শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৪। উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের জন্য আরো ব্যবস্থা গ্রহণ | দৈনিক পাকিস্তান | ৩০ আগস্ট, ১৯৭১ |
উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের অধিকতর সুবিধার জন্য আরও ব্যবস্থা গ্রহণ : ভারত সহযোগিতা না দিলে আকাঙ্ক্ষিত ফল হবে না: পররাষ্ট্র সেক্রেটারী
করাচী, ২৯ শে আগষ্ট (এপিপি)। – পূর্ব পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে আরো সুযোগ-সুবিধা দানের জন্য সরকার যে সকল নবতম ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন, পাকিস্তান তা জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনার প্রিন্স সদরুদ্দিনকে অবহিত করেছেন।
পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব সুলতান মোহাম্মদ খান আজ এখানে এই তথ্য প্রকাশ করেন। তিনি গত সপ্তাহে জেনেভায় জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেছেন।
তেহরান ও জেনেভায় পাকিস্তানী দুতদের সঙ্গে আলোচনা করে এখানে প্রত্যাবর্তনের পর তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন। তিনি বলেন, প্রিন্স সদরুদ্দিনের পাকিস্তান সফরের পরবর্তী ঘটনাবলী ও তিনি তাঁকে অবহিত করেছেন।
পররাষ্ট্র সেক্রেটারী বলেন, তিনি জাতিসংঘ উদ্বাস্তু হাই কমিশনারকে অবহিত করেছেন যে, উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে বহু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি প্রিন্স সদরুদ্দিনকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, উদ্বাস্তুদের গৃহে ফেরার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য সরকারী প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
প্রিন্স সদরুদ্দিনকে তিনি বলেছেন যে, ভারতের সহযোগিতা ছাড়া উদ্বাস্তু সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে পাকিস্তানের একতরফা ব্যবস্থা দ্বারা আকাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাবে না। তিনি প্রিন্স সদরুদ্দিনকে আরো বলেছেন যে, উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে ভারত বাধা দিচ্ছে। ভারত সহযোগিতা না করলে এই স্মস্যার সন্তোষজনক সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন লাগতে পারে।
জনাব সুলতান মোহাম্মদ খান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে প্রিন্স সদরুদ্দিনের প্রতিনিধি মিঃ কেলী প্রদেশের সীমান্ত বরাবর বহু স্থান পরিদর্শন করেছেন এবং এখন কিছুটা যাচাই করতে সক্ষম হয়েছেন।
জনাব খান বলেন যে, প্রয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার জন্য তিনি ইসলামাবাদের কয়েকদিনের মধ্যেই কেলীর সঙ্গে আলোচনা করবেন।
বিদেশে অবস্থানকালে সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কলকাতায় পাকিস্তানী ডেপুটি হাই কমিশনের কর্মচারীদের দেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাবস্থা করার গঠনমূলক ভূমিকা গ্রহনের জন্য তিনি সুইজারল্যান্ড সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
পররাষ্ট্র সেক্রেটারী বলেন যে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক এ পর্যন্ত গৃহীত রাজনৈতিক কর্মচারী এবং উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ও পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাবলীও তিনি সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে অবহিত করেছেন।
তিনি বলেন, সুইজারল্যান্ডের সরকার পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে হয়। তারা সম্ভবতঃ আমাদের সমস্যাবলী বুঝতে পারছেন।
ইরান সফর সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পররাষ্ট্র সেক্রেটারী বলেন যে, পাকিস্তান ও ইরানের পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় তিনি আলোচনা করেছেন।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ইরানী শাহানশাহের কাছে যে বাণী পাঠিয়েছিলেন সে সম্পর্কে শাহানশাহের জবাব ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছেন।
আর সি ডি রাষ্ট্র প্রধানদের সম্মেলন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তিনটি রাষ্ট্রের মধ্যে বৈঠকের পর চুড়ান্ত তারিখ ঠিক করা হবে।
তেহরান ও জেনেভায় পাকিস্তানী দূতদের আঞ্চলিক বৈঠক সম্পর্কে তিনি বলেন, মতামত বিনিময় করাই এই সকল সফরের উদ্দেশ্য।
তেহরানের বৈঠকে মধ্যপ্রাচ্য ও পুর্ব আফ্রিকায় নিযুক্ত দূতগণ তেহরান বৈঠকে এবং ইউরোপ, পশ্চিম আফ্রিকা ও আমেরিকায় নিযুক্ত দূতগন জেনেভা বৈঠকে যোগদান করেন। নয়াদিল্লী ও পিকিংয়ে নিযুক্ত দূতগন জেনেভা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
ইরাকে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত জনাব আবুল ফাতেহ- এর বিরুদ্ধে বহিষ্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন এ ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যেই কতিপয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। জনাব আবুল ফাতেহ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে বৃটেন চলে গেছেন।
পররাষ্ট্র সেক্রেটারী বলেন যে, জনাব ফাতেহ দূতাবাসের অর্থ আত্মসাত করেছেন। রাজনৈতিক অপেক্ষা আর্থিক কারণই তার পলায়নের উদ্দেশ্য।
নয়াদিল্লীতে নিযুক্ত পাকিস্তানী হাই কমিশনার জনাব সাজ্জাদ হায়দারও পররাষ্ট্র সেক্রেটারীর সঙ্গে এখানে আগমন করেন।
—————————–
.
.
শিরোনামঃ ৫৫। দুই সপ্তাহের মধ্যে মুজিবের বিচার সম্পন্ন হবেঃ নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রদূত আগাশাহীর বিবৃতি
সূত্রঃ ডেইলি নিউজ
তারিখঃ ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে মুজিবের বিচার সম্পন্ন হবে :
নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা শাহি এর বিবৃতিআগস্ট ৩১, ১৯৭১.পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আগা শাহী গতকাল ( আগস্ট ৩১ ) দেশের আস্থার উন্নয়নের জন্য পাকিস্তান সরকারের নতুন পদক্ষেপগুলোর ব্যাপারে মহাসচিব উ থান্ট কে অবহিত করেন।
এর পর তিনি নিউওয়ার্কে সংবাদদাতাদের বলেন, ‘আপনারা জানেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি নানা ধরণের পদক্ষেপ নিয়েছেন দেশের আস্থা অর্জনের জন্য এবং এই ক্ষেত্রে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা চিন্তা করা হচ্ছে।’ তিনি বলেন যে এই পদক্ষেপগুলো “আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে” বাস্তবায়ন করা হবে। পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে ১১ই আগস্ট তার বিচার শুরু হয়েছে এবং আগামী দুই সপ্তাহের মাঝে তা শেষ হয়ে যাবে।তিনি বলেন যে, শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এবং বিদ্রোহ ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার দায়ে দোষী করা হয়েছে। শেখ মুজিবের বিচার কোথায় হচ্ছে এই ব্যাপারে রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান, অবশ্য তিনি জানিয়েছেন যে শেখ মুজিবের পছন্দ অনুযায়ী জনাব এ কে ব্রহী, যিনি পাকিস্তানের একজন সেরা সাংবিধানিক আইনজীবী, তিনি শেখ মুজিবের পক্ষে এ মামলায় অংশ নিচ্ছেন।(ডেইলি নিউজ, করাচী – সেপ্টেম্বর ১, ১৯৭১)..
.
শিরোনামঃ ৫৬। বৃটিশ সরকারের নিকট পাকিস্তানের প্রতিবাদ,
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান,
তারিখঃ ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বৃটিশ সরকারের নিকট প্রতিবাদ জ্ঞাপন বৃটেনে পাকিস্তান বিরোধী প্রচারনায় ক্ষোভ
ইসলামাবাদ, ৩১শে আগস্ট (এ পি পি)।– পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখন্ডতার বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কার্যের ঘাটি হিসাবে বৃটেন উপনিবেশসমূহ ব্যাবহারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের তীব্র ক্ষোভ বৃটিশ সরকারকে জানানো হয়েছে। গতকাল বৃটিশ হাইকমিশনাকে পররাষ্ট্র কার্যালয়ে ডেকে আনা হয় এবং এ ব্যাপারে পাকিস্তান সরকারের অসন্তোষের কথা তার সরকারকে অবহিত করার আহব্বান জানান হয়।
বৃটেনে পাকিস্তানী হাই কমিশনার জনাব সলমান আলী ইতিপূর্বে লন্ডনে এই একই কথা অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। প্রকাশ, বৃটেনে ও বৃটিশ উপনিবেশ হংকংয়েব বিদ্রোহীদের প্রতি বৃটিশ সরকারের মনোভাব প্রেক্ষিতে উক্ত কড়া প্রতিবাদ জানানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। বৃটেন ও হংকংয়ে বিদ্রোহীরা আশ্রয় লাভ করেছে।
কোন কোন ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধিদের আনুগত্য ত্যাগের ব্যাপারে বৃটিশ মনোভাব কার্যতঃ উৎসাহ জুগিয়েছে। বৃটিশ সরকার বিদ্রোহীদের তৎপরতা রোধ করার জন্য কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। বিদ্রোহীদের বৃটেনে অবস্থান করতে দেয়া হয়েছে। বিবিসি বেতার ও টেলিভিশনে তাদের সময় ও সুযোগই শুধুমাত্র দেয়া হচ্ছেনা, কতিপয় বৃটিশ নাগরিকও পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখন্ডতার উপর হামলা চালানোর একমাত্র লক্ষ্য ও ঘোষিত উদেশ্য নিয়ে পাকিস্তানের নাশকতামূলক তৎপরতা চালানোর জন্য অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বিদ্রোহীদের সংগে অর্থ যোগাড় করার কাজে হাত মিলিয়েছে।
বস্তুতঃপক্ষে ভারতের বাইরে বৃটেন একমাত্র দেশ যেখানে পাকিস্তানকে ধ্বংস করার উদেশ্যে এই সকল তৎপরতা কিছুদিন যাবত অবাধে চলছে। পাকিস্তানের প্রতি বৈরী ও অবন্ধুসূলভ মনোভাবের বর্তমান পথ থেকে বৃটেনকে নিবৃত করার জন্য পাকিস্তান সরকার এখন কি ব্যাবস্থা ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহন করবেন সরকারী মহল থেকে তা এখনো জানা যায়নি।
.
.
শিরোনামঃ ৫৭। ভারতের বিরুদ্ধে জেনারেল ইয়াহিয়ার হুঁশিয়ারী,
সুত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান,
তারিখঃ ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুঁশিয়ারি ভারত দেশের কোন অংশ দখলের চেষ্টা করলে পাকিস্তান পুরোপুরি যুদ্ধ করবে
.
প্যারিস, ১লা সেপ্টেম্বর (রয়টার)।– আজ এখানে প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, ভারত পাকিস্তানী ভূ খন্ডের কোন অংশ দখলের চেষ্টা করলে পাকিস্তান পুরোপুরি যুদ্ধ করবে। দৈনিক লা ফিগারো পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি বিশ্বকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই যে ভারত যদি মনে করে থাকে তারা বিনা উস্কানিতে আমাদের ভূখন্ডের কোন অংশ দখল করতে পারবে , তাহলে তারা মারাত্মক ভূল করবে।
এর অর্থ হবে যুদ্ধ, পূর্ন যুদ্ধ তাকে আমি ঘৃণা করি। কিন্তু আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য আমি তাতে ইতস্ততঃ করবনা। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন যে , পূর্ব পাকিস্তানের সংকটকালে এটা ফাঁস হয়ে গিয়েছে যে, তার দেশের বিরুদ্ধবাদীর পুরোভাগে রয়েছে বৃটেন। পূর্ব পাকিস্তানের সংকটে তিনি ফ্রান্স ও চীনের ভূমিকার প্রসংশা করেন।
তবে অন্যান্য কতিপয় অজ্ঞাত দেশের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন , আইন ও শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপারে কতিপয় সীমান্ত এলাকা ছাড়া সবকিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
তিনি বলেন আমি বলতে পারি, জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আমি এখনো দৃঢসংকল্প। আমি আওয়ামী লীগ বাতিল করেছি। কিন্তু প্রদেশের প্রতিনিধিদের আসন আমি বাতিল করিনি। আমি দেশোদ্রোহীদের বিতাড়িত করেছি। ৮৯ জন ডেপুটি জাতীয় পরিষদে আসন গ্রহন করবেন। সীমান্তে গোলযোগও গনতান্ত্রিক পদ্মতি অনুসরণ থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারবে না। সীমান্ত পরিস্থিতি মোটেই শান্ত নয়।ভারতীয়রা সৈন্যদের অনুপ্রবেশ ও বিদ্রোহীদের উস্কানী অব্যহত রেখেছে।
এজন্যই উদ্বাস্তুরা বাড়ীঘরে ফিরে আসতে পারছেন না । এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন যে, ভারতীয়রা উদ্বাস্তুদের রাজনৈতিক পূজি হিসাবে ব্যাবহার করছে। তারা জাতিসংঘ থেকে উদ্বস্তুদের জন্য সাহায্য পাচ্ছে। ভারত অর্থ পাচ্ছে এবং উদ্বাস্তু ফেরত দিচ্ছেনা। উদ্বাস্তু সমস্যা ভারতীয় সমস্যা নয়, আমাদের সমস্য। পূর্ব পাকিস্তানে অভিযান এলাকা থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের কেন সরিয়ে রাখা হয়েছিল তা জিজ্ঞেস করলে জেনারেল ইয়াহিয়া তার জবাবে বলেনঃ
আমি তাদেরকে রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। এই ধরনের সামরিক অভিযান শুরু হলে তার পরিণাম কি হবেয তা কেউ জানে না। আমি একজন সৈনিক হিসাবেই কাজ করছি, একজন আয়েশী রাজনীতিবিদ হিসাবে নয়। পরে অবশ্য আমি এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। যদি কোন সাংবাদিক আওয়ামী লীগের হাতে নিহত হতেন, সেটা আমার খুবই কাজে আসতো। কারন আওয়ামী লিগ কতৃক নির্যাতনের কথা অনেকেই বলাবলি করছেন।
.
.
ষিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৮। জেনারেল ইয়াহিয়ার সাধারন ক্ষমা ঘোষণা | দৈনিক পাকিস্তান | ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক গোলযোগ
চলাকালে সকল অপরাধের জন্য
প্রেসিডেন্ট্র সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন
রাওয়ালপিন্ডি, ৫ই সেপ্টেম্বর, (এপিপি)।– ১লা মার্চ থেকে ৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে গোলযোগ চলাকালে যারা অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট তাদের সকলকেই সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করেছেন। আজ থেকে এই সাধারণ ক্ষমা কার্যকরী হবে। যাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সশস্ত্র বাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, মুজাহিদ ও আনসার বাহিনীর সদস্যগণ রয়েছে।
ইশতেহারের পূর্ণ বিবরণ
আজ প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারিয়েট থেকে জারিকৃত এক ইশতেহারে বলা হয়, কতিপয় এম এন এ, এম পি এ ও কতিপয় সীমিতসংখক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতের সম্মুখে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগে থেকে নিজেদের মুক্ত করার যথেষ্ট সুযোগ দেয়া হয়েছে।
আজ ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর রোববার প্রেসিডেন্ট ১৯৭১ সালের ১লা মার্চ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে গোলযোগ চলাকালে যারা অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা মঞ্জুর করেছেন।
সেনাবাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, মুজাহিদ ও আনসার বাহিনীর সদস্যদের ক্ষেত্রেও এই ক্ষমা প্রযোজ্য হবে। আশা করা যাচ্ছে যে, জাতীয় প্রশ্নাদির নিষ্পত্তির নীতি অনুসরণে প্রেসিডেন্টের এই সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক গোলযোগের ফলে সৃষ্ট উত্তেজনার পরিণামে যে সমস্ত ব্যক্তি অপরাধ করেছে এবং দেশের বাইরে চলে গেছে অথবা আত্মগোপন করেছে, তাদের মন থেকে সর্বপ্রকার সন্দেহ, ভয় এবং আশংকা দূরীভূত হবে।
ধর্ম সম্প্রদায় অথবা গোত্র নির্বিশেষে এ ধরনের সকল লোক দেশের ভেতরে থাকলে এখন স্বাধীনভাবে বেরিয়ে আসতে পারবেন এবং দেশের বাইরে থাকলে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য এবং তাঁদের পেশা অবিলম্বে কার্যকরী করার জন্য এবং এরুপ প্রতিটি ব্যক্তি যাতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে ও দেশের সংহতি জোরদার করার ব্যাপারে অবদান রাখতে পারে, তার উদ্দেশ্যে আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে পুনর্বাসনে সাহায্য করার জন্য পূর্ব পাকিস্তান সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এই সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শনের ফলে দেশের পূর্ণ স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রেসিডেন্টের সংকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ অগ্রগতি সূচিত হলো।
.
.
ষিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৯। আইন কাঠামো আদেশ সংশোধন | দৈনিক পাকিস্তান | ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
ইসলামাবাদ, ৪ঠা সেপ্টেম্বর (এপিপি)।– আইন কাঠামো আদেশ সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের জারীকৃত এক আদেশে জাতীয় অথবা প্রাদেশিক পরিষদের কোন আসন সাময়িকভাবে শুন্য হলে, আসন শুন্য হওয়ার চার মাসের মধ্যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এই আদেশের নাম আইন কাঠামো (দ্বিতীয় সংশোধনী) আদেশ, ১৯৭১।
এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকরী হবে। আইন কাঠামো আদেশের ৭ নম্বর ধারার পরিবর্তে এই আদেশ জারী হয়েছে। উক্ত বাতিল ধারা অনুযায়ী আসন শুন্য হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ছিল।
.
.
শিরোনামঃ ৬০। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসে প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার বানী
সূত্রঃ কারেন্ট নিউজ ডঃ হাসান জামান সম্পাদিত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ‘ ৭১
তারিখঃ ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা দিবসের বার্তা
নিচে রাষ্ট্রপতির সম্পূর্ন বার্তাটি বিবৃত করা হলো।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা দিবসটি সমগ্র জাতির জন্য ১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে সশস্ত্র সংঘাতে আমাদের বীর প্রতিরক্ষা বাহিনীর গৌরবময় কীর্তির কথা স্মরণের একটি উপলক্ষ্য। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের জন্য এটি একই সাথে গৌরবময় ইতিহাসকে স্মরণের দিন এবং বিদেশি আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ সকল হুমকির বিরুদ্ধে মোকাবেলা করে দেশের সীমান্ত রক্ষার মহৎ ও পবিত্র অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্তকরণের দিন। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সবসময়েই তাঁদের প্রতি স্থাপিত আস্থার মর্যাদা রেখেছেন। জাতীয় সংহতি, অখণ্ডতা এবং আদর্শের প্রশ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে তাঁরা কখনই দ্বিধা করেননি। সকল সংকট তাঁরা শক্তিমত্তা ও ইস্পাত দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছেন।
পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহী ও দুষ্কৃতকারীদের দমনে যে ভূমিকা তাঁরা পালন করেছেন তা আমাদের দ্বারা সবসময়ে গৌরব ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হবে। যারা ষড়যন্ত্রকারী এবং সীমান্তে সশস্ত্র অনুপ্রবেশকারীদের প্ররোচনা ও সক্রিয় সমর্থনে আমাদের পবিত্র মাতৃভূমিকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা করেছিল, তাদের পরিকল্পনা এবং শক্তিকেন্দ্র তাঁরা গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা এখনও সেখানে দুষ্কৃতকারীদের দমনে নিয়োজিত আছেন।
দেশকে ভেঙ্গে যাওয়া থেকে রক্ষায় যে ত্যাগ আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা করেছেন তা সর্বোচ্চ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা দাবি করে। তাঁদের নিঃস্বার্থ সেবা, আত্মত্যাগের মানসিকতা এবং দেশের জন্য যুদ্ধ করার সদিচ্ছাই আমাদের অস্ত্র। তাঁরা এর উদাহরণ রেখেছেন পঁয়ষট্টির যুদ্ধে এবং আবারও তা প্রমাণ করেছেন আমাদের অস্তিত্বের প্রতি বহুমুখী হুমকি নিকেশ করে।
আমরা একটি শান্তিকামী রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সৌহার্দ্য ও সহযোগী মনোভাব বজায় রাখতে অটল। তবে একই সাথে, আমরা আমাদের দেশের সংহতি এবং অখণ্ডতা বজায় রাখতেও বদ্ধপরিকর এবং প্রস্তুত। আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনোরূপ বর্হিশক্তির হস্তক্ষেপ সহ্য করবো না; আমরা স্বাধীন, গর্বিত এবং আত্মমর্যাদাপূর্ণ জাতি এবং আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করার অধিকার রাখি।
আজকের এই দিনে, আমরা ১৯৬৫ এর যুদ্ধে দেশকে রক্ষা করতে গিয়ে শাহাদত বরণকারী সাহসী সন্তানদের স্মরণ করছি। একই সাথে আমরা গৌরবের সাথে স্মরণ করছি তাঁদের, যাঁরা সুস্থ সবল দেহে সেই যুদ্ধ জয় করে ফিরে এসেছেন গাজি হিসেবে এবং দেশপ্রেম এবং কর্তব্যপরায়নতার দীর্ঘ ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন।
এদের উদাহরণ পাকিস্তানি সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আগামী প্রজন্মের জন্য বাতিঘর হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় স্বার্থে তাঁদের আত্মত্যাগ এবং দুর্ভোগবরণ নিষ্ফল হবে না। এই আত্মত্যাগ ভবিষ্যৎ পাকিস্তানকে একটি দুর্ভেদ্য দূর্গে পরিণত করতে বাধ্য।
পাকিস্তান, আল্লাহর রহমতে, থাকবে, এবং পৃথিবীর কোনো শক্তি একে ধ্বংস করতে পারবে না। এখানে আমি কায়েদে আযমের এই কথাটি স্মরণ করতে চাই।
“যারা নির্বোধের মত ভাবে যে পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে পারবে তারা দুঃখজনক ভাবে ভুল করছে। পৃথিবীর কোনো শক্তি পাকিস্তানের সংহতি ভঙ্গ করতে পারবে না। পাকিস্তানের ভিত্তি এখন সত্যের উপর এবং গভীরভাবে প্রতিষ্ঠিত।”
.
.
শিরোনামঃ ৬১। নয়াদিল্লীতে “বাংলাদেশ” মিশনঃভারত সরকারের কাছে পাকিস্তানের তীব্র প্রতিবাদ
সুত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
নয়াদিল্লীতে “বাংলাদেশ” মিশনঃ
ভারত সরকারের কাছে পাকিস্তানের তীব্র প্রতিবাদ
ইসলামাবাদ, ৫ই সেপ্টেম্বর (এ পি পি)। – পাকিস্তান আজ ভারত সকারের কাছে, নয়াদিল্লীতে তথাকথিত বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজ সকালে পাকিস্থানস্থ অস্থায়ী ভারতীয় হাই কমিশনারকে পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে তীব্র প্রতিবাদ লিপি প্রদান করা হয়।
এতে বলা হয় যে, এই কাজের মাধ্যমে ভারত সরকার পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা নাশের ব্যাপারে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে তার প্রকাশ্য যোগসাজশের কথা আর একবার প্রমাণ করেছে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ভারত সরকার কতৃক বিদ্রোহী ও দল ত্যাগীদের ভারতীয় এলাকা থেকে পাকিস্তান বিরোধী কার্যকলাপ পরিচালনার সুজগ-সুবিধা প্রদানের ব্যাপারে পাকিস্তানের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়।
তাকে একথাও বলা হয় যে, ভারত সরকারের বিভিন্য উস্কানিমূলক কাজ এবং ভারতীয় নেতৃবৃন্দের পাকিস্তানের সংহতি বিরোধী বিবৃতিসমূহ উপমহাদেশের শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয় যে, উপমহাদেশের এই বৈরি নীতি অব্যাহত থাকলে যে পরিণতি হবে ভারত সরকার তা অনুধাবন করবেন বলে পাকিস্তান সরকার তা আশা করেন।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয় ভারতীয় সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে যে, গত ৩০শে আগস্ট নয়াদিল্লীতে আনুষ্ঠানিকভাবে তথাকথিত বাংলাদেশ মিশন খোলা হয়েছে এবং এতে এর জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। খবরে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানের হাই কমিশনারের বরখাস্ত কর্মচারীদের এই মিশন পরিচালনার কাজে নিয়োগ করা হবে এবং মিঃ বাবুল কান্তি দাস নামে এক ব্যক্তিকে এই মিশন দেখাশোনার দায়িত্বভার দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তান সরকার বিদ্রোহী ও দলত্যাগীদের ভারতের মাটি থেকে পাকিস্তান বিরোধী কার্যকলাপ চালানোর জন্য সুজগ-সুবিধা ও অনুমতিদানকে গুরুতর বিষয় বলে মনে করেন। পাকিস্তান সরকার এ খবরেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণী বিভাগের চেয়ারম্যান মিঃ ডি, পি ধর, কলকাতার তথাকথিত বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত ১লা সেপ্টেম্বর কলকাতায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন যে, স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতেত অন্যতম লক্ষ্য। পাকিস্তান সরকার এই বিবৃতির ব্যাখ্যা চাচ্ছেন এবং একে পাকিস্তানের আঞ্চলিক অখণ্ডতার উপর হামলার শামিল বলে মনে করবেন। এ প্রসঙ্গে প্রতিবাদলিপিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সীমান্ত লঙ্ঘন এবং বিনা উস্কানিতে পাকিস্তানী এলাকায় গোলাগুলি বর্ষনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতিবাদের ব্যাপারেও ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
.
.
শিরোনামঃ ৬২। সাধারণ পরিষদে পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
মাহমুদ আলী নেতা নির্বাচিতঃ সাধারণ পরিষদে
পাক প্রতিনিধি দলের নাম ঘোষণা
ইসলামাবাদ, ৮ সেপ্টেম্বর (এ পি পি) । পাকিস্তান ডেমক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মাহমুদ আলী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন ২৬তম অধিবেশনে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করবেন । এক সরকারী হ্যান্ড আউটে প্রকাশ, জাতিসংঘে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব আগা শাহী সহকারী নেতা হবেন । এই প্রতিনিধি দলে সরকারী ও বেসরকারী সদস্যরাও থাকবেন । বেসরকারী সদস্যরা হচ্ছেনঃ
বিচার পতি জনাব জাকি উদ্দিন পাশা, জজ, হাইকোর্ট, লাহোর
জনাব শাহ আজিজুর রহমান, এডভোকেট, ঢাকা
জনাব জুলমাত আলী খান, এডভোকেট, ঢাকা
জনাব কামাল ফারুকী, রার-এট-ল, করাচী
ডঃ বেগম ইনায়েত উল্লাহ, পি, এইচ, ডি.
মিসেস রাজিয়া ফয়েজ, সাবেক এম এন এ
ডাঃ ফাতিমা সাদিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জনাব এ টি সাদি, এডভোকেট, হাই কোর্ট, ঢাকা
জনাব খকন বাবর, এডভোকেট, লাহোর
প্রতিনিধি দলে সরকারী সদস্য থাকবেনঃ
জাতিসংঘে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব আগা শাহী
অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব এম এ আলভী
মরক্কোয় নিযুক্ত পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত জনাব এ এইচ বি তৈয়াজী
যুগোশ্লাভিয়ায় নিযুক পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত জনাব আই এ আখন্দ
পররাষ্ট্র দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল (জাতিসংঘ) জনাব ইউসুফ জে আহমদ ও
ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র দফতরের সহকারী আইন উপদেষ্টা জনাব জাহিদ সাইদ, বার-এট-ল ।
নিউইয়র্কে ও জাতিসংঘে পাকিস্তানী মিশনের কর্মকর্তা এবং পররাষ্ট্র দফতর ও পার্শ্ববর্তী মিশন সমূহের কূটনৈতিক কর্মকর্তাগণও প্রতিনিধি দলকে সাহায্য করবেন ।
উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৬তম অধিবেশনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ১৯৭১ সালের ২১শে সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে ।
.
.
শিরোনামঃ ৬৩। জাতীসংঘ কমিটিতে আগাশাহীঃ পূর্ব পাকিস্তান সংকট সম্পর্কে মেননের অভিযোগ খন্ডন
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
জাতিসংঘ কমিটিতে আগাশাহী
পূর্ব পাকিস্তান সংকট সম্পর্কে মেননের অভিযোগ খন্ড
জাতিসংঘ, ১৫ই সেপ্টেম্বর (এ পি পি) । পূর্ব পাকিস্তানে ঔপনিবেশিক বিরাজ করছে বলে মিঃ কৃষ্ণ মেননের অভিযোগ পাকিস্তান গতকাল খন্ডন করেছে । ঔপনিবেশিক দেশ ও জনগণকে স্বাধীনতা দানের ঘোষণা কার্যকরীকরণ সংক্রান্ত জাতিসংঘ বিশেষ কমিটির সভায় গত বৃহস্পতিবার উক্ত অভিযোগ করা হয় ।
মিঃ কৃষ্ণ মেনন মোজামবিক ও ঔপনিবেশিক শাসনাধীন অন্যান্য এলাকার মুক্তি আন্দোলনের সংগে পূর্ব পাকিস্তান সংকটের তুলনা করেন এবং বিশেষ কমিটিকে এ ব্যপারে হস্তক্ষেপ করার আহব্বান জানান । পাকিস্তানের প্রতিনিধি জনাব আগা শাহী কমিটিকে বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে ঔপনিবেশিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং কটাক্ষ করার অর্থ শুধুমাত্র পাকিস্তান নয়, অধিকন্তু ভারতও যে কোন বর্ণগত বা বহু ভাষাভাষী রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখন্ডতা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলে ।
তিনি বলেন সংযুক্ত করে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান হয় নি । যখন কোন পাকিস্তান সরকার ছিল না, কোন পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছিল না,
তখন পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানের অংগ হয়েছে । ভারতীয় প্রতিনিধি মিঃ জৈন পাকিস্তানী প্রতিনিধির ভাষণ দানের বিরোধিতা করেছিলেন । পাকিস্তান বিশেষ কমিটির সদস্য নয় মিঃ জৈন অযুহাত দেখান যে, বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে মিঃ কৃষ্ণ মেনন একজন আবেদনকারী মাত্র এবং কমিটিতে আবেদন কারীর জবাব দেয়া হয় না ।
যাই হোক সিরীয় প্রতিনিধি কমিটির সভাপতিত্ব করেছিলেন এবং তিনি পাকিস্তানী প্রতিনিধির জনাব আগা শাহীকে ভাষণ দানের সুযোগ দেন । জনাব আগা শাহী বলেন যে, বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে মিঃ মেনন কমিটির আমন্ত্রনের সুযোগের অবৈধ ব্যবহার করেছেন ।
.
.
শিরোনামঃ ৬৪। বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা প্রণীতব্য শাসনতন্ত্রের সংশোধনী পদ্ধতি সম্পর্কে ইয়াহিয়ার বিবৃতি
সূত্রঃ ‘ পাকিস্তান’ ওয়াশিংটন দূতাবাসের বিশেষ সংবাদ বুলেটিন
তারিখঃ ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
প্রেস রিলিজ
রাওয়ালপিন্ডি
সেপ্টেম্বর ১৯, ১৯৭১
.
সেপ্টেম্বরের ১৮ তারিখে ইয়াহিয়া খান নিম্নোক্ত বিবৃতি দেন,
আপনারা অবগত আছেন যে আমি সবসময় চেয়েছি এমন একটা সংবিধান গড়তে যা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা বাস্তবায়িত হবে। ১৯৬৯ সালের ২৮শে নভেম্বর ক্ষমতার সুষম বন্টনের জন্যে আমার পরিকল্পনা ব্যক্ত করি, সেখানে সংবিধানের গঠনতন্ত্রের জন্যে বিভিন্ন রকম বিকল্প আলোচনা করার সুযোগ ছিলো। গণতান্ত্রিক উপায়ে এবং জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা সংবিধান প্রনয়নের কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম।
দুর্ভাগ্যক্রমে আমার মূল পরিকল্পনা পূর্ব পাকিস্তান কর্তৃক তীব্র বিরোধীতার সম্মুখীন হয়। পূর্ব পাকিস্তানের অস্থিতিশীল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে যেকোন রকম বিবাদ, এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন ঘটানোর যে কোনরকম পরিস্থিতি থেকে দেশকে রক্ষা করতে আমি সর্বদাই সচেষ্ট ছিলাম।
এমতাবস্থায় এই বছরের জুনের ২৮ তারিখে আমি ঘোষণা দেই যে পূর্ব পাকিস্তান সংকটের কারণে যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক নেতা এবং এবং সংবিধান বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে একটি সংবিধান প্রনয়ন ছাড়া আর কোন বিকল্প অবশিষ্ট নেই। সংবিধানটিতে অবশ্যই সাধারণ সংশোধনীর প্রক্রিয়া থাকবে।
অনেক চিন্তা ভাবনা এবং রাজনৈতিক নেতাদের সাথে দীর্ঘ শলা পরামর্শের পর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই, সরকারী কর্মকর্তাদের দ্বারা গঠিত একটি কমিটি জাতীয় অধিবেশনে সংবিধান উপস্থাপন করবে। অধিবেশনটি যখন পূর্ণ পথ পরিক্রমা শুরু করবে, তখন সংবিধান থেকে প্রনীত সিদ্ধান্তে কখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা নেয়া হবে। অধিবেশনের কোন সদস্য কর্তৃক সংবিধান সংক্রান্ত কোন গঠন মূলক সংশোধনীর কথা উত্থাপনের জন্যে অনুকূল পরিবেশ থাকবে। প্রথম তিন মাসে সংশোধনী আনয়নের জন্যে সদস্যদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে আমি খুব সহজ একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছি। অধিবেশনে কোন সংশোধনী তখনই গৃহীত হবে, যদি তা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়, এবং প্রতিটি ফেডারেশনের মাঝে এ ব্যাপারে ঐকমত্য থাকে।
যদি উল্লেখিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোন সংশোধনী আমার কাছে উত্থাপিত হয়, এবং জাতীয় স্বার্থ গভীর ভাবে নিরীক্ষার পর আমি ইতিবাচক মত দেই, তবে তা সংবিধানে সংযুক্ত হয়ে যাবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৫। প্রবাসে বাংলাদেশ আন্দোলনে তৎপর বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে পাকিস্তানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে হাজির হবার নির্দেশ। | আবু সাঈদ চৌধুরী | ২১শে সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
পাকিস্তান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিজ্ঞপ্তি,
বিশেষ রেফারেন্স নাম্বার ১৯৭১ এর ৫
মাননীয় রাষ্ট্রপতি……………… ……… ………………… কতৃপক্ষ
বনাম
বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী …………… উত্তরদাতা
প্রতি
জনাব বিচরক আবু সাঈদ চৌধুরী ,
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন বি ৩ ( ইউ কে )
যখন তথ্যের ভিত্তিতে ( সংযোজনী ‘এ’ সংযুক্ত ) পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ১২৮ নং ধারার অধীনে আপনার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক রিপোর্ট প্রদান করার জন্য পাকিস্তান সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রেফারেন্স দ্বারা নির্দেশ দিয়েছেন ।
এবং যখন সচিব, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পাকিস্তান সরকার, ইসলামাবাদ সেই সূত্রে আপনার বিরুদ্ধে নিন্মোক্ত অভিযোগ দাখিল করে বলেছেন যে,
১। ২৭ শে মার্চ থেকে ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তানের বাইরে ছুটিতে রয়েছেন, আপনি কোন অজুহাত ব্যতীতই আপনার দপ্তরের দায়িত্ব পুনরায় শুরু করার জন্য পাকিস্তানে ফিরতে ব্যর্থ হয়েছেন, যদিও এটা আপনার অবস্থান অনুযায়ী যোগদান কর্তব্য ছিল:
২। উপরে বর্ণিত মোতাবেক প্রবাসে থাকার সময় আপনি সক্রিয়ভাবে পাকিস্তান সরকারের প্রতি ঘৃণা ছড়ানোর মত কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং পাকিস্তান সার্বভৌমত্বের একটি অংশ বিলুপ্ত করে পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশকে “ বাংলাদেশ” নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করার জন্য প্ররোচনা চালাচ্ছেন, এটাও অপরাধ ধারা ১২১- এ – ১২৩- এ এবং ১২৪ এর অধীনে পাকিস্তান দণ্ড বিধির আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ; এবং
৩। একটি রাষ্ট্র বিরোধী ও রাজনৈতিক অনেক কাজে অংশগ্রহন করার মাধ্যমে আপনি পাকিস্তান সংবিধান রক্ষা এবং অক্ষুন্ন রাখার আমাদের শপথ এবং সেই সাথে বিচারকদের আচরণ বিধি অনুচ্ছেদ ১২৮ লংঘন করেছেন যার অধীনে বিচারকদের যে কোন রাজনৈতিক কার্যকলাপ নিষিদ্ধ।
এবং যখন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের রেফারেন্সটি উপরে উল্লেখিত অভিযোগ সহকারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিশেষ রেফারেন্স নাম্বার ১৯৭১এর ৫ হিসেবে রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছে।
এবং যখন কাউন্সিলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কেন আপনার বিরুদ্ধে আইনের অধীনে কারন দর্শানোর জন্য কার্যকলাপ চালানো যাবে না তা জানতে;
অতএব আপনাকে এখন সকাল ৯.৩০ মিনিটে ১৯৭১ এর অক্টোবরের ১৫তম দিনে পাকিস্তান কাউন্সিল এম লাহোরে হয় ব্যক্তিগত ভাবে বা নিজেকে রক্ষার জন্য যথাযথ ভাবে আপনার পক্ষে একজন আইনজীবী হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে অন্যথায় আপনার বিরুধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সেপ্টেম্বর ,১৯৭১ এর ২১তম তারিখ নির্দেশিত।
(আব্দুর রহিম)
রেজিস্টার
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল
পাকিস্তান
সংযোজনী “ এ ’’
পাকিস্তানের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সমীপে
( এডভাইসরি জুরিসডিকশন )
বিশেষ রেফারেন্স নং ১৯৭১ এর ৫
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি … কতৃপক্ষ
বনাম
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী,
ঢাকা উচ্চ আদালতের বিচারক, … উত্তরদাতা
দায়েরকারী
ইফতিখারুদ্দিন আহমদ
অ্যাডভোকেট – অন – রেকর্ড
সুপ্রিম কোর্ট , পাকিস্তান
লাহোর ।
সংযোজনী ‘ এ ’
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কৃতক প্রণীত একটি প্রস্তাব মোতাবেক, রাষ্ট্রপতি পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চ আদালতের জাজ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে জাতিসংঘ মানবাধিকারের কমিশনের ২৭তম অধিবেশনে জন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসাবে মনোয়ন করতে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন, যা জেনেভা, সুইজারল্যান্ড এ ২২শে ফেব্রুয়ারী থেকে ২৬শে মার্চ ,১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত হয়।
২। তার অনুরোধে , পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ২৭শে মার্চ থেকে ১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ পর্যন্ত জাজের বহির্পাকিস্তান ছুটি মঞ্জুর করেন, যা দীর্ঘ মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, কিন্তু কোন অজুহাত ছাড়াই পুনরায় কাজে যোগদানের জন্য ফেরত আসেননি যদিও তিনি তা করার কথা।
৩। কমিশনের কাজ শেষে বিচারক লন্ডনে চলে যান, দৃশ্যত তার ছেলেকে দেখার জন্য যে সেখানকার ছাত্র। ১৮ই এপ্রিল, ১৯৭১ এ প্রকাশিত লন্ডনের সান ডে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনের মোতাবেক সেই সংবাদপত্রের একজন প্রতিনিধিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচারক তার বিবৃতিতে তিনি পাকিস্তানী সেনাদের বর্বর নৃশংসতা যা পূর্ব পাকিস্তানে ২৫শে মার্চ ১৯৭১ এ বিশাল আকারের আঘাত করা হয়েছিল তার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন যে দেশে কোন আইন নেই সেখানের উচ্চ আদালতে তার পক্ষে ফিরে যাওয়া অসম্ভব । এই বিবৃতিটি পূর্বোক্ত সান ডে টেলিগ্রামে প্রকাশিত।
৪। ১৩ই জুন, ১৯৭১ তারিখে বিচারক লন্ডনের টেলিভিশনে আরেকটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন যেখানে তিনি “জাতীয়” এবং “ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি” হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করেন, যা তার বক্তব্য অনুযায়ী যেখানে মুজিব নগর প্রতিষ্ঠিত এবং যেখানে তিনি আশা করছেন যা অদুর ভবিষ্যতে স্বীকৃতি পাবে। সাক্ষাৎ কারের এক পর্যায়ে বিচারক পাকিস্তান সরকার কে “ হত্যাকারীদের সরকার “ হিসাবে আরোপ করেন এবং “মোহাম্মাদ আলি জিন্নাহর পাকিস্তান সরকার মারা গেছে” বলে লন্ডন টাইমসে বিবৃতি দেন। অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে , তিনি আশা করেন ইন্ডিয়া পাকিস্তান কে আক্রমন করবে কারন “ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা” এর কারনে পূর্ব পাকিস্তানের এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ।
৫। বিচারক “ রয়েল কমনওয়েলথ সোসাইটি “ লন্ডনের সদর দপ্তরের আর একটি সাক্ষাতকার দেন যা অবশ্যই ৮ম জুন, ১৯৭১ এর সাক্ষাতকার এর অনুরুপ, এই প্রতিলিপিটি “ কমনয়েলথ সোসাইটি জার্নাল’’ এ অগাস্ট ,১৯৭১ এ আবির্ভূত হয়েছিল।
৬। ৩ জুন, জজ ডি –ভেরা হোটেল, হাইড পার গেইট, লন্ডনের ডাবলিও একটি হোটেলের সভায় বক্তৃতা করেন, যেখানে অতিথি-বক্তা জয় প্রকাশ নারায়ণকে তার সপক্ষে “ বাংলাদেশ” কে সমর্থন দেওয়ার ধন্যবাদ প্রকাশ করেন।
৭। বিচারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন এবং ১২ই জুন, ১৯৭১ নিও ইয়র্কে বাংলাদেশ এর অনুকুলে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেন ।
৮। ৩০শে জুলাই,১৯৭১ দৈনিক জং রাওয়ালপিন্ডি বিষয়ে প্রকাশিত একটি আলোকচিত্র অনুসারে বিচারক আরও একটি ডাকটিকেট ছাপানো ও প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন যেখানে গন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে অভিপ্রায় দেয়া হয়।
৯। বিচারকের কিছু কর্ম এবং বিবৃতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের ফৌজদারি আইনের অধীনে মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ গঠন করা যায় এবং সরকার উপযুক্ত সময়ে তার বিরুদ্ধে সক্রিয়ও ব্যবস্থা গ্রহনের অধিকার রাখে।
.
.
শিরোনামঃ ৬৬। উপনির্বাচনের নয়া কর্মসূচী ঘোষণা
সূত্রঃ মর্নিং নিউজ
তারিখঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তান উপনির্বাচনের পুনরালোচনা
পাকিস্তান নির্বাচন প্রজ্ঞপ্তি দ্বারা জারিকৃত জ্ঞাপনপত্র
সেপ্টেম্বর ২১, ১৯৭১
প্রেস রিলিজ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ২০শেসেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত নির্বাচন প্রকিয়া পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের শুন্য আসনসমূহের কারণে পুনর্বিবেচনা করেছে। এইসকল উপনির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণ এবং তাদের সুবিধা বিবেচনার স্বার্থে তিনি ২০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত কার্যক্রম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বাতিল করা হয়েছে।
অদ্য জারিকৃত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে একটি নতুন কার্যক্রম প্রকাশিত হয়েছে। এইসকল উপনির্বাচনের সংশোধিত সময়সূচী অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র নির্বাচন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালনকারীসংশ্লিষ্টকর্মকর্তা দ্বারা যথাক্রমে ২০শে অক্টোবর এবং ২১শে অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে গ্রহিত হবে।
উভয় পরিষদের ক্ষেত্রে, যদি প্রার্থী প্রত্যাহারের জন্য কেউ থাকেন, তবেপ্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ সময় হবে ২৮শে অক্টোবর, ১৯৭১।
নির্বাচনের জন্য নিবন্ধন উভয় পরিষদে একযোগে ১২ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ হতেআরম্ভ হবে, এবং ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯৭১ এর মধ্যে পরিচালিত হবে।
অদ্য প্রকাশিত সংশোধিত প্রজ্ঞাপনে জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচকমণ্ডলী বিষয়ক নিবন্ধনের তারিখ নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
(মর্নিং নিউজ, করাচি-২২শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)
.
.
শিরোনামঃ ৬৭। পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন ঘোষিত উপ-নির্বাচনের সংশোধিত সময়সূচী
সূত্রঃ পাকিস্তান টাইমস
তারিখঃ ২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন ঘোষিত উপনির্বাচনের সংশোধিত সময়সূচী
২১শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের শুন্য আসনসমূহ পূরণের উদ্দেশ্যে আগামী ১২ই ডিসেম্বর, ১০৭১ হতে ২৩শে ডিসেম্বর, ১৯৭১ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আজ নির্বাচন কমিশন এখানে ঘোষণা করেছে। (ইসলামাবাদ, ২১শে সেপ্টেম্বর)
২৫শে নভেম্বর থেকে ৯ই নভেম্বর এর মধ্যে পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী ছিল।
নির্বাচন কমিশন পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচী বাতিল করেছে এবং সকল রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সম্পূর্ণ সহযোগিতা নিশ্চিত করতে এবং তাদের সুবিধার স্বার্থে একটি নতুন সময়সূচী ঘোষণা করেছে।
নতুন সময়সূচী অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের মনোনয়নপত্র নির্বাচন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালনকারীসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা দ্বারা যথাক্রমে ২০শে অক্টোবর ও ২১শে অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে গ্রহিত হবে, এবং যথাক্রমে ২২শে অক্টোবর ও ২৩শে অক্টোবর পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তদন্ত করা হবে।
উভয় পরিষদের জন্য প্রার্থী প্রত্যাহারের শেষ সময় হবে ২৮শে অক্টোবর।
পূর্বের সময়সূচীতে মনোনয়নের তারিখসমূহ ছিল ২৯শে সেপ্টেম্বর ও ৩০শে সেপ্টেম্বর, এবং প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ২৮শে অক্টোবর।
জনাব নুরুল আমিন, মাওলানা আউল আলা মউদুদি এবং খান এ সবুর সহ রাজনৈতিক নেতাবৃন্দ ১৯শে সেপ্টেম্বর ঘোষিত উপনির্বাচন কার্যক্রম বিস্তারের দাবী জানিয়েছেন।
নতুন সময়সূচী দেয়া হলঃ
জানি-২ রংপুর-২, প্রানি-১৩ রংপুর-১৩, প্রানি-১৪ রংপুর-১৪, পানি-১৫ রংপুর-১৫ ডিসেম্বর ১২
জানি-৯ রংপুর-৯, প্রানি-৭ রংপুর-৭, প্রানি-৮ রংপুর-৮, ডিসেম্বর ১৫
জানি-১০ রংপুর-১০, প্রানি-১১ রংপুর-১১ ডিসেম্বর ১
জানি-১১ রংপুর-১১, প্রানি-১ রংপুর-১, প্রানি-৩ রংপুর-৩ ডিসেম্বর ২১
জানি-১৩ দিনাজপুর-১, প্রানি-২৩ দিনাজপুর-১, প্রানি ২৪ দিনাজপুর-২ ডিসেম্বর ১২
জানি-১৪ দিনাজপুর-২, প্রানি-২৫ দিনাজপুর-৩ ডিসেম্বর ১৫
জানি-১৫ দিনাজপুর-২, প্রানি-২৭ দিনাজপুর-৫, প্রানি-২৮ দিনাজপুর-৬ ডিসেম্বর ১৮
জানি-১৬ দিনাজপুর-৪, প্রানি-২৯ দিনাজপুর-৭, ডিসেম্বর ২১
জানি-১৭ দিনাজপুর-৫, প্রানি-৩০ দিনাজপুর-৮, প্রানি-৩১ দিনাজপুর-৯ ডিসেম্বর ২৩
জানি-১০ বগুড়া-১, প্রানি-৩৩ বগুড়া-১, ডিসেম্বর ১৩
জানি-২০ বগুড়া-২, প্রানি-৩৪ বগুড়া-২, ডিসেম্বর ১৬
জানি-২৪ পাবনা-১, প্রানি-৫৯ পাবনা-১, প্রানি-৬০ পাবনা-২ ডিসেম্বর ১৩
জানি-২৬ পাবনা-২ ডিসেম্বর ১৬
জানি-২৮ পাবনা-৫ ডিসেম্বর ১৯
জানি-৭০ পাবনা-১২ ডিসেম্বর ২২
জানি-৩০ রাজশাহী ডিসেম্বর ১৪
জানি-৩২ রাজশাহী-৩, প্রানি-৪০ রাজশাহী-৮, প্রানি-৫০ রাজশাহী-৯ ডিসেম্বর ১৭
জানি-৩৩ রাজশাহি-৪, প্রানি-৪২ রাজশাহি-১, প্রানি-৪৫ রাজশাহী-৪ ডিসেম্বর ১২
জানি-৩৫ রাজশাহি-৬, প্রানি-৫১ রাজশাহি-১০, প্রানি-৫২ রাজশাহি-১১ ডিসেম্বর ১৯
জানি-৩৬ রাজশাহী-৭, প্রানি-৫৩ রাজশাহী-১২, প্রানি-৫৪ রাজশাহী-১৩ ডিসেম্বর ২২
জানি-৩৯ কুষ্টিয়া-১, প্রানি-৭৩ কুষ্টিয়া-৩, প্রানি-৫৪ রাজশাহি-১৩ ডিসেম্বর ১২
জানি-৩৯ কুষ্টিয়া-১, প্রানি- কুষ্টিয়া-৩, প্রানি- ৭৪ কুষ্টিয়া-৪ ডিসেম্বর ১২
জানি-৪০ কুষ্টিয়া-২, প্রানি-৭১ কুষ্টিয়া-১, প্রানি-৭২ কুষ্টিয়া-২ ডিসেম্বর ১৫
জানি-৪১ কুষ্টিয়া-৩, প্রানি-৭৫ কুষ্টিয়া-৫ ডিসেম্বর ১৮
জানি-৪২ কুষ্টিয়া-৪, প্রানি-৭৬ কুষ্টিয়া-৬, প্রানি-৭৭ কুষ্টিয়া-৮ ডিসেম্বর ২১
জানি-৪৩ যশোর-১, প্রানি-৭৮ যশোর-১, প্রানি-৭৯ যশোর-২ ডিসেম্বর ১২
জানি-৪৪ যশোর-২, প্রানি-৮০ যশোর-৩ ডিসেম্বর ১৫
প্রানি-৮২ যশোর-৫ ডিসেম্বর ১৬
জানি-৪৬ যশোর-৪, প্রানি-৮৩ যশোর-১১ প্রানি-৮৪ যশোর-২ ডিসেম্বর ১৯
জানি-৪৭ যশোর-৫, প্রানি-৮৫ যশোর-৮ প্রানি-৮৬ যশোর-৯ ডিসেম্বর ২২
জানি-৪৮ যশোর-৬, প্রানি- ৮৭ যশোর-২০, প্রানি-৮৮ যশোর-১১ ডিসেম্বর ২০
জানি-৪৯ যশোর-৮, প্রানি-৮৯ যশোর-১২, প্রানি-৯০ যশোর-১৩ ডিসেম্বর ২৩
জানি-৫১ খুলনা-২ ডিসেম্বর ১৩
জানি-৫৩ খুলনা-৪ ডিসেম্বর ১৬
জানি-৫৩ খুলনা-৫ ডিসেম্বর ১৯
জানি-৫৮ বাকেরগঞ্জ-১, প্রানি-১২৪ বাকেরগঞ্জ ১৩ ডিসেম্বর ১২
জানি-৬০ বাকেরগঞ্জ-৩, প্রানি-১১৯ বাকেরগঞ্জ-৮, প্রানি-১২০ বাকেরগঞ্জ-৯, প্রানি-১২১ বাকেরগঞ্জ-১০ ডিসেম্বর ১৫
জানি-৬২ বাকেরগঞ্জ-৫ ডিসেম্বর ১৮
জানি-৬৩ বাকেরগঞ্জ-৬ ডিসেম্বর ১৯
জানি-৬৬ বাকেরগঞ্জ-৯ ডিসেম্বর ২১
জানি-৭১ টাঙ্গাইল-১, প্রানি-১৩৪ টাঙ্গাইল-৫, প্রানি- ১৩৬ টাঙ্গাইল-৮ ডিসেম্বর ১৪
জানি-৭৩ টাঙ্গাইল-২, প্রানি-১৩৩ টাঙ্গাইল-৪ ডিসেম্বর ১৭
জানি-৭৫ টাঙ্গাইল-৫, প্রানি-১৩০ টাঙ্গাইল-১, প্রানি-১৩২ টাঙ্গাইল-৩ ডিসেম্বর ২০
জানি-৭৮ ময়মনসিংহ-২ ডিসেম্বর ১২
জানি-৮৫ ময়মনসিংহ-১০, প্রানি-১৫৫ ময়মনসিংহ-১৭ ডিসেম্বর ১৪
জানি-৮৮ ময়মনসিংহ-১৩ ডিসেম্বর ১৬
জানি-৯১ ময়মনসিংহ-১৬ ডিসেম্বর ১৭
জানি-৯২ ময়মনসিংহ-১৭, প্রানি-১৬৭ ময়মনসিংহ-২৯ ডিসেম্বর ২৩
জানি ৯৩ ময়মনসিংহ-১৮ ডিসেম্বর ২০
জানি-৯৬ ফরিদপুর-৩, প্রানি-২০৫ ফরিদপুর-৫, প্রানি-২০৭ ফরিদপুর-৭ ডিসেম্বর ১৪
জানি-৯৭, ফরিদপুর-৪ ডিসেম্বর ১৭
জানি-৯৯ ফরিদপুর-৬, প্রানি-২০০ ফরিদপুর-১০, প্রানি-২১২ ফরিদপুর-১২ ডিসেম্বর ১৯
জানি-১০৭ ঢাকা-৪ ডিসেম্বর ১৪
জানি-১০৮ ঢাকা-৫, প্রানি-১৯১ ধাকা-২১ ডিসেম্বর ১৭
জানি-১৮১ ঢাকা-১১, প্রানি-১৮২ ঢাকা-১২, প্রানি-১৮৩ ঢাকা-১৩ ডিসেম্বর ২০
জানি-১৮৪ ঢাকা-১৪, প্রানি-১৮৫ ঢাকা-১৫ ডিসেম্বর ২৩
জানি-১০৩ ঢাকা-১০, প্রানি-১৯২ ঢাকা-২২ ডিসেম্বর ১৩
জানি-১১৫ ঢাকা-১২, প্রানি-১৯৫ ঢাকা-২৫ ডিসেম্বর ১৬
জানি-১১৭ ঢাকা-১৪, প্রানি-১৯৯ ঢাকা ডিসেম্বর ১৯
জানি-১১৯ ঢাকা-১৬, প্রানি-১৭৭ ঢাকা-৭ ডিসেম্বর ১২
জানি-১২০ সিলেট-১ ডিসেম্বর ১২
জানি-১২১ সিলেট-২, প্রানি-২৩৯ সিলেট-২০ ডিসেম্বর ১৫
জানি-১২২ সিলেট-৩, প্রানি-২৩৪ সিলেট-১৫, প্রানি-২৩৬ সিলেট-১৭ ডিসেম্বর ১৮
জানি-১২৩ সিলেট-৪, প্রানি-২৩৩ সিলেট-১৪ প্রানি-২৩৫ সিলেট-১৬ ডিসেম্বর ২১
জানি-১২৫ সিলেট-৬, প্রানি-২৩০ সিলেট-১১ ডিসেম্বর ১৩
জানি-১২৭ সিলেট-৮ ডিসেম্বর ১৬
জানি-১২৯ সিলেট-১০, প্রানি-২২০ সিলেট-১ ডিসেম্বর ২৩
জানি-১৩১ কুমিল্লা ১, প্রানি-২৪২ কুমিল্লা-২ ডিসেম্বর ১২
জানি-১৩২ কুমিল্লা-২ প্রানি-২৪৩ কুমিল্লা-৩, প্রানি-২৪৪ কুমিল্লা-৪, প্রানি-২৪৫ কুমিল্লা-৫ ডিসেম্বর ৫
জানি-১৩৫ কুমিল্লা-৫, প্রানি-২৫৪ কুমিল্লা-১৪ ডিসেম্বর ১৮
জানি-১৩৬ কুমিল্লা-৬, প্রানি-২৫৭ কুমিল্লা-১৭, প্রানি-২৫৮ কুমিল্লা-১৮ ডিসেম্বর ২১
জানি-১৩৮ কুমিল্লা-৮, প্রানি-২৪৯ কুমিল্লা-৯ ডিসেম্বর ১৭
জানি-১৪৩ কুমিল্লা-১৩, প্রানি-২৬১ কুমিল্লা-২১, প্রানি-২৬২ কুমিল্লা-২২, প্রানি-২৬৬ কুমিল্লা-২৬ ডিসেম্বর ১৯
জানি-১৪৪ কুমিল্লা-১৪, প্রানি-২৬৫ কুমিল্লা-২৫ ডিসেম্বর ২৩
জানি-১৪৬ নোয়াখালী-২ প্রানি-২৬৮ নোয়াখালী-২, প্রানি-২৭০ নোয়াখালী-৩, প্রানি-২৭০ নোয়াখালী-৪ ডিসেম্বর ১৩
জানি-১৪৭ নোয়াখালী-৩ ডিসেম্বর ১৫
জানি-১৫০ নোয়াখালী-৬, প্রানি-২৭৫ নোয়াখালী-৯, প্রানি-২৭৬ নোয়াখালী-১০, প্রানি-২৭৭ নোয়াখালী-১১ ডিসেম্বর ১৮
জানি-১৫১ নোয়াখালী-৮, প্রানি-২৭২ নোয়াখালী-৬ ডিসেম্বর ২২
জানি-১৫৩ চট্রগ্রাম-১ ডিসেম্বর ১৪
জানি-১৫৫ চট্রগ্রাম-৩, প্রানি-২১১ চট্রগ্রাম-৮, প্রানি-২৮৯ চট্রগ্রাম-৯ ডিসেম্বর ১৭
জানি-১৫৮ চট্রগ্রাম-৬, প্রানি-২৯৩ চট্রগ্রাম-১৩ ডিসেম্বর ২০।
(পাকিস্তান টাইমস, লাহোর-সেপ্টেম্বর ২২, ১৯৭১)
.
.
শিরোনামঃ ৬৮| ফরেন সার্ভিসের ৮ জন বরখাস্ত
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৫শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
হোসেন আলী ও আবুল ফতেহসহ ফরেন
সার্ভিসের ৮ জন বরখাস্ত
রাওয়ালপিন্ডি, ২২শে সেপ্টেম্বর (পি পি আই)। – প্রধান সামরিক শাসনকর্তা পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসের ৮ জন অফিসারকে বরখাস্ত করেছেন। নীচে উল্লেখিত তারিখ থেকে তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে। পাকিস্তান গেজেটে এ কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বরখাস্ত ব্যক্তিদের নামঃ-
জনাব এ এফ এম আবুল ফতেহ, ১৯-০৮-১৯৭১ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন।
জনাব হোসেন আলী, ১৮-০৪-১৯৭১ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। ০৪-০৮-১৯৭১ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন মেসার্স এস এ করিম, এনায়েত করিম, এস এ এম এস কিবরিয়া এবং এস মোয়াজ্জেম আলী। জনাব মহিউদ্দীন আহমদ ০১-০৮-১৯৭১ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন। জনাব আনোয়ারুল করিম চৌধুরী ১৭-০৪-১৯৭১ থেকে বরখাস্ত হয়েছেন।
এই আদেশ বলে বরখাস্ত ব্যক্তিরা চাকুরীতে থাকাবস্থায় কোন অপরাধ করে থাকলে তারা যে কোন আইন বলে আনীত অভিযোগ এবং তার শাস্তি থেকে রেহাই পাবেন না। জনাব আবুল ফতেহ ইরাকে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ছিলেন। জনাব এম হোসেন আলী
কলকাতায় পাকিস্তানের সাবেক ডেপুটি হাই কমিশনার ছিলেন, জনাব এস এ করিম
জাতিসংঘে পাকিস্তানের সাবেক সহকারী স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন।
জনাব এনায়েত করিম ওয়াশিংটন সাবেক মিনিস্টার ছিলেন। জনাব কিবরিয়া ওয়াশিংটন সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন। জনাব মোয়াজ্জেম আলী ওয়াশিংটনে থার্ড সেক্রেটারী এবং জনাব মহিউদ্দিন আহমদ যুক্তরাজ্যে সাবেক থার্ড সেক্রেটারী ছিলেন।
.
.
শিরোনামঃ ৬৯। জাতিসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি
সুত্রঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
জাতিসংঘে সাধারণ সভায় পাকিস্তানের প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি :২৭শে সেপ্টেম্বর,১৯৭১
ভারতের সম্মানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর উত্থাপিত বিবৃতির আদেশ ক্রমের ভিত্তিতে বাধ্য হয়ে আজকে আমি এই বিবৃতি দিচ্ছি। তার বিবৃতির বৃহত্তম অংশে যে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তা আমার দেশের অভ্যন্তরীণ অধিকারভুক্ত অঞ্চলের মধ্যে সম্পর্কগত ভাবে অবস্থান করে। আমার প্রতিনিধিত্ত মূলনীতির দ্বারা পরিচালনা করা হয়েছিল যা অনুচ্ছেদ ২, ক্রিয়াশীল অনুচ্ছেদ ৭, জাতিসংঘের দলিলের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। দৃষ্টান্তস্বরূপ যেখানে বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্য রাষ্ট্ররা অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না।
এই নীতি সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয় এবং তা আফ্রিকান ঐক্য সংস্থাতেও পাওয়া যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থার সাথে সাথে অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার ফোরামেও পাওয়া যায়। যেমন জোট নিরপেক্ষ অধিবেশন এবং আফ্রিকান – এশিয়ান অধিবেশন সংস্থা। আমরা জানতে চাই এই নীতিটি কেন অসমর্থন করা হচ্ছে এবং তার সাথে কটাক্ষও করা হচ্ছে? কারন পাকিস্তানের কিছু গোপন করার আছে -কিন্তু আজ সকালে ভারতের প্রতিনিধিত্বর কারনে তা কঠিন করছে। আর তা হলে কার্যকরী পদবতিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পরিচালনা করা অসম্ভব হয়।
ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে, আন্তর্জাতিক আচরণ, আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের সনদের সব নিয়ম লঙ্ঘন করে।আন্তর্জাতিক আইন সকল রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান রেখে প্রাদেশিক অধিকারভুক্ত অঞ্চলের জন্য সমস্ত রাষ্ট্রের জন্য একটি পরিষ্কার বাধ্যবাধকতা রাখে। ডিসেম্বর , ১৯৬৫ তে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় কেবলমাত্র একটি না ভোটের বিপরীতে রেজুলেশন অবলম্বন করেছিল যেখানে অভিহিত ছিল ‘’ স্বাধীনতা ও সারভৌমত্ত রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের ঘরোয়া বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং অগ্রহণীয়তা ঘোষণা করা হয়েছে। ‘’
রাষ্ট্রের বলবত ১ম অনুচ্ছেদ,
কোন রাষ্ট্রের যে কোন কারনেই প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অথবা বহিরাগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না। ফলে সশস্ত্র হস্তক্ষেপ এবং অন্যান্য হস্তক্ষেপের রুপ অথবা রাষ্ট্রের ব্যক্তিগত বিষয়ে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা অথবা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক অথবা সাংস্কৃতিক উপাদানের উপর হস্তক্ষেপের চেষ্টার বিরুধে নিন্দা করা হয়।
বলবত ২য় অনুচ্ছেদ পঠিতঃ
……… কোন রাজ্যকে সংঘবদ্ধ করা, সাহায্য করা, উসকে দেওয়া, প্ররোচিত করা অথবা নিসিদ্ধ কাজে বাঁধা না দেয়া, সন্ত্রাসী অথবা যে কোন কার্যকম অন্য রাষ্ট্রর শাসন ব্যবস্তাকে সহিংস করা অথবা অন্য রাষ্ট্রের অসামরিক শত্রুতায় হস্তক্ষেপ করা।
অবেশেষে, কার্যকর অনুচ্ছেদ ৪ এর বলেঃ
‘’ ৪, এই বাধ্যবাধকতাগুলি কঠোর ভাবে মান্য করা প্রয়োজনীয় যাতে একটি জাতি অন্য একটি জাতির সাথে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, যে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের অনুশীলন শুধুমাত্র জাতিসংঘের দলিলের মূলনীতিতে আঘাত করে না বরং তা আন্তর্জাতিক শান্তি এবং নিরাপত্তাকে হুমকির দিকে পরিচালিত করে। [রেজুলেশন ২১৩১ ( XX ) ]
এইটি উল্লেখযোগ্য যে ভারত কমিটির একটি সদস্য ছিল যেটি ডিসেম্বরে প্রস্তুত করেছিল।
আমি নিশ্চিত যে এখানে উপস্থিত সকল প্রতিনিধি অজ্ঞাত নয় যে আমরা পাকিস্তানের সমস্যার একটি সমাধান খুজে পেতে চেষ্টা করছি। মিটমাট করার ক্ষেত্রে যে সমসা তৈরি হয়েছে তা অর্থনৈতিক , রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আঞ্ছলিক দাবী ………… যা পাকিস্তানের মতো একটি দেশের জন্য অনন্য নয়। তারা বহুভাষিক, বহুবিচিত্র সংস্কৃতি , বহুজাতি হিসাবে রাষ্ট্রের সমস্ত জায়গায় উপস্থিত হয়। এই সমস্যায় ভারত নিজেও কবলিত, তথাপি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থার বিষয় বলাটাকে শোভন মনে করেছে। আমি তার দেশের মধ্যে কি চলছে সে বিষয়ে কথা বলাটা এখানে প্রস্তাব করি না এবং এই বিষয়ে বেশি কিছু বলারও নেই। আমরা সবাই জানি এবং বিশ্ব জানে ভারতের মিজো এবং নাগাদের কি ঘটেছিল । পশ্চিম বঙ্গের ভারতীয় রাজ্যের টারমিল এবং অসামরিকদের কন্দল সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। যা গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষে বিগত ৪ বছরেও কিছু করা সম্ভব হয়নি। দক্ষিন ভারতের পাঞ্জাবের এবং তাদের অধিকারের চাহিদার বিষয়ে আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমার এই বিষয় খনন করার কোন অভিপ্রায় আমার নেই এবং আমি আমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে এই অগাস্ট সমাবেশে নিশ্চিত ভাবে কোন প্রচার করার প্রস্তাব রাখি না যদিও দুর্ভাগ্যবশত দেখা যাচ্ছে আমার প্রতিবেশি এই বিষয়ে খুবই উপযুক্ত।
পাকিস্তানে বিরাজমান পরিস্তিতির মৌলিক কারন আছে, আমি নিশ্চিত , এখানের প্রতিনিধিদের তা পার্থক্য করাটা খুব অজানা নয়। যদিও তা প্রচারের ঝড়ের কারনে মেঘলা এবং বাষ্পভূত হচ্ছে যার উধাহরন এই প্রভাতে শুনেছিলাম।
মৌলিক কারণ হলও সাধারণ নির্বাচন ডিসেম্বরের শেষে পুরো পাকিস্তান জুড়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচন প্রাপ্ত বয়স্ক বাক্তিদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে ধরা হয়েছিল। তারপর যা হলও পাকিস্তানের জনগন বৈধতার আকাঙ্খায় গণতান্ত্রিক ও কেন্দ্রীয় ধরনের যেটি একটি একক স্বায়ত্তশাসনের পূর্ণ মাপ দিবে এবং বহিরাগত একটা সংগঠিত চাল দেশ ভাগের জন্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানে সহিংসতা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল । জীবন এবং সম্মান শুধুমাত্র যারা রাষ্ট্র থেকে সরে আসতে চেয়েছে তাদের সাথে সাথে সাধার জনগন কেও বিপদ গ্রস্ত করে রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন রাজনৈতিক দলের মাঝে একটি সন্ধি স্থাপনের জন্য, রাজনৈতিক দল থেকে যখনটা অস্বীকার করা হয়েছিল। যারা জাতীয় আসন সংখ্যা গরিষ্ঠতালাভ করেছে। এটি স্পষ্টত যে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রনয়ন করা যায়নি কিন্তু যার মানে সহিংসতার মাধ্যমে তা পরিচালনা করা।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান যে নির্বাচনটি অনুস্থিতিত করেছিল তিনি বাধ্য হয়ে পাকিস্তানের সংহতি অখণ্ডতা বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব পালনে আদেশ দিয়েছিলেন। আমরা ভারতের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া খুজে পেয়েছিলাম। উদ্ভাস্তুদের কোন সমস্যাই ছিল না। আজ সকালে যা ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তানে অনধিকার চর্চার জন্য একটি অজুহাত হিসাবে পেশ করেন।
ভারতীয় পারলামেন্ট একটি সমাধান অবলম্বন করেছিল, যা ভারতীয় প্রধান মন্ত্রীর নিজস্ব মতবাদে চলছিল। তথাকথিত বাংলাদেশের জন্য সমর্থন ঘোষণা করেছে। একটি বিশাল এবং ঐক্য বদ্ধ প্রচার অসত্য ঘটনাকে গতি দিচ্ছে। কলকাতা এবং অন্যান্য জায়গায় অর্ধ-সত্য আর কলঙ্কের জাল বোনা হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধের গল্পটা হিসাব করে প্রচারিত হয়েছে। গল্পে খামখেয়ালি মৃত্যুদণ্ড এবং বিশাল অঙ্কের হত্যাকাণ্ড সহ আরও অনেক কিছু বলা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল, বুদ্ধিজীবীদের তাদের পরিবারের চোখের সামনে থেকে তুলে মেরে ফেলা হয়েছিল এবং চিটাগং পোর্ট কসাইখানায় পরিনত হয়েছিল।
এই বিষয়ে আমাকে ভারতীয় সংবাদপত্রের মতামত আমাকে উল্লেখ করতে দিন।
৪ই আগস্ট, ১৯৭১, দিল্লীর স্তেটসম্যান পত্রিকায় লিখেছে যে অনেকের দাবী অতিরঞ্জিত পর্যায়ে পরিমাপ করা যায়। যদি তা সরাসরি উদ্ভাবন না করা যায় তা অবশ্যই পরিস্কার যে তারা তা তৈরি করেছিল। পরবর্তী প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছিল তাদের মাঝে যারা বিষয়গুলো দাবী করেন এবং যারা নিজ শক্তিতে চিন্তা ছাড়াই বিষয়গুলো দৃঢ় ভাবে মেনে নেন।
সেনাবাহিনীর প্রবর্তন করার এক সপ্তাহের চেয়ে কম সময়ের মাঝে ঢাকা শহর থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করা হয়েছিল অস্ত্রাগার অপশারন করার জন্য যেখানে শক্তিশালি অস্ত্র এবং বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছিল এবং যা দেশের বাহির থেকে গ্রহন করা হয়েছিল তা সত্তেও সব কাজ অক্ষতভাবে করা হয়েছিল। যে সব বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রতিবেদন করা হয়েছিল ভারতীয় প্রচারের মাধ্যমে, তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে যা নিউ ইয়র্ক টাইমসে কিছু মাস আগে প্রকাশ করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের ঘটনার উপর ভারতীয়দের উৎকণ্ঠার কারন খুবই স্বচ্ছ এবং প্রকৃত পক্ষে তা আত্ম- স্বীকৃত। ওয়াশিংটন এর প্রতিবেদন, ২য় এপ্রিল এর প্রতিবেদন যা একজন ভারতীয় কর্মকর্তা বিবৃত করেছিলেন যে এটি একটি মনঃ স্তাত্তিক যুদ্ধ ছিল, যদিও তা রিপোর্ট করা হয়নি।
একজন বিদেশী পর্যবেক্ষক, মিঃ ব্রউনও ডি হামেল লিখেছিলেন, ১৭ই এপ্রিল ’’ লন্ডন টাইমসে ’’, যে ভারতীয় সংবাদপত্রঃ
‘’……… দেখা যাচ্ছে দায়িত্ব বোধের সব অনুভুতি হারিয়েছে। খবর দরকার, তখন অস্বাভাবিক গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে। দশের মাঝে নয় বারই প্রমানিত হয়েছে যে প্রতিবেদন গুলো অসমর্থিত এবং পরস্পর বিরোধী। নিরসংসতার যে কোন প্রতিবেদন যা ছিল উদ্দিপনাময় এবং প্রমান ছাড়া নিশ্চিত ভাবে স্থাপন করা হয়েছিল। ‘’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেনতার দেশের জন্য পাকিস্তানী উদ্ভাস্তুদের খাওয়ানো একটি বিশাল বোঝা হয়ে যাচ্ছে। তিনি নয় মিলিয়ন এর বেশি সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও বলেছেন এখনও হাজার হাজার মানুষ সীমানা পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করছে। তিনি আগামি ৬মাসের তত্ত্বাবধানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ডলার দাবী করেছেন। এই সংখ্যা নিজেই নিজেকে স্তম্ভিত করে। এমনকি যদি ভারতের সম্মুখে নয় মিলিয়ন উদ্ভাস্তুর বিষয়ে প্রশ্ন রাখা হয়!! আমি ভুল না হয়ে থাকলে চলতি বছরের ভারত সরকারের পূর্ণ বাজেট ৪০০ মিলিয়ন ডলার যা ৫০০ মিলিয়ন জনগন কে চালানর জন্য নির্ধারিত।
এটা প্রাথমিক ও বাধ্যতামুলকভাবেযারা পাকিস্তানের বাড়িঘর ছেড়ে চলে গেছে এবং যারা এখন ভারতের উদ্ভাস্তু শিবিরে বসবাস করছে তাদের সকলকে নিরপেক্ষ এবং সঠিক গননার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমার সরকার সতর্কতার সাথে গননা করে বেড় করেছে যে ১লা সেপ্টেম্বর এর হিসাব অনুযায়ী পাকিস্তান ছেড়ে গেছে তাদের সংখ্যা ২০০২৬২৩ জন। আমরা এই হিসাব ভিত্তি ছাড়া বিশ্বাস করার জন্য দাবী করছি না। বিপরীত ভাবে, আমরা জাতিসংঘের সাধারণ সচিবকে অনুরোধ করছি তিনি যাতে যাচাইয়ের জন্য কোন নিরপেক্ষ সংস্থা মনোনয়ন করেন। আমার ঘটনা স্থলে সংস্থাটিকে যে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ার জন্য প্রস্তুত। আমি খুবই খুশি হব যদি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীতার সরকারের পক্ষ থেকে অনুরুপ নিশ্চয়তা প্রদান করেন । এটা আরও সম্ভব যদি নিরপেক্ষ সংস্থা নিজে তা পরীক্ষা করে দেখে যে ভারতের দাবীকৃত বাস্তুহারা ব্যক্তিদের সংখ্যা অথবা তা এখনও অব্যাহত আছে কিনা। আমি একটি সঠিক সংখ্যার উদ্বাস্তু গননার স্বাধীন পরীক্ষা দাবী করছি , যেখানে আমার কোন উদ্দেশ্যই নাই যে মানুষের সমস্যার একটি বড় মাপের আন্দলনের গভীরতা কমানোর। এটা দুঃখজনক কিন্তু অনিবার্য ছিল। ঐ অঞ্চলের বসবাসরত ব্যক্তিগন যারা আছে অথবা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দৃশ্যপট থেকে পলায়ন করেছে অথবা দাঙ্গার প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। সেই সংখ্যাগুলো যারা সংঘাতের বিপাকে বাস্তুহারা তাদের জনসংখ্যার ঘনত্ব যা মানুষের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে যাওয়ার কারনে উৎপন্ন। এই ধরনের ভয় উৎপন্ন করা তখনি সম্ভব যখন তাদের বলা হবে যে তারা পরিকল্পিত গনহত্যার স্বীকার হবে।
অনুরুপ উদাহরণ ভারতের প্রধান মন্ত্রীর প্রত্রিক্রিয়ার থেকে পাওয়া যায় যখন ইয়াহিয়া খান উদবাস্তুদের কাছে আবেদন করেন যাতে তারা তাদের ঘরে ফিরে আসে তখন তিনি বলেন। ‘’ আমি কসাইয়ের কাছে বাস্তুহারাদের ফিরে যাবার অনুমতি দিতে পারি না।‘’
যারা কোন একটি কারনে নিজ দেশ ছেড়ে চলে গেছে এই জটিল সমস্যায় পাকিস্তান অভিলাস এবং স্থির করে তারা অন্য দেশ ছেড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের নিজ বাড়ি এবং কর্মস্থলে ফিরে আসে। দৃঢ় ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তাদের পুনরায় সকল সুবিধা ফেরত দেওয়া হবে। ১৮ই জুন ইয়াহিয়া খান তার আপিল এ বলেনঃ
আমি ধর্ম নিরপেক্ষ, ধর্ম বিশ্বাস অথবা ধর্ম সমগ্র পাকিস্তান জাতির কাছে আবেদন করছি। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যা লঘু সম্প্রদায়ের লোক কোন রকম দ্বিধা ছাড়াই তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে পারে। তাদেরকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা এবং সকল সুবিধা প্রদান করা হবে। তারা পাকিস্তানের সমান নাগরিক এবং বৈষম্যমূলক আচরনের কোন প্রশ্নই নেই। আমি তাদেরকে বলব তারা যাতে দুষ্ট অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হয় যা পাকিস্তান এর বাইরে প্রচার করা হচ্ছে। পাকিস্তান সরকার সীমানা বরাবর ২১তি অভ্যর্থনা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত করেছে যাতে ত্রাণ, সরবরাহ এবং যানবাহন দেওয়া হয়, যাতে গৃহহারারা বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। পাকিস্তানের যুদ্ধ বিরতির ঘটনা হিসাবে পলাতক সামরিক ব্যক্তিদের সাথে সাথে সকল শ্রেণীর জনগণকে রাজক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে যারা বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২৮শে জুন জাতির উদ্দেশে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি বলেনঃ
‘’ আমরা আনন্দে এবং কৃতজ্ঞ চিত্তে জাতি সংঘের যে কোন সাহায্য গ্রহন করব এই বাস্তুহারা লোকদের পাকিস্তানে ফিরিয়ে আনার জন্য সুবিধা বৃদ্ধি করব।
ফলস্বরূপ পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সাধারণ সচিবকে পূর্ণ সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হয়েছে তাদের বাসস্থান উদ্ভাবন করার জন্য।
পূর্ব পাকিস্তানে একটি বিশেষ কমিটি স্থাপন করা হয়েছে প্রশাসনিক সহায়তা জাতি সংঘের সংস্থাকে প্রধান করার জন্য।
উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন সুবিধাজনক করতে সীমা রেখার উভয় পাশে উদ্ভাস্তুদের জন্য সেক্রেটারি – জেনারেল এর ১৯ শে জুলাইএর প্রস্তাব পাকিস্তান সরকার ২৪ ঘণ্টার মাঝে গ্রহন করেছে। এটি অবশ্যই লক্ষণীয় যে ভারত অবশ্যই পালনীয় প্রস্তাবটি বাতিল করেছিল। পাকিস্তান সরকার জাতি সংঘের এই প্রস্তাবেও সম্মত হয়েছিল যে কিছু সংখ্যক জাতি সংঘের সদস্যকে পূর্ব পাকিস্তানে আসন দেয়া হবে ত্রাণ ও পূর্ণবাসন অপারেশনে সহায়তা করতে পারে।
আমরা আমাদের নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবর্তনের জন্য সব ব্যবস্থা গ্রহন করেছি। যারা ভারতে আছেন তারা এটা এতটাই গুরুত্ব সহকারে মূল্যায়ন করা হচ্ছে যে উদ্বাস্তুরা তাদের বাড়ি ঘরে ফিরে আসতে শুরু করেছে। শেষ গননা অনুযায়ী প্রায় ২০০০০০ জন ফিরে এসেছে। ভারত থেকে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার সাহায্যে আরও দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
পাকিস্তান সরকার ভারত সরকারের পক্ষ থেকে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে একটি সম্মেলনে আমন্ত্রন জানিয়েছেন যাতে উদ্দেশ্যটি সম্পূর্ণ করার জন্য চিন্তিত পদক্ষেপ নেয়া যায়। পাকিস্তান সরকার তার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধান মন্ত্রীর সাথে যে কোন সময়ে যে কোন স্থানে এই সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনায় বসার। যদিও ভারত এখনও সহযোগিতা করতে অস্বীকার করছে শুধুমাত্র পাকিস্তান সরকারের সাথে নয় বরং সকল নিরপেক্ষ চেষ্টাকেও । যা উদ্বাস্তুদের ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রহন করা হয়েছে। আমি আগেই বলেছি ভারত উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন সুবিধা জনক করতে সীমারেখার উভয় পাশে উদ্বাস্তুদের জন্য সেক্রেটারি – জেনারেল এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারত পাকিস্তান সমস্যা নিরসনে নিরাপত্তা পরিষদের একজন দক্ষ অফিসার পাঠানো হবে পাকিস্তানের এই পরামর্শতেও সমর্থন দেয়া হয়নি। পশ্চিম বাংলায় ইসলামিক সচিবালয়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যদের উদ্বাস্তু শিবিরে ভ্রমনের অনুমতি দেয়া হয়নি এবং আমার সরকারের প্রতিনিদিদের সাথে সম্মেলন টেবিলে বসতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
এটা আপাতবিরোধী হয় যখন ভারতীয় প্রতিনিধিরা উদ্বাস্তুদেরদের জন্য সদস্যদের কাছ থেকে অঙ্গীকার আদায়ের জন্য আসে। ভারত গঠনমূলক যে কোন প্রস্তাব গ্রহনে অনিচ্ছুক যা নিরীহ মানুষের দুর্ভোগ শেষ করতে সহায়তা করবে। কেন ভারত সরকারের জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকের উপস্তিতি মেনে নিতে সমস্যা হচ্ছে ? যেখানে পাকিস্তান সরকারকে দায়ী করা হচ্ছে তার জনগণের বিরুদ্ধে ভয়াবহ কার্যসাধন করার জন্য, তারপরও পাকিস্তান সরকার কোন দ্বিধা ছাড়াই জাতি সংঘের পর্যবেক্ষককে সীমানা অনুসন্ধান করার জন্য অনুমতি দিচ্ছে।
ভারতের সহযোগিতা করার বিষয়ে প্রতিরোধ করার কারন সুস্পষ্ট। ভারত আশা করছে বিশ্বের কাছ থেকে একটি সশস্ত্র সংঘাত আড়াল করতে পারবে। মানবিক সহায়তার অজুহাতে ভারত বিচ্ছিন্নবাদি একটি দলকে সেনা প্রশিক্ষন এবং সহায়তা করছে যারা ভারতে নিরাপদ আশ্রয় খুজে পেয়েছে। আমি আবারো ভারতের এই কূটাভাষ নজির হিসাবে উল্লেখ করছি।
১৮ই সেপ্টেম্বর ,১৯৭১ দিল্লীতে একটি মিটিং এ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিম্ন আসনের একজন ব্যাক্তি বলেন, যা প্রায় এক সপ্তাহ আগে , ‘’ উদ্বাস্তুদের তখনই তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করা হবে যখন তা একটি স্বাধীন জাতি হবে।‘’ এটা অনুমেয় ছিল যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বাধীনতা প্রদান করবে না কিন্তু আমাদের এই পরিস্থিতির দিকে কাজ করতে হবে যাতে পাকিস্তানের আর কোন বিকল্প না থাকে।‘’
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ সকালের বিবৃতিতে পাকিস্তানের সঙ্কটে রাজনৈতিক সমাধান বলতে কি বোঝাতে চেয়েছেন তা নিয়ে কোন সন্দেহই নেই, প্রতিরক্ষা মন্ত্রানলয়ের তার সহকর্মীর বিবৃতিতেই তার উত্তর সরবরাহ করা হয়েছে।
আমি আমার দেশের পক্ষ থেকে বলছি, আমাদের কোন উদ্দেশ্যই নেই আমাদের স্বাধীনতা এবং অখন্দতাকে বিপদগ্রস্ত করতে কাওকে অনুমতি দেওয়া। আজ আমার দেশ যার মুখোমুখি তা কেবলমাত্র আক্রমণমূলক যা আজ সকালে আমরা শুনেছি। এবং তা দুভাগে বিভক্ত করার জন্য আক্রমণমূলক প্রচেষ্টা। পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের এবং আসামের সীমানায় দৈনিক গোলাবর্ষণ দেখা যাচ্ছে। ভারতীয় সৈন্যদের নিয়মিত ভাবে এই সব অঞ্ছলে শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছিল সঙ্কট শুরু হওয়ার পূর্বেই এবং তখন থেকেই কথিত মুক্তিযুদ্ধ বাহিনীর ২০০০০০ জনকে টেনিং এবং সজ্জিত করা হচ্ছিল ভারত সরকারের ব্যয়ে ।
২৯শে এপ্রিল, ১৯৭১, নিউ ইয়র্ক টাইমস এর প্রতিবেদনে যা বলা হয়েছে।
ভারতীয় সড়ক ইতিমধ্যে সীমান্ত পয়েন্ট কলকাতা থেকে উত্তরে নেতৃত্ব স্থানীয় সরবরাহ রুটের চেহারা নিয়েছে। বাংলার ট্রাক দেখা যাচ্ছে ভারতীয় শহরের অভিমুখ থেকে তাজা সরবরাহ, খালি জ্বালানির ড্রাম এবং গোলাবারুদের বাক্স বহন করে আনছে। ভারতীয় সীমানার কাছে বাঙ্গালী স্বাধীনতার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেছে যা সম্ভবত ভারত পাকিস্তানের সৈন্যদের মধ্যে শুটিং ঘটনার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা হবে।
‘’ পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতাতে তাৎক্ষনিক অনেক গল্প আছে ভারতীয় সামরিক সহায়তার। একটি প্রতিবেদন হলও , ভারতীয় গোলাবারুদ কারখানা ভারতীয় চিহ্নিতকরন ছাড়াই অস্ত্র এবং গোলাবারুদ তৈরি করছে। অন্য একটি হলও ভারতীয় কর্মকর্তারা একটি বিশাল গেরিলা ফোরস এর অনুসঙ্গী হয়ে পাকিস্তানে গত সপ্তাহে একটি আক্রমন চালায়। ‘’
আমি জানি না ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বক্তৃতামঞ্চে ফিরে এসে এই আরোপগুলো অস্বীকার করবেন কি না ? তিনি নিজেই ভারতীয় পার্লামেন্টে ২০শে জুলাই ঘোষণা করেন, ‘’ স্বাধীনতা সৈন্যদের ভারত সব রকম সাহায্য করবে।‘’ যদিও তিনি আজ সকালে এখানে এসে বিবৃতি দেন যে ভারত তার প্রতিবেশীর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, এবং এই বিষয়ে কাজ শুধুমাত্র নোবেল এবং মহত্ত দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে করছে। সে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে নির্দোষ, অসহায় শিকার হিসাবে অঙ্কিত করেন।
আমি সাহস করে বলছি জাতিসংঘের এই হলে ঘন ঘন এই প্রচার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। আমাকে বলতে অনুমতি দিন যে পোপের আখ্যার অশুভ চক্র ভারত আমাদের মাথার উপর রাখতে চাচ্ছে এবং বর্তমান অবস্থাই তার আসল ভূমিকা। গত চার মাসে উদ্বাস্তুদের জন্য ভারতের উৎকণ্ঠা মানবিক নয় বরং গুপ্তচর পাঠানো এবং বিশ্বের কাছে প্রচার করাই আসল উদ্দেশ্য। ভারতে অভিপ্রায় দীর্ঘদিনের এবং অপূরণীয় ইচ্ছা হলও তা আলাদা , দুর্বল এবং যদি সম্ভব হয় পাকিস্তানকে শেষ করা। প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের মিঃ কে সুবরামায়ম কায়দা করে বলেনঃ
‘’ভারতের উপলব্দি করা আবশ্যক যে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করা আমরা আমাদের স্বার্থে করছি। পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন করার সুযোগ আর কখনো আসবে না এবং বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ভারতের নিরাপত্তা সমস্যাকে সমাধান করবে।‘’
অন্য আরেকজন ভারতের রাজনীতিবিদ দেখেন পাকিস্তানের বিভেদ এর পথ ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিনত করবে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী দুঃখজনক সুরে বলেন উদ্বাস্তুদের অন্তঃ প্রবাহে ভারতের অর্থনীতির অবস্থান অবনিতি হচ্ছে। পাকিস্তানী হিসাবে আমি তাকে আশ্বাস দিচ্ছি এবং অন্য পাকিস্তানী প্রতিনিধিরা আশ্বাস দিচ্ছে যে পাকিস্তান তৈরি এবং ইচ্ছুক তার প্রত্যেক নাগরিককে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। যদি ভারত এই বোঝা উপশম করার ইচ্ছা রাখে এবং অকুণ্ঠ সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা উচিত।
আমার সরকার উদ্বাস্তুদের সবচেয়ে ভালো পদ্ধতিতে ফিরিয়ে আনার জন্য ভারতের সাথে বসতে এবং আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আমার সরকার নিরাপত্তা কাউঞ্ছিলের কারযে সহায়তা প্রদানের জন্য বিশেষ ভাবে মনোনীত দক্ষ অফিসার তৈরি করেছে। কোন কারনে ভারত সরকার অনিচ্ছুক পাকিস্তানের সাথে টেবিলে বসার; তাহলে নিরাপত্তা কাউঞ্ছিলের উন্নত অফিসে বসার প্রস্তাব গ্রহন করা যাক।
আমি আগেই বলেছি, পাকিস্তান সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করেছে পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসনের জন্য। এটাও নিশ্চিত করা হয় যে উদ্বাস্তুদের সাথে সাথে পাকিস্তানের সকল নাগরিকদের জন্য দেশের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, ২৮শে জুন জাতির উদ্দেশ্যে তিনি নিজে প্রকাশ করেন যে জনগণের পূর্ণ অংশ গ্রহন ছাড়া স্বাভাবিকতা ফিরে আসতে পারে না। তিনি সরকারের প্রতিনিধি উপস্থাপক হিসাবে বাস্তব উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানে বেসামরিক প্রশাসন স্থাপন করা হচ্ছে যেখানে লক্ষণীয় যে এই সদস্যরা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য । উপ- নির্বাচনের মাধ্যমে এই সব আসন যা বিদ্রোহে অংশ গ্রহনের কারনে আরোপিত আসন অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে; নভেম্বর মাসের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। একটি অস্থায়ী সংবিধান তৈরি হচ্ছে যা অপরিহার্য দুটো শর্তকে সন্তুষ্ট করার প্রচেষ্টায় : আঞ্ছলিক স্বায়ত্তশাসন এবং পাকিস্তানের অখণ্ডতা সংরক্ষণ। জাতীয় পরিষদের একটি অপেক্ষাকৃত সহজ পদ্ধতি দ্বারা অস্থায়ী সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা থাকবে । ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে ‘’ প্রতারনা ‘’ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন।
যদি পাকিস্তানের অবস্থা সত্যিই তারা বর্ণনার মতো হতো তাহলে প্রেস সেন্সরশিপ মুছে ফেলা হতো না, জাতিসংঘের কর্মীদের এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটিকে পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো না। যদি সহিংসতা অব্যাহত থাকে তা ভারতের উৎসাহ প্রদানের ফলাফল। পোষকতা এবং সহায়তার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে অন্তর্ঘাত তৈরি হচ্ছে।
অবিরতভাবে সীমানায় বোমাবর্ষণ এবং কামান দাগানো দৈনন্দিন ঘটনা।
রাষ্ট্রের মধ্যে সুসম্পর্ক সুশৃঙ্খল আচারন সংরক্ষণের উপর ভিত্তি করে রাষ্ট্রের অখণ্ডতার সম্মানার্থে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে কঠোর নীতি পালন করা হয় । ভারতের বর্তমান কার্যকম উভয় নীতিকে লঙ্গন করে। কোন রাষ্ট্র ইচ্ছুক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বহিরাগত হস্তক্ষেপ উপেক্ষা করার? এই পরিষদের মধ্যে কোন রাষ্ট্র ইচ্ছুক অন্য দেশের হস্তক্ষেপের কারনে তার ভূখণ্ডের নকশার বিভাজন সৃষ্টি কারীকে উপেক্ষা করার? ভারত নিজে কি তৈরি তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ মেনে নিতে? এটাই কি বলা হয় যে অপসরন নিজ ঘরে বিদ্রোহ কিন্তু বিদেশে তা সসঙ্কল্প ?
আমাকে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে হয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে দিন যে পাকিস্তান সরকার স্থানচ্যুত নাগরিকদের তাদের বাড়িঘর ফেরত নিশ্চিত করার জন্য যে কোন পরিমান গ্রহনের জন্য তৈরি। আমরা একটি সম্পূর্ণ জাতি হিসাবে বসবাস করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এবং শান্তি পূর্ণ প্রতিবেশীর সাথে শান্তি রক্ষার্থে। কিন্তু পাকিস্তান আরও দৃঢ় ভাবে প্রতিজ্ঞ যে আঞ্ছলিক এবং জাতীয় অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য আর কাওকে প্রশ্নও করার অনুমতি দেয় না ।
যদি ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বন্দ্ব পরিহার করতে হয় তাহলে আন্তর্জাতিক কমিউনিটি ভারতের উপর তার নীতির উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং তাদের এই নীতি পরিহার করার জন্য স্মরণ করে দেয়া হয়।
জনাব রাষ্ট্রপতির ২২শে সেপ্টেম্বর এর এক সংবাদ সম্মেলনের বিবৃতিঃ
‘’ এই উদ্বাস্তু সমস্যা একটি মানবিক সমস্যা। আমরা অবশ্যই তা সমাধান করব। পুরো বিশ্ব অবশ্যই এই সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে। কিন্তু যদি আপনি বিষয়টিকে রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখতে চান , যদি একটি বিতর্ক টেনে আনতে চান তাহলে এর কোন শেষ নেই। প্রশ্নও হলও কি করে তা দ্রুত সমাধান করা যায়। এই কারনে, এই বিষয়কে আমি বিশ্বাস করি, এই দৃশ্য গুলোকে বাদ দিয়ে আলচনা করার। আমরা বিশ্বাস করি পাকিস্তান এবং ভারত একত্র করার এবং তারা কিভাবে সমস্যা সীমিত করে তা দেখতে হবে।‘’
এটা আমার সরকার ভারত – পাকিস্তানের বর্তমান উত্তেজনা কমাতে সম্মলিত পথ খুজে বেড় করার চেষ্টা করছে এবং উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবাসন এর বিষয়েও চেষ্টা করছে যার দৃশ্য আমরা পূর্ণ রুপে শেয়ার করেছি।
আমার সরকারের পক্ষ থেকে আমি প্রকাশ করছি যে পাকিস্তান উদ্বাস্তুর এই সমস্যা নিরসনে যে কোন ধরনের পরামর্শ গ্রহনে তৈরি আছে।
.
.
শিরোনামঃ ৭০। জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি আগাশাহীর বিবৃতি পয়েন্ট অব অর্ডার
সূত্রঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি আগাশাহীর বিবৃতি পয়েন্ট অব অর্ডার
২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
জনাব আগাশাহীর প্রথম পয়েন্ট অব অর্ডার স্টেটমেন্ট
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গত ১০ মিনিট ধরে অযথা খোঁচাখুঁচি করেছেন। তিনি আমার দেশের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলেছেন সবাই এটা জানেন যে, পাকিস্তানের দুটি অংশ ভারতের প্রায় ১০০০ মাইল সীমান্ত দিয়ে বিভক্ত, তিনি পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন, তিনি পাকিস্তানের দুই অংশে সম্পদ বণ্টন নিয়েও কথা বলেছেন।
জাতিসংঘের সদস্য রাষ্টের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো বা প্রত্যেকটি দেশের বৈষম্য নিয়ে খোঁচাখুঁচি করা কি অনুমোদিত? মি. প্রেসিডেন্ট, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এত গভীরে গিয়ে নাক গলানোর কি অনুমতি আছে? আমি এজন্য আপনার কাছে রুলিং দাবি করছি।
সেকেন্ড পয়েন্ট অব অর্ডারঃ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী প্রসিডিউর-১ এর কোন নিয়ম অনুসারে পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপিত হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন। আমি সহজ করে এটা বলতে পারি যে, প্রসিডিউরের রুলগুলো জাতিসংঘের চার্টার রুলের অধীনস্ত রুল এবং একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যাবস্থা অ্যাসেম্বলিতে আলোচনা করার অনুমতি নেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়েছেন বলেই আমি পয়েন্ট অব অর্ডার উত্থাপন করেছি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথাব্যাথার কোন প্রয়োজন নেই। একটি সদস্য রাষ্ট্র কি ধরণের সামাজিক ব্যবস্থা প্রচলিত, দেশটি কি গণতান্ত্রিক নাকি স্বৈরাচারশাসিত, সংসদীয় নাকি রাষ্ট্রপতি শাসিত, দেশটির ভিন্ন দুটি অংশে উন্নয়নের ভারসাম্য আছে নাকি নেই, বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য ছয়দফার প্রয়োজন নাকি এলাকাভিত্তিক সায়ত্ত্বশাসন দরকার তা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাথাব্যাথার কোন প্রয়োজন নেই। এগুলো সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ বিচারব্যাবস্থার বিষয়। তাই মি. প্রেসিডেন্ট শান্তিপূর্ণ যৌক্তিক বিতর্কের খাতিরে আমি আপনার কাছে আবারও আবেদন করছি, আপনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে এ ঘটনার আন্তর্জাতিক ফলাফল কি হতে পারে তা নিয়ে নিজেকে নিয়োজিত রাখার উপদেশ দিন। সেক্রেটারি জেনারেলের পর্যবেক্ষণকে যদি তিনি তার বাৎসরিক রিপোর্টে প্রাধান্য দেন তাহলে তাকে অর্ডারের আওতায় আনা হোক।
এগুলো আন্তর্জাতিক প্রাক্ষাপটের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে, কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী যে ব্যাপারগুলো উত্থাপন করেছেন তার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এগুলো সম্পূর্ণরূপে পাকিস্তানের বিচার ব্যাবস্থার আভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭১। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি | জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস | ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সাল |
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি মাহমুদ আলীর বিবৃতি ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
চরম অনীহার সাথে আমি আমি আবার সাধারণ পরিষদে কথা বলার জন্য অনুমতি চেয়েছি। আমি আন্তরিক ভাবে আশা করি যে আমরা তর্কযুদ্ধ শেষ করে কিভাবে শরণার্থীদের ঘরে ফিরিয়ে আনা যায় তার বিভিন্ন ব্যবহারিক দিকের প্রতি মনোযোগ জ্ঞাপন করব।
আমরা আশা করেছিলাম যে ভারতের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যে কিভাবে এই সংকট নিরিসন করা যায় তার উপর তার সরকারের মতামত তুলে ধরবেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি ভাবলেন যে পরিষদে পাকিস্তানের পতন সম্পর্কে ভাষণ দেয়াটা বেশি উপকারি। আমাদের সবারই সীমাবদ্ধতা রয়েছে, এবং আমার দেশের সাংবিধানিক সমস্যার একটু চিরস্থায়ী সমাধান বের করার চেষ্টার ইতিহাস গোপন কিছু নয়। এমন একটি সরকার ব্যবস্থা স্থাপনই আমাদের সব সময়ের উদ্দেশ্য ছিল যা জনগনের ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে এবং বিভিন্ন ভৌগলিক , রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়গুলি মিটমাট করবে। আমরা সেই রাস্তা বরাবর এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। এটা আমি বলতে পারি যে আমাদের সাফল্যে ভারতেরও লাভের সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমাদের ব্যর্থতায় ভারতেরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তান কর্তৃক হিসাবকৃত শরণার্থী সংখ্যার সঠিকতা নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। তিনি ভেবেছেন যে এটা খুবই অদ্ভুত যে এক জেলা থেকে দেশ ছেড়েছেন ২ জন আর অন্য জেলা থেকে দেশে ছেড়েছেন ৬০০০ জন। এটা নিশ্চিত যে এধরনের প্রশ্ন উত্থাপন হতে পারে এবং আমার সরকার প্রস্তাব করেছে যে জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক আমাদের আদালতের একটি স্বাধীন যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি তার দেশের অতি সতর্ক উদ্বাস্তু আন্তঃপ্রবাহের নিবন্ধন অনুরূপ যাচাই প্রক্রিয়ায় দিতে সম্মত হন নি।
কেন ভারত সরকার প্রত্যাশা করবে যে সবাই বিনাবাক্যে তাদের তুলে ধরা চিত্র গ্রহণ করবে যা কিনা প্রতিনিয়ত বাস্তব কোন সূত্র ছাড়া ঘুড়িয়ে প্যাঁচিয়ে বলা হচ্ছে? আমি সুপারিস করতে চাই যে যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে শরণার্থীরা ফিরে আসা পর্যন্ত তাদের ভোগান্তি উপশম করার একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে, এটাও নিশ্চিত করা কর্তব্য যে শরণার্থীদের জন্য সরবরাহকৃত সাহায্য যাতে অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হয়।
দুটি অযুহাতের উপর ভিত্তি করে ভারত তার সীমান্তে জাতি সংঘের পর্যবেক্ষণ এর প্রতি আপত্তি জানিয়েছে। প্রথমটি হল, কারণ এটি অপ্রয়োজনী যেহেতু এরই মাঝে অনেক মানুষ শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। এটি একটি ন্যায্য যুক্তি। পাকিস্তানের দিকেও আমরা দর্শনার্থী পেয়েছি। উপরন্তু, গত দুই মাস বা এর বেশি সময় ধরে পাকিস্তানের কোন অংশে কোন সেন্সরশীপ এর অস্তিত্ব নেই। অথবা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সংবাদকর্মীদের চলাচলের উপর কোন ধরনের নিষেধাজ্ঞাও নেই। তা সত্বেও পাকিস্তান পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি মেনে নিতে দ্বিধাবোধ করে নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, যাদের কাছে ভারত আপিল করেছে, তারা ভারতের কাছ থেকে একই রকমের আত্মবিশ্বাস আশা করে থাকে।
এটি প্রকৃতপক্ষে হতাশাজনক যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা কমিয়ে আনার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবিত গুড অফিস কমিটিকে একটি প্রতারণামূলক কৌশল হিসেবে উল্লেখ্য করেছেন। এটা কি সত্য নয় যে জুলাই মাসের ২০ তারিখে জাতি সংঘ মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রতি ভারত পাকিস্তানের মধ্যকার অধোগামী অবস্থার দিকে আলোকপাত করে একটি গোপন স্মারকলিপি পাঠ করেন? তিনি কি “সীমান্ত সংঘর্ষ, চোরাগোপ্তা হামলা, আরো মিয়মিত হয়ে উঠা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড” এর প্রতি তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন নি? তিনি কি সতর্ক করে দেন নি যে উপমহাদেশে একটি বড় ধরনের দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়তে পারে?
এটা আলোচ্যসূচীতে ছিল যে পাকিস্তান উপমহাদেশে শান্তির জন্য হুমকি এবং বৃহত্তর যুদ্ধে এড়াতে নিরাপত্তা পরিষদকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে। এবং এখনও, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুড অফিস প্রস্তাবকে প্রতারণামূলক কৌশল হিসেবে অবহিত করা সমুচিত মনে করেন।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে তার দেশ এই বিষয়ে পাকিস্তানের সমকক্ষ হতে চায় না। এখন, এটি কি ইঙ্গিত দেয়? হয় এই কথাটি অর্থহীন অথবা অথবা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে যে ভারত এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য দেশ হিসেবে পাকিস্তানের চাইতে বেশি মর্যাদা উপভোগ করে থাকে। এটি একটি অসমর্থনযোগ্য যুক্তি। এমনকি এত বড় সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো একটি শক্তির প্রতিনিধি গতকাল এই প্রতিষ্ঠানকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে এই প্রতিষ্ঠানের সকল সদস্য দেশ সম-মর্যাদা উপভোগ করে।
আমি আমার ভারতীয় সহকর্মীদের মিথ্যা অহংকার পাশে সরিয়ে রাখতে বলব এবং বাস্তবতার পৃথিবীতে ফিরে আসার জন্য বলব। নিশ্চয়ই, ভারতের অভ্যন্তরে জাতি সংঘের পর্যবেক্ষক নিয়োগ গ্রহণ করার জন্য কেউ ভারতের চাইতে কম ভাববে না।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একই ভাবে তার সরকারের প্রতিনিধিদের সাথে বসে শরণার্থীদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ ঠিক করার জন্য আলোচনা করার প্রস্তাবে রুক্ষ ছিলেন। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে তিনি বা তার সরকার কেউই পাকিস্তানের প্রস্তাব বুঝতে ভুল করেন নি। আমরা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকে অনুরোদ করি নি। আমরা পাকিস্তানের এই বা ওই লোক অথবা ওই দল যার সাথেই দরাদরি করি না কেন তা একান্তই পাকিস্তানের এখতিয়ার। একমাত্র ব্যাপার যা ভারতকে ভাবাচ্ছে তা হল ভারতের মাটিতে বিশাল সংখ্যক পাকিস্তানী নাগরিকের উপস্থিতি এবং কিভাবে তাদেরকে ফেরত পাঠানো যায়। এটা এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার জন্য যে, আমার সরকারের মতে, উভয় দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের মাধ্যমে অথবা কোন নিরিপেক্ষ পৃষ্ঠপোষকের অধিনে আলোচনায় বসবে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে পাকিস্তান তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাকে একটি ভারত-পাকিস্তান সমস্যায় রূপ দিতে চাচ্ছে। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে এসেছে শুধুমাত্র ভারতের মাটিতে পাকিস্তানী শরণার্থীদের উপস্থিতির জন্য এবং সাহায্য এবং সহযোগিতার জন্য যা ভারত পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রদাণ করছে।
আমি অন্যদিন বলেছিলাম যে এই ধরনের সাহায্যের ভিতর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র সরবরাহ এবং প্রশিক্ষণ প্রদাণ করা এবং ভারতের নিজস্ব বাহিনীর পাকিস্তান সীমানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন অভিযানে অংশগ্রহণ করা। এই আগস্টের অধিবেশন এটি অবশ্যই উল্লেখ করবে যে ভারত এই অভিযোগ নিরবতার মাধ্যমে এড়িয়ে গিয়েছে। আসলে, তিনি বলেছেন যে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা কার্যকর ভাবে বন্ধ করা সম্ভব নয়, এবং, আমি এটিকে ভারতের পার্লামেন্টে ভারত সরকার কর্তৃক বর্ণিত “মুক্তিবাহিনী”-কে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করার অঙ্গিকার এর পুনর্ব্যক্ত হিসেবে ধরে নিচ্ছি। আমি এমন কোন সীমানা সম্পর্কে অবহিত নই যা উঁচু কাঁটাতারের বেড়া দ্বারা বন্ধ করা হয়। সীমান্তকে শান্তিপূর্ণ রাখা হয় সংশ্লিষ্ট সরকারের নীতিমালা এবং কর্মপুন্থা দিয়ে। আমি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করব আমাদের দুই দেশের মধ্যকার শান্তি এবং স্থিতিশীলতাকে উন্নীত করার সবচেয়ে ভালো উপায় এর উপর আন্তর্জাতিক আচরণ এর সাধারণ নিয়ম এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভারত এবং পাকিস্তান এর মধ্যকার সীমান্তকে উত্তপ্ত করার বক্তব্য এর প্রভাব তুলে ধরার জন্য।
আমি এখানে বিতর্কিত বিষয়গুলো হিসাব করতে আসি নি। ভারত ও পাকিস্তান সীমান্তের পূর্বাংশের ঘটনাসমূহের কারণে উপমহাদেশে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জাতি সংঘের মহাসচিব শান্তির জন্য হুমকিসমূহের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যদি না এই পরিস্থিতি খুব তাড়াতাড়ি প্রতিবিহিত করা হয়। আমার সরকার ভারতের সাথে সমযোতায় যাওয়ার ইচ্ছার প্রমাণ দিয়েছে, আমাকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পুনরাবৃত্তি করতে না দিয়ে, শুধুমাত্র ঐসকল সমস্যা নিয়ে কথা বলতে বলুন যা নিয়ে ভারতের জনগণে চিন্তিত এবং এটি তাদের প্রতি একটি বোজাস্বরূপ যেমনঃ শরণার্থী সমস্যা।
গতকাল সোভিয়েত ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন এই পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য সতর্কতা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার জন্য। আমরা এই আবেদনকে স্বাগত জানাই এবং আশা করি ভারত সরকার এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। গতকাল আমি অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের কাছ থেকে এই সমস্যার সমাধানে একটি সুন্দর রাজনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারের স্বদোপোদেশ শুনেছি। যদি তারা আমাকে এই বক্তৃতামঞ্চ থেকে তাদেরকে উত্তর দেয়ার অনুমতি দেন তাহলে আমি বলব ওটাই হল সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য যার দিকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট অগ্রসর হচ্ছেন যা তিনি সমস্ত বাঁধা বিপত্তি সত্বেও অর্জন করতে বদ্ধপরিকর।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিজেই প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খানের এই পর্যন্ত নেয়া পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা করেছেন যেমন- সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান, জনগনের মৌলিক অধিকারের দাবি প্রহনযোগ্যতা প্রদান এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসা। এই কর্মপন্থাকে বাধাগ্রস্থ হয়েছে কিন্তু শেষ হয়ে যায় নি, এর চূড়ান্ত লক্ষ্য হল একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক এবং ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান যা অন্য সকল দেশের সাথে শান্তি এবং বন্ধুত্বের ভিতর দিয়ে বসবাস করতে চায়। উপমহাদেশে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা জোরদার করা হবে এবং শরণার্থীদের দুর্ভোগ আরো তাড়াতাড়ি শেষ হবে যদি যেরকমটা ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী গত সপ্তাহের বলেছেন তারা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় যেখানে পাকিস্তানের ভেঙ্গে যাওয়া ছাড়া আর কোন দ্বিতীয় উপায় থাকবে না এর পরিবর্তে ভারত সরকার এই উদ্দেশ্যের সাথে নিজেদের একীভূত করতে পারে।
.
.
শিরোনামঃ ৭২। প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের প্রেস নোটঃ কোর্টের রায় সম্পর্কে রটনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী
সূত্রঃ ডন
তারিখঃ ২৯, সেপ্টেম্বর ১৯৭১
.
প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের প্রেস নোটঃ কোর্টের রায় সম্পর্কে রটনার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী বিচারকার্যের বিবরণী ও আদালত অবমাননার ব্যাপারে সতর্কবার্তা
সেপ্টেম্বর ২৮, ১৯৭১
.
এতদ্বারা জানানো যাচ্ছে যে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা ও আনীত অন্যান্য অভিযোগের ভিত্তিতে শেখ মুজিবুর রহমানকে রুদ্ধদ্বার ( রাষ্ট্রীয় বিষয়াদির গোপনীয়তা রক্ষার্থে ) বিচারের মুখোমুখি করবার জন্য প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের আহ্বানে একটি বিশেষ সামরিক আদালত গঠন করা হয়েছিল।
বিচারকার্য আরম্ভ হয় ১১ অগাস্ট, ১৯৭১ এ। অবশ্য আদালত ঐদিনই মুলতবি ঘোষণা করা হয় নিরপেক্ষভাবে মামলা পরিচালনা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে নিজের ইচ্ছানুযায়ী একজন আইনজীবি নির্বাচন করতে দেয়ার জন্য।
সেপ্টেম্বর ৮, ১৯৭১ তারিখে জনাব এ. কে. ব্রোহি এবং তার তিনজন সহকারী – জনাব গোলাম আলী মেমন, জনাব আকবর মির্জা ও জনাব গোলাম হোসেন উক্ত মামলায় নিযুক্ত হন, এবং মামলার সাক্ষীদের বক্তব্য নিরীক্ষণ শুরু হয়।
ইতোমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সপক্ষে ২০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও নিরীক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান এ মামলাটিতে জনাব এ. কে. ব্রোহি বিবাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
জনসাধারণকে সময়ের সাথে সাথে চলমান মামলাটির অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করা হবে।
ইত্যবসরে, সকলের উচিত হবে স্বীয় স্বার্থ রক্ষার্থেই এমন কিছু বলা বা করা হতে বিরত থাকা, যা কি না আদালত অবমাননা বা বিচারকার্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের সামিল হয়, অথবা চলমান মামলাটির পরিচালনা প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতদুষ্ট করে তোলে।
( দ্য ডন, করাচী, সেপ্টেম্বর ২৯, ১৯৭১)
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৩। এল এফ ও সংশোধনঃ মন্ত্রীরা নির্বাচনে দাড়াতে ও পরিষদের সদস্য থাকতে পারবেন | দৈনিক পাকিস্তান | ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
ইসলামাবাদ, ২৮ শে সেপ্টেম্বর ( এপিপি ) – কোন ব্যক্তি গভর্ণর কতৃক মন্ত্রীপরিষদের সদস্য পদে নিযুক্ত রয়েছেন বলে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য কিংবা কোন প্রদেশের প্রাদেশিক প্রদেশের সদস্য নির্বাচিত হতে ও সদস্যপদ বহাল রাখতে অযোগ্য ঘোষিত হবেন না।
প্রেসিডেন্ট ২৫শে সেপ্টেম্বর আইনগত কাঠামো আদেশ সংশোধনের মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করেছেন। এই আদেশ ১৯৭১ সালের আইনগত কাঠামো ( তৃতীয় সংশোধনী ) আদেশ বলে অভিহিত হবে এবং সাথে সাথেই তা বলবত হবে ও ১৯৭১ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর বলবত হয়েছে তাও ধরে নিতে হবে।
.
.
শিরোনামঃ ৭৪। আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গভর্নর, ষ্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, এস, ইউ দুররানীর বিবৃতি
সূত্রঃ ইন্টারন্যাশনাল মনিটরী ফান্ডঃ প্রেস রিলীজ
তারিখঃ ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
.
বার্ষিক যৌথ আলোচনায় স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান এবং পাকিস্তান ত্রান তহবিলের মাননীয় গভর্নর এস ইউ ডুরান্টের বিবৃতি
আমাদের দুজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাগত বক্তব্য এবং বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এই প্রতীয়মান হয় যে আমরা খুব কঠিন সময়ে মিলিত হয়েছি। ব্রিটন ঊডস ইন্সটিটিউটের বিচক্ষণতা এবং নেতৃত্ব এই অস্থির পরিবেশে স্বস্তি বয়ে আনবে। বৈশ্বিক বানিজ্য এবং বিনিময়ে সঙ্কট দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। এটি সম্ভবত শুধুই নাটকীয় তা নয় , কিছুক্ষেত্রে আকস্মিক ও, যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কার্যকলাপ আমাদের বছরের পর বছর ধরে পুঞ্জীভূত সমস্যার দিকে নতুন ভাবে আলোকপাত করার সুযোগ সৃষ্টি করেছেঃ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার কেন্দ্রীয় অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতার অবনতি, প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক পুজিবাজারের প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতির অভাব, অর্থ / বিনিময় সমন্বয় প্রক্রিয়ায় সুনির্দিস্ট ভারসাম্যের অভাব, বিনিময় হারে অনমনীয়তা যা মুল্য মাত্রা এবং ক্রয় ক্ষমতার আপেক্ষিক পরিবর্তনের সাথে সমন্বয় রাখতে পারছে না, এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ হচ্ছে যে কোন সময়ের চেয়ে জনবহুল এই পৃথিবীতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য।
আন্তর্জাতিক বানিজ্য এবং বিনিময় ব্যবস্থায় বিদ্যমান বর্তমান অনিশিচয়তা এবং ভাঙ্গন দূর করতে আমাদের এখনই সুদৃঢ় পদক্ষেপ হাতে নিতে হবে। উন্নয়নশীল দেশে এর বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে উক্ত ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুস্পষ্টভাবে নির্দেশ করেছেনঃ এসব উদ্ভুত সমস্যাসমুহ হতাশাজনক ,বিশেষ করে এই কারণে যে যুক্ত্ররাষ্ট্র এবং তার প্রধান ব্যবসায়িক অংশিদারদের মাঝে সমন্বয়জনিত সমস্যায় এসব দেশের কোনভাবেই কোন ভূমিকা নেই। উক্ত সমস্যা সমাধানে , সমূহ বিপদ এবং দীর্ঘসুত্রিতা পরিহার করে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহোদয়ের সুপারিশের সাথে আমরা দৃঢ় সম্মতি জানাচ্ছি, কারণ দীর্ঘসূত্রিতার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। যদি মুদ্রা বৈষম্য অথবা আর্থিক চ্যুতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তবে যে সব উন্নয়ন প্রকল্প বর্ধিষ্ণু পুঁজির প্রবাহ এবং বাণিজ্যিক সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে অনুমিত সেগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। বিশ্ব বানিজ্য এবং উৎপাদন ব্যবস্থায় , স্বল্প –উন্নত দেশসমূহের ভূমিকা হয়তো তুলনামূলক ভাবে কম , তবুও বিশ্ব-ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট তার ভাষণেও আমরা শুনেছি, পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের ভার তাদের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক আর্থিক এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ধারাবাহিক ব্যবস্থাপনার সন্তোষজনক অগ্রগতি সম্পর্কে তাদের আশঙ্কা বাস্তব এবং তাদের অংশগ্রহণ অবশ্যই সক্রিয়, এমনকি নিবিড় হওয়া প্রয়োজন। যেখানে উন্নত দেশসমূহ সীমিত কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে নিজেদের পার্থক্যগুলোর সমাধানে পৌঁছাতে চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে এসব বিশেষায়িত ফোরামে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের প্রচেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। Bretton Woods institutions – এ আমাদের একটি বিশ্ব জনগোষ্ঠী আছে এবং এটাই আশা করা হচ্ছে যে উক্ত সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়া তাদের মধ্য দিয়েই খুঁজে পাওয়া যাবে।
আমাদের উপর যে সঙ্কট সেটি এককভাবে বিনিময় হার পুননির্ধারণের মাধ্যমে করা সম্ভব নয় , যদিও যেকোন ধরনের নিষ্পত্তির জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া , এই মজুদ নিষ্পত্তি বিষয়ে পুনর্বিবেচনা এবং উন্নত দেশসমূহের আর্থিক নীতি সমন্বয় সাধন প্রয়োজন। উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হলো সাধারণভাবে স্বীকৃত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সম্পর্ক সংশ্লিষ্ট প্রধান নিয়মনীতিসমুহ পুনঃ-প্রতিষ্ঠা এবং তার সফল প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ । বিশেষত , মুল্য নির্ধারণ ব্যবস্থায় পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে সমতা আনয়ন অত্যন্ত জরুরি যা সম্ভবত মুল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা চুক্তির সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা যাবে। এ ধরনের ভাসমান মুদ্রানীতি যদিও নিরাপদ নয় , তবে তহবিল রক্ষায় আন্তরজাতিক তত্বাবধানে বিশেষ ক্ষমতা প্রদানের মাধ্যমে অনুমতি প্রদান করা যেতে পারে। যদি মূদ্রার মূল্যমান একবার নির্ধারন করা যায় তবে , একটি নির্দিষ্ট সীমায় বিশেষ করে “Articles of Agreement” কর্তৃক নির্ধারিত সীমায় পরিবর্তিত হবে। ফান্ডের জন্য রিজার্ভ তৈরি করা এবং এর কার্যাবলী নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরি যা এই মুহূর্তে ভ্রুনাবস্থায় বিদ্যমান।
যতক্ষণ না পর্যন্ত আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে , আর্থিক উন্নয়নের সম্ভাবনাসমূহ মারাত্মকভাবে বিপদগ্রস্ত থাকবে। মার্কিন সহায়তার ১০ শতাংশ হ্রাস একটি অশনি সঙ্কেত, যদি সঠিক “Burden Sharing” এর উপায় উদ্ভাবন করা না হয় তবে তা অন্যান্য দাতাগোষ্ঠীর আগ্রহকে ব্যহত করবে। OECD এর পৃষ্ঠপোষকতায় অনুদান কার্যক্রম উন্নয়নের যে দ্বার উন্মোচন হয়েছিল তার গতি আকস্মিকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ঋণ সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য, অনুদান কার্যক্রমের উন্নয়ন অতি আবশ্যিক নাহলে যা একটি নতুন সমস্যার সূত্রপাত ঘটাবে । যখন অনুদান বিষয়ে বিদেশী বিশেষজ্ঞগণ দাতাগোষ্ঠী এবং অনুদান গ্রহীতাগোষ্ঠীর সাথে নতুনভাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি এবং অর্থনৈতিক মানদণ্ড নির্ধারণের ব্যাপারে কঠোরভাবে জোর দিচ্ছেন সেখানে অর্থনীতি বহির্ভূত বিবেচনাসমূহ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অতপর আমাদের উপর আন্তর্জাতিক মুদ্রানীতির প্রয়োগের ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দায়িত্ব বর্তায়। আন্তর্জাতিক উন্নয়নে অর্থায়ন পরিকল্পনা যা বিশ্ব ব্যাংকের গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত তার কার্যপদ্ধতি এবং বিষয়সমূহের প্রতিও আমাদের গভীর দৃষ্টিপাত করতে হবে।
যেসব অনুমানের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া ঋণের বোঝায় ক্রমাগত প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশ সমূহের অভ্যন্তরীণ ঋণ সমস্যা সমাধানের জন্য এবং পাশাপাশি বিগত বছরসমূহে নানা দেশে ঋণ বহুপাক্ষিক পুনঃতফসিলিকরণ প্রক্রিয়ার অভিজ্ঞতার আলোকে যে কাজ করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করার জন্য আমরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের স্বাগত জানিয়েছি। যদিও এখন অত্যাধিক ঋণের বোঝা সৃষ্টির পেছনে যেসব জটিল কারণ বিদ্যমান সে সম্পর্কে আমাদের ভালোই ধারনা আছে , তবে এখনো পর্যন্ত পিয়ারসন কমিশন এবং জাতিসঙ্ঘের অন্যান্য বিশেষজ্ঞ দলকর্তৃক প্রদত্ত সুপারিশসমূহের বাস্তবসম্মত দীর্ঘমেয়াদী প্রায়োগগিপ্রক্রিয়া নিয়ে কোন কাজ হয়নি। এ বিষয়ে তাদের কাজের ধারাবাহিকতায় , আমরা আশা করছি যে আমাদেরত প্রতিষ্ঠান এই ক্ষেত্রে জরুরী ভিত্তিতে আর্থিক এবং সাংগঠনিক উভয় দিকেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য ঋণ পাবার যোগ্য রাষ্ট্রসমূহকে ঋণ প্রদান সংক্রান্ত যে বিদ্যমান ধারণা সেটি বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। এখন বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশসমূহ এমন একটি অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে , ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ যেখানে অসম্ভব এবং এখনই ব্যাংকসমূহের লোন কার্যক্রম সংক্রান্ত নিয়মাবলী স্থিতিশীল করার শ্রেষ্ঠ সময়। একটি স্থিতিশীল পোর্টফোলিও এটাই নিশ্চিত করে এসব দেশসমুহ থেকে সম্পদ বিশ্ব ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। স্পষ্টত এটি এক্ট অগ্রহণযোগ্য অবস্থা এবং যা কিছু কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন করে যে ঠিক কতদিন পর্যন্ত ব্যাংক নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ঋণদানে নমনীয়তা প্রদর্শন করবে।
ব্যাংক এবং তার সদস্যসমূহ বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের IDA অন্তর্ভুক্ত “ The Soft Window”- প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দরিদ্রে দেশগুলোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এতে অস্থিরতার নতুন ধরনের কিছু উপাদান যুক্ত হয়েছে, কারণ প্রতিবছর IDA তার ঋণ শোধ করার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। এটি এমন একটি চর্চা যাকে বেষ্টন করে আছে নানা রাজনৈতিক সমস্যা এবং ফলশ্রুতিতে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অনিশ্চয়তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থনীতিতে। আমাদের অবশ্যই আরো সুনিশ্চিত এবং সমাধানের উজ্জ্বল পথ খুঁজে বের করতে হবে। যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে , বিশেষ অধিকার সংরক্ষন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ স্থাপন এ যাবতকালে একটি অন্যতম আশাপ্রদ উদ্যোগ। আন্তর্জাতিক আর্থিক /মুদ্রা ব্যবস্থার জন্য SDR সক্রিয়ভাবে যে ভুমিকা রেখেছে সেরূপ এটিও গৌরবের সাথে কাজ করবে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে। আমরা আশা করছি যে , দ্বিতীয় মেয়াদের SDR- এ সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্বেই এই বিষয়ে তহবিল বিষয়ক সকল আলোচনা সঠিক সময়ের মধ্যে সুচারুভাবে সম্পন্ন হবে।
আরেকটা নতুন সমস্যা সম্মুখে উঠে এসেছে যেহেতু বিশ্ব ব্যাংকের গ্রুপের গুরুত্ব এবং সম্মান ক্রমশ বাড়ছে যা এর সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও এর রাজনৈতিক পরিণতির মধ্যে বিরোধের সূচনা করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এই পৃথিবী একটি অশান্ত স্থান এবং আমরা যতোই এতে সমন্বয়ের মাধ্যমে শৃঙ্খলা আনতে চাইনা কেন, সেখানে অনিবার্যভাবে এমন কিছু সময় এবং পরিস্থিতি আসবে যখন মতপার্থক্য থাকবে। বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপ এই ধরনের সমস্যাবহুল কাঠামো নিয়ে যেভাবে কাজ করছে , এবং সেইসাথে তাদের কর্মপ্রক্রিয়াকে, অবশ্যই সতর্কতার সাথে যেকোন বিশ্বাস বা আস্থাভঙ্গের সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করতে হবে। সম্ভবত কর্মকর্তাদের প্রণীত সিদ্ধান্তের রাজনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে আরও সংবেদনশীলতা প্রয়োজন যারা শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়েই দক্ষতা থাকবে না, বরং প্রতিষ্ঠানের কর্মপদ্ধতি এবং ব্যবস্থাপনাকে যথাযথভাবে রক্ষা করাও তার উদ্দেশ্য থাকবে।। বোর্ডের উচ্চ-পদস্থ কর্মকর্তা তথা, সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী সদস্যসমূহের সাথে এবং আমাদের ইন্সটিটিউটের কর্মকর্তাদের মাঝে বিদ্যমান সম্পর্কের পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
আমরা আগ্রহের সাথে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সভাপতির ভাষণে শুনেছি যে তিনি বৃহত্তর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে উন্নয়ন নীতিমালার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। যদি উন্নয়নশীল দেশসমূহ এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় মনোযোগ না দেয় , তবে এই ধরনের বৃহত্তর কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যে ধরনের বাঁধার সম্মুখীন হতে হয় তা হলো, আভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক সম্পদ এবং সাংগঠনিক দক্ষতার অভাব। দেশীয় জনশক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অবকাঠামোগত সুযোগসুবিধা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে আভ্যন্তরীণ মূলধনের স্বল্পতা অন্যতম প্রধান কারণ। এটি সম্ভবত অস্বীকার করার উপায় নেই যে উন্নয়নশীল দেশসমূহ বৈদেশিক প্রযুক্তি এবং সহায়তার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল যা তাদের নিজস্ব সম্পদের বিলিবন্টনের সাথে সংগতিপূর্ন নয়। কারন, সাধারণত , বৈদেশিক সঞ্চয় মূলত প্রকল্প ঋণ থেকে পাওয়া যায়। তাছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ মূলত বেশ বিস্তৃত, যেখানে অন্তর্ভুক্তি ঘটেছে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের যার উৎপাদনকে আর্থিক মানদণ্ডে বিচার করা কঠিন। এই ধরণের ঋন প্রকল্পের কার্যক্রম একটি নির্দিস্ট কাঠামোতে ফেলা বেশ কঠিন। এই ধরনের সাধারণ খাত বা প্রকল্পে ঋণ সুবিধা প্রদান বিষয়ে ব্যাংক নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করছে এবং এর ব্যাংকের অর্থায়ন এবং প্রকল্পের উপাদান হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হতে উদ্ভুত সমস্যাসমূহ থেকে পরিত্রাণ উপায় পাওয়া যায় স্থানীয় মুদ্রার বিনিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশাবলীতে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো প্রকল্পের ঋণ সুবিধা প্রদান প্রসঙ্গে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা যা ব্যাপকহারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য শ্রমঘন বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে আরো দৃঢ় করবে । আমি সুপারিশ করবো যে , সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা মূল্যায়নের মাধ্যমে অর্জিত বিশাল সাফল্য এই নিশ্চয়তা দেয় যে, ব্যাঙ্ক কর্তৃক নিয়োজিত সম্পদসমূহ প্রকল্পের সাথে সম্পর্কিত না হলেও শ্রমবাজারে তা গুরত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এছাড়াও ঋণ প্রদান সংক্রান্ত শর্তসমূহ এবং ব্যাংকের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া পুনর্গঠন করা অতি-আবশ্যিক যার মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি হবে এবং উৎপাদনের আরও সুষম পরিবেশ তৈরি হবে। আমরা অনুমান করতে পারি যে উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য গৃহিত সুবিশাল উদ্যোগ প্রয়োগ সময়সাপেক্ষ এবং এর জন্য প্রয়োজন এ বিষয়ে সম্যক গবেষণা এবং এই ক্ষেত্রে অন্যান্যদের মতো ব্যাংক অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৫। ভারতের কাছে কড়া প্রতিবাদ: পাকিস্তানী জাহাজ হয়রানী | দৈনিক পাকিস্তান | ২ অক্টোবর ১৯৭১ |
ভারতের কাছে কড়া প্রতিবাদ: গভীর সাগরে পাকিস্তানী জাহাজ হয়রানী
ইসলামাবাদ, ১লা অক্টোবর, ( এ পি পি )। – গভীর সাগরে ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ কর্তৃক পাকিস্তানী জাহাজ হয়রানী হওয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ভারত সরকারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। ( ক ) ১৯৭১ সালের ১৫ ই আগষ্ট ১১-১৫ মিনিট থেকে ১২-৫০ মিনিটের মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানী বানিজ্যতরী ‘ওসেন এনার্জী’ কে দুটো ভারতীয় রণতরী অনুসরণ করেন।
ঐদিন ১২-৫০ মিনিট বাণিজ্যতরীটি ১৬ ডিগ্রি ৩৯ উত্তর ৮৬ ডিগ্রি ০৬ পূর্বে কোর্স ২০৬ ডিগ্রি গতিপথে অগ্রসর হচ্ছিল। জাহাজটির গতিবেগ ছিল ১৯,৫ নট।
( খ ) ১৯৭১ সালের ২০শে আগষ্ট সকাল ৯টা তিন মিনিটে পাকিস্তানী বানিজ্য তরী ‘সফিনা-ই আরব’ ১৯ ডিগ্রি ৩৩ উত্তর ৫৯ ডিগ্রি ৫৫ পূর্ব গতিপথে অগ্রসর হচ্ছিল। এই সময় ভারতীয় তিন রনতরী জাহাজটি ঘেরা ও করে। এগুলোর মধ্যে ভারতীয় নৌবাহিনী ‘বেটনা’ জাহাজটি চলে যাওয়ার আগে পাকিস্তানী ‘সফিনাই আরব’ জাহাজের বিপরীত দিক দিয়ে প্রায় দুশো গজের মধ্যে আগমন করেন।
ভারতীয় নৌবাহিনীর এই চরম উস্কানীমূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার ভারত সরকারের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। গভীর সাগরে স্বাধীনতা লঙ্ঘনের এই তৎপরতা ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে, অবিলম্বে তার ব্যবস্হা গ্রহণের জন্য পাকিস্তান ভারতের কাছে দাবী জানিয়েছে।
.
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৬। হিউম – মাহমুদ আলী বৈঠক | দৈনিক পাকিস্তান | ৩ অক্টোবর,১৯৭১ |
হিউম-মাহমুদ আলী বৈঠক
জাতিসংঘ, ২রা অক্টোবর (এ পি পি)। – জাতিসংঘ সাধারন পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলের নেতা জনাব মাহমুদ আলী শুক্রবার রাতে বৃটিশ পররাষ্টমন্ত্রী স্যার অ্যালেক ডগলাস হিউমের সাথে পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এপিপির বিশেষ সংবাদদাতা জনাব ইফতিখার আলী জানাচ্ছেন। সাধারন পরিষদের বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রদত্ত ভাষণে স্যার অ্যালেক ডগলাস হিউম পূর্ব পাকিস্তান প্রশ্নে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছেন।
তিনি ভারতে অবস্হানরত পাকিস্তানী উদ্বাস্ত্তদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনে একটি রাজনৈতিক সমাধানের দাবী বাদ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে যোগাযোগ রক্ষায় ক্ষেত্রে গেরিলা তৎপরতার বিপদ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন এবং সেখানে খাদ্য সরবাহের জন্য যোগাযোগ ব্যবস্হা গড়ে তোলার ব্যাপারে জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
.
.
শিরোনামঃ ৭৭। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনের সময়সূচীঃ পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের প্রেস নোট (৩ অক্টোবর)
সুত্রঃ মর্নিং নিউজ- করাচী
তারিখঃ ৪ অক্টোবর, ১৯৭১
.
পাকিস্তান নির্বাচন কমিশন কতৃক ইস্যুকৃত প্রেস নোট
৩ অক্টোবর , ১৯৭১
অযোগ্য ঘোষিত হবার ( একজন মৃত) কারণে ফাঁকা হয়ে যাওয়া পুর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ৮৮ আসনের উপনির্বাচন ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ এবং ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই বার্তা আজ (৩ অক্টোবর) ইসলামাবাদে সরকারিভাবে জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ নভেম্বর ১৯৭১, অফিস চলাকালীন সময়ে নির্বাচন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালনকারী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারগণ কতৃক মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হবে।
রিটার্নিং অফিসারগণ ২রা নভেম্বর মনোনয়ন পত্র যাচাই বাছাই করবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৭ নভেম্বর। এই আসনগুলোতে ভোটগ্রহণ শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং শেষ হবে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২।
কাঠামোগত আইনী আদেশ এর ১৯৭০ সংশোধনী অনুযায়ী প্রাদেশিক আসন ফাঁকা হবার চার মাসের ভিতরে উপনির্বাচনের ব্যাবস্থা করতে হবে, অর্থাৎ ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ এর আগে। এই আইনী চাহিদার প্রেক্ষিতে ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত চলমান উপনির্বাচনের সাথে ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এই উপনির্বাচন ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখের ভিতরে অনুষ্ঠিত হবে।
ভোট গ্রহণের জন্য কয়েকটি প্রদেশে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২য় দফা উপনির্বাচন আরম্ভ করা দরকার যাতে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া ১৯ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখের ভিতরে সমাপ্ত করা সম্ভবপর হয়।
কর্মপরিকল্পনা অনুসারেঃ
নির্বাচন কেন্দ্রের সংখ্যা ও নির্বাচনী এলাকা এবং নির্বাচনের তারিখ-
.
PE-৪ রংপুর-৪ ২৪/১২/১৯৭১
PE-৫ রংপুর-৫
PE-৬ রংপুর-৬ ২৯/১২/১৯৭১
PE-১২ রংপুর-১২ ৩১/১২/১৯৭১
PE-১৬ রংপুর-১৬ ০৩/০১/১৯৭২
PE-১৮ রংপুর-১৮
PE-১৯ রংপুর-১৯ ০৬/০১/১৯৭২
PE-২২ রংপুর-২২ ০৭/০১/১৯৭২
PE-৩৬ বগুড়া-৪ ২৫/১২/১৯৭১
PE-৩৭ বগুড়া-৫
PE-৪১ বগুড়া-৯ ১৯/১২/১৯৭১
PE-৩৯ বগুড়া-৭ ২২/১২/১৯৭১
PE-৪৪ রাজশাহী-৩ ২৯/১২/১৯৭১
PE-৪৮ রাজশাহী-৭ ০১/০১/১৯৭২
PE-৫৬ রাজশাহী-১৫
PE-৫৭ রাজশাহী-১৬ ২৪/১২/১৯৭১
PE-৬১ পাবনা-৩
PE-৬২ পাবনা-৪ ০১/০১/১৯৭২
PE-৬৫ পাবনা-৭ ২৯/১২/১৯৭১
PE-৬৮ পাবনা-১০ ২৫/১২/১৯৭১
PE-৯১ খুলনা-১
PE-৯২ খুলনা-২ ২২/১২/১৯৭১
PE-৯৫ খুলনা-৫ ০১/০১/১৯৭২
PE-৯৮ খুলনা-৮ ২৫/১২/১৯৭১
PE-১০৪ খুলনা-১৪ ২৯/১২/১৯৭১
PE-১০৯ পটুয়াখালী-৫ ২৩/১২/১৯৭১
PE-১১০ পটুয়াখালী-৬
PE-১১১ পটুয়াখালী-৭ ২৬/১২/১৯৭১
PE-১১৮ বাকেরগঞ্জ-৭ ২৯/১২/১৯৭১
PE-১২৬ বাকেরগঞ্জ-৬ ০ ১/০১/১৯৭২
PE-১২৯ বাকেরগঞ্জ-১৮ ২৪/১২/১৯৭১
PE-১৩১ টাঙ্গাইল-২ ২৩/১২/১৯৭১
PE-১৩৭ টাঙ্গাইল-৮ ২৬/১২/১৯৭১
PE-১৩৯ ময়মনসিংহ-১
PE-১৪০ ময়মনসিংহ-২
PE-১৪১ ময়মনসিংহ-৩ ০৭/০১/১৯৭২
PE-১৪৪ ময়মনসিংহ-৬
PE-১৪৫ ময়মনসিংহ-৭
PE-১৪৬ ময়মনসিংহ-৮ ০৫/০১/১৯৭২
PE-১৪৭ ময়মনসিংহ-৯
PE-১৪৮ ময়মনসিংহ-১০ ০৩/০১/১৯৭২
PE-১৪৯ ময়মনসিংহ-১১ ০১/০১/১৯৭২
PE-১৫২ ময়মনসিংহ-১৪
PE-১৫৩ ময়মনসিংহ-১৫ ৩০/১২/১৯৭১
PE-১৫৬ ময়মনসিংহ-১৮
PE-১৬৩ ময়মনসিংহ-২৫ ১৮/১২/১৯৭১
PE-১৬৪ ময়মনসিংহ-২৬ ১৫/১২/১৯৭১
PE-১৭৩ ঢাকা-১০ ০৪/০১/১৯৭২
PE-১৭৫ ঢাকা-৫
PE-১৭৬ ঢাকা-৬ ০৬/০১/১৯৭২
PE-১৮৮ ঢাকা-১৮ ২৯/১২/১৯৭১
PE-১৯৪ ঢাকা-২৪
PE-১৯৭ ঢাকা-২৭
PE-১৯৮ ঢাকা-২৮ ০২/০১/১৯৭২
PE-২০১ ফরিদপুর-১ ২৯/১২/১৯৭১
PE-২০৩ ফরিদপুর-৩
PE-২০৪ ফরিদপুর-৪ ৩১/১২/১৯৭১
PE-২০৯ ফরিদপুর-৯ ০৭/০১/১৯৭২
PE-২১৩ ফরিদপুর-১৩
PE-২১৪ ফরিদপুর-১৪
PE-২১৯ ফরিদপুর-১৯ ০৩/০১/১৯৭২
PE-২১৬ ফরিদপুর-১৬
PE-২১৭ ফরিদপুর-১৭
PE-২১৮ ফরিদপুর- ১৮ ০৫/০১/১৯৭২
PE-২২১ সিলেট-১
PE-২২২ সিলেট-২ ২৫/১২/১৯৭১
PE-২২৩ সিলেট-৪
PE-২২৪ সিলেট-৫ ২৯/১২/১৯৭১
PE-২৩১ সিলেট-১২
PE-২৩২ সিলেট-১৩ ৩১/১২/১৯৭১
PE-২৪৬ কুমিল্লা-৬
PE-২৪৭ কুমিল্লা-৭ ০৩/০১/১৯৭২
PE-২৫০ কুমিল্লা-১০
PE-২৫২ কুমিল্লা-১২ ৩০/১২/১৯৭১
PE-২৫৯ কুমিল্লা-১৯ ২৬/১২/১৯৭১
PE-২৬০ কুমিল্লা-২০
PE-২৬৩ কুমিল্লা-২৩ ২৫/১২/১৯৭১
PE-২৭৪ নোয়াখালী-৭ ২৯/১২/১৯৭১
PE-২৭৮ নোয়াখালী-১২
PE-২৭৯ নোয়াখালী-১৩ ২৫/১২/১৯৭১
PE-২৮১ চট্টগ্রাম- ১
PE-২৮৪ চট্টগ্রাম-৪ ২৬/১২/১৯৭১
PE-২৮৫ চট্টগ্রাম-৫ ২৩/১২/১৯৭১
PE-৬৯ পাবনা ১১ আসনে নির্বাচিত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে ফাঁকা হয়ে যাওয়া আসনের উপনির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন আজ সকালে নিম্নোক্ত ঘোষণা প্রদান করেছে।
১লা নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়ন দাখিল করা যাবে, মনোনয়নের সত্যতা যাচাই হবে ২রা নভেম্বর এবং মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ৭ নভেম্বর। ভোট অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ডিসেম্বর।
( মর্নিং নিউজ, করাচী- ৪ অক্টোবর, ১৯৭১ )
.
.
.
শিরোনামঃ ৭৮। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মাহমুদ আলীর আরেকটি বিবৃতি (অংশ)
সূত্রঃ – জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ – ৫ অক্টোবর, ১৯৭১
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মাহমুদ আলীর (পাকিস্তান) বিবৃতি
৫ অক্টোবর, ১৯৭১
দেশ ভাগের সময় পাকিস্তান পুরো আয়তনের মাত্র এক পঞ্চমাংশ পেয়েছিল এবং নানা দিক থেকে অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছিল। যদিও এটা আমাদের প্রতি অবিচার হয়েছে তারপরেও ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা আলাদা হয়েছে এটাকে আমরা পুরস্কার হিসেবেই মেনে নিচ্ছি। আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে যথসম্ভব সহযোগিতার কথা বিবেচনা করেছি। ১৯৪৭ এর বিভাজনের মূলনীতি ভঙ্গ করে ভারত যখন মুসলিম অধ্যুষিত জম্মু দখলের প্রয়াশে সেনাবাহিনী প্রেরণ করে তখন আমাদের স্বাধীনতার বয়স ২ মাসের বেশি না। পাকিস্তানের সাথে অনেক বিষয় নিয়েই আলোচনার দরকার, কিন্তু যখনই এরকম কোন আলোচনা শুরু হয় ভারত কৌশলে সত্য এড়িয়ে যায় এবং আসল বিষয় থেকে সরে যাওয়ার জন্য তালবাহানা শুরু করে।
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষের প্রধান দুইটি কারণ আমি উল্লেখ করেছি। এই সংঘর্ষ ছাড়া এবং পাকিস্তানকে দুর্বল ও ধ্বংস করে দেয়ার ব্যাপ্তিশীল ও চলমান ভারতীয় প্রচেষ্টা না থামলে বর্তমান ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব পারস্পরিক শান্তির বিরুদ্ধে অচিন্তনীয় হুমকি হিসেবে কাজ করবে। ভারতের নীতি কি পাকিস্তানের প্রতি ধ্বংসাত্মক ছিল না? প্রতিবেশি দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যার সুযোগ নেয়া কি অস্বাভাবিক ও বেমানান নয়? তারা কি আমাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে সতর্ক হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকবে না? আজকে আমার দেশ ও ভারতের সীমান্তে যা হচ্ছে তা শুধু নিছক সীমান্ত সংঘর্ষ নয়, এটা জাতিসংঘের একটি সদস্য ভারত কর্তৃক জাতিসংঘের অন্য আরেকটি সদস্য পাকিস্তানের ভিতরে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ।
গত কয়েক মাস ধরে ভারত পাকিস্তানের সাথে চোরাগুপ্তা যুদ্ধে লিপ্ত আছে এবং এখনও আছে। একটা সময় ছিল যখন পাকিস্তান সরকারের সামরিক অভিযান যে প্রকারেরই হোক না কেন তাতে ভারতের আক্রান্ত হবার কোন অনুমেয় কারণ বা ভয় ছিল না। তারা বিশাল সংখ্যার সৈন্য জড়ো করেছে, প্রায় ২০ লাখের মত, এছাড়াও আছে বিভিন্ন রকমের ধ্বংসাত্মক অস্ত্র যা পূর্ব ও পাশ্চিম পয়াকিস্তানের সীমান্তে জড়ো করা হচ্ছে। তারা নিয়মিত আমার দেশে সশস্ত্র সৈন্য প্রেরণ করে হত্যা ও ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। তারা আশ্রয় দেয়, প্রশিক্ষণ দেয়, আর্থিক ও সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করে, এবং একই রকমের আরও কিছু বাহিনীকে উৎসাহিত করে বিভিন্ন নাশকতামূলক কাজ করতে এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে। সংক্ষেপে বলা যায় ভারত আমার দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ না হবার একমাত্র কারণ পাকিস্তান সরকারের সর্বোচ্চ সংযম।
সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গুলি, মর্টার সেল ছুড়া সহ অন্যান্য রণলিপ্সু কার্যক্রম নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
আমি দুইটি শক্ত উদাহরণ পেশ করছি যাতে পরিষদের সবাই একটা ধারণা পায় বর্তমানে আমরা কি পরিস্থিতির মুখোমুখি।
ভারতীয় কামান থেকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সিলেট জেলার সীমান্তের নিকটবর্তী পাঁচটি গ্রামে প্রায় এক হাজার রাউন্ড গোলা বর্ষন করা হয়। কামানের গোলায় ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলো হল মানটালা, কমলাপুর, জয়পুর, আরামনগর এবং হারাশপুর। ১২ জন নারী ও ৮ জন শিশু সহ মোট ২৮ জন গ্রামবাসী এই হামলায় প্রাণ হারান। আহতের মধ্যে আরও আছে টেলিফোন বিভাগের কিছু কর্মচারী যারা একটা যোগাযোগ লাইনে মেরামতের কাজ করছিলেন। এটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে, টেলিযোগাযোগ লাইনগুলোই ভারতীয় আক্রমনের প্রধান লক্ষ্য। গোলা বর্ষনের পরে ভারতীয় সৈন্য এইসব এলাকায় অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। পাকিস্তান সেনা অভিযান চালিয়ে ঐ এলাকা থেকে ৩ টি হালকা মেশিনগান, ১৪৫ বাক্স গোলাবারুদ, ১০০ টি স্টিলের হেলমেট, ৪০ টি মাইন, কিছু বেতার যন্ত্র এবং ৩৮৭ টি গ্রেনেড উদ্ধার করেছে।
পাকিস্তানে খাদ্যশস্য প্রবেশের পথগুলোতে বাঁধা তৈরি এবং ধ্বংসে উৎসাহ দেয়ার মাধ্যমে ভারত পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ তৈরির চেষ্টা করছে। চালনা বন্দরে খাদ্যবাহী আমেরিকান জাহাজ লাইটনিং এর উপরে হামলাকারী অন্তর্ঘাতকদের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে অভিযান চালানো হয়েছে। পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ টের পেয়েছে যে ডুবুরিরা ভারতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এবং তাদের উদ্দেশ্য ছিল চালনা ও চট্টগ্রাম বন্দরে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য খাদ্য নিয়ে আশা জাহাজগুলো ডুবিয়ে দেয়া। ডুবুরিদের ভারত থেকে লিমপেট মাইন (পানির নিচেও আঠার মত লেগে থাকে) দেয়া হয়েছিল এবং সেগুলো ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছিল। খাদ্যবাহী জাহাজে এরকম নাশকতা চালানোর মাধ্যমে ভারত পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিতে চায় যাতে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি হয়। যদি আন্তর্জাতিক মহল আসলেই পূর্ব পাকিস্তানের সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের ব্যাপারে জেনে থাকেন তাহলে তাদের কর্তব্য হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে কৃত্রিম খাদ্য সংকট তৈরিতে ভারতকে বাঁধা দেয়া, তাদের কর্তব্য হচ্ছে ভারতকে এমন সব কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখা যা থামিয়ে না রাখলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অস্তিত্বের সংকটে পরবে।
এটা এখন বিশ্ব সম্প্রদায়ের বিশেষ করে জাতিসংঘের দায়িত্ব আরেকটি যুদ্ধ প্রতিহত করা যার ফলাফল দক্ষিন এশিয়ার জন্য ভয়াবহ হতে পারে।
গত ২০ জুলাই মহাসচিব উ থান্ট উপমহাদেশে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল অবস্থার দিকে আলোকপাত করে নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেছেন। মহাসচিব আরও উল্লেখ করেনএই এলাকার সার্বিক অবস্থা আস্তে আস্তে আরও অবনতির দিকে এগুচ্ছে। তিনি বলেন, “ বর্তমান সংকটপূর্ণ অবস্থার উৎপত্তি ছয় বছর আগে, যখন দীর্ঘকালীন সমস্যা ও বৈরিতা অমীমাংসিত ও অসম্পন্ন অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।”
সীমান্তের আসল অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, “বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তের অবস্থা বেশি গোলমেলে। সীমান্ত সংঘর্ষ, চোরাপুপ্তা হামলা ও অন্যান্য নাশকতামূলক কাজ খুব পরিচিত দৃশ্য হয়ে যাচ্ছে”।
তিনি এই অঞ্চল তথা বৈশ্বিক শান্তির প্রতি হুমকির দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “জাতিসংঘের কেউই ভুলতে পারবে না যে উপমহাদেশের অন্যতম এই সংঘাত সবার মাঝেই ছড়িয়ে পরতে পারে”।
উ থান্ট সংক্ষেপে এই অবস্থাকে বৈশ্বিক শান্তির প্রতি হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন এবং নিরাপত্তা পরিষদকে এই অবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সর্বসম্মতিতে একটি বাস্তবায়নযোগ্য সিদ্ধান্তে আসার নির্দেশ দেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমি আমার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছিলাম যে আমার সরকার নিরাপত্তা পরিষদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করতে প্রস্তুত এবং দুই দেশের মধ্যে অবস্থার উন্নয়নের উদ্দ্যেশ্যে পরিষদের এই প্রচেষ্টাকে তারা স্বাগত জানান। আমি সেই প্রস্তুত থাকার বিষয়টি এখানে পুনরাবৃত্তি করছি।
ভারত অবশ্যই এটাকে ভিন্ন ভাবে দেখছে। তাদের সরকার বুঝানোর চেষ্টা করছে যে এটা ভারত-পাকিস্তানের সমস্যা নয়। তাদের মতে যা হয়েছে সবকিছুই পাকিস্তানের কারণে হয়েছে এবং ভারত সেসকল কর্মকান্ডের শিকার মাত্র যারা অসংখ্য এবং ক্রমবর্ধমান উদ্বাস্তুর বোঝা মাথায় নিয়ে ক্লান্ত। কিন্তু আসল সত্যটা কি? আমাদের ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপ একদম স্পষ্ট এবং সেগুলো আমি আগেই উল্লেখ করেছি।
গত কয়েক মাসে দুনিয়া পূর্ব পাকিস্তান সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে যার বেশির ভাগই বলা হয়েছে বাইরের মানুষ দ্বারা। তাদের সবার বক্তব্য বাস্তবতার সাথে ক্ষাপ খায় না। তাদের মধ্যে অনেকেই অহংকারী মনোভাব বজায় রাখে ও প্রকাশ করে। কিন্তু আমি যদি ব্যক্তিগত ভাবে ভাবি, তাহলে আমি এসেছি পূর্ব পাকিস্তান থেকে। আমি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মত না। ভুয়া বিবৃতি ও সমালোচনা আমার সাজে না। এই অধিবেশনের পরে আমি পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যাব। আমার বাঁচতে হবে, সহ্য করতে হবে, সংগ্রাম করতে হবে এবং আমার জনগণের মাঝেই থাকতে হবে। পূর্ব পাকিস্তানের অসহয় জনগণের জন্য যদি কোথাওনোংরা রাজনীতির থাবা মুক্ত মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে থাকে তাহলে তাকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই। একই সাথে আমি দুঃখ প্রকাশ করে বলতে চাই, আমার জন্মভূমিকে পৃথিবীর সামনে বিকৃত করা হয়েছে। সব কিছু ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, এমন ভাবে বলা হচ্ছে যেন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে একটি পূর্ব পাকিস্তানি কণ্ঠ জেগে উঠতে দেয়া হোক, যাতে করে বিশ্ব বুঝতে পারে যে এই দুই দেশের বন্ধন এত সহজে ছিন্ন করা যাবে না এবং এরা একত্রিত হয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় দেশ গঠনের দিকে এগুচ্ছে। এটা সত্যি যে আমাদের মাঝে আঞ্চলিক সামঞ্জস্য কম এবং সম্পদের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য ন্যায় বিচার করা হবে। কোন দেশ, কোন বহুজাতিক বা বহুভাষিক রাষ্ট্রে এরকম সমস্যা নেই? এসব সমস্যাকে অন্যান্য গুলোর থেকে প্রাধান্য দেয়ার দরকার নেই। পাকিস্তানে আমরা একটা বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমরা চরম দুর্দশা মোকাবিলা করেছি। আমরা একটা অগ্নিপরীক্ষা পার করে এসেছি। কিন্তু এত কিছুর ভিতরেও আমরা বুঝতে পেরেছি যে বিভাজন ও রাষ্ট্রসত্ত্বার ভাঙন, সর্বোপরি আমাদের একাত্মতার সমাপ্তি আমাদের জন্য কোন সুবিধাজনক কিছু না বরং অন্যদের জন্য।
আমাদের জন্য আসলেই এটা দুর্ভাগ্যজনক যে এই অবস্থা একটা সহিংস পরিস্থিতির জম্ন দিয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় অস্তিত্ব ও ভারতের সাথে সম্পর্কের দিকগুলো মাথায় না রাখলে এরকম পরিস্থিতি সৃষ্টির কারণগুলো বুঝা যাবেনা। পূর্ব পাকিস্তানের সমান অধিকারের দাবিকে দমিয়ে রাখার ফলেই এই আন্দোলন হচ্ছে এরকম ভাবা আসলেই অনেক সহজ। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ স্বাধীনতার থেকে কোন দিক থেকে পিছিয়ে আছে যেখানে তারাই সংখ্যাগুরু এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে? ভুল গুলোকে সঠিক করার বা ভারসাম্য ঠিক রাখার ক্ষমতাসংখ্যাগুরুদের থাকে বা তারা আদায় করে নিতে পারে। সংখ্যাগুরুরা অপসৃত হতে চায় এটা একরকম অবিশ্বাস্য কথা। বইয়ের ভাষায় মতে অপসৃতদের চাহিদা মানে হচ্ছে সংখ্যালঘুদের চাহিদা। আমি আবারও বলছি, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সংখ্যালঘু বা কোন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নয় এবং এটা থেকে বুঝা যায় তাদের মাঝে থাকা কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী আসলে স্বাধীন জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনা। যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী তারা স্বঘোষিত সংখ্যালঘু। তাদের অবস্থানই বলে দেয় তারা সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। এই বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে নেতৃত্বের ব্যার্থতা বা বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্র যা দেশের সংহতিকে নষ্ট করে দিতে চায়। পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ক্ষেত্রে দুই কারনই সমান দায়ী।
ভারত ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে আন্দোলনের পরিধি অবিলম্বে আরও বাড়বে। পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর যেসব অংশ নদী, পাহাড়, বোন বা জলাভূমি দ্বারা ঘেরা সেসব অংশ দিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরেই এলাকাগুলোতে যুদ্ধ সরঞ্জাম জড়ো করছে এবং সেটা সীমিত সংখ্যক পাকিস্তানি সৈন্য দ্বারা ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। অবস্থা যখন সংকটাপন্ন তখন ভারত তার উপর দিয়ে বিমান চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মাঝে বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা এমনটা করেছে একটি ভারতীয় বিমান অপহরণ করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়ার প্রতিহিংসায়। কিন্তু বিচারকদের রায়ে এটা প্রমাণিত যে এই অপহরণের ঘটনা ছিল ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর মস্তিষ্ক প্রসূত যাতে তারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা অবৈধ ও ভারতের আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির পরিপন্থি। এরপরেও, এমনকি মিটমাটের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ভারত এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে অপরাগ। যখন এই সংকট বিরাট আকার ধারন করছে এবং পাকিস্তান কঠিন পরীক্ষার ভিতর দিয়ে যাচ্ছে তখন ভারত আমাদের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সীমান্তে সৈন্য জড়ো করেছে।
দেশে বিদ্রোহ ও বাইরের হুমকির মুখে দেশকে নৈরাজ্য, বিভাজন ও ভারতীয় আধিপত্য থেকে রক্ষা করতে পাকিস্তান সরকারের সামনে আর কোন পথ খোলা ছিল না। এই সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কাছে আমার প্রশ্ন, অন্যান্য আইনি সরকার এই অবস্থায় কি করত?
পূর্ব পাকিস্তানে আমরা যে ধরণের দ্বন্দ্ব সহ্য করেছি তা আসলেই দুঃখজনক। কিন্তু পুরো বিশ্ব এখনও সঠিকভাবে জানেনা এই অবস্থা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে এবং বৈদেশিক হস্তক্ষেপের কারণে তা কিভাবে আরও কঠিন রূপ নিয়েছে। যদি উদ্বাস্তু মানুষগুলোর প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতি একটুও মানবিক হত তবে তারা নিশ্চিতভাবেই অন্য পন্থা অবলম্বন করত। উদ্বাস্তুদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পাকিস্তান সরকারের আবেদনকে তার পৌছে দিতে পারত। উদ্দেশ্য সাধনের আমাদের ও জাতিসংঘের সম্মিলিত চেষ্টায় সাথে যা সহযোগিতামূলক হত। যা পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশের সাথে আলোচনার পথ খুলে দিত। এখন এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে ক্ষমতার রাজনীতি না থাকলে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে তাদের নিজ আবাসে ফিরে যেতে দেয়ার দাবি জানাত।
একটানা প্রচারণা ও কর্মের দ্বারা ভারত বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা এই উদ্বাস্তু মানুষগুলোকে তাদের দেশে নিজ আবাসে ফিরতে দিতে চায় না, এই মুহূর্তে সব থেকে দুঃখের বিষয় এটাই। সীমান্ত সংঘাত তৈরি, কামান থেকে গোলা বর্ষণ করে আমাদের দেশীয় জনগণকে সীমান্ত অতিক্রম করতে দিচ্ছে না। তারা সীমান্তের নিকটবর্তী এলাকায় তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের নাম করে বিচ্ছিন্নতাবাদী তৈরি করে তাদের ব্যবহার করছে।
এটাই হল ভারত সরকারের কূটনীতি যা এখন পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরিয়ে আনার সকল চেষ্টাকে ব্যার্থ করে দিয়েছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার এবং তার প্রতিনিধি দলের সম্মতি, পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি কতৃক বার বার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা, শরণার্থীদের পুনর্বাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সহ এমন বিবিধ কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করেছি আমরা আমাদের দেশীয় জনতাকে ফিরিয়ে আনতে উদ্বিগ্ন। গত ১৯ জুলাই মহাসচিব উ থান্ট ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশকেই প্রস্তাব করেন সীমান্তের দুই পাশেই সীমিত সংখ্যক U.N.H.C.R.প্রতিনিধিউপস্থিতথাকবেন।আমরা কোন সংকোচ ছাড়াই এ প্রস্তাবে সম্মতি জানাই, যদিও ভারত তা প্রত্যাখ্যান করে।
উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরতে না দেয়ার পিছনে ভারত লোকদেখানো যে কারণ দেখায় তা হল দেশের পরিস্থিতি তাদের ফিরে যাওয়ার মত নিরাপদ না। প্রথমত, ভারত নিজেরাই পরিস্থিতি অনিরাপদ করে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, এই অধিবেশনে দেয়া ভাষণে সম্মানিত ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর মতে“নিরাপদ পরিস্থিতি” বলতে ভারত আসলে যা বুঝাতে চায় তা একটি জটিল রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য নেতারা প্রকাশ্যেই বলেছেন যে শুধুমাত্র বাংলাদেশ রাষ্ট্র তৈরি হলেই তারা উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরতে দেবেন। যা অন্য ভাবে বললে যখন পূর্ব পাকিস্তান আলাদা হয়ে যাবে এবং ভারতীয় আধিপত্য মেনে নেবে।
এক দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের এর থেকে ভয়ানক উদাহরণ আর কি হতে পারে? মাত্রই গত বছর ভারত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি বিষয়ক ঘোষণায় যোগ দিয়েছিল যেখানে সবাই সর্বসম্মতিক্রমে শপথ নিয়েছিল এবং জাতিসংঘ দলিল উদ্দেশ্য ও নীতির নিঃশর্ত বৈধতা পেয়েছিল। যার মধ্যে জাতিগত সম্পর্ক, আকার, ভৌগলিক অবস্থান, উন্নয়নের ধারা, রাজনৈতিক, সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবস্থা যেরকমই হোক, অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিও ছিল। এবং আরও বলা ছিল এই নীতিমালার লঙ্ঘন কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া হবে না।
ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি শুধু পাকিস্তানের একার জন্য চিন্তার বিষয় নয়, নিজস্ব সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ইচ্ছুক যেকোনো রাষ্ট্রের জন্যই চিন্তার বিষয়। যদি হস্তক্ষেপ নীতি একপেশে বা আপোষ করা হয় তবে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের তুলনায় দুর্বল বা ছোট যেকোনো রাষ্ট্র বড় ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের আক্রমনের শিকার হবে। আমি এই অধিবেশনে আবেদন জানাচ্ছি যাতে ভারতকে এই হস্তক্ষেপমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত রাখতে ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হোক। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা ভারতের দখলদারি মনোভাব প্রতিহত করা ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমাধানের ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর, যা আমাদের টিকে থাকার জন্য আবশ্যক।
ভারত যাতে মনে না করতে পারে তারা উপমহাদেশে আর কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনি। ভারত চেষ্টা করেছিল নাগা-দের ক্রীতদাস করতে। যারা ছিল এই উপমহাদেশের অভারতীয় অধিবাসী এবং জন্ম থেকেই তারা ভারত শাসনের সুদীর্ঘ সময়ে তাদের উপরে চালানো অনুচ্চারিত কষ্ট তারা বয়ে বেড়াচ্ছে। ভারতের নিজস্ব ভূমিতে এমন অনেক ঘটনা আছে যা সরাসরি ক্ষুদ্র ভাষাগত ও জাতিগত ভাবে আলাদা জাতিগোষ্ঠীকে শোষণ ও নিপীড়নের ফলাফল;যেমন দ্রাবিড়, শিখ এবং বাঙ্গালি। কিন্তু আমরা এগুলোকে ভারতের নিজস্ব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কারণ হিসেবে ব্যবহার করিনি। আমরা শুধু আশা করছি, ভারত বুঝবে এই নৈরাজ্য ও বিভাজন শুধু আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে না, তাদের জন্যও আনবে।
যদি আমি সংক্ষেপে বলি, ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি দুই দেশের শান্তির জন্য স্পষ্ট হুমকি যা খুব দ্রুত নিরসন করা দরকার, যদি এই দুই দেশের জনগণ স্বাধীনভাবে উন্নত জীবন যাপন করতে চায়। আমরা ভারতের জনগণকে আমাদের শত্রু ভাবি না। আসলে আমরা মনেকরি,পাকিস্তানের প্রতি তাদের কঠোর ও লাগাতার শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব প্রকাশের দ্বারা দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে উত্তেজনা স্থায়ী করার মাধ্যমে ভারত সরকার তার নিজের জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। আমরা আশা করি ভারত সরকার বুঝবে দক্ষিন এশিয়ার শান্তি নিশ্চিত করার জন্য শক্তিশালী পাকিস্তানের আবশ্যকতা কতখানি। একইভাবে, আমরা আশা করবো বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত শক্তিরা পাকিস্তানকে দুর্বল ও আলাদা করে দেয়ার অপচেষ্টা প্রতিহত করে এই অঞ্চলে স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে এনে শান্তির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৯। রজার্স-মাহমুদ আলী বৈঠক | দৈনিক পাকিস্তান | ৯ অক্টোবর, ১৯৭১ |
রজার্স-মাহমুদ আলী বৈঠক
ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শান্তির পক্ষে হুমকি
ভারতকে নিবৃত্ত করার আহবান
জাতিসংঘ, ৮ই অক্টোবর ( এ পি পি )। – সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা জনাব মাহমুদ আলী গতকাল সন্ধ্যায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম রজার্স-এর সাথে পাক-ভারত উপমহাদেশের বিস্ফোরণোম্মুখ পরিস্হিতি সম্পর্কে ৪৫ মিনিট ধরে আলাপ আলোচনা করেন। পাকিস্তানী সূত্রে প্রকাশ, জনাব মাহমুদ আলী মার্কিন নেতাকে বলেছেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের সশস্ত্র হস্তক্ষেপ শান্তির পক্ষে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং ভারতকে ঠেকানো না গেলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে।
ভারতকে হস্তক্ষেপের পথ থেকে বিরত করা আন্তর্জাতিক জাতিপুঞ্জের কর্তব্য। পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক গোলযোগের সময় প্রায় ২০ লাখ লোক পাকিস্তান নাগরিক ভারতে চলে গেছে।
সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে ইচ্ছুক এবং এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়েছে উদ্বাস্তুদের ফেরার সুযোগ-সুবিধার জন্য জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগে পাকিস্তান রাজী আছে। কিন্তু ভারত রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য এতে রাজী হচ্ছে না।
আন্তরিক পরিবেশে অনুষ্টিত এই আলোচনায় জনাব মাহমুদ আলীকে সাহায্য করেন অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব, মমতাজ এ আলভী, জাতিসংঘে পাকিস্তানী দুত জনাব আগাশাহী ও যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত আগা হেলালী।
অপর এক খবরে প্রকাশ, পাকিস্তান গতকাল সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটিতে (অর্থনৈতিক ও সামাজিক) বলেছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক যোগাযোগের সময় ভারতে গমনকারী পাকিস্তান নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে পাকিস্তান ইচ্ছুক। পাকিস্তানী উদ্বাস্তুদের দু:খ দুর্দশা মোচনের জন্য তার সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন।
.
.
শিরোনামঃ ৮০। রাজনৈতিক তৎপরতা সম্পর্কিত ৯৪ নং সামরিক বিধি জারী
সূত্রঃ পাকিস্তান টাইমস
তারিখঃ ১০ অক্টোবর, ১৯৭১
রাজনৈতিক তৎপরতা সম্পর্কিত ৯৪ নং সামরিক বিধি জারী
১) এই বিধি ১০ ই অক্টোবর, ১৯৭১ থেকে কার্যকর হবে এবং সে সময়ে জারীকৃত সকল আইনের পাশাপাশি কোন রকম খর্বতা ছাড়াই এটা বলবৎ থাকবে।
২) এই আইনে, যদি না এই বিষয় ও প্রসঙ্গের কোন ব্যাতিক্রম থাকে, ‘রাজনৈতিক দল’ বলতে বুঝানো হচ্ছে কোন দল অথবা ব্যাক্তি সমষ্টিকে যারা কোন ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে বৈধতা দেয়ার জন্যে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের কাজে লিপ্ত থাকে।
৩) কোন রাজনৈতিক দল কিংবা ব্যাক্তি পাকিস্তানের মতাদর্শ কিংবা অখন্ডতা কিংবা নিরাপত্তার জন্যে ক্ষতিকর কিংবা Legal Framework Order, 1970 (PO, No. 2 of 1970) এর ২০ নং অনুচ্ছেদে ঘোষিত নীতিমালার পরিপন্থী কোন মত প্রচার কিংবা কাজ করতে পারবে না।
৪) রাজনৈতিক কর্মকান্ডের প্রক্রিয়ায় কোন রাজনৈতিক দল বা ব্যাক্তি নিম্নোক্ত কাজ করতে পারবেন না – (ক) কোন মতের সমর্থন আদায় কিংবা প্রচারের জন্য বলপ্রয়োগ, সহিংসতা, ভীতিপ্রদর্শন কিংবা আঘাতের হুমকি কিংবা আর্থিক লাভের প্রস্তাব দেয়া, (খ) যে কোন উপায়ে কোন ব্যাক্তি বা সম্পদের আঘাত বা ক্ষতি সাধন করা, (গ) সরকারী সেবা, কর্পোরেশন অথবা আইনের অধীন ও নিয়ন্ত্রিত কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডে কিংবা কর্তব্যপালনে বাধাপ্রদান, (ঘ) আইনের অধীন কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা কর্পোরেশনে কর্মরত ব্যাক্তি অথবা কোন সরকারী চাকুরেকে তার আনুগত্য কিংবা দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত কিংবা বিচ্যুত করার চেষ্টা করা, (ঙ) শিক্ষা প্রতিষ্টানের কর্মকান্ডে কোনভাবে হস্তক্ষেপ কিংবা ব্যাহত করা, (চ) পত্রিকার অফিস সহ সংবাদমাধ্যমের যে কোন শাখাকে সরাসরি চাপ প্রয়োগ কিংবা মত তুলে ধরতে বাধাপ্রদানে বাধ্য করা, (ছ) অন্যান্য রাজনৈতিক দল কিংবা এর সদস্যদের সুষ্ঠু ও শালীন সমালোচনার সীমা লঙ্গন করা কিংবা যে কোন উপায়ে ইহাতে বাধা প্রদান করা, (জ) জাতীয় পরিষদের কিংবা প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনে যে কোন ভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, কিংবা বিঘ্ন করা কিংবা এর বিরুদ্ধে প্রচার করা।
৫) (ক) ডেপুটি কমিশনার কিংবা তার অনুমোদিত অফিসারের কাজের সুবিধার্থে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির সঙ্ঘর্ষ এড়িয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে পরপর জনসভা ও রাজনৈতিক মিছিলের সুযোগ দিতে প্রত্যেক ব্যাক্তি যিনি কোনধরনের সভা কিংবা মিছিল বের করতে আগ্রহী, তারিখ, সময় এবং সভার স্থান ও মিছিলের জন্যে ব্যাবহৃত রুটের উল্লেখ সহ মিছিলের যৌক্তিক কারণ সমূহ লিখিতভাবে ডেপুটি কমিশনার কিংবা তার অনুমোদিত অফিসারের নিকট জমা দিতে হবে। (খ)যদি ডেপুটি কমিশনার অথবা পূর্বে বর্ণনুযায়ী তার অনুমোদিত কোন অফিসার উপ –অধ্যায় (১) এর অধীনে একই স্থানে একই তারিখে একের অধিক সভা ও মিছিলের নোটিশ পেয়ে থাকেন, তাহলে দলগুলোর সাথে আলোচনাসাপেক্ষে প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে কর্মসূচি আয়োজন করতে পারেন যেন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির সঙ্ঘর্ষ ও পরপর আয়োজনের অসুবিধা এড়ানো যায়। (গ) কোন ধরনের জনসভা এবং রাজনৈতিক মিছিল উপ –অধ্যায় (১)এর নোটিশ এবং উপ – অধ্যায় (২) এর অধীনে আয়োজন ব্যাথিত করা যাবে না; এছাড়া নিয়মানুযায়ী আয়োজন করা যাবে।
৬. কোন ব্যক্তি কোন জনসমাবেশ বা রাজনৈতিক মিছিলে কোন ধরনের অস্ত্র বা এমন কোন যন্ত্র বহন করতে পারবে না যা দ্বারা অন্যকে আঘাত করা সম্ভব, এর ব্যত্যয় ঘটিলে তার বুরুদ্ধে অস্ত্র বহনকারী হিসেবে আইন জারি হবে।
৭. কোন ব্যক্তি কোন জনসমাবেশে কথা বলার সময়
(ক) কোন ধরণের রাষ্ট্রদ্রোহমূলক আচরণ বা ভঙ্গী
(খ) বক্তব্য যা বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠীর মাঝে কোন অসন্তুষ্টি কিংবা ঘৃনাবোধ তৈরি
(গ) কোন বক্তব্য বা বিবৃতি যা মানুষকে উত্তেজিত করে সহিংসতা ছড়ায়
(ঘ) কোন ব্যক্তি কোন মিছিল বা জনসমাবেশ কোন আপত্তিকর স্লোগান বা পোষ্টার বহন করলে তা অনুচ্ছেদ ৮ এর ক এবং খ এর আওতাধীন হবে।
৮. কোন ব্যাক্তি কোন জনসমাবেশে কোন রাজনৈতিক মিছিলে কোন পোষ্টার বা স্লোগান দিলে তা
(ক) বিভিন্ন জাতি, ধর্ম বা গোষ্ঠীর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি অথবা
(খ) মানুষের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি করে জনসাধারণের জান মালের ধ্বংসকারী হিসেবে বিবেচ্য হবে।
৯. কোন ব্যাক্তি কোনভাবেই কোন ব্যাক্তির রাজনৈতিক মিছিল বা সমাবেশে বাধা বিপত্তি তৈরি করতে পারবে না।
১০. কোন ব্যাক্তি তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড বা মতাদর্শ প্রকাশ করতে পারবে না <১> যদি সে কোন কারণে সাজা ভোগ করে থাকে যতদিন না সে তার পাঁচ বছর পূর্ণ না করে থাকে তার ফৌজদারি অপরাধ থেকে মুক্তি পায়। <২> পাকিস্তান পাবলিক কমিশনের আওতাধীন চাকুরীরত কোন ব্যক্তি তার অবসর গ্রহণের ৩ বছর পূর্ণ না হওয়া অবধি সেও কোন ধরণের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হতে পারবে না।
১১. মার্শাল ‘ল’ আইন ৭৬ বাতিল করা হল যা প্রধান মার্শাল ‘ল’ প্রশাসক দ্বারা প্রণয়ন করা হয়েছিল।
১২. এই সংবিধান লংঘনকারী যেই হোক না কেন তাকে কঠোর কারা দন্ড ভোগ করতে হবে যা তিন বছর মেয়াদ পর্যন্ত অথবা অর্থদন্ড বা উভয়ই।
[ পাকিস্তান টাইমস, লাহোর – অক্টোবর ১০, ১৯৭১ ]
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮১। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতার ও টেলিভিশন বক্তৃতা ( অধিবেশন আহ্বান, ক্ষমতা হস্তান্তর ও ভারতীয় হামলা ) |
জাতিসংঘের পাকিস্তান মিশনের তথ্য কেন্দ্রের দলিল | ১২ অক্টোবর, ১৯৭১ |
পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ২৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে বৈঠক
নতুন কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে গঠন করা উচিত
পরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অভিযোগ করেন ভারতের অগ্রগতিশীল সেনা ও বিমানবাহিনী ইউনিট সব পূর্ব পাকিস্তান ঘিরে রেখেছে
ইসলামাবাদ, ১২ অক্টোবর ১৯৭১:প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, রেডিও এবং টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এ আজ জাতির উদ্দেশে একটি ভাষণে বলেন, যে পাকিস্তানের নতুন সংবিধান ২০ ডিসেম্বর তারিখে প্রকাশ করা হবে। ৯০ দিনের জাতীয় পরিষদ দ্বারা এই সংবিধানের সংশোধনী একটি বিশেষ সহজ কার্যপ্রণালী দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পর শুরু হবে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বললেন, ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ২ডিসেম্বর তারিখে জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন পর গঠন করা হবে।
নিম্নলিখিত বিবৃতি পাঠ করা হয়:
“আমি আমাদের সব থেকে উদ্বেগের ব্যাপার আজ উল্লেখ করছি। আপনারা অবগত আছেন যে, বিরুদ্ধ বাহিনী যা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা ও তার অস্তিত্ব স্বীকার না এবং ক্রমাগত আমাদের দুর্বল করতে এবং পরিণামে এই দেশ ধ্বংস করতে উন্মুখ হয়ে আছে। গত ২৪ বছর ধরে সৌহার্দ্য ও বন্ধুত্বের প্রতি আমাদের আন্তরিক চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও আমি দু:খের সাথেবলছি ভারত পাকিস্তানের ক্ষতি করার কোন সুযোগ মিস কখনও করেনি। আমাদের দিকে তার প্রতিকূল নকশা দিয়েযে সংখ্যায় যে সমস্ত কর্ম গ্রহণ এবং আমাদের বিরুদ্ধে নেওয়া অব্যাহত রেখেছে তা থেকে এটিস্পষ্ট হয়েছে।
জোরকরে কাশ্মীর দখল, ১৯৬৫সালে পাকিস্তানের ওপর আক্রমণ এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ক্ষতির কারণ হবে বলা সত্ত্বেও ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণআমাদের দুর্বল করার এবং প্রত্যেক সম্ভাব্য উপায়ে আমাদের ক্ষতি করতে ভারতের প্রচেষ্টার প্রধান কিছু উদাহরণ। পাকিস্তানে প্রতি তাদের বৈরী আচরণের অসংখ্য দৃষ্টান্ত আছে।
ভারতের সর্বশেষ পাকিস্তান ভাঙ্গার প্রচেষ্টা সম্পর্কে আপনারা ভালভাবে পরিচিত। তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ ও অর্থ দিয়ে দুর্বৃত্তদের সহযোগিতা এবং অনুপ্রবেশকারীদের পাঠিয়েদেশপ্রেমিক পূর্ব পাকিস্তানীদের জীবন ও সম্পত্তি ক্ষতিসাধন করেদেশের বাকি অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানবিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে। তারা গোলাবর্ষন করেছে এবং ঐ অংশের বেশ কয়েকটি এলাকায় আর্টিলারি ও মর্টার দিয়ে গোলাবর্ষন অব্যাহত রেখেছে। বিশ্ব ধীরে ধীরে জানতে পারছে যে পূর্ব পাকিস্তানে সেতু উড়িয়ে দেয়া এবং যোগাযোগ ব্যাহত করার মত সব ধরনের নাশকতা কার্যক্রম বিচ্ছিন্নতাবাদী নামে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে । ভারত কর্তৃক সামরিক এবং স্যাবোটাজ প্রশিক্ষণ এবং প্রেরণের মাধ্যমে পূর্ব শাখার মধ্যে এবং আমাদের বন্দরে প্রায় খাদ্য-জাহাজ ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু আমাদের সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা তা মোকাবিলা করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে দুর্ভিক্ষ তৈরী এবং মানুষকে না খাইয়ে রাখা ছাড়া ভারতের অন্য কোন উদ্দেশ্য নাই। সুতরাং আমাদের পূর্ব শাখার লোকদের জন্য সমবেদনা তাদের দাবির জন্য অনেক।
এই প্রতিকূল কার্যক্রম ছাড়াও ভারতের পদাতিক, বর্ম এবং কামান সব পূর্ব পাকিস্তানের সীমানায় সরানো হয়েছে। একইভাবে ভারতীয় বিমানবাহিনী ইউনিট যেখান থেকে সরাসরি হুমকি হতে পারে ঐখানে অবস্থান নিয়েছে। পশ্চিম দিকেও, ইউনিট এবং ফরমেশনগুলোর বড় সংখ্যক তাদের শান্তি স্টেশন থেকে স্থানান্তরিত এবং আমাদের সীমানা দিকে এগিয়ে আনা হয়েছে। এই সকল সামরিক কার্যক্রম হতে এটা অনুমান করা যায় যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের ভয়াবহ আগ্রাসনের সম্ভাবনা রয়েছে। এই অসুস্থ সামরিক প্রস্তুতির কিন্তু একটাই উপসংহার হতে পারে, তারা তড়িঘড়ি করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করতে পারে।
ভারতের প্রতিকূল আচরণ সম্বন্ধে যা বর্ননা করেছি এখানে কোন অযৌক্তিক এলার্ম নাই কারণ জাতিকে অবশ্যই দেশের সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে হবে।
তবে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, এই দেশের উভয় অংশের বিরুদ্ধে ভারতের আগ্রাসনের ব্যাপারে সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী পুরোপুরি জাগ্রত ও সচেতন রয়েছে। আপনাদের সাহসী সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের পবিত্র মাটির প্রতিটি ইঞ্চি রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত। আল্লাহর সাহায্যে বিশ্বাস ন্যায়ে সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সফলভাবে আগ্রাসন চ্যালেঞ্জ পূরণ করবে যেমন তারা অতীতে সম্পন্ন করেছে।
কিন্তু আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি, যুদ্ধ বা সমানভাবে জরুরী ঘটনায় এটা যথেষ্ট নয় যে শুধুমাত্র সরকার ও সশস্ত্র বাহিনী চ্যালেঞ্জ পূরণ করার জন্য প্রস্তুত হবে। আপনাদের প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করতে হবে। বর্তমান সঙ্কটাবস্থায় সবাইকে প্রকৃত মুজাহিদ চেতনায় তার নিজস্ব বিশেষ গোলক আক্রমনাত্মক বাহিনীর সঙ্গে অবশ্যই কঠিন ভাবে কাজ করতে হবে, আমাদের সমস্ত পার্থক্য , সংকীর্ণতা এবং প্রাদেশিক কুসংস্কার পরিহার এবং সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর করতে হবে। প্রতিটি স্তরের মানুষকে সম্প্রতি রক্ষায় এবং একতা আনতে কাজ করতে হবে যেন দেশের প্রতিরক্ষায় আমরা পাথরের মত কঠিন হয়ে দাড়াতে পারি। আমার কোনো সন্দেহ নেই যে মানুষ এই উপলক্ষ্যে জেগে উঠবে এবং সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আমাদের নিরাপত্তা ও দেশপ্রেম ও সাহসের সঙ্গে অখণ্ডতার চ্যালেঞ্জ পূরণ করতে হবে।
ভারতীয় নেতারা তাদের মারমুখো বিবৃতি দিয়ে তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মনে কোন সন্দেহ রাখেনি। তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ সম্পর্কে কথা বলছে এবং তাদের কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধ উন্মত্ততামূলক কথা বলছে। বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা বিদেশ ভ্রমণ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে এবং বিচ্ছিন্নবাদীদের পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা চালাচ্ছে। সারা পৃথিবী ভারতীয় খেলা দেখছে এবং প্রচারণা দ্বারা এই প্রোপাগান্ডাকে ঢাকা যাবে না।
বিশ্বের সকল শান্তিকামী দেশ সহানুভূতির সঙ্গে বুঝেছে যে আমরা সমস্যার সম্মুখীন এবং সমাধান করতে চেষ্টা করছি। বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো ত্রাণ ও বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের জন্য এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য আমাদের সরাসরি এবং জাতিসংঘের মাধ্যমে সহায়তা দিয়েছে। আমি তাদের ধন্যবাদ প্রকাশ করতে চাই।
বড় সংখ্যক দেশ এ ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছে যে পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনা আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার আছে এবং কেউ আমাদের বলুন কিভাবে আমাদের কাজ করতে হয় সে অধিকারই তাদের নেই।
সম্প্রতি, আমি বিশেষ দূত প্রেরণ করেছি কিছু আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর নেতাদের কাছে যারা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ ও বিশৃঙ্খলা দূর করার ব্যাপারে অবিচল, মুসলিম বিশ্বের এবং এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলোর বন্ধুদের কাছ থেকে উষ্ণ সংহতি প্রকাশের বার্তা গৃহীত হয়েছে।
আমরা গভীরভাবে চীন গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের বন্ধুত্ব এবং সমর্থনকে প্রশংসা করি। বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার দ্বারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান যে প্রত্যেক জাতি নিজস্ব সমস্যার একটি সমাধান খুঁজেপাওয়ার অধিকার রয়েছে।
আমি আগ্রহ নিয়ে লক্ষ করেছি প্রিমিয়ার Kosygin মস্কোতে একটি সাম্প্রতিক ভাষণে প্রখর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন উপমহাদেশে শান্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের শান্তি ভঙ্গের প্রতিরোধ করতে সম্ভব সবকিছু করবে। আমি স্বাগত জানাই এবং আন্তরিকভাবে আশা করি যে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রভাব ব্যবহার করে ভারত একটি সশস্ত্র সংঘাত হতে বিরত রাখতে পারবে। তবে আমি দু: খ প্রকাশ করছি প্রিমিয়ার Kosygin জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে সেইসাথে আগমন এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের সহজতর সম্পর্কে গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ সম্বন্ধে কোনো উল্লেখ করেননি।
U.N. পর্যবেক্ষকদের বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফেরত সহজতর এবং সীমান্তে বিস্ফোরক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার মত অনেক প্রস্তাবকে আমাদের তরফ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে কিন্তু ভারতীয়রা অগ্রাহ্য করেছে। এটি শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নয়।
সরকার দ্বারা সাধারণ ক্ষমা এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তাদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থার ফলে দুই লক্ষ মানুষ পাকিস্তানে ফিরে এসেছে কিন্তু ভারত এখনো একটা বড় অংশ ধরে রেখেছে, যদিও তাদের সংখ্যা একেবারেই অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, আমরা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা মূল্যায়ন করতে যে কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থাকে স্বাগত জানাব। এই প্রস্তাবও ইন্ডিয়ানরা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুস্পষ্ট উপসংহারে এই যে যেমন স্ফীত পরিসংখ্যান ভারত দ্বারা দেওয়া হচ্ছে শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্যে হতে পারে এবং সেটি মিথ্যা অজুহাতে সর্বোচ্চ বৈদেশিক সাহায্যের চেষ্টা। তারা জোর করে দুর্গন্ধযুক্ত বস্তি ও শিবিরে একটি শোচনীয় অবস্থায় বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের রেখেছে এবং তাদের ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেয় নি। আমরা সব বন্ধুপ্রতিম দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ যদি তারা একটি মানবিক সমস্যা হিসেবে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ভারতকে প্রভাবিত করে এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুজি তৈরীর পরিবর্তে, তাদের ঘরে ফিরে আসতে দেয়া হোক। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য এবং আমাদের সীমানা থেকে তার বাহিনী প্রত্যাহার করার প্রয়োজন ভারতের উপর প্রেসার দেয়া উচিত।উত্তেজনা হ্রাস এবং একটি সর্বনাশা যুদ্ধ যাতে উভয় দেশের জীবন ও সম্পদের প্রভূত ক্ষতি স্থাপিত হবে তা থেকে রক্ষার এটি একমাত্র সমাধান।
এটা আমরা আন্তরিক বিশ্বাস করি যে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফেরত সহায়ক অবস্থা সৃষ্টির জন্য এটি অপরিহার্য যে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ের কাজ করা উচিত এবং উত্তেজনা কমাতে এবং দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত। মনের মধ্যে এই হচ্ছে আমরা অতীতে গ্রহণ করেছেন এবং সবসময় কোনো মহল এই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে থেকে কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ বিবেচনা করার জন্য প্রস্তুত করা হবে। এট মনে রেখে আমরা অতীতেও গ্রহণ করেছি এবং সবসময় যে কোনো মহল এই উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে সাহায্য করবে এরকম কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ বিবেচনা করার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এখানে, আমি আমার দেশের যারা বিদেশে বসবাসকারী এবং যারা ভারতীয় প্রচারক এবং তাদের খলনায়কদের ভয়াবহ কাহিনী দ্বারা বিভ্রান্ত তাদের কিছু বলতে চাই। আমি আনন্দিত যে এসব তথ্য এখন তাদের পরিচিত হয়ে উঠছে । আমি চাই যদি এটা সম্ভব হয় তারা তাদের দেশে এসে নিজেরা কিছু দেখতে এবং কিভাবে ভারতীয় প্রচারক সত্য বিকৃত করেছে তা আবিষ্কার করতে।
আমি বারবার বলেছি এবং আমি এটা আবার বলতে চাই যে আমরা একটি শান্তিকামী দেশ এবং বিশেষ করে আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিশ্বের সব জাতির সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমরা অন্য মানুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার কোন ইচ্ছা নেই এবংআমাদের ব্যাপারে অন্যদের হস্তক্ষেপ করতে দেবো না। নির্বিঘ্ন এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তি সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য এবং আমাদের জনগণের জন্য ভাল। আমরা সর্বত্র সংঘাত এড়াতে এবং যেকোন অশান্তিমুলক কাজে না জড়াতে সদা সক্রিয়। যাইহোক, আমাদের দ্বারা একতরফা প্রচেষ্টা যেমন একটি পরিস্থিতির জন্য একা যথেষ্ট নয় এবং সেখানে ভারত থেকে প্রতিক্রিয়া এবং ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আসছে। আমরা জানি এবং আমি আশা করি আমাদের প্রতিবেশীও বুঝতে পারবে যে সশস্ত্র সংঘাতে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। আসলে এ ধরনের দ্বন্দ্ব আরও সমস্যার সৃষ্টি করে এবং অগ্রগতি গতি ব্যাহত করে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে দুই দেশের মধ্যে সব বিদ্যমান সমস্যার কাশ্মীর ও ফারাক্কা বাঁধ সহ একটি ন্যায্য ও ন্যায়সঙ্গত পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণভাবে নিষ্পত্তি করা উচিত। যদিও শান্তি কামনা করি, তাহলেও আমরা সম্পূর্ণরূপে আত্মরক্ষা এবং আমাদের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হয়।
আমি এখন ক্ষমতায় হস্তান্তরের আমার পরিকল্পনার বিবরণ যা আমি এই বছর ২৮ জুন তারিখে ঘোষণা করেছিলাম এবং যা ১৮ সেপ্টেম্বর একটি বিবৃতি দিয়েছিলাম, সে সম্পর্কে আপনাদের অবহিত করতে চাই। আমি এখানে যে পরিকল্পনা জানাতে যাচ্ছি তা সম্পূর্ণরূপে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে এবং তাদের আমি কি ঘোষণা দিতে যাচ্ছি সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ভাবে অবগত করা হয়েছে।
আপনারা অবগত আছেন যে, আমি ইতিমধ্যে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার দ্বারা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনগুলিতে খালি রাখা জাতীয় পরিষদের সীট সেইসাথে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের খালি সীটগুলো পূরণের জন্য।
সংবিধান ১৯৭১ সালের ২০ ডিসেম্বরে ও জাতীয় পরিষদ ১৯৭১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ডাকা হবে।
এছাড়াও আপনি সচেতন যে জাতীয় পরিষদে সংবিধান ও এই কাজের সুবিধার জন্য একটি বিশেষ সহজ পদ্ধতি সংশোধনের পরামর্শের প্রতিটি সুযোগ ৯০ দিনের প্রাথমিক সময়ের মধ্যে করার সুযোগ থাকবে।
এই পদ্ধতি এমন হতে হবে যে বিধানসভা পরিষদের একটি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন সংখ্যা এবং প্রদেশের একটি ঐক্যমত্য দ্বারা সংবিধানের একটি সংশোধনী উত্থাপন করা হতে পারে যেখানে প্রতিটি প্রদেশের মোট আসনের সর্বনিম্ন ২৫% থাকবে। এইগুলো সংখ্যাগুলো আসার উদ্দেশ্য হল, একটি ভগ্নাংশ সামগ্রিকভাবে গ্রহণ করা হবে। আমি যোগ করতে পারি যে আমার বিবেচনা বা প্রস্তাবিত সংশোধনী পুনর্বিবেচনার জন্য ৯০ দিন সময় গ্রহণ করা হয়েছে। আমি এইভাবে অনুমান করি যে প্রস্তাবিত সংশোধনী তার প্রবর্তনের থেকে এই সময়ের সর্বত্র আমার নিকট পেশ করা চলতে থাকবে। সর্বশেষ সংশোধনী, যাতে তিন মাস সময়ের প্রবর্তনের ঘোষনার পর থেকে ৮০ দিনের মধ্যে হাউস দ্বারা আমাকে জমা করা হবে যেন আমাকে তাদের বিবেচনা বা পুনরায় বিবেচনার জন্য কমপক্ষে ১০ দিন থাকে। সুতরাং এই প্রক্রিয়ার পুরো সমাপ্তির ৯০ দিনের মোট সময়কাল অতিক্রম করবে না।
জাতীয় পরিষদ নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে সম্পন্ন করা হবে। জাতিয় পরিষদ হাউসের প্রাচীনতম সদস্য যাকে আমি মনোনীত করব তার সভাপতিত্বে ২৭ ডিসেম্বর তারিখে সমবেত হবে। এরপর সদস্যদের দ্বারা শপথ এবং স্পিকার এবং ডেপুটি ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হবে।
ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন পর গঠন করা হবে। কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করার পর জমা এবং সংশোধনী বিবেচনার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা আরম্ভ হবে।
উপনির্বাচনে দ্বারা কয়েকটি নারী-আসনের জন্য নির্বাচন সম্পন্ন করার পর শীঘ্রই পশ্চিম পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদ তলব করা যেতে পারে। পূর্ব পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের উপনির্বাচনের জন্য তফসিল ইতিমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক ঘোষণা করা হয়েছে। ১০৫ আসনে উপনির্বাচনের জন্য ১২ থেকে ২৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর মধ্যে ৭৮টি সীটে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৮৮টি সীটে ১লা ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৭ জানুয়ারি ১৯৭২ এর মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এইভাবে প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের কার্যকরীতা পরিষ্কার করা হয়েছে এবং প্রদেশে সরকার গঠনের জন্য মঞ্চ সেট করে দেয়া হয়েছে।
আমি বিস্তারিতভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য আমার পরিকল্পনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। আগেই বলেছি, এই পরিকল্পনা পুরোপুরি রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জানানো হয়েছে এবং এখন আমি এটা জাতির জন্য পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ননা করেছি। এখন আর সন্দেহ করার কোন কারণ নাই। আমি আশা করব সব রাজনৈতিক দল আন্তরিকভাবে এ পরিকল্পনার সিদ্ধির দিকে তাদের মনোযোগ উৎসর্গ করবে, আমি নেতাগণ এবং জাতির কাছে আবেদন জানাই যে আমাদের দেশের সংহতি এবং অখণ্ডতার বহিরাগত এবং অভ্যন্তরীণ ভয়াবহ হুমকি ভুলবেন না।
পুরস্কার অনেক উচ্চ এবং বিপদ অনেক বড় যে কোনোক্রমেই আমরা দেশের প্রতিরক্ষা এবং গণতান্ত্রিক পথের আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে নিবৃত্ত হওয়া যাবে না। দেশে কোন কর্ম বা যে কারো বিবৃতি গণতান্ত্রিক পথের কৃতিত্ব। দেশে কোন কর্ম বা কারো দ্বারা বিবৃতি যা জাতিকে লক্ষ্য থেকে বিমুখ করতে পারে তা দেশপ্রেমিক হতে পারে না।
আমি, আমার জাতির কাছে আবেদন করব বিশেষ করে জাতীয় প্রেস ও রাজনৈতিক নেতাদের খাপ বা ফটকা এবং গুজবে কান না দিতে যা, যদি এগুলো না থামান যায়, একটু আগে আমি যা উল্লেখ করেছি সেগুলোকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করবে এবং আমাদের শত্রুদের আনন্দিত করবে।
জাতি এক ব্যক্তি হিসাবে দাঁড়ানো এবং আমাদের লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাক। কাপড় আমরা পাকিস্তানিরা কি দিয়ে তৈরি তা দেখিয়ে দিন বিশ্বকে। আমার মনের মধ্যে কোন সন্দেহ নেই যে পাকিস্তানের দেশপ্রেম তুলনাহীন, যাদের অন্তরে রাসূল (তার উপর শান্তি বর্ষিত হোক) এর প্রেম স্পন্দিত হয় এবং যাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হল তাদের ইমান এবং যারা ভরসা করে আল্লাহর সাহায্যের উপর এবং যে কোন দিক থেকে যে কোনো চ্যালেঞ্জ পূরণে সক্ষম।
অবশেষে, আমি আবার বলতে চাই অযৌক্তিক বিপদাশঙ্কার কোনো কারণ নেই কিন্তু সেখানে অবশ্যই আত্মপ্রসাদেরও কোনো স্থান নেই। শান্ত এবং ধীরস্থিরভাবে পদ্ধতিতে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আমরা সতর্ক হতে হবে এবং আমাদের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব এর কোনো হুমকি মোকাবেলার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সব পার্থক্য ডুবে যাক এবং যারা আমাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনা করছে আমরা সংঘবদ্ধ জাতি হিসেবে দৃঢ়ভাবে তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ প্রমান করব। পৃথিবীর কোন শক্তি ইসলামের ১২০ মিলিয়ন মুজাহিদদের তাদের স্বাধীনতা রক্ষা এবং তাদের ভাগ্য নির্ধারন করা থেকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। চলুন আবার প্রমাণ করে দেই প্রত্যেক পাকিস্তানি নাগরিক তাদের দেশের নিরাপত্তা রক্ষার মত মহান দায়িত্ব পালন করতে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করতে প্রস্তুত।
আল্লাহ আমাদের সাহায্য এবং আমাদের পাকিস্তান রক্ষার গণতন্ত্র পুনরূদ্ধার এবং আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান উত্থাপন সাফল্য দান করুন। খোদা আপনাদের সহায় হোন, খোদা আপনাদের সকলের মঙ্গল করুন।
.
.
শিরোনামঃ ৮২। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আগা শাহীর বিবৃতি
সূত্রঃ জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ ১২ অক্টোবর, ১৯৭১
.
মিস্টার আগহ শাহ (পাকিস্তান) এর বিবৃতি জাতিসংঘ এর সাধারণ সভায় ।
অক্টোবর ১২, ১৯৭১
.
ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি যখন বিবৃতি এর জন্য একটি সঠিক প্রতিউত্তর তৈরি করছিল , ১৯৫৩ সালের ৫ অক্টোবর ঘোষণা করে দুটি প্রস্তাব যাহারা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিনিধিত্ব দলের সাথে একমত । প্রথমত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ছিল যা ইন্ডিয়া নিজেদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করছে, ” এটার ভিতর আসতে পারে না এবং আসা উচিৎ নয় ” । দ্বিতীয়ত যে সমস্যা ছিল যারা বাস্তুচ্যুত ছিল তাদের ফিরে আসা তাদের বাড়িতে যা পূর্ব পাকিস্তান এ একটা যন্ত্রণা এবং ফিরে আসা নিয়ে বিতর্ক ছিল ।
যদি ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি তাদের প্রস্তাব তুলে ধরে, আমরা দেখেছি যে ইন্দো-পাক উপমহাদেশ এর শুরুর প্রক্রিয়া হয়ত অপসারিত হবে বা হতে পারে । এর জন্য স্থিতি একটা সমাধান আমাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যার অতি সহজ সমাধান হবে ।
ইহা এটা না, তবুও,অতন্ত্ দুঃখজনক যে, যেটা তুলে ধরা হয়েছিল তা প্রস্তাবনা থেকে অনেক দূরে, ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি অগ্রসর হওয়া কে বাধা প্রদান করছিল প্রতি মুহূর্তে । অন্যদিকে তিনি বলেছেন ইন্ডিয়া করতে পারে না বা তাদের উচিৎ নয় পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যায় হস্তক্ষেপ করা । কিন্তু সোজা ভাবে, তিনি প্রশ্ন করেছেন যে সরকার এর উচিত চুক্তি করা ঐ সব মানুষগুলোর সাথে যারা পাকিস্তানের একতা ভেংগে দিতে চায় । এটা পরিস্কার নয় যে, এক প্রদেশের এর ব্যাপারে অন্য প্রদেশ হস্তক্ষেপ করবে? প্রাদেশিক সরকার ইচ্ছে পোষণ করে যে তারা স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখবে একে অপরের সাথে এবং কেউ কারো অভ্যন্তরীণ সমস্যার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে না । কিন্তু এখানে, এক প্রদেশ দাবী করে যে, নির্দিষ্ট কোন অভ্যন্তরীণ অবস্থার সমাধান একটা নির্দিষ্ট পথেই হবে । তারপর আবার, অন্যদিকে, রাষ্ট্রদূত সেন বলেছেন যে শরনার্থীদের ফিরিয়ে দেয়ার সমস্যা এক অত্যন্ত যন্ত্রণা দায়ক । অপর পক্ষে, ইন্ডিয়া কাছ থেকে নামমাত্র সহযোগিতা আশা করা যায় না যে উদ্দ্যেশে তারা শরনার্থীদের ফিরিয়ে তাদের ঘরে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা, সম্পদ আর সম্মান ।
এখানে একটা বিষয় পরিস্কার, প্রত্যেকেই একমত যে এই মানবিক দুঃখজনক প্রস্থান এর সমস্যার সমাধান একমাত্র তাদের উচিত নিজ ঘরে ফিরে আসা । যদিওবা তারা বর্তমানে ইন্ডিয়ার মাটিতে আছে, আমার প্রশ্নঃ কিভাবে এটার সমাধান হবে যদি ইন্ডিয়া সহযোগিতা না করে? অথচ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধির বিবৃতিতে ব্যাখ্যা করে দেখা যায় যে তারা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে মানবিকতা আর জরুরী অবস্থার অবসান এর জন্য ।
শরনার্থীদের ফিরে আশা নিয়ে যে যে রাজনৈতিক শর্ত দেয়া হয়েছে, সেটা শুধু পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এ না, এমন কি একটা বড় সংখার মানুষের অঙ্গীকার এর সসাথে জড়িত । ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি আমাদের কঠিন ভাবে অভিযুক্ত করেছেন ।
কিন্তু কিভাবে একজন বর্নণা করতে পারে যে ইন্ডিয়ার মনোভাব এবং নীতি কোন অংশের জন্য দায়ী যারা শরনার্থীদের ফিরিয়ে দিতে বাধা প্রদান করছে? আমাদের বিবৃতি বক্তৃতার উপর তৈরি যে ২৭ থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর এবং ৫ই অক্টোবর আমার প্রতিনিধি বর্নণা করবেন বিস্তারিত যে পাকিস্তান সরকার শরনার্থীদের ফিরে আসায় কোন ভয় নেই এটা নিশ্চিত করেছে । সাধারণ সম্পাদক এবং জাতিসংঘ এর হাই কমিশনার দুজনেই শরনার্থীদের সাহায্যের চেষ্টা করেন । এখন সময় নয়, যে ইন্ডিয়া নিরপেক্ষ ভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে একটা গঠনমূলক প্রস্তবনা যেটা তৈরি করা হয়েছে? এই অংশে পাকিস্তান সফল হয়েছে প্রায় ২০০,০০০ জন শরনার্থীকে ফিরিয়ে আনতে । আমি এখন সভায় শরনার্থীদের ফেরা নিয়ে বিবরনি দেয়া এবং নিশ্চিত করা যে জাতিসংঘের প্রতিনিধি হাই কমিশনার, যিনি ব্যক্তিগত ভাবে ঘুরে দেখেছেন পূর্ব পাকিস্তানের অনেকাংশ এবং শরনার্থীদের সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে এবং তারা খুব অল্প সংখ্যায় আছে । আমার সরকার এর সব সামর্থ্য আছে যেসব প্রতিনিধি ইউএনএইচসিআর থেকে শরনার্থীদের দেখতে আসবে তাদের ফিরে আসা । আমরা এখানে বিতর্কে জড়াতে আসিনি, কিন্তু চেষ্টা করছি কিভাবে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পপাওয়া যায় । আমাদের প্রধান বিবৃতি যেটা অক্টোবর ৫ এ উদাহৃত জমা করার ঘটনা লুকান হয় যে যুদ্ধ ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান এর মাঝে হচ্ছে সেটা রত করা হয় । রাষ্টদূত সেন তাদের সবাইকে হাসিখুশি পন্থায় অপসারন করেন । তারপর তিনি বলেন যে ইন্ডিয়া কাছে ৪০০ উপরে অভিযোগ আছে পূর্ব সীমান্তে ধ্বংস যোজ্ঞের উপর । নির্বিশেষ অভিযোগ এর উপর ভিত্তি করে, এটা প্রমাণিত হয় না যে এটা কোন জরুরী অবস্থা? এটা যথেষ্ট নয় অভিযোগ এর জন্য; কোন একটা অবশ্যই পরীক্ষিত হওয়া উচিত । যদি ইন্ডিয়া চায় এই অভিযোগ পরীক্ষা করে দেখা হোক; কিন্তু এটা জরুরী নয় যে নিরাপত্তা কাউন্সিল বিবেচনা করে দেখব যে এটা আন্তর্জাতিক অবস্থা? আমরা যে বিবৃতি দিয়েছি, আমরা প্রকাশ করেছি আমাদের প্রস্তুতি যে সহযোগিতা ভাল একটা অফিস কমিটি আর নিরাপত্তা কাউন্সিল । কিন্তু ইন্ডিয়া প্রতিরোধ করে কার্যসম্পাদন করে ফেলতে পারে যাতে করে অবস্থার পরিবর্তন হয় । এটা অস্বীকার করা যায় না ইন্ডিয়া পাকিস্তান উপমহাদেশ এর শান্তি এখন হুমকির মুখে? জাতিকে আজ ভাষণ দেন, রাষ্ট্রপতি আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান বলেন, “” তারা”” ইন্ডিয়াকে ইংগিত করে – ” বোমা মারছে এবং প্রতি নিয়ত চলমান ভাবে নিক্ষেপ করে যাচ্ছে ওই এলাকায়” যেটা, পূর্ব পাকিস্তানের এলাকা ” – ” তাদের আর্টিলারি এবং মর্টার দিয়ে “। ক্রমেই পুরো বিশ্ব জেনে যাবে যে সব বড় ধরনের নাশকতার কার্যকলাপ যেমন ব্রিজ ধ্বংস করা এবং পূর্ব পাকিস্তান এর সাথে যোগাযোগব্যবস্থা এর ভাংগন এ সব কিছু ই করছে ইন্ডিয়ার অনুপ্রবেশকারীরা কিন্তু নাম দিচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের । অন্তর্তঘাতী এবং ফ্রগম্যান শিখে নিচ্ছে আর ইন্ডিয়া পাঠিয়ে দিচ্ছে যাতে করে আমাদের খাদ্য বহনকারী জাহাজ গুলো ধ্বংস করে দিতে পারে পূর্ব পাকিস্তান এ কিন্তু তারা ব্যর্থ হয় আমাদের আর্মিদের কাছে । ইন্ডিয়ার উদ্দেশ্য তেমন ককিছু না কিন্তু একটা অবস্থা তৈরি করা যাতে পূর্ব পাকিস্তানের লোক জন অনাহারে থাকে ।
তবুও দেখা যাচ্ছে যুদ্ধ টা ইন্ডিয়ান সামরিক সৈন্যরা আমাদে সীমান্তে ভীড় করছে, আর পাকিস্তান শান্তি বজায় রেখে চলছে । রাষ্ট্রপতির আজকের বিবৃতি অনুযায়ীঃ ” এটা আমাদের বিশ্বাস যে এটা একটা অবস্থার সৃষ্টি করছে যা কিনা শরনার্থীদের ফিরে আসা এবং সাধারণ অবস্থা তৈরি করবে, আর এটা জরুরী যে ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তান একত্রে কোন পন্থা বের করা উচিত এবং টান কমানোর নিমিত্তে এবং স্বাভাবিক অবস্থা এর জন্য তাড়াতাড়ি সবাইকে ফিরে আসা উচিত ।”
সম্ভাবত ই না তবুও দায়িত্ব যে, রাষ্ট্রদূত সেন অবহসিত হন যে, রিপোর্ট উদ্ধৃত করা হয়েছে আমাদের কাছে, যে হাজার এর কাছাকাছি শেল নিক্ষেপ করা হয়েছে ইন্ডিয়া আর্টিলারি থেকে পূর্ব পাকিস্তান এর সীমান্তের গ্রামে ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে । তারপর তিনি নিজে কাছাকাছি শব্দটি পরিবর্তন করে একে বারে সঠিক করে বলতে প্রশ্ন করেন কে এগুলো গুনেছে? কিন্তু ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি এখানেই থামেন না এবং একই প্রশ্ন করেন, যখন তারা যুক্তি আর বিবেক হীন ভাবে বলতে শুরু করে যে এক লক্ষ এর উপর মানুষ মারা গেছে পূর্ব পাকিস্তান এ । রাষ্ট্রদূত সেন উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন , যে একটা তুচ্ছ পত্রিকার কথা ম্যানচেষ্টার গার্ডিয়ান, কিন্তু তিনি তাকে মনে করিয়ে দেন যে একই পত্রিকা এই ইস্যুতে ১৯ জুলাই একটা রিপোর্ট প্রকাশ করে, এবং তার সংবাদাতা ছিলেন, মার্টিন ওলকোট, এর প্রভাব বিবেচনায় বলেনঃ ” সাধারন হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান এর হত্যা এর ঘটনা, এটা অবশ্যই নেয়া উচিৎ যে প্রত্যেক ক্যাটাগরিতে গগনা করা”” । ওলকোট খুব ভাল ভাবে হিসেব করে দেখেন যে প্রায় ২০,০০০ মানুষ মারা যায় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দ্বারা এবং ৩০,০০০ হতাহত হয় পাকিস্তানি আর্মিদের দ্বারা, যা ২৫শে মার্চ রাতের ফল । তার উদ্ধৃতিঃ
” সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপ এ কিছু লোক মারা গিয়েছে যা অপর পক্ষের প্রজ্ঞাপন এ বলা হয়েছে তার থেকে কম “
৫ই অক্টোবর তার বিবৃতি,প্রতিনিধি দলের চেয়ারম্যান উল্লেখিত করেন যে তিনি পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসছেন কারণ তিনি জানা যে তার সাথে পূর্ব পাকিস্তান এর অনেকের সাথে পরিচিত হন যা আমাদের দেশের অন্তর্ভূক্ত । আমি দুঃখ প্রকাশ করছি রাষ্ট্রদূত সেন এর উচিত ছিল তার জাতিকে উল্লেখ করা । সুনিশ্চিত ভাবে, একজন ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে, তিনি কোন কারনে তার একক ভাবে জন্ম পরিচিতি আর অবস্থা পাকিস্তানের কোন অংশ নয় ।
সবশেষে, ইন্ডিয়ার প্রতিনিধি, চেষ্টা করেছেন হালকাভাবে উদগত করেছেন ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান এর মাঝে যে বিরত থাকা সম্পর্ক পুনঃ স্থাপিত করতে চেষ্টা করেন যা দুই দেশের মাঝে ছিল । তিনি জম্মু আর কাশ্মীর এর সমস্যা সম্পর্কে কিছু শুনতে চান না, অথচ এই সমস্যায় লাখ খানে মানুষ জড়িয়ে আছে । তিনি বলেছেন যে ইন্ডিয়া সব সময় চেয়ে আসছে যে তারা সব সহযোগিতা করবে এই দ্বিপার্শ্বিক সমস্যা সমাধানের জন্য । প্রথমত যে, জম্মু আর কাকাশ্মীর সমস্যা দ্বিপার্শ্বিক নয় । দ্বিতীয়ত, যযদি আমরা ছাড় না দদেই এক মুহূর্তের জন্য, এটা অতি সাধারণ নয় যে ইন্ডিয়া চুক্তি করবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য, পরবর্তীতে বলেন যে এক মাত্র চুক্তি হতে পারে পাকিস্তান আজাদ কাশ্মীর ছেড়ে দিবে । অপর শব্দে বলা যায়, তারা আমাদের আমন্ত্রন জানিয়েছে একটা দান করার জন্য কাশ্মীর যা তাদের দখল থেকে ছুটে গিয়েছে ।
এটা বলা হয় যে এই ইস্যু আনা হয়েছে এই জন্য যে সমস্যা থেকে চোখ সরিয়ে নেয়ার জন্য যা পূর্ব পাকিস্তান তৈরি হয়েছে, এটা পুরোটাই বিপরীত । পরবর্তী এই সমস্যা উঠে এসেছে এই বছর এবং আমরা মনেপ্রাণে আশা করছি যে তা শীঘ্র সমাধান হবে । জম্মু আর কাশ্মীর এর ভাগাভাগি বা একে বারে ভাগ করে নেয়ার সমস্যা তাদের সম্পর্কের শুরু থেকে চলে আসছে সেই ১৯৪৮ সাল থেকে ।
.
পাকিস্তান, অন্য সব দেশ এর চেয়ে বেশি সচেতন এর জরুরী রাজনৈতিক অবস্থা আর সসমাধান নিয়ে । আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে এটা সমাধান করা বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়া । পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি, তার বিবৃতিতে বলেছেন, গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠত হবে দেশে । আমি বক্তৃতামঞ্চ ছাড়াতে পারিনা সচেষ্ট চিত্তে যে অপসারতি করা হবে আর যে ভুল বোঝা বুঝির সৃষ্টি হয়েছে পূর্ব পাকিস্তান যে ই বিবৃতি দেয়া হয়েছে এক বা দুজন প্রতিনিধি দ্বারা সাধারণ সভায় । এই ভুল বোঝাবুঝি মনে হচ্ছে আত্মনির্ধারণ কেন্দ্রিক । পাকিস্তান, যতটুকু অন্য সব দেশ এবং বিশ্বাস করে এবং অবিচলিতভাবে মেনে চলে নীতি । এই নীতি প্রযোজ্য সব মানুষ এর জন্য যারা ঔপনিবেশিক শাসক এর অধীন অথবা পরাধীন অধীনতা অথবা বিচ্ছিন্নতাবাদী যাদের জায়গা এখনো নির্ধারণ হয়নি । ইহা এক হাস্য কর অনুসরণ হবে এই নীতির, যদি এটা জাতিগত ভাবে ডাকা হয়, জাতিগত বা ভাষাসংক্রান্ত দল সুবিন্যস্ত করা হয় বহু জাতি বা বহু ভাষার প্রদেশ যেতা এখন পরীক্ষিত হয়েছে তাদের অধিকার আর আত্মকেন্দ্রিকতা । অবিরাম ভাংগন এর ফলে বিশেষত যে ররাষ্ট্র গুলো নতুন স্বাধীন হয়েছে ফলাফল ছাড়াই । পাকিস্তানের ক্ষেত্রে, এটা সার্বভৌম রাষ্ট্র যা কিনা পাওয়া গিয়েছে ইন্ডিয়ার নীতি অনুযায়ী, যা ইন্ডিয়া কে স্বাধীনতা দিয়েছে । উভয় রাষ্ট্র বিভিন্ন ভাষা ভাষী । পাকিস্তানে আছে বাঙালি, পাঞ্জাবি, সিন্ধি, পাঠান এবং বেলুচি ; এই পাচ জাতি এবং সংস্কৃতির মানুষ গুলো প্রধানত আমাদের দেশের এবং এদের মধ্যে কেকেউ ই সাব অর্ডিনেট না অথবা সংখ্যংখ্যায় কম নয় । রেফারেন্স যেটা তৈরি করা হয়েছে পাঠান আর বেলুচিদের জন্য যা সাদৃশ্য সাথে ঐতিহাসিক আর বৈধ সত্য । এবং সর্বশেষ এ আমাদের প্রতিবেশী আফগানিস্তান এর কাছে কোন আশা নেই প্রখরভাবে শুধু মাত্র ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক রাখা আর শ্রদ্ধাশীল থাকা ।
.
.
শিরোনামঃ ৮৩। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আগা শাহীর আরেকটি বিবৃতি
সূত্রঃ জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টেস
তারিখঃ ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১
.
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে জনাব আঘা শাহী (পাকিস্তান) এর বক্তব্য
অক্টোবর ১৩, ১৯৭১
সাধারণ বিতর্কের সময় আমার প্রতিনিধিদল কয়েকবার এ ব্যাপারে জোর দিয়েছে যে আমরা এখানে যুক্তি মেলাতে এবং বিতর্কে জয়লাভ করতে আসিনি। আমরা বর্তমান ভারত পাকিস্তান পরিস্থিতি খুবই গুরুতর, এবং আমাদের বিতর্কে অংশগ্রহণ করার জন্য অত্যাবশ্যক শান্তির বাধ্যতামূলক হওয়া বিবেচনা করছি।
আমি গতকাল যা বলেছি, এইমাত্র ভারতের প্রতিনিধির দেয়া তার প্রত্তুত্যরে বিভিন্ন ভুল বিবৃতি এবং পুরনো অভিযোগের পুনরাবৃত্তি রয়েছে ইতিমধ্যে যেসব আমরা মিথ্যা প্রমাণিত করেছি। আমি নিশ্চিত যে পরিষদের কেউই শান্তির কারণ উন্নয়ন করতে অথবা শান্তির জন্য হুমকিস্বরূপ কোন একটি অবস্থার সম্পর্কে স্পষ্ট উপলব্ধি আনতে ব্যর্থ একটি উত্তর এবং পাল্টা উত্তরের সারি উপভোগ করেন না। যাই হোক, ভারত এর প্রতিনিধির আগের হস্তক্ষেপের প্রেক্ষাপটে, তিনি যেই চিত্র অংকন করেছেন আমি একটি যুক্তিসঙ্গত এবং পক্ষপাতহীন উপস্থাপনার মাধ্যমে সেই চিত্র সংশোধনের আমার সরকারের নিকট দায়িত্বে আবদ্ধ আছি।
প্রথমত, আমি গতকাল আমার উত্তর দেয়ার অধিকার ব্যবহার করায় ভারতের প্রতিনিধিকে ক্ষুব্ধ মনে হয়েছে, আমাদের বিরুদ্ধে তার ভারতের অভিযোগ বিবৃতির সাতদিন পর আমরা তাকে এটাই আশ্বাস দিতে চাই যে আমরা সবসময় বিশ্বাস করি একটি বিরতি নিয়ে যেকোনো ধরণের অভিযোগের উপর প্রতিফলন ঘটানোতে যাতে আমরা কোন উত্তেজনাপূর্ণ উত্তর না দেই এবং কোন উত্তাপের সৃষ্টি না করি, বরং এই সাধারণ পরিষদকে জ্ঞানের আলো পরিবেশন করি। এইজন্য আমরা ভাবলাম যে ভারতের প্রতিনিধি থেকে এক মুহূর্ত আগে যে বিবৃতি আমরা শুনেছি সে ধরণের বিবৃতি না করে বরং আমাদের একটি উপযুক্ত উত্তর করা উচিত।
আমি ব্যাপকভাবে বিস্মিত হয়েছি যখন ভারতের প্রতিনিধি বলেন যে ভারত-পাকিস্তান বিনিময়ে যেসকল দফা আমার দ্বারা তৈরি করা হয়েছে সেগুলো আফগানিস্তানের প্রতিনিধি দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে।
আমরা বহু সময় জন্য শুনেছি যে ভারত সরকার পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ইচ্ছা পোষণ করে না, এবং তারপরও ভারতের প্রতিনিধি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের উপর একটি যথার্থ সুদীর্ঘ বক্তৃতা মধ্যে চালু করেছেন। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক পরিকল্পনার সংবিধানের প্রকৃতি সম্পর্কে পাকিস্তানের কিছু রাজনৈতিক নেতাকে উদ্ধৃত করেন। নেই
একটি দেশের অভ্যন্তরীণ সংবিধান উন্নয়নসমূহের উপর মন্তব্য করা কি রাষ্ট্রের একচেটিয়া গার্হস্থ্য অধিক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে না? যদিও পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের আমার দেশে অর্জিত মতামতের মুক্ত প্রকাশের চর্চায় কি বলার আছে তা তিনি পাকিস্তান প্রেস থেকে উদ্ধৃত করেছেন।
তবুও তিনি আমার সরকারকে কৃতিত্ব প্রদান করেননি যে সরকারের সম্পর্কে এই সমালোচনামূলক মতামত, যা শুধুমাত্র সমালোচনামূলক নয়, বরং অত্যন্ত জোরালোভাবে সমালোচনামূলক-বাস্তবিকই প্রকাশিত। তিনি এখনও আমার দেশে বিদ্যমান অবস্থার উপহাস করেন এবং বলেন যে, আমরা জানি না যে এসব তারা বলেছেন কারণ পাকিস্তানে সেন্সরশিপ আছে। যদি সেন্সরশিপ থাকতো, পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা সরকারের বিরুদ্ধে এই সমালোচনামূলক মন্তব্য কোনদিনও দিনের আলো দেখতে পেত না। ভারতের প্রতিনিধি এই সাধারণ পরিষদকে আমার এবং ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের মধ্যকার সম্পর্ক সম্বন্ধে অবহিত করার মতো এবং কিভাবে বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানেরা কিভাবে অস্ত্র পাচ্ছে তা নিয়ে রাষ্ট্রদূত হিলালির একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে দেয়া বক্তব্য উদ্ধৃত করার মতো ভালো ছিলেন। তিনি ১৯৭১ এর ১লা থেকে ৫ শে মার্চের অবস্থা নিয়ে বলছিলেন, যখন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ, উপ-সামরিক বাহিনী, পূর্ব পাকিস্তান সৈন্যদলের বিরাত অংশের আনুগত্য পরাভূত অবস্থায় ছিল। পূর্ব পাকিস্তান থেকে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর এইসকল উপাদানসমূহের আনুগত্য পরাভূত করা হয়েছে এবং তারা অস্ত্রাগার এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদের দোকান লুট করার উদ্ধেশ্যে প্রণোদিত ছিল, স্পষ্টত, পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপ-সামরিক বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর নিয়মিত সদস্য হওয়ায় তারা অস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল, এবং যখন তারা পক্ষত্যাগ এবং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উত্থান করে, তখন তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করে।
কিন্তু সেটা গল্পের শেষ। এখানে একটি দীর্ঘ সময় ধরে পূর্ব পাকিস্তানে সশস্ত্র ভারতীয় মৌলসমূহের অনুপ্রবেশকে হয়েছে। অস্ত্র এবং গোলাবারুদ যে সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং ভারত দ্বারা পাকিস্তানে প্রেরিত হচ্ছে এটা জনসাধারণের অবগত একটা বাস্তব সত্য। তারা গেরিলা সরবরাহ এবং গেরিলাদের অস্ত্র প্রদান করছে এটা অস্বীকার করার কোন উদ্যোগ ভারতীয় কর্মকর্তাদের দ্বারা গত কয়েক মাস ধরে নেয়া হয়নি।
শুধু আজ, নিউ ইয়র্ক টাইমসের ভারত ভিত্তিক সংবাদদাতা সিডনি শানবার্গ থেকে নিউ ইয়র্ক টাইমসে ট্রেনের পর ট্রেন ভর্তি করে যে অস্ত্র কলকাতায় যাচ্ছে এই বিদ্রোহীদের সশস্ত্র করার জন্য যাতে তারা পূর্ব পাকিস্তানে তাদের অভিযান জোরদার করতে পারে এই বিষয়ে আমাদের কাছে একটি সম্পাদনা আছে।
আমি ২৫শে মার্চের পরবর্তী অনেক সংবাদদাতাদের উদ্ধৃত করতে পারি, বিশ্ব বিখ্যাত সংবাদপত্র দ্য লন্ডন, ডেইলি টেলিগ্রাফ এবং অন্যান্যের সংবাদদাতাগণ যারা এই বিদ্রোহীদের অস্ত্রশস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ এবং সমর্থন ও ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর সহায়তা দিয়ে ছেড়ে দেয়ার সঙ্গে ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপ্তি সম্পর্কে নিজস্ব সম্পাদকদের সম্পাদনা প্রেরণ করেছেন।
দলিলপত্রের উদ্দেশ্যসমূহ এবং মূলনীতিসমূহ কঠোরভাবে পালন করার প্রয়োজনীয়তা, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা জোরদার করার মূলনীতিসমূহ, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মূলনীতিসমূহ ঘোষণা, মূলনীতিসমূহ যার উপর আগ্রাসন সংজ্ঞায়িত করা উচিত এসকল বিষয়ে আমরা ভারতীয় প্রতিনিধি থেকে অনেক কিছু শুনে থাকি, এবং আমরা জানি যে ভারতীয় প্রতিনিধিগণ আন্তর্জাতিক আচরণের সংজ্ঞা নয়, নিজেরাই আগ্রাসনের সংজ্ঞা প্রণয়নে সক্রিয় অংশ নিয়েছে, বলা হয়েছে যে গেরিলাদের সশস্ত্র করা এবং উদ্দীপনা সৃষ্টি করা, অনুর্বর আন্তর্জাতিক সীমানায় অভিযান ও অন্তর্ঘাত চালাতে পাঠানো আগ্রাসী কর্মকাণ্ড। কিন্তু এটা আসলে হচ্ছে তা যা তারা পাকিস্তানের ব্যাপারে করছে; তবুও তারা বলে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে ইচ্ছুক না।
এটা সবসময় সবচেয়ে বেদনাদায়ক যখন মৃত্যুর ভয়াবহ গণিত বা হতাহতের সংখ্যা নিয়ে কোনো যুক্তিতর্কে প্রবেশ করতে হয়। ভারতের প্রতিনিধি অবিরতভাবে হতাহতের সংখ্যা “এক মিলিয়নের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই মিলিয়ন” বলে বক্তব্য দিয়ে গেছেন। এখন, এক মিলিয়নের এক-চতুর্থাংশ থেকে দুই মিলিয়নের সীমান্ত দিয়ে এমন বক্তব্য প্রদান করার স্বাধীনতা কি দায়িত্বশীলতার মধ্যে পড়ে, যেন তারা শুধু কিছু সংখ্যা বা শুধু কতগুলো জড় একক, এবং জীবন্ত মানুষ নয়?
যদি আমরা আমাদের নিজের দেশের আইন বিবেচনা করি, প্রতিটি মৃত্যুর সর্বোচ্চ অপরাধ হিসেবে তদন্ত করা হয়, এবং একটি দেশ শুধুমাত্র একটি দুর্ঘটনায়ও সবচেয়ে উদ্বিগ্ন এবং শাসিত হয়। কিন্তু ভারতের প্রতিনিধি এখানে আসেন এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রীয় পদক্ষেপকে দায়ী করে ২৫০,০০০ থেকে ২,০০০,০০০ এর মধ্যে পুরুষ, নারী ও শিশু মৃত্যুর অভিযোগ করেন।
সত্যবাদিতা এবং স্পষ্টতার প্রয়োজনীয়তা কি বলতে পারেন যেখানে তারা এই ধরণের অভিযোগ করতে পারে? আমি বলতে চাই যে ঐ পরিসংখ্যান যা ভারত দ্বারা সবসময় উদ্ধৃতকরা হয় এবং যা ভারতীয় উৎস হতে উদ্গত হয়ে বিশ্ব সংবাদে জায়গা করে নিয়েছে, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানসমূহ যাদের থেকে এসব গুজব ছড়িয়ে পড়েছে এবং পাকিস্তানের ভাবমূর্তি কলুষিত করতে চেষ্টা করেছে। সদস্যরা সকলে গত নভেম্বর ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন। সে সময়ে, পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনে জড়িত রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা নির্দিষ্ট অভিযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে পাকিস্তান সরকার সংগঠিত সব সম্পদ বন্যা থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের সাহায্য করতে পর্যাপ্ত আকারে সংহত করেনি। সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী সেইসকল রাজনৈতিক দলসমূহ নিজেদের দল থেকে একটি কর্মীও বিচ্যুত করেননি তাদের নিজের আত্মীয়স্বজনের জন্য মানবতা ও ত্রাণ স্বার্থে। তারা নির্বাচন, ভোটভিক্ষা, আমাদের প্রচারণা মিছিলে জড়িত ছিল, এবং এখন তারা পাকিস্তানের ফেডারেল সরকার তাদের দায়িত্ব নিয়ে অভিযুক্ত করছে, এবং আমি পরিষদকে বলতে চাই যে তারা পাকিস্তান সরকারকে গণহত্যা দায়ে অভিযুক্ত করেছে।
দৃশ্যত, শব্দের এই যুদ্ধে, মানুষ বাস্তবতার জ্ঞান হারিয়েছে, শব্দেরা তাদের অর্থ হারিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের উত্তরজীবিদের মধ্যে একজনও অবহেলার ফলে মৃত্যুবরণ করেনি।
হতাহতের যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো তার কারণ ছিল বন্যা; তারা সব ঘটেছিল ঘূর্ণিঝড়ে, চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে এবং তবুও পাকিস্তান সরকার সেই সকল রাজনৈতিক দল অভিযুক্ত হয়-যা পরবর্তীতে তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী রং-এর গণহত্যাকে বিশ্বাসঘাতকতা করে।
আমি পরিষদকে এটাও বলতে চাই যে ২রা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চের মধ্যে আওয়ামী লীগ একটি সমান্তরাল সরকার গঠন করার জন্য ক্রিয়াকলাপের ক্রম গঠন করে এবং প্রতিষ্ঠিত সরকারের কর্তৃত্ব তুচ্ছ করে। তারা সরকারী কর্মচারীদের অফিস যোগ দিতে না নির্দেশনা জারি করে; তারা বিদ্রোহের পতাকা উত্তোলন করে; তারা বাণিজ্যিক কেন্দ্রসমূহকে নির্দেশ দেয় তারা নির্দেশনা দেয় যে কেন্দ্রীয় সরকারকে কোন কর প্রদান করা উচিত নয়। এবং এই উপায়ে তারা, বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানেরা যারা নির্দোষ নাগরিকদের হত্যা শুরু করে। ঐ ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। যখন সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করার অভিযোগে অভিযুক্ত না হওয়ার তাগিদে যারা দর্শকের মত দাঁড়িয়ে থেকেছে, এবং অবশেষে যখন হত্যাকান্ড দমন করার আদেশ ছিল, এবং যখন, তাদের কর্মকাণ্ডের ফলে, দুই বা তিন ডজন মানুষের বেশি মানুষ নিহত হয়নি, তাদের গণহত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছিল। পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার চিৎকার ২৫শে মার্চের আগেই শুরু হয়েছিলো যখন সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের নিরপরাধ মানুষ যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাদানসমূহের মতো একই রাজনৈতিক প্ররোচনায় ছিল না তাদের হত্যা দমন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
সেসব নথিভুক্ত করা আছে, নথিভুক্ত তথ্যসমূহ, এবং তবুও তথ্য দমন করা হয়েছে। ঐ তথ্যসমূহকে বিশ্ব সংবাদে তাদের জায়গা করে নিতে অনুমতি দেয়া হয়নি। তবুও পাকিস্তানের সরকারকে সেন্সরশিপ ও দমনের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়।
তবে আমি আপনাদের বলতে চাই যে ভারত প্রতিনিধি দ্বারা উদ্ধৃত সকল মৃত্যুর পরিসংখ্যান ভারতীয় সূত্র থেকে নির্গত হওয়া। সেই প্রতিনিধিদের এসব ভাণ্ডার খাওয়ানো হয়েছে। আমি আর এর উপর বাস করতে চাই না, কিন্তু আমাকে যদি চ্যালেঞ্জ করা হয়, আমি আপনাদের সামনে আরও প্রমাণ উপস্থাপন করতে প্রস্তুত। আমি ইতিমধ্যে বিবৃতি দিয়েছি যে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর সশস্ত্র উপাদান হতে বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহীরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীরা করেছেন, যারা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র চুরি করে এবং যারা অস্ত্র ও গোলাবারুদের দোকান লুটপাট করে, তারা ভারত থেকে সরবরাহ করা হয়েছিলো এবং ভারত দ্বারা সশস্ত্র হয়েছিলো, এবং আমি আজকের নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি নিবন্ধের প্রতি পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ পাস হওয়ার অভিযোগ নিয়ে ভারতের প্রতিনিধি উত্থাপিত প্রশ্ন প্রসঙ্গে, নিউইয়র্ক টাইমসে আজ একটি সংবাদ অনুচ্ছেদ আছে যাতে বলা হয়েছে যে একটি পাকিস্তান মিশন থেকে একটি কূটনৈতিক দলত্যাগী তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিবৃতি দিয়েছে যা তিনি পক্ষত্যাগ করার আগে পাকিস্তান মিশনকে বিদেশে দেওয়া হয়। আমি এখানে একটি শ্রেণীগত বিবৃতি করতে চাই; আমার মিশন বা কোনো ধরনের মিশন আমার সরকার থেকে শেখ মুজিবুর উপর পাস হওয়া কোন আইনের প্রশ্ন নিয়ে কোন তথ্য পাইনি।
অতএব, এই মিশন থেকে কোনো দলত্যাগী, যে আমাদের দিকে এই অভিযোগ নিক্ষেপ করার আগে
যায় এবং প্রেসে বিবৃতি রাখেন যে যত্ন এবং সাবধানতাবশত একটি প্রাণদন্ড প্রয়োগ করা হয়েছে।
আমি এই পরিষদকে আরও বলব যে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক দলত্যাগীগণ শেখ মুজিবুর রহমান মারা গেছেনস্মারকলিপি প্রচারিত করেছে এবং প্রতিনিধিদের চিঠি পাঠিয়েছে। এ ধরনের ভুল বিবৃতি এবং মিথ্যা প্রচারণা করে কি উদ্দেশ্যে সাধিত হচ্ছে তা আমাদের বোধশক্তির বাইরে, কিন্তু, অন্তত, আমরা আশা করি যে সার্বভৌম যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিগণ এঁকে অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন এবং কটাক্ষ করতে পুস্তিকা-লেখক এবং প্রজ্ঞাপকদের চেয়ে বেশী দায়িত্বশীল হবে।
আমাকে আরো গঠনমূলক কিছুর উদ্দেশ্যে এসব অভিযোগের উত্তর দিতে দিন, যা আপনাদের সকলের জন্য যেমন, ঠিক তেমনি আমার জন্যেও বেদনাদায়ক। আমি বর্তমান ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির অবনতি থামানো এবং স্থানচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনতে একটি আস্থা পরিবাহী একটি জলবায়ু নির্মাণের জন্য পাকিস্তান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রস্তাবনাসমূহ নবায়ন করে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাই।
এই হল আমাদের প্রস্তাবনাসমুহঃ
প্রথমত, আমাদের দ্বারা গণনা করা সংখ্যা এবং যে ভারত দ্বারা কথিত সংখ্যার মধ্যে বিদ্যমান ব্যাপক অসমতা বিবেচনা করে যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং ভারতে চলে গেছেন একটি নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বারা সেসব ব্যক্তির সংখ্যা নির্ণয় করা, যাতে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেছেন এমন শরণার্থীদের সংখ্যা সংক্রান্ত বিতর্ক শেষ হতে পারে, শুধুমাত্র একটি নিরপেক্ষ সংস্থা এমন একটি মূল্যায়নে পৌঁছাতে পারে যা চ্যালেঞ্জ করা যাবে না।
দ্বিতীয়ত, আমরা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের ফিরে আসা এবং পুনর্বাসনের সহজতর করতে পূর্ব পাকিস্তান এবং ভারত সীমান্তের উভয় পক্ষের শরণার্থী জন্য জাতিসংঘের হাই কমিশনার প্রতিনিধিদের স্থাপত্যের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করছি। এই প্রস্তাবটি মহাসচিব দ্বারা প্রস্তুত করা হয়েছিল, এবং এটি স্পষ্ট যে জলবায়ু উন্নতি এবং আস্থা প্রতিষ্ঠায় তজ্জাতীয় একটি পরিমাপ দীর্ঘ পথ যেতে পারবে। আমার সরকার পূর্ব পাকিস্তানের যেখানে শরণার্থীরা ফিরে আসছে সেসব এলাকা পরিদর্শন করতে এবং তাদের সাথে দেখা করতে জাতিসংঘের হাই কমিশনার প্রতিনিধিদের সব সুবিধা নিতে পারবে। তবে সীমান্তের ওপারে একটি পর্দা টানা হয়েছে যা উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তন ব্যাহত করছে।
তৃতীয়ত, কিভাবে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা অপনীত করা যেতে পারে, পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যাবস্থায় বাস্তুচ্যুত পূর্ব পাকিস্তানিদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা সংগঠিত করা যায় এসব বিষয়ে ভারত ও পাকিস্তান উভয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা নিরাপত্তা পরিষদের একটি ভাল কার্যালয়ের কমিটিকে আমন্ত্রণ করার প্রস্তাব করছি।
চতুর্থত, আমরা ভারতের সঙ্গে কাজ করতে, যে কোন পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় প্রস্তুত, উপায় এবং মাধ্যম বের করতে যার দ্বারা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন নিষ্পন্ন হতে পারে এবং সশস্ত্র সংঘাতের হুমকি সরানো যায়।
সুদীর্ঘ বিতর্ক না করে, যা নিছক তিক্ততা বৃদ্ধি করে, আমরা আশা করি যে ভারত সরকার এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবে না। আমি জানি এটা বলা যায় যে, “এগুলো আগেও প্রস্তুত করা হয়েছে, এবং আমরা এগুলোকে প্রত্যাখান করেছি”, কিন্তু আমরা তার প্রত্যাখ্যান পুনর্বিবেচনা করতে আবেদন জানাচ্ছি। কারণ এগুলো গঠনমূলক প্রস্তাবনা এবং পরিস্থিতির একটি সত্য উন্নতিবিধান সংগঠিত করতে পারে, যাতে আমরা উভয় মানবতাবাদ এবং শান্তি কর্তৃক দাবি করা চাহিদাসমূহ কম করার লক্ষ্যে অবদান রাখতে পারি, এবং আমি ভারতের প্রতিনিধিকে এই সকল প্রস্তাবনা তুচ্ছতাচ্ছিল্য না করতে আবারও আবেদন করছি ।
.
.
শিরোনামঃ ৮৪। ইয়াহিয়া-পদগর্নি আলোচনা।
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান।
তারিখ: ১৭ই অক্টোবর ১৯৭১।
.
ইয়াহিয়া-পদগর্নিআলোচনা
পাকিস্তানের অখন্ডতা ও সংহতি অক্ষুন্ন
রাখার উপর বিশেষ গুরুত্বআরোপ।
১৬ই অক্টোবর, ( এ পি পি, তাস)। – পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান গতরাতে সোভিয়েটইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নির সাথে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন।তারাঁ পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যাবলী সম্পর্কে মতবিনিময় করেন।অপরপক্ষে ভারতের প্রেসিডেন্ট ভি,ভি গিরীও গতকাল সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নির সাথে সাক্ষাৎকরেন।
হ্রদ্যতা ও আন্তরিকতায়য় পরিপূর্ণ এ আলোচনায় সোভিয়েট সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিকোলাই বিরুবীন এবং ভারতের প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারীও অংশগ্রহন করেন।প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনা কালে প্রেসিডেন্ট পদগর্নি পাকিস্তানের ঐক্য সংহতি তথা পাকিস্তান ও ভারতের মাঝে শান্তি রক্ষায় তার দেশের গভীর আগ্রহ ব্যাক্ত করেছেন বলে মনে হয়।তিনি পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব সম্পর্ক উন্নয়নে সোভিয়েট ইউনিয়নের কথা উল্লেখ করেন।
ইরানী রাজতন্ত্রের আড়াইহাজারতম বার্ষিকীতে যোগদানার্থে এখানে স্বল্পকালীন অবস্থানকালে প্রেসিডেন্ট অগা জেনারেল মোহাম্মাদ ইয়াহিয়া খান পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিস্ট বিষয়ে ইরানের শাহানশাহ ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা করেন।রুমানিয়া যুগোশ্লোভিয়া ও সোভিয়েট ইউনিয়নের প্রেসিডেন্টসহ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সাথেও মিলিত হন।
প্রেসিডেন্ট ইউনিয়ন,যুগোশ্লোভিয়া ও রোমানিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানগন পাক-ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতি তথা পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘর্ষের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে মনে হয়।পাকিস্তান তার একার উদ্যোগে উপমহাদেশের শান্তি অক্ষুন্ন রাখার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন রুমানিয়া ও যুগোশ্লোভিয়ার প্রেসিডেন্ট গভীরভাবে তা অনুধাবন করেন।প্রেসিডেন্ট পদগর্নির মনোভাবের পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন যে, উপমহাদেশের শান্তি অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারটা ভারতের মনোভাবের উপরই নির্ভর করছে।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন ব্যাপার একান্তভাবেই তার নিজস্ব ব্যাপার,আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিকতার দিক থেকে দিক থেকে সীমান্তের অপর প্রান্ত হতে সে ব্যাপারে হস্তক্ষেপের কোন যৌক্তিকতা নেই।প্রেসিডেন্ট এই মর্মেও অভিমত প্রকাশ করেন যে, ভারত যে শান্তির কথা বলে তার যথার্থতা প্রমান করতে হলে,তাকে পাকিস্তানের সীমান্ত থেকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার, অনুপ্রবেশ তথা অন্যান্য আক্রমনাত্বক তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।তা হলে পাকিস্তানের সীমান্ত বরাবর বর্তমানের আত্মরক্ষামূলক অবস্থানগুলো থেকে তার সশস্ত্র বাহিনী প্রত্যাহার করবে।
.
.
শিরোনামঃ ৮৫। পাকিস্তান যুদ্ধ চাহে না তবে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ নিবে- ইয়াহিয়া।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক।
তারিখ : ২০ অক্টোবর,১৯৭১।
.
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেনঃ
পাকিস্তান যুদ্ধ চাহে না, তবে আক্রান্ত হলে প্রতিশোধে নিবে।
প্যারিস,১৯শে অক্টোবর,(রয়টার)।- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক স্বাক্ষাৎকারে বলিয়াছেনযে,তাহার দেশ ভারতের সাহিত যুদ্ধ করিতে চাহে না,তবে ভারতীয় বাহিনী আক্রমন করিলে উহার প্রতিশোধ গ্রহন করা হইবে।গতকার প্যারিসের” লিমন্ডে ” পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার উক্ত সাক্ষাৎকারের বিবরনী প্রকাশিত হয়।পত্রিকার করাচীস্থ সংবাদদাতার সহিত এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান উপরোক্ত উক্তি করেন।
তিনি পাবসিপোলিসে সোভিয়েট ইউনিয়ন প্রেসিডেন্ট নিকোলাই পদগর্নির সহিত সাম্প্রতিক সাক্ষাতকালে ভারত কতৃক পাকিস্তানকে হুমকির কথা উল্লেখ করিয়াছেন বলিয়া জানান।প্রেসিডেন্ট পদগর্নি তাহাকে জানাইয়াছেন যে,সোভিয়েট ইউনিয়ন উপমহাদেশে শান্তি কামনা করে এবং আগষ্ট মাসে সম্পাদিত সোভিয়েত-ভারত চুক্তি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পরিচালিত হইবার নহে।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভারতকে আক্রমনাত্বক উৎসাহ প্রদান করিবেনা বলিয়া প্রেসিডেন্ট পদগর্নি জানাইয়াছেন।
ভারত হইতে বাঙালী গেরিলাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকিলে তিনি প্রতিশোধ গ্রহন করিবেন কিনা,জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন: আমি তা করব না,কারন আমি ভারতের সহিত যুদ্ধ চাহি না।আমরা পরম ধৈর্য্য প্রদর্শন করিতেছি।যুদ্ধ বাধিলে উহা শুধু উভয় দেশের জনগনের দু:খ-দুর্দশাই বৃদ্ধি করিবে এবং উহাতে উদ্ধাস্ত সমস্যার সমাধান হইবে না।
তবে পাকিস্তানি নেতা বলেন,এটা সুস্পশ্ট যে,তাহার দেশ উহার উহার অভ্যন্তরীন ব্যাপারে ভারতীয় হস্তক্ষেপ বরদাস্ত করিবে না।তিনি আরও বলেন যে,উভয় দেশের মধ্যকার বর্তমান সঙ্কটের পরিনাম কি হইবে তা ভারতের মনোভাবের উপরেই নির্ভরশীল। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আস্থার সহিত বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনাধীন।তিনি অভিযোগ করেন যে,ভারত দুস্কৃতিকারীদের আশ্রয় না দিলেআমাদের এলাকায় বোমা বর্ষণ না করিলে,ধংসাত্বক কার্যকলাপের উৎসাহ না দিলে এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা বিচ্ছিন্ন ও অর্থনীতি পঙ্গু করার জন্য ক্রমাগত অনুপ্রবেশকারী প্রেরন না করিলে এপ্রিল মাস হইতেই স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তন সম্পূর্ণ হইত।সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে কোনরূপ আলোচনায় অংশগ্রহন করিতে অস্বীকৃতি জানাইয়াছেন বলিয়া তিনি অভিযোগ করেন।ভারত যে কখনো পাকিস্তানের অস্তিত্ব মানিয়া নেয় নাই,তাহাই উক্ত মনোভাবের ভিত্তি বলিয়া তিনি উল্ল্যেখ করেন।
শেখ মুজিবর প্রসঙ্গে
বন্ধী শেখ মুজিবুর রহমানের সাহিত কোনরূপ আপোষের সম্ভাবনা আছে কিনা জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বলেন,শেখ মুজিবুর রহমানপর বিচার হইতেছে।পাকিস্তানের সেরা আইনজীবী কতৃক তাহার পক্ষ অবলম্বন এবং গোপন বিচার অনুষ্ঠানের ব্যাপারে আমি সম্মতি দিয়েছি।দেশের অখন্ডতা হুমকির সম্মুখীন হইলে সেক্ষেত্রে এ ধরনের গোপনে বিচার অনুষ্টান অস্বাভাবিক নহে।বিচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হইলে টবং পরিস্থিতি অনুকূলে হইলে তখন আমি উহার সকল বিবরনী করিব,তবে অদূর ভবিষ্যতে নয়।
দেশের অখন্ডতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে তাহার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে আলোচনা হইয়াছে বলিয়া গুজব শুনা যাইতেছে,তাহা সত্য কিনা জিজ্ঞাসিত হইলে প্রেসিডেন্ট বলেন:বিচার অনুষ্ঠানের ভার প্রদত্ত সামরিক আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমানিত না হলে আমি একজন বিদ্রোহীর সহিত পূনর্বার আলোচনা করিব না।
সর্বোপরি তিনি যে,জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন নাই,তাহা উপলব্ধি করাইবার বিষয়টি তাঁহার উপর নির্ভর করিতেছে।
.
.
শিরোনামঃ ৮৬। বিনা উস্কানীতে গোলাবর্ষণের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের তীব্র প্রতিবাদ।
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান
তারিখ: ২১অক্টোবর,১৯৭১
.
বিনা উস্কানীতে গোলাবর্ষনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের তীব্র প্রতিবাদ পরিনতির জন্যে ভারতই দায়ী থাকবে
ইসলামাবাদ,২০ শে অক্টোবর,(এ পি পি)। – পাকিস্তানের আজ ভারতকে জানিয়ে দিয়েছে যে,পাকিস্তানী ভূ-খন্ডে বিনা উস্কানীতে ভারতের সেনাবাহিনীর কামান ও মর্টারের গোলা বর্ষণের ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে সেজন্যে ভারত সরকারই একক ভাবে দায়ী থাকবে।গতকাল ভারতীয় হাই কমিশেনর কাছে প্রতিবাদলিপিতে পাকিস্তান ভারত সরকারকে অবহিত করেছে করেছে যে,বিনা উস্কানীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার কঠিন মনোভাব ধারন করেছে।
এই প্রতিবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান ভারতীয় সামরিক হস্তক্ষেপের ফলে জানমালের ক্ষতিপূরণ দাবী করার অধিকার সংরক্ষিত রাখছে।মঙ্গলবার শেষ রাতের দিকে পাকিস্তান সীমান্ত অতিক্রম করে।সদাসতর্ক পাকিস্তানী সৈন্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাদের দেখতে পায়।তখনই তাদের আক্রমন না করে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের পাকিস্তান এলাকার বেশ ভেতরে ঢোকার সুযোগ দেয়।যখন তারা হিলির উত্তরে সীমান্তবর্তী গ্রাম আপতইর-এ পৌছেঁ পাকিস্তানী সৈন্যরা তাদের উপর কার্যকরভাবে গুলিবর্ষণ শুরু করে।স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রে সজ্জিত অনুপ্রবেশকারীরও পাল্টা গুলিবর্ষণ করে।কিন্তু শিগগিরই তারা ভারতীয় এলাকার দিকে পশ্চাদপসরণ শুরু করপ।তখন তাদের ৯জন নিহত হয়।পাকিস্তানী সৈন্যরা সীমান্তের দিকে পলায়নকারী ভারতীয় সৈন্যদের পশ্চাদ্ধাবন করে এবং আরো তিনজনকে হত্যা করে।অনুপ্রবেশকারীরাও একটি হালকা মেশিনগান, ৮টি রাইফেল,২০ টি হাতবোমা এবং প্রচুর কার্তুজ ফেলে পালিয়েছে।
গোলাবর্ষণ
এদিকে ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনী আজও কুমিল্লা,যশোর,রংপুর এবং ময়মনসিংহ জেলারর সীমান্তবর্তী গ্রামসমূহে কোন রকম উস্কানী ছাড়াই গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখে।
উস্কানি ছাড়াই ভারতীয় গোলন্দাজ বাহিনীর এরূপ নৃশংস গোলাবর্ষণের ফলে ৩৭ জন নিরপরাধ গ্রামবাসী নিহত এবং ৪৪ জন আহত হয়েছে।নিহতদের মধ্যে ১২ জন মহিলা ও ১০ টি শিশুও রয়েছে।
আজকের ভারতীয় গোলাবর্ষণে কুমিল্লার ৬টি,যশোরের আটটি, ময়মনসিংহের ২টি এবং রংপুর জেলার ২ টি গৃরাম ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
মাঝারি কামান, ফিল্ডগান এবং বিভিন্ন ধরনের মর্টর থেকে পনেরো শ’র বেশী গোলা এইসব গ্রামে বর্ষিত হয়.
.
.
শিরোনামঃ ৮৭। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে জেনারেল ইয়াহিয়ার উপর – পত্র
সূত্রঃ জাতিসংঘ দলিলপত্র উদ্ধৃতিঃ বাংলাদেশ ডকুমেন্টস
তারিখঃ ২২ অক্টোবর, ১৯৭১
জাতিসংঘ মহাসচিবের ২০ অক্টোবর, ১৯৭১ ইং প্রেরিত চিঠির জবাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রত্যুত্তর – ২২ অক্টোবর, ১৯৭১
আমার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে আপনার ২০ অক্টোবর,১৯৭১ ইং প্রেরিত চিঠি আজকে হাতে পেয়েছি।
পাক-ভারত সীমান্তে চলমান অবস্থার অবনতি বিষয়ে আপনার সদয় বিবেচনার ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ একমত। শান্তি আনয়ন এবং উভয় দেশের দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা,যা মানুষের জন্যে শুধু দুর্যোগ বয়ে আনে,সেটি দূর করার জন্যে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। ইতোমধ্যে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বোমা হামলায় শত শত পুরুষ,নারী ও শিশু নিহত হয়েছে এবং অনেক লোকজন বাস্তুহারা হয়েছে।
দুঃখের বিষয় হলো, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে নয়াদিল্লীতে এক প্রেস কনফারেন্সে দুই দেশের সীমান্ত থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। সীমান্তের সাথে ভারতের যোগাযোগ পাকিস্তানের চেয়ে ভাল – এটিই এর মূল কারণ।
পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান সীমান্তে অস্ত্রশস্ত্রসহ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমি কোনো মতানৈক্য চাই না। যুদ্ধবিরতি চলাকালীন উভয় পাশে দশজন করে সৈন্য থাকবে। একই সাথে পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ এবং বোমা হামলা বন্ধ করতে হবে।
জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক দল যাতে সীমান্তের উভয় পাশে অবস্থান করে সৈন্য প্রত্যাহার পর্যবেক্ষণ করে এবং শান্তি প্রক্রিয়া পরিচালনা করে সে ব্যাপারে ও সুপারিশ করছি। শুধুমাত্র আগের মত স্বীকৃত সীমান্তরক্ষীরা সীমান্তে অবস্থা করবে।
এখানে আপনার মধ্যস্থতার বিষয়টিকে স্বাগত জানাই এবং সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্যে খুব শীঘ্র ভারত এবং পাকিস্তান সফর করবেন বলে আশা রাখছি।আমি নিশ্চিত এটি একটি প্রশংসনীয় এবং কাঙখিত প্রভাব ফেলবে এবং শান্তির পথে এগিয়ে নিবে।
১৯ অক্টোবর ভারতীয় নেতারা লাহোর এবং শিয়ালকোট সীমান্তের শহরসমূহ দখল করার যে হুমকি দিয়েছেন,তার গুরুত্ব বিবেচনা করে আপনার ভারত ও পাকিস্তান সফরের বিষয়ে একটি ঘোষণা আশা করছি।
পরিশেষে, এই শান্তি প্রক্রিয়ায় আমার দেশের বিভিন্ন অংশে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
মহোদয়,অনুগ্রহ করে,আমার পূর্ণ বিবেচনার নিশ্চয়তা গ্রহণ করুন।
.
.
শিরোনামঃ ৮৮। জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনের তথ্যাবলী
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৩ অক্টোবর, ১৯৭১
.
মনোনয়নপত্র বাছাই সমাপ্ত
১৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
এম এন এ নির্বাচিত
পনেরো জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর নির্বাচন কমিশনসূত্রে একথা জানানো হয়েছে বলে এপিপির খবরে প্রকাশ।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে ৫ জন পিডিপির, ৫ জন জামাতে ইসলামীর, ২ জন কনভেনশন মুসলিম লীগের, ২ জন নেজামে ইসলামের ও ১ জন কাইয়ুম লীগের।
নির্বাচিত সদস্যরা হইতেছেনঃ-
পিডিপি
সৈয়দ আজিজুল হক ( এন ই ৫৮, বাখরাগঞ্জ ১)
সৈয়দ মুসলেহ উদ্দীন ( এন ই ৬২, ময়মনসিংহ ১৭)
জনাব দলিলুর রহমান ( এন ই ১৪৩, কুমিল্লা ২)
জনাব মোহাম্মদ নুরুল্লাহ ( এন এ ১৫৩, চট্টগ্রাম ১)
জনাব ফজলুল হক ( এন ই ১২২, সিলেট ৩)
জামাতে ইসলামী
জনাব সাদ আহমদ ( এন ই ৪০, কুষ্টিয়া ২)
জনাব আবদুল মতিন ( এন ই ৪১, কুষ্টিয়া ৩)
অধ্যাপক ইউসুফ আলী ( এন ই ১০৮, ঢাকা ৫)
জনাব মতিউর রহমান শাহ ( এন ই ৬৩, বাখরাগঞ্জ ৬)
জনাব জবান উদ্দীন আহমদ ( এন ই ১১, রংপুর)
কনভেনশন মুসলীম লীগ
জনাব মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ ( এন ই ১১৩, ঢাকা ১০)
জনাব এম, এ, মতিন ( এন ই ২৬, পাবনা ৩)
নেজামে ইসলাম
জনাব আশরাফ আলী ( এন ই ১৩১, কুমিল্লা ১)
জনাব আবদুল হক ( এন এ ১৪৪, কুমিল্লা ১৪)
কাইয়ুম মুসলীম লীগ
জনাব মুজিবর রহমান ( এন ই ৯১, ময়মনসিংহ ১৬)
একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। ইনি হচ্ছেন জনাব মাসুদুর রহমান ( এই ই ৪৭, যশোর ৫)। ফলে জাতীয় পরিষদের ৭৭ টি আসনের উপনির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা এখন ২০১ জনে দাঁড়িয়েছে। একটি নির্বাচনী এলাকার খবর এখনো পাওয়া যায়নি।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ হচ্ছে ২৮শে অক্টোবর।
উপনির্বাচন প্রার্থীদের তালিকা
জাতীয় পরিষদ
এন ই ৮৮, ময়মনসিংহ ১৩ মাওলানা মোঃ মনজুরুল হক ও এ কে ফজলুল হক।
এন ই ৪৩, যশোর ১ এম এ রশিদ, পিডিপি ও শেখ শরফ উদ্দীন আহমদ, কনভেনশন।
এন ই ৪৪, যশোর ২ সৈয়দ শামসুর রহমান, কাউন্সিল ও আহমদ রফিউদ্দিন, স্বতন্ত্র।
এন ই ৪৯, যশোর ৭ মৌলভী সোলেমান মোল্লা, জামাত ও আমীর হোসেন, স্বতন্ত্র।
এন ই ৫৮, বাখরগঞ্জ ১ সৈয়দ আজিজুল হক, পিডিপি।
এন ই ৬২, বাখরগঞ্জ ৫ মৌলভী আবদুর রব, মোঃ ইসমাইল খান, আবদুস সোবহান মৃধা, কাইয়ুম ও মোঃ আবদুল আজিজ।
এন ই ৬০, বাখরগঞ্জ ৩ ব্যারিস্টার আখতার উদ্দীন, কনভেনশন, এম শমশের আলী, শামসুদ্দীন আহমদ, আবদুর রব ও আবুল হোসেন।
এন ই ৬৩, বাখরগঞ্জ ৬ মহিউর রহমান শাহ, জামাত।
এন ই ২, রংপুর ২ আবুল বাশার, কাউন্সিল, সৈয়দ আলী, কাইয়ুম আলহাজ গরির উদ্দীন আহমদ, কনভেনশন, সৈয়দ কামাল হোসেন রিজভী, পিপিপি।
এন ই ১৭, দিনাজপুর ৫ কামরুজ্জামান, মোঃ আবুল কাশেম, আবদুল ওয়াদুদ, স্বতন্ত্র, মোঃ সোহেল, পিপিপি।
এন ই ২৮, পাবনা ৫ মুন্সী আবদুল মজিদ, স্বতন্ত্র; রিয়াজ উদ্দীন মিয়া, স্বতন্ত্র; সৈয়দ আসগর হোসেন জায়েদী, কাইয়ুম।
এন ই ২৯, পাবনা ৬ আবদুস সোবাহান, জামাত, মোঃ মোতালেব আলী, স্বতন্ত্র
এন ই ১৪, নোয়াখালী ২ আবদুল জব্বার খন্দকার, পিডিপি, খাজা আহমদ, মোসলেহ উদ্দীন আহমদ, শামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, কনভেনশন।
এন ই ১৪৭, নোয়াখালী ৩ সাইদুল হক এডভোকেট, কনভেনশন, মাওলানা মকবুল আহমদ, নেজাম, মোঃ গোলাম মোস্তফা।
এই ই ১৫০, নোয়াখালী ৬ মোঃ হারিস মিয়া, কনভেনশন, মোঃ সফিকুল্লাহ, জামাত।
এন ই ১৫১, নোয়াখালী ৭ আবদুর ওয়াহাব উকিল, পিডিপি, আবু সুফিয়ান, স্বতন্ত্র।
এন ই ১২০, সিলেট ১ নাসির উদ্দিন, পিডিপি, আবদুল বারী, কনভেনশন।
এন ই ১২১, সিলেট ২ সৈয়দ কামরুল আহসান, নেজাম, আবদুর রহমান, জামাত।
এন ই ১২২, সিলেট ৩ ফজলুল হক, পিডিপি।
এন ই ১২৩, সিলেট ৪ সৈয়দ আবুল খায়ের, স্বতন্ত্র, মাহিবুর রহমান, কনভেনশন, মোঃ আবদুস সাত্তার, জামাত, মোঃ মইনুল ইসলাম, জামাত, হাজি হাবিবুর রহমান চৌধুরী, কনভেনশন।
এন ই ১২৯, সিলেট ১০ গোলাম জিলানী চৌধুরী, পিডিপি, মেসবাউদ্দোহা আহমদ, কনভেনশন, আবদুস সাত্তার পীর, জামাত।
এন ই ১৩৫, কুমিল্লা ৫ মোঃ সাজেদুল হক, মোঃ বজলুর রহমান চৌধুরী, আবদুল মান্নান, আবদুল মজিদ।
এন ই ১৩৬, কুমিল্লা ৬ মোঃ ইব্রাহীম মজুমদার, হাশমত উল্লাহ, হাজী মজহারুল হক চৌধুরী, আলী আসগর।
এন ই কুমিল্লা ৮ তমিজ উদ্দিন পিডিপি, আব্দুর রব।
এন ই ১১, রংপুর ১১ জবান উদ্দীন আহমদ, জামাত।
এন ই ৭১, টাঙ্গাইল ২ মৌলভী ওয়াজেদ আলী খান পন্নী, স্বতন্ত্র ও গোলাম আজম, জামাত।
এন ই ৭৩, টাঙ্গাইল ৩ এম এ মান্নান, কনভেনশন, মাওলানা আবদুস সামাদ দেওয়ান, জামাত, মাওলানা আবদুল হাই হানাফী (লাহোরী), নেজাম।
এন ই ৭৫, টাঙ্গাইল ৪ অধ্যাপক এ খালেক, জামাত, ডাঃ শওকত আলী ভুঁইয়া, কনভেনশন, হাকিম হাবিবুর রহমান, কনভেনশন।
.
দৈনিক পাকিস্তান, ২৪ অক্টোবর (১৯৭১)
আরও ৩ জন প্রার্থী বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
আরও ৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ১৮ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশন সূত্রে এ কথা জানানো হয়েছে বলে এপিপির খবরে প্রকাশ।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত প্রার্থী ৩ জন হচ্ছেনঃ কাউন্সিল মুসলিম লীগের জনাব আসমত আলী ( এন এ ৪২, কুষ্টিয়া ৪), নেজামে ইসলামের সৈয়দ কামরুল আহসান ( এন ই ১২১, সিলেট ২) ও জনাব সাজেদুল হক, (এন ই ১৩৫, কুমিল্লা ৫)।
২০১ জন প্রার্থী এখন জাতীয় পরিষদের ৭৮টি নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। বাছাইয়ের পর কুষ্টিয়া, যশোর, সিলেট ও কুমিল্লা জেলার ৮ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
কিন্তু এগুলো চুড়ান্ত নয়। কারণ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে এগুলোর বিরুদ্ধে আবেদন রয়েছে। নির্বাচন কমিশনসূত্রে জানানো হয় যে, ফরিদপুর জেলার এন ই ৯৯ নির্বাচনী এলাকার উপনির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দিতা করার জন্য ৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে। বাছাইয়ের পর যাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে তারা হচ্ছেনঃ
কাউন্সিল লীগের মিয়া মনসুর আলী (এন ই ৪২), জামাতের মাওলানা হাবিবুর রহমান, কনভেনশন লীগের জনাব আকবর আলী মোল্লা (এন ই ৪৭), স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব মাসুদুর রহমান (এন ই ১২১), জনাব আবদুর রহমান (এন ই ১৩৫), জনাব বজলুর রহমান, জনাব আবদুল মান্নান ও জনাব আবদুল মজিদ।
দৈনিক পাকিস্তান, ২৪ অক্টোবর (১৯৭১)
আর ১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ধন্দিতায় এম এন এ নির্বাচিত
আর ১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ধন্দিতায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে বিনা প্রতিদ্ধন্দিতায় নির্বাচিত প্রার্থীর সংখ্যা ১৯ জনে উন্নীত হয়েছে। পিপিআই এর খবরে প্রকাশ, গতকাল রবিবার জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই সম্পর্কে প্রাপ্ত আরো বিস্তারিত খবরে জানা গেছে যে, এন ই ৪৫, যশোর ৩ নির্বাচনী এলাকা থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী জনা আবদুল ওয়াহাব বিনা প্রতিদ্ধন্দিতায় এম এন এ নির্বাচিত হয়েছেন।
তারা দুজন প্রতিদ্ধন্ধী কাউন্সিল মুসলিম লীগের সৈয়দ শামসুর রহমান ও কনভেনশন মুসলিম লীগের জনাব রফিউদ্দিন তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এর ফলে বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত প্রার্থীদের দলওয়ারী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নিম্নরুপঃ
পিডিপি-৫
জামাত-৫
কনভেনশন-৩
নেজাম-৩
কাইয়ুম মুঃ লীগ-১
কাউন্সিল লীগ-১
এন ই ১৩৫ নির্বাচনী এলাকা থেকে বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত জনাব সাজেদুল হক কোন দলভুক্ত তা জানা যায়নি।
দৈনিক পাকিস্তান, ২৯ অক্টোবর (১৯৭১)
৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত
পূর্ব পাকিস্তানের জাতীর পরিষদের উপনির্বাচনে ৩১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিবসে গতকাল প্রদেশের ৭৮টি উপ-নির্বাচনী আসনের মধ্যে ৩৩ টির সংবাদ কমিশনের নিকট এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে ৩১ আসনের প্রার্থীগণ বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
বাকী দুটি আসনের মধ্যে এন ই ৪৯ যশোর ৭ নির্বাচনী আসনে জামাতের প্রার্থী জনাব সোলেমান আলী মোল্লার সাথে পিপলস পার্টির জনাব আমীর হোসেনের প্রতিদ্ধন্ধিতা হচ্ছে এবং এন ই ৪৭ যশোর ৫ নির্বাচনী আসনে পিডিপির জনাব মোশারফ হোসেনের সাথে পিপলস পার্টির জনাব ওয়াহিদ আলী আনসারী প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন।
বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন কাইয়ুম লীগের সাধারণ সম্পাদক খান আবদুস সবুর, পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম, পূর্ব পাকিস্তান কাউন্সিল মুসলিম লীগের সভাপতি খাজা খয়ের উদ্দিন, পূর্ব পাকিস্তান পিডিপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আজিজুল হক এবং প্রাদেশিক রাজস্বমন্ত্রী ও জামাত প্রার্থী মওলানা এ কে এম ইউসুফ। বিনা প্রতিদ্ধন্ধিতায় নির্বাচিত ৩১ জনের মধ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির হচ্ছেন ৩ জন, পিডিপির ৭ জন, কাইয়ুম লীগের ৪ জন, জামাতে ইসলামীর ৮ জন, কনভেনশন মুসলিম লীগের ২ জন, কাউন্সিল মুসলিম লীগের ২ জন ও নেজামে ইসলামের ৫ জন।
তালিকা
১। এন ই-১১ রংপুর
জবান উদ্দিন আহমদ (জে আই)
২। এন ই-২৬ পাবনা
এম এ মতিন (কনভেনশন লীগ)
৩। এন ই-৪০ কুষ্টিয়া
সাদ আহমেদ (জে আই)
৪। এন ই-৪১ কুষ্টিয়া
মোঃ এ মতিন (জে আই)
৫। এন ই-৪২ কুষ্টিয়া
আজমত আলী (সি এম এল)
৬। এন ই-৫৮ বাকেরগঞ্জ
সৈয়দ আজিজুল হক (পিডিপি)
৭। এন ই-৬৩ বাকেরগঞ্জ
শাহ মতিউর রহমান (এন আই)
৮। এন ই-৯১ ময়মনসিংহ
মজিবুর রহমান (কিউ এম এল)
৯। এন ই-৯২ ময়মনসিংহ
মওলানা মোসলেহ উদ্দীন (পিডিপি)
১০। এন ই-১০৮ ঢাকা
অধ্যাপক ইউসুফ আলী (জে আই)
১১। এন ই-১১৩ ঢাকা
মোঃ শহিদুল্লা এস কিউ এ (কনভেনশন লীগ)
১২। এন ই-১২২ সিলেট
ফজলুল হক (পিডিপি)
১৩। এন ই-১২১ সিলেট
সৈয়দ কামরুল আহসান (এন আই)
১৪। এন ই-১৩১ কুমিল্লা
এম আশরাফ আলী (এন আই)
১৫। এন ই-১৪৩ কুমিল্লা
দলিলুর রহমান (পিডিপি)
১৬। এন ই-১৪৪ কুমিল্লা
মৌলভী আবদুল হক (এন আই)
১৭। এন ই-১৫৩ চট্টগ্রাম
মোঃ নুরুল্লা (পিডিপি)
১৮। এন ই-৭১ টাঙ্গাইল
গোলাম আজম (জে আই)
১৯। এন ই-৫৩ খুলনা
আবদুস সবুর খান (কিউ এম এল)
২০। এন ই-৫১ খুলনা
মওলানা এ কে এম ইউসুফ (জে আই)
২১। এন ই-৯৯ ফরিদপুর
আলীমুজ্জামান চৌধুরী (পিডিপি)
২২। এন ই-৪৫ যশোর
আবদুল ওয়াহাব (পিপিপি)
২৩। এন ই-৪৬ যশোর
খাজা মোঃ শাহ (এন আই)
২৪। এন ই-১০৭ ঢাকা
আকরাম হোসেন খান (পিপিপি)
২৫। এন ই-২ রংপুর
সৈয়দ কামাল হোসেন রিজভী (পিপিপি)
২৬। এন ই-১০ রংপুর
সাইদুর রহমান (কিউ এম এল)
২৭। এন ই-১৪ দিনাজপুর
মওলানা তমিজউদ্দীন (জে আই)
২৮। এন ই-৩৯ কুষ্টিয়া
আফিল উদ্দীন (কিউ এম এল)
২৯। এন ই-১১৭ ঢাকা
এস কে খয়ের উদ্দিন (সি এম এল)
৩০। এন ই-২০ বগুড়া
মোশহুল ইসলাম ( পিডিপি )
৩১। এন ই-১৯ বগুড়া
জনাব আব্বাস আলী খান ( জে আই )
.
.
দৈনিক পাকিস্তান, ৩০ অক্টোবর ১৯৭১
মোট সংখ্যা ৫০-এ দাঁড়াল
জাতীয় পরিষদে আরো ১৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত
(স্টাফ রিপোর্টার)
গতকাল শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানের উপ-নির্বাচনে আরো ১৯ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বলে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ তাদের প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করায় এইসব প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
ফলে এ যাবৎ জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০টিতে। গতকাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৯ জন সদস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন পিডিপির ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব মাহমুদ আলী, কাউন্সিল মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি জনাব সফিকুল ইসলাম ও পিডিপির জনাব আব্দুল জব্বার খন্দকার। ফলে পিডিপি, জামাতে ইসলামী ও কনভেনশন মুসলিম আরো ৪ টি করে আসন লাভ করেছেন এবং পিপলস পার্টি ও কাউন্সিল মুসলিম লীগ প্রত্যেকে আরো ৩টি করে আসন পেয়েছে।
দলওয়ারী নির্বাচিত সদস্যদের সংখ্যা হচ্ছেঃ
জামাতে ইসলামী | -১২ |
পিডিপি | -১১ |
পিপলস পার্টি | -৬ |
কনভেনশন মুসলিম লীগ | -৬ |
নেজামে ইসলাম | -৬ |
কাউন্সিল মুসলিম লীগ | -৫ |
কাইয়ুম মুসলিম লীগ | -৪ |
নির্বাচন কমিশন গতকাল যে ১৯ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন নিম্নে তাদের নাম দেয়া হলোঃ
১। |
এন ই-১৭ দিনাজপুর ৫ জনাব কামরুজ্জামান পিডিপি।
|
২। |
এন ই-৭৮ ময়মনসিংহ-৩ জনাব মোঃ এস এম ইউসুফ জামাত।
|
৩।
|
এন ই-৮৮ ময়মনসিংহ – ১০ মওলানা মনজুরুল হোক নেজামে।
|
৪। |
এন ই-১৪৬ নোয়াখালী ২ জনাব আবদুল জব্বার খন্দকার নেজাম।
|
৫। |
এন ই-১৪৭ নোয়াখালী ৩ জনাব সাইদুল হক এডভোকেট কাউন্সিল লীগ।
|
৬। |
এন ই-১৫০ নোয়াখালী ৬ জনাব সফিউল্লাহ জামাত।
|
৭। |
এন ই-১৫১ নোয়াখালী ৭ জনাব আবু সুফিয়ান কনভেনশন লীগ।
|
৮। |
এন ই-৭৩ টাঙ্গাইল ৩ জনাব আব্দুল মান্নান কনভেনশন লীগ।
|
৯। |
এন ই-৭৫ টাঙ্গাইল ৫ অধ্যাপক এ খালেক জামাত
|
১০। |
এন ই-৯ রংপুর ৯ জনাব রইসউদ্দীন আহম্মদ পিপিপি।
|
১১। |
এন ই-১২৭, সিলেট ৮ জনাব মাহমুদ আলী পিডিপি।
|
১২। |
এন ই-১৩২, কুমিল্লা ২ জনাব এ কিউ এম শফিকুল ইসলাম কাউন্সিল লীগ।
|
১৩। |
এন ই-১৫, দিনাজপুর ৩ জনাব আব্দুল্লাহ আল কাফি জামাত।
|
১৪। |
এন ই-১২০, সিলেট ১ জনাব নাসির উদ্দিন পিডিপি।
|
১৫। |
এন ই-১২৩, সিলেট ৪ হাজী হাবিবুর রহমান চৌধুরী কনভেনশন লীগ।
|
১৬। |
এন ই-৪৩, যশোর ১ জনাব এম রশীদ পিডিপি।
|
১৭। |
এন ই-৪৪, যশোর ২ সৈয়দ শামসুর রহমান কাউন্সিল লীগ।
|
১৮। |
এন ই-৬০, বাকেরগঞ্জ ৩ জনাব শামস উদ্দীন আহমদ পিডিপি।
|
১৯। |
এন ই-৬২, বাকেরগঞ্জ ৫ মাওলানা আবদুর রব কনভেনশন লীগ। |
দৈনিক পাকিস্তান, ৩১ অক্টোবর (১৯৭১)
এ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫২ জন নির্বাচিত
জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনে আরো দুজন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে গতকাল শনিবার নির্বাচনী কমিশনের এক ঘোষণায় জানানো হয়। এর ফলে মোট জাতীয় পরিষদের ৭৮ টি শূন্য আসনের মধ্যে এ পর্যন্ত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা ৫২ জনে উন্নীত হলো।
সর্বশেষ যে কয়জন প্রার্থীকে সাময়িকভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে তারা হলেনঃ এন ই-৯৭, ফরিদপুর ৪ নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে কনভেনশন লীগের জনাব আব্দুর রহমান ও এন ই-৩৫, রাজশাহী ৬ নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে জামাতে ইসলামীর জনাব আফাজ উদ্দীন আহমদ।
শুক্রবার নির্বাচনী কমিশন ভুলক্রমে ঘোষণা করেছিলেন যে, এন ই-৩৫ নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। গতকাল পূর্বদিনের ঘোষণা সংশোধন করে আফাজউদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন বলে ঘোষণা করেন। জাতীয় পরিষদের ৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সম্পর্কে এখনো কোন খবর পাওয়া যায়নি।
যশোর হতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জাতীয় পরিষদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত সদস্য জনাব এম, এ, ওহাব কাইয়ুম লীগে যোগদানের কথা ঘোষণা করেছেন। কাইয়ুম লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ খবর পরিবেশন করা হয়। তিনি এন ই-৪৫ নির্বাচনী কেন্দ্র হতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
দৈনিক পাকিস্তান, ১০ নভেম্বর (১৯৭১)
জাতীয় পরিষদঃ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্য
সংখ্যা ৫৮ জনে উন্নীত
(স্টাফ রিপোর্টার)
গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় পরিষদের উপনির্বাচনের আরও ৬ জন প্রার্থীকে সাময়িকভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে প্রদেশের জাতীয় পরিষদের ৭৮ টি শূন্য আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্যের সংখ্যা ৫৮ জনে দাঁড়িয়েছে। বাকী ২০টি জাতীয় পরিষদ আসনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে নির্বাচনী কমিশনসূত্রে জানা গেছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সদস্যদের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী ৫৮ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যের মধ্যে জামাতে ইসলামীর ১৫ জন, পিডিপির ১২ জন, কনভেনশন মুসলিম লীগের ৭ জন, কাইয়ুমপন্থী মুসলিম লীগের ৭ জন, নেজামে ইসলামীর ৬ জন, পাকিস্তান কাউন্সিল মুলিম লীগের ৬ জন ও বাকী ৬ জন পিপিপির সদস্য।
পিডিপি নেতা জনাব ইউসুফ আলী চৌধুরীকে (মোহন মিয়া) এন ই-৯৬, ফরিদপুর-২ নির্বাচনী এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী জনাব মকিম উদ্দিনের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।
চট্টগ্রামে এন ই-১৫৫, নির্বাচনী এলাকায় পাকিস্তান কনভেনশন মুসলিম লীগের সভাপতি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরী ও পিডিপি নেতা জনাব মাহমুদুন নবী চৌধুরীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
এছাড়া জনাব মাহমুদুন নবী চৌধুরী চট্টগ্রামের এন ই-১৫৮ নির্বাচনী এলাকা থেকেও পাকিস্তান শান্তি ও কল্যান পরিষদের সভাপতি মৌলভী ফরিদ আহমদসহ অপর ৩ জন প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
গতকাল যে ৬ জন প্রার্থীকে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে তাঁরা হচ্ছেনঃ এন ই-৩২, রাজশাহী-৩ জনাব জসীম উদ্দিন আহমদ (কাইয়ুম লীগ), এন ই-৩৩, রাজশাহি-৪ জনাব মমতাজ উদ্দিন আহমদ (পিডিপি), এন ই-৩৬, রাজশাহি-৭ জনাব আব্দুস সাত্তার খান চৌধুরী (কাউন্সিল কাইয়ুম লীগ), এন ই-২৮, পাবনা-৫ সৈয়দ আফজাল হোসেন জাহেদী (কাইয়ুম মুসলিম লীগ), এন ই-২৯, পাবনা-৬ মাওলানা আব্দুস সোবহান (জামাতে ইসলামী) ও এন ই-৬৬, বাকেরগঞ্জ-৯ মওলানা আব্দুর রহীম (জামাতে ইসলামী)।
.
.
শিরোনামঃ ৮৯। জেনারেল ইয়াহিয়ার তিন দফা শান্তি প্রস্তাবঃ জাতিসংঘের মধ্যস্থতা প্রয়াস অভিনন্দিত
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৬ অক্টোবর, ১৯৭১
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার তিন দফা শান্তি প্রস্তাব
জাতিসংঘের মধ্যস্ততা প্রয়াস অভিনন্দিত
থান্টকে অবিলম্বে সফরে আসার অনুরোধ
(নিজস্ব প্রতিনিধি)
ইসলামাবাদ, ২৫শে অক্টোবর। -প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান উপমহাদেশে শান্তি রক্ষার জন্য উথান্টের মধ্যস্থতার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং উভয় পক্ষের সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য তাঁকে অবিলম্বে পাকিস্তান ও ভারত সফরের অনুরোধ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সীমান্তের উভয় পার থেকে পাকিস্তান ও ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে তিন দফা শান্তি প্রস্তাব পেশ করেছেন এবং সেক্রেটারি জেনারেল উথান্টের প্রতি তা কার্যকর করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
এই তিন দফা প্রস্তাব হচ্ছেঃ প্রথমতঃ উভয় দেশের সেনাবাহিনী পাক-ভারত আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে সরে যাবে। দ্বিতীয়তঃ সৈন্য প্রত্যাহারের তদারকের জন্য জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হবে এবং তৃতীয়তঃ সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য উথান্ট উপমহাদেশ সফর করবেন। উপমহাদেশে বিস্ফোরণোম্মুখ পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য উথান্ট মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের কাছে যে চিঠি দিয়েছেন তার জবাবে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান উক্ত প্রস্তাব দিয়েছেন।
উথান্ট ২০শে অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ক্ষিপ্রতার সাথে ২১শে অক্টোবর জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় জবাব গতরাত পর্যন্ত জাতিসংঘে পৌছায়নি। উথান্টের পত্রের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা না হলেও বোঝা যাচ্ছে যে আন্তর্জাতিক সীমান্তে বিস্ফোরণোম্মুখ পরিস্থিতি এবং অর্থহীন ও ভয়াবহ যুদ্ধের গুরুতর পরিণতির তিনি একটা বাস্তব বিশ্লেষণ করেছেন।
ব্যক্তিগত মধ্যস্থতার সম্ভাবনা
উথান্টের মধ্যস্থতা প্রস্তাব সুনির্দিষ্ট ভাষায় গৃহীত না হলেও তার অর্থ নিম্নলিখিত দুটোর একটি হতে পারেঃ
তিনি ব্যক্তিগত মধ্যস্থতা করতে পারে কিংবা, বিকল্প পথ হিসাবে জাতিসংঘ সনদের ৯১ ধারা অনুযায়ী তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে চিঠি দিতে পারেন। তিনি নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে চিঠি দিলে তিনি হয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকবেন কিংবা অন্ততঃপক্ষে কঠোর মনোভাব গ্রহন করা হবে।
উথান্টের জুলাই মাসেও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছেও চিঠি দিয়েছিলেন কিন্তু তা ৯১ ধারা অনুযায়ী দেয়া হয়নি। সেটি ছিল গোপন ও ঘরোয়া ধরনের চিঠি। উথান্ট তার পত্রে উল্লেখ করেছেন যে, কাশ্মীরের যুদ্ধবিরতি সীমারেখা বরাবর শান্তিরক্ষা তদারকের জন্য জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রয়েছে কিন্তু পাক-ভারত সীমান্তে জাতিসংঘের অনুরূপ কোন ব্যবস্থা নেই।
এই পর্যবেক্ষণের অর্থ সম্পর্কে কোন আভাস পাওয়া না গেলেও প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত ধরে নিয়ে তার পূর্বের প্রস্তাবের পুনরুল্লেখ করেছেন যে, সৈন্যদের স্বাভাবিক শান্তিকালীন অবস্থানে সরিয়ে নেয়া সম্ভব না হলেও উভয়পক্ষে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির জন্য তাদের অন্ততঃপক্ষে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক
প্রেসিডেন্ট আরোও প্রস্তাব করেছেন যে, জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকগণ সীমান্তের উভয় পারে সৈন্য অপসারণ তদারক ও শান্তি বজায় রাখবেন। একই সঙ্গে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ এবং পাকিস্তান সীমান্তের ভেতর গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে।
প্রেসিডেন্ট এর এ চিঠি ভারতকে বেকায়দায় ফেলেছে। জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের অধিবেশন চলতিকালে উথান্টের সফর এবং শান্তির জন্য জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক মোতায়েন এই উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা ভারতের পক্ষে কঠিন হবে।
প্রেসিডেন্টের চিঠির বিবরণ
আমি আপনার ১৯৭১ সালের ২০শে অক্টোবরের বাণী আমার রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে পেয়েছি। পাক-ভারত সীমান্তে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে আপনার এই অভিমতের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। উভয় দেশের শান্তি রক্ষা এবং ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়ানোর ব্যপারে আপনার মতো আমিও গভীর উদ্বেগ বোধ করছি।
কারণ ভয়াবহ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে তাতে কোটি কোটি লোকের শুধুমাত্র দুর্ভোগই নেমে আসবে। ইতিমধ্যেই আমাদের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে গোলাবর্ষণের ফলে শত শত নারী ও শিশু হতাহত এবং অসংখ্য লোক গৃহহারা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ১৯৭১ সালের ১৯শে অক্টোবর নয়াদিল্লীতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী সীমান্ত থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন।
যুক্তি দেখানো হয়েছে যে, সীমান্তে ভারত অপেক্ষা পাকিস্তানী সৈন্যরা আরো কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই প্রশ্নে আমি কোন বিতর্কে না নেমে প্রস্তাব করছি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয় অঞ্চলের আন্তর্জাতিক সীমানা বরাবর থেকে গোলন্দাজ ও সাঁজোয়া বাহিনীসহ উভয় দেশের সেনাবাহিনীকে শান্তিকালীন অবস্থানে সরিয়ে নেয়া না গেলেও অন্ততপক্ষে উভয় পক্ষের নিরাপত্তা বোধের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য পরস্পরের গ্রহণযোগ্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে।
একই সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তানে আমাদের সীমান্তে সশস্ত্র অনুপ্রবেশ ও গোলাবর্ষণ বন্ধ করতে হবে। আমি আরো সুপারিশ করছি যে, সৈন্য প্রত্যাহার পর্যবেক্ষণ ও শান্তি তদারকের জন্য সীমান্তের উভয় পারে জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হোক। সীমান্ত ঘাঁটিগুলোতে শুধুমাত্র স্বীকৃত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকবে।
আমি আপনার মধ্যস্থতার প্রস্তাবকেও অভিনন্দন জানাচ্ছি এবং খুবই আশা করছি যে, সৈন্য প্রত্যাহারের উপায় ও পদ্ধতি আলোচনার জন্য আপনি অবিলম্বে পাকিস্তান ও ভারত সফর করবেন। এতে ইপ্সিত ফল পাওয়া যাবে এবং শান্তির পথ প্রশস্ত হবে বলে আমি সুনিশ্চিত।
পাকিস্তানী সীমান্তবর্তী শহর লাহোর ও শিয়ালকোট দখলের জন্য ভারতীয় নেতৃবৃন্দের হুমকির ফলে পরিস্থিতির সংকট নিষ্পত্তির জন্য আপনি ভারত ও পাকিস্তান সফরের প্রকাশ্য ঘোষণা করলে তা খুবই অনুকূল হবে।
উপসংহার আমার দেশের পক্ষ থেকে আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।
.
.
শিরোনামঃ ৯০। ভারতের আক্রমণাত্মক তৎপরতার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১
.
ভারতের আক্রমণাত্মক তৎপরতার
বিরুদ্ধে কড়া হুশিয়ারি
বেপরোয়া গোলাবর্ষণের প্রতিবাদ
ইসলামাবাদ, ২৭শে অক্টোবর (এপিপি)। – পাকিস্তান সরকার সীমান্তে আচরণবিধি লংঘন করে মর্টার ও ভারী ফিল্ডগানের সাহায্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানী এলাকায় বিনা উস্কানিতে অনবরত গোলাবর্ষণ অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের কাছে আর একটি কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
গত ২৩শে অক্টোবর শনিবার এখানকার ভারতীয় হাইকমিশনের নিকট প্রদত্ত এক প্রতিবাদলিপিতে পাকিস্তান ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক আক্রমণাত্মক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পরিণতি সম্পর্কে ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে। ৬ই অক্টোবর থেকে ১২ই অক্টোবর পর্যন্ত বিনা প্ররোচনায় ভারতীয় বাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেপরোয়া আক্রমণাত্মক কার্যকলাপের ২১টি ঘটনা উক্ত প্রতিবাদলিপিতে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবাদ জ্ঞাপনকালে প্রতিবাদলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর বেপরোয়া গোলাবর্ষণে পূর্ব পাকিস্তানে জানমানের যে ক্ষয় হয়েছে পাকিস্তান সরকারের সে ক্ষতিপূরণ দাবীর অধিকার রয়েছে।
প্রতিবাদলিপিতে নিম্নোক্ত ঘটনাগুলোর তালিকা রয়েছেঃ
১। ৬ই অক্টোবর বেলা ১টার সময় ভারতীয় বাহিনী যশোর জেলার ছুটিপুর এলাকায় ৩ ইঞ্চি মর্টারের সাহায্যে ১০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
২। ৬ই অক্টোবর রাত ১টা থেকে ভারতীয় বাহিনী নোয়াখালী জেলার পরশুরাম এলাকায় ভারী মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ শুরু করে। এই গোলাবর্ষণ দীর্ঘসময় অব্যাহত থাকে এবং এই সময়ে ২০১ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৩। ৬ই অক্টোবর বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে ভারতীয় বাহিনী দিনাজপুর জেলার ডিঙ্গাপাড়া এলাকায় ফিল্ডগান থেকে ৩০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৪। ৬ই অক্টোবর ৫টার সময় খুলনা জেলার ভোমরা এলাকায় ভারতীয় সৈন্যরা ফিল্ডগান থেকে ৭ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৫। ৬ই অক্টোবর রাত ১০টায় খুলনা জেলার কাকডাঙ্গা এলাকায় ভারতীয় বাহিনী ফিল্ডগান থেকে ৮ রাউণ্ড ও ৩ ইঞ্চি মর্টার থেকে ১২ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৬। ৭ই অক্টোবর ভোর সারে ৪টার দিকে ভারতীয় বাহিনী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় ফিল্ডগানের সাহায্যে ২৯ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৭। ৭ই অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৫টায় ভারতীয় সেনাবাহিনী বিনা উস্কানিতে কুষ্টিয়া জেলার দর্শনা এলাকায় ২২০ এম এম মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করে।
৮। ৮ই অক্টোবর ভোর ৩টা ১৫ মিনিটে কুষ্টিয়া জেলার ইছাখালী সীমান্ত ফাঁড়ির উপর ভারতীয় বাহিনী বিনা উস্কানিতে ফিল্ডগানের সাহায্যে ২ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
৯। ৮ই অক্টোবর বেলা ১২টা ২৫ মিনিটে ভারতীয় সৈন্যরা বিনা প্ররোচনায় কুমিল্লা জেলার শালদা ও নয়নপুর এলাকায় ভারী মর্টার থেকে ৮ রাউণ্ড ও রিকয়েললেস রাইফেল থেকে ৭৫ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করেছে।
১০। একই দিনে বেলা ১১টায় ভারতীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় সিলেট সীমান্ত এলাকায় মর্টারের সাহায্যে গোলাবর্ষণ করে। এই গোলাবর্ষণে একজন পাকিস্তানী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে।
১১। ৯ই অক্টোবর বেলা ১২টার সময় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী খুলনা জেলার কাকডাঙ্গা এলাকায় ফিল্ডগান থেকে ৮০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১২। ৮ই অক্টোবর বিকাল ৬টায় ভারতীয় বাহিনী যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় ফিল্ডগানের ৫০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৩। ৮ই অক্টোবর সকাল ৭টায় ভারতীয় বাহিনী বিনা উস্কানিতে খুলনা জেলার ভোমরা এলাকায় ফিল্ডগান থেকে ১৭০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৪। ৮ই অক্টোবর রাত ৩টা ২৫ মিনিটের সময় ভারতীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় কুষ্টিয়া জেলার ইছাখালি এলাকায় ১২০ এম এম মর্টারের সাহায্যে ৮৭ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৫। ৮ই অক্টোবর বিকাল ৩টায় যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় ভারতীয় বাহিনী ফিল্ডগান থেকে ৭০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৬। ৯ই অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৬টায় ভারতীয় বাহিনী কুষ্টিয়া জেলার মহেশকান্দি এলাকায় ফিল্ডগান থেকে ৩২ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৭। ১০ই অক্টোবর সকাল ৬টায় ভারতীয় বাহিনী বিনা উস্কানিতে যশোর জেলার বেনাপোল এলাকায় ভারতীয় বাহিনী ফিল্ডগান থেকে ২৫ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৮। ১০ই অক্টোবর বেলা ২টায় ভারতীয় বাহিনী যশোর মসলিয়া ছুটিপুর এলাকায় ৬ ইঞ্চি মর্টার থেকে ২১ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
১৯। ১১ই অক্টোবর রাত ৯টায় ভারতীয় বাহিনী খুলনা জেলার কাকডাঙ্গা এলাকায় ফিল্ডগান থেকে ১৫ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে।
২০। ১১ই অক্টোবর সকাল ১১টার সময় ভারতীয় বাহিনী কুমিল্লা জেলার রিও এলাকায় ভারী মর্টার থেকে প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ করে। এতে ৫ ব্যক্তি নিহত ও ৩৯ জন আহত হয়েছে।
২১। ১২ই অক্টোবর সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে যশোর জেলার মসলিয়া এলাকায় ভারতীয় বাহিনী বিনা উস্কানিতে ফিল্ডগান থেকে ২০ রাউণ্ড গোলাবর্ষণ করে। এতে ৩জন নিরীহ লোক আহত হয়।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯১। ভারতের শিবিরে অবস্থানকারী উদ্বাস্তুদের প্রতি ইয়াহিয়াঃ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ফেরার আহ্বান | দৈনিক পাকিস্তান | ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১ |
ভারতের শিবিরে অবস্থানকারী উদ্বাস্তুদের প্রতি প্রেসিডেন্ট
জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে ফেরার আহ্বান
রাওয়ালপিন্ডি, ৩০শে অক্টোবর (এপিপি/পিপি আই)। – প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ, এম, ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানের সকল বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রকৃত পাকিস্তানী নাগরিকদের প্রত্যাবর্তন যাচাই করার ব্যাপারে আমাদের কাছে যে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্রহণযোগ্য হবে এবং আমরা এ ধরনের সংস্থার সাহায্যকে স্বাগত জানাবো।
প্রেসিডেন্ট পুনরায় ঘোষনা করেন যে, সাম্প্রতিক গোলযোগে যে সমস্ত পাকিস্তানী পূর্ব পাকিস্তান ছেড়ে গেছেন, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে তাদের সকলের প্রত্যাবর্তনকেই স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন যে, এ ব্যাপারে হিন্দু-মুসলমান অথবা অন্য কোন সম্প্রদায়ের প্রশ্ন নেই, সকলেই ফিরে এসে স্বাভাবিক পেশাগত কাজ চালিয়ে যান, এটাই কাম্য।
প্রেসিডেন্ট বলেন যে, গত মার্চ মাসের পর বিশ লাখের কিছু বেশী লোক পূর্ব পাকিস্তানে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে গেছে। এই সংখ্যা যে কোন নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা তদন্ত করে দেখতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, ভারত বাস্তুত্যাগীদের সংখ্যা বেশী বাড়িয়ে বলেছে।
ভারত তার প্রদত্ত সংখ্যা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকলে নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক বাস্তুত্যাগীদের সংখ্যা যাচাই করতে দিতে ভারতের কুন্ঠাবোধ করা উচিত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরের দুর্দশাগ্রস্থ পরিবেশে বসবাসকারী এই সমস্ত হতভাগা ব্যাক্তিদের তাদের বাড়িঘরে ফিরে আসতে দেওয়া হবে বলে প্রেসিডেন্ট আশা প্রকাশ করেন। প্রত্যাবর্তনকারীদের নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের জন্য গৃহীত ব্যবস্থাদির উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তাদের মন থেকে সবরকম ভয় ও আশংকা দূর করার জন্যই সাধারন ক্ষমা প্রদর্শন করা হয়েছে।
পাকিস্তান বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে কেবল মুসলমানদের ফেরত নিতে চাইছে বলে ভারত যে অভিযোগ করেছে, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খন সরাসরি তার সত্যতা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন যে, যে কোন ধর্মেরই হোক না কেন, সকল প্রকৃত পাকিস্তানীকে ফিরিয়ে আনাই পাকিস্তানের নীতি।
প্রেসিডেন্ট এর বিবৃতির পূর্ন বিবরন
রাওয়ালপিন্ডি।- প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান আজ নিন্মলিখিত বিবৃতি দেনঃ
পূর্ব পাকিস্তানের সাম্প্রতিক গোলযোগের পর আমাদের যে সমস্ত নাগরিক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গিয়েছিলেন, আমি বার বার তাদেরকে ঘরবাড়ীতে ফিরে এসে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানিয়েছি। তাদেরকে পূর্ন নিরাপত্তার এবং প্রত্যাবর্তন ও পূনর্বাসন-এর ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সবরকম সুযোগ-সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সরকারের প্রদর্শিত সাধারন ক্ষমার উদ্দেশ্য হচ্ছে তাঁদের মন থেকে সবরকম ভয় ও আশংকা দূর করা। আমার সরকার বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিদের পুনর্বাসনের কাজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক সরকারে তাঁদের একজন মন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিজে এই কাজে ব্যাক্তিগতভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
কার্যকরীভাবে রিলিফ ও পূনর্বাসনের কাজ চালানোর জন্য প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের হাতে প্রয়োজনীয় অর্থ দেয়া হয়েছে। পূনর্বাসনে আরো সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে যাদের প্রয়োজন তাদের সকলকেই নগদ মঞ্জুরী দেয়া হবে। যদি এজন্য অতিরিক্ত সম্পদের প্রয়োজন হয়, তবে তা দ্রুত সরবরাহ করা হবে।
আমার সরকার আন্তর্জাতিক মহলের বিভিন্ন প্রস্তাবে এমনকি সীমান্তের উভয় দিকে পর্যবেক্ষক মোতায়েন এবং এ ব্যাপারে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল ব্যাক্তিগত প্রভাবকে কাজে লাগানোর জন্য তাঁর প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রিলিফ ও পূনর্বাসনের সমন্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল ও জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশনারের প্রতিনিধিরে ইতিমধ্যেই ঢাকায় এসেছেন। জাতিসংঘের উদ্বাস্তু সংক্রান্ত হাইকমিশানারের প্রতিনিধি পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক ব্যাপকভাবে সফর করেছেন এবং বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিদের অভ্যর্থনা জানানো এবং তাদের পূনর্বাসনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিজেই লক্ষ্য করেছেন।
এটা দুঃখজনক যে, বিশেষ পরিস্থিতিতে যারা বাড়ীঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, সে সমস্ত হতভাগ্য ব্যাক্তিদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে পারে এরুপ কোন ব্যবস্থাই ভারত সরকার গ্রহণ করেনি। আমরা যখন আমাদের নাগরিকদের ফিরে পেতে ইচ্ছুক এবং আগ্রহী, ভারত তখন এই মানবিক সমস্যাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং তাদের প্রত্যাবর্তনে বাধা দেয়ার জন্য সবরকম বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে। এই উদ্দেশ্যে ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে সীমান্ত এলাকায় গোলযোগ বজায় রাখছে এবং নিরাপ্ততাহীনতা ও অনিশ্চয়তার পরিবেশ সৃষ্টি করছে।
জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল সম্প্রতি এই পরিস্থিতির প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন যে অনুপ্রবেশ এবং কামান ও মর্টারের গোলাবর্ষণের ফলে সীমান্ত এলাকায় যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে, তা বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিদের শীঘ্র পূর্ব পাকিস্তানে ফেরার পথে বাধার সৃষ্টি করেছে।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোন কোন বিদেশী রাষ্ট্র থেকে নৈতিক ও আর্থিক সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে বাস্তুচ্যুত ব্যাক্তিদের সংখ্যা অত্যন্ত বেশী বাড়িয়ে বলেছে।
যাঁরা স্থানীয় অবস্থানের কথা পুরোপুরিভাবে পরিচিত, তাঁরা ভারতীয় প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হবেন না। কারন এটা সবার জানা আছে যে পশ্চিম বঙ্গের অন্যান্য স্থানের বাস্তুত্যাগী শিবিরগুলো কলকাতার স্থায়ী ভবঘুরে ও বেকার লোকে ভর্তি। তাছাড়া, উদ্বাস্তু সম্পর্কে ভারতীয় হিসেবে ১৯৪৭ সালে যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে গেছে এবং কোন না কোন কারনে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসিত হয়নি, তাদেরকেও ধরা হয়েছে।
একথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, দেশ ভাগাভাগির সময় সীমান্তের উভয় দিক থেকে ব্যাপকহারে লোক এক দেশ অন্যদেশে চলে গেছে। ভারত কিছুতেই এসব লোককে উদ্বাস্তু হিসেবে গণ্য করতে পারে না এবং পূর্ব পাকিস্তানে সাম্প্রতিক গোলযোগের সময় যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, তাদের মধ্যেও ধরতে পারে না।
আমরা বিষয়টি পুংখানুপূংখভাবে হিসেব করে দেখেছি এবং তাতে দেখা যায় যে, এ বছর মার্চ থেকে ২০ লাখের কিছু বেশী লোক তাদের বাড়ীঘর ছেড়ে চলে গেছে। উদ্বাস্তু সংখ্যা সম্পর্কে যে কোন রকমের সন্দেহ নিরসনের উদ্দেশ্যে জেলাওয়ারীভাবে বাস্তুত্যাগীদের সংখ্যা পূর্বেই প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগে একটি নিরপেক্ষ সংস্থার মাধ্যমে ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে একটি জরিপ কার্য চালিয়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে যাওয়া প্রকৃত উদ্বাস্তুদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের জন্যও আমরা প্রস্তাব করেছিলাম।
ভারত যদি তার প্রদত্ত হিসাব সম্পর্কে নিশ্চিতই হয়ে থাকে, তবে এই প্রস্তাব গ্রহণে ভারতের পক্ষে কুন্ঠাবোধ করার কোন কারন নেই।
ভারত বিশ্বকে আরও বলেছে যে, পাকিস্তান বাস্তুত্যাগী ব্যাক্তিদের সংখ্যা যে ২০ লাখ বলে বর্ণনা করেছে, ভারতের মতে তার মধ্যে শুধু মুসলমানের সংখ্যাই ধরা হয়েছে এবং ভারতের বক্তব্য অনুসারেই বলা যায় বাদবাকী যারা ভারতে রয়েছে, তারা অমুসলমান।
এটা ভারতের দুরভিসন্ধিমূলক বিকৃত তথ্য এবং তাতে বাস্তুত্যাগীদের স্বদেশ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে পাকিস্তানের নীতি প্রতিফলিত হয় না। আমি এটা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই যে, গত গোলযোগের সময় যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে গেছে তাদের মধ্যে প্রত্যেকটি পাকিস্তানীকে সে মুসলমান, হিন্দু অথবা অন্য কোন সম্প্রদায়েরই হোক না কেন নিজের বাড়ীঘরে ফিরে আসার পর স্বাভাবিক কাজকর্মে আত্মনিয়োগে স্বাগত জানানো হবে।
এই ধরনের লোকের সংখ্যা যাই হোক না কেন এবং তারা যে ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রেরই হোন না কেন সরকার জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে তাদের পূনর্বাসন ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন পুনর্বাসিত হওয়ার জন্য অর্থ সাহায্যসহ সম্ভাব্য সবরকমের সাহায্য প্রদান করবেন।
প্রত্যাবর্তনকারী প্রকৃত নাগরিকদের যাচাই করার ব্যাপারে যে কোন আন্তর্জাতিক সংস্থার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে এবং এ ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করার জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে।
আমি আশা করি ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে বর্তমানে যারা অত্যন্ত করুন অবস্থায় বসবাস করছে, সেইসব হতভাগা লোকদের এবং তাদের নিজ নিজ বাড়ীঘরে ফিরে আসতে দেয়া হবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯২। ৩২ জন অফিসারের খেতাব বাতিল | দৈনিক পাকিস্তান | ১ নভেম্বর, ১৯৭১ |
৩২ জন অফিসারের খেতাব বাতিল
ইসলামাবাদ, ৩১শে অক্টোবর (এপিপি)। – প্রেসিডেন্ট ৩ জন সাবেক কেন্দ্রীয় সেক্রেটারীসহ ৩২ জন উচ্চপদস্থ সরকারী অফিসারের খেতাব প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কেবিনেট সেক্রেটারিয়েট থেকে প্রকাশিত এক অতিরিক্ত গেজেট অনুসারে যে সব অফিসারের খেতাব প্রত্যাহার করা হয়েছে নিন্মে তাদের নাম ও নামের পাশে খেতাব উল্লেখসহ তালিকা প্রকাশ করা হলোঃ
১। জনাব ডব্লিউ এ শেখ, সাবেক সি এস পি, স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ দফতরের সাবেক সেক্রেটারী (সিতারা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
২। জনাব এস, এম জাফরী, সাবেক সি এস পি, সাবেক চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাকিস্তান ষ্টিল মিল কর্পোরেশন, ইসলামাবাদ (সিতারা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
৩। জনাব আবু নাসার, সাবেক সি এস পি, পশ্চিম পাকিস্তান রাজস্ব বোর্ডের সাবেক সদস্য (সিতারা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
৪। জনাব আলতাফ হোসেন গওহর, সাবেক সি এস পি, লাহোরস্থ ফাইনান্স সার্ভিসেস একাডেমীর সাবেক ডিরেক্টর (হিলাল-ই-কায়েদে আজম, সিতারা-ই-পাকিস্তান, সিতারা-ই-কায়েদে আজম, তমঘা- ই- পাকিস্তান)।
৫। জনাব এম এম শাহ, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল, কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান সংস্থা, করাচী (সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
৬। জনাব জি ইয়াজদানী মালিক, সাবেক সি এস পি, সাবেক ম্যানেজিং ডিরেক্টর, পাকিস্তান প্রিন্টিং কর্পোরেশন, ইসলামাবাদ (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
৭। জনাব আনোয়ার আদিল, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডিরেক্টর, নিপা, করাচী (সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
৮। দরবার আলী শাহ, সাবেক সি এস পি, পেশোয়ারের সাবেক কমিশনার (সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
৯। জনাব এস মুনীর হোসেন, সাবেক সি এস পি, সাবেক সেনসাস কমিশনার স্বরাষ্ট্র দফতর, ইসলামাবাদ (সিতারা-ই-কায়েদে আজম, তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১০। মালিক আবদুল লতিফ খান, সাবেক সি এস পি, সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারী, খাদ্য ও কৃষি ডিভিশন, ইসলামাবাদ (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১১। জনাব এস মোহাম্মদ হোসেন, সাবেক সি এস পি, খায়েরপুরের সাবেক কমিশনার (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১২। জনাব হেলাল উদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডেপুটি সেক্রেটারী, বাণিজ্য দফতর, ইসলামাবাদ (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৩। জনাব শাহ করিমুর রহিম, সাবেক সি এস পি, সাবেক কাষ্টমস কালেক্টর, করাচী (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৪। এস মুস্তাফা হোসেন এ জায়েদী, সাবেক সি এস পি, মৃত, পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের মৌলিক গণতন্ত্র ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত বিভাগের সাবেক সেক্রেটারী (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৫। জনাব মোঃ পিয়ার আলী নাজির, সাবেক সি এস পি, সাবেক চেয়ারম্যান, ডি আই টি (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৬। জনাব এস ডি কোরেশী, সাবেক সি এস পি, পশ্চিম পাকিস্তান সড়ক পরিবহন সংস্থার সাবেক চেয়ারম্যান (সিতারা-ই-কায়েদে আজম, তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৭। জনাব খলিলুর রহমান খান, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডিআইজি অব পুলিশ, বাহাওয়ালপুর (সিতারা-ই-খিদমত)।
১৮। জনাব আবদুল হক, সাবেক সিএসপি, সাবেক চেয়ারম্যান, ইপিআর টিসি, পূর্ব পাকিস্তান, ঢাকা (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
১৯। জনাব মোঃ আলী, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডিআইজি অব পুলিশ, রেলওয়ে চট্রগ্রাম (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
২০। জনাব মোঃ ইদ্রিস, সাবেক সি এস পি, সাবেক আইজি অব পুলিশ এষ্টাবলিসমেন্ট (সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
২১। জনাব আসিফ মজিদ, সাবেক সি এস পি, সাবেক ডিআইজি অব পুলিশ, (সিতারা-ই-খিদমত)।
২২। আলহাজ কফিলউদ্দিন আহমদ, সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার, পাক পিডব্লিউডি, করাচী (সিতারা-ই-কায়েদে আজম)।
২৩। সৈয়দ নাসির হোসেন, সাবেক সুপারিনটেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার সেন্ট্রাল ইলেকট্রিক্যাল এন্ড মেকানিক্যাল সার্কেলস, করাচী (তমঘা-ই-পাকিস্তান)।
২৪। জনাব মীর মোঃ হোসেন, সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল, টি এন্ড টি বিভাগ, করাচী (সিতারা-ই-খিদমত)।
২৫। জনাব বি এন নাজির, সাবেক চীফ ইঞ্জিনিয়ার, ষ্টাফ এন্ড এষ্টাবলিসমেন্ট উইং, টি এন্ড টি বিভাগ, করাচী ( সিতারা-ই- খিদমত)।
২৬। জনাব ইয়ামীন কোরেশী, সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারী, কৃষি দফতর, ইসলামাবাদ (সিতারা-ই-খিদমত)।
২৭। জনাব এস আই হক, সাবেক পি আর এস, সাবেক চীফ কন্ট্রোলারাব স্টোর্স, পি ডব্লিউ আর, লাহোর (সিতারা-ই-খিদমত)।
২৮। জনাব ডব্লিউ এ শেখ, সাবেক পি আর এস, সাবেক চেয়ারম্যান, রেলওয়ে বোর্ড (সিতারা-ই-পাকিস্তান)।
—————-
.
.
শিরোনাম:৯৩। জেনারেল ইয়াহিয়ার বিবৃতি
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২ নভেম্বর, ১৯৭১
সীমান্তের ওপার থেকে প্রত্যেক দিন গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে: ইয়াহিয়া
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আসন্ন
লন্ডন,১লা নভেম্বর ( এএফপি)- পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন হয়ে উঠেছে।আজ ডেইলি মেইল পত্রিকার প্রতিনিধির কাছে এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট জে: ইয়াহিয়া খান এ কথা বলেছেন।তিনি বলেন, ভারত ইতিমধ্যেই আমাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।কোন সার্বিক সংঘর্ষ হচ্ছে না, কারন আমরা পাল্টা আঘাত হানছি না।ভারত পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের ওপারে প্রতিদিন দেড়শ থেকে তিনহাজার গোলাবর্ষণ করে চলছে।প্রেসিডেন্ট বলেন,চীন পাকিস্তানের উপর আক্রমন সহ্য করবে না।
ভারতীয় প্রেসিডেন্ট মিসেস ইন্দিরা গান্ধী সম্পর্কে তিনি বলেন,স্বাধীন বাংলাদেশ(পূর্ব পাকিস্তান) কায়েম হলে শুধু পাকিস্তানই খন্ডিত হবে না,ভারতীয় যুক্ত রাষ্ট্রের ভাঙনও শুরু হবে,মহিলা এ কথাটি বুঝবেন, আল্লাহর কাছে এই কামনাই করি।
.
.
শিরোনাম :৯৪। খেয়ালবশে মুজিবকে মুক্তি দেয়া যায় না : ইয়াহিয়া
সূত্র: দৈনিক পাকিস্তান
তারিখ: ৩রা নভেম্বর,১৯৭১
খেয়ালবশে মুজিবকে মুক্তি দেয়া যায় না: ইয়াহিয়া
নিউইয়র্ক, ২রা নভেম্বর ( এএফপি) – প্রেসিডেন্ট জে: এ এম ইয়াহিয়া খান বলেছেন,পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন এবং চীন তার ( পাকিস্তানের) সশস্ত্র বাহিনীকে সবরকম অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করবে।তিনি বলেছেন,জাতি তার মুক্তি দাবী করলে তিনি শেখ মুজিবর রহমানকে মুক্তি দিবেন।
নিউজউইক ম্যাগাজিনের প্রতিনিধির সাথে বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট এসব কথা বলেছেন।ইয়াহিয়া খান বলেন,যুদ্ধ (ভারতের সাথে) যে আসন্ন এ কথা না বলার কোন কারন নেই।কেননা তা আসন্ন।ভারতীয়রা আমাদের সাথে যুদ্ধ শুরুই করে দিয়েছে।সার্বিক মোকাবেলা হচ্ছেনা,কারন আমরা পাল্টা আঘাত হানছি না।
তিনি বলেন,উত্তপ্ত পরিস্থিতির আরো সম্প্রসারণ ঘটুক তা তিনি চান না।তবে একটা এলাকা দখল করে সেখানে ক্রীড়ানক বাংলাদেশ সরকারকে বসানোর জন্যে ভারত যদি উত্তেজনার প্রসার ঘটায় সেটা হবে যুদ্ধ।আর অবস্থা যদি তাই দাড়ায় চীন পাকিস্তানের উপর আক্রমণ সহ্য করবে না।প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়া আমরা প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবো।
পূর্ব পাকিস্তানের দাবী প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমাদের যে সময় নষ্ট হয়েছে তা পূরণ করার চেষ্টা করছি।২০ শে ডিসেম্বর শাসনতন্ত্র জারী করা হবে।আর এটা খুবই স্বাভাবিক যে পূর্ব পাকিস্তান প্রতিরক্ষা,পররাষ্ট্র ও কর ধার্যের বিষয় ছাড়া সব ক্ষেত্রে সর্বাধিক স্বায়ত্বশাসন ভোগ করবে।
শেখ মুজিব প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট বলেন,মুজিব যদি এখন পূর্ব পাকিস্তানে ফিরে যান,তার লোকেরাই তাকে মেরে ফেলবে।কেননা,তারা তাদের সকল দুর্ভোগের জন্যে তাকেই দায়ী করছে।খেয়ালের বশে আমি তাকে মুক্তি দিতে পারি না। তবে জাতি যদি তার মুক্তি চায়-আমি তাকে মুক্তি দেবো।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৫। পিকিংএ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল | দৈনিক পাকিস্তান | ৬ নভেম্বর, ১৯৭১ |
পিকিং-এ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল
প্রেসিডেন্টের প্রতিনিধি হিসেবে ভুট্টো নেতৃত্ব করছেন
উপমহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে
(সালামত আলী প্রেরিত)
ইসলামাবাদ, ৫ই নভেম্বর। -জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টোর নেতৃত্বে আট সদস্যবিশিষ্ট্য একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ সকালে একটি বিশেষ বিমানযোগে এখান থেকে চীন রওয়ানা হয়ে গেছেন। দু’দেশের মধ্যে অব্যাহত আলোচনার অংশ হিসেবে গণচীনের আমন্ত্রণক্রমে এই প্রতিনিধিদল চীনে গেছেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতিনিধি হিসেবে জনাব ভুট্টো দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।
কয়েকদিনব্যাপী চীনে অবস্থানকালে প্রতিনিধিদলটি প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ও অন্যান্য নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন বলে জানা গেছে। পিপিপির চেয়ারম্যান জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো ছাড়াও প্রতিনিধিদলে রয়েছেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি এয়ার মার্শাল এ রহিম খান, পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব সুলতান মোহাম্মদ খান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ লেঃ জেনারেল গুল হাসান খান, পাকিস্তান নৌবাহিনীর চীফ অব স্টাফ রিয়ার এডমিরাল রশীদ, পররাষ্ট্র দফতরের দুজন ডিরেক্টর জেনারেল জনাব আফতাব আহমদ খান ও জনাব তবারক হোসেন এবং পররাষ্ট্র দফতরের ডিরেক্টর জনাব আহমদ কামাল। অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব এম এ আলভী এখানে সাংবাদিকদের উক্ত প্রতিনিধিদলের চীন রওয়ানা হওয়ার বিষয়টি জানান।
জনাব আলভী প্রতিনিধিদলটিকে অত্যন্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, পাকিস্তান ও গণচীনের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনার ব্যবস্থা রয়েছে এবং অব্যাহত রীতির ভিত্তিতেই প্রতিনিধিদলটি পিকিং রওয়ানা হয়েছেন। তিনি বলেন যে, প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে চীনের নেতাদের উভয় দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় এবং উপমহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে।
প্রতিনিধিদলটি যেভাবে গঠন করা হয়েছে তাতে অস্ত্র আনার জন্য সেটি যাচ্ছে এরুপ আভাস রয়েছে কিনা এই মর্মে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, চীন থেকে অস্ত্র সরবরাহ করাটা কোন নতুন কিছু হবে না। তিনি বলেন, যে ধরণের সহযোগিতা রয়েছে তা আপনাদের ভালই জানা আছে।
এই প্রতিনিধিদলের চীন যাত্রা একাধিক কারনে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমতঃ সম্প্রতি ভারত ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে একটি সামরিক চুক্তি রয়েছে এবং ভারত ইতিমধ্যেই রাশিয়া থেকে আরো অস্ত্র ও সমর্থন আদায়ের জন্য চুক্তিটি কাজে লাগিয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ দু’মাসেরও বেশী সময় যাবৎ পাকিস্তান ও ভারতের সসস্ত্র বাহিনীগুলোর প্রায় সমস্ত শক্তি সীমান্ত বরাবর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং যে কোন মুহূর্তে সার্বিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার মারাত্মক আশংকা রয়েছে।
তৃতীয়তঃ যদিও চীন সর্বদাই পাকিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে তবুও সাম্প্রতিক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষভাবে ভারত ঘেঁষা বিবৃতিগুলোর সঙ্গে তুলনীয় কোন কিছু এ যাবৎ পাওয়া যায়নি।
চতুর্থতঃ বর্তমানে ভেটো ক্ষমতাসম্পন্ন নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য গণচীন কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালানোর ক্ষমতা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি বৃহৎ শক্তিতে পরিণত হয়েছে। কিছুদিন যাবৎ পাকিস্তান পাক-ভারত বিরোধ নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের যথার্থতা বিবেচনা করছে এবং এ ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে।
অতিরিক্ত পররাষ্ট্র সেক্রেটারী অবশ্য জানান যে, অবিলম্বে নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত বিরোধের প্রশ্ন উত্থাপনের কোন বিকল্প নেই। যাহোক চীন যেহেতু শীঘ্রই নিরাপত্তা পরিষদে বসবে এবং যেহেতু কোন না কোন বৃহৎ শক্তি অথবা সেক্রেটারী জেনারেল উথান্ট কর্তৃক নিরাপত্তা পরিষদে পাক-ভারত উপমহাদেশের পরিস্থিতির বিষয়টি উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কাজেই প্রতিনিধিদলটি পিকিং-এ অবস্থানকালে স্বাভাবিকভাবেই এ ব্যাপারে আলোচনা করবে। প্রতিনিধিদলটির গঠন প্রকৃতি এই মর্মে আভাস বহন করে যে, পাক-ভারত বিরোধের সামরিক ও কুটনৈতিক দিকসহ সকল বিষয়ে পুর্ণাঙ্গ আলোচনার ইচ্ছা রয়েছে।
ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তার তিনটি সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করায় প্রতিনিধিদলে পাকিস্তানের তিনটি সশস্ত্র বাহিনী সর্বোচ্চ পর্যায়ের কমান্ডারদের অন্তর্ভুক্তি তাৎপর্যপূর্ণ বলে গণ্য হচ্ছে। এপিপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়েছে, প্রতিনিধিদলটি চীনা নেত্রীবৃন্দের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করবেন। পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জানান যে, প্রতিনিধিদলটি চীনে কয়েকদিন অবস্থান করবেন।
প্রতিনিধিদলটি যেরুপ উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন করে গঠন করা হয়েছে তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সেটির প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ও চীনের অন্যান্য সংশ্লিষ্ট নেতা ও মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচী রয়েছে। মুখপাত্রটি বলেন, গণচীন সাধারণতন্ত্রের আমন্ত্রনক্রমে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার জন্য পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট একটি প্রতিনিধিদলকে পিকিং-এ প্রেরণ করেছেন।
পিকিং থেকে এএফপি পরিবেশিত খবরে বলা হয়, পর্যবেক্ষকরা মনে করেন যে, প্রতিনিধি দলটির এই আকস্মিক পিকিং সফর পাক-ভারত সীমান্তের উত্তেজনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এক বছর আগে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের পিকিং সফরের পর এটাই গণচীন সফরকারী বৃহত্তম পাকিস্তানী প্রতিনিধি দল।
উক্ত খবরে বলা হয় যে, পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমানে রাজনৈতিক নেতা জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো মন্ত্রী থাকাকালে কয়েকবার পিকিং সফর করেছেন। ৬ বছর আগে চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রাক্কালের তিনি শেষবারের মতো পিকিং সফর করেন।
এতে উল্লেখ করা হয় যে,পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ পিপলস পার্টির নেতা জনাব ভুট্টো বর্তমানে কোন সরকারী পদে অধিষ্ঠিত নেই। এখানে পর্যবেক্ষকরা বলেন যে, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিরোধ এবং পূর্ব পাকিস্তানে তথাকথিত বাংলাদেশ বিদ্রোহের প্রতি জনাব ভুট্টো কঠোর মনোভাবাপন্ন মহলের সমর্থক বলে মনে হয়।
উক্ত খবরে বলা হয় ভুট্টো এমনি এক সময়ে পিকিং সফর করছেন, যখন ১৯৬২ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে তিক্ত চীন-ভারত সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য উন্নতির আভাস পাওয়া যাচ্ছে। তবে চীন অথবা ভারত কোন পক্ষই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।
গত সপ্তাহে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের জাতিসংঘভুক্তিতে অভিনন্দন জানিয়ে চীনের প্রধানমন্ত্রী ও অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। চীনের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই-এর অভিনব কুটনৈতিক অস্ত্র টেবিল টেনিসকেও চীন-ভারত সম্পর্কোন্নয়নে ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় টেনিস দল পিকিং-এ আফ্রো-এশীয় বন্ধুত্বমুলক টেবিল টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করছে।
চীনের বন্ধুরাষ্ট্রের খেলোয়াড় দলকে সাধারণতঃ যেরুপ অভ্যর্থনা জানানো হয় ভারতীয় টেবিল টেনিস দলকেও সেরুপ অভ্যর্থনা জানানো হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহলের অবশ্য এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী ও পাকিস্তানের বহু কারিগরি ও শিল্প প্রকল্পে সহযোগিতাকারী চীন প্রয়োজনে একনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে পাকিস্তানের পাশে থাকবে।
তবে যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তানীদের সঙ্গে একত্রে যুদ্ধ করার জন্য চীনা সৈন্য পাঠানোর সম্ভাবনা নেই বলে তারা মনে করেন।
পিকিং উপস্থিতি
পিকিং থেকে রয়টার ও এএফপি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, প্রতিনিধিদলটি এখানে এসে পৌঁছেছেন। বিমানবন্দরে চীনের অস্থায়ী সহকারী প্রধানমন্ত্রী মিঃ চী পেং ফি প্রতিনিধিদলকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন।
জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক পরিহিত প্রায় ২ হাজার চীনা তরুণ তরুণী প্রতিনিধিদলটিকে স্বাগত জানায়। বিমানবন্দরে ব্যানারে লেখা ছিল পাকিস্তানের বিশিষ্ট মেহমানদের স্বাগত জানাচ্ছি।
এছাড়া তারা আফ্রো-এশীয় জনগণের সংহতি প্রকাশ করে ও বিদেশী আক্রমণ ও হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে পাকিস্তানী জনগনের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে শ্লোগান দেয়।
জনাব ভুট্টো পরে মিঃ চী পেং ফি-এর সঙ্গে পিকিং-এর রাষ্ট্রীয় মেহমানদের বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে যান।
—————
শিরনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৬। আমার কোন বিকল্প ছিল না | নিউজউইক ম্যাগাজিন | ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ |
পূর্ব পাকিস্তানের গেরিলা দ্রোহ এবং ইন্ডিয়া – পাকিস্তানের অন্যতম যুদ্ধ দ্বারপ্রান্তের মধ্যেও তার দেশ সংকটের মধ্যেও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গত সপ্তাহে নিউজুইকের প্রবীণ সম্পাদক আমুদ ডে বোর্চগ্রেভ ের কাছে একটি সাক্ষাতকার দিয়েছেন।তাদের কথোপকথনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার দেশ এবং ইন্ডিয়া যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন সেখানে তার অবস্থান ইয়া বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন।ইয়াহিয়ার মন্তব্যের উদ্বৃত্তাংশ নিম্মোক্ত
যুদ্ধ অনিবার্য না আপনাকে আমার এমন বলার কোনো কারণ নেই কারণ এটিইসত্য। ইতিমধ্যে ভারত আমাদের সাথে যুদ্ধ করেছে এবং কোনো সাধারণ বোঝাপোড়া না থাকার কারণে শুধুমাত্র আমরা ফিরে আঘাত করিনি।ক্রমবর্ধমান প্ররোচণার পরেও আমরা সর্ব্বোচ্চ সংযম রাখার চেষ্টা করছি।পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত সীমানা ব্যাপি ২৪ ঘন্টায় ভারত ১৪০ থেকে ৩০০০ কামান গোলা এবং মর্টার শেল ছুড়ে মারে …(পূর্ব পাকিস্তানী গেরিলারা ) সেতু,বৈদ্যুতিক তোরণ,এমনকি খাবারবাহী জাহাজ ও ধ্বংস করেছে।ভারত ২৩টি গেরিলা প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছে,সাধারণ জনগণকে তাদের সীমান্ত এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়েছে,তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী প্রতিদিন আমাদের হুমকি দিচ্ছে ভারত যদি লুন্ঠিত অঞ্চল বাড়ানোর লক্ষ্যে অগ্রসর হয় এবং একটি পুতুল বাঙ্গলাদেশ সরকার স্থাপন করে, যুদ্ধ তাহলে হবেই।
কিভাবে( আমাদের )সামরিক বাহিনী যুদ্ধ করবে এবং তাদের থেকে পাঁক গুণ বড় সামরিক বাহিনীর (ভারতের )বিরুদ্ধে জয় লাভ করবে ।তাদেরকে এই নির্দেশ দেওয়া আমার জন্য একটি সামরিক পাগলামি হবে।কিন্তু যদি আমরা আক্রমণের শিকার হই তাহলে আমরা অবশ্যই যুদ্ধ করবো ।(ভারতের) এমন যুদ্ধাস্ত্র আছে যা অনেক ক্ষেত্রেই স্বয়নভর ।যদি তারা প্রতিদিন ৩০০০ শেল নিক্ষেপ করতে পারে তার অর্থ এই যে তাদের হাতে প্রচুর গুলি মজুদ আছে।এই বিলাসীতা আমাদের সামরিক বাহিনী বহন করতে পারবে না।
চায়না পাকিস্তানের উপর আক্রমণ সহ্য করবে না ।আমরা প্রয়োজনানুসারে অস্ত্র এবং গুলি সংগ্রহ করবো (প্র্যত্যেকের সহায়তায় )সংক্ষিপ্ত মধ্যবর্তিতায়।কিছু জিনিশ আমরা বিনামূল্যে আনবো এবং কিছুর জন্য মূল্য পরিশোধ করবো।কিন্তু চীনদের শর্তাবলী খুব সহজ ঃ ২৫ বছরের সুদ মুক্ত ঋণ।গত বছর পেকিং এ থাকাবস্থায় আমি ২০০ মিলিওন মূল্যের অর্থনীতি এবং ৫ বছরের সুদবিহীন পরিকল্পনার মধ্যস্ততা করেছিলাম।
বাঙালীদের কখোনোই কেউ সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেনি।আমরাও ভুল করেছি এবং এই “ আমরা “ দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানীদের বুঝাচ্ছি যারা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান্মন্ত্রী ছিলেন।
পূর্ব পাকিস্তানের অবনতি ঘটছিলো এবং আমরা কখনোই তাদের উন্নয়নে যথেষ্ট মনোযোগ দেইনি।
আমরা এখন হারানো সময় পুনুরদ্ধারের চেষ্টা করছি।২০ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান জারি করা হবে।তারা আমাদের থেকে হাজার মেইল দূরে অবস্থান করছে তাই এইটাই স্বাভাবিক যে তারা তাদের সর্ব্বোচ্চ স্বাধীনতা উপভওগ করবে এবং তাদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেরাই সামলাবে।অর্থ্যাত প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং কর ছাড়া বাকি সব।
অনেকেই হয়তো আমার কথা বিশ্বাস করবে না ,কিন্তু আমার ধারণা, যদি সে ফিরে যায়, তাহলে সে তার নিজের লোকদের দ্বারাই খুন হতে পারে যারা তাকে সমস্ত দূর্ভোগের জন্য দায়ী মনে করে।কিছু ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন বাহুল্য। দুই বছর সে আমার সাথে অভ্যন্তরীণ স্বাধীনতার বিষয়ে আলাপ করেছেন এবং তার কথার খেলাপ করেছেন।তিনিসংগঠিত হলেন এবং দেশের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ পরিচালনা করলেন…বিদ্রোহ দমন করা ছাড়া বিকল্প ছিল না কোনো।অন্য যে কোনো সরকার একই কাজ করতো…কিভাবে আমি সেই ব্যক্তিকে ফিরে আসতে বলি এবং তার সাথে মধ্যস্ততা করি।দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করা এবং সামরিক বাহিনীর আনুগত্য ধ্বংস করার জন্য সে অভিযুক্ত।এ কে ব্রোহী দ্বারা সে সুরক্ষিত যে কিনা দেশের সর্বোত্তম এবং সর্বাধিক শ্রদ্ধেয় আইনজীবী,সামরিক আদালতে কোনো ধরণের ছলা কৌশল হবে ভেবে থাকলে ব্রোহী মামলাটি হ্রহণ করতেন না ।মুজিবকে আমি প্রথমেই মেরে ফেলিনি এবং পরে চেষ্টা করেছিলাম যেহেতু সরকারি কর্মকর্তা অনেকেই এর পক্ষপাতী ছিলেন।
আমরা যা করেছি তা হচ্ছে চুক্তি সাপেক্ষে তাকে অই অঞ্চলের রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব দিয়েছি। আকস্মিক আমি তাকে মুক্তি দিতে পারি না।এটি একটি বিশাল দায়িত্ব।কিন্তু যদি জনগণ তার মুক্তি চায়, আমি করবো।
সবচাইতে খারাপ পরাজয় হবে ভারতের নিজের।পূর্ব বাংলা এবং আসাম শীঘ্রই এক হবে এবং তা হবে ভারত জোটের ভাঙনের শুরু।সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করি, এই মহিলা (ইন্দিরা গান্ধী )যেন তা অনুধাবন করে।
এখানে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৭। পাক প্রতিনিধিদলের চীন সফরের ফলাফল বর্ণনা | দৈনিক পাকিস্তান | ৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
‘অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী দ্ব্যর্থহীন ভাষায় চীনের মনোভাব ব্যক্ত করেছেন’
আলোচনার ফল সন্তোষজনকঃ চৌ
পিকিং, ৮ই নভেম্বর (এপিপি)। -প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই গতরাতে বল্রন যে, চীনের নেতৃবৃন্দ ও বন্ধুত্বমূলক সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কর্তৃক চীনে প্রেরিত পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের মধ্যে আলোচনা সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেছে।
চীন থেকে ফিরে আসার আগে চীনা নেতাদের সম্মানে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের নেতা জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো এক ভোজসভার আয়োজন করেন,
ভোজসভায় এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই উক্ত মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই আলোচনার সাফল্যে দু দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা ও আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্বেও পরোপুরি পরিচয় রয়েছে।
তিনি বলেন, অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চি পং ফেই তার ভাষণে চীনের ভূমিকা পরিষ্কার ভাষায় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া সরকার ও জনগনের কাছে চীনা সরকার এবং জনগনের শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানানর জন্য পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ জানান।
হংকং থেকে রয়টার পরিবেশিত খবরে প্রকাশ, চৌ এন লাই ও ইয়াহিয়ার বিশেষ দূত জনাব ভুট্টো তাঁদের আলোচনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে। গতরাতে জনাব ভুট্টো প্রদত্ত ভোজসভায় তাঁরা ভাষণ দেন।
মিঃ চৌ এন লাই বলেন, ইয়াহিয়ার কাছ থেকে দায়িত্ব নিয়ে পাকিস্তানী প্রতিনিধিদল চীনে বন্ধুত্বমূলক সফরে এসেছেন এবং সাধারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চীন সরকারের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের আলোচনায় সাফল্যজনক ফল পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার পিকিং আগমনের পর মিঃ চৌ এন লাই ও অন্য চিনা নেতাদের সঙ্গে ভুট্টোর প্রতিনিধিদলের আলোচনা হয়েছে বলে যে খবর বেরিয়েছে যে সম্পর্কে সিনহুয়া কোন বিস্তারিত বিবরণ দেয়নি।
যাই হোক, ভুট্টো গতরাতে পিকিং-এ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন যে, আলচনার ফল এশিয়ার হামলা প্রতিরোধ করবে। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চী পেং ফেই পাকিস্তানী প্রতিনিধিদলের জন্য প্রদত্ত ভোজসভায় অভিযোগ করেছেন যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে ভারত হস্তক্ষেপ করছে।
জনাব ভুট্টো গতরাতে চীনা নেতাদের সম্মানে প্রদত্ত ভোজসভায় বলেন যে, চীনা নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করে তাঁর প্রতিনিধিদল দেশে ফিরছে।
এশিয়ায় পাকিস্তানের ভূমিকা হচ্ছে শান্তি, বন্ধুত্ব, অন্যের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা ও মানবজাতির অগ্রগতি। পাকিস্তান ও চীনের জনগন এই সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৮। অঘোষিত যুদ্ধ হচ্ছেঃ ইয়াহিয়া | দৈনিক পাকিস্তান | ৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
অঘোষিত যুদ্ধ হচ্ছেঃ ইয়াহিয়া
ভারত হামলা করলে চীন হস্তক্ষেপ করবে
.
করাচী, ৮ই নভেম্বর (পিপিআই)। – ভারত পাকিস্তানের উপর আক্রমণ চালালে গণচীন যেভাবে পারে পাকিস্তানকে সাহায্য করবে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গত শুক্রবার লাহোরে কলম্বিয়া ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের প্রতিনিধি টমাস ফেন্টনের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, ভারত পাকিস্তানে আক্রমণ চালালে অবশ্যই চীন হস্তক্ষেপ করবে।
পাকিস্তান ও ভারত কি যুদ্ধের কাছাকাছি এসেছে এ প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, এর মধ্যেই একটা অঘোষিত যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতের প্রতি অসাধারন সহিষ্ণুতা দেখাচ্ছে। কিন্তু ভারত আমাদের সীমান্তে অব্যাহতভাবে গোলাবর্ষণ করে চলেছে। বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজুবুর রহমানের বিচার সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে প্রেসিডেন্ট বলেন, বিচার চলছে।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, শেখ মুজিবের ভাগ্যে কি ঘটবে না ঘটবে সে সিদ্ধান্ত আদালতই গ্রহণ করবে। তবে বিচার সমাপ্ত হলেই মামলার বিবরণ প্রকাশ করা হবে। পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক সমাধান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি আগেই জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি পরিকল্পনা দিয়েছেন এবং তিনি তা বাস্তবায়িত করবেন।
পূর্ব পাকিস্তানের একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ছাড়া কিভাবে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এর জবাবে প্রেসিডেন্ট বলেন, নির্বাচন শেষে একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের অভ্যুদয় ঘটবে এবং তাঁর কাছেই ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে।
উদ্বাস্তুদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা সত্যিকারভাবে তাদের ঘরবাড়ী ফেলে ভারতে চলে গেছেন সেইসব উদবাস্তুকে ফিরিয়ে নিতে পাকিস্তান রাজী আছে। এ ব্যাপারে আমরা জাতিসংঘের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি।
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৯। দন্ডবিধি সংশোধন আইন জারি | পাকিস্তান অবজার্ভার | ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ |
ইসলামাবাদ, নভেম্বর ১১– এপিপির বরাত দিয়ে জানা যায় প্রেসিডেন্ট একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন যেটি দ্বারা একটি বিশেষ কোর্ট স্থাপন করতে বলা হয়েছে সেসকল অভিযুক্তদের বিচারের জন্য যারা পাকিস্তানি পিনাল কোড অফিশিয়াল সিক্রেট এক্ট ১৯২৩ (গুপ্তচরবৃত্তি) এর ৩ ধারা এবং শত্রু শক্তি অধ্যাদেশ ১৯৪৩ (শত্রুর সাহায্য করা) এর ৩ ধারানুসারে অপরাধ চক্রান্তে সেকশন ১২০ এর বি, অন্যায় কারাবাসে সেকশন ৩৪২ অথবা আগুন অথবা বিস্ফোরক ব্যবহার করে অপকর্ম চেষ্টায় সেকশন ৪৩৫ এর অধীনে বিচারযোগ্য হবে ।
পাকিস্তান সুপ্রীম কোর্টের একজন বিচারককে চেয়ারম্যান এবং হাই কোর্টের একজন বিচারককে সদস্য করে সরকার বিশেষ আদালতটি স্থাপন করবে । এই প্রজ্ঞাপনটির নাম দেয়া হয় “ফৌজদারি আইন সংশোধনী ১৯৭১” (বিশেষ আদালত) যেটি ৮ নভেম্বর, ১৯৭১ সালে (রাষ্ট্রপতি নির্দেশ নং- ১৩, ১৯৭১ অনুসারে ) গঠিত হয় এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় (আইন বিভাগ) কর্তৃক সাধারণ তথ্যের জন্য গতকাল প্রকাশিত হয়।
.
.
শিরোনামঃ ১০০। বন-এ পররাষ্ট্র সেক্রেটারী সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৪ নভেম্বর, ১৯৭১
.
বন-এ পররাষ্ট্র সেক্রেটারী
সীমান্ত পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে
বন, ২৩শে নভেম্বর (রয়টার)।- পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সেক্রেটারী জনাব সুলতান মোহাম্মদ খান গত রাতে বলেন যে, পাক-ভারত বিরোধের গতকালকের খবরে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতিরই আভাস পাওয়া যায়।
পাকিস্তান পররাষ্ট্র দফতরের শীর্ষস্থানীয় কর্মচারী জনাব খান সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণদানকালে জনৈক সাংবাদিক পূর্ব পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বাত্মক হামলার পাকিস্তানী খবর তাঁকে অবহিত করেন।
পরিস্থিতি পূর্বাপেক্ষা আরও অধিকতর জটিল ও বিপজ্জনক মনে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। যেহেতু পাকিস্তানী ভূখণ্ডেই আক্রমণ হচ্ছে তা থেকেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে কোথা থেকে হামলাটা হচ্ছে। জনাব খান আরও বলেন যে, যুদ্ধের মাধ্যমে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কোন সমস্যারই সমাধান হবে না বরং তাতে উদ্বাস্তুদের সংখ্যাই বৃদ্ধি পাবে এবং উভয় দেশই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।
ভারতীয় আক্রমণের পর পাকিস্তান ভারতীয় ভূখণ্ডে পাল্টা আক্রমণ হানবে কি না জিজ্ঞাসা করা হলে জনাব খান যে কোন দেশের আত্মরক্ষা করার মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইন-তথা জাতিসংঘ সনদের উল্লেখ করেন।
জনাব খান আরও বলেন যে, ভারতের হামলার ফলে উভয় পক্ষেই বিপুল প্রাণহানি ঘটবে এবং শুধুমাত্র দু দেশের জন্যই নয় বরং সমগ্র এশিয়ার জন্যই তা আরও বহুবিধ সমস্যার সৃষ্টি করবে।
ওয়াশিংটন, অটোয়া, প্যারিস, বন প্রভৃতি স্থান সফর শেষে জনাব খানের আজ পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনের কথা।
.
.
শিরোনামঃ ১০১। উপমহাদেশের পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যে কোন বৃহৎ শক্তির উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৬ নভেম্বর, ১৯৭১
.
উপমহাদেশের পরিস্থিতিতে পাকিস্তান
যে কোন বৃহৎশক্তির উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে
রাওয়ালপিন্ডি, ২৪শে নভেম্বর (এপিপি)।- পাকিস্তান উপমহাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ভারতের হামলা বন্ধ করার ক্ষেত্রে যেকোন বৃহৎশক্তির উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে।
আজ সন্ধ্যায় একজন সরকারী মুখপাত্র এ কথা বলেছেন। মুখপাত্রটি বলেন, আজ সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর অনুসারে উপমহাদেশের বর্তমান সংকট পরিসমাপ্তির জন্য যদি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েট ইউনিয়ন দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণ করে তবে আমরা এ বিষয়ে অত্যন্ত খুশী হবো।
তিনি বলেন, কিন্তু পাকিস্তান বর্তমান পর্যায়ে এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাতে পারে না। কারণ পাকিস্তান ভারত কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী সব বৃহৎশক্তিরই উচিত ভারতকে বলে তার আক্রমণ থামানো।
যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েট ইউনিয়ন উভয়ে পরষ্পরের সংষ্পর্শে রয়েছে এবং এই উপমহাদেশের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে ওয়াশিংটনে প্রকাশিত একটি সংবাদ সম্পর্কে মন্তব্য করতে বলা হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ সম্পর্কে পাকিস্তানের মনোভাব কি হবে মুখপাত্রকে একজন সাংবাদিক এ প্রশ্নও করেন। মুখপাত্রটি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে বিদেশী শক্তির সাহায্যকে পাকিস্তান পছন্দ করবে। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান পরিস্থিতির একমাত্র সমস্যা হলো উদ্বাস্তু ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তন।
এ জন্য পাকিস্তান জাতিসংঘের সহযোগিতা ও তত্ত্বাবধানকে স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান বাস্তুত্যাগী ব্যক্তিদের তাদের বাড়ীঘরে ফিরিয়ে আনার জন্যে নিজেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান আক্রান্ত হয়েছে এবং আমরা আক্রমণকারী নই। সংঘর্ষ বন্ধ করার ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক বিদেশী শক্তির উদ্যোগে আমরা খুশী হবো।
প্রশ্ন:- আপনি বলেছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত সোভিয়েট দুরপাল্লার কামান ব্যবহার করেছে। এ জন্যে পাকিস্তানকে মস্কোর কোন উদ্যোগ মেনে নেয়ার সম্ভাবনাকে আপনি কি বাতিল করে দেবেন?
উত্তর:- সোভিয়েট ইউনিয়ন থেকে যদি কোন গঠনমূলক ও শান্তিপূর্ণ উদ্যোগ আসে আমরা তা পছন্দ করবো। ভারতই বিভিন্ন দেশকে পাকিস্তানে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছে। যেসব দেশ ভারতকে সামরিক সাহায্য দিচ্ছে তাদের দেখা উচিত ভারত কি ভাবে এই অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে।
—————–
শিরোনামঃ ১০২। ন্যাপের সকল গ্রুপ নিষিদ্ধ ঘোষণা
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
.
ন্যাপের সকল গ্রুপ নিষিদ্ধ ঘোষণা
কতিপয় নেতাকে আটকের আদেশ
দলের পরিষদ সদস্যদের আসন থাকবে- প্রেসিডেন্ট
রাওয়ালপিন্ডি, ২৬শে নভেম্বর (এপিপি)।- প্রেসিডেন্ট আজ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সকল উপদল ও গ্রুপকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। আজ এখানে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বলেন যে, তিনি ইতিমধ্যে ন্যাপের কতিপয় নেতাকে আটক করার আদেশ দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, তবে ন্যাপের টিকিটে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত ব্যক্তিদের আসন বহাল থাকবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি দীর্ঘদিন যাবৎ পাকিস্তানের স্বার্থ ও নিরাপত্তার বিরুদ্ধে কাজ করছিল। এর কতিপয় নেতা এই দেশ সৃষ্টির বিরুদ্ধে জোর তৎপরতা চালিয়েছিল এবং এর অস্তিত্ব মেনে নিতে পারেনি।
তারা এর ক্ষতি করার কোন সুযোগই নষ্ট করেননি। এখন যখন তারা পূর্ব অংশে অভ্যন্তরীণ নাশকতামূলক তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং যখন ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তানের এলাকা আক্রমণ করেছে এবং যখন তার (ভারতের) নেতৃবৃন্দ আমাদের এলাকা দখল ও তা নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা বলছেন, তখন উক্ত দলের কতিপয় নেতা এ দেশের শত্রুদের সঙ্গে যোগসাজশে পাকিস্তানকে খণ্ডবিখণ্ড ও ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা করছেন। প্রেসিডেন্ট বলেন, অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ এখন দেশের বিরুদ্ধে এক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যারা প্রথমেই পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতা দাবী করেছিলেন মওলানা ভাসানী তাদের অন্যতম, এবং এখন তিনি আমাদের শত্রুদের মধ্যে বসবাস করছেন।
এছাড়া সবচেয়ে ঘোরতর পাকিস্তানবিরোধী আব্দুল গাফফার খান এই দেশের প্রতি শত্রুতায় কখনো ক্ষান্ত হননি এবং এখন তিনি এর শত্রুদের সঙ্গে প্রকাশ্যে যোগসাজশে কাজ করে যাচ্ছেন। এই দলের অন্যান্য কতিপয় নেতা পাকিস্তানের কোন কোন অংশে বিদ্রোহ শুরু করার ষড়যন্ত্র করছেন। প্রেসিডেন্ট তাঁর বিবৃতিতে বলেন, আমি ধৈর্যের সঙ্গে আশা করেছিলাম যে, এই সংকটপূর্ণ সময়ে আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করছি। তখন শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং এই দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এখনো যারা পাকিস্তানে আছেন তারা এক সাধারণ শত্রুর মোকাবিলায় আমাদের সঙ্গে শরীক হবেন অথবা কমপক্ষে সক্রিয় শত্রুতা থেকে বিরত থাকবেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন, কিন্তু যখন বৈদেশিক হামলা হয়েছে তখন আমরা আমাদের শত্রুদের অনুরুপ লক্ষ্যসম্পন্ন ও তাদের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রক্ষাকারী এবং উক্ত লক্ষ্যসমূহ অর্জনে তাদের (আমাদের শত্রুদের) সক্রিয়ভাবে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা প্রণয়নকারী একটি রাজনৈতিক দলের অব্যাহত অস্তিত্ব থাকতে দিতে পারি না। কাজেই দেশের অভ্যন্তর থেকে এই হুমকি দূর করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বলেন, কাজেই আমি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সকল গ্রুপ ও উপদল নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমি ইতিমধ্যেই এই দলের কিছু সংখ্যক নেতাকে আটক করার আদেশ দিয়েছি। তিনি বলেন, তবে দলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা সত্ত্বেও এই দলের টিকিটে যারা জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদগুলোতে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের আসন বহাল থাকবে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, আশা করা যাচ্ছে যে, তারা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ব্যক্তিদের প্রভাবমুক্ত দলের অন্যান্য সদস্যরা প্রতিরক্ষায় এবং দেশের উন্নতির জন্য পুরোপুরিভাবে এবং অকপটে তাদের ভূমিকা পালন করবে।
—————
শিরোনামঃ ১০৩। উপনির্বাচনঃ ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা
সূত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান
তারিখঃ ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১
উপনির্বাচনঃ
ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা
ইসলামাবাদ, ২৬শে নভেম্বর, (এপিপি)।- প্রধান নির্বাচন কমিশনার পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেছে। জাতীয় পরিষদের ২০টি ও প্রাদেশিক পরিষদের ৭১টি আসনে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
.
[ উল্লেখ্য যে, বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় ৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল। ]
.
.
.
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৪। বিচারের জন্য বিশেষ আদালত গঠিত | দৈনিক পাকিস্তান | ২৭ নভেম্বর, ১৯৭১ |
বিচারের জন্যে বিশেষ আদালত গঠিত
ষড়যন্ত্র, গুপ্তচরবৃত্তি ও শত্রুকে সাহায্য
ইসলামাবাদ, ২৬শে নভেম্বর, (এপিপি)।- কেন্দ্রীয় সরকার আজ ষড়যন্ত্র, গুপ্তচরবৃত্তি ও শত্রুদের সাহায্য করার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য দু’সদস্যের একটি বিশেষ আদালত গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন।
সম্প্রতি জারীকৃত ফৌজদারি আইন সংশোধন (বিশেষ আদালত) আদেশ মোতাবেক এই আদালত গঠন করা হয়েছে। এই আদালতের বিচারপতিদ্বয় হচ্ছেন সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি জনাব মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী (চেয়ারম্যান) এবং সিন্ধু ও বেলুচিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি জনাব আবদুল কাদির শেখ।
১৯৭১ সালের ফৌজদারি আইন সংশোধন (বিশেষ আদালত) নির্দেশটি (১৯৭১ সালের প্রেসিডেন্টের নির্দেশ নম্বর ১৩) ১৯৭১ সালের ১১ই নভেম্বর জারী করা হয়।
এই নির্দেশের তৃতীয় ধারায় পাকিস্তানী ফৌজদারি দন্ড বিধির ১২০ (ষড়যন্ত্র), ৩৪২(বেআইনীভাবে আটক রাখা) অথবা ৪৩৫ (ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে বিস্ফোরকদ্রব্য ব্যবহার) অথবা ১৯২৩ সালের সরকারী গোপনীয়তা আইনের গুপ্তচরবৃত্তির তৃতীয় ধারা অথবা ১৯৪৩ সালের শত্রুর চর (শত্রুকে সাহায্য করা) অর্ডিন্যান্সের তৃতীয় ধারা মোতাবেক শাস্তি পাবার যোগ্য অপরাধীদের বিচারের জন্যে দু’সদস্যের একটি বিশেষ আদালত গঠনের ব্যবস্থ করা হয়েছে।