You dont have javascript enabled! Please enable it! বিভিন্ন যুদ্ধের বর্ননা ১০ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
১। মুক্তিসেনাদের সাফল্য বর্ননা করে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ আর্কাইভস মুজিবনগর জুন-আগস্ট, ১৯৭১

ট্রান্সলেটেড বাইAparajita Neel

<১১, , >

নিউজ বুলেটিন (পাঁচ)                                               ২২শে জুন ১৯৭১

বাংলাদেশ তথ্য ব্যুরোঃ পূর্বাঞ্চল

নোয়াখালী রণাঙ্গণে ২৯০ জন শত্রুসেনা খতম

নোয়াখালী জেলার ফেনী মহকুমার অন্তর্গত ছাগলনাইয়া এলাকায় ফুলগাজী চানগাজীতে গত ১৭ই জুন থেকে ২০শে জুন পর্যন্ত চারদিনব্যাপী বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে বহু পাকসৈন্য হতাহত হয়। পরবর্তী খবর জানা গিয়েছে যে, এই রণাঙ্গনে হানাদার সৈন্যের মৃত্যুসংখ্যা ২৯০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতিপূর্বে প্রাপ্ত প্রাথমিক খবরে এই মৃত্যুসংখ্যা ২০০ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভৈরবে ২০ জন হানাদার সৈন্য নিহত

ময়মনসিংহ থেকে আমাদের সংবাদদাতা জানাচ্ছেন, ভৈরব পাকসৈন্য বাহিনীর উপর বাংলাদেশ বাহিনী এক দুঃসাহসিক আক্রমণ চালায়। বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে বিশজন হানাদার সৈন্য নিহত হয়। বাংলাদেশ বাহিনীর গেরিলা দল ভৈরব ব্রিজে মাইন স্থাপন করে এবং এই মাইন বিস্ফোরণে ব্রিজটা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

মিয়াবাজারে প্রচন্ড সংঘর্ষঃ ৫০ জন হানাদার সৈন্য নিহত

কুমিল্লা জেলার মিয়াবাজারে বাংলাদেশ বাহিনী হানাদার পাকসৈন্যদের ক্যাম্পের উপর আক্রমণ চালান। বাংলাদেশ বাহিনী এই আক্রমণে বোমা, মেশিনগান, রকেট নিক্ষেপ করেন। গত ১৯শে জুন উভয় পক্ষের মধ্যে এই সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং ১৮ জন আহত হয়। হানাদার বাহিনী এই যুদ্ধে কামান ও মর্টার ব্যবহার করে।

 

রেল সেতু উড়িয়ে দেয়া হয়েছে

কুমিল্লা জেলার লালমাইয়ে বাংলাদেশ বাহিনী গেরিলা তৎপরতা চালিয়ে বিদ্যুৎ লাইনের একটি পাইলন উড়িয়ে দিয়েছেন। গত ১৯শে জুন গেরিলা দল ডিনামাইট নিয়ে নিকটবর্তী রেল সেতুটা উড়িয়ে দিয়েছেন।

কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ বাহিনীর গেরিলা তৎপরতা বৃদ্ধিতে হানাদার বাহিনীর মধ্যে ত্রাসের সৃষ্টি হয়। কুমিল্লা জেলার মন্দভাগ এলাকায় হানাদার বাহিনিকে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে গেরিলা দল ৯ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করে। গত ১৯শে জুন রাজাপুরে বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে এক খণ্ডযুদ্ধে ১৪ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। গত ১৮ই জুন এবং ১৯শে জুন নয়নপুরে গেরিলাদের আক্রমণে ১০ জন হানাদার সৈন্য নিহত হয়।

আসাম পাড়াতে ৫০ জন সৈন্য খতম

 

সিলেট জেলার আসাম পাড়ায় বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে হানাদার বাহিনীর প্রচন্ড যুদ্ধে ৩০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।

পূর্ব সেক্টর রিপোর্টার

৮ আগস্ট

(ক) কুমিল্লা সেক্টর

১। ১৯৭১ সালের ৪ আগস্ট মুক্তিফৌজ চটেশ্বরে (Cotershahar) অবস্থিত পাকবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সেখানে ৩০০টা থেকে ৬০০টা পর্যন্ত ৩ ঘন্টা দীর্ঘস্থায়ী একটি খণ্ড যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর ৫ জনকে হত্যা করে এবং ২ জনকে আহত করতে সমর্থ হন।

২। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিফৌজ চানখোলা একটি পাকিস্তান আর্মি টহলে অতর্কিত হামলা চালায়। এবং এই যুদ্ধে মুক্তিফৌজ পাকবাহিনীর ৬ জনকে হত্যা করে এবং ৯ জনকে আহত করতে সমর্থ হন। মুক্তিফৌজ এই অপারেশনে মর্টার ব্যবহার করেন।

৩। ১৯৭১ সালের ২ আগস্ট মুক্তিফৌজ চৌদ্দগ্রামের কনস্তলায় (Konoshtala) একটি পাকিস্তান আর্মি টহলে হামলা করে এবং তাতে তারা পাকবাহিনীর ৪ জনকে হত্যা করে এবং ৫ জনকে আহত করতে সমর্থ হন। মুক্তিফৌজের আক্রমণে পরাজিত হয়ে পালাবার সময় পাকবাহিনী সুবনিতে (Suboni) একটি নিরাপরাধ মেয়েকে হত্যা করে।

৪। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট মুক্তিফৌজ চৌদ্দগ্রামের সুরাইনল (Suryanal) এবং মাদলীতে (Madali) পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর আক্রমন করে পাকবাহিনীর ৮ জন সেনাকে হত্যা এবং ২ জনকে আহত হয়।

৫। ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট আরেকটি অপারেশনে চটেশ্বরে (Cotershahar) মুক্তিফৌজ একটি সম্মুখ যুদ্ধে পাকআর্মির ৪ জন সৈন্যকে নিহত এবং ২ জনকে আহত করতে সমর্থ হয়।

স্বাক্ষর

৭-৮-৭১

 

বিশেষ কমান্ডো একশন প্রতিবেদনঢাকা

১। বৈদ্যর বাজার সাব-ইউনিটের গেরিলারা বৈদ্যর বাজার থেকে সোনারগাঁও গেট পর্যন্ত সড়কে ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী মাইন স্থাপন করে রাখে। তাতে ১৯৭১ এর আগস্টের ১৪ তারিখ মধ্যরাতে, প্রায় ১২ঃ৩০ মিনিটে পাকবাহিনীর সশস্ত্র একটি টহলরত দলকে বহন করা দুটি জীপ এবং একটি স্কুটার সম্পূর্নরুপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনায় ১১ জন পাকিস্তানী সৈন্য এবং ৩ জন রাজাকার মারা যায়।

২। ১৯৭১ এর ৯ আগস্ট রাত প্রায় ৯ টায় জামপুর (Zampur) ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান জয়নাল কাজী এবং তার অন্য একজন সক্রিয়সহযোগীকে হত্যা করা হয়।

৩। ১৯৭১ এর ১০ আগস্ট বৈদ্যর বাজার ইউনিয়নের সবচাইতে কুখ্যাত পাকসহযোগী মান্নান মোল্লা তার পরিবারের ৪ সদস্যসহ নিহত হয়।

৪। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা নিন্মোলিখিত জায়গায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন এবং ১৪ তারিখ ভোর ৬০০ টা থেকে ১৫ তারিখ দুপুর ১২০০ পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করেন।

       ক। বৈদ্যর বাজার থেকে কৈকর টেক (Kaikar Tek)

                        খ। সোনারগাঁও থেকে সি এন্ড বি রোড

                        গ। বৈদ্যর বাজার থেকে আনন্দ বাজার

৫। বৈদ্যর বাজার থেকে নিন্মলিখিত অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়ঃ

ক। মাজুমপুরন (Mazumpuron) পোস্ট অফিসের, মোষেরচর গ্রামের মান্নান তালুকদারের কাছ থেকে ১১ আগস্ট ১৯৭১ এ ১ টি পিস্তল ও ১ টি দুই নলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

খ। ঐ একইদিনে বালিয়াপাড়া পোস্ট অফিসের পেরাব গ্রামের হাবিবুর রহমানের কাছ থেকে একটি এক নলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

গ। বাড়াদি (Baradi) পোস্ট অফিসের আলমাদি (Almadi) গ্রামের ইউনুস ভুঁইয়ার কাছ থেকে ১ টি দুই নলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

ঘ। ১৯৭১ এর ১৫ আগস্ট খামারগাঁও গ্রামের হাফেজ সরকারের কাছ থেকে ১ টি এক নলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

ঙ। ১৯৭১ সালের ১৪ আগস্ট সোনামুড়ি পোস্ট অফিসের সোনামুড়ি গ্রামের নূর হোসেনের কাছ থেকে ১ টি এক নলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

৬। ডেমরার কাছে মুক্তিযোদ্ধারা ২০-২২ জন রাজাকারকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা দুটি নৌকায় করে কোরে কোন একটি অপারেশনে যাওয়ার পথে রাস্তায় রাজাকাররা তাদের উপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন রাজাকারদের উপর গুলি চালালে তারা সবাই নিহত হয়। তাদের কাছ থেকে ৭ টা ৩০৩ রাইফেল এবং ৫ টি রেইন কোট উদ্ধার করা হয়।

স্বাঃ/-সুলতান মাহমুদ

সংবাদদাতা

পূর্ব সেক্টর-২

প্রেস অ্যান্ড লিয়াজো অফিসার

নিউজ বুলেটিনকুমিল্লার নদীতে এমব্যুশ

শালদা নদী এলাকায় শত্রুপক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। সেখানে ২৬শে আগস্ট থেকে ২৮শে আগস্ট পর্যন্ত (মন্দভাগ এবং নয়নপুর এলাকাসহ) শত্রুপক্ষের ২১১ (দুইশত এগারো) জন নিহত এবং অনেক আহত হয়। শত্রুপক্ষে নিহতের সংখ্যা ৩০০-এর বেশী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সালদানদী এরিয়া, যেখানে শত্রুর উপর ক্রমাগত নজর রাখা হয়েছে এবং অতর্কিত আক্রমন করা হয়েছে; যেখানে শত্রুপক্ষের অনেক কর্মকর্তা বিভিন্ন অপারেশনে নিহত হয়েছে; যেখানে শত্রুপক্ষকে নানান ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছিল; যেখানে শত্রুপক্ষকে বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন স্থানে বারবার দৌড়ে পালাতে হয়েছে; সেখানে মুক্তিফৌজ আবার তাদেরকে টার্গেট করে নিজেদের তৃষ্ণা মিটাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। যে তৃষ্ণা শত্রুপক্ষের শক্তিকে প্রায় শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দিয়েছে। শত্রুর রেশন লাইনকেটে দেওয়া হয়েছে, যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে, অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহও থামিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে, একজন ক্যাপ্টেনসহ, ২৬শে আগস্ট শত্রুপক্ষের ৮১ জন, ২৭শে আগস্ট ৪৫ জন এবং ২৮শে আগস্ট ৮৬ জন সৈন্য নিহত হয়।

১৯৭১ সালের ২৬ আগস্ট সকালে শত্রুসৈন্য বহন করা এক নৌকা ব্রাহ্মণপাড়া থেকে ধান্দোইল (dhandoil)-এর দিকে রেকি করার জন্য আসছিলো। তখন মুক্তিফৌজ তাদের উপর অতর্কিত হামলা করলে একজন অধিনায়কসহ দশ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিফৌজ আরো প্রাণশক্তি এবং প্রতিশ্রুতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরলো। মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের কাছে খাবার এবং গোলাবারুদ সরবরাহ প্রায় অসম্ভব করে দিলো। মন্দভাগ থেকে দুটি নৌকায় করে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নিয়ে আসার সময় মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের উপর অতর্কিত হামলা করে ১২ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। অই একই দিন সকালে নয়নপুর থেকে মন্দভাগে রেশন এবং গোলাবারুদ সরবরাহ করার জন্য চেষ্টা করলে তাদের ২ টি নৌকা ডুবিয়ে দেয় মুক্তিফৌজ এবং সেখানে ১৪ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একইদিন সকাল প্রায় ১১টার দিকে মৃতদেহ উদ্ধার করার জন্য আরো দুটি নৌকায় করে পাকিস্তানী সৈন্য এলে আগে থেকে এমব্যুশ করে থাকা মুক্তিফৌজ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাতে পিছনের নৌকাটি পালিয়ে যেতে পারলেও সামনের নৌকাটিকে দুবিয়ে দেয়া হয় এবং এতে ৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। একইদিনে মুক্তিফৌজ পাকসেনাদের আরেকটি রেশন ও গোলাবারুদ সরবরাহ বানচাল করে দেয়। শত্রুপক্ষ ৪ টি নৌকায় করে রেশন এবং গোলাবারুদ নিয়ে এবং আরো একটি নৌকা তাদেরকে পাহারা দিয়ে ব্রাহ্মপাড়া থেকে নয়নপুরের দিকে আসার চেষ্টা করলে আগে থেকেই উত্তর দিকে ওঁত পেতে থাকা নাগাইশ মুক্তিফৌজ তাদের উপর হামলা করে। এতে শত্রুপক্ষের ৩টি নৌকা ডুবে যায় এবং বিশজন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। সর্বশেষে পশ্চিম দিক থেকে ২টি নৌকা মৃতদেহ সংগ্রহ করতে এলে, তারা মুক্তিফৌজ-এর ফায়ারিং রেঞ্জের ভিতরে থাকায় আরো ৬ জন পাকিস্তানী সৈন্য ঘটনাস্থলে মারা যায়।

উত্তর নাগাইশ(Nagaish), সেই একই স্থানে, যেখানে ২৮শে আগস্ট উপরোক্ত অপারেশন হয়েছিল, মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষকে এটা একদম স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, নতুন করে আবার রেশন বা অস্ত্র/গোলাবারুদ সরবরাহের প্রচেষ্টা তাদেরকে স্রেফ মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিবে। ২৮ তারিখে ৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্যকে বহন করে ৩ টি নৌকা পশ্চিম দিক থেকে নয়নপুরের দিকে আসছিলো। মুক্তিফৌজ তিনটি নৌকাকেই ডুবিয়ে দেয় এবং ঐ ৫০ জন পাকিস্তানী সৈন্যই ঘটনাস্থলে মারা যায়।

৯:০০ টার দিকে ৩০ জন পাকিস্তানী সৈন্যসহ ২ টি নৌকা সাম্নের দিকে আগাতে চাইলে তারা মুক্তিফৌজের আক্রমণের মুখে পরাস্ত হয় এবং এতে ঐ ৩০ জন সৈন্যর সকলেই মারা যায়। নৌকা দুটিও ডুবে যায়।

২৭শে আগস্ট পাকিস্তানী সৈন্যরা নয়নপুর, হরিমঙ্গল, শশীদল এলাকা থেকে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায় মুক্তিফৌজের উপর। কিন্তু মুক্তিফৌজ পালটা আক্রমন চালালে শত্রুরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এবং এতে ঘটনাস্থলেই ১৫ জন পাকিস্তানী সৈন্য মারা যায়।

এছাড়াও মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের বিভিন্ন অবস্থানের উপর আক্রমন চালালে ৩০ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয় ও ৩২ জন আহত হয়।

আল চৌবাশে ১৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২১ জন আহত হয়। মাধবপুরে ১ টি শত্রু জীপ্ এবং একটি ৩ টন ট্রাক ধ্বংস করে দেয়া হয়। ফলে, ৪জনশত্রুসৈন্য মারা যায় এবং ৬ জনআহত হয়। মহেশপুর এবং দেউশে মুক্তিফৌজের একটি অতর্কিত হামলায় শত্রুপক্ষের ১১ জন নিহত ও ৯ জন আহত হয়।

 

 

কুমিল্লার উত্তর পূর্ব অংশ

২৮শে আগস্ট কালিকাপুর এবং মিরপুরে মুক্তিফৌজের বিভিন্ন অতর্কিত আক্রমনে ১০ জন শত্রুসৈন্য কালিকাপুর নিহত হয় এবং ৯ জন আহত হয়। মিরপুরে মুক্তিফৌজের হাতে ৪ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং একজন আহত হয়।

চৌদ্দগ্রাম এবং বিবির বাজার সাব সেক্টর

বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে ১১ জন রাজাকার নিহত হয়। গোলাবারুদসহ ৪টি 303 রাইফেল আটক করা হয়।তেতাবমি, ছাঁচরা, ও বারসিতে শত্রুঘাটির উপর রেইড করা হয়। মুক্তিফৌজের হাতে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৯ জন পাক পুলিশ এবং ২০ জন রাজাকারসহ অনেকে আহত হয়। ২৬ আগস্ট ছাঁচরা ১১ জন এবং ২৫শে আগস্টতেতাবমিতে (Tetabomi) ২ জন পাকসেনা মুক্তিফৌজের হাতে মারা যায়।

ফেনী (নোয়াখালী জেলা)

মুক্তিফৌজ ফেনী সড়কে হাসানপুরের কাছাকাছি একটি 75’X12′ সেতু উড়িয়ে দেয়। এর ফলে ফেনী-বিলোনিয়া মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্নরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফেনী-কুমিল্লা সড়কে ৩ টি টেলিফোনের খুঁটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। যার ফলে, ফেনী-কুমিল্লা টেলিযোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হয়।

সংবাদদাতা

পূর্ব সেক্টর-২

৩০-০৮-১৯৭১

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদর দপ্তর প্রকাশিত বিভিন্ন সেক্টরের যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনমালা বাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর জুলাই-আগস্ট, ১৯৭১

 

<১২, , ৬-১১>

ট্রান্সলেটেড বাইঃ

Ashrafi Nitu <6-11>

Iffat E Faria <11-18>

Fazla Rabbi Shetu <18-24>

Aparajita Neel <25-34>

Kazi Wasimul Haque <35-42>

 

 

গোপনীয়

বাংলাদেশ ফোর্সের সদরদপ্তর
নং ৩০১২\বি ডি এফ\জি এস (১)
৩১ ই জুলাই,১৯৭১

প্রতি,

সাদেক খান
৪\এ, পাম এভিনিউ
প্রযত্নে-ব্যারিস্টার এ সালাম
কলকাতা-১৯

বিষয়: রেডিও ও প্রেসে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি রিপোর্ট

আমি আপনাকে নিউজলেটার পাঠাচ্ছি। মেমো নং-১, তারিখ ৩১ জুলাই, ৭১। দয়া করে ক্যামেরাম্যান উজ্জ্বলকে অবিলম্বে প্রেরণ করবেন। মেজর খালিদ তাকে পাঠানোর কথা বলেছেন ।

ধন্যবাদ ।

স্বাক্ষর : সুলতান এম খান

এনক্লোজার

*****

কুমিল্লা, ঢাকা, ফরিদপুর সেক্টরের উপর প্রতিবেদন

স্মারপলিপি নং-১
৩১ ই জুলাই,১৯৭১

ফরিদপুর

ফরিদপুর জেলায় মিলিটারি বাহিনী দ্বারা যেসব তীব্র অতর্কিত আক্রমণ সংঘটিত হয়েছে তা থেকে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলো হতে ধারণা পাওয়া যায়।

(ক) ২০ ই জুলাই মুক্তিফৌজ শান্তি কমিটির(তথাকথিত) একটি বৈঠকে অতর্কিত আক্রমণ করে। এ আক্রমণে শান্তি কমিটির সম্পাদক,সক্রিয় সদস্য নুরুল ইসলাম উভয়ই নিহত হয়। এছাড়াও তাদের দুইজনসহযোগি নিহত। এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে মাদারিপুর জেলার অন্তর্গত পালং উপজেলায়।

নিম্নোক্ত বিভিন্ন ঘটনার কারণেসহযোগীদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সরকার প্রদত্ত মেশিনসমূহ মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে স্বাধীনতাকামী বাহিনীর বিভিন্ন আক্রমণ দ্বারা।

(খ) ২৬ শে জুলাই নারিয়া পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ হয় এবং এই আক্রমণে একজন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ নিহত হয়।

(গ) পালং পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত আঙুরিয়া বাজারঃ পাট গুদামের ২৫০০০ মণ (আনুমানিক) পাট পুড়িয়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। তহসিল দপ্তরের সরকারি নথি এবং কৃষি অধিদপ্তর সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে।

(ঘ) রাশেদ ফকির,রাশেদ ঢালি এবং হাফিজসহ সকল শত্রুসহযোগী নিহত হয়। এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে খাদেরগঞ্জ পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত শাহাজাহানপুর বাজারে। এছাড়াও পালং পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত ধর্মশ্বেরের কাদির খান ও নারিয়া পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত ইউনুস নামে অন্য দুইসহযোগী নিহত হয়।

রজস্ব অফিসের সকল নথিপত্র এবং পালং পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত ছিড়ান্দির মুনসেফ কোর্টও পুড়িয়ে ফেলা হয়। গোসাইরহাটেও পুড়িয়ে দেয়া হয়।

এছাড়াও গোস্বিরহাট থানার নিকটে পামোদিয়ায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও বেতার স্টেশন ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হয়। এই ঘটনা ঘটে ভেদেরগঞ্জ পুলিশ স্টেশনে।

কুমিল্লা

(ক) ২৫,২৬,২৭ ই জুলাই সালদানন্দী এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি বিনিময় হয়। শত্রুদের উপর হাল্কা মরণাস্ত্র এবং মর্টার প্রয়োগ করা হয়। ২৬ শে জুলাইয়ের আক্রমণে শত্রুরা মারাত্নক হতাহতের শিকার হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে (তবে হতাহতের সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায় নাই)।

শত্রুরা বিক্ষিপ্তভাবে মনেরা ব্রীজের দিকে পশ্চাপদ হচ্ছিলো। তারা প্রতিরক্ষার জন্য ভাঙা ব্রীজটি মেরামতের চেষ্টা করছিলো।

(খ) আখাউড়া পুলিশ স্টেশনের অন্তর্গত দাইখোলা গ্রামের চেয়ারম্যান সিরাজ মিঞা ভুঁইয়া সালদানন্দীর কমান্ডারের কাছে আত্নসম্পর্ণ করেন ।

(গ) শত্রুদের একদল আমাতলির একটি বাড়িতে ঘাঁটি গড়েছিলো। গত যুদ্ধের (মর্টার ও আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গোলাগুলি বিনিময় হয়) পর শত্রুদের পশ্চাৎ অবস্থানে অতর্কিত আক্রমণ করা হয়।

(ঘ) ২৩ শে জুলাইকেলাসনগরে এক দল মুক্তিসেনা শত্রুদের সাথে গুলি বিনিময় করেছে। শত্রুদের ২১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে। নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে একজন অফিসার নিহত হয়েছে।

২৬ শে জুলাই বগাবারিতে একটি রেলপথ,২ টি টেলিফোন পোস্ট এবং ২টি শত্রুর ট্রাক সফলভাবে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

গোপনীয়

বাংলাদেশ ফোর্সের হেডকোয়ার্টার

নং ৩০১২\ বি ডি এফ\ জি এফ
২রা আগস্ট,৭১

প্রাপক:

সাদেক খান
৪\এ পাম এভিনিউ
প্রযত্নে ব্যরিস্টার এ সালাম
কলকাতা-১৯

বিষয়: বেতার ও প্রেসে অবস্থার প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য রিপোর্ট।

আমি একটা নিউজ লেটার পাঠাচ্ছি। নথি নঃ ২, ২ আগস্ট, ১৯৭১। মুক্তিবাহিনি নিয়মিত কিছু গান এবং কবিতা পাঠাচ্ছে। এই ব্যাপারে আপনার মতামত জানালে খুশি হবো। এগুলো প্রকাশ ও প্রচার করলে তারা আরো উজ্জীবিত হবে।

স্বাক্ষর-সুলতান এম খান

এনক্লোজারঃ ৪

গোপন বার্তা

২রা আগস্ট,১৯৭১

সিলেট, ব্রাক্ষণবাড়িয়া সেক্টরের উপর প্রতিবেদন:

মুক্তিবাহিনী এবং গেরিলাবাহিনীর নিয়মিত আক্রমণে শত্রুরা মারাত্নক হতাহতের শিকার হচ্ছে। তারা অনেক পাক আর্মিরসহযোগী দোসরদেরকেও প্রতিহত করেছে।

১ ২৪ তারিখে শত্রুদের আখড়ায় অতর্কিত আক্রমণে ২৫ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। এছাড়া শত্রুরা সাধারণ মানুষদের তাদের মৃতদেহ বহন করতে বাধ্য করে এবং মারাত্নক গোলাবর্ষণ করে। এই ঘটনা সংঘটিত হয় সিলেটেরতেলিয়াপাড়ায় (কমলাপুর গ্রাম)।

মুক্তিফৌজ গেলিরা নরসিংদির পশ্চিমে অহিনাশপুরের রেলপথে একটি এন্টি মাইন স্থাপন করে সেনাবাহী রেললাইন উড়িয়ে দেয়। সবধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শত্রুরা এই ফাঁদে পা দেয় এবং তাদের ৪টি বগি উড়িয়ে দেওয়া হয়।

গেরিলারা রেলপথের স্টেশন সিগনাল বোর্ড এবং সরারচরের (বাজিতপুর পুলিশ স্টেশনের নিকটে, কিশোরগঞ্জ উপজেলা, ময়মনসিংহ জেলা) টেলিগ্রামের সরঞ্জাম ধ্বংস করা হয়। পরবর্তীতে পাকসেনাবাহিনি অত্র এলাকায় সন্ত্রাসী কাজকর্ম চালায়।

৪ ১৪ তারিখে বাজিতপুর থানার শান্তিকমিটির (তথাকথিত)সহসভাপতি সানাউল্লাহ নামে এক মাওলানা আহত হয় এবং ২৬ তারিখ রাতে নিহত হয়।

দশ তারিখে বাজিতপুরের কুখ্যাত বাচ্চু মিঞা নিহত হয় ।

৫২৯ শে জুলাই সিলেটের মোহাম্মদপুরের তেলিয়াপাড়ায় এক অতর্কিত আক্রমণে ৩৫-৪০ জন সেনা নিহত হয়।

একই আক্রমণে একজন অফিসার (ক্যাপ্টেন), দুইজন জে সি ও (সুবেদার), একজন এন সি ও নিহত হয়।

মাইন বিস্ফোরনে দুরমানগরে একজন রাজাকার নিহত হয়। একই এলাকায় শত্রুর অবস্থানে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এই হামলার হতাহতের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায় নাই (সিলেট)।

৭ ২৯ শে জুলাই আরেকটি অতর্কিত আক্রমণে দুধপাতিল থানার চুনারুঘাটে ৯ জন সেনা নিহত হয়।

৮ ভাতাকান্দি থানার দাঊদকান্দীতে বেতারকে বিপর্যস্ত করে গেরিলাবাহিনী। ২৫ শে জুলাই একই গেরিলা দল দায়েরপাড়া শান্তি কমিটির সভাপতি আবুল মিয়া এবং মুজিতপুর ইউনিয়নের মমতাজ মিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি শান্তিকমিটির ছোট সমাবেশে অতর্কিত আক্রমণ করে। মিঠাকান্দা স্টেশন থেকে ছয়টি রাইফেলস ছিনিয়ে নেয়া হয় বেলাবো বাজারে মুক্তিফৌজ বাহিনি ৫ জন রাজাকারকে মেরে ফেলে ।

চট্টগ্রাম সেক্টর

আমলাঘাটে কিছু বিস্ফোরক রাখা হয় এবং চারটি বৈদ্যুতিক তোরণ উড়িয়ে দেয়া হয়। মুক্তিফৌজ নরোরা বাজারে(রামগড়) অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং আবু আহমেদ এস ও লাই মিয়া নামে একজন সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। কালিয়ারে অতর্কিত আক্রমণে কিছুসহযোগী নিহত হয়। পাকসহযোগী মোঃ সিরাজ চৌধুরী এবং আরো দুইজনকে মেরে ফেলা হয়।

ঢাকা,কুমিল্লা,নোয়াখালি এবং ফরিদপুর সেক্টর

১ সালদানন্দী-শত্রুদের অবস্থানে হামলা করা হয় এবং মর্টার ব্যবহার করা হয়। বড় ধরনের হতাহতের আশা করা হচ্ছে। তবে হতাহতের সঠিক পরিমাণ এখনো জানা যায় নাই (২৭ ই জুলাই)

২ ২৩ শে জুলাই-হরিমঙ্গল ব্রিজের দক্ষিণ অংশের রেলপথের ২৭০ ফুট অংশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

৩ ২৮শে জুলাই-বায়রার দক্ষিণ অংশে বিজনা ব্রিজে শত্রুদের অবস্থানে মর্টার দিয়ে গোলাগুলি বিনিময় করা হয়েছে। শত্রুদের ১০ জন সেনা আহত হয়েছে এবং ৩ জন নিহত হয়েছে।

৪ বিধ্বংস্ত ব্রিজের নিকটে সালদানন্দী পুলিশ স্টেশনে শত্রুর অবস্থানে হামলা, ২জন নিহত,৫জন আহত।

৫ হরিমঙ্গলে ৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য আর ২০ ফুট প্রস্থের একটি ব্রিজের দুই পাশ উড়িয়ে দেয়া হয় ।

৬ ২৮ শে জুলাই আনন্দপুরের নিকটে শত্রুদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আক্রমণ করা হয় এ আক্রমণে ৩ জন শত্রু নিহত হয় ।

নিম্নে শত্রুদের প্রতিরক্ষা অবস্থানে বিভিন্ন রকমের আক্রমণের ঘটনা বর্ণনা করা হলো ।

২৮ শে জুলাই : মহেশ্বরে ৬ শত্রু আহত
২৮ শে জুলাই: আমরতলিতে ৪ জন আহত (শত্রু)
২৮ শে জুলাই : বাশমঙ্গলে ৬ জন নিহত এবং ৫ জন আহত
২৮ শে জুলাই: আনন্দপুরে ১১জন নিহত এবং ৫ জন আহত
২৯ শে জুলাই: রোদেশ্বরে ২ জন নিহত ও আহত

২৯ শে জুলাই: আনন্দপুরে একটি রেলপথের ব্রিজের ও রেলপথের ২০ ফুট ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এই ব্রিজটি পাকিরহাট ও রাজপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাঝে অবস্থিত ছিল।

ঢাকা অপারেশন

 

অপারেশনগুলো নিজে পরিচালনা করছে এমন ছেলেদের কাছ থেকে সংগৃহিত তথ্য নিচে দেওয়া হলো।

২৬ শে জুলাই রাত ৮১৫ টায় মতিঝিলের বিদ্যুৎ ও পানি উপকেন্দ্রে (মতিঝিল মাজারের নিকটে) সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়। পুরো মতিঝিল কলোনীতে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।

২৩ তারিখ রাতে মুক্তিবাহিনী যাত্রাবাড়ি ব্রিজ উড়িয়ে দেয় যখন পশ্চিম পাকিস্তানীদের সাথে আরেকটি অপারেশনে থাকার কথা ছিলো। এই ঘটনায় ৫২ জন পুলিশ নিহত হয়।

২৮ তারিখ রাত আটটায় হাত বোমা ছোঁড়া হয় ইপিআরটিসি মতিঝিলের বাস স্টেশনে, হতাহতের অবস্থা জানা যায় নি।

২৩ জুলাই দুপুর ১২ টায় সিদ্ধিরগঞ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদ্যুতিক লাইন সফলভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ।গেরিলারা প্রথমেই শত্রুদের স্থাপিত ৪৫-টি এন্টি পার্সোনাল মাইন নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যার মধ্যে ১২-টা ছিল বড় মাইন।

গুরুত্বপূর্ণ নথি

বাংলাদেশ ফোর্সের হেডকোয়ার্টার
নং৩০১২\বি ডি এফ\ জি এস (ও পি এস)
৪ ই আগস্ট,১৯৭১

প্রাপক: সাদেক খান
৪\ক, পাম এভিনিউ
প্রযত্নে ব্যারিস্টার এ সালাম
কলকাতা-১৯

বিষয়: রেডিও ও প্রেসে প্রকাশের জন্য অবস্থার প্রতিবেদন এবং ছবি ।

আমি টেলিভিশনের একটি স্ক্রিপ্ট পাঠাচ্ছি যেটা সম্প্রতি গ্রানাডা টেলিভিশন লিমিটেড এ প্রচার করা হয়েছে এবং এর সাথে কিছু ছবিও পাঠাচ্ছি (একই দল তুলেছে)। নিউজ এর সাথে থাকছে। আর ঘটনার ছবিও পাঠাচ্ছি।

স্বাক্ষর-সুলতান এম খান

এনক্লোজার-১৫

 

 

পাকসেনাদের গোপন আক্রমণ

নদী কি কখনো তার প্রবাহ থামিয়েছে? নদীর কুল ছিল ৯০ জন পাকসেনাদের মৃত্যুশয্যা।

নদী কি কখনো তার প্রবাহ থামিয়েছে? এখন এটা পাকসেনাদের জন্য এক বিরাট প্রশ্ন। কিন্তু তা ঘটেছিল। মুক্তিসেনারা তা সম্ভব করেছিল। কুমিল্লায় বেশ কিছু ঘটনায় বিব্রত হবার পর পাকসেনারা সেখানে তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য নৌকায় করে প্রচুর সৈন্য সমাবেশ করার চেষ্টা করছিল। মুক্তিফৌজের ধারাবাহিক বিতারনের জবাবে পাকসেনারা তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা করছিল। সম্প্রতি ঘটমান যুদ্ধে পাকসেনাদের মুক্তিবাহিনী প্রায় অচল করে দিয়েছিল।

২৯ জুলাই তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় ৩০০ সৈন্যের ৭ টি নৌযান জলপথে যাচ্ছিল। কুমিল্লার জাফরগঞ্জে মুক্তিবাহিনী একটি সফল এম্বুশ করে তাদের উপরে। ৭ টার মধ্যে ৪ টা নৌকা মুক্তিবাহিনীর আয়ত্তের কাছে আসলে তারা মর্টার, এল এম জি ও এইচ এম জি দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। সেই কথাটা সত্যি সত্যি ফলে যায়। নদী হথাত টার গতি থামিয়ে দেয়। কিন্তু শত্রুরা তাদের নৌকা ডুবে যাওয়া ঠেকাতে পারেনি। এগুলোতে প্রায় ১২৫ জন সেনা ছিল (এক কোম্পানি)। কিন্তু হায়, প্রায় সবাই ডুবে মারা যায় বা নিহত হয়। কিন্তু বাকি ৩ টি নৌকা তাদের আর্টিলারির সাহায্য নিয়ে তাদের পূর্বের স্থানের দিকে পালিয়ে যায়।

প্রায় একই সময়ে কুমিল্লার মান্দাভাগে মুক্তিফৌজেরা মেশিনগান, মর্টার দিয়ে শত্রুদের আক্রমণ করে প্রায় ৩০ জনকে হত্যা করে। সেখানে যুদ্ধ এখনো চলছে। যদিও নতুন নতুন তথ্য ক্রমশ আসছে।

সম্প্রতি কুমিল্লা ও টার আসে পাশের এলাকায় ঘটে যাওয়া ঘটনায় পাকসেনাদের মনোবল ধ্বংসের পথে। তারা ভয়ে কুমিল্লার সরকারী বাসভবন ছেড়ে চান্দিনায় চলে যাচ্ছেন।

আশা করি বাংলার নদী শত্রুদের জন্য কোনোদিন প্রবাহিত হবেনা।

৩০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত নিম্নের ঘটনাগুলি ঘটেছে। এগুলো সব কুমিল্লার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অংশের।

৩০ জুলাই কুমিল্লার উত্তর ও উত্তর-পূর্ব অংশে শত্রুদের অনেক অবস্থানে মুক্তিফৌজ এম্বুশ করে। তাদের প্রচুর হতাহত হয়। শ্রিমান্তপুএ শত্রুদের আস্তানা আক্রমণ হয়। ১১ জন নিয়মিত সেনা নিহত হয়। একই দিনে একই স্থানে আরেকটি এম্বুশে আরও ৪ জন শত্রুসেনা নিহত হয়। কোটেসশর ও রাচিয়াতে আলাদা এম্বুশে ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়। আনন্দপুর ও নারায়নপুরের আরও ৪ টি অবস্থানে এম্বুশ করা হয়। সেখানে যথাক্রমে ১২ ও ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়।

৩১ জুলাই আবারো আক্রমণ হয়। কায়াম্পুরে ১২ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। একই দিনে ইয়াকুবপুর ও লাটুমুরায় ২০ জন সেনা নিহত হয়।

১ আগস্ট চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে। প্রায় ১৩০ জন সেনা ছুটোছুটি করে কবরস্থানের দিকে পালাতে থাকে। জাফরগঞ্জের কাছে ৯০ জন নিহত ও ডুবে মরে (অন্যত্র বিস্তারিত বর্নিত আছে)।

হরিমঙ্গলে এম্বুশ করার সময় পাকসেনাদের ৩০ জন নিহত হয়। কায়াম্পুরে আরেকটি ঘটনায় ১৩ জন হতাহতের ৯ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। স্রিমন্তপুরে ৩ জন ও কোটেসশরে ২ পাকসেনা নিহত হয়।

শত্রুদের অবস্থানে আক্রমণ চলছেই। কলাছারার ঘটনা আগেই বলা হয়েছে। লাটুমুরা, চন্ডিয়ার, বাড়িয়া ও গুরাইটে ২৯ জন হতাহত হয়। কায়াম্পুর জ্যাকপটে আক্রমণ করে ১০ সেনা নিহত করা হয়। ৪ জন আহত হয়। জিক্রাতে মর্টার আক্রমণে শত্রুদের ১৪ জন হতাহত হয়। ৬ টি বাঙ্কার ধ্বংস হয়।

গুরুত্তপূর্ন খবর

বাংলাদেশ বাহিনীর হেডকোয়ার্টার

No 3012/BDF/GS (I)

05 Aug, 71

প্রতি

Sedeq Khan

4/A Palm Avenue

C/O Barrister A Salam

Calcutta-19

বিষয় – প্রেস ও রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি রীপোর্ট

আমি একটি নিউজলেটার পাঠাচ্ছি। মেমো নং ৩, তারিখ-৫ আগস্ট ৭১।

সংযুক্তি-১

স্বাক্ষর

সুলতান এম খান

জরুরী অবস্থার রিপোর্টঢাকা অপারেশন

১। ২৫ জুলাই সকাল ৬টা ১মিনিটে পুবাইলএর কাছে কালসাটাতে নরসিংদী থেকে ঢাকাগামী একটি ট্রেন বিষ্ফোরিত হয়। পাথর ও বালিতে পরিপূর্ণ দুইটি বগি, ডিজেল ইঞ্জিন, এবাং যাত্রী ও ওয়েস্ট পাকিস্তানী পুলিশসহ তিনটি বগি সম্পূর্নরূপে ধবংস হয়ে যায়। সাথে সাথেই ইঞ্জিনটিতে আগুন ধরে যায়। কালোধোয়া দেখা যায় এবং সবগুলো বগি লাইনচ্যুত হয়ে পতিত জমিতে পড়ে যায়। পাথর ও স্প্লিন্টার ছুটে ১৫০-২০০ গজএর ভেতরে। বালি ও পাথর ভরা বগিগুলোর আঘাতে একটি কাল্ভার্ট ধ্বংস হয়ে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশসহ প্রায় ৩০-৩৫ জন নিহত হয়। দায়িত্বরত রেলোয়ে ইঞ্জিনিয়ার যিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন, গেরিলাদের জানান যে এটা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল অপারেশন এবং ধ্বংস করা ট্রেনগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে।

২। ২৭ জুলাইএ রাত ৮টা১১মিনিটে মতিঝিলের পাওয়ার সাবস্টেশন (পীরজঙ্গিমাজার) সম্পূর্ন রূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ৪জন গেরিলার একটি দল সাবস্টেশনে প্রবেশ করে এবং ২ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশসহ সব গার্ডদের নিরস্ত্র করে ফেলে। তারা গার্ডদের ওখানে বেধে ফেলেন এবং তালা ভঙ্গে বিস্ফোরক স্থাপন করেন এবং ওই দুই পুলিসকে মেরে ফেলেন। বিস্ফোরন সংঘটিত হয় এবং পুরো স্টেশন ধ্বংস হয়ে যায়। পুরো দালান ধ্বসে পড়ে। মতিঝিল, শাহজাহানপুর, গোপীবাগ এবং কমলাপুর রেলস্টেশন এরিয়া সম্পুর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। পুরো মতিঝিল এলাকা আতংকিত হয়ে পড়ে রেলওয়ে কলোনী দিয়ে যখন একদল অবাঙ্গালী লোকজন পলায়ন করছিল তখন-৫০ জন রাজাকার তাদের ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড হামলা করেন এবং গুলি চালান। প্রায় ৮-১০জন রাজাকার ঘটনা স্থলে মারা যায়।

৩। ক) ২৩ জুলাইএ সিদ্ধিরগঞ্জের ২টি সংযোগ খূটিকেটে ফেলা হয়। দলটি ৩৫টি ছোট মাইন এবং ১০টি বড় মাইন নিষ্ক্রিয় করেন যেগুলো কিনা খুটিগুলো ঘিরেছিল।

খ) ২৩ জুলাইএ্সিদ্ধিরগঞ্জও খিলগাঁও এর লাইনের একটি সংযোগ খুটি ধ্বংস হয়।

গ) ২২ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জ ও কমলাপুর এর লাইনের একটি সংযোগ খুটি ধ্বংস হয়। দলটিকে শুধু খুটি ধ্বংসের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

৪। ১৫ জুলাই দুপুর১২টায় চার্জ বসিয়ে কিছু বৈদ্যুতিক খুটি উড়িয়ে দেয়া হয়। খুটিগুলো টঙ্গি ব্রিজের নিকটবর্তী ছিল। এই লাইন গুলি মিরপুর ও টঙ্গিকে এবং টঙ্গী থেকে ঢাকাকে সংযুক্ত করে ছিল।

৫। ২৮ জুলাইএ একটি বৈদুতিক খুটি ধ্বংস করা হয়। এই লাইনটি কালিগঞ্জ হতে টঙ্গি পর্যন্ত গেছিল। এটি ৩৩০০০ ভোল্ট এর লাইন ছিল। ঘটনাস্থল ছিলনা গাদি।

৬। ১৫ জুলাই এ যখন পাগলার নিকটে একটি রেলওয়ে কালভার্ট উড়িয়ে দেয়া হয় যখন একটি ট্রেন ব্রিজটি পার হচ্ছিল। ব্রিজটি সম্পুর্নরুপে ধ্বংস হয়ে যায়। সামনের খালি বগি দুটো পানিতে পড়ে যায় এবং ইঞ্জিনটি একপাশের লাইন এ বেধেছিল। ইলেক্ট্রিক পদ্ধতিতে একাজটি করা হয়।

৭। ঢাকা মিল ব্যারাকের নিকটের ট্রেনিং সেন্টারে দুটি হাত বোমা ছুড়ে মারা হয়। এর ফলে দুই রাজাকার মারা যায়। অপারেশনের তারিখ ছিল ১১ জুলাই ১৯৭১।

৮। ১৫ জুলাই আলমগঞ্জ ঢাকায় শান্তি কমিটি অফিসারদের আক্রমণ করে ২ জনকে হত্যা করা হয়।

৯। ১২ জুলাই একজন দুর্ধর্ষসহচরকে ধরার প্রস্তুতি চলে। সে কিছু মেয়ে ও টার নিজের কন্যাকে নিয়ে ফেরী বোটে পাড় হচ্ছিল। সেটি ডুবিয়ে দেয়া হয় ও সবাই নিহত হয়।

সিলেটব্রাহ্মণবাড়িয়া সেক্টর

১ আগস্ট মুক্তিফৌজ চৌরাশিয়াতে শত্রুদের পেট্রোলে আক্রমণ করে তাদের বেশ কয় জন ও ১ জন রাজাকার হত্যা করে।

২ আগস্ট আমপারা চা বাগানে ৩ জন পাকসেনা হত্যা করা হয়। তারা ২৮ টি যানে তেলিয়াপারা থেকে মাধবপুরে যাচ্ছিল। মুক্তিবাহিনী তাদের উপর এম্বুশ করে ৩ জন নিহত ও অনেক আহত হয়। রিমা চা বাগান ও বাল্লা ক্যাম্পে আক্রমণে যথাক্রমে ৩ ও ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। একই স্থানে অন্য ২ টি অ্যামবুশে যথাক্রমে ২ ও ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

৩১ জুলাই কৃষ্ণপুরের সুরমা গ্রামে মুক্তিফৌজ ২ টি এন্টি ট্যাঙ্ক মাইন পুঁতে রাখে। এতে ৩ টনের একটি সৈন্য ভর্তি যান আক্রান্ত হয় ও ২০ জন নিহত ও অনেক হতাহত হয়। শত্রুরা রাগ হয়ে পাশের জনসাধারণের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।

চট্টগ্রাম সেক্টর

 

বাগার বাজারে মুক্তিফৌজের আক্রমণে অনেক রাজাকার নিহত হয়। শত্রুদের পেট্রোল যানে আক্রমণে ৩ জন নিহত হয় ও বাহনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঘটনা ছিল ৩১ জুলাইয়ের। ছাগলনাইয়াতে আক্রমণে ১০ পাকসেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

 

 

গুরুত্তপূর্ন নিউজলেটার

বাংলাদেশবাহিনীর সদরদফতর

No 3012/BDF/GS (0)

০৮ আগস্ট ৭১

প্রতি

সাদেক খান

সেক্রেটারি, বাংলাদেশ আর্কাইভস

১৩/১ পাম এভিনিউ

কোলকাতা-১৯

বিষয় – প্রেস ও রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি রীপোর্ট

আমি একটি নিউজলেটার পাঠাচ্ছি। মেমো নং ৫, তারিখ-৮ আগস্ট ৭১।

সংযুক্তি-১

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

কুমিল্লার সংবাদ, নোয়াখালী সেক্টরের অংশ

) ফেনী

জগন্নাথের টেলিফোনের খুটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায়, ফেনী ও চৌদ্দ গ্রামের মধ্যবর্তী টেলি্যোগাযোগ সসম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এবং সংযোগহীন হয়।

ফেনী ও চট্টগ্রামের মধ্যে রাস্তা ও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যখন মুক্তিবাহিনী আনাতলিসেতু ৩০০১ বিবিস্ফোরক দিয়ে ধ্বংস করে। ঘটনাটি ঘটে ৩১ শে জুলাই। ১ জন রাজাকার ও বিস্ফোরণে নিহত হয়। সেতুটির গুরুতর মেরামত প্রয়োজন।

পাইথ্রাতে (ফেনীরনিকটবর্তী), ৫ জন রাজাকারকে আটক করা হয়েছে মাইনসহ। এগুলো ক) ট্যাংক-বিরোধীমাইন, ওখ) সেনা-বিরোধীমাইন।

বাংলাদেশের ভিতর কর্মরত একটি ছোট গ্যারিলাবাহিনী, সেনবাথ(উত্তর) এঅবস্থিত, রাজাকার শাখায় আক্রমণ করে এবং ৪ জনকে নিহত এবং ৬ জনকে আহত হয়। গ্যারিলারা ২৩০৩ রাইফেল বাজেয়াপ্ত করে। ফেনীর আশেপাশের রাজাকারদের মুক্তিফৌজদের সাহায্য করতে বাধ্য করা হয়। তবে, সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাজাকাররা(৭০%) মুক্তিফৌজকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। যদিও, খারাপ উপাদানগুলো এখনো দৃশ্যতেই রয়ে গেছে। কিন্তু আমরা আশা করতে পারি যে শেষ পর্যন্ত তারা নিশ্চিহ্ন হবে।

) কুমিল্লা উত্তরপূর্বঅংশ

শত্রুপক্ষ কুমিল্লা শহরের আশেপাশে তাদের সর্বচ্চো শক্তি নিয়োগ করেছে। যদিও পাকবাহিনী চেষ্টা করছে আক্রমন চালানোর, তাদের বারবার আত্মরক্ষামুলক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এমনকি আত্মরক্ষামুলক পদ থেকে কিছু শত্রুদের প্রত্তাহার করতে হয়েছে। গেরিলারা কুমিল্লা বিভাগের বেশ গভির থেকে পরিচালনা করছে। এখানে জ্ঞাপিত হচ্ছে যে রাজাকাররা বরংসহযোগী পূরণ।

কুমিল্লা কোম্পানিগঞ্জ এর রাস্তায় মাইন বিস্ফোরণের দরুন শত্রু পক্ষের একটি সংবিভাগ বহনকারী যান ধ্বংস হয়ে যায়। একজন পাকসেনা নিহত হয় এবং ১ টি রাইফেল বাজেয়াপ্ত করা হয়।

২ থেকে ৩ আগস্ট কুমিল্লার উত্তর সাব সেক্টরে নানাবিধ আক্রমণে প্রায় ৫০ জন পাকসেনা হত্যা করা হয়। আনন্দপুর, স্রিমন্তপুর, আজানপুর, চারনাল ও হরিমঙ্গলে সফল অ্যামবুশ করে আমাদের বাহিনী। আজানপুরে একটি সেতু ধ্বংস করা হয় এলাকাবাসীর সহায়তায়। এতে সাধারণ জনগণ কিছুটা হতাহত হয়। ১৪ জন পাকসেনা ও ১১ জন সাধারণ জনগণ মারা যায়। আনন্দপুরে ৪ জন, স্রিমন্তপুরে ৩ জন, চারনালে ৬ জন ও হরিমঙ্গলে ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। কোটেসশরে ১ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়। ৪ আগস্ট হরিমঙ্গল ও রাজপুরে শত্রু অবস্থানে মর্টার আক্রমণে যথাক্রমে ৮ জন ও ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সিলেটব্রাহ্মণবাড়িয়া সেক্টর

সিলেটের দক্ষিণ ভাগে তেলিয়াপারা চা বাগানের কাছে শত্রুরা জোড় হতে থাকে। যেমন-সেজামুরা, ধর্মঘর, চৌরাস্তা ইত্যাদি। তারা মেশিনগান ও মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে। শত্রুরা ৪ দিক থেকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। শত্রুদের ৬ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছে।

সুরমা গ্রাম থেকে রেশন নিয়ে আসা একটি বাহনে আক্রমণ করে সেটা উড়িয়ে দেয়া হয়। একটি জিপ ও ৩ টনের ট্রাক ছিল। রিপোর্টে জানা যায় একজন অফিসার ও ১ জন জে সি ও নিহত হয়েছে।

৫ আগস্ট সিতিধাইয়ের পশ্চিমে আলিপুরায় এম্বুশে ১৫ জন শত্রু নিহত ও অনেক হতাহত হয়। কিছু বাঙ্কার ধ্বংস হয়। গেরিলাদের একটি দল সুতাং রেলওয়ে স্টেশন উড়িয়ে দেবার জন্য পাঠানো হয়। শত্রুদের একটি নৌকা ডুবে যায় ও অনেক পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়। একটি বিস্ফোরণে ৩০০ পাউন্ড বোমা বিস্ফোরিত হয় ও অনেক পাকসেনা ও রাজাকার নিহত হয়।

চর্গ্রাম সেক্টর

বিচ্ছিন মাথা

 

এটা ছিল এক মেজরের মাথা, একজন পাক আর্মি মেজর। মাথাকেটে বাংলাদেশ ফর্সেস হেড কয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়। কারেরহাট, ফেনীতে গত ১০ দিনে মুক্তিফৌজ ও পাকসেনাদের মধ্যে অনেক যুদ্ধ হয়।

৪ আগস্ট ৫ ঘণ্টা যুদ্ধে ৩৭ জন পাকসেনা ও ৫০ জন রাজাকার নিহত হয়। আক্রমণের চরম পর্যায়ে তারা একজন ক্যাপ্টেন, ২ জন জে সি ও হত্যা করে ও একজন মেজরের মাথাকেটে ফেলে তার মাথা বেইজে নিয়ে আসে। একটি সময়ে শত্রুরা আত্ম সমর্পনে প্রস্তুত ছিল কিন্তু কিছুক্ষণের ভিতরে সেখানে শত্রুদের আরও ২ প্লাটুন সেনা এসে হাজির হয়-কিন্তু তারা বেইজ থেকে সরে যায়। তখন তারা এদিকে সেদিকে পালাতে থাকে। গ্রামবাসীরা তাদের আক্রমণ করে। শত্রুরা অস্ত্র ফেলে দৌড়াতে থাকে। সম্প্রতি খবরে জানা যায় শত্রুরা কারেরহাটে ৬ আগস্ট তাদের অবস্থান ছেড়ে চলে যায়-কিছু সিভিল ফোর্স ও রাজাকারদের রেখে। ছাগলনাইয়াতে একটি এম্বুশে ৪ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়। কালিয়াতে কালিয়া ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া হয় এবং আম্লিঘাটে একটু বৈদ্যুতিক খুঁটি ধ্বংস করা হয়।

 

 

প্রেস সংক্রান্ত ডকুমেন্ট

বাংলাদেশবাহিনীর সদরদফতর

No 3012/BDF/GS (1)

১০ আগস্ট ১৯৭১

প্রতি

সাদেক খান

সেক্রেটারি, বাংলাদেশ আর্কাইভস

১৩/১ পাম এভিনিউ

কোলকাতা-১৯

বিষয় – প্রেস ও রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি রীপোর্ট

আমি একটি নিউজলেটার পাঠাচ্ছি। মেমো নং ৬, তারিখ-১০ আগস্ট ৭১।

সংযুক্তি-৩

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

 

সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেক্টর

সিলেট (দক্ষিণ) এবং ময়মণসিংহের কিছু অংশ।

মুক্তিফৌজ বেশ কিছু দিন ধরেই দ্বারীপুর-লাটুপুর এবং মুকুন্দপুরে শ্ত্রুর উপর নজর রাখছিল। পরবর্তীতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছিল। মুক্তিফৌজ চুনারুঘাটের রাস্তায় ট্যাংক-বিধ্বংসী মাইন পেতে রাখে।

৫ ই আগস্ট সকালে শ্ত্রুদের কিছু যানবাহন মাইনে বিধ্বস্ত হয়। বিস্তারিত জানা যায়নি।

গেরিলাদের ঘাঁটি থেকে শত্রু ঘাটির অভ্যন্তরে পাঠানো হয়েছিল, যারা তাদের দায়িত্ব থেকে নিম্নলিখিত ফলাফল অর্জন করেছেন।

তারা নিম্নলিখিত পাকবাহিনীর দোসরদের খতম করেছেন,

২৭ জুলাই: সিরাজমিয়া ওরফে সিরু, গ্রাম-বাগদাহার, থানা-নবীনগর।

২৭ জুলাই:কফিলুদ্দিন আহমেদ, শান্তি কমিটির মেম্বার, গ্রাম-মহেশপুর, থানা-নবীনগর।

২৭ জুলাই: রাজাকারদের দুইটিগ্রু প, গ্রাম-মহেশপুর, থানা-নবীনগর।

২৭ জুলাই:হরমুজ, গ্রাম-ভৈরবপুর, থানা-ভৈরব।

২৮ জুলাই:লালমিয়া, গ্রাম-শিমুলকান্দি, থানা-ভৈরব।

৩১ জুলাই:নারায়ণপুরবাজারে, রশিদনামের একজন ডাকাত, যে নিজেকেমুক্তিবাহিনীর সদস্য বলে দাবী করত, থানা-রায়পুরা।

৩১ জুলাই:নরসিংদিতে পুর্ব পাকিস্তান রোড ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অফিসে ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। অনেকেই আহত হয় এবং অফিস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।

৩রা আগস্ট: মুক্তিফৌজ নবীনগর থানার ভুচাবাড়ি গ্রামে পাকবাহিনীর অবস্থানের উপর চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। শত্রুপক্ষের দশজন সেনা নিহত হয়। মুক্তিফৌজের কমান্ডোরা পোস্টঅফিসে ও গ্রেনেড হামলা চালায়। যার ফলশ্রুতিতে পোস্টঅফিসের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

দৌলতকান্দির নিকট মুক্তিবাহিনী টেলিফোন পোল উড়িয়ে দেয়, যার ফলে ভৈরববাজার ও নরসিংদি মধ্যে টেলিফোন যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।

কুমিল্লা এবং ফেনী সেক্টর

৫ইআগস্ট উত্তরসেনবাগ, কুমিল্লাতে চারজন রাজাকারকে হত্যা করা হয়। মুক্তিফৌজ দুইটি থ্রী নট থ্রী রাইফেল ও জব্দ করে। ২রা আগস্ট ফেনী-চিটাগাং মহাসড়কের আন্নান্তাজি অংশের একটা ব্রিজ ধ্বংস করা হয়। শালদা নদী (নয়নপুর) অংশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলতেছিল ৫ই আগস্ট থেকে। শত্রুর হতাহতের ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায় নি। মুক্তিফৌজের সাতজন এখন পর্যন্ত্য শহীদ হয়েছেন। চৌরালার যুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে শত্রুপক্ষের তিনটি বাংকার ধংস হয়েছে, দুইজন নিহত এবং ছয় জন আহত হয়েছে। মুক্তিফৌজের এনকে আব্দুস সাত্তার, এনকে মুজাহিদ এবং মোহাম্মাদ আলি আক্কাস শহীদ হয়েছেন।

কুমিল্লার উত্তরে মুক্তিফৌজ শত্রুদের উপর হামলা অব্যাহত রেখেছে। ২রা আগস্টে, কানাশতলায় শত্রুদের পাচটি অবস্থানের উপর হামলা চালায় মুক্তিফৌজ। সূর্য্যনগরে গুপ্তহামলায় শত্রুপক্ষের চারজন সৈনিক নিহত ও দুইজন আহত হয়।

মুক্তিফৌজের আক্রমণের পর শত্রুরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ৮জন শত্রুসেনা নিহত ও আরও ২ জন আহত হয়।

কুমিল্লা গেরিলা বাহিনীর শহর

মুক্তিবাহিনীর ব্যাতিক্রমি আক্রমণে পাকিস্তান সেনাবাহিনী একেবারেই বিপর্যস্ত হয়ে গেছে।গেরিলাদের ঘনঘন আক্রমণে কুমিল্লা শহর ছেড়ে তাদের পালাতে হয়েছে। পুরো অঞ্চল এখন মুক্তিফৌজের দখলে।

বাধ্য হয়ে হানাদার বাহিনী তাদের ২য় হেডকোয়ার্টার কুমিল্লা থেকে চান্দিনায় সরিয়ে নিয়েছে। খাঁ খাঁ নীরবতা বিরাজ করা এই শহরে এখনকেউ খুবই কম সংখ্যক শত্রুসেনা টহল দলকে দেখতে পাবে।

রহস্যজনক আক্রমণের জন্য এবং মৃত্যুর ভয়ে পাকসেনারা এখন নিজেদের চলাফেরা আর অস্ত্রের শব্দ শুনলেও ভয় পায়।

৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী মর্টারসহ ব্যাপক হামলা চালায় রায়পুরের পাকশিবিরে। ২০ পাকসেনা এবং ৭ রাজাকার ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। এত শক্তিশালী আক্রমণে পাকবাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং পালিয়ে যায়। একই এলাকায় কুমিল্লার পূর্বাঞ্চলে(গোমতী নদীর তীরবর্তী) ধ্বংসপ্রাপ্ত হরিমঙ্গল ব্রিজে মুক্তিফৌজ ৩ পাকসেনা এবং শ্রীমান্তপুরে আরও ২ পাকসেনাকে খতম করে।৬ই আগস্ট মুক্তিফৌজ শালপুর গ্রামের শিবিরে আবার আক্রমণ চালিয়ে ২০ সেনাকে ঘায়েল করে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেক্টরে ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত এক অ্যামবুশে ১০ হানাদার এবং ১০ রাজাকারকে হত্যা করে। বুড়িচং পুলিশ স্টেশনে মুক্তিফৌজের হাতে ১৫ রাজাকারের প্রাণনাশ হয়। ৪ ও ৫ আগস্ট কোটেশ্বর এলাকায় উপর্যপুরি আক্রমণ পরিচালনা করা হয়। এতে ১০ পাকসেনা নিহত হয়।

কুমিল্লার উত্তরপূর্ব অঞ্চল (আখাউড়া এবং কশবার নিকটবর্তী)

নবীনগর এবং মুরাদনগরে গত ১০ দিনে ২৫ রাজাকারকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের কয়েকজনের নাম নিম্নে উল্লেখ করা হলঃ

১। আলন্দিকোটের আক্কাস আলী মাস্টার

২। শ্রীখাইলের ক্যাপ্টেন মিয়া চেয়ারম্যান

৩। বাগদাহার, নবীনগরের শিরু মিয়া

৪। মহেশপুরের মাজেদ মিয়া

৫। বিটঘরের কফিল উদ্দিন

নিম্নে কুমিল্লার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুক্তিফৌজের আক্রমণ এবং অ্যামবুশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলঃ

ক) ৩রা আগস্ট ইব্রাহিমপুরে অ্যামবুশ করে ১১ হানাদার সেনাকে হত্যা করা হয়।

খ) ৩রা আগস্ট কাশিমপুরের শত্রুশিবিরে হামলাতে ১ শত্রুসেনা ঘায়েল হয়।

গ) ৩রা আগস্ট মেরাসানি এবং কলাচারা চা বাগানের শত্রু শিবিরে আক্রমণ করে যথাক্রমে ১ ও ৩ সেনাকে হত্যা করে।

ঘ) ৩রা আগস্ট রাজপুর এলাকার রেললাইন উড়িয়ে দেওয়া হয়।

ঙ) ৩রা আগস্ট লাটুমুরা এবং চান্দিবর এলাকার শত্রুশিবিরে আক্রমণ করে ১৯ জন এবং ২রা আগস্ট মর্টার হামলায় ১০ জন হানাদার সেনা ঘায়েল হয়।

চ) ৫ই আগস্ট বগাবাড়ি এলাকায় অ্যামবুশ করা হয়, এতে ৪ পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।

ছ) ৬ আগস্ট কশবা এলাকায় শত্রুশিবিরে অ্যামবুশ করা হয়। এতে ১৯ পাকসেনা নিহত ও ১০ জন আহত হয়।

 

প্রেসের দলিল এবং ডকুমেন্ট

 

হেডকোয়ার্টার,

বাংলাদেশ ফোর্স নং 30/2/BDF/GS (1)

১২ আগস্ট, ১৯৭১

বরাবর,

সাদেক খান

সচিব, বাংলাদেশ আর্কাইভ

১৩/১, পাম এভিনিউ

কলকাতা-১৯

বিষয়ঃ রেডিও এবং প্রেসে পরিবেশনের জন্য পরিস্থিতি রিপোর্ট

আমি একটি নিউজলেটার পাঠাচ্ছি। মেমো নং-৭, তারিখ-১২ আগস্ট ৭১।

সংযুক্তি-৩

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

 

রিপোর্টকুমিল্লা সালদা নদী সেক্টরঃ

আমাদের জয় সুনিশ্চিত। শত্রুবাহিনীরক্ষণ কৌশল গ্রহণ করেছে, তবুও তারা বিভিন্ন রক্ষনাত্নক অবস্থান ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। সালদা নদী এলাকায় (নয়নপুর, মন্দাবাগ) তাদের কঠোর অবস্থান ছিল। কিন্তু গত ১ মাস শত্রু শিবিরগুলো বারবার আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের পিছু হটতে হয়েছে, আর যেসব জায়গায় তারা প্রতি আক্রমণ করতে চেয়েছে, সেখানেই তারা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।

১০ই আগস্ট মুক্তিফৌজ নয়নপুর এলাকা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করে। ১১ই আগস্ট শত্রুবাহিনী মন্দাবাগ এবং আশেপাশের এলাকার শিবির থেকে ভারী মর্টার প্রত্যাহার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে যাত্রা করে।

শত্রুসেনারা জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে এরকম দৃশ্য দেখাটা আনন্দের ব্যাপার। এই সেক্টরে প্রায় ২০০ বর্গ মাইল এলাকা উদ্ধার করা হয়েছে।(পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করা হবে)

রিপোর্টউত্তরপূর্ব কুমিল্লা

 

সরিষাদি এবং গুরবাতি রেলস্টেশনের মাঝামাঝি বাইকোমরার কাছাকাছি এলাকায় মাইন স্থাপন করা হয়। মাইন বিস্ফোরণের ফলে দুটি ভিন্ন পাকসেনাদল ঘায়েল হয়।

বড় আইয়ুবপুর গ্রামে একজন ছাত্র মুক্তিসেনা অত্র এলাকার রাজাকার বাহিনীর প্রধান মীর আকবর আলী ও তার পুত্রকে হত্যা করে।

 

রিপোর্টসিলেট (দক্ষিণাঞ্চল) সেক্টর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া

* ৯ আগস্ট একপালার রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিফৌজ হামলা চালায়। ৫ রাজাকার ঘায়েল হয়। এই সময়ে ৫৩ রাউন্ড গুলিসহ ১টি থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

* আসামপুরের শত্রু শিবিরে হামলা চালালে ১০ জন নিহত এবং বেশ কিছু হানাদার সদস্য আহত হয়।

* ৯ আগস্ট কমলাপুর গ্রামের শত্রুশিবিরে হঠাৎ অ্যামবুশ করা হয়। এই আক্রমণে ৩ শত্রুসেনা ঘায়েল হয়।

* ৯ আগস্ট এক অ্যামবুশের মাধ্যমে দক্ষিণ বিজয়নগরে রাজাকারদের নিধন করা হয়।

বিভিন্নস্থানে কমান্ডো অভিযান

১২ জুলাই নারায়ণগঞ্জের গদনাইলে অবস্থিত ইলেকট্রিক সাব-স্টেশনের যন্ত্রপাতি এবং আসবাবপত্র ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়। ফলে বিদ্যুতের অভাবে বেশ কয়েকটি কলকারখানার কাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে-চিত্তরঞ্জন এবং লক্ষ্মীনারায়ণ পোশাক কারখানা এবং পাট বিপণন কর্পোরেশন।

*

২৬জুলাই পাট বিপণন কর্পোরেশন সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রেলব্রিজ যামাঝিরপাড়া পুল নামে পরিচিত, সেটা ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে মালবাহী ট্রেনের যাতায়াত বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

৪ আগস্ট পাট বিপণন কর্পোরেশনের অবস্থিত পাটের মজুদ কারখানায় অগ্নিসংযোগ করা হয় যা ৪ দিন ব্যাপী জ্বলতে থাকে। ফলে ৫০-৬০,০০০ মেট্রিক টন বহনের সক্ষমতা রাখা এই কারখানার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেই সময় সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশ পরিমাণ পাট মজুদ ছিল।

৩০ জুলাই আশুগঞ্জ-সিদ্ধিরগঞ্জ লাইনে সরবরাহকারী ১,৩২,০০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বৈদ্যুতিক গ্রিডের দুটি খুঁটি/পোল ধ্বংস করা হয়। ফলে আশুগঞ্জ-ঢাকা বিদ্যুৎ সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত এবং বন্ধ হয়ে যায়। একই দল ভৈরব-নরসিংদী-ঘোড়াশাল বাইপাস হয়ে কাজ করা আশুগঞ্জ-ঢাকা লাইনের ১০০০ কিলোওয়াট গ্রিড ধ্বসিয়ে দেয় এবং ভৈরব-ঢাকা টেলিফোন লাইনের দুটি করে মোট ৪টি পোল ধ্বংস এবং তার উপড়ে ফেলা হয়।

৩০ জুলাই সকাল ৭টায় গেরিলা বাহিনী চৌদ্দগ্রামের ৪ মাইল দক্ষিণের নানকারা এলাকায় আক্রমণ করে। শত্রুবাহিনীর একটি চলন্ত জিপে হামলা চালিয়ে ড্রাইভারসহ ৭ জনকে হত্যা করা হয়। কানে গুলি খাওয়া এক পাঞ্জাবির কাছ থেকে জি-থ্রি রাইফেল এবং গোলাবারুদ দখলে নেওয়া হয় এবং তাকে বর্ডারের দিকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার সময় সে মৃত্যুবরণ করে। স্ত্রীর কাছে লেখা দুটি চিঠি এবং কিছু তাবিজ তার পকেট থেকে উদ্ধার করা হয়। সৈন্যটি ছিল বেলুচ রেজিমেন্টের মাঞ্জুর আহমেদ।

৩০ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় গেরিলা বাহিনী চৌদ্দগ্রামে ঢুকে মর্টার এবং এমএমজি ব্যবহার করে গুলিবর্ষণ শুরু করে। সকাল পর্যন্ত চলা এই আক্রমণে শত্রুবাহিনীর অনেক সদস্য নিহত হয় (বেসামরিক রিপোর্ট অনুযায়ী)

৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় অ্যামবুশ বাহিনী চৌদ্দগ্রাম এবং জগন্নাথে চলাচলরত পাক বাহিনীর উপর হামলা চালায়। প্রথমেই রাস্তার উত্তরপাশে ২০ জন এবং দক্ষিণ পাশে ৬ জন মারা যায়। শত্রুবাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে চালাতে ঐ এলাকা থেকে সরে যায়, তারা বেসামরিক লোকজনের সহায়তায় মৃতদেহ সরিয়ে ফেলে। এই আক্রমণে মোট ৩২ পাকসেনা নিহত হয়।

২আগস্ট ভোর ৬টায় হরিসর্দারহাটের রাস্তায় মুক্তভাবে চলমান শত্রুসেনাদের উপর আক্রমণ চালিয়ে ৮জনকে হত্যা করে। পাল্টা জবাবে পাকসেনারা আমাদের বাহিনীর উপর শেল হামলা চালায়। তারপর আমাদের বাহিনীও সমুচিত জবাব দেয়। দিনভর চলা এই যুদ্ধে শত্রু বাহিনীর ১৫জন নিহতসহ মোট ২৫ জন আঘাত প্রাপ্ত হয়।

৩ আগস্ট চৌদ্দগ্রাম এবং মিয়ার বাজারের সংযোগকারী রাস্তায় দাঁড়ানো পাকসেনাদের উপর ৫০০-৬০০ গজ দূর থেকে অতর্কিত হামলা চালায় এবং ৪ জনকে হত্যা করে।

৩ আগস্ট মুক্তিবাহিনী চট্টখোলা-ফেনী রোডে ট্যাংক এবং অ-মনুষ্যবাহী মাইনসহ এক রাজাকার দলকে আটক করে, যাদেরকে মাইন পোঁতার নির্দেশ দিয়ে পাঠানো হয়েছিল। আটককৃত রাজাকারদের নাম হল-

ক) গোলাম মুস্তাফা

খ) নুরুল ইসলাম

২৯ জুলাই মুক্তিবাহিনী ঘাটুকিয়া নদীপথে যাতায়াতকারী পাকসেনাবাহী লঞ্চে আক্রমণ করে। ৪৫ মিনিট চলা বন্দুকযুদ্ধে শত্রুবাহিনীর ৫ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয়।লঞ্চটি ডুবিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি, কারণ, মুক্তিবাহিনীর রকেট লঞ্চার কাজ করছিল না।

 

 

প্রেস সংক্রান্ত ব্যাপার এবং ডকুমেন্টস

হেডকোয়ার্টার, বাংলাদেশ ফোর্স

নং-৩০১২/বিডিএফ/জিএস (১)

১৩ আগস্ট, ১৯৭১

বরাবর,

সাদেক খান,

সচিব, বাংলাদেশ আর্কাইভ

১৩/১, পাম এভিনিউ, কলকাতা-১৯

বিষয়ঃ পত্রিকা এবং রেডিওতে পরিবেশনের জন্য প্রেরিত তথ্যলিপি।

আমি আপনার কাছে যুদ্ধের তথ্যলিপি পাঠাচ্ছি। পত্র নং-৮, তারিখ-১৩ আগস্ট, ১৯৭১। আমি আপনার নিকট মুক্তিসেনা রচিত কতগুলো কবিতা এবং গানও পাঠাচ্ছি।

ইতি

সুলতান মাহমুদ

***

 

 

প্রেসের জন্য তথ্যলিপিঃ

দক্ষিণ কুমিল্লাঃ

 

৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের পর্যদুস্ত করার জন্য বের হয়। বিকেল সাড়ে ৪টায় শত্রুবাহিনীর একটি দল রাঙ্গামুরা বাজারের সামনের রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় এবং সেই সময়েই ১০ জন পাকসেনার একটি দল সেই ব্যারিকেডকে সুরক্ষা করার জন্য মার্চ করে আসতে থাকে। মুক্তিবাহিনী উভয় দলের উপর গুলি চালিয়ে ২ জনকে নিহত এবং ৩ জনকে আহত হয়।

৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী রাস্তার পূর্বদিকের অংশে অবস্থান করার সময় খবর পায় যে, হানাদার বাহিনীর একটি ছোট দল সীমান্ত থেকে মহাসড়কের দিকে আসছে। মুক্তিবাহিনী একটি পুকুরের ঢালে পজিশন নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। শত্রুবাহিনী এসে পৌঁছানোর সাথে সাথে গুলি করা শুরু করে। এই আক্রমণে ৪ জনকে ঘায়েল করে।

উত্তর-পূর্ব কুমিল্লাঃ

৭ আগস্ট ধুম এবং মস্তান নগর রেলওয়ে স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় মুক্তিবাহিনী একটি বগিসহ রেল ইঞ্জিন উড়িয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, চালক,সহকারী এবং আরও ২ জন রেল কর্মচারী নিহত হয়েছে এই আক্রমণে।

চট্টগ্রাম সেক্টরঃ

 

২ আগস্ট মুক্তিফৌজের গেরিলারা এক কুখ্যাত পাক দোসর-সাতকানিয়া কলেজের প্রিন্সিপাল আবুল খায়েরকে হত্যা করে এবং একই দিনে ঐ এলাকার একটি ব্রিজ ধ্বংস করে। এই ঘটনা, পাক বাহিনীকে তৎপর করে এবং তারা সাতকানিয়া কলেজের আশেপাশে সৈন্যবৃদ্ধি করে। কিন্তু এই এলাকাতেই আবার মুক্তিসেনারা আক্রমণ করবে, তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারেনি হানাদাররা। গেরিলারা ৬ আগস্ট রাতে শত্রুশিবিরে হামলা চালিয়ে তছনছ করে ফেলে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই পাক শিবির পর্যদুস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটে পাক শিবিরে। মুক্তিবাহিনীও কিছুটা ক্ষতির শিকার হয়েছে, তবে তার পরিমাণ এখনো জানা যায়নি। ৭-১৩ আগস্ট পর্যন্ত কতজন পাকসেনা ঘায়েল হয়েছে, জানা যায়নি, তবে সংখ্যাটি বেশ ভালো পরিমাণ তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুক্তিবাহিনী অনেক পাক দোসরকেও হত্যা করেছে এই কয়দিনে। ৮ আগস্ট বানশাখালা এলাকায় একটি রেলব্রিজ উড়িয়ে দেয়।

কুমিল্লাসেক্টরঃ

শালদানদীর উপর নিউজ বুলেটিন, নয়নপুর, মন্দভাগ

 

শত্রুবাহিনীর সকল অবস্থানই ধ্বংস করা হয়েছে এবং শত্রুসেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়েছে। এখনো সঠিক বিবরণ না পাওয়া গেলেও শুধুমাত্র ৭ আগস্ট মন্দাবাগ এবং সালদা নদী এলাকায় ৩৩ পাকসেনা নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছে। মন্দাবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১০০ শত্রু বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে এবং পুরো এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে। কসবা-কুমিল্লা রোডে রেলব্রিজ, কালভার্ট, বৈদ্যুতিক খুঁটি, রেল লাইন পুরোপুরি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। কসবাতে এক সফল অ্যামবুশ চালিয়ে ১৩ পাকসেনাকে ঘায়েল করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত খবরে, ৭-৯ আগস্ট কুমিল্লা সেক্টরে ৯০ পাকসেনা খতম হয়েছে। গেরিলারা গোমতী নদীর চারেপাশের এলাকায় বারবার গুলিবর্ষণ এবং অ্যামবুশ করে নিজেদের অবস্থান আরও শক্তিশালী করছে।

কোটেশ্বর এলাকায় ৮ আগস্ট শত্রুবাহিনীর ৫ সদস্য নিহত এবং ৩ সদস্য আহত হয়। ১০০ গজ টেলিফোন লাইন উপড়ে ফেলা হয়। ৯ আগস্ট কোটেশ্বর এলাকায় আরও একটি আক্রমণে ২ জন এমং অমরতলীতে আরেক আক্রমণে ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১০ দিন আগেই আজমপুর এলাকায় হানাদার বাহিনীর সারানো একটি ব্রিজ ধংস করা হয়। আখাউড়া সেক্টরে এক অ্যামবুশে দুই পাকসেনাকে ঘায়েল করা হয়।

বিবিরবাজার এলাকাঃ

 

৫ আগস্ট মুক্তিফৌজ লালার ব্রিজ ধ্বংস এবং একই দিনে ঢালিবাড়ি ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত করে। এরপর মিয়ার বাজার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ৫ পাকসেনা এবং ৫ রাজাকারকে খতম করে। আরেক অভিযানে বক্সনগর এলাকায় ১০ পাকসেনা প্রাণ হারায় এবং ৬ জন আহত হয়। ৭ আগস্ট বিচ্ছিন্ন অভিযানে দুই পাকসেনা নিহত এবং ৩ সেনা আহত হয়।

ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকাঃ

 

৪ আগস্ট গেরিলা বাহিনী নরসিংদীর পঞ্চপাখি ব্রিজ ধ্বংস করে ঢাকা-নরসিংদী স্থল যোগাযোগ বিপর্যস্ত করে ফেলে।

৫ আগস্ট আড়াইহাজার-বটলা এলাকার কাঁচা সড়ক খনন করে পানির স্তরে নামিয়ে আনায় আড়াইহাজার এলাকায় পাকসেনাবাহিনীর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

৩০ জুলাই ঢাকা-দাউদকান্দি (কুমিল্লা সড়ক) এর সংযোগকারী ব্রিজ মেরামতের অযোগ্য করে ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে ঢাকা-কুমিল্লা যোগাযোগ প্রায় বন্ধ।

অ-মনুষ্যবাহী মাইনের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এক পশ্চিম পাকিস্তানীর গাড়ি টুকরো টুকরো করা হয়েছে।

৩০ জুলাই ফার্মগেট এলাকার শত্রু চেক পোস্টে হামলা করে গেরিলারা। ৪ পাকসেনা তৎক্ষণাৎ নিহত এবং পরে আরও ৫ জন মৃত্যুবরণ করে। ৫ সেনা আহত হয়।

দুটি পশ্চিম পাকিস্তানি দোকান গ্রেনেড হামলার শিকার হয় ৫ আগস্ট। দুটি দোকানই ক্ষতিগ্রস্ত এবং কয়েকজন আহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধা সামসুল আলম রচিত তিনটি কবিতা

।।আহবান।।

২০-৭-৭১

বীর মুক্তির দল,

তোরা এগিয়ে এগিয়ে চল।

তোদের পিছে থাকি জনতা,

দেবে অসীম বল।

বীর সাহসী সৈনিক হয়ে,

কর জীবন পণ।

আপন হাতের অস্ত্র বলে,

বাধা দেরে রণ।

পাকসেনাদের দূরাচর,

করে দেরে ঠান্ডা।

নীলাকাশে উড়িয়ে দেরে,

বাংলাদেশের ঝান্ডা।

রক্ত বর্ণ চোখ করে,

উঠরে সবাই রঙিন হয়ে।

পাকসেনাকে তাড়িয়ে দিয়ে,

বাংলা আন আপন করে।

সময় তোদের চলে যায়,

তোরাকেন উঠিস নাই?

বঙ্গবন্ধু প্রান দেয়,

তোরাকেন জাগিস নাই।

পাকসেনাদের দুরাশা,

ভেঙে দেরে স্বহস্তে।

বাংলা মাকে গড়িয়ে নেরে,

সভ্য যুগের সাথে সাথে।

বাংলাদেশে জন্ম মোদের,

ধন্য বাংলার মাটি।

বাংলার বুকে গড়া মোদের,

শরীর পরিপাটি।

বিপদ বাঁধায় লড়বে সবাই,

করবোনা আর লাজ।

সবাই মোরা বাংলার ছেলে,

সবাই বাংলার রাজ।

বাংলার মান রক্ষা করা,

মোদের প্রধান কাজ।

এ বিশ্বমাঝে বাংলা মাকে,

গড়তে হবে তাজ।

।।আহবন।।

২০-৮-৭৯

বঙ্গবন্ধুর ডাক এসেছে,

চলরে সবাই।

আয়রে আমার ভাই বোনেরা,

নতুন করে গাই।

মায়ার বাঁধন টুটে,

আয়রে সবাই ছুটে।

ঐ শহীদেরা চেয়ে আছে,

শুনতে মুক্তির গান।

আয়রা আমার ভাইরা সবাই,

নতুন পথে ধাঁই।

স্বাধীনতার গান রচিয়ে,

সবাই মিলে গাই।

অন্ধ জীবন হতে,

চলরে আলোর পথে।

বাংলা মাকে স্বাধীন করে,

সাম্যের গান গাই।

তোমাদের ঐক্যবদ্ধ,

হইতে হবে।

তোমাদের ঝড় তুফান,

সইতে হবে।

হিংসা বিদ্বেষ ছেড়ে দিয়ে,

আয়রে পা বাড়াই। ঐ।

আমাদের দাবিদাওয়া,

মানতে হবে।

আমাদের বঙ্গবন্ধুকে,

ছাড়তে হবে।

আমাদের স্বাধীনতা

দিতে হবে।

ঐক্যবদ্ধে জড়িয়ে সবাই

এসো বিশ্ববাসীকে

দেই জানাই। ঐ।

 

 

|| আয়না ||

২০-৬-৭১

জাগ জাগ জাগরে

মুক্তির দল উঠরে সাজিয়া।

উঠরে সবাই রঙ্গিন হয়ে

আকাশ ছেদিয়া।

শুনরে মুক্তিসৈনিক

দেখরে নয়ন মেলিয়া।

দস্যু সেনাদের খঞ্জর

বাজিছে ঝনঝন করিয়া।

কে কোথায় তোরা

আয়রে সবাই ছুটিয়া

পলাশির ঐ চিত্রহ্রদে

লও অংকিত করিয়া

ঈমানের বল যায়নি

এক্ষণও উঠিরে রাঙ্গিয়া।

সত্যের জন্য প্রাণ দিয়ে

সবাই যাও শহীদ হইয়া।

ওরে ভয় নাই ভয়নাই

হবে মোদের ঈমানের জয়।

জাগরে জাগরে বাজারে

দামামা শির উঁচু করিয়া।

তোরাকেন আজ যুদ্ধের

অলসের হিলিভাই চুপ করিয়া।

সভ্যজগতে অঙ্গতা মুছিয়ে

জাগরে সবাই নতুন হইয়া।

 

 

প্রেস সংক্রান্ত ডকুমেন্ট

বাংলাদেশ ফোর্সের দপ্তর নং ৩০জে২/বিডিএফ/জিএস(1)১৪ই আগস্ট, ১৯৭১  প্রতিঃসাদেক খানসচিব, বাংলাদেশ আর্কাইভস১৩/১ পাম এভিনিউকলকাতা-১৯  বিষয় : প্রেস এবং রেডিও সংক্রান্ত পাবলিকেশনের অবস্থা প্রতিবেদন  আমি আপনাকে একটি নিউজলেটার পাঠাচ্ছি, যার মেমো নাম্বার–৯, তারিখঃ ১৪ই আগস্ট ১৯৭১।  স্বাঃ সুলতান মাহমুদ

*******************************************

  সিলেট(দক্ষিন) ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেক্টরের নিউজ বুলেটিনঃ ১২ই আগস্টে মুক্তি ফৌজ শেজামুরা (Shejamura) এলাকায় ওৎ পেতে ১জন শত্রুপক্ষের সেনাকে হত্যা করে। এবং এ ঘটনায় আরো অনেক শত্রুসেনা আহত হয়।

সুরমা টি-গার্ডেন এরিয়ার তেলিয়াপাড়া চুনারুঘাট সড়কে মুক্তিফৌজ এন্টি-ট্যাঙ্ক মাইন পুঁতে রাখে। সেটির বিস্ফোরণে একটি ৫ টনের যাত্রীবাহি গাড়ি যা শত্রুপক্ষের সৈন্য বহন করছিল, সেটি ধ্বংস হয়ে যায়। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলেই শত্রুপক্ষের ৮জন সেনা নিহত হয় এবং আরো অনেকে আহত হয়।

  ময়মনসিংহের একাংশঃ ৩ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা কালিগঞ্জ থানার চর সিন্ধার বাজার এলাকায় ডাঃ ফজলুল করিম (এম বি বি এস)-এর চেম্বারের ভিতরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাকে গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও ঐ গ্রেনেড নিক্ষেপের কারণে পাকিস্তানি সেনাদের দুই বিশেষসহযোগী গফুর ব্যাপারিসহ আরো একজন নিহত হয়। পাকিস্তানিদের আরেকজনসহযোগী গিরাদি-এর ফজলু মিয়াকে মুক্তিফৌজের গেরিলারা দেশের ভালোর জন্য হত্যা করে।  ৫ই আগস্ট মুক্তিফৌজ জাতীয় জুট মিল ও জনতা জুট ভিতরে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে উভয় মিল বন্ধ হয়ে যায়।

কুমিল্লা ফেনী সংবাদদক্ষিণ কুমিল্লা ৪ঠা আগস্ট মুক্তিফৌজবিবিরবাজারের কাছাকাছি এলাকার উন্মুক্ত স্থানে চলাফেরারত অবস্থায় শত্রুদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এতে শত্রুপক্ষের দুইজন মারা যায়। শত্রুপক্ষের লোকজন কোনরকম জবাব দেয়া ছাড়াই পিছু হটে পালিয়ে যায়।  মুক্তিফৌজ কমান্ডোরা হরিদাসপুর হাট থেকে আমানগন্ডা পর্যন্ত মর্টার এবং মেশিনগান দিয়ে শত্রুপক্ষের ঘাটিতে আক্রমণ চালায়। শত্রুরা এর উত্তরে কোনরকম গুলিবর্ষন করেনি। নিয়োগপ্রাপ্ত অধিকাংশরাজাকার ও বিহারিই তাদের অবস্থান ত্যাগ করে। গোলাবারুদ ফুরিয়ে যাওয়া এবং শত্রুপক্ষের প্রচন্ড শেলিং-এর কারণে মুক্তিফৌজ পিচু হটে চলে আসে। একজন সিএএফ অফিসারসহসহ শত্রুপক্ষের ১৩ জন নিহত হয় এবং ৮ জন আহত হয়। এই প্রতিবেদন বিভিন্ন সূত্র থেকে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করা হয় এইটাআরও নিশ্চিত যে সেই কর্মকর্তাপিক ক্যাপ, একটি কালো মিলিশিয়া শার্ট ও একটি খাকি প্যান্ট পরেছিলেন এবং তার সাথে লাল রঙের চামড়ার খাপে ৭৬২ মিমি একটি চাইনিজ পিস্তল ছিল। এই অপারেশনে মুক্তিফৌজের ১জন মারা যায় ও ২ জন আহত হয়। শত্রুপক্ষ এখানে ৫০% রাজাকার, ২৫% মিলিশিয়া, ২৫% বিশুদ্ধ আর্মি পার্সন দ্বারা গঠিত ছিল। ১০ই আগস্ট মুক্তিফৌজশত্রুপক্ষের ২৫(পঁচিশ) জনের একটি গ্রুপের উপর গুলিবর্ষণ করে। এ সময়ে তারা বালুঝুরির একটি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। এতে শত্রুপক্ষের ৬ জন সৈন্য মারা যায়। শত্রুপক্ষের বাকি সৈন্যরা লাশগুলো নিয়ে বড় রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়।

মিরাবাজার এলাকা (কুমিল্লা)

 

9 আগস্ট মুক্তিফৌজ রাজপুরে শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। এতে ১০ জন শত্রুসেনা নিহত হয়।

 

কুমিল্লার উত্তর অঞ্চল (গোমতী নদীর কাছে)

শত্রুপক্ষ এ এলাকায় এখনো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন। বাকিরা এই এলাকা তাদের দখলে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু গেরিলাদের নানারকম কৌশলের কারণে শুধুমাত্র একটি ফলাফলই নির্দিষ্ট ছিল, উত্তরই একটিই ছিলো-“মর তোরা”। মৃত্যু অথবা পাআনো ছাড়া তাদের আর কোন পথ খোলা ছিল না। এ যুদ্ধে টিকে থাকা তাদের জন্য ছিল ভীষণ কঠিন।  ১০ই আগস্ট কোটেশ্বর এবং নারুয়াতে শত্রুপক্ষ মুক্তফৌজের হামলার স্বীকার হয়। শত্রুদের ঘাটিতে আক্রমণ করে যথাক্রমে ৩জন ও ৬ জনকে হত্যা করা হয়। সবচেয়ে বড় আঘাত করা হয় ১১ই আগস্ট। মুক্তিফৌজ হরিমঙ্গলে শত্রু ঘাটিতে আক্রমণ করে প্ররায় ২০ জন শত্রুসেনাকে হত্যা করে। কোটেশ্বরও রক্ষা পায়নি। ১১ই আগস্ট ৩ জন শত্রুসেনাকে হত্যা করা হয়। একইদিনে পাঞ্চুরাতে ২ জন শত্রুসেনাকে হত্যা করা হয়। এ আক্রমণগুলোর সবই মুক্তিফৌজের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে।

 

 

কুমিল্লার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলঃ 

শত্রুরা নয়নপুর থেকে সরে গিয়ে (শালদা নদীর কাছে) মন্দবাগ দখল করার চেষ্টা করে। যদিও শত্রুরা মন্দবাগের মুল এলাকায় তাদের দখল হারায় এবং অতঃপর তারা মন্দবাগ বাজারে তদের ঘাটি গাঁড়ে। এটা ছিল ৯ আগস্টের ঘটনা। শত্রুরা নয়নপুরে আগে থেকেই নাস্তানাবুদ ছিলো। ৯ই আগস্ট মুক্তিফৌজ আরো উজ্জীবিত হয়ে শত্রুদের পুরো এলাকাছাড়া করতে মাঠে নামে। এতে মন্দবাগ (Mandabagh) বাজারে শত্রুপক্ষের ৫জন নিহত ও ১ জন আহত হয় এবং নওগাঁতে ৫ জন নিহত ও ১ জন আহত হয়। ঐ একই দিনে মুক্তিফৌজ একটি ব্রিজ ও শত্রুপক্ষের ১০ টি বাংকার ধ্বংস করে দেয়। ১০ই আগস্ট মন্দবাগ বাজারে মুক্তিফৌজ সামনে এগিয়ে সরাসরি শত্রুদের ঘাটিতে হামলা করে প্রায় ২০জন শত্রুসেনাকে হত্যা করে ও বিশাল সংখ্যক শত্রুসেনাকে আহত হয়। ১১ই আগস্ট শত্রুপক্ষ প্রায় ৩০০ সেনা ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে পালিয়ে যায়। মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের প্রায় ১০০ বাংকার ধ্বংস করে। পেছনে শত্রুদের একটি পেট্রলবাহিনী ছিল। মুক্তিফৌজ তাদের মোকাবেলা করে। ১২ই আগস্ট লক্ষ্মীপুর, মন্দবাগ বাজার ও পয়েশে শত্রুপক্ষের ৯ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।

প্রেস সংক্রান্ত ব্যাপার এবং ডকুমেন্টস

 

 বাংলাদেশবাহিনীরসদরদপ্তরনং 3012 / BDF / GS(T)১৪ আগস্ট ১৯৭১ থেকে : সাদেক খানসচিব, বাংলাদেশ আর্কাইভস13/1, পাম এভিনিউকলকাতা-19 বিষয় : প্রেস এবং রেডিও পাবলিকেশন জন্য পরিস্থিতি প্রতিবেদন আমি তোমাকে পাঠাচ্ছি একটি নিউজলেটার দ্রষ্টব্য মেমো কোন  14 আগস্ট 1971 সংযুক্তি-১ কপি  স্বাঃ / সুলতান মাহমুদস্টাফ অফিসার

 

কুমিল্লা

চৌদ্দগ্রামমিয়াবাজার সাবসেক্টর

১৭ই আগস্ট থেকে ২০ই আগস্ট পর্যন্ত মুক্তিফৌজের বিভিন্ন অপারেশন এবং এমবুশে ১জন ক্যাপ্টেনসহ শত্রুপক্ষের ৬১ জন সৈন্য নিহত ও ২০ জন সৈন্য আহত হয়। এমজি ৪৩ বেল বক্স ও এমজি চেইনসহ মুক্তিফৌজ বিপুল পরিমানে অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে। বিস্তারিত নিচে দেয়া হলঃ

মুরাদনগরে দেশী নৌকায় চলাফেরা করার সময় মুক্তিফৌজ শত্রুসেনাদের উপর এমবুশ করে। মুক্তিফৌজ শত্রুপক্ষের উপর সরাসরি গুলিবর্ষন করলে একজন ক্যাপ্টেন, বিভিন্ন পদবীর ২৯ জন শত্রুসেনা ও ৫জন রাজাকার নিহত হয়। একজন রাজাকারকে গ্রেফতার করা হয়।

মুক্তিফৌজ নিন্মলিখিত জিনিশপত্র দখল করেঃ

১। এমুনিশন এমজি ৪৩ বেল বক্স-২ (১ বক্স ভর্তি ও ১ বক্স খালি)

২। ৭৬২ চায়না এমুনিশন-৫০০

৩। রাইফেল ৩০৩ – ১

ঐ একইদিনে একটি এমবুশে মুক্তিফৌজ আরো ২ জন শত্রুসেনাকে হত্যা করে।

১৮ই আগস্ট আনন্দপুরে আরেকটি শত্রুঘাটিতে হামলা করলে যথাক্রমে ৩জন নিহত ও ২জন শত্রুসেনা আহত হয়।

আরো দুইটি আক্রমণ ও এমবুশে আনন্দপুর ও কন্টেশতলাতে যথাক্রমে ৯জন ও ৭জন শত্রুসেনা নিহত ও আহত হয়।

২০শে আগস্ট মুক্তিফৌজ আবার রঙ্গুনাথপুরে শত্রুঘাটিতে এমবুশ করলে ১১জন শত্রুসেনা নিহত ও ৩জন আহত হয়। নিন্মলিখিত জিনিশপত্র দখল করা হয়ঃ

১। এমজি ১ এ ৩ চেইন এবং মেগাজিন।

২। আই জি-৩ রাইফেল

চাঁদপুর (কুমিল্লা জেলা)

 

চাঁদপুরে মুক্তিফৌজ ব্যাপক পরিমাণে তাদের কর্মকান্ড চালু করে। ১৬ই আগস্ট মুক্তিফৌজ ২ টি স্টিমার ডুবিয়ে দেয়-একটি কার্গো বার্জসহ একটি কার্গো। এই কার্গোগুলো শত্রুদের জন্য রেশন এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বহন করছিল। আরেকটি স্টিমারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রতিটার ক্যাপাসিটি ২০০০ থেকে ৩০০০ টন ছিল।

লঞ্চঘাট ও প্যান্টুন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং একটি ভাসমান আই ডাব্লিউ টি এ জেটিও বিধ্বস্ত হয়। মুক্তিফৌজরা যখন অপারেশন শেষে ফিরে আসছিল, তখন পাকিস্তানি সেনারা তাদের উপর ওপেন ফায়ার করে, কিন্তু মুক্তিফৌজ গেরিলারা কোন হতাহত ছাড়াই ফিরে আসে।

সিলেট (দক্ষিণ)

২০ই আগস্ট ওসমানপুরে একজন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে ও একজনকে মারাত্বকভাবে আহত হয়।

  সারাংশ: ১৪ই আগস্ট২২ই আগস্টময়মনসিংহসিলেটমৌলভীবাজার সেক্টর চোরাগুপ্তা হামলা: ৯রেইড: ১২রাজাকার হত্যা: ৪৮রাজাকার আহত: ১০ক্ষতিগ্রস্থ বা ডুবে যাওয়া নৌকাঃপাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ: ১৩স্পিড বোট উপর হামলা: ২পাকবাহিনী আহত: ৬৭পাকবাহিনী হত্যা: ২৪৭অফিসার্স: ৩স্বদেশদ্রোহী নিহত: ৩৬স্বদেশদ্রোহী আহত: ১পুলিশ হত্যা: ৭অফিসার: ১মাইনে বিস্ফোরিত সেনাবাহিনীর যানবাহন: ৬(সেনাবাহিনীসহ/ছাড়া)লঞ্চ ধ্বংস: ১সেতু ও রেল কালভার্ট বিধ্বস্ত, ধ্বংস: ১২ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ:রেললাইনের ট্রাক উৎপাটনঃ রেলও্যে ট্রাক ধ্বংস: ৩শটগান দখল:রাইফেলস: ২২শটগান: ২১বেয়নেট: ৩এলএমজি: ১গ্রেনেডঃ ৪ইলেকট্রিক তোরণ (ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্থ): ১উপড়ানো টেলিফোন লাইন: ৪টেলিফোন পুল: ২ইলেকট্রিক তোরণ: ৩

 

 

ঢাকাকুমিল্লাচিটাগং সেক্টর

চোরাগুপ্তা হামলা: 8রেইড: ৩০রাজাকার হত্যা: ১৮ রাজাকার আহত: ৪রাজাকার ব: ২ক্ষতিগ্রস্থ বা ডুবে যাওয়া নৌকাঃবাংকার ধ্বংস: ৩পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ: ১৯ পাকবাহিনী আহত: ৭৫পাকবাহিনী হত্যা: ৪০১ অফিসার্স: ৪মুক্তিহত্যা হত্যা: ১স্বদেশদ্রোহী নিহত: ২০(প্রিন্সিপাল, সাতকানিয়া কলেজের জনাব আব্দুল খায়েমনিহত)স্বদেশদ্রোহী আহত: আমিমাইনে বিস্ফোরিত সেনাবাহিনীর যানবাহন: ২(সঙ্গে বা সেনাবাহিনী ছাড়া, খনি দ্বারা)ব্রিজেস & রেলওয়ে কালভার্ট বিধ্বস্ত, ধ্বংস: ৯বাংকার: ১১০ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজঃরেললাইনের ট্রাক উৎপাটনঃ৯ ফুট রেলওয়ে ট্রাক ধ্বংস: ১৩৩ ইয়ার্ড বন্দুক দখল:টেলিফোন পুল: ২২টেলিফোন লাইন উপড়ানো: ২ মাইলপাওয়ার তোরণ: ১০ইলেকট্রিক স্টেশন: ১

কুষ্টিয়াযশোরখুলনা সেক্টর

চোরাগুপ্তা হামলা: ৪রেইড: ৯রাজাকার হত্যা: ২৮রাজাকার আহত:রাজাকার দখল: ১৭ক্ষতিগ্রস্থ বা ডুবে যাওয়া নৌকাঃপাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ: ৭পাকবাহিনী আহত: ১০পাকবাহিনী হত্যা: ৭৭অফিসার্স: ২স্বদেশদ্রোহী নিহত: ৩৩স্বদেশদ্রোহী আহত: মাইনে বিস্ফোরিত সেনাবাহিনীর যানবাহন: ১(সঙ্গে বা সেনাবাহিনী ছাড়া, খনি দ্বারা)ব্রিজ & রেলওয়ে কালভার্ট বিধ্বস্ত, ধ্বংস: ৩ক্ষতিগ্রস্থ ব্রিজঃ রেলওয়ে ট্রাক ধ্বংস:ক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনঃটেলিফোন লাইন উপড়ানো:বন্দুক দখল: রাইফেল: ১গোলাবারুদ: ১৪বন্দুক: ১১

রংপুরদিনাজপুররাজশাহী সেক্টর

চোরাগুপ্তা হামলা: ৭রেইড: ৮থানায় হানা: ৩পুলিশ কর্মকর্তা নিহতঃ ১পুলিশ হত্যা: ৭রাজাকার হত্যা: ২৭রাজাকার দখল: ১২ক্ষতিগ্রস্থ বা ডুবে যাওয়া নৌকাঃ২পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধ: ৪পাকবাহিনী আহতঃ৩৩পাকবাহিনী হত্যা :৪৮অফিসার: ৭স্বদেশদ্রোহী নিহত: ৫৫স্বদেশদ্রোহী আহত:মাইনে বিস্ফোরিত সেনাবাহিনীর যানবাহন: ৫(সঙ্গে বা সেনাবাহিনী ছাড়া, খনি দ্বারা)ব্রিজ & রেলওয়ে কালভার্ট বিধ্বস্ত, ধ্বংস: ২ক্ষতিগ্রসব্রিজ :রেলওয়ে ট্রাক ধ্বংস:40 ফুটক্ষতিগ্রস্থ রেললাইনঃশটগান দখল: রাইফেল: ৩৬পাওয়ার তোরণ ধ্বংস: ১

প্রেস বিষয়ক এবং দলিলাদি

সদর দপ্তর বাংলাদেশ বাহিনী

নংঃ ৩-১২/বি ডি এফ/ জি এস (অপ্স)

১৬ই অগাস্ট ১৯৭১

বিষয়ঃ সংবাদপত্র এবং রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি বর্ননা

আপনাকে ১৬ই অগাস্ট ১৯৭১ তাং বিশিষ্ট ১১ নং মেমো দিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশনা পাঠালাম।

স্বাক্ষর

সংযুক্তিঃ ০২ টি মাত্র

সুলতান মাহমুদ

চিটাগাং সেক্টর

১৪ আগস্ট মুক্তিফৌজ গেরিলারা চান্দগাড়িতে শত্রু অবস্থান ঘেরাও করে এবং শত্রুরা পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ যাবত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী শত্রুপক্ষের নয় জন হতাহত হয়েছে যার মধ্যে একজন জেসিও এবং চার জন রাজাকার রয়েছে। শত্রুদের পাকিস্তানী পতাকা উত্তোলন করতে দেয়া হয়নি।

সিলেট(দক্ষিন)এবং ব্রাক্ষণবাড়ীয়া

(১৪) ঘেরাও চলাকালিন সময়ে মুক্তিবাহিনী চৌরাস্তার একটি বাড়ী যা শত্রুপক্ষের প্রাক্তন আস্তানা ছিল, তা উড়িয়ে দেয়। শত্রুপক্ষের হতাহতের কোন খবর এখনো জানা যায়নি। মুক্তিবাহিনী মুকন্দপুরে শত্রুপক্ষের অবস্থানের ওপর মর্টারের গোলা বর্ষন করে, শত্রুপক্ষের হতাহতের কোন খবর এখনো জানা যায়নি (১৪ই অগাস্ট)। মুক্তিবাহিনী সিন্ধার খান চা বাগানে শত্রুপক্ষের অবস্থানের ওপর মর্টারের গোলা বর্ষন করে, শত্রুপক্ষের হতাহতের কোন খবর এখনো জানা যায়নি (১৪ই অগাস্ট)।

কামালপুরে মুক্তিবাহিনী মর্টারসহযোগে শত্রু অবস্থানে হামলা চালায়, তিনজন শত্রুসৈন্য ঘটনাস্থলে মারা যায়, মর্টার আক্রমনের ফলে হতাহতের কোন সংবাদ এখনো জানা যায়নি।

১২ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনী আলিনগর-জয়নগর (মোহনপুরের অগ্রবর্তী) এলাকায় চার জন রাজাকারকে হত্যা করে।

১৩ ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনীর এক ছোট দল সিন্ধার খান চা বাগানে ঘেরাও এর সম্মুখীন হলে যুদ্ধ করে ফেরত আসার সময় নিজেদের কোনরুপ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই তারা পাচ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করতে সক্ষম হয়।

ঢাকা এবং ময়মনসিংহের আশেপাশে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডো কার্য্যক্রম

২৫ শে জুলাই ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশন এবং জিনারদি (ঢাকা জেলা) র মধ্যবর্তী স্থানে গ্যাস পাইপ ধ্বংস করা হয়।

পাকিস্তানী বাহিনীর সঞ্চিত অস্র এবং গোলাবারুদ সংগ্রহের উদ্দেশে মুক্তিবাহিনী বাজিতপুর ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে হামলা চালায়। পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সংঘর্শে পাকিস্তান আর্মির তিন সদস্য, একজন গার্ড এবং একজন ক্যাশিয়ার মারা যায়। মুক্তিবাহিনীও তাদের একজন সদস্যকে হারায়, তবে কোন অস্র এবং গোলাবারুদ সংগ্রহ করা যায়নি।

৩১শে জুলাই দুই কুখ্যাত রাজাকার ভ্রাতা শফিক এবং শাহজাহানের মধ্যে শফিককে হত্যা করা হয়।

৫ই অগাস্ট গেরিলারা জুট মার্কেটিং করপরেশনের বাইলিং এজেন্ট মারকাসের পাটের গোডাউনে অগ্নি সংযোগ করলে ৪০০ বেল পাট পুড়ে যায়।

২ য় অগাস্ট নবীনগর থানাধীন মেহেরকোটা গ্রামের রাজাকার কালা মিয়া এবং ৩ রা অগাস্ট কৃষ্ণনগর গ্রামের রাজাকার হারুন আলিকে হত্যা করা হয়।

চিটাগাং সেক্টর

১৩ ও ১৪ ই অগাস্টের রাতে মুক্তিবাহিনী এই অঞ্চলে বৃহৎ আকারের অভিযান পরিচালনা করে।

১৪ ই অগাস্ট রামগরের এসডি’ওর বাংলো, এসডি’ওর অফিস এবং মৃত্তিকা সংরক্ষন অফিসে হামলা হলে শত্রুপক্ষ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় যার বিস্তারিত বিবরন এখনো জানা যায়নি।

মহাননী বৌদ্ধ মন্দিরে আক্রমন পরিচালনা করা হয়, ক্ষয়ক্ষতির বিবরন এখনো জানা যায়নি।

মুক্তিযোদ্ধাদের একই দল সেই এলাকায় ৪৮ গজ রাস্তা উড়িয়ে দেয়।

মুক্তিবাহিনী রামগর এবং কারাগার হাট সংযোগকারী রাস্তার সোনাছড়ি ব্রীজে পাহারারত শত্রু অবস্থানে হামলা চালায়, ২০ মিনিটের এই অভিযানের পুরোটা সময় জুড়ে শত্রুসৈন্যদের মরন আর্তনাদ শোনা যায়। শত্রুপক্ষের হতাহতের খবর এখনো জানা যায়নি। বাগান বাজারের শত্রু অবস্থানে মর্টারের গোলা বর্ষণ করা হয়, হতাহতের নিশ্চিত খবর পাওয়া গেলেও সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।

অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিবাহিনী আন্ধার মানিকে শত্রুদের প্রধান ঘাটি দখল করে নেয়। জেসিওদের নিকট হতে প্যারেড স্যালুট গ্রহন করার সময় একজন অফিসারকে ঘটনাস্থলে হত্যা করা হয়, তাৎক্ষনিক ভাবে নিকটে দাঁড়ানো অপর তিনজন অফিসারকে হত্যা করা হয়। সাহায্যকারীরা আসার ফলে এবং মর্টার গোলাবর্ষণ শুরুর কারনে ব্যাপক সংখ্যক শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনী তলাতলী এবং টাকিয়ার শত্রু অবস্থানে প্রথমে মর্টার হামলা চালিয়ে পরে এই দুই শত্রু এলাকা ঘেরাও করে। টাকিয়াতে দুইটি এবং ক্লিনাগারে দুইটি শত্রু টাওয়ার ধংস করা হয়।

কুমিল্লা

আখাউড়া সাবসেক্টর

চাদপুর, লঙ্কামুরা এবং ভাগলপুরে (৯, ১০ এবং ১১ তারিখে) মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা ৪ শত্রুসৈন্য, এক রাজাকারকে হত্যা করাসহ এক রাজাকার এবং শত্রুপক্ষের এক চরকে গ্রেফতার করে।

মুক্তিবাহিনী চাদপুর এলাকাতেও হামলা চালায় এবং ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে (সকালে ৪ জনের মৃতদেহ দেখা গেছে)। ১১ ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনী দালাল বাড়ির বিচ্ছিন্ন শত্রু অবস্থানে পুনরায় হামলা চালায় এবং ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১২ ই অগাস্ট লাটুমুরায় দুইটি এবং লক্ষীপুরে অপর দুইটি শত্রু বাঙ্কার উড়িয়ে দেয়া হয়। দুই কুখ্যাত রাজাকার তথা আবুল কাশেম, পিতা মৃত কলি মিয়া, গ্রাম চাদপুর, কসবা এবং আবু মিয়া, গ্রাম সাইদাবাদ, থানা কসবা, মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

কুমিল্লা উত্তরাংশ (গোমতি নদীর নিকটে)

১২ ই অগাস্ট আতাখারায় শত্রু অবস্থানে ভিন্ন ভিন্ন গুপ্ত হামলায় মোট ১৪ জন্য শত্রু সৈনিক মারা যায়। সর্বশেষ আক্রমনের পর শত্রুপক্ষ মৃতদেহ সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হবার পর গোলন্দাজ বাহিনির ছত্রছায়ায় তা সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়।

কেবল এই এলাকাতেই ১২ এবং ১৩ ই অগাস্ট (গোমতি নদীর নিকটে) সংরক্ষনশীল মতে মুক্তি বাহিনী ৪০ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

নিম্নে ঘেরাও এবং গুপ্ত হামলার ফলে শত্রু পক্ষের নিহত এবং হতাহতের বিবরণ দেয়া হল।

১২ই অগাস্ট কোটেশ্বরে একজন এবং ১৩অই অগাস্ট জানবাড়িতে আট জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়, কোটেশ্বরীতে তিনজন, পায়কোঠায় দুইজন এবং নারাওয়ারাতে আরো তিনজন মারা যায়।

———————————————————————————-

প্রেস বিষয়ক এবং দলিলাদি

সদর দপ্তর বাংলাদেশ বাহিনী

নংঃ ৩০১২/বি ডি এফ/ জি এস (অপ্স)

১৭ই অগাস্ট ১৯৭১

বরাবর

সাদেক খান

সেক্রেতারী, বাংলাদেশ আর্কাইভ

১৩/১ পাম এভিনিউ

কলকাতা-১৯

বিষয়ঃ প্রেস এবং রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি বর্ননা

আপনাকে ১৭ই অগাস্ট ১৯৭১ তাং বিশিষ্ট ১২ নং মেমো বাবদ একটি সংবাদ প্রকাশনা পাঠালাম।

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

সংযুক্তি

নিউজ বুলেটিন

কুমিল্লা এবং ঢাকা

শালদা নদী এলাকা

 

শত্রুদের নৃসংশতা আগের তুলনায় ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে। এখন তারা গ্রামের লোকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন। পাস্কিস্তান আর্মি পথ প্রদর্শক হিসেবে তুলে নিয়েছিল এমন একজনের বক্তব্য থেকে এটা জানা গেছে। শত্রুরা বিশেষত গত সপ্তাহে এই এলাকায় ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছে। ১০ ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনী শত্রুর বিভিন্ন ঘাটিসহ তাদের অগ্র এবং পশ্চাৎ অবস্থান দখল করে নেয়।

শালদানদী চত্বরে মর্টারের ব্যাপক গোলাবর্ষন এবং এই এলাকায় হামলার কারনে শত্রুপক্ষ ৪ দিনে ৬০ জন হতাহত হবার মত ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির শিকার হয়েছে, ফলে মানস গ্রামসহ নয়নপুর গ্রাম এবং শালদানদী গোডাউন এলাকাতেও শত্রুপক্ষ তাদের প্রতিরক্ষা বিস্তৃত করেছে।

মান্দাবাগ গ্রামে নিখুত বোমাবর্ষনের কারনে শত্রুপক্ষের একটি ১২০ মর্টার বিধ্বস্ত হয় এবং এক সপ্তাহে প্রায় ২০০ (দুই শত, যার বেশীরভাগ মৃত) জন হতাহত হয়।

এই এলাকায় শত্রুপক্ষে রমনোবল সম্পূর্ন ভেঙ্গে পরে এবং তারা আক্রমন বুহ্য ব্রাহ্মনপাড়ায় সরিয়ে নিয়ে যায়।

শালদানদী এলাকায় মুক্তি বাহিনীর অত্যন্ত সফল তিনটি গুপ্ত হামলার ফলে শত্রু বাহিনী এই রাস্তা ব্যাবহার বন্ধ করে দিয়েছে

১১ ই অগাস্ট শত্রুবাহিনী মন্ডাবাগ পৌছানোর জন্য এক নতুন রাস্তা বের করার চেষ্টা করে এবং অপরাহ্নে ফেরত আসে।

ফেরত আসার সময় তারা পথ প্রদর্শক হিসেবে নাগেশ গ্রাম থেকে এক জনকে সংগ্রহ করে। এই ব্যাক্তি শত্রু পক্ষের ভেঙ্গে পরা মনোবলের কথা জানান। তিনি জানান নৌকার ভেতর থাকা শত্রুপক্ষেরকেউকেউ কান্না করছিলেন এবং নৌকা থেকে নামতে অস্বীকৃতি জানান, অন্যরা পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল।

এটা ইতিমধ্যে জানা গেছে মন্ডাবাগ বা নয়নপুরে দৃষ্টিসীমার মধ্যে শত্রুবাহিনী নেই। ১৩ এবং ১৪ই অগাস্ট শত্রুপক্ষ মন্ডাবাগে তাদের অবস্থান পুনরুদ্ধার করতে চাইলে ২০ জন হতাহতের পর তাৎক্ষনিক ভাবে পশ্চাদপসারন করে।

 

চিটাগং সেক্টর

১৫ ই অগাস্ট শত্রুপক্ষের ১৫ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়। ছাগলনাইয়াতে এক হামলায় শত্রুপক্ষের তিনজন সৈন্য নিহত হয়, মির্ধানবাজারে অপর এক গুপ্ত হামলায় ১২ (বারো) জন্য শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

 

সিলেট (দক্ষিন) এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়া

১৪ই অগাস্ট নালুয়া চা বাগান এলাকায় শত্রু অবস্থানে গুপ্ত হামলায় ৭ (সাত) শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়, অপর ছয় জজন আহত হয়।

ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় গেরিলা কার্য্যক্রম

মুক্তিবাহিনীর নরসিংদীর গেরিলারা পূবালী জুট মিলের দুইটি গোডাউন পুড়িয়ে ছাই করে দেয়।

নিম্নের তিন সক্রিয় রাজাকারকে হত্যা করা হয়।

১) ঘোড়াশালের মোহাম্মাদ ইদ্রিস

২) জোনারদি র ফাজলুল হক

৩) রূপগঞ্জের সক্রিয় দফাদার ইসলাম উদ্দিন

৪) ডাকাত দলের এক সদস্য

একটা RL এবং একটা MMG উদ্ধার করা হয়, একই সাথে বিপুল পরিমান গোলাবারুদ হতগত হয়।

সমাবেশে ভাষন দেবার সময় সমগ্র পাকিস্তান জামাত-ই-ইসলামের এক ভাইস প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা হয়।

ঢাকা এবং নরসিংদীর মধ্যবর্তী পাচরাখী সেতু সম্পূর্ন ভাবে বিদ্ধস্থ করা হয়।

হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টাল ঘটনা (ইতিমধ্যে বিবৃত)

রূপগঞ্জে মুক্তিবাহিনী দুই জন পশ্চিম পাকিস্তানী ছাত্র, যারা স্বেচ্ছায় রাজাকার হিসেবে কাজ করছিল, তাদের গ্রেফতার করে।

 

 

কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চল

১৩ ই এবং ১৪ই অগাস্টের মধ্যে চৌদ্দগ্রামের নিকটে ৩০ জনের মৃত্যুসহ শত্রুবাহিনীর ৪০ জন হতাহত হয়। একটি জীপ পুড়িয়ে দেয়া হয় এবং ঘটনাস্থলে ৬ জনকে হত্যা করা হয়, এখানে দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলে। অবশেষে শত্রুপক্ষ মৃতদেহ নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। একই দিনে অপর এক সংঘর্ষে শত্রুবাহিনী প্রায় ১০ জন সৈন্য হারায়।

১৪ ই অগাস্ট ট্রাঙ্ক রোডে শত্রু বাহিনীর যাতায়াত গুপ্ত হামলার শিকার হয় এবং বালুঝুরি ব্রীজে শত্রু অবস্থান আবারও ঘেরাও করা হয়। শত্রুপক্ষের প্রায় ১৫ জন হতাহতের শিকার হয়। শত্রুপক্ষের চৌদ্দগ্রাম, হরি সদরহাট এবং আমনগোদা অবস্থানের ওপর মর্টারের গোলাবর্ষন করা হলে শত্রুপক্ষের আরো ১০ জন হতাহত হয়।

১৪ ই অগাস্ট রাত্রে শত্রুপক্ষের ১২ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়। মুক্তিবাহীনি আনন্দপুর, জঙ্গলবাড়ী এবং কোটেশ্বর এলাকায় হামলা করে এই সাফল্য অর্জন করে। পাওয়া খবর অনুযায়ী ১৩ এবং ১৪ ই অগাস্টের মধ্যে কুমিল্লা সেক্টরে শত্রুপক্ষের হতাহতের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে।

————————————————————————————

প্রেস বিষয়ক এবং দলিলাদি

এচেলন সদর দপ্তর বাংলাদেশ বাহিনী

নংঃ ৩০১২/বি ডি এফ/ জি এস (১)

১৮ই অগাস্ট ১৯৭১

বরাবর

সাদেক খান

সেক্রেতারী, বাংলাদেশ আর্কাইভ

১৩/১ পাম এভিনিউ

কলকাতা-১৯

বিষয়ঃ প্রেস এবং রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি বর্ননা

আপনাকে ১৮ই অগাস্ট ১৯৭১ তাং বিশিষ্ট ১৩ নং মেমো বাবদ একটি সংবাদ প্রকাশনা পাঠালাম। একই সাথে রেডিও পাকিস্তান কতৃক ১৭ ই অগাস্ট ১৯৭১ সালে বেলা তিনটার সময় প্রচারিত হাবিলদার সালাহ উদ্দিনের সাক্ষাতকারের বিরোধীতা করে দেয়া বাংলাদেশ বাহিনীর বিভিন্ন জেসিও এবং এনসিও র একটি যুক্ত বিবৃতি, যা এখনো বাংলাদেশ রেডিওর কাজে আসতে পারে, সংযুক্ত করা হল।

সংযুক্তি-৪ (চারটি মাত্র)

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

 

কুমিল্লা এবং ফেনীর সংবাদসমূহ

১৩ এবং ১৪ ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনী শত্রুবাহিনীকে প্রায় হাতাহাতি আক্রমন করে। এই সাহসী সম্মুখ যুদ্ধ শত্রু বাহিনীর অবস্থান গুড়িয়ে দেয়। শত্রুসৈন্যদের তাদের বিভিন্ন রক্ষনাত্বক অবস্থান থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। শত্রু অবস্থানে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়, জনগণ উল্লাস ধ্বনি দেয় এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের পলায়ন করতে দেখে।

সালদার এবং সুবার বাজারে (পরশুরাম পুলিশ স্টেশন) প্রায় হাতাহাতি যুদ্ধে পাকিস্তান আর্মির এক অফিসার এবং অন্যান্য পদের আরো ১৫ জন চরম পরিনতি বরন করে।

শত্রুপক্ষের ১৬ জনের মৃত্যু এবং ৬ জনের আহত হওয়া নিয়ে সর্বমোট ২২ জন হতাহত হয়।

মুহুরী নদীর পশ্চিম তীরে হাজী খালেকপুর থেকে গাবতলী (সালদার এবং সুবার বাজারের নিকটে) শত্রুপক্ষ আবার বিপর্যের সম্মুখীন হয়। দ্বিতীয় আক্রমন শত্রুপক্ষকে কোনরূপ সুযোগ না দিয়ে গুড়িয়ে দেয়, জনগনের মনোবল ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। ব্যাপক আনন্দ উল্লাসের মধ্য দিয়ে জনগণ বিজয় উদযাপন করে। শত্রু বাঙ্কার ধংস করা হয়, ব্যাপক অস্র এবং গোলাবারুদ হস্তগত হয়। ১৩ (১০ সৈন্য, ৩ রাজাকার) জনের মৃত্যু, ৭ জন আহত হওয়া নিয়ে শত্রুপক্ষের মোট ২০ জন হতাহত হয়। শত্রুবাহিনী বর্তমানে তাদের সুরক্ষা অবস্থান সুদৃঢ় করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা কিছু বায়ু পর্যবেক্ষনও চালাচ্ছে। ১৩ এবং ১৪ই অগাস্টের মধ্যে সালদার এবং সুবার বাজারে শত্রুপক্ষের মোট হতাহতের সংখ্যা ৪২ জন।

১১ এবং ১২ ই অগাস্ট সুবার বাজার এবং বাদুয়াতে শত্রুপক্ষের ৪ জন হতাহত হয়, ১২ অগাস্ট ফেনী রোডে মাইন বিস্ফোরনে এক জন সৈন্য নিহত এবং ওপর একজন গুরুতর আহত হয়। সুবার বাজারে মুক্তিযোদ্ধারা ২ মেইল লম্বা টেলিফোন তার হস্তগত করে।

কুমিল্লা

চৌদ্দ গ্রাম এবং মিয়ার বাজারের সন্নিকটে

শত্রুরা তাদের ২ জন অফিসারকে হারিয়েছে। হরিমঙ্গলে মুক্তি বাহিনী আক্রমন চালালে একজন লেফটেন্যান্ট, একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্টসহ ছয়জন সৈন্য মৃত্যুবরন করে। শত্রুপক্ষএর মোট ১২ জন হতাহতের মধ্যে ৮ জন ম্রিত এবং অপর ৪ জন আহত।

১২ই অগাস্ট এক সফল অভিযানে মুক্তিবাহিনী ১২জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা এবং ৫ জনকে আহত হয়। কটক বাজারে মুক্তিবাহিনী ১০ (দশ) জন সৈন্যকে হত্যা করে, অপর দুই জন আহত হয়।

বক্স নগর হতে ১২ই অগাস্ট ২ জন রাজারকারকে গ্রেফতার করা হয়। ১৫ ই অগাস্ট আখাউড়ার কাছে এক গোরস্থানে গুপ্ত হামলায় ৪ জন শত্র্য সৈন্য মারা যায় এবং অপর দুই জন আহত হয়।

 

সিলেট (দক্ষিন), ব্রাহ্মনবাড়িয়া, ময়মনসিংহ এবং ঢাকার কিয়দংশ

মুক্তিবাহিনীর কমান্ডোরা নিম্নবর্নিতসহযোগীদের নিশ্চিহ্ন করেনঃ

১) মাস্টার আহমেদ আল খান, গ্রামঃ বাঘার হাট, থানাঃ কাপাসিয়া, ৫ ই জুলাই ময়মনসিংহ

২) আব্দুল বাতেন এবং আব্দুল মান্নান, গ্রামঃ ওজলি, থানাঃ কাপাসিয়া, ১০ ই অগাস্ট, ময়মনসিংহ

৩) আব্দুল ওয়াহিদ, গফরগা, ময়মনসিংহ

৪) চান্দ মিয়া এবং সৈয়দ আলি নামের রাজাকার দ্বয়, গ্রামঃ কারিহাটা, থানাঃ কাপাসিয়া, ৪ ঠা অগাস্ট, ময়মনসিংহ

৫) আব্দুর রাজ্জাক এবইং লোকমানুর রহমান, তারাগাও গ্রামে, থানাঃ কাপাসিয়া, তারা পর্যায় ক্রমে রুপগঞ্জ গ্রাম, ঢাকা এবং পাবনা জেলার স্থানীয় ছিল।

৬) মোহাম্মদ হাফিজুদ্দিন এবং আব্দুল আলি (রাজাকারদ্বয়), গ্রামঃ তারাগাও, থানাঃ কাপাসিয়া, ২৩ জুলাই

৭) মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, পিতাঃ সাইফুদ্দিন এবং আব্দুল হাকিম, পিতাঃ মোঃ সামিরুদ্দিন, গ্রামঃ তারাগাও, থানাঃ কাপাসিয়া, ২৫ শে জুলাই

 

একটি বিলম্বিত সংবাদঃ গুরুত্বপূর্ন

২৮ শে জুলাই দারাদারিয়া গ্রামের (থানাঃ কাপাসিয়া) গ্রামের নিকট গুপ্ত হামলার শিকার হয়ে শত্রুপক্ষের খাদ্য বহনকারী তিনটি লঞ্চ সম্পূর্নভাবে ধংস হয়ে ডুবে যায়।

প্রেস বিষয়ক এবং দলিলাদি

এচেলন সদর দপ্তর বাংলাদেশ বাহিনী

নংঃ ৩০১২/বি ডি এফ/ জি এস (১)

২২ শে অগাস্ট ১৯৭১

বরাবর

সাদেক খান

সেক্রেতারী, বাংলাদেশ আর্কাইভ

১৩-১ পাম এভিনিউ

কলকাতা-১৯

বিষয়ঃ প্রেস এবং রেডিওতে প্রকাশের জন্য পরিস্থিতি বর্ননা

১৮ই অগাস্ট ১৯৭১ তাং বিশিষ্ট ১৪ নং মেমো বাবদ একটি সংবাদ প্রকাশনা পাঠালাম।

স্বাক্ষর

সুলতান মাহমুদ

সংবাদ

সিলেট (দক্ষিন), ব্রাহ্মনবাড়িয়া

মুক্তিবাহিনীর কমান্ডোরা সম্প্রতি ব্রাহ্মনবাড়িয়া-কুমিল্লা, ব্রাহ্মনবাড়িয়া-আখাউড়া-কুমিল্লার মধ্যবর্তী সকল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। ১৮ ই অগাস্ট মুক্তিবাহিনী সুলতানপুর সড়ক সেতু (একটি বৃহৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ সেতু) গুড়িয়ে দেয়। এই সেতু শত্রুপক্ষের সংযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছিল।

  • মুক্তিবাহিনী ১৮ ই অগাস্ট সিলেট জেলায় দুইটি টাওয়ার (এক লাখ ৩২ হাজারকেভি) ধংস করে
  • মুক্তিবাহিনী ভৈরব বাজারে ইসমাইল নামক এক গুরুত্বপূর্ন সহযোগীকে হত্যা করে, রহ্মত আলি নামে আরেকজনকে গুরুতর আহত করা হয়।

মুক্তি বাহিনী ১৮ ই অগাস্ট পুরো রাঙ্গুনিয়া পুলিশ বাহিনীকে গ্রেফতার করে, যার মধ্যে ছিল ৭ জন রাজাকার এবং ৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ। সংক্ষিপ্ত বিচারের পর সবাইকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

  • বোয়াখালিতে মুক্তি বাহিনীর গ্রেনেড হামলায় প্রাক্তন মুসলিম লীগ MPA এবং গুরুত্বপূর্ন একসহযোগী তার বাম পা হারায়
  • মুসলিম লীগের নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর গুরুত্বপূর্নসহযোগী জনৈক মোঃ ইসমাইলকে রাউজানে হত্যা করা হয়
  • মুক্তিবাহিনী চট্রগ্রামের আগ্রাবাদ, জেনারেল হাসপাতাল, চিটাগং কলেজ, হোস্টেল এবং অন্যান্য এলাকায় পতাকা উত্তোলন করে। বোয়াখালি, আনোয়ারা, পাটিয়া এবং সাতকানিয়া থানা বাংলাদেশী পতাকায় পরিপূর্ন ছিল।

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদর দপ্তর প্রকাশিত যুদ্ধ পরিস্থিতি সংক্রান্ত আরো কয়েকটি প্রতিবেদন বাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর ১৯৭১

 

ট্রান্সলেটেড বাইঃ Razibul Bari Palash

<১১, , ৪৩৪৯>

পাকিস্তান সেনাবাহিনী যে কোনো মুহূর্তে মুক্তিফৌজ থেকে ভারী আক্রমণ আশা করছিল। এর জন্য তাদের প্রস্তুতি & ব্যবস্থা নেয়া ছিল। বাংকার ও অনেকগুলি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তবুও গেরিলাদের কার্যক্রম বেড়েই যাচ্ছে। রেডিও পাক, টেলিভিশন স্টেশন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পাহারা বাড়ানো হয়েছে। ডবল মানুষের উচ্চতার দেয়াল করা হয়েছিল। এইসব জায়গার চারপাশের গাছ ও ঝোপকেটে ফেলা হয়েছিল। রহস্যময় মুক্তিফৌজদের ধরতে সব প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করেছে।

আর মুক্তিফৌজদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া কি?

তারা এটাসহজে গ্রহণ করে। একজন ছেলে বলল-‘আমরা তাদের ছোট্ট একটা লাথি দেব। ভালোই লাগছে। ‘

লাথির কিছু নমুনা নিচে দেয়া হল-

  • মুক্তি বাহিনী দ্বারা গ্রীন রোডে একটি অতর্কিত আক্রমণ করা হয়। পাকবাহিনীর জিপ ছিল। চার সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়।
  • মিরপুর রোড, কলাবাগান কালেক্টরেট অফিসে আক্রমণ হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ধরা হয় এবং সব হত্যা করা হয়। দশ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হতাহত হয়।
  • ১৫ আগস্ট দুটি পাওয়ার পাইলন কাটা হয় কালীগঞ্জ টঙ্গী লাইনে।
  • ২১ শে আগস্ট কালীগঞ্জ থেকে ডেমরার মধ্যে লাইন বিছিন্ন করা হয় (রূপগঞ্জের কাছে)।
  • ঢাকার মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জে নদীর তীরে একটি অ্যামবুশ করে। রূপগঞ্জের ওসি চার পাকবাহিনী ও চার পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশের সঙ্গে আসছিলেন। দুই স্থানীয় পুলিশ মুক্তি বাহিনীর বিরুদ্ধে তদন্ত করে। ধাক্কা দিয়ে নৌকা দখল করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা স্টেনগান দিয়ে আক্রমণ করে এবং সমস্ত কর্মীদের হত্যা করে।

কুমিল্লা

মাধাবাগ এলাকার থেকে সর্বশেষ সংবাদ। মুক্তিফৌজ ও পাকবাহিনীর মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে।  পাকবাহিনী মুক্তিফৌজের প্রতিরোধ ভাঙ্গার কঠিন চেষ্টা করছে। এর মধ্যে শত্রুরা ঘেরাও হয়ে গেল।

সাম্প্রতিক খবরএ জানা যায় যে জুলাই ও ১ লা আগস্টে মুক্তিবাহিনী প্রায় পঞ্চাশ জন শত্রুসেনা নিহত ও বিশ জন আহত হয়।

আখাউড়া সেক্টর

নবীনগর থানায় মুক্তি বাহিনী শত্রুসৈন্য বহনকারী নৌকা অতর্কিতে আক্রমণ করে। তিনটি নৌকার ২টি ডুবে যায়। বায়ান্ন জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

আখাউড়া ছাপ্পান্ন নং সেক্টরে গত সপ্তাহে ৫৬ জন রাজাকার ৩৪ টি রাইফেলসহ আত্মসমর্পণ করে।

ফেনী (নোয়াখালী)

গেরিলা কার্যক্রম ফেনীতে চলতে থাকে। ৩০ শে আগস্ট ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং অনেকে আহত হয়েছে। মুক্তিফৌজ বিভিন্ন বাংকার উড়িয়ে দেয়, ধ্বংস করে ও রাজাকারদের বন্দী করে।

৩০শে আগস্ট কালিরহাটে মুক্তি বাহিনী শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। মর্টার ও এলএমজি র ভারি গোলাবর্ষণ চলে। শত্রুদের মনোবল দুর্বল হয়ে যায়। শত্রুরা বিভ্রান্ত এবং পশ্চাদপসরণ করে।

পঁচিশ জন পাকসেনা নিহত ও পঁয়ত্রিশ জন আহত হয়। ফারুক আহমেদ নামে একজন কুখ্যাত রাজাকারকে বন্দী করা হয় যে চট্টগ্রামে অনেক বাঙালি পরিবারকে হত্যা করে।

একই দিনে শত্রুদের সঙ্গে পরশুরাম এ বিভিন্ন সম্মুখযুদ্ধে পাঁচ শত্রুসৈন্য নিহত এবং তিনটি বাঙ্কার ধ্বংস করে।

কুমিল্লা

চৌদ্দগ্রাম মিয়াঁর বাজার এলাকা (কুমিল্লা দক্ষিণপূর্ব অংশ)

২৬ ও ২৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ জন শত্রুসেনা চৌদ্দগ্রাম ও মিয়াঁরবাজার এলাকায় এ নিহত হয়। শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে সাত পাকসেনা নিহত, ছয় জনকে আহত হয়।

২৭ তারিখ হরিমঙ্গলে অভিযানে মুকিফৌজ শত্রুর ঘাঁটি ধ্বংস করে। এতে ১১ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়।

চৌদ্দগ্রামে মাইন বিস্ফোরণে এক পাকসৈন্য মারা যায়।

মুনসীরহাঁট রাজস্ব অফিসে আগুণ দেয়া হয়। সকল সরকারী নথি এবং অন্যান্য জিনিস ধ্বংস করা হয়।

                   কুমিল্লার উত্তর পূর্বাঞ্চল (গোমতী নদীর কাছে)

ফকিরহাট ও রাঘুরামপুর এলাকায় শত্রুরা মাটি খনন করে এবং মাঝিগাছায় স্থানীয়দের তাদের সাহায্য করতে বলে। শত্রুরা ইতিমধ্যে হামলার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা লাইন তৈরি করে। শত্রুরা আরো সৈন্য, আরো আগ্নেয়াস্ত্র বৃদ্ধি করতে থাকে। ২৯ ও ৩০ শে আগস্ট এই সাব সেক্টরে মুক্তিফৌজ ১৭ জন শত্রু নিহত ও অনেক আহত হয়।

২৯ শে আগস্ট নিয়মিত বাহিনীর এক প্লাটুন ও রাজাকারদের দুই বিভাগ রেল লাইনের দিকে অগ্রসর হয়। তাদের কালিপুর এ অতর্কিতে আক্রমণ করা হয়। ৪ জন শত্রু নিহত ও তিন জন আহত হয়।

একই দিন তারা যখন চার্নালে এ লুটপাট চালিয়ে ফিরে যাচ্ছে তখন আরও তিন জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ৩০ শে আগস্ট জাওয়াপাড়াতে শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলাকরে দশ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়।

শালদা নদী এলাকা

শত্রুরা নতুন প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। তবে প্রতিটি সময় মুক্তিবাহিনীর সজাগ থাকার জন্য এটা সম্ভব হচ্ছিল না।

৩০ শে আগস্ট শত্রুরা শালদা নদীর দক্ষিণাঞ্চলে প্যান এ ভাঙা সেতুর কাছে বাংকার খনন করার চেষ্টা করে। মুক্তি বাহিনী তখন তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। তিন জন পাকসেনা মারা যায় এবং আরও অনেক আহত হয়। পরিশেষে ৩১ শে আগস্ট শত্রুরা আবার বাঙ্কার খনন করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেবারও তারা পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। একই দিনে তারা বিঞ্জা সেতুর কাছে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করার চেষ্টা করে। ভারি মর্টার এবং ছোট অস্ত্র দিয়ে তারা পাকসৈন্যদের বিতাড়িত করে। তিন পাকসৈন্য মারা যান।

                   ময়মনসিংহ ঢাকার কিছু অংশে গেরিলা সাফল্য

* ১২ আগস্ট নরসিংদী, শিবপুর, ঢাকা জেলার মধ্যে পুটিয়া সেতুধ্বংস করে।

* লঞ্চে অতর্কিতে আক্রমণ করে। তিনটি লঞ্চ ধ্বংস করা হয়েছিল। তারিখ ছিল ৭ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্টের মধ্যে। ১৫০ জন নিহত ও প্রচুর শত্রু হতাহত হয়।

* নারায়নবাজারের কাছাকাছি দারোগাবাড়ি (মীমের পাশে) শত্রুর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।

হতাহতের সংখ্যা ৭৫ থেকে ১০০। তারিখ ৭ আগস্ট থেকে ১৬ আগস্ট।

* ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় শত্রুপাইলন ধ্বংস করার সময় শত্রুদের সাথে যুদ্ধ হয়। মুক্তিবাহিনী ৭৬২ এস এম জি এবং ৭৬২ রাইফেল (চীন) ও ১৫০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে।

* শিবপুর ও মনোহরদীতে তহশীল অফিস আক্রমণ করে এবং এইসব পুড়িয়ে দেয়

* কাঞ্চনের কাছাকাছি ২৭শে জুলাই লাখ্যা নদীতে পাট বহনকারী নৌকা পুড়িয়ে নিমজ্জিত করে।

* ৩০ শে জুলাই বাগাদিয়া ইউনিয়নের (থানা কাপাসিয়া) একজন দফাদারকে হত্যা করে। সে ছিল ময়মনসিংহের খুব নামকরা রাজাকার।

* ৩১ জুলাই কাপাসিয়ার ইকারিয়া গ্রামে শীতলক্ষ্যা নদীতে একটি লঞ্চ যা রেশন নিয়ে ডেমরা থেকে নয়নবাজারে যাচ্ছিল।

* ৯ আগস্ট মনোহরদী থানার উপর আক্রমণ করে। ও সি আব্দুল করিমসহ ২১ জন পুলিশ মুক্তি বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৫ টি রাইফেল ও এক হাজার রাউন্ড আম্যুনিশন উদ্ধার হয়।

* নিম্নলিখিত রাজাকারদের নির্মূল করা হয়-

* মাইন উদ্দিন সরকার-বারোইবারি থানা জয়দেবপুর ঢাকা জেলা ৪ আগস্ট

* হযরত আলী গ্রাম সন্ধ্যা ঢাকা জেলা থানা জয়দেবপুর, ৫ আগস্ট

* সিদ্দিক (সদস্য) গ্রাম-মেঘপবি থানা জয়দেবপুর, ঢাকা জেলা

* পূবালীর সালাম ডাকাত থানা কালীগঞ্জ ঢাকা জেলা

* ৯ আগস্ট বায়রার দুই রাজাকার,থানা জয়দেবপুর

কুমিল্লা ফেনী

১৫ থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত

গোমতী নদীর কাছাকাছি (কুমিল্লা শহরের চারপাশে) ৫৫ এর বেশী রাজাকার আক্রান্ত হয় এবং চল্লিশ জন নিহত হয়।

আখাউড়ার কাছাকাছি ১৫ থেকে ১৬ আগস্ট আক্রমণে ১৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

 

 

গোমতীর কাছে

জাম্বারিতে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণে ষোল জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। বেশ কিছু আহত হয়। শাওয়ালপুরে অন্য আক্রমণে পাঁচ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় ১৬ আগস্ট।  ফকিরহাটে ২০০ ফুট রেললাইন উড়িয়ে দেয়া হয় এবং ৫০ ফুট চওড়া একটি গভীর খাত করা হয় চারটি চার্জে।

১৫ আগস্ট কোটেশরে পাকবাহিনীর তিন জন নিহত হয়।

আবার ১৬ আগস্ট গাজীপুরে শত্রুদের ২০ জন আহত হয় যাদের ১৪ জন মারা যায়। অতর্কিত হামলায় শত্রুদের প্রতিরক্ষা ধ্বংস করা হয়।

                                       আখাউড়ার কাছাকাছি

মুক্তিফৌজ শত্রু অবস্থানের উপর গুলিবর্ষণ করে। ১৪ আগস্ট কাশিম্পুরে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। রেললাইনও ধ্বংস করা হয়েছিল।

১৪ ই আগস্ট কলাচারা চা বাগানে ২৮ টি মাইন সেট করা হয়।

১৬ আগস্ট তোলাইমুলে মুক্তিবাহিনী পাঁচজন শত্রু হত্যা করে। একই দিনে গুরুইটে একটি অতর্কিত আক্রমণে অনেক শত্রুসৈন্য নিহত ও আহত হয়।

মনোহর বাজার (শালদা নদীর পাশে)

মুক্তিফৌজ একটি টহল দলের উপর গুলিবর্ষণ করে। ৪ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

চৌদ্দগ্রামের কাছাকাছি

 

শাশিয়ালিতে ৬০ জন পাঞ্জাবি ও ছয় রাজাকারকে ২৭ শে জুলাই হত্যা করা হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। অতর্কিত অন্য এক আক্রমণে পাইকপাড়ায় ১০ জন নিহত হয়।

১৪ আগস্ট একটি শত্রু জিপ বিস্ফোরণে এক ক্যাপ্টেন গার্দিজি নিহত হয়। এন্টি ট্যাংক মাইন বিস্ফোরণে আরও ৩০ জন মারা যায়।

সংবাদ পূর্ব সেক্টর

কুমিল্লা

মীরাবাজার, চৌদ্দগ্রাম সাবসেক্টর

মুক্তি বাহিনী ২ সেপ্টেম্বর মিরাবাজারে শত্রু বেইজ অতর্কিতে আক্রমণ করে। ২৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২১ জন আহত হয়। এরা পাকবাহিনীর নিয়মিত ফোর্স ছিল। ৩ আগস্ট শউগাজিতে তিন পাকসেনাকে ও দুই রাজাকার হত্যা করে।

চাঁদ পুর পর্যন্ত জুড়ে এই সাব-সেক্টরে গেরিলাদের ক্রমাগত আক্রমণ চলে। বার বার শত্রুদের আক্রান্ত করা হয়। গত কয়েক মাসের মধ্যে অনেক জীপ ও ট্রাক (পাকসেনাবাহিনীর) ধ্বংস হয়েছে। অনেক পাক আর্মি অফিসাররা তাদের জীবন হারিয়েছে।

চাঁদপুর শাশিয়ালিতে ৬৬ জন পাক নিহত হয়। ২৯ আগস্ট ৬ পুলিশ এবং নয় রাজাকার নিহত হয়। ১২ জন আহত হয়েছে। একটি রাইফেল ও ৫০ টি ৩০৩ গোলাবারুদ হস্থগত হয়। ৩১আগস্ট এ বাওয়াল (চাঁদপুর) এ মুক্তিবাহিনী ৪টি রাইফেল ২০০ ৩০৩ গোলাবারুদ দখল করে নেয়। ১২ পাকসেনা নিহত ও অন্য ১০ জন আহত হয়। বিবির বাজারে মাইন বিস্ফোরণে এক পাকসেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নিহত হন। নিউজ থেকে পেয়েছি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাঁদপুর মহকুমা ফরিদগঞ্জ থানায় এ পর্যন্ত প্রকাশিত ৮ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আরো ৮২ জন পাকসেনা, ৭৪ জন রাজাকার ও ৩০ জন পুলিশ নিহত হয়েছে। শত্রুপক্ষের উপর মুক্তিবাহিনীর কৃত আঘাত ১০০ জনেরও বেশি। গাজীপুরে সংঘটিত আক্রমণে ১৪ রাজাকার, ৩০ পাকসেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। ঘটনাটা ১৯ আগস্ট সংঘটিত হয়েছিল। একই তারিখে ধনুয়াতে ১৯ পাকসৈন্য নিহত হয় এবং ১৩ জন আহত হয়েছে।

ইম্প ফেনী (সংবাদ দেরীতে গৃহীত)

আগস্টের ২০ তারিখ মুহুরিগঞ্জের কাছাকাছি উল্কা যাত্রীবাহী ট্রেন উড়িয়ে দেয়া হয়। পাকসৈন্য এবং ড্রাইভারসহ শত হতাহত হয়।

এতে চট্টগ্রাম-ফেনী ট্রেন চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মুনসীর হাট ফেনী রোডে একটি ট্রাক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ, লোড করার সময় ধ্বংস করা হয়েছিল। দুই জন পাকসেনা ও ৬ রাজাকার নিহত হয়।

সংবাদ

বিশেষ কমান্ডো একটিভিটিস

ঢাকা

ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্প্রতি তাদের কার্যক্রম তীব্রতর করেছে। এতে শত্রুরা হতাশ। রাস্তার যুদ্ধ একটি দৈনিক ব্যাপার। গত মাসে ঢাকা শহরে কমপক্ষে ৭ কর্মকর্তা, ১৭৫ পাকসেনাকে ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ নিহত হয়।

ধোলাইখালে তথ্য পেয়ে পাক বাহিনী একটি জায়গায় আক্রমন করে। যেখানে পাকসৈন্য পূর্ণ পাঁচটি লরি এসেছিল। সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান নেয়। মুক্তি বাহিনী ৪১ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। পাক বাহিনী অনেক হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের দুই জন আহত হয়েছে। পরে মুক্তিবাহিনী খাল পেরিয়ে চলে যায়।

পরদিন সূত্রাপুরে মুক্তিফৌজ ২জন পাকসেনা ও ১ জন সার্কেল ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে।

২২ আগস্ট পশ্চিম কমলাপুরে মুক্তিযোদ্ধারা গোয়েন্দা শাখার ১ জনকে হত্যা করে।

১০ আগস্ট মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের উপর আকস্মিক হামলা করে আজিমপুর এলাকায়। ৪ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা বন্দী চার টি ৩০৩ রাইফেল ও ৬০ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

 

কুমিল্লা

মন্দব্যাগ্রায়নপুর এলাকা

১ লা সেপ্টেম্বর উপর বিকেল ৪টার ঘন্টা সময়ে মুক্তি ফৌজ শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ৩ “মর্টারএর সাহায্যে। পাকসেনারা বিস্মিত হয়ে গেছিল এবং কোন উত্তর দিতে পারলনা। পাকবাহিনীর একজন অধিনায়ক নিহত হয়। পার্শবর্তী চালনা এলাকায় ১৬ জন পাকসৈন্য ও ২৪ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিসেনারা ১টি এলএমজি এমকে-১, ১২ টি এলএমজি ম্যাগাজিন, ৪টি মার্ক থ্রি রাইফেল, ২টি মার্ক ফোর রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিন বক্স এবং ৭টি বড় কাঠের নৌকা জব্দ করে।

নারায়নপুর মুক্তি ফৌজ তিনটি বাঙ্কার, ৫ জন সৈন্য নিহত ও ৭ জনকে আহত হয়।

(ক)স্টাফ কোয়ার্টারের বিপরীতে গ্রীন রোডে ভী আকৃতিতে খনি এম-৪ স্থাপন করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা নির্মানাধিন ছাদে অবস্থান গ্রহণ করে। এক সেনা ট্রাক (বেডফোর্ড) রাস্তায় যায় এবং পাশের বিল্ডিং এ ক্রাশ করে। সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা গ্রেনেড ছুড়ে ও ট্রাক টি ধ্বংস হয় এবং সব সেনা সদস্যরা নিহত হয়। ৫ মিনিট পর আর একটি শত্রু জিপ আবার সেখানে প্রবেশ করে এবং মাইনে আক্রন্ত হয়ে উলটে যায়। মুক্তি বাহিনী লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। জিপ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়। আবারও সশস্ত্র কর্মীদের বহনকারী অন্য একটি লরি মাইন এলাকায় ঢুকে পরে।

পাক আর্মি রা পালাতে শুরু করে আবার গুলিও করে। কিন্তু সেটি মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বেষ্টিত ছিল। গুলিবর্ষণের পর যোদ্ধারা জলাভূমি দিয়ে চলে যায়। মুক্তিযোদ্ধাদের একজন পায়ে আঘাত পান।

শত্রুর প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি নিম্নরূপ:

(১)মৃত-২৪ জন

(২)আহত-৪১ জন

(৩) এক জিপ ও দুটি ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস

(খ) নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজ অফিসের রেকর্ড ও দরকারি কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে-

 ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা ব্যাহত করাই ছিল উদ্যেশ্য।

(গ) ঢাকার যোদ্ধারা টঙ্গী-জয়দেবপুর মধ্যে বিদ্যুৎপাইলন ধ্বংস করে।

কুমিল্লা

 

শালদা নদী থেকে আরও খবর আসছে। মাইঝখার (শালদা নদী এলাকা) এ মুক্তি বাহিনী অতর্কিত হামলায় করে। ৩০ রাজাকার ও ১০ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও প্রায় ২০ জন আহত হয়।

অন্য একটি স্থানে মুক্তি ফৌজ একটি বাড়ী-যেখানে পাকসৈন্যরা থাকত সেখানে আক্রমণ করে বাড়িটি একদম উড়িয়ে দেয়।

তখন বাড়ির ভেতর অনেক চিৎকার শোনা যায়। ১৫-২০ মিনিট আগুণ জ্বলল। তারপর একটি বিকট শব্দ হল। রেল লাইনের একটি বাঙ্কার ও উড়ে যায়।

২৫ জুলাই সালদানদী পার্টি হাবিলদার জহুর (একটি কুখ্যাত ডাকাত) ও তার শিষ্যদেরকে গ্রেফতার করে। তারা লুটপাট ও পাবলিক হয়রানি করত।

৬ জুলাই ৬ জন শত্রু অনুপ্রবেশকারী গ্রেফতার হয়। ১৪ টি বিস্ফোরক, ১৩ টি হাত বোমা ও বুবি ট্র্যাপ জব্দ করা হয়।

২৮ জুলাই জগন্নাথ এ শত্রু অবস্থানে সফলভাবে অতর্কিতে আক্রমণ করা হয়েছে। ছয় রাজাকার নিহত ও ২ জন আহত হয়। এবং একটি মাইন বিস্ফোরণে ১টি জিপ ধ্বংস এবং এক অফিসার ও ৬ সৈন্য নিহত হয়।

সোনাবন সাবসেক্টর

২৪ জুলাই ২ টি ভিন্ন অ্যামবুশে পর্যবেক্ষণ পোস্টের ২৬ জন,আরও ৩০ জনের মধ্যে ৭ রাজাকার নিহত হয়। এটা ছিল শোনাবনে।

২৬ জুলাই আনন্দপুরএ শত্রু অবস্থানের উপর আক্রমণ করায় ৩ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

এক কর্মকর্তাও নিহত হয়।

২৬ জুলাই কুমিল্লা শহরে মুক্তিফৌজ তারুমিয়াতে মর্টার ব্যবহার করে। একজন প্রখ্যাত রাজাকার নিহত ও এক কর্মকর্তা আহত হয় বলে জানা যায়। বিস্তারিত খবর আর পাইনি।

নোয়াখালী

২৬ জুলাই সকাল ১১ টায় অ্যান্টিট্যাংক বিস্ফোরণের ফলে একটি জিপসহ এক কর্মকর্তা এবং অপর এক র‍্যাঙ্কের সেনা নিহত হয়।

সিলেট সেক্টর

বাংলাদেশে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রতি ঘন্টায় তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে।

কিছু একশন নিম্নরূপ:

ক) ২৬ জুলাই গেরিলারা চুনারুঘাট থানা সিলেট জেলার কুখ্যাত এক রাজাকার হত্যা করে। আরও ৬ জনকে হত্যা করা হয়।

খ) ট্যামাই নামে একজন কুখ্যাত ডাকাত,, রাজাকার ও অন্যান্য ৬সহযোগীদের হত্যা করা হয়। এই ঘটনা বেল্লাতে সংঘটিত হয়েছিল। এই ঘটনায় খুশি হয়ে সাধারণ মানুষ নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ শুরু করে।

গ) ২৭ শে জুলাই মুক্তি ফৌজ সিরাজগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলের মধ্যে দারাগাও ব্রিজ ধ্বংস করে।

ঘ) একটি মাইন বিস্ফোরণে শত্রুদের একটি ডজ গাড়ি ও ৬ সৈন্য নিহত হয়েছে

ঙ) রাজাকার এহসানুল হক, সাইফুল্লাহ কান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে হত্যা করা হয়

চ) সাতগাঁও এর একটি সেতু সফলভাবে উড়িয়ে দেয়া হয়।

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৪। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদর দপ্তর প্রকাশিত যুদ্ধ ইস্তেহার বাংলাদেশ আর্কাইভস, মুজিবনগর

আগস্ট-ডিসেম্বর,

১৯৭১

ট্রান্সলেটেড বাইঃ Razibul Bari Palash

<১১, , ৫০১৭৪>

বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর, মুজিবনগর

জনসংযোগ বিভাগে

আগস্ট ১৫, ১৯৭১

১। পাক বাহিনী, রাজাকার এবং তাদের বেসামরিক এজেন্টদের উপর মুক্তিবাহিনীর তীব্রতর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ এলাকার মধ্যে তাদের প্রচারণা-সেতু, টেলিফোন লাইন, পাওয়ার সাপ্লাই ধ্বংস, রেল লাইনের অপসারণ, পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যাহত করার কাজ সারা বছর চলছে।

২। ১৪ আগস্ট রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায় যে বিভিন্ন সেক্টরে ৩১৪ পাকসৈন্য নিহত ও ৭৩ জন আহত হয়েছে মুক্তিবাহিনীর একশনে। মুক্তিবাহিনী ৫০ জন রাজাকার নিহত ও ৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। কমপক্ষে ১৩ জনসহযোগিতাকারিও নিহত হয়। তারা ৪২ রকম বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র দখল করে। পাক বাহিনী দ্বারা ব্যবহৃত ৫ টি গাড়ি তারা ধ্বংস করে। এছাড়া তারা ৫টি সড়ক সেতু, ৫টি রেল সেতু, ৫টি বৈদ্যুতিক পাইলন এবং ৫ স্থানে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, অপসারিত রেললাইন ধ্বংস এবং অধিকৃত এলাকার ৫ জায়গায় টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। তারা সিলেট জেলার দিরাই এলাকার কাছাকাছি ২১ জনের একটি ডাকাত দলকে হানা দেয় এবং তাদের সবাইকে হত্যা করে। তারা ১ টি এলএমজি, ৮ টি রাইফেল, ২১ টি শট বন্দুক, ৪ টি গ্রেনেড ও গোলাবারুদের একটি বৃহৎ পরিমাণ জব্দ করে। স্থানীয় মানুষ তাদের কার্যক্রমে নিশ্চিন্ত ও নির্ভার ছিল। ঢাকা শহরের মধ্যে তারা একটি চেকপোস্ট করে এবং ৫ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি জিপ মাইনে ধ্বংস করে।

আরও বিস্তারিত বর্ণনা নিচে দেওয়া হল:-

রংপুরদিনাজপুররাজশাহী সেক্টর

৮ আগস্ট মুক্তিবাহিনী বাদলগাছিতে তিনটি বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করে।

পত্নীতলা-মহাদেবপুরে এক পাক গাড়ির মাইন বিস্ফোরণের ছয় পাকসৈন্য নিহত ও তিন জন আহত হয়। বগুড়া এলাকায় ১১ জুলাই থেকে ১৮ আগস্ট এর মধ্যে গেরিলা হামলা চালায়।

তারা বগুড়া ও গাবতলীর মধ্যে রেলসেতু ক্ষতিগ্রস্থ করে। তারা শীকরকান্দি পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ করে এক অফিসার এবং ৪ রক্ষির প্রাণনাশ করে। দুই সেনা ট্রাক মাইনে বিস্ফোরিত হয়। বগুড়া-রংপুর রোডে আলিতলায় তারা হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ করে পেট্রোল পাম্প ধ্বংস করে। সোনাতলায় মাইনে একটি মাল ভর্তি ওয়াগন বিস্ফোরিত হয়।

২৪ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই এর মধ্যে মুক্তিবাহিনী বগুড়ায় অনেক গেরিলা আক্রমণ করে। বগুড়া গাবতলি সড়কে আর্মি জিপে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে এবং ২ জন পুলিশ কনস্টেবল ও চার পাক সমর্থকদের হত্যা করে। ১০ আগস্টে তারা মাছক্ষরিয়ার তিন বিশিষ্ট জামাত নেতাদের হত্যা করে।

৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী দানিয়ারিতে দুই পাকসেনা হত্যা করে এবং একজনকে আহত হয়।

কুষ্টিয়াযশোরখুলনা সেক্টর

৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী শ্যামনগর রাজাকার দপ্তরে আক্রমণ করে একজন বিখ্যাত রাজাকার জনাব মাওলানা আবদুল সাত্তার রাজাকারসহ তিনজন রাজাকারকে হত্যা হয়। তারা ৩ রাজাকারকেও গ্রেফতার করে এবং দুটি রাইফেল জব্দ করে।

১১ আগস্ট চন্দরবাসে মুক্তিবাহিনী রাইফেল ও গোলাবারুদসহ ৫ জন রাজাকার বন্দী করে। একই দল জবানাথপুরে অ্যামবুশ করে ৩ পাকসৈন্য ও তিন রাজাকার হত্যা করে।

১০ আগস্ট তারা গোদাগাড়ীতে ১ জন পিস কমিটির সদস্যকে হত্যা করে।

ঢাকাকুমিল্লাচট্টগ্রাম সেক্টর

১০ আগস্ট মুক্তিবাহিনী মরভাতালি এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় করে এবং ৫ পাকসেনা নিহত হয়।

১২ আগস্ট তারা মন্দভাগ বাজারে আক্রমণ করে ৫৫ পাকসেনাকে হত্যা করে।

৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী সাতকানিয়া কলেজ এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালায় যেখানে পাক বাহিনীর ৪০ জন হতাহত হয়েছে।

৩ আগস্ট তারা একজন বিশিষ্ট পাকসহযোগী মোঃ আব্দুল কুয়াইরকে হত্যা করে-তিনি প্রিন্সিপাল ছিলেন সাতকানিয়া কলেজের। তারা একই এলাকায় একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা পটিয়া এলাকায় ১০ পাকসহযোগীরা হত্যা করে।

৫ আগস্ট তারা মেহাববাজারে সেতু ধ্বংস করে। তারা একই এলাকায় একটি ক্যাম্পে অভিযান চালায় এবং ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং পাঁচ জন আহত হয়।

৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কোটেশ্বর পাক অবস্থানের উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে এবং ৬ জনকে হত্যা করে।

৭ আগস্ট তারা হরিমঙ্গলে ২ পাকসেনাকে হত্যা করে ও ৩ জনকে আহত হয়।

৭ অগাস্ট তারা কসবা এলাকায় ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

৯ আগস্ট বিজয় নগরে ৯ রাজাকার হত্যা এবং তিন জনকে আহত হয়।

২১ জুলাই বোয়ালিয়া গ্রামে এক বিশিষ্ট শান্তি কমিটির সদস্যকে হত্যা করে।

৯ অগাস্ট কামাল্পুরে ৩ জন পাকসৈন্য হত্যা করে।

২ আগস্ট মুক্তিবাহিনী দুটি টেলিফোনের খুঁটি ভেঙ্গে ও টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে। ভৈরববাজার এবং ঢাকার মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় এ (রেল এবং সিভিল) কার্যক্রম চালায়।

২৬ জুলাই তারা নারায়াণঙ্গঞ্জ এলাকায় রেলসেতু ধ্বংস করে।

১২ জুলাই তারা গদনাইলে যন্ত্রপাতি ও বিল্ডিং বা বৈদ্যুতিক সাব স্টেশন ধ্বংস করে। এর জন্য কাছাকাছি মিলের পাওয়ার সাপ্লাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

৪ আগস্ট তারা গদনাইলে পাট গুদামএ আগুণ দ্যায়। প্রায় তিন মণ পাট পুড়ে যায়। গুদামঘর বিল্ডিং পুড়ে যায়।

৩০ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ঢাকার চারপাশে নিম্নলিখিত গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন করে। তারা সড়ক সেতু ও এই এলাকায় দুটি রেল সেতু ধ্বংস করে। একটি গাড়ী গেরিলাদের মাইনে মিরপুর-ঢাকা রোডে বিস্ফোরিত হয়।

ঢাকার পাক চেকপোস্টে আক্রমণে ৫ পাকসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়। তারা ঢাকায় পাকসেনাদের প্রতিষ্ঠিত ২ টি দোকান আক্রমণ করে এবং এতে এক ব্যক্তি আহত হয়। ৩০ জুলাই আশুগঞ্জের প্রধান গ্রিড লাইন ও শিবপুর থানায় ২ টি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে। এতে ঢাকা-আশুগঞ্জের মধ্যে ইলেকট্রিক সাপ্লাই ব্যাহত হয়। একই দল একই এলাকায় ১০০০কেভি গ্রিড লাইন ধ্বংস করে।

ময়মনসিংহসিলেটমৌলভীবাজার সেক্টর

১০ আগস্ট মুক্তিবাহিনী শ্রীমঙ্গল এবং কমলগঞ্জের মধ্যে তিনটি স্থানে রেললাইন উপড়ে ফেলে।

১০ আগস্ট তারা কালীঘাট-মতিগঞ্জ রাস্তার উপর একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

৯ আগস্ট আলীনগর এক রাজাকার হত্যা করে।

১০ অগাস্ট কানাইঘাট এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় ও এক পাকসেনা হত্যা করে।

৮ আগস্ট চরখারি-গোপালগঞ্জ এর মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। একই এলাকায় ২ জন রাজাকার হত্যা করে।

১১ আগস্ট সমশের নগরের কাছাকাছি একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে

১১ আগস্ট সুরমা নদী এলাকায় অ্যামবুশে পাক স্কাউট এবং রাজাকারদের আক্রমণ করে। এবং দুই জন আহত হয়।

৭ আগস্ট সিলেট শহর ও এর উপকণ্ঠে সেনা গাড়ির উপর একটি গ্রেনেড ছুড়ে ফেলে তিন পাকসেনা হত্যা করে।

১৩ জুলাই কোম্পানিগঞ্জের দক্ষিণে মুক্তিবাহিনী  তুকারগাওয়ে পাকসৈন্যদের আক্রমণ করে। এক অফিসার এবং খাইবার রাইফেলসের অন্য র‍্যাংক এর ৭ জনকে হত্যা করে। তারা একটি রাইফেল জব্দ করে।

১০ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী দিরাই এলাকায় ডাকাতদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ২১ জন ডাকাত নিহত হয়। এছাড়াও তারা ১ টি হালকা মেশিন গান, আটটি রাইফেল, ২১ টি শট গান, চারটি গ্রেনেড এবং কিছু গোলাবারুদ জব্দ করে। অভিযান চালিয়ে দিরাই এলাকায় একটি পাক সমর্থকের বাড়ি ধ্বংস করে।

১২ আগস্ট কমলাপুরে পাক অবস্থানে আক্রমণ করে এক পাকসেনাদল এবং দুই জনকে আহত হয়।

২০ থেকে ২৬ জুলাই কটিয়াদি, পাকুন্দিয়া ও গাচিহাতায় নিম্নলিখিত গেরিলা অপারেশন সম্পন্ন হয়। তারা কটিয়াদি নদীর পাঁচ মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে দুই লঞ্চে পাকসৈন্যদের (ঢাকা থেকে দরগাপুর গামী) আক্রমণ করে ৪০ পাকসৈন্য হত্যা এবং ৪৫ জন আহত এবং একটি লঞ্চ ধ্বংস করে। প্রায় ৫০০পাকসৈন্যকে তারা ৫ টি লঞ্চে আক্রমণ করে। প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল এবং ৫ দিন ধরে চলে। এবং প্রচুর হতাহত হয়-প্রায় ১০০পাকসৈন্য জখম হয়। ভৈরব-ময়মনসিংহ রেল লাইনে গাছিপারা স্টেশনে এক ট্রুপ পাকসেনা ভর্তি একটি রেল মাইনে আক্রান্ত হয়। এতে ২০ পাকসৈন্য, ১০ পাঞ্জাবি পুলিশ ও দুই ইঞ্জিন ড্রাইভার নিহত হয়।

২৫ জুলাই মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ পুলিশ লাইনে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। আরেকটি গ্রুপ রাজাকার ও পাক সমর্থকদের ঘরের উপর গ্রেনেড ছুড়ে। এর প্রতিশোধে পাকসেনারা তেন্তাল বাজার, ফুলপুর জ্বালিয়ে দেয়। ময়মনসিংহের কাছাকাছি কলপারা ঘর পুড়িয়ে দেয় এবং বাইতামারিতে ধানক্ষেতের সাধারণ মানুষকে মেরে ফেলে।

১১ আগস্ট দরবাস্ত-কানাইহাঁট রাস্তায় আক্রমণে ৩ পাকসৈন্য নিহত ও ২ জন আহত হয়।

১০ আগস্ট কানাইরহাট অভিযান চালিয়ে ৩ রাজাকার হত্যা করে।

৯ আগস্ট দিলকুশা এলাকায় দুজন পাক সমর্থকদের হত্যা করে।

১০ আগস্ট তারা সিলেটীপারা ও মেওয়া র মধ্যে ২ টি টেলিফোনের খুঁটি এবং টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। এতে বড়্গ্রাম ও সেলিয়ার মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হয়।
তারা বিয়ানীবাজারএ গ্রেনেড ছুড়ে ফেলে দুই রাজাকার হত্যা করে।

২ আগস্ট তারা ছাতকের কাছাকাছি পাক গাড়ির ওপর অতর্কিত হামলা করে ৫ জন আহত করে। ৪ আগস্ট সুরমা নদীতে স্পিড বোটে আক্রমণ করে ২ পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।

১২ আগস্ট গোসগাও এলাকায় আক্রমণ করে তিন রাজাকার হত্যা ও চার জন আহত হয়।

২৬ জুলাই ময়মনসিংহ পেট্রোল পাম্প দিকে গ্রেনেড ছুড়ে এক প্রহরীর প্রাণনাশ ও একজন আহত হয়।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর। মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
আগস্ট ১৬
যুদ্ধ বুলেটিন

মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের হতাহত করতে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। রাজাকার ওসহযোগীদেরকেও। সকল ক্ষেত্রে তারা পাকসেনাকে হয়রানির শিকার করছে। পাকবাহিনীর যোগাযোগের ব্যাহত করা ছাড়াও অধিকৃত এলাকায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে তারা ৪ কর্মকর্তাসহ ১৪৬ পাকসেনা হত্যা করেছে এবং ৬১ জন যখন করেছে। তারা ৭০ রাজাকার নিহত ও ১৪ জন বন্দী করেছে। তারা ৩৮ রকমের অস্ত্র জব্দ করে। তারা ৩ টি পাক যান ধ্বংস করে যেগুলো সৈন্য বহন করতে ব্যবহৃত হত। ৫টি সড়ক ও রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করা হয়েছে।
মুক্তিবাহিনীর উল্লেখযোগ্য কিছু সাফল্য নীচে বর্ণিত হল :-

১২ আগস্ট তারা কুমিল্লার নবীনগর এলাকা সাফ করে। এবং ১২টি রাইফেল, ৮ টি শট গান, ৩টি বেয়োনেট এবং প্রচুর গোলাবারুদ জব্দ করে।

তারা দিনাজপুর জেলার সাগুনি এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ রেল সেতু ধ্বংস করে। এর দরুন দিনাজপুর-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও এর মধ্যে এই রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়েছে। সেতু এখনও আউট অব কমিশন। ১২ আগস্ট তারা ফুলবাড়ী ও পার্বতিপুরের মাঝে একটি কাল্ভার্ট ধ্বংস করে।

প্রচুর সংখ্যক রাজাকার আত্মসমর্পণ করছে। তারা সব পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অবিশ্বাসী হচ্ছে বলে অভিযোগ করে। তারা পাকিস্তানী সৈন্যদের ক্যানন ফুডার হিসেবে ব্যাবহ্রিত হচ্ছে বলে মনে করে।

বিস্তারিত কার্যক্রম এর বিবরণ নিচে দেওয়া হল:

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

১৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী রতনপুরে এক রাজাকার এর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে হত্যা করে। একই দিনে তারা ফুলবাড়ী এলাকায় অতর্কিতে আক্রমণ এবং তাদের ৯ জন হত্যা করে।
১৫ অগাস্ট ফুলবাড়ী এলাকায় কুহইহাট ফেরিতে অতর্কিতে আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী রাজাকারদের দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এতে ১২ জন নিহত হয়। একই এলাকায় এছাড়া ১২ জন বন্দি হয়। এছাড়া পাক প্যাট্রোলে ১২ আগস্ট আক্রমণে একজন পাকসেনা আহত হয়।

৬ অগাস্ট কাজিপারার এক স্থানে পাক বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর গুলি বিনিময়ে ৩৮ জন জামাতি এবং এক পাকসেনা নিহত হয়। ১১ আগস্ট সাতজন সৈন্য বহনকারী এক পাক জিপ মাইনে বিস্ফোরিত হয় এবং গাড়ির সবাই নিহত হয়। সেসময় পার্শবর্তী একটি যানে ৩৩ জন বেসামরিক নাগরিক আক্রান্ত হয়।

৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর ধর্মপুর এলাকায় কাঠের ব্রীজ ধ্বংস করে।

১২ অগাস্ট ফুলবাড়ী-পার্বতিপুর রেল যোগাযোগ ব্যাহত ও রেলওয়ে কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১৩ অগাস্ট হরগোবিন্দপুর পাক প্যাট্রোলে মুক্তিবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং ৩ পাকসৈন্যকে হত্যা করা হয়।

১৪ আগস্ট হিলি ও চরকাইএলাকার মধ্যে প্রায় ৪০ ফুট একটি রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস করা হয়। দুজন বিহারিকে হত্যা করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে দুটি শটগান জব্দ করা হয়।

১৫ অগাস্ট উত্তর খানপুরে ৪ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়।

১৫ অগাস্ট পাথরঘাটা এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় চার পাকসেনা নিহত এবং শীতলডাঙ্গাগ্রামে দুই রাজাকার হত্যা করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

১৪ অগাস্ট উজিরপুরে পাকসৈন্যদের সাথে যুদ্ধে একজন অফিসারসহ ১১ পাকসেনা নিহত হয়।
১৫ আগস্ট ভোমরা এলাকায় পাক গাড়ি আক্রমণে এগারো পাকসেনা / রাজাকার হত্যা করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

১০ অগাস্ট পাক অবস্থান আমান্ডাঙ্গায় অভিযান চালিয়ে ১ অফিসারসহ কয়েকজন হত্যা করা হয়।

১৩ অগাস্ট নরমানে এলাকায় পাক বাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণে ছয় জনকে আহত করা হয়।

১১ অগাস্ট মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ছয়টি টেলিফোনের খুঁটি ও কসবা ও মন্দভাগের মধ্যে একটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করা হয়।

১২ অগাস্ট কসবা এলাকায় ১০০ গজ রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়।

১৩ অগাস্ট কালীগঞ্জ এ মুক্তিবাহিনী রাজাকার ডঃ ফাশীঊদ করিম এবং জনাব গফুর বেপারী উভয়ের বাড়িতে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। ফোলে ডঃ করিম গুরুতর আহত হয় এবং জনাব বেপারী নিহত হয়।

১৩ অগাস্ট মন্দবাগ এলাকায় ১০০ ফুট রেললাইন উপড়ে ফেলা হয়।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী মন্দভাগে আক্রমন করে এবং সেখানে ৩ পাকসৈন্য নিহত হয়।

১৩ অগাস্ট নেপটার হাট এলাকায় দুটি বৈদ্যুতিক পাইলন উড়িয়ে দেয়া হয়।

১২ অগাস্ট ১২ টি টেলিফোনের খুঁটি ভেঙ্গে এবং মন্দভাগ-নাপ্তের হাট এর মধ্যে টেলিফোন যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়।

১৩ অগাস্ট একই এলাকায় মুক্তিবাহিনী চার পাকসেনাকে হত্যা করে।

২০ থেকে ২৫ জুলাই এর মধ্যে ঘোড়াশাল রেলওয়ে স্টেশন ও জিনারদি রেলওয়ে স্টেশনএর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে গ্যাস পাইপ লাইন ধ্বংস করা হয়।

৩১ জুলাই জিনারদি এলাকায় মুক্তিবাহিনী দুই সক্রিয় পাকসহযোগীদের হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী শ্রীমঙ্গলের কাছাকাছি হাসনাবাদ এলাকায় সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

১৩ অগাস্ট কালীঘাট এলাকায় মুক্তিবাহিনী বৈদ্যুতিক তোরণ উড়িয়ে দেয়।

১৪ আগস্ট লুভা নদীর পশ্চিম তীরে পাক সৈন্যের উপর অতর্কিত আক্রমণে তিন রাজাকার আহত হয়।

১২ আগস্ট দক্ষিণারঞ্জন রেলস্টেশনে দুই পাকসেনা নিহত এবং রাজাকার আহত হয়।

১২ আগস্ট সোনারুপায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী সাত পাকসেনাকে হত্যা করে।

১২ আগস্ট দুই কর্মকর্তা বহনকারী এক পাকবাহিনী জিপ জুড়ী-গোপালবাড়িতে মাইনে বিস্ফোরিত হয় এবং এতে ৩ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়।

৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী দ্বারা পাকসৈন্য ও রাজাকারদের জয়কালাস এলাকায় আক্রমণে এক পাকসেনা নিহত ও এক রাজাকার আহত হয়।

১৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী আহমেদনগর-সাকুচি এলাকার মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে।

১৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী বাওরামারি-নুন্নি এলাকার মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে।

৭ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে ১২ রাজাকার ও ছয় সৈন্য গ্রেনেডে আক্রান্ত হয়ে নিহত হয়।

২৬ জুলাই ধলাই এলাকায় ৫ রাজাকার হত্যা করা হয়।

৩০ জুলাই কমলগঞ্জের কাছাকাছি মকাবিলে অভিযান চালিয়ে ১২ রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৪ আগস্ট পাকিস্তানের সৈন্য নারায়নপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং গুলি বিনিময় হয়। ৬ জন পাকসেনা জখম হয়।

১২ অগাস্ট অভিযান চালিয়ে কানাইঘাট এলাকায় এক আনসার কমান্ডারের বাড়ি ধ্বংস করা হয়।

১৪ আগস্ট ডুপাতিলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ পাকসেনা হত্যা এবং চার জনকে আহত করা হয়।

১৪ আগস্ট রাধানগরে অ্যামবুশে এক মিলিশিয়া ব্যক্তি নিহত হয়।

১২ অগাস্ট লালপুরে দুই রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৪ অগাস্ট ছাতকের কাছাকাছি পাক পোস্টে দুই পাকসেনাকে হত্যা করা হয়।

১২ আগস্ট পাকসৈন্য নবীগঞ্জ এলাকায় আক্রমণে ১২ রাইফেল, ৮ শট গান, তিনটি বেয়োনেট ও গোলাবারুদের একটি বৃহৎ পরিমাণ বন্দী করে।

১৪ আগস্ট বিজয়পুর-বিরিশিরিতে অ্যামবুশে পাক প্যাট্রোলের এক পাকসেনার প্রাণনাশ করা হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরে
১৫ আগস্ট ১৯৭১ এর পাওয়া তথ্য মতে

পাকসেনারা বাবরাতে অনিয়মিতভাবে মুক্তিবাহিনীর উপর আক্রমন ও গুলি বিনিময় করে। এতে ১৩ আগস্ট ৩ জন পাকসেনা হত্যা করে। একই দিনে রাত্নি সেতুর কাছে পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ে এক পাকসেনা নিহত হয়।

৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কাকিনা রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমন করে, এতে ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।
১০ আগস্ট দামোদরপুর এলাকায় ৪ পাক সমর্থক নিহত ও নবাবগঞ্জে একজনকে হত্যা ও একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৩ অগাস্ট সেগুণই রেল সেতু ধ্বংস করা হয়।কেন্দ্রীয় জেটি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ বিস্ফোরিত হয়। এতে দিনাজপুর-পীরগঞ্জ-ঠাকুরগাঁও রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

৫ আগস্ট শীতলাই রেল সেতু উড়িয়ে দেয়া হয় ও ১৩ আগস্ট সম্মুখ যুদ্ধে ৪ রাজাকার পাকসেনা নিহত হয়। পালানোর সময় আর ৪ জন জখম হয়।

১২ অগাস্ট গঙ্গাদাসপুর এলাকায় অতর্কিত আক্রমণে এক রেডিও অপারেটরসহ ১৫ জন আহত হয়।

মুক্তিবাহিনীর প্যাট্রোল এক মুসলিম লীগের সদস্য হত্যা করে। এবং বর্নি এলাকায় ১০ আগস্ট তাঁর কাছ থেকে কিছু গোলাবারুদ সঙ্গে একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। তারা একই এলাকায় এক শান্তি বাহিনী সদস্যকে হত্যা করে।

আগস্ট ৯ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে মুক্তিবাহিনী নিম্নলিখিত গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন করে:-

মুক্তিবাহিনী শ্রীগ্রামে শান্তি বাহিনী সম্পাদকের বাসায় আগুন দেয়। তারা দুলিরজুরি এলাকায় এক মুসলিম লীগের সদস্যকে হত্যা করে। তারা একই এলাকায় একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়, পাহারা দেয়া তিন রাজাকার হত্যা করে ও রাইফেল জব্দ করে। তারা একটি মুসলিম লীগ নেতার বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। তারা কুচিগ্রামে একটি পাক সমর্থকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুটি বন্দুক উদ্ধার করে।

১২ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী জদাবপুর পাক অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। এতে তিন জনের মৃত্যু এবং ৫ জন আহত হয়। অন্য একটিতে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়।

আগস্ট ১০ থেকে ১২ তারিখে জদাবপুর, রাধাপুর মাদারতলা অঞ্চলে ২০ শান্তি বাহিনী সদস্যদের হত্যা করে। ছয়টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

১ থেকে ৮ আগস্টে যশোর এলাকায় কয়েকটি গেরিলা অভিযান চলে। তারা মুক্তারপুর পোস্ট অফিস জ্বালিয়ে দেয় এবং স্টেশনারি ও সিল উদ্ধার করা হয়। মুক্তিবাহিনী দুই জামাত সদস্যকে হত্যা করে ও তাদের কাছ থেকে তিনটি বন্দুক উদ্ধার করে। মুক্তিবাহিনী উজিরপুরগামী ১৯ পাক বাহিনীর একটি নৌকায় আক্রমণ করে; এতে এক সৈনিক নিহত এবং অন্য জন আহত হয়। তারা পাঙ্কা এলাকায় একটি নৌকায় এম্বুশ করে ছয় জন পাকসেনা হত্যা করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

১১ অগাস্ট কোটেশ্বরে পাক অবস্থানে গেরিলারা মর্টার দিয়ে তিন পাকসেনাকে হত্যা করে। এছাড়া পরে আরও ৬ জন নিহত হয়।

৮ ও ১০ অগাস্ট রাজাপুরে পাক অবস্থানে মর্টার অভিযান চালিয়ে ১৩ জন জখম করে।

১১ অগাস্ট হরিমঙ্গলে অভিযান চালিয়ে ২০ জন হতাহত হয়।
১২ আগস্ট সেজামুরা এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে ১ জন নিহত হয়।

১২ আগস্ট সুরমা এলাকায় সেনা বহনকারী এক পাক গাড়ি মাইনে উড়িয়ে দেয়া হয়। এতে ৮ জন নিহত ও অনেক আহত হয়। গাড়িটি সম্পূর্ন ধ্বংস হয়।

৫ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী নারায়ণগঞ্জে একটি পাটের গুদামে গেরিলা হামলায় প্রায় ১০০০ বান্ডিল পাট জ্বালিয়ে দেয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১১ অগাস্ট রাঘুরচাক এলাকায় এক পাকসহযোগীকে হত্যা ও ১২ আগস্ট একই এলাকায় তিন বিন্দুতে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করা হয়।

১২ আগস্ট বড়লেখা এলাকার কাছাকাছি পাক প্যাট্রোল অতর্কিতে আক্রমণে ৩ পাকসৈন্য আহত হয়।

১০ অগাস্ট সাগারনাল পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ছয় পাকসৈন্য হত্যা করা হয়।

১০ অগাস্ট মুহম্মদপুর এলাকায় একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়।

বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগে
আগস্ট ১৭
যুদ্ধ বুলেটিন

১৭ আগস্ট প্রাপ্ত রীপোর্ট অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী এখানে নিয়মিত কার্যক্রম চালায়। এতে, এক মেজর, ১ ক্যাপ্টেন, ২ অফিসার, ২ জে শি ও এবং এক হাবিলদারসহ ১৭৩ পাকসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ৩৮ জন পাকসেনাআহত হয় এবং ৫১ রাজাকার ও ২৫ জনসহযোগীকেও হত্যা করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

১৩ আগস্ট মুক্তিবাহিনী সিঙ্গিমারি এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণ করে ৪ জনকে হত্যা করে। কিছু গোলাবারুদ সঙ্গে একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৪ আগস্ট পাটেশ্বরি এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে এক পাকসেনা নিহত ও দু’জন আহত হয়।

১৩ অগাস্ট নাগেশ্বরী ও গজলায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলায় ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৭ জন আহত হয়।

২৯ থেকে ৩১ জুলাই বগুড়া এলাকায় মুক্তিবাহিনী কয়েকটি গেরিলা অভিযান সম্পন্ন করে। তারা সারিকান্দি থানায় অভিযান চালিয়ে অফিসার-ইন-চার্জকে হত্যা করে। বগুড়া-গাবতলী রাস্তায় মাইনে এক পাকবাহিনী জিপ বিস্ফোরণে একজন অফিসারসহ এক জন আহত হয়। তারা ধুনট থানা আক্রমণ করে। এতে পাঁচ পুলিশ কনস্টেবল নিহত হয় ও সাতটি রাইফেল এবং একটি ১২ বোর বন্দুক জব্দ করে। তারা শান্তি কমিটির সদস্য ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান জনাব মোজাম্মেল হককে হত্যা করে। তারা চেয়ারম্যানের বাসা থেকে ১২ বোর বন্দুক উদ্ধার করে। আরও একটি বন্দুক তহশীল অফিস থেকে পায়।

১২ অগাস্ট গঙ্গাপ্রসাদে মাইনে এক পাক জিপ আক্রান্ত হয়। এতে এক মেজর, এক ক্যাপ্টেন, এক হাবিলদার ও চার সিপাহী নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের দিন জয়মানিরহাট এলাকায় বোমা বিস্ফোরিত হয়। পাকসেনারা সেখানে যায় এবং ৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়।

১৩ আগস্ট শিঙ্ঘিচর ও ভুশ্মারি গ্রামে পাকসেনারা ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এই গ্রাম থেকে গ্রামবাসীদের ভারতে বামনহাট শরনার্থী রিসিপ্সন ক্যাম্পে যেতে বাধ্য করে। সেখানে ভারত ফেরতদের ধরার জন্য পাকসেনাদের ক্যাম্প ছিল।

১১ আগস্ট পানিমাছে পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। এতে ৮ জন আহত হয়।

১০ অগাস্ট মারিয়াতে অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৪ মুজাহিদ হত্যা করে।

১৩ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর থানায় গ্রেনেড ছুড়ে ও কাজীপুর এলাকায় তিন রাজাকার হত্যা করে।

১৩ আগস্ট লতলা-ঠাকুরগাঁও সড়কে মাইন বিস্ফোরণে এক পাকিস্তানী জিপ বিস্ফোরিত হয়; এতে, ২ পাকসেনা নিহত হয়।

১০ অগাস্ট আখানগর রেলওয়ে স্টেশনে এক জামাতি নেতা ও ৪ অবাঙ্গালি সহায়তাকারী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলায় নিহত হয়। এছাড়া জনাব সাকিকি নামে বিশিষ্ট জামাতি নেতা হারিন্দাতে নিহত হয়।

পার্বতিপুর-ফুলবাড়ী রেল ট্র্যাকে কাইদ্রায় পাক প্যাট্রোল রন্ধনরত থাকা অবস্থায় গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয় এবং পাক প্যাট্রোল একটি রাইফেল এবং তাদের সরঞ্জামাদি রেখে দৌড়ে পালায়।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ রাস্তায় এক বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে।

১৫ অগাস্ট ভাটুরিয়ার কাছাকাছি পাকসৈন্যদের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয় ও ৪ জন নিহত হয়।
১৪ অগাস্ট গোপালনগরে তিন পাক সমর্থকদের হত্যা করা হয়। পরে তাদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

১৫ আগস্ট নবাবগঞ্জে ব্যাপক গেরিলা হামলা চলে। নয়টি রাজাকার ধরা হয় তাদের ক্যাম্পে আক্রমণ করে। এবং চারটি রাইফেল জব্দ করে। হরিপুরে একটি ৩০x৮ ফুট ব্রীজ উড়িয়ে দেয়া হয়।

জানা যায় যে ১০ থেকে ১৪ আগস্টে যশোরে একটানা গেরিলা কার্যক্রমের জন্য তাদের স্বাধীনতা দিবস পালিত হবেনা। এস এস সি পরীক্ষাও বাতিল ঘোষণা করা হয়। গেরিলা আক্রমনের সময় তারা এক অবাঙালি পাকসহযোগীকে নরঙ্গলি এলাকায় হত্যা করে। তারা ফরিদপুর এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক পাইলন উড়িয়ে দেয় এবং যশোর অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তারা ফরিদপুরের তিন রাজাকার হত্যা করে।

১৫ অগাস্ট বুরিপন্তা এলাকায় পাক বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং তিন পাকসৈন্য নিহত ও এক জন আহত হয়।

১১ অগাস্ট ডালটননগর কৃষি খামারে অভিযান চালিয়ে চার রাজাকার হত্যা করে। তারা ১৪ আগস্ট একই এলাকায় কালভার্ট উড়িয়ে দেয়।

১৩ অগাস্ট বুরিপন্তা এবং বারিবাঙ্কা অঞ্চলে পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ে দুই পাকসেনা নিহত হয়।

১৩ অগাস্ট বাগ্বানে মুক্তিবাহিনী দুই পাকসেনাকে হত্যা এবং তিন জনকে আহত হয়।

১৩ অগাস্ট মাছুডাঙ্গা এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে সতেরো পাকসেনা নিহত হয়।

১৩ অগাস্ট বায়রা এলাকায় এক রাজাকার নিহত ও একটি রাইফেল উদ্ধার হয়।

১৪ অগাস্ট কানপুর এলাকায় পাকসৈন্য ও রাজাকারের সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে ২ পাকসৈন্য, আট রাজাকার ও ৫ পাক সমর্থক নিহত হয়।

২৯ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট মাদারীপুর এলাকায় নিম্নলিখিত কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। মুক্তিবাহিনী মাহান্দ্রাদি এলাকায় টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে। তারা কবিরাজপুর এক মুসলিম লীগের সদস্যের বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। নৌকায় গ্রেনেড ছুড়ে তারা তিন রাজাকার হত্যা করে। নাগরদিতে এক মুসলিম লীগের সদস্যকে হত্যা করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

১৪ আগস্ট রামগড় অভিযানে ছয় পাকসেনা নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী পাক অবস্থান মোহনবাগান বাজারের উপর মর্টার চালিয়ে ৫ পাকসেনা হত্যা এবং কয়েক বাংকার ধ্বংস করে।

১০ আগস্ট পাক অবস্থান আন্ধারমানিকে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ চালালে একজন কর্মকর্তাসহ পাঁচ পাকসৈন্য নিহত হয়।

১২ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী তাকিয়া এলাকায় দুটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে।

১৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী পাক অবস্থান চাদ্গাজিতে অভিযান চালিয়ে ৫ পাকসেনা হত্যা করে।

১৫ অগাস্ট দেবপুরে এক পাক জেসিও এবং চার রাজাকার হত্যা করে।

১৩ আগস্ট মুক্তিবাহিনী জামবাড়ি এলাকায় পাক প্যাট্রোল অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং ৩ পাকসেনা হত্যা করে।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী আগাদির ও কুটির মধ্যে এক বৈদ্যুতিক পাইলন উড়িয়ে দেয়া

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী কসবার দক্ষিণে ৯ ফুট রেলপথ ট্র্যাক ধ্বংস করে।

১১ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী পাক অবস্থান মধুপুরে অভিযান চালিয়ে চার পাকসেনাকে হত্যা করে। ২৫ জুলাই সায়দাবাদে দুই পাকসহযোগী নিহত হয়।

১২ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী আলীনগর এলাকায় চার রাজাকার হত্যা করে।

১১ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী কামালপুর এলাকায় পাক প্যাট্রোলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এতে তিন পাকসেনা নিহত হয়।

১০ অগাস্ট পাক অবস্থান নওগাঁ আক্রমণে ৫ পাকসেনার প্রাণনাশ এবং এক জন আহত।

৩ অগাস্ট নবীগঞ্জ ২ জন সক্রিয়সহযোগীদের হত্যা করা হয়।

১২ অগাস্ট লক্ষ্মীপুর অ্যামবুশে তিন পাকসৈন্য নিহত ও নয়জন আহত হয়।

৩১ জুলাই মুক্তিবাহিনী বাজিতপুরে পাক ন্যাশনাল ব্যাংক শাখায় অভিযান চালিয়ে কর্তব্যরত কোষাধ্যক্ষকে হত্যা করে।

৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী নারায়ণগঞ্জ এলাকায় এক পাট গুদামে আগুন দেয় ও পাট বাজারজাতকরণ এর এজেন্ট হত্যা করে।

১৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী পাক অবস্থান ছাগলনাইয়ায় আক্রমন চালিয়ে চার পাকসৈন্য হত্যা ও দুই বাংকার ধ্বংস করে।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী আলীনগর দুটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে। একই এলাকায় একটি সড়ক সেতুতে পাহারারত ৫ পাকসৈন্যকে হত্যা করা হয়।

১৫ অগাস্ট কোটেশ্বর পাক অবস্থান উপর মর্টার দিয়ে হামলা করে ৫ পাকসেনাকে হত্যা করা হয়।

১৪ আগস্ট জামবাড়ি এলাকায় পাক চৌকি আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী একটি জেসিওসহ তিন পাকসৈন্য হত্যা করে।

১৫ অগাস্ট মন্দভাগ এলাকায় দুটি টেলিফোনের খুঁটি ধ্বংস করে। ১৪ আগস্ট মুকুন্দপুর পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী দুই জন শত্রুসেনাকে হত্যা করে।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী হরিণ খোলা ও চৌরাস্তায় মর্টার দিয়ে চার পাকসৈন্য হত্যা করে। পাক বাহিনী দ্বারা দখল করা বেসামরিক ঘরও ধ্বংস করে দেয়া হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

এই সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ৪২ জন শত্রুসেনাকে হত্যা ও ১৯ জনকে আহত হয়।

১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালনের খবরে কালীগঞ্জ এলাকায় মিটিং এর উপর তিন মুক্তিযোদ্ধা আক্রমণ করে। সভায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে ছয় রাজাকার নিহত ও কিছু পাকসেনা গুলিবিদ্ধ হয়।

১৪ আগস্ট পাকিস্তানের সৈন্য এবং রাজাকাররা কারাবালিয়া হামলা করার চেষ্টা করে এবং মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। ফলে তাদের দখল চেষ্টা ব্যার্থ হয়। ৩ পাকসৈন্য আহত হয়।

১৩ আগস্ট পাক অবস্থান বড়গ্রামে তিন জনের মৃত্যু হয় এবং ৫ জন আহত হয়।

১৩ অগাস্ট কাংলি ফেরি এলাকায় দুটি নৌকা ধ্বংস করা হয়।

১৪ অগাস্ট রাজাকারদের সাথে একই এলাকায় একটি ব্রিজ পাহারার সময় মুক্তিবাহিনী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, এতে, ১ রাজাকার নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী বিয়ানীবাজার অভিযান চালিয়ে দুই রাজাকার হত্যা করে।

৮ আগস্ট মুক্তিবাহিনী গোলাপগঞ্জ থানা ধ্বংস করে।

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী তাঞ্জর এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে দুই রাজাকার হত্যা করে।

১৪ অগাস্ট কামালপুর একটি সম্মুখযুদ্ধে ২৬ জন পাকসেনা নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট সাগরনলে পাক চৌকিতে আক্রমণে ২ পাকসৈন্য আহত হয়।

১৪ অগাস্ট সিলেটে জেলা সংগ্রাহকের অফিস এবং টাউন হলে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে মুক্তিবাহিনী।

১৪ আগস্ট ১২০ পাকসৈন্যরাতে ফারাঙ্গাপারা দখল করে।

১৫ আগস্ট প্রথম প্রহরে মুক্তিবাহিনী ফারাঙ্গাপারায় আক্রমণ করে এবং দুই রাজাকার হত্যা ও দুই জন পাকসেনা আহত হয়।

১৫ আগস্ট শানিবারই মিশন দখল এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৫ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী চালপারার দিকে আগুয়ান পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে ১২ জন শত্রুসেনাকে হত্যা করে।

১৪ অগাস্ট গোবিন্দ-সৈয়দপুর রাস্তায় ৯০ ফুট দীর্ঘ ফলিয়া সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়।

১৫ অগাস্ট পাক অবস্থান কামালপুরে আক্রমন চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৮ জন পাকসৈন্য হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী বাংকার এবং ঘর ধ্বংস করে। একটি বেসামরিক বাস ভাংচুর করা হয়।

বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগে
যুদ্ধ বুলেটিন-আগস্ট ১৮

মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্য, রাজাকার ও তাদের দোসরদের উপর তীব্র আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল। সকল খাঁতে পাক বাহিনীর উপর হয়রানি ও হতাহতের কার্যক্রম তীব্রতর হয়েছে ।

রিপোর্ট মতে মুক্তিবাহিনী এখানে ১১০ জন পাকসেনাকে হত্যা এবং ৫৫ জন পাকসেনা আহত হয়। ৪৭ রাজাকার ও ১১সহযোগীকেও হত্যা করা হয়। অপারেশনের সময় ১০টি অস্ত্র দখল করে মুক্তিবাহিনী। ৩ টি সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়, তাতে অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

মুক্তিবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য নিচে উল্লেখ করা হল:-

মুক্তিবাহিনীর ঢাকা শহরের চারপাশে তাদের কার্যক্রম তীব্রতর করে। তারা সম্পূর্ণভাবে ঢাকা ও নরসিংদী মধ্যে ট্রাফিক ব্যাহত করে ঢাকা-নরসিংদী রাস্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু ধ্বংস করে দেবার ফলে। যে উল্লেখ করা যেতে পারে রেলপথ যোগাযোগ ইতিমধ্যে ধ্বংস করা হয়েছে নানা পয়েন্টে এর ক্ষতি করে।

নরসিংদী পূবালী জুট মিলস ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঢাকার চারপাশে অনেক অন্যান্য কারখানা মুক্তিযোদ্ধারা ধ্বংস করে। সমগ্র পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামেরসহ-সভাপতিকে তারা ঢাকায় মিটিং চলাকালে হত্যা করে। তারা রূপগঞ্জ, জিনারদি ও ঘোড়াশাল এলাকায় কিছু সক্রিয় পাকসহযোগীদের হত্যা করে।
১৭/১৮ অগাস্ট রাতে যশোর জেলার শার্শার কাছাকাছি ছুটিপুরে একটি পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১১ জন পাকসেনা হত্যা করে। তারা তাদের কাছ থেকে কিছু অস্ত্র এবং এক পদাতিক ওয়্যারলেস সেট জব্দ করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

১৩ অগাস্ট গুলি বিনিময়ে ৪ পাকসৈন্য নিহত ও সাত জন আহত হয়।

১৫ অগাস্ট ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় সাত রাজাকার নিহত ও ১টি শট গান জব্দ হয়। গনমতি এলাকায় পাক সমর্থক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে দুই পাক সমর্থকদের হত্যা করা হয়।

১৬ অগাস্ট অন্ধ মাছখরিয়া এলাকায় অতর্কিত গুলি বিনিময়ে ছয় পাকসেনা আহত হয়।

১৪ অগাস্ট জগতপুরে রাজাকার ক্যাম্পের উপর আক্রমণ চালিয়ে তিন রাজাকার হত্যা এবং একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৪ অগাস্ট ভাবাল দিঘিতে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে; এতে ৩ পাকসৈন্য নিহত ও ৪ জন আহত হয় ।

১৬ আগস্ট কাজিপাড়ায় আক্রমণে তিন পাকসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়।

১৬ অগাস্ট বাহমানিয়া এলাকায় পাক প্যাট্রোলের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ পাকসেনা নিহত হয়।

১৫ অগাস্ট হিলি ও চরকির মধ্যে রেলওয়ে কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১৪ অগাস্ট রসুল বিল অভিযান চালিয়ে দুই পাকসহযোগী হত্যা করা হয়।

১৩ অগাস্ট ফার্সিপারা-আঁটুরা রাস্তা কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১৩ আগস্ট প্রথম হরিণ মারি এলাকায় মুক্তিবাহিনী এবং পাক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ে ৯ পাকসেনা নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

১৩ অগাস্ট আমঝুপু এলাকায় দুই রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৪ অগাস্ট চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর রাস্তায় দুটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করা হয়।

১৪ আগস্ট নওগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গার মধ্যে হাটপলিয়াতে অ্যামবুশে তিন রাজাকার হত্যা, চারটি রাইফেল উদ্ধার। একই এলাকায় একটি রাস্তা কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১১ থেকে ১৫ আগস্ট লেবুতলা এলাকায় ২ পাক সমর্থকদের হত্যা করা হয়।

১৩ অগাস্ট পান্তাপারা ও জীবন নগর এলাকায় অ্যামবুশে তিন রাজাকার নিহত হয়।

১৬ আগস্ট ঘনা গ্রামে একটি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের বাড়ি ধ্বংস করা হয় এবং এক পুলিশ দফাদার নিহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম সেক্টর

আগস্টের মাঝামাঝি ঢাকার কাছাকাছি কোথাও একটি সভায় সমগ্র পাক জামাত-ই ইসলাম দলের ভাইস প্রেসিডেন্টকে হত্যা করে মুক্তিবাহিনী।

১৪ অগাস্ট চৌদ্দগ্রাম এলাকায় পাক বাহিনীর উপর মর্টার আক্রমণে ছয় পাকসেনা নিহত হয়।

১২ অগাস্ট অ্যামবুশে রিকশা চলন্ত অবস্থায় অতর্কিতে আক্রমণে ১ জন পাকসেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়।

১৩ অগাস্ট একই এলাকায় অ্যামবুশে ছয় পাকসেনা নিহত হয়।

১৪ আগস্ট কোটেশ্বরে গুলী বিনিময়ে তিন পাকসৈন্য নিহত হয়।

১২ আগস্ট এক সক্রিয় পাকসহযোগী রূপগঞ্জ এলাকায় নিহত হয়।

১৪ আগস্ট পাক আনন্দপুর আক্রমণে তিন পাকসেনা নিহত হয়।

১২ আগস্ট রসুলপুর এলাকায় রাজাকার ক্যাম্প অভিযান চালিয়ে ৫ রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৫ অগাস্ট সালদানদী পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ পাকসেনা হত্যা করা হয়।

১৩ অগাস্ট পাক অবস্থান মন্দভাগে মর্টার আক্রমণে তিন পাকসৈন্য নিহত ও একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয়।

১৫ অগাস্ট একই এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় হয় ও দুই শত্রুসেনা হত্যা করা হয়।

১৫ অগাস্ট নালুয়া এলাকায় চলন্ত পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ ও ১০ জন আহত।

১৫ অগাস্ট মিরসরাই এলাকায় দুই রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৫ আগস্ট সাল্ধার বাজার পাক বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময় ও দুই পাকসেনা নিহত হয়।

১২ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী নরসিংদী পূবালী জুট মিলস আগুন দেয় এবং এতে প্রচুর ক্ষতি সাধন হয়।

১১ অগাস্ট ঘোড়াশাল এক পাকসহযোগী নিহত হয়।

১১ অগাস্ট সম্পূর্ণ ঢাকা-নরসিংদীর মধ্যে সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী ওমরগাও গ্রামে পাক বাহিনী ও শান্তি কমিটির সভায় অভিযান চালায়। এতে দুই পাকসেনা এবং ১০ রাজাকার নিহত হয়। কিছু গোলাবারুদ ও একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
১১ থেকে ১৬ আগস্টে সদরপুর এলাকায় গেরিলা কার্যক্রম চলে। এতে তিন পাকসৈন্য নিহত ও আট জন আহত হয়। সদরপুর এলাকায় ফেরি ধ্বংস করে মুক্তিবাহিনী তিন রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

১০ অগাস্ট পারামারি ঘাটে পাকসৈন্য ভর্তি তিনটি মোটর লঞ্চ আক্রমণে ২ টি লঞ্চ ডুবে যায় এবং ১৩ জন পাকসেনা আহত হয়।

১৫ আগস্ট তারাপুর ঘাট আক্রমণে সাত পাকসৈন্য ও ১২ রাজাকার নিহত হয়।

১৫ অগাস্ট পত্রখাইয়া পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে ২ জন আহত হয়।

১৫ আগস্ট অন্য একটিতে দুই পাকসেনা আহত হয়।

১২ অগাস্ট পুল তলা পাক অবস্থানে আক্রমণে এক পাকসৈন্য নিহত ও তিন জন আহত হয়।
একটি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়।

১৫ আগস্ট ডাটির গাও এক পাকসৈন্য নিহত।

১৬ আগস্ট ভারতীয় সীমানার মধ্যে প্রবেশের চেষ্টায় ৫ পাকসৈন্য নিহত।

———————————————————————–
বাংলাদেশ বাহিনীর সদর দপ্তর। মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন-১৯, আগস্ট
রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

১৪ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী রংপুর মডেল হাইস্কুলে পাকসেনাদের ঘাঁটি মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে। এতে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
১৭ অগাস্ট নাগেশ্বরবারী সেতু ধ্বংস করা হয়।

১৬ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ভামানিয়া এলাকায় পাক মিশ্র প্যাট্রোলে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং ছয় সৈন্যকে হত্যা করে। ১ টি ১২ বোর বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

১৬ অগাস্ট কালাহারি এলাকায় রাজাকারের উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে মুক্তিবাহিনী। এতে, তিন রাজাকার নিহত হয়।

১০ অগাস্ট নওগাঁ এলাকায় ১ টি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করা হয়।

১৪ অগাস্ট পাকসৈন্যরা জোরপূর্বক কানসাট এলাকায় সাধারণ লোকদের সরিয়ে নিচ্ছিল। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৯ পাকসৈন্য ও ১৩ রাজাকার নিহত হয়। এতে মর্টার ব্যাবহার হয়।

১৬ অগাস্ট দিনাজপুর-ফুলবাড়ী রাস্তার কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১৭ আগস্ট পাক অবস্থান রামসাগরে অভিযানে ৩ পাকসেনা নিহত, ২ জন আহত হয়। পাক বাহিনীর ২ টি যান ধ্বংস করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

১৮ আগস্ট মুক্তিবাহিনী গহনছড়াতে সাতটি পাট গুদাম জ্বালিয়ে দেয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

১৫ অগাস্ট রামগড় এলাকায় অ্যামবুশে ৫ পাকসেনা নিহত হয়।

১৫ আগস্ট পাক অবস্থান হরিমঙ্গলে অভিযান চালিয়ে দুই কর্মকর্তাসহ ছয় সেনা নিহত হয়।

১২ আগস্ট বান্দুয়া দৌলতপুর এলাকায় আক্রমণে এক পাক সমর্থক নিহত ও মাইলনে ১ জন আহত হয়।

১২ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ফুলগাজী এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার টেলিফোন তার নষ্ট করে।

১৪ অগাস্ট পাক অবস্থান দলধরে অভিযান চালিয়ে একজন কর্মকর্তাসহ ১৫ জন আহত। একই এলাকায় আরেকটি লড়াইয়ে একই দিনে পাক বাহিনীর ৫ জন আহত।

১৬ আগস্ট নাগাইস এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে আট জন নিহত হয়।

১৫ আগস্ট একই এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে আক্রমণে ৫ জন নিহত হয়।

১৫ অগাস্ট হামাইলে ৩ জন শত্রুসেনা নিহত হয়।

১৩ অগাস্ট কটক এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে অভিযান ৫ পাকসেনা নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট বিবির বাজার পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে ছয় জন আহত। একই এলাকায় ওপর একটি আক্রমণে ২ পাকসেনা নিহত হয়।

১৪ অগাস্ট ফেনী-কুমিল্লা রাস্তায় চলন্ত পাক বাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণে ৫ পাকসৈন্য নিহত এবং একজন আহত হয়। আরেকটি স্থানে দুটি টেলিগ্রাফের খুঁটি ধ্বংস করা হয় ও এই এলাকায় বিভিন্ন স্থানে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করা হয়।

১১ অগাস্ট পাক অবস্থান নয়নপুরে রেলস্টেশনে অভিযান চালিয়ে ২৩ পাকসেনা নিহত হয়।

১০ ও ১৫ আগস্টের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ঢাকা এলাকায় প্রায় ১০ ডাকাত হত্যা করে। পাক বাহিনী লুট ও ধর্ষন করার জন্য এসব ডাকাতদের নিযুক্ত করেছিল।

১৪ অগাস্ট ৪০০০ মণ ধারণকারী নরসিংদীর একটি পাটকল পুড়িয়ে দেয় মুক্তিবাহিনী।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

ফেঞ্চুগঞ্জ গ্রেনেড ছুড়ে মুক্তিবাহিনী দুই রাজাকার হত্যা করে।

১৬ অগাস্ট বয়ারাইনারী এবং নান্নির মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। তারা বদর বাহিনী সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা এবং একই এলাকায় ৩ জন বদর বাহিনীর লোক হত্যা করে।

১৬ আগস্ট একটি পাক জিপে অতর্কিতে আক্রমণ করে ছয় পাকসৈন্য হত্যা করে।

১৭ অগাস্ট পাক অবস্থান আদিছড়া অভিযান চালিয়ে ১০ জন হতাহত হয়।

১০ অগাস্ট ফুলটন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন নিহত করা হয়।

১৩ আগস্ট পাক বাহিনীর উপর ধামাই এলাকায় মাইন আক্রমণে মেজর কামাল ও দুই পাকসেনাকে হত্যা করা হয়।

১৬ আগস্ট টাঙ্গাটিলা-ছাতক গ্যাস পাইপ লাইন উড়িয়ে দেয়া হয়। এজন্য ১৬ ০ ১৭ আগস্ট ছাতকে কোন আলো ছিল না।

১৩ আগস্ট সাইল এলাকায় পাক প্যারা মিলিটারি গ্রুপ ২৫ টি ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়, গ্রামবাসীদের উপর নির্যাতন করে, ধর্ষণ এবং লুটপাট করে।

১৭ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী কারিতলায় পাক অবস্থান আক্রমণ করে। এতে ২ পাকসেনারা, এক কুক এবং এক পাক সমর্থক নিহত হয়। একটি এলএমজি ধ্বংস হয়।

১৫ আগস্ট পাক অবস্থান বকশীগঞ্জএ আক্রমণে ৫ জন নিহত এবং দুটি যানবাহন ধ্বংস করা হয়।

দেরীতে প্রাপ্ত তথ্য মতে ৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী পাক পোস্ট বন্দরকটায় অভিযান চালিয়ে একজন কর্মকর্তাসহ ২০ জনকে আহত হয়।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তরে মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন,
২০ শে আগস্ট

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশের সকল সেক্টরে পাকসৈন্যদের উপর তাদের আক্রমণ অব্যহত রাখার কারনে ব্যাপক পাকসেনা হতাহত হয়।

নৌপথও তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পায়। মুক্তিবাহিনী সফল ভাবে পাকসেনাদের নৌকা ধ্বংস করে দেয়।

১০ই আগস্ট মুক্তিবাহিনী মাটিকারা এলাকায় পাক বাহিনীর চারটি স্টিমারে অতর্কিত আক্রমণ করে। স্টিমারটি পালাতে চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হয়। কিন্তু স্টিমারের এক সেনা কর্মকর্তা এবং ২০ জন লোক স্টিমারটি ফেলে রেখেই পালিয়ে যায়। সেখান থেকে মুক্তিবাহিনী ৫০০ বাক্সে গোলাবারুদ উদ্ধার করে ও পরে স্টিমারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

১২ আগস্ট একই এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের অ্যামবুশ করে। এতে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৩ আগস্ট আবারো এই এলাকায় এম্বুশ করে এবং ১৬ পাকসেনা নিহত হয়।

প্রতিবেদনে জানা যায় খুলনারতেরখাদায় মুক্তিবাহিনী সশস্ত্র রাজাকারদের সঙ্গে যুদ্ধ নিযুক্ত হয়। সেখানে ২৬ জন রাজাকার নিহত এবং ৭ জন গুরুতরভাবে আহত হয়। জানা যায় পাকসেনারা তাদের পাঠায়। তারা কঞ্চফু হাই স্কুলে অবস্থান করছিল। তারা সেখানে লুটপাট ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘর পোড়ানোর শুরু করে। তারা এলাকার অন্যান্য মানুষের ঘরও পুড়িয়ে দেয়। এই তথ্য পেয়ে মুক্তিবাহিনী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে।

১৭ আগস্ট শ্যাম নগর থানায় অভিযান চালিয়ে ২ রাজাকার হত্যা করে এবং দুই রাইফেল (৩০৩) এবং ২০০ রাউন্ড গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

১৫ ই আগস্ট পাকসৈন্যদের একটি লঞ্চে আক্রমণ করে। এতে, ৩০ জন পাকসেনা নিহত হয়। একই দিনে কপিল মুনি অঞ্চলে আরেকটি অ্যামবুশে ২৬ জন রাজাকার নিহত হয়।

বিবরণ নিচে দেওয়া হল:-

১৩ অগাস্ট কামাল পোখারি এলাকায় কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।
১৯ আগস্ট গোমাথি-খেতির একটি সেতু ধ্বংস করা হয়।

১৮ অগাস্ট দাদুলে ছয় পাকসৈন্য নিহত ও দু’জন আহত করা হয়।

১৮ অগাস্ট রায়গঞ্জ ও নাগেশ্বরী মধ্যে ২০০ গজ টেলিফোন লাইন ধ্বংস করা হয়।

১৫ অগাস্ট দালমনিহাট কলেজে রাজাকার ও পাকসেনাদের স্বাধীনতা দিবস কার্যক্রমে আঘাত করে ২০ জনকে আহত করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

১৫ অগাস্ট বদখানা এলাকায় কালভার্ট ধ্বংস করা হয় ও এক পাক সমর্থক নিহত হয়।

১৫ অগাস্ট সাবদান এলাকায় মর্টার আক্রমণে ছয় জনের মৃত্যু হয় এবং ৯ জন আহত হয়।

১৪ অগাস্ট পাবদা এলাকায় সড়ক কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।

১২ আগস্ট মাগুরায় গেরিলা আক্রমণে নাহাটায় ৫ রাজাকার নিহত হয়। ৫ টী রাইফেল জব্দ হয়।
পাখুরিয়াতে তিন পাক সমর্থকদের হত্যা এবং একটি বেয়নেট জব্দ হয়।

১৫ অগাস্ট একটি লঞ্চে আক্রমণ করে ৩০ জন পাকসেনা হত্যা করা হয়। একই দিনে কাঁপিলমনিতে ২৬ জন রাজাকার হত্যা করা হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১৭ অগাস্ট রাধানগর অভিযান চালিয়ে ১১ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

১৯ আগস্ট পাচিম সাল্কনা এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে ১ পাকসেনা নিহত হয়।

১২ অগাস্ট মাটিকাটা অ্যামবুশে ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়।

১০ আগস্ট মাটিকাটা চারটি স্টিমার পাক কনভয় অতর্কিতে আক্রমণ। এক কর্মকর্তা এবং ২০ জন পালিয়ে যায়। ৫০০ বাক্সে গোলাবারুদ সংগৃহীত হয়। এবং স্টিমার আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়।

১৩ অগাস্ট মাটিকাটা য় আক্রমণে ষোল পাকসেনা নিহত করা হয়।

১৮ আগস্ট কাটিয়ামাড়ায় পাক প্যাট্রোল আক্রমণে দুই রাজাকার আহত হয়।

১৬ আগস্ট আলিনগরে ২০০ গজ তার বিচ্ছিন্ন করা হয়।

সুনামগঞ্জ-সিলেটে হাফ মাইল টেলিফোন তার ধ্বংস করা হয়।

গেরিলারা অসংখ্য বিদেশী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়

মুজিবনগর আগস্ট, ২২, এক সপ্তাহে গেরিলারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পোর্টে এক ডজনেরও বেশী বড় জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এগুলো ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের জাহাজ। এগুলো অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন করত এবং আরো কৌশলগত জিনিশপত্র আনা-নেয়া করত, যার মূল্য পাকসেনাদের কাছে অত্যন্ত বেশী ছিল।

যানা যায় সেখানে লাইটেনিং নামে একটি সোমালিয়ান জাহজ এবং আল আব্বাস নামে পাক বাহিনীর জাহাজ ছিল। এটির ওজন ছিল ১৫,০০০ টন। এটি তৈরি করতে প্রায় ১০ কোটি রুপির প্রয়োজন হয়েছে। ১৯৬৮ সালে সালে আইয়ুব খানের আমলে এটি চালু করা হয়েছিল।

সরকারের একজন মুখপাত্র বলেছিলেন বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন ও উচ্ছেদের মাধ্যমে যেকোন কার্যক্রম প্রতিরোধ করার জন্য জনগণ প্রস্তুত আছে। তাই ইসলামাবাদের সাথে সহায়তা করে পাঠানো যেকন সরঞ্জাম নিজ ঝুঁকিতে পাঠাতে বলা হয় বিভিন্ন দেশকে।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
২৩ শে আগস্ট

মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশ সীমানার মধ্যে নৌপথে প্রচুর আক্রমণ পরিচালনা করেছে। সেই সব গেরিলা অপারেশনের বর্ননা নিম্নে বর্নিত হল-

১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী মংলা বন্দরে অপারেশন সম্পন্ন করে। ৬টি কার্গো শিপ ডুবে যায়-যার মধ্যে ২ টি আমেরিকান, ২ টি চীনা, জাপানি এবং এক পাকিস্তানি জাহাজ রয়েছে। এই জাহাজে পাকসেনাবাহিনীর জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ বহন করা হয়। নালিয়নের মুক্তিযোদ্ধারা ২ টি পাক বন দপ্তর দখল করে নিলেন। এছাড়াও ৮ টি রাইফেল (৩০৩), ২ টি রিভলবার ও ২৬ টি শট গান জব্দ করা হয়।

রাতে একই তারিখের ‘ লাইটনিং’ ও ‘ সলায়মান’ জাহাজ ডুবানো হয়। ১৫/১৬ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রচণ্ড কর্মকান্ড পরিচালনা করা হয়। আল-আব্বাস, ১৫০০০ টনের জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এই জাহাজে ১০ কোটি রুপি খরচ পড়েছিল। এটা ১৯৬৮ সালে আইয়ুব খানের সময় চালু হয়। ‘ফরমোছা’ নামে আরেকটি জাহাজ মুক্তিবাহিনী নিমজ্জিত করে। জেটি ১৩তে তারা একটি কার্গো নিমজ্জিত করে।

১৫/১৬ আগস্ট রাতে ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রাস্তার দাউদকান্দি ফেরিঘাটে গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। মুক্তিবাহিনীর একটি ফেরী ডুবিয়ে দেয়া হয়। এতে ৮ টি বড় যানবাহন ধরত। তারা স্টিমার ঘাট জেটি ও পন্টুন সম্পূর্ণ ধ্বংস করে। জ্বালানীর স্টোরেজ এবং বড় ড্রামস ধ্বংস করে। লঞ্চঘাট পন্টুন ও জেটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে এবং এতে ১২ জন রাজাকার ও পুলিশ নিহত হয়।

১৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ হার্বারে ৩ টিজাহাজ ডুবে যায়। একটি বড় কয়লা স্টিমার কাছে ডুবে গিয়েছিল।

৭ থেকে ১৬ আগস্ট লাখ্য নদীর উপর ৩ টি বড় মোটর লঞ্চ ধ্বংস এবং ১৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়।

১৮ আগস্ট সিলেট জেলার দক্ষিণ দিরাই একটি স্টীমার ডুবে যায়।

১৩ আগস্ট চাতুল ফেরী ধ্বংস হয়।

১৫ আগস্ট সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ মহকুমায় সাঞ্চা থেকে পাক কার্গো লঞ্চ ও বার্জ জব্দ হয়। তারা এছাড়া এক কার্গো লঞ্চ, মোটর ৮ টি, টানেন মটর লঞ্চ ১ টি ও কার্গো লঞ্চ বাসুনারা জব্দ করে। মটর লঞ্চ ব্যবহৃত হচ্ছে টাগ এস্কোর্টের জন্য। দুটিতে সিমেন্ট দিয়ে ও ১ টিতে গম ছিল। ৫ টি খালি বার্জ ছিল। এগুলো গুমঘাঁটের দিকে যাচ্ছিল। এছাড়া দোকান, বৈদ্যুতিক পণ্য, খাদ্য উপাদান ছিল। ৩০০০ এমডি এস গম ভর্তি পাকসেনাদের জাহাজ সাঞ্চানাতে জব্দ হয়।

১৯/২০ আগস্ট রাতে রংপুর বর্ডার আউটপোস্ট আক্রমণ করা হয়। ২০ জন পাকসেনা আহত ও ২ তও বাঙলার ধ্বংস হয়।

১৯ আগস্ট শ্যাম নগরে আক্রমণে ১৬ জন আহত হয়। কিছু যান ধ্বংস হয়।
১৬ থেকে ১৮ আগস্ট মন্দভাগে সালদানদীতে পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৮০ পাকসেনা নিহত হয়।

১৯ আগস্ট আমালছিতে গেরিলা হামলায় পাকসৈন্যদের প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়া হয়। এতে ১০ জন পাকসৈন্য, ২ সহযোগী, ৮ পাক আধাসামরিক লোক নিহত হয়। আলামছি এখন মুক্তিবাহিনীর দখলে।

১৩ আগস্ট সিলেটের কাছাকাছি আনসার চেইনপ্স গ্রেনেড ছুড়ে; এতে, ১৩ পাকসেনা নিহত হয়।

১৩ আগস্ট নেত্রকোনা মহকুমারকেন্দুয়া থানায় অভিযান চালিয়ে ৬ পাক পুলিশ হত্যা করা হয়। তারা ১৩ রাইফেল (৩০৩), ২ টি চীনা রাইফেল, ১৭ টি বেসামরিক বন্দুক এবং গোলাবারুদ জব্দ করে। তারা থানা এবং ২ টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
৮ আগস্ট পাকিস্তানের সৈন্য বহনকারী একটি বেসামরিক বাস ফেরী এলাকায় মাইনে উড়িয়ে দেয়। ২ জন জেসিওসহ ১৯ পাকসৈন্য নিহত হয় এবং ৩০ জন এই ঘটনায় আহত হয়।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের মহকুমার নরসিংদী ও শিবপুর মধ্যে একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
২৪ শে আগস্ট

১। ২১ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা সেক্টরের কানাস্থালায় পাকিস্তানি অবস্থানের উপর অভিযান চালিয়ে একজন কর্মকর্তাসহ ১৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

২। ১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা সেক্টরের এলাকা মুরাদনগরে পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে এক কর্মকর্তাসহ ৩০ জন শত্রুসৈন্য ও ৫ জন রাজাকার হত্যা করে এবং একটি রাইফেল ও কিছু চীনা গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

৩। সামরিক আইন কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকে তাদের সাথে কাজে যোগদানের জন্য লিফলেট প্রচার করে। লিফলেটে বলায় হয় যে সেনাবাহিনী তাদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। লিফলেটে আরও বলা হয় অবিলম্বে তাদের সেবা নিশ্চিত করা হবে যদি তারা যোগদান করেন।

৪। বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগের একজন মুখপাত্র বলেন কোন বাঙ্গালী শ্রমিক তাদের জুট মিলস ও অন্যান্য কারখানায় যোগদান করেনি। এম এল কর্তৃপক্ষ অধিকৃত এলাকার জুট মিলস এবং অন্যান্য কারখানা চালাতে শমিক পেলনা-তাই পশ্চিম পাকিস্তান থেকে শ্রমিক আমদানি ছাড়া কিছু করার থাকল না। তিনি আরও বলেন বাঙ্গালী শ্রমিক তাদের জন্মভূমি থেকে হানাদার বাহিনীকে দূর করে ছাড়বে।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
২৪ শে আগস্ট

প্রতিবেদনে জানা যায় মুক্তিবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরে এক অফিসারসহ ৮৪ জন পাকসেনা নিহত করে এবং ৫৪ জন পাকসৈন্য আহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী ৪৯ জন রাজাকার হোটয়া এবং ৭ জন রাজাকারকে আহত হয়, ও ৮ প্রকার অস্ত্র দখল করে। তারা পাকসেনাদের একটি খাবারবাহী ও অন্যান্য সামগ্রী বহনকারী লঞ্চ দখল করে।
তাদের বিস্তারিত রিপোর্ট নিচে দেওয়া হল:-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

২১ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ফুলতলা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালায়। এতে, ৩ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়।

২০ আগস্ট বেলবাড়িতে একজন কর্মকর্তাসহ এবং ৯ জন নিহত হয় ও ৪ জন আহত হয়।

২১ আগস্ট মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাও ও রুহিতে ২০০ ফুট রেললাইন উড়িয়ে দেয়।

১৯ আগস্ট ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়। চাক্রামে আরেকটি অভিযানে ছয় জন হতাহত হয় ৯ জন জখম হয়।

২১ অগাস্ট শান্তি বাহিনী সদস্যদের পাঁচটি ঘর অভিযান চালিয়ে এক ডবল বোর বন্দুক, চারটি সিঙ্গেল বোর বন্দুক এবং কিছু গোলাবারুদ জব্দ করে।

১৭ অগাস্ট পার্ভতিপুর ও ফুলবাড়ী রেলওয়ে কালভার্ট ধ্বংস করে।

২০ আগস্ট একই এলাকায় একটি টহল দল অ্যামবুশে পাক বাহিনীর চার জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

২২ আগস্ট ৩ পাকসেনা নিহত এবং পাঁচ জন আহত হয়।

২১ অগাস্ট প্রাগপুরে দুটি হত্যা ও তিন জনকে আহত হয়।

১৮ থেকে ১৯ আগস্ট যশোর এলাকায় সফল গেরিলা হামলা চালিয়ে তারা চন্দ্রপাড়ায় ২ জনকে হত্যা করে। ভবতপুরে রেলের দুই বগি লাইনচ্যুত করা হয় এবং মাথুরাপুরে রাজাকারদের আক্রমণ করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

১৬ আগস্ট দুটি স্টিমার ও চাঁদপুরে পণ্যসম্ভার বহন করা একটি বড় বজরা ডুবিয়ে দেয়া হয়।
মুক্তিবাহিনী লঞ্চঘাট ও পন্টুন সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করে।

১৮ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী দুটি বৈদ্যুতিক পাইলন এবং সাহাজিবাজার ও সিলেটের মধ্যে বিদ্যুতের লাইন ধ্বংস করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১৯ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী কামালপুরের কাছাকাছি বলদমুড়া সড়ক সেতু ধ্বংস করে পাহারারত ৫ রাজাকারকে হত্যা করে।

১৯ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী কুশিয়ারা নদীর উত্তরে বাঁধ ধ্বংস করে।

২০ অগাস্ট বিজয়পুরে পাক পোস্ট ৫ জন পাকসেনা হত্যা এবং ৫ টি বাংকার ধ্বংস হয়।

১৪ থেকে ১৬ আগস্ট ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া রাস্তায় দাপুনিরে যুদ্ধে ১০ পাকসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী দাপুনির সেতুটি ধ্বংস করে।

২০ আগস্টে কামালপুরে অ্যামবুশে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়।
২১ আগস্ট তানটার নামে এক পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী দশ জন পাকসৈন্য হত্যা করে।

১৪ এবং ১৬ আগস্ট থেকে অ্যাকুয়া ব্রিজে পাক প্রহরীদের দিকে গ্রেনেড ছুড়ে ২ জন শত্রুসেনা হত্যা করে।

১৯ অগাস্ট লাঙলাতে পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণে দুই জন শত্রুসেনা আহত হয়।

১৯ অগাস্ট বড়লেখাতে দুই পাকসেনা নিহত এবং দু’জন আহত হয়। কাছাকাছি পাক অবস্থান ছোটা লাদাখে অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী এক রাজাকার হত্যা করে।

২১ আগস্ট আমালসিদ এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময় শুরু হলে চার পাকসৈন্য নিহত হয়।

১৯ অগাস্ট শুটার কান্দির কাছাকাছি ফাইলাপুরে দুই পাকসেনা ও দুই পাক সমর্থকদের হত্যা করা হয়।

২০ আগস্ট রায়গ্রান এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে এক পাকসৈন্য নিহত ও দুই জন আহত হয়েছে।

২১ অগাস্ট ঢাকা থেকে সিলেট গামী খাদ্য ও অন্যন্য মাল বাহী একটি কার্গো চাঁদপুরে জন্দ হয়। এর ধারণ ক্ষমতা ১২৫ টন। ক্রু ছিলেন ৯ জন। আনুমানিক পণ্য মূল্য প্রায় ৮৫০০০ টাকা।

১৯ অগাস্ট জাঁকিব বাড়ি বাজারে অভিযান চালিয়ে ১২ রাজাকার হত্যা করা হয়।

২৫ আগস্ট মালিক বাড়িতে ১৬ রাজাকার নিহত হয়।

২৬ জুলাই ভালুবাতে অভিযান চালিয়ে চার জন পাকসেনা হত্যা করা হয়।

২৭ জুলাই মুক্তিবাহিনী আঙ্গরগারাতে অভিযান চালিয়ে চার রাজাকার হত্যা করে।

১৫ অগাস্ট ময়মনসিংহ এ পুলিশ লাইনে গ্রেনেড ছোড়ায় এক পুলিশ নিহত ও তিন জন আহত হয়।

১৬ আগস্ট লক্ষ্মীপুর রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর এনকাউন্টারে তিন জন শত্রুসেনার মৃত্যু হয় এবং সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়।

১৪ অগাস্ট তারাকান্দা বাজারে সাত রাজাকার নিহত ও চার জন আহত হয়। ৩ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

২০ অগাস্ট হালুয়াঘাট ও টেলিখালির মধ্যে টেলিফোন লাইন নষ্ট করা হয়।

২১ আগস্ট ও ২২ আগস্ট কামালপুর-বকশীগঞ্জের মধ্যে টেলিফোন লাইন নষ্ট করা হয়।

২২ অগাস্ট চালিপাড়ায় পাক বাহিনীর একটি নৌকার উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। তানটারে আক্রমণে ১৬ জন পাকসৈন্য নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
২৫ শে আগস্ট

মুক্তিবাহিনী সব খাতে তাদের গেরিলা অপারেশন করে যাচ্ছে এবং পাকসেনা, রাজাকার ও তাদের দোসরদের মারাত্মক ক্ষতি করে যাচ্ছিল। তথ্য থেকে জানা যায় ২ কর্মকর্তাসহ ১০২ পাকসেনা নিহত এবং ১৯ জন পাকসেনা আহত হয়েছে। এছাড়া ৪৯ রাজাকার নিহত এবং ৬সহযোগীকে বন্দী করা হয়েছে। অধিকৃত এলাকার পাঁচটি স্থানে টেলিফোন তার ধ্বংস বা ৫ টি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সাফল্য নীচে বিবৃত করা হয়:

১৪, ১৫ ও ১৭ আগস্ট খুলনা জেলার কাবাল বাড়ি, ফেতুয়া, হাজীপুর, তালা ও পাইকগাছা অপারেশন সম্পন্ন হয়। এই লড়াইয়ে কালাবারি ২৫ রাজাকার, ফেতুয়া ১৫ রাজাকার, ও হাজীপুর এলাকায় ৩ রাজাকার ও পাক সমর্থক নিহত হয়। তালা ও পাইকগাছা বিমুক্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট করা হয়।

২১ আগস্ট নোয়াখালীর খাঁয়ের বাজারে এবং লক্ষ্মীপুর থেকে শত্রুদের পিছু হটিয়ে দেয়া হয়।

২১ আগস্ট যশোর জেলার নোয়াপাড়ায় আট জন হতাহত হয়। পরে তারা এই এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়।

২১ আগস্ট আয়েদপুর এলাকা শত্রুমুক্ত হয়।

৮ আগস্ট রাতে পাঞ্জাবি সৈন্য ও পাঠান সৈন্যদের মাঝে ভূরুঙ্গামারী এলাকায় বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পাঞ্জাবি বাহিনী একজন পাঠান অধিনায়ককে এরেস্ট করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর

১৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী ফুলবাড়ী-পাহাড়ী ট্র্যাকে রেলওয়ে কালভার্ট ও দুই টি টেলিগ্রাফের খুঁটি ধ্বংস করে।

২১ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ফুলতলা-ঠাকুরগাঁও রাস্তার উপর সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

২০ অগাস্ট কুড়িগ্রাম এলাকায় ওয়াপদা কর্মকর্তা কলোনিতে আক্রমণ করে তিন পাক সমর্থকদের (অফিসার) হত্যা করে।

২২ আগস্ট কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট এলাকায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত করে।

২০ অগাস্ট নাগেশ্বরী-ধানি গাগ্লা এলাকায় দুটি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।

২২ আগস্ট রাত্নাই সেতু মহাইঘাটে রেললাইন উড়িয়ে দেয়া হয়।

১৮ আগস্ট রাতে ভূরুঙ্গামারী এলাকায় টহলরত পাঞ্জাবি এবং পাঠান বাহিনীর মধ্যে বিতর্ক হয়। পাঠান ক্যাপ্টেন এরেস্ট হন।
৬ আগস্ট সুখানপুকুরের কাছাকাছি গেরিলারা দুটি কালভার্ট ধ্বংস এবং গাবতলীর কাছাকাছি এক পাকবাহিনী জিপে অতর্কিতে আক্রমণ করে। এতে ৭ জন পাকসেনা হতাহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

৭ ও ১৩ আগস্ট এর মধ্যে ঝিঙারগাছা এলাকায় গেরিলারা অনেক অভিযান সম্পন্ন করে। তারা আজিরপুরে ১ জন পাকসেনা হত্যা করে। মুহম্মদপুর এলাকায় অ্যামবুশে দুই জন পাকসেনা নিহত হয়। তারা আম্রিতবাজার ইউনিয়ন পরিষদ অফিস এবং পোস্ট অফিস জ্বালিয়ে দেয় এবং সিল ও নথি উদ্ধার করে।

২২ আগস্ট কাশিম্পুরে ৫ পাকসেনা নিহত হয়।

স্থানীয় প্রতিরোধ গ্রুপ এবং মুক্তিবাহিনী নিম্নলিখিত কর্ম সম্পন্ন করে-

১৪ আগস্ট তারা ২৫ জন রাজাকার হত্যা করে। ১৫ আগস্টে তারা ফেতুয়াতে ১৫ রাজাকার হত্যা করে। ১৭ আগস্ট তারা হাজিপুরে ১ পাক সমর্থক ও ৩ রাজাকার হত্যা করে। এটা জানা যায় যে তালা ও পাইকগাছা মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
আমবাড়িয়া এলাকায় ১০ আগস্ট ৩ টি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

২০ অগাস্ট ছাগলনাইয়া-শুভপুরে মাইনের বিস্ফোরণে পাক যান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০ অগাস্ট ছয়ঘরিয়া এলাকায় পাকসৈন্যবাহী দুইটি পাক বেসামরিক যানবাহন গ্রেনেড আক্রান্ত হয়। এতে ২ পাকসৈন্য আহত এবং যানবাহন ক্ষতি হয়।

১৮ আগস্ট আনন্দ পূর দক্ষিণে তিন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন আহত হয়। ১৯ আগস্ট একই স্থানে আক্রমণে ৫ জন আহত হয়।

১৭ আগস্ট কানাস্থালাতা এলাকায় আক্রমণে ২ জন পাকসেনা নিহত হয়।

১৯ অগাস্ট কানস্থ লতা এলাকায় অ্যামবুশে ২ পাকসৈন্য নিহত ও ১ জন আহত হয়।

২০ আগস্ট মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১১ পাকসেনা হত্যা করে। ২১ আগস্ট আবার একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ পাকসেনাদল হত্যা করে একজন অফিসারসহ। ফলে পাকসেনারা খেইস বাজার এবং লক্ষ্মীপুর থেকে দূরে বিতাড়িত হয়।

২১ আগস্ট নোয়াপাড়া এলাকায় পাক বাহিনীর ৮ জন হতাহত হয় ও পরে তারা অবস্থান থেকে সরে যায়।

১৭ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী ইলিয়টগঞ্জের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যানকে হত্যা করে।

১৬ অগাস্ট মুরাদ নগরে একটি দেশী নৌকায় আক্রমণে একজন কর্মকর্তা এবং ৫ রাজাকারসহ ত্রিশ পাকসৈন্য নিহত হয়। তারা একটি রাইফেল ও কিছু চীনা গোলাবারুদ দখল করে।

২১ আগস্ট রঘুরাম্পুরে ২০০ গজ টেলিফোন তার নষ্ট করা হয়।

২০ আগস্ট উশাম্পুরে মাইনে এক পাকসেনা নিহত ও ১ জন আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

কালীঘাট এলাকায় ২০ আগস্ট ২ পাকসেনা হত্যা ও তিন জন আহত হয়।

২১ অগাস্ট অ্যামবুশে ৩ জন আনসার আহত হয়।

২১ অগাস্ট ব্রহ্ম বাজার ২০০ গজ টেলিফোন লাইন ধ্বংস কর হয়।
আয়েদপুরে ৮ বর্গ মাইল এলাকায় থেকে এগুলো সংগ্রহ করা হয়।

২২ অগাস্ট রহিম পুরে দুই পাকসেনা নিহত এবং এক জন আহত হয়

২২ অগাস্ট চরবাঙ্গালীতে মাইন বিস্ফোরণে এক রাজাকার নিহত হয়।

২৩ আগস্ট জামালপুর-বকশীগঞ্জ ও হালুয়াঘাঁট-টেলিখালির মধ্যে টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়।

২২ আগস্ট তানটার এলাকায় পাক চৌকি সমেত এলাকা আক্রমণে ২ পাকসৈন্য আহত হয়।

২০ আগস্ট ও ২১ আগস্ট টাঙাইলে আক্রমণে দুই পাকসেনা নিহত এবং চার জন আহত হয়।

————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
২৬ শে আগস্ট

মুক্তিবাহিনীরা সব খাতে তাদের গেরিলা কার্যক্রম বজায় রেখেছে। তারা পাক বাহিনী, রাজাকার ওসহযোগীদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি করছে।

তাদের কিছু প্রশংসনীয় এবং বীরত্বপূর্ণ কার্যক্রম নিম্নে দেওয়া হল:-

১। ২২ আগস্ট অনিয়মিতসহ দুই পাক প্লাটুন ভামানিয়াতে মুক্তিবাহিনীর উপর হামলা করার চেষ্টা করে। এতে এক মেজর ও আনসারসহ ২৫ জন হতাহত হয়। পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট তারা সৈন্য প্রত্যাহার করে। একই এলাকায় মাইনে একটি জিপ বিস্ফোরিত হয়। ৩ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন আহত হয়েছে।

২। ২২ আগস্ট পাখুরিয়া স্কুল-যেখানে ২ প্লাটুন পাকসেনা ছিল-সেখানে আক্রমণ করা হয়। ৪৫ জন পাকসেনা নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। স্কুল ভবনের ক্ষতি হয়।

৩। ২৪ আগস্ট মৃধার বাজারে অ্যামবুশে ৬ জন জখম হয়। প্রতিশোধমূলকভাবে তারা বেসামরিক ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। ২১ আগস্ট অ্যামবুশে ৭ জন পাকসেনা নিহত ও ৪ জন আহত হয়। অবশিষ্ট সৈন্য পার্শবর্তী ঘরে আগুন লাগিয়ে পালিয়ে যায়।

৪। বৈদ্যুতিক পাইলন না থাকায় সিলেট শহরে একটি অংশ বিদ্যুৎহীন আছে। ১৫ আগস্ট ছাতক ও সিলেটে আরও ২ টি পাইলন ধ্বংস করা হয়।

৫। একটি নিশ্চিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় সিলেটে নাগরিক হাসপাতালে প্রায় ১৫০ জন আহত রাজাকার চিকিত্সা নিচ্ছে। এই হাসপাতালে প্রচন্ডভাবে পাকসৈন্য দ্বারা সুরক্ষিত।

৬। পাক কর্তৃপক্ষ ‘ঈগল ফোর্স ‘ নামে যশোরে একটি নতুন সংগঠন করেছে বলে জানা গেছে

৭। ২২ আগস্ট অভয় এলাকায় এম্বুশে ৩ টি পাক পেট্রোল পোস্ট আক্রান্ত হয়। দুটি পাক নৌকা ডুবে যায়। ১৫ জন পাকসৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম নিচে দেওয়া হল:-

২২ অগাস্ট রাত্নাই ও মোঘলাহাটে রেললাইন মেরামতের সময় দুই রাজাকার ও দুই শ্রমিক নিহত হয়। ২২ অগাস্ট মোঘলাহাটে মুক্তিবাহিনী পাক সমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৫ সমর্থক হত্যা করে।

১৭ আগস্ট ওয়েস্ট ভুরুঙ্গামারী পাক প্যাট্রোল আক্রমণে এক পাকসৈন্য নিহত এবং ৫ জন আহত হয়।

১৮ আগস্ট আন্ধারিঝার খামার এ চার জন পাকসেনা নিহত হয়।

১৮ অগাস্ট আন্ধারিঝার খামার এবং লালমনিরহাটের মধ্যে প্রায় ২০০ গজ টেলিফোন তার ছিন্ন করে।
২২ আগস্ট বড়বাড়ি তীর্ণাই সেতু ধ্বংস করা হয়।

২১ অগাস্ট বাদ্মিসএলাকায় ছয় পাকসেনা নিহত এবং চার জন আহত করা হয়।

২২ অগাস্ট যাবার হাট পাকসৈন্য ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর অতর্কিত হামলা এবং ১০ জন আহত করা হয়।

১৯ অগাস্ট বারাতে এক শান্তি কমিটি সদস্য এবং বাগধানিতে আরেক সদস্য নিহত হয়।

২২ অগাস্ট বসুয়া এলাকায় মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণ চালায়; এতে চার রাজাকার নিহত এবং দুই পিস কমিটির সদস্য বন্দী হয়। তিনটি রাইফেল ও দুটি বন্দুক জব্দ করা হয়। ইউনিয়ন পরিষদ অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকর্তার দুটি পরিচয়পত্র জব্দ করা হয়।

২৩ অগাস্ট বিদ্যাধরপুরে ৫ পাকসেনা নিহত এবং সাত জন আহত হয়। এক পাক সমর্থকও নিহত হয়।
১ থেকে ১৩ আগস্টে ফরিদপুরে গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন। তারা কামালপুরে মুসলিম লীগের সমাবেশে ২০ পাকসেনা হত্যা করে। কাওলিকান্দার কাছাকাছি দিগনগরে পুলিশ স্টেশন ও রাজাকার কোর্ট পুড়িয়ে দেয়। তারা চার রাজাকার নিহত এবং ১৩ রাইফেল ও একটি বৃহৎ পরিমাণ গোলাবারুদের জব্দ করে।

২১ অগাস্ট তারা কিছু গোলাবারুদের সঙ্গে দুটি রাইফেল জব্দ করে। ১৭ অগাস্ট শ্যামনগর থানা অভিযান চালিয়ে দুই রাজাকার হত্যা করে। পাক পোস্ট সিক্রির অভিযান চালিয়ে ৫ জন হতাহত হয়।

১৮ আগস্ট কায়েমকলায় ১ রাজাকার ও দিয়ারাতে শান্তি বাহিনী চেয়ারম্যানকে হত্যা করে।

২৩ অগাস্ট মীরগঞ্জ অভিযান চালিয়ে ৫ পাকসৈন্য হত্যা করা হয়।

২২ অগাস্ট বিদ্যাধরপুরে ফেরী ধ্বংস করা হয়।

১২ আগস্ট বোয়ালিয়াতে মুসলিম লীগ নেতা হত্যা করা হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় যে, ঈগল বাহিনী নামে একটি নতুন দল গঠন করা হয়েছে এবং যশোর এর কাজ চলবে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

২০ আগস্ট সোনাগাজিতে সেনা বহনকারী তিনটি পাক যানবাহন আক্রমণে ১৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। ২১ আগস্ট মধুগ্রামে ২ রাজাকার নিহত হয়।

২১ অগাস্ট সোনাগাজী এলাকায় রাজাকারসহ ২০ পাকসেনা নিহত করা হয়।

২১ অগাস্ট মীরধরবাজারে সাত পাকসেনা নিহত এবং চার জন আহত হয়

২৪ অগাস্ট প্রতিশোধমূলক হিসেবে পাকসৈন্যরা বেসামরিক ঘর পুড়িয়ে দেয়। ৬ জনকে হত্যা করে।

১৮ অগাস্ট চানগাজি বাজারে চার পাকসেনা নিহত হয়।

২১ অগাস্ট দেবীপুরে অ্যামবুশে চার পাকসেনা নিহত করা হয়।

১৯ আগস্ট রাজুরিয়াতে সাত পাকসৈন্য নিহত হয়।

২০ অগাস্ট মুক্তিবাহিনী এলাকায় তিন রাজাকার হত্যা করে।
২১ আগস্ট নোয়াপারা পাক অবস্থানে ছয় জন পাকসেনা নিহত হয়।

২১ অগাস্ট শ্রীপুরে এক রাজাকার হত্যা ও ১ জন আহত ও একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৮ অগাস্ট রামশিরাবরি এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাক বাহিনীর উপর মর্টার নিক্ষেপ করলে ৮ জন পাকসেনা নিহত এবং ২৪ জন আহত হয়।

১৫ আগস্ট চার্নাল এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণে ৩ জন আহত হয়।

১৬ আগস্ট একই এলাকায় মুক্তিবাহিনী অতর্কিত হামল করলে আট পাকসৈন্য নিহত হয়।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায় চট্টগ্রামে ১৬ আগস্ট আল আব্বাস নামক ১৫০০০ টন ধারণ ক্ষমতার একটি জাহাজ মুক্তিবাহিনী ডুবিয়ে দেয়। আরেকটি প্রায় ১২৫০০ টন ধারণক্ষমতা পাক আর্মীদের জন্য খুচরা যন্ত্রাংশ বহনকারী জাহাজ ডুবিয়ে দেয়া হয়। এছাড়াও ৩ টি বৃহৎ পণ্যসম্ভার বার্জ ডুবিয়ে দেয়া হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর

১৮ অগাস্ট চানু-শমসেরনগর রাস্তার সেতু ধ্বংস করা হয়। একই এলাকায় পাকসৈন্য বহনকারী এক জিপে অতর্কিত আক্রমণ করে দুই জন পাকসেনাকে আহত করা হয়।

২৩ অগাস্ট বর্নিতে পাক বাহিনীর আটটি দেশী নৌকা জব্দ করা হয়।

১৫ অগাস্ট ছাতক ও সিলেটের মধ্যে দুটি পাইলন ধ্বংস করে মুক্তিবাহিনী। পাইলন মেরামতের অধীনে ছিল; তাই সিলেটের একটি অংশ বিদ্যুৎ ছাড়া ছিল।

নিশ্চিত রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ১৫০ জন আহত রাজাকার সিলেটে নাগরিক হাসপাতালে চিকিত্সা পাচ্ছেন। সিলেটে অবস্থিত এই হাসপাতাল প্রচন্ডভাবে পাকসৈন্য দ্বারা সুরক্ষিত হয়।

২৩ অগাস্ট লরবাং আরসিসি সেতুর ৪০ ফুট দীর্ঘ দুটি স্তম্ভ উড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা গুলিবর্ষণ করলে আট রাজাকার পালিয়ে যায়।

২৪ আগস্ট মুক্তিবাহিনী নাকুচইতাল-আহমেদনগর এবং হালুয়াঘাট-চিখালির মধ্যাকার টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

২৩ অগাস্ট আটগ্রাম এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে অভিজান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৩ জন আনসার হত্যা করে।

২১ অগাস্ট সুলতানপুর অ্যামবুশে দুই আনসার নিহত ও এক পাকসৈন্য আহত হয়।

১৮ অগাস্ট পূর্বধলায় শান্তি কমিটির দুই সদস্য নিহত হয়।

১৯ আগস্ট আতাপাড়া থানায় মুক্তিবাহিনী ৩ ঘন্টা ধরে অভিযান চালানোর পর সেটি দখল করে, ৯ রাজাকার হত্যা করে। পুলিশ স্টেশনের কমান্ডিং অফিসারের আত্তসমর্পন করে এবং মুক্তিবাহিনী ২২ টি রাইফেল জব্দ করে। একই দিনে আতাপারা পোস্ট অফিস ধ্বংস এবং ডাকঘর থেকে চার টেলিফোন সেট উদ্ধার করা হয়।

২০ অগাস্ট আতাপারায় শান্তি কমিটির এক পাক আহ্বায়ক ও শান্তি কমিটির এক সচিব নিহত হয়।

২১ অগাস্ট বকশীগঞ্জ চারুয়া বাজারে চার বদর বাহিনী সদস্য, আট পাক সমর্থক এবং এক পাক পুলিশ ইন্সপেক্টর নিহত হয়।

————————————————————————————

বাংলাদেশ ওয়ার নিউজ
মুজিবনগর
২৮ শে আগস্ট

কুমিল্লা সেক্টর: দখলদার বাহিনীর জন্য মৃত্যু ফাঁদ

প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী গেরিলা ও কমান্ডো আক্রমণ প্রতিনিয়ত বাড়ছিল। এখন সরাসরি আঘাতের সময়। গত কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় ৪ কর্মকর্তা এবং ২০০ ও আর এস মারা যায়। এছাড়া প্রচুর আহত হয়েছে। সংবাদদাতা থেকে পৌঁছনো প্রতিবেদনে জানা যায় দাউদকান্দিতে ৮ টি ভারী যানবাহন বহন সক্ষম একটি ফেরি ধ্বংস করা হয়। ফেরিঘাটে, স্টিমার ঘাট, জেটি ও পন্টুন, জ্বালানি ২৩/২৪ আগস্ট রাতে ধ্বংস করা হয়। ১২ রাজাকারদ নিহত হয়। পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশও নিহত হয়।

গত ২ মাস মুক্তিবাহিনী সালদানদী এলাকায় প্রায় ২০০ বর্গমাইল এলাকা দখলে রাখে। এখানে পাক হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে চরম শাস্তি পায়। এখানে শত্রু সর্বোচ্চ হতাহতের রেকর্ড গড়ে। কয়েকজন অফিসারসহ প্রায় ১৫০০ জন হতাহত হয় এই এলাকায়। মুক্তিবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম। শেষ মানুষের শেষ বুলেট পর্যন্ত এই অবস্থান ধরে রাখা হবে।

প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য মতে গেরিলাদের কাজ বাংলাদেশের অনেক ভিতরেও চলতে থাকে। টাঙ্গাইলে সম্প্রতি এক দুর্ঘটনায় ২ পাকসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়েছে। পরশুরাম থানা ফেনী মহকুমার সালদার ও সুবের বাজারে অপর একটি ঘটনায় মুক্তিবাহিনী শত্রুর উপর সাহসী আক্রমণ করে। ১ জন অফিসার ও ১৫ জন ও আর এস নিহত হয়। হানাদার বাহিনী ফিরে গেলে মুক্তিবাহিনী “জয় বাংলা” স্লোগান দিতে থাকে বাংলাদেশের পতাকা তুলে।

এতে প্রমাণিত হয় পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ের যোগ্যতা এখন পাকা পোক্ত।

—সৌজন্য-বাংলাদেশ আর্কাইভস, নিউজ ও ফিচার সার্ভিস।
————————————————————————————

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর
মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
৩০ শে আগস্ট

বিলম্বিত খবরে প্রকাশ-১৫ ও ১৬ আগস্ট রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সাত বড় জাহাজ এবং দুটি বার্জ মুক্তিবাহিনী গেরিলা আক্রমণে পানিতে ডুবে যায়।

১। এতে পাকসেনাদের মনোবল এতোটাই ভারাক্রান্ত হয় যে লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ১৮ আগস্ট, সেটি দেখতে পোর্ট পরিদর্শণে যান। তিনি সে সময়ে বন্দর এলাকায় ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র ন্যাভাল অফিসার ও ধ্বংসের সময় দায়িত্বরত সব সেন্ট্রিকে গ্রেফতারের আদেশ দেন। ১৩ নং জেটির বিপরীতে একটি বজরা ডুবিয়ে পোর্ট অবরুদ্ধ করা হয়। পুরো এলাকায় কার্ফু জারি করে রাখা হয়।

২। ঢাকা থেকে প্রাপ্তি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১১ ও ১৪ ই আগস্টের মধ্যে ঢাকা সঙ্গীত কলেজ, সেগুনবাগিচায় অভিযানে ২ পাকসেনা নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

৩। ১৩ আগস্ট রাতে পাকবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসে অভিযান চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবের সম্পাদকসহ বিভিন্ন বিভাগের ১১ জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে আটক করা হয়।

৪। একটি প্রামাণিক উৎস থেকে জানা যায় ৮ হাজার ছাত্রের মাত্র ৩০ জন পরে ক্লাসে অংশ নেয়।

৫। জানা যায়, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৪৫০ জনের মাত্র ১ জন ক্লাসে আসে-যে ছিল পাকবাহিনীর মেজর ফরমান আলীর কন্যা।
৬। ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল লাইনে রেল কালভার্টের পাশ দিয়ে পাকসেনারা অনেক বাংকার গড়ে তুলেছে।

৭। ৭ আগস্ট রাতে পাকসৈন্য মতিঝিল কলোনি ও ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা আক্রমণ করে এবং প্রায় ৮০ ব্যক্তিকে বন্দি করে। তাদের হদিস আর জানা যায় নি।

—–সিল, পাবলিক রিলেশন অফিসার, বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ দপ্তর
যুদ্ধ বুলেটিন
৩০ আগস্ট

মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় তাদের গেরিলা কার্যক্রম তীব্রতর করছে। তারা পাকসৈন্যদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। জলপথও গেরিলা কার্যক্রম সমান তীব্রতর হয়েছে।

আজকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক অফিসারসহ ১৪৬ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৩ অফিসারসহ ৭৩ জন আহত হয়-অধিকৃত এলাকায়। ১ পাক সৈনিক বন্দীও আছে।

৪৬ রাজাকার নিহত হয়েছে এবং ২১ পাক পুলিশসহ ২৬ জন ধরা হয়েছে। তারা তাদের অপারেশনের সময় বিভিন্ন ধরনের ৩৪ প্রকার অস্ত্র জব্দ করে। তারা ৪ স্থানে সড়ক সেতু, ২ স্থানে রেল সেতু, ২ স্থানে টেলিফোনের খুঁটি ধ্বংস এবং রেললাইন সরিয়েছে। ৪ জায়গায় টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করে।

পাঞ্জাবি মেজর ও ক্যাপ্টেন বেলুচীর বিবাদ ও তথ্যে আসে। লুঠ বণ্টন নিয়ে এক পাঞ্জাবি মেজর ও একজন বেলুচী ক্যাপ্টেন মধ্যে লড়াইয়ের পরে তা সৈন্যদের মধ্যে ছড়ায়। এটি ঘটেছে ৮ আগস্ট। এই সংঘর্ষে পাঞ্জাবি দিকে ৬৫ জন নিহত এবং ৪৫ জন আহত এবং বেলুচী দিকে ১০ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়।

অন্য রিপোর্টে জানা যায়, ৯ আগস্ট মনহরদি থানার আক্রমণে ১ অফিসারসহ ২১ পুলিশ সদস্যদের বন্দী করা হয়। ১৫ টি রাইফেল জব্দ করা হয়। ১০ আগস্ট একটি পাকবাহিনী প্যাট্রোল অতর্কিতে আক্রমণ করে ২ জন আহত হয়।

চরগ্রানে রেল ব্রিজ ধ্বংসের জন্য লাটু এবং সরলেখার মধ্যে রেল যোগাযোগ নষ্ট হয়। ঢাকায় পাকিস্তানি ব্যবসায়ীদের মুক্তিবাহিনীর কারণে ব্যাবসা চালিয়ে যেতে অসুবিধা হয়। তাই তারা তাদের দোকান ও স্থাপনা বন্ধ করে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যেতে শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

অবাঙালি পাক সমর্থকরা মুক্তিবাহিনীর ভয়ে সন্ধ্যায় তাদের ঘর থেকে বের হয়না। ফলে তাদের মৃত্যু হার কমে গেছে।

রংপুর-দিনাজপুর রাজশাহী সেক্টর

১৬ আগস্ট মুঘলহাটে দুই পাকসেনা নিহত এবং প্রচুর আহত হয়েছে।

১৬ অগাস্ট চারার হাটে দুই রাজাকার হত্যা ও ৭ জন আহত কর হয়।

১৭ আগস্ট রামপুরে চার পাক বাহিনী হত্যা করা হয়।

১৭ আগস্ট রানিসন্ধাইলে ৫ জন পাক বাহিনীর সৈন্য হতাহত হয়।
১৭ আগস্ট চারাডাঙ্গিতে অভিযান চালিয়ে দুই জন পাকসেনা হত্যা করা হয়।

১৭ অগাস্ট গৌরীপুরের কাছাকাছি তিন পাকসৈন্য নিহত ও দু’জন আহত করা হয়।

১০ আগস্ট আদমদীঘি-ভরতপুর মধ্যে রেললাইন উড়িয়ে দেয়া হয়।

৯ আগস্ট আদমদীঘি পোস্ট অফিস আক্রমণে দুটি রাইফেল, দুটি ১২ বোর বন্দুক ও চার টি টেলিফোন সেট উদ্ধার করা হয়। এবং
৫ রাজাকার হত্যা করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর

৫ আগস্ট সারদা রোড জংশনে চার পাকসেনা নিহত এবং তিন জন আহত হয়েছে।

১৫ অগাস্ট লালপুর থানায় অভিযান চালিয়ে এক রাজাকার হত্যা ও একটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়।

১৬ আগস্ট রাম নগরে ছয় পাকসেনা নিহত এবং তিন জন আহত।

১৫ অগাস্ট ৫ রাজাকার বন্দী ও একটি সিঙ্গেল বোর বন্দুক উদ্ধার করা হয়।

১৫ আগস্ট জাগতির কাছে যশোর-ঘিগাছার সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়।

১৫ আগস্ট চৌগাছাতে টেলিফোনের খুঁটি উড়িয়ে দেয়া হয়।

৪ আগস্ট তারাই ছড়া ২৬ জন রাজাকার হত্যা করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর

সোনাগাজিতে ১৫ আগস্ট চার পাকসেনা কর্মকর্তাদের বহনকারী একটি জিপ মাইনে আক্রান্ত হয়ে এক অফিসার নিহত হন। বাকি ৩ জন গুরুতর জখম হন।

১৫ আগস্ট বসন্তপুরে পাঁচ পাকসেনা নিহত এবং এক জন বন্দী হয় যখন রাজাকারদের উপর আক্রমণ করা হয়।

১৬ অগাস্ট অভিযান চালিয়ে বাঘের এলাকায় দুই রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৭ ই আগস্ট, সশিদল এলাকায় অ্যামবুশে বারো পাকসেনা নিহত হয়। ১৬ আগস্ট একই এলাকায় আরেকটি অ্যামবুশে চার পাকসেনা নিহত হয়।

১৬ অগাস্ট কোটনা এলাকায় ১০০ ফুট রেললাইন ধ্বংস করা হয়।

১৬ অগাস্ট চান্দলাতে ২ জন পাকসহযোগীরা হত্যা করে।

১৬ অগাস্ট নায়ানপুরে রেশন বহনকারী তিন পাক নৌকা অতর্কিতে আক্রমণ করা হয় এবং ১০ পাকসেনা নিহত হয়। নৌকা টি খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

জুলাই ৮ থেকে ২৫ কাপাসিয়া থানার এলাকায় ১২ সক্রিয় পাকসহযোগীরা হত্যা করে।

২৮ জুলাই লক্ষ্য নদীতে পাক সৈন্যের জন্য রেশন বহনকারী দুটি লঞ্চ মুক্তিবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে ও ধ্বংস করে দেয়। রেশন নদীতে ডুবে ছিল। ৩১ জুলাই অন্য এক অভিযানে পাকসৈন্যদের জন্য রেশন বহনকারী একটি মটরলঞ্চ লাখ্যা নদীতে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ধ্বংস করে।

৯ আগস্ট মনোহরদী থানায় অভিযান চলে। এতে কমান্ডিং অফিসারসহ ২১ পুলিশ সদস্য আটক ও ১৫ টি রাইফেল এবং গোলাবারুদ জব্দ হয়। দুই জন হতাহত হয়। ২ টি টেলিফোন খুঁটি ধ্বংস করা হয়।
২৮ মেগাবাইট নবীগঞ্জ থানায় মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ১০০ কিমির উপর যোগাযোগ করতে সক্ষম ১ টি রেডিও সেট উদ্ধার করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলোভীবাজার সেক্টর

১১ আগস্ট সমশের নগর-কুর্মাছাড়া রাস্তায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে একটি সেতু ধ্বংস করা হয়।

১৮ অগাস্ট ছাড়্গ্রাম এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে রেলসেতু ধ্বংস হয়। এতে লাটু-বড়লেখার মধ্যে রেল যোগাযোগ ধ্বংস হয়।

১৭ অগাস্ট ছোটলেখায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দুই পাকসেনা নিহত এবং তিন জন আহত হয়।

১৭ আগস্ট ছিলুয়া এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে একটি সড়ক সেতু ধ্বংস হয়।

১৩ অগাস্ট আলীনগর মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে এক সুবেদার এবং দুই সৈন্যকে হত্যা করে।

১১ আগস্ট কুলাউড়ার কাছাকাছি সড়ক সেতু মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ধ্বংস করা হয়।

১২ আগস্ট শমসেরনগর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করা হয়।

১৩ অগাস্ট সুনামগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তিনটি মোটরের ছয় বার্জ টাগ জব্দ ও চৌদ্দ কর্মী বন্দী করা হয়।

১৮ আগস্ট আহমেদনগর-কুন্নির মধ্যে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করা হয়।

১৭ আগস্ট ধলাপাড়া নদীতে পারাপারের সময় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে এক পাকসেনাদল হত্যা ও দু’জন আহত হয়।

১৭ আগস্ট একই এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযানে ৫ জন আহত হয়।

১৭ অগাস্ট কামালপুর এলাকায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩ জনকে হত্যা করা হয়।

১৫ অগাস্ট নাওকুচিতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে সাত পাকসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়। একটি ব্যারাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১৮ অগাস্ট কানাইরঘাট এলাকায় আনসার অভিযান চালিয়ে দুই জনকে হত্যা করা হয়।

১৮ আগস্ট দিল্কুশাতে পাক চৌকি আক্রমনে এক জনের প্রাণনাশ ও দু’জন আহত হয়।

১৮ অগাস্ট বারামারিতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে তিন রাজাকার নিহত ও তিন জন আহত হয়।

১৫ অগাস্ট ফুলপুর-ময়মনসিংহ রাস্তার উপর কুদাল ধরে ৩০ ফুট দীর্ঘ আরসিসি ব্রীজ ধ্বংস করা হয়।

১৬ অগাস্ট তারাকান্দার মধ্যে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫ রাজাকার হত্যা করা হয় এবং সাত জন আহত হয়। তিনটি রাইফেল জব্দ করা হয়।

১৯ অগাস্ট তানটারে পাক অবস্থানে অভিযান চালালে কিছু পাকসৈন্য আহত হয়।

—-সিল, পিআরও
বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৩১ আগস্ট

সারা দেশেই সব সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম তীব্র ভাবে এগিয়ে চলছিল। পাকবাহিনী, রাজাকার ও তাদেরসহযোগীরা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। তথ্য মতে ১৬ থেকে ২৯ আগস্টে তিন দিনের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১০২ জন নিহত হয়েছে। নামকরা পাকসহযোগী জনাব ফখরুদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাজস্ব মন্ত্রী ও সচিব বাংলাদেশ প্রাদেশিক মুসলিম লীগ-তিনিও নিহত হন। ১০২ জনের মধ্যে ৬১ জন পাকসৈন্য, ১৫ রাজাকার ও ২৬সহযোগী ছিল। এই সময়কালে ৪০ টির বেশী ট্রুপ্সে পাকসেনাদের উপর মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ চলে। জনাব ফখরুদ্দিনকে ময়মনসিংহ জেলায় নিয়ে আসা হয়।

২৮ আগস্ট সিলেট জেলায় লামুকাটায় রাজাকার চৌকি সমেত অবস্থানে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৩ জন রাজাকার নিহত হয়। ২৭ আগস্ট সিলেটে মনুর কাছাকাছি পাকসৈন্যদের উপরে অ্যামবুশে ৫ জন হতাহত হয়। একই দিনে ৩ মাইল উত্তরে তামার্জুনিতে রাজাকারদের টহল দলে অভিযানে ৬ জন হতাহত হয়। তাদের কাছ থেকে ২ টি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ২৭ আগস্ট কানাইরঘাটে পাক প্যাট্রোল অতর্কিতে আক্রমণে ৩ পাকসেনা আহত হয়। একই এলাকায় নৌকায় চলন্ত পাকবাহিনীর উপরে অতর্কিতে আক্রমণে ২ জন নিহত হয়। ১ জন আহত হয়। একই দিনে একটি পাক জিপ মাইনে আক্রমণে করা হয় জকিগঞ্জ-আতাগ্রাম রাস্তায়। এতে ২ পাকসৈন্য নিহত হয় এবং 3 জন আহত হয়। তাদের গাড়ির প্রচুর ক্ষতি হয়। একই দিনে শমসেরনগরের কাছাকাছি টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে এই এলাকায় টেলি যোগাযোগ ব্যাহত করা হয়।

২৭ আগস্ট নোয়াখালীতে ফেনী-বিলোনিয়া এলাকায় পাক বাহিনীর জন্য সরবরাহ বহনকারী ১৫ টি পাক বেসামরিক যানবাহন অতর্কিতে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে এবং প্রায় সব যানবাহন ভাংচুর করে। একই এলাকায় হাসানপুরের কাছাকাছি একটি সড়ক সেতু ধ্বংস এবং ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেনী-বিলোনিয়ার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

২৬ আগস্ট নোয়াখালীর সোনাইছড়ি এলাকায় একটি ব্রিজে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে এক পাকসেনা ও ২ রাজাকার হত্যা করে।
কুমিল্লা জেলার মন্দভাগে পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৫ জন হতাহত হয়। একই দিনে তারা বিবির বাজার অভিযান চালিয়ে ২ পাকসৈন্য হত্যা করে।

২৬ আগস্ট শিরনহাটে ৪ টি পাকসৈন্যবাহী দেশী নৌকায় মুক্তিবাহিনী অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং ২ টি নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে ১০ জন আহত হয়।

২৭ আগস্টে দিনাজপুর জেলার হালিবান্দায় মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ জনকে আহত হয়। ২৫ আগস্ট একই এলাকায় রাজাকার অবস্থানে আক্রমণে ১৪ জন আহত হয়। ১৫ টি রাইফেল ও 8 জন রাজাকার বন্দী করা হয়। ২৮ আগস্ট রংপুর ভুরুংমারি পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ২ জনকে আহত হয়।

২৭ আগস্ট উত্তরবঙ্গের নকুরগাছিতে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস করে। একই দিনে দারপুলে ৩ জন পাকসৈন্যকে আহত করা হয়। ২৬ আগস্ট ফুলতলা-ভবানীপুর রাস্তা আক্রমণে ধ্বংস হয় এবং এর ফলে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। একই দিনে দঙ্গরহাট এলাকায় পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ পাকসেনা হত্যা এবং ৪ জনকে আহত হয়।

২৭ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলায় পটল্ডাঙ্গায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পিস কমিটির চেয়ারম্যান নিহত হয়।
বারিনগর যশোরে ২৫ আগস্টে এক মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৬ জন রাজাকার নিহত হয় ও ২ টি রাইফেল উদ্ধার হয়। আর ৩ জন আহত হয়।

——————সিল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স, ৩১ আগস্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১ সেপ্টেম্বর

মুক্তিবাহিনী সারা বাংলাদেশ জুড়ে ব্যাপক গেরিলা কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা পাক বাহিনী, রাজাকার ওসহযোগীদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি করছিল।

প্রশংসনীয় কয়েকটি কার্যক্রমের কিছু নিচে উল্লেখ করা হল:

(১)মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরের লেবুতলা, হাশিম্পুর ও রায়পুর স্বাধীন করে। এবং ১৪ আগস্ট থেকে ২৪ আগস্ট বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে।

(২) ২৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গা থানায় আক্রমণ করে। ২৮ আগস্ট আরেকটি অ্যামবুশে ২ জন আহত হয়।

(৩) মুক্তিবাহিনী ২৬ আগস্ট জগন্নাথ দীঘিতে তিনটি টেলিফোনের খুঁটি ধ্বংস করে কুমিল্লা ও ফেনীর মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে।

(৪) ২৭ আগস্ট কুমিল্লা জেলার কসবায় পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালালে ২০ জন আহত হয়। দুটি বাংকার ধ্বংস করা হয়।

(৫) ৩০ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার বেরিগাও এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর গুলি বিনিময়ে ৪ পাকসেনা নিহত হয়।

(৬) ২৮ আগস্ট ময়মনসিংহের ইসলামপুরে বদর বাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৪০০ মণ পাট জব্দ করে। ৪ জন নিহত হয়।

(৭) রংপুর লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে রাজাকারদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৭ রাজাকার হত্যা করে। রেলসেতুর পাহারায় থাকা পাকপোস্টেও আক্রমণ করে। ফলে পাকসেনারা পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরে ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়া হয়। ২৬ আগস্ট নাগেশ্বরী-রায়গঞ্জ রাস্তায় ১০ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং ৪ জন আহত হয়।

(৮) ২৭ আগস্ট ভবানীপুর, ঝারবাড়ি এবং বিরাইতের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ৭০ ফুট রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস করে।

——————সিল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স, ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২ সেপ্টেম্বর

মুক্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে ব্যাপক ভাবে বলবত আছে।
গত কয়েক দিনের অপারেশনে মুক্তিবাহিনী ১০৪ জন পাকসেনা হত্যা এবং ৫৭ জন আহত হয়। একই সময় ৬০ জন রাজাকার, ১২ জন পুলিশ ও ৫ জনসহযোগীকে হত্যা করা হয়।

প্রধান কিছু অপারেশন-
২৮ আগস্ট ঢাকায় সবচেয়ে সাহসী কিছু মাইন অপারেশন করা হয়। মুক্তিবাহিনী ২ টি সেনা ট্রাক ও ১ টি জিপ উড়িয়ে দেয়। অন্তত ২৪ জন পাকসৈন্য এবং রাজাকার নিহত হয় এবং ৪১ জন আহত হয়।

২৪ আগস্ট এবং ২৭ আগস্টের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ৯ জন পাকসৈন্য, ১২ জন রাজাকার ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম এলাকায় ৯ পুলিশ হত্যা করে।

২৮ আগস্ট ব্রহ্মপাড়া ও সালদানদী এলাকায় মুক্তিবাহিনী ৫ টি দেশী নৌকায় আক্রমণ করে ১ অফিসারসহ ২৩ জন পাকসৈন্য ও রাজাকারদের হত্যা করে।

২৬ আগস্ট সিলেট জেলায় ফুল্টন অঞ্চলে মুক্তিবাহিনী আক্রমণে ৩ জনকে হত্যা করে এবং বেশ কিছু শত্রু বাংকার ধ্বংস করে।

২৮ আগস্ট সিলেটের লাটু এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ে ৫ জন পাকসৈন্য আহত হয়।

২৫ আগস্ট মুক্তিবাহিনীর সেট করা মাইনে ৪ টি ট্রেনবগি সিলেট জেলার জুড়ী এলাকায় লাইনচ্যুত হয়।

২২ আগস্ট আরেকটি মাইন অপারেশনে মৌলভী বাজার এলাকায় একটি আর্মি ট্রাকে আক্রমণে কমপক্ষে ৬ পাকসৈন্য নিহত হয় এবং বেশ কিছু আহত হয়।

২৯ আগস্ট মুক্তিবাহিনী কামারশাল পাকসৈন্য অবস্থানে অভিযান চালায়। এতে ৫ জন পাকসেনা আহত হয়।

২৯ আগস্ট রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহীতে পাক প্যাট্রোলে মুক্তিবাহিনীর অতর্কিতে আক্রমণে তাদের মধ্যে ৬ জন নিহত হয়।

৩০ আগস্ট মুক্তিবাহিনী ভতেমারিতে পাকসৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৫ জন হত্যা করে। একই দিনে দানুর এলাকায় ৩ জন পাকসেনা নিহত এবং ৪ জন আহত হয়।

এই সময়ে মুক্তিবাহিনী ৫০ টি শত্রু যানবাহন ধ্বংস করে এবং প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে। তারা কয়েকটি সেতু ধ্বংস করে।
এ সময়কালে ৪২ জন রাজাকার সিলেট জেলার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

——————সিল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স, ২ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৩ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলা কার্যক্রম আরও গতিবান হয়েছে। রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ভতেমারিতে পাকসৈন্য অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে আহত হয়। মুক্তিবাহিনী অমরখানা এবং জগদালহাটে পাকসৈন্য অবস্থানের উপর মর্টার হামলা করে। এই আক্রমণে ৫১ জন পাকসেনা নিহত ও ১৩ জন আহত হয়।

যশোর-খুলনা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পানিঘাট, কারামার, পশ্চিম বাগ ও শ্যামপুর এ সিরিজ আক্রমণ সম্পন্ন করে এবং এক কর্মকর্তা এবং ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর এক জন জখম হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী দুর্গাপুর, ছাগলনাইয়া, লোডাগাও এবং সোহাগপুর এ তাদের আক্রমণ চালিয়ে শত্রু অবস্থানের ১৫ জন পাকসেনা হত্যা, ৩ শত্রু বাংকার ধ্বংস করে।

মনোহরদীতে আক্রমণে ১২ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করা হয়। ঢাকা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুট এ একটি রেল ট্রলিবাস মুক্তিবাহিনী সফলভাবে অ্যামবুশ করে। এতে এক আর্মি অফিসার এবং ৫ জন সৈন্য নিহত হয়।

সিলেট-ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পুটিছেরা, জাগাদা এবং বান্দরকাটাতে সংঘর্ষে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। বিরিশিরিতে মুক্তিবাহিনীর মাইনে একটি শত্রু গাড়ি বিস্ফোরিত হয়ে দুই জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং গাড়িটি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

——-এসডি / নজরুল ইসলাম, গণসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বাহিনী ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৪ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখযোগ্যভাবে সকল ফ্রন্টে সফলতার সাথে তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং গত দুই দিন সময়ে ২ কর্মকর্তাসহ আরো ২৫০ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু অবস্থান শত্রুমুক্ত হয়েছে। শত্রুরা স্থানচ্যুত, তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইন এবং সেতু ধ্বংস করা হয়েছে।

পূর্ব ফ্রন্টে ধারাবাহিক আক্রমণে মুক্তিবাহিনী দারিয়াপুর, বল্লভপুর, কুশাডাঙ্গা, মিয়াবাজার, কালিকাপুর, কোটেশ্বর, মিরপুর, গুথুমা এবং মাইঝখার এ মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীকে আক্রমণে করে ৬০ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং অনেক আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এছাড়াও নয়নপুর এবং সাশিদালে মর্টার হামলা চালায়। সেখানে ৩৬ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। ২ টি সফল আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা শনিরহাট এবং নাগাইসে ৫০ জন পাকসেনা হত্যা করে, ১২ টি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। আসাম পাড়ায় মুক্তিবাহিনীর মাইনে একটি শত্রু ট্রাক ও ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

উত্তর সেক্টরে সাগ্নি এবং বচবা গায়ের মধ্যে রেলওয়ে ট্র্যাকে মাইন সেট করে উড়িয়ে দেয়া হয়। একটি পাকবাহী জিপ আক্রমণে এক কর্মকর্তা ও চার সৈন্য নিহত হয়। পিলাকান্দিতে মুক্তিবাহিনীর মাইনে ১ টি ট্রাকসহ ৭ জন নিহত হয়। তীব্র যুদ্ধে বেরিগাও ও ট্যাংরাটিলাতে ৩৩ জন পাকসৈন্য এবং আখাছরিতে ২২ জন পাকসেনা নিহত হয়েছে। উলিপুর এ পাক ক্যাম্পে সাহসী আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ২০ জনকে আহত হয় এবং ভারী যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে।

পশ্চিম সেক্টরের মুক্তিবাহিনী গেরিলারা প্রহরারত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরের উপর একটি সাহসী আক্রমণ করে ও নিয়ন্ত্রণ রুমে গ্রেনেড ছুঁড়ে ২ পাকসেনা হত্যা করে। বর্দিতে মুক্তিবাহিনীর মাইনে ১ টি পাকিস্তানের জিপ, ১ জন অফিসার এবং ৫ জন সৈন্য নিহত হয়।

পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে মুক্তিবাহিনী গেরিলারা রেলওয়ে স্থানচ্যুত করে যোগাযোগ নষ্ট করে। বারাছাড়াতে ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।
নির্ভরযগ্য তথ্য মতে পাঠান ও পাঞ্জাবি সৈন্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। সিলেটে কাদিম নগরে মালামাল বিতরণের উপরকেন্দ্র করে পাঠান ও পাঞ্জাবি সৈন্যদের মধ্যে তীব্র বিরোধ দেখা দেয়।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স, ৪ সেপ্টেম্বর, ৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৫ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম চালু রেখেছে। এখানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তারা ১১৩ জন পাকসেনা, ৩২ জন রাজাকার ও ১৪ জন পাকপুলিশ হত্যা করে এবং প্রচুর হতাহত হয়। বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রতিদিন ব্যাপক ক্ষতি সাধনের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি মুক্তিবাহিনীর অভিযানে পাকসেনা বহনকারী ৩ টি নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়।
রংপুরে, দিনাজপুর ও রাজশাহী সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা খাজানপুর, বালদিয়া, শাইনপুকুর, ভাড়াটের ছড়া, জামালগঞ্জ ও বাহানপুরে পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণে ২৮ জন পাকসেনা ও ১৫ জন রাজাকার হত্যা করে। পূর্ব শ্যামপুড় এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাইনে একটি শত্রু ট্রাক উড়ে যায় এবং ৬ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী পার্বতিপুর গ্রাম ও ফুলবাড়ীর মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে।

রিপোর্ট করা হয়েছে যে সম্প্রতি পাকসৈন্যরা কুদানবাজার ঘিরে বেসামরিক নাগরিকদের উপর গুলি ও অগ্নিসংযোগ করছে। তারা ২১ জন বেসামরিক লোক হত্যা এবং ৩৫কেজন আহত হয়। এই বাজারে তারা দোকান লুট করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধারা শিতালাইয়ের কাছাকাছি দারশায় অভিযান চালিয়ে ২ জন পাকসৈন্য হত্যা করে। তারা এই এলাকায় টেলিগ্রাফ অফিস পুড়িয়ে দেয় ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে দুইটি সফল আক্রমণে ঢাকা ও চন্দ্রপুর রূপগঞ্জের ওসিসহ ৩০ জন পাকসেনা ও ৪ জন পাকিস্তানি পুলিশের প্রাণনাশ হয়। কাছাকাছি রূপগঞ্জে পাকবাহিনী এবং পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ বহনকারী ৩ নৌকা ডুবিয়ে দেয়া হয়। মুক্তিবাহিনী শীতলক্ষ্যা নদী ও চন্দ্রপুরে দুটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। ঢাকার কাছাকাছি মিরপুর ও চন্দ্রপুরে দুটি সফল অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ১০ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ ও ১০ জন পাকসেনা হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভী বাজার সেক্টরে শ্রীমঙ্গল, ভোগা, করিমপুর, কুরসাইলও নালিতাবাড়ী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর একটি সিরিজ আক্রমণে ২১ জন পাকসেনা এবং ১৮ রাজাকার হত্যা করা হয়।

করিমনগর ও জুড়ী বড়লেখায় মুক্তিবাহিনীর মাইনে একটি শত্রু ট্রাক ও একটি পাকবাহিনী বহনকারী জিপ আক্রান্ত হয়ে ১০ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। ভিগাতে মাইন বিস্ফোরণে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। নালিতাবাড়ীতে পাকসৈন্যদের উপর মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে ১২ জন পাকসেনা নিহত হয়। দেওয়ানগঞ্জ থানা ধ্বংস করে ১ টি স্টেনগান ও একটি রাইফেল জব্দ করা হয়।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স, ৫ সেপ্টেম্বর, ৭১

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৯ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে। বিভিন্ন সেক্টর থেকে পৌঁছনো খবর মতে মুক্তিবাহিনী ৩১ আগস্ট এবং ৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ১১৪ জন নিয়মিত পাকসেনাসহ ২৪২ জনকে হত্যা করেছে।

মুক্তিবাহিনী ঢাকা ও এর আশপাশে তাদের গেরিলা কার্যক্রম তীব্রতর করেছে। তারা সূত্রাপুর, আজিমপুর গেরিলা অপারেশনে ৪ পিএএফ প্রভোস্ট ও সূত্রাপুর সার্কেল ইন্সপেক্টরসহ ৫০ জনকে হতাহত হয়। ধোলাইখালে তারা ৩ টি রাইফেল উদ্ধার এবং আজিমপুর এলাকা থেকে কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

শহরের পাক-সামরিক কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে তীব্র গেরিলা কার্যক্রমের কারণে সারা শহরের রাস্তায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যক্তিগত অনুসন্ধান শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সফলভাবে বিবির বাজার, কোটেশ্বর, চারনাল এবং পাঞ্চরাতে ১৮ জন পাকসৈন্য হত্যা করে। চন্দ এলাকায় ২ টি নৌকা ধ্বংস করে ২৫ জন পাকসৈন্য হত্যা করে এবং ২০ জন আহত হয়।
একই সেক্টরে মিয়ানবাজার, রাঙামাটিয়া, নয়নপুর এবং চান্দলাতে শত্রু অবস্থানের উপর অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ২৮ জন পাকসেনা হত্যা করে।

চট্টগ্রাম থেকে একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম বহির্নোঙ্গরে এক মেরিন কমান্ডো অপারেশন চালিয়ে বিদেশী জাহাজ ও ট্যাঙ্কার ডুবিয়ে দেয়।

মুন্সিরহাট এলাকায় একটি শত্রু ট্রাক মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়। তিন জন পাকসৈন্য গুরুতর জখম হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা গোয়ালবাড়ি, কোদাইলকাঠি, কামালপুর শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা করে। নারায়ণ শশ্মান, শ্রীবর্ণী, আতগ্রানা এবং জয়ন্তিপুরে ৩০ জন পাকসৈন্য ও কয়েকজন রাজাকার হত্যা করে। তারা ছারগাই, পাচগাও এবং জুগিলে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু ধ্বংস করে যোগাযোগ ব্যাহত করে।

বিলম্বিত তথ্য অনুযায়ী ময়মনসিংহ জেলার একটি এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর বিমান আক্রমণ করে পাকসেনারা। পাক বিমান ২ বার বোমা ফেলে। মুক্তিবাহিনী সরে যাবার আগে ৩২ ঘণ্টা যুদ্ধ চলে। এতে ২৩ জন আহত হয়। এক মেজরসহ এবং কয়েক রাজাকার নিহত হয়।

সিলেট অঞ্চলে বিশ্বনাথ রাস্তায় পাকসৈন্য বহনকারী একটি পাক আর্মি ট্রাক মুক্তিবাহিনীর মাইনে ধ্বংস হয়।

মুক্তিবাহিনী ২ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী এলাকায় শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ জন হত্যা এবং ১৫ জন পাকসেনাকে আহত হয়। তারা রংপুর-দিনাজপুরের মধ্যে লাহিড়ী, খঞ্জনপুর, চিলহাটি, হাতি বান্ডা, জগদলহাট,পারুলিয়া, সাকাতি এবং আমারখানা শত্রু অবস্থানে আক্রমণ করে যার ফলে ১৫ জন পাকসৈন্য ও ২০ জন রাজাকার নিহত হয়। রাজশাহী সেক্টরে মুকুন্দপুর ও চিলাহাটিতে ৬ জন নিহত ও ৬ জন পাকসৈন্য আহত হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়ায় যশোর-খুলনা সেক্টরে দুলানিঘাটে পাক বাহিনীর সাথে যুদ্ধে ৫ জন হতাহত হয়। পরে এই এলাকা থেকে শত্রুসৈন্য সরে যায়। হানাদার বাহিনী এই এলাকায় অভিযান চালিয়ে লুটপাট চালায় খবর পেয়ে মুক্তিবাহিনী সেখানে ছুটে আসে এবং গ্রাম বাসিদের মুক্ত করে।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৮ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বিভিন্ন সেক্টর থেকে মুক্তিবাহিনী ১১৯ জন পাকসেনা হত্যা করে।

উল্লেখযোগ্য অপারেশনের মধ্যে কয়েকটি হল:

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলা, নাগালকোট এবং মহরিগঞ্জ, বিবির বাজারে মাইন দিয়ে অপারেশন চালিয়েছে। ফেনীতে একটি পাক আর্মি জিপ বিস্ফোরণে বিবির বাজার এলাকায় একজন ক্যাপ্টেনসহ ৩ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। তারা বড়াইতে পাকসৈন্য বহনকারী দেশী নৌকায় অতর্কিতে আক্রমণ করে ৪ জনকে হতাহত হয় এবং নৌকা ডুবিয়ে দেয়। তারা বীথি দাউদপুর, রূপা, যাদিশার, নাওপুর বাজার ও মতুয়ায় ২৪ জন পাকসৈন্য হত্যা করে। তারা ঢাকা এলাকায় অ্যামবুশে একটি পাক গাড়ির ক্ষতি করে ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেটে-মৌলভী বাজার সেক্টরে মুক্তিবাহিনী নওগ্রাম, কুদাইল, চাল্পারা, শেরপুর ও নতুন বাজার এলাকায় ৫৮ জন পাকসৈন্য হত্যা করে ও অনেকে আহত হয়। মুক্তিবাহিনী সফলভাবে নওগ্রাম এলাকায় ১৩ জন পাকসেনা হত্যা ও ৬ পাকসৈন্যকে আহত হয়। কুদাইল ও চাল্পারা এলাকায় ১৭ জন হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ শহরের ভিতরে পাকসৈন্যদের অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ পাকসেনাকে হত্যা করে। তারা নতুন বাজারে গ্রেনেড ছুড়ে ৯ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।
মুক্তিবাহিনী নাওকুচি-আহমেদনগর এলাকার মধ্যে দুইটি জায়গায় টেলিযোগাযোগ ও রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস করে। এতে বড়লেখা ও লাটুর মধ্যে ট্রেন যোগাযোগ বিঘ্নিত হয়।

যশোর-কুষ্টিয়া-খুলনা সেক্টরে আমাদের গেরিলা কমান্ডোরা কোটালিপুর এলাকায় ২ জন বেলুচ সৈন্যকে বন্দী করে। তারা বীরগোবিন্দপুর ও নিশ্চিন্তপুর অভিযান চালিয়ে ৪ পাকসেনাকে হত্যা করে। সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ভোমরাতে ৪ জন শত্রুসৈন্য হত্যা ও ৬ জনকে আহত হয়। এজন্য তারা মর্টার ব্যাবহার করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরে বরখাতা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর মুক্তিবাহিনীর প্রবল গোলাবর্ষণের কারণে ২০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আরেকটি অভিযানে ৩ শত্রুসৈন্য হতাহত হয়।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৯ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে।
বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৮৭ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং অনেক সৈন্যকে আহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের সাসিয়ালি, গাজীপুর, পান ছড়া, বাগবার, জামবাড়ি এবং কোটেশ্বর এলাকায় মুক্তিবাহিনী ৪৫ জন পাকসৈন্য হত্যা ও ১৫ জনকে আহত হয়।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের শাসাইল এলাকায় পাক নিয়মিত এবং সামরিক পুলিশ কর্মীদের নিয়ে গঠিত একটি শত্রুসৈন্য কলাম এ অভিযান চালিয়ে ২৫ পাকসেনা হত্যা করে। গাজীপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৩ সেপ্টেম্বর ২ জন পাকসেনা হত্যা করে এবং পাঁচ পারায় ৩ জনকে আহত হয়। একই দিনে পানছড়া এলাকায় ৪ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ১২ জনকে আহত হয়। কুমিল্লার বাগবারে ২ পাকসৈন্য নিহত ও ৪ জন আহত হয়। কোটেশ্বরএ ৩ জন আহত হয়। তারিখ ছিল ৩ সেপ্টেম্বর। শোলিয়াতে ৬ জন নিহত হয় একই দিনে। ৪ সেপ্টেম্বর পাক বাহিনীর ওপর হামলায় চার জন হতাহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভী বাজার সেক্টরএ মুক্তিবাহিনী ৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ অঞ্চলে গেরিলা কার্যক্রম চালু করে ৩০ টি চীনা রাইফেল জব্দ করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের সাহসী মুক্তিবাহিনী বাসন্তিপুরে ৩ সেপ্টেম্বর ৬ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন মতে ২৯ আগস্ট একই এলাকায় পাক সৈন্যের উপর অতর্কিতে আক্রমণে এক ক্যাপ্টেনসহ ৫ পাকসেনা নিহত ও দুই জন আহত হয়। ৬ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলার রানি শংকইল হরিপুর রোডে পাকসৈন্য বহনকারী এক পাক গাড়ির বিস্ফোরণে ৫ জন নিহত হয়। একই এলাকায় ভিন্ন অপারেশনে আরও ৬ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।
তারা রাত্নাই এলাকায় ট্রেন যোগাযোগ ব্যাহত করে।

৫ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার পূর্ব গোদামারি-বড়খাঁটা এলাকায় মুক্তিবাহিনী ও পাক বাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময়ে ৩৪ পাকসৈন্য নিহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ৫ সেপ্টেম্বের গোয়ালহাটি এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ে ৫ জন শত্রুসেনা নিহত ও ৬ জন পাকসেনা আহত হয়। একই দিনে তারা আফ্রাতে আক্রমণে ১ পাকসৈন্য হত্যা করে।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১০ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে।

অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী বর্তমান মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৯০ জন নিয়মিত পাকসৈন্যসহ ৪৫৬ জনকে হত্যা করে। তারা বিভিন্ন সেক্টরে তাদের অপারেশনের সময় আরো ১৩০ জন পাকসৈন্যকে আহত হয়। মুক্তিবাহিনী এই সময়কালে শত্রুদের থেকে ৫০ টিরও বেশি রাইফেল জব্দ করে।

সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা গত বুধবার ময়মনসিংহ জেলার কামালপুরে আক্রমণ করে। এতে প্রচুর হতাহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী নাওকুচি-আহমেদনগরের মধ্যে এবং ময়মনসিংহে টেলিখালি-হলদিয়া ঘাটের মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে ঐ জায়গার টেলিযোগাযোগ ব্যাহত করে। রায়গ্রাম এবং আটগ্রামে তারা একই দিনে পাকবাহিনীকে হতাহত হয়।

৬ সেপ্টেম্বর, মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার নালিতাবাড়ী থানায় অভিযান চালিয়ে পাক-সামরিক পুলিশ ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ এলাকায় অপারেটিং মুক্তিযোদ্ধা শত্রুদের থেকে ২০ টি চিনা রাইফেল জব্দ করে।
৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ঐ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত করে। ইল্লুঘাট-আলিয়ালটি সেতু ধ্বংস করে। ৪ সেপ্টেম্বর নওগ্রামে ৬ জন পাকসেনাকে হত্যা ও ১৩ জনকে আহত হয়।

৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ছাতক ও সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের মধ্যে রেলওয়ে ট্র্যাক উড়িয়ে রেল যোগাযোগ নষ্ট করে। ৬ সেপ্টেম্বের দিল্কুশা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১২ জন পাকসেনা হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরের নওগ্রাম এলাকায় ৪ সেপ্টেম্বর ১৩ জন পাকসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে তারা আট গ্রাম এলাকায় পাক বাহিনীর অবস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের হতাহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৭ সেপ্টেম্বের গোয়ালগ্রাম এলাকায় ৬ জনকে আহত হয়। ৫ সেপ্টেম্বর তারা যুদ্ধ করে ৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। আসরা এলাকায় একই দিনে এক পাকসেনাদল হত্যা করা হয়।

৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ভোমরায় মর্টার দিয়ে ৪ জন পাকসেনা হত্যা করে। কাকদানিয়াতে তারা ৬ জন পাকসেনা আহত হয়।
৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে শীতলার কাছাকাছি দারসাতে ৬ জন পাকসেনা হত্যা করে।

রংপুর-দিনাজপুর সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাঁও ও পীরগঞ্জের মধ্যে ৫ সেপ্টেম্বর ২ টি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে।
৬ সেপ্টেম্বর দিম্পারা এলাকায় ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। আগে তারা ৫ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় আরো ২ টি পাওয়ার পাইলন ধ্বংস করে।
৪ সেপ্টেম্বের শিরির বন্দর এবং পার্বতীপুরে ট্রেন লাইন ধ্বংস করে। তারা একই দিনে ফুলতলা-ঠাকুরগাঁও এর মধ্যে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত করে।

মুক্তিবাহিনী পূর্ব গোদাগাড়ী-বড়খাঁটা এলাকায় চলন্ত যানে আক্রমণে ৮ জন পাকসেনা হত্যা করে।

৬ সেপ্টেম্বর রানি শংকইল-হরিপুর রোডে মুক্তিবাহিনীর মাইনে একটি গাড়ির বিস্ফোরণে গাড়ীসহ ৫ জন নিহত হয়। আরেকটি অ্যামবুশে ৬ জনের মৃত্যু এবং ৪ জন আহত হয়।

৪ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর জেলার পারলিয়া এবং আমারকিয়ানা অভিযান চালিয়ে ৬ জন পাকসেনা নিহত করা হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৪ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার হারাস পুরে এক পাকসেনাদল হত্যা করে। ৩ সেপ্টেম্বর তারা লতিফ পুর, গাজীপুর, বাঙ্গারা, বাগের, কোটেশ্বর, জাম বাড়ি, নয়াপুর, সোলাবাজারে অভিযানে ৫১ জন পাকসেনা হত্যা ও অনেককে আহত হয়।

•••••••

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১১ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে।
গত কয়েক দিন (৩ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর) গেরিলা অপারেশনের অতিরিক্ত রিপোর্ট আজ এখানে পৌঁছেছে। এই অপারেশনে ১০২ জন শত্রু আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ৫৯ জন পাক বাহিনীর নিয়মিত সদস্য।

সিলেট-ময়মনসিংহ সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সোনারূপা, দিলকুশে অভিযান চালায়। এছাড়া মাধবপুর ও সিলেট জেলার লাটুবেনিয়া এলাকার পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে।

৮ সেপ্টেম্বর আট গ্রামে মর্টার দিয়ে আক্রমণে ৮ জন হত্যা করে।

৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ভোগড়া ও করিমপুর এলাকায় পাক বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে ৩ পাকসেনা ও ৪ রাজাকার হত্যা করে। বুলিয়াতে অন্য একটি আক্রমণে ২০ জন আহত হয়।

৬ সেপ্টেম্বর দুলকুশে ৪ জন নিহত হয়। সিলেটের আভাবগিতে এক পাকসেনা ও দুই রাজাকার মাইনে নিহত হয়।

ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিবাহিনী জাস্লান্দিতে সড়ক সেতু ধ্বংস করে এবং ৫ সেপ্টেম্বর হাতীগাওয়ে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী গত মাসে কিশোরগঞ্জের একটি পুলিশস্টেশনে অভিযান চালায় ও ৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে। তারা ৪ টি রাইফেল জব্দ করে। আরও ২ টি রাইফেল গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশনে জব্দ করা হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৮ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার ভুরুংগমারি-পাটেশ্বর এ পাক অবস্থানে অভিযান চালায় এবং ৩ জন পাকসেনা হত্যা করে। একই দিনে তারা পশ্চিম কুড়িগ্রাম এলাকায় ২ জন পাকসেনা হত্যা করে।
৫ সেপ্টেম্বর তারা চাতাইল স্কুলভবনে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ৫ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ১৪ জন আহত হয়।
৭ সেপ্টেম্বর রংপুর জেলার লালমনিরহাটের উত্তরে মুক্তিবাহিনী একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকায জেলার হরিরামপুর এলাকায় পাকসৈন্য বহনকারী একটি লঞ্চ অ্যামবুশে ১১ জন নিহত হয়। তারা লঞ্চটি ধ্বংস করে। সাহসী যোদ্ধারা গত মাসে লোহাগঞ্জ, শ্রীনগর, নবাবগঞ্জ, হরিরামপুর, ঘিওর পুলিশ স্টেশন দখল করে। প্রচুর পুলিশ নিহত ও আহত হয়। এতে তারা ১৯ টি রাইফেল জব্দ করে। বিলম্বিত রিপর্টে যানা যায়, চট্টগ্রাম পূর্ব মিরসরাইয়ে মুক্তিবাহিনী পাকসৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণে ২০ জন হতাহত হয়।

৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ঢাকা-কুমিল্লা সেক্টরে মাতুয়া এলাকায় ৪ পাকসেনা হত্যা করে।
কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরএ খুলনা জেলায় ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ২ জন পাকসৈন্য ও ২ জন রাজাকার হত্যা করে।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৫ সেপ্টেম্বর

বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গেরিলা কার্যক্রমের রীপোর্ট আরও আসতে থাকে। কয়েকটি বড় অপারেশনের বিবরণ নিম্নে দেয়া হল-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ১০ সেপ্টেম্বর গহুডাঙ্গায় ৪ জনকে হত্যা করে। একই দিনে কুড়িগ্রামে ১০ জনকে হত্যা করে।
১১ ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী দরারকোটে আক্রমণ করে। বুরতাপ ও পাটেশ্বরে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৬ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়।

১২ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মোঘলহাটে আক্রমণ করে। ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। এই সময়কালে তারা লালমনিরহাটে পার্বতিপুর-পিলুবারী রেল যোগাযোগ ধ্বংস করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ১০ সেপ্টেম্বর কুদালিয়ায় ১৫ জন পাকসেনা হত্যা করে। একই দিনে তারা চারনাইলে ৭ জন নিয়মিত পাকসৈন্যসহ ১০ জনের প্রাণনাশ করে।

১১ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মানিক্ষাইলে রেল সেতু ধ্বংস করে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী সিক্রিতে ৫ জন পাকসেনা হত্যা করে।

দেরীতে পৌঁছনো প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনী ৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার-যশোর-খুলনা সেক্টরের ঝাউডাঙ্গায় ২ জন পাকসেনা হত্যা করে ও ৪ জন আহত হয়। তারা ৬ টি রাইফেল জব্দ করে। ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিত্তিয়াছারায় ৮ জন পাকসৈন্য নিহত হয় ও ৩ জন আহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ৮ সেপ্টেম্বর পানছড়ায় আক্রমণ চালায়। এতে ৩ জন আহত হয়।
৭ সেপ্টেম্বর তারা ঢাকা জেলার চান্দলায় ৭ জনকে হত্যা করে ও ৮ পাকসৈন্য আহত হয়। ৮ সেপ্টেম্বর মনিপুরে তারা পাকসেনা বহনকারী ৩ টি নৌকা অ্যামবুশে ৭ পাকসৈন্য ডুবিয়ে মারে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে মুক্তিবাহিনী আটগ্রাম, ছাড়গ্রামে ও বালায় মর্টার আক্রমণ করে এবং ৬ জন পাকসৈন্য নিহত হয় ও ৫ জন আহত হয়।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী আগস্ট এর মধ্যবর্তী সময় বরিশাল জেলায় প্রচুর গেরিলা অপারেশন হয়েছে।
১৩ আগস্ট মুক্তিবাহিনী পিরোজপুরে পাকসৈন্য বহনকারী ২ টি নৌকা আক্রমণ করে এবং উভয় লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়। ফলে বেশ কিছু পাকসেনা নিহত বা ডুবে মরল।

১৫ ই আগস্ট মুক্তিবাহিনী রাজাকারসহ পাকবাহিনীর এক প্লাটুন শক্তিকে আক্রমণ করে। লঞ্চ ডুবে যাবার কারণে শত্রুদের ৬ জন নিহত হয়। তারা ২৫ টি ৩০৩ রাইফেল জব্দ করে।

১৬ আগস্ট মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলায় শত্রুদের হেফাজত থেকে মোড়লগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫০ ছাত্র ও ৪ শিক্ষককে উদ্ধার করে। তাদের জোর করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করার জন্য গৃহবন্দী করে রাখা হয়।

একই দিনে মুক্তি বাহিনী বরিশাল জেলার ভান্ডারিয়া ও কাঁঠালিয়া থানায় অভিযান চালিয়ে ১১৮ টি রাইফেল জব্দ করে।
১৮ আগস্ট তারা কাঙ্খালি থানায় অভিযান চালিয়ে ৫ জন পাকসেনা হত্যা করে এবং কয়েকজন রাজাকার হত্যা করে। তারা ৪৫ টি রাইফেল জব্দ করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী কোটালীপাড়া থানার আক্রমণে ৩ জন পাকসৈন্য ও ১০ জন রাজাকার হত্যা করে। তারা একটি লঞ্চ, ৩ টি বার্জ এবং ১২ টি রাইফেল জব্দ করে।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৬ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে। গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের কিছু প্রতিবেদন নিচে দেওয়া হল:-

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরের মুক্তিবাহিনী ১০ সেপ্টেম্বর আমজাদহাটে অ্যামবুশ করে। মাঝিগাছা ও চাঁদপুরে ১৬ জন পাকসৈন্য হত্যা করে।

৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কোটেশর, অমরতলি এবং জামবাড়ি অঞ্চলে পাক অবস্থানের উপর আক্রমণ করে এবং ১৩ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১১ সেপ্টেম্বের মুক্তিবাহিনী কালিকাপুরে অ্যামবুশ করে। এতে ৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হয়। আগে ৬ সেপ্টেম্বর আমজাদ হাটে গেরিলা অপারেশন চলায়। এতে ১৫ জন নিহত হয়।

৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ সেপ্টেম্বর সময়কালে ফতেপুর, সালদাবাদ, বিনোদ পুর, বগুড়া বাড়ি আক্রমণে ১৬ পাকসেনা নিহত হয়।

১০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মুকুন্দ পুরের কাছাকাছি পাকসৈন্য বহনকারী একটি ট্রেন উড়িয়ে দেয়। ১০ রাজাকার ও ১৯ পাকসেনা নিহত হয়। ইঞ্জিন ও ট্রেনের ৩ বগি ধ্বংস হয়।

৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী তেলিয়াপাড়া পাক বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময় করে ও ৯ জন নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনী ১৩ সেপ্টেম্বর রাজেন্দ্রপুরে ৫ পাকসেনা নিহত এবং ৯ জন আহত হয়।
ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে সাগরনাল ফুলতলা রাস্তায় এক পাকিস্তানি সেনা জীপ্ অ্যামবুশে ঘটনাস্থলেই এক মেজরসহ ৪ পাকসেনাক নিহত হয়।

১২ সেপ্টেম্বর আখাস্রিতে আক্রমণ করে। এতে ২ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়। ১৩ ই সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী সোহাগপুরে ২ পাকসেনাকে গুরুতরভাবে আহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের মুক্তিবাহিনী বামনপাড়া এবং আইহাইতে ১৫ জন পাকসৈন্য হত্যা করে।

১০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ভতেমারিতে পাক প্যাট্রোলে অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং ৭ জন পাকসেনা হত্যা করে। এছাড়াও মুক্তিবাহিনী রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি করে।

———-স্বাঃ /-জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স,

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৭ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে।
রিপোর্টের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ নিচে দেওয়া হল-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর
১১ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর আলিপুরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে তাদের ১২ জন হতাহত হয়।

১২ সেপ্টেম্বর ভোতেমারিতে পাক বাহিনীর সঙ্গে গুলি বিনিময়ে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়। একই এলাকায় ১৪ সেপ্টেম্বর পৃথক অপারেশনে ২ জন নিহত হয়। মুঘলা ঘাটে মুক্তিবাহিনীর অভিযানে ৬ পাকসৈন্য আহত হয়।

১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁওয়ের উপ বিভাগীয় শহরে সড়ক যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ছতাছারায় পাক বাহিনীর উপর মর্টার নিয়ে আক্রমণ করলে ১৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। আলফাপুর এলাকায় ৭ পাকসৈন্য ও ২০ জন অনিয়মিত সদস্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ১৬ টি রাইফেল ও ৭ বক্স চীনা গোলাবারুদ জব্দ করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
১০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী চারনালে ও লক্ষ্মীপুরে ৩ জনকে হত্যা করে। একই দিনে জাদিসারে ৪ জনকে হত্যা করে। ১১ বগাবাড়িতে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং দুই জন আহত হয়।

১২ সেপ্টেম্বর ফতেপুরে মর্টার দিয়ে ১ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। তাদের ৩ জন রাজাকার সাহায্য করছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাছাকাছি একই রকম আক্রমণ হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নবীনগরে টেলি যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়।

১২ সেপ্টেম্বর দুই জন পাকসেনা ও তাদেরসহযোগী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে নিহত হয়। এটি ছিল ছাগলনাইয়াতে। এই সেক্টরে একটি বড় সংখ্যক রাজাকার অস্ত্র নিয়ে আত্মসমর্পণ করে।

সিলেট-ময়মনসিংহ সেক্টর:
১২ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল আভাং এ পাকসৈন্যদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে ৭ পাকসৈন্য নিহত হয়।

১৩ সেপ্টেম্বর ভোগা, করিমপুর ও কামারাইল এলাকায় ৪ জন পাকসেনা আহত হয়।

একটি দেরীতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কুড়িগ্রামে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে তিন জন পাকসৈন্য নিহত হয় এবং ৪ জন রাজাকার আহত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৮ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে তাদের গেরিলা কার্যক্রম জোরদার রেখেছে। আজকের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী শীতল ডাঙ্গা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে ৪ জন পাকসেনা হত্যা করে এবং ২ জন আহত হয়। একই দিনে ঘুপডাঙ্গায় ৮ জন নিহত হয়।

১৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী পাগলেদেওয়ান হাটে ৬ জন পাকসৈন্য ও ২ রাজাকারকে হত্যা করে।
কারিয়াতে ৯ টি মাইনের আক্রমণে ৪ পাকসৈন্য ও ৩ রাজাকার নিহত হয়। এর আগে মুক্তিবাহিনী সেতাব গঞ্জ ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে নৌকা ও টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
১৩ সেপ্টেম্বর হরিনগরে মুক্তিবাহিনী পাক বোটের উপর অ্যামবুশ করে। এতে বোটের চালক এবং রাডার অ্যান্টেনা ধ্বংস হয়। পরবর্তীতে ৪ টি লঞ্চ ডুবানো হয়।
মুক্তিবাহিনী বানারীপাড়ায় ৩ টি লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়। প্রায় ৪০ পাকসৈন্য নদীতে ডুবে মরল বলে অনুমান করা হয়। এই সেক্টরে গত কয়েক দিনে বিপুল সংখ্যক রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। কুষ্টিয়ায় একটি ইউনিয়ন শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ২২ জন রাজাকার ও অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
১২ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কাইউমপুর এলাকায় আক্রমণ করে ৫ জন পাকসেনা হত্যা করে ও ৭ জন আহত হয়।
১২ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মন্দভাগে পাকসৈন্য বহনকারী ২ টি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। অন্তত ১৫ জন পাকসৈন্য ডুবে মরে। ১২ সেপ্টেম্বর গুথুমা নদীতে ২ জন পাকসৈন্য নিহত ও ২ জন আহত হয়।
১২ সেপ্টেম্বর সাতারা নর্থে মুক্তিবাহিনী এক পাক জিপ মাইনে বিস্ফোরণ করে ৪ পাকসেনা হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে:
১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কামারাইলে পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ২ জন হত্যা করে। ১৫ সেপ্টেম্বর বউরামারিতে মাইন বিস্ফোরণে ১৫ জন পাকসৈন্য আহত হয়। এর আগে বউসি রেলস্টেশন ধ্বংস করে জামালপুর-জগন্নাথগঞ্জ ঘাট পর্যন্ত রেল যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত করে।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৯ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে আজকের গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-
কয়লা স্বল্পতার কারণে রেলপথে ধ্বংস চালানো সম্ভব হচ্ছিলনা।

মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা শহরের চারপাশে তাদের গেরিলা কার্যক্রম তীব্রতর করছে। ঢাকা থেকে বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বীর মুক্তিবাহিনীর আগস্টের শেষ সপ্তাহে ও চলতি মাসের প্রথমার্ধে ঢাকা শহরের মধ্যে প্রচুর গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন করে। আগস্টে শহরের ইস্কাটন এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় কিছু বীর মুক্তিযোদ্ধা শত্রুসৈন্য থেকে হঠাৎ স্টেনগান ছিনিয়ে নিয়ে আক্রমণ করে এবং ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়। তারপর তারা সফলভাবে জায়গা ত্যাগ করে।

সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিনী শহরের নিয়মিত পাকসৈন্য ও পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশের অন্তত ১৪ জনকে হত্যা করে।
৬/৭ সেপ্টেম্বর রাতে ১৫০ ফুট দির্ঘ বৃহৎ পণ্যসম্ভারের একটি বজরা ঢাকার কাছাকাছি নরসিংদীতে অবস্থান নিচ্ছিল। এটা পাট ভর্তি ছিল। মুক্তিবাহিনী সেটাকে ডুবিয়ে দেয়।

৮ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলার মোহনগঞ্জ এলাকায় শত্রুসৈন্য ভর্তি তিনটি দেশী নৌকা মোহনগঞ্জে মুক্তিবাহিনীর অ্যামবুশে পরে। তিনটি নৌকা এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ রেখে পাকসেনারা পালিয়ে যায়।

৫ সেপ্টেম্বর সিলেট-ময়মনসিংহ সীমান্তে ধর্মপাশা এলাকায় পাকসৈন্য বহনকারী দেশী নৌকা মুক্তিবাহিনী আক্রমন করে। এতে একজন মেজরসহ ৬২ জন নিহত হয়।

——–সিল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, হেডকোয়ার্টার, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২০ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনের গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
১৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী খানপুর এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে ৭ টি শত্রু বাংকার ধ্বংস করে, ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর মাইনে একটি পাক জিপ উড়িয়ে দেয়া হয়। এক অফিসারসহ ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর মকারাম্পুর-আলীনগর এলাকায় ২ জন আহত হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর হাতীবান্ধা এলাকায় ১৬ জনকে হত্যা করা হয়। একই দিনে গেরিলারা একটি রেলসেতুতে অভিযান চালিয়ে ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

১২ সেপ্টেম্বর বড়খাঁটায় ১ জন পাকসেনা হত্যা করে। অন্যত্র ৩ সেনা নিহত হয়। একই দিনে নামি এলাকায় ২ ট্রুপ পাকসেনা ও ৫ জন রাজাকার নিহত হয়।
মহেন্দ্রনগরের কাছাকাছি রেলওয়ে লাইন ধ্বংস করা হয়। এছাড়াও ডোমার, ডিমলা এবং রুহিয়াতে রাস্তা ও টেলি যোগাযোগ ধ্বংস করা হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি বাহিনী দক্ষিণ যাসপুরে পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। এতে ৩ সেনা ও ১ রাজাকার নিহত হয়। একই দিনে ধাক্সিন জাস্পুরে ১ সেনা নিহত হয়।

১৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী জাম্বারিতে একটি পাক পেট্রোল আক্রমণ করে। এতে ৫ জন নিহত হয়। আগে ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর কাশিম্পুর রেল স্টেশনে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে:
১৩ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মিন্তেসর এলাকায় আক্রমণে ২ জন সৈন্য হত্যা করে।

১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মহব্বতপুরে আক্রমণ করে ১ জনকে হত্যা করে।

১৬ সেপ্টেম্বর বাদীরটেকাতে মুক্তিবাহিনী ২ জনকে হত্যা করে। আগে
১২ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ একালায় আক্রমণ করে ৮ টি রাইফেল উদ্ধার করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
১৬ সেপ্টেম্বর গজনী ব্রিজে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ৫ জনকে আহত হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর ভোমরাতে ৪ জন পাকসেনা হত্যা করে।

——–সিল, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২১ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
১৮ সেপ্টেম্বর রংপুরে মুক্তিবাহিনীরা ৩ পাকসেনাকে হত্যা করে। একই দিনে দিনাজপুরের খানপুরে ২ জন সেনা নিহত ও ২ জন আহত হয়। একই দিনে মধু পারায় ৩ জন হতাহত হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী দিনাজপুরের হিলি চারকাটে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে এবং ২ টি সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয়। একই দিন ফুলবাড়ি-চারকাইের মধ্যে রেলওয়ে কালভার্ট, রেললাইন ও টেলিফোনের খুঁটি ভেঙ্গে ফেলে।

১৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ডিমাপুরে ২ জন পাকসেনা হত্যা করে। তারা আখানাগাক রেলওয়ে স্টেশনে ও সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে:
১৮ সেপ্টেম্বর সোনাবারিয়া পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে হামলা করা হয়। কয়েকজন সেনা রাইফেলসহ আত্তসমর্পন করে। যশোরের ধোপাখালিতে পাকবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২ পাকসেনা হত্যা করে। তারা বাঙ্কারও ধ্বংস করে। যশোর জেলাতে একই দিনে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কুমিল্লা সেক্টর-
১৬ সেপ্টেম্বর চামুবস্তি এলাকায় গরু নিয়ে যাবার সময় পাকসেনাদের উপর আক্রমণ করা হয়। এতে ৩ পাকসেনা নিহত এবং ৫ জন আহত হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর মির্জানগর এলাকায় ৩ জন নিহত হয়। ১৪ ই সেপ্টেম্বর কাইম্পুরে ৩ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়। নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় অভিযানে ৬ পাকসেনা আহত ও ২ জন নিহত হয়। দেশী নৌকায় পাকসৈন্যদের উপর অ্যামবুশে ১ নৌকা ডুবে যায়; বাকিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী গিতাবারি ও বিরিঞ্চিতে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৩ জন পাকসেনা হত্যা করে। উত্তর জলিল্পুরে ৩ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর-
জয়ন্তীপুরে একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর ২ জন সেনা নিহত হয়। ফারাঙ্গি পারা এলাকায় পাকবাহিনীর সাথে মর্টার যুদ্ধে ৪ জন নিহত হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর সিলেটের লেবু ছড়ায় ২০ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়। ৩ জন মুক্তিবাহিনীর সদস্য এই অপারেশনে আহত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৩ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনের গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলোভী বাজার সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ২০ সেপ্টেম্বর সিলেটের রাধানগরে পাকসৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করে।

১৯ শে সেপ্টেম্বরে মণিপুর ও লক্ষ্মীপুরে ৩ সৈন্য নিহত হয়। একই দিনে মুক্তি বাহিনী সফলভাবে সিলেট জেলার বেরিগাও এবং বাদিপ্তাকে ৫ জনকে হত্যা করে। ১৯ সেপ্টেম্বর বড়গঞ্জে ৪ জনকে হত্যা করে। এর আগে

১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর একটি দল এবং জয়ন্তী পুরে রাজাকার ও সমর্থনকারীদের আক্রমণ করে ৪ জন পাকসৈন্য ও অনেক রাজাকারকে হত্যা করে।

১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী রাজকই চাবাগান ফ্যাক্টরীতে অভিযান চালিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

১৩ ও ১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী শাহবাজপুর চা বাগান এলাকার পাকসৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আট জনকে হত্যা করে।

ময়মনসিংহে ১৫ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী সফলভাবে মুক্তাগাছা, কলমাকান্দা, শ্রীবড়দি, ইসলামপুর ও নালিতাবাড়ী দশ পাক-সামরিক হত্যাসহ বিভিন্ন থানায় অভিযান চালিয়ে ১০ পাক পুলিশ হত্যা করে।

১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী গাইবান্ধার কাছাকাছি উলিবিহারে ২ পাকসৈন্য হত্যা করে ও ১ জন আহত হয়। ১৩ টি রাইফেল, ১ টি চীনা স্বয়ংক্রিয় গান এবং কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

আজ এখানে খবর পৌঁছে যে রাজাকার ও পাক বাহিনীর মধ্যে গুরুতর বিরোধের ইঙ্গিত বিদ্যমান। ৯ সেপ্টেম্বর কিছু রাজাকার উলিপুরে পাকসেনাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এর দরুন দুই পাকসেনা ও দুই রাজাকার নিহত হয়। পরে সি এলাকায় পাকসেনারা প্রায় তিনশো বেসামরিক ব্যক্তি হত্যা করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
পাথরঘাটায় দুই পাকসেনা নিহত এবং ২ জন আহত হয়। একই দিনে মোঘল হাতে ১ জন নিহত হয়।

১৮ ই সেপ্টেম্বর তারিখে মুক্তিবাহিনী রংপুর টাউনে শত্রুদের সাথে গুলি বিনিময় করে। উদরশ্রীতে ৩ জন পাকসেনা নিহত হয়।

১৬ তারিখে মুক্তিবাহিনী একটি ব্রিজ উড়িয়ে দেয়। ১৭ সেপ্টেম্বর মহেন্দ্রনগর এলাকায় ১ পাকসৈন্য নিহত হয়।

১৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ট্রেনের ২ টি বগি লাইনচ্যুত করে ও ২ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টরে:
১৬ সেপ্টেম্বর খাজুরিয়াতে ২ পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়। একই দিনে হুগলীতে যুদ্ধ হয়। ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে:
১৭ সেপ্টেম্বর পালিয়াতে ২ টি ট্রুপস নিহত হয়। সনাবারিয়া-মানদরাতে একটি জিপ ও অন্য একটি যান ধ্বংস করা হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৩ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
রংপুর সেনানিবাস ও রংপুর রেলস্টেশন এলাকায় গেরিলারা তাদের কার্যক্রম বৃদ্ধি করে। ১৬ সেপ্টেম্বর পাকসহযোগীদের মালিকানাধীন দোকান এর উপর গ্রেনেড ছুড়ে কিছু রাজাকার হত্যা করা হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী চড়কামারিতে ৫ জন পাকসেনা হত্যা করে। একই দিনে অন্য সংঘর্ষে বাওলিয়া এলাকায় ৬ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১৮ সেপ্টেম্বর ফারসিপারা এলাকায় ৬ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর কিন্দাখানে ৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।
১৮ সেপ্টেম্বর লাহিড়ীতে ২ পাকসৈন্য হত্যা করা হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর দিবার এলাকায় পাক বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে এক শত্রুসেনাদল হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী কিছু রেলপথ ধ্বংস করে। রংপুর জেলার নাগেশ্বরী ও ভতেমারি এলাকায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়। সড়ক সেতু ও কালভার্ট ধ্বংস করা হয়।
মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী, মহেন্দ্রনগর, নাগেশ্বরী ও জয় মনিরহাট এলাকায় গেরিলা কার্যক্রম তীব্রতর করেছে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
১৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কোটেশ্বর, বান মাংলা, চানাল এ শত্রু অবস্থানে অভিযান চালায়। এতে ৬ জন নিহত হয়। কুমিল্লায় ১৭ সেপ্টেম্বর তারা লহাইমারি এবং জাদিসারে ৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

১৬ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা জেলার প্যাঁচারা এলাকায় ২ পাকসেনা নিহত হয়। কুমিল্লা জেলার কসবায় শত্রুসৈন্য অবস্থানের উপর গুলিবর্ষণ করে। ১৩ সেপ্টেম্বর তারা আরাইবারিতে ২ পাকসেনা হত্যা করে।

ময়মনসিংহ সেক্টর:
২০ সেপ্টেম্বর চারিপারা এবং বেরিগাও ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

১৭ সেপ্টেম্বর নাওকুচিতে মাইনে একজন নিহত হয়। শ্রীমঙ্গলে ১৫ সেপ্টেম্বর মাইনে এক পাক জিপ ধ্বংস হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা যায় যে কান কাঁটা অবস্থায় প্রায় ৪০ জন রাজাকার ময়মনসিংহ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পাকসেনাদের সক্রিয়সহযোগিতার জন্য গ্রামবাসীরা এই শাস্তি তাদের দেয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে:
২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর মানিকনগরে ২ কোম্পানি সৈন্যের সাথে যুদ্ধে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর তারা যশোর জেলার কামদেবপুরে এক জন পাকসৈন্য হত্যা করে।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৪ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
২১ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী পাথরঘাটায় ৫ পাকসেনা হত্যা করে ও ৩ জন আহত হয়। একই দিনে চুকি পারায় ৩ জনকে হত্যা করে। একটি অ্যামবুশে ২ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়।

১৯ সেপ্টেম্বর আমারখানায় ৮ জন আহত হয়। সেখানে সড়ক সেতু উড়িয়ে দেয়। মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও উপ বিভাগীয় শহরে প্রায় ব্যাপক গেরিলা কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

২০ সেপ্টেম্বর উত্তর ঠাকুরগাঁও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৬ জন নিহত এবং চার জন আহত হয়। একই দিনে ঠাকুরগাঁও পাওয়ার হাউসে তারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।

১৮ সেপ্টেম্বর একটি পাক গাড়ি আক্রমণ করলে ২ জন নিহত হয়। আগে একটি অভিযানে মুক্তিবাহিনী ঠাকুরগাও সড়ক, রেল ও টেলিযোগাযোগের ক্ষতি করে।

১৭ সেপ্টেম্বর বান্ত্রায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৬ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়। তারা ৪ টি শত্রু বাংকার ধ্বংস করে। দক্ষিণ রায়গঞ্জে আক্রমণে ২ জন আহত হয়।

২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী একটি রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করে রেলওয়ে যোগাযোগ নষ্ট করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
২১ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী বাড়াবাড়ি এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়। অন্য একটি ঘটনায় ৫ জন পাকসেনা ও ৩ জনসহযোগী নিহত হয়।

২০ সেপ্টেম্বর হরিচন্দ্রপুরে ২ জন নিহত হয়। ২২ সেপ্টেম্বরতেনতুয়াবারায় ৩ পাকসৈন্য নিহত এবং পাঁচ জন আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কালীঘাট চা বাগান এলাকায় পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৫ পাকসেনা হত্যা করে।

২১ সেপ্টেম্বর গাজীপুর চা বাগানে ৫ পাকসেনা ও ৮ রাজাকার হত্যা করে। এছাড়া ৫ টি রাইফেল জব্দ করে। সামারবাগ চা বাগানে এবং মারিম্পুরে অভিযান চালিয়ে ৭ জন হত্যা করে।
রংপুর জেলার সাইদুল্লাপুর থানায় অভিযান চালিয়ে ১২ টি শট গান জব্দ করে। বেশ কিছু পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়।

২০ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনীর গৌরীপুরের কাছাকাছি অভিযানে ৫ জন আহত হয়।
১৮ তিলাগাওয়ে মুক্তিবাহিনী গ্রেনেড ছুড়ে চার জন পাকসৈন্য হত্যা করে। বেতুয়ায় একই ভাবে দুই জন পাকসেনা নিহত হয়। জানা যায় যে,
ময়মনসিংহ হাসপাতালে প্রায় ৫০০ জন আহত পাকসৈন্য ও রেন্জার্স ভর্তি করা হয়েছে। দেরীতে প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী গফরগাঁও ও কাওরাইদে রেল সড়ক ধ্বংস করে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম কুমিল্লা সেক্টর-
দেরীতে প্রাপ্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েকটি আক্রমণে শাল্ডাড়, জগন্নাথ ডীঘীম পরশ ও ডূড়ড়গাপূড়ে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১৯ জন পাকসেনা নিহত হয়। আরও পরে যানা যায় যে, কাওড়াঈডে একটি আক্রমণে ৯ পাকসেনা ও ৪ রাজাকার নিহত হয়।

——–জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৭ সেপ্টেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
২১ সেপ্টেম্বর ধর্মগরে মুক্তিবাহিনী সশস্ত্র পাকসৈন্যদের আক্রমণ করে একই দিনে আট শত্রুসৈন্য হত্যা করে। লকদিঘিতে ১ প্লাটুন সৈন্যকে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। ১৯ সেপ্টেম্বর খগেরহাটে রেশন বহনকারী একটি গরুর গাড়ী মাইনে বিস্ফোরিত হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর খানপুরে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত ও দুই জন আহত হয়। জানা যায় বিজনপুর-পঞ্চগ্রাফে মুক্তিবাহিনী সুশৃঙ্খল ভাবে আক্রমণ চালায়। এই অপারেশন ছিল পরিকল্পিত এবং নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। মুক্তিবাহিনী চার দিক থেকেই পাকসৈন্যদের ঘিরে ফেলে। শত্রুসৈন্য বিস্ময়ে পালানো শুরু করে। ৫৭ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং এক অফিসারসহ ৩৮ জন আহত হয়। ৩ টি পাক যানবাহন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। পাঁচটি অস্ত্র জব্দ ও ৫ জন শত্রুসৈন্যদের বন্দী করা হয়।

বোর্ড অফিস এলাকায় একটি অর্ধটন ট্রাক ও একটি জিপ অ্যামবুশে আক্রান্ত হয়। জিপটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়, ৭ জন নিহত ও ৫ জন আহত হয়।

বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার অ্যাম্বারখানা এলাকায় অ্যামবুশ করে। প্যাট্রোল শত্রুসৈন্য চাকারমারি এলাকায় দিকে আসলে এমন সময় মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ করে। এতে ছয় জন নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। পরে যানা যায়, ১৯/২০ তারিখ রাতে জাগদালিয়াত ও পঞ্চগড়ে শত্রুসৈন্যদের উপর হামলা হয়। এতে ১১ জন নিহত, ১৯ জন আহত হন এবং ৭৫০ রাউন্ড গুলিসহ ২ টি অস্ত্র জব্দ করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে:
মুক্তিবাহিনী মানদা এলাকায় এম্বুশ করে। তারা চার জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে ও ২ জন আহত হয়। দত্তনগরে গ্রেনেড নিক্ষেপের ফলে একজন সেনা নিহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর-
বিলম্বিত খবর মতে আজ মুক্তিবাহিনী সালদা এলাকার কাছাকাছি পাক বাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে ২ জনকে হত্যা করে করে।
১৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মর্টার দিয়ে শত্রুদের আক্রমণ করে। এতে ২ জন মারা যায়। সিতাদিয়াতে ৪ জন নিহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলোভী বাজার সেক্টর-২৩ সেপ্টেম্বর পাকসৈন্য বহনকারী এক নৌকা মুক্তিবাহিনীর দ্বারা নিমজ্জিত হয়। তারা লুভাছরা পাড় হতে চেষ্টা করছিল। এতে ১০ জন নিহত হয়। আগে ১৮ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের বারহাতায় পাক শত্রুদের ছয় জন হতাহত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১ অক্টোবর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
মুক্তিবাহিনী ২৮ সেপ্টেম্বর লিখাদেরি এলাকায় পাক বাহিনীকে আক্রমণ করে। এতে ৬ শত্রুসৈন্য নিহত ও ৩জন আহত হয়। ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জে পাক প্যাট্রোল আক্রমণে ২ জন নিহত হয়। বর্মি ও জয় দেবপুরে ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী আক্রমণে ১২ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর তারিখে মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার জয় মনিরহাটে অ্যামবুশ করে। তারা ৬ জন পাকসেনা হত্যা করে।

২৬ সেপ্টেম্বর দেবপুরে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।

২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর অন্য অপারেশনে মুক্তিবাহিনী উকসা এলাকায় ১৫ জন পাকসেনা হত্যা করে এবং ২ টি রাইফেল জব্দ করে।
এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী এক জুনিয়র অফিসারসহ ১৫ জন পাকসেনা হত্যা করে সিলেট জেলার আন্ধারমানিক এলাকায়। একই দিনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা গুতিরমালায় ৩ জন পাকসেনা হত্যা করে ও ৬ জন জন আহত হয়।

বিলম্বিত রিপোর্টে জানা যায় মুক্তিবাহিনী শইলপুকুর পাকুরিঘাট পামুরা ও সিলেট জেলার ঠনঠনিয়াতে পাক বাহিনীর উপর মর্টার আক্রমণ করে। এতে ১০ জন জন পাকসেনা নিহত ও ১৬ জন আহত হয়। এবং ৭ টি বাংকার ধ্বংস হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২ অক্টোবর

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
বিলম্বিত রিপোর্টে যানা যায় যে কাকডাঙ্গাতে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মুক্তিবাহিনী কয়েকটি অপারেশন চালায়। মদ্র ও বোয়ালিয়াতে বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ ২০০ জনেরও বেশী পাকসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ৬ জন পাকসেনা বন্দী করে।

২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ভোমরাতে দুই পাকসেনা হত্যা করে এবং তিন জনকে আহত হয়।

২৮ সেপ্টেম্বের মুক্তিবাহিনী বর্ণী এবং জয়দেবপুরের মধ্যে পাক বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। এতে ৬ জনের মৃত্যু হয় এবং ৭ শত্রুসৈন্য আহত হয়। একই দিনে দুটি পাকসেনাকে বর্ণীর কাছাকাছি নিহত করা হয়।

২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী উকসা এলাকার কাছাকাছি মর্টার দিয়ে ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কুতুবপুরে ২ জনকে হত্যা করে। এর আগে যশোরের রঘুনাথপুর, সারথা ও চুরামাঙ্কাতিতে অফিসারসহ ১১ জন পাকসৈন্যকে হত্যা করা হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
২৭ সেপ্টেম্বর সারপ্রাইজ অভিযানে মুক্তিবাহিনী উসালিয়াতে পাকসেনাকদের তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং ১৭ জন পাকসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে নেয়। এর আগে ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় পাক বাহিনীর সম্মুখীন হয় এবং চার শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।
সেপ্টেম্বের ২৭, মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের খানপুরের কাছাকাছি ১৫ জনকে আহত হয়। মুক্তিবাহিনী চক্রামারিতে ৭ জন পাকসেনা হত্যা করে।

মুক্তিবাহিনী ২৭ সেপ্টেম্বর পারভতিপুর ও বদর গঞ্জের মধ্যে একটি রেলসেতু উড়িয়ে দিয়ে রেল যোগাযোগ বিঘ্নিত করে।

২৮ সেপ্টেম্বর লকিয়ালদেবিতে ৬ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

২৪ সেপ্টেম্বর শুলিপুকুর, পাকুরিঘাট, পাকিজ্রিয়া, ঠনঠনিয়া, বালানুর ও মাঞ্ছিওসাতে ৩২ সেনা ও ২১ রাজাকার হত্যা করে। শুধু পাকুড়িয়াতে ১৬ জন জখম হয়। মুক্তিবাহিনী এলাকায় সাতটি শত্রু বাংকার ধ্বংস করে। ২৪ সেপ্টেম্বর চালাহাতিতে ৩ জন হত্যা ও ৫২ জন আহত হয়। জাবাইতে ৭ জন নিহত হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বগুড়ার কাছাকাছি হিলি পাঁচবিবিতে ৬ সেনা ও ২ রাজাকার হত্যা করে। একই দিনে কারিয়ার কাছাকাছি ৭ জনকে হত্যা করা হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁওের কাছাকাছি একটি পাক প্যাট্রোল অতর্কিতে আক্রমণ করে ও ২ জন নিহত হয়। এবং পরের দিন তারা গফরগাঁও থানায় অভিযান চালিয়ে ২ পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে।

২৭ সেপ্টেম্বর রহিম্পুরে ব্রিজে পাহারারত এক সেনাকে হত্যা করে।

২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কয়েকটি জায়গায় অ্যামবুশ করে। মোহনগঞ্জে তারা ৬ সৈন্য ও ৪ রাজাকার হত্যা করে। দশগ্রামে তারা ১০ সেনা হত্যা করে। নল্কুরা ও নলদিয়াতে ৪ জন নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী মহাব্বাতপুরের কাছাকাছি ৭ জনকে হতাহত হয়। ২৬ সেপ্টেম্বর পাকশিগঞ্জ-কামালপুর রাস্তায় ২ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

২৫-২৬ সেপ্টেম্বের মুক্তিবাহিনী রাত্রিতে স্রিগারনাল ও কামারাইলে ১৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। সেপ্টেম্বর ২৭ বাটলিতে ৩ জনকে হত্যা করে। আগে ২৫ তারিখ এখানে অ্যামবুশে ৭ জন হত্যা করা হয়।

২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী রাধানগরে পাক বাহিনীর ওপর হামলা চালায় এবং তাদের চার জন হত্যা করে। ২৬ সেপ্টেম্বর কাঠালপুরে দুই পাক যানবাহন ও দুটি ফেরি ধ্বংস করা হয়।
সেপ্টেম্বর ২৪-২৫ তারিখে করিমপুর, হান্দাতলা, চালতাপুরে অ্যামবুশ হয় ও রাম্না দ্রাসা, ঠাকুরচর, বাত্যা ওকেন্দুয়াতে থানা দখল করে। এতে ১৬ পাকসেনা ও ৯ রাজাকার নিহত হয়। এর আগে মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ শহরের কাছাকাছি অবস্থান করে ৫ শত্রু হত্যা করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কাইম্পুর ৮ শত্রুসৈন্য হত্যা ও সাত জন আহত হয়। ২ টি শত্রুনৌকা ধ্বংস করা হয়। একই দিনে সিরপুর ও আজনাপুরে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়। মনোহরপুর ও কোটেশ্বর মুক্তিবাহিনী ৪ পাকসেনা হত্যা করে। ২৬ তারিখ দেবপুরে এম্বুশে ৫ জন নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী ফেনী ও বিলোনিয়া মধ্যে একটি রেলসেতু ধ্বংস করে। ২৫ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী আন্ধারমানিকে কাছাকাছি পাক বাহিনীর উপর আক্রমণে ১ জেসিওসহ ৭ পাকসেনা নিহত হয়। বিলম্বিত রিপোর্টে জানা যায়, মুক্তিবাহিনী ৯ সেপ্টেম্বর মাইন দিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লাইনে একটি ট্রেন উড়িয়ে দেয়। পাঁচ পাক বাহিনী ও তাদের কিছুসহযোগী নিহত হয়। ইঞ্জিন ও ট্রেনের তিনটি বগি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৪ অক্টোবর

বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর-
২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রাধানগরে অ্যামবুশে ছয় শত্রুসৈন্য হত্যা করে। দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও এলাকায় ৬ পাকসৈন্য নিহত হয়। একই দিনে শেরপুরে ২ জন নিহত হয়। খুলনার ভোমরায় ২ জন ও বর্ণীতে ২ জন নিহত হয়।

আগে ২৮ সেপ্টেম্বর ৩ জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর নোয়াপুরে ছয় শত্রুসৈন্য হত্যা ও ১৫ জন আহত করে। মুক্তিবাহিনী কোটেশ্বর এলাকায় পাক বাহিনীর অ্যামবুশে তিন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

৩০ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার জাম্বারিতে চার পাকসেনা নিহত হয়। আগে ২৭ সেপ্টেম্বর কসবায় তিন শত্রুসৈন্য হত্যা ও তিন জন আহত হয়।

২৯ সেপ্টেম্বর আনন্দপুরে ৪ জন নিহত হয়। অন্য অপারেশনে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার মনোহরপুর এলাকায় চার শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

আগে ২৮ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা কসবার কায়ইয়ুম পুর ৩ ঘণ্টা মর্টার আক্রমণে ৩৫ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। এছাড়া তারা পাঁচটি বেয়োনেট এবং ২৫০ রাউন্ড চীনা বুলেট জব্দ করে। এক গেরিলা এই অপারেশনের সময় আহত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৫ অক্টোবর

বীরমুক্তিযোদ্ধাদের বাংলাদেশ অধিকৃত এলাকার সব ফ্রন্টে গত কয়েকদিনে গেরিলা কার্যক্রমের বিশেষ অপারেশন নিম্নরূপ-

১ অক্টোবর বিরিশিরি-বিজয়পুর এলাকায় ২ জন পাকসেনাকে মুক্তিবাহিনী হত্যা করে। বদরকাটাতে আরেকটি বাহিনী মর্টার দিয়ে ৫ জনকে হত্যা করে। ২ অক্টোবর একই দিনে ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট ফুলপুর-রাস্তায় মাইনে একটি ট্রাক বিস্ফোরিত হয়।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালী জেলার পূর্ব চ্যাঙ্গালনিয়ার কাছাকাছি ৫ পাকসেনা নিহত ও ৭ জন আহত হয়। তারা তিনটি বাংকার ধ্বংস করে। বিলম্বিত রিপোর্টে জানা যায়, কুলাউড়া-বড়লেখা রাস্তায় ১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পটিয়াছরা এলাকায় পাক বাহিনীর উপর যৌথ অভিযানে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং এক জন আহত হয়। এর আগে ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জাফ্লং বাজারে ৮ পাকসৈন্য নিহত হয়।

বুড়িচং উপশাখায়, ২৭ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী মঞ্চপুর, আজনাপুর, কোটেশ্বর ও জামবাড়িতে বিশ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী চৌদ্দগ্রামে শত্রুদের ১২ জন নিহত ও ১ জন আহত করে।

২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী কানাসতলা এলাকায় ১২ জনকে হত্যা করে। ২৮ সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে মাইনে সেতু উড়িয়ে দেয়। বিলম্বিত খবরে জানা যায়, বুড়িচং এলাকায়তেইশ শত্রুসৈন্য নিহত ও অনেক পাকসেনা আহত হয়।

এর আগে ২৬ সেপ্টেম্বর পান ছড়ায় অ্যামবুশে ৩ জন নিহত হয়। ২৭ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় এক জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

——–নজরুল ইসলাম, জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্স।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৭ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য কমান্ডো অপারেশনের উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভী বাজার সেক্টর:
৩রা অক্টোবর এক পাকবাহিনীর একটি গাড়ি ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার কামালপুর-বকশীগঞ্জ সড়কে মুক্তিবাহিনীর মাইন দ্বারা আক্রান্ত হয় ও সাত জন নিহত ও ৬ জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী এলাকায় পাক অবস্থানে অভিযান চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে সেখানে অনেক সৈন্য আহত হয়। ১ অক্টোবর এর আগে মুক্তিবাহিনী ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল ট্র্যাক ধ্বংস করে।

জামালপুর ৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার ধানুযা এলাকার কাছাকাছি শত্রু সৈন্যের সঙ্গে গোলাগুলিতে আট জন হতাহত হয়। এক মুক্তিযোদ্ধা এই অভিযানে আহত হয়েছে।

এর আগে ২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রাইয়াপুর এলাকায় তাদের চার জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী জ্বলিলখালা এলাকায় পাক টহলে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে সাত জনকে হত্যা করে এবং বারো জন আহত হয়। একই দিনে যোদ্ধারা এই এলাকায় একজন সন্দেহভাজন আটক করে।

৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বল্লভপুরের কাছাকাছি দুই জন টহলরত শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর-
মুক্তিবাহিনী ২ অক্টোবর চম্পকনগর পাক অবস্থানে দুই জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এই এলাকায় আরেকটি অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা বৈদ্যনাথপুরে পাকসেনাদের অতর্কিত আক্রমণে এক কর্মকর্তা হত্যা করে। এবং পাঁচজন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নয়াদিঘি এলাকায় অভিযান চালায়। ২ অক্টোবর এক শত্রুসেনা নিহত এবং দুই জন আহত হয়।

মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের তিনজনকে হত্যা এবং চার জনকে আহত হয়। এর আগে তারা একই এলাকায় বিভিন্ন সময়ে আক্রমণ চালায়, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ব্লক করে, কালভার্ট ধ্বংস করে। একই দিনে দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও এলাকায় একটি গরুর গাড়িতে পাকসেনাদের জন্য রেশন বহন অবস্থায় মুক্তিবাহিনীর মাইনে বিধ্বস্ত হয়। এতে ২ জন যাত্রী নিহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী গভেসপুরের কাছে পাকসেনাদের আক্রমণে পাঁচ শত্রুসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়। একই দিনে যশোরের চাঁদপুরে মাইনে সাত পাকসেনা মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২ অক্টোবর মাদ্রাতে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশ করে। গোলাগুলিতে ৬ জন শত্রুসেনা নিহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৮ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য কমান্ডো অপারেশনের উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর-
৫ অক্টোবর বেরিল্বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয় ও ৪ জন আহত হয়। একই দিনে বাক্সা-বালিয়াডাঙ্গাতে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। একই দিনে নবতকাটতিতে একটি শত্রু জিপ ধ্বংস করে।

৩ অক্টোবর বরিশালের বাবুগঞ্জে মুক্তিবাহিনী অ্যামবুশ করে-এতে ৪ জন নিহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহি সেক্টর-
৪ অক্টোবর ভতেমারি একালায় মুক্তিবাহিনী একটি শত্রু জীপ খনি বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত করে। বিলম্বিত খবর অনুযায়ী-মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দরে সেনা অধিষ্ঠিত এলাকায় আক্রমণ করে চার শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং তাদের কাছ থেকে একটি রাইফেল উদ্ধার করে। এতে আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস অনেক বেড়ে যায়।

৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী খানপুরে নয়জন পাকসেনা আহত ও চার পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
কুমিল্লায় ২৬ শে সেপ্টেম্বর মুক্তিবাহিনী সেনা বহনকারী একটি শত্রু জীপে অতর্কিত আক্রমণ করে এক অফিসারসহ তার দুই যাত্রী হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভিবাজার সেক্টর-
৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নুমেকানগর-নাওকুচি রোডের শত্রু চৌকিতে অতর্কিত আক্রমনে তাদের তিনজন হতাহত হয়। একই রাতে তারা নৌকুচিআতাল-আহমেদনগর টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে। ৪র্থ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রঙরা এলাকায় দুই জন শত্রুসৈন্য বন্দী করে।

৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রাতে তিন পাকিস্তানী সৈন্য ও পাঁচ রাজাকার হত্যা করে আজিমগঞ্জের কাছাকাছি। একই রাতে তারা চাতলাপুরের কাছাকাছি শত্রু অবস্থানে আক্রমণ করে দুইজনের প্রাণনাশ এবং তিনজনকে আহত করে। ৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট সেনা অবস্থানের উপর একটি অভিযানে একটি পাকিস্তানি মটর লঞ্চ ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের কিছু হতাহত হয়।

বিলম্বিত খবর অনুযায়ী ২৬ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গোপালগঞ্জ মহকুমার রামচন্দ্রপুরএর কাছে মধুমতি নদীতে খাদ্য কর্মী এবং শত্রুসৈন্য ও গোলাবারুদ বহনকারী চারটি কার্গো বিমানে হামলা চালায়। তারা দুইটি কার্গো ডুবিয়ে দেয়, পনের রাজাকার ও দুই পাঞ্জাব পুলিশকে হত্যা করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৯ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার কসবার কাছাকাছি তৃতীয় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের পাকিস্তানি সেনা বহনকারী একটি বড় লঞ্চে অতর্কিত আক্রমণে অন্তত ২০০ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। লঞ্চ অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ একটি বৃহৎ লঞ্চ নিমজ্জত হয়েছিল। ৩ অক্টোবর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্য একটি লঞ্চ বাঞ্ছারামপুরে ১০ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে ও সেটি ডুবিয়ে দেয়।

একই এলাকায় প্রায় আরেকটি বিশাল গেরিলা অপারেশনে সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা ৩ টি স্পিড বোট ডুবিয়ে দেয় এবং দখলদার বাহিনীর ১০ টি দেশী বোট ক্ষতিগ্রস্ত করে। এতে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল এবং একজন ক্যাপ্টেনসহ ১৪ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। তারা ৫ অক্টোবর ৪র্থ আমারাতলিতে সেনাবাহিনীর টহলে অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে ৪ জন শত্রুর প্রাণনাশ হয়।

৩ অক্টোবর তারা নয়নপুরে রেলওয়ে স্টেশনের কাছে ৩ জন হানাদার সৈন্য হত্যা করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ২ অক্টোবর হোমনা থানায় অভিযান চালিয়ে ১১ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং ৫ জন রাজাকার হত্যা করে। এছাড়া, ১৫ জন রাজাকার অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর আগে ১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বল্লার কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। তারা আসামপারা থেকে মোল্লা পর্যন্ত আক্রমণ করে। এতে ২৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৪ জন আহত হয়।

চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে নোয়াখালী জেলার ফেনী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর দ্বারা পরিচালিত একটি সাহসী আক্রমণাত্মক হামলায় তাদের রণকৌশলের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নির্দেশ করে।

৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীতে ফেনীর কাছাকাছি মুইয়ারি নদী পার হয়ে পরশুরাম এবং অনন্তপুর এ প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। মরিয়া এবং বিভ্রান্ত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর আক্রমণ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দারুণ সমন্বয়ের মধ্যে তীব্র জবাব দেয়া হয় এবং মর্টারসহ ছোট এবং ভারী অস্ত্র দিয়ে তাদের উপর নিবিড় হামলা চালানো হয়। প্রচণ্ড যুদ্ধ করার পর শত্রুরা তাদের কমরেডদের ১৯ টি মৃতদেহ ফেলে চলে যায়। এই বীরত্বপূর্ণ কাজে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও উন্নত এবং তাদের হামলা আরও জোরদার হয়। এই অপারেশনের সময় অন্যত্র তারা শত্রুসৈন্যদের সঙ্গে আরেকটি সরাসরি সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ৪০ জন শত্রুসৈন্য এতে নিহত হয়।

একই জেলার অনন্তপুরে শত্রুসৈন্যদের উপর ত্রিধাবিভক্ত মুক্তিবাহিনী অবস্থানে আক্রমণ করে। এই যুদ্ধ বেশ কয়েক ঘন্টা চলে। এবং শত্রুসৈন্যদের একটি গ্রুপের প্রায় ৩০ জন হতাহত হয়। পরে মুক্তিবাহিনী প্রতিরক্ষা অবস্থানটি পদদলিত করে। আমাদের বীরত্বপূর্ণ মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন প্রাণ হারায়। এতে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৩০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। অবশেষে, হানাদার বাহিনী জায়গাটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধা ও দখলদার সৈন্যদের মধ্যে ফেনী ও বিলোনিয়া এলাকায় ভারী যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেছিল। প্রতিবেদন নিশ্চিত যে এক জেসিওসহ ২৭ জন শত্রুসৈন্য মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়। জানা গেছে যে দখলদার বাহিনীর মনোবল ধ্বংস হয়। এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ফেনী ও বিলোনিয়ার মাঝে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে। ফুলগাজী রেল ব্রিজ ভেঙ্গে ফেলে। তাদের বীরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এভাবে এগিয়ে চলে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১০ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী খানজাহানপুরে শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ করে ১২ জনকে হত্যা করে। আগে ৪ অক্টোবর শিবরামপুরে অ্যামবুশে ২ জন নিয়মিত সেনা এবং অনিয়মিত ৭ সৈন্য হত্যা করে।

একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহী নবাবগঞ্জগামী ট্রেনে আক্রমণ করে ২৩ জনকে হত্যা করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর-
মুক্তিবাহিনি নোয়াখালীর বেলনিয়া ও চিকনগুনিয়াতে অ্যামবুশ করে ৫ জনকে হত্যা করে। একই দিনে তারা মুরলীফাইদ এলাকায় শত্রু অবস্থানে আক্রমণ করে ৩ জন হত্যা এবং ৭ শত্রুসৈন্যকে আহত হয়। একই দিনে মকামিয়া বাজারে হানাদার বাহিনীর টহলে ত্তৎ পাতা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ২ শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

এর আগে ৬ অক্টোবর তারা পাকিস্তানি বাহিনীর উপর গ্রেনেড আক্রমণ করে। তখন তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোড যানবাহন আনলোড করছিল-তাদের ৩ জন নিহত হয়।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সালদা শত্রুসৈন্য অবস্থানে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে পরশুরাম এবং চিতলিয়া এলাকায় ৪০ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং বহুসংখ্যক আহত হয়।

৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী আনন্দপুর ও ধানিকান্দার মধ্যে শত্রু অবস্থানের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা ৬০ জন দখলদার সেনা হত্যা এবং আরো অনেক আহত হয়। একই দিনে তারা একই এলাকায় শত্রু অবস্থানের উপর মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে। এই অপারেশনে তারা ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং শত্রুদের বিভিন্ন বাংকার ধ্বংস হয়।

কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন অঞ্চলে বৃহৎ গেরিলা কার্যক্রম চালিয়েছে।
৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পানছড়া এবং কোটেশশর এলাকায় ৪ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। বিলম্বিত সংবাদ অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী মনলপুর এবং মোহনপুর এলাকায় শত্রুসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয় ৯ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে ও দু’জন আহত হয়।

আজ রিপোর্ট পৌঁছায় যে সিলেট জেলার মুক্তিবাহিনী ৭ অক্টোবর রাতে কমেদপুর এলাকায় এক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মেজরসহ ২৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চম্পক নগর এলাকায় ৩ পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে। একই দিনে তারা এ কাবিয়াবাজারে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

অক্টোবর ৮ তারিখ, মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার কাগমারি এলাকায় হানাদার বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। জানা গেছে যে একটি বড় যুদ্ধ মুক্তিবাহিনীর গেরিলা ও টাঙ্গাইল জেলার হানাদার বাহিনীর মধ্যে চলেছে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১২ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী কুছুমবির কাছে আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাদের এবং অনিয়মিত একটি দলের চার জন হত্যা এবং দুই জনকে আহত হয়।

৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারদের আরেকটি পেটি আক্রমণ করে এবং ৪ সৈন্য ও মেহেরপুরের কাছাকাছি দুইসহযোগী রাজাকারকে হত্যা করে। একই রাতে বালতিয়ার কাছাকাছি মুক্তিবাহিনী একটি পাক গাড়ির ওপর অতর্কিত হামলা করে এক সৈনিক হত্যা করে।

৪ অক্টোবর এবং ৫ টার সময় দশ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে মাইন বিস্ফোরণে হত্যা করে ভুরুঙ্গামারী রাস্তায়। এর আগে গত ৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দানিগাগ্লাতে পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ জন পাকসেনাকে হত্যা করে।

এর আগে ২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী উলিপুর-কুড়িগ্রাম সড়কে ১ পাকসেনা হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীরা সাতটি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে। পৃথক অভিযানে, মুক্তিবাহিনী পালটিয়া-হাতিবাঁধা এবং রাজারহাঁট-তগারি এলাকার মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
২৪ টি দেশি নৌকায় সিলেট জেলার হাকালুকি হাওরের কাছাকাছি দুটি গানবোটসহ চলন্ত অবস্থায় এই বড় শত্রু দলটিকে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। একজন মেজর এবং ক্যাপ্টেন নিহত হয় ও ১৫ জন আহত হয়। আরও ১০ শত্রুসৈন্য যুদ্ধে নিহত হয়। আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের দুটি জন নিহত হয় ও ৩ জন আহত হয়।

৭ অক্টোবর মারকুলই সিলেটে একটি কলামে আক্রমণে ৪ পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের সঙ্গেসহযোগী ২ রাজাকার নিহত হয়। ৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কামারসাইলের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণে চার শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের কলসিন্দূরের কছাকাছি একটি দল আক্রমণে দুই জন সৈন্য নিহত হয়।

এর আগে ১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী জামালপুর-ফেরিঘাটে (ময়মনসিংহ) কাছে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে তিন পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বকশিগঞ্জ-কামালপুর রোডের একটি সড়ক সেতু ভেঙ্গে ফেলে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী কাগমারির কাছে পাকিস্তানের সৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন হত্যা করে ও ৩ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। একই দিনে তারা কয়েমকলার কাছাকাছি শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ২ জনকে হত্যা করে এবং ১০ জন আহত হয়।

অক্টোবর ৫ তারিখে মুক্তিবাহিনী পীরগাছা (খুলনা)র কাছে পাকিস্তানের অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১ জেসিওসহ ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী কাশিয়ানী ভাটিয়াপাড়ায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর তিন দিক থেকে একটি সাহসী আক্রমণ করে। তারিখ ও স্থান-৪ অক্টোবর; গোপালগঞ্জ উপবিভাগ। এতে কমপক্ষে ৩০ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ২০ রাজাকার নিহত হয়। এখানে রাজাকারদের একটি গ্রুপ তাদের অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মরিয়া হয়ে পাকিস্তানি সৈন্যরা এয়ার-কভার পাঠায়। পাকিস্তানি জেট বিমান দিনে দুইবার এলাকায় টহল দিত। সেনা বহনকারী একটি পাক হেলিকপ্টার সন্ধ্যার দিকে অবতরণের চেষ্টা করলে মুক্তিবাহিনী গুলি চালিয়ে তা ব্যার্থ করে দেয় এবং হেলিকপ্টারটি ঢাকা ফেরত যায়। পরদিন অতিরিক্ত পাকিস্তানি সেনারা প্রতিশোধমূলকভাবে এলাকায় গানবোট ও লঞ্চ নিয়ে আসে এবং বহু ঘর পুড়িয়ে দেয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ৪ ও ৫ অক্টোবর খাজুরিয়ার কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং ৪ জন নিহত হয়। এ সময়কালে, মুক্তিবাহিনী আজনাপুর এর কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা দ্বিগুণ করে যাতে ১৩ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয় এবং ৩ জন আহত হয়।

৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নয়নপুরের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে এবং শত্রুদের ৫ জন হতাহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী জামবাড়ির কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং ২ জন শত্রু নিহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৩ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১০ অক্টোবর রংপুর জেলার ভতেমারিতে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১০ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

এর আগে ৫ অক্টোবর তারা একই এলাকায় ছাপানির কাছাকাছি একটি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করে।

৯ অক্টোবর হানাদার বাহিনী সোনামস্ক এলাকায় হামলা করে, কিন্তু মুক্তিবাহিনী পাল্টা জবাব দেয়। এতে ৭ শত্রুসৈন্য নিহত এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। এসময় এক রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী জয়মনিরহাঁট এবং আন্দেরিঝর খামার এর মধ্যে আক্রমণে ৩ জন নিহত এবং ১০ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। তারা একই দিনে ছালমা এবং রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম এর মধ্যে চান্দিজান সেতু ভেঙ্গে ফেলে। পরের দিন তাদের কাছে অস্ত্রসহ ৪ রাজাকার তিস্তা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

৯ অক্টোবর মাইন বিস্ফোরণের কারণে কাজলদীঘি এলাকায় দুই শত্রুসৈন্য নিহত হয়। একই দিনে তারা ছুড়লি এবং কেটার মধ্যে কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলে। তারা এই এলাকায় টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে।

এর আগে ৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী শত্রুসৈন্যদের উপর অ্যামবুশ করে।

মচিঘরএলাকায় প্যাট্রোলরত এক শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এবং একটি চীনা রাইফেল দখল করে নেয়।

যশোর-কুষ্টিয়া-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১০ অক্টোবর খুলনা জেলার ঘুগরিতে অ্যামবুশে ৭ হানাদার সৈন্য হত্যা করে। এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন আহত হয়েছিল। একই দিনে মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলার মদনকটি স্কুলে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে অভিযান চালায় এবং ৪ জন নিহত এবং গুরুতরভাবে ৭ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

২ অক্টোবর তারা দসিতানার মধ্যে শত্রুসৈন্য অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ২ অক্টোবর যশোর জেলার কাপাসডাঙ্গাতে অতর্কিত আক্রমণে ১০ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ১০ অক্টোবর এক রাজাকার তার রাইফেলসহ যশোরের কুটচান্দপুর এলাকার কাছে আত্মসমর্পণ করে। এর আগে, ৪ অক্টোবর দুই রাজাকার বেনাপোল এলাকায় অস্ত্রসহ মুক্তিবাহিনির কাছে আত্মসমর্পণ করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ৯ অক্টোবর জোরাগঞ্জ এবং নোয়াখালী জেলার ফেনীর মধ্যে ২ টি রেলওয়ে ব্রীজ ভেঙ্গে ফেলে এই দুই স্থানের মাঝামাঝি রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে।

৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনি কুমিল্লা জেলার লাটমুরাতে টহলরত শত্রুসৈন্যদের অতর্কিত আক্রমণ করে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে তারা মজুমদ্বারহাঁট এলাকায় ৬ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ৭ অক্টোবর চার্নাল এলাকায় একই দিনে একটি অতর্কিত আক্রমণে ২ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

নোয়াখালী জেলার গাবতলা এলাকায় অতর্কিত পাকিস্তানি সেনাদের টহলে আক্রমণ করে ৪ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এতে তারা তিনটি এলএমজি দখল করে নেয়। এর আগে, অক্টোবর ৬ মুক্তিবাহিনী কাইয়াঁরা স্কুল এ হানাদার বাহিনীর উপর অ্যামবুশ করে তাদের মধ্যে ৬ জন নিহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১১ অক্টোবর হালুয়াঘাট ও ময়মনসিংহের তেলিখালির মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে টেলিযোগাযোগ অনুপযোগী করে ফেলে। এর আগে ৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার প্যাট্রোলে অতর্কিত আক্রমণে ৬ জন হত্যা করে। এতে তারা 2 টি চীনা রাইফেলস দখল করে নেয়।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ সময় শ্রীমঙ্গল এবং সিলেট জেলার কাকিছাড়ার মধ্যে একটি রেলওয়ে ব্রিজ ধ্বংস করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৪ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার হাতিবান্ধায় ১১ অক্টোবর দখলদার সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং ৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ জন আহত হয়।

৪ অক্টোবর শাহতে মাইনে দুই জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং দুই জন গুরুতর আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী দেওদা এলাকায় প্যাট্রোল পার্টির সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় ও ২ জন সৈন্য নিহত হয়। তারা একই দিনে রাজশাহী জেলার আটপাড়ায় রাজাকার ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৫ রাজাকার হত্যা করে।

এর আগে ৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রাজশাহী জেলার নবাবগঞ্জ এলাকায় পেট্রোলরত শত্রুদের অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং এক শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং কয়েকজন আহত হয়। একই দিনে রাইফেলসহ ৪ জন রাজাকার দিনাজপুর জেলার হামজাপুরে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর-
দখলদার সেনাবাহিনী ময়মনসিংহ এলাকায় ১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করে। এতে ১০ শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী টিকাহোয়ারে রাজাকারদের প্যাট্রোলে আক্রমণ করে এবং এতে শত্রু সৈন্যেরসহযোগী ৬ রাজাকার নিহত হয়। ও তাদের ৪ জন আহত হয়।

বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী এক হানাদার আর্মি ট্রাক মাধবপুর থেকে ময়মনসিংহে চলার সময় ৩ অক্টোবর পর্যন্ত মাইনে আক্রান্ত হয়। এতে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

১০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার কুলাউড়াতে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এই সময় ২ জন রাজাকার তাদের রাইফেল দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই দিনে, একটি শত্রুবাস পাগলা এলাকায় মাইন বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। তারা অভিযান চালিয়ে একই দিনে জয়কালাস এবং দিরাই মধ্যে গমনরত একটি লঞ্চ ধ্বংস করে। এতে হতাহতের রিপোর্ট এখনো পাইনি। একই দিনে তারা ছাড়গ্রামে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ২ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। পরের দিন ১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বুশগ্রামে একজন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার বালা সেতুতে পাহারারত পাকিস্তানি সেনাদের উপর অভিযান চালিয়ে ২ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তোকচা এলাকায় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং অনেক হতাহত হয়। দুই রাজাকার দক্ষিণকুলে একই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

৫ অক্টোবর তারা সাচা এবং সিলেট জেলার সুনামগঞ্জের মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:

মুক্তিবাহিনী আমানগণ্ডা এলাকায় ৯ অক্টোবর একটি এম্বুশে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর ফুলগাজীতে পাকিস্তানি সেনাঅবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এর আগে তারা একই এলাকায় একটি সড়ক সেতু ভেঙ্গে ফেলে। অনন্তপুর এলাকায় একই দিনে আরেকটি অভিযানে এক শত্রুসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী বওহারা এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণে একই দিনে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

৪ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার জামবাড়িতে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলায়, মুক্তিবাহিনী ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। একই দিনে তারা পানছড়াতে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে একটি এম্বুশে। মুক্তিবাহিনী একই দিনে সইতশালা এলাকা থেকে হানাদার বাহিনীর তাড়িয়ে দেয়।

৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চাঁদপুর-কুমিল্লা জেলা আক্রমণে ২ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। তারা একই এলাকায় শত্রুদের দুইটি বাংকার ধ্বংস করে।

এর আগে, ৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় হানাদার বাহিনী বহনকারী নৌকায় অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং নৌকা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা এর দখল অঞ্চলের রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, প্রচুর রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পন করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৫ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
১২ অক্টোবর দুই প্লাটুন শত্রুবাহিনী খালপারা এবং আলপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ন হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সফলভাবে এই হামলায় তাদের ১০ জনকে হতাহত হয়। এই অপারেশনে এক গেরিলা নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী ক্যাঁতরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

এর আগে ১০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী খালপারা এবং আলপুরে শত্রু চৌকিতে অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে ৪ জন দখলদার সৈন্য নিহত হয়। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর শেরখানকে গত সপ্তাহে রংপুর জেলার গাইবান্ধায় মুক্তিবাহিনী হত্যা করে। জানা গেছে যে যখন দখলদারী সৈন্যদল গাইবান্ধা সাব-সদর দপ্তর থেকে ভরালখালির দিকে অগ্রসর হয় মুক্তিযোদ্ধারা তখন তাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং দুই জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ মেজর শেরখান নিহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
আজ এখানে পৌঁছান বিলম্বিত খবর অনুযায়ী ৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দাতিয়াশার এলাকায় শত্রু চৌকিতে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং ৩ জন দখলদার সৈন্যকে হত্যা করে।

8 অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা গাবতলা এলাকায় ২ জন শত্রুসৈন্যকে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভী বাজার সেক্টর:
১২ অক্টোবর আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট জেলার জৈন্তাপুরে শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে কিছু চীনা গোলাবারুদ, সঙ্গে একটি রাইফেল উদ্ধার করে।

১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দেবালছড়া এলাকায় অভিযান চালায়। এই অপারেশনে তারা ২ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা মুড়িয়াছড়াতে শত্রুসৈন্যদের উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং তাদের ৩ জনকে হতাহত হয়। দখলদার সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর একই এলাকায় আরেকটি অতর্কিত হামলায় তিন পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে।

আজ একটি বিলম্বিত খবরে যানা যায় যে, ৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী গাইবান্ধার কাছাকাছি আলহাজ্ব জুট মিলসে অভিযান চালিয়ে দুই জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। এর আগে ৩ অক্টোবর আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা গাইবান্ধার কাছাকাছি রসুলপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণে চার পাকিস্তানি রেঞ্জার্সকে হত্যা করে।

কুষ্টিয়ার যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১১ অক্টোবর বাকশা এলাকায় একটি বৈদ্যুতিক পাইল ধ্বংস করে।

১২ অক্টোবর তারা মদনকাঠি এলাকায় ৫০০ গজ টেলিফোন লাইন সরিয়ে ফেলে এবং তারা কুষ্টিয়ার মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা সড়কে চারটি বৈদ্যুতিক পাইলন ধ্বংস করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৬ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের বিশাল এলাকা মুক্তিবাহিনীর নিবিড় গেরিলা অপারেশনের কারণে অক্টোবরের ১ম সপ্তাহ জুড়ে বিদ্যুৎহীন ছিল। এ সময়কালে মুক্তিবাহিনী আছিরাবাদ, মাদিরবাড়ি, মদিনাঘাট এবং চাঁদপুরে ৪ টি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ধ্বংস করে। ৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম-কাপ্তাই লাইনে বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১২ অক্টোবর রাদিনগর এর নিকটবর্তী পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অতর্কিতে তাদের ৩ জন হত্যা করে। ৪ অক্টোবর গুথুমা এবং পূর্ব দেবপুরে পাক অবস্থানের উপর পৃথক অভিযান চালিয়ে, দুই পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে এবং ৭ অক্টোবর ৪ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী নোয়াখালী জেলায় ছাগলনাইয়া থানায় অভিযান চালিয়ে ৪ পাকিস্তানি সৈন্য ও পুলিশ হত্যা করে ও ৭ জন আহত হয়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী সেপ্টেম্বর ১৭-১৯ তারিখে হরিরামপুর এবং ঢাকা জেলার শিবালয় থানার মালুছিম বাজারের কাছে পাক বাহিনীর উপর গুলিবর্ষণ করে। এই অভিযানে ২৫ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার হাতীভাঙ্গাতে ৯ অক্টোবর ২০ জন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। ৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মোহনগঞ্জে পাকিস্তানি রেঞ্জার্সে অতর্কিতে আক্রমণ করে এবং এদের মধ্যে চারজন নিহত হয়।

১০ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনাদের ১ টি গাড়ি ফুলপুর-হালুয়াঘাট সড়ক পথে মাইনে আক্রান্ত হয় এবং চার পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। ময়মনসিংহ জেলায় মুক্তিবাহিনী ৪ অক্টোবর জামালপুর সরিষাবাড়ির মধ্যে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। দাঘি রেল স্টেশনের কাছেকেন্দুয়া-কালীবাড়ি এবং বয়রালির কাছাকাছি রেলওয়ে সেতু ধ্বংস করে। এর দ্বারা জামালপুর ও বাহাদুরাবাদ এর মধ্যে রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়। গত সপ্তাহে ২০ জন রাজাকার জামালপুরে তাদের অস্ত্রসহ ময়মনসিংহ জেলায় এবং সিলেট জেলায় দালুরাতে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

রংপুর দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী পুখিলগাও এলাকায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং শত্রুসৈন্যদের ৩ জন আহত হয়। ৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভতেশুরে পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে, উত্তর অডিতমারিতে ৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও পাঁচজন আহত হয়। ৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভবানীপুরে পাকসেনাদের সাথে যুদ্ধে দুই শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ৯ অক্টোবর কিছু রাজাকার গাইবান্ধার কাছে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১২ অক্টোবর একজন রাজাকার কমান্ডার, হলদিবাড়ির হাবিবুর রহমান (রংপুর জেলা) মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৭ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

সিলেট জেলায় মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যে ভারী যুদ্ধ চলছিল। আমাদের সাহসী সৈন্যরা ইতিমধ্যে এই শিল্প শহরের একটি অংশ দখল করে আছে এবং ছাতক ও প্রতিবেশী শহরগুলির মধ্যে সব সড়ক ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। গত দুই দিনের যুদ্ধে পাকসেনা হতাহতের পরিমান অনেক বেশী।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীতে মেরিন কমান্ডোরা গত ৮ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি বড় জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। এগুলো হল পাকিস্তানের নাসিম এবং অপরটি ছিল গ্রিক জাহাজ এভ্লস যা দুটি ট্যাংক এবং অন্যান্য অস্ত্র ও গোলাবারুদ পূর্ন ছিল।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার সাদেকপুরে পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ক্যাপ্টেনসহ ২৩ পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীরা ৬ টি শত্রুরাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ দখল করে নেয়। এক পাকসৈন্য বন্দী করা হয়।

এর আগে গত ৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বুড়িচং (কুমিল্লা জেলা) এর কাছে পাকসৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১১ অক্টোবর সাহসী গেরিলারা চাঁদপুর ফেরিঘাটে পাকসেনাদের উপর ঝটিকা আক্রমণ করে ৫ জন পাকসেনাকে এবং ৭সহযোগী রাজাকার কর্মিকে হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর মর্টার হামলা করে ৫ জনকে হত্যা করে এবং ৩৭ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী মাহেশকুন্দির কাছাকাছি ১৫ অক্টোবর পাকসৈন্যদের উপর আক্রমণ চালায় এবং ১০ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে।

১৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভাগযতি এবং শুকরিয়াতে পাকবাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণে ২০ শত্রুসৈন্য হত্যা করে ও ১০ জন আহত হয়। এবং একই দিনে মুক্তিবাহিনী রামকৃষ্ণপুরে পাকবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে ও ৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। গেরিলাদের আরেকটি গ্রুপ সাদিপুরএর কাছাকাছি শত্রুচৌকিতে গুলিবর্ষণ করে এবং ৩ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে।

১৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বাকশাতে ৪ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ২ জন আহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৮ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
১৬ অক্টোবর রাতে মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর ভূপালগঞ্জের কাছে পাকিস্তানি সৈন্যদের ওপর মর্টার হামলা করে। এতে ১৭ জন হতাহত হয়। একই দিনে রাতে মুক্তিবাহিনী কারিয়া এর কাছে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলি করে এবং ১০ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী বগুড়া জেলার হিলি এবং পাঁচবিবি রেল লাইন উড়িয়ে দেয়।

১৬ অক্টোবর সকালে মুরাদপুরের কাছাকাছি টহলরত পাকসেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে ক্যাপ্টেনসহ ৫ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পাঁচবিবির কাছে পাকিস্তানি সেনাদের উপর পৃথক হামলায় ১৩ ও ১৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ৫সহযোগী রাজাকারসহ ১৬ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১৩ অক্টোবর মুক্তি বাহিনী চক্রবেনিতে একটি পাকিস্তানি টহলে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং শত্রুদের ৪ জন নিহত হয়।

১৭ অক্টোবর ১০ রাজাকার তাদের অস্ত্রসহ দিনাজপুরের কাছাকাছি মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

১৪ অক্টোবর ১২ জন রাজাকার কারিয়াতে আত্মসমর্পণ করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের বগাবাড়ির কাছে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মজুমদারহাট পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ পাকসেনা হত্যা করে।

৯ অক্টোবর একটি অনুরূপ অভিযানে নোয়াখালী জেলার কালিবাজারে মুক্তিবাহিনী ১২ জন নিহত ও ৪ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

৬ ও ৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চাদলাতে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর দুটি পৃথক হামলা করে ১৩ জনকে হত্যা করে ও ১০ জন শত্রুসৈন্যকে আহত হয়।

৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ১০ জনকে হত্যা করে এবং সাইসালা গ্রামে আক্রমণে ১৫ পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:

১৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দুর্গাপুর এবং নাজিরপুর এর মধ্যে পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণে ২ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহের মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে। মুক্তিবাহিনী গেরিলাদের ১৩ অক্টোবর গৌরীপুর থানায় অভিযান চালিয়ে কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী গেরিলাদেরা টাঙ্গাইল জেলায় তাদের কার্যক্রম জোরদার করেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে, মুক্তিবাহিনী গোপালপুর এর কাছাকাছি পাঞ্চিকাম্পা পাকসৈন্যদের উপর আক্রমণে ২৫ জনকে হত্যা করে। গেরিলারা ঢাকা জেলা ও ময়মনসিংহ জেলার সরিষাবাড়ি কালিয়াকৈরে রাজাকার ঘাঁটি ধ্বংস করে। প্রায় ৬০ জন রাজাকার এই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। চলতি মাসের গোড়ার দিকে টাঙ্গাইল থেকে গেরিলাদের ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে বিভিন্ন সেতু ধ্বংস করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৯ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনীর একটি দল ১৩ অক্টোবর জতস্মান এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর প্যাট্রোল এর উপর গোলাগুলি শুরু করে। এতে ২০ জন শত্রুসৈন্য হতাহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলায় ভুরুঙ্গামারী-পাগলাহাঁট সড়ক এর উপর পাকিস্তানি সৈন্যদের অতর্কিতে হামলা করে ৩ জন হত্যা করে এবং চার শত্রুসৈন্য আহত হয়।

১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী লালমনিরহাটে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে ৬ জনকে হত্যা করে এবং ১৫ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। একই দিনে তারা ভুরুঙ্গামারীতে শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ করে ৩ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা একই দিনে উলিপুর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্যাট্রোলে অতর্কিত হামলায় ৪ শত্রুসৈন্য ও ৭ রাজাকার হত্যা করে।

এর আগে ১০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী উলিপুরের কাছাকাছি রেলসেতু উড়িয়ে দিয়ে কুড়িগ্রাম-চিলমারী রেল ট্র্যাক ঘংস করে এবং ট্রেন যোগাযোগ ব্যাহত করে।

১২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দখলদার সৈন্যরা যখন নালা পার হচ্ছিল তখন অতর্কিতে হামলা করে এবং ৬ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১০ অক্টোবর তিন রাজাকার হাবরার মধ্যে মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ৭ অক্টোবর রাজশাহী জেলার মাগুরা পাড়ায় একটি মিশ্র পাকিস্তানি প্যাট্রোলকে আক্রমণ করে এবং ৩ শত্রুসৈন্য ও ৪ পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ১৩ অক্টোবর মানদ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে এবং দুই জনের প্রাণনাশ করে এবং ৫ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

এটা একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র যে মুক্তিযোদ্ধারা ৯ অক্টোবর খুলনা জেলার বাগেরহাট মহকুমার হারিদিয়ায় হানাদার বাহিনীকে আক্রমণ করে ২০ শত্রুসহ এক কর্মকর্তা হত্যা করে। সৈন্যদের কাছ থেকে এটা জানা যায়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাহসী মুক্তিবাহিনী মর্টার দিয়ে কুমিল্লা শহরের সার্কিট হাউস বিল্ডিং, রাজগঞ্জ এবং কান্দিপুর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের উপর ১১ অক্টোবর আক্রমণ করে ১০ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী বুগণবাজার এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে এক কর্মকর্তাসহ ৩ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার আজনাপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে অতর্কিত আক্রমণে ৩ শত্রু হতাহত হয়।
জানা যায় যে পাকিস্তানি বিমান ৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার পার্শ্ববর্তী শিবপুর, কাপাসিয়া ও রায়পুরে গ্রাম ও বাজারের উপর আক্রমণ করে পুড়িয়ে দেয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী সাদিকপুর এলাকায় এক কর্মকর্তাসহ ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
রাইফেলসহ তিন রাজাকার ১৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার লারিগ্রাম-কামারগাও এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীকেন্দুয়াতে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ধর্মপাশা সিলেট-ময়মনসিংহ সীমান্তে ৭ জন শত্রু হতাহতের খবর পাওয়া যায়। এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ জন জখম হয়।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর ৪ র্থ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের একটি মার্কেটে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এতে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২১ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-
সালদানদীতে মুক্তিবাহিনী ও পাকসেনাদের মধ্যে যুদ্ধের আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। যুদ্ধ ১৬ অক্টোবর থেকে শুরু করে এবং ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। পাক বাহিনীর কামান এবং এয়ারস্ট্রাফ সমৃদ্ধ ৩৩ বালুচ ব্যাটালিয়ন মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর হামলা চালায়। বীর মুক্তিবাহিনীরা এর সমুচিত জবাব দেয় এবং ৭০ জন শত্রুসেনা হতাহত হয়। আরও অনেক আহত হয়েছে। পাকবাহিনী রাতে আর্টিলারি প্রোটেকশনে তাদের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় কিন্তু ১৮ টি মৃতদেহ মুক্তিবাহিনী সংগ্রহ করে। পাকসেনারা সেগুলো ফেলে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

১ অফিসারসহ তিন বন্দী সেকেন্ড লে পারভেজকে বন্দী করা হয়। পরে তাদের মৃত্যু হয়। শত্রুরা বিপুল পরিমাণ অস্ত্র এবং ৬ MMG সহ গোলাবারুদ পিছনে ফেলে রেখে যায়।
ছাতক টাউনএ বিমান আক্রমণ তখনো চলছিল। শত্রুরা এখনও চারিদিক বেষ্টিত রেখেছিল। পাকবাহিনী এই এলাকা য় পুনরায় তাদের বাহিনী এনেছে।
কসবা মধ্যে আরো এলাকা মুক্তিবাহিনী বিমুক্ত করেছে।

১১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি মর্টার নোয়াখলি জেলার মজুমদারহাঁট এর, অনন্তপুর অ পরশুরামে হানাদার বাহিনীর উপর হামলা করে। এতে ৪১ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। এর আগে ৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চিতলিয়ায়, একই জেলার পরশুরাম এবং নয়াপুর এলাকায় ৬ জনকে হত্যা করে এবং ১৭ শত্রুসৈন্য আহত হয় অ্যামবুশের মাধ্যমে। এছাড়া শত্রুপক্ষের এক বাঙ্কার ধ্বংস করে। এটা আজকে প্রাপ্ত একটি বিলম্বিত খবর।

বীরত্বপূর্ণ গেরিলারা ৬ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার নয়নপুর এলাকায় একটি সাহসী অভিযান চালায়। মুক্তিযোদ্ধারা অ্যামবুশে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে তারা মর্টার দিয়ে পাকিস্তানি সেনারাদের উপর হামলা চালায়। ৯ জন শত্রু নিহত হয়।

৭ অক্টোবর তারা কায়ুম্পুর এবং জামবাড়ি এলাকায় ১৬ জনকে নিহত ও ৬ শত্রুসৈন্য আহত হয় একটি পেট্রোলে আক্রমণ করে।

৮ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা যেরনখলা এবং বুড়িচং এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর হামলা চালায় এবং এক মেজরসহ ৩৭ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা একটি বৃহৎ পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে বেয়।
৯ অক্টোবর বীর গেরিলারা সাদিকপুর এলাকায় পাকসৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ক্যাপ্টেনসহ ২৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এছাড়া তারা একজন শত্রুসৈন্য, ৬ টি রাইফেল (৩০৩) ও ৭০০ রাউন্ড গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

১১ অক্টোবর তারা একই এলাকায় শত্রুসৈন্যদের উপর মর্টার হামলা চালায়। ৫ জন হত্যা এবং ৩৭ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

৫ অক্টোবর সকালে মুক্তিবাহিনী সাতবাড়িয়া এলাকায় গেরিলা হামলায় ৯ জন হানাদারকে হত্যা করে।

১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নৌ ইউনিট কমান্ডো ফরিদপুরের টেকেরহাট ফেরিঘাট এলাকায় দুই টি লঞ্চ ডুবিয়ে দেয়-এগুলো দখলদার সৈন্যরা ব্যবহার করত। এর আগে
৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একই জেলার আমগ্রাম রোড ব্রিজের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পুলিশএর উপর হামলা চালায়। এতে ২ পশ্চিম পাঞ্জাবি পুলিশ নিহত হয়। একই দিনে হানাদার বাহিনী ফরিদপুরের পাকুল্লা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে হানা দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করে। এই যুদ্ধ চার ঘন্টা ধরে চলে। মুক্তিবাহিনীরা এতে ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ১৩ জন গুরুতর আহত হয় যাদের মধ্যে ৩ জন মাদারীপুর হাসপাতালে পরে মারা যায়। শত্রুরা ১ টি লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী
ফরিদপুরের রাজৈর এর অধীনে সাঙ্কেরদি এলাকায় হানাদার বাহিনীর প্যাট্রোলএ মুক্তিবাহিনী অতর্কিত হামলা করে। এই অপারেশনে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা গৌরনদী বরিশাল জেলার কিছু কর্মকর্তাসহ পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী একটি বড় লঞ্চ অতর্কিত হামলা করে এবং প্রচুর হতাহত হয়। তারা ১৯ টি রাইফেল, ১ টি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ দখল করে নেয়। লঞ্চ টি পরে ধ্বংস করা হয়। এক হাবিলদারসহ পনের জনসহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

১১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী যশোর জেলার ফকিরহাট এর অধীনে চুলকাটি হাইস্কুলে দখলদার সেনা ক্যাম্পে হামলা চালায়। যুদ্ধ বেশ কয়েক ঘন্টা চলে। ১০ জন শত্রু হতাহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ১১ টি রাইফেল (৩০৩) ও প্রচুর পরিমাণ গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলায় রামপাল এলাকায় ৬ ঘণ্টার একটি ভারী যুদ্ধে ৫ শত্রুসৈন্য হত্যা। তারা ৫ টি রাইফেল (৩০৩) এবং বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরঃ
মুক্তিবাহিনী ১৬ অক্টোবর রংপুরের বড় কিয়াটায় দখলদার বাহিনীর সাথে যুদ্ধে ৩ জন নিহত এবং এক শত্রুসৈন্য আহত হয়।

১৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী আমপারা এলাকায় শত্রু অবস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের ৩০ জন হতাহত হয়। ১৭ অক্টোবর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা রাইগাং এর কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ১৭ জনকে নিহত ও ১৫ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

১৫ অক্টোবর সকালে তারা একই এলাকায় ৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে এম্বুশ করে।

১৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের উপর অভিযান চালায়-এবং এতে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ১৮ জন আহত হয়।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম জেলার মিরেশশর এলাকার উপর একটি অভিযানে মুক্তিবাহিনী ৩০ জন নিহত ও ১০ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

১৮ অক্টোবরের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহের বাওরামারিতে পাকিস্তানি সেনাদের এক জেসিওসহ ১৮ শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং এক কর্মকর্তা আহতসহ ৬ জন আহত হয়।

মুক্তিবাহিনী ১১ অক্টোবর নেত্রকোনা মহকুমার বারহাট্টার কাছাকাছি নৌ ইউনিটের উপর আক্রমণ করে শত্রুর নৌকা ডুবিয়ে দেয়।
একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার আকাশরই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।
এসময় ১২ রাজাকার মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৪ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী ২১ অক্টোবর রংপুর জেলার সিঙ্গিমারি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে হামলা করে ১০ জন শত্রুসেনাদের হত্যা করে। এই অভিযানের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন আহত হয়।

২০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একই জেলার খেতিবারি এলাকায় প্রায় ৪০ জন সদস্যের একটি পাকিস্তানি দলে আক্রমণ করে। এতে তাদের ১১ জন হতাহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ১ জন নিহত হয়।
১৯ অক্টোবর গেরিলা কার্যক্রম এই সেক্টরে চলতে থাকে। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা খরিবারিতে হানাদার বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে ৭ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। একই দিনে তারা মুরাদপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সম্মুখীন হয় এবং ২ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।
দিনাজপুর জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা গোদাগড়িহাট এলাকায় হানাদার সৈন্যদের সঙ্গে একটি যুদ্ধে ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা একই দিনে হরগোবিন্দপুরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলে অতর্কিত আক্রমণে এক জন নিহত ও দুই শত্রুসৈন্য আহত হয়।

১৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার লালমনিরহাটের নিকটবর্তী স্থানে পাকিস্তানি সেনাঅধ্যুষিত স্থান আক্রমণে ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

১৭ অক্টোবর কুড়িগ্রামের কাছাকাছি ২ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। তারা কুড়িগ্রাম ও উলিপুর রেল ট্র্যাক ধ্বংস করে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে। একই দিনে তারা দিনাজপুর-সৈয়দপুর সড়কে পাট বোঝাই একটি পাকিস্তানী ট্রাক উড়িয়ে দেয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
২০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার মুকুন্দপুরে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানের উপর মর্টার অভিযান চালিয়ে ১ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

১৯ অক্টোবর নালুয়া এলাকায় হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা চালিয়ে ৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

১৮ অক্টোবর গুথুমা নদী এলাকায় শত্রুসৈন্য অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা চালিয়ে পাঁচ পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা নোয়াখালী জেলার পাগলিরকুল এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থান আক্রমণে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

১৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর ফুলগাজী এলাকায় ২ জনের প্রাণনাশ এবং ৪ শত্রুসৈন্যকে আহত হয়। এর আগে ১৬ অক্টোবর দুই পাকিস্তানি সৈন্য একই এলাকায় খুন হয়। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা শালদার এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর মর্টার হামলা চালায়। এতে ৮ শত্রুসৈন্য নিহত এবং দুইটি বাংকার ধ্বংস হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর:
২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার বাঘমারা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর কাছে ৯ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে।

২০ অক্টোবর তারা নাজিরপুর এলাকায় হানাদার সৈন্যদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে ২ শত্রুসৈন্য ও ৪ রাজাকার নিহত হয়।

১৭ অক্টোবর সিলেট ও চিয়াতাকে ২ টি বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করে ইলেকট্রিক সাপ্লাই ব্যাহত করা হয়। একই দিনে তারা ফুলপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনারাদের আক্রমণে ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনীর সেজালু এলাকায় ৩ জন শত্রু হত্যা করে এবং ১৮ অক্টোবর ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয় একটি অ্যামবুশে।

এর আগে ১৬ অক্টোবর একই এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে মুক্তিযোদ্ধারা ৩ শত্রুসৈন্য ও ৭ রাজাকার হত্যা করে ও ১৩ জন আহত হয়। জানা যায় যে পাকিস্তানি সামরিক কর্তৃপক্ষ মেজর মনসুর যে ঘুবরি এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর কমান্ডিং এর দায়িত্বে ছিল তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটা বিশ্বাস করা হয়, যে গেরিলা অপারেশনে অপারগতার জন্য তাকে সরান হয়। তাকে ১০ অক্টোবর ৭১ এ ৭ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হওয়ার জন্য দায়ী গেরিলাদের চেক করতে বলা হলেও তিনি ব্যার্থ হন।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৫ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী চট্টগ্রাম জেলার বরপারুয়ার কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। ১ জন অফিসারসহ ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী শত্রুদের থেকে ৪ টি এলএমজি দখল করে নেয়।
কুমিল্লায় ২০ অক্টোবর চৌদ্দগ্রাম নিকটবর্তী এলাকায় অন্য একটি অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা ৪ পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে।
১৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মিয়াবাজার এবং কুমিল্লা জেলার পানা পুকুরে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আঘাত হানে। এতে ১৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২ জন আহত হয়।
১৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াপুরের কাছে পাকিস্তানি সেনা অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণে ৫ জন শত্রু নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী শালদারে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ১৭ অক্টোবর ১ টি পাকিস্তানি সেনাদের গাড়ি নোয়াখালীর নতুনবাজার এলাকায় মুক্তিবাহিনীর মাইন দ্বারা ধ্বংস করা হয়। ৭ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ৩ জন এই বিস্ফোরণে আহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের রংপুর জেলার বড়খাতার কাছাকাছি এলাকায় আক্রমণ করে ২ জন হত্যা এবং ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়। ২১ অক্টোবর রাতে মুক্তিবাহিনী অমরখানা এবং দিনাজপুর জেলার গগদাল হাট এ একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সেতু ধ্বংস করে। ২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার চিন্তামনে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর মর্টার হামলা চালায়। ২ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের খুলনা জেলার বাকশা এলাকায় আক্রমণে ৪ জন হত্যা এবং ৬ জন শত্রুসৈন্যদের আহত হয়।

২৩ অক্টোবর পাকসেনারা যখন সাতক্ষীরা সাবডিভিশিনে কাকডাঙ্গার দিকে যাচ্ছিল এমন সময় দখলদার সৈন্যদের উপর মুক্তিবাহিনী অতর্কিতে মর্টার আক্রমণ করে। এতে ৪ জন নিহত ও ৫ জন মারাত্মক আহত হয়। এর আগে গত ১৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলার পাস্মেরি এলাকা থেকে শত্রু মোটর লঞ্চ দখল করে নেয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে:
২০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার মিরাশিয়ারে অভিযান চালিয়ে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ১৮ অক্টোবর রাতে মুক্তিবাহিনী ঢাকা-ময়মনসিংহ লাইনে রেল ধ্বংস এবং রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে। ১৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ঢাকা-ময়মনসিংহ এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। রাজাকারদের একটি দল ২১ অক্টোবর দেওয়ানগঞ্জ এ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৭ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

২৫ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট জেলার গয়ান-সারিঘাট সেতু উড়িয়ে দেয়। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী ২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর অভিযান চালায়। এতে বিশ জন নিহত এবং দশ জন আহত হয়।
২৩ অক্টোবর একটি এম্বুশে মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার জগদ্দলহাঁট এলাকায় ৯ জন শত্রুসেনা হত্যা এবং আট শত্রুসৈন্য আহত করে। একই দিনে তারা দিনাজপুর জেলার টেঙ্গুরিয়াতে পাকিস্তানি টহলে আক্রমণে ৬ জনকে হত্যা করে ও চার জনকে আহত করে। মুক্তিযোদ্ধারা এছাড়াও বর্নি এলাকাতে (কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা)শত্রু অবস্থানে আক্রমণে এক হানাদার সৈন্য হত্যা করে। এর আগে ২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার রায়গঞ্জএ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধে জড়িত হয় এবং শত্রুর দিকে বাইশ জন হতাহত হয়।

রিপোর্ট করা হয়েছে যে 23 অক্টোবর হানাদার বাহিনী একটি বাংকার গড়তে আলীনগর গ্রামের ঘর থেকে টিন শেড খুলে নিয়ে যায়।

২৩ অক্টোবর ময়মনসিংহের বারহাট্টাতে গেরিলারা শত্রুসৈন্যদের আক্রমণে চার অনিয়মিত সেনা হত্যা করে।
এর আগে
২১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট জেলার কালনী এলাকায় হানাদার সৈন্য বহনকারী দুটি নৌকা ও একটি লঞ্চ ডুবয়ে দেয়।
২১ অক্টোবর শত্রুসৈন্যরা রংপুর জেলার জয়মনিরহাটে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করে। কিন্তু আমাদের বীর যোদ্ধারা সফলভাবে তা প্রতিহত করে। তাদের এক কর্মকর্তা, দুই JCOসহ প্রায় চল্লিশ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করা হয়। ২০ জন আহত হয়। এর আগে ২১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর জেলার ভুরুঙ্গামারী পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে। তারা এই অভিযানে দশ শত্রুসৈন্য নিহত এবং এক হানাদার বাহিনীর জীপ দগ্ধ করে।
২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মৃধারবাজারে আক্রমণ করে এক কর্মকর্তাসহ তাদের দশ জনকে হতাহত করে। প্রতিহিংসামূলকভাবে বর্বর শত্রুসৈন্যরা গ্রামবাসীর ঘর পুড়িয়ে দেয়।
স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৮ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ২৪ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ভবানীপুরের কাছাকাছি রেলওয়ে কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলে। ২৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী বৈদ্যনাথপুরে পাকিস্তানি টহলে আঘাত হানে। ৩ জন সৈন্য নিহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: ২৬ অক্টোবর বীর মুক্তিযোদ্ধারা সফলভাবে খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার ভারটিয়া গ্রামে শত্রুসৈন্যদের আক্রমণ করে। এসময় তারা ৮ জন নিহত ও আরো অনেক শত্রুসৈন্য আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন এই যুদ্ধে নিহত হয়।

২৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর থানা আক্রমণে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।
২৩ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা পাটকেলঘাটা এলাকায় হানাদার সৈন্যদের সঙ্গে একটি সম্মুখযুদ্ধে ১৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা ২ য় সপ্তাহে খুলনার আশাশনি এলাকায় রাজাকার ক্যাম্পে হানা দেয়। তারা ৬৪ জন রাজাকার নিহত এবং ৩৫ জন আহত হয়। ৬ টি রাইফেলস গেরিলারা দখল করে।

২৩ অক্টোবর মুক্তি বাহিনী ফরিদপুরের ভেদেরগঞ্জ হানাদার বাহিনীর উপর অভিযান চালায়। এই অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধারা নিয়মিত সৈন্য, প্রাক্তন সামরিক স্টাফ ও পাকিস্তানের পাঞ্জাবি পুলিশসহ একশত পঞ্চাশ জন শত্রুদের হত্যা করে। আরো ৯ জন মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিবাহিনী দু’শো চীনা রাইফেল, দুই টি LMG জব্দ করে। এই অপারেশনে আমাদের এক জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

অক্টোবর এর ১ ম সপ্তাহে হানাদার সৈন্যরা ঝালকাঠি থেকে বরিশাল জেলার কাওখালি মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প আক্রমণের জন্য যাচ্ছিল। কিন্তু বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে গেরিলারা তাদের যোগ্য জবাব দিয়েছিল। এতে ১৮০ জন শত্রু আহত ও ৩৫ জন নিহত হয়। আব্দুল মালেক, বানাদগুল ও পেশোয়ার জেলার জান গুল নামে ৩ জন শত্রুসৈন্য মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা এছাড়াও বিভিন্ন LMG ও একটি বৃহৎ পরিমাণ গোলাবারুদসহ আট টি রাইফেল দখল করে নেয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর-
২১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা জেলার সালদানদী এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর মর্টার হামলা করে। এতে সাইত্রিশ হানাদার সৈন্য নিহত এবং তাদের ত্রিশ জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী সাল্গার ও শ্রীপুর এলাকায় শত্রুসৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। এই সম্মুখ যুদ্ধ দুই ঘন্টার জন্য অব্যাহত ছিল। শত্রুদের পঞ্চাশ জন নিহত হয়। এবং আরো অনেক আহত হয়। এসময় দুই জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
মুক্তিবাহিনী ২০ অক্টোবর আমজাদের বাজার ও কুমিল্লার জগন্নাথ দীঘির মধ্যে শত্রুসৈন্য অবস্থানে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ২৮ জন নিহত এবং বারো জন আহত করে।
২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর ফেনী মহকুমার মুন্সিরহাট এলাকায় রাজাকারদের চৌকি আক্রমণ করে তাদের পনের জন আটক করে এবং চার টি রাইফেল জব্দ করে।
২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর ফুলগাজি এলাকায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে এম্বুশে দুই জন শত্রুসৈন্য হত্যা এবং ৩ জন আহত করে। এর আগে ১৮ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা একই জেলার নোয়াপুরে সেনা অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা চালায় এবং পাঁচ জন নিহত ও ৯ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। এবং চার টি বাংকার ধ্বংস করা হয়। একই দিনে তারা সালদার এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে হামলা চালায়। এক হানাদার সৈন্য নিহত এবং দুই জন আহত হয়েছে।
১৭ অক্টোবর মুক্তি বাহিনী নোয়াখালীর নতুনবাজার মাইন বিস্ফোরণ করে শত্রুসৈন্য বহনকারী একটি ট্রাক বিধ্বস্ত করে। একই দিনে তারা একই জেলার বদরপুর এলাকায় এক জন শত্রুসৈন্য নিহত ও দুই জন আহত করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর-২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার আহমেদনগর-রাংটিয়া এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরণে এক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্স

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৯ অক্টোবর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ২৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কায়ুমপুর এলাকায় মর্টার দিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের উপর হামলা চালায় এবং ৬ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

২৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী আনন্দপুরে gএরিলা হামলায় ৪ সৈন্য নিহত এবং ২৪ অক্টোবর ৩ জন আহত করে।
মুক্তিবাহিনী গেরিলারা পরশুরামে হানাদার বাহিনীকে অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। একই দিনে, রাজাপুরের কাছাকাছি শত্রুসৈন্যদের ওপর অন্য অতর্কিত আক্রমণে ৪ জন শত্রু হতাহত হয়। এর আগে
২০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা রাজামার দীঘি এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণ করে ১০ জন নিহত ও ১১ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে আহত হয়।
২১ অক্টোবর চাদস্রিতে পাকসেনাদের উপর অতর্কিত আক্রমণে ৬ জন নিহত ও তিন শত্রুসৈন্য আহত হয়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন মতে বাতিসাতে পাক অবস্থানে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ১০ জন পাকসেনা নিহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: গত সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা আন্দুলবেরিয়ার ২ মাইল পূর্বে পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী ট্রেন মাইন বিস্ফোরণে ট্রেনের তিনটি বগি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ইঞ্জিন লাইনচ্যুত হয়। বিস্ফোরণের পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলি করে এবং ৫০ জন শত্রু হতাহত হয়।
২৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা গোয়ালা আটি আক্রমণে প্রচুর পাকসেনা আহত করে। এর আগে ১৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী গোয়ালা আটিতে একটি যুদ্ধে দখলদার সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলিতে ১৭ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।
২৪ অক্টোবর কুষ্টিয়ার শিকারপুর এলাকায় ১৫ টি রাইফেল ও ২৪ জন রাজাকারদের আটক করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা রায়গঞ্জে পাকিস্তানের সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৯ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। একই দিনে, গেরিলারা ফরিদপুরে একটি কৌশলগত সড়ক সেতু ভেঙ্গে ফেলে শত্রুর যোগাযোগ ব্যাহত করে। ২৪ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী লালপুর থানা আক্রমণে অস্ত্র ও প্রচুর গোলাবারুদসহ আট রাজাকার আটক করেন।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মর্টার দিয়ে পাক অবস্থানের উপর কুমিল্লা জেলার নয়নপুরে আক্রমণ করে ৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। একই দিনে, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা গিলাতলায় ৩ সৈন্য হত্যা করে অ্যামবুশে।
জয় নগরে অন্য একটি অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনী ২ জন নিহত এবং ৩ পাকিস্তানি সৈন্য আহত হয়।

২৬ অক্টোবর ছাগলনাইয়াতে এক পাকিস্তানি আর্মি ট্রাকে মুক্তিযোদ্ধারা মাইন দিয়ে ধ্বংস করে। এতে সাত নিয়মিত পাকিস্তানি সৈন্য এবং পাঁচটি অনিয়মিত ফোর্স নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী আবারকাল্ট এলাকায় পাকিস্তান বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে পাকসেনাদের প্রচুর হতাহত করে এবং পরে শত্রুরা তাঁদের অবস্থান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। এর আগে মুক্তিবাহিনী এই এলাকায় অনেক অভিযান চালায়।

২২ অক্টোবর এক অভিযানে অনিয়মিতসহ একুশ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ১৯ অক্টোবর সকালে পাকসেনাবহনকারী একটি বাস মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দেয় এবং শত্রুদের ১৫ জন আহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
২৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা জগতপুর এলাকায় একটি পাকিস্তানি টহলে অতর্কিত আক্রমণে ৯ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও ৪ জন আহত হয়। ২৪ অক্টোবর সকালে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ৫ জন শত্রুকে হত্যা করে। ২৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভালদাওতে পাক প্যাট্রোলে অতর্কিত আক্রমণ করে এবং এক পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। একই দিনে, মুক্তিযোদ্ধারা বাজুমারার কাছাকাছি পালানখালিতে ১২ টি রাইফেলসহ ১৩ জন রাজাকারকে আটক করে। প্রায় একই সময়ে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের লালমনিরহাঁট আক্রমণ করে ৫ জন শত্রু হত্যা করে। তারা কিছু চিনা অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী রংপুর জেলার বনারিপারা এবং সুকর্নপুকুরে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা ৪ কর্মকর্তাসহ ৪৮ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। একটি বিশেষ পাকসেনাদের বহনকারী ট্রেন মাইন বিস্ফোরণে আক্রান্ত হয়।

১৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পত্নীতলার কাছে পাকসেনাদের অবস্থানে গেরিলারা অভিযান চালায়। এতে ১৭ জন অনিয়মিত ও ৬ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। আমাদের ২ জন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
২৮ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী গোয়ালাহাটে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আক্রমণ করে। এতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ১৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা দস্তানিয়া এলাকায় ৫ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৭ জন আহত হয়।

২৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী যশোর জেলার গোদখালি-নভারনের মধ্যে রেলওয়ে ট্র্যাক উড়িয়ে দিয়ে শত্রুর যোগাযোগ লাইন ব্যাহত করে। একই দিনে
মুক্তিযোদ্ধারা ছুরমানকাঠিতে ১৪ রাইফেলসহ ১৮ জন রাজাকার বন্দি করেন।

২৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী রামনগর এলাকায় পাক প্যাট্রোলে অতর্কিত হামলা করে এবং ৩ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। বেতুল্লি এলাকায় অতর্কিত আক্রমণে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সৈন্য ও ৩ শত্রুসহযোগিতাকারী রাজাকার হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী পদ্মাশঙ্কা তাদের অবস্থানের উপর আক্রমণ প্রতিহত করে। এতে ৮ জন সেনা নিহত হয়।

২৪ অক্টোবর কুতুবদিয়াতে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে ৪ জন অনিয়মিত ও ১ পাকসেনা নিহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা নকলা, নালিতাবাড়ী, পূর্ব ধলা, দুর্গাপুরসহ ময়মনসিংহ জেলার কয়েকটি থানায় অপারেশনের সময় ১০ অনিয়মিত শত্রু নিহত এবং কিছু অস্ত্র দখল জব্দ করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আকাশারি ও প্রিত্নির কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণে শত্রুসৈন্যদের ১০ জন হতাহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা,
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৫ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের ঢাকা শহরের ও তার চারপাশে গেরিলা কার্যক্রম সামরিক কর্তৃপক্ষ ও তাদের সহযোগীদের মধ্যে একটি প্যানিক তৈরি করেছে।

২২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ঢাকার তেজগাঁও থানার কাছে একটি নৌকায় গমনরত পাকসেনাদের উপর আক্রমণ করে। এতে ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৬ জন আহত হয়েছে। নৌকা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ঢাকা শহরের ২০ মাইল উত্তরাঞ্চলে জয়দেবপুর এলাকায় গেরিলারা একজন হানাদার সৈন্য হত্যা করে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের বৈদ্যুতিক ও শিল্প নদী শীতলক্ষ্যার উপর সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার পাওয়ার সাপ্লাই ইনস্টলেশনের ক্ষতি করে। এতে ৯ ঘণ্টা ডেমরা কাঞ্চন শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে।

১৮ অক্টোবর গেরিলারা পিলখানা, যেখানে ২৫ শে মার্চের আর্মি ক্র্যাক ডাউনের আগে হেডকোয়ার্টার ছিল, ইপিআর সদর দপ্তরের কাছাকাছি মাইন সেট করে ৪ জনকে হত্যা করে। বর্তমানে এটি পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার্স সদরে অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটা জানা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার অদূরে মর্টার হামলা চালায়। নারায়ণগঞ্জ ঢাকা মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এবং বাণিজ্যিক শহর-বিভিন্ন রেলওয়ে, কালভার্ট ধ্বংস এবং বিভিন্ন স্থানে রেললাইন সরানোর দ্বারা ইতোমধ্যে তারা ট্রেন যোগাযোগ ব্যাহত করে। গত সপ্তাহে ১০ জনকে হত্যা করা হয় যাদের পরিচয় লক্ষণীয়ভাবে সেনা কর্তৃপক্ষ গোপন রাখে এবং তারা ৮ জনের হতাহতের ঘোষণা করে।

কুমিল্লা জেলায় ২৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী সিম্পুর এলাকায় ২ সৈন্য নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়।

২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার কোটেসশর এলাকায় হানাদার বাহিনীর অবস্থানের ওপর মর্টার দিয়ে আক্রমণ করে। এতে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি থানায় অভিযান চালিয়ে ৪ টি রাইফেল জব্দ করে। মেহার, ফরিদগঞ্জ এবং মতলবে রাইফেলসহ ৫ রাজাকার আত্মসমর্পন করে।

২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী আরবপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণে ৩ জন নিহত এবং ৮ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী যশোরের সাঞ্চানগা এলাকায় আরেকটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ করে ৩ নভেম্বর। আরেকটি দল অ্যামবুশ করার চিন্তা করে। তারা মর্টার সঙ্গে গোলাগুলি করে। পরবর্তীতে তারা সৈন্য পালিয়ে যায়। এতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর তিনটি চীনা রাইফেলস দখল করে নেয়। মুক্তিবাহিনীর টেলিফোন তারের অপসারণ করে এবং বিভিন্ন টেলিফোনের খুঁটি নষ্ট করে বাগদাঙ্গা এলাকায় টেলি-যোগাযোগ ব্যাহত করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এখানে হানাদার বাহিনী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সিলেট জেলার গোয়াইন এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে যুদ্ধে ২৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। রাজাকারদের বিপুলসংখ্যক নিহত হয়। ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা হতাহত হয়।
১ লা নভেম্বর মুক্তিবাহিনী মাইন বিস্ফোরণে ময়মনসিংহ জেলার বিরিশিরি-বিজয়পুর রাস্তায় এক জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার শ্রীবর্দি থানার ভায়াডাঙ্গাতে আক্রমণে ১০ জন শত্রুকে হত্যা করে।

৩ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ভায়াডাঙ্গা-স্রিবর্দ্দি এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিঘ্নিত করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর মুক্তি বাহিনী নান্দিনা পুলিশ ক্যাম্পে আক্রমণে দুই পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ও ৪ রাজাকাররা হত্যা করে।

স্বাঃ /-দুষ্পাঠ্য
পাবলিক রিলেশন অফিসার
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৬ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহে ছাতলাপুরে অভিযান চালিয়ে ৬ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ১ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে এই সময়কালে মুক্তিবাহিনী আনন্দপুরে ৮ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ১ নভেম্বর ধূলিরগাও এলাকায় মুক্তিবাহিনী অভিযান চালায়। এতে তারা ১২ শত্রুসৈন্য ও বহু রাজাকারদের হত্যা করে।

৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ধূলিরগাও এলাকায় ৪ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে একই এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্য বহনকারী নৌকায় অতর্কিত আক্রমণ করে এবং নৌকা ডুবে যায়। এতে ৪ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং কিছু গোলাবারুদ দখল করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদনে ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলারকেন্দুয়া থানার বসুদেববাজারে হানা দিয়ে তারা ১২ টি রাইফেল ও ৪ রাজাকারকে আটক করেন।

ঢাকা-কুমিল্লা-নোয়াখালী সেক্টর:
১ নভেম্বর কাহুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিত আক্রমণে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও তিন জন আহত হয়। ২ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার কিম্পুরে সেনা অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা চালায় এবং ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং চার জন আহত হয়। হানাদার বাহিনী ২৯ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার নিলখির মধ্যে মুক্তিবাহিনীর একটি ইউনিট অভিযান করার সময় বীরত্বপূর্ণ মুক্তিবাহিনীর হাতে ৪০ জন শত্রু নিহত হয়। এটি ৩ ঘণ্টা ধরে চলে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন ছোটখাট আঘাত পায়। নোয়াখালী জেলার দুবলাচাঁদপুর এলাকায় অতর্কিত হামলায় ২৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ১২ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ দখল করে নেয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী নোয়াপুর এলাকায় ৬ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। তারা শত্রুর ২ টি বাংকার ধ্বংস করে। এর আগে ২৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ফেনী মহকুমার কোতোয়ালী এলাকায় আক্রমণ করে এবং ৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং একটি বাঙ্কার সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২৪ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা জেলার হরিরামপুর থানার অধীনে লেসরাগঞ্জ এর পাকিস্তানি আর্মি ক্যাম্পে হানা দিয়ে ৪ ঘন্টার যুদ্ধে নিয়মিত পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকারসহ ৮০ জন শত্রু হত্যা করে। তাদের পঞ্চাশ জনকে বন্দী করা হয় এবং তাদের দ্বারা ব্যবহৃত সিগনাল সেন্টার ধ্বংস করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩ টি মেশিন গান এবং প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

২৪ অক্টোবর ১ টি পাকিস্তানী আর্মি ট্রাক মুক্তিবাহিনী দ্বারা মাইন বিস্ফোরণের স্বীকার হয়। এটি ছিল কুমিল্লা-দাউদকান্দি রাস্তায়। এতে ৬ জন শত্রু নিহত এবং ট্রাক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এর আগে ২৩ অক্টোবর মাইনে তিন শত্রুসৈন্য দাউদকান্দি থানা এলাকায় নিহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
২ নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর জেলার টুনিরহাট আক্রমণে ১০ জন শত্রু হতাহত করে। ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা নাজিমএর কাছে ৩ টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ, ২ জন রাজাকার আটক করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ২১ অক্টোবর আলিন্ধি এলাকায় হানাদার বাহিনীকে অ্যামবুশ করে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং এক জন আহত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৭ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

মুক্তিবাহিনী সফলভাবে ৫ নভেম্বর রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের বাঁটারা এবং মোহনপুর ফাঁড়ি থেকে দখলদার সেনাদের তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়। মুক্তিযোদ্ধারা এখন এই দুটি পোস্টের নিয়ন্ত্রণ করছে। এই পোস্ট ধরে রাখার জন্য তাদের অভিযানের সময়, এক জন শত্রুসেনা নিহত ও ১ জন আহত হয়। দুই চীনা রাইফেল, এবং এলএমজি এবং রাইফেলসহ বেশ কিছু রাজাকার বন্দী করা হয়। মুক্তিবাহিনী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে নোয়াখালী জেলা (চৌমুহনী বাদে) পশ্চিম অংশে একটি সুবিশাল এলাকা সাফ করে। মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনী তাড়িয়ে গতকাল কুষ্টিয়ার ধর্মনন্দ এবং পলাশীপারা দখল করে। ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বার্নি এবং ডাক্তারবাড়ি-সিলেট জেলার-তাদের নিয়ন্ত্রণে আনে-এতে ২৩ জন নিয়মিত পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
২৯ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একটি টহল দলের উপর আমরখানা এলাকায় বাংকার খননের সময় পাক বাহিনীর উপর হামলা চালায়। ৫ জন শত্রু নিহত হয়। ৩ জন অন্যান্য সৈন্য আহত হয়। পাকসেনাদের দুটি মৃতদেহ ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়।

২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একটি পাক যানবাহনে অ্যামবুশ করে এবং একটি জীপ এবং একটি ট্রাক ধ্বংস করে। এতে ২৫ জন পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্য প্রাণ হারিয়েছে। পাঁচ জন শত্রুর মৃতদেহ এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনী উদ্ধার করে। তাছাড়া চীনা অস্ত্রের একটি বড় অংশ দখল করে।

৩০ অক্টোবর রাতে দুই সাহসী মুক্তিবাহিনীর গেরিলা আক্রমণ করে জয়মনির হাটডাক বাংলোতে। সেখানে ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একজন মেজর আব্দুল্লাহ আকবর ছিল এবং ঘটনাস্থলেই তাকে হত্যা করা হয়। এই সাহসী ছেলেরা সেনাবাহিনীর মূল্যবান কাগজপত্র দখল করে নেয়। এই নথিতে তথ্য পাওয়া যায় যে শত্রুদের নৈতিক বল খুব কম এবং পাকসেনা কর্মকর্তাদের পাসপোর্ট সিজ করা হয়েছে যাতে তারা ত্যাগ না করতে পারে।

৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী চকচান্দিতে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে ২৫জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা চরকাই এবং রংপুর জেলার ছিটামন এর মধ্যে টেলিফোন তার নষ্ট করে টেলিযোগাযোগ ব্যাহত করে। এর আগে ৩ নভেম্বর তারা চরকাই এবং ঘোরাঘাট এর মধ্যে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে। বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী একটি বিশেষ পাকিস্তানি সেনা বহনকারী ট্রেন ভারতখালি-বনারপারা এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা পারা মাইন এর বিস্ফোরণের কারণে বিধ্বস্ত হয়। রেল ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ৬ টি বগি লাইনচ্যুত হয়। তারপর তারা ট্রেনের ৫০ জনের বেশী শত্রুসৈন্যদের হত্যা গুলি করে হত্যা করে।

সিলেটে জেলা মুক্তিবাহিনী ৫ নভেম্বর বাগবার এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখীন যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে এক রাজাকার বন্দী হয়। ৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ইলেকট্রিকসাপ্লাই লাইন ধ্বংস করে মৌলভী বাজার শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত করে। মুক্তিযোদ্ধারা ২ নভেম্বর রঙরাতে ১২ টি রাইফেল দিয়ে ৮ জন রাজাকার আটক করে।

১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোরের নোয়াপারাতে অ্যামবুশে ৬ জন শত্রুসেনা নিহত ও ৪ জন আহত করে। ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চান্দিপুরে আক্রমণে ২১ টি রাইফেলসহ ৯ কোন রাজাকার আটক করে।

ঢাকার মুক্তিবাহিনীর কাছ থেকে প্রাপ্ত একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী তারা ২৬ অক্টোবর হানাদার সৈন্যদের উপর অ্যামবুশে দুটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত করাসহ মনোহরদী থানা ও হাতিরদিয়াতে ৮ জন নিহত ও অনেককে হতাহত করে। ২ টি গাড়ি পুরো ধ্বংস হয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে অক্টোবরের প্রথমার্ধে মুক্তিবাহিনী ঢাকা জেলার একই থানার দশদোনাতে ১২ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ঢাকা জেলার কালিয়াকৈরে মাইন বিস্ফোরণে শত্রুসৈন্য বহনকারী একটি গাড়ির এক মেজর এবং ক্যাপ্টেনসহ ১৭ দখলদার সৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ২৫ রাজাকার নিহত এবং একই এলাকায় ২৩ টি রাইফেল জব্দ করে।

৩ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার বকশীগঞ্জে-আলিপুর রাস্তায় এক আর্মি ট্রাক মাইন বিস্ফোরণে ৯ জন নিহত হয়।

২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী মিফিল অন্দহ এবং মাহমুদপুর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ৪ শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দখলদার সেনাদের বহনকারী দুটি রেলওয়ে বগি মুক্তিবাহিনীর দ্বারা পাড়া মাইন বিস্ফোরণের কারণে ধস হয় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল রুটের মাসাখালির কাছাকাছি অংশ সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ৪ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এই সময়কালে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা ৭ জনকে নিহত ও ৪ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বিভিন্ন রেলওয়ে ব্রিজ ও কালভার্ট ধ্বংস করায়, ঢাকা ও ময়মনসিংহ মধ্যবর্তী সমগ্র রেল রুট জুড়ে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের পাত সরানোয় ঢাকা ও ময়মনসিংহের রেল যোগাযোগ ধ্বংস হয়। রাইফেলসহ ৩৮ রাজাকারকে ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও এলাকায় বন্দী করা হয়। ভালুকা এলাকায় গত সপ্তাহে ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত, ২০ টি রাইফেলসহ ১০ রাজাকারকে বন্দি করা হয়।

স্বাঃ / নাজিউল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৮ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-
মুক্তিবাহিনীর গত শনিবার ময়মনসিংহ জেলার হানাদার সৈন্যদের তেলিখালি পোস্ট দখল করে। এতে দখলদার বাহিনীর ভারী মর্টার দিয়ে আক্রমণের চেষ্টা ভেস্তে যায়। বরং তারা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বিপুল ভাবে হতাহত হয়। পোস্ট টি দখল করার পর শত্রুদের ৩০ টি লাশ পাওয়া যায়। মুক্তিবাহিনী ১ টি এল এম জি, একটি ২ ইঞ্চি মর্টার এবং ৮ টি রাইফেল (৩০৩) দখল করে।

৩০ অক্টোবর মুক্তি বাহিনী নৌ-কমান্ডোরা কুমিল্লা জেলার চাঁদপুরের লন্ডনঘাঁট ২ ক্রেন বিশিষ্ট আমেরিকান ফ্রিগেট Loren ডুবিয়ে দেয়। এটি অস্ত্র ও গোলাবারুদ চাঁদপুরে unload করছিল। মাইনে লন্ডন ঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাহাজ এবং ৫ জন সেন্ট্রি ক্রু ডুবে মরে। এর আগে ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযান চালিয়ে ৩ টি রেল ওয়াগন পুড়িয়ে দেয়। বুরমাহতেতেলের ডিপোতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই সময়ে ৩ টি বোট পাকিস্তানি সেনাদের জন্য বিপুল পরিমাণ গম বহন করে। মেঘনা নদীর মধ্যে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা এগুলো আটক করা হয়। এগুলো চাঁদপুর থেকে রায়পুরা নেয়া হচ্ছিল।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনী ২১ অক্টোবর ঢাকা জেলার মনোহরদীতে হানাদার বাহিনীর অবস্থানে হানা দিয়ে ২৫ জন নিহত ও একজন জে সি ওসহ তিন জনকে আটক করে। তারা ৪৫ টি রাইফেল, ২ টি মেশিনগান এবং একটি বাইনোকুলার জব্দ করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে ২৬ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ঢাকা জেলার HATLRDIA থানায় আক্রমণ করে ৮ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও অনেক শত্রু আহত হয়।

৩০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর হাজতখোলায় অ্যামবুশে শত্রুসৈন্যদের উপর আক্রমণে ক্যাপ্টেনসহ ৩৫ জনকে হত্যা করে। রেন্জার্স এবং অনিয়মিত সৈন্যসহ কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। ৩১ অক্টোবর কুমিল্লার বিজয়পুরে অতর্কিত হামলায় ১৩ জন নিহত এবং ২১ শত্রুসৈন্য আহত হয়। এই সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন প্রাণ দেন। ২৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী পাবনা-বগুড়া এলাকায় সাঘাট্টায় এম্বুশে কর্নেল রহমাত খান ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সুবেদার নবাব আলিকে হত্যা করে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী হামলায় পাকিস্তানি সেনা মোল্লাহাট থানার চাকুলিয়াতে ২৬ অক্টোবর থেকে পরপর ৩ দিন যুদ্ধ চালিয়ে এক কর্মকর্তাসহ শতাধিক শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা জেলার আশাশুনি এবং চাপড়া এলাকায় ১৭ টি রাইফেলসহ ১৮ জন রাজাকার আটক করেন। মুক্তিযোদ্ধারা তুশখিয়ালিতে অক্টোবরের শেষ পনেরো দিন ১২ জন রাজাকার আটক করে এবং বরিশাল জেলার মঠবাড়িয়াতে ১৫ টি রাইফেল, ৪ পাঞ্জাবি পুলিশসহ ১৮ জন রাজাকার বন্দি করে।

মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টেরনথি থেকে জানতে পারে যে পাকসেনারা বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকার নিরস্ত্র ও অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর ধর্ষণ ও ডাকাতি অব্যাহত রেখেছে। মানুষ নির্বিচারে হত্যা ও চলতে থাকে। এই তথ্য একটি চিঠি নং ০১০১/১৩/ এ / সি এস তারিখের ২৫ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ২০ অক্টোবর ৭১, ক্যাপ্টেন গোলাম মোস্তফা, রেজিমেন্টের অ্যাডজুট্যান্ট স্বাক্ষরিত থেকে প্রাপ্ত হয়।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ বাহিনী।
বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৯ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

রংপুর-দিনাজপুর রাজশাহী সেক্টর:
৩ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দাউদপুর এলাকায় অ্যামবুশে অনিয়মিত বাহিনীর ৫ জন এবং ৭ জন পাকসেনা হত্যা করে। এই অপারেশনে আমাদের ১ জন যোদ্ধা প্রাণ হারায়। ৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকসেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করে চান্দিপুর এর কাছাকাছি এবং দুই রাজাকার নিহত হয়। ৯ জন রাজাকার ও ২১ টি রাইফেল আটক করা হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা শ্যামপুর এর কাছাকাছি একটি পাক টহল অতর্কিত আক্রমণে দুই জন পাকসেনাকে এবং এক অনিয়মিত সৈন্যকে হত্যা করে। এটা ছিল ২ নভেম্বর। মুক্তিযোদ্ধারা আকিলপুরের কাছাকাছি আরেকটি মিশ্র পাক টহল অতর্কিত আক্রমণে সাত অনিয়মিত সৈন্য নিহত ও তিন জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর:
৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হান্সাদহ এবং কোটচাঁদপুর এর মধ্যে ২০০ মিটার টেলিফোন তার ধ্বংস করে। তারা চুয়াডাঙ্গা ও দর্শনার মধ্যে টেলিফোনের খুঁটি ধ্বংস করে। সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা নবীনগরে পাকসেনাদের ও রাজাকারদের ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ৩ নভেম্বর তাদের প্রচুর হতাহত হয়। দুইটি লাশ ও ৬ টি রাইফেল রেখে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। ২ নভেম্বর হাকিমপুরে পাকসেনা ও রাজাকারদের উপর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে ৬ রাজাকার নিহত এবং তিনজন আহত হয়। আমরা এই সম্মুখযুদ্ধে আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জনকে হারাই।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা হাজতখোলা ও লালমারির কাছে পাকসেনা ও রাজাকাররাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে ক্যাপ্টেনসহ ১৫ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ২০ জন আহত হয়। বিজয়পুর এলাকায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত হামলায় ২০ জন আহত হয়। আমাদের ১ জন নিহত ও ১ জন আহত হয়। ৩ নভেম্বর পরশুরাম এলাকায় পাক অবস্থানের ওপর মর্টার হামলায় ৫ পাকসেনাকে হত্যা করে ও ৬ জন আহত হয়। ১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বেলছাড়ি এলাকায় পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং দুই জন পাকসেনাকে হত্যা করে এবং পাঁচ জন আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট-মৌলভীবাজার সেক্টর: ৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আসগরাভারে পাকসেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্প অভিযান চালিয়ে তাদের হতাহত হয়। এ অপারেশনে দুটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। ২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আলীনগর এলাকায় পাক বাহিনী ও রাজাকারদের একটি দলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তিন পাকসেনা নিহত এবং ৫ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ১ নভেম্বর ফুলপুর ও হালুয়াঘাট এর মধ্যে টেলিফোন লাইন ধ্বংস করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১০ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

যশোর-কুষ্টিয়া-খুলনা সেক্টর:
মুক্তিবাহিনী গত মঙ্গলবার খুলনা জেলার বেতাগি এর মধ্যে হানাদার বাহিনীর সাথে গুলি করে ৫ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এর আগে ৮ নভেম্বর হানাদার বাহিনী হঠাৎ কৈখালী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর ২ জনকে হত্যা করে এবং অনেক শত্রুসৈন্য আহত হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে গোপালগঞ্জ মহকুমার কাশিয়ানী থানার ফুকরার কাছাকাছি পাকিস্তানি সেনা এবং রাজাকারদের উপর অ্যামবুশ করে। এতে ১২ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও ১৫ জন রাজাকার নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৭ নভেম্বর একই জেলার শাহাপুরে ৩ রাইফেল সহ ৩ জন রাজাকারকে বন্দী করে। ৩ নভেম্বর যশোর জেলার চুরামনকাঁঠি এলাকায় রেললাইন মাইন দিয়ে ধ্বংস করে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে। তারা একই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনুপযোগী কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাইলন উড়িয়ে দেয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর:
৬ নভেম্বর পাহাড় পুকুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। ১০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এই অপারেশনের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন নিজের প্রাণ দিলেন। একই দিনে রংপুর জেলার কারনাই এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা ৫ টি রাইফেল ও ৮ জন রাজাকার আটক করে।

৭ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার গোসাইগঞ্জিহাটে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত হামলা করে এক শত্রুসৈন্য নিহত ও তিন জন আহত করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই মাসের ১ম সপ্তাহে কালীগঞ্জ-ব্রত্মারি এবং হাতীবান্ধা-ব্রত্মারি এলাকার মধ্যে রেললাইন সরিয়ে রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর:
৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার সালদানদীতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণে ২ জনের প্রাণনাশ এবং ৪ শত্রুসৈন্য আহত হয়।
একই দিনে, কায়ুমপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আগে ৬ নভেম্বর মাইন বিস্ফোরণে চন্ডিধর এলাকায় দুই শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনীর মর্টার আক্রমণে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও চারজন আহত হয়। ২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পানছোড়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্যাট্রোল এ অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। পরের দিন, নয়নপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী ৩ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। চান্দলা এলাকায় অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনী ২ নভেম্বর ২ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী এটা জানা যায়।

২৮ অক্টোবর ঢাকা জেলার আড়াইহাজার এলাকায় রাইফেলসহ ২ জন রাজাকার বন্দী করা হয়। ৩০ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার মিয়াবাজার এ অভিযানে পাকিস্তানি সেনাদের ৪ জন নিহত এবং ৭ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর:
৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর মহকুমার মেলান্দহ-মাহমুদপুর এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এই সংঘর্ষের সময় এক জেসিওসহ ১২ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং চারজন আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ১ জন প্রাণ দেয়। এর আগে ২৭ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় সাত শত্রুসৈন্য খুন করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনী ২৪ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করে এবং ১০ শত্রুসৈন্য আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ১ জন নিহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১১ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ২১ অক্টোবর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বাজিতপুর থানা দখল করে রাজাকারদের এলাকা ক্লিয়ারিং করে। অপারেশনের সময় মুক্তিযোদ্ধারা কিছু গোলাবারুদ ও ১৭ টি রাইফেল দখল করে নেয়। স্মরণ করা যেতে পারে যে মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার ১২ টি থানার মধ্যে 8টি পুলিশ স্টেশন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। রেল ও সড়ক যোগাযোগ উপবিভাগীয় হেডকোয়ার্টার সংযোগপথ ধ্বংস করা হয়েছে। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী উপ বিভাগীয় শহরসহ অবশিষ্ট 3 টি থানা ধরে রাখার জন্য মুক্তিবাহিনী ও শত্রু সৈন্যের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায় যে কিছু সংখ্যক রাজাকারদের এই এলাকায় ধরা হয়েছে। ২৬ অক্টোবর একটি সফল কমান্ডো হামলায় মুক্তিবাহিনীর একটি বিশেষ টিম ময়মনসিংহ জেলার জগন্নাথগঞ্জ ঘাট এবং সরিষাবাড়ীর মধ্যে পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী ট্রেনের ৫ টি বগি লাইনচ্যুত করে। হানাদার বাহিনীর এতে ৪০ জন হতাহত হয়।
8 নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে বিয়াডাঙ্গা এবং স্রিবর্দির মধ্যে। এতে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। পরদিন ৭ রাইফেলসহ ৬ রাজাকার বালা এবং গতগ্রাম এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়।

৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার মহানগঞ্জের কাছাকাছি আলুদা এলাকায় অ্যামবুশে ২ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। পরে লেঙ্গুরা এলাকায় মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে ৩ নভেম্বর। এতে ১৫ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ২৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার ১৪ রাজাকাররাকে হত্যা করে পাচিম্পাতুলি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে। এছাড়া, মুক্তিবাহিনী ৭৮ জন সশস্ত্র রাজাকার আটক করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দখলদার সেনারা ২৫ অক্টোবর মুক্তিবাহিনীর বালি এলাকা আক্রমন করে। অনেক লড়াইয়ের পর উভয় পক্ষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তারপর তারা হাতাহাতি শুরু করে। ফলে অন্তত ২৫ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দুজন এই তৎপরতা চালানোর সময় নিহত হয়।

২৪ অক্টোবর গেরিলা হামলায় ১৪ রাইফেলসহ ১০ রাজাকার সিলেট জেলার মদনা এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়। আরেকজন রাজাকার একই জেলার রুপচাং এ রাইফেলসহ বন্দী হয়।
৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার মন্দভাগ এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর একটি বীভত্স হামলা করে। এতে ১৫ জন হতাহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী রাধানগর এ পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর অ্যামবুশে ২ জনকে হত্যা করে ও ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়। লাটিমিয়া এলাকায় ২ জন শত্রু অ্যামবুশে নিহত হয় এবং ২ জন আহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী
বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১২ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-
জানা যায় যে দখলদার বাহিনীকে টাঙ্গাইল জেলা উৎখাত করা হয়েছে। এখন মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার নিয়ন্ত্রণ করছে। টাঙ্গাইলের স্বাধীনতা জোন পাবনা জেলার রায়গঞ্জ থানার দক্ষিণ থেকে ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ থানা পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলা হেড কোয়ার্টারের পথে সংযোগ কালভার্ট ও সেতু মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দিয়েছে এবং যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করেছে। জেলার কোনো চালু রেল যোগাযোগ নেই। তাই ঢাকার সঙ্গে সকল যোগাযোগের লিংক ধ্বংস হয়েছে।
ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ থানা এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বারহাট্টা থানার টানটার এলাকা দখল করে নেয়। জানা যায় যে মুক্তিযোদ্ধারা পুলিশ স্টেশনের ও সি ও ১০৫ জন রাজাকারকে আটক করে। তারা ১ টি এলএমজি এবং পুলিশ স্টেশন থেকে ৮০ টি রাইফেল দখল করে নেয়। টানটার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ১২ টি বোমা ও কয়েকটি মর্টার দখল করে নেয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী যশোর জেলার মাশাল্লা এলাকায় এক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপ মাইনে ধ্বংস করে-এতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ৩ নভেম্বর খুলনা জেলার লকারোড পুলিশ স্টেশনের কাছে খারদারির মধ্যে হানাদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ৬ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনী দখল বাহিনীর উপর বীভত্স হামলা চালায় ২৫ অক্টোবর খুলনার জেলার কচুয়া থানার কাশেরহাট এলাকায়। লুটপাট ও যুদ্ধ কয়েক ঘন্টার জন্য অব্যাহত থাকে। চৌদ্দ শত্রুসৈন্য নিহত এবং আরো অনেক আহত হয়। হানাদার সৈন্যরা তাদের কমরেডদের ১৪ লাশ ও ১৪ টি রাইফেল ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। আমাদের পক্ষে কোন প্রাণহানী ছিল না।
ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: মুক্তিবাহিনীর ধলাই এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে হানা দিয়ে এক কর্মকর্তাসহ অন্তত ২৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এই অভিযানের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন শহীদ হন। এবং আরো ২ জন আহত হন।

এখানে প্রাপ্ত বিলম্বিত তথ্য মতে, মুক্তিবাহিনীর ৩১ অক্টোবর কুমিল্লা জেলার সালদানদী এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী নৌকায় অ্যামবুশ করে-এতে ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। তাদের বাকিরা পানিতে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায়। নৌকা টি ডুবে গিয়েছিল। এর আগে ২৯ অক্টোবর গেরিলারা কুমিল্লা জেলার সরাইলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলে আক্রমণ করে ২ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী নোয়াখালী জেলার দেবপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আত্মরক্ষামূলক অবস্থানের দিকে আগুয়ান পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ করে। এতে ১২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাবনা জেলার শাহবাজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে ৩ জন হত্যা এবং একই দিনে কাজল দিঘিতে একটি অ্যামবুশে ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়। এর আগে ৩১ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা শাঘাম এলাকায় ৯ রাইফেলসহ ১২ জন রাজাকার আটক করে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৩ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-
৯ নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার কমরগাও এলাকা থেকে দখলদার সেনাদের তাড়িয়ে দেয়। ময়মনসিংহ জেলার মদনা এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: ৮ নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী রাসিকপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা শত্রুদের ৫ টি বাংকার ধ্বংস করে। ৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা দর্শনা ও কুষ্টিয়া জেলার কাপাসডাঙ্গার মধ্যে টেলিযোগাযোগ ধ্বংস করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জরাপুকুর এলাকায় সেনা বহনকারী গাড়ির ওপর অতর্কিত হামলা করে। গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ১১ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রামকৃষ্ণ এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর টহলে অতর্কিত হামলায় ৫ জনকে হত্যা করে ও ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়।
রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ডোমার ও রংপুর জেলার চিলাহাটি রেল ট্র্যাক উড়িয়ে দেয়। তারা ডোমার-চিলাহাটি সড়কের একটি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলস্বরূপ, উভয় রাস্তা এবং রেল যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-নোয়াখালী সেক্টর: ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার কোতোয়ালি থানার মধ্যে কোটেশ্বর এলাকায় ঘুমন্ত পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে ২০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কায়ুম্পুরে অ্যামবুশে ৭ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। অনন্তপুর এলাকায় ৪ নভেম্বর অন্য অতর্কিত হামলায় আমাদের বাহিনী ২ জন শত্রু নিহত এবং ২ সৈন্য আহত হয়।

৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী দখলদার বাহিনীর উপর বীভত্স হামলা চালায়। তখন তারা বেলুনিয়া এবং নোয়াখালীর পরশুরাম এলাকায় মুক্তিবাহিনীর আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে হামলা করার চেষ্টা করে। প্রচণ্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ১ ক্যাপ্টেনসহ ৮ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আমাদের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। পরের দিন দখলদার সৈন্যদের অন্য ২ কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আসে কিন্তু অভিযান মুক্তিবাহিনী বানচাল করে দেয়। মুক্তিবাহিনীর মর্টার ও মেশিনগান দিয়ে দুই ঘণ্টা আক্রমণে ৩৫ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। তারা এক চীনা এলএমজি এবং কিছু গোলাবারুদ দখল করে নেয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: ৯ ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহের বাহাদুরাবাদ ঘাট এ ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীতে দুর্গাপুর-নাজিরপুর রোডে হানাদার বাহিনীর উপর অতর্কিত হামলায় চার জন হতাহত হয়। এর আগে ৭ নভেম্বর সোহাগপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনীর সাথে পাকিস্তানি সেনাদের সংঘর্ষে ৩ শত্রুসৈন্যকে নিহত হয়। তিনটি রাইফেল জব্দ হয়।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলায় মির্জাপুর এর কাছাকাছি পাথরঘাঁটি এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যুদ্ধে ১ মেজরসহ ৭ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ৩০ অক্টোবর এই সংঘর্ষ হয়। জানা গেছে দুই পশ্চিম পাকিস্তানি রেঞ্জার্স এবং ২৫ রাজাকার নিহত হয়। এসময় আমাদের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ হারান।

১১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী গৌরী নগর এলাকায় অভিযানে কিছু শত্রুসৈন্য হত্যা করে। কিছু গোলাবারুদ দখল করে নেয়।
একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১২ রাইফেলসহ ৮ জন রাজাকার ময়মনসিংহ জেলা নেত্রকোনা মহকুমা এরকেন্দুয়ার কাছাকাছি বাউশের বাজার এলাকায় বন্দী হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৪ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ১১ ই নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কুমিল্লা জেলার কামালপুর অবস্থানে মর্টার অভিযান চালিয়ে ৫ জন হত্যা এবং ১২ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। মুক্তিবাহিনী চাউরা এলাকায় অ্যামবুশে ২ শত্রুসৈন্য নিহত ও তিন জন আহত করে। তারিখ ছিল ৬ নভেম্বর। ৫ নভেম্বর অন্য একটি অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৭ জন নিহত ৮ জন আহত হয়। এটি ছিল চট্টগ্রাম জেলার হরিণ খোলাতে। এর আগে ৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীতে হুগলি চা বাগানে পাকিস্তানি সেনার অবস্থানে হানা দিয়ে ৪ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৬ জন আহত হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: মুক্তিবাহিনী আলীপুর এলাকায় ১০ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যুদ্ধে ৫ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এই অপারেশনের সময় আমাদের ১ জন শহীদ হলেন। একই দিনে ১৬ টি রাইফেল, ১১ টি রাইফেলের বেয়নেট এবং কিছু গোলাবারুদ এর সঙ্গে ১৬ জন রাজাকার তেরাইল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়। এর আগে ৯ নভেম্বর ৪ রাইফেলসহ ২ জন রাজাকার রাজাপুর এলাকায় আটক হয়।

একটি বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা ২৭ অক্টোবর পুকুরিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৫ পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং ১৫ রাজাকাররা হত্যা করে। এর আগে তারা এক মেজর এবং ক্যাপ্টেনসহ ফরিদপুর জেলার দামুদিয়াতে ৩১ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে। এই সময়কালে মুক্তিযোদ্ধারা মোল্লাহাট এলাকা থেকে ৪০ জন রাজাকার আটক করে।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: ৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার কমরগাও এলাকায় ১০ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী দখিঙ্গুল চা কারখানায় দখলদার সেনা ক্যাম্পে একটি ভারী যুদ্ধ করে। এতে ১৩ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করা হয়। একটি বিলম্বিত তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়ীর কাছাকাছি ভ্যাদার বাড়ি ক্যাম্প থেকে ৭০ টি রাইফেলসহ ৭০ জন রাজাকার আটক করে।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ১২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কাশিম্পুর পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালায়। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা আলীপুর এলাকায় টহলরত এক পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার হত্যা করে। তারা ১ টি রাইফেল দখল করে নেয়। ৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলায় ৪ অনিয়মিত সৈন্যসহ ৫ জন শত্রু হত্যা করে। এটি ছিল সিঙ্গার দাবড়ি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর এম্বুশ। এর আগে ৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার চিলমারী-কুড়িগ্রাম এর মধ্যে পাকিস্তানি সেনা বহনকারী একটি ট্রেন অ্যামবুশ করে ৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। তারা ৪ টি রাইফেল জব্দ করে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৬ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: মুক্তিবাহিনী ১২ নভেম্বর সিলেটের আরিয়াল এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে অ্যামবুশে ৭ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন আহত হয়। তেলিয়াপাড়া এলাকায় আরেকটি হামলায় একই দিনে মুক্তিবাহিনী ৪ পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে জুরিগোয়াল বাড়িতে মুক্তিবাহিনী ৫ হানাদার সৈন্য ও ১ রাজাকার হত্যা করে। তারিখটি ছিল ১২ নভেম্বর। একই দিনে জৈন্তাপুর কালিনগর এলাকার মধ্যে একটি সেতু ধ্বংস করে। এর আগে ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সোনাপুর এবং সমানবাগ চা বাগানে পাকিস্তানি সেনারাদের উপর অভিযান চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

ময়মনসিংহ জেলায় ১২ নভেম্বর বিজাপুর-বিরিশিরি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের মাইন বিস্ফোরণে এক দখলদার সেনা নিহত হয়। ১০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর ১৫ শত্রুসৈন্য হত্যা করা হয় এবং অস্ত্র ও বিপুল গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। এটি ছিল বড়লেখা এলাকার অ্যামবুশ। আরেকটি অভিযানে একই দিনে মুক্তিবাহিনী কৃষ্ণনগর এলাকায় ৭ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারিখটি ছিল ১০ নভেম্বর। এর আগে ৯ নভেম্বর তারাকান্দা এলাকায় এক রাইফেলসহ এক রাজাকার কামাজানি এলাকায় মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে। এতে পাঁচ শত্রুসৈন্য ও ১০ রাজাকার নিহত হয়। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী কিশোরগঞ্জের থানার গাছিহাটা এলাকায় দখলদার বাহিনীর উপর বীভত্স হামলা চালায় আমাদের মুক্তিবাহিনী। এতে ১৫ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। অক্টোবরের শেষ পনেরো দিন কিশোরগঞ্জ এলাকায় ৩৩ টি রাইফেলসহ ৩৫ জন রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়। ১০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী লক্ষ্মীবাজার এলাকায় অ্যামবুশে ৭ জনকে হত্যা করে এবং ১৭ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ১৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার ছাউড়া এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ২ জন শত্রু হত্যা ও ৩ জন শত্রুসৈন্য আহত করে। ১২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কারনাইল বাজার এলাকায় ৮ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এতে আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন আহত হয়। চাইলাশিয়া এলাকায় আরেকটি হামলায় একই দিনে মুক্তিবাহিনী ৪ জনকে নিহত এবং ৫ শত্রুসৈন্য আহত হয়। একটি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধারা জব্দ করে। ৮ এবং ১১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী আরম্নির এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর ধারাবাহিক আক্রমণ করে। এতে ১৪ জন নিহত এবং ৮ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ছাপিতলা এলাকায় চলন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রায় ৬০০ সৈন্য মুভ করছিল। যুদ্ধ প্রায় ৫ ঘণ্টা ধরে চলে। এতে শত্রুদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর আগে ৮ নভেম্বর অন্তত ১ অফিসারসহ অন্তত ৩১ জন পাকিস্তানী সেনা রাঙ্গিছড়া এলাকায় মুক্তিবাহিনীর দ্বারা অতর্কিত হামলায় নিহত হয়। আমাদের এক মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: মুক্তিবাহিনী ১২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার আলমডাঙ্গা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার, ১৯ রাজাকার ও এক পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে। এর আগে ৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী জহরপুর পশ্চিম পাকিস্তানি রেঞ্জার্স এ অতর্কিত হামলা করে এবং তাদের ৫ জন নিহত হয়, একটি রাইফেল মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা জব্দ হয়। ১১ নভেম্বর একটি রাইফেলসহ এক রাজাকার কাজীপুর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়। ৯ নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা উপ বিভাগীয় শহরের বাইরে উপর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কদম তলি সেতুতে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর মর্টার দিয়ে হামলা চালায়। এতে ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং কয়েক জন আহত হয়। ৮ নভেম্বর খুলনা জেলার কলারোয়া থানার গওহর হাটা এলাকায় টহলরত দখলদার বাহিনীর উপর মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। এর আগে ২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সাতক্ষীরা থানার কাকডাঙা এলাকায় অস্ত্র এবং গোলাবারুদসহ ৫ জন রাজাকার বন্দী করে।

এই মাসের ১ ম সপ্তাহে ইয়াহিয়া খানের হতাশার শোধ এর প্রভাব পড়ে। মাহমুদপুর ও সাতক্ষীরা থানায় করবদলি এর কাশেম্পুর গ্রামে লুটপাট, শয়াবারিয়া, রামকৃষ্ণপুর ও কলারোয়া থানার কামাল পাশা এলাকায় শিশুসহ নির্বিশেষে নিরীহ মানুষ হত্যা করা হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ১০ নভেম্বর কুড়িগ্রামের কাছে মুক্তিবাহিনীর মাইনে হানাদার সৈন্য বহনকারী ট্রেন আক্রান্ত হয় এবং এক কর্মকর্তাসহ ৮ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং ট্রেনের আটটি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই দিনে চিল্মারি কুড়িগ্রাম থেকে পাকিস্তানি সেনাদের বহনকারী অন্য একটি গাড়ি মুক্তিযোদ্ধাদের অতর্কিত হামলায় ২ পাকিস্তানি সৈন্য, ৩ রাজাকার ও গাড়ির চালক নিহত হয়।

মুক্তিযোদ্ধারা ১১ নভেম্বর রংপুর জেলার বুড়রাবুড়ি এলাকায় ৩ টি রাইফেলসহ ৩ জন রাজাকার আটক করে।

মুক্তিবাহিনীর সাথে একটি ভারী যুদ্ধের পরে রংপুর জেলার ভুরুংগ মারি এলাকা মুক্ত হয়। ফলে জেলার একটি প্রধান অংশ মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আসে। হামলার সময় পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রচুর হতাহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৭ নভেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী ভুরুঙ্গামারী এলাকায় তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখে এবং পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি ব্যাটেলিয়নের সঙ্গে ভারী লড়াইয়ের পর পাটেশ্বরি দখল করে। শত্রুরা ভারী মর্টার এবং মেশিন গান দিয়ে ও মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিরোধ করতে না পেরে পশ্চাত্পদ অবলম্বন করে। আমাদের বীর বাহিনী এখন দক্ষিণমুখী অগ্রসর হতে থাকে।

সালদানদী এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গত দুই দিনে মুক্তিবাহিনী অবস্থানের উপর চার টি আক্রমণ পরিচালনা করে। এই সকল হামলায় শত্রুদের প্রচুর হতাহত হয়। এই অপারেশনের বিবরণ যুদ্ধক্ষেত্রে আমাদের সংবাদদাতা থেকে পাই।
২৭ অক্টোবর জগন্নাথ গঞ্জ ঘাটে মুক্তিবাহিনী শের আফগান নামক জাহাজ টি নিমগ্ন করে। নৌ কমান্ডোরা এই জাহাজ সৈন্য ও গোলাবারুদ বহন জন্য ব্যবহার করছিল।

জানা গেছে যে গেরিলা কমান্ডো কার্যক্রম ঢাকা শহরে তীব্রতর হয়েছে। বীর গেরিলারা গত সপ্তাহে রকেট লঞ্চার দিয়ে প্রধান স্টেট ব্যাংক ভবন আক্রমণ করে। একই সপ্তাহে মতিঝিল ন্যাশনাল ব্যাংকের সামনে বিভিন্ন সেনা যানবাহন মাইন বিস্ফোরণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানি সৈন্যরা এই ভবনের ভিতরে পোস্ট করে। পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের ফেরত পাঠাতে অনুরধে ব্যার্থ হয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক করে। স্মরণ করা যেতে পারে যে এই পশ্চিম পাকিস্তানি পুলিশ ঢাকায় আনা হয় ৬ মাসের কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে। শহর মধ্যে বিরাজমান একটি সঙ্কটাবস্থা সৃষ্টি হয়। সেনা কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহের জন্য সকাল সন্ধ্যা কারফিউ চালু করে এবং শহরের প্রতিটি ঘরে নির্বিচার অনুসন্ধান পরিচালনা শুরু করে। এই জন্য, সেনা কর্তৃপক্ষ শহরের মধ্যে প্রতিটি পুলিশ স্টেশনে এক ব্রিগেড সৈন্য মোতায়েন করে।

রংপুর দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ১৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার আন্ধারিঝারখানার এলাকায় ৩ পাকিস্তানি সেনা যানবাহন অ্যামবুশ করে দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে ও তাদের হতাহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী জয়মনিরহাটে অস্ত্র ও গোলাবারুদের একটি বৃহৎ পরিমাণ দখল করে নেয়। তারা রায়গঞ্জ এলাকায় প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটক করে। এর আগে ১২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রাধানগর এলাকায় এক পাকিস্তানি টহল দলে অতর্কিত আক্রমণে ৩ হানাদার সৈন্য হত্যা করে।

৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার আকুল্পুরে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর মর্টার দিয়ে ৩ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই এলাকায় অন্য একটি যুদ্ধে ২ জন শত্রুসেনা নিহত এবং ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

একটি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর জীপ এই মাসের ১ ম সপ্তাহে বড়লেখা-করমচিতনগর সড়কে মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। ফলে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী কয়েকটি বিদেশী চিনহ যুক্ত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করে। ৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেটের সেকিঘাটে বোমা নিক্ষেপ করে এক পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে। ৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কাউরি খোলাতে একটি পাওয়ার ট্রান্সফরমার উড়িয়ে দেয়। ফলে ৪ দিনের জন্য পাওয়ার সাপ্লাই ব্যাহত হয়। ১৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেট ও সুনামগঞ্জ মধ্যে দালরফরি এবং একটি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ২ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার ঠাকুরকোনাতে হানাদার বাহিনীর ৭০০ মন মজুদ চাল জব্দ করে। ১৪ নভেম্বর ১১ জন সশস্ত্র রাজাকার উত্তর ময়মনসিংহে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা বন্দী হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৮ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-

মুক্তিবাহিনী ভারী আক্রমণে দখলদার সৈন্যদের থেকে ময়মনসিংহ জেলার ঘোষগাও মুক্ত করে। এবং এলাকায় এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর ভারী আক্রমণের কারণে দখলদার সৈন্যরা একই জেলার হালুয়াঘাট থেকে নিজেদের প্রত্যাহার শুরু করে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী পিয়েশরি দখলের পর মুক্তিবাহিনী আরও দক্ষিণে যেতে থাকে এবং নাগেশ্বরী থানায় গেরিলা কার্যক্রম শুরু করে হানাদার বাহিনীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করতে থাকে। এদিকে মুক্তিবাহিনী পশ্চিম নাগেশ্বরী একটি কৌশলগত সড়ক সেতু ধবংস করে রিইনফোর্সমেন্ট বন্ধ করে দেয়।

রংপুর দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: মুক্তিবাহিনী ১৬ নভেম্বর রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণের এর ফলে ৬ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৪ জন আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দুই জন এই অপারেশনের সময় আহত হন। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী দক্ষিণে ক্ষেতইবারি অ্যামবুশে তিন শত্রুসৈন্য নিহত এবং এক জন পাকসেনা আহত হয়। ১৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী হাতীবান্ধা এবং পারুলিয়ার মধ্যে রেললাইন ধ্বংস করে এলাকায় রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে। ১৩ নভেম্বর বাহিনী গঙ্গালক্ষির কাছে পাকিস্তানি সেনা এবং অনিয়মিত একটি মিশ্র প্যাট্রোলে অতর্কিত আক্রমণে শত্রুদের ৫ জন হত্যা করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মাইনে শত্রু ট্রেন বিস্ফোরণে দুই জন প্রাণনাশ এবং তিন দখলদার সৈন্য আহত হয়। এটি ঘটে সান্তাহার-আদমদীঘি লাইনের লাইনচ্যুত হবার জন্য।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: মুক্তিবাহিনী টুকারবাজার এলাকায় ৫ জন পাকসেনাকে এবং ৩ জন রাজাকার হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী সাতিগাওএ পাক অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৯ জন হতাহত হয়। এর আগে ৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার শ্যামগঞ্জ-শম্ভুগঞ্জ এলাকায় পাক প্যাট্রোল এ আঘাত হেনে সাত পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়। এ সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের দুই জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার পিয়ারপুরের কাছাকাছি তিনটি আর্মির জীপ অ্যামবুশ করে তিন শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং তাদের যানবাহন দুটি ধ্বংস করে। মুক্তিবাহিনী শত্রুদের থেকে ৩ টি রাইফেল দখল করে।

কুষ্টিয়া-যশোর সেক্টর: মুক্তিবাহিনী ১২ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার আলমডাঙ্গাতে পাকিস্তানি ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। দুই সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হয়। ১৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা আন্দুবাড়িয়াতে পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযান চালিয়ে ১২ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে। ১১ নভেম্বর দশ হানাদার সৈন্য ও এক রাজাকার নাস্তি ঘূঁঘরি যাত্রাপথে মুক্তিবাহিনীর মাইন বিস্ফোরণে নিহত হয়। এর আগে ৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নাস্তির কাছে অতর্কিত হামলায় ৭ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। যখন মুক্তিবাহিনী গোরপাড়াতে শত্রু বাংকারএ হানা দেয় তখন কিছু অনিয়মিত সৈন্যসহ ৯ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয। বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী খদাইরপুরে একটি বড় যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার সৈন্যদের ১ জন ক্যাপ্টেনসহ ১৩ পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। এতে মুক্তিবাহিনীর ৩ জন হতাহত হয়। ১০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সাকুরা এবং মোহনপুরে শত্রুর প্যারা-মিলিটারি ক্যাম্পে অভিযান করে। এতে বেশ কিছু অনিয়মিত সৈন্য নিহত হয়। মুক্তিবাহিনী এই শিবির থেকে ৫৭ টি রাইফেল এবং বন্দুক দখল করে নেয়। ১২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কামারখালি ঘাটের কাছে দুই টি খেয়া নৌকা ধ্বংস করে। একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, রায়পারায় পাকসেনা ও রাজাকারদের মধ্যে একটি বৃহৎ আক্রমণে অন্তত ৪০ জন রাজাকার নিহত হয। এই সংঘর্ষের কারণ জানা যায়নি।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর-মুক্তিবাহিনী ১৫ নভেম্বর নোয়াখালী জেলার ছাগলনাইয়াতে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর গুলিবর্ষণ করে পাঁচ পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ৫ নভেম্বর কাবিলপুর পাকিস্তানি অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ১ অফিসারসহ ৩ শত্রুসৈন্য নিহত করে এবং ৭ জন আহত হয় এবং ঢাকা ও তাঁর বাইরে গেরিলা আক্রমণের জন্য পাক বাহিনী ১৭ নভেম্বর ভোর ৫ টায় হঠাত কারফিউ আরোপ করে। পাক আর্মি কর্তৃপক্ষ ঘরে ঘরে সার্চ শুরু করে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধা (অস্পষ্ট)

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১৯ নভেম্বর ১৯৭১

সমস্ত বাংলাদেশ জুড়ে সংঘটিত অসংখ্য গেরিলা অপারেশনের মধ্যে দুর্ধর্ষ ও বীরোচিত উল্ল্যেখযোগ্য অপারেশনগুলো নিম্নরূপ-
১৮ নভেম্বর রাজশাহী জেলার আগর হাট থেকে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের ফলে পাকসেনারা নিজেদের প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। ফলে তারা চাকলার দিকে যেতে থাকে। কিন্তু সেখানেও মুক্তিবাহিনী আক্রমণ করে তাদের সেখান থেকে সরে যেতে বাধ্য করে। ধবরা এলাকায় হানাদার বাহিনীর অবস্থানের উপর একটি অনুরূপ আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা ধবরা থেকে শত্রুদের সরে যেতে বাধ্য করে। ১৬ নভেম্বর দখলদার বাহিনী কুষ্টিয়া জেলার বামন্দিয়ার কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা সাহসিকতার সাথে পাল্টা জবাব দেয় এবং শত্রুরা পশ্চাত্পদ হয়। শত্রুসৈন্যদের প্রচুর সৈন্য হতাহত হয়।

রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টর: ১৭ নভেম্বর হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর রংপুর জেলার উলিপুর এর কাছে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর এটা সফলভাবে প্রতিহত করে। এতে ২৪ পাকিস্তানি সেনা নিহত এবং দশজন আহত হয়। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার অন্ধরিজ-হারখামার এ ৩ পাকিস্তানি সৈন্য আটক করে। একই দিনে একই এলাকায় তারা অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাকিস্তান বাহিনীর ১ ট্রাক রেশন দখল করে। ১৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী দক্ষিণ কুড়িগ্রাম এ ১২ জন শত্রুসৈন্য অ্যামবুশে হত্যা করে। এর আগে ১১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী লালমনিরহাটের নিকটবর্তী রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস করে। ১৩ নভেম্বর দোহাইপাড়াতে ২০ টি রাইফেলসহ দুই রাজাকার বন্দী করা হয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টর: ১৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের রাজাপুর এলাকায় অ্যামবুশে ৪ জন নিহত এবং ২ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের জন্য রেশন বহনকারী একটি যানবাহন কোলা এলাকায় মুক্তিবাহিনীর মাইনে বিধ্বস্ত হয়। ১৫ নভেম্বর ৪০ টি রাইফেলসহ ৪০ জন রাজাকার বারাগান্দিয়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা বন্দী হয়। ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার প্রতাপপুর এলাকায় অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনীর ১১ জন শত্রুসৈন্য নিহত ও চার জন আহত হয়। তারা একই দিনে এই দুই স্থানের মাঝামাঝি বিভিন্ন কালভার্ট ধ্বংস করে চৌগাছা-যশোর সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত করে। মুক্তিবাহিনী ১৪ নভেম্বর খুলনা জেলার সাতক্ষীরা কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপ অ্যামবুশে এক ক্যাপ্টেনসহ ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত করে শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত করে।

ঢাকা-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম সেক্টর: ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার চান্দলাতে পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থানে আক্রমণে ৬ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। তারা শত্রুর ২ টি বাংকার ধ্বংস করে। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী আরাইপারে পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের ওপর মর্টার আক্রমণ করে ৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। ১৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর জয় নগরে অতর্কিত আক্রমণে হানাদার সৈন্যদের ২ জন হত্যা ও ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়। একই এলাকায় এর আগে ১২ নভেম্বর অন্য একটি অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনী ২ জন হানাদার সৈন্য হত্যা করে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধারা এই মাসের ১ ম সপ্তাহে কাপ্তাই এলাকায় বিভিন্ন বিদ্যুৎ পাইলন ধ্বংস করে চট্টগ্রামে ইলেকট্রিকসাপ্লাই ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও কাপ্তাই এলাকায় মুক্তিবাহিনীর ২ জন নিহত এবং ৯ নভেম্বর অতর্কিত হামলায় ৫ হানাদার সৈন্য আহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্সেস
বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২১ নভেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা নভেম্বর মাসে রুঢ়ভাবে শত্রুর নৌ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করে। কমান্ডোরা মেঘনা নদীর মধ্যে ৬ নভেম্বর একটি চীনা কোস্টার ও ৪ নভেম্বর একটি পাকিস্তানি জাহাজ ‘এমভি SHAMY’ নিমগ্ন করে। ৭ নভেম্বর রাতে কমান্ডোরা চাঁদপুর মহকুমার মোহনপুর এর কাছাকাছি একটি পাক জলপথ জাহাজ ‘এমভি Lili’ ডুবিয়ে দেয়। ১১ নভেম্বর তারিখে একটি পাকিস্তানী শিপিং কর্পোরেশন এমভি SHOBAN “একটি বজরা ‘গফুর’ চাঁদপুরের উত্তর ইখলাস্পুরের কাছাকাছি কাছাকাছি ডুবিয়ে দেয়। ১৩ নভেম্বর পাকিস্তানি গানবোট HARHAIM কমান্ডোরা নিমগ্ন করে। এটি ছিল চাঁদপুর বন্দরের দক্ষিণে। মুক্তিবাহিনী ইতিমধ্যে অনুরূপ অভিযান সুন্দরবন এলাকায় চালাত এবং এতে চালনা পোর্ট ও চট্টগ্রাম বন্দরে শত্রু কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমে যায়।

২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী পাকসেনাদের সাথে একটি ভয়ানক এনকাউন্টার করে খুলনা জেলার কালীগঞ্জ থানা মুক্ত করে। একই রাতে মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার বারখাটাতে পাকিস্তানি অবস্থান দখল করে। শত্রুদের উভয় স্থানে হতাহতের পরিমান এর সঠিক চিত্র এখনো জানা যায়নি।

১৯ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনারা সিলেট জেলার দখিঙ্গুলের কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করে এবং এতে হানাদার বাহিনী সরে যেতে বাধ্য হয়। এতে ২০ পাকিস্তানি সৈন্য নিহত এবং তাদের বিপুল সংখ্যক আহত হয়। একই দিনে রাধানগর মুক্তিযোদ্ধাদের একই রকম একটি আক্রমণ হয়। এছাড়াও একই দিনে মুক্তিবাহিনী তাহিরপুর থেকে সাচিনা পর্যন্ত এলাকায় অ্যামবুশে পাকিস্তানি সেনাদের ৫ জনকে হতাহত হয়।

১৮ নভেম্বর রাজাকারদের একটি দলের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনারা রাজশাহী জেলার আগ্রা পুকুর এলাকার দিকে অগ্রসর হয়। মুক্তিবাহিনী তাদের উপর একটি ঝটিকা আক্রমণে ১০ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এতে আমাদের এক জন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা নিহত ও ২ জন সামান্য আহত হয়।

১৭ নভেম্বর ১ টি পাকিস্তানি আর্মি জীপ যশোর-কুষ্টিয়া সেক্টরের আমবাড়িয়ার কাছাকাছি মুক্তিযোদ্ধাদের মাইনে প্রস্ফুটিত হয়। এতে দুই পাকসেনা ও রাজাকারদের ৩ জন নিহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী ভোমরাতে পাকিস্তানি সেনাদের আক্রমণ করে এবং শত্রুর ৫ জন নিহত হয়। একই সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ১৯ নভেম্বর আলোক দিঘির কাছে দখলদার সৈন্যদের অতর্কিতে আক্রমণ করে ২ পাকসেনা নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। একই দিনে ৪ জন রাজাকার যশোর জেলার বেটাই এর কাছে বন্দী করে।

কুমিল্লার জেলায় ১৭ নভেম্বর সালদানদী এলাকায় মুক্তিবাহিনীর উপর একটি মর্টার আক্রমণ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধে শত্রুরা পিছু হটে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন মতে ১ টি পাকিস্তানি আর্মি প্যাট্রোল ট্রেন ৯ ই নভেম্বর রাতে চাঁদপুর-লাকসাম লাইনে বারাসাত আলীর কাছাকাছি লাইনচ্যুত হয়। এতে ইঞ্জিন ও ট্রেনের দুই টি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং দুই পাকসেনা এবং ৫ রাজাকার নিহত হয়। একই রাতে মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।

ময়মনসিংহ জেলায় মুক্তিবাহিনী ১৬ নভেম্বর মুক্তাগাছা থানায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন অনিয়মিত সৈন্য হত্যা করে। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা অনিয়মিত সৈন্যদের উদ্ধার করতে আসেন। একটি সম্মুখযুদ্ধে ৪ শত্রুসৈন্য ও ৫ রাজাকার নিহত হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা, বাংলাদেশ ফোর্সেস
বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২২ নভেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী তাদের জয় জয়কার সমস্ত বাংলাদেশে অব্যাহত রেখেছে। জানা যায় গতকাল মুক্তিবাহিনী ভারি যুদ্ধের পর অমরখানা ও জগদলহাট দখল করে। শত্রুর দিকে হতাহতের খবর এখনো পাইনি।

খুলনা থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, মুক্তিবাহিনী ২০ নভেম্বর সাতক্ষীরা উপ বিভাগের কালীগঞ্জ থানার বসন্তপুর অবস্থানে অভিযান চালায়। সারাদিন যুদ্ধ করার পর মুক্তিবাহিনী বসন্তপুর দখল করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী কালীগঞ্জ থানার দিকে অগ্রসর অব্যাহত রাখে। ভারী যুদ্ধের পর বিনিময় করার পর দখলদার সেনারা কালীগঞ্জ থেকে পশ্চাদপসরণ করে।
কালীগঞ্জ এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ১৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী শ্যামনগর আগাতে থাকে। ছোট যুদ্ধে তারা এটি দখল করে। তারপর নূর নগর এগিয়ে যায়। তারা ৭ টি বোমা, ৩ ইঞ্চি মর্টার ও প্রচুর গোলাবারুদ, সঙ্গে ১২ রাজাকার, একটি মটর লঞ্চ, একটি বিএস রকেট লঞ্চার দখল করে। এক বেলুচ সৈন্য এই অপারেশনের সময় মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী শঙ্করে আক্রমণ করে। ভারী যুদ্ধের পরে তারা এটি দখল করে। হানাদার বাহিনীর ৬ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়। তাঁর সাতক্ষীরার দিকে পশ্চাদপসরণ করেন। সর্বশেষ প্রতিবেদন মতে খুলনা জেলার একটি মহকুমা শহর-সাতক্ষীরায় যুদ্ধ অব্যাহত আছে।

১৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলায় অ্যামবুশে ৩ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী ৩ টি রাইফেল ও জীপটি দখল করে।

২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বাহাদুরাবাদ ঘাটে একটি ৩০০ ফুট লম্বা বার্জে হামলা চালায়। এটি যমুনা নদী দিয়ে রেইল ওয়াগন বহন করে।

১৭ নভেম্বর দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৩ টি রাইফেলসহ ৪ জন রাজাকার বন্দী হয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৩ নভেম্বর ১৯৭১

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সব সেক্টরে প্রতিরক্ষা অবস্থান নিয়েছে। এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণের মুখে তাদের এডভান্সড পজিশন থেকে অপসৃত হয়েছে। গত কয়েক দিনের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ৫০০০ বর্গ মাইলের অধিক এলাকা সম্পূর্ণরূপে শত্রু মুক্ত করেছে। খুলনা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী গতকাল ভোমরা ও কুলিয়াতে শত্রু অবস্থানের দখল করে। ভয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সাতক্ষীরা ছেড়ে দেয়। কুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ১২ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

মুক্তিবাহিনী রংপুর-দিনাজপুর সেক্টরে ভুরুঙ্গামারী দক্ষিণে রায়গঞ্জ দখল করে। এই যুদ্ধে শত্রুদের ১২ জন হতাহত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ৩ টি মেশিন গান, ১১ টি LMG, ৬ টি মর্টার, ৪ টি জীপ, ও প্রচুর গোলাবারুদ জব্দ করে। মুক্তিবাহিনী রংপুর জেলার হাতীবান্ধা মুক্ত করে।

২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার বালা মুক্ত করে। মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত হয়রানির একই দিনে পাকিস্তানি সেনারা ময়মনসিংহ জেলার আহমেদনগর থেকে নৌকুচি পর্যন্ত নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। মুক্তিবাহিনী বিজয় পুরে শত্রুসৈন্যদের চারদিক থেকে ঘিরে আছে। জানা যায় যে ১৭ নভেম্বর ণৌকুচিতে আহত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর রিয়াজ ২১ নভেম্বর হাসপাতালে মারা যান।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ১০০০ টন কেরোসিন তেল ও প্রায় ৩০ টন গ্যাসোলিন বহনকারী একটি তেল ট্যাঙ্কার ডুবিয়ে দেয়। ইঞ্জিন রুমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এটি করা হয়। ট্যাঙ্কার সম্পূর্ণরূপে পোতাশ্রয়ে ডুবে ছিল। ১১ নভেম্বর ৮ টি রাইফেল (৩০৩) ও ৩০০ রাউন্ড গোলাবারুদেরসহ ১৯ রাজাকার চট্টগ্রাম জেলার মিরেরসরে আটক করা হয়। এর আগে ১০ এবং ৩ নভেম্বর বেশ কিছু গোপন আক্রমণের মধ্যে মুক্তি-বাহিনী ৮ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

২১ নভেম্বর সিলেট জেলার সারিঘাট-গোয়াইনঘাট সড়কে একটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপ মাইন বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হয়। এতে এক মেজরসহ ৬ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয় এবং গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয।

প্রাপ্ত বিলম্বিত তথ্য মতে, মুক্তিবাহিনী ৮ নভেম্বর পাবনার কালিয়াহাড়িপুরে পাকিস্তানি সেনার উপর অবস্থানে আক্রমণে ৮ শত্রুসৈন্য নিহত ও ২০ টি রাইফেলসহ ২১ জন রাজাকার আটক করে।

২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের আলোক দিঘিতে হানাদার সৈন্যদের প্যাট্রোলে অ্যামবুশে ২ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। ১৮ নভেম্বর দখলদার সৈন্যরা আগ্রাপন্ড এলাকা দিকে অগ্রসর হয় এবং তারা মুক্তিবাহিনীর বাঁধার সম্মুখীন হয়। সম্মুখযুদ্ধে ১০ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের এক জন শহীদ হয়। এবং ২ জন ছোটখাট আঘাত পায়।

যশোর-কুষ্টিয়া-খুলনা সেক্টর: মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ নভেম্বর একটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপ মাইন দ্বারা আমবাড়িয়া এলাকায় উড়িয়ে দেয়-এতে ২ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। একই দিনে খুলনা জেলা মুক্তিবাহিনী সেলুয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। এর আগে ১৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী আমবাড়িয়া এলাকায় ৬ পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার হত্যা করে। ১৯ নভেম্বর হানাদার বাহিনী যখন বাগওয়ান থেকে মনিরনগর যাচ্ছিল তখন মুক্তিবাহিনীর দ্বারা আক্রমণের শিকার হয় এবং ৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৭ জন আহত হয়। ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী খুলনা জেলার ভাতসালা এলাকায় হানাদার বাহিনীর সাথে গুলি বিনিময়ে ২ জন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। ১৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বাগেরহাট এলাকায় ১০ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। বাকেরগঞ্জ এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আরেকটি সংঘর্ষে একই দিনে মুক্তিবাহিনী ৫ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী জগতির কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপে অতর্কিত হামলায় ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। জীপ টি ধ্বংস করা হয়। মুক্তিবাহিনীর আরেকটি গ্রুপ ছিটিপুর থেকে গোয়ালাহাটি সরার পথে ২ জনকে হত্যা করে এবং ৩ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টর: ২১ নভেম্বর হানাদার বাহিনী মর্টারসহ পূর্ব লিটুরা পৌছায়। মুক্তিবাহিনী তাদের আক্রমণ করে ৪ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে হানাদার বাহিনী একই এলাকায় অন্য মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। এতে ১০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ১৭ নভেম্বর বিলাজপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ওপর হামলায় ৩ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। ডাক্তার বাড়ি এলাকায় অতর্কিত হামলায় একই দিনে মুক্তিবাহিনী ৩ জন নিহত এবং ৪ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ১৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নিশ্চিন্তপুর এলাকায় অতর্কিত আক্রমণে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ১৫ জন পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার্স এবং ২ রাজাকার হত্যা করে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারাদের ১ জন আহত হয়। ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বাদল পুরে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ করে ১৭ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীর এই অপারেশনের সময় ২ টি রাইফেল জব্দ হয়। ১৯ নভেম্বর সিলেট জেলার দখিন গুলে চা বাগানে একটি পাল্টা হামলায় মুক্তিবাহিনী ২০ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৪ নভেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনীর নিয়মিত বাংলাদেশের সকল সেক্টরে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর তাদের সব ধরনের আক্রমণ ও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

নোয়াখালীর ফেনীতে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর উপর একটি ভারী হামলা চালায়। বকশিরহাটে এক ব্যাটেলিয়ন পাকসৈন্য মুক্তিবাহিনী ঘিরে ফেলে। এবং সব দিক থেকে আক্রমণ করে। ফলে এই ব্যাটালিয়নের যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়।

সিলেট সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী আটগ্রাম, রহিমপুর এবং শরিফগঞ্জ মুক্ত করার পর সিলেটের দিকে অগ্রসর হয়। জৈন্তাপুরের দক্ষিণে প্রচণ্ড লড়াই চলছে। জৈন্তাপুরের চারপাশে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীকে ঘিরে ফেলেছে এবং তাদের সব সংযোগ লাইন বন্ধ করা হয়েছে।

যশোর সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী মহেশপুর থানা মুক্ত করে যশোর ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছে। এদিকে মুক্তিবাহিনী যশোর বিমানঘাঁটির কন্ট্রোল টাওয়ার এর ক্ষতি করে শত্রুর আকাশপথ অচল করে দেয়।

ময়মনসিংহ জেলার উত্তরে নিজয়পুরে এবং বোয়াল মারিতে পাকিস্তানি সেনা অবস্থান মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে।

২২ নভেম্বর হানাদার বাহিনী দিনাজপুরের দক্ষিণে ঘুঘুডাঙ্গাতে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে পাকসেনারা আক্রমণ করে। প্রচণ্ড যুদ্ধ করার পর পাকিস্তানি সেনারা সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়। এতে ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়। আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন নিহত হয় ও দুই জন ছোটখাট আহত হয়।

২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা দুয়াপারা এলাকায় টহলরত ৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

ঢাকা জেলা থেকে সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা মুন্সীগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকা মুক্ত করেছে। অপারেশন বিবরণ এখনো আসেনি। এর আগে ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী শ্রীপুরের দক্ষিণে পাকিস্তানি অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। গত কয়েক দিনে, মুক্তিবাহিনী তাদের অস্ত্রসহ ৮৫ রাজাকার দখল করে নেয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৫ নভেম্বর ১৯৭১

নোয়াখালী জেলায় মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড যুদ্ধের পর গত রাতে বকশিরহাট স্বাধীন করে। শত্রুদের ১৫০ জনের বেশি হতাহত হয়। এবং তাদের একটি বড় সংখ্যক সৈন্য বন্দী করা হয়। বাকি রা নিকটবর্তী জঙ্গলে পালিয়ে যায়। পাকসেনাদের একটি সংখ্যা পালানোর সময় গ্রামবাসী তাদের হত্যা করে।

মুক্তিবাহিনী কিশোরগঞ্জ শহরে সৈন্যদের বিরুদ্ধে তাদের চরম আক্রমণাত্মক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ফলে শত্রুরা দক্ষিণ পূর্ব ভৈরববাজার ঘাঁটি থেকে এবং ময়মনসিংহের উত্তর পশ্চিম অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। রেললাইনের অপসারণ এবং ময়মনসিংহ জেলা শহরে এবং ভৈরববাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন লিঙ্ক রেল লাইনের রেল ও সড়ক সেতু ও কালভার্ট ধ্বংস করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ সংযোগ সড়ক ধ্বংস করা হয়েছে। ২০ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কিশোরগঞ্জের গচিহাটার কাছে একটি রেলওয়ে সেতু পুনর্নির্মাণের প্রয়াস বানচাল করে দেয়। এর আগে, জগদলপুর এবং গোচিয়াটার মধ্যে ২ মাইল রেললাইনের পাত সরানো হয়েছে। তারা রেল বাঁধ নির্মান করে। পরে তারা কিশোরগঞ্জের থেকে আসা দখলদার বাহিনীর সঙ্গে টায়ার বিনিময় করেন। পড়ে সৈন্যরা পশ্চাত্পদ অবলম্বন করে। এতে বুঝা যায় যে কিশোরগঞ্জ শহর একটি নো ম্যান্স শহরে পরিণত হয়েছে। ১৮ নভেম্বর একটি অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা শহরের সলঙ্গা রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করে ৫ জন রাজাকাররা ও রাইফেল দখল করে। ১৪ নভেম্বর পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলায় মুক্তিবাহিনী ৬ জনকে হত্যা করে ও কিশোরগঞ্জ থানার রামপুর এলাকায় ৪ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ২২ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা নালিতাবাড়ী থেকে রাজাকারদের সাফ করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনী থেকে একটি এলএমজি এবং শ্যামগঞ্জ থেকে ১৩ টি ম্যাগাজিন দখল করে।

মুক্তিবাহিনীর আক্রমণাত্মক কার্যক্রম সাতক্ষীরা শহরে চলছিল। মুক্তিযোদ্ধারা মানদরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ২ টি সাতক্ষীরা শহর ও মাহমুদপুর মধ্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সেতু ধ্বংস করে। একই দিনে একটি পাকিস্তানি সেনা জীপ যশোর থেকে সাতক্ষীরার পথে পথে ২২ নভেম্বর যশোর-সাতক্ষীরা সড়কে মুক্তিবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়। এতে এক ক্যাপ্টেনসহ ৩ শত্রুসৈন্য নিহত এবং জীপ ধ্বংস করা হয়। সাতক্ষীরা টাউন এখন খুলনা জেলার বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মুক্তিবাহিনী দ্বারা ক্রমাগত হয়রানি হবার কারণে ২২ নভেম্বর হানাদার বাহিনী যশোর জেলার ছুটিপুর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর কুষ্টিয়া কাছে পাকিস্তানি সৈন্য ভর্তি ২ টি দেশি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এর আগে ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

২৩ নভেম্বর সিলেট জেলা মুক্তিবাহিনী লুবাছড়া এবং ধাকেরগুল থেকে হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে দেয়। ২২ নভেম্বরে মুক্তিবাহিনী বিয়ানইবাজার পাকিস্তানি সেনারা অবস্থানে আক্রমণ করে ২ জন হত্যা এবং ৭ শত্রুসৈন্য আহত হয়। প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। এর আগে, ১৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী বালাগঞ্জ এলাকায় হানাদার বাহিনী বহনকারী ৫ টি দেশি নৌকা ডুবিয়ে দেয়। এতে ৭ পাকিস্তানি সৈন্য ও ১০ রাজাকার নিহত হয়।

মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত চচাপে দখলদার বাহিনী ২২ নভেম্বর রংপুর-দিনাজপুর-রাজশাহী সেক্টরের চাকচাঁদি এলাকায় তাদের অবস্থান পরিত্যাগ করে। মুক্তিবাহিনী এই অবস্থানে মর্টার দিয়ে ১০ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী ঘুঘুডাঙ্গা খাল এলাকায় শত্রু আক্রমণ প্রতিহত করে। এতে ৩০ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।
ঢাকা থেকে প্রাপ্ত বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর কমান্ডোরা ৩ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপে গ্রেনেড ছুড়ে মারে। ফলে ৪ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়। নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ এলাকায় ৬ টি রাইফেলসহ ১১ জন রাজাকার বন্দী করা হয়। এর আগে ৩০ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা রূপগঞ্জ এলাকায় রাজাকারদের থেকে একটি মোটারবোট দখল করে নেয়। এর আগে মুক্তিবাহিনী ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলায় এক কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে হত্যা করে ও ৪ শত্রুসৈন্য আহত হয়। মালিবাগ ও কমলাপুর এলাকার কাছে ৪ জনসহযোগী হত্যা করে।

২২ নভেম্বর উপর মুক্তিবাহিনীর ময়মনসিংহ জেলার বাজাইপুড়ের কাছে দখলদার সেনাদের জন্য রেশন বহনকারী একটি পাকিস্তানী কলামে অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ৫ অনিয়মিত সৈন্য নিহত হয়। ২ নভেম্বর একটি বিলম্বিত রিপোর্ট অনুযায়ী ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধারা ভালুরার কাছাকাছি আমখোলায় রাজাকার সঙ্গে একটি সম্মুখযুদ্ধে ৫ রাজাকার নিহত এবং ২৫ টি রাইফেল জব্দ করে।

১৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লাগামী নোয়াখালী সেক্টরের রামতলা এলাকায় পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের কলাম আক্রমণে ৩ পাকিস্তানি সৈন্য ও ৫ রাজাকার হত্যা করে। একটি বিলম্বিত তথ্য অনুযায়ী একটি বড় যুদ্ধে ৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি কাছে পাকিস্তানি সেনাদের মিশ্র কলামে আক্রমণে ৬০ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে এবং ৫০ জন আহত হয়। ২০ জন পাকিস্তানি সৈন্য ও রাইফেলসহ এক রাজাকার বন্দী করা হয়। ১৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কুমিল্লার রাজানগরে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের একটি মিশ্র কলাম অ্যামবুশে ২ শত্রুসৈন্য হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা ২১ নভেম্বর জগন্নাথ থেকে রাইফেলসহ ৫ রাজাকার বন্দী করে। এবং ২০ নভেম্বর নোয়াখালী জেলার রহিম পুরে ৪৪ টি রাইফেলসহ ৪৭ জন রাজাকারদ আটক করে। মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লার নতুন বাজার থেকে ২১ নভেম্বর রাইফেলসহ ১৩ জন রাজাকার দখল করে নেয়।

22 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নোয়াখালীর দুর্গাপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ জন হত্যা এবং ১০ শত্রুসৈন্য আহত হয়।

চাঁদপুর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা যায় যে মুক্তিবাহিনীর নৌ-কমান্ডোরা চাঁদপুরের নদী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। চলতি মাসের প্রথম পক্ষকাল সময় নৌ-কমান্ডোরা শত্রুসেনা কর্তৃপক্ষ দ্বারা ব্যবহৃত চারটি কোস্টার নিমগ্ন করে। কোস্টার টি সম্প্রতি চীন সরবরাহ করেছিল। এছাড়া ২ টি মার্চেন্ট কোস্টার এবং বন্দরে বন্দরে যাতায়াতকারী পাকিস্তানি সেনারাদের ঘাঁটি টহলের একটি মার্চেন্ট জাহাজ মেঘনা নদীতে নিমগ্ন করা হয়। জানা গেছে চাঁদপুর পোর্ট রাতে আর কাজ করত না।

এই কোস্টার এ একটি বার্জ ডুবিয়ে দেয়া হয়। হানাদার সৈন্য ভর্তি একটি গান বোট ডুবিয়ে দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ৩ টি দেশী নৌকায় ৩০০ টন সয়াবিনতেল বহন করার সময় সেগুলো দখল করে নেয়। ১ টিতেল ট্যাঙ্কার পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি যমুনা নদীতে ডুবিয়ে দেয়া হয়। ৩ নভেম্বর নৌ-কমান্ডোরা কুমিল্লা জেলার মোহনপুর এলাকায় ম্যাটল্যাব বাজারের নিকটবর্তী স্থানে একটি স্টীমার ডুবিয়ে দেয়।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৬ নভেম্বর ১৯৭১

বীর মুক্তিবাহিনী নিয়মিত পাকসেনাদের থেকে বিভিন্ন জায়গা দখল মুক্ত করছিল এবং তাদের পিছু হটতে বাধ্য করছিল। ২৫ নভেম্বর সিলেট জেলার গারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রাধানগর গোয়াইনঘাট মুক্ত করে। এই অভিযানের সময় মুক্তিবাহিনী১০ শত্রুসৈন্য নিহত এবং একটি এলএমজি, একটি টেলিফোন সেট, একটি অতিরিক্ত পিপা ও প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে। যশোর শহরের উপকণ্ঠে তুমুল যুদ্ধ চলছে। ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ মহকুমা শহরে ভারী যুদ্ধ চলছে। কুষ্টিয়া জেলার মুক্তিযোদ্ধারা শহরের দিকে আগাচ্ছে। জানা যায় তারা ইতিমধ্যে মেহেরপুর শহর ঘিরে আছে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ১৯ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার মুকুন্দপুর রেলস্টেশন আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অভিযানের সময় মুক্তিবাহিনী ৩১ শত্রুসৈন্য, ২ টি স্টেনগান, ২ টি LMG ও ৩ ইঞ্চি 3 ইঞ্চি মর্টার দখল করে।

মুক্তিবাহিনীর অপারেশনের বিবরণ নিচে দেওয়া হল:-
২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী মর্টার দিয়ে রাজশাহী জেলার রাজারামপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর আক্রমণ করে। এতে এক অফিসারসহ ৯ জন নিহত এবং ১০ জন আহত হয। এছাড়া ৬০ জন আধাসামরিক লোক নিহত এবং তাদের ২০ জন আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন শহিদ হয়। ১৪ টি রাইফেলসহ ১২ জন রাজাকার বন্দী করা হয়। ২৪ নভেম্বর তারিখে পাবনা জেলার পিপুলবাড়ীয়ায় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে ২ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে।

২৩ নভেম্বর খুলনার এর শ্রীরামপুরের কাছে মর্টার আক্রমণে ৬ জন শত্রুসৈন্য ও কিছু রাজাকার নিহত হয়।
২১ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার মুক্তিবাহিনী লক্ষ্মীপুর এলাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অভিযান চালিয়ে ৭ শত্রুসৈন্য নিহত ও কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।

একই দিনে মুক্তিবাহিনী কাইম্পুর এলাকায় ৬ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ১৪ নভেম্বর একই জেলার আম্রাতলি এলাকায় ২ পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। কুমিল্লার মুক্তিবাহিনীর মইনপুর এলাকায় একটি অভিযানে এক কর্মকর্তাসহ ১৩ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়। তারিখটি ছিল ১৭ নভেম্বর। ১৬ থেকে ১৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কাঈম্পূড় এলাকায় সিরিজ হামলায় ৫ জন নিহত এবং ১২ শত্রুসৈন্য আহত হয়। ২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কামালপুরে ৫ শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২ টি বাংকার ধ্বংস করে।

নোয়াখালী জেলায় মুক্তিবাহিনী ২২ নভেম্বর দুর্গাপুর এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণ করে ৭ জন হত্যা এবং ১০ শত্রুসৈন্য আহত হয়। ২৪ অক্টোবর কবিরহাট এলাকার কাছাকাছি কলামে মুক্তিবাহিনী অতর্কিত আক্রমণে ১৪ জন নিহত ও ২৭ শত্রুসৈন্য আহত হয়। তারা ২ টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এর আগে, ২১ অক্টোবর চাপরাশিরহাট এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে অভিযান চালিয়ে ২৬ জন সেনা নিহত এবং প্রায় ৬০ জন আহত হয়। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ২ জন শহিদ হয়।

চট্টগ্রাম জেলায় মুক্তিবাহিনী পার্বত্য অঞ্চলে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে এবং ৫ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। তারা এক পাকিস্তানি সেনাকে বন্দী করে। প্রাপ্ত বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী জানা যায় যে পাকিস্তানি সেনারা রাজাকারসহ ঢাকার কাছে মুড়াপাড়ায় স্পিড বোটে যাবার সময় মুক্তিবাহিনীর অতর্কিত হামলায় ১৮ জন নিহত ও তাদের ১০ জন আহত হয়। মুক্তিবাহিনী ১৩ টি রাইফেল এবং একটি স্টেনগান জব্দ করে।

সিলেট জেলায় মুক্তিবাহিনী সিলেটের বিশ্বনাথ সড়কে ১৫ ফুট রাস্তা উড়িয়ে দেয়। এতে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়।

অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার সরারচর এলাকা থেকে ২৮ টি রাইফেলসহ ৩৫ জন রাজাকার আটক করে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৭ নভেম্বর ১৯৭১

বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব সেক্টরে তাদের আক্রমণাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রাখছিল এবং দখলদার সেনারাদের পিছু হটতে বাধ্য করছিল।

নোয়াখালী সেক্টরে মুক্তিবাহিনী ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া মুক্ত করার পর আরও দক্ষিণ পশ্চিমে ফেনী শহরের উপকণ্ঠে ভারী যুদ্ধ চালাচ্ছিল। উত্তরে দিনাজপুর জেলার পঞ্চগড়ে রিইনফোর্সমেন্ট অগ্রসর হবার সময় যুদ্ধ আরও বেড়ে যায়। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিবাহিনী গুরুত্তপূর্ণ ঝিকরগাছা এলাকায় তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কার্যত যশোর ক্যান্টনমেন্ট দখল প্রায়।

মুক্তিবাহিনী ২৫ নভেম্বর খুলনার জেলার বাসন্তিপুর মুক্ত করে। মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলায় আটগ্রাম, রহিমপুর ও জকিগঞ্জ সড়ক বরাবর এলাকা মুক্ত করেছে।

২৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী গৌরিনগর এলাকায় পাকিস্তানি সেনা অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয় ও সৈন্যদের সঙ্গে গোলাগুলি করে। মুক্তিযোদ্ধাদের আগুয়ান ইউনিট প্রতিরোধ করতে না পেরে পাকিস্তানি সেনারা রাজাপুর থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় এবং মুক্তিবাহিনীর পোস্টে টি দখল করে। রাজাপুর এলাকায় কয়েকটি যুদ্ধের মধ্যে মুক্তিবাহিনী ১১ শত্রু হত্র্যা করে। আমাদের কোন হতাহত হয়নি।

২৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার মোহনগঞ্জ থানায় পানিহাটা ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। সিজ এখনো অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে মুক্তিবাহিনীর সামুদ্রিক কমান্ডো ৭৫০০ টন COLUMBIA ট্রেডার নামে এক আমেরিকান জাহাজ এবং চালনা পোর্ট এলাকায় এক পাকিস্তানি গানবোট ডুবিয়ে দেয়। ২৪ নভেম্বর রাতে সাহসী নৌ-কমান্ডোরা ময়মনসিংহ জেলার যমুনা নদীর উপর বাহাদুরাবাদ ঘাটে অভিযান চালায়। শেল বিস্ফোরণের ফলে গোলাবারুদ ডাম্প বিস্ফোরণ হয় এবং একটি স্টীমার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাকিস্তানি সেনারা আরও দক্ষিণে প্যাট্রোল বোটসহ সব জল যান সরিয়ে ফেলে।

২৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনীর কুষ্টিয়া জেলার মোহনখালি এলাকায় পাকিস্তানি অনিয়মিত বাহিনীর উপর অতর্কিত আক্রমণ করে। এতে ১২ জন রেন্জার্স নিহত হয় ও ১২ জন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী আমান্ডাঙ্গা এলাকায় হানাদার বাহিনীর উপর মর্টার আক্রমণে ২ জন প্রাণনাশ এবং ৪ শত্রুসৈন্য আহত হয়। যশোর জেলার মাগুরা মহকুমার শ্রীপুর থানায় ২৭ রাইফেলসহ এর আগে ২৭ পুলিশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে। ২৫ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার নেত্রকোনা মহকুমার নাজিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মুক্তিবাহিনী ৩ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী রাজশাহী জেলার গোদাগাইরহাট এলাকায় পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে এবং ৮ শত্রুসৈন্য নিহত হয়। অন্য অভিযানে একই দিনে

ধোবরা এলাকায় মুক্তিবাহিনী ৪ শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চিম লালমনিরহাট এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দেয় এবং ট্রেন যোগাযোগের আরও চ্যুতি ঘটে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৮ নভেম্বর ১৯৭১

বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব সেক্টরে তাদের আক্রমণাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রাখছিল এবং দখলদার সেনারাদের পিছু হটতে বাধ্য করছিল।

দিনাজপুর জেলার, মুক্তিবাহিনীরা গতরাতে কৌশলগত ভাবে গুরুত্তপূর্ণ থানা পঞ্চগড় থেকে শত্রুদের বিতাড়িত করে। এবং তারা শহরে অবস্থান নিয়েছে। ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ সুসংহত করেছে। ২৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী একই জেলার ভ্রামপুরা মুক্ত করে।

কুষ্টিয়া ও যশোর জেলা-মুক্তিবাহিনী জীবননগর, বাঘাছড়া, শার্শা ও নভারন এলাকায় শত্রুমুক্ত করেছে। যশোর শহর দখল প্রক্রিয়াধীন।

খুলনা জেলার, মুক্তিবাহিনীত রাজাপুর, মান্দ্রা, রঘুনাথপুর, গাগ্নি এবং নাবাতকাটি এলাকা থেকে শত্রুসৈন্য বিতাড়িত করে।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এখনো নোয়াখালীর ফেনী মহকুমা শহরে যুদ্ধ চলছে। ২৫ নভেম্বর কাইম্পুর, ছারুয়া এবং কুমিল্লা জেলার কাশিমপুরে ত্তৎ পাতা সিরিজ বোমায় ৮ জন শত্রুসৈন্যকে হত্যা করে। ২৪ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী চাঁদপুর এলাকায় একটি পাক প্যাট্রোল অ্যামবুশে ৩ হানাদার সৈন্য হত্যা করে। ২৩ নভেম্বর চম্পকনগরের দক্ষিণ-পূর্বে একটি পাক প্যাট্রোলে অ্যামবুশ করে দুই শত্রুসৈন্য নিহত এবং ৩ জন আহত হয়।

রংপুর জেলায়, জেলার উত্তর অংশে তাদের অবস্থান সংহত করার পর মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা শত্রুর যোগাযোগ লাইন ব্যাহত করে। ২৬ নভেম্বর তারা ডোমার এবং চিলহাঁটির মধ্যে একটি রেল সেতু ক্ষতিগ্রস্ত করে। একই এলাকায় তারা অস্ত্রসহ ৩ রাজাকার আটক করে। ২১ নভেম্বর পারলিয়া এবং ভতেমারি র মধ্যে রেল ট্র্যাক সরানো হয়। এর আগে, একই অপারেশন কাকিনাতে করা হয়। তিস্তা এবং মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাট এর আশেপাশে ‘ রেল যোগাযোগ ব্যাহত করা হয়। ২৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ফিলিয়া পাকসেনা অবস্থানে অভিযান চালিয়ে ৪ জন সৈন্য হত্যা করে।

রাজশাহীতে, মুক্তিবাহিনী নওগাঁর কাছে ২ জনকে হত্যা করে এবং ২০ নভেম্বর ৪ জনকে আহত হয়।

ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরে মুক্তিবাহিনী তিলকপুরের কাছে ১৭ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে ২৪ নভেম্বর। ২৫ নভেম্বর বর্নিতে দুই পাকসেনা নিহত এবং তিনজন আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী দিসয় এলাকায় পাকসৈন্য ও অনিয়মিত সৈন্যদের আক্রমণ করে তাদের ৩ জন হত্যা করে। ২৩ নভেম্বর গৌরিনগর পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর একটি অভিযান করলে তিন শত্রুসৈন্য ও ২ রাজাকার নিহত করা হয়। মুক্তিবাহিনী দুইটি শত্রু বাংকার ধ্বংস করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী গৌরিনগর থেকে ১ মাইল দূরে ১১ জন শত্রুসৈন্য ও অনিয়মিত সৈন্য হত্যা করে। ২৩ নভেম্বর দুর্গাপুর এলাকায় মুক্তিবাহিনী দুই জনকে প্রাণনাশ এবং এক পাকসেনা আহত হয়। এর আগে ১৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ময়মনসিংহ জেলার বকশীগঞ্জের কাছাকাছি মাযেদ্দায় ২ প্লাটুন শত্রু কলাম আক্রমণ করে ১৭ জন নিহত ও ৯ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়। ২৩ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী জামালপুর মহকুমার ইসলামপুরের কাছাকাছি আক্রমণে অস্ত্রসহ ৭ রাজাকার আটক করে। ২২ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নেত্রকোনা মহকুমা শহরে অভিযান চালিয়ে ৬ অনিয়মিত শত্রুসেনা হত্যা করে। সিলেট জেলায়, মুক্তিবাহিনী বড়লেখার কাছাকাছি এবং লংলা চা বাগান এলাকায় দুটি কৌশলগত সেতু ধ্বংস করে। তারা বালাগঞ্জ এলাকায় একটি খেয়া নৌকা ধ্বংস করে।

২৪ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিবাহিনী মহেশকুন্দি শত্রু পল্টনে অতর্কিত আক্রমণ করে। খুলনা জেলার, মুক্তিবাহিনী সনাবাড়িয়াতে শত্রু অবস্থানে আক্রমণে ২৩ নভেম্বর ৭ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

স্বাঃ / নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ফোর্সেস

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২৯ নভেম্বর ১৯৭১

বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব সেক্টরে তাদের আক্রমণাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রাখছিল এবং দখলদার সেনারাদের পিছু হটতে বাধ্য করছিল।

সিলেট জেলায়, মুক্তিবাহিনী গতকাল জৈন্তাপুর এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ছোটাখেল মুক্ত করে। বৃহৎ যুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাদের প্রচুর হতাহত হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিলেট শহর থেকে ১২ মাইল দূরে যুদ্ধ চলছিল। মুক্তিবাহিনী কানাইঘাটে পাকসেনাদের আক্রমণের যোগ্য উত্তর দেয় এবং এখন সেটি মুক্তিবাহিনীর দখলে। এছাড়া মুক্তিবাহিনী রাধানগর মুক্ত করে।

২৬ নভেম্বর রাতে, মুক্তিবাহিনী সিলেট জেলার বাদীরটেকাতে পাকিস্তানি অবস্থানে আক্রমণ করে ২৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে। আমাদের সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের ৩ জন প্রাণ হারায়।

যশোর-খুলনা সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী সাতক্ষীরা শহরের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সোনাবাড়িয়া শত্রুমুক্ত করে।

২৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ধর্মদহার কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর উপর অ্যামবুশে ৭ জন পাকিস্তানি সৈন্য হত্যা করে। ২৫ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী কাজিপুর থানায় অভিযান চালিয়ে ১৬ পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং অনিয়মিত শত্রুসেনা হত্যা করে। একই তারিখে মুক্তিবাহিনী যাদবপুর পাকিস্তানি সৈন্যদের উপর অতর্কিত হামলায় ৫ জনকে হত্যা করে ও কিছু অনিয়মিত সৈন্য আহত হয়।

ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সেক্টরে ২৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী মধুপুর অঞ্চলের পাকিস্তানি সেনা অবস্থানে আক্রমণ করে ৬ শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

২৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অভিযান চালিয়ে ২ পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং ৩ রাজাকার হত্যা করে।
পাবনা থেকে বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ১৬ নভেম্বর বাঘাইলের কাছাকাছি আক্রমণ করে ৫০ জনকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে। ১৭ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ঈশ্বরদী থানায় অভিযান চালিয়ে ১১ পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে। তারা ৮ টি রাইফেল উদ্ধার করে। তারা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ এবং শহরে ভিআইপি গেস্ট হাউস ধ্বংস করে।

ঢাকা জেলায় মুক্তিবাহিনী ২১ নভেম্বর কাউয়াকইরের কাছে পাকিস্তানি সেনা কনভয় এর উপর অতর্কিত আক্রমণে ৪ জন পাকসেনাকে হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী একটি শত্রু জীপ এবং কিছু গোলাবারুদ দখল করে। ১৫ নভেম্বর সকালে শত্রুর সঙ্গে এনকাউন্টারে মুক্তিবাহিনী ৭ জন অনিয়মিত সৈন্য হত্যা করে এবং একই এলাকা থেকে ৬ জন রাজাকার আটক করে। ১৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী জয়দেবপুরের কাছাকাছি ঢাকার ২০ মাইল উত্তরে শত্রু চৌকিতে অতর্কিত আক্রমণে ১০ জন অনিয়মিত শত্রুসৈন্য হত্যা করে।

স্বাঃ /-নুরুর রহমান,
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
৩০ নভেম্বর ১৯৭১

বীর মুক্তিযোদ্ধারা সব সেক্টরে তাদের আক্রমণাত্মক কার্যক্রম অব্যাহত রাখছিল এবং দখলদার সেনারাদের পিছু হটতে বাধ্য করছিল।

সিলেট জেলায় মুক্তিবাহিনী সুনামগঞ্জ মহকুমার তাহেরপুর থানার মুক্ত করে। ২৮ নভেম্বর রাতে মুক্তিবাহিনী গৌরিনগর পাকসেনাদের আক্রমণ করে এবং শত্রু দখল থেকে গৌরী নগরের কিছু অংশ দখল করে নেয়। ১২ পাকসেনা অভিযানে নিহত হয়। ২৮ নভেম্বর কানাইঘাটের কাছাকাছি গৌরীপুরে একটি বড় যুদ্ধে একজন কর্মকর্তাসহ 75 জন পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। 7 পাকসৈন্যকে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সিলেট জেলার কানাইঘাট লড়াইয এখনও চলছে।
দিনাজপুর জেলায় মুক্তিবাহিনী পঞ্চগড়ে দক্ষিণে পুতুল্লার দিকে তাদের অবস্থান সংহত করে। রংপুর জেলায় মুক্তিবাহিনী নাগেশ্বরী যাওয়ার পথে পাকিস্তানি সেনার সম্মুখীন হয়। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী নাগেশ্বরী থানার দুই মাইল উত্তরে একটি জায়গায় যুদ্ধ চলছে।

নোয়াখালী জেলায় মুক্তিবাহিনী ফেনীতে তাদের অবস্থান সংহত করার পর এখন শহরের ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ শুরু করেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারী যুদ্ধ চলছে।

যশোরে মুক্তিবাহিনী জেলা হেড কোয়ার্টারের দিকে অগ্রসর হয়। বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ১৫ নভেম্বর ভারী লড়াইয়ের পর টাঙ্গাইল জেলা শহর মুক্ত হয়েছে। এর আগে 17 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী অভিযান চালিয়ে মির্জাপুর থানার মুক্ত করে। একই দিনে মুক্তিবাহিনী মির্জাপুর-টাঙ্গাইল সড়ক ধরে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। 12 নভেম্বর থেকে 18 নভেম্বরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কে ছয়টি রাস্তা সেতু ধ্বংস করে সম্পূর্ণরূপে শত্রুর শক্তিবৃদ্ধি লাইন ব্যাহত করে। টাঙ্গাইল শহর দখলের পরে মুক্তিবাহিনী ১৮ নভেম্বর বাসাইল পুলিশ স্টেশন দখল করে। একটি হিংস্র যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে মুক্তিবাহিনী 18 জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং 30 জন রাজাকার হত্যা করে ও বাসাইল মুক্ত করে। মুক্তিবাহিনী ১৭ নভেম্বর দুই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জীপ অতর্কিত আক্রমণে করে যখন তারা ময়মনসিংহ থেকে টাঙ্গাইল যাচ্ছিল। এতে এক কর্মকর্তাসহ আট পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। 18 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরের কাছে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর একটি পাকিস্তানি আক্রমণ প্রতিহত করে। পাকিস্তানি সৈন্যরা পাঁচটি গানবোটে আসে। একটি ভারী যুদ্ধে, মুক্তিবাহিনী 35 শত্রুসৈন্য নিহত ও 50 জন আহত হয়। দুইটি নৌকা ডুবিয়ে দেয়।

কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী বাড়াগান্দিয়াতে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকারদের ওপর অ্যামবুশে ১৮ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়। 23 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী চুয়াডাঙ্গা মহকুমার মধ্যে দামুড়হুদা থানায় অভিযান চালিয়ে 11 পুলিশ সদস্যকে এবং 9 টি রাইফেল দখল করে নেয়। 20 নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ভাটিয়াপারা এলাকায় আক্রমণে 45 জন হতাহত হয়। তারা 2 টি মোটর লঞ্চ দখল করে নেয়। এক জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। 18 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী কালনীতে 7 শত্রুসৈন্য হত্যা করে একটি অ্যামবুশে। মুক্তিবাহিনী 48 টি রাইফেল, 1 টি এলএমজি এবং কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করে। গেরিলাদের একটি গ্রুপ একই এলাকায় 20 নভেম্বর 9 জন পাকসেনা হত্যা করে। মুক্তিবাহিনীর একজন বেসামরিক স্বেচ্ছাসেবক এতে শহীদ হয়। 17 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী মিরেপারার কাছে পাক অবস্থানে মর্টার দিয়ে আক্রমণে 12 পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে।

ময়মনসিংহ সিলেট সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী ২৮ নভেম্বর কুরিখোলায় পাক টহলে অতর্কিত আক্রমণে দুই পাকসেনা এবং ৩ রাজাকার হত্যা করে। 27 নভেম্বর পাকসেনারা বর্ণী এবং ডাক্তার বাড়ি এলাকায় মুক্তিবাহিনীর অবস্থানে আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই আক্রমণের জবাব দেন। এতে 3 পাকসৈন্য আহত হয়। একই দিনে মুক্তিবাহিনী বিয়ানীবাজার এলাকার কাছাকাছি হানাদার বাহিনী উপর আক্রমণে এক জনকে হত্যা করে এবং ৬ জনকে বন্দি করে।

একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী গফরগাঁও থানার কাছাকাছি আমিতলাতে অভিযান চালায় এবং 68 জন পাকসেনা হতাহত হয়। মুক্তিবাহিনী 25 টি রাইফেল ও প্রচুর গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এতে এক জন মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়।

ঢাকা-কুমিল্লা সেক্টরে, মুক্তিবাহিনী কৃষ্ণপুর এলাকায় পাক অবস্থানের ওপর মর্টার হামলা করে দুই পাকসেনা নিহত ও দু’জন আহত হয়। এর আগে ২০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা একই এলাকায় একটি রেল সেতু ভেঙ্গে ফেলে। ১৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী সংকলহাইলে পাকসৈন্যদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে দুই জন পাকসেনাকে হত্যা করে। এর আগে ১৩ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গাজীপুর এলাকায় পাকসেনাদের একটি লঞ্চে আক্রমণ করে এক কর্মকর্তাসহ ১৫ জন হত্যা করে এবং ২০ জন আহত হয়। লঞ্চ টি খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মুক্তিবাহিনী 5 টি রাইফেল উদ্ধার করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
১ ডিসেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনীর বিজয় বাংলাদেশের সকল মুখপত্র অপ্রতিহতভাবে অব্যাহত রেখেছে। জানা যায় যে মুক্তিবাহিনী গতরাতে একটি বড় যুদ্ধে সিলেটের দক্ষিণাঞ্চলে কৌশলগত শহর শমশেরনগরএ-আক্রমণ করে। শত্রুরা অপ্রস্তুত ভাবে যুদ্ধে জড়িত হয়। সর্বশেষ রিপোর্ট মতে মুক্তিবাহিনী ইতিমধ্যে শহরে প্রবেশ করেছে এবং আনন্দের সাথে শত্রমুক্ত করছে। স্মরণ করা যেতে পারে শমসেরনগর একটি বিমানবন্দরে রয়েছে। সিলেট ও শমসেরনগরের মধ্যে এবং অন্যান্য জায়গার সঙ্গে 25 মার্চ থেকে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

উত্তর সিলেটে মুক্তিবাহিনী উত্তর-পূর্ব দিকে টেংরাটিলা, সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব দিকে দঊরাবাজার মুক্ত করে। জানা যায় যে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে জেলার গারা, সেমুতানা, কারণি, আলিরগাও এবং পিরিজপুর এলাকা থেকে পাকসেনারা নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এবিং গোলাবারুদ, কাপড়, ব্যাগএবং কিছু কাগজপত্র ফেলে গেছে। মুক্তিবাহিন সুলতানপুর এবং এরুখালি ও দখল করেছ।

ময়মনসিংহ জেলার কামালপুর এলাকায় যুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনী দিনাজপুর ও যশোর সেক্টর থেকে আরও অগ্রগামী হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী নোয়াখালীর ফেনী শহরে এখনো যুদ্ধ চলছে।

29 নভেম্বর মুক্তিবাহিনী, ময়মনসিংহ জেলার বারখালি এলাকায় হানাদার বাহিনীর একটি কলামের উপর আক্রমণ করে 12 জন পাকিস্তানি সেনা হত্যা করে। এই অপারেশনের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের 2 জন শহীদ হন। এছাড়াও ১৮ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী একই এলাকায় একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করে।

হুসেইনপুর এলাকায় রাইফেলসহ 14 রাজাকার আটক করে। 11 নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হুসেইনপুর থানার 15 পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ এবং 25 অনিয়মিত সৈন্য হত্যা করে। তারা 77 টি রাইফেল, 2 টি বন্দুক ও কিছু গোলাবারুদ দখল করে। এই অভিযানে আমাদের ৪ জন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। এবং 4 জন আহত হয়। নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা গফরগাঁওের কাছাকাছি দত্তেরবাজার রেন্জার্সে শত্রুদের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে 12 জন রেন্জার্স এবং 11 জন রাজাকার হত্যা করে। তারা 14 টি রাইফেল দখল করে নেয়। এই অপারেশনে আমাদের ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।

ময়মনসিংহ জেলার বোয়ালিয়ায় মুক্তিবাহিনী ১২ নভেম্বর অ্যামবুশে ১৫ জন দখলদার সৈন্য হত্যা করে। তারা ১৪ নভেম্বর ধামসুর এলাকায় 6 পাকিস্তানি সৈন্য ও নয়জন রাজাকার হত্যা করে।

২৬ নভেম্বর সিলেট জেলায় দাকাদক্ষিন একালায় মুক্তিবাহিনী একটি ট্যাঙ্ক মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে।

চট্টগ্রাম জেলার মুক্তিবাহিনী ১৭ নভেম্বর ফেনুয়া ও হালদা চা বাগানে আক্রমণ করলে ৫ জন শত্রুসেনা নিহত ও ৪ জন সৈন্য আহত হয়। তারা কিছু গোলাবারুদ ও একটি রাইফেল দখল করে নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধারা ২০ নভেম্বর রাজঘাট চা বাগান থেকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগীদের তাড়িয়ে দেয় এবং চা কারখানার কাজ বন্ধ করে দেয়।

মুক্তিযোদ্ধারা ১৭ নভেম্বর ফটিকছড়ি থানার সার্কেল অফিস অভিযান চালিয়ে ১১ জন পাকিস্তানি পুলিশকে আটক করে। তারা থানা ও সার্কেল অফিসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। এই অভিযানের সময় মুক্তিযোদ্ধারা ৬ টি রাইফেল, একটি এলএমজি, একটি স্টেনগান ও প্রচুর গোলাবারুদ দখল করে। মুক্তিযোদ্ধারা এই সময়কালে চট্টগ্রাম ও ফেনী এলাকায় রেল ট্র্যাক মুছে ফেলে, রেল সেতু ও কালভার্ট ধ্বংস করে এবং রেল যোগাযোগ ব্যাহত করে।
কুষ্টিয়া-যশোর-খুলনা সেক্টরে মুক্তিবাহিনী 27 নভেম্বর আব্দারহাট এলাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্যাট্রোলে অতর্কিত হামলা করে 7 জনের প্রাণনাশ এবং 2 শত্রুসৈন্য আহত হয়। 21 নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সন্তোষপুর এলাকায় 3 টি রাইফেলসহ 9 পাকিস্তানি পুলিশ আটক করে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ বাহিনী।

বাংলাদেশ বাহিনীর দপ্তর, মুজিবনগর
জনসংযোগ বিভাগ
যুদ্ধ বুলেটিন
২ ডিসেম্বর ১৯৭১

মুক্তিবাহিনী ধারাবাহিক বিজয়ী অব্যাহত রাখে-আরো নতুন স্থান দখল করতে থাকে এবং বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাদের উপর প্রবল চাপ চলমান থাকে।

দিনাজপুর জেলার মুক্তিবাহিনীর পাচগরেরে ১০ মাইল দক্ষিণে বোদা থানার হেডকোয়ার্টার শত্রুমুক্ত করে এবং এখন ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে অগ্রসর হয়।

রংপুর জেলার মুক্তিবাহিনী নাগেশ্বরী থানা শত্রুমুক্ত করে এবং আরও দক্ষিণে এগিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ভারলা নদীর উত্তরে এখন প্রায় পুরো এলাকায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।

কুষ্টিয়ায় মুক্তিবাহিনী জীবননগরের উত্তরপূর্বে আন্দুল্বেড়িয়া গ্রাম স্বাধীন করে। জানা যায় যে মুক্তিবাহিনীর ভারী চাপের কারণে শত্রুরা ৯ম বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার যশোরের থেকে মাগুরায় শিফট করে।

ময়মনসিংহে মুক্তিবাহিনী কামালপুরে শত্রু পোস্ট চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলেছে এবং শত্রুর সমস্ত যোগাযোগ লাইন ধ্বংস করেছে। কামালপুরের পতন অতি আসন্ন।

সিলেট জেলার মুক্তিবাহিনী বিমানবন্দর এবং শমসেরনগর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান সংহত করছে।

চট্টগ্রাম জেলার মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা উত্তরে ও চট্টগ্রামের দক্ষিণে আনোয়ারাতে ফটিকছড়ি ও রাউজান থানার অধিকাংশ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর পটিয়া থানা ও হাতিয়া দ্বীপের প্রধান অংশে প্রাধান্য বজায় রেখেছে। সর্বশেষ রিপোর্ট মতে সীতাকুণ্ড ও মিরেশ্বরাই নিয়ন্ত্রণের জন্য যুদ্ধ চলছে। মুক্তিবাহিনীর রাঙ্গামাটির কাছে তাদের অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলছে।

ময়মনসিংহ জেলার মুক্তিবাহিনী ২৪ নভেম্বর গোপালপুর এ পাকসেনাদের আক্রমণের জবাব দিচ্ছে এত ১৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত হয়।

একই দিনে মুক্তিবাহিনী বিরিশিরি বিজয় পুর থেকে সরার সময় আক্রমণ করে ৫ জন শত্রুসেনা হত্যা করে। ২৯ নভেম্বর নালিতাবাড়ী এলাকায় ২১ টি রাইফেলসহ ২১ জন রাজাকার আটক করা হয়।

২৫ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী জামালপুর-ইসলামপুর লাইনে অভিযান চালিয়ে ২ পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে। তারা ৮টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদসহ ৮ জন রাজাকার আটক করে।

২৬ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী ভালুকা এলাকায় ৩ পাকিস্তানি সেনা ও ৪ জন রাজাকাররা হত্যা করে।

২৯ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নেত্রকোনা মহকুমা শহরে থানায় অভিযান চালিয়ে ৬ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ হত্যা করে।

২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বারহাট্টা থানায় অভিযান চালিয়ে ১০ জন অনিয়মিত শত্রুসৈন্য হত্যা করে। এর আগে ২১ নভেম্বর মুক্তিবাহিনী নেত্রকোনার কাছাকাছি রেলওয়ে ক্রসিং এ পশ্চিম পাকিস্তানী রেঞ্জার্স ও রাজাকারদের আক্রমণ করে ৩ রেন্জার্স এবং ৫ জন রাজাকার হত্যা করে। আরেকটি অভিযানে একই দিনে মুক্তিযোদ্ধারা নেত্রকোনার এসডিওর বাসায় পাহারারত ৭ জন রেন্জার্স এবং ১২ জন রাজাকারকে হত্যা করে।
২৮ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা মুন্সীবাজারে একটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়ি ধ্বংস করে। ২৭ নভেম্বর দখলদার বাহিনী ময়মনসিংহ-সিলেট সেক্টরের কালশনারচর এলাকায় মুক্তিবাহিনীকে আক্রমণ করে। বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে আক্রমণ প্রতিহত করে। প্রতিহিংসামূলকভাবে পাকিস্তান বিমানবাহিনী এলাকায় বোমাবর্ষণ এবং বেসামরিকদের উপর অনেক অত্যাচার ও হতাহত সঙ্ঘটিত করে।

বগুড়া জেলার মুক্তিযোদ্ধারা ২৩ তারিখ সারিয়াকান্দি থানায় অভিযান চালায় ও কমান্ডিং অফিসারসহ ২২ জন পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশকে হত্যা এবং তাদের ২ জনকে আটক করে। তারা ৮ টি রাইফেল উদ্ধার করে।

২৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর জেলার শাঁখাটা থানা আক্রমণে একজন কমান্ডিং অফিসারসহ ১০ পুলিশ এবং ২ টি রাইফেল এবং একটি স্টেনগানসহ ৩২ জন রাজাকার আটক করে। মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট হানাদার সৈন্যদের একটি ঘাঁটির যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিঘ্নিত করে।

২৬ নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা মঘলাঘাট ও লালমনিরহাটে রেল ট্র্যাক সরিয়ে ফেলে।

২৮ নভেম্বর তারা অদিত্মারির পূর্বে কাছাকাছি এলাকায় রেললাইন উড়িয়ে দেয়। একই দিনে তারা লালমনিরহাটের পশ্চিমে কাকিনার কাছাকাছি দামাগিয়া রেললাইন ধ্বংস করে।

২৪ নভেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধারা কাকিনার টেলি-যোগাযোগ ধ্বংস করে।
রাজশাহী জেলার মুক্তিযোদ্ধারা ২৭ নভেম্বর চারঘাট ও সারদার মধ্যে টেলি-যোগাযোগ ব্যাহত করে।

১৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বগুড়া-গাইবান্ধার মধ্যে সিঙরা রেল সেতুতে অভিযান চালায় ব্রিজ পাহারারত রাজাকারদের হত্যা করে। ১০ টি রাইফেল দখল করে।

২৭ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা যশোর জেলার মুন্সীগঞ্জের কাছে রাইফেলসহ ৪ জন রাজাকার আটক করে।

কুমিল্লা জেলায় ২৩ নভেম্বর জাম্বাড়ি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা ৫ জন শত্রুসৈন্য হত্যা করে ও ২ জন শত্রুসৈন্য আহত হয়।

২০ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা রিশিমুখ এলাকায় ৩ টি রাইফেলসহ ৭ জন রাজাকার ও কিছু গোলাবারুদ দখল করে করে। একটি বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী চাপিতালা এলাকায় হানাদার বাহিনী উপর অভিযান চালায়। এই অভিযানে ২ কর্মকর্তাসহ ১৫ জন শত্রুসৈন্য নিহত এবং ২০ জন আহত হয়।

বিলম্বিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী গেরিলারা উজিরপুর ও মুলাদী সদর মহকুমা ও লালমোহন, চরফ্যাশন, ভোলা মহকুমা এবং স্বরূপকাঠি এর বোরহানুদ্দিন থানা শহর ও পিরোজপুর মহকুমার বানারিপারাসহ বরিশাল জেলার বিশাল এলাকা নিবিড় অপারেশন চালিয়েছে। এই অপারেশনের সময়, মুক্তিবাহিনী ২১ পাকিস্তানি সৈন্য ও ১১৫ জন অনিয়মিত শত্রুসৈন্য হত্যা করে। মুক্তিবাহিনী ৬০ টি রাইফেলসহ প্রচুর অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করে। তারা বিভিন্ন শত্রু গানবোট, তিনটি লঞ্চ ও দুই টি বার্জ ধ্বংস করে। এই এলাকার বেশীর ভাগ অংশ এখন মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

স্বাঃ /-নজরুল ইসলাম
জনসংযোগ কর্মকর্তা