১ তারিখে এক জনসভায় বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধের দাবিতে লর্ড সভার সদস্য লর্ড ফেনার ব্রকওয়ের ভাষণ

হাউজ অফ লর্ডসের এর সদস্য, ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের জন্য ব্রিটিশ আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি  লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে বলেছেন, তিনি তাঁর শৈশব কাটিয়েছেন বাঙলার মাটিতে, যার জন্য তিনি সবসময়ই নিজেকে বাঙলার একজন বন্ধু বলেই পরিচয় দেন। পাকিস্তান সৃষ্টির ইতিহাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান স্বৈরাচারী শাসকদের মত পূর্ব পাকিস্তানকে শাসন করে যাবে, এমন ইচ্ছা সম্ভবত ব্রিটেনের কখনই ছিল না। তিনি অবিলম্বে পূর্ব বাঙলার মানুষের দুর্দশাপূর্ণ পরিস্থিতি অবসানের দাবি জানান। তিনি সভায় পাঁচ দফা দাবিও রাখেনঃ

(ক) অবিলম্বে পূর্ব বাঙলার দুর্গত মানুষের জন্য কার্যকরী ত্রাণ পৌঁছাতে হবে।

(খ) সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে।

(গ) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আক্রমণ বন্ধ করে তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।

(ঘ) অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের সভা ডেকে জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসে দেশের জনগণের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ দিতে হবে।

(ঙ) পূর্ব পাকিস্তানে উদ্ভূত পরিস্থিতিকে বিশ্ব শান্তির জন্যও হুমকি স্বরূপ বলে উল্লেখ করে জাতিসংঘকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানান।

(চ) তিনি আরও জানান, ১৯৭১ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়া কমনওয়েলথ সম্মেলনে গৃহীত ‘সিংগাপুর বিবৃতি’তে উল্লেখিত স্বাধীনতার শর্তগুলো পাকিস্তান পূরণ করেছে। পূর্ব বাঙলার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য প্রতিনিধিদল পাঠাতে কমনওয়েলথের প্রভাবশালী সদস্য যেমন ব্রিটেন, ভারত এবং কানাডার সরকারপ্রধানদের তিনি অনুরোধ করেন।

নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বান করে সেখানে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রস্তাবনাকেও তিনি জোরালো সমর্থন জানান।

গার্ডিয়ান পত্রিকার সংবাদদাতা মার্টিন অ্যাডেনি ২৫ মার্চ ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তিনি সেদিন ঘটে যাওয়া ঘটনার এক মর্মান্তিক বর্ণনা দেন।

পূর্ব বাঙলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর চালানো সশস্ত্র দমন পীড়ন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়- এই যুক্তির তীব্র সমালোচনা এবং প্রতিবাদ জানান লেবার পার্টি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ের মন্ত্রী এবং বর্তমান এমপি পিটার শোর। তিনি ব্রিটিশ সরকারকে পাকিস্তানের ঘটনাবলীর দিকে গভীর মনোযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। সেই সাথে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের উপর চাপপ্রয়োগ করে হলেও পূর্ব বাংলায় রক্তপাত বন্ধের বিনীত আহ্বান জানান। তাঁর মতে, পূর্ব বাঙলার ভবিষ্যত নির্ধারণের দায়িত্ব সে অঞ্চলের মানুষের উপরই ছেড়ে দেয়া উচিৎ, পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উপর নয়। তিনি আরও জানান, এপ্রিল ৫ এ অনুষ্ঠিতব্য কমন্স এর সভায় পূর্ব বাঙলার পরিস্থিতির একটি ইতিবাচক সমাধানে পৌঁছানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে ব্রিটিশ সরকারের উপর লেবার পার্টি তার সমস্ত প্রভাব খাটাবে।

.

13.18.110

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধের দাবীতে লর্ড সভার সদস্য লর্ড ফ্রেনার ব্রকওয়ের ভাষণ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস ৪ এপ্রিল, ১৯৭১

৪ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে এক যুক্তরাজ্যের এক জনসভায় হাউস অফ লর্ডসের সম্মানিত সদস্য লর্ড ফেনার ব্রকওয়ের বক্তব্যঃ

লর্ড ফেনার ব্রকওয়ে, একি সাথে হাউস অফ লর্ডসেরএকজন সম্মানিত সদস্য এবং উপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিরোধী আন্দোলন এর অন্যতম পথনির্দেশক ছিলেন। তার বক্তব্যে উল্লেখ্য হয় যে তিনি তার শৈশব এর একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন এই বাংলায় এবং একারনেই তিনি নিজেকে বাংলার একজন বন্ধু হিসাবে ভাবেন। পাকিস্তান এর সুচনার কথা স্মরন করে তিনি বলেন যে খুব ব্রিটিশরা কখনই এই উদ্দেশ্যে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করেনি যে এটির পশ্চিম অংশ বা পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলার মানুষের উপর স্বৈরাচারী শাসন চালাবে। তিনি অনতিবিলম্বে পূর্ব বাংলার এই ভয়াবহ মানবিক দুর্যোগের অবসান দাবি করেন। তার দাবি সমুহ নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। পূর্ব বাংলার দুর্গত মানুষদের জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ত্রান সামগ্রী সরবরাহ করা।

২। সকল রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি প্রদান করা।

৩। পাকিস্তানি আর্মিদের পূর্ববাংলা হতে অবিলম্বে উতখাত এবং তাদের আক্রমনের উপর যথার্থ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করা।

৪। গণতান্ত্রিক  পন্থায় নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিদের নিয়ে অবিলম্বে একটি জাতীয় অধিবেশন ডাকতে হবে। দেশের মানুষের ভবিষ্যৎ কি হবে তা তাদের দ্বারা নির্বাচিত  গনপ্রতিনিধিরাই নির্ধারণ করবে।

৫। একি সাথে তিনি এই উদ্ভুত পরিস্থিতিকে একটি আন্তর্জাতিক শান্তির প্রতি একটি হুমকিস্বরূপ বিবেচনা করে, উক্ত বিষয়ে জাতিসংঘের সাহায্য কামনা করেন।

৬। তিনি একি সাথে এ বিশয়টি নিশ্চিত করেন যে, উক্ত বছর জানুয়ারি মাসে সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিতব্য কমনওয়েলথ কনফারেন্সে যে ঘোষনাপত্র প্রকাশ করা হয়, কমনওয়েলথ এর সদস্য হিসাবে পাকিস্তান তাতে স্বীকৃতি প্রদান করে, এবং একি সাথে স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের জন্য প্রণীত বিধিমালার অনুমোদন করে। তিনি আশা করেন যে, প্রভাবশালি কমনওয়েলথ রাষ্ট্র যেমন ইংল্যান্ড, ইন্ডিয়া কিংবা কানাডা কমনওয়েলথ সচিবালয়ে পূর্ব বাংলায় কমনওয়েলথ এর একটি পর্যবেক্ষণকারী দল পাঠানোর প্রস্তাব উত্থাপন করবে। তিনি পূর্ব বাংলার চলমান পরিস্থিতি বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে একটি সভা আমন্ত্রনের জন্য ইন্ডিয়ার প্রস্তাব এর প্রতি সমর্থন জানান।

তার বক্তব্যের পর, দ্যা গারডিয়ান পত্রিকার সাংবাদিক, মারটিন আডেনি, ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় অবস্থানকালীন তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।

এর পর, পিটার শোর, লেবার গভর্নমেন্ট এর একজন এম পি এবং প্রাক্তন মন্ত্রী, এই বক্তব্যতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন যে পূর্ব বাংলায় ঘটে যাওয়া ঘটনাসমুহ নিতান্তই পাকিস্তানের আভ্যন্তরিন বিষয়। তিনি অবিলম্বে যুক্তরাজ্যের সরকারকে এই বিষয়ে নজরদারি করার উদ্যোগ নাওয়ার দাবি জানান। তিনি ব্রিটিশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান, যেন অবিলম্বে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এর সাথে আলোচনা করে এই রক্তপাত বন্ধের জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। তিনি বলেন, পূর্ব বাংলার মানুষের ভবিষ্যৎ তারা নিজেরাই নির্ধারণ করবে, পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মিরা নয়। একি সাথে শোর ব্রিটিশ লেবার পার্টির প্রতি আহবান জানান যেন তারা আসন্য ৫ এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য কমনস ডিবেটে, ক্ষমতাসীন ব্রিটিশ সরকারের উপর সম্ভাব্য সকল চাপ সৃষ্টি করে এবং ব্রিটিশ সরকার পূর্ববাংলার এই পরিস্থিতির অবসানে ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহনে প্রভাবিত করে।

.

13.19.111-115

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষের আশংকা অক্সফার্ম ও ওয়ার অন ওয়ান্ট সংস্থার রিপোর্ট অক্সফার্ম ও ওয়ার অন ওয়ান্ট এর প্রেস বিজ্ঞপ্তি ৭ এপ্রিল, ১৯৭১

পূর্ব পাকিস্তানের সকল জনগন অপরিমেয় এক দুর্ভিক্ষের মুখোমুুখি হতে পারে অক্সফাম এবং ওয়ার অন ওয়েন্ট রিপোর্টে বলা হয়। ভয়াবহ পরিনতি হতে পারে তাই অব্যস্মাভীভাবে নিম্মোক্ত বিষয় বিবেচনা করা উচিতঃ

১। গত নভেম্বরে সাইক্লোনে যে ক্ষতি হয় এর দেনা প্রচুর পরিমানে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয় যা এখনও বন্ধ হয়নি।

২। গচ্ছিত খাবার যা চিটাগং বন্দর ও অনান্য স্থানে জমা আছে তা চালানো অপছন্দনীয় হলেও এগুলো দেওয়া যেতে পারে এবং কিছুটা ক্ষতিপূরন হতে পারে।

৩। দুর্ভিক্ষ এখনকার ছোট শস্য বুনতে সংগ্রহে ব্যহত হতে পারে। বসন্তের ফসল বুনতে বাধা দিতে পারে যা  বর্ষার প্রধান ফসল যার তেল এবং কৃষকের অনান্য ফসল কাটার বস্তুর সরবরাহ  বাধা এটা আমাদের মতামত যে দুর্ভিক্ষ নূন্যতম মাত্রায় যেতে পারে যদি সরকার জাতিসংঘে এবং অনান্য অর্ন্তাজাতিক সংস্থা , এজেন্সি যদি একসাথে পাকিস্তানি সরকারের সাথে কাজ করে সাপ্লাই প্রতিষ্ঠা করতে সাইক্লোন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার প্রথম এবং তারপর দেশের বাকী এলাকার জুনে বর্ষার বৃষ্টির আগেই আমরা বৃটিশ সরকারের এরকম একটা সহযোগীতা পূর্ন ব্যাপারে উদ্যোগ চাইছি।

পৃষ্টা-১১২

বর্তমান অবস্থার সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলো পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কিত ভবিষ্যতের মুক্তি এবং পুনর্বাসনের কাজ। অথবা ভবিষ্যতের ত্রান ও পুর্নবাসনের কাজের সাথে সম্পর্কিত পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্তিতির সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা।

১। বর্তমান সেনাবাহিনী আসে পূর্ব পাকিস্তানি ২৫ মার্চ হইতে সম্পূর্ন গোপনীয়তার দায়বদ্ধতা থেকে মার্চের শুরুতে একটি নিবিড় সেনাবাহিনী তৈরি করা হয় ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ মানুষের যৌক্তিক নিয়মে সেনাবাহিনীর লক্ষ হয় সকল বাংলাদেশী জাতীয়বাদী সংঘটন পিষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রন করার জন্য।

২। সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য অর্জন করা হয়নি। সকল রিপোর্ট থেকে এটা মনে হবে যে যদিও নিয়ন্ত্রন হয়েছিল ঢাকার মধ্যে মোটামুটি দ্রুত কিন্তু এটা চট্রগামে সহজে ছিল না এবং কিছু ছোট শহর গুলোতে এখনো কোন প্রভাব পড়তে পারে নি অধিকাংশ গ্রাম এলাকাগুলোতে স্পষ্টভাবে , পশ্চিম পাকিস্তানের বাঙ্গালিদের স্পষ্টভাষী অবমাননার তাদের বাংলা জাতীয়বাদী আন্দোলনের মূল শক্তি অবমূল্যায়নের দিকে নিয়ে গেল। যাই হোক সেনাবাহিনী সম্ভবত নিহত করেছে প্রকৃত  সম্ভাব্য নেতাদের এবং গুড়ো করে দিয়েছে তাদের প্রাথমিক প্রতিরোধ।

বিদেশী সরকার গুলো আচরন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন এবং তাদের সামকরন ভাবে নেতিবাচক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে সেনাবহিনীর প্রাথমিক নির্মম সাফল্যর।

ইউ.কে এর যথেষ্ঠ বিনিয়োগ ছিল পশ্চিম পাকিস্থানে এবং যেহেতু দুর্যোগের আশংকা তাই হাই কমিশন খুব সতর্কের সাথে নিরুৎসাহিত করেছে ত্রান সংস্থাগুলোকে  যাতে তারা অধিক ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় অতিরিক্ত ত্রান না করে কেননা এটা ক্ষতিকর হতে পারে । এটা ভাবার বিষয় যে হাই কমিশনের নূন্যতম ধারনা ছিল যে, দীর্ঘমেয়াদী সৈন্য শক্তি প্রয়োগ হতে পারে কারন আমাদের শক্তি ও সামর্থ্য যথেষ্ট ছিল এটা শক্তি প্রয়োগ শুরুর আগেই

থেকে জানত। ইউ.এস স্বেচ্ছাকৃত শক্তি প্রয়োগের ব্যপারে তেমন আগ্রহী ছিলনা অন্যদিকে ইউ.কে গ্রহনযোগ্য বিনিয়োগ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং সত্যিকারার্থে তেমন উদ্ভিগ্ন ছিল না কেন্দ্রিয় সরকারের সাথে কোন প্রকার

গোপনীয় যুদ্ধ কৌশল নিয়ে সাহায্য করা সভ্যতার চীন তাদের অঞ্চলের উপর দিয়ে সামরিক বাহিনীর চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল এবং যেহেতু ২৫ মার্চের ঘটে যাওয়া ঘটনা পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ব্যাপক কিছু ছিল। যেহেতু চীন সম্পূর্ন ঘুরে যাওয়া সম্ভাবনা ছিল যখন তারা মরিয়া বাহিরের সাহায্যেও জন্য একমাত্র রাশিয়ার একটা দেশ যারা নথিযুক্ত করেছিল। যারা উচ্চকন্ঠে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধী ছিল এবং তারাই বৃহৎ আকারে হাত বাড়িয়ে চরমভঅবে পরাস্থা নেতৃত্বহীন বাংলার পাশে চীন কিছু করবার পূর্বেই যাতে ফের রাজনীতিকভাবে কিছু সুবিধা নেওয়া যায় এবং বাংলা থেকে চীন পন্থীভাব নিশ্চিত করতে । ইন্ডিয়া চোখে আঙ্গুল দেবার মত আগ্রহ , আবেগ প্রদর্শন করেছিল বাঙ্গালিদের জন্য যা না বলা হত পূর্ব পাকিস্তান তাদের বহু সুবিধা পেত না। যা দেখে পশ্চিম পাকিস্তান তাদের রাজনীতিতিতে একটা প্রভাব বিরাজ করে। তথাপি ইন্ডিয়ান ধারা বাজায় রেখে যথেষ্ট আগ্রহ ও উদ্দিপনার সাথে দীর্ঘমেয়াদী আর্মি অপারেশান চালিয়ে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনকে উদ্দিপ্ত করতে থাকেন তাদের তীব্র কঠিন কষ্টদায়ক চাপ থেকে । বর্তমানে পূর্বপাকিস্তানকে স্বীকৃতি দেওয়া প্রাসঙ্গিক বিষয় নয় কিন্তু হতে পারত যদি সামরিক আক্রমন চলতে থাকত যা ঘটেছিল ভিয়েতনামের সাথে।

এখানে তিনটি বিষয়ে সম্ভাব্য ফলাফল ছিল।

পৃষ্টা-১১৩

মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র ত্রয়োদশ অধ্যায়

ক। সেনাবাহিনী সর্বাতœকভাবে নিয়ন্ত্রন নিয়ে নিয়েছে যা সত্যিই অবিস্বাস্য সম্ববত এপ্রিলের শেষ নাগাদ এটা হবে।

খ) বাহিরের কোন সাহায্য ছাড়াই বাঙ্গালিরাও সর্বাতœকভাবে নিয়ন্ত্র নিয়ে নিয়েছে এটাও সত্যিই অবিস্ব্যাস্য।

গ। মূল শহর বন্দর বিমান বন্দর এবং তার আশেপাশের অঞ্চল সেনাবাহিনীর দ্বারা কোন নিয়ন্ত্রন ছাড়াই সামরিক অচলাবস্থা চলছে যা শুধু মাত্র দেশের অন্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করছে।

৫। যদি বিবেচনা করা হয় তবে পশ্চিম পাকিস্তানের উপর পশ্চিম সরকারের চাপ ছাড়ই এমন অবস্থা দাড়াবে যেখানে অধিকাংশ লোকজন হতাশা ও পরাজয়ের অনুভূতি নিবে এবং এটা নি:সন্দেহে নকশাল বাদী সত্যবাদী , পশ্চিমা বিরোধীদের সমর্থন বৃদ্ধি করবে।যোগাযোগ ব্যবস্থা রাস্তাঘাট, ব্রীজ , কালভার্ট, গাড়ীঘরা নৌকা ও রেলের যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এবং এর সাথে অভ্যন্তরীন ও আমদানীতে ও খাবারের বিতরন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে এবং জরুরী ত্রান সহায়তা দরকার পড়বে। তথাপি এখন সামরিক সরকার স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য বিদেশী সহায়তা দিতে অনুমোতি দিবে।

 ৬। যদি সম্ভাবনা বিবেচনা করা হয় তবে আওয়ামিলীগের বাকীদের পরিস্থিতির উপর ঢিলেঢালা বজায় রাখতে যেখানে অধিকাংশ নেতা সৈন্য দ্বারা গুলিবিদ্ধ এটা বিভ্রান্তি বাড়বে এবং অস্থিরতা তৈরি হবে কিছু সময়ের জন্য । সুযোগ দিতে এই জন্য উপরে বর্নিত একই চরমপন্থার জন্য বিবেচনাযোগ্য সুযোগ আসবে। তথাপি সাধারন জনগন তাদের সাফল্য নিয়ে উজ্জল হবে এবং সকল সমস্যার জন্য পাকিস্তানি আর্মিদের উপরে দোষ চাপাবে এবং ফলশ্রুতি সর্বক্ষেত্র থেকে ব্যাপক বিদেশী সাহায্য গ্রহন করা হবে যা অর্জিত নিবিড় ভাবে চিহ্নিত করা হয়নি ।

পশ্চিম সরকার বা পশ্চিম পাাকিস্থানের সরকারের কাছে পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের উপর যা কিনা পর্যাপ্ত পরিমান চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে।

স্বল্প মেয়াদী ত্রান ব্যবস্থা এই মহামারী সমস্যা খানিকের জন্য স্বস্তি দিতে পারে। দীর্ঘ মেয়াদী সুযোগ সুবিধা নির্ভর করছে বাঙ্গালীর অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক সংগ্রামের উপর। এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে সিবিসি দলিল স্বল্পমেয়াদী ও অনিশ্চিত কৌশলের চেয়ে।

৭। যদি সি বিবেচনায় নেয়া হয় যতদূর এর সম্ভাব্য পরিমান হবে। অচলাবস্থা যে মূলে অমূল বৃষ্টি আসা পর্যন্ত চলবে। আর্মি ও জনগনের জন্য যোগান ব্যবস্থা অসহনীয় হয়ে যাবে। এই মন্দতার কৌশলগত ব্যবস্থা।বাঙ্গালির সাফল্য শুধুমাত্র বাহিরের ত্রান সামগ্রী জনগনের মধ্যে ক্ষুদা ও অপুষ্টি ব্যপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। যেখানে সাইক্লোনে আক্রান্ত গ্রামআঞ্চল দেড় মিরিয়ন জনগনের দুর্দসা লাঘবে সৈন্য নিয়ন্ত্রন থেকে চেষ্টা করবে না।

পৃষ্টা-১১৪

৮। এটা এখন অনুমান করা সম্ভব যে , ঘুর্নিঝড় ও সৈন্য দ্বারা গৃহিত সামরিক অভিযানের ফলাফল মানুষের চাহিদা কী রুপ নিবে।

অ.     দেশের সব অংশে খাদ্য সরবরাহ ভেঙ্গে পড়েছে অবহেলিত হচ্ছে। যদি বৃষ্টি আরম্ভ হতে শুরু করে তবে করে অধিক পরিমানে প্রয়োজনীয় খাবার ঘুর্নঝড় আক্রান্ত এলাকায় সরবরাহ প্রায় অসম্ভব। চট্রগাম ডাকের সংরক্ষন ক্ষমতা হবে দেড় লক্ষ টন। এটা মর্চের মাঝামাঝি ছিল। এটা যুক্তিসঙ্গতভাবেই অবুমেয় যে সেখানে পরবর্তী দুমাসের জন্য সন্তুষ্ট পরিমান খাদ্যদ্রব্য কিংবা খাদ্যশস্য ছিল সমগ্র দেশের জন্য। এলাকার ক্ষতির পরিমান ছিল অজানা। সে সময়ে আমদানিকৃত শস্যের পরিমান একটু বেশি ছিল। ১৮/০৩/৭১। উপরন্তু তার সময়ের মাঝামাঝি সময়ের ফসল শীতের সেচের মাধ্যমে বোরো ফসল এপ্রিলের দিকে উঠিয়ে আনা উচিত। স্থানীয় লোকবল সাধারন ভাবে সহজলভ্য না হওয়ার দরুন আমদানীকৃত স্থানীয় শ্রমের উপর নির্ভরশীলতার দরুন ফসল উৎপাদন সম্পূর্ন রুপে হবে না। কারন শ্রম তখন সহজলভ্য হচ্ছে না।

ই.      যোাগাযোগ নিচের সংক্সিপ্ত বিবরন থেকে অনুমান করা যেতে পারে ঃ বহু যানবাহন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বহু রাস্তা, সেতু ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ট্রেনের লাইন নেক জায়গায় কেটে ফেলা হয়েছে এবং মজুদ কিছু হয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘুর্নিঝড়ের কারনে নৌ বানিজ্য পুনরুদ্ধার সম্ভব হচ্ছে না।

ঈ. ভবিষ্যৎ কৃষি উৎপাদন ঃ আক্রান্ত এলাকার ষাড় আমদানী বন্ধ হয়ে পড়েছে। অবৈধ পথে ইন্ডিয়া থেকে         আমাদনী বড় পরিমানে আমদানী বন্ধ । তার মধ্যে সন্দেহাতীতভাবে সৈন্যদের খাদ্য সরবরাহ করার জন্য অনেক গুলো জবাই করা হয়েছে। খাদ্যের জন্য বীজ ব্যবহারের ফলে এবং সার সরবরাহ বিঘিœত হবে সারা দেশ ।

উ. কৃষি কাজ যান্ত্রিকীকরন ঃ চাষাবাদের সময় লক্ষণীয় কমাতে হবে এবং জ্বালানী সরবরাহ স্বল্প সময়ের মধ্যে হতে হবে। সাথে ধানক্ষেতের উপড় উপর বায়ু অদূষনকারী সেচন প্রয়োগ এবং মূল ফসলের নামে সহায়ক ফসল উৎপাদনে একটি বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে এটি যদিও অত্যন্ত ব্যয়বহুল একশ একর প্রতি খরচ ৩০০ ডলার।

ঊ. মেডিকেল এটা ধারনা কারা যায় যে মেডিকেল সুবিধা সরবরাহ আর্মি দ্বারা বড় পরিসরে পরিচালিত হবে এবং সত্যিকারের জরুরী মেডিকেল সেবায় প্রয়োজন পড়বে যা সাইক্লোন পরবর্তী সময়ে নেয়া হয়নি/বাস্তবীকভাবে অনুপস্থিত।

ঋ. ভবন ও নিরসন: সময় এমন হয়ে গেছে যে পুরোপুরী স্থয়ী ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান আত্রান্ত এলাকায় খুব কম পরিমানই নেয়া যাচ্ছে। এটা হতে পারে এই কারনে যে মজুদের কিছু পরিমান বা সংরক্ষিত মজুদের কিছু এলোমেলো হয়েছে ১৯৭১ এর মধ্য থেকে যে ভবনগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তারজন সকল সম্প্রদায়ের সমর্থনে একটা সাধারন ভবন তৈরির নীতিমালা প্রয়োজন।

এ. সাইক্লোন ও সতর্কতা ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা: সতর্কতা ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় হতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ বাথ মেরমতের কাজ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এবং মে ও আক্টোবর মাসের ঘুর্ণিঝড়ের পরিসংখ্যান সম্ভাবনা সম্পূর্নভাবে অপ্রস্তুত ও প্রতিরক্ষাহীন অসহায় জনগনের উপর আঘাত আসবে যার ক্ষতি হবে অসামাঞ্জস্যপূর্নভাবে।