শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪১। বৃটেনে অ্যাকশন কমিটিসমূহের ঐক্যবদ্ধ তৎপরতা চালানোর প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রতিবেদন | ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাকশন কমিটি প্রকাশিত প্রচারপত্র | ৭ জুলাই, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির প্রতি আহ্বান
আমরা প্রয়োজনে একতাবদ্ধ হয়েছি: এবার কর্মে একতাবদ্ধ হই
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি
(ওয়েস্টমিনস্টার–লন্ডন)
২৫ মার্চ ১৯৭১ এর ভয়াবহ গণহত্যা অভূতপূর্বভাবে গোটা বাঙালি জাতিকে একতাবদ্ধ করেছে। আওয়ামী লীগের ৬-দফাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ১-দফায় একীভূত করেছে তা। বাঙালির বন্ধনমুক্তির অতি জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি পরিণত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জবরদখল থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে।
এ ঘটনার পর থেকে তিন মাস এবং কভেন্ট্রি কনফারেন্স সম্মেলন ও পরিচালক কমিটি নিয়োগের প্রায় আট সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে। যুক্তরাজ্যে আমরা এখনো অ্যাকশন কমিটির একটি জাতীয় নেটওয়ার্কের আবির্ভাবের অপেক্ষায়, যা সমগ্র বৃটেনে আমাদের শত শত নিবেদিতপ্রাণ কর্মীদেরকে দিকনির্দেশনা যোগাবে। আমাদের এখনো জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমের তাড়নার সুশৃঙ্খল ও দৃঢ়কর্মকান্ডে রূপান্তর প্রত্যক্ষ করা বাকি। পরিচালক কমিটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা কর্মীদের একটি সাংগঠনিক কাঠামো প্রদানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দুঃখজনকভাবে তারা কোনো খসড়া সংবিধান তৈরিতে সমর্থ হয়নি যা আমাদের জাতীয় সংঘবদ্ধ আন্দোলনে কোনো কাঠামো দাঁড় করাতে পারে।
অতএব, এখনই উপযুক্ত সময় কভেন্ট্রি কনফারেন্সের সময়কার মতোই সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার, পরিচালক কমিটির ব্যর্থতাগুলোকে অতিক্রম করতে। এযাবৎ গঠিত অ্যাকশন কমিটির অতিরিক্ত প্রতিনিধিসহ কভেন্ট্রি কনফারেন্সের প্রতিনিধিদের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তা করা সম্ভব। এমন একটি সম্মেলন যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সাংগঠনিক ও সাংবিধানিক বিষয়াদির উপর প্রতিবেদন গ্রহণ করবে এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সম্মুখীন হওয়া কিছু অতি গুরুতর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি (ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন) যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সুসঙ্গত ও সুশৃঙ্খল একক জাতীয় সত্ত্বা হিসেবে সংগঠিত করার কাজে জড়িত সকলের বিবেচনাধীন হিসেবে এই স্মারকলিপির খসড়া তৈরি করেছে।
ক) আমাদের বিবেচনাধীন:
১। এমন একটি জাতীয় সংগঠন সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি-সহজভাবে উল্লেখের জন্য একে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিল হিসেবে অভিহিত করা হোক-উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন সমর্থনে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কর্মীদের চেতনাগত, রাজনৈতিক ও বৈষয়িক সংস্থানের উপযুক্ত ব্যবহার।
২। বাংলাদেশ কাউন্সিলের কর্মকান্ড বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রদূতের কর্মকান্ডের সাথে বিভ্রান্তির অবকাশ থাকবে না। এ দু’টো প্রতিষ্ঠান সম্পূরক, যদিও বিভিন্নভাবে পৃথক। এ পার্থক্য সুস্পষ্টভাবে উপলব্ধ, সমাদৃত এবং সর্বাধিক সতর্কতা ও সচেতনতার সাথে আমাদের আচরণ ও কর্মকান্ডে বহিঃপ্রকাশিত হবে। অন্যথায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের কারণে সংঘর্ষ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টিহবে।
৩। বাংলাদেশ কাউন্সিলের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদকে সচল করা এবং জাতীয় সংস্থানের সর্বোচ্চ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাউন্সিল সম্পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করবে এবং বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রদূত, বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাথে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবে। এছাড়াও, এর তহবিলের অবমূল্যায়ন এবং লোকবলের ব্যবহারে বাংলাদেশ কাউন্সিল দিকনির্দেশনার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রাষ্ট্রদূতের শরণাপন্ন হবে, এবং আন্তর্জাতিক সংহতিমূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রদূতের দিকনির্দেশনা অনুসারে কাজ করবে।
৪। রাষ্ট্রদূত কার্যালয়ের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক সংহতিমূলক কর্মকান্ডের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য এবং লন্ডন থেকে সহজে অভিগম্য দেশগুলোতে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৫। এ দু’টি প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ ও যথাযথ সংস্থানে যৌথভাবে কাজ করবে।
খ) জাতীয় সাংগঠনিক কাঠামো প্রসঙ্গে -বাংলাদেশ কাউন্সিল
১। অন্যান্য সকল কার্যাবলীর উর্ধ্বে বাংলাদেশ কাউন্সিলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হবে বাংলাদেশ সমর্থকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক অবদানসংগ্রহ। মনে রাখা উচিৎ যে সমগ্র জাতি এককভাবে দেশাত্ববোধের এক নজীরবিহীন উচ্চতায় স্থাপিত হয়েছে, তবে এমন কলাকৌশলের সরবরাহ প্রয়োজন যাতে এ সংস্থা তাদের কাছে পৌঁছতে পারে, সাপ্তাহিকভাবে সম্ভব না হলেও মাসিকভাবে। যদি আমরা তাদের কাছে পৌঁছতে না পারি, তহবিল সংগ্রহে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারি, তবে এ জনশক্তির সম্ভাবনার ১০ শতাংশ অর্জন করাও সম্ভব হবেনা।
২। অতএব, প্রাথমিক কমিটি-স্থানীয় কমিটি-আবাসিক অথবা পেশাগতঅবস্থাভেদে আমাদের জাতীয়তাবাদী কর্মীদের সমাবেশের উপর ভিত্তি করে এ দলীয়করণ খুব বেশি বেখাপ্পা অথবা ব্যাপকভাবে পরিব্যাপ্ত হবেনা। এ দু’টো বিষয়ই সম্ভাব্য সমর্থকদের সাথে ব্যক্তিগত ও স্বাভাবিক সম্পর্কে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে এবং…স্বাভাবিক যোগাযোগের গতিময়তার ক্ষেত্রে ক্ষতিকারক হবে এবং তহবিল সংগ্রহ বাধাগ্রস্থ করবে।
৩। স্থানীয় কমিটি হবে একটি কার্যকরী একক এবং সংখ্যায় ৫০ পর্যন্ত হতে পারে, প্রতি ইউনিটে কর্মীসংখ্যা হবে পাঁচ এবং প্রত্যেক কর্মী দলের কমপক্ষে পাঁচ জন সদস্যের দায়িত্ব বহন করবে।
৪। স্থানীয় কমিটিগুলো বাংলাদেশ কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিবন্ধভুক্ত হবে এবং সাধারণ স্বার্থ সংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হবে সরাসরি। এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য কার্যক্রমের দক্ষতাকে গতিশীল করা। এছাড়া, স্থানীয় কমিটিগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিজ আঞ্চলিক কমিটির অধীনে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবে, তার অস্তিত্ব থাকুক অথবা বিলোপ ঘটুক যাই হোক না কেন।
৫। স্থানীয় কমিটিতে ভোটাধিকার উপস্থাপনের জন্য কমপক্ষে ১০০ জন সদস্যের প্রয়োজন হবে-সদস্যপদ ফি বার্ষিক ১২ ব্রিটিশ পাউন্ড এবং কেন্দ্রীয় তহবিলে কমিটির সর্বনিম্ন অবদান বার্ষিক ১০০০ ব্রিটিশ পাউন্ড হতে পারে। ভোট উপস্থাপনের ক্ষেত্রে স্থানীয় কমিটিকে কেন্দ্রীয় তহবিলে অতিরিক্ত অবদান অনুপাতে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
৬। শৃঙ্খলাবদ্ধ ও সমন্বিত কার্যক্রম উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে প্রাথমিক ইউনিটগুলোকে আঞ্চলিক কমিটিতে যেমন (ক) গ্ল্যাসগো ও নর্থ; (খ) ম্যানচেস্টার ও লেনস; (গ) লীডস ও ইয়র্কস; (ঘ) বার্মিংহাম ও মিডল্যান্ডস; (ঙ) ব্রিস্টল অথবা কার্ডিফ ও দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ড; (চ) লন্ডন ও দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ড এভাবে সমন্বিত করা যেতে পারে। আঞ্চলিক কমিটিগুলোর প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় কমিটির বিবেচনাধীন ও আহূত বাংলাদেশ কাউন্সিলের জাতীয় সম্মেলন থেকে দায়িত্ব গ্রহণের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সম্পূর্ণ সংস্থা গঠন করবে।
গ) সাংগঠনিক কার্যাবলী সম্পর্কিত
১। ‘কর্মে একতা’ অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বাপেক্ষা বড় প্রতিবন্ধক হবে প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব (গত দুই দশকে বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কর্মকান্ড থেকে উদ্ভুত এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রবীণ; যারা স্বভাবতই কোনো না কোনোভাবে স্থূল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন যদিও এতে তাদের কোন দোষ নেই) এবং স্থানীয় অ্যাকশন কমিটির নতুনভাবে উদ্ভূত নেতৃত্বের (বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তরুণ এবং শিক্ষিত কিন্তু অনেকেই ধৈর্যহীনতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক দাম্ভিকতায় আক্রান্ত) মধ্যে বর্ধিষ্ণু সাংঘর্ষিক সম্পর্ক। প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব নতুন প্রজন্মের রাজনীতিবিদদের হস্তক্ষেপে বোধগম্যভাবেই চিন্তিত। অন্যদিকে, নতুন উদ্ভুত জননেতৃত্ববিরক্তিবোধ করে যখন তাদের শুভাকাংক্ষাউদ্ভুত কর্মকান্ড সংকীর্ণ ও সাম্প্রদায়িক বিরোধপূর্ণ রাজনীতি দ্বারা বাধাগ্রস্থ হয়। তরুণ প্রজন্ম কার্যক্রম ও দ্রুত তৎপরতার পরিবর্তে অপ্রাসঙ্গিক তর্ক-বিতর্কে সময় নষ্ট করছে। নেতৃত্বে এ দুই ভিন্ন ধরণের বৈশিষ্ট্য খুবই দৃশ্যতঃ হবে যদি লন্ডনের দুটি সংগঠন, স্টুডেন্টস’ অ্যাকশন কমিটি অথবা উইমেন’স কমিটি এবং লন্ডন অ্যাকশন কমিটির কার্যপন্থার তুলনামূলক বিচার করা হয়। এ দু’টো সম্পূর্ণ পৃথক ধারাকে একটিমাত্র সমন্বিত ধারায় একত্রিত করাটাই আমরা যারা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কর্মীদের মধ্যে ‘কর্মে একতা’ দেখতে আগ্রহী তাদের সকলের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী সাংগঠনিক কাজ। সকল পর্যায়ে সকল প্রচেষ্টা এই সমস্যার সমাধানে ঘনীভূত করা উচিৎ।যদি প্রতিষ্ঠিত জননেতৃত্ব এবং নবউদ্ভুত নেতৃত্বের মধ্যে এ সম্মেলন সম্ভব হয় তবে আন্দোলনে তহবিল ও কর্মকান্ড সরবরাহে প্রধান দুটি সমস্যার তুলনামূলক সহজ সমাধান সম্ভবপর হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে একতা ও সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত মনস্তাত্বিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্ব এবং নবউদ্ভুত রাজনৈতিক কর্মীদের পরস্পরের সম্পর্কে আরো বেশি জানা এবং পরস্পরের শক্তি ও সীমাবদ্ধতাগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতাগুলোর উপরে তাদের শক্তি ও ভালো দিকগুলোকে গুরুত্ব দেও্য়া এবং যথাযোগ্য ক্ষমতার বিবেচনায় তাদেরনেতৃত্বে স্থান দিয়েই একটি কাঠামো সৃষ্টি। এ সকল নেতৃত্বের মধ্যে অনেকেই কর্মঠ, দৃঢ়চেতা ও বিশ্বস্ত এবং লক্ষ্যের প্রতি তাদের নিষ্ঠা প্রশ্নের উর্ধ্বে। এসকল ব্যক্তিবর্গ ট্রাস্টি, মধ্যস্থতাকারী, কোষাধ্যক্ষ, ফিন্যান্স কমিটির সদস্য প্রভৃতি পদের জন্যবিশেষভাবে উপযুক্ত এবং তাদের মধ্যে অনেকেই আবার বিভিন্নসংস্থার প্রধান পদস্থিত হবার যোগ্য। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে তারা সম্পাদকীয় দায়িত্ব এবং দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদে চেয়ারম্যান পদের জন্য উপযুক্ত নন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের বৈঠকগুলো উপযুক্ত সূচনা পায়না, অপ্রাসঙ্গিকতায় বাধাগ্রস্থ হয়, সামান্যতম বিরোধিতায় লাইনচ্যুত হয়, সময়মত শুরু ও শেষ হয়না, কোনো গ্রহণযোগ্য ও বোধগম্য সমাধানে পৌঁছে না এবং এর কারণ হলো ত্রুটিপূর্ণ সভাপতিত্ব। ত্রুটিপূর্ণ সভাপতিত্বের কারণে বৈঠকগুলো জাতিকে একতাবদ্ধ হতে সহায়তা এবং আমাদের রাজনৈতিক চেতনা ও দেশাত্ববোধের তাড়নাকে উর্ধ্বে তুলে ধরার পরিবর্তে বিপরীত ঘটনা ঘটায়। এমন ত্রুটিপূর্ণভাবে পরিচালিত বৈঠকগুলো অপ্রীতিকর বিষণ্নতা ও হতাশা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে। এ বৈঠকগুলো উৎসাহ প্রদানের পরিবর্তে বরং আমাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা সৃষ্টি করে।
২। অন্যদিকে, কার্যকরী সাবকমিটির ভিত্তিতে কর্মকর্তাবৃন্দের সমন্বয় প্রয়োজন, যাদের কার্যালয় পরিচালনা, প্রকাশনা, জনসম্পর্ক, অ্যাকাউন্টিং প্রভৃতি নির্দিষ্ট কাজ থাকবে। এসকল কর্মকর্তার যথাযোগ্য সমন্বয় সংগঠনটির কার্যনির্বাহী শাখা গঠন করবে। তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব হবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জাতীয় সম্মেলন অথবা জাতীয় কাউন্সিলের বিভিন্ন সম্মেলনের মধ্যবর্তী সময়ে আসা নীতিমূলক সিদ্ধান্তগুলো নির্বাহ করা।
৩। ‘কর্মে একতা’ এবং একই সাথে ‘কার্যাবলীতে দক্ষতা’ অর্জন করতে সংস্থাটির আরো একটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে যা হলো প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধিত্বমূলক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসা কর্মকর্তাবৃন্দ এবং কোনো জনসংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট নন এমন ব্যক্তিবর্গ কিন্তু পেশাগত ও রাজনৈতিকভাবে দায়িত্বশীল পদের জন্য যোগ্য তাদের কার্যাবলী সমন্বয়। এসকল ব্যক্তিবর্গ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসবেন তা আশা করা যায়না। তাদের কাছে পৌঁছানোর একমাত্র উপায় হলো খসড়া। জাতীয় কাউন্সিলের প্রাথমিক ইউনিট থেকেই কর্মকান্ডের বিভিন্ন পর্যায়ে সকল নির্বাচক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে ক্ষমতা বন্টনের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ আন্দোলনে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সাংগঠনিক সমস্যা নিয়ে এই ছিলো আমাদের তাৎক্ষণিক কিছু ভাবনা এবং বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির সদস্যবৃন্দ (ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন) আমাদের সহকর্মী ও স্বদেশবাসীর কাছ থেকে এই স্মারকলিপির মন্তব্য ও সমালোচনা গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবেন। এছাড়াও আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে অ্যাকশন কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দের উচিৎ আন্দোলনে প্রয়োজনীয় অ্যাড-হক সংবিধান সরবরাহে জরুরীভাবে বৈঠকে অংশগ্রহন করা, যাতে সদস্য এবং কমিটি হিসেবে আমাদের অধিকার ও বাধ্যবাধকতাগুলো উল্লিখিত এবং সীমাবদ্ধতাগুলো সংজ্ঞায়িত থাকবে। কেবল তবেই আমাদের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে একটি কার্যকরী কাঠামো প্রদান করা যাবে। অন্যথায় হতাশা গভীরতর হবে এবং জনগণের দেশাত্ববোধক প্রেরণাকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। যদি আমরা তা ঘটতে দেই, তা হবে জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ এবং বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিশ্বাসঘাতকতাস্বরূপ।
বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির পক্ষে
(ওয়েস্টমিনস্টার-লন্ডন)
২৩ মিনফোর্ড গার্ডেনস
লন্ডনডাব্লিউআই
৭ জুলাই ১৯৭১,
আ.রহিম চৌধুরী
শরিফুল ইসলাম
যুগ্ম আহ্বায়ক
<৪, ৪২, ৮০-৮১>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪২। পাকিস্তানকে সহায়তা বন্ধের জন্য বাঙালি শ্রমিক নেতাদের আহ্বান | ‘ওয়ার্কার প্রেস’ লন্ডন | ৯ জুলাই ১৯৭১ |
৯ জুলাই শুক্রবার, ১৯৭১
ওয়ার্কার্স প্রেস
বাংলাদেশ এক্সক্লুসিভ
পাকিস্তানে সরবরাহ বন্ধ হোক: ইউনিয়নিস্টদের কাছে আবেদন
রবার্ট ব্ল্যাক
বৃটিশ শ্রমিকেরা পাকিস্তানের প্রতি সহায়তা রোধ করুক, গতকাল চল্লিশ লক্ষ লোকের নেতা– ‘বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিকলীগ’ শক্তিশালী বক্তব্য ওয়ার্কার প্রেসকে।
লীগ সভাপতি শাহজাহান এবং সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান বৃহত্তর ব্যবসায়ী সমিতিগুলো বিশেষত বন্দর ও পরিবহন সমিতির কাছ থেকে সংহতির অঙ্গীকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
বাঙালি এবং বৃটিশ শ্রমিকদের মধ্যে তাদের মৌলিক অধিকারগুলোর সাধারণ আন্দোলনে একতার উপর গুরুত্বারোপ করে শাহ জাহান বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক লীগ এর মধ্যেই বৃটিশ বন্দর শ্রমিকদের ‘পাকিস্তানি বা পাকিস্তানে দ্রব্যাদি ও অস্ত্র পরিবহনে জড়িত যেকোন জাহাজে কাজ করা থেকে বিরত থাকতে’ অনুরোধ জানিয়েছে।*
তিনি এই প্রস্তাবনাটি নিয়ে বৃটেনের সিংহভাগ বন্দর শ্রমিকদের একতাবদ্ধ করার কাজে নিয়োজিত পরিবহন ও সাধারণ শ্রমিক সমিতির কর্ণধার জ্যাক জোনস-এর সাথে আলোচনায় বসার আগ্রহ ব্যক্তকরেছেন। (টি অ্যান্ড জি ডাব্লিউ ইউ কনফারেন্স স্কারবার-তে আগামী সোমবার শুরু হচ্ছে।)
শাহজাহান বলেন যে সারা বিশ্বের ব্যবসায়ী সমিতিগুলোর সাথে বৈঠকের পর তিনি ধারণা পেয়েছেন যে যদি বৃটিশ শ্রমিকেরা বাংলাদেশ সমর্থনে নেতৃত্ব দেয়, তবে অন্যরাও শীঘ্রই তাদের অনুসরণ করবে।
প্রভাব
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি ইউরোপ, আমেরিকা এবং কানাডার শ্রমিকদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করবে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, শ্রমিক ও তাদের নেতাদের বিশ্ব রাজনীতিতে ‘ক্ষমতা বিবেচনায়’ বাংলাদেশ সমর্থন থেকে বিচ্যুত হওয়া উচিৎ না।
তাদের একমাত্র বিবেচনা হওয়া উচিৎ বিশ্বব্যাপী শ্রমিকেরা যে লক্ষ্যে আন্দোলনে জড়িত – রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি।
এ বিষয়গুলো প্রাক্তন পাটকল শ্রমিক আবদুল মান্নান কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। তিনি আইয়ুব খানের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম জনআন্দোলন সংগঠনের অভিযোগে সাত বছর ধরে পাকিস্তানি জেলে কারাভোগ করেন।
২৫ মার্চ থেকে এযাবৎ তার মা-সহ পরিবারের সাত সদস্য পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হয়।
জবাব
তিনি ঘোষণা করেন, ‘আমরা চাই টি ইউ সি এর অন্তর্ভুক্ত সকল বৃটিশ শ্রমিক তাদের নেতৃবৃন্দ আমাদের আবেদনে সাড়া দেবেন।‘
‘পাকিস্তান বর্জন করুন। ইয়াহিয়া খানের জন্য সকল প্রকার সরবরাহ বন্ধ করুন। যদি বৃটিশ শ্রমিকেরা নেতৃত্ব গ্রহণ করে, বিশেষ করে তাদের নেতৃবৃন্দ, তবে সারা পৃথিবীর শ্রমিকেরা তার অনুসারী হবে।‘
২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সময়ে জাহান এবং মান্না উভয়েই বাংলাদেশে ছিলেন।‘ব্যবসায়ী সমিতিগুলো এ আক্রমণের সরাসরি শিকার হয়েছে।‘ শাহজাহান একথা বলেন।
ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং অন্যান্য শহরে আন্দোলনকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
এমনকি বেতন সংগ্রহের আহ্বানে আসা শত শত শ্রমিকদের মেশিনগানের গুলিতে হত্যা করা হয়েছে।
‘কিন্তু তাদের চেতনা অক্ষুণ্ণ রয়েছে’। শাহজাহান ওয়ার্কার প্রেসকে এই বলে নিশ্চিত করেন।
তিনি ব্যাখ্যা করেন যে শতকরা ৩০ শতাংশ বাঙালি শ্রমিক ইয়াহিয়া শাসনের অধীনে সেনাপ্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে।
এসকল শ্রমিকদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং নবগঠিত বাহিনীর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে অংশ নিচ্ছে।
উভয় নেতাই বাংলাদেশের কৃষক-শ্রমিকদের সাথে বৃটিশ ব্যবসায়ী সমিতির দৃঢ় সংহতির জন্য আয়োজিত প্রচারণা কার্যক্রমের জন্য ওয়ার্কার্স প্রেসকে ধন্যবাদ জানান।
পাকিস্তানি বাহিনীর জন্য সকল দ্রব্য সামগ্রী ও অস্ত্রের উপর বাণিজ্যিক সমিতিগুলোর জন্য দাপ্তরিক নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে তাদের আবেগপূর্ণ এ আবেদন জ্যাক জোনস, হিউ স্ক্যানলন এবং টি ইউ সি সাধারণ সম্পাদক ভিক্টর ফেদারের বিবেচনাধীন।
সকল সমিতির শ্রমিকদের এখনই পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দাবি জানানো দরকার।
<৪, ৪৩, ৮২-৮৫>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৩। পাকিস্তানে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ইয়াহিয়া খানের সর্বশেষ প্রচেষ্টা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন | বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশান অফ নিউ ইংল্যান্ডের পুস্তিকা | ১৪ জুলাই ১৯৭১ |
পাকিস্তানে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া–এর সর্বশেষ সূত্র
বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশান অফ নিউ ইংল্যান্ড
জুলাই ১৪, ১৯৭১
ক্ষমতাশীল রাষ্ট্রগুলো এবং বিশ্বব্যাংকের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চাপের পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পাকিস্তানে বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপন করতে বাধ্য হয়েছেন । জুন ২৮, ১৯৭১-এ তার এ হাস্যকর পরিকল্পনা ঘোষিত হয়। তিনি এমন একটি প্রক্রিয়ার সূচনা করেন যার মাধ্যমে চার মাসের কাছাকাছি সময়ের মধ্যেই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। বেসামরিকসরকারগঠিতহওয়ারপরওতা সেনা আইনের আবরণে ঢাকা থাকবে। এছাড়া, সবচেয়ে হাস্যকর ব্যাপারটি যেঅকার্যকর পন্থায় সরকার গঠিত হবে তা নয়, বরং যেভাবে তাকে অভিহিত করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের প্রস্তুতকৃত সংবিধানের খসড়া
এ পরিকল্পনা অনুসারে জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে সংবিধান রচনার প্রাথমিক উদ্দেশ্যেই নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ তাদের সে অধিকার হারাবেন। বরং সংবিধান রচনায় জাতীয় ও প্রাদেশিক কার্যাবলী সূচিত হওয়ার ঘোষণায় নির্বাচিত বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন সংঘটন এবং সংবিধান রচনায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের পর তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের জন্য তাদের এ অধিকার বিলোপের কোনো অবকাশ থাকেনা। বরং তা জনগণের উপর শাসকগোষ্ঠীর নিজস্ব সংবিধান চাপিয়ে দেয়ার শামিল। এ স্বেচ্ছাচারী সংবিধান যে সেনাশাসনের অধীনে অভিষিক্ত হবে তাতে আইনত এর কোনো স্থান থাকবেনা। এ সংবিধান দীর্ঘসময়ের গ্রহণযোগ্যতে হারাবে, যে পরিণতি ঘটেছিলো প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান প্রণোদিত সংবিধানের ক্ষেত্রে। তা শুধু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে অজ্ঞতাই নয়, একই সাথে সেনাশাসনের বিরুদ্ধে যেকোন কিছুর মুখোমুখি হওয়া পরিকল্পিতভাবে এড়ানোর উদ্দেশ্য প্রকাশ করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে দেশে সংনিধান প্রণয়নের এ ‘অবিচ্ছেদ্য’ অধিকার সেনা শাসকদের কে দিয়েছে?
সংবিধানের প্রকৃতি
সংবিধানের প্রকৃতি ইয়াহিয়া খানের দ্বারা নির্দেশিত হয়েছে। তার মতে, এটি প্রাদেশিক ক্ষেত্রে দৃঢ়তর স্বায়ত্বশাসন এবং একই সাথে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার নিশ্চিত করবে। তা একই সাথে স্ববিরোধী এবং কথার মারপ্যাঁচ হিসেবে দাঁড়ায়। ২৫ মার্চের পর থেকে এযাবৎ সেনা অভিযানের মাধ্যমে বাঙালিদের সাথে যা ঘটেছে তার পর স্বায়ত্বশাসন তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এই পরিকল্পিত ও নৃশংস গণহত্যা এবং অর্থনৈতিক ধ্বস পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক জান্তার উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে।তারা বাঙালিদের নিজ জনগণ বলে মনে করে না। বরং তারা মানবসভ্যতার ইতিহাসে নজীরবিহীনভাবে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে চিরকাল অবদমিত রাখতে এবং বাংলাদেশকে উপনিবেশ হিসেবেশোষণ করতে চায়।তাদের বর্তমান পরিকল্পনা তাদের এ চক্রান্ত অবশ্যই ফাঁস করে দেয়, যদিও তা শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর চোখে ধূলো দেয়ার অভিপ্রেত চেষ্টা। তাতে ভারতে অবস্থানরত ছয় মিলিয়ন শরণার্থীসহ দুর্দশাগ্রস্থ মানুষের জন্য কোনো সমবেদনার প্রকাশ নেই। বাঙালিদের মধ্যে আত্ববিশ্বাস ও মঙ্গলকামনা সৃষ্টির কোনো উদ্দেশ্য নেই। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাশাসকদের কাছে এসবের কোনো প্রয়োজনই নেই। তারা বিশ্বাস করে তারা সেনাশাসনে অবদমন ও নৃশংসতার মধ্য দিয়ে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবে। তাদের এখনো এ সত্যটি মেনে নেয়া বাকি যে তথাকথিত একতা ও সংহতির বন্ধন তারা নিজেরাই ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
প্রত্যাশিত সহকর্মীবৃন্দ:
বর্তমান পরিকল্পনায় ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশে কোন ব্যাক্তিবর্গের সহায়তা প্রত্যাশা করেন? অবশ্যই আওয়ামী লীগ নয় যারা জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে মাত্র দুটো বাদে বাকি সব সীল অর্জন করেছে। আওয়ামী লীগ চিরতরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের যা ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন’ ও ‘রাষ্ট্রবিরোধী বা অপরাধ্মূলক কর্মকান্ডে’ জড়িত ছিলেন তাদের অ্যাসেম্বলিতে বসতে দেওয়া হবেনা। এছাড়া যারা এগিয়ে আসবেন তারা নিজ নিজ ক্ষমতার ভিত্তিতে অ্যাসেম্বলিতে অংশ নিতে পারবেন। নির্বাচনের মাধ্যমে আসন পূর্ণ করা হবে। এই হলো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বিবেচনায় দেশে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ার অংশ।এভাবেই ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা হস্তান্তরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সমর্থন অর্জন করতে চান। কিন্তু তিনি জানেন যে অনেক আওয়ামী সমর্থক তার সহযোগিতায় এগিয়ে আসবেনা। তিনি এটাও জানেন যে গত নির্বাচনের ফলাফলের সরাসরি প্রত্যাখ্যান পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও জটিলতার সৃষ্টি করবে। এ প্রেক্ষিতে গ্রণযোগ্যতা অর্জনের জন্য জগাখিচুড়ি সূত্র নিয়ে তার প্রাণপণ চেষ্টা, যদিও তিনি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পেরেছেন যে তার এ প্রচেষ্টা অর্থহীন।
ইয়াহিয়া খানের সামনে বিকল্পের অভাবে আমরা বিন্দুমাত্র আগ্রহী নই, যা তিনি বোঝার চেষ্টা করছেন। তিনি অর্থহীন কর্মকান্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন, শুধুমাত্র সারা বিশ্বকে শান্ত করতে। তিনি ফাঁকা আসনগুলোর জন্য ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে দেশদ্রোহী ও সমমনাদের নিয়ে অ্যাসেম্বলি গঠন করতে চান। তা আইনত, সাংবিধানিক বা নৈতিক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবেনা। সঠিকভাবে নির্বাচিত সদস্যদের অ্যাসেম্বলিতে বসা ও অংশগ্রহণ করার অধিকার কোনোভাবেই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। জাতীয় অ্যাসেম্বলিতে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য আচরণ ইয়াহিয়া খানের যোগ্যতায় মেনে নেয়া সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাবাদী আচরণ সম্পর্কিত তার ধারণা সত্যবিচ্যুত। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এর রাতে পশ্চিম পাকিস্তান বাহিনীর নৃশংস ধ্বংসযজ্ঞের আগে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি। গোটা প্রচারমাধ্যম এর সাক্ষী। এর প্রেক্ষিতে শেখ মুজিবুর রহমান নন, বরং ইয়াহিয়া খানই পাকিস্তানের দ্বিবিভক্তির জন্য দায়ী। অতীত ও বর্তমানের পরিপ্রেক্ষিতে এব্যাপারে কোনোপ্রকার পুনর্বিবেচনা্ প্রশ্নের উর্ধ্বে।
পরিকল্পনার লক্ষ্য
প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান স্পষ্টভাবেই বাঙ্গালিদের জন্য এ পরিকল্পনার অবতারণা করেননি, বরং প্রাথমিকভাবে সারা বিশ্বের সরকার এবং বিশেষত পাকিস্তানপন্থী সহযোগী রাষ্ট্রগুলোর জন্য। তিনি এ আশা করেন না যে বিশ্বের ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর চোখে তার এ পরিকল্পনার অসারতা ধরা পড়বেনা। তিনি যা চাইছেন তা হলো ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর কয়েকটি ‘পাকিস্তানের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার’ কূটনীতি চালিয়ে যাওয়ার কোনো অজুহাত খুঁজে পাবে।ইয়াহিয়া খান নিজের বরাতে দাবি করেন যে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলো পাকিস্তানে সংহতি ও দৃঢ়তা রক্ষার নামে বাংলাদেশে সেনা কর্মকান্ড সাধারণভাবে অনুমোদন করেছে। সত্যিই কি তাই? বিন্দুমাত্র না। বিশ্বের প্রচারমাধ্যমগুলো একক এবং প্রশ্নাতীতভাবে এ কর্মকান্ডের নিন্দা জানিয়েছে।ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোও নিন্দা প্রকাশের সাথে ইয়াহিয়া সরকারের জন্য এ সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে জোর দিয়েছে।
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে ইয়াহিয়া খানের প্রস্তাবিত ধারণা এবং রাষ্ট্রগুলোর সরকারের ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই পরিকল্পনা গত তিন মাসে ইয়াহিয়া খানের সৃষ্ট সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারেনা। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের দেশদ্রোহী ও সমমনাদের নিয়ে গড়া এ শাসনতন্ত্র বাংলাদেশে শাসনব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবেনা। পরিশোধনের নামে এ নারকীয়তা এখনো চলছেই।কিন্তু শাসকগোষ্ঠী খুব ভালোভাবেই জানে যে এর জন্য সাড়ে সাত কোটি মানুষের গোটা একটি জাতিকেই বিলুপ্ত করে দিতে হবে। এভাবেই পাকিস্তানি বাহিনী অবশেষে বাংলাদেশ শাসনের অধিকারের প্রশ্নে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
যাই হোক, ইয়াহিয়া খান কঠোর দমনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শাসন করতে চান। তার এই উচ্চাভিলাষের কারণ কিছু ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রের নীরব সমর্থন। এটা বোধগম্য যে ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলোর আরো অনেক সমস্যার মোকাবেলা করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সম্পূর্ণ অসমর্থনযোগ্য পরিস্থিতির দীর্ঘসূত্রীতা্র পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কূটনৈতিক সমর্থন কি ন্যায়সঙ্গত?
বাংলাদেশের জনগণ অমানুষিক দুর্দশা, আতংক, হুমকি ও নিগ্রহের মধ্য দিয়ে দিনযাপন করছে। সেনা আগ্রাসনের ভয়ে ছয় মিলিয়ন শরণার্থী তাদের জন্মভূমিতে ফিরতে পারছেনা। বহু স্বাধীন প্রত্যক্ষদর্শী সেনাবাহিনীকে নৃশংস ও অস্ত্রমুখী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
শরণার্থীরা তখনই ফিরে আসতে পারবে যখন তাদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ তৈরি হবে, যা শুধুমাত্র সম্ভব যদি তাদের নির্বাচিত নেতৃত্ব অবিলম্বে ক্ষমতা গ্রহণ করবে এবং সেনা আগ্রাসন তুলে নেওয়া হবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে জনগণ তাদের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও গঠনমূলক কর্মকান্ডে ফিরে যাবে যদি তাদের বেছে নেয়া নেতৃত্বে গঠিত সরকার দেশ শাসন করে।
সর্বশেষ বিশ্লেষণ
কোনো এলাকায় শান্তি-শৃংখলা তখনই বজায় থাকে যদি ও কেবল যদি অনিবার্য ব্যাপারগুলো যত দ্রুত সম্ভব মেনে নেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আশা করেন যে সময়ের সাথে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে পড়বে এবং ক্ষত শুকিয়ে আসবে। বিশ্বের সরকারগুলোর সম্ভাব্য ধারণা বাংলাদেশ অবশেষে নতি স্বীকার করবে। এতো বড় মূল্য দেয়ার পর এর চেয়ে সত্যবিচ্যুত আর কিছু হতে পারেনা
সুগঠিত ও সুসজ্জিত সেনাবাহিনী তাদের অস্ত্রসীমার মধ্যে এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে, কিন্তু মানুষের মনে নয়। সশস্ত্র বাহিনীর জন্য তা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসহযোগিতার সাথে গেরিলা কর্মকান্ড, একই সাথে ছয় মিলিয়ন উদ্বাস্তু মানুষের অদৃশ্য চাপ সেনাশাসক জান্তাকে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে ভেঙে পড়তে বাধ্য করবে। শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো যতো দ্রুত তা বুঝতে পারবে, দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তা ততই মঙ্গলজনক হবে। ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রগুলো কি এভাবেই মানবসভ্যতার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দুঃখজনক ঘটনার নিষ্ক্রিয় দর্শক হয়ে চরম মূল্যের মধ্য দিয়ে নতুন একটি জাতির অনিবার্য উদ্ভবকে বিলম্বিত করবে?
এ ব্যাপারে বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিক্রিয়ার জন্য এর মধ্যেই হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
<৪, ৪৪, ৮৬>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৪। স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাওয়ারের প্রতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর চিঠি | বিশেষ প্রতিনিধির চিঠি | ১৯ জুলাই, ১৯৭১ |
গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি
জয় বাংলা ১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ই সি ৩
টেলিফোনঃ ০১-২৮৩৫৫২৬/ ৩৬২৩
৯-৭-৭১
প্রাণপ্রিয় গ্রুপ ক্যাপ্টেন তাওয়াব,
পাকিস্তানে ফেরা আপনার পক্ষে সম্পূর্ণভাবে অনিরাপদ। অনুগ্রহপুর্বক পাকিস্তানে ফিরবেন না। আপনাকে বাংলাদেশের প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে অবিলম্বে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
শুভ কামনা।
আপনার অনুগত,
আ. স. চৌধুরী
——-
<৪, ৪৫, ৮৭>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৫। ৩১শে জুলাই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশের সমর্থন সভায় যোগদানের কথা জানিয়ে বৃটিশ এমপি-র চিঠি | এম,এ, আর খানকে লিখিত চিঠি | ২১ জুলাই, ১৯৭১ |
ফ্র্যাংক জুড, এমপি
জনাব খান,
আপনার ২০ জুলাই-এর চিঠিটির জন্যে ধন্যবাদ। জনাব সেলওয়ে আপনার সভা সম্পর্কে আমাকে অবগত করেছিলেন এবং আপনাকে সময়মত উত্তর দিতে পারিনি বলে দুঃখ প্রকাশ করছি।
৩১ জুলাই, শনিবার বেলা ৩টায় সোমার রোডের সেন্ট পিটারস্ হলে আসতে পারলে আমি আনন্দিত হবো, এবং আপনার সঙ্গে থাকার জন্যে উন্মুখ থাকবো।
জনাব ম. আ. র. খান আপনার অনুগত,
সভাপতি, এসডি/-
বাংলাদেশ ক্রিড়া পরিষদ
৬ ব্রিটানিয়া রোড
সাউথসি।
———
< ৪, ৪৬, ৮৮>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৬। ৩১শে জুলাই-এর সভায় যোগদানের অক্ষমতা জানিয়ে জন স্টোনহাউজ, এমপি-র চিঠি | এম,এ, আর খানকে লিখিত চিঠি | ২২ জুলাই, ১৯৭১ |
সম্মানিত জন স্টোনহাউজ. এমপি হতে
হাউজ অফ কমনস্
লন্ডন, এসডব্লিউ১
২২শে জুলাই,১৯৭১
জনাব খান,
আপনার ২০শে জুলাই-এর চিঠিতে ৩১শে জুলাই-এর ঘটিতব্য সভায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
দুর্ভাগ্যবশত, সেদিন আরেকটি সাক্ষাৎকার থাকার নিমিত্ত আমার পক্ষে আপনার সভায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। সভাটির সফলতা কামনা করছি।
আপনার অনুগত,
জন স্টোনহাউজ।
জনাব ম. আ. র. খান
সভাপতি,
বাংলাদেশ ক্রিড়া পরিষদ,
৬ ব্রিটানিয়া রোড।
সাউথসি।
—————–
<৪, ৪৭, ৮৯>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৭। অচিরে লন্ডনে বাংলাদেশ মিশন প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়ে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর চিঠি | ভেনেজুয়েলা প্রবাসী ড. এন আলম খন্দকারকে লিখিত চিঠি | ৪ আগস্ট, ১৯৭১ |
৪ঠা আগস্ট, ১৯৭১
ড. এন. আলম খন্দকার,
ইন্সটিটিউটো ওশিয়ানো গ্রাফিকো,
আপারতাদো পোস্টাল ৯৪,
কিউমানা,
ভেনেজুয়েলা।
জনাব খন্দকার,
আপনার ২ জুন, ১৯৭১ এর চিঠিটি গ্রহণ করতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত, কিন্তু পূর্বেই আপনাকে লিখতে না পারার জন্য আমি গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি। আমার অধিকতর জরুরি কাজের জন্য এর জন্য দায়ী। গত তিন মাস যাবত আমি মধ্যরাতের পূর্বে বিছানায় যেতে পারিনি। তাছাড়া, তৎক্ষণাৎ চিঠির উত্তর দেয়ার উপযুক্ত সুযোগ আমার নেই।
আমরা খুব শীঘ্রই একটি বাংলাদেশ মিশন পেশ করতে যাচ্ছি এবং সবকিছু আরো ভালভাবে সংগঠিত হবে এবং তখন চিঠিগুলো আরো ভালভাবে মনোনিবেশিত হবে।
আমি খুব স্বল্প সময়ের জন্য নিউ ইয়র্ক ছিলাম। বিদেশে এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে আমাকে মাঝে মাঝে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়েছে, কিন্তু আমার প্রধান কার্যস্থল যুক্তরাজ্য এবং আমি লন্ডনে পদস্থিত।
আপনার মহৎ কথা এবং আপনার মহৎ চিন্তার জন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ যেগুলো আমাকে প্রকৃতপক্ষে সর্বদা অনুপ্রাণিত করবে। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্যও আমি কৃতজ্ঞ। এটি গভীরভাবে আমাকে নাড়া দিয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে কোনো সাহয্যের প্রয়োজন হলে আমি তা অবশ্যই আপনাকে লিখতে দ্বিধা করব না।
অনেক অভিনন্দন ও শুভকামনা।
আপনার অনুগত,
আবু সাঈদ চৌধুরী
——–
<৪, ৪৮, ৯০>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৮। শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের প্রতিবাদে যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৮ আগস্ট, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যস্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের আকশন কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রীট, লন্ডন, ই. সি. ৩
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত এক লক্ষ বাঙালি সম্প্রদায় গভীর বেদনা এবং অভিঘাত সহকারে সংবাদটি গ্রহণ করেছে যে ইয়াহিয়া খান পরিশেষে সাড়ে ৭ কোটি বাংলাদেশী জনগণের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১১ই আগস্টে একটি ষড়যন্ত্র মামলা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
গণতান্ত্রিক অধিকার এবং মানবিক মূল্যবোধকে ইয়াহিয়া খান কর্তৃক দশ লক্ষ মানুষের হত্যা, আশি লক্ষ মানুষকে তাদের দেশ থেকে তাড়ানো, তিন কোটি মানুষ কে সর্বস্বান্ত করা এবং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণকে আতংকিত করার অপরাধ সম্পর্কে অবগত করার প্রয়োজন নেই বলেই জণগন মনে করছে। তিনি এখন আন্তর্জাতিক মতামতকে অবজ্ঞা করে মামলা চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আমরা সাধারণ বিশ্বমত এবং বিশেষ করে ব্রিটিশ সর্বসাধারণের কাছে ঘটনাটির উত্থানের দাবি করছি এবং তাদের স্ব স্ব সরকারের কাছে ইয়াহিয়া খানকে এই ক্ষতিকর এবং বিপদজনক আইন বন্ধ করে শেখ মুজিবর রহমানকে অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে অনুরোধ করছি।
—————
<৪, ৪৯, ৯১-৯৩>
অনুবাদকঃ আফসানা আশা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৪৯। এ্যাকশন কমিটি কর্তৃক জাহাজ ক্রয়ের ব্যাপারে একটি বৃটিশ কোম্পানীর সাথে পত্র যোগাযোগ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১০ ও ১২ আগস্ট, ১৯৭১ |
বেভিস মারক্স হাউজ।
বেভিস মারক্স,
লন্ডন. ই. সি. ৩।
হোরেস এস. করড্রান লিঃ
পরিচালবৃন্দঃ এইচ. এস. করড্রান, এইচ. এল. করড্রান
জাহাজের দালালগণ
টেলিফোনঃ ০১-২৮৩৩৯৭১/২
টেলিগ্রামসমূহঃ এনফিবিও. লন্ডন. ই. সি. ৩.
সংকেতসমূহঃ নিউ বব এবং স্কট’স
জনাব ভুঁইয়া
১১ গোরিং স্ট্রিট,
ই. সি. ৩.
জনাব ভুঁইয়া এর সৌজন্যে
প্রিয় মহাশয়,
আপনার গতকালের টেলিফোনে প্রেরিত তলবের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এবং আপনার বিনীত বিবেচনার জন্য এটির সঙ্গে বর্তমানে সর্বাধিক ৭০০ টন ওজনলভ্য বন্দরে বন্দরে যাতায়াতকারী জাহাজসমুহের তালিকাটি ভেতরে রাখা হলো যেভাবে অনুরোধ করা হয়েছিলো।
আমরা আপনার তদতিরিক্ত পরামর্শ অনুসরণ করব এবং ইতিমধ্যে এই জনযানগুলোর কোনোটিতে যদি আগ্রহ প্রকাশ করেন তবে তা শুনে আনন্দিত হব।
আপনার বিশ্বস্ত
হোরেস এস. করড্রান লিঃ
এসডি/-
হোরেস এস. করড্রান লিঃ
স্ক্রু স্টিমার ওয়াইয়াইইউকে আই এবং ডিইউএলএর বিবরণ
সর্বাধিক ওজন ইঙ্ক. জ্বালানী মজুদকারী অংশ- প্রায় ইঞ্জিন-বর্নণা-এম. ডব্লিউ. এম.
৭৪০ টন
ভরা নকশা- ৩.৩২ ডিজেল মোটর
জ্বালানী মজুদকারী অংশ-৯৪ ৩/৪ টন কোথায় স্থাপিত-এফট.
কখন,কোথায় তৈরি হয়েছে– ১৯৬৪/১৯৬৩,হল্যান্ড তৈরিকারকের নাম-মোটোরেনরেক
তৈরিকারকের নাম- স্কিপ্স ভি/ডি ডি গ্রিত্তো ম্যানহিম
হর্স পাওয়ার-৭৫০ এইচপি ৩৫৫ আর.এম.পি.
মান- সর্বচ্চো এললয়েড’স ক্লাস সিলিন্ডারের ব্যাস- ৬:৩২০ মিমি.
সর্বশেষ নিরীক্ষা- ১৯৬৮ ও ১৯৬৯ পিস্টনের ইন্ধন জোগান-৪৮০ মিমি.
বায়লার………আয়তন……
আয়ু…………………………………
নিবন্ধন টন-৪৫৫, মোট-২০৪ প্রকৃত গড় দ্রুতি ১১ নট
ঘন ধারণক্ষ্মতা-৫৬.১ গ্রেইন/৫৩.১১৭ বেল ক্ষয় প্রায় প্রতি ২৪ ঘন্টা
পানি নিয়ন্রণ ও ভারসাম্য ১৫৫ টন দ্বিগুন তলদেশে, ৩ টন গ্যাসোলিন
প্রায় ১২ টন বিশুদ্ধ পানি উত্তাপক পৃষ্ঠ……………
ঝাঁঝরি এস……………
উচ্চতা ৫৯.৭২ মি/৫৪.০০ মি হাপড়ের সংখ্যা………
কাজের চাপ……………
মাত্রা প্রস্থ ৯.২০ পাউন্ড প্রতি ইঞ্চি…………
মাল রাখার অংশের গভীরতা ৩.৩২ মি. ডাংকি বয়লার…………
ঢালাই গভীরতা ৫.৪০
মাল রাখার অংশের সংখ্যা………জলরধোক বেষ্টনীর সংখ্যা
……… ৪ শক্তিশালী কপিকলবিশেষ হাইব্রাউলিক
উচ্চতার অর্ধেক দরজাসমূহের আয়তন ও সংখ্যা ভা্র-উত্তোলন যন্ত্র
১১.৫৭ x ৫.৪৮ ৪ এট ৩ টন
বাষ্প চরকী………
ফেরিঘাট ব্যবস্থা খোলা আশ্রয়-পাটাতন বাষ্প চালনার যন্ত্র
অবস্থান………
মূল্য…………
পি…………বি……………এফ…………কিউ………।।
——————-
হোরেস এস. করড্রান লিঃ বেভিস মারক্স হাউজ.
পরিচালবৃন্দঃ এইচ. এস. করড্রান, এইচ. এল. করড্রান বেভিস মারক্স.
জাহাজের দালালগণ, লন্ডন. ই. সি. ৩.
টেলিফোনঃ ০১-২৮৩৩৯৭১/২
টেলিগ্রামসমূহঃ এনফিবিও. লন্ডন. ই. সি. ৩.
সংকেতসমূহঃ নিউ বোই এবং স্কট’স
জনাব ভুঁইয়া ১২ আগস্ট,১৯৭১
১১ গোরিং স্ট্রিট,
ই. সি. ৩.
<৪, ৫০, ৯৪-৯৫>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইয়াসিন তারিন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫০। ১৯৭১ সনের ৬ ও ১২ আগস্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত এ্যাকশন কমিটির সভায় প্রস্তাবপত্র | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১২ আগস্ট, ১৯৭১ |
প্রথম বৈঠক, ৬ আগস্ট, ১৯৭১: বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বিচারপতি এ এস চৌধুরী কর্তৃক অনুমোদিত হয়নি
দ্বিতীয় বৈঠক, ৭ আগস্ট, ১৯৭১: শেখ আ: মান্নান ও জনাব আজিজুল হক ভূঁইয়া সভার কার্যনির্বাহী কমিটিতে কাজ করার জন্য নির্বাচিত হন।
৭ অগাস্ট, ১৯৭১ দ্বিতীয় বৈঠক অনুযায়ী নিম্নের সদস্যগণ বিচারপতি এ এস চৌধুরীর সাথে দেখা করেন :
ক) জনাব শেখ আবদুল মান্নান।
খ) জনাব শামসুর রাহমান।
গ) জনাব কাবিল চৌধুরী।
বিচারপতি এ এস চৌধুরী তাঁর এবং ব্রিটেনের বাঙালি সম্প্রদায়ের নেতাদের ভিতরে অনুষ্ঠিত অদপ্তরিক বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত পরিচালনা কমিটির তদন্তকারী সদস্যদের কাছে পৌঁছে দিলেন। এই সিদ্ধান্ত প্রচার করার দায়িত্ব পরিচালনা কমিটির সদস্য জনাব কবিরকে দেওয়া হয়। যেহেতু জনাব কবির চৌধুরী তৎকালীন নেতাদের সাথে যোগাযোগ করেন নি, তাই পরিচালনা কমিটির আহ্ববায়ক ১২ অগাস্ট, ১১ গোরিং স্ট্রিট, ইসি৩, ৬ টায় গুরুত্তপূর্ণ একটি সভার ডাক দেন। উক্ত সভায় নিম্নের ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন :
ক) জনাব শেখ আবদুল মান্নান।
খ) জনাব শামসুর রহমান।
গ) জনাব আজিজুর হক ভুইঞা
সভায় নিচের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয় :
ক) বিচারপতি এ এস চৌধুরীর অনুরোধে তাঁর এবং ব্রিটেনের বাংলা সম্প্রদায়ের নেতাদের ভিতরে অনুষ্ঠিত বেসরকারি বৈঠকটিকে অনুমোদন দেওয়া হয় সেই সাথে বৈঠকে নেওয়া প্রস্তাবগুলো ও পরিচালনা কমিটি অনুমতি প্রদান করেন যেনো অধিবেশন কমিটি এটি আওতায় রাখতে পারে।
খ)আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, নিম্নের পরিচালনা কমিটির সদস্যগণ অধিবেশন কমিটির অধীনে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন।
ক) জনাব শেখ আবদুল মান্নান।
খ) জনাব আজিজুর হক ভুইঞা।
পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৬ আগস্ট, ১৯৯৭১, ১১ গোরিং স্ট্রিট, ইসি ৩, ৬ টায় বিচারপতি এ এস চৌধুরী এবং ব্রিটেনের বাংলা সম্প্রদায়ের নেতাদের ভেতরে অদপ্তরিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে নিম্নের ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন :
১) মি : শেখ আবদুল মান্নান।
২) মি: শামসুর রহমান।
৩) মি: আজিজুর হক ভুইঞা।
৪) মি: কাবিল চৌধুরী।
এবং বৈঠকে নিম্নের সিদ্ধান্তগুলো গৃহীত হয়:
ক) পরিচালনা কমিটির অধিবেশনের মাধ্যমে শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সংগঠন তৈরী করার পূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেইসাথে এই সংগঠন দ্বারা ব্রিটেনে মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। যদিও অদপ্তরিক বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করা হয় নি, তারপরেও তারা আনন্দের সাথে চারজন স্থানীয় প্রতিনিধি দিয়ে কমিটি সংগঠিত করেন। এরূপ প্রচেষ্টার জন্য পরিচালনা কমিটি কেন্দ্রীয় কমিটিকে আন্তরিক সাধুবাদ জানায়।
খ) এতে আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, সভার বক্তব্য বিচারপতি এ এস চৌধুরী এর কাছে পৌঁছে দেওয়া ও অনুমোদন এর জন্য জনাব শামসুর রহমান, জনাব শেখ আব্দুল মান্নান এবং জনাব কবির চৌধুরিকে বিচারপতি চৌধুরীরর সাথে পরের দিন সকালে দেখা করতে বলা হয়।
স্বাক্ষর/
আহ্বায়ক, পরিচালনা কমিটি
<৪, ৫১, ৯৬>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫১। ১১ই আগস্ট প্রতিরোধ দিবস পালনের আহবান | এ্যাকশন কমিটির প্রচারপত্র | ১০ আগষ্ট, ১৯৭১ |
১১ই আগস্ট: প্রতিরোধ দিবস
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা গণপ্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে গোপনে সামরিক আদালতে বিচারের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
এই ষড়যন্ত্রকে বানচাল করতে হবে। একে রুখে দাঁড়াতে হবে। আসুন হাজার হাজারে এসে আগামী বুধবার, ১১ই আগস্ট, বেলা ২ টায় হাইড পার্ক স্পিকার্স কর্নারে জমায়েত হয়ে এই ঘৃণিত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন।
বাংলাদেশের সরকারের বৈদেশিক প্রতিনিধি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে এই জরুরী গণ-সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এতে যোগদানের জন্য আমরা আপনাদের সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
জয় বাংলা
আহ্বায়ক
কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি।
কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি কর্তৃক ১১ গোরিং স্ট্রিট, ল-ন, ইসি-৩ থেকে প্রকাশিত ও প্রচারিত।
টেলিফোনঃ ০১-২৮৩ ৩৬২৩, ২৮৩৫৫২৬
<৪, ৫২, ৯৭> শিরোনাম |
সূত্র |
তারিখ |
৫২। বিচারপ্রতি আবু সাঈদ চৌধুরীর প্রতি মাসিক “ভেঞ্চার” সম্পাদক জর্জ কানিংহাম এম,পি’র চিঠি | ব্যক্তিগত চিঠিপত্র | ১২ আগস্ট ১৯৭১ |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রঃ চতুর্থ খন্ডঃ ৯৭-১০১
ভাষান্তর :: Muwaffaq Muhsin
ভেঞ্চার
১১ ডার্টমাউথ স্ট্রিট, লন্ডন এসড ব্লিউ১ ডব্লিউ এইচ ১৩০৭৭
১২ আগস্ট ১৯৭১
বিচারপ্রতি আবু সাঈদ চৌধুরী,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,
১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন।
ইসি৩
বিচারপতি চৌধুরী,
ফ্যাবিয়ান সোসাইটির মাসিক ম্যাগাজিন “ভেঞ্চার” এর নাম আপনি হয়তো শুনে থাকবেন। আমার সম্পাদনায় বহির্বিশ্বের বিষয়াদি সম্বলিত এই ম্যাগাজিনটি প্রতি মাসে বের হয়। এটির একটি সম্পাদকীয়তে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে মতামত প্রকাশ করা হয়েছে (ম্যাগাজিনের একটি কপি চিঠির সাথে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে) এবং ভবিষ্যতেও আমরা এই বিষয়ের উপর আরো প্রবন্ধ ছাপানোর আগ্রহ প্রকাশ করছি।
অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে জানাচ্ছি যে, এই বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের আরো উদ্যমী মনোভাবের প্রয়োজনকে যুক্তি দ্বারা বিশ্লেষণ করে লিখিত একটি সুচিন্তিত ও সুসংগঠিত লিখা আমাদের অক্টোবর ইস্যুতে ছাপানো উচিত বলে আমি মনে করি। বিশেষতঃ আমি চাই লেখাটি যেন ব্রিটিশ সরকারের এবং আমেরিকান সরকারের পলিসির মধ্যে পার্থক্যকে স্পষ্ট করে তোলে। আমেরিকানরা ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে সম্ভবত বেশিদূর যাচ্ছে না কিন্তু ব্রিটিশ সরকার যতদূর যাওয়ার পরিকল্পনা করছে তার চেয়ে বেশি এগোচ্ছে।
আপনি এই বিষয়ের উপর কয়েকটি লাইন লিখে দিতে আগ্রহী হবেন কি? আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, আপনাকে এর বিনিময়ে কোন সম্মানী দিতে পারবনা, কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে আমাদের প্রভাবশালী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা আর্থিক বিনিময়ের চেয়ে আরো বেশি মূল্যবান কিছু হতে পারে।
এই আশা নিয়ে শেষ করছি যে, আপনি উপরোক্ত বিষয়ের উপর একটি আর্টিকেল লিখতে আগ্রহী হবেন। আমি আরো কৃতজ্ঞ থাকব যদি আপনি আমাদের অক্টোবর ইস্যুতে প্রকাশের নিমিত্তে উপরোক্ত বিষয়ের উপর একটি আর্টিকেল লিখে সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখের মধ্যে পাঠিয়ে দেন।
আপনার অনুগত,
জর্জ কানিংহাম, এমপি
সম্পাদক।
<৪, ৫৩, ৯৮>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৩। ১৬ই আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য কনভেনশনের কমিটির সভার বিজ্ঞপ্তি | একশন কমিটির দলিলপত্র | ১৩ আগস্ট, ১৯৭১ |
১৩ আগস্ট, ১৯৭১
জনাব আলী,
প্রথমেই আপনাকে ভ্রাতৃত্বসূলভ অভিনন্দন জানাই অধিবেশন কমিটিতে আপনি নমিনেশন পেয়েছেন বলে।
অধিবেশন কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হবে ১৬ই আগস্ট রোজ সোমবার। স্থানঃ স্টিয়ারিং কমিটি অফিস, ১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন, ই,সি ৩। উক্ত সভায় কেন্দ্রীয় একশন কমিটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সব অ্যাকশন কমিটি নিয়ে সম্মেলন ডাকার বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করা হবে।
আপনার ভ্রাতৃসূলভ,
আজিজুল হক ভূঁইয়া।
জনাব আরব আলী
কাশ্মীর রেস্টুরেন্ট,
২৮ নীড় স্ট্রিট,
স্টার্টফোর্ট-আপন-এভন।
<৪, ৫৪, ৯৯-১০০>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৪। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের গোপন বিচার বন্ধের জন্য সোচ্চার আহ্বান সম্বলিত বিজ্ঞাপন | বাংলাদেশ একশন কমিটির বিজ্ঞাপন | ১৬ই আগষ্ট, ১৯৭১ |
বিজ্ঞাপন
জেগে ওঠো বিশ্বঃ থামাও এই ক্যামেরা ট্রায়াল
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির মুক্তি নিশ্চিত কর
পাকিস্তান ন্যাশনাল এসেম্বলিতে ৩১৩ টি আসনের মধ্যে বাংলাদেশের (পূর্ব পাকিস্তান) অধীনে রয়েছে ১৬৯টি এবং শেখ মুজিবুর রহমান ও তার দল জয়ী হয়েছে ১৬৭টি আসনে। ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা দিয়েছিল যে শেখ মুজিবুর রহমান হবে পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী এবং এই খবর প্রচার মাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
কী ঘটেছিল তারপর?
১. ইয়াহিয়া খানের সামরিক জান্তা নিরস্ত্র বাঙালির উপর নিষ্ঠুরভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে।
২. হাজার হাজার মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে ঘরছাড়া করা হয়েছে।
৩. বাংলাদেশের ভিতরেই শরণার্থীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
৪. সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়ঃ
এই একই জান্তা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জননেতার সহকর্মীদের অনিষ্ট সাধনের লক্ষে “পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা” শিরোনামে একটি বানোয়াট খবর প্রচার করেছে।
শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে “অন্যায় বিচার” কি সাড়ে সাত কোটি বাংলাদেশির বিরুদ্ধে অন্যায় নয়?
এটি কি গণতন্ত্রের বিচার?
পশ্চিম পাকিস্তানিদের এই হিংস্র প্রতিহিংসা বিশ্ববাসী কি শুধুই নির্বাক চোখে দেখবে?
এটি কি হিংস্রতা দেখার সময় নাকি হিংস্রতা থামানোর সময়?
ব্রিটিশ সরকার, জাতিসংঘ এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের দাবি, শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অন্যায় বিচার থামানো হোক আর তাঁর মুক্তি নিশ্চিত করা হোক।
পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছেঃ
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর অ্যাকশান কমিটির পরিচালনা কমিটি; বাংলাদেশ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন; লন্ডন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেই-অন-সী, বারমিংহাম ও ব্রাডফোর্ড, বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি, বেডফোর্ড , মিডলবরো, ব্রিস্টল, বোর্নমাউথ, ব্রিংটন, ওয়েস্ট লন্ডন, ডরেস্ট, এক্সেটার, এনফিল্ড, সাউথএন্ড-অন-সী, ইপ্সউইক, চ্যাথাম, লুফন, অক্সফোর্ড, স্কানথ্রোপ, এসআই.আলবান’স, ক্লেকহিটন। ওয়েস্টমিন্সটার, কিডারমিন্সটার, ওয়েলিংবরো, মেন্সফিল্ড, আক্সপ্রিজ, কারডিফ, লেইচেষ্টার, কভেনট্রি, সাউথাম্পটন, ব্লেচলি, সাউথওয়েস্ট লন্ডন, নর্দাম্পটন ও লেঙ্কাশায়ার, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অ্যাকশান কমিটি, সুইন্ডন, সাউথসি, ব্রাডফোর্ড, শেফিল্ড, বারমিংহাম, ও নটিংহাম; গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অ্যাকশন কমিটি; লন্ডন, বাংলাদেশের অ্যাকশন কমিটি, নর্থ ও নর্থওয়েস্ট লন্ডন; ইস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, নিউক্যাসল-আপন-টাইন, বাংলাদেশের ইস্লিংটন কমিটি, বাংলাদেশের জন্যে সাহায্য তহবিল, লন্ডন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর সাহায্য এবং অ্যাকশন কমিটি, বারমিংহাম; বাঙালি অ্যাসোসিয়েশান কেমব্রিজ ; কমিটি ফর বাংলাদেশ, টিপট্রি, বাংলাদেশ সারভাইভাল কমিটি, ক্রয়ডন, বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট, লিডস; বাংলাদেশ পপুলার ফ্রন্ট , ব্রাডফোর্ড; বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ , কেইলি , হেলিফ্যাক্স, ক্লেকহিটন ও ব্রাডফোর্ড; বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান, স্কটল্যান্ড ও ম্যানচেষ্টার, বাংলাদেশ সোশ্যাল অ্যাসোসিয়েশান লাফবরো, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশান কমিটি , ব্রাডফোর্ড: বাংলাদেশ যুব সংস্থা, লন্ডন, বাংলাদেশ স্টুডেন্টস’ অ্যাকশান কমিটি, কারডিফ, অ্যাকশান বাংলাদেশ, লন্ডন; বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশান কমিটি, লন্ডন।
এই বিজ্ঞাপনের জন্যে পৃষ্ঠপোষকতার আয়োজন করেছেঃ
বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাকশান কমিটি,
৩৫ গেমেজেস বিল্ডিং, ১২০ হলবোর্ন, লন্ডন, ই,সি ১, টেলিফোনঃ ০১-৪০৫-৫৯১৭
<৪, ৫৫, ১০১-১০৩>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৫। ব্রিটেনে বাংলাদেশ আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো রচনার লক্ষে প্রস্তাবিত একটি খসড়া গঠনতন্ত্র | একশন কমিটির দলিলপত্র | ১৮ই আগস্ট, ১৯৭১ |
৭০এ হাই স্ট্রিট
কোলচেস্টার এসেক্স
১৮ই আগস্ট, ১৯৭১
প্রিয় বন্ধুগন,
ব্রিটেনে বাংলাদেশ আন্দোলনের সাংগঠনিক কাঠামো রচনার লক্ষে প্রস্তাবিত একটি খসড়া গঠনতন্ত্র আমি এখানে জুড়ে দিচ্ছি এই আশায় যে গঠনতন্ত্র তৈরিতে এটি সহায়ক হবে।
যদি প্রয়োজন হয় আমি সানন্দে এই খসড়ার যেকোন বিষয় ব্যাখ্যা করব।
বিনীত,
(জনাব লোকমান আলী)
একটি নিখুঁত ও একতাবদ্ধ আন্দোলন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে, সকল কর্মকাণ্ডে একতা এবং গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা নিশ্চিত করতে আমরা, যুক্তরাজ্যে সকল বাংলাদেশি সমর্থকণ, বাংলাদেশ একশন কমিটির এই গঠনতন্ত্র মেনে নিলাম। এখন থেকে যুক্তরাজ্যে এই কমিটির নতুন নাম হবে “বাংলাদেশ কাউন্সিল” এবং ঠিকানা হবে ১১ গোরিং স্ট্রিট (ভবিষ্যতে যেকোন কিছু পরিবর্তনযোগ্য)।
লক্ষ্যসমূহঃ
১. এই কাউন্সিলের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশ সরকার এবং মুক্তি ফৌজদের জন্যে বিভিন্ন জিনিস-পত্র ক্রয়ের উদ্দেশ্যে তহবিল সংগ্রহ করা। অন্য কোনভাবে এটি করা আদৌ সম্ভব নয়।
২. যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি সমর্থকদের প্রচেষ্টার গতি বৃদ্ধি করতে এবং তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের ইচ্ছাকে পূরণ করার লক্ষে তাদেরকে প্রাণোদ্দীপ্ত করা।
৩. দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশের সমর্থকদের অবগত করা এবং যতটা সম্ভব তাদের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতার সদ্ব্যবহার সম্পর্কে তাদেরকে ওয়াকিবহাল রাখা।
৪. বাংলাদেশ সরকার ও তার প্রতিনিধিদের সাথে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সমর্থকদের যোগাযোগ বজায় রাখা।
৫. তহবিলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সদ্ব্যবহারে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ তহবিল ট্রাস্টিদের সাহায্য করা।
৬. বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বসমর্থন বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া।
৭. বাংলাদেশি জনগণের দুর্দশা লাঘবে সাহায্য তৎপরতাসহ যেকোন সহায়ক কর্মকান্ডের আয়োজন করা।
গঠনঃ
১. বোর্ড অফ ট্রাস্টি
২. জাতীয় পরিষদ
৩. নির্বাহী কমিটি
৪. স্থানীয় কমিটি
নিয়মঃ
এখানে উল্লিখিত নিয়মগুলি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ আন্দোলনের সাথে জড়িত সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হবে
পরিষদঃ
১. কাউন্সিল স্বশাসিত হবে এবং সম্ভাব্য সর্বোত্তম চ্যানেলের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি বিনাশর্তে এর সমর্থন দান করবে।
২. কাউন্সিল বাংলাদেশ সরকার ও তার দূতের নিকট থেকে আসা নির্দেশনা খুঁজবে।
৩. প্রত্যেক স্থানীয় কমিটি থেকে দুইজন করে সদস্য নিয়ে এই কাউন্সিল গঠিত হবে।
৪. কাউন্সিল একজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। প্রেসিডেন্ট ও ভাইস-প্রেসিডেন্টের মেয়াদ এক বছর কার্যকরী থাকবে।
৫. পরিষদের সেক্রেটারির পদবী হবে অঅবৈতনিক।
নির্বাহী কমিটিঃ
১. জাতীয় পরিষদ এবং স্থানীয় কমিটি উভয়ের সদস্য হতে উক্ত কাউন্সিল নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত করবে।
২. নির্বাহী কমিটির সদস্য বিভিন্ন পেশা যেমন আইনজীবী, সাংবাদিক, একাউন্ট্যান্ট এবং এইরূপ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিবর্গ হবেন।
৩. নির্বাহী কমিটির মেয়াদকাল হবে এক বছর।
কার্যাবলীঃ
১.এই কাউন্সিলের প্রধান কাজ হবে আন্দোলন আরো বেগবান ও ফলপ্রসূ করার জন্য একটি নীতিমালা প্রনয়ন করা।
২. কাউন্সিল স্থানীয় কমিটির নিকট দায়বদ্ধ থাকবে স্থানীয় কমিটির সাথে লিয়াজো রক্ষা করা এবং কমিটিকে পূর্ণ অবগত রাখার জন্য।
৩. নির্বাহী কমিটির কার্যাবলী তদারক করবে উক্ত কাউন্সিল এবং নির্বাহি কমিটি কাউন্সিলের নিকট দায়বদ্ধ থাকবে।
৪. কোন ব্যক্তি কিংবা একটি বিশেষ কাজ করার নিমিত্তে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গকে মনোনীত করার ক্ষমতা থাকবে কাউন্সিলের হাতে।
৫.জরুরী কোন প্রয়োজন ছাড়া কাউন্সিল কোন মিটিংএর কমপক্ষে চারদিন আগে তার সদস্যকে লিখিতভাবে জানাবে।
৬. কোন চুক্তিভঙ্গের অপরাধে কাউন্সিল তার সদস্য কিংবা নির্বাহী কমিটির কোন সদস্যের বিরুদ্ধে যেকোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারবে।
৭. কাউন্সিল সংবিধান পরিপন্থী কোনপ্রকার কাজ করতে পারবে না। এ বিষয়ে কোনপ্রকার সন্দেহ উত্থিত হলে নির্দিষ্ট একটি নির্বাচিত কমিটি গঠন করে তা সমাধান করতে হবে।
৮. পরিষদের যে কোন সদস্যের কোন একটি আন্দোলন করার ক্ষমতা থাকবে কিন্তু তা কাউন্সিলের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য উপস্থিত থাকা অবস্থায় পাশ হওয়া লাগবে।
৯. কাউন্সিল প্রতিমাসে কমপক্ষে একবার বসা লাগবে কিন্তু নির্বাহী কমিটির প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে একবার বসতেই হবে।
১০.আন্দোলনের সাথে জড়িত এমন যেকোন লেখ্য প্রমান,প্রস্তাবনার রেকর্ড রাখার দায়িত্ব কাউন্সিলের।
১১.অফিস চলাকালীন সময়ে কাউন্সিলের যেকোন সদস্যেরই এইসকল রেকর্ডে পূর্ণ এক্সেস থাকবে। কিন্তু তাদের সম্পাদককে তা জানিয়ে রাখতে হবে।
প্রেসিডেন্টের দায়িত্বঃ
প্রেসিডেন্টের প্রধান দায়িত্ব হবে কাউন্সিল বিষয়ক সার্বিক তত্ত্বাবধান করা, গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যে কাউন্সিলের প্রতিনিধি হওয়া এবং যখন প্রয়োজন তখন পরামর্শ দান করা। ভাইস প্রেসিডেন্টেরও অনুরুপ দায়িত্ব পালন করতে হবে যখন প্রয়োজন।
চেয়ারম্যানের দায়িত্বঃ
কাউন্সিলের সদস্যদের দ্বারা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবে। তিনি কাউন্সিলের সব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। তিনি সদস্যদের প্রতি সর্বাবস্থায় এবং কাউন্সিলকে তার লক্ষ্যে পরিচালনায় সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ থাকবেন। যেকোন কাউন্সিল মিটিং মূলতবী কিংবা স্থগিত করার ক্ষমতা তাঁর হাতে রয়েছে কিন্তু তা কখনই এক পক্ষকালের বেশি নয়। চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁর দায়িত্ত্ব পালন করবেন।
স্থানীয় কমিটিঃ
একটি স্থানীয় কমিটিতে কমপক্ষে ৫০ জন সদস্য থাকবে যারা কাউন্সিলের ভোটে প্রতিনিধিত্ব করবে।
৫০ জনের কম সদস্য সংখ্যা থাকলে তাদের অন্য যেকোন কমিটি,এলাকা কিংবা শহরে যোগদান করতে হবে এইরূপ ভোটদানের যোগ্যতা অর্জনের জন্য।
নিম্নে একটি স্কেচ ম্যাপ দেয়া হল যেখানে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কাউন্সিলের গঠন দেখানো হয়েছেঃ
স্কেচ-ম্যাপ |
এম. লুকমান
৭০এ হাই স্ট্রিট , এম. লুকমান
কোলচেস্টার, এসেক্স বাংলাদেশ একশন কমিটির
টেলিঃ ০২০৬৭১২৫৫ পক্ষ থেকে
ক্যাম্ব্রিজ, এসেক্স,সাফোক এবং নরউইচ
<৪, ৫৬, ১০৪>
অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৬। ২০শে আগস্ট অনুষ্ঠতব্য কনভেনশন কমিটির সভার বিজ্ঞপ্তি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৮ আগস্ট, ১৯৭১ |
১৮ আগস্ট, ১৯৭১
জনাব খান,
আমি এখন এটাই নিশ্চিত করার জন্য লিখছি যে অধিবেশন কমিটির প্রথম মিটিং আগামি শুক্রবার ২০ আগস্ট সন্ধ্যা ৬ টায় পরিচালনা কমিটির অফিসে-(ঠিকানা ১১ গোয়িং স্ট্রিট, লন্ডন ইসি. ৩) অনুষ্ঠিত হবে। মিটিংটি হবে সকল অ্যাকশন কমিটির সাথে একটি প্রাথমিক আলোচন সভা কীভাবে কেন্দ্রীয় একশন কাউন্সিল গঠন করা যায় তা নিয়ে।
আপনি জানেন যে, এই মিটিংটি গত ১৬ আগস্ট, সোমবার আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক সদস্যের অনুপস্থিতির কারনে এটি কয়েক দফা পেছানো হয়েছে। যাই হোক, যেহেতু এটি একটি জরুরী মিটিং, ২০ আগস্ট এর চূড়ান্ত তারিখ ধার্য করা হয়েছে। আপনি যদি মিটিংএ আসতে অপারগ থাকেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আপনাকে ছাড়াই উক্ত মিটিং অনুষ্ঠিত হবে।
আহ্বায়ক
আজিজুল হক ভুঁইয়া
জনাব গাউস খান
৫৮ বারউইক স্ট্রিট
লন্ডন, ডব্লিউ.সি.১.
<৪, ৫৭, ১০৫>
অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৭। স্বাধীনতা সংগ্রামে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের সুব্যবস্থার লক্ষ্যে ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনস্টার ব্যাংকে নতুন হিসাব খোলার বিজ্ঞপ্তি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৯ আগস্ট, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
১১, গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন, ই.সি.৩
টেলিঃ০১-২৮৩-৫৫২৬/৩৬২৩
১৯ আগস্ট,১৯৭১
স্যার,
বাংলাদেশ ফান্ডের সাফল্য আমাদেরকে এটাই বুঝিয়েছে যে, হ্যাম্ব্রোস ব্যাংক থেকে পাওয়া সুযোগ সুবিধা এখন আর পর্যাপ্ত নয়। হ্যাম্ব্রোস ব্যাংকের উক্ত অ্যাকাউন্টটি থাকবে কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থনকারীদের তাদের প্রদেয়গুলো আরো সহজে ফান্ডে রাখার জন্য ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক লিমিটেডে আরো একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সবাই সম্মত হয়েছেন।
যেহেতু ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক একটি জয়েন্ট স্টক ব্যাঙ্ক এবং প্রত্যেকটি শহরে এবং গ্রামে এর শাখা রয়েছে, সুতরাং বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য আমাদের যা দরকার তা দেয়ার জন্য এটি একটি ভাল অবস্থানে রয়েছে । এখন বাংলাদেশ সমর্থনকারীদের যে কেউ ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংকের যেকোন শাখায় গিয়ে বাংলাদেশ ফান্ডে টাকা প্রদান করতে পারবে। এটি করার জন্য তাদের নিম্নবর্ণিত কাজ করতে হবে। যেকোন শাখায় গিয়ে তাদের একটি ব্যাঙ্ক পেয়িং স্লিপ পূরণ করতে হবে নিম্নবর্ণিত তথ্যাবলী প্রদান করেঃ ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক লিমিটেড, ৬ টটহিল স্ট্রিট, লন্ডন, এস.ডব্লিউ.আই. ব্যাঙ্ক কোডঃ ৬০-৪০-০৩। অ্যাকাউন্ট বাংলাদেশ ফান্ড, নং-০০৭৭২২। ব্যাঙ্ক তাঁকে একটি পেমেন্টের রিসিপ্ট প্রদান করবে। পেয়িং স্লিপে সমর্থনকারির নাম এবং ঠিকানা দেয়াটা গুরুত্ত্বপূর্ণ তাহলে আমরা এভাবে জানতে পারব এই অ্যাকাউন্টে টাকা প্রদানকারীর নাম।
তবে হ্যামব্রোস ব্যাংককে কোন কিছু পরিশোধ করাটা এখনই এতটা গুরুত্ত্বপূর্ণ না যেহেতু উপরেই বলা হয়েছে যে সকল পরিশোধের ব্যবস্থা করা হয়েছে ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে।
আপনার বিশ্বস্ত
আজিজুল হক ভুঁইয়া
আহ্বায়ক
<৪, ৫৮, ১০৬-১০৮>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৮। ২০শে আগস্ট অনুষ্ঠিত কনভেনশন সাব-কমিটির সভার আলোচ্যসুচি ও কার্যবিবরণী | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১০ আগস্ট, ১৯৭১ |
অধিবেশন সাব–কমিটির ১ম সভার আলোচ্য সুচি অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার, ২০শে আগস্ট, ১৯৭১ সন্ধ্যা ৬টায়, ১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন কে.সি.৩–তে
১। যুক্তরাজ্য অধিবেশনকে সকল বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য যৌক্তিক কোন পন্থা বের করা।
২। ভবিষ্যতে কিসের ভিত্তিতে কাউন্সিলে (গঠিত হবে) প্রতিনিধিত্ব করা হবে তা নির্ধারণ করা।
৩। ভবিষ্যতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অবকাঠামো নির্ধারণ
ক.পারিষদের সংখ্যা
খ.নির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা
গ.তিনজন ট্রাস্টি নির্বাচন করা
৪। জনাব আজিজুল হক ভুঁইয়া উপস্থাপিত খসড়া সংবিধান অথবা সভার অন্য যে কোন সদস্যের দ্বারা উপস্থাপিত খসড়া পর্যালোচনা, উন্নিতকরন, পরিবর্তন কিংবা সংযোজন করা।
৫। বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির নির্দেশনায় স্বাধীনতা আন্দোলনের স্বপক্ষে কাজ করবার জন্য বাঙালিকে একটি ঐক্যবদ্ধ মাধ্যম প্রদানের লক্ষ্যে কনভেশন আহ্বানের প্রতি দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
উপরোক্ত আলোচ্য সূচি নিয়ে সভা সন্ধ্যা ৭:২০ মিনিটে শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ১২:২০ মিনিটে। পরিপূর্ণ অংশগ্রহণের মাধ্যমে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে আলোচ্য সূচির ৩ নাম্বার পয়েন্ট পর্যন্ত সবকিছু শেষ করা হয়। সকল বিষয়ের পক্ষে সর্বসম্মতিক্রমে সমাধান করা হয়। এই কার্যধারা এবং সমাধান নথিভুক্ত করা, অধীত হওয়া এবং অধিবেশন কমিটির সকল সদস্যদের দ্বারা স্বাক্ষর করা হয়েছিল।
আলোচ্য সূচির বাকি বিষয়গুলো অধিবেশন কমিটির পরবর্তী সভায় পর্যালোচনা ও নির্ধারণ করা হবে, যা অনুষ্ঠিত হবে ২৪শে আগস্ট ১৯৭১, মঙ্গলবার দুপুর ৩টায়।
জনাব আজিজুল হক ভুঁইয়ার পরিচালনায় সভা অনুষ্ঠিত হয়, যিনি পরিচালনা সংসদের আহ্বায়ক এবং একই সাথে অধিবেশন কমিটির সভা আহ্বানের জন্য কমিটির মাধ্যমে আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।
আজিজুল হক ভুঁইয়া
সভার কার্যবিবরণী এবং সমাধান
১। অধিবেশন কমিটির সভা আহ্বানের জন্য এবং সভার প্রতিটি সদস্য একজন অপরজনের সাথে যোগাযোগের জন্য ম্যানচেস্টারের জনাব মতিন একজন আহ্বায়ক নির্বাচনের প্রস্তাব দেন।
শেখ আব্দুল মান্নান এবং এ.এম.তরফদার কনভেনশন কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে যৌথভাবে জনাব আজিজুল হক ভুঁইয়ার নাম প্রস্তাব করেন এবং জনাব গাউস খান, এ.মতিন, আরব আলি, ও জনাব ভুঁইয়া এই প্রস্তাবে সমর্থন দেন।
অধিবেশন কমিটির নামে এবং যৌথ আহ্বায়কের অধীনে নিজ নিজ ইউনিট এবং অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী প্রেরণ করতে হবে।
১ম আলোচ্যসূচি উত্থাপন
১।সকল বাঙ্গালির কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য যৌক্তিক কোন পন্থা বের করা( ইউ.কে কনভেনশন)
উপরোক্ত আলোচ্যসূচি তে প্রতিটি শহরে একটি পরিষদের অধীনে সকল প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করার বিষয়ে সভার সকলে একমত পোষন করেন।একটি শহরের মধ্যে যদি কোনপ্রকার অমিল বা মতানৈক্য হয় তবে কমিটিগুলোকে একত্রিত করার জন্য কমিটি তার সকল ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যাবহার করবে।
(স্বাক্ষরিত)গাউস খান এ.মতিন শেখ আব্দুল মান্নান এ.এইচ.ভুঁইয়া এ.এম.তরফদার আরব আলি
২য় আলোচ্যসূচি
ভবিষ্যতে কিসের ভিত্তিতে কাউন্সিলে(গঠিত হবে) প্রতিনিধিত্ব করা হবে তা নির্ধারণ করা।
জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের ব্যাপারে সকলে একমত হন।গ্রহণযোগ্য আনুমানিক জনসংখ্যার তথ্যের ভিত্তিতে নিম্নোক্ত ভাবেঃ
সাউথ ইংল্যান্ড ৩০.০০()
মিডল্যান্ডস ২৫,০০০
ল্যাঙ্কশায়ার ৯,০০০
ইয়র্কশায়ার ৫,০০০
স্কটল্যান্ড.ওয়ালেস
ইষ্ট এংলিয়া ৩,০০০
ছাত্র,নারী এবং
ডাক্তার ৭২,০০০
(স্বাক্ষরিত)শেখ আব্দুল মান্নান
এ.মতিন
এ.এইচ.ভুঁইয়া
আরব আলি
এ.এম.তরফদার
গাউস খান ।
৩য় আলোচ্যসূচি
উত্থাপন-ভবিষ্যতের কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির অবকাঠামো নির্ধারণ এবং যারা এ ব্যাপারে একমত তাদের সংখ্যা নিম্নরূপঃ
সবমিলিয়ে ২১৬ পারিষদের বিবরণ উপস্থাপন করা হল-
সাউথ ইংল্যান্ড ৯০
মিডল্যান্ডস ৭৫
ল্যাঙ্কশায়ার ২৭
ইয়র্কশায়ার ১৭
স্কটল্যান্ড ৩
কার্ডিফ ২
ইষ্ট এংলিয়া ২
২১৬
এবং
নির্বাহী কমিটির সদস্য-
সাউথ ইংল্যান্ড ১০
মিডল্যান্ডস ৯
ল্যাঙ্কশায়ার ৫
ইয়র্কশায়ার ৩
২৭
এবং
পারিষদদের মধ্যে হতে তিনজন ট্রাস্টি নির্বাচন
(স্বাক্ষরিত)গাউস খান
এ.এইচ.ভুঁইয়া
আরব আলি
শেখ আব্দুল মান্নান
এ.মতিন এ.এম.তরফদার।
<৪, ৫৯, ১০৯>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৫৯। ২৪শে আগস্ট অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির সভার কারযবিবরণী ও প্রস্তাবসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৪ আগস্ট, ১৯৭১ |
অধিবেশন কমিটির দ্বিতীয় মিটিং অনুষ্ঠিত হয় ২৪শে আগস্ট, ১৯৭১ গোরিং স্ট্রিটে।
জনাব গাউস খানের পৃষ্ঠপোষকতায় যেদিন খসড়া সংবিধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছিলো, সেদিন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন জনাব এন ইসলাম এবং অন্য একজন আইনজীবী। এ দু’জন আইনী উপদেষ্টা ভোটাধিকার ছাড়াই সংবিধানিক আলোচনায় অংশ নিতে পেরেছিলেন।
এবং এও একমত যে, সংবিধানের খসড়া কপি মের্সাস. এ মতিন, এ এইচ ভুঁইয়া, এ এম তরফদার এবং গাউস খান জমা দিয়েছিলেন এবং তাঁদের বিবেচনায় অধিবেশন কমিটির সদস্যদের মধ্যে তা প্রচারিত হয়েছিল।
ইহা একমত যে, খসড়া সংবিধান আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো সোমবার, ৩০শে আগস্ট, ১৯৭১ বিকেল ৩ টায়, গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ই. সি. ৩-তে।
(স্বাক্ষরিত)
এ. এইচ. ভুঁইয়া
এ. মতিন
শেখ আব্দুল মান্নান
আরব আলী
এ. তরফদার
<৪, ৬০, ১১০-১১১>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬০। ৩০শে আগস্ট অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির সভার প্রস্তাবসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৩০ আগস্ট,১৯৭১ |
অধিবেশন কমিটির তৃতীয় মিটিং অনুষ্ঠিত হয় সোমবার, ৩০শে আগস্ট, ১৯৭১, গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ই. সি. ৩-তে
১. কোন ধরণের ভোটাধিকার ছাড়াই জনাব নূরুল ইসলাম এবং জনাব পাশাকে সংবিধান কাঠামোবদ্ধ করার জন্য উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীকালে যখন সংবিধান কাঠামোবদ্ধ করা হয়, তখন একজন আইনী উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ করা হয়, সংবিধানের বৈধ দিকগুলো সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ করার জন্য। আইনী উপদেষ্টার সুপারিশসমূহ কমিটির সদস্য কর্তৃক বিবেচনায় রাখা হয়।
২. সংবিধানের ৩য় অনুচ্ছেদ।
“ট্রাস্টিবৃন্দ”
ধারা ১. পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত ছয়জন ট্রাস্টিজের সমন্বয়ে “বাংলাদেশ ফান্ড” গঠিত হবে। বর্তমান নির্বাচিত তিনজন ট্রাস্টির পাশাপাশি পরিষদ কর্তৃক আরও তিনজন ট্রাস্টি নির্বাচিত হবে। ফান্ড থেকে টাকা তুলে নেবার ক্ষেত্রে ন্যূনতম চারটি স্বাক্ষরের প্রয়োজন হবে। নির্বাহী কমিটির আলোচনার পূর্বে কোন টাকা উঠিয়ে নেয়া যাবে না।
ধারা ২. বাংলাদেশ সরকারের শর্তাধীন সুপারিশক্রমে অথবা যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির সুপারিশক্রমে ট্রাস্টিগণ দ্রুত টাকা উঠাতে পারবেন – শুধুমাত্র এ ক্ষেত্রেই উপরোক্ত অনুচ্ছেদের ব্যতিক্রম হবে।
৩. অনুচ্ছেদ ৪
ট্রাস্টিগণ সরাসরি পরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হবে। তাদেরকে কাউন্সিলের পূর্ববর্তী – অফিস সদস্য হতে হবে এবং ভোটাধিকার ছাড়া নিরবাহী কমিটির সদস্য হতে হবে এবং কেন্দ্রীয় বা স্থানীয় কমিটির হতে পারবে না।
৪. অনুচ্ছেদ ৫. কেন্দ্রীয় পরিষদ।
কেন্দ্রীয় পরিষদ গঠিত হবে নিম্নোক্ত প্রদেশগুলোর কমিটির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে। প্রদেশসমূহ :
১. দক্ষিণ ইংল্যান্ড, ২. মিডল্যান্ডস, ৩. ল্যাঙ্কাশায়ার, ৪. ইয়র্কশায়ার এবং সংলগ্ন দেশসমূহ।
সকল শহর এবং গ্রামে প্রতিনিধিদের কোটা হবে সাধারণ, মূলত জনসংখ্যার ভিত্তিতে।
কেন্দ্রীয় পরিষদ প্রতি তিনমাসে অন্তত একবার বসবে।
পরবর্তী মিটিং
কমিটির পরবর্তী মিটিং অনুষ্ঠিত হবে শুক্রবার, ৩য় সেপ্টেম্বর, বিকেল ৫টায়।
(স্বাক্ষরিত) এ. মতিন
এ. এইচ. ভুঁইয়া
নুরুল ইসলাম
শেখ আব্দুল মান্নান
এ. এম.তরফদার
গাউস খান
এ. পাশা
আরব আলী
<৪, ৬১, ১১২>
অনুবাদকঃ সৈয়দা ইসরাত জাহান কনক
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬১। স্টিয়ারিং কমিটির ব্যাংক একাউন্ট খোলার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আহ্বায়কের প্রতি বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সম্পাদকের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৩১ আগষ্ট, ১৯৭১ |
এটিএমজেডসি/এনইসি ৩১শে আগস্ট, ১৯৭১
এ. এইচ. ভুঁইয়া, আইনজীবী
আহ্বায়ক,
অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি,
যুক্তরাজ্যস্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,
১১, গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন, ই. সি. ৩.
জনাব ভুঁইয়া,
১৯শে আগস্ট, ১৯৭১ -এ আপনার পত্রের জন্য ধন্যবাদ। বাংলাদেশ ফান্ডের জন্য হ্যামব্রস ব্যাংক লিমিটেড-এ ডিপোজিট অ্যাকাউন্ট ছাড়াও ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংক লিমিটেড-এও নতুন অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বলে ধারণা করছি। এ ধরণের একটি অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য, ন্যাশনাল ওয়েস্টমিনিস্টার ব্যাংকে যে কপিটি ফরওয়ার্ড করা হয়েছে তার একটি বিকল্প কপি আমার প্রয়োজন। তাছাড়াও, আমি জানতে চাই, এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত কিনা, অথবা এটি আহ্বায়ক কমিটির সিদ্ধান্ত কিনা। সকল ট্রাস্টিগণের এ ধরণের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কেও জানতে চাই। সম্প্রতি পর্যবেক্ষণ করেছি যে, আহ্বায়ক কমিটির অন্যান্য ব্যাংকে নিজস্ব একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে এবং আমি সে অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত জানতে চাই এবং যে সকল অনুবন্ধ ও স্বাক্ষর জমা দেয়া হয়েছে, সে বিষয়েও জানতে আগ্রহী। এইসূত্রে, আমি উল্লেখ করতে পারি যে, জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী, বিশেষ প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের হাই কমিশনার-এর সভাপতিত্বে, ১১, গোরিং স্ট্রীট, ৮ই মে, ১৯৭১, বিভিন্ন কমিটির মিটিংয়ে উল্লেখিত যে, আহ্বায়ক কমিটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অনুমোদিত নয়।
এ অ্যাকাউন্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিস্তারিত সবকিছুই জানতে চাই।
আপনার উত্তরপ্রার্থী।
আন্তরিকভাবে অনুগত,
এ. টি. এম. জাফারুল্লাহ চৌধুরী
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন।
সি. সি. জনাব আবু সাঈদ চৌধুরী,
যুক্তরাজ্যস্থ বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি ও হাই কমিশনার।
<৪, ৬২, ১১৩-১১৪>
অনুবাদকঃ জিহাদ
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬২। বৃটেনে প্রবাসী বাঙ্গালীদের আন্দোলন ও সংগঠন সম্পর্কে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর বক্তব্য | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি
১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ইসি৩
টেলিফোন: ০১-২৩৮ ৫৫২৬/ ৩৬২৩
জয় বাংলা
প্রবাসী বাঙালি ভাইবোনদের প্রতি
বিচারপতি চৌধুরীর আবেদন
প্রবাসী সংগ্রামী বাঙালি ভাইবোনেরা,
আসসালামু আলায়কুম
আপনারা যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন তার জন্য আমি গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও আমার নিজের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশের পবিত্র মাটি থেকে শেষ পশ্চিম পাকিস্তানি বর্বর সৈন্যটি নিশ্চিহ্ন না হবে ততদিন পর্যন্ত আপনারা অটুট মনোবল নিয়ে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অকুন্ঠ সমর্থন ও সক্রিয় সহযোগিতা করে যাবেন।
যে কোন সংগ্রামেই প্রয়োজন বলিষ্ঠ সংগঠনের। গত ২৪শে এপ্রিল কভেণ্ট্রিতে অনুষ্ঠিত বাঙালি প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধিবর্গের সম্মেলনে যে স্টিয়ারিং কমিটি গঠিত হয়েছিল, তা এতদিন পর্যন্ত বিলাত প্রবাসী বাঙালি ভাইবোনদের স্বাধীনতা আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠন হিসেবে কাজ করে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি ও স্টিয়ারিং কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে আমি এতদিন চেষ্টা করে এসেছি দেশের সংগে যোগাযোগ রক্ষা করে বিদেশে আমাদের আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ ও জোরদার করে তুলতে। খোদার ফজলে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতায় এই আন্দোলন সাফল্যের দিকে এগিয়ে গিয়েছে বলে বাংলাদেশ সরকার এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
নির্বাচনে অনেক সময় দলাদলি বা ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সেই কারণে আমি মনে করেছিলাম যে কাজের ভিতর দিয়ে সংগ্রামী ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হওয়ার পর কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কাউন্সিলের নির্বাচন হলে ভালো হয়। তাই আমি সুগঠিত আন্দোলন গড়ে উঠবার পর নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপদেশ দেই। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে স্টিয়ারিং কমিটির বিশেষ উদ্বিগ্নতা সত্ত্বেও তাঁরা আমার উপদেশ অনুযায়ী এতদিন নির্বাচন থেকে বিরত থাকেন।
বর্তমানে আমি অনুভব করছি যে, আন্দোলনের খাতিরে এখানকার কেন্দ্রীয় সংগঠনকে আরো বলিষ্ঠ করা প্রয়োজন। প্রথমত মাত্র কয়েকজন লোকের পক্ষে এতবড় আন্দোলনের গুরুদায়িত্ব পালন করে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। দ্বিতীয়তঃ যত বেশি লোক আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করবেন আন্দোলন ততই জোরদার হবে বলে আমার বিশ্বাস। তাই পুরোপুরিভাবে গণভিত্তিক ও প্রতিনিধিত্বমূলক আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কাউন্সিল গঠন করা খুবই দরকার। অতএব আমার উপদেশ অনুযায়ী স্টিয়ারিং কমিটি একটি CONVENTION বা সম্মেলন আহ্বানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য CONVENTION COMMITTEE গঠন করেছেন। CONVENTION COMMITTEE এ পর্যন্ত তিনটি বৈঠকে মিলিত হয়ে এই কাজে অনেক দূরে এগিয়ে গিয়েছেন। আমি আশা করছি সম্মেলন শীঘ্রই ডাকা হবে। এই সম্মেলনকে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আপনারা সূষ্ঠভাবে ও শৃংখলার সাথে এই ব্যাপারে সহযোগিতা করবেন বলে আমি বিশ্বাস রাখি।
আমরা এক জীবনমরণ যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছি এবং খোদার ফজলে যুদ্ধক্ষেত্র হতে খুবই উৎসাহজনক খবর আসছে। এই সময় একতা বজায় রাখা খুবই প্রয়োজন। এই ঐক্য কোনরকম ফাটল ধরলে শুধু আমাদের সংগ্রামের ক্ষতিই হবে না, তা পশ্চিম পাকিস্তানি শত্রুদের সপক্ষে এক বিরাট হাতিয়ার। তাই আপনাদের কাছে আমার বিনীত আরজ এই যে, দেশ ও দশের খাতিরে আপনারা এতদিন পর্যন্ত যে একটা নজায় রেখে এসেছেন তা অক্ষুণ্ন রাখবেন। জয় বাংলা।
আপনাদের খাদেম
(আবু সাঈদ চৌধুরী)
৩১/৮/৭১
<৪, ৬৩, ১১৫>
অনুবাদকঃ আফসানা আহমেদ রিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৩। ৩রা সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির সভার প্রস্তাবসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৩রা সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
১৯৭১ এর ৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার লন্ডনের গোরিং স্ট্রিট এ কনভেনশন কমিটির ৪র্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কেন্দ্রীয় পরিষদ, অঞ্চলের সমস্ত কমিটির পক্ষ থেকে ২১৭ জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত হবে কেন্দ্রীয় পরিষদ।
অনুচ্ছেদ ৫ এর ধারাবাহিকতা:
পরিষদের কার্যাদি: জরুরি মুহূর্তে কার্যনির্বাহী কমিটি কর্তৃক গৃহীত তড়িত সিদ্ধান্তসমূহ ব্যতীত প্রতিষ্ঠানের অন্য সকল নীতির ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় পরিষদ। কার্যনির্বাহী কমিটির সাথে আলোচনার ভিত্তিতে আহবায়ক কর্তৃক পরিষদের মিটিং আহ্বান করা হবে। আর্থিক বিষয়াদি এবং কার্যনির্বাহী কমিটির কার্যকলাপ সংবলিত রিপোর্ট প্রতি তিন মাস অন্তর পরিষদের কাছে দাখিল করতে হবে। পঞ্চাশজন কাউন্সিলর তাদের যৌথ স্বাক্ষরের ভিত্তিতে পরিষদের বিশেষ প্রয়োজনে সভা ডাকতে পারবেন।
স্বাক্ষরসমূহ
অনুচ্ছেদ ৬ – কার্যনিবাহী কমিটির কার্যাদি:
গোপন ব্যালট পেপারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলরদের দ্বারা নির্বাচিত এবং কাউন্সিলরদের মধ্য থেকেই এগার জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত হবে কার্যনির্বাহী কমিটি।
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
<৪, ৬৪, ১১৬> শিরোনাম |
সূত্র |
তারিখ |
৬৪। আসন্ন কভেনশনে সরাসরি প্রতিনিধিত্ব চেয়ে ষ্টিয়ারিং কমিটিকে লেখা আইলিংটন কমিটি সম্পাদকের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১০সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
বাংলাদেশের জন্য আইলিংটন কমিটি
(১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত)
১৮৯. ক্যালেডোনিয়ান রোড, লন্ডন, এন ১
টেলিফোনঃ ০১-৮৩৭ ১৪৮০
তারিখঃ ১০ সেপ্টেম্বর,১৯৭১
পরিচালনা পরিষদ,
১১,গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন,ই.সি.২.
জনাব,
আসন্ন অধিবেশনে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে আমাদের মত প্রকাশ করে আমরা লিখছি। আমরা মনে করি যে অধিবেশনে কোন পরিচায়ক সংস্থা ছাড়াই সকল স্থানীয় দলকে সরাসরি প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়া উচিত।
যেহেতু আমাদের দল এ যাবৎকালে স্বাধীন সত্তা হিসেবে ছিল, সেহেতু অধিবেশন আয়োজনের যেকোন অগ্রগতিতে আমাদেরকে অবহিত করার জন্য অনুরোধ করছি।
অভিবাদন এবং আশু জবাব প্রত্যাশী।
আন্তরিকতার সাথে
ই. রহমান
জি.এস.
<৪, ৬৫, ১১৭-১১৮>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৫। সাউথল বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের সভার প্রস্তাব ও গঠিত কমিটির বিবরণ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১১ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
প্রথম অধিবেশন
সাউথল
সময়-বিকাল ৪টা
তারিখ-১১।৯।৭১ ইং
অদ্য বিকাল ৪ ঘটিকার সময় গ্রেটার লন্ডনস্থ সাউথলে স্থানীয় বাঙালিদের উদ্যোগে এক সাধারণ সভা আহূত হয়। উক্ত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সাউথল বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়।
প্রকাশ থাকে যে, উক্ত সংগ্রাম পরিষদ বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে জয়যুক্ত করিবার জন্য যাবতীয় দায়িত্বপূর্ণ কাজ করিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলেন।
উক্ত সংগ্রাম পরিষদ সর্বদাই গ্রেট বৃটেনস্থ বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটি এবং বাংলাদেশ মিশনের সংগে যোগাযোগ সহকারে কাজ করিবেন বলিয়াও প্রস্তাব গৃহীত হয়।
সাউথল বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ
ওয়ার্কিং কমিটি
১।মিঃ আব্দুসসালাম চৌধুরী চেয়ারম্যান
২। ” আকবর আলী ভাইস চেয়ারম্যান
৩। ” সাদিক আলী ঐ
৪। ” এম,ইউ, আহসান সেক্রেটারি
৫। ” গজনফর আলী অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি
৬। ” চাঁন মিয়া ঐ
৭। ” সাজ্জাদুর রহমান ট্রেজারার
৮। ” প্রতাব আলী অ্যাসিট্যান্ট ট্রেজারার
৯। ” নূর হোসেন অরগানাইজিং সেক্রেটারি
১০। ” আবুল হোসেন অ্যাসিস্ট্যান্ট অরগানাইজিং সেক্রেটারি ১১। ” আব্দুল আউয়াল ঐ
সাধারণ সদস্যগণ
১।মিঃসাহিদআলী
২।” সূর্যলালবেঘী
৩। ” এম, বকসচৌধুরী
৪। ” তাহিরউল্যা
৫।মিঃমাহমুদআলী
৬। ”আরজুমিয়া
৭। ” মোহনলাল
৮। ” মতিলাল
৯। মিঃ আনা ১৬।মিঃ আব্দুল বারী
১০। ” মকবুল আলী ১৭। ” আব্দুল খালেক
১১। ” বি, এস, হাওলাদার ১৮। ” আব্দুল হান্নান
১২। ” গোলাম মর্ত্তুজা ১৯। ” আব্দুর রকিব
১৩। ” জৈন উল্যা ২০। ” আব্দুল মতিন
১৪। ” ওয়ারিশ উল্যা ২১। ” হাজী আফতাব আলী
১৫। ” তৈয়াব আলী ২২। ” কনু মিয়া
এম. ইউ. আহসান
১১-৯-৭১
সেক্রেটারী
বাংলাদেশ সংগ্রাম পরিষদ
সাউথল, মিডলসেক্স
________________
<৪,৬৬,১১৯-১২০>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৬। বাংলাদেশ সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট সরকার এবং জাতিসংঘে চাপ সৃষ্টির আহবান সংক্রান্ত বিভিন্ন লবির কাছে লিখিত চিঠি | ইউনাইটেড এ্যাকশন বাংলাদেশ | সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
ইউনাইটেড এ্যাকশন–বাংলাদেশ
৯১. কমার্শিয়াল রোড,লন্ডন,ই. ১.
পরিচালনা পরিষদের জন্য অনুলিপি
—————————-
—————————-
—————————-
জনাব,
আপনার অবগতির জন্য ইয়াহিয়া খানের সাম্প্রতিক প্রেস সাক্ষাৎকারটি যা ১ সেপ্টেম্বর “লা ফিগারো’তে এবং পরবর্তীতে ২ সেপ্টেম্বর ‘হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড’ এ প্রকাশিত হয়েছিল, তা এখানে লিপিবদ্ধ করার জন্য আমরা স্বাধীন মতামত প্রকাশের আশ্রয় গ্রহণ করছি।
তার সৈনিকদের হত্যা করার দায়ে তিনি সুস্পষ্টত গণহত্যার অনুমতি দিচ্ছেন এবং ভয়ংকর একটি ভুল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। দশ লাখের বেশি মানুশ খুন হয়েছে, নব্বই লাখের বেশি সন্ত্রস্ত বাঙালি সীমান্ত পার করেছে, বাংলাদেশের সাড়ে ছয় কোটিরও বেশি বাঙালি দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়েছে, কিছু জেলায় অনাহারের সূচনা হয়েছে, গৃহযুদ্ধের সম্মুখীন হয়েছে, ইয়াহিয়া এক রাজনৈতিক কানাগলির সাক্ষাৎ পেয়েছেন এবং তার কাছে দুইটি পথ খোলা আছে, হয় বাংলাদেশে বিশৃংখলা তৈরি নতুবা ভারতের সাথে যুদ্ধ।
সারা বিশ্বকে ইয়াহিয়া খানের কৈফিয়ত দিতে হবে কোথায় সাড়ে সাত কোটি বাঙালির নির্বাচিত শেখ মুজিব? ইয়াহিয়া পাঁচজন সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত সেনাবাহিনীর শাসন পরিচালনাকারী পরিষদের মুখপাত্র। তিনি কারো প্রতিনিধিত্ব করেন না। তিনি যেখানে আছেন তা বেয়োনেট এবং বুলেটের ব্যবহার দ্বারা হয়েছেন।
শেখ মুজিব কে বিচারাধীন করে তিনি বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের স্বাধীনভাবে প্রকাশিত ইচ্ছাকে বিচারাধীন করেছেন। কেউ ইয়াহিয়া খান অথবা তার প্রজ্ঞাপন কৌশল আর বিশ্বাস করে না। শেখ জীবিত এবং ভাল আছে শুধু এটুকু বললেই হবে না। আমরা জানতে চাই উনি কোথায় আছেন। শেখ এর একমাত্র অপরাধ হল তিনি একটি নির্বাচন জিতেছেন।
বাঁচার জন্য পালিয়ে যাওয়া নব্বই লাখ মানুষকে ভারত আশ্রয় দিয়েছে। ভারতের সাথে যুদ্ধ শুরু করে বিশ্ব মনোযোগ বিমুখ করার অধিকার ইয়াহিয়ার নেই। শরণার্থীদের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য ভারতকে অবশ্যই বিশ্বের সাহায্য করা দরকার। সাম্প্রতিক সময়ে “দি টাইমস” বলেছে, পূর্ব পাকিস্তানে যা ঘটছে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় হতে পারে না।
জনাব, আমরা আপনাকে বাংলাদেশের সংকটাবস্থা এবং বিষয়াদি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। অনুগ্রহপূর্বক আপনার সরকার এবং জাতিসংঘের উপর চাপ প্রয়োগ করুন। বাংলাদেশকে অবশ্যই এই অবিবেচক শাসকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বাঙালিরা ইয়াহিয়া খান ও তার পাঞ্জাবিদের সহকর্মী হয়ে থাকতে চায় না।
আপনার অনুগত,
১। এম. এ. সামাদ খান
২। আর. ইউ. আহমেদ
৩। এ. এইচ. জোয়ার্দ্দার
৪। এ. মতলিব
৫। ………….
৬। মোঃ আবদুর রব
ইউনাইটেড এ্যাকশন বাংলাদেশের জন্য
<৪,৬৭,১২১>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৭। বাংলাদেশ তহবিলের সাহায্যার্থে প্রদর্শিত চ্যারিটি শো–র বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ পিপলস সোসাইটি ইন গ্রেট বৃটেনের প্রচারপত্র | ১১ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
বাংলাদেশ তহবিলের সাহায্যার্থে চ্যারিটি শো
এক টিকিটে দু’টি প্রখ্যাত বাংলা ছায়াছবি।
আগামী রবিবার লা কন্টিনেন্টাল সিনেমা হলে প্রদর্শিত হবে
বেলা ১২টায় শুরু
সূর্যান
অভিনয়েঃ আনোয়ার, নাসিমা খান, আনোয়ারা, রওশন আরা, কাজী খালেক।
পরবর্তী ছবি
দুই বাড়ি
অভিনয়েঃ জহুর গাঙ্গুলি, পাহাড়ী সান্যাল, রেনুকা, অনুপ, অনিল ও ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়
কাউন্টারেও টিকিট বিক্রি হবে
_______________________________________________________________________________
বাংলাদেশ পিপলস সোসাইটি ইন গ্রেটার লন্ডন কর্তৃক আয়োজিত।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিল : চতুর্থখন্ড
<৪,৬৮,১২২>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৮। কনভেনশানে সরাসরি প্রতিনিধিত্বের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ রিলিফ কমিটির সম্পাদকের চিঠি | এ্যাকশান কমিটির দলিলপত্র | ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
আহ্বায়ক,
অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে
১১, গোরিং স্ট্রিট,
লন্ডন, ইসি৩
জনাব,
আমাদের নজরে এসেছে যে সম্ভাব্য সমগ্র যুক্তরাজ্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্যে তথাকথিত লন্ডন কমিটি দাবি করছে যে লন্ডন ও নিকটবর্তী এলাকাগুলোর সকল বর্তমান কমিটি এর অন্তর্ভুক্ত এবং এটি তাদের সকলের প্রতিনিধিত্ব করে।
আমাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রকাশের উদ্দেশ্যে আমরা অত্যন্ত জোরালোভাবে উল্লেখ করবো এবং পরামর্শ জানাবো যে, এই কমিটি তথাকথিত লন্ডন কমিটির অন্তর্ভুক্ত নয় এবং উক্ত কমিটি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করেনা। তেমন কোনো দাবি হবে সম্পূর্ণ মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং অসাংগঠনিক।
যাইহোক, এ কমিটি যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের নাগরিকদের নিরবিচ্ছিন্ন সমাবেশ এবং বাংলাদেশের পক্ষে দীর্ঘমেয়াদী জনসমর্থন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনায় সমমনা কমিটিগুলোর আন্দোলনে ‘ইউনাইটেড অ্যাকশন বাংলাদেশ’-এ অংশগ্রহণ করছে।
নিবেদক
আপনার বিশ্বস্ত
মো. আবদুস সামাদ খান
সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ত্রাণ কমিটি
তারিখ:
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
<৪,৬৯,২৩>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৬৯। আসন্ন কনভেনশন সম্পর্কে নর্থ এ্যান্ড নর্থ-ওয়েস্ট লন্ডন শাখা এ্যাকশন কমিটির সভাপতি কর্তৃক বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে লেখা চিঠি | এ্যাকশান কমিটির দলিলপত্র | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাকশন কমিটি
(উত্তর ও উত্তর–পশ্চিম লন্ডন)
৩৩ ডাগমার রোড, লন্ডনএন ২২
টেলি. ৮৮৯-৪৪৭৪
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধির উদ্দেশ্যে।
জনাব,
যুক্তরাজ্যে বাঙালি জনসাধারণের মধ্যে বিতরণকৃত আপনার ‘আবেদন’ আমি অত্যন্ত প্রশংসার সাথে পড়েছি। ইতোপূর্বে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিপক্ষে পরিচালনা কমিটির কাছে আপনার পরামর্শের পেছনে উপস্থাপিত কারণগুলো অত্যন্ত অর্থবহ ও প্রশংসনীয়।
১০ এপ্রিল আমরা একটি স্থানীয় কমিটি গঠন করেছি এবং তখন থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
আপনার ‘আবেদন’ এবং পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের ‘আবেদন’ থেকে জানতে পেরেছি যে, শীঘ্রই জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে, জাতীয় সম্মেলনে যাতে প্রতিটি কার্যকরী অ্যাকশন কমিটি সঠিক এবং সরাসরি প্রতিনিধিত্ব পায় মহামান্যের কাছে তার আবেদন জানাই। তথাকথিত প্রাদেশিক কমিটিগুলোর স্ব স্ব অঞ্চলে কাউন্সিলর নির্বাচনের মতো অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত আমাদের দৃষ্টিতে আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্রের মতোই ঘৃণ্য। আমাদের আন্দোলনের দৃঢ়তায় আমরা বিশ্বাস করি এবং আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনে গড়ে ওঠা সংগঠনে সরাসরি অংশগ্রহণের অধিকার আমাদের আছে।
সম্ভবত আপনার দৃষ্টিগোচর হয়েছে যে, একদল ব্যক্তির ধারণা শুধুমাত্র তাদের সমর্থন ও অর্থে বাংলাদেশ স্বাধীন করা সম্ভব। তারা স্বাধীনতার আন্দোলনকে গতিশীল করার পরিবর্তে দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ত রয়েছে। আমার মতে, উক্ত ব্যক্তিবর্গ আন্দোলনে সহযোগিতার নামে বরং বৃহত্তম ক্ষতি সাধন করছে। এ সকল ব্যক্তির উদ্দেশ্যে জনসমক্ষে নিন্দা জানাতে আপনার কাছে আবেদন জানাই এবং আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনি যুক্তরাজ্যে অবস্থানকারী সর্বস্তরের মানুষের অসাধারণ সমর্থন পাবেন।
আমি এছাড়াও জানতে পেরেছি যে, চারটি প্রাদেশিক কমিটির মধ্যে দুটিই বাংলাদেশ তহবিলে তাদের সংগ্রহ জমা করছেনা। কোনো বিশেষ কারণ ছাড়াই জনগণের অর্থ আটকে রাখা এ সকল ব্যক্তি সম্পর্কে জনগণকে জানিয়ে দেওয়ার আবেদন থাকবে আপনার কাছে। আমরা কোনো প্রকার আপত্তি ছাড়াই আপনাকে পথপরিদর্শক ও নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছি। সফলতার পথে আপনার নেওয়া প্রতিটি পদক্ষেপের আমরা আবারও আন্তরিক সমর্থনের অংগীকার জানাই। ধন্যবাদ। জয়বাংলা।
আপনার বিশ্বস্ত,
(এস এম আইয়ুব)
সভাপতি।
<৪,৭০,১২৫>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭০। ওলন্দাজ এম.পি-দের ভারত সফরের ব্যাপারে ল্যাংকাশায়াস্থ বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশনের তৎপরতা | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন
ল্যাংকাশায়ার এবং সংলগ্ন প্রদেশসমূহ
এ. মতিন অ্যাসোসিয়েশন-এর সংশ্লিষ্ট ইউনিটসমূহ:
চেয়ারম্যান এ্যাক্রিংটন, ব্ল্যাকবার্ন, বার্নলি, চেস্টার
লতিফ আহমেদ হসলিংডেন এবং রটেন্সটেল, লিভারপুল,
সাধারণ সম্পাদক মোসলে, ম্যানচেস্টার এবং সংলগ্ন
শহরসমূহ, ওল্ডহ্যাম রকডেল, সেন্ট
হেলেনস, স্টোক-অন-ট্রেন্ট, টডমর্ডার্ন।
৩৩৬, স্টকপোর্টরোড,
ম্যানচেস্টার১৩।
টেলি.০৬১-২৭৩৩৪২২
তারিখ:২০ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
রেফারেন্স …
বিচারপতি জনাব এ. এস. চৌধুরী,
১১, গোরিং স্ট্রিট,
লন্ডন।
মহামান্য বিচারপতি জনাব চৌধুরী,
এ বার্তার উদ্দেশ্য ডাচ এমপিদের প্রস্তাবিত ভারতভ্রমণ প্রসংগে আপনাকে জানানো। আপনার নির্দেশনা অনুসারে আমরা টিকেটের (ফেরত) ব্যবস্থা করেছি, কে এল এম এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে ফ্লাইটের সময় এবং তারিখ মহামান্য এমপিদের জানিয়ে দিয়েছি প্রভৃতি। কে এল এম থেকে প্রেরিত সর্বশেষ বার্তায় জানা গেছে যাত্রীরা (এমপিবৃন্দ) ৩০ আগস্ট ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।
ভারতে তাঁদের মিশনের সফলতার ব্যাপারে আমাদের কাছে আর কোনো তথ্য নেই। যদি আপনার কাছে এ সম্পর্কিত কোন তথ্য থাকে তবে অনুগ্রহ করে আমাদের জানাবেন।
যথাযোগ্য সম্মানপূর্বক,
জহিরুল এইচ চৌধুরী
চেয়ারম্যান-এর পক্ষে
<৪,৭১,১২৬>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭১। ২১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কনভেনশন সভার কার্যবিবরণী ও প্রস্তাবসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ |
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত সম্মেলনের অগ্রগতি প্রসংগে।
অনুচ্ছেদ – ৬: নির্বাহী কমিটি
কাউন্সিলের সরাসরি নির্বাচিত ১১ সদস্য নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠিত হবে। তারা ‘কাউন্সিল’ এর সদস্য হবেন। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাহী কমিটি নির্বাচনের সাতদিনের মধ্যেই প্রথম সভায় কমিটি নিজেদের মধ্য থেকে আহ্বায়ক নির্বাচন করবে। নির্বাচিত আহ্বায়কের নাম নির্বাহী কমিটির প্রথম সভার চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হবে। নির্বাহী কমিটির নির্দেশনা অনুসারে আহ্বায়ক দায়িত্ব পালন করবেন।
কার্যাবলী
নির্বাহী কমিটির হাতে কাউন্সিলের নির্ধারিত সাধারণ নীতি-কাঠামোর মধ্যে প্রাত্যহিক কর্মকান্ড ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা থাকবে। এছাড়াও নির্বাহী কমিটি অন্যান্য সাহিত্য, প্যাম্ফলেট, বই প্রভৃতি প্রকাশ করবে। এটি সমগ্র যুক্তরাজ্যের ভিত্তিতে সাধারণ সভা ও প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। জাতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনে সহায়ক যেকোনো কার্যক্রম পরিচালনা করবে। নির্বাহী কমিটি নির্দিষ্ট কার্যাবলীর উপর ভিত্তি করে সাবকমিটি গঠন করবে এবং সাবকমিটির সদস্যবৃন্দ নন-কাউন্সিলর হতে পারবেন।
অনুচ্ছেদ – ৭: অংগীভূত অঞ্চল এবং কেন্দ্রের মধ্যে সম্পর্ক
অংগীভূত অঞ্চলগুলো কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অথবা নির্বাহী কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী সহযোগী হবে।অংগীভূত কমিটিগুলো সংবিধান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বা নির্বাহী কমিটির কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে কোনো সাংবিধানিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেনা। অঞ্চলগুলো কেন্দ্রীয় অফিসে সকল প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করবে। নির্বাহী কমিটি কেন্দ্রীয় সকল নীতিমূলক সিদ্ধান্ত মাইমোগ্রাফিক সার্কুলারের মাধ্যমে প্রত্যেক অঞ্চলে পৌঁছে দেবেন। নির্বাহী কমিটির *অজ্ঞাতে* জাতীয় নীতি বা বাংলাদেশ সরকার বা এর মিশন বা যেকোনো সরকারী অথবা অন্যান্য যেকোনো সংগঠনের যেকোনো ব্যাপারে অংগীভূত কমিটিগুলোর নির্দেশনার অধিকার থাকবেনা। নির্বাহী কমিটি এবং যেকোনো (ইউনিট) কমিটির মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার একটি কপি আঞ্চলিক কমিটিতে পাঠানো হবে।
কোনো অঞ্চলের অংগীভূত সংস্থাগুলোর মধ্যে বিবাদের ক্ষেত্রে তা আঞ্চলিক কমিটির অধীনে সমর্পিত হবে। আঞ্চলিক কমিটির সিদ্ধান্তের বিপক্ষে নির্বাহী কমিটির কাছে যেকোনো পক্ষই আপীল জানাতে পারবে। নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত যদি কোনো পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য না হয় তবে তা কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের হাতে সমর্পিত হবে। কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
কোনো অংগীভূত সংস্থা এবং তার আঞ্চলিক কমিটির মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে তা নির্বাহী কমিটির হাতে অর্পিত হবে। যদি নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত কোনো পক্ষের কাছেই গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে বিষয়টি কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের হাতে অর্পিত হবে। কাউন্সিলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
অনুচ্ছেদ – ৮: শৃংখলাতান্ত্রিক পদক্ষেপ:
যেকোন অফিসনির্বাহী, সদস্য বা সংস্থার বিরুদ্ধে শৃংখলাতান্ত্রিক পদক্ষেপ আহ্বায়কের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটির বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা যাবে।নির্বাহী কমিটি ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। উক্ত অফিসনির্বাহী, সদস্য বা সংস্থা চৌদ্দ দিনের মধ্যে আহ্বায়কের মাধ্যমে কাউন্সিলের কাছে নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে, যা পরবর্তীতে ৩০ দিনের মধ্যেই কাউন্সিলের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
অনুচ্ছেদ – ৯: কোরাম:
নির্বাহী কমিটির সাতজন এবং কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ৯৫ জন সদস্য নিয়ে তাদের স্ব স্ব কোরাম গঠিত হবে।
অনুচ্ছেদ – ১০
সংবিধানে যেকোন সংশোধনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের অর্ধেকের বেশি সদস্যের প্রয়োজন হবে।
অনুচ্ছেদ – ১১
নোটিশ: নির্বাহী কমিটির সভার জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা কেন্দ্রীয় কমিটির সাতদিনের স্পষ্ট নোটিশ দেওয়া হবে।
অনুচ্ছেদ – ১২
প্রধান উপদেষ্টা: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনই কেন্দ্রীয় অ্যাকশন কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হবেন।
অনুচ্ছেদ – ৬ এর ধারাবাহিকতা
কোনো গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়াই পরপর নির্বাহী কমিটির তিনটি সভায় অনুপস্থিত যেকোন সদস্যই তার সদস্যপদ হারাবেন। কেন্দ্রীয় কমিটির পরবর্তী সভায় এই শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
স্বাক্ষরসমূহ –
<৪,৭২,১২৮>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭২। বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের সভার বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের দলিলপত্র | ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ গণ–সংস্কৃতি সংসদ
BANGLADESH PEOPLE’S CULTURAL SOCIETY
৫৯, সিমোর হাউজ
ট্যাভিস্টক প্লেস
লন্ডন ডাব্লিউ সি ১
ফোন: ৮৩৭-৪৫৪২
সেপ্টেম্বর২৮, ১৯৭১.
প্রিয়সুধী,
বাংলাদেশ গণ-সংস্কৃতি সংসদের নির্বাহী কমিটির একটি সভা ১ অক্টোবর, ১৯৭১ শুক্রবার স্টেপনি ইনস্টিটিউট, মিরডল স্ট্রিট (গ্র্যান্ড প্ল্যাইস হলের বিপরীতে) কমার্শিয়াল রোড, লন্ডনই১ (টিউব: হোয়াইটচ্যাপেল)-এ সন্ধ্যা ৭ টায় অনুষ্ঠিত হবে।
আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
আলোচ্যসূচি:
১) গত সভার উল্লেখযোগ্য মুহূর্তগুলো।
২) ম্যানচেস্টার ভ্রমণের প্রস্তুতি।
৩) বিদ্যালয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা।
৪) সংবিধান।
৫) অ্যাকাউন্টসমূহ।
৬) অন্য যেকোনো বিষয়।
ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্ভাষণের সাথে
আপনার গুণমুগ্ধ,
মুন্নি রহমান(মিসেস)
সম্পাদক
<৪,৭৩,১২৯>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৩। বিচারপতি চৌধুরীর প্রতিবৃটিশ লেবার পার্টির চিঠি | অ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৯সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
দ্যা লেবার পার্টি
ট্রান্সপোর্ট হাউজ স্মিথ স্কয়ার লন্ডন এসডাব্লিউ১
টেলিফোন: ০১-৮৩৪৯৪৩৪
টেলিগ্রাম: ল্যাব্রেপকমসো ওয়েস্ট লন্ডন
সাধারণ সম্পাদক: এইচ আর নিকোলাস ওবে
অবৈতনিক কোষাধ্যক্ষ: অবসরপ্রাপ্ত এল জে ক্যালাহ্যান এমপি
সহকারী সাধারণ সম্পাদক: জে জি মরগ্যান
রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি: আর জি হেওয়ার্ড
টিআর/ইই
বিচারপতি জনাব চৌধুরী ২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
বাংলাদেশ অফিস
১১ গোরিং স্ট্রীট, লন্ডন, ইসিথ্রি
বৃটিশ ওভারসীজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপ
সম্মানিত সুধী,
এ বার্তার উদ্দেশ্য, বৃটিশ ওভারসীজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপ এবং জনাব পিটার শোর দ্বারা যৌথভাবে আয়োজিত ৫ই অক্টোবর মঙ্গলবার বিকাল ৫.১৫-এ ব্রাইটন লেবার ক্লাব, লেউইস রোড, ব্রাইটন-এ বাংলাদেশ বিষয়ক সভায় বক্তব্য রাখতে এ সংগঠনের ভাইস-চেয়ারম্যান জনাব দালজিত সেহবাই-এর সাথে টেলিফোনে আপনার দেয়া সমাধানটি নিশ্চিত করা। আমি বুঝতে পারছি যে, আপনি লেবার পার্টি সম্মেলন পর্যবেক্ষণ করতে আগ্রহী এবং আপনার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে ৩, ৪ ও ৫ অক্টোবর তিন রাতের জন্য বেডফোর্ড হোটেল, কিংস রোড, ব্রাইটন-এ।
বৃটিশ ওভারসীজ সোশ্যালিস্ট ফেলোশিপ প্রতিষ্ঠিত হয় লেবার পার্টি- এর জাতীয় নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে, লেবার পার্টির সদস্যবৃন্দ এবং বৃটেনে অধিবাসী কমিউনিটিগুলোর মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ়তর করার প্রাথমিক উদ্দেশ্য নিয়ে, যা বর্তমানে লেবার পার্টি সদস্যদের বৈদেশিক বিষয়াদি সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করায় বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করছে। এই ফেলোশিপের চেয়ারম্যান হলেন জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং শ্রমিক সরকারের একজন সদস্য মিস জোয়ানলেস্টর, এমপি।
আমি আপনার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মঙ্গলবার ব্রাইটনে থাকবো।
আপনার বিশ্বস্ত
টম রিডাউট
সম্পাদক
<৪,৭৪,১৩০-১৩২>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৪। নেদারল্যান্ডের দৈনিক ‘DE TIJD’-এ প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিস্থিতির উপর নিবন্ধের অনুবাদ সংবলিত ‘ফ্যাকট শীট-১৮’ | বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের বুলেটিন | ৩০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১। |
বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গ্রেট বৃটেন
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ
৩৫ গ্যামেজ বিল্ডিং
১২০ হলবর্ন, লন্ডনইসি১
ফোন: ০১–৪০৫৫১৭
তারিখ: ৩০.৯.৭১
ঘটনার বিবরণ–১৮
নিচে অ্যামস্টারড্যাম এর দে টাইড(নেদারল্যান্ডস-এ সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক)- এ ১৪ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত একটি কলামের অনুবাদ প্রকাশিত হলো।
আন্তরিক শ্রদ্ধা?
আইরি কুইপার
দে টাইড, অ্যামস্টারড্যাম
শিরোনাম: আন্তরিক শ্রদ্ধা? (মন্তব্যে আইরি কুইপার)
কলাম: বিভিন্ন সময়ে।
১৪-৯-৭১
“পাকিস্তান দূতাবাস রাজতান্ত্রিক ডাচ সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং দে টাইড ,অ্যামস্টারড্যাম-এ এপ্রিল ২২, ১৯৭১ ‘বিভিন্ন সময়ে’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধটি মন্ত্রণালয়ের নজরে আনতে পেরেছেন। এই নিবন্ধটি পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দেয় এবং আর্টিকেলটির লেখক পাক রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে সবচেয়ে দুর্বিনীত, অবমাননাকর এবং মানহানিকর ভাষা ব্যবহার করেছেন। এবং তিনি পাক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ বপন করেছেন। নেদারল্যান্ডসের মতো একটি দেশ যার সাথে পাকিস্তান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুখী সম্পর্ক বজায় রাখে, তাতে এমন একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হতে পারে, এ ব্যাপারে পাক দূতাবাস ‘আহত ও ব্যথিত’। পাক দূতাবাস এই কলামের প্রকাশনার বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং আশা করছে যে এই বিষয়ে মন্ত্রণালয় ‘যথাযথ ব্যবস্থা’ গ্রহণ করবেন।
“পাক দূতাবাস রাজতান্ত্রিক ডাচ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে এর সুসম্পর্ক নিশ্চিত করতে এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে।”
পাক দূতাবাস পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে কয়েক মাস আগে এই চিঠিটি পাঠিয়েছে। মাননীয় রাষ্ট্রদূত “কেউ যদি তা ব্যাখ্যা করতে পারেন” শিরোনামে আমার লেখা একটি নিবন্ধে রুষ্ট হয়েছিলেন।
আমার শেষ বক্তব্য ছিলো: “ভবিষ্যত যদি গৌরবান্বিতও হয়, শান্তি, সুখ ও ন্যায়বিচারে পরিপূর্ণ হয় বিশ্ব, তারপরও তা পূর্ব পাকিস্তান, বায়াফ্রা এবং ভিয়েতনামের জনগণের কোনোই কাজে আসবেনা। তারা কেবল একবারই বাঁচবে এবং কেন তাদের এভাবে ভুগতে হবে তা কেউই তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবেনা।”
এ অংশটি অবশ্যই রাষ্ট্রদূতের ক্রোধের কারণ নয়। তিনি সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন; কিন্তু সত্যি বলতে, তা মোটেই আমার উদ্দেশ্য ছিলো না। লেখাটিকে কেবল তখনই খারাপ বলা যেত, যদি তিনি তাতে সন্তুষ্ট হতেন।
বিশেষত পাক রাষ্ট্রপতি জেনারেল ইয়াহিয়া খান সম্পর্কে আমি যা লিখেছিলাম, মহামান্য রাষ্ট্রদূত তাতেই ক্ষুব্ধ। নিজের লেখার উদ্ধৃতি দেওয়া অসারত্বের পরিচায়ক, কিন্তু এবার আমার সপক্ষে একটি ভালো যুক্তি আছে। আমি লিখেছিলাম: “ইয়াহিয়া সেই ব্যাক্তি যে পূর্ব পাকিস্তানিদের অবদমিত রাখতে তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তাকে একজন খলনায়ক হিসেবেই বিবেচনা করে থাকি, একজন বিশৃঙ্খল অপরাধী যাকে গ্রেফতার করা উচিত, যাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা উচিত, অথবা অন্ততপক্ষে পাগলাগারদে রাখা উচিত, কারণ তিনি উম্মাদ হয়ে থাকতে পারেন, তা নাহলে তিনি এমন নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিতে পারতেন না: হাজার হাজার, লাখ লাখ স্বদেশী জনগণের ওপর ঠান্ডা মাথায় খুনো মনোবৃত্তি নিয়ে আক্রমণ চালানো, রাষ্ট্রপতি হিসেবে যাদেরকে কিনা তার রক্ষা করার কথা! প্রকৃতপক্ষেই, এমন একজন মানুষ অবশ্যই অপরাধী।”
এছাড়াও আমি সানডে টাইমস-এর একজন সাংবাদিককে উদ্ধৃত করেছিলাম, যার মতে ইয়াহিয়া বাস্তবিকই এই ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন যে, যেকোনো মূল্যে পাক একতা রক্ষা করা তার দায়িত্ব। আমি লিখেছিলাম: “তিনি অনুধাবনই করতে পারছেন না যে তিনি কোনো অপরাধে অপরাধী। ক্ষমতার সর্বোচ্চ শিখরে থেকেও তিনি ক্ষমতার ব্যবহার সম্বন্ধে অবগত নন”। এবং: “বিশ্বের বর্তমান অরাজক পরিস্থিতির কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে।“
এরই মধ্যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে বহু কিছু জানতে পেরেছি। আমি ২২ এপ্রিল যা ভেবেছিলাম, পরিস্থিতি তার চেয়েও অনেক খারাপ। শরণার্থীর সংখ্যা আনুমানিকভাবে প্রায় আশি লাখ, বা এক কোটি। শত শত মানুষ প্রত্যক্ষদর্শী; পাক রাষ্ট্রপতি পূর্ব পাক জনগণের প্রতি কেমন আচরণ করেছে, তা তারা বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে।
আমেরিকান সাপ্তাহিক নিউজউইক “পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা” শিরোনামে পাক রাষ্ট্রপতির কর্মকান্ড বিষয়ে এক বিশাল প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মলাটে ছিলো রুগ্ন এক পূর্ব পাকিস্তানি শিশু, পিতৃমাতৃহীন, ভুখা-নিরন্ন, নিরাশ (আমরা কেনো বেঁচে থাকি, যদি আমরা শিশুদের ভোগান্তির শিকার হতে দেই?)- কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রদূত বিন্দুমাত্র মাথা ঘামান না এ ব্যাপারে। তিনি শুধু চান ডাচ সরকার “যথাযথ ব্যবস্থা” নিক, চান না পূর্ব পাকিস্তানি শিশুদের দুর্দশার কবল থেকে বাঁচাতে, চান শুধু এই নষ্ট পৃথিবীর অগণিত মানুষের অনুভূতি: ক্রোধ ও হতাশা প্রকাশে একজন সাংবাদিককে বাধা দিতে, কারণ এ সব আমাদের চোখের সামনেই ঘটছে অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না।
একটি কাজই শুধু আমাদের করার আছে, তা হলো বিশ্ববিবেক, ৩০০ কোটি মানুষের বিবেককে নাড়া দেওয়া, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিশ্ববিবেক এতোটা দৃঢ় ও অদম্য হয়ে উঠবে যে তা ইয়াহিয়া খানের মতো অযোগ্য রাজনীতিবিদদের কর্মকাণ্ড থামাতে সফল হবে। কিন্তু তারপরও: “এসব মানুষ শুধু একবারই বাঁচবে, এবং কেনো তাদের এমন ভোগান্তির শিকার হতে হবে তা কেউই তাদের কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবেনা।”
যদি পাকিস্তান সরকার হেগ-এ তাদের দূতাবাসের প্রতিনিধিত্বে আমাকে অভিযুক্ত করতে চায়, একই সাথে তাদের অভিযুক্ত করতে হবে নিউজউইক (উদাহরণ হিসেবে বলছি), নিউ ইয়র্ক টাইমস-কেও, যারা ১ আগস্ট ইয়াহিয়ার “অমানবিক নীতি” এবং “নিয়মতান্ত্রিক গণহত্যা, ধর্ষণ এবং হিন্দুদের ভারতে নির্বাসন” নিয়ে লিখেছে।
এছাড়াও তাদের অভিযুক্ত করতে হবে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি-কে, যিনি ১৬ আগস্ট নয়াদিল্লীতে ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছে। এবং বিশ্ব চার্চ কাউন্সিল-কে, যারা ভারতে শরণার্থীদের প্রত্যক্ষ করেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে পাক বাহিনী “সবচেয়ে ভয়াবহ নির্দয়তা” সংঘটন করেছে।
কিন্তু নিম্নসাক্ষরিত এবং দে টাইড-কে সম্ভবত অভিযুক্ত করা হবে না। অ্যামস্টারড্যামে পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয় একজন পাবলিক প্রসিকিউটরের কাছে চিঠিটি পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য সিআইডি-কে নির্দেশ দিয়েছেন। আমি সিআইডি অফিসারদের তাদের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছি যে, নিবন্ধে আমার মতামত “পাক রাষ্ট্রপতির প্রতি অপমান নয়, বরং তার নীতির একটি সংজ্ঞায়িত সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ।”
এ ঘটনা ঘটেছে ছয় সপ্তাহ আগে এবং তখন থেকে আমি তাদের কাছ থেকে আর কোনো খবর পাইনি।
কেসটি সম্ভবত তুলে রাখা হয়েছে। দু;খের বিষয়, কারণ আমি বিচারকের কাছে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলাম যে, পাক দূতাবাস পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে, এছাড়াও আমি “আহত ও ব্যথিত” এ ব্যাপারে যে, এমন নির্লজ্জ অপমানজনক ও মানহানিকর নীতি পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি অনুসরণ করতে পারেন, যার সাথে নেদাল্যান্ডস এমন বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সুখী সম্পর্ক বজায় রাখে।
আমি এছাড়াও বলতে চেয়েছিলাম যে, রাষ্ট্রপতি খান আমার সবচাইতে প্রাথমিক মানবিক অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন, যে তিনি পাক সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণার বীজ বপন করছেন। তার নীতির বিরুদ্ধে আমি দৃঢ় প্রতিবাদ জানাতাম এবং এই আশা ব্যক্ত করতাম যে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
কিন্তু আমি হয়তো তাতে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার সুসম্পর্ক নবায়নের সুযোগ হারাতাম।”
<৪,৭৫,১৩৩-১৩৪>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৫। মুক্তিযুদ্ধের ছয় মাসঃ বাংলাদেশের অব্যাহত স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর একটি সমীক্ষা | বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এ্যাকশন কমিটি, গ্রেট বৃটেন। | সেপ্টেম্বর, ১৯৭১। |
ছয় মাসের স্বাধীনতা আন্দোলন
বাংলাদেশের বিস্তৃত নদ–নদী অযথাই রক্তরঞ্জিত হয়নি!
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হানাদার অধ্যুষিত বাংলাদেশে যে রক্ত ঝরিয়েছে তা কিউসেকে মাপা সম্ভব। মেঘনা ও পদ্মায় বহমান প্লাবনের মতোই এই রক্তস্রোত বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশবে, বাংলার চিরসবুজ মাটিতে মিশে যাবে। ব-দ্বীপ বাংলাদেশের মাটি হাজার হাজার শহীদের রক্তে সমৃদ্ধ হয়ে আবার হেসে উঠবে, যখন হানাদার বাহিনী বিতাড়িত হবে।
এরই মধ্যে স্মরণীয় একটি উপলক্ষ্য হচ্ছে আজ ২৬ সেপ্টেম্বর। ২৫ মার্চের সেই কালোরাতের পর ছয়মাস গত হয়েছে, যখন ইয়াহিয়া তার অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত বাহিনীকে নিরস্ত্র বাঙালির হত্যাযজ্ঞে লেলিয়ে দেয়। নিশ্চিতভাবে এই ছয়টি মাস বাংলাদেশের প্রতিরোধ সংগ্রামে একটি যতিচিহ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়।
তারপরও, স্মৃতি চিরন্তন! এই ছয় মাসে ইতিহাস দেখেছে বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ আর নারী-শিশুর প্রতি নারকীয় অত্যাচার ও অনাচার – যার উদ্ভব বিকারগ্রস্ত মানসিকতার বিকৃত দুঃস্বপ্নে। এবং তা মানব সভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন, মধ্যযুগে মধ্য এশীয় বর্বরেরা যারা এশিয়া এবং ইউরোপের মাটিতে ভয়াবহতা নিয়ে নেমে এসেছিলো!
বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার পোষা নেকড়েদের এই অনাচার ইতিহাসের পাতায় সাধারণ মানুষের উপর সংঘটিত সশস্ত্র বাহিনীর অত্যাচারের নিকৃষ্টতম উদাহরণ হিসেবে স্থান পাবে।
অস্বাভাবিক এই একশ আশিটি দিন অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষায় পরিপূর্ণ।
শত্রুপক্ষের জ্ঞাত উদ্দেশ্যগুলো এবং তার অনাচারের ফলাফলের একটি সমীক্ষা থেকে তা উদ্ভুত। তার একটি উদ্দেশ্য ধরা যাক। ‘ঢাকার কসাই’ জেনারেল টিক্কা খান পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কমিয়ে আনার মরণপণ লক্ষ্য নিয়ে তার গণহত্যামূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেছিলেন।
তার অনাচারের কারণে সংঘটিত জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের আপাত সাফল্য নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট হতেই পারেন: প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর রক্তলালসায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রাণ দিয়েছে; ৯০ লাখ স্ব-অবস্থায় ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে যেখানে শরণার্থী শিবিরে মহামারী এবং অপুষ্টি তাদের সংখ্যায় কমিয়ে আনছে; এবং আরো কয়েক মিলিয়ন উদ্বাস্তু মানুষ বাংলাদেশের মধ্যে ভাসমান অবস্থায় ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
ইয়াহিয়া বাহিনীর সাথে হাত মিলিয়ে দুর্ভিক্ষের আগমন, যার জন্যে ইসলামাবাদ জান্তা গভীর আগ্রহে অপেক্ষমান। এ অনিবার্য দুর্ভিক্ষ, যার পথ পাকিস্তান গড়ে দিয়েছে শস্যের ধ্বংসসাধন এবং চাষিদের ক্ষেত থেকে উৎখাতের মাধ্যমে, তা যে শুধু বাংলাদেশের আরো একটি অংশ ধ্বংস করবে তাই নয়, বরং বুভুক্ষু মানুষকে খাবারের বিনিময়ে হানাদার বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করবে।
বাঙালির জনসংখ্যা কমিয়ে আনার এতোসব গণহত্যামূলক চক্রান্ত তবেই অর্থবহ হতো, যদি বাংলাদেশ পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত থাকতো। কিন্তু, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সাথে বাঙালি জনসাধারণের বিরুদ্ধে হানাদার বাহিনীর এ নীলনকশা শুধুই ঘৃণ্য অনাচার, যার সফলতা ইহুদি সমস্যার বিরুদ্ধে হিটলারের ‘চূড়ান্ত সমাধান’ – এর চাইতেও কম!
আরো একটি শিক্ষা হলো যে, দ্রুততার সাথে বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় ও সশস্ত্র বাহিনীকে সংঘবদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। গত মে – এর কালো সপ্তাহগুলোর দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, প্রাথমিক ধাক্কার পরপরই বিধ্বস্ত বাংলাদেশের মধ্য থেকে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি রাযে রাষ্ট্রীয় কলাকৌশল সৃষ্টি ও একটি কার্যকরী স্বাধীনতা বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হয়েছেন তা সত্যিই অসাধারণ। স্বাধীনতা বাহিনীর নতুন অর্জনগুলো বিস্তারিত বর্ণনার প্রয়োজন নেই এখানে। হানাদারদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধের শক্তি এবং মুক্তিবাহিনীর সাফল্যগুলো প্রায় প্রতিদিনই নিরপেক্ষ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে স্বীকৃতি পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিকভাবে, বাংলাদেশ ‘গ্রেট পাওয়ার গেইম’ – এর শিকার হিসেবেই রয়ে গেছে। রাষ্ট্রীয় জনসমর্থনের ভিত্তিতে উদ্ভুত নতুন একটি রাষ্ট্রকে বরণ করে নেয়ায় অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর স্বাভাবিক অনাগ্রহ ছাড়াও অদ্ভুতভাবে পাকিস্তানে আমেরিকা ও চীনের মিলিত স্বার্থ কুচক্রীজান্তাকে ইসলামাবাদেক্ষমতায় রেখেছে, যা একে বাংলাদেশে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার উদ্যম সরবরাহ করছে। ৯০ লক্ষ শরণার্থীর চাপে জর্জরিত ভারত ঘটনা প্রবাহে এই অপেক্ষা ও আশায় আছে যে মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র প্রচেষ্টা ইয়াহিয়া বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে পিছু হটতে বাধ্য করবে এবং শরণার্থীদের নিজ মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়া সম্ভব করবে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন দর্শকের ভূমিকায় অপেক্ষমান, নব উদ্ভুত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের টিকে থাকার সম্ভাবনা যাচাই করছে।
এমন আন্তর্জাতিক অবস্থার ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের ব্যাপক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসবে। তারপরও, এমন একটি দূরবর্তী ঔপনিবেশিক যুদ্ধচালিয়ে যাওয়ায় ইসলামাবাদের সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেখাটা ভুল হবে। পাকিস্তান আমেরিকা নয়।
যেখানে বাংলাদেশের জনগণের দুঃখদুর্দশা এরই মধ্যে হয়তো ভিয়েতনামকে ছাড়িয়ে গেছে, কিন্তু বাংলাদেশে যুদ্ধহয়তো ভিয়েতনাম যুদ্ধের বর্তমান অবস্থার মতো ততোটা লম্বা সময় নিয়ে চলবে না।
বাংলাদেশের দেশপ্রেমীদের তাই গভীর প্রত্যাশার সাথে নিকট ভবিষ্যত দেখা দরকার।
বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত
যুক্তরাজ্য
৩৫, গ্যামেজেস বিল্ডিং, ১২৯ হলবোম, লন্ডন ইসি১। টেলি – ০১. ৪০৫ ৫৯১৭
লার্কুলার লিমিটেড কর্তৃক মুদ্রিত
<৪,৭৬,১৩৫>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৬। ১লা অক্টোবর অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির সভার প্রস্তাবসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১ অক্টোবর, ১৯৭১। |
১ অক্টোবর, ১৯৭১, অধিবেশন কমিটির সিদ্ধান্তসমূহ
(ক) এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, ১ অক্টোবর সংঘটিত ৭ম সভার ২নং সিদ্ধান্তের সাথে সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক কমিটিগুলোর কাছে অধিবেশন কমিটির পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হবে, যা অধিবেশন কমিটির ছয়জন সদস্যের পক্ষে আহ্বায়ক স্বাক্ষরিত করতে পারবেন।
(খ) এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, এই প্রক্রিয়ার দ্রুতকরণে বিচ্ছিন্ন কমিটিগুলোর আঞ্চলিক কমিটিগুলোর সাথে সহযোগিতার তাড়না দিয়ে সংবাদ পরিক্রমায় সার্কুলার দাখিল করা হবে।
(গ) এছাড়াও এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, সম্মেলনটি ৭ নভেম্বর, ১৯৭১ রবিবার সকাল ১০.৩০ এ অনুষ্ঠিত হবে।
২২ অক্টোবর নির্বাচন কমিশন, অধিবেশন কমিটির সদস্যবৃন্দের সাথে বৈঠকে আমন্ত্রিত হবেন। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচিত সদস্যবৃন্দ তাদের সদস্য হিসেবে নির্বাচনের ব্যাপারে অবহিত হবেন। এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, নির্বাচন কমিটি নিম্নোক্ত সদস্যবৃন্দ নিয়ে গঠিত হবে:
(১) ব্যারিস্টার আমিন,
(২) ব্যারিস্টার ফেরদৌস,
(৩) ডক্টর হারুন,
(৪) ডক্টর সিরাজউদ্দৌলা
(৫) জনাব গণেশচন্দ্র দে।
এছাড়াও আরো একটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, আসন্ন নির্বাচনের রেফারেন্সের শর্তাবলী অধিবেশন কমিটির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হবে।
কমিশন নিজেদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। নির্বাহী কমিটি এবং বাংলাদেশ ফান্ডের তিনজন ট্রাস্টির নির্বাচন পরিচালনার সম্পূর্ন ক্ষমতা কমিশনের থাকবে।
<৪,৭৭,১৩৬>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৭। সংগৃহীত চাঁদার হিসাবসহ রশিদ বই ফেরতদানের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের আহ্বান | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১ অক্টোবর, ১৯৭১। |
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য অ্যাকশন কমিটির নির্বাহী কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন ই সিথ্রি
টেলি: ০১-২৮৩৫৫২৬/৩৬২৩
জয় বাংলা
জরুরী আবেদন
বাংলাদেশ ফান্ডে টাকা আদায়ের জন্য গ্রেট বৃটেনের জন্য যে সমস্ত শাখা কমিটি বা ব্যক্তি বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি থেকে ছাপানো রশিদ বই নিয়েছেন তাদের সবাইকে অবিলম্বে চাঁদার হিসাবসহ সমস্ত বই স্টিয়ারিং কমিটি অফিসে ফেরত দিবার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের প্রস্তুতি ও তৎপূর্বে হিসাবনিকাশ পরিষ্কার করার জন্যই রশিদ বইসমূহ এবং তার হিসাব ফেরত নেওয়া প্রয়োজন বিধায় স্টিয়ারিং কমিটির এক জরুরীসভা উক্ত সিদ্ধান্তগ্রহণ করেছেন।
এ ব্যাপারে স্টিয়ারিং কমিটি আপনাদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা কামনা করছে।
আজিজুল হক ভুঞা
আহ্বায়ক
স্টিয়ারিং কমিটি
১লা অক্টোবর, ১৯৭১।
<৪,৭৮,১৩৭>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৮। বে’সওয়াটার শাখা এ্যাকশান কমিটির ২রা অক্টোবরের সভার প্রস্তাবাবলী | বে’সওয়াটার এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২ অক্টোবর, ১৯৭১। |
গণপ্রজাতন্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অ্যাকশন কমিটির
বে’স ওয়াটার শাখা, লন্ডন ডাব্লিউ১১
গৃহীত সিদ্ধান্তের সারমর্ম
২রা অক্টোবর, ১৯৭১।
অত্র ২ আগস্ট শনিবার ১০৩ লেডবারী রোডে বে’সওয়াটার শাখার কার্য সংসদ পরিষদের সভায় নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
১। রিজিওনাল কমিটির প্রতি এইবে’স ওয়াটার প্রতিষ্ঠানের কোনো আস্থা নাই। বে’স ওয়াটার শাখা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ এবং স্টিয়ারিং কমিটি ব্যতীত অন্য কোন কমিটির অধীনস্থ নয়।
২। কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিকট ভবিষ্যতে যে প্রতিনিধি নেওয়া হইবে তা এই শাখা হইতে সরাসরি নেওয়ার জন্য দাবী করা হইতেছে।
৩। এই প্রতিষ্ঠান রিজিওনাল কমিটির মধ্যস্থতায় কোন প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠাইতে সম্পূর্ণ অসম্মত।
এম, মোরশেদ
২-১০-৭১
সভাপতি, বে’সওয়াটার কমিটি।
<৪,৭৯,১৩৮>
অনুবাদকঃ ইফতি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৭৯। বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে প্রচারিত রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর বিবৃতি | লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রেস বিজ্ঞপ্তি | ৭ অক্টোবর, ১৯৭১। |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
লন্ডন, অক্টো. ৮:- আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মরহুম জনাব এইচ এস সোহরাওয়ার্দীর একমাত্র পুত্র জনাব রাশেদ সোহরাওয়ার্দী ৭ অক্টোবর লন্ডন ১১ – এ এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং আশা করেন যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে পূর্ণ বিজয় ছিনিয়ে আনতে সফল হবে।
জনাব রাশেদ সোহরাওয়ার্দীর বিবৃতির পূর্ণ ভাষ্য নিম্নরূপ:-
“যখনই আমি পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা কমিটির ব্যাপারে জানতে পারি তখন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতি আমার সহমর্মিতা ও সম্পূর্ণ সমর্থনছিলো। রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকার কারণে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিজের বিবৃতির প্রয়োজন বোধ করিনি, কিন্তু যেহেতু এটি স্পষ্ট যে, আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, জনাব হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর স্মৃতি আমার পরিবারের একজন সদস্য তাঁর বিবৃতির মাধ্যমে অলংকৃত করতে চাইছেন, সেহেতু আমার এ ব্যাপারে মুখ খোলা কর্তব্য বলে মনে হয়েছে।
আমি দৃঢ়কন্ঠে নির্দ্বিধায় বলতে চাই যে, আমি বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতা আন্দোলনের সর্বোত্তর সফলতা কামনা করি। বিগত ২৪ বছর যাবত তারা পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক অর্থনৈতিক ভাবে নিগৃহীত ও রাজনৈতিকভাবে অবদমিত হয়ে আসছে এবং এখন তারা পশ্চিম পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিচালিত গণহত্যা ও অন্যান্য ঘৃণ্য অনাচারের বিরুদ্ধে অস্ত্রহাতে তুলে নিতে বাধ্য হয়েছে।
আমার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, বীর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জনে সফল হবে।
নিকট ভবিষ্যতে আমি একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে যেতে চাই, যেখানে সকল বিশ্বাস ও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার মানুষ সুখ-সমৃদ্ধিতে বাস করবে।
এছাড়াও আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সম্ভাষণ জানাই, যার সদস্যবৃন্দ আমার পিতার সহকর্মী এবং অত্যন্ত স্নেহের পাত্র ছিলেন।”
(রাশেদ সোহরাওয়ার্দী)
৭ অক্টোবর, ১৯৭১)
প্রচার/প্রকাশ/সম্প্রচারের জন্য প্রেরিত। হাতে লেখা বিবৃতির ফটোকপি সংযুক্ত।
(মহিউদ্দিন এ চৌধুরী)
সংবাদ ও প্রচার বিভাগ
বাংলাদেশ মিশন।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ মিশনের সংবাদ ও প্রচার বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত, ২৪ পেমব্রিজ গার্ডেনস, লন্ডন
ডব্লিউ ২। ফোন – ২২৯০২৮১.২২৯ ৫৪৩৫।
<৪,৮০,১৩৯>
অনুবাদকঃ মাহীন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮০। কনভেনশন উপলক্ষে সকল আঞ্চলিক এ্যাকশন কমিটিকে অবিলম্বে প্রতিনিধি নির্বাচন ও তা কনভেনশন কমিটিকে জানানোর জন্য আহ্বায়কের বিজ্ঞপ্তি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ৮ অক্টোবর, ১৯৭১ |
সম্পাদক/সভাপতি
অ্যাকশন কমিটি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
যুক্তরাজ্য (মিডল্যান্ড অঞ্চল)
৯৩, স্ট্র্যাটফোর্ড রোড
বারমিংহাম – ১১
৮ অক্টোবর, ১৯৭১
জনাব,
কনভেনশন কমিটি আনন্দের সাথে জানাচ্ছে যে, খসড়া সংবিধানের অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে এবং সকল কমিটি সহযোগে একটি অধিবেশন ডাকবার কার্যপ্রণালী ঘটিত বিষয়সমূহে সম্মতিও অর্জিত হয়েছে।
১ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে অধিবেশন কমিটির মিটিং এর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে, সকল কমিটির যৌথ
পরামর্শের ভিত্তিতে প্রতিটি কমিটির প্রতিনিধি সংখ্যা বণ্টনের জন্য আঞ্চলিক কমিটিগুলোকে তাদের
নিজস্ব অঞ্চলে অতিশীঘ্র মিটিং করবার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। বণ্টন নির্ধারিত হওয়া মাত্রই প্রতিটি
আঞ্চলিক কমিটিকে অবশ্যই তাদের নিজস্ব মিটিং ডাকতে হবে প্রতিনিধি/কাউন্সিলরদেরকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য এবং ২০ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখের আগেই অধিবেশন কমিটির কাছে এক কপি এবং আঞ্চলিক কমিটির কাছে এক কপি নামের তালিকা পাঠাতে হবে।
৪টি অঞ্চলে এবং অন্যান্য ইউনিটে প্রতিনিধি বণ্টন নিচের ক্রমানুযায়ী করা হবেঃ
লন্ডন এবং দক্ষিণ ৯০
মিডল্যান্ড ৭৫
ল্যাঙ্কাশায়ার ২৯
ইয়র্কশায়ার ২০
ছাত্রছাত্রী ৮
মহিলা ৮
গ্লাসকো ৩
ওয়েলস ২
পূর্ব অ্যাংলিয়া ২
বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ৪
মোট ২৩৩
৭ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখটি অধিবেশনের সম্ভাব্য তারিখ হিসেবে ধার্য করা হয়েছে। অনুগ্রহপূর্বক চূড়ান্ত
তারিখের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে। অধিবেশন কমিটিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত খামবন্ধ করে নেবার জন্য
অনুরোধ করা হচ্ছে। কমিটির কোন বিষয়ে আরও জানার থাকলে অনুগ্রহ করে লিখতে অথবা টেলিফোন
করতে বলা হচ্ছে।
আহ্বায়ক
অধিবেশন কমিটি
কপি করুনঃ তথ্যের জন্য সকল অ্যাকশন কমিটি
<৪,৮১,১৪০-১৪১>
অনুবাদকঃ মাহীন বারী
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮১। লন্ডনে ১১ই অক্টোবর অনুষ্ঠিত কনভেনশন প্রশ্নে ভিন্নমতালম্বীদের সভার প্রস্তাবাবলী | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১১ অক্টোবর, ১৯৭১ |
এস এম আইয়ুবের সভাপতিত্বে ১১ই অক্টোবর লন্ডনে কনয়ে হলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সক্রিয় কর্মীদের সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত সমুহঃ
১/ বাংলাদেশ একশন কমিটির আন্দোলনকারীদের এই সভা সুস্থ ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ আন্দোলনের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। একশন কমিটির অধুনা প্রকাশিতব্য জাতীয় কনভেনশনে যে সকল বিষয়ে আলোচনা আহ্বান করা হচ্ছেঃ
ক) যথাযথ মূল্যায়নের সাথে কার্যকরী কমিটির সিদ্ধান্ত উল্লেখ করতে হবে; যদিও অ্যাকশন কমিটির
সংস্থানিক কাঠামো ও কার্যপ্রণালী ঠিক করতে অতিশয় দেরি হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও অ্যাকশন কমিটি
কার্যকরী কমিটিকে প্রস্তাব করছে পূর্ণ সমর্থনের যাতে করে যতটুকু পারা যায় অধিবেশনকে সফল করার
ব্যাপারে।
খ) আঞ্চলিক কমিটিতে পেশ করবার জন্য কনভেনশন কমিটির সিদ্ধান্ত সত্যায়িত করা।
২/ সেন্ট্রাল বডির গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবনার উপরে গুরুগম্ভীর আলোচনা যেকোনো উপায়ে মিটিং এ রাখা হবে । এরই সাথে এর গঠনপ্রণালী ও কার্যকরণ প্রক্রিয়া বিষয়েও আলোচনা করা হবে।
৩/ এই সভা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, অধিবেশনের যেকোনো সিদ্ধান্তে ভোট প্রদানের অধিকার কেবল
তাদেরই আছে যারা যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ কম্যুনিটিতে আছেন এবং যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হয় অর্থ
সংক্রান্ত বিষয়ে নয়ত সরাসরি সংগঠিত হতে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের সংখ্যা এবং গঠন জনসংখ্যার
ঘনত্বকে প্রকাশ করতে পারে আবার নাও পারে। এরই প্রেক্ষিতে আমরা বলব যে, সকল অ্যাকশন কমিটিকে কমপক্ষে দু’জন প্রতিনিধিকে পাঠাবার জন্যে আমন্ত্রণ জানানো যাচ্ছে। এর সাথে যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতা আন্দোলনে সাধারণ মানুষের সংশ্লিষ্টতা বিষয়ক দৃঢ় ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আসবার জন্য বলা হয়েছে।
৪/ সভা মনে করে অ্যাকশন কমিটির কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষকে দু’টি ভাগে ভাগ করা প্রয়োজন। প্রথম ভাগ কেবল অ্যাকশন কমিটির গঠন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো ধারণ করবে। এর জন্যে অধিবেশন কমিটিকে অবশ্যই অতিশীঘ্র গঠন সংক্রান্ত খসড়া অ্যাকশন কমিটিকে প্রদান এবং এ সম্পর্কে তাদের মতামত আহ্বান করতে হবে। আলোচনা অ্যাকশন কমিটির দলিল পত্র ১১ অক্টোবর ১৯৭১
ও সমালোচনার আলোকে গৃহীত মতামত কনভেনশন কমিটি গ্রহণ করবে যা তাদের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুতকরণে সহায়তা করবে। চূড়ান্ত খসড়া অবশ্যই প্রথম অধিবেশনে যোগদানকারী অ্যাকশন কমিটির প্রতিনিধিদের মূল্যায়নের ভিত্তিতে নির্ধারণ হবে।
৫/ প্রস্তাবিত অ্যাকশন কমিটিগুলোর কেন্দ্রীয় সংস্থার গঠন গৃহীত হয়ে গেলে ডকুমেন্ট কালবিলম্ব না করে
প্রণীত হবে এবং সকল অ্যাকশন কমিটিকে গঠনপ্রণালী অনুযায়ী নিজেদেরকে পুনরসজ্জিত করবার জন্য বলা হবে। পুনর্গঠিত অ্যাকশন কমিটিগুলো তাদের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানাবে, যাতে করে জাতীয় অধিবেশন পর্যায়ে গঠনপ্রণালীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়া যায়। এটি অ্যাকশন কমিটিগুলোর জন্য একটি কার্যকরী অনুষ্ঠান গ্রহণ করবে। এরই সাথে খ) অধিবেশন কর্তৃক গৃহীত অনুষ্ঠান ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদে জাতীয় অধিবেশনে কর্মচারী ও পরিচালনা পর্ষদ গঠন করা হবে।
৬/ তদুপরি এই সভা মনে করে যে, বর্তমান অধিবেশন কমিটির নিকট জাতীয় অধিবেশন আয়োজনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাবার মতন যথেষ্ট উপযুক্ত মানব সম্পদ নেই। এই প্রেক্ষিতে অধিবেশন কমিটিকে ছাত্র,
ডাক্তার এবং মহিলাদের সমন্বয়ে গঠিত অ্যাকশন কমিটির সাথে সহযোগী হয়ে বিস্তার লাভ করতে বলা হচ্ছে। প্রয়োজনে কনভেনশন কমিটিকে বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য উপ কমিটি গঠনের জন্যও বলা হচ্ছে।
৭/ এগুলোর পাশাপাশি সভা অ্যাকশন কমিটিগুলোর জাতীয় অধিবেশনের জন্য দশ সদস্য বিশিষ্ট আয়োজক কমিটি নিয়োগ দিয়েছে এবং সকল আঞ্চলিক কমিটিকে একই ধরনের উদ্যোগ কার্যকরী কমিটিকে প্রেরণ করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। যাতে করে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ আন্দোলন একটি সুস্থ ও গণতান্ত্রিক রূপ পায়, এজন্য আয়োজক কমিটির প্রতি সমর্থন ও পরিচর্যার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
অ্যাকশন কমিটিগুলোর জাতীয় অধিবেশন আয়োজনের নিমিত্তে আয়োজক কমিটির পক্ষে এস এম আইয়ুব কর্তৃক ইস্যুকৃত, ৩৩ ডাগমার রোড, লন্ডন এন ২২ (০১-৮৮৯—–৪৪৭৪)
<৪,৮২,১৪২-১৪৪>
অনুবাদকঃ সমীরণ কুমার বর্মন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮২। লন্ডনে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিক কমিটি গঠন সম্পর্কে প্রচারপত্র | লন্ডন আওয়ামী লীগের ‘প্রচারপত্র-১’ |
অক্টোবর,১৯৭১
|
‘প্রচারপত্র–১’
আওয়ামী লীগ লন্ডন
পূর্বের আকাশে সূর্য উঠেছে
আলোকে আলোকময়
জয় জয় জয় জয় বাংলার জয়।
পাকিস্তানের ইতিহাস হলো মোনাকেফী, বেঈমানী শাসক ও শোষক চক্রের ইতিহাস। জিন্নার সাধের পাকিস্তান পূর্ব বাংলার মানুষদের জন্য ছিল এক বিরাট ফাঁকি আর ফাঁকিস্তান। পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশে রূপান্তরিত হয়েছে, আর এর সম্পদ পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার ও স্তূপীকৃত হয়েছে। শাসন ও সামরিক বিভাগে বাঙালিদের স্থান নেই। জাতীয় সম্পদ হতে বাঙালিরা বঞ্চিত হয়েছে সদাই। সমগ্র পাকিস্তানের মোট রাজস্বের শতকরা ৬২ ভাগ দেশরক্ষা করতে ব্যাহত হয়, শতকরা ৩২ ভাগ খরচ হয় ইসলামাবাদে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনায়। মোট রাজস্বের শতকরা ৯৪ ভাগ বিভিন্ন নামে পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হয়। মাত্র ৬ ভাগ পূর্ব বাংলার ভাগ্য জোটে। যদিও পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের আয়ের শতকরা ৬৪ ভাগ জোগায়। তাই পূর্ব বাংলার মানুষের পরিশ্রমের বুনিয়াদের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের ইমারত গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের মানুষকে পায়ের তলায় দাবিয়ে রাখার জন্য পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী গত ২৩ বছর ধরে বাঙালি জনগণের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ইসলাম বিরোধী জিগির-বাহানা প্রয়োগ করে আসছে। অতএব বাংলার মানুষ রাজনৈতিক ও স্বাধীকার নিয়ে বাঁচার দাবী উঠালো। শোষিত, নিপীড়িত ও বঞ্চিত পূর্ব বাংলার জনগণের মুক্তির জন্য অগ্রসর হলো আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ গত ২০ বছর ধরে বাংলার দাবী নিয়ে চরম লড়াই করে আসছে শাসক ও শোষক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পূর্ব বাংলার মানুষেরা পাকিস্তানে জনসংখ্যার অনুপাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। গত ডিসেম্বরে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন হলো। মহান নেতা শেখ মুজিব সমগ্র পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হলেন। পাঞ্জাবি শাসক, শোষকচক্র ও নররক্তপিপাসু পশুরাজ ইয়াহিয়া বাংলার দাবীকে বানচাল করে দেবার জন্য “ডাণ্ডা দিয়া ঠাণ্ডা করার খেয়ালে” ২৫শে মার্চ রাত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর সৈন্য বাহিনী বাংলার মানুষের উপর লেলিয়ে দিলেন। বাংলার প্রিয় জননেতা শেখ মুজিবকে বন্দী করলেন। এসব নৃশংস ও নারকীয় কার্যকলাপের কাহিনী আপনাদের সবার জানা। বাংলাদেশকে কলোনিতে পরিণত করে রাখার জন্য অসূর ইয়াহিয়ার সৈন্যরা ১২ লক্ষ নিরস্ত্র নাগরিককে হত্যা করেছে। দলে দলে তরুণীদের গ্রেফতার করেছে। বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে আটক তরুণীদের একেবারে উলংগ অবস্থায় রেখে পাক পশুবাহিনী এক নারকীয় আনন্দ উপভগ করছে। শত শত তরুণীকে পশ্চিম পাকিস্তানে চালান দেওয়া হয়েছে। পূর্ব বাংলার আজ বড়ই দুর্দিন। অসহায় ছেলেমেয়ে ও লাঞ্ছিত নারীত্বের ক্রন্দনে বাংলার আকাশ বাতাস আজ ভারী। গরীব মানুষের লাখো লাখো ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে। তাই অসূর ইয়াহিয়ার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে। বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে। হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক ফৌজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ ‘মুক্তি বাহিনী’ গড়ে তুলেছে। সার্বভৌম ও প্রজাতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছে, বাংলার মাটিতে ‘মুজিবনগরে’। বাংলাদেশ এখন পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত। আজ এই জাতীয় সংগ্রামে বাংলাদেশের সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পাক শত্রুকে মরণ আঘাত হানতে হবে। ইনশা-আল্লাহ বাংলার জয় অনিবার্য।
___________________
জনাব সামাদের সভাপতিত্বে
লন্ডনে আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও ভ্রাম্যমাণ দূত এবং সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব আবদুস সামাদ এম_এন_এ ইংল্যান্ড সফরে এসেছিলেন। তিনি বার্মিংহাম, ব্রাডফোর্ড ও ম্যাঞ্চেস্টার প্রভৃতি শহরগুলিতে আওয়ামী লীগ কর্মী সম্মেলন ও বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বক্তৃতা করেন। গত ১৩ই অক্টোবর আওয়ামী লীগ লন্ডন শাখার এক কর্মী সম্মেলন হয়। এই কর্মী সম্মেলনে লন্ডন আওয়ামীলীগকে শক্তিশালী ও জোরদার করে গড়ে তোলার জন্য জনাব আবদুস সামাদ বিশেষ জোর দেন এবং সকলের পরামর্শ অনুযায়ী জনাব আমাদের সভাপতিত্বে নিম্নলিখিত কর্মীবৃন্দকে নিয়ে আওয়ামী লীগ লন্ডনের অস্থায়ী কমিটি গঠিত হয়।
সভাপতি ঃ জনাব আলহাজ আবদুল মান্নান
১ম সহ সভাপতি ঃ জনাব মিনহাজ উদ্দিন আহমদ
২য় সহ সভাপতি ঃ জনাব ইসমাইল মিয়া
৩য় সহ সভাপতি ঃ জনাব মোহাম্মদ ইসহাক
সাধারণ সম্পাদক ঃ জনাব মোহাম্মদ আবুল বশর
সংগঠন সম্পাদক ঃ জনাব সুলতান মোহম্মদ শরীফ
জন-সংযোগ সম্পাদক ঃ জনাব জিল্লুর হক
সামাজিক সম্পাদক ঃ জনাব মিম্বর আলী
শ্রম সম্পাদক ঃ জনাব শাহ সিরাজুল হক
বহিরাগত সম্পর্কীয় সম্পাদক ঃ জনাব আব্দুর রকিব
মহিলা সম্পাদিকা ঃ বেগম হেলেন তালুকদার
দফতর সম্পাদক ঃ জনাব এম,এ,হাকিম
কোষাধক্ষ্য ঃ জনাব মজির উদ্দিন
সদস্যবৃন্দ ঃ জনাব রমজান আলী, শফিকুর রহমান,এন ইউ আহমদ, নুরুল ইসলাম, গাউস খান, বি এইচ তালুকদার, আবদুল হামিদ, শফিক মিয়া, মোহাম্মদ কলমদার আলী, শরিয়ত উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ একরাম হোসেন, নুরুল হক, তোয়াহিদ আলী, শামসুর রহমান, মশ্রফ আলী, মোহাম্মদ অমর, রেদওয়ান মিয়া, এ কে এস ইসলাম, তৈয়বুর রহমান, মহিন উদ্দিন, আবদুল আজিজ ও রহিম উদ্দিন।
অস্থায়ী আওয়ামী লীগ লন্ডন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ১৭ই অক্টোবর। এই অধিবেশনে বৃহত্তম লন্ডন শহরকে সাংগাঠনিক কার্যকলাপের ও গণ-সংযোগের সুবিধার জন্য লন্ডনকে ৯টি আঞ্চলিক ভাগে বিভক্ত করা হয় এবং এর এক এক ভাগকে একটি সাব-ডিভিশন আওয়ামী লীগের মর্যাদা দেওয়া হয়। সাব ডিভিশনগুলি নিম্নলিখিত ডিস্ট্রিক্ট এলাকা নিয়ে গঠিত হবেঃ-
১। এন+এন+ডবলিউ
২। ডাবলিউ+ ডাবলিউ-সি
৩। ই-১
৪। ই-২+৮+৫
৫। ই-৯+১৪+১৬+৬+১৩+১৫+৭+১২ ৩ হতে ৬ পূর্ব লন্ডন
৬। ই- ১০+১১+১৭১৮+৪+ইসেক্স
৭। দক্ষিণ টেমস এলাকা
৮। উত্তর টেমস এলাকা
৯। নর্থ+এন-ডাবলিউ
লন্ডনের বাঙালি ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ
আপনারা রাজনৈতিক বিভিন্ন ‘ইজম’ পন্থীদের প্রভাব থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে শক্তিশালী করে তুলুন আর একটি মাত্র আওয়াজ তুলুনঃ
প্রিয় নেতা শেখ মুজিব আমাদেরকে ডাক দিয়েছেন গোলামীর জিঞ্জির ছিঁড়ে ফেলতে। আসুন, আমরা বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য সর্বস্ব পণ করি।
______________________________________________________
সাধারণ সম্পাদক জনাব মোহাম্মদ আবুল বশর কর্তৃক ২৭৫ উলড ব্রোমটন রোড, লন্ডন, দঃ পঃ ৫ হইতে প্রকাশিত ও প্রচারিত। দূরালাপনীঃ ০১-৩৭৩ ৭৫৬১, ০১-৬০৩ ৭৪৬১
<৪,৮৩,১৪৫-১৪৭>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৩।বাংলাদেশ প্রশ্নে বৃটিশ লেবার পার্টির সিদ্ধান্ত জানিয়ে মিঃ আয়ান মিকার্ডো এম,পি-র চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৩ অক্টোবর,১৯৭১ |
প্যালেস চেম্বারস
ব্রিজ স্ট্রিট, লন্ডন এসডব্লিউ১এ ২ জেএক্স
টেলিফোন: ০১.৮৩৯২৭২১
জনাব এম এ এইচ মিয়া বিকম
৩৭’ বিসকট হাউজ
ডিভাস স্ট্রিট
লন্ডন ই৩ ৩এল
১৩ অক্টোবর ১৯৭১
জনাব মিয়া,
আমি আপনার ৩ তারিখের চিঠির জন্য আমার লেবার পার্টি সম্মেলনের বিবরণীতে আপনাকে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পেয়েছি। আমি নিশ্চিত যে জাতীয় নির্বাহী কমিটি কর্তৃক যে বিশ্লেষণটি সম্মেলনে উপস্থাপিত হয়েছে যা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণযোগ্য এবং সম্মেলন ও বাইরের সন্ধ্যার বৈঠকগুলোর উভয়ের বক্তৃতা পড়ে থাকবেন। লেবার পার্টিতে আপনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সমর্থন রয়েছে।
একান্তে,
এসডি/
জনাব মিকারডো কর্তৃক আদিষ্ট এবং
তাঁর অনুপস্থিতি তে সই করা
আয়ান মিকারডো, এমপির পক্ষ থেকে
……………………………..
খবর প্রকাশিত
লেবার পার্টির তথ্য বিভাগ থেকে প্রকাশিত
ট্রান্সপোর্ট হাউজ – লন্ডন এসডব্লিউ ১.০১–৮৩৪–৯৪৩৪
তথ্য পরিচালক: পার্সি ক্লার্ক
পিএস ৮৩/৭১
আশু প্রকাশের জন্য
পাকিস্তান
লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক কমিটির আজকের বৈঠকে পাকিস্তানের পরিস্থিতি আলোচিত হয়েছে এবং নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়েছে।
১। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান মানবীয় সংকট নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন এন.ই.সি. ধারণা করে যে, পাকিস্তানের মধ্যকার বর্তমান সংঘর্ষের ঝুঁকি বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ, শুধুমাত্র একটি সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমেই পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধার করা ও শান্তির প্রতি হুমকির শেষ ঘটানো যেতে পারে এবং জরুরি অবস্থা ও শরণার্থীদের বর্তমান ভোগান্তির পরিমাণ এবং আসন্ন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বৃটেনের কাছে একটি মুক্তহস্ত প্রতিক্রিয়া দাবি করে। নিম্নলিখিত আশু পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এইচ. এম. সরকারকে সুপারিশ করা যাচ্ছে :
(ক) পাকিস্তানের শান্তির হুমকিস্বরূপ এবং অন্যদের নিরাপত্তা বিপন্নকারী সংঘর্ষ সিকিউরিটি কাউন্সিলে জরুরী প্রশ্ন হিসেবে বিবেচনায় আনতে হবে।
(খ) উ থান্টের রিলিফ ফান্ডে বৃটিশ অবদান পর্যাপ্তরূপে বাড়ানো এবং শরনার্থীগত সমস্যায় ভারতকে অর্থনৈতিকভাবে বাড়তি সাহায্যের জন্য আশু দ্বিপার্শিক প্রস্তাব দিতে হবে।
এন.ই.সি. আরো ধারণা করে যে, এই অবস্থায় এটি ঠিক যে বৃটিশ জনগণের জানা উচিত এইচ.এম. সরকার পাকিস্তান এইড কনসোরটিয়াম এর আসন্ন বৈঠকে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে, যা পাকিস্তানের মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটাবস্থা নিয়ে আলোচনা করবে।
এন.ই.সি. ধারণা করে যে, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধসে গেছে সেখানে উন্নয়নের জন্য সাহায্য অর্থবহ হতে পারে না। অতএব, কনসোরটিয়াম এর আসন্ন মিটিংএ সুপারিশ করা হচ্ছে যে, যতদিন না পূর্ব পাকিস্তানে একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসা অর্জন করা হয়, ততদিন ত্রাণ এবং ব্যধি ও সংকটাবস্থা নিবারণের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের জন্য সাহায্য সীমিত হওয়া উচিত কারণ যাদের সাহায্য দরকার তারা আর পাকিস্তানে নেই।
২। ইন্ডিয়া ও পাকিস্তানে পর্যাপ্ত ত্রাণ দিতে না পারায় এবং অন্যান্য সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের সময় অনুরূপ প্রযুক্তিগত সমস্যায় কমিটি এইচ এম সরকারকে একটি আন্তর্জাতিক রিলিফ কমিশন প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দেয়ার জন্য সুপারিশ করছে। এই কমিশন দ্রুত গঠন করা উচিত এবং ত্রাণ, পরিবহন ও বৃহৎ সংস্থা দক্ষতার সহিত সুবিন্যাশ করা উচিত। এমতাবস্থায় কমিশন পাকিস্তানে চলমান বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে এবং বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী জাতিসংঙ্ঘ কর্তৃক কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত সে বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করবে। প্রাকৃতিক এবং মানুষসৃষ্ট দুর্যোগে জীবন বাঁচাতে কমিশন শীঘ্রই ত্রাণ সরবরাহের স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, জরুরী ওষুধ সরবরাহ করবে এবং প্রয়োজনে বর্তমান অবস্থার নিয়ন্ত্রণ নেবে যতক্ষণ দীর্ঘ মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়ন না করা যাচ্ছে। এই কমিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাবে এইচ.এম. সরকারের উচিত সম্পূর্ণ বৃটিশ অংশগ্রহণ এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা।
জুন ৮, ১৯৭১
——————————–
আইডি/১৯৭০–৭১/৯৩
পাকিস্তানের বিষয়ে জাতীয় নির্বাহী কমিটির বিবৃতি
আলোচনাসভা বাংলায় সংঘটিত হওয়া ভয়ানক দুঃখজনক ঘটনায় ভীতি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে। তারা মনে করে যে, পাকিস্তানকে পূর্ব বাংলার মানুষের সহ্য করা ভয়ানক দুর্ভোগের দায়িত্ব নিতে হবে এবং আলোচনাসভা পাকিস্তান সরকারকে জনগণ ও পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত নেতার বিরুদ্ধে মিলিটারি বাহিনীর অহেতুক ব্যবহারের নিন্দা জানায়।
শরণার্থী
বিশাল শরণার্থী সমস্যায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের অপর্যাপ্ত প্রতিক্রিয়ায় আলোচনাসভা মারাত্মক উদ্বিগ্ন। ভারতীয় সরকার এই সমস্যার কিছু অংশের দায়িত্ব নিয়েছে এবং শরণার্থীদের সহযোগিতার সকল দায়িত্ব নেয়ার জন্য আলোচনাসভা একটি জাতিসংঘ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য সুপারিশ করেছে। আলোচনাসভা এরকম একটি সংস্থাকে সম্পূর্ণ সহযোগিতার নিশ্চয়তা দেয়ার জন্য এবং ইতোমধ্যে ভারত সরকারকে ত্রাণের বর্তমান জরুরি সমস্যার সাথে মানিয়ে নিতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য বৃটিশ সরকারকে সুপারিশ করে।
সহযোগিতা
আশানুরূপ রাজনৈতিক সমাধান ছাড়া পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার অর্থ দাঁড়াবে একটি নিন্দিত মিলিটারি শাসনব্যাবস্থায় ভর্তুকি প্রদান। অতএব, আলোচনাসভা সকল দেশ ও বিশেষ করে পাকিস্তান এইড কনসোরটিয়াম এর সদস্যদের পূর্ব বাংলার জনগণের সন্তোষজনক রাজনৈতিক সমাধান না পাওয়া পর্যন্ত সকল ধরণের জরুরি মানবিক সহযোগিতা প্রতিরোধ করতে সুপারিশ করছে।
রাজনৈতিক
সমাধান
আলোচনাসভা মনে করে যে একটি রাজনৈতিক সমাধানে তখনই পৌঁছানো যাবে যখন:
১।পূর্ব বাংলায় সামরিক অত্যাচার বন্ধ হবে।
২। পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক নেতাদের বিশেষ করে শেখ মুজিবুর রহমান কে কারামুক্ত করা হবে।
পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক ভোটে নির্বাচিত এবং জনগণ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য নেতাদের সাথে যেকোন রাজনৈতিক সমাধানের বন্দোবস্ত করা উচিত।
শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ
আলোচনাসভা ধারণা করে যে, ভারতীয় উপমহাদেশের বর্তমান অবস্থা বিশ্ব শান্তির প্রতি হুমকিস্বরূপ। অতএব, পূর্ব বাংলার মানুষের ইচ্ছানুযায়ী রাজনৈতিক সমধানের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের সরাসরি অংশগ্রহণ করা উচিত। আলোচনাসভা বিষয়টিকে জাতিসংঘের চলমান বৈঠকে উত্থাপন করার জন্য বৃটিশ সরকারকে সুপারিশ করেছে।
_______________________
<৪,৮৪,১৪৮-১৪৯>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৪। কনভেনশন সম্পর্কে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বক্তব্য সম্বলিত চিঠি | ক্যাম্পেন কমিটির দলিলপত্র | ১৪ অক্টোবর,১৯৭১ |
এস.এম. আইয়ুব
০১-৮৮৯ ৪৪৭৪
৩৩, দাজিরিয়ার রোড লন্ডন এন ২২ ১৪ অক্টোবর ১৯৭১
প্রিয় বন্ধু,
আমি আমার সভাপতিত্বে ১১ অক্টোবর সোমবার কনওয়ে হল, লন্ডন ডব্লিউ সি ২ এ সংঘটিত বৈঠকের কার্যবিবরণী আলোচনা করছি। লন্ডনের ভিতর ও বাহিরের ১৪ টি সক্রিয় দল থেকে ৪০ জনেরও বেশি বাঙালি কর্মী বৈঠকে অংশগ্রহণ করে এবং সর্বসম্মতিক্রমে আলোচিত সমাধান গ্রহণ করে।
আপনি যদি নথিপত্রে ব্যক্ত করা অধিকাংশ সমাধানের সাথে একমত হয়ে থাকেন, তাহলে আমরা আশা করব যে, আপনার কমিটি নথিতে প্রদর্শিত সমস্যাগুলোকে গুরুত্বসহকারে নেবে এবং সরাসরি ১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ইসি৩ ঠিকানায় প্রতিনিধি সভার কমিটিকে উক্ত আলোচ্য বিষয়গুলোর বিপরীতে আপনার কমিটির মতামতসহ এ বিষয়ে চিঠি প্রেরণ করবে।
যুক্তরাজ্যে গণতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক জীবনযাপনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের কর্মকান্ড নিশ্চিতের মাধ্যমে অ্যাকশন কমিটির জাতীয় অধিবেশনের জন্য প্রচারণা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে যোগদান করা সম্ভব হলে আমরা খুশি হব
আমরা আশা করি, আপনি আমাদের সাথে একমত হবেন যে, সময়ের সাথে সাথে জনমনে ভীতি বেড়েই চলেছে। এই প্রক্রিয়া রোধ করা না গেলে আমাদের যুক্তরাজ্য গমন অপোষনীয় ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
আপনার দ্রুত প্রত্যুত্তর সহজতর করতে আমরা একটি ফর্ম পাঠাচ্ছি। বিষয়টির প্রতি আপনার জরুরি মনোযোগ প্রত্যাশা করি।
যেকোন ধরনের বিস্তারিত তথ্য জানতে আমার সাথে যোগাযোগ করতে সংকোচবোধ করবেন না।
শুভেচ্ছান্তে।
আপনার একান্ত,
এস.এম. আইয়ুব
প্রচারণা কমিটির পক্ষ থেকে
ফর্ম
সেক্রেটারি
কনভেনশন কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ই সি ৩
আমাদের কমিটি ১১ অক্টোবর লন্ডনের বৈঠকের সাথে সম্পূর্ণ একমত। এটি আমাদেরও অভিমত যে, অ্যাকশন কমিটিগুলোর প্রস্তাবিত কেন্দ্রীয় দলের সংবিধান কমিটিগুলোর একটি বিশেষভাবে মিলিত সম্মেলনে রচনা করা উচিত। শুধুমাত্র এমন একটি সংবিধান গৃহীত হওয়ার পরই কর্মকর্তা, পরিচালনা পর্ষদ প্রমুখ নির্বাচন করার জন্য জাতীয় অধিবেশন হওয়া উচিত।
আপনাম নাম————————–টেলিঃ নং————————নাম এবং অ্যাকশন কমিটির বিশেষ বিবরণ—————————————————————————————————————————————————————————————————————————-
_________________________________________
<৪,৮৫,১৫০>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৫। কনভেনশনের জন্য নির্ধারিত দুজন প্রতিনিধির নামসহ কিডারমিনষ্টার শাখার সভাপতির চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৫ অক্টোবর,১৯৭১ |
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি
৭২ কোভেন্ট্রি স্ট্রিট, কিডার মিনস্টার
টেলি নং–৬২০১১
তারিখ: ১৫ অক্টোবর,৭১
সেক্রেটারি
অধিবেশন কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রিট,লন্ডন ই সি ৩
জনাব,
আমি কিডার মিনস্টার ওরস এর বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত সমাধানের একটি কপিসহ প্রযোজনীয় সকল কাপজপত্র পাঠিয়ে দিচ্ছি।
১৫ অক্টোবর, ৭১ এ বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি কিডার মিনস্টার এর একটি বৈঠক হয়েছে। এই বৈঠকের জরুরি বক্তব্য ছিল প্রতিনিধিদের লন্ডনের অধিবেশন কমিটিতে পাঠিয়ে দেওয়া যার কোন ব্যতিক্রম নেই।
সবাইকে যথাক্রমে ৮ অক্টোবর, ৭১ এবং ১৪ অক্টোবর, ৭১ এ অধিবেশন কমিটির চিঠি দ্বারা বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
এই বৈঠক জনাব এস. এম. আইয়ুব এর সভাপতিত্বে লন্ডন বৈঠকে গৃহীত সমসধানের প্রশংসা করেছে।
যেহেতু লন্ডনের অধিবেশন কমিটি প্রত্যেকটি সমাধান গ্রহণ করেছে, সেহেতু আমি দু’জন প্রতিনিধির নাম প্রেরণ করছি, যারা লন্ডনের অধিবেশন কমিটির কাছে কিডার মিনস্টার শাখার বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটিকে সম্পূর্নরূপে উপস্থাপন করে।
উপরন্তু, আমি আরও আপনার নজরে আনতে চাই যে, এই কমিটি মধ্যভূমি প্রদেশের মধ্য দিয়ে লন্ডনের অধিবেশন কমিটির কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য দাখিল করতে ইচ্ছুক নয়। প্রতিনিধিদের সাথে এলাকার অমনোভাবের বিষয়বস্তু সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে।
আশা করি, কনভেনশনাল কমিটিতে প্রতিনিধিদের নাম অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ সফল হবে।
ধন্যবাদ।
প্রতিনিধিদের নাম ঠিকানা
১। সৈয়দ আলবাব হোসেন ৭২ কনভেন্ট্রি স্ট্রিট, কিডার মিনস্টার, ওরকস
টেলি নং: ৬২০১১
২। সৈয়দ আফরুজ হোসেন ২৮ গিলগাল,স্টুরপোর্ট অন সেভার্ন ওরকস
বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি কিডার মিন্সটার এর সভাপতি
(সৈয়দ মুজতবা হাসান)
___________________________________________________
<৪,৮৬,১৫১>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৬। কনভেনশন সম্পর্কে ভিন্ন মতাম্বলীদের পক্ষে আহ্ববায়কের প্রতি চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১ |
এস. এম. আইয়ুব
৩৩, ড্যাজমার রোড
লন্ডন, এন. ২২
১৫ অক্টোবর, ১৯৭১
আহ্বায়ক,
অধিবেশন কমিটি,
১১, গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ইসি৩
প্রিয় শুভাকাঙ্ক্ষী,
আমি ১১ই অক্টোবর আমার সভাপতিত্বে কনওয়ে হলের সমাবেশে গৃহীত সিদ্ধান্তের একটি কপি সংযুক্ত করছি।
মিটিংটি দুই দিনের নোটিশে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তথাপি এতে ১২ টি স্থানীয় কমিটির বহু সংখ্যক কর্মী অংশগ্রহণ করেছিলেন, যথা:
১. এনফিল্ড
২. কলচেস্টার
৩. আক্সব্রীজ
৪. বেলহাম
৫. ওয়েস্টমিনস্টার
৬. বেসওয়াটার
৭. হেনডন
৮. নর্থ ওয়েস্ট লন্ডন
৯. বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন
১০. ইসলিংটন
১১. ত্রাণ কমিটি (ইস্ট লন্ডন)
১২. ছাত্রসংগ্রাম কমিটি।
অতএব, এটি নিশ্চিতভাবেই অনুমান করা যায় যে, স্থানীয় কার্যকমিটির মধ্যে সভায় গৃহীত সুপারিশের জোরালো সমর্থন রয়েছে।
অতএব আমরা আশা করি যে, আপনি এই উপস্থাপনায় আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেবেন এবং অতি শীঘ্রই আপনার উত্তর জানাবেন, যাতে করে আমরা প্রস্তাবিত সম্মেলনে, কার্যকর অংশগ্রহণের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারি।
বিনীত
এসডি/-
এস এম আইয়ূব
<৪,৮৭,১৫২-১৫৩>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৭। কনভেনশন সম্পর্কে ভিন্ন বক্তব্য জানিয়ে নিউটন শাখা এ্যাকশন কমিটির সম্পাদকের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৭ অক্টোবর, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের
জনগণের অ্যাকশন কমিটি
লিউটন (বেডস) ইউনিট
৫, কেনিলওরথ রোড
লিউটন
বেডস
১৭ অক্টোবর, ১৯৭১
ফোন: লিউটন ২৬৯৯৪
আহ্বায়ক,
অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা সংসদ
ব্রিটেনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে,
১১, গোরিং স্ট্রীট
লন্ডন, ই. সি. ৩।
জনাব,
আমরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছি যে, আমাদের ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখের চিঠির উত্তর আপনি দেন নি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুক্তরাজ্যে আমাদের আন্দোলনের ধারাবাহিতা বজায় রাখার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এমনকি চিঠিটি স্বীকৃতও হয় নি এবং যার ফলে আমাদের কমিটি, যেটি দৃঢভাবে সংগঠিত হয়েছে, তা এখন ধ্বংসের পথে এবং যদি এই ধরনের কিছু ঘটে, আপনি এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী হবেন।
ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি যে, একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার জন্য একটি জাতীয় সম্মেলন খুব শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি প্রস্তাবিত কমিটিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে যদি না, আপনি একটি সভা আহ্বান করেন যা আমরা ইতিমধ্য প্রস্তাব করেছি, আঞ্চলিক কমিটির প্রধানদের সাথে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য যা কিনা বিভিন্ন আঞ্চলিক উপ-সংসদের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আসতে পারে এবং সব উপকমিটিকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে, যাতে করে শান্তিপূর্ণভভাবে ও একটি গণতান্ত্রিক উপায়ে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা সম্ভব হতে পারে।
আমরা বুঝতে পেরেছি যে কিছু কমিটি অবগত নয় সংবিধান কি হবে এবং কিভাবে কমিটির প্রতিনিধিত্ব করা হবে। খসড়া সংবিধানের কপি সব কমিটির মধ্যে বন্টন করা হবে তাদের প্রস্তুত করতে অনুচ্ছেদ, ধারা ও অন্যান্য বিষয়ে বিতর্ক করার জন্য।
আমরা আশা করি যে, যুক্তরাজ্যে বাঙালি ঐক্যের নিমিত্তে আপনি এই চিঠিতে গুরুত্ব আরোপ করবেন।
জয় বাংলা
নিবেদক
sd/-
(মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন)
সম্পাদক
প্রতিলিপি: বিচারপতি জনাব এ. এস. চৌধুরী
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাই কমিশনার
২৪, পেমব্রিজ গার্ডেনস
লন্ডন ডব্লিউ ২
তথ্য এবং উহার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য।
<৪,৮৮,১৫৪>
অনুবাদকঃ নিগার সুলতানা
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৮। বাংলাদেশ আন্দোলন সমর্থনকারী জনৈক বৃটিশ নাগরিকের প্রতি এ্যাকশন কমিটির আহ্বায়কের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ |
অক্টোবর ১৮, ১৯৭১
জনাব ব্রায়ান এম. কে
২১, শফিল্ড ড্রাইভ
ড্যারফিল্ড
বার্ন্সলে
ইয়র্ক।
জনাব কে,
আমি খুবই আনন্দিত যে, আমাদের ব্রিটেনের শ্রম পার্টি সম্মেলনের সভায় আপনি অংশগ্রহণ করছেন। আমরা খুবই উৎসাহিত হয়েছি আমাদের প্রয়োজনে আপনি সাহায্য করতে সম্মত হয়েছেন বলে।
বাংলাদেশে এখনও এই দেশের তরুণদের যথেষ্ট মনোযোগ পায়নি। এই দেশের তরুণ সমাজতাত্ত্বিকদের নিকট আমাদের প্রয়োজন প্রচার ও ব্যাখ্যার করে কিভাবে আমরা একটি জাতীয় প্রচারণায় যেতে পারি তার সাহায্য ও পরামর্শ দিয়ে আপনি আমাদেরকে অনেক সাহায্য করতে পারেন।
আপনি আমাদেরকে আপনার এলাকায় একটি সভার কোন সম্ভাবনা যদি থাকে, যেখানে আমি আমার একজন কর্মীকে প্রেরণ করতে পারি হয় একটি সমাবেশে ভাষণ দেয়ার জন্য নয়ত আপনার এলাকার একটি তরুণ সমাজতাত্ত্বিক দলের সাথে কথা বলার জন্য, সে বিষয়ে ধারণা দিলে আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ হব। আপনার মতামত জানার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। এদিকে, আমরা আপনাকে বাংলাদেশের পাশাপাশি এখানকার উন্নয়ন সম্পর্কেও অবগত করতে থাকব।
নিবেদক
এম. এ. এইচ. ভূঁইয়া
<৪,৮৯,১৫৫,১৫৬>
অনুবাদকঃ আদিতি আদৃতা সৃষ্টি
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৮৯। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারের প্রতি স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
জয় বাংলা
১১গোরিং স্ট্রিট লন্ডন ই.সি.৩
টেলিফোন: ০১-২৮৩ ৫৫২৬/ ৩৬২৩
১৮ অক্টোবর, ১৯৭১
জনাব হোসেন আলী
হাই কমিশনার
ভারতস্থঃ হাই কমিশনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে
জনাব আলী,
জনাব আবু ইউসুফ খান যিনি এই চিঠিটি বহন করছেন তিনি সম্প্রতি পাকিস্তান এয়ার ফোর্স (সৌদি আরবের কোথাও সংস্থিত) এর একজন ইঞ্জিনিয়ার, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে অগ্রসর হচ্ছেন। জনাব খানের ভাই মেজর তাহের, যিনি আমাদের বাহিনীর অন্যতম সেক্টর কমান্ডার, জনাব খানকে একটি চিঠি লিখে অনুরোধ করেছেন যে, লন্ডন থেকে কিছু অস্ত্রোপচার যন্ত্র সংগ্রহ করে সেগুলো নিয়ে যেন বাংলাদেশে (মেঘালয়ের কোথাও মূল হাসপাতাল) আসে। জনাব খান চিঠি পাওয়া মাত্রই আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। আপনাদের নজরে আনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি প্রাপ্তির মাধ্যমে যন্ত্রগুলো সংশ্লিষ্ট পরিচালনা কমিটির দ্বারা সরবরাহ করাকেই আমরা সঠিক হবে বলে মনে করছি। যেহেতু খুব স্বল্প পরিমাণ অর্থ খরচ হবে, আমরা মনে করি যে, আপনি আনন্দের সাথে আমাদের সিদ্ধান্ত অনুমোদন এবং আমাদের খুব দ্রুত উত্তর পাঠাবেন।
এ প্রসঙ্গে সম্ভবত আপনার চিঠি নং বি – ৫/৪/৭১, ১৩ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখে প্রচারিত চিঠিটি পড়ে দেখুন, যেখানে বলা আছে যে, গ্রেট ব্রিটেনের সব অ্যাকশন কমিটি এই বিশেষপরিচালনা কমিটির অধিভুক্ত। আপনার অন্যান্য প্রচারণার মধ্যে থেকেও এই বিশেষ চিঠিটি ব্রিটেনে বাংলা সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি মহান উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে আপনার সরাসরি আবেদন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, যা গুরুতর প্রভাব সৃষ্টি করেছে। সরকার আদেশ দিয়েছে তাদের পরিচালনা কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নিকট অর্থ সংগ্রহ করে এবং ব্যাংকে এটি সঞ্চিত রাখতে, যাতে ঠিক সময়ে সরকার তা ব্যবহার করতে পারে। তখন থেকেই আমরা টাকা সংগ্রহ এবং ব্যাংকের মাধ্যমে তা গচ্ছিত রাখছি। আপনাদের এই কর্ম আমাদের বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। অনেক রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সরকার ও সশস্ত্র বাহিনীর অনেকেই অধৈর্য হয়ে অনেক অ্যাকশন কমিটি, বাঙালি নেতৃত্ব, বিভিন্ন সংস্থার নিকট চিঠি লিখে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ও যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে আমাদের ছেলেদের করুণ পরিস্থিতি ও অপরিমেয় দুঃখকষ্টের অবস্থা স্পষ্টভাবে চিত্রায়িত করেছে এবং আবেদন করছে তাদের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। যেহেতু সমগ্র বাংলার জনগণ তাদের জন্য ‘বাংলাদেশ ফান্ড’ এ চাঁদা দিয়েছে এবং এখনো দিচ্ছে সুতরাং তারা আসলেই চায় যে তাদের টাকা প্রকৃত এবং বাস্তব ফল প্রদান করুক। সুতরাং এখন আমাদের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করুন। এখন মুক্তিবাহিনীর অনেক কিছুর প্রয়োজন এবং আপনি আমাদের জনগণের কাছে তা লিখে পাঠাচ্ছেন। নিরীহ মানুষ আমাদের কাছে আসে এবং দোষারোপ করে। তারা বলে আমরা যুদ্ধে লড়াইরত সেনাদের দুর্ভোগের জন্য দায়ী। তারা জিজ্ঞাসা করে যদি টাকা সঠিক অবদানের জন্য কাজে লাগানো না হয় তবে কেন তা দেয়া হয়েছে, কেন আমরা আবার চাঁদা দেবো? আমাদের উপর নিস্ক্রিয়তার অভিযোগ আসছে। ঠিক সে সময়েই পরিচালনা কমিটি আপনার কাছে তাদের দুর্ভাগ্যপূর্ণ অবস্থা বিবেচনা করার জন্য লিখছে, যখন আপনার সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি ব্রিটেনে জনগণের নিকট প্রকাশিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাদের নিকট এসে জানতে চায় কেন এখনো ঔষধ, কাপড়-চোপড় ও অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় জিনিসপত্র পাঠানো হয়নি। তারা ব্যাখ্যা চায়, সক্রিয়তা চায় এবং জিনিসপত্র পাঠানোর ব্যাপারে আমাদের নীরবতাকে দায়ী করে দাবি জানায় তাদের জন্য আপনার কাছে লিখতে।
আমরা বুঝতে পারি না কেন আমরা অর্থের একটি অংশ ব্যয় করার অনুমতি পাই না, যা আমাদের দ্বারা আপনার জন্য সংগৃহীত। কারণ সত্যি বলতে, সাহায্য করার ক্ষেত্রে আমাদের অক্ষমতা এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তির সাথে আপনার সরাসরি যোগাযোগ পদ্ধতির কারণে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের নিকট কমিটি অবহেলিত হয়ে পড়বে এবং সব ব্যবহারিক উদ্দেশ্য অবশেষে উচ্ছনে যাবে। পাকিস্তান হাই কমিশন তাদের দূত পাঠিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে, পরিচালনা কমিটি ক্ষীণ হয়ে আসছে এবং বাংলাদেশ ফান্ডে অর্থ সহযোগিতার প্রয়োজন নেই। অতএব, এটা সম্ভবত নিছক দেশপ্রেমের অত্যন্ত এক ক্ষ্যাপামি। পৃথক পৃথক সংগঠন বিভিন্ন তহবিল পরিচালনা করবে, অর্থ সংগ্রহ করবে এবং এর জন্য শুধু তারাই দায়ী থাকবে।
আশা করি আমি আপনাকে প্রচুর চাপ এবং অপমানের সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছি, যাতে আমরাও নিক্ষিপ্ত হয়েছি।
যাই ঘটুক না কেন আমি জনগণের কাছে ঠিক অনুরূপ একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছি যেখানে মুক্তিবাহিনীর জন্য গরম কাপড় চাওয়া হয়েছে, আশা করি সব উল্লেখ করেছি। আমি নিশ্চিত এতে একটি অসাধারণ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে। আমি শীঘ্রই আবার আপনার কাছে লিখবো। বিনম্র অভিবাদন ও শুভেচ্ছা রইলো।
জয় বাংলা।
আপনার বিশ্বস্ত
(এম এ এইচ ভূঁইয়া)
আহ্বায়ক।
<৪,৯০,১৫৭>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯০। ‘থার্ড ওয়ার্নড ফার্স্ট’-এর উদ্যোগে আয়োজিত সভায় বাংলাদেশ সম্পর্কে বক্তব্য রাখার অনুরোধ সম্বলিত এ্যাকশন কমিটির আহ্বায়কের প্রতি চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২২ অক্টোবর, ১৯৭১ |
৩য় বিশ্ব প্রথমে
ব্রিটওয়েল স্যালোম
ওয়েলিংটন
অক্সন
ওএক্স৯৫এলএক্স
২২ অক্টোবর, ১৯৭১
বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি
১১, গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ইসি৩
জনাব ভূঁইয়া,
আমরা টেলিফোনে আপনার নিউল্যান্ড পার্ক কলেজ, শালফন্ট সেইন্ট গাইলস, বাকিংহ্যামশায়ার-এ বুধবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭ টায় কথা বলার জন্য যে আয়োজনটি করেছিলাম … সেটি নিশ্চিত করার জন্যই আমি আপনাকে চিঠিটি পাঠাচ্ছি। আমি কলেজের প্রতিনিধি স্টিভ ডে এর সাথে কথা বলেছি, আপনাকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানাবার জন্য যে, আপনি কিভাবে ঐখানে পৌঁছুবেন এবং ট্রেনে কিভাবে দেখা করবেন।
লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজে নভেম্বরের ৬ তারিখ শনিবারে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তৃতীয় বিশ্ব অধিবেশনের সকল ব্যবস্থা চূড়ান্ত করবার লক্ষ্যে আয়োজকদের সাথে কথা বলব যেন তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করে।
আপনি এই দু’টি সভায় আসতে সম্মত হয়েছেন, তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং গতবারের বার্মিংহাম এডুকেশন কলেজের বৈঠকের ব্যাপারে ভুল বুঝাবুঝি হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত কারণ আমি শেষ মুহূর্তে জানতে পারি যে বৈঠক বাতিল করা হয়েছে।
আপনার অনুগত স্বাক্ষরে বারবারা ক্লার্ক
————————-
<৪,৯১,১৫৮>
অনুবাদকঃ নাবিলা ইলিয়াস তারিন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯১। ২২ শে অক্টোবর অনুষ্ঠিত কনভেনশন কমিটির সভার সিদ্ধান্তসমূহ | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২২ অক্টোবর, ১৯৭১ |
অধিবেশন কমিটির সম্মেলন
২২শে অক্টোবর, ১৯৭১
দক্ষিণাঞ্চলীয় ইংল্যান্ডের কিছু কমিটির দৃষ্টিভঙ্গীতে যেসব আপত্তি উত্থাপিত হয়েছে, তা সমাধানের লক্ষ্যে ৩০ অক্টোবর, শনিবার দুপুর ২টায় অধিবেশন কমিটি লন্ডনে একটি সভার আয়োজন করবে, যেখানে বর্তমান কমিটি ও আঞ্চলিক কমিটির প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করবেন। আগামিকাল ২৩ অক্টোবর, শনিবার, ১৯৭১ তারিখে আঞ্চলিক কমিটির দ্বারা গৃহীত ফলাফল বৈঠকে বিবেচনা করা হবে।
স্বাক্ষরসমূহ ২২.১০.১৯৭১
বৈঠকে এটাও নির্ধারণ করা হয় যে, নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে ১১ গোরিং স্ট্রিট এ নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের সাথে বসবার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
স্বাক্ষরসমূহ
<৪,৯২,১৫৯-১৬০>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯২।অনুষ্ঠিতব্য কনভেনশনের জন্য মিডল্যান্ড অঞ্চলের কমিটিসমূহের প্রতিনিধিদের সংখ্যা ও নামসহ লিখিত চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৩ অক্টোবর,১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি
(মিডল্যান্ড অঞ্চল)
৯৩ স্ট্যাফোর্ড রোড
স্পার্ক ব্রুক বার্মিংহাম বি১১ আইআইআরই ২৩.১০.১৯৭১
আহ্বায়ক
অধিবেশন কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রিট,লন্ডন. ই সি ই ৩
জনাব,
আপনার অনুরোধ/চিঠির সাথে একমত পোষণ করে ৮/১০/৭১ তারিখে আমরা মিডল্যান্ড অঞ্চলে সকল কমিটি মিলে একটি সভার আয়োজন করেছিলাম। এবং আসন বরাদ্দ করা হয়েছিল মিডল্যান্ড অঞ্চলের সকল কমিটির উপস্থিতি ও আংশিক সম্মতির উপর।
আমরা নিম্নলিখিত তালিকাসমূহ পাঠিয়ে দিচ্ছি
কমিটি বরাদ্দকৃত আসনসংখ্যা
১।কনভেন্ট্রি ৩
২।লেইসেস্টার ২
৩।লাফবোরো ২
৪।নর্থহ্যাম্পটন ২
৫।ওয়েলিংবোরো ১
৬।নটিংহাম ১
৭।ডার্বি ম্যান্সফিড ১
৮।ওরচেস্টার ১
৯।কিডারমিনস্টার ২
১০।ব্ল্যাকহেলথ ২
১১।উলভারহ্যাম্পটন ১
১২।ওয়েনেসবারি ২
১৩।ওরল্যাস্টন ১
১৪।ওয়ালসল ২
১৫।ওয়েস্টব্রমউইচ ২
১৬।টিপটন ২
১৭।স্মেথউইক ৪
১৮।বার্মিংহাম(বি ডি এ সি) ___৪৪___
মোট ৭৫
ওয়েস্টব্রমউইচ : (১) জনাব আব্দুল জলিল, ৭৯, হ্যামিল্টন রোড, বিহাম–২১, (২) জনাব আয়াস মিয়া, ৬৮, বিচার্স রোড, বিহাম–২১
ওরচেস্টার : (১) জনাব মুজাহিদ আহমেদ, ৭৪, ওয়ায়েল্ড লাইন, ওরচেস্টার
লাফবোরো : (১) জনাব এ আহমেদ ১০২. ফ্রিহোল্ড স্ট্রিট, লাফবোরো
(২) জনাব এস এ হাই
নর্থহ্যাম্পটন : (১) জনাব এ এইচ চৌধুরী, ৭ মার্কপার্ক, নর্থহ্যাম্পটন
(২)জনাব আব্দুল আহাদ
ওয়েলিংবোরো : (১) জনাব ইসরাইল আলী, ৩২, চার্চ সি ওয়েলিংবোরো
স্মেথউইক : (১) জনাব মদোরিস আলী, ১০৪, লুইসহ্যাম রোড, স্মেথউইক,স্টাফস
(২) জনাব মুসলাউদ্দিন, ৩৩, মিডলম্যান রোড,স্মেথউইক,স্টাফস
(৩) জনাব আশাবুর রহমান জয়গিরদার, ১২৫, অক্সফোর্ড
রোড, স্মেথউইক, স্টাফস
(৪) জনাব মনুহর আলী, ২৬, সেন্ট্রাল প্লেস, স্মেথউইক স্টাফস
নটিংহাম : (১) জনাব এম এ ইউসুফ চৌধুরী, ১৭৭, আলফেরটন রোড,নটিংহাম
ডারলাস্টন– ||
ওয়েনেসবারি– | |
কভেন্ট্রি– | |
লেস্টার– | |
ডারবি/মারসফিল্ড | পরে পাঠানো হবে |
কিডারমিনস্টার– | |
ব্ল্যাকওয়েলথ– | |
উলভারহ্যাম্পটন– | |
ওয়ালসল– | |
—————————————
<৪,৯৩,১৬১-১৬৩>
অনুবাদকঃ তন্দ্রা বিশ্বাস
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৩। কনভেনশনের জন্য মনোনীত বিভিন্ন কমিটির ও তাদের প্রতিনিধিদের তালিকাসহ সভাপতি ও সম্পাদকের চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৩ অক্টোবর,১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এ্যাকশন কমিটি
৯৩, স্ট্রাটফোর্ড রোড স্পার্কব্রুক, বার্মিংহাম বি১১ আইআই আইআরই ২৩/১০/১৯৭১
সভাপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি
(মিডল্যান্ড অঞ্চল)
৯৩, স্ট্র্যাটফোর্ড রোড, বার্মিংহাম ১১
জনাব,
অধিবেশন কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত তারিখে অনুষ্ঠিতব্য অধিবেশনের জন্য প্রতিনিধিদের নাম ও ঠিকানার নিম্নলিখিত তালিকা আমরা উপস্থাপন করছি। এটি অনুগ্রহপূর্বক কনভেনশন কমিটির কাছে পাঠাতে পারেন। ২৩ অক্টোবর, ১৯৭১ সোমবারে অনুষ্ঠিত কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে তালিকাটি সংযোজিত হয়েছে।
একান্তই,
সভাপতি সম্পাদক
পুংখানুপুংখরূপে পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ১১ গোরিং স্ট্রিট, লন্ডন ই সি ৩ এর অধিবেশন কমিটির আহ্বায়কের অনুলিপি।
হ্যান্ডসওয়ার্থ
১৫, রিচমন্ড রোড, হ্যান্ডসওয়ার্থ বি’হ্যাম–১৯
জনাব নূর আলী ৯১,হান্টার্স রোড ঐ
জনাব আজিজুর রহমান ৩১ জন স্ট্রিট ঐ
জনাব মোবেশির আলী ১৮ সেন্ডওয়েল রোড ঐ
স্যালটে
জনাব মোঃ আফরুজ মিয়া ৯৬ এডারলি রোড বি’হ্যাম–৮
জনাব রেজাউর রহমান জয়গিরদার ৪৬ হার্ডফোর্ড স্ট্রিট বি’হ্যাম–১২
জনাব সাজিদুর রহমান ১৪৬ স্ট্রিট সেভিয়ার্স রোড বি’হ্যাম–৮
জনাব জহুর আলী ৪৮, বয়ার রোড ঐ
জনাব মহিবুর রহমান ১২০, স্ট্রিট সেভিয়ার্স রোড ঐ
জনাব এম ইউ আহমেদ ২৩৪, ভিক্টোরিয়া রোড অ্যাস্টন বি’হ্যাম–৬
জনাব আকমল হুসেইন ১৮, লিন্টন রোড ” ঐ
জনাব আবদুল মকলিব ১৫৮, ভিক্টোরিয়া রোড ” ঐ
জনাব চেরাগ উদ্দিন ১০০, ফ্রেডেরিক রোড ” ঐ
জনাব মনির উদ্দিন ৯৯, ফ্রেডেরিক রোড ” ঐ
জনাব আসেক আলী ১১৮, ফ্রেডেরিক রোড ” ঐ
জনাব গাউস আহমেদ ৬০, ভিকারেজ রোড ” ঐ
জনাব আব্দুস সুবহান ২২৭, বেভিংটন রোড ” ঐ
জনাব সায়েদ আলিক উল্লাহ ৩১০, আলবার্ট রোড ” ঐ
জনাব মধু মিয়া ১২৫, আপার সাটন স্ট্রিট ” ঐ
জনাব আবদুস সবুর চৌধুরী ১৫,ভাইন স্ট্রিট ” ঐ
স্মলহিথ
জনাব এ এম জগুল পাশা ৫২, ওয়ার্ডসওয়ার্থ রোড স্মলহেথ বি’হ্যাম–১০
জনাব এ এইচ ভূঁইয়া ৯৩, স্ট্রাটফোর্ড রোড ” বি’হ্যাম–১১
জনাব ইসমাইল আজাদ ২৩, লয়েডস স্ট্রিট ” বি’হ্যাম–১০
জনাব আফতাব আলী ৭৫, ওয়েভারলি রোড ” ঐ
জনাব কাজি আব্দুল মন্নান ২/৪১৬, বোল্টন রোড ” ঐ
জনাব মউলা উদ্দিন আহমেদ ২৯, ওয়ার্ডসওয়ার্থ রোড ” ঐ
জনাব আব্দুল বারী ৩৫, ডোরা রোড ” ঐ
জনাব আনোয়ার হুসেইন ৫২, অবোরি রোড ” ঐ
জনাব এ কে এম এ হক ৯৩, স্ট্রাটফোর্ড রোড ” বি’হ্যাম–১১
জনাব আবদুন নূর ২১, গোল্ডেনহিলক রোড ” বি’হ্যাম–১০
জনাব আবদুল হান্নান ৩৫, ডোরা রোড ” ঐ
বলসালহেথ
জনাব আব্দুল হুসেইন ১২২, বলসালহেথ রোড বি’হ্যাম–১২
জনাব আব্দুল মতিন ২০, আলেকজান্ডার রোড বি’হ্যাম–৫
জনাব গিয়াস উদ্দিন ১১৫, আলেকজান্ডার রোড ঐ
জনাব মনোহর মিয়া ৫৮, আলেকজান্ডার রোড ঐ
জনাব লাই মোহাম্মদ ১৩, প্রিন্সেস রোড ঐ
জনাব জামশেদ মিয়া ৬৪, স্ট্রিট লাকস রোড ঐ
জনাব শাহ নুরুল ইসলাম ২১৮, ব্রড স্ট্রিট বি’হ্যাম–১৫
জনাব সায়েদ আবদুর রহমান ৪২, বলসালহেথ রোড বি’হ্যাম–১২
জনাব মোহাম্মদ আলী ৮/৪৩৮, বোল্টন রোড বি’হ্যাম–১০
স্পার্কব্রুক এবং স্পার্কহিল
জনাব আস্কির মিয়া ৭৯,হ্যামিল্টন রোড হ্যান্ডসওয়ার্থ, বি’হ্যাম–২১
জনাব মোবারক আলী ৩২, বিলহাই স্ট্রিট, ওয়েস্ট ব্রাউনিচ স্টাফস
টিপটন
জনাব রইস উদ্দিন ১০, পিল স্ট্রিট টিপটন স্টাফস
জনাব আহমাদুক হক ১৬, পিল স্ট্রিট ” ”
স্মার্থউইক
জনাব মাদারিস আলী ১০৪, লুইশান রোড স্মার্থউইক বিহ্যাম–৪০
জনাব আশাবুর রহমান জয়গিরদার ১২৫, অক্সফোর্ড রোড ” ঐ
জনাব মনুহর আলী ২৬, সেন্ডওয়েল প্লেস ” ঐ
জনাব মুসিক উদ্দিন ২০, ম্যাফেকাইন রোড ” ঐ
ওয়ালসল
জনাব জহুরুল হুসেইন চৌধুরী ১৮, ক্যাল্ড মোড় গ্রিন ওয়ালসল স্টাফ
জনাব আব্দুর রহমান ৪২০, ওল্ড ওয়ালসল রোড ” বি’হ্যাম–২২এ
ওয়েনেসবারি
জনাব আব্দুল খালিক ১৪, পেরি স্ট্রিট ওয়েনেসবারি স্টাফস
১৬,হলোওয়ে ব্যাংক
জনাব আকাদ্দাস আলী হিলটপ, ওয়েস্ট ব্রমউইচ,স্টাফস স্টাফস
ডার্লস্টন
জনাব আবদুল জব্বার ১৯২, ওয়ালসল রোড ডার্লস্টন স্টাফস
মসলে
জনাব নুরুজ্জামান খান ৫৭০, মসলে রোড মসলে বি’হ্যাম–১৩
সেলেইয়োক
জনাব শফির আহমেদ ৫০৭, ব্রিস্টল রোড সেলেইয়োক বি’হ্যাম–২৯
<৪,৯৪,১৬৪>
অনুবাদকঃ জয়
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৪। কনভেনশন সম্পর্কে ভিন্ন মতালম্বীদের পক্ষে স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের প্রতি চিঠি | এ্যাকশন কমিটির দলিলপত্র | ২৫ অক্টোবর, ১৯৭১ |
আহ্বায়ক,
পরিচালনা কমিটি
১১, গোরিং স্ট্রিট,
লন্ডন ইসি 3
প্রিয় সুধী,
আমাকে শনিবার ২৩ অক্টোবর, ১৯৭১ তারিখে বৃহত্তর লন্ডনে পরিচালিত ১২ টি অ্যাকশন কমিটির যথা ত্রাণ কমিটি (হেসেল স্ট, এল), রিলিফ কমিটি (ফোর্ডহ্যাম স্ট এল), বেইজওয়াটার অ্যাকশন কমিটি, লন্ডন কমিটি, হেনডন কমিটি, এনফিল্ড কমিটি, এন ও উঃপঃ কমিটি, ওয়েস্টমিনস্টার কমিটি, ছাত্রসংগ্রাম কমিটি, উইমেন্স এসোসিয়েশন খিলানপথ কমিটি, মৌলভীবাজার কমিটি, সংগ্রাম কমিটির মিটিং এ আসন্ন জাতীয় সম্মেলন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উপর তাদের মতামত জানানোর জন্য বলা হয়েছে। সেগুলো হল:
১. সভায় উপস্থিত শিক্ষা কমিটি ১৯৭১ এর এপ্রিল/মে থেকেই সক্রিয়, কেউ কেউ কোভেন্ট্রি অধিবেশনেরও বহু আগে থেকে সক্রিয় এবং বাংলাদেশ তহবিলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সহায়তা এবং সংহতি কার্যক্রমেও বেশ সক্রিয় তারা।
২. ৫৮ বেরউইক স্ট্রিট, লন্ডন ডব্লিউ আই-এ অবস্থিত তথাকথিত ‘লন্ডন কমিটি’ উপরের অনুচ্ছেদে উল্লেখিত ১২ কমিটির কাছে আমাদেরকে উপস্থাপন করে না এবং তথাকথিত ‘লন্ডন কমিটি’ আমাদের কোন গোপন খবর জানে না।
৩. অতএব, উপরোক্ত অ্যাকশন কমিটিসমূহ প্রস্তাবিত সম্মেলনে সরাসরি উপস্থাপিত হবে এবং তথাকথিত ‘লন্ডন কমিটি’ বা তথাকথিত ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় কমিটি (এটিও ৫৮ বেরউইক, স্ট্রিট, লন্ডন লন্ডন ডব্লিউ আই-এ অবস্থিত)’-এর মত কোন মধ্যবর্তী স্বত্বার মাধ্যমে উপস্থাপিত হবে না।
৪. উপরোক্ত কমিটিসমূহকে তাই আর্থিক অবদান, সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় প্রতিনিধিদলের সংখ্যা সম্পর্কে সরাসরি আপনাকেই জানাতে হবে।
আশা করি শীঘ্রই আপনার উত্তর পাব।
আমরা চিঠিটির একটি কপি তথ্য প্রদান ও দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অ্যাকশন কমিটিগুলোর কাছেও পাঠিয়ে দিচ্ছি।
বিনীত,
এস এম আইয়ুব চেয়ারম্যান
৩৩ দামগার রোড,
লন্ডন এন ২২।
<৪,৯৫,১৬৪-১৬৮>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
৯৫। বাংলাদেশ সমর্থনে গঠিত ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসীজ’-এর তিনটি প্রচারপত্র | ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসীজ’-এর দলিলপত্র |
অক্টোবর, ১৯৭১ |
হইতে: তাসাদ্দুক আহমেদ গ্যাঙ্গেস রেস্টুরেন্ট ৪০ জেরার্ড স্ট্রিট লন্ডন ডাব্লিউ ১ ফোন. ০১-৪৩৭ ৮৭০৫/০২৮৪
এই চিঠিটি আমি আপনাকে লিখছি, কারণ আমি মনে করি বিদেশে থাকা অনেক বাঙালি, যারা বাংলাদেশে প্রতিরোধ আন্দোলনে সহযোগিতার জন্য কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের অভাবে সম্পূর্ণরূপে হতাশ এবং বেদনাহত, আপনিও তাদেরই একজন। আমরা আপনার অনুভূতি এবং উদ্বেগ আমরাও উপলব্ধি করতে পারি এবং আমরাও তীব্রভাবে আশা করি আমাদের জাতীয় নেতারা অন্তত একবারের জন্য হলেও যেন তাদের সংকীর্ণ কলহ ভুলে গিয়ে হাতে হাত রেখে ৭০,০০০ প্রবাসী বাঙালিকে একটি জাতীয় নেতৃত্ব দেন। ক্ষমতাসীন নেতৃত্ব জনগোষ্ঠীর কঠিন প্রয়োজনের সময় শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে ।
যাই হোক, দেশপ্রেমের জোয়ারে নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে পৃথক পৃথক কিছু পেশাদার দলের উৎপত্তি হয়েছে। লন্ডনে যাদের কথা আমরা জানতে পেরেছি, তারা বাঙালি ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ, নারী পরিষদ, ডাক্তার পরিষদ, প্রচার কমিটি ইত্যাদি। এই সংকটপূর্ণ সময়ে এই দলগুলো নিজেদের কাজ ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তাদের কাজগুলো পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতার অভাবে চরম অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। মোটের ওপর, তারা হল পৃথক পৃথক ছোট দল, যাদের সাথে গণমানুষের যোগাযোগ খুবই সামান্য।
বিক্ষিপ্ত কার্যক্রম গুলিকে সীমিত একটি সমন্বয় দিতে হবে এবং একে অন্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা প্রতিরোধ করতে হবে, বিশেষ করে বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে সংহতি প্রচারণার ক্ষেত্রে, সম্প্রতি দু’টি কমিটির ব্যয়ভার বহন করা হচ্ছে, একটি হচ্ছে সর্বদলীয় সংসদীয় কমিটি যাদের মূলনীতি হল পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায় বিচার, অপরটি হল সর্বদলীয় নাগরিক প্রচার কমিটি, যার প্রধান ছিলেন ডেভিড মেসন, তিনি ছিলেন সাম্প্রদায়িক সম্পর্কের নিমিত্তে গঠিত মেথডিস্ট কনফারেন্স কমিটির আহ্বায়ক। আন্তর্জাতিক প্রচার কমিটিটি বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসিস নামে পরিচিত ছিল। এর সহসভাপতি প্যানেলে কানাডা, আমেরিকা, শ্রীলংকার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। আশা করা যায় যে, শীঘ্রই মধ্যপ্রাচ্য এবং অন্যান্য দেশগুলোকেও উপযুক্ত সামর্থ্য সহকারে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। আমাদের সীমিত প্রচেষ্টায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করা গেছে। ব্রুস ডগলাসম্যান এম.পির বাংলাদেশ পরিদর্শনের ব্যবস্থা আমরাই করেছিলাম। আন্তর্জাতিক ত্রাণসংস্থাগুলোকে শীঘ্রই গৃহযুদ্ধে ভুক্তভোগীদেরকে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবেই জন স্টোন হাউস এম.পি. র সংস্পর্শে আছি, যিনি শরণার্থীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে সম্প্রতি কলকাতা গিয়েছিলেন। বিমানের মাধ্যমে ত্রাণসামগ্রীর সাপ্তাহিক চালানের ব্যবস্থা ইতিপূর্বে করা হয়েছে। আমরা প্রতিনিধিদের ব্যয়ভারের সম্মুখীন হচ্ছি, যারা প্যারিসে পাকিস্তান এইড কনসোর্টিয়াম এর সদস্যদের মধ্যে প্রচারণা চালাচ্ছে। জাতিসংঘে দুইজন প্রতিনিধিকে পাঠানোর ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি, আমরা আমাদের একজন সহযোগীকে বিশেষভাবে নিয়োগ দিয়ে সিলেট জেলার অবস্থার উপর প্রতিবেদন তৈরির জন্য করিমগঞ্জে পাঠিয়েছি।
আপনার বিবেচনার জন্য জানিয়ে রাখছি যে, আমরা নিজ নিজ ভাবে যতটুক সম্ভব চেষ্টা করছি, তারপরেও আমরা আপনাকে মাদের পূর্ণ সহযোগিতা প্রদানের আবেদন জানাচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য এবং আন্দোলনের উদ্দেশ্য সহকারে আবেদন করছি। দয়া করে সতর্কতার সাথে পড়বেন এবং আপনার বন্ধুদেরকে এর কপি সরবরাহ করবেন, যারা নিজেদেরকে এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত করতে আগ্রহী। আমরা আপনার এবং আপনার সহযোগীদের কাছে কী ধরণের সহযোগিতা পেতে পারি, সে বিষয়ে দয়া করে জানাবেন।
শুভেচ্ছা এবং অভিবাদন রইল।
একান্তে, ……………………….
২।
বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসীস ১৫৫ হুইটফিল্ড স্ট্রিট, লন্ডন ডাব্লিউ ১ টেলিফোনঃ ০১-৩৮৭ ৬৪৮২/৪৩৭ ৮৭০৫ ক্যাবলঃ প্রবাসী লন্ডন ডাব্লিউ ১ প্রেসিডেন্ট-ডেভিড মেসন
পাকিস্তান আমাদের কাছে মৃত। যে মাটি আমাদের অসংখ্য আশার জন্ম দিয়েছিলো, তা এখন বর্বর পেশাদার সৈন্যদলের খেলার মঞ্চে পরিণত হয়েছে। আগামী দিনগুলোকে নিয়ে দেখা আমাদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো খুন হওয়া স্ত্রীদের, শ্লীলতাহানি হওয়া বোনদের এবং মেরে ফেলা শিশুদের দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।
আমরা যারা পেশাদার সৈন্যদের দাস হয়ে স্বদেশে ফিরে যাওয়াকে প্রত্যাখ্যান করি এবং শান্তি, ন্যায়বিচার এবং গণতন্ত্রের মন্ত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি স্বাধীন দেশে ফিরে যাবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারাই বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসীসকে পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছি – এটি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে সংহতির জন্য একটি আন্তর্জাতিক প্রচার। এই আন্দোলনের লক্ষ্য (ক) অমানবিকতা এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করে তোলা (খ) গৃহযুদ্ধের ভুক্তভোগীদের জন্য আন্তর্জাতিক ত্রাণ এবং সাহায্য সহজলভ্য করা; এবং (গ) বিশ্বের সভ্য, গণতান্ত্রিক এবং সমাজতন্ত্রী দেশগুলোর সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশের ৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের জন্য আত্মনির্ধারণের অধিকার অর্জন করা।
বাংলাদেশের কারণে আন্তর্জাতিক সমঝোতা এবং সহানুভূতি অর্জনের জন্য যে গ্রুপটি নতুন কাওকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে, সক্রিয় হয়েছে যখন ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এর রাতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকাতে নিরস্ত্র নাগরিকদের গণহত্যা হয়েছিল। ইংরেজি ভাষার বুলেটিন ‘বাংলাদেশ’ আমরাই প্রকাশ করেছি, পাঁচ সপ্তাহের খবর নিয়ে এটি প্রকাশিত হয়েছে এবং বিস্তৃতভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এই বুলেটিন টিকে আমাদের কার্যক্রমের দৈনন্দিন ফিচার বানাতে চাই এবং সম্পূর্ণ করতে চাই অনিয়মিত প্রকাশনার ক্ষুদ্র পুস্তক, পুস্তিকা, পোস্টার ইত্যাদির মাধ্যমে। পরবর্তী দুই মাসে এর জন্য আমাদের খরচ পড়বে প্রায় ১৫০০ পাউন্ডের কাছাকাছি। পাশাপাশি, আমরা জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্রে (খরচ আনুমানিক ১৫০০ পাউন্ড) , নেপাল, শ্রীলংকা, বার্মা এবং আফগানিস্তানে (১৫০০ পাউন্ড), যুক্তরাজ্যে (১৫০০ পাউন্ড) এবং ইউরোপে (৫০০ পাউন্ড) সংহতি প্রচারাভিযানের ইচ্ছা রাখি। এই প্রকল্পের জন্য মোট আনুমানিক খরচ প্রায় ৭৫০০ পাউন্ডের মত। আমরা এই অর্থ প্রাথমিকভাবে উত্তোলনের আশা রাখি তাদের মধ্যে থেকে যাদের নিজ জন্মভূমিতে মুক্তভাবে বসবাস করার অধিকার আছে এবং হানাদার সৈন্য এবং তাদের দোসরদের দ্বারা আজকের এই গৃহযুদ্ধ যেসব মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং যাদের আত্মীয়স্বজন ভুক্তভোগী।
যারা আমাদের জন্মভূমিকে স্বাধীনভাবে আবার হাসতে দেখতে চায় এবং অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে প্রস্তুত হবার জন্য বাড়তি অর্থ এবং অতিরিক্ত সময় ছন্নছাড়া জীবনের ছায়া থেকে বের হয়ে একটি নতুন জাতির আবির্ভাব চায়, আপনিও নিশ্চয়ই তাদেরই একজন, আর তা হয়ে থাকলে আমাদের সাথে যোগদান করুন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় অর্থ উত্তোলনে সহায়তা করুন। আমরা আশা করি, প্রচারাভিযান চালু করার প্রথম বছরে প্রথম ১০০ স্পন্সর প্রত্যেকে ১০০ পাউন্ড দান কিংবা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে সংগ্রহ করতে পারব।
নতুনরা নির্দলীয় হবে এবং কোন উপদলেরও সদস্য হবে না। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং বহুজাতিক কোম্পানি এবং বহু-জাত সংবলিত বিভিন্ন সমস্যাতে এর গঠনের অগ্রসরে কাজ করবে । এসব প্রচারাভিযান কার্যক্রমে ইচ্ছুক যে কেউ সক্রিয় সদস্য, সহযোগী সদস্য কিংবা সমর্থক হিসেবে যোগদান করতে পারে, আরও বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলে নিম্নে সাক্ষর সহ দয়াকরে আমাদের সংস্পর্শে থাকুন।
বিনীত,
———-
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে আপনারা যেভাবে সাহায্য করতে পারেন – নির্দেশাবলী
১। একটি কার্যকরী কমিটি থেকে যেখানেই হোক আপনারা কমপক্ষে পাঁচ জন বাংলাদেশী সমর্থক মিলিত হতে পারেন। এটি হতে পারে আপনার কাজের জায়গাতে কিংবা বাসায় কিংবা বিনোদনের কোন জায়গাতে। শুরুতে বাংলাদেশ আন্দোলনের জন্য আমরা সকল বাঙালি রেস্তোরাঁগুলোকে প্রচারাভিযান কেন্দ্র এবং অর্থ ও ত্রাণসামগ্রীর সংগ্রহশালা হিসেবে গঠন করার পরামর্শ দিচ্ছি। মেইল গ্রহণের জন্য কমিটির একটি উপযুক্ত অ্যাড্রেস এবং মিটিং এর উদ্দেশ্যে একটি জায়গা নির্ধারণ করা উচিত। (একটি আদর্শ শাসনতন্ত্রের সাথে আপনাদেরকে সাহায্য করার জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত হতে হবে।)
২। এরপর, কমিটিকে বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর সংস্পর্শে থাকা উচিত যারা বাংলাদেশের জন্য প্রচারাভিযান চালাচ্ছে এবং মুক্তিযোদ্ধা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের পেশাদার সৈন্য দ্বারা ভুক্তভোগীদের জন্য নৈতিক সমর্থন এবং চিকিৎসা সামগ্রী সংগ্রহের চেষ্টা করছে, সেসব সংস্থাগুলোকে তাদের প্রকাশিত পুস্তক, পত্রিকা ইত্যাদি আপনাদেরকে পাঠাতে বলুন। তারপর সেগুলো পরিচিতদের মধ্যে বিতরণ করুন।
৩। বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার, বাংলাদেশের সাথে সংহতির জন্য প্রচারাভিযান -তাদের সকলেরই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতার প্রয়োজন। সুতরাং আপনার কমিটির জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। ব্যাংকের স্থানীয় শাখাতে একটি হিসাব খুলুন। হিসাব পর্যবেক্ষণের জন্য দু’জন ট্রাস্টি নিয়োগ করুন। আপনার কমিটির প্রত্যেক সদস্যকে মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে এক পাউন্ড দান করতে উৎসাহিত করুন। আপনার পরিচিত এবং সহযোগীদের তহবিলে দান করতে উৎসাহী করুন। স্বল্প সংগ্রহগুলো সিলগালাযুক্ত বাক্সে রাখতে হবে, যেগুলো দেশি এবং বিদেশি সংস্থাগুলোর ত্রাণ থেকে জমা হয়েছিলো। এবং এক পাউন্ডের বেশি দান করলেও, তা সবসময়ই গ্রহণযোগ্য। দেশি এবং বিদেশি প্রচারকদের কাছ থেকে রসিদ বই চেয়ে নিন।
৪। বাংলাদেশ সরকার এবং তাদের বিদেশি এজেন্সিগুলোর যোগ্যতাসম্পন্ন পরিচালক, প্রযুক্তিবিদ, জনসংযোগ কর্মচারীবৃন্দ, ইত্যাদি প্রয়োজন। দয়া করে এই ধরনের লোকদের একটি তালিকা সংগ্রহ করুন, যারা বাংলাদেশ সরকার নিয়ন্ত্রণ এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে কাজ করতে ইচ্ছুক। সংগ্রহ করর সময় সম্মানিত সংস্থাগুলোকে এই ধরনের কর্মচারীবৃন্দের প্রাপ্যতা সম্পর্কে অবগত করুন। এই ধরনের কর্মী নির্বাচনের সময় তাদেরকেই অগ্রাধিকার দিন, যাদের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব আছে অথবা ব্রিটিশ নাগরিকত্বের জন্য মনোনীত হয়েছেন। যারা পাকিস্তানের প্রেষণের উপর নির্ভর করেন অথবা যারা পাকিস্তান সরকারের ভাতা সমূহের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন তাদের অবশ্যই বোঝাতে হবে, যেন তারা বাংলাদেশ আন্দোলনের সাথে না জড়ান, যদিও এটা পরিষ্কার করে দেওয়া উচিত যে, আমরা তাদের উদ্বেগ এবং সহানুভূতিকে সম্মান করছি।
৫। কমিটিকে তাদের তহবিল থেকে অর্থ প্রদানে সতর্ক হওয়া উচিত। সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে সংগ্রহকৃত তহবিল অথবা অন্যান্য সাহায্য সামগ্রী অবশ্যই বিশেষ কারনে বিতরণ করা হবে। ব্যাক্তিগত সংগ্রহকারীদের পছন্দ এবং পরামর্শকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। যদি একটি কমিটি সমষ্টিগতভাবে কিছু দান করতে চায়, তবে তাদের বিভিন্ন প্রকল্প সম্পর্কে কমিটি সদস্যদের যাচাই করতে বলা উচিত। এই পরিমাপগুলো অতি প্রয়োজনীয়, দানকারীরা যেন সন্তুষ্ট হতে পারেন যে, তাদের দান সঠিকভাবেই ব্যবহার করা হচ্ছে। একমাত্র এই উপায়েই যেকোন দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের জন্য আমরা আমাদের দানকারীদের আস্থা অর্জন করতে পারবো এবং বাংলাদেশ আন্দোলনে তাদের টেকসই আগ্রহ অর্জন করতে পারব।
বাংলাদেশ ফ্রিডম মুভমেন্ট ওভারসীস এর পক্ষে ইস্যুকৃত। ৪০ জেরার্ড স্ট্রিট। লন্ডন ডাব্লিউ ১। ০১.৪৩৭ ৮৭০৫। তাসাদ্দুক আহমেদ।
<৪,৯৬,১৬৯>
অনুবাদকঃ ওমর বিন কিবরিয়া
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৬। বাংলাদেশ গণহত্যার বিরুদ্ধে “ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ” আয়োজিত একটি জনসভায় গৃহীত প্রস্তাব | “ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ” | ২৫ জুন, ১৯৭১ |
বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার উপর সিদ্ধান্ত
২৫ জুন শুক্রবার লেডি জিফোর্ড এর সভাপতিত্বে ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত সর্বজনীন মিটিং এ জনাব জন প্ল্যাটস মিলস, কিউ.সি., দ্বারা নিম্নোল্লিখিত সিদ্ধান্ত উত্থাপিত হয়েছিলো এবং জনাব অশোক সেন, ব্যারিস্টার এট-ল (ভারত সরকারের সাবেক মন্ত্রীপরিষদভুক্ত আইন মন্ত্রী) জনাব বিচারপতি আবু এস. চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ কূটনীতিক, জনাব সাকওয়াত হোসেইন, ব্যারিস্টার -এট-ল এবং লর্ড জিফোর্ড, ব্যারিস্টার-এট-ল দ্বারা সমর্থিত হয়েছিলো এবং সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছিলোঃ
এই সর্বজনীন মিটিং প্রয়োজনে এর আহবায়কদের ইসলামাবাদে পাকিস্তানের আচরণের এবং ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত এর সামরিক শাসন এবং তাদের পরিচালিত করা সামরিক প্রধানদের তদন্তের জন্য গণহত্যা বিষয়ক অধিবেশনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করতে নিরাপত্তা পরিষদকে বলার জন্য প্রস্তুতিমূলক কমিটি গঠন করতে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং চেষ্টা করুন এবং শাস্তি দিন তাদেরকে যারা গণহত্যা বিষয়ক অধিবেশনের আইন অমান্য করে অপরাধ করেছিলো।
<৪,৯৭,১৭০>
অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৭। বাংলাদেশে গনহত্যা বন্ধ ও বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের ইস্যুতে ট্রাফলগার স্কোয়ারে অনুষ্ঠিতব্য একটি জনসভার পোস্টার | এ্যাকশন বাংলাদেশ লন্ডন | ১ আগস্ট, ১৯৭১ |
গণহত্যা থামাও
★
বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দাও
ট্রাফেলগার স্কয়ারে মিছিল
রবিবার, ১ আগস্ট, ১৯৭১
দুপুর ২টা
★
অ্যাকশন বাংলাদেশ
৩৪, স্ট্র্যাটফোর্ড ভিলাস
লন্ডন এনডব্লিউ ১
ফোন ০১ ৪৮৫ ২৮৮৯
<৪,৯৮,১৭১>
অনুবাদকঃ তানভীর আহমেদ রিশাত
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
৯৮। বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের কাছে লিখিত বৃটিশ পরিবেশ নিয়ন্ত্রন বিভাগের একটি চিঠি | বাংলাদেশ স্টিয়ারিং কমিটি, লন্ডুন | ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১ |
পরিবেশ অধিদপ্তর
রয়্যাল পার্ক ডিভিশন
গেউড হাউস (৬ষ্ঠ তলা), ২৯ গ্রেট পিটার স্ট্রিট লন্ডন এস অব্লিউ ১ পি/৩এল ডব্লিউ
টেলিফোনঃ ০১-৭৯৯ ৭৫৩৩ এক্সঃ ৩৯৮
এ এইচ ভুঁইয়া আইনজীবী আপনার রেফারেন্স –
আহ্বায়ক আমাদের রেফারেন্স: এএল ১০৩/৩
বাংলাদেশ পরিচালনা সংসদ
১১, গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ইসি ৩ তাং- ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১
জনাব,
১. আমি আপনাকে আমাদের ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১, বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথোপকথনের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এবং জানাতে চাই যে, আগামী রবিবার, ৩১ অক্টোবর, ১৯৭১ দুপুর ১.৩০ হতে ২.৩০ পর্যন্ত হাইড পার্কের কোমার এরিয়াতে ক্ল্যারিজেস অভিমুখী আপনার সংস্থাটির মার্চ করার অনুমতি মিলেছে। এ ব্যবস্থা বিশেষভাবে আগেই নেয়া হয়েছে লরিতে করে অস্ত্রসামগ্রী পাঠিয়ে দেয়ার মাধ্যমে, যাতে করে বিপুল পরিমাণ জনতাকে সামলে রাখতে কোন অসুবিধা না হয়।
শব্দের ভলিউম অবশ্যই কঠোরভাবে কিন্তু এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যেন বক্তার কথা শুনতে উপস্থিত জনতার কোন সমস্যা না হয় এবং যখন আপনাদের বাহনটি র্যালির অভ্যন্তরে থাকবে তখন সকলপ্রকার চিহ্ন বা বিজ্ঞাপন ঢেকে রাখা হবে এবং আপনাদের কাজে যেসব যন্ত্রপাতি লাগছে তার উতপাদকের কোন প্রকার রেফারেন্স রাখা হবে না।
২. এই অনুমতি নিম্নলিখিত শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে:
ক) লরি প্রবেশের সকল ব্যবস্থা, মিটিং এর প্রস্তাবিত স্থান, প্রবেশ ও প্রস্থানের পথের বিষয়ে আগেই হাইড পার্ক পুলিশ ইন্সপেক্টর (টেলিফোন – ৭২৩ ৮২৭৪)-এর অনুমতি নিয়ে রাখতে হবে।
খ) পার্কে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের যেন কোনরকম বিরক্তি বা প্রতিবন্ধকতা ভোগ করতে না হয় এবং যাবার সময় পার্ককে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রেখে যেতে হবে এবং পার্কের ব্যবহারের কারণে ডিপার্টমেন্টের কোন সম্পত্তির ক্ষতিসাধন হলে উপযুক্ত (কিংবা ডিপার্টমেন্টের দাবি অনুযায়ী) ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
গ) পার্ক ব্যবহারের কারণে কারও ব্যক্তিগত আঘাতপ্রাপ্তি (মৃত্যুসহ) বা সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হলে আপনাকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
ঘ) পুলিশ কিংবা পার্ক কর্তৃপক্ষের যেকোন নির্দেশ মেনে চলতে হবে।
ঙ) যেকোন ধরণের অর্থ, দান কিংবা চাঁদা গ্রহণ, প্রচারণাপত্র, লিফলেট, প্রোগ্রামার, সংবাদপত্র বা ওই ধরণের নিবন্ধের বেচাকেনা বা বিতরণ, ব্যানার কিংবা যেকোন ধরণের নোটিশ প্রদর্শন, অন্য যেকোন লিখিত বা আঁকা বিষয়াদির বিজ্ঞাপন ও যেকোন ধরণের বাদ্যযন্ত্র বাজানোর ক্ষেত্রে পার্কে নিষেধাজ্ঞা মানতে হবে।
২। আপনার সদস্যদেরকে পার্কে ময়লা না ফেলার বিষয়ে অনুরোধ করলে আমরা কৃতজ্ঞ হব। মিটিং এ আসা লোকজনের ফেলা ময়লা পার্কের কর্মীদের সাধারণ ডিউটি ফেলে পরিষ্কার করতে আসার প্রয়োজন হলে আয়োজকদেরকে তার জন্য অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
৩। এসব শর্তে আপনারা রাজি থাকলে আমরা খুশি হব।
৪। মেট্রোপোলিস পুলিশ কমিশনার ও হাইড পার্ক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে এই চিঠির কপি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
আপনার বিশ্বস্ত
স্বাক্ষরিত
জি আর হারট
৯৯। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটির আহ্বায়কের একটি চিঠি | অ্যাকশন কমিটির স্টিয়ারিং কমিটি | ২৯ অক্টোবর, ১৯৭১ |
<৪,৯৯,১৭৩–১৭৪>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রঃ (পৃষ্ঠা নং ৩০২৬-২৮)(চতুর্থ খন্ডঃ ১৭৩-৭৫)
ভাষান্তরঃ মুহসীন
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জন্যে অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ইসি ৩
টেলিফোন নম্বরঃ ০১-২৮৩৫৫২৬/৩৬২৩
২৯ অক্টোবর, ১৯৭১
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
গণপ্রজাতন্ত্রী ভারত
মহামান্য,
ব্রিটেনে আপনার সমীহপূর্ণ অভ্যাগমন উপলক্ষে এই দেশে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের পক্ষ থেকে আপনাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন জানাই এবং সেই সাথে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অমানুষিক বর্বরতা থেকে বাঁচার জন্যে ভারতে আশ্রয় নেয়া লক্ষ লক্ষ অসহায় বাঙালির প্রতি ভারত সরকার এবং জনগণ যে ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, সেজন্যও রইল আপনার প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
ইয়াহিয়া খানের সেনাবাহিনী এখনও বাংলাদেশে নির্বিচারে গণহত্যা, লুট-পাট, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে। আপনি এ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছেন। পাকিস্তানিদের এই নির্মম অত্যাচার ইতিহাসের অন্য সব বর্বরতাকে ছাপিয়ে গেছে। যে কারণে আপনার দেশে প্রতিদিন অজস্র বাঙালি শরণার্থী আশ্রয় নিচ্ছে। শরণার্থীদের এই প্রবাহ থামবেনা যতদিন না পর্যন্ত তারা নিরাপত্তা, সম্মান এবং মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকার মত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পাবে।
আপনি এ ব্যাপারেও অবগত আছেন যে, বিগত ২৪ বছর ধরে কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতিকে অপদখল করে রেখেছে এবং রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকে শোষণ করে আসছে। আমাদের প্রিয় জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা প্রত্যাহারের ঘোষণা না দিয়েই যখন ইয়াহিয়া খানের সৈন্যরা আমাদের নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালালো, আমরা তা প্রতিহত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিলাম এবং আনুষ্ঠানিকভাবে সরকার গঠন করে বাংলাদেশের প্রতিনিধি নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম।
নিজস্ব ভূখণ্ডের পাশাপাশি আমাদের সংস্কৃতি, চিন্তা এবং অভ্যাসের বিচারে আমরা এখন আলাদা এক জাতি এবং ইতোমধ্যে আমরা সুবিশাল স্বাধীন অঞ্চলসমূহের অধিকারী।
জাতিসংঘ সনদের অধীনে প্রতিশ্রুত জাতিগত আত্ন-নিয়ন্ত্রণের অধিকার চর্চার নিমিত্তে আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি। এখন এই বাস্তবতাকে স্বীকৃতি দেয়া বিশ্বসম্প্রদায় এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের কর্তব্য।
আমরা তীব্রভাবে আশা করি যে, আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশের সরকার হিসেবে আপনি সানন্দে খুব দ্রুত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পদক্ষেপ নেবেন।
আপনার বিশ্বস্ত,
আজিজুল হক ভূঁইয়া
আহ্বায়ক
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অ্যাকশন কমিটির পরিচালনা কমিটি
<৪,১০০,১৭৫>
অনুবাদকঃ মুহসীন
১০০। বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি আবু সাঈদ চৌধুরির কাছে লিখিত নর্দাম্পটন অ্যাকশন কমিটির সম্পাদকের একটি চিঠি | বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি | ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১ |
প্রেরকঃ বাংলাদেশ অ্যাকশন কমিটি
২১, ক্যাস্টিলিয়ান স্ট্রিট,
নর্দাম্পটন।
৩০ অক্টোবর, ১৯৭১
প্রাপক
জনাব এ এস চৌধুরী,
বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি
১১ গোরিং স্ট্রিট
লন্ডন ইসি ৩
জনাব,
আমি আপনার ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ তারিখে পাঠানো চিঠির প্রসঙ্গে লিখছি। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে, আমরা সম্প্রতি কোন তহবিল সংগ্রহ করতে পারিনি। আপনার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি যে, স্বাধীনতা আন্দোলনে কার্যকরী ও সক্রিয় ভূমিকা পালনের নিমিত্তে পূর্ববর্তী অ্যাকশন কমিটি ভেঙে নতুন নর্দাম্পটন অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
আপনি জেনে খুব আনন্দিত হবেন যে, ইতোমধ্যে আমরা কাপড়-চোপড় (পায়জামা ও শার্ট) এবং অর্থ সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছি। সংগৃহিত জামা-কাপড় খুব শীঘ্রই আপনার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এখানে নর্দাম্পটনে আমার সহকর্মী বাংলাদেশিরা আপনার সাথে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। অনুগ্রহ করে আমাদের জানাবেন আপনি কবে, কখন পরিদর্শনে আসতে পারবেন, যেন তদানুসারে একটি সভার আয়োজন করা যায়। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি যে, আপনার আগমন আমাদের লোকদের বিশ্বাস ও আস্থাকে সতেজ করবে এবং এই উদ্যম দিয়ে তাঁরা দেশের স্বার্থে স্বাধীনতা যুদ্ধে আরো উদারভাবে কাজ করতে পারবে। এখন থেকে আমাদের কার্যক্রম সাপ্তাহিকভাবে চলবে।
আপনার অবগতির জন্যে “নতুন নর্দাম্পটন অ্যাকশন কমিটি”-র সদস্যদের নামের তালিকা নিচে উল্লেখ করে দিলামঃ
১. সভাপতিঃ জনাব এ এইচ চৌধুরী
২. সহ-সভাপতিঃ জনাব ইসরাইল আলি
৩. সাধারণ সম্পাদকঃ জনাব বি মিয়া
৪. যুগ্ম সম্পাদকঃ জনাব ইরশাদ হোসাইন
৫. কোষাধ্যক্ষঃ জনাব আব্দুল আহাদ
অফিসের নতুন ঠিকানাও উপরে দিয়ে দেয়া হয়েছে। অনুগ্রহ করে উপরের ঠিকানাটি সংগ্রহে রাখবেন।
বি মিয়া
সাধারণ সম্পাদক।
<৪,১০১,১৭৬-১৮৪>
অনুবাদকঃ অভি সরকার
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১০১। বৃটেনে বাংলাদেশের ছাত্রদের প্রথম জাতীয় সম্মেলনের একটি প্রচার পুস্তিকা | বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এ্যাকশন কমিটি,গ্রেট বৃটেন | ৩০ অক্টোবর, ১৯৭১ |
যুক্তরাজ্যে প্রথম বাংলাদেশ জাতীয় ছাত্র সম্মেলন
৩০ অক্টোবর ১৯৭১
হেনরি থরটন স্কুল
ক্ল্যাফ্যাম কমন, সাউথসাইড
লন্ডন ডব্লিউ ৪
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশে ছাত্রসংগ্রাম কমিটি
৩৫ গ্যামেজেস বিল্ডিং
১২০ হলবর্ন, লন্ডন ইসি১
টেঃ 01-405-5917
“এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।”
- শেখ মুজিবুর রহমান
রাষ্ট্রপতি, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
“ধ্বংসস্তুপ এর মধ্য থেকে একটি নতুন বাংলাদেশ উঠে আসবে, যা শান্তি, গণতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বোধের প্রতি অনুগত থাকবে। এই দেশটি তৈরি হবে ধর্মমত, ভাষা, সংস্কৃতি এবং জাতীয়তার ভিত্তির ওপর এবং এটি টিকে থাকবে আমাদের সময়ে হতে থাকা এই মহাসংগ্রামের অভিজ্ঞতার সূত্রে।”
-তাজউদ্দীন আহমেদ
প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশ
খন্দকার মোশতাক আহমেদ, পররাষ্ট্র ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বার্তা:
“আমি জানতে পেরে অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে, আগামী ৩০ অক্টোবর, লন্ডনে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় ছাত্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশি ছাত্রগণ আমাদের পবিত্র মুক্তিযুদ্ধের জন্য বিশ্ব জনমতকে আমাদের দিকে ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তোমাদের সম্মেলনের সর্বাঙ্গিন সাফল্য কামনা করছি। জয় বাংলা”। (তারযোগে প্রাপ্ত)
আমরা বাংলাদেশকে এই পাশবিক, সকল নীতিনৈতিকতা বর্জিত পাপীদের দখলদারি থেকে যে কোন মূল্যে মুক্ত করেই ছাড়ব।
হাতের কাছে যা কিছু আছে তা নিয়েই শত্রুকে আঘাত কর। দৃঢ়ভাবে আঘাত কর, ধ্বংস কর, সমস্ত অস্তিত্ব ধুলায় মিশিয়ে দাও। আমাদের দেশের নারীপুরুষের জীবন এবং সম্মান রক্ষার্থে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জনগণকে এগিয়ে আসতে বল, যেন তারা আমাদের দেশের নাগরিকদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে পারে, বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে পারে।
- কর্নেল এম. এ. জি. ওসমানী
সর্বাধিনায়ক, বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী
“আমি জেনে খুশি হয়েছি যে, লন্ডনে যুক্তরাজ্যে বসবাসকারী ছাত্রদের একটি সম্মেলন হতে চলেছে। আমি সম্মেলনের সর্বাঙ্গিন সাফল্য কামনা করি। আমি আন্তরিকভাবে চাই, তাঁদের লালিত স্বপ্ন এবং অনুগত প্রচেষ্টা যেন সাফল্যের মুখ দেখে।
দেশমাতৃকার নিদারুণ মনস্তাপ অনুভূত হয় সঙ্কল্প, বীরত্ব এবং সহনশীলতার মাঝেই। দেশের যুবসমাজের সাথে আমার সম্পর্ক খুব গভীর এবং তাঁদের সাফল্যে আমি গর্ববোধ করি। সত্যিকারভাবেই বাংলাদেশের যুবসমাজ সত্য এবং দেশপ্রেম দ্বারা অনুপ্রাণিত।
আবু সাঈদ চৌধুরী
বাংলাদেশ সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি
শুভেচ্ছা বক্তব্য
সম্মানিত বিচারপতি, সুধীবৃন্দ, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বন্ধুগণ এবং প্রতিনিধিবৃন্দ:-
প্রথমবারের মত অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্রদের ঐতিহাসিক সম্মেলনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ছাত্রজনতার পক্ষে আপনাদেরকে সসম্মানে স্বাগত জানাচ্ছি। এটি ঐতিহাসিক, কেননা বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে সমর্থন ও ঐক্য প্রকাশের লক্ষ্যে এখানে এটিই প্রথম আন্তর্জাতিক সমাবেশ।
আমরা যুদ্ধ করছি। আমাদের নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা মূলত যুদ্ধ করছি, এটি সত্যি। কিন্তু এ কথা কেউ যেন ভুলে না যায় যে, আমাদের এ যুদ্ধ মানবতার জন্যও। পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাংলাদেশে যেভাবে মানবতাকে এবং মানবসভ্যতাকে কলংকিত করেছে, তা এর আগে কখনও হয় নি। মানবতার বিরুদ্ধে পাকিস্তান জঘন্য অপরাধ করেছে। বিশ্ব এটিকে এড়িয়ে গেলে তা খুবই দুঃখজনক হবে।
মুক্তিযুদ্ধে আমরা প্রত্যেক শুভবুদ্ধির মানুষের সমর্থন এবং বিবেচনাবোধের ঐক্য চাই, কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তার মানবতাবিরোধী আচরণের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সোচ্চার সমর্থন আমাদের কাম্য। এ সম্প্রদায় যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে বাংলাদেশের ভুক্তভোগী সাড়ে সাত কোটি জনতা মানবতার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেললেও অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। এবং এর ফলে পৃথিবী পশুদের আবাসস্থলে পরিণত হবে শীঘ্রই। এখানে আমরা যারা আছি, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের সবারই লড়াই করার একটি কারণ রয়েছে, যেটি আমাদের বিশ্বকে আরও সুন্দর করবে। এটি আমাদের পবিত্র দায়িত্ব, এবং আমাদের এ ভার বহন করতেই হবে, যাতে করে আমাদের বংশধরদের জন্য এ বিশ্ব আরও নিরাপদ হয়ে ওঠে। আমাদের এ সম্মেলন আহ্বান করার এটি একটি প্রধান উদ্দেশ্য।
তবে, বাংলাদেশের লড়াকু ছাত্রজনতার শক্তির অংশ হিসেবে, বিশ্বের সরকার এবং জনগণের এই ফোরামে এটি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয়। লাখো জনতার আত্মদান বৃথা যেতে পারে না। এছাড়াও আমরা আমাদের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকন্ঠিত। পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার উদ্দেশ্যে আমাদের সাবধানবাণী, শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ক্ষতি হলে উপমহাদেশের শান্তির অভূতপূর্ব ক্ষতি সাধিত হবে। আমরা মরতে শিখেছি, আর কোন শক্তি আমাদেরকে শান্তি-গণতন্ত্র-ন্যায়বিচারের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে বিচলিত করতে পারবে না।
এ সুযোগে আমরা ধন্যবাদ জানাতে চাই বিশ্বের সে সব মানুষদের, যাঁরা আমাদের দুর্দশায় এগিয়ে এসেছেন। আমরা আমাদের এখানে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সম্মানিত অতিথিদেরকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সুধীমণ্ডলী, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া এ সম্মেলন আয়োজন করা সম্ভব হতো না।
আপনাদের আবারও সাদর অভ্যর্থনা জানাই।
জয় বাংলা!
কর্মসূচী
সকাল ১১টা – বেলা ১টা রিপোর্ট এবং পুনরালোচনা (শুধুমাত্র বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য)
বেলা ১টা – ২টা মধ্যাহ্ন বিরতি
বেলা ২টা – বিকেল ৪টা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (সকলের জন্য)
ক) বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সম্মেলন উদ্বোধন করবেন।
খ) অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখবেন-
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জনাব পিটার শোর, এমপি
জনাব পিটার হেইন, ইয়াং লিবারেলস এর চেয়ারম্যান
জনাব সিলভিয়া মুর, কমিটি ফ্রান্সিস দে সলিদারিতে আভেক লা বাংলাদেশের প্রতিনিধি
জনাব ফিলিপ ক্লার্ক, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি
জনাব সৈয়দ আব্দুস সুলতান, এমএমএ
বিকেল ৪ টা – ৪.৩০ টা চা বিরতি
বিকেল ৪.৩০ টা – ৬টা আলোচনা সভা (সকলের জন্য)
ক) বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী সভাপতিত্ব করবেন
খ) আলোচনা শুরু করবেন:
জনাব রেহমান সোবহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিডার এবং ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স এর মাননীয় অ্যাম্বাসাডর
ড: আজিজুর রহমান খান, বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির অর্থনীতিবিদ
জনাব মার্টিন এডনি, গার্ডিয়ান পত্রিকা
গ) উপস্থিত দর্শকবৃন্দের মধ্যে যে কেউ বক্তব্য রাখতে পারবেন
বিকেল ৬.৩০ – সন্ধ্যা ৭.৫০ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
নৃত্যনাট্য – “অস্ত্র হাতে তুলে নাও”
পরিবেশনায়, বাংলাদেশ জনতা সাংস্কৃতিক সমাজ
সন্ধ্যা ৭.৫০ – ৯.৩০ “ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা” (শুধুমাত্র বাংলাদেশের ছাত্রদের জন্য)
আমাদের সংগ্রাম
পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫ মার্চে যখন “৪৮ ঘন্টার মধ্যে” রাজনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব ধূলিসাৎ করার সুস্পষ্ট নির্দেশনাসহ যখন পূর্ব পাকিস্তানে হামলা শুরু করল, প্রায় দশ লক্ষ লাশের কবরে তারা সত্যিকার অর্থে পাকিস্তানের ধারণাটিরই কবর তৈরি করলো, কেননা ১২০০ মাইল দূরত্বে অবস্থিত দু’টো আলাদা অংশ দ্বারা গঠিত পাকিস্তানের ধারণাটিই ছিল পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৪৬ সালের জনসম্মতিতে পূর্ব বাংলা প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে নতুন একটি রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল, যেখানে পাঞ্জাবে এবং উত্তর পশ্চিমের অন্যান্য রাজ্যসমূহে সমগ্র ভারত কংগ্রেসেরই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল।
কিন্তু ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চে ঘোষিত লাহোর প্রস্তাবে যে “সার্বভৌম এবং স্বায়ত্তশাসিত রাষ্ট্র”-এর সঙ্ঘের ধারণা দেয়া হয়েছিল, সেটি আর বাস্তবায়িত হয় নি। ১৯৪৭ সালের আগস্টে স্বাধীনতা লাভের পরপরই “সন্দিহান” এবং জবরদখলকারী লোকজন নিজেদেরকে সদ্যস্বাধীন রাষ্ট্রের নব্যঔপনিবেশিক প্রভুস্থানীয় হিসেবে গণ্য করা শুরু করলো। তারা তাদের শক্তি অর্জন করলো পাঞ্জাবি অধ্যুষিত সেনাবাহিনী থেকে। যে বাঙ্গালিরা রাষ্ট্রের ৫৬ শতাংশ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে, তাদেরকে ছলে বলে কৌশলে সেনাবাহিনী থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হলো, “তারা যোদ্ধা জাতি নয়” এই অজুহাতে।
পরবর্তী ২৪ বছর ছিল দমন-পীড়ন এবং সাড়ে সাত কোটি মানুষকে মৌলিক অধিকারবঞ্চিত করার দীর্ঘ ইতিহাস। পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে যৌথ নির্বাচনী ব্যবস্থাভিত্তিক ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সমর্থন করার সময়, রাষ্ট্রীয় ভাষাগুলোর একটি হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মাতৃভাষাকে গ্রহণ করার দাবিতে, ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে তাদের ভোটদানে – যখনই সংখ্যাগরিষ্ঠরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে তাদের মত প্রকাশের চেষ্টা করেছে, তখনই “ষড়যন্ত্র” আবিস্কৃত হয়েছে। ফলশ্রুতিতে অনিবার্যভাবেই এসেছে নির্মম নিপীড়ন।
“সৈনিকতায় সততার পরাকাষ্ঠা” প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে এদেশের সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলেন, তখন হয়তো সারা বিশ্বকে তিনি বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন যে, তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনর্বহাল করতে চান। কিন্তু এখন এই “সৎ সৈনিক” এবং তার সামরিক শাসনের পৈশাচিক ক্রোধের ভয়াবহতা প্রত্যক্ষ করেছে এ বিশ্ব, কারণ তারা যেভাবে চেয়েছিল, সেভাবে বাঙালিরা ভোট দেয় নি।
পেছন ফিরে তাকালে যুক্তিসংগতভাবেই ধরে নেয়া যায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব (যাদেরকে “ঝামেলাবাজ” মনে করা হত), “কাফের” এবং “ভারতের চর” হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। যেভাবে তারা এ নির্দেশ পালন করেছে, তা হিটলার, চেঙ্গিস খান, আটিয়া এদেরকেও লজ্জ্বা দিত। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিশেষে দশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার নারী ধর্ষিত হয়েছে, গ্রাম-গঞ্জ জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, ৯০ লক্ষাধিক বাঙালি সীমান্ত অতিক্রম করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু “৪৮ ঘণ্টার লক্ষ্যমাত্রা” অর্জিত হয় নি। বাঙালিরা লড়তে জানে না, এ ভ্রান্ত ধারণা ভেঙ্গে গেছে। প্রায় সাত মাসেরও অধিক সময় ধরে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী এবং গেরিলারা পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে তটস্থ করে রেখেছে, তাদের বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি সাধন করছে। যেখানেই মুক্তিসেনারা ছুটে যাচ্ছে, সেখানেই স্থানীয় জনগণের সর্বাত্মক সহায়তা পাচ্ছে। অন্যদিকে, এমনকি সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাকিস্তানি সংবাদপত্রগুলোতেও দালালদের প্রাপ্য চরম পরিণতির খবরে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
এখন ভীতসন্ত্রস্ত সামরিক জান্তা নিজেদের মুখরক্ষার জন্য এই ইস্যুকে টেনে হিঁচড়ে ধাপে ধাপে আরও বড় করছে। তারা তাদের নিজ কৃতকর্মের জন্য ভারতকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। ক্ষমতার রাজনীতির এ খেলায় পরিহাসের বিষয় এই যে, ইতিহাসের সর্ববৃহৎ মানবসৃষ্ট গণদুর্যোগেও যতজন বিচলিত হয় নি, ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যবর্তী আরেকটি যুদ্ধের বিপদসম্ভাবনায় বিশেষ করে সরকারী কর্মকর্তাদের ভেতরে তার চেয়েও বেশিসংখ্যক মানুষ বিচলিত হচ্ছে।
সংবাদপত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু মহাশক্তি মার্চের ১ তারিখের পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়ার পক্ষে। কিন্তু সাড়ে সাত কোটি বাঙালি তা চায় না। বাঙালি জাতি মুক্তি চায়, স্বাধীনতার চেয়ে কম কিছু তারা মেনে নেবে না। দশ লক্ষাধিক বাঙালি ভাইবোনকে যে সেনাবাহিনী হত্যা করেছে, সে সেনাবাহিনীকে অস্ত্রসজ্জিত করার জন্য ৬০ শতাংশেরও বেশি খরচ হচ্ছে, এটি জানার পর কি কোন বাঙালি আর এক পয়সাও কর দেবে?
না। পাকিস্তান মৃত, দশ লক্ষেরও বেশি লাশের সাথে সমাহিত হয়েছে পাকিস্তান। মুক্তিবাহিনী এগিয়ে যাচ্ছে্, আর বেশি দেরি নেই, শীঘ্রই তারা বাংলাদেশের পবিত্র মাটিকে শত্রুছাড়া করবে। এ অলঙ্ঘনীয়, আমেরিকার অস্ত্রসহায়তা একে মুছে ফেলতে পারবে না। কেননা, আমেরিকার সমস্ত সৈন্যসামন্ত, অস্ত্রশস্ত্র এবং সম্মান আমেরিকা ভিয়েতনামে নিয়োগ করে রেখেছে।
আমাদের কার্যক্রম
আমরা আজ এখানে সমবেত হয়েছি বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে আপনাদেরকে জানানোর জন্য। আমরা আপনাদের অনুরোধ করব, আপনারা ১৯৭১ সালের মার্চের শুরুর দিনগুলোর দিকে ফিরে তাকান, আপনারা ফিরে তাকান বাংলাদেশে ১৯৬৯ সালের গৌরবময় আন্দোলনের দিনগুলোর দিকে এবং আরও পেছনের সময়গুলোতে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অন্তহীন প্রচেষ্টা, আন্তরিক রাজনৈতিক পরিকল্পনা এবং অক্লান্ত মহানুভবতা ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানকে বাঁচাতে, যার দুই অংশের মধ্যে শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাস ছাড়া আর কোন কিছুতেই কোন মিল ছিল না। এবং বিশ্বাসের এই ঐক্য, আধ্যাত্মিক এবং আত্মিক যেমনই হোক না কেন, সেটি তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর, যাদের সিংহভাগই পশ্চিম পাকিস্তানের, তাদের মধ্যে তিলমাত্র শিষ্টাচার এবং নৈতিকতা জাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলেই পাকিস্তানের এ রক্তাক্ত অবসান সংঘটিত হল।
এই ২৪ বছরে বাংলাদেশে অনেকেই ছিলেন, যাঁদের দূরদর্শিতায় ধরা পড়েছিল আজকের দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো। আমরা সবচেয়ে পরিচিত নামগুলো যদি নাও বলি, আমরা বলতে পারি যে, আমাদের অনেক শুভানুধ্যায়ীরাই বিশ্বাস করতেন, পাকিস্তান টিকবে না। আবার আমাদেরই অনেক বন্ধু ছিলেন, যাঁরা বিশ্বাস করতেন এবং প্রচার করতেন, তাঁরা প্রথমত বাঙালি এবং তার পর পাকিস্তানি। মূলধারার পাকিস্তানি ছাত্রনেতৃবৃন্দ এ ধরণের প্রচারণাকে উপহাস করতেন। আমরা এখানে দাঁড়িয়ে এসব বলছি শুধুমাত্র এটুকু দেখাতে যে, এমনকি ১৯৭১ সালের শুরুর দিনগুলোতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কী ধরণের মানসিক এবং পারস্পরিক দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করতো।
তারপরই, বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নগ্নতম, ঘৃণ্যতম অভিসন্ধিতে জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করা হলো, প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর সার্বজনীন ভোটাধিকারের নীতিতে অনুষ্ঠিত প্রথম সাধারণ নির্বাচনে জনগণের বিশাল সমর্থন পেয়ে যে সংসদে বাংলাদেশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল। ঠিক তখনই, মুহূর্তের মধ্যে জাতির বোধোদয় হলো, এখনই সময় পাকিস্তান ফেডারেশনের মিথ্যের মুখোশ খুলে ফেলার। দেশে ছাত্ররাই এ আন্দোলনের সম্মুখভাগে ছিল। লন্ডনে, আমরা বিশাল সংখ্যক ছাত্ররা র্যালিতে যোগ দিলাম, এবং সিদ্ধান্ত নিলাম যে, পাকিস্তানের প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই, আমাদের সামান্য শক্তিটুকু দিয়ে হলেও আমাদের নিজেদের ভূমি, স্বাধীন এবং সার্বভৌম বাংলাদেশকে, আমাদের নিজেদের জাতিকে গড়ে তুলতে হবে। পার্টির সাথে সম্বন্ধযুক্ত সকল ছাত্রদের মনেও একই চিন্তার উদয় হলো। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক বিশাল সম্মেলনে, দু’ঘণ্টার মধ্যে ১১ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ ছাত্রসংগ্রাম কমিটি নামের ছাত্র কমিটি গঠিত হলো। এ কমিটি প্রয়োজনবোধে নিজেরা ভোটপ্রয়োগ করে নতুন সদস্য নির্বাচন করতে সক্ষম।
যদিও ৭ মার্চ এ কমিটি গঠিত হয়, বর্তমান আন্দোলনে আমরা ছাত্ররা ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকেই সরাসরি নিয়োজিত ছিলাম। ঐ সময় লন্ডনের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানি জান্তার জাতীয় সম্মেলন স্থগিত করার কূটকৌশল অনুমান করে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রতিবাদ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আমরা মার্চের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত দিনে ২৪ ঘণ্টা পাকিস্তানের হাইকমিশনের ওপর নজর রাখছিলাম। যুক্তরাজ্যে ৭ই মার্চ ছিল এ আন্দোলনের আরও একটি মাইলফলক, যখন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার বাঙালি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে যোগদান করে। আমরা এ সমস্ত সমাবেশ এবং র্যালির আয়োজন-যোগদানের অগ্রভাগেই ছিলাম।
এ সংগ্রাম কমিটি সত্যি বলতে গড়ে উঠেছে রাস্তায় এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে এ সংগ্রাম কমিটি কাজ করে গেছে; আমরা এতোটাই আবেগ দিয়ে সম্পৃক্ত ছিলাম যে, আমরা প্রতিটি পরিস্থিতিতে এমনিতেই সাড়া দিয়েছি, পরিকল্পনা করে সময় নষ্ট না করে। ঐসব দিনগুলোতে বিশ্ববিবেককে জাগিয়ে তোলার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় আমরা আমাদের শেষ শক্তিটুকু ঢেলে দিয়েছি। আমরা আমাদের স্মারকলিপি ও আবেদনপত্র নিয়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে গিয়েছি। আমরা ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট, যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন, ভারত, শ্রীলংকা এবং বার্মার দূতাবাসে একাধিকবার গিয়েছি।
ঐ সময়ে আমরা বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রের প্রধানবৃন্দ, জাতিসংঘের মুখপাত্রকে বাংলাদেশের জনগণের দুরবস্থার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করে টেলিগ্রাম পাঠিয়েছি। ঐ সময়ে আমরা বিশ্বকে এটাই জানাতে চেয়েছি যে, বাংলাদেশে যা ঘটছে তা একান্তই গণহত্যা।
শুরু থেকেই আমরা বাংলাদেশের ব্যাপারে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদেরকে পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিই। আমরা তাঁদের সাথে দেখা করি এবং তাঁদেরকে আমাদের কার্য বিবরণী, সংবাদপত্রের খণ্ডাংশ এবং অন্যান্য দলিল প্রদান করতে থাকি। আমরাই প্রথম গ্রুপ যাঁরা ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সাথে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করি। আমরা জনাব পিটার শোরের সাথে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎ করার পর তিনি শেখ সাহেবের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এরপর থেকে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
জনাব পিটার শোর, জন স্টোনহাউজ, ব্রুস ডগলাস-মান, ফ্রেড ইভান্স, টবি জেসেল এবং অন্যান্য এমপিদের সমর্থন এবং বিবেচনাবোধের জন্য তাঁদের প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। সংসদ সদস্যদের সাথে আলোচনার সময় আমরা বারবারই স্পষ্ট করে বলেছি যে, বাংলাদেশের জনগণ পূর্ণাংগ স্বাধীনতা চায়। আমরা একই উদ্দেশ্য সামনে রেখে অন্যান্য পার্লামেন্ট সদস্যদেরকেও লিখেছি। আমরা তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটরদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে চলছি। যেসব সিনেটর ১৯৬১ সালের বৈদেশিক সহায়তা আইনের স্যাক্সবি-চার্চ সংশোধনীর (এস ১৬৭৫) সমর্থনে ছিলেন, আমরা তাঁদের সাথে যোগাযোগ রেখেছিলাম। আমরা সেসব সিনেটরদের কার্যক্রম আনন্দের সাথে উল্লেখ করছি এবং বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন জ্ঞাপনের কারণে তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জুলাইয়ের শেষদিকে আমরা লন্ডনে আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী ৫,০০০ জন আমেরিকান আইনজীবীদের সাথে যোগাযোগ করি। আমরা তাঁদেরকে বাংলাদেশের ওপর কয়েকটি দলিল প্রদান করি, পাশাপাশি তাঁদেরকে মানবতার স্বার্থে এগিয়ে আসার আবেদন জানাই। আমরা আনন্দের সাথে আপনাদের জানাচ্ছি যে, আমেরিকাতে ফিরে গিয়ে তাঁদের অনেকেই সংশ্লিষ্ট সিনেটর এবং কংগ্রেস সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেন।
আমাদের রয়েছে বিস্তৃত প্রকাশনা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কার্য বিবরণীগুলো। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সেখানে প্রকাশিত হয়েছে। এই কার্য বিবরণীগুলো সংবাদমাধ্যমে, পার্লামেন্ট সদস্যদের কাছে এবং অন্যান্য সংস্থায় পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা ২০টি কার্য বিবরণী প্রকাশ করেছি। এগুলো ছাড়াও আমরা বিভিন্ন উপলক্ষে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছি। বিশ্ববাসীকে জানানোর জন্য আমরা নিম্নোক্ত পুস্তিকাগুলো পুণঃপ্রকাশ করেছি:
১) প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, যা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সৃষ্টি ঘোষণা করে
২) পূর্ব পাকিস্তানে সংঘাত – পটভূমি এবং সম্ভাবনা
৩) গণহত্যা – কেন বাংলাদেশেই?
৪) কেন আমরা বাংলাদেশ চাই
৫) ছয় মাসের মুক্তির সংগ্রাম
আমরা স্থানীয় এবং জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি। প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছিল টাইমসে, যেখানে “পূর্ব বঙ্গে গণহত্যা” বন্ধে বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানানো হয়েছিলো। এটি প্রকাশিত হয় ২৫ মার্চের আগে। পরবর্তীটি ২৭ মার্চে গার্ডিয়ানে প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন”। ঐ সময়ে মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার ঘোষণা করেন। পরবর্তী বিজ্ঞাপনটি গার্ডিয়ানে ২০ জুলাই “বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিদের প্রতি খোলা চিঠি” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। শেখ সাহেবের কথিত বিচারের সংবাদে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের পাশাপাশি আমরাও এগিয়ে আসি। আমরা ১৬ আগস্ট “বিশ্ববাসী জেগে উঠুন। এখনই প্রহসনমূলক বিচার বন্ধে কিছু করুন” শিরোনামে টাইমস পত্রিকায় অর্ধপৃষ্ঠাব্যাপী বিজ্ঞাপন দিই। আমরা স্থানীয় সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা “জনমত”-এও একটি বিজ্ঞাপন দেই, যেখানে আরও অনেক কিছুর পাশাপাশি স্থানীয় বাঙালি কূটনীতিকদেরকে পাকিস্তানি হাইকমিশনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার অনুরোধ জানানো হয়। এ বিজ্ঞাপনটি ছাপা হয় ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট তারিখে। ঠিক ঐদিনই “বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিন” এ মর্মে বিশাল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ঐ দিনই পাকিস্তান হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ পাকিস্তান হাইকমিশনের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন।
বিভিন্ন সংস্থায় তদবির করার কাজটি ছিল আমাদের জন্য খুব আগ্রহ আর উদ্দীপনার। আমরা এখানে সংক্ষেপে উল্লেখ করবো আমাদের অংশগ্রহণ করা পার্টি এবং ইউনিয়ন অধিবেশনগুলোর কথা। জনাব আনিস আহমাদ এবারডিনে জাতীয় খনি উত্তোলনকারী সমিতির জাতীয় অধিবেশনে যোগদান করেন। সেখানে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করা হয়। তাছাড়াও, জনাব আনিস আহমাদ এবং আমাদের সভাসঙ্গী জনাব এ জেড এম হোসেইন স্কেয়ারবোরোতে পরিবহন এবং সাধারণ কর্মী সমিতির অধিবেশনে তদবির করেন। সে অধিবেশনে কোন প্রস্তাব পাস না হলেও, মহাসচিব জনাব জ্যাক জোনস আমাদের প্রতিনিধিদের কাছে তাঁদের জাতীয় নির্বাহমণ্ডলীর সভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
আমাদের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত লিবারেল পার্টি, লেবার পার্টি এবং কনজারভেটিভ পার্টির অধিবেশনে তদবির করেন। লিবারেল এবং লেবার পার্টি অতঃপর বাংলাদেশের ওপর প্রস্তাব পাস করেন। দূর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কনজারভেটিভ পার্টির অধিবেশনগুলো থেকে এরকম কোন সাফল্য অর্জন করতে পারি নি।
আমাদের বেশ কয়েকজন বন্ধু বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে গিয়ে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং বাংলাদেশের পক্ষে প্রচারণা চালান। আমাদের কমিটির সদস্য জনাব ওয়ালি আশরাফ বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে বুদাপেস্টে বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। ঘটনাক্রমে, সেটিই ছিল প্রথম আন্তর্জাতিক ফোরাম যেখানে বাংলাদেশ অংশগ্রহণের অনুমতি পায়।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং নজরুল ইসলাম ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশের আমন্ত্রণে হল্যান্ডে একটি সংবাদ সম্মেলনে যোগদান করতে হল্যান্ড যান। জনাব ওয়ালি আশরাফও একই সম্মেলনে বিচারপতি এ এস চৌধুরীর পক্ষে যোগদান করেন। তাঁরা ইউরোপা কমিটি গঠন করেন এবং তাঁরা বেলজিয়ামে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করেন।
আমরা প্যারিসে আন্তঃপার্লামেন্ট সমিতির অধিবেশনে যোগদান করার জন্যও প্রতিনিধি প্রেরণ করি। তাঁরা হলেন ড: এ এইচ প্রামাণিক, নজরুল ইসলাম, এ জেড এম মোহাম্মদ হোসেন। তাঁদের তদবির সফল হয়। অন্তঃপার্লামেন্ট সমিতি অধিবেশনে ৭০টি দেশ অংশগ্রহণ করে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এবং লাতিন আমেরিকান অনেকগুলো দেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ সমস্যা প্রসঙ্গে আগ্রহ এবং বিবেচনাবোধ প্রদর্শন করে। অধিবেশন শেষে বাংলাদেশের ওপর একটি প্রস্তাব পাস করা হয়।
নীতিনির্ধারণী কমিটির অনুরোধে আমরা জনাব এ জেড এম হোসেনকে রোমানিয়ার সিনাইয়ায় পাগ-ওয়াশ বিজ্ঞান এবং বিশ্বশান্তি অধিবেশনে প্রেরণ করি।
আমরা আগেই উল্লেখ করেছি এ, বাংলাদেশের সমর্থনে আমরা মহাদেশের বেশ কয়েকটি জায়গায় ইনফর্মিং কমিটির সদস্যদের প্রেরণ করেছি। “ইউরোপা”র আদলে হল্যান্ডে গঠিত কমিটিটি মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া, জার্মানি এবং বেলজিয়ামে কর্মরত। এছাড়াও আমরা Comite Francais De Solidarite Avec le Bangladesh গঠনেও অংশগ্রহণ করি। আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, তাঁদের প্রতিনিধিরা এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের সমর্থনে অন্যান্য মহাদেশীয় কমিটিগুলোর সাথে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছি এবং তাঁদেরকে আমাদের প্রকাশনাসমূহ প্রকাশের সাথে সাথেই প্রেরণ করছি। একই লক্ষ্য সামনে রেখে আমরা বাংলাদেশের সমর্থনে গঠিত আমেরিকার কমিটিগুলোর সাথেও যোগাযোগ রেখেছি। আমরা Systeme Bibliograpique International Sur Le. Genocide, Les Crimes Contre L’Humanite Et Les এদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমরা আরব অঞ্চলে এবং আরব সাগর তীরবর্তী রাষ্ট্রসমূহে বসবাসরত অনেক বাঙালির সাথেই ক্রমাগত যোগাযোগ রেখে চলেছি।
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত আমাদের নিজস্ব সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর সাথে অর্থবহ যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমরা একটি সার্বজনীন কেন্দ্রীয় কর্মকমিটি গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ নিই। এ উপলক্ষে ১৯ মার্চ আমরা বাঙালিদের একটি বিশাল সমাবেশ আয়োজন করি। অবশ্য আমাদের মধ্যে পারস্পরিক মতামতে সমঝোতা না আসায় আমাদের পক্ষে কমিটিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু তাই বলে এ আন্দোলন থেমে থাকেনি। এমনকি সেসব দিনেও আমাদের আন্দোলন আমাদের জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন অংশ থেকে সমর্থন পেয়ে এসেছে।
আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছি এবং প্রত্যেকটিতে অংশ নিয়েছি। লন্ডনে আমাদের আয়োজিত প্রথম পাবলিক মিটিং এ বিচারপতি এ এস চৌধুরী এবং অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জনাব জন স্টোনহাউজ বক্তব্য রাখেন। আমরা এর পর থেকে বেশ অনেকগুলো র্যালি, মিছিল এবং সমাবেশ আয়োজন করি। আমরা সফররত পাকিস্তানি ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করি। আমার বন্ধু মানিক চৌধুরী এবং আফরোজ আফগান বাংলাদেশের স্বীকৃতি দাবি করে ১০ ডাউনিং স্ট্রীটের সামনে অনশন ধর্মঘট করেন। আমরা যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের* সামনেও অনশন ধর্মঘট আয়োজন করি। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সকল বাঙালির জীবনে ২৫ মার্চ সন্ধ্যা একটি বাঁক নিয়ে আসে। আমরা আরও অনেক বাঙ্গালির সাথে লন্ডনস্থ পাকিস্তানি দূতাবাসের সামনে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে অংশ নিই। তখন থেকেই আমরা প্রত্যেক বাঙ্গালিকে অনুরোধ করেছি পাকিস্তানের সাথে তাদের সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য এবং এর পর থেকে আমরা আর কখনও পাকিস্তান হাইকমিশনের সম্মুখে প্রতিবাদ সমাবেশে যাই নি। স্থানীয়ভাবে বাঙ্গালিরা সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলে, এর পর আমরা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে প্রতিটি কমিটির সাথে সহযোগিতা করাকে আমাদের মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করি।
বন্ধুগণ, এ রিপোর্টে আমাদের কার্যক্রমের বিস্তারিত বিবরণ দেয়া সম্ভব নয়। আমরা আমাদের কার্যক্রমের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে আপনাদেরকে সংক্ষেপে অবহিত করতে চেষ্টা করেছি। আমরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছি এবং বিশ্বকে আমরা জানাতে চাই যে, এ অবস্থার কোন নড়চড় হবে না।
জয় বাংলা!
পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র সাহায্য পাঠানোর প্রতিবাদে। জনাব এ হাই খান এবং জনাব রাজিয়া চৌধুরী বিচারপতি এ এস চৌধুরীর অনুরোধে তাঁদের অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করেন।
যুক্তরাজ্য বাংলাদেশ ছাত্র কর্মকমিটি কর্তৃক ৩৪ গ্যামেজেস বিল্ডিং, ১২০ হলবর্ন,
লন্ডন ইসি১ থেকে প্রকাশিত
টেলিফোন: ০১-৪০৫-৫৯১৭
লারকুলার লিমিটেড থেকে মুদ্রিত