You dont have javascript enabled! Please enable it! মুক্তিযুদ্ধে প্রবাসীদের ভূমিকা ০৯ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৪। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল্যায়ন পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) কমিউনিষ্ট পার্টি ………………
১৯৭১

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের মূল্যায়ন
বাংলাদেশের আন্দোলন–সংগ্রাম সম্পূর্ণ নতুন রূপ ধারণ করেছে । গণতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে এবং শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন পরিণত হয়েছে সশস্ত্র সংগ্রামে।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতির সহযোগিতা এবং সমর্থন রয়েছে । মুক্তি সংগ্রামের জন্য জনগণের এরূপ মিলিত সমর্থন ইতিহাসে দুর্লভ।বাংলাদেশের জন্য সংগ্রামের উদ্দেশ্য এবং ধরণ উভয়ই পরিবর্তিত হয়েছে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য রয়েছে।এটি সম্পূর্ণরূপে একটি নতুন পরিস্থিতি ।
সেই জন্যই, বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রকৃতি নির্ধারণ ও এর সঠিক নিরূপণ নিশ্চয়ই অপরিহার্য ।
কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক সমিতি নির্মিত বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম নিরূপন এবং এর নির্ধারিত কার্যক্রম নিম্নে উল্লিখিত হলঃ
আন্দোলনের প্রকৃতি এবং ধরণঃ
শত্রু এবং মিত্র
আন্দোলনের প্রকৃতি
প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শাসন ও শোষণের বৈশিষ্ট্য ছিল ঔপনিবেশিক প্রকৃতির; যদিও আধুনিক ধারণা অনুযায়ী । বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের উপনিবেশ না । এই প্রসঙ্গে বলা যায়, বাংলাদেশের সংগ্রামের প্রকৃতি হল বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম ।
এই সংগ্রাম প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে যারা সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য পেয়ে থাকে । অতএব, এই স্বাধীনতা সংগ্রাম সাম্রাজ্যবাদীদেরও আক্রমণ করছে এবং বর্তমানে এটি সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সরাসরি সংগ্রামের সম্ভাবণার নিয়ামক ধারণ করছে ।তথাপি, এই সংগ্রাম নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক; কেননা, এর মূল উদ্দেশ্যগুলোর একটি হল গণতন্ত্র ।

সংগ্রামের ধরণ
এই সংগ্রাম পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী ও সশস্ত্র সেনাবাহিনীর বিপক্ষে সরাসরি পরিচালিত হচ্ছে । তাই সেনাবাহিনীকে পরাভূত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এর উদ্দেশ্য ।
অর্থাৎ, এই সংগ্রামের প্রধাণ ধরণ হল সশস্ত্র শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ।
সংগ্রামের শত্রু এবং মিত্র
শত্রুঃ পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজিবাদী শাসক শ্রেণি যারা সাম্রাজ্যবাদের মদদদাতা, বিশেষতঃ আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদ ও সামন্তপ্রথার ভূস্বামী এবং এদেশে তাদের প্রতিনিধিরাই হল বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু ।
মিত্রঃ ক) বাংলাদেশের সমগ্র জনতাই এই সংগ্রামের মিত্র যাদের মধ্যে রয়েছে শ্রমিক, ভূমিহীন কৃষক, মধ্যবিত্ত; বুর্জোয়া ও জোতদার । এদের মধ্যে বড় বড় সামন্তপ্রভূ সবচেয়ে দুর্বল শাখা প্রমাণিত হতে পারে । সেই জন্য আমাদের বড় সামন্তপ্রভূদেরব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে (জোতদারদের একটি অংশ) ।
খ) আমরা বিবেচনা করি, পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য ভাষাভাষী শোষিত জাতি, বিশেষতঃ ছোট জাতিগুলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের বন্ধু । বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম একে অপরের নিকট প্রশংসনীয় । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চরম প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংঘটিত হচ্ছে যা তাঁদেরও উৎপীড়ন ও শোষণ করছে (পশ্চিম পাকিস্তানী)। এইজন্য, পশ্চিম পাকিস্তানের জনগনের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সমরথন করা উচিত এবং গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনেভ জন্য তাদের সলল সংগ্রামও আমাদের সমর্থন লাভ করবে ।

গ) বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্বের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রেমী এবং প্রগতিশীল জনগণ এমনকি, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোও মিত্র হিসেবে বিবেচিত হবে । সংগ্রামের পূর্ণ সাফল্যের জন্য তাদের পূর্ণ সমর্থন ও সহায়তা অপরিহার্য । এই সংগ্রামে সকলগণতান্ত্রিক শক্তির সহায়তা, বিশেষতঃ ভারতের জনগণ ও সরকারেরসাহায্য-সহযোগিতা আবশ্যক । পাশাপাশি, প্রতিবেশী বার্মা, সিংহল ওনেপালেরজনগণ ও সরকারের সহায়তাও অপরিহার্য । আফগানিস্তান এবং আরব রাজ্যের গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাষ্ট্রগুলোর সাহায্য ও সমর্থনও বাংলাদেশের সংগ্রামের জন্য সহায়ক হবে ।

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম এবং বিশ্বের শান্তি, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের আন্দোলনের মধ্যে সম্পর্ক
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের শান্তি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার সংগ্রামকে শক্তিশালী করবে; এছাড়াও বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম বিভিন্ন জাতির জাতীয় অধিকার, স্বায়ত্তশাসন ও গণতন্ত্রের জন্য আন্তর্জাতিক সাম্যবাদী আন্দোলনের অংশ ।
কেননা; ক) এই সংগ্রামের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির প্রভাব শক্তিশালী করবে।
খ) এই সংগ্রাম পরিচালিত হচ্ছে পাকিস্তানের স্বেচ্ছাচারী স্বৈরতন্ত্রের বিপক্ষে যা সাম্রাজ্যবাদ দ্বারাসমর্থিত । এইজন্যএর সাফল্য পরোক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদকেই দুর্বল করবে ।
গ) বাংলাদেশের সংগ্রামের সফলতা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটাবে এবং ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গঠনে সহায়ক হবে .
(ঘ) এই সংগ্রামে বিজয়ী হলে, সেখানে সম্ভাবনা আছে যে
সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশেরসম্পর্ক উন্নতি হবে।
যদি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট ও প্রগতিশীল শক্তি সঠিক ভূমিকা পালন করতে পারেন এবং যদি আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সমর্থন দেয়, তবে,বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের সফলতা ব্যাপকতর হয়ে যাবে।
শক্তি এবং সংগ্রামের দুর্বলতা
স্ট্রেংথ:
(১) চাহিদা ও স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাংলাদেশের সমগ্র জনগণের দ্বারা সমর্থিত।
(২) জনগণের মধ্যে লড়াকু মনোভাব এবং সেনাবাহিনীকে সশস্ত্র সংগ্রামে বিক্ষিপ্ত ভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। যুবকরা
সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছে ।
(৩) একটি ছোট মাওবাদী দলা ব্যতীত, সব গণতান্ত্রিক ও বামপন্থী দলগুলো
সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে সামিল আছে।
(৪) যেহেতু এই সংগ্রাম নিপীড়িত জনগণের শত্রু বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে
এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শোষিত জাতি হিসাবে সেখানে জনগণের সমর্থনে জেতার সম্ভাবনা আছে পশ্চিম পাকিস্তানের নিপীড়িত জাতিকে।
(৫) এই সংগ্রামের পিছনে রয়েছে জনগণের সমর্থন এবং গণতান্ত্রিক শক্তি
ভারত সরকার ।
(৬) সোভিয়েত ইউনিয়নসহ গণতন্ত্র, শান্তি ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী
বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশে সংঘঠিত পশ্চিমাদের গণহত্যার ব্যাপারে সোচ্চার আওয়াজ তুলেছে এবং তারা এর একটা সুষ্ঠ রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আহবান জানাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংরাম আরোও বেগবান হচ্ছে।
দুর্বলতা:
(১) এখনও সংগঠিত শক্তি ও সামর্থ্যের অভাব ব্যাপক আকারে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মানুষের সমর্থন ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের অভাব ও বর্তমান স্বাধীনতা সংগ্রামে দেখা যাচ্ছে।
(২) স্বশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নেয়া মানুষ এবং বিভভিন্ন সংগঠনের মাঝে অভিজ্ঞতার অভাব দেখা যাচ্ছে।
(৩)জনগণের একটি অংশ,বিশেষ করে ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে
স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বৈরী মনোভাব দেখা যাচ্ছে।
(৪) সমাজতান্ত্রিক শিবির ও আরব বিশ্ব এখনো তাদের শক্ত অবস্থান এবঙ্গ সমর্থন পোশণ করেনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাহায্যে।
(৫) স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সংগঠনের মাঝে এখনো ঐক্য গড়ে উঠেনি।
(৬) বিভিন্ন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির ইয়াহিয়া সাহায্য সমর্থন ব্যাপ্ত হয়
বিভিন্ন পদ্ধতি দ্বারা । আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সমর্থন পেয়েই পশ্চিমারা আমাদের শোসন চালিএ যাচ্ছে।। কিন্তু মানুষ এখনো সম্পূর্ণরূপে সচেতন না এই শত্রুদের সম্পর্কে।
(৭) জাতীয় নিপীড়নের ফলে এবং বৈষম্যমূলক আচরণ হিসাবে
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন চক্রের বাংলা উগ্র নীতি বা বিরোধী পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিতে অতীতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব পশ্চাতপ্রবন সেখানে এখন একটি অ্যান্টি-অ বাঙালি গোষ্ঠী দেখা যাচ্ছে। এর ফলে ষড়যন্ত্র, মিথ্যা প্রচারণা এবং অ্যান্টি-বাংলা উস্কানি শাসক দ্বারা পরিচালিত চক্র এবং অন্যান্য প্রতিক্রিয়াশীল চক্র পশ্চিম পাকিস্তানী জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে,
এই কারণে জনগন ও শোসিত জনতার মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরী করা কঠিন হয়ে পরবে।
(৮) যদিও ‘মুক্তি বাহিনীকে’ (লিবারেশন আর্মি) প্রাথমিকভাবে বাইরে গঠন করা হয় এবং ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুলিশ, ইত্যাদি দ্বারা গঠিত হয়, তথাপি, তারা বীরের মতো লড়াই করেছে শত্রু সৈন্যদের বিরুদ্ধে। এই মুক্তিবাহিনী রাজনৈতিকভাবে শিক্ষিত না
তাছাড়া, তারা শাসক থেকে গণবিরোধী ভুল শিক্ষা লাভ করেছিলেন
নেতৃত্বের শ্রেণী চরিত্র সংগ্রাম এবং তার শক্তি ও দুর্বলত
নেতৃত্বের শ্রেণী চরিত্র
এই সংগ্রামের প্রধান নেতৃত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ দল ও তার দ্বারা গঠিত সরকার। তারা প্রধানত বাংলাদেশের উদীয়মান বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতিনিধি।তাদের পশ্চিমা একচেটিয়া পুঁজির সঙ্গে তীব্র এবং মৌলিক দ্বন্দ্ব আছে। এই নেতৃত্বের শক্তি যে তারা না আছে বর্তমান সময়ের মধ্যে রয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানের একচেটিয়া পুঁজির কাছে আত্মসমর্পণ করে যে প্রতিক্রিয়াশীল বলতে হয়, চক্রের শাসন করছেন এবং বাঙালির জাতীয় অধিকার প্রশ্নে তারা দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য। এই নেতৃত্বের ব্যাপক বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন।
দুর্বলতা
কিন্তু এই নেতৃত্বের দুর্বলতা যে এটা বিপ্লবী অভাব হয়
এবং সাংগঠনিক ক্ষমতা বর্তমানে সশস্ত্র সংগ্রামের বিধায়ক জন্য প্রয়োজনীয়।
দ্বিতীয়ত, তারা শক্তি মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের কোন দৃঢ় বিশ্বাস আছে এবং
জনগণের শক্তি সংগঠিত উপায়ে মানুষের সংগ্রাম। অন্য দিকে,
তারা আরো এইড এবং কোনো বড় সহায়তায় কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে আনত হয়
ক্ষমতা কোনো শিবির একাত্মতার। বর্তমানে তারা এইড উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল
ভারত সরকার। তারা এখনও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি আছে।
তৃতীয়ত, সেখানে নেতৃত্বের পক্ষ থেকে অনুপলব্ধি যে সব ঐক্য বাহিনী যুদ্ধ সাফল্যের এই সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়। বরং, সংকীর্ণতাএবং সাম্প্রদাযিকতা এখনো নেতৃত্বের মধ্যে বিদ্যমান।
এই সংগ্রামের অন্যান্য দলগুলোর ভূমিকার
(ক) দক্ষিণপন্থী দলগুলোর ইয়াহিয়া চক্রের এজেন্ট ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
(খ) ভাসানী ন্যাপ এখন, এই সংগ্রামে তাদের সমর্থন ঘোষণা করেছে যদিও
তারা ধারাবাহিকভাবে কোনো স্পষ্ট রাজনৈতিক লাইন অনুসরণ করা হয়নি। (বর্তমানে ভাসানী ন্যাপযেমন একটি দল আর অস্তিত্ব নেই; শুধু মওলানা ভাসানী ও তাঁর অনুসারীদের কিছু সংখক এটার সাথে সংযুক্ত করা হয়।)
(গ) তিনটি মাওবাদী সংগঠন এই আন্দোলনে তাদের সমর্থন দ্বারা উপস্থিত রয়েছে।
তারা মৌখিকভাবে ঘোষণা করে আওয়ামী লীগসহ সব বাম বাহিনীর একটি যুক্তফ্রন্ট
প্রয়োজনীয়; কিন্তু আসলে, তারা আওয়ামী লীগ ব্যতীত একটি পৃথক বাম যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে চান।
(ঘ) অন্য মাওবাদী গ্রুপ (হক –তোহা) একটি বিভেদ সৃষ্টিকারী এবং বিরুধি সংগঠন হিসাবে কাজ করছে।
যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রশ্ন
এই সংগ্রামে দ্রুত এবং নিশ্চিত বিজয়ের জন্য আওয়ামী লীগ, কমিউনিস্ট পার্টি ও ন্যাপ (ওয়ালী-মুজাফফর নেতৃত্বে) সহ সব যুদ্ধ বাজিনীকে নিয়ে একটি ইউনাইটেড ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট গঠন করা অপরিহার্য শর্ত।
এই ফ্রন্টের সংগঠিত হও্যার ফলে সংগ্রাম আরোও শক্তিশালী, বলিষঢ় রুপ ধারণ করবে। যার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের জনগনের মাঝে উদ্দিপনা বেড়ে যাবে এবং জয় তরান্বিত হবে। মুক্তিবাহিনী সহ অন্যান্য যুদ্ধরত বাহিনো যত দ্রুত সফল হতে থাকবে ততই উন্নত দেশ সমূহ থেকে সাহায্য এবঙ্গ সহযোগিতে বাড়তে থাকবে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের অনমনীয়তা এবং অন্যদিকে, বিরোধী আওয়ামী
কিছু বামপন্থী দলের লীগ বিরোধীতার মনোভাব কারণে এই ফ্রন্ট ঘঠণে বাধা হয়ে দাড়ায়।
অবশ্য আওয়ামী লীগ কর্মিবৃন্দ, বিশেষ করে ছোট ছোট সংগঠন ঐক্য মনোভাবের ফলশ্রুতিতে মুক্তি ফৌজ গঠণ করে। অনেক সমস্যার পরেও এই ফ্রন্ট ঘঠনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। একটি জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠনের জন্য ন্যুনতম যেসব কার্যক্রম নিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে,
শত্রুর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ।
আন্দোলন যখন বাঁধার সম্মুখীন
১। সংগঠিত এবং বলিষ্ঠদেহী সেনা, গেরিলা যোদ্ধাসহ অনেক কিছুই এখনো গঠিত হয়নি।

২। দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধরত সকল রাজনৈতিকদল এবং গনসংস্থা ধ্বংস করা হয়েছে।
৩। মানুষের জীবনে অর্থনৈতিকসঙ্কট তীব্র রুপ ধারন করেছে । যার ফলে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির লোক নিরাশায় পতিতহয়েছে।

৪। যেই হারে মানুষ নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তার তুলনায় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রচারণা অত্যন্ত দূর্বল।
৫। বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়ে বাইরেরদেশগুলোতে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। প্রচারণা এবং কূটনৈতিক কার্যকলাপ বৈশ্বিক মতামত ও বিভিন্ন অবস্থার দিকে লক্ষ্য রেখে করা সত্ত্বেও আমাদের লড়াইয়ের দিকটা অত্যন্ত দূর্বল।
৬। চরম নিপীড়নের শিকার হয়ে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ ভারতের কাছে আশ্রয় চাইছে। যা আন্দোলনেরপ থে বড় বাধা।
৭। লড়াই এখনও পর্যন্ত কেবলমাত্র ভারতীয় সরকারের একক সাহায্য ও সহায়তার উপর নির্ভরশীল এবং এই সরকার অত্যন্ত রক্ষণশীল হবার কারনে তা আন্দোলনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে
৮। পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকচক্রের সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে সমর্থিত সাম্রাজ্যবাদী সমর্থন এইসমস্যা তৈরি করেছে। তাছাড়া এই প্রতিক্রিয়াশীল ক্ষমতাসীন চক্রকে চীনা মাওয়াবাদী নেতৃত্বের দেওয়া প্রকাশ্য রাজনৈতিক সমর্থন এবং সামরিক সহায়তায় গনহত্যা এবং নির্মমভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দমনে উৎসাহ সৃষ্টি করছে। চীনা নেতাদের এই লজ্জাহীন কর্মকান্ড বাংলাদেশের আন্দোলন নিয়েবহুদেশে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। পৃথিবীর স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষই এইসব শুরু করেছে। তাছাড়া,চীনা নেতৃত্বের এই ভুমিকার ফলে,পাক-ভারত উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে, এশিয়ার শান্তিবিঘ্নিত হচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
দলের ভূমিকা
বাংলাদেশের বর্তমান সশস্ত্র যুদ্ধ ও আন্দোলন কম্যুনিস্ট পার্টির উপর কিছু বিশেষ এবং কঠিন ঐতিহাসিক দায়িত্ব আরোপ করেছে। এইসকলদায়িত্বপূর্ণ করার জন্য কম্যুনিস্ট পার্টিকে অবশ্যই নিম্নলিখিত কার্যাবলী পালন করতে হবে-
১।সশস্ত্র সংগ্রামে নিজেদের উদ্যোগে সম্পূর্নভাবে অংশগ্রন করতে হবে।
২।সকল ধরনের সামরিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক এবং অন্যান্য দূর্বলতা থেকে পরিত্রাণ পেতে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে হবে।
৩।যুক্তফ্রন্ট গঠনে সর্বস্তরে উদ্যোগ নিতে হবে
৪। আন্দোলনের আশু উদ্দেশ্য অর্জনের সাথে সাথে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের জন্য নেতৃত্ব দিতেহবে।
স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় অবশ্যম্ভাবী
পরিশেষে, মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকচক্রের সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম । এই সেনাবাহিনী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী সরকারের সহায়তায় আধুনিক সমরাস্ত্রে গঠিত এবং পাকিস্তানের শাসকচক্র এখনও এদের তরফ হতে বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছে । উপরন্তু , চীনের মাওয়াবাদী নেতারা অবাধ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক সহায়তার ব্যাপ্তি ঘটিয়েই যাচ্ছে । এইরুপ অবস্থায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ কঠিন এবং রক্তক্ষয়ী ।

কিন্তু পাকিস্তানি শাসকচক্র বাংলাদেশের জনসাধারণের কাছ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন । যার কারনে বাংলাদেশের অসহযোগ আন্দোলন এবং সশস্ত্র সংগ্রাম, প্রশাসনিক ব্যাবস্থা এবং আর্থনৈতিক কাঠামো সম্পুর্নভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। এত কিছুর পরেও ক্ষমতাসীনচক্র আজ তীব্র সংকটের মুখে । শাসকশ্রেণির এই অবাধ নিপীড়ন এবং নিগ্রহ সাধারন মানুষের মাঝে কেবল তীব্র ঘৃণা আর ক্ষোভ তৈরি করছে । কেবল মাত্র কিছু দালাল ব্যাতিত, বাংলাদেশের মানুষ সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, এই যুদ্ধবাংলাদেশেরসকলমানুষের সহায়তায় হচ্ছে । এইদেশের বড় সংখ্যক তরুন-যুবা সশস্ত্র আন্দোলনে এগিয়ে আসছে । আপামর জনসাধারণের একতাই এই যুদ্ধের প্রধান হাতিয়ার।

তদুপরি, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তার পরিমাণ দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষ,গণতান্ত্রিকদল এবং বাহিনীর পাশাপাশি ভারত সরকারও অকুন্ঠ সাহায্য এবং সহায়তা বৃদ্ধি করছে । সোভিয়েত ইউনিয়ন এই অবাধ গনহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে এই সমস্যার আশু সমাধান দাবিক রেছে। বিশ্বশান্তি পরিষদ ও এই গনহত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশের এইসমস্যার সমঝোতার দাবি জ্ঞাপন করেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্বের শান্তিকামি মানুষ এবং প্রগতিশীল শক্তির সমর্থন দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিশ্বজনমত গঠনের সুযোগও সৃষ্টি হচ্ছে।
অতএব, পাকিস্তানি শাসকচক্র বাহিনী যত সুসজ্জিত থাকনা কেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ যত দুঃসাধ্যই হোকনা কেন বাংলাদেশের চূড়ান্ত জয় অবশ্যম্ভাবি।

গৃহীতঃ
২২.৫.৭১ কেন্দ্রিয়কমিটি, কম্যুনিস্টপার্টি পূর্বপাকিস্তান (বাংলাদেশ) ।
ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্টের কর্মসূচি
জাতীয় মুক্তি ফ্রন্টে গঠনের জন্য নিদেনপক্ষে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারেঃ
১.দখলদার ও প্রগতি বিরোধী পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীকে পরাজিত ও বিতারিত করতে সশস্ত্র সংগ্রামীদের অংশগ্রহণ করতে হবে। একটি স্বাধীন, সার্বভৌম , গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য সমাজতন্তের পথে আগাতে হবে।
২.আইন পরিষদ, জনগন,নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কর্তৃপক্ষের দ্বারা বিশ্বস্ত প্রতিনিধি নির্বাচন করবে; প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের সার্বজনিন প্রয়োগ ও সমন্বিত নির্বাচক মন্ডলী দ্বারা ভোটদান প্রণয়ন; জনগণকে নির্বাচিত প্রতিনিধি প্রত্যাহার করার অধিকার দেয়া; সংসদীয় গণতন্ত্র বহাল রাখা; এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
৩.জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যেমন:বাকস্বাধীনতা, জাতিগত স্বাধীনতা, তথ্যের স্বাধীনতা ইত্যাদি অধিকার সমূহ যেন মজুর হতে চাষা সকল শ্রেণীর মানুষ ভোগ করতে পারে। সকল অনাচারী আইন বন্ধ করতে হবে, জনগণের সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে যেন তারা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীদের সর্বদা সাহায্য করতে পারে।শহর,গ্রাম ও মফস্বল এলাকায় নানান কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য জনগণের দ্বারা নির্বাচিত স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা নির্বাচন এবং সরকার চলাকালীন সময়ে প্রশাসনের এসকল সংস্থার সাহায্য গ্রহন।
৪। সকল ধর্ম,বর্ণ এবং লিঙ্গের জাতিকে সম অধিকার দান এবং তাদের আদর্শগত স্থান হতে পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা।
৫। সকল নাগরিকদের তাদের নিজস্ব মতামত,ধর্মবিশ্বাস ও ধর্মীয় আচরণ অনুষ্ঠান পালনে নিশ্চিত করতে হবে; কারও ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর হস্তক্ষেপ করা থেকে বিরত থাকা; সকল প্রকার উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও যারা শত্রুপক্ষদের সহায়তা করবে তাদের প্রচারণা বন্ধ করা।
৬। রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাজকর্ম হতে সেই সমস্ত কর্মকর্তাদের বহিস্কার করতে হবে যারা পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত,পোষা বা আঙ্গাবহ এবং বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী;আমলা ও পুলিশের ক্ষমতা সীমিতকরন।
৭। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার জন্য একটি প্রকৃত দেশপ্রেমী ও জনবান্ধব সেনাবাহিনী গঠন করতে হবে।
৮। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।
৯। রাষ্ট্রীয় খাতে ভারী ও প্রাথমিক শিল্প কারখানা বাস্তবায়ন করতে হবে; রাষ্ট্রীয়খাত এমনভাবে গড়তে হবে যেন শিল্পখাত একটি কাঙ্খিত লক্ষে পৌছায়; রাষ্ট্রীয় শিল্প কারখানার প্রতিষ্ঠিত আইন প্রণয়নকারী প্রতিনিধি দ্বারা কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।রাষ্ট্রীয় শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের যোগদান নিশ্চিত করার লক্ষে একক ব্যবস্থাপনা গ্রহন করতে হবে; রাষ্ট্রীয় খাতে শিল্পকারখানা গড়তে পুজি সংগ্রহ বাড়াতে হবে; ব্যাংক,বীমা,পাট শিল্প কারখানা এবং বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা জাতীয়করণ এবং অর্থনীতির ওপর একাধিক্যপত্যবাদী বাজার দখলদারদের নির্মূল করতে হবে।পুঁজিবাদ এবং ক্ষুদ্রপুজির অধিকারী রাষ্ট্রীয় খাতের বাইরে শিল্প কারখানা তৈরিতে উৎসাহ এবং বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দান করতে হবে
নিরপেক্ষ সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে সকল দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক সৃষ্টি এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে।প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে হবে,বিশেষত ভারতের সংগে।
১০। (ক)ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জরুরী ও প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।পরিবার প্রতি অধিষ্ঠিত জমির পরিমাণ সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা(প্রায় ৩৩ একরের ওপর) নির্ধারণ এবং দরিদ্র মানুষ ও কৃষকদের মাঝে অতিরিক্ত জমি প্রয়োজন অনুযায়ী বণ্টন করতে হবে।সরকার কর্তৃক যে সমস্ত মালিকদের জমি অধিগ্রহন করা হবে তাদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়ে।রাষ্ট্রীয় জমি ভূমিহীন এবং গরীব কৃষকদের মাঝে অবাধে বিতরণ করতে হবে।
(খ)২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদের ভূমি করের আওতা মুক্ত রাখতে হবে।ভূমিকর সংগ্রহ পর্যায়ক্রমে অপসারণ করা এবং দানকৃত ভূমি হতে উৎপাদিত দ্রব্যের লভ্যাংশের ওপর আনুপাতিক হারে আয়কর সংগ্রহ করতে হবে।
(গ)পাট ও অন্যান্য অর্থকারী ফসলের ন্যায্য মূল্য নির্ধারন করতে হবে।
(ঘ)কৃষি শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে।
(ঙ)কৃষকদের সমবায় কৃষি চাষে উৎসাহিত করা।কৃষকদের জন্য রাষ্ট্রীয় সাহায্য যেমন:আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, নিম্নসুদ, কৃষিঋণ ইত্যাদি বর্ধিত করতে হবে
(১১)বন্যা নিয়ন্ত্রণ, জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলা এবং সেচ ব্যাবস্থাকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসেবে ধরতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(১২)শিক্ষাব্যবস্থাকে সার্বজনিন ও বিনামূল্যে বাস্তবায়ন; কম খরচে উচ্চ শিক্ষার ব্যাবস্থা করা, বিপুল সংখ্যক বিদ্যালয়, গবেষণাগার, মেডিকেল সেন্টার, কৃষি ও প্রযুক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ; শিক্ষাব্যাবস্থাকে আমূল ভাবে পুনর্গঠন করতে একটি আধুনিক বৈঙ্গানিক ভিত্তি অনুসরণ করতে হবে
বাংলাদেশের সকল পর্যায়ে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাদান চালু করা এবং বাংলা ভাষার উন্নতি সাধনের লক্ষে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে।বাংলাদেশে বসবাসরত উর্দুভাষীদের তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের সংস্কৃতি বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
(১৩)রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে রাষ্ট্রের পক্ষ হতে ব্যয় বাড়াতে হবে।জনগণের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাকে সহজলভ্য করতে হবে।
(১৪)শ্রমিকদের জীবন ধারনের জন্য ন্যূনতম মজুরী, চাকরী নিরাপত্তা, সর্বোচ্চ ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, ভবিষ্যত নিরাপত্তা এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের পাশাপাশি ধর্মঘট ও যৌথ দর কষাকষির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।তাদের পরিবারবর্গের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধূলার জন্য বাসস্থান, ছুটি, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ইত্যাদি সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করতে হবে।তাদের ন্যায্য আয়ের সঙ্গে জীবনযাত্রার মানের মিল থাকবে;তাদের বাসস্থান, চাকরি এবং কাজের নিরাপত্তা ও করের বোঝা কমাতে হবে।শ্রমিক ও অফিস কর্মচারীদের জন্য যানবাহন দিতে হবে।
অফিসের কর্মী, বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় ও অন্যান্যদের জীবন যাত্রার মান অনুযায়ী ন্যায্য আয় সুনিশ্চিতকরণ; তাদের জীবিকা নির্বাহ, চাকরি ও সেবার(চাকুরির)নিরাপত্তা এবং তাদের উপর করের বোঝা কমানোর নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
(১৫)সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিমন্ডলে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের সমান অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। সকল প্রকার বৈষম্য ও সামাজিক নিপীড়ন থেকে নারীজাতিকে মুক্ত করতে হবে। নারীদের মধ্যে শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
(১৬)যারা পাকিস্তানের শাসক চক্রকে সহযোগিতা করেছে অথবা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় যারা মানুষের বিরুদ্ধে কাজ করেছে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের যথাপোযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ।
(১৭) শত্রু দ্বারা দখলকৃত বা বাজেয়াপ্ত সম্পত্তি মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া। শত্রুদের দ্বারা যেসব ব্যক্তি ও পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে তাদের পুনর্বাসন করা। স্বাধীনতা সংগ্রামে আহত ও নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত সাহায্য প্রদান করতে হবে ।
(১৮)পররাষ্ট্র পরিমন্ডলে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করা। যেকোন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধের চুক্তিতে যোগদান থেকে বিরত থাকা, সাম্যভাবে সকল দেশের সাথে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা, ভারতসহ আফ্রো-এশিয়ান দেশ, সমাজতান্ত্রিক শিবির এবং সকল বন্ধু রাষ্ট্রের সাথে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থাপন করা। শান্তিপ্রিয় দেশগুলোর সাথে একই কাতারে দাঁড়িয়ে বিশ্ব শান্তি রক্ষা এবং সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী জাতির মুক্তি সংগ্রামে সমর্থন করা ও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার জন্য একটি নীতি অনুসরণ করা।

পশ্চিম পাকিস্তানের দ্বারা শোষিত মানুষ ও নিপীড়িত মানুষের শুধুমাত্র ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামে পূর্ণ সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য একটি নীতি অনুধাবন করা।
সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির উপর নির্ভরশীলতা এড়ানো এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী শর্তমূলক বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ গ্রহণ পরিহার করা।
এই কার্যক্রমটি সংগ্রামের মাধ্যমে যেসব এলাকা স্বাধীন হবে সেসব এলাকায় যতদূর সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে।

<৪,২৪৫,৫৫২-৫৫৪>
অনুবাদকঃ পল্লব দাস
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৫। বাংলাদেশের অবস্থা ব্যাখ্যা করে বিশ্ব বুদ্ধিজীবি মহলের প্রতি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আবেদন বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৭১

বাংলাদেশের অবস্থা ব্যাখ্যা করে বিশ্ব বুদ্ধিজীবি মহলের প্রতি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আবেদন
বাংলাদেশের যেসব বাস্তুচ্যুত শিক্ষক, বিজ্ঞানী, কবি, চিত্রশিল্পী, লেখক, সাংবাদিক ও অভিনেতা পৃথিবীর ইতিহাসের একটি নিকষতম গণহত্যা এবং সহিংসতার জন্য দায়ী পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্রোধ থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন, তাঁদের নিয়ে বাংলাদেশবুদ্ধিজীবী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছে।
কাউন্সিলটির উদ্দেশ্য হল- গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুদ্ধ প্রচেষ্টায় সমর্থন করা, আমাদের স্বাধীনতার জন্য বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করা, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর অপরাধ লিপিবদ্ধ করা, আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে শিক্ষামূলক কাজ করা এবং আমাদের সদস্যরা যখন স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য কাজ করে তখন তাদের সত্ত্বা অনুধাবন করানো।
আমাদের সম্প্রদায়ের সদস্যদের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত থেকেই সামরিক কর্মযজ্ঞের বিশেষ টার্গেট করা হয়। সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন আচরণের একটি উদাহরণ হচ্ছে বিশ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদেরকে তাদের স্ত্রী ও সন্তানদের সামনে ঠান্ডা মাথায় খুন করা। তাদের পাপগুলো গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধ, একনায়কতন্ত্র বিরোধী, বাঙ্গালীর ভাষা ও সাংস্কৃতিক নিজস্বতার বিরুদ্ধে তাদের জেদ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বাংলাদেশ আন্দোলনের দার্শনিক ভিত্তির বিরুদ্ধে তাদের স্পষ্ট উচ্চারণের প্রতি সমর্থন প্রদান করে। বাঙ্গালিদের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্বশাসনের দাবিকে কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি একটি শ্রেণী হিসেবে বুদ্ধিজীবীদেরকে একেবারেই নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল।

স্বায়ত্বশাসনের দাবি উঠেছে ২৩ বছর ধরে শোষিত ও বঞ্চনার শিকার পাকিস্তানের বাঙ্গালীদের কাছ থেকে, যারা পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও এর সমৃদ্ধিতে পরিমিত পরিমানে অবদান রেখেছে। সশস্ত্র বাহিনী এবং বেসামরিক উচ্চপদে তাদের সংখ্যা অতি নগণ্য ছিল এবং তাদের উৎপাদিত পাট থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে ব্যয় করা হত এবং একই সময়ে বাংলাদেশ পশ্চিম পাকিস্তানী পণ্যের সংরক্ষিত বাজার হিসেবে কাজ করত। বাঙ্গালীরা ঔপনিবেশিক ধারার শোষণের ইতি টানতে চেয়েছিল এবং তাদের অর্থনৈতিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়নের অধিকার দাবী করেছিল। এটি পুজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক-সামরিক ভিত্তিক পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক চক্রের বিশেষাধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছিল, যার ২২টি ধনী পরিবার জাতীয় সম্পদের আশি ভাগ নিয়ন্ত্রণ করত।
গত ডিসেম্বরে জনগণের চাপে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে দেখা যায় যে, বাঙ্গালীদের দাবি প্রায় সর্বসম্মত, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া শেখ মুজিবর রহমান- বাংলাদেশের জনগণের নেতা, যার দল আওয়ামীলীগ জাতীয় পরিষদের ১৯৬টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে এবং জাতীয় অধিবেশনে পরিষ্কারভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে – এর সাথে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য ভন্ডামিপূর্ণ আলোচনায় মিলিত হয়।

আবরণে আচ্ছাদিত ও দীর্ঘায়িত এই নামে মাত্র আলোচনার পিছনে ইয়াহিয়া খান অসভ্য সহিংসতার মাধ্যমে সাংবিধানিক দাবি দমনের দুই বছরের পুরাতন চক্রান্তের চূড়ান্ত রূপ প্রদান করেন। ২৫শে মার্চ মাঝরাতে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে ইয়হিয়ার মধ্যযুগীয় বর্বর দল বাংলাদেশের নিরীহ জনগণের উপর অমানবিক অত্যাচার শুরু করে। ঐ রাতের গণহত্যা ও বিধ্বস্ততা ইতিহাসের কোনোকিছুর সাথে তুলনা চলে না। ইয়াহিয়ার বিশ্বাসভঙ্গের লক্ষ্য হল বাংলাদেশে ঔপনিবেশিক শক্তি চিরস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অগ্রাহ্য করা যা সংখ্যাগরিষ্ঠের অধিকার। এই লক্ষ্যের অগ্রসর ভাগ হল- সমস্যাটি মিটানোর জন্য ইসলামাবাদ সতর্কতার সাথে গণহত্যাকে একটি পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করে। তার সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালী, নারী, শিশু, অসুস্থ ও বৃদ্ধদের উন্মাদের মতন হত্যা করছে। এরা এ পর্যন্ত ১০ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে এবং এর নৃশংসতা থেকে বাঁচার জন্য সত্তর লাখের বেশি মানুষকে ভারত ও বার্মা পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এরা গোটা শহরে বর্জ্য ছড়িয়ে দিয়েছে এবং সব গ্রাম লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। সন্ত্রাসের তাদের একটি প্রিয় কৌশল হল- সমস্ত গ্রামে আগুন ধরিয়ে দেয়া এবং দুঃখজনকভাবে পলায়নরত পুরুষদের বেপরোয়াভাবে হত্যা করে ও মেয়েদের অপহরণ করে তাদের অত্যাচার ও সম্ভ্রমহানি করা। সংক্ষেপে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী হত্যা,ধর্ষণ ও লুটের এতই বড় মিশন চালিয়ে যাচ্ছে যে স্বয়ং হিটলার কিংবা অ্যাটিলিয়া দেখলে লজ্জা পেত। বাংলাদেশের মানুষের উপর পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকান্ড চলছেই। আমরা বিশ্বাস করি যে, বুদ্ধিজীবীদের মানবতার প্রতি দায়িত্ব রয়েছে এবং বাংলাদেশে মানবতা নিদারুণ যন্ত্রণায় ভুগছে। আমরা সারা বিশ্বের বুদ্ধিজীবীদের কাছে আবেদন জানাইঃ
(১) বাংলাদেশে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য তাঁদের নিজ দেশে আন্দোলন সংগঠিত করা।
(২)পাকসেনাদের মানবতা বিরোধী কাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং আন্তর্জাতিক আইনজীবী কমিশন ও জাতিসঙ্ঘের কাছে বাংলাদেশ ইস্যু তুলে ধরা।
(৩)একনায়কতন্ত্র এবং উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামকে সমর্থন দেয়া- যা এখন সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সংগ্রামে পরিণত হয়েছে।
(৪)গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য তাঁদের নিজ নিজ সরকারের প্রতি চাপ তৈরি করা।
(৫) শেখ মুজিবর রহমান ও অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তির জন্য পাকিস্তান সামরিক কর্তৃপক্ষের উপর চাপ তৈরি করা।
(৬) আমাদের এই উদ্দেশ্যে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা।

সভাপতি
ডঃ এ. আর. মল্লিক, ভাইস-চ্যান্সেলর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

সহ-সভাপতিবৃন্দ
ডঃ কে. এস. মুরশিদ, বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অধ্যাপক এস. আলি আহসান, বিভাগীয় প্রধান, বাংলা বিভাগ , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
কামরুল হাসান – চিত্রশিল্পী
রণেশ দাসগুপ্ত – সাংবাদিক
সাধারণ সম্পাদক
জহির রায়হান, ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক
যুগ্ম সম্পাদক
ডঃ এম. বিলায়েত হোসেন, অধ্যাপক, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাহী সচিববৃন্দ
হাসান ইমাম, অভিনেতা
সাদেক খান, শিল্প সমালোচক
মউদুদ আহমেদ, ব্যারিস্টার
ডঃ মতিলাল পাল, অর্থনীতিবিদ
ব্রজেন দাস, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াবিদ
ওয়াহিদুল হক, সংগীতজ্ঞ ও সাংবাদিক
আলমগীর কবির, সমালোচক ও সাংবাদিক
অনুপম সেন, সমাজবিজ্ঞানী
ফয়েজ আহমেদ, সাংবাদিক
এম. এ. খায়ের, চলচ্চিত্র প্রণেতা
কামাল লোহানী- সাংবাদিক
মুস্তফা মনোয়ার- চিত্রশিল্পী ও টিভি প্রযোজক

বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ
৯, সার্কাস অ্যাভিনিউ,কলকাতা- ১৬, ভারত.

<৪,২৪৬,৫৫৫-৫৫৬>
অনুবাদকঃ নিঝুম চৌধুরী
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৬। বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবি মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের বিবৃতি …………………
১৯৭১

শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক আদালতে গোপনে অগ্রীম মৃত্যুদন্ডাদেশ দেবার চেষ্টা করে আবারও গোটা বিশ্বকে চমকে দিলো জেনারেল ইয়াহিয়া খান। মূলত ক্ষমতার মোহে অন্ধ , একজন অযোগ্য শাসক শুধু নিজ দেশকেই নয় বরং গোটা বিশ্বকে জানান দিচ্ছিলো যে সে দেশ-বিদেশের জনতার সদিচ্চছা, স্বাধীনতা, সম্ভ্রম তথা মানবতার পথের সুদূরপ্রসারী পথযাত্রার অগ্রনায়ক ব্যক্তিটিকে সে হত্যা করতে চায়।
একটি দেশ যা দশকের চাইতেও বেশি সময় থেকে একনায়ক্তন্ত্রের বুটের তলায় দুমড়ে আছে সেখানে, সংখ্যাগরিষ্ঠের জনতার শাসনের অধিকার যখন সংশয়ের অবকাশ দেখা দেয়, অমন সময়ে- শেখ মুজিবুর রহমান সার্বভৌমত্বের বৈধতা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন, প্রথমত সাধারণ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে, এরপর অসহযোগ আন্দোলন গড়ে তুলে- যেমনটি বিশ্ববাসী কখনো দেখেনি। যখন ইয়াহিয়া খান জনতার বহুদিনের ইচ্ছা এবং অধিকারগুলো দুমড়ে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠনের শেষ সুযোগ বাতিল করে গণহত্যার আদেশ দেয়, যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে তখন শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীতা করে হাজার মাইল দূরবর্তী সংখ্যালঘু শাসক তথা শোষকগোষ্টীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ও সশস্ত্র সংগ্রামের ডাক দেন।
বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জবাবদিহিতামূলক সরকারের জন্য আন্দোলন করে আসছিলেন!কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তা বুট দিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।এরপর বিশ্বে নজিরবিহীন একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তার দল বিজয় লাভ করে।কিন্তু জনগণের হাতে ক্ষমতা না বুঝিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি সরকার টালবাহানা শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির প্রতি অসহযোগিতার ডাক দেন।পাকিস্তানি সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খাঁ বাঙালি জাতির ওপর দমন-পীড়ন এবং গণহত্যা শুরু করে।শেখ মুজিবকে বিনাবিচারে আটকে রাখে। এ সময় তাকে আইনজীবী নিয়োগেরও সুযোগ দেওয়া হয়নি। আটকের আগে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দেন এবং যার যা আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলার আহ্বান জানান।তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এরপর আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়, মানবাধিকার সংস্থাসহ সবার কাছে আমাদের ন্যায্য অধিকার লড়াইয়ের প্রতি সমর্থন জানানোর আহ্বান জানাই।ইসলামাবাদের লৌহমানব আমাদের ওপর যে অন্যায় যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল, তার নিন্দা জানাতে বলি!এশিয়া ও বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, গণতান্ত্রিক, মানবতাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান স্মরণ করা অতীব জরুরি!

<৪,২৪৭,৫৫৭-৫৫৮>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৭। ভারতে আগত বাংলাদেশবাসী যুদ্ধকালীন দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে একটি প্রচারপত্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি পরিষদ ……
১৯৭১

ভারতে শরণার্থী বাংলাদেশী ভাইবোনদের প্রতি আবেদন

আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক কঠিন ও দুরুহ মুহূর্তে আমরা আজ বাস করছি। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অমানুষিক গণহত্যা ও অত্যাচার থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়ে আমরা সাময়িক ভাবে আশ্রয় নিয়েছি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের মাটিতে। আমাদের এ বিপদ মুহূর্তে ভারত সরকার ও এদেশের জনসাধারণ আমাদের প্রতি যে সহানুভূতি ও সাহায্য প্রদান করেছে তার তুলনা নেই। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের এই অবস্থা সাময়িক। আমরা সোনার বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে বিতাড়িত করে অতি শীঘ্র জন্মভূমির মাটিতে আবার ফিরে যাব। সংগ্রাম এগিয়ে চলছে। আজকে আমাদেরকে আরও সক্রিয়ভাবে সে সংগ্রামে শরিক হতে হবে। সংগ্রামকে সফল করে দেশকে শত্রুমুক্তি করার জন্যে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আমাদের পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম করা উচিত।
(১) যুদ্ধাবস্থায় আমাদের যে কোন রকম অসুবিধা সহ্য করার মতো মনোবল প্রয়োজন। আমদের স্বদেশবাসী লক্ষ লক্ষ লোক দেশের জন্যে প্রাণ দিয়েছে- লক্ষ লক্ষ লোক এখনও শত্রুসৈন্যের কবলিত এলাকায় নির্যাতিত হচ্ছে। তাঁদের কথা স্মরণ করে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হব- দেশের খাতিরে যেকোনো অসুবিধাকে আমরা তুচ্ছ মনে করবো।
(২) ৩০ লক্ষ শরণার্থীর ভরণ-পোষণের ও সর্বপ্রকার সুখ- সুবিধার ব্যবস্থা এক ব্যাপক সমস্যা। শরণার্থীদের সহযোগিতা ও উপলব্ধি ছাড়া কোন সরকার বা বেসরকারি সংঘের পক্ষে সব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা সম্ভব নয়।
(৩) পাকিস্তানী দুশমনরা আমাদের ভিতর সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিগত বিদ্বেষের বীজ ছড়াবার জন্যে তাদের অনুচরদের লাগিয়ে দিতে পারে। কাজেই সকল প্রকার সাম্প্রদায়িকতা, জাতি- বিদ্বেষ ও রাজনৈতিক তর্ক- বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে আমরা যেন শত্রুর শিকার না হই। আমাদের বিশেষ করে মনে রাখতে হবে, পাকিস্তানী সরকার তাদের বর্তমান বেকায়দা অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তারা বিশেষ করে চেষ্টা করছে, ভারতের মাটিতে একটা সাম্প্রদায়িকতা কলহ সৃষ্টি করতে। তাদেরই উস্কানিতে বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় কিছুসংখ্যক সুবিধাবাদী মিরজাফর হিন্দু- সম্প্রদায়ের জিনিসপত্র লুটপাট করে। মনে রাখবেন, যেসব মুসলমান এসব কাজ করছে- তারা শুধুমাত্র হিন্দুদের শত্রু নয়, তারা আমাদের জাতীয় শত্রু। আমদের মুক্তিবাহিনীর বীর সেনারা বহু অঞ্চলে এসব মিরজাফরী শত্রুদের শাস্তিদান করছেন। আমাদের সবার এক পরিচয়। হিন্দু- মুসলমান- বৌদ্ধ- খৃষ্টান মিলে আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমাদের লক্ষ্য এক- দেশকে শত্রুর কবল থেকে রক্ষা করা।
(৪) সীমিত অর্থবল ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে নানারকম জটিলতার ভিতর দিয়ে যুদ্ধ পরিচালনার কাজ করে যেতে চলেছে। আমাদের সরকারের প্রতিটি কাজকে ধৈর্যসহকারে গ্রহণ করতে হবে। শীঘ্রই বিভিন্ন কর্মক্ষম ব্যক্তিদের সহায়তায়- ক্যাম্প এলাকায় স্বাস্থ্যরক্ষা, সামাজিক শান্তিরক্ষা, অল্পবয়স্ক শিশুদের শিক্ষাদান ও মহিলাদের কার্যোপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা কার্যকরী করা হবে। এ ব্যাপারে আমরা সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগকে সর্বতোভাবে সহায়তা করতে সচেষ্ট হবো।
(৫) সর্বোপরি আমাদের সকলকে মানসিক ও যথাসম্ভব শারীরিকভাবে যুদ্ধাবস্থার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। মুক্তিবাহিনীকে জোরদার করে তোলার জন্যে আমরা যে কোন ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবো।
আমাদের মনে রাখতে হবে- একতাই গণশক্তির মূল চাবিকাঠি, আর শৃঙ্খলা হোল একতার বন্ধন। আমাদের অভাব- অভিযোগের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন আমাদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে আমাদের লক্ষ্যভ্রষ্ট করতে না পারে। মুক্তিযুদ্ধে সেই হবে আমাদের পরোক্ষ দান। আমাদের সকল দুঃখ- কষ্টের মূলে আমরা ফিরে পাবো স্বাধীন বাংলাদেশ। সে দিন আসন্ন। “জয় স্বাধীন বাংলা”
“দুঃখ সহার তপস্যাতেই হোক বাঙ্গালীর জয়
ভয়কে যারা মানে তারাই জাগিয়ে রাখে ভয়
মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তারেই টানে
মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বাঁচতে তারাই জানে।”

<৪,২৭৮,৫৫৯-৫৬৩>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৮। বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থনের জন্যে বিশ্বের শ্রমিক সংগঠনসমূহের প্রতি বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার ——————–
১৯৭১

একটি আবেদন
ট্রেড ইউনিয়ন অর্গানাইজেশন ও বিশ্বের শ্রমজীবি মানুষের প্রতি বাংলাদেশ ট্রেডইউনিয়ন সেন্টার, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার”-এর শ্রমজীবি মানুষের পক্ষ থেকে
প্রিয় কমরেড বন্ধুগণ,
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা কর্তৃক বাংলাদেশে (প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান) চালানো গণহত্যার ব্যাপারে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন।
আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন, ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম প্রধান প্রদেশগুলো নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়। একই ধর্ম হলেও পাকিস্তান পাঁচটি আলাদা জাতিসত্ত্বা- সিন্ধু, বেলুচ, পাখতুন, পাঞ্জাবি ও বাঙ্গালী নিয়ে গঠিত ছিল। পাকিস্তানের সর্বমোট জনসংখ্যার ৫৬% হল বাঙ্গালীরা যারা দেশের পূর্বাঞ্চলে বাস করে, যা কিনা পশ্চিমাঞ্চল থেকে একহাজার মাইলের চেয়েও বেশী দূরত্বে বিচ্ছিন্ন। বাঙ্গালীদের মোট জনসংখ্যা সাড়ে সাত কোটি।
একদম শুরু থেকেই কতিপয় বড় পুঁজিবাদী, সামন্তবাদী জমিদার ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী শক্তির স্বার্থ পূরণ করে চলেছে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। শ্রমিক-কৃষকশ্রেণী ও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর উপর লাগামহীন শোষণ, নিপীড়ন চালায় তারা। জনসাধারণকে চরমভাবে বঞ্চিত করে দেশের বেশিরভাগ সম্পদ গুটিকয়েকের হাতে কুক্ষিগত করা হয়েছিল। একনায়কতান্ত্রিক সরকারের ছায়াতলে কালো শ্রমিক আইন, বিপুল সংখ্যক বেকার ও শ্রমজীবি শ্রেণীকে সীমাহীন শোষণের মাধ্যমে পুঁজিবাদ অতুলনীয় দরে মুনাফা লাভ করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে একাধিপত্যবাদী গ্রুপ তৈরী হয়, প্রায় পঁচিশটির মতো যাদের বেশিরভাগ শিল্প-কারখানা ও ব্যাঙ্কের উপর দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ ছিল এবং ফলাফলস্বরুপ সরকারের উপরও।
পাকিস্তানের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্ন জাতিসত্ত্বার শোষণ, বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি প্রকট ছিল। বেশিরভাগ শিল্প-কারখানার মালিক ছিল পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাব অথবা করাচীর শিল্পপতিরা। ভৌগোলিক দিক দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একহাজার মাইলের চেয়েও বেশি দূরত্বে বিচ্ছিন্ন পুর্ব পাকিস্তানের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ছিল পশ্চিমাঞ্চলের জাতিসমুহের থেকে আলাদা। পুর্ব পাকিস্তানের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে মন্থর করতে ও একে কার্যত এক উপনিবেশে পরিণত করতে সম্ভব সবকিছু করেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। পুরো জাতিকে দুর্বল ও পরাধীন করার উদ্দেশ্যে শাসকগোষ্ঠী বাঙ্গালীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে আক্রমণ করে।
পূর্ব পাকিস্তানের শ্রমজীবি শ্রেণীকেই সবসময়ের মতো সকল শোষণের বোঝা বহন করতে হয়।
শ্রমজীবি শ্রেণীর সংগ্রাম ও জাতীয়তাবাদের অধিকার আন্দোলন সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন নির্মমভাবে দমন করা হয়। গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন ও গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের প্রচেষ্টা শুরুতেই নষ্ট করা হয়। গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার উদ্দেশ্যে ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খানের নেতৃত্বে সামরিক আইন চাপিয়ে দেয়া হয়।
সামরিক জান্তার নৃশংসতা ও নিপীড়ন সত্ত্বেও প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারবিরোধী দল ধীরে ধীরে শক্তি অর্জন করছিল। আইয়ুব খান বাধ্য হল সামরিক আইন প্রত্যাহার করতে। ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। এতকিছুর পরেও জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেন ও দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক আইন জারি করেন। কিন্তু এই স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতিকে ঘোষণা দিতে হয় যে, তার শাসনের প্রধান উদ্দেশ্য হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করা।
১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অপ্রতিরোধ্য সংখ্যক জনগণ জাতীয়তার অধিকার ও জনগণের স্বার্থরক্ষাকারী গণতান্ত্রিক শক্তির পক্ষে ভোট দেয়। জাতীয় পরিষদে এই গণতান্ত্রিক সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ও তাদের উপর অর্পিত হয় দেশের সংবিধান প্রণয়ন ও সরকার গঠনের দায়িত্ব।
সামন্তবাদী জমিদার, একাধিপত্যবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের পরিচর্যাকারী সামরিক জান্তা নির্বাচনী ফলাফলে তাদের অনিবার্য পতন দেখতে পাচ্ছিল। সুতরাং, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন অজুহাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপার এড়িয়ে যাওয়া শুরু করলেন। তিনি জনগণ ও তাদের প্রতিনিধিদের বারংবার দাবি সত্ত্বেও জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করতে রাজী হননি।
ফলাফলস্বরুপ, পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলন গড়ে ওঠে যা পশ্চিম পাকিস্তানের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির সমর্থনও লাভ করে। যাহোক, সাংবিধানিক অচলাবস্থার অমীমাংসিত ইস্যুতে ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাধানে আসার উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা শুরু করেন। কয়েকদফা আলোচনার পর রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসে যে আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের সম্ভাবনায় বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ ও গণতান্ত্রিক শক্তি স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে এবং তারা দু’একদিনের মাঝে রাষ্ট্রপতির তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আশা করছিল। জনগণকে বোঝানো হচ্ছিল যে মতৈক্যে পৌঁছানো গেছে ও প্রয়োজনীয় আইনী আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।
আলোচনা চলাকালীন সময়েই, হঠাৎ করে ১৯৭১ এর ২৫শে মার্চের শেষ প্রহরে, আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে এমন কোন ঘোষণা বা কোন চূড়ান্ত শর্ত না দিয়েই ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে বর্বরতা ও ত্রাসের সাম্রাজ্য স্থাপন করে যা মানব জাতির ইতিহাসে অতুলনীয়। ২৫শে মার্চের কালো রাতে বাংলাদেশের হাজার হাজার নির্দোষ জনগণ, যারা শান্তিপূর্ণ মীমাংসার উচ্চাশা ও সুখী ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে বিছানায় গিয়েছিল, তারা পরদিন ভোরের আলোই দেখতে পায়নি। সর্বোচ্চ প্রতিক্রিয়াশীল কালো শক্তির দ্বারাও এতটা নগ্ন ও নোংরা বিশ্বাসঘাতকতার ঘটনা মানবতা আগে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা, ধরপাকড়, লুটপাট, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শহর-নগর ধ্বংস করছে।
সেনাবাহিনী গ্রামের পর গ্রাম, গুরুত্বপূর্ণ বাজার, উপাসনালয়, ঐতিহাসিক স্থান, ব্যাঙ্ক, কোষাগার, গয়নাগাটি লুট করছে ও টাকা-গয়না সব পশ্চিম পাকিস্তানে চালান করছে। নিরস্ত্র নাগরিকের উপর আধুনিক স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, মেশিনগান, ট্যাঙ্ক, গোলাবারুদ, যুদ্ধ-জাহাজ, বোমারু-বিমান সবকিছু ব্যবহার করা হচ্ছে। আক্রমণটা বিশেষত আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা কল-কারখানার শ্রমিক, শহুরে দরিদ্র মানুষ, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবিদের উপরে ছিল। কারখানার শ্রমিক ও অন্যান্য কর্মজীবি মানুষের আবাসস্থল বস্তি ও কুঁড়েঘরে আগুন দেয়া হচ্ছে আর যখন বাসিন্দারা দৌড়ে ঘর থেকে বের হচ্ছে তাদেরকে মেশিনগানের গুলিতে ঝাঝড়া করে দেয়া হচ্ছে। ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে ও শ্রমিকরা বেকার ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। কল-কারখানার শ্রমিক, কর্মচারী ও তাদের পরিবার পরিজনকে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। দখলকৃত জায়গায় আর্মি ঘরে ঘরে তল্লাশী নিচ্ছে, মানুষজনকে ছুড়িকাঘাত করছে, গুলি করছে, মেয়েদের ধর্ষণ করছে, ধনসম্পদ লুট করছে। জনসম্মুখে মানুষজনকে গাছ থেকে ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে, অত্যাচার করে খুন করা হচ্ছে। নাৎসী স্টাইলে মানুষজনকে খুন করার আগে বাধ্য করা হচ্ছে নিজের কবর নিজে খুড়তে। দখলকৃত শহরের রাস্তাঘাট থেকে পথচারী তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ও সেনাবাহিনীর ব্লাডব্যাঙ্ক বানানোর জন্য তাদের শরীর থেকে জোরপূর্বক সব রক্ত শুষে নেয়া হচ্ছে। এই রক্তশূন্য মানুষকে তারপর পরিকল্পিতভাবে মেশিনগান দিয়ে গুলি করা হচ্ছে।
পাকিস্তানী আর্মি তাদের যাত্রাপথের রাস্তার উভয়পাশের সকল বাজার, গ্রাম পুঁড়িয়ে ফেলে ও গুলি করে নির্মমভাবে নিরস্ত্র মানুষকে খুন করে। যেসব শহর বা গ্রামে তারা ঢুকার সাহস করে না সেখানে তারা আকাশ থেকে বোমা ও গোলাবারুদ বর্ষণ করে পুঁড়িয়ে ছাই করে মাটিতে মিশিয়ে দেয়।
দখলদারী বাহিনীর এ নিষ্ঠুর বর্বরতায় আমাদের দেশের লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে ও বাধ্য হচ্ছে জীবন বাঁচানোর জন্য দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে। গণহত্যার ফলে ঘরবাড়ি, জমিজমা, বিষয়সম্পত্তি সবকিছু ফেলে কৃষিজীবি মানুষ বাধ্য হচ্ছে পালিয়ে যেতে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হল, হোস্টেলে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, আগুন দেয়া হচ্ছে, হাজার হাজার ছাত্র নিহত হচ্ছে। প্রসিদ্ধ বুদ্ধিজীবি, দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবীদকে তাদের সন্তানের সামনে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
সংবাদমাধ্যম ও পত্রিকা অফিসে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে, আগুন দেয়া হচ্ছে। শুধু ২৫শে মার্চ রাতেই কমপক্ষে পঞ্চাশ হাজার মানুষ মারা হয়েছে এবং এই গণহত্যা এখনও একইভাবে চলছে।
এসব ঘটনাবলী নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে, সামরিক জান্তা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে, গণতন্ত্র স্থাপন ও আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত জাতিগত আত্ননিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে তৈরী ছিল না। ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তা প্রকাশ্যে গণহত্যা হোক বা সবকিছু জ্বালিয়ে পুড়িয়ে রাখ করে, যেভাবেই হোক ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর ছিল। দৃশ্যত, বাংলাদেশের আমজনতার উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। তাদের স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছিল যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা ও স্বায়ত্বশাসনের অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ জুড়ে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ তৈরী হয়। বাঙ্গালী সামরিক, আধা-সামরিক ব্যক্তিবর্গ, পুলিশ যারা খুন হবার পূর্বেই জনতার সাথে মিশে যেতে পেরেছিল তারা বাংলার মানুষকে সাহায্য করছে ও পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ও ঐক্যবদ্ধ সসস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। বাংলাদেশের শ্রমজীবি জনতা বিগত তেইশ বছরের (শোষণ, দারিদ্র, দুর্দশা, নির্মম দমন পীড়নের বছর) তীক্ত অভিজ্ঞতা থেকে অনুধাবন করে যে, কায়েমী শক্তির শেষ অবলম্বন পাকিস্তানী সামরিক জান্তার হাত থেকে বাংলার জনতা মুক্তি না পেলে বৈষম্যহীন শ্রেণী স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হিসেবে শ্রমজীবি মানুষ সক্রিয়ভাবে বাংলাদেশের সসস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করছে।
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার” নামে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র জন্ম নিয়েছে । এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও জনাব তাজউদ্দিন আহমেদকে প্রধানমন্ত্রী করে ;একটি অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছে। যেহেতু ডিসেম্বর ১৯৭০ এ ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনগণ দ্ব্যর্থহীনভাবে তাদের পক্ষে রায় দিয়েছে, তাই এই সরকারই বাংলাদেশের একমাত্র আইনগতভাবে বৈধ সরকার।
অবস্থাদৃষ্টে বুঝা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের জনগণের ধ্বংসসাধন করার পরিকল্পনা আনেক আগে থেকেই নেয়া হচ্ছিল। ফ্যাসিস্ট আর্মি ও কমান্ডো ইউনিট তৈরী করে গণহত্যা, ধ্বংস, অগ্নিসংযোগ, লুট ও ধর্ষণে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছিল। রাষ্ট্রপতি যে আলোচনার সূত্রপাত করেছিলেন আর সময় সময়ে তিনি যে প্রতিশ্রুতিগুলো দিচ্ছিলেন সেগুলো আর কিছুই না শুধু সময়ক্ষেপণ ছিল যার আড়ালে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছিল। আমরা ভাল করেই জানি শত্রুকে পরাজিত করতে আমাদের এক দীর্ঘ, সুসংগঠিত সসস্ত্র সংগ্রাম চালাতে হবে। আমরা জানি যে, সংগ্রামে বিজয়ী হতে হলে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্প্রদায়, সকল গণতান্ত্রিক শক্তি ও শান্তিপ্রিয় মানুষের নৈতিক ও বৈষয়িক সমর্থন খুবই জরুরি। এটা উল্লেখ করতে পারা খুবই উৎসাহব্যঞ্জক যে অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও শান্তিপ্রিয় শক্তির সাথে সাথে বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়ন সংগঠন ও নিপীড়িত জনতা আমাদের ন্যায্য উদ্দেশ্যে সমর্থন জানিয়েছে ও পাকবাহিনী কর্তৃক সংগঠিত নিষ্ঠুর কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রমজীবি ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে বিশ্বের শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কাছে ও বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শ্রমজীবি শ্রেণী ও ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনের কাছে আমাদের আবেদনঃ
১. বিগত সাধারণ নির্বাচনে বাংলার আপামর জনতার দ্বারা নির্বাচিত একমাত্র আইনগতভাবে গঠিত “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” এর সরকারকে মেনে নিতে নিজ নিজ দেশের সরকারকে রাজি করানো। এই সরকারের প্রতি বাংলার জনতা অকুন্ঠ সমর্থন ও আনুগত্য প্রকাশ করেছে। কতিপয় ধুলিস্মাৎ হয়ে যাওয়া শহর বাদে সমগ্র বাংলা জুড়ে সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২. বাংলার সরকার ও সংগ্রামী জনতাকে নৈতিক ও বৈষয়িক উভয় সাহায্য প্রদান করা ও নিজ নিজ দেশের সরকারকেও তা করার জন্য রাজী করানো;
৩. গণহত্যা বন্ধ করতে জনমত সংগঠিত করা ও পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট সরকার ও সেনাবাহিনীর উপর চাপ তৈরী করা;
৪. পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ, পাকিস্তানী সামরিক জান্তাকে যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহ, বহন, বোঝাই বা খালাসে প্রত্যাখ্যান করার জন্য নিজ নিজ সরকারকে রাজী করানো
বর্বর পাকিস্তানী সামরিক শাসনে মানবসভ্যতা গভীর প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। মানবতার এখন শুধু দুইটা বিকল্প আছে, হয় সে এই গণহত্যা, ধ্বংস ও নিষ্ঠুরতার নিরব দর্শক হয়ে থাকবে যখন গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও স্বাধীনতা পদদলিত হচ্ছিল, যখন বাংলার সাড়ে সাত কোটি জনতার জন্মাধিকার, তাদের আশা-আখাঙ্খা গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল ও প্রতিক্রিয়াশীল কালো শক্তিকে উৎসাহিত করা হচ্ছিল, অথবা শান্তি, প্রগতি, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার শক্তিগুলোকে একত্রিত করতে ও বাংলাদেশের ন্যায়সঙ্গত উদ্দেশ্যকে সমর্থন করতে বিশ্ববাসীর বিবেককে আহবান করা যাতে করে পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট সামরিক জান্তাকে বিপর্যস্ত করা যায় ও পৃথিবীর সকল প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে শিক্ষা দেয়া যায় যে বিশ্বের জাগরিত জনতা এসব বর্বরতা একদম বরদাস্ত করবে না।
আমাদের সামান্যতম সন্দেহ নেই যে, আন্তর্জাতিক ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিশ্বের শ্রমজীবি জনতা অবশ্যই এই উদ্দেশ্যে মাথা তুলে দাঁড়াবে ও বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনে বিশ্বের শান্তি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শক্তিকে একত্রিত করবে।
বন্ধুরা, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনাদের সাহায্য সহযোগিতায় আমরা শেষ পর্যন্ত শত্রুকে ছত্রভঙ্গ করে বাংলার পবিত্র মাটি থেকে দখলদার বাহিনীকে তাড়াতে সক্ষম হব।
হাজার হাজার শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না, যাবেও না। বিজয় আমাদের হবেই।
“গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” দীর্ঘজীবী হোক।
আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী শ্রেণীর ভ্রাতৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক।
সমগ্র পৃথিবীর শান্তি, সমৃদ্ধি, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের শক্তিগুলোর একতা ও ভ্রাতৃত্ব দীর্ঘজীবী হোক।

ভ্রাতৃত্বপূর্ণ শুভেচ্ছাসহ
বাংলাদেশ “ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টার”
১. সাইফুদ্দিরি আহমেদ মানিক, আহবায়ক, টিইউসি, সভাপতি, লতিফ বাওয়ানী জুট মিল শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা, বাংলাদেশ।
২. মনজুরুল আহসান, সভাপতি, উজালা ম্যাচ ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন ও সাধারণ সম্পাদক, হোটেল ইন্টার-কন্টিনেন্টাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, ঢাকা।
৩. আহসানউল্লাহ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক, বন্দর শ্রমিক ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম।
৪. লুৎফুর রহমান, সভাপতি, কাঞ্চন আঞ্চলিক শ্রমিক ইউনিয়ন, ঢাকা।
৫. শামসুজ্জোহা, সদস্য, রেলওয়ে ওয়ার্কার কর্মী পরিষদ, বাংলাদেশ।
৬. আলমগীর কবির, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ইউনিয়ন, ঢাকা, বাংলাদেশ।
<৪,২৪৯,৫৬৪-৫৬৬>
অনুবাদক- কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৪৯। জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের কর্মসূচী জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট ……১৯৭১

জাতীয় মুক্তিফ্রন্টের কর্মসূচী
যে নিম্নতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে বর্তমানে জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট গঠনের প্রচেষ্টা চালানো যাইতে পারে, তাহা হইলঃ
(১) পাকিস্তানেরপ্রতিক্রিয়াশীলশাসকগোষ্ঠীর দখলকারী সৈন্যবাহিনী সশস্ত্র সংগ্রামের দ্বারা পরাভূত ও বিতাড়িত করা, বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত করা এবং সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য অর্জনের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তোলা।
(২) এই রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বময় ও সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক আইন সভার হাতে ন্যস্ত করা, প্রাপ্তবয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকার ও যুক্তি নির্বাচন প্রথার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচন চালু করা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ফিরাইয়া আনিবার অধিকার জনগণকে দেওয়া, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র নিশ্চিত করা এবং ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।
(৩) জনগণকে বাক স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা, রাজনৈতিক দল ও সংঘ গঠনের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রভৃতি মৌলিক অধিকারসমূহ নিশ্চিত করা, শ্রমিক কৃষক ও অন্যান্য জনতা যাহাতে ঐসব অধিকার অবাধে ভোগ করিতে পারে তাহার ব্যবস্থা করা, সর্ববিধ দমনমূলক আইন রহিত করা, রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিসমূহ নির্ধারণের ব্যাপারে জনসাধারণ যাহাতে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করিতে পারে তাহার পূর্ণ সুযোগ দেওয়া, নগর, শহর ও গ্রামে স্থানীয় ব্যাপার সমূহ পরিচালনার জন্য জনগণের নির্বাচিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সমূহ স্থাপন করা এবং সহকারী শাসন পরিচালনার কার্যে এই সব প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা গ্রহণ করা। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ হইতে পৃথক করা এবং কোন আইন বিধিসম্মত কিনা তাহা নির্ধারণের ভার বিচারালয়ের উপর অর্পণ করা।
(৪) রাষ্ট্রের চোখে জাতি-ধর্ম, স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের সমান অধিকার স্বীকার করা এবং ধর্মগত ও মতাদর্শগত কারণে কারোর প্রতি কোন বৈষম্যমূলক আচরণ না করা।
(৫) প্রত্যেক নাগরিক নিজ বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী মতামত ও ধর্মীয় বিশ্বাস পোষণ ও ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অধিকার নিশ্চিত করা। কাহারও ধর্ম বিশ্বাসে হস্তক্ষেপ না করা। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক প্রচারণা বেআইনি করা। সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক দল ও শত্রুদের দালালী করিয়াছে এমন সব দলকে বেআইনি করা।
(৬) পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী ও বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের দ্বারা শিক্ষিত, তাহাদের প্রতি অনুরুক্ত ও সম্পর্কিত সকল স্তরের সমস্ত প্রকার কর্মচারীদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিকযন্ত্র হইতে অপসারণ করা। আমলা, পুলিশ প্রভৃতির ক্ষমতা সীমিত করা।
(৭) বাংলাদেশের দেশরক্ষা বাহিনীকে একটি প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও গণস্বার্থকারী সৈন্যবাহিনী হিসেবে গড়িয়া তোলা।
(৮) বাংলাদেশের উপজাতি জনগণের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক বিকাশের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা।
(৯) রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে ভারী ও মূল শিল্প গড়িয়া তোলা, শিল্পের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পকে প্রধান নির্ধারিত শক্তি হিসাবে গড়িয়া তোলা, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ইত্যাদির উপর গনপ্রতিনিধিমূলক আইনসভার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমূহ পরিচালনার ক্ষেত্রে সেইসব শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে শিল্প গঠনের মূলধন সংগ্রহ ও অর্থনীতির উপর হইতে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের কর্তৃত্ব বিলোপের জন্য ব্যাংক, বীমা, পাট শিল্প ও ব্যবসা, দদেশিক বাণিজ্য এবং প্রধান পরিবহণ ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা। যাহার মুক্তি সংগ্রামে সহযোগিতা করিয়াছেন, তাহাদের শিল্প, বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা জাতীয়করণ করা হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে শিল্প বিস্তারের জন্য পুঁজিপতিদের বিশেষত স্বল্প পুঁজির মালিকদের উৎসাহ প্রদান ও তাহাদের সুযোগ সুবিধা দান। সমাজব্যবস্থা নির্বিশেষে সকল দেশের সাথে সমতার ভিত্তিতে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপন করা এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলি বিশেষতঃ ভারতের সহিত ব্যবসা বাণিজ্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা।
(১০) (ক) ভুমি ব্যবস্থার ক্ষেত্রে আশু প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন। জমির সিলিং পরিবার প্রতি ১০০ বিঘায় নির্ধারিত করা এবং উদ্বৃত্ত জমি গরিব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে অগ্রধিকারের ভিত্তিতে বিতরণ করা। যেসব ভু-স্বামীর ভূমি সরকারি আয়ত্তে নেওয়া হইবে, তাহাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া। সরকারের খাস জমি ভূমিহীন ও গরিব কৃষকদের মধ্যে বিনা মূল্যে বিতরণ করা।
(খ) ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির মালিকদের খাজনা হইতে রেহাই দেওয়া। ক্রমে খাজনা প্রথা তুলিয়া দিয়া জমির উৎপন্ন ফসলের মোট আয়ের উপর আনুপাতিক হারে আয়কর ধার্যের নীতি অনুসরণ করা।
(গ) পাট ও অন্যান্য অর্থকারী ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।
(ঘ) ক্ষেতমজুরদের জন্য যোগ্য মজুরী নিশ্চিত করা।
(ঙ) কৃষকদিগকে সমবায় চাষে উৎসাহিত করা, রাষ্ট্র হইতে কৃষির আধুনিক যন্ত্রপাতি, সার নামমাত্র সুদে কৃষিঋণ প্রভৃতি দ্বারা কৃষকদিগদের সাহায্য করা।
(১১) বন্যা, জলোচ্ছ্বাস নিরোধ এবং সেচ ব্যবস্থার কাজকে রাষ্ট্র হইতে জরুরী কর্তব্য হিসেবে গ্রহণ করা এবং ঐগুলির জন্য রাষ্ট্র হইতে যথাযোগ্য ব্যবস্থা অবলম্বন করা।
(১২) অবৈতনিক সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা, কম খরচে সকল প্রকার উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা, বহুসংখ্যক বিদ্যালয়, বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার, ডাক্তারি, কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতঃ আধুনিক বৈজ্ঞানিক পন্থায় ও ধর্মনিরেপেক্ষভাবে শিক্ষাদানের প্রস্তাব গ্রহণ।
বাংলাদেশের শিক্ষার সকল স্তরে বাংলা ভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা এবং বাংলা ভাষার বিকাশের জন্য রাষ্ট্র হইতে সকল প্রকার সাহায্য দান। বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দু ভাষাভাষীদের নিজেদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ ও নিজেদের সাংস্কৃতিক জীবন গড়িয়া তোলার অধিকার দান।
(১৩) জনগণের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজকে যথোচিত গুরুত্ব দিয়া উহার জন্য রাষ্ট্র হইতে বেশি করিয়া অর্থ ব্যয় করা এবং চিকিৎসার সুযোগ জনগণের জন্য সহজলভ্য করেয়া তোলা।
(১৪) শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য উপযোগী নিম্নতম মজুরী, চাকুরীর স্থায়িত্ব, দৈনিক উর্দ্ধে ৮ ঘণ্টা কাজ, ভবিষ্যতের নিরাপত্তা, ধর্মঘট ও যৌথ দর কষাকষির অধিকার সহ সমস্ত ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নিশ্চিত করা।
তাদের বাসস্থান, ছুটি, পরিবার সহ শিক্ষা, চিকিৎসার বন্দোবস্ত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার ব্যবস্থা করা।
কর্মচারী, বুদ্ধিজীবী প্রভৃতির জীবনধারণের যোগ্য আয় নির্ধারিত করা, তাদের জীবিকা ও চাকুরীর সংস্থান ও নিশ্চয়তা বিধান ও তাহাদের উপর হইতে করলাভ লাঘব করা।
শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা।
(১৫) সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পুরুষদের সহিত নারীদের সমান অধিকার, সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা। সর্ববিধ সামাজিক নিপীড়ন ও বৈষম্যমূলক আচরণ হইতে নারী সমাজের মুক্তি নিশ্চিত করা। নারীদের ভিতর শিক্ষা প্রচারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা।
(১৬) যাহারা পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠীর সাথে সহযোগিতা করিয়াছে কিংবা মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জনগণের শত্রুতা করিয়াছে, তাদের স্থাবর ও অস্থাবর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাহাদিগদের শাস্তির ব্যবস্থা করা।
শত্রু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করিয়া তাহা জাতীয় সম্পত্তিতে পরিণত করা।
(১৭) শত্রুকর্তৃক দখলকৃত সম্পত্তি মালিকদিগদের ফিরাইয়া দেওয়া। শত্রু দ্বারা উৎখাতকৃত ব্যক্তি ও পরিবারবর্গের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও আহতদের পরিবারবর্গকে যথোপযুক্ত সাহায্য দেওয়া।
(১৮) বৈদেশিক ক্ষেত্রে স্বাধীন ও নিরেপেক্ষ নীতি অনুসরণ করা, কোনরূপ সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধজোটে শামিল না হওয়া, সকল দেশের সহিত সমতার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন, ভারত সহ আফ্র-এশিয়ার দেশসমূহ, সমাজতান্ত্রিক শিবির ও মিত্রভাবাপন্ন দেশসমূহের সহযোগিতা স্থাপন এবং শান্তিকামী দেশসমূহের সহিত এক কাতারে দাঁড়াইয়া বিশ্ব শান্তি রক্ষা ও বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করা।
পশ্চিম পাকিস্তানের শোষিত জনগণ ও নির্যাতিত জাতিসমূহের ন্যায্য ও গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি সকল প্রকার সহযোগিতা ও সমর্থনের নীতি অনুসরণ করা।
সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির উপর নির্ভরশীল না হওয়া এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী শর্তযুক্ত বৈদেশিক সাহায্য বা ঋণ গ্রহণ না করা।
সংগ্রামের মাধ্যমে কোন মুক্ত অঞ্চল হইলে সেই অঞ্চলে উক্ত কর্মসূচী যথাসম্ভব বাস্তবায়িত করিতে হইবে।

<৪,২৫০,৫৬৭-৫৭৩>
অনুবাদকঃ নওশীন তাসনিম, সজীব কুমার সাহা, সাদ্দিউন জয়
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫০। বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি প্রতিবেদন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ………
১৯৭১

বাংলাদেশের উপর প্রতিবেদন

বাংলাদেশ যা পূর্বে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল তার পাকিস্তান সৈন্য পরিচালক ইয়াহিয়া খানের ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের করা বিশাল সংখ্যক ধ্বংসলীলা এবং গণহত্যা দেখে পুরো বিশব হতবাক এবং বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানের প্রগতিবিরোধী শাসকগোষ্ঠী সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা প্রশিক্ষিত এবং সাজানো সৈন্যের সাহায্যে ঘটানো সন্ত্রাসের ঘটনা ইতিহাসে বিরল এবং এটি এখনো অখণ্ডিত। গত তিন মাসে অভাব, অনাহার এবং রোগের কারনে, ৭৫ মিলিয়ন বাঙ্গালীর উপর অমানবিক নিপীড়ন, শত হাজার মানুষ খুন এবং ছয় মিলিয়নের ও বেশি মানুষ দেশ ত্যাগ করে। বাংলাদেশের প্রায় সব শহর এবং ত্রিশ হাজারেরও বেশি গ্রাম লুটপাট করা হয়। এটা এখন পুরোপুরি পরিস্কার যে ইয়হিয়া দল বাঙ্গালী জাতীকে বিলুপ্ত করে দেয়ার চেষ্টা করছে।

কেন এই জেনসাইড?

ইয়াহিয়া খানের করা জঘন্য অপকর্মর শেকড় অতীতের। এমনকি এটি পাকিস্তানের বিরোধে গিয়ে ইন্ডিয়ার সাম্রাজ্যবাদীর বিরুদ্ধে করা গভীর ষড়যন্ত্র।
কিছু মুসলিম প্রধান এলাকাকে একত্রিত করার মাধ্যমে ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান উপমহাদেশে পাকিস্তান গঠন করা হয়এবং ইন্ডিয়া সন্ত্রাসবাদের এক হাজার মাইলেরও বেশি এলাকা জুড়ে দু- ধর্মীদের আলাদা করা হয়। যদিও পাকিস্তান গঠন করা হয় ইন্ডিয়ার সকল মুসলিমদের একটি একক জাতি করার জন্য, আসলে বাঙ্গালী, পূর্ব পক্ষ এবং সিন্ধিস, বেলুচিস, পশ্চিম ভাগের পাঠান এবং পাঞ্জাবী সহ পাঁচটি ভিন্ন ভাষা এবং ভিন্ন ঐতিহ্যের ভিন্ন জাতিকে পাকিস্তান নিজেদের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। এই ঘটনা আবার জাহির করা হয় এবং এখনকার বাঙ্গালী, পাঠান, সিন্ধিস এবং বেলুচিস জাতির গতিবিধিতে দ্যোতনা লক্ষ্য করা যায়।
গত ২৪ বছরে, জনগণ উন্নতির পথ সৃষ্টি করেছে, যেখানে শাসকগোষ্ঠী ভালো প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এটিই সেই অসঙ্গতি যা শাসকগোষ্ঠীর এক দিকে জেনসাইডের বর্তমান সংকটকাল অব্দি গড়িয়েছে এবং অন্যদিকে সাম্যবাদী শক্তির স্বাধীনতা সংগ্রাম অন্যদের উপর আরোপিত হয়েছে।
সরকারের দমনমূলক কর্মপন্থা
চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়ার শুরু থেকে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী, যা বুর্জোয়া এবং সামন্তবাদীদের করাল গ্রাসের দিকে ঠেলে দেয়, পুরোপুরি দমনের কর্মপন্থা ছিল নিজস্ব, জাতীয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার, কারন এটাই ছিল তাদের শাসনপন্থা প্রশমিত এবং সংরক্ষিত করার একমাত্র উপায়। তাদের নীচু শ্রেণীর আক্রমন সংরক্ষণে পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী জাতি এবং গনতন্ত্র রক্ষার্থে নির্মম আক্রমন চালায়।
সাম্যবাদের অগ্রগতি বাড়াবাড়ি রকমের বেড়ে যাচ্ছিলো । শত শত দেশপ্রেমিক কে কারাবন্দী করা হচ্ছিলো এবং বিভিন্ন ঘটনায় সেটা বেড়ে হাজারের দিকে যাচ্ছিলো। পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ ছিল যেখানে গণতান্ত্রিক সতর্কতা ছিল ওয়েস্টার্নদের থেকেও বেশি।
জাতীয় অপলাপ এবং অসমতা
অনিয়ন্ত্রিত শাসন থেকে সুবিধাভোগের মাধ্যমে পাকিস্তান বুর্জোয়ারা তরতর করে একাধিপত্যবাদী হয়ে যাচ্ছিলো। এটি অর্জিত হয়েছিল শুধুমাত্র গনতান্ত্রিক এবং জাতীয় অধিকার সংকোচনের মাধ্যমে, যতটা রাজনৈতিক শাসন ছাড়া অর্থনৈতিক শাসন বজায় রাখা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিলো এবং বহুমুখী রাষ্ট্রের অধীনে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অপলাপ অদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রক জাতীয় অপলাপের স্থান নেয়।
পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন টিকিয়ে রাখার জন্য, যা শুধুমাত্র তাদের বুর্জোয়া এবং সামন্ততান্ত্রিকদের সাথে জড়িত ছিল এবং মোটেই অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যের উত্তোলন ছিল না, পাকিস্তানের এবং নির্দিষ্টভাবে পূর্ব পাকিস্তানের ঐতিহ্যে বাধা দিতে বাধ্য করা হয়; কারণ, যদি দেশে গণতান্ত্রিক এবং উন্নত উদ্দেশ্য অনুমোদন করা হয় পুরো আক্রমণ পাকিস্তানে মধ্যযুগীয় অন্ধকার বয়ে আনবে, যার ফলে চরমভাবে সংরাম করা শাসকগোষ্ঠীর পতন ঘটতে পারে।
যখন জাতীয় রাজনীতির অপলাপ ও বৈষম্য দ্বারা চাপ সৃষ্টি করছিলো পাকিস্তানের ভিন্ন শাসকগোষ্ঠীকে সবার পক্ষে সহ্য করা কঠিন ছিল, এটা বিশেষ করে বাঙালীদের পক্ষে দুর্ঘটনার মত ছিল। ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক এবং ঐতিহ্যইক বাধা বাঙালীদের অতিতের জন্যে পুরোপুরি বিরোধ ছিল, এটা পাকিস্তানি বাঙালীদের ঐতিহ্যের মৃত্যু প্রমান করে।
পাকিস্তানের ন্যাশনাল মনোপলির উন্নতি পূর্ব পাকিস্তানের অধিপত্য প্রসূত করে, এবং এই অধিপত্য ছিল উপনিবেশীও।
পাকিস্তানে সব বুর্জোয়ারা ছিল অবাঙালী, যাদের হাতে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতি চালনার ভার ছিল। সবথেকে বড় বুর্জোয়ারা পরিচিত ছিল ’২২ মনোপলিসট পরিবার’ হিসেবে, যারা ইন্ডাস্ট্রিয়াল সংস্থান এর ৬৭% এবং ব্যাংক এবং ইনস্যুরেন্স এর ৭০-৮০% নিয়ন্ত্রন করতো।
পাকিস্তানে বিশাল ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে, অর্থনৈতিক রাজনীতি পশ্চিম পাকিস্তানের দয়া হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানে প্রনয়ন করা হয়। সুতরাং পাকিস্তানের স্থিতির চব্বিশ বছরে দুই পক্ষের অর্থনৈতিক অসমতা ছল পাক খাওয়ার মতন। যদিও পাকিস্তানের জনসংখ্যার অনুপাত ছিল পুরো ৫৬%, যা ব্যায়ের ৩৬% (১৯৬৫-৬৬-১৯৬৯-৭০) অংশ ভাগ করে এবং শুরুরদিকে এটা ছিল ২০% এর ও নিচে ছিল (১৯৫০-৫১-৫৫)। বিগত বিশ বছরে পূর্ব পাকিস্তান রপ্তানিমূলক আয় ছিল ৭০% এর থেকেও বেশি এবং যা ছিল ৪৫-৫৫% পরিসরের বাইরে, বর্তমানে যখন আমদানিকৃত আয় বেশি ছিল না, তখন তা ছিল ৩২%।

এসব বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈদেশিক ব্যবসা বলিষ্ঠ এবং দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতি দেখিয়েছে যা কার্যকরিভাবে সকল সুলভ বৈদেশিক বিনিময় বিলীন করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের সকল খরচ, পশ্চিম পাকিস্তানী বুর্জোয়ারা এমন এক পর্যায়ে যেতে পারে যা থেকে তারা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি বন্দি হট্টতে পরিণত করতে পারে। এটা বলাটা গুরুত্বপূর্ণ যে, এই ক’বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল রপ্তানীর ৪০-৫০% পূর্ব পাকিস্তানে বিক্রি হয়েছে।
পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক আধিপত্য সম্ভব হয়েছিলো কেন্দ্রীয় সরকারের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের বড় ব্যবসার মাধ্যমে, যা পাকিস্তানের নিজেদের ভেতরকার অসমতা প্রকাশ করে। যখন পাকিস্তানে মিলিটারি আইন গঠন করা হয়, তখন প্রশাসনের সকল মিলিটারি সদস্য পশ্চিম পাকিস্তানের ছিল এবং ১৯৬০ এ কেন্দ্রীয় বেসামরিক কর্মচারীদের ৮৭% ছিল পূর্ব পাকিস্তানী (এই সংখ্যা তখন পর্যন্ত তেমন পরিবর্তিত হয় নি এবং যেকোনো কিছু কম সংখ্যক বাঙ্গালী কর্মকর্তা কেন্দ্রীয় সরকারি রাজনীতিতে খুব কমই প্রভাবিত হয়েছিল)
সংক্ষেপে, পশ্চিম পাকিস্তানের বড় বুর্জোয়ার আপাতদৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক ব্যখ্যা পূর্ব পাকিস্তানকে একটি অসুস্থ রাজ্যে নামিয়ে আনে। অবশ্যই, প্যান্থাস, বেলুচিস, এবং সিন্দিস নামে পাকিস্তানের অন্যান্য জাতিরাও চেপে যাচ্ছিলো।। কিন্তু বাঙ্গালীদের সাথে বিদেশাতঙ্কিতদের মত ঘৃণিতভাবে আচরন করা হচ্ছিল। এবং ঔপনিবেশিক রকমের শোষণ চলছিলো।
গণতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসনের জন্য সাম্যবাদী সংগ্রাম
পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রথম সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ভাষা নিয়ে। এটা বলা অপ্রয়োজনীয় যে এটি নিঃসন্দেহে গণতান্ত্রিক বিষয়বস্তু, কারণ এটি শুরু হয়েছিল উর্দু ভাষার অগনতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে, মাতৃভাষার আণুবীক্ষণিক নিম্নতা, বাকী মানুষেরা এটিকে শুধুমাত্র প্রদেশিক লীগ বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। শোষকদের কার্যকলাপে বাঙ্গালীরা ও অন্যান্য জাতিরা তাদের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছিল। ১৯৫২ তে এই সংগ্রাম আনুপাতিক রূপ গ্রহন করে। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনের পর গণতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসন পুরনাঙ্গ রূপ পায়। এর ফলে বিপরীত পক্ষের নির্বাচন মুসলিম লীগ পার্টির বিরুদ্ধে একটি অবিচ্ছিন্ন দল গঠন করে । এই অবিচ্ছিন্ন দলই ২১-দফা দাবির সুত্রপাত করে, যা পাকিস্তানের হয়ে লাহোরের ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ এর পক্ষ থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পুরো স্বায়ত্তশাসন দাবি করে। অবিচ্ছিন্ন দলের নির্বাচনে ৩০০ আসনের ২৯০ টি লাভ করে বিশাল জয় অর্জন করে, যা প্রমান করে জনগন গণতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসন চায়।
কিন্তু শোষকগোষ্ঠী জনগণের এ রায় প্রত্যাখ্যান করে এবং নির্বাচনের ফল শুন্য বলে বিবেচনা করে। দুই মাসের ভেতর পূর্ব পাকিস্তানের অবিচ্ছিন্ন দল, কেন্দ্রীয় সরকার, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে সমঝোতা করে অবিচ্ছিন্ন দল মিথ্যা বলে খারিজ করে । একইসময় পূর্ব পাকিস্তানে বহু রকমের অত্যাচার শুরু করে। হাজার হাজার সাম্যবাদী এবং বামপন্থিদের কারাবন্দী করা হয়।
কিন্তু এসব নির্যাতন পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রিয় স্বায়ত্ত্বশাসনের আন্দোলন থামাতে পারে নি। এটি লক্ষণীয় যে , পাকিস্তানের অন্যান্য জাতি যথা বেলুচিস ,সিন্ধিস এবং পাঠানরা তাদের জাতীয় অধিকারের জন্য যুদ্ধ করেছে । এই সময় , কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের চারটি প্রদেশ কে একিভূত করে এবং দুই অংশের মাঝে সমতা চালু করে, পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা(৫৬%) বেশি থাকা স্বত্তেও যেন সকল বিষয়ে বভত্তর অংশ দাবি করতে পারে। এটি অবশ্যই পাকিস্তানের বিভিন্ন দেশের মাঝে ক্রমবর্ধমান অন্দোলনকে দমন করার পরিকল্পনা। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের একটি ইউনিট পাকিস্তানের জাতীয় অধিকার অর্জনের আন্দোলনে উপরিক্ত সংগ্রামকে জোরদার করতে দায়িত্ব পালন করে।
পাকিস্তান গনপরিষদে ১৯৫৬ সালে প্রনীত সংবিধান যা ১৯৫৫ সালে পরোক্ষ ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হয়। তিন বছর পর, জনগনের জনপ্রিয় চাপে , পাকিস্তান সরকার অনেক টালবাহানা করে পাকিস্তানের প্রথম সাধারন নির্বাচনের(ফেব্রুয়ারি-মার্চ,১৯৫৯) তারিখ ঘোষনা করে।
কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল শাসক গোষ্ঠী গনতন্ত্র প্রবর্তনের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য যা গনতন্ত্রের পথ সুগম করতো । সাম্রাজ্যবাদ সুবিধার সাথে সাথে সারা দেশে সারা দেশে সামরিক আইন জারি করে। এরপর সামরিক শাসক আয়ুব খানের স্বৈর শাসন শুরু ।
আইয়ুব খান তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে বিভিন্ন জাতির জাতীয়তাবাদি অন্দোলনকে দমন করতে। কিন্তু ১৯৬১ সাল থেকে বাঙ্গালি,বেলুচিস,সিধ্রা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম শুরু করে। এমনকি ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়কাল ও তাদের মনে সংশয় সৃ্ষ্টি করে নি। ১৯৬৬ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ আওয়মিলীগ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করে। ৬ দফা দাবি মূ্লত ভোটাধিকারসহ সংসদীয় গনতন্ত্রের দাবি। এই প্রস্তাবনাটি বামপন্থি এবং কমিউনিষ্ট দ্বারা সমর্থিত হয় এবং দাবিটির উপর ভিত্তি করে জনগন সম্পূর্ণ অকপটে অন্দোলন শুরু করে , এবং আন্দোলনকে গতিশীল করে।
এই আন্দোলনটিকে ও সাময়িকভাবে দমন করা হয়।
কিন্তু ১৯৬৮ সালের শেষের দিকে এবং ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে পাকিস্তানের সীমানা নিয়ে একটি আন্দোলন শুরু হয় যা পরিশেষে আইয়ুব শাসকের সমাপ্তি ঘটায়। পূ্র্ব পাকিস্তানে স্টুডেনটস অ্যাকশন কমিটি কর্তৃক প্রনীত ১১ দফা কর্মসূচি দ্বারা আন্দোলন বেগবান হয় এবং এগুলো শাসন বিরোধী রাজনৈতিক দল দ্বারা সমর্থিত হয়।
৬ দফা এবং ১১দফা কর্মসূচির সাথে অসামরিক মুক্ত জীবন যাপন ,শিক্ষা সংষ্কার,ছাত্র ও শ্রমিক দাবি, নিরপেক্ষ ও স্ব্ধীন পররাষ্ট্রনীতি, ব্যাংক ও বীমা ইত্যাদি জাতীয়করনের দাবি সংযোজিত হয়।
পশ্চিম পাকিস্তানে বিরোধী দল,সাধারন জনগন ও বাহিনী সরাসরি নি্র্বাচন এবং সংসদীয় গনতন্ত্রের জন্য ঐক্যবদ্ধ ছিল। একনায়কতান্ত্রিক আইয়ুব শাসকগোষ্ঠি ঐক্যবদ্ধ গন আন্দোলনের চাপ প্রতিরোধ করতে না পেরে ক্ষমতামচ্যূত হয়।
ইয়াহিয়ার প্রবেশ
তারপর ইয়াহিয়া খান শাসক শ্রেণীকে উদ্ধার করতে এলেন। ইয়াহিয়া পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করলেন; আইয়ুবের সংবিধান বাতিল করলেন এবং তার অপ্রকৃত গণতন্ত্র সরিয়েদিলেন। জনসাধারনের বিদ্যমান চাপে ইয়াহিয়া বাধ্য হয়ে নির্দিষ্ট কিছু দাবি স্বীকার করে,যথা, প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সরাসরি নির্বাচন। এক একক ও সাবেক প্রদেশের পুনঃস্থাপনের বিভাজন এবং ‘সমতা’ যা১৯৫৫সালের পূর্বে চালু করা হয়েছিল।দেশের জন্য একটি সংবিধান যা নির্বাচিতজাতীয় পরিষদ দ্বারাপ্রণীত তা বাতিল করা হয়। কিন্তু ইয়াহিয়া একটি বৈধ কাঠামো জারি করেন যা কট ,‘’ইন্টার আলিয়া জারি ‘’, যা রাষ্ট্রপতি, ইয়াহিয়া খান দ্বারা প্রমাণীকৃত করতে হবে। এতে জাতীয় পরিষদের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ হয়।

১৯৭০ এর ডিসেম্বরে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।ফলাফল ছিল চমকপ্রদ । পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের১৬৯টি আসনের মধ্যে সর্বমোট১৬৭ টি আসনজিতেছে; যা জাতীয় পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার (মোট ৩১৩ টি আসনের মাঝে) সঙ্গে আওয়ামী লীগের দল তৈরি হয় ।
আওয়ামী লীগেকে ভোট প্রদানের দ্বারাপূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আসলে স্বায়ত্তশাসনের জন্য ভোট প্রদান করে। আর তা শাসকশ্রেণীকেবিচলিত করে তুলে।
পশ্চিম পাকিস্তানে জেড এ ভুট্টো৮৪ টি আসন ( ১৪৪তি আসনের মাঝে )এন এ আসনে জয়ী হন, কিন্তু এসব আসন শুধুমাত্র পাঞ্জাব ও সিন্ধু প্রদেশে থেকে ছিল। যাইহোক, শাসকশ্রেণী তাদের ষড়যন্ত্র হিসাবে একটি বিড়ালের থাবা যেমন ভুট্টোকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকে বিপন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
খুব তাড়াতাড়ি ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের প্রথম সেশনের জন্য একটি তারিখ ঘোষণা করেন ৩রা মার্চ, ভুট্টো ঘোষণা করেন যেতার দল জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করবে না; এবং নিদিষ্ট তারিখেরঅধিবেশনে সরাসরি প্রত্যক্ষ সংগ্রামের হুমকি প্রদান করেন ।আর ইয়াহিয়া তা ন্যায্য চিন্তা করে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন এবং এর পরিবর্তে বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে একটি গোলটেবিল সম্মেলনের চিন্তা করেন । কিন্তু এই অস্বাভাবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার আগে আওয়ামী লীগ, যারা জাতীয় পরিষদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়ী তাদের সাথে পরামর্শ করার বিবেচনাও করেনি।
শান্তিপূর্ণ শেষ গণআন্দোলনের: শিখর
স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট কারনে সকল গণতান্ত্রিক দল জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় ক্ষুব্ধ ছিল এবংঅযৌক্তিক ও হাস্যকর ধারনা হিসেবে গোল টেবিল বৈঠক প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু হাজার হাজার জনগন খবরটি শুনার সাথে সাথেইইয়াহিয়া খানের এই উচ্চ হস্তান্তর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেনেতাদের প্রতিক্রিয়ারআগেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নেমে আসে ।
তা সত্ত্বেও, উত্থান তার শান্তিপূর্ণ চরিত্র হারায় নি। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে আওয়ামী লীগ ২য়মার্চ থেকে পাঁচ দিনের জন্য একটি সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। এটা সকল গণতান্ত্রিক দল সমর্থিত। সমগ্র মানুষ সম্পূর্ণরূপে এই আহ্বানে সাড়া দেয়। যথারীতি শাসক চক্র ভীতিপ্রদর্শন এবং সহিংসতা দ্বারা এটা দমন করার চেষ্টা করে। কারফিউ ঢাকা ও অন্যান্য শহরের উপর আরোপ করা হয়েছিল এবং যখন মানুষ শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল তাদেরকে মেশিনগানের আগুনের নিচে পতিত করা হয়েছিল। যদিওশাসক চক্রের ষড়যন্ত্র মানুষের মনোবল ভেঙে দিতে ব্যর্থ হয়।
৬ই মার্চ শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের পঞ্চম দিনে ইয়াহিয়া জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের জন্য একটি নতুন তারিখ ঘোষণা করেন।২৫শেমার্চ, কিন্তু একই সাথে পূর্ব পাকিস্তানের জনগন এবং নেতাদের এই সঙ্কটের জন্য দায়ী করেন যা আসলে ইয়াহিয়া খান নিজে এবং শাসক দলের কারনে তরান্বিত হয়েছিল।তিনি এমনকি তথাকথিত “পাকিস্তানের“সংহতি ও অখণ্ডতা ”বজায় রাখার জন্য সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার আশঙ্কাও করেন।
একইসাথে সামরিক জান্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসনে নিযুক্ত করেন; যে কি না,কম বুদ্ধি ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির একটি নীচ জীব, যাকেপূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের দমন করতে এই সামরিক জান্তা ইতিমধ্যে সামরিক আক্রমণ দ্বারা তার পদক্ষেপ দেখিয়েছেন ।
৭ইমার্চ, সামরিক আইন প্রত্যাহারএবং ক্ষমতা জনগণের নির্বাচিতপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তরনা করা পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান ধারাবাহিকভাবেশান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।শেখ মুজিবুরের দাবী ও কার্যক্রম সব গণতান্ত্রিক দল দ্বারা সমর্থিত হয় এবং সমগ্র মানুষ মহান উদ্যম সঙ্গে সাড়া দেয়। আক্ষরিক ভাবেই দেশের সব কার্যক্রম স্থবির হয়ে এসেছিলেন। মিলস, কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সকল সরকারি, আধা-সরকারি. অফিস এবং হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালত এবং পূর্ব পাকিস্তানের পরিবহন ব্যবস্থা, ইত্যাদি সহ সকল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে এসেছিল। পুলিশ ও গোয়েন্দা শাখা সহ পূর্ব পাকিস্তানের বেসামরিক প্রশাসন আওয়ামী লীগের নির্দেশনা অনুসরণ করে। সংক্ষেপে, পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগের ভার্চুয়াল নিয়ন্ত্রণ ছিল।
এই পর্যায়ে ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে শেখ মুজিবুরের সাথে আলোচনা করতে আসার ঘোষণা দেন। আলোচনা১৪ই মার্চ থেকে শুরু। এরপরআলোচনার কিছু সময়ের জন্য অব্যাহত হয়। একই সময়ে ইয়াহিয়া প্রকাশ্যে ঘোষণা করে যে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের (যেমন ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সামরিক আইন বাতিল ) দাবীর সাথে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে।
আলোচনাইয়াহিয়া খান ও শেখ মুজিবুরের উপদেষ্টাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। অতঃপর মানুষ যখনএকটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তির দৃষ্টিশক্তি দেখতে শুরু করেছিল তখনইপূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ লোকদের বিরুদ্ধে আকস্মিক এবং অগ্নিশর্মা আক্রমণ এসেছিল।২৫শেমার্চ রাতে, নামমাত্র সতর্কবাণী ছাড়াই তাদের উপর এবং এমনকি ইয়াহিয়া-মুজিব এর আলোচনা শেষে, বিশ্বাসঘাতক মিথ্যাবাদী ইয়াহিয়া খানের ভাড়াটে গুন্ডাদের বাংলাদেশের নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

একটি নতুন পর্যায়ের শুরু: মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম
এভাবে পাকিস্তানের সামরিক জান্তারা গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের শান্তিপূর্ণ সকল সংগ্রামের পথ বন্ধ করেছে এবং মানুষ বাধ্য হয়েছে তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা এবং গণতন্ত্র ও জাতীয় অধিকারের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র তুলে নিতে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীরসৈন্য,সেইসাথে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস এবং এর সাথে পুলিশ সহ সবদিক থেকে মুক্তিফৌজ (মুক্তিবাহিনী) গঠনের জন্য মানুষ যোগদান করেন এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী যা ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধেএকটি বিদেশী দখলদার বাহিনীর মতো আচরণ (যা বাস্তবে পশ্চিম পাকিস্তানী শাসনের ঔপনিবেশিক প্রকৃতি প্রমাণিত)।
উপরের ঘটনা এবং কার্যক্রমের তথ্য থেকেনিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত টানা যেতে পারে।
* বাংলাদেশের মানুষের বর্তমান সংগ্রাম গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের পথে তাদের দীর্ঘ সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়।
* এমনকি পাকিস্তানের শাসক চক্রের পুনরাবৃত্তি এবং একগুঁয়ে মনোভাবগণতন্ত্র এবং স্বায়ত্তশাসন অস্বীকার করার পরও,মানুষ শান্তিপূর্ণ পথ পরিহার করেনি বরং ক্ষমতাসীন সামরিক একনায়কতন্ত্রের সঙ্গে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা করার চেষ্টা করে। ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার সশস্ত্র হামলারকারনে মানুষ স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করতে বাধ্য হয় ।

* বাংলাদেশের জনগণকে সামরিক একনায়কত্বের বিশ্বাসঘাকতায়এবং বর্বর হামলার কারনে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য করা হয়েছে।
* পাকিস্তানের গত কয়েক মাসের ঘটনাগত চব্বিশ বছরের ইতিহাসকেসন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত করেছে যে স্বীকৃতগণতন্ত্র শাসকশ্রেণীর চিন্তা থেকে সর্বাধিক দূরে ছিল। অতএববাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এটা অনিবার্য ছিল যে, আজ না হোক কাল গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের সংগ্রামের জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে বিকশিত হবে। কারণ, এখন পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তান অতি প্রতিক্রিয়াশীল শাসকশ্রেণী কখনোই পাকিস্তানে গণতন্ত্র চালু করবে না এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে সামরিক আমলাতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র স্থানচ্যুত করা সম্ভব হবে না। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বর্তমান যুগে সামাজিক উন্নয়নের জন্য গনতন্ত্র অত্যাবশ্যক এবং অনিবার্য প্রয়োজনীয়তা। বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদ একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা ছিল।
গত চব্বিশ বছর ধরে গণতন্ত্রে বাধা এবং শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির পরেও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিক্রিয়াশীল শাসক চক্র জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে এবং বাংলাদেশের মানুষের উপর আক্রমণ শুরুর মাধ্যমে পাকিস্তানের বর্তমান সংকটময়পরিস্থিতি ত্বরান্বিত করেছে। নোংরা ইয়াহিয়া খানের প্রতিক্রিয়াশীল শাসক চক্র যারা কেবলমাত্র দায়ী মৃত্যু এবং প্রকাণ্ড সম্পদ হারানোর লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিষ্ক্রিয় করা জন্য।
বাংলাদেশের জনগণ এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন। তারা লক্ষ লক্ষ জীবন উৎসর্গ করেছে এবং তারা আরো বেশি কিছু করার জন্য প্রস্তুত। নির্মম, ঔপনিবেশিক দখলদার বাহিনীর থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, এবং শুধু সামাজিক শৃঙ্খলা প্রতিস্থিত করার আগে তারা বিশ্রাম করবে না।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি

<৪,২৫১,৫৭৪>
অনুবাদকঃ আল-জাবির মোহাম্মদ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫১। বিদেশে সাহায্য চেয়ে অজয় রায়ের চিঠি ……… ১৯৭১

প্রিয় লেন,
অনেক দিন তোমার সাথে কোন যোগাযোগ হয় না। আমি নিশ্চিত তুমি বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাবলী গভীরভাবে পর্যবেক্ষন করছো। ২৫ই মার্চ ১৯৭১, পাকিস্তান আর্মি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ ও বেসামরিক জনগনের উপর ঝাপিয়ে পরায় আমাকে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। আমি ১৫ই মে ঢাকা ত্যাগ করে ২৩ মে ইন্ডিয়াতে পৌছেছি। ঢাকায় অবস্থানকালে পাকিস্তান আর্মির গনহত্যা ও সরকারী ও ব্যক্তিগত ভবনগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছি। এমন কি মসজিদ, মন্দির, চার্চ যেখানে প্রানভয়ে ভীত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে সেগুলোও ছাড় পায়নি। গ্রাম, হাট- বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র কিচ্ছু রক্ষা পায়নি সব ধ্বংস করে ফেলেছে। দশ লক্ষের উপরে মানুষকে স্রেফ মেরে ফেলা হয়েছে, হাজার হাজার মেয়ে নির্যাতন ও ধর্ষনের শিকার এবং তাদের আর্মি ক্যাম্পগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রায় কোটিখানেক মানুষ বাধ্য হচ্ছে ভারতে আশ্রয় নিতে। এই শরনার্থীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় (২০০), কলেজ (হাজারের উপরে), এবং স্কুল (১০,০০০) শিক্ষক, বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবিরা রয়েছেন।

তুমি জানো আমরা ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছি। মুক্ত বাংলার একটি বৈপ্লবিক সরকার গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কমিনিউস্ট পার্টি সহ সব গনতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। আমরা লড়বো, শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবো। আমাদের মুক্তিবাহিনী (স্বাধীনতার যোদ্ধা) সাধারন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র, চাষী, দিন মজুর, শিক্ষক ইত্যাদি নিয়ে গঠিত। এই যুদ্ধে আমাদের নৈতিক এবং বস্তুগত দুইধরনেরই আন্তর্জাতিক সাহায্য দরকার। আমার তাই তোমার কাছে বিশেষ অনুরোধ, তুমি এবং তোমার দলীয় লোকজন আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য সাহায্য তুলে দাও। আমাদের ছেলেরা কোন রকম শীতবস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধ করছে। যা প্রয়োজনীয় দয়া করে তাই করো। দয়া করে আমার ঠিকানায় কিছু টাকা পাঠানোর চেষ্টা করো, সেটা আমি সিপিবি (কমিউনিস্ট পার্টি অফ বাংলাদেশ)-এর তহবিলে জমা করে দিবো।

খেয়াল করো আমি এখন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক হিসেবে কাজ করছি। এটি শরণার্থী .-শিক্ষকদের সংস্থা যার লক্ষ্য দুর্গত শিক্ষক সমাজ সহ মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করা। সুতরাং আশা করি তুমি তোমার শিক্ষক সমাজের কাছেও আমাদের এই মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্যে অনুরোধ করবে। সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা, সাধারন সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, দরভাঙ্গা ভবন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা – ১২, ভারত।

সার্বিক শুভেচ্ছা সহ
ডঃ লেন শিলডস
রসায়ন বিভাগ
ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
ব্র্যাডফোর্ড, ইংল্যান্ড।

তোমার একান্ত
অজয়

<৪,২৫২,৫৭৫-৫৮৮>
অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত, আল-জাবির মোহাম্মদ,নিঝুম চৌধুরী
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫২। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অবস্থা এবং ভুমিকা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন বাংলাদেশের বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের প্রচার পুস্তিকা

২৫ শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর
রক্তঝরা দিনগুলোতে
শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাথের
সভাপতি, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ ও বিশ্ব বৌদ্ধ সৌভ্রাতৃত্ব সংঘ
১লা জানুয়ারি, ১৯৭২ইং
মুখবন্ধ
গিরিরাজ হিমালয়ের হিমবাহু বন্ধন থেকে পলাতকা গঙ্গা-ব্রক্ষপুত্রের মহামিলনে ঘটেছিল কোন এক মহালগ্নে। তাদের এই সঙ্গম শ্রান্তি ও ক্লেদ মহাসাগরের নীল মহাস্নানে ধুয়েমুছে নেওয়ার ক্ষণেই মহাসাগরের বুকে ভেসে উঠেছিল বিশ্বের অদ্বিতীয় কৃষিভূমি, আমাদের এই দেশ। এই সোনার বাংলা। সুজলা সফলা শস্য শ্যামলা এ দেশ শত শতাব্দীর মহানিদ্রা ঘোর ছেড়ে বৌদ্ধ পালযুগের বৌদ্ধ বাংলাই গর্ব সমুন্নত শিরে হয়ে দাঁড়িয়েছিল,-সিংহল, শুমাত্রা-জাভা, সুবর্ণভূমি ও সুবর্ণদ্বফিবাসীর মহাতীর্থ ক্ষেত্র এবং এটা ইতিহাসের সাক্ষ্য। বৌদ্ধ বাংলার চরম বেদনাকর বিয়োগান্ত পরিণতির ধারা বেয়ে দাসত্বের জিঞ্জিরের নির্মম লৌহ নিষ্পেষণে জর্জরিতমুমূর্ষুবাংলা ও বাঙ্গালীরধর্ম, সভ্যতা, ভাব- ভাষা–সংস্কৃতি ও কৃষ্টি পুনরুজ্জীবনের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ শুরু হয় ১৯০৫-১৯০৬ সালে বঙ্গ- ভঙ্গ আন্দোলনের অবয়বের বুকে স্বাধীনতার স্বপ্ন- সাধ নিয়ে। বিপ্লবী বাংলার মন ও মানসের সীমাহীন দ্যোতনা ভাঙ্গার পূজারী বেশে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, দেশ প্রিয় যতীন্দ্র মোহন ও নেতাজী সুভাষের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পূর্ণ পরিণতির পথে বেগবতী হয়ে উঠেছিল বটে, কিন্তু অবাঙ্গালীর দল বিদেশি, বিজাতি বিধর্মী বেনিয়ার অনুকম্পা আশীষ ও সক্রিয় সহযোগিতা পুষ্ট হয়ে বাংলার স্বপ্ন সাধের ভ্রনাবয়বকেই করে দিয়েছে শ্বাসরুদ্ধ।
অস্থিচর্মসার নাভিশ্বাসগ্রস্ত বাংলার সাড়ে সাত কোটি বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সন্তান দল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বজ্র কণ্ঠের আহ্বানে ভাঙ্গার পূজারীর বেশে মৃত্যুঞ্জয়ী সংকল্প গ্রহন করলে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গভীর নিশিথে বাংলার প্রাণকেন্দ্র ঢাকায় নিদ্রায় মগ্ন শত শত বাঙ্গালীর জীবনে নেমে আসে চির নিদ্রা। শুরু হয় উন্মুক্ত তরবারি হাতে অত্যাচারীর উম্মাদ নর্তন- কুর্দন। শুধু শহরে বন্দরে নয়, গ্রাম বাংলার হাজার হাজার পল্লীর হাটে- ঘাটে- মাঠে চলতে থাকে হত্যা, লুণ্ঠন, নারী হরণ, ধর্ষণের কালো বিভীষিকা। সবুজ বাংলার অফুরন্ত শ্যামলিমা হয়ে উঠে মুক্তিপাগল অবুঝ বাঙ্গালীর তাজা খুনে লালে লাল।
বৌদ্ধ জম্বুদ্বীপের হতাবশিষ্ট মুশ্তিমেয় বাঙ্গালী বৌদ্ধ সন্তানদলওঅত্যাচারীর উদ্যত- কৃপাণের কবল থেকে রক্ষা পায় নি। এর চরম সংকট মুহূর্তে ঢাকার কমলাপুর বৌদ্ধবিহারেরশ্রদ্ধেয় শ্রীবিশুদ্ধানন্দ মহাস্তবিরের প্রাণও কেঁপে উঠেছিল মৃত্যু- মুখোমুখি অসহায় মানুষের জন্য। বলতে দ্বিধাবোধ করবো না, কমলাপুর বৌদ্ধ বিহার রুপ মধুচক্রের চারিদিকে মধুলোভীদের যেসব ছাই সর্বাধিক গুঞ্জন তুলতো, দেশের মৃত্যুসংকটক্ষণে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের টিকির সন্ধানও। এ গভীর বিয়োগান্তক্ষণেও কর্মবীর বিশুদ্ধানন্দ ভেঙ্গে নুয়ে না পড়ে চরম পিচ্ছিল পথে দৃঢ় পথে যে যাত্রা শুরু করে ছিলাম ‘রক্তঝরা- সহযোগিতার জন্য তিনি আমার প্রতি যে ভাব ও মন নিয়ে মৈত্রীর হস্ত প্রসারিত করে ছিলেন তা গ্রহণ করেছি অতীতের সব দুঃখ বেদনাকে দুঃস্বপ্নের ছায়ার ন্যায় ধুয়ে- মুছে দিয়ে; পরিস্থিতির সর্বনাশা পরিধি ও গভীরত্ব উপলব্ধি করে এবং দেশের মানুষের প্রতি তাঁর বেদনাবিহ্বল হৃদয়ের বাস্তবরূপ চর্মচক্ষে প্রত্যক্ষ করে।
– বিশ্বেশ্বর চৌধুরী।
রক্তঝরা দিনগুলোতে
মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যতম অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল যে রাত্রিতে- হিটলার, নাদিরশাহ, তইমুরলঙ্গ, চেঙ্গিস খাঁকে ছড়িয়ে পরিব্যাপ্তি ঘটেছিল যার; এক মাইলেই- এর যে ঘটনা একদিন বিশ্ববাসীকে করে দিয়েছিল স্তব্ধ- বাংলাদেশে সেরকম শত শত মাইলেই সৃষ্টিকারী জঙ্গি ইয়াহিয়া সরকারের শত অপচেষ্টা ব্যর্থ করে আজ বাংলাদেশে উঠেছে নতুন সূর্য। শেই রক্তিম সূর্যের আশায় প্রাণ দিয়েছে হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী মানুষ; ঊষালগ্নে প্রত্যাশায় অনেক কাজ করে গেছেন নেপথ্যে।
সুপরিকল্পিত পরিচালিত অধ্যায়ের শুরুতে কামান, মর্টারের শব্দে ভীতসন্ত্রস্ত আশেপাশের জনসাধারণ একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে ‘কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দির’কে বেছে নিলো। এভাবে জমা হতে লাগলো ঢাকা নগরীর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের করে লোকেরা। আমি অস্থিরভাবে পায়চারী করতে লাগলাম, ভাবছিলাম এদের কেমন করে বাঁচাবো। এ অসহায় লোকদের মুখে হাসি ফোটাতে পারব কিনা। পরদিন সকালবেলা (২৬শে মার্চ, ’৭১ ইং) কমলাপুর রেইল স্টেশন থেকে এ দিকটায় শেলিং শুরু হল। হঠাৎ কয়েকটা এসে পড়লো আমাদের সীমানায়। প্রাণ হারালো মুটে- মুজুরের ছোট্ট একটি মেয়ে আর নাম না জানা দু’জন যুবক।
এদিকে দেখতে দেখতে হাজার চারেকের মত অসহায় নারী- পুরুষ- শিশু মন্দিরে জমা হলো। কেউ কেউ আবার অধিকতর নিরাপত্তার আশায় স্থানন্তরে গমন করতে লাগলো। আমি শেষ পর্যন্ত এ সমস্ত প্রানের নিশ্চয়তা বিধানকল্পে২৮শে মার্চ, ’৭১ ইং তারিখে সেক্রেটারিয়েট ভবনে তদানিন্তন চীফ সেক্রেটারী ও অন্যান্য কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীর সাথে সাক্ষাৎ করতে ছুটলাম। সাথে ছিল আমার প্রিয় শিষ্য শ্রীমান শুদ্ধানন্দ ভিক্ষু ও শ্রীমান জ্ঞানদারঞ্জন বড়ুয়া। পথে বের হয়ে যে ঢাকা নগরীর দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করলাম তা চিরকাল স্মরণে থাকবে আমার। দেখলাম কামান- মর্টার সজ্জিত ঢাকার রাজপথে ইয়াহিয়ার সশস্ত্র বর্বর সৈন্যরা টহল দিচ্ছে, আশেপাশে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে আছে অগণিত লাশ। এ ছাড়া আর কোন পাবলিক কিংবা প্রাইভেট যানবাহন সেদিন আমার চোখে পড়েনি।
সেক্রেটারিয়েটে হোম সেক্রেটারীর কামরায় ঢুকে দেখলাম চারজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন, চিন্তা আর অবসাদে মুখ ভারাক্রান্ত। বৌদ্ধ মন্দিরে চার হাজারের মত আর্তেও সমাগমের কথা জানিয়ে আমি তাদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য এঁদের সাহায্য ছাইলাম। উত্তরে হোম সেক্রেটারী ম্লান মুখে জবাব দিলেন, “ আমার নিজের নিরাপত্তা যেখানে অনিশ্চিত সেখানে আপনার বৌদ্ধ সমাজ কিংবা আপনার মন্দিরে আশ্রিত লোকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করি কি করে। তা ছাড়া আমার হাতে কোন ক্ষমতাও নেই”। আমি নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম তবে এক্কেবারে আশা ছাড়লাম না।
এপ্রিল মাসের ২তারিখ বেলা দশটার দিকে আমি আমার কামরায় বসে আছি। এমন সময় শুনলাম, মার্শাল ল-এর অর্ডার নিয়ে রেডিও অফিস থেকে তিনজন লোক এসেছেন, সাথে টেপ রেকর্ডার। আমার সাথে দেখা করে বললেন, “আপনাকে একটা বিবৃতি দিতে হবে”। একটু পরেই পুনঃ বললেন, “এর জন্য আপনাকে কিচ্ছু ভাবতে হবে না, আমরা কয়েকটা প্রশ্ন এনেছি, আর তার সাথে এনেছি উত্তরটা। আপনি শুধু কণ্ঠটা দিবেন- এই যা”।– বলে আমার দিকে এক টুকরা কাগজ এগিয়ে দিলেন। লিপিটুকু পড়ে- আজ বলবো, আমি সেদিন এত দুঃখের দিনেও মনে মনে না হেসে পারিনি। আজ আমার বলতে দ্বিধা নেই, যেহেতু আজ আমার মুখ বন্ধ রাখার জন্য রাইফেল কিম্বা বেয়নেট উঁচু করে ধরবে না অথবা জোর করে মিথ্যা বলাতে পারবে না; কারণ আজ আমি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক এবং সর্বোপরি আমার চিন্তাধারা মুক্ত। সেদিনের সে বিবৃতির নামে অপরূপ প্রহসন পড়ে আমি বলেছিলাম, “ আপনাদের এই বানানো উত্তর আমার পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব হবে না। তবে হ্যাঁ, আমি প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারি; সরকার যদি ইচ্ছা করেন তবে তা প্রচার করতে পারেন”। বৌদ্ধদের অবস্থা কেমন’- এরুপ এক প্রশ্নে তা জানতে চাওয়া হলে উত্তরে বলেছিলা, “ঢাকা বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থানরত বৌদ্ধ এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকের আপাতত ভালই আছেন। ঢাকা শহর কিম্বা প্রদেশের অন্যান্য স্থানের লোকদের অবস্থা কেমন তা প্রদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখতে পারলেই বলবো। তবে সবাই ভালো ও শান্তিতে থাকুক এটাই আমি একান্তভাবে কামনা করি”। এ ছাড়া তখনকার সৃষ্ট অবস্থার জন্য একমাত্র আওয়ামীলীগই দায়ী বলে বলাতে ছেয়েছিলেন। আমি এ বলে উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানাই যে, আমি রাজনীতি বুঝি না, যেহেতু আমি ধর্মগুরু এবং আমার সংঘ কিম্বা আমি রাজনীতির ধার- ধারি না। মানুষের কল্যাণ কামনাই আমার একমাত্র ব্রত।
গোলমালের প্রথম দিকে দিন পাঁচেকের মতো আমাদের টেলিফোন লাইন কাটা ছিলো। এরপর থেকেই চাঁটগা, পটুয়াখালী, বরিশাল, কুমিল্লা এবং আরোও অন্যান্য জায়গা থেকে আমাদের কাছে বার্তা আসতে লাগলো। ঐ মুহূর্তে তারা আমার উপস্থিতির উপর বিশেষ গুরুত্ত আরোপ করছিলো। এর বেশি কিছু প্রকাশ করার মতো তখন কারো অবস্থা ছিলো না। গ্রামের অবস্থা বুঝতে আমার বেগ পেতে হলো না। ঐ সময়ে আমরা ‘আকাশবাণী’ থেকে প্রচারিত এক খবরে জানতে পারলাম, চট্টগ্রামের রাউজান থানার এক বৌদ্ধ বিহার গোলার আঘাতে সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে গেছে এবং একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু মারা গেছেন। আমরা প্রায় সব সময়েই ‘আকাশবাণী’ আর ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ থেকে ঐ ধরনের খবর শুনতে পাচ্ছিলাম। আমার প্রাণ ছটফট করছিলো, সংশয়াপন্ন হলাম অনেকের জীবদ্দশা সম্পর্কে। দিন যেতে লাগলো, কিন্তু জনসাধারণের সাথে সাক্ষাৎ করার তেমন কোন কার্যকারী ব্যবস্থা করতে পারলাম না।
এরপর হঠাৎ মে মাসের পয়লা তারিখে তদানীন্তন গভর্নর টিক্কা খান আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি আমার কর্মী শ্রীজ্ঞানদা রঞ্জন বড়ুয়াকে নিয়ে সাবেক গভর্নর হাউসে গিয়ে উঠলাম। গিয়ে দেখি তৎকালীন চীফ অব স্টাফ হামিদ খান আর টিক্কা খান এক ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে অবস্থান করছে। হামিদ খান আমাকে বলল, “আপনাকে বিদেশে বৌদ্ধ রাষ্ট্রগুলোতে পরিভ্রমণে যেতে হবে। এখানে যে আপনারা শান্তিতে আছেন এবং যে সামান্য গণ্ডগোল বেধেছিল তা ঠিক হয়ে গেছে, এটাই বলতে হবে। আমি পাকিস্তা বৌদ্ধদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবো”। বৌদ্ধদের নিরাপত্তার কথা শুনে আমি আশান্বিত হলাম; কিন্তু ভাবলাম দেশে যে প্রলয় ক্রমাগত বেড়েই চলছে সেটাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে কিভাবে একটা ডাহা মিথ্যা প্রচারণা চালাবার জন্য বিদেশ যাবো।একটা সম্প্রদায়কে রক্ষা করার নামে কি করে একটা জাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবো। বললাম, “গ্রামের লোকেরা এক্কেবারে হতাশ হয়ে পরেছে। আমাকে কাছে পাবার জন্য তারা আকুল আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তারা কেউই ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আকি দু’ একদিনের মধ্যে চাঁটগাযেতে চাই”। একটা সফরসূচি দাখিল করতে বলবো আমাকে। আমি সম্মতি জানিয়ে ফিরে এলাম।
ওখান থেকে ফেরার পর থেকেই মানসিক দুশ্চিন্তায় ভীষণভাবে ভুগছিলাম।ভাবছিলাম আমার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে।
ঐ রাত্রে আড়াইটার দিকে কুকুরের ডাকে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। একটু পরেই কে একজন আমাকে ডেকে জানালো, সে একটু টেলিফোন করতে চায়। আমার কেমন জানি একটু সন্দেহ জাগলো। তাকে জানিয়ে দিলাম, এত রাত্রে টেলিফোন দেয়া সম্ভব নয়। তার অনেক কাকুতি মিনতির পরেও আমি রাজী না হওয়াতে সে চলে যাচ্ছিলো। আঙ্গিনায় তাকে আমাদের কুকুরটা এমনভাবে ধরলো, আমার মনে হল তাকে বুঝি কামড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমার মনে করুণা জাগলো। থাকতে না পেরে শেষ অবধি আমি দরজা খুললাম। যেই খোলা, অমনি দু’ পাশ থেকে চারজন যুবক আমাকে ধরে ফেললো। দেখলাম, তাদের কারো হাতে রিভলবার, স্টেনগান কিম্বা রাইফেল। কামরায় এনে তারা আমাকে চেয়ারে বসিয়ে খুব শক্ত করে বেঁধে রাখলো। এরি মধ্যে টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছে। চিৎকার করতে বারণ করে একজন আমার দিকে রিভলবার উঁচু করে ধরে রাখলো। চাবি নিয়ে তারা একটা স্বর্ণ-নির্মিত বুদ্ধ মূর্তি (জাপান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত), আমার গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা (সিংহলের জনৈক ভদ্রমহিলা দান করেছিলেন), একটা টাইপরাইটার, শরণার্থীদের জমা স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা সহ মোট পনের হাজার টাকার জিনিসপত্র নিয়ে যায়। আমি অবশ্যি কর্তৃপক্ষকে ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণসহ এ বিষয়ে অবগত করাই। সেদিন ভেবেছি আমার সরলতার সুযোগ নিয়েই তারা সর্বস্ব লুট করেছিলো।
এরপর আমার জন্মস্থান রাউজান থানার পূর্বগুজরাথেকে ৭ই মে দুখানা টেলিগ্রাম পেলাম। লেখা ছিল,-
“MISCREANTS LOOTED TENPLE WITH ALL THINGS YESTERDAY THREATENING BURNING WHOLE VILLAGE COME IMMEDIATELY” এবং “COME AT ONCE DONT FAIL”
এগুলো পেয়ে আমি রীতিমত বিব্রত হয়ে পড়লাম। অনুমতি ব্যতিরেকে তখন কারো ঘর থেকে বের হবার সাধ্য ছিল না। কারণ, এতে হয় মৃত্যু নয়তো অকথ্য নির্যাতন। আমি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে কর্মীবাহিনীর জন্য কিছু ‘পরিচয় পত্র’ নিয়ে চাটগাঁ যাবার ব্যবস্থা করলাম। ডাঃ পি, সি, বড়ুয়া ও শ্রীমান জ্ঞানদা রঞ্জন বড়ুয়াকে আমার কর্মীবাহিনীর অগ্রবর্তী দল হিসেবে অত্যাচারিত, নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্য চাটগাঁ পাঠাই।
মে মাসের তের তারিখ অসম সাহসী মোঃ ইশহাক চৌধুরী সাহেবকে নিয়ে আমি চাটগাঁ পৌঁছালাম। চাটগাঁ তখন মৃত ও জনমানবশূন্য। আমি কাউকে না পেয়ে শাহজাহান হোটেলে গিয়ে উঠলাম। পরে এক বিরাট কর্মীবাহিনী আমার পিছনে এসে দাঁড়ালো। ৪৬নং বৌদ্ধ মন্দির সরকে সংঘের অফিস করে একটা সফরসূচি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করি এবং কর্মীবাহিনীকে নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তর পরিভ্রমণ শুরু করি।
ছ তারিখে যে বৌদ্ধ মন্দির লুট করেছিলো, চাটগাঁ গিয়ে জানতে পারলাম তা’ স্থানীয় মুসলিম লীগের কতিপয় অসৎ কর্মীদের দিয়েই সমাধ্য হয়েছিল।
চাটগাঁ গিয়ে আমি প্রায় ৭০ হাজারের মতো ‘পরিচয় পত্র’সংঘের মাধ্যমে হিন্দু- মুসলমান- বৌদ্ধ- খ্রিষ্টানদের মধ্যে বিলি করি। আমি পরে খবর পেয়েছি, এ পরিচয় পত্র দিয়ে অনেক বৌদ্ধ যুবক এবং হিন্দু পরিবার সামরিক শাসকদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সীমানা অতিক্রম করে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্রে চলে গিয়ে মুক্তি সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলো।
চাটগাঁয়ের যে সমস্ত গ্রামে যাই, তার কেবল থানার নামই উল্লেখ করছি- রাউজান, রাঙ্গুনীয়া, বোয়ালখালী, পটিয়া, সাতকানিয়া, চকরিয়া, কক্সবাজার, রামু, উখিয়া, টেকিনাফ, ফটিকছড়ি, হাটহাজারী, মীরেশরাই, সীতাকুণ্ড, মহেশখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি, রামগড়, বান্দরবন, বোয়ালখালী, দিঘীনালা, মায়নীমুখ, কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা।
এছাড়া আমাদের সফরের পরবর্তী পর্যায়ে পটুয়াখালীর তালতলী, আমতলী, গলাচিপা, বরগুনা, খেপুপাড়া, কবিরাজপাড়া, নয়াপাড়া, বইলতলী, কুয়াকাটা সহ মোট ৪২টি গ্রাম ঘুরি।
যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা, খুলনা, বাগেরহাট, ভোলার বিভিন্ন অঞ্চলেও ব্যাপক পরিভ্রমণ করি। টাংগাইলের শ্রী শ্রী অকুকৃল ঠাকুরের ‘সৎসংঘ আশ্রম’ এবং মির্জাপুরের আর, পি, সাহার সংস্থাগুলো পরিদর্শন করি। আমি ও আমার কর্মীবাহিনী তিন মাস আট দিনে সবশুদ্ধু মিলিয়ে প্রায় ১২,০০০ মাইল পরিভ্রমণ করি।
আমাদের পরিক্রমার সময়সূচী বেতারে প্রচার করা হতো। আমাদের যাতায়াতের রাস্তার দু’পাশে সম্প্রদায় নির্বিশেষে যে জমায়েত আর ভিড় লক্ষ্য করেছি, তা থেকে উপলব্ধি করেছি তারা উৎপীড়ন- অত্যাচার সর্বোপরি মৃত্যু ভয় থেকে রক্ষা পাবার ক্ষীণ আলোক দেখেছিলো। আমাদের থেকে দুটো সান্ত্বনার বানী শোনার জন্যে জনসাধারণ সব সময়ই উন্মুখ হয়ে থাকতো। এতে পরবর্তী সময়সূচী পালনে বিলম্ব ঘটতো, কিম্বা সম্ভবও হতো না।
প্রত্যেক গ্রামে এমন কি থান হিসেবে ঘটনা আর নির্যাতনের কথা উল্লেখ করলে এক বিরাট ইতিহাস রচনা করা যাবে। যা দেখছি তার একটা মোটামোটি ধারণা হিসাবে এটাই বলতে হয় যে, উৎপীড়ন, নৃশংস হত্যা, পাশবিক অত্যাচার আর নৈরাজ্যের এক নজিরবিহীন ইতিহাস পাকিস্তানের সামরিক জান্তা রেখে গেছে।
আমরা যে সমস্ত জায়গায় গেছি সে সমস্ত এলাকার লোকদের জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে সভায় আহ্বান জানিয়েছি; তাদের অভাব অভিযোগ নিয়েছি এবং ভবিষ্যতে যাতে তার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে ব্যাপারে আশা দিয়েছি। বৌদ্ধ গ্রাম ছাড়া আমরা অনেক হিন্দু ও মুসলমান গ্রামেও সভা করে তাদের সাথে মিলিত হয়েছি।
স্বচক্ষে দৃষ্ট অত্যাচারের প্রত্যেকটা বিষয়ে আমরা স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এবং লিখিতভাবে তা পেশ করি। এটা স্থিরনিশ্চিত যে, আমিই আমার সংঘকে নিয়ে সর্বপ্রথম (এবং সর্বশেষও) সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে তাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে অকুতোভয়ে তাদের অত্যাচারের কথা তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেই। আমার সংঘের তরফ থেকে আমিই তাদের সৃষ্ট রাজাকার, মুজাহিদ, আল- বদর এমনকি নিয়মিত সৈন্যদের বিরুদ্ধে নালিশ করি। এরা তথাকথিত শান্তির নামে যে অশান্তি, নৈরাজ্য ও লুটতরাজ, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালানো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংসকরণ, নরহত্যা, নারী অপহরণ ও ধর্ষণ এবং তল্লাশীর নামে প্রকাশ্যে স্ত্রীলোকের সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে দেখা- এ সমস্ত আমি জানাই। সামরিক জান্তাকে দাখিলকৃত দু’একটা চিঠির অনুলিপি উদ্ধৃতকরলাম।
রাজাকার ও মুজাহিদের বিরুদ্ধে মেজর জেনারেল অ্যাফেয়ার্স কে ২০শে সেপ্টেম্বর ৭১-এ দেয়া এক চিঠির কিয়দংশ-
…১৭ তারিখের আমাদের চিঠি সংযুক্ত করার সময়, সবিনয় নিবেদন এই যে, পূর্বে উল্লেখিত পুলিশ স্টেশনের আয়তায় (মিরশরাই এবং সীতাকুণ্ড) যে সকল গ্রাম আমরা পরিদর্শন করি, সেখানের মানুষের দুর্বিষহ অবস্থা দেখে বিশেষ করে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের যাদের সাথে পূর্ব উল্লেখিত পুলিশ ষ্টেশনের রাজাকার এবং মুজাহিদেরা নির্দয় ব্যবহার করে, নৃশংস ভাবে হামলা করে এবং গুরুতরভাবে প্রহার করে, আমরা আমাদের কান্না ধরে রাখতে পারিনি…
……যে সকল গ্রাম আমরা পরিদর্শন করি তার কোনটিই এই অত্যাচার থেকে রক্ষা পায় নি, তারপরও মিরশরাই পি, এস, এর ভিতরে একটি গ্রাম মাইয়ানির নাম উল্লেখ করতে চাই যেখানে রাজাকাররা তথা কথিত তদন্তের নামে পুরুষদের নৃশংসভাবে অত্যাচার করা হয় এবং মহিলাদের বিবস্ত্র করা হয়…
২৪ সেপ্তেম্বের ১৯৭১ তারিখে রাজাকারদের বিরুদ্ধে মেজর জেনারেল সিভিল অ্যাফেয়ার্স- কেদেয়া অপর এক চিঠির অংশ বিশেষ……
রাজাকাররা বাজারে আবুরখিল গ্রামের (রাওজান, চট্টগ্রাম) সকল বৌদ্ধদের পুড়িয়ে হত্যা করার এক উন্মুক্ত ঘোষণায় আমরা শঙ্কিত হই এবং আমাদের প্রতিনিধি দল পূর্বে উল্লেখিত গ্রামে যান…
যখন আমরা উল্লেখিত গ্রামের প্রধান বৌদ্ধ মঠে প্রবেশ করছিলাম,তখন গ্রামের এক পাশে রাজাকারদের লুটের হিংসাত্মক কণ্ঠস্বর শুনতে পারছিলাম যেখানে প্রায় ১৮ টা ঘরে লুট করা হয়, ঘরের লোকদের নির্দয় ভাবে পিটান হয় এবং ৫ জন নির্দোষ মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়……
উক্ত ব্যাপারে রাজাকারসহ মোট ১৭ জন দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে বলে খবর পাই।
মীরেশরাই থানার নিয়মিত সৈন্যদের বিরুদ্ধে আমার কাছে যে টেলিগ্রাম এসে পৌঁছে তাও সামরিক কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করি। সেটা ছিল-
মীরশরাই বেস থেকে সৈন্যরা বৌদ্ধ গ্রাম দামদামাতে আক্রমণ করে ২৯ সে নভেম্বের ৫২ ঘর পুড়ে যায় ২ জন হত্যা অনেকে আহত অনেক লুট করা সম্পত্তি মহিলা ধর্ষণ ভগবান বুদ্ধের ভাঙ্গা ছবি ভিক্ষুদের হামলা।
বৌদ্ধ ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদের যে সমস্ত অভিযোগ পাই তা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করে তার কার্যকরী ব্যবস্থা নিই।
মিঃ আব্দুল ওয়ালি-র জবানবন্দি, চট্টগ্রাম পার্বত্য অঞ্চল, ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১।
…… যে রাজাকাররা মানুষের অবরত কষ্টের কারণ।
যে রাজাকাররা ব্যবসায়ী এবং গ্রামবাসীদের বিনামূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করতে বাধ্য করেছে…
যে মেইযুযরা নারীদের অত্যাচার করছে এবং নৃশংস ভাবে কয়েকজন মেয়েদের উপর হামলা করেছে। যে দিঘিনালা হাসপাতালে মেইযুসদের হামলার শিকার অনেক মেয়ে পরে আছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের দিঘিনালায় কতিপয় গুন্ডা প্রকৃতির লোক প্রায় ২৫টি হিন্দু পরিবারকে ধর্মান্তরিত করে। শ্রী বিনোদ বিহারী চৌধুরী নামে জনৈক ভদ্রলোকের পাঠানো একখানা দরখাস্ত আমার কর্তৃপক্ষ সমীপে দাখিল করি এবং পুনঃ তাদের ধর্মে দীক্ষিত করার ব্যবস্থা করি। এছাড়া চাটগাঁ আর পটুয়াখালী বহু হিন্দু পরিবারকেও ধর্মান্ত রকরণ থেকে রক্ষা করেছি।
প্রথম পর্যায়ে সামরিক কর্তৃপক্ষ যে সমস্ত বৌদ্ধদের আটক করে তার ৪৯ জনের এক তালিকা প্রস্তুত করে তাদের কাছে পেশ করি। এদের অনেকেই উচ্চপদস্থ কর্মচারী এবং প্রায়ই সরকারি চাকুরে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের ছাড়পত্র কিংবা খবরদা দেবার জন্য আমরা কর্তৃপক্ষ সমীপে বরাবর চাপ দেই। কিন্তু শেষ পর্যন্তও তাদের কোন সন্ধান মেলেনি। তবে মার্চের পরবর্তী অধ্যায়ে রাজাকার কিম্বা মুজাহিদরা যে শত শত লোক ধরে নিয়ে গিয়েছিলো তাদের সামরিক জান্তার মরণ থাবা থেকে আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হই।
বিশিষ্ট সংগীত পরিচালক জনাব আলতাফ মাহমুদসহ বিল্লাহ পরিবারের নুহেল আলম বিল্লাহ, খনু, দিনু ও লিনু বিল্লাহকে সামরিক কর্তৃপক্ষ ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল। এঁদের পাঁচজনের মুক্তির জন্য অশেষ প্রচেষ্টা চালানোর পর নুহেল ও তার তিন ভাইকে কোন রকমে প্রাণে বাঁচিয়েছি। দুঃখের বিষয় জনাব আলতাফ মাহমুদকে সামরিক জান্তার মরণ ছোবল থেকে রক্ষা করা গেল না।
আমরা মির্জাপুর সফরকালে সমাজসেবী, জনদরদী শ্রী আর, পি, সাহা-র কন্যা জয়া-র কাছ থেকে তার পিতা, ভাই, অন্যান্য কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের সামরিক বাহিনী কতৃক অত্যাচারের এক মর্মন্তদ কাহিনী শুনি। এদের হাত থেকে আর, পি, সাহাকে উদ্ধারের জন্যে বহু প্রচেষ্ঠা চালাই কিন্তু এ জনদরদীর কোন সন্ধান পেলাম না।
পটুয়াখালীতে শ্রী অবনাশ চক্রবর্তী নামে জনৈক ভদ্রলোকে এক ধ্বংসস্তূপরে দিন যাপন করতে দেখি। তাঁর তিন কন্যা মায়া, মঞ্জু ও প্রতিমা সামরিক জান্তার অত্যাচার হতে রক্ষা পাবার জন্য পাঁচ মাস অজ্ঞাতবাস অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে আমরা তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি।
ঢাকাস্থ শ্রীরথীন্দ্র সরকার এবং শ্রীঅলক বলকে রাজাকার এবং পাক সেনারা ধরে নিয়ে অকথ্য শারীরিক অত্যাচার চালায়। এ খবর তাদের সমূহ মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। শ্রীরথীন্দ্র সরকারমৃতপ্রায় অবস্থায় কিছু দিন হাসপাতালে রাখতে হয়েছিল। ডাক্তার নুরুল ইসলাম সাহেবের (ডাইরেক্টর, পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন) আন্তরিক প্রচেষ্টায় সুস্থ হয়ে ওঠে।
আমাদের পরিক্রমণকালে আমি প্রত্যেক জায়গায় আশ্রয় প্রার্থীকে আশ্রয়দান এবং মুক্তিবাহিনীর কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করতে আবালবৃদ্ধবনিতা বিশেষ করে যুব সমাজকে পরামর্শ দিয়েছি। এমন কোন বৌদ্ধ গ্রাম নেই যেখানে মুক্তিবাহিনী এবংহিন্দু পরিবার আশ্রয় গ্রহণ করেনি, এমন কি জনৈক অফিসারসহ পাঁচজন মুক্তিবাহিনী ঢাকা বৌদ্ধ মন্দিরে আশ্রয় নিয়ে তাদের কাজ চালিয়ে গিয়েছিলো।
বিগিত ন’মাসে আশ্রয় প্রার্থী অনেক ছেলেমেয়ে এবং মাতৃপিতৃহীন শিশু আগ্রসার বৌদ্ধ অনাথালয় ভিক্ষু সুগতানন্দের তত্ত্বাবধানে আছে।
পয়লা মে তারিখে ঢাকা বৌদ্ধ মন্দির লুট হলে তদন্তের পর কর্তৃপক্ষ আমাকে আত-দশ জনের নাম দাখিল করতে বলে। আমি অসম্মতি জানালে তারা গ্রাম ঘেরাও করে জ্বালিয়ে দেবে বললো। আমি বলেছি, আমার কেস- এর তদন্তের প্রয়োজন নেই। তদন্তের প্রয়োজন নেই। তদন্তের নামে অনর্থক কতকগুলো নিরীহ লোকের উপর অত্যাচার হোক, এ আমি কোনদিন চাইনা। এভাবে কমলাপুরের ঠাকুরপাড়া, সবুজবাগ, আহমদবাগ প্রভৃতি আমার প্রতিবেশী গ্রামের উপর পাক-সৈন্যদের হামলা সব সময় প্রতিরোধ করেছি।
পরিভ্রমণকালীন ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরে যে সমস্ত মূর্তি ভগ্ন কিম্বা অক্ষত অবস্থায় দেখতে পাই তা যথাস্থানে রক্ষিত আছে। আমার সংঘ বৌদ্ধগ্রাম ও মন্দিরের ক্ষয়ক্ষতির একটা মোটামোটিফর্দ তৈরী করে তা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করে তার ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়।
এরি মধ্যে আন্তঃ পরিভ্রমণ বন্ধ করে বিদেশ যাবার জন্যে বারবার আমার কাছে চাপ পড়তে লাগলো। আমি জানিয়েছি, স্বচক্ষে দেখা এত অত্যাচারকে ধামাচাপা দিয়ে বিদেশে গিয়ে আমার পক্ষে মিথ্যা বলা কি করে সম্ভব? কিন্তু তারা সে কথায় কর্ণপাত না করে ক্রমাগত পীড়াপীড়ি শুরু করলো।
শরণ নিলাম পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন ইন্সটিটিউটের ডাইরেক্টর প্রফেসর নুরল ইসলাম সাহেবের। হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সাড়ে তিন মাস ডাক্তার সাহেবের চিকিৎসাধীনে থাকতে বাধ্য হলাম।
হাসপাতালে থাকা অবস্থায়ও পাঁচ- ছ’বারের মতো কর্তৃপক্ষের কাছে উপস্থিত হতে আমাকে বাধ্য করেছিলো এবং বিদেশে যাবার জন্য নানাভাবে ভীতি প্রদর্শন করেছিলো। আমি শারীরিক অনুপযুক্ততার কারণ দেখিয়ে বিদেশে শত মিথ্যা বলা থেকে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্যের উন্মেষের অন্তরায় না হয়ে বাঁচলাম।
আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে পাক- সরকার যে কাজ সমাধা করতে ব্যর্থ হল মেজর রাজা ত্রিদিব রায়কে দিয়ে তা করিয়ে নিলো। আমার কাঁধ থেকে বোঝটা নামতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আমি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলাম।
সামরিক কর্তৃপক্ষ জোর করে আমার কাছ থেকে দু’টো বিবৃতি নিয়ে প্রচার করে। ন’ মাসে আমার নামেও মোট তিনখানা বিবৃতি ছাপায়। কিন্তু আরেকখানা আমার খুলনা পরিভ্রমণকালীন আমার এবং আমার সংঘের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে ছাপানো হয়। তখন এগুলোর প্রতিবাদ করেও কোন ফল হয় নি। অধিকন্তু সামরিক জান্তা আমার উপর অধিকতর অসন্তুষ্ট ও ক্রুদ্ধ হয়।
এ ছাড়া দেশে থেকেও সামরিক জান্তার অত্যাচারে কথা বিশ্বের কাছে প্রচার করার সুযোগ পেয়েছিলাম। কয়োটো, জাপান এ ‘বিশ্বধর্ম ও বিশ্বশান্তি সম্মেলনে’ উপস্থিত থাকাকালীনদি ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অফ রিলিজিয়ন অ্যান্ড পিস-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডঃ হোমার এ জ্যাক- এর সাথে আমার আন্তরিকতা জন্মে। মানবতার সেবায় আমি নিয়োজিত এ খবর পেয়ে আমার সাথে দেখা করতে তিনি টুরিস্ট হিসেবে একদিনের জন্যে ঢাকায় আসেন। আমি তখন হাসপাতালে। রুদ্ধদার বৈঠকে তাঁর সাথে আমার পুরো সোয়া তিন ঘণ্টা আলাপ হয়। দীর্ঘকাল পরিভ্রমণে আমি স্বচক্ষে যা দেখেছি কিম্বা শুনেছি- রাজাকার, পাক- সৈন্যের অত্যাচার- অনাচার, লুটতরাজ, হত্যাযজ্ঞ, নারীহরণ ও নির্যাতন- এ সবই তাকে সবিস্তারে বলেছি। আমার হাসপাতালে আশ্রয় নেবার কারণ এবং এ তথ্য প্রকাশের পিছনে যে আমি, এ কথা ঘুনাক্ষরেও প্রকাশ না করতে ডঃ জ্যাক কে অনুরোধ করি। অন্যথায় আমার জীবন সংশয়ের কারণ হবে বলে জানাই। তিনি আমার এই অনুরোধ রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ডঃ জ্যাক নতুন দিল্লিতে এ বিষয়ে এক আলোচনা বৈঠকে মিলিত হন। এতে বাইশটি সংস্থা এক যুক্ত স্মারকলিপি পেশ করেন। এর পর ওয়াশিংটনে পঞ্চাশটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে অনুরুপ এক বৈঠক বসে। তিনি বাংলাদেশ সম্পর্কে চারটি প্রণয়ন করেন। এগুলো-
১.“ইস্টবেঙ্গল/ বাংলাদেশ”
২. “ঢাকাডায়েরি”
৩. ডেথইনগোল্ডেনবাংলাদেশ
৪.“ফাইনাল রেসোলুশন”- ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন বাংলাদেশ
এ বইগুলোতে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তার অধিকাংশই আমাদের বৈঠকেরই ফলশ্রতি। এগুলো ছাড়া তিনি মাসিক পত্রিকা ( নভেম্বর, ৭১ ইং )
‘বিয়ন্ড কয়োটো’ এর ‘অন ভিসিটিং ঢাকা’ তে লিখেছেন-
…..ঢাকায় আমি জানতে পারি প্রায় ১০০,০০০ মানুষ গণহত্যার শিকার হয়…… হত্যাকাণ্ড চলছে, নতুন গৃহরক্ষী ও রাজাকারদের মাধ্যমে। আমি বুঝতে পারি কিভাবে আট লাখ হিন্দুদের হত্যা করা হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারি সৈন্ন্য দিয়ে… এ হত্যাকান্ডে আমি আরও সংযুক্ত করতে চাই যে… পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি যা করছে তা সারা পৃথিবীর মানুষ ভুলতে পারবে না যেমনটা হিটলার জার্মানিতে করেছে।
না পৌঁছানো পর্যন্ত আমি বলতে পারছি না, বাংলাদেশের মুভমেন্টে এর গরিলা আর্মি এবং মুক্তি বাহিনিতে মানুষের কতটা সমর্থন আছে। তবে এ সম্বন্ধে অনেক শুনেছি বাংলাদেশ রেডিওতে……
ডঃ জ্যাক ছাড়াও আমার পরিচিত জাতিসংঘের জনৈক উচ্চপদস্থ কর্মচারী ঢাকা থেকে থাইল্যান্ড যাবার পথে আমার সাথে দেখা হয়। থাইল্যান্ডে ‘ ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ অফ বুদ্ধিস্ট’ এর প্রধান কার্যালয়কে তাঁর মাধ্যমে ঐ সমস্ত জঘন্য অত্যাচারের বিষয় অবগত করাই এবং এখানকার নিপীড়িত জনগণের দুঃখ উপশমের জন্য পাকিস্তান সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার আবেদন জানাই।
এই খবর শুনে উক্ত সংঘের প্রেসিডেন্ট প্রিন্সেস পুন পিশমাই দিসকুল পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে একখানা চিঠি দেন এবং রাষ্ট্র সংঘের সেক্রেটারি জেনারেল উথান্ট থাইল্যান্ডে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত এবং আমাকে তার অনুলিপি দেন। চিঠিটা পুরো উদ্ধৃত করলাম।
জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান,
পাকিস্তান রাষ্ট্রপতি
ইসলামাবাদ
১৫ই সেপ্টেম্বর, ৭১
মহামান্য,
আমরা আপনার এই মর্মে দৃষ্টিগোচর করতে চাই যে, ঢাকায় বিশ্ব বৌদ্ধ সংঘের একটি সক্রিয় আঞ্চলিক শাখা রয়েছে রয়েছে নিম্নে বর্নিত ঠিকানায় যা আমাদের সংগঠন ১৯৫০ সালে সিলনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সংশ্লিষ্ট।

যেহেতু বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে অস্থির অবস্থা চলছে এবং আমরা আমাদের আঞ্চলিক শাখা নিয়ে গভীর ভাবে শঙ্কিত যেহেতু আমরা তাদের সাথে কোন রকম যোগাযোগ করতে পারছি না।

আমরা তাই মহানুভবের কাছ থেকে উপরে বর্নিত জায়গায় অবস্থানরত আমাদের ভিক্ষু ও সাধারন ছাত্রদের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য জানতে চাইছি। আমাদের তরফ থেকে কোন সাহায্য করলে আমরা যদি তাদের এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারি আমরা সেগুলো করতে করতে আগ্রহী আছি যদি মহানুভব আমাদের তাদের সংক্রান্ত কোন তথ্য বা যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন।

মহানুভবকে আন্তরিক শুভেচ্ছা সহ,

ধাম্মা হতে
এসডি
এইচ এস এইচ পুন সমাই দিসকুল
সভাপতি
বিশ্ব বৌদ্ধ সংঘ
ঠিকানাঃ ডাব্লিউ,এফ,বি আঞ্চলিক শাকা
পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
বৌদ্ধ মন্দির, কমলাপুর
ঢাকা – ২, পূর্ব পাকিস্তান।

সিসি – এইচ ই ইউ থান্ট, মহাসচিব জাতিসংঘ।
এইচ ই পাকিস্তান রাষ্ট্রদূত, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড।
ডাব্লিউ এফ বি – সম্মানিত সাধারন সম্পাদক জনাব আইয়েম সাংখাভাসি১

আমরা আপনার ১৮-০৮-৭১ তারিখে লেখা চিঠি পেয়েছি এবং আপনি আপনার লোকজনের জন্যে যে মানবিক কার্যক্রম করছেন তার প্রশংসা জানাই। মানুষের শান্তি ও কল্যান ফিরিয়ে আনার জন্যে আপনি যেই কষ্টসহিষ্ণু চেষ্টা করে যাচ্ছেন তা অবশ্যই আপনাকে অধিক সাফল্য এনে দেবে…

আপনার ১৯-০৬-৭১ তারিখের চিঠির প্রেক্ষিতে আমরা আপনার দেশের দুঃখজনক অবস্থার জন্যে সহানুভুতি জানাই এবং আপনাদের মানুষজনের কষ্টলাঘবের জন্যে আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্যে সাধুবাদ জানাই।

আমরা বুঝি, এটা একটা কঠিন কাজ যেখানে এমন ধৈর্য ও নৈপুন্যের সাথে মানবতার জন্যে নিবেদিতভাবে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা প্রার্থনা করি আপনার যাজক মানসিক ও শারীরিকভাবে এমন কঠিন কাজ সম্পাদনে সফল হোক।

সকল ভুক্তভোগি সহধর্মীদের ভালোবাসা সহ
এ সমস্ত চিঠি থেকে এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে -বর্হিবিশ্বে এখানকার মর্মন্তুদ কাহিনী ফলপ্রসুভাবে প্রচার করতে সক্ষম হয়েছি এবং বিশ্ব সংস্থা ঐ অবস্থায় আমার ভূমিকা উপলব্দি করতে পেরেছে। সামরিক কর্তৃপক্ষ আমার উপর সন্তুষ্ট নয় জেনে এবং এখানে থাকলে আমার সমূহ বিপদ ভেবে W.F.B এর প্রেসিডেন্ট আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য এক উদ্যোগ গ্রহণ করে আমন্ত্রণ জানাবেন।
ভেন, ভিসুনানন্দ মাহাত্ম্যরো
সভাপতি
পাকিস্তান বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
বৌদ্ধ সমিতি
কমলাপুর, ঢাকা-১৪
পূর্ব পাকিস্তান।
১৫, নভেম্বর ৭১
মাননীয়,
আপনাকে জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত যে, ২০-২৪ ডিসেম্বর ব্যাংককে অনুষ্টিতব্য আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ইয়থ কনফারেন্সের সকল প্রস্তুতি সমাধা হয়েছে।
আপনি ইতিপূর্বে আমাদের পূর্বে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন কনফারেন্সে যোগদান করেছেন এবং আমাদের অনেক সাহায্য করেছেন। আমরা আশা করবো আপনি এবারো আমাদের সাথে ব্যাংককে যোগদান করবেন এবং আপনার মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও পথপ্রদর্শনের মাধ্যমে আমাদের ধন্য করবেন।
দয়া করে আমাদের জানাবেন আপনি কখন আসছেন এবং আমরা সে হিসেবে আপনার জন্য উপযুক্ত স্থানে আপনার জন্য সমস্ত কিছুর আয়োজন করবো।
আশা করি আপনার ভ্রমণ নিরাপদ হবে। জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
আপনারই
এসডি/-
এইচ।এস।এইচ রাজকুমারী পুন পিস্মাই দিসকুল
সভাপতি
বিসস বোদ্ধ সমিতি
কিন্তু সামরিক সরকার আমার উপর সন্দেহ প্রকাশ করে থাইল্যান্ড যাবার অনুমতি দিলো না।
পরিশেষে মানবতার সেবা করতে গিয়ে আমার সমাজ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকদের কাছ থেকে আমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি। আমার সংঘের বিরাট কর্মীবাহিনী মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে জাতির দুর্দিনে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে সমাজ ও দেশের কাছে তা চিরজাগ্রুক থাকবে বলে আমার দৃঢ়বিশ্বাস।
আমার প্রিয় শিষ্য শ্রীমান প্রিয়নন্দ মহাখের, ভিক্ষু মুদ্ধানন্দ, ভিক্ষু জিনানন্দ, ভিক্ষু সুগতানন্দ, ভিক্ষু বোধিপাল, শ্রীশাক্যবোধি মহাদথের, উ- জিনিতা মহাথের, উ- নাইদা, উ- পণ্ডিতা, ভিক্ষু অগ্রবংশ, ভিক্ষু অগ্রশ্রী, শ্রী প্রফুল্লকমল বড়ুয়া, শ্রীবসুভূতি মুৎসুদ্দী , শ্রীজ্ঞানদার বড়ুয়া, শ্রীব্রহ্মদত্ত বড়ুয়া, শ্রীরণজয় বড়ুয়া, শ্রীসুধেন্দু বড়ুয়া, শ্রীঅশক বড়ুয়া, শ্রীআনন্দ প্রসাদ বড়ুয়া, শ্রীশশাঙ্ক মোহন বড়ুয়া, শ্রীসুনীল কান্তি বড়ুয়া, মোহাম্মদ ইছহাক চৌধুরী, শ্রীসুদত্ত সেবক বড়ুয়া, শ্রীতেজেন্দ্রনাথ বড়ুয়া, শ্রীইন্দুভূষণ বড়ুয়া, শ্রীসুমেধ বড়ুয়া, শ্রীযতীন্দ্রনাল বড়ুয়া, শ্রীবেণীমাধব বড়ুয়া, শ্রীবিজনবিহারী বড়ুয়া এবং আরও অনেকে পাকসেনার রক্তচক্ষু ও বুলেটের ভয়কে উপেক্ষা করে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে এ ন’ মাস দিনের পর দিন দেশের অত্যাচারিত লাঞ্ছিত মা- বোনদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, কত শত মুক্তিবাহিনী ও দেশের তরুণ প্রানের পাশে সমূহ মৃত্যুর হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছে তার ইয়ত্তা নেই। রক্তঝরা এই ন’ মাসের কার্যবিবরণীতে সংঘের বিরাট কর্মীবাহিনীর কর্মতৎপরতার পূর্ণাংগ চিত্র প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে।
আজ এ ভেবে আমার চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয় যে, আমাদের সংঘের চাটগাঁ শাখার অফিস- ইন- চার্জ বিশিষ্ট কর্মী শ্রীমৎ জিনানন্দ ভিক্ষু, যিনি রাজাকার ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ এনেছিলেন, স্বাধীনতা প্রাপ্তির ঠিক দুদিন আগে তিনি এদেরই জঘন্যতম শিকারে পরিণত হন। সংসারত্যাগী, মানবধর্মী এই নবীন ভিক্ষু গত পঁচিশে মার্চের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চাটগাঁ, কুমিল্লা, নোয়াখালীর প্রতিটি উপদ্রুত গ্রামের প্রতিটা সম্প্রদায়ের আবালবৃদ্ধবনিতাকে রক্ষার জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন তা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
আজ যে সংঘের মাধ্যমে আমি তথা আমার প্রতিষ্ঠান এবং সম্প্রদায় বহিরবিশ্বে সুপরিচিত হয়েছে সে সংঘেরই বিশিষ্ট কর্মী, অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক শ্রীশশাঙ্ক বিমল বড়ুয়াকে (বঙ্গীশ ভিক্ষু) হানাদার পাকবাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন।
এতদসংগে আমি গভীর ভাবে স্মরণ করছি স্বাধীনতা সংগ্রামে শত শত বিগতপ্রাণ মহান জীবনগুলো। ছাত্র- ছাত্রী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, ডাক্তার, মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর শহিদদের পারলৌকিক মঙ্গল কামনা করছি এবং তাঁদের শোকশন্তপ পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
সবেব সত্তা সুখীতা হোন্তু।
জগতের সমস্ত প্রাণী সুখী হোক।
।।জয় বাংলা।।
দপ্তরে এসএমএলএ এসইসি -৪
সার্কিট হাউজ
চট্টগ্রাম
টেলি: ৮৫৫৫
নং,২০ / ৩৫ / এমএল
২৬ জুন, ৭১
প্রতি: ভেন. ভিষুদ্ধনান্দ মালিয়া হিরো
টি পিকে, টি কে প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান
বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
ঢাকা।
বিষয়: পিটিশন / তদন্ত
আপনার চিঠির নং নীল তারিখ,২৮মে ৭১ বোঝায়।
আপনার তথ্যের জন্য পুলিশ সুপারের তদন্তের একটি কপি এর সাথে সংযুক্ত করা হলো। ইনচেল-ওয়ান।
১১০৩৫১২ই 25 জুন 71 এর পুলিশ সুপারের চিঠির একটি কপি,
আমি এটা প্রতিবেদন করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি , আম তদন্ত করে দেখেছি যে বিষয়গুলো স্থানীয় এবং টি এন্ড টি অফিসের ভিত্তিতে , যারা দূর্ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল
উদাহরনস্বরূপ
যে ব্যক্তিবর্গ কে 29 এপ্রিল 71 এ নিজেদের অফিসে থাকার কথা ছিল যারা এই সংযুক্ত পিটিশনে অন্তর্ভূক্ত।
সেই একই দিনে দুপুর ১টায় সার্কিট হাউজে তাদেরকে কিছু সেনাসদস্য ডেকে নিয়ে গেছিলো, কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা ফিরে আসে নি।
তদন্তের সময় এটা প্রকাশিত হয় যে ধর্মদর্শী বড়ুয়া একজন অবকাশ প্রাপ্ত কেরানী ছিলো, টেলিফোন অপারেটর না যেমন টা পিটিশনে উল্লেখিত ছিলো।
টি এন্ড টি এর কর্মচারীদের মাধ্যমে এটি আরো প্রকাশিত হয় যে ৫ কর্মকর্তাদের সেনা সদস্যরা টি এন্ড টি এর অফিস প্রাঙ্গন থেকে ডেকে নিয়ে গেছিলো, তাদের নিজস্ব অফিস কক্ষ থেকে নয়।
ই পি রেইলওয়ে স্টেশন রোড 21. 4 71 এ ডেপুটি চিফ অ্যাকাউন্টস অফিসার জনাব সি আর বড়ুয়া স্টেনোগ্রাফার-এর সংক্ষিপ্ত রূপ-টাইপিস্ট হিসেবে (আধুনিকীকরণ) অফিসে উপস্থিত হন। সেখান থেকে তাকে কিছু সেনা সদস্য সার্কিট হাউজে নিয়ে যায় কিন্তু সে ও আজ পর্যন্ত তার অফিসে ফিরে আসেনি।

তদন্তে এটি সামনে আলোকপাত করা হয়েছিলো যে ঐসকল ব্যক্তি সকল ঝামেলার মধ্যেও তাদের অফিস নিয়মিত করতো।তাদের সম্পর্কে আর কোনো প্রতিকূল প্রতিবেদন পাওয়া যায় নি। আপনাদের জ্ঞাতার্থে অনুগ্রহপূর্বক এইটুকু জানাচ্ছি।
কর্মীদের তালিকা, যাদের আর্মীরা নিয়ে গেছিলো তাদের নামের পাশে দেখানো তারিখগুলোতে।
নাম ও পদবী:
১.১.জনাব এস আর বড়ুয়া, এম এ, পি আর এ এস
উপ-অর্থনৈতিক উপদেষ্টা
উপ-প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা, পি
ই রেলওয়ে, চট্টগ্রাম
সে ঝামেলা শেষ হওয়ার পর
প্রতিদিন নিয়মিত অফিস করতো।এবং ১৬-০৪-৭১ এ অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে
আর্মিরা তাকে ধরে নিয়ে যায়।

২. জনাব প্রভাস কুমার বড়ুয়া. সাব-
অস্ত্রোপচার. চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়. চট্টগ্রাম ২১-০৪-৭১ তারিখে তাকে তার ৪ নং সারসন রোডের বাসভবনের সামনে থেকে আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছিলো
৩. জনাব চীন রঞ্জন বড়ুয়া,
শ্রুতিলেখক, আধুনিকায়ন
হিসাব। পি ই রেলওয়ে,
চট্টগ্রাম। রেলওয়ে পে অফিসের ডিউটির পর যখন সে তার বেতন তুলছিলো তখন তাকে আর্মীরা ধরে নিয়ে গেছিলো।
৪. জনাব সঞ্চয় ভূষণ বড়ুয়া, ইলেকট্রিক
কপিকল ফিটার, বৈদ্যুতিক বিভাগ.
চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট. চট্টগ্রাম. ২১-০৪-৭১ তারিখে তাকে তার অফিসের জেটি থেকে ধরে নিয়ে গেছিলো আর্মীরা।
৫. জনাব তরত কামী বড়ুয়া, টেলিফোন
অপারেটর, টিঅ্যান্ডটি বিভাগ. চট্টগ্রাম. মার্শাল কতৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসারে সে ২১-০৪-৭১ তার অফিসে প্রতিবেদন করে এবং কতৃপক্ষের সংশ্লিষ্টে তার জন্য একটি ‘নিরাপত্তা পাস’ ইস্যু করে দেয়াঠয় এবং নিজ দ্বায়িত্ব পালনে তাকে পরামর্শ দেয়া হয়। ২২-০৪-৭১ তারিখ হতে সে ভালোভাবে তার দ্বায়িত্ব পালন করতে থাকে কিন্তু ২৯-০৪-৭১ তারিখ দুপুর ২টার সময় তাকে তার ডিউটির সময় হতে আর্মী সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়।
৬. জনাব চীন রঞ্জন বড়ুয়া, অফিস
সুপারিনটেনডেন্ট টিঅ্যান্ডটি চট্টগ্রাম ঐ
৭. জনাব ধর্মদর্শী বড়ুয়া, টেলিফোন /
অপারেটর, টিঅ্যান্ডটি চট্টগ্রাম ঐ
৮. জনাব পরাগ বড়ুয়া, টেলিফোন / অপারেটর. টি
টি চট্টগ্রাম ঐ
৯. জনাব সুধীর রঞ্জন বড়ুয়া,
ইলেট্রিশিয়ান. কেপিএম
লি. বিভাগ,পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐ
১০. জনাব হরেন্দ্র লাল বড়ুয়া, মেকানিক্যাল
বিভাগ. কর্ণফুলী কাগজ মিলস লিমিটেড,
চন্দ্রঘোনা, পার্বত্য চট্টগ্রাম। ১৪-০৪-৭১ এ তাকে নিয়ে গেছিলো।
১১. জনাব সত্যরঞ্জন বড়ুয়া, স্বত্বাধিকারী.
মোটর ওয়ার্কশপ,চাঁদপুর,
চট্টগ্রাম তাকে তার কর্মশালা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।
১২. জনাব ভবেশ চন্দ্র বড়ুয়া, ক্লার্ক.
ওয়ার্কশপ, পোর্ট ট্রাস্ট, চট্টগ্রাম ২৬-০৪-৭১ এ তাকে নিয়ে গেছিলো।
১৩. জনাব বিপুল কান্তি বড়ুয়া, স্বর্গীয়
বিল্ডিং, কলেজ রোড, চট্টগ্রাম ০৩-০৫-৭১ এ তাকে নিয়ে গেছিলো।
১৪. জনাব সুবিমল বড়ুয়া, টেলিফোন / অপারেটর, টি
& টি চট্টগ্রাম ২৯-০৪-৭১ এ তাকে নিয়ে গেছিলো।
১৫. জনাব বঙ্গীশ বড়ুয়া, সহকারী প্রধান
মাস্টার কাপ্তাই সরকার. এইচ ই স্কুল ১৪-০৪-৭১ তারিখ হতে সে নিরুদ্দেশ

সংঘ কতৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্রের অনুলিপি

“নমোঃ তাসা”
পাকিস্তান বুদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
(বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক সংগঠন)
পাকিস্তানে বৌদ্ধ ওয়ার্ল্ড ফেলোশিপ রিজিওনাল সেন্টার

সদর দফতর
বৌদ্ধ বিহার
কমলাপুর. ঢাকা -14

চট্টগ্রাম অফিস
30/5. আন্দের্কিল্লা. চট্টগ্রাম
পূর্ব পাকিস্তান

সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অংশ
তারিখ-
এটা প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে জনাব/জনাবা………… পুত্র / কন্যা / জনাব /স্ত্রী ……… এর গ্রাম…… থানা
…… চট্টগ্রাম জেলায় জন্মসূত্রে একজন পাকিস্তানী।

“কতৃপক্ষের কাছে সাহায্যের জন্য অনুরোধ করা হলো”
স্বাঃ /ভীন বিষুদানন্দ
সভাপতি
পাকিস্তান বুদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ
ঢাকা

<৪,২৫৩,৫৮৯-৫৯০>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৩। বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারী
সহায়ক সংস্থার একটি আবেদন বাংলাদেশের পুলিশ কর্মচারী
সহায়ক সংস্থা ……
১৯৭১

বাংলাদেশ
নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারী সংস্থা
স্বাধীন বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারী ভাইয়েরা আমার-

উনিশ শ’ সাতচল্লিশ সালের চোদ্দই আগস্ট ইংরেজ শাসকদের কবল থেকে স্বাধীনতা লাভের পর আমরা যে মুক্তির শপ্ন দেখেছিলাম, বিগত চব্বিশ বছর ধরে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানের কবলে পড়ে আমাদের সে আশা – আকাঙ্ক্ষা চিরতরে পর্যুদস্ত হতে চলেছিল। সোনার বাংলাকে শোষণের কলোনি করে পাক শাসকচক্র আমাদের দাসত্বে পরিণত করার হীন ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিলো কতিপয় পদলেহনকারী বাঙ্গালী দালালদের সহযোগিতায়। আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আর সামাজিক দিক থেকে হয়েছিলাম পংশু আর অসহায়। ওদের শাসন- শোষণ ও অত্যাচারের ষ্টীম রোলারের আঘাতে বাংলার নিরীহ সরল মানুষ হয়েছে ক্ষিপ্ত অশান্ত। তারই মৃত্যু প্রকাশ ঘটে উনিশ শ’ বায়ান্ন সালের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে- যে আন্দোলনের প্রবাহে বাংলার সোনা- মাণিক- ভাইদের তাজা রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল বাংলার পীচঢালা রাজপথ। শহিদ সালাম বরকত রফিকের লাল তাজা রক্তের বদলা শপথ নিয়েছিলো বাংলার সাতে সাত কোটি মানুষ। তারা বিনা দ্বিধায়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে মরণজয়ী সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো পাক জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে- একাত্মতা প্রকাশ করেছিলো দেশের মুক্তির সংগ্রামে।
গত পঁচিশ মার্চের রাত থেকে পাক জঙ্গিশাহী বাংলার নিরীহ নিরস্ত্র জনসাধারণের উপর যেরূপ অত্যাচার অবিচারের ষ্টীম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর ইতিহাসে এধরনের বর্বরোচিত জঘন্য দমন নীতির নজীর নেই।
বাংলার নিরীহ মানুষ আজ ক্ষিপ্ত, অশান্ত। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ মুক্তি সৈনিক পাক জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে সংগ্রামরত। দশ লক্ষাধিক নরনারীর রক্তে রঞ্জিত বাংলার পদ্মা- মেঘনা- যমুনার অথই জলরাশি- পথে- ঘাটে আজ মানুষের হাহাকার। বর্বর পাকসৈন্যদের নরহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, নারীধর্ষণের করুণ কাহিনীতে পৃথিবীর মানুষ আজ স্তব্ধ, হতবাক- বিশ্ববিবেক আজ স্তম্ভিত, নির্বাক। তবুও বাংলার মানুষ আজ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, ইস্পাতকঠিন চেতনায় আজ সংগ্রামমূখর।
পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীনতা আন্দোলন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যে দেশেই বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে- সে দেশের সশস্ত্র বাহিনী হয় সরকারের পক্ষ সমর্থন করছে, না হয় নীরাবতার ভুমিকা পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আমাদের (বাঙ্গালী) ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, ইস্ট পাকিস্তান পুলিশ, মুজাহিদ ও আনসার বাহিনী জনগণের পক্ষে যেভাবে সরকার বিরোধী ভূমিকা সমর্থন করছে- তার কোন নজীর নেই। এ ধরণের বিপ্লব অনন্য- একক। এর একমাত্র কারণ, পাক জঙ্গিশাহীর শোষণ আর অত্যাচার; অপর দিকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন।
আমরা সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ করে তথাকথিত পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ কর্মচারীরা ইংরেজ আমলের আইনের মাধ্যমে চব্বিশ ঘণ্টার জন্যে কাজ- কর্মে নিয়োজিত থেকেও আমরা ছিলাম সমাজের এক শ্রেণীর ঘৃণিত অস্পৃশ্য বীজ- পাক শাসকচক্রের ক্রিড়নক সমাজের এক শ্রেণীর অবহেলিত পদদলিত সরকারী কর্মচারী। আমরা কোনদিন মানুষের আস্থাভাজন হতে পারি নি- অথচ গাধার খাটুনি খেটে আমরা ছিলাম অস্পৃশ্য অবহেলিত। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা বিরামহীন পরিশ্রম করেও সমাজের কাছে হয়েছি লাঞ্ছিত- অবহেলিত। আমাদের দৈনন্দিন দুঃখ –কষ্ট, অভাব- অনটন থাকা সত্ত্বেও আমরা বিরামহীন সমাজের সেবা করেছি, কিন্তু তার বিনিময়ে শুনেছি ‘পুলিশ জুলুম চলবে না’ ‘পুলিশ গোষ্ঠী নিপাত যাক’ স্লোগান। কিন্তু কেন, কেন এই বিরাম্বনা, এর জন্য দায়ী কারা- সমাজ, না রাষ্ট্রব্যবস্থা? এ বিচার কি কেউ কোনদিন করেছিলো? করেনি। তাই আমাদের এ বিপ্লব পাক জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে আমাদের বিক্ষোভ। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনে আমরা একার- আর পূর্ণ সহযোগী।
আজকে সমাজ মানুষের চিন্তাধারায় পরিবর্তন হয়েছে। আমরা বাঙ্গালী, মানুষ। সরকারী কর্মচারী হলেও খাকী পোশাকের অন্তরালে আমাদেরও একটি সবুজ মন ঘুমিয়ে আছে, তাকে জাগিয়ে দিতে অনেক সফল সম্ভাবনা আছে বলেই অসহযোগ আন্দোলনের প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু দেশের অভ্যন্তরীণ আইন- শৃঙ্খলার ভার পুলিশের উপরই ন্যস্ত করেছিলেন। সেই মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়েই আমরা পূর্ব বাংলার প্রায় পঁয়তাল্লিশ হাজার পুলিশের কর্মচারী এই আন্দোলনের পাক জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র ভূিমকায় অবতীর্ণ হয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, আমরা সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে চেষ্টা করেছি- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সে কাহিনী স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হবে। ( এ ব্যাপারে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা শীর্ষক প্রবন্ধ যা দৈনিক যুগান্তরের গত পনেরই অক্টোবর সংখ্যায় প্রকাশিত- প্রণিধানযোগ্য।
আজ বাংলাদেশ স্বাধীন ও গণপ্রজাতন্ত্রী রাশ্ত্ররুপে স্বীকৃত। আমরা পুলিশ কর্মচারী, অতীতের দুঃখ- দৈন্য ভুলে গিয়ে জনগণের সাথে একাত্ম হয়ে দেশ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করবো। ইংরেজ আমলের শোষকরূপ আইন যন্ত্রকে পালটে নিয়ে জনগণের একাত্মতাই হবে আমাদের কাম্য। আমরা হবো প্রকৃতই জনগণের বন্ধু ও সেবক এবং সেই ভাবধারার পরিপ্রেক্ষিতেই রচিত হবে আমাদের শাসন ব্যবস্থা। আমাদের দিয়েই হবে তার সার্থক রুপায়ন। এ আশা নিয়েই আমরা অতীত- ধ্যান ধারণার পরিবর্তন হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পাক বাহিনীর অত্যাচারের প্রাণের ভয়ে আমাদের প্রায় দু’হাজার কর্মচারী আশ্রয় নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের বিভিন্ন স্থানে। আরও অসংখ্য পুলিশ কর্মচারী রয়েছেন পাক অধিকৃত এলাকায়। আমরা আজ আত্মীয়- স্বজন, বন্ধু- বান্ধব, স্ত্রী- পুত্র, ছেলে- মেয়েদের সাথে সম্পর্কচুত, তবুও আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রত্যক্ষ সংগ্রামমুখর- অতীতকে ভুলে গিয়ে আমরা অনাগত ভবিষ্যতের সফল সংগ্রামে নিয়োজিত।
চলমান জীবনে যেকোনো কাজে সংগঠনের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের অগণিত পুলিশ কর্মচারীরা আজও ছড়িয়ে আছে অধিকৃত এলাকায় এবং ভারতের বিভিন্ন স্থানে। তাদের অভাব- অভিযোগ, দুঃখ- দৈন্য অবর্ণনীয়- এ জন্য আমাদের বিশেষ করে বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীরা আমাদের ভাইদের দুঃখ- কষ্ট অভাব- অভিযোগের সাথে একাত্ম হতে চাই। আর তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার জন্য দরকার একটি সহায়ক সংস্থা। বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীদের দৈনন্দিন অভাব- অভিযোগ, দুঃখ- দৈন্য মোচনের জন্য একটি সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আর এজন্যই আমরা একটা সংস্থার অভাব উপলব্ধি করছি- আশা করি এ ব্যাপারে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা অবশ্যই পাবো।
এ ব্যাপারে আপনাদের পক্ষে আমি আমাদের পুলিশ প্রধানের অনুমতি চেয়ে আবেদন প্রকাশ করছি নিয়ম- শৃঙ্খলা ও আইনানুভাবে আমরা আমাদের অভাব- অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদশ সরকারের কাছে পেশ করার দৃঢ় সংকল্প নিয়েই আমরা আমাদের লক্ষ্য পথে এগিয়ে যাবো- আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতাই আমাদের কাম্য। জয় বাংলা।
বাংলাদেশের নিম্নপদস্থ পুলিশ কর্মচারীদের পক্ষে-
(স্বাক্ষর) এ,কে, মকবুল আহমদ
(প্রাক্তন) ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মচারী, মেহেরপুর থানা,
কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।
<৪,২৫৪,৫৯১-৫৯২>
অনুবাদকঃ আবরার ফাহিম চৌধুরী
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৪। সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির প্রতি বাংলাদেশের
বুদ্ধিজীবী,শিক্ষক,চলচিত্র ও কুশলী ,ক্রীড়াবিদদের আবেদন
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় বেতার কেন্দ্রের দলিল ১৯৭১

সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির কাছে একটি আবেদন

আমরা অবাক হইনি যখন আমরা দেখেছি আপনি আপনার মহান ভাইজন ও রবার্ট কেনেডির অভিজাত ঐতিহ্যের অনুসরণে বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে নাৎসি-শৈলীর এ গণহত্যা অভিযানের আপনার দ্বিধাহীন অভিযোগ এবং প্রশমননীতি/রিচার্ড নিক্সন, স্পষ্টভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের জন্য সান্ত্বনা বয়ে এনেছেন। জাতি এখন হঠাৎ গণহত্যা অভিযানের ধাক্কা সামলে নিয়েছে এবং আজ ইতিহাসের নিকৃষ্টতম উপনিবেশের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তীব্র অঙ্গীকারবদ্ধ।

আমাদের এ বিজয়ের হবে ন্যাবিচার এবং গণতন্ত্রের, যে আদর্শকে আপনি ও আমেরিকার মানুষ মূল্যবান বলে মনে করেন। কিন্তু ইসলামাবাদ জেনারেল যারা আজ অবধি জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খাকে নৃশংসভাবে দমন করেছে, তাদের প্রতি মার্কিন সরকার এর সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তায় এ বিজয় বিলম্বিত হচ্ছে এবং মানুষের দুর্ভোগ ত্বরান্বিত হচ্ছে।

প্রায় আট মিলিওন (আশিলক্ষ) শরণার্থীর দুর্দশা সচক্ষে দেখতে আপনি ভারত ছুটে যান। যারা ন্যূনতম নিরাপত্তার খোজে, জেনারেল ইয়াহিয়ার তোপ থেকে বাঁচতে ওখানে পালিয়ে গেছে। এছাড়াও আপনি হয়ত আরো সত্তর মিলিয়ন মানুষের অবস্থা ধারনা করতে পারেন যারা পালিয়ে যেতে পারেনি। তারা যেন নিজের দেশেই শরণার্থী যেখানে আকস্মিক মৃত্যু সর্বদাতাদের খুঁজে বেড়ায়। ইতিমধ্যে দশ লাখ পুরুষ, মহিলা ও শিশুকে পরিকল্পতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গেটস্টাপো-শৈলীর অভিযানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদের আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাণিজ্যিক ও ট্রেডিং সেন্টারগুলো ধ্বংস করার মাধ্যমে অঞ্চলের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ২৫ শে মার্চ থেকে পাকিস্তানি সৈনিকদের ছেরে দেওয়া হয়েছে তাদের ইচ্ছামত হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করার জন্যে। আজ দীর্ঘ চার মাস পরেও তাদের বিভীষিকাময় বেলেল্লাপনার তীব্রতা একটুও কমেনি। বাংলাদেশ এর অবিসন্বাদিত এবং গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত নেতা। এমনকি জেনারেল ইয়াহিয়া আগামরায় উচ্চারণ করতেও দ্বিধাবোধ করেননি। তারা (জেনারেল ও তার সহযোগীরা) মহান নেতাকে নিশ্চিতভাবে ফায়ারিং স্কোয়াড দ্বারা হত্যা করবে যদি কোন উচ্চতর ক্ষমতা তাদের না দমিয়ে রাখে।

সন্ত্রাস এর এ ধরনের রাজত্ব শুধুমাত্র শরণার্থী সমস্যাকে অবিশ্বাস্যভাবে বাড়িয়ে তুলবে। শরণার্থী সমস্যার প্রকৃত কারণ সমাধান না করে ক্রমবর্ধমান শরণার্থীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী খোঁজা, স্ব-পরাজিত হওয়ার একটি প্রক্রিয়া। এখনো সহজেই বিপদ এড়ানো যেতে পারে যদি আমেরিকা ইসলামাবাদ শাসনকে অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে দেউলিয়া হওয়া থেকে রুখে না দাঁড়ায়। আমরা নিশ্চিত যে আমেরিকান কর দাতারা, যদি তাদের সঠিকভাবে এ বিপর্যয় সম্পর্কে অবগত হয়, তবে তারা পাকিস্তানের জান্তা বাংলাদেশে গণহত্যার অভিযান.

আমরা আপনি, আপনার দল এবং আমেরিকান জনগণের কাছে আবেদন করছিযেন আপনারা সর্বাত্মক চেষ্টা করেন যেন চাপে আমেরিকা প্রশাসন তার নীতি পরিবর্তন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, এর প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং অবিলম্বে তার মুক্তির বাবস্থা করে।

স্বাক্ষরকারী:
এ আর মল্লিক
সৈয়দ আলি এহসান
কে সারওয়ার মুরশিদ
যহির রায়হান
কামরুল হাসান
রনেশ দাশ গুপ্ত
ফয়েজ আহ্মদ
আলমগির কবীর
হাসান ইমাম
ওয়াহিদুল হক
আশরাফ আলি চৌধুরী
এম এ খায়ের
কামা লোহানী
ব্রজেন দাস
সাদেক খান
বেলায়েত হোসেন
মুস্তফা মনোয়ার
আনুপম সেন
মতি লালপাল
মউদুদ আহমেদ
কামরুজ্জামান
ফারুখ খলিল
দেওয়ার মোহাম্মাদ আহমেদ
অজয় কুমার রায়
গোলাম মরশেদ
আনয়ারুজ্জামান
মাজহারুল ইসলাম
শামসুল আলম সায়েদ
মোশারফ হোসেইন
রাসবিহারী ঘোষ
আনিসুজ্জামান
এ এযিয়াউদ্দিন আহমেদ
কবরী চৌধুরী
নারায়ণ ঘোষ
চিত্তরঞ্জন চৌধুরী
খসরু নোমান
সামর দাস
সুভাস দত্ত
আব্দুল জব্বার খান
উদায়ন চৌধুরী
রাজু আহমেদ
সুস্মিতা দেবী
চিত্তবর্ধন
এবং
জাফর ইকবাল
পক্ষে
বাংলাদেশ বুদ্ধিজীবী সংগ্রাম পরিষদ
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
বাংলাদেশ চলচিত্র ও কুশলী সমিতি
বাংলাদেশ ক্রীড়া সমিতি

<৪,২৫৫,৫৯৩>
অনুবাদকঃ নওশীন তাসনিম
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৫। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বাংলাদেশ আর্কাইভস কমিটি সংক্রান্ত তথ্য বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ১ জুলাই, ১৯৭১

বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
বিশেষ বিজ্ঞপ্তি
তারিখ ১-৭-৭১
প্রতি
……………………………
……………………………
………………………………
মহোদয়,
বিষয়ঃ বাংলাদেশ আর্কাইভ
বাংলাদেশ সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনা, রিপোর্ট, উন্নয়ন, স্মারক, নথি, ঘটনা, প্রকল্প, কার্যক্রম, চিত্র, সিনেমা এবং ঘোষণাসমূহ সংগ্রহে রাখার জন্য বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি একটি বাংলাদেশ আর্কাইভ কমিটি গঠন করেছে।
কমিটির চেয়াম্যান পদে আছেন প্রফেসর সৈয়দ আলী এহসান এবং সেক্রেটারি পদে নিযুক্ত আছেন মোঃ সাদেক খান। রেকর্ডের তালিকাসমূহ হেফাজতে ও নিরাপদে রাখার ব্যাবস্থা গ্রহন করা হতেছে।
উপকরণগুলো তিনটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে; গোপনীয়, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ। ডোনারদের নির্দেশে পরবর্তী রেফারেন্স কঠোর রাখার জন্য, আর্কাইভ কার্যালয়ের প্রতিযোগীদের অজান্তে গোপনীয় উপকরণ সমূহ নামমুদ্রামিকত ও গুদামজাত করা হবে। অনামমুদ্রামিকত গোপনীয় উপকরসমূহ কঠোরভাবে গপন রাখা হবে এবং আলোচনা করার জন্য ডোনারদের অনুমতি নিতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ উপকরণগুলোর জন্য আর্কাইভ কমিটি থেকে পরামর্শ গ্রহন করা হবে, কিন্তু উদ্ধৃত করার জন্য দাতার অনুমতি নিতে হবে। সাধারণ উপকরণ আর্কাইভ কমিটির সৌজন্যে উদ্ধৃত ও নির্দেশিত করা হবে। আপনাকে আপনার উপকরণসমূহ আর্কাইভ কমিটিকে দান করে সহযোগিতা করার জন্য এবং বাংলাদেশের ঘটনাসমুহের ডকুমেন্ট সংগ্রহের প্রচেষ্টায় আর্কাইভ কমিটিকে সাহায্য করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হল।
ধন্যবাদান্তে
আপনার অনুগত
(কামরুজ্জামান)
এমএনএ-ইনচার্জ
শিক্ষামূলক বিষয়
বাংলাদেশ গনপ্রজাতন্ত্রী সরকার এবং
নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশ
শিক্ষক সমিতি

<৪,২৫৬,৫৯৪>
অনুবাদকঃ নওশীন তাসনিম
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৬। বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনা সভাসমূহের কার্যবিবরণী বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির দলিল ২৫ নভেম্বর এবং ২ ও ৩ ডিসেম্বর ,১৯৭১

বাংলাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষা
২৫ নভেম্বর, ১৯৭১ এ, ১১, সুতেরকিন স্ট্রিট, কোলকাতা ১৩ তে মোঃ জ। রহিম এর সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
নিম্নের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয় :
(১) বাংলাদেশের শুধুমাত্র বিজ্ঞান শিক্ষায় শিক্ষাগত সমস্যা।
(২) সর্বচ্চোঅর্থনৈতিকউন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের সম্পদের ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিশেষ ঝোঁকে বৈজ্ঞানিক শিক্ষা।
(৩) বৈজ্ঞানিক শিক্ষার মিথলজি।
(১) এবং (২) দফা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আলোচনা করা হয়। তবে আলচনায় এটাই বোঝা যায় যে এখনও সঠিক পদ্ধতিতে বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য আরও চিন্তাশীল হওয়া জরুরী যা (২) দফার উদ্দেশ্য কে ভালো মতন পরিবেশন করবে।
দফা (৩) যা স্বাভাবিকভাবেই (১) এবং (২) কে অনুসরন করে যা ভালমতন আলোচনা করা হয়নি।
এখানকার সদস্যবৃন্দ পরের বৈঠকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আরও গভীরভাবে চিন্তা করার কথা বলে এবং তাদের মতামত বিসদভাবে প্রকাশ করে যার ফলে বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষার একটি সুন্দর সূচনা হওয়া সম্ভব।
বৈঠক স্থগিত রাখা হয় এবং পরের বৈঠকের সময় ২রা দিসেম্বর,১৯৭১ ১১, সুতেকিন স্ট্রিট ে বেলা ১২তে নির্ধারণ করা হয়।

নিম্নোলিখিত সদস্যবৃন্দ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন:
১. মোঃ প.ক. চক্রবর্তী
২. মোঃ স. ক. ভট্টাচার্জি
৩. ডঃ ম. আ. সালেহ
৪. মোঃ চ. র. গুহা রায়
৫. ডঃ আ. রহমান
৬.মোঃ ক. ক. রায়
৭. মোঃ স. আলম
৮. মোঃ আ. দাস
৯. মোঃ ক. ম. সাহা
১০. মোঃ স. ক. মুখোপাধ্যায়
১১. মোঃ দ. শর্মা
১২. মোঃ ন. চ. দত্ত বনিক

জিল্লুর রহমান
২৫/১১/৭১
স্ট্রিট , কোলকাতা-১৩ তে ২রা দিসেম্বর,১৯৭১ এ প্রফেসর র. হকের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।
বৈঠকে এটাই আলোচনা করা হয় যে, প্রকল্পের কাজ প্রাথমিকভাবে দুইভাগে বিভক্ত হবে, ভাগ (১) দেশীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান শিক্ষার কোর্সসমূহ সাজানো এবং ভাগ (২) বিজ্ঞান বইসমূহ বাংলায় লেখা।
ভাগ (১) এ বিজ্ঞানশিক্ষার কোর্স সাজানোর জন্য কাজ করার প্রতি মনোযোগ দেয়া হবে।
নিজেদের মধ্যে আলচনার প্রথম স্থান হল স্কুল তাই বৈজ্ঞানিকদের প্রাথমিক স্তরেই গবেষণার বিস্তারিত প্রনয়ন করার পরামর্শ দেয়া হয়, যাতে বিস্তৃত কোর্সসমূহ বিজ্ঞানের নিয়মানুযায়ী সাজানো যায়।
১৩ই দিসেম্বর,১৯৭১ এ পরবর্তী বৈঠকে এটি সমাধানের কথা বলে বৈঠকের মুলতবি করা হয়।
নিম্নবর্ণিত সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন,
১. ডঃ এ.কে.. রায়
২. জনাব শাম স আলম
৩. জনাব এস. কে. মুখোপাধ্যায়
৪. ডঃ এ. রাবমতি
৫. জনাম এস. আহমেদ
৬. জনাব পি. কে. চক্রবর্তী
৭. জনাব কে. বি. চক্রবর্তী
৮. জনাব এস. কে. সাহা
৯. ডঃ এ. কাদের
১০. জনাব কে. এম. সাবা
১১. জনাম এস. কে.. ভট্টাচার্য
১২. জনাব কে. কে. রায়
১৩. জনাব এন. সি. দত্ত বণিক
১৪. জনাব সি. আর. গুহ রায়
১৫.. ডঃ এ. সালেহ
১৬ .জনাব ডি. শর্মা
১৭.. জনাম এ. দাস
১৮ জনাব জ. রহিম
সুতেরকিন স্ট্রিট, কল্কাতা-১৩ তে ১৩ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এ প্রফেসর আর হকের সাথে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
স্কুলের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের বিজ্ঞান কোর্সের পাঠ্যক্রম রূপরেখা স্থাপনের জন্য বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার বিশেষজ্ঞরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষা ও আলোচনা করা হয় এবং ১৬ই দিসেম্বর,১৯৭১ ের পরবর্তী বৈঠকে বিশেষজ্ঞদের প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম প্রদানের জন্য বলা হয় ।

নিম্নবরনিত সদস্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলে,
১ ডঃ এ.. সালেহ
২. জনাব ডি. শর্মা
৩. জনাব এ. দাস
৪. জনাব কে. কে. রায়
৫. জনাব পি. কে. চক্রবর্তী
৬. জনাব এস. কে. সাবা
৭. জনাব জ. রহিম
৮. জনাব এস. আহমেদ
৯. ডঃ এ. রহমান
১০. জনাব এস. কে. ভট্টাচার্য
১১. ডঃ এ. কাদের
১২. এন সি. দত্ত
১৩. জনাব এস.. কে মুখোপাধ্যায়
১৪. জনাব কে. এম. সাহা
১৫. জনাব কে. বি. চক্রবর্তী

সংযোজন
<৪,২৫৭,৫৯৭>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৭। বাংলাদেশকে সমর্থন এবং স্বীকৃতির জন্য সরকারকে রাজি করানোর অনুরোধ জানিয়ে বৃটিশ জনগণের প্রতি আহ্বান এ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র এপ্রিল, ১৯৭১
S O S
বাংলাদেশ

প্রিয় গ্রেট ব্রিটেনবাসী,
বাংলাদেশের জনগণ নাৎসিদের মত হত্যাকান্ডের স্বীকার হচ্ছে। তাদের একমাত্র অপরাধ তারা স্বাধীনতা ও সমতা চেয়েছিল!
নিষ্ঠুর ও ক্ষমতাশীল পশ্চিম পাকিস্তানী ধোঁকাবাজেরা : তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রিয় জনগণকে পদানত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তারা বোমা মেরেছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, হলগুলোতে, আমাদের বাসাবাড়িতে এবং এমনকি আমাদের হাসপাতালগুলোতেও।
তারা এমন একটি অপরাধ করেছে যা একই সংগে অমার্জনীয় এবং মানব ইতিহাসে অদ্বিতীয়।

বাংগালীরা তীর ধনুক, ছুরি ও বাঁশের লাঠি নিয়ে তাদের আধুনিক সরঞ্জাম, সৈন্যদল, কামান, মেশিনগান এবং ট্যাংকবিধ্বংসী ক্ষেপনান্ত্রের বিরুদ্ধে অসীম সাহস নিয়ে যুদ্ধ করেছে।
মানবিকতার দোহাই – দয়া করে বাংলাদেশের সাহায্যে এগিয়ে আসুন।
আমরা বিশ্বাস করি যে, গ্রেট ব্রিটেনের মুক্তি প্রিয় জনগণ আমাদের সাহায্য করতে পারে এবং আমরা সনির্বদ্ধ অনুরোধ করছি সকল নৈতিক এবং বস্তুগত সমর্থনসহ তাদের এখনই এগিতে আসার জন্য যাতে তারা একত্রিত হতে পারে।
আপনাদের সরকারকে এখনই বাংলাদেশকে স্বীকার করতে ও সমর্থন করতে বলুন!!!

বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি
৫২, ওয়ার্ডসওয়ার্থ রোড স্মল হেলথ
বার্মিংহাম ১০

<৪,২৫৮,৫৯৮>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৮। পাকিস্তান ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিতে টাকা না রাখার জন্য প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহবান অ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র এপ্রিল,
১৯৭১

পাকিস্তানিদের শব দাফন
পাকিস্তানিদের অর্থনীতি খতম। আসুন এবার আমরা সবাই মিলে তার কাফন তৈরির কাজে লেগে যাই।
গত তেইশ বছর ধরে ওরা আমাদের শোষণ করে এসেছে এবং আমাদের টাকায় বন্দুক কিনে আজ আমাদের বুকে মারছে। ওদের ব্যাংকে অথবা ইন্সিওরেন্স কোম্পানিতে টাকা দেয়া মানেই তাদের বন্দুক কিনতে সাহায্য করা। অতএব আসুন, আমরা সেগুলোকে বর্জন করে আমাদের মুক্তি সংগ্রামকে আর এক ধাপ এগিয়ে দেই।
১। দেশের পরিবারের কাছে টাকা পাঠাতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
২। অবিলম্বে নিম্নলিখিত পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যাংকের একাউন্ট বন্ধ করুন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি ইন্সিওরেন্স কোম্পানির পলিসি ‘সারেন্ডার’ করুন।
ব্যাংকঃ ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। হাবিব ব্যাংক লিমিটেড। ইউনাইটেড ব্যাংক লিমিটেড। স্ট্যান্ডার্ড ওভারসিজ ব্যাংক অব পাকিস্তান। কমার্স ব্যাংক। মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেড।
ইন্সিওরেন্সঃ ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিয়ন ইন্সিওরেন্স কোং। আদমজী ইন্সিওরেন্স কোং। হাবিব ইন্সিওরেন্স কোং। মুসলিম ইন্সিওরেন্স কোং।

<৪,২৫৯,৫৯৯>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৫৯। ব্রাডফোর্ডের বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের ২৫শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভার প্রস্তাবাবলী অ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র ২৫ এপ্রিল,
১৯৭১

বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ (ব্রাডফোর্ড)
৯ কর্নওয়াল টেরাস
ব্রাডফোর্ড বিডি৮ ৭জেটি
২৫ শে এপ্রিল, ১৯৭১
অদ্য রবিবার ২৫ শে এপ্রিল স্থানীয় টেক্সটাইল হলে বিকাল তিন ঘটিকার সময় ব্রাডফোর্ড বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের এক কাউন্সিল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। সংগ্রাম পরিষদের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যরা সুষ্ঠুভাবে সংগ্রাম পরিষদের কার্যাবলী পরিচালনা করতে না পারায় ও নানারুপ মতানৈক্যের সৃষ্টি হওয়ায় উপস্থিত কাউন্সিল সদস্যগণ সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণের হতে পরিষদের দায়িত্বভার অর্পণ করেন এবং নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত তারা পরিষদের সকল কাজ চালিয়ে যাবে। আজ থেকে পুরাতন এক্সিকিউটিভ কমিটির সকল সদস্যকে তাদের সকল প্রকার দায়িত্বভার থেকে মুক্তি দেয়া হলো।
উক্ত কমিটি এই সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ঃ
১। আজ পর্যন্ত পরিষদের নামে যে সমস্ত চাঁদা নেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়া হবে।
২। ইয়র্কশায়ার ও অন্যান্য সংস্থাতে যারা পরিষদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তাদের আর প্রতিনিধিত্বের ক্ষমতা থাকবে না।
৩। এক্সিকিউটিভ কমিটির পুরনো সদস্যরা নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটিতে অবশ্যই সদস্য হতে পারবেন না।
৪। ইয়র্কশায়ার সহ অন্যান্য সংস্থাতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটি নতুন প্রতিনিধি নিযুক্ত করবে ও সকল সংস্থাকে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিবে।
৫। নতুন এক্সিকিউটিভ গঠন না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম পরিষদের কোন কাজ নিম্নলিখিত ব্যাক্তিগণের লিখিত পত্র ব্যতিরেকে হতে পারবে না।
৬। আগামী রবিবার পরিষদের নতুন এক্সিকিউটিভ কমিটি গঠন করা হবে। স্থান ও সময় পরে জানানো হবে।
কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ (স্বাক্ষর):
১। এম, খান
২। নূরুল ইসলাম চৌধুরী
৩। হাজী আসাব আলী
৪। এস, আবেদীন
৫। এন, উল্লাহ
৬। আবদুস সোবহান
৭। মোঃ আজিজুর রহমান
৮। সায়িফউদ্দিন আহমদ
৯। নূরউদ্দিন
১০। আলতাব আলী
১১। সুনফর আলী
১২। সোহরাব আ
১৩। আনাম খান
১৪। বসির উদ্দিন
১৫। মজলিস আলী
(সিলমোহর)
বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ (ব্রাডফোর্ড)
৯, কর্নওয়াল টেরাস
ব্রাডফোর্ড বিডি৮ ৭জেটি

<৪,২৬০,৬০০-৬০৫>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬০। স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে
রচিত বাংলাদেশের কবিগান বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
(ল্যাংকারশায়ার ও পার্শ্ববর্তী এলাকা)
প্রকাশিত পুস্তিকা মে,
১৯৭১

বাংলার এ দুর্দিনে যার অপার উৎসাহে এই ক্ষুদ্র কবিগান লেখা সম্ভব হলো, তিনি আর কেউ নন- তিনি
আমার প্রতিবেশী ও পরম শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধুবর মাস্টার এ. আজিজ। তারই সহযোগিতায় কবিগানটি উৎসর্গ করলাম রকেট যুগের অগ্নিপুরুষ, বঙ্গজননীর বীর সন্তান স্বাধীন বাংলার স্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবকে…
“আমাকে বন্দি করো, আমাকে হত্যা করো-
এতে আমার দুঃখ নেই; কিন্তু আমার দেশবাসীর
উপর অত্যাচার কোরো না”। – মুজিব
বাংলাদেশের কবিগান
-কবি আবদুর রহমান খান রচিত
চিল শকুনে মানুষ খায় হায়রে সোনার বাংলায়
হুকুম দিল এহিয়ায় খুন করিতে।। (ধুয়া)

উনিশ সাত চল্লিশ সনে, হিন্দু আর মুসলমানে
সোনার ভারত স্বাধীন আনে বৃটিশ রাজ হতে
দুই ধর্ম দুই জাতি পাক-ভারত হলো স্থিতি
গেল ভাই বাংলার শক্তি দুই ভাগেতে।।

পূর্ব-পশ্চিম পাকিস্তানে শাসন করে খান পাঠান
বাঙালিরা ভাই জানে ভাব ভক্তিতে
পূর্ব বাংলার ফল ফসল তাদেরে খাওয়াইয়া সকল
বাংলার মানুষ হলো দুর্বল এই জগতে।।

ধর্মের নামে জুয়া খেলা লুটলোরে সোনার বাংলা
তেইশ বছরের দুঃখ জ্বালা পারি না সহিতে,
কি বলিব দুঃখের কাহিনী দুই নয়নে ঝরে পানি
দেশে যত হয় আমদানী তাদের ভাগ্যেতে।।

পাট তামাক চা আমরা ফলাই, গো মহিষের খল
মোদের ভাগ্যে সকলেই ছাই খাই, তাদের হাতে
দুঃখের উপর দুঃখ ভারী, কড়াক্রান্তি হিসাব করি
দিতে হ’লে খাজনার কড়ি অফিস আদালতে।।
বলছি গত বন্যার কথা, হঠাৎ এল ঘূর্ণিবার্তা।
হারায়াছি ভগ্নি ভ্রাতা পারি না ভুলিতে,
হাতিয়া সন্দ্বীপের অধিবাসী একশ পঁচিশ হাজারের বেশি
জলের স্রোতে গেল ভাসি নদী নালাতে।।

ভোলা ও পতুয়াখালি হয়ে গেছে মানুষ খালি
মায়ে ছেলে গলাগলি ভাসা পানিতে
নোয়াখালী ও বরিশালের মানুষের লাশ খালে বিলে
মাংস খাইল কাক শৃগালে পাইলাম দেখিতে।।

মানুষ পশু সারি সারি ভাসল জলে মরি-মরি
সোনার বাংলার নরনারী কাঁদছে শোকেতে
ওদের কান্দনের সুর শুনল কি সরকার বাহাদুর
বল মোদের কিয়া কসুর চাই জানিতে।

ডুবল মাথের পাট ধান্য ঘরে নাই কারো মুষ্টি অন্ন
কি আছে বাঙালির জন্য জীবন রাখিতে
বাংলাদেশের কয়টি জেলা চিটাগাং ঢাকা কুমিল্লা
বারে বারে বন্যার ঠেলা আছে ভুগিতে।।

মনপুরাতে মরছে মানুষ আহারে বিনা হইয়া বেহুঁশ
পশ্চিমারা খায় কাঁঠাল কোষ ময়দার রুটিতে
বড় কষ্টে দিন কাটাই ডাইল ভাত খাইতে না পাই
তৈল বিনা জটারে লাগাই বঁধূর চুলেতে।।

ন্যায্য দাবী চাইলে মোরা বহে মোদের রক্তধারা
কারো হাতে শিকলকড়া ভরে জেলেতে
বাংলার যুবক বি-এ পাশ দেশে কাটে ঘোড়ার ঘাস
কেউ টানেরে মরা লাশ চৌকিদারিতে ।।

উনিশ আটান্ন সনে আইয়ূব বসেন সিংহাসনে
ইস্কান্দার মির্জা যায় বৃটেনে প্রাণের ভয়েতে
কামান গোলার ভয় দেখাইয়া রক্ত মোদের খায় চুষিয়া
বাংলার মানুষ চুপ করিয়া রইল ঘরেতে।।
শোনেন দেশের ইতিকথা দেশে আনল চেয়ারম্যান প্রথা
ভাঙ্গিল বাঙালির মাথা ভোট না দিতে
সংখ্যায় আমরা অনেক বেশি দুঃখের ভিতর ফুটে হাসি
বানাইতে চায় মানুষ ডাক্তারী মতে।।

শেরে বাংলা সুহরাওর্দী বাংলার শোকে কাঁদি কাঁদি
দুঃখ পাইল জন্মবধি অন্যায় শক্তিতে।
রেখে গেল প্রেমসিদ্ধুশেখ মুজিব বঙ্গবন্ধু
জাগিল বাঙালি পঙ্গু তাহারে ডাকিতে।।
স্ট্রাইক হল কলেজ স্কুল ছাত্রছাত্রী তুলল রোল
বাঙালিরা আঁখি খোল সংগ্রাম চালাইতে
ভয় পেয়ে বীর আইয়ূব খানে এহিয়াকে ডেকে আনে
বসাইল নিজাসনে স্বার্থ রাখিতে।।

নেতা যেজন পিতা বটে হয় না নেতা বটে চটে
নেতা হয়ে গণভোটে স্বাধীন দেশেতে
হইল দেশে ভোটাভোটি বাঙালিরা সপ্তকোটি
ভোট দিয়াছে মানুষ খাঁটি মুজিবের হাতে।।

শেখ মুজিবের হ’ল জয় পাঞ্জাবি পাঠানের ভয়
বাংলার বুকে হ’ল উদয় চন্দ্র নিশিথে
মুজিব হবেন রাষ্ট্রশ্রেষ্ঠ পাঞ্জাবিদের মনে কষ্ট
কি ভাবে হয় শ্রেষ্ঠ নষ্ট ভাবে কমজাতে।।

কলকৌশলে তিন মাস গেল দুটি তারিখ বাতিল হল
বাংলার মানুষ জেগে উঠল বাঁচার দাবীতে
মোদের এত রোনাজারি দেখ এহিয়ার ছলচাতুরি
কারফিউ আইন জারি করি দলি ঢাকাতে।।

বঙ্গবন্ধু বললেন তবে এবার বাংলা স্বাধীন হবে
বাংলার মানুষ কাঁদবে কত পেটের ক্ষুধাতে
আছে হাড় নাই মাংস সব নিয়াছে রাবন কংস
হায়রে অসুরের ধ্বংস মানব সুরেতে।।

যখন ভুট্টো এহিয়া মিলে ঢাকায় যায় মিটিং- এর ছলে
আশায় ভাষায় কথা বলে শর্ত সন্ধিতে
পাঠান পাঞ্জাবি সত্তর হাজার বংগসাগর দিচ্ছেরে পারি
কেউ জানে না সংবাদটি তার বাংলার মাটিতে।।

ভুট্টো এহিয়া পাজি কথা বলে আজিবাজি
পৌঁছিল যাইয়া করাচি পশ্চিম দেশেতে
দেশে গিয়ে দিল ভাষণ শেখ মুজিব রাষ্ট্র দুশমন
সাত কোটি বাঙালির মন তখন জ্বলে গোস্যাতে।।

শেখ মুজিবের স্বপ্নধ্যান সাত কোটি বাঙালির প্রাণ
বৃদ্ধলোক হইয়াছে জোয়ান শত্রুনাশিতে
কেঁপে উঠে ঢাকার সিটি কেউ লইলরে হস্তে লাঠি
চায় ওরা শান্তি সৃষ্টি অশান্তি দেশেতে।।

তখন উঠল বাংলার জয় পতাকা চারিদিকে তার স্বর্ণমাখা
ভিতরে বঙ্গের চিত্র আঁকা বাংলা কালিতে
আহা কি বিচিত্র নিশান জানিয়া কোন কবির ধ্যান
এই নিশানের গাহিব গান বাঁচলে ধরাতে।।

চোরের মতন রাত বারটায় দুশমন সৈন্য গেল ঢাকায়
গান মেশিন ট্যাংক বন্দুক চালায় ঘুমের ঘরেতে
ঘরে ঘরে আগুন দিল ঢাকা শহর ছাই করিল
লক্ষাধিক মানুষ মরিল কামান গোলাতে।।

ভাংলো ঢাকার ইউনিভার্সিটি ছাত্র মারল কোটি কোটি
রাঙগা হোল ঢাকার মাটি মানুষের রক্তে
রোকেয়া ইকবাল হলে তিনদিন ভরা আগুন জ্বলে
নাশিল শিক্ষা সমূহে গোলাম বানাইতে।।

হাকিম মোক্তার ব্যারিস্টার প্রফেসার আর লেকচারার
মারে কত বিজ্ঞ ডাক্তার অগ্নি অস্ত্রেতে
হত্যাযজ্ঞ অবশেষে ছড়ে পড়ে সারা দেশে
শহর বন্দর ভরল লাশে চিটাগাংগেতে।।

বিদেশি সাংবাদিক যারা তাদেরে করিয়া তাড়া
মিটাইল সাধ পুরাপুরি মনের খুশিতে
হোস্টেল বোর্ডিং দিয়ে হানা চালাইল হায় জিনাকিনা
কবিতার ছন্দ চলে না এসব লিখিতে।।

হসপিটাল ফার্মেসি যত ভাঙল ঢাকায়ে শত শত
সৃষ্টি নতুন ইতিবৃত্ত বংগ ভূমিতে
রেডক্রস দিল ফিরাইয়া পাষাণ নিষ্ঠুর ইয়াহিয়া
গেল ভাই কারবালা হইয়া ঢাকার বুকেতে।।

যেমন এজিদ সীমার মারোয়ান, এহিয়া ভুট্টো টিক্কা খান
বধিত বাঙালি সন্তান নামল রণেতে
জয়নাল আবেদীন হবেই রাজা উড়াও স্বাধীন বঙ্গধ্বজা
ঠিক রাখ ভাই নামাজ রোজা ঈমানের সাথে।।

কচি কচি ছেলেমেয়ে বাধিল পাষাণ কোন হৃদয়ে
শিশুর লাগি কাঁদে মায়ে বসি রাস্তাতে
লক্ষ লক্ষ নরনারী চলে গেল গৃহ ছাড়ি
বনজঙ্গল পাড়ি দিয়া স্বাধীন ভারতে।।

ধন্যরে ভাই ভারতবাসী, তোরাই মোদের প্রতিবেশী
তোরাই ফুটাইলি হাসি- মায়ের মুখেতে,
থাকবো তোদের চিরঋণী, লিখবো ভাই ভারত কাহিনী
উঠবে যখন দিনমণি, ভাঙ্গা ঘরেহে।।

কুমিল্লার শ্রী ধীরেন দত্ত, গুলিতে হইলেন নিহত,
কাঁদছে মানুষ শত শত সারা বাংলাতে
শুটিং, লুটিং, বার্নিং, হত্যা বলবো কত মৃত্যুর কথা
নত নয় বাঙালির মাথা থাকবে উঁচুতে।।

রংপুরের মশিউর রহমান, হয়ে গেলেন শহীদ কুরবান
সিলেটে ফরিদ দেওয়ান অনেক মতে।
ছিল ওরা দেশের বাতি, থাকবে অমর ওদের খ্যাতি
ফিরে যদি বাংলার জ্যোতি, আল্লার কৃপাতে।।

সারা বঙ্গে পড়ল সাড়া, বুকটান করিয়া দাঁড়া
লড়তে হবে গুলি ভরা বন্দুকের সাথে।
বাংলার পুলিশ, ই পি আর, হেরি দুঃখ বঙ্গ মা’র,
রণ করিতে হ’ল তৈয়ার আনন্দ চিত্তে।।

রাখতে হবে বাংলা স্বাধীন, থাকলে ধরার আসমান জমিন
বলেছেন মন্ত্রী তাজউদ্দিন, বাংলা হতে,
মৌলানা ভাসানীর বাড়ী, উঠছেরে শহীদের ধ্বনি
বিলাইয়া দে জিন্দেগানী, আল্লার রাহেতে।।

ওরা দিল বীরের পরিচয়, জয় জয় বাংলা জয়,
শত্রুসৈন্যের পরাজয় রণ ক্ষেত্রেতে,
শত্রুসেনা রণ ছাড়ি, উঠল রে আকাশে উড়ি
প্লেন হতে বোমার ঝড়ি লাগে ফেলিতে।।

বাংলাদেশের জেলায় জেলায় কাপুরুষরা বোমা ফেলায়
কুষ্টিয়া ও চুয়াডাংগায় ভীষণ জোরেতে,
হায়রে মোদের অস্ত্র নাই, মরবে কি বাঙালি সিপাই
ভাই মরিলে কাঁদবেরে মায় পুত্র শোকেতে।।

দিনাজপুরে আবদুর রবে বীরত্ব দেখায় সগৌরবে
বঙ্গ মা তোর জয় হবে স্বাধীন জঙ্গেতে,
শ্রীহট্টে মেজর ওসমান, রাথিতে স্বাধীন জন্মস্থান
চালাইল যুদ্ধ অভিযান নানান জেলাতে।।

ইউনুস আলী চীপ এডভাইজার আরেক সন্তান বঙ্গ মা’র
পশ্চিম পাকিস্তানে হাজার হাজার আছেন বন্দীতে।
ওরা যদি থাকত মুক্ত, দেখতে মা তুই শত্রুর রক্ত
আদায় করত তোমার শর্ত ভীম পদাঘাতে।।

বোশেখ মাসের পাকা ধান, মাঠে মাঠে হইল বিরাট
কৃষক শ্রমিক লড়িতে যান, পাছে বৃদ্ধ পিতা হাঁকে
শত্রুমাররে লাখে শোভা নাই এতে।।

এই মতন হাজার ভাই সবার নাম জানা নাই
ওদের কাছে সালাম জানাই বিলাত হইতে,
নছিব মন্দ ঘরের বার, মোরা হেথায় আমি হাজার
পাইলাম ভাগ শহীদ সুধার কলির যুগেতে।।

যেথায় যত বঙ্গবাসী দেশের লাগি হও উদাসী
কে দোষী কে নির্দোষী দেখরে শেষেতে,
ছাড় হিংসা দলাদলি ঐক্য দাঁড়াও মাথা তুলি,
মাকে ডাক মা’ বলি আও একতাতে।।

মিনতি বিশ্বের মহাশক্তি, বাংলাদেশের চাই স্বীকৃতি
সাত কোটি মানুষের শান্তি, চাই কমনওয়েলথে,
শুন মা ইংল্যান্ডের রাণী, তোমার কাছে এই বাণী,
দাও ফিরাইয়া চিন্তামণি, সিরাজ বাংলাতে।।

গানটি আমার রক্তলেখা, উর্ধ্বে তোর জয় পতাকা,
মায়ের অঙ্গে রক্ত মাখা, বাংলা ভাষাতে।
বলছে কথা এ রহমান, এবার মোদের শেষ রক্তদান,
জয় বাংলার জয় গান, গাওরে খুশিতে।।

প্রকাশনায়ঃ বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (ল্যাংকারশায়ার ও পার্শ্ববর্তী এলাকা) ৩৩৬, স্টকপোর্ট রোড, ম্যানচেস্টার।
প্রকাশক কর্তৃক সর্বসত্ত্ব সংরক্ষিত।

লেখক বৃটেনে কর্মরত একজন সাধারণ শ্রমিক। ১৯৭১ সনের ৮ মে ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত জনসভায় গানটি পরিবেশিত হয়। এই সভায় আবু সাঈদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

<৪,২৬১,৬০৬>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬১। লন্ডনে গঠিত বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলী সম্পর্কে প্রতিবেদন
লন্ডনস্থ বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র জুন, ১৯৭১

বাংলাদেশের গণ-সাংস্কৃতিক সংগঠন
৫৯,সিমরহাউজ
টাভিস্টক প্লেইস
লন্ডনডব্লিউসিআই
ফোন: ৮৩৭-৪৫৪২
ভুমিকা
ইউ কে তে অবস্থিত বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সংগঠন এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা লেখক,গায়ক,কবি,বাদক,পেইন্টার,গায়ক,ছাত্র,শিক্ষক,সাংবাদিক সহ আরও অনেক পেশার লোকজনের সমন্বয়ে গঠিত যারা বিবিধ কারনে বাইরের দেশে বসবাসরত এবং দেশের সংস্কৃতির সাথে যুক্ত।
এই সংঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়তা করা,বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের অপরিহার্যতা বুঝাতে দেশের জাতীয়তাবাদের সংস্কৃতির মাধ্যমে বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করা,এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা প্রগতিশীল ও স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবীদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন ও বাংলাদেশের একনায়কতান্ত্রিক এবং উপনিবেশবাদী সংগ্রামের বিরুদ্ধে সমর্থন সংগ্রহ করা।

সমাজের সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে আহব্বান কর যাচ্ছে।উপরোক্ত উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনের জন্য সংগঠনের কাজ হবে বক্তৃতা,সেমিনার,সম্মেলন,বিতর্ক,বাদ্যযন্ত্র,সান্ধ্যভোজ,দেশাত্ববোধক নাটক,চিত্রকলা,আলোকচিত্র,ছায়াছবির আয়োজন করা,পত্রিকা প্রকাশ করা এবং বাংলাদেশের জাতীয় সংস্কৃতি প্রচারের লক্ষ্যে পৃষ্ঠোপোষকতার মাধ্যমে দেশের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করা।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের নাগরিকদের উপরোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে বলা হল।
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ দীর্ঘজীবী হোক
মুন্নি রহমান এনামুল হক
সাধারণ সম্পাদক রাষ্ট্রপতি
জুন,১৯৭১

<৪,২৬২,৬০৭-৬০৮>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন, কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬২। বৃটেনে গঠিত বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদ প্রচারিত স্বাধীনতা সংগ্রামের গান(বাংলা ও ইংরেজী) বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের প্রচারপত্র জুন, ১৯৭১
বাংলাদেশগণ-সাংস্কৃতিকসংগঠন
লন্ডন
বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সংগঠন
লন্ডন
১।যেথায় মাটি শুদ্ধ আর বাতাস তাজা
সেথায় বাংলাদেশ–;
যেথায় নদী বয় সমুদ্রে
যেথায় পাখি গান গায়
সুখে
শীত ও বসন্তে
ঝড়ে ও বৃষ্টিতে
সেথায় বাংলাদেশ।
যেথায় কৃষক ও শ্রমিক যুদ্ধ করে,
যেথায় স্বাধীনতা আসে রক্তের বিনিময়ে
যেথায় সব ফ্যাসিস্টদের প্রতিহত করি
যুদ্ধ করি সকল উপনেশবাদীদের
এবং শত্রুর বিরুদ্ধে
দ্রুততার সাথে
সেথায় বাংলাদেশ।
কথা ও সুরঃএনামুল হক বাঙালি
২।শোন আমার বন্ধুরা তোমরা কি শুনবে
আমি একজন বাঙালি
আমার শির দগ্ধ হয়
হৃদয় পোড়ে
তবুও আমার আত্মা গেয়ে চলে।
আমার মায়ের নোলক চুরি হয়েছে
আমার আলয় ,উনুন ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে
আমি হারিয়েছি আমার ভালবাসার পাখি,হারিয়েছি আমার উদ্যান
তবুও আমি ভীত হই নি
আমার নদী এখনও সেথায়
আমার নৌকো এখনও সেথায়
এখন আমি পাল তুলব সর্বময়।
কথাঃ এনামুল হক বাঙালি
সুরঃ বাঙালি সংস্কৃতি(গৃহীত)
স্বাধীনতা সংগ্রামের গান
১.
এসো দেশের ভাই এক সাথে সবাই
এসো ভেদাভেদ ভুলে এবার করব যে লড়াই।।
যেখানে কণ্ঠভরা ছিল গান আর গোলাভরা ছিল ধান হে
যেখানে শিশুর মুখে হাসি দেখে জুড়াত সব মায়ের প্রাণ হে
আজ সেই দেশেতে ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নাই।

অত্যাচারী হত্যাকারী নরপিশাচের আক্রমণে।
বর্বর বিদেশী যত শোষকের ঘৃণ্য আচরণে।
যেখানে শহরে বন্দরে গ্রামে উঠেছে আজ সংগ্রামের ঢেউ
যেখানে ছেলেবুড়ো মা বোনেরা মৃত্যুকে আর ভয় করে না কেউ
সেই বাঙ্গাদেশের স্বাধীনতা আনব যে আমরাই।।

বাংগালী জাগে বাংগালী জাগে বাংগালী জাগে
লড়াই-এর ময়দানে ছুটে কে যাবি চল আগে।।

মাতৃভূমি কাঁদেরে ভাই জন্মভূমি কাঁদে বাংলাদেশ কাঁদে
লড়াই লড়াই লড়াই কর পা দিও না ফাঁদে।।

২.
মুক্তি যদি পেতে চাও হেইও হেইও হেইও
অস্ত্র হাতে তুলে নাও হেইও হেইও হেইও
বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যাও হেইও হেইও হেইও
মুক্তি ফৌজ নাম লেখাও হেইও হেইও হেইও
যার বুকে আছে দেশের টান হেইও হেইও হেইও
সে দিতে পারে নিজের প্রাণ হেইও হেইও হেইও
সাবাস বাংলার মজুর কিষাণ হেইও হেইও হেইও
সাবাস বাংলার নওজোয়ান হেইও হেইও হেইও
সব বেদনার হবে শেষ হেইও হেইও হেইও
স্বাধীন হবে বাংলাদেশ হেইও হেইও হেইও
মুক্তি যদি পেতে চাও হেইও হেইও হেইও
অস্ত্র হাতে তুলে নাও হেইও হেইও হেইও।।
কথা ও সুরারোপ- এনামুল হক

<৪,২৬৩,৬০৯>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬৩। বৃটেনে গঠিত বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের কর্মকর্তাদের নামের তালিকা
বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের প্রচারপত্র জুন, ১৯৭১

বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সংগঠন
দফতরের সংবাদবাহক এবং নির্বাহী কমিটির সদস্যদের তালিকাঃ
১।সভাপতি জনাব এনামুল হক,৩৩ অ্যাবে রোড,অক্সফোর্ড ০৮৬৫৪৬৮৩৭
২।সহ-সভাপতি জনাব শফিকুর রহমান,১৪৬ শেভিয়ট গার্ডেন এন.ডব্লিউ.২ ৪৫৫৮০৩১
৩। জনাব ফজলে লোহানী,৯৩ শিপ্যানহাম আর.ডব্লিউ.ডি.৯ জনাব শাহিদুদ
দাহার,৭৯ শিল্টার্ন ওয়েজ নর্দাম্পটন
৪।সাধারণ সম্পাদক মিসেস মুন্নি রহমান,৫৯ সেমর হাউজ,টাভিস্টক পিআই ডব্লিউসিআই ৮৩৭ ৪৫৪২
৫।যুগ্ন-সচিব জনাব মাহমুদ হাসান,৪০ লংরিজ রোড,এসডব্লিউ৫ ৩৭৩৯৬৭৫
৭। জনাব জাকিউদ্দিন আহমেদ,৩৭ বেলাওয়ে ষ্ট্রীট এসডব্লিউ ১২
৮।সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব বুলবুল আহমেদ,৮৯ কলভিল রোড,ই ১১,৫৫৬০৮৪৫
৯।কোষাধ্যক্ষ জনাব আনিস আহমেদ,২ টেম্পারলি রোড,এস.ডব্লিউ.১২. ৫৭২ ৫৭২০
১০।সদস্য মিসেস লুলু বিলকিস বানু,২৭ কোর্টফিল্ড গার্ডেন্স,এসডব্লিউ৫ ৩৭৩ ৭২৪১
১১। মিসেস জেবুন্নেসা খায়ের,৯৬ অ্যাডারব্রুক রোড,এসডব্লিউ ১২ .৬৭৩৪১৯৭
১২। জনাব আহমেদ হোসাইন জোয়ার্দার,১৬ স্যাম্ফ্যেন রোড,এসডব্লিউ ১৭
১৩। জনাব আব্দুর রউফ,২ টেম্পারলি রোড,এসডব্লিউ ১২.৬৭৩৫৭২০
১৪। জনাব এ রউফ,৬৬/এ হ্যানবারি ষ্ট্রীট ই.১..২৪৭ ১৪৬৯
১৫। জনাব মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ,১২৯ হেভারস্টক হিল,এন.ডব্লিউ.২.৭২২ ২৯৬২
১৬। জনাব নজরুল ইসলাম,১৩৪ হাইমলি রোড,এসডব্লিউ ১৭
১৭। জনাব এ রাজ্জাক সৈয়দ,১১১ ওয়েস্টবর্ন পার্ক রোড,ডব্লিউ২
১৮। জনাব জিয়াউর রহমান খান,১৬ পিরব্রাইট রোড,এসডব্লিউ ১২. ৮৭৪ ৪২৯৬
১৯। জনাব ডঃ হুজ্জত আলি প্রামানিক,২ পাটনি হাই ষ্ট্রীট এসডব্লিউ ১৫ ৭৮৮ ১৪৭৬

দ্রষ্টব্যঃ নতুন সদস্য সহযোজিত করা হতে পারে এবং পুরো যুক্তরাজ্য জুড়ে সংঠনের সংশ্লিস্টতা থাকবে।

<৪,২৬৪,৬১০>
অনুবাদকঃ শওকত ইসলাম রিপন
শিরোনাম সুত্র
তারিখ
২৬৪। লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে নীতিগত সম্মতি জানিয়ে মুজিবনগর থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সহযোগীর চিঠি
ড. এনামুল হক কে লিখিত চিঠি ৮ জুন, ১৯৭১

ডিও নং-২১০
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর,
জুলাই ৮,১৯৭১
জনাব এনামুল হক
৩৩,এবে রোড,
অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।

প্রিয় হক সাহেব,
মি. চেসওয়ার্থ মারফত প্রেরিত আপনার ১৮মে, ১৯৭১ তারিখের চিঠি আমি পেয়েছি। আমি খুব সতর্কতার সাথে আপনার প্রস্তাবগুলো পড়েছি। ইংল্যান্ডে বাংলাদেশ সেন্টার স্থাপনের ব্যাপারে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। আমরা জাস্টিস চৌধুরী এবং তার স্টীয়ারিং কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং পরামর্শ পাঠাচ্ছি। এটি পারস্পরিক মতামত এবং খবরাখবর আদান প্রদানে সহায়ক হবে । আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এরকম একটি অফিস খুব দরকারি এবং স্টীয়ারিং কমিটি রাজি হলে এই প্রচেষ্টা কে আমরা সাদর সম্ভাষণ জানাবো।
মি. পাশার সাথে আমার কখনো দেখা হয় নি। আমি জানি না তিনি কলকাতা এসেছেন কি না। আমাদের জানানো হলেই স্টীয়ারিং কমিটির মাধ্যমে সব কর্মসূচি শুরু করবো।এখন আমরা এখানে সফররত ভুঁইয়া সাহেবের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
স্ট্যাম্পের নকশা অনুমোদিত হয়েছে।আপনার কাছে আরো নকশা থাকলে অনুগ্রহ করে অনুমোদনের জন্যে পাঠিয়ে দিবেন। বেশি থাকলেও ক্ষতি নেই। প্রকাশনার ব্যাপার হলো,আমাদের কলকাতা মিশন এখনো কোনো বুলেটিন বের করতে পারে নি। আশা করছি, লন্ডন অফিস একটি নিউজ বুলেটিন হলেও প্রকাশ করতে পারবে।
অনুগ্রহ করে জাস্টিস মি. চৌধুরীকে চিঠিটি দেখাবেন এবং আপনার প্রস্তাবনার ব্যাপারে একমত কি না দেখবেন। মি. চৌধুরী সহ ব্রিটেনের অন্য বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাবেন।

ইতি
আপনারই প্রিয়
রহমত আলী
প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সহযোগী

<৪,২৬৫,৬১১-৬১২>
অনুবাদকঃ
শিরোনাম সুত্র তারিখ
২৬৫। প্রবাসে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের প্রস্তাব সহ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে লিখিত চিঠি
ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের পক্ষে এসোসিয়েট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির চিঠি ৮জুলাই,১৯৭১

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস
২০,ওয়েস্ট ফরটিথ স্ট্রীট, নিউইয়র্ক১০০১৮
জুলাই ৮,১৯৭১
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
১১,গোরিং স্ট্রীট,
লন্ডন, ইসি ৩,ইংল্যান্ড।

প্রিয় চৌধুরী সাহেব,
আমার আপনার সাথে নিউ ইয়র্কে দেখা হয়েছিল,যখন আপনি বাংলাদেশে চলমান নৈরাজ্যের বিষয়ে জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে কথা বলতে এসেছিলেন।আপনার সাথে দেখা হওয়ায় খুব ভাল লেগেছিলো।

আপনাকে একটি প্রস্তাব দেয়ার জন্যে এই চিঠিটি লিখছি। আপনার সাড়া পেলে খুব খুশি হবো।
আপনি নিশ্চয় জানেন যে,বিশ্বের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটি আক্রান্ত হলে (যেমন বর্তমানে পাকিস্তানে যা চলমান),ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিস শিক্ষক এবং ছাত্রদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করে থাকে ।

আমার মনে হয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে যারা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন,তাদের জন্য বিদেশে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করলে শুধুমাত্র দুর্দশা দূর করবে তা না,বরং অভিযুক্তদের জন্যে একটি শেষ আশ্রয়স্থল ও হতে পারে। আরো সুদুরপ্রসারী চিন্তা করলে বলা যায়,এটি বিশ্বের বিভিন্ন নৈরাজ্যবাদী সরকার কর্তৃক একই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাওয়া জনগণের জন্যে আশার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
যদি পশ্চিমবঙ্গে কিংবা ভারতের অন্য সুবিধাজনক স্থানে বাংলাদেশ বহিঃস্থ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, তবে আনুষঙ্গিক সহায়তার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান ফাউন্ডেশন থেকে সহায়তার পরিকল্পনা শুরু করতে পারি।
আমাদের ধারণা হলো,মেজর ফাউন্ডেশনগুলোর কাছে শরণার্থীদের জন্যে সরাসরি সাহায্য চেয়ে আবেদন করলে তা ফলপ্রসূ হবে না। কারণ ফাউন্ডেশনগুলো নিজেদের রিলিফ এজেন্সির চেয়ে ডেভেলপমেন্ট এজেন্ট মনে করে এবং এভাবেই তারা সামাজিক পরিবর্তনে ভুমিকা রাখতে চায়।
পরিকল্পনা পাঠিয়ে মন্তব্য চাওয়ার আগে আমি এ ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া আশা করছি। নিম্নলিখিত কয়েকজনের কাছেও এ পত্রটি পাঠানো হচ্ছে এবং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে তাদের মতামত ও আপনাকে জানানো হবে।
ইতি
কে বি রাও
এসোসিয়েট এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারি

সিসি –
মি চিদাম্বরনাথন
ড.হ্যারি ডি গিডকোনেস
মি . এনামুল হক
মি. জামশেদ খান
ড. এ আর মল্লিক
মি. লেনন ও’ ম্যারিয়ন
ড. গ্লেন টি নাইগ্রিন
মি লিওনার্ড সুসম্যান

<৪,২৬৬,৬১৩-৬১৭>
অনুবাদকঃ আল-জাবির মোহাম্মদ, খন্দকার কাফি আহমেদ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬৬। লন্ডনের হাইডপার্কের সমাবেশে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর ভাষণের বিবরণী লন্ডনস্থ একশন কমিটির দলিলপত্র ১৮ জুন, ১৯৭১

“জয় বাংলা – জয় বাংলা”
কসাই ইয়াহিয়ার বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের নিরবচ্ছিন্ন, অমানবিক গনহত্যা সম্পর্কে গ্রেট ব্রিটেন ও বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্যে আমরা আজকে এখানে সমবেত হয়েছি। এবং এটা প্রতিটি স্বাধীনতাপ্রিয় মানুষের দায়িত্ব ইয়াহিয়ার এই চলমান গনহত্যার নিন্দা জানানো এবং তা অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে বলা। আজ এই সভা শেষ হওয়ার পর ইয়াহিয়ার বর্বরোচিত শাসনে সমর্থন না দেওয়ার আবেদন নিয়ে আমরা এখান থেকে মিছিল নিয়ে চাইনিজ দূতাবাস ও আমেরিকান দূতাবাসের সামনে যাবো। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো এই স্বৈরশাসকের শোষনের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে এবং আমাদের সাথে আওয়াজ তুলতে যাতে বিশ্বের সকল সরকার বিশেষ করে গনপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার ও আমেরিকার সরকার তাদের সাহায্য বন্ধ করে দেয় এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এবং আমি আপনাদের এই টুকুই বলতে পারি এই গনহত্যা বন্ধই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার একমাত্র উপায়। এছাড়া আর কোন উপায় নেই। তাই আমি আপনাদের সবাইকে আমার সাথে স্লোগান ধরতে অনুরোধ করি, “স্বীকৃতি দাও স্বীকৃতি দাও” – “বাংলাদেশ,বাংলাদেশ” “স্বীকৃতি দাও, স্বীকৃতি দাও” – “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ” “স্বীকৃতি দাও স্বীকৃতি দাও” – “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ”, “দীর্ঘজীবি হোক দীর্ঘজীবি হোক” – “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ” “দীর্ঘজীবি হোক দীর্ঘজীবি হোক” – “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ”। ধন্যবাদ আমি এখন বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি মাননীয় জাস্টিস চৌধুরী সাহেবকে অনুরোধ করবো মঞ্চে আসতে এবং আমাদের মাঝে কিছু বলতে। সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।

হাততালি , স্লোগান – জয় বাংলা।

বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরি
বন্ধু এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই আমাদের এমন ভয়াবহ সংগ্রামের সময় আপনাদের উষ্ণ সহানুভুতি ও সমর্থনের জন্য।
(হাততালি…)
সুধীমন্ডলি, আপনারা অবগত আছেন যে আমরা আমাদের উপর গত তেইশ বছর নীরবে সহ্য করে যাওয়া রাজনৈতিক নিপীড়ন ও অর্থনৈতিক শোষন সাংবিধানিক ভাবেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। এবং সুধীমন্ডলি আপনারা আরো অবগত আছেন, কিভাবে সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান আমাদের এই সাংবিধানিক প্রচেষ্টাকে থামিয়ে দিয়েছে এবং ২৫ই মার্চ রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র, বেসামরিক মানুষের উপর সামরিক বাহিনী গনহত্যায় লেলিয়ে দিয়েছে এবং এখনো বাংলাদেশী জনগণের উপরে গণহত্যা চালিয়েই যাচ্ছে। এই বেপরোয়া হত্যাকান্ডের প্রাক্কালে স্বাধীনতার স্বফঃস্ফুর্ত দাবী উঠেছে (ধিক! ধিক!—-) এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষ নিজেদের ইয়াহিয়ার শাসন থেকে মুক্ত ঘোষনা করেছে।
(হাততালি…)
আমরা এখন ইয়াহিয়া খানের হানাদারসামরিক বাহিনীকে বাধা দেওয়ার ভয়াবহ সংগ্রামে লিপ্ত আছি।
(হাততালি…)
এই ভয়াবহ………… (মাইক ত্রুটি) সংগ্রামের সময় আমরা বিশ্ববাসীর সমর্থন ও সহানুভুতি আশা করি। বিশ্বের একপ্রান্তের নিদারূন যন্ত্রনা অবশ্যই অন্যদের ছুয়ে যাবে আশা করি। আমাদের এই বিপদের সময় অগাধ সহানুভুতির জন্যে আমরা ব্রিটিশ জাতি, সংবাদপত্র, রেডিও এবং টেলিভিশনের প্রতি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ। (হাততালি……)
আমাদের আজকে একটাই কাজ করার আছে, আর সেটা হচ্ছে ইয়াহিয়া খানের হানাদার বাহিনীকে বাধা দেওয়া। (হাততালি…) এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীকে তাদের আক্রমন, ধর্ষন থেকে মুক্ত করা। (স্লোগান – জয়বাংলা)। আপনারা অবগত আছেন, তাদের সৈন্যরা গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, ধর্ষন করছে, বাচ্চাদের হত্যা করছে, গনহত্যা চলছেই। বিশ্বের বিবেক কি এরপরেও জাগবে না! আমরা বিশ্ববাসী ও তাদের সরকারের কাছে আবেদন জানাই, ইয়াহিয়া খানের সরকারকে সুস্পষ্টভাবে বাধা দেওয়া হোক। আমি বিশ্বের সব সরকারের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক সাহায্য না দেওয়ার জন্যে আবেদন জানাই। (হাততালি……)
আপনাদের অনুধাবন করা উচিৎ, পাকিস্তানের কোন সরকার নেই যাকে আপনারা সহায়তা প্রদান করবেন। ইয়াহিয়া খান নিজে পাকিস্তানকে শেষ করে দিয়েছে। আজ যা আছে তা শুধুই পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার। (ধিক! ধিক!…) এবং বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষ হত্যার জন্যে সেই সরকারকে কোন ধরনের অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়া উচিৎ নয়। এটা বিশ্বের সরকারের কাছে আমার প্রার্থনা। স্বাধীনতাকামী ও হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশের বাচ্চা, নারী পুরুষ হত্যার জন্যে কোন অস্ত্র জোগান দেওয়া অনুচিত হবে। তারা তাদের স্বীয় শক্তিতে বিশ্বাস ও ভরসা করে কিন্তু তারপরেও বিশ্ববাসী ও সব সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছে যাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র জনগনকে হত্যার জন্যে ইয়াহিয়া খানকে কোন ধরনের অস্ত্রের জোগান না দেওয়া হয়। সুধীমন্ডলি, এখন নতুন মিথ্যাচার শুরু হয়েছে যে বাংলাদেশের জনগন স্বাধীনতা চায় না। প্রিয় বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দ, আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও হানাদার বাহিনীকে থামাতে চান তারা হাত তুলুন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের দাবীতে এগিয়ে আসুন। (স্লোগানঃ জয় বাংলা…)
ইংল্যান্ড মুক্তচিন্তা ও মতপ্রকাশের দেশ হিসেবে সুপরিচিত। তাই এখানে যদি আপনারা আওয়াজ তোলেন তবে কেউ বলতে পারবে না আপনাদের বাধ্য করা হয়েছে বরং আপনারা স্বেচ্ছায় করেছেন। আপনারা বিদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধি। আপনাদের প্রত্যেইকেই প্রতিনিধি। এবং আপনার বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছে যা সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশীর দাবী (হাততালি)। এটা ইয়াহিয়া খানের ভাষ্য অনুযায়ী কোন দুবৃত্তের দাবী নয় বরং বাংলাদেশের জনগনের দাবী। সুধীমন্ডলি, আমরা হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করতে বদ্ধ পরিকর। আমরা বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ। এবং এই সংগ্রামে আমরা সকলের সহায়তা, সহানুভুতি এবং সাহায্য চাই।
প্রিয় বাংলাদেশের নাগরিকবৃন্দ, আমাকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের বিশেষ নির্দেশনা দিতে হবে। (জয় বাংলা…)
এই সমাবেশ শেষ হওয়ার পর যে মিছিল হবে সেটা শুধুই প্রতিবাদী মিছিল হবে না। এটা হবে গনপ্রজাতন্ত্রী চীন, আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আমাদের আবেদনের উপায়। ইয়াহিয়া খানকে অস্ত্রের জোগান দেওয়া বন্ধ করার আবেদন। ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকারকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদান বন্ধ করার আবেদন। বাংলাদেশের সরকার বাংলাদেশের নাগরিকদের এই আবেদন করার মিছিলে শৃংখলা ও শান্তি বজায় রাখতে অনুরোধ করেছেন যাতে যুক্তরাজ্যের অরিথিপরায়ন মানুষ বুঝতে পারে আমরা সুশৃংখল জাতি। (হাততালি)
আমাদের মিছিল হবে শান্তিপূর্ন। কোন আক্রমনাত্মক স্লোগান আমরা দেবো না। দুই দেশের দুই দুতাবাসের সামনে কোন আলাদা দল হবে না। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জনগন আমাদের সমর্থন দিবে এবং ইয়াহিয়া খানকে অস্ত্র জোগান দেওয়া বন্ধ করবে। (হাততালি…)
সেই প্রার্থনা, সেই আবেদনেরসাথে বাংলাদেশের নাগরিকরা লন্ডনে দুই মহান দেশের দুই জাতির কাছে যাবে । (হাততালি…)
আমাকে বলা হয়েছে আমাদের শত্রুরাওসক্রিয় এবং তারা হয়তো লোক পাঠাতে পারে যারা আমাদের মিশে যাবে যারা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যাচ্ছি এবং আমাদের এই লক্ষ্যে পৌছাতে ঝামেলা করতে পারে। আমি পরিস্কার করতে চাই, যারা এহেন কাজে লিপ্ত হবে তারা বাংলাদেশের শত্রু, এবং তাদের হীন কাজের জন্যে বাংলাদেশ সরকার কোন দায়ভার নিবে না এবং বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তারা কোন ধরনের নিরাপত্তা পাবে না। (হাততালি।)
আমি তাই পুনরায় আমার প্রিয় দেশবাসি আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যেকোন মূল্যে শৃংখলা ও শান্তি রক্ষা করবেন। আপনারা জানেন আমরা স্বাধীনতার সংগ্রাম করছি, এই বিদেশে এবং ব্রিটিশ সরকার আমাদের অতিথিপরায়নতা দেখিয়েছে, ব্রিটিশ সরকার এখানে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে যেমন আমি বলছিলাম যেখানে বাকস্বাধীনতা আছে সেখানে আন্দোলনের স্বাধীনতা আছে। (হাততালি……)
আমাদের এই আবেদনের যাত্রায় আপনারা অবশ্যই ব্রিটিশ সরকার ও জনগনের অতিথিপরায়নয়ার জন্যে আপনার কৃতজ্ঞতা দেখাবেন এবং আপনার কাজ দ্বারা কোন ভাবেই সেই অয়াতিথেয়তার অবমূল্যায়ন করবেন না। প্রিয় নাগরিকবৃন্দ আমি তাই বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাজের মাধ্যমে আমরা কতটা সুশৃংখল সম্মানিত জাতি তা প্রদর্শন করবেন। (হাততালি এবং স্লোগানঃ জয় বাংলা)
সুধীমন্ডলি, এখানে যারা আমাদের আন্দোলনে সংহতি ও সমর্থন জানাতে এসেছেন তাদের আমি ধন্যবাদ এবং বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন মহামান্য রাণীর সরকার এবং কমনওয়েলথ প্রধান বাস্তবতা অনুধাবন করবেন এবং বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাবেন। (হাততালি)
আমি মনে মনে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সেদিন বেশী দূরে না যেদিন বাংলাদেশ কমনওয়েলথ জাতির আনন্দিত সদস্য হিসেবে যোগদান করবে। (হাততালি)
প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সংকল্প, সাহস, ত্যাগ এবং একতা বজায় রাখুন সেই আবেদন করি আপনাদের কাছে। আমরা সফল হবই। ইনশাল্লাহ, আমরা শান্তি প্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবো।
আমরা এমন একটি সংবিধান গঠনকরব যা চিন্তার স্বাধীনতা,বাক স্বাধীনতা,মত প্রকাশের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেবে।আমরা একটা গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের দিকে ধাবিত হচ্ছি যেখানে সকল মানুষ সমান হবে।হিন্দু ও মুসলিম,বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে আমরা শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করব।(হাততালি)
আমাদের স্বীকৃত নেতা শেখ মুজিব একটি নতুন বিশ্বাসের অগ্রদূত,একটি নতুন আশার রাষ্ট্রদূত এবং যে আশা রাষ্ট্র গঠন করবে যেখানে সবাই সমান,মুক্ত এবং কেউ নিপীড়িত হবে না।(হাততালি এবং স্লোগান)
সুধিবৃন্দ,শেখ মুজিব ও অন্যান্য রাজনৈতিক নেতারা এখনও জেলে যাদের অপমানজনক চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করা সত্ত্বেও অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।আমরা শেখ মুজিবের মুক্তি চাই।আমরা সকল রাজবন্দীদের মুক্তি চাই।আমরা সব ধরণের ত্যাগের জন্য প্রস্তুত আছি,কেউ তাদের মুক্তি ঠেকাতে পারবে না।(হাততালি এবং স্লোগান:জয় বাংলা…….)
সুধিবৃন্দ,এখানে আরও কয়েকজন বিজ্ঞ বক্তা উপস্থিত আছেন,তারা আপনাদের সংক্ষেপে বক্তৃতা উপস্থাপন করবেন।কিন্তু,আপনাদের আপিলে মার্চ শুরুর আগে আমি বাংলায় কয়েকটি কথা বলব এরপর আমি আপনাদের অনুরোধ করব আপনারা মিছিল নিয়ে অগ্রসর হবেন।এই বৈঠকের পর আমি আপনাদের সঙ্গে বাংলায় আলোচনা করব।
ধন্যবাদ সুধিবৃন্দগণ(হাততালি….)

বক্তৃতার শেষাংশ-
ভাই ও বোনেরা,আজকে আমরা এখানে সমবেত হয়েছি মুক্ত কন্ঠে একতাবদ্ধভাবে ঘোষণা করতে যে,বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ ইয়াহিয়া খানের হানাদার সৈন্যদের হটিয়ে দেওয়ার জন্য বদ্ধপরিকর।
-হাততালি
আমরা এখানে সমবেত হয়েছি সমস্ত দুনিয়াকে জানিয়ে দিতে যে,আমরা একতাবদ্ধভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি এবং ইনশাআল্লাহ সেই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করবো।-হাততালি ও স্লোগান:জয় বাংলা
আজকের এই শোভাযাত্রা সম্বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের সাথে আমার সরাসরি কথা হয়েছে।বাংলাদেশের মন্ত্রীমন্ডলী আমাদের জানিয়েছেন যে,আমাদের এই শোভাযাত্রা আবেদনের শোভাযাত্রা-এটা বিক্ষোভের মিছিল নয়।আমাকে জানিয়েছেন যে,আমি যেন তাদের হয়ে আপনাদের অনুরোধ করি,সর্ব অবস্থায় আপনারা শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা করে বাংলাদেশের জনসাধারণ এবং বাংলাদেশ সরকারের সম্মান বৃদ্ধি করবেন।-হাততালি-
আপনারা চীনা দূতাবাস এবং আমেরিকান দূতাবাসে যাবেন এই আবেদন নিয়ে যেন তারা ইয়াহিয়া খানকে কোনরূপ সাহায্য না করেন;কিন্তু কোনরূপ শ্লোগানের দ্বারা বা কোনরূপ ব্যবহারের দ্বারা আপনারা তাদের প্রতি কোনরূপ অসম্মান প্রদর্শন করবেন না।-হাততালি-
পাকিস্তান হাইকমাশনের লোক আমাদের প্রশাসনের মধ্যে যোগ দিয়ে তাদের প্রতি অশোভন এবং অসৌজন্যপূর্ণ ব্যবহার করে আমাদের দায়ী করবার, দোষী করবার চেষ্টা করবে।তাদের থেকে আপনারা হুঁশিয়ার থাকবেন।-হাততালি-
এবং তাদের এই কাজের জন্য আমরা কোনরূপ দায়ী থাকবো না।আমাদের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দিন সাহেব দ্ব্যার্থহীন ভাষায় আমাকে বলেছেন-আমাদের লক্ষ্য সকলের জন্য প্রীতি,বিদ্বেষ নয়।-হাততালি-
আপনারা এই কথাটি মনে রাখবেন। আমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি।আপনারা এই শোভাযাত্রায় যাবার সময় আমরা যে কয়েকটি শ্লোগান অনেক ভেবে-চিন্তে ঠিক করেছি, আশা করি,মাত্র সেই কয়েকটি বলে যাচ্ছি আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বলবেন-“স্বীকৃতি চাই,স্বীকৃতি চাই ”
আপনারা বলবেন-“বাংলাদেশ,বাংলাদেশ”
আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বলবেন”দীর্ঘজীবী হও,দীর্ঘজীবী হও”
আপনারা বলবেন”শেখ মুজিব,শেখ মুজিব”
আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বলবেন”দীর্ঘজীবী হোক মুক্তি ফৌজ”
আপনারা বলবেন”দীর্ঘজীবী হোক মুক্তি ফৌজ”
তারপরে আর একটা শ্লোগান হবে”বন্ধ কর,বন্ধ কর”
আপনারা বলবেন”গণহত্যা,গণহত্যা”
আর একটা হবে,”সমর্থন বন্ধ কর”
আপনারা বলবেন,”ইয়াহিয়া খান”।
:আপনাদের মনে থাকবে, আপনাদের সকলের?
:”হাঁ”
:আচ্ছা।
আমি আর একবার বলছি”স্বীকৃতি চাই,স্বীকৃতি চাই”
জবাবঃ “বাংলাদেশ, বাংলাদেশ”।
জনাব চৌধুরীঃ “বাংলাদেশ”
জনাব চৌধুরীঃ “দীর্ঘজীবী হও,দীর্ঘজীবী হও”
জবাবঃ “শেখ মুজিব,শেখ মুজিব”
জনাব চৌধুরীঃ “দীর্ঘজীবী হোক মুক্তি ফৌজ”
জবাব:“দীর্ঘজীবী হোক মুক্তি ফৌজ”
জনাব চৌধূরীঃ “বন্ধ কর,বন্ধ কর”
জবাবঃ “গণহত্যা,গণহত্যা”
জনাব চৌধূরীঃ”সমর্থন বন্ধ কর”
জবাবঃ “ইয়াহিয়া খান”।
জনাব চৌধুরীঃআপনাদের অশেষ ধন্যবাদ।আপনারা যে কষ্ট করে এখানে সমবেত হয়েছেন তার জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের আপনাদের ভাই ও বোনদের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের শুকরিয়া আদায় করছি।এখন আপনারা শান্তি ও শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে মিছিলে যোগ দিন।আসসালামু আলাইকুম।

<৪,২৬৭,৬১৮>
অনুবাদকঃ অনুরাধা চৌধুরী
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬৭। আন্দোলনের কতিপয় দিক সম্পর্কে মুজিবনগর সরকারের বহিবিশ্ব প্রচার বিভাগের মওদুদ আহমেদের প্রতি স্টিয়ারিং কমিটির আহবায়কের চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিল পত্র ২৭ জুলাই, ১৯৭১

জনাব মওদুদ আহমেদ,
বহিঃ প্রকাশনা বিভাগ,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মিশন,
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলকাতা-১৭, ২৭শে জুলাই ১৯৭১ইং
প্রিয়,
জনাব আহমেদ
১৯৭১ সালে ১২ জুলাই হতে প্রতিদিন আমাদের প্রেস ও তথ্য বিভাগ থেকে পত্রিকার ক্লিপিংস গুলো দ্রুত প্রেরণ এবং সময়মতো সেগুলো আপনার কাছে পৌছানোও হচ্ছে। যেহেতু প্রকাশনাগুলো বিভিন্ন সুত্র ও আমাদের প্রকাশনা বিভাগ থেকে নেয়া হচ্ছে এবং তার অনুলিপি আপনার নিকট পাঠানো হবে।
ইতমধ্যে পান্ডুলিপির অনুলিপিটি আমি হস্তান্তর করে দিয়েছি। যেটি বর্তমানে বুকলেট আকারের প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে এটি ছাপানো বন্ধ করা একটি বিলম্বিত পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমি মনে করি। যেকোন ক্ষেত্রে , মুদ্রণ শেষ হবার সাথে সাথেই এর পান্ডুলিপি আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ করছি যার জন্য আপনি এবং হুদার নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আশা করি খুব সহসাই সে আয়োজন তৈরি হবে।
বাংলাদেশে ফেরার পর হতে আমি মারাত্মকভাবে সাংগঠনিক সমস্যায় ব্যাস্ত আছি। যা স্টিয়ারিং কমিটি সম্মুখীন করছে। যার জন্য আমি নিয়মিত ভাবে আপনার সাথে যোগাযোগ রাখতে পারি নি। এটির জন্য আমি অবশ্য দুঃখিত।প্যানারোম অনুষ্ঠান টী খুব ভালোভাবেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্যে বাঙালীদের উদ্দিপীত করতে ও নৈতিক সমর্থন যোগাতে এটী কাজ করেছিল।
জীবন থেকে নেয়া’র অনুলিপিগুলোও প্রস্তুত বলে আমি আশা করি।অনুলিপি পাবার জন্য আমি খুবই আগ্রহী। আমাকে উপদেশ দিন কীভাবে অগ্রসর হওয়া যায় এবং কত তাড়াতাড়ি আমরা এটি পেতে পারি।
মি.জহির রায়হান, মি.আলমগীর কবির, মি. বেলায়েত হোসেন এবং স্বাধীনতা কাউন্সিলের অন্যান্য সদস্যবৃন্দের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়।

আপনার অনুগত
আজিজুল হক ভুঁইয়া
সভার আহবায়ক

<৪,২৬৮,৬১৯>
অনুবাদকঃ অনুরাধা চৌধুরী
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬৮। স্টিয়ারিং কমিটির প্রতি একটি কনভেনশন কমিটি গঠনের আহবান সম্পর্কিত প্রবাসী নেতৃবৃন্দের বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ এ্যাকশন কমিটির দলিল পত্র ৩০ জুলাই, ১৯৭১

১৯৭১ সালের ৩০ শে জুলাই স্টিয়ারিং কমিটির অফিসে বাঙালী কমিউনিটির কিছু নেতা ও বিচারপতি আবু সায়েদের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।সভায় স্টিয়ারিং কমিটিকে সম্মলনের জন্য মোট ৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করার অনুরোধ করা হয়েছিল।যার মধ্যে ৪টি ইউনিট থেকে ৪ সদস্য ও স্টিয়ারিং কমিটি থেকে জন অন্তর্ভুক্ত করার কথা । কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি অথবা কাউন্সিল নির্বাচন এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলন পুনর্গঠিত করতে স্টিয়ারিং কমিটি সম্মেলন কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। সম্মেলন কমিটি একটি খসড়া সংবিধান তৈরি করবে এবং সম্মেলনে তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করবে। এ অনানুষ্ঠানিক সভায় স্টিয়ারিং কমিটিকে চূড়ান্তভাবে এ ব্যাপারটিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ করার অনুরোধ করা হয়েছে।

স্বাক্ষর
<৪,২৬৯,৬২০-৬২৩>
অনুবাদকঃ নন্দন দেব
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৬৯। লন্ডনে আয়োজিত বাংলাদেশের স্বীকৃতি মিছিলের কর্মসূচী-পুস্তিকা এ্যাকশন বাংলাদেশ, লন্ডন প্রকাশিত পুস্তিকা ১ আগস্ট, ১৯৭১

গণহত্যা থামাও গণহত্যা থামাও
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও স্মারকসভা

গণহত্যা থামাও
“বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও” সমাবেশ
রবিবার, ১লা অগাস্ট ১৯৭১
গণহত্যা থামাও গণহত্যা থামাও
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও
কর্মসূচীঃ
২.০০সঙ্গীত যুগলবন্দীঃ ভারতীয় সেতারবাদক মনেশ চন্দ্র সাথে তবলায় মাধুকর কোঠারা
২.১৫ বিচারপতি আবুঃ ঢাকা উচ্চ আদালতের সাবেক বিচারপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। বর্তমানে বিদেশে বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি ।
২.৩০ প্রত্যক্ষদর্শীর রেকর্ডকৃত অংশ
২.৩৫ reg prentice M.P. চারজনেরমধ্যেএকজন M.P.S যিনিপশ্চিমপাকিস্তানএবংবাংলাদেশউভয়দেশপরিদর্শন করেছেন ।
২.৫০রেভ কেনিওন রাইটঃ১৫ বছর পশ্চিম বাংলায় বাস করেছেন। অপারে বাংলাদেশে এবং ভারতের শরণার্থী শিবিরের সাম্প্রতিক পরিদর্শক । কোভেন্ট্রি ক্যাথেড্রালের পরিচালক।
৩.০০ প্রধানমন্ত্রী জন স্টোনহাওজঃ বাংলাদেশে একবার এবং ভারতে অবস্থিত শরণার্থী শিবিরে দুবার পরিদর্শন করেছেন।বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার ডাকে ২১০জন মন্ত্রীর করা প্রস্তাবিত স্বাক্ষরে এসেছেন ।
৩.১৫ লর্ড ব্রকওয়েঃ প্রথমসারির একজন যিনি পাকিস্তানি সৈন্যর দ্বারা কৃত নৃশংসতার নিন্দা জানিয়েছেন ।
৩.১৫ শেখ মুজিবুর রহমানের রেকর্ডকৃত অংশ ।
৩.৩০ টম উইলিয়াম ও.সি এম.পিঃ পূর্বে রাজনৈতিক বিচারে শেখ মুজিবুর রহমানের বিবাদী ছিলেন।
৩.৪৫ সঙ্গীতঃ বাংলাদেশের জনগনের সাংস্কৃতিক সংগঠন ।
৪.২৫ বেগম লুলুঃ বানু্গালিএখানে পড়াশোনায়রত বাঙালি মহিলা ।
৪.৩৫ ডেভিড কশফঃ টেলিভিসন, চলচ্চিত্র এবং মঞ্চ অভিনেতা।
৪.৪০রেভ। রজার ক্রসওয়েটঃ চার্চ মিশনারি সোসাইটির তরুণ পরিচালক
৪.৪৫ লেডী গিফোরডঃ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে ডাকা মতবিনিময় সভার কোস্পন্সর এবং সভাপতি
৪.৫০ বব এডওয়ার্ড এমপিঃ কেমিক্যাল ওয়ার্কার ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ।
৪.৫৫ সিমন হেবডিচঃ জাতীয় তরুণ লিবারেললীগের রাজনৈতিক সহ-সভাপতি।
৫.০০ নির্মল সিং. লুটন থেকে আগত একজন শিখ কর্মী ।
৫.০৫ পউল কানেটঃ বাংলাদেশের ঘটনা ের মুখপাত্র ।
সঙ্গীত ।
জনাব হিথকে চিঠি প্রদানের জন্য ১০ ডাউন স্ট্রিটের দিকে যাত্রা এবং কোণায় অবস্থান।
বক্তা
( এই অনুষ্ঠানটি শেষ সময়ে পরিবর্তন সাপেক্ষ )
শ্রদ্ধেয় জনাব হিথ,
১লা আগস্ট, ১৯৭১ রবিবার ত্রাফাল্গার স্কয়ারে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলিতে অবস্থিত সহস্র মানুষের পক্ষ থেকে আমরা এই বার্তা এনেছি।
যখন আমরা সবাই পূর্ব বাংলায় রাজনৈতিক সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তানকে কোন প্রকার উপরন্তু অর্থনৈতিক সাহায্য না পাঠানোর সিদ্ধান্তকে প্রশংসা দিচ্ছি , তখন এটা পরিস্কার যে শুধুমাত্র এই আচরন পাকিস্তান সেনাবাহিনিকে ৭.৫ কোটি বাঙালি মানুষের গনতন্ত্রকে দমন করার উন্মত্ত প্রয়াসকে কিছু মাত্র নিবৃত্ত করছে না ।
অতএব আমারা আপনার নিকট আবেদন করছি , বাঙালি জনগনের উপর পাকিস্তানি গণহত্যা বন্ধের নিমিত্তে উল্লেখিত যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক ।
প্রথমত, নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকৃত কার্যকলাপ “জাতিসংঘ গণহত্যা সমঝোতা অনুচ্ছেদ ২, উপপরিচ্ছেদ (ক), (খ), (গ)” এর আওতায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিসদের নিকট উত্থাপন করে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি ব্রিটেনের প্রতিশ্রুতির প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আমরা অনুরোধ করব।
দ্বিতীয়ত, আপনাদের প্রভাব খাটিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি আমেরিকান সরকারের প্রেরিত অস্ত্র চালান বন্ধ করার জন্য আমরা অনুরোধ করব।
তৃতীয়ত, আমরা অনুরোধ করব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য, যখন এটা পরিস্কার যে , পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারকে সচেতন করার জন্য এটাই একমাত্র শান্তিপূর্ণ এবং কূটনৈতিক পন্থা অবশিষ্ট আছে ।যেভাবে তারা দাবি করে, বাঙালি জনগনকে বশ্যতা স্বীকার করানোর জন্য বর্বর নীতিই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য , তাহলে সেই যুদ্ধে তারা হেরেছে ২৫ই মার্চ ; যেদিন তারা সেটা শুরু করেছিল। ৭০০০০হাজার সেনাবাহিনী ৭৫ মিলিয়ন মানুষকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত ধরে রাখার আশা করতে পারে না। একটি স্বাধীন বাংলাদেশ নিছক সময়ের ব্যাপার। এটাই বাস্তবতা এবং আরো জীবন অংশ হারানোর আগেএটাকে স্বীকৃতি দেয়া পর্যবেক্ষক দেশের উপর নির্ভর করে । অন্যথায়, এ ধারণাই সমর্থন করা হবে যে, আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতি কেবল বন্দুকের নল থেকেই আসে ।
শুধুমাত্র ব্রিটেনে অবস্থিত ১০০,০০০ বাঙালি যাদের পরিবার এবং বন্ধু অত্যাচারিত ও হত্যা হয়েছে তাদের কথা মনে রেখে নয়, উপরন্ত প্রত্যেক মানুষের নামে আমরা এসব বিষয়গুলো উত্থাপন করছি, কারন যদি এই গণহত্যানীতি বাধাহীনভাবে চলতে দেয়া হয় তাহলে আমরা যে পৃথিবীতে বাস করছি তার ধরন পরিবর্তন করবে।
সর্বশেষে জনাব হিথ আমরা আপনার নিকট প্রার্থনা করব এই বিষয়গুলো করার জন্য কারন যেহেতু এটা ব্রিটেন ছিল যে প্রায় ২৩ বছর আগে পাকিস্তান গঠনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা রেখেছিল তাই ভারতীয় উপমহাদেশের এই ব্যাপারে ব্রিটেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করে। যদি আমরা এই প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে বিফল হই, যদি ভারত তার মুখোমুখি বিশাল সমস্যা সমাধানে যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়, তাহলে ব্রিটেনকে এর দোষের ভাগীদার হতে হবে।
যখন দূরবর্তী খণ্ডনে অনুমোদনে কোন সরকারের অনিহাকে আমরা তারিফ করি , তখন আমরা আশা করি আপনি সম্মতি জানাবেন যে, যদি মানুষের উপর এই শারীরিক উচ্ছেদ এবং নির্যাতনে সায় দেয়া হয়, তাহলে যেসব মানুষ তাদের সাথে বসবাস করে তাদের পরিস্কারভাবে প্রকাশ করা ইচ্ছায় স্বেচ্ছাচারী সীমানার বাস্তবসম্মত পুনর্বিন্যাসের সাড়া দেয়ার অপেক্ষা আমাদের গ্রহ আরো অধিক বিপদগ্রস্ত হবে।
আপনার অনুগত,
কমনসভায় ২০০ এর বেশী সংসদ সদস্য এই প্রস্তাবে স্বাক্ষর দিয়েছেন। তারা যোগ করেন এগারোজন মন্ত্রণাপরিষদের সদস্য এবং তিরিশজন সাবেক মন্ত্রিকে।
পূর্ববাংলায় গণহত্যা
এবং
বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান
“এই ভবন বিশ্বাস করে যে পূর্ববাংলায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকর্তৃক বিশাল আকারে বেসামরিক মানুষের ব্যাপক গণহত্যা এবং নৃশংসতা যা পাকিস্তান কর্তৃক স্বাক্ষরিত গনহত্যার উপর জাতিসংঘের রীতির বিপরীত, ডিসেম্বর ১৯৭০ এর নির্বাচনে জনগনের গনতান্ত্রিক ইচ্ছার প্রকাশকে গ্রহণ করতে কাণ্ডজ্ঞানহীন অস্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে নিশ্চিত করা যায় যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সরকার পূর্ববাংলায় শাসন করার সম্পূর্ণ অধিকার খুইয়েছে ।
অতএব, আস্থা রাখা যায় যে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই অবস্থাকে আন্তর্জাতিক শান্তি এবং জেনোসাইড কনভেনশন উভয়ের জন্য একটি হুমকি তা জরুরিভাবে বিবেচনা করার জন্য আহ্বান করবে, এবং আরো বিশ্বাস করা যায় যে এই আদেশ পুনঃস্থাপন করা পর্যন্ত জাতিসংঘ পর্যবেক্ষক বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকারকে পূর্ববাংলার জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণ প্রকাশের চালিকাশক্তি হিসেবে অনুমোদন দিবে।“
আমি সংযুক্ত করেছি ব্রিটিশ পাউন্ড বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে দূরবর্তী কাজের জন্য।

প্রাপক,
এ্যাকশন বাংলাদেশ
৩৪ স্ট্রেটফোর্ড ভিলাস,
লন্ডন, এন। ডব্লিও। ১
যোগাযোগ- ৪৮৫ ২৮৮৯ এবং ২৬৭ ৪২০০

সম্মিলিত বাংলা সঙ্গীতঃ
“বাঁধ ভেংগে দাও।”
বাংলা অনুলিপি

বাঁধ ভেংগে দাও। বাঁধ ভেংগে দাও। বাঁধ ভেংগে দাও।
ভাং………………………………… গো (দু’বার)
বন্দী প্রাণ মন হউক উধাও। বন্দী প্রাণ মন হউক উধাও।
ধা ……………………………………… ও (একবার)

রোমান অনুলিপিতে অনুবাদঃ

BADH BHENGE DAO, BADH BHENGE DAO, BADH BHENGE DAO
BHAN— — — — — — — — — NGO (twice)
DHA— — — — — — — — — — — — O (once)

ইংরেজী অনুবাদঃ
Break the barrier, Break the barrier, Break the barrier, Break.
Let the imprisoned soul fly away

“এরপর আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়,
তোমাদের কাছ আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা যখন
রক্ত দিয়েছি তখন আরও দেব- এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ ।
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।

জয় বাংলা”।
-শেখ মুজিব।

<৪,২৭০,৬২৪>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭০। বৃটেনে পাকিস্তান হাই কমিশনের বাঙ্গালী কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদের বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপনোপলক্ষে আয়োজিত সভার বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেনের দলিলপত্র ৩ আগস্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
৩৪ গ্যামেজ বিল্ডিং
১২০ হই বর্ন, লন্ডন ইসিআই
ফোন ০১-৪০৫৫৯১৭

রেফ. তারিখঃ- ৩-৮-৭১
প্রিয় বন্ধু,
ইউকেতে পাকিস্তান হাইকমিশনের বাঙ্গালী কূটনীতিক জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ, যিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নিজের বশ্যতা ও আনুগত্য প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারকে নিজের সাধ্যমতো সেবা করার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন, তার সম্মানে আয়োজিত সভা উপলক্ষ্যে এই প্রতিকূলতার মধ্যেও আপনাদের আমন্ত্রণ জানাতে আমরা আনন্দ অনুভব করছি। এই সভা ৮ই আগস্ট রোজ রবিবার বেলা ২:০০ ঘটিকায় কনওয়ে হল, ২৫ রেড লায়ন স্কয়ার, হলবর্ন, লন্ডনে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি বিচারপতি এ.এস. চৌধুরী উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে এর শোভা বর্ধন করবেন। তার সাহসী কাজের প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে আমরা আপনাদের দুইজন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
এ.জেড.এম. হোসেইন
<৪,২৭১,৬২৫>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭১। ট্রাফালগা স্কোয়ারে প্রদত্ত ১লা আগস্টের ভাষণ সম্বলিত পুস্তিকা প্রকাশের ব্যাপারে আবু সাইদ চৌধূরীকে লিখিত চিঠি বাংলাদেশ গণ সংস্কৃতি সংসদের দলিল পত্র ৪ আগস্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ গণ সংস্কৃতি সংসদ
৫৯, সায়েমৌর হাউজ
টেভিস্টক প্লেস
লন্ডন ডব্লিউসিটি
ফোন ৮৩৭-৪৫৪২
৪ আগস্ট, ১৯৭১
বিচারপতি এ.এস. চৌধুরী
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত
১১, গোরিং স্ট্রীট, লন্ডন, বিসি ৩।

শ্রদ্ধেয় স্যার,

আপনার সাথে আমার আলোচনার প্রেক্ষিতে ট্রাফালগা স্কোয়ারে ১লা আগস্ট দেয়া আপনার ভাষণ মুদ্রণ ও প্রচার করার জন্যে আপনার অফিসকে নির্দেশ দিতে আমি অনুরোধ করব। আমি অনুভব করছি যে এটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মতামত ছড়িয়ে দিতে খুবই কার্যকর উপায়ে সাহায্য করবে কারণ এতে আছে পরিস্থিতির সবচেয়ে সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দেশ্যের ব্যাখ্যা। সম্ভবত ভাষণটি সংগ্রাম বাংলাদেশের পল কনেটের কাছে থাকতে পারে(তার টেপ রেকর্ডারে)।

আপনাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।

বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে।

বিনীত
এনামুল হক
সভাপতি
বাংলাদেশ গণ সংস্কৃতি সংসদ
<৪,২৭২,৬২৬>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭২। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের বিরুদ্ধে বৃটেনের পত্রপত্রিকায় প্রতিবাদ প্রকাশনার আহবান বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৩ আগস্ট, ১৯৭১

বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
৩৪ গ্যামেজ বিল্ডিং
১২০ হই বর্ন, লন্ডন ইসিআই
ফোন ০১-৪০৫৫৯১৭
সভাপতি/সম্পাদক/আহবায়ক

তারিখঃ ১২-০৮-১৯৭১

প্রিয় স্যার/ম্যাডাম,

আপনি জানেন যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে অবৈধভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকে রাখা হয়েছে। ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা ষড়যন্ত্র করছে তাকে শেষ করে দেয়ার ও প্রচ্ছদ কাহিনী বানানোর যে তাকে ক্যামেরার সামনে সামরিক ট্রাইব্যুনাকে বিচার করা হবে।

জনগণকে মৌখিক ও লিখিতভাবে এই বিচারের ফলাফল সম্পর্কে আমাদের সতর্ক করতে হবে।

আমাদের রাষ্ট্রপতির মুক্তির চেষ্টা করতে ও মুক্তি নিশ্চিত করতে বিশ্বের কাছে আমাদের আবেদন করতে হবে।

এই চিন্তা মাথায় রেখে আমরা টাইমস’এর ১৬ আগস্ট, ১৯৭১ এর সংখ্যার একটি পূর্ণ পৃষ্ঠা বিজ্ঞপ্তি প্রদর্শন সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করেছি।

এই দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের সকল সদস্যের নাম ও ঠিকানা উক্ত বিজ্ঞপ্তিতে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করছি আমরা। আমরা আরও প্রস্তাব করছি যে সকল সংগ্রাম পরিষদের একসাথে ২৬০০.০০(দুই হাজার ছয়শ পাউন্ড)খরচ বহন করতে হবে।

সম্প্রতি টাইমসে প্রকাশিত তথাকথিত পাকিস্তান সংহতি সংঘের বিজ্ঞাপনের একটা পাল্টা জবাব দেবে এই প্রস্তাবিত বিজ্ঞাপনটি।

আমরা আরও প্রস্তাব করেছি যে ব্যয় বহনের জন্যে প্রত্যেক কমিটিকে ন্যূনতম £৩০(ত্রিশ পাউন্ড মাত্র) চাঁদা দিতে হবে।যদি আপনার কমিটি উপরোক্ত প্রস্তাবসমূহে রাজী থাকে তবে অবশ্যই এখুনি ফোন করে নিশ্চিত করুন (অফিস ০১-৪০৫-৫৯১৭, সন্ধ্যা ০১-৬৭৩-৫৭২০) ও যত শীঘ্র আপনার পক্ষে সম্ভব হয় চাঁদা বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে পাঠিয়ে দিন।

আমরা বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ দূত বিচারপতি জনাব আবু সায়িদ চৌধুরীর সাথে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছি।
জয় বাংলা

এ জেড এম হোসাইন
আহবায়ক

<৪,২৭৩,৬২৭>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৩। দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড অঞ্চলের পক্ষে কনভেনশনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রতিক্রিয়া সম্বলিত একটি চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিল পত্র ২২ আগস্ট, ১৯৭১

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্যে সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
এনফিল্ড শাখা
৩৭০, লিংকন রোড, এনফিল্ড, মিডলসেক্স
২২ আগস্ট, ১৯৭১
আহবায়ক
পরিচালনা কমিটি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্যে সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
১১, গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন, ই.সি.৩

প্রিয় স্যার,

লন্ডন সংগ্রাম কমিটি শাখার সভাপতি জনাব গউস খান দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড অঞ্চলের সংগ্রাম পরিষদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার খবরে আমরা অবাক হয়েছি। যেহেতু তিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হননি উপরন্তু এই অঞ্চলের সিংহভাগ সংগ্রাম পরিষদ শাখা যারা বাংলাদেশের জন্যে তহবিল বৃদ্ধি(আমাদের সংগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান) করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছে তাদের প্রতিনিধিত্ব করেন না, তাই অধিকাংশের মতো আমরাও তার ছায়াতলে যেতে চাই না।

সুতরাং, সিংহভাগের মতো আমরাও কেন্দ্রীয় সংগ্রাম পরিষদে গণতান্ত্রিক ও ন্যায়সঙ্গতভাবে সরাসরি নিজেদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই, যাতে সত্যিকার অর্থেই আমাদের জাতির চিত্র প্রতিফলিত হবে যা নির্ভীকভাবে আমাদের সংগ্রাম এগিয়ে নিয়ে যাবে।

বিনীত
মোঃ শহীদুর রহমান খান
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্যে সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
এনফিল্ড শাখা

অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৪। লন্ডনস্থ মুকুল এন্টারপ্রাইজের উদ্যোগে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘জয় বাংলা’র প্রচারপত্র প্রচারপত্র ২৮ আগস্ট, ১৯৭১
<৪,২৭৪,৬২৮>
মুকুল এন্টারপ্রাইজ নিবেদিত

জয় বাংলা(বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ)
বিশিষ্ট শিল্পীরা অনুষ্ঠানটিতে নাচে, গানে, সুরে অংশগ্রহণ করবে।
স্থানঃ-ইয়র্ক হল, বেথনাল গ্রীন, লন্ডন ই.২.
বেথনাম গ্রীন সেন্ট্রাল লাইন নিকটবর্তী টিউব স্টেশন
তারিখ-২৮শে আগস্ট ১৯৭১, শনিবার
সময়-বেলা ৩.০০ ঘটিকা(বেলা ২.৩০ এ দরজা খুলবে)
আমন্ত্রিত সম্মানিত অতিথিবৃন্দঃ
বিচারপতি এ.এস. চৌধুরী
পিটার শোর(এমপি)
অব. মাননীয় বি.জে. স্টোন হাইজ(এমপি)
ব্রুস ডগলাস মান(এমপি)
পল কনেট
লেডি গিফোর্ড ও অন্যান্যরা
হতাশ না হতে চাইলে তাড়াতাড়ি টিকেট কাটুন।

অফিসঃ
৬৭, ব্রিক লেন
লন্ডন, ই.১.
০১-২৪৭০৯৬৮
<৪,২৭৫,৬২৯>
অনুবাদকঃ আফসানা আহমেদ রিয়া
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৫। লন্ডনে আয়োজিত বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কর্মী সম্মেলনের বিজ্ঞপ্তি বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সমিতি
৫৯, সেমোর হাউজ
তাভিস্তক প্লেস,
লন্ডন, ডব্লিও সি আই
ফোনঃ ৮৩৭-৪৫৪২ ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশী সাংস্কৃতিক সম্মেলন
প্রিয় বন্ধুগণ,
১৯৭১এর ১৮ সেপ্টেম্বর, শনিবার বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সমিতির তত্ত্বাবধানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশের জনগনের সংস্কৃতির উপর প্রথমবারের মত একটি সম্মেলন আহবান করা হয়েছে।(পূর্ব নির্ধারিত সূত্রঅনুযায়ী যা ২১ আগষ্ট অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল)প্রতিনিধি ও অংশগ্রহনকারী হিসেবে লেখক, কবি, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, গায়ক, সুরকার, শিক্ষক, ছাত্র, বিজ্ঞানী ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে জড়িতদের এতে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে ।বাংলাদেশের জনগনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সমর্থন অর্জনের উপায় অনুসন্ধান করতে, আমাদের জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতিকে উদ্বুদ্ধ করতে, বিশ্ব মতামতকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনিবার্যতা সম্পর্কে প্রভাবিত করতে, এবং বিশেষ করে বাংলাদেশে বিরাজমান নোংরা স্বৈরতন্ত্র ও উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলনের পক্ষেবিশ্বের প্রগতিশীল এবং স্বাধীনতাকামী বুদ্ধিজীবিদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করতে এ সম্মেলন স্বপ্রনোদিত আলোড়ন সৃষ্টি করবে ।
১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এর মধ্যেযুক্তরাজ্যের সব নগর ও অঞ্চলহতে বৃহৎ সংখ্যক প্রতিনিধি সম্মেলনে মনোনয়ন করতে আমরা বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি এবং এর এসোসিয়েশনকে অনুরোধ করছি ।
এ সকল প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় স্বাধীনতা পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবংগনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত এ.আর মল্লিক এবং বাংলাদেশের প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্র পরিচালক জহির রায়হানকে সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রন জানানো হয়েছে, তারা সম্মেলন উদ্বোধন করতে সম্মত হয়েছিল ।
নিন্মলিখিত পরীক্ষামূলক প্রোগ্রাম
তারিখ: ১৯ সেপ্টেম্বার, রবিবার, ১৯৭১
স্থান: কনওয়ে হল, রেড লায়ন স্কয়ার, লন্ডন, ডব্লিও সি আই (টিউবঃ হলবর্ণ)
উদ্বোধন ও আলোচনা সভা: সকাল ১০ টা হইতে দুপুর ১ টা ,
বিপ্লবী নৃত্যনাট্য ও সংগীত সন্ধ্যা : বিকেল ২.৩০ হইতে সন্ধ্যা ৫ টা,
আশা করি আপনারা প্রতিনিধি পাঠাতে সক্ষম হবেন, এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের নাম পাঠালে কৃতজ্ঞ থাকিব ।
জয় বাংলা
দয়া করে প্রতিনিধিখরচ বাবদ ১.০০ পাউন্ড সম্মেলন ফি উপরোক্ত ঠিকানায় পাঠাইবেন ।
আপনার বিশ্বস্ত
মুন্নি রহমান
জেনারেল সেক্রেটারি
প্রত্যেক প্রতিনিধির জন্য অন্তত ১ পাউন্ড করে উপরোক্ত ঠিকানায় পাঠানোর অনুরোধ করছি
<৪,২৭৬,৬৩১-৬৩২>
অনুবাদকঃ সজীব কুমার সাহা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৬। বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশ গণ সংস্কৃতি সংসদ
৫৯, শেয়মোর হাউজ
তাভিস্তক প্লেস,
লন্ডন , ডব্লিউ সি আই
ফোন নম্বর – ৮৩৭ – ৪৫৪২ ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

কর্মসূচিঃ
প্রচারণাঃ
১। জনমত গঠন
২। বাংলাদেশ
৩। প্রচারপত্র ( লিফলেট ) বিলি
ক। লা কন্টিনেন্টাল সিনেমা হল
খ । লাপ্যালেসিয়াম
গ। ব্রিক লেন
ঘ। হ্যাসেল স্ট্রিট
ঙ। কমার্সিয়াল রোড
চ। হলওয়ে রোড , বাকু শপ
ছ । ……………
জ। ……………
ঝ। ………………
ঞ।………………
মহড়াঃ
১। শুক্রবার , সেপ্টেম্বর ১০ ,মারডেল স্ট্রিটে পুরুষ নৃত্য।
২। শনিবার , সেপ্টেম্বর ১১ , পূর্ণ মহড়া , সকল গায়ক , গায়িকা নৃত্যশিল্পী দের অবহিতকরন।
৩। রবিবার , বাংলাদেশ ভবনে

মাইক
১। ল্যাংলি স্ট্রিটে অবস্থিত লাইটফুট স্টেজ সাউন্ড কে ১৫ পাউন্ডের একটি চেক পাঠান , রবিবার ১২ই সেপ্টেম্বর।
২। হলরুমের তত্ত্বাবধায়কের সাথে যোগাযোগ করতে হবে , যদি তিনি ব্যাবস্থা করতে পারেন তাহলে তার প্রাপ্য অর্থ তাকে দিয়ে দেয়া।
৩। অনুষ্ঠান বর্ননা বিন্যাস এর জন্য জনাব খয়েররের পুত্রের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
মঞ্চ
১। নকশার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বুলবুল এবং রউফের উপর অর্পন করা হোক।
২। কৃত্রিম গাছপালা ও বাশের খুটি দিয়ে মঞ্চ প্রস্তুত করতে হবে।
আলোকসজ্জাঃ
১। দুইজন ব্যাক্তি দায়িত্বে থাকবে। আমি বারান্দায় থাকব, আর একজন থাকবে সুইচ প্যানেলের দায়িত্বে।
২। আলোক সজ্জা যন্ত্রের ( লাইটিং ইফেক্ট মেশিনের ) সাথে থাকবে আরেকজন।
৩। অবিলম্বে হলরক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে জানতে হবে তার কি দরকার। আর তাকে হলরুমের শাটার বন্ধ করতে হবে যাতে দিনের আলো নিয়ন্ত্রন করা যায়। আর তার প্রাপ্য অর্থ তাকে দিয়ে দেয়া হোক।

<৪,২৭৭,৬৩৩>
অনুবাদকঃ জেসিকা গুলশান তোড়া
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৭। লন্ডনে ১৮ ও ১৯ সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদ আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রচারপত্র
বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র
১৩সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের বিপ্লবী আলেখ্য
অস্ত্র হাতে তুলে নাও
(নৃত্যনাট্য)
ও গীতিবিচিত্রা
উদ্বোধন করবেনঃ
জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী
বক্তৃতা করবেনঃ (সদ্য বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাগত)
মিঃ পিটার শোর, এমপি
(চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। বিশেষ আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকে আসছেন)
স্থানঃ কনওয়েহল, রেড লায়ন স্কোরার, হোবর্ন।
সময়ঃ শনিবার ও রবিবার
১৮ ও ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১, বেলাঃ২-১৫মিনিটে।
প্রবেশমূল্যঃ ১ পাউন্ড মাত্র।
অবিলম্বে টিকিট সংগ্রহ করুন অথবা যোগাযোগ করুনঃ
বাংলাদেশগণ-সংস্কৃতিসংসদ
৫৯ সিমোরহাউস
ট্যাভিস্টকপ্লেস, ডব্লিউসি-১
ফোনঃ৮৩৭-৪৫৪২

<৪,২৭৮,৬৩৪>
অনুবাদকঃ আল-জাবির মোহাম্মদ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৮। জাতিসংঘে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব করার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক যাত্রার বার্তাসহ বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরির প্রতি মুজিবনগর থেকে প্রেরিত টেলিগ্রাম এ্যাকশন কমিটির দলিল পত্র ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

টিএস ১৫/১০১ ইন বি০১০৪ ওয়াইআর ০৪৩৬ এক্স
সিকেএ২৪২ সিএস৩১৩/০ জিবিএল০বি বিইউ ইনসিএ ০২৩
কলকাতা ২৩ ২০ ১৯৪০
জরুরী বাংলাদেশ লন্ডন ২ডাব্লিউ
যেহেতু জাস্টিস আবু সাঈদ চৌধুরি পররাষ্ট্র মন্ত্রি আসতে পারবেন না, দয়া কয়ে নিউইয়র্কে প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিতে চলে যান
– আলম

<৪,২৭৯,৬৩৫>
অনুবাদকঃ জেসিকা গুলশান তোড়া
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৭৯। মুক্তিযুদ্ধের ছয়মাস উপলক্ষে লন্ডনের সাপ্তাহিক ‘জনমত’ এর আবেদন
সাপ্তাহিক ‘জনমত’ এর বিজ্ঞাপন
২০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

সাপ্তাহিক জনমত
৩০৩ বিক্সটন রোড, লন্ডন দক্ষিণ-পশ্চিম ৯. ফোন ০১-৬৭৩৫৭২০
শ্রদ্ধেয় আহবাহক। সম্পাদক। স্বত্বধিকারী
…………………………….
…………………………….
আমরা আনন্দের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, আগামী ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে ‘সাপ্তাহিক জনমত’ এর ৩৩তম সংখ্যা বর্ধিত করে বিশেষ সংখ্যা হিসাবে প্রকাশিত হবে। এই বিশেষ সংখ্যায় বাংলাদেশ ও ভারত থেকে পাঠান ছাড়াও প্রবাসী বাঙ্গালীদের পাঠানো গল্প, প্রবন্ধ, রচনা, কবিতা ইত্যাদি প্রকাশিত হবে। বাংলাদেশের প্রখ্যাত নেতাদের এ উপলক্ষে পাঠানো বিশেষ বাণীও প্রকাশিত হবে।
এই প্রসঙ্গ আমরা উল্লেখ করতে চাই যে, ‘জনমত’ এর আর্থিক সংকটের কথা আপনাদের অজানা নয়। আমরা বিশ্বাস করি যে, মুক্তিসংগ্রামের সঙ্গে প্রচারের মাধ্যম অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। তাই আমাদের পরিকল্পনা থাকলেও আর্থিক সংকট আমাদেরকে যথেষ্ট দমিয়ে দেয়।
তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ, আলোচ্য সংখ্যার ‘জনমত’ এ আপনারা বিজ্ঞাপন আকারে পৃষ্ঠাংশ নিয়ে আমাদেরকে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা জানাতে পারেন। শুধু তাই না, বিজ্ঞাপনে আপনাদের কার্যাবলীর একটা ক্ষুদ্র বিবরণ জনসমক্ষে তুলে ধরতে পারেন অথবা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাতে পারেন।
আমাদের বিজ্ঞাপনের হারঃ পূর্ণ পৃষ্ঠা ৪০ পাউন্ড। আধ পৃষ্ঠা ২০ পাউন্ড। এক-চতুর্থাংশ পৃষ্ঠাঃ ১০ পাউন্ড মাত্র।
আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বিলেতের বেশ কয়েকটি সংগ্রাম পরিষদ ইতিমধ্যেই আমাদের এই বিশেষ সংখ্যার প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানিয়ে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন। আশা করি আপনাদের সহযোগিতা পাব।
ইতি
সাপ্তাহিক জনমত
বিজ্ঞাপনের জন্য নীচের কুপনটি পূরণ করে আজই পাঠিয়ে দিনঃ
বিজ্ঞাপনের বিভাগে, সাপ্তাহিক জনমত, বিক্সটন রোড, লন্ডন, দক্ষিণ-পশ্চিম ৯
এই সঙ্গে পাঠান লেখাগুলো দিয়ে আমাদের পূর্ণ এক পৃষ্ঠা। আধ পৃষ্ঠা। এক-চতুর্থাংশ পৃষ্ঠা বিজ্ঞাপনের বিশেষ সংখ্যায় ছাপাবেন। এর সঙ্গে ৪০ পাউন্ড। ২০ পাউন্ড। ১০ পাউন্ড এর চেক। পোস্টাল অর্ডার পাঠালাম।
নাম…………………………..
ঠিকানা…………………….
ফোন…………….. স্বাক্ষর………………….
আপনারা চাইলে আপনার বিজ্ঞাপনে কি লিখতে হবে আমরা এ ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি।
………………………………………
<৪,২৮০,৬৩৬-৬৩৭>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮০। ব্রিটেনের এনফিল্ড এ্যাকশন কমিটির পক্ষে চাঁদা আদায়ের রশিদ বই সংক্রান্ত অভিযোগসহ বাংলাদেশ ফান্ডের ট্রাস্টি জন স্টোনহাউস এমপি-কে লিখিত চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র।
২৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি
২৩৯, নাগস হেড রোড
পনডারস এন্ড. এনফিল্ড
৭. ৯. ৭১

জনাব জন স্টোনহাউস, এম. পি.
হাউস অব কমন্স,
ওয়েস্টমিনস্টার, লন্ডন, এস. ডাব্লিউ. আই.

জনাব,
আমরা নিম্ন স্বাক্ষরিত ব্যক্তিরা আপনার সহৃদয় পর্যবেক্ষণের জন্য, নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আপনার নজরে আনতে ইচ্ছুক।

৮ ই আগস্ট, ১৯৭১ রবিবার আমাদের ১৯৫, নাগস রোড, এনফিল্ড, মিডলসেক্সে দেখা হয়েছিল এবং সর্বসম্মতিক্রমে এই সমস্যাগুলো সমাধানকল্পে “বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি -এনফিল্ড” নামে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় একটি সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনার প্রত্যয়ে। এটি স্থির প্রতিজ্ঞ হয়েছিল যে জনাব আব্দুল করিম (২৩৯, নাগস হেড রোড, এনফিল্ড) এর আহ্বায়ককে জনগণ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষার সকল দায়িত্ব দেয়া হবে।

তদানুসারে, আহ্বায়ক যুক্ত থাকে ব্রিটেনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের জন্য কার্যকমিটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যদের সাথে বাংলাদেশ ফান্ডের সংগ্রহের রশিদ বইয়ের জন্য যেখানে তুমি একজন ট্রাস্টি। রশিদ বই নং ৯৯০১৯৯১ এবং ৯৯২ হতে ক্রমিক নং ২৪৭২৬-২৪৭৬৫২২৪৭৭৬-২৪৮০০ ইস্যুকৃত হয়েছিল ১৬.৮.৭১ তারিখে। সংগ্রহ সহজভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল। ২৩ শে আগস্ট ৩০৮ ডলারের একটি সংগ্রহ স্টিয়ারিং কমিটিতে জমা হয়েছিল যা স্টিয়ারিং কমিটির পক্ষ থেকে জনাব এম. এম. হকের দ্বারা স্বীকৃত হয়েছিল।

আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিলাম রশিদ বই সংক্রান্ত পরবর্তী ইস্যু নিয়ে, কিন্তু সব ভেস্তে এখন আমরা বলছি যে রশিদ বই আর ইস্যু হবে না। আমরা জোর করেছিলাম যে স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত লিখিত ভাবে নিশ্চিত হবে, কিন্তু কোন সাফল্য ছাড়া।

আমরা সংযুক্ত থাকতে চেয়েছিলাম আবু সাইদ চৌধুরীর ন্যায়পরায়ণতার সাথে কিন্তু স্টিয়ারিং কমিটি একটি প্রতিবন্ধকতা যা ছাপিয়ে উঠা কঠিন।

আমরা আপনাকে প্ররোচনা দিতে চাই একজন ট্রাস্টি হিসেবে প্রয়োজনীয় কাজ করার জন্য যাতে আমরা রশিদ বই সহ প্রেরিত হই যাতে আমরা বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য সংগ্রহ চালিয়ে যেতে পারি। অধীনে উল্লেখিত সদস্যরা
বাংলাদেশ ফান্ডে অবদান রাখতে আগ্রহী হয়েছেন এবং যেকোন কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতার ইতি টানা উচিৎ, বাংলাদেশ ফান্ডে অর্থ প্রবাহ রোধে দায়ী যেকোন নকশা পরাভূত করার জন্য।

আমরা কৃতজ্ঞ হব যদি আপনি সকল যোগাযোগের জন্য আমাদের আহ্বায়ককে ডাকতে সদয় হন।

আপনার বিশ্বস্ত
লুৎফুর রহমান

————

২০ গিলিংহাম স্ট্রিট
লন্ডন এস. ডাব্লিউ. আই
৭ অক্টোবর ১৯৭১
আরটি. হন
জন স্টোনহাউস
B Sc ( B con) এম পি
ফোন :০১ ৮৩৪ ০৯২২

জনাব আজিজ,
আমি খুব খুশি হব যদি আপনি এনফিল্ডের বাংলাদেশ কমিটি থেকে আগত চিঠিতে উত্থাপিত সমস্যাতে নজর দেন।
বিনীত
sd/-

জনাব এম. এ. এইচ. ভূঁইয়া
বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন ই. সি. ৩
Enc1

<৪,২৮১,৬৩৮>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম সূত্রঃ তারিখ
২৮১। ম্যানচেস্টারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ জানিয়ে বাঙ্গলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সংসদের প্রতি চিঠি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন ল্যাংকাশায়ারের দলিলপত্র ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

এ. মতিন
চেয়ারম্যান,
লাতিফ আহমেদ
সাধারণ সম্পাদক
৩৩৬, স্টোকপোর্ট রোড,
ম্যাঞ্চেস্টার ১৩.
ফোন :০৬১ -২৭৩ ৩৪২২
তারিখ : ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

মিসেস, এম. রাহমান
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ গণ -সংস্কৃতি সংসদ
৫৯ সেমুর হাউস
লন্ডন ডাব্লিউ. সি. আই

জনাবা,
আমাদের নির্বাহী কমিটির মত অনুসারে আমি অত্যন্ত আনন্দিত আপনার সংস্থাকে ১৬ অক্টোবর, ৭১ তারিখে ফ্রি ট্রেড, ম্যাঞ্চেস্টারে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আমন্ত্রণ জানাতে পেরে।

অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল খরচ আমরা বহন করব। এবং টিকিট বিক্রিতে অর্জিত অর্থের অর্ধেক বাংলাদেশ গণ-সাংস্কৃতিক সংসদের তহবিলে জমা দিতে হবে।

আমরা আশা করব, আপনি আমাদের আমন্ত্রণ গ্রহণ করবেন এবং আমরা কৃতজ্ঞ হব যদি আপনি আমাদের অতি শীঘ্রই নিশ্চিত করেন।

বিনীত
জহিরুল এইচ. চৌধুরী
সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে

অনুরুপ নকল :
বাংলাদেশ গণ -সাংস্কৃতিক সংসদের প্রেসিডেন্ট

<৪,২৮২,৬৩৯>
অনুবাদকঃ সজীব কুমার সাহা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮২। মৌলভীবাজার এ্যাসোসিয়েশন নাম দিয়ে কতিপয় ব্যাক্তির ক্ষতিকর কার্যকলাপের প্রতিবাদ জানিয়ে বৃটেন প্রবাসী মৌলভীবাজারের অধিবাসীদের চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র ১,অক্টোবর,১৯৭১

কার্য সম্পাদন কমিটির প্রতিনিধি সমিতি
১১ গরিঙ্গ স্ট্রিট,
লন্ডন ইসি৩

জনাব,
আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী ব্যাক্তি যারা বাংলাদেশের সিলেট জেলার মৌলভীবাজার মহকুমা থেকে এসেছি এবং বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত। আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই যে, আমাদের এলাকার কয়েকজন স্ব-ঘোষিত যারা বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানরত , কিছু দূর্ভিসন্ধী নিয়ে “মৌলভীবাজার এ্যাসোসিয়েশন “ নামক একটি সংগঠন যুক্তরাজ্যে স্থাপন করেছে মৌলভীবাজারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। আশা করছি বুঝতে পেরেছেন “মৌলভীবাজার এ্যাসোসিয়েশন” কয়েক মাস পূর্বে ভারতবর্ষের আশ্রিতদের সাহায্য করার জন্য কিছু টাকা প্রেরণ করেন এবং তা এই দেশ সহ ভারতবর্ষে বিপুল প্রচার করা হয়। এই ধরণের স্বস্তা প্রচার যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বাংগালীদের অনুভূতির ভয়াভহ ক্ষতি করেছে এবং আমরা বুঝতে পারি মৌলভীবাজারের মানুষদের কর্মকান্ড বাংগালী সহকর্মীদের মনে সংশয় এবং ভুল ধারণার সৃষ্টি করেছে।
পক্ষান্তরে আমরা বিশ্বাস করি যে, উপরে উল্লেখিত প্রচার ,শান্ত মৌলভীবাজারের নামে বর্বর ইয়াহিয়ার শাষকগুষ্ঠীর কাছে পৌছাবে । ফলশ্রুতিতে , তারা মৌলভিবাজারকে বেছে নিয়ে প্রচন্ডভাবে বোমা বর্ষণ করবে এবং আমাদের ভাই-বোনদের নির্বিচারে হত্যা করবে।
এই ধরণের সংকীর্ণতা প্রকৃতপক্ষে অনুশোচনীয়, আমরা আশংকা করছি , যে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মনে আবারও ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি করবে এবং যুক্তরাজ্যে বসবাসরত মৌলভীবাজারের মানুষদের নিরুৎসাহিত করবে আমাদের কার্যক্রমে।
আশা করছি আপনার কোন সংশয় নেই এই ব্যাপারে আশুদৃষ্টি দিতে এবং দেখবেন যে কোন সংকীর্ণ স্লোগান যেন না হয়।
আপনার বিশ্বস্ত
(৫৬ জনের স্বাক্ষর)
তারিখ; লন্ডন, ১লা ডিসেম্বর,১৯৭১
<৪,২৮৩,৬৪০-৬৪৩>
অনুবাদকঃ পুজা পলি
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৩। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন এবং “বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ডে” চাঁদা প্রদানের জন্য ছাত্র সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে বৃটেনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উদ্দেশ্যে লিখিত চিঠি ইউনাইটেড এ্যাকশন, বাংলাদেশের দলিলপত্র ১২ অক্টোবর,১৯৭১
লক্ষাধিক শিশুহত্যা কি অব্যশই করণীয়?
রোড টু বাংলাদেশ
মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১২ অক্টোবর,১৯৭১
একটি আবেদন
জনাব,
১.পূর্ববাংলায় সমরিক আক্রমণে প্রতিনিয়ত লক্ষাধিক নিরীহ মানুষ, নারী,শিশু হত্যা করা হচ্ছে। চারিদিকে ধিক্কারে সরব হয়েছে । যেন হিটলারের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছে সমগ্রবিশ্ববাসী এবং তার স্বাক্ষী হচ্ছে।এসব নিপীড়িত মানুষের প্রতি তাদের সাহায্যদান খুবই ক্ষীণ তবুও তারা তাদের জন্য গাইছেন এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পাশে দাড়িয়েছেন।এমন বিরূপ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহাবস্থান তুলোনায় সাহায্যের পরিমাণ অপরিমিত ছিলো।এটা প্রায় নব্বই লক্ষ জনসংখ্যার বিপরীতে(সুইডেন-নিউজিল্যান্ডের সমন্বিত জনসংখ্যা এবং লন্ডনে অবস্থিত জনসংখ্যার সমান)যারা যুদ্ধাক্রান্ত হয়ে ভারতের শরণার্থী শিবিরে রয়েছে।এই ভীতিকর অবস্থার শেষ হয়নি,থামেনি পথযাত্রা।সেই মার্চে শুরু হওয়া সামরিক আক্রমণের ফলস্বরূপ এটা এখনো বিদ্যমান।বর্তমানে,প্রতিমাসে ৪০,০০০ হাজার মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করছে।এ নির্মম অবস্থা আতংকজনক এবং অবর্ণনীয়।এপ্রেক্ষিতে আমরা ‘সানডে টাইমস’ এবং ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ দুটি পত্রিকার অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ছবি যুক্ত করছি।এই রিপোর্টটি তাদের প্রতিবেদনকারীরা স্বচক্ষে দেখেছিলেন মার্চে এবং জুন মাসে।বহুল আলোচিত এসব ছবি পশ্চিম বাংলার দুর্দশা, শরণার্থী শিবিরের এবং বাংলাদেশের পথগামী মানুষের একটি নির্ভেজাল প্রতিচ্ছবি তৈরি করে।
২.পূর্ববাংলার অভ্যন্তরীন অবস্থা অধিকতর খারাপ।সামরিক অত্যাচার এখনো চলছে।গ্রামগুলো এখনো পুড়ছে।হাজার হাজার লোক এখনো দেশত্যাগী হচ্ছে।ভিয়েতনাম যুদ্ধের মত এখন বাংলাদেশেও গৃহযুদ্ধের অবতারণা হয়েছে।এই যুদ্ধটা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ভয়াবহ আকার নিয়েছে এবং অনেকখানে অঙ্কুরিত হচ্ছে।গেরিলা আক্রমণের ফলে খাদ্য বিতরণ এবং যোগাযোগব্যবস্থা বিছিন্ন হয়ে পড়েছে।পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পুনরায় সংগঠিত হতে পারে।চরম হুমকি মুখে আছে নারীরা এবং যদি যথাসময়ে উদ্ধারের কার্যক্রম না হয় তবে সেটা সাংঘাতিক আকার ধারণ করবে।মানব ইতিহাসে সেটা ভয়ানক দুর্বিপাক হয়ে উল্লেখ থাকবে।বিশেষজ্ঞরা অনুমান করেছেন,বিশ্বসংস্থাগুলো শীঘ্রই যদি কোন পদক্ষেপ না নেয় তবে ৪ কোটি মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে।
৩.আমরা আপনাদের কাছে আশাবাদী হয়ে লিখছি সেসব নারীদের জন্য দ্রুত কিছু করুন।ব্রিটিশরা দুর্দশাগ্রস্ত লক্ষাধিক মানুষদের জন্য গুরুত্ববহ স্থানে রয়েছে।আমরা বিশ্বাস করি বাংলার এই দুঃসময়ে আপনারা কিছু করার জন্য বিশেষ অবস্থানে আছেন।আমরা নির্দিষ্ট প্রস্তাবনা রাখার আগে আপনাদের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ মতামত এবং ছবি সংযুক্ত করবো যা এই দুরাবস্থার গাম্ভীর্য সম্পর্কে ধারণা দিবে :-
ক) মি. রেগ্ প্রেনটিস্ এম.পি,যিনি সংসদসদস্য ছিলেন এবং প্রতিনিধিরূপে পাকিস্তান এবং ভারত সফর করেছেন বর্তমান সংকটাবস্থা নিয়ে পর্যালোচনার জন্য।১৬জুলাই,১৯৭১ এ নিউ স্টেটমেন্টে তিনি লিখেছেন, “আমরা যখন রাস্তা দিয়ে ড্রাইভ করছিলাম….হাজারাধিক নতুন শরণার্থীকে রাস্তার অপরপাশে যুক্ত হতে দেখেছি,তারা শুধু চলেছে আর চলেছে, মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে, বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা তাদের রান্নার জিনিসপত্র এবং নূন্যতম সম্পত্তি সাথে নিয়ে আসছিল,ছোট বাচ্চারা কয়েক মাসের শিশু কোলে নিয়ে ছিলো,কিছু মানুষ অসহায়ভাবে খাটের মাঝে শুয়ে ছিলো…এবং প্রতিনিয়ত প্রায় দশ লক্ষ মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়ে পৌঁছেছিল।
খ) মাদার তেরেসা,যিনি কুষ্ঠরোগীদের নিয়ে ভারতের একটি গ্রামে মিশনারি প্রতিষ্ঠান করেছেন এবং ইতোমধ্যেই তিনি পোপ শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর তিনি লন্ডন পৌঁছে জানিয়েছেন,
“পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিবেদনসমূহ শরণার্থীদের নিয়ে পুর্ণবিবেচনা করার দিকে দৃষ্টিগোচর নির্দেশ করে।”
যা এটাই প্রকাশ করে পথমানুষের আগমন তখনও থামেনি।
গ) ২৫ সেপ্টেম্বরে পোপ জরুরিভিত্তিতে রোমান ক্যাথলিক ত্রাণ কর্মকতাদের সভা ডাকলেন।এর বিষয়বস্তু ছিলো পূর্ব পাকিস্তানের গৃহযুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকা মানুষের জীবিকার উপর। পোপ-এর আহ্বানের পরপরেই ক্যাথলিক ত্রাণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান, বিশ্বের পরাক্রমশালীরা যদি শীঘ্রই তাদের সাহায্যে এগিয়ে না আসেন তবে কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের নারীরা সর্বনাশা পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।
ঘ) হাভার্ড মেডিকেল স্কুলের লিংকন সি চেন এবং জন ই রোডি লিখেছেন, “অনিতিবিলম্বে সম্মুখে সংকটময় অবস্থা। ১৯৪৩ সালের নারীদের মত একই প্রথা অর্ন্তভুক্তি হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের নারীদের।এই যুদ্ধাহত দেশটির প্রায় ৭৫লক্ষ মানুষ(এখন ৯০লক্ষ)ভারতে আশ্রয় নিয়েছে।যেটা পূর্ব পাকিস্তানের অধিকতর খারাপ অবস্থার কারণে হয়েছে।বর্তমান মূল্য বিশ্বাসযোগ্যভাবে বিচার করা যায় খাদ্যের মজুদাবস্থা থেকে।এ মজুদকৃত খাদ্য শুধুমাত্র ২৫লক্ষের জন্য হবে।কিন্তু সেখানে ভূমিহীন কৃষক,মজুর,বর্গাচাষী,তাঁতী,শ্রমিক এবং গ্রামের গরিব মানুষেরা রয়েছে।কত ক্ষুধার্ত মানুষ মারা যাচ্ছে সেটা এখনো অজানা।
ঙ) মি.পিটার সোর,এমপি প্রাক্তন শ্রমিককল্যাণ মন্ত্রী,যিনি কিছুদিন আগেই ভারত এবং পূর্বপাকিস্তান সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন।৫ সেপ্টেম্বর তিনি ‘সানডে টাইমস্’পত্রিকায় লিখেছেন, “নারীদের অবস্থা যতটুকু দেখছি তা ছিল ভয়ানক।কেউ জানাতে পারছেনা পূর্ববাংলায় কতটুকু খাদ্য ঘাটতি রয়েছে….জরুরী প্রয়োজনীয়তা ভয়াবহতা এড়াতে পারছে না।ভারত পূর্বপাকিস্তানের প্রায় ৮০লক্ষ মানুষের জন্য এগিয়ে এসেছে।তারা ক্ষুধার কারণেশরণার্থী নয়,তারা শরণার্থী হয়েছে নিপীড়ন এবং ভয়ে। যদিওপূর্বপাকিস্তানে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে বিগত কয়েক মাসে,এখনও দলে দলে মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলেছে।
চ) পশ্চিম বাংলার শরনার্থী শিবিরের দুর্দশার কথা বর্ণনায় নিকোলাস টোমালিন ‘সানডে টাইমস’-এ একটি লেখা প্রকাশ করেন।যার শিরোনাম ছিলো”লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু কি আবশ্যিক? “(সানডে টাইমস,২৬ সেপ্টেম্বর),”প্রতিটি সপ্তাহের শেষদিনে তারা দেখতে পায় তাদের বরাদ্দকৃত খাবার ফুড়িয়ে এসেছে(২০০গ্রাম চাল)।তারা দ্রুত খাবার পাবার আশায় সারারাত সারিবদ্ধভাবে হাঁটুগেড়ে কালো ছাতার নিচে বসে থাকে।বাঁশের লম্বা বেড়া দিয়ে ঘেরা জায়গাটায়।তাদের দেখতে খোঁয়াড়ে বাঁধা গবাদিপশুরর মতো লাগছিলো।”
“আমি দেখেছিলাম তাদের মধ্যে একজন(একটি শিশু)তার কাছের ঘরে ফিরছিল।তার ক্ষুধার্ত পরিবার তার জন্য অপেক্ষারত।তাদের খাবার সংগ্রহের এবং শেষ হওয়ার এটা ছিলো ৬ষ্ঠ দিন। সে মাত্র পাঁচ বছরের শিশু।সে জেনেছে কি হচ্ছে,সেই সাথে সে তার পরিবারের দায়িত্ববান সদস্য।সে দেখেছে তার পিতলের দুধের গ্লাস তার আরও ছয়জনের সাথে ভাগাভাগি করতে হচ্ছে।তার বাবা বড় বড় ঢোক গিলছে আর তার ভাইবোনেরা লোভীর মত পান করছে,শেষ পর্যন্ত এটিতে একটা বড় টেবিল চামচের সমপরিমাণ দুধ ছিলো শিশুটির জন্য।
এসব ছোট ঘটনাগুলো লাখো ঘটে চলেছে।বর্তমানে সবচেয়ে এটা সবার জন্য ভয়ংকর দুর্যোগ।এই শিশুগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে জন্য আরো অধিক খাদ্য সংযোজন প্রয়োজন।
৪.জনাব, আমরা এই উক্তিগুলো আপনাকে প্রেরণ করেছি,কিন্তু আমরা নিশ্চিত আপনি ইতিমধ্যে এগুলো জেনেছেন।আমরা লিখেছি কারণ আপনার সাহায্য এবং নৈতিক সমর্থনের প্রত্যাশা করছি।আমরা সন্দেহাতীতভাবে জানি,আপনি পূর্ব ও পশ্চিম বাংলার যন্ত্রণাকাতর মানুষদের জন্য ত্রাণ পাঠাবেন।সমস্যারর বিশালত্ব প্রকান্ড কিন্তু সাহায্য অপ্রতুল।মানবতার দৃষ্টিকোণে, সংক্ষিপ্তাকারেও যথাসাধ্য প্রত্যেকেরর এগিয়ে আসা উচিত।
এ কাজের জন্য আয়োজনগুলো:-
আপনাদের কাছে আমাদের আবেদন,আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়, পলিটেকনিক্যাল কলেজ কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংগঠিত করে অর্থসংগ্রহ করুন”ইউনাইটেড এ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড”এর নামে।আপনি আরও করতে পারেন-
ক)একটা নাচের অনুষ্ঠান বা অন্য কোন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থসংগ্রহ করতে পারেন।
খ)”হেল্প বাংলাদেশ উইক”দেখতে পারেন এবং লোকজনকে অনুদানের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
গ) সেসব লক্ষাধিক অনাহারী মানুষের জন্য শিক্ষার্থীদের দৃঢ়তা এবং তাদের অনুদানের হার দেখুন।
ঘ)শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানুন নিয়মিত অনুদান দেয়ার জন্য ব্যাংক অর্ডার দেয়ার নিয়ম।
ঙ)অর্থতহবিলের অন্যকোন মাধ্যম
চ)কিংবা আপনার সরকারের সরকারী বা অন্যকোন অনুদান খাতে।
আপনার সাহাযার্থে আমরা তৈরি।আপনার প্রয়োজনে আমাদের মধ্যে যে কোন একজন আপনার সাথে কথা বলতে প্রস্তুত।
৬)”ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ”-এর লক্ষ্য নির্দিষ্ট। ত্রাণ সংগ্রহ এবং পীড়িত মানুষের কাছে পৌঁছানো এদের উদ্দেশ্য।এই জন্যই এর নাম “ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড”।ব্যাংকারা হলেন-
National Westminster Bank Limited
43 Kingway,London WC2B 6TN.
Ale No.01533118
Bank Code No.01-04-78
আপনার অনুদানটুকু সরাসরি এই অ্যাকাউন্টে,চেকে যা(ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড)এর জন্য এবং যা A/C পে করা যাবে।
এই তহবিলের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন-
১)অবঃ রেভ্ ট্রেভর হুডডেলস্টেন,বিশপ্ অফ স্টেফনি
২)লেডি গিফরড্
৩)অবঃ হোন রিচার্ড ক্রসম্যান,মেম্বার অফ পার্লামেন্ট
৪)জনাব.এস.আই.আজিজ,এ.এম.বি.আই.এ

আমরা আপনার বিশ্বস্ত
১)মো.এ.সামাদ খান
২)আর.ইউ.আহমেদ
৩)মো.আবদুর রব
৪)এ.মোতালিব
৫)…….
৬) এ.এইচ.জোয়ার্দার
ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশের জন্য

<৪,২৮৪,৬৪৪-৬৪৯>
অনুবাদকঃ জিহাদ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৪। যুদ্ধকালে বৃটেনের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত নৃত্যনাট্য “অস্ত্র হাতে তুলে নাও” এর পান্ডুলিপি
বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র রচনাকাল
আগষ্ট ১৯৭১

। । অস্ত্র হাতে তুলে নাও । ।
রচনা ও সুরারোপঃ এনামুল হক

[বৃষ্টির শব্দ। মেঘের গর্জন]
কিষাণীরা । । বরষা নেমেছে যেন বন্যাধারা
মেঘেরা ডাকিছে যেন বাজে নাকাড়া । ।
রিমঝিম রিমঝিম ঝরো ঝরো সারাদিন
পড়িছে আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি বিরামহীন
শ্যামল পৃথিবী হোলো আত্মহারা ।।

বিজুলী চমক দেয় জোনাকীরা ঝলসায়
বউ কথা কও পাখী এলো বুঝি জলসায়
ভরে দিক গানে প্রাণ শ্রাবণ ধারা ।।

[ভীষণ মেঘের গজীন। আরো বৃষ্টি বন্যা]
কিষাণ । । হায় হায় এইবার আমাদের কি হবে উপায়
ফসলের সব ক্ষেত ডুবে গেল বরষায় । ।
মাঠে ছিল পাকা ধান যত
স্রোতে সব হোয়ে অবনত
আমাদের রেখে গেল কঠিন ক্ষুধার তাড়নায় । ।
কিষাণী । । তবুও আসবে জোতদের
চাইবে ধানের ভাগ তার
কি করে ঠেকাবে তাকে আশা দেব কোন ভরসায় ।।

[ভীষণ মেঘের গজীন। ঠুলীর প্রবেশ]
টুলী । । টাক ডুমা ডুম বদ্যি বাজে শোনো স্বদেশ বাসী
পঁচিশ টাকায় বিক্রি হবে পাঁচশ টাকার খাসি । ।
কিষাণ । । বাজার বেজায় সস্তা দেখি বলত ভাই খুলে
এমন ভাবে দাও বুঝিয়ে যাই না যেন ভুলে ।।
টুলী । । দেশের যত সমস্যা ভাই উঠছে কেবল জমে
তাই দেখে সব খান সাহেবদের ঘুমটা যাচ্ছে কমে
সৈন্য-সেনা আর আমলা মিলে পাকাচ্ছে এক জোট
ভুখা পেটে নাচতে নাচতে দিতে হবে ভোট । ।
কিষাণ । । বল কি হে ভোট দিয়ে কি পেটের ক্ষুদা যাবে । ।
টুলী । । ওই ভোটটা দিলেই গরম গরম পেটের খাবার পাবে
টাক ডুমা ডুম বদ্যি বাজে শোনো স্বদেশ বাসী
পঁচিশ টাকায় বিক্রি হবে পাঁচশ টাকার খাসি । ।

[টুলীর প্রস্থান। ছাত্র ও যুবক দলের প্রবেশ।]
যুবক দল । । নৌকার দলে ভোট দে সবে ভাই
নৌকার দলে ভোট না দিলে বাংলার বাঁচাবার উপায় নাই । ।
এক ছাত্র । । দেশ শাসনের কেতাব নাই
হিসাব করে লিখবে সবাই
তাইত তোমার ভোটটা চাই
নৌকার দলে ভোট দে সবে ভাই । ।
সকলে । । জয় বাংলা । । জয় বাংলা । ।
(যুবকদলের প্রস্থান।)

[ গোলাগুলির শব্দ। টুলীর প্রবেশ।]
টুলী । । টাক ডুমাডুম টাক ডুমাডুম টাক ডুমাডুম ডুম
মার খেয়ে সব মরতে হবে জঙ্গী লাটের হুকুম
বাংলাদেশের থাকবে শুধু নফর চাকর দাসী
পাঁচশ টাকায় কিনতে হবে পঁচিশ টাকার খাসি
ও মিয়াঁ ভাই কি করি উপায় কিসে বাঁচাই প্রাণ
পশুর মত আসছে তেড়ে পাঞ্জাবী আর পাঠান ।।
কিষাণ । । কেমন কথা আইন মত সবাই দিলাম ভোট
তাতেও দেখি খান সাহেবের বেজায় গরম চোট ।।
টুলী । । খান সাহেবদের মাথা মোটা ধার ধারে না কারো
সারা জীবন শিক্ষা তাদের খুন কর আর মারো
শাসন আর শোষণ করে নেইক কোনোই দায়
সহজে কি কেউ ক্ষমতা ছেড়ে মরতে চায় । ।
কিষাণী । । হায় বাঙ্গালী হায় বাঙ্গালী
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেশ বাঙ্গালী
ঘুম কি এবার ভাঙ্গবে রে তোর
রাত কেটে ঐ আসল যে ভোর
আরো রক্ত দিতে যে বাংলাদেশ আজ কাঙালি ।।

[টুলীর প্রস্থান। ভীষণ গোলাগুলির শব্দ।]
কিষাণ । । সহসা শুনি যে কোথাও বাজিছে যুদ্ধের কোলাহল
শিরায় শোণিতে জাগিছে হিংসার দাবানল
যুদ্ধের হুঙ্কার আমি তুচ্ছ করি
অন্যায় শক্তিকে আমি ব্যর্থ করি
মৃত্যুকে করি যে রূদ্ধ মৃত্যু দিয়ে
হিংস্রকে করি যে স্তব্ধ বজ্র দিয়ে
জীবনের সৈনিক আমি অন্যায়ের সাথে মোর দ্বন্দ
জীবন সার্থক হোক সত্য জেনে সেইত আনন্দ ।।
সকলে । । শক্তির যে করে অপব্যবহার
শক্তির হাতে তার হবে সংহার।
শৃংখল পায়ে পায়ে পরায়ে
পশ্চাতে যে টানে জড়ায়ে
বিশ্বের ঘৃণা তারে দহে বারবার
তাই তার প্রতিকার জন্মের অধিকার । ।
কিষাণী । । এবারে উঠেছে ঢেউ
ঘরে বসে নেই কেউ
স্বাধীনতা সংগ্রাম
চলবেই অবিরাম । ।
সকলে । । শরীরের কোষে কোষে
প্রতিবাদ জ্বলে রোষে
আছে যারা পরাধীন
তাদের নতুন দিন । ।

[মুক্তিফৌজের পোশাক পরে কয়েকজনের প্রবেশ]
কিষাণী । । কি যে উল্লাস জাগে দিকে দিকে
স্বাধীনতা নাম বুকে লিখে লিখে
তাপিত হাজার প্রাণ
প্রলয়ের মত সারা দিনক্ষণ
বিদেশী প্রভুর সব আয়োজন
ভেঙ্গে করে খান খান । ।
কিষাণ । । স্বাধীনতা বলবার
স্বাধীনতা চলবার
লিখবার গাইবার বাঁচবার
ভাগ্যকে ভাঙতে
হাসতে কি কাঁদতে
চাই সব করবের অধিকার ।।
সকলে । । জন্মভুমি ওগো বাংলাদেশ
তোমার ব্যথার করব যে শেষ
খামারে অথবা যত কারখানা কলে
আর কারো দাস হোয়ে খাটি দলে দলে
মনে হয় এইবার সিব উঠি ফুঁসে
করেছে যেমন ওই চীনে আর রূশে । ।
কিষাণ । । হে-
মার জোয়ানো হেঁইও
জোরসে টানো হেঁইও
সবাস জোয়ান হেঁইও
হও আগুয়ান হেঁইও
সকলে । । সাবধানে বাই
আমরা সবাই
মজুর কিষাণ
বাঁচাই পরাণ
কিষাণ । । পেটের টানে হেঁইও
সবাই জানে হেঁইও
সকলে । । হেঁইও রে হেঁইও
হেঁইও রে হেঁইও
কিষাণ ও কিষাণী । কারখানাতে খেত খামারে
শহরে গাঁয়ে আর পাহাড়ে
বেলা অবেলা সকাল বেলা
টানছি বোঝা ঠেলছি ঠেলা
মহাজনের মেশিন চালাই
সাহেব সুবার বাড়ী বানাই
সকলে । । এই কপালে কিছুই নাই
আমরা মজুর পথে বেড়াই
আমরা খাটি ফসল ফলাই
তাইত গানে আগুন ছড়াই
কিষাণ । । হে-
নয়া জামানা হেঁইও
দেয় নিশানা হেঁইও
সাবাস জোয়ান হেঁইও
হও আগুয়ান হেঁইও
সকলে । । সাবধানে ভাই
আমরা সবাই
মজুর কিষাণ
বাঁচাই পরাণ
কিষাণ । । পেটের টান হেঁইও
সবাই জানে হেঁইও
সকলে । । হেঁইও রে হেঁইও
হেঁইও রে হেঁইও
কিষাণ ও কিষাণী ।। রাতের শেষ সূর্য যেমন
আলোয় ভরায় সারা ভুবন
আসবে আসবে সেই সুদিন
আসবে সমাজ শোষনীয়
আসবে আসবে সেই স্বরাজ
সাম্যবাদের শ্রমিক রাজ
সকলে । । এসো মজুর কিষাণ ভাই
এবার সবাই করব লড়াই
সবার মুক্তি অবশেষে
আসবে আসবে বাংলাদেশে
কিষাণ । । হে-
মুক্তি যদি পেতে চাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও
অস্ত্র হাতে তুলে নাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও
বুক ফুলিয়ে এগিয়ে যাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও
মুক্তি ফৌজে নাম লেখাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও
যার বুকে আছে দেশের টান হেঁইও হেঁইও হেঁইও
সে দিতে পারে নিজের প্রাণ হেঁইও হেঁইও হেঁইও
সাবাস বাংলার মজুর কিষাণ হেঁইও হেঁইও হেঁইও
সাবাস বাংলার নওজোয়ান হেঁইও হেঁইও হেঁইও
সব বেদনার হবে শেষ হেঁইও হেঁইও হেঁইও
স্বাধীন হবে বাংলাদেশ হেঁইও হেঁইও হেঁইও
মুক্তি যদি পেতে চাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও
অস্ত্র হাতে তুলে নাও হেঁইও হেঁইও হেঁইও । ।
রচনা কালঃ আগষ্ট, ১৯৭১।
যুদ্ধকালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে মঞ্চায়িত।

<৪,২৮৫,৬৫১>
অনুবাদকঃ রায়হান রানা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৫। ১৬ অক্টোবর ম্যাঞ্চেস্টারে অনুষ্ঠিতব্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পোষ্টার বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের
দলিলপত্র ১২ অক্টোবর, ১৯৭১

বাংলাদেশের
স্বাধীনতা সংগ্রামের বিপ্লবী আলেখ্য
অস্ত্র হাতে তুলে নাও
(নৃত্যনাট্য)
ও গীতিবিচিত্রা

পরিবেশনায়ঃ

বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সংসদ
BANGLADESH PEOPLES CULTURAL SOCIETY,
অনুবাদকঃ রায়হান রানা
AL-MAARJ HOSPITAL
AL-MARJ(BRACE),LIBYA
17.10.71
জনাব চৌধুরী সাহেব,

আমার সালাম নেবেন। অনেকদিন পূর্বে আপনার কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম যে আমি এবং ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম ১০০ স্টার্লিং পাউন্ড বাংলাদেশ ফান্ডে পাঠিয়েছি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১০০ পাউওন্ডের রসিদ পেয়েছি। কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে রসিদ পেলাম না। রসিদের কোন প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু যেহেতু মাহবুব পেয়েছেন বাংলাদেশ গভর্ন্মেন্টের পক্ষ থেকে সেহেতু আমাদেরও দরকার এবং বিশেষ করে আমার আবদুর রহমান ও ডাঃ নুরুল আলম চৌধুরীর প্রত্যেকে ৫০ পাউন্ড করে পাঠিয়েছেন। তারাও রসিদ পাননি। এ ব্যাপারে একটু ত্বরান্বিত না হলে অসুবিধা আছে। রসিদ তাড়াতাড়ি দিলে টাকা সংগ্রহও তাড়াতাড়ি হবে।

আপনাদের কাছ থেকে কাগজপত্র রীতিমত পাচ্ছি, সেজন্য আপনাদের সকলকে জানাই মোবারকবাদ। আরবীতে অনুদিত বইপত্র পাঠাতে পারলে খুব ভাল হয়। কোন ব্যাপারেই আমরা চেষ্টার ত্রুটি করছি না।

… হাসপাতালে ডিউটি করছি আর চিঠি লিখছি। একই চিন্তা-কিভাবে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে এবং আমাদের সন্তান-সন্তানিরা মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ
করবে, স্বাধীনভাবে চিন্তা করবে, কথা বলবে। ঐ দিনের প্রতীক্ষায় রইলাম যেদিন পরম আল্লাহতালা জালিমের শাস্তি দিয়ে নিরপরাধ জনসাধারণকে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেবেন……।
জয় বাংলা
ডাঃ এ, কে, এম, আবদুল হাফিজ

justice abu sayeed chowdhury
11, Goring St. London EC 3 U.K.

—————————–

<৪,২৮৬,৬৫২>
অনুবাদকঃ রায়হান রানা
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৬। প্রেরিত চাঁদার রসিদ চেয়ে লিবিয়া থেকে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে লেখা চিঠি এ্যাকশান কমিটির দলিলপত্র ১৭ অক্টোবর, ১৯৭১

AL-MAARJ HOSPITAL
AL-MARJ(BRACE),LIBYA
17.10.71
জনাব চৌধুরী সাহেব,

আমার সালাম নেবেন। অনেকদিন পূর্বে আপনার কাছে চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম যে আমি এবং ডাঃ মোঃ আবদুস সালাম ১০০ স্টার্লিং পাউন্ড বাংলাদেশ ফান্ডে পাঠিয়েছি। ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১০০ পাউওন্ডের রসিদ পেয়েছি। কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে রসিদ পেলাম না। রসিদের কোন প্রয়োজন ছিল না; কিন্তু যেহেতু মাহবুব পেয়েছেন বাংলাদেশ গভর্ন্মেন্টের পক্ষ থেকে সেহেতু আমাদেরও দরকার এবং বিশেষ করে আমার আবদুর রহমান ও ডাঃ নুরুল আলম চৌধুরীর প্রত্যেকে ৫০ পাউন্ড করে পাঠিয়েছেন। তারাও রসিদ পাননি। এ ব্যাপারে একটু ত্বরান্বিত না হলে অসুবিধা আছে। রসিদ তাড়াতাড়ি দিলে টাকা সংগ্রহও তাড়াতাড়ি হবে।

আপনাদের কাছ থেকে কাগজপত্র রীতিমত পাচ্ছি, সেজন্য আপনাদের সকলকে জানাই মোবারকবাদ। আরবীতে অনুদিত বইপত্র পাঠাতে পারলে খুব ভাল হয়। কোন ব্যাপারেই আমরা চেষ্টার ত্রুটি করছি না।

… হাসপাতালে ডিউটি করছি আর চিঠি লিখছি। একই চিন্তা-কিভাবে আমাদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে এবং আমাদের সন্তান-সন্তানিরা মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করবে, স্বাধীনভাবে চিন্তা করবে, কথা বলবে। ঐ দিনের প্রতীক্ষায় রইলাম যেদিন পরম আল্লাহতালা জালিমের শাস্তি দিয়ে নিরপরাধ জনসাধারণকে শান্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দেবেন……।
জয় বাংলা
ডাঃ এ, কে, এম, আবদুল হাফিজ

justice abu sayeed chowdhury
11, Goring St. London EC 3 U.K.

—————————–
<৪,২৮৭,৬৫২>
অনুবাদকঃ জিয়াউল আরেফিন তুহিন
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৭। দক্ষিণ ইংল্যান্ড ও আঞ্চলিক এ্যাকশন কমিটির সম্পর্কে মতানৈক্যের প্রশ্নে আয়োজিত সভায় উপস্থিতির জন্য কনভেনশন কমিটির আহবায়কের বিজ্ঞপ্তি এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র ১ নভেম্বর, ১৯৭১

যুক্তরাজ্যে অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
এ্যাকশন কমিটির সম্মেলন কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রীট, লণ্ডন ইসি ৩
১ নভেম্বর, ১৯৭১
সভাপতি / সম্পাদক,
প্রিয় বন্ধুরা,

এতদ্বারা ২২ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির একটি সভার রেজুলেশনের অনুযায়ী, বোনাফিল্ড দক্ষিণ ইংল্যান্ড আঞ্চলিক কমিটির কন্ডাক্ট এর বৈধতা ও বিশ্বস্ততার প্রতি বেশ কয়েকটি স্থানীয় কয়েকটি কমিটির মতানৈক্যের প্রেক্ষিতে রোববার ৭ নভেম্বর ১৯৭১, লেডি মার্গারেট চার্চ হল, লেডি মার্গারেট রোড, কেনটিস টাউন N. W. 5 (ইংল্যান্ডের কেন্টিশ টাউন টিউব স্টেশন), ২ টায় অনুষ্ঠিত দক্ষিণ ইংল্যান্ড অঞ্চলের সর্ব কমিটির মিটিংয়ে আপনি আপনার কমিটি থেকে দুজন প্রতিনিধি প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

কেবলমাত্র সরবরাহকৃত এডমিশন কার্ড প্রদর্শণ করলেই অনুমোদিত প্রতিনিধিগণ সভায় প্রবেশের অনুমতি পাবেন।

আপনার ভ্রাতৃপ্রতীম
(এম এ এইচ ভূইয়া)
আহবায়ক

নিম্নবর্ণিত সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত কনভেনশন কমিটির পক্ষ থেকে:
১. জনা্ব এম এ এইচ ভূইয়া ২. জনাব এস কে এ. মান্নান ৩. জনাব গউস খান
৪. জনাব এম এ মতিন ৫. জনাব আরব আলী ৭. জনাব এ এম তরফদার

ADMIT ONE
আমি,———————— যথাযথভাবে ——————————–কমিটি দ্বারা অনুমোদিত হয়ে কনভেনশন কমিটির আহ্বায়ক কর্তৃক আহবান করা রবিবার ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত থাকার জন্য বলা হলো।

আহ্বায়ক
সম্মেলন কমিটি

সভাপতি / সম্পাদক এর স্বাক্ষর

————————— ____
<৪,২৮৮,৬৫৩>
অনুবাদকঃ কাজী সাদিকা নূর
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৮। ওল্ডহ্যামে গঠিত বাংলাদেশ ইয়ুথ লীগের সংগৃহীত অর্থ সদ্ব্যবহারের উপদেশ কামনা করে স্টিয়ারিং কমিটিকে চিঠি এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র ৪ নভেম্বর, ১৯৭১

জয় বাংলা
বাংলাদেশ ইয়ুথ লীগ
১১ টিন স্ট্রিট
ওল্ডহ্যাম
লানক্স.
ফোনঃ ০৬১-৬২৪৩১৮৯
তারিখঃ৪নভেম্বর,১৯৭১
প্রাপক,
যুক্তরাজ্যে অবস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি।
জনাব,
আমি বাংলাদেশ ‘তরুণ লীগের’ পক্ষ থেকে আপনাদের মারফতে মাননীয় বিচারপতি চৌধুরী সাহেবের উপদেশ কামনা করছি। আমাদের ‘তরুণ লীগ’ তহবিলে এ পর্যন্ত প্রায় বারো শত পাউন্ড জমা হয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের ইচ্ছা উক্ত পাউন্ডগুলি আমাদের বীর সেনানী মুক্তিবাহিনীর জন্য গরম কাপড় খরিদার্থে ব্যবহার করা হোক।
আশা করি বিচারপতি সাহেব এ বিষয়ে নিশ্চয়ই আনন্দিত হবেন।
তাই আমাদের পয়সাগুলি কিভাবে তাঁর হাতে পৌঁছাবো, আপনারা অতি সত্বর আমাদের উপদেশ দান করবেন।
আমাদের সংগ্রামী সালাম রইল।
ইতি
বাংলাদেশ ইয়ুথ লীগ
ওল্ডহ্যাম,লানকস.

<৪,২৮৯,৬৫৪-৬৫৭>
অনুবাদকঃ আরিফ রায়হান
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৮৯। প্রবাসে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব সংবলিত বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে গণ-সংস্কৃত সংসদের পক্ষে পেশকৃত গোপন প্রতিবেদন গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়
অসাধারণ বিচারপতি এ এস চৌধুরী
এই নোট স্বাক্ষী দেয় যে লন্ডনে জরুরী ভিত্তিতে বাংলাদেশ সংস্কৃতি সেন্টার স্থাপন করা দরকার । এটা এমন একটা সংস্থা হবে যার কমিটিতে ৩ জন সদস্য থাকবে ।
১. বিচারপতি চৌধুরী
২. সেন্টার এর সম্মানিত পরিচালক
৩. একজন প্রতিনিধি যিনি কমিটি পরিচালনা অথবা একজন উত্তরাধিকারী ।
এটা ফাইনেন্স করবে পরিচালনা কমিটি অথবা বেসরকারী কোন সংস্থা । এটার সম্ভাবনা হচ্ছে সয়ংসম্পূর্ন হওয়া প্রতিটি দিক থেকে । এই মুহূর্তে একটা কক্ষ হয় ১১ নং রাস্তায় অথবা বাংলাদেশ মিশন এর বাড়ির সেন্টার ।
কেন্দ্র এর প্রধান কেন্দ্রে অবস্থান করবেন এবং পরিচালনা করবেন । একজন ইই মাত্র সহকারী থাকেবে যে কিনা পার্ট টাইম মুদ্রালেখক এবং অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করবেন যা বেতন ভুক্ত কর্মচারী হিসেবে থাকবেন । বাকি সবাই কে সেচ্ছাসেবী হিসেবেই নিয়োগ দেয়া হবে ।
কেন্দ্র এর সাধারণ উদ্দেশ্য ছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যে সংকট চলছে বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে তা দূর করা । কেন্দ্র এর প্রচেষ্টা ছিল যে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবশ্যম্ভাবিতা তুলে ধরা, স্থাপিত করা এবং স্বাতন্ত্র্যতা বজায় রেখে যে দেশ গুলো বাংলাদেশের পক্ষে আছে তাদের সাথে মৈত্রী ভাব বজায় রাখা,প্রকল্প সমৃদ্ধ করতে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য জনগন কে আকর্ষন এর উদ্দেশ্যে দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনাময বজায় রাখা বাংলাদেশের জাতিসত্তা,কিছু সাহিত্য প্রকাশ করা যা বিশ্ববাসীর কাছে সমাদৃত হয় বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা, কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে আমনন্ত্রন করা বাংলাদেশ সম্পূর্কে তাদের দৃষ্টিভংগি আলোচনার জন্য, স্পন্সর ও প্রদর্শন করা বাংলাদেশের উপর তৈরিকৃত ফটোগ্রাফ, চিত্রকর্ম, ফিল্ম, পোস্টার ইত্যাদি, তৈরি করতে হবে গ্রন্থাগার, এবং দলিল পত্রের এক কক্ষ যেখানে থাকবে বই, সাময়িক পত্রিকা, ফিল্ম, স্লাইড, নথি, খবরের কাগজ, মানচিত্র, চার্ট ইত্যাদি যেটা বাংলাদেশ মিশন এর গবেষণা কক্ষ হিসেবে থাকবে,কেন্দ্রিয় কমিটি অথবা অন্য কেউ কোন যিনি কতৃপক্ষ এর দ্বায়িত্ব আছেন, তারা ২১শে ফেব্রুয়ারি উদযাপন, স্বাধীনতা দিবস (২৬শে মার্চ), বাংলা নববর্ষ (১৪ই এপ্রিল), রবি ঠাকুর এর জন্মদিন (৭ মে), কাজী নজরুল এর জন্মদিন (২৬ মে) এবং এই ধরনের যত জাতীয় অনুষ্ঠান আছে তা আয়োজন করা ।
ছয় মাস এর মধ্যে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সোসাইটি অনুষ্ঠান গুলো কখুব সফলতার সাথে আয়োজনে সক্ষম হয় এবং একটা জোরদার সচেতনা তৈরি হয় ইউকে তে থাকা বাংলাদেশীদের মাঝে আর নিজেদের মাঝে সহযোগিতার এর বন্ধন তৈরি হয় ।
বাকি সব সংস্থা একই রকম উদ্দেশ্য নিয়ে চলে, যেমন পরিচালনা কমিটি, ছাত্র কমিটি, মহিলা কমিটি, একশন ববাংলাদেশ ইত্যাদি । কিন্তু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সোসাইটি বিভিন্ন ধরনের উপাদান একত্র করে এবং তুলে ধরে যে কিভাবে তাদের বাধ্য করা হয়েছে তাদের দূর্বলতা । একটা সেচ্ছাসেবী সোসাইটি হিসেবে তারা বাস্তবায়ন করতে পারেনি যে গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম এবং ফান্ডস । ইহা সবচেয়ে ভাল সাহায্য করছে যা হল কিছু কাজ ( গান,নাচ,কবিতা) ইত্যাদি নির্ধারিত করা হয় ককেন্দ্র থেকে । সবশেষে এটা আশা করা বেশি ঠিক ছিলা না যে কেন্দ্র ব্যবহার হবে, সব কিছুর জন্য এটার কাজের ধরন দেখে, মিলিত হওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে নানা মত ছিল এবং তারা একটা স্থায়ী প্রতিষ্টান যদিও স্বাধীনতা সংগ্রাম সফলতার সাথে জয়ী হয় । এটা সম্প্রসারিত করে পরে একটা কিংবদন্তী হিসেবে স্বাধীনতা সংগ্রাম তুলে ধরা হবে ইউনাইটেড কিংডম এ থাকা বাঙালিদের জন্য ।
এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক সোসাইটি এর কেন্দ্র কার্যকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাড় করান, আমরা এইটা বলতে পারি যে সঠিক বিষয় এর পর্যাপ্ত অভাব আর প্রতিষ্ঠান এর অবস্থা উদ্বিগ্ন ছিল লন্ডনে । পরবর্তিতে বিস্তারিত উদাহরণ এবং কাউকে লক্ষ্য করে অভিযোগ করা হয়নি ।

(i) যখন সপ্তম মাস চলছিল তখন বিচারপতি চৌধুরী বিভিন্ন বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কূটনীতিক, সংবাদিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব যারা ইউরোপ এবং আমেরিকা আছেন । যতদূর জানা যায়, যে এ ধরনের সাক্ষাত পরবর্তিকালে অনিয়মিত ভাবে হত এবং ব্যক্তিগত চিঠির মাধ্যমে যোগাযোগ হত । কেবল মাত্র শুধু কিছু বুলেটিন ছাপানো হতো ডাকযোগে প্রতিস্থাপিত হত । কেন্দ্র এটা বজায় ররেখেছিল বিচারপতি চৌধুরীর নেতৃত্বে ।
(ii) পরিচালনা কমিটি বা দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি ছিল কারন এর উদ্দেশ্য, এটা সব সময় রাজনৈতিক সংস্থার লোকজন যারা ইউকে তে আছে মিটিং, মিছিল, ইত্যাদি এর বব্যবস্থা করত । তাদের প্রধান কাজ ছিল ফান্ড জমা করা আআর সবাই কে একত্র করে রাখা স্বাধীনতা সংগ্রাম । কেউ আশা করেনি যে তারা এই দ্বায়িত্ব সরাসরি নেবে আর কাজের পরিধি এই নোটেই বলা হয়েছে ।
(iii) একই ভাবে সব কূটনীতিজ্ঞ যারা সম্প্রতি তাদের মনোভাব ও আনুগত্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ এর জন্য । এছাড়া অন্য ভাবনাতে তাদের কর্মদক্ষতা প্রতিফলিত হয়, তারা প্রশিক্ষিত আমলা ছিলেন যারা নিজস্ব দক্ষতার দ্বারা সাংস্কৃতিক সংগ্রাম কে এক বৈপ্লবিক রূপ দেন । এটার সচিত্র উদাহরণ হচ্ছে সম্প্রতি মিস্টার হাসনাইন বাইকাল, সম্পাদক আল হারাম, ইজিপ্ট এবং সবচেয়ে ক্ষমতাধর চিঠি হয়েছিল আরব বিশ্বে, অক্টোবর এ লন্ডনে । এটা খবরের কাগজ এ রিপোর্ট ও হয়েছিল । কিন্তু ইহা কেউ উদ্যোগ নেয়নি বিচার চৌধুরী এর সাক্ষাত এর জন্য । অনেক বড় মিস!
(iv) এমন কি অধি পাকিস্তানি পত্রিকা ডাউন অফ করাচী নভেম্বর এর শুরুতে ঢাকা ডিআইটি টাওয়ার, যা জাতীয় ছাপাখানা ট্রাস্ট মর্নিং নিউজ বিল্ডিং এবং কর্নফুলী পেপার মিলস যা এশিয়াতে সবচেয়ে বড় গেরিলা আক্রমণ এর বোমবিস্ফারণ নিয়ে এক খবর প্রকাশ করে । এটা প্রকৃতপক্ষে একটা অসাধারণ খবর ছিল আর দেখানো হয়েছে যে বর্ডার এ আক্রমণ হয়েছে । আফসোস এই কারনে যে এগুলোর কোনটা ই বাংলা সাপ্তাহিক কিংবা ইংরেজি পাক্ষিক এ প্রকাশ পায়নি লন্ডনে । যদিও এধরন এর একটা কেন্দ্র তৈরি করা যথার্থ ছিল যাতে করে গবেষণা চালিয়ে নেয়া যায় আর বাংলাদেশ মিশন এর তথ্য উপাত্ত সমান এবং প্রচারিত করা যায় ।
(v) এন্ড্রে মেলারেক্স, যিনি ফ্রান্স এর একজন বিশিষ্ট কূটনীতিক বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এ সাহায্য সহযোগীতা আর সাপোর্ট দেন । এটা জানা যায়নি যে তা কতৃপক্ষ থেকে নাকি ব্যক্তিগত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তার এই অফার গ্রহণ করা হয় । বাংলাদেশের কেন্দ্র থেকে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয় এবং তার সাথে একটা চুক্তি করা হয় মুজিবনগর সরকারের সাথে এবং তার ই সাথে এক প্রজ্ঞাপন জারির উদ্দেশ্য যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয় ।
(vi) এটা প্রমাণিত যে প্রকাশ করার যে কাজ তা পরিকল্পনা করা হয় পর্যাপ্ত পোস্টার যা ছবি আর স্লোগান এ ভরা ছিল, যাতে করে আন্দোলন এর মআতত্রা কমে না যায় । সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অবিলম্বে কিছু পোস্টার বের করে বাংলাতে (এবং ইংরেজি আর ফ্রেঞ্চ ভাষাতেও) যাতে করে পরিপূর্ণ ভাবে প্রদর্শন করতে পারে বাঙলা রেস্তরাতে,অফিস এ এবং জনসামাগম এলাকা গুলো যেমন গ্রন্থাগার, জাদুঘর, রেল-স্টেশন, এয়ারপোর্ট, ডাক ঘর ইত্যাদি ।
(vii)এটা লক্ষনীয় যে বেশিরভাগ বাঙালি পরিতৃপ্ত , কিন্তু তার অধিকাংশ লোক ই অশিক্ষিত, তারা ই অনেকাংশে দায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য । তাদের উতসাহ ছিল দেখার মত । কিন্তু বিপদ আরও বড় হতো যদি এই দল বাস্তবিক ভাবে শিক্ষিত না হত তাহলে আমাদের নতুন জাতীয়তার জন্য সমস্যা ছিল, আই.ই যে ধর্মনিরপেক্ষতা একটা ভন্ডামি ছিল পাকিস্তানের বাংলাদেশের জন্মের সময় । শুধুমাত্র স্লোগান ই পেরেছিল এই কুসংস্কার দূর করতে । বাংলাদেশের শত্রুরা খুব সহজেই তাদের বন্দুক ব্যবহার ছাড়া ই এখানে যুদ্ধ করত সমর্থ হয়েছিল, যদি বা অবিলম্বে যুগপৎ প্রচেষ্টা না নেয়া হয় তবে এটা পরিস্কার প্রদর্শন করতে পারে না যে তারা বাংলাদেশের নতুন বাসী যারা তারা একটা সমাজ তৈরি করবে যা কাজে লাগানো যাবে না হস্তক্ষেপ করতে পারবে ধর্মীয় জনসাধারণ হিসেবে । জনসাধারনের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে । এই বিষয়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র খুব কঠিন কাজ করেছে ।
(viii) কেউ জানেনা পুরোপুরিভাবে স্বাধীন হতে কত সময় লাগবে বাংলাদেশের । ইতিমধ্যে কেন্দ্র পরিচালনা করতে শুরু করেছে সব কেস যা বাংলাদেশের ছাত্ররা ইউকে তে সম্মুখীন হচ্ছে এবং গাইড করছে সব ধরনের অনুষন্ধানে উচ্চতর শিক্ষায় সম্পর্কে ইউকে তে । এমন কি সংগ্রহ করে দিচ্ছে বৃত্তি, ভাতা, সহকারিতা জন্য যারা উপযুক্ত বিভিন্ন জায়গা থেকে ।

(ix) অবিলম্বে কোন উপায় বের করা উচিতে বই এবং সাময়িকি ইতিহাস এর উপর এবং সাথে সাথে বর্তমান পরিস্থিতি, ঐতিহ্য, আর্ট,রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজতন্ত্র বাংলাদেশ সম্পর্কে যা ইংরেজি আর বাংলা দুই আছে কেন্দ্রিয় গ্রন্থাগার এর জন্য । আমাদের অবশ্যই উন্নত করা উচিত অভিবাসীদের যারা ইউকেতে আছেন এবং একটা ভাল জোট হিসেবে একত্র করা যারা নিজেদের সম্পর্কে জানে । আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আমাদের বিস্তারিত জানা উচিত ।

অর্থনৈতিক প্রভাব (প্রথম ছয় মাসের জন্য)

পূর্ণকালীন সহায়কের বেতন (১০০ পাউন্ড/মাস) ৬০০ পাউন্ড
খন্ডকালীন পিওন-টাইপিস্টের বেতন (৬০ পাউন্ড/মাস) ১৮০ পাউন্ড
স্টেশনারি ও সম্ভাব্য পরিবহন খরচ ৬০০ পাউন্ড
—————–
মোট (ছয় মাস) ১৩৮০ পাউন্ড
(সকল ধরণের খরচ স্টিয়ারিং কমিটি বহন করবে)
<৪,২৯০,৬৫৮-৬৫৯>
অনুবাদকঃ জেসিকা গুলশান তোড়া
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯০। ঈদের ফেতরাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য সাহায্যের জন্য বাংলাদেশ মহিলা সমিতির আবেদন
বৃটেনে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির প্রচারপত্র ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বৃটেন
১০৩ লেডবুরি রোড, লন্ডন, ডব্লিউ ১১
ফোনঃ ০১-৭২৭৬৫৭৮
তারিখঃ ১৬ নভেম্বর, ১৯৭১
সুধী,
পবিত্র ঈদ সমাগমে প্রতিটি দেশপ্রাণ বাঙ্গালীর মন স্বভাবতই ভারাক্রান্ত। দেশ ও জাতি আজ ঘোরতর দুর্যোগের সম্মুখীন। ইয়াহিয়ার নীতি ও ধর্মজ্ঞান বিবর্তিত নৃশংস সেনাবাহিনীর অত্যাচারে জর্জরিত। অত্যাচারী এজিদ বাহিনী বাঙ্গালী জাতির নাম পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে বদ্ধপরিকর। দেশের এই সংকটে আমাদের একমাত্র ভরসাস্থল মরণজয়ী জেহাদেরত মুক্তিবাহিনীর ভাইরা। বাংলা ও বাঙ্গালীকে তারা বাঁচাবেই-প্রয়োজন হলে তাঁদের জীবনের বিনিময়ে। আমাদের ঈদ ব্যর্থ হবে যদি পবিত্র দিনে তাদের প্রতি আমাদের কর্তব্য ভুলে যাই।
তাই,যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ মহিলা সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবারের ফেতরার পয়সা সংগ্রহ করে মুক্তিবাহিনীর কাপড়-চোপড় ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিস খরিদ করার জন্য পাঠিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে আমরা অনুরোধ করছি আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা।
আসুন ভাই-বোনেরা,এইবারের ফেতরার পয়সা মুক্তিবাহিনীর নামে বাংলাদেশ মহিলা সমিতির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে জেহাদে শরিক হোন। দানের দ্বারা দেশের প্রতি আপনার গুরুদায়িত্বের ভার কিছুটা লাঘব করুন। আপনার ঈদ সার্থক ও পবিত্র হোক।
জয় বাংলা।

নিবেদিকা
মিসেস বকশ
(কনভেনর)

একটি জরুরী আবেদন
সোনার বাংলায় মানুষ আজ হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যালীলার শিকার। তারা আজ অন্নহীন, বস্ত্রহীন। এখন শীতকাল। মুক্তিবাহিনীরা খোলা জায়গায় কাজে ব্যস্ত। শরণার্থীরা শীতবস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে এগিয়ে আসুন। দেশ স্বাধীন যারা করছেন তাদের সাহায্য করাই দেশের কাজ করা। যে যা পারেন নতুন বা পুরানো কিন্তু পরিষ্কার জাম্পার, সোয়েটার, কার্ডিগান, পুলওভার, প্যান্ট ও গলাবন্ধ দিয়ে সাহায্য করুন। এর আগে মে মাসে আমরা ‘ওয়ার অন ওয়ান্ট’ এর মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীদের জন্য ৪০০ শার্ট ও প্যান্ট পাঠিয়েছি। আপনাদের সাহায্য পেলে এবারও পারব ইনশাআল্লাহ। আপনার সংগ্রহ করা কাপড়গুলি নীচের ঠিকানায় আগামী ১৩ ও ২০শে নভেম্বর শনিবার বেলা ২-৪টার মধ্যে পৌঁছে দিন।
১. ওয়াল্ড সার্ভিস ট্রাস্ট, ২. ৫৮ বার উইক স্ট্রীট,
২৭ ডেলানসি স্ট্রিট লন্ডন ডাব্লিউ. আই,
লন্ডন এন. ডাব্লিউ. আই অক্সফোর্ড সার্কুলার।
(ক্যামডেন হাই স্ট্রিটের বিপরীতে,
ক্যামডেন টাউন)

বাংলাদেশের মহিলা সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবারের ফেতরার পয়সা সংগ্রহ করে সেটা মুক্তিবাহিনীর জন্য খরচ করবে। এই সংকল্প রূপায়নের জন্য চাই আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতা।
দেশ আজ ইয়াহিয়া- সৈন্যের অত্যাচারে ধ্বংস কবলিত। বাংলাদেশে আজ জীবন ধারণ করাই দুর্বিষহ। জাতি আজ জীবন-মরণ সমস্যার সম্মুখীন। আপনার-আমার ভাই বোনেরা জীবন পণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে। আপনারা কি মনে করেন না যে যারা মানুষ বাঁচানোর ব্রতে নেমেছেন তাঁদের সাহায্য করাই ধর্মের কাজ ও বাংলার মানুষকে বাঁচানোই আজ বাংলার মানুষের মহান কর্তব্য ও দায়িত্ব?
আপনার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে বলুন এবারের ফেতরার পয়সা মুক্তিবাহিনীর জন্য খরচ করতে এবং নিজেরাও ফেতরার পয়সা মুক্তিবাহিনীর নামে বাংলাদেশ মহিলা সমিতিতে জমা দিন।
-জয় বাংলা-
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, ১০৩ লেডবেরী রোড, লন্ডন পশ্চিম ১১

<৪,২৯১,৬৬০-৬৬১>

অনুবাদকঃ সাদ্দিউন জয়
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯১। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থন ও সহযোগিতার আহবান জানিয়ে ব্রিটেনের লিবারেল পার্টির ১৯৭১ সালের কনফারেন্সে আগত প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রচারিত আবেদন এ্যাকশন কমিটির দলিল ১৯৭১

১৯৭১ সালে স্কারবোরহে অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টির সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আবেদন

জনাব,
মানবিক ট্র্যাজেডি যা পশ্চিম পাকিস্তানের ফ্যাসিস্ট সামরিক জান্তা বাংলাদেশের জনগণের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে সে বিষয়ে আপনি অবশ্যই অবগত আছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চ বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে তাদের সন্ত্রাসের বিশাল এবং নির্মম অভিযান শুরু করে নির্বিচার হত্যাকাণ্ড, ধর্ষন, লুণ্ঠন,অগ্নিসংযোগ দ্বারা এবং বাঙ্গালিদের অপরাধ ছিল গণতান্ত্রিক উপায়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে একটি দলকে নির্বাচিত করা, এছাড়া আর কিছু না। কিন্তু ডিসেম্বরে আমাদের মানুষ প্রথমবারের অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তাদের গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের ফল অস্বীকার করার অন্য কোন কারণে 1970 যে পদ্ধতিতে সেনাবাহিনী এই নৃশংস ও নিষ্ঠুর কাজগুলো সংঘটিত করেছে তা অনেক প্রত্যক্ষদর্শী এবং সাংবাদিক গণহত্যা হিসাবে নিশ্চিত করেছেন। সংবাদপত্রের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী পাক-সেনাবাহিনী আমাদের বেসামরিক জনগণের উপরে গণহত্যা এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাটিতে এই বিদেশী সেনা উপস্থিতির কারণে স্বাভাবিক জীবন, প্রশাসনিক, শিক্ষাগত, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সব দিক বিঘ্নিত হচ্ছে। খুব শীঘ্রই যদি না আক্রমণ সেনা প্রত্যাহার করা হয় তবে অভূতপূর্ব মাত্রার তীব্র দুর্ভিক্ষ আঘাত হানবে যা অন্তত ২৫ মিলিয়ন মানুষকে নিশ্চিতভাবে সরাসরি আক্রান্ত করবে। তাছাড়া, এ পর্যন্ত পাকবাহিনীর ভয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়া বা সেনাবাহিনীর সন্ত্রাসের কারণে দেশ থেকে বিতাড়িত ৮ মিলিয়ন মানুষ কখনোই দেশে ফিরে আসবে না যদি না পাকসেনাবাহিনী বাংলাদেশের ছেড়ে যায়।
নিজেদের বিনাশ এবং বাংলাদেশের চরম রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে বাংলার জনগণ নিজেদের, তাদের ভুমি, তাদের সম্মান তাদের মর্যাদাএবং তাদের সহজাত ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার্থেই নিজেদের হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। যদিও আমরা আমাদের জনগণের দুর্দশার কারণে কষ্ট পাচ্ছি,তবুও আমরা গর্বিত কারণ আমাদের বীর যোদ্ধারা তাদের বীরোচিত ও সাহসী মুকাবিলার দ্বারা আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে।
আমরা জানি লিবারেল পার্টি একটি সাহসী ও দুরদর্শী রাজনৈতিক দল যারা ন্যায়ের সঙ্গে হাত মিলাতে কখনও পিছপা হবে না। আমরা আরও জানি, যখন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কঠোরভাবে আমাদের জনগণের উপর দমননীতি চালিয়েছিল, আপনারাই ছিলেন প্রথম দল যারা বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এই সেনা অভিযানের নিন্দা করেছিলেন। একজন আলোকিত মনের মানুষ হিসেবে আপনাকে কৃতজ্ঞচিত্তে জানাতে চাই, আমরা পুরোপুরি স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত ইয়াহয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম থামবে না।

<৪,২৯২,৬৬২-৬৭৩>
অনুবাদকঃ জয়ন্ত সেন আবীর, রায়হান রানা, শওকত ইসলাম রিপন
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯২। বৃটেনে গঠিত বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের সভাপতি ড. এনামুল হকের চিঠিপত্র ও যোগাযোগ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র ১৯৭১

আবুল সাদুদ্দীন
নৃ-সংগীতবিদ্যা
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া
৭ জুন, ১৯৭১
প্রিয় এনাম,
তোমার সাথে ফোনালাপ আমাকে প্রীত করেছে। এটা অবিশ্বাস্য শোনায়, তাই নয় কী? আমি খুবই খুশি যে তুমি দেশের বাইরে অবস্থান করছ। আমি নিশ্চিত যে তুমিও জান তুমি কতটা ভাগ্যবান। অতীতে তোমার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড (টিভিতে ‘মুজিব কোট’ পরিধান করা সহ) অবশ্যই তোমার নাম বহুদিন ধরে কড়া পাহারায় রাখা সেনাবাহিনীর গুপ্ত তালিকায় ঢোকাবার জন্য যথেষ্ট ছিল!জানি না কেন, কিন্তু তুমি যে অক্সফোর্ডে তা না জেনেই তোমাকে নিয়ে আমারঅস্থিরতা অনুভূত হচ্ছিল। আমি ড. ডেভিডসনকে সে কথা বলেছিও। আমি কল্পনা করার চেষ্টা করছিলাম কিভাবে ২৬ মার্চ, আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক দিনটিতে, হয়ত তোমাকে তোমার জাদুঘরের বাসা থেকে টেনে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে। হয়ত সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিণতিই বরণ করতে হয়েছে তোমাকে। আমাদের অবশ্যই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ যে তোমার ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। তোমার উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে। আর আমি মনে করিসাহায্য প্রদানে সক্ষম মানুষের আশায় অপেক্ষা করে থাকা মানুষজনের সাহায্যার্থে এখন তুমি অনেক বেশি ভূমিকা রাখার সুযোগ পাবে।
আমি মাত্রই লস অ্যাঞ্জেলস এর আমেরিকান লীগ অফ বাংলাদেশ এর একটি সভা থেকে ফেরত আসলাম। সেখানে কী হয়েছে তা বলতে আমার লজ্জা হচ্ছে। সিলেটি গ্রুপ (যারা ব্যক্তির যোগান দেয়, বুদ্ধির নয়) যেকোনো প্রকারে এতে বাধা দেবার সুযোগ খুঁজছিল কারণ এই সংগঠনে তারা কোনো পদ পায় নি। আমি আগে থেকে অভিহিত ছিলাম না যে আমাদের বিব্রত করবার জন্যে তারা এক অশুভ পরিকল্পনা রচনা করেছে, এবং শেষ পর্যন্ত তাই-ই ঘটেছে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্বন্ধে আলোচনার বদলে তারা আমাদের হিসাব-পত্র দেখতে চাইল, যেন আমরা একদল চোর বৈ কিছু নই। আমি অত্যন্ত রাগান্বিত হয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদে এই সভা ত্যাগ করে চলে আসি। একজন এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে যে দালানের বাইরে সে আমাকে আঘাত করে এবং ‘কুত্তার বাচ্চা’ গালি দেয়। সে হুমকি দেয় যে আমাকে সে দেখে নিতে পারবে। যদি কেবলমাত্র সে আমাকে, এই আহাম্মক সাদুদ্দীনকে বাদ দিয়ে ইয়াহিয়া খানকে দেখে নিতে পারত! এতে অবাক হবার কিছু নেই যে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী বাংলা বিজয় করেছিল এবং আজও ইয়াহিয়ার গর্দভ সেনারা আমাদের ওপর প্রভুত্ব চালিয়ে যাচ্ছে। ঠাকুর, প্রকৃতপক্ষেই, একজন ভবিষ্যৎদ্রষ্টা ছিলেন!
“সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ কর নি!”
আমি শুনেছি একই রকম ঘটনা ইংল্যান্ডেও ঘটে চলেছে। সম্পূর্ণ পরিস্থিতি সম্বন্ধে তোমার অভিমত কী? এই ধ্বংসাত্মক এবং অপব্যায়িত শক্তি আরো ভালভাবে ব্যবহারের উপায় কী? এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং আমি সে আশাতেই তোমার কাছে লিখছি যেন তুমি এ ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে আমাদেরচিরস্থায়ী আনুগত্যের মানহানিকর অবস্থান থেকে রক্ষা করতে পার। আমি মনে করি তোমার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য সম্বন্ধে আমার কিছু ধারণা রয়েছে এবং এখনই তার জন্যে সর্বোৎকৃষ্ট সময়। আমাদের কিছু করা দরকার। ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে এ বিষয়ে তোমার যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে এটা বোঝার জন্য যে একজন ব্যক্তি কিভাবে “সময়কে করায়ত্ব” করতে পারে। তুমি কি গুরুত্ব সহকারে কোনকিছুর কথা ভাবছ? আমার টাকা থাকলে আম যতদ্রুত সম্ভব কিউবা চলে যেতাম। যখন লাল সেনারা তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা উপভোগ করছিল তখন আমি রেড চায়নায় অবস্থান করছিলাম। নিজের চোখে আমি দেখেছি কিভাবে একটি বিদ্রোহের জন্ম দিয়ে তাকে টিকিয়ে রাখা যায়। আমি ইতোমধ্যে কিছু ইসরায়েলি গ্রুপের সাথে কথা বলেছি। একটি ট্রটস্কাইট গ্রুপ আমার সাথে কথা বলতে চেয়েছে এটা জানার জন্যে যে বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তনে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ব্যাপারে কি তোমার কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা বা উপদেশ দেবার রয়েছে?
দয়া করে তোমার সামনের পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি সম্বন্ধে আমাকে যত দ্রুত সম্ভব অভিহিত কর। বসন্তের সময় তোমাদের এই পশ্চিম তীরবর্তী কলেজগুলোতে কথা বলার জন্য আনতে না পারাটা আসলেই খুব দুঃখের ব্যাপার। আমি পুরোপুরি নিশ্চিত নই যে যেসকল পেশাগতভাবে শিক্ষক তাদের উচ্চতর বিভিন্ন ডিগ্রীর জন্য ক্রেডিট সংগ্রহ করতে এখানে আসে তাদের জন্য গ্রীষ্ম উপযুক্ত সময় কি না। যাই হোক, বিচারপতি চৌধুরীকে পশ্চিম তীরে, বিশেষ করে বার্কেলে এবং ইউ. সি. এল. এ. তে এসে কথা বলতে রাজি করাও। সাধারণভাবে আমেরিকান জনগণ বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে খুবই অন্ধকারে বাস করে (যেমনটা আমরা করি কলাম্বিয়ান বা ফিনিশ রাজনীতি সম্পর্কে)।
অত্যাচার এবং গণহত্যার কিছু ছবি পাঠিও। আমরা তাদের বড় করে কপি করে ছড়িয়ে দিতে পারি যা আমেরিকানদের প্রভাবিত করার জন্য, কারণ তারা এমন জিনিস দেখতে পছন্দ করে। এ পদ্ধতিতে সহজেই তাদের মধ্যে আবেগ ও সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলা সম্ভব। এমন কিছু ব্রিটিশ প্রতিবেদক এবং মানুষের সাথে কথা বল যাদের কাছে ছবি থাকতে পারে। “জনমত” এক্ষেত্রে একটি ভাল উৎস হতে পারে।
আমার মনে হয় ডেভিডসনের কাছে ব্যক্তিগতভাবে লিখে আমাদের জন্য ইউ. সি. এল. এ. এর মাধ্যমে তাকে কিছু করতে অনুরোধ করা যেতে পারে। এখানে তার সাথে আমার সাক্ষাৎ এর চেয়ে লন্ডন বা অক্সফোর্ড থেকে তোমার লেখা অধিক ক্রিয়াশীল হবে। মনে করে অস্ট্রেলিয়ার বাশাম এর নিকটেও লিখ। সে তোমার চিঠি পেয়ে খুবই খুশি হবে। তাকে জানিও তুমি কী করছ। ‘কিউরেটার’ উপাধিটি তার মধ্যে ব্যাপক কৌতূহলের জন্ম দিবে। দুটি ঠিকানাই নিচে দেয়া আছে।
মুজিবুর রহমান সম্বন্ধে তোমার কাছে কী কী খবর রয়েছে? ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি তাকে এর মাঝে মেরে ফেলা হয়েছে। মুজিবের ‘ভাষণ’ যখন গোপন বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছিল সেসময়ে বাঙালিদের মনোবল কার্যত ধ্বংস করে দেবার জন্যেও সেনাবাহিনী যে তাকে বন্দি অবস্থায় জনসম্মুখে প্রদর্শন করে নি সেটাই প্রমাণ করে যে ঐসময়ে তিনি জীবিত ছিলেন না। তুমি কি এমন কোনো পরিকল্পনা করতে পার যা প্রমাণ করবে তিনি আর বেঁচে নেই? আমি সংবাদপত্রে (চিঠির আকারে) একটি রচনা প্রকাশের কথা ভাবছিলাম যাতে লিখা থাকবে সঠিক পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে এটাই প্রতীয়মান হয় যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা আমেরিকান জনগণকে বোঝাবার জন্যে যথেষ্ট হবে। আমার এই মতবাদকে ভুল প্রমাণিত করার একটিই উপায় রয়েছে। আর তা হল ইয়াহিয়া খান যদি জনসম্মুখে তা নাকচ করে আমেরিকান প্রতিবেদকদের সামনে মুজিবকে ‘জীবিত’ প্রদর্শন করে। এটা প্রমাণ করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে যে মুজিবের প্রকাশিত ছবিটি অনেক পুরোনো, সম্ভবত ১৯৬৬ এরও আগের যখন তিনি একটি ষড়যন্ত্র মামলার আসামী হিসেবে কারারুদ্ধ ছিলেন। এ বিষয়ে আর কারো সাথে আলোচনা কোরো না, কিন্তু আমাকে জানিও আমরা কিভাবে কার্যকররূপে এটা সম্পন্ন করতে পারি। ইতিহাস তোমাকে পথ দেখাবে। রাইখস্ট্যাগে হিটলারের আগুন লাগানো এবং তার দায় কমিউনিস্টদের ঘাড়ে চাপানোর ঘটনাটি মনে রাখবে।
আমি জানি তুমি খুবই ব্যস্ত। কিন্তু তুমি তোমার সচিবকে মুখে মুখে বলে একটি চিঠি লেখাতে পার এবং সে খুবই দক্ষতার সাথে বাকি সবগুলো কাজ করে ফেলবে।
ইনু
এ. কবির
সি/ওঃ পিসি রয়
৪৯/৪, হিন্দুস্তান পার্ক
কলকাতা ২৯
২৮/০৮/১৯৭১
প্রিয় জনাব হক,
আপনার টেলিফোন বার্তা আমার কাছে পৌঁছেছে। আমরা একজন (বা দুজন) প্রতিনিধি পাঠাতে সম্পূর্ণ তৈরী, যা নির্ভর করছে আপনার টিকেট প্রেরণের ক্ষমতার উপর। আমরা মুক্তি বাহিনীর ওপর আলোকচিত্র প্রদর্শনী করবার বিরুদ্ধে, কারণ এটা বেশ বড় একটি নিরাপত্তা ঝুঁকি। তবে “বাংলাদেশ ওয়ার অফ ন্যাশনাল লিবারেশন” নামক তথ্যচিত্রটির প্রথম অংশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই অংশে গণহত্যার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং আমাদের আন্দোলনের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ করবার চেষ্টা করা হয়েছে।আশা করছি আপনার তা পছন্দ হবে। দ্বিতীয় অংশ “বার্থ অফ অ্যা নেশন” এবং এই ৬ খণ্ডের তথ্যচিত্রের বাকি ৪ খণ্ডের কাজ আগামী ৬-৮ সপ্তাহের মাঝে শেষ হয়ে যাবে। প্রতিটি অংশের দৈর্ঘ্য হবে ২০ মিনিট। যদি সম্ভব হয় তবে ইউকে, ইউরোপ এবং ইউএসএ এর টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র থিয়েটারগুলোতে এদের বণ্টনের ব্যবস্থা করুন। এর অগ্রগতি আমাদের পরবর্তীতে আরো বৃহদাকার প্রকল্প গ্রহণে সক্ষম করে তুলবে। যদি আমরা লন্ডনের সাংস্কৃতিক সম্মেলনে আমাদের প্রতিনিধি পাঠাতে পারি তবে সে সেখানে এই ছায়াছবিটি বহন করে নিয়ে যাবে।
প্রতিনিধি পাঠাবার মূল সমস্যা হল আমাদের মধ্যে খুব অল্প কজনেরই পাসপোর্ট রয়েছে। বিশেষায়িত ভ্রমণ ব্যবস্থাদি তখনই করা সম্ভব যখন আপনি টিকেটের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পত্র (ছাপানো নামঠিকানা এসব সব সহকারে) পাঠাবেন। অনুগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব এই পত্রটি পাঠাবার ব্যবস্থা করবেন, এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নয়ত আপনি যাদের কথা উল্লেখ করেছেন তাদের মাঝে কেউই যেতে পারবেন না।
শুভকামনায়
আলমগীর
—————————————————
ইনকা ০১৮ কলকাতা সার্কাস অ্যাভিনিউ ১৮ ৬ ১০০৫
জেড০০৯৪ অয়াইআর০০৮৪এক্স বিএলবি৩৮৯ সিবিএ০০১৭ সিএস/৩/৬ সিবিএলবি কো

এনামুল হক ৩৩ অ্যাবি রোড অক্সফোর্ড
শ্রীলঙ্কায় ভ্রমণের কারণে যোগদানে অক্ষম সবকিছু ঠিক থাকলে জহির যাবে।
মল্লিক
১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
যেডসিযেডসি যেডআর০৫৪২এক্স সি সিকেএ৮৬১ সিএস৩৭২/১৬
জেবিএলবি কো ইনকা ০১৮
কলকাতা সার্কাস অ্যাভিনিউ ১৮ ১৬ ১৯৩০
এনামুল হক ৫৯ সিমোর হাউস ট্রাভিস্টক প্লেস
লন্ডন ডব্লিউসি ১
১৮ এর বিকেলে পৌঁছাচ্ছি ফ্লাইট নামাব্র ৫৮২ বিমানবন্দরে থাকবেন।
জহির রায়হান
——————–
এ.আর. মল্লিক
১৭ সুনেলাইন নোহার অ্যাভিনিউ
কলকাতা ১৪, ভারত
২৫/০৯/৭১
প্রিয় এনামুল হক,
তোমার টেলিগ্রাম ও এর মধ্যে লেখা চিঠি পেয়েছি। তোমার টেলিগ্রাম পেয়ে আমার তখন লন্ডন যাওয়া সম্ভব নয় দেখে জহির রায়হানকে যেতে বলেছিলাম এবং তোমাকে জানাতে বলেছিলাম। জহির এখান থেকে দিল্লি পর্যন্ত গিয়েছে জানি – তবে সেখান থেকে সুবিধামত কোনো ফ্লাইট পায়নি বলে শুনেছি। এখান থেকে দাপ্তরিক কাজকর্ম করতে সময় লেগেছে। সম্ভবত তার ফলে তোমাদের কর্মশালার সময় অনুসারে বিলেতে পোঁছা তার পক্ষে সম্ভবপর হবে না। শেষ পর্যন্ত সে কী করবে জানি না। আমি দিল্লিতে ছিলাম, পরশু এসেছি। শুনেছ বোধকরি আমার নিউ ইয়র্ক যাবার কথা। সব ঠিক হয়েছে। হয়ত ৩/৪ দিনের মাঝে রওনা হব। যাবার পথে তোমাদের সাথে দেখা করা সম্ভব নাও হতে পারে। তবে ফেরার পথে অবশ্যই দেখা করে আসব।
……………পরে তোমাকে চিঠি দেব নিউ ইয়র্ক পোঁছে। প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল।
আজিজুর রহমান মল্লিক
——————–
১৬২/২৩, লেক হার্ডেনস
কলকাতা ৪৫
সেপ্টেম্বর ২৭, ৭১
প্রিয় জনাব হক,
আমি নিশ্চিত সাংস্কৃতিক সম্মেলনে যোগদানের লক্ষ্যে বিলেতে যাওয়া বিষয়ে জহিরের ব্যর্থতায় আপনার সবাই খুবই হতাশ। তবে এরজন্য সে দায়ী নয়। সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করেছে। কিন্তু সবকিছুইএকেবারে শেষ মুহূর্ত করবার জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল। টিকেট আসতে আসতে বড্ড দেরি হয়ে যায়। তুমি তার দিল্লি টিকেটের জন্য যে টাকা পাঠিয়েছিলে তা মাত্র একদিন আগে এয়ার ইন্ডিয়ায় এসে পোঁছে। তারা দুদিন তা আঁকড়ে ধরে বসে ছিল। টিকেট ইত্যাদি প্রদর্শনপূর্বক ১৭ সেপ্টেম্বর জহির তার “পরিচয়ের শংসাপত্র” পেতে পারত। কিন্তু দায়িত্বরত ব্রিটিশ ব্যক্তি এতটাই দ্রুততার সাথে তার ভ্রমণের শংসাপত্র(ভ্রমণের নথিপত্র) কে বাতিল করে দেন যে কথা বলার অবকাশটুকুও পাওয়া যায় নি। কারণ হিসেবে তিনি দেখান যে তোমার চিঠিতে কোথাও তুমি এমন উল্লেখ কর নি যে বিলেতে গেলে তুমি তার দেখাশোনা করবে এবং ভিক্ষাবৃত্তি করে সেখানে তার চলতে হবে না। যাই হোক, এরপর বলা হল যে সে তবু বিলেতে যাক। সেখানে তুমি এয়ারপোর্টে এসে ব্রিটিশ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছেবিলেতে থাকাকালীন তার ভরণপোষণের নিশ্চয়তা দিতে পারবে।
এরপর আসল শেষ বাধা। তুমি অ্যারোফ্লোট এর যে টিকেট পাঠিয়েছিলে তাতে করে মস্কোর হয়েভ্রমণটি সম্পন্ন করতে হবে। তাড়াহুড়োর কারণে অ্যারোফ্লোট এর কলকাতা অফিস মস্কো থেকে লন্ডনের ফ্লাইটে একটি আসনের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। তারা উপদেশ দেয় যে জহিরের উচিৎ এরপরেও মস্কো চলে যাওয়া। মস্কো থেকে লন্ডনের পরের ফ্লাইটেও টিকেট পাওয়া যাবে না এমনটি হবার সম্ভাবনা খুব কম। কিন্তু তারা জহিরকে এটা জানাতে ভুলে যায় যে মস্কো থেকে বহির্গমন টিকেটের নিশ্চয়তা ছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষ ট্রানজিট যাত্রীদের সেখানে অবস্থানের অনুমতি দেয় না, যদি না তাদের কাছে যথোপযুক্ত সোভিয়েত ভিসা থাকে। এই তথ্যটি আমাদের দিল্লি এয়ারপোর্টে জানানো হয় যেখানে ট্রানজিট ভিসা না থাকায় অ্যারোফ্লোট কর্তৃপক্ষ জহিরকে উড়োজাহাজে চড়তে দিল না। আমিও সেখানে ছিলাম। আমি সেখানে জে. পি. নারায়ণের বাংলাদেশ বষিয়ক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। পরদিন ছিল ১৯ তারিখ, রবিবার। সেদিন দিল্লির সোভিয়ের দূতাবাস বন্ধ থাকে। ২০ তারিখের আগে কোনো ফ্লাইটও ছিল না। তাই আমি জহিরকে উপদেশ দিই টিকেটটা খরচ না করতে, কারণ সে তোমার সম্মেলনে অংশ নিতে পারছে না।
যখন এসব দাপ্তরিক কাজকর্ম খুবই কঠিন হয়ে উঠছিল আমরা পাসপোর্ট এবং এরূপ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে এমন কাউকে পাঠাবার কথা চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু তা করা যায় নি কারণ তুমি ফেরতযোগ্য নয় এমন টিকেট জহিরের নামে পাঠিয়েছিলে।
যাই হোক, আমি মনে করি জহিরের এই ভ্রমণটি করা উচিৎ-সম্ভবত আগামী মাসেই। আশা করা যায় তুমি তার উপস্থিতি বাংলাদেশ বিষয়ক যেকোনো সভায় কাজে লাগাতে পারবে।
তুমি কি অক্টোবরের শেষে বা নভেম্বরের শুরুতে তারিখ ঠিক করতে চাও?
এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমাদের এক বন্ধুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মিশনের জন্য বিলেতে পাঠানো হবে –দুই বা তিন সপ্তাহের জন্য। এমনকি আমাকেও এই চাকরিটির জন্য নির্বাচিত করা হতে পারে যদিও এ মুহূর্তে আমি কলকাতা ছেড়ে যেতে রাজি নই। তোমাকে অবশ্যই তার ফিরে আসার বন্দোবস্ত করতে হবে (এক পাক্ষিক – যাবার বন্দোবস্ত বাংলাদেশ সরকার করবে)। আবার বিলেতে থাকাকালীন তার থাকা-খাওয়ার খরচ রয়েছে। তুমি কি সাহায্য করতে পারবে? তুমি কোনভাবেই তার মিশন বা মিশনের প্রকৃতি সম্পর্কে কোনোরূপ প্রশ্ন করতে পারবে না। একেবারে অল্প, যাদের না জানালেই নয়, এমন দু-একজন ছাড়া আর কেউ যেন জানতেও না পারে সে বিলেতে কী করছে। তুমি এই কাজে সাহায্য করতে আগ্রহী হলে আমাকে জানিও।
সম্মেলন কেমন ছিল? এখানে প্রচারের উদ্দেশ্যে আমাকে প্রতিবেদন পাঠিও। সাপ্তাহিক “পিপল” পত্রিকার জন্যেও আমাদের একজন সংবাদ প্রতিবেদক দরকার। তুমি কি কারো নাম সুপারিশ করতে চাও?
তোমারই
আলমগীর
কামরুল হাসান

প্রিয় এনামুল,
সি/ও, মো, খালেদ চৌধুরী

২/১ এ নরট রেঞ্জ
কলকাতা-১৭
২৮-৯-৭১

বহু তত্ত্ব-তল্লাশির পর তোমার ঠিকানা পেলাম।আশা করেছিলাম তোমার কাছ থেকেই আগে চিঠি পাব। আমি কলকাতায় এসেছি গত এপ্রিল মাসের তারিখে। সেই থেকেই তোমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছিলাম। যাই হউক, বহু কথা জমা হয়ে আছে। এখানকার এই পরিবেশে সেসব চিন্তায় কোন বাস্তব রুপ দিতে পারব বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের সভ্যদের মানসিকতা তো জানই। তবুও ধৈর্য ধরে কাজ করে যাচ্ছি। ব্যক্তিগত ভাবেও নিশ্চিন্তে নাই, কারণ আমি একলাই কলকাতায় এসেছি। তোমার ভাবী এবং রত্না এখনও ঢাকাতেই আছে। এই ছয় মাসের মধ্যে মাত্র দুবার যোগাযোগ রক্ষা করতে পেরেছি। বিশেষ অবস্থায় পড়েই তোমার ভাবি এখনো ঢাকায় পড়ে আছে। কখন যে কোন বিপদ আসে সেই চিন্তাতে মাঝে মাঝে খুবই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। গত মাসে আলভী ( শিল্পী) ঢাকায় গিয়েছিল কিন্তু সে আর সংবাদ নিয়ে ফিরে আসতে পারলনা। সে ধরা পড়ে গেছে পাক সেনাদের হাতে। অবশ্য ঢাকায় পৌঁছানোর কয়েক দিন পরে। আলতাফ মাহমুদ এর বাড়ী থেকে।
আলতাফ মাহমুদ ধরা পড়েছে আগেই এবং ওর উপর অমানুষিক অত্যাচার হয়েছে সংবাদ পেয়েছি। তাকে বোধ হয় জীবিত অবস্থায় আমরা দেখতে পাবোনা। জানিনা তুমি এ সংবাদ পেয়েছো কিনা। যাক এরকম সংবাদের তো শেষ নাই । এবার আমাদের কথা বলি ।
এর মধ্যে আমরা বাংলাদেশের শিল্পীরা Painting Exhibition করেছিলাম। নতুন, দেবদাস, স্বপনচৌধুরী , মুস্তুফামনোয়ার , কাজীগিয়াস এবং আরো অনেকে-প্রায় কুড়ি জন কলকাতায় আছে। নানান অসুবিধার মধ্যে সকলকে ছবি আঁকতে হয়েছে। মোটামুটি প্রদর্শনী ভালই হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের প্রচার দফতরের পক্ষ থেকে আরও কাজ করছি। poster আঁকছি । কিন্তু আমি যেভাবে কাজ করতে চাই তা এই পরিবেশে সম্ভব নয় । তোমাদের মাঝখানে যেতে পারলে খুব ভাল হত। অনেকেই তো গেল বিদেশ। শিল্পীদের মধ্যে কেউই যায়নি অথচ painting এর মধ্যে অনেক কিছু করার আছে । তাছাড়া লন্ডন এর মত জায়গায় গেলে বিভিন্ন মাধ্যমের কাজ সুযোগ পাওয়া যাবে ফলে painting এবং poster সবই করা সম্ভব। প্রচুর কাজ করার রয়েছে।
আমার মনে হয় তুমি আবু সাঈদ চৌধুরী সাহেবের সাথে আলোচনা করে আমাকে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করতে পারো। তোমাদের কাছে একবার যেতে পারলে ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারবো। তোমাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত কিছুই জানিনা। আমার চিঠি পাওয়ার সাথে সাথেই তোমাদের পরিকল্পনার বিস্তারিত বিবরণ জানিও।

………… রোজী (আমাদেরমেয়ে) সুইজারল্যান্ডে আছে। … করাচী থেকে ওকে পালাতে হয়েছে। এখানে আসার পর আমেরিকা থেকে নেনুর চিঠি পেয়েছিলাম। সে কিছু একটা করতে চায় আমাকে নিয়ে গিয়ে। কিন্তু আমি প্রথমে তোমাদের কাছে যেতে চাই। তোমরা বাংলাদেশের সরকারের তরফ থেকে আমাকে নিয়ে যেতে চেষ্টা করলেই সুবিধা হবে বলে আমার মনে হয়, আমি বাংলাদেশ সরকারের সাথেই সংযুক্ত। তুমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা নিও। উত্তরের অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকবো ।

ইতি-
কামরুল ভাই
—————–
শাহরিয়ার কবির
৬৬/৬ গোরাখাবিশি আরডি
দামদাম, কল-২৮
টেল ৫৭৩৭৮
ভারত

এনাম ভাই ,
আপনার টেলিগ্রাম পেয়েছি। আপনার স্বাগত বার্তার জন্য ধন্যবাদ। আমি অত্যন্ত উদ্ধিগ্ন ছিলাম লন্ডনে কিভাবে প্রদশর্নীর আয়োজন সম্ভব। পুস্তক-পুস্তিকা অব্যশই আনছি। এ ছাড়া উভয় বাংলার শিল্পীদের আঁকা ছবি, পোষ্টার আলোকচিত্র ইত্যাদিও সঙ্গে থাকছে। জহির রায়হান ‘STOP’ নামে যে প্রামাণ্য চিত্রটি তুলছেন সেজন্য কদিন অপেক্ষা করছি। ওটাই সঙ্গে করে আনছি।
কিছু সরকারী অনুমোদনের ব্যাপারে আমাকে এ মাসের ২৩/২৪ তারিখ পর্যন্ত কোলকাতা থাকতে হচ্ছে। আপনি এ সময়ের ভেতর আপনাদের সোসাইটির পক্ষ থেকে আমাকে একটি আমন্ত্রণ লিপি পাঠান।
প্রদশর্নীর জন্য যে জিনিষগুলো অপরিহার্য তারও উল্লেখ করবেন। তাতে আমার ইউ-কের ভিসা পেতে সুবিধা হবে।
জাফর ভাই (সিকান্দার আবু জাফর) সম্প্রতি কোলকাতা এসেছেন। তার একটা বিবৃতি বাংলাদেশ সরকার পুস্তিকাকারে ছাপছে। ওটার ইংরেজিতে অনুবাদ করে আপনাদের পক্ষে কি ছাপানো সম্ভব হবে? বিবৃতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রামাণ্য ,এতে কোন সন্দেহ নেই।
তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্র নির্মানের কথা ভাবছেন । একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশের ইচ্ছাও তাঁর আছে। তবে আর্থিক কোন সাহায্য এখানে পাচ্ছেন না। আপনারা কি তাঁকে কোন সাহায্য করতে পারেন ? আপনার চিঠি অথবা ফোনের অপেক্ষা করছি।
শ্রদ্ধান্তে
শাহরিয়ার বাংলাদেশ গণ- সাংস্কৃতিক সমিতি
৫৯, সেমৌর ভবন, তেভিস্তক, লন্ডন
১৭ অক্টোবর, ১৯৭১
শাহরিয়ার কবির
৬৬/৬ গোরাখাবিশি আরডি
দামদাম, কল-২৮
টেল ৫৭৩৭৮
ভারত

প্রিয় জনাব শাহরিয়ার কবির,
আপনার ৮ই অক্টোবর ১৯৭১ পত্রের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
উপরন্ত, আমাদের তারের তারিখের ২৮শে সেপ্টেম্বর আমাদের প্রাথমিক চুক্তি ইঙ্গিত। আমি আপনার দ্বারা প্রস্তাবিত বাংলাদেশ গণ- সাংস্কৃতিক সমিতি লন্ডন পেইন্টিং, পোষ্টার, ফটোগ্রাফ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামের থিমে তৈরি ছায়াছবি প্রদর্শনী আয়োজন করবে চ্যাট নিশ্চিত করতে লিখুন।
আমরা আপনাকে পরামর্শ দিতে চাই যে , চিত্রপ্রদর্শনী সহ আপনার এখানে আসা দরকার এবং এটা প্রয়োজন পরবে যে আপনার কয়েক সপ্তাহ এখানে থাকতে হবে। আমরা প্রশংসা করব, আপনি যদি আপনার সাথে নির্বাচিত বই ও পত্রিকা , কাব্যধর্মী কাজ এবং সাম্প্রতিক সময়ের নাটক নিয়ে আসেন।
আমরা আরও সুপারিশ করবে যে আপনি মেসার্স সিকান্দার আবু জাফর, কামরুল হাসান সাথে যোগাযোগ করবেন। জহির রায়হান ও আলমগীর কবির তাদের পরামর্শ এবং এই প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য আমরা ইউ.কে. অনুরূপ কর্মসূচি আয়োজনের জন্য তাদের সঙ্গে চিঠিপত্রে যোগাযোগ করছি।

আপনাকে শীঘ্রই দেখার অপেক্ষায়। আপনার আন্তরিক এনামুল হক সভাপতি
তথ্য, প্রচার ও বেতারদপ্তর
গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশসরকার
মুজিবনগর
আমার ঠিকানা-৭৫বি, লিন্টন স্ট্রিট
কলকাতা-১৪
২৬-১০-৭১

—————

স্নেহের এনামুল,
তোমার ১৩/১০ তারিখে লেখা চিঠিখানি আমি বেশ কয়েকদিন আগেই পেয়েছি। তোমার টেলিগ্রাম আমি পাই নাই। আশা করছি তোমার ভাবীর কাছ থেকেও এবার চিঠি পেয়ে যাবো। তোমার চিঠি পরে খুব বেশী আশ্চর্য হই নাই । আমিরুল, জহির বাকবীর কেউই তোমার কথা আমার কাছে এতটুকু ঈঙ্গিতেও জানায় নাই। একবার শুনেছিলাম জহির লন্ডন যাচ্ছে এবং শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না এর মূলে যে তোমার প্রচেষ্টা ছিল তা আমি জানতে পারি নাই। তোমার চিঠি পাওয়ার পর জহিরের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয় নাই। সমস্ত পরিস্থিতি জেনেও মন শক্ত করে যেতে হবে।
ষ্ট্যাম্প প্রকাশ করার ব্যাপারে এমন একটা গোপন ভাব চলছিল যা আমার কাছে খুবই অস্বস্তিকর লাগছিল। স্টোন হাউসের সাথে আমারও একদিন আলাপ হয়েছিল, এখানে কিন্তু এসব সমদ্ধে কোন আলোচনাই ভদ্রলোক করেনি। আর বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষে যারা অবস্থিত তাদের সাংস্কৃতিক চিন্তা এবং রুচিবোধ তোমার কাছে অপরিচিত নয়; অতএব এ নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো । বাংলাদেশের প্রতীক এবং পতাকা অবশ্য পরিবর্তনীয়। এসব পরে হবে ।
তোমার বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি প্যাডের মানচিত্রটিও খুব ভাল হয় নাই, তাই আমি মানচিত্রটি নতুন করে এঁকে পাঠালাম। ছেপে নিও। আমি আপাতত বাংলাদেশ সরকারের ডিজাইন বিভাগের দায়িত্ব নিয়েছি। দেবদাস, নিতুন, নাসির, প্রাণেশমণ্ডল, এরা কাজ করছে। এর মধ্যে অনেকগুলি পোষ্টার তৈরী করেছি। ইংরেজিতেও হচ্ছে। তোমার কাছে পাঠাবো।

সংস্কৃতির ক্ষেত্রে আমাদের প্রচুর কাজ করার রয়েছে। ‘সামরিক জুন্তা’ এবার বিশেষভাবে আমাদের মত লোকদের ভীষণ পোষণ করছে। এর অন্তনিহিত কারণ বুঝতে পারলে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের তাৎপর্যও বুঝতে পারত কর্তাব্যক্তিরা।
আমি, দেবদাস এবং জহির লন্ডনে পৌঁছতে পারলে আমাদের আন্দোলন জোরদার হবেই। বাংলার সাংস্কৃতিক রুপকি এবং দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ক্ষেত্রে তাঁর প্রবলতা যে কত খানি ছিল তা বোঝাবার সময় এসেছে। আজ কলকাতায় বসে বুজতে পারছি আমরাই আজ সত্যিকারের বাঙ্গালী। আমাদের সন্তান্নেরা আজঅগ্রগামী। পশ্চিম বাংলার সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র মোটেই সংস্কারমুক্ত নয় এবং এখানকার হিন্দুরা আরও হিন্দু এবং মুসলমানরা আরও মুসলমান হয়ে বসে আছে। এখানকার পুরাতন ব্রতচারীরা আমাকে পেয়ে খুবই উৎসাহিত এবং সমস্ত দায়িত্ব আমার উপর দিতে চায়। তাহলে বুঝতেই পারছ এরা কোথায় গিয়ে পড়েছে। যাক সাক্ষাতে সব আলোচনা এবং কর্ম পন্থা বেছে নেওয়া যাবে।

আমি লিনোকাট করছি। উবায়েদ কলকাতায় আসছে কয়েক দিনের জন্য। তাঁর হাতে লিনোকাটের একটি সেই পাঠিয়ে দিয়ো। এখানে যে সেট পাওয়া গেছে তাতে ভালো কাজ হয়নি। আমি যাওয়ার সময় অন্ততঃ ২০/২৫ টিলিনো বাংলাদেশের ঘটনার উপর নিয়ে যেতে পারব।
এ ব্যাপারে উবায়েদকেও লিখেছি। রশীদের সাথে নিশ্চয় তোমার যোগাযোগ ঘটেছে। তাকেও চিঠি লিখতে বলবে।
আমেরিকা থেকে হেনুও আমাকে চিঠি দিয়েছিল। সেখানে গিয়ে Exhibition করার জন্য। আগে তোমাদের কাছে যাই, তারপর দেখা যাবে। যাক মোট কথা হতাশ হলে চলবেনা, তোমরা কবে পর্যন্ত টিকেট পাঠাতে পারবে জানিও।
আমি এখন থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আয়োজন করছি।
আমি এবং বদরুল একসাথে আছি। নতুন ঠিকানাতেই যোগাযোগ করবে এবার থেকে।
জুলেখা এবং বাচ্চাদেরকে আমার স্নেহাশীষ দিও। তোমাদের কুশল কামনা করি।
ইতি
কামরুল ভাই
১৭ এ, পামএভিন্যু
কলকাতা-১৯
৫/২২/৭১
শ্রদ্ধেয় এনামুল হক সাহেব,
……… আমাদের প্রযোজিত গীতি-নকশা ‘বিবর্তনের ইতিকথা’ ও নাটক ‘রক্তপথ’ আপনাদের আগ্রহ সৃষ্টি করেছে জেনে আমরা আনন্দিত ও উৎসাহিত হয়েছি। আমি সমর দাস, নারায়ণ , ঘোষ ও সুভাস দত্তের সাথে এ নিয়ে আলোচনা করেছি। টেপ করে উক্ত নাটক ও গীতি-নকশা পাঠান সম্ভব।

আমার মনে হয় সেই সাথে একটি ছোট্ট নায়ক-গায়িকার টিম ও দুজন পরিচালক গেলে ভাল হয়। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানালে বাধিত হব।

আশা করি আমাদের সোসাইটির কাজ ভালভাবে অগ্রসর হচ্ছে। সভ্যদের প্রীতি ও শুভেচ্ছা বলবেন।

_আবদুল জব্বার খাঁ
আহবায়ক, প্রোগ্রাম কমিটি,
বাংলাদেশ চলচিত্রশিল্পী ও কুশলী সমিতি।

৬৬/৬ গোরাখাবিশি আরডি
দামদাম, কল-২৮
টেল ৫৭৩৭৮
ভারত
১৩/১১/৭১
এনাম ভাই,
আপনার চিঠির জবাব অনেক আগেই দেয়া উচিত ছিলো। অনিবার্য কারণ বশত আমাকে বেশ কিছুদিন সীমান্ত এলাকায় কাটাতে হয়েছিল বলে লিখতে পারিনি। এ জন্যেআমি লজ্জিত। প্রদর্শনীর ব্যাপারে আপনাকে বিস্তারিত জানাচ্ছি।

এ প্রদর্শনীর জন্য আমি উভয় বাংলার শিল্পীদের আঁকা ছবি সংগ্রহ করেছি। বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যারা কোলকাতায় এসেছেন এরা হচ্ছেন কামরুল হাসান-মোস্তফা মনোয়ার, দেবদাস চক্রবর্তী, নিতুন কুন্ডু ও প্রাণেশ মন্ডল। এ ছাড়া আছেন ধীরেন সোম , স্বপন চৌধুরী গিয়াসউদ্দিন, নাসিরউদ্দিন , শেখর , রঞ্জিত নিয়োগি এরা।
সব মিলিয়ে সতেরটা তৈলচিত্র (বেশবড়সাইজের) , চৌদ্দটা জলরং, ড্রইং এবং মিশ্র মাধ্যমের ছবি রয়েছে। ভারতীয় শিল্পীদের বাংলাদেশের উপরআঁকা গোটা চল্লিশেক ছবি রয়েছে। পোষ্টার তিরিশটা । আলোকচিত্র এখনো সংগ্রহ করছি। ৬০/৭০ টার মত সংগ্রহ করতে পারবো। আর বাংলাদেশের উপর যেসব বই (কবিতা, প্রবন্ধ) বেরিয়েছে, আনছি। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রচার পুস্তিকা তো রয়েছেই। কিছু রেকর্ড রেরিয়েছে বাংলাদেশের উপর। ওগুলো এবং আমাদের শিল্পীদের গানের টেপ আনছি। জহির রায়হানের প্রামান্যে চিত্রগুলি যদি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় আনবো ।
এবার আমি আপনার সঙ্গে একটা গুরুত্বপূর্ন আলোচনা করতে চাই । এ প্রদর্শনীর ব্যাপারে আপনারা কতটা উৎসাহিত জানিনা। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহিত। বেসরকারীভাবে অবশ্য যতোখানি যম্ভব করবেন। আপনি চিঠিতে লিখছেন, সিকান্দার আবু জাফর এবং অন্যান্যদের সাথে আলাপ করার জন্যে আপনারাও এ ধরনের অনুষ্ঠান করতে আগ্রহী। আপনারা প্রত্যক্ষভাবে উদ্যেগী হলে আরো ব্যাপক আকারে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এ প্রদর্শনী হতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে আয়োজনের জন্য একটা ফান্ডের প্রয়োজন। আর্থিক স্বচ্ছন্দের ওপর প্রদর্শনীর স্বচ্ছল প্রদর্শন করছে। অবশ্য পরে প্রদর্শনীর ছবি এবং বিভিন্ন পুস্তক (যা প্রদর্শনী কতৃপক্ষ ছাপবে যা বিষয়বস্তু সঙ্গে করে আনছি) । বিক্রি করে প্রদর্শনীর টাকা তুলেও যথেষ্ট উদ্ধুত্ত থাকবে যা স্বচ্ছন্দে মুক্তি সংগ্রামের জন্য খরচ করা যেতে পারে। এ প্রদর্শনীর ব্যাপারে আমাদের মিশন যথেষ্ট আগ্রহশীল ।
আপনারা যদি এই প্রদর্শনীর গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর সম্পূর্ণ ভার নিতে রাজি হন , এ চিঠি পাওয়া মাত্র লিখে জানাবেন। তাহলে সেভাবে ব্যবস্থা করবো। এ মাসের শেষ সপ্তাহে যাচ্ছি। জাফর ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আলমগীর কবির আপনার কোন চিঠি পাননি। জহির রায়হান বলেছেন ওকে চিঠি দিতে। জাফর ভাই আপনাকেখুব শীঘ্রই লিখেবেন। শ্রদ্ধা জানাবেন।
-শাহরিয়ার
—————————-

‘অভিযান’
বাংলাদেশ সাপ্তাহিক সংবাদপত্র, ঢাকা
সম্পাদকঃ শিকদার আবু জাফর
অস্থায়ীঠিকানাঃ
৮৪/৯, রিপন স্ট্রীট কলকাতা-১৬
২৪-১১-৭১
এনামুল,
……… ৬ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আসার পর থেকে ক্রমানুগত অসুস্থ্য থাকছি (Acute Bronchitis Azthma)। …… এখানে একেবারে চুপ করে বসে না থেকে সাপ্তাহিক সংবাদপত্র বের করেছি একখানা। কপি পাঠালাম। অন্যান্য সংখ্যা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাঠাবো। তোমরা কাজে লাগিও এবং পত্রিকার জন্যে আগ্রহ ও অর্থসাহায্য সংগ্রহ করে পাঠিও।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত আমার অভিযোগ শীর্ষক বিবৃতি বাংলাদেশ সরকার প্রকাশ করেছেন। তাঁর দুকপিও তোমাকে পাঠালাম। প্রয়োজন মত ব্যবহার কর।
………… এখানকার সর্বাধুনিকহাসপাতালের শ্বাসবিশেষজ্ঞ আমাকে পরীক্ষা করে জানিয়েছেন। আমাকে কিছুটা সুস্থ্য করে তোলা সম্ভব। …… কিন্তু খরচ হবে কমপক্ষে দেড় হাজার টাকা। আপাতত সে টাকারব্যবস্থা নেই। অতএব , চিকিৎসার প্রশ্ন এখন আসেনা। কিন্তু সংগ্রাম চলবেই।
এসটি ক্রস কলেজ অক্সফোর্ড
পোস্টকোড অএক্সআই ৩টিইউ
টেলিফফোন ৪৩১৮২
২৫ অক্টোবর ১৯৭১
……… আমাদের পত্রিকার ব্যবহার করা সম্ভব এ রকম তথ্যাদি এবং পত্র-পত্রিকা যদি পাঠাতে খুবই উপকৃত হবো ……………

– সিকান্দার আবু জাফর
সেন্ট ক্রস কলেজ,অক্সফোর্ড
পোস্ট কোড – OXI3TU
টেলিফোন – ৪৩১৮২
২৫ অক্টোবর, ১৯৭১

ই হক স্কয়ার
৩৩,এবে রোড
অক্সফোর্ড

প্রিয় হক সাহেব
হাসান সাহেব(কামরুল হাসান) কে সাহায্য করার ব্যাপারে অধ্যাপক স্যার উইলিয়াম কোল্ডস্ট্রিম ব্রিটিশ কাউন্সিলের সাথে কথা বলেছেন। আমি যতটুকু দেখলাম তিনি প্রশ্নটা ঠিকভাবে উত্থাপন করতে পারেন নি দুর্ভাগ্যবশত,সম্ভবত তিনি ফিরতি টিকেটের জন্যে ৭০০পাউন্ড চেয়েছেন। প্রত্যুত্তরে ব্রিটিশ কাউন্সিল হাসান সাহেবের ইংল্যান্ডে আসার একটি সুনির্দিষ্ট কারণ জানতে চেয়েছে,যেমন শিক্ষাবৃত্তি কিংবা এরকম কিছু। এরকম হলেও একজন পঞ্চাশোর্ধ মানুষকে এভাবে বিবেচনা করা উচিত হবে না।

দুঃসংবাদ হলেও আমার মনে হয় এখনই হতাশ হওয়ার মত কিছু হয় নি। ব্রিটিশ কাউন্সিল মি. উইলিয়াম কোল্ডস্ট্রিমের পরামর্শের কথা উল্লেখ করে জেরাল্ড ফোর্ট সাহেব কে লিখতে বলেছে। আমার মনে হয় সেটাই করা উচিত। পরের বার,হাসান সাহেবের টিকেট খরচ হিসেবে ২৫০ পাউন্ড এবং কয়েক মাসের খরচের কথা লিখবেন।
মি. জেরাল্ড ফোর্ট,ব্রিটিশ কাউন্সিল, ৩৭৩ ইউস্টন রোড,লন্ডন এন ডব্লিউ আই।
ইতি
ড.ডব্লিউ ই ফন হেইনিনজেন
——-
আলমগীর কবির
৪৯/৪,হিন্দুস্তান পার্ক,
কলকাতা -২৯
০৮- ০৮- ১৯৭১
প্রিয় হক সাহেব,
…..ড.মল্লিক এবং জহির সাহেব কলকাতার বাইতে থাকায় উত্তর দিতে দেরি হল। বিভাজনগুলোর কথা শুনে আমি আশ্চর্য হই নি। এদিককার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাচ্ছে,তাই ঐক্য থাকা খুব দরকার।সর্বদলীয় জাতীয় স্বাধীনতা নামে একটি গুজব এদিকে শোনা যাচ্ছে। সুসংবাদ হল বাংলাদেশ যে কোন দিন স্বীকৃতি পাবে বলে আশা করছি যুদ্ধ খুব ভালোই এগোচ্ছে। দুটো পাক ডিভিশন একদম নির্মূল করে ফেলা হয়েছে। যুদ্ধের ধরণ দেখে বুঝা যাচ্ছে আমাদের পতনের হার খুব সামান্য সারা বাংলাদেশে এ হার ১৫০:১। কিন্তু সম্মুখ সমরে গেলে আমাদের পতনের হার বাড়তে পারে। এখন ৪০% এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে এবং পুরো এলাকাতেই আমরা অভিযান চালাতে পারছি। এমনকি রাতে আর্মিরা ক্যান্টনমেন্টে চলে গেলে ঢাকা শহরটাই আমাদের ছেলেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। টিক্কা খান ও ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছে নৌবাহিনী যে কোন মুহূর্তে যুদ্ধে নামবে। বিমান বাহিনী ও ভারত স্বীকৃতি দেয়ার সাথে সাথে আক্রমণ করতে প্রস্তুত,ওদের সাথে আমাদের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ছেলেদের মনোবল চমৎকার, বরং সেক্টর কমান্ডারদেরই এদেরকে যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে ফেরাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় এ মুহূর্তে এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক প্রচারণা এবং লবিংয়ের জন্যে আপনার প্রস্তাবনা আমি সর্বান্তকরণে সমর্থন করছি। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার খুবই ধীর এবং ড.মল্লিক কে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না। উনার ইংল্যান্ড সফরের ব্যাপারে আপনার তথ্য ভুল। আপনি একটা কাজ করতে পারেন – ড. মল্লিক এবং জহির রায়হানের জন্যে একটি করে দুটি টিকিট পাঠিয়ে দিন। পরে আমরা তাকে যে কোনোভাবে ভারতের বাইরে পাঠানোর ব্যবস্থা করব। এরপর তাকে ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকা পাঠাবেন।আশা করি, তিনি আবু সাঈদ চৌধুরীর চেয়েও এফিশিয়েন্ট হবেন।জহির ও যেতে রাজি আছে কিন্তু সিনেমার কাজ থাকায় যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে,২১আগস্টের র্যালীর জন্যে আরেকজন প্রতিনিধি পাঠানো হবে। আমরা এখান থেকে জহির রায়হান কর্তৃক ইংরেজিতে নির্মিত একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ডকুমেন্টারি পাঠাব,যা ১৫ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন হবে। স্বাধীনতা পরিষদ ইতোমধ্যে ওয়াহিদুল হকের নেতৃত্বে একটি গানের দল গঠন করেছে। ওরা কয়েকটা জায়গায় অনুষ্ঠান করেছে এবং এটি দরকারি মনে হয়েছে। এখন ওরা মুক্তিবাহিনী ক্যাম্পগুলো সফর করছে

শুভেচ্ছাসহ
আলমগীর কবির

ড.এনামুল হক
সভাপতি
বাংলাদেশ গণসংস্কৃতি সমাজ
৩৩,এবে রোড,অক্সফোর্ড, যুক্তরাজ্য।

<৪,২৯৩,৬৭৪-৬৯৩>
অনুবাদকঃ শওকত ইসলাম রিপন, নাবিলা ইলিয়াস তারিন, নওশীন তাসনিম
শিরোনাম সুত্র তারিখ
২৯৩। ইংল্যান্ডে গঠিত বাংলাদেশ তহবিল ও একশন কমিটিসমূহের স্টীয়ারিং কমিটির আয় ব্যয়ের হিসাব বাংলাদেশ তহবিলের ট্রাস্টি বোর্ড ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

ইংল্যান্ডে গঠিত বাংলাদেশ তহবিল ও একশন কমিটিসমূহের স্টীয়ারিং কমিটির আয় ব্যয়ের হিসাব
১. ভূমিকা
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সম্ভাব্য সকল উপায়ে সাহায্য করার জন্যে অনেকগুলো একশন কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিসমূহ স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্যে তহবিল সংগ্রহ করা শুরু করে। অধিকাংশ কমিটি সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্যে একটি সাংগঠনিক সংস্থার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১৯৭১ সালের এপ্রিলে কভেন্ট্রিতে এ কমিটিসমূহের একটি সম্মেলন হয়। বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের জন্যে অনুষ্টিত মিটিংয়ে একশন কমিটিসমূহের একটি স্টীয়ারিং কমিটি গঠিত হয়। পরবর্তীতে এর ব্যবস্থাপনা এবং পরিচালনার জন্যে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ নিয়ে বাংলাদেশ তহবিল গঠিত হয়।

২.উদ্দেশ্য
ক) বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের একশন কমিটিসমূহের স্টীয়ারিং কমিটির মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল ব্যবস্থাপনা
খ) ট্রাস্টিদের মতানুযায়ী উপযুক্ত ক্ষেত্রে এবং অবস্থা বিবেচনা করে তহবিল ব্যয় করা।

৩. ট্রাস্টি
তহবিলের ট্রাস্টিগণ হলেন –
১.বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী
২. জন স্টোনহাউস এমপি এবং
৩.মি ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ

৪. ব্যাংকার
ট্রাস্টের ব্যাংক হল –
১. হামব্রোস ব্যাংক,৪১ বিশপ গেট,লন্ডন ই সি ৩ এবং
২.ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক,ক্যাক্সটন হাউস, লন্ডন. এস ডব্লিউ আই

৫. নিরীক্ষক
কাজী মুজিবুর রহমান,এসিএ কে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কর্তৃক নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।

৬. জমা এবং খরচের সংক্ষিপ্ত তালিকা

ক) সর্বমোট সংগ্রহ ৪,১২,০৮৩.২৬ পাউন্ড
খরচ-
সরাসরি ব্যয় ১১,৪৩০ পাউন্ড
স্টীয়ারিং কমিটি ২১,৪৩০ পাউন্ড
বাংলাদেশ সরকারকে প্রেরণকৃত ৩,৭৬,৫৬৮.০৫
পাউন্ড
মোট খরচ – ৪,০৯,৭৮০.৫০পাউন্ড
অবশিষ্ট – ২৩০৩.২৫ পাউন্ড

খ) ৩১ডিসেম্বর,১৯৭১ এর পরে প্রাপ্ত আনুমানিক ১ লক্ষ পাউন্ড ও উপরে উল্লিখিত রশিদের অন্তর্ভুক্ত। এ থেকে বুঝা যায় যে, বিভিন্ন কমিটি এবং সংগঠনসমূহ একটি বিশাল অংকের অর্থ তহবিলে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিয়েছিল এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজ’র বারবার তাগাদা দেওয়ার পর বাংলাদেশ তহবিলে জমা দেয়।।
বিভিন্ন কমিটির কাছে ইস্যুকৃত ১৩৩৫টি রশিদ বইয়ের মধ্যে ২৮ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭% এবং ৩১জুলাই, ১৯৭২ পর্যন্ত ৮১%ফেরত পাওয়া যায়। এ কারণে প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব হয়।

গ) মোট সংগ্রহ ছিল ৪,১২,০৮৩.২৬ পাউন্ড যার মধ্যে মাত্র ৩৩,২১২.০৫ পাউন্ড যুদ্ধের জন্যে ব্যয় করা হয়। ৩,৭৬,৫৬৮ পাউন্ড ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং অবশিষ্ট ২,৩০৩.২১ পাউন্ড পাঠিয়ে দিয়ে হিসাব বন্ধ করে দেয়া হবে এবং হিসাব বন্ধ করার পর আর কোনো অর্থ জমা পড়লে যথানিয়মে পাঠানো হবে এবং ঘোষণা দিয়ে জানানো হবে। হিসাব বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কেউ জমা দিতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাস, যুক্তরাজ্য শাখায় দিতে পারবে,পরে তা বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

ঘ) ১১,৪৩০ পাউন্ড তহবিল থেকে সরাসরি খরচ হিসেবে দেখানো হয়েছে,যার বিবরণ নিম্নরূপ –

কমিটির খরচ – ২২০০ পাউন্ড
বঙ্গবন্ধুর জন্যে ট্রায়ালের আইনি খরচ – ৩২৫০ পাউন্ড
ডেলিগেশন খরচ – ২,১৯১.২২ পাউন্ড
বিজ্ঞাপন প্রচারণা – ২,৮০৭.৫০ পাউন্ড
মুক্তিবাহিনীর সরঞ্জামাদি – ৯৬৮.৭৮ পাউন্ড
ব্যাংক চার্জ – ১,২৫০ পাউন্ড
সর্বমোট – ১১,৪৩০ পাউন্ড

——

আবু সাঈদ চৌধুরী
জন স্টোনহাউস
ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ
সদস্য
বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
বাংলাদেশ তহবিল
দ্রষ্টব্য –
এই প্রতিবেদন তৈরীর পর ২,৩০৩.২১ পাউন্ড বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ তহবিলের বিভিন্ন বই ও রেকর্ড এবং একশন কমিটির কাগজপত্র দেখে আমি নিশ্চিত করছি যে,এই সংযুক্তি বাংলাদেশ তহবিলের কাগজপত্রের সাথে সংগতিপূর্ণ।
আমার মতে,এই সংযুক্ত বিবরণী বাংলাদেশ তহবিলের একটি সত্য ও সুস্পষ্ট ধারণা দেয়।আমি এটাও নিশ্চিত করছি যে,ট্রাস্টের সকল ব্য নির্বাহ ট্রাস্টের নিয়মানুযায়ী হয়েছে।
আমি জনাব এম এ এল মতিন,অডিট এবং একাউন্টসের পরিচালক, যুক্তরাজ্য দূতাবাসের কাছে প্রতিবেদন তৈরিতে সাহায্যের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭২
কাজী মুজিবুর রহমান
চার্টার্ড একাউন্টেন্ট
১৬৪,ব্রুমউড রোড,লন্ডন এসডব্লিউ

বাংলাদেশ তহবিল
প্রাপ্তি ও প্রদান রশিদ
২৪শে এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৯৭২
পাউন্ড
চাঁদা এবং অর্থ সাহায্য প্রাপ্তি (তফসিল-১) ৪,০৬,৮৫৬.২০
ডাক টিকিট নিলামে প্রাপ্তি ৪৫০.১৩
ব্যাংক সুদ ৪,৭৭৬.৯৩
৪,১২,০৮৩.২৬
প্রদত্ত অর্থ (বাদ)
পরিচালনা সাংসদ ২১,৭৮২.০৫
কমিটি ২,২০০.০০
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈধ আইন খরচ ৩,২৫০.০০
প্রতিনিধি খরচ ২,১৯১.২২
বিজ্ঞাপণ কর্মশালা ২,৮০৭.৫০
মুক্তিবাহিনীর জন্য বরাদ্দ ৯৬৮.৭৮
ব্যাংক খরচ ১২.৫০
৩৩,২১২.০৫
৩,৭৮,৮৭১.২১
(বাদ)
বাংলাদেশ সরকারকে স্থানান্তর ৩,৭৬,৫৬৮.০০
ব্যালেন্স ২,৩০৩.২১
ব্যাংক ব্যালেন্স প্রদর্শিত ২,৩০৩.২১

নোট ১- এই বিবরণীর ১নং তফসিল অনুযায়ী যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদশের তহবিলে স্থানান্তরিত হয়েছে তা একশান কমিটির হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ তহবিলে সরাসরি জমাকৃত অর্থের সমান নাও হতে পারে এবং এর হিসাব রাখা সহজসাধ্য বিষয় নয়।
নোট ২- ১৩৩৫ টি রশিদ বই একশান কমিটি থেকে জারি করা হয় যার মাঝে ১৫৩ টি এখনও অসম্পন্ন।
নোট ৩-খতিয়ানের সাথে সমন্বয় করে পরিকল্পণা।
নোট ৪-নিরীক্ষা ফি আনুমানিক ৫,৫০০ ইউরো এবং খতিয়ানের হিসাবে এই খরচ ধরা হয়নি।কারণ নিরীক্ষক তাঁর দাবী মওকুফ করেছে।

আবু সায়েদ চৌধুরী
জন স্টোনহাউজ
ডোনাল্ড চেজওর্থ
সদস্য
ট্রাস্টি বোর্ড

বাংলাদেশ তহবিল
সংক্ষিপ্ত তালিকা নং ১
বাংলাদেশ তহবিলে স্থানান্তরিত মুজিবনগরে পাঠানো রেমিট্যান্স কমিটির খরচ জমাখরচ

লন্ডন এবং সাউথ-ওয়েস্ট এলাকা

মিডল্যান্ড এলাকা

ইয়র্কশায়ার এলাকা
ম্যানচেস্টার এলাকা

পরিচালনা সংসদের সংগ্রহ ও যুক্তরাজ্যের বাহিরের কমিটি

সরাসরি এবং অ-শ্রেণিবিভক্ত রেমিট্যান্স
পৃষ্ঠা নং ৬

পৃষ্ঠা নং ৭
পৃষ্ঠা নং ৮
পৃষ্ঠা নং ৯
পৃষ্ঠা নং ১০

পৃষ্ঠা নং ১১
পৃষ্ঠা নং ১২

পৃষ্ঠা নং ১৩
পৃষ্ঠা নং ১৪

পৃষ্ঠা নং ১৪
£ £
৪৩,২৭১.৩০

২৪,৫৫৪.৫৫
৩৭,০৯১.৯৭
১৪,০৫২.৩৬
১৩,০৮০.৬২
১,৩২,০৫০.৮০

৯৬,১৫০.০৯
২০,৪৬২.৮১

৪৮,৭৪৮.৭৪
৪৮,৮৭১.১৩

২৬,৭৬৮.০২

৩৩,৮০৩.৯১

৪,০৬,৮৫৬.২০ £ £
১০৩.৬০

৫০০.০০
৫০০.০০


১,১০৩.৬০

৩,০০০.০
৩২.৮০

৪,১৩৬.৪০ £ £
৬৭৮.৭৮

২৭০.৫০
৯২৬.৫৯
২,৮২৫.৪৫
২৮.০০
৪,৭৩৮.৩২

৮,৮৮৭.০৫
৭৯০.৭২

১,৮৯৫.৪৬
১,২৫৪.৫৯

১৭,৫৬৬.১৪ £ £

৩০৭.০০
৪,১৩২.০৮


৪,৪৩৯.০৮

১৯৯.৬৫

৬৮৮.০০
৪৪৫.২১

৫,৭৭১.৯৪

বাংলাদেশ তহবিল
সংক্ষিপ্ত তালিকা নং ১

১ মোট সংগ্রহ

২ বাংলাদেশ তহবিলে স্থানান্তরিত
৩ মুজিবনগরে পাঠানো রেমিট্যান্স


খরচ


জমাখরচ

৬ অগৃহিত রশিদ বইয়ের সংখ্যা

মতামত

লন্ডন এবং সাউথ-ওয়েস্ট এলাকা
এনফিল্ড অ্যাকশন কমিটি
৩৭০, লিংকন রোড, এনফিল্ড

আক্সব্রিজ অ্যাকশন কমিটি,
১০, মিল এভিনিউ, আক্সব্রিজ
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
২৬ চ্যাথাম হিল্ল, কেন্ট
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
৫৮, স্টোকস ক্রফট, ব্রিস্তল
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
১০৩, লেওডবারি রোড, লুন্ডন, ডাব্লিউ.১১
বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটি,
হেসেল স্ট্রিট, লন্ডন, ই.আই.
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
৬৮, স্ট্রিথাম হাই রোড, এস.ডাব্লিউ.১৬
বাংলাদেশ পিপলস সোসাইটি
৪৫, সেন্ট পিটার স্ট্রিট, ক্রয়ডন
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
৫, ভিক্তোরিয়া রোড, সুইন্ডন
বাংলাদেশ কমিটি,
১৫, কুইনস রোড, ব্রাইটন
বাংলাদেশ সমিটি,
২৭, ফসেট রোড, সাউথসী £

৫,৫৩৬.২০

৭৩৫.০০

১,৭৯৮.৬৫
৩,১০৯.০০

৩,৬৭৭.৩৫

১১,৩৫৬.০০

২৫০.০০

১১৯.০০

১,৩৫৫.২০

২,৫৮৫.৫৮

১,৫১৬.০০ £

৫,৫৩৬.২০

৭৩৫.০০

৫৩১.২৭
৩,১৫৬২.০০

৩,৬৭৭.৩৫

১১,২২৯.০০

২৫০.০০

১১৯.০০

১,৩৫৫.২০

২,৩৩৫.৫৮

১,৫১৬.০০ £

১০৩.৬০

– £

১৬৩.৭৮
১৪৭.০০

১২৭.০০

২৫০.০০

– £

– £

– £

একটি রশিদ বই হারিয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়।
১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
১২৫, সেন্ট হেলেন স্ট্রিট, ইপসুইচ
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,,
৭৭, বেলগ্রোভ রোড, ওয়েলিং কেন্ট
সেন্ট অ্যালবান্স এইড কমিটি
৫৬ স্ট্যানহোপ রোড, সেন্ট অ্যালবান্স
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি,
১৬, অনস্লো রোড, সাউথ্যাম্পটন
বাংলা ফ্যাশন
১৬৯, ব্রিকলেন, লন্ডন, ই.আই.
এম. রহমান
১৪, কনওয়ে রোদ, লন্ডন, এস.ই.১৮
নর্থ এবং নর্থ-ওয়েস্ট অ্যাকশন কমিটি
৩৩, ডাগমার রোড, লন্ডন, এন. ২২
ডার্লস্টন অ্যাকশন কমিটি
৭৬, স্টোক নিউইংটন রোড, লন্ডন, ন. ১৬ £
২,৪১৫.০০

২৫.২০

৮,৬৮৩.৫০

৬০.০০

১০০.০০

১৪১.০০

১,৬০৮.৬০

২৪৩.০০ £
২,৪১৫.০০

২৫.২০

৮,৬৮৩.৫০

৬০.০০

১০০.০০

১৪১.০০

৭২৯.০০

২৪৩.০০ £


৫০৩.০০

– £


২০৯.৬০

– £


১৭০.০০ £


– £

জানানো হয়েছে যে হারিয়ে গেছে।

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

মহিলা সংঘ, লুটন।
বাংলাদেশ শ্রমিক সংঘ
১১। গ্ল্যাডস্টোন এভিনিউ, লন্ডন, ই,১২।

বাঙালী সংঘ
৭৪, প্রিন্স অফ ওয়ালেস রোড, নরউইন
বাংলাদেশ সংস্কৃত সংঘ।
টোটেনহাম স্ট্রিট, লন্ডন, ডাব্লিউ ১।
বাংলাদেশ মিশন,
২৪, পেম্ব্রিজ গার্ডেন, লন্ডন, ডাব্লিউ ২।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৬০, আউটফিল্ড রোড, মিডেলস্যেক্স।
বাংলাদেশ যুব সংঘ,
৮৫, ইয়োর্ক স্ট্রিট, লন্ডন, ই,আই।
এন, হক এন্ড কো,
৫০, হান্সবারি স্ট্রিট, লন্ডন, ই,আই।
ইউসুফ আলী,
১৪ বেট্টি স্ট্রিট, লন্ডন, ই,আই।
এ, রাকিব,
১৫, নিউ রোড, লন্ডন, এ,আই।
এম, রহমান,
ওয়াইল্ডগেট স্ট্রিট, লন্ডন, ই,আই।
বাংলাদেশ সংঘ,ব্লেচলি।
বেডফোর্ড কমিটি,
৯৮, ফস্টার হিল রোড, বেডফোর্ড। £
১৬৪.৯০

২৩৪.০০

১০৪.০০

১৪০.০০

১,১২০.৩৫

৮৮১.০০

৮০০.০০

১৭০.০০

১৯৭.০০

৫৮৮.৫০
৪,৪০১.৭০

৮,০৯৯.০০

৩,২৯৩.০০ £
১৬৪.৯০

২৩৪.০০

১০৪.০০

১৪০.০০

১,১২০.৩৫

৮৮১.০০

৮০০.০০

১৭০.০০

১৯৭.০০

৫৮৮.৫০
৪,৪০১.৭০

৮,০৯৯.০০

৩,২৯৩.০০ £


৫০৩.০০


– £
৬০.৯৪

২০৯.৬০

£

৮৪.০০

১৭০.০০

২৫.০০
২৮.০০

– £



£

£ ৮৪.০০ জন্য চেক তহবিল অভাবে ব্যাংক ফিরিয়ে দিয়েছে

দুই চেক ব্যাংক থেকে ফেরত
টাকার পরিমান £ ২৮.০০

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

বাংলাদেশ রিলিফ কমিটি ৫, ফর্ডহাম স্ট্রিট, লন্ডন, ই,1. বাঙালী সংঘ, ১৭, হিলস রোড, ক্যামব্রিজ।

লুটন একশন কমিটি ৫,কেনলিওয়র্থ রোড, লন্ডন।

ডা, এম, এইচ, জোয়ার্দার, বেকেনহাম হাঁসপাতাল, কেন্ট মৌলভী বাজার জনসেবা সমিতি, ১৭২, ওয়ার্ডোর স্ট্রিট, লন্ডন, ডব্লিউ,১।

বাংলাদেশ একশন কমিটি, দক্ষিণ ওয়ালেস।

বাংলাদেশ রিলিফ ফান্ড কমিটি, ১১,গ্রউং স্ট্রিট, লন্ডন £

জানা নেই £

– £

– £

– £

– £

1
রিপোর্টে বলছে হারিয়ে গেছে। রিমাইন্ডারের কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

টাকা সমিতি তহবিলে সম্পর্কযুক্ত এবং বাংলাদেশ ফান্ডে হস্তান্তরযোগ্য নয়।

স্টিয়ারিং কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী £১৮২.৬৭ কম আছে। তহবিলের কোন সঠিক রশিদ বহী রাখা হয়নি এবং মিঃ বি, উদ্দীন জানিয়েছেন তার কাছে পাঠানো ২৫ টি রশিদ বহী তিনি পাননি

এই ব্যক্তি বাংলাদেশে। রিপোর্ট বলছ ৩টি বহী হারিয়ে গিয়েছে এবং ২টি বহী হেরফোর্ড রোডের মাহমুদ আলী এবং ওয়েস্টবোউর্ব রোড, লন্ডন, ডব্লিউ ১ এর কাপ্তান মিয়াঁর নামে জারি করা যারা বহী ফেরত দেননি

ছয়টি রশিদ বহী অনাদায়ী। বাংলাদেশ ফান্ডে প্রেরিত টাকার সাথে পূর্ব বাংলা ঘুর্নিঝড় আক্রান্তদের জন্য সংগ্রহীত অর্থ অন্তুর্ভুক্ত

বেশকিছু রিমাইন্ডার পাঠানোর সত্যেও কোন জবাব পাওয়া যায়নি। এই কমিটি টাই, ইত্যাদি বিক্রির দ্বারা তহবিল সংগ্রহ করেছে কিন্তু কোন একাউন্ট তৈরি করা হয়নি এবং কোন একাউন্ট বাংলাদেশে পাঠানো হয়নি

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

লন্ডন কমিটি,
৫৮, বেরউইচ স্ট্রিট, লন্ডন, ডাব্লিউ, আই।

বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কাউন্সিল,
৫৮, বেরউইচ স্ট্রিট,লন্ডন, ডাব্লিউ, আই। £

১২,৬৬৩.২০

৪,২১৪.৬১ £

১০,০০২.৩৬

৪,০৫০.০০ £

– £

২,৬৬০.৮৪

১৬৪.৬১ £

– £

৫৬


১৮০
£
২৬৮টি স্টিয়ারিং কমিটির রশিদ বহি গোড়াতে কমিটি সরবরাহ করা হয়েছে। ১২৫টি বহি অন্যান্য কমিটির কাছে স্থানান্তর করা হয়েছিল। ১৪৩টির হিসাবের বিপরীতে স্বতন্ত্র সংগ্রহকের দ্বারা ১০টি এবং লন্ডন কমিটির দ্বারা ৭৭টি বহি হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছিল ৫৬ টি বহির হিসাব ব্যতিরেকে যেগুলো এখনও অনাদায়ী। যে সংগ্রহকেরা রশিদ বহি দেয়নি তাদের লন্ডনে লন্ডন কমিটি দ্বারা হাইকমিশনে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে।
কমিটির দ্বারা নিরীক্ষিত একাউন্টের বিবৃতিতে দেখা গেছে যে, সংগৃহীত £১২,৬৬৩.২০ থেকে £২,৯০২.৮৪ কমিটির দ্বারা খরচ হয়ে গেছে। একটি ডুপ্লিকেটর মেশিন যার দাম লন্ডন কমিটি বলেছে £১২০.০০, অপারেশন ওমেগায় চাঁদা ১২০.০০ এবং লন্ডন কমিটির সদস্যদের ভারত ভ্রমণের খরচও £৬১০.০০ এই খরচের অন্তর্ভুক্ত।

কাউন্সিল ১,০০০ রশিদ বহি মুদ্রণ করেছে যার মধ্যে মিঃ তৈয়বুর রহমান ৭৬৫ টি ফেরত দিয়েছে

বাংলাদেশ রিলিফ কমিটি, ৬৭, ব্রিক লেন, লন্ডন, ই,আই।

বাংলাদেশ উদ্বর্তন কমিটি,
৫,ডার্বি রোড, পশ্চিম ক্রয়ডন।
বাংলাদেশ একশন কমিটি, ১০, কাউলি মিল রোড, মিডেলস্যেক্স।
বাংলাদেশ একশন কমিটি, এক্সেটার।
বাংলাদেশ একশন কমিটি, বউর্নমাউথ।
বাংলাদেশ চিকিৎসা সংঘ
বাংলাদেশ একশন কমিটি, ইস্লিংটন।

বাংলাদেশ একশন কমিটি, নিউ পোর্ট

জানা যায় নি



১,৪৯৫.০০

৩,২০৭.০০

৬৯২.০০

৪২৫.০০

৮৬৫.০০
১,৩২৫.০০
৪,৫৭৫.৩৭

২০০.০০

২৮.০০ রশিদ বহিঃ লন্ডন একশন কমিটি ২০টি বহির জন্য বিবেচনাধীন এবং কতিপয় সংগ্রহক ৩৬টি অব্যবহৃত বহি ফিরিয়ে দিয়েছে। ১৮০টি বহি আশা করা হচ্ছে, সবকটিই বিবেচনাধীন। কমিটির ব্যয় £১৬৪.৬১। সংগ্রহকেরা যারা টাকা জমা দেয়নি এবং রশিদও তৈরি করেনি তাদের একটি তালিকা কমিটি বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠিয়েছে।

১৮টি একশন কমিটির রশিদ বহি পাঠানো হয়নি যার মধ্যে জানানো হয় যে ২টি হারিয়ে গেছে।

একাউন্ট তৈরি হয়নি।
বেশ কিছু রিমাইন্ডার পাঠানো হয়েছে কিন্তু উত্তর পাওয়া যায়নি।

একাউন্ট তৈরি হয়নি।

একাউন্ট তৈরি হয়নি।
কমিটির নিজস্ব রশিদ বহি দ্বারা সংগ্রহ করা হয়েছে। হিসাবের জন্য একাউন্ট তৈরি করা হয়নি। জানানো হয় যে, £৯৫৪৭৪ কমিটির ব্যাংক একাউন্টে পরে আছে। কোন একাউন্ট তৈরি হয়নি।

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

সংগ্রাম পরিষদ,
সাউথহল, মিডেক্স,
মিডল্যান্ড অঞ্চল।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৯৩, স্ট্যাটফোর্ড রোড, বার্মিংহাম।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
২১, ব্র্যাডার স্ট্রিট, ম্যান্সফিল্ড।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৫৩, চার্চ স্ট্রিট, হ্যালসোউইন।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৬, এভিংটন রোড, লিচেস্টার।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৭৪, ওয়েল্ডস লেন, ওয়েসস্টার।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৪০, ক্রিসেন্ট, কোভেন্ট্রি।
বাংলাদেশ একশন এন্ড রিলিফ কমিটি,
৯৪, পার্ক লেন, টিপ্টন।
বাংলাদেশ কল্যান সংঘ,
১৪, প্যারি স্ট্রিট, ওয়েডনেসবারি।
এ, বাংলাদেশ একশন কমিটি,
ওয়েডনেসবারি।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
১৫০, নিউ জন স্ট্রিট, ওয়েসস্টার।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৩৪, এমার্সন রোড, ডোর্সেট।

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৭২, কোভেন্ট্রি স্ট্রিট, কিডারমিন্সটার। £

৭৩,৩৬৩.৬৭

৪৭৪.৫০

১,৮৬৬.১০

৫,৪৬৩.৫০

২,২১২.০০

৭,২২৬.১২

৩৮০.০০

৬,১২০.৬০
২,৩৬৫.০০

৩৬৩.০০

— £
২৯৬.২৫

৬৫,৫৬৭.৯৭

৪৫৯.৫০

১,৮৬৬.০০

৫,২৫১.৬০

১,৮০৬.২০

৭,১০১.১২

৩৮০.০০

৬,১২০.৬০
২,৩৬৫.০০

৩১০.০০

৫,৪০২.০০ £



৪,৯২২.০০ £

৭,৬৮৮.৪৬

১৫.০০

২১১.৯০

৩৮৬.৮০

১২৫.০০



— £

১০৭.৪৬

১৯.০০



২০.১১
£



৪ £
একাউন্ট তৈরি হয়নি

সাধারণ ডাকযোগে স্ট্রিয়ারিং কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তা পৌছায়নি। এবং আরো জানানো হয় যে এই রশিদ গুলো দিয়ে কোন তহবিল সংগ্রহ করা হয়নি।

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬
৭ ৮

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
১, মোরলি স্ট্রিট, লাউব্রহ।

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৭, মেয়ারফেয়ার, নর্দাম্পটন।
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
নটিংহাম।

বাংলাদেশ রিলিফ এন্ড একশন কমিটি, ১৯, মোসলে রোড, বার্মংহাম

বাংলাদেশ নারী সংঘ,
৫২, ওয়ান্ডসওয়ার্থ রোড, মিডল্যান্ড

ইয়র্কশায়ার অঞ্চল
মুক্তিযুদ্ধ ফ্রন্ট,
১০, লাইচেশ্তার গ্রোভ, লিডস।
সংগ্রাম পরিষদ,
৯৪, হাই স্ট্রিট, ক্ল্যাখিটন
মুক্তি সংগ্রাম কমিটি,
৪৫, কিংসহিল রোড, হুডার্সফিল্ড
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৪২, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, মিডেলব্রহ
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৯, কর্নওয়াল ট্রেঞ্চ, ব্র্যাডফোর্ড £

৩,৮০৫.০০

৪,৯৮৪.৪৪

জানা যায়নি

,,

,,

৭,০০১.০০

৯০০.০০

৫৬০.০০

৪,৬১৮.০০

৩,০৬২.০০ £

৩,১০০.০০

২,৮৯৮.৭২

১,৭৭০.০০

৯,৮৯৪.০৯

৮০০.০০

৬,২৯৯.০০

৯০০.০০

৫২৫.০০

৪,০৯৮.৫৩

২,৫৬০.০০
£

— £

৭০২.৫০

৩৫.০০

৫১৯.৪৭

৫০২.০৯
£

৭০৫.০০

৮৫.৭২

£

— £

£৩১০.০০ খরচের সাথে যুক্ত করা হয়েছে কিন্তু এই অর্থ বার্মিংহাম একশন কমিটিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে

একাউন্ট তৈরি হয়নি

কোন একাউন্ট তৈরি হয়নি
তৈরি বিবৃতিতে দেখাচ্ছে অর্থ বাংলাদেশ ফান্ডে দিয়ে দেওয়া হয়েছে

একাউন্ট তৈরি হয়নি। £১৫৫.০০ এর একটি চেক ব্যাংক দ্বারা নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা চেক পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিল কিন্তু জবাব পাওয়া যায়নি

জানা গেছে হারিয়ে গেছে

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ,
৩, স্কারব্রহ স্ট্রিট, সাউথব্রহ
বাংলাদেশ একশন কমিটি,
২৭, লিস্টার লেন, হ্যালিফ্যাক্স
বাংলাদেশ মুক্তি ফ্রন্ট।
২৫, হোকার স্ট্রিট, ক্যেইংলি
বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম কমিটি,
৪২, ভিক্টোরিয়া স্ট্রিট, টিসাইড
ব্র্যাডফোর্ড সংগ্রাম পরিষদ।
১০, কর্নওয়াল রোড, ব্র্যাডফোর্ড

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৬, থম্পসন রোড, সেফফিল্ড

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
৩৩, সেন্ট পেগ লেন, ক্ল্যেখিটন

বাংলাদেশ একশন কমিটি,
১০, ক্লার্ক স্ট্রিট, স্কানথ্রোপ

ব্র্যাডফোর্ড পপুলার ফ্রন্ট, ৮৬, আন্ডার ক্লিফ স্ট্রিট, ব্র্যাডফোর্ড-৩
ম্যাঞ্চেস্টার এবং সংলগ্ন এলাকা
ম্যাঞ্চেস্টার একশন কমিটি, ১৫১, অক্সফোর্ড রোড, ম্যাঞ্চেস্টার, ১৩ £

৮২৩.৫৩

২,৩২৭.০০

৩,৪৫৫.০০

৫৫০.০০

১৭,৬৩৬.০০

জানা যায়নি

,,

৫,৫৬০.০০

২৫০.০০

জানা যায়নি £

৮২৩.৫৩

১,৭৪৪.০০

৩,৪৫৫.০০

৫৫০.০০

১৪,৫০০.০০

৬,৭৩৬.৬৮

৮৫২.০০

১৪৫.০০

৪২,১০০.০০ £

৩,০০০.০০

— £

১৩৬.৪০


£

৫৮৩.০০

১০৫.০০

— £

১০

২৭ £

একশন কমিটির একটি রশিদ ফক্সস্টোন সেন্ট ব্র্যাডফোর্ডের মিঃ আফ্রোজ বখতের নামে জারি করা, যিনি ক্রমাগত অনুরোধের পরেও ইহা ফিরিয়ে দিতে অক্ষম হয়েছেন

বহি মিঃ এম, চৌধুরীর নামে জারি করা,
বেশ কিছু রিমাইন্ডার পাঠানো হলেও জবাব আসেনি

এই বহিগুলো মিঃ বারির নামে জারি করা,
রিমাইন্ডার পাঠানোর পরেও জবাব আসেনি

রিমাইন্ডার পাঠানোর পরও জবাব আসেনি

জানা গেছে ২৭টি রশিদ বহি হারিয়ে গেছে। কোন একাউন্ট তৈরি হয়নি। ম্যাঞ্চেস্টার একশন কমিটির নিজস্ব রশিদ বহি দিয়ে সংগ্রহ করা হয়েছে

১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮

পূর্ব বাংলা সংঘ,
৪৫, ক্যাভেন্ডিস প্লেস
নিউক্যাসেল-আপন-ট্যান
বাংলাদেশ সংঘ,
ক্রিসেন্ট, গ্লাসগোউ এন,১০
বাংলাদেসগ একশন কমিটি,
১০৫, বোল্ড স্ট্রিট, লিভারপুল, ১
একশন কমিটি
ওল্ডহাম, ল্যান্স

রচড্যাল কমিটি,
রচড্যাল
যুক্ত্রাজ্যের বাইরের কমিটি
বাংলাদেশ ক্লাব
পি,ও, বক্স ১০, বাহারাইন

বাংলাদেশ শিক্ষা কেন্দ্র,
পি,ও, বক্স ১৫২, দোহা, কাতার
পি,ও, বক্স ৬৫৬, লিবিয়া
পি,ও, বক্স ৩৬৩, সৌদি আরব
পি,ও, বক্স ১৫৫, মস্কাট, ওমান
পি,ও, বক্স ৬৪১, দুবাই
অন্যান্য বিদেশী রাষ্ট্র-
পি,ও, বক্স ১৮১, আবু দাবি
বাংলাদেশ সমিতি, আল-আমিন-
স্টিয়ারিং কমিটির অফিস সংগ্রহ £

১,৯৯৪.০০

৩,৮৫১.৭৫

১৮০.৮৫

১,৫৭৩.৩৯

৯০৪.৪৪

জানা যায়নি

,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,,
,, £

১,৯৯৪.০০

২,৩০০.০০

১,৪৯৭.৫৭

৩,১০০.২৯
২,৩৮৩.৪২
৪,০০২.৩৭
১৮৪.০০
৪,৭৯১.০১
৩৮৬.০৫
৬,৫৫৭.৪৬
১,৩৬৯.৪৯
২,৪৯৭.৩৬ £

৩২.৮০









– £

১,২৫৪.৫৯

১৮০.১৫









– £

২৬৪.৫৯









– £









– £

হিসাবের জন্য কোন একাউন্ট তৈরি করা হয়নি।
হিসাবের জন্য একাউন্ট তৈরি

এই কমিটি নিজস্ব রশিদ ব্যবহার করে সংগ্রহ করেছে

জানানো হয়েছে যে এই রশিদ দিয়ে কোন সংগ্রহ করা হয়নি

১ লন্ডন অ্যাকশন কমিটি (নিম্নে লন্ডন অ্যাকশন কমিটি দ্বারা সংগ্রহ করা রেজিস্ট্রি):
(ক) জনাব গৌড়ঙ্গ সাহা রায়, ৪১, তান্তালন রোড, লন্ডন, এস.ও.১২। ১
(খ) আতর আলি খান, ৪০, ম্যাপেল স্ট্রিট, লন্ডন, ও. আই. ১
(গ) জনাব সিরাজুল হক, ৩৮, অর্থর দেকিন হাউজ, লন্ডন, ই. আই. ৬
(ঘ) জনাব হারুন-অর-রশিদ,২৩, রেনটার’স অ্যাভেন্যু, লন্ডন, এন. ও. ৪ ১৭
(ঙ) জনাব স. রহমান, ২৭, ক্লিফটন রোড, সমুদ্রের দক্ষিন দিকের শেষে। ১০
(চ) জনাব এ. খাইর, ৭এ, ডোরসেট স্ট্রিট, লন্ডন, ও. আই. ১
(ছ) জনাব আব্দুল আহাদ, ১০, কিংস্টন হিল, লন্ডন। ১
(জ) জনাব শায়েস্তা মিয়া, ২৭৫, পুরাতন ব্রম্পটন রোড, লন্ডন, এস. ও. ৫ ১
(ঝ) জনাব আব্দুল হোসেন, ১১৩, ব্রিক লেন, লন্ডন, এ.১ ১
(ঞ) জনাব আব্দুল খালিক, মহারাজা রেস্তুরেন্ত,৫০, কুইন্সওয়ে,লন্ডন, ও. ২ ২
(ট) জনাব নাসির আলি, ৪, পোর্টল্যান্ড রোড, লন্ডন, এস.ই. ২৫ ৩
(ঠ) জনাব ফজলু মিয়া,১৯, সেল প্লেস, লন্ডন, ও.২ ১
(ড) জনাব গয়াস মিয়া, ৫০, ব্রিক লেন, লন্ডন, ই.১ ১
(ঢ) হাজি নাসিমুল্লাহ, ২৪,চিকস্যানড প্লেস, লন্ডন, এ.১. ১
(ন) জনাব আমজাদ আলি ২১, ইরিন হাউজ,লন্ডন, ই.১
জনাব এ. লন্ডন ১
(প) লন্ডন কমিটি হিসাব করতে পারেনি ৭ হারানো রিপোর্ট
২ এনফিল্ড কমিটি ১টি রিপোর্ট হারিয়ে
৩ লিউটন কমিটি ২৫টি রিপোর্ট পাওয়া যায়নি
৪ রিলিফ কমিটি , ফরধাম স্ট্রিট, লন্ডন, ই. ১ ১টি রিপোর্ট হারিয়ে
৫ আক্সব্রিজ কমিটি ১ ১
৬ আক্সব্রিজ কমিটি ২ ৩
৭ ডঃএম. এম.এ. জোয়ারদার, বিকেনহাম হাসপাতাল, নেল ১
৮. মৌলভীবাজার জনসেবা সমিতি ৩ টি রিপোর্ট হারিয়ে
৯. ব্রিজেন্দ কমিটি, কার্ডিফ ৬
১০. জনাব এইচ রাশিদ,১১,গরিং স্ট্রিট ১
১১. ডোরসেট কমিটি ৪ টি রিপোর্ট সাধারণ পোস্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে যাপৌঁছায়নি।
১২. শীফিলড কমিটি ৯
১৩. হ্যালিফ্যাক্স সংগ্রাম পরিষদ ১
১৪. স্কানথ্রপ কমিটি ১০
১৫. ম্যানচেস্টার কমিটি ২৭
১৬. ক্লিখেতন কমিটি ৪
_____________
মোট ১৫৩

কমিটির আবেদনসমূহের বিশ্লেষণ ব্যাবস্থা
স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি, ইউ.কে ১,২০০.০০
বাংলাদেশ লিবারেশন কাউন্সিল, মুজিবনগর ১,০০০.০০
___________
মোট ২,২০০.০০
স্ট্রিং কমিটি
১. সরঞ্জাম
(১) যুক্তরাজ্যের সাথে অ্যাকশন কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের জন্য
(২) বাংলাদেশের মানুষকে সাহায্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বস্তুগত ও নৈতিক সহায়তা পাঠাবার জন্য ।
(৩) বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।
(৪) সভা, সমাবেশ ইত্যাদি সংগঠিত করতে এবং বাংলাদেশের বাইরের মানুষের জনমত তৈরি করতে।
(৫) বাংলাদেশের মানুষের কারণ প্রচার করতে বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বে প্রতনিধি পাঠানো।
(৬) অ্যাকশন কমিটি থেকে তহবিল সংগ্রহ সমন্বয় সাধনের জন্য।
২. উপসংহার
(১) জনাব বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর পরামর্শ অনুযায়ী রিজলিউশন স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের কাজ এইভাবে প্রদান করবে।
নিম্নলিখিত মহোদয়গণ সর্বত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
(ক) জনাব আজিজুল হক ভুঁইয়া, আহ্বায়ক।
(খ) জনাব শেখ আব্দুল মান্নান, সদস্য।
(গ) জনাব শামসুর রহমান, সদস্য এবং
(ঘ) জনাব কবির চৌধুরী, সদস্য।
৮. মৌলভীবাজার জনসেবা সমিতি ৩ টি রিপোর্ট হারিয়ে
৯. ব্রিজেন্দ কমিটি, কার্ডিফ ৬
১০. জনাব এইচ রাশিদ,১১,গরিং স্ট্রিট ১
১১. ডোরসেট কমিটি ৪ টি রিপোর্ট সাধারণ পোস্টের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে যাপৌঁছায়নি।
১২. শীফিলড কমিটি ৯
১৩. হ্যালিফ্যাক্স সংগ্রাম পরিষদ ১
১৪. স্কানথ্রপ কমিটি ১০
১৫. ম্যানচেস্টার কমিটি ২৭
১৬. ক্লিখেতন কমিটি ৪
_____________
মোট ১৫৩

কমিটির আবেদনসমূহের বিশ্লেষণ ব্যাবস্থা
স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি, ইউ.কে ১,২০০.০০
বাংলাদেশ লিবারেশন কাউন্সিল, মুজিবনগর ১,০০০.০০
___________
মোট ২,২০০.০০
স্ট্রিং কমিটি
১. সরঞ্জাম
(১) যুক্তরাজ্যের সাথে অ্যাকশন কমিটির কার্যক্রম সমন্বয় সাধনের জন্য
(২) বাংলাদেশের মানুষকে সাহায্য এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বস্তুগত ও নৈতিক সহায়তা পাঠাবার জন্য ।
(৩) বাংলাদেশকে হানাদার বাহিনী থেকে মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন।
(৪) সভা, সমাবেশ ইত্যাদি সংগঠিত করতে এবং বাংলাদেশের বাইরের মানুষের জনমত তৈরি করতে।
(৫) বাংলাদেশের মানুষের কারণ প্রচার করতে বিভিন্ন দেশ ও বিশ্বে প্রতনিধি পাঠানো।
(৬) অ্যাকশন কমিটি থেকে তহবিল সংগ্রহ সমন্বয় সাধনের জন্য।
২. উপসংহার
(১) জনাব বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর পরামর্শ অনুযায়ী রিজলিউশন স্টিয়ারিং কমিটি গঠনের কাজ এইভাবে প্রদান করবে।
নিম্নলিখিত মহোদয়গণ সর্বত্র স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে কাজ করেন।
(ক) জনাব আজিজুল হক ভুঁইয়া, আহ্বায়ক।
(খ) জনাব শেখ আব্দুল মান্নান, সদস্য।
(গ) জনাব শামসুর রহমান, সদস্য এবং
(ঘ) জনাব কবির চৌধুরী, সদস্য।
প্রতিনিধি দলের খরচ
মুক্তি বাহিনী :
মুক্তি বাহিনীদের সরঞ্জাম ৩১৩৭.৬৮
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের জন্য খরচ ১,২২০.৭৩
______________
৪৩৫৮.৪১
কমিটির অবদান ১.৫৮৩.০০
রাজধানী জিনিসপত্র ও আসবাবপত্র ৩৬২.১০
_______________
২১,৭৮২.০৫
মোঃ আব্দুল হক ভুঁইয়া
শেখ আব্দুল মান্নান
শামসুর রহমান

স্টিয়ারিং কমিটি অফ দ্য অ্যাকশন
কমিটি অফ বাংলাদেশ ইন ইউ.কে.
র পক্ষে

দখলক্রিত বিবৃতি আমি দেখেছি যা, কমিটির বই এবং রেকর্ড অনুযায়ী আমার মতামত এবং আমি প্রত্যয়ন করছি যে এই বিবৃতি রাষ্ট্রের কমিটি বিষয়ে সত্য এবং ন্যায্য বিবৃতি প্রকাশ করে।
কাজী মুজিবুর রহমান
চার্টার্ড হিসাবরক্ষক
১৬৪. ব্রুমউড রোড
লন্ডন, এস.ও.১১
৩০ সেপ্তেম্বর,১৯৭২

বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী কর্ম কমিটি গঠিত নির্বাচিত স্টিয়ারিং কমিটি, যুক্তরাজ্য
১৬ই এপ্রিল ১৯৭১ থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের রশিদ এবং শোধের বিবৃতি
বাংলাদেশ ফান্ডের অবদান ২১,৭৮২.০৫
কেটে রাখা পেমেন্ট ১০,৫৬.০৪
ভাড়া রেট, লাইটার এবং তাপ ১,১৮৭.৫৮
টেলিফোন এবং টেলিগ্রাম ৪,২৮৮.৭৬
প্রচার, মিটিং এবং র্যা লী ৪৬২.৫৯
প্রকাশিনী এবং বুকলেট ইত্যাদি ৩,০৫৫.১১
প্রতিনিধি দলের খরচ ১,১৪০.০৭
ভ্রমনকালীন খরচ ২০০.০০
ল্যাঙ্কা দ্বারা কম অবদান ৯৪০.০৭

সেচ্ছাসেবীদের খরচ ১,৯০০.৪৭
ডাকমাশুল মুদ্রণ ও ষ্টেশনারী ৬৯৮.৬৩
বিজ্ঞাপন ১,৪৮৬.০২
বিনোদন ২৭০.৮৬
সাধারণ খরচ ১৩১.৫৮
মুক্তিবাহিনীদের সরঞ্জাম ৩,১৩৭.৬৮
বাংলাদেশ থেকে ডেলিগেশনের খরচ ১,২২০.৭৩
অ্যাকশন কমিটি অবদান ১,৫৮৩.৮৩
আসবাবপত্র, রাজধানী ও জিনিসপত্র ৩৬৪.১০
৬,৩০৪.৩৪
_________________________
২১,৭৮২.০৫
ব্যলেন্স নিল
নোটঃ সমস্ত সম্পদ যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের মানুষের জন্য হাই কমিশনে স্থানান্তরিত করা হয়।
মোঃ আব্দুল হক ভুঁইয়া
শেখ আব্দুল মান্নান
শামসুর রহমান
স্টিয়ারিং কমিটি অফ দ্য অ্যাকশন
কমিটি অফ বাংলাদেশ ইন ইউ.কে-র পক্ষে

অ্যাকশন কমিটির অবদানের বিশ্লেষণ
স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটি ৭৬৫.০০
অ্যাকশন বাংলাদেশ ২৫০.০০
অপারেশন ওমেগা ১০০.০০
সান্দ্রে অবদান ২৫.৮৩
বাংলাদেশ আকশন কমিটি হল্যান্ড ৩০০.০০
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি সুইডেন ৭৫.০০
এনফিল্ড অ্যাকশন কমিটি ৬৮.০০
___________________________
মোট- ১,৫৮৩.৮৩

_ _ _ _

<৪,২৯৪,৬৯৪-৬৯৮>
অনুবাদকঃ শিরোনামহীন-১
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৪। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আবুল এইচ. সাদউদ্দিনের চিঠিপত্র ব্যক্তিগত চিঠিপত্র এপ্রিল-মে, ১৯৭১

এথনোম উজিকোলজি
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
লস এঞ্জেলস – ৯০০২৪
২৭ এপ্রিল, ১৯৭১
জনাব সিনেটর,
আমাদের এই সংকটময় মুহূর্তে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাংলাদেশ (প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান) এর সকল স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দকে সরিয়ে দেয়ার যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে এবং আমার দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর যে ভয়ংকর বর্বরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তা দেখে আমরা নির্বাক ও হতবাক হয়ে পড়েছি। আমার ভাই-বোনেরা রক্তপিপাসু পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হিংস্র নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরে প্রতিবাদী সব কণ্ঠ রোধ করে দেয়া হয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হল মার্কিন সরকারের কেউ এখনও পর্যন্ত এই বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করেনি এমনকি তাদের দেশ থেকে সরবরাহকৃত অস্ত্র দ্বারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক আমাদের প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, উকিল, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীসহ নিরাপরাধ মানুষদেরকে নির্মমভাবে হত্যার বিরুদ্ধে কেউ নিন্দাও জানায়নি। অত্যন্ত দুঃখজনক! প্রেসিডেন্ট নিক্সন চার্লস ম্যানসনকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন, অথচ বাংলাদেশে যা ঘটছে, সে সম্পর্কে তিনি খুব সচেতনভাবেই কিছু জানার বা বলার বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। আমেরিকার এই নীরবতা খুবই লজ্জাজনক।
দয়া করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্ষমতার এই দম্ভকে প্রতিহত করতে আওয়াজ তুলুন যাতে করে বাংলাদেশের মানুষগুলোকে বাঁচতে পারে। সরকার যদি গণমানুষের জন্য কাজ করতে না-ই পারে, তবে রাজনৈতিক ক্ষমতা কেবল অস্ত্রের মুখেই অর্জন করা সম্ভব বলে আমরা ধরে নেব। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই আমরা স্বাধীন হবই। বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতার নাম।
রেড চায়নার প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের চরমপন্থী উপাদানসমূহের পক্ষে সমস্ত মধ্যপন্থী শক্তিগুলোকে উচ্ছেদ করার একমাত্র উদ্দেশ্যটি যদি সত্য হয়ে থাকে (দ্রষ্টব্য লস এঞ্জেলস টাইমস; বৃহষ্পতিবার, ২২ এপ্রিল, ১৯৭১) তবে ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রেরই বিপদ হবে। কিন্তু একই সাথে এটাও আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আপনাদের সামরিক সম্পৃক্ততা বা হস্তক্ষেপ কোনভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
জনাব সিনেটর, আপনার কাছে আমাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ, দয়া করে পাকিস্তানকে সামরিক ও অর্থনৈতিক উভয়রূপেই সাহায্য প্রদান বন্ধ করুন। বাংলাদেশ অভুক্ত থেকে হলেও স্বাধীনতা অর্জন করবেই। অনুগ্রহ করে লক্ষ্য রাখবেন যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে কোন শিক্ষাগত বৃত্তি ও অনুদান কিন্তু নেই।
পাকিস্তানিদের প্রতি যেকোন ধরণের বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ করে দিলেই পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নির্মম হত্যাযজ্ঞের প্রতি অসম্মান জানানো হয়। এতে করে পাকিস্তানি জেনারেলদের টনক নড়তে পারে।
আমার ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা রইল।
বিনীত নিদেবক
(আবুল এইচ.সাদউদ্দিন)
৩৫ লিবারেল সিনেটর
ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান
ইউ এস সিনেট
ক্যাপিটাল হিলস
ওয়াশিংটন ডিসি
——————–

৫০৫ গ্যালেই অ্যাভিন্যু
৪০১ লস এঞ্জেলস
ক্যালিফোরনিয়া – ৯০০২৪
৬ মে, ১৯৭১
সভাপতি
ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়
ব্লুমিংটন, ইন্ডিয়ানা – ৪৭৪০৫

জনাব,
আমার দেশে (প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান)পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক এখনও পর্যন্ত নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর ঘৃণ্য বর্বরতা চালানো হচ্ছে, যার পরিপ্রেক্ষিতেসম্প্রতি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে এবং বাংলাদেশ (বেঙ্গল) নামে নতুন গঠিন সরকার ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। এই বিষয়ের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র(১৯৬৪) হবার সুবাদে আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে লিখছি।
পাকিস্তান থেকে খুব অল্পই প্রতিবদন বের হচ্ছেযার কারণেবেশিরভাগ খবর আমেরিকানদের কাছেও পৌছায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে সামরিক নৃশংসতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, কখনও কখনও সপরিবারে। নিম্নে নিহতদের একটি আংশিক তালিকা আমার বক্তব্যকে বৈধতা দিতে সাহায্য করবে। আপনার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কয়েকজন প্রফেসর হয়ত এই হতভাগ্য প্রফেসরদের কাউকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবার কারণে ব্যক্তিগতভাবে চিনেও থাকতে পারেন। ঢাকা বা চট্টগ্রামের কোন আমেরিকান শরণার্থীর কাছ থেকে সরাসরি কোন রিপোর্ট পেয়ে থাকলে আমার বর্ণনাকে বরং কমই মনে হবে আপনার কাছে।
বাংলাদেশি জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর (অফিসার ও তালিকাভুক্তদের ৯৫%ই পশ্চিম পাকিস্তানি; বাঙালি অফিসার হাতেগোণা কয়েকজন, তারা কখনই লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের ওপরে প্রোমোশন পান না) এই নির্মম বর্বরতার পরিপ্রেক্ষিতে আমি আপনাকে তীব্র নিন্দা জানানোর জন্য এবং আমাদের জনগণের মূল্যবান প্রাণের অমর্যাদা করার জন্য পাকিস্তানি সামরিক সরকারের প্রতি ধিক্কার জানোনোর আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় পশ্চিম পাকিস্তানের পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় (শিক্ষা) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ব্যবসায় শিক্ষা)- উভয়কেই সহযোগিতা দিয়ে থাকে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবেআপনার কাছে আকুল আবেদনযে, আপনি, অন্যান্য কর্মকর্তা ও ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ডিনবৃন্দ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ঘৃণ্য বর্বরতার প্রতি তীব্র প্রতিবাদ ও ঘৃণা জানিয়ে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়কে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সবধরনের সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকবেন। একজন পশ্চিম পাকিস্তানি শিক্ষার্থীও যেন আপনার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ বছর কোন বৃত্তি বা অনুদান না পায় দয়া করে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য প্রদান যেন সঙ্গত কারণেই বন্ধ না হয়।
এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং আশ্চর্যজনক যে, বর্তমানে চলতে থাকা এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনাগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাকিস্তানের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে! এখন হিটলারের জার্মানির ‘ইহুদী সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান’কেনাজ্জি জার্মানির “অভ্যন্তরীণ সমস্যা’ হিসেবে ধরে নিয়ে নিজেকে প্রবোধ দিলে নিশ্চয়ই ভুল হবেনা!
ধারণা করছি যে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে কোন বাঙালি ছাত্র নেই। আমার মনে হয়েছে যে চুপ করে থাকা যখন লজ্জার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তখন কাউকে না কাউকে তো আওয়াজ তুলতেই হবে। তাই আপনাকে এই চিঠি লেখা।
ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইল।
বিনীত নিবেদক
(আবুল এইচ.সাদউদ্দিন)
শিক্ষা সহকারী
এথনোমিউজিকোলজি ইন্সটিট্যুট
ইউসিএলএ

———————
জনাব আবুল সাআদুদ্দিন
এথনোমিউজিকোলজি
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি
লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া ৯০০২৪

যুক্তরাষ্ট্র সিনেটরবৃন্দ
শ্রম ও জনকল্যাণ কমিটি
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৫১৩
২০ মে, ১৯৭১

জনাব সাদউদ্দিন,
আপনার চিঠি এবং পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির প্রমাণস্বরূপ সংযুক্ত কাগজপত্রের জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
আপনার দেশে গত কয়েক মাস ধরে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলো প্রকৃতপক্ষেই দুঃখজনক। সেসব আমাদের দৃষ্টি ও মনযোগ আকর্ষণ করেছে।
আপনি হয়ত অবগত আছেন যে, সিনেট আইনে পাকিস্তানে অস্ত্র চালান বন্ধের বিষয়টি আছে এবং সিনেটে এ সংক্রান্ত আলোচনায় আমি অবশ্যই ব্যবস্থাটি গ্রহণের পক্ষে সমর্থন জানাব।
আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের হতভাগ্য ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের জন্য জাতিসংঘ সাহায্য পাঠাবার কথা চিন্তা করছে এবং আশা করি অচিরেই সেসব পৌঁছে যাবে।
গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন বলে খুশি হলাম। নিশ্চয়তা দিচ্ছি যে এই বিষয়ে আমি আমার প্রতিজ্ঞা ও সম্পৃক্তি বজায় রাখব। আপনার দেশের জনগণের ভয়াবহ এই দুর্দশা নিরসনে গৃহীত যেকোন ব্যবস্থাকে আমি অবশ্যই সমর্থন জানাব।
বিনীত
অ্যালান ক্র্যান্সটন
ক্যালিফোর্নিয়া

———————–
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট
বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি
ওয়াশিংটন, ডিসি ২০৫১০
২১ মে, ১৯৭১
প্রিয় বন্ধু,
পাকিস্তানের দুঃখজনক পরিস্থিতির বিষয়ে যোগাযোগ করার জন্য ধন্যবাদ। সময় করে লিখার জন্য প্রশংসা রইল।
আপনি জেনে খুশি হবেন যে, বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটি মে মাসে পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাত না মেটা পর্যন্ত সামরিক সহযোগিতা পাঠানো স্থগিত রাখা এবং সাধারণ ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই ব্যাপারে আপনার সম্পৃক্তির কারণে আমার ধারণা এস.কন.রেস.২১ এর কমিটি রিপোর্টটি পড়তে আপনি আগ্রহী হবেন। একটি কপি সংযুক্ত করা হল।
অন্য একটি চিঠির আদলে লেখার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি, কারণ এই বিষয়ে আমার কাছে এতো চিঠি এসেছে যে প্রত্যেককে আলাদা করে উত্তর দেয়াটা অসম্ভব ছিল।
বিনীত
জে.ডব্লিউ.ফুলব্রাইট
চেয়ারম্যান
——————-
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট
বিচারক কমিটি
ওয়াশিংটন ডিসি ২০৫১০
২৪ মে, ১৯৭১
জনাব আবুল এইচ.সাদউদ্দিন
৫০৫, গ্যালেই অ্যাভিনিউ ৪০১
লস এঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া ৯০০২৪

জনাব সাদউদ্দিন,
আমার সাথে মতপ্রকাশের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
পাকিস্তানি গৃহযুদ্ধে মার্কিন অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার আমাকে গভীরভাবে বিচলিত করেছে। যদিও পাকিস্তানিদের হাতে ইতোমধ্যে পৌঁছে যাওয়া মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কিছুই করার নেই, কিন্তু একথা আমরা স্পষ্ট করে বলতে পারি যে, পরবর্তীতে আর কোন সামরিক সাহায্যের যোগান পাঠানো হবে না। রাষ্ট্রপতিকে এই বিষয়ে আমার অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য আমি এস.কম.ফি ২১ এ পৃষ্ঠপোষকতা করেছি, যা পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত দ্বন্দ্ব না থামা পর্যন্ত পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক সাহায্য প্রদান স্থগিত রাখা এবং ভয়ংকর এই সংঘর্ষ শেষ হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তানে সমস্ত সামরিক দ্রব্যাদি বিক্রয়ের লাইসেন্স স্থগিত রাখা নিশ্চিত করবে। আমরা সবাই আশা ও প্রার্থণা করছি যে, পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যেন ভবিষ্যতের যেকোন প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায়।
আপনার চিঠি পেয়ে ভাল লাগল এবং আশা করছি যে আমাদের দেশের সাথে জড়িত যেকোন বিষয়ে আপনি নির্দ্বিধায় আমাকে লিখবেন।
বিনীত
বার্চ বায়ে
যুক্তরাষ্ট্র সিনেট
ইন্ডিয়ানা

<৪,২৯৫,৬৯৯-৭০০>
অনুবাদকঃ শিরোনামহীন-১
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৫।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রচারিত ‘টু এ্যাপিলস’ এ এম মুহিত সংকলিত ‘Thoughts in Exile’ ২৮ মার্চ, ১৯৭১

দু’টি আবেদন
২৮ মার্চ, ১৯৭১
প্রেক্ষাপট
মাত্র চার মাস আগেই বাংলাদেশের (প্রাক্তন পূর্ব পাকিস্তান) মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানা একটি সাইক্লোনের কারণে আধুনিক কালের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগটির সম্মুখীন হয়েছে। সেসময়ে সামরিক শাসকদের চূড়ান্ত ঔদাসীন্য আর চরম অবহেলা প্রত্যক্ষ করেছে পুরো পৃথিবী। আর আজ আধুনিককালের সবচাইতে বড় মানবসৃষ্ট দুর্যোগটিও তৈরি করছে সেই একই সামরিক জান্তা।
গত তিন দিন ধরে হানাদারবাহিনী মেশিন গান ও বোমা দিয়ে নিরস্ত্র জনগণের ওপর সীমাহীন অত্যাচার চালাচ্ছে। বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হয়েছে হাসপাতাল, ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে শরণার্থী শিবিরসমূহ, নিরস্ত্র মানুষকে কেটে ফেলে দেয়া হছে রাস্তায় – ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিক কর্তৃক বিশ্ব মিডিয়ার কাছে ঠিক এই চিত্রটিই পাঠানো হয়েছে, ধংসযজ্ঞ শুরু হবার পর। এটা হল হানাদারবাহিনীর ভয়ংকর উদ্দেশ্যের একটি অংশ, যেখানে তারা বিদেশি সাংবাদিকদেরকে অস্ত্রের মুখে লাঞ্ছিত করাটাকে জরুরি মনে করছে। যা ঘটছে, তা হল আধুনিক ইতিহাসের একটি নজিরবিহীন হত্যাকাণ্ড।
অত্যন্ত সচতুরভাবে বাংলাদেশের মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, কারণ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে জেনারেল ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে থাকা সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা তুলে দেয়ার দাবি করার সাহস তারা করেছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সময় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এই প্রতিজ্ঞাটি করেছিল জেনারেল ইয়াহিয়া এবং গত বছর অক্টোবরে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ সমাবেশে তা পুনরায় করা হয়েছিল। এই মাসের ঘটনাসমুহে এটাই স্পষ্ট যে, সামরিক জান্তার আসলে জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দেবার কিংবা বাংলাদেশের ওপর থেকে তাদের ঔপনিবেশিক শাসন তুলে নেয়ার কোন উদ্দেশ্য নেই। জনগণকে হত্যা করে হলেও বাংলাদেশকে তাদের উপনিবেশ হিসেবে রাখার ব্যাপারে তারা দ্বিধাহীন।
বাংলাদেশের জনগণও পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকদের হাত থেকে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে মুক্ত করার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
এই যুদ্ধের ফলাফল নিয়ে আর কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। তারা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সমৃদ্ধ আর আমরা আমাদের নিজ অবস্থানে অপ্রতিরোধ্য বিশ্বাস নিয়ে অনড়। ওরা সম্পদলোভী, আমরা মুক্তিযোদ্ধা। ওরা সংখ্যায় কম, আমরা অনেক। ওদের নৈতিকতা দূর্বল। আমরা নৈতিকভাবে শক্তিশালী। ওরা কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হতে পারে, কিন্তু মূল সংগ্রামে আমরাই জিতব।
যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও সরকারের কাছে আবেদন
যে সংগ্রাম এখন বাংলাদেশে চলছে, তাহল বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির সাধারণ আন্দোলনেরই একটি অংশ। দুই শতাধিক বছর আগে মার্কিন জনগণ তাদের দূরবর্তী শাসকদের কাছ থেকে মুক্তির জন্য যে আন্দোলন করেছিল, তার চেয়ে এটি আলাদা কিছু নয়। আমেরিকায় ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মত, পূর্ব পাকিস্তানেও রক্তপাত ঘটছে হাজার মাইল দূরের ভিনদেশি শাসকদের স্বার্থের জন্য। আপনাদের মতই, আমরাও আমাদের কল্যাণের প্রতি উদাসীন দূরবর্তী এক সরকারকে ভোটপ্রদানের ক্ষমতা ছাড়াই কর প্রদান করে যাচ্ছি। আপনাদের মত আমরাও আত্মসংকল্পের অধিকার চর্চার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনাদের মত আমরাও যেকোন উপায়েই হোক কঠোর থাকব।
মার্কিন জনগণের মহৎ ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার পর বাংলাদেশের জনগণের আর কোন সন্দেহ নেই যে, মার্কিন সরকার ও তাদের জনগণ বাংলাদেশের এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সময় এখন সবচেয়ে দামি। নিরাপরাধ মানুষগুলোকে বাঁচানোর এখনই হল সময়।
মানবতার খাতিরে আমরা আপনাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে হাজার হাজার নিরাপরাধ নাগরিকদের এই এলোপাতাড়ি হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
আমাদের শোষকদেরকে সাহায্য না করলেই আমাদেরকে সাহায্য করা হয়। ইয়াহিয়া শাসকগোষ্ঠীকে সামরিক কিংবা অর্থনৈতিক যেকোন প্রকারের সাহায্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে আমরা আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
বিশ্বের জনগণ ও সরকারের কাছে আবেদন
যে সংগ্রাম এখন বাংলাদেশে চলছে, তা হল বিশ্বব্যাপী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির সাধারণ আন্দোলনেরই একটি অংশ। পূর্ব পাকিস্তানেও রক্তপাত ঘটছে হাজার মাইল দূরের ভিনদেশি শাসকদের স্বার্থের জন্য। আমাদের কল্যাণের প্রতি উদাসীন দূরবর্তী এক সরকারকে ভোটপ্রদানের ক্ষমতা ছাড়াই কর প্রদান করে যাচ্ছি। আমরাও আত্মসংকল্পের অধিকার চর্চার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমরাও যেকোন উপায়েই হোক কঠোর থাকব।
বাংলাদেশের জনগণের কোন সন্দেহ নেই যে, আপনার সরকার ও তাদের জনগণ বাংলাদেশের এই দানবীয় হত্যাযজ্ঞ থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে। সময় এখন সবচেয়ে দামি। নিরাপরাধ মানুষগুলোকে বাঁচানোর এখনই হল সময়।
মানবতার খাতিরে আমরা আপনাদের ক্ষমতা ব্যবহার করে হাজার হাজার নিরাপরাধ নাগরিকদের এই এলোপাতাড়ি হত্যাযজ্ঞ বন্ধের আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
আমাদের শোষকদেরকে সাহায্য না করলেই আমাদেরকে সাহায্য করা হয়। ফ্যাসিবাদী ইয়াহিয়া সরকারের বিরুদ্ধে জারি করে আমাদেরকে সাহায্য করার আবেদন জানাচ্ছি।
নতুন গঠিত স্থানীয় সরকারকে স্বীকৃতি জানিয়ে আমাদেরকে সাহায্য করুন। তাতক্ষণিকভাবে এই গণতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকৃতি জানাতে আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন রইল।
যুক্তরাষ্ট্রের বাঙালি সমাজ

<৪,২৯৬,৭০১>
অনুবাদকঃ শিরোনামহীন-১
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৬। পাকিস্তানের ওয়াশিংটন দূতাবাসে বাঙ্গালি কূটনীতিকের প্রতি অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদলিপি এ এম মুহিত সংকলিত ‘Thoughts in Exile’ ১৯ এপ্রিল, ১৯৭১

একটি প্রতিবাদলিপি
মেসার্স এম এফ বান, মুহিদ চৌধুরি এবং মোশতাক আহমেদ
১৯ মে, ১৯৭১
আমরা ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ থেকে বড় উদ্বেগ ও হতাশা সাথে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি সরকারের কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করে আসছি। হাজার হাজার নিরাপরাধ ও নিরস্ত্র বাঙালিকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা ও স্বায়ত্তশাসনের গণতান্রিক একটি আন্দোলনকে পাশবিকভাবে দমন করার ঘটনায় আমরা হতাবাক। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বরতা এবং সরকারের এই অমানবিক কারযক্রম চালিয়ে যাওয়ার যে আপাত উদ্দেশ্য, তাতে করে এই সরকারের সাথে কোনরকম সম্পৃক্ততা রাখাটা আমাদের মর্যাদাবোধ ও নৈতিক যথার্থতার পরিপন্থী।
১৯৭১ সালের ১৭ মে তে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সভায় পররাষ্ট্র নীতির পূর্ব পাকিস্তানবিষয়ক এশিয়ান ও প্যাসিফিক নীতির সাবকমিটির শুনানিতে উপস্থিত দূতাবাসের সহকারী শিক্ষা অফিসার জনাব এম আর খানের অহেতুক চাকরিচ্যুতি শীর্ষক সারসংক্ষেপে বাঙালিদের প্রতি পাকিস্তানি সরকারের অমর্যাদাপূর্ণ আচরণের আরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। অধিবেশনটি ছিল জনগণের সবার জন্য উন্মুক্ত, যেখানে এম আর খান অংশগ্রহণ করেন এবং তিনি ছিলেন সেখানে কেবল একজন দর্শক হিসেবে। তিনি সেখানে কোন বক্তব্য দেন নি এবং তার উপস্থিতিও বিশেষভাবে চোখে পড়ার মত ছিল না। একই অধিবেশনে অন্যান্য পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তান দূতাবাসের উপদেষ্টা জনাব আকরাম জাকি।
জনাব খানকে ‘অসদাচরণ’ এর অভিযোগে চাকরিচ্যুত করার জন্য দূতাবাসের এই ঘটনা স্থগিত করা ছিল একটি অজুহাতমাত্র
, যা স্পষ্টটতই পাকিস্তান সরকারের এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাঙালিদেরকেও নিপীড়ন করার প্রবণতার প্রমাণ দেয়।
আমরা এই ঘটনাকে একই সঙ্গে অপমানজনক ও পক্ষপাতমূলক হিসেবে বিবেচনা করি, কারণ একই অপরাধের কারণে একজন বাঙালি কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে, কিন্তু কোন পশ্চিম পাকিস্তানিকে নয়, যদি তা আসলেই অপরাধ হয়ে থাকে।

<৪,২৯৭,৭০২-৭০৫>
অনুবাদকঃ নাজিয়া বিনতে রউফ
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৭। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্যে বাঙ্গালী কূটনীতিক এ.এম. মুহিতের স্মারকলিপি এ.এম. মুহিত সংকলিত ‘Thoughts in exile’ ১৯ এপ্রিল, ১৯৭১

রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের উদ্দেশ্যে স্মারকলিপি
প্রায় পনের বছর আগে আমি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলাম এবং যেহেতু পাকিস্তান এখন আর অখন্ড নয় তাই দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমি পাকিস্তান সরকার থেকে নিজেকে পৃথক করার ঘোষণা দিচ্ছি।
২২ বছর বয়সী তরুণ হিসেবে, নিজের জন্য ও নিজের দেশের জন্য উচ্চাশা নিয়ে আমি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেই। পাকিস্তান ছিল আমার তরুণ বয়সের স্বপ্নের ভূখন্ড- উন্নত সংখ্যাগুরু সম্প্রদায় দ্বারা সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণ আর ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরাধীনতার বিরুদ্ধে ভারতবর্ষের মুসলিমদের বিদ্রোহের স্বার্থকতা। সিভিল সার্ভিসকে আমার শুধু উন্নত জীবন যাপনের মাধ্যম হিসেবেই নয় উপরন্তু আমার দেশের গরীব মানুষের সেবা করার মাধ্যম হিসেবেও প্রতীয়মান হয়েছিল। আমার জানামতে আমি যথাযথ আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সাথে দেশের সেবা করার চেষ্টা করেছি যার জন্যে ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে আমাকে স্বীকৃতিও দেয়া হয়েছে। আস্থা ও ভরসাপূর্ণ বিভিন্ন পদের দায়িত্ব আমার কাঁধে অর্পিত হয়েছিল, পূর্ব-পাকিস্তান সরকারের জেনারেল আযম খানের উপ-সচিব হিসেবে আমার ব্যস্ত কিন্তু সংক্ষিপ্ত মেয়াদ আমি উপভোগ করেছি। রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অধীনে প্রায় তিন বছর ও তারপর আপনার অধীনে স্বল্পমেয়াদে মন্ত্রিপরিষদের উপ-সচিব হিসেবে কাজ করাকে আমি বিশেষ সুযোগ বলে মনে করি। ১৯৬৬ সালে আমি তামিঘা-এ-পাকিস্তান নাগরিক পুরষ্কার লাভ করি।
পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে আমি সরকারী চাকুরীর সময় সমানভাবে কাটিয়েছি ও আমার অন্যান্য সহকর্মীদের মতো আমিও বুঝতে পেরেছি যে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সুবিচার করা হচ্ছে না এবং বাঙ্গালীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এটা অস্বীকার করা যাবে না, পাকিস্তান যে আদর্শের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি- এক সম্প্রদায় দ্বারা অন্য সম্প্রদায়কে ও এক অঞ্চল দ্বারা অন্য অঞ্চলকে শোষণ বেড়েই যাচ্ছিল, শ্রেণী, ভাষা ও স্থান নির্বিশেষে নাগরিকদের কাছে সমান সু্যোগ কখনও পৌঁছায় নি, সমাজ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের গণতান্ত্রিকীকরণ ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি কখনও সম্পূর্ণ আশাহীন মনে হয়নি। বেসামরিক প্রশাসনে বাঙ্গালীর অংশগ্রহণ বাড়ছিল যদিও বৃদ্ধির হার খুবই হতাশাজনক ছিল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ বাড়বে বলে আপনার ভাল সত্ত্বা আশা ধরে রাখলেও এই রাস্তা কন্টকপূর্ণ হবে সেটা বিশ্বাস করার পেছনে সকল কারণই ছিল। অর্থনৈতিক উন্নয়নে ত্বরণ বিভিন্ন মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল কিন্তু সেটাও আক্রোশবিহীন ছিল না। আমাদের পশ্চিম পাকিস্তানীদের শোষণের নীলনকশা অবশেষে আলোর মুখ দেখছিল। আমাদের ব্যবস্থায় একজন সরকারী চাকুরের জন্যে দলীয় রাজনীতি সহজ কথা নয় কিন্তু আমি যা বলছি তা দলীয় রাজনীতির ব্যাপার নয়, এটা আমাদের সিংহভাগ জনগণের মঙ্গলের ব্যাপার, জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্বের খুবই মৌলিক একটা বিষয়।
আপনি নিজেই বলেছেন, পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী পুরো দেশের জন্যে ও বিশেষ করে বাঙ্গালীদের জন্য খুবই উদ্বেগ ও বেদনার উৎস। ঠিক যখন দেশ একটা গণতান্ত্রিক যুগে প্রবেশের দেরগোরায় ছিল, তখনই দেখা গেল যে, সামাজিক কাঠামো ও জাতীয়তার ভিত্তি নৃশংসভাবে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আমরা যারা দেশের বাইরে আছি, তারা ডিসেম্বর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক উন্নয়ন নিরব যন্ত্রণায় পর্যবেক্ষণ করছি। এমনকি পূর্ব পাকিস্তানে ছয় দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে স্বায়ত্বশাসনের প্রতি এত বিশাল সমর্থন প্রতিফলিত হবার পরও পাকিস্তানের ক্ষমতাধররা সেদিকে কান দেননি। এর পরিবর্তে পরিষদের অধিবেষণ স্থগিত করতে রাজী হয়ে ও বিচ্ছিন্নতাবাদী অনুভূতিকে উপরের হাত শক্ত করতে দিয়ে আপনি এতদিন নেয়া সকল উদ্যোগ হারিয়েছেন।তবে পাকিস্তানকে নিয়ে আশা আবার পুনর্জাগরিত হয় যখন মার্চের মাঝামাঝি আপনি আলোচনা আবার শুরু করেন। কিন্তু সকল আশা ভেঙ্গে যায় যখন নৃশংস ক্রাক-ডাউনের খবর আসে। পুরো একটা দিন না যাওয়া পর্যন্ত এই সামরিক আঘাতের তাৎপর্য ও উদ্দেশ্য জানা সম্ভব হয় নি। ঐসময় থেকে সরকারী চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাপ্ত খবর ও অন্য সকল উৎস থেকে প্রাপ্ত খবরে এত বৈসাদৃশ্য ছিল যে পরিস্থিতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা কঠিন ছিল। সময়ের পরিক্রমায় এই সুবিশাল ট্রাজেডি নিজ মহিমায় উদ্ভাসিত হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রের বিলম্বিত ঘোষণা তিন বছর আগের অনুরুপ প্রচেষ্টার (কুখ্যাত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা) মতোই অবিশ্বাসযোগ্য ছিল। যা সত্য মনে হচ্ছিল তা হল শোষণের অবসান ঘটিয়ে মানুষের কাছে ক্ষমতা সমর্পণ করার মাধ্যমে পাকিস্তানে আধিপত্য বিস্তারকারী কায়েমী স্বার্থসমূহের সমন্বয় সাধন করা যায় নি; বরং একটি রাজনৈতিক সঙ্কটের সামরিক সমাধান করার চেষ্টা করা হচ্ছিল।
মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি যেমন খড়কুটো আকড়ে ধরে তেমনি আমিও, আমার স্বদেশী অনেক মানুষের মতো নিকষ কালো মেঘের মধ্যেও আশার আলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম। আমি আশা করে আছি যে সামরিক অপারেশনের নামে এই উন্মাদ কার্যকলাপ বন্ধ করা হবে। আমি আশা করছি যে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে আনতে আপনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। আমি প্রার্থনা করছি যে আপনি শেষ পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের সাথে একটা বোঝাপড়ায় আসবেন ও বাঙ্গালীদের স্বায়ত্বশাসনের অধিকারের অনুমোদন দেবেন(একটি প্রক্রিয়া যার জন্য আমাদের দেশ চিৎকার করে কাঁদছে)। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল একটিও সুস্থ মস্তিষ্কের যুক্তিসঙ্গত পদক্ষেপ আপনার সরকার নেয়নি। আপনার বহুল প্রতীক্ষিত ২৮শে জুনের ঘোষণা যেভাবে দেয়া হয়েছে তা বেদনাদায়ক হতাশা নিয়ে এসেছে। এই বিবৃতি আশা বা ভরসার জন্য কোন জায়গা রাখেনি। অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তানে সকল নাগরিক অধিকার দমন করে ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে ও অবশেষে পাকিস্তানের উভয় পক্ষের অর্থনীতি ধ্বংস করে, সর্বোপরি সরকার সকল কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।
যদিও এটা দাবি করা হচ্ছে যে ভ্রান্ত পথে চলমান একদল অল্প কজন মানুষ দেশ ভাঙ্গার চেষ্টা করছে, শাস্তি কিন্তু সম্পূর্ণ বাংলাদেশকেই নির্বিচারে দেয়া হচ্ছে। যেকোন অজুহাতে বাঙ্গালী মারা হচ্ছে ও সম্পদ বিনাশ করা হচ্ছে। বস্তি এলাকা উজাড় হওয়া, গোলাগোলি ও নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক আচরণ, যোগাযোগ নেটওয়ার্কে নাশকতা প্রতিরোধ, দুষ্কৃতিকারীদের অনুসরণ ও অন্যান্য অনেক অজুহাত হল এর ছোট কিছু উদাহরণ মাত্র। বাঙ্গালী হিন্দু সম্প্রদায়ের যে ৮ মিলিয়ন পদদলিত অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে যাদের বিগত ২২ বছরে ভারতে আশ্রয় নেবার ইচ্ছা বা উপায় কোনটাই ছিল না তাদের দ্বারা নাকি ৬৪ মিলিয়ন বাঙ্গালী মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছে, এমন একটা অপমানজনক অজুহাতের ভিত্তিতে আপনার সরকার পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দুদের শেষ করার একটা ঘৃণ্য উদ্দেশ্য অনুসরণ করছে। গত তিন মাস যাবৎ এতটাই অবিবেচনাপ্রসূত সামরিক অপারেশন চলছে যে পূর্ব পাকিস্তানে এখন জীবিত থাকার ঘটনাটাই সবচেয়ে বড় বিলাসিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার এখন তার নাগরিকদের জীবন ও সহায় সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বদলে দেশ ও জনগণের ধ্বংস করার দায়িত্ব নিয়েছে। দেশপ্রেমিক জনসাধারণ এক বিদেশ ভূমিতে প্রবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে যে দেশ আগে কখনও আমাদের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল না। পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের ভিতরে ও বাইরে উভয় দিকে নাগরিকদের রোগে ও অনাহারে মারা যাতে বাধ্য করা হচ্ছে। আপনার সরকার পাকিস্তানে (পুর্ব ও পশ্চিম উভয় অংশ) খবর পাঠানো ও পাকিস্তান থেকে খবর নেয়া উভয়ই এত কঠিন বানিয়ে রেখেছে যে, শর্ষের মধ্য থেকে ভূত বের হবার ভয়ে আপনি ভীত এই সিদ্ধান্তে আসা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। প্রকৃতপক্ষে দেশে সম্পূর্ণরুপে ত্রাসের রাজত্ব চলছে আর রহস্য সৃষ্টি করার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের এই বর্ণনাতীত নৃশংসতা শুধু আরও তীব্রতর হচ্ছে।
পূর্ব পাকিস্তানে ঔপনিবেশিক জল ঘোলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে যদিও এটা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে যে ক্ষমতা খুব শীঘ্রই মানুষের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হবে। পূর্ব পাকিস্তানের সরকার চালানোর জন্য বড় ও পাতি উভয় ধরনের কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনয়ন, পূর্ব পাকিস্তানের কৌশলগত স্থানসমূহে অবাঙ্গালী বসানো, বন্দর, বিমানবন্দর, কারখানা ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক চালানোর জন্য পশ্চিম থেকে শ্রম আমদানী ইত্যাদি সকল পদক্ষেপ কেবলমাত্র এক বন্য ঔপনিবেশিক ক্ষমতার পক্ষেই ভাবা সম্ভব। আপনার সরকারের কাছে সব বাঙ্গালীই সন্দেহজনক। দায়িত্বপূর্ণ পদে যারা আছেন তাদের দায়িত্ব হয় শিথিল করা হচ্ছে অথবা তাদের অকার্যকর করা হচ্ছে। বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্ক আগের যুগের বৃটিশ কর্মকর্তা ও তাদের স্থানীয় সহকর্মীদের চেয়েও খারাপ রুপ নিচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের উচ্চকন্ঠ জনগণ আপনাদের কঠোর সামরিক দমন পীড়নের চাপে স্থম্ভিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রাণ বাচানোর জন্য তাদের তোতাপাখির মতো কথা বলতে হচ্ছে ও লিখতে হচ্ছে।
আপনার সরকার এমন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা পূর্ব পাকিস্তানকেই শুধু রক্তপাত করাচ্ছে না বরং এই দর কষাকষিতে পশ্চিম পাকিস্তানও ধ্বংস হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানের শহরগুলো মূলত জনশূন্য; অর্থনৈতিক লেনদেনের অভাবে যোগাযোগমাধ্যম স্থবির; বেসামরিক প্রশাসনের চাকা মূলত অচল ও দেশের যুবক সম্প্রদায় আত্নগোপনে। খাদ্যশস্য সংগ্রহ খুবই কম হচ্ছে (সেপ্টেম্বর ১৯৭০ থেকে মাত্র ৬০০,০০০ টন আমদানী করা হয়েছে)। ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ থেকে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সরবরাহ কার্যত বন্ধ রয়েছে আর ফসলের বপন ও ফলন উভয়ের অবস্থা খুব খারাপ। সবকিছু পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান দুর্দশার চিত্র উপস্থাপন করছে যা মানুষের কল্পনারও বাইরে। যে হারে বিদ্রোহ বেগবান হচ্ছে, এতে করে এই বিপর্যয় নিরসনের কোন আশাই নেই। পশ্চিম পাকিস্তানের উপর পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতির প্রভাব অত্যন্ত গভীর। পশ্চিম পাকিস্তান একটি ভাল ও বড় বাজার হারিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানে চালানো সামরিক অপারেশন অর্থায়ন করতে বলা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানকে। বহির্বিশ্ব থেকে অর্থনৈতিক ও সামরিক সাহায্য পাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। রাষ্ট্রকে চূড়ান্ত দেউলিয়াত্বের দিকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে।
নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দমনের মাধ্যমে সকল ধরনের বৈধতা হারিয়েছে পাকিস্তান সরকার যার নেতৃত্বে আছেন আপনি। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে আপনি “আজীবন নিষিদ্ধ” ঘোষণা করেছেন। দেশের উভয় অংশের মানুষকে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক নেতা আপনার হুমকির কারণে গা-ঢাকা দিয়েছেন। আপনার নির্দেশে যে বর্বরতার সাথে গণহত্যা চালানো হচ্ছে ও মানব বসতি ধ্বংস করা হচ্ছে, পাশাপাশি দেশের উভয় অংশে ভিন্নমত পোষণকারীদের উপর যে নিষ্ঠুর দমন পীড়ন চালানো হচ্ছে এতে করে সভ্য দুনিয়ায় আপনার সরকারের স্থান সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য হয়ে পড়েছে। ২৫শে মার্চ চরম ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আপনার করা আঘাত পুর্ব পাকিস্থানে মুক্তিযুদ্ধের বীজ বপন করেছে ও সেখানে আপনার সৈন্যরা দখলদার বাহিনী হিসেবে গণ্য হচ্ছে। যে বর্বরতার সাথে আঘাত করা হয়েছে তা পশ্চিম পাকিস্তানীদের জন্য বাঙ্গালীদের মনে ঘৃণার জন্ম দিয়েছে আর এখন এই ক্ষত এত গভীর যে তা মেরামতের অনুপযোগী। বস্তুত, জাতীয়তাবোধের ভিত্তি এখন পারষ্পরিক ঘৃণা ও ভয়ের নিচে দাফন হয়ে গেছে। এটা চিন্তা করা অস্বাভাবিক নয় যে পাকিস্তানের সমাধিফলক মেহেরপুরের আম্রকাননেই লেখা হয়ে গেছে। পৃথিবীর চোখে আপনার সরকার গণহত্যা ও পাকিস্তানের বিভাজনের অপরাধে অপরাধী।
আপনার সরকার আরও অনেক উপায়ে ক্ষতির কারণ হয়েছে। এরা নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে অথবা অন্তত তাদের হত্যার কারণ হয়ে ও উপাসনালয়সহ মানব বসতি ধ্বংস করার মাধ্যমে ইসলামকে কলুষিত করছে। পূর্ব পাকিস্তানের এই সঙ্কট ভারতে বসবাসরত ৬৫ মিলিয়ন মুসলিমের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। আপনার সরকার যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তা ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে যুদ্ধাবস্থাকে ত্বরান্বিত করছে। এটা পূর্ব পাকিস্থানকে ভারতের হাতে চলে যেতে বাধ্য করছে-এমন একটি ক্ষতি যা ক্ষমার অযোগ্য। সবকিছুর উর্ধে আপনি পূর্ব পাকিস্তানে শ্রেণী যুদ্ধের অবস্থা তৈরী করেছেন- এমন একটি সামাজিক ধাক্কা যা সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতার উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে নিজের একান্ত মূহুর্তে আপনি নিজেকে বাহবা দিবেন যে আমার পক্ষে আপনার সরকারের সাথে যুক্ত থাকা আর সম্ভব নয়। আপনার সরকারের একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ দেখার জন্য আমি অনেকদিন অপেক্ষা করেছি। আমি ঔপনিবেশিক প্রভুদের অধীনস্থ স্থানীয় কর্মকর্তা হবার মতো মানুষ নই। আমি সবসময় নির্ভয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে চেয়েছি কিন্তু পাকিস্তানে এমন পরিস্থিতি এখন আর নেই। এই পর্যায়ে যেমন আমি ভয় পাচ্ছি যে আমাকে হয়তো দেশের বাইরে বাস করেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। যতদিন পূর্ব পাকিস্তানে আপনার সামরিক দমন পীড়ন চলতে থাকবে ততদিন বিবেকের তাড়নায় আমি সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিজের ন্যায়সঙ্গত জায়গায় ফিরে যেতে পারব না। এটা এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ একাই অত্যাচারী, অবৈধ ও বর্বর ক্ষমতা জবরদখলকারী থেকে পাকিস্থানকে (উভয় অংশ) রক্ষা করবে। সুতরাং বাংলাদেশের উদ্দেশ্য সমর্থন করা ও এর উদ্দেশ্যে নিজের আনুগত্য সমর্পন করা ছাড়া আমার আর কোন বিকল্প নেই। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি, স্যার, আমি আপনার অধীনে চাকুরিরত সকল সরকারী কর্মকর্তার, যারা এই দেশে চলমান ত্রাসের সাম্রাজ্যে কথা বলতে ভয় পাচ্ছে, তাদের মনের অনুভূতি প্রকাশ করছি।
আমি আপনার জন্য একটি ব্যক্তিগত প্রার্থনা দিয়ে শেষ করতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে আপনার উদ্দেশ্য আন্তরিক কিন্তু আপনি চলমান দ্রুত ঘটনাপ্রবাহের শিকার। তাই আমি আশা করছি যে, আপনি খুব দ্রুতই মন্দ প্রভাব থেকে বের হয়ে আসবেন অথবা বর্তমান ট্রাজেডি থেকে নিজেকে সরিয়ে নেবেন। আল্লাহ আপনাকে ন্যায়পরায়নতার রাস্তা প্রদর্শন করুক এবং আপনার যেসব কৃতকর্মের জন্য হয়তো আপনি অনিচ্ছাকৃতভাবে দায়ী, তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার সময় পান।

<৪,২৯৮,৭০৬-৭০৭>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৮। পাকিস্তানের সরকারী চাকুরী ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপনের কারণ সংবলিত বাঙলি কূটনীতিক এ. এম. এ. মুহিতের বিবৃতি এ, এম, এ, মুহিতের সংকলিত “Thoughts in Exile” ২৭ জু্লাই,১৯৭১

কেন আমি অব্যাহতি দিলাম
জুলাই ২৭, ১৯৭১।
যে প্রশ্নটি আমি আজ সন্ধ্যায় উত্তর দিতে চেয়েছিলাম, “কী আমাকে পাকিস্তান সরকার থেকে পৃথক করেছে এবং বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করিয়েছে।” ২৫শে মার্চ থেকে আমি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব করে আসছি এ আশাতে যে, রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান হয়তো এ সংকটপূর্ণ অবস্থার একটি শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি করবেন। কোন আশারই আর কোন ভিত্তি নেই এবং আত্মবিধ্বংসী সরকারের পক্ষে কাজ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তাসত্ত্বেও, আমি স্বীকার করতেই হবে,আমার দেশের সরকারের সাথে পনের বছরের কর্মজীবন, যা ছিল কিশোর বয়সে আমার স্বপ্নজগৎ, তা আমি সহজে চাইলেই ঝেড়ে ফেলতে পারি না। মনে রাখার মত কিছু ঘটনা এবং পরিচিতি আমার আছে,তার মধ্যে একটিস্বয়ং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার জন্য কাজ করা।
ক্ষমতায় থাকা বর্তমান সরকারের বৈধতা, ঔপনিবেশিক উচ্চাশা, অসভ্যতা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভ্রান্তি, মানবিক চিন্তার অভাব এ সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোই আমাকেসরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ করে তুলছে
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া তার সরকারকে বলতেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু তিনি এখন দেশের ইতিহাসের সবথেকেনিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপর চাপ প্রয়োগ করে দমিয়ে রাখছেন, এমনকি তিনি এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছেন এবং তিনি নির্দেশ দিয়েছেন যে সুদূর ভবিষ্যতে এ সামরিক আইন প্রত্যাহার করা হবে না। একারণেই তার সরকার বৈধতার সকল অধিকার হারিয়েছে।
নাগরিকদের জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়ার পরিবর্তেপাকিস্তান সরকারপূর্ব পাকিস্তানের জনগণের “বেঁচে থাকা”কেই তাদের বিলাশিতা জ্ঞান করছে। সরকার পুর্ব পাকিস্তানে যে নৃশংসতা দেখাচ্ছে তার কারণে বাংলাদেশীরা দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে এবং এর ফলে দুই অংশে ভিন্নমত তৈরি হয়েছে যা সভ্য বিশ্বে এ সরকারের অধিকারকেই শুধু বাজেয়াপ্ত করেনি বরং এই বিভাজনের জন্যও এই মতানৈক্যকেই দায়ী করেছে।
এই সরকার সন্ত্রাস রাজত্বের দ্বারা পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মকর্তা এবং শ্রমিকের একটি বিশাল দল স্থানান্তরিত করেপূর্ব পাকিস্তানে উপনিবেশ স্থাপন করতে সবধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরণের সমস্যায় জর্জরিত একটি গরির দেশের প্রতি এ ধরণের প্রয়াস নিছক উন্মত্ততা।
সরকার বিপদজনক কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিল এবং তা নিরলসভাবে অনুসরণ করা হচ্ছিল। এটা খুবই ভয়ানক কারণ এটা হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিশূণ্য। এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধের পরিস্থিতিই ছড়িয়ে দেয়নি বরং এই অঞ্চলে সহিংস সামাজিক অভ্যুত্থানের বীজও বপন করেছে। যা পূর্ব পাকিস্তানকে রক্তশূন্য করেছে পাশাপাশি পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতিকেও।
বর্তমানে পূর্ব পাকিস্তানে মানুষের দুর্দশার সীমা অবর্ণনাতীত। সেনাবাহিনী কর্তৃক আক্রমণের ফলে মৃত্যুর আশংকা এবং ধনসম্পদের ধ্বংসকে এক পাশে সরিয়ে রাখলেও, দুর্ভিক্ষের আশংকা আসলেই ভয়ানক। সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যমের অচলাবস্থার সাথেক্রমেই আঁকড়ে ধরা সন্ত্রাসপ্রবণতার কবলে পরে সকল অর্থনৈতিক কার্যক্রম এবং খাদ্যশস্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির গতিবিধি থামিয়েদিয়েছে।
সাত লক্ষ শরণার্থী থাকা সত্ত্বেও পূর্ব পাকিস্তানেরপ্রত্যন্ত এলাকায় অনাহার এখন প্রশ্নাতীত। গত অর্থ বছরের খাদ্যের চাহিদা ও যোগানের মধ্যে ২.৩ মিলিয়ন টন পার্থক্য থাকা সত্ত্বেওএ বছর মাত্র ১.৩ মিলিয়ন টন খাদ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছেএবংদেশের অভ্যন্তরে মজুদকৃত খাদ্য ভান্ডারে উদ্বৃত্ত খাদ্য প্রত্যন্ত এলাকায় পৌছে দেয়ার কাজওগত মার্চ মাস থেকেবন্ধ আছে।
নিকট ভবিষ্যতেও এ সম্ভাবনা ক্ষীণ। সবকিছু আশাতীত ভাবে ঠিক থাকলেও এই বছর প্রতি বছরের গড়ে ৩.৫ মিলিয়ন টন খাদ্য ঘাটতির থেকেও ৩০% কম উৎপাদন হবে। এমনকি যদি শরণার্থীরা ফিরে নাও আসে, তবেপূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান সময় থেকে জুন ১৯৭২ পর্যন্ত ২.৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য প্রয়োজন।গতমাসে বিদ্রোহ কম থাকা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ পরিবহন ব্যবস্থায়সকল সম্ভাব্য নৌযান একত্রিত করেও গত মাসে ১ মিলিয়ন টনের বেশি পরিবহন করতে পারেনি। যাইহোক,এত প্রতিবন্ধকতার পরেও এসব কর্মকান্ডের তীব্রতার প্রমাণ রয়েছে। এ ব্যাপারটা আমার মাথায় আসছে না যে বর্তমান পরিস্থিতিতে কিভাবে ১.২ মিলিয়ন টনের বেশি খাদ্যশস্য এ বছর পূর্ব পাকিস্তানে যোগান দেয়া হবে। যদি লক্ষাধিক ক্ষুধার্ত মানুষদের বাঁচিয়ে রাখতে হয় তবে প্রথম অপরিহার্য শর্ত হলো পূর্ব পাকিস্তানে পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমি বুঝাতে চাইছি প্রকৃত শান্তি এবং বন্দুক বা বেয়নেটের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দেয়া নীরবতা নয়। দ্বিতীয় শর্ত হলো খাদ্য বন্টন কার্যক্রমে সমস্ত জনসাধারণের অংশগ্রহণ করা। যতদিন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান সরকারের অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং যতদিন বাঙ্গালিরা তাঁদের রাগ ও অসন্তোষ নিজেদের ভিতরে পুষে রাখবে এবং যতদিন না তারা সরাসরি অথবা অন্তর্ঘাত ও অহিংস যুদ্ধে লিপ্ত না হয় ততদিনে আমার কোন শর্তই পূরণ হবে না।
১৯৪৩ সালে বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ হয়। যুদ্ধের কারণে পরিবহন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে যায় এবং খাদ্যের ঘাটতিপ্রায় ৬% হয়ে গিয়েছিল। সে দুর্ভিক্ষে প্রায় ২.৫ থেকে ৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যায়। বর্তমান সময়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ। তার মানে আগামী তিন মাসে ৭.৪ থেকে ১৫ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে অনাহারে।
আমি নিয়তিকে মেনে নিচ্ছি না। আমি বিশ্বাস করি যে এই অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব। বৈশ্বিক শক্তি নিশ্চয়ই মানুষ ধ্বংসের সাক্ষী হয়ে অসহায়ের মতো বসে থাকবে না। বাঙালিদের নির্যাতিত হতে দেয়া সত্যিই বিপদজনক। রাজনৈতিক আচরণে উন্মত্ততাকে প্রাধান্য দেয়াও খুবই মারাত্মক।
পাকিস্তানের উন্মত্ততার বিপক্ষে বলিষ্ঠ আওয়াজ তুলতে বিশ্ব বিবেকের কাছে সনিবন্ধ অনুরোধ জানিয়ে আমি এই বক্তব্য শেষ করছি।
-এ, এম, এ, মুহিত

<৪,২৯৯,৭০৮-৭১০>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
২৯৯। পাক সামরিক জান্তার অধীন গভর্নর মালিকের নিকট জনাব মুহিতের চিঠি এ, এম, এ, মুহিত সংকলিত “Thoughts in Exile” সেপ্টেম্বর, ১৯৭১

গভর্নর মালিকের নিকট পত্র
সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
আপনি আমাকে একটি উন্মুক্ত সমাজ তৈরির জন্য বলেছিলেন যেখানে বিতর্কের মীমাংসা হবে যুক্তিতর্কের ভিত্তিতে। সত্যিকারঅর্থেই কি আপনার মনে হয়যতদিন না পর্যন্তইয়াহিয়ার দলের চাপ পুরোপুরি বিলুপ্ত না হচ্ছেততদিন পশ্চিম পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের কোথাও এ ধরণের কোন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব?দেশটা সেরকম কিছু করতে চাইছিল যখন ভুট্টো ইয়াহিয়ার সাথে সামিল হয়ে সবকিছুই ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে চাইছিল। আমি অবাক হচ্ছি যে,২১ ফেব্রুয়ারি গৃহদাসের মতো বরখাস্ত হবার পরআপনার বলা উচিত ছিল প্রকৃত ক্ষমতার স্থানান্তর কখন হবে। আপনি কিভাবে এ সন্দেহ দূর করতে চাইছেন?
আপনি অর্থনীতি এবং সমাজের পুণঃনির্মাণ করতে বলছেন এবং অতীতকে ক্ষমা করতে ও ভুলে যেতে বলছেন। কার জন্য আপনি অর্থনীতি পুণঃনির্মান করবেন? আপনার পশ্চিম পাকিস্তান এবং বিহারি মালিকগণের জন্য, যখন তারা ভূমিহীন ছিল এবং তখন যাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছিলাম? যখন বাংলাদেশের একটি পরিবারও ইয়াহিয়ার সামরিক বাহিনীরঅত্যাচার ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি তখনআপনি কিভাবে ক্ষমা করবেন বা ভুলে যাবেন? ভারত বিভাজনের সময়ে এর পরিমাণ অনেক কম ছিল। উদ্ধৃতি সহকারে বলতে হচ্ছে যে, “অবিচ্ছিন্ন পাকিস্তান থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা আমাদের জন্য নতুন মাতৃভূমি চাইতে বাধ্য হচ্ছি,কারণ এখানে আমাদের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।” প্রকৃতপক্ষে ইহা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এবং যা আমি আগেও দেখেছি।
আল্লাহর দোহাই এই বলবেন না যে,বর্তমান পরিস্থিতির পেছনে ভারতে ষড়যন্ত্র কিংবা তাদের সংশ্লিষ্ঠতা আছে। যেকোন সময়ই বাঙালিদের প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে যে,এখানে ভারতের কোন হস্তক্ষেপ নেই। আপনার মালিকদের বিরুদ্ধেও কুরুচিপুর্ণ হঠকারিতার প্রমাণ রয়েছে যে,তারা শেরে-এ-বাংলাকে ভারতের সাথে ষড়যন্ত্রেলিপ্ত হবার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। আমিব্যক্তিগতভাবেজনাব নুরুল আমিনের বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ শুনেছি,পাকিস্তানের স্বার্বভৌমত্ব নিয়ে যার উদ্বেগ পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।
আপনি বাঙালিদের জাতীয় আত্মহত্যার কথা বলছেন। সৌভাগ্যবশত এবারের ঘটনা সেরকম কিছু না। ২৫ শে মার্চে ইয়াহিয়া-ভুট্টো মৈত্রীপাকিস্তানের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে এবং আপনি তা পুনরায় একত্রিত করতে পারবেন না কারণ দুই প্রদেশের মধ্যে এখন আছে রক্তের নদীআর “ঝলসান পৃথিবী”। প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় যে,পাকিস্তানের ধ্বংসের পেছনে দায়ী তারাই,যারা পাকিস্তানের আন্দোলনের সাথে একদমই জড়িত নয়,যারা পাকিস্তানের জন্য কোন আত্মত্যাগ স্বীকার করেনি কিন্তু পরবর্তিতে বড় লভ্যাংশ ভোগ করেছে। পাঞ্জাবিরা পাকিস্তানের জন্য সামান্যই করেছে বিনিময়ে তারা পেয়েছে সর্বোচ্চ লাভ। ইয়াহিয়া এবং তার বাহিনী কখনোই পাকিস্তানের জন্য কাজ করেনি কাজেই তাদের দিক থেকে দেশ ধ্বংস করে দেয়াটা খুবই সহজ ছিল। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ভুট্টো ছিলেন ভারতীয় নাগরিক। কাজেই এটাই স্বাভাবিক যে,পাকিস্তানের অস্তিত্বের চেয়ে ব্যক্তিগতক্ষমতার লালসাঅবশ্যই তার নিকট বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যারা পাকিস্তানের সৃষ্টিতে ভূমিকারেখেছিল তাঁদের দ্বারাই পাকিস্তান ধ্বংস হচ্ছে না দেখে আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। ।
আপনি গভর্নর হিসেবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে আপনি শরণার্থীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবেন এবং দাবি করেছেন যে সংখ্যালঘুরা ভাল নাগরিক। আমি আপনার কর্তৃপক্ষ এবং তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত নই। পাকিস্তানিরা আমাকে বলছে,প্রত্যেক হিন্দুই শত্রু এবং তারাই সকল ঝামেলার উৎস এবং তারা বাঙালি মুসলমানদের ভুল পথে পরিচালিত করছে। আমি ইহাকে বাঙালি মুসলমানদের জন্য অপমান হিসেবে নিয়েছি এবং আপনি দেখে থাকবেন যে ইয়াহিয়া সাহেবকে দেয়া আমার পত্রে আমি এরূপ অদ্ভুত ইঙ্গিতের বিরোধিতা করেছি। এটা দ্বারা বুঝায় আপনার বক্তব্য শুধুই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মন রক্ষার্থে দেয়া এবং তার জন্য যত মিথ্যাই বলা লাগুক আপনার কাছে সেটা কোন বিষয়ই না। সংখ্যালঘু সমস্যা সমাধানের জন্য আপনি ভারতের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমি কি আপনাকে আপনাদের ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দেব;আপনি সে সময়কার কথা বলছেন যখন দু’দেশের মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধেছিল। এখন কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধেনি বরংবাঙালি বিশেষত বাঙালি হিন্দুদের বিরুদ্ধে ইহা একটি সংগঠিত সরকারের ইচ্ছাকৃত গণহত্যা ।
আপনি সন্ত্রাস আন্দোলনের নিস্ফলতার কথা বলছেন। আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে, এটা কোন সন্ত্রাসী আন্দোলন নয়,এটাস্বাধীনতা যুদ্ধ। গণতান্ত্রিক আইনসভা দ্বারা শাসিত ব্রিটেনের মত করে আপনিও আপনার উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য সাংবিধানিক কার্যক্রমের উপর নির্ভরশীল হতে পারেন। তারপরেও আপনি অসহযোগ,অবাধ্য নাগরিক আন্দোলন (পাঞ্জাবএবং আসাম ১৯৪৬-৪৭) কিংবা সরাসরি এ্যাকশনের মুখেও পরতে পারেন। বর্তমানে আপনি কাজ করছেন স্বৈর সামরিক শাসনের সাথে,যার কৌশলও ভিন্ন হতে হবে। আপনি কাজ করছেন অসভ্য,অশিক্ষিত এবং দেশপ্রেমহীন সুবিধাভোগী পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে।
আপনি খাদ্য সংকটের ব্যাপারে জোর দিয়েছেন কিন্তু পরিবহনের কথাটা মাথায় রেখেছেন কিন্তুখাদ্যের উৎস কি সেটা নিয়ে ভাবেননি এবং খাদ্য সংকটও দূর হয়নি। যখন আমরা খাদ্য সংকটের কথা বলছিলাম ইয়াহিয়া প্রতিশোধপ্রবণ হয়ে তীক্ষ্ণস্বরে বলেছিলেনগোডাউনগুলো খাদ্যে ভরপুর আছে। কিন্তু এখন এটা প্রমাণিতদেশে যে পরিমাণ খাদ্য প্রয়োজন, আপনি তার পুরোটার জোগান দিতে পারবেন না। আপনি ২.৩ মিলিয়ন টন আমদানির পরিকল্পনার কথা বলছেন। আমার সরাসরি অভিজ্ঞতা থেকে আমি আপনাকে বলতে পারি যে,পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের “দয়া”য় আপনি এ পরিমানের আশেপাশেও যেতে পারবেন না। আপনি কি জানেন গত বছরের পরিকল্পিত ২.৩ মিলিয়ন টনের কতোটুতু আমদানি হয়েছিল? শুধুমাত্র ১.১ মি টন।আপনিই ভালো জানেন আপনি কিভাবে আপনার মালিকদের দোষ ঢাকবেন, যাদের প্রতিক্ষেত্রেই সততার ঘাটতি রয়েছে।
আপনি ত্রাণ কার্যক্রম,প্রত্যাগমনকারীদের আর্থিক সাহায্য এবং পুনর্গঠনেরওয়াদা করেছিলেন । আপনার কি মনে হয় আপনি প্রচলিত নোট(ছাপানো টাকা) অথবা সম্পদ পাবেন?গত নভেম্বরের অভিজ্ঞতা ভিন্ন কথা বলে।বাহিরের দেশগুলো থেকে যে সম্পদগুলো আসে তাও বাংলাদেশে পৌঁছে না। দুই প্রদেশের মধ্যকার সম্পর্কের বেলায় বাংলাদেশকেএত বেশি শোষণ করা হয়েছে যে শঠতা,মিথ্যা এবং কুটিল চালের মত বিষয়গুলো পশ্চিম পাকিস্তানের নজরে আসে না। আপনার কি মনে হয় আপনার বক্তব্য এবং সিদ্ধান্ত তাদেরকে এসব থেকে বদলে দেবে?
আপনি ২৭৯মিলিয়ন রুপিঅর্থব্যয়ে বাংলাদেশে উন্নয়ন কার্যক্রমের কথা বলেছেন। আমি অবাক হয়েছি যে আপনিএই ব্যাপারটা উল্লেখ করেননি যা আপনার করা উচিত ছিল। যারা বাজেট তৈরি করেন,তারা তাঁদের কল্পনাতেও এমন কোন কিছু ভাবেন না।
আপনার অবিভক্ত,শক্তিশালী এবং গর্বিত পাকিস্তানের স্বপ্ন সত্যিই অযৌক্তিক এবং জনগণের প্রতি ক্ষমতার পুনর্বহাল এতোটাই দাম্ভিকতাপূর্ণ যে,সেখানে আমি স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারছি না। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এখন অসভ্য দলে পরিণত হয়েছে,তাঁদের দ্বারা সভ্য সমাজ তৈরি করা সম্ভব না। তারা জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষেও নেই। ২৮ জুনের ইয়াহিয়ার বক্তব্যটি পড়ুন এবং যেদিন থেকে তিনি বাংলাদেশকে হাতের পুতুল বানিয়ে রেখেছেন সেদিন থেকে তার কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করুন ।
আপনি বয়সে আমার থেকে বড় এবং আমার অত্যন্ত কাছের একজন।বার্ধক্যে উপনীত হয়ে আপনার এমন জঘন্য কাজে অংশগ্রহণ আমাকে কস্ট দিচ্ছে, যার কারণে আমি বাজে ভাষা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি। ইয়াহিয়া গত ফেব্রুয়ারি মাসেআপনাকে আপনার মতামতের বিরুদ্ধে চাকুরি থেকে বিদায় দিয়েছেন। পাগল হয়ে গেছে কিংবা পাগল হতে যাচ্ছে এরকম একজন মানুষের আশা কিংবা যোগ্যতায় আপনি কিভাবে বিশ্বাস রাখেন? পাকিস্তানের আর কোন পথ খোলা নেই। বাংলাদেশের সকল মা দুর্দশাগ্রস্থ, সকল যুবক আজ বিপ্লবী, আপনার পূর্ববর্তী শাসকদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য প্রতিটি আত্মা আজ স্বাধীনতার বন্দরে। এ স্বাধীনতা শীঘ্রই আসবে এবং শাসকদের যথাপোযুক্ত শিক্ষা দেবে। তা পশ্চিম পাকিস্তানকেও স্বাধীন করে দেবে। এ ধারায় আপনি একজন অ-সত্তা এবং যতদ্রুত আপনি এ ব্যাপারটি অনুধাবন করবেন ততই আপনার এবং দেশের জন্য তা মঙ্গলজনক।