You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলার বাণী
ঢাকা: সোমবার ৭ই ফাল্গুন, ১৩৭৯ ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩

আসন্ন নির্বাচনের তাৎপর্য

নির্বাচনী ডামাডোলে মাঝে যে উপলব্ধিটিই কেমন যেন আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে তাহলো আসন্ন নির্বাচনের বিশেষ তাৎপর্যটি। বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের এই দিকটা সম্বন্ধে বারবার জনগণের এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। গত শনিবার ঢাকার শহর অঞ্চলে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় নির্বাচনের এই বিশেষ তাৎপর্যের কথাই উপলব্ধি করার জন্য জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী জনাব কামাল হোসেন।
সশস্ত্র সংগ্রামের মাত্র এক বৎসর পর একটা গণতান্ত্রিক শাসন তন্ত্রের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এই নির্বাচনের ওপর যেমন দেশবাসীর তেমনি বিদেশি জনগণের দৃষ্টি রয়েছে। কারণ সশস্ত্র সংগ্রাম অতিরিক্ত একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানের নজির ইতিহাসে দেখা যায়না। অথচ সেই সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক গণসংগঠন আওয়ামী লীগ।
এরপর রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে পুনর্গঠনের কঠোর দায়িত্ব। আগামী পাঁচ বৎসরের জন্য যারা নির্বাচিত হবেন তাদের দায়িত্ব থাকবে দেশকে শুধু পুনর্গঠনে নয় বরং অগ্রযাত্রার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। এ পথে বাধা অনেক, কণ্টকাকীর্ণ তাদের চলার পথ। বিরামহীন কর্মসাধনার সেই ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই নির্বাচন প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন বলে আমরা মনে করতে পারি। আশা করতে পারি ত্যাগ, সাধনা আর আন্তরিকতার ব্রত নিয়ে রাষ্ট্রের হাল ধরতে এগিয়ে আসবেন নির্বাচিত প্রতিনিধিবৃন্দ। এজন্য দরকার নির্বাচন-পূর্ববর্তীকালে নিজেদের যোগ্যতা ও আন্তরিকতার পরিচয় দেবার। প্রতিদ্বন্দী কুৎসা রটানো অথবা দলীয়ভাবে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির কোন আবশ্যকতার রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করিনা। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত কর্মটি ঘটতে দেখা যাচ্ছে। প্রার্থী বা সংগঠন বিষয়ে নিজেদের যোগ্যতা অথবা আন্তরিকতার পরিচয় দেয়ার চাইতে বিপক্ষের কুৎসা রটানোকেই নির্বাচনী বাজিমাতের সঠিক পন্থা হিসেবে ধরে নিয়েছেন।
স্বাধীনতা-উত্তরকালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌল আদর্শ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অনেকেই ভুলে যান যে, আমরা একটা আদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে যাচ্ছে। এখানে ‘লওনী লিবারেলিজম’ প্রকারান্তরে সেই মহতী প্রচেষ্টার পথেই বারবার বাধা সৃষ্টি করে চলবে। ইতিমধ্যেই আমরা লক্ষ্য করেছি মহল বিশেষ এই লিবারেলিজমের নামে সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করেছে। নির্বাচন-উত্তর কালে এই আয়েশী বুর্জোয়াদের কঠোর হস্তে দমন করে আমাদের সমাজতান্ত্রিক আদর্শ রূপায়নে অগ্রসর হতে হবে। এ নির্বাচন তাই নির্দেশ করবে আমরা কোন পথে যাব। জাতির ভবিষ্যত রূপরেখা এই নির্বাচনের ফলাফলের উপর অনেকাংশে নির্ভর করছে। সবার উপর এবারের নির্বাচন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে প্রণীত শাসনতন্ত্র জনগণ গ্রহণ করবে কিনা। এর অর্থ আমাদের অস্তিত্ব ও আদর্শের প্রশ্নে জনগণের মসন্ডেট গৃহীত হবে আসন্ন নির্বাচনে। সুতরাং গতানুগতিকতার ধারায় বাংলাদেশের অনুষ্ঠিতব্য প্রথম সাধারণ নির্বাচনকে বিচার করলে শুধু ভুলই করা হবে না বরঞ্চ তা জাতির জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিতে পারে। আমাদের এই নির্বাচনের তাৎপর্য কে উপলব্ধি করতে হবে এবং তার প্রেক্ষিতেই ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও সেই উপলব্ধিবোধ আশা করলে তা কি খুব বেশী চাওয়া বলে মনে করা হবে?

কথা প্রসঙ্গে

ঢাকা জেলা প্রশাসন রাস্তার পাশে অবস্থিত সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে সম্মুখে এক সপ্তাহের মধ্যে গার্ড লাইট স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আলোর অভাবে দুষ্কৃতিকারীদের তৎপরতা দমনে প্রহরারত পুলিশের কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন প্রদত্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। কর্তাদের অনুরোধ নির্দেশ বিশেষ। তাদের এই অনুরোধ অথবা নির্দেশ যাই বলা হোক না কেন তা মেনে চলবে দোকানি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু তাতে করে অবস্থার কি কোন রকমের হবে বলে আশা করা যায়?
এইতো পরশু দিনেই দিনে-দুপুরে ডাকাতি করতে এসেছিল সশস্ত্র দুস্কৃতিকারীরা। পিস্তল দেখিয়ে তো ‘চলন্ত সূর্যের নিচেই’ সব ক্রিয়া-কর্ম সমাধা হয়ে যাচ্ছে। গুপ্তহত্যার ক’টি হয়েছে রাতে নিশীথে? ‘পায়ে ব্যথা তাই পড়া করিনি’- এ বড় ছেলেমি যুক্তি। ও করে স্নেহশীলা মায়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে, ছিনতাই-রাহাজানি শিকারে পড়ে নাগরিকের কাছে এটা কোন যুক্তি বলেই গ্রাহ্য হতে পারে না।
বেশ রাজসিক ব্যাপার। ওদের জন্য জাম্বো জেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আসছে দূর দেশ থেকে। অবলা নিরীহ ওদের সংখ্যা একশ সাতাশ।
বিমানবন্দরে ওদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত থাকবেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বন, মৎস্য ও পশু পালন মন্ত্রী জনাব সোহরাব হোসেন স্বয়ং। আগামী ২৩শে ফেব্রুয়ারি ভোর সাড়ে ছটায় আনুষ্ঠানিকভাবে অস্ট্রেলীয় সরকারের এই দান তিনি গ্রহণ করবেন।
যুদ্ধোত্তরকালে বাংলাদেশ গো সম্পদের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে তারই প্রেক্ষিতে অস্ট্রেলীয় সরকারের এই গরু দান। অবশ্য জাম্বো চেটে চেটে ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের পর চতুষ্পদ এই জীবদের প্রাতঃরাশের কোনো ব্যবস্থা করা হয়েছে কিনা সংবাদে তার উল্লেখ নেই। আমরা শুধু বলি গো-ভক্ষণকারীদের এতে উল্লাসিত হবার কোন কারণ নেই। চাষবাস এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকয়ে ওদের আনা হয়েছে সেই দূর দেশ থেকে।
জাপান সরকারের ৪৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধানকারীদল সম্প্রতি লুবাং দ্বীপের অভিমুখে যাত্রা করেছেন। উদ্দেশ্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জাপানি সৈনিকদের খুঁজে বের করা অনুমান করা হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কিছু সৈনিক লুবাং-এর জঙ্গলে লুকিয়ে আছে।
জাপান সরকারের মনোবাঞ্ছা পূরণ হবে কিনা আমরা জানিনা। তবে অনুসন্ধানকারী দলের কেউ যদি আবার লুবাং-এর সেই গহীন অরণ্যে হারিয়ে গিয়ে সুর তুলে গাইতে শুরু করেন “নিজের হারাবে খুজি……” তবে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। ফ্যাসিবাদী সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী কেউ যে অনুসন্ধানকারী দলেই নেই এমনটি বা কিভাবে মেনে নেওয়া চলে?

কালেক্টেড অ্যান্ড ইউনিকোডেড বাই- সংগ্রামের নোটবুক

পত্রিকার মূল কপি পড়তে এখানে ক্লিক করুন

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!