You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩২। বাংলাদেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিটিশ পত্রিকার ভুল প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিইয়েশন, স্কটল্যান্ডের বক্তব্য প্রচারপত্র ৬ মে, ১৯৭১

ইয়াহিয়াকে সাহায্যের জন্য সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্র

“দি সানডে টাইমস” গত সপ্তাহান্তে পাকিস্তান থেকে একটি বিস্ময়কর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এটি সাম্প্রতিক যুদ্ধকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যকার এযাবৎকালের একটি অপ্রকাশিত বিদ্রোহের বিস্তারিত প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়: ১০ দিন একসাথে থাকার পর পূর্ব পাকিস্তানের বিস্তারিত খবর পাকিস্তানি সেনাদের মধ্যকার একটি ব্যাপক ও প্রায় সফল বিদ্রোহ এবং হাজার হাজার অবাঙালি নারী, পুরুষ ও শিশুদের পাশবিক হত্যাকাণ্ডের খবর উন্মোচন করেছে।

এটা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দ্রুত প্রতক্রিয়া, কঠিন শৃঙ্খলা এবং সঠিক নেতৃত্ব, যা সেনাবাহিনীকে    বিদ্রোহীদের কাছ থেকে সেই বৃহষ্পতি ও শুক্রবারে রক্ষা করেছিল।

এটি একটি কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনা, কিন্তু বাংলাদেশে অবাঙালিদেরকে হত্যা করার প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ    ভুল ছিল। প্রতিবেদনটির লেখক হলেন অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস, যিনি করাচীর “মর্নিং নিউজ” পত্রিকার    সম্পাদক, যেটি সরকার পক্ষের পত্রিকা, যা আসলে সরকারের কাছ থেকে ভর্তূকি গ্রহণ করত। “দি সানডে টাইমস” নিজেদের প্রতিবেদনকে সম্পূর্ণরূপে পক্ষপাতহীন ও বস্তুনিষ্ঠ দাবি করে এসব উল্লেখ করা থেকে সতর্কভাবে দূরে ছিল। কিন্তু যখন “দি সানডে টাইমস” পাকিস্তান সরকারের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলো,  তখন তা এন ম্যাডিংটনের নতুন শ্রমবিষয়ক এমপি জনাব ব্রুস ডগলাস- ম্যানকে একটি শীতল    অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। তিনি সবেমাত্র বাংলাদেশ সফর থেকে ফিরেছিলেন এবং “দি সানডে টাইমস”-কে সেই    অবস্থার বিবৃতি প্রদান করেছেন। লর্ড থমসনের অনুসারীগণ বিবৃতিটি বর্জন করে।

১৪ মে বাংলাদেশের সংগ্রামের ওপর মি. ডগলাস-ম্যানের জরুরি প্রস্তাবনা সংসদে উপস্থাপিত হবে। আশা করা হচ্ছে যে, পরিস্থিতি লুকানোর জন্য সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।

ওয়ার্কস প্রেস, বৃহস্পতিবার, ৬ই মে,১৯৭১

বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন, স্কটল্যান্ড

১.৫ এলডেন স্ট্রীট

গ্লাসসো সি ৩

<৪,৩৩,৫৫-৬০>

অনুবাদকঃ শিরোনামহীন-১

শিরোনাম সূত্র তারিখ

৩৩। “বাংলাদেশ ফাইটস ফর ফ্রিডম”-বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন

 

বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি প্রকাশিত পুস্তিকা ৮মে, ১৯৭১

 

বাংলাদেশ ফাইটস ফর ফ্রিডম

প্রকাশনায় – বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি, যুক্তরাজ্য

৬৮এ স্ট্রেথাম হাই রোড, লন্ডন, এসডব্লিউ ১৬

ফোন – ০১-৭৬৯-৪৬৯০

ভূমিকা

এই পুস্তিকা খুব সংক্ষিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের ওপর চালানো রাজনৈতিক দমন ও অর্থনৈতিক শোষণ সম্পর্কে ধারণা দেবে।

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক নজিরবিহীন গণহত্যার কারণে ধর্মীয় সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে এক হওয়া দু’টি অংশ আজ সম্পূর্ণ পৃথক।

এই গণহত্যা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, এই অর্থনৈতিক শোষণ ও রাজনৈতিক দমন বন্ধ করার একমাত্র উপায় হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করা। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনতা আজ সেই সংগ্রামে রত।

এ. এস. চৌধুরী

উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিচারক, হাই কোর্ট ঢাকা

৮ মে, ১৯৭১

বাংলাদেশ ফাইটস ফর ফ্রিডম

১৯৪৭ সালে মুসলিম ও হিন্দুদের মধ্যে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ভেতর পাকিস্তানের জন্ম হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের ভেতরে থেকেই পাকিস্তানের দু’টি অংশেরর উৎপত্তি এবং শুরু থেকেই এর ইতিহাস ছিল প্রাদেশিক অসন্তোষ দ্বারা ত্রুটিপূর্ণ।

“সেকেন্ড ফ্লাড অভ ইস্ট পাকিস্তান” শিরোনামে দ্য সানডে টাইমস, লন্ডনে বলা হয়েছে: “পাকিস্তানের বর্তমান অশান্তি মূলত ব্রিটিশ ভারত পৃথকীকরণ প্রক্রিয়ার একটি যৌক্তিক সমাপ্তি, যা ২৫ বছর আগেই শুরু হয়েছিল। সম্পূর্ণ পৃথক এবং বিশেষ করে একটি মুসলিম রাষ্ট্র তৈরির ওপর জোর দিয়ে মরহুম জনাব জিন্নাহ ও তার মুসমিল লিগের সহকর্মীরা শুধুমাত্র মুসলিম ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে হু’টি জাতির জন্ম দিয়েছিলেন, যা ছিল সংস্কৃতি, ভাষা এবং হাজার হাজার মাইল শত্রুতাপূর্ণ ভারতীয় এলাকা দ্বারা সম্পূর্ণ আলাদা”।

সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মার্কিন প্রফেসর, এডওয়ার্ড এস. মেসন বলেছেন, “পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা অনিবার্য। একটি অবিভক্ত পাকিস্তান কাঠামোর ভেতরে থেকে অর্থনৈতিক স্বায়ত্ত্বশাসনের নিমিত্তে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তা অনিবার্যভাবেই পূর্ব পাকিস্তানি জনগণকে গণহারে হত্যার মাধ্যমে এমন একটি আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়েছে, যা আজ না হোক কাল একটি স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্ম দেবে – “বাংলাদেশ” এখন কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র”। সংক্ষেপে পত্রিকাটি মূলত পাকিস্তানের ইতিহাসকেই তুলে ধরে ও সাংস্কৃতিক, ভাষাগত এবং সামাজিক প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করে এবং দু’টি পক্ষের অর্থনীতি ও রাজনীতিই আসলে বর্তমান সংঘর্ষের প্রধান কারণ বলে বিবেচনা করে।

পাকিস্তান মূলত ধর্মীয় মনোভাবের ওপর ভিত্তি করেই গঠিত হয়েছিল এবং গঠনের পর সেই মনোভাবকে জিইয়ে রাখার চেষ্টাই করা হচ্ছিল। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে এক হাজার মাইল ভারতীয় অঞ্চল ছড়িয়ে রয়েছে। উভয়েই মুসলিম হলেও এরা অনেকটা পর্তুগাল আর পোল্যান্ডের মতই। ১৯৪৯ সালেই রিচার্ড সিমন্ডস তাঁর “দ্য মেকিং অভ পাকিস্তান’ বইতে তাঁর পর্যবেক্ষণ লিখে গিয়েছিলেন, “পাকিস্তানের ভেতরে পূর্ব বাংলার অঞ্চলটিতেই নীরিক্ষা করা সবথেকে কম সহজ, অথচ এর ভবিষ্যত নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে কঠিন”। “পশ্চিম হল খুব শুষ্ক একটি জায়গা, যেখানে চওড়া চোয়াল, পাগড়ি আর ঢোলা পায়জামাওয়ালা লম্বা পুরুষদের প্রধান চলাচলের বাহন হল উট, আর পূর্বাঞ্চলে বর্ষাকালে গ্রাম থেকে গ্রামে আর বাড়ি থেকে বাড়িতে ছোটখাটো, উজ্জ্বল রঙের চেক লুঙ্গিপরা পুরুষেরা চলাফেরা করে নৌকায়। পশ্চিম পাকিস্তান মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দিকে সংযুক্ত আর পূর্ব পাকিস্তান অনিবার্যভাবেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত”। বাঙালিদের ভাষা, পোশাকআশাক, খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারণ প্রণালি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা এবং ইকোনমিস্ট অভ লন্ডনের পর্যবেক্ষণটিই এক্ষেত্রে অনেকখানি সঠিক – “পূর্ব পাকিস্তান কথা বলে বাংলায়, উর্দু থেকে তা আলাদা হওয়া ছাড়াও এখানকার অধিবাসীরা এই উপমহাদেশের সবচাইতে স্পষ্টভাষী, সবচাইতে রাজনীতিসচেতন এবং চিররসবোধসম্পন্ন মানুষদের দলের অন্তর্ভূক্ত”।

অতএব, এই বিষয়গুলোর ভিত্তিতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, পাকিস্তানের দুই অংশ, পূর্ব আর পশ্চিম মূলত জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে গঠিত হয়নি, বরং ধর্মীয় মনোভাবের ভিত্তিতে হয়েছে। পাকিস্তানের জন্ম থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী ভেবেছিল যে, যতদিন পর্যন্ত মানুষকে এই মনোভাবের প্রতি সোচ্চার রাখা সম্ভব হবে, ততদিন পর্যন্ত বাঙালিকে শোষণ করার একটি ভালো সুযোগ পাওয়া যাবে। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে শোষণ ও স্বৈরাচারী নিয়ম-শৃংখলার বীজ বুনে দিয়ে গিয়েছিলেন তথাকথিত জাতির জনক জনাব জিন্নাহ। জনাব জিন্নাহ হয়েছিলেন প্রথম গভর্নর জেনারেল এবং একই সাথে পরবর্তীতে রাষ্ট্রের অন্যান্য উচ্চ পদসমূহেরও দায়িত্বে ছিলেন– ক্ষমতায় থাকা মুসলিম লিগ পার্টির সভাপতিত্ব এবং সমবায়ী পরিষদের সভাপতিত্ব। যেকোন উপায়েই হোক, একটি গণতান্ত্রিক দেশের ইতিহাসে এ এক নজিরবিহীন ঘটনা। “রোমান পরিবারে ২০ শতকের দিকে পিতারা নিজেদের কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে পরিবারে অসন্তোষ তৈরিতেও পিছপা হতেন না, তেমনি পাকিস্তানেও অনিবার্যভাবেই একটি বিশৃংখলা তৈরির পাঁয়তারা চলছিল এবং এই অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের কারণে আরও অনেক অগণতান্ত্রিক বিষয়াদির সূচনা হওয়া ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার”। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন, জনগণে মতামত ছাড়াই নিজের ইচ্ছেমত নিয়ম জারি করে গিয়েছেন।

১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের ভাষণে জনাব জিন্নাহ স্পষ্টতই বলেন যে, “পাকিস্তানের একটাই হবে রাষ্ট্রভাষা আর তা হল উর্দু”। এটি ছিল অত্যন্ত অগণতান্ত্রিক, কারণ পাকিস্তানের বেশিরভাগ মানুষ কথা বলত বাংলায়, যা ছিল ইন্দো-পাকিস্তান উপমহাদেশের অন্যতম সমৃদ্ধ একটি ভাষা। তিনি আরও ইংগিত করেন যে, এই ভাষা ষড়যন্ত্রে ইন্ধন যুগিয়েছে “ফিফথ কলামিস্টস”। এই রাজনৈতিক দমনের কারণে খুব শীঘ্রই পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করতে আরম্ভ করেছিল। পশ্চিম পাকিস্তান এও বুঝে গিয়েছিল যে, বাংলার রাজস্ব আয় ছাড়া তাদের সামরিক অস্ত্রের যোগান ফাঁটা বেলুনের মত চুপসে যাবে। এ কারণেই ‘পাকিস্তান বাঁচাও’, ‘ইসলাম বাঁচাও’ বলে মাতম শুরু হল। ইসলাম কিংবা দেশপ্রেমের একচেটিয়া অধিকার কেবলমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানেরই আছে বলে পূর্ব পাকিস্তানিরা বিশ্বাস করে না। তারা নিজেদের মত করে ইসলামে নতুন মাত্রা যোগ করছে ঠিক যেমনটি করেছিল তুর্কী, মিশরীয়, আলজেরিয়ান আর ফিলিস্তিনিরা।

অর্থনৈতিক শোষণ

হাভার্ড ইউনিভার্সিটির একজন অর্থনীতিবিদ, রবার্ট ডর্ফম্যান, বলেছিলেন, “পাকিস্তানের দু’টি অংশের গড়পরতাজীবনযাত্রার মধ্যকার যে বিশাল ও বিস্তৃত ফারাক, তা আসলে প্রশ্নাতীত। এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান অধ্যুষিত সরকারও স্বীকার করে যে, গড়ে একজন পূর্ব পাকিস্তানি পশ্চিম পাকিস্তানের গড় আয়ের মাত্র দুই-তৃতীয়াংশ আয় করে এবং অতিরিক্ত দামও তাকে পরিশোধ করতে হয়। আয়ের এই অসমতার জন্য মূলত পশ্চিমাঞ্চলের স্বার্থ থেকে পূর্বাঞ্চলের স্বার্থ আদায়ের জন্য একটি পরিকল্পিত অধীনতাই দায়ী, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান দাবি করে যে বৈদেশিক আদান-প্রদান, যা পূর্ব পাকিস্তানের পাট রপ্তানি থেকে আসে, তা অসমভাবে পশ্চিম পাকিস্তানকেই সুবিধা দিয়ে থাকে, জাতীয় বিনিয়োগের এই বণ্টন আয়ের অসমতাকে বাড়িয়ে দেয় – ওই উচ্চ শুল্কহার এবং আমদানি কোটাসমূহ পশ্চিম পাকিস্তানে মুনাফা ও কর্মসংস্থান বাড়াতে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তানিদের পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়”। দ্য ইকোনমিস্ট আরও বলে, “আমাদের মতে এই বিষয়গুলোই মূলত মূল্যবৃদ্ধির কারণ”।

১৯৫২ সাল থেকেই পাকিস্তান একটি বৃহৎ বৈদেশিক সাহায্যগ্রহণকারী দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং চীন থেকে, যার বেশিরভাগ অংশই পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্পায়নের পেছনে খরচ হয়েছে, আর পূর্ব পাকিস্তানে খুব অল্প সংখ্যক প্রকল্পই হাতে নেয়া হয়েছে, এমনকি সেগুলোর মালিকানাও পশ্চিম পাকিস্তানিদেরই। ১৯৫৯-৬০ সালে, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের মাথা পিছু আয় ছিল ৩২% বেশি। পরবর্তী ১০ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানে আয় বৃদ্ধির বার্ষিক হার ছিল ৬২%, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানে ছিল মাত্র ৪.২%। ফলস্বরূপ, ১৯৬৯-৭০ সালের মধ্যে পূর্বের চেয়ে পশ্চিমে মাথা পিছু আয় ছিল ৬১% বেশি। পূর্ব পাকিস্তানের বৈদেশিক বাণিজ্য আয় পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থ আমদানিতে ব্যবহৃত হয়, বিশেষত শুল্ক, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং শিল্পসংক্রান্ত লাইসেন্সিং পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পণ্য ক্রয়ে বাধ্য করে, যেগুলো বিশ্ববাজার থেকে আরও স্বল্পদামে সংগ্রহ করা যায়। ১৯৭০ সালের লন্ডন টাইমসের ২০ অক্টোবর সংখ্যায় বলা হয়: এই মুহূর্তে পূর্ব পাকিস্তান চীন থেকে কয়লা সংগ্রহ করে প্রতি টন একদর ১৭২ রুপিতে। এটি পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র স্টিল কারখানার এই বিশাল পরিমাণ লোকসানের অন্যতম বড় একটি কারণ। তা সত্ত্বেও, সীমানা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে নিয়ে আসা কয়লা প্রতি টন মাত্র ৫০ রুপি। তাছাড়া পূর্ব পাকিস্তান তার মূল পণ্যসামগ্রী, মাছ এবং নিম্নমানের পাট পশ্চিমবঙ্গের আগ্রহী ও মুমুর্ষু কারখানাগুলোতে বিক্রি করতে পারত”।

পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানের আরেকটি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক শোষণের মাধ্যম হল পাবলিক বিনিয়োগ ক্ষেত্র। ১৯৫৫-৬৬ -১৯৬৯-৭০ সালে ৩য় পাঁচ বছর মেয়াদী পরিকল্পনায় ৩৬% বৃদ্ধি অর্জন করে, ১৯৫০-৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৬০% সহ কেন্দ্রীয় সরকার উন্নয়ন ব্যয় ২০% কমে গেছে। পূর্ব পাকিস্তান প্রাইভেট শেয়ার বিনিয়োগের আরও কম অংশ পেয়েছে, ২.৫% এরও কম।

পূর্ব পাকিস্তানে ৫ মাস আগের জোয়ারে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১০ লক্ষ বাঙালি প্রাণ হারিয়েছে। পৃথিবীর কোন শক্তিই প্রাকৃতিক দূর্যোগকে রুখতে পারে না, কিন্তু ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি ক্ষমার অযোগ্য। ১৯৩৭ সালেই সুভাষ চন্দ্র বসু বন্যা প্রতিরোধ, ব্যবসা-বাণিজ্য উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাষের জমি পুনঃরুদ্ধারের জন্য ছয় লেনের পরিবহন ব্যবস্থা সমৃদ্ধ একটি ২৬০ মাইল লম্বা উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণের পরামর্শ দেন। সেই প্রকল্পসমূহের দায়িত্ব নিয়েছে পারস্পরিক শত্রুতাপূর্ণ ইউরোপ এবং পাকিস্তান ও ভারত। পূর্ব পাকিস্তান ও পূর্ববঙ্গ মিলে এটি করতে না পারার কোন কারণই ছিল না।

এই উপমহাদেশ শক্তিশালী পাহাড় দ্বারা সমৃদ্ধ। এখানে নুড়িপাথরের কোন অভাব নেই। বাঙালিরা কাজ করতে আগ্রহী। এখানে শ্রমের কোন অভাব নেই, কেবল নেতৃত্বের প্রয়োজন। এ শুধু বাঙালিদের পক্ষেই দেয়া সম্ভব, কারণ প্রাচীনকাল থেকে তারা সর্বনাশা সমুদ্র আর অদম্য নদীনালার সাথে বসবাস করে আসছে। প্রস্তাবিত বাঁধটি কেবলমাত্র সমগ্র অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীলই করবে না, বরঞ্চ ভবিষ্যতের জন্য দারিদ্র্যপীড়িত বাঙালির মধ্যে আশার আলোও জাগিয়ে তুলবে। সাম্প্রতিককালে ঢাকায় এক পশ্চিমা কুটনীতিক বলেন: “যদি সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে তার শুরুটা হবে এই বাংলায়-ই”। উপকূলীয় বাঁধটিই কেবল পারে এই ধ্বংস ঠেকাতে। আর কিছু পারবে না। পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বারবারই বাঙালিদেরকে বলে থাকে যে, এই বাৎসরিক বন্যা, এর ধ্বংসাত্মক জোয়ার এবং খরা – সবই সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা, অথচ পশ্চিমের সাম্প্রতিক ইন্দো অববাহিকা প্রকল্প ওই মরুভূমি এলাকাকে উর্বর এক জমিতে পরিণত করেছে জলাবদ্ধতার সাথে সংগ্রাম করেও।

পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ৯০% সদস্যই আসে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। সামরিক বাহিনী তত্ত্বাবধানের এই বিপুল খরচ সেখানকার মানুষের ৭৫% সুবিধায় কাজে লাগানো হয়, এত বছর ধরে অবিবেচকের মত এভাবেই পশ্চিম পাকিস্তানের কলহ আর পূর্ব পাকিস্তানের বঞ্চনা সংঘটিত হয়ে এসেছে। সেনাবাহিনীর বিনিময়ে বেশিরভাগ স্বার্থত্যাগের এটি একটি অর্থলোভী কর্মপন্থা, যা মূলত কাশ্মিরের মত বাহ্যিক কিছু সমস্যাকে জিইয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। কোন বাঙালিকে সি-ইন-সি কিংবা সেনাবাহিনীর অফিসের দায়িত্ব না দেয়ার জন্য পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এটি একটি অলিখিত কর্মপন্থা। বিমানবাহিনী কিংবা নৌবাহিনী এবং প্রতিভাবান বাঙালি অফিরসারদেরকে জোরপূর্বক মেজর কিংবা লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে এবং আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রদত্ত পদসমূহে অবসর গ্রহণে বাধ্য করা হয়। মুখ্য সামরিক প্রতিস্থাপনাসহ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর তিনটি মূল দফতরই পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের ধ্বংসের জন্য একটি সামরিকভাবে শক্তিশালী পাকিস্তান চেয়েছিল। পূর্ব পাকিস্তানকে দূর্বল করে একে চিরস্থায়ীভাবে উপনিবেশ হিসেবে শাসন করার জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের এটি ছিল একটি ভয়ংকর উদাহরণ। বাঙালিরা যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী না, কথাটি সত্যের উপহাসমাত্র। কারণ হিসেবে বলা যায়, বাংলা সেনাবাহিনী ১৯৬৫ সালে লাহোর সেক্টরে ভারতের বিরুদ্ধে সাহসী যুদ্ধ করেছিল। এমনকি এখনও তারা সুপ্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র পাকিস্তানি সেনাদের সাথে কোনরকম অস্ত্র ছাড়াই যুদ্ধ করে যাচ্ছে।

লাহোর চুক্তি ও ছয় দফা

১৯৬৬ সালে বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান একটি ছয় দফা কার্যক্রম তৈরি করেন, যেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে পূর্ব বাংলার স্বায়ত্ত্বশাসনের ডাক দেয়া হয় এবং এটি সর্বপ্রথম উত্থাপিত হয় ১৯৫৩ সালে ঢাকার একটি জনসভায়। এটি মূলত বাংলার অবহেলিত জনগণের মুক্তির জন্য তৈরি হয়েছিল এবং যা মূলত ১৯৪০ সালে মুসলিম লিগের লাহোর চুক্তি, যা পাকিস্তানের জন্মদান করে, তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। ভারত বিভাজনের ৭ বছর আগে এই চুক্তি পাশ করা হয়। এতে অনুমোদিত হয় যে, পাকিস্তানের মূল প্রদেশসমূহ পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করবে। তার দাবির মূল বক্তব্য ছিল একটি যুক্ত্ররাষ্ট্রীয় সংবিধান যা ওই যুক্ত্ররাষ্ট্রীয় সরকারকে কেবল পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেবে এবং এমনকি যুক্ত দু’টি রাষ্ট্র তাদের “প্রাদেশিকতা” বাড়াতে পারবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের তাদের নিজস্ব চুক্তি তৈরি কর‍্তে পারবে।

১৯৬৬ সালের মার্চ মাসে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান বলেন যে, শেখ মুজিবের ছয় দফাকে তিনি আলাদা হয়ে পড়ার হুমকি হিসেবে নিয়েছেন এবং সতর্ক করে দিয়েছেন যে দরকার হলে তিনি সেগুলো মেনে নেয়ার পরিবর্তে গৃহযুদ্ধে লিপ্ত হবেন যুক্তরাষ্ট্রে যেমন হয়েছিল। তৎক্ষণাৎ শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করা হয় এবং বেশিরভাগ বিদেশি পত্রিকায়ই এ ঘটনা অগ্রাহ্য করা হয়। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে তাঁকে চতুর্থবারের মত গ্রেফতারের এই ঘটনায় বাঙালিরা তাকে শহীদ ভেবেছিল। রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান ও অন্যান্য শাসক গোষ্ঠীর কারসাজিতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় মুজিবকে আর ৩৫ জনের সাথে বিচারের আওতায় আনা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে, তারা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ভারতীয় অনুচরদের সাহায্যে আইয়ুব সরকারের অপসারণে একটি বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করে। এই অভিযোগের সত্যতার কোন ছিটেফোঁটাও ছিল না এবং প্রমাণের অভাবে মুজিবের পক্ষে অসমাপ্ত অবস্থায় বিচারকার্যের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং কারাগারে গুলি খাওয়া একজন বাদে তিনি ও বাকি সবাইকে মুক্ত করে দেয়া হয়। মুজিব আসলে স্বায়ত্তশাসন নয়, অনৈতিক অপসারণ চাইছেন বলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদেরকে ভুল বুঝিয়ে মুজিব ও তাঁর নেতৃত্বের সম্মানহানি করাই ছিল এই বিচারের উদ্দেশ্য। তা সত্ত্বেও, পাকিস্তান সরকার এই নীল নকশা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়। রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান নিজেই এতে অপদস্ত হন।

পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর মানসিকতার দু’টি খুব গুরুত্বপূর্ণ দিক এই বিচারকার্যের মাধ্যমে ফুটে ওঠে, প্রথমত, একটি দেশ পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত রাজনৈতিক জ্ঞান তাদের নেই, মূলত তারা অত্যন্ত বিবেকবর্জিত এবং একটি সভ্য সমাজে অগ্রহণযোগ্য যেকোন কিছু ঘটিয়ে ফেলতে তারা সক্ষম, দ্বিতীয়ত, তারা সবসময়ই বাঙালিদেরকে সন্দেহ করত এবং যেকোন যেকোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় কম্যুনিস্ট ও ভারতের উস্কানিতে করেছে অপবাদ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে সবখানে বাধা দেয়া হত।

বর্তমান সংকট

সাম্প্রতিক ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তাঁর দল, আওয়ামিলীগ, পূর্ব পাকিস্তানকে বরাদ্দ করা জাতীয় সাংবিধানিক সভার ১৬৯ টি আসনের মধ্যে ১৬৭ টিতেই জয়ী হয়েছে। তাঁর দল ৩১৩টি চেম্বারে স্পষ্টতই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। পাকিস্তানের নব নির্বাচিত জাতীয় সভার ৩ মার্চ তারিখে দেখা করবার কথা ছিল। ৮৩ সদস্যের দল নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো দাবি করেন যে, বাণিজ্য ও সহায়তার নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকা উচিত। যখন শেখ মুজিব অতীত অর্থনৈতিক শোষণের এই হাতিয়ারের সাথে আপোষ করতে অসম্মত হন, ভুট্টো তখন সভায় অংশগ্রহণ করা প্রত্যাখ্যান এবং তার ও অন্যান্য সামরিক নেতাদের পরামর্শে রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান অনির্দিষ্টভাবে সভা স্থগিত করে দেন।

“ভারতের বিরুদ্ধে হাজার বছরের সংগ্রাম” স্লোগান নিয়ে ভুট্টো নির্বাচনে জয়লাভ করেন। শেখ মুজিব নির্বাচনে জয়ী হন তাঁর বিখ্যাত ছয়দফার জন্য। এটাই হল বাঙালিদের জন্য স্বায়ত্ত্বশাসন, যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানের কাছে থাকবে সামরিক, পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক বিষয়াদির জরুরি কাগজপত্র। একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিল যে, “৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের সমর্থনে করাচির রাস্তায় বেলুচ, পাঠান ও সিন্ধিরা মার্চ করেছিল”। তারা কেবল পশ্চিম পাঞ্জাব প্রদেশ অতক্রম করতে পেরেছিল, যেখানকার লোকেরা পাকিস্তানের সমস্ত উচ্চ পদসমূহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং এখানেই ছিল মূল সমস্যা। “ভারতের বিরুদ্ধে হাজার বছরের সংগ্রাম” ছাড়া জনাব ভুট্টো ও পশ্চিম পাঞ্জাবীদের কাছে পাকিস্তান ছিল অর্থহীন এবং সাড়ে সাত কোটি বাঙালির দ্বারা অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধ করার কোন ক্ষমতাই ছিলনা।

কাশ্মির সমস্যা এবং তুরস্ক, ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যকার একটি চুক্তি আঞ্চলিক কর্পোরেশন ও উন্নয়ন, পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষতিসাধনের মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করে তুলেছিল। লন্ডনের সানডে টাইমসের ডেভিড হোল্ডেন ঠিকই বলেছেন, “কাশ্মিরের সাথে পাকিস্তানের বারমাসী যুদ্ধে বাঙালিদের কোনকিছু যায় আসে না, তবুও এই যুদ্ধে সামরিক খরচ করা হয়েছে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয় থেকেই, যার সিংহভাগ অর্জিত হয়েছে বাঙালিদের দ্বারাই”। কাশ্মির ঘটনায় মতামত দিয়ে সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান বলে, “পাকিস্তান অভিযোগ করে যে, কঠিনভাবে নিপীড়ন করে ভারত পাকিস্তানপ্রেমী কাশ্মিরীদেরকে আটকে রেখেছে। অথচ হাস্যকর ব্যাপার হল এই যে, ইসলামাবাদের জন্তারা নিজেরাই  প্রকাশ্যেই সাড়ে সাত কোটি প্রকৃত পাকিস্তানিদের ওপরে সেই নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মিরের কথা আবারও উঠলে জাতিসংঘ নিশ্চয়ই এবার তিক্ত হাসি হাসবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মত এই বিষয়টিও এখন পুরনো হয়ে গেছে”।

জাতীয় সভার প্রতি ইয়াহিয়া খানের খামখেয়ালী স্থগিতাদেশের কারণে সারা বাংলায় প্রতিবাদ ও মিছিল ছড়িয়ে পড়ে ১ মার্চে, যা সেনাবাহিনী জোরপূর্বক থামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বাংলার প্রায় ২০০০ স্বাধীনতাকামী ছেলেপেলে এতে প্রাণ হারায়, এই রক্তাক্ত হত্যাকাণ্ড ঘটা সত্ত্বেও আওয়ামিলীগ স্বাধীনতা ঘোষণা করা থেকে বিরত থাকে। এর বদলে তারা অহিংস অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যায়। বিশ্বের ইতিহাসে এই প্রথম বেসরকারি একটি দলের নেতা, শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পূর্ব পাকিস্তানের সমগ্র সরকারি প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস করে এবং তাদের অভিযোগসমূহ তাঁর কাছে প্রেরণ করে। এ ছিল এমন এক অসহযোগ আন্দোলন, যে আন্দোলনে এমনকি মহাত্মা গান্ধীও কোনদিন মানুষের মধ্যে এই পরিমাণ ঐক্য, সংহতি ও উৎসর্গের চেতনা অর্জন করতে পারেননি। সেসময়ে এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি কখনই পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চাননি। “পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্তঃপ্রবাহের সুপ্রচারণা সত্ত্বেও তাঁর পরবর্তী দুই সপ্তাহর জন্য আলাপ চালিয়ে যাওয়ার মধ্যেই পাকিস্তানের ঐক্যের প্রতি তাঁর আপোষ ও অঙ্গীকারের প্রস্তুতি ফুটে ওঠে”।

রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া পূর্ব পাকিস্তানে তার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বাড়াতে চাইছিলেন এবং কোনদিনই তিনি সরল বিশ্বাসে মুজিবের সঙ্গে কোন আপোষ করেন নি। আলাপ চলাকালে তিনি প্রকাশ্যেই বলেন যে, কিছু কিছু বিষয়ে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন, ২৫ মার্চ তিনি ইসলামাবাদে ফিরে যান এবং পাকিস্তানের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী, শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সম্বোধন করেন। তিনি তাঁর দলকে অবৈধ ঘোষণা করেন এবং ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ, বৃহষ্পতিবার রাতে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন, যেমনটি আর্মেনিয় খ্রিস্টানদের গণহত্যা ও হিটলারের ইহুদী হত্যার পর অনেকদিন দেখা যায়নি।

২৫ মার্চ সারা বাংলাদেশ আতংকে চিৎকার করে ওঠে। ভারীবর্ষনের পর সৃষ্ট বন্যার মত রাজপথে রক্ত বয়ে যায়। নারী-পুরুষ-শিশু-কিশোররা আতংকে রাস্তায় ছোটাছুটি করে। আকাশে-বাতাসে তাঁদের চিৎকারের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। অস্ত্র ও গোলাবর্ষণের শব্দে তাদের চিৎকার হারিয়ে যায়। হাজার হাজার লোক মারা যায়। প্রখর রৌদ্রে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের লাশে পচন ধরে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জাল ভেদ করে কতিপয় সাহসী সাংবাদিকেরা তাঁদের অদম্য সাহসিকতার পরিচয় দেয় – সারা বিশ্ব এই গণহত্যার বিষয়ে জানতে পারে ও টেলিভিশনের পর্দায় দেখে। বিশ্ব থমকে গিয়েছিল কি? তারা কি আতংক অনুভব করেছিল? তাদের প্রতিক্রিয়া যা-ই হয়ে থাক না কেন, যুদ্ধের শিকার বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ সেকথা কোনদিনও জানতে পারবে না। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম ও বর্বর গণহত্যার রক্তাক্ত বর্ণনা দিয়েছিল আতংকিত প্রত্যক্ষদর্শীরা। পূর্ব পাকিস্তানের পত্রিকাগুলোর কন্ঠ চেপে ধরা হত, যদি না তাদের অফিসগুলো কামানের গোলার আঘাতে চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গিয়ে না থাকত। বিদেশি সাংবাদিকদেরকে লাঞ্ছিত করা হত, শরীরে তল্লাসি করা হত, মানহানির অভিযোগে অবশেষে বিতাড়িত করা হত। একজন ব্রিটিশ ভদ্রমহিলা একজন পাকিস্তানি অফিসারকে জিজ্ঞেস করেছিল, “শিশুগুলোকে কেন মেরে ফেলা হল?” অফিসার উত্তর দিয়েছিল, “অনাথ এই শিশুগুলো পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা নিয়ে বড় হবে”। বাইরের পৃথিবীর কাছে যেন সত্য প্রকাশ না পায়, সে ব্যাপারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অত্যন্ত সচেষ্ট ছিল।

<৪,৩৪,৬১-৬৩>

অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৪।“ফ্যাক্ট শীট-৯”-দেশবিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে প্রতিবেদন বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির প্রচা্র পত্র মে, ১৯৭১

ঘটনার বিবরণ

বিশ্বশান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশের জনগণ

৪র্থ বিশ্বশান্তি সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থিত ছিলো, যা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে(মে ১৩-১.৬)। আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধিত্ব পরিচালনা করেন জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব এম এ সামাদ এবং আরো ছিলেন জাতীয় আওয়ামি পার্টির যুগ্ম সচিব জনাব দেওয়ান মাহবুব আলী; যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট অ্যাকশন কমিটির নির্বাহী সদস্য ডা: সরওয়ার আলী এবং জনাব ওয়ালী আশরাফ।                     

আমরা যুদ্ধবিদ্ধস্ত

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার আমন্ত্রণে, সংগঠকদের ধন্যবাদপূর্বক প্রতিনিধিদের নেতা জনাব সামাদ বর্ণনা করেন যে, তাঁর দেশ যুদ্ধবিদ্ধস্ত। নৃশংস গণহত্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং এখানে সাড়ে সাত কোটি মানুষের বাস। সংবাদপত্র এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে গত দেড় মাস ধরে ঘটতে থাকা গণহত্যা এবং নৃশংসতার কথা আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন। ২৩ বছরের শোষণের ইতিহাসকে ইঙ্গিত করে আমরা আরো জানাই, “১৯৪০ সালে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সর্বশেষ অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাবের মূলনীতির ভিত্তিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ব্রিটিশ ঔপনেশিক শাসকদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের মানুষই সবচেয়ে বেশি আত্মত্যাগ করেছিলো। বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিলো অনেক বেশি – উল্লেখ্য খসড়াটি ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোর স্বাধীন ও সার্বভৌম একটি প্রদেশ সৃষ্টির নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীনতা অর্জিত হয় ১৪ আগস্ট, ১৯৪৭ সালে। কিন্তু সমগ্র পাকিস্তানের ক্ষমতা ন্যস্ত ছিলো কিছু সংখ্যক পশ্চিম পাকিস্তানির হাতে। তখন থেকেই শুরু হয় শোষণ ও নিপীড়ন। বাংলাদেশ কেবলই একটি উপনিবেশে পরিণত হয়, কিন্তু এ দেশের মানুষের নিরন্তর পরিশ্রমে এখানে অঢেল পরিমাণে পাট উৎপন্ন হতো, যা ছিলো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান উৎস এবং চা ও চর্মশিল্পের পাশাপাশি পাকিস্তানের মোট আয়ের ৭০% আসতো এখান থেকে। কিন্তু এ আয়ের খুবই অল্প পরিমাণ ব্যবহৃত হতো আমাদের উন্নতির জন্য। বাংলাদেশে অবস্থানরত জনগণের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল তিনগুণ বেশি।

সর্বশেষ নির্বাচন এবং পরবর্তী ঘটনাসমূহ বর্ণনাপূর্বক তিনি বলেন, “জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনাব ভুট্টোকে সমর্থন করেন এবং সমাবেশ পিছিয়ে দেন। সমাবেশ পিছিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ছিলো বাঁধভাঙা ও স্বতঃস্ফূর্ত এবং সারা দেশের মানুষ এ স্বেচ্ছাচারপ্রসূত কর্মকান্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে। মানুষ এখন বুঝতে পারছে যে, ইয়াহিয়া কখনোই ক্ষমতা স্থানান্তর করতে চায়নি এবং গণতন্ত্রের বিদ্রুপ করেছে। তা সত্ত্বেও, শেখ মুজিব একটি রাজনৈতিক মীমাংসার পথ খুঁজছেন।

জনাব সামাদ সংক্ষেপে বর্ণনা করেন কীভাবে জেনারেল প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সে ভয়াবহ কালরাতের যখন জেনারেল ইয়াহিয়া আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করছিলেন। তিনি বলেন, “২৫ মার্চ রাত ১১টা, তখনো আলোচনা শেষ হয়নি। ইয়াহিয়া খান বিশ্বাসঘাতকতার এক নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সশস্ত্র সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়লো দুর্বল ও নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর। কোন ধরণের সতর্কতা ও কারফিউ ছাড়াই ট্যাংক, মর্টার, কামান, মেশিনগান এবং রকেট ব্যবহার করে নির্বিচারে হত্যা করলো নিরপরাধ মানুষদেরকে। প্রথম দু’রাতে হত্যা করা হয়েছে অগুণিত মানুষকে। ঢাকাতেই আনুমানিক হত্যার সংখ্যা ১,০০,০০০। ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের অসংখ্য ঘটনা ঘটছে। ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়বৃন্দ, আমি আপনাদের বর্ণনা করবো সে সব ঘটনা যাতে আপনারা তথাকথিত শান্তির জন্য রাখা এ সম্মেলনে বসে তা অনুভব করতে পারেন।”

জনাব সামাদ বলেন যে, বাঙালিরা পিছু হটেনি। “মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সৈন্যদেরকে খুশিমত ছড়িয়ে পড়তে দিয়েছিল স্থান ও সময় বুঝে তাদেরকে ঘিরে ধরে যুদ্ধের মাধ্যমে কোণঠাসা করে দেবার জন্য।”

জনাব সামাদ নিশ্চিত করেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শুধুই একটি দখলদার বাহিনীর, যাদের কোন জনসমর্থন নেই।

নৃশংসতার নিন্দা জানায় সদস্যবৃন্দ

সম্মেলনে অংশ নেয়া ১২৪টি দেশের ৮০০ জনেরও বেশি সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাংলাদেশের প্রতি নৃশংসতা ও গণহত্যার তাঁদের তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিশ্বশান্তি সংস্থা স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশিদের সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করে। বাংলাদেশিদের বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এবং আত্ম-সংকল্পের কারণে তারা বাংলাদেশিদের ল্যামব্রাকিস পদকে ভূষিত করে।

জাতীয় আওয়ামী পার্টির প্রধান মওলানা ভাসানির একটি বাণী উক্ত সম্মেলনে পাঠানো হয়।

সফরে রাষ্ট্রদূত

জনাব এম এ সামাদ বাংলাদেশ সরকারের সফরকারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে বিশ্ব সফরে নিযুক্ত হন। তিনি হাঙ্গেরিয়ান সরকারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং বাংলাদেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি সোভিয়েৎ রাষ্ট্রপতি জনাব পডগোর্নির সাথে খুব শীঘ্রই মিলিত হবেন। পূর্ব ইউরোপ সফরের পর তিনি যুক্তরাজ্য সফরে আশাবাদী।

কমন প্রস্তাব

হাউস অব কমনস সর্বসম্মতিক্রমে ১৪ মে, ১৯৭১ তারিখে একটি প্রস্তাব পাশ করে। প্রস্তাবনায় জনাব ব্রুস ডগলাস-ম্যান এম পি বলেন, “এই হাউজ পূর্ব পাকিস্তানে ঘটতে থাকা হত্যা ও বিনাশ এবং খাদ্যঘাটতির হুমকি নিয়ে উদ্বিগ্ন। শত্রুদের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য যথাযথ সরকারের প্রভাব, জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তজার্তিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি এবং রাজনৈতিক মীমাংসা অর্জন পাকিস্তানিদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

এ দুঃখজনক ঘটনার প্রকৃতি ও ব্যাপকতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ” ………. সর্বনিম্ন মৃত্যুসংখ্যা আনুমানিক ১,০০,০০০, কিন্তু অনেক মূল্যনির্ধারকের মতে তা এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে।”

বিপুল সংখ্যক শরণার্থী যারা কিনা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে, তাদের দেখে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, “… পরিস্থিতি এমন যে, যেখানে ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়েছে, ভবিষ্যতে তা জনসমুদ্রে পরিণত হবে”। তিনি বলেন, “ক্যাম্পে খাবারের পরিমাণ পর্যাপ্ত কিন্তু তাতে ভারতীয় সরকারের খরচ মাথাপিছু প্রতিদিন এক টাকা।”

ভারতীয় উদ্বেগ সত্বেও, তিনি বাংলাদেশে তাঁর সফরের বর্ণনা দিয়ে বলেন, “প্রতিনিয়ত আমরা একই ঘটনা শুনে আসছি। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সেনাবাহিনী গ্রামে প্রবেশ করে, যা তখন সুরক্ষিত ছিলো না, তারা পুরুষদের উপর গুলি চালায়, নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করে, অগ্নিসংযোগ করে চলে যায়”।

তিনি আরো বলেন, “হত্যা এবং ঘৃণার পরিমাণ এতোই বেশি যে অবিভক্ত পাকিস্তান রাষ্ট্র এখন মৃত”।

হাইড পার্কে কথা বললেন বিচারপতি চৌধুরী

সভা শেষ হবার পরদিন কেন্দ্রীয় পরিচালনা কমিটির উপদেষ্টা এবং সম্মানিত এম পি জন স্টোন হাউজ ও বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, হাইড পার্ক স্পিকারর্স কর্ণারে একটি সার্বজনীন মিটিংয়ের আয়োজন করলেন, যেখানে উপস্থিত ছিলো প্রায় দু’হাজার বাঙালি। মিটিংটি আয়োজন করেছিলো স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি এবং এটি ছিলো বিচারপতি চৌধুরীর প্রথম জনসম্মুখে বক্তৃতা যেখানে তিনি কমন প্রস্তাবটি বিস্তারিত বর্ণনা করেন।

বাংলাদেশ  স্টুডেন্টস এ্যাকশন কমিটি কর্তৃক প্রচারকৃত বন্টনকৃত

৩৫ গ্যামাজেজ বিল্ডিং, ১২০ হলবর্ণ , লন্ডন, . সি . .

যোগাযোগ. ৪০৫৫৯১৬ ( অফিস সময়)

                             ৬৭৩৫৭২০

<৪,৩৫,৬৪>

অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৫। “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি” বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রচারপত্র বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, যুক্তরাজ্য মে, ১৯৭১

বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদগ্রেট বৃটেন

৩৫ গ্যামেজ বিল্ডিং

১২০ হলবরন, লন্ডন ইসিআই

ফোন-০১-৪০৫-৫৯১৭

___________________

জাতীয় সংগীত

আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।।

ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,

মরি হায়, হায় রে- ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি।।

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো-

কী আঁচল বিছায়েছ বতের মূলে, নদীর কূলে কূলে।

মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,

মরি হায়, হায় রে-

মা, তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি।।

তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে,

তোমারি ধূলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।

তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,

মরি হায়, হায় রে-

তখন খেলাধুলা সকল ফেলে তোমার কোলে ছুটে আসি।।

বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রচারিত।

___________________________

<৪, ৩৬, ৬৫>

অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৬। জনাব এ, সামাদ এমএন-র প্রতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর চিঠি ব্যক্তিগত চিঠি ২৪ মে, ১৯৭১

 

টেলিফোনঃ ০১-২৮৩-৩৬২২/৩

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি যুক্তরাজ্য

              গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন, ইসি ৩.১১

জনাব সামাদ,

আমি হঠাৎই লন্ডন ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আশা করি আপনি লন্ডনে পৌঁছানোর আগেই ফিরে আসব।আমার অনুপস্থিতিতে আপনি সম্পূর্ণভাবে পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জনাব আজিজুল হক এবং পরিচালনা কমিটির সদস্য জনাব মান্নানের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন। তাঁরা দু’জনেই নিবেদিতপ্রাণ কর্মী এবং আমি তাঁদেরকে কর্ম সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়ে এসেছি।

এ সামাদ, এম এন এ                                        ধন্যবাদান্তে

                                        এ এস চৌধুরী।

<৪, ৩৭, ৬৬-৬৭>

অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৭। বৃটেনে প্রবাসী জনাব এম, এ রাজ্জাক চৌধুরীর প্রতি কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশনের জনাব আনোয়ারুল করিম চৌধুরীর চিঠি ব্যক্তিগত চিঠি ২৪ মে, ১৯৭১

 

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মিশন

সার্কাস এভিনিউ                                                        গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন

কলিকাতা ১৭                                                                         , সার্কাস এভিনিউ

                                                                                        কলিকাতা১৭

                                                                        ২৪ মে, ১৯৭১

নং-বি-৫/৪/৭১

জনাব এম এ রাজ্জাক চৌধুরি

৬, ব্রিটানিয়া রোড,

সাউথ সি (যুক্তরাজ্য)

জনাব,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কলিকাতা মিশনের প্রধান জনাব এম হোসেন আলির কাছে ১৬ মে, ১৯৭১ এ লেখা চিঠিতে চোখ বুলানোর জন্য আপনাকে অনুরোধ জানাচ্ছি।

মিশন প্রধান আপনাকে এবং লন্ডনে বসবাস করা বাঙালি সম্প্রদায়কে তাঁর ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন প্রদানের জন্য। বাংলাদেশের জনসাধারণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নির্মূল করার যুদ্ধে রত আছে এবং তাদের প্রচুর পরিমাণে সাহায্য দরকার দেশকে মুক্ত করতে। এমতাবস্থায়, আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি ,আপনার যেকোন রকম সাহয্যের জন্য, যাতে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারি।

আপনি জেনে খুশি হবেন যে, আমরা লন্ডনে নিম্নে উল্লেখিত নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছি:

    বাংলাদেশ ফান্ড, একাউন্ট নং. ০০৭-৮৬৬-৩০,

    হাম্ব্রোস ব্যাংক, ৪১, বিশপ গেইট, লন্ডন ই.. সি. ৩.

এই অ্যাকাউন্টের ট্রাস্টিদের নামগুলো হল সম্মানিত জন স্টোনহাউজ এমপি, মি. ডোনাল্ড হেজওয়ার্থ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিচারপতি জনাব আবু সায়ীদ চৌধুরি। বাংলাদেশের জন্য যত সাহায্য সংগৃহীত হয়েছে, তা উক্ত অ্যাকাউন্টে জমা দেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। উক্ত অ্যাকাউন্ট থেকে প্রয়োজনের সময় বাংলাদেশের চাহিদা মেটানোর জন্য ফান্ড তুলবে বাংলাদেশ সরকার।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং বুদাপেস্টে বিশ্বশান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান জনাব মোহাম্মদ আ সামাদ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে খুব শীঘ্রই লন্ডন সফরে আসবেন। বিচারপতি জনাব এ এস চৌধুরির নিকট থেকে জনাব সামাদের আগমন এবং তার কার্যক্রম সম্পর্কে ভালভাবে অবগত হওয়ার জন্য আপনাকে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। জনাব চৌধুরির অফিসের ঠিকানা: ১১, গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন, ইজি ২। টেলিফোনঃ ২৮৩-৩৬২৩২, ২৮৩-৩৫৫২৬।

জনাব চৌধুরি বাংলাদেশের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের নিকট হতে জাতিসংঘে দেশটির প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ও অন্যান্য মহাদেশে সংস্থাটির বিভিন্ন অংশের ফান্ড তোলার কাজে সমন্বয়ের করার জন্য এবং বাংলাদেশের সমর্থনের জন্য কাজ করার আরো ক্ষমতা পেয়েছেন। আমরা আশা করব আপনি সব ধরনের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করবেন তাঁকে, যা বাংলাদেশের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।

সাহায্য পাওয়া গেলে বিজয় আমাদের হবেই, ইনশা’আল্লাহ।

জয় বাংলা

                                আপনার বিশ্বস্ত,

(আনোয়ারুল করিম চৌধুরি)

      মিশনপ্রধান

<৪, ৩৮, ৬৮>

অনুবাদকঃ সমীরন কুমার বর্মণ

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৮।বাংলাদেশের সমর্থনে ১৯শে জুন হাইড পার্কে অনুষ্ঠিতব্য জনসভা ও গণমিছিলের প্রচারপত্র বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রচারপত্র জুন, ১৯৭১

জনসভা

গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের সমর্থনে আগামী ১৯শে জুন শনিবার বেলা ১টায় লন্ডনের হাইড পার্কের স্পিকার্স কর্নারে এক জনসভা হবে।

সভায় বাংলাদেশ সরকারের বৈদেশিক মুখপাত্র বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ছাড়াও আরো অনেকে বক্তৃতা করবেন।

গণমিছিল

সভার পরে হত্যাকারী দেশ পাকিস্তানের ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য স্পিকার্স কর্নার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হবে। মিছিল অক্সফোর্ড স্ট্রিট, পোর্টম্যান স্ট্রিট, গ্লোস্টার প্লেস, পার্ক রোড হয়ে ‘লর্ডস’ ক্রিকেট মাঠের সামনে সেন্ট জন্স উড রোডে শেষ হবে।

আবেদন

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সহানুভূতিশীল সকলকে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে উক্ত জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিলে যোগদানের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

গ্রেট বৃটেনস্থ বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক ৩৫নং গ্যামেজেস বিল্ডিং, ১২০নং হবোর্ন, লন্ডন ইসি-১ থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত। মুদ্রণে সাপ্তাহিক জনমত। দূরালাপনীঃ ০১-৪০৫-৫৯১৭ ও ০১-৬৭৩-৫৭২০।

<৪, ৩৯, ৬৯>

অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৩৯। এ্যাকশন কমিটি কর্তৃক মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্যের প্রস্তাবের জবাবে বাংলাদেশ থেকে ক্যাপ্টেন এন হুদার চিঠি ব্যক্তিগত চিঠি ১২ জুন, ১৯৭১

মুক্তি ফৌজ

বায়রা ক্যাম্প

১২ জুন, ‘৭১।

জনাব ভূঁইয়া,

অগ্রসরমান বেস ক্যাম্পে আমাদেরকে পরিদর্শন করে যাবার জন্য আমার এবং আমার সৈন্যদলের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। আপনার সংস্থার পক্ষ থেকে আমার ছেলেদের মজুদ এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করার সদয় প্রস্তাবের জন্য আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনার কাছ থেকে আমি আরও নিশ্চিত হলাম যে, এটি একটি বেসরকারি সাহায্য এবং আপনার তরফ থেকে সম্পূর্ণ একটি স্বেচ্ছাসেবা। আমি নিচে কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের তালিকা যুক্ত করছি যা আমার ছেলেদের কাজে আসবে।

আজ সন্ধ্যায় আপনাকে আমার সেক্টরের অধীনে বাংলাদেশের মুক্ত অঞ্চলে নিয়ে যেতে পারাটা আমার জন্য অনেক সম্মানের ব্যাপার ছিল। আমরা আশা করছি সৃষ্টিকর্তার কৃপায় এবং আপনাদের সকলের শুভকামনায় আমরা বিজয়ী হব।

আপনার সদয় দৃষ্টি কাম্য।

একান্ত

(ক্যাপ্টেন এন, হুদা)

দ্রব্যাদির তালিকা

(১) জঙ্গল বুট                    …                    ১০০ টি

(২) ইউনিফর্ম, খাঁকি                …                    ১৫০ সেট

(৩) বিছানা, সম্পূর্ণ                …                    ১২৫ টি

(৪) রেইন কোট              …                    ৫০  ,,

(৫) পশমী মোজা              …                    ১০০ ,,

(৬) মশারি                  …                    ৩০  ,,

(৭) ফ্লাস্ক (বড়)              …                    ২   ,,

(৮) দূরবীন                      …                    ৩ ,,

(৯)……অবস্থান নির্ণয়ের জন্য কম্পাস-                         ১টি

<৪, ৪০, ৭০-৭৪>

অনুবাদকঃ দিব্য কান্তি দত্ত

শিরোনাম সূত্র তারিখ
৪০। বাংলাদেশ সম্পর্কে ‘এইড বাংলাদেশ কমিটি, ইউরোপ’- এর প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ নিউজ’ ৫ জুলাই, ১৯৭১

 

 

বাংলাদেশের খবর

(এইড বাংলাদেশ কমিটির অঙ্গসংগঠন, ইউরোপ)

জুলাই ৫, ১৯৭১।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

ধ্বংসযজ্ঞ, ৭ কোটি ৬০ লক্ষ বাঙালির গণতান্ত্রিক কণ্ঠকে বর্বরভাবে দমিয়ে রাখা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা ছাত্রাবাসে ঘুমন্ত শিক্ষার্থী, প্রকৌশলী, ডাক্তার, বিজ্ঞানী, বুদ্ধিজীবি, অধ্যাপক এবং নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা ইত্যাদি প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানচিত্রে উদিত হয়েছে একটি নতুন দেশ। দেশটি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’, পূর্ববর্তী ‘পূর্ব পাকিস্তান’।

স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এবং এ দায়িত্ব পালন করেন তৎকালীন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম। উক্ত অনুষ্ঠানে বিশ্ব মিডিয়ার লোকজনসহ প্রায় দশ হাজার প্রত্যক্ষদর্শী উপস্থিত হয়েছিলেন। ঠিক তখন জেনারেল ইয়াহিয়া খানের অধীনে কর্মরত বাহিনী বাংলাদেশের গ্রাম এবং শহরগুলোতে বোমা, মেশিনগান ইত্যাদির দ্বারা লক্ষ লক্ষ পলায়নপর শরণার্থী হত্যা করছিল। বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেয়া এবং ইতিবাচক পদক্ষেপের দ্বারা লক্ষ লক্ষ বাঙালীর দূর্দশা লাঘব করার এখনই উপযুক্ত সময়। রক্ত যদি স্বীকৃতির জন্য যথার্থ মূল্য হয়, তবে আমরা তার জন্য যথেষ্ঠ মূল্য প্রদান করেছি।

গণতান্ত্রিকভাবে  নির্বাচিত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেছেন এবং বাংলাদেশের ৭ কোটি ৬০ লক্ষ জনগণ তাদের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেছেন।

একনায়ক ইয়াহিয়া খান ব্যালটের জবাব বুলেট দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন এবং জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসী হয়ে যুদ্ধ শুরু করেছেন। ঘুমন্ত অবস্থায় তারা আমাদের ছাত্রদের মেশিন গান দিয়ে হত্যা করেছে; অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবি, বিজ্ঞানীদেরকে তাদের ধর্ষিতা স্ত্রী, মেয়ে এবং বোনদের সামনে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের শহরগুলোতে বোমাবাজি করা হয়েছে এবং নাপাম বোমার দ্বারা গ্রামগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। পুরো বাংলাদেশ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে যেখানে ভিড় করছে অসংখ্য শকুন এবং আমাদের প্রিয়জন ও নিকটাত্মীয়ের চারপাশে ঘুরে বেড়ানো কুকুরের সংখ্যাও অগণিত।

যদি একটা ‘মাই লাই’ পুরো সভ্য দুনিয়ার ভিত নাড়িয়ে দেয় তাহলে বাংলাদেশে শত শত ‘মাই লাই’ তৈরি হওয়াকে কিভাবে অবহেলা করা যায়? আমরা মানবতা এবং গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে এই পাশবিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে অনুরোধ জানাচ্ছি। তাদের ইয়াহিয়া খানের ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে তার অসভ্য সৈনিকদলকে অপসারণ করতে বাধ্য করতে হবে। পশ্চিম পাকিস্তানে সকল আর্থিক এবং সামরিক সাহায্য বন্ধ করার মাধ্যমে এ অবস্থা অর্জন করা যেতে পারে। বাংলাদেশে সামরিক শক্তি ও সাহায্য নিয়ে প্রবেশ করার মাধ্যমে জনগণের ভোগান্তি কমানোর জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ জাতিসংঘের একটি অবশ্যপালনীয় কর্তব্য।

বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা

বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে অনুমান করা যায় যে, বাংলাদেশের অবশিষ্ট জনবল এবং অস্ত্রাদি অত্যন্ত সাশ্রয়ী এবং বিচক্ষণভাবে ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশের সামরিক নীতি বর্তমানে শক্ত জমিনের মত। সম্মুখযুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তান মিলিটারির ব্যাপক গোলাবারুদসমৃদ্ধতাই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করবে তা স্বীকৃত। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ একটি নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছে।

বড় বড় শহর এলাকাগুলো আক্রমণকালীন অবস্থার অতিবাহিত করেছে। আক্রমণকারীদের বর্বর হত্যাকান্ড শহরের কেন্দ্রস্থলগুলোকে কিছুটা হলেও জনশূন্য করে ফেলেছে।

অপরদিকে, কেন্দ্রীয় সরকার ভৌগোলিক এবং কৌশলগতভাবে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নিয়েছে যাতে অতিসত্ত্বর প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহন করা যায়।

পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ এবং অপরাধকর্ম লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঘরছাড়া করেছে। এখনো পর্যন্ত প্রায় ষাট লক্ষ মানুষ গন্তব্যহীন।

দখলকৃত গ্রামগুলোতে মজুদকৃত শস্য ধ্বংস করা হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তান খাদ্যসল্পতাকে চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করে বাংলাদেশের জনগণের মনোবল ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি তাদের শারীরিকভাবেও দূর্বল করে ফেলতে চায়, এই ভীতি ছড়ানোর মাধ্যমে দখলদারদের সৃষ্ট গণ্ডগোল এবং ত্রাস কৃষিক্ষেত্রের সবধরণের কর্মকান্ডকে প্রভাবিত করেছে।

বাংলাদেশকে সাহায্য করার জন্য ইউরোপে বন্ধু দেশগুলো কি করেছিল?

যদি পাকিস্তান সাহায্য ক্লাবের সদস্য, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিত্ব, সাহায্য সংস্থা আছে এমন দেশ বাংলাদেশ থেকে দ্রুত পাকিস্তানি সৈন্য অপসারণের জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিত তবে অবশ্যই বাংলাদেশের এই দূর্দশার ইতি খুব দ্রুতই টানা যেত। ভৌগোলিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের অদ্ভূত অবস্থান এবং তাদের অর্থনৈতিক দুর্বলতার কথা বিবেচনা করে আমরা বিশ্বকে মানবতার স্বার্থে পশ্চিম পাকিস্তানে কোন সাহায্য না দিতে অনুরোধ করলাম, যাতে তারা সেই সরঞ্জাম দিয়ে বাঙালিদের নির্মমভাবে হত্যা না করতে পারে।

এইড বাংলাদেশ কমিটি, ইউরোপা

‘এইড বাংলাদেশ কমিটি, ইউরোপা’ অতি সম্প্রতি ‘স্কেফেনটেলবাডেস্ট্রাট ২৫, রুরমন্ড, নেদারল্যান্ড একটি প্রধান কার্যালয়ের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর টেলিফোন নম্বরটি হল ০৪৭৫০-৯৭৮৭। এর নীতি হল, বাংলাদেশে চলমান বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে সমগ্র বিশ্বের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা এবং লক্ষ লক্ষ ভুক্তভোগী মানুষকে খাদ্য, ওষুধ, বস্ত্র, কম্বল, দুধ এবং অন্যান্য দ্রব্যাদির সরবরাহের পাশাপাশি নীতিগত সমর্থন যোগানো। এছাড়া এটি শেখ মুজিবুর রহমানের ছয় দফা দাবীর প্রচার এবং প্রসার ঘটাচ্ছে যা বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টত বোঝা যায়, নির্বাচনের সময় পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার কোন ধরনের উদ্দেশ্যই বাঙালিদের ছিলনা। যদিও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের বিশ্বাসঘাতকতা তাদের নিশ্চিত করেছিল, তারা পাকিস্তানের কাছ থেকে কোনরকম ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করতে পারেনা। তাদের সামনে স্বাধীনতা ঘোষণা করা ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ খোলা ছিলনা। এছাড়া এই কমিটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পিছনে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কারণটিও প্রচার করছে।

সংবাদ সম্মেলনসমূহ

‘বাংলাদেশ এইড কমিটি, ইউরোপ’ বাংলাদেশে চলমান বর্তমান প্রবল পরিস্থিতি সম্পর্কে পুরো বিশ্বের মতামত এবং সংহতি প্রকাশের জন্য তিনটি সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করে। সেগুলো অনুষ্ঠিত হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট, দি হেগ এবং হার্লিনে। কমিটির এই কর্মকান্ড জার্মান রেডিও এবং টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়।

বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় সেবা গণহত্যার নিন্দা জানিয়েছিল কি?

১৬ এপ্রিল ‘বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় সেবা’র সম্পাদক জেনেভা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে গণহত্যার নিন্দা জানিয়ে টেলিগ্রাম করেছেন। টেলিগ্রামটিতে মূলত নির্বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ছাত্র হত্যার দ্বারা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার চক্রান্তকে নিন্দা জানানো হয়।

‘স্বাধীনতা’ হানাদার বাহিনীর উচ্ছেদ চেয়েছিল কি?

১৮ এপ্রিল লন্ডনে হয়ে যাওয়া ‘লিবারেশন’ (প্রাক্তন ঔপনিবেশিক স্বাধীনতা আন্দোলন) এর বার্ষিক সভায় বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার নিন্দা জানানো হয় এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানি সৈন্যদের উচ্ছেদের বিষয়েও সেখানে একটি প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হয়।

গাফফার খান ইয়াহিয়া-ভূট্টো-কাইয়ূম গোষ্ঠীর প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন

‘আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়’র ২৫০ জন শিক্ষক একটি স্মারকলিপিতে ইয়াহিয়া খান ইসলাম এবং পাকিস্তানের নামে বাংলাদেশে যা করেছেন তার প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন। ইন্দোনেশিয়া সংসদের স্পীকার এবং ‘আন্তর্জাতিক ইসলামিক সম্মেলন’ বাংলাদেশে পাকিস্তানি সৈন্যদের সংঘটিত এই পাশবিকতার নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচিত করা হয়েছিল হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অবস্থিত চতুর্থ বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে (মে ১৩-১৬)। উক্ত সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলকে নেতৃত্ব দেন জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব আ সামাদ।

যুদ্ধরত বাংলাদেশ

সংস্থাকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রতিনিধি আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রতিনিধি দলের প্রধান জনাব আ সামাদ জানালেন যে, বাংলাদেশ এখন যুদ্ধাবস্থায়। জনাব সামাদ পরিপূর্ণভাবে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা বর্ণনা করলেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা হানাদার ছাড়া আর কিছু নয়, কারণ তাদের বিশেষ কোন সমর্থনই নেই- এই বিষয়টিও পরিষ্কার করলেন।

পাশবিকতা নিন্দিত

সম্মেলনে ১২৪ টি দেশ থেকে উপস্থিত প্রায় ৮০০ সদস্য অবিসংবাদিতভাবে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য কর্তৃক বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া পাশবিকতা এবং গণহত্যার প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে। ‘বিশ্ব শান্তি সংসদ’ স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামের সাথে সংহতি প্রকাশ করে। সংসদটি স্বকীয়তা রক্ষার জন্য বাংলাদেশের জনগনকে ‘ল্যাম্ব্রাকিস মেডেল’ দিয়ে সম্মানিত করে।

রাষ্ট্রদূতের সফর

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব এম এ সামাদ বর্তমানে বিশ্ব পরিদর্শন করছেন। তিনি ইতোমধ্যে হাঙ্গেরির সরকারের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এবং বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি পূর্ব ইউরোপিয়ান ভ্রমনের সমাপ্তি হিসেবে সোভিয়েত রাষ্ট্রপতি জনাব পডগর্নির সাথে সাক্ষাত করবেন এবং এরপর তিনি যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক মতামতে সংহতি

বিগত দুই মাস ধরে বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা বৈশ্বিক মতামতের সংহতি প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনা করেছে যেটা বর্তমানে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের পাশবিকতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

দুই ইংরেজি পত্রিকা- ‘দ্যা টাইমস’ এবং ‘দ্যা গার্ডিয়ান’র বিশেষ প্রতিবেদন দেখিয়েছে যে, শেখ মুজিবুর রহমান এবং ইয়াহিয়া খানের ভিতর আলোচনা চলাকালীন ইয়াহিয়া গোপনে বাংলাদেশে যুদ্ধের সৈন্যদল এবং সরঞ্জামাদি নিয়ে আসেন। পাকিস্তান সরকার থেকে প্রতি পদক্ষেপে চাপ প্রদান করা দুই দলের ভিতর পার্থক্য স্পষ্টত প্রতীয়মান করছিল। কথার খোলাসা না করেই ইয়াহিয়া বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন এবং পাকিস্তানি সৈন্যরা হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ল নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর।

শরণার্থীদের দূর্দশা

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনু্যায়ী ভারতে শরণার্থীদের ভিতর কলেরা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। শরণার্থীর সংখ্যা পঞ্চাশ লক্ষ অতিক্রম করতে চলেছে এবং ৬০,০০০ এরও বেশি লোক প্রতিদিন শরণার্থী হচ্ছে। ওষুধ দুর্লভ হয়ে পড়েছে এবং ভারতীয় সরকার সাহায্যের জন্য বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। রোগাক্রান্ত এলাকায় ব্রিটিশ, ডাচ এবং জার্মান সরকার ইতোমধ্যে আর্থিক সাহায্যসহ অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছে। ‘এইড বাংলাদেশ কমিটি’ রেডিও, টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে জার্মানীর জনগনের কাছে সাহায্যের জন্য বিশেষভাবে আবেদন জানিয়েছে। ‘মেডিকো ইন্টারন্যাশনাল’ ইউরোপে এবং ‘সেইন্ট জন’স অ্যাম্বুলেন্স প্রিগাডো, কলকাতা’ ভারতে এর প্রতিনিধি দ্বারা পশ্চিমবঙ্গে ২৫০০০০ ডি, এম এর বেশি চিকিৎসা সাহায্য পাঠিয়েছে। এরা আরও টাকা এবং সরঞ্জাম সংগ্রহ করছে।

বাংলাদেশি সৈন্যদের প্রত্যুত্তর

সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী ঝটিকা অভিজানে হারের পর পাকিস্তানী সৈন্যরা অবস্থান হারাতে শুরু করেছে। স্বাধীনতার সৈনিকরা উক্ত এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাচ্ছে, এমনকি ঢাকা বিমানবন্দরও হুমকির সম্মুখীন। পাকিস্তানি সৈন্যরা সরঞ্জাম এবং লোকবলের অভাবে খুব বাজেভাবে ভুগছে। সাধারণ লোকের সমর্থনের অভাবে তারা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অভাবে ভুগছে। তারা দল ধরে শহর থেকে চলে যেতে পারে এবং তাদের বহরগুলোতে স্বাধীনতাকামী গেরিলা যোদ্ধারা সাধারণ মানুষের সাহায্য নিয়ে ওঁত পাতছে।

সময় এখন বাংলাদেশের পক্ষে এবং পাকিস্তানী সৈন্যারা বাংলাদেশের ওপর হস্তক্ষেপের প্রতিদান হিসেবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ কমিটি, ইউরোপের আবেদন

আমরা সকল দেশ, বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থী এবং বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ ভুক্তভোগীদের জন্য সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানাই। ধারণা করা হচ্ছে যে, শুধুমাত্র শরণার্থীদের জন্যই ত্রিশ লক্ষ কলেরা প্রতিষেধক, বিশ লক্ষ টিএবিসি প্রতিষেধক, এক লক্ষ বোতল স্যালাইন, পঁচিশ হাজার মোলার ল্যাকটেট, দশ লক্ষ অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ক্যাপসুল, এক লক্ষ প্যাকেট কটন, সত্তর হাজার ফুট গজ ব্যান্ডেজ এবং দশ হাজার ডোজ ডিপথেরিয়া প্রতিষেধক সিরাম প্রয়োজন। বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ অসহায়ের চিকিৎসা সাহায্য খুব বেশি প্রয়োজন। কিন্তু তাদের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য আমাদের কিছু সময় প্রয়োজন। তাই মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে আমরা আমাদের কাছে টাকা-পয়সা এবং দ্রব্যাদি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করছি যাতে করে আমরা তা পৌঁছে দিতে পারি। “আবারো আমরা মানবতার দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি, পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্য পরিষদে যাতে কোন সাহায্য পাঠানো না হয় এবং এর দ্বারা আমরা ভুক্তভোগী বাংলাদেশকে পুরোপুরি ধ্বংস হওয়ার পূর্বেই বাঁচাতে পারব।”

আমরা বিভিন্ন দেশের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে চাপ দেয়ার জন্য অনুরোধ করব যাতে করে দেশটি বাংলাদেশ থেকে তার আক্রমণকারী সৈন্যদের সরিয়ে নেয়। আমরা তাদের কাছে আরও অনুরোধ করি যেন তারা অতিসত্ত্বর ‘বাংলাদেশ সরকার’কে স্বীকৃতি দেন।

এইড বাংলাদেশ কমিটি- ইউরোপ কর্তৃক ইস্যুকৃত।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!