শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০২। ইন্দিরা গান্ধীর লন্ডন সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে ৩০ অক্টোবর আয়োজিত একটি গনমিছিলের প্রচারপত্র | বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি | অক্টোবর ,১৯৭১ |
মিসেস গান্ধীর লন্ডন আগমন উপলক্ষে
বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে
বিরাট গণ–মিছিল
স্থানঃ হাইড পার্ক স্পির্কাস কর্নার
সময়ঃ বেলা দেড় ঘটিকা (১-৩০ মিঃ)
তারিখঃ শনিবার ৩০শে অক্টোবর, ১৯৭১
গণমিছিলঃ হাইড পার্ক স্পীর্কাস কর্নার হইতে আরম্ভ করিয়া ব্রুক স্ট্রিট ক্লারিজেস হোটেল
হইয়া হ্যানোভার স্কোয়ারে শেষ হইবে।
সভায় বক্তৃতা করিবেনঃ
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, বৃটিশ পার্লামেন্টের কয়েকজন সদস্য ও বাংলাদেশ থেকে আগত আওয়ামী লীগের ৪ জন এম-এম-এ ও এম-পি-এ এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি প্রতিনিধিবৃন্দ।
প্রতিটি বাঙালি ভাইকে উক্ত মিছিলে অংশগ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিনীত
আহ্বায়ক,
বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি
১১নং গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন, ই সি ৩।
<৪,১০৩,১৮৬>
অনুবাদকঃ রাফসান আহমেদ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৩। ৩০শে অক্টোবর হাইড পার্কের জনসমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচী | বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি | ৩০শে অক্টোবর ,১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
জয় বাংলা
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন ই সি ৩
টেলঃ- ০১-২৮৩ ৫৫২৬/৩৬২৩
সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি
প্রস্তাবনায়:
১. শামসুর রাহমান, সদস্য, পরিচালনা কমিটি
২.সহকারী-শামসুল আলম
৩. সভাপতিত্বে – এম. আজিজুল হক ভুঁইয়া, আহ্বায়ক, পরিচালনা কমিটি ৬ মিনিট
৪. কোরআন তিলাওয়াত … ৩ মিনিট
৫. কাতর চৌধুরী, সদস্য, এস. সি ৩ “
৬. জনাব পাশা ২
৭. জনাব আব্দুল মতিন ২
৮. জনাব গাউস খান ২
৯. জনাব এ. এম তারাফদাই ২
১০. জনাব এ জেড চৌধুরী ৫
১১. ড. মফিজ চৌধুরী ৫
১২. ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ২
১৩. নারী সমিতি ২ “
১৪. জাকারিয়া চৌধুরী ২
১৫. ছাত্র সংগ্রাম কমিটি ২
১৬. রেজাউল করিম ২
১৭. এনামুল হক ২
১৮. জনাব এ. মোমেন। ৩
১৯. তালুকদার বি.এইচ.
প্রধান বক্তা বিচারপতি এ.এস. চৌধুরী ২৫ “
ঘোষণার জন্য ২
__________________
৭০ মিনিট
<৪,১০৪,১৮৭>
অনুবাদকঃ রাফসান আহমেদ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৪। বাংলাদেশ মিশন প্রধানের কাছে লিখিত ‘ইউনাইটেড এ্যাকশন-বাংলাদেশের’ পক্ষে কয়েকজন সদস্যের চিঠি | ইউনাইটেড এ্যাকশন-বাংলাদেশ | নভেম্বর ,১৯৭১ |
ইউনাইটেড এ্যাকশন-বাংলাদেশ
৯১, কমার্শিয়াল রোড, লন্ডন, ই. ১
জনাব বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
যুক্রাজ্যের বাংলাদেশ মিশন
২৪, পেমব্রিজ গার্ডেনস।
লন্ডন ডাব্লিউ২।
বিচারপতি জনাব চৌধুরী,
আমরা পত্রের সাথে কিছু কাগজপত্র সংযুক্ত করছি, যা এই অ্যাকশন গ্রুপের কার্যক্রমে গত কয়েকদিন যাবত প্রজন্মের জন্য উপযোগী কিছু প্রকাশ্য মতামত নিয়ে প্রচারিত হয়েছে।
আমারা অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি যে, ব্রিটিশ ন্যাশনাল ইউনিয়ন এর ছাত্রদেরকে আমাদের আবেদনের সাথে সংযুক্ত সিদ্ধান্তসমূহ দ্বারা উদ্দীপ্ত করতে সফল হয়েছি।
এখন পর্যন্ত এই ইউনিয়নটি বিপর্যয়পূর্ণ সীমা সম্পর্কে সতর্ক ছিলোনা এবং এতেই বোঝা যায় যে, আমরা তাদেরকে যৌথ সমাধানে প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়াও আমরা আনন্দিত যে, ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ মাননীয় বিশপ রুডলেস্টন, রিচারড ক্রসমেন এম.পি. এবং লেডি জিফরডের ত্রাণ তহবিলের নির্বাহ করতে সফল হয়েছে, যা আমরা প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এখন আশা করি যে, প্রায় ছ’শো শিক্ষার্থীর ইউনিয়নে কিছু প্রতিক্রিয়া হবে, যা আমাদের আবেদনপত্রে প্রচারিত হয়েছে; কিন্তু যেকোনো ক্ষেত্রে আমরা ইংল্যান্ডের এবং ওয়েলসের প্রতিটি কোণে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, পলিটেকনিক এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বার্তা গ্রহণ করেছি।
এছাড়াও আমরা কলকাতা পাবলিসিটি মিশন থেকে সরাসরি বিভিন্ন প্রচার উপকরণ গ্রহণ করছি। এই ধরনের একটি বার্তা সাজানো নোটের সঙ্গে আমাদের কাছ থেকে সম্প্রতি সব ব্রিটিশ এমপিদের কাছে প্রচারিত হচ্ছে। এটাও আপনার অবগতির জন্য সংযোজিত হয়েছে।
আমাদের হাতে তাৎক্ষণিক তিন নম্বর বিষয়টি হচ্ছে, একটি জনসভা সংগঠিত করা, যা ৬ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬.৩০ মি. কনওয়ে হল এ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা আমন্ত্রণ পত্র প্রেরণ করেছি আপনার জন্য এবং ইংল্যান্ডে অবস্থিত অন্যান্য বাঙালি নেত্রীবৃন্দের সাথে ব্রিটিশ এম. পি এস, চার্চমেনের জন্যও। আমরা আশা করি আপনি উপস্থিত হতে সক্ষম হবেন এবং আমারা বিশ্বাস করি আপনার উপস্থিতিই সমগ্র লন্ডনে বাঙালি মতামতকে প্রবলভাবে সক্রিয় করে তোলার জন্য জরুরি।
আমরা আপনাকে আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে পরামর্শ দিতে থাকব।
বিনীত
ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশের পক্ষে
স্বাক্ষর
সি.সি. স্টিয়ারিং কমিটি
১১ গোরিং এস টি
ই.সি.৩.
<৪,১০৫,১৮৮>
অনুবাদকঃ রাফসান আহমেদ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৫। সুরাইয়া খানমের কাছে বৃটিশ এম-পি জোয়ান হল- এর পক্ষে লিখিত একটি চিঠি | বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি | ৩ নভেম্বর,১৯৭১ |
জোয়ান হলের পক্ষ থেকে
৩ নভেম্বর, ১৯৭১
জনাব,
মিস জোয়ান হলকে উদ্দেশ্য করে ২৭ অক্টোবর আপনার লেখা চিঠির জন্য ধন্যবাদ। মিস হল একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেশের বাইরে আছেন। আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে ফিরে আসার পর তিনি ব্যক্তিগতভাবে আপনার চিঠির উত্তর দিবেন।
আপনার বিশ্বস্ত
জোয়ান হলের সহকারী
সুরাইয়া খানম,
স্টিয়ারিং কমিটি অব দ্যা এ্যাকশন কমিটি
ফর দ্যা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ
১১, গোরিং স্ট্রিট,
লন্ডন, ই.সি.৩.
<৪,১০৬,১৮৯>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মণ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৬। স্টিয়ারিং কমিটির সেক্রেটারীর কাছে লিখিত ‘ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশ সোসাইটি’র পক্ষে সৈয়দ বশীর আহমদের চিঠি | বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির ষ্টিয়ারিং কমিটি | ৪ নভেম্বর,১৯৭১ |
বরাবর
পরিচালক কমিটির সম্পাদক
(বি.ডি.এস.) ১১ গোরিং এস.টি লন্ডন এ.সি.৩.
জনাব,
আমি ওল্ডহ্যামের পক্ষ থেকে দু’একটি কথা না লিখে পারছি না। ওল্ডহ্যাম বাংলাদেশ সোসাইটি গণতান্ত্রিক উপায়ে গঠিত না হওয়ায় আপনাদের কাছে অভিযোগ করেছি। আপনারা মিঃ মতিনের অপেক্ষায় আমাদের কোন উপদেশ দিতেছেন না। মিঃ মতিনের দ্বারা কোন কাজ সম্ভব হবে না। কারণ আমাদের পূর্বের চাঁদা ১৩/১৪ হাজার মানচেষ্টার জমা রহিয়াছে। আমরা ওল্ডহ্যামের বিষয় আপোষের চেষ্টা নিয়ে ব্যর্থ হই। গতিকে আপনাদের কোন উপদেশ না পেয়ে কোন কাজে অগ্রসর হতে পারছি না।
অতএব, আপনার মেহেরবানী পূর্বক অতি সত্বর কিভাবে মুক্তিফৌজ বা বাংলাদেশের শরণার্থীদের সাহায্য করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে এবং উপদেশ দিতে মর্জি হয়। ইতি-
৪/১১/৭১ইং
আপনার
সাভেদ বশির আহমেদ
১১-প্লাগ এসটি.
ওল্ডহ্যাম. ল্যান্স.
টেলিফোনঃ ০১৬-৬৭২-৪২৪৪
<৪,১০৭,১৯০>
অনুবাদকঃ মাহিন বারী
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১০৭। অস্ত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে চাঁদা সংগ্রহের আহবান সম্বলিত কর্নেল ওসমানীর চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
কর্নেল এম এ জি ওসমানী, পিএসসি
এমএন এ
কমান্ডার-ইন-চীফ
বাংলাদেশ ফোরসেস
প্রযত্নে – গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর
ডিওনং ১১৫১ এ
২৭ নভেম্বর, ‘৭১
জনাব রাজ্জাক,
১০ আগস্টের বিচারপতি এ এস চৌধুরীর নিকট প্রেরিত চিঠি সম্বলিত আপনার ১৮ অক্টোবর, ‘৭১ এর চিঠির জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, যা আমি ২৬ নভেম্বর, ‘৭১ এ হাতে পেয়েছি। যুক্তরাজ্যে আপনি যে তহবিল সংগ্রহ করেছেন, তার কিয়দংশ একত্রীভূত করবার পরামর্শ দেবার মাধ্যমে আপনি যে ভরসা প্রদর্শন করেছেন আমি তার জন্য অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমার মনে হয়, আমার কাছে তহবিল পৌঁছে দেবার ব্যাপারটি ঠিক হচ্ছে না। আমার লোকদের প্রতি আমার উপদেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্যে তারা যেন অস্ত্র ক্রয়ের নিমিত্তে যত বেশি সম্ভব অর্থ সংগ্রহ করে। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যেন অর্থ যাতে যুক্তরাজ্যেই থাকে এবং অত্যন্ত সতর্কতার সাথে অস্ত্র ক্রয়ের সময় বিনিময় করা হয়।
মুক্তিবাহিনীর প্রতি আপনার অবদান রাখবার প্রয়াসকে আমি গভীরভাবে সাধুবাদ জানাচ্ছি। আপনার পরিস্থিতিতে আমি মনে করি যুক্তরাজ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবেন বিশেষ করে আমাদের লোকদের মাঝে ঐক্য বজায় রাখা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবার ক্ষেত্রে।
যথাযথ সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক
একান্ত বাধ্যগত
এম এ রাজ্জাক খান চৌধুরী এসকিউআর
৬ ব্রিটানিয়া রোড
দক্ষিণ সাগর
পোর্টসমাউথ
যুক্তরাজ্য
<৪,১০৮,১৯১>
অনুবাদকঃ মাহিন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৮। বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের দাবীতে হাইডপার্কে একটি জনসভার প্রেস বিজ্ঞপ্তি | এ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি | ৯ ডিসেম্বর ,১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ই সি ৩
টেলিফোনঃ ০১-২৮৩ ৫৫২৬/৩৬২৩
৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের দাবীতে হাইডপার্কে জনসভা
ভারত ও ভুটান কর্তৃক বাংলাদেশ সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রের স্বীকৃতিলাভ করেছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে পরিচালনা কমিটি হাইডপার্কের স্পিকারস কর্নারে রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে দুপুর ১২:০০ ঘটিকায় মাননীয় সরকার এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবির নিমিত্তে একটি জনসভার আয়োজন করেছে।
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সায়েদ চৌধুরী এই উপলক্ষে জাতিসংঘ থেকে আসছেন জনসভা করবার জন্য।
যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে কমপক্ষে ৭৫ হাজার বাঙ্গালী লন্ডনে আসছেন শুধুমাত্র এই ঐতিহাসিক জনসভাটিকে প্রত্যক্ষ করবার জন্য।
স্বাক্ষরিত –
(এম এ এইচ ভুঁইয়া)
আহ্বায়ক
<৪,১০৯,১৯২-১৯৩>
অনুবাদকঃ মাহিন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০৯। বাংলাদেশ কনভেনশন কমিটির আহ্বায়কের কাছে লিখিত সাউথ ইংল্যান্ড রিজিওনাল কমিটির জয়েন্ট কনভেনর-এর চিঠি | বাংলাদেশ কনভেনশন কমিটি | নভেম্বর ৪, ১৯৭১ |
৪ নভেম্বর ৭১
প্রেরক: যুগ্ম আহবায়ক
দক্ষিণ ইংল্যান্ড আঞ্চলিক কমিটি
৫৮ বুরউইক স্ট্রিট
লন্ডন ডব্লিউ ১
প্রাপকঃ জনাব এম এ ভুঁইয়া
আহবায়ক
অধিবেশন কমিটি
জনাব ভুঁইয়া
জনাব গাউস খান আমাকে জানিয়েছেন যে, সকল কমিটির মেয়াদ বিবেচনার জন্য আপনি ৭ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে দক্ষিণ ইংল্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির (এসইআরসি) মিটিং ডেকেছিলেন। একটি বিষয় আমার মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না যে, আপনি এ কাজটি কেন করলেন, যেখানে আপনি এমন গুরুতর বিষয় নিয়ে না মিটিঙের পূর্বে আমার সাথে আলোচনা করলেন না মিটিং এ আমাকে নিমন্ত্রণ করবার নুন্যতম সৌজন্যটুকু দেখালেন।
আমি আপনার দৃষ্টিগোচরে করতে চাই যে, এসইআরসি তার উপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই অত্যন্ত বিশ্বস্তভাবে পালন করে আসছে এবং এ বিষয়ে অ্যাকশন কমিটির সদস্যদের পূর্ণ গণতান্ত্রিক সমর্থন রয়েছে, যা কমিটির কারিকুলাম ও সাংগঠনিক নির্দেশাবলীতে উল্লেখিত রয়েছে। আমি আপনার দৃষ্টিগোচরে এটাও আনতে চাই যে, আপনি যে অধিবেশন কমিটির আহবায়ক, সেটি আঞ্চলিক এবং পরিচালনা উভয় কমিটির প্রতিনিধিদের দ্বারাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, এসইআরসি এর বৈধতা একটি মাত্র মিটিং দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না যা আপনি অধিবেশন কমিটির নামে ডেকেছিলেন। তদুপরি, অঞ্চল আপনাকে কোন মিটিং ডাকবারর এখতিয়ার দেয়নি, বিশেষভাবে কমিটির “বৈধতা” বিষয়ে কথা বলবার জন্য। আমি অতএব, আপনার এই অঞ্চলে এধরণের মিটিং করবার বিষয়ে আমি তীব্র প্রতিবাদ জ্ঞাপন করছি। এরই সাথে আমি আপনাকে এধরণের মিটিং করা হতে অতিশীঘ্র নিবৃত হবার উপদেশ দিচ্ছি।
আমি আশংকা করছি যে, আপনার এহেন কঠোর ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড অঞ্চলের ঐক্য বিপদ্গ্রস্ত করতে পারে। জাতীয় স্বাধীনতার এই চরম সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ “প্রবাসী মুজাহিদ” এ কোন প্রকার অনৈক্যের জন্য কেবলমাত্র আপনি দায়ী থাকবেন।
আমি আপনাকে এও জানাতে চাই যে, যদি অঞ্চলের কোন সদস্য কমিটির কাজের সাথে দ্বিমত প্রকাশ করে তবে আমরা আনন্দের সাথে এই বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি এবং শুধুমাত্র কমিটির ভিতরে ক্রোধ-ক্ষোভের বিষয় মিটমাট করে ফেলবার চেষ্টা করব।
একান্ত
স্বাক্ষরিত
(এম এ চৌধুরী)
তথ্যের জন্য পাঠানো হয়েছে:
১/ সকল আঞ্চলিক কমিটিতে
২/ এসইআরসি এর সকল অ্যাকশন কমিটিতে
৩/ বিচারপতি জনাব এ এস চৌধুরীর নিকট
৪/ জনাব গাউস খান, সদস্য, কনভেনশন কমিটির নিকট
<৪,১১০,১৯৪>
অনুবাদকঃ মাহিন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১০। লন্ডনের ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনস্টার ব্যাংক ম্যানেজারকে লিখিত বাংলাদেশ ফান্ড একাউনটেন্ট জেনারেল এর চিঠি | বাংলাদেশ ফান্ড | ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
ব্যবস্থাপক,
ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক লিমিটেড,
ক্রাক্সটন হাউস, ৬ টটহিল স্ট্রিট
লন্ডন এসডব্লিউ ১
জনাব,
অনুগ্রহ করে আমাকে একটি ক্রেডিট ট্রান্সফার বই প্রেরণ করুন, যাতে করে আমরা এই অফিসে গৃহীত
অর্থ ব্যবহার করতে পারি।
আপনার বিশ্বস্ত
(এম কিউ রহমান)
হিসাব রক্ষাকর্তা
বাংলাদেশ তহবিল
এ/সি নং ৪৮০০৭৭২২
<৪,১১১,১৯৫>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মণ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১১। হাইডপার্কে বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটি আয়োজিত স্বীকৃতি মিছিলের পরিচয়পত্র ও পোষ্টার | বাংলাদেশ ষ্টিয়ারিং কমিটি | ১২ ডিসেম্বর,১৯৭১ |
সালাম, সালাম, হাজার সালাম,
গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের
রাষ্ট্রপতি ও বাঙালি জাতির জনক
শেখ মুজিবুর রহমানকে
জানাই সংগ্রামী অভিনন্দন।
স্বাধীন বাংলাদেশ স্বীকৃতি মিছিল
রবিবার ১২ই ডিসেম্বর ১৯৭১ বেলা ১২টায় হাইডপার্ক স্পীকার্স কর্নার
স্বাধীন বাংলার সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
আমাদের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম আজ বিজয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমাদের বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশ ‘ভারত’ আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেই সাথে স্বীকৃতি দিয়েছেন ‘ভুটান’। আমরা পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশের কাছে আবেদন ও দাবী জানাইতে চাই ‘স্বীকৃতির’ জন্য। বিলাতের এক লক্ষ প্রবাসী বাঙালির মিছিল থেকে আমরা লক্ষ কণ্ঠে আওয়াজ তুলতে চাই “গণ-প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশকে মুক্তি দাও”।
সাড়ে সাত কোটি মানুষের পক্ষ হয়ে তোমাদের নিকট আমাদের দাবী স্বীকৃতি দাও। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও।
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও গ্রেট বৃটেনস্থ হাইকমিশনার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী এই সভায় ও মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের অধিবেশন থেকে আসবেন।
দলে দলে আপনারা সভা ও মিছিলে যোগ দিন।
যাতায়াতের জন্য নিজ নিজ এলাকার কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি
কর্তৃক আয়োজিত।
_______________________
<৪,১১২,১৯৬>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মণ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১২। বাংলাদেশে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনীর সাহায্যের জন্য প্রবাসী বাঙালীদের কাছে প্রচারিত একটি আবেদনপত্র | বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ লন্ডন | ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
জরুরী আবেদন
মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে শত্রুমুক্তির জন্য আজ জীবন-মরণ সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। আমরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অংশ নিতে না পারলেও তাদেরকে টাকা-পয়সা দিয়ে সংগ্রামকে জয়যুক্ত করার জন্য নিয়মিত সাহায্য করে যাচ্ছি।
টাকা-পয়সা ছাড়াও আজ যেসব জিনিস মুক্তিবাহিনীর নিত্যপ্রয়োজনীয় আমরা নিম্নলিখিত সেই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি সরাসরি বিনা খরচে বাংলাদেশে পাঠাবার ব্যাবস্থা করেছি। প্রবাসী বাঙালি ভাইদের কাছে অনুরোধ তাঁরা যেন সম্ভবমত নিম্নলিখিত জিনিসগুলো অতি সত্বর নিচের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেন।
মুক্তিবাহিনীর জন্য যেসব জিনিস পাঠাবেন
নতুন কাপড়: পুলওভার, সোয়েটার ও কম্বল
খাদ্যদ্রব্যঃ টিনে ভর্তি মুক্তিবাহিনী মাংস, মাখন। চীজ, বিস্কুট ও ফলমূল।
উপরোক্ত জিনিস আগামী ১২ই ডিসেম্বরের মধ্যে
বাংলাদেশ মিশন, ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেন্স, লন্ডন, ডব্লিউ-২ ঠিকানায় পাঠাবেন।
বিস্তারিত জানার জন্য টেলিফোন ০১-৪০৫-৫৯১৭ নম্বরে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, ৩৫ নং গ্যামেজেস বিল্ডিংস, ১২০ নং হার্বোন, লন্ডন, ই সি ১ অফিসে সন্ধ্যা ৭টার আগে যোগাযোগ করুন।
বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
লন্ডন ই সি ১।
<৪,১১৩,১৯৭-১৯৮>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মণ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৩। “বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি” প্রচারিত একটি বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি লন্ডন | ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
জরুরী বিজ্ঞপ্তি
স্বাধীন সার্বভৌম গণ-প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বীকৃতির দাবীতে হাইড পার্কে গত রবিবারের জনসভা ও মিছিলকে কেন্দ্র করে যে তর্কের ঢেউ উঠেছে এবং স্টিয়ারিং কমিটি বর্তমানে যে প্রশ্নবাণের সম্মুখীন হয়েছে সে সম্বন্ধে স্টিয়ারিং কমিটির বক্তব্য ব্যাখ্যা করে বলার খুব প্রয়োজন। বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর নির্দেশক্রমে স্টিয়ারিং কমিটি এ সভা ও গণমিছিলের আয়োজন করে এবং নিমন্ত্রণপত্র ও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সমস্ত শাখা কমিটিগুলোর কাছে ঐ সভা ও শোভাযাত্রাকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলার জন্য আবেদন জানায়। বিলাতে সর্বত্র অ্যাকশন কমিটিগুলোর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং দল নিরপেক্ষভাবে সকল বাঙালির সমবেত প্রচেষ্টায় ঐ দিন হাইড পার্কে প্রচুর লোকসমাগম হয়। সভামঞ্চে স্টিয়ারিং কমিটির কাউকে না দেখে মানুষের মনে প্রশ্ন জাগে স্টিয়ারিং কমিটি কর্তৃক আয়োজিত জনসভা স্টিয়ারিং কমিটি পরিচালনা না করে একটা দলের উপর ছেড়ে দিল কেন? দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজার হাজার মানুষ এই জন্যই সেদিন প্রতিবাদ করেছে, প্রকাশ্যে স্টিয়ারিং কমিটির কাছে কৈফিয়ৎ তলব করেছে এবং স্টিয়ারিং কমিটি বাধ্য হয়ে জনতার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু এখন সময় এসেছে সমস্ত কিছু বুঝিয়ে বলার।
ঐদিন স্টিয়ারিং কমিটি ছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ স্বীকৃতির দাবীতে হাইড পার্কে জনসভা এবং সবশেষে গণমিছিলের বন্দোবস্ত করে। প্রথমে স্টিয়ারিং কমিটি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল। পরে যখন ঘটনাটি জানাজানি হয় তখন স্টিয়ারিং কমিটি অপর পক্ষের নেতৃবৃন্দের কাছে পৃথকভাবে তাঁদের সভা পরিচালনা না করে স্টিয়ারিং কমিটির সাথে সহযোগিতার অনুরোধ জানান। দুঃখের বিষয়, লীগের এই দলের নেতৃবৃন্দ স্টিয়ারিং কমিটির প্রস্তাব প্রত্যাখান করে। এমতাবস্থায় স্টিয়ারিং কমিটি এক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হয়। একদিকে জনতার কাছে ওয়াদাবদ্ধ এবং খবরের কাগজের মাধ্যমে বহুল প্রচলিত জনসভা চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে দু’টা সভা হলে গত আট মাস ধরে প্রবাসী বাঙালি জনতা একতা ও দুর্নিবার সংগ্রামের মাধ্যমে যা কিছু অর্জন করেছে তার সবকিছু বিসর্জন দেওয়া।
লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে স্টিয়ারিং কমিটি এই মর্মে দাবী জানায় যে, খুনী ইয়াহিয়া বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার সংকল্প নিয়ে সেদিন যখন নিরস্ত্র নরনারীর উপর বর্বর আক্রমণ করেছিল তখন ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক মতবাদ, সকল ভেদাভেদ দলীয় কোন্দল এবং ব্যক্তিবর্গ ত্যাগ করে প্রবাসী বাঙালিরা স্টিয়ারিং কমিটির জন্ম দিয়েছিল। দেশপ্রেম আর বিবেকের কাছে সেদিন ক্ষুদ্র স্বার্থ ও অহম পরাজয় বরণ করেছিল। স্মরণ থাকে যে, স্টিয়ারিং কমিটি অ্যাকশন কমিটিগুলোর সাহায্যে বিদেশে যে সংঘবদ্ধ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলেছিল তার কাজ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শত শত শহীদের তাজা রক্তে অর্জিত স্বাধীনতাকে বানচাল করে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন কুকুর আর বিভ্রান্ত গণচীন আজ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া পৃথিবীর কোন বৃহৎ শক্তির কাছ থেকে আমরা এখনও কোন স্বীকৃতি আদায় করতে পারিনি। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে বিরামহীন সংগ্রামের এখন বরং বেশি প্রয়োজন। যা হোক আওয়ামী লীগের এই দলটির নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের যুক্তিতর্ক কোন মূল্য বহন করল না। তাঁরা তাদের সংকল্পে অটল থাকলেন।
অতঃপর এই জটিল পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য স্টিয়ারিং কমিটি এক জরুরী সভায় নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করেন:
১। একই জায়গায় একই সময়ে একই উদ্দেশ্যে বাঙালিদের আলাদা দু’টো সভা ও শোভাযাত্রার ফলাফল কি দাঁড়াবে?
২। এর ফলে বৃটিশ জাতি পৃথিবীর কাছে আমাদের কি নতুন রূপ প্রকাশ পাবে?
৩। পৃথিবী কর্তৃক স্বীকৃতি পাবার আগেই বাঙালিদের মধ্যে প্রকাশ্য রাজপথে দলাদলি দেখানোর ফল কি দাঁড়াবে?
৪। বাঙালি বীরের রক্তস্রোতের মধ্যে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে বর্তমান মুহূর্তে শুধু একটা শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে তার সবকিছু জলাঞ্জলি দেওয়ার অধিকার প্রবাসী বাঙালিদের আছে কি?
উপরের বিষয়গুলো আলোচনা করা এবং সেই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পূর্ব সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার অনুরোধ জানিয়ে স্টিয়ারিং কমিটি লীগের ঐ দলটির কাছে পুনরায় আবেদন জানান। কিন্তু দলটি যে কোন মূল্যে তাদের নিজের সভা চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন। ঠিক এ সময় নিউইয়র্ক থেকে গ্রেট বৃটেনে নিযুক্ত স্বাধীন বাংলার হাই কমিশনার, বৃটেনে বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের নেতা এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ ডেলিগেশনের নেতা বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী টেলিফোন মারফৎ স্টিয়ারিং কমিটিকে জানান যে, ঐ দলটি যখন যে কোন অবস্থাতেই মিটিং করে যাবেন তখন দেশের সম্মান রক্ষার্থে এবং বাঙালি জাতি নিশ্চিত অপমান থেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে স্টিয়ারিং কমিটি যেন ভিন্ন সভা না করে সকল অ্যাকশন কমিটিগুলোকে ঐ দলটির সাথে সভা ও শোভাযাত্রায় যোগ দিতে অনুরোধ করেন।
এ পরিস্থিতিতে দেশের মর্যাদাহানির সম্ভাবনা দেখে, কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে নিজেদের গভীর দায়িত্বের কথা স্মরণ করে এবং স্বাধীন বাংলার বৃহত্তর স্বার্থের কথা চিন্তা করে স্টিয়ারিং কমিটি সমগ্র বাঙালি জনতার কাছে তাদেরকে লীগের সভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করতে অনুরোধ জানায়।
স্টিয়ারিং কমিটি ত্যাগ স্বীকার না করলে আমাদের স্বাধীনতার নতুন সূর্য সেদিন কিছুটা ম্লান হয়ে যেতো- প্রবাসী বাঙালির এতদিনের সংঘবদ্ধ দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত সবকিছুর সাফল্য মাত্র এক ঘন্টার ব্যবধানে ধ্বংস হয়ে যেতো। নিজস্ব সভা বাতিল করে স্টিয়ারিং কমিটি যে অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন এবং যে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও অপমান ভোগ করেছেন তার জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা দুঃখিত হন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে বর্তমান অপমানের চেয়ে অনাগত ভবিষ্যতে তাদের সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে অপরাধী হতে হতো। দল, গোষ্ঠী এবং ব্যক্তির চেয়ে জাতি অনেক বড় এবং জাতির জন্য অপমানিত হলে তাতে গৌরব ছাড়া ক্ষতি নেই, একথা স্মরণ রাখা দরকার।
জয় বাংলা।
নিবেদক-
স্টিয়ারিং কমিটি, লন্ডন
ইসি ৩।
<৪,১১৪,১৯৯>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দও
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৪। বাংলাদেশ প্রশ্নে বৃটিশ লেবার পার্টির অভিমত জানিয়ে লিখিত মিঃ হ্যারল্ড উইলসন এমপি-র একটি চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
প্রেরক: সম্মানিত হ্যারল্ড উইলসন, ওবিই, এফআরএস এমপি
হাউজ অফ কমনস
লন্ডন এডব্লিউ ১
১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
জনাব খান,
পূর্ব পাকিস্তানের দুঃখজনক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার চিঠির প্রতিউত্তর দিতে বিলম্ব হওয়ায় জনাব উইলসন ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এই বিষয় এবং অন্যান্য বিষয়ে চিঠিপত্রের চাপ এত বেশি যে, ইচ্ছা থাকলেও অতি দ্রুত আপনার চিঠির প্রতিউত্তর দেয়া প্রায় অসম্ভবের পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে।
অক্টোবরে ব্রাইটনে লেবার পার্টির বার্ষিক সভায় পাকিস্তান সম্পর্কিত একটি উক্তি সার্বিকভাবে সমর্থিত হয়েছে, যার একটি প্রমাণপত্র জনাব উইলসনের অনুরোধে আমি আপনাকে প্রেরণ করছি।*
বিবৃতিটি তৎক্ষণাৎ বৃটিশ সরকার এবং জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদকের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।
সংসদীয় লেবার পার্টি পুরোপুরিভাবে এই অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছে এবং তারা বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ কার্যকরী পদক্ষেপ দাবী করবে।
বিনীত
এম, এ, রাজ্জাক খান, আইনজীবী
সাধারণ সম্পাদক।
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি অব পোর্টসমাউথ,
৬, ব্রিটানিয়া রোড,
সাউথসি, হ্যান্টস।
পি০৫আইএসএন।
*মিঃ আয়ান মিকার্ডো এম, পি-র চিঠি দ্রষ্টব্য, ১৩ অক্টোবর, ১৯৭১।
<৪,১১৫,২০০-২০৪>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দও
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৫। ‘জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ’ বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞের উপর একটি প্রচার পুস্তিকা | ব্যারিস্টার সাখাওয়াত হুসাইন | ১৯৭১ |
বাংলাদেশে গণহত্যা
সাখাওয়াত হোসেইন
ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল
দ্বিতীয় মুদ্রণ
নতুন মূল্য ৫ পেন্স
১৯৪৪ সালে ডাক্তার রাফায়েল লেমকিন প্রবর্তিত শব্দ ‘গণহত্যা’ বলতে বোঝায়, অন্যান্য জিনিসের মধ্যে (ক) মেরে ফেলা; (খ) গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করা; (গ) স্বেচ্ছায় বিবাদে জড়িয়ে পুরোপুরি অথবা আংশিকভাবে জাতীয় একটি নৈতিক গোষ্ঠী কিংবা একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা করা (অনুচ্ছেদ ২, গণহত্যা নীতি)। ৯ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ এ সাধারণ সমাবেশে গণহত্যা নীতি পাস করা হয়। উক্ত নীতিটি নৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থান থেকে একটি সর্বসম্মত ঘোষণা যে, “গণহত্যা আন্তর্জাতিক আইনে একটি গুরুতর অপরাধ, জাতিসংঘের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যের বিপরীত এবং সভ্য বিশ্বে নিষিদ্ধ (জাতিসংঘ প্রস্তাবনা (১) ১৯৪৬ সালের ১১ ডিসেম্বর প্রস্তাবিত নীতিমালা)। এটি ১৯৫৭ সালের ১২ জানুয়ারী কার্যকর হয়। পাকিস্তানসহ ৬৮ টি সরকার এই নীতিমালায় স্বাক্ষর করে।
জার্মানির নাৎসি সরকার কৌশলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাদের ধর্মীয় অথবা জাতিগত উৎপত্তির কারণে ধ্বংস করে। এইধরণের অপরাধ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ঘটনা ছিল- পুরো হতবিহ্ববল বিশ্ব তখন এই তর্ককে বাতিল করেছিল, যা তাদের নাড়া দেয়। ‘আন্তর্জাতিক সামরিক বিচারসভা’র হুকুমনামা নুরেমবার্গে পুরো বিশ্বের মতামতকে একত্রিত করে এবং ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ ধারণাটিকে স্বীকৃতি দেয়, তা সংঘটিত দেশের জাতীয় আইন ভঙ্গ করুক বা না করুক।
নীতিমালার চতুর্থ অনুচ্ছেদ অনুসারে, সংঘটিত সরকারের দায়িত্বরত শাসক, সরকারী চাকুরীজীবি কিংবা সাধারণ ব্যক্তিসহ যে ব্যক্তি গণহত্যা অথবা অনুচ্ছেদ-৩ এ উল্লেখিত যেকোন অপরাধ সংঘটনে জড়িত থাকবেন তাকে শাস্তি দেয়া হবে। মুক্তির হাহাকারের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞাই সেইসব মারাত্মক এবং কঠোর দিকগুলোকে নির্দেশ করে যার প্রতি নীতিমালার বিধানগুলো প্রয়োগ করা হবে।
১৯৪১ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান সৃষ্টি হয়। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় ১২০০ মাইল দূরত্বে বাংলাদেশ। পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠান, পাঞ্জাবি এবং সিন্ধুদের ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত দিক থেকে চিহ্নিত করা যায়। সংস্কৃতিগত দিকসহ পুরোপুরিভাবেই বাঙালিদের থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা আলাদা। বাংলাদেশের সব মানুষ বাংলার মত একটি সুগঠিত ভাষায় কথা বলে। সংস্কৃত এর মূল। একজন বাঙালি কবি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান। পশ্চিম পাকিস্তানের কেউ এ ভাষায় কথা বলেনা। বাঙালিরা জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, আবহাওয়া এবং রাজনৈতিক আচরণগত দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে আলদা। রাজনৈতিক প্রথাগত দিকের পার্থক্যে কিছুটা বিস্তার পাকিস্তানের সৃষ্টি করা
সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক সংগঠন মুসলিম লীগ ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের ওপর থেকে এর নিয়ন্ত্রণ হারায়। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে প্রথম সুযোগেই তারা নাস্তানাবুদ হয়। এই নির্বাচন একনায়ক আইয়ুব খানের মিলিটারি শাসনামলে (১৯৫৮-১৯৬৯) পুনরায় অনুষ্ঠান করা ছিল মেকি এবং জোর করে আরোপিত। বাংলাদেশে ২৩.৬ ভাগ মানুষ হিন্দু (১৯৬১ আদমশুমারী)। বাংলাদেশ ১৯৫৬ সালে যৌথ নির্বাচনের পক্ষে ইচ্ছা প্রকাশের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে মতামত দেয়। অন্যদিকে পাকিস্তানের অভিজাতরা ইকবাল এবং তার প্যান-ইসলামিক মতবাদের পক্ষ নিয়ে গড়িমসি করতে লাগল। ১৯৫৩ সালে আহমাদী-ক্বাদিনী (দুই বিদ্রোহী মুসলিম গোষ্ঠী) দাঙ্গায় পাঞ্জাবে ৫০,০০০ লোক মারা যায় এবং লাহোরে শিয়া-সুন্নী (দুই বিদ্রোহী মুসলিম গোষ্ঠী) ধর্ম নিয়ে অসাধুতা এবং পাকিস্তান যে একটা নড়বড়ে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে এর পক্ষে ইতিবাচক সাক্ষ্য দেয়।
উপরোন্তু, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির মুসলিম নিয়ে একটি নতুন বিভেদপূর্ণ মতবাদের প্রবর্তনা করেছে। পশ্চিম পাকিস্তানের চোখে বাঙালিরা হিন্দু থেকে মুসলিমে রুপান্তরিত হয়েছে। এর প্রধান কারণ অবশ্যই বিগত পঁচিশ বছরে বাঙালি যে অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়েছিল সেটি। বাঙালীর প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকশ্রেণির ইচ্ছাকৃত শোষণের দ্বারা বাঙালির কায়িক জীবন নিঃশেষের জন্য করা কাজে তাদের মৌন সম্মতি ছিল, যা বোঝার জন্য বিভেদের মতবাদ গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ব পাকিস্তানে সর্বশেষ বন্যায় (১৯৭০) আনুমানিক পাঁচ লাখ লোক মারা গেছে। পাকিস্তান প্রশাসনের গা ছাড়া ভাব খুব ভালভাবেই সকলের অবগত।
অর্থনৈতিক শোষণের মাত্রা প্রদর্শনের জন্য আমাদের ‘প্রধান স্বদেশী উৎপাদন’র পণ্যের উৎপাদনে অবদানের শুধুমাত্র কিছু চিত্র উল্লেখ করতে হবে। বাংলাদেশ এবং পশ্চিম পাকিস্তান একই জায়গা থেকে শুরু করেছিল (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পূর্ব পাকিস্তান সরকার ১৯৬৩)। ১৯৫৯-১৯৬৯ সালের ভিতর পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ৩২ শতাংশ বেশি ছিল। ১৯৬৯-১৯৭০ সালের ভিতর তা বেড়ে ৬১ শতাংশে গিয়ে দাঁড়ায় (চতুর্থ পাঁচ বছরের পরিকল্পনা ১৯৭০-৭৫ এর উপদেষ্টার প্রতিবেদন। খন্ড-১; পরিকল্পনা কমিশন, পাকিস্তান সরকার। প্রতিবেদনের অনুমানগুলো ন্যূনতম, সরকারি মৌলিক তথ্যের সমন্বয়ের অভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে দাম অনেক বেড়ে যায়)।
বিগত পঁচিশ বছরে পাকিস্তানের মোট রপ্তানির ৫০-৭০ শতাংশেই বাংলাদেশের অবদান ছিল, সে তুলনায় বাংলাদেশে আমদানির ভাগ ছিল মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ (পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিস কর্তৃক ইস্যুকৃত সরকারী পরিসংখ্যান)। জনসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশের আমদানি করার কথা ছিল ৬৭.৫ শতাংশ। ১৯৪৮-১৯৪৯ থেকে ১৯৬৮-১৯৬৯ সালের ভিতর বাংলাদেশ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে কমপক্ষে ২৬০ কোটি ডলার স্থানান্তর করা হয়েছে (পূর্ব পাকিস্তানে দ্বন্দ্ব, পটভূমি এবং বিস্তৃত দৃশ্য, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন অধ্যাপক)। এই সম্পূর্ণ শোষণ (গ), অনুচ্ছেদ ২ মোতাবেক বাঙালী নামক একটি স্বতন্ত্র জাতির ওপর গণহত্যা সংঘটিত করেছে।
অনুচ্ছেদ ৩ এ উল্লিখিত নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন কর্মকান্ড শাস্তিযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে, যথা (ক) গণহত্যা; (খ) গণহত্যা সংঘটনের জন্য ষড়যন্ত্র; (গ) গণহত্যা সংঘটনের জন্য সরাসরি অথবা জনগণের ভিতর উত্তেজনা সৃষ্টি করা; (ঘ) গণহত্যা সংঘটনের চেষ্টা এবং (ঙ) গণহত্যায় সহযোগিতা।
পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা যেসব নীতিমালা অনুযায়ী অপরাধ সংঘটিত করেছে তা হল- (ক)। রাত ১০.৩০ টায় আক্রমণ শুরু হয়েছিল। কোন কারফিউ জারি করা হয়নি এবং কোন পূর্বনির্দেশনা ছিলনা। আক্রমণ পূর্বনির্ধারিত ছিল। তারা নির্বিচারে পুরুষ, মহিলা এবং শিশু হত্যা এতিমরা পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বেড়ে উঠবে- শিশুদের মারার পিছনে তারা এই যুক্তি প্রদর্শন করে। উপ-অনুচ্ছেদ (ঙ)। অনুচ্ছেদ ২ অনুযায়ী, “এক গোত্রের শিশুকে অন্য গোত্রে স্থানান্তর” একটি গুরুতর অপরাধ। তারা আবাসিক এলাকায় নিজের বিছানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে এবং বস্তিতে নিরস্ত্র বাঙালীকে নির্বিচারে হত্যা করে। জার্মানীর নাৎসি বাহিনী প্রথমে মানুষকে শিবিরে একত্র করেছিল এবং এরপর জবাই করে হত্যা করেছিল। এর সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশে পাশবিকতার পরিমাণ এরচেয়েও বেশি ছিল।
রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া এবং জনাব ভূট্টো আলাদাভাবে নীতিমালা (খ) এবং (ঙ) এর আওতায় দোষী। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক সমাধানের জন্য অতর্কিত আক্রমণের এগারো দিন পূর্ব থেকে তিন ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত আলোচনায় নিয়োজিত ছিলেন। জনাব ভূট্টো সেই আলোচনার একটি অংশ ছিলেন। অতর্কিত হামলা সম্পন্ন হওয়ার পর সকাল আটটায় রাষ্ট্রপতি তার হিংস্র স্বরে (ডেইলি টেলিগ্রাফ) দেশের প্রতি বক্তব্য রাখেন। একই সকালে জনাব ভূট্টো সাংবাদিকদের বলেন, “সৃষ্টিকর্তা পাকিস্তানকে রক্ষা করেছেন”। এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে, তারা আলোচনার দ্বারা সমাধানের পরিবর্তে সৈন্য প্রস্তুত করার জন্য সময়ের সদ্ব্যবহার করছিলেন।পশ্চিম পাকিস্তানের বিশটি পরিবার যারা সাবেক পাকিস্তানের ৮৫ শতাংশ সম্পদের মালিক ছিল তারা (ঙ) নং নীতিমালা অনুযায়ী গণহত্যায় সহায়তার দায়ে শাস্তির আওতাধীন। বৈদেশিক রপ্তানি এবং বাজারের জন্য বাংলাদেশ তাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানের অবকাঠামো সুগঠিত। বর্তমান বাজাতে পশ্চিম পাকিস্তানের রপ্তানির ৪০ শতাংশ দ্রব্যই উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে বিধায় বাংলাদেশ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিম পাকিস্তানের সাম্রাজ্যবাদীরা বিকল্প বাজারের জন্য হন্যে হয়ে খোঁজ করছিলেন যা ব্যর্থ হয়। আরসিডি এই চেষ্টার একটি উদাহরণ। ১৯৬৮ সালের উত্থানের পর থেকে পাঞ্জাবি (স্থানান্তরিত অধিবাসীসহ), শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলারা বুঝতে পারলেন যে, বাংলাদেশকে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যাবেনা। এজন্য তারা বাংলাদেশে তাদের শিল্পকারখানা, ব্যবসা এবং আর্থিক লেনদেন বন্ধ করে দিতে লাগলেন। কিন্তু, বিকল্প বাজার না থাকা সত্ত্বেও তারা ১০-১২ বছর এই বাজার ধরে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং মূমূর্ষু সময়েও তারা মত পরিবর্তন করলেন না। এই গণহত্যা তাদের এই জেদেরও ফল।
সেনাবাহিনীর সকল উচ্চপদস্থ সদস্য পশ্চিম পাকিস্তানি, এমনকি সরকারী চাকরিতেও অধিকাংশ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তাদের। ১৯৬০ সালে এই পরিমাণ ছিল ৮৭ শতাংশ যা এখনও পর্যন্ত খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং সরকারী উভয় ক্ষেত্রেই একটি শীর্ষক এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসন চালায়। উপরোন্তু, তিন লক্ষ পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী বাংলাদেশের সম্পদের অন্যায় অধিগ্রহণ ছাড়া বেঁচে থাকতে পারবেনা। পশ্চিম পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী, সরকারী চাকুরে এবং শোষকেরা তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব সুবিধার্থে চক্রান্ত করে এই গণহত্যা সংঘটিত করেছে। তাদের প্রত্যেকে অনুচ্ছেদ ৩ এর (খ) এবং (গ) নং নীতিমালার আওতাধীন।
সংবাদপত্র এবং বিশ্বস্ত সূত্রের খবর অনুযায়ী, সেনাবাহিনী “ইয়া আলী, ইয়া হায়দার” স্লোগান নিয়া গণহত্যা সংঘটিত করেছে। এটি ‘জিহাদ’- ‘নাস্তিকদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ’র প্রচলিত স্লোগান। মতদীক্ষাদান এবং ষড়যন্ত্রের দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য এবং জনগণকে বিশ্বাস করানো হয়েছে যে, ‘কাফির (অবিশ্বাসী-হিন্দু)’ এবং ‘অর্ধ-কাফির (রূপান্তরিত মুসলিম)’দের মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে। সৈন্যরা পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার পর মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। তারা জনগণের ইসলামে বিশ্বাস প্রমাণ করার জন্য তাদের চর্মচ্ছেদকৃত লিঙ্গ প্রদর্শনের জন্য জোর করছে। সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী মৃত ফিরোজ খান নুন একদা বলেছিলেন, অধিকাংশ বাঙালির খৎনা হয়না।
সৈন্যদল নারীদের ধর্ষনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোরআন থেকে আয়াত পাঠ করতে বাধ্যকরছে। এই দিকগুলো ইয়াহিয়ার সৈন্যদের ধর্মান্ধতা প্রমাণ করে। তারা বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটি ধর্মযুদ্ধ চালাচ্ছে।
হিন্দু এলাকাগুলো বিশেষ লক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং তাদের প্রত্যেকে মারা পড়েছে। বিশিষ্ট হিন্দুদের তাদের ধর্মের কারণে কায়দা করে হত্যা করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধ্বংস করার জন্য সৈন্যদের উদ্দেশ্য একদম সুস্পষ্ট।
বুদ্ধিজীবীরা আরেকটি বিশিষ্ট লক্ষ্য। অনেকে ইতোমধ্যে মৃত এবং অধিকাংশকেই দেশ থেকে পলায়নে বাধ্য করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবিদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং বাংলাদেশকে ধ্বংস করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের একটি পরিকল্পিত অংশ। যদিও পশ্চিম পাকিস্তানের (১৩.৬) চেয়ে বাংলাদেশে (১৭.৬) শিক্ষিত মানুষ বেশি ছিল তথাপি ১৯৫১ সালে ৪১,৪৮৪ স্নাতকের বাংলাদেশ ১৯৬১ তে ২৮,০৬৯ জন স্নাতকের বাংলাদেশে পরিণত হয়, যেখানে এ সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানে এ সংখ্যা ২১.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পায় (আদমশুমারী পাকিস্তান- ১৯৬১)।
জাতীয় বিচারালয়ে উপযুক্ত বিচারের জন্য অনুচ্ছেদ ৫ ও ৬ প্রণয়ন করা হয়েছে। এইধরনের জাতীয় অপরাধ সংঘটনের পর পার পেয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই নীতিমালায় আন্তর্জাতিক প্যানেল ট্রাইব্যুনালের বিবেচনার দ্বারা বিচার প্রত্যাশাও অন্তর্ভূক্ত। অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী, গণহত্যা এবং অন্যান্য উল্লিখিত কর্মকান্ড রাজনৈতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেনা। তথাপি, স্বাক্ষর অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়াসহ সকল ব্যক্তি গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক প্যানেল ট্রাইব্যুনালের বিচারের আওতায় আন্তর্জাতিক প্যানেল বিচারের ধারণা উপযুক্ত এবং তা অনুচ্ছেদ ৬ এ প্রণীত। পরবর্তীতে সাধারণ সভার আমন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচারিক অঙ্গসংগঠন প্রতিষ্ঠার সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখা হয়েছে যাতে করে “গণহত্যা এবং অন্যান্য অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের দায়ভার আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী এই সংগঠনের ওপর অর্পণ করা যায়”। কমিশনটি একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধী বিচারালয় প্রতিষ্ঠার জন্য পরামর্শ প্রদান করে। এটি এখনও জাতিসংঘের বিবেচনায় রয়েছে। জাতিসংঘকে এর কার্যকারিতা প্রদর্শনের দ্বারা অতিসত্ত্বর বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি বিচারালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে।অনুচ্ছেদ ৮ অনুযায়ী, যেকোন সংযুক্ত দল জাতিসংঘের উপযুক্ত সংস্থাকে এর দলিলের আওতায় গণহত্যা এবং এর সম্পর্কিত অন্যান্য কর্মকান্ড বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানাতে পারবে। দলিলটি নিরাপত্তা সংস্থার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে যার মধ্যে “অর্থনৈতিক সম্পর্কের সাময়িক কিংবা পুরো ব্যাঘাত এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব (অনুচ্ছেদ ৪১)”, উপপাদন, আকাশ, জল অথবা সড়কপথে যেকোন আক্রমণ ব্যাহত করার জন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর শক্তি ব্যবহার করা (অনুচ্ছেদ৪২) অন্তর্ভূক্ত (অধ্যায় ৭, জাতিসংঘের দলিল)।
পরিশেষে, গণহত্যা নীতিমালার অনুচ্ছেদ ৯ অনুসারে, স্পষ্টত স্বাক্ষরিত রাষ্ট্রের যে কেউ আন্তর্জাতিক আদালতের সামনে বর্তমান নীতিমালার ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ সহ জড়িত দলের মধ্যকার বিতর্ক সহ ইস্যুটি তুলে ধরবে এবং সেইসাথে অনুচ্ছেদ ৩ এ বর্ণিত গণহত্যার জন্য জড়িত রাষ্ট্রের দায়ও তুলে নিশ্চুপ পৃথিবীকে এখনই জেগে উঠতে হবে, এখনই।
এই পুস্তিকার প্রথম প্রকাশনা এক সপ্তাহের ভিতর শেষ হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় প্রকাশনা একরকমের দায়ভারই ছিল। কিন্তু এসময়েই অপ্রত্যাশিত বাঁধাটা এল। প্রথম প্রকাশনায় একমাত্র অর্থসহায়তাকারী ছিলেন জনাব আব্দুল হামিদ যা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকাশনার জন্য অর্থসহায়তা কোথা থেকে আসবে? প্রকাশকেরা যখন মাথার চুল ছিঁড়ছিলেন তখন আবার বিশাল হৃদয়ধারী প্রস্তুত অর্থসাহায্যের সাথে জনাব আব্দুল হামিদ এবং জনাব শফিকুর রহমান এগিয়ে এলেন। এই দুই ভদ্রলোকের কাছে আমরা চিরঋণী যা কখনো শোধ করা যাবেনা।
একজন উদার মানুষের কাছে বারবার সাহায্য চাওয়া সম্ভবপর নয়। তাই আমরা এবার এই পুস্তিকার জন্য একটি মূল্য নির্ধারণ করেছি যা ৫ নতুন পেন্স। এই চিন্তা অপরাধবোধ থেকেই উদ্ভূত যা বস্তুগত সমর্থনের জন্য প্রয়োজন। এটা আমাদের আশা যে, আমাদের অপরাধবোধের প্রতি সুবিচার করা হয়েছে।
আমির আলি
শামসুল মোর্শেদ
কৃতজ্ঞতা স্বীকার-
আব্দুল হামিদ
ও
শফিকুর রহমান
আমির আলি এবং শামসুল মোর্শেদ কর্তৃক ২৯ রুপার্ট স্ট্রিট থেকে প্রকাশিত।
লন্ডন ডব্লিউ১
<৪,১১৬,২০৫-২০৬>
অনুবাদকঃ স্বর্না, বিশাল
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৬। “দি এ্যাকশন কমিটি ফর দা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইন দা ইউনাইটেড কিংডম” এর গঠনতন্ত্র | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৯৭১ |
প্রস্তাবনা
“কোন জাতিই স্বাধীনতা এবং ন্যায় অর্জন করতে পারে না যদি না তারা এটার জন্য রক্ত ঝরায়। স্বাধীন,সার্বভৌম বাংলাদেশ স্থাপন করতে হলে একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে যেটি তৈরী হবে মানুষ এবং অঞ্চলভেদে”
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহনান।
বাংলাদেশের জনগন পশ্চিম পাকিস্তানের উপর একটি সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়েছিল।
আমরা যুক্তরাজ্যের বাঙ্গালিরা শপথ করে আমাদের সমর্থন, ত্যাগ, অবদান নিশ্চিত করেছিলাম আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি। “যুদ্ধজয়” এর ক্ষেত্রে একতা একান্ত জরুরী। আমরা একতাবদ্ধ। একই লক্ষ্যে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের এক্যবদ্ধ কাজও করা উচিৎ। সুতরাং আমরা যুক্তরাজ্যের বাঙ্গালিরা একটি সংগঠন গড়ে তুললাম।
প্রবন্ধ:
এই সংগঠনটির নাম হবে “দি এ্যাকশন কমিটি ফর দা পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ ইন দা ইউনাইটেড কিংডম”। সংগঠনটির প্রধান কার্যালয় হবে লন্ডন। হাম্বারিস ব্যাংকের “বাংলাদেশ ফান্ডের” তিনজন ট্রাস্টির নাম-
১.আবু সাঈদ চৌধুরী
২.জন স্টোনহাউজ
৩.চেসওর্থ
যা হবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় তহবিল।
কেন্দ্রীয় কমিটি তিনজন ট্রাস্টি নির্বাচিত করবে এবং ছয়জন থাকবে সর্বমোট ট্রাস্টি। কমপক্ষে চারজন ট্রাস্টির স্বাক্ষর লাগবে ফান্ড থেকে টাকা উত্তোলন করতে। সেন্ট্রাল কমিটির সিদ্ধান্তের পূর্বে টাকা উত্তোলন করা যাবে না।
নির্বাচিত ট্রাস্টি সরাসরি “সেন্ট্রাল কাউন্সিল” নির্বাচিত করবে। তাদের পূর্ববর্তী অফিসীয় কমিটির সদস্য হতে হবে। কিন্তু ভোটের অধিকার ছাড়া কেন্দ্রীয় কিংবা লোকাল কমিটিতে যুক্ত হতে চাইলে সেটা অবৈধ হবে না।
কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কমিটিতে আবু সাঈদ চৌধুরী ও ৩জন নির্বাচিত ট্রাস্টি সহ নয় জন সদস্য থাকবে। ২ জন হিসাবরক্ষক সহ অন্য ৫ জন সদস্য নির্বাচিত হবে সরাসরি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে। এই ৫ জন সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত করার জন্য মনোনিত হবে না।
কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিক কমিটির কাজ হবে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে হিসাব সাবমিট করার পূর্বে সঠিক হিসাব রাখা, ফান্ড বৃদ্ধি করা।
সেন্ট্রাল কাউন্সিলঃ
সকল কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কেন্দ্রিয় কাউন্সিল গঠিত হইবে। জনগনের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রতিটা শহরের প্রতিনিধি কোটাভিত্তিক হবে।কেন্দ্রিয় কাউন্সিল প্রতি তিন মাসে কমপক্ষে একবার বসবে। কেন্দ্রিয় কাউন্সিলের ১৫ জন সদস্যে সরাসরি কেন্দ্রিয় কমিটি নির্বাচিত করবে।
কেন্দ্রিয় কমিটির কার্যাবলিঃ কেন্দ্রিয় কমিটি সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ সংস্থা হবে।সংগঠনের মুখপত্র হিসেবে অন্তত একটি বাংলা এবং ইংরেজি সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক কাগজে তা প্রকাশ করবে। কেন্দ্রিয় কমিটি অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের সাহিত্যে,লিফলেট,বই ইত্যাদি প্রকাশ করবে। ইউ.কে ভিত্তিক পাবলিক মিটিং ও বিক্ষোভ আয়োজন করবে। ইহা জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে সহযোগী অন্য যে কোন কর্মকান্ড নিয়ে কাজ করবে। কেন্দ্রিয় কমিটি কিছু নির্দিষ্ট কাজের জন্য সাব কমিটি এবং এসব সাব কমিটির জন্য কিছু নন কাউন্সিলর তৈরি করবে।
স্থানীয় কমিটি সমূহের কার্যাবলিঃ স্থানীয় বা মাসিক ভিত্তিতে তহবিল বৃদ্ধিকরণ এবং সদস্যদের নিবন্ধন রক্ষনাবেক্ষন করবে। প্রতিটি ছোট ও বড় শহরে শুধুমাত্র একটি কার্যকরী কমিটি থাকবে। তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে গেলে তা কার্যকরী এবং সুনির্দিষ্ট করার জন্য কেন্দ্রিয় কাউন্সিল এবং কমিটির উভয়ের সম্মতি অনুযায়ী এবং তাদের প্রতিনিধি ও সদস্যের অংশগ্রহণে একটি বিদ্যমান কমিটি থাকা সত্ত্বেও আরো কমিটি গঠন করা যাবে। কমিটির প্রতিনিধিদের সাথে সমস্যা সমূহ একত্রিত করন এবং তা কার্যকরী সমাধানের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির প্রথম কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে।
বিতর্কঃএকটি স্থানীয় কমিটি ও কেন্দ্রিয় কমিটি অথবা দুই বা ততোধিক শহর বা কেন্দ্রিয় কমিটির মধ্যবর্তী কমিটি গঠনের মধ্যে কোন বিবাদের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাওয়ার ১৪ মাসের মধ্যে তার সমাধান করতে হবে। কেন্দ্রিয় কমিটির কেন্দ্রিয় কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে পার্টির আপিল করার ক্ষমতা থাকবে।কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।
সংশোধনঃ এই সংবিধানের কোন ধারা বর্তমান কাউন্সিলের ২/৩ দ্বারা সংশোধন করা যাবে। সংশোধনের পক্ষে ভোট মোট কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যার ৫০% এর কম হবে না।
কোরামঃ একটি কেন্দ্রিয় কমিটি এবং একটি কাউন্সিলের জন্য মিটিঙয়ের জন্য কোরাম হবে ১/৩ এবং ১/২ ।
নোটিশঃ কেন্দ্রিয় কমিটি এবং কেন্দ্রিয় কাউন্সিলের মিটিঙয়ের জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা ও ৭ দিনের নোটিশ দিতে হবে। জরুরী ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় কমিটি নোটিশ ছাড়াই বসতে পারবে। কিন্তু সকল সদস্যগণকে জানানোর চেষ্টা করতে হবে। বিচারপতি এ.এস চৌধুরী কেন্দ্রিয় কমিটির উপদেষ্টা হবে।
<৪,১১৭,২০৭-২১০>
অনুবাদকঃ মুশাররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১১৭। বাংলাদেশকে সমর্থন দানের আহবান সম্বলিত একটি পুস্তিকা | বাংলাদেশ সলিডারিটি ক্যাম্পেন | ১৯৭১ |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সংহতি
সমর্থনের জন্য আহবান
আমরা ব্রিটিশ জনগন বিশেষত ব্রিটিশ শ্রমিকদের প্রতি আহবান জানাই আমাদের শ্রমিক ও কৃষকদের প্রতি সমর্থনদানের জন্য যারা বর্তমানে অসঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের জন্য লড়াই করছে, শোষণ থেকে মুক্তি ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য।
বাংলাদেশের জনগন কারা ? কেন তাদের সমর্থন প্রয়োজন? এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ও গণমাধ্যম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এই বিষয়কে বিভ্রান্ত করছে। তারা শরনার্থী বা নৃশংসতার পূর্ণ বিবরণ দিয়েছে। কিন্তু এই দুঃখজনক ঘটনাগুলোর পিছনে যে সমস্ত কারন বিদ্যমান তার ব্যাপারে তারা সাধারনত কোন ব্যাখা দেয়নি। ১৯৪৭ সাল থেকে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিস্তারিত বিবরণ প্রয়োজন। এখানে কিছু প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হলঃ
পশ্চিম পাকিস্তানের বিস্বাশঘাতকতা সবসময়েই বিরাজমান ছিল। পুর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় ২৫ মার্চ বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে এমন বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা ঘতেছিল যেটি সমকালীন ইতিহাসের ঘটনায় বিরল একটি দৃষ্টান্ত। কোন সতর্কবার্তা বা চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত না জানিয়েই। আদেশ পালন করতে গিয়ে, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সৈন্যরা হঠাৎ ঘুমন্ত ও নির্দোষ মানুষের বেসামরিক জনগনের উপর মেশিনগান, ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও কামান নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে। তারা তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়, এবং তাদের উপর গুলি বর্ষন করে যখন তারা আগুন থেকে বাচার জন্য রাস্তায় এসে পড়ে। সেই রাতে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ নিহত হয়-অধিকাংশই তার মধ্যে ছিল নারী ও শিশু।
পরবর্তী দিনগুলোতে পশ্চিম পাকিস্তানী ঘাতকদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠে। সতর্কতার সাথে পরিকল্পিত, অতি নিষ্ঠুর গনহত্যার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছিল। নির্বিচারে গণহত্যার মাধ্যমে তারা সাধারণ জনগণকে ভীতি প্রদর্শন করতে চায়। বেছে বেছে প্রশাসক, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, প্রযুক্তিবিদ, ছাত্র এবং শিক্ষকদের গনহত্যার মাধ্যমে তারা সম্ভাব্য প্রতিরোধের যারা সুত্রধর ছিলেন তাদের ধ্বংস করার আশা করেছিল। কিন্তু উভয় ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্ত কতজন নিহত হয়েছে তার সঠিক হিসাব কারো কাছে নেই।(এই অঞ্চলে সেই সংখ্যা হতে পারে ১০ লাখ)
ঢাকায় মিথ্যা সমঝোতার নাটক!!!…১৬ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, ইয়াহিয়া খান ও পুর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথাবার্তা হচ্ছে। মুজিবুরের পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের পুর্ন সমর্থন রয়েছে এবং যেটি নির্বাচনে প্রকাশ পেয়েছে এবং ১০ থেকে ২৫ মার্চের অহিংস আন্দোলনেও সমর্থন রয়েছে। পুরো প্রশাসন এতে জড়িত ছিল যাদের মধ্যে ছিলেন বিচারক, পুলিশ ও সরকারি কর্মকর্তারা। ২ ও ৩ মার্চ পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা অহিংস আন্দোলকদের উপর গুলি চালিয়েছিল, এক হাজারের বেশী জন যাতে নিহত হয়েছিল। কিন্তু ইয়াহিয়া খান এতে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং তার ইচ্ছা ছিল সাংবিধানিক বিষয়গুলোর শান্তিপুর্ন মীমাংসা। মুজিবুর এই আশ্বস্ততা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছিলেন। আমরা জানি কিভাবে এই সমঝোতা একটি মিথ্যা নাটক ছিল; যার আবরনে গনহত্যার জন্য সামরিক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ এবং এর পরবর্তী দিনগুলোতে যে গনহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, সেটি পশ্চিম পাকিস্তানের ২৩ বছরের রক্তক্ষয়ী সমাপ্তি ঘটিয়েছিল, আরও জন্ম দিয়েছিল নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের।
বাংলাদেশের স্বীকৃতি। প্রত্যেক সম্ভাব্য দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। নেতৃবৃন্দ ৮০% জনগনের ভোট জিতেছিলেন, প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগের স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ অন্তত এখন পর্যন্ত স্বীকৃত হবে না। বৃহৎ ক্ষমতার এটি করাটা হবে অস্বস্তিকর। বাংলাদেশ ততদিন পর্যন্ত যুদ্ধ করবে যতদিন না তারা স্বাধীন হচ্ছে। সংগ্রামে নৈতিক ও সামরিক সহায়তার জন্য তাদের এই আবেদন। প্রত্যেক দিন আরও মানুষ নিহত হচ্ছে এবং দেশের সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে।
কেন এই গনহত্যা? পশ্চিম পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক শ্রেণীর এই কর্মকান্ড কোন অপ্রত্যাশিত মুর্খতার আচরন নয়। এগুলো অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক নিপীড়নের যৌক্তিক ও প্রয়োজনীয় ফলাফল যেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে হয়ে আসছে।
যেভাবে পশ্চিম পাকিস্তান পুর্ব পাকিস্তানকে শোষণ করেছে
এখানে পুর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অধিকরণ ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থে তাদের অধিনতার কিছু মৌলিক তথ্য তুলে ধরা হলঃ
১। আয়ঃ পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রতি আয়ের মধ্যে বিরাট অসমতা ছিল।১৯৫২-৬০ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানের আয় পুর্ব পাকিস্তানের চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশী ছিল। এবং ১৯৬৭-৭০ পর্যন্ত ছিল ৬১ শতাংশ। এভাবে দশ বছরের মধ্যা আয়ের ব্যবধান শতাংশের হিসেবে প্রায় দ্বিগুন ছিল।
২। বিনিয়োগঃ এই পরিস্থিতির উদ্ভিব ঘটেছিল যেহেতু পাকিস্তানের বিনিয়োগ তহবিলের উৎস ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ উৎস সমূহ এবং পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে সাত কোটি যা মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ছিল এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ সমূহ মুলত পশ্চিম পাকিস্তানে করা হত। কিন্তু ১৯৫০-৫৫ সালের মধ্যে পুর্ব পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যয়ের ২০ শতাংশ পেয়েছিল। ১৯৬৫-৭০ সালে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়েও সর্বোচ্চ হার ছিল ৩৬%।
বেসরকারি বিনিয়োগেও ঐ সময়ে পুর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ২৫ শতাংশের কম।
৩। বানিজ্যঃ ১৯৫০ এবং ১৯৭০ এর মধ্যবর্তী সময়ে পুর্ব পাকিস্তানের বৈদেশিক রপ্তানি আয় ছিল পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশের মধ্যে। কিন্তু পুর্ব পাকিস্তানের বৈদেশিক আমদানি ছিল ২৫ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৯ এর মধ্যবর্তী সময়ে পুর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে স্থানান্তরকৃত সম্পদের পরিমাণ ছিল ২৬ লাখ টাকার উপরে।
(এই সমস্ত সংখ্যা সমূহ পাকিস্তান সরকারের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান দপ্তর থেকে জারিকৃত দাপ্তরিক পরিসংখ্যান থেকে সংগৃহীত উপদেষ্টা পরিষদ, চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ১৯৭০-৭৫, খন্ড-১, পরিকল্পনা কমিশন, পাকিস্তান সরকার, জুলাই ১৯৭০ থেকে সংগৃহীত)।
এই সমস্ত তথ্য থেকে এই উপসংহারে পৌঁছান যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তনের উন্নয়ন পুর্ব পাকিস্তানকে বঞ্চিত করে হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে পুর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের একটি উপনিবেশ। এই পরিস্থিতি ভাগ্যক্রমে সৃষ্টি হয়নি, এটি ছিল বৃহত্তর রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ফলাফল। কাদের দ্বারা এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল?
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক স্বৈর শাসকগন। ১৯৫৮ সাল থেকে পাকিস্তানে সামরিক একনায়কতন্ত্র রয়েছে। সকল সিদ্ধান্ত সামরিক নেতা ও উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের দ্বারা নির্ধারিত হত। যেহেতু প্রাদেশিক রাজধানী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে, ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা গঠিত সামরিক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। যাইহোক, প্রকৃত সিন্ধান্ত সমূহ ওয়াশিংটনে নেয়া হত, ইসলামাবাদে নয়। বিশ্ব রাজনীতির কৌশলের গুরুত্বপুর্ন অংশ হিসেবে ইউ এস সাম্রাজ্য তন্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক নেতৃবৃন্দ, আমলাতন্ত্র, এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের উপর নির্ভর করে। এবং তার সমর্থকদের উত্তম ভাবে পুরস্কৃত করে; এমন কি তাদেরকে একটি শোষণের জন্য উপনিবেশ ও প্রদান করে।
পাকিস্তানকে ইউ এস এর সহায়তা। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৪ সালের মধ্যে পাকিস্তান প্রায় ২০ কোটি টাকা সামরিক অনুদান পেয়েছিল। এর মধ্যে ছিল স্টার লাইটার্স, প্যাটন ট্যাঙ্কস,আর্মার্ড পারসনেল ক্যারিয়ারস, অটোম্যাটিক এবং রিকয়েল ছাড়া ছোট অস্ত্র। এই অস্ত্র গুলো ছিল সাম্যবাদ “সংঘটিত করার” উদ্দেশ্যে । কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে সংক্ষিপ্ত সীমান্ত যুদ্ধ ছাড়াও পুর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণকে হত্যা করার কজে মুলত ব্যবহৃত হচ্ছে।
১৯৫১ থেকে ১৯৫৯ সালে ইউ এস এর থেকে সর্বোচ্চ ৩০ কোটি টাকা অর্থনৈতিক সহায়তা পেয়েছে পাকিস্তান যা মুলত পশ্চিম পাকিস্তানে কারখানা স্থাপনের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে।
২২ টি পরিবার। ওয়াশিংটনে নেয়া এই সিদ্ধান্তের ফলাফল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে শাসক গোষ্ঠী তৈরি করা, সেই বিখ্যাত “টুয়েন্টি টু ফ্যামিলিস” বা ২২ পরিবার। যার মধ্যে ছিল সামরিক ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা ও শিল্পপতি। এই গোষ্ঠী ৮০% ব্যাংকিং সম্পদ, ৭৫% বীমা সম্পদ ও ৬০% শিল্প সম্পদ নিয়ন্ত্রন করত। তারা বিবাহ সুত্রে সম্বন্ধ যুক্ত ছিল এবং তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য একত্রিত ছিল। তারা জোরপুর্বক হলেও পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অসম বিনিময় রক্ষা করত। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র যন্ত্রকে পরিণত করেছিল তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নীতির একটি মাধ্যম হিসেবে।
পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের প্রতিরোধ
পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষক ও শ্রমিক দের মাঝে বিক্ষিপ্ত প্রতিরোধ ছিল। কিন্তু পুর্ব পাকিস্তানের প্রায় পুরো জনগোষ্ঠীর সংগঠিত প্রতিরোধ পাকিস্তান সৃষ্টির শুরু থেকেই দেখা গেছে। এবং তাদের নিজস্ব গুরুত্বপুর্ন সাফল্যও রয়েছে। নিম্নে কিছু গুরুত্বপুর্ন ঘটনার ক্রমানুক্রমিক বিবরণ দেয়া হলঃ
১৯৪৭ মুসলিম প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা
১৯৪৮ “পৃথক রাষ্ট্রের” দাবিতে আন্দোলনে অনেকে নিহত হয়। কিন্তু ফলশ্রুতিতে বাংলাকে দুইটি রাষ্ট্র ভাষার মধ্যে একটি হিসেবে গ্রহণ করা হয়
১৯৫৩ ইউনাটেড ফ্রন্ট এর নির্বাচনী বিজয় অসাম্প্রদায়িক ও কৃষক ও শ্রমিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। এই সময়ে বাঙালি জাতির স্বার্থ রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ ও প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৮ আইয়ুব খান ক্ষমতা দখল করেন এবং সামরিক শাসন ধার্য করেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও এরনেতা মাওলানা ভাসানির সঙ্ঘবদ্ধ কৃষক আন্দোলনকে স্তিমিত করার জন্য।
১৯৫৬ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার যুদ্ধ আইয়ুব খান ও শাস্ত্রী উভয়ের জন্য সুবিধাজনক ছিল। যুদ্ধের পর ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার পর পুর্ব পাকিস্তানের জনগণকে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের জন্য এটি লাভজনক ছিল।
১৯৬৮ আওয়ামী লীগের ছয় দফায় বৈদেশিক বাণিজ্য, বৈদেশিক অনুদান বণ্টন ও করারোপণের উপর নিয়ন্ত্রন সহ প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির তের দফা কর্মসুচি যোগ করেছিল শিল্প সম্পদকে জাতীয়করণের আহবান এবং জমি বিতরনের নিয়ন্ত্রন।
১৯৬৯ আইয়ুব খান শাসনের সমাপ্তি মুলত পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের আন্দোলনের ফলাফল
১৯৭০ পুর্ব পাকিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকায় ঘুর্নিঝড় স্পষ্ট ভাবে দেখিয়ে ছিল পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের দুঃখ দুর্দশার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর নির্লিপ্ততা। ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসন জাতীয় পরিষদে পুর্ব পাকিস্তানকে বণ্টন করা হয়েছিল। এবং প্রাদেশিক পরিষদে ৩৪৩ আসনের মধ্যে ২০১ আসন ছিল আওয়ামী লীগের।
১৯৭১ পশ্চিম পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসক গোষ্ঠী অনুধাবন করেছিল পুর্ব পাকিস্তানের উপর তাদের উপনিবেশিক শাসনের সমাপ্তি ঘটবে যদি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণ করা হয়। এই গনহত্যা পুর্ব পাকিস্তানের জনগনের একতাবদ্ধ প্রতিরোধের মুখে একমাত্র সম্ভাব্য নীতি ছিল।
জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম
পুর্ব পাকিস্তানের কৃষক ও শ্রমিকদের আন্দোলনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় অনিবার্য। বহুল প্রচলিত গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পুর্ব পাকিস্তানের জনগন পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক আমলাতন্ত্র ও তাদের অস্ত্রধারী সৈন্যদের উপর বিজয় লাভ করবে। বাংলাদেশের মানুষের বহির্বিশ্বের কাছ থেকে দান নয় বরং সামন্তবাদ ও পুঁজিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এর জন্য বস্তুগত সহায়তা পাওয়ার আশা রাখার অধিকার আছে।
বাংলাদেশের সাথে সংহতি
ব্রিটিশ সরকারের প্রতি এই সংহতি সমাবেশে নিম্নলিখিত দাবি পুরন করার জন্য আহবান করা হচ্ছেঃ
১।অতিসত্বর পাকিস্তানে সরবরাহের জন্য বরাদ্দকৃত অস্ত্রসমুহ জব্দ করা
২।পশ্চিম পাকিস্তানে সকল ঋণ, যেকোনো ধরনের অনুদান জব্দ করা
আমরা ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশের শ্রমিক শ্রেণী কে আহবান জানাই তাদের মজুরি পুর্ব পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে অর্পন করা। আমরা ডক শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকদের আহবান জানাই পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসনের জন্য বরাদ্দকৃত দ্রব্য সমূহ উৎপাদন বা কোথাও ভরানোর থেকে বিরত থাকার জন্য।
বাংলাদেশের জয়
কৃষক ও শ্রমিকের সংগ্রামের জয়
সাম্যবাদের জয়
স্বাক্ষরঃ বাংলাদেশ সংহতি সমাবেশ
৭০, হারকোর্ট রোড
শেফিল্ড এস ১০ ১ ডিজে
<৪,১১৮,২১১-২১২>
অনুবাদকঃ মুশাররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১১৮। বাংলাদেশের পক্ষে আন্দোলন কারী অ্যাকশন বাংলাদেশ কমিটি,ইউরোপের সমর্থক ও সহযোগী ব্যক্তি ও দলসমুহের তালিকা | এ, বি কমিটি, ইউরোপ –এর দলিলপত্র |
১৯৭১
|
সহানুভুতিসম্পন্ন গোষ্ঠী, ব্যক্তিবর্গ, ভিআইপি, অ্যাকশন কমিটি, এর তালিকা যাদের সাথে এ বি কমিটি ইউরোপ কাজ করেছে এবং সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশের স্বার্থে
১। ওয়ার্কগ্রুপ বাংলাদেশ
উস্টেলান ৮০
সান্টপোর্ট
নেদারল্যান্ড
০২৩-৩৭৮১৭৪
মি পল আর্ফটেরমিজর
২। প্রফেসর ডঃ আইআর পি এম হেরজেস
জুলিয়ালাম ১৩৬, ডেলফট, হল্যান্ড
৩।জনাব এ রাজ্জাক
বাংলাদেশ প্রতিনিধি
ডুরহল্মসগ্রান্ড ৩৮
স্টকহোম, সুইডেন
৪। রেলাস টের বিক, এম পি
টুইড কামের ডের স্টাটেন-জেনারেল
ডেন হ্যাগ, হল্যান্ড
৫। ডাব্লিউ জি নেইমান
কেনমার্ক টেলিভিশন হল্যান্ড
(টেলিভিশন প্রতিবেদন প্রযোজনা করেছিল পি এম ও বাংলাদেশ সম্পর্কে)
৬। পল মেই (পরিচালক;থার্ড ওয়ার্ল্ড শপ)
স্টিচটিং এস ও এস
পোস্ট বক্স-২৫; হল স্ট্রাট ১৯ কেল্ক্রাড
নেদারল্যান্ড
গিরো নং- ১০৪৫৬৭৮
টেলীঃ ০৪৪৫-৫৩৭
(এই সংস্থা বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে)
৭। অ্যাকশন বাংলাদেশ
৩৪, স্ট্রাটফোর্ড ভিলা
লন্ডন এন ডাব্লিউ ১
টেলিঃ ০১-৪৮৫২৮৮৯
৮। অপারেশন ওমেগা
১৫১, ডাটমন্থ পার্ক হিল
লন্ডন এন ১৯, টেলিঃ ০১-২৬৩০৯৪০
৫, ক্যালেডনিয়ান রোড, লন্ডন এন ১
( তাদের স্বেচ্ছাসেবিরা এখনও বাংলাদেশে কাজ করছে)
৯। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র
১৩২, নিউ ইস্কাটন
ঢাকা-২, বাংলাদেশ
( বর্তমানে সাভার, ঢাকা, বাংলাদেশে কাজ করছে হল্যান্ড থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবিদের সাথে)
১০। নেদারল্যান্ডস কমিটি ফর কাপল কমিউনিটিস বাংলাদেশ
১৩, স্ট্রাউস লান, বিল্টোভেন
নেদারল্যান্ডস
( সুপরিচিত ফরাসি ধর্ম যাজক আবেরপিয়ের এর কাছ থেকে সংবাদের পর, শহর ও গ্রামে ইউরোপিয়ান জনগণকে উদ্দীপিত করতে, বন্ধুত্ব গঠন করতে এবং বাংলাদেশের শহর ও গ্রামে জনগনের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য উপরোক্ত সংগঠন করা হয়েছিল। একটি শাখা দল ইতোমধ্যে এখানে এসেছে মঙ্গলকামনার উদ্দেশ্যে)
১১। ডঃ জন সি ডাব্লিউ ভ্যান ও রনি ডেন (বাংলাদেশে এসেছিলেন উপরোক্ত উদ্দেশ্যে এবং কুষ্টিয়া জেলাকে বাছাই করেছিলেন)
১২। মি এফ জে এফ এম ভ্যান থিয়েল
“ হেল্প বেঙ্গলি রিফিউজি কমিটি”
দ্য হেগ, নেদারল্যান্ডস
১৩। ওয়ার্কগ্রুপ বাংলাদেশ-ভেনলো
কেলার স্ট্রাত ১; ভেনলো
টেলীঃ ১৫৫৭৩
হল্যান্ড
১৪। অ্যাক্টইকমিটি কপ্পেলজ মেন্তে দেলফট – বাংলাদেশ দেলফট
হল্যান্ড
১৫। বাংলাদেশ বুলেটিন
লেইডেন, হল্যান্ড
১৬। মি ফ্রান্স এ ওয়াইল্ডেনবার্গ
মার্টিন লুথার কিং সেন্ট্রাম
আমস্টারডাম, হল্যান্ড
(বাংলাদেশের জন্য সক্রিয় ভুমিকা পালন করেছিলেন, তহবিল গঠনে সহায়তা করেছিলেন এবং অ্যাকশন বাংলাদেশ, লন্ডন এর সাথে একত্রিত হয়ে বাংলাদেশের উপর ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। ভ্রাম্যমান প্রদর্শনী হল্যান্ড এর প্রায় সকল বড় জায়গাগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল)
১৭।এ্যাকশন কমিটি ফর দ্য পিপলস রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কিংডম
<৪,১১৯,২১৩-২২২>
অনুবাদকঃ মাহীন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১১৯।“বাংলাদেশ কেন”? পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ |
বাংলাদেশ রিলিফ কমিটি, লন্ডন |
———– ১৯৭১ |
বাংলাদেশ কেন?
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
বাঙ্গালীদের স্বাধীনতা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনা সরকার পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের উপর বর্বর ও নৃশংস হামলা চালায়। বাঙালীরা প্রকৃতপক্ষে যা চেয়েছিল তা হচ্ছে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক সাম্য। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ প্রমাণ করে যে এখানে অপসারণের কোন পরিকল্পনা ছিল না এবং বাঙ্গালীদের সেটা অর্জনের জন্য কোন ধরণের সশস্ত্র প্রস্তুতিও ছিল না। তারা আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়া হিয়া খানের রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর ভরসা করেছিল। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর রীতিমত কসাইগিরি চালায় যা বাঙ্গালী জনসাধারণদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ গড়বার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের মাঝে একটি সুস্পষ্ট বিভাজন রেখা তৈরি করা হয়। পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের উপর চলমান শোষণের ফলাফল হিসেবে এই সিদ্ধান্তটি অনিবার্য ছিল। বিশ্বের নিকট এটা আশ্চর্যজনক কিছু হয়ে আসেনি। বরঞ্চ এরকমটা যে হবে তা অনেক আগে থেকেই অনেকে ধারণা করে আসছিলেন। এক ধর্ম ব্যতীত দুদেশের মধ্যে অন্য কোন মিল নেই। নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, চিন্তাচেতনায়, ভাষা, জীবনযাপন- প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা ২টি ভিন্ন জাতি। দুই জাতির মধ্যে বিদ্যমান বিরোধ নিষ্পত্তির কোন উদ্যোগ তো নেওয়াই হয় নি বরঞ্চ কেবল অর্থনৈতিক শোষণ ও সামাজিক বৈষম্য করা হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান যেন রয়েছে কেবল মাত্র পশ্চিম পাকিস্তানী ধনবান বনিক, শিল্পপতি ও ঠিকাদার, সামরিক ও সরকারি কর্মকর্তা শ্রেণীর উন্নতির জন্য। গত ২৪ বছরের পাকিস্তানী সরকারের সময়ে বেশিরভাগ পরিচালিত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা। শাসন তন্ত্র এমনভাবে করা হয়েছে যাতে পূর্ব পাকিস্তানের মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তান মরুভূমির উন্নতি হয়। সত্যিকার অর্থে পাকিস্তান সরকার সর্বচ্চ চেষ্টা করেছে যাতে এসকল অনিয়মের হিসেব জনসম্মুখে না আসে। তারপরেও যতটুকু তথ্য প্রকাশ হয়েছে সেখান থেকেই এই বৈষম্যের ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে উঠে।
গড় বার্ষিক বাজেট
মোট রাজস্ব | ৬,০০০ মিলিওন রুপি | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
সামরিক খাতে খরচ | মোট ৬০% | ৫০% | ১০& |
বেসামরিক খাতে খরচ | মোট ৪০% | ২৫% | ১৫% |
যখন পূর্ব পাকিস্তান মোট রাজস্বের ৬০% আয় করে কিন্তু বিনিময়ে মাত্র ২৫% খরচ পায় তখন পশ্চিম পাকিস্তান মোট রাজস্বের ৪০% আয় করে ৭৫% খরচ করে।
বৈদেশিক বানিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি আয়
১০ বছর সময়ে ১৯৫৮-১৯৬৮ |
পশ্চিম পাকিস্তান
|
পূর্ব পাকিস্তান
|
বৈদেশিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান রপ্তানি করে মোট বানিজ্যের ৫৯% কিন্তু আমদানি করে মাত্র ৩০% যেখানে রয়েছে খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এবং অতিক্ষুদ্র পরিমানে উন্নয়ন সামগ্রী। একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তান মোট বৈদেশিক আয়ের ৪১% আয় করে কিন্তু ৭০% রপ্তানি করে। এর উল্লেখযোগ্য অংশ ব্যয় করা হয় বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজে যেটা হয়ে থাকে পুরোপুরি পশ্চিম পাকিস্তান অঞ্চলে।
আন্তঃপ্রদেশ বানিজ্য ১৯৬৪-৬৯
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানে রপ্তানি | পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে রপ্তানি |
৫২৯২ মিলিওন রূপি | ৩১৭৪ মিলিওন রূপি |
পূর্ব পাকিস্তানের অর্থ কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হয় এটি তার একটি উদাহরণ। ধারণা করা হয় যে ১৯৪৭ থেকে এই পর্যন্ত পাচার করা সম্পদের অর্থমূল্য ৩০০০ মিলিওন ইউরো।
এবার ১৯৬৪-৬৫ সালে রপ্তানিকৃত পণ্য সমূহ দেখা যাকঃ
পাট ও পাট জাতীয় পণ্য (সব পূর্ব পাকিস্তানের) | ১২৪৫৮০ মিলিওন রূপি |
তুলা ও তুলা জাতীয় পণ্য (প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানের) | ৫১৮৮০ মিলিওন রূপি |
পশুর ছাল ও চামড়া (প্রধানত পূর্ব পাকিস্তানের) | ৬১৩০ মিলিওন রূপি |
চা (সম্পূর্ণ পূর্ব পাকিস্তানের) | ১০০০ মিলিওন রূপি |
পশম (সম্পূর্ণ পশ্চিম পাকিস্তানের) | ৭৩০০ মিলিওন র্যপি |
অন্যান্য (পূর্ব ও পশ্চিম মিলিয়ে) | ৫৬২০০ মিলিওন রূপি |
উন্নয়ন প্রজেক্ট এর জন্য বরাদ্দ কৃত অর্থের শতকরা হিসাবঃ
বিসয় | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
উন্নয়ন বিভাগের জন্য বৈদেশিক বানিজ্যের অর্থ | ৮০% | ২০% |
বৈদেশিক সাহায্য (ইউএস এইড সহ) | ৯৬% | ৪% |
ইউএস এইড | ৬৬% | ৩৪% |
পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন করপরেসন | ৫৮% | ৪২% |
পাকিস্তান শিল্প অর্থ ও বিনিয়গ সন্সথা | ৮০% | ২০% |
শিল্প উন্নয়ন ব্যাংক | ৭৬% | ২৪% |
বাড়ি নির্মাণ | ৮৮% | ১২% |
৭৭% | ২৩% |
উপরের তথ্য থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে বিভিন্ন শিল্পখাতে পশ্চিম পাকিস্তান মোট উন্নয়ন বিনিয়োগের ৭৭% পায় যা কেবল মাত্র মোট জনসংখ্যার ৪০% এর কাজে আসে।
পাকিস্তানের জন্য বৈদেশিক সাহায্য
১৯৬৫ সালে পাকিস্তানে আশা চাইনিজ ঋণ ছিল ৬০ মিলিওন ইউএস ডলার যার অধিকাংশ খরচ হয় পশ্চিম পাকিস্তানে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ৯ মিলিওন মার্কিন ডলার খরচে স্থাপিত হেভি মেশিনারি কমপ্লেক্স। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে খরচ হয় ১২৫০০০ মার্কিন ডলার পানি ও শক্তি উন্নয়নের জন্য। অথচ ঋণশোধ করা হয় পাট ও পাটজাত দ্রব্য দ্বারা।
সুঁই গ্যাস প্রজেক্টের জন্য বিশ্বব্যাংক ১৯৫৪ সালে ১৪ মিলিওন মার্কিন ডলার এবং ১৯৬৫ সালে ১৫ মিলিওন মার্কিন ডলার চুক্তি করে পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে। একই উৎস থেকে ১৯৬৪ সালে করাচী বন্দর উন্নয়নের জন্য পায় ১৭ মিলিওন মার্কিন ডলার এবং ৩০ মিলিওন পায় পাকিস্তান ইনভেস্টমেন্ট এন্ড ক্রেডিট কর্পোরেশন যার অধিকাংশ খরচ হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএন এজেন্সি) ৫ মিলিওন মার্কিন ডলার পশ্চিম পাকিস্তানে এবং ৪.৫ মিলিওন মার্কিন ডলার পূর্ব পাকিস্তানে দেয় শিক্ষা প্রজেক্ট এ।
তেল অন্বেষণের জন্য রাশিয়া পশ্চিম পাকিস্তান কে ১১ মিলিওন হতে ১৮ মিলিওন মার্কিন ডলার দেয় ১৯৬৫ সালে।
১৯৪৭-১৯৬৫ সালে ইউকে ৬৪ মিলিওন ইউরো ঋণ দেয় যার সিংহভাগ খরচ হয় পশ্চিম পাকিস্তানে।
ইউএস এইডের প্রদত্ত ৩.৬ বিলিওন মার্কিন ডলার থেকে ২.৭ বিলিওন খরচ হয় পশ্চিম পাকিস্তানের মংলা বাধ ও তারবেলা বাধ নিরমানে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে খরচ হয় মাত্র ০.৯ বিলিওন বন্যা নিয়ন্ত্রনের জন্য। এসমস্ত ঋণ নিঃসন্দেহে পশ্চিম পাকিস্তানের মরুভূমিকে উর্বর করে তলে অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বরভুমি পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা সমস্যায় কার্যকর কোন সমাধান নিয়ে আসেনি। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ১৯৫৩ সাল থেকে সাইক্লোন ও বন্যার মত দুর্যোগের ভোগান্তি বয়ে বেড়াচ্ছে।
তুলনামূলক শিল্প উন্নয়ন
উভয় অঞ্চলে স্থাপিত শিল্প কারখানা সমূহ | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
তুলা শিল্প | ১৯৪৭/৪৮ এ ৩৫০ ১৯৬৬/৬৭ এ ৬৮৩৬ প্রতি মিলিওন ইয়ার্ড এ বৃদ্ধি ১৮৫৩% |
১৯৪৭/৮ এ ৫০৮ ১৯৬৬/৭ এ ৫৫০ প্রতি মিলিওন ইয়ার্ড এ বৃদ্ধি ৮.২৫% |
চিনি শিল্প | ১৯৪৭/৪৮ এ ১০ ১৯৬৬/৬৭ এ ৩০৪ প্রতি ‘০০০ টনে বৃদ্ধি ২৯৪৩% |
১৯৪৭/৮ এ ২৫ ১৯৬৬/৭ এ ১১২ প্রতি ‘০০০ টনে বৃদ্ধি ৩৪৮% |
সিমেন্ট শিল্প | ১৯৪৭/৮ এ ৩০৫ ১৯৬৬/৭ এ ১৯৩৪ প্রতি ‘০০০ টনে বৃদ্ধি ৫৩৪% |
১৯৪৭/৮ এ ৪৬ ১৯৬৬/৭ এ ৭৫ প্রতি ‘০০০ টনে বৃদ্ধি ৬৩% |
উপরের টেবিল হতে দেখা যায় যে কিভাবে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় অত্যন্ত ধীর গতিতে সিল্পায়ন করা হয়েছে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়নের গতি অতি দ্রুত। ১৪৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় বেশি শিল্প কারখানা ছিল। বোম্বে হতে আগত ধনিক শ্রেণীর অভ্যন্তরমুখী প্রবাহ এই বিষয়ে খুব দ্রুত পরিব্রত্ন নিয়ে আসে।
কাঁচামাল উৎপাদন সিল্পের ক্ষেত্রে পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানে বিনিয়োগ ছিল যথাক্রমে ৭৫% ও ২৫%। এছাড়া পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প কারখানাগুলোর বেশিরভাগের মালিকানা ও কর্তৃত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদের হাতে। যাদের মূল লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তান থেকে টাকা রোজকার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া। ১৯৪৭ সাল হতে এক হিসেবে দেখা যায় পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ৩০০০ মিলিওন মার্কিন ডলার।
এধরণের অর্থ পাচারের উপর অঞ্চলিক রাজ্যের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না।
আধুনিকায়নের মূল বস্তু ইস্পাত এখন পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের ২টি কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। এবিষয়ে পশ্চিমের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৫৬ মিলিওন এবং পূর্বের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ১১ মিলিওন মার্কিন ডলার।
কৃষি উন্নয়ন
বিষয় | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
১৯৯৬৪-৬৮ সালে প্রতি ‘০০০ নিউট্রিয়েন্ট টনে সার বিতরণ | ৭৩৯ ৬৬% |
৩৭১ ৩৩% |
১৯৬৪-৬৯ সালে প্রতি ‘০০০ টনে উন্নত বীজ বিতরণ | ১৯৫১-৫২ এ ৩৪২ ১৯৬৬-৬৭ ৮৯% |
১৯৫১-৫২ এ ৪০ ১৯৯৬৬-৬৭ এ ১১% |
প্রতি ‘০০০ টনে উন্নত মাছের উৎপাদন ২৭৩% | ৫৬ ১৫৩ |
১৭৫ ২৫৯ ৪৮% |
হুইল টাইপ ট্রাক্টর এর বিতরণ | ২০০৬৯ ২০০০ |
১৮২৫ ৩৫০ |
অন্যান্য | ৯১% | ৯% |
এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে পূর্ব পাকিস্তানে বেশি পরিমাণ আবাদি জমি রয়েছে এবং প্রায় প্রতি জমিতেইতেই বছেরে ২ থেকে ৩বার করে ফসল ফলানো হয়ে থাকে। শুধু চাষযোগ্য জমির দিক থেকেই নয়, ফসল উৎপাদনের দিক থেকেও পশ্চিমের পরিমাণ খুব কম। এই বিষয়টাকে বুঝতে এরা খুবই গড়িমসি করছে।
কৃষি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে, পাকিস্তান কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৬০০ মিলিওন রূপি ধার দেয় যার বেশিরভাগ পায় পশ্চিম পাকিস্তানী কৃষকগণ। বেশিরভাগ সেচ প্রকল্প গুলো পরিগনিত হয় চুক্তিবদ্ধ প্রজেক্ট হিসেবে এবং তা পশ্চিম পাকিস্তানে সরকারের অর্থায়নেই নির্মাণ হয়ে থাকে। এটা অত্যন্ত সচেতনভাবে ৭৫ মিলিওন বাঙ্গালিকে না খাইয়ে রাখবার সমান। ফেদেরাল আর্মির ৫০০০০০ এর মধ্যে বাঙ্গালী ২০০০০ জন। এই ৪৮০০০০ জন পশ্চিম পাকিস্তানীরা তাদের আয় খরচ করে পশ্চিম পাকিস্তানে যা ওই অংশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে পরোক্ষ ভুমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন ১৯৫৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানীরা পশ্চিম পাকিস্তানীদের থেকে ২০% খারাপ অবস্থায় রয়েছে। ১৯৬৮ সালে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪০% ।
শক্তি উন্নয়ন
আরেকটি উন্নয়ন সুচক হল প্রতি জনসংখ্যার জন্য কি পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন হচ্ছে তা নির্ণয়। পাকিস্তানে শক্তি উৎপাদন বেড়েই চলেছে। পশ্চিম পাকিস্তানে পানি, তাপ ও অন্যান্য উপায়ে মোট ৮৩৮০০০ কিলো ওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হচ্ছে (মোট উৎপাদনের ৮৩%) অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে হচ্ছে ১৭৯৫০০ কিলো ওয়াট (মোট উৎপাদনের ১৭%)। বিভিন্ন শক্তি উতপাদনে বৈদেশিক সাহায্যের একটি বড় অংশ ব্যবহার হচ্ছে। ১৯৫৯-৬৪ এই ৫ বছরে ২টি বৃহত্তর সেচ ও শক্তি প্রকল্পে ইন্দুস বেসিনকষ্ট এ ১৮০০মিলিওন মার্কিন ডলার এবং অয়াপদা তে ১৪৫৩ মিলিওন রূপি খরচ হয়।
২০ বছরে শিক্ষার বিকাশ
এলাকা | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
প্রাথমিক বিদ্যালয় | ১৯৪৭/৮ এ ৮৪১৩ ১৯৬৮/৯ এ ৩৯৪১৮ বেড়েছে সাড়ে ৪ গুণ |
১৯৪৭/৮ এ ২৯৬৬৩ ১৯৬৮/৯ এ ২৮৩০০ কমেছে কারণ বাচ্চাদের সংখ্যা বেড়েছে |
উচ্চ বিদ্যালয় | ১৯৪৭/৮ এ ২৫৯৮ ১৯৬৫/৬ এ ৪৪৭২ বেড়েছে ১৭৬% |
১৯৪৭/৮ এ ৩৪৮১ ১৯৬৫/৬ এ ৩৯৬৪ বেড়েছে ১১৪% |
কলেজ | ১৯৪৭/৮ এ ৪০ ১৯৬৮/৯ এ ২৭১ বেড়েছে ৬৭৫% |
১৯৪৭/৮ এ ৫০ ১৯৬৮/৯ এ ১৬২ বেড়েছে ৩২০ % |
মেদিক্যাল/ইঞ্জিনিয়ারিং/কৃষি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় | ১৯৪৭/৮ এ ৪ ১৯৬৮/৯ এ ১৭ বেড়েছে ৪২৫% |
১৯৪৭/৮ এ ৩ ১৯৬৮/৯ এ ৯ বেড়েছে ৩০০% |
শিক্ষিতের হার বৃদ্ধি | ১৯৪৭/৮ এ ২(৬৫৪ জন) ১৯৬৮/৯ এ ৬(১৮৭০৮ জন) বেড়েছে ৩০ গুণ |
১৯৪৭/৮ এ ১(১৬২০ জন) ১৯৬৮/৯ এ ৪(৮৮৩১ জন) বেড়েছে ৫ গুণ |
মজার ব্যাপার হল পূর্ব পাকিস্তানে স্কুলগামী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সরকারের অনাগ্রহতার জন্যে স্কুলের সংখ্যা কমে গেছে কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে একই সময়ে সরকার একটি বিশাল পরিমাণ অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেছে স্কুলের পিছনে যার ফলশ্রুতিতে সেখানে স্কুলের সংখ্যা সাড়ে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কি পশ্চিম পাকিস্তানী শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবার পরিকল্পনা নয়? একই চিত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা ক্ষেত্রেও যেখানে অনেকগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে পাকিস্তানী সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাগত দিক থেকে পঙ্গু করে রাখবার পাঁয়তারা নিয়েছে তাদেরকে যথাযোগ্য সুযোগ সুবিধা দেয়া থেকে বিরত হয়ে। এবার স্কলারদের সঙ্খ্যার দিকে তাকান যাক। ১৯৪৭ সালে যেখানে পশ্চিমের চেয়ে পূর্বে দিগুন পরিমাণ স্কলার ছিল যা পরবর্তী ২০ বছরে ৫ গুণ বেড়েছে, সেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে বেড়েছে ৩০ গুণ। কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, শিল্প গবেষণা কেন্দ্রগুলোর ১৬টির মধ্যে ১৩টি রয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানে। এমনকি কলম্ব প্ল্যান, ফোর্ড ফাউন্ডেসন, কমনওয়েলথ এর মতন শিক্ষা বৃত্তি গুলোর অধিকাংশই পায় পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসবের কোন ধরণের বিজ্ঞাপন পূর্ব পাকিস্তানের পত্রিকায় প্রকাশ না করে সরাসরি পশ্চিম পকিস্তানের হাতে উপহার হিসেবে দেয়া হয়।
চাকরির ক্ষেত্রেও একই ধরণের বৈষম্য দেখা যায়। সিভিল, মিলিটারি ও অন্যান্য চাকরির ক্ষেত্রেও বাঙ্গালীদের শিক্ষা ব্যবস্থার মতন কম গুরুত্ব দেয়া হয়। পশ্চিমের অধিবাসীরা সকল চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে অধিক সুবিধা পেয়ে থাকে কেননা বেশিরভাগের নিয়োগ কেন্দ্র পশ্চিমে অবস্থিত। আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনী, সকল সরকারি দপ্তর এমনকি বেসরকারি দপ্তরও পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের পত্রিকায় এসকল জায়গার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ পায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে এখানে ইন্টার্ভিউ নেয়া হয় না। এর উপর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়োগ বোর্ড এর মেম্বাররা পশ্চিম পাকিস্তানী হন যাদের মধ্যে পূর্বের অধিবাসীদেরকে নেবার মানসিকতা থাকে না। আর্ম ফোর্স এ শারীরিক যোগ্যতা এত বেশি কঠিন যে তা বেশিরভাগ বাঙ্গালীদের জন্যই অনুপযুক্ত। এরফলে এক্ষেত্রে বাঙ্গালীদেরকে বাদ দেয়া আরও সহজতর হয়ে গেছে। নিচের ছকে এ বিষয়ে আরও ভালোভাবে দেয়া হলঃ
পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান | |
্সিভিল সার্ভিস | ৮৪% | ১৬% |
ফরেন সার্ভিস | ৮৫% | ১৫% |
ফরেন হেড মিশন (সংখ্যা) | ৬০ | ৯ |
আর্মি | ৯৫% | ৫% |
আর্মি অফিসার ও জেনারেল র্যাঙ্ক | ১৬ | ১ |
নেভি টেকনিক্যাল | ৮১% | ১৯% |
নেভি নন টেকনিক্যাল | ৯১% | ৯% |
এয়ার ফোর্স পাইলট | ৮৯% | ১১% |
আর্মড ফোর্স (সংখ্যা) | ৫০০০০০ | ২০০০০ |
পাকিস্তান এয়ার লাইন্স (সংখ্যা) | ৭০০০ | ২৮০ |
পি আই এ ডিরেক্টরস (সংখ্যা) | ৯ | ১ |
পি আই এ ম্যানেজার (সংখ্যা) | ৫ | নাই |
রেইলওয়ে বোর্ড ডিরেক্টর (সংখ্যা) | ৭ | ১ |
প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য
১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের রাজধানী হিসেবে করাচী নির্ধারিত হওয়ার ঘটনা পশ্চিমকে একটি বড় শক্তি দিয়েছে। ২০০ মিলিওন রূপি লেগেছে একে উন্নত করতে এবং উন্নয়ন সাধনের পর এটি পশ্চিম পাকিস্তান আঞ্চলিক সরকারের কাছে পুরোপুরি হস্তান্তর করা হয়েছে। সকল ইনকামও তাই আঞ্চলিক সরকারের হাতে যাচ্ছে। এরপর আবারও ২০০ মিলিওন রূপি খরচ করা হচ্ছে ইসলামাবাদকে উন্নত করবার জন্য রাজধানী হিসেবে। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার জন্য বরাদ্দ মাত্র ২০ মিলিওন রূপি।
আর্মি, নেভি, বিমান বাহিনীসহ সকল দপ্তর পশ্চিমে করা হয়েছে। একই সাথে সকল মিলিটারি একেদেমিও। এইটা উল্লেখ্য যে ৬০% বাজেট যায় মিলিটারিদের জন্য যার আবার ৮০% খরচ হয় মিলিটারি কন্ট্রাঙ্কটর, আর্মড পারসনাল যাদের সকলেই পশ্চিম পাকিস্তানী।
সকল পাবলিক ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের হেড কোয়ার্টার যেমন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ার লাইন্স, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং অন্যান্য ব্যাংক, ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন, ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশন, ফরেন মিশন এবং আরও ১০০টা পাকিস্তানী ও বৈদেশিক এজেন্সির প্রধান দপ্তর অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তানে যার প্রধানও পশ্চিম পাকিস্তানী এবং এসকল প্রতিষ্ঠানের পলিসি এমনি হয়ে থাকে যেন পশ্চিম পাকিস্তানীরাই অধিক সুবিধা লাভ করে।
সামাজিক উন্নয়ন
সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও একই বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এখানে কিছু পরিসংখ্যান দেয়া হলঃ
পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান | |
জনসংখ্যা | ৫৫ মিলিয়ন | ৭৫ মিলিয়ন |
ডাক্তারের সংখ্যা | ১২৪০০ | ৭৬০০ |
হাসপাতালের আসনসংখ্যা | ২৬০০০ | ৬ |
গ্রাম্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র | ৩২৫ | ৮৮ |
শহুরে কমিউনিটি উন্নয়ন প্রজেক্ট | ৮১ | ৫২ |
পূর্ব পাকিস্তানকে বলা হয় পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ। এমনকি অর্থনীতিবিদ, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের বিস্ময় প্রকাশ করেছেন যে কিভাবে পূর্ব পাকিস্তানকে তার সহযোদ্ধা পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে তুলনা করা যায়?
সিভিল লেবার ফোর্স এ চাকরি | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
গ্রামাঞ্চল ৫৯% শহর ৪১% |
গ্রামাঞ্চল ৮৬% শহর ১৪% |
পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পোন্নয়ন গঠিত ছিল ৪% ক্ষেত্রে লাবার ফোর্স, চাকরি এবং উন্নতর জীবন নির্বাহের মাধ্যম। পূর্ব পাকিস্তানে দরিদ্র উন্নয়ন সিল্পায়নের ক্ষেত্রে ছিল ১৪% শহরের সকল চাকরির ক্ষেত্রে। এই বিষয়টি পার ক্যাপিতা ইঙ্কাম ও গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট এ প্রভাব ফেলে।
পার ক্যাপিতা ইনকাম পাকিস্তানী রুপিতে |
পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
১৯৬০ এ ৩৫৫ ১৯৭০ এ ৪৯২ |
১৯৬০ এ ২৬৯ ১৯৭০ এ ৩০৮ |
মাথাপিছু আয়ের ক্ষেত্রে ১৯৬০ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের তফাত ছিল ৮৬। দশ বছর পর এটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮৪। অন্য কথায় বলা যায় জীবন ধারণের মান পূর্ব পাকিস্তানে দিন দিন ক্মছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।
গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্ট পার ক্যাপিতা | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
১৯৫৯/৬০ এ ৩১২ ১৯৬৪/৬৫ এ ৩৯১ |
১৯৫৯/৬০ এ ২৪২ ১৯৬৪/৫ এ ২৯৭ |
পূর্ব পাকিস্তানে প্রধান খাদ্যশস্য ধান এবং পশ্চিম পাকিস্তানে গম। এবার নিম্নে এসম্পরকে কিছু তথ্য দেখা যাক
পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান | |
ধান প্রতি মাউন্দ (৮২ পাউন্দ) | ১৮ রূপি | ৫০ রূপি |
গম প্রতি মাউন্দ (৮২ পাউন্দ) | ১০ রূপি | ৩ রূপি |
যখন একজন পূর্ব পাকিস্তানীকে তার সঙ্গির তুলনায় অনেক বেশি দামে খাবার সংরহ করতে হয় অথচ তার আয় অত্যন্ত অল্প তখন সে কিভাবে ভালো স্বাস্থ্যর কথা চিন্তা করতে পারে?
বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে যদি আমরা গ্রামাঞ্চলে খাদ্য পুষ্টি বিবেচনায় আনি
পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান | |
গ্রামাঞ্চলে গ্রহণকৃত ক্যালরির পরিমাণ ১৯৬০ – ৬৫ জনপ্রতি প্রতিদিন | ১৬২৫ | ১৫৫৬ |
শহর অঞ্চলে এই বৈষম্য আরও প্রকট ( ইউকে তে ক্যালরি গ্রহণ করে ৩২৫০)
পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে প্রাপ্ত এসকল তথ্য অনুসারে বলা যায় যে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক দিক থেকে কারও সাহায্য ছাড়াই টিকে থাকতে সক্ষম। উন্নতির জন্য যে নুন্যতম সম্পদ প্রয়োজন তা আছে এই দেশের, কেবল চিন্তাধারাটুকু নেই। পর্যাপ্ত বৈদেশিক সহায়তা এবং নিজস্ব সম্পদের সদ্ব্যবহার এর সুযোগ পেলে বাংলাদেশের একটা সময়ে উন্নতি না করবার কোন কারনেই নাই। বিশ্ব শক্তির বোঝা উচিৎ যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত, আর এই সচ্ছলতা অর্জনের অধিকার কোন ক্রমেই বিলম্বিত করে রাখা উচিৎ নয়।
সর্বোপরি সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক হতে সে যে অবহেলা ও অন্যায় আচরনের শিকার হয়েছে গত দুই দস্ক ধরে, সুষ্ঠু বিচার পাওয়া এবং স্বরাজ পাওয়া এখন তার নইতিক অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সকল তথ্য ও পরিসংখ্যান অফিশিয়াল ও অন্যান্য বিশ্বস্ত উৎস হতে নেওয়া হয়েছে যেমন ন্যাশনাল প্ল্যানিং কমিশন, পাকিস্তানের ২০ বছর, সেন্ট্রাল ব্যুরো অব পাকিস্তান, ডিপার্টমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন, সেন্ট্রাল বোর্ড অব রেভিনিউ, সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিকস অফিস, পাকিস্তান ইয়ার বুক ১৯৭০, মেরিন ফিশারিজ ডিপার্টমেন্ট, পাকিস্তান ইকোনমিক সার্ভে, গবর্নমেন্ট অব পাকিস্তান বাজেট, কেসিং কনটেম্পোরারি আর্কাইভস, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, দ্য ইকোনমিকস, ডিপার্টমেন্ট প্রস্পেক্টস অফ পাকিস্তান ( একজন নরয়েজিয়ান অর্থনীতিবিদ রচিত)
<৪,১২০,২২৩>
অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২০। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস কবলিত পূর্বপাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান সরকারের নিদারুন অবহেলা জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে লিখিত চিঠি |
আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগের সভাপতির চিঠি
|
১৯৭০ |
নভেম্বর ২৫, ১৯৭০
মহামহিম ইউ. ট্যান্ট
মহাসচিব, জাতিসংঘ
মাননীয় মহাসচিব,
আমরা যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত পাকিস্তানিরা পূর্ব-পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের গুরুতর অবস্থা ও বিস্তার লক্ষ্য করেছি যেখানে দশ লক্ষাধিক প্রাণ হারিয়েছে এবং আরো দশ লক্ষাধিক অনাহার, কলেরা, টাইফয়েড,আমাশয়, নিউমোনিয়া, ইত্যাদি কারণে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে। ত্রাণ কার্যক্রমের খাদ্য নিয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রপতিসহ পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাতন্ত্রবাদীদের টানাটানি আবারো প্রমাণ করেছে যে পূর্ব-পাকিস্তানিরা শুধুমাত্র শোষণের স্বীকার হয়ে আসছে। এমনকি পূর্ব-পাকিস্তানিরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানবিক বিবেচনা, তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলবার সুযোগও পায় না তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে। আমরা বিগত তেইশ বছর যাবৎ একই আচরণ দেখে আসছি। ভারত সরকারের তার রাজ্যের উপর দিয়ে উড়তে দেওয়ার অনুমতি স্বত্বেও তার রাজ্যের উপর দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব-পাকিস্তানে ত্রাণ সহায়তার জন্য কোন বিমান বা বিমানপোত নেওয়া হয়নি। যেহেতু পাকিস্তান সরকার এখনও সমুদ্রপথে কোন বিমানপোত পাঠায়নি, এটা প্রমাণ করে যে পাকিস্তান সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে।
ভারত-পাকিস্তান উপমহাদেশ ১৯৪৭ সালে তাদের স্বাধীনতা পেয়েছিলো। ধারণা করা হয়েছিলো পাকিস্তান দুইটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ নিয়ে গঠিত হবে, কিন্তু এটা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। সামরিক-আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী সবসময়ই পূর্ব-পাকিস্তানিদের মানবাধিকার উপেক্ষা করে এসেছে। ভারত বিভাজনের পর পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পশিচম পাকিস্তানের সামরিক-আমলাতন্ত্রের জটিলতায় বন্দী হয়েছিলো এবং পূর্ব-পাকিস্তানকে শাসন করছিলো ও তার সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে অপসারণ করছিলো।
বিগত তেইশ বছর নিপীড়িত হয়ে, আমরা চাই যে আপনি আমাদের দুঃখ-দুর্দশা জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের নজরে নিন, যাতে পঁচাত্তর মিলিয়ন পূর্ব-পাকিস্তানি তাদের মানবিক অধিকার ফিরে পায় এবং তাদের নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
আপনার অনুগত,
কে. এস. আহমেদ
পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক ১০০২৫.
<৪,১২১,২২৪>
অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২১। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাস কবলিত পূর্বপাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তান সরকারের নিদারুন অবহেলা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের কাছে লিখিত চিঠি |
আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগের সভাপতির চিঠি
|
২৫ নভেম্বর, ১৯৭০ |
নভেম্বর ২৫, ১৯৭০
পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি
ইসলামাবাদ,পাকিস্তান
জনাব,
আমরা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত পাকিস্তানিরা, পূর্ব-পাকিস্তানের উপকূলবর্তী এলাকার সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ও জ্বলোচ্ছ্বাসের গুরুতর অবস্থা ও বিস্তার লক্ষ্য করেছি যেখানে দশ লক্ষাধিক প্রাণ হারিয়েছে এবং আরো দশ লক্ষাধিক অনাহার, কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয়, নিউমোনিয়া, ইত্যাদি কারণে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ কার্যক্রমের খাদ্য নিয়ে আপনার ও প্রভাবশালী পশ্চিম পাকিস্তানি আমলাতান্ত্রিকদের টানা-হেঁচড়া আবারো প্রমাণ করেছে যে পূর্ব-পাকিস্তানিরা শুধুমাত্র শোষিত হয়ে আসছে। এমনকি তথাকথিত পাকিস্তান সরকারের কাছ থেকে পূর্ব-পাকিস্তানিরা ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানবিক আচরণও পায় না,স্বাভাবিক সময়ে তাদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলবার অধিকারও নয়। বিগত তেইশ বছর যাবৎ আমরা একই আচরণের মুখোমুখি হয়ে আসছি। এখনও সকল প্রতিরক্ষা নির্বাহ পশ্চিম পাকিস্তানে নিঃশেষিত হয়ে আসছে। যদিও মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৭০ শতাংশ এবং মোট রাজস্বের ৬০ শতাংশ পূর্ব-পাকিস্তানের মাধ্যমে অর্জিত হয়ে আসছে, তার যৎসামান্যও পূর্ব-পাকিস্তানের উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে না। যদি এই দুর্যোগের সময় শুধুমাত্র বিদেশি দেশগুলোর উপর আমাদের নির্ভর করতে হয়, তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানের পরিপূরক অংশ হিসেবে তাদের সাথে যুক্ত করার ফলাফল কি যখন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে পূর্ব-পাকিস্তানে ত্রাণ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য ধ্বংসের চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আমরা চাই আপনি জনাব এ. কে. ফজলুল হকের ১৯৪০ সালের পাকিস্তান বিভাজন প্রস্তাবনার দিকে নজর দিন, যা দুইটি স্বাধীন পাকিস্তানের দাবি করেছিলো। এটি পূর্ব-পাকিস্তানিদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিলো, কিন্তু কখনোই পূরণ করা হয়নি। এখন আমরা আপনার নিকট দাবি করি বর্তমান পূর্ব-পাকিস্তানি জাতীয় নেতার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে এবং একটি ভিন্ন, স্বাধীন, সার্বভৌম পূর্ব-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করতে এবং এর মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে ভবিষ্যৎ শত্রুতা, হিংস্রতা, অবিশ্বাস, ঘৃণা, এবং রক্তপাত বন্ধ করতে।
আপনার অনুগত,
কে. এস. আহমেদ
সভাপতি
পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা
২৬৬৭ ব্রডওয়ে নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক ১০০২৫
<৪,১২২,২২৫-২২৬>
অনুবাদকঃ সজীব কুমার সাহা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২২। নির্বাচনে বিজয়লাভের জন্যে শেখ মুজিব ও তার দলকে অভিনন্দন ও পরামর্শ দিয়ে লিখিত চিঠি |
আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতির সভাপতির চিঠি
|
১৯ ডিসেম্বর , ১৯৭০ |
আমেরিকাস্থ পাকিস্তানলীগ
২৬৬৭ , ব্রডওয়ে , নিউইয়র্ক , এন ওয়াই ১০০২৫
১৯শে ডিসেম্বর, ১৯৭০
জনাব শেখ মুজিবর রহমান
সভাপতি ,পাকিস্তান আওয়ামী লীগ
ধানমন্ডি , ঢাকা
পূর্ব পাকিস্তান
প্রিয় মুজিব ভাই,
আমেরিকাস্থ পাকিস্তানলীগের পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার দলকে পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম প্রকৃত নির্বাচনে জয়লাভ করার জন্য অভিনন্দন। নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট ভাবে প্রমান করে যে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য সহ্য করবে না।
গত ২৩ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তান শোষিত হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের বিকাশের জন্য। আজ যেখানে এক জন পশ্চিম পাকিস্তানের জনগনের মাথাপিছু আয় ১২৫ ডলার সেখানে একজন পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মাথাপিছু আয় সর্বসাকুল্যে মাত্র ৬৩ ডলার। আজ পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। আমি নিশ্চিত এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যে বিষয়ে আপনার চেয়ে তারা বেশি সচেতন ।
এরকম আরো অনেক বিষয় আছে যেটা আমাকে বিব্রত করে যার ফলে আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষন করছি। পাকিস্তান দূতাবাসের রেজিস্ট্রেশন পরিসংখ্যান অনুযায়ী , তিন হাজার পাকিস্তানি ছাত্র আমেরিকাতে আছে যার মাত্র ১৬৩ জন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা। এই ধরনের অসমতা বৃটেন এবং অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিরাজমান যেখানে পাকিস্তানি ছাত্র ছাত্রীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য যায়। তাছাড়া এই ধরনের অসমতা অন্যান্য বৈদেশিক সেবা ক্ষেত্রেও বিরাজ করছে। উদাহরনস্বরুপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় , যেখানে উভয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং সহকারী পররাষ্ট্র সচিব উভয়ই পশ্চিম পাকিস্তানের। তাছাড়া সেখানে ৫৪ জন দূত যার মধ্যে মাত্র ১৪ জন পূর্ব পাকিস্তানের।
এই অবিচার পূর্ব পাকিস্তানের জনগন গত ২৩ বছর ধরে ভোগ করতেছে এবং এই ব্যাবস্থা ত্রুটি মুক্ত করা অকল্পনীয় যদি না পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন না হয়। এই পদ্ধতিকে ত্রুটিমুক্ত করতে একমাত্র উপায় আমরা যদি নিজেদের নিয়তি নিজেরাই নিয়ন্ত্রন করতে পারি। আমরা যারা আমেরিকাতে ছাত্র এবং আমেরিকান স্কলাররা আপনাকে অনুরোধ করছি ১৯৪০ সালের এ কে ফজলুল হকের দ্বারা সরানো আন্দোলন আবার করতে হবে। আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে কোন কিছুতেই মিল নেই যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে । আমার মতে এখনই সেরা সময় স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করার। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সমর্থনের পাশাপাশি সারা বিশ্বের জনমত রয়েছে আপনার পক্ষে।
আপনার একান্ত
রফিক ইউ আহমেদ
সভাপতি
সাংস্কৃতিক কমিটি
আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগ
জনাব ইয়াহিয়া খান ,প্রেসিডেন্ট , পাকিস্তান
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী , সভাপতি , ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ
জনাব আতাউর রহমান খান , সভাপতি , পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী লীগ
জনাব নূরুল আমিন , সভাপতি , পাকিস্তান ডেমোক্রাটিক পার্টি
<৪,১২৩,২২৭>
অনুবাদকঃ সজীব কুমার সাহা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৩। অভিনন্দনের জবাবে শেখ মুজিব কতৃক আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগের সভাপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন |
রফিক উদ্দিন আহমেদকে লিখিত শেখ মুজিবের চিঠি
|
১৯ জানুয়ারী, ১৯৭১ |
শেখ মুজিবর রহমান
৬৭৭ ,ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা
রোড নং – ৩২
ঢাকা ,টেলিফোন – ২৪২৫৬১
তাং – ১৯ – ১ -৭১
প্রিয় আহমেদ ,
দেশের সাধারণ নির্বাচনে সাফল্য লাভের পর আমার দলকে অভিনন্দন জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।জনগণ ছয় দফা দাবির উপর রায় দিয়ে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে যার ফলে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এমন একটি সমাজ গঠনে যেখানে প্রতিটা অঞ্চল এবং প্রতিটা মানুষ সমান বিচার পাবে । জনগণের রায়কে সম্মান দিতে আমাদের ব্যার্থ হলে চলবে না।
শুভকামনা রইল।
শেখ মুজিবর রহমান
জনাব রফিক ইউ আহমেদ
চেয়ারম্যান ; সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক কমিটি
আমেরিকাস্থ পাকিস্তান লীগ ,
ইনকর্পোরেশন, ২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউইয়র্ক ,
এন ওয়াই ১০০২৫
<৪,১২৪,২২৮-২২৯>
অনুবাদকঃ সজীব কুমার সাহা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৪। ইয়াহিয়া খানকে প্রতিশ্রুতি অস্ত্র সাহায্য না দেয়ায় আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনজণের উদ্দেশ্যে প্রচারিত চিঠি | আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের দলিল |
১২ মার্চ , ১৯৭১
|
আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ
২৬৬৭ ব্রডওয়ে ,নিউইয়র্ক এন ওয়াই ১০০২৫
তাং – ১২ইমার্চ , ১৯৭১
জনাব,
আমি যে সংগঠনের পক্ষে চিঠি লিখছি সেই সংগঠন প্রতিনিধিত্ব করে সেই সব মানুষদের যারা উৎপত্তি গত ভাবে পূর্ব পাকিস্তানী এবং যারা তাদের আমেরিকাস্থ বন্ধু। আমি এই চিঠি লিখছি বাধ্য হয়ে কারণ এই সময়ে পাকিস্তানে কি ঘটছে এইটা জানানোর জন্য।
পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক দূর্যোগে পতিত হওয়ার স্মৃতি এখনো আমেরিকার জনগনের স্মৃতিতে জীবন্ত রয়েছে । তাদের মধ্যে কয়েকজন বিপদের মাত্রা সম্পর্কে সচেতন যেটির মুখোমুখি আজ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ । এই দূর্যোগ মনুষ্যসৃষ্ট ,গত বছরের নভেম্বরের মত নয় । এটি প্রতিরোধযোগ্য । সাড়ে সাত কোটি অসহায় নিরস্ত্র বাঙালি পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর মেশিনগান ও গ্রেনেড বোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে । পাকিস্তান গত ২৩ বছর ধরে এই অঞ্চলের মানুষের অস্তিত্বে রয়েছে । কিন্তু পূর্ব অংশের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের অভিজাতদের দ্বারা শোষিত হচ্ছে । আমলাতন্ত্র এবং সেনাবাহিনীতে নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রন করছে যাতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা উপকৃত হয় । পূর্ব পাকিস্তানিরা সরকারের এরুপ গনতান্ত্রিক পন্থায় হতাশ হয়েছে কারন এখানে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সামান্য অংশ পায় । যদিও মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশ পূর্ব অংশে বাস করে , কিন্তু তারপরও তারা দুটি অংশকে এক রাখতে উল্লেখযোগ্য ছাড় ও ত্যাগস্বীকার করছে নিরর্থকভাবে । ১৯৫৬ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার রক্ষা করতে সম্মত হয় । এবং তারা অন্য অংশে রাজধানী স্থাপনে আপত্তি করে নাই । সব কিছু করার পরেও এই নিয়ম গুলি কোন কাজে আসে নাই । একটি জোট গঠিত হলো যারা পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যাবসায়ী , আমলা এবং সেনাবাহিনীর স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯৫৬ এবং ১৯৫৮ সালের নিয়ম গুলি পুনরাবৃত্তি করে । গত দুই দশক ধরে পাকিস্তানের রাজনীতি প্রভাবশালী সহনশীল হচ্ছে যার ফলে পাকিস্তানের রাজনীতির নিয়ন্ত্রন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর কাছে চলে যাচ্ছে । একটি ধারাবাহিক সেনা অভ্যুত্থান এর মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার দমনের জন্য । ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আরো হতাশ হয়েছে । সারা বিশ্বের জনগণ একটি আভাস পেয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের অবহেলা ঘূর্ণিঝড়ের সময়। একটি ছোট এলাকার মধ্যে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং দারিদ্রতার কারণে মার্শাল আইয়ুব ১০ বছরে শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে পূর্বাংশের মানুষ ।
আজ সংবিধান খসড়া তৈরী করার সময় এসেছে কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যেতে হবে যার ফলে জনগণের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হবে । জাতীয় পরিষদে মুজিব ও ভুট্টোর মধ্যে একটি চুক্তির অনির্দিষ্ট স্থগিতাদেশ এবং ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধের প্রচার চালিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বোকা বানানো হয়েছে । বাঙালিরা তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে জানত পশ্চিম পাকিস্তানের বিশ্বাসভঙ্গতা ও তাদের স্বার্থান্বেষী মনোভাব ।
পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসনের প্রতিবাদ জানাতে পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে সঙ্গহতি দেখিয়েছেন তা সারা বিশ্বে অতুলনীয় । শিক্ষার্থী , পেশাজীবি , সরকারি চাকরিজীবি সবাই একসাথে অংশগ্রহন করেছে এই প্রতিবাদে । পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম নয় পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার । এটাই কি উপযুক্ত সময় নয় আমেরিকার জনগনের এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করার ? কতজন আমেরিকান জানে যে তাদের রক্ষার্থে যে অস্ত্র সজ্জিত ছিল , আজ সেই অস্ত্র পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র জনগণকে দমনের উদ্দেশ্যে ব্যাবহৃত হচ্ছে ?
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ চিরকাল মনে রাখবে কয়েক মাস আগের ঘূর্নিঝড়ের পরে আমেরিকার সাহায্য সহযোগিতার কথা । আমেরিকা সাইক্লোনের সময় যে ভাবে তাদেরকে যুক্ত করেছে , জনগনের প্রত্যাশা এখন তারা পাকিস্তানের এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে এতটা নির্লিপ্ত থাকতে পারে না ।
ঐতিহাসিকভাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান চিন্তা পাকিস্তানকে প্রতিরক্ষা নয় , তাদের চিন্তার বিষয় পাকিস্তানের জনগণের বৈধ আকাঙ্খা কে দমন করা যায় । পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্লজ্জ ভূমিকা এখন সারা বিশ্বের কাছে ভুল্ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে ।
অত এব আমেরিকার জনগণের আমাদের আকুল আবেদন যাতে তাদের জনপ্রতিনিধি , তাদের কংগ্রেসম্যান রা যাতে ইয়াহিয়া খানের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি পাকিস্তান কে অস্ত্র সহায়তা না দেয় ।
পূর্ব পাকিস্তানের আজকের অবস্থা আপনাদের গৌরবময় সংগ্রামের সময় থেকে আলাদা ছিল না । ব্রিটিশদের মত আমেরিকা যেমন নির্যাতিত পাকিস্তানও তেমনি পূর্ব পাকিস্তান হাজার মেইল দূরে বসে নির্যাতন করছে । আপনাদের মত আমরাও আমাদের কল্যানের জন্য আমরা খাজনা দেয় । কিন্তু তারা আমাদের কল্যানের ব্যাপারে উদাসীন ।
আপনারা যদি আমাদেরকে সাহায্য না করতে পারেন , অনুরোধ করছি অন্তত হানাদার পাকিস্তানিদের সাহায্য করবেন না যাতে তারা আমাদের ঔপনিবেশিক শাসন চালিয়ে যেতে না পারে ।
কাজী এস আহমেদ
প্রেসিডেন্ট
<৪,১২৫,২৩০-২৩১>
অনুবাদকঃ শিপ্রা কর্মকার
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৫। আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের জরুরি সভায় গৃহীত সিন্ধান্ত সমূহ | ইস্ট পাকিস্তান লীগের সভার কাযবিবরণী |
২৮ মার্চ, ১৯৭১
|
আমেরিকার পূর্ব পাকিস্তান লীগ!
৬৬৭, ব্রডওয়ে নগরী,নিউইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫
২৮ শে মার্চ, ১৯৭১
আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে পূর্ব পাকিস্তান লীগ কতৃক ২ টায় এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং যার অর্থ দাড়ায় বাংলাদেশের নিরস্ত্র ও নিরীহ মানুষকে তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য একটি বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে লিপ্ত করা। সভাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশের মানুষের অংশগ্রহনে অনুষ্ঠিত এবং যার মূল উদ্দ্যেশ্য ছিল নিন্মলিখিত সমস্যাগুলোর সমাধান করা।
১) এই সভায়, ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর সমাধানের ৩১ তম বার্ষিকী উৎযাপন করা হয় যাতে ভারতের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে দুটি পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টির জন্য পরিষ্কারভাবে অনুরোধ করা হয়!
২) এই বৈঠকে উল্লেখ করা হয় যে, পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্র প্রতিনিধিত্ব করার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা আত্মহুতি ও বিভিন্ন সেবা প্রদান করতে সম্মত।
৩) গনতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত আমাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, ৬ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর আওতায় পূর্ব পাকিস্তানের কাছে দিতে রাজি হল। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক স্বৈরাশাসক ইয়াহিয়া খান, ৭৫ কোটি বাঙ্গালীর চাহিদা গ্রহনের পরিবর্তে তাদের ধ্বংশের জন্য তাদের বিরুদ্ধে জেট বোম্বার, ট্যাংক ,কামান ও অন্যন্য আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে মধ্যযুগীয় বর্বরতা শুরু করে!
৪) এই বিষয়ে বৈঠকে সংশোধিত হয়েছে যে এই সমাধি ঘন্টায় বাংলাদেশের প্রয়োজনে বিশ্বের সব গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর এগিয়ে আসা উচিত এবং মার্কিন জাতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বিশেষকরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে অনুরোধ করা উচিত। চট্টগ্রামে অস্থায়ী সরকার মেজর জিয়া খানকে ভিত্তি করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও পশ্চিম পাকিস্তানি থেকে হানাদারদের বাইরে নিক্ষেপ করতে সম্ভাভ্য সব ধরনের সহায়তা প্রদান করবে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ভারত। জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের প্রধান বৈঠকে এসব দেশের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভা অাহ্বান করা হয় এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘের অনুমতিক্রমে সদস্যপদ প্রাপ্ত হয়। বর্তমানে, ১৯৪৭ সালে ভারত মামলার উপমা পাকিস্তান কর্তৃক অনুষ্ঠিত হয় যখন ভারত মূল সদস্যপদ বজায় রাখে এবং পাকিস্তানকে নতুন করে আবেদন করতে হয়
৫) এই সভায় রাষ্ট্রপতি রিচার্ড এম নিক্সন কে অবিলম্বে পূর্ব পাকিস্তানের জাতিসংঘের সামরিক হস্তক্ষেপের জন্য জিজ্ঞাসা করতে অনুরোধ করা হয় সরকারের শ্বাসত ধারনা সংরক্ষন করতে। জনগনের সরকার, জনগনের দ্বারা এবং জনগনের জন্য।
৬) এই বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানে গনতন্ত্রের কারন তার সমর্থনের জন্য প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তার গভীরতম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তার অনুরোধ, গনতন্ত্র, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক নৈতিকতা নামে তাদের সংগ্রামে প্রত্যেকের সাহায্যে প্রদান করা। সম্মান ও মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকাই অামাদের বীর সম্প্রদায়ের লক্ষ্য।
৭) এই সভায় জাতিসংঘের মহাসচিব উথান্ট, জাতিসংঘের সনদের ৯৯ ধারার অধীনে নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভা আহ্বান করেন এবং জাতিসংঘের শান্তিমিশন পূর্ব পাকিস্তানের প্রানবধ গনহত্যা বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহন করেন।
(কাজী এস. আহমেদ)
(রাষ্ট্রপতি)
<৪,১২৬,২৩২-২৩৩>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৬। “বাংলাদেশ”-আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের মুখপাত্র | “বাংলাদেশ” ভল্যুম ১ নম্বর ১ | ৩১ শে মার্চ, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগের একটি অঙ্গসংগঠন, ইনর্কোপরেট।
২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫
ভল্যুম ১ নম্বর ১ মার্চ ৩১, ১৯৭১
মুজিবের আহ্বান
নিমোক্ত পাঠ্যাংশটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর জন্য একটি সম্প্রচারিত বার্তা, কলকাতার নিকটে একটি বেতার স্টেশন থেকে তা মনিটর করা হয়, শুক্রবার সকালে, ২৬ শে মার্চ, ১৯৭১ সালে। সম্প্রচারিত হওয়ার সময় ৯ টা ৮ মিনিট, ৫০০ কিলোসাইকেল পার সেকেন্ড: “পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ আক্রমণ করে ঢাকায় অবস্থিত পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ভিত্তি পিলখানা এবং রাজারবাগ পুলিশ স্টেশন, ২৬ শে মার্চ, মধ্যরাতে এবং অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করে। ঢাকায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং পুলিশ বাহিনীর সাথে কঠোর যুদ্ধ হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মানুষ প্রাণপণে শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। বাংলাদেশের সর্বত্র সর্বস্তরের জনগণ শত্রুবাহিনীদের প্রতিহত করার চেস্টা করছে। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং মুক্তির জন্য সংগ্রামে আপনাদের সাহায্য করুন। জয় বাংলা। ” -শেখ মুজিবুর রহমান |
বাংলাদেশই কেন
এটি বাংলাদেশের প্রথম সমস্যা। ইহাই একমাত্র কাজ যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানি আগ্রাসকগণ, আমাদের শহরগুলোতে বোমাবর্ষণ ও জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং নিরস্ত্র মানুষদের হত্যা করছে, আমাদের পবিত্র মাটি ছেড়ে না যাচ্ছে, পাঠকগণ, আপনাদের বলে রাখছি, পাকিস্তানিরা আমাদের সকল জনগণের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জিত, রক্ত ও অশ্রু দিয়ে কেনা স্বাধীনতা, নিষ্প্রদীপ করার নিরর্থক চেস্টায় পর্যবসিত হয়েছে।
যে ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমাদের জাতির জন্ম হয়েছে, তা নির্ভয়ে প্রকাশ করার জন্য বাংলাদেশকে উদ্দ্যোগী হতে হবে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে স্বদেশবাসীদের আশা এবং আকাঙ্খা নিশ্চয়ই এদেশে বসবাসরত ক্লিষ্ট মানুষদের আশা এবং আকাঙ্খার সাথে বিশ্বস্ত।
– সম্পাদকীয় বোর্ড
আমেরিকা ইস্ট পাকিস্তান লীগ অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি মানুষদের এবং ৭৫ মিলিয়ন বাঙালীর নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণার সংবাদ বহন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা বাংলাদেশ রেডিও থেকে সম্প্রচার করা হয়।
যখন এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সুখের ঘটনা হতে পারত , আমরা এখন এ উদযাপন সংযত করছি। আমরা সবাই জানি যে; পশ্চিম পাকিস্তানি অধিকারভুক্ত বাহিনী ঠিক এ মুহূর্তে বাংলাদেশে নির্মম এবং অসভ্য কর্মকান্ড চালাচ্ছে আমাদের নিরস্ত্র এবং নিরপরাধ মানুষদের বিরুদ্ধে। ওয়াশিংটন প্রদেশ বিভাগের মুখপাত্র বলেন, আমেরিকানগণ ঢাকাতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে, ঢাকা শহর জুড়ে পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যাপক গোলাবর্ষণের কথা জানাতে পৌঁছেনেন। আন্তজার্তিক প্রেস থেকে আপনি জেনে থাকবেন যে, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী বোমারুবিমান, ট্যাংক, ভারী কামান, মেশিনগান, জাহাজি বোমা ব্যবহার করছে আমাদের অসহায় মানুষদের বিরুদ্ধে।
এ বিশ্বের সকল মুক্তিকামী এবং বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ অবশ্যই নিন্দা করবে, বাঙালিদের বিরুদ্ধে এরূপ মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুর হত্যালীলা এবং নগ্ন আগ্রাসনের যাদের অপরাধ ছিল আত্মসংকল্পের জন্য অবিচ্ছেদ্য অধিকার চাওয়া। পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানের পতাকাতল থেকে বের হয়ে এসে তাদের ভাগ্যকে একটি আকৃতি দিতে চেয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তানিদের দ্বারা তারা নির্মমভাবে শোষিত হয়েছিল,যখনি তারা এটি প্রতিহত করতে চেয়েছিল কিংবা তাদের ন্যায্য ভাগ চেয়েছিল তখনই তাদের মেশিনগান দ্বারা নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারি মেশিনের অসভ্যতার নিন্দা প্রকাশ করার মত ভাষা আমাদের নেই। আমাদের নিরীহ মানুষদের বিরুদ্ধে ইহার নৃশংস এবং ভয়ঙ্কর মধ্যযুগীয় সন্ত্রাস কার্যকলাপ আন্তর্জাতিক প্রেসে পরিপূর্ণভাবে রিপোর্ট করা হবে।
আলী আহমেদ কর্তৃক।
যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাঙালিরা বাংলাদেশের জন্য আত্মত্যাগের সংকল্প নিল
আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের মিটিং অনুষ্ঠিত হয় নিউইয়র্কে, ২৮ মার্চ, ১৯৭১ সালে, সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার ৩০০ এর অধিক বাঙালি তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার দাবিতে একত্রিত হয়। তাছাড়া এ মিটিং আরো অনুরোধ জানায় পশ্চিম পাকিস্তানি আগ্রাসকদের বিরুদ্ধে বন্ধুরাষ্ট্র সমূহের সরকারদের, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং ভারতকে, যাতে তারা চট্রগ্রামে অবস্থিত মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে, শর্তাধীন বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দেয় এবং যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়ায়।
ইন্ডিয়ার সংসদ সমাধান গ্রহণ করল
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতের দু’কক্ষবিশিষ্ঠ সংসদে সমাধানের প্রস্তাব উস্থাপন করেন ৩১ মার্চ, ১৯৭১ সালে, পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব বাংলার মানুষের উপর বলপ্রয়োগ এবং নিরস্ত্র মানুষের উপর গণহত্যার “দ্রুত অবশানের” দাবি করে তিনি বলেন, “নিয়মানুগ ধ্বংসকরণ দ্রুত তুলতে হবে এবং বন্ধ করতে হবে যা গণহত্যার পরিমাপক। “
<৪,১২৭,২৩৪>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৭। “বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ”-এর বক্তব্য সম্বলিত প্রচারপত্র | “বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ”এর প্রচারপত্র | মার্চ, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ
প্রতিরক্ষা
পরিষদ
বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিষদ(বাপ্রপ) বাঙালি ও আমেরিকানদের একটি করমুক্ত এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, যা ইলিয়ন প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। এটি গঠিত হয় ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ সালের পর, যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশের( পূর্ব-পূর্ব বাংলা) নিরস্ত্র মানুষদের উপর আক্রমণ চালায়।
লীগের উদ্দেশ্যসমূহ:
১. আমেরিকান জনগণের সামনে বাঙালিদের বর্তমান সংকট তুলে ধরা এবং তা বজায় রাখা।
২.তথ্য উৎপাদন এবং বন্টনের উদ্দেশ্যে তহবিল গঠন।
৩. যুক্তরাষ্ট্র নীতি পরির্বতনের জন্য কংগ্রেস এবং নিক্সন প্রসাশনকে প্রচোরিত করা।
৪. যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাঙালিদের মনোবল বজায় রাখা, যাদের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন মারা গিয়েছে কিংবা নিরুদ্দেশ।
৫. বাঙালি এবং তাদের আমেরিকান বন্ধুদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে উন্নয়নের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে হবে, যদিও সে সম্পর্কিত তথ্য খুবই কম।
এ পরিষদ যুক্তরাষ্ট্রে আরো কিছু বাংলাদেশি সংস্থা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করছে এবং শিকাগো থেকে একটি বাংলাদেশি সংবাদবাহীপত্র পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করছে।
————————————————————————-
আমি বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিষদে যোগ দিতে ইচ্ছুক এবং সংবাদবাহী পত্র হাতে পেয়েছি এবং এ ক্ষেত্রে আমার অবদান$…………………………………………………….
নাম ………………………………………………………………………………………ঠিকানা………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………………ফোন………………………………………
বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা পরিষদ
৫২৪৫ এস. ক্যানউড এভিন্যু
শিকাগো,ইলিয়ন ৬০৬১৫
<৪,১২৮,২৩৫-২৩৬>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১২৮। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংরক্ষণের মাধ্যমে সাহায্যের আবেদন | আমেরিকাস্থ ইষ্ট পাকিস্তান লীগের প্রচারপত্র |
৩ এপ্রিল, ১৯৭১ |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য সংগ্রাম
বাংলাদেশের নিরপরাধ এবং নিরস্ত্র মানুষের উপর বোমারু-বিমান, ট্যাংক, ভারী কামান, মেশিনগান এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে যে বর্বর ও নৃশংস আক্রমণ চালানো হচ্ছে, সারা বিশ্বের মানুষ এখন সে সম্পর্কে অবগত, যাদের অপরাধ ছিল গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর, যিনি কিনা জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্বাচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে বড় পরিসরে স্বায়ত্বশাসনের অনুমতি।
এ সূত্রে স্মরণ করিয়ে দিতে পারা যায় যে, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ কর্তৃক ১৯৪০ সালে প্রস্তাবিত লাহোর প্রস্তাবে, ভারতের সকল মুসলিম সংঘের জন্য, মুসলিম সংঘের রাজনৈতিক দলগুলো পরিষ্কারভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে উইলে উল্লেখ করেন যে,” ব্রিটিশ ভারতের দুটি অঞ্চল– দক্ষিণ পূর্ব এবং দক্ষিণ পশ্চিমের দুটি বিচ্ছিন্ন ও স্বাধীন রাষ্ট্র।”
আমরা দেখাতে চাই যে, বাংলাদেশের মানুষ সাবেক পাকিস্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এই কারণে যে, তারা সংসদে প্রতিনিধির সমতা এবং অন্যান্য সেবাদানে রাজি হয়েছিল।
আমাদের নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লজ্জাহীন আগ্রাসনে প্রথম তিনদিনের যুদ্ধে ইতিমধ্যে তিন হাজার বাঙালিকে হত্যা করা হয়েছে।
আমাদের মানুষদের এ গুরুতর সময়ে, আমরা যুক্তরাজ্যের প্রদেশগুলোর সদস্যদের সাথে একটি চুক্তির সান্নিধ্যে এসেছি যে, তারা যেন চট্রগ্রামে অবস্থিত মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে শর্তাধীন বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দেয় এবং আগ্রাসকদের প্রত্যাখান করার যথাসম্ভব সাহায্যের হাত বাড়ায়।
তাছাড়া আমরা যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং অন্যান্য জাতীয় পরিষদের সদস্যদের অনুরোধ করেছি যাতে তারা অতি দ্রুত নিরাপত্তা পরিষদের একটি সভা আহ্বান করে এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে জাতিসংঘের সদস্যপদ ধরে রাখার অনুমতি প্রদান করে যা পাকিস্তান কর্তৃক দখলকৃত ০১১, ভারতের সাথে এর একটি সাদৃশ্য রয়েছে যে, ১৯৪৭ সালে ভারত মূল সদস্যপদ লাভ করে এবং পাকিস্তানকে নতুন করে আবেদন করতে হয়।
যেমন মি. সামার সেন জাতিসংঘের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অত্যন্ত নির্ভীকভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যদিও পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার তথাপি তাদের এ অভ্যন্তরীণ ব্যাপার অনৈতিক অনুপাতে পরিণত হয়েছে। ইহা অবিকল একটি পরিস্থিতি যা জাতিসংঘ দলিলে অনুচ্ছেদ ৯৯তে বর্ণিত এবং যথোপযুক্তভাবে প্রয়োগকৃত।
সুতরাং নিরাপত্তা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ইউ থান্টকে জাতিসংঘ দলিলের অনুচ্ছেদ ৯৯ এর অধীনে একটি সভা আহ্বান করার এবং জাতিসংঘে প্রেরণের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।
এখন বাংলাদেশের সময় নির্দয় ও বাছাইকরা গণহত্যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মানবিক ইতিহাসে যার কোন সাদৃশ্য নেই এমনকি মধ্যযুগীয় অসভ্যতা ও নির্মমতার কাহিনীতেও নেই।
জয় বাংলা ! বাংলার জয়’
নিউইয়র্ক
এপ্রিল,১৯৭১ কে এস আহমেদ
সভাপতি
যুক্তরাষ্ট্রস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ. ইনর্করপোরেট.,
২৬৬৭ ব্রডওয়ে,
নিউইয়র্ক। নিউইয়র্ক ১০০২
<৪,১২৯,২৩৭-২৩৮>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম
|
সূত্র
|
তারিখ
|
১২৯। প্রবাসী সকল বাঙালী ও প্রতিবেশীদের প্রতি আমেরিকান্থ ইষ্ট পাকিস্তান লীগের বক্তব্য
|
ইষ্ট পাকিস্তান লীগের দলিলপত্র। |
৫এপ্রিল, ১৯৭১।
|
বিজ্ঞপ্তি নং:১
৫এপ্রিল, ১৯৭১
সকল বাঙ্গালীর প্রতি:
আমাদের দেশের দুর্যোগ ছিল খুবই আকস্মিক এবং দুঃখজনক যে, কিছু সময়ের জন্য আমরা সবাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা এখন উপলব্ধি করেছি যে, জয় নিশ্চয়ই আমাদের হবে কিন্তু এই সংগ্রাম দীর্ঘ হবে। প্রথম এবং সর্বাগ্রে মনে রাখার বিষয় এই যে, আমার প্রত্যেককে উদ্যম বজায় রাখতে হবে এবং আমাদের আশাহত হওয়া যাবে না এই সাময়িক বিপরীত অবস্থায়। মনে রাখতে হবে যে বাংগালীরা পৃথিবীর অন্যতম সাহসী জাতি। তারা মেশিনগান, মর্টার এবং ট্যাংকের সাথে লড়াই করেছে লাঠি ও বর্শা দিয়ে। তাদের অপ্রতিরোধ্য শ্রেষ্ঠতার মুখোমুখি হওয়ার সাহস আছে এবং জয়ী হওয়ারও অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।
আমরা কি পারি, যারা বিদেশে আছি, এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করতে? কিছু বিষয় আছে, যা আমরা অবিলম্বে করতে পারি।
১. আমেরিকার বাংলাদেশ লীগ:
এটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, নিউইয়র্কস্থ আমেরিকান কংগ্রেসের পূর্ব পাকিস্তানলীগ আমেরিকায় অবস্থিত সকল বাংগালী সংস্থার প্রধান কার্যালয় হবে। এটির নাম অতি দ্রুতই আমেরিকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে পরিবর্তিত হবে। আপনাকে সংস্থার অধ্যায়গুলো ভালভাবে জানতে হবে এবং বিজ্ঞপ্তির শেষে প্রদত্ত ঠিকানায় আমাদের তথ্য দিতে হবে। যতদূর সম্ভব আমেরিকান নাগরিকত্ব সহ বাংগালীদের স্থানীয় অধ্যায় গুলোর প্রেসিডেন্ট করতে হবে।এটা তহবিল বৃদ্ধিতে এবং স্থানীয় কংগ্রেসম্যান, স্থানীয় নির্বাচিত কমিটি ও স্থানীয় জনগণের সমর্থন যোগাতে সহায়তা করবে।
২. তহবিল সংগ্রহ :
আমাদের দেশের মানুষকে বস্তুগত সাহায্য করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করতে ও জাহাজে প্রেরণ করতে অবিলম্বে টাকার প্রয়োজন। সকল বাংগালীকে একটি তহবিল সংগ্রহের অভিযানে যেতে হবে। আমাদের বেশির ভাগ তহবিল আসবে ন্যায়বান আমেরিকানদের কাছ থেকে,
যারা পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মিদের বর্বরতায় বিস্মিত হয়েছে। এটা জোরদার করা উচিৎ যে, নৃশংসতায় ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য, চিকিৎসাসেবা ও ত্রাণ সহায়তার অন্যান্য বিভাগের জন্য প্রচুর পরিমাণ সহায়তার প্রয়োজন হবে। প্রত্যেক শহরে যেখানে বাংগালীরা আছে, বাংলাদেশের আমেরিকান বন্ধুদের কাছ থেকে তহবিল সংগ্রহ শুরু করবে। এই তহবিল হয়ত অন্তর্ভুক্ত হবে, অথবা হবে না। যেমন সংগঠন ক্যামব্রিজ, ম্যাস, নাশভিল, টেন ও ওয়াশিংটন ডিসিতেপাওয়া গেছে। একজন আমেরিকান নাগরিক আপনাদের লোকাল AFB এর প্রেসিডেন্ট হবে। যখন তহবিলগুলো সংগঠিত হবে, চেকগুলো বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য তৈরি করা হবে। এই চেকগুলো প্রত্যেক অধ্যায় সহ পরবর্তী নির্দেশনা দেয়া পর্যন্ত রাখা হবে। সংগৃহীত প্রকৃত পরিমাণের সাপ্তাহিক তথ্য এক্সপ্রেস ডেলিভারি ডাকযোগে নিচের ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে। আমাদের দীর্ঘ দূরত্বের ফোনকলে সংরক্ষন করা উচিৎ এবং প্রয়োজনীয় সরবরাহ কেনার জন্য ব্যবহার করা উচিৎ। প্রতি অধ্যায়ে থাকা প্রত্যেক বাংগালীর নাম, ঠিকানা ও ফোন নাম্বার বিশেষ ডাক ব্যবস্থায় নিম্নোক্ত ঠিকানায় প্রেরণ করতে হবে।
৩. তথ্য সংগ্রহ :
বাংগালীদের বিভিন্ন দল এরই মধ্যে, আমাদের জনগণের উপর অনৈতিক নৃশংসতার সংবাদ প্রকাশে ভাল কাজ করেছে এবং বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পশ্চিম পাকিস্তানের কৃতকর্মের জন্য নিন্দা প্রকাশে অনুপ্রাণিত করেছে। এই কাজ এখন প্রত্যেক বাংগালীকে করতে হবে। ছাত্রসমাজ, একাডেমিক কাউন্সিল ও বিশিষ্ট অধ্যাপকদের উপর বিশেষ নজর দিতে হবে। পাকিস্তানি আর্মিদের কর্তৃক সংগঠিত অপরাধের বিশালতা সম্পর্কে বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে অবহিত করতে হবে। গণহত্যা বন্ধে একটি সমাধানের জন্য, এই সংস্থা ও ব্যক্তিদের পাওয়ার চেষ্টা করুন। আমাদের সংঘাতের দৃশ্যগুলো শোনার জন্য বা কথা বলার জন্য আগ্রহী যেকোন দল বা প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করুন। এটা বোঝানো গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা বিদ্রোহী নই যা আমাদের সংবাদ মাধ্যম, টিভি ও রেডিওতে প্রায়ই বলা হচ্ছে। ( আমেরিকার গৃহযুদ্ধের সাথে এই পরিস্থিতির একদমই তুলনা নেই। বরং আমাদের সংগ্রামকে ১৭৭৬ সালে তাদের কলোনিবাসী শাসকদের বিরুদ্ধে করা স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে তুলনা করা যেতে পারে)।
এটাই সেনাবাহিনী যারা কিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দ্বারা যথাযথ ভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে। জোর সত্য এই যে, একনায়ক দ্বারা পরিচালিত আর্মি কর্তৃক একটি বৈধ নির্বাচিত সরকার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ও সমগ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠনে তাদের নাৎসি স্টাইলে আক্রমণ জোরদার হচ্ছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করছে। শিক্ষার্থীদের অসৎ ভাবে হত্যা করা হচ্ছে এবং ঠান্ডা মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ জন প্রফেসর ও প্রভাষককে হত্যা করেছে। ( আমরা শুনেছি তাদের মধ্যে ড. শাহ আজিজুর রহমান, ড. জি সি দেব এবং ড. মুস্তাফিজুর আহমেদ চৌধুরীও থাকতে পারেন)। এটা আন্দোলনের জন্য অতীব জরুরী যে, সংবাদমাধ্যম, টিভি, রেডিও ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের সহানুভূতি জাগ্রত ও জীবিত রাখা।
৪. ভারত, সিংহল, বার্মা:
এই তিনটি দেশকে আমাদের সহযোগীতার জন্য কঠোর চাপ দিতে হবে। সিংহল, সামরিক অথবা PIA প্লেনগুলোতে অতিরিক্ত জ্বালানী ভরে দেয়ার অনুমতি দিবে না। PIA প্লেনগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনবরত সৈন্য আনছে। বার্মা সামরিক বিমানগুলো চীন হয়ে অতিরিক্ত উড়ে যাওয়ার অনুমতি দিবে না। ভারত অবিলম্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে উপকরণ দিয়ে সাহায্য করবে। বাংগালী ও আমেরিকানদের থেকে প্রাপ্তচিঠি, ভারতীয়, সিংহলী ও বর্মী নাগরিকদের দ্বারা গৃহীত টেলিগ্রাম, ফোনকল, সমাধান এসবই আমাদের প্রচারণায় সহায়তা করবে। নষ্ট করার মত একমুহূর্ত সময়ও নেই। অনুগ্রহ করে, বাংলাদেশের জন্য আপনি আপনার সর্বোচ্চটা দিন।
জয় বাংলা
অস্থায়ী ঠিকানা : ৩১১৭, ৭ম স্ট্রীট, এন ই ওয়াশিংটন ডিসি ২০২১৭ টেলিফোনঃ ৭০৩-৩৫৬-০২৭৭
<৪,১৩০,২৩৯-১৪০>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও নেতৃবৃন্দের প্রতি আমেরিকান্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের সভাপতির আবেদন | ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকার প্রচারপত্র | এপ্রিল, ১৯৭১ |
আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ
২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউইয়র্ক এ ওয়াই ১০০২৫’’
জনাব,
আমেরিকা এই অবস্থায় হাত গুটিয়ে দাড়িয়ে থাকতে পারে না যখন, পাকিস্তান থেকে গণতান্ত্রিক অগ্রগতিকে সমূলে উৎপাটনের জন্য ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের ৭৫ মিলিয়ন লোক নিষ্ঠুর ভাবে অবদমিত হচ্ছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে বামপন্থি চীনের ঘনিষ্ঠতা বিবেচনা করে, আমাদের সাথে ভারতের প্রায় ভংগুর সম্পর্ক জোড়া লাগানোর গুরুত্ব বিবেচনা করে শুধু মাত্র দক্ষিণ এশিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে এবং বামপন্থীদের বিপক্ষে অবামপন্থীদের শক্তিকে একটা স্থিতিশীল অবস্থায় দাড় করানোর জন্য আমরা পূর্ব পাকিস্তানকে তাদের নিজস্ব লক্ষে পৌঁছানোর সংগ্রামকে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি।
২৫ শে মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র উপর সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা হয়েছে। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য জাহাজগুলো করাচীতে সরিয়ে নিচ্ছে এই অজুহাতে যে, চিটাগাং বন্দর ঘঘনবসতি পূর্ণ, যখন গোলাবারুদ বহনকারী জাহাজগুলো অবিরত সেখানে মাল খালাস করছে। তারা বাকি পৃথিবীর সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। এমনকি আন্তর্জাতিক রেডক্রস বিমানগুলোও পূর্ব পাকিস্তানে ত্রাণ সহায়তা আনার অনুমতি পায়নি। বিদেশী সংবাদদাতাদেরও পূর্ব পাকিস্তান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বিদেশীরা, আমেরিকানদের সহ যেই ইন্টারভিউ দিয়েছে পূর্ব পাকিস্তান থেকে চলে যাওয়ার পর, নিশ্চিত করেছে নিরীহ নাগরিকদের উপর গণহারে হত্যা, ধর্ষণ ও লুন্ঠন চলছে।
এশিয়ায় আমেরিকার অবস্থান ঘনীভূত করার জন্য এবং পৃথিবী ও আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার জন্য, অবিলম্বে রক্তক্ষয় বন্ধে আমরা আমাদের নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করব। আমরা তা সরাসরি যুক্ত হওয়ার ঝুঁকি ছাড়াই করতে পারি।
পশ্চিম পাকিস্তানের ঘাটতি অর্থনীতি প্রচন্ডভাবে নির্ভরশীল ক) একটি উপনিবেশ ও বাজার হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকে ক্রমাগত শোষণ খ) বৈদেশিক সাহায্য, বিশেষত আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত সাহায্যের উপর। পূর্ব পাকিস্তানের সচেতন জনসাধারণ পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ সুবিধার জন্য তাদের সম্পদের শোষণ অস্বীকার করছে। পশ্চিম পাকিস্তানের আর্চিল পর্বত, তারপর বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়। এটা ছাড়া, এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক অপারেশন টিকিয়ে রাখতে পারবে না।
নৈতিক বিবেচনা থেকে বেশ দূরে, এটা আমেরিকানদের স্বার্থ পশ্চিম পাকিস্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করছে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানের আর্মি দ্বারা দমনমূলক ব্যবস্থা বন্ধে। যদি এই কাজ না করা হয়, গেরিলা যুদ্ধ চলতে থাকবে। ফলে, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ের রাজনৈতিক শক্তির মৌলবাদী এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীল অবস্থার ক্ষতি হবে।
পদক্ষেপ এবং দ্রুততম পদক্ষেপ প্রয়োজন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এই কৌশলগত অংশে অবস্থান ও মর্যাদা বজায় রাখতে চায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নলিখিত পদক্ষেপ বরাবর চলা উচিৎ :
(১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পাইপলাইনসহ সব ধরনের মেডিক্যাল, সামরিক ও অর্থনৈতিক সরবরাহ বন্ধ করা উচিৎ যতক্ষণ না পূর্ব পাকিস্তান থেকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করছে।
(২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সরকারকে চাপ দিবে দখলদারিত্বের এলাকায় দুস্থ পাকিস্তানিদের সাহায্যার্থে আন্তর্জাতিক ত্রাণ তৎপরতার অনুমতি দিতে। যদি প্রয়োজন হয়, ভারত সরকারের সহযোগীতায়, স্বাধীন এলাকাগুলোতে ত্রাণ সহায়তা বাংলাদেশের নবগঠিত সরকারের মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে।
(৩) পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের গণতান্ত্রিকভাবে প্রকাশের ইচ্ছা অনুসারে, যত দ্রুত সম্ভব, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নব গঠিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেবে।
(৪) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একজন জাতিসংঘ পর্যবেক্ষকের পূর্ব পাকিস্তানে মিশনে যাওয়ার পরিকল্পনা সমর্থন করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থার জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদন পেশ করবে।
আপনার অনুগত,
পক্ষে
কাজী এস। আহমেদ
সভাপতি, আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান
<৪,১৩১,২৪১-২৪২>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩১। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগনের প্রতি বাংলাদেশের জনগনের আবেদন | আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ প্রকাশিত বুলেটিন |
১৫ এপ্রিল, ১৯৭১ |
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ও জনগনের প্রতি বাংলাদেশের জনগনের আবেদন
উপকূল অঞ্চলে মাত্র ৪ মাস পূর্বে একটি সাইক্লোন আঘাত করেছিলো যখন বাংলাদেশের জনগন (ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তান) বর্তমান সময়ের বৃহত্তম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভোগ করেছে। সে সময় সমগ্র বিশ্ব সামরিক শাসনকালের চরম ঔদাসীন্য এবং উপেক্ষার সাক্ষী ছিল। আজ একই সামরিক জান্তা সম্পাদন করছে বর্তমান যুগের বৃহত্তম মানব সৃষ্ট ট্রাজেডি।
গত ৩ দিন যাবত সেনাদের দিয়ে মেশিনগান এবং বোমার মাধ্যমে গণহারে একসঙ্গে নিরস্ত্রদের গনহত্যা চলতে থাকে। হাসপাতালগুলোতে বোমা হামলা হয়েছিলো , জনবহুল এলাকা গুলো সম্পূর্ণ ভাবে ধ্বংস হয়েছিলো , নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষদের রাস্তায় হত্যা করা হয়েছিলো চিত্রটা এমনই ছিল যেটি ওয়ার্ল্ড প্রেস কে ঢাকায় অবস্থানকারী বিদেশি প্রতিনিধির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে হত্যাকাণ্ড যখন শুরু হয়েছিলো।এটি সামরিক বাহিনীর জঘন্য পরিকল্পনার একটি মাপকাঠি-যে তারা বিদেশী প্রতিনিধিদের বন্দুকের মুখে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করে। যা আধুনিক ইতিহাসের নজিরবিহীন গণহত্যার স্থান করে নিয়েছিলো।
বাংলাদেশের জনগনকে নিয়মিতভাবেই হত্যা করা হচ্ছিলো কারন তারা এটি চেয়ে অপরাধ করেছিলো যে, ইয়াহিয়া পরিচালিত সামরিক জান্তা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।যখন তিনি অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন এই প্রতিজ্ঞা ইয়াহিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবেই করেছিলেন এবং গত বছরের অক্টোবরে জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনের পূর্বে পুনরায় বলেছিলেন।
যদি সেখানে কোন সন্দেহ ছিল,এই মাসের ঘটনাগুলিতে এটাই পরিষ্কার হয়েছে , যে সামরিক জান্তার জনগনের কাছে ক্ষমতা ত্যাগের কোন ইচ্ছাই ছিল না , অথবা বাংলাদেশের উপর থেকে তাদের প্রভাব হারানোর ইচ্ছাও ছিল না। তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল যে বাংলাদেশকে অপরিবর্তিত অবস্থায় চলতে হবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে বন্দী হয়ে থাকতে হবে, যদিও এর মানে ছিল কেবলই বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা।
বাংলাদেশের জনগন বেশ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে মুক্ত হতে চেয়েছিল একটি বাধ্য হয়ে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানি অত্যাচারীদের থেকে ।
এখানে কোন সন্দেহই নাই যেহেতু এটা তাদের প্রতিবাদের ইচ্ছার ফলাফল। তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত ,আমরা সজ্জিত আমাদের অজেয় বিশ্বাস নিয়ে। তারা ভাড়াটে সৈনিক আমরা মুক্তিযোদ্ধা। তারা অল্প আমরা অনেক। তাদের নীতি ক্ষয়িষ্ণু আমাদের নীতি বলিষ্ঠ। তারা হয়ত কিছু লড়াই জিততে পারে , কিন্তু আমরা যুদ্ধটাই জিতব।
বাংলাদেশে এখন যে লড়াই চলছে তা সমগ্র বিশ্বের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির পদক্ষেপ এর একটা অংশ। এটি সেই সংগ্রাম থেকে ব্যাতীক্রম নয় যেখানে আমেরিকার জনগণ দুই শতাব্দী পূর্বে তাদের শাসকের বিরুদ্ধে করেছিলো। আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশের মত,পূর্ব পাকিস্তান ও হাজার মাইল দূরে থাকা বহিরাগত শাসকদের স্বার্থে শোষিত হচ্ছিল।আপনাদের মত,আমাদেরও ট্যাক্স দিতে হচ্ছে দূরবর্তী সরকারকে যা মূলত আমাদের উন্নয়নের জন্য নয়,কোন রকম প্রতিনিধিত্বের অধিকার ছাড়াই। আপনাদের মত, আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের। আপনাদের মত, আমরাও সাফল্যের সঙ্গে লড়াই করব, এর জন্য যে কোন মূল্যই দিতে হোক না কেনো।
আমেরিকার জনগনের বিশাল ঐতিহ্যের কথা জেনে, বাংলাদেশের মানুষের এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই যে আমেরিকার সরকার এবং জনগণ এই পৈশাচিক গণহত্যা রোধে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। যাই হোক ,সময় এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যদি নিষ্পাপ মানুষগুলোকে রক্ষা করতে হয় , এখনই প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার সময়।
মানবতার নামে,আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন নির্বিচারে এই হাজার হাজার নিষ্পাপ নাগরিকদের হত্যা বন্ধ করতে বিশ্ব রাজনীতিতে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্র হিসেবে আপনারা আপনাদের প্রভাব ব্যাবহার করুন।
আমাদের উপর উৎপীড়নকারীদের সাহায্য না করে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আমরা আপনাদের কাছে প্রার্থনা করি আপনারা ইয়াহিয়া শাসকগোষ্ঠীকে যে কোন ধরনের সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্রদানে বিরত থাকবেন।
বাংলাদেশের নবগঠিত অস্থায়ী সরকারের সাথে পরিচিত হয়ে আপনারা আমাদের সাহায্য করতে পারেন। আপনার কাছে আমাদের প্রার্থনা খুব শিঘ্রই এই গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে পরিচিত হউয়ার।
এপ্রিল ১৫ ,১৯৭১ আমেরিকান লিগ অফ বাংলা ৪১৬, সিঙ্কলেয়ার এভনিউ, গ্লেন্ডেল, সিএ ৯১২০৬
<৪,১৩২,২৪৩>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩২। আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের সভাপতির প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পত্র | ইস্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকার দলিলপত্র | ২২ এপ্রিল, ১৯৭১ |
জয় বাংলা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর
এপ্রিল২২, ১৯৭১
কে.এস. আহমেদ, ইএসকিউআর.,
সভাপতি।
ইস্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকা,
২৬৬৭ ব্রড ওয়ে,
নিউইয়র্ক ১০০২৫।
প্রিয় জনাব আহমেদ,
গত ৯ই এপ্রিল ১৯৭১ জনাব ফারুকুল ইসলাম এবং জনাব মাহবুব হুসাইন মারফৎ আপনার পত্র গ্রহণ করেছি।
আমি একই কারনে আপনাকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন জানাই আপনাকে এবং আপনার কমিটি কে আমেরিকাতে বসবাসকারী বাংলাদেশের জনগণকে সংঘবদ্ধ করার জন্য এবং আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে তারা করতে পারে এমন সবকিছুর জন্য।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে জাতিসংঘে স্বীকৃতি প্রদান করার জন্য জাতিসংঘের সদস্য দেশ গুলোর রাষ্ট্রদূতদের উপর সমবেত চাপ প্রয়োগ করতে আপনার সংস্থাকে অনুমোদন করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত কাজগুলোর জন্য আমি আপনার উপর নির্ভর করে থাকবঃ-
ক)আমাদের জনগণকে আরো বলিষ্ঠভাবে সংগঠিত করুন।
খ)বাংলাদেশে চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে গণ র্যালী,মিটিং,সমাবেশ জনসাধারণ্যে প্রচার এবং অন্য যা কিছু সম্ভব এসবের মাধ্যমে আমেরিকাতে জনমত সৃষ্টি করুন
গ)অর্থ সংগ্রহ সচল ও সমন্বিত করুন এবং ত্রাণ সামগ্রী যেমন খাদ্য শস্য ,ঔষুধ শীতবস্ত্র ইত্যাদি সুবিধাজনক ব্যাবধানে পাঠানোর ব্যাবস্থা করুন।পরবর্তি নির্দেশনা সহ এই অর্থ তহবিলের ব্যাবহার প্রসঙ্গে যথাসময়ে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে।ইতোমধ্যে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় জনাব হুসাইন এবং জনাব ইসলামের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঘ) ইন্টারন্যাশনাল রেড ক্রস এবং এমন অন্যান্য জনহিতকর সংস্থাগুলোর কাছে ত্রান,সাহায্য এবং সকল ধরনের সহযোগিতার জন্য যান।
ঙ)জাতিসংঘে আমাদের বিশিষ্ট প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সায়ীদ চৌধুরীকে সহযোগিতা করুন এবং যতটুক সম্ভব তার কাছে সাহায্য পৌঁছে দিন।
চিঠিপত্র আদান প্রদানের জন্য , বাংলাদেশ ডিপলোমেটিক মিসন,৯,সার্কাস এভিনিউ, কলকাতা-১৭ এই ঠিকানা ব্যাবহার করা এ সময়ের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক হবে।
আপনার একান্ত আন্তরিক , এসডি/- মন্ত্রী , পররাষ্ট্র ।।
<৪,১৩৩,২৪৪-২৪৬>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৩। প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের বক্তব্য | ইস্ট পাকিস্তান লীগের দলিলপত্র | ২৬ এপ্রিল, ১৯৭১ |
এপ্রিল ২৬,-১৯৭১
বিজ্ঞপ্তি নং-২
আমাদের সরকারের সাথে বাংলাদেশে যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে এবং আমরা নিশ্চিত হবার জন্য খোঁজ সম্পন্ন করার বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছি।আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ,জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ, ইচ্ছা পোষণ করেন বাঙালি সম্প্রদায়কে বিদেশে সংগ্রামের দুটি দিকে মনোযোগী হউয়ার, আক্রমণকারীদের বিপক্ষে;অর্থ উত্তোলন এবং কূটনৈতিক চাপ।
অর্থ উত্তোলনঃ প্রধান মন্ত্রী বিদেশে উত্তোলিত অর্থ দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে চেয়েছেন।এই বিষয়গুলোর মধ্যে কিছু বিষয় বর্তমানে প্রকাশের প্রয়োজন নেই।অন্য বিষয়গুলো হল ঔষুধ সরবরাহ , বস্ত্রের কিছু বিষয় ইত্যাদি । এই অর্থ আরো ব্যাবহৃত হত বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক দিককে সাহায্য করতে।
দুটি ভিন্ন উদ্দেশ্যে অর্থ উত্তোলন করা উচিত ছিল। বাংলাদেশের আমেরিকান বন্ধুদের দ্বারা অর্থ উত্তোলন এবং ত্রাণ সরবরাহের জন্য বিভিন্ন গির্জা প্রতিষ্ঠান কে পরিষ্কাররুপে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা উচিত।
আমরা যতদূর ধারনা করি যে আক্রমণকারী পাকিস্তানী সৈন্য ২০০০ গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছিলো , ১০ লাখ মানুষকে বাস্তুহারা করেছিলো। নিরাপত্তা যুক্ত আশ্রয়ের জন্য পাচ লাখ মানুষ রিফিউজি হয়ে ভারতে পাড়ি জমিয়েছিল। আমাদের ভারতে রিফিউজি মানুষদের এবং বাংলাদেশে বাস্তুহারা মানুষদের উভয়কেই সাহায্য করতে হবে। বাংলাদেশের বাস্তুহারা মানুষদের সাহায্যের জন্য আমাদের বন্দোবস্তের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং অপর একটি বিজ্ঞপ্তিতে আপনাদের অবগত করানো হবে।
বাংলাদেশ সরকারের সাহায্যের জন্য অর্থ উত্তোলন বাংলাদেশ ফান্ড নামে জমা করা উচিত ছিল (যেমনটা বিজ্ঞপ্তি নং১ এ অবগত করা হয়েছিলো)। উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের প্রতিনিধির নিকট সরাসরি ব্যাক্তিগত দানগুলো করা যাবে। এই প্রতিনিধি পরবর্তী ২ সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য আমাদের বাঙ্গালিদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ সহযোগিতা আহবান করতে হবে। আমাদের ভাই ও বোনেরা চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। কমপক্ষে এতটুক আমরা করতে পারি। আমাদের কিছু আরাম স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে তাদের সাথে না হয় একটু কষ্ট করলাম।
কূটনৈতিক প্রচারণাঃ কলকাতায় জনাব হোসেইন আলির ঘোষণা আমাদের কূটনৈতিক প্রচারণার উন্নতির জন্য দারুন ফলপ্রসূ হয়েছে। ‘তাঁর ঠিকানা নিচে দেওয়া হলঃদয়াকরে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া তাকে লিখবেন না। বাংলাদেশের প্রধান কূটনৈতিক মিশনের দায়িত্বে থাকায় তারা খুব ই ব্যাস্ত। যাই হোক একটি অভিনন্দন পত্র জনাব আলি এবং তাঁর সহকর্মীদের অবশ্যই অনুপ্রেরণা যোগাবে ।
টেলিগ্রাফ ঠিকানাটি বাংলাদেশ.কলকাতা ।
—————————————————————————————————————————————–*জনাব হোসেইন আলি
ভারতস্থ বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি
বাংলাদেশ মিশন
৯ সার্কাস এভিনিউ
কলকাতা-১৭,ভারত।
আশা রাখছি আমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বিচারপতি আবু সায়ীদ চৌধুরী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জাতিসংঘের পূর্বে নিউইয়র্ক আসবেন। খুব শিঘ্রই তাঁদের এখানে আসার সঠিক তারিখ জানা যাবে। আমরা একটা বড় পরিসরকে ফোনের মাধ্যমে জানিয়ে দিব। আমরা আশা করি সেই বড় পরিসর ছোট ছোট গ্রুপ গুলোকে জানিয়ে দিবে। বিচারপতি এ.এস চৌধুরীকে স্বাগতম এবং সহযোগিতা করতে একটি বড় জনসমাগম আশা করা হচ্ছে । তাঁর নিউইয়র্ক পরিদর্শনের সময় প্রত্যেক দল থেকেই কমপক্ষে একজন পাঠানো উচিত।
আমরা প্রতিনিয়ত সিনেটর এবং কংগ্রেস ম্যান দের চিঠি লিখছি । আমেরিকানদের চিঠি এক্ষেত্রে বেশি ফলদায়ক । দয়াকরে জনমতগঠনের প্রচার বন্ধ করবেন না।
বাংলাদেশের খবরঃ বাংলাদেশ সরকারের লোকদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা নিম্নোক্ত উন্নতির খবর জেনেছিঃ
ক) ঢাকার বাইরের সকল বেসামরিক কর্মচারী মুক্তিফৌজে যোগদান করেছে এবং অনেক জরুরী অবস্থায় ডেপুটি কমিশনার এবং এসডিও রা প্রতিরোধ আন্দোলন চালিয়েছে ।ঢাকার বাইরে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী কর্মচারী বাংলাদেশ সরকারে যোগ দিয়েছে ।ঢাকার সরকারী কার্যালয়ের প্রায় সকল ২য়,৩য় এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী তাদের নিজ গ্রামে এবং শহরে চলে গিয়েছে এবং মুক্তিফৌজে যোগদান করেছে।ঢাকার বাকি কর্মকর্তা দের রক্ষীবাহিনী দ্বারা তাদের অফিস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।এটি সশস্ত্র আক্রমণকারীদের জন্য প্রয়োজন যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রত্যেকটা সুযোগে মানুষেরা খুব দ্রুত এবং সাবধানতার সাথে ঢাকার বাইরে চলে যাচ্ছে,এর কারন শহরে তারা এবং তাদের সম্পদের সম্পূর্ণ অনিরাপত্তা। মিরপুর এবং মোহাম্মদপুরের বিহারীরা ধানমণ্ডির বেশির ভাগ বাড়িই দখল করে নিয়েছে এবং বিনা বাঁধায় লুট করে চলছে। “মুসলিম” বিহারীরা ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গায়(সৈয়দপুর, লালমনিরহাট ইত্যাদি ) বন্দুক বিতরণ করেছে এবং স্থানীয় লোকদের বিপক্ষে লুটতারাজের উদ্দেশ্যে দল গঠন করেছে। অন্যান্য অবাঙালিরা , যেমন গারো এবং সাঁওতাল , পশ্চিম পাকিস্তানি আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। বেশিরভাগ উপজাতি জনগণই খ্রিষ্টান এবং,হিন্দুদের মত তারাও ধরা পড়া মাত্রই পশ্চিম পাকিস্তানি দ্বারা হত্যা হবার মত বিপদে আছে।
খ) অনেক লোকই বাংলাদেশের যুদ্ধে সাহায্যের জন্য যোগদান করেছে। দুর্ভাগ্যবশত তাদের বেশিরভাগেরই এ ব্যাপারে দক্ষতা নেই যেটা অতীব প্রয়োজনীয় । মন্ত্রীপরিষদ আমাদের দূত কে বলেছেন তাদের কি কি প্রয়োজন –
- i) রেডিও/তড়িৎ প্রকৌশলী এবং মিস্ত্রী
- ii) ইউওটিসি/সেনাবিহিনী/পুলিশ ট্রেনিং আছে এমন ব্যাক্তি ,
iii) সব ধরনের বেসামরিক কর্মচারী
- iv) যন্ত্র প্রকৌশলী এবং মিস্ত্রী
- v) চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত সেবিকা
বাংলাদেশে যে কেও কাজ করতে ইচ্ছুক হলে বাংলাদেশ মিশন,কলকাতার সাথে যোগাযোগ করা উচিত, যতক্ষণ পর্যন্ত না যুক্তরাষ্ট্রেও একটি মিশন খোলা হয় ।।
গ) বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরে বসে , যেটা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় নয় । মুজিবনগর যে কোন জায়গায় মন্ত্রীপরিষদ সাক্ষাত করে ।।এটি ছিল সঠিক স্থানে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর নাপাম-বোম্বিং রোধ করার জন্য।যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা বিমানধ্বংসী সক্ষমতা অর্জন করেছি রাজধানী অস্থিতিশীল রাখতে হবে । যাই হোক , যদিও বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দেশের বেশির ভাগ জায়গা দখলে রাখতে অক্ষম।
তারা ১০০০ কিংবা তার ও বেশি অস্ত্রসজ্জিত গাড়ি এবং ট্যাঙ্ক নিয়ে চলাচল করছে ।এছাড়া অন্যদিকে সারি সারি গ্রাম পুড়ে গেছে ,শহরগুলো ক্ষুদ্র কামান এবং বোমা বর্ষণ, কামানের গোলাবর্ষণ এবং নাপাম বোমায় ছেয়ে গেছে । লুটেরার দল সবকিছু ধ্বংস করে অথবা লুট করে। যাই হোক , তারা আর চালিয়ে যেতে পারছে না। উদাহরণস্বরূপ তারা ঈশ্বরদী থেকে কুষ্টিয়া,চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের দিকে অগ্রসর হয়েছিলো। কিন্তু তারা এখন ভেড়ামারা এসে থেমে গিয়েছে।তাদের সৈন্য পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য সমস্যা হচ্ছে এবং তারা কামানবাহিনী কিংবা বিমান সহযোগিতা ছাড়া অভিযান চালাতে ভয় পায়। পাকিস্তানি সৈন্যদলের শক্তি মুক্তি ফৌজের কাছে বিধ্বস্ত হতে বাধ্য হচ্ছে এবং এটি তাদের যুদ্ধকৌশল বড় আকারে কিন্তু ক্ষণস্থায়ী শক্তিতে পরিবর্তন করাচ্ছে।মুক্তিফৌজরাও তাদের রণকৌশল পরিবর্তন করেছে । তারা প্রথম দিকে গতানুগতিকভাবেই বাঁধা দিয়েছিলো কিন্তু তাদের বর্ম সহ সাঁজোয়া রণতরী,বড় কামান এবং বিমান বাহিনী না থাকায় বেশি ক্ষতি হচ্ছিল। তারা এখন নিজেদের যুদ্ধ পদ্ধতিকে ভালো সাফল্যের সাথে গেরিলা পদ্ধতির যুদ্ধে পরিবর্তন করেছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সরবরাহের জায়গা বাজে ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশের কোথাও ট্রেন চলাচল করছে না।অচল হয়ে গেছে চট্টগ্রাম বন্দর।বর্ষার আগমনের শুরুতে এবং পাকিস্তানের আর্থিক অবস্থা পতন , সাথে যুক্ত হবে বৃহৎ মুক্তিফৌজের ট্রেনিং এবং অস্ত্রশস্ত্র , পরবর্তী কিছু মাসের মধ্যেই আমাদের বিপরীত সামরিক অবস্থা লক্ষ করা উচিত হবে।
জয় বাংলা !
——————————————————————–<৪,১৩৪,২৪৭-২৪৮>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৪। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার আবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | ২৭ এপ্রিল, ১৯৭১ |
যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানিত কংগ্রেস সদস্যদের প্রতি
পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মত ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে প্রাদেশিক এবং জাতীয় স্তরে মুক্ত এবং বৈধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি সংবিধানসিদ্ধ বিধানসভা গঠন করা এবং গণতন্ত্র (যা ১৯৫৮ সাল থেকে এদেশে অনুপস্থিত) পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি জাতীয় কাঠামো গঠন করাই ছিল জাতীয় নির্বাচনের উদ্দেশ্য। পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) এর জনগণ আওয়ামী লীগের প্রতি তাদের বিষ্ময়কর সমর্থন জুগিয়েছে (বিধানসভায় ১৬৯ এর ভিতর ১৬৭ টি আসন)। শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে দলটি বিধানসভা গঠনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের প্রদেশগুলোতে সায়ত্ত্বশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এর বাসিন্দাদের প্রতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটবে। এছাড়া এই অসাধারণ সমর্থনের ফলে আওয়ামী লীগ বিধান সভায় সংখ্যাধিক্য প্রতিষ্ঠা করেছে এবং নিয়মানুযায়ী তারা এখন নিজস্ব রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রবর্তন করতে সক্ষম। তথাপি সহিংসতা সংঘটনের দুই মাস পূর্বে এবং বিধানসভা বসার পূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমান প্রধান বিরোধী দলের নেতা জে, এ, ভূট্টো এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের সাথে ঐক্যমত্য স্থাপনের চেষ্টা করেন। কিন্তু, কোন পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ প্রদেশের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষার্থী এবং প্রধান রাজনীতিবিদদের ওপর পূর্বনির্ধারিত আক্রমণ দ্বারা আপস আলোচনার আকস্মিক সমাপ্তি ঘটানো হয়।
এক মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেছে, পাকিস্তান সরকার এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের অসাংঘর্ষিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে তাদের পাষন্ড সৈন্যদল ব্যবহার করে অবদমিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সৈন্যদল চিন্তাবহির্ভূতভাবে সকল বয়স এবং উভয় লিঙ্গের মানুষের ওপর আক্রমণ চালিয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটিয়েছে, যার সংখ্যা প্রায় ২০০,০০০ থেকে ১,০০০,০০০ এর মধ্যে। পাকিস্তানের সাথে আমেরিকার সৈন্যমৈত্রীর থেকে অর্জিত অস্ত্রগুলো আসল উদ্দেশ্যের বিপরীতে বিদেশী শত্রুর বিপক্ষে ব্যবহার না করে দেশীয় জনগণের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। সংঘটিত গণহত্যা সভ্য সমাজ কর্তৃক নির্ধারিত সাধারণ মানবাধিকার, বিশেষত জীবনযাপনের অধিকারকে লঙ্ঘন করেছে।
পাকিস্তানের সাথে আইটি৫ সৈন্যমৈত্রীর নীতি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র্ পরোক্ষভাবে এই মর্মান্তিক নিষ্ঠুরতা সংঘটনের ভাগীদার হিসেবে নজির প্রতিষ্ঠা করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা থেকে বিরত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যস্ততাকারী হিসেবে আশা করা যাচ্ছে ততক্ষণ কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ওই অঞ্চলে রক্তবন্যা থামিয়ে রাজনৈতিক ঐক্য গঠন করতে সহায়তা করবে এবং তা বাঙালীদের সমর্থনের দ্বারা উপযুক্ততা লাভ করবে।
পদক্ষেপগুলো নিম্নে বর্ণিত হল:
১। বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি প্রদান।
২। যতক্ষণ পর্যন্ত সব সংঘর্ষ স্থগিত করে বাঙালীদের বৈধ আকাঙ্ক্ষা মেনে নেয়া না হয় ততক্ষণ পাকিস্তানের প্রতি সকল আর্থিক এবং সৈন্য সাহায্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
৩। অন্যান্য রাষ্ট্র এবং সাহায্য সংস্থার সাথে যোগসূত্র রেখে জাতিসংঘের পদক্ষেপ গ্রহন এবং পাশবিকতায় আক্রান্তদের খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা। এছাড়া বাংলাদেশে আক্রান্ত এবং ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সরবরাহ নিশ্চিত করা।
৪। পাকিস্তান সরকারের প্রতি কূটনৈতিক পন্থায় অতিসত্ত্বর পাশবিকতা বন্ধের জন্য চাপ প্রয়োগ এবং বাঙালী জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদান।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এতদিন হয়ত আক্রমণের জন্য উচ্চ মহলের সাহায্য পেয়েছে, কিন্তু সাড়েসাত কোটি জনগণের বৈধ ইচ্ছা অবশ্যই বিজয়লাভ করবে। যদি এই সংঘর্ষ অতিসত্ত্বর থামানো যেত এবং বাঙালী জনগণের সমর্থনযোগ্য অধিকারগুলো স্বীকৃতি প্রদান করা যেত তবেই আমেরিকা প্রদত্ত সুবিধার সদ্ব্যবহার করা হত। নাহলে, স্থিতিশীল রাজ্যের প্রত্যাশা অস্তিত্বহীন এবং গণতান্ত্রিক আওয়ামী লীগের অধীনে বর্তমান বাংলাদেশের আন্দোলন আওয়ামী লীগ অথবা ভিত্তিগত বামপন্থীদের আন্দোলন বলে বিবেচিত হতে পারে।
এপ্রিল ২৭, ১৯৭১
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা
৩১১৭ ৭ম স্ট্রিট এন, ই
ওয়াশিংটন ডি, সি, ২০০১৭
টেলিফোন: ৪৩২-৮৭২৭
<৪,১৩৫,২৪৯-২৫০>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৫। প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগ সভাপতির বক্তব্য | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | ৩ মে, ১৯৭১ |
আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ, ইনক.
২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫।
৩ মে, ১৯৭১
প্রিয় বন্ধু,
আপনি সম্ভবত ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন যে, বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের সাথে সাক্ষাত এবং সেখানকার বর্তমান অবস্থার ওপর সরাসরি পর্যবেক্ষণের জন্য ‘আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ, নিউ ইয়র্ক’ থেকে দুজন প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। তাদের ভিতর একজন প্রতিনিধি, জনাব মাহবুব হুসাইন বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা নিয়ে মাত্রই ফিরে এসেছেন। জনাব হুসাইন গতকালের দলীয় সভার ওপর একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পেশ করেছেন। জনাব হুসাইন উল্লেখ করেছেন যে, দেশটি গেরিলা কৌশলে পারদর্শী হয়ে উঠছে এবং বর্তমানে দেশের একটি বড় এলাকা স্বাধীনতাকামী সৈন্যদলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, শত্রুপক্ষের সৈন্যদল দূর থেকে ভারী গোলাবর্ষণ, এলাকাভিত্তিক গোলাবর্ষণ ও বোমাবাজির পন্থা অবলম্বন করছে।এর ফলে অসহায় বাঙালী শরণার্থীর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষ নাগাদ প্রায় ২৫ লক্ষ বাঙালী শরণার্থী সীমানা পেরিয়ে ভারতে অবস্থান নিয়েছে। শত্রুপক্ষকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে গেরিলা আক্রমণ অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সরকার পাকিস্তানের সাবেক সরকারী চাকুরীজীবি এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সচিব দফতর গঠন করেছে। জাতীয় এবং প্রাদেশিক সংসদের সদস্য, শিক্ষক এবং ছাত্রনেতাদের নিয়ে জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তি ফৌজ (স্বাধীনতাকামী সৈন্যদল) এর প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের কাজটি সমন্বয়ের জন্য একটি উচ্চ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা গঠন করা হয়েছে। আমরা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সহায়তা করার প্রস্তাব দিচ্ছি।
আমরা ২২ এপ্রিল, ১৯৭১ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মুস্তাক আহমেদের কাছ থেকে পাওয়া একটি চিঠির প্রতিলিপি আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য সংযুক্ত করছি। পররাষ্ট্র মন্ত্রী দলটিকে আমেরিকায় অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের সংঘবদ্ধ করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন এবং আমাদের অর্থসাহায্য ও খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদি ত্রাণ সংগ্রহ, সমন্বয় এবং সরবরাহের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন।
আমরা আপনাকে অবগত করার সুযোগ পেয়ে খুশি যে, বাংলাদেশ সরকার নিউ ইয়র্কে পাকিস্তানের সাবেক সহকারী উপদেষ্টা জনাব এ, এইচ, মাহমুদ আলীকে অত্র এলাকায় বাংলাদেশ মিশন স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছেন। জনাব আলী বর্তমানে মিশন প্রতিষ্ঠা নিয়ে ব্যস্ত।
বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক্, টেলিযোগাযোগ, মুক্তিযুদ্ধ, গণমাধ্যম এবং সম্প্রচার ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষ লোকবল সরবরাহের জন্য অনুরোধ করেছে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের বিশেষ জরুরী মন্তব্য আমাদের অফিস থেকে অর্থসাহায্যের বিনিময়ে সরবরাহ করা হচ্ছে।
জয় বাংলা!
আপনার একান্ত
এসডি
(কাজী এস, আহমেদ)
সভাপতি
<৪,১৩৬,২৫১>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৬। প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি আমেরিকাস্থ ইস্ট পাকিস্তান লীগের সম্পাদকের বক্তব্য | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | ৩ মে, ১৯৭১ |
আমেরিকাস্থ পূর্ব পাকিস্তান লীগ, ইনক.
২৬৬৭ ব্রডওয়ে, নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫।
৩ মে, ১৯৭১
প্রিয় বন্ধু,
দয়া করে অবগত হবেন যে, দলের বার্ষিক সাধারণ আলোচনা সভা নিউ ইয়র্ক মহানগর এলাকার সন্নিকটেই কোথাও অনুষ্ঠিত হবে। যথার্থ সময় এবং তারিখ পরে জানানো হবে। আমেরিকা এবং কানাডায় অবস্থিত সকল বাঙালীকে আমরা সভায় আসার জন্য বার্তা পাঠাচ্ছি। এ ব্যাপারে আপনার সাড়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আপনি সভায় উপস্থিত থাকবেন কিনা সেটা জানাও জরুরী। আমাদের সেই অনুযায়ী আয়োজন করতে হবে।
ওইদিন কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সভাপতি, সহ-সভাপতি, সম্পাদক, সহ সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, সংস্কৃতি এবং সামাজিক বিভাগের সভাপতি, সদস্য এবং জনসম্পর্ক বিভাগের সভাপতি, সম্পাদনা বিভাগের সভাপতি ও সদস্য (৬ জনের অধিক নয়) ইত্যাদি পদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হবে।
এই উদ্দেশ্যে একটি মনোনয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। দয়া করে ১০ জুন, ১৯৭১ তারিখের আগে আপনার মনোনয়ন জনাব এ, কে, এম, শাহাদাত হুসাইনের কাছে দাখিল করবেন। দয়া করে খেয়াল রাখবেন, মনোনয়নকারী এবং মনোনীত ব্যক্তি উভয়কেই ই, পি, এল, এ অথবা এর মনোনীত বিভাগের সদস্য হতে হবে।
দয়া করে নিম্নোল্লিখিত দুটি জরুরী তথ্য লক্ষ্য করবেন:
১। ২ মে, ১৯৭১ তারিখে ১৪৫ ব্লিকার স্ট্রিট এ হয়ে যাওয়া সাধারণ সভায় ই, পি, এল, এ থেকে নাম বদলে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা ইনক. করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাবনা গৃহীত হয়েছে। যদিও আইনি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এবং আলবেনীর প্রাদেশিক সরকার কর্তৃক নাম অনুমোদিত হওয়ার আগপর্যন্ত সকল হিসাব ও নথির কাজবর্তমান নাম অনুযায়ীই সম্পন্ন করা হবে।
২। যারা বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে জানতে চেষ্টা করছেন তাদের সুবিধার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমাদের সরকারের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার থেকে একজন গোয়েন্দা নির্দেশনা সহকারে ফিরে এসেছেন। সকল স্থানীয় সভার উদ্দেশ্যে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
আমাদের সরকারের অনুরোধ অনুসারে সাহায্য সরবরাহের জন্য খুব জরুরীভাবে অর্থসাহায্য দরকার। দয়া করে আমাদের বার্তায় সাড়া দিন এবং আমাদের সাহায্য করুন।
মনোনয়নের জন্য যোগাযোগ:
জনাব এ, কে, এম, শাহাদাত হুসাইন
৩৯৭ অষ্টম এভিনিউ, নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০০১
ফোন: ৮৬৮-৯৭৯৪
আপনার একান্ত
এসডি
(ফায়জুর রহমান)
সম্পাদক
<৪,১৩৭,২৫২>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৭। আমেরিকাস্থ বাংলাদেশ লীগের সদস্যভুক্তির ফরম | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | মে, ১৯৭১ |
সদস্যভুক্তির ফরম
বরাবর
সম্পাদক
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা ইনক.
বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডি, সি
মহাশয়,
আমি জনাব/জনাবা ……………………………………………………………………………………
আপনার সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করছি। আমি সংস্থার গঠনতন্ত্র মেনে চলব এবং আমার সাধ্যানুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের চেষ্টা করব।
আমার সদস্যপদ ফি ২ ডলার সংযোজিত হল।
আপনার একান্ত
…………………………
স্বাক্ষর
মেইল ঠিকানা:
রাস্তা :
অ্যাপার্টমেন্ট:
শহর:
রাজ্য:
জিপ কোড:
নোট: চেক বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকায় পরিশোধযোগ্য হতে হবে।
<৪,১৩৮,২৫৩-২৫৪>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৮। আমেরিকার প্রবাসী বাঙালীদের প্রতি সর্বাত্মক সহযোগীতার আহবান | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | ১৩ মে, ১৯৭১ |
ওয়াশিংটন অধ্যায়
সুধী,
আমাদের সোনার বাংলা আজ জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে বর্বর পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যের ট্যাংকের আঘাতে। আমাদের ভায়েরা আজ বিকৃতদেহ বোমার আগুনে, আমাদেস মা-বোন ধর্ষিত হচ্ছে নৃশংস, পশুসম পাঞ্জাবী সৈন্যের হাতে। আমার সোনার দেশের মানুষ আজ হীনতম পশুর চেয়েও জঘন্য অবস্থায় জীবন কাটাচ্ছে- কুকুর-বেড়ালের মত তাদের রাস্তায় গুলি করে মারছে। শকুন-চিল তাদের মাংস ছিড়ে খাচ্ছে বাংলাদেশের পথে ঘাটে।
আমাদের কি অপরাধ? আমাদের অপরাধ বিদেশী শোষকদের শোষণে অত্যাচারিত মাতৃভূমিকে আমরা মুক্ত করতে চেয়েছি। আমরা চেয়েছি বাংলাদেশের নিবন্ন চাষী-মজুরদের মুখে খাবার দিতে, আমরা চেয়েছি শিক্ষাবঞ্চিত, চিকিৎসাবঞ্চিত বাংলাদেশের মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি। আমাদের যা নায্য পাওনা, আমাদের রক্ত জল করা সেই পাটের পয়সা- আমরা চেয়েছি আমার দেশের মানুষের উন্নয়নে তা ব্যয় হোক। আমরা চেয়েছি গত তেইশ বছর ধরে ধর্মের নামে, ইসলামের নামে পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ আমাদের আর্থিক জীবনকে পঙ্গু করে দেয়ার যে চক্রান্ত চালিয়েছে তার অবসান।
আমাদের এই গণতান্ত্রিক অধিকারের জবাবে আজ তারা। পূর্ব বাংলায় ধ্বংসের তান্ডবলীলা চালিয়েছে। গ্রাম, শহর, গঞ্জ আজ ধ্বংসস্তূপ। সাধারণ মানুষ, শ্রমিক, চাষী, সরকারী কর্মচারী, ছাত্র, শিল্পী, অধ্যাপক- সমস্ত বাঙালীকে হত্যা, করে বাঙালীকে একটা জাতি হিসাবে পৃথিবীতে মাথা তুলে দাঁড়াতে না দেয়া হচ্ছে ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্রের পরিকল্পনা। পৃথিবীর ইতিহাসে নৃসংশতার, বর্বরতার এমন দৃষ্টান্ত মেলা ভার।
কিন্তু ইয়াহিয়া-ভুট্টো চক্র একথা জানে না যে এই বাংলাদেশ একদিন খুদিরামের জন্ম দিয়েছিল, এই বাংলাদেশ জন্ম দিয়েছিল সূর্যসেনের, এই বাংলাদেশ জন্ম দিয়েছে বরকত-সালামের। আজ বাংলার ঘরে ঘরে ক্ষুদিরাম, ঘরে ঘরে বরকত-সালাম। যদি প্রয়োজন হয় সাতকোটি বাঙালীর জীবন দিয়ে হলেও আমরা স্বাধীনতা অর্জন করবো। আজ আমাদের দেশ যদি স্বাধীনতা লাভ না করে, আমাদের জন্মভূমিতে যদি আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারি, পৃথিবীর বুক হতে বাঙালী জাতি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাহলে আমাদের বেঁচে থাকার কি প্রয়োজন, কি প্রয়োজন আমাদের সম্পদে, পরদেশের জৌলুসে? আমাদের ব্যক্তিগত বৈভব, আমাদের শিক্ষা কোন স্বর্গ উদ্ধার করবে, আমাদের মাতৃভূমি যদি দলিত-মথিত হয় শত্রুর পদতলে?
বাংলার মানুষের আজ চরম পরীক্ষার দিন। আমরা যারা বিদেশে আছি, যারা বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করতে পারছি না, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে জীবন দিতে পারছি না মাতৃভূমির কলঙ্ক মোচনের জন্য, আসুন আমরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমাদের জীবনপণ করি এই স্বাধীনতা সংগ্রামে জয়ী হওয়ার জন্য। আজ প্রয়োজন আমাদের সমগ্র প্রচেষ্টা একত্রিত করা- যারা শত্রুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করছে তাদের সর্বাত্মক সাহায্য দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা (যা পূর্ব পূর্ব পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা নামে পরিচিত ছিল) অত্তর আমেরিকার বাঙালীদের প্রতিষ্ঠান হিসামে সুবিদিত। দীর্ঘদিন ধরে এই প্রতিষ্ঠান পূর্ব বাংলার স্বাধিকারের জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এই সংগঠন কোন বিশেষ রাজনৈতিক মুখপত্র নয়। যে কোন বাঙালী তার দেশকে ভালবাসে, যে কোন বাঙালী স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে চায়, এই প্রতিষ্ঠান তার জন্য। আমাদের একান্ত অনুরোধ, এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিন এবং বিদেশ থেকেও কিভাবে আমরা আমাদের আজকের জীবণ-মরণ সংগ্রামে সাহায্য করতে পারি, সে বিষয়ে আপনাদের অভিমত অন্য সবাইকে জানান।
আজ বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার একটাই মাত্র লক্ষ্য- মাতৃভূমির স্বাধীনতা।
জয় বাংলা।
মে ১০, ১৯৭১।
মহসীন রেজা সিদ্দীক
সম্পাদক, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা,
ওয়াশিংটন ডিসি শাখা।
_______________________________________________________________
<৪,১৩৯,২৫৫>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৩৯। বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | মে, ১৯৭১ |
বাংলাদেশের ৭ কোটি ৫০ লক্ষ জনগণের যুক্তি
সামরিক একনায়কইয়াহিয়া খান পরিচালিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্বারা বাংলাদেশে (ভূতপূর্ব পূর্ব পাকিস্তান) সংঘটিতবৃহত্তম মানব সৃষ্ট বিপর্যয়ের ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয় শুনেছেন।পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা নির্বিচারে হাজার হাজার নিরস্ত্র নিষ্পাপ জনগণকে হত্যা করেছে এবং বড় পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, চিকিৎসক, প্রকৌশলী এবং রাজনৈতিক নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছে।
পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচনের ফলাফলের এমন সাড়াই এই গণহত্যার কারণ; বাংলাদেশের জনগণের অধিকার রক্ষা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়াঅভিভূতভাবে জনপ্রিয় বিজয়ী প্রতিনিধিদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রত্যুত্তর এটি।
এমনকি পাকিস্তান গঠনের সময়, যুক্তরাষ্ট্র সম্পূর্ণ পাকিস্তানের উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক সাহায্য এবং বামপন্থী আগ্রাসন থেকে দেশকে রক্ষার্থে সামরিক সাহায্য সরবরাহ করেছে। যখন বাংলাদেশের জনগণঅর্থনৈতিক সাহায্য বণ্টনের স্বাধীনতা চেয়েছিলো, যা বহুবছর যাবত পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনস্থ কেন্দ্রীয় সরকার দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো, তাঁদের একত্রে নির্মূল করতে প্রতিষ্ঠিত সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশে আতঙ্কের শাসনামল অটল আছে। হাজার হাজার জনগণ তাঁদের জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশীদেশ ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। আর যারা সৈন্যদের গুলি থেকে বেঁচে গিয়েছে তারা খাদ্যের অভাবে মৃত্যুর মতবিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। বিস্তৃতভাবেগুটিবসন্ত এবং কলেরার ব্যাপারও লক্ষ করা গিয়েছে।
বাংলাদেশের জনগণ বেঁচে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে যুদ্ধ করছে। এসব কারণে নাগরিক সমাজের প্রত্যেকটি শান্তিপ্রিয়সদস্যদের থেকে তাঁদের সাহায্য ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আপনাদের কাছে আরও আহ্বান করি বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভোগ নিরসনে উদার সাহায্যের জন্য।
বাংলাদেশকে সাহায্য করতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বাঙালিরা তাঁদের নিজেদেরকেসংঘবদ্ধ করেছে।আমরা, পিটসবার্গ এর ইস্ট বেঙ্গলিকমিউনিটির পক্ষে, আপনাদেরনিকট আবেদন করি যে যতক্ষণ পর্যন্ত না সামরিক শাসকরা তাঁদের নিষ্ঠুর শাসন বন্ধ করে এবং একটি গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়; ততক্ষন পর্যন্ত অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তা উভয়ই বন্ধ করতে আপনি আপনার সিনেটর, ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং বিশ্ব ব্যাংককে চিঠি এবং টেলিগ্রামের মাধ্যমে আপনার মত জানান।
ডঃ আয়ুব ইকবাল, ৫২১৭ ফিফথ এভিনিউ, পিটসবার্ঘ, পেনসিলভানিয়া ১৫২৩২ এই ঠিকানায়মেইলের মাধ্যমে চেক পাঠিয়ে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকায় দান করতে পারেন। আরো তথ্যেরজন্য কল করুন ৩৬৩-২২২৩ অথবা ৬৮৩-৩১৪৬।
<৪,১৪০,২৫৬>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪০। বাংলাদেশে গণহত্যার প্রতিবাদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন দানের জন্য আবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার প্রচারপত্র |
মে, ১৯৭১ |
নীরবতা যখন লজ্জার হয়ে উঠে
একজনকে অবশ্যই মুখ খুলতে হয়!
বাংলাদেশে গণহত্যা
আপনার রাষ্ট্র থেকে প্রদানকৃত অস্ত্র দ্বারা পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী অকারণে বর্বরোচিতভাবে প্রায় ২০০০০০ অসহায় মানুষকে হত্যা করেছিলো।
অধ্যাপক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ছাত্রদেরকে তাঁদের নিজ গৃহে হত্যা করা হয়েছিলো।
ইউ এস হতে সরবরাহকৃত ট্যাঙ্ক দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়েছিলো।
নগর এবং শহরগুলোতে বোমা বিস্ফোরণ করা হয়েছিলো; গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
– দয়া করে বাংলাদেশে সংঘটিত সামরিক নৃশংসতার নিন্দা জানান। – দয়া করে পাকিস্তানি একনায়কতান্রিক সরকারকে ইউ.এস. হতে সহযোগিতা প্রদানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আওয়াজ তুলুন।
-দয়াকরে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার দান এখানে পাঠানঃ-
আমেরিকান লীগ অব বাংলাদেশ ৪১৬ সিঙ্কলেয়ার এভিনিউ গ্লেন্ডেল। সিএ. ৯১২০৬
-আপনার সাহায্য দুর্ভোগে ভুক্তভোগীদের কাছে পাঠানো হবে ।
<৪,১৪১,২৫৭-২৫৯>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪১। ক্যালিফোর্নিয়ায় আমেরিকান লীগ অব বাংলাদেশের তৎপরতা সম্পর্কে প্রতিবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র |
মে, ১৯৭১ |
আমেরিকান লীগ অব বাংলাদেশ
৪১৬, সিঙ্কলেয়ার এভিনিউ
গ্লেন্ডেল। ক্যালিফোর্নিয়া-৯১২০৬
ইউ.এস.এ.
টেলিফোনঃ (২১৩) ২৪৫-২৭০৯
প্রিয় জনাব মুহিথ, মে ১২, ১৯৭১
আপনার বিজ্ঞপ্তি নং২ যথাসময়েই পেয়েছি। যেহেতু আপনি অবহিত, পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলোতে আমাদেরকেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপার আমাদের এতটাই ব্যাস্ত রেখেছিল যে আমরা আপনাকে এতদিন লিখতে পারিনি।
আপনি যেহেতু আমাদের মূল সংস্থার নেতা, আমাদের সংস্থার উন্নয়নের জন্য ব্যবহৃত এখানে প্রস্তুতকৃতপ্র য়োজনীয় ব্যাপারগুলোর একটি কপি সাথে কিছু বাম্পারস্টিকার আমি আপনাকে সংগ্রথিত করছি।আমেরিকান লীগ অব বাংলাদেশের জন্য ক্যালিফোর্নিয়া এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে তে কাজের কতটুক অগ্রসর হয়েছে এ ব্যাপারে এটি আপনাকে একটি ধারনা দিবে।
আমাদের সংস্থার বাম্পার স্টিকার ধারনাটি লাভজনক হবে। এটি আমাদের অর্থ উত্তোলনে সহায়তা করবে এবং একই সময়ে একটি বিস্তৃত প্রচারণাও দিবে। একটি স্টিকারের জন্য ন্যূনতম দান হবে এক ডলার।আমি বিশ্বাস করি যে এ দেশের প্রায় যে কেওই কোন রকম কষ্ট ছাড়াই এক ডলার যোগাতে পারবে।আমি আশা করি এই ন্যূনতম কিংবা তার চেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহ করতে কারো কোন সমস্যা হবে না।
এ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ লোকদের অনেকগুলো সাড়ার মধ্যে, বাংলাদেশ সংক্রান্ত আমাদের কর্মীদের, ১৯৭২ সালের জন্য ইউ.এস. রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী, মেইনের সিনেটর এডমন্ড এস. মুস্কাই এর একটি চিঠির কপি এর সাথে আরও এই ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি এবং ইউ.এস. সিনেট কে উল্লেখ করে তার একটি বিবৃতির কপিও আমি আপনাকে পাঠাচ্ছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন বিশিষ্ট অধ্যাপকেরলেখা “কনফ্লিক্ট ইন ইস্ট পাকিস্তান” নামক একটি পুস্তিকার মুল্যবান কপিও পাঠানো হচ্ছে।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার পথনির্দেশের জন্য। জয় বাংলা।
আপনার একান্ত,
আমেরিকান লীগ অব বাংলাদেশ
এসডি/
(এস.এম.এস. দোহা)
সভাপতি
এডমন্ড এস. মুস্কাই
মেইন
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট
ওয়াশিংটন, ডি.সি. ২০৫১০
এপ্রিল ২৩, ১৯৭১
এস.এম.এস. দোহা, সভাপতি
বাংলা লীগ অব আমেরিকা
৪১৬ সিঙ্কলেয়ার এভিনিউ
গ্লেন্ডেল, ক্যালিফোর্নিয়া ৯১২০৬
প্রিয় জনাব দোহা,
পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা সংক্রান্ত আপনার মতামত প্রকাশের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।আমি এই ব্যপারে আপনার থেকে শুনে উপলব্ধি করি।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত হওয়া এই ট্র্যাজিক ঘটনার ব্যপারে আপনার উদ্বেগ আমি জানিয়েছি। আপনি এটা জানতে আগ্রহী হবেন যে আমি একটি একটি প্রস্তাবযোগ করেছি যেটিহল সংঘর্ষের পুনসমাধান না হওয়া পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানকে সামরিক সহযোগিতা সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখতে হবে। আমি আপনাকে আমার এই ব্যাপারের উপর সম্প্রতি দেওয়া একটি বিবৃতি কপি আপনাকে পাঠাচ্ছি, আমি আশা করি যেটি আপনার কাছে আগ্রহের হবে।
শুভ কামনা রইল।
একান্ত,
এডমন্ড এস.মুস্কাই।
সিনেটর যুক্তরাষ্ট্র।
মহাসভা সংক্রান্ত বিবরণ
৯২ কংগ্রেস এর সভার কার্যবিবরণী এবং আনুষ্ঠানিক আলোচনা, প্রথম পর্ব
ওয়াশিংটন, বুধবার, এপ্রিল ১৪, ১৯৭১।
ভল.১১৭. নং.৫১.
সিনেট
পূর্ব পাকিস্তান
জনাব প্রেসিডেন্ট মুস্কাই, পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমানে ঘটে যাওয়া ট্র্যাজিক ঘটনার উপর দৈনিক সংবাদপ্রতিবেদনগুলো আমি বাড়তি উদ্বেগ এবং আশঙ্কার সাথে পড়েছি। সাম্প্রতিক মাসগুলতে এই দুর্ভাগ্যজনক অঞ্চলে এটি ২য় বৃহত্তর প্রাণ হারানোর ঘটনা। যখন এই চিত্রটি পরিষ্কার ছিলো না, আমি বিশ্বাস করি যে এটি পরিষ্কার করতে প্রত্যেক দিকে এই ট্র্যাজেডি সম্পর্কে আরো যথেষ্ঠ তথ্য আছে যাতে উদ্বেগ গ্রস্থআমেরিকানদের মুখ খোলা উচিত।আমাদের অর্থনৈতিক সাহায্য এবং পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক এবং সামরিক উন্নতির মধ্যকার সম্পর্কআমার কাছে একটি উদ্বেগের ব্যাপার।
গত সপ্তাহে, এই ব্যাপারে, আমি এবং আমার সাথে মিন্নেসটার সিনেটর (জনাব মন্ডেল), ম্যাসাচুসেটসেরসিনেটর (জনাব ব্রুক), এবং অরেগনের সিনেটর (জনাব হ্যাটফিল্ড) রাষ্ট্রের সচিবের নিকট চিঠি পাঠিয়েছি।সেই চিঠিতে আমরা আমেরিকার সম্পৃক্ততার ব্যাপ্তি সম্পর্কে ব্যাখা দেওয়ার অনুরোধ করেছি, প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ, পাকিস্তানে হত্যাকাণ্ড এবং কোন্দলের। আমরা একটি উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছি।
নিউ জার্সির বিশিষ্ট প্রবীণ সিনেটর ( জনাব কেস) দ্বারা প্রস্তাবিত ইউ.এস. সামরিক বাহিনীর পাকিস্তানকেসহযোগিতার প্রস্তাব আমি সমর্থন করি। ১৯৫০ সালের মধ্যবর্তী সময় থেকে ইউ.এস. সরকার পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আছে।এরকম প্রতিবেদন আছে যে কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের শহর এবং গ্রামাঞ্চল উভয়তে ব্যবহৃতবিমান, ট্যাংকস, অস্ত্র, এবং অন্যান্য সামগ্রী আমেরিকা সরবরাহ করেছিলো।
জনাব সভাপতি, আমেরিকার জন্য সময় হয়েছে স্পষ্টভাবে এবং শীঘ্রই তাঁদের পাকিস্তান সরকারকে ধ্বংসাত্মক অস্ত্র সরবরাহেরপরিকল্পনা বাতিল করার । এই পরিস্থিতিতে অস্ত্রগুলো কেবল শুধু হত্যাকাণ্ড এবং দুশ্চিন্তা কে আরও উত্তেজিত করবে। পাকিস্তান সরকারকেসামরিক সহযোগিতা অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। ভারত এবং পাকিস্তানকে প্রাণঘাতী উপাদানগুলো বিক্রির উপর “ওয়ান-টাইম এক্সেপসন” ১৯৬৫ বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা, সম্মত হয়েছিলো ১৯৭০ এর অক্টোবরে, সাঁজোয়া কর্মী, জেট, এবং বি-৫৭ বোম্বারস এর সরবরাহ প্রস্তাবিত হয়েছিলো। এই সরবরাহ সম্পন্ন হওয়া উচিত হবে না।
এই বিশ্বের দুশ্চিন্তা এবং সংঘর্ষ কমাতে কাজ করার জন্য আমাদের একটি দায়িত্ব আছে। যেখানে আমরা নিজেদেরকেইন্দোচায়না সংঘর্ষ থেকে পৃথক হউয়ার জন্য উপায় খুঁজছি, সেখানে কি আমরা সামরিক সহযোগিতা দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দুশ্চিন্তা বাড়ানো মেনে নিতে পারি ?
আমি বলি আমাদের উচিত হবে না। আমি এই ব্যাপারের প্রস্তাব সমর্থন করি এবং ইহাকে সহযোগিতা করতে যোগদান করে আমি গর্বিত।
<৪,১৪২,২৬০-২৬৩>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪২। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার আহবান | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার মুখপত্র ‘বাংলাদেশ পত্র’ | ১৪ মে, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ পত্র
কলেজ স্টেশন,টেক্সাস প্রথম সংখ্যা ১৪ মে, ১৯৭১ _______________________________________________________________
স্বাধীনতার ডাকে
বাংলাদেশে আজ রক্তগঙ্গা বইছে। বাংগালির রক্তে হোলি খেলে পাঞ্জাবি দস্যুদল পৈশাচিক আনন্দে মত্ত। আমাদেরই ভাইবোনেরা যখন অত্যাচারীর খড়গ রুখে দাঁড়াতে গিয়ে নির্বিচারে জীবন বিলিয়ে দিতে দ্বিধা করছেন না, তখন মার্কিন দেশের বিলাষময় পরিবেশের মধ্যে থেকে দেশের জন্য আমরা কি করছি?! স্বাধীনতা আমরা পাবই, এ ব্যাপারে দ্বিমতের কোন অবকাশ নেই। তবে এ আন্দোলনে আমরা আমাদের দেশবাসীকে কতটুকুই বা সাহায্য করছি? ছিন্নবস্ত্রে, অনাহারে ও অন্নাভাবে থেকেও বাংলাদেশের বীর জনতা স্বৈরাচারী সাম্রাজ্যবাদের বেয়নেট ও শাসনকে ভূলুন্ঠিত করেছে। স্বাধীনতা সংগ্রামের এই সংকটময় মুহূর্তে দেশবাসীর জন্য আমরা কি আমাদের একটুকু আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিতে পেরেছি? হাজারো মানুষের রক্তের ঋণে গড়া এই সংগ্রামের ডাকে আমরা এককভাবে সাড়া দিতে না পারলে উত্তরসূরীরা আমাদেরকে ক্ষমা করবে না।
তাই আজ আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। আসুন, বাংলা মায়ের ডাকে সবাই একসাথে কাজ করে যাই। দলাদলি ও বিভেদ ভুলে গিয়ে মাত্র একটি লক্ষ্যে পৌঁছাবার জন্য আমাদেরকে আত্মোৎসর্গ করতে হবে।
করণিয় আমাদের অনেক। প্রচারকার্যে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র ও স্বাধিকার আদায়ে বাংলাদেশের বীর জনতার মহান আদর্শ ও আত্মত্যাগের সংগ্রাম বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রচারকার্যের এবং বাংলাদেশের দুর্গত মানবতার জন্য আর্থিক সাহায্যের একান্ত প্রয়োজন। এই মুহূর্তে আমাদের যথাসাধ্য সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত।
এই চরম সংকটকালে নির্বিকার হয়ে বসে থাকলে চলবে না। বিনা ত্যাগে স্বাধীনতার আকাঙ্খা করলে ভুল হবে। এ ভুল অমার্জনীয় অপরাধ। সংগ্রামহীন স্বাধীনতা লাভের নজীর ইতিহাসে নেই। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে গড়া এই মুক্তির সংগ্রামকে আমরা ব্যার্থ হতে দেব না। বাংলার জয় হবেই।
জয় বাংলা
কলেজ স্টেশনঃ আমাদের কর্মসূচী
গত নির্বাচনে অর্জিত গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ের জন্য মার্চ মাসের প্রথম ভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদেশব্যাপী এক অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনকে বানচাল করে দেবার জন্য পাঞ্জাবি সৈন্যরা নির্বিচারে গণহত্যা আরম্ভ করে। এই ঘটনার প্রথম থেকেই আমরা কলেজষ্টেশনের বাঙ্গালী ছাত্ররা ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের জন্য কাজ শুরু করি। প্রথমতঃ একটি সামরিক পরিষদ গঠন করা হয়। তারপর আজ (১৪’মে) মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের তিনজন সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ সংগ্রামী ছাত্র সংস্থার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। এছাড়াও অনেকে বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে স্বেচ্ছায় কাজে এগিয়ে আসেন।
পঁচিশে মার্চের আগে পর্যন্ত অনেকবার মার্কিন সিনেটর,প্রেসিডেন্ট নিক্সন, উথান্ট এবং বৃহৎ শক্তিবর্গের সরকার ও আরও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কাছে পত্র ও তার বার্তা পাঠানো হয়- বাংলাদেশের রক্তপাত বন্ধ করা ও জনগণের নির্বাচিত নেতাদের হাতে শাসনভার হস্তান্তর করার দাবি জানায়।
পঁচিশে মার্চের অপরিণামদর্শী ঘটনা আমাদেরকে সাময়িকভাবে স্তম্ভিত ও বিহবল করে। কিন্তু বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণার পরে পরেই পুরোদমে আমাদের প্রচারকার্য শুরু হয়। মাত্র এক ঘন্টার নোটিশে আমরা সকল সদস্য একটা জরুরী সভায় মিলিত হয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করি। দুর্গত মানবতার সেবায় ব্যায় করার জন্য মাথাপিছু কমপক্ষে একশত ডলার চাঁদা দেওয়ার প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে এ সভায় নেওয়া হয়। এ ছাড়া নিউইয়র্কে ব্যায় বহনের জন্য মাসিক চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম কিস্তিতে তিন হাজার ডলার তুলে নিউয়র্কে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষভাব উল্লেখযোগ্য এই যে অনেকে ব্যাংকে ধারের খাতার অংক বাড়িয়ে চাঁদা দিয়েছেন, অনেকে নির্ধারিত নিম্নমানের অনেক বেশী দিয়েছেন, এবং সকলেই যে কোন মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য সাধ্যমত সাহায্য করার অঙ্গীকার করেছেন।
ছাত্র হিসেবে টাকার অভাব থাকলেও,আমাদের কর্ম প্রেরণার অভাব নেই। কলেজস্টেশন থেকে এ পর্যন্ত বহুমুখী প্রচারকার্য চালিয়েছি তার মধ্যে নিম্নলিখিতগুলি উল্লেখযোগ্যঃ
-পঁচিশে মার্চের পরে একশো সিনেটর, জাতিসংঘ প্রধান এবং বৃহৎশক্তির রাষ্ট্রপ্রাধানগণের নিকট কয়েক দফা আবেদনপত্র ও তার বার্তা পাঠানো হয়। এখনও বিশেষ বিশেষ প্রয়োজনে তাঁদের নিকট পত্র ও বার্তা পাঠানো হচ্ছে।
-বাংলাদেশে স্বাধীনতা সংগ্রামে ও দুর্গত মানবতার সাহায্যের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন শহরের মার্কিন নাগরিকদের স্বাক্ষরসহ ১১ জন প্রভাবশালী সিনেটরের কাছে ১৫০০ আবেদন পত্র পাঠানো হয়েছে।
-টেক্সাস ও এন্ড ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র ও শিক্ষকদের মাঝে বাংলাদেশের সংগ্রামের সঠিক চিত্র তুলে ধরা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রত্যাগত অনেক শিক্ষক আমাদের বিশেষ সাহায্য করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সাথে দল বেঁধে দেখা করে এখানকার বাংলাদেশের দুর্গত ছাত্রদের জন্য আর্থিক সাহায্যের আশ্বাস পাওয়া গেছে।
-পাকিস্তানে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইউজিন লক ও প্রাক্তন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলের নেতা হ্যারল্ড উইলসনের সাথে যথাক্রমে ডালাস ও অষ্টিনে দেখা করে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করি এবং বাংলাদেশকে সাহায্য করার আবেদন জানাই।
-স্থানীয় বেতার, টিভি এবং দৈনিকে বাংলাদেশের উপর সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ করেছি। এছাড়া হিউস্টনে বাংলাদেশ ছাত্র সংস্থার আয়োজনে ওখানকার টিভি ও বেতারে একই রকম আলোচনা সভায় যোগ দিয়েছি।
-হারভার্ডের তিনজন বিশ্ববিখ্যাত অর্থনীতিবিদের “পূর্ব পাকিস্তানে সংঘর্ষঃ পটভূমি ও প্রত্যাশা” নামক নিরপেক্ষ রিপোর্ট খানির পাঁচশো কপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে এবং বিশ্বব্যাপী প্রচারের ব্যাবস্থা করা হয়েছে।
-এখানে ছাত্র-সিনেট বাংলাদেশের গণ-আন্দোলন দমনে পাকিস্তান সরকারের মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারকে নিন্দা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকাঃ
সংগঠন ও সংগ্রামের ইতিহাস
আমাদের কেন্দ্রীয় সংস্থা গড়ে ওঠার পিছনে রয়েছে বহুদিনের অক্লান্ত পরিশ্রম ও চেষ্টা। ১৯৪৭ সালে প্রবাসী সিলেটি ব্যবসায়ীরা নিউইয়র্কে পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা নামে বাঙ্গগালিদের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তোলেন। পরে এর নামকরণ হয় ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা। সদস্যসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে এই সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করা হয়। গত প্রলয়ঙ্কারি ঝড়ের পর এ সংস্থার সদস্যবর্গ পাক সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ, বাংলাদেশে রিলিফের জন্য চাঁদা সংগ্রহ ও বাংলা ছবি দেখানো জাতিসংঘের সম্মুখে বাংলাদেশকে আলাদা করার দাবি, একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপন, এছাড়া আরও বহুমুখী প্রচারকার্যে প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সংস্থার নাম বদলিয়ে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা করা হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের সাথে এর সরাসরি যোগাযোগও স্থাপিত হয়েছে।
শীঘ্রই কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মকর্তা নির্বাচিত হবে। এ ব্যাপারে সকল সদস্য সংস্থা ও মেম্বারদেরকে পূর্বভাবে কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুর রহমান বাংলাদেশ লীগকে আরও জোরদার করে গড়ে তোলার জন্য মার্কিন ও কানাডাবাসি সকল বাংগালির সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করেছেন।
কেন্দ্রীয় সংস্থার ঠিকানাঃ
ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা, ইঙ্ক,
২৬৬৭ ব্রডয়ে, নিউইয়র্ক ১০০২৫
ফোনঃ (২১২) ৮৬৬-৭৪৭৪
* * *
যোগাযোগের আবেদন
নিউইয়র্ক মূল কেন্দ্রকে সব রকমের সাহায্য ও সরাসরি যোগাযোগের জন্য সমস্ত আমেরিকা ও কানাডাকে কতগুলি উপকেন্দ্রে ভাগ করা হয়েছে। আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চলের ৯টি স্টেটের ভার আমরা কলেজস্টেশন, টেক্সাস-এ গ্রহণ করি। আমাদের এই আঞ্চলিক কেন্দ্রের নাম হবে- উপকেন্দ্রঃ দক্ষিণাঞ্চল।যে সমস্ত স্টেটে আমরা সদস্য শাখাগুলির সাথে একসঙ্গে কাজ করতে চাই সেগুলো হলঃ টেক্সাস, নিউমেক্সিকো, লুজিয়ানা, ওক্লাহোমা, আলবামা আরকানসা, মিসিসিপি, ফ্লোরিডা ও জর্জিয়া। এ সমস্ত স্টেটে বাংগালি ছাত্র ও চাকরিজীবি যারা আছেন তারা সবাই শীঘ্রই আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আপনার এলাকায় আপনি এক হলেও দেশের এই দুর্দিনে আপনার সাহায্য আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
আপনাদের নিজ নিজ এলাকায় বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার শাখা গঠন করুন এবং শীঘ্রই আমাদের উপকেন্দ্রে আপনাদের সংগ্রামী পরিষদ ও সদস্যদের ঠিকানা ও আপনাদের কার্যকলাপের বিবরণ পাঠান। আপনাদের খবর “বাংলাদেশ পত্রে’ ছাপা হবে।
আমরা যদি কোনভাবে আপনাদের সাহায্য করতে পারি, তবে জানাতে দ্বিধা করবেন না। আমরা আরও ফলপ্রসূভাবে কাজ করতে চাই। প্রচার কার্যে এবং নিউইয়র্কের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগে আমরা আপনাদেরকে সাহায্য করব। তবে চাঁদা পাঠানো ও যে কোন জরুরী কাজের জন্য আপনারা মূলকেন্দ্রের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।
একটি প্রস্তাব
আমাদের এই আঞ্চলিক কেন্দ্রে আরও সুষ্ঠুভাবে কার্য সমাধার জন্য সকল সদস্য শাখাকে নিয়ে শীঘ্রই একটা আনুষ্ঠানিক আঞ্চলিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এর মাধ্যমে আমাদের বর্তমান কর্মপ্রচেষ্টা এর জোরদার করা যায়। প্রচারকার্য, অর্থ সংগ্রহ, নিজেদের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার একটা নিয়মতান্ত্রিক ভিত্তি গঠন করাই আনুষ্ঠানিক সংগঠনের মূল লক্ষ্য হবে। ১৫’মে এক সাধারণ সভায় আমরা এই প্রস্তাব বিবেচনা করবো। এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত জানাবেন।
ভবিষ্যৎ কর্মসূচী
শীঘ্রই আমরা কলেজস্টেশন ও নিকটবর্তী শহরগুলোতে স্থানীয় মহলের কর্মকর্তাদের সাহায্যে চাঁদা সংগ্রহ অভিযান শুরু করব।
বাংলাদেশের উপর টেক্সাস ও এন্ড এম ইউনিভার্সিটিতে আলোচনা সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হচ্ছে।
পত্রপত্রিকা ও বিদেশী খবরের কাগজে বাংলাদেশের উপর রচনা ও সংবাদ ছাপাবার আরও জোরদার চেষ্টা চালানো হবে।
এখানে অনেকেরই স্কলারশিপ বা দেশ থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের জন্য চাকরী বা অন্য কোন অর্থ সাহায্য জোগাড় করার চেষ্টা করা হবে।
এছাড়াও আমাদের নিয়মিত প্রচারকার্য আরও সুষ্ঠুভাবে চালানো হবে।
শীঘ্রই ‘বাংলাদেশ পত্রে’ বাংলাদেশের সংগ্রাম, ঐতিহ্য ও ইতিহাসের উপর একটি সাহিত্য সংখ্যা বেরুবে। প্রবন্ধ ও যে কোন সাহিত্যমূলক রচনা সম্পাদকের ঠিকানায় পাঠাবার জন্য আমাদের পাঠক ও শুভকাঙ্খীদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
সম্পাদক, ‘বাংলাদেশ পত্র’
বক্স ২৩৭০।
কলেজস্টেশন, টেক্সাস ৭৭৮৪০
______________________
সর্বপ্রকার যোগাযোগের জন্যঃ
বাংলাদেশ, বক্স ২৩৭০
কলেজস্টেশন, টেক্সাস ৭৭৮৪০। ফোন (৭১৩) ৮৪৬-২১৩২
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, কলেজস্টেশন শাখা কর্তৃক মুদ্রিত প্রকাশিত ও প্রচারিত। সর্বপ্রকার যোগাযোগের জন্যঃ বাংলাদেশ, বক্স ২৩৭০, কলেজস্টেশন, টেক্সাস ৭৭৮৪০। ফোন (৭১৩) ৮৪৬-২১৩২।
<৪,১৪৩,২৬৪>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৩। আমেরিকায় বাংলাদেশের দুটো মিশন খোলা সম্পর্কে জনাব রেহমান সোবহান ও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর পরামর্শ সম্পর্কে অবহিত করে লেখা চিঠি | ইষ্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকার দলিলপত্র | ২৯ মে,১৯৭১ |
আমেরিকা পূর্ব পাকিস্তান লীগ,ইনকর্পোরেটেড
২৬৬৭ ব্রডওয়ে,নিউইয়র্ক,এন.ওয়াই.১০০২৫.
২৯মে,১৯৭১
প্রিয়বন্ধু,
আমি আপনাকে যুক্তরাজ্যে এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা জনাব রেহমান সোবহান এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে, যাঁরা উভয়েই মে মাসের শেষ অর্ধাংশে এখানে ছিলেন ,আমাদের সাম্প্রতিক আলোচনা সম্পর্কে অবহিত করার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত।
একটি সভায় জনাব সোবহান আমাদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সাথে নিম্নলিখিত পরামর্শ দেন:-
১।যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশন খুলতে হবে,বিশেষ করে দুইটি মিশন,একটি ওয়াশিংটন এবং অন্যটি নিউইয়র্কে।এই মিশনগুলোতে একটি সংরক্ষনশীল হিসাব অনুযায়ী প্রতিমাসে আনুমানিক পাঁচ হাজার ডলার খরচ হবে যা ঐচ্ছিক অনুদান দ্বারা বহন করা হবে।
২। লীগের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি কার্যদর্শী বা জাতীয় সমন্বয়সাধন পরিষদ থাকতে হবে।
৩।মিশন বিভিন্ন পর্ব,পরিষদ ও বাংলাদেশের সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে।মিশনের অন্যান্য কার্যাবলী ইউ.এস. সিনেট,প্রতিনিধিদের আইনসভা,বিশ্বব্যাংক,আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল,জাতিসংঘের সদস্য ইত্যাদিও প্রজ্ঞাপন এর পরিমণ্ডলের মধ্যে হবে।
জনাব বিচারপতি চৌধুরী তাঁর ব্যক্তিগত মতামত প্রদান করেন যে যদি তহবিল অনুমতি দেয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে দুইটি মিশন আমাদের উদ্দেশ্যের প্রতি আরো ভাল সেবা দেবে।তাঁর মতানুসারে মিশনের প্রধান কাজ হবে পাকিস্তানে সকল সম্ভাব্য উৎস থেকে সহযোগীতা বন্ধ করা।
জনাব বিচারপতি চৌধুরীর কিছু সাক্ষাৎকার থাকায় তিনি ইউরোপে গেছেন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিউইয়র্কে ফিরে আসার জন্য আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছি।১২ জুনের র্যালি তে বক্তব্য দেয়ার জন্য যথাযথ সময়ে তিনি ফিরে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। প্রত্যাগমনে তাঁর সাথে বিশদ আলোচনার আশা করি।
বিষয়টির উপর সিদ্ধান্ত নেয়ার লক্ষ্যে ২৬ জুন অনুষ্ঠিতব্য বার্ষিক সাধারন সভায় আপনার পূর্বোল্লিখিত বিষয় সংক্রান্ত মতামত বিবেচনা করা হবে।
জয় বাংলা
মিঃ এনায়াতুর রহিম আপনার অনুগত
সভাপতি এসডি/-
(কাজী এস. আহমেদ)
সভাপতি
<৪,১৪৪,২৬৫-২৬৬>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৪। ইস্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকার বার্ষিক সাধারন সভার বিজ্ঞপ্তি | সংস্থার দলিলপত্র | ২৯ মে,১৯৭১ |
দ্য ইষ্ট পাকিস্তান লীগ অফ আমেরিকা,ইনকর্পোরেটেড।
২৬৬৭ ব্রডওয়ে,নিউ ইয়র্ক,এন. ওয়াই. ১০০২৫
২৯ মে,১৯৭১
প্রিয় বন্ধু,
আমার পূর্বের চিঠিতে উল্লেখিত বার্ষিক সাধারন সভা ২৬জুন,১৯৭১শনিবারে সকাল ১০টায় নিউইয়র্কের ৭৬তম স্ট্রিটের পশ্চিম সেন্ট্রাল পার্কের দ্য ইউনিভার্সালিস্ট চার্চ অফ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে।
সভার জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানটি নিম্নরূপ হবে:-
১।ব্যক্তিগত পরিচয়।
২।সভাপতির স্বাগত ভাষণ।
৩।সেক্রেটারি কর্তৃক বার্ষিক প্রতিবেদন।
৪।কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক বার্ষিক প্রতিবেদন।
৫।পূর্বের কর্মকাণ্ড এবং লীগ কর্তৃক বিগত কয়েক মাসের অনুসৃত মূলনীতির বিশদ বিবরণ।
৬।পর্বের প্রতিনিধি কর্তৃক প্রতিবেদন ও পরামর্শ।
-বিরতি-
৭।সভাপতিত্ব সংক্রান্ত বার্ষিক প্রতিবেদন।
৮।সভার আলোচ্য বিষয়সূচি:-
ক)একটি জাতীয় সমন্বয়সাধন পরিষদ বা প্রাদেশিক পরিষদ ইত্যাদি গঠন।
খ)নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ মিশন। জনাব এ.এইচ. মাহমুদ আলী কর্তৃক উক্ত বিষয়ের উপর বিশদ বিররণ প্রদান করা হবে।
৯।নির্বাচন:
i) মনোনীত পরিষদ কর্তৃক প্রতিবেদন।
ii) নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একটি নির্বাচন সংঘ নিয়োগ।
১০।বিবিধ।
কনভেনশনে প্রত্যেক পর্ব থেকে কমপক্ষে একজন প্রতিনিধির উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিয়মানুযায়ী এবং কার্যকর পদ্ধতিতে কাজ করার জন্য একটি জাতীয় সমন্বয়ক পরিষদ গঠনে সাহায্য করবে। পর্ব প্রতিনিধিদের তাদের সম্মানিত সদস্যদের সাথে যেকোন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা উচিত। সভায় উপস্থিত হওয়ার পূর্বে পর্বমণ্ডলী থেকে বা স্বতন্ত্র উৎস থকে আগত পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করা হবে।
আমি কনভেনশনে আপনার সাথে সাক্ষাৎকারে প্রবল আগ্রহী।
শুক্রবার রাতে পৌঁছানো অতিথিদের সহযোগীতার জন্য ৮৬৬-৭৪৭৪ ও ৮৬৫-৩৪৭৪ মিঃ কাজী এস আহমেদ এবং ২৯৪-৫৮৫১ এ মিঃ ফয়জুর রহমান এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
জয় বাংলা
আপনার অনুগত
এসডি/-
ফয়জুর রহমান
সেক্রে.ই.পি.এল.এ.
<৪,১৪৫,২৬৭-২৬৮>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৫। মিড ওয়েস্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের কলাম্বাসে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ | মিঃ মুহিতকে মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিঃ জে কে ভট্টাচার্জের চিঠি | ২৯ মে,১৯৭১ |
মিয়ামি বিশ্ববিদ্যালয় ৩২৫ ডব্লিউ. হাই স্ট্রিট. ৭
মাইক্রোবায়োলজি ডিপার্টমেন্ট ৫/২৯/৭১
অক্সফোর্ড,ওহিও ৪৪৫০৫৬
টেলিফোন: ৫১৩.৫২৯–
৫৪২২
জনাব মুহিত,
অনুগ্রহপূর্বক ৩নং প্রস্তাবটি পড়ুন। আমরা বাংলাদেশ সরকারের নামে ওয়াশিংটন ডিসি তে সম্পদ জমা করার সম্ভাবনা(আইনজীবির সাথে আলোচনা ইত্যাদি)বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করব।ওয়াশিংটন অফিসের জন্য আমাদের একটি হিসাবও(আনুমানিক) দরকার।
স্বকীয় অভিনন্দন।
একান্তই আপনার,
জে.কে. ভট্টাচার্য্য
মিডওয়েস্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সিদ্ধান্ত
২৯ মে,১৯৭১, কলাম্বাস ওহিও তে অনুষ্ঠিত
১। বাংলাদেশ বিষয়ে যেকোন সহযোগিতায় অবিলম্বে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
২।মিডওয়েস্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ওয়াশিংটন ডিসিতে একজন মুখপাত্রকে সমর্থক হিসেবে পেয়েছেন।এসোসিয়েশন মিঃ আমহমুদ আলী কে বিলম্ব না করে পদের দায়িত্ব গ্রহন করার জন্য সুপারিশ করছে।
৩।প্রতিষ্ঠানটি ওয়াশিংটন ডিসি তে সম্পদ্গুলো পৌঁছে দেয়ার জন্য পন্থা(সঠিক ব্যক্তির সাথে আলোচনার মাধ্যমে) অবলম্বন করবে।
৪। অবিলম্বে উন্নত সমন্বয় ও সংগঠনের উদ্দেশ্যে মিডওয়েস্টার্ন প্রদেশের একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার তারিখ ও স্থান রাজ্য প্রতিনিধির দ্বারা নির্ধারিত হবে।
৫। মিডওয়েস্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের সদস্যরা ১২ জুন,১৯৭১ নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য র্যালি তে অংশগ্রহন করবে।
মিডওয়েস্ট বাংলাদেশ এসোসিয়েশন কেন
যতটা সম্ভব বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে প্রচুর ত্রাণসামগ্রী দিয়ে এবং বাংলাদেশকে সমর্থন করতে আমরা মিডওয়েস্ট বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেছি(কর মুক্ত)। এই এ্যাসোসিয়েশন স্থানীয় পর্যায়ে সমন্বয় করবে,তহবিল বৃদ্ধি করবে,প্রয়োজনীয় কর্মসূচী সমর্থন ও প্রচার করবে। এই এ্যাসোসিয়েশন কর্পোরেশনের সাথে এবং একই উদ্দেশ্যে উৎসর্গী কৃত অন্যান্য সংস্থা বা ব্যক্তির কর্মকাণ্ডের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।এই সংস্থার একজন প্রতিনিধি অন্য সংস্থার অনুরূপ প্রতিনিধির সাথে কর্মকাণ্ড সমন্বয় করবে।
বিঃদ্রঃ
১।পাকিস্তানের মিলিটারি পরিচালনা পরিষদের উদ্দেশ্যে ত্রাণ স্থগিত করার জন্য সিনেট প্রস্তাব ২১(মামলা ও মন্ডেল কর্তৃক……
২।সকল ত্রাণ স্থগিত করার জন্য সিনেট প্রস্তাব ৯৯(হ্যারিস কর্তৃক)……
৩। মিসেস রড তার স্বামী ডঃ জন ই. রডের সাথে দেখা করার জন্য আফ্রিকা যাচ্ছেন…
৪। সিনেটর স্যাক্সবি ডঃ রড এর কাছ থেকে বাংলাদেশের ভয়ংকর পরিস্থিতির বহু তথ্য পেয়েছেন…
৫। সিনেটর স্যাক্সবি এরকম গুরুতর সমস্যার মধ্যেও ফরেন রিলেশনস সিনেটর কমিটির সদস্যদের জন্য মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করেন।
<৪,১৪৬,২৬৯-২৭২>
অনুবাদকঃ মুশররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১৪৬। আমেরিকায় প্রবাসী বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধের সংগে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংবাদের প্রতিবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার দলিলপত্র | ১ জুন, ১৯৭১ |
অনুগ্রহপুর্বক পড়ুন ও বাঙালিদের মাঝে বিতরন করুন
জুন ১, ১৯৭১
প্রচারপত্র নং- ৩
১। বিশ্ব ব্যাংক– আই এম এফ এর উদ্দেশ্যঃ
পাকিস্তানী আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন একটি গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাকিস্তান এখন অনেকটাই দেউলিয়া এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার অবস্থায় থাকবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত জুলাইয়ের মধ্যে সাহায্য পাচ্ছে। জুনের ২১ তারিখে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে প্রেরিত ত্রাণ সহায়তা ২১ তারিখে প্যারিসে পৌছবে। প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য বাংলাদেশে এখন বিশ্বব্যাংক ও আই এম এফ এর একটি কার্যক্রম চলছে। এই কার্যক্রম বাংলাদেশে ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত চলবে এবং প্যরিস যাওয়ার পুর্বে তারা ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। এই কার্যক্রমের তথ্য আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারন যদি তারা প্রতিবেদন পেশ করে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে তখন এই ত্রাণ সহায়তা পাকিস্তানে পৌছবে। অবশ্যই আমরা জানি যে, পরিস্থিতি সেখানে স্বাভাবিক নয় কিন্তু এই প্রতিবেদনের তথ্য সমূহ নির্ভর করবে সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের কতটা পরিমাণ চলাফেরা করার অনুমতি প্রদান করবে। বিশ্বব্যাঙ্ক-আই এম এফ এর এই কার্যক্রমে ১৩ সদস্য আছেন এবং এই কার্যক্রম বিশ্বব্যাংকের দক্ষিন এশিয়া শাখার প্রধান জনাব পি কারগিলের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। এই কার্যক্রমের প্রত্যেক সদস্য খুলনা, চালনা,যশোর, সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা ভ্রমণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। তাদের কাছে অনুরোধ এসেছে কিছু মহকুমা শহর ও থানা কেন্দ্র পরিদর্শন করার। বেশ কিছু প্রতিবেদন থেকে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, বাংলাদেশে পরিস্থিতি খুব স্বাভাবিক নয়। আমরা আশা করি যে, এই কার্যক্রম সত্যটা প্রত্যক্ষ করবে এবং পেশ করবে। প্রকৃত পরিস্থিতির প্রতিবেদন পাকিস্তানে ত্রাণ সহায়তা থামিয়ে দিতে পারে এবং এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে যাতে তারা একটি ব্যয়বহুল যুদ্ধ চালিয়ে যেতে না পারে।
২। খাদ্য ও ত্রাণ
চালের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলেছে এবং প্রতিবেদনে উঠে এসেছে জায়গা বিশেষে ৮০ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। কিছু জায়গায় এই পরিস্থিতি মজুতদারদের মালগুদাম লুট করা পর্যন্ত পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ঘুর্নিঝড় উপদ্রুত এলাকায় দুর্ভিক্ষ সম পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। ত্রাণ সহায়তার আকুতিকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ৩০ টি জাহাজ এবং অসংখ্য ট্রাক ইউ এস এইড এর কাছ থেকে লাভ করতে যাচ্ছে। এটি বলা হচ্ছে যে, এই জলযান এবং যানবাহন গুলো শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাদের দ্বারা ব্যবহৃত হবে। এটি আমাদের সন্তুষ্ট করতে পারল না। সর্বোপরি, ঘুর্নিঝড় উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইউ এস এইড প্রদত্ত ৫০ টি স্পিড বোট পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্বারা ব্যবহৃত হচ্ছে, ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছবিতে দেখা যায় যে, গোপালগঞ্জ আক্রমনের পুর্বে জেনারেল নিয়াজি ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রদত্ত একটি বোট পরিদর্শন করছেন।
ঢাকায় খাদ্য বিভাগ ও ত্রাণ বিভাগের দুই সচিব পাকিস্তান সরকারের সেবায় নিয়োজিত আছেন। আমরা বলতে পারছি না কতটা সুষ্ঠুভাবে তারা গ্রামগুলোতে ত্রাণ বিতরন করতে পারবেন যতক্ষন না পর্যন্ত থানা কর্মকর্তারা এবং ইউনিয়ন কাউন্সিলররা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করছেন। অতএব, খাদ্য সাহায্য তাদের অনুমতি প্রাপ্তির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। ভোলা, হাতিয়া ও সন্দীপে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমনের ভিত্তিতে আমরা ভাবছি ত্রাণ বহন কারী সকল জল ও স্থল যানবাহন ও ত্রাণ বিতরনের পদ্ধতি বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আমাদের দেশ থেকে প্রত্যাহার না করা হচ্ছে।
৩। বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য সমূহ
বিভিন্ন তথ্যসুত্র থেকে আমরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া নিম্নলিখিত খবর সমূহ সংকলন করতে সক্ষম হয়েছিঃ
১। জেনারেল ওসমানী, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, ঘোষণা করেছেন যে, গেরিলা যুদ্ধের উপর পুনঃপ্রশিক্ষনের পর ১০,০০০ মুক্তিযোদ্ধাকে আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। গেরিলা প্রশিক্ষন প্রাপ্ত আরও মুক্তি ফৌজকে শীঘ্রই রণাঙ্গনে পাঠানো হবে।
২। যশোর সেক্টরে, ঢাকা থেকে ৪০ মাইল দূরে মুক্তিযোদ্ধারা কিছু আর্মি গানবোট এর উপর অতর্কিত আক্রমণ চালিয়েছে, এবং একটি সড়ক সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
৩। কুমিল্লা সেক্টরে তারা রেল ও সড়ক সেতু ধ্বংস করেছে, সেনাবাহিনীর গতিবিধিকে সড়কপথে অবরুদ্ধ করেছে এবং ফেনীর দিকে অগ্রসরমান একটি সৈন্য বাহিনীকে সফল ভাবে আক্রমণ করে এবং ২০০ পাকিস্তানি সৈন্য এতে নিহত হয়।
৪। কসবা সেক্টরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একটি ভারী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
৫। সিলেটের গুরুত্বপুর্ন তেলিয়াপাড়া সড়ক জংশন পুনঃ গ্রহনের জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচেষ্টা মুক্তিযোদ্ধারা একটি ভারী যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিহত করেছে।
৬। দিনাজপুর জেলায় একটি রেলসেতু উড়িয়ে দেয়া হয়েছে এবং অসংখ্য রেল পথ অচল করে দেয়া হয়েছে।
৭। চট্টগ্রাম সেক্টরে, লাকসাম ও ফেনীর মধ্যকার একটি রেল ও একটি সড়ক সেতু ধ্বংস করা হয়েছে এবং ইলিয়টগঞ্জ রেল সেতু উড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
৮। রংপুর সেক্টরে সৈন্য শ্রেণীর একটি দলকে কালুঘাটে অতর্কিত আক্রমণ করা হয় এবং বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর দ্বারা জব্দ করা হয়েছে।
৯। কুষ্টিয়া সেক্টরে একটি রেলসেতু মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দিয়েছে।
১০। বরিশালের একটি সৈন্য ঘাটি মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা অতর্কিত আক্রমনের শিকার হয়েছে বলে প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে।
১১। খুলনার নিকটে , পকিস্তান সেনাবাহিনীর নদী গতিপথ পরিষ্করণ কার্যলাপ মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা ব্যর্থ হয়েছে যখন তারা আবার তাদের রণতরী ডুবিয়ে দিয়েছিল।
১২। সমগ্র বাংলাদেশে রেলওয়ে ও ষ্টীমার সেবা ব্যবস্থা মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যাবলির জন্য মুলত অচল হয়ে পড়েছে এবং সেনাবাহিনীর অনুরোধ ও হুমকি সত্ত্বেও কর্মচারিরা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
১৩। মে ১২ তারিখের পরে ভোলা, হাতিয়া ও সন্দীপ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমনের শিকার হয়। তারা অনেক গ্রাম ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং হাতিয়া ও সন্দীপে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তারা পিছু হটেছিল। যাইহোক, তারা ভোলায় নিজেদের সুরক্ষিত অবস্থায় রেখেছে। ঘুর্নিঝড় উপদ্রুত এলাকায় তাদের উপস্থিতি ত্রাণ সরবরাহকে একটি তামাশা বানিয়ে দিয়েছে।
১৪। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ সদর মহকুমা আক্রমণকারীদের দ্বারা বিধ্বস্ত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে এবং পথের ধারে মৃত্যুর মুখোমুখি হচ্ছে। ১৮’মে এর লন্ডন টাইমসে একটি সচিত্র বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছে। ( হ্যাজেলহার্স্ট এর প্রতিবেদন)
১৫। ঢাকায় বিভিন্ন ভবনে বিভিন্ন সময়ে ছয় বার বোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে ( সচিবালয়, স্টেট ব্যাংক, ইউ বি এল ইত্যাদি)। এই বোমাগুলোর সাথে চিরকুট পাওয়া গিয়েছে যেখানে সহযোগিতার বিরুদ্ধে সাবধান করা হয়েছে। খবর পাওয়া গিয়েছে যে, সিলেটে দুইজন বিশিষ্ট সহযোগী নিহত হয়েছেন এবং আরেকজন সহযোগী, একজন প্রাক্তন মন্ত্রী, তালিকার পরবর্তী শিকার হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
১৬। ২৫ মে পাওয়া প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, আক্রমণ পুর্ববর্তী সময়ে শহরগুলোতে জনসংখ্যা ছিল ময়মনসিংহ ১০%, চাদপুর ২০%, কুমিল্লা ৩০%।
১৭। ধামরাই লুটের শিকার হয়েছে। মন্দির ও প্রতিমাসমূহ ধ্বংস করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, ঢাকা ও আশেপাশের জাদুঘর গুলো লুটের বা ধ্বংসের শিকার হতে পারে। ইতোমধ্যে বিপুল পরিমাণ লুটের দ্রব্য সমূহ ঢাকা থেকে পাঞ্জাবে স্থানান্তর করা হচ্ছে। এখন তারা আমাদের সাংস্কৃতিক শিল্পদ্রব্য সমূহ ধ্বংস করতে তৎপর হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দলসমুহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করতে পারে ইউনেস্কোকে দেশের মন্দির, মসজিদ, গির্জা, জাদুঘর সমূহকে ধংসের হাত থেকে রক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ বার্তা পাঠাতে। ইউনেস্কো পর্যবেক্ষকদেরকে অনুরোধ করা উচিৎ এগিয়ে আসার জন্য।
১৮। পাকিস্তানি সেনাদের কারখানা শ্রমিকদের কাজে যোগদান করার অনুরোধ এবং পরবর্তীতে হত্যা করার উদাহরণ ঊঠে এসেছে। এরূপ গণহত্যার স্পষ্ট প্রমানাদি গোপালগঞ্জ চিনি কারখানা, রাজশাহী, খুলনা নিউজপ্রিন্ট কারখানা এবং বাটা জুতা কারখানা, টংগি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
১৯। সকল থানা উন্নয়ন কেন্দ্র সমূহ খালি পরে রয়েছে এবং থানা ও গ্রাম পর্যায়ে কোন কাজ সংঘটিত হচ্ছে না।
৪। সন্ধির দলিল সমূহ
এটি পাকিস্তানের কাছে একটি ধাক্কা হিসেবে এসেছে যে, তারা তাদের প্রকৃত পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাদেশকে তিনদিনে চুর্ণ বিচুর্ণ করতে সমর্থ হয়নি। পরাজয়ের দিকে এগুতে থাকায় তারা এখন একে অপরকে দোষারুপ করতে শুরু করেছে এবং এমনকি তারা পাকিস্তানকে একত্র করে রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচেষ্টাকেও তারিফ করছে। আমেরিকায় পাকিস্তান ছাত্র সংঘ গত বছর একটি জামায়াত পন্থী দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ইউ এস এ তে নিযুক্ত পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতের এই কার্যক্রমে পৃষ্ঠপোষকতা ছিল। এতদিন পর্যন্ত বাঙালি বিরোধী পিএসএএ ইয়াহিয়া ও টিক্কা খানের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য বলেছে ( দেখুন পাকিস্তান স্টুডেন্ট, এপ্রিল, ১৯৭১)। তারা বিবেচনা করে যে পাকিস্তান ভ্রাতৃত্তবোধের ভিত্তিতে একত্রে থাকতে পারে। এটি একটি দুঃখজনক ঘটনা যে, পাকিস্তান বাংলাদেশের মুসলিমদের হত্যা ও নির্যাতন করার মাধ্যমে ইসলামকে কলঙ্কিত করছে। তারা কি ৭ লক্ষ মানুষকে হত্যা এবং ৫ কোটি মানুষকে সর্বস্বান্ত করার পুর্বে তাদের ভাতৃত্ববোধ প্রদর্শন করতে পারত না? এই বিশ্বাসঘাতক কসাইদের সাথে বসবাস করা এখন যে কোন বাংগালির পক্ষে অসম্ভব।
ওয়াশিংটন ডি সি তে সফরকালে আরও নানাবিধ সন্ধির পরিকল্পনা এম এম আহমেদ ও অন্যান্য পাকিস্তানিদের দ্বারা প্রনয়ন করা হয়েছে। এই সকল দলিল সমূহ ইংগিত প্রদর্শন করে যে, বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে একত্রে থাকতে পারে এবং শেখ মুজিবুরের বিচার ও শাস্তি সত্বেও আওয়ামী লীগ সেনাবাহিনীর সাথে সহযোগিতা করবে। এইসমস্ত অদ্ভুত ধারণা সমূহ রহমান সোবহান কার্যকরীভাবে নিকাশ করেছেন, যিনি সৌভাগ্যক্রমে তখন ওয়াশিংটনে ছিলেন। জনাব সোবহান চারবার টিভিতে উপস্থিত হয়েছিলেন এবং প্রচুর উপস্থিত মানুষের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলন ও আয়োজন করেছিলেন।“ চ্যানেল ২৬ “এ তার সাক্ষাৎকার সবাই প্রশংসা করেছে এবং অনুরোধ সাপেক্ষে সেটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও দেখানো হবে। সাক্ষাতকারের অনুলিপিগুলো বিদেশে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। জনাব সোবহান ১২ জন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যদের সাথে দেখা করেছেন। তার সম্মানে একটি মধ্যাহ্ন ভোজ আয়োজন করেছিলেন সিনেটর সাক্সবি যেখানে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট সিনেটররা অংশ নিয়েছিলেন। জনাব সোবহান বিশ্বব্যাংক, আই এম এফ, ইউ এস এইড ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট এর ঊচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করেছিলেন। তিনি কানাডাও পরিদর্শন করেছিলেন ( অটোয়া ও মন্ট্রিল ), সংসদ সদস্যদের সাথে দেখা করেছিলেন এবং সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন।
৫। বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী
বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, নিউইয়র্ক গিয়েছিলেন স্বল্প সময়ের জন্য। এই ভ্রমণ ব্যাপক প্রচার লাভ করেনি যেহেতু এটি শেষ সময় পর্যন্ত অনিশ্চিত ছিল। তাকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জরুরি কাজের জন্য লন্ডনে ফিরতে হয়েছিল। তিনি ১,৫০,০০০ পাউন্ড সংগ্রহ করতে পেরেছেন এবং লন্ডনে অবস্থিত বাঙালিরা তার স্থাপন করা তহবিলে মুক্ত হস্তে দান করছেন
৬। জুন ১২ তারিখে নিউইয়র্কের র্যালি
আমেরিকায় বাংলাদেশ লীগ পাকিস্তান দুতাবাস, নিউইয়র্ক এবং জাতিসংঘ ভবন এর সামনে ১২ জুন বিক্ষোভ প্রদর্শনের আয়োজন করেছে।
এই সমাবেশের বক্তারা হলেনঃ
বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরী
জয় প্রকাশ নারায়ন
ইকবাল আহমেদ
রুথ গেজ কলবি
বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী ১২ জুনের মধ্যে আমেরিকায় ফেরার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন এবং কয়েক সপ্তাহ তিনি ইউ এস এ এবং কানাডাতে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ব্যয় করবেন। জনাব রহমান সোবহান ও প্যারিস সাহায্য সংঘের পরবর্তিতে ২১ জুন ইউ এস এ তে ফেরার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
চলুন আমরা সবাই বাংলাদেশের জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুন করি এবং জুন মাসকে মুক্তিযুদ্ধের লড়াই এর জন্য একটি সন্ধিক্ষণ এ পরিণত করি।
জয় বাংলা!
<৪,১৪৭,২৭৩-২৭৮>
অনুবাদকঃ আরিফ রায়হান, সজীব কুমার সাহা, মোঃ মোসাব্বিরুল হক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৭। ওয়েস্ট কোস্টে বসবাসকারী বাঙালী দের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহযোগিতা ও তৎপরতার উপর প্রতিবেদন | “ওয়েস্ট কোস্ট নিউজ বুলেটিন”-আমেরিকা লীগ অব বাংলাদেশ | ১ জুন, ১৯৭১ |
আমেরিকা লীগ অব বাংলাদেশ
ওয়েস্ট কোস্ট নিউজ বুলেটিন
প্রিয় দেশপ্রেমিকগণ
শুভেচ্ছা জানবেন!
বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আট সপ্তাহ পর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট কোর্টে থাকা বাংলাদেশিদের জন্য নিজেদের মধ্যে সাহায্য, সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল । সেই উদ্দেশ্য ২২ মে ১৯৭১ সালে সান ফ্রান্সিসকোতে পারস্পারিক সহযোগিতা এবং যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য একটি মিটিং ডাকা হয়েছিল, যেখানে লস এঞ্জেলস, ব্রেকলি, স্ট্যানফোর্ড এবং সান ফ্রান্সিসকোতে থাকা বাঙালিরা অংশ নেয় ।
যেহেতু বাঙালিরা সবাই বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিল, তাই একটি শক্তিশালী যোগাযোগ ব্যবস্থার দরকার হয়েছিল, যাতে করে সবার প্রচেষ্টা আর উদ্যম একত্র করা যায়। এর মাধ্যমে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধ করা সম্ভব হবে, যেমন দূরবর্তী ফোন কল ইত্যাদি এবং অপ্রয়োজনীয় শারীরিক শক্তির ব্যয়। এই খবরটি ছিল বাঙালিদের মধ্যে সমন্বয় সাধনের প্রথম প্রচেষ্টা।
২২ মে এর মিটিং এ ব্রেকলি, লস এঞ্জেলস, স্ট্যানফোর্ড আর সানফ্রানসিসকো প্রবাসীরা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
১. প্রধান সমন্বয়ক থাকবেন লস এঞ্জেলসে এবং সেখান থেকেই সবার সাথে যোগাযোগ করবেন, যারা ব্রাকলির ওয়েস্ট কোর্ট, সসানফ্রানসিসকো, স্ট্যানফোর্ড, সানডিয়াগো, সান্তা বারবারা, ডেনভার (কলরাডো) এবং টাকসান(এরিজোনা)-তে আছেন। এটি আরো কয়েকটি রাজ্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে যেমন হাওয়াই, ডালাস আর পিটসবার্গ (কানসাস)।
২. সক্রিয় যোগাযোগব্যবস্থা থাকবে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো এবং মিশিগান এর সাথে যা প্রধান নির্বাহীগণ পরিচালনা করবেন এবং তারা সকল নির্দেশনা গ্রহণ করবেন, যা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে প্রেরণ করা হবে আর সেগুলো পৌছে দেয়া হবে সকল ওয়েস্ট কোর্ট ইউনিটে।
৩. সকল ইউনিটের মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করতে হবে। আর সেই তথ্য পৌছে দিতে হবে সকল সদস্যের কাছে।
৪. বৈদেশিক মুদ্রার ৫% শতাংশ, যার পুরোটা সংগ্রহ করা হবে ওয়েস্টকোর্ট প্রবাসীদদের কাছ থেকে, তা লস এঞ্জেলস থাকা সদস্যরা খরচ করবেন প্রচারণা আর নির্দেশনার কাজে ।
৫. সাধারণত প্রত্যেক ইউনিটই প্রকাশ করবে পাকিস্তানি সেনারা কি পরিমাণ নৃশংসতা আর বর্বরতা চালিয়েছে আমাদের দেশে এবং ছড়িয়ে দেবে পুরো আমেরিকার জনগণের মাঝে আমাদের স্বাধীনতার বৈধতা দেয়ার জন্য ।
৬. তহবিল সংগ্রহের সকল বিবৃতি লস এঞ্জেলসে জমা দিতে হবে।
৭. একটি প্রধান তালিকা থাকবে, যেটি প্রস্তুত করা হবে সকল অধিবাসী এবং সহানুভূতিশীলদেরকে সাথে নিয়ে, যারা সাহায্য করতে ইচ্ছুক, তাদের নাম প্রত্যেক ইউনিট থেকে লস এঞ্জেলসের সমন্বয়কের কাছে পাঠা তে হবে ।
৮. বার্কলিতে থাকা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জ্যোতি দাস গুপ্তকে রাজনৈতিক তথ্য ও রাজনৈতিক চিঠিপত্র লিখতে আগ্রহী যে কাউকে পরামর্শ প্রদান করবেন।
ওয়েস্ট কোস্ট ইউনিটে থাকা কয়েকজন সমন্বয়কের নাম-ঠিকানা নিচে উল্লেখ করা হল। অন্যান্য ইউনিতকে তাদের নাম-ঠিকানা লস এঞ্জেলসে তাদের সমন্বয়কদেরকে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হল।
লস এঞ্জেলস :
১. জনাব আবুল হাই সাদ্দুদ্দিন ৫০৫, গ্যালে অ্যাভিনিউ ৪০১, লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, ৯০০২৪, টেলি : (২১৩) ৪৭৮ – ৩১৬৬
২. জনাব চন্দন দাস, ১৬২১ গেলডন অ্যাভিনিউ ৭, লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া, ৯০০২৪, টেলি : (২১৩) ৪৭৫ – ২৯৪৬
বার্কলি :
১. জনাব জামাল মুন্সী, ১২১৫ কাইন্স বার্কলি, ক্যালিফোর্নিয়া, টেলি : (৪১৫) ৫২৪ – ৮৫৩৩
২. ড. জ্যোতি দাস গুপ্ত, টেলি : (৪১৫) ৫২৪ – ৮৫৩৩
সানফ্রানসিসকো :
১. মিস আমিনা পান্নি, ৭৭০ লেক মার্সিড বেলভিউ, সানফ্রানসিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া, ৯১৪৩২, টেলি : (৪১৫) ৪৬৯ – ৩১৭৯
২. জনাব এ বি এম ফারুকী, টেলি : (৪১৫) ৪৬৯ – ৩১৭৯
স্ট্যানফোর্ড :
১. ডা. রফিক রহমান, ৬১০ সার্কেল ড্রাইভ, এপার্টমেন্ট – ১
পোল এল্টো
ক্যালিফোর্নিয়া। ৯৪৩০৩
টেলি : (৪১৫) ৩২৫ – ৫৭৯৬
সান্তা বারবারা
১. মিস পারমিতা ঘোষ, ৬৫২০ সারভেন্টিস রোড। ২২ গোলেটা, ক্যালিফোর্নিয়া ৯৩০১৭
টেলি : (৮০৫) ৯৬৮ – ১৩৭২
সান ডিয়াগো :
১. জনাব রনধীর মিত্র ৩৯০৩-এ মিরা মের স্ট্রিট, লা জোলা, ক্যালিফোর্নিয়া – ৯২০৩৭
ডেনভার(কলোরাডো)
১. ডাঃ জনাব শের আলি
৬৪০১ ওয়েস্ট কলফেক্স
ডেনভার, কলো ৮০২১৪
টেলি: (৩০৩) ২৩৭-৭৩৭৫
টুস্কান, অ্যারিজোনা
২. ডাঃ এম. শফিকুল্লাহ
১৭৩৬ই, ব্রডওয়ে
টুস্কান, অ্যারিজোনা ৮৫৭১৯
টেলি: (৬০২) ৬২৪-৫৪৫৮
………………..
প্রতিরোধ সংবাদ
(১৭ মে, ১৯৭১ সালে শিকাগো থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশ নিউজলেটারের উদ্ধৃতাংশ)
পাকিস্তান সরকার নানা রকম মিথ্যার মাধ্যমে এদেশে অবস্থিত বাঙালিদের বোঝাতে চেষ্টা করছে যে , দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে এবং পুরো স্বাধীনতা আন্দোলনটি আসলে ভারতের মদদপুষ্ট একদল দুষ্কৃতিকারির পরিকল্পনা মাত্র। এই সবকিছুই অর্থহীন। এসব চিঠি আসা বন্ধ করতে না পারলে সব ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিন।
আজকাল এই দেশে সংবাদপত্র কোন প্রতিরোধ খবর বহন না করার প্রধান কারণ হল, পাকিস্তান সেনাবাহিনী সফলভাবে কলকাতা এবং বাংলাদেশের পশিমাঞ্চলের মাঝের একমাত্র সড়কপথটি বন্ধ করে দিয়েছে। এটি এই অঞ্চলের কলকাতাভিত্তিক বিদেশী সাংবাদিকদের যুদ্ধের প্রথম দুই সপ্তাহের সংবাদ সংগ্রহের প্রধান পথ ছিল। যাই হোক না কেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের ১৩০০ মাইলের সীমানা খোলা রয়েছে। ভারতীয় সাংবাদিক এবং আমাদের জনগণ সমগ্র বাংলাদেশের প্রতিরোধ সংবাদ নিয়ে সীমানা অতিক্রম করছে।
একজন বাংলাদেশী প্রতিনিধি, যিনি মাত্রই দেশে এসেছেন, লিখেছেন: “সিলেটের চা বাগান এলাকা, যা প্রাকৃতিক সুরক্ষা প্রদান করে এখনও বাঙালি সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণাধীন রয়েছে”। একটি বাহিনী এখনও পার্বত্য চট্টগ্রামের বাহিরে আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমগ্র বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সশস্ত্র বাঙালিদেরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং গেরিলা আক্রমণের মাধ্যমে সেনা ইউনিটকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে। এ ধরণের ঘটনার, যেমন প্রতিরোধের যুদ্ধবিগ্রহের পুনরাবৃত্তি এবং প্রবলতা বৃ্দ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় ভাল দক্ষতার, অস্ত্রসম্ভারের অতিরিক্ত সরবরাহ, যার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিকট হতে উদ্ধার করা হয়েছে এবং মৌসুমী বায়ু সেনাবাহিনীর নিরাপত্তার যৌক্তিক সমস্যা সৃষ্টি করবে। রাজনৈতিক প্রেরণা এবং সেনাবাহিনী কর্তৃক জনগণের ওপর পরিচালিত নির্বিচার অত্যাচার জনগণের দীর্ঘ যুদ্ধে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। তাদের কামানের আয়ত্তে থাকা গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে এবং আগুন হতে নিরাপদ অঞ্চল ঘোষণা করে ৭ কোটি ৫০ লক্ষ বাঙালির নিরাপত্তা বিঘ্ন করা পাকিস্তানি বাহিনীকে ঘৃ্ণার বস্তুতে পরিণত করেছে এবং সরাসরি হুমকি প্রদান করেছে ।
আরও একজন বাঙালি, যিনি এক মাস আগেই এ দেশ ছেড়েছেন, আগরতলা থেকে তিনি লিখেছেন: “প্রতিদিন শয়ে শয়ে তরুণকে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ওরা এত দ্রুত কীভাবে সব শিখে নিচ্ছে, সেটি খুবই আশ্চর্যের। এখানে আসতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। তা নাহলে আমি বাঙালিদের এই আত্মত্যাগ, দেশের জন্য তাঁদের ভালবাসা এবং তার স্বাধীনতা ও সম্মানের জন্য তাঁদের জীবন দিয়ে দেয়ার ইচ্ছা সম্পর্কে আমি জানতেই পারতাম না”।
উল্লেখযোগ্য সংবাদ
বার্কলে: ২৮ মে, ১৯৭১ তারিখে ভারতে বাংলাদেশি শরণার্থীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে উস্তাদ আলি আকবর খান (প্রখ্যাত সারোদশিল্পী), জনাব জন হ্যান্ডি (মার্কিন জ্যাজশিল্পী) ও জনাব জাকির হুসেইন (ল্যাবিয়া) এর একটি কন্সার্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল। টিকেট বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ৩০০০ ডলার এবং অত্র স্থানে সরাসরি দানকৃত অর্থ থেকে প্রায় ৫০০ ডলার সাহায্য উঠেছিল।
স্যান ফ্রান্সিস্কো: ২ জুন, ১৯৭১ তারিখে একটি ডেমোন্সট্রেশনের আয়োজন হতে যাচ্ছে।
লস এঞ্জেলস: সকল সদস্য প্রতি মাসে সংস্থায় ১০ ডলার করে দিতে রাজি হয়েছেন এবং আমরা আশা করি, অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরাও এতে রাজি হবে। অর্থসাহায্য আসছে এবং আরও আসার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ১১ জুন, ১৯৭১ তারিখে একটি ডেমোন্সট্রেশনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
টুস্কোন (অ্যারিজোনা) অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রচারণা চলছে এবং অর্থসাহায্য আসছে।
ডেনভার (কলরাডো): স্থানীয় সভা গঠিত হয়েছে এবং অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা বর্ণনা করে এই পুস্তিকাটির সাথে একটি সংযুক্তি দেয়া হল। বাংলাদেশে একটি অথর্ব সরকার গঠনের জন্য পাকিস্তানি সেনা শাসকরা যাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছে, তাদেরকে নিয়ে একটি মূল্যায়নও এতে দেয়া হয়েছে।
একটি আবেদন লস এঞ্জেলসের সদস্যদের জন্য প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ ডলার করে চাঁদা নির্ধারিত হয়েছিল। চাকুরিজীবী ও এর থেকে বেশি দান করার সামর্থ্য যাদের আছে, তাদেরকে যেন এটি বাধা দান না করে। ইতিহাসের এই সংকটময় মুহূর্তে যখন কোটি কোটি মানুষ দুঃখ-দুর্দশায় দিনাতিপাত করছে, তখন আমাদের উচিত নিজেদের আয়েশ আর ধন-দৌলত থেকে তাদের জন্য কিছু করা। যারা চাকুরিজীবী এবং সামর্থ্যবান, তাদেরকে সাধ্যমত, বিশেষ করে নিজেদের মাসিক নীট আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ দান করার জন্য আহ্বান জানানো হল। স্ট্যানফোর্ডের ড. রকিকুর রহমান মাসিক নীট আয়ের ৫% দান এবং স্থানীয় হেড অফিসে হস্তান্তর করার পরামর্শ জানিয়েছেন।
|
অ্যামেরিকান লিগ অভ বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত
সভাপতি জনাব এস এম এস দোহা
৪১৬ সিনক্লেয়ার অ্যাভিন্যু, গ্লেনডেল, ক্যালিফ, ৯১২০৬
জেনারেল ইয়াহিয়ার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করছে কারা?
জাতীয় নির্বাচনে ১৬৯ টির মধ্যে ১৬৭টি আসন এবং প্রাদেশিক নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ৩১০ টির মধ্যে ২৬৯ টি আসন নিশ্চিত করার পর ইয়াহিয়া আওয়ামি লীগকে নিষিদ্ধ করে এবং পুর্ব পাকিস্তানের ‘যুক্তিসংগত’ ও ‘প্রতিনিধিত্বমূলক’ ব্যক্তিবর্গের সাথে আলোচনা করে ‘গণতান্ত্রিক উপায়’-কেই তিনি মঞ্জুর করবেন বলে জানান।
ব্যাপক অনুসন্ধান আর নিগ্রহের পর আওয়ামি লীগ থেকে মাত্র দু’জন সংসদ সদস্যের খোঁজ পাওয়া গেছে, যারা সেনাদেরকে সমর্থন করে। কিন্তু উন্নয়নের আগেই ইয়াহিয়া বক্তব্য দেন এবং তাতে সেইসব রাজনীতিকদেরকেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যারা একটি “নাগরিক কমিটি” গঠন করেছে এবং সামরিক শাসক সরকারকে পূর্ণ সমর্থন প্রদান করেছে। চলুন দেখা যাক, কারা এই প্রতিনিধিরা:
নূরুল আমিন: জনাব আমিনকে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে প্রাদেশিক এম এলের বিরুদ্ধে নিযুক্ত (নির্বাচিত নয়) করা হয়েছিল। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্য মন্ত্রী হওয়ার পরপরই তিনি এবং তার মন্ত্রীসভা ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। আইয়ূব শাসনের বিরোধিতার জন্য জনাব আমিন হারানো সম্মান ফিরে পান এবং গত নির্বাচনে ময়মনসিংহে একটি আসন লাভ করেন। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে তার অন্যান্য দলের আশিজন প্রার্থীর প্রত্যেকেই হেরে যান। জনাব আমিন তাই একটির বেশি নির্বাচন কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করেন না এবং বাঙালিরাও তাকে নেতা হিসেবে বিবেচনা করে না।
ফজলুল কাদের চৌধুরী: রুক্ষ আচরণের জন্য বিখ্যাত। জনাব চৌধুরী আয়ূব খানের দালাল হিসেবে বিশেষ কুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন। এমনকি তিনি, সবুর খান ও মোনেম খান ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের মানুষদের থেকে বিচ্ছিন্নকরণে আয়ূব শাসনের প্রধান হাতিয়ার। গত নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের বিরোধিতা করেন এবং চট্টগ্রামে ২৫,০০০ এরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি এমনকি নিজের পরাজয় মেনে নেয়ার সৌজন্যও দেখান নি এবং ৭ ডিসেম্বরকে “পূর্ব পাকিস্তানের বাচ্চাদের দিন” হিসেবে ঘোষণা দেন। (ডন, ১৪ দিসেম্বর, ১৯৭০)
খান এ. সবুর: জনাব চৌধুরীর মত জনাব সবুরও আয়ূব সরকারের সাথে হাত মেলান এবং পূর্ব বঙ্গে সবচেয়ে ঘৃণিত তিনজন ব্যক্তির মধ্যে একজনের পরিণত হন। প্রতারণার মাধ্যমে নির্বাচনের জেতার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনাব সবুর গত নির্বাচনের সময় সাহায্য পান এবং প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ান। তিনি আসলে সর্বশেষ খুলনা-৬ আসনে ৮৪,০৫৪ ভোটের বিপরীতে ৬.২৮৮ ভোটে হেরে যান।
মৌলভি ফরিদ আহমেদ: মৌলভি ফরিদ, তিনি স্বভাবতই পূর্ব পাকিস্তানে আয়ূব শাসনামলে বিখ্যাত ছিলেন, প্রাদেশিক স্বায়ত্ত্বশাসনের বিরোধিতা করতে গিয়েই তিনি জনগণের বিশ্বাস হারান। গত নির্বাচনে চট্টগ্রামে নিজ কেন্দ্রে মোট ভোটের মাত্র ৩০ শতাংশ পেয়ে পরাজিত হন।
মালিমুদ আলি: বামদের একসময়ের “প্রাণ” জনাব আলি মাওলানা ভাসানির ওপর আক্রমণ করে এবং পশ্চিম পাকিস্তানি নওয়াব, যেমন পিডিপির নবাবজাদা নাসরুল্লাহর সাথে হাত মেলাতে গিয়ে সিলেটে নিজ কেন্দ্রের সমর্থন হারান। গত নির্বাচনে বিজয়ীর ৫৩,৭৪৯ ভোটের বিপরীতে ১৫,৬২৮ ভোট পেয়ে করুণভাবে চতুর্থ হন।
খাজা খাইরুদ্দিন: পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগ পরিষদের নেতা জনাব খাইরুদ্দিন ঢাকা গত জাতীয় নির্বাচনে শেখ মুজিবুরের কাছে ১,৬৪,০০০ ভোটের বিপরীতে ৪০,০০০ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
গোলাম আযম: গত নির্বাচনে জামায়াত এ-ইসলামির অধ্যাপক গোলাম আজম জহিরুদ্দিনের ১,১৬,২()৪ ভোটের বিপরীতে ৩৫,৫২৭ ভোট পেয়ে ঢাকার ভোটারদের সমর্থন হারান।
সামরিক শাসকদের “প্রতিনিধি” হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে আরও অনেকেই আছেন, যাদের জনগণের সাথে যোগাযোগের পরিস্থিতি উপরিউল্লিখিতদের চেয়েও খারাপ।
আমরা কি তাহলে এদেরকে এর পরেও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি বলব? এদেরকে নিয়ে কি কোন রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব? ইতিহাস থেকে কি আমরা এটি শিক্ষা পাইনি যে বিভীষণ, ডিয়েম, থিউস, কিস এবং লন নোলসদের মত মানুষদেরকে নিয়ে রাজনীতি হয় না? এটা যে নিজের সাথেই প্রতারণা, তা কি আমরা বুঝতে পারছি না?
চলুন নিজেদেরকে আমরা আর না ঠকাই। চলুন নিজেদেরকে এই নিষ্ঠুর খেলার বলি না বানাই।
চলুন কারণগুলোকে খতিয়ে দেখি।
আওয়ামি লীগ ও তাদের প্রোগ্রামে আমাদের জন্য কী বলা আছে, তা কোন বিষয় নয়। কিন্তু বাঙালি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন সমঝোতা চলবে না।
পূর্ব বঙ্গ ও পশ্চিম পাকিস্তান উভয়ের জনগণের আত্ম-নির্ধারণের অধিকারের মধ্যেই রয়েছে মুক্তি। আর তখনই রক্তপাত ও ঘৃণা হ্রাস পাবে।
চলুন সবাইকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিই।
বাঙালিদের সাথে সংহতি রেখে পশ্চিম পাকিস্তানি নাগরিকবৃন্দ কর্তৃক প্রকাশিত।
<৪,১৪৮,২৭৯>
অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৮। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার সাধারণ সভার বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার প্রচারপত্র | ৬ জুন, ১৯৭১ |
প্রিয় বন্ধু,
পূর্ব-পাকিস্তানের আমেরিকান লীগের সভাপতির নিকট থেকে আমাদের প্রাপ্ত চিঠিগুলো সংগ্রহে রাখুন। জুন ২৬, ১৯৭১ এ নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বার্ষিক সাধারণ বৈঠকে যদি আপনি অংশগ্রহণ করতে চান, অনুগ্রহপূর্বক জনাব মাহবুব আলীর সাথে যোগাযোগ করুন (টেলি. ৭৬৫৪৪৬৯, সন্ধ্যা ৬টার পরে), যিনি সদয়ভাবে একটি গাড়ি বহরের বন্দোবস্ত করার দায়িত্ব নিয়েছেন।
জুন ৬, ১৯৭১
এনায়েতুর রহিম সভাপতি,
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা
ওয়াশিংটন ডি সি সভা
<৪,১৪৯,২৮০>
অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৪৯। বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার গ্রেটার ওয়াশিংটন ডি সি শাখার সাধারণ সভার বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার সম্পাদকের চিঠি | ৬ জুন, ১৯৭১ |
বিজ্ঞপ্তি
জুন ২৬, ১৯৭১ এ নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া লীগের সাধারণ সম্মেলনে আমাদের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করতে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডি সি সভার একটি সাধারণ বৈঠক শুক্রবার, জুন ১৮, ১৯৭১ ইং রাত ৮ টায় ১৭৭২, ১৯ তম সেন্ট. এন. ডব্লিউ.- তে অনুষ্ঠিত হবে।
আমরা আপনার উপস্থিতি প্রার্থনা করি।
জুন ৬, ১৯৭১
স্বাক্ষরে –
সচিব,
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা
বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডি সি সভা
<৪,১৫০,২৮১-২৮২>
অনুবাদকঃ ফাহমিদা আক্তার বৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫০। বাংলাদেশের সংগ্রামের সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশের বিজ্ঞপ্তিসহ মার্কিন জনগণের প্রতি সাহায্যের আবেদন | “সেভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটির” প্রচারপত্র | ৮ জুন, ১৯৭১ |
হত্যাকাণ্ড – গণহত্যা – রক্তগঙ্গা – আতঙ্ক
এবং এখন অনাহার
সবকিছুই একটি খেলার অংশ
পূর্ব-পাকিস্তানের শোকাবহ ঘটনা
(বাংলাদেশ)
যুদ্ধ, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ চলমান খাদ্য ঘাটতির কারণে তৈরি হওয়া ধ্বংস ও উৎখাতের ফলে সাড়ে সাত কোটি পূর্ব-পাকিস্তানি বাসিন্দাদের মধ্যে ১ থেকে ৩ কোটি মানুষ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অনাহারের সম্মুখীন হবে। একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের বিয়োগান্তক পরিণতি ঠেকাতে হলে পশ্চিম পাকিস্তানি মুখপাত্রদের অমায়িক আশ্বাসের বিপরীতে এই প্রশ্নাতীতভাবে মরিয়া পরিস্থিতিতে এখন একটি বড় মাপের আন্তর্জাতিক ত্রাণ উদ্যোগের প্রয়োজন হবে।
অবস্থা স্বাভাবিক হতে যে কয় মাস প্রয়োজন, তা হয়তো মজুতকৃত খাদ্য দিয়ে জনসংখ্যাকে ধরে রাখতে পারার সময় অতিক্রম করে ফেলবে। যে কারণগুলো গণ দুর্ভিক্ষ চালিত করে সেগুলো একটি নির্দিষ্ট সীমার পর অপরিবর্তনীয়। যখন অনাহারী পরিবারগুলোর প্রথম কাহিনী এবং ছবি ছাপা হবে, তখন এমন আরো হাজার পরিবারকে রক্ষা করবার জন্য অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাৎক্ষণিক এবং শক্তিশালী আন্তর্জাতিক ভূমিকাই সম্ভবত একমাত্র প্রতিরক্ষা, যা পূর্ব বাঙলার জণগনের জন্য এখন আছে।
_________________
১২ই মে, পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান জাতিসংঘ মহাসচিবের পূর্ব-পাকিস্তানকে দেওয়া সহায়তার প্রস্তাব প্রত্যাখান করে।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় রক্তগঙ্গাটি বইয়ে দেয়ার পর, তিনি এখন প্রতিরোধকারীদের অনাহারে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করছেন।
নভেম্বরে ছিলো এক ঘূর্ণিঝড় যা অনেক প্রাণ নষ্ট করেছিল। এর কারণ ছিলো প্রকৃতি। মার্চে বাংলাদেশ আরেকটি আক্রমণের শিকার হয়েছিলো, পরিকল্পিতভাবে দেশটির যুবসমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং লাখো অসহায় মানুষকে শেষ করে দিচ্ছিলো। এর মূল হোতা ইয়াহিয়া খান।
______________________
বাংলাদেশের প্রয়োজন আমাদের সাহায্য সমাবেশ: শনিবার, জুন ১২
সাক্ষাৎ করুন পাকিস্তান দূতাবাসের সাথে ২ ই/ ৬৫ স্ট্রিট, কলাম্বাস সার্কেল প্রাঙ্গণে, অতঃপর ম্যাডিসন এভিনিউ; ৪২ স্ট্রিট ইউএন প্লাজার ফার্স্ট এভিনিউ, এবং স্ট্রিট ৪৭.
বক্তাগণ: কংগ্রেস সদস্যবৃন্দ এবং অন্যান্য প্রধান নাগরিকগণ।
বাংলাদেশের প্রয়োজন আপনাদের সাহায্য বৈঠক:
বৃহস্পতিবার, জুন ১০,রাত দশটা, কমিউনিটি চার্চ, ৪০ই/ ৩৫ স্ট্রিট
বক্তা: জয়প্রকাশ নারায়ণ
বিষয়: বাংলাদেশে সংগ্রামের নৈতিক ও মানবিক দিক
আপনার কংগ্রেস সদস্য, সিনেটর এবং সভাপতির নিকট লিখুন বাংলাদেশকে সাহায্য করতে। অনুরোধ করুন পাকিস্তানকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেওয়া স্থগিতকরণের, যতোক্ষণ না বাংলাদেশের ভীত-সন্ত্রস্ত ও অনাহারি জনগণ মুক্তি ও স্বাধীনতা পায়।
আপনাদের আর্থিক সহায়তা পূর্ব-পাকিস্তানকে সাহায্য করবে। এটি হবে করবিহীন। দয়া করে পূর্ব-পাকিস্তানের আমেরিকান লীগের নিকট প্রদানযোগ্য চেক সম্পাদন করুন। আপনার নাম ও ঠিকানাসহ মেইল করুন: সেইভ ইস্ট বেঙ্গল কমিটি ৩জে, ৫০ কেনিলওর্থ প্লেস, ব্রুকলিন, নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১১২১০.
<৪,১৫১,২৮৩-২৮৯>
অনুবাদকঃ অভি সরকার, জয়ন্ত সেন আবীর
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫১। নিউইয়র্কে সমাবেশসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতার ওপর প্রতিবেদন | বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার মুখপাত্র (নিউইয়র্ক) ‘বাংলাদেশ’ ভলিউম – ১ | ১৬ জুন, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ
সাহায্য পাঠান এই ঠিকানায়:
বাংলাদেশ ত্রান তহবিল
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউইয়র্ক, এন.ওয়াই. ১০০২৫
এবং/অথবা আপনার স্থানীয় চ্যাপ্টারের ঠিকানায়
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার অংগসংস্থা | |
ভলিউম ১, সংখ্যা ৩ | নিউ ইয়র্ক: জুন ১৬, ১৯৭১ |
নিউ ইয়র্কে সমাবেশ
নিউ ইয়র্ক : জুন ১২, ১৯৭১। বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা, বাংলাদেশ মৈত্রী সংস্থা এবং ইন্ডিয়ান অর্গানাইজেশনের যুগ্ম কমিটির যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে নিউ ইয়র্কে ১৯৭১ এর ১২ জুন তারিখে একটি গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সর্বস্তরের প্রায় এক হাজার মানুষ এ সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জনাব জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণ, ডঃ ইকবাল আহমাদ, জনাব উইলিয়াম রায়ান, ডঃ প্লাস্ট্রিক, মিসেস অ্যান টেলর, ডঃ আলমগীর, মিঃ এ পুলি। অশীতিপর মুক্তিযোদ্ধা জনাব পি সি মুখার্জী সভায় সভাপতিত্ব করেন।
ভারতের সর্বোদয় নেতা জয়প্রকাশ নারায়ণ তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে পূর্ব বাংলার জনগণ পাকিস্তান থেকে ছিন্ন হতে চায় নি যতক্ষণ পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক সরকার তাদের এক রকম ভাবে এ সিদ্ধান্ত নিতে তাদের বাধ্য করে। জনাব নারায়ণ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী কেননা ঐ অঞ্চলের সকল বাঙ্গালির জীবন মৃত্যুর প্রশ্নের সাথে জড়িত এটি। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি, বিশেষ করে মুক্ত পৃথিবীর প্রতি আবেদন জানান যাতে [বাংলাদেশ] এলাকার জনগণের ইচ্ছানুযায়ী সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতেতাঁরা তাঁদের আনুষ্ঠানিক সকল পদাধিকার প্রয়োগ করেন। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বৃহৎ শক্তিগুলোর গুরুদায়িত্বের কথা তিনি উল্লেখ করেন; তিনি সতর্ক করেন, বৃহৎ শক্তিগুলোর নেতৃবৃন্দ যদি বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং প্রয়োজনে সাড়া দিতে ব্যর্থ হন, তাঁরা বাঙালিদের এ দূর্ভোগের জন্য দায়ী থাকবেন।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত বিদ্বজ্জন ডঃ ইকবাল আহমাদ ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারের নির্মমতার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি পাকিস্তানের সামরিক সরকারকে “উগ্র ফ্যাসিস্ট সরকার” নামে আখ্যায়িত করেন।ডঃ আহমাদ বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসসদস্য মিস্টার উইলিয়াম রায়ান র্যালির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখার সময় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে সকল ধরণের সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকার। তিনি বাঙ্গালির স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের বাস্তবায়নের প্রতি সর্বাত্মক সমর্থন জানান। নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ প্লাস্ট্রিকও পূর্ব বাংলায় শান্তি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য পাঠানো স্থগিত করার আহ্বান জানান। তিনি সতর্ক করেন, বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যপ্রদান চলতে থাকলে, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নিজস্ব মৌলিক অধিকার দমনকারী গোষ্ঠীভুক্ত হবে যুক্তরাষ্ট্র।
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মিসেস অ্যান টেইলর, যিনি ইতোপূর্বে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ওয়াশিংটনে অনশন ধর্মঘট করেছিলেন, তিনি পূর্ব বাংলার নিরস্ত্র জনগনের বিরুদ্ধে সামরিক অস্ত্রে সজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মমতার প্রত্যক্ষ বিবরণ দেন, সর্বশেষে, আমেরিকার শুদ্ধচিন্তার জনগণের উদ্দেশ্যে বাঙালিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাস্তবায়নে সহায়তা করারআবেদন জানানতিনি। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত না হওয়া এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শেষ সৈন্যটি বাংলাদেশের মাটি থেকে সরে যাওয়া না পর্যন্ত পাকিস্তান সরকারকে দেয়া সব রকম সাহায্য-সহায়তা বন্ধ রাখতেবাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার ডঃ আলমগীর আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে তাদের সরকারের ওপর সর্বাত্মকভাবে প্রভাব খাটানোর জন্যআকুল আবেদন জানান।
সম্পাদনা পর্ষদ
চেয়ারম্যান: কে এম আলমগীর, সদস্য: গুলশান আরা বানু, আশরাফুল ইসলাম, মোয়াজ্জেম হোসেন, রফিকুল হুদা চৌধুরী
সম্পাদকীয়
মার্চের ২৬ তারিখ মধ্যরাতে জন্ম নেয়া আমাদের দেশটি অসহ্য বেদনা আর দুঃখের সময় পার করছে। অখণ্ড পাকিস্তানের ধারণার মৃত্যু হয়েছে, বাস্তবিক সকল প্রয়োজনেই। অনেক আত্মত্যাগের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা হয়েছে; এ ভূখণ্ডের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম মাত্রই শুরু হয়েছে। ইয়াহিয়ার পশ্চিম পাকিস্তানি ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ের শুরু এভাবেই।
ইয়াহিয়ার এজেন্ট টিক্কা খান মীরজাফর তৈরি করতে চাইবে; বাংলাদেশ থেকে কিছু বিশ্বাসঘাতক বেছে নেবে। তাদের কেউ কেউ হয়তো বন্দুকের নলের সামনে, চাপে পড়ে বক্তব্য দেবে। সত্যি জানার কোন সুযোগ আমাদের নেই, কেননা খবর পাবার কোন উপায় নেই, আমাদের সম্পূর্ণরূপে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। বিদেশী প্রতিনিধিরাও হয়তো এখন [বাংলার ভূখণ্ডে] ঢুকতে এবং সামরিক তত্ত্বাবধানে কিছু কিছু জায়গায় যেতে পারছেন।
ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি প্রাক্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সরাসরি ম্যান্ডেট পেয়েছিল আওয়ামী লীগ। দলটিকে অবৈধ ঘোষণা করে, পার্টির নেতাদেরকে “বিশ্বাসঘাতক” আখ্যা দিয়ে, ফ্যাসিস্ট সামরিক সরকার শহর-গ্রামে বোমা হামলা করল, ছাত্রাবাস-বাড়িঘর পুড়িয়ে দিলো, ট্যাঙ্কের তলায় চাপা দিল হাজার হাজার জনতাকে। এরই মধ্যে তারা মিলিয়নেরও বেশি মানুষ হত্যা করেছে; ৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে বাড়িঘর ফেলে পার্শ্ববর্তী ভারতে পালিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। ফ্যাসিস্ট সামরিক শাসকের মতে, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর সকলেই দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারী। সভ্য সমাজ স্তব্ধ হয়ে গেছে, শুধু তাই নয়, এ রকম তুলনাহীন বর্বরতার তীব্র নিন্দা জানানোরও ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
এ মুহূর্তে আমাদের করণীয় অনেক কিছুই। আমাদের এখনই এটা উপলব্ধি করতে হবে যে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ হিসেবে আমরা আর থাকতে পারবো না। জয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। জনমত গঠনের লক্ষ্যে সেমিনার আয়োজন করে, শিক্ষাদানের মাধ্যমে, ত্রাণ তহবিল সংগ্রহ করে, বিক্ষোভ সমাবেশ-র্যালির মাধ্যমে আমেরিকার জনগণকে আমাদের জানাতে হবে যাতে আমেরিকার সরকার পশ্চিম পাকিস্তানি ইয়াহিয়া সরকারকে সকল সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য পাঠানো বন্ধ করে। আমেরিকার জনগণকে আমাদের অনুরোধ করতে হবে তাঁদের প্রতিনিধি এবং নেতৃবৃন্দকে টেলিগ্রাম, চিঠি এবং মেমোরেন্ডাম পাঠানোর জন্য, যাতে করে নেতা-প্রতিনিধিরা উচিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন– বাংলাদেশ এবং এর জনগণের পক্ষ নেন। আমাদেরকে পাকিস্তান দূতাবাস ও ইসলামাবাদ থেকে প্রচারিত মিথ্যে প্রচারণার দিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সেগুলোকে সত্যি দিয়ে মোকাবেলা করতে হবে। বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী এখন আরও সুসংগঠিত। প্রতিদিন স্বেচ্ছাসেবকের সংখ্যা বাড়ছে হাজারে হাজারে, আরও বেশি করে, অধিক সমরাস্ত্র-যন্ত্রসজ্জিত প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ জেনারেল ওসমানী পূর্বাভাস দিয়েছেন, ১৪ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই দেশ দখলদার বাহিনীমুক্ত হবে।
নিশ্চয়ই বিজয় হবে আমাদের।
আমাদের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, দেওয়ান মাহবুব আলী নামেই যিনি বাঙালিদের পরিচিত, তিনি এ মাসে বুদাপেস্টে একটি রাজনৈতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করা অবস্থায় হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহে…)। আমরা তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। জাতি হারালো একজন সাহসী যোদ্ধাকে, একজন শ্রদ্ধেয় রাজনৈতিক নেতাকে, যাঁর শুন্যতা আরও অনেকদিন সহজে পুরণ হবে না।
মাওলানা ভাসানী এবং মুজাফফর আহমেদের সংহতি প্রকাশ
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) এর নেতা মাওলানা ভাসানী এবং অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে যাবতীয় বস্তুগত এবং নৈতিক সমর্থন দেয়ার জন্যউভয় নেতাই বিশ্বের গণতান্ত্রিক জাতিগুলোর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যে [বাংলাদেশের] যন্ত্রণার কাহিনী
ঢাকা থেকে বরিশাল এবং খুলনা হয়ে যশোরে সম্প্রতি ভ্রমণ করে আসা জনৈক আমেরিকান বরিশালে সেনাবাহিনীর বর্বরতার বর্ণনা দেন নিম্নোক্ত রেকর্ডকৃত ভাষ্যে: “যেখানেই গিয়েছি, সেনাবাহিনীর বর্বরতার চিহ্ন সেখানেই ছিল স্পষ্ট। বরিশালে প্রতি দিন প্রায় ১৫-২০ জন লোক নিহত হচ্ছে হিন্দু হওয়ার অপরাধে এবং আওয়ামী লীগের কর্মী সন্দেহে। ঠিক দুপুর ১টার দিকে ছাত্র-তরুণ যে কেউই মৃত্যুর ডাক শুনতে পেতে পারে।ক্ষমা প্রদর্শনের নাম করে লোকদেরকে ধরে এনে হত্যা করা হয়… গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, এখনও চলছে… সেনাবাহিনীর এহেন বর্বরতার পরও মুক্তিবাহিনী তাদের মিশন চালিয়ে যাচ্ছে সফলতার সাথে… সব কিছ স্বাভাবিক রয়েছে মর্মে সরকারের দাবি নেহাতই প্রহসন…”
শরণার্থীরা ফিরছে না
এ পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পূর্ব বাংলা থেকে ভারতে বর্তমানে প্রায় ৫.৫ মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে সফররত বিশ্ব ব্যাঙ্কের সরেজমিন দলের আগমন উপলক্ষে পাকিস্তান সরকার শরণার্থীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেছে এবং তাদেরকে দেশে ফিরে আসার অনুরোধ জানিয়েছে। তবে, পাকিস্তান শরণার্থী ত্রাণ ব্যবস্থাপনার ইন্টারএজেন্সি কমিটির চেয়ারম্যান জানাচ্ছেন, এখন পর্যন্ত ‘কোন শরণার্থী ফিরে এসেছে এমন কোন সংবাদ আসে নি’। ইয়াহিয়া খানের চাল জনগণকে টলাতে পারে নি।
বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা (নিউ ইয়র্ক)
-এক নজরে কার্যক্রমসমূহ
ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা, যা বর্তমানে বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা নামে পরিচিত, সেটি ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা হিসেবে গঠিত হয়। এর পর ১৯৭০ সালের ১২ ডিসেম্বর এর নাম পালটে ইস্ট পাকিস্তান লীগ অব আমেরিকা রাখা হয়। গঠিত হবার পর থেকে দেশে-বিদেশে বাঙালিদের কল্যাণে লীগ বিভিন্ন কার্যক্রম চালু করে। বাঙালিদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটনায় লীগের কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হল:
সাইক্লোন: পূর্ব বাংলায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে লীগ “সুতরাং” চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী আয়োজন করে। পূর্ব বাংলায় বন্যাদূর্গতদের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের ঔদাসীন্যের প্রতিবাদে লীগ নিউ ইয়র্কে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে। পূর্ব বাংলার ঘূর্ণিঝড়দূর্গতদের জন্য খাদ্যশস্যবাহী জাহাজ করাচীতে পাঠানোর প্রতিবাদে লীগ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সরকার, ইসলামাবাদে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত, ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের কনসালকে চিঠি, টেলিগ্রাম প্রেরণ করে। এ ছাড়াও, পূর্ব বাংলার প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক আচরণের কথা উল্লেখ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনে স্মারকলিপি পেশ করে এবং পূর্ব বাংলার জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার রক্ষার জোরালো সুপারিশ করে।
সাধারণ নির্বাচন: প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে ৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে পাঠানো টেলিগ্রামে লীগ প্রতিপক্ষকে ধসিয়ে দিয়ে তাঁদের এ জয়ে অভিনন্দন জানায় এবং আওয়ামী লীগের ছয় দফা কর্মসূচীর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে। পূর্ব বাংলারস্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে লীগ ইয়াহিয়া খানকেও টেলিগ্রাম প্রেরণ করে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ঘোষণা: পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে সেনাবাহিনী দমন করা শুরু করলে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। জাতির ডাকে সাড়া দিতে লীগ সম্ভাব্য সব কিছুই করেছে। লীগ সাথে সাথেই স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে এবং ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধ করতে সর্বাত্মক কর্মসূচী গ্রহণ করে। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টদের এবং যুক্তরাজ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রীদের উদ্দেশ্যে চিঠি ও টেলিগ্রাম প্রেরণ করা হয়, তাঁদেরকে বর্তমান সংকটের ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে এবং পূর্ব বাংলায় গণহত্যা বন্ধ করতে তাঁদের হস্তক্ষেপ করতে জোরালোভাবে অনুরোধ জানানো হয়।
অনতিবিলম্বে পাকিস্তান সরকারকে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের সকল প্রকার সাহায্য বন্ধ করার এবং গণহত্যা বন্ধ করতে সাহায্য করার অনুরোধ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং কংগ্রেসের সদস্যদেরকে চিঠি এবং স্মারকলিপি প্রেরণ করা হয়। লীগের প্রতিনিধিরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাতিসংঘের প্রায় সকল সদস্যরাষ্ট্রের দূতদের সাথে দেখা করেন এবং পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদলের বর্বরতার প্রতিবাদ জানানোর অনুরোধ করেন, বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার বাস্তবায়নে সমর্থনলাভের চেষ্টা করেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব জনাব উ থান্টকেও টেলিগ্রাম পাঠিয়ে অনুরোধ জানানো হয় এ সংকটে হস্তক্ষেপ করার। জাতিসংঘ সনদের অনুচ্ছেদ ৯৯ অনুসারে তাঁকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠানোর এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ত্রাণকার্যের ব্যয়ভার বহনের অনুরোধ জানানো হয়। জনাব থান্টের সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যোগাযোগ স্থাপনের বেশ কয়েকটি চেষ্টা করা হয়, যদিও সবগুলোই ব্যর্থ হয়।
সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড: ৩০ মার্চের একটি বৈঠকে জনাব নুরুল আমিন চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটি গঠন করা হয়। পূর্বেই গঠিত কার্যকমিটিকে ৪ এপ্রিলের বৈঠকে বর্ধিত করা হয়। লীগের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২৫ এপ্রিল, জনাব শাহাদাত হোসেনকে চেয়ারম্যান পদে অভিষিক্ত করে একটি নির্বাচন নির্ধারণ কমিটি গঠন করা হয়।
চ্যাপ্টার নিউজ
- বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার বৃহত্তর ওয়াশিংটন ডিসি চ্যাপ্টার বাংলাদেশের স্বার্থ আরও এগিয়ে নিতে পুরোদমে কাজ করে চলছে। চ্যাপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে শক্তিশালী তদবির ক্যাম্পেইন চালু করেছে, যাতে বাংলাদেশের ইস্যুটি প্রমাণ করার জন্য রুটিন অনুযায়ী লীগ সদস্যদের একটি গ্রুপ পর্যায়ক্রমে সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদেরকে প্রাসঙ্গিক রচনাসমগ্র প্রদান করবে। এরুপ প্রচেষ্টায় খুবই ফলপ্রসূ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। লীগ, স্থানীয় বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ এসোসিয়েশন চ্যাপ্টার এবং আমেরিকান ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় ভারত থেকে আগত সর্বোদয় নেতা জ্যোতিপ্রকাশ নারায়ণের জন্য সেমিনার আয়োজন করে। আরও উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লীগ তহবিল সংগ্রহের অভিযান জোরেসোরে শুরু করেছে। লীগের সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে লীগের তহবিলে লীগের প্রত্যেক সদস্য মাসিক বেতনের অন্ততঃ ৫% প্রদান করবেন। এ অঙ্গীকারের পক্ষে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।
- আইওয়ার মেসন সিটির ডঃ বদরুদ্দোজা স্থানীয় চ্যানেলে একটি টিভি প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন, যেখানে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা ঘোষণাপূর্ব ঘটনাসমূহ ব্যাখ্যা করেছেন। তাছাড়াও তিনি তাঁর স্থানীয় আমেরিকান বন্ধুদের মাধ্যমে আমেরিকান সিনেটর এবং কংগ্রেসসদস্যদেরকে ৪০টিরও বেশি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন।
- ১৯৭১ এর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল হাউজে বাংলাদেশের ওপর একটি প্যানেলের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। জনাব বিমান বসু এবং তাঁর স্ত্রী, ডঃ রশিদুজ্জামান এবং অন্যান্যরা এ আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনা শেষে বাংলাদেশের যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য ইন্টারন্যাশনাল হাউজের সদস্যদের পক্ষ থেকে তহবিল সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
- ন্যাশভিল, টেনেসির ডঃ জিল্লুর রহমান আলহার(আজহার?), ডঃ হাবিবুর রহমান, ডঃ ইউনূস, ডঃ ইসমাইল এবং আরও কয়েকজন তাঁদের স্থানীয় চ্যানেলে টিভি প্রোগ্রাম আয়োজন করেন এবং তাতে বাংলাদেশে সেনাসংঘটিত ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের বিশদ বিবরণ দেন।
বাংলাদেশ লীফ অফ আমেরিকার শাখা সমূহ:
–
১) নিউ ইয়র্ক
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা, ইনক.
২৬৬৭ ব্রডওয়ে
নিউ ইয়র্ক, এন. ওয়াই. ১০০২৫
সভাপতিঃ কে. এস. আহমেদ
সচিবঃ ফাইজুর রাহমান
কোষাধ্যক্ষঃ আব্দুল হক
২) ক্যালিফোর্নিয়া
আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ
৪১৬ সিনক্লেয়ার অ্যাভিনিউ
গ্যানডেল, ক্যালিফ. ৯১২০৬
সভাপতিঃ এস. এম. এস. দোহা
৩) কলোরাডো
বাংলাদেশ অফ আমেরিকা
৩৭২৮ পূর্ব ৭ম অ্যাভিনিউ
ডেনভার, কলো. ৮০২০৬
সভাপতিঃ জেরাল্ড আর. হেনড্রিকস
সচিবঃ এম. শের আলী
৪) ম্যাসাচুসেটস
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
২৪ পিবডি টেরেস, অ্যাপার্টমেন্ট ৫১০
বোস্টন, ম্যাস.
সভাপতিঃ খুরশেদ আলম
সচিবঃ এম. আলমগীর
৫) ইলিনয়
বাংলাদেশ অফ আমেরিকা(আরবানা শাখা)
১১০৭ ওয়েস্ট গ্রীন স্ট্রিট, আরবানা, ইলিনয় ৬১৮০১
সভাপতিঃ এম. রাহমান
সচিবঃ এ. এস. সাহাব-উদ-দীন
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা (শিকাগো শাখা)
৫২৪৫ দক্ষিণ কেনউড অ্যাভিনিউ
শিকাগো ১১১.৬০৬১৫
সভাপতিঃ এফ. আর. খান
৬) অহাইও
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
৫১১৫ প্রেসকাট অ্যাভিনিউ #ডি
ডায়টন, অহাইও ৪৫৪০৬
সভাপতিঃ এ. কে. এম. আমিনুল ইসলাম
সচিবঃ এ. এইচ. জাফরুল্লাহ
৭) নর্থ ক্যারোলিনা
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
২১৮ ব্রড স্ট্রিট (পূর্ব)
এলিজাবেথ সিটি, এন. সি. ২৭৭০৯
সভাপতিঃ এ. এল. চৌধুরী
৮) মিশিগান
পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা
ইনক. ৩১৩০ কাস অ্যাভিনিউ
ডেট্রয়েট, মিশ. ৪৮২০১
সভাপতিঃ আব্দুস শহীদ
সচিবঃ মুস্তাফিজুর রাহমান
৯) পেনসিলভানিয়া
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
৫৯০৩ ফিফথ অ্যাভিনিউ
পিটসবুর্গ, পেন.
সভাপতিঃ কিউ. এম. আহমেদ
১০) টেক্সাস
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
পিও বক্স ৩৩২৫
কলেজ স্টেশন, টেক্সাস ৭৭৮৪০
সভাপতিঃ হাফিজুর রাহমান
সম্প্রতি বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ-এ পরিবর্তিত হয়েছে।
১১) ওয়াশিংটন ডি.সি.
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
পিও বক্স ৪৪৬৫
ব্রুকল্যান্ড স্টেশন, ওয়াশিংটন ডি.সি. ২০০১৭
সভাপতিঃ এনায়েতুর রহিম
সচিবঃ মহসিন আর. সিদ্দিক
১২) টেনেসি
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা, ইনক.
৮০৮ হিলউড বুলভার্ড
ন্যাশভিল, টেনেসি ৩৭২০৯
সভাপতিঃ জিল্লুর রাহমান আতহার
সচিবঃ প্রযোজ্য নয়
১৩) কেন্টাকি
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা
২০৮ জে উইলিয়ামসবার্গ রোড
লেক্সিংটন, কেন্টাকি ৪০৫০৪
সভাপতিঃ জর্জ এইচ. ব্র্যাডবয়েস জুনিয়র
সচিবঃ মুখতার এম. আলী
কোষাধ্যক্ষঃ শামসুল এইচ. মোল্লা
<৪,১৫২,২৯০-২৯৩>
অনুবাদকঃ মুশাররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১৫২। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালিদের তৎপরতা সংক্রান্ত তথ্য | বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগের মুখপাত্র “বাংলাদেশ নিউজ লেটার’ নং ৪ | ১ জুলাই,১৯৭১ |
বাংলাদেশ নির্ভর করছে তোমাদের উপর
বাংলাদেশে বর্বর সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে হাজার লক্ষ বাঙালি মুক্তি ও ন্যায়ের পতাকাতলে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। একটি সংরক্ষিত অনুমান হচ্ছে যে, পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে যারা নিহত হয়েছে তাদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি। প্রায় ষাট লক্ষ মানুষ তাদের ঘর ছাড়তে এবং নিরাপত্তা ও আত্মরক্ষার জন্য সীমান্তের ওপারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। প্রতিদিন আরও হাজার লক্ষ মানুষ সৈন্যদের বর্বরতা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, হত্যার কাহিনী নিয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে। ক্লান্তি ও অবসাদে হাজার হাজার মানুষ যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করছে। আরও হাজার মানুষ কলেরা ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভারতের জনাকীর্ণ শিবির গুলোতে মৃত্যুবরণ করছে এবং এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এই মানব প্রস্থানের মাত্রা মানব ইতিহাসে নজিরবিহীন। ভারত সরকার ও জনগন তাদের নিজস্ব সীমাবদ্ধতার মাঝেও লাখো অসহায় শরনার্থীদের দেখাশোনা করার মাধ্যমে অতিমানবিক কাজ করেছেন। আমাদের এই গভীর সংকটের সময় তাদের আমাদের প্রতি এই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঙালিরা তাদের জীবন উৎসর্গ করছে এটি নিশ্চিত করার জন্য যাতে আমরা ভবিষ্যৎ সময়ে মুক্ত ও গর্বিত বাঙালি হিসেবে বাচতে পারি। তাদের বীরত্ব ও সংকল্পের কাহিনী প্রতিদিন সংবাদমাধ্যম গুলোতে প্রচারিত হচ্ছে।
কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রয়োজনের সময় আমরা আমাদের মাতৃভূমির জন্য কি করছি? আমরা যারা পাশ্চাত্য জীবনের আরাম ও আয়েশে বসবাস করছি, যারা মৃত্যু, ধ্বংস ও দুর্যোগের দৃশ্যপট থেকে সরে এসেছি তারা নিজেদের প্রশ্ন করতে পারিঃ আমরা কি দেশের স্বার্থে আমাদের সর্বোচ্চ দিয়েছি? ব্যক্তিগতভাবে এবং সমষ্টিগত ভাবে, পাকিস্তানে প্রেরিত সকল সহায়তা বন্ধ করার জন্য আমাদের নিজেদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পরিমান চাপ প্রয়োগ করতে হবে এবং পাকিস্তানে সহায়তা পাঠানোর বিরুদ্ধে শক্ত জনমত সৃষ্টির জন্য সকল সম্ভাব্য কার্যাবলি গ্রহণ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার খুবই প্রয়োজন। একটি ডলার আমাদের লক্ষ্য পুরণে অনেকখানি সহায়তা করতে পারে। আমাদের অঙ্গীকার হোক যে, আমাদের বেতনের কিছু অংশ আমরা অতীব প্রয়োজনের জন্য রাখব এবং বাকি অংশ থাকবে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য। আমরা কি এর বাইরে কিছু করার সামর্থ্য রাখি?
পশ্চিম উপকুলের বাংলাদেশ দলের জন্য সমন্বয়ক পরিষদ
বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর সাথে সাথে সকল বাঙ্গালির স্বতস্ফুর্ত প্রতিক্রিয়া সমন্বয় ও বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। কার্যকরী যোগাযোগ ও সমন্বয়ের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পৌঁছানর জন্য, সান ফ্রান্সিসকোতে ২২ মে, ১৯৭১ একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল যাতে লস অ্যাঞ্জেলস, বার্কলে, সটানফোর্ড ও সান ফ্রান্সিসকো এর বাঙালি অধিবাসীদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমুহ গ্রহণ করা হয়েছেঃ
১। প্রধান সমন্বয়ক দল লস অ্যাঞ্জেলসে অবস্থান করবে এবং পশ্চিম উপকুলের বার্কলে, সান ফ্রান্সিসকো, সটানফোর্ড, সান ডিয়েগো, সান্টা বারবারা, ডেনভার (কলোরাডো) এবং টাসকন (অ্যারিজোনা) এর অন্যান্য দলগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে। হাওয়াই, ডালাস এবং পিটসবার্গ (কানসাস) এর আরও দলসমুহের সাথে সমন্বয় স্থাপন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
২। নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো ও মিশিগানের দলসমুহের সাথে প্রধান সমন্বয়ক দল কার্যকরী যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গৃহীত সকল নির্দেশনাসমুহ পশ্চিম উপকুলের অন্যান্য সকল দলসমুহের কাছে পৌঁছে দেবে।
৩। সকল দলসমুহ জরুরি তথ্য সমূহ নিজেদের মধ্যে বিনিময় করবে এবং সকল স্থানীয় সদস্যদের কাছে সরবরাহ করবে।
৪। মোট সংগ্রহের ৫ শতাংশ অর্থ পশ্চিম উপকুলের দলসমুহ প্রচার ও অন্যান্য সমন্বয় খরচের উপরি ব্যয় বহন করার উদ্দেশ্যে লস অ্যাঞ্জেলসের দলের কাছে প্রেরন করবে।
৫। সাধারণত প্রতিটি দল আমাদের ভুমিতে সংঘটিত পাকিস্তানী সৈন্যদের নির্মমতা ও পাশবিকতার উন্মোচনের জন্য প্রচারনা অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশের পুর্ণ স্বাধীনতার বৈধ দাবিকে আমেরিকার সাধারণ জনগন ও বিশেষত আমেরিকান প্রতিনিধিদের মাঝে প্রচার করবে।
৬। তহবিল সংগ্রহের বিবরণী লস অ্যাঞ্জেলসে জমা দিতে হবে।
৭। সকল অধিবাসী ও সহানুভূতিশীলদের প্রধান তালিকা প্রস্তুত করবে এবং সকল দলের প্রধান সমন্বয়ক এমন ব্যক্তিদের নাম ও ঠিকানা লস অ্যাঞ্জেলসের সমন্বয়কদের কাছে প্রেরণ করবে।
জনসভা
বৃহস্পতিবার, ২৪ জুন, রাত ৮ টায় ফ্রেন্ডস মিটিং হাউস, ফোর্থ এন্ড আর্ক ষ্ট্রীট, ফিলাডেলফিয়া, পেনসিলভানিয়াতে একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। যার উদ্দেশ্য ফ্রেন্ডস অফ ইস্ট বেঙ্গল নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা যার কাজ হবে ১। আমেরিকার জনগণকে পুর্ব বাংলার ঘটনাবলী সম্পর্কে অবহিত করা ২। ত্রাণ কার্যাবলিতে সহায়তা প্রদান ৩। পাকিস্তানে আরও সহায়তা প্রদানের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন যতদিন না তারা পুর্ব বাংলায় তাদের ত্রাসের রাজত্বের সমাপ্তি ঘটাচ্ছে। এই জনসভার আয়োজন করেছেন প্রফেসর চার্লস কাহ্ন ( ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া), রেভারেন্ড রিচার্ড এল কিচ ( সেন্ট্রাল ব্যাপিস্ট চার্চ, ওয়েন) এবং অন্যান্যরা। সকলকে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হল।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশ র্যালি
বাংলাদেশের সমর্থনে ১২ জুন, ১৯৭১ নিউইয়র্কে একটি বিশাল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিতে কানাডা ও ইউনাইটেড স্টেট এর বিভিন্ন জায়গা থেকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠী সমূহ ও বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে প্রায় ২০০০ জন যোগদান করেছিলেন। বাংলাদেশে সংগ্রামী লক্ষ মানুষের জন্য প্রবাসে বসবাসকারী বাঙালিদের অসাধারণ উদ্বেগের প্রতিচ্ছবি ছিল এই র্যালি।
অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগানের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সফল করার জন্য প্রয়োজনে যে কোন আত্মত্যাগের প্রত্যয় ব্যক্ত করে। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনতার বৈধ দাবিকে সমর্থনের জন্য আমেরিকান জনগণকে এগিয়ে আসার নিবেদন করে।
ইন্ডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম কমিটি ও আমেরিকান ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশের সহায়তায় এই র্যালির আয়োজন করে বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকা। সকলের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করেন জনাব ইকবাল আহমেদ ( পশ্চিম পাকিস্তানী পণ্ডিত ) এবং জনাব জয়প্রকাশ নারায়ণ (ভারতীয় সর্বোদয় নেতা)
বিস্তারিত সংবাদসমুহঃ
বাংলাদেশের উপর একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে ইউনিভার্সিটি অফ উইন্ডসর, কানাডা তে জুলাই ৭, ১৯৭১ তারিখে সন্ধ্যা ৭ টায়। সম্মেলনের আলোচ্য বিষয় হল দ্য কেস ফর বাংলাদেশ। বক্তাদের মধ্যে আছেন প্রফেসর রন ইন্ডেন, ডিপার্টমেন্ট অফ হিস্ট্রি, ইউনিভার্সিটি অফ শিকাগো, প্রফেসর র্যালফ নিকোলাস, ডিপার্টমেন্টঅফ অ্যান্থ্রোপোলোজি, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, প্রফেসর পিটার বারটোক্কি, ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যান্থ্রোপোলোজি এন্ড সোশিয়লজি, অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি, মিশিগান, আজিজুল হক খন্দকার, ডেট্রয়েট থেকে আগত বিডিএল ডিরেক্টর। সভার স্থান হল দ্য রুম, অ্যাসাম্পশন কলেজ, ৪০০ হুরন লাইন, উইন্ডসর, কানাডা। সকলে সভায় যোগদান করার জন্য আমন্ত্রিত।
বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগের বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের আগামী সভা অনুষ্ঠিত হবে ম্যাডিসন, উইসকনসিন এ শনিবার ৩ জুলাই ১৯৭১ তারিখে দুপুর দেড়টার সময়। বিডিএল এর সকল সদস্য এবং সকল শুভানুধ্যায়ীদের এই সভায় যোগদানে স্বাগতম জানানো হল। যদি আপনি আসার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তবে অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করুন বিডিএল,৪০৮ ভার্জিনিয়া টেরেস, ম্যাডিসন, উইসকনসিন। (ফোনঃ ৬০৮-২৩৩-০২৫৩)
বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র ওয়াশিংটনে স্থাপিত হয়েছে যার দায়িত্বে আছেন জনাব আব্দুর রাজ্জাক খান। এই দপ্তর সকল ওয়াশিংটন ডি সি তে তদবিরজনিত সকল কার্যক্রম সমন্বয় করবে। যদি আপনার তদবির জনিত কাজে কোন নির্দেশনা দরকার হয় তবে যোগাযোগ করুন জনাব খান (৭০৩৯৩১-২৯৯৭)
সান ফ্রান্সিসকোতে সমাবেশ ও পদযাত্রা
আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ, সটানফোর্ড শাখা সান ফ্রান্সিসকো বে এরিয়ার অন্যন্য বেশ কিছু সংগঠন ও অন্যান্য লীগ শাখাগুলোর সাথে একত্রে বাংলাদেশী জনগনের সংগ্রামকে সমর্থন দানের জন্য জুন ২ তারিখ, বুধবারে একটি সমাবেশ ও পদযাত্রার আয়োজন করেছে ।
সান ফ্রান্সিসকোতে ইউ এস ফেডারেল ভবনের সামনে পদযাত্রার মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে বেশ কয়েকজন বক্তা বাংলাদেশের বিয়োগান্তক ঘটনার বর্ননা দেন, এই বিয়োগান্তক ঘটনার প্রতীক হিসেবে একটি কালো কফিন ফেডারেল ভবনের সিঁড়ির উপর রাখা হয়। লোকজন বাহুতে কালো ব্যাজ পরিধান করেছিল এবং প্রচারপত্র বহন করে এই গনহত্যার নিন্দা জানাচ্ছিল এবং এই দুঃখজনক ঘটনায় ইউ এস এর ভুমিকা এই কফিনের চারপাশে একটি নিরব প্রতিবাদ হিসেবে ভুমিকা পালন করছিল। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন বার্কলে, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ক্লেইন্ডর্ফের,প্যাসিফিক স্টাডিস সেন্টারের মিসেস জুডিথ কার্নয়, সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কারস পার্টির পালো আল্টো, জনাব মার্ক স্নেইডার এবং আমেরিকান লীগ ফর বাংলাদেশের ডঃ রফিকুর রহমান। বক্তারা ইঙ্গিত করেন যে ইউনাইটেড স্টেটস সরকার এখনও পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে গভীর সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্বন্ধ রক্ষা করে চলছে এবং পুর্ব বাঙালিদের উপর ভয়ঙ্কর গনহত্যা ও রাজনৈতিক নিপীড়নের বিপক্ষে দাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করেছে।
সমাবেশের শেষে বিক্ষোভকারিদের একটি বড় অংশ কালো বাহু বন্ধনী পরিধান করে আড়াই মাইল দূরে অবস্থিত পাকিস্তান দুতাবাসে পদযাত্রা করে। এই পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন আমেরিকান। এই পদযাত্রার উদ্দেশ্য বহনকারী প্রচারপত্র পথচারী, দোকান মালিক এবং পদযাত্রার পথে অবস্থিত সকল এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে বিতরন করা হয়। পদযাত্রার সময় যারা বাঙালি কৃষকদের পোশাক পড়ে ছিলেন তারা কাধে কফিন বহন করছিলেন। তারা কপালে কৃত্তিম রক্তে রাঙ্গা ব্যান্ডেজ পরিধান করেছিলেন পাকিস্তানী গনহত্যার শিকার বাঙালি জনগনের দুঃখ দুর্দশাকে তুলে ধরার জন্য। স্লোগান যেমন” জয় বাংলা” বা “ বাংলাদশের জয়” পদযাত্রার সময় বারবার উচ্চারন করা হয়েছিল।
পাকিস্তান দুতাবাসে পৌঁছে বিক্ষোভকারিরা দুতাবাস ভবনের সামনে একটি সংক্ষিপ্ত পদযাত্রা করেছিল যেখানে ডঃ রফিকুর রহমান একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠ করেছিলেন।
বাংলাদেশ লীগ সম্মেলন
বাংলাদেশ লীগ অফ আমেরিকার জাতীয় সম্মেলন নিউইয়র্কে জুন ২৬, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। সকল বাংলাদেশী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সম্মেলনে যোগদানের অনুরোধ করা হল।
বাংলাদেশী সাহিত্য,বোতাম ও বাম্পার স্টিকারের জন্য বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ, শিকাগোতে যোগাযোগ করুন।
প্রচারে
বাংলাদেশ ডিফেন্স লীগ
৫২৪৫ এস কেনঊড, শিকাগো, ৩ , ৬০৬১৫
<৪,১৫৩,২৯৪>
অনুবাদকঃ মুশাররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
১৫৩। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সমর্থক ডঃ ও মিসেস গ্রিনোর প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির ধন্যবাদ পত্র |
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশনের চিঠিপত্র |
১৪ জুলাই, ১৯৭১ |
ডঃ ও মিসেস ডাব্লিউ বি গ্রিনো ১৪ জুলাই, ১৯৭১
১২০৩ পপলার মিল রোড
বাল্টিমোর, মেরিল্যান্ড ২১২১০
ডঃ গ্রিনো
গত মাসের শেষের দিকে জনাব শাহরিয়ার আহমেদের কাছে পাঠানো চিঠির প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এই পত্র। যদিও আমরা, ইউনিভার্সিটি অফ অরিগনের বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন, সিনেট কমিটি ও হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সদস্যদের কাছে লিখতে সমর্থ হইনি, আমাদের অন্যান্য দল, বিশেষত লস অ্যাঞ্জেলস এর আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ এই বিষয়ে লিখেছে। যাইহোক, আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি ছাত্ররা নিম্নলিখিত ব্যাক্তিদের কাছে লিখেছিঃ
১। ওয়াশিংটন ও অরিগন রাজ্যের ৮০ জন অধ্যাপক
২। রাজ্য সিনেট এর সকল সদস্য
৩। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ এর সকল সদস্য
৪। অরিগন রাজ্যের সকল গুরুত্বপুর্ন সংগঠন
৫। অরিগন রাজ্যের গুরুত্বপুর্ন ব্যক্তিবর্গঃ বিচারক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, দলিলপত্র নিয়ে কাজ করে এমন অধিবাসীবৃন্দ
আমরা মুলত আমাদের কার্যক্রম অরিগন ও ওয়াশিংটন রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছি। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গের একটি তালিকা তৈরিতে ব্যস্ত আছি।আমরা রাজ্যব্যাপী অন্যান্য দল গুলোর সাথেও সর্বক্ষন যোগাযোগ রাখছি।
আমাদের প্রচেষ্টাকে সমন্বয় করার জন্য আমরা মিসেস র্যাচেল জর্ডান ও অন্যান্য দল সদস্যদের সাথেও যোগাযোগ রাখছি।
আমরা আপনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার হাত বাড়াতে চাই বাংলাদেশের স্বার্থকে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে আপনার অসাধারণ কাজের জন্য। আপনার কাছ থেকে পরবর্তী সময়ে যেকোন পরামর্শ ও চিন্তাভাবনা অবশ্যই সাদরে গ্রহণ যোগ্য হবে।
ধন্যবাদ
বিনীত নিবেদক
শওকাত হাসান
সভাপতি
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
প্রযত্নে বৈদেশিক ছাত্র সংগঠন
কক্ষ ৩১৩ ইএমইউ
ইউনিভার্সিটি অফ অরিগন
ইউজিন, অরিগন ৯৭৪০৩
<৪,১৫৪,২৯৫-২৯৭>
অনুবাদকঃ মুশাররাত আলম মৌ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৫৪। বাংলাদেশের ঘটনায় ইন্ডিয়ানা মিডওয়েষ্টার্ন কম্যুনিটির উদ্বেগ ও তৎপরতা সম্পর্কে প্রতিবেদন | জনাব মুহিতকে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা এক বাড়ী মালিকের চিঠি | ২৬জুলাই,১৯৭১ |
ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ
সোয়ের্হন হল, পশ্চিম ১১৭
ব্লুমিংটন, ইন্ডিয়ানা ৪৭৪০১
জুলাই ২৬, ১৯৭১
প্রিয় মুহিত,
টেলি নংঃ
৮১২-৩৩৭-৩৭০৯
আশা করি পূর্ব পাকিস্তানে যে নজির বিহীন ঘটনা ঘটেছে তা সম্পর্কে আপনি সন্দেহাতীতভাবে অবগত আছেন। আক্ষরিক অর্থে বহুলোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং হাজার হাজার গ্রাম ভূমিস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৭ লক্ষ শরণার্থী ভারতে চলে গেছে এবং এদের অনেকে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। ১০ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষ অনাহারে জীবনযাওইন করছে। এমন কি মধ্যপাশ্চত্য সম্প্রদায়গুলো এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে এবং স্থানীয়সম্প্রদায় যা চ্যান্সেলর, ডিন ও তিন থেকে চারটি বিভাগীয় চেয়ারম্যান দ্বারা গঠিত তারা বিভিন্ন সম্প্রদায় শিক্ষার্থী ও অনুষদ থেকে ইতিমধ্যেই বড় ধরনের অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে । সাহায্যের আবেদন করে লেখা আমাদের চিঠি এবং পুস্তকেরর বিবরণ ৪টি সংবাদপত্র দ্বারা গৃহিত হয়েছে। সংবাদপত্রগুলো-তা ছাপাতে সম্মত হয়েছে।
আমি জানাতে খুবই আগ্রহী যদি, এটা সম্ভব কিনা, একই ধরনের একটি কমিটি গঠন করে আমাদের সম্প্রদায়ের কাছে থেকে অর্থ সংগ্রহ করা। এই বিশাল আকারের জনগোষ্ঠীর খুধা নিবারণ ও বস্ত্রের জন্য প্রচুর পরিমাণ অর্থ সহায়তা দরকার।
যদি আপনি সাহায্য করতে চান তবে ব্যাখ্যা দিন, নিঃসংকোচে আমাদের আবেদন চেয়ে লেখা চিঠিটা ব্যবহার করতে পারেন এবং মেইল সংবাদপত্র ও চার্চের যে সংগঠনগুলো আছে তাদের মাধ্যমে অনুরোধ করতে পারেন।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান যা আমেরিকা সরকারের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বিভাগ দ্বারা রেজিস্টার্ড হয়েছে। এটির সরাসরি সংযোগ রয়েছে-
১। অক্সফাম, দ্যা ব্রিটিশ রিলিফ অরগানাইজেশন।
২। ভারত সরকার।
৩। বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার, যে কিনা পূর্ব পাকিস্তানে সরাসরি সহায়তা প্রদানের বিষয়টি অনুসন্ধান করেছিল। এর সঞ্চয়ী হিসাব বৈধভাবে চালু করা হয়েছিল তদারকির জন্য। যদি আপনি অর্থ সংগ্রহের জন্য প্রচারাভিযান শুরু করতে পারেন এই অ্যাসোসিয়েশান তোমাকে একটি প্রাপ্তি রশিদ সরবরাহ করবে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই প্রতিষ্ঠানটিকে খুব ভালো ভাবে জানি।
একান্ত আন্তরিকতায়
স্বাক্ষরে
(এফ. বারি. মালিক)
দ্রষ্টব্য – আমি অবশ্যই ২২ আগস্ট ওয়াশিংটন আসবো এবং ২৩ আগস্ট চলে যাবো। আমি তোমার সাথে ১০ই আগস্ট থাকবো। আমার টেলিফোন (৮১২) ৩৩২-৫৯৮৫। আমি এখানে ১৯৭১ সালের ১৬ই আগস্ট পর্যন্ত থাকবো।
সাহায্যের জন্য আবেদন
*ওয়াশিংটন পোস্টঃ “পূর্ব পাকিস্তানের গত নভেম্বরে হওয়া সাইক্লোন এবং সামুদ্রিক জোয়ারের কারণে এবং গৃহযুদ্ধের ফলে খাদ্য বন্টন সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। এটি আজ স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছে। প্যারিসে ১১ জাতি ত্রান কার্যক্রমের সাথে যুক্ত প্রতিনিধি দল আশঙ্কা করেছিল যে, প্রায় ৭৪ লক্ষ বাসিন্দা যার ৩০ থেকে ৬০ লক্ষ পূর্ব পাকিস্তানি ক্ষুধায় মারা যেতে পারে। ( মে ১, ১৯৭১)।
তখন পর্যন্ত ভারতের মোট জনসংখ্যার ৭ লক্ষ উদ্বাস্তু ছিল যার হাজার হাজার লোক কলেরাতে মারা গিয়েছিল এবং যদি ছড়িয়ে পড়ে তবে তবে ১০ হজারেরও অধিক লোক মারা যেতে পারে। কংগ্রেশনাল জরিপ নির্দেশ করেছে যে, দুর্ভিক্ষের একটি সুস্পষ্ট সম্ভবনা যাতে ১০ থেকে ২০ লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারে।
*”লাইফ ম্যাগাজিনের শিরোনাম”
তারা এত দ্রুত মারা যাচ্ছে যে আমরা গণনা করতে পারছি না। (জুন ১৬,১৯৭১)।
*”নিউজ উইক প্রতিবেদন”
“সেখানে যা ঘটেছিল তা সম্পর্কে আমার কোন সন্দেহ ছিল না” (জুন ২৮,১৯৭১)।
*কংগ্রেস্ম্যান গ্যালাঘেরঃ চেয়ারম্যান (হাউজ সাবকমিটি অন এশিয়ান এফোয়ারিস)।
১৯৭১ সালের ১০ই জুন, ঐ অঞ্চল পরিদরশন করে আসার পর কংগ্রেস্ম্যান গ্যালাঘের (চেয়ারম্যান, হাউজ সাব কমিটি অন এশিয়ান এফোয়ারিস) তার হাউজে বলেন-
“আমাকে বলতে দিন যে, খুবই খারাপ যা আমি দেখেছি। বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক হাউজ কমিটিতে ১২ বছর চাকুরির অভিজ্ঞতায় আমি ভেবেছিলাম যে, গণহত্যা, নৃশংসতা ও অবর্ণনীয় মানসিক ভোগান্তির বর্ননা তুলে ধরা হয়েছিল তা অতিরঞ্জিত কিন্তু এখন আমি সহকর্মীদেরকে বলতে পারি, যদি সে রকম কিছু হয়ে থাকে তা ঐ রিপোর্টে ছিল অস্পষ্ট”।
তিনি শেষ করেন “বন্যা, সাইক্লোন এবং বর্বর নিষ্ঠুরতা যে লাশের স্তুপ ইতিমধ্যে পূর্ব পাকিস্তানে তৈরি করেছে তা দীর্ঘ হওয়ার আগেই বিশ্ববাসীকে আরেকটি বড় ধরনের দুর্যোগ প্রতিহত করার উদ্যোগ নিতে হবে”।
বিশ্বব্যাংকের অফিসিয়াল প্রতিনিধির প্রতিবেদনে বর্ণনা করা হয়েছে, “ কুষ্টিয়া শহরটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত জার্মানির কোন শহরের ন্যায় মনে হচ্ছিল যেখানে বোমা বিস্ফোরণের কারণে প্রায় ৯০ শপ্তাংশ ঘর, দোকান, ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য দালান সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল এবং ৪ থেকে ৪০ হাজার লোক চরম দূর্দশার মধ্যে পড়েছিল। বস্তুত ঘর বাড়ি এবং দালানকোঠার যে ধ্বংস সেটি ১৯৪৪ সালের আরেকটি আরহেম শহরের কথা মনে করিয়ে দেয়।
(নিউইয়র্ক টাইমস, জুলাই ১৩, ১৯৭১)
*দ্যা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অন ইউনিভার্সিটি ইমারজেন্সি এপিলসঃ
আমরা চুপ থাকতে পারছি ন যখন “কিছু পণ্ডিতদের মন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে রক্তাক্ত গণহত্যার কারণে এবং তাদের স্বতন্ত্র যে সংস্কৃতি তা ধ্বংসের হুমকির সম্মুখীন”।
এ আবেদনটি সাক্ষরিত হয়েছিল ১০০ জনেরও অধিক পন্ডিত যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী (ই.জি মিল্টন ফ্রিডম্যান, বিগনিট ব্রিজিজনস কি, রিচার্ভ গার্নার, এডউইন রইচারসার সাবেক জাপানি রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র) এবং সাতজন নোবেল বিজয়ী দ্বারা (এইচ.এ বিথা ডব্লিউ হেইসেনবার্গ, টি.ডি লি, আই.আই রবি, সি. টোয়েনস, এইচ. সি ঊড়ি এবং হি.পি উইংগার)
# ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক দ্বিপাক্ষীয় প্রতিনিধি বলেছিলেন “আমরা দেখেছি শিশুদের যাদেরকে গুলি করা হচ্ছে এবং আমরা দেখেছি রাস্তার ধারে লোকজন অনাহারে মরে পড়ে আছে”। (দ্যা টাইমস, লন্ডন, জুলাই ২, ১৯৭১)
# সিনেটর কেনেডী হাউস কমিটির সামনে উল্লেখ করেছে, “পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক যা আজ লক্ষাধিক মানুষের বেঁচে থাকার আশা ব্যক্ত করা কে মৃত্যুর ভিড়ে দুঃস্বপ্নে পরিণত করবে যদি না তাৎক্ষণিক ভাবে এসকল লোকেদের সাথে মিলিত হয়ে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়”।
যখন আমরা ৭ লক্ষ শরণার্থী কে সাহায্য করতে পারছি না অথবা গণনাকৃত ১০ থেকে ৩০ লক্ষ ক্ষুধার্ত কে, আমরা তখন কিছু সংখ্যক জীবনকে বাচাতে পারি।
আমরা আপনাদের নিকট উদার হয়ে সহায়তার আবেদন জানাচ্ছি।
জর্জ বুলেট জর্জ নেকমিকিয়াম
রজার সি.বাক রজার নিউটন
বিরাম কার্টার স্কুইলার অটসন
জেমস্ কাউন্সিলমান জাম্মালামাদাকো রাও
ক্র্যাঙ্ক ফ্রেঞ্জ ডেভিড রজার্স
ডিন ফ্রেসার মেরি সেসফ্রিস
জুলিয়াস জেটম্যান ফিলিপ স্মিথ
এ্যালেন গ্রাইমকো লিও সল্ট
হারম্যান হার্ডসন জর্জ স্প্রিংগার
রালফ জনসন জেমস্ সুইটহার্ট
বাড়ী মালিক রিচার্ড ইয়ং
ফ্র্যাউক ম্যাককোলেকি
আপনার অনুদান শুল্কমুক্ত
দয়া করে চেকটি বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিলিয়ে নিন।
উল্লেখ করুন যদি এটি এককালীন বা মাসিক হয়ে থাকে।
বন্ধকদাতাও মেইলঃ
ড. জুলিয়াস জারম্যান
স্কুল অফ ল (আইন বিভাগ)
ল বিল্ডিং (আইন ভবন)
ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়
ব্লুমিংটন, ইন্ডিয়ানা ৪৭৪০১