ভেসার্নজে নভস্তি | যুগোস্লাভিয়া, ৮ জুলাই ১৯৭১ | বেয়োনেটের সাহায্যে স্বাভাবিক অবস্থা
প্রায় তিনমাস হল স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালীদের দমাতে মিলিটারি এটাক শুরু হয়েছে। এই প্রথম সেখানে বিনা পাহারায় একজন বিদেশী সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। যদিও বেশিরভাগ চিহ্ন সরিয়ে ফেলা হয়েছে তবে তাদের নৃশংসতার কিছু প্রমাণ এখনো আছে।
রাজধানী ঢাকা এখনো ভয়, সহিংসতা ও সন্ত্রাসের শহর। সরকার বলছে “স্বাভাবিক পরিস্থিতি” যদিও রাস্তায় মানুষজন প্রায় চুপিসারে চলছে আর গাড়ী তেমন দেখা যাচ্ছেনা। ঢাকায় অনেক সৈন্য আছে তবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্পেশাল পুলিশ স্কোয়াড আনা হয়েছে। তারা যানবাহন ও মানুষকে চেক করছে এবং গ্রেপ্তারের হার প্রচুর।
‘স্বাভাবিক’ এর একটি নমুনা হচ্ছে যদি কেউ বাংলা রেডিও-স্টেশনের অনুষ্ঠান শোনে তাহলে তার শাস্তি ভয়াবহ। অসংখ্য দোকান এখনো বন্ধ। গাড়ীর নম্বর-প্লেটের বাংলা পরিবর্তন করে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। এবং রাস্তায় কানাঘুষা চলছে যে পাকসেনারা এখনো বাঙ্গালীদের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে – তাদের গ্রেপ্তার করছে এবং কখনো কখনো মেরে ফেলছে।
যদিও ট্যাংক এবং রকেট এর ট্রেস মুছে ফেলা হয়েছে তবুও ভয়ের ছায়া স্পষ্ট। পুরনো ঢাকা সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা এবং এখানে আওয়ামীলীগের সমর্থকের সংখ্যা বেশী। মার্কেটের অবস্থা খুব করুন। নোংরা সরু পথ দিয়ে যেতে যেতে দুই পাশের ধ্বংস করা দালান দেখা যাচ্ছে। এগুলোর বেশিরভাগের মালিকানা ছিল হিন্দুদের। তারা ঘর ছেড়ে যাবার আগ পর্যন্ত তাদের নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়।
ভারতে চলে যাওয়া সাড়ে ৬ মিলিয়ন পাকিস্তানিদের মধ্যে ৪ মিলিয়ন ছিল হিন্দু। এদের বন্দুকের মুখে যেতে হয়েছে। সরকার তাদের মন্দির জ্বালিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর তাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়িগুলো “অনুগত” নাগরিকদের দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।