শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবির ও কর্মকর্তাদের একটি তালিকা | বাংলাদেশ সরকার, লিবারেশন কাউন্সিল, পুর্বাঞ্চলীয় জোন | ————–
১৯৭১ |
কাঠালিয়া বা বড়মুড়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব জালাল উদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব রাজা মিয়া, এমপিএ
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব এ. চৌধুরী
৪ রাজনৈতিক উপদেশক অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ
৫ ” জনাব এম. এ. হামিদ
৬ ” জনাব বেলায়েত হোসেন
৭ ”
৮ শারীরিক উপদেশক জনাব এম.এ.মাজিদ
৯ ”
১০ ”
১১ ”
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিকেল অফিসার জনাব মাহবুবুল আলম এম.বি.বি.এস.
১৪ মেডিকেল সহকারী মো. শহীদুল্লাহ।
চৌটাখোলা যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব খাওয়াজা আহমেদ এমএনএ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী এমএনএ
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব নুরুল হুদা
৪ রাজনৈতিক উপদেশক জনাব মিজানুর রহমান এম.এ.
৫ ” জনাব মাহবুবুল আলম
৬ ” জনাব আব্দুর রহমান
৭ ” জনাব সিরাজউদ্দিন চৌধুরী
৮ শারীরিক উপদেশক জনাব সিদ্দিক আহমেদ
৯ ” জনাব এ.এম.সাইফুল্লাহ
১০ ” জনাব এস. আই. আজিজুর রহমান
১১ ”
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিকেল অফিসার জনাব হাফিজ আহমেদ
১৪ মেডিকেল সহকারী ড. জুলফিকুর ইসলাম, এম.বি.বি.এস.
<003.217.633> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বড়নগক বা চড়মারা যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান অধ্যাপক মো. আব্দুর রউফ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান অধ্যাপক মো. ইউনুস
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব মো. আব্দুল হাকিম
৪ রাজনৈতিক উপদেশক জনাব সায়েদ মতিউল ইসলাম ভুইঁয়া
৫ ” জনাব মো. আব্দুল আওয়াল
৬ ” জনাব মো. আব্দুর রাজ্জাক
৭ ” অধ্যাপক আবুল হাসান
৮ শারীরিক উপদেশক
৯ ”
১০ ”
১১ ছাত্র প্রতিনিধি
১২ মেডিকেল অফিসার
১৩ মেডিকেল সহকারী জনাব মো. আব্দুল মজিদ চৌধুরী
১৪ ড. গোলাম মোস্তফা খাঁন, এমবিবিএস
ড. সিকান্দার হায়াত
হারিনা যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব এম.এ. মান্নান
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব মোশাররাফ হোসেন এমএনএ
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব জিতেন্দ্র প্রসাদ নাথ
৪ রাজনৈতিক উপদেশক জনাব আজিজুল হক চৌধুরী
৫ ” অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ
৬ ” অধ্যাপক নুরুল আবসার
৭ ” অধ্যাপক আব্দুল্লাহ-আল-মামুন
৮ শারীরিক উপদেশক
৯ ”
১০ ”
১১ ”
১২ ছাত্র প্রতিনিধি আবু মো. হাসেম
১৩ মেডিকেল অফিসার ড. এখলাসউদ্দিন এল.এম.এফ.
১৪ মেডিকেল সহকারী জনাব হামিদুল্লাহ (প্যারামেডিকেল)
উদয়পুর বা পলাতনা (I) যুব রিলিফ ক্যাম্প
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান ক্যাপ্টেন এম.এস. আলী, এমএনএ.
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব আব্দুল্লাহ-আল-হারুন, এমপিএ
৩ রাজনৈতিক উপদেশক অধ্যাপক মিহির কুমার দত্ত
<003.217.634> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৪ ’’ অধ্যক্ষ, গোপাল চন্দ্র দাস
৫ ’’ অধ্যাপক মো. রফিজুর রাসুল
৬ ’’ চৌধুরী
৭ শারীরিক উপদেশক
৮ ’’ জনাব আব্দুল বারি খাঁন
৯ ’’
১০ ’’
১১ ছাত্র প্রতিনিধি
১২ মেডিকেল অফিসার
১৩ মেডিকেল সহকারী ড. এস. এল. দে, এমবিবিএস.
১৪ কম্পাউন্ডার
১৫ স্টোর সুপারভাইজার
১৬ স্টোর কিপার
১৭ রিসেপশনিস্ট
হাপানিয়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“গোমতি (I)”
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব আলী আজম, এমএনএ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব আজিজুল হক
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব নাসির হুসাইন
৪ রাজনৈতিক উপদেশক অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ
৫ ” জনাব গোলাম নূর
৬ ” জনাব সিরাজউদ্দিন
৭ ” ইয়াকুত আলী
৮ শারীরিক উপদেশক
৯ ”
১০ ”
১১ ”
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিকেল অফিসার
১৪ মেডিকেল সহকারী
দূর্গা চৌধুরী পাড়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“বুনা”
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব সায়েদ ইমদাদুল বা্রি, এমপিএ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব লিলু মিয়া
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব আব্দুর রউফ
৪ রাজনৈতিক উপদেশক জনাব সামসুল হুদা
৫ ” জনাব দিওয়ান খাঁন খাদেম
<003.217.635> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.217.636> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.217.637> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৬ ” জনাব সারওয়ার জাহান
৭ ” জনাব শামসুল ইসলাম ভুইয়া
৮ শারীরিক উপদেশক
৯ ”
১০ ”
১১ ”
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিকেল অফিসার
১৪ মেডিকেল সহকারী
হাপানিয়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“তিতাস”
ক্রম পদের নাম ব্যাক্তির নাম
১ শিবির প্রধান জনাব কাজী আকবারউদ্দিন আহমেদ
২ সহকারী শিবির প্রধান জনাব আব্দুল হালিম
৩ শিবির পরিদর্শক জনাব হাবিবুর রহমান
৪ রাজনৈতিক প্রশিক্ষক জনাব রঞ্জিত চন্দ্র সাহা
৫ ঐ জনাব মো. ইশতিয়াক
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ শারীরিক প্রশিক্ষক বাচ্চু শিকদার
৯ ঐ
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব মো. ইদ্রিস
১৩ মেডিকাল অফিসার ডা. শান্তি রঞ্জন সাহা, এমবিবিএস
ডা. আমজাদ হোসাইন, এম এলএফ
১৪ মেডিকাল সহকারী বিল্লামঙ্গল ভৌমিক
হাপানিয়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“ব্রহ্মপুত্র”
ক্রম পদের নাম ব্যাক্তির নাম
১ শিবির প্রধান জনাব আফতাবউদ্দিন, এমএনএ
২ সহকারী শিবির প্রধান জনাব কফিলউদ্দিন আহমেদ
৩ শিবির পরিদর্শক জনাব আব্দুল বারি
৪ রাজনৈতিক প্রশিক্ষক জনাব আবু বাকের
৫ ঐ জনাব সিদ্দিকুর রহমান
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ শারীরিক প্রশিক্ষক
৯ ঐ
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিকাল অফিসার
১৪ মেডিকাল সহকারী
হাপানিয়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“যমুনা”
ক্রম পদের নাম ব্যাক্তির নাম
১ শিবির প্রধান
২ সহকারী শিবির প্রধান মোঃ শফিরুদ্দিন আহমেদ, MPA
৩ শিবির পরিদর্শক জনাব সায়েদুর রহমান
৪ রাজনৈতিক প্রশিক্ষক জনাব আব্দুস সাত্তার
৫ ঐ জনাব মনির উদ্দিন
৬ ঐ প্রোফেসর গৌড়াঙ্গ প্রাসাদ মিত্র
৭ ঐ জনাব সিদ্দিকুর রহমান, B.A. B.T
৮ ঐ
৯ শারীরিক প্রশিক্ষক
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ঐ
১৩ ঐ
১৪ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব শহিদুল ইসলাম (ইমতু)
১৫ মেডিকাল অফিসার জনাব আবদুস সামাদ M.B.B.S.
১৬ মেডিকাল সহকারী ড. আই-ইয়ারিপাড়া ডাস, L.M.F.
দূর্গা চৌধুরী পাড়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“ইছামতি”
ক্রম পদের নাম ব্যাক্তির নাম
১ শিবির প্রধান জনাব জামালুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
২ সহকারী শিবির প্রধান জনাব সুবাস চন্দ্র মোদক
৩ শিবির পরিদর্শক
৪ রাজনৈতিক প্রশিক্ষক
৫ ঐ জনাব ডি এ কাইয়ুম
৬ ঐ জনাম মোহাম্মদ আলী
৭ ঐ
৮ ঐ
৯ শারীরিক প্রশিক্ষক
১০ ঐ জনাব এ কে এম আলাউদ্দিন
১১ ঐ জনাব সুনীল চন্দ্র দেব
১২ ঐ
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব দেওয়ান মোহাম্মদ ইব্রাহিম
১৪ মেডিকাল অফিসার
১৫ মেডিকাল সহকারী
দূর্গা চৌধুরী পাড়া যুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
“গোমতি (II)”
ক্রম পদের নাম ব্যক্তির নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব আমির হোসাইন, এমপিএ
২ ডেপুটি ক্যাম্প প্রধান জনাব কিরণ্ময় দত্ত
৩ ক্যাম্প সুপারভাইজার জনাব সৈয়দ আব্দুল কাফী
৪ রাজনৈতিক উপদেশক জনাব শামসুদ্দীন আহমেদ
৫ ” জনাব শামসুর রউফ
৬ ” জনাব আফজাল খান
৭ ” ইয়াকুত আলী
৮ ”
৯ শারীরিক উপদেশক জনাব ফিরোজ আহমেদ
১০ ” জনাব দুলু মিয়া
১১ ”
১২ ”
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব সিদ্দিকুর রহমান
১৪ মেডিকেল অফিসার
১৫ মেডিকেল সহকারী
নাসিরযুব ট্রানজিট/ রিলিফ ক্যাম্প
<003.217.638> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.217.639> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.217.640> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
নরসিংগিতার যুব সংঘ/ রিলিফ ক্যাম্প
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব দেওয়ান আহুল আব্বাস, এমএনএ
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান শামসুল হক
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব শেখ আবু মাহমুদ
৫ ঐ জনাব কাজী নুরুল হক
৬ ঐ জনাব এস এম ভূঁইয়া
৭ ঐ
৮ ঐ
৯ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব জয়নুল আবেদিন
১০ ঐ জনাব ফিরোজ আহমেদ সরকার
১১ ঐ জনাব এম এ বাতেন
১২ ঐ
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব কাফিকুল হক
১৪ মেডিক্যাল অফিসার জনাব এ মাতিন ভূঁইয়া, এমবিবিএস
১৫ মেডিক্যাল সহকারী জনাব এম আর চৌধুরী
হাতিমারা অথবা কামাল নগর যুব সংঘ/রিলিফ ক্যাম্প
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব আবুল বাশার
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক জনাব মাহমুদ হাসান
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব আলী তাহের মজুমদার
৫ ঐ জনাব জাহিরুল হক চৌধুরী
৬ ঐ জনাব আসগার হোসাইন
৭ ঐ জনাব আব্দুল মান্নান
৮ ঐ
৯ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব আব্দুল মালেক
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ঐ
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব ইমাম আবু জাহিদ সালিম
১৪ মেডিক্যাল অফিসার জনাব লুৎফুল কবির
১৫ মেডিক্যাল সহকারী জনাব আনিসুজ্জামান
রাজনগর যুব সংঘ
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব মোহাম্মদ হানিফ, এমএনএ
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান
৩ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব বিসমিল্লাহ, এমপিএ
৪ ঐ জনাব প্রিয়া লাই দাস
৫ ঐ জনাব আবুল কাশেম চৌধুরী
৬ ঐ জনাব আব্দুল হক চৌধুরী
৭ শারীরিক উপদেষ্টা
৮ ঐ
৯ ঐ
১০ ঐ
১১ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব মোঃ শাহজাহান
১২ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ কে ইমরানুল হক, এমবিবিএস
১৩ মেডিক্যাল সহকারী
১৪ কম্পাউন্ডার
১৫ স্টোর পরিদর্শক
১৬ স্টোর কিপার
১৭ অভ্যর্থনাকারী
১৮ ক্যাম্প পরিদর্শক
ধর্ম নগর
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব তাইমুজ আলী, এমপিএ
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা
৫ ঐ
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ ঐ
৯ শারীরিক উপদেষ্টা
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ঐ
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি
১৪ মেডিক্যাল অফিসার
১৫ মেডিক্যাল সহকারী
কৈলাসাহার (ভগভান নগর)
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব তাওয়াবুর রহমান, এমপিএ
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান জনাব এম এ মালেক
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা প্রফেসর ফাইজুর রহমান
৫ ঐ জনাব গিয়াস উদ্দিন মনির
৬ ঐ জনাব মজিবুর রহমান
৭ ঐ
৮ ঐ
৯ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব সিকান্দার আলী
১০ ঐ জনাব আব্দুল গাফুর
১১ ঐ
১২ ঐ
১৩ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ
১৪ মেডিক্যাল অফিসার
১৫ মেডিক্যাল সহকারী
পাঠানকান্দি অথবা করিমগঞ্জ যুব সংঘ/রিলিফ ক্যাম্প
রুনাখিরা যুব সংঘ
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব আব্দুল মমিন
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান জনাব তজম্মুল আলী
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক জনাব আব্দুল জব্বার
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব পরিষৎ কর্মকার পাল
৫ ঐ জনাব আফসার মিয়া
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব মোঃ আব্দুল করিম চৌধুরী
৯ ঐ জনাব আব্দুল হক
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব এ খালিক চৌধুরী
১৩ মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মুকাদ্দাস আলী, এলএমএফ
১৪ মেডিক্যাল সহকারী
সেলাছড়া
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব সায়দুর রহমান চৌধুরী
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান প্রফেসর মোঃ চৌধুরী
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক জনাব গোপাল চন্দ্র দে
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা
৫ ঐ
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব মোঃ সাইফুল্লাহ
৯ ঐ
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ছাত্র প্রতিনিধি জনাব দুলাল চন্দ্র চৌধুরী
১৩ মেডিক্যাল অফিসার
১৪ মেডিক্যাল সহকারী
কাদলাশহর আশ্রম বাড়ি (খোয়াই)
ক্রমিক নং পদবী নাম
১ ক্যাম্প প্রধান জনাব মোস্তাফা শহীদ, এমপিএ
২ ক্যাম্প উপ-প্রধান
৩ ক্যাম্প পরিদর্শক
৪ রাজনৈতিক উপদেষ্টা
৫ ঐ
৬ ঐ
৭ ঐ
৮ শারীরিক উপদেষ্টা জনাব আব্দুল মালেক
৯ ঐ
১০ ঐ
১১ ঐ
১২ ছাত্র প্রতিনিধি
১৩ মেডিক্যাল অফিসার
১৪ মেডিক্যাল সহকারী
<003.217.641> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৮. শারীরিক প্রশিক্ষক
৯. ”
১০. ”
১১. ”
১২. ছাত্র প্রতিনিধি
১৩. মেডিকেল অফিসার
১৪. চিকিৎসা সহকারী
শ্রী নগর (এস জে হক) যুব ক্যাম্প
ক্রমিক নং পদের নাম ব্যক্তিদের নাম
১. ক্যাম্প প্রধান জনাব খায়ের উদ্দিন আহমেদ
২. ডেপুটি. ক্যাম্প প্রধান এমপিএ জনাব মির্জা ফিরোজ আহমেদ
৩. ক্যাম্প সুপারভাইজার মোহাম্মদ মোস্তফা
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষক জনাব মোশাররফ হোসেন
৫. ” জনাব আলী আহমেদ মাস্টার
৬. ” জনাব মুজাফফর আহমেদ এমএ, এলএলবি
৭. ”
৮. ”
৯. দৈহিক প্রশিক্ষক
১০. ” জনাব খোরশেদ আলম
১১. ”
১২. ” জনাব এমদাদ আহমেদ
১৩. ছাত্র প্রতিনিধি
১৪ . মেডিকেল অফিসার জনাব দিলীপ কৃষ্ণ চৌধুরী
চিকিৎসা সহকারী জনাব মোহাম্মদ মুজিবুল হক
উদয়পুর বা পালটানা (২ য়) যুব ট্রানজিট / রিলিফ ক্যাম্প
ক্রমিক নং পদের নাম ব্যক্তিদের নাম
১. ক্যাম্প প্রধান
২. ডেপুটি. ক্যাম্প প্রধান
৩. ক্যাম্প সুপারভাইজার
৪. রাজনৈতিক প্রশিক্ষক
৫. ”
৬. ”
৭. ”
৮. দৈহিক প্রশিক্ষক অধ্যাপক আবু তাহের রিজভী
৯. ”
১০. ”
১১. ”
১২. ছাত্র প্রতিনিধি
১৩. মেডিকেল অফিসার
১৪. চিকিৎসা সহকারী
<003.217.642> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.217.643> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
তৃতীয় অধ্যায়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক প্রশাসন
দক্ষিণ পূর্ব জোন-১
দক্ষিণ পূর্ব জোন-২
পূর্ব জোন-১
উত্তর-পূর্ব জোন – ১
উত্তর-পূর্ব জোন – ২
উত্তর জোন
পশ্চিম জোন
পশ্চিম জোন-১
পশ্চিম জোন-২
দক্ষিণ পশ্চিম জোন
দক্ষিণ পশ্চিম জোন-১
দক্ষিণ পশ্চিম জোন-২
<003.217.644> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.218.645> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
দক্ষিণ পূর্ব জোন –১
ও
দক্ষিণ পুর্ব জোন – ২
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ পূর্ব জোন–১ এড় অনুষ্ঠিতব্য
সভার আলোচ্য বিষয় |
বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ পূর্ব জোন –১ | ১ অক্টোবর ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
মুজিবনগর
বিজ্ঞপ্তি
১০ অক্টোবর ১৯৭১ বিকাল ৩:০০ ঘটিকায় জোনাল কাউন্সিল সাউথ ইস্ট জোন -১ এর একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে।
নিম্নলিখিত বিষয়সূচি উল্লিখিত বৈঠকে জন্য সংশোধন করা যেতে পারে: –
(১) জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান নির্বাচন.
(২) জোনাল কাউন্সিলের নিম্নলিখিত সাব-কমিটি গঠন.
(৩) (ক) অর্থ উপ-কমিটির
(খ) রিলিফ উপকমিটি
(গ) )স্বাস্থ্য উপ-কমিটির
(ঘ) প্রচার উপ-কমিটির
(ঙ) শিক্ষা উপ-কমিটি, এবং সরকারের অনুমোদনক্রমে অন্য কোনো সাব-কমিটি বিষয়.
(৪) মেমো নং গ/ ৮১০ (৩৪৫) তারিখ ২৭.৭.১৯৭১ এর ধারা ৪(সি) অনুযায়ী উপ-কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচন. ২৭/০৭/১৯৭১
(৫) বিবিধ।
স্বা/-
(এ এইচ এম কামরুজ্জামান)
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
০১.১০.১৯৭১
<003.219.646> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ পূর্ব জোন-১ এর অনুষ্ঠিতব্য
সভার প্রস্তাবাবলীর অংশ বিশেষ |
বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ পূর্ব জোন -১ | ১০ অক্টোবর ১৯৭১ |
জনাব খাজা আহমেদ,এমএনএ এর সভাপতিত্বে ১০-১০-১৯৭১ তারিখ শান্তির বাজারে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল-১ এর জোনাল কাউন্সিল কার্যবৃত্ত থেকে গৃহীত।
……………………………
পরিষদ মনে করে হেড কোয়ার্টার জোনের চরম শেষের অংশ উদয়পুরে স্থানান্তর যুক্তিযুক্ত হবে না। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, উক্ত পরিষদ জোনের হেড কোয়ার্টার সাব্রুম থেকে মনু ঘাটে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পরিষদ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, কর্মক্ষম উদ্দেশ্যে সমগ্র ফেনীকে সেক্টর-১ এর সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে।
স্বাঃ /-
কে. আহমেদ
রাষ্ট্রপতি
১২/১০/৭১
মেমো নং SEZI/ZC/73, ডিটি ১৯-১০-১৯৭১.
অনুলিপি পাঠনো হয়েছে:
(১) প্রতিরক্ষা সচিব,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তথ্য এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নিমিত্তে।
সম্পাদক
জোনাল কাউন্সিল,
সাউথ ইস্ট জোন -১
<003.220.647> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মুক্তিফৌজে ভর্তি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে লিখিতি স্টাফপ্রধান কর্তৃক দক্ষিণ পূর্ব জোনে লিখিত চিঠি | বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ-পূর্ব
জোন-২ |
১২ অক্টোবর,
১৯৭১ |
গোপনীয়
জরূরী
ইসিএইচ এইচ কিউ বাংলাদেশ ফোর্স
নং ২০০১/বিডিএফ/এ
১২ অক্টোবর, ১৯৭১
প্রতি : কমান্ডার ডেল্টা সেক্টর আপনাকে এই HQ এর সাথে
তথ্য : জনাব খালেদ মোশাররফ আলি, এম এন এ – এব্যাপারে সদয় যোগাযোগ রাখার
সাউথ ইস্ট জোন-২ জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
গণপ্রজানতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিষয় : মুক্তিফৌজে ভর্তি সংক্রান্ত।
গত ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এর কথোপকথন কমান্ডার ডেল্টা সেক্টর/ইসিএইচ এইচ কিউ বাংলাদেশ ফোর্সেস এর অনুসারে,
১. দেখা যাচ্ছে যে, মুক্তিবাহিনীতে লোক নেয়ার ব্যাপারে বেশ কিছু ভুল বোঝাবুঝি/নির্দেশনার অভাব ঘটছে। মেজর সুবরামানিয়াম সঠিক নিয়ম না মেনে মুক্তিবাহিনী তে সদস্য নিচ্ছেন বলে আমাদের নজরে এসেছে।
২. যদি মেজর খালেদ মোশাররফ কে এই ভর্তি সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ডের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় তাহলে তার হাত দিয়ে সকল ভর্তি কার্যক্রম চললে সকলের জন্য মঙ্গল জনক হবে।
৩. নিশ্চিত ভর্তি এবং ভর্তি সময়ে যে কোন ধরণের ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে মেজর খালেদ মোশাররফ এম এন এ, যিনি কি না হেড কোয়ার্টার এর সাথে সরাসরি সম্পর্ক যুক্ত, তাকে এই ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্ব প্রদান করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
স্বাক্ষর
চিফ অফ স্টাফ
গোপনীয়
পরিচালক,
নির্দেশনা ও পরিকল্পনা,
ইয়ুথ ক্যাম্প।
<003.221.648> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জোনের কর্মকর্তা নিয়োগের নিয়ম কানুন সংক্রান্ত চিঠি | বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ পূর্ব
জোন – ২ |
২৮ অক্টোবর,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ পূর্ব জোন – ২
নং – ৯০৫ ২৮ অক্টোবর, ১৯৭১
জনাব দেবব্রত দত্ত গুপ্ত
সহকারী নির্দেশক, প্রশিক্ষণ
ইয়ুথ ক্যাম্প।
ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্পের কোন পোস্টের জন্য কোন এপয়েন্টমেন্ট লেটার ইস্যু না করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে। এই ধরণের এপয়েন্টমেন্ট এর জন্য ফাইনান্সিয়াল কমিটির অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়াও, ইয়ুথ রিসিপশন ক্যাম্পের এপয়েন্টমেন্ট এ কে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করবেন সেটা ফাইনান্সিয়াল কমিটি সিদ্ধান্ত দেবে।
আলী আজম
চেয়ারম্যান
ফিন্যান্স কমিটি।
<003.222.649> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবিরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে চীফ অব স্টাফ কর্তৃক লিখিত চিঠি | বাংলাদেশ সরকার দক্ষিণ পূর্ব
জোন – ১ |
২৮ অক্টোবর,
১৯৭১ |
গোপনীয়
ইকেলন এইচ কিউ বাংলাদেশ ফোর্স
নং ৩০০৯/বিডিএফ/…………
২৮ অক্টোবর, ১৯৭১।
প্রতি : চেয়ারম্যান, জোনাল কাউন্সিল, দক্ষিণ পূর্ব জোন ১।
” ” দক্ষিণ পূর্ব জোন ২।
বিষয় : নিরাপত্তা।
১. কয়েকজন পাকিস্তানি আইডি কার্ডধারী বালককে গণবাহিনীর ইয়ুথ ক্যাম্প এ ভর্তি করা হয়েছে। তারা কোন ক্ষতি করবে না, এই ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এই ধরণের বালককে ভর্তি করা ইয়ুথ ক্যাম্পের জন্য নিরাপদ নয়।
২. সুতরাং, সকল ইয়ুথ ক্যাম্প এ তল্লাশী চালান পূর্বক সকল পাকিস্তানি আইডি কার্ড সংগ্রহ ও নষ্ট করে ফেলা হোক। এছাড়াও যেসকল বালকের কাছে আইডি কার্ড পাওয়া যাবে তাদের মধ্যে যারা সম্পূর্ণ সন্দেহ মূক্ত হবে কেবল তাদের ভর্তি করার জন্য অনুরোধ জানানো হল।
স্বাক্ষর
চিফ অফ স্টাফ
গোপনীয়
<003.223.650> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবির পরিচালনা, ব্যবহার ও পুনর্বিন্যাসের নির্দেশ | দক্ষিণ পূর্ব জোন – ১ | ৫ নভেম্বর ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জরুরী।
প্রতি,
সকল ক্যাম্প চিফ, ইউথ রিসেপশন ক্যাম্প, দক্ষিণ পূর্ব জোন – ১।
বিষয় : ইয়ুথ ক্যাম্পের পূনর্বিন্যাস।
জনাব,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের “বোর্ড অফ কন্ট্রোল, ইয়ুথ ক্যাম্প” নির্দেশনা অনুসারে, ইয়ুথ ক্যাম্পের উন্নত প্রশাসন ও সঠিক পরিচালনা নিশ্চিত করার জন্য এর সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। এবং তার রিপোর্ট আগামী ১৪ নভেম্বর, ১৯৭১ এর মধ্যে স্বাক্ষরসহ প্রদান করতে অনুরোধ করা হলো।
নীতিমালার অনুলিপি এখানে সংযোজিত করা হলো।
আব্দুল ওয়াহাব এম পি এ
৫.১১.৭১
চেয়ারম্যান
গ্রুপ এডভাইজরি কমিটি
ইয়ুথ ক্যাম্প, সাউথ ইস্ট জোন – ১।
মেমো নং ৮ই২১/১১৬ তাং- ১৩/১১/৭১
অনুলিপি :
জনাব এম এ সামাদ, জেড এ ও, দক্ষিণ পূর্ব জোন – ১
(তথ্য ও জরুরী পদক্ষেপের জন্য)
চেয়ারম্যান।
<003.223.651> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ইয়ুথ রিসেপশন ক্যাম্প প্রশাসনের সাধারণ নির্দেশনা
উপদেষ্টা কমিটি :
১. প্রতিটি অভ্যর্থনা ক্যাম্পের ইয়ুথ ক্যাম্প নিয়ন্ত্রক বোর্ড অনুমোদিত একটি উপদেষ্টা কমিটি থাকবে। এই কমিটির কাজ হলো ক্যাম্পের সামগ্রিক তত্ত্বাবধায়ন এবং সকল প্রকার ব্যবস্থাপনা এবং শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা। কমিটিতে এমপিএ/এমএনএ এর পক্ষ থেকে অন্তত তিনজন অবৈতনিক মেম্বার এবং বাকিরা থাকবেন ক্যাম্প এরিয়া পরিচালনা করতে আগ্রহী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং তারা তৎসময়ে ক্যাম্পের নিকট দূরত্বে বসবাসরত হবেন। যেসব ক্যাম্প পুরোদমে চলছে, সেখানে এই নীতিমালা অনিসারে উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়ে না থাকলে অতিস্বত্বর গঠন করতে হবে। যা ভবিষ্যতে ক্যাম্পের পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে ক্যাম্প ইন চার্জ উক্ত কমিটির সাথে মিটিং এর আয়োজন করে সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণ করবেন।
কমিটিতে মেম্বারদের মধ্য থেকে একজন চেয়ারম্যান ও একজন সচিব নির্বাচন করা হবে। উক্ত চেয়ারম্যান, সচিব ও সদস্যদের নাম উল্লেখ করে আগামী ১৫-১০-১৯৭১ এর মধ্যে একটি লিস্ট বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর চেয়ারম্যানের নিকট অনুমদনের জন্য প্রদান করতে হবে। উপদেষ্টা কমিটি ক্যাম্প ইন চার্জ নিয়োগ দেবেন।
ক্যাম্প ইনচার্জ হবেন একজন পুর্ণকালীন কার্যনির্বাহক এবক পদাধিকারবলে উপদেষ্টা কমিটির সদস্য। উপদেষ্টা কমিটি সকল নির্দেশনা প্রদান করবে এবং সে অনুসারে ক্যাম্প ইনচার্জ প্রতিদিনের ক্যাম্প চালানোর দায় দায়িত্ব বহন করবেন। উপদেষ্টা কমিটির সভার কার্যাবলি রেকর্ড করা হবে ও তার অনুলিপি সশ্লিষ্ট জোন নিয়ন্ত্রক বোর্ডের পরিচালক ও চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরন করা হবে। ক্যাম্পের সকল খরচের হিসেব রাখার দায়িত্ব ক্যাম্প ইন চার্জের।
একটি ক্যাম্পের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল এর পরিমাণ ন্যুনতম ২৫০ জন।
সদস্য :
ক্যাম্প ইন চার্জ সহ সকল কার্যনির্বাহী কর্মচারিকে ক্যাম্পের বাসিন্দা হতে হবে।
২. ক্যাম্প ইন চার্জ উপদেষ্টা কমিটির সহায়তায় নিচের কয়েকজনকে নিয়োগ দেবেন –
- একজন হিসাব রক্ষক – তিনি ক্যাম্পের সাথে জড়িত সকল খরচের হিসাব রাখবেন, যার মধ্যে স্টোর এবং খাবার দাবারের হিসেবও থাকবে। হিসাব রক্ষণ বই নির্দিষ্ট সময় পর পর চেক করা হবে।
- একজন ডেপুটি ক্যাম্প ইন চার্জ কাম সুপারভাইজার ইন চার্জ – আবাসন, বিছানাপত্র, তাঁবু, স্যানিটেশন ইত্যাদি সাধারণ পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা করা এবং উদাহরণ স্বরূপ ক্যাম্পের ছেলেদের এবং কর্মচারীদের সকল ধরণের আবাসন ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা করার দায়িত্ব ডেপুটি ক্যাম্প ইন চার্জের।
- একজন স্টোর সুপারভাইজার – ক্যাম্পের সকল ধরণের স্টোর করার যোগ্য মালামাল ও যন্ত্রপাতির দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি জিনিসপত্রের তালিকাও নথিবদ্ধ রাখবেন।
<003.223.652> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.223.653> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.223.654> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(ঘ) একজন খাবার সরবরাহ তূত্ত্বাবধায়ক:
তিনি বাজার সদাই, রান্নার যোগাড়যন্ত্র, থালাবাসন, খাবর পানি এবং জ্বালানির দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন। তিনি দৈনিক খরচের হিসাব হিসাব হিসাবরক্ষকের নিকট প্রেরণ করবেন।
(ঙ) একজন মেডিকেল অফিসার
(চ) একজন কম্পাউন্ডার
(ছ) একজন সার্বিক সহকারী (জেনারেল এসিস্ট্যান্ট)
(জ-ট) চারজন ইনস্ট্রাকটর (প্রশিক্ষক) [৫০০ জনের একটি ক্যাম্পের জন্য]
৩. প্রশিক্ষক:
১. প্রেরণাদায়ক প্রশিক্ষক (মোটিভেশনাল ইনস্ট্রাকটর) – প্রতি ২৫০ তরুণের জন্য ১ জন।
উপদেষ্টা কমিটির দাপ্তরিক সদস্য।
৫. কর্মচারীদের আবাসন: হাতখরচা;
নিম্নোক্ত কর্মচারীবৃন্দ ক্যাম্পে বিনামূল্যে আবাসন সুবিধা পাবেন। তারা কোন ধরণের মজুরী পাবেন না। তবে, কর্মরত সময়ে তাদের পকেটমানি/হাতখরচা হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ রূপি করে প্রদান করা হবে।
১। ক্যাম্প ইনচার্জ।
২। ডেপুটি ক্যাম্প ইনচার্জ (সুপারভাইজার)।
৩। হিসাবরক্ষক।
৪। গুদাম তত্বাবধায়ক
৫। খাবার সরবরাহ তত্বাবধায়ক।
৬-৯। চারজন প্রশিক্ষক
১০। মেডিকেল অফিসার
১১। কম্পাউন্ডার
১২। সার্বিক সহকারী (রান্নাবান্না তদারকি ইত্যাদি এবং ক্যাম্প ইনচার্জ প্রদত্ত অন্যান্য দায়িত্ব।)
৬. বাবুর্চি এবং অন্যান্য কর্মচারী:
ক্যাম্পে স্বেচ্ছাসেবক এবং তরুণদের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী কর্মচারী নিযুক্ত করা হবে যেমন বাবুর্চি, সহকারী বাবুচি ইত্যাদি যারা হেলপার হিসেবে পরিচিত হবে। প্রয়োজনীয় সেবাদানকারী কর্মচারীর সংখ্যা ও সেবাদানের ধরণ উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত হবে।
এ ধরণের সকল কর্মচারীকে ক্যাম্পে আবাসন সুবিধা ও হাতখরচ হিসেবে প্রতিমাসে ৫০ রূপি প্রদান করা হবে।
৭. কার্যকরী নির্দেশনা:
১। উপদেষ্টা কমিটি ক্যাম্পের বিভিন্ন প্রয়োজনে ক্যাম্প ইনচার্জের মাধ্যমে জোনাল ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবেন এবং ক্যাম্পের কার্যক্রম ও হিসাব সম্পর্কিত পাক্ষিক প্রতিবেদন পেশ করবেন। প্রতিবেদনের এক কপি সরাসরি বোর্ড অব কন্ট্রোল এর চেয়ারম্যান বরাবর এবং আরেক কপি তাদের স্ব স্ব পরিচালক বরাবর প্রেরণ করা হবে।
২। সকল প্রকার খরচ প্রাক নিরীক্ষার বিষয় হবে এবং স্ব স্ব ক্যাম্পে পাক্ষিকভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
৩। যুব ক্যাম্পের পরিচালক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান এবং ক্যাম্প ইনচার্জের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করবেন।
৪। ক্যাম্পের টাকা উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অথবা উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়া সাপেক্ষে ক্যাম্প ইনচার্জ কর্তৃক গৃহীত হবে এবং উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত নিরাপদ হেফাজতে রাখা হবে এবং যেখানে ব্যাংকিং সুবিধা আছে সেখানে নিম্নোক্ত যেকোন দু’জন ব্যক্তি দ্বারা যৌথ একাউন্ট পরিচালিত হবেঃ
ক) চেয়ারম্যান খ) ক্যাম্প ইনচার্জ গ) হিসাবরক্ষক
কার্যক্রম শুরুর দিন থেকে প্রতিদিনের উপস্থিত তরুনদের দৈনিক প্রত্যাবর্তনের সংখ্যা উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান এবং জোনাল ডাইরেক্টরদের কার্যালয়ে অবশ্যই অবগত করতে হবে।
ঘ। ভর্তির অন্যান্য রিপোর্ট ও হিসাব এর নমুনা পরবর্তীতে প্রেরণ করা হবে। মিটিং এ ধরণের রিপোর্টগুলো খালি শিট হিসেবে যাবে।
৮. শারীরিক প্রশিক্ষণঃ
শারীরিক প্রশিক্ষণের সিলেবাস এমন হবে যেন সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে তরুণরা যেকোন অস্বাভাবিক অপারেশন এর জন্য সর্বোচ্চ শারীরিক কর্মদক্ষতা ও মনোবল অর্জন করে। এ সিলেবাসে পাকা রাস্তার বদলে মেঠো পথে চলা ও হাঁটাও অন্তর্ভূক্ত থাকবে। বিস্তারিত সিলেবাস নির্দেশ মোতাবেক বাস্তবায়িত হবে। কোন ধরণের কুচকাওয়াজ থাকবে না।
৯. ভর্তিঃ
ক্যাম্পে ভর্তি ক্যাম্প ইনচার্জের তত্বাবধানে হবে যিনি উপদেষ্টা কমিটি অথবা উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক এ উদ্দেশ্যে সৃষ্ট অন্য কোন ব্যক্তির নির্দেশনা প্রাপ্ত হবেন।
ক্যাম্পে ভর্তিকৃত সকল বালককে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার এলাকার এমএনএ/এমপিএ কর্তৃক সনাক্তকৃত হতে হবে। এমএনএ/এমপিএ এর অনুপস্থিতিতে ………………… বরাবরে একটি লিখিত সার্টিফিকেট উপস্থাপন করতে হবে, এবং এ ব্যপারে উপদেষ্টা কমিটি অথবা উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিবেন।
বালকটিকে অবশ্যই ডাক্তারি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে হবে এবং ভর্তির অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার উপর তার প্রশ্নাতীত আস্থা ও বিশ্বাস থাকতে হবে। তার কোন ধরণের অতীত অপরাধজনিত কার্যক্রম থাকা চলবে না। তার অন্যান্য কোন রাষ্ট্রের প্রতি বিশেষ আনুগত্য থাকাও যাবে না।
সকল সক্ষম যুবকদের জন্য ভর্তি উন্মুক্ত থাকবে ও সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ইত্যাদি, জন্মস্থান এবং এলাকা নির্বিশেষে উদারনীতিতে কঠোরভাবে পরিচালিত হবে।
রিসিপশন ক্যাম্পে ভর্তিকৃত যেকোন বালক পরবর্তীতে এডমিশন ক্যাম্পে ভর্তির জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় তদন্তে অকৃতকার্য হয় তাকে সয়ংক্রিয় ভাবে ক্যাম্প থেকে বহিষ্কার করা হবে।
১০. নিরীক্ষা দলঃ (অডিট টিম)
…… হিসাবরক্ষক, …… হিসাব সহকারী এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত একটি নিরীক্ষা দল জোন ক্যাম্পের চেয়ারম্যানকে অবগত করে পর্যায়ক্রমে রিসিপশন ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন ও হিসাব নিরীক্ষা, অগ্রীম প্রদেয় এবং প্রাক নিরীক্ষা সমন্বয় করবেন। এ দল পরিচালকের মাধ্যমে বোর্ড অব কন্ট্রোলের চেয়ারম্যান বরাবরে নিরীক্ষা প্রতিবেদন ও তার সাথে একটি সাধারণ প্রতিবেদন দাখিল করবেন। উপদেষ্টা কমিটি অডিট দলকে সকল প্রয়োজনীয় সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদান করবেন।
[১১] পরিদর্শন দলঃ
এমএনএ/এমপিএ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার সমন্বয়ে বোর্ড অব কন্ট্রোল এর চেয়ারম্যান কর্তৃক একটি পরিদর্শন দল গঠিত হবে। প্রত্যেক জোনে একটি করে পরিদর্শন দল থাকবে। এই দল রিসিপশন ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন ও চেয়ারম্যনের কাছে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট ও সুপারিশ প্রেরণ করবেন। রিসিপশন ক্যাম্পের পরিচালক ও নিয়মিতভাবে তাদের রিপোর্ট ও সুপারিশের একটি কপি প্রাপ্ত হবেন।
[১২] পরিচালক, রিসিপশন ক্যাম্পঃ
প্রত্যেক জোনে একজন রিসিপশন ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক থাকবেন। “কার্যকরী নির্দেশনা” তে ইতোমধ্যে যার কথা উল্লিখিত হয়েছে, পরিচালক, উপদেষ্টা কমিটির সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখবেন এবং তার ক্যাম্প পরিচালনা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে এবং ক্যাম্পের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও উন্নয়ন সাধনের জন্য তিনি কাজ করবেন। এ উদ্দেশ্যে, তিনি অথবা তার সহকারী বারবার ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পরিচালক, রিপিসপন ক্যাম্প, সদর দপ্তর ও নিয়মিত ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পরিচালক প্রতি সপ্তাহে বোর্ডে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট দাখিল করবেন।
[১২] পরিচালক, রিসিপশন ক্যাম্পঃ
প্রত্যেক জোনে একজন রিসিপশন ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক থাকবেন। “কার্যকরী নির্দেশনা” তে ইতোমধ্যে যার কথা উল্লিখিত হয়েছে, পরিচালক, উপদেষ্টা কমিটির সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখবেন এবং তার ক্যাম্প পরিচালনা সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকবে এবং ক্যাম্পের প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ ও উন্নয়ন সাধনের জন্য তিনি কাজ করবেন। এ উদ্দেশ্যে, তিনি অথবা তার সহকারী বারবার ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পরিচালক, রিপিসপন ক্যাম্প, সদর দপ্তর ও নিয়মিত ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। পরিচালক প্রতি সপ্তাহে বোর্ডে প্রয়োজনীয় রিপোর্ট দাখিল করবেন।
<003.224.655> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবির উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্তসমূহ | দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ | ১৩ নভেম্বর, ১৯৭১ |
জনাব এম এ ওয়াহাব, এমপি এর সভাপতিত্বে সাতচান্দ-এ দক্ষিণ পূর্ব জোন-১ এর যুব শিবির উপদেষ্টা কমিটির আলোচনা সভা অনুস্থিত হয় ১৭-১০-৭১ তারিখের বেলা ১৫:০০ তে।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১। জনাব এম এ ওয়াহাব, এমপিএ, চেয়ারম্যান
২। তালেব আলী, এমপিএ, সদস্য
৩। ডাঃ ফিরোজ রহমান, এমপিএম, সদস্য
৪। জনাব এস এম সামাদ, জোনাল তত্ত্বাবধায়ক অফিসার, সদস্য
নিম্ন উল্লেখিত সিদ্ধান্ত সমূহ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ঃ
১। অভ্যর্থনা শিবির এখন দেমাগিরিতে সেখানকার সাম্প্রতিক আক্রান্ত অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২। ডাঃ এম এ মান্নান এমপিএ উক্ত সাব-কমিটির নিয়োজিত অতিরিক্ত সদস্য।
৩। যুব অভ্যর্থনা শিবিরের আরও ভাল তত্ত্বাবধানের জন্য, দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ এর সকল শিবির প্রধানকে বোর্ড অব কন্ট্রোলের দিক-নির্দেশনা মোতাবেক জরুরী ভিত্তিতে তাঁদের স্ব স্ব শিবির পুনঃগঠন করার অনুরোধ করা হয়। এবং অতি দ্রুত এ ব্যপারে তাদের প্রতিবেদন প্রদানের জন্য বলা হয়।
৪। রেশনের মত সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদানের জন্য, দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ এর আওতাধীন দুর্দশাগ্রস্ত যুব শিবিরসমুহের তালিকা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণের অনুরোধ করা হয়।
৫। পূর্ববর্তী প্রদত্ত অর্থের শতভাগ হিসাব না পাওয়া পর্যন্ত নতুন করে দ্বিতীয় দফায় অর্থ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না।
সভার প্রধানকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে আলোচনা শেষ হয়।
আব্দুল ওয়াহাব এমপিএ
চেয়ারম্যান
তারিখ ১৩-১১-১৯৭১
স্মারক নম্বরঃ এসইজেড-আই/১১৫(৬)
প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ ও তথ্যের জন্য অনুলিপি পাঠানো হয়ঃ
জনাব এস এ সামাদ, আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়ক কার্যনির্বাহী, এসইজেড-আই
সচিব,
যুব শিবির দল উপদেষ্টা কমিটি।
<003.225.656> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পোলো ক্যাম্প হইতে তিন যুবকের পলায়ন সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি
|
দক্ষিন পূর্ব জোন-২
যুব প্রশিক্ষন পরিচালনা বোর্ড |
১১ নভেম্বর,
১৯৭১ |
যুব (প্রশিক্ষন) পরিচালকের দপ্তর
দক্ষিন পূর্ব জোন–২
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মেমো নং. ওয়াইটিসি /৩৩৮ তাং ১১ নভেম্বর, ১৯৭১
প্রাপক
কাম্প-ইন-চার্জ / শিবির প্রধান
ও/সি, সকল ওয়াই টি/ওয়াই সি
বিষয় – পলায়ন
পরিচালক পোলো ক্যাম্প কর্তৃক অবগত/বিবৃত করা হইয়াছে যে, নিম্নলিখিত যুবকগন গত ৫-১১-৭১ তারিখ হতে পলাতক রহিয়াছে।
ছেলেদের বিবরণ নিম্নরূপ:
ক্রমিক নং নাম ঠিকানা
১ জনাব মাইনুদ্দিন গ্রামঃ রামপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জেলা নোয়াখালী
২ জনাব শামসুল হক পিতাঃ মাহা আলম, গ্রামঃ সাবারপুর,
সোনাগাড়ি, নোয়াখালী
৩ জনাব এজমাউল হক পিতাঃ মাহা আলম, গ্রামঃ আলিপুর
সুধারা, নোয়াখালী
ইহা আপনার অবগতির জন্য জানানো হইলো।
পরিচালক
কো-অর্ডিনেশন প্ল্যানিং
এন্ড প্রোগ্রামিং
যুব শিবির
<003.226.657> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভিত্তি ফৌজে নিযুক্তকরন সম্পর্কে মেজর মিত্রের কাছে লিখিত যুব শিবির পরিচালকের একটি চিঠি | দক্ষিন পূর্ব জোন-২
যুব প্রশিক্ষন পরিচালনা বোর্ড |
১৫ নভেম্বর,
১৯৭১ |
যুব (প্রশিক্ষন) পরিচালকের দপ্তর
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিন পূর্ব জোন–২
মেমো নং. ওয়াইটিসি /৩৪৩ তাং ১৫ নভেম্বর, ১৯৭১
প্রেরক- ডঃ আবু ইউসুফ
পরিচালক, প্রশিক্ষন
যুব শিবির
প্রিয় মেজর মিত্র,
এই পত্র মারফত আমার কর্মচারী জনাব আনোয়ার হোসেনকে আপনার সংগে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি যিনি ভি.এফ. অভিষিক্তকরনের সংগে জড়িত, যে বিষয় গতকাল আলোচনা হয়েছে।
আমি আশা করি এর মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ট যুবককে ঈদের আগেই অভিষিক্ত করার কাজ তরান্বিত হবে। শুভেচ্ছা সহ, ধন্যবাদান্তে
পরিচালক
কো-অর্ডিনেশন, প্ল্যানিং
এন্ড প্রোগ্রামিং
যুব শিবির
<003.227.658> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবির পরিচালনা সংক্রান্ত জোন প্রধানের বিজ্ঞপ্তি
|
দক্ষিন পূর্ব জোন-২ | ২২ নভেম্বর,
১৯৭১ |
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিন পূর্ব জোন-২
বিজ্ঞপ্তি
তারিখ, ২২ নভেম্বর, ১৯৭১
১৪/১১/৭১ তারিখে আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি জানাইতেছি যে, সকল এমএনএ/এমপিএগন পরিস্থিতিগত কারনে শিবির প্রধান/উপ-শিবির প্রধানের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত, তাহারা সকল সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রদিসহ তাহাদের অধঃস্তন কর্মকর্তাদের নিকট অব্যবহিতভাবে তাহাদের দায়িত্ব হইতে অব্যাহতি লইবেন এবং বিষয়টি চেয়ারম্যান, যুব উপদেষ্টা কমিটি এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ, দক্ষিন পূর্ব জোন-২ এর নিকট অবহিত করিবেন। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ভবিষ্যতে যুব অভ্যর্থনা শিবির বিষয়াবলির সহিত সংযুক্ত কোনপ্রকার বিল কোন এমএনএ/এমপিএগনের নামে অঙ্কিত হইবে না।
এই সিদ্ধান্তের সহিত আশু সম্মতি আন্তরিকভাবে কাম্য।
( জেড.এ. চৌধুরী)
চেয়ারম্যান
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ,
দক্ষিন পূর্ব জোন-২
মেমো নং. ১০৫৯ (৩০) তাং, ২২/১১/৭১সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুলিপি প্রেরন করা হইলোঃ- শিবির প্রধান/উপ-শিবির প্রধান, বড়ানগরচেয়ারম্যান, যুব উপদেষ্টা কমিটিআঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সম্পাদক (পদাধিকারবলে)আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদআঞ্চলিক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা, দক্ষিন পূর্ব জোন-২
<003.228.659> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.228.660> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জোনের কর্মচারীদের কাজের তালিকা | দক্ষিণ পুর্ব জোন-১ | ২৫ নভেম্বর
১৯৭১ |
- ১ জনাব মইনুদ্দিন আহমেদ : নগদান হিসাব রাখা,সব ধরনের রশিদ প্রস্তুত
এবং নিয়ন্রণ করা, সহায়ক নগদান খতিয়ান হিসাবরক্ষণ সহ সব ধরনের হিসাবনিকাশ সংক্রান্ত তালিকাগন্থ্র যথাযথভাবে তদারকি করা ,ধরনের মূল্যবান তথ্য এবং রশিদসমূহ নিরাপদে সংরক্ষণ করা, সব ধরনের আর্থিক প্রতিবেদন দাখিল করা ইত্যাদি এবং অনান্য হিসাব সংক্রান্ত কাজের জন্য তাকে নিয়োগ দেয়া হবে।
- ২ জনাব কৃপাসুখ চাকমা : হিসাব বিভাগের সাহে জড়িত। সে
নিম্মলিখিত নথিপত্র নিয়ে কাজ করিবেঃ
ক) আকস্মিক ঘটনা খ) অর্থায়ন (এফইএন) গ) বাজেট ঘ) অর্থায়ন উপ পরিষদ(জেডসি/এফ) ঙ ছুটির হিসাব চ) বিবিধ রশিদ ছ) মজুরি জ) বিদ্যুৎ বিল ঝ) যানবাহন খরচ ঞ বেতন এবং অন্যান্য আর্থিক কাগজপত্র
- ৩ জনাব সঞ্জিত কুমার দে সরকার : সে নিম্মলিখিত নথিপত্র নিয়ে কাজ করিবেঃ
ক) বায়োডাটা (বি-ডি) খ) আবেদন এবং নিয়োগপত্র (পি এন্ড এপপ) গ) মজুদ
বিবরণী ঘ যুব শিবির (ওয়াই সি ) ঙ) সম্পদ বিবৃতি
- ৪ জনাব ভবানী প্রসাদ মজুমদার : সে নিম্মলিখিত নথিপত্র নিয়ে কাজ করিবে
ক) সাধারণ হিসাব নিকাশ খ) প্রাপ্তি এবং প্রদান গ) বিবিধ স্টেশনারি মজুদ হিসাব ঘ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র বিভাগ।
- ৫ জনাব গোলাম মোস্তফা চৌধুরী : সে নিম্মলিখিত নথিপত্র নিয়ে কাজ করিবে
ক) নিয়োগ এবং পোস্টিং খ) মন্ত্রীসভা গ) চিকিৎসা সেবা ঘ) তথ্য ঙ) স্থানীয় কর্র্তিপক্ষ চ) পুলিশ ছ) শিল্প ব্যবসা ও বাণিজ্য সমিতি
- ৬ জনাব মজীবুল হক স্টেনো : সে নিম্মলিখিত নথিপত্র নিয়ে কাজ করিবে
ক) গোপন নথি খ) বিভাগীয় সভা বিবরণী গ) বিভাগীয় সভা ঘ) বিভাগীয়্ প্রশাসন কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত ফাইল
- ৭ জনাব সফিকুর রহমান টাইপিস্ট : তিনি ও এস কর্তিক নির্ধারিত প্রাত্যহিক
সংশ্লিষ্ট চিঠিসমূহ টাইপ করিবেন
- ৮ জনাব নির্মল কুমার মল্লিক টাইপিস্ট : তিনি ও এস কর্তিক আরোপি প্রাত্যহিক
সংশ্লিষ্ট চিঠিসমূহ টাইপ করিবেন
- ৯ জনাব নারায়ণ চন্দ্র মজুমদার : তারা হিসাব এবং অন্যান্য বিবিধ নথি এবং
ত্রাণ সংক্রান্ত কাগজ নিয়ে কাজ করবে
- ১০ জনাব মতি লাই কর্মকার
এবং
জনাব বিমেলেন্দু দেওয়ান ও এস : সাধারণ তদারকি নিরাপত্তাকর্মীদের ফাইল
কর্মীদের হাজিরা খাতা কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট এসিসটেন্টদের কাছে পৌছে দেয়া, অফিস কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্গখলা নিশ্চিতকরণ এবং
দাপ্তরিক কাজ তরান্বিত করা
১১/১১/৭১ তারিখে বিভাগীয় প্রশাসন কর্তৃক অফিস আদেশনামার পরিপ্রেক্ষিতে সকল কর্মকর্তাগণ নিজ নিজ নথিপত্র সরংক্ষণ করবেন। নথিপত্রের কোনো কাগজপত্র হারিয়ে গেলে কিংবা অফিসের কোনোধরনের তথ্য ফাঁসের জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসার দায়ী থাকবেন।
যেহেতু বাংলাদেশ সরকার এক|টি নিয়মিত সরকার, জনস্বার্থে সকল নিয়ম নীতি মেনে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের আকুণ্ঠচিত্তে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য এবং অফিসের পবিত্রতা রক্ষার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে। ইহাও নির্দেশনা রইলো যে , অফিস শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য যে কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কর্মাচারী সদস্যদের নিন্মলিখিত নির্দেশনা কঠোর ভাবে মেনে চলতে বলা হলোঃ
১।যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমতি নেয়া ব্যতীত কেউ কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করবেন না (নন গেজেট কর্মচারীদের ক্ষেত্রে , দপ্তর অধীক্ষক এবং হিসাবরক্ষক ছাড়া অতিরিক্ত আঞ্চলিক প্রশাসনিক অফিসার দায়িওত্ব গ্রহণ করতে পারবেন )
২। সরকারী নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি কেউ অসংযত সমালোচনা করবেন না
৩। কেউ তার নিজ কর্ম এলাকার বাইরে কোনো বিষয়ে অযথা আগ্রহ দেখাবেন না এবং নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে কঠোর হবেন।
( এস এ সামাদ) আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল -১
২৪ ১১ ৭১
১ ও ২ দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল -১ এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের কপি প্রদেয়
<003.229.661> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
জোনের অর্থ উপ-পরিষদ প্রধানের যুব শিবির সফর সংক্রান্ত চিঠি | দক্ষিন পুর্ব জোন-১ | ২৮ নভেম্বর,
১৯৭১ |
প্রিয় রউফ এবং আফজাল,
আমি ২৯ অক্টোবর, ৭১ রোজ শুক্রবার আপনাদের বক্সনগর এবং হাতিমাতা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করব বলে মনস্থির করেছি। এই সময়ের মধ্যে পত্র বাহক জনাব ফজলুল হক, যেমন বলবেন সেই অনুযায়ী ১৬৫ জন ছেলের খাদ্য ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হল।
ধন্যবাদান্তে,
বিনীত নিবেদক
(আলী আজম)
চেয়ারম্যান
অর্থ কমিটি
দক্ষিন পুর্ব জোন-২
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
২৮-১১-৭১
অধ্যাপক আব্দুর রউফ
এবং
জনাব মো. আফজাল।
<003.230.662> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
যুব শিবিরে নতুন করে যুব অন্তর্ভুক্তিকরন বন্ধ করার আদেশ | দক্ষিন পুর্ব জোন-২ | ২৯ নভেম্বর,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
চেয়ারম্যানের অফিস, ইউথ এডভাইসরী কমিটি,
দক্ষিন পুর্ব জোন-২
মেমো নং 2/ZAC/Y /C তারিখ ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১
বরাবর
ক্যাম্প প্রধান,
আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ইউথ রিসেপশন ক্যাম্প, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ কন্ট্রোলের চেয়ারম্যান, রিসেপশন ক্যাম্পে আর কোন অন্তর্ভুক্তি না করার জন্য নিম্নসাক্ষরকারীদের পরামর্শ দিয়েছেন। এবং সকল প্রকার ক্যাম্প আর্টিকেল নিরাপদ সংরক্ষন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে, (১)কোনো অবস্থাতেই রিসেপশন ক্যাম্পে আর কোন যুব অন্তর্ভুক্তি না করতে, (২)আপনি আরও যা করবেন, নিজ হেফাজতে ক্যাম্প আর্টিকেল গুলোর সংরক্ষন করার জন্য জরুরী পদক্ষেপ নেবেন এবং লিপিবদ্ধ করার জন্য এরূপ জিনিসের তালিকা দ্রুত নিম্নসাক্ষরকারীদের নিকট পাঠাবেন।
এটা এখানে উল্লেখ করা যায় যে, আমাদের পক্ষ থেকে যে সকল ছেলেরা ইতিমধ্যে মুক্তিযদ্ধা হিসেবে রিসেপশন ক্যাম্পে আছে তাদের তালিকা করা এবং মুক্তিযদ্ধাদের মাঝে সাহায্য করার জন্য তাদের অভিষিক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। আপনি অনুগ্রহ করে আপনার সকল পৌরজনদের তালিকা তাদের বাবার নাম, বাড়ির ঠিকানা, বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদির ৩ কপি নিম্নসাক্ষরকারীদের নিকট পাঠাবেন যাতে বিষয়টি উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা যায়।
(আহমেদ আলী)
চেয়ারম্যান,
জোনাল ইউথ এডভাইসরী কমিটি
দক্ষিন পুর্ব জোন-১।
<003.231.663> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবাকারীদেরকে (নার্সিং বয়) কর্মস্থলে নিয়োগের জন্য যুব শিবির পরিচালকের একটি চিঠি | দক্ষিন-পুর্ব জোন-২।
যুব প্রশিক্ষন পরিচালনা বোর্ড |
৩০ নভেম্বর,
১৯৭১ |
যুব পরিচালকের (প্রশিক্ষণ) অফিস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিন পুর্ব জোন-২
মেমো নং YTC/360 তারিখ ৩০ নভেম্বর, ৭১
দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার, মেলাঘর,
বিষয় –নার্সিং প্রশিক্ষিত ছেলেদের পরিচয়
জনাব,
যে ছেলেরা গোকুলনগর ক্যাম্পে নার্সিং সহকারী হিসেবে প্রশিক্ষন নিয়েছে তারা তাদের হাজিরার জন্য গোকুলনগর এবং চারিলাম ক্যাম্পে অপেক্ষা করছে।
সেক্টর ৩এর ছেলেদের ইতিমধ্যেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আপনাকে অনুগ্রহ করে যত দ্রুত সম্ভব আপনার সেক্টরের ছেলেদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করা হল।
ধন্যবাদান্তে।
আপনার একান্ত অনুগত
(আবু ইউসুফ)
পরিচালক,
প্রশিক্ষন।
<003.232.664> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব শিবিরের খরচের হিসাব অডিট করার আদেশ | দক্ষিণ-পূর্ব জোন ২ | ৩০ নবেম্বর, ১৯৭১ |
গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
নিরীক্ষা ও পরিদর্শন উপ–কমিটি
দক্ষিণ পশ্চিম জোন–২
নং…… তাং ৩০/১১/৭১
প্রতি
ক্যাম্প প্রধান/উপ-ক্যাম্প প্রধান
চেয়ারম্যান, দক্ষিণ পূর্ব জোন- দ্বিতীয় অধীন উপ কমিটি
জোনাল কাউন্সিলের অধীনে অফিস; সাউথ ইস্ট জোন -২।
মাননীয় মহাশয়
সাউথ ইস্ট জোন-২ এর সকল অফিস এবং যুব রিসেপশন ক্যাম্প জোনাল অডিট টিম দ্বারা নিরীক্ষিত হবে। তাই আপনাকে অবহিত করা হচ্ছে যে, আপনার অফিস যেকোন উপযুক্ত দিনে নিরীক্ষিত হবে এবং এই পরিদর্শনের জন্য আপনাকে সব হিসাব বই হালনাগাদ করতে বলা হচ্ছে যাতে নিরীক্ষা কাজ দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। অনুগ্রহ পূর্বক নিরীক্ষার উদ্দেশ্যে প্রাক বিজ্ঞপ্তি হিসাবে এই চিঠিটিকে বিবেচনা করবেন। আমি এক্ষেত্রে আপনার সহযোগিতা এবং সহায়তার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি যা অত্যন্ত প্রশংসিত হবে। ধন্যবাদান্তে,আপনার একান্ত(এস. জোহা, এম এন এ)চেয়ারম্যাননিরীক্ষা ও পরিদর্শন সাব-কমিটিসাউথ ইস্ট জোন -২
চেয়ারম্যান, জোনাল কাউন্সিল, সাউথ ইস্ট জোন-২চেয়ারম্যান, যুব রিসেপশন ক্যাম্প উপদেষ্টা কমিটি.
<003.233.665> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জোনের কর্মচারীদের বেতনের হিসাবঃ
নভেম্বর, ১৯৭১ |
দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ | নভেম্বর, ১৯৭১ |
জোনাল প্রশাসনিক দপ্তরের অফিসারদের বেতন বিল , দক্ষিণ–পূর্ব অঞ্চল।
নভেম্বর,১৯৭১ এর জন্য।
সিদ্ধান্তসমুহ | |||||||||
নাম | উপাধি | প্রকৃত বেতন | শীতকালীন | অন্যান্য | রাজস্ব | মোট সিদ্ধান্ত | নেট
পরিমাণ প্রদেয় |
স্বাক্ষর | মন্তব্য |
১।সৈয়দ আব্দুস সামাদ | জোনাল এডমিন অফিসার | ৫০০ রুপি | – | – | ১/- | ১ রুপি | ৪৯৯ রুপি | ||
২। জনাব মোহাম্মাদ ইসহাক | ৫০০ রুপি | ২০.০০ | ১/- | ২১ রুপি | ৪৭৯ রুপি | ||||
৩। ডঃ একেএম আবু জাফর | জোনাল স্বাস্থ্য অফিসার | ৫০০ রুপি | – | – | ১/- | ১ রুপি | ৪৯৯ রুপি | ||
৪। জনাব একেএম রুহুল আমিন | স্টাফ অফিসার | ৫০০ রুপি | ২০.০০ | ২০০.০০ | ১/- | ২২ রুপি | ২৭৯ রুপি | ||
৫। জনাব মনিরুল আহসান | তথ্য অফিসার | ৪৮৭.৫ রুপি | ২০.০০ | ২০০.০০ | ১/- | ২২রুপি | ২৬৬.৫০ রুপি | ||
৬। জনাব এম মহিউদ্দিন | শিক্ষা অফিসার | ৩৪৯.৮৬ রুপি | ২০.০০ | ২০০.০০ | ১/- | ২২১ রুপি | ১২৮.৮৬ রুপি | ||
(মাস প্রতি ৫০০ রুপি হিসেবে ২১ দিনের বেতন) | যোগদান করেছে | ||||||||
৭। জনাব বিমলেশ্বর দেওয়ান | পুলিশ অফিসার | ৪০০ রুপি | ২০.০০ | – | ১/- | ২১ রুপি | ৩৭৯ রুপি | ||
৮। জনাব এম শাহাবুদ্দিন | হিসাব অফিসার | ৪০০ রুপি | ২০.০০ | – | ১/- | ২১ রুপি | ৩৭৯ রুপি | ||
৯। জনাব এস হাফিজ আহমেদ | জোনাল স্টাফ অফিসার | ৩০৮ রুপি | ২০.০০ | – | ১/- | ২১ রুপি | ২৮৭ রুপি | ||
১০। জনাব এম এ ওয়াহাব | সি ও | ৩০০ রুপি | ১৫.০০ | – | ১/- | ১৬ রুপি | ২৮৪ রুপি | ||
৪২৪৫.৩৬ রুপি
|
১৫৫.০০ |
৬০০.০০
|
১০/-
|
৭৬৫ রুপি
|
৩৪৮০.৩৬ রুপি
|
৪২৪৫ / ৩৬ (টাকায় চার হাজার দু’শো পঁয়তাল্লিশ এবং ছত্রিশ পয়সা মাত্র) এর জন্য পাশকৃত।
<003.234.666> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.234.667> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.234.668> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পুর্ব জোন-১ এর প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণী | দক্ষিন পুর্ব জোন-১ | ২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
অনুমোদনের জন্য খসড়া
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী এমএনএ এর সভাপতিত্বে ২.১২.৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, দক্ষিন পুর্ব জোন–১ এর মিটিংযের সারাংশ।
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, অধ্যাপক নু্রুল ইসলাম চৌধুরী, এমএনএ এর সভাপতিত্বে ২.১২.৭১ তারিখে মিলিত হন। নিম্নলিখিতরা উপস্থিত ছিলেনঃ
১. অধ্যাপক নু্রুল ইসলাম চৌধুরী, এমএনএ, চেয়ারম্যান।
২. জনাব খাওয়াজা আহমেদ, এমএনএ।
৩. জনাব সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ।
৪. জনাব আব্দুল ওয়াহাব, এমপিএ।
৫. জনাব খাইরুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ।
৬. জনাব ওবাইদুল হক, এমপিএ।
৭. জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ।
সম্পাদক গত সভার সারাংশ পড়ে শোনান যা উপস্থিত সদস্যদের দ্বারা অনুমোদিত হয়েছে। এরপর কাউন্সিল কাজে নেমে পরেঃ
স্বাধীন হওয়া এলাকা গুলোর সমস্যাঃ– স্বাধীন হওয়া এলাকা গুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনার শুরুতেই, সদস্যরা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগের মেমো নং FIN/24/71/494 এ অর্থ মন্ত্রীর মন্তব্য সহ এর বিষয়াবলী উদ্ধৃত করেন।
এ বিষয়ে নিম্ন লিখিত সমাধান গুলো সর্বসম্মতি ক্রমে গৃহীত হয়ঃ
“কাউন্সিল এটা জানতে পেরে দুঃখিত হয়েছে যে, দায়িত্ব প্রাপ্ত বিভাগ স্বাধীন এলাকা গুলোর সমস্যার গুরুত্ত্ব বুঝতে ব্যার্থ হয়েছে এবং আমলাতান্ত্রিক, ধরাবাঁধা নিয়মে কাজ করেছে যা একটা সময় পরে নিন্দিত হয়েছে। স্বাধীন এলাকা গুলোতে ত্রান কার্যক্রমের অনুমতি জন্য সভাপতির পাঠানো টেলিগ্রামে কাউন্সিলের সদস্যদের সম্মতি ছিল। কাউন্সিল বুঝতে পারল যে, যদি একজন পুর্ণ ক্ষমতাধারী মন্ত্রী পুর্বাঞ্চলে বাস না করে, মুক্ত এলাকা গুলোর সমস্যা যেগুলোতে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্ত দরকার সেগুলো সম্পুর্ন রূপে অনুধাবন করা যাবে না।
মুক্ত এলাকা গুলো পরিদর্শনের পর কাউন্সিলের সদস্যরা চেয়ারম্যানকে জরুরী তহবিলের জন্য চাপ দেওয়ার তাগিদ দেন। বেসামরিক প্রশাসন স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিষ্ঠার প্রসাশনিক খরচ মেটানোর জন্য কোন তহবিল নেই। কাউন্সিল মনে করে যে, মন্ত্রীসভার সদস্যদের অতি সত্ত্বর জোনের মুক্ত এলাকা গুলো পরিদর্শন করা উচিৎ এবং মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেকোন ভাবেই হোক, পরিকল্পিত এলাকাটি কাউন্সিলের অনুমোদন প্রাপ্ত ছিল এবং চেয়ারম্যানকে মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাউন্সিল অনুমোদিত পরিকল্পনার বকেয়া রসিদের অর্থের অনুমোদনের অনুরোধ জানিয়ে দ্রুত টেলিগ্রাম করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল ।
কাউন্সিল আশা করেছিল যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগ মেমোতে উল্লেখিত পরিমান অনুযায়ী মুক্ত এলাকার বিশদ পরিকল্পনার স্থগিত কাজের জরুরী খরচ মেটানর জন্য কিছু অর্থের অনুমোদন দেবে।
জনাব খাওয়াজা আহমেদ, এমএনএ সভাকে জানান যে, পরশুরামের জন্য মোট ২৩২টি টিউব ওয়েল বরাদ্দ ছিল। এই মুহুর্তে তার ৮০% ই অকেজো। এগুলোকে মেরামত করার ব্যবস্থা অতি দ্রুত করতে হবে।
তিনি পেট্রল, ডিজেল এবং অন্যান্য তেলের প্রকট ঘটতির কথাও উল্লেখ করেন। এলাকার কৃষিবিদরা ৮ মাসের যুদ্ধ এবং এর সমস্যার কারনে অনাহারের শেষ সীমায় পৌছে গেছেন। আসন্ন আবাদি মৌসুমের জন্য তাদের পর্যাপ্ত ইরি বীজ দরকার। খাদ্য, শশ্য এবং অন্যান্য কৃষি পন্যের জন্য পরশুরাম সব সময় অতি ফলনশীল এলাকা ছিল।
সরকারের সাথে দ্বিপার্শিক বানিজ্যের খুটিনাটি বিশ্লেষনের জন্য নিম্ন লিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে কাউন্সিল একটি বানিজ্যিক সংগঠন তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয়।
১. জনাব সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ।
২. জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ।
৩. জনাব আব্দুল ওয়াহাব, এমপিএ।
ত্রান উপ-কমিটির সমগ্র জোনের জন্য নির্মিতব্য বিস্তারিত পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাউন্সিল প্রাথমিক ভাবে নিম্ন লিখিত ত্রান পরিকল্পনার অনুমোদন দেয়।
১.বাড়িঘর তৈরীর জন্য অনুদান ১০,০০,০০০/-
২.দুর্লভ নিত্তপ্রয়োজনীয় পন্যের সরবরাহ ২,০০,০০০/-
৩.পরিক্ষামুলক ত্রান কার্য ৫০,০০,০০০/-
৪.ক্ষ্রতিগ্রস্থ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা ১,০০,০০০/-
৫.ঔষধ ১,০০,০০০/-
৬.সাহায্য দরকার এমন মানুষের মধ্যে শীত বস্ত্র বিতরনঃ ১০ হাজার লোকের জন্য পশমী কাপড়।
অন্য সাব-কমিটির কাজের বিস্তার সম্পর্কিত বিস্তারিত পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য কাউন্সিল তাদেরকে অনুরোধ করেছে।
সরকারি অনুমোদনের ভিত্তিতে কাউন্সিল নিম্ন লিখিত পরিবর্তনের মাধ্যমে পুরোনো ধারা স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের পরিনত হবেঃ
১. মূল কলেবর থেকে সহযোগী অংশ গুলোকে বাদ দাওয়া হবে।
২. সংশ্লিষ্ট এমএনএ/এমপিএ এর সাথে আলোচনা করে অবশিষ্ট সদস্যদের এলাকার লোকেদের আস্থাভাজন সমাজকর্মীদের সাথে সংযুক্ত করা হবে। সভায় মুক্ত এলাকা গুলোতে পোস্ট অফিস চালুর সিদ্ধান্ত হয়।
সভায়, জোনাল কাউন্সিলের সাথে পরামর্শ করে মুক্ত এলাকার বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ দেওয়ার কর্তৃত্ত্ব জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়।
সৈয়দ ফজলুল হক, এমএনএ, মুক্তিযোদ্ধারা সবচেয়ে বেশি যে সব সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেগুলো নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে না।সদস্যরা বাংলাদেশের ভেতরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে তাদের দুর্দশা বর্র্নিত পীড়াদায়ক চিঠি পেয়েছেন। সদস্যরা মুক্তিযোদ্ধাদের অবহেলিত অবস্থার জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।
মুক্ত এলাকার বেসামরিক প্রশাসন চালানোর জন্য কাউন্সিল নিম্নলিখিত মৌলিক নীতি গুলো গ্রহন করেঃ-
ত্রাণ এবং পুণর্বাসন
জোনাল কাউন্সিলের ত্রাণ উপ-কমিটির মাধ্যমে সরকারের ত্রাণ প্রচেষ্টা সংগঠিত ও পরিচালিত করতে হবে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরু থেকে ভুক্তভগী মানুষের সম্পত্তি ইত্যাদির ক্ষয়ক্ষতির সঠিক মুল্যায়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হবে।
উন্নয়ন
সম্পুর্নভাবে আত্মনির্ভর ও স্বতঃপ্রবৃত্ত কাজের ওপর নির্ভরশীল।
সাধারন প্রশাসন
কাউন্সিল অনুধাবন করল যে, থানা পর্যায়ের নিচে, যা কিনা আমাদের দেশের স্বাধীন এলাকা গুলোতে মৌলিক প্রশাসনিক একক হিসেবে বিবেচিত হয়, এর নিচে মুক্ত এলাকা গুলোতে প্রশাসন স্থাপন যুক্তিযুক্ত হবে না। মানুষকে সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে তাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। মানুষের মনে নিরাপত্তার অনুভুতি নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ পোস্টিং করা যেতে পারে। পরিষদের মৌলিক কাঠামো, উপ-বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসন, স্বাধীনতার আগে যেমন ছিল তেমন ভাবেই চলতে পারে।
বিবিধ
সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ইউথ রিসেপশনের ক্যাম্পের নভেম্বর, ১৯৭১ মাসের পারিশ্রমিক মাসের শেষে প্রতিটি ক্যাম্পের প্রকৃত নগদ তহবিলের ভিত্তিতে প্রদান করা হবে।
ইউথ রিসেপশনের ক্যাম্পের হিসাব নিরীক্ষার জন্য জনাব এ.বি.এম. তালেব আলী, এমপিএ এবং জনাব ওবায়দুল হক, এমপিএ কে সংগে নিয়ে একটি নিরীক্ষা দল গঠন করা হয়। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জোনাল কাউন্সিলের কাছে এর তথ্য জমা দাওয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে জনাব ওবায়দুল হক, এমপিএ প্রত্যাহারের কারনে মেজর সুব্রমানিয়ামকে ফেনী যুব ক্যাম্পের ক্যাম্প-ইন-চার্জের পদে বসানোর ক্ষমতা দেওয়া হয়, যেহেতু জোনের মুক্ত এলাকায় তাকে প্রয়োজন ছিল।
সরকার স্থানান্তরের জন্য কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোন সেক্টর বা সাব-সেক্টর কমান্ডারকে তার নিজ এলাকায় পোস্টিং দেওয়া হবে না এবং যদি জোনে এই ধরনের পোস্টিং নিয়ে নির্দিষ্ট কোন সমস্যার উদ্ভব হয় তাহলে তা যথোপযুক্ত কর্তৃত্বের সাথে সমাধানের ক্ষমতা জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে দেওয়া হয়।
মেয়র হাসপাতালে সকল পোস্টিংয়ের দায়িত্ব কাউন্সিল জোনাল সাস্থ্য উপ-কমিটিকে দেয়।
কাউন্সিল প্রচার বিভাগের সকল অসমাপ্ত কাজ শেষ করার জন্য জোনাল প্রশাসনিক অফিসারকে অনুরোধ করেন।
সভাপতিকে ধন্যবাদ জ্ঞ্যাপনের মাধ্যমে মিটিং শেষ হয়।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী, (এস. এ. সামাদ)
সভাপতি, সেক্রেটারি,
জোনাল এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল জোনাল এডমিনিস্ট্রেটিভ কাউন্সিল
দক্ষিন পুর্ব জোন-১, শান্তিরবাজার।
<003.235.669> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জোনের প্রশাসনিক সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে শিবিরের দায়িত্ব গণপরিষদ সদস্য কর্তৃক সহকারী প্রধানের হাতে ন্যস্ত করার আদেশ | দক্ষিণ পূর্ব জোন ২ | ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ – পূর্ব জোন 2
১৪ নভেম্বর ১৯৭১ সালে অনুষ্ঠিত , জোনাল কমিটির মিটিং এ নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ি , যেসব MNA ও MPA ক্যাম্পের দায়িত্তে ছিল তাদের ডেপুটি চীফ এর কাছে সব কিছু বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কোনো সরকারি প্রতিনিধির ই ক্যাম্পের দায়িত্ব বুঝে নিতে দেরি করা উচিত নয়।
তৎকালীন ডেপুটি চীফ কেই MPA ও MNA গুলোর কাছ থেকে সব কিছু বুঝে নিতে বলা হয়েছিল কেননা কমিটি কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেয়ার আগ পর্যন্ত ডেপুটি চীফ ই এখন ক্যাম্পের প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন।
আহমেদ আলী
চেয়ারম্যান,
জোনাল উপদেষ্টা কমিটি
যুব শিবির
দক্ষিণ – পূর্ব জোন -2
মেমো নং – 6/ZAC/Y/C তাং- ৪ঠা ডিসেম্ম্বর, ১৯৭১
অনুলিপি জনাব আফজাল খানের প্রতি তথ্য ও যথাযথ ব্যবস্থা নেবার জন্য।
আহমেদ আলী
চেয়ারম্যান,
জোনাল উপদেষ্টা কমিটি
যুব শিবির
দক্ষিণ – পূর্ব জোন -2
<003.236.670> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যুব অভ্যর্থনা শিবিরের খাদ্য ভাতা বৃদ্ধির বিজ্ঞপ্তি | দক্ষিণ পূর্ব জোন ২ | ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ – পূর্ব জোন 2
মেমো নং – 7/ZAC/Y/C তাং ৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
প্রেরক- আহমেদ আলী
চেয়ারম্যান,
জোনাল উপদেষ্টা কমিটি
যুব অভ্যর্থনা শিবির
প্রাপকঃ ক্যাম্প প্রধান
হাতিমারা
জনাব,
এতদ্বারা আপনাকে জানানো যাচ্ছে ইউথ রিসিপশান ক্যাম্প, জোনাল উপদেষ্টা কমিটির মিটিং এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, খাদ্যে ভর্তুকি বাবদ যে অর্থ ২৫ পয়সা থেকে ৪০ পয়সায় উন্নীত করা হয়েছে তা নিম্নলিখিত উপায়ে সমন্বয় করা হবে-
১- সকল বন্দী দের টিফিন বাবদ প্রতিদিন ৩০ পয়সা ব্যয় করা হবে।
২- প্রতি বন্দী কে প্রতিদিন নগদ ১০ পয়সা দেয়া হবে। এটি টাকা পাওয়ার পর সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক ভাবে দেয়া হবে।
১ ডিসেম্বর , ১৯৭১ থেকে আপনাকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানানো হচ্ছে।
আপনার অনুগত
আহমেদ আলী
চেয়ারম্যান,
জোনাল উপদেষ্টা কমিটী
<003.237.671> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে জোনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তারবার্তা | দক্ষিণ পূর্ব জোন ১ | ৯ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
ড. টি. হোসেন
৮- থিয়েটার রোড,
ক্যালকাটা- ১৬
স্বাধীন এলাকার সাধারন মানুষ ও মুক্তি ফৌজ দের জরুরী ভিত্তিতে ডাক্তার ওষূধ ও চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন। ফেনীর ছাগলনাইয়ার ‘MORERSJARO’ থানায় যে হাসপাতাল টি আছে তা শ্ত্রুদের আক্রমনে বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে । দয়া করে জরুরী ভিত্তিতে ৫০ হাজার টাকা পাঠান। এই পদক্ষেপ নিতে দেরি করলে জনগন আমাদের সরকারের উপর আস্থা হারাবে।
জোনাল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
দক্ষিণ – পূর্ব জোন
________________________________________________
টেলিগ্রাফের জন্য নয়।
মেমো নং SEZ-I/HS/14/237 তাং- ৯/২১/৭১
নিশ্চিতকরণ অনুলিপি
জোনাল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা
দক্ষিণ – পূর্ব জোন
<003.238.672> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.238.673> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.238.674> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ-পূর্ব জোনে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণী | দক্ষিণ-পূর্ব জোন ১ | ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বেসামরিক প্রশাসনের উপশাখা গঠনের লক্ষ্যে ফেনীতে অবস্থিত উপশাখা কর্মকর্তার দপ্তরে ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের সন্ধ্যা ৭ ঘটিকায় মেজর থাপার সাথে একটি মিটিং এর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
উপস্থিত
১) জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী – সভাপতি, পূর্বাঞ্চল
২) _সামাদ- জোনাল প্রশাসক, পূর্বাঞ্চল
৩)_খাজা আহমেদ, এমএনএ,
৪)_তালেব আলী, এমপিএ।
৫)_খাইরুদ্দিন, এমপিএ।
৬)_পুলিন বিহারী দে, এমএনএ
৭)_খান-এ-আলম খান, ডি.সি., নোয়াখালী
৮)_মুসা, পুলিশ প্রধান, নোয়াখালী।
৯)_মোঃ ইশহাক, এস.ডি.ও., ফেনী।
১০) সকল বিভাগীয় প্রধান।
১) নিম্নলিখিত নির্দেশনাসমূহ জনাব নুরুল ইসলাম চৌধুরী, সভাপতি, পূর্বাঞ্চল কর্তৃক প্রদান করা হয়েছিলঃ-
১) এলাকায় দ্রুত বেসামরিক প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে।
২) সরকারের নির্দেশ আসা পর্যন্ত সকল বিভাগে বিদ্যমান কর্মচারীবৃন্দ সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে যাবেন।
৩) আঞ্চলিক নীতিগুলো বাস্তবায়িত করা হবে।
৪) জনাব সামাদ কর্তৃক আদেশ এবং নির্দেশনাগুলো সময়ে সময়ে জারি করা হবে, জোনাল প্রশাসক দ্বারা সম্পন্ন করা হবে।
৫) জনাব মোঃ ইসহাক উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন, ফেনী।
৬) সংযোগাধিকারিক বিভিন্ন বিভাগীয় এবং আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষের সাথে সংযোগ রক্ষা করবেন।
৭) স্থানীয় প্রশাসনকে আরো গতিশীল করতে অফিসিয়াল যন্ত্রপাতিগুলো দ্বারা কর্মসময়ের পরেও কাজ করা হবে।
৮) ২৫শে মার্চের আগে যেসকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীবৃন্দ তাদের কর্মক্ষেত্র ত্যাগ করেছেন তারা অন্যদের মতো একই পদমর্যাদায় থাকবেন।
২) জনাব সামাদ, আঞ্চলিক প্রশাসক উপস্থিত সবাইকে আঞ্চলিক প্রশাসনের কাজের বর্ণনা দিলেন এবং বিভিন্ন সদস্যকর্তৃক উত্থাপিত বিভিন্ন দিকগুলো পরিষ্কার করলেন।
৩) মেজর থাপা নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলো জারি করলেনঃ
১) বেসামরিক প্রশাসনের গঠনের লক্ষ্যে এ সম্পর্কিত সবকিছু দ্রুত সম্পাদন করতে হবে।
২) ফেনী থানা প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কেন্দ্রে ত্রাণবিতরণ শুরু করা হবে যেখানে নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো থাকবেঃ-
ক) রান্না
খ) সংরক্ষণ
গ) প্রজ্বলন
ঘ) স্বাস্থ্যব্যবস্থা।
৩) সকল লুটকৃত সম্পদ দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া হবে।
৪) মুদ্রাঃ
ক) ১১/১২/৭১ তারিখ পর্যন্ত সকল ব্যাংক বন্ধ রাখা হবে।
৫) জনাব সি.এম.আহমেদ এ সময়ে উপ-কোষাগার কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবেন।
৬) বাজার সচিবের নিয়ন্ত্রণে, কোন অতিরিক্ত মূল্য ভোক্তা যেন অনুভব না করে তা শিল্প ও বানিজ্য চেম্বার পর্যবেক্ষণ করবে।
৭) নিম্নক্ত পণ্যদ্রব্যগুলো থাকবে……এবং রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিক্রয় হবে।
ক) চিনি
খ)পেট্রোল
গ)কে.ওয়েল
ঘ)লবণ
ঙ) সকল ই.ওয়েল
৮) হাসপাতাল-হাসপাতাল স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।
৯) স্বাস্থ্য- ফেনীর মেডিকেল অফিসার ঠিক আছেন, তাকে মহামারীরোধ করার জন্য টিকা এবং প্রতিষেধক প্রদান শুরুর পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১০) স্বাস্থ্যব্যবস্থা- নগর কমিটি দ্রুত এ ব্যাপারে মনোনিবেশ করবে
১১) বিদ্যুৎব্যবস্থা-২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ চলাচল নিশ্চিত হবে। এইচ.এস.ডি তেলের ব্যবস্থা করা হবে।
১২) উপবিভাগে এইচ.এস.ডি তেল সরবরাহের জন্য হোস্ট সরকারকে অনুরোধ করা।
১৩)কৃষিতে পাম্পের জন্য…….এইচ.এস.ডি তেল আহরণের ব্যবস্থা করা।
১৪) শিক্ষা-সকল প্রতিষ্ঠানে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করা। ফেনী কলেজকে কি করে দ্রুত শুরু করা যায় তা জি.বি কলেজের সদস্য জনাব এ. মালেক দেখবেন।
১৫) রাস্তা ও মহাসড়ক | ডি.সি., নোয়াখালী নিশ্চিত করেছেন যে তিনি চুক্তির
নিমিত্তে উভয় বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারদের
১৬) গৃহব্যবস্থাপনা | মেজর থাপার নিকট পাঠাবেন।
১৭) টেলিযোগাযোগ – সকল সরকারী বিভাগ এবং আর্মি ক্যাম্পগুলোতে দ্রুত টেলিফোন সংযোগ দেয়া হবে।
১৮) ডাকঘর- পুরাতন টিকেটগুলোতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের সীল বসিয়ে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
১৯) দূরবার্তা – দূরবার্তা সুবিধা উপবিভাগগুলোতে বর্ধিত করা হবে।
২০) অকেজো যানবাহনগুলোকে মেরামত করার জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অংশ আনা হবে।
২১) রেলপথ- রেল মাস্টারদের সকল রেলপথ সম্পত্তি গোডাউনে স্তূপ করতে এবং অর্থ কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২২) পরিবহন – বাস সমিতি দ্রুত পরিবহন সুবিধা তৈরী করবে।
২৩) কৃষি – শীতকালীন শস্য সরবরাহ করা হবে।
<003.239.675> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিজ্ঞপ্তি জানিয়ে জোনের রাজনৈতিক বিষয় প্রধানের চিঠি | বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ |
১২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
প্রেরকঃ খাজা আহমেদ,
রাজনৈতিক নেতা, ফেনী
প্রাপকঃ উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী
মেমো নংঃ ক-১/ সিপিআরবি ১৯, তারিখ ১২ ডিসেম্বর ‘৭১
নিম্ন বর্নিত যে রাজনৈতিক সংস্থাগুলো গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার দ্বারা নিষিদ্ধ ঘোষীত হয়েছে। সংস্থার প্রধানদের জরুরী ভিত্তিতে হেফাজতে নিতে হবে এবং অনতিবিলম্বে অফিস গুলো ভাল ভাবে খুজে দেখে সিল করে দিতে হবে।
নিম্নে বর্নিত লোকজন এই সংস্থার প্রধান ।
দয়া করে জরুরী ভিত্তিতে বিষয়টি দেখার আবেদন রইল ।
১. সামশুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী
এস/ও সালামাত উল্লা চৌধুরী, বিরিঞ্চি প্রেসিডেন্ট,কনভেনশন মুসলিম লীগ পি.এস. ফেনী
২. কাজী আহমেদ সম্পাদক, কনভেনশন মুসলিম লীগ
এস/ও ফজলুর রহমান ভুঁইয়া
গ্রামঃ বারাহিপুর, পিএস. ফেনী
৩. নুর আহমেদ, চৌধুরী এস/ও. জি…. প্রেসিডেন্ট, কাউন্সিল মুসলিম লীগ
গোডাউন কোয়ার্টার, পিএস. ফেনী
৪. গোলাম মহিউদ্দিন খন্দকার সম্পাদক, কাউন্সিল মুসলিম লীগ
এস/ও. মোঃ ইব্রাহিম
গ্রামঃ নীঝপানুয়া, পি/এসঃ ছাগলনাইয়া
৫. মকবুল আহমেদ, বিএ নাজিম-ই-জামাত-ই-ইসলামী
এস/ও নাদেরউজ্জামান
গ্রামঃ পূর্ব চাঁদপুর, পিএসঃ ফেনী
৬. ফজলুর রহমান কন্ট্রাক্টর, আমির-ই-জামাত-ইসলামী
এস/ও ওমার, ডাক্তারপাড়া, পিএসঃ ফেনী
৭. আব্দুল জব্বার খদ্দার, আহ্বায়ক, পিডিএ
এস/ও আব্দুল হাকিম চৌকিদার, গ্রামঃ গৌনাক
পিএসঃ সোনাগাজী
<003.239.676> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৮. মৌলানা ইব্রাহিম, প্রেসিডেন্ট, নাজিম-ই-ইসলামী
এস/ও. হাজী রেজাউদ্দিন
গ্রামঃ বিহারীপুর পিএস. ফেনী
৯. নুর ইসলাম চৌধুরী সম্পাদক, নাজিম-ই-ইসলামী
এস/ও আব্দুর রহমান,গোডাউন কোয়ার্টার
পিএস. ফেনী
এসডি/- খাজা আহমেদ
১২.১২.৭১
রাজনৈতিক প্রধান,ফেনী
চেয়ারম্যান, ফাইনেন্স সাব কমিটি
জোন-১
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মেমো নং. ৬(২)/সি, তারিখ.১২.১২.৭১
অনুলিপি পাঠানো হয়েছেঃ- ১) মিস্টার এম. হুসেইন, ম্যাজিস্ট্রেট ১ম শ্রেনী কে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছে অফিস এবং সকল রেকর্ডস আর আর্টিকেল জব্দ করতে বলা হয়েছে যা ওখানে পাওয়া যাবে এবং তা পাঠাতে হবে অফিসে পুলিশ এর সাহায্য নিয়ে যারা নিয়োজিত আছে ও/সি দ্বারা, ফেনী পি.এস ।
২) ওসি ফেনী কে উপর এ উল্লেখিত সকল ব্যক্তিকে হেফাজতে নিতে বলা হল ।
(মোহাম্মদ ইশতিয়াক)
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী।
১২/১২/৭১
<003.240.677> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রত্যাগত শরণার্থীদের জন্য অভ্যর্থনা শিবির খোলা সংক্রান্ত কয়েকটি চিঠি | বাংলাদেশ সরকার,
দক্ষিণ-পূর্ব জোন-১ |
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়, ফেনী
মেমো নং ২৩/সি, তারিখ ফেনী, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
বরাবর
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
১নং এস.ই. অঞ্চল,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ,
শান্তির বাজার।
বিষয়ঃ অভ্যর্থনা শিবির উদ্বোধন।
যে সমস্ত বাস্তহারা লোকজন এখন ভারত থেকে ফিরে যাচ্ছে, তাদের গ্রহণ করা ও দেখভালের জন্য প্রত্যেক থানা সদরে একটি করে মোট চারটি অভ্যর্থনা শিবির খোলা হয়েছে। এই ব্যাপারে সকল ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
ফেনীর রাজনৈতিক নেতা জনাব খাজা আহমেদ, এমএনএ এর কাছ থেকে আমি ৫০০০.০০ রুপি অগ্রিম গ্রহণ করেছি। এই সল্প পরিমান অর্থ দিয়ে যতটা সম্ভব আমি কাজ শুরু করে দিয়েছি।
শরণার্থীদের পরিবহণ এখন খুব তীব্র সমস্যা, কারণ সব যানবাহন এখন সামরিক ব্যক্তিদের কাজে ব্যাবহার হচ্ছে। যাইহোক, রাজনৈতিক নেতা জনাব খাজা আহমেদের সাহায্যে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।
খুব দ্রুতই পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের বন্দোবস্ত করা জরুরি।
উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের বিষয়টাও এখন অনেক বড় প্রশ্ন। তাদের উপশম ও পুনর্বাসনের ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা আমি শান্তির বাজারে আপনার কাছে জমা দিয়েছি। অনুগ্রহ করে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের, বা আপনার কাছে যেটি উপজুক্ত মনে হবে সেই মতে কাজ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এই চিঠির (মোহাম্মদ ইশতিয়াক)
সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী।
<003.240.678> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়, ফেনী
রসিদ নং ……… তারিখঃ ১৫/১২/৭১
প্রতি,
C.O(Rev), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ফেনী ফেনী শরণার্থী শিবির
C.O(Dev), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, পরশুরাম পরশুরাম
C.O(Dev), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ফেনী মুতিগঞ্জ(সোনাগাজী)
C.O(Dev), ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ছাগলনাইয়া ছাগলনাইয়া
আপনাদেরকে ………… শরণার্থী শিবিরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে প্রেরণ করা হল। শিবিরের কাজের জন্য আপনার প্রয়োজন মত ………… এ নিয়োজিত যে কারও সেবা গ্রহণ করার অনুমোদন দেয়া হল।
ফেরত আসা লোকজনকে গ্রহণ করার জন্য শিবির প্রস্তুত করতে আপনাকে এখনি সেখানে চলে যেতে বলা হল।
Sd/মোহাম্মদ ইশতিয়াক
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী
১৫/১২/৭১
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
উপ–বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়, ফেনী
স্মারক নং ২০(৪)/সি, তারিখঃ১৫/১২/৭১
প্রতি,
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,
অভ্যর্থনা শিবির, মুতিগঞ্জ/ফেনী/ছাগলনাইয়া/পরশুরাম
যারা ফেরত আসছে, ভারত সরকার যদি তাদেরকে কোনও টোকেন দিয়ে থাকে তবে সেই অনুসারে আপনার শিবিরের মাধ্যমে আগতদের নিবন্ধন করার জন্য অনুরোধ করা হল। নিবন্ধনে ফেরত আসা মানুষের নাম, ঠিকানা, পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্য তথ্যাদি সংযুক্ত করতে হবে।
Sd/-
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী
১৫/১২/৭১
রসিদ নং ২০(৪)/১(২)/সি, তারিখঃ ১৫.১.৭১
অনুলিপি প্রেরণ করা হলঃ
১। জনাব খাজা আহমেদ, এমএনএ ও সভাপতি, ফেনী উপ-কমিটি, অঞ্চল-১, ফেনী।
২। সহকারী কমিশনার, তথ্যের জন্য নোয়াখালী, উপ-বিভাগীয় কার্যালয়, ফেনী।
<003.240.679> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
উপ–বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়, ফেনী
রসিদ নং ২১(৪)/সি তারিখ ১৬.১২.৭১
প্রতি,
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাঃ ১। ছাগলনাইয়া অভ্যর্থনা শিবির
২। মুতিগঞ্জ(সোনাগাজী) অভ্যর্থনা শিবির
৩। পরশুরাম অভ্যর্থনা শিবির
৪। ফেনী অভ্যর্থনা শিবির
এই সঙ্গে মনে রাখবেন, ভারত থেকে যারা নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসছে তাদেরকে একটা প্রত্যয়নপত্র দিতে হবে। এই প্রত্যয়ন পত্র ফেরত আসা মানুষদের সাথে রাখার জন্য বলা হচ্ছে কারণ ত্রাণ কার্যক্রমের সময় সেটা প্রয়োজন হবে।
এই অফিস আদেশে(রসিদ নং ২১(৪)/সি তারিখ ১৬.১২.৭১) যেমন বলা হয়েছে, তেমনি আপনার শিবিরের মাধ্যমে যারা বাড়ি ফিরছে তাদের লিখিত বিবরণ রাখার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
এই সম্পর্কে আমি আপনাকে বলতে চাই, বিভিন্ন চেক পোস্ট দিয়ে যে সমস্ত মানুষ ভারত থেকে বাংলাদেশে আসবে তাদের গ্রহণ করার জন্য ভারতীয় সীমান্তে কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবী প্রেরণ করুন। কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবীদেরকে প্রত্যাবর্তনকারীদের সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদান এবং সবিনয়ে ক্যাম্পে তাদেরকে পথ প্রদর্শন করার নির্দেশ দিন।
Sd/- মোহাম্মদ ইশতিয়াক
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী
স্মারক নং ২১(৪)/১(৩)/সি তারিখ ১৬.১২.৭১
অনুলিপি প্রেরণ করা হলঃ
১। জনাব খাজা আহমেদ, এমএনএ, রাজনৈতিক প্রধান, ফেনী
২। প্রশাসনিক কর্মকর্তা, এস ই ১নং অঞ্চল
৩। সহকারী কমিশনার, নোয়াখালী
তথ্যের জন্য
(মোহাম্মদ ইশতিয়াক)
উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফেনী।
<003.240.680> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বরাবর,
ক্যাম্প সুপারভাইজার,
——————-ক্যাম্প,
স্যার,
বাংলাদেশী উদ্বাস্তুদের আশ্রয় প্রদানের জন্য আমরা ভারত সরকারের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন যেহেতু আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছে আমরা স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে ফিরতে চাই।
আপনার বিশ্বস্ত
পরিবর প্রধানের স্বাক্ষর
পুলিশ পরিচয় পত্র নং…………
১। ক্যাম্পের নাম ……………………………….
২। পরিবার প্রধানের নাম এবং বয়স…………….
৩। পরিবারের সদস্যদের নাম এবং বয়স……….
৪। পুলিশ পরিচয় পত্র নং……………………….
৫। ব্লক এবং তাঁবু নং…………………………..
৬। ক্যাম্পে প্রবেশের তারিখ……………………
৭। বাংলাদেশে ফেরার তারিখ………………….
………………………………
ক্যাম্প সুপারভাইজারের স্বাক্ষর
<003.241.681> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.241.682> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পূর্ব জোন
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব জোন কাউন্সিল অধিবেশনে গৃহীত প্রস্তাবাবলীর অংশ | বাংলাদেশ সরকার পূর্ব জোন ও প্রতিরক্ষমন্ত্রনালয় | ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সাধারণ প্রশাসন দপ্তর
স্বারক লিপি নং সা.প্র/১৭৬১ তারিখ ২৭/১০/১৯৭১
বরাবর
সম্পাদক,
প্রতিরক্ষা দপ্তর।
অবগতি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ০৫/০৯/১৯৭১ ইং তারিখে অনুষ্ঠিত পূর্ব জোনের, জোনাল কাউন্সিল সভায় গৃহীত প্রস্তাব ১ এর কপি নিম্ন স্বাক্ষরকারীকে প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
(ওয়ালিওল ইসলাম)
উপসচিব ( সি.এস )
সা.প্র দপ্তর
উপরোক্ত আলোচনা
প্রস্তাব নং ১
১। ০৫/০৯/১৯৭১ ইং তারিখে সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে মুক্তিবাহিনীর সাথে সংযোগ রক্ষার জন্য সরকারের আরও এক বা একাধিক অফিসার নিয়োগ দেওয়া উচিত।
……………………………
প্রস্তাব নং ৫,১২ ও ১৪
৫। বাংলাদেশ সরকার কাউন্সিল সদস্য ও জোনের অফিসারদের বিভিন্ন শরণার্থী, যুব ও ট্রান্জিট ক্যাম্পে নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য বাহনের ব্যবস্থা গ্রহন করবে। পাহাড়ি অঞ্চলে যাতায়াত ও যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য কয়েক ধরনের যানবাহন অত্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবসত তুরা সহ দূরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত বিভিন্ন যুব, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশিক্ষন শিবিরের সাথে সংযোগ করা সড়কগুলোতে এবং শহরেও কোন যানবাহন পাওয়া যায় না, এমন কি ভাড়াতেও না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আহত মুক্তিযোদ্ধা, যাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রয়োজন তাদেরকে দ্রুত নিকটবর্তী ডাক্তারের কাছে নেওয়া যায় না অথবা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া যায় না।
<003.242.683> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.242.684> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পুর্ব জোন যুব শিবির উপদেষ্টা পরিষদের সভার কার্যাবলী | বাংলাদেশ সরকার, পূর্ব জোন | ১৫ নভেম্বর, ১৯৭১ |
পূর্বাঞ্চল ইয়ুথ ক্যাম্প উপদেষ্টা কমিটির সভার সারসংক্ষেপ।
১৫ নভেম্বর, ১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত।
৭১ এর ১৫ নভেম্বর পূর্বাঞ্চল ইয়ুথ ক্যাম্পের উপদেষ্টা কমিটির একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মুস্তফা শহীদ। সভায় অংশগ্রহণ করেনঃ-
১. মৌলানা আসাদ আলী, এমপিএ
২. বাবু গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন, এমপিএ
৩. জনাব তৈমুস আলী, এমপিএ
৪. জনাব তোয়াবুর রহিম, এমপিএ
বিশেষ অনুরোধে জনাব মুস্তফা আলী, এমএনএ (সদস্য- প্রশাসন) অথবা পূর্বাঞ্চল সভায় অংশগ্রহণ করে।
সভার উদ্বোধন করে জনাম মুস্তফা শহীদ লক্ষ্য করেন যে, বিভিন্ন কারণে পূর্বাঞ্চলের (১) ধর্মনগর (২) কৈলাশহর (৩) কমলপুর অভ্যর্থনা শিবির মসৃণভাবে কাজ করছে না। সিলেট জেলার হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার থেকে উচ্চ হারে ক্রমাগত যুবকদের আগমনে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ক্যাম্প প্রশাসনের প্রস্তুতি নেয়া এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে (১) জনাব তৈমুস আলী, এমপিএ হবেন ধর্মনগর ইয়ুথ ক্যাম্প প্রধান, (২) জনাব তোয়াবুর রহিম, এমপিএ হবেন কৈলাশহর ইয়ুথ ক্যাম্প প্রধান, (৩) জনাব গোপাল কৃষ্ণ মহারত্ন, এম পিএ হবেন কমলপুর ইয়ুথ ক্যাম্প প্রধান, (৪) মৌলানা আসাদ আলি, এমপিএ হবেন মোহনপুর ইয়ুথ ক্যাম্প প্রধান।
১. আরও ভালো ব্যবস্থাপনার জন্যে ক্যাম্প প্রধানদের অতিসত্বর ক্যাম্পের পুনরবিন্যাসের অনুরোধ করা যাচ্ছে। স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে তাদের সক্রিয় উদ্যোগ এবং সহায়তার জন্যেও অনুরোধ করা হচ্ছে। তাদেরকে আরও কিছু নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলার অনুরোধ করা যাচ্ছ, (এ) অভিযান সংক্রান্ত বাজেটের নির্দেশাবলী, (বি) প্রশাসনের জন্যে সাধারণ নির্দেশনা (যা এখানে সংযুক্ত আছে)।
২. গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, বেশ কিছু ইয়ুথ ক্যাম্পে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ থেকে সঠিকভাবে রেশন সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলস্বরূপ, ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় বেশ অসুবিধা হচ্ছে। নিয়মিত রেশন সরবরাহ করার লক্ষ্যে আশ্রয়দাতা সরকারের উচ্চ কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
৩. যেহেতু এই অঞ্চল অপেক্ষাকৃত ছোট এবং অভ্যর্থনা শিবিরের সংখ্যা পাঁচের বেশি নয়, তাই একজন পূর্ণকালীন পরিচালকের প্রয়োজনীয়তা নেই। একজন সহকারী পরিচালকের পক্ষেই এই দায়িত্ব পালন সম্ভব। অতঃপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, একজন সহকারী পরিচালক সহ নিম্নলিখিত কর্মীদের অতিসত্বর নিয়োগ দেয়া হবে এবং উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যানকে অনুমতি দেয়া হল জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের সাথে পরামর্শ করে কর্মী নিয়োগ দেয়ার জন্য।
(i) সহকারী পরিচালক ১
(ii) হিসাবরক্ষক ১
(iii) অফিস সহকারী ১
(iv) অফিস পিওন ২
(v) চালক ১
৪. আগরতলা প্ল্যানিং ও প্রোগ্রামিং স্টেশনের সমন্বয় পরিচালক ড. আবু ইউসুফকে জরুরী পরামর্শ এবং কার্যদর্শনের জন্যে উপদেষ্টা কমিটির সভাপতির পক্ষ থেকে বিনীত অনুরোধ করা হচ্ছে। একইসাথে তাকে পূর্বাঞ্চল ইয়ুথ ক্যাম্পের সাময়িকভাবে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেবার জন্যেও অনুরোধ করা হচ্ছে। এই কাজে তার ভ্রমন ভাতা এবং অন্যান্য প্রাথমিক খরচ পূর্বাঞ্চল ইয়ুথ ক্যাম্পের উপদেষ্টা কমিটি থেকে বহন করা হবে।
৫. গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করা গিয়েছে যে, ক্যাম্পের প্রায় সকল যুবক ওষুধ এবং বিশেষ করে শীতবস্ত্রের অভাবে বিভিন্ন রোগে ভুগছে। অতএব, কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি ২০০০ টি (দুই হাজার) কম্বল এবং পর্যাপ্ত ওষুধের জন্যে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
৬. কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে ১৯৭১ এর ডিসেম্বর মাসের জন্য বাজেট (এখানে সংযুক্ত আছে) ঠিক করেছে, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বাজেট অনুমোদনের সুপারিশ করার জন্য উপদেষ্টা কমিটির সভাপতিকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এসডি/-
চেয়ারম্যান,
ইয়ুথ ক্যাম্প উপদেষ্টা কমিটি,
পূর্বাঞ্চল,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
<003.243.685> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
গণপরিষদ সদস্য দ্বারা গঠিত উত্তর-পূর্ব জোন-১ এর প্রথম সভার কার্যবিবরণী ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক চিঠি | বাংলাদেশ সরকার, উত্তর-পূর্ব জোন-১ এবং স্বাস্থ্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় | ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
উত্তর পূর্ব অঞ্চল–১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলের সংবিধান বিষয়ে এমএনএ এবং এমপিএ দের প্রথম মিটিং এর সারসংক্ষেপ
সদস্যদের কেউই ডাওকিতে ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ এর পূর্বনির্ধারিত তারিখে উপস্থিত না হওয়ায় নির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হবে না।
উপস্থিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে সভার স্থান পরিবর্তন করে শিলং এবং ৬ই সেপ্টেম্বরের বদলে ৭ সেপ্টেম্বরে সভা স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএনএ, ফোনে ডাওকির জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন। বালাত এবং বারসেরাতে অবস্থানরত এমএনএ এবং এমপিএ দের দেরীতে আসার কারণে তারিখ স্থানান্তর করা জরুরী ছিল। যানবাহনের দুরবস্থার কারণে তাদের দেরী হয়েছে।
১. জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী, এমএনএ
২. জনাব আব্দুল মালিক, এমপিএ
৩. জনাব এম. এ. কুদ্দুস, এমপিএ
৪. জনাব মাসুদ আহমেদ চৌধুরী, এমপিএ
৫. জনাব আব্দুর রইস, এমপিএ
৬. জনাব এম. এ. জহুর, এমপিএ
৭. জনাব এম. এ. সাত্তার, এম পিএ
৮. জনাব লুৎফুর রহমান, এমপিএ
৯. জনাব আব্দুল আজিজ চৌধুরী, এমপিএ
১০. জনাব আব্দুল লতিফ, এমপিএ
১১. জনাব মঞ্জুর আহমেদ, এমপিএ
১২. জনাব হাবিবুর রহমান, এমপিএ
১৩. জনাব সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এমপিএ
১৪. জনাব কাজী সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
১৫. জনাব দেওয়ান ওবায়েদুর রেজা চৌধুরী, এমপিএ
১৬. জনাব আব্দুল মুন্তাকিন চৌধুরী, এমএনএ
১৭. জনাব এম. আব্দুর রহিম, এমএনএ
<003.243.686> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১৮। জনাব এম শহীদ খান,এমএনএ
১৯। জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি ,এমএনএ কে ভোটের মাধ্যমে এই সভা পরিচালনার করার জন্য সভাপতি মনোনীত করা হয়েছে।
নিম্নলিখিত আলোচ্যসূচী সভায় আলোচনা করা হয়েছেঃ
১। আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতি নির্বাচন
২। আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর নিম্নলিখিত উপ-কমিটিগুলো গঠন-
(ক) অর্থায়ন উপ-কমিটি
(খ)রিলিফ উপ-কমিটি
(গ)স্বাস্থ্য উপ-কমিটি
(ঘ)প্রচার উপ-কমিটি
(ঙ)শিক্ষা উপ-কমিটি
১। উপস্থিত সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী,এমএমএ কে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতি নির্বাচন করেছে।
২। উপ-কমিটিগুলোর সভাপতি ও সদস্যরা সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছেন।
(ক) অর্থায়ন উপ–কমিটি
সভাপতি-জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি,এমএনএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
জনাব আব্দুল মালিক,এমপিএ
জনাব দেওয়ান ফরিদ গাজী,এমএমএ
জনাব এস এইচ চৌধুরি,আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
(খ)রিলিফ উপ–কমিটি
সভাপতি-জনাব আব্দুর রইস,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব লুৎফুর রহমান,এমপিএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব এম এ কুদ্দুস,এমপিএ
জনাব সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, এমপিএ
জনাব এম এ সাত্তার,এমপিএ
গ) স্বাস্থ্য উপ–কমিটি
সভাপতি-জনাব হাবিবুর রহমান,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
ডাক্তার আব্দুল মালিক,এমপিএ
ডাক্তার কাজি সিরাজুদ্দীন আহমেদ এমপিএ
জনাব আব্দুল হক,এমএনএ
জনাব মাসুদ আহমেদ চৌধুরি ,এমপিএ
জনাব আব্দুল হামিদ,এমএনএ
(ঘ)প্রচার উপ–কমিটি
সভাপতি-
জনাব আব্দুল মুন্তাকিম চৌধুরি,এমএনএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব মঞ্জুর আহমেদ,এমপিএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব জেড এ রহিম,এমএনএ
জনাব আব্দুর রইস,এমপিএ
জনাব লুৎফুর রহমান,এমপিএ
<003.243.687> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
( ঙ) শিক্ষা উপ–কমিটি
সভাপতি-
জনাব এম এ লতিফ,এমপিএ
সদস্যবৃন্দ-
জনাব আব্দুল আজিজ চৌধুরি,এমপিএ
জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরি,এমএনএ
জনাব আব্দুস জহুর,এমপিএ
জনাব আব্দুল হক,এমএমএ
৩।বিবিধ
নিম্নলিখিত আলোচ্যসূচী সভাপতির অনুমতিক্রমে এবং সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মতিক্রমে নেয়া হয়েছেঃ
১। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, সকল সাব-সেক্টর যেমন উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এর (ক)করিমগঞ্জ (খ) ডাউকি (গ)বারাচ্ছড়া-বালাট- রাঙ্গুয়া (ঘ)ভোলাগঞ্জ-শিলা ইত্যাদিতে এমএনএ,এমপি এবং ৫ জন রাজনৈতিক কর্মী নিয়ে কমিটি হবে যা স্থানীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখার ক্ষমতা থাকবে।
২। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে,এই অঞ্চলের মুক্ত এলাকাগুলোতে ব্যবসা-বানিজ্য দেখার জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হবে।
৩। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে , শরণার্থীদের সমস্যাগুলো দেখার জন্য একটি শরণার্থী উপ-কমিটি গঠন করা হবে ।
৪। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে , একটি উপ-কমিটি গঠন করার প্রস্তাব করা হবে যা রাজস্ব,সরকারি সম্পত্তি ও টোল সংগ্রহ করবে এবং যেসব সরকারি সম্পত্তি সংগ্রহ করা হয়েছে তার মূল্য হিসাব করবে।
৫। বাস্তবতা এই যে কিশোরগঞ্জ উপ-বিভাগের বেশিরভাগ উদ্বাস্তু উত্তর-পূর্ব অঞ্চল-১ এ সাময়িকভাবে বসবাস করছে। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, কিশোরগঞ্জ উপ-বিভাগ এই অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
৬। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারের সি ইন সি (C in C) কে অনুরোধ করা হবে যাতে প্রতিটি সাব-সেক্টর যাতে ঠিকমত চলতে পারে তার জন্য অন্তত একটি হলেও উপযুক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়।
৭। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হবে যাতে রাজ্য সরকারের কাছে থেকে এমএনএ এবং এমপিদের ভারতের মাটিতে স্বাধীন চলাচলের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করা হয়।আরো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, সভাপতি বা আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিলকে অনুরোধ করা হবে যেন আসাম ও মেঘালয় সরকারের কাছ থেকে এই সংগঠনের সদস্যদের মুক্ত চলাচলের জন্য অনুমতি সংগ্রহ করা হয়।
৮। সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে যে, আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল এর সভাপতিকে ক্ষমতা দেয়া হবে যুব ক্যাম্পগুলোর কাজ দেখার জন্য স্থানীয় উপ-কমিটি সাথে সহযোগিতার জন্য উপযুক্ত লোক যেন নিয়োগ দেয়া হয়।
৯। কমিটি সর্বসম্মতি ক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সদর দপ্তর ডাউকি থেকে শিলং এ সরিয়ে নেয়া হবে।যেহেতু ডাউকি,বালাট,শিলা,বারাচ্ছড়া প্রভৃতি এলাকার পথ শিলং হয়ে চলে গেছে। এতে করে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সাথে সর্বোচ্চ যোগাযোগ সম্ভব হবে।
১০। বাংলাদেশের কিছু এলাকায় পাকিস্তানি আর্মির সাম্প্রতিক ধ্বংসযজ্ঞের প্রেক্ষিতে,উদ্বাস্তুর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে,বিশেষ করে বালাট এলাকায় ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে, যা সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পরেছে। বর্তমান সময়ে বেশ বড়সংখ্যক উদ্বাস্তু আশ্রয় ও রেশনের আওতার বাইরে। এই উদ্বাস্তুদের ভোগান্তি কমানোর জন্য তৎপরতা বাড়ানো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।
<003.243.688> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১১। বালাত এলাকায় কলেরা ছড়িয়ে পড়ছে এবং তা মহামারি আকার ধারণ করেছে।একারণে যদিও আশ্রয়দাতা সরকার চিকিৎসা সুযোগসুবিধা বাড়িয়েছে কিন্তু তা পরিস্থিতির তুলনায় অপর্যাপ্ত।অসংখ্য মূল্যবান জীবন বাঁচানোর জন্য চিকিৎসা সেবা বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে।
১২। চলমান মিলিটারি অপারেশনের কারণে আমাদের এখানে হতাহতের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে কিন্তু বালাত, শেইলা, ভোলাগঞ্জ এবং আশেপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সুবিধা না থাকার কারণে আহত ব্যক্তিদের জন্য যথাযথ চিকিৎসা এবং পরিষেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।তদুপরি মারাত্মকভাবে জখম হওয়া রোগীদের আশেপাশের হাসপাতালে পাঠানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকার কারণে অনেক মূল্যবান জীবন জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা।
উপরোক্ত ঘটনা বিবেচনা করে এই জোনে নিম্নোক্ত সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছেঃ
ক) এ্যাম্বুলেন্স- ৫টি।
খ) বালাত এলাকায় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা সংবলিত একটু ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল তৈরি করতে হবে।
গ) যুদ্ধক্ষেত্রের আশেপাশে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার জন্য ইউনিট গঠন করতে হবে- ১৫টি।
বাংলাদেশ সরকার থেকে অনুমোদন আসার আগ পর্যন্ত উপ-মেডিক্যাল কমিটিকে উপরোক্ত সমস্যাগুলো পর্যবেক্ষণ করতে অনুরোধ করা হল।
১৩। অপর্যাপ্ত পরিমাণ আর্মি অফিসারের কারণে প্রতিটা সাব-সেক্টরে কর্মক্ষমতা মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে উপযুক্ত পরিমাণে কর্মকর্তা পাঠানোর অনুরোধ করা হল।
১৪। জোনাল কাউন্সিলের প্রতি সদস্য অগ্রগমন ও মিটিং হওয়ার পরের দিন নির্ধারিত দৈনিক ১৫ রুপি করে এবং জোনের ভিতর চলাচলের খরচ হিসেবে ভাতা পাবেন।
১৫। জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং জনাব দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী (এমএনএ)কে বাংলাদেশ সরকারের সাথে জোনের সকল সমস্যা নিয়ে আলোচনা এবং তা সমাধান করতে অনুরোধ করা হল।
১৬। উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেয়া এবং তাদের জীবিকার জন্য কোন ভাতার বিধান না থাকায় এই জোনের সরকারী কর্মকর্তা এবং শিক্ষকগণ কঠিন সময় অতিবাহিত করছেন। যেহেতু তাদেরকে অন্য জোনের সাথে যোগাযোগও রক্ষা করতে হয়, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তাদের বিষয়টা সহানুভূতি সহকারে দেখা হয়।
১৭। মিটিং এর সিদ্ধান্তসমূহের কপি সংশ্লিষ্ট জায়গায় প্রচারিত হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
এসডি/- এসডি/-
(এস এইচ চৌধুরী) (দেওয়ান ওবায়দুর রেজা চৌধুরী)
জোনাল প্রশাসনিক অফিসার এমএনএ
এবং প্রেসিডেন্ট
সদস্য সচিব
<003.244.689> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উত্তর-পূর্ব জোন-২ আওতাধীন যুব শরনার্থী ও মুক্তিফৌজ শিবিরের মাসিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাব | বাংলাদেশ সরকার, উত্তর-পূর্ব জোন-২ এবং সাধারণ প্রশাসন বিভাগ | ১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়, উত্তর–পূর্ব জোন–২
প্রেরকঃ মোঃ লুৎফর রহমান
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
প্রাপকঃ স্বরাষ্ট্র এবং অর্থসচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিষয়ঃ জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, তুরা কর্তৃক সম্ভাব্য মাসিক ব্যয় বরাদ্দের বাজেট।
Ref: ZAO/ZAC(B)-3/71, তাংঃ ১৬/৯/৭১
জনাব,
যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক জানানো যাচ্ছে যে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, উত্তর-পূর্ব জোন-২, কর্তৃক মাসিক ব্যয়ের হিসাব সম্পন্ন হয়েছে এবং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে প্রস্তাবিত হল।
আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নার্থে তহবিল বরাদ্দের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় বরাদ্দ বাজেটের একটি কপি আপনার সদয় বিবেচনার জন্য দেওয়া হল।
যুব ও মুক্তিফৌজ শিবিরের ছেলেদের সামগ্রিক চাহিদা এবং এই এলাকার শরনার্থীদের দুঃখ-দূর্দশা বিবেচনা করে তহবিল বরাদ্দের অনুরোধ করছি যা অবিলম্বে আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করবে।
আপনার বাধ্যগত,
এস/ডি- মোঃ লুৎফর রহমান
মন্ত্রণালয়ের সদয় অবগতির জন্য মন্ত্রীপরিষদ সচিব বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
সদয় বিবেচনা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সচিব, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
এস/ডি- মোঃ লুৎফর রহমান
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
উত্তর-পূর্ব জোন-২, তুরা।
<003.244.690> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
Memo No. GA/ …………. Dt. 14.10.71
যুব কন্ট্রোল বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি কপি প্রেরণ করা হল।
(২) সচিব, সামরিক।
উপসচিব (সংস্থাপন)
সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ।
________________________________
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল কর্তৃক প্রস্তাবিত সম্ভাব্য মাসিক ব্যয়ের হিসাব,
উত্তর–পূর্ব জোন–২, তুরা।
কাউন্সিল যতক্ষণ তার কাজ চালিয়ে যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার এখতিয়ারাধীন যত যুব, মুক্তিফৌজ এবং শরনার্থী শিবির আছে তাদের আর্থিক দিক বিবেচনা করবে। নিচে সেসব শিবিরের বিস্তারিত দেয়া হলঃ
শিবিরের নাম শিবিরে ছেলেদের শিবিরের নাম মুক্তিফৌজ শিবির
সংখ্যা এখানে ছেলেদের সংখ্যা
ক) মহেশ্বরাগঞ্জ ২০০০ ছেলে ক) মহেশ্বরাগঞ্জ ৫০০ ছেলে
খ) পোড়াখাসিয়া ৫০০ ছেলে খ) পোড়াখাসিয়া ৫০০ ছেলে
গ) ডালু ২৫০০ ছেলে গ) কন্যাবাড়ী ১০০০ ছেলে
(কেন্দ্রীয় সরকারের ঘ) গাছুয়াপাড়া ৫০০ ছেলে
নিয়ন্ত্রণে) ঙ) শিব-বাড়ী ১০০০ ছেলে
ঘ) গাছুয়াপাড়া ৫০০ ছেলে চ) জাকশাগ্রাম ১৫০০ ছেলে
(অস্বীকৃত) ছ) রাঙরা ১০০০ ছেলে
শরনার্থী শিবির
ঙ) শিব-বাড়ী ৬০০ ছেলে ক) জিগজাগ ১০০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত)
চ) বাগমারা ৫০০ ছেলে খ) আমপতি ৫০০০০ ছেলে
ছ) রাঙরা ৫০০ ছেলে গ) পোড়াখাসিয়া ২০০০০ ছেলে
জ) মলিয়াদেও ৪০০ ছেলে ঘ) মাছাংপানি ৬০০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত)
ঝ) মহেশখালা ১০০০ ছেলে ঙ) দিমাপাড়া ৪০০০০ ছেলে
চ) গাছুয়াপাড়া ৫০০০ ছেলে
(অস্বীকৃত, কিন্তু রেশন দেওয়া হচ্ছে)
ছ) মেনান ৪০০০০ ছেলে
জ) শিব-বাড়ী ৫০০০০ ছেলে
ঝ) বাগমারা ১০০০০০ ছেলে
ঞ) চান্দু ভুঁইয়া ২৫০০০ ছেলে
উপরে বর্ণিত সব যুব শিবির, গাছুয়াপাড়া, শিব-বাড়ি, মহাদেও এবং মহেশখালা শিবির অস্বীকৃত, যার ফলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা নাজুক।
<003.244.691> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ক্যাম্পগুলোতে ছেলেদের বেঁচে থাকার দশা নিতান্তই শোচনীয়। মহাদে এবং মহেশখালী যুব ক্যাম্পগুলোতে সরকার থেকে কোনো রেশন সরবরাহ হয়নি। অন্যান্য যুব ক্যাম্পগুলোতে প্রয়োজনীয় অনেক উপাদান বাদ দিয়ে শুধুমাত্র চাল, ভোজ্য-তেল, ডাল এবং নুন সরবরাহ করা হয়েছে যা যুবাদের নিয়ন্ত্রণে আছে যারা তাঁদের ঘর থেকে নিঃস্ব অবস্থায় বিতাড়িত হয়েছে। ফলে সেখানে অবর্ণনীয় পরিস্থিতি প্রতীয়মান এবং ছেলেরা অপুষ্টি এবং সাধারণ রোগে আক্রান্ত হয়ে আছে যা তাঁদের শরীর-স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করছে। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলোতেও প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি দরকার।
তথ্যে সূত্রে এটিও জানা যায় যে উত্তর-পূর্ব অঞ্চল – ২’এ সাধারণ ম্যালেরিয়া এবং এনোফিলিস মশার বিরুদ্ধে প্রত্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আমাদের ছেলেরা মেডিকেল-সেবা এবং মশারির অভাবে এই রোগে ভুগছে। অন্যদিকে দূষিত মসলা এবং পানির কারণে ডায়রিয়া মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিরোধ এবং প্রতিকার কোনোটির জন্যেই এখনো ওষুধপাতি বিতরণ করা হয়নি। প্রায়শই মুক্তিবাহিনীর ছেলেরা এসব জরুরি সুবিধা পায়না। আক্রান্ত ছেলেরা যাতায়ত সুবিধার অভাবে হাসপাতালে ডাক্তারের কাছে গিয়ে মেডিকেল-সেবা নিতে পারছেনা। নোংরা পরিধেয় কাপড় এবং জঙ্গলের জুতা পরার কারণে ছেলেরা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। সমস্যাটি এতো ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও অবহেলা করা হচ্ছে, যা এটিই নির্দেশ করে যে এই অঞ্চলে তাঁদের সেবার জন্য কেউ হয়তো নেই।
মানিকচরে নিয়মিত হাজারো ছেলে এবং শরণার্থী মারা যাচ্ছে।
শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা অশেষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। প্রাপ্ত জায়গা, পরিমান মতো খাবার এবং পুষ্টি, নিরাপদ পানি, মেডিকেল-সেবা, মশারি এবং পরিধেয় কাপড় ইত্যাদির অভাবে শরণার্থীরা অপুষ্টি এবং নানান রোগের শিকার হচ্ছে। ভোগান্তির এই চরম দশা দেখে কাউন্সিলের নীতিগত দিক থেকে স্থানীয় প্রশাসন এবং কিছু লোকাল এজেন্সির সহযোগিতায় ত্রাণ-কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
ফলাফলস্বরূপ নৃশংসতার বর্বর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত রাজনৈতিক কর্মী যারা এই অঞ্চল অতিক্রম করতে পারতেন তারাও এই খারাপ সময়ের শিকার হয়েছেন। কাউন্সিল নিজস্ব নীতিগত বাধ্য-বাধকতা থেকে তাদের ত্রাণ সামগ্রী এবং টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করেন।
আমাদের সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করা, এটা শুধু আশা করা যায় যে কাউন্সিল নিজেকে সম্পূর্ণভাবে যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে আমাদের ছেলেদের জন্যে নিবেদিত হবে। ইস্যুটি এমন দাঁড়িয়েছে যে, হয় আমরা জিতবো নয়তো মরবো। আমাদের ছেলেদের শারীরিক সক্ষমতা এবং মনোবল সম্পর্কিত সমস্যাগুলি উপলব্ধি না করা আমাদের পরিকল্পনা এবং এখানে অবস্থানের উদ্দেশ্য-র পুরোপুরি বিপরীতমুখী হবে।
যাদের উপর আমরা আমাদের চূড়ান্ত বিজয়ের আশা গেঁথে রেখেছি তাঁদের তথাপি আমাদের ছেলেদের যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে যদি সফল করতে না পারি তাহলে গত নির্বাচনে আমাদের বিজয় সম্পূর্ণভাবে ম্লান হয়ে যাবে।
যুব এবং মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে থাকা আমাদের ছেলেদের সমস্যার উপর নজর রেখে এবং শরণার্থীদের প্রতি নীতিগত দিক থেকে চিন্তা করলে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা অনুযায়ী একটা মাসিক অনুদান ব্যয় করা দরকার:
<003.244.692> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
উক্ত জোনের জন্য সর্বোচ্চ ব্যয়ের হিসাব
যুব এবং এফএফ ক্যাম্প :
(১৬,০০০ বালকের জন্য)
বিবরণ
পরিমাণ
দর
মূল্য
অনাবৃত্ত
মূল্য
১. মশারী। (যেহেতু বালকেরা মাচাং এ ঘুমাবে, একজনের মশারীতে কাজ হবে না। প্রতি ৬ জনের জন্য একটি বড় মশারী প্রয়োজন।)
২,৫০০
২৫ রূপী প্রতি পিস
৬২,৫০০/-
২. কম্বল (দুই জন বালকের জন্য দুইটি কম্বল)
১৬,০০০
২০ রূপী প্রতি পিস
৩,২০,০০০/-
৩. জঙ্গল শ্যু
১৬,০০০ জোড়া
২০ রূপী প্রতি জোড়া
৩,২০,০০০/-
৪. লুঙ্গী, রুমাল, গেঞ্জী, শার্ট ও চাদর (প্রতি ছেলের জন্য এক সেট)
১৬,০০০ সেট
৩০ রূপী প্রতি সেট
৪,৮০,০০০/-
৫. প্রাথমিক চিকিৎসা বাক্স
২০ টি
৫০ রূপী প্রতি বাক্স
১,০০০/-
৬. টয়লেট (সাবান ও অন্যান্য)
১৬,০০০ বালকের জন্য
৫ রূপী প্রতিজন
৮০,০০০/-
৭. বালকদের হাত খরচ (যেহেতু তারা চাল, ডাল, তেল লবণ ব্যতিত অন্য কিছু কেনার খরচ পায়না)
১৬,০০০ বালকের জন্য
০.৫ রূপী প্রতিজন
২,৪০,০০০/-
৮. ম্যালেরিয়া নিরোধক ঔষধ
৫০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
১২,৫০০/-
৯. কলেরার ঔষধ
১,০০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
২৫,০০০/-
১০. মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট
১,০০,০০০ ট্যাবলেট
১ পয়সা ট্যাবলেট প্রতি
২৫,০০০/-
<003.244.693> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৩. শাড়ি -→২৫০০০ পিস → টাকা_৮ক প্রতি পিস → টাকা ২০০০০০/-
৪. শিশুর শীতকালীন পোষাক → ৭৫০০০ সেট→ টাকা ১৫/- প্রতি সেট → টাকা ১,২৫,০০০/- অসিস্ত্ব ভাতা ১.রাজনৈতিক ক্ষতিগ্রস্থ ও শিল্পীদের → ২৫০০০জন(প্রায়) -→টাকা ৫০ জনপ্রতি প্রতিমাসে →টাকা ১,২৫০০০/- ২.শিক্ষক ও সরকারী কর্মচারীদের( তিনি সরকারের নীতি অনুযায়ী ভাতা প্রদান করবেন) → ৫০০০ জন(প্রায়) → টাকা ১০০/-→প্রতিমাসে গড়মাথা → টাকা ৫০০০০/- প্রচার কাজ ১. সাইক্লোস্টাইল মেশিন → ১ সেট → টাকা ৪০০০/- →টাকা ৪০০০/- ২.ট্রাঞ্জিস্টার সেট →২৫ সেট – টাকা ২০০(প্রতি) → টাকা ৫০০০/- ৩.সংবাদপত্র, সাময়িকপত্র,লিফলেট ও অন্যান্য প্রকাশনা → টাকা ১০০০০/- চিকিৎসা ও অন্যান্য বিবিধ বিষয় ১. ১০ চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা খরচ প্রস্তাব করণ → টাকা ১০/- →টাকা ৫০০০/- (প্রতি কেন্দ্রে) → টাকা ৫০০০০/- [বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ১০টি চিকিৎসা কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত প্রসূতি ক্লিনিক উদ্বাস্তু পৌরজন,যুব ও F.F ক্যাম্পে বসবাসকারীদের দেখাশুনা করার জন্য প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।প্রতিটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ৫ শয্যার জরুরী বিভাগ কলেরা ও অন্যান্য মহামারী রোগের রোগীদের চিকিৎসার জন্য অন্তর্ভূক্ত করা উচিত।সেবিকা নিযুক্ত করা উচিত মেডিকেল অফিসারদের পরামর্শ ক্রমে,এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত করা ওষুধ এবং অন্যান্য ব্যয় মূল্যায়ন করা এবং তহবিল অনুযায়ী স্থাপন করা]
<003.244.694> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(শিরোনাম: উত্তর-পূর্ব জোন-২ আওতাধীন যুব শরণার্থী ও মুক্তিফৌজ শিবিরের মাসিক ব্যয় বরাদ্দের হিসাব। সূত্র:বাংলাদেশ সরকার,উত্তর পূর্ব জোন-২ এবং সাধারণ প্রশাসন বিভাগ। তারিখ:১৬সেপ্টেম্বর,১৯৭১।) [পূর্বে দ্রষ্টব্য] ………………………..
সর্বমোট ব্যয় -৪২,৩৪,০০০ রুপি (বিয়াল্লিশ লাখ চৌত্রিশ হাজার রুপি মাত্র।)
উপরোক্ত প্রাক্কালিত ব্যয় প্রস্তাবিত এবং কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যের পরামর্শক্রমে সম্পাদিত হলো।
Sd/- মো লুৎফর রহমান
সেক্রেটারি
ও আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
উত্তর-পূর্বে জোন-২।
………………………………………………………………
<003.245.695> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস্ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি প্রেরণ সম্পর্কে নর্থ জোন প্রশাসক কর্তৃক কেবিনেট সচিবের কাছে লিখিত চিঠি। | বাংলাদেশ সরকার উত্তর জোন। | ২৫নভেম্বর,১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক প্রশাসক,
নর্থ জোন,কুচবিহার।
মেমো নং:১২৪৮ তারিখ:২৫/১১/১৯৭১
প্রেরকঃ এফ আহমেদ,
আঞ্চলিক প্রশাসক,
নর্থ জোন,কুচবিহার।
প্রাপকঃ জনাব এইচ টি ইমাম,
মন্ত্রিপরিষদ সচিব,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,
৮,থিয়েটার রোড,কোলকাতা-১৭।
বিষয়: ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস্ সংশ্লিষ্ট দলিলাদি (রেকর্ডকৃত সাক্ষ্য ও অন্যান্য বিষয়াদি) প্রেরণ প্রসঙ্গে।
রেফারেন্স–অফিস মেমো নং-৭৭৮ তাং -১৩/১০/৭১;৭৭৯ তাং-১৩/১০/৭১;৮২১ তাং-১৯/১০/৭১;৮৬১ তাং-২২/১০/৭১;৮৯৬ তাং-২৫/১০/৭১;১০১৬ তাং- ৩/১১/৭১।
জনাব অখিলেশ্বর বর্মন,এ্যাডভোকেট কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রতিটি পাঁচ কপি করে তিন সেট দলিল (সাক্ষ্য ও অন্যান্য) ৬৮তম থেকে ৭০তম কিস্তিতে পূর্বের দলিলাদির ধারাবাহিকতায় আপনার নিকট পাঠানো হলো।
সংযুক্তি: প্রতিটি পাঁচ কপি করে তিন সেট দলিল।
Sd/-
আঞ্চলিক প্রশাসক,
নর্থ জোন, কুচবিহার।
……………………………….
<003.246.696> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
উত্তর পূর্ব জোন এমএনএ ও এমপিএ -দের তালিকা:তাদের এলাকা ও ভারতস্থ ডাক ঠিকানা। | বাংলাদেশ সরকার উত্তর জোন। | …………, ১৯৭১ |
এমএনএ/এমপিএ দের এলাকা এবং ভারতস্থ ডাক ঠিকানার তালিকা
ক্রমিক নং/এমএনএ ও এমপিএদের নাম | এলাকা পিএস | ভারতস্থ ডাক ঠিকানা |
১.জনাব আবদুর হোসেন,এমপিএ | ১) ফুলবাড়ি পিএস,
২) লালমনিরহাট পিএস, ৩)পারি;কালিগঞ্জ পিএস (দূর্গাপুর ইউসি) |
প্রযত্নে-জনাব আজিজুর রাহমান প্রধান,গ্রাম:ওকরাবাড়ি,ডাক বক্স:বালাকান্দি,জেলা:কুচবিহার। |
২.জনাব মোজাহার হোসেন চৌধুরী,এমএনএ | ১) ভুরুঙ্গামারী পিএস,
২) নাগেশ্বরী পিএস, ৩) ফুলবাড়ি পিএস |
প্রযত্নে-জনাব জাফর আলামুল হক,ডাকবক্স-শাহাবগঞ্জ,জেলা-কুচবিহার। |
৩. জনাব লুৎফর রহমান,এমএনএ
|
১) গাইবান্ধা পিএস,
২) সাঘাটা পিএস, ৩) ফুলছড়ি পিএস |
বাংলাদেশ অফিস, ধুবড়ি,আসাম। |
৪.জনাব শাহ আবদুল হামিদ,এমএনএ | ১) গোবিন্দগঞ্জ পিএস,
২) পলাশবাড়ি পিএস |
বাংলাদেশ কার্যালয়। |
৫.জনাব শাহ আবদুর রাজ্জাক,এমপিএ | ১) কাউনিয়া পিএস,
২) পীরগাছা পিএস |
ডাক বক্স-গোলাকগঞ্জ,গোয়ালপাড়া,জেলা-কুচবিহার। |
৬.জনাব শামসুল চৌধুরী,এমপিএ | ১) ভুরুঙ্গামারী পিএস,
২) নাগেশ্বরী পিএস (অংশবিশেষ) |
প্রযত্নে-ডা:কালিপদ দাস,ডাকবক্স-সিতাই,জেলা-কুচবিহার |
৭.জনাব মো: আবদুল আউয়াল,এমএনএ | ১) কাউনিয়া পিএস,
২) গঙ্গাছড়া পিএস, ৩) পীরগাছা পিএস |
গ্রাম ও ডাক:সাহেবগঞ্জ,জেলা:কুচবিহার। |
৮.জনাব আবদুল হাকিম,এমপিএ | ১) সমগ্র কুড়িগ্রাম পিএস,
২) নাগেশ্বরী পিএস ও ফুলবাড়ি পিএস (আংশিক) |
গ্রাম: ফতেহ মাহমুদ,ডাক বক্স:ঐ,ভায়া-হলদিবাড়ি,জেলা-কুচবিহার। |
৯.জনাব আফসার আলি আহমেদ,এমএনএ | নীলফামারী, সৈয়দপুর, এবং
কিশোরীগঞ্জ |
ভায়া হলদিবাড়ি,জেলা-কুচবিহার। |
১০.জনাব আযহারুল ইসলাম,এমপিএ | জলঢাকা কাম কিশোরীগঞ্জ পিএস, P.E-3
রংপুর-III |
ক্যাম্প ইনচার্জ,ডাক বক্স:হলদিবাড়ি,জেলা:কুচবিহার |
১১.জনাব ওয়ালিউর রহমান, এমপিএ | ১) গাইবান্ধা পিএস | বাংলাদেশ কার্যালয়,কুচবিহার। |
১২.জনাব মফিজুর রহমান,এমপিএ | ১)সাঘাটা পিএস,
২) পলাশবাড়ি পিএস, ৩) ফুলছড়ি পিএস |
মাইঙ্কারছড়া,গোয়ালপাড়া |
<003.246.697> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১৩. জনাব সিদ্দিকুর হোসাইন MPA | ১.কোতোয়াল P. S
রংপুর ২. গঙ্গাছাড়া P. S |
পোস্ট অফিস – মাকলিগঞ্জ
জেলা – চকবিহার |
১৪. জনাব মতিউর রহমান MNA | ১. পীরগঞ্জP. S
২. মিঠাপুকুরP. S |
চকবিহার
বর্তমানে লোয়ার সার্কুলার রোড কোলকাতা |
১৫. জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ MNA | ১. কুড়িগ্রামP. S
২. লালমনিরহাট |
প্রযত্নে
জসিম উদ্দিন আহমেদ ডি. কে. রোড পোস্ট অফিস – ডুবরী গোয়ালপাড়া |
১৬. জনাব সাদাকত হোসাইন MNA | ১. রৌমারি
২. চিলমারি ৩. উলিপুর |
মানকারচর, গোয়ালপাড়া
আসাম |
১৭. জনাব আব্দুর রউফ MNA | ১.ডিমলাP.S
২. ডুমারP. S ৩.জলঢাকাP.S |
নেতাজি পাড়া
পোস্ট অফিস – ও জেলা- জলপাইগুড়ি |
১৮. জনাব আব্দুর রহমান চৌধুরী MPA | ১. ডিমলাP. S
২. ডুমারP. S |
পোস্ট অফিস দেওয়ানগঞ্জ
জেলা চকবকার |
১৯. জনাব মো:আমিনMPA | ১. জলঢাকা P. S | প্রধাননগর
পোস্ট অফিস-শিলিগুড়ী জেলা – দার্জিলিং |
২০.জনাব করিম উদ্দিন মিয়া MNA | ১. কালিগঞ্জ | পোস্ট অফিস – সিতাই
চকবকর |
২১. জনাব আবেদ আলী MPA | ১. হাতিবান্দা
২. পাটগ্রাম |
পোস্ট অফিস – চেংরাবান্দা
জেলা – চকবিহার |
<003.247.698> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পশ্চিম জোন কাউন্সিল সভার কার্যবিবরণী | বাংলাদেশ সরকার পশ্চিম জোন | ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর এবং
১৮ অক্টোবর, ১৯৭১ |
৫/৯/৭১ এর ১১টায় কোর্ট-কাচাড়ি, বালুরঘাটের পশ্চিমাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দ:-
১.জনাব শাহ মোতালেব আহমেদ MNA
২. ডা:ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডলMNA
৩. প্রিন্সিপাল এ. বি. এম. মোকছেদ আলীMNA
৪. জনাব আজিজার রহমান MNA
৫. জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী MNA
৬. জনাব আব্দুর রহীম MPA
৭. জনাব সরদার মোশাররফ হোসাইনMPA
৮. জনাব খতিবুর রহমান MPA
৯. জনাব কাজী আব্দুল মজিদ চৌধুরী MPA
১০.জনাব মো: গোলাম রহমান MPA
১১. জনাব শাহ মো: ইউসুফ MPA
১২.জনাব মো:একরামুল হকMPA
১৩. জনাব মো: ফজলুল করিম MPA
১৪. জনাব সিরাজুল ইসলাম MPA
১৫. জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ মোক্তার MPA
১৬. জনাব জাহিদুর রহমান MPA
১৭. জনাব কসিমুদ্দিন আহমেদ MPA
১৮. জনাব সাইদুর রহমান MPA
১৯. জনাব আবুল হাসনাত চৌধুরী MPA
২০. জনাব মোজাফফর হোসাইন MPA
২১. জনাব হাসান আলী সরকার MPA
২২. জনাব জামিলুর রহমান প্রধান MPA
২৩. জনাব মো:আজিজুর রহমান সরকার MPA
২৪. জনাব প্রোফেসর আবু সাঈদ MNA
২৫. জনাব বাইতুল্লাহMNA
২৬. জনাব ইয়াজউদ্দিন প্রামাণিক MPA
২৭. কাজিমদার খাইবুদ্দিন আহমেদ MPA
২৮. জনাব গিয়াসউদ্দিন, সরদার MPA
২৯. জনাব ইমদাদুল হকMPA
৩০.জনাব আজিজুল ইসলাম খান MPA
<003.247.699> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.700> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৩১.জনাব আব্দুল হাদি
৩২.জনাব আশরাফুল ইসলাম
৩৩.জনাব মোহাম্মদ মেজবাউল হক
৩৪.জনাব হামিদুর রহমান
৩৫.জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ
৩৬.জনাব সরদার আমজাদ হোসাইন
৩৭.জনাব মুজিবুর রহমান
৩৮.জনাব আবুল কাশিম খান
জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ,MPA, রাজশাহী প্রবিত্র কোরান থেকে তেলওয়াতের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু করেন।
জনাব আশরাফুল ইসলাম MPA রাজশাহী, জনাব আজিজার রহমান MNA, দিনাজপুর কে সভাপতিত্ব করার জন্য আমন্ত্রন জানান। জনাব আজিজার রহমান সরকার এমএনএ, রংপুর এই আহ্বানে সমর্থন জানান।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারি সকল শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য জনাব আশরাফুল ইসলাম MPA আহ্বান জানালে সকল সদস্য দাঁড়িয়ে একমিনিট নিরবতা পালন করেন। জনাব সরদার আমজাদ হোসাইন MPA সকল বাংলাদেশীদের প্রানের বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবৈধভাবে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য পাক সামরিক জন্তার প্রতি নিন্দা প্রকাশ করেন। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের নিরাপত্তা চান।
সম্মেলনের শুরুতেই স্মারকলিপি নং-GA/8IO(345) তাং ২৭/০৭/৭১ অনুসারে প্রতিষ্ঠিত আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের পুরো ব্যবস্থাপনা পাঠ করেন এবং বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাঙ্খিত সময়ের আগেই বাংলাদেশ স্বাধীন হবে।
সম্মেলনের এ পর্যায়ে জনাব শাহ মোতালেব আহমেদ উল্লেখ করেন পশ্চিম এলাকা অনেক বড় হবার দরুন যোগাযোগ ব্যবস্থায় সমস্যা হচ্ছে এবং এখানকার প্রায় বিশ লক্ষ উদ্বাস্তুদের উন্নত ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার জন্য কয়েকটি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা দরকার এতে করে সকল কর্মচারী এবং ভয়ানক কষ্টে থাকা উদ্বাস্তুদের অবস্থার উন্নতি হবে। পূর্বাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের শাসনতন্ত্র প্রণয়নের পূর্বেই পশ্চিম এলাকাকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্তির সমাধান বাস্তবায়নের জন্যে তিনি প্রস্তাব করেন।
জনাব সরদার আমজাদ হোসাইন এবং ডা: মেসবাউল হক তার এ প্রস্তাবে সমর্থন জনান। মেসবাউল হক বলেন রাজশাহী এলাকার সদস্যরা যারা কিনা বেরুবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি থেকে ইসলামপুর থেকে লালগোলা পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে তারা একটি এলাকার অধিনে থেকে বালুরঘাট হেডকোয়াটারের সাথে কাজ করতে পারছে না। জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন বলেন যদি আঞ্চলিক প্রশাসনিক শাসনতন্ত্র প্রনয়ন আরো দেরি হয় তাহলে মানুষের ভোগান্তি ও কষ্ট বর্তমান সময়ের চেয়ে আরো বেশি হবে। এজন্য, তিনি মত দেন আগে আঞ্চলিক শাসনতন্ত্র প্রনয়ন হোক তারপর যদি প্রয়োজন হয় হয় তখন আঞ্চলিক বিভক্তিকরন করা যাবে।
জনাব বাইতুল্লাহMNA বলেন রাজশাহী অঞ্চলের MNA এবংMPA সাবাই পশ্চিম অঞ্চল বিভক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনাব জাহিদুর রহমান MNA, মত দেন যে পশ্চিম অঞ্চলের তিন ভাগে বিভক্তি গ্রহনযোগ্য তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কিন্তু এ সকল পদক্ষেপ সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা সে ব্যাপারে তিনি অনিশ্চিত। যেহেতু এ সকল অঞ্চলগুলো সরকারের যত্নশীল বিবেচনার মাধ্যমে স্থাপিত হয়েছে এবং এমনকি চারটি জেলা নিয়ে একটি অঞ্চল গঠিত হলেও এখানে মাত্র তিনটি জেলা নিয়ে এ অঞ্চলটি গঠিত। তিনি আরো বলেন আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের শাসনতন্ত্র খুব দ্রুত প্রনয়ন করে এ অনুসারে স্বাধীনতার জন্য কাজ শুরু করতে হবে। জনাব সরদার আমজাদ হোসাইন একমত হলেও তিনি উল্লেখ করেন একটি ভুল দিয়ে যে নীতিমালার শুরু তা কখনো সন্তোষজনক এবং ভালো ফল দিবে না।
জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমেদ MPA বক্তব্য দেন তিনি পাক সেনাদের নির্যাতনের কারনে সৃষ্ট কিছু সমস্যা এবং ডাকাতির কারণে সৃষ্ট কিছু সমস্যা ও মুক্তিফৌজের কিছু সমস্যা সমাধানের জন্য মন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু মন্ত্রী তো দুরে থাক প্রশাসন ও উপ-প্রশাসনের কেউ তার সাথে আলোচনা করেন নি এবং তার সমস্যাগুলো সমাধাবিহীন রয়ে গিয়েছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যদিনা পশ্চিম এলাকাকে বিভক্ত না করা হয় তাহলে এমন অবস্থা বজায় থাকবে এজন্য ZAC এর সংবিধান প্রনয়নের পূর্বেই বিভক্তিকরন আবশ্যিক। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে অতিরিক্ত উদ্বেগ ও অস্থিরতার জন্য উত্তরবঙ্গের নেতা ও মন্ত্রীরা আমাদের সমস্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করতে পরছে না এবং এছাড়া মাত্র একজন চেয়ারম্যান ও একটিমাত্র পরিষদের পক্ষে সর্বদা সবজায়গায় যথাযথ কাজ করা সম্ভবপর হচ্ছে না।
জনাব সিরাজুল ইসলাম MPA তার বক্তব্যে বলেন প্রশাসনের যুক্তিসঙ্গত এবং সফল কাজ ও ৪০০ মাইলের বিশাল মুক্ত এলাকাকে একটিমাত্র বিশেষ অঞ্চলের আওতায় এনে সমন্বয় সাধন ব্যতিরেকে শাসনতন্ত্র, চেয়ারম্যান ইত্যাদি নির্ধারনের কোন বাস্তব প্রয়োজন নেই। ক্যাবিনেট প্রথমে অবশ্যই সকল এলাকাকে তিন অথবা চারটি অঞ্চলে ভাগ করবে তারপরে নির্বাচন হলে সাধারণ মানুষ ও উদ্বাস্তুরা মুক্তি পাবে তাদের কষ্ট থেকে। তা নাহলে তড়িঘড়ি নির্বাচন ও স্থূল সমস্যাগুলো বাংলাদেশের মানুষের জন্য বিপদ ও দুর্দশা বয়ে নিয়ে আসবে। উপরন্তু, চেয়ারম্যান ও শাসনতন্ত্র নির্ধারণের পরে ক্যাবিনেট ওপারের ও উত্তরবঙ্গের ২০ লক্ষ উদ্বাস্তুর আঞ্চলিক প্রশাসনিক বিভাজন করতেই পারবে না এবং তারা এখন যেভাবে বঞ্চিত হচ্ছে সেভাবেই বঞ্চিত হতে থাকবে এবং চারটি অঞ্চলের প্রশাসনিক পরিষদের ধারণাটি গ্রহনযোগ্য কিন্তু ৬০ লক্ষ উদ্বাস্তু নিয়ে তিনটি আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ হলে সমস্যাগুলো সমাধানহীন রয়ে যাবে এবং আমরা আশা করি আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদকে ক্যাবিনেট বিভক্ত করবে এবং এসব এলাকার সদস্যদের মাধ্যমে ২-৩ দিনের মধ্যে নির্বাচন করা যাবে।
জনাব কামারূদ্দিন মুক্তারMPA এবং গিয়াসউদ্দিন সরসার, এমপিএ বিভক্তি করনের পক্ষে সমর্থন দেন সম্মেলনের মুলতবি ঘোষণা চান।
প্রফেসর আবু সাইদ MPA প্রথমে অঞ্চলগুলো বিভক্তির পক্ষে মত দেন এবং বলেন এটি আরো ভালো ও কার্যকর প্রশাসনের জন্যে বাস্তবসম্মত আচরণ হবে। জনাব হাসান আলী সরকার পাক আর্মিদের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন সকল MPA ও MNA যেন স্বাধীনতার জন্য পদক্ষেপ নেয়। তিনি আরো বলেন আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের শাসনতন্ত্র প্রনয়ন হয়ে গেলে পরে বিভক্তি করা যাবে।
জনাব ওয়াকিলউদ্দিন মন্ডল বলেন তিনি আমরা যে বিভক্তকরন চাচ্ছি সেটা সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা সে ব্যাপারে তার অনিশ্চয়তা রয়েছে।
<003.247.701> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.702> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.703> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.704> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.705> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.247.706> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
|৩য় খন্ড-৭০১-৭০২ পৃষ্ঠা(দলিল)|
→ জনাব ওয়াকিল মন্ডল,এম.এন.এ- তার অভিমত ব্যক্ত করেন যে, জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল সবাই চেয়েছে কিন্তু তিনি সন্দিহান ছিলেন যে এই পদক্ষেপ সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেকিনা।জনাম আবুল হাসনাত চৌধুরী, এম.এন.এ বলেন যে, আদেশ সম্পন্ন করা উচিত,আই.ই. জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন করতে হবে এবং জোনের বিভাজনে পদক্ষেপ এগিয়ে নেয়া হবে।
জনাব আব্দুর রহিম,এম.পি.এ, দিনাজপুর -উল্লেখ করেন যে, ১০-১৫ জনের একটি প্রতিনিধিদল কিছুদিন আগে জোন বিভাজনের পদক্ষেপ নিয়ে মুজিবনগর এসেছিলেন কিন্তু কিছুই করতে পারেনি।তিনি আরও বলেন,জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন হওয়া উচিত মানুষের অবস্থা খুবই গুরুতর ছিল।তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন যে,জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠনের জন্য সভা জমায়েত হয়েছিল এবং এটি চূড়ান্ত শক্তি হিসেবে ছিল অন্যথায় জোনাল বিভাজনের প্রশ্ন তুলতে ঐ একই গঠন ছাড়া সভার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষ ছিলনা,বৈধতার প্রশ্ন থেকে অথবা অন্যথায় জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন না করতে জনাব আ.রহিম,এম.পি.এ-র কর্মসূচি অনুযায়ী সভাপতির মাধ্যমে ভোট দিতে।জনাব আ.রহিমের পক্ষে ১০ ভোট পড়ে,বিপক্ষে ২০ টি এবং ৮ সভাপতি সহকারে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল বিরতির।
জনাব খাতিবুর রহমান, এম.পি.এ বলেন যে, জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল তখনি সেখানে গঠন হওয়া দরকার ছিল এবং জোনের বিভাজন অগ্রসর হয়ে মোকাবিলা করা দরকার ছিল।জনাব মোজাফফর হোসেন,এম.পি.এ, বগুড়া, তার জেলার জন্য আলাদা জোন চেয়েছিলেন।
দীর্ঘ আলাপচারীতার পর সভাপতি সদস্যদেএ অভিমত জানতে চেয়েছিলেন এগিয়ে নিতে অথবা জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল প্রশাসক দের মুলতবি চেয়ে এবং ওই সময় জোনের বিভাজন নিয়ে।
সদস্যরা হাত উচিয়ে তাদের মতামত দেন।সেখানে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন মুলতবি এবং জোন বিভক্ত করার পক্ষে ১৯ ভোট পড়ে, ১৫ টি এর বিপক্ষে এবং ১৩ টি ভোটবিরতি যা সভার সভাপতি সহকারে এবং সভার আঞ্চলিক প্রশাসনিক অফিসার । মোট ৩৫ ভোট অনুকূলে এবং মুলতবির বিপক্ষে, জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল বিভাজন বাংলাদেশের জনগণ এবং শরণার্থী দের আগ্রহে চেয়েছেন।
সভাপতি জানতে চেয়েছেন কে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল এর অনুকূলে আছেন এবং কে বিপক্ষে। ৩২ সদস্যের মতো বড় হিসাব জোন বিভাজনের অনুকূলে পাওয়া যায়।উভয়ের প্রত্যেকে পূর্ব জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল গঠন অথবা এগিয়ে নিতে জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন এম.পি.এ বিভাজনের বিরুদ্ধে ছিলেন।
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল এটি পরবর্তীতে সমাধান হয় চেয়ারম্যান এবং উপ-কমিটির বাছাইয়ের মাধ্যমে সাথে তাদের চেয়ারম্যান মুলতবি হবেন এবং কেবিনেট অনুগ্রহ করে সবচেয়ে বড় বিভক্তি এবং নিয়ন্ত্রণের অসাধ্য পশ্চিম জোন চারশত মাইল বেড়েছে বড়বাড়ি থেকে কৃষ্ণনগর ৬ টি জোনের সীমান্ত হিসেবে,প্রতি ১ টি দিনাজপুর, রাজশাহী এবং বগুড়া জেলার জন্য বড় আয়তন বিশিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য জনগণের আগ্রহের জন্য এবং স্বাধীনতার প্রচেষ্টাকে চাঙ্গা করতে এবং স্বাধীন এলাকাসমূহে কার্যকর সমন্বয় সাধনের জন্য।
সভাটি সভাপতির প্রতি একটি ধন্যবাদ ভোটের মাধ্যমে শেষ হয়।
(স্বাক্ষর)
মো. আজিজুর রহমাব,এস.পি.এ
ও
সভার সভাপতি
অনুলিপি প্রেরণ করা হয় সচিব,কেবিনেট ডিভিশন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,মুজিবনগর এর কাছে দরকারি তথ্য এবং প্রয়োজনীয় কর্মসূচির জন্য।
(স্বাক্ষর)
জোনাল প্রশাসন অফিসার
পশ্চিম বঙ্গ
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল সভার কার্যবিবরণী, পশ্চিম জোন-১ অনুষ্ঠিত হয় ২৬.৯.৭১ সকাল ১১ টায়,বাগেরহাট কোর্টকাছারি তে।
উপস্থিত সদস্যতালিকা :
১. জনাব আজিজুর রহমান,এম.এন.এ
২. জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এম.এন.এ
৩.জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম.এন.এ
৪.জনাব ড.ওয়াকিলউদ্দিন মণ্ডল,এম.এন.এ
৫. জনাব এ.বি.এম মুকছেদ আলী,এম.এন.এ
৬. জনাব মো.আব্দুর রহিম,এম.পি.এ
৭. জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম.পি.এ
৮.জনাব মো. খাতিবুর রহমান,এম.পি.এ
৯.জনাব কাজি আব্দুল মজিদ চৌধুরী,এম.পি.এ
১০.জনাব মো.গোলাম রহমান, এম.পি.এ
১১.জনাব শাহ মো.ইউসুফ, এম.পি.এ
১২.জনাব একরামুল হক, এম.পি.এ
১৩.জনাব সিরাজুল ইসলাম, এম.পি.এ
১৪.জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ, এম.পি.এ
১৫.জনাব মো. আজিজুর রহমান সরকার, এম.পি.এ
১৬.জনাব জামিলুর রহমান প্রধান, এম.পি.এ
১৭.জনাব প্রফেসর আবু সায়্যেদ, এম.এন.এ
১৮.জনাব মুজিবুর রহমান, এম.এন.এ
১৯. জনাব কাশিমুদ্দিন আহমেদ, এম.পি.এ
২০.জনাব ড.সাইদুর রহমান এম.পি.এ
২১.জনাব আবুল হাসনাত চৌধুরী, এম.পি.এ
২২.জনাব মোজাফফার হোসেন, এম.পি.এ
২৩.জনাব হাসান আলী সরকার, এম.পি.এ
২৪.জনাব তাহেরুল ইসলাম খান, এম.পি.এ
২৫.জনাব আবুল কাশেম খান,জোনাল প্রশাসনিক অফিসার,পশ্চিম জোন-১
শুরুর দিকে জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম.পি.এ- সভার সভাপতিত্ব করতে জনাব মুজিবুর রহমান,এম.এন.এ-এর নাম প্রস্তান করেন।প্রস্তাবটি দ্বিতীয় বার করেন জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম.এন.এ।এর প্রতিক্রিয়ায় সেখানে আর কোনো প্রস্তাব ছিলনা।
জনাব মুজিবুর রহমান,এম.এন.এ সভায় চেয়ারম্যান হিসেবে আসন গ্রহণের পূর্বে বলেন যে, সকল সদস্য ভাই-ভাই এবং যদি একজন ব্যথিত হয় তবে প্রত্যেকেই একই পন্থায় আক্রান্ত হবে। তিনি আবারো আশা ব্যক্ত করেন যে, সেখানে কোনো সংকীর্ণতা বা স্বার্থপরতা থাকা উচিত নয় এবং সব সম্ভাব্য চেষ্টা সকলের সহযোগীতায় তৈরি হবে সব চিন্তার মানুষের নিজের মতো উভয় রাজনৈতিক আভিমতে আমাদের কাঙখিত লক্ষ্য বাংলার স্বাধীনতা অর্জন।
|৩য় খন্ড-৭০৩-৭০৪ পৃষ্ঠা(দলিল)|
→ তারপর পবিত্র কুরান তেলাওয়াত এর মাধ্যমে সভা আরম্ভ হয়।সভাপতির দৃষ্টান্তে বাংলাদেশের জন্য জীবনদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন স্বরূপ ১ মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন পর্যবেক্ষণ করা হয়।
সভার দাবিসমূহ :
(১) শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারকার্যে লজ্জাজনক বিলম্ব এবং অবিলম্বে তাঁর নিঃশ্বর্ত মুক্তি।
(২) বিশ্বের সব রাষ্ট্রে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে দাবি উত্থাপন।
(৩) বাংলাদেশ কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের কারণ দর্শানো।
সভায় অন্তর্নিহিত প্রশংসা করা হয় এবং দেশের সেবায় চালিত ‘মুক্তিফৌজ’ এর প্রতি উচ্চসম্মান প্রদর্শন করা হয়।
সভায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং ভারতে এর শরনার্থীদের অকৃত্রিম সহযোগীতা এবং সহানুভূতির জন্য ভারতের ৫৫ কোটি জনগণ এবং ভারত সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ এবং এর মানুষের প্রতি সহযোগীতায় এগিয়ে আসার জন্য সভায় অন্যান্য দেশসমূহের প্রতিও একইভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
পূর্বেকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে দুই জোনে বিভক্ত করার জন্য সভায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
এরপর সভাপতি তীব্র ইচ্ছা প্রকাশ করেন যে,রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ভিন্নতা,যদি থাকে সবকিছুই বন্ধুত্বপূর্ণ মীমাংসায় সম্পন্ন হওয়া উচিত।এ পর্যায়, জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল সভাপতি নির্বাচন সংক্রান্ত সদস্যদের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নিতে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আধা ঘণ্টার জন্য সভা বিরতি দেন।
সভা পূনঃআরম্ভের পর জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম.পি.এ-জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান হতে জনাব আব্দুর রহিমের নাম প্রস্তাব করেন। এটিই দ্বিতীয় বার প্রস্তাব করেন জনাব আজিজুর রহমান,এম.এন.এ,জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম.এন.এ,জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম.পি.এ এবং জনাব আজিজুর রহমান সরকার,এম.পি.এ।
জনাব মোজাফফর হোসেন,এম.পি.এ জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল এর চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. ওয়াকিলউদ্দিন মণ্ডল,এম.এন.এ-এর নাম প্রস্তাব করেন যা দ্বিতীয় বার প্রস্তাব করেন জনাব তাহিরুল ইসলাম খান,এম.পি.এ,বগুড়া। আর কোনো প্রস্তাব ছিলনা। ডা. ওয়াকিলউদ্দিন আহমেদ প্রস্তাবকারীর প্রতি অনুরোধ করেন তার নাম প্রত্যাহার করে নিতে যা প্রস্তাবকারী কর্তৃক পতিত হয়। ডা. ওয়াকিলউদ্দিন আহমেদ পরে প্রার্থীতা থেকে তার নাম প্রত্যাহার করেন।সেখানে আর মাত্র একজন প্রার্থি ছিলেন;জনাব আব্দুর রহিম,এম.পি.এ জোনাল প্রশাসন কাউন্সিল চেয়ারম্যান হিসেবে।
যাইহোক পরে এটি সর্বসম্মতিক্রমে সমাধান হয় যে, জনাব আব্দুর রহিম,এম.পি.এ-যথাযথভাবে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল পশ্চিম জোন-১ এর চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত ঘোষিত হন।
অর্থ উপ-কমিটি:
জনাব শাহ মুহাম্মদ ইউসুফ এম পি এ অর্থ উপ-কমিটির সদস্য হতে জনাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ -এর নাম প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটি জনাব মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন এম পি এ উপ-কমিটির সদস্য হতে জনাব কাশিমুদ্দিন আহমেদ এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা জনাব গোলাম রহমান কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সিরাজুল ইসলাম এম পি এ জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ-এর নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি জনাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব জামিলুর রহমান প্রধান এম এন এ এর নাম জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ কর্তৃক প্রস্তাবিত হয় এবং কাজী আব্দুল মজিদ চৌধুরী এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়
জনাব আবুল হাসনাত চৌধুরী এম পি এ-র নাম জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ কর্তৃক প্রস্তাবিত হয় এবং জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ এম পি এ, জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব কাশিমুদ্দিন আহমেদ এম পি এ এবং জনাব আবুল হাসনাত চৌধুরী এম পি এ তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী জনাব মোজাফফর হোসেন এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা জনাব শাহ মোহাম্মদ ইউসুফ এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব মোজাফফর হোসেন তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ এম এন এ সদস্য হিসেবে জনাব এম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী এম এন এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা জমাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব খাতিবুর রহমান এম পি এ সদস্য হিসেবে জনাব মুজিবুর রহমান এম এন এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং তৎক্ষণাৎ জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
মুজিবুর রহমান এম এন এ কৃতজ্ঞতার সাথে অস্বীকৃতি জানান এবং সদস্য হিসেবে তার অক্ষমতার জন্য মিনতি করেন।
এটি সমাধান হয় যে জনাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ,জনাব জামিলুর রহমান প্রধান এম পি এ এবং জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী এম এন এ অর্থ উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনীত হন।
উপ-কমিটির অব্যাহতি :
জনাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ জনাব আজিজুর রহমান এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন।প্রস্তাবটি জনাব একরামুল হক এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ এম এন এ জনাব সিরাজুল ইসলাম এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং জনাব এবিএম মুকছেদ আলী এম এন এ, জনাব আজিজুর রহমান এম পি এ সদস্য হিসেবে সমর্থন করেন।
জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী এম এন এ জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা সরদার মোশাররফ হোসেন এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ জনাব মোজাফফর হোসেন এম পি এ,তাহিরুল ইসলাম খান এম পি এ এবং কাশিমুদ্দিন আহমেদ এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন। এটি জনাব জামিলুর রহমান প্রধান এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
|৩য় খন্ড-৭০৫-৭০৬ পৃষ্ঠা(দলিল)|
জনাব সিরাজুল ইসলাম এম পি এ জনাব গোলাম রহমান এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি জনাব আজিজুর রহমান এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন এম পি এ ডা.ওয়াকিল উদ্দিন মন্ডল এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং জনাব এবিএম মোকছেদ আলী এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব কাশিমুদ্দিন আহমেদ এম পি এ,তাহিরুল ইসলাম খান এম পি এ এবং মুজাফফর হোসেন এম পি এ তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেন।
এটা সমাধান হয় যে নিম্নোক্ত সদস্যগণ নির্বাচিত ঘোষিত হয় অব্যাহতি উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে।
১. জনাব আজিজুর রহমান সরকার,এম পি এ
২. জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ
৩. জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ
৪. জনাব গোলাম রহমান,এম পি এ
৫. ডা.ওয়াকিল উদ্দিন মণ্ডল,এম এন এ
৬. জনাব এস এম ইউসুফ,এম পি এ
৩. স্বাস্থ্য উপ-কমিটি
জনাব এস এম ইউসুফ এম পি এ জনাব একরামুল হক এম পি এ এবং জনাব মজিদ চৌধুরী,এম পি এ এর নাম প্রস্তাব করেন যা জনাব গোলাম রহমান কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী,এম পি এ জনাব ফজলুল করিম,এম এন এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব একরামুল হক,এম পি এ জনাব খাতিবুর রহমান, এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি জনাব এবিএম মুকছেদ আলী,এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব এবিএম মুকছেদ আলী,এম এন এ জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম এন এ -এর নাম প্রস্তাব করেন যা সরদার মোশাররফ হোসেন,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব খাতিবুর রহমান উপ-কমিটির সদস্য হতে অস্বীকৃতি জানান।
এটা সমাধান হয় যে নিম্নোক্ত সদস্যগণ
নির্বাচিত ঘোষিত হয় স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে।
১.জনাব একরামুল হক,এম পি এ
২. জনাব আব্দুল মজিদ চৌধুরী, এম পি এ
৩. জনাব জনাব ফজলুল করিম,এম পি এ
৪. জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম এন এ
৪.জনসংযোগ উপ-কমিটি:
জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি জনাব এবিএম মোকছেল আলী,এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম পি এ জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা তাৎক্ষণিকভাবে জনাব খাতিবুর রহমান,এম এন এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব ম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এম এন এ জনাব ডা.ওয়াকিল উদ্দিন মণ্ডল,এম পি এ এবং গোলাম রহমান,এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ জনাব আজিজুর রহমান সরকার,এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি সরদার মোশাররফ হোসেন,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব এবিএম মোখছেদ আলী,এম এন এ জনাব আজিজুর রহমান,এম এন এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি তাৎক্ষণিক ভাবে জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
এটা সমাধান হয় যে নিম্নোক্ত সদস্যগণ নির্বাচিত ঘোষিত হয় জনসংযোগ উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে।
১. জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন,এম পি এ
২. জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ
৩. জনাব ডা. ওয়াকিল উদ্দিন মণ্ডল,এম এন এ
৪. জনাব গোলাম রহমান,এম পি এ
৫. জনাব আজিজুর রহমান সরকার, এম পি এ
৬. জনাব আজিজুর রহমান,এম এন এ
৫.শিক্ষা উপ-কমিটি
জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ জনাব খাতিবুর রহমান,এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা জনাব একরামুল হক,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ প্রস্তাব করেন জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম এন এ এবং জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ -র নাম। এটি জনাব এস এম ইউসুফ, এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।জনাব গোলাম রহমান,এম পি এ জনাব এস এম ইউসুফ, এম পি এ-র নাম প্রস্তাব করেন যা সমর্থন করেন জনাব একরামুল হক,এম পি এ
জনাব এস এম ইউসুফ, এম পি এ প্রস্তাব করেন জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ এবং জনাব মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এম এন এ-র নাম,সমর্থিত হয় জনাব গোলাম রহমান,এম এন এ কর্তৃক।
ডা. ওয়াকিল উদ্দিন মণ্ডল,এম এন এ জনাব এবিএম মোখছেদ আলী,এম এন এ-র নাম প্রস্তাব করেন এবং এটি সমর্থিত হয় জনাব একরামুল হক,এম পি এ দ্বারা।
জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ তার নাম প্রত্যাহার করেন।
এটা সমাধান হয় যে নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ নির্বাচিত ঘোষিত হয় স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে।
১. জনাব খাতিবুর রহমান,এম পি এ
২. জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ,এম এন এ
৩. জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ
৪. জনাব এস এম ইউসুফ,এম পি এ
৫. জনাব এম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এম এন এ
৬. ডা. ওয়াকিল উদ্দিন মণ্ডল,এম এন এ
জনাব সিরাজুল ইসলাম,এম পি এ প্রস্তাব দেন যে, (১) বাণিজ্য ও ব্যবসা উপ-কমিটি এবং (২) যুব ও অভ্যর্থনা ক্যাম্প উপ-কমিটি নামে আরো দুটি উপ-কমিটি এখানে দরকার।প্রস্তাব টি জনাব এস এম ইউসুফ,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
জনাব আজিজুর রহমান সরকার,এম পি এ প্রস্তাব দেন যে, একটি সামাজিক কল্যাণ উপ-কমিটি প্রতিষ্ঠা করাও জরুরি এবং প্রস্তাব টি জনাব একরামুল হক,এম পি এ কর্তৃক সমর্থিত হয়।
<003.247.707> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জনাব আজিজুর রহমান সরকার, এমপিএ প্রস্তাব করেন যে একটি সমাজকল্যাণ উপ-কমিটি গঠন করা উচিত এবং প্রস্তাবটি জনাব একরামুল হক, এমপিএ দ্বারা সমর্থিত। উক্ত কারণে বিষয়টির সমাধানে তিনটি সাব-কমিটি যথা (১) শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটি, (২) যুব ও রিসেপশন ক্যাম্প উপ -কমিটি. (৩) সমাজ কল্যাণ উপ -কমিটি গঠন করা হয় এবং সরকার একইরকম প্রস্তাব অনুমোদনে অগ্রসর হবে।
৬. শিল্প ও বাণিজ্য উপ–কমিটি:
জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন. এমপিএ প্রস্তাব করেন, এম/এস কাজী আবদুল মজিদ চৌধুরী, এমপিএ, খতিবুর রহমান, এমপিএ, গোলাম রহমান, এমপিএ, সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ, একরামুল হক, এমপিএ, জামিলুর রহমান প্রধান, এমপিএ এবং কামরানউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ উক্ত উপ-কমিটির সদস্য হবেন।
উক্ত প্রস্তাবনাটি জনাব এ বি এম মুকসেদ আলি দ্বারা সমর্থিত হয় ।
উক্ত প্রস্তাবনা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব না থাকায় নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ এই উপ-কমিটির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ঘোষিত হন:
(১) জনাব কাজী আবদুল মজিদ চৌধুরী, এমপিএ
(২) খতিবুর রহমান, এমপিএ
(৩) গোলাম রহমান, এমপিএ
(৪) সিরাজুল ইসলাম এমপিএ
(৫) একরামুল হক এমপিএ
(৬) জনাব জামিলুর রহমান প্রধান, এমপিএ
(৭) জনাব কামরানউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
৭. যুব ও রিসেপশন ক্যাম্প উপ –কমিটি:
জনাব গোলাম রহমান এমপিএ প্রস্তাব করেন এম/এস আবদুর রহিম, এমপিএ, আজিজুর রহমান সরকার, এমপিএ, ডঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ, সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ, এস এম ইউসুফ, এমপিএ এবং এ বি এম মুকসেদ আলী, এমপিএ উক্ত উপ-কমিটির সদস্য হবেন।
উক্ত প্রস্তাবনাটি যথাযথভাবে জনাব একরামুল হক, এমপিএ দ্বারা সমর্থিত হয় ।
উক্ত প্রস্তাবনা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব না থাকায় নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ যুব ও রিসেপশন ক্যাম্প উপ -কমিটির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ঘোষিত হন:
(১) জনাব আব্দুর রহিম, এমপিএ
(২) জনাব আজিজুর রহমান সরকার, এমপিএ
(৩) ডাঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ
(৪) জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ
(৫) জনাব এস এম ইউসুফ, এমপিএ
(৬) জনাব এ বি এম মুকসেদ আলী, এমএনএ
৮. সামাজ কল্যাণ উপ–কমিটি:
জনাব, খতিবুর রহমান এমপিএ এম/এস –শাহ্ মাহতাব আহমেদ, এমএনএ, কাজী আবদুল মজিদ চৌধুরী, এমপিএ, ডঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ, এম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এমএনএ সিরাজুল ইসলাম এর নাম প্রস্তাব করেন।
উক্ত প্রস্তাবনাটি যথাযথভাবে জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ দ্বারা সমর্থিত হয় ।
উক্ত প্রস্তাবনা ব্যতীত অন্য কোন প্রস্তাব না থাকায় নিম্নলিখিত ব্যক্তিবর্গ সামাজ কল্যাণ উপ-কমিটির নির্বাচিত সদস্য হিসেবে ঘোষিত হন:
<003.247.708> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(১) জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ, এমএনএ
(২) কাজী আবদুল মজিদ চৌধুরী, এমপিএ
(৩) ডাঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ
(৪) জনাব এম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এমএনএ
(৫) জনাব সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ
(৬) জনাব আজিজুর রহমান সরকার, এমপিএ
উপ-কমিটির কতৃক সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানরা হলেনঃ-
ক্রমিক নং | উপ-কমিটির নাম | চেয়ারম্যান নাম |
১ | অর্থ উপ-কমিটি | জনাব এ বি এম মুকসেদ আলী, এমএনএ |
২ | ত্রাণ উপ-কমিটি | জনাব সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ |
৩ | স্বাস্থ্য উপ-কমিটি | কাজী আবদুল মজিদ চৌধুরী, এমপিএ |
৪ | প্রচার উপ-কমিটি | জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ |
৫ | শিক্ষা উপ-কমিটি | জনাব শাহ্ মাহতাব আহমেদ, এমএনএ |
৬ | শিল্প ও বাণিজ্য উপ-কমিটি | জনাব জামিলুর রহমান প্রধান, এমপিএ |
৭ | যুব ও রিসেপশন ক্যাম্প উপ -কমিটি | ডাঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ |
৮ | সামাজ কল্যাণ উপ-কমিটি | জনাব এম মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এমএনএ |
জনাব তাহিরুল ইসলাম খান, এমপিএ, বগুড়া প্রকাশ করে বগুড়া জেলার সদস্য উপ-কমিটি গঠন ও জোনাল প্রশাসনিক পরিষদের নির্বাচন সঙ্গে কোনো চুক্তি ছিল না । তাঁর মতে, বগুড়া জেলার সদস্যরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হবার কারণে এই কমিটিতে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এবং তিনি প্রস্তাব করেন বালুঘাট-এ বগুড়া জেলার হেড কোয়াটার সহ একটি পৃথক জোন করা হোক । জনাব সিরাজুল ইসলাম, এমপি্ জনাব মোজাফ্ফর হোসেন, এমপিএ, ডঃ সাইদুর রহমান, এমপিএ, জনাব হাসান আলী সরকার, এমপিএ, জনাব আবুল হাসমত চৌধুরী, এমপিএ, এবং কাসিমউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ পৃথক জোন করা প্রসঙ্গে সমর্থন ও একমত পোষণ করেন এবং বগুড়া জেলার জন্য একটি পৃথক জোন দাবি করেন ।
জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ বলেন যে বগুড়া জেলার সদস্যদের তর্ক মর্মে দিনাজপুরের সদস্যদের দ্বারা সবকিছু করছেন যেখানে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্পূর্ণই ভিত্তিহীন, ততঃমধ্যে দিনাজপুর জেলার সদস্যবৃন্দ অভেদ্য অফিস নির্বাচনের ও বগুড়া জেলার সদস্যদের মাঝের সহযোগিতা বজায় রাখতে আগের রাতে থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন । তিনি আরও প্রকাশ করেন যে, তারা যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে জোর করে সিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছুক হয় তবে বগুড়া জেলার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা দীর্ঘায়িত করবার প্রয়োজন নেই । তিনি আরও উল্লেখ করেন, বগুড়া জেলার সদস্যদের বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য হিসেবে প্রস্তাবিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা তা প্রত্যাখ্যান করেন যা সম্পূর্ণ অসহযোগতার নিদর্শন বহন করে ।
ডঃ ওয়াকিলউদ্দিন মন্ডল, এমএনএ এবং জনাব সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ এই প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন । তাঁরা প্রকাশ করেন যে, বগুড়া জেলার জন্য একটি পৃথক জোন চাহিদাটি তাঁরা সমর্থন করবেন শুধুমাত্র যদি বগুড়া জেলার সদস্যদের তাদের সংস্করণ এবং দিনাজপুর জেলার সদস্যদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠের দেওয়া সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেয় । তারা আরো বলেন যে,
<003.247.709> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
কোন কারণে তারা বগুড়া জন্য পৃথক জোন সৃষ্টির বিরোধিতা করা উচিত নয় যখন এই ইতিমধ্যে গত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সমস্যাগুলি সমাধান করা হয়েছে ।
সভার সভাপতি জনাব মুজিবুর রহমান, এমএনএ, এর বক্তব্যটি বগুড়া জেলার সদস্যদের পৃথক জোন সংক্রান্ত মতামত ও দর্শন সমর্থন করে । উক্ত সভাটি সভার সভাপতির ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে শেষ হয় ।
স্বাঃ / – মুজিবুর রহমান, এমএনএ
প্রেসিডেন্ট.
২৬/০৯/৭১
মেমো. নং WZ-I/205, তারিখ ২৮. ৯. ৭১
সচিব, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরাবর প্রয়োজনীয় তথ্য এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের অনুলিপি পাঠানো হল ।
স্বাঃ / -. মোঃ আবুল কাশেম খান,
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
ওয়েস্ট জোন- I
২৬/৯/৭১
মেমো. নংঃ WZ-I/ 209, তারিখ ২৮. ৯. ৭১
সচিব, সাধারণ প্রশাসন বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বরাবর তথ্য অনুগ্রহের জন্য অনুলিপি পাঠানো হল ।
(মো. আবুল কাশেম খান)
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
ওয়েস্ট জোন- I
২৬/৯/৭১
……………………………………
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণী, ওয়েস্ট জোন- I অনুষ্ঠিত
হয়
১৮. ১০. ৭১, ১১-০০ ঘণ্টা, গঙ্গারামপুর জোনাল কাউন্সিলের অফিস
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
(১) জনাব আব্দুর রহিম, এমপিএ
(২) মো. আবুল কাশেম খান, জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
(৩) আজিজুর রহমান, এমএনএ
(৪) মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, এমএনএ
(৫) ডাঃ ওয়াকিলুদ্দিন মন্ডল, এমএনএ
(৬) জনাব সরদার মোশাররফ হোসেন, এমপিএ
(৭) শাহ্ মো. ইউসুফ, এমপিএ
(৮) মো. ফজলুল করিম, এমপিএ
(৯) সিরাজুল ইসলাম, এমপিএ
<003.247.710> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(১০) কামরুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
(১১) জামিলুর রহমান প্রধান, এমপিএ.
(১২) কাসিমউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ
(১৩) আবুল হাসানাত চৌধুরী, এমপিএ
(১৪) মুজাফফর হোসেন, এমপিএ
উক্ত সভাটি কামরুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ দ্বারা পবিত্র কুরআন থেকে আবৃত্তি দিয়ে শুরু হয়।
প্রারম্ভেই বাংলাদেশের শহীদদের প্রতি সম্মান দেখানো হয়েছিল ।
সভায় শেখ মুজিবুর রহমানের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয় । এছাড়াও সভায় ভারতের সরকার ও তার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় তাদের সাহায্যে, সমর্থন এবং বাংলাদেশের সরকার এবং জনগণ প্রতি সহানুভূতি জন্য ।
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যধারায় অনুষ্ঠিত হয় ২৬.৯.৭১ নিয়ে আলোচনা হয় । কোন সদস্য দ্বারা কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি ।
এজন্য, উল্লেখিত সভার সমস্যাগুলির সমাধান নিশ্চিত করা হয় তার কার্যবিবরণীতে ।
ত্রাণ সাব-কমিটির সভাপতি তার বাজেট যা ছিল বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন ও আলোচনা করেন । এটা ঠিক করা হয়েছিল যে, জোনের সমগ্র এলাকা রিলিফ অপারেশনের জন্য ৫ টি উপ-জোনে বিভক্ত হওয়া উচিত যা ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় সমন্বয় পর নিযুক্ত প্রেরিত কর্মী দ্বারা পরিচালিত হবে । সরকার আরও সিদ্ধান্ত নেয় যে, ৩৪ টি ত্রাণ শিবির যেখানে কোন কর্মকর্তা নিযুক্ত হয় নি তার জন্য ৬৮ জন কর্মকর্তার নিয়োগ দিবে ।
দুস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণের জন্য রুপি ৩,০০,০০০/০০ (তিন লক্ষ রুপি) বাজেট সাপেক্ষে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও অবিলম্ব সমাধান করা উচিত । এছাড়া পরিবহন ভাতা ও কন্টিনজেন্ট ব্যয় সাপেক্ষ রুপি ২,০০০.০০ ত্রাণ সংক্রান্ত বিষয়ে অনুমোদন করা হয় ।
আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার বাংলাদেশের মানুষের এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের মানুষ ও মুক্ত এলাকাসমূহের মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে অগ্রসর হবে ।
অতঃপর, চেয়ারম্যান, প্রচার উপকমিটির তার বাজেট উপস্থাপন করেন ও আলোচনা সাপেক্ষে তা অনুমদিত হয় (অনুলিপি সংযুক্ত)। আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, কাজের সুবিধার জন্য সমগ্র জোন কে ৫টি উপ- জোনে বিভক্ত করা উচিত ।
তারপর সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির প্রাক্কলিত বাজেট উপস্থাপন করেন উল্লেখিত উপ-কমিটির সভাপতি । আইটেম নং – ৬ ব্যাতিরেক সাব-কমিটির প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদিত হয় (অনুলিপি সংযুক্ত) ।
উপ-কমিটির সভাপতি দ্বারা উপস্থাপিত শিল্প ও বাণিজ্য সাব কমিটির বাজেট অনুমোদিত হয় (অনুলিপি সংযুক্ত) ।
জোনাল প্রশাসনিক পরিষদ চেয়ারম্যান সুপারিশ করেন যে শুধুমাত্র আক্রান্ত ‘মুক্তিবাহিনী’, মুক্তিযোদ্ধা ইত্যাদি এবং তাদের পরিবারের জন্য সর্বমোট রুপি ২৫,০০০/০০ (রুপী পঁচিশ হাজার) বাজেটে করাজ প্রয়োজন ।
<003.247.711> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
তারপর আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের চেয়ারম্যান ০১ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়ের জন্য আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ পশ্চিমাঞ্চল-১ এর বাজেট ব্যাখ্যা করেন এবং বাজেট আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক অনুমোদিত হয়। চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদের মাধ্যমে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
স্বাক্ষরঃ
চেয়ারম্যান আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ,
পশ্চিমাঞ্চল-১ গণপ্রজাতন্ত্রী. বাংলাদেশ সরকার গঙ্গারামপুর
পশ্চিমাঞ্চল-১ এর প্রশাসনিক কর্মকর্তার দপ্তর
রশিদ নং- পশ্চিমাঞ্চল-১/৩০৫(২)
তারিখঃ ২৫/১০/১৯৭১
প্রয়োজনীয় তথ্য এবং উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নিম্নলিখিত ব্যাক্তিবর্গকে অনুলিপি পাঠানো হলঃ-
১। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
২। সচিব-সাধারণ প্রশাসন বিভাগ-গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
৩। আঞ্চলিক পরিষদের সকল সদস্য বৃন্দ।
স্বাঃ মোঃ আবুল কাশেম খান
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
পশ্চিমাঞ্চল-১
বাজেট উপ-কমিটি কর্তৃক ত্রানের পরিশিষ্ট
১। নগদ প্রদানঃ ৩,০০,০০০ রুপি
২। টিএ ও ডিএ ২০০০ রুপি
৩,০২,০০০ রুপি
স্বাক্ষরঃ
আঞ্চলিক ত্রাণ কর্মকর্তা
পশ্চিমাঞ্চল-১
<003.247.712> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বরাবর
চেয়ারম্যান
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ
পশ্চিমাঞ্চল-১
বিষয়ঃ বাজেটের হিসাব।
প্রিয় মঙ্গলকামী সুহৃদ বাজেট উপ-কমিটির চেয়ারম্যান, ১ অক্টোবর ১৯৭১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৭১ সময়কালের জন্য নিম্নরুপ বাজেট করা হল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণকরন।
বিবরণ পরিমাণ
১। আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা-১ ৫০০×৩ রুপি ১,৫০০ রুপি
২। সহকারি স-কর্মকর্তা-৫ ৩০০×৩×৫ রুপি ৪,৫০০ রুপি
(পশ্চিম দিনাজপুরের পাচটি উপ-বিভাগের জন্য)
৩। কেরানী-৫ ২০০×৩×৫ রুপি ৩,০০০ রুপি
৪। দপ্তর ভাড়া ১০০×৪ রুপি ৪০০ রুপি
৫। পিয়ন-৫ ১১০×৫×৩ রুপি ১,৬৫০ রুপি
৬। রাত্রিকালীন পাহারাদার-১ ১১০×৩ রুপি ৩৩০ রুপি
৭। গাড়িচালক-১ ২০০×৩ রুপি ৬০০ রুপি
৮। পরিবহন খরচ ৫০০×৩ রুপি ১,৫০০ রুপি
৯। বিবিধ খরচ ৫০০০×৩ রুপি ১৫,০০০ রুপি
(ক) কাগজ
(খ) পত্রিকা
(গ) মুদ্রন ইত্যাদি
১০। জ্বালানী, তৈল ইত্যাদি ১০০০×৩ রুপি ৩০০০ রুপি
১১। দপ্তর আসবাব ১০০০ রুপি ১,০০০ রুপি
১২। প্রচারণা এবং মাইকিং বাবদ ৪,০০০ রুপি
১৩। বিবিধ খরচ/আপ্যায়ন খরচ ৩,০০০ রুপি
মোট ৩৯,৪৮০ রুপি
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারনা কাজের জন্য একটা গাড়ি বরাদ্দ করা হবে ।
স্বাঃ সরদার মোশাররফ হোসেন
চেয়ারম্যানপ
প্রচারনা উপ-কমিটি
পশ্চিমাঞ্চল-১
সমাজকল্যান উপকমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে কমিটির চেয়ারম্যান জনাব মোশাররফ প্রস্তাবিত বাজেট পেশ করেন। যা ১/১০/৭১ থেকে ৩১।/১২/৭১ সময়কালের জন্য প্রযোজ্য।
<003.247.713> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১। সাংস্কৃতিক দলের সংগঠন ১০,০০০ রুপি
২। স্থানান্তরিত শিল্পীদের সহায়তা ৫,০০০ রুপি
৩। কর্মকর্তা উন্নয়নে ২,৩৫০ রুপি
৪। দপ্তর উন্নয়নে ৩০০ রুপি
৫। দপ্তরের আসবাব ব্যায় ২,৩০০ রুপি
৬। যাতায়াত খরচ ১,০০০ রুপি
৭। বিবিধ/আপ্যায়ন খরচ ১,০০০ রুপি
মোট ২১,৯৫০ রুপি
মোটঃ একুশ হাজার নয়শত পঞ্চাশ রুপি মাত্র
জমাদানকারী
স্বাঃ/ মোঃ মোশারর হোসেন চৌধুরী
চেয়ারম্যান
সমাজকল্যান উপ-কমিটি
পশ্চিমাঞ্চল-১
১৮.১০.৭১
<003.248.714> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পশ্চিমাঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক সভার কার্যক্রম ২৪.১১.৭১ ,১১ টায় গঙ্গারামপুর আঞ্চলিক পরিষদের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থিত সদস্যরাঃ
১.জনাব মোঃ আজিজুর রহমান,এম এন এ।
২.জনাব শাহ মাহতাব আহমেদ ,এম এন এ।
৩.ড. উয়াকিলউদ্দীন ,এম এন এ ।
৪.জনাব সরদার মোশাররফ হোসাইন ,এম পি এ।
৫.জনাব মোঃ খতিবুর রহমান,এম পি এ।
৬.জনাব কাজী আব্দুল মজিদ চৌধুরী,এম পি এ।
৭.জনাব গোলাম রহমান ,এম পি এ।
৮.জনাব শাহ মোঃ ইউসুফ, এম পি এ।
৯.জনাব মোঃ একরামুল হক ,এম পি এ।
১০.জনাব মোঃ কামারুদ্দিন আহমেদ,এম পি এ।
১১.জনাব মোঃ আজিজুর রহমান সরকার,এম পি এ।
১২.জনাব জামালুর রহমান প্রধান,এম পি এ।
১৩.জনাব হাসান আলী সরকার,এম পি এ।
১৪. জনাব আবুল কাশেম খান, আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
সভাটি জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ এম পি এ এর পবিত্র কোরান থেকে তিলাওয়াতের পর শুরু হয়।
সভার কার্যক্রম ৫ তারিখের পরিবর্তে সামান্য পরিবর্তন করে ১৮.১০.৭১ তারিখে নিশ্চিত করা হয়।ত্রাণ কার্যক্রমের অধীন এলাকায় কার্যালয়ে এটি ৫ ই পড়া উচিত।
তারপর স্বাধীন অঞ্চলগুলোর মানুষের সমস্যাগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় এবং কার্যকরীভাবে সকল সদস্য এই আলোচনায় অবদান রাখেন। এটি বের হয়ে আসে যে ,স্বাধীন এলাকাগুলোর মূল সমস্যা হল আমন ধান ও আখের ফসল যা জমির মালিক সরাসরি বা অধিয়ারদের দ্বারা উৎপাদিত হয়েছে।এই সময়ে কিছু জমির মালিক এলাকায় উপস্থিত ছিলেন না,কিছু অধিয়ারদের ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য ।কিছুক্ষেত্রে মালিক এবং অধিয়ার উভয়ই এলাকা থেকে অনুপস্থিত। আরো কিছু অঞ্চল আছে যেখানে জায়গার মালিক জায়গা ছেড়ে চলে গিয়েছেন এবং সেখানে প্রতিবেশীরা চাষ করেন। এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে মালিক এবং অধিয়ারদের ন্যায্য মুনাফা সংরক্ষণে আঞ্চলিক পরিষদ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এছাড়াও আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে উৎপাদকরা ,যেখানে নিজেরা জমিতে চাষ করেছে ,তাদের উৎপাদনের সম্পূর্ণ অংশ পাবে এবং উৎপাদনের ৫০% বহিঃশুল্ক হিসেবে যাবে যেখানে অধিয়ার দ্বারা চাষাবাদ হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে মালিকদের খুঁজে পাওয়া যাবে না সেক্ষেত্রে মালিকের অংশ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিয়ে নিবে। যদি মালিকদের পরবর্তীকালে খুঁজে পাওয়া যায় তবে যথোপযুক্ত পরীক্ষায় সরল বিশ্বাসে তাদের তা ফেরত দেয়া হবে।
<003.248.715> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যেখানে কিছু ব্যক্তি দ্বারা মরু জমি চাষাবাদ করা হয়েছে সেক্ষেত্রে মালিকের অংশ বাংলাদেশ সরকার কতৃক নিয়ে নেয়া হবে।
এটি নির্ণীত হয়েছে যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য উপায় ও মানে খুঁজে বের করার জন্য নিম্নোক্ত ব্যক্তিবর্গ নিয়ে একটি উপকমিটি গঠিত হবে যা পরবর্তী অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কমিটিটি ফসলের উপযুক্ত পরিমাপ , আহরণ,সংরক্ষণ ও ধান ও আখের বিলি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এটি আরো নির্ণীত হয়েছে যে এম এম এ ও এম পি এ রা তাদের নিজস্ব এলাকার জন্য দায়ী থাকবেন।
১.জনাব একরামুল হক ,এম পি এ।
২.জনাব এস. এম. ইউসুফ, এম পি এ।
৩.জনাব গোলাম রহমান ,এম পি এ।
৪.জনাব সরদার মোশাররফ হোসাইন ,এম পি এ।
৫.জনাব খতিবুর রহমান ,এম পি এ(আহবায়ক)
৬.জনাব কাজী আব্দুল মজিদ চৌধুরী,এম পি এ।
৭.জনাব জামালুর রহমান প্রধান,এম পি এ।
৮.জনাব আজিজুর রহমান সরকার,এম পি এ।
৯.জনাব মোশাররফ হোসাইন চৌধুরী,এম পি এ।
১০.জনাব কামারুদ্দিন আহমেদ ,এম পি এ।
১১.জনাব সায়েদুর রহমান ,এম পি এ।
১২.জনাব আজিজুর রহমান, এম এন এ।
যুব অভ্যর্থনা শিবিরের সমস্যাগুলোও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়। আলোচনাকালীন এটি প্রকাশিত হয় যে, বিভিন্ন যুব অভ্যর্থনা শিবিরে ছেলেরা মাসের পর মাস একত্রে রয়েছে এবং ছেলেগুলো প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য অধৈর্য হয়ে পড়েছে। চেয়ারম্যান কতৃক এটিও ব্যক্ত হয়েছে যে, পাতিরাম যুব শিবিরে ঐ ছেলেগুলোর জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল,কিন্তু প্রশিক্ষণ শেষে ঐ ছেলেগুলোকে তাদের নিজ নিজ অভ্যর্থনা শিবিরে ফিরে যেতে হবে। এটি সকল উপস্থিত সদস্যদের অনুভূত হয়েছে যে বিভিন্ন যুব অভ্যর্থনা শিবিরে ছেলেদের জন্য রাখা ব্যবস্থা একান্ত প্রয়োজনীয় এবং এই সকল প্রশিক্ষণ বন্ধ করার পরিবর্তে যুব অভ্যর্থনা শিবিরের জোগাড় করা ছেলেদের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন প্রশিক্ষণ রাখা উচিত।
অতএব,এটি নির্ণীত হয়েছিল যে জরুরিভাবে যুব অভ্যর্থনা শিবিরের ছেলেদের এবং অন্যান্যদের জন্যও প্রশিক্ষণ সুবিধা আয়োজন করা হবে এবং তদানুযায়ী সরকার পদক্ষেপ নিবে।
উদ্বাস্তু শিবিরের সমস্যাগুলো নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে এবং এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে সরকারকে শীতবস্ত্ররূপে তাঁবু এবং তেরপল প্রদানের জন্য স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে।
এটি আরো প্রকাশিত হয়েছে যে নবাগত ব্যক্তিদের জন্য রেশন কার্ড সরবরাহ করা হয়নি যার ফলে তাদের ভীষণ কষ্টে পড়তে হয়েছে এবং এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এই বিষয়টি ভারত সরকারকে কিংবা অন্য কোনো উপযুক্ত কতৃপক্ষকে
গ্রহণ করার অনুরোধ করবে ।
আলোচনায় বিভিন্ন যুব অভ্যর্থনা শিবিরে অভিযোগে বর্ণিত অপকর্ম উঠে এসেছে এবং এটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে যদি কোনো শিবিরে ভ্রষ্ট চর্চা বন্ধ করা হবে এবং এম এন এ ও এম পি এ দের আমাদের স্বাধীনতার আন্দোলনের সকল ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে যাতে এতে কোনো প্রতিকূল সমালোচনার সম্মুখীন হতে না হয়।
<003.248.716> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যখন বাংলাদেশের নতুন এলাকা স্বাধীন হচ্ছে তখন সদস্যদের দ্বারা এটির প্রয়োজন অনুভূত হয় যে ব্যবসায় বাণিজ্য উপকমিটি দ্রুত সরকার কতৃক অনুমোদিত হওয়া উচিত ,পাশাপাশি সময় নষ্ট না করে কমিটির কার্যক্রম শুরু করা উচিত।
সভাপতিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভাটি শেষ হয়।
স্বাঃ/ (এম. এ. রহিম)
সভাপতি,
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ,
পশ্চিমাঞ্চল-১
…………………………………………………………..
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়,
পশ্চিমাঞ্চল-১
রশিদ নং- পশ্চিমাঞ্চল-১/৫০৪(২৮) তারিখ, ১ ডিসেম্বর ,১৯৭১
অনুলিপি অগ্রসর হয়েছেঃ-
১) সচিব,মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, সি ও ,বাংলাদেশ মিশন ,৯ সারকাস এভিনিউ ,কলকাতা-১৭
তথ্য সহায়তার জন্য
স্বাঃ/
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
পশ্চিমাঞ্চল-১
<003.249.717> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বরাবর
আঞ্চলিক পরিষদ
পশ্চিম জোন -১
উপস্থিত সম্মানিত সদস্য মণ্ডলী আমি আমাদের পরিকল্পনা নিয়ে বলার পূর্বে অনুরোধ করতে চাই
বিভিন্ন সীমান্ত অঞ্চলে আমাদের রাজনৈতিক মাঠকর্মীদের ব্যবহার করতে পারি শান্তিপূর্ন এবং সুষ্ঠু ভাবে রাজস্ব আদায়ের জন্য।
কিছুদিন আগেই আমি সীমান্তবর্তী এলাকায় গিয়েছিলাম এবং সেখান থেকে তথ্য পেয়েছি যে বাংলাদেসগ-ভারত সীমান্তের বেশ কিছু পথে বিভিন্ন বাংলাদেশী পণ্য যেমনঃ পাট, তামাক, মোলাসেস, জ্বালানী কাঠ, মাছ ইত্যাদি ভারতে যাচ্ছে। কিছু অননুমোদিত এজেন্সি এই সুযোগে ভাড়া, কর ও রপ্তানি শুল্ক আদায় করছে। আমি বাজারদরও যাচাই করেছি এবং দেখেছি পুর্বোক্ত পণ্যসমূহের দাম ভারতের দামের থেকে অনেক কম এবং বাঙ্গালিরা এতই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে আছে যে তারা তাদের পণ্য বিক্রি করতে আগ্রহী কিন্তু দেশে এখন সেরকম কোন ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। যদি আমরা পরিকল্পনা করে বাংলাদেশি পণ্যের উপর কর বসিয়ে তা আদায় করতে পারি তাহলে একই সাথে বেশ ভাল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ও হবে এবং একই সাথে এরকম অনিশ্চিত সময়ে দেশের অনেক বেকার মানুষের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে। সহজে কর আদায়ের জন্য যেসকল রাজনৈতিক নেতারা সীমান্তের কাছাকাছি থাকেন আমরা চাইলে তাদেরকেও এই কর আদায়ের কাজে সামিল করতে পারি।
এখন আমি কিছু সীমান্ত এলাকার উল্লেখ করে দিচ্ছি যেখান থেকে নিয়মিত রাজস্ব আদায় সম্ভব।
সম্ভাব্য রাজস্ব আদায়ের এলাকাসমূহঃ
১) লস্করহাট পাড়িলিয়া সীমান্ত
২) কামারপাড়া হাট শালপাড়া এবং শাপরা
৩) ত্রিমহিনী হাট চেংগিসপুর
৪) পাঞ্জুইল অঞ্চল হিলি
৫) মাদারগঞ্জ হাট ডাঙা পাড়া
৬) দাউঘর হাট সামগিয়া
৭) কুমারগঞ্জ খানপুর
৮) প্রানসাগর হামজাপুর
৯) কাটাবাড়ি হামজাপুর
১০) চম্পাতলি হামজাপুর
১১) মহিপাল দিঘি হাট ডুগডুগি
১২) শান্তিমারি ডুগডুগি
<003.249.718> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১৩) মোল্লাপাড়া ডুগডুগি
১৪) রাধীকাপূর অঞ্চল
১৫) মালন
১৬) ইসলামপুর
১৭) দাসপাড়া
১৮) তেতুলিয়া অঞ্চল
১৯) দাংঘির হাট
২০) টেকের পাড়া কাইতান
২১) সৈয়দপুর হাট কাইতান
২২) সরদার হাট দেবীপুর সীমান্ত
২৩) তালতলা
২৪) তপন তপন
২৫) সপরা/কুমারগঞ্জ
(অসম্পূর্ণ)
<003.250.719> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পশ্চিম জোন-২ এর আওতাধীন মুক্ত এলাকার প্রশাসনিক কাঠামো | বাংলাদেশ সরকার
পশ্চিম জোন-২ |
২৪ নভেম্বর, ১৯৭১ |
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলরের অফিস
পশ্চিম অঞ্চল-২
আদেশ
পশ্চিম অঞ্চল-২ এর মুক্ত এলাকার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর জন্য নিম্নলিখিত কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করা হল। প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণঃ-
১) জনাব আব্দুল মতিন সরকার,সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী সংগ্রাহক, দিনাজপুর। হারিসচন্দ্রপুর ত্রাণ ক্যাম্প কর্মকর্তাকে প্রশাসনিক কাজে সহায়তা করবেন। কর্মকর্তাকে শীঘ্রই তার বর্তমান অবস্থান হতে কর্মস্থলে বদলি করা হবে।
২) জি এম আফলাতুন,সাবেক সহকারী, এস.ডি.ও কার্যালয়, নবাবগঞ্জ। তিনি অফিস সহকারী কাম টাইপিস্ট হিসাবে কাজ করবেন। সরকার শীঘ্রই তার নিয়োগপত্র অনুমোদন করবে।
৩) প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের পিয়ন হিসাবে পূর্ববতী বাংলাদের সরকার এর স্থানচ্যুত কর্মচারীদের নিয়োগ দেয়া হবে।
৪) শেখ জামিরুদ্দিন আহমেদ, সি.ও (রাজস্ব),সিলেট। এখন গাজল আরজেসি উক্ত এলাকার আর.ও (R/0) হিসাবে কাজ করবেন। তাকে সহায়তা করার জন্য দুইজন টোল সংগ্রাহক এবং দুইজন সহকারী রাজস্ব সংগ্রাহক থাকবে। উপরোক্ত কর্মকর্তাদের পূর্ব স্থানচ্যুত বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের মধ্য হতে চেয়ারম্যান জেড.এস.সি এর অনুমোদনের মাধ্যমে নির্বাচিত করা হবে।
৫) পূর্ব স্থানচ্যুত বাংলাদেশ সরকারের কর্মচারীদের মধ্য হতে একজন ক্লার্ক ও একজন পিয়ন ভোলাহাটে রাজস্ব কর্মকর্তার জন্য কর্মকর্তা নিজে বাছাই করে নিবেন এবং চেয়ারম্যান জেড.এস.সি তা অনুমোদন করে দিবেন।
৬) ম্যাজিস্ট্রেট এর জন্য একজন পিয়ন ম্যাজিস্ট্রেট নিজেই বাছাই করে নিবেন এবং চেয়ারম্যান জেড.এস.সি তা অনুমোদন করে দিবেন।
৭) জনাব এম এ ওয়াদুদ, হেড ক্লার্ক, পি.এস রেলওয়ে, পাবনা। বর্তমানে ত্রাণ কর্মকর্তা। তিনি এখন থেকে নিমতলা রিলিফ ক্যাম্পের ম্যাজিস্ট্রেট এর অধীনে পেশাদার হিসাবে কাজ করবে।
৮) দুইজন মেডিকেল অফিসার উক্ত এলাকার জন্য প্রয়োজন। যদি সম্ভব হয় তবে জেড.এইচ.ও মন্ত্রণালয় এর সুপারিশ ক্রমে পুর্ব স্থানচ্যুত বাংলাদেশ সরকার এর কর্মকর্তাদের মধ্যহতে নিয়োগ দেয়া হবে
৯) দুইজন কম্পাউন্ডার ও দুইজন ড্রেসার কাম পিয়ন এবং একজন সুইপার ও জেড.এইচ.ও এর মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।
<003.250.720> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বিচার
ভোলাহাট এর সকল প্রতিষ্ঠান অবিলম্বে চালু হবে।এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাদি গ্রহন করবে জে.এইচ.ও।
পুলিশ
যেসব পুলিশ সদস্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে তাদের অবশ্যই অতিসত্বর নিজস্ব পদে যোগদান করতে হবে।
যেসব পুলিশ শিবগঞ্জ পি.এস (মুক্ত এলাকায়) কাজ করছিলো তারা এই মূহুর্তে ভোলাহাট পি.এস এ কাজ করবে।
শিবগঞ্জ এর জন্য কর্মকর্তা নিম্নরুপঃ-
(১) ও.সি-১ জন
ভোলাহাট পুলিশ এর জন্য বিবরণী নিম্নরূপঃ
১। ইন্সপেকটর -১ জন
২। দারোগা -১ জন
৩। সাব-ইন্সপেক্টর-২ জন
৪। এ এস আই-২ জন
৫। কন্সটেবল- ১৫ জন
প্রচার এবং কল্যাণ
চেয়ারম্যান জেড.এ.সি. অনুমোদন এর মাধ্যমে জনাব আসাদুজ্জামান, উপ-বিভাগীয় অ্যাডজুট্যান্ট, এখন সুজানগর ত্রাণ সংযুক্ত ক্যাম্প এলাকায় সমাজকল্যাণ ও প্রচার কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করবে। সাথে থাকবে একজন সহকারী এবং তিনজন পিওন।
চেয়ারম্যান
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদ
পশ্চিম অঞ্চল-২
স্বাক্ষরঃ
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
পশ্চিমাঞ্চল – ২
অনুলিপি নং- পশ্চিমাঞ্চল -২ ১৯২(১৫)
তারিখঃ ২৩.১১.৭১
যাদেরকে অনুলিপি দেয়া হয়েছে-
(১) জন প্রশাসন সচিব
(২) অর্থসচিব,
(৩) স্বরাষ্ট্র সচিব
(৪) বাংলাদেশ মিশন প্রধান – কলকাতা
(৫) পুলিশের মহাপরিদর্শক
(৬) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা সচিব
(৭) জনাব এ এইচ খান, কর্মকর্তা, মুক্ত এলাকা।
<003.250.721>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(৮) জনাব.মতিন সরকার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি সংগ্রাহক,দিনাজপু্র,বর্তমানে হরিসচন্দ্রপুর রিলিফ ক্যাম্পের সাথে সংযুক্ত . মুক্তি শিবির
(৯) এস কে.জামির উদ্দিন আহমেদ , সি.ও সিলেট রাজস্ব, বর্তমানে গাজল রিলিফ ক্যাম্পের সাথে সংযুক্ত
(১০) জোনাল স্বাস্থ্য কর্মকর্তা , পশ্চিম জোন – ২
(১১) জোনাল পুলিশ অফিসার, পশ্চিম জোন – ২
(১২) জোনাল শিক্ষা অফিসার, পশ্চিম জোন – ২
(১৩) জনাব. আসাদুজ্জামান, সাব- বিভাগীয় সহকারী, বর্তমানে সুজননগর রিলিফ ক্যাম্পের সাথে সংযুক্ত
(১৪) বি. ডি. এফ অধিনায়ক (সেক্টর কমান্ডার) , সেক্টর নং ৭ ।
এস ডি/
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
পশ্চিম জোন- ২
২৪.১১.৭১
<003.251.722>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়, দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল
স্মারকলিপি নম্বরঃ VII-৭/৭১-২৫৫ তারিখ – ৫.৯.৭১
প্রেরক
জনাব এম শামসুল হক
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল
বরাবর
জনাব এইচ টি ইমাম
মন্ত্রিপরিষদ সচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সূত্র স্মারকলিপি নম্বর ঃ GA/১১৪(৯) তারিখঃ ২৩.৮.৭১
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের সংবিধান এর জন্য ৫ই সেপ্টেম্বর,১৯৭১ আরিখের MNAs এবং MPAs এর সভার কার্যবিবরণী এক কপি মন্ত্রীসভার তথ্য অনুগ্রহে পাঠানো হয়।
জনাব শামসুল হক
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের সংবিধানের জন্য MNAs এবং MPAs এর সভার কার্যবিবরণী ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ বেলা ১১ টায় কৃষ্ণনগরের নদিয়া জেলা পরিষদের হলে অনুষ্ঠিত হয়।
উপস্থিত সদস্যগণঃ
১.জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস, MNA,কুষ্টিয়া
২. জনাব শাহিউদ্দীন,MNA,কুষ্টিয়া
৩. জনাব নুরুল হক,MPA,কুষ্টিয়া
<003.251.723>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৪.জনাব আহসানুল্লাহ, MPA,কুষ্টিয়া
৫.জনাব ইউনূস আলী,MPA, কুষ্টিয়া
৬.জনাব গোলাম কিবরিয়া, MPA, কুষ্টিয়া
৭.জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী, MPA, কুষ্টিয়া
৮.জনাব আব্দুর রব (বগা মিয়া), MPA,পাবনা
৯.ডাঃ কে.বি.এম. আবু হেনা, MPA,পাবনা
১০.জনাব গোলাম হাসনায়েন, MPA,পাবনা
১১.জনাব তাফিজুদ্দিন আহমেদ, MPA,পাবনা
১২.জনাব আব্দুর রহমান, MPA,পাবনা
১৩.জনাব রওশন আলি,MNA,যশোর
১৪.জনাব খন্দকার এ.হাফিজ,MNA,যশোর
১৫.জনাব সোহরাব হোসেন,MNA,যশোর
১৬.জনাব ইকবাল আনোয়ারুল ইসলাম,MNA,যশোর
১৭.জনাব নুরুল ইসলাম, MNA,যশোর
১৮.জনাব সৈয়দ আতার আলি , MPA,যশোর
১৯.ল্যাফটেনেন্ট মতিউর রহমান,MPA,যশোর
২০.জনাব শাহ হাদিউজ্জামান MPA,যশোর
২১. জনাব মোঃ আবুল ইসলাম, MPA, যশোর
২২.জনাব তাবিবুর রহমান সরদার,MPA,যশোর
২৩.জনাব গোলাম মজিদ,MPA,যশোর
২৪.জনাব জে.কে.এম.এ. আজিজ,MPA,যশোর
২৫.জনাব আসাদুজ্জামান, MPA,যশোর
২৬.জনাব কে.আই.এম. সালেহউদ্দীন,MNA,ফরিদপুর
২৭. জনাব গৌড় চন্দ্র বালা, MPA,ফরিদপুর
২৮.জনাব ফনি ভূষণ মজুমদার, MPA,ফরিদপুর
২৯.জনাব কাজী হেদায়েত হোসেন,MPA,ফরিদপুর
৩০.জনাব এ.ই. আমিনুদ্দীন আহমেদ,MPA,ফরিদপুর
৩১. জনাব সতীশ চন্দ্র হায়দার,MPA,ফরিদপুর
৩২.ডাঃ আফতাবুদ্দীন মোল্লা,MPA,ফরিদপুর
৩৩.জনাব ইমামুদ্দীন আহমেদ,MPA,ফরিদপুর
৩৪.জনাব জামাল উদ্দীন চৌধুরী,MPA,ঢাকা
৩৫.জনাব মোঃ সিদ্দিকুর রহমান,MPA,ঢাকা
৩৬.জনাব মো: আলাউদ্দিন, MPA,ঢাকা।
১.জনাব সোহরাব হোসেন,MNA সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল।
২.বিভিন্ন সদস্যদের দ্বারা একটি বিস্তারিত আলোচনার পর তা নিম্নরূপে স্থির করা হয়েছে-
পূর্ণসমর্থন এবং মন্ত্রীসভা ও আঞ্চলিক কাউন্সিল গঠনের জন্য তার সিদ্ধান্তের কারণের জন্য আস্থা যখন এই গৃহ খুলনা , পাবনা,ফরিদপুর ও যশোর জেলায় অর্থাৎ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের গঠিত এলাকা বিভিন্ন মতামতের কারণে বাতিল হবে এবং দি ধরনের মন্ত্রীসভা বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে তার দ্বিখন্ডনের জন্য এবং যে উদ্দেশ্যে পৃথক জেলার MNAs, MPAs মন্ত্রীসভার মতামত নির্ণীত হত তার জন্য পূণর্বিবেচনা অনুরোধ করা এবং বাড়ির সুপারিশ পূণর্বিবেচনায় অপেক্ষমান এবং ঐ কাউন্সিলের বৈঠক মূলতবী করা।
<003.252.724> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল-১
স্মারকলিপি নম্বরঃVII-৭১/২৯০
তারিখ – ২৬.৯.৭১
প্রেরক
জনাব এম শামসুক হক
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল-১
বরাবর
জনাব এইচ টি ইমাম
মন্ত্রিপরিষদ সচিব
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সূত্র স্মারকলিপি নম্বর ঃ GA/১৩৭৮(১০০)
তারিখ ঃ ১৮.৯.৭১
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের সংবিধান এর জন্য MNAs এবং MPAs এর সাক্ষাতের বিচারকার্যের এক কপি ২৬ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ এতদ্বারা মন্ত্রিসভা তথ্য অনুগ্রহ পাঠানো হয়।
জনাব শামসুল হক
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল-১
আঞ্চলিক প্রশাসনিক পরিষদের অবদানের জন্য MNAs এবং MPAs এর সভার কার্যবিবরণী ২৬ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ বেলা ১১ টায় আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। উপস্থিত সদস্যগণঃ
১.জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস, MNA,কুষ্টিয়া
২. জনাব বেরিস্টার আমিরুল ইসলাম, MNA,কুষ্টিয়া
৩. জনাব সাহিউদ্দীন,MNA,কুষ্টিয়া
৪.জনাব নুরুল হক,MPA,কুষ্টিয়া
৫.জনাব আহসানুল্লাহ, MNA, কুষ্টিয়া
৬.জনাব জহুরুল হক রেজা, MNA, কুষ্টিয়া
৭.জনাব ইউনূস আলী, MNA, কুষ্টিয়া
৮.জনাব গোলাম কিবরিয়া, MNA, কুষ্টিয়া
৯.জনাব আব্দুর রৌফ চৌধুরী, MPA
<003.252.725>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১০. “আব্দুর রব(বগা মিয়া), এমপিএ,পাবনা
১১. গোলাম হাসনায়েন,এমপিএ,পাবনা
১২. তাফিজুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ, পাবনা
১. জনাব গোলাম কিবরিয়া, এমপিএ, সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য নির্বাচন করা হয়। ২. সভা বিকাল ৩ টা পর্যন্ত মূলতবী করা হয়।
৩. সভা বিকাল ৩ টায় পুনরায় শুরু হয়।
৪. যেহেতু পাবনা জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যগণ বিজ্ঞপ্তি না পাবার কারণে সভায় উপস্থিত হতে পারে নি,তাই সর্বসম্মতিক্রমে স্থির করা হয়েছে যে, একটি সুযোগ দেয়া হোক যাতে আঞ্চলিক সংবিধানে চেয়ারম্যান নির্বাচন এবং উপ-কমিটি নির্বাচন সকল সদস্যের সম্মতিক্রমে হয়।বৈঠকটি তাই আবার মূলতবি করা হয় ৩ অক্টোবর, ১৯৭১(রবিবার) সকাল ১১:৩০ ঘটিকায় আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসে,দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল ১,কৃষ্ণনগর।
৫. অনুপস্থিত সদস্যদের টেলিগ্রাম দ্বারা অবহিত করা হয়।
গোলাম কিবরিয়া, এমপিএ
রাষ্ট্রপতি
<003.253.726> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পশ্চিম জোন প্রশাসনিক কাউন্সিলের গঠনতন্ত্র রচনার জন্য এমএনএ ও এমপিদের সভার কার্যবিবরণী | বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ |
৩ অক্টোবর,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১
স্মারক নাম্বার. ৮-৭/৭১/৩০৪ প্রদত্ত তারিখ ৩.১০.৭১.
হতেঃ জনাব এম.শামসুল হক,
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১।
প্রতি
জনাব এইচ টি ইমাম
মন্ত্রীপরিষদ সচিব,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার.
রেফারেন্সঃ স্মারক নং. গ/১৩৭৮(১০০) প্রদত্ত তারিখ ১৮.৯.৭১ এবং এই কার্যালয়ের স্মারক নং ৮-৭/৭১/২৯০ প্রদত্ত তারিখ ২৬.৯.৭১.
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর প্রশাসনিক কাউন্সিল ও এর সাব-কমিটিগুলোর গঠনতন্ত্র রচনার জন্য এমএনএ ও এমপিদের সভা ১৯৭১ সালের ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এর সাথে এই সভার কার্যবিবরণীর একটি অনুলিপি মন্ত্রীপরিষদের অবগতির জন্য পাঠানো হল।
এর মধ্যে যা রয়েছে(এনক্লোজ):
১)দক্ষিন-পশ্চিমজোন-১ এর প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরণীর-১টি অনুলিপি।
২) অর্থ সংক্রান্ত সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণীর -১টি অনুলিপি।
৩) রিলিফ সংক্রান্ত সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণীর -১টি অনুলিপি।
৪) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণীর -১টি অনুলিপি।
৫) প্রচার সংক্রান্ত সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণীর -১টি অনুলিপি।
৬) শিক্ষা সংক্রান্ত সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণীর -১টি অনুলিপি।
(এম.শামসুল হক)
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১।
<003.253.727>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর প্রশাসনিক কাউন্সিলের গঠনতন্ত্র রচনার জন্য এমএনএ ও এমপিএদের সভার কার্যক্রম আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসে ৩.১০.৭১ তারিখে সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১. জনাব আজিজুর রহমান আক্কাস,এমএনএ,কুস্টিয়া।
২. ’’ সাহিউদ্দিন, এমএনএ।
৩. ’’ নুরুল হক, এমপিএ,কুস্টিয়া।
৪. ’’ আহসানুল্লাহ, এমপিএ,কুস্টিয়া।
৫. ’’ জহুরুল হক রেজা, এমপিএ,কুস্টিয়া।
৬. ’’ ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া।
৭. ’’ গোলাম কিবরিয়া, এমপিএ,কুস্টিয়া।
৮. ’’ আব্দুর রউফ চৌধুরী, এমপিএ,কুস্টিয়া।
৯. ’’ আব্দুর রব (বগা মিয়া), এমপিএ,পাবনা।
১০. ’’ গোলাম হাসনাইন, এমপিএ,পাবনা।
১১. ’’ তফিজুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ।
১২. ’’ আব্দুর রাহমান, এমপিএ।
১. সকাল ১১টায় জনাব গোলাম কিবরিয়া,এমপিএ এর সভাপতিত্বে স্থগিত হওয়া সভা পুনরায় শুরু হয়।
২.সর্বসম্মতিক্রমে জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী,এমপিএ আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল,দক্ষিন পশ্চিম জোন-১ এর চেয়ারম্যান মনোনীত হন।
৩.সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে নিম্নলিখিত সাব-কমিটিগুলো,এদের বিপরীতে উল্লেখিত সদস্যদেরদ্বারা গঠিত হবে।
(ক) অর্থ সংক্রান্ত সাব-কমিটিঃ
১.জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী,এমপিএ পদাধিকারবলে সদস্য।
২. ’’ নুরুল হক,এমপিএ,পাবনা সদস্য।
৩. ’’ আব্দুর রহমান,এমপিএ,পাবনা ’’
৪. ’’ তফিজুদ্দিন আহ্মেদ,এমপিএ,পাবনা ’’
৫. ’’ শামসুল হক আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
পদাধিকারবলে সদস্য।
(খ) রিলিফ সংক্রান্ত সাব-কমিটিঃ
১. জনাব তফিজুদ্দিন আহমেদ,এমপিএ,পাবনা সদস্য
২. ’’ সাহিউদ্দিন,এমএনএ,কুস্টিয়া ’’
৩. ’’ ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া ’’
৪. ’’ জহুরুল হক রেজা,এমপিএ,কুস্টিয়া ’’
৫. ’’ গোলাম হাসনাইন,এমপিএ,পাবনা ’’
৬. ’’ আব্দুর রব,এমপিএ,পাবনা ’’
৭. ’’ গোলাম কিবরিয়া,এমপিএ,কুস্টিয়া ’’
<003.253.728>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(গ) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাব-কমিটিঃ
১. জনাব গোলাম হাসনাইন,এমপিএ,পাবনা
২. ’’ আহসানুল্লাহ,এমপিএ,কুস্টিয়া
৩. ’’ সাহিউদ্দিন,এমপিএ,কুস্টিয়া
৪. ’’ তফিজুদ্দিন,এমপিএ,পাবনা
(ঘ) পাবলিসিটি সংক্রান্ত সাব-কমিটিঃ
১. জনাব আব্দুর রাহমান,এমপিএ,পাবনা
২. ’’ তফিজুদ্দিন,এমপিএ,পাবনা
৩. ’’ জহুরুল হক,এমএনএ,কুস্টিয়া
৪. ’’ ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া
৫. ’’ আহসানুল্লাহ,এমপিএ,কুস্টিয়া
(ঙ) শিক্ষা সংক্রান্ত সাব-কমিটিঃ
১. জনাব ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া
২. ’’ আব্দুর রাহমান,এমপিএ,পাবনা
৩. ’’ তফিজুদ্দিন,এমপিএ,পাবনা
৪. ’’ নুরুল হক,এমপিএ,কুস্টিয়া
৪.সাব কমিটিগুলো বৈঠকের মাধ্যমে নিম্নে উল্লেখিত ব্যক্তিদের নিজ নিজ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করেছেঃ-
(ক) অর্থ সংক্রান্ত সাব-কমিটি জনাব নুরুল হক,এমপিএ,কুস্টিয়া।
(খ) রিলিফ সংক্রান্ত সাব-কমিটি ’’ তফিজুদ্দিন আহমেদ,এমপিএ,পাবনা।
(গ) স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সাব-কমিটি ’’ গোলাম হাসনাইন,এমপিএ,পাবনা।
(ঘ) পাবলিসিটি সংক্রান্ত বিষয়ক সাব-কমিটি ’’ আব্দুর রাহমান,এমপিএ,পাবনা।
(ঙ) শিক্ষা সংক্রান্ত সাব-কমিটি ’’ ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া।
৫. সদস্যদের আলোচনার পরে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে,যে কোন গেরিলা দলের ভবিষ্যৎ সকল অভিযানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিএ/এমএনএ অবশ্যই দলকে পরামর্শ দেবার ক্ষেত্রে এবং দল ও অভিযানের এলাকা নির্ধারনসহ কাম্য অন্যান্য সকল কাজের সাথে সংযুক্ত থাকবেন।
৬. অভ্যর্থনা ক্যাম্পগুলোতে বর্তমানে ছেলেদের যে সমস্যাগুলোয় পড়তে হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহণ করা হয় যে সরকার কে অবশ্যই ক্যাম্পগুলোর বর্তমানের শোচনীয় অবস্থার উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭.সভাপতি ও সদ্য মনোনীত আঞ্চলিক কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ হয়।
(গোলাম কিবরিয়া) এমপিএ,
সভাপতি
<003.254.729>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন প্রশাসনিক কাউন্সিল রিলিফ
সাব-কমিটির সভার কার্যবিবণী |
বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ |
৩ অক্টোবর,
১৯৭১ |
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল,দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ এর রিলিফ সাব-কমিটির সভা ৩/১০/৭১ তারিখের দুপুর ১টায় আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপস্থিত সদস্যগনঃ
১. জনাব তফিজুদ্দিন আহমেদ,এমপিএ,পাবনা
২. ’’ সাহিউদ্দিন,এমএনএ,কুস্টিয়া ৩. ’’ ইউনুস আলী,এমপিএ,কুস্টিয়া ৪. ’’ জহুরুল হক রেজা,এমপিএ,কুস্টিয়া ৫. ’’ গোলাম হাসনাইন,এমপিএ,পাবনা ৬. ’’ আব্দুর রব,এমপিএ,পাবনা ৭. ’’ গোলাম কিবরিয়া,এমপিএ
|
সদস্য
’’ ’’ ’’ ’’ ’’ ’’ |
১. সভায় সভাপতিত্ব করার জন্য মনোনীত হন জনাব সাহিউদ্দিন,এমএনএ,কুস্টিয়া।
২.সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল,দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ এর রিলিফ সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জনাব তফিজুদ্দিন আহমেদ,এমপিএ, পাবনা, মনোনীত হয়েছন।
(সাহিউদ্দিন) এমএনএ
সভাপতি
<003.255.730>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পশ্চিম জোন প্রশাসনিক কাউন্সিলের
পাবলিসিটি সাব-কমিটির সভার কার্যবিবরণী |
বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ |
৩ অক্টোবর
১৯৭১ |
আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল,দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ এর পাবলিসিটি সাব-কমিটির সভা ৩/১০/৭১ তারিখের দুপুর ১টায় আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপস্থিত সদস্যগনঃ
১. জনাব আব্দুর রাহমান,এমপিএ,পাবনা সদস্য
২. ’’ তফিজুদ্দিন,এমপিএ,পাবনা ’’
৩. ’’ জহুরুল হক,এমপিএ, ’’
৪. ’’ ইউনুস আলি,এমপিএ,কুস্টিয়া ’’
৫. ’’ আহসানউল্লাহ,এমপিএ ’’
১.সভায় সভিপতিত্ব করার জন্য মনোনীত হন জনাব তফিজুদ্দিন আহমেদ, এমপিএ, পাবনা।
২.সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাউন্সিল,দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ এর পাবলিসিটি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জনাব আব্দুর রাহমান,এমপিএ, পাবনা,মনোনীত হয়েছেন।
(তফিজুদ্দিন আহমেদ)
এমপিএ,সভাপতি
৩/১০/৭১
<003.256.731>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
০৩/১০/৭১ এ অনুষ্ঠিত দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের ফিন্যান্স উপ-কমিটির সভার কার্য-বিবরনী বেলা ১ টায় জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরাম্ভ করা হল ।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১। জনাব আঃ রউফ চৌধুরী , এমপিএ, চেয়ারম্যান , প্রাক্তন সহকারী সদস্য
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল ,দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১
২। জনাব নুরুল হক, এমপিএ ,কুষ্টিয়া ”
৩।জনাব আঃ রহমান , এমপিএ , পাবনা ”
৪।জনাব তাফিজ উদ্দীন আহমেদ , এমপিএ , পাবনা ”
৫।জনাব শামসুল হক প্রাক্তন সহকারী
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
১।সভায় জনাব নুরুল হক , এমপিএ , কুষ্টিয়া কে সভাপতি হিসাবে মনোনীত করা হল ।
২।সর্বস্মমতিক্রমে দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের ফিন্যান্স উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে জনাব নুরুল হক ,এমপিএ,কুষ্টিয়া কে মনোনীত করা হল
নুরুল হক
সভাপতি
০৩/১০/৭১
<003.257.732>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
০৩/১০/৭১ এ অনুষ্ঠিত দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির সভার কার্য-বিবরনী বেলা ১ টায় জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরম্ভ করা হল ।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১। জনাব গোলাম হাসনায়েন , এমপিএ, পাবনা , সদস্য
২। জনাব আহসানউল্লাহ, এমপিএ ,কুষ্টিয়া ”
৩।জনাব শাহিউদ্দীন এমএনএ , কুষ্টিয়া ”
৪।জনাব তাফিজ উদ্দীন আহমেদ , এমপিএ , পাবনা ”
১।সভায় জনাব আহসানউল্লাহ, এমপিএ ,কুষ্টিয়া কে সভাপতি হিসাবে মনোনীত করা হল ।
২।সর্বস্মমতিক্রমে দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের স্বাস্থ্য উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে জনাব গোলাম হাসনায়েন , এমপিএ, পাবনা কে মনোনীত করা হল ।
আহসানউল্লাহ, এমপিএ
সভাপতি
০৩/১০/৭১
<003.258.733>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
০৩/১০/৭১ এ অনুষ্ঠিত দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের শিক্ষা উপ-কমিটির সভার কার্য-বিবরনী বেলা ১ টায় জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার কার্যালয়ে আরাম্ভ করা হল ।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১। জনাব ইউনুছ আলী , এমপিএ, কুষ্টিয়া সদস্য
২। জনাব আঃ রহমান , এমপিএ ,পাবনা ”
৩।জনাব তাফিজ উদ্দীন আহমেদ , এমপিএ ,পাবনা ”
৪।জনাব নুরুল হক, এমপিএ , কুষ্টিয়া ”
১।সভায় জনাব আঃ রহমান , এমপিএ ,পাবনা কে সভাপতি হিসাবে মনোনীত করা হল ।
২।সর্বস্মমতিক্রমে দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের শিক্ষা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে জনাব ইউনুছ আলী , এমপিএ, কুষ্টিয়া কে মনোনীত করা হল ।
আঃ রহমান, এমপিএ
সভাপতি
০৩/১০/৭১
<003.259.734>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৩০/০৯/১৯৭১ পর্যন্ত পাক্ষিক প্রতিবেদনের প্রতিলিপি গ্রহন করা হল দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ (কৃষ্ণনগর ) হতে ।
১। রিফিউজিদের অনুপ্রবেশ যথেষ্ট পরিমানে বেড়ে যাচ্ছে । যুবকদের একটা বড় অংশ মুক্তি-ফৌজে যোগদান করতে ইচ্ছুক ।
২। মুক্তি-ফৌজদের পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহন করা সত্ত্বেও রাজাকার ও শান্তি-কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন উপায়ে এলাকাবসীদের হয়রানি করে যাচ্ছে ।
৩। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কম বেশি স্বাভাবিক কিন্তু ক্যাম্পে ত্রান সামগ্রী কম পরিমানে বিতরনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে । রিফিউজিদের কোন অভিযোগ বা অসন্তোষ গুরুতর অপরাধ বলে গন্য হবে সেক্ষেত্রে অভিযোগকৃত রিফিউজিদের কার্ড বাতিলের হুমকি দিতে বিব্রতবোধ করবে না ক্যাম্প কর্মকর্তারা ।
৪। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা নেই তবে স্থানীয় জনগন ও রিফিউজিদের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে ।
৫। ক্যাম্পে ওষুধ সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে ।পেটের পীড়া ছাড়াও ভালুকা ত্রান ক্যাম্পে চিকেন পক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে ।
৬। যুবকেরা আগ্রহের সহিত অপেক্ষা করছে মুক্তি-ফৌজে যোগ দিতে ,একই সাথে প্রশিক্ষনে যোগ দিতেও প্রস্তুত ।
সুপারিডেন্ট
উপ-সচিব
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
অনুলিপিঃ
১। ব্যক্তিগত সচিব , সভাপতি
২। ব্যক্তিগত সচিব , প্রধানমন্ত্রী
৩। ব্যক্তিগত সচিব , স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
৪।সৌজন্য কপি এডিসি থেকে সি-ইন-সি
উপ-সচিব
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
<003.260.735>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
আঞ্চলিক দপ্তর , দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১
মেমো নং VII/৭/৭১/৪০৭ (৩) তারিখঃ ২৬/১০/৭১
প্রাপক ,
১।সচিব , মন্ত্রীপরিষদ
২। সচিব , সাধারণ প্রশাসন অধিদপ্তর
৩। সচিব , অর্থমন্ত্রনালয়
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিষয়ঃ ২২/১০/৭১ এ অনুষ্ঠিত সভায় দক্ষিন-পশ্চিম জোনের জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের কার্যবিবরনী প্রসঙ্গে
২২/১০/৭১ এ অনুষ্ঠিত জোনাল কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরনীর অনুলিপি জানার সুবিধার্তে পাঠানো হইলো ।
এম. শামসুল হক
সদস্য-সচিব
ও
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১
……………………………………………
দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের সভার কার্যবিবরনী ২২/১০/৭১ বেলা ১১ ঘটিকায় জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
উপস্থিত সদস্যবৃন্দঃ
১। জনাব আঃ রউফ চৌধূরী , এমপিএ কুষ্টিয়া
২। জনাব সাহিউদ্দিন ,এমএনএ , কুষ্টিয়া
৩। জনাব নুরুল হক ,এমপিএ , কুষ্টিয়া
৪। জনাব আহসানউল্লাহ , এমপিএ , কুষ্টিয়া
৫। জনাব ইউনুছ এ ইউ ,এমপিএ , কুষ্টিয়া
৬। জনাব গোলাম কিবরিয়া , এমপিএ , কুষ্টিয়া
৭। জনাব তাফিজউদ্দিন আহমেদ ,এমপিএ ,পাবনা
৮। জনাব আঃ রহমান , এমপিএ ,পাবনা ।
<003.260.736>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১. সদস্য সচিব (জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা) কাউন্সিলকে বলেছেন যে, ৫ দিনের মধ্যে বাজেট উপস্থাপনের জন্য, দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চল-১ এর জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে সম্বোধন করা, ১-১০-৭১ তারিখের FIN/5/71/221(40) বেয়ারিং নাম্বার এর একটি চিঠি গ্রহন করা হয়েছিল। তাই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছিল এবং ১৪-১০-৭১ তারিখে জমা দাওয়া হয়েছিল। জ়োনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বাজেট উপস্থাপন করতে বলায় এবং সেই সুত্রে জ়োনাল কাউন্সিলকে উপেক্ষা করে তাকে তার অধিকার অ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করায় সদস্যরা গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
২. জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের কার্যাবলী সাধারন প্রশাসন ডিপার্টমেন্টের ২৭-৭-৭১ তারিখের অনুচ্ছেদ ৩ এর ৮১০ নং অর্ডার অনুযায়ী বিবেচিত হয়েছিল এবং এটা অনুভূত হচ্ছিল যে, জ়োনাল কাউন্সিলের ক্ষমতা/কার্যাবলী অত্যধিক খর্ব করা হয়েছে।
তাই এটা সর্বসম্মতিক্রমে স্থির করা হল যে, অবস্থান পরীক্ষা করার জন্য মন্ত্রীপরিষদকে সরানো হোক এবং কাউন্সিলকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার জন্য আদেশে যথোপযুক্ত পরিবর্তন করা হোক।
৩. জ়োনাল কাউন্সিলের অফিসার এবং কর্মচারীদের নিয়োগের প্রশ্ন আলোচিত হয় এবং এটা স্থির করা হলো যে, সকল বিভাগের অফিসারদের নিয়োগ দাওয়ার ক্ষমতা জ়োনাল কাউন্সিলের থাকবে, শুধুমাত্র প্রথম শ্রেনির অফিসারদের ক্ষেত্রে কাউন্সিলের মতামত নেওয়া হবে।
(আব্দুর রউফ চৌধুরী)
এমপিএ,
চেয়ারম্যান,
জ়োনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল
দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চল-১।
<003.261.737>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-২-এর কাউন্সিলের সভার প্রস্তাবাবলীর অংশ | বাংলাদেশ সরকার দক্ষিন-পশ্চিম জোন-২ এবং সাধারন প্রশাসন বিভাগ | ২৭ অক্টোবর,
১৯৭১ |
রেজ়লিউশন নং ১১ এবং ১৯
১১. ঠিক করা হলো যে, বাংলাদেশের সামগ্রিক মুক্তি সংগ্রাম তত্ত্বাবধানের জন্য একটি যুদ্ধ কাউন্সিল গঠন করা হবে এবং প্রতিটি জোনে একটি জোনাল, প্রতিরক্ষা উপ কমিটি গঠন করা হবে।
১৯. স্থির করা হয় যে, বাংলাদেশের এখনো স্বাধীন না হওয়া অঞ্চল গুলোতে কোন মুক্তি বাহিনীকে অপারেশনে পাঠানোর আগে এমএনএ, এমপিএ এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার সাথে পরামর্শ করা হবে।
………………………..
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাধারন প্রশাসনিক দপ্তর
মেমো নং ১৭৫৭ তারিখঃ ২৭.১০.৭১
বরাবর
সচিব,
প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়,
বাংলাদেশ সরকার.
নিম্ন সাক্ষরিত সংযুক্তিটি আপনার জ্ঞ্যতার্থে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ২৬.৯.৭১ তারিখে অনুষ্ঠীত দক্ষিন-পশ্চিম অঞ্চল-২ এর জোনাল কাউন্সিলের মিটিং এ গৃহীত রেজলিউশন ১১ এবং ১৯ এর কপি সহ প্রেরনের উদ্দেশ্য হস্তান্তর করা হলো ।
(ওয়ালীউল ইসলাম)
সহকারী সচিব (সি.এস.)
সাধারণ প্রশাসন বিভাগ
সংযুক্তিঃ উপরের অনুরুপ
<003.262.738>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
দক্ষিন-পশ্চিম-১ জোনাল কাউন্সিল সদস্যদের ভ্রমণ ও দৈনিক ভাতা প্রদানের নিয়মাবলী সম্পর্কে সরকারের প্রশাসন বিভাগীয় সচিবকে লিখিত জোন কর্মকর্তার চিঠি। | বাংলাদেশ সরকার
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১ |
২৮ অক্টোবর,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জোনাল সেক্রেটারি দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১
হইতেঃ এম. সামসুল হক,
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১।
বরাবরঃ সচিব,
সাধারন প্রশাসন বিভাগ,
গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
বিষয়ঃ জোনাল কাউন্সিলের সদস্যদের টি.এ./ ডি.এ. প্রদান পদ্ধতি
এমএনএ এমপিএ গণ জোনাল কাউন্সিলের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য তাদের টি.এ./ ডি.এ. দাবি করছেন। কিন্তু উপরে উল্লেখিত উদ্দেশ্যে তাদেরকে কি পরিমান টি.এ./ ডি.এ. প্রদান করা হবে সে সম্পর্কে কোন সরকারি নির্দেশনা নেই। এটা অনুভুত হয় যে, এমএনএ/এমপিএ গণের অফিসিয়াল সফরে রেল/সরক/আকাশ পথে যাত্রা এবং অবস্থানের জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া থাকা উচিত। যেমন জোনাল কাউন্সিলের সদস্যদের টি.এ./ ডি.এ. প্রদান সম্পর্কে নিম্ন লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় সচ্ছতা থাকা জরুরীঃ-
১)এমএনএ/এমপিএ গণ জোনাল কাউন্সিলের মিটিংয়ে উপস্থিত থাকার জন্য টি.এ./ ডি.এ. পাওয়ার অধিকারী কিনা।
২)জোনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের এরূপ টি.এ. বিল এ প্রতিসাক্ষরকারী নিয়ন্ত্রণকারী অফিসারের পদবী।
৩)সদস্যদের সফর সংক্রান্ত প্রক্রিয়া ও রেল/সরক/আকাশ পথে যাতায়াতের হার এবং অবস্থানের ডি.এ.।
এই মর্মে, উপরে উল্লেখিত বিষয়ে সরকারের প্রয়োজনীয় মতামত ও ব্যাখ্যার জন্য নিম্নসাক্ষরিত ব্যক্তির সাথে অতি দ্রুত যোগাযোগ করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
এসডি/-এম. শামসুল হক
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১।
মেমো নং 413/1 (2) তারিখ ২৮.১০.৭১
(১)প্রয়োজনীয় তথ্য এবং পদক্ষেপের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ বিভাগের সচিবকে কপি পাঠানো হয়েছে।
(২)প্রয়োজনীয় তথ্য এবং পদক্ষেপের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার সচিবকে কপি পাঠানো হয়েছে।
এম. শামসুল হক
জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তা,
দক্ষিন-পশ্চিম জোন-১।
<003.262.739>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
চতুর্থ অধ্যায়
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বৈদেশিক সম্পর্ক
<003.262.740>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.263.741> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.263.742> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.263.743> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কতৃক ভারতীয় রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিত পত্র | বাংলাদেশ সরকার | ২৪ এপ্রিল,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশেরঅস্থায়ীরাষ্ট্রপতিকতৃকভারতীয়রাষ্ট্রপতিরকাছেপত্র
এপ্রিল২৪,১৯৭১
সৈয়দনজরুলইসলাম
মুজিবনগর
গনপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশেরসরকারের
অস্থায়ীরাষ্ট্রপতি
বরাবর,
রাস্ত্রপতি,ভারতপ্রজাতন্ত্র
নয়াদিল্লি
মহাত্নন,
১৯৭১সনের২৬মার্চ,স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশসরকারেরইশতেহারঅনুযায়ীজনবশেখমুজিবররহমানকেপ্রধানকরেসরকারগঠনকরাহয়।
স্বাধীনতার ইস্তেহার,আইন প্রয়োগের নির্দেশাবলী এবং মন্ত্রি পরিষদ সদস্যের তালিকার, যথাক্রমে ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ অক্ষরে চিহ্নিত অনুলিপি আপনার সদয় বিবেচনার জন্য সংযুক্ত হইল ।
বাংলাদেশ সরকার , ২৬ মার্চ ’৭১ এর পুর্বে পুর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ভূখন্ডের শাষন এবং আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে,এজন্য দেশ পরিচালনায় আনর্জাতিকভা স্বিকৃত সকল নিয়ম-নিতী গ্রিহীত হয়েছে ।
ঐতিহ্যগত ভাবে বংলাদেশ এবং ভারতের জনগনের ভাতৃত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কএর দৃষ্টিকোন থেকে আমি মাননীয় সরকার কে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কে অতি সত্বর স্বিকৃতি দানের অনুরোধ জানাচ্ছি ।বাংলাদেশ সরকার দু দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী এবং কুটনিতিক বিনিময় ভবিষ্যতে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্কআরো দৃঢ় করবে।
অতএব মহাত্নন আমাদের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধীকার দিয়ে বিবেচনা করে বাধিত করবেন।
(স্বাক্ষর)সৈয়দ নজরুল ইসলাম
অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট
(স্বাক্ষর)খন্দকার মোস্তাক আহমেদ
বাংলাদেশ সরকারের সীলমোহর পররাষ্ট্র মন্ত্রী
এ স্বাধীনতার ইস্তেহার
মুজিবনগর ,বংলাদেশ সরকার
তারিখ ১০ এপ্রিল
যখন সংবিধান প্রণয়নের নিমিত্তে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য বানলাদেশে ৭ ডিসেম্বার ’৭০ হতে ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । এবং
যখন বাংলাদেশের জনগন সেই নির্বাচনে ১৬৯ জনের মধ্য ১৬৭ জন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধী নির্বাচিত করেন এবং
যখন জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনপ্রতিনিধিদের সংবিধান প্রনয়নের উদ্দেশ্যে তলব করেন
এবং
যখন তলবকৃত সভা বিধি বহির্ভূত ও অবৈধ ভাবে অনির্দিটকালের জন্য মুলতুবি করা হয়
এবং
যখন তারা তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে বাংলাদেশের প্রতিনিধীদের অস্বিকার করে পাকিস্থানিরা বিশ্বাষঘতকতা করে একটি নীতি বহির্ভুত যুদ্ধ শুরু করে
এবং
যখন এই বিশ্বাসঘাতকতার কারনে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের অসংবদিত নেতা দেশের মানুষের আইনসিদ্ধ স্বাধীকার প্রতিষ্টার লক্ষে ২৬ শে মার্চ’৭১ ঢাকায় স্বাধীনতার ঘোষনা দেন এবং জনগনগন কে উদ্বুদ্ধ করেন দেশেরসম্মান এবং স্বকিয়তা বজায় রাখার জন্য
এবং
যখন পাকিস্তানিরা একটি নির্মম ও বর্বর যুদ্ধ পরিচালনা করেছে এবংএখনো অসংখ্য সাধারন নিরস্ত্র বাংগালীর উপর অকল্পনীয় অত্যাচার এবং গনহত্যা চালাচ্ছে
এবং
যখন পাকিস্তান সরকা্রের সৈন্য সমাবেশ, অনৈতিক যুদ্ধ,গনহত্যা এবং অন্যান্য নিপিড়নমুলক কার্যক্রমে বাংলাদেশের নির্বাচিত পতিনিধিদের একত্রিত হয়ে সংবিধান প্রনয়ন এবং সরকার গঠন অসম্ভব করে তুলেছে
এবং
তখন বাংলাদেশের জনগন তাদের অকুতভয় নির্ভিক সংকল্পবদ্ধভাবে বিপ্লব দ্বারা বাংলাদেশের ভুখন্ডের উপর তাদের কার্যকর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করেছে
আমরা বাংলাদেশের জনগনের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসাবে জনগনের ম্যান্ডেট দ্বারা সন্মানিত হয়ে মনোবল সমুন্নত রেখে নিজেদের একটিসাংবিধানিক সংসদ প্রতিষ্ঠা করেছি ।
এবং
মিলিত অভিমতের মাধ্যমে জনগনের সমঅধিকার ,মর্যাদা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নিশ্চয়তা বিধান করলাম
আমরা বাংলাদেশ কে গনপ্রজাতন্ত্র দ্বারা শাসিত ঘোষনা করলাম এবংইতমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর স্বাধীনতার ঘোষণা কে প্রতিষ্ঠিত করলাম।
এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে সম্মতি জানাচ্ছি যে যতদিন সংবিধান প্রনীত নাহয় ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পজাতন্ত্রের রাস্ত্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ রাষ্ট্রপতি পদে বহাল হবেন।এবং
প্রজাতন্ত্রের স্বশত্র বাহীনির সর্বময় কর্তৃত্ব থাকবে রাস্ত্রপতির হাতে ।
তিনি্ ক্ষমা প্রদান এবং সকল নির্বাহি ও নিয়ম কানুন প্রবর্তনে ক্ষমতা প্রোয়গ করবেন ।
তাঁর ক্ষমতা থাকবে প্রয়োজন মনে করলে প্রধান্ মন্ত্রি নিয়োগ দিবার এবং অন্যান্য মন্ত্রি নিয়োগের ।
তাঁর খাজনা গ্রহন এবং অর্থ ব্যয়ের ক্ষমতা থাকবে ।
তিনি সংসদ অধিবেশন আহ্বান এবং মুলতুবী ঘোষনার ক্ষমতা প্রাপ্ত থাকবেন এবং
বাংলাদেশ জনগনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক আইনানুগ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু তিনি করবেন ।
আমরা বাংলাদেশের জনগনের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধীগন আরো সংকল্প ব্যক্ত করছি, যখন কোন কারনবশত রাস্ত্রপতি থাকবেন না বা তিনি অপারগ হবেন কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হতে বা কার্যক্রম পরিচালনা করতে , সেক্ষেত্রে ,উপ রাষ্ট্রপতি রাস্ট্রপতির সকল ক্ষমতা, দ্বায়িত্ব এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
আরো সংকল্প ব্যাক্ত করছি জাতির সদস্য হিসাবে আমাদের উপর যে দ্বায়িত্ব অর্পিত হয়েছে তা সঠিকভাবে পর্যবেক্ষন করব এবং তা সম্পাদন করব জাতিসংঘের নীতি অনুসারে।
আরো সংকল্প ব্যাক্ত করছি যে স্বাধীনতার ইস্তেহার ২৬ মার্চ ’৭১ হতে কার্রকর হিসাবে বিবেচিত হবে।
আমরা আরো ঘোষনা করছি যে ইতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমাদের সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে প্রফেসর ম ,ইউসুফ আলীকে নিয়োগ করেছি রাস্ট্রপতি এবং উপ রাষ্ট্রপতি র শপথ পাঠ এবং দ্বায়িত্ব অর্পনের ।
( স্বাক্ষর)ম,ইউসুফ আলী
বাংলাদেশের সাংসদ দ্বারা খমতাপ্রাপ্ত
<003.263.744>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বি. অবিরাম আইন প্রয়োগকারী আদেশ
মুজিবনগর
তারিখ: ১০ই এপ্রিল, ১৯৭১
আমি, সাইদ নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রপতি এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ১০ ই এপ্রিল, ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষনা দ্বারা আমার উপর অর্পিত ক্ষমতা বলে, এতদ্বারা যেসব আদেশ দেয়া হয় যা ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ কার্যকর করা হয়, পূর্বোক্ত ঘোষনা সাপেক্ষে বজায় থাকে যা অনুবর্তী পরিবর্তনের সংগে বলবৎ করা প্রয়োজন হতে পারে, যা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাশক্তির দ্বারা এবং সকল সরকারি কর্মকর্তা – বেসামরিক, সামরিক, আইনজীবী, কূটনীতিক – যারা শপথ গ্রহণ করে চাকরীর ক্ষেত্রে তাদের অফিসে শর্ত ও অবস্থা সাপেক্ষে বাংলাদেশের প্রতি সব ধরনের আনুগত্য অব্যাহত রাখবে যা তাদের দ্বারা উপভুক্ত হবে এবং সকল জেলা জজ ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে এবং সকল কূটনীতিক প্রতিনিধি অন্যত্র তাদের এখতিয়ারের মধ্যে সব সরকারি কর্মকর্তাদের বাইয়্যত গ্রহণের ব্যবস্থা করবে।
এই আদেশ ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ থেকে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।
(sd) সাঈদ নজরুল ইসলাম
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
<003.264.745> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
দিল্লীতে বাংলাদেশ তথ্য কেন্দ্র স্থাপন সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখিত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি। | বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
|
২৬ এপ্রিল, ১৯৭১।
|
খন্দকার মোশতাক আহমেদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মুজিবনগর,
২৬ শে এপ্রিল, ১৯৭১
বিনীত মহানুভব,
আমি বিনীত ভাবে বলতে চাই যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নয়াদিল্লীতে জনার কে. এম. সেহাবউদ্দিনকে প্রধান এবং জনাব আমজাদুল হককে সংবাদ সহদূত করে একটি তথ্য কেন্দ্র উন্মোচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে একটি পূর্ণক্ষেত্র মিশন খোলার আগ পর্যন্ত। বাংলাদেশ সরকারের তাদের উপর পূর্ণ বিশ্বাস এবং আস্থা রয়েছে।
আমি কৃতজ্ঞ হব যদি ভারতীয় সরকার জনাব কে. এম. সেহাবউদ্দিনকে এবং জনার আমজাদুল হককে নয়াদিল্লীতে একটি তথ্যকেন্দ্র স্থাপনা এবং পরিচালনার জন্য সকল সুযোগ সুবিধা ও সংগতি প্রদান করে। আমি নিশ্চিত যে ভারতীয় সরকার তাদের সকল প্রয়োজনীয় কূটনীতিক বিশেষাধিকার এবং দায়মুক্তি মঞ্জুর করবে।
অনুগ্রহ পূর্বক মহানুভব আমার সর্বোচ্চ বিবেচনার আশ্বাস গ্রহণ করুন।
( খন্দকার মোশতাক আহমেদ)
পররাষ্ট্রমন্ত্রী
নং. পি- ৫/২৮/৭১
মহানুভব শ্রী শরণ সিং
পররাষ্ট্র মন্ত্রী
ভারত সরকার
নয়াদিল্লী
(মোনোগ্রাম)
জনাব কে. এম. সেহাবউদ্দিন, বি. এস. এফ. বাংলাদেশ তথ্যকেন্দ্র, নয়াদিল্লী এর প্রধানকে নকল প্রেরণ করা হবে।
<003.265.746> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পেইজ ৭৪৬
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রী কর্তৃক বাংলাদেশের পক্ষে আনুগত্য প্রকাশকারীদের উদ্দেশ্যে লিখিত চিঠি।
|
বাংলাদেশ সরকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
|
১৩ ই জুন, ১৯৭১।
|
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
জয় বাংলা
মুজিবনগর
১৩ ই জুন, ১৯৭১
আপনি নিঃসন্দেহে অবগত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংরক্ষণের সংগ্রাম একটি নতুন এবং সংকট পূর্ণ দশায় প্রবেশ করিতেছে। বর্ধিত সামরিক কার্যাবলীর সাথে শত্রুবাহিনীকে সামনে দিনগুলোতে তীব্র অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে। এটা এখন প্রয়োজন একটি চূড়ান্ত অভ্যুত্থানের জন্য সকল প্রচেষ্টা একত্রীকরণ।
আমরা খুবই উদ্বিগ্ন এটা জানার জন্য আপনারা সবাই কোথায় অবস্থান করছেন এবং কিভাবে আপনি নিঃসন্দেহে কঠিন এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করছেন। যদি আপনার পরিবার তাদের আসল বাড়ি থেকে সরে যায়, তাদেরকে সর্বোত্তম বাসস্থান দেয়া হয়েছে যতটা বিদ্যমান পরিস্থিতির অধীনে দেয়া যেতে পারে।
এইসব এবং আরও অনেক বিষয় আপনার কল্যাণ সম্পর্কে এবং আপনার পরিবার সম্পর্কে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নিত্য উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। আমরা কষ্ট কমাতে চাই যতটা পারি, বিজয় অর্জনের জন্য আমরা আমাদের সমস্ত সময় ও শক্তি উৎসর্গ করার পূর্বে।
আমরা কৃতজ্ঞ হব যদি আপনি আমাদের আপনার এবং আপনার পরিবার সম্পর্কে রীতি অনুসারে আবদ্ধ ভাবে প্রাসঙ্গিক তথ্য দেন। আমরা আরও আগ্রহী হব রীতি অনুসারে আপনার বায়োডাটা পেতে।
বার্তা বাহক যিনি এই চিঠি আপনার নিকট বহন করবে আবার আপনার নিকট থেকে উত্তর নিয়ে আসবে যাতে করে আমাদের ইতিহাসের এই সংকটময় সময়ে আপনার মেধা, অভিজ্ঞতা ও শ্রম বাংলাদেশের কাজে লাগানোর জন্য আমরা অতি দ্রুত আয়োজন করতে পারি।
ধন্যবাদান্তে
বিনীত
জনাব মোশতাক আহমেদ
পররাষ্ট্র, নীতি এবং সংসদীয় কার্যাবলী
<003.266.747> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.266.748> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কতৃক যুক্ত্রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের গণহত্যায় সাহায্য না করার আবেদন | দি হিন্দুস্তান টাইম | ২৪জুন
১৯৭১ |
গণহত্যায় অবদান রাখবেন না
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলামের আবেদম
জুন ২৩; ১৯৭১
আজ বাংলাদেশ সরকার এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহের প্রতি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি নিক্সনকে পাঠানো একটি টেলিগ্রামে জনাব সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণ এ অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি জানতে পেরে প্রচন্ড ব্যথিত এবং ক্ষুদ্ধ।
তিনি চিহ্নিত করে দেখান পাকিস্তান তাদের অস্ত্রাগারের সকল অস্ত্র এমনকি ত্রাণ সরবরাহের জন্য যে জলযান দেয়া হয়েছে, সবকিছুই গণহত্যার জন্য ব্যবহার করছে এবং বলেন “এখন একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বিবেক এবং তাদের জাতীয় স্বার্থের প্রতি আবেদন করি, তারা যেন গণহত্যা , উচ্ছেদ এবং এই দরিদ্র রাষ্ট্রের দুর্লভ সম্পদের প্রতি ধ্বংসযজ্ঞে অবদান না রাখে।”
বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র কার্যালয়ের একজন মুখপাত্র এই নতুন অস্ত্রচুক্তিকে “বাংলাদেশের রক্তাক্ত জনগণের প্রতি কঠিন আঘাত” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, পাকিস্তানকে যা ই সাহায্য দেয়া হোক না কেন স্বাধীনতা সংগ্রাম নিরলসভাবে চলবে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর বিভিন্ন মালামাল এবং অতিরিক্ত যন্ত্রপাতিও ইতিমধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে সরবরাহ করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে।
পররাষ্ট্র কার্যালয়ের মুখপাত্র বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এমন কাজের ফলে মুক্ত বিশ্ব তথা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের জনমগনের মোহমুক্তি ঘটবে। তিনি আরও বলেন, “একটি ভিনদেশী সামরিক জান্তা কর্তৃক নৃশংসতা ও রক্তগঙ্গার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বের স্বাধীনতাকামী মানুষের উত্তাল কণ্ঠস্বরের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের এসব কাজ স্পষ্টত অবজ্ঞা প্রদর্শন করে।”
১৯৫১ সাল থেকে পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের পটভূমি বর্ণনা করতে যেয়ে তিনি আরও মনে করিয়ে দেন যে, পাকিস্তান ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩,০০০ মিলিয়ন ডলার অর্থসাহায্য পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। শুধুমাত্র ১৯৬৪ থেক ১৯৬৫ সময়কালেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্যের পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,০০০ মিলিয়ন ডলারের মত। তিনি বলেন যে, এই বিশাল সামরিক সাহায্যের পুরোটাই বাঙালীর সগ্রামের করার জন্যই ব্যবহার করা হচ্ছে।
মুখপাত্র আরও বলেন, এমন তথ্য পাওয়া গিয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে নিম্নবর্ণিত অস্ত্র সরবরাহের সম্মতি জানিয়েছেঃ প্রায় ৩০০ সশস্ত্র সৈনিক ক্যারিয়ার, চারটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট, ছয়তি এফ-১০৪ জঙ্গী বিমান এবং সাতটি বি-৫৭ বোমারু বিমান।
তিনি বলেন “বর্তমান এই অস্ত্র সরবরাহ এটাই প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষয়প্রাপ্র পাকিস্তানের অস্ত্রাগার পরিপূর্ণ করতে চায়।”
তিনহি আরও যোগ করেন যে, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের নিকট আবেদন করছে জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে জন্য, পাকিস্তানে সকল যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করতে এবং অবিলম্বে পাকিস্তানে পরবর্তী সকল অস্ত্র এবং মালামাল সরবরাহ বন্ধ করার জন্য।
(দ্য হিন্দুস্তান টাইমস, নয়াদিল্লী- জুন ২৪, ১৯৭১)
<003.267.749> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইসলামী সম্মেলনে
প্রদত্ত টেলিগ্রাম |
দি স্টেটসম্যান | ২৫ জুন,
১৯৭১ |
ইসলামের নামে গণহত্যা
বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ২৪ জুন,১৯৭১ তারিখে জেদ্দায় অনুষ্ঠিত ইসলামিক কনফারেন্সের বিভিন্ন সদস্যের নিকট পাঠানো টেলিগ্রাম সংক্রান্ত প্রেস রিপোর্ট
বাংলাদেশে চলমান গণহত্যা তাৎক্ষনিক ভাবে বন্ধ করতে সংস্থাটির প্রভাব ও ক্ষমতা ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জেদ্দায় ইসলামিক কনফারেন্স এর সাধারণ সম্পাদক টেংকু আবদুর রহমানের নিকট আজ একটি টেলিগ্রাম পাঠিয়েছেন।
টেলিগ্রামের অনুলিপি সচিবালয়ের সকল সদস্যদের নিকট পাঠানো হয়েছে,তার মধ্যে রয়েছেন সৌদি আরবের বাদশা ফয়সাল,শেখ সাব্বান এবং শেখ বিন বাজ।
জনাব ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে সমর্থন দেবার জন্য তাদের অনুরোধ করেছেন এবং তিনি হত্যা,নির্যাতন,মসজিদ অপবিত্রকরন,ইমামদের হত্যাকাণ্ড এবং পবিত্র কোরআন পোড়ানোর বিষয় উল্লেখ করেছেন।
ইউএনআই যোগ করেছেন:টেলিগ্রামটি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর করা ধ্বংসযজ্ঞের বিবরণ দিয়েছে এবং তিনি বলেন যে “ পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ নেতারা মানব ইতিহাসের জঘন্যতম অপরাধ করতে বদ্ধ্যপরিকর অন্যদিকে তারা নিজেদের দোষ ইসলামের পবিত্র নামের আড়ালে এড়ানোর চেষ্টা করছে ”।
(দা স্টেটস্ম্যান,নিউ দিল্লী-জুন ২৫,১৯৭১)
<003.268.750> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমিসম্পর্কে বাংলাদেশ মিশনের প্রেস এটাচির সাংবাদিক সম্মেলন | ন্যাশনাল হেরাল্ড | ৪ জুলাই,
১৯৭১ |
পাকিস্তান তার ওয়াটারলু পাবে বাংলাদেশে
৩ জুলাই,১৯৭১ তারিখে বিদেশী এবং ভারতীয় সাংবাদিকদদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রেস এটাচে জনাব আমজাদুল হক কর্তৃক প্রদত্ত বিবৃতি
জনাব আমজাদুল হক,বাংলাদেশের প্রেস এটাচে,আজ বিদেশী এবং ভারতীয় সাংবাদিকদের বলেন যে বাংলাদেশ হচ্ছে সমস্ত জনগোষ্ঠীর সংকল্প এবং ইচ্ছার প্রকাশ।তিনি বলেন “কষ্টার্জিত যুদ্ধ এবং বীরত্বপূর্ণ প্রতিরোধের মাধ্যমে ৭.৫ কোটি মানুষ নিয়ে গঠিত এই নতুন দেশ,যা কে পাকিস্তানের সকল সৈন্য মিলেও হারাতে পারবে না।এটি জনগনের প্রায় সর্বসম্মত ভোটের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং এর বৈধতা,বাস্তবতা এবং জনপ্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না ’’।
জনাব হক,যিনি তিন মাস পূর্বে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের পরিবর্তন করেছিলেন স্মরন করেন যে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ সরকার গঠনের সময় বলেছিলন যে পাকিস্তান মৃত এবং মৃতদেহের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়েছে।জটিল আলোচনা যার কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল সেই সম্পর্কে তার দেয়া প্রদত্ত বিবৃতি জনাব আহমেদের সারসংক্ষেপ কে সমর্থন করে।ইয়াহিয়া,ভূট্টো এবং তাদের পশ্চিম পাকিস্তানী সামরিক জান্তার এজেন্টদের পক্ষ থেকে বিশ্বাসঘাতকতা,ছলনা,গণতন্ত্র বাতিলের ইতিহাস এটা।আলোচনা চলাকালীন কোন সময়ই গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে পাকিস্তানের একতা রক্ষা করার কোন উদ্দেশ্য তাদের ছিল না।এটা পরিকল্পিত ভাবে গণহত্যা,গণতন্ত্র ধ্বংস এবং জনগণের ইচ্ছার দমন।
জনাব হক যোগ করেন যে “ এরকম ঠাণ্ডা মাথায় গণতন্ত্র ধ্বংস খুব কমই ঘটেছে।কিন্তু বাংলাদেশ অসংখ্য শহীদের রক্ত দ্বারা তৈরি যা কখনই পশ্চিম পাকিস্তানের তৈমুরদের দ্বারা ধ্বংস হবে না।এটি থাকার জন্যেই এসেছে।কোন শক্তি বাংলাদেশ কে ধ্বংস করতে পারবে না
গত ২৩ বছরে বাংলাদেশের প্রতি হওয়া বৈষম্যের ইতিহাস বর্ননা করার সময় বাংলাদেশের প্রেস এটাচে বলেন যে ৯০% ব্যাংক ডিপোসিট পশ্চিম পাকিস্তানীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং পাকিস্তানের মোট পূঁজির প্রায় ৮৫% শুধুমাত্র করাচীতেই কেন্দ্রীভূত এবং বেসরকারি বিনিয়োগের প্রায় ৮৭% পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি পরিবারের একচেটিয়া অধিকারভুক্ত।মোট জাতীয় বাজেটের ৫০% প্রতিরক্ষার জন্য বরাদ্দ কিন্তু সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষার জন্য ১০%ও ব্যয় করা হয় না।অন্য ভাবে বলা যায় যে বাংলাদেশের জনগণ রাজনৈতিক ভাবে,অর্থনৈতিক ভাবে,প্রশাসনিক ভাবে এবং সামরিক দিক দিয়ে দাসত্বাধীন এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মুক্তি প্রিয় জনগণ সেভাবে থাকাকে চরম ভাবে ঘৃণা করে।
জনাব হক বলেন যে পাকিস্তানের ভেতরের অপশক্তি যা পাকিস্তান কে শাসন করে মূলত জন-বিরোধী।তারা সইন্যবাহিনি,বেসামরিক আমলাতন্ত্র এবং একচেটিয়া অধিকার ভোগী পূঁজিপতিদের ষড়যন্ত্রের অংশ।এই শক্তিগুলো একসঙ্গে কাজ করে এবং গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে শক্তিশালী হতে দেয় না।
<003.268.751> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ইয়াহিয়ার সত্য প্রকাশ
জনাব হক বলেন, তখন ইয়াহিয়া খান আইয়ুব খান থেকে ক্ষমতা হস্তগত করেছিলেন সামরিক জান্তার কাছ থেকে গণতন্ত্রকে উদ্ধার করার জন্য। আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক আইন প্রতিষ্ঠার জন্য এগিয়ে এসেছিলো। গত ৭ ডিসেম্বর থেকে এই বছরের ১৭ জানুয়ারী পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ কেবল একটি সক্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে সর্ব সমর্থিত হয় নি বরং পার্লামেন্টেও তাদের আধিপত্য সমগ্র পাকিস্তানে বেশি ছিলো।
সর্বশেষ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর বিপুল ভোটে জয় পশ্চিম পাকিস্তানের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহের ভাটা ফেলতে বড় ভূমিকা পালন করে।
জনাব হক আরো বলেন, “এটি এখন পরিষ্কার যে ইয়াহিয়া খানের পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যা দূরীকরণের কোন পরিকল্পনাই ছিলো না বরং তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী নিরীহ মানুষদের দমনের দিকেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।”
যখন শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোগীদের সাথে ইয়াহিয়া খানের শান্তিপূর্ণ ভাবে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আলোচনা চলছিলো তখনই ২৫ মার্চের রাতে বাংলাদেশের নিরস্ত্র অসহায় মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের প্রশিক্ষিত সৈন্যরা অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এটি বেঈমানীর মত ঘৃণ্য কাজ ব্যতিত কিছু নয়।
“বাংলাদেশ এখন একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি সরকার দেশের সামগ্রিক বিষয়াদি দেখাশোনা করছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই মুহুর্তে একদল ব্যর্থ সৈনিক ছাড়া কিছুই নয়। সুতরাং তারা যত দ্রুত দেশ ছাড়বে ততই আমাদের এবং তাদের উভয়ের জন্য মঙ্গল।
পিন্ডির যুদ্ধ
“আমাদের দেশ এখন যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি সমগ্র দেশের প্রতিটি মানুষের যুদ্ধ। আমাদের বর্তমান সংগ্রাম এখন মুক্তির সংগ্রাম। রাশিয়া, আলজেরিয়া, চায়না, কিউবার সেই স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী মানুষগুলোর সাথে আমাদের এখন কোন পার্থক্য নেই। ১৮ শতকে আমেরিকান মানুষের করা স্বাধীনতার জন্য সেই আন্দোলনের সাথেও আমাদের কোন পার্থক্য নেই।
বাংলাদেশ আজ রক্তাক্ত। প্রচন্ড কষ্ট এবং যন্ত্রণায় এদেশের মানুষ আজ চিৎকার করে কাঁদছে। মানব ইতিহাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া এমন হত্যাযজ্ঞের নজির বিশ্ববাসী খুব কমই দেখেছে।
এই দূর্ভাগা মাতৃভূমির শহর বন্দরের মাটি আজ রক্তাক্ত। বাঙ্গালীদের জন্য এটি এখন একটি বাঁচার লড়াই। এটি এমন একটি যুদ্ধ যা আমরা কখনো চাই নি। এটি এমন একটি যুদ্ধ যা আমাদের উপর পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক জোর করে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
এখন আমরা আমাদের যুদ্ধ সাহস সংকল্প ও সহনশীলতার সাথে পরিচালনা করে যাচ্ছি। আমাদের সাহসী মুক্তিফৌজ নিজেদের যোগ্যতা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছে।
<003.268.752> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
দেশ মাতৃকার জন্য নিজেদের আত্মার সাথে এই যুদ্ধকে গেঁথে নিয়েছে তারা। মুক্তিফৌজ ইতোমধ্যেই শত্রুর বিশালত্বকে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত যোদ্ধা রয়েছে। আমাদের এখন প্রয়োজন অস্ত্র ও গোলা বারুদ সাহায্য। যদি আমরা আধুনিক অস্ত্র সাহায্য ঠিকমত পেতে পারি, তাহলে পাকিস্তানি হানাদাররা বুঝতে তারা কাদের সাথে লাগতে এসেছে।
ইসলামের বিরুদ্ধে
ইসলামিক দেশ হওয়ার ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করে জনাব হক বলেন, “আমরা জানি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক সরকার মুসলিম দেশগুলোতে আমাদের ব্যাপারে ইসলামের নামে মিথ্যে ও বানোয়াট গল্প ছড়াচ্ছে। কিন্তু আমরা আশা করি মুসলিম বন্ধু রাষ্ট্রগুলো তাদের এই মিথ্যাচারে কান দেবে না। বাংলাদেশ একটি নিশ্চিত স্বাধীন দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে সুতরাং এই মুহুর্তে নতুন করে কোন রাজনৈতিক সমাধানে যাওয়ার প্রশ্ন আসে না। ইসলামের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের সাথে একত্রে থাকার কোন প্রশ্নও আসে না। পাকিস্তানি রা ইসলামের নাম ব্যবহার মুসলিম দেশগুলোকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আমি তাদের জিজ্ঞাস করতে চাই, একজন নিরীহ মুসলিম কে কিভাবে আরেকজন মুসলিম নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে? ইসলামের নামে কিভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের মুসলিম সৈন্য একজন মুসলিম নারীকে ধর্ষন করতে পারে? কেন পাকিস্তানের মুসলিম সৈন্যরা পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম নারীদের ধর্ষণ এবং মুসলিম ডাক্তার, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি এবং ব্যবসায়ীদের হত্যা করছে? এটা কি সেই ইসলাম যার উপর পাকিস্তান সরকার নির্ভর করছে? মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আমাদের অনুরোধ যে আপনারা সামনে এগিয়ে আসুন এবং ইসলামের নামে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর পশ্চিম পাকিস্তানিদের এমন নির্মম হত্যাযজ্ঞের তীব্র প্রতিবাদ করুন।
পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের এই যুদ্ধ কেবল বাংলাদেশের মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ নয়। বরং সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার শান্তির উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে।
মানবাধিকার কমিশনের উপর হতাশা প্রকাশ করে জনাব হক আরো জিজ্ঞেস করেন, যখন সাড়ে সাত কোটি মানুষ স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য লড়ছে তখন মানবাধিকার কমিশনগুলো কি করছে? যদি তারা কিছু নাই করতে পারে তাহলে এই ধরণের সংস্থার প্রয়োজন কি? তাহলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংহতির প্রয়োজনই বা কি?
ভারতীয় সহায়তা
বাংলাদেশের মানুষের উপর গভীর আস্থা প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমরা একটি জেতা যুদ্ধ করছি কারণ আমরা কোন দোষ করি নি। আমরা আমাদের লক্ষ্য জানি এবং আমাদের সাহসী মুক্তিফৌজ প্রয়োজনে বছরের পর বছর যুদ্ধ করে যাবে যতদিন না আমাদের বিজয় অর্জিত হয় এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই দেশ থেকে নির্মূল হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য ও আস্থা প্রয়োজন। নৈতিক এবং যান্ত্রিক দুটোই। বিশ্বের সকল দেশের কাছে আমাদের অনুরোধ, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম আত্মপ্রকাশ করতে আমাদের সাহায্য করুন। আমরা সকল জাতির কাছে আমাদের স্বীকৃতি প্রদানের আকুল আবেদন জানাই। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় জনগণের নৈতিক সমর্থনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৬০ লক্ষ উদ্বাস্তু যারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতীয় উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন বাংলাদেশ, ভারতের জনগণ ও সরকারের কাছে এই বড় সংখ্যক উদ্বাস্তু মানুষের বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করার জন্য আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে
<003.268.753>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যে ৬ মিলিয়ন শরণার্থী আশ্রয়ের জন্যে ভারত পৌঁছেছে তাদের জন্যে গভীর উদ্বেগপ্রকাশ করে তিনি বলেন, ”ভারত সরকার এবং তাদের জনগন বাংলাদেশের অসহায় শরণার্থীদের জন্য যা করছে তার জন্য তারা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। ভারতের একার পক্ষে এটি মোটেও সহজ কাজ নয়”। তিনি দুর্ভোগে পড়া মানুষের কাছে দ্রুত ত্রান পাঠানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।
পাকিস্তানে আমেরিকান অস্ত্র বিক্রির শুরুর কথা উল্লেখ করে জনাব হক বলেছেন যে,
“এর ফলে ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষের ঢেউ বয়ে গেছে। আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে অবিলম্বে পাকিস্তানে অস্ত্র প্রেরণ বন্ধ করা উচিত বলে তাগাদা দিচ্ছি এবং বাংলাদেশে কোন কুকর্ম ও গনহত্যা চালানোর জন্য আর কোন সামরিক দ্রব্য পাকিস্তানে তৈরি করা হবেনা বলে নিশ্চয়তা দাবি করছি।” তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঐতিহ্য এবং মানবতার খাতিরে পাকিস্তানে কোন ধরনের সামরিক অথবা অর্থনৈতিক দান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
যারা এখনও ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান বিশ্বাস করে তাদের পরিষ্কারভাবে বুঝতে হবে যে ইয়াহিয়া যখন ২৫ মার্চের রাতে ঢাকা থেকে ফিরে আসেন তখনি একক পাকিস্তানের শেষ আশাটুকু সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। ইয়াহিয়ার অবশ্যই জানা উচিত যে, তিনি ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তানের শেষ আশাটুকুকে ধূলিসাৎ করেছেন। ইয়াহিয়ার সর্বশেষ সম্প্রচার সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে জনাব হক বলেন, “এগুলো সম্পূর্ণ অর্থহীন কথাবার্তা। যাই হোক আমরা এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নই। আমাদের দেশটি স্বাধীন এবং ইয়াহিয়া অন্য রাষ্ট্রের প্রধান। দিল্লিতে অনেক কূটনীতিক আমাকে বলেছেন যে ইয়াহিয়া বুদ্ধিমান নন। আপনারা পরিষ্কারভাবে দেখতে পারছেন যে আজ পর্যন্ত একটি পুতুল সরকার গঠন করার জন্য তিনি একজন দেশদ্রোহী পাননি।“ উর্দু প্রেস সম্পর্কে তিনি বলেন যে, “ ২৬ জুন তিনি উর্দু প্রেসের একটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করেন। যদিও অধিবেশনে স্পিকার উর্দু সংবাদপত্রেরই প্রতিনিধি ছিলেন,
তিনি মনে করেন, উর্দু প্রেস বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের জাতীয় মেজাজ ভাগ করে নিয়েছে। আমরা আশা করি এবং আমাদের আবেদন তারা এগিয়ে আসবে, ইয়াহিয়ার বিশ্বাস ঘাতকতা আরও উন্মুক্ত করে দিবে এবং অবশ্যই আমাদের কারণগুলো সমর্থন করবে।“
পাকিস্তানে তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে জনাব হক বলেছেন মারাত্মক অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলায় নেয়া পাকিস্তান সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দেখিয়ে দিচ্ছে তারা আজ আর্থিকভাবে কতটা দেউলিয়া। বাংলাদেশের যুদ্ধ সম্পূর্ণ ভাবে অর্থনৈতিক চ্যুতি ঘটিয়েছে। প্রতিদিন এই ক্ষতির পরিমান ৫২ মিলিয়ন টাকা। এতে তাদের বিশাল বাজেট ঘাটতি হয়েছে যা পুরো বিশ্বের জন্য নতুন রেকর্ড। এটি বাজেটের প্রায় ৫০% এবং অবশ্যই অর্থের জন্য কাগজের মুদ্রা তৈরি করতে হবে যেটি মুল্যস্ফীতির চাপের সাথে যুক্ত হবে। পশ্চিম পাকিস্তানে প্রতি মাসে আমদানি ঘাটতি ৪০ মিলিয়ন ডলারের সাথে সাথে পাকিস্তানের মজুদ শুন্যের কোঠায় পৌঁছেছে। বিদেশি ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধের একতরফা স্থগিত পাকিস্তানের সম্পূর্ণ দেউলিয়া অবস্থারই বহিঃপ্রকাশ।
একটি রাজনৈতিক সমাধান সম্পর্কে জনাব হক বলেছেনঃ “আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এবং প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ রাজনৈতিক নিষ্পত্তির জন্য ইতিমধ্যে ৪টি শর্ত জানিয়ে দিয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে শেখ মুজিবুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তি, বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতি, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে হানাদার বাহিনী প্রত্যাহার, গত তিন মাসে পশ্চিম পাকিস্তানি আর্মিদের বর্বরতায় ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এই শর্ত পূরণ না করবে ততক্ষন পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগন পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করা পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।“
<003.269.754> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.269.755> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
দিল্লীতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের উপর আন্তর্জাতিক সেমিনার সংক্রান্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যসূচি | বাংলাদেশ সরকার,
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় |
৯ জুলাই
১৯৭১ |
১৯৭১ সালের ১৪, ১৫, এবং ১৬ আগষ্ট নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সেমিনার নিয়ে ৯ জুলাই, ১৯৭১–এ বাংলাদেশ মিশনের হল রুমে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সারসংক্ষেপ
নিম্নলিখিত মহোদয়গণ অংশগ্রহণ করেন।
১.ড. এ. আর. মল্লিক, উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
২.জনাব খিতিশ চন্দ্র চৌধুরী,
১২ ডি শংকর ঘোষ লেন, কল্কাতা-৬।
৩.জনাব রাধা কৃষ্ণান।
৪.জনাব আর. আই. চৌধুরী, প্রথম সচিব, বাংলাদেশ মিশন।
নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত গুলো নেয়া হয়েছে: –
যে, সেমিনারের স্পন্সরদেরকে জানানোর জন্য অবিলম্বে বাংলাদেশের ২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির (অধ্যাপক, আইনজীবি, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও শিল্পী) তালিকা তৈরী করতে হবে যারা নয়া দিল্লির সেমিনারে অংশগ্রহন করবেন। এই সকল ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত ও সংগ্রহ করতে হবে এবং সময়সুচির আগেই নামের তালিকার সাথে সংগঠনের ব্যবস্থাপকের নিকট পাঠাতে হবে।
অধ্যাপক ও শিল্পিদের তালিকা তৈরী এবং জীবনবৃত্তান্তসহ তাদের তালিকা বাংলাদেশ মিশনের ১ম সচিবের নিকট পাঠানোর জন্য ড. এ. আর. মল্লিককে অনুমোদন দাওয়া হয়েছে।
রাজনীতিবিদ, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে ১ম সচিব প্রস্তাব করেন যে, নিম্ন লিখিত ব্যক্তিদের কাছে তাদের জীবন বৃত্তান্ত সহ তালিকা তৈরী এবং ১ম সচিবের নিকট তা জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
(১)জনাব মওদুদ আহমেদ, অ্যাডভোকেট
(২)জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, এমএনএ
২. যে, নিম্নলিখিত বিষয়ের উপর অবিলম্বে নিবন্ধ লিখতে হবে এবং সেগুলোর প্রতিলিপি তৈরী করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যকলাপের জন্য সময়ের অনেক আগেই সেমিনারের স্পন্সরদের কাছে পাঠাতে হবে।
(ক) একটি স্থায়ী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলদেশ (তার জনবল, সম্পদ, মানুষের রাজনৈতিক, সামাজিক আকাঙ্খা ইত্যাদি)।
(খ)রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি (এর প্রকৃত দৃষ্টিকোণ, অর্থনৈতিক অসমতা, বাংলাদেশের সংস্কৃতির ওপর আক্রমন, এবং বর্তমান সংকটের উপর তাদের প্রভাব এর পটভুমি)।
(গ) ইস্যুর বৈধতা।
(ঘ) বাংলাদেশের গণহত্যা।
(ঙ)ভারতে বাংলাদেশি শরণার্থী প্রবেশ সমস্যার মানবিক দিক।
৩. জনাব রাধা কৃষ্ণান ও অধ্যাপক ডঃ আলি হাসান জনাব সুব্রত রায়, অ্যাডভোকেট, উচ্চ আদালত, কলকাতা, কে (ঘ) নং এর গণহত্যার ওপর নিবন্ধ লিখতে অনুরোধ করতে সম্মত হয়েছেন।
ডঃ এ.আর. মল্লিক (খ) নং এর বাংলাদেশ ইস্যুতে “রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি” উপর নিবন্ধ লিখতে সম্মত হয়েছেন।
সিরিয়াল ক,গ এবং ঙ-এ উল্লেখিত অন্যান্য প্রবন্ধ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত হয় যে, উপরে ৩য় প্যরায় উল্লেখিত ২৫ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আলোচনা এবং আলাদা আলাদা ব্যক্তিদের আই দায়িত্ব দেওয়ার জন্য একটি মিটিংয়ের আহ্বান করা হোক।বাংলাদেশ মিশনের ১ম সচিব তাঁর দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মিটিংয়ের আহ্বান করবেন।
৪. যে, এই মিশনের মিশনের প্রেস অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগকে নিম্ন লিখিত প্রবন্ধ গুলো সংগ্রহ এবং বাংলাদেশ মিশনের ১ম সচিবের নিকট জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে।
(১) শেখ মুজিবের ৭ ই মার্চ, ১৯৭১ এর ঐতিহাসিক ভাষণের ইংরেজী অনুবাদ (পঞ্চাশ কপি)
(২) শেখ মুজিবের ৭ ই মার্চ, ১৯৭১ এর ভাষণের টেপ।
(৩) বাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন ফিল্ম, নৃশংসতার ছবি, দলিলপত্র ইত্যাদি।
(৪) বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীদের পেইন্টিং।
(৫) শেখ মুজিবের বড় আকারের ছবি (৫ কপি)
৫. যে, ১৯৭১ এর জুলাই থেকে আগষ্ট পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের মতামত তুলে ধরার জন্য একটি স্পিকার প্যানেল তৈরী করা হবে। নির্বাচিত হয়ে গেলে এই সকল ব্যক্তিদের সল্প সময়ের নোটিশে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সফরের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানিয়ে দিতে হবে। ফার্স্ট সেক্রেটারি মিশন প্রধানের সাথে পরামর্শ করে তালিকা তৈরী করবেন।
(আর. আই. চৌধুরী)
ফার্স্ট সেক্রেটারি,
বাংলাদেশ
মিশন।
বি. নং ৫/৮০/৭১
কপি পাঠানো হবেঃ-
(১) পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ সরকার।
(২) বাংলাদেশ মিশনের প্রধান।
(৩) প্যারা ৪ এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সহকারি প্রেস অ্যাটাশে, বাংলাদেশ মিশন, কলকাতা।
(৪) প্যারা ১(খ) এবং ৩(খ) এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডঃ এ.আর. মল্লিক।
(৫) প্যারা ১(গ) এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনাব মওদুদ আহমেদ।
(৬)প্যারা ৩(ক) এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ড. আলী হাসান।
(৭) ড. মাজহারুল ইসলাম, তাঁর নিজের অংশের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
(আর. আই. চৌধুরী)
ফার্স্ট সেক্রেটারি,
<003.270.756> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহির্বিশ্ব প্রচার সম্পর্কিত একটি চিঠি | বাংলাদেশ সরকার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
১২ জুলাই, ১৯৭১ |
তারিখঃ ১২ জুলাই, ১৯৭১
মো. আ. রাজ্জাক
দুহামসগ্রান্ড ৩৮
১২৭ ৪৮ স্কারহোমেন
স্টোকহোম
সুপ্রিয় রাজ্জাক,
আমরা ৩রা জুলাই আপনার চিঠি পেয়েছি এবং এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যেসকল সমস্যা উল্লেখ করেছেন তা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে এবং আমরা আশা করি, খুব শীঘ্রই প্রচারকার্যের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপাতি সরবরাহ করতে পারবো।
সংবাদপত্রের জন্য, আপনাকে নিয়মিত সুইডিশ প্রেস থেকে শুধুমাত্র সমসাময়িক তথ্যাদি পাঠাতে হবে। প্রাথমিক ভাগে আপনাকে এমন বিষয়াদি উপস্থাপন করার অনুরোধ করা হচ্ছে যা সহজেই দৃষ্টি আকৰ্ষণ করে এবং ২৫শে মার্চের আগে ঘটেছে।
বিনীত,
১২/৭/৭১
তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
বহিঃপ্রচার বিভাগ
সি.সি. পররাষ্ট্র সচিব
… … … … …
বাংলাদেশ মিশন
দুহামসগ্রান্ড ৩৮
১২৭ ৪১ স্কারহোমেন
স্টোকহোম
জুলাই ৩, ১৯৭১
বিষয়ঃ সুইডেনে বাংলাদেশের প্রচার।
প্রিয় তাহেরউদ্দিন ঠাকুর,
Kindly refer to your letter dated June 24, 1971 regarding newspaper clippings etc. on Bangladesh in Sweden.
<003.270.757> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ইতোমধ্যে আপনি হয়তো জেনে থাকবেন, আমি একা স্বল্প পরিমান অর্থ-তহবিল এবং কর্মী নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আপনার অনুরোধ রেখে এত বিস্তৃত অনুবাদের কাজ করাটা স্বভাবতই বেশ কঠিন। আমি অবগত করতে চাচ্ছি যে এদেশে ২৫শে মার্চ থেকে প্রতিবেদন, মন্তব্য এবং সম্পাদকীয়তে উক্ত সমস্যার জন্য ব্যাপক কাভারেজ দেওয়া হয়েছে। কিছু সংখ্যক সম্পাদকীয় কলাম প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু জনপ্রিয় ম্যাগাজিনেও বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে যা আমাদের কাছে বোধগম্য। এখন আপনি বুঝতে পারবেন যে যদি কেউ অনুবাদ সংক্রান্ত এই বিশাল দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে, তাহলে অন্য কোনো কাজে সে সামান্যই সময় ব্যয় করতে পারবে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এটা সম্ভবপর নাও হয়ে উঠতে পারে। যেভাবেই হোক, আমি স্থানীয় প্রেস এবং ম্যাগাজিন থেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত লেখাগুলো কাটছাট করে (অবশ্যই ইংরেজি সহ) আপনাকে পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখবো। এতটুকু আপোষ করাটা যৌক্তিক। আমার কাছে বাছাই করা সব লেখাগুলিই আছে কিন্তু প্রধান কাজ হচ্ছে এগুলি অনুবাদ করা। উপরন্তু, এগুলি এয়ার-মেইলে করে পাঠানোর জন্যে কিছু টাকা দরকার। আমি আশা করি বাংলাদেশে সরকার আমার প্রস্তাবনা মোতাবেক এখানে অর্থ-তহবিলসহ একটা অফিস তৈরী করবে। সে পর্যন্ত আমি আমার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যাব।
আমি মোঃ হোসেন আলীকে কেবলই জানিয়েছি যে সুইডিশ লিবেরেলের তরুণরা সুইডেন কর্তৃক বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদানের জন্যে সমগ্র দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা অর্থ সংগ্রহ এবং আলোচনা-সভার বন্দোবস্ত করতেও ইচ্ছুক। দুই বছরের শিথিলতা ও অধ্যাবসায়ের পর এই উত্থানকে আমি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। কিন্তু আমাদের অবশ্যই নিয়মিত প্রয়োজনীয় প্রচার-সরঞ্জামাদি নিয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। এতে করে দেশব্যাপী তাদের ক্যাম্পেইন প্রচারণা বজায় থাকবে। এই সুযোগ আমরা হাতছাড়া করতে পারিনা। তারা বাংলাদেশের উপর নৃশংসতা এবং মুক্তিবাহিনীর অর্জন নিয়ে চলচ্চিত্র বানাতেও আগ্রহী হবে। যেহুতু তাদের জেনারেল পার্টি কংগ্রেস ১৬ই আগস্টে বসবে সুতরাং কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে চলচ্চিত্রটি পৌঁছতে হবে। দয়া করে জানাবেন, আপনি এই কাজে আমাদের কিভাবে কতটুকু সাহায্য করতে পারবেন। এই ধরণের চলচ্চিত্র আসলে আমাদের ক্যাম্পেইনে ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। ব্যাপারটি গুরুত্বসহকারে দেখা হোক।
আপনার উচিত, যেভাবেই হোক, কঠিন হলেও এই সময়ের মধ্যে চলচ্চিত্রটি পাঠানো, আপনি আমাদের লন্ডন ইউনিটে বিবিসি কিংবা আইটিভি কর্তৃক গ্রন্থণা এবং সম্পাদনার জন্য একটা ফিল্ম পাঠিয়ে অনুরোধ করতে পারেন। এটা কঠিন হবার কথা না। লন্ডন থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় প্রচার-সরঞ্জামাদি, মানচিত্র এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীর স্টেটমেন্টও সরবরাহ করতে পারে। আমরা শীঘ্রই এই সহযোগিতার সুযোগকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে চাই। তরুণ সুইডিশ লিবারেলের মতে, কেন্দ্রীয় তরুণ লীগ যারা বিশাল সুইডিশ তরুনের প্রতিনিধিত্ব করে, এই ক্যাম্পেনে যোগদান করতে পারে। এতে বুঝা যায় যে আমরা সুইডিশদের দ্বারা আমাদের এই মুভমেন্টে বিশাল শক্তি পেতে যাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেন, আমাদের ক্যাম্পেইন অবশ্যই সরকারের দৃষ্টিতে আসবে এবং সাধারণ জনগণের উপর প্রভাব রাখবে। কাজের এই পর্যায়ে এসে আমি স্থানীয়ভাবে তথ্য অনুবাদের জন্য কোনো না কোনো সহযোগিতা পেতে পারি। এতে আমাদের অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। এহেন স্থানীয় সহযোগিতা নিয়ে আমরা স্টকহোমে বাঙালিদের জীবন নিয়ে একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছি যার বর্ণনা আমি মোঃ হোসেন আলীকে লিখে পাঠিয়েছি। প্রদর্শনী এখনো চলছে এবং পাবলিকের মনোযোগ আকর্ষণ করছে। আমাদের কাজের অগ্রগতি শুরু হয়েছে। এখন আমাদের শুধু দরকার ধৈর্য আর ত্যাগ।
<003.270.758> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এমন নিরলস প্রচেষ্টার প্রতি আমার কোনো সন্দেহ নেই। এই শহরে অল্প বাঙালি থাকলেও ‘বাংলাদেশ’ একটি জনপ্রিয় শব্দে পরিণত হতে পারে। আপনার এটিও মনে রাখতে হবে যে আমরা সবশেষে নরওয়ে, ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডেও আমাদের কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। আমি খবর পেয়েছি যে আমাদেরই কিছু ছেলে অসলোতে স্থানীয় কার্যক্রম কমিটি গঠনের পরিকল্পনা করছে। তাদেরও কিছু সহযোগিতা এবং প্রচার-সরঞ্জামাদির প্রয়োজন হবে। আর সামান্য কিছু অর্থ-তহবিল পেলে আমিও কোপেনহেগেনে একটি ইউনিট স্থাপনের ব্যবস্থা নিব। আমার মনে হয় আমি আমাদের কাজ-কর্ম এবং এর সংশ্লিষ্ট খরচ সম্বন্ধে ধারণা দিতে পেরেছি। আপনি শীঘ্রই এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান জানাতে পারলে ভালো হয়।
সৌজন্যে,
জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুর
বহিঃপ্রচার বিভাগ
বাংলাদেশ মিশন
কলকাতা
বিনীত,
এসডি/-
(আ. রাজ্জাক)
<003.271.759> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
কলিকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন প্রধান ও কর্মীদের পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনে অস্বীকৃতি – ১৮ জুলাই |
এশিয়ান রেকর্ডার আগস্ট
১৩-১০-১৯৭১ |
১৮ জুলাই,১৯৭১ |
Bangladesh Mission In Calcutta Refuses To Return To Pakistan-Swiss Mediation Attempt
জনাব হোসেন আলী, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ মিশন প্রধান, ১৮ জুলাই ঘোষণা দিয়েছেন যে তাঁর মোটমাট ৬৩ জন কর্মীবৃন্দ একটি অফিশিয়াল জিজ্ঞাসাবাদকারী কমিটিকে ইঙ্গিত করেছে যে তারা পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করবে না। জিজ্ঞাসাবাদকারী কমিটিতে ছিলেন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত সুইস এম্বাসির কাউন্সিলর ড. বোনার্ড, কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব মেহেদী মাসুদ এবং কলকাতাস্থ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনাব এ. কে. রায়। পূর্ব সম্মতিক্রমে, সুইস কূটনীতিক সাবেক পাকিস্তান ডেপুটি হাই কমিশনের কর্মীবৃন্দকে পৃথকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যারা কিনা বাংলাদেশ প্রজান্ত্রিক জোটে আবদ্ধ হয়েছে। তাদের একই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে তারা কি পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন করবে কিনা এবং যদি তারা হ্যাঁ-সূচক উত্তর দিয়ে থাকে তবে তাদের ইচ্ছা মোতাবেক ভারত সরকার কর্তৃক যে কোনো নিরাপদ জায়গা দেবার ব্যবস্থা ছিল।
জনাব হোসেন আলী জানিয়েছেন যে কমিটির জিজ্ঞাসাবাদে কেউ কেউ বাংলায় এবং কেউ কেউ ইংরেজিতে লিখিতভাবে না-সূচক উত্তর দিয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম প্রজাতন্ত্রের মিশন প্রধান হিসেবে এহেন জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হওয়া মর্যাদাগত দিক থেকে সাজে না, তাই জনাব হোসেন আলী জিজ্ঞাসাবাদ কমিটির সম্মুখীন হননি। প্রস্তাব করা হয়েছিল যে জনাব হোসেন আলী নিজে জিজ্ঞাসাবাদ কমিটিকে এমন কোনো স্থানে আমন্ত্রণ জানাবেন যেন তিনি প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি এবং এর কারণস্বরূপ বলেছেন, তিনি পাকিস্তানী প্রতিনিধি জনাব মেহেদী মাসুদকে আমন্ত্রণ জানাবেন না। সবশেষে তিনি সম্মতি দেন যে তার কর্তৃত্বাধীনে একটা গোছালো-ফাঁকা বাসায় তিনি কমিটিকে আমন্ত্রণ জানাবেন। এমন ব্যবস্থাপনায় জনাব হোসেন আলী একই প্রশ্নের জবাবে না-সূচক উত্তর দিয়েছিলেন।
Mr. Hossain Ali told newsmen that the Bangladesh Mission staff would have had
nothing to do with the Pakistani representative and would not have gone to see the Swiss representative but for their consideration for the personnel or the Indian Deputy High Commission in Dacca.
জনাব হোসেন আলী বলেছিলেনঃ “তারা তাদেরকে জিম্মি করে রেখেছে এবং তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করছে। আমরা দ্রুত তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে সহযোগিতা করতে চেয়েছিলাম। আমি আশা রাখতে পারি তারা শীঘ্রই ফিরে যাবে।
“একটি নিরপেক্ষ দেশের আস্থাবান প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আমরা সন্দেহের ঊর্ধে, স্বেচ্ছায়, স্বানন্দে এবং মন থেকে আমাদের জোট বাংলাদেশ সরকারে স্থানান্তর করেছি।
“এটা একদম পরিষ্কার যে আমরা চাপে পড়ে কোনো কিছু করিনি। আমাদের উপর যা ছিল তা কেবল মাত্রই পাকিস্তান সরকারের গা-জোয়ারি। আমরা সর্বদা বিশ্বাসী ছিলাম এবং পাকিস্তানের সেবক হিসেবে নিজেদের উৎসর্গ করেছিলাম কিন্তু এই ব্যাপারটি আমাদের এমনভাবে কাজ করিয়েছে যেন আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল।
<003.272.760>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক বৈধ সরকারী প্রতিনিধিত্বকরণ সম্পর্কে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ সরকার,
পরররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
২০ জুলাই ১৯৭১ |
ফোনঃ
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলিকাতা ১৭
(কৃতজ্ঞতা স্বীকার সহ কিংবা ব্যতীত কপি করা যেতে পারে)
________________________________________________________________________________
নং. পিআর/২৫
মুজিবনগর
জুলাই ২০, ১৯৭১
সরকারি ব্যাখ্যা
বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন স্থানে তাদের ব্যক্তিগত সফরের পর্যবেক্ষণের সাথে সংযুক্ত পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ পদের প্রতি বিদেশি অফিসের মনোযোগ অঙ্কন হয়েছে। বিভিন্ন পৃথক পৃথক উপলক্ষে বিদেশি অফিসসমূহ দ্রষ্টব্য নিয়েছে যেখানে বিদেশি সরকার এবং জাতিসংঘ এর সাথে তারা আমাদের সম্পর্কের প্রশ্নে মোকাবিলা করেছে।বিদেশি অফিসের ধারণা যে মানুষ নিজেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘ঘনিষ্ঠ সহযোগী’ অথবা ‘বৈধ সহায়তাকারী’ হিসেবে দোষারোপ করছে এবং ‘বাংলাদেশ বাহিনীর সাথে সংযোগ হচ্ছে’ যখন সংবাদমাধ্যম গুলো অথবা অন্যথায় নেয়া হলো,নিজেদের মতো করেছে এবং নিজেদের স্বতন্ত্র সক্ষমতায়। মতামত সমূহ তারা নিজেদের মতো ব্যাখ্যা করেন এবং বাংলাদেশ সরকার দ্বারা গঠিত মতে না ভাবতে।
<003.273.761> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলেরদক্ষিণ – পশ্চিম জোন-১ এর ত্রাণ উপ-কমিটির সভার কার্যবিবরণী জোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসেঅনুষ্ঠিত হয় ৩ অক্টোবর, ১৯৭১; দুপুর ১টায়।সভায় উপস্থিত সদস্যরা হলেন-
(১) জনাব তফীজউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ,পাবনা (সদস্য)
(২) জনাব শাহীউদ্দিন,এমএনএ, কুষ্টিয়া (সদস্য)
(৩) জনাব ইউনুস আলী, এমপিএ, কুষ্টিয়া (সদস্য)
(৪) জনাব জহুরুল হক রাজা, এমপিএ, কুষ্টিয়া (সদস্য)
(৫) জনাব গোলাম হাসনাইন, এমপিএ, পাবনা (সদস্য)
(৬) জনাব আব্দুর রব,এমপিএ, পাবনা (সদস্য)
(৭) জনাব গোলাম কিবরিয়া, এমপিএ (সদস্য)
★সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব শাহীউদ্দিন,এমএনএ, কুষ্টিয়া।
★★সর্বসম্মতিক্রমে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, দক্ষিণ – পশ্চিম জোন-১ এর ত্রাণ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জনাব তফীজউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ, পাবনা।
(শাহীউদ্দিন)এমএনএ,
সভাপতি।
<003.273.762> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলেরদক্ষিণ – পশ্চিম জোন-১ এর প্রচার উপ-কমিটির সভার কার্যবিবরণীজোনাল প্রশাসনিক কর্মকর্তার অফিসেঅনুষ্ঠিত হয় ৩ অক্টোবর ১৯৭১ বেলা ১টায় ।সভায় উপস্থিত সদস্যরা হলেন-
(১)জনাব আব্দুর রহমান, এমপিএ, পাবনা (সদস্য)
(২) জনাব তফীজউদ্দিন, এমপিএ, পাবনা (সদস্য)
(৩) জনাব জহুরুল হক, এমপিএ, পাবনা (সদস্য)
(৪) জনাব ইউনুস আলী, এমপিএ, কুষ্টিয়া (সদস্য)
(৫) জনাব আহসানউল্লাহ, এমপিএ (সদস্য)
★সভায় সভাপতিত্ব করেন জনাব তফীজউদ্দিন আহমেদ, এমপিএ, পাবনা।
★★সর্বসম্মতিক্রমে জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিল, দক্ষিণ -পশ্চিম জোন-১ এর প্রচার উপ-কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন জনাব আব্দুর রহমান, এমপিএ, পাবনা।
(তফীজউদ্দিন আহমেদ)
এমপিএ,সভাপতি
৩/১০/৭১
<003.273.763> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(তৃতীয় খন্ড)
(গ) জনাব এম.এ. সুলতান, এমএনএ
(ঘ) এম. এ. খাইর, এমএনএ
(ঙ) জনাব তাহেরুদ্দীন ঠাকুর, এমএনএ
৪) সম্মেলন কতৃপক্ষের কিছু শিল্পীর প্রয়োজন ছিল। তাদের নাম নিচে দেওয়া হল।
(ক) মিসেস সানজিদা খাতুন
(খ) মিস কল্যাণী ঘোষ
(গ) জনাব সমর দাশ
(ঘ) জনাব অাব্দুল জব্বার
(ঙ) জনাব অাপেল মাহমুদ সর্বমোট ২০জনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাকী ৫জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করা হতে পারে।
৫) এটাও প্রস্তাব করা হয়েছে যে সম্মেলন কতৃপক্ষকে আবেদন করতে হবে যে একটি আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পাঠাতে এবং ভ্রমণ,বাসস্থান ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক খরচের ব্যাপরে অনুসন্ধান করতে। যখন সকল কাগজ বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সচিবের কাছে পৌছবে, একটা বাজেট মুদ্রণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে, এইসব কাগজ পত্র মুদ্রণের জন্য আপাতত অনুমোদিত হতে পারে।
(আর.আই. চৌধুরী)
প্রথম সচিব।
নং বি ৫/৮০/৭১ তাং ২১.০৭.৭১
অনুলিপি হুবুহু দেওয়া হয় জনাব মওদুদ আহমদকে, বার-অ্যাট-ল . ৯, সার্কাস অ্যাভিনিউ, কলকাতা ১৭.
তিনি বিনয়ের সাথে দায়িত্ব নেন যে একটি কাগজে ” বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক আইন এবং তার চর্চা” নামক লিখা তৈরি করেন দিল্লীর আন্তর্জাতিক সেমিনারে পড়ার জন্য। এটি খুবই প্রশংসিত হবে যদি তিনি নিশ্চিত করতে পারেন যে, কাগজটি ৩১ই জুলাই,১৯৭১সালের নিম্নে সাক্ষরিত হয়ে পরিপূর্ণ রূপে যেন প্রয়োজনীয় ব্যাবস্হা তৈরি করে এটি মূদ্রণের জন্য।
(আর.আই. চৌধুরী)
প্রথম সচিব। .
<003.274.764> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ কতৃক পর্যবেক্ষক মোতায়েন সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি। | বাংলাদেশ সরকার | ৩১জুলাই,১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯,সার্কাস এভিনিউ,কলকাতা -১৭
(স্বীকৃতি ছাড়া অথবা স্বীকৃতি দিয়ে পুনুরউৎপাদন করা যেতে পারে)
______________________________________________________________________________________________
নং.PR/30.মুজিবনগর
৩১জুলাই,১৯৭১
পাকিস্তানের জাতিসংঘের প্রতি ধাবিত হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
খন্দকার মোশতাকের আহমেদের( পররাষ্ট্র মন্ত্রী বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী) লক্ষ্যে পাকিস্তানের পদক্ষেপ অঙ্কিত হয়েছিল বাংলাদেশ ইস্যুকে ভারত পাকিস্তান ইস্যুতে রূপান্তরিত করতে, তিনি বলেন যে এটা ভুল মনোভাব এবং এটি কখনোই বিশ্বের এই অংশে শান্তি বয়ে আনবেনাহ। তিনি বলেন, ইঙ্গিতগুলো খুবই পরিষ্কার যে, পাকিস্তান, শেষ মুহুর্তে তাদের ভাবমূর্তি কলঙ্কিত করছে, এবং জাতিসংঘের আশেপাশে দ্রুত গতি বাড়াচ্ছে যেন বাংলাদেশে সৈনিকদের হাত থেকে নিশ্চিত পরাজয় এড়াতে পারে। বাংলাদেশের মাটিতে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষেক পাঠায়ি এটাকে ইন্ডিয়া-পাকিস্তান ইস্যু তৈরি করতে চায় যেটি নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের একটা বেপরোয়া মনোভাবের লক্ষণ। বাংলাদেশের সরকার আবারো বিশ্বের সকল জাতির আকর্ষণ আকৃষ্ট করছে যে, বর্তমানে বাংলাদেশ একটা স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। কিছু মানুষের জন্য এটা মানা কষ্টকর কিন্তু এটাই হচ্ছে সত্যি। ২৫শে মার্চ রাত হতে বাংলাদেশের মাটিতে কি হয়েছে সবই ইতিহাসের পাতায় দিনের পর দিন,মাসের পর মাস লিখা হয়ে গেছে। জাতিসংঘের ভূমিকা তখন থেকে সেই সময়কাল পর্যন্ত কি ছিল সবারই জানা। জাতিসংঘের ক্ষমতা ছিল এবং সম্মতি ছিল বিশ্বের সকল ক্ষতিগ্রস্হ মানবতার জন্য ভালো কিছু প্রেরণ করা কিন্তু এটির উপকারিতার সুযোগ পাইনি। বাংলাদেশের দুর্ভোগ সহ্য করা জনগণ তাদের দুর্ভোগ প্রাথমিক ভাবে জয় করতে পেরেছে এবং তারা সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। কি এমন করল জাতিসংঘের কার্যনির্বাহীদের যে এখন ঘুম ভাঙ্গল তাদের উদাসীন ঘুম থেকে? বাংলাদেশে যোদ্ধাদের ধমানোর যেকোন প্রচেষ্টাকে এখন থেকে গুড়িয়ে দেওয়া হবে।
<003.274.765> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যেভাবে আমাদের সাহসী যোদ্ধারা লক্ষাধিক জীবন এবং রক্ত ও কান্নার নদী বয়ে দিয়ে তাদের বিজয়ের রাস্তা তৈরি করছে, আমরা কখনোই কাউকে এই ত্যাগকে খর্ব করতে দিবনা। বাংলাদেশের মাটির উপর ৭কোটি বাঙ্গালীই শুধুমাত্র ক্ষমতা গঠন করবে। জাতিসংঘের ত্রাণ ও পূর্ণবাসস্থান বিভাগের হাই কমিশনার শরণার্থীদের অবস্থার একটি দৃশ্য নেন। তিনি একটি উপশমকারী ব্যবস্থা নিতে চান যখন এটির জন্য গুরুতর অস্ত্রপাচারের প্রয়োজন। বলা যায় এই দ্বারা তিনি একটা ভালো পজিশনে থাকতে পারতেন হয়ত যদিও তার উপস্হিতিতে এবং প্রতিশ্রুতিতে শরণার্থীরা ঘরে ফিরতে অনুপ্রাণিত হয় যেহেতু ইন্ডিয়াতে তখনও অসংখ্য পরিমাণ শরণার্থী ছিল। আমরা অনুভব করি যে এই লাইনে আর অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষা অবশ্যই নেওয়া হবে। সে জন্য আমরা জাতিসংঘকে ঢেকে শরণার্থী সমস্যা সমাধানে তাদের নিরর্থক প্রচেষ্টা বন্ধের কথা বলি। শুধুমাত্র বাংলাদেশের জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারেই পারে শরণার্থীদের ঘরে ফেরাতে। জাতিসংঘ ও তার অধিভুক্ত সংস্থা ঢেলে সাজানো এবং তার ভূমিকা যৌক্তিকীকরণের আবশ্যক এবং যেকোন প্রকারে কোন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর পরিকল্পনা করতে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান ইস্যু সত্য বলে স্বীকার করতে ভারত-পাকিস্তান ইস্যুর পরিবর্তে। এই মনোভাব কখনোই বিশ্বের এই অংশে শান্তি আনবেনা। বাংলাদেশ সরকারের জাতীয় পদ্ধতিতে একার পক্ষে কথা বলতে হবে তাদের ভাগ্য নির্ধারণকারী শুধুমাত্র জনগণের জন্য। একটা মিথ্যা আহ্বান,অধিকতর বিপর্যয় এবং সমালোচনা এড়িয়ে চলে আমাদের পৃথিবীকে নিশ্চিত করতে হবে যে বাংলাদেশ সরকার শান্তির রাস্তা তৈরি করতে প্রস্তুত, মূল ইস্যু গুলোকে ধুয়াশা,অবহেলা করেনা।
<003.275.766> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ইয়াহিয়ার নির্বাচন সম্পর্কে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি | দ্যা হিন্দুস্তান টাইমস | ৫ই আগস্ট, ১৯৭১ |
ইয়াহিয়া বলেছিল হিন্দু ভোট ১৫%
১৯৭১এর ৪ঠা আগস্ট বাংলাদেশ পরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য।
বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র আজ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এর বক্তব্যের সমালোচনা করে এটিকে একটি “ভয়ঙ্কর মিথ্যা” বলে আখ্যায়িত করেন যেই বক্তব্য তিনি বলেছেন “শেখ মুজিবর রহমান হিন্দু সংখ্যালঘুদের ভোটের কারণে জয়লাভ করেন”।
তেহেরান ডেইলি পত্রিকায় ইয়াহিয়ার সাক্ষাতকারের মন্তব্যে মুখপাত্র বলেন অাওয়ামিলীগ ৮২% ভোট পেয়ে নির্বাচনে জয় লাভ করে যেখানে হিন্দু সংখ্যালগুদের সংখ্যা ১৫% এর ও কম। ” যদি এইটা বলা হয় যে আওয়ামিলীগ এই ভোট গুলো ভিক্ষা করছে তাহলে বাকী ৬৭% ভোট কোথা থেকে আসল?”
মুখপাত্র দেখিয়ে দিয়ে বলে কৌতুহলী হয়ে জানতে চাই জেনারেল ইয়াহিয়া যেই কিনা গর্ব করে বলেছিল নির্বাচন সুষ্ঠ এবং মুক্তভাবে হয়েছে সেই এখন কিভাবে পৃথিবীকে বিশ্বাস করাতে চাচ্ছে যে আওয়ামিলীগ নির্বাচনটা জিতেছে হুমকি, ভীতিপ্রদর্শন এবং অন্যায় পদ্ধতি অবলম্বন করে।
মুখপাত্র পুনরায় বলেন যে ” জেনারেল ইয়াহিয়া নির্বানের আগে এবং নির্বাচনের সময় আর্মি,পুলিশ,সেনাবাহিনী নিয়োগ করেন নির্বাচনের বিধি-নিষেধ বজায় রাখতে। ” এটি একজন ইরানী সাংবাদিকের স্বীকারোক্তি যে তার কাছে তথ্য ছিল দেশে যা ঘটছে তার সম্পর্কে এবং এই তথ্য গুলোই প্রমাণের জন্য যথেষ্ট যে জেনারেল ইয়াহিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার কোন ক্ষমতা নাই।
<003.276.767> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক সাহায্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার | দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া | ৬ আগস্ট,
১৯৭১ |
আজবাংলাদেশসরকারমার্কিনযুক্তরাষ্ট্রেরকংগ্রেসে পাকিস্তানের সাহায্য বাতিল করায় সন্তষ্টি প্রকাশ করছে ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক শাখার একজন মুখপাত্র বলেন “আমরা অত্যন্ত সন্তষ্টির সঙ্গে পড়লাম যে মার্কিন হাউজের প্রতিনিধিগণ বৈদেশিক সাহায্য সংক্রান্ত বিলে নিরোধক্ষম ব্যাবস্থার ভোট প্রয়োগ করেছেন যার ফলে পাকিস্তানের জন্য সকল অর্থনৈতিক এবং সামরিক সাহায্যে বাতিল হবে”
“আমরা আমাদের উষ্ণ অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি আমেরিকান কংগ্রেসম্যান দের তাদের বিজ্ঞতার জন্য তারা বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সঠিকভাবে অনুধাবন করেছেন। এটা ধন্যবাদার্হ যে, মহামান্বিত সদস্যগণ সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালী তাদের মতৃভূমিতে সুখে- শান্তিতে আছে –পাকিস্তানের এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হননি”
মুখপাত্র বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান হাউজের বিদেশ সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি জনাব থমাস মরগ্যান কে এবং দক্ষিন এসিয়ার উপকমিটির সভাপতি মি. করুইলিয়াস গিয়াঘী কে, আমদের দেশের উপর মানব সৃষ্ট ধ্বংস যজ্ঞের ব্যাপকতা নিয়ে কংগ্রেস সদস্যদের একীভুত করায় তাদের ভুমিকার জন্য ।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত গনপ্রতিনিধিগণ গর্বের সঙ্গে আমেরিকান কংগ্রেস সদস্যদের সালাম জানাচ্ছে গণন্তন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য।তিনি আরো বলেন “আমরা বিশ্বাস রাখি আমেরিকার প্রশাসন তাদের নিজেদের কংগ্রেস সদস্যদের দ্বারা গৃহিত সিদ্ধান্তের সম্মান করবে”
কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব হোসেন আলী এই”আশাব্যঞ্জক খবরে” আনন্দ প্রকাশ করেন যে নিউইয়র্ক এবং ও্যাসিংটনের পাকিস্তান মিশনের সব বাঙ্গালী স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন ।
এক বক্তব্যে মি. এ ইউবলেন কূটনীতিকদের এই পদক্ষেপে বাংলাদেশের মানুষের দ্বাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে গেছিল এবং তারা মুক্তিযুদ্ধ চালিয়ে গেছে।
<003.277.768> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তান কতৃক প্রকাশিত শ্বেতপত্রের প্রতিক্রিয়া
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় |
দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া | ৮ আগস্ট,
১৯৭১
|
অসংখ্য মিথ্যাচারে ভরা শ্বেতপত্র
পাকিস্তান সরকারের ৭ আগষ্ট১৯৭১ শ্বেতপত্রের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের বক্তব্য
পররাষ্ট্র দপ্তরআজ বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র বাংলাদেশে পাকিস্তানের শ্বেতপত্র কে মিথ্যাচারে ভরা বলে বর্ননা করেন ।
মুখপাত্র আরো বলেন ,এই সামরিক জান্তা তার জঘন্য কার্জক্রমের দ্বারা বিশ্ববাসীর মতামতকে উপেক্ষা করে এবং বিপক্ষে থেকে প্রচলিত নিয়ম নীতি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে ।
সত্য এতইপরিষ্কার যা বারবার বলার প্রয়োজন নেই কারন বিষয়টি বিশ্ববাসী সাংবাদিকদের সৌজন্যে ভালভাবেই জানেন ।
“আমরা বিশ্ববাসিকে জানাতে চাই যে যদি শেখ মুজিবর রহমানের কোন সশস্ত্র বিপ্লবের পরিকল্পনা থাকত তবে তাঁর জান্তার হাতে বন্দি হবার সম্ভাবনা থাকত না যখন যুদ্ধের জন্য তাঁর নিজস্ব বাহিনী রয়েছে।
মুজিবের বিশ্বাস ছিল অহিংসা এবং অসহযোগ নীতিতে। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন যে তিনি পিছিয়ে যাবার বিপক্ষে ,কারন তা বাংলাদেশের জন্য অর্থহীন ,পাকিস্থানের অন্তর্গত মুখ্য অংশ থেকে গৌন অংশকে পৃথক করা ।
“তাঁর ৬ দফা আন্দোলন ছিল পাকিস্তানের সকল প্রদেশের জন্য এবং ক্ষুদ্রতর অবহেলিত প্রদেশগুলোরঅধিকারের জন্য তিনি অনমনীয় ভাবে যুদ্ধ করেছিলেন।”
“জিরো আওয়ার”
ঘটনা প্রবাহের বাস্তবতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমান করে যে সামরিক জান্তা আগে থেকেই জিরো আওয়ার ঠিক করে রেখেছিল যখন তারা “কপটতাপুর্ণ দীর্ঘায়ীত আলোচনা” চালায় ।
মুখপাত্র উল্লেখ করেন “২৪ তারিখ সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া খানের উপদেষ্টাগণএবং আওয়ামী লিগের নীতি নির্ধারকগণ একটি আলোচনা সভায় মিলিত হন যেখানে চুক্তি সম্পাদিত হয় এবং সরকার গঠনের অধ্যাদেশের খসড়া ঘোষনার জন্য চূড়ান্ত করা হয়।
মুখপাত্র উল্লেখ করেন যে “পুরো জাতি অধীরভাবে অপেক্ষায় ছিল।”
কিন্তু সেই ঘোষণার পরিবর্তে সেনাবাহিনীর আক্রমন শুরু হয়।
“আমরা বিশ্বাসঘাতকদের সতর্ককরতে চেয়েছিলাম বাংলাদেশের আদর্শ কে শেষ করার যে কোন চেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিপরীত ফল দিবে ।”
তিনি দৃঢ়ভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন যে সেনাবাহিনী আক্রমনের পূর্বে বাঙ্গালীরা অবাঙ্গালীদের হত্যা করেছে।
<003.277.769> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
“অসহযোগআন্দলনেরপরবাঙ্গালীরাকখনই, অবাঙ্গালীদেরএলিয়েনহিসাবেদেখেনি, তাঁদের মেরেফেলার কথাও বলেনি। এমনকি৯ মার্চের পর অবাঙ্গালী সেনাবাহিনী এবং নৌ বাহিনী হাতেহাত মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ পরিচালনা করে যেখানে শতশত বাঙ্গালী নিহত হয়েছিল। ”
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা এত তীব্র হয় যে মৌলানা ভাসানী দ্রুত চিটাগং পৌঁছান এবং শেখ মুজিবর রহমান অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য দুজন নেতাকে সেখানে প্রেরন করেন ।নেতৃবৃন্দ সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী কে সরাসরি অভিযুক্ত করেন।
চতুর্থঅধ্যায়
গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশসরকার
বৈদেশিক সম্পর্ক
<003.278.770> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.279.771> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.279.772> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.280.773>বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তানের মিশনসমূহে কর্মরত কূটনীতিবিদদের বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন সংক্রান্ত তথ্যাদি ২-২১ আগস্ট | এশিয়ান রেকর্ডার, সেপ্টেম্বর ১৭-২৩, ১৯৭১ | ২-২১ আগস্ট, ১৯৭১ |
কূটনীতিকদেরপদত্যাগ :
কূটনৈতিকইতিহাসেরকাহিনীমধ্যেসর্বকালেররেকর্ড৫আগস্টস্থাপিতহয়যখনযুক্তরাষ্ট্রেপাকিস্তানেরমিশনের১৪জনবাংলাকূটনীতিকসার্বজনীনভাবেপদত্যাগ করে।
কূটনৈতিকপর্যবেক্ষকদেরমতে, আগেকখনোএতবড়একটাপদত্যাগপৃথিবীরকোথাওঘটেনি।ইসলামাবাদেরপ্রচারযন্ত্রেরবিশ্বাসযোগ্যতার জন্য এটা একটা বড় আঘাত ছিল।
বিদেশেপাকিস্তানীমিশনেকর্মরতবাঙালিসদস্যদের উপর নজরদারি শুরু করা হয় এবং এক মিশনে একজন বাঙ্গালির থেকেও কোন প্রেস বিবৃতি প্রেসে স্থাপন করা হয়নি।
নয়াদিল্লির একটি রিপোর্টঅনুযায়ী, সব বাঙালি কর্মীরা ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক থেকে ইসলামাবাদ ট্রান্সফারের আদেশের অধীনে ছিল।
দিল্লিরনতুনপাকিস্তানহাইকমিশনেরএকজনপূর্ববাংলারকর্মচারীআব্দুলমজিদকঠোরনজরদারিরমধ্যেতারভারতেরবাড়িতেপালিয়েযানএবংতিনিবাংলাদেশেরপ্রতিতারআনুগত্যঘোষণাকরেন।
ভারতীয়বাড়ীতেআসারপর, তিনি জনাবকেএমশাহাবুদ্দিনের(সাবেকপাকিস্তানিকূটনৈতিক) সংস্পর্শেথাকেন, যিনি সেনাবাহিনীর কঠোর ব্যবস্থার পরেওতারআনুগত্যবাংলাদেশসরকারেরদিকেপরিবর্তনকরেন।
জনাব মজিদ ১৯৬৪ সালে তথ্য ও ন্যাশনাল বিষয়ক পাকিস্তানের মন্ত্রণালয় যোগদান করেন।করাচী এবং ইসলামাবাদে কাজ করার পর তিনি১৯৬৮ সালে দিল্লি মিশনে স্থানান্তারিত হন।
একটি প্রেস বিবৃতিতে জনাব মজিদ বলেন, “আমি বাংলাদেশের সেবা করার জন্যপাকিস্তান হাই কমিশন ত্যাগ করলাম। আমি বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার আনুগত্য ঘোষণা করছি ।”
পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে আরেকটি পদত্যাগ :
জনাব ফজলুল হক চৌধুরী, লন্ডনে কর্মরত একজন পাকিস্তান হাই সহকারী লেবার কমিশন, ১২ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন শেখ মুজিবুর রহমানের “প্রহসনের বিচারের” বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে।
জনাব চৌধুরী ব্রিটেনে চতুর্থ পদত্যাগী পাকিস্তানী কূটনীতিক ছিল।সে তার সিধান্ত ১১ আগস্ট জানিয়েছিল যখন প্রায় ২০০০ বাঙালি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ডাউনিং স্ট্রিটে গিয়েছিল শেখ রহমানের মুক্তির জন্য।
বিক্ষোভকারীরা হাইড পার্কে সমবেত হয় এবং শেষ হবার আগ পর্যন্ত লন্ডনের প্রধান রাস্তা দিয়ে মিছিল করে।
<003.280.774> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জনাব চৌধুরী বলেন, এটা বিদ্রূপাত্মক ছিল যে শেখ রহমানের বিরুদ্ধেপাকিস্তানেরপরিচালনাপরিষদে সাজানো মামলা করার চেষ্টা করা হয়েছিলএকটিচক্রের মাধ্যমে যেটার কোন আইনি বৈধতা ছিলনা । এই চক্র ডাহা মিথ্যা বলেছে জনগণ নির্বাচিত নেতাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে।
জনাব মহিউদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ :
হংকংয়ে ভারপ্রাপ্ত পাকিস্তানি ট্রেড কমিশনার, জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ ১৮ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমর্থনে পদত্যাগ করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে, জনাব আহমেদ পাকিস্তান সরকারকে পূর্ববঙ্গে নির্মম গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেন।এটা কোন ব্যাক্তির পক্ষে আর সম্ভব নয় এমন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করা যারা গণহত্যায় জড়িত।আমরা নিরব দর্শক হয়ে থাকতে পারিনা যেখানে দেশের হাজার হাজার মানুষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
জনাব এ এফ এম আবুল ফতেহ এর পদত্যাগ :
ইরাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, জনাব এ এফ এম আবুল ফতেহ ২১ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য শিকার করেন।
জনাব ফতেহ এখন পর্যন্ত পদত্যাগকারী সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পাকিস্তানী কূটনীতিক।
তিনি আট মাসের জন্য বাগদাদের রাষ্ট্রদূত হয়েছিলেন এবং তার পূর্বে
প্যারিস, ওয়াশিংটন,প্রাগ, নয়া দিল্লি ও কলকাতায় ছিলেন।
১৯৬৬ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি ছিলেননয়া দিল্লির চ্যান্সেলর এবং পরে ডেপুটি হাইকমিশনার। তারপরের দুই বছরতিনি কলকাতার ডেপুটি হাইকমিশনার ছিলেন।
<003.281.775> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে নিয়োগকৃত ডঃ মালিকের নিয়োগ সম্পর্কিত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রেস বিজ্ঞপ্তি | বাংলাদেশ সরকার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলিকাতা-১৭
(স্বীকৃতি সহ বা স্বীকৃতি ছাড়া পূর্নগঠন করা যেতে পারে)
_____________________________________________________________________________________________
নং. পি আর /৪৩ মুজিবনগর
২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
‘পরাজয়ের স্বীকৃতি’
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ড. মানিকের সাক্ষাৎকারের উপর
১। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ বাংলাদেশের দখলকৃত অঞ্চলের শাসক হিসেবে ড. মানিকের সাক্ষাৎকার ‘পরাজয়ের
স্বীকৃতি’ হিসেবে আখ্যা দেন।
২। উল্লিখিত তারিখে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, স্বদেশদ্রোহী শ্রমিকসংঘের সমর্থক এবং বাংলাদেশের দখলকৃত অংশের শাসক ড. এ এম মালিকের সাক্ষাৎকারটি ইসলামাবাদের তথাকথিত সামরিক জান্তা বাহিনীর পরাজয়ের স্বীকৃতি। এটা স্পষ্ট যে টিক্কা খানের নির্মম হত্যা, লুটপাট, দহন যন্ত্রণা এবং ধর্ষণ বাংলাদেশের মাটিকে কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত করেছে। হত্যাকারীর পতন হয়েছে এবং তার সাহসের মহীমা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়েছে। সে একজন অসার এবং মাথা নিচু হওয়া নিন্দিত ব্যক্তি। জেনারেল ইয়াহিয়া খানের জন্য এটা স্পষ্ট বার্তা।
৩। এই উদ্দ্যেগকে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে আখ্যা করে। এটা উল্লেখ্য যে, ইসলামাবাদের হত্যাকারীরা ‘বেসামরিক নিয়ম পুনরুদ্ধার’ জারি করে উপনিবেশে, পশ্চিম পাকিস্তানে নয়। ঔপনিবেশিক শাসন, স্বায়ত্ত্বশাসন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা ২৫ মার্চ , ১৯৭১ এর আগের ইস্যু ছিল। জনগন সবাই আওয়ামী লীগকে শাসন এর জন্য নির্বাচন করেছিল। বেসামরিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা মানে হলে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এবং হুকুম ছাড়া মানুষদের নিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা।
৪। মি: মানিকের সাক্ষাৎকারটি ছিল বর্হিবিশ্বের চোখে ধুলো দেওয়া এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টির একটা প্রচেষ্টা মাত্র। বাংলাদেশের জনগন এই ধরনের নাগরিক শাসন পুনর্গঠনের নকশা সম্পর্কে জানে। তারা এমন পুনর্গঠন দেখেছে ১৯৫৮ সালে আইয়্যুবএর অভ্যুত্থানের পর এবং ১৯৬৯ সালে ইয়াহিয়া ক্ষমতায় আরোহণের এরপর। যখন একটি উপনিবেশ সামরিক সরকার দ্বারা শাষিত হয় তখন তা তীব্র দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
<003.281.776> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যখন একজন সামরিক গভর্নরের ঔপনিবেশিক শাসন বিদ্রূপপূর্ণ,দুর্গন্ধযুক্ত এবং লজ্জাজনক হয়ে উঠেছে,তখন সামরিক শাসকগন বাংলাদেশের সুবেদার হিসেবে একজন বেসামরিক মীরজাফর কে রোপণ করার চেষ্টা করছেন।এইবারও সামরিক শাসকগন ঔপনিবেশিক প্রশাসনের মূল নিয়ম ব্যবহার করেছেন।বিদেশী শক্তিগুলোকে সাহায্য ও সহযোগিতা প্রদানের জন্য বোঝানোর এই পরিচিত চেষ্টা এবার ফলপ্রসূ হবে না।
৫. ড. এ এম মালিক একজন বৃদ্ধ ব্যক্তি।তার অতীত সন্দেহজনক এবং কোন ভবিষ্যৎ নেই।এইদিকে তিনি বাংলাদেশের মাটিতে তার প্রভুদেরদ্বারা সংগঠিত সহ্যসীমার বাইরের অপরাধের কথা না শুনতে সম্মত হয়েছেন।তিনি দেয়ালের লিখন পড়তে অক্ষম কারন তিনি অধঃপতিত ও ভীমরতিগ্রস্থ।আমরা শুধু তাকে করুণা করতে পারি ।
<003.282.777> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের সরকার ও জাতিসংঘের মধ্যে
বিনিময়কৃত চিঠি ও আনুষঙ্গিক তথ্য |
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় | ৪সেপ্টেম্বর,১৯৭১ |
প্রদত্ত তারিখ,৪সেপ্টেম্বর,১৯৭১
প্রেরক :জনাব মউদুদ আহমেদ,
৪-এ পাম এভিনিউ,বালিগঞ্জ,
মেফেয়ার রোড,কলকাতা-১৯.
প্রাপক : জনাব ব্রায়ান ই. উরকহার্ট,
পরিচালক,
বিশেষ রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক সহকারী মহাসচিবের কার্যালয়,
নিউইয়র্ক.
জনাব,
২৭শে অগাস্টের আপনার চিঠির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি খুশি যে মহাসচিব শেখ মুজিবর রহমানের পরিণতি কে উদ্বেগের বিষয় বলে বিবেচনা করেন যেমনটা তিনি অগাস্টের ১০ তারিখে দেয়া বিবৃতিতে প্রকাশ করেছিলেন।
তারবার্তা পাঠানোর প্রধান কারণ ছিল জাতিসংঘের মহাসচিব কে এই মর্মে পাকিস্তান সরকারের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো যে,ঢাকায় তার একজন পরামর্শদাতা হিসেবে আমি এখনো,শেখ মুজিবর রহমান যে আমাকে পরামর্শ দিতে ইচ্ছুক সেটা জানার সুযোগের জন্য তৈরি,যাতে করে পাকিস্তানে প্র্যাকটিস করতে যোগ্যতা সম্পন্ন তার পছন্দের আইনজীবীগণ তার পক্ষে মামলা পরিচালনা করতে পারেন।পাকিস্তান সরকার কতৃক নিয়োজিত জনাব এ কে ব্রহি তার নিজের পছন্দের আইনজীবী নন।আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যদি আপনার অফিসের মাধ্যমে শেখ মুজিবর রহমান কে এটা জানানো যায় তাহলে তিনি তৎক্ষণাৎ আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইবেন।
মহাসচিবের দক্ষতা ও এখতিয়ার সম্পর্কে আমি সচেতন কিন্তু আপনাকেও উপলব্ধি করতে হবে যে আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য আমি সরাসরি পাকিস্তান সরকারের নিকট প্রস্তাব দিতে পারছি না।
যদি এটা কোনভাবে ব্যবস্থা করা সম্ভব হয় তাহলে এই অঞ্চলে শান্তি আনার উদ্দ্যেশের ক্ষেত্রে সেটা খুবই উপকারী হবে।আমি আপনাকে আশ্বস্ত করছি যে ভালো কিছু অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই বিষয়টি গোপন থাকবে।
দ্রুত উত্তর অত্যন্ত প্রশংসনীয় হবে।
আপনার বিশ্বস্ত
(মউদুদ আহমেদ)
<003.282.778> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জাতিসংঘ
নিউইয়র্ক
২৭ই আগস্ট, ১৯৭১
প্রিয় জনাব আহমেদ,
জাতিসংঘের মহাসচিবের পক্ষে আমি,শেখ মুজিবর রহমানের বিচার প্রসঙ্গে ১৮ আগস্ট, ১৯৭১ তারিখে আপনার প্রেরিত তারবার্তার প্রাপ্তি স্বীকার করছি।
শেখ মুজিবর রহমানের পরিণতি মহাসচিবের জন্য উদ্বেগের বিষয়,তার আসন্ন বিচার সংক্রান্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট ১৯৭১ তারিখের সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মুখপাত্র মহাসচিবের প্রতিক্রিয়া ব্যাখ্যা করেছেন।আপনার অবগতির জন্য ঐ বিবৃতির একটি অনুলিপি সংযুক্ত করা হল।
যাই হোক,মহাসচিব দুঃখের সাথে এই নির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার অনুরোধে রাজি হতে পারছেন না।বর্তমান পরিস্থিতির বাড়াবাড়ি রোধ করার লক্ষ্যে তিনি তার দক্ষতা ও ক্ষমতার মধ্যে থেকে কাজ করছেন এবং যতদূর সম্ভব তিনি কাজ করে যাবেন।আমি নিশ্চিত যে আপনি বুঝবেন এই কাজ প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং প্রচার ছাড়াই করতে হবে।
আন্তরিকভাবে আপনার
ব্রায়ান ই. উরকহার্ট
পরিচালক
বিশেষ রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক
সহকারী মহাসচিবের কার্যালয়,
জনাব মউদুদ আহমেদ
৪-এ পাম এভিনিউ
মেফেয়ার রোড,কলকাতা
ভারত
—————————
<003.282.779> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জাতিসংঘ
প্রকাশনা বিভাগ
সাধারন তথ্য সংক্রান্ত অফিস
জাতিসংঘ,নিউইয়র্ক.
(মিডিয়ায় ব্যবহারের জন্য-অফিসিয়াল রেকর্ড নয়)
নোট নং. ৩৬৭৮
১০ অগাস্ট ১৯৭১
সংবাদদাতাদের প্রতি নোট
শেখ মুজিবর রহমানের আসন্ন বিচার সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে জাতিসংঘের একজন মুখপাত্র জানান যে,
“মহাসচিব মনে করেন যে এটি খুবই স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল বিষয় যা একটি সদস্য দেশের – এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিচার ব্যবস্থার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে। মানবিক দৃষ্টিকোন সেই সাথে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকেও এই বিষয়টি অনেক পক্ষের জন্য বিশেষ আগ্রহ ও উদ্বেগের। প্রায় প্রতিদিনই পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন সকারের প্রতিনিধিগণ মহাসচিবের নিকট গভীর উদ্দেগ প্রকাশ করেছেন এবং এখানে একটা সাধারণ ধারণা রয়েছে যে এক ধরনের বোঝাপড়ায় না পৌঁছালে এই অঞ্চলে শান্তি ও স্বাভাবিক অবস্থা প্রত্যপর্ণ করা কঠিন হবে। অনেক প্রতিনিধির মত মহাসচিবও মনে করেন যে শেখ মুজিবর রহমানের পরিণতি সম্পর্কিত যে কোন সিদ্ধান্তে অবধারিত ভাবে পাকিস্তানের সীমার বাইরে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।”
<003.283.780> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ মিশন প্রধানের
বক্তব্য- ৮ই সেপ্টেম্বর |
এশিয়ান রেকর্ডার অক্টোবর
১-৭, ১৯৭১ |
৮ সেপ্টেম্বর,
১৯৭১ |
জনাব কে.এম.সাহাবুদ্দিনের দাবিঃ
৮ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লীস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান জনাব কে.এম.সাহাবুদ্দিন দাবি করেন যে “বাংলাদেশের প্রায় পুরো এলাকা আমাদের নিয়ন্ত্রনে”।
প্রেস ক্লাবে মধ্যাহ্নভোজেরআয়োজনের একটি সভায় তিনি বলেন যে “এমনকি ঢাকা যা ইসলামাবাদের জন্য নিরাপদ ছিল তাও এখন আর পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ততটা নিরাপদ নয়।আমাদের সংগ্রামে আমরা যথেষ্ট সফলতা অর্জন করেছি।”
তার সহকর্মী, জনাব আমজাদুল হক পশ্চিম পাকিস্তানকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন যে শেখ মুজিবর রহমানের কোন ক্ষতি করা হলে সেটা শান্তির প্রতি হুমকি তৈরি করবে কারণ তিনি শুধু বাংলাদেশের নন, সারা পৃথিবীর।
জনাব সাহাবুদ্দিন বলেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের সফলতা পাকিস্তান আর্মির সদস্যদের কান্টনমেন্টের সীমানার মধ্যে থাকতে বাধ্য করছে।“পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ শুধু ক্যান্টনমেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ”।
জনাব হক,বাংলাদেশ ইস্যুর রাজনৈতিক সমাধানের পূর্বশর্ত হিসেবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি কতৃক সামনে আনা ৪-দফা প্রস্তাব পুনরায় ব্যক্ত করেন। সেগুলো হল : পশ্চিম পাকিস্তান কতৃক বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দান,বিনাশর্তে শেখ মুজিবর রহমানের মুক্তি,আক্রমণকারী সেনাদল সরিয়ে নেয়া এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীদ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের সকল ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরন প্রদান করা।
জনাব সাহাবুদ্দিন এবং জনাব হক উভয়ই ঘোষণা করেন যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধের সংগ্রামে “ আমরা আর নিরস্ত্র,অপ্রশিক্ষিত এবং অসহায় নই”।
<003.284.781> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ সরকারের ভারতস্থ হাইকমিশনার
কর্তৃক স্বপক্ষ ত্যাগের কারণ ব্যাখ্যা |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ৯ সেপ্টেম্বর,
১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মিশন
৯,সার্কাস এভিনিউ,কলকাতা-১৭
বাংলাদেশ
মানুষেরর জীবনে কখোনো কখোনো এমন সময় আসে যখন অস্থায়ী কতৃপক্ষের কাছে বশ্যতা স্বীকারের চেয়ে কোনো মহতী আদর্শের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা উচিত।।কোনো সরকার তার ক্ষমতাবলে জোর করে আনুগত্য আদায় করতে পারে না। যখন তারা একটি সভ্যসমাজের প্রাথমিক নর্মস ও আদর্শ ভঙ্গ করা শুরু করে এবং মানবতা বিরোধী অপরাধ করে,যেমনটা পাকিস্তান সরকার করেছে তখন এর বিরোধিতা করা নৈতিক ভাবে অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।জেফারসন তাই বলেছিলেন,’ স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্যের প্রকাশ।‘
আমি পাকিস্তানের বৈদেশিক বিভাগের সদস্য হিসাবে প্রায় ২২ বছর পাকিস্তান সরকারের সেবা করেছি এবং সর্বোচ্চ বিশ্বস্ততার সাথে পাকিস্তানের জন্য কাজ করেছি।এমনকি পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশী নাগরিকদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য যুদ্ধ শুরুর পরেও আমি সরকারের জন্য কাজ করে গেছি।যেহেতু সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল সেই কারনে বাংলাদেশে কি ঘটছে সেই বিষয়ে আমার কাছে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য ছিল না।হাজারো ভীত আহত ও পঙ্গু শরণার্থী রক্ত হিম করা অমানবিক নৃশংসতার ঘটনা নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতে এসেছে যা সরকারের দাবিকে মিথ্যা প্রমান করেছে।ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানকারি এবং খুব কাছ থেকে এসব ঘটনা দেখেছেন এমন কিছু বিদেশী ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকদের রিপোর্টআমার কাছে আসা শুরু করে এবং তথ্যেরএকটি নিরপেক্ষ উৎস তৈরি হয়।এইসব রিপোর্ট থেকে যে অবস্থা উঠে আসে সেটা ভয়াবহ ও মর্মস্পর্শী।এগুলো সন্দেহের উর্ধ্বে প্রমান করে যে বাংলাদেশে ঠাণ্ডা মাথায় গনহত্যা চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের সরকার, বর্তমানে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তাসরকার। এরা মরিয়া হয়ে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করছে।যদিও তারা মাত্র ৮ মাস পূর্বে নিজের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচন বাতিল করেছে।সামরিক জান্তা হিংস্রতা নৃশংসতা ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে চুপ করিয়ে রাখতে চাইছে। এদের কর্তৃত্ব সম্পূর্ণভাবে সামরিক শক্তির উপর নির্ভরশীল এবং এর নিয়ন্ত্রণ গোলন্দাজবাহিনীর পরিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ।এই সরকার এমনকি ক্ষমতায় থাকার ভান করারও সকল বৈধতা হারিয়েছে।পাকিস্তান জাতিকে এরাই ধ্বংস করছে।পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সামরিক অভিযানের ফলে সৃষ্ট মৃতদেহের পাহাড় ও ধ্বংসাবশেষের নিচে সমগ্র পাকিস্তান চাপা পড়ে আছে।
বাংলাদেশ একসময় ছিল সমৃদ্ধির সোনালি অঞ্চল। পশ্চিম পাকিস্তানের বর্বর দলের কারণে সেটা এখন ঝলসে যাওয়া ভূমিতে পরিণত হয়েছে।বাংলাদেশের নিরস্ত্র,শান্তিপ্রিয় ও গনতান্ত্রিক মনভাবাপন্ন মানুষের উপর ইয়াহিয়া-হামিদ-ভুট্টোর ভাড়াটে গুন্ডাদের লেলিয়ে দেয়া হয়েছে।বাংলাদেশে বর্তমানে খুন,লুন্ঠন,অগ্নিসংযোগ,ধর্ষণ নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
<003.284.782> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের জনগণদের হত্যা করেছে এবং করে চলেছে।তারা অসংখ্য মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অগণিত মানুষ জীবন বাঁচাতে,অপমান থেকে,অসম্মানিত হওয়ার থেকে এবং গণহত্যার থেকে রক্ষা পেতে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।জনসাধারণের মধ্যে অবিশ্বাস,ভয়,চিন্তা এবং উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।বাংলাদেশে ঘটতে থাকা ভয়াবহ ও নৃশংস ঘটনা আপনাদের অজানা নয়।
যদি পশ্চিম পাকিস্তানী কায়েমি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ ও তাদের পোষ্য সামরিক জান্তা বাংলাদেশ কে পাকিস্তানের অংশ বলে মনে করতো তাহলে তারা বাংলাদেশ কে উপিনেবেশ বানাতো না,তারা গণহত্যা,গণধর্ষন,অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হত না।এখন তারা সারা পৃথিবীকে বিশ্বাস করাতে চায় যে বাংলাদেশীরা বিচ্ছিন্নতাবাদী।যে ৬ দফা কর্মসূচিতে নির্বাচনের আগে ও পরে জেনারেল ইয়াহিয়া কোন সমস্যা পান নাই সেই একই কর্মসূচি ২৬শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে রাষ্ট্রবিরোধী বলে আবিষ্কৃত হল।এটা একটা রসিকতা যে যদিও ইয়াহিয়া নির্বাচনের পরে ঘোষণা দেন নির্বাচন সম্পূর্ণরুপে অবাধ ও সুষ্ঠ হয়েছে কিন্তু মার্চের ২৬ তারিখে তিনি বলেন যে আওয়ামী লীগ হুমকি ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জনসমর্থন পেয়েছে।নির্বাচনের সময় তার সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে তিনি যে নিজেই স্বীকার করেছিলেন সেটা তিনি ভুলে গেছেন।এটা শতাব্দীর সেরা পরিহাস যে যাকে তিনি “পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী” বলে উল্লেখ করেছিলেন সেই ব্যক্তিই রাতারাতি “বিশ্বাসঘাতকে” পরিণত হল।
এই বর্বরতা ও নৃশংসতা দিয়ে বাঙ্গালীদের মনোবল দমিয়ে রাখা যাবে না।যে জাতি সাংবিধানিক আন্দোলনে বিশ্বাসী তাদের হঠাৎ করে যুদ্ধের মাঝে ঠেলে দেয়া হয়েছে।এখন বাংলাদেশ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে,মুক্তিযুদ্ধ।পশ্চিম পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর হাত থেকে মাতৃভূমিকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের জনগণ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও একতাবদ্ধ।মুক্তি সংগ্রামকে সংগঠিত ও ফলপ্রসূ করার জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ ১২ এপ্রিল,১৯৭১ তারিখে মিলিত হন এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকার গঠন করেন।বাংলাদেশের প্রগতিশীল সকল রাজনৈতিক দল এই সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছে।মুক্তিবাহিনী সকল ক্ষেত্রেই শত্রুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত।নিয়মিত বাহিনি,গেরিলা যোদ্ধারা,কম্যান্ডো বাহিনী এবং দ্রুত আঘাত করে পালিয়ে যাওয়া যোদ্ধারা শত্রুদের প্রচন্ড ক্ষতি করছে।ইয়াহিয়ার কসাইদের কবল থেকে পালিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার তরুণ ইয়ুথ ক্যাম্পে আসছে।তারা চূড়ান্ত যুদ্ধের জন্য নিজেদের তৈরি করছে।আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।আমাদের সংগ্রাম সত্যের জন্য,মানুষের মর্যাদার জন্য এবং গনতন্ত্রের জন্য।সুতরাং আমাদের সাফল্যের ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী।
পাকিস্তান যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে যে এটা তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়।কিন্তু সত্যি কি তাই যখন এই অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে,যখন একটা জাতিকে ধ্বংস করতে চাওয়া হচ্ছে যার সুদূরপ্রসারিত ভৌগলিক সীমানা,ভাষা,সাহিত্য,সংস্কৃতি,আশা এবং আকাঙ্ক্ষা রয়েছে?
এটা কি নিষ্ঠুর রসিকতার মত শোনায় না যখন পাকিস্তানের বর্বরতার প্রেক্ষিতে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ কে হত্যা করা হচ্ছে,বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে,যখন নারীদের ধর্ষন করা হচ্ছে,যখন বুদ্ধিজীবী ও ছাত্রদের খুঁজে বের করা হচ্ছে এবং হত্যা করা হচ্ছে?
প্রদত্ত তারিখ (এম.হোসেন আলী)
৯ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ বাংলাদেশ সরকারের ভারতস্থ হাইকমিশনার
<003.285.783> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগের একটি সভার
কার্যবিবরণী |
বাংলাদেশ সরকার,
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
১৩ সেপ্টেম্বর,
১৯৭১ |
সভার কার্যবিবরণীর বর্ণনা
অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৩.৯.১৯৭১
উপস্থিত: (১) পরিচালক-বহির্বিশ্ব প্রচার মন্ত্রণালয় এবং বৈদেশিক সম্পর্ক,
ভারত সরকার.
(২) পরিচালক-জাতিসংঘের ভারত বিষয়ক দপ্তর
(৩) ব্যবস্থাপনা পরিচালক,অল ইন্ডিয়া রেডিও
(৪) পরিচালক-সরকারী প্রচার বিভাগ
(৫) পরিচালক- টেলিভিশন সংক্রান্ত বিষয়ের
(৬) ভারত সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
(৭) সহকারী পরিচালক,পিআইবি,কলকাতা
(৮) জনাব এম.এ.সামাদ,প্রতিরক্ষা সচিব,বাংলাদেশ সরকার
(৯) এ.পি.এ বাংলাদেশ মিশন.
সভাপতিত্ব করেছেন জনসংযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা,বহির্বিশ্ব প্রচার বিভাগ,বাংলাদেশ সরকার।
প্রেস রিলিজ থেকে বাংলাদেশের শিল্পী,শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের সমবেত করার বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
১.(ক) বুলেটিন সম্পর্কিতঃ পরামর্শ দেয়া হয়েছে যে যুদ্ধ বুলেটিন সহ বাংলাদেশ সরকারের সকল বুলেটিন বিকাল ৩.৩০ এর পূর্বে প্রকাশ করতে হবে এবং স্থানীয়ভাবে প্রেসে প্রকাশের আগে বুলেটিনগুলো পিআইবি টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে দিল্লি পাঠাতে হবে।
(খ) ক্ষেত্রবিশেষে এবং যদি খুব প্রয়োজনীয় না হয় তাহলে বিকাল ৩.৩০ এর পরের বুলেটিন প্রকাশ পরের দিনে করা হবে।
(গ) পিআইবির জনাব রথের সাথে এই উদ্দেশ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জনাব এম.মাকসুদ আলি,এপিএ লিঁয়াজো হিশেবে মনোনীত হয়েছেন।উভয়েই সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং এই বন্দোবস্তের ব্যাপারে তাদের সরাসরি জ্ঞান রয়েছে।
২.জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে যে সব প্রয়োজনীয় সংকলন নিয়ে যেতে হবে সেগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।প্রতিনিধিদলকে কি কি প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে হবে সেই ব্যাপারে জনাব ডিকইট উপদেশের মাধ্যমে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।সেগুলো হলঃ-
ক) নেতাদের ধারণকৃত বক্তৃতা
খ) ৭০ সালের ডিসেম্বর থেকে ৭১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস
গ) কাগজপত্র যা সংগ্রাম কে নায্যতা দেয় এবং গত ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিষয়টি প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাখ্যা করেছে।
<003.285.784>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ঘ) শরণার্থীদের রেকর্ডকৃত সাক্ষাৎকার
ঙ) ধারণকৃত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা,যদি থাকে
চ) গুরুত্বপূর্ণ বিদেশী ব্যক্তিদের নির্বাচিত সাক্ষাৎকার
ছ) গণহত্যা সম্পর্কিত সিনেমা
জ) যথাযত সম্পাদনার পরে জনাব জহির রায়হানের প্রামাণ্যচিত্র
ঝ) যদি সম্ভব হয় তাহলে যাদের কাছে পাঠান হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকারের রেকর্ড।
অল ইন্ডিয়া রেডিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অত্যন্ত সুহৃদ ব্যক্তি এবং তিনি এইসব সাক্ষাৎকার রেকর্ড করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জনাব মউদুদ আহমেদের নিয়ন্ত্রনে কাজ করার জন্য একজন ইঞ্জিনিয়ার কে পাঠিয়েছেন।তিনি আরও আশ্বাস দিয়েছেন যে এই ব্যাপারে স্টেশন পরিচালক জনাব ডি.কে.সেন গুপ্ত আমাদের সম্ভাব্য সকল ধরণের সাহায্য করবেন।
৩. শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীগণঃ-বাংলাদেশী শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের পুর্নবাসন ও তাদের মেধার কার্যকর ব্যবহার প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।আলোচনায় অংশ নেয়া বন্ধুরা শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে আলোচনা করতে নিষেধ করেন কারণ পরে কলকাতায় আসা একটি আলাদা দল এই বিষয়ে আলোচনা করবেন।কিন্তু শিল্পীদের প্রতিভার কার্যকর ব্যবহার প্রসঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করা হয়েছে।সভাপতি ভারতে বাংলাদেশী শিল্পীদের কার্যক্রমের বিস্তারিত পটভূমি বর্ননা করেন।নিম্নেউল্লেখিত বিষয়গুলো সভায় উপস্থাপন করা হয়:-
(ক) শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের সংগঠনসমূহের নাম।সংগঠনের মোট সংখ্যা ৫।
(খ) এত সংগঠন হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়।যেহেতু সরকার সকল শিল্পীদের সহায়তা করতে পারছে না বা তাদের মেধার ব্যবহার করতে পারছে না সেহেতু তাদের নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ এবং সহায়তা অর্জন করতে হচ্ছে।
(গ) শিল্পীদের মধ্যে বিদ্যমান পরস্পর বিরোধী স্বার্থও ব্যাখ্যা করা হয়েছে।কিন্তু মাতৃভূমির মুক্তিই যে সকলের মাঝেই বিদ্যমান সর্বজনীন উদ্দেশ্য তার উপরও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।এই পটভূমি শোনার পরে সভায় উপস্থিত সকলে শিল্পীদের মেধাকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা আলোচনা করতে চান।আলোচনার মাধ্যমে নিম্নেউল্লেখিত পরামর্শগুলো দেয়া হয়ঃ-
(II)শিল্পীদের ৫টি দলে ভাগ করা সম্ভব হবে কি না যেমন :
(ক) একটি দল ইয়ুথ ক্যাম্প ও শরণার্থী শিবিরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করবে।
(খ) একটি দল সেনাবাহিনী ও গেরিলা ঘাঁটিতে সেনাদের কিভাবে বিনোদন দেয়া যায় সেই বিষয়টি দেখভালের দায়িত্তে থাকবে।
(গ) ভারতের জনগনের মাঝে বাংলাদেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য একটি দল ভারতের বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করবে।
(ঘ) একটি দল রেডিও বাংলাদেশে কাজ করবে।
(ঙ) বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের বিষয়টি একটি দল ব্যাপকভাবে প্রচার করবে।
(iii) মুক্তি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার তার প্রভাব ব্যবহারের মাধ্যমে এই সংগঠনের শিল্পীদের ব্যক্তিগত কার্যক্রম স্থগিত রাখতে পারবে কিনা।
এই উদ্দেশ্যে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ও প্রকল্প তৈরি করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং তারা আশ্বস্ত করেছেন যে অর্থের ব্যাপারে সমস্যা হবে না।
<003.285.785> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এগুলো করার পূর্বে অপরিহার্য কিছু পরামর্শ হচ্ছে:-
(ক) বাংলাদেশের সরকারের সাথে সকল শিল্পীর নিবন্ধন।
(খ) তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে এই সব প্রস্তাবের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা। প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল যে আজ(১৪.৯.৭১) বিকাল ৫টায় মিশন প্রাঙ্গনে শিল্পীদের সাথে আমাদের বন্ধুরা দেখা করবেন।তারা আনন্দের সাথে রাজি হয়েছেন।
বাংলাদেশে প্রাপ্ত যাবতীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য উঠে আসে।বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পরিচালিত অভিযানের বিস্তারিত তথ্য কিভাবে প্রকাশ করা যায় সে প্রশ্নটি এজেন্সির আকারে ছোট সংবাদ প্রতিষ্ঠান গঠনের পরামর্শ প্রসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।যদিও এই প্রসঙ্গে কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় নাই।আজ বিকাল ৩টা পর্যন্ত সভা স্থগিত করা হয়েছে।
এপিএ,রেডিও পাকিস্তানের উপর নজরদারির রিপোর্ট আমদের জন্য সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন।অল ইন্ডিয়া রেডিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিষয়টি নোট করেছেন এবং সম্ভাব্য সকল সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।
অনুলিপি যাদের প্রতি:-
১.তথ্য ও প্রচার মন্ত্রণালয়
২.পররাষ্ট্রমন্ত্রী
৩. পররাষ্ট্র সচিব
৪.হাই কমিশনার, কলকাতা
৫.জনাব সামাদ, প্রতিরক্ষা সচিব
৬.সহকারী পরিচালক,পি.আই.বি., কলকাতা
৭.জনাব মউদুদ আহমেদ
৮.এ.পি.এ.
<003.286.786> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.286.787> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পেইজ ৭৮৬
কার্যবৃত্ত (দ্বিতীয়) অনুষ্ঠিত হয় ১৪ সেপ্টেম্বর,১৯৭১ সালের বিকাল ৪ ঘটিকায়। উপস্থি ছিলেনঃ
১.মহাপরিচালক,অল ইন্ডিয়া রেডিও
২.পরিচালক,বহিঃ প্রচার বিভাগ,ভারত সরকার
৩.পরিচালক, অল ইন্ডিয়া রেডিও ( টেলিভিশন খাত)
৪.প্রফেসর, এম খালেদ,MNA,সম্পাদক,বহিঃপ্রচার বিভাগ,বাংলাদেশ সরকার।
৫. জনাব এম.এ সামাদ,সচিব(প্রতিরক্ষা), বাংলাদেশ সরকার
৬.জনাব মাকসুদ আলি,সহকারী প্রেস সংযুক্ত,বাংলাদেশ হাই কমিশন ।
জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর,MNA,জনসংযোগ উপদেষ্টা, বহিঃপ্রচার বিভাগ,সভায় সভাপতিত্ব করেন। জনাব এম.এ সামাদ সভায় আলোচনা শুরুর সময় বলেন কিভাবে মানুষ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত, পশ্চিম পাকিস্তান এবং বিদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের তথ্য সম্পর্কে অবহিত হয়।তিনি স্থানাঙ্ক এবং আরো কার্যকর ফলাফলের জন্য কিছু অভিক্ষেপের উপর গুরুত্বারোপ করেন।জনাব সামাদ প্রস্তাব দেন যে, সংবাদ বুলেটিন লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত যাতে বাংলাদেশ বেতার সর্বশেষ সংবাদ ব্যবহার করতে পারে।সংবাদের উপস্থিত ব্যবস্থা সন্ধ্যা সংক্রমণের জন্য বিকাল তিনটার মধ্যে রেকর্ড করা হয়।জনাব সামাদ অবহিত করেন যে, বর্তমানে ৫/৬ ঘন্টার প্রোগ্রাম দৈনিক তিনবার সম্প্রচার করা হচ্ছে এবং এই রেডিও কর্মচারীদের সদস্য সংখ্যা মোট ৩৭ জন।তিনি আরও জানান যে, বিশেষ করে সন্ধ্যায় রেডিও প্রোগ্রামে অনেকেই নিয়মিত নন। তিনি প্রস্তাব দেন যে,ভারতীয় প্রতিভা স্ক্রিপ্ট প্রস্তুতির কাজে লাগানো যেতে পারে। জনাব মাকসুদ আলি প্রস্তাব দেন যে, উর্দু সংবাদপত্রের প্রবণতা জানার জন্য তাদের মতামত সারাংশ পেতে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। তাকে জনাব রায়ের সাথে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আলোচনার সারাংশে জনাব তাহের উদ্দীন ঠাকুর একমত হন যে, রেডিও প্রোগ্রাম জনগণের প্রত্যাশার খাতিরে আরও উন্নত করা যেতে পারে। তিনি প্রস্তাব করেন যে, প্রোগ্রাম আরো বাড়ানো উচিত এবং প্রোগ্রাম আয়োজকদের উভয় পক্ষকে মাসে অন্তত দুবার আলোচনায় বসতে হবে।সমস্ত উন্নতির জন্য তিনি প্রস্তাব করেন যে, স্টুডিও তে আরও টেপ রেকর্ডার, লাইব্রেরীর ব্যবস্থা করা উচিত।দুই স্টুডিওর বর্তমান অবস্থা এবং তিনটি টেপ রেকর্ডার যেন দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে বলেন।তিনি, শিল্পিদের বাসস্থানও যে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেই বিষয়টিও মেনশন করেন।
পেইজ ৭৮৭
আরও ব্যবস্থারর উপর চাপ দিয়ে অন্তত নূনতম সুযোগ সুবিধা দিয়ে শ্রমিকদের সাথে মিটমাট করবার প্রস্তাব দেন জনাব ঠাকুর। তিনি A.I.R সংবাদ বুলেটিন থেকে D.G তে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যেখানে একটি মেয়াদে “মনোনীত” বাংলাদেশের মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।(উদাহরণঃ জনাব তাজউদ্দীন আহমহ,মনোনীত প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ) D.G. A.I.R. ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে এসব বিষয়ে তিনি সম্পুর্ন আত্মবিশ্ববাসীতিনি আরো জোর দিয়ে বলেন যে, বাংলাদেশ বেতারের উচিত তার নিজস্ব ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রাখা।
<003.287.788> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.287.789> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারতস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনার কর্তৃক একটি চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন কালে প্রদত্ত বক্তব্য |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
BANGLADESH PRESS RELEASE
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলিকাতা-১৭
(স্বীকৃত তথ্য উপাত্ত সহকারে বা ব্যতিত পুনর্লিখিত)
————————————————————————————————————————
নং – পিআর/৪৯ সেপ্টেম্বর ১৪, ১৯৭১
এম হোসেইন আলী চিত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন।
“আমি জনাব সুবল পাল এমন একটি অসাধারণ চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ প্রদান করতে চাই, যা বর্তমানে বাংলাদেশে হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হচ্ছে তাতে অবদান রাখবে।” ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার জনাব এম হোসেইন আলী চিত্র প্রদর্শনীতে এই কথা বলেন।
জনাব হোসেইন আলী ১৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ সালে চারুকলা একাডেমীতে চিত্রকর সুবল পাল এর চিত্রকর্মের প্রদর্শনীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এছাড়াও জনাব আলী আরো বলেন যে সমালোচকরা হয়তো বলেন যে শিল্পের মধ্য দিয়ে উপযোগবাদী চরিত্র ফুটে উঠে না। কিন্তু শিল্প সবসময়ই মানবতা এবং সভ্যতার জন্য অপরিহার্য। এটি একটি জাতির চিন্তাধারা ও ভাবমূর্তি ফুটিয়ে তোলে। রঙ তুলির ইস্পাত কঠিন আঁচড়ে চিত্রকর সুবল পাল বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তার একটি পরিষ্কার ছবি তুলে ধরেছেন। বলা হয়ে থাকে শিল্পের কাজই হচ্ছে বিনোদন প্রদান এবং সেই সাথে শিল্পীর জন্য উৎসাহের একটি অশেষ উৎস হয়ে ওঠা। যদি তাই হয়, তবে আমার মনে হয় এই ছবিগুলো অনেকের জন্যই হতাশা ও মন খারাপের কারণ হতে পারে কারণ এই ছবিগুলোতে চিত্রকর সুশান্ত পাল সাড়ে সাত কোটি মানুষের উপর একটি বিদেশী সেনাবাহিনীর অন্যায় আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞের জীবন্ত চিত্র তুলে এনেছেন। চিত্রকর তার ছবিতে বাংলাদেশে ঘটে ্যাওয়া বিষয়গুলো এমোণভাবে তুলে ধরেছেন, যেভাবে এইসব অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে একজন শিল্পীর প্রতিবাদ জানানো উচিত। তিনি তার কাজটি সথিকভাবে এবং যথাযথভাবেই করেছেন।
দেশের মুক্তি সংগ্রাম নিয়ে হাইকমিশনার আরো বলেন যে সভ্য পৃথিবীতে সবাই বাংলাদেশে যা হয়েছে এবং যা এইমুহুর্তেহচ্ছে সেইসব সম্পর্কেসবই জানেন। তাদের চোখের সামনেই একটি স্বাধীনতাকামী জাতি সামরিক জান্তা দ্বারা অমানবিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তা দেখার জন্য আমি আরেকবার কাউকে অনুরোধ করবো না। এটি খুবই পরিচিত একটি গল্প, বাংলাদেশের নিরস্ত্র ও নিরীহ
পেইজ ৭৮৯
জনতার উপর এই ধরণের বর্বর হামলার কথা সবাই জানে। যাই হোক, আমি বলতে চাই যে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক জান্তা কর্তৃক এই দেশের ধর্মভীরু মানুষের উপর এই ধরণের গনহত্যা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কে শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার বলে তৈরী করে নি বরং পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে সব ধরণের সম্পর্ক ছিন্ন করার পথ তৈরী করে দিয়েছে। ইয়াহিয়া খান কর্তৃক পাঠানো সামরিক গোষ্ঠী বুঝতে পারছে তারা এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা কামী মানুষকে উন্নত অস্ত্র শক্তির ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
সভ্য বিশ্বের সব জায়গায় তাদের এই ধরণের বর্বর আক্রমণ নিন্দিত হয়েছে। তাদের অর্থনীতি, যা কিনা বাংলাদেশী সম্পদের উপর নির্মিত হয়েছে, তা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া এই অযৌক্তিক যুদ্ধের বিপরীতে শক্ত ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। যার কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশী মানুষের উপর বছরের পর বছর ধরে চালিয়ে আসা অযৌক্তিক নিগ্রহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। বিদেশ থেকে যে সকল অনুদান ও সাহায্য আসতো তা সবই পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি এবং সামরিক সরঞ্জামের জন্য ব্যয় করা হতো। বাংলাদেশের সামরিক অগ্রগতি ব্যহত হওয়ার কারণ হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধভিত্তিক সামরিক অর্থনীতি যা কেবলমাত্র ভারতের সাথে যুদ্ধের জন্য পরিকল্পিত। কিন্তু মূলত এই সরকার নিজেদের কে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষের উপর নির্যাতনের মাধ্যমে ক্ষমতায় রেখেছে।
মুক্তি বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে হাই কমিশনার বলেন যে, আমাদের মরণজয়ী মুক্তিবাহিনী ইতোমধ্যেই শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন আক্রমণ রচনা করতে সমর্থ হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য এই যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী দিনে দিনে ছন্দ ফিরে পাচ্ছে। আমাদের গেরিলারা প্রতিদিন পশ্চিম পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যক হানাদার সেনা হত্যা করছে এবং ব্রিজ উড়িয়ে দেয়া, রেল লাইন তুলে ফেলা, রাস্তা নষ্ট করার মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনীর যোগাযোগ, রসদ, অস্ত্রপাতি ও সৈন্য আদান প্রদান ব্যহত করছে। আমাদের গেরিলারা একইসাথে দেশে থাকা স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকারদেরও নির্মূল করছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মবিশ্বাস তাদের বিপুল সংখ্যক সৈন্য ও অন্যান্য রসদ হারিয়ে একেবারে তলানীতে নেমে আসায় তার কয়েক জায়গা থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। মুক্তি বাহিনী বর্তমানে বাংলাদেশের একটি বিরাট অংশ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। বিশ্বের সেরা সেনাবাহিনী এখন ভীত সন্ত্রস্ত এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে যুদ্ধে ইস্তফা দিয়ে আত্মসমর্পণ করছে।
রাজনৈতিকভাবে, আমরা বর্তমানে পূর্বের চাইতে বেশি একতাবদ্ধ। যদিও আওয়ামীলীগ নির্বাচনে অনেক বড় জয় পেয়েছিলো এবং বর্তমানে এটি দেশে সবচাইতে বড় আগ্রহের বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর এই মুহুর্তে উচিত হাতে হাত রেখে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করে যাওয়া। দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে সাথে নিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি বিজয়সূচক সমাপ্তি টানা।
চিত্রকর সুবল পালকে ধন্যবাদ জানিয়ে জনাব আলি জানান, একটি ছবি হাজার শব্দের প্রতিচ্ছবি।
<003.288.790> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাঙালি কর্মচারীর স্বপক্ষ ত্যাগের পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
BANGLADESH PRESS RELEASE
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯, সার্কাস এভিনিঊ
কলিকাতা-১৭
(স্বীকৃত তথ্য উপাত্ত সহকারে বা ব্যতিত পুনর্লিখিত)
——————————————————————————————————————————-
নং – পিআর/৫০ মুজিবনগর
১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
জনাব ফতেহ এর বহিঃসমর্পনের জন্য পাকিস্তানের সরকারের আবেদনের জবাবে
ইরাকে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত জনাব এ এফ এম আবুল ফতেহ এর বহিঃসমর্পনের জন্য আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ আজ মুজিবনগরে মন্তব্য করেন যে, পাকিস্তান সরকার কয়েকটি দেশে জনাব আবুল ফতেহ এর বহিঃসমর্পনের জন্য আবেদন করতে দেখে বেশ অবাক হয়েছেন। জনাব ফতেহ পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইরাকে নিযুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনি নিজের মাতৃভূমির (বাংলাদেশ) পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। পাকিস্তান সরকার তার বিরুদ্ধে ইরাকে থাকা পাকিস্তানি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনেছে।
২. জনাব ফতেহ একজন সাহসী দেশ মাতৃকার সন্তান যিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে নিজের দেশের উপর নেমে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণ এর বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ তুলেছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশে পাকিস্তান এম্বাসি থেকে বাংলাদেশের অধিকার সূত্রে পাওনা পাকিস্তানি ফান্ডের অংশ নিজের সাথে করে নিয়ে এসেছেন। এই অর্থ বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের জিম্মায় আছে এবং দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩. পাকিস্তানে আজ কোন কিছুই ঠিকমত চলছেনা। সামরিক জান্তা বাহিনী জনাব ফতেহ এর দৃষ্টিভঙ্গী অনুধাবন করতে ব্যর্থ। বাংলাদেশ সরকার তার মত দেশপ্রেমিকদেরই মুক্তিবাহিনীতে দেখতে গভীরভাবে আগ্রহী। এই ধরণের বহিঃসমর্পনের নোংরা চক্রান্ত বাইরের বিশ্বকে আশ্চার্যান্বিত করেছে।
<003.289.791> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.290.792> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.291.793> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বাংলাদেশ বেসরকারি প্রতিনিধি দলের নেতা ড.এ.আর মল্লিক পাকিস্তান এবং ইসলামের স্বঘোষিত রক্ষকদের ইসলামাবাদে আক্রমণ করেন, তার কোন সংশয় ছিলনা যে তার এই আগমন বাঙালিদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করবে । তিনি বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের বিভেদের জন্য বাংলাদেশ দায়ী। কার্যত, এটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। ইসলামাবাদের ক্ষমতাসীন চক্রের এ দায় বহন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন যে বাংলাদেশের বিষয়টি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হিসেবে ২৬শে মার্চ থেকে নিরস্ত করতে হবে। পাকিস্তানের ইতিহাস এবং পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক শক্তি ও পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরাচারের মধ্যের তীব্র লড়াই ঘেঁটে তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন যে পাকিস্তানের জনগণ কখনোই ভারতের মতো স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ভোগ করতে পারেনি। লোভী সেনাপ্রধানরা দুর্নীতিবাজ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতিবিদদের প্রতিস্থাপিত করে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে ২৪ বছর পাকিস্তান শাসন করে এবং একাধিপত্য ও কার্টেল তৈরি করে, যা লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবিকে শোষিত করে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের উপর প্রথম আক্রমণটি ছিল সংস্কৃতি ও ভাষাগত ঐতিহ্যে। ৬ বছর ধরে বাঙালিরা এ আন্দোলন চালিয়ে যায় এবং অনেকে ঢাকার রাস্তায় নিহত হয়। আয়ুব সরকার, ১১ বছর শাসন করে, ২২টি পরিবার ৬০ ভাগ শিল্প সম্পদ পায়, ৭৫ ভাগ অন্তঃবানিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে, ৩ ভাগ হিসেবধারী যারা ইতোমধ্যে অর্থ আয় করছিল তাদের ৮০ ভাগকে ব্যাংক অগ্রীম দেয়া হয়েছিল। ৮০ ভাগ বৈদেশিক সহায়তা পশ্চিম পাকিস্তানকে দেয়া হচ্ছিলো আর পূর্বভাগ পাকিস্তানের জন্য ৭০ ভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করলেও সহায়তা পাচ্ছিলো ১০ ভাগেরো কম।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিনিধিদলের গঠন এবং সদস্যদের নাম ঘোষনা করা হোলো। জাতিসংঘে দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব আবু সায়েদ চৌধুরী দ্বারা প্রতিনিধিদলটি পরিচালিত হবে।
ইউ.কে তেও বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি বিচারপতি জনাব এম.চৌধুরী নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডনের দিকে অগ্রসর হলো।
নিম্নের প্রতিনিধি সদস্যগণ আজ মুজিবনগর থেকে দিল্লী হয়ে নিউ ইয়র্কের দিকে রওনা হয়েছেন।
১) জনাব এম.এ.সামাদ, এমএনএ, বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
২) প্রফেসর মুজাফফর আহমেদ, বাংলাদেশ সরকারের পরামর্শমূলক কমিটির সদস্য।
৩) জনাব ফণী ভূষণ মজুমদার,এমপিএ
৪) জনাব সিরাজুল হক, এমপিএ
৫) জনাব সায়েদ আব্দুস সুলতান, এমএনএ, উকিল
৬) জনাব ফকির শাহাবুদ্দিন,এমপিএ
৭) জনাব মফিজ চৌধুরী, এমএনএ
৮) জনাব আসাবুল হক,এমপিএ
৯) জনাব এ.এফ.এম. আবুল ফাতেহ, অ্যাম্বাসেডর এট লার্জ
১০) জনাব কে.কে. পন্নি, দূরপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভ্রাম্যমাণ রাষ্ট্রদূত
১১) ড.এ.আর.মল্লিক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।
এম/এস.এম.আর.সিদ্দীকি, এমএনএ, এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধি অর্থনীতিবীদ ও অর্থনীতি বিষয়ক অসাধারণ রাষ্ট্রদূত রহমান সোবহান, জাতিসংঘে বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এস.এ.করিম এবং যুক্ত্রাষ্ট্রে বাংলাদেশ মিশনের পরামর্শক এ.এম.এ.মহিউদ্দিন ইতোমধ্যে নিউ ইয়র্কে ছিলেন এবং সেখানে প্রতিনিধিদলে যোগ দিয়েছিলেন।
সম্ভবত স্বীকৃতিসহ অথবা ছাড়াই পুনঃনির্মান করা হয়েছে
নং PR/54 মুজিবনগর,
সেপ্টেম্বর ২৫,১৯৭১
খন্দকার মোস্তাক আহমেদ বলেন পরিপূর্ণ স্বাধীনতাই আমাদের লক্ষ্য
পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোস্তাক আহমেদ পাওয়ার ব্লক সুদের জন্য অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য বাংলাদেশী রক্ত ব্যবহারে সতর্ক করেন।
সরকার থাকা অবস্থায় তিনি বারবার সজোরে ঘোষনা করেন পরিপূর্ণ স্বাধীনতাই আমাদের লক্ষ্য। মুজিবনগরে আজকের এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের ৭৫ লক্ষ মানুষের ভাগ্য নিয়ে আলোচনা এবং সিন্ধান্ত সম্পর্কে বিশ্বের সকল স্বাধীনচেতা মানুষ অপেক্ষা করছে। দুর্ভাগ্যক্রমে কিছু সরকার ইয়াহিয়ার ঔপনিবেশিক জান্তাকে সংরক্ষণ এবং চিরস্থায়ী করতে স্পষ্ট বিষয়টিকে ধোঁয়াশা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এমন কিছু শক্তি বাংলাদেশের ব্যাপারে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছে এবং শুধু তাই নয়য়, তারা ‘রাজনৈতিক উপযোজন’, ‘বন্দোবস্ত’, ‘পুনর্মিলন’ এবং ‘সমাধান’ সমর্থন করছে আমাদের বিরুদ্ধে। আমাদের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের মানুষের রক্তের ধারা কোন ভাবেই পাওয়ার ব্লক সুদ অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনে ব্যবহার করা হবেনা।
পরিপূর্ণ স্বাধীনতা আমাদের লক্ষ্য। যারা বাংলাদেশের ৭৫ লক্ষ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে আমরা তাদের বলতে চাই,আমাদেরকে তারা বাঁচার জন্য কিছু না দিতে পারলে আমাদের স্বাধীনতার জন্য মরতে প্রস্তুত।
<003.292.794> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.292.795> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.293.796> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
একটি প্রধান ডকুমেন্ট
“Bangladesh—Contemporary Events and Documents” বইটি মার্চ ১৯৬৯ সাল থেকে শুরু করে এপ্রিল ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর সংকলন যেখানে স্বাধীনতার ঘোষনা থেকে শুরু করে বর্তমান সংকটের বর্ণনা দেয়া আছে।বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না বরং সহজ ভাবে সেখানে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।UN এর ২৮ টি ডকুমেন্ট এর মধ্যে এই বইটি একটি অন্যতম ডকুমেন্ট।
এটায় ৬টি অধ্যায় ছিল ।প্রথম অধ্যায়ের নাম ছিল ”colonization” যেখানে পাকিস্তানের উতপত্তি ও পূর্ব পাকিস্তানের উপনীবেশিকরন নিয়ে আলোচনা করা হয়। এখানে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক শোষণ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং অর্থনৈতিক অবস্থা ও তুলে ধরা হয়।
২য় অধ্যায়ের নাম ছিল ‘”Demand for a Right to Live”, এখানে দুইটি উল্লখযোগ্য বিষয়ে আলোচনা করা হয় – আওয়ামীলীগ এর ৬ দফা দাবী, ও কেন্দ্রিয় ছাত্র পরিষদ এর ১১ দফা দাবি।
বই টির প্রধান ডকুমেন্ট ছিল ৩য় অধায়ে যার নাম ‘”The Second Martial Law”: A Promise with a hidden meaning” । এখানে তুলে ধরা হয় কিভাবে আইয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তর করার প্রতিজ্ঞা করলেও পরবর্তীতে তা না করে তিনি উলটা আর্মি দের হাতে ১৯৬৯ সালে অনৈতিক ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।এই অধ্যায়ে আরো কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল , যেমন- ১০ মার্চের গোল টেবিল বৈঠকে শেখ মুজিবর রহমানের ভাষন, জেনারেল আইয়ুব খান এর ১২ মার্চের ভাষন , জেনারেল আইয়ুব খান এর জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং ১৯৬৯ সালে মার্শাল ল জারি।
৪র্থ অধ্যায়ের নাম ছিল “Towards Democracy: The First General Election in Pakistan” এখানে তুলে ধরা হয় .আইনী কাঠামোর কারণে জনগন দ্বারা নির্বাচিত হওয়া সত্ত্বেও গণপরিষদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল এবং রাষ্ট্রপতি চাইলে সংবিধান প্রণয়ের ক্ষেত্রে গণপরিষদের যেকোনো সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারতেন.আওয়ামীলীগ একটি সাংবিধানিক রাজনৈতিক দল হওয়া সত্তেও এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে ও নির্বাচনে অংশ নেয়। এছারা শেখ মুজিবর রাওহমানের নির্বাচন , বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এর নির্বাচনী ইশতেহার এবং আওয়ামীলিগ এর সাংবিধানিক প্রস্তাবনা এখানে তুলে ধরা হয়।
মার্চ ১ থেকে মার্চ ২৫ এর মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো ৫ম অধায়ে তুলে ধরা হয় যার নাম “Design revealed: Army buys time to attack”।একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির সাথে আর্মিরা কেমন আচরন করে ও কিভাবে গভীর রাতে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর ঝাঁপিয়ে পরে তা এখানে বর্ণনা করা হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া খান এর ৬ মার্চ এর ঘোষনা , বংবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন , বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার আলোচনা এসব বিষয় এখানে তুলে ধরা হয় ।
৬ষ্ঠ অধায় Bangladesh: a new Sovereign State” এ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষনার কথা তুলে ধরা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুখবন্ধ
মানব সভ্যতার সবচেয়ে জঘন্যতম ঘটনাটি বাংলাদেশে সংঘটিত হয়। পাকিস্তানী আর্মিরা বাঙ্গালীদের ধ্বংস করার সব পরিকল্পনা নিয়ে আবির্ভুত হয়।। তারা ৭৫ মিলিয়ন শান্তিপ্রিয় নিরীহ বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পরে।
সারা বিশ্ব মানব সভ্যতার উপর এই বর্বর নির্যাতনের নিশ্চুপ সাক্ষী ছিল। এত কিছুর মাঝেও কিছু নেতা ও বিবেকবান সাংবাদিক এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করে বাঙ্গালীদের পাশে এসে দাঁড়ায় । তারা ইয়াহিয়া খানের বর্বরতার কথা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরে।
এভাবে অবহেলিত ও চাপা থাকা ঘটনা সবার সামনে আসে।
ঘটনাগুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে বাঙ্গালীদের উপর করা অত্যাচার ও তাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম ফুটে উঠে। এখানে আমাদের নিজস্ব কোনো মতামত নেই, শুধু প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
আমরা বিশ্ব বাসি কে এটা পড়ার আহবান জানাই।
জয় বাংলা।
EXTERNAL PUBLICITY DIVISION
MINISTRY OF FOREIGN AFFAIRS,
GOVERNMENT OF BANGLADESH.
<003.293.797> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
স্বায়ত্তশাসন থেকে স্বাধীনতার পথে সাংবিধানিক আন্দোলঅংশ নেবার অপরাধে শত শত হাজার বাঙ্গালিদের হত্যা করা হয়েছিল। খুন, অগ্নিসংযোগ, লুটতরাজ আর ধর্ষণ ছিল সেদিনের নির্দেশ। কেন? কারণ তারা স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান দেশদ্রোহিতারর অপরাধে বিচারাধীন ছিলেন। কারণ তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন , যেখানে গন্তন্ত্রের সাংঘর্শিক কিছু ছিল না এবং সর্বোপরি,তিনি স্বায়ত্তশাসনের বিষয়ে আপোষহীন ছিলেন, যার জন্য বাঙ্গালিরা তাকে ভোট দিয়েছিলেন। আওয়ামীলীগ গণতন্ত্র এবং সংবিধানের নীতিতে দৃঢ় বিশ্বাসী একটা গণতান্ত্রিক দল ছিল। শেখ মুজিবুর রহমান গণতন্ত্রের প্রশ্নে একনিষ্ঠ ছিলেন। গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে তার মনে অটল বিশ্বাস ছিল। তিনি অহিংস উপায়ে জনগণের চাহিদা নিয়ে আওয়াজ তুলেছিলেন। ‘দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকা ২৮ মার্চ লিখে, “তিন রাত আগে সরকারি সৈন্য দ্বারা সাধারণ মানুষের উপর অকস্মাৎ আক্রমণের পর যে প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে তা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনে সহিংসরূপে ফেটে পড়েছে।” এই একই লাইনের সাথে ৪ এপ্রিল ‘বাল্টিমোর সান’ লিখে “পশ্চিম পাকিস্তান প্রয়োজনে তাদের সর্বশেষ সৈন্য জনবহুল পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানোর সব ইঙ্গিত দিয়েছে, যার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যথাসম্ভব কারণ একটাই, বিগত ডিসেম্বরের ভোটের ফলাফল। ইয়াহিয়া খানকে উল্লেখ করে ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ ৬ এপ্রিল তার সম্পাদকীয় তে লিখে “তিনি তার সেনাবাহিনী ব্যবহার করে যা করেছেন এবং করছেন তা পূর্ব পাকিস্তান এবং তাদের নেতাকে দমিয়ে রাখার জন্য। কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই এটা সন্ধিস্থাপনে ধস নামার কারণে নয়। রাষ্ট্রপতি ভোটের সময়েই শেখ মুজিবের ক্ষমতা অনুধাবন করতে পেরে তাকে আর চাননি। তাই রাষ্ট্রপতি বন্দুক তুলে নিলেন। পূর্ব পাকিস্তানের দরিদ্র জনগণ যারা ভোট দেয়ার শাস্তি পাচ্ছিলো, সেই ভোট রাষ্ট্রপতিকে চিন্তিত করে তুলেছিল। আর্মি পাঠিয়ে তিনি শুধু গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতিই উদাসীনতা দেখাননি, বরং নিজেকে বেপরোয়া এবং অবিবেচক শাসক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ছিল সুপরিকল্পিত কাজ।” ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ ১৪ এপ্রিলের সম্পাদকীয়তে লিখে “বাংলাদেশের বিষয়াবলী দিল্লী এবং রাউয়াল পিন্ডির মধ্যকার অন্তহীন ঝামেলার ফল না। যখন একটা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর সেনাবাহিনী সেটা স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে নি তখনই এর উত্থান হয়। শেখ মুজিব কখনোই কোনভাবেই নিজে থেকে বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেননি। তিনি মূলত বেশি কিছু চান নি শুধু আইনগতভাবে লড়াই করে ভোটে জিতে যা পেয়েছেন তা ছাড়া।”
বর্তমান পরিস্থিতির পটভূমি এবং পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণ উল্লেখ করে ১৮ এপ্রিল ‘দ্যা সানডে টাইমস’ লিখে “শেখ মুজিবের আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক পরিকল্পনা সিংহভাগ পূর্ব পাকিস্তানিদের কাছে সাম্প্রতিক নির্বাচনে অনুমোদিত হয়েছিল, যা আওয়াজ তুলেছিল কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের হস্তান্তর নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক নীতিমালার বৈষম্যের সংশোধন বিষয়ে। ইয়াহিয়া খান সরকারের প্রতিক্রিয়া ছিল নিয়ন্ত্রণহীন ত্রাসযুক্ত শাসন যার মাত্রা কেবল ধীরে ধীরে জ্ঞাত হচ্ছিল।
<003.293.798> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সুদানের দৈনিক ‘আল সাহাফা’ও এই বিতর্ক এড়িয়ে গেল যে পূর্ব বাংলার সংগ্রাম একটা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। তারা লিখেছিল “এই বিস্ফোরিত অবস্থার জন্য দায়ী জেনারেল ইয়াহিয়া খান। মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের প্রকৃত প্রতিনিধি।……….. মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্মানযোগ্য এবং তিনি সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রের নিদর্শন।” সিনেটর উইলিয়াম স্যাক্সবে ১১ মে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট বক্তব্যে বলেছিলেন “আমি আমার সহকর্মীদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সন্ধি পূর্ববর্তী ২৫ মার্চের আকস্মিক মিলিটারি আক্রমণ এর কথা। পূর্ব পাকিস্তানের চাহিদা স্বাধীনতা ছিল না, শুধু স্বায়ত্তশাসন এবং নিজেদের বিষয়ে স্ব-নিয়ম; যেমন কর্মপন্থা আর আধাসামরিক বাহিনী, ব্যবসা বাণিজ্য, কর এবং অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং এরকম আর কিছু বিষয়।” ১৮মে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর প্র্যাঙ্ক চার্চ তার বয়ানে আওয়ামীলীগ সম্পর্কে নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে উল্লেখ করে বলেন “এই বাঙ্গালি রাজনৈতিক দলটি অভূতপূর্ব অনুমোদন পেয়েছে; পূর্ব পাকিস্তানে ১৬৯ এর মধ্যে ১৬৭ টি আসন আর জাতীয় পরিষদে ৩১৩টি, যা পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনকে সমর্থন করে।” ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর পাকিস্তান আর্মি বাঙ্গালিদের হাতে ক্ষমতা দিতে অনিচ্ছুক ছিল।
২১ জুন ‘কেন্সিংটন পোস্ট’ এ জর্জ ক্লার্ক লেখেন “৫ মাস থেকে এখন অব্দি বাংলাদেশ যে বিশাল দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা শুধুমাত্র পাকিস্তান সামরিক সরকার কর্তৃক একটা গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রত্যাখ্যানের ফল। এটা যেন স্যার ম্যালবি এবং কনজারভেটিভ বোরঘ কাউন্সিলের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে নিরাপত্তারক্ষী ডেকেছে।” ১৪ জুন, ১৯৭১ গার্ডিয়ান তাদের সম্পাদকীয় ত্র পাকিস্তান সরকার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের বৈধতা নিয়ে লেখে “এবং যদিও পাকিস্তান সরকার নির্বাচনের রায় উল্টে দেয় তবুও দখল নির্বাচনের হাতেই থাকবে।” ‘দ্যা ডেইলি মিরর,লন্ডন’ এর আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা জন পিলগার ১৬ জুন, ১৯৭১ লিখেন “বাঙ্গালিদের অপসৃত বা বিদ্রোহী হতে হবে না। তারা পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং দেশের প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়ে শেখ মুজিবুরের আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে অভূতপূর্বভাবে ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টি আসন দখল করে বাঙ্গালিদের জন্য জাতীয় পরিষদে জায়গা করে নিয়েছে।শেখ মুজিবুরের স্বল্পমেয়াদী সরকার অনেকটা গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত মি. হেথের সরকারের মতো।” পিলগার আরো লেখেন “বাংলাদেশের অভ্যুত্থান তখনই হয়েছিল যখন ঢাকা ত্রাসের শাসনে আক্রান্ত হয়েছিল।” লেবার এম. পি. মি. টেড লিডবিটার তার এক চিঠিতে পাকিস্তানি হাইকমিশনার সালমান আলীকে বলেন “প্রত্যেকটা রিপোর্ট, প্রত্যেকটা টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে প্রত্যেকটা সংস্করণ তোমার প্রজ্ঞাপনের সাথে সাংঘর্ষিক।…….যে রক্তের দাগ প্রত্যেকে তোমাদের হাতে দেখতে পাচ্ছে তা কোন কূটনৈতিক চালই তোমার নেতাদের নির্বুদ্ধিতা, তোমার নীতিমালার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার সমালোচনা থেকে আমাকে দূরে রাখতে পারবে না এবং তাদের সাহায্য প্রয়োজন যারা শুধু গণতন্ত্র ছাড়া আর কিছুই চায় না।”
<003.293.799> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.293.800> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বেইরুট পত্রিকা আল শাব-এ প্রকাশিত, “বস্তুত পুর্ব পাকিস্তান অপসারনের কাছে মাথা নত করেনি যতক্ষন না এটা প্রমানিত হয়েছে যে, দেশের শাসন ব্যবস্থা জনগণের ইচ্ছা নয় বরং ১০০০ মাইল দূরে অবস্থান করা একটি দাম্ভিক গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করে।এরকম একটি দেশে বসবাসের অনুমোদন কে দেবে? পাকিস্থান একটি কৃত্রিম স্বত্তা এবং যেকোন কৃত্রিম জিনিস বিলুপ্ত হবেই।”
২৩ আগস্ট, টাইমস ম্যাগাজিনে লেখা হয়, “যদিও পুর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার জন্য মুজিবকে অভিযুক্ত করা হয়, প্রকৃত পক্ষে তিনি পাকিস্তানের পুর্ণ বিভক্তি চাননি এবং ততক্ষন পর্যন্ত স্বাধীনতা ঘোষনা করেননি যতক্ষন না………………… রক্তগঙ্গা শুরু হয়।”
ইংল্যান্ডের হাউস অফ লর্ড-এর লর্ড ফেন্নের ব্রকওয়ে, এক বিবৃতিতে বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিরোশিমায় বোমা নিক্ষেপের পর এটাই সবচেয়ে বড় দুর্দশাপুর্ণ বিপর্যয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে হিটলারের পর এটাই গণতন্ত্রের সবচেয়ে নির্মম অস্বীকার।
গণতন্ত্রকে অন্তর্ঘাত করার ষড়যন্ত্র
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান, জনাব জুফিকার আলী ভুট্টো এই রাজনৈতিক নাটকে সবচেয়ে সন্দেহজনক ভুমিকা পালন করেন। তার অনুরোধে এবং আওয়ামী লীগয়ের একটি সময়পুর্ব সমাবেশের অনুরোধ উপেক্ষা করে জেনারেল ইয়াহিয়া ৩ মার্চ সমাবেশের ঘোষনা দেন, এবারও জনাব ভুট্টোই সর্বপ্রথম সমাবেশ বয়কট করেন। শুধু তাই না, তিনি প্রকাশ্যে পশ্চিম পকিস্তানের অন্য সদস্যসের সমাবেশে উপস্থিত থাকার ব্যপারে ভয় দেখান।তিনি এই ইস্যুতে একটি রক্তগঙ্গার হুমকি দেন। সমাবেশ ঘোষনার প্রতিবাদে তিনি সমগ্র পশ্চিম পাকিস্তানে একটি সাধারন ধর্মঘটের ডাক দেন, তিনি খায়বার থেকে করাচি পর্যন্ত একটি হরতাল দাওয়ার হুমকি দেন, যেখানে জনাব ভুট্টো জাতীয় পরিষদের একটি সংখ্যা লঘু দলের নেতা ছিলেন এবং শুধুমাত্র পাঞ্জাব ও সিন্ধুতে সংখ্যাগরিষ্ট আসন নিশ্চিত করেছেন। একদিকে তিনি ক্ষমতা, গণতন্ত্র এবং সাংবিধানিক সরকারের দ্রুত হস্তান্তর দাবি করেন অন্যদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনের বিরোধিতা করেন।
যখন নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হল, সামন্ততান্ত্রিক নেতাদের দ্বারা সমর্থিত সেনাবাহিনী এবং জনাব ভুট্টো উভয়ের এবং গণতন্ত্রের সকল প্রত্যাশাকে অন্তর্ঘাত করার পশ্চিম পাকিস্তানি মূল উদ্দেশ্য উন্মোচিত হয়।জনাব হেনরি ব্র্যাডসের ২৯ এপ্রিল, ওয়াশিংটনের ইভিনিং স্টার-এ লিখেছেন “যখন নির্বাচনের ফল পাওয়া গেল, ভুট্টো পুর্ব পাকিস্তানের তাদের ইচ্ছানুযায়ী শাসনতন্ত্র পাওয়ার অধিকারকে অস্বীকার করার চেষ্টা করা শুরু করেন।ভুট্টো, একজন সামন্ততান্ত্রিক ভূপতি এবং উজ্জ্বল কিন্তু সুবিধাবাদী কর্মজীবন সম্পন্ন সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী, দরিদ্রদের কাছে সমাজতান্ত্রিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে পশ্চিমে জয়ী হন।যদিও রহমানের বিরুদ্ধে তার প্রতিবন্ধক রনকৌশল গরীবদের থেকে পশ্চিমা অভিজাত শ্রেনির স্বার্থই বেশি রক্ষা করবে।
২০ জুলাই, লন্ডন, টাইমস-এ লেখা হয়, জনাব ভুট্টোর যুক্তি ছিল যে, সমাবেশে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা (যেখানে এটি 167 টি আসন লাভ করে) লাভের ভিত্তিতেও আওয়ামী লীগ যৌক্তিকভাবে সমগ্র পাকিস্তানের পদ নির্দেশনা আশা করতে পারে না, যখন এটি শুধুমাত্র একার্ধের প্রতিনিধিত্ব করে।এটি একটি খুবই দুর্বল যুক্তি ছিল। কিন্তু ৩ মার্চের পরিকল্পিত নির্বাচক পরিষদের মিটিং স্থগিত করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অজুহাত দাওয়ার মত যথেষ্ট আইনি ও সাংবিধানিক সত্ত্ব এর ছিল।
যদিও তারা নির্বাচনের অনুমতি দিয়েছে, জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের অভিপ্রায় কখনই সামরিক সরকারের ছিল না। তাদের পরিকল্পনা ছিল যে, একবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে বিভিন্ন
দলের মধ্যে আসন গুলো ভাগ হয়ে যাবে, দেশে একটা রাজনৈতিক বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে এবং তারা তাদের শাসন চিরস্থায়ী করার জন্য রাজনীতিবিদদের ছোট করতে পারবে। কিন্তু নির্বাচনের ফল তাদের পরিকল্পনা ধুলিস্বাৎ করে দেয়। ইয়াহিয়া খাঁন শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে ক্ষমতায় আসার পর ক্ষমতা হস্তান্তরের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার একটি গোপন উদ্দেশ্য ছিল।
একজন পশ্চিম পাকিস্তানি নেতা এবং পাকিস্তানের জাতীয় আওয়ামী পার্টির সভাপতি, খাঁন আব্দুল ওয়ালী খাঁন আফগান পত্রিকা নিউ ওয়েভকে দাওয়া এক সাক্ষাৎকারে(দি স্টেটসম্যান, ইন্ডিয়ার ১৯ আগস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী) বলেন, “রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খাঁন সেনাবাহিনীর খবর বিশ্বাস করে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন যে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ নির্বাচনে সফলকাম হবে না। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, কাইয়ুম মুসলিম লীগের ৭০টি আসনে জয়ী হওয়ার কথা, দৌলতানা ৪০টি, ভুট্টো ২৫টি, জাতীয় আওয়ামী পার্টি ৩০টি এবং মুজিবের আওয়ামী লীগ শুধু মাত্র ৮০টি আসনে জেতার কথা। এই তথ্যের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জনগণকে এই প্রতিশ্রুতি দিতে সম্মত হয়েছেন যে, নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। এটা ছিল একটা জুয়া খেলা যা ব্যর্থ হয়েছে, কিন্তু সামরিক জান্তা ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করে। ”
৬ জুলাই, দি গার্ডিয়ান, লন্ডন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মনোভাব, বর্ণনা করে, “তিনটি বাক্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রকৃত মনোভাব। নির্মম, মানুষের জীবনের ব্যাপারে উদাসীন, নির্বিচারে হত্যাঃ এবং, মানসিকভাবে অস্বাভাবিক রকমের হিংস্র।”
নিউসউইক ম্যাগাজিন “বাংলাঃ একটি জাতির হত্যা” শিরোনামে ২রা আগস্ট, ১৯৭১ এ একটি কভার পেইজ স্টোরিতে লেখে, “হঠাৎ করেই মনে হচ্ছে যে, বাংলার সময় এসেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক ও পুর্বের স্বায়ত্ত শাসনের জন্য মুজিবের অবস্থান পাঞ্জাব নেতাদের সহ্যের চেয়ে বড় হুমকিতে পরিনত হল।মুজিবের সাথে দ্বিতীয়বার লড়তে নারাজ পশ্চিম পাকিস্তানের জনপ্রিয় বামপন্থি রাজনীতিবি, জুলফিকার আলী ভুট্টো নতুন সংসদে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এবং শেষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আচমকা পরিষদের উদ্বোধনী অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেন।
২রা আগস্ট, ১৯৭১ এ প্রকাশিত একটি কভার স্টোরিতে টাইম ম্যাগাজিন বলেছিল, “নির্বাচনের বিজয় বুঝায় যে, মুজিব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে পুরো পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রি হবেন।
এটা এমন একটা বিষয় যা ইয়াহিয়া আগে থেকে আঁচ করতে পারেননি। তিনি এবং তার সহকর্মী জেনারেলগণ আশা করেছিলেন যে, মুজিব পুর্ব পাকিস্তানের ৬০% এর বেশি আসন পাবে না, এবং এই ক্ষুদ্র পুর্ব পাকিস্তানী দলটি পশ্চিম পাকিস্তানি দল গুলর সাথে জোট গঠন করবে, প্রকৃত ক্ষমতা ইসলামাবাদেই থাকবে।মুজিব কিছু কারচুপির আশংকা করছিলেনঃ “যদি নির্বাচন হতাশাব্যঞ্জক হয়,” তিনি একটি বিবৃতিতে ঘোষনা করেছিলেন যা ভয়াবহ ভবিষ্যতের আভাস দেয়।পুর্ব পাকিস্তানের জনগণ সেই সকল লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের কাছে ঋনী যারা যদি দরকার হয়, আরো লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের আত্মদান দিতে ঘুর্নিঝড়ে মারা গেছে, যাতে আমরা একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বাঁচতে পারি।”
একটি পূর্বকল্পিত পরিকল্পনা “. শক্তি। হস্তান্তর করা হবে নাঃ
ইয়াহিয়ার সামরিক শাসন কখনই জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চায়নি, এটা আরো স্পষ্ট হল এই ঘটনা থেকে যে তারা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের জনগণের উপর হামলার পতিকল্পনা করছে। ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে, নির্বাচনের পরে যখন আলোচনা চলছিল, সেনাবাহিনী সেই কয় মাসে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কিভাবে দেশের নতুন গণতান্ত্রিক শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য আঘাত হানা যায় তার বিশদ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
<003.293.801>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
২৮মার্চ সিডনি স্কেনবার্গ নিউ ইয়র্ক টাইমস এ লিখেছেন, “কিন্ত যেসব ছোট ছোট তথ্য উপাত্ত আলোতে এসেছে সেগুলো দ্বারা এটিই প্রতীয়মান হয় যে পশ্চিমের ক্ষমতাধর গোষ্ঠী শেখ মুজিবকে কখনই পূর্ব পাকিস্তানে এককভাবে স্বায়ত্ত্বশাসনে জয়ী হতে দিতে চায়নি।” একই দিনে তিনি লিখেন, “ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রতিদিন প্রচুর সৈন্যদল প্রবেশ করছিল। অনেক বাঙালী বিশ্বাস করতে শুরু করলো যে, আলাপ-আলোচনা ভেবেচিন্তেই দীর্ঘায়িত করা হচ্ছে যেন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার পূর্ব অংশে ভারী শক্তিবৃদ্ধির জন্য পর্যাপ্ত সময় হাতে পায়।”
দ্য বাল্টিমোর সান এর একজন লেখক ৩০মার্চ “পূর্ব পাকিস্তানে ইয়াহিয়ার পরিকল্পিত আক্রমণ” শীর্ষক খবরে বলেন, “কিন্ত সেই পরিস্থিতি(সেই ক্ষুদ্র চাল যখন ইয়াহিয়া মুজিবের সাথে সংলাপ প্রত্যাখ্যান করে) অতিমাত্রায় সরল ছিল না, এটি ছিল খুবই কপট। এটি সংলাপের পুরো উদ্দেশ্যকে একটি বিলম্বিত প্রক্রিয়া হিসেবে দেখাবে যার মাঝে তারা(পাকিস্তান আর্মি জেনারেলেরা) পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আরও সৈন্যদল উড়িয়ে নিয়ে আসতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এই মন্তব্যটিই প্রথম সংকেত নয় যে সংলাপগুলো ছিল একটি বিলম্বিত প্রক্রিয়া। করাচী থেকে ঢাকা আগত একজন ভ্রমণকারী অগ্নিকাণ্ডের এক সপ্তাহ আগেই সাংবাদিকদের চমকে দিয়েছেন এটি বলে যে, তার একজন বিশ্বস্ত জেনারেল তাকে বলেছেন যে, সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা হলো বাঙালী নেতৃবৃন্দদের এটি বিশ্বাস করানো যে সংলাপ সফল হতে পারে, আর তারপর তারা বিনা সতর্কবার্তায় ঝাপিয়ে পড়বে।” তিনি আরও যোগ করেন, “ঘটনাটিকে শুধুমাত্র একটি অরক্ষিত জাতির উপর সতর্কভাবে সমন্বিত পূর্বপরিকল্পিত একটি আক্রমণ হিসেবেই বর্ণনা করা যায় যে আক্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আন্দোলনটিকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া যে আন্দোলনের কৌশল ছিল অহিংস ও অসহযোগ… জেনারেল টিক্কার পূর্বগামী ব্যক্তি, যে আন্দোলনটি ভাল্ভাবে বুঝতে পারা জন্য বাঙালীদের মাঝে পরিচিত ছিল, ঢাকা ত্যাগ করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান চলে যান কোনো প্রকাশ্য কৈফিয়ত ছাড়াই। যেসব বাঙালী তাকে চিনতেন তারা বলেন, মার্চের এক তারিখ প্রাথমিক পরিষদ স্থগিতের ঘোষণা দেয়ার পরপরই তাকে মিলিটারি আগ্রাসনের প্রস্ততি নেবার আদেশ দেয়া হলে তিনি পদত্যাগ করেন।”
দ্যা গার্ডিয়ান ৩১মার্চ তাদের সম্পাদকীয়তে লিখেন, “তিনি(ইয়াহিয়া) যখন মুজিবের সাথে আলাপ-আলোচনা করছিলেন, তার জেনারেল তখন হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিলেন।”
৪এপ্রিল দ্য বাল্টিমোর সান এ লেখা হয়, “কতটুকু ঠাণ্ডা মাথায় যে পশ্চিম পাকিস্তান গুলি করে ও আগুনে পুড়িয়ে বাঙালীদের নত করেছেন তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে কিছু পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের ঐ গণহত্যার রাতের ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডে।”
৪এপ্রিল দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস একই ঘটনা নিশ্চিত করে… “এটি এখন স্পষ্ট যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা কখনও সংলাপ সফল করতে চায় নাই, তারা নিজেদের এখানে এনেছিল শুধুমাত্র কালক্ষেপণ করতে যেন তারা ওই সময়ে আক্রমণ পরিচালনা করতে যথেষ্ঠ সৈন্যসহ শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে।”
২৯এপ্রিল হেনরি ব্রাডশের “ইভনিং স্টার” এ প্রতিবেদন করেন, “সাইক্লোনটি হয়তো এখনও তার পূর্ণ মূল্য বুঝে নেয়নি।“ এই উন্মোচনকারী মন্তব্যটি করা হয় জুলফিকার আলি ভুট্টো দ্বারা ৪ মার্চ একটি সাক্ষাৎকারের সময়। এর মাধ্যমে দেখা যায়, পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিটারি-আমলাতান্ত্রিক অভিজাতরা পূর্ব পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণে রাখতে রক্তপাত পর্যন্ত করতে ইচ্ছুক। তিন সপ্তাহ পর, গত বৃহস্পতিবার, সেই রক্তপাত শুরু হয়…”
ফরাসী “লে মন্ডে” এই সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়ে বলেন, “কোনো ধরনের আপসের দিকে না গিয়ে, এমনকি এমন আপস দিকে চাচ্ছিল যেটায় বাঙালী স্বায়ত্তশাসনের সমর্থকদের চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারই বেশি উপকৃত হতো, ইয়াহিয়া নিপীড়ন বৃদ্ধি করছে যা বর্তমানে নিষ্ঠুরতার এমন এক সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে যে এটি পূর্বপরিকল্পিত না হওয়াটাই হবে বিষ্ময়কর।”
<003.293.802>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১১মে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটে দেয়া এক বক্তব্যে সিনেটর উইলিয়াম সেক্সবি বলেন, “আলাপ-আলোচনার ধুম্রপর্দার অন্তরালে, বিশাল পাঞ্জাবী পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধি করা হচ্ছিল, আর তার পুরো শক্তি এমনভাবে নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর উন্মোক্ত করা হয়, ডঃ রোড ও অন্যান্য সাক্ষীর বর্ণনায় যা ছিল পৃথকভাবে রক্তস্নান, জন-নিধন ও গণহত্যা।”
২০ জুলাই লন্ডনের দ্য টাইমস এ বলা হয়, “এটি নিয়ে খুব একটা সন্দেহ নেই যে মার্চের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত উপায় হিসেবে সেনাবাহিনীর ব্যবহার রাষ্ট্রপতি ও তার পরামর্শকদের মাথায় গেঁথে যায়। বড় মাত্রার সৈন্যবাহিনী পশ্চিম প্রান্ত থেকে উড়িয়ে আনা হয় – যদিও তা মিলিটারি কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে – এই উড়িয়ে আনার কাজ গোপনে পুরো মাস জুড়ে চলতে থাকে।”
২ আগস্ট, ১৯৭১ সালে নিউজউইক ম্যাগাজিন “বাংলাঃ গণমানুষের হত্যাকাণ্ড” শীর্ষক একটি কভার-স্টরিতে লেখা হয়, “ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক বসার কয়েক সপ্তাহ আগেই রাষ্ট্রপতি ও তার ডান হাত লেঃজেঃ টিক্কা খান মুজিবকে গ্রেফতার, আওয়ামীলীগ ভেঙে দেওয়া ও বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের হত্যার নীল নকশা করে ফেলেন।”
ম্যাগাজিনে আরও লেখা হয়, “টিক্কা খান বাংলায় সেনাবাহিনীর শক্তি গড়ে তোলার জন্য কালক্ষেপণ করতে ইয়াহিয়াকে দৃশ্যত প্ররোচিত করেন। তদনুযায়ী, ইয়াহিয়া মুজিবের সাথে আলোচনার খাতিরে দর কষাকষি করেন। আর যখন এই এই নেতা আলোচনা করছিল এবং বাঙালী, সাথে সমগ্র বিশ্ব, পাকিস্তানকে রক্ষা করতে পারে এমন একটি সমঝতার দিকে তাকিয়েছিল, তখন সেনাবাহিনী একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটায়। দক্ষিণ ভারতের পাশ দিয়ে দীর্ঘ জলসীমার উপর দিয়ে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক বিমান দ্বারা পরিচালিত বোয়িং ৭০৭ এ করে উড়ে এসে, বাংলায় সেনা সংখ্যা ৬০,০০০ পর্যন্ত উন্নীত করে সেনাবাহিনী তাদের শক্তি দ্বিগুণ করে ফেলে। যখন টিক্কা কথা দেয় যে সবকিছু প্রস্তত, ইয়াহিয়া ঢাকা ছেড়ে আকাশপথে চলে যায়। আর সেই রাতেই, বেলুচিস্তানের বোমারু (টিক্কা খান) তার সেনাবাহিনী উন্মুক্ত করে।”
২আগস্ট, ১৯৭১ এ প্রকাশিত টাইম ম্যাগাজিনঃ
“মার্চে নির্ধারিত সাংবিধানিক অধিবেশনকে সামনে রেখে, ইয়াহিয়া রাতে সাদা পোশাকে পূর্বে উড়ে আসা সৈন্যদের নিয়ে গোপনে বাহিনী গঠন শুরু করেন। তারপর তিনি এটি বলে অধিবেশন পিছিয়ে দেন যে, মুজিব পূর্বাঞ্চলের জন্য কতটুকু ক্ষমতা ও স্বারত্তশাসন চান তা সূক্ষ্মভাবে নিরূপণ না করে অধিবেশনে বসা সম্ভব না। মুজিব পূর্ণ স্বাধীনতায় সমর্থন দেননি, বরং চেয়েছিলেন এমন একটি জাতীয় ঐক্যের স্খলিত আভাস চেয়েছিলেন যার নেতৃত্বে প্রত্যেক পার্শ্ব তাদের নিজস্ব কর, বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য নিয়ন্ত্রণ করবে। ইয়াহিয়া ও জেনারেলদের কাছে এটি ছিল অগ্রহণযোগ্য। ২৫ মার্চ ইয়াহিয়া তার চালিয়ে রাখা আলোচনা ভেঙে দেন এবং ইসলামাবাদ চলে যান। পাঁচ ঘণ্টা পর, ক্ষুদ্র কামান, ট্যাঙ্ক ও রকেট ব্যবহার করে সেনাবাহিনী ঢাকার আধ ডজন সেকশনে সেনা আক্রমণ চালায়।”
২৩ আগস্ট টাইম ম্যাগাজিনে লেখা হয়, “গত ডিসেম্বরের সাংবিধানিক পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্বের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে মহাজয় লাভ করে। এটি ৩১৩ আসনের জাতীয় পরিষদে মুজিবের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছিল, সাথে এটিও নিশ্চিত করেছিল যে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন। এটি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া ও পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষমতাধর গোষ্ঠী যারা ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত এই দেশটি পরিচালনা করে আসছে, তাদের সতর্ক করার জন্য যথেষ্ঠ ছিল। ইয়াহিয়া ও তার দল ভয় পাচ্ছিল মুজিবের উত্থানের অর্থ হতে পারে দীর্ঘদিন ধরে শোসিত পূর্ব পাকিস্তানে বৃহত্তর কোনো স্বায়ত্তশাসন, আর তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালী আন্দোলন নৃশংসভাবে পিষে দমন করে।”
<003.293.803>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সবশেষে এপ্রিলের ৪ তারিখে সানডে টেলিগ্রাফে গণতন্ত্র ধ্বংসে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চস্তরের চরিত্র এবং পরিকল্পনা বিশ্লেষণ করেন ডেভিড লোশাক।“ইয়াহিয়া কর্তৃক শুরু করা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই মানুষগুলো কখনোই বিশ্বাস স্থাপন করে নাই।তারা বিশ্বাস করে নাই কারণ প্রকৃতি গত ভাবে,বেড়ে উঠার বা বিশ্বাসের দিক থেকে তারা গণতান্ত্রিক নয় বরং স্বৈরাচারী,পুরুষতান্ত্রিক এবং একপক্ষীয়।বিংশ শতকের থেকে আঠারো শতকের মত সাধারণ জনগণের প্রতি তাদের ঘৃনা সূচক মনোভাব রয়েছে,তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে পাকিস্তানের কর্তৃত্বকারী অংশ হিসাবে তাদের সমগ্র ভবিষ্যৎ বেসরকারি সরকারের নিকট শান্তিপূর্ন ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হবে, যেমনটা একমাস আগেও অতি নিকটে (যদিও কখনো ছিলো না) বলে মনে হয়েছিলো।তাদের কাছে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও তার বেসামরিক মন্ত্রীসভা কর্তৃক একটি নির্বাচিত বিধানসভার নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুতকৃত যথাযথ পদক্ষেপগুলো পাকিস্তানের ক্ষমতা কাঠামোর বাস্তবতা আড়াল করার বাহানা ছাড়া আর কিছু ছিলো না।তারা ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভরসা করেছিল।সামরিক শাসন দীর্ঘ করার জন্য সেটাই হত সবথেকে বৈধ অজুহাত। এর পরিবর্তে এই নির্বাচন এক নেতা ও এক দল পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিব এবং আওয়ামী লীগ কে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রদান করে।ডিসেম্বরের ৭ তারিখ থেকেই জেনারেল ও কর্নেলরা জানতেন যে তাদের কি করতে হবে।এটি তখন শুধুমাত্র একটি অজুহাতের অপেক্ষা ছিল……………ততদিনে সেনাবাহিনী সতর্কতার সাথে সম্ভাব্য পরিকল্পনা তৈরি করে ফেলেছিল। এর গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আওয়ামী লীগে পুরোপুরি ভাবে অনুপ্রবেশ করেছিল।পরিষ্কারভাবে বলা যায় প্রেসিডেন্ট যখন শেখ মুজিবের সাথে সাংবিধানিক আলোচনার শেষ গোলটেবিল বৈঠক করছিলেন তখনই প্রেসিডেন্টের নতুন সামরিক আইন প্রশাসক লে.জেনারেল টিক্কা খানের ব্যক্তিগত নির্দেশনায় চুড়ান্ত প্রুস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল।”
“যখন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া মুজিবের সাথে আলোচনা করছিলেন তখন তিনি অবশ্যই সেনাবাহিনীর প্রুস্তুতি সম্পর্কে যানতেন।ঘটনা পরিক্রমার সাক্ষ্যে প্রেসিডেন্টকে ভয়াবহ বিশ্বাসঘাতকার দায় থেকে মুক্তি দেয়া কঠিন।”
গণহত্যা
বিশ্বের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নিশ্চিত যে জেনারেল ইয়াহিয়া ও তার সরকার গণহত্যার দায়ে দোষী।তার দখলদার সেনাবাহিনীর মিশন হচ্ছে “ প্রত্যেক বাঙালি কে হত্যা পোড়ানো।” একটি জাতি ও জনগোষ্ঠী কে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং অতি সতর্কতার সাথে এর খুঁটিনাটি পালন করা হয়েছিল।গণহত্যা কনভেনশনের আর্টকেল ২ অনুযায়ী এই অপরাধ হচ্ছে “সেই সব কাজ যা কোন জাতি,জাতিগত,বর্ণের বা ধর্মীয় দল কে সম্পূর্ন বা আংশিক ভাবে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে ঐ দলের সদস্যদের হত্যা বা গুরুতর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি করার মাধ্যমে….।”বর্তমানে অধিকৃত এলাকায় যে নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দেয় তাকে পাঞ্জাবি সেনাদল গুলি করছে এবং একইভাবে হিন্দুদেরও নিশ্চিহ্ন কর হচ্ছে।যে ধরণের নৃশংসতা করা হয়েছে তার কোন তুলনা বর্তমান সময়ের ইতিহাসে নেই।
কিভাবে এই উদ্দেশ্যমূলক গণহত্যা শুরু করা হয়েছিল তা মার্চের ২৬ তারিখে ঢাকা থেকে বহিষ্কার হবার পূর্ব পর্যন্ত থাকা প্রায় সকল বিদেশী সাংবাদিক এবং সেনাবাহিনীর আক্রমণ শুরু হবার পরে যারা বাংলাদেশে গিয়েছেন,তারা লিখেছেন।তাদের মতে এভাবেই সব শুরু হয়েছিলঃ
ওয়াশিংটন পোস্টে হেনরি ব্রাডশের লিখেছেন “বৃহষ্পতিবার রাতে সেনাবাহিনী ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় এবং শুক্রবার সকালেও অনেক বেলা পর্যন্ত ভারী আর্টিলারি সহ গুলির আওয়াজ শোনা গেছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে প্রকান্ড অগ্নিশিখা দেখা গেছে।”
<003.293.804>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এএফপি এর সাংবাদিক ব্রায়ান মে বলেন, “সারা রাত ধরে গোলাগুলির যে তীব্রতা ছিল এবং শুক্রবারে বিক্ষিপ্তভাবে তা যেভাবে বজায় ছিল তাতে বোঝা যায় শহরজুড়ে মৃতের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনী বাঙালী অধ্যুষিত পুলিশ বাহিনীকে নিরস্ত্র করে ফেলেছিল।
ইউপিয়াই এর রবার্ট কাইলর বলেছেন, “হোটেলের কাছে “দ্য পিপল” সংবাদপত্রের দিকে টর্চ হাতে সৈন্যদের যেতে দেখা গিয়েছে। সেখানে কিছু হট্টগোল এবং গোলাগুলি হলো আর অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো… আগুনের প্রকাণ্ড লেলিহান শিখা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক হতে উপরের দিকে উঠে গেল। সৈন্যদল যদি ভারী অস্ত্রসস্ত্র সমেত হামলা চালিয়ে থাকে, তবে এই হত্যালীলা ব্যাপক আকার ধারণ করবে। ছাত্রাবাসগুলো যেগুলোর প্রতিটিতে ৪০০ করে ছাত্র ধরে সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দ্বারা ঠাসাঠাসি হয়ে যায়।
বিবিসি এর মাইকেল ক্লেয়টন রিপোর্ট করেন, “ঢাকাবাসিকে আতঙ্কিত করতে সৈন্যবাহিনী বৃহস্পতিবার রাতে এক নৃশংস অভিযান পরিচালনা করে।”
সিমন ড্রিং, ডেইলি টেলিগ্রাফ লন্ডন এর আরেকজন সাক্ষী, ৩০মার্চ লিখেন, “আকষ্মিক আক্রমণে ইকবাল হলে প্রায় ২০০ ছাত্র খুন করা হয় তাদের কক্ষগুলোতে মেশিনগানের গুলির ঝাঁজরায়… মিলিটারি অনেকগুলো মৃতদেহই সরিয়ে ফেলে কিন্ত ৩০টি দেহ তখনও সেখানে ছিল যেগুলো থেকে কখনই ইকবাল হলের করিডোরগুলোর এত রক্ত হওয়া সম্ভব না।
তিনি আরও বলেন, “যারা বাজারে ঘুমিয়ে ছিল তাদের গুলি করা হয়, সকাল বেলাও তারা একইভাবে শুয়ে ছিল কম্বল গায়ে, মনে হচ্ছিল যেন তারা ঘুমোচ্ছে। ২৬মার্চ সকালে গোলাগুলি বন্ধ হয়, পুরো ঢাকা নিস্তব্ধতার চাদরে ঢেকে যায়। হঠাৎ শহর আবার সৈন্য দ্বারা ছেয়ে যায় এবং ১১ ঘণ্টা ধরে তারা এই পুরাতন নগরী ঢাকাকে ধ্বংস করে দেয়।” তিনি আরও বলেন, “সেনাবাহিনী পুরান নগরটির প্রতিটি মানুষকে গুলি করে এবং মানুষকে তাদের বাড়ির ভেতরে পুড়িয়ে মারে। সবচেয়ে বড় গণহত্যাটি চলে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায়। সেনাবাহিনী তারপর পরবর্তী টার্গেট, শেখ মুজিবের সমর্থনকারীদের কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়, এই হত্যাযজ্ঞ রাত পর্যন্ত চলতে থাকে।”(সিমন ড্রিং ছিলেন একজন সাংবাদিক যিনি ২৬ মার্চ রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের একটি কক্ষে লুকিয়ে থাকেন । ২৭মার্চ সকালে যখন কারফিউ তুলে নেয়া হয়, ড্রিং তখন এই হত্যাযজ্ঞ ও ধ্বংসলীলা নিজ চোখে দেখতে পান।)
দ্য টাইমস, লন্ডন এর পিটার হ্যাজেলহার্স্ট তিনদিনের হত্যাযজ্ঞের পর বেঁচে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, “কিছু মানুষকে আদেশ দেয়া হয় বিশাল কবল খোঁড়ার জন্য। পাকিস্তানি সেনারা ৮-৯ জন বাহককে বসতে বলে। কিছুক্ষণ পর দাঁড়াতে বলা হয় এবং কবরের পাশে সারিবদ্ধ হতে নির্দেশ দেয়া হয়। বন্দুকগুলো থেকে আবার গুলি করা হয় এবং তারা আমার বন্ধুদের মৃতদেহের পাশে পড়ে যায়।”
৩০ মার্চ জন উডরুফ দ্য বাল্টিমোর সান এ “পূর্ব পাকিস্তানে ইয়াহিয়ার পরিকল্পিত আক্রমণ” শীর্ষক এক লেখায় লিখেন, “ প্রথমেই বেতারে কারফিউ ঘোষণা করা হয় মাঝ সকালে এবং তার ৮ ঘণ্টা পরে বিদেশি সাংবাদিকরা দেখতে পান সৈন্যদের দ্বারা ১৫ জন নিরস্ত্র যুবক যারা আস্তে আস্তে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদ করে এগিয়ে আসছিল তাদের উপর একটি জীপবাহী মেশিনগান চালানোর হয়।”
এসোসিয়েট প্রেস এর মাইকেল লরেন্ট নিউ ইয়র্ক পোস্ট এ প্রতিবেদন করেন, “তখনও পুড়তে থাকা যুদ্ধ এলাকাগুলো শনিবার ও গতকাল পরিদর্শনের সময় ছাত্রাবাসের বিছানায় একজন কিছু ছাত্রের পোড়া দেহ খুঁজে পায়। ট্যাঙ্কগুলো ছাত্রাবাসগুলোতে সরাসরি আঘাত হানে। জগন্নাথ হলে একটি গণকবর তড়িঘড়ি করে পূর্ণ করা হয় ইকবাল হলে হত্যা করা ২০০ জন ছাত্রের লাশ দিয়ে। প্রায় ২৯টি দেহ তখনও মাটিতে ও ছাত্রাবাসে পড়েছিল।”
<003.293.805>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
দ্য টাইমস, লন্ডন এর লুইস হেরেন ২এপ্রিল লিখেন, “পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যার যুদ্ধ শুরু করার জন্য দায়ী। বলা হয় তাদের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্বদের সরিয়ে দেয়া, এটি সম্ভবত ভালভাবেই অর্জিত হয়েছিল।” উপসংহার টানা হয় যে, “পূর্ব পাকিস্তান অন্তত এক যুগ অথবা হয়তো একটি প্রজন্ম রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ত্ব ব্যাতীত থাকবে। আক্রমণ চালানোর কয়েক সপ্তাহ আগেই পশিম পাকিস্তানিরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে থাকা বাঙালী সৈন্য ও অফিসারদের নিরস্ত্র করে ফেলে।”
২এপ্রিল দ্য নিউ স্টেটস্ম্যান এ মারভিন জোন্স লিখেন, “রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়ার ধন্যবাদ বিধ্বংসী অভিযানে রূপান্তরিত হয়ে যায়, পুর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রতি সেখানে কোনো পিছুটানই দেখানো হয়নি। আর স্থূল যুক্তিতে তাদের শত্রু নিশ্চই সমস্ত জনগণ কারণ তারা স্ব-শাসনের দাবীতে সর্বসম্মতি দেখিয়েছে।”
৮এপ্রিল লন্ডনের দ্য ইভনিং স্ট্যান্ডার্ডে লেখা হয়, “হাজার হাজার বাঙালী খুন করা হয়। সেনাবাহিনী মানুষকে জড়ো করে তার মেশিনগান দিয়ে… তাদের পেছন থেকে কুকুরের মতো গুলি করে মারা হয়।”
২০জুলাই মাইকেল হর্ন্সবাই দ্য টাইমস এ লিখেন, “এটি নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, সেনাবাহিনী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশের উপর পদ্ধতিগত নিপীড়ন চালায়।”
ডেইলি টেলিগ্রাফ এর ১২এপ্রিলের সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, “যা হচ্ছে তা ঔপনিবেশিক দখলদারীত্ত্বের যুদ্ধ থেকে কম হলেও অন্তত একটি গৃহযুদ্ধ অথবা বিদ্রোহীদের উপর নিপীড়ন। কঠোর সেন্সরশিপ ও বিদেশি সংবাদদাতাদের নির্বাসনের ফলে সাক্ষীদের দ্বারা জানানো নৃশংসতা নিশ্চিতভাবে বলা অসম্ভব, কিন্ত ভয়ঙ্করতম ভয় জাগিয়ে তোলার জন্য এটি পর্যাপ্ত।”
সিলেট, বাংলাদেশ থেকে ডেভিড লোশাক ১৫এপ্রিল দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ এ প্রতিবেদন করেন, “সাত লাখ মানুষের প্রায় সবাই গ্রামের দিকে পালিয়ে গিয়েছে শহুরে রাস্তাগুলো অসহায় বৃদ্ধ ও বিকলাঙ্গদের আর লাশগুলো কুকুর ও শকুনদের জন্য ছেড়ে দিয়ে। স্ফীত লাশগুলো সিলেটের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীতে ভেসে উঠছিল। এগুলো ছিল ২৬মার্চ, ১৯৭১ এর রাতের প্রত্যয়নপত্র যে রাতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা শহরে হানা দেয় এবং লুট ও হত্যার অভিযান চালায়। একটি বিশেষ ইউনিটকে দায়িত্ব দেয়া হয় ডাক্তার, উকিল, সাংবাদিক, শিক্ষক ও অন্যান্য পেশাজীবী মানুষদের হত্যা করার জন্য।”
১৬এপ্রিল লন্ডনের দ্য নিউ স্টেটস্ম্যান লিখে, “রক্তই যদি জনগণের স্বাধীনতার অধিকারের মূল্য হয়, বাংলাদেশ তবে অতিমুল্য প্রদান করেছে… ধর্মনিষ্ঠভাবে প্রয়োজনীয়, যেমনটা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো পশ্চিমের কাছে দাবীগুলো জানায় ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে, তারা তাই করেছে। তারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নিখিল-পাকিস্তান পরিষদে জয়লাভ করে। এটি ছিল দেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচন এবং যার ফলাফল প্রচণ্ড ধাক্কা দেয় ইয়াহিয়া খানের ইসলামাদ সরকারকে যে সরকারের মূল শক্তি ছিল সেনাবাহিনী যেখানে বাঙালীরা ছিল উপেক্ষিত, ইসলামাবাদ আতঙ্কিত হয়ে যায়। যার ফলাফল হলো এই হত্যাযজ্ঞ।”
১৭এপ্রিল, ১৯৭১, সিডনি স্ক্যানবার্গ পালাতে সক্ষম হওয়া এক নব্বই বছর বয়স্ক বৃদ্ধ সেকেন্ড ল্যাফটেনেন্ট এর উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস এ লিখেন, “একটি জানালা দিয়ে তিনি দেখেন পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা রেজিমেন্টের ৬০জন বাঙালী সৈন্যকে একটি ভবনের পেছনে নিয়ে যায়, তাদের হাত উপরে তোলা ছিল। তারপর তিনি একটানা গোলাগুলির আওয়াজ শুনতে পান এবং বুঝে নেন বাঙালীদের হত্যা করা হয়েছে।”
<003.293.806>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
” বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরী অবস্থায় অান্তর্জাতিক কমিটির” পরিচালনা কমিটি নিউইয়র্ক থেকে “হিন্দুস্থান স্টান্ডার্ড, ইন্ডিয়া ২৪ এপ্রিল, বিবৃতি দেয় যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান টার্গেট, গণহত্যা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং নির্যাতিতদের মাস্টার লিস্ট তৈরী করা হচ্ছে। নেতৃস্থানীয় শিক্ষক যেমন চিত্রশিল্পী, গায়ক ও লেখক, যারা বাঙালি সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সাথে জড়িত ছিলেন তারা নির্যাতিত হন। গণহত্যা ছিল নিষ্ঠুরতম ও শোচনীয় দৃশ্য।
সিরিয়ার অাল-থাওরা উল্লেখ করে পশ্চিম পাকিস্থানী সৈন্যরা পূর্ব বঙ্গে সুসসংগঠিত গণহত্যা চালাচ্ছে।
টাইম পত্রিকার সংবাদদাতা ডান কগিনস্ ছিলেন অন্যতম একজন সংবাদদাতা যিনি ২৬ তারিখে সন্ধ্যায় মিলিটারি কর্তৃক ঢাকায় সংবাদ সংগ্রহ থেকে বরখাস্ত হন। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি প্রথম অামেরিকান সাংবাদিক হিসেবে ঢাকার বিখ্যাত সড়কে ট্রাক ও সাইকেলে ভ্রমন করেন। তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেন বর্বরতা অাপাত দৃষ্টিতে অবিরাম। এক যুবককে সৈন্যরা খুজে বের করে। ওই যুবক তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং বলে তার ১৭ বছরের ছোট বোনকে ছেড়ে দিতে এবং বিনিময়ে সে সবকিছু করবে। কিন্তু ওই যুবকের সামনে তারা তার বোনকে বেয়োনেট দিয়ে হত্যা করে। কর্নেল অাব্দুল হাই একজন ডাক্তার যিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন, তাকে তার পরিবারে শেষ ফোন করতে দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল। এবং এক ঘন্টা পরে তার দেহ তার বাড়িতে প্রেরণ করা হয়। একজন বৃদ্ধ যিনি কারফিউ থেকে জুম্মার নামায অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন, তিনি মসজিদ বরাবর হাটতে থাকলেন কিন্তু গুলিতে নিহত হলেন।
উদঘাটিত রির্পোটের মাঝে সব থেকে আলোচিত হচ্ছে “এনথনি মাসকারেনহাস এর চার পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি যা “সিডনি টাইমসে ১৩ জুন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এই গণহত্যা পরিচালনা করা হয়েছিল নিপীড়িত মানুষদের ভয় দেখানোর জন্য। মাসকারেনহাস পাকিস্থানী সৈন্যদের অাতিথীয়েতায় সারাদেশ ভ্রমনের সুযোগ পান এপ্রিল ১৯৭১। তিনি দ্রুত তার লেখা শুরু করেছিলেন এবং নাম দিয়েছিলেন “গণহত্যা”। তিনি লেখেন, অামি মনে করি, পূর্ব বাংলা সরকার চুক্তিপত্রের বিরোধীতা করেনি। পূর্ববঙ্গ এখন অধ্যুষিত। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাঘের উপর বসে হিসাব নিকাষ করছেন। কিন্তুু সৈন্যরা সেখানে থেমে থাকেনি। পাকিস্থান সরকারের চুক্তি পূর্ববঙ্গের জন্য সেটা পড়লাম ঢাকার ইস্টার্ন হেডকোয়ার্টারসে্। এটার তিনটি তত্ব ছিল। (১) বাঙালিরা তাদের নিজেদের অনির্ভরযোগ্য করবে এবং পশ্চিম পাকিস্থানের অাইন মানবে। (২) বাঙালিদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা এবং সাংবিধানিক ভাবে ইসলাম গঠন এবং শক্তিশালী ধর্মীয় সম্পর্ক পশ্চিম পাকিস্থানের সাথে গঠন করা। (৩) হিন্দুদের মারা যাওয়ার পর সে সম্পদ মধ্য শ্রেণীর মুসলমানদের মধ্যে বন্টন করা হবে। এটা সাংবিধানিক গঠন শক্ত ও রাজনীতির কাঠামো ভবিষ্যতে শক্ত করবে। এবং এই চুক্তি সর্বাধিক ভারসাম্য রক্ষা করবে।
<003.293.807>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জুলাই ১৪, ডেইলি মিরর পত্রিকাতে বলা হয়…”এটা যখন পরিস্কার যে পূর্ব পাকিস্থানে যা ঘটেছিল যা শুধু উপপ্লবের চাপাচাপিই ছিল না, ছিল গণহত্যা। পশ্চিম পাকিস্থানী সামরিক সরকার চিহ্নিত গণহত্যার দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন মানুষের মাঝে ২% মানুষকে অনাহারে রাখেন।
২০ জুন, লন্ডনের “দ্য সিডনি টাইমস্” একটি সম্পূর্ণ পৃষ্ঠার খবর প্রকাশ করে “পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ” নামে। এবং বলা হয় এই গণহত্যার সাথে ইয়াহিয়া সরকার জড়িত। এবং এই হত্যা প্রচারণা লাগামহীনভাবে ছাড়া হয় বাংলাদেশে। হত্যা করা হয় শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, হাকিম, ডাক্তার, হিন্দু এবং অাওয়ামীলীগারদের। গুপ্ত পুলিশদের কাজ প্রসারিত ছিল। এটা রাজাকারদের প্রধান কাজ ছিল। বিহারী অার অস্ত্র সজ্জিত কর্মীরা সিনিয়র অফিসারদের সহায়তায় লুটপাট, মেয়েদের ধরে নিয়ে যাওয়া, ধর্ষণ, পতিতাবৃত্তি এবং এধরনের অারো অনেক কাজ করাতো।
চট্টগ্রামের অাগ্রাবাদে পতিতালয় চালানো হয় এবং, মেয়েদেরকে অফিসারদের কাছে পাঠানো হত পার্টিতে অংশ নেয়ার জন্য। সেনা গোয়েন্দারা সন্দেহভাজনদের তালিকা তৈরী করে। তারা সাদা, ধূসর ও কালো তিনভাগে বিভক্ত হয়। সাদারা অসংযতভাবে ঘোরে, ধূসররা অবরুদ্ধ করে এবং কালোরা গুলিকরে হত্যা করে। অনেক সন্দেহভাজনকে প্রকাশ্যে ধরা হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ক্যান্টনমেন্টে নেওয়া হয়। এবং তারপর অার তাদের দেখা যায় নি। এরকম অনেক উদাহরণ অাছে।
টনি ক্লিফটন ২৮ জুন, নিউজউইক ম্যাগাজিনে জন হাসটিংসের বরাত দিয়ে বলেন, (জন হাসটিংস একজন ব্রিটিশ মিশোনারী, যিনি ২০ বছর ইন্ডিয়া ছিলেন) তিনি বলেন, অামি নিশ্চিত যে, পাকিস্থানী সৈন্যরা মেয়েদেরকে ক্রমাগত ধর্ষণ করছে এবং দুই পায়ের মাঝে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করছে। ক্লিফটন অারো বলেন, এই গণহত্যা এলোমেলো ছিল না। এটা পরিকল্পিতভাবে চালনা করা হয়েছিল বাঙালীদের নির্মূল করার জন্য।
জুন ২৮, লন্ডনের “দ্য গার্ডিয়ান ” পত্রিকায় মার্টিন উল্লাকট বলেন “খুন, ধর্ষণ, লুট এবং অগ্নী সংযোগের পর কুমিল্লা জেলাকে নিরাপদ বলার কোন সঠিক কারণ আছে কি? ।”
সিডনি স্ফানবার্গ যাকে পাকিস্থানী সৈন্যরা বরখাস্ত করেছিল ৩০ জুন। তিনি বাংলাদেশের ফরিদপুর থেকে ২৯ জুন লিখেছিলেন, পাকিস্থানী সৈন্যরা হলুদ রঙের বড় এইচ লিখেছিল হিন্দুদের দোকানে এবং সংখ্যা লঘুদের সম্পত্তিতে যাতে জনগণ বুঝতে পারে এগুলো তাদের অন্যতম লক্ষ্য।
স্ফানবার্গ ৪ জুলাই অাবার লেখেন, পৃথিবী কি বুঝতে পারছে না যে এই পাকিস্থানী সৈন্যরা ধোঁকাবাজ? তিনি একজন বিদেশীকে জিজ্ঞেস করেন যিনি অনেক বছর যাবৎ পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করছেন। তিনি বলেন “তারা বাঙালীদের ভয় দেখানোর জন্য হত্যা করেছিল এবং বাংগালিদেরকে গোলাম বানিয়ে রাখতে চায়? তারা সব গ্রাম মুছে ফেলতে চাইছিল। প্রথমে তারা অাগুন দিয়ে পোড়াচ্ছিল এবং তারা থামতো যতক্ষণ না তারা নিজেরা ক্লান্ত হতো?
৫-ই জুলাই “দ্য হংকং স্টানর্ডাডে” লেখা হয়, ” ইয়াহিয়া খানের সৈন্যর মানব জাতির রক্তাক্ত কাহিনীর একটা ভয়াবহ নতুন রেকর্ড করে ।”
ইউনাইটেড আরব রিপাবলিকের “অাল-অাহরাম” পত্রিকার সম্পাদক হোসেইন হেইফাল ৯ জুলাই লেখেন, “অামরা কিভাবে নিরবে থাকতে পারি যখন পূর্ব পাকিস্তানে একচতুর্থাংশ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে যা কিনা ইতিহাসের সবচেয়ে মর্মান্তিক হত্যাকান্ড?”
<003.303.808>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১২ই জুলাই নিউইয়র্ক টাইমসে অ্যান্থনি লুইস লিখেছেন, ” দুষ্কৃতকারীদের সাথে ডিল করার নামে দৃঢ়তা শূন্য পাকিস্তান যে অপপ্রচার চালায় তা আসল সত্যকে আড়াল করতে পারেনা যে, পাকবাহিনীর হত্যা এবং ত্রাসের রাজত্ব জাতি ও রাজনীতির তলানিতে ঠেকেছে”। জুন ‘৭১ সালে বাংলাদেশে একটি ব্যাপক সফর শেষে বিশ্বব্যাংকের ১০জন প্রতিনিধি একটি যৌথ প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই প্রতিবেদনের সাথে পাকিস্তান বিভাগের আইবিআরডি’র অর্থনীতিবিদ Mr. Hendrik Van der Heijen এর মন্তব্য দাখিল করা হয়; যিনি বলেছিলেন, ” কৃষকেরা শহরগুলিতে আসছেনা এবং কেই শহরের বাইরেও যাচ্ছেনা। হাজার হাজার কৃষক পালিয়ে গেছে। সেখানে সবকিছু অস্বাভাবিক এবং এটি একটি ধ্বংসাত্মক অভিজ্ঞতা।” Mr. George Broussin ফ্রান্সের La Politique De Matin এ লিখেছেন, ” যেসব অপরাধ বর্ত্তমান বিশ্বকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ঘটছে বাংলাদেশে যা মানবজাতির জন্য সবচেয়ে মারাত্মক ও সবচেয়ে বিপর্যয়কর।” ২১জুলাই,১৯৭১ সালে International Herald Tribune এর প্রতিবেদন :- “পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে জ্ঞাপিত তরঙ্গের মতন গ্রাম দহন এবং ধর্ষণের পর গত কয়েক মাসে একলক্ষ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি পূর্ব পাকিস্তানি শরণার্থী -যাদের প্রায় বেশিরভাগ মুসলিম ; ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পালিয়ে যায়।”
টাইম ম্যাগাজিনের আগস্ট ২, ১৯৭১ সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো :- ” গোটা পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে রক্তপাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। নগরের প্রতিটি অংশে বোমাবর্ষণ এবং বায়বীয় আক্রমণের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খুলনা উত্তরাঞ্চলীয় শহরতলি খালিশপুরে নগ্ন শিশু এবং জীর্ণশীর্ণ নারীদেরকে ধ্বংসস্তূপের ময়লা সাফ করতে দেখা যায় যেখানে একসময় তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট দাঁড়িয়ে ছিলো। চট্টগ্রামের হাজারি লেন ও মাওলানা শওকত আলী রোডের বিস্তৃতি অপনোদিত হয়েছে। যশোর কেন্দ্রীয় বাজার ঢেউতোলা টিন ও টুটা দেয়ালের সাথে মানুষ দুমড়ে মুচড়ে দলায় পরিণত হয়েছে। চল্লিশ হাজারের জনসংখ্যার একটি শহর কুষ্টিয়া,যা এখন, বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ” পারমাণবিক হামলার পর একটি সকালের মতো। ” ঢাকায় সৈন্যদল অগ্নিবর্ষকের মাধ্যমে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং যারা অগ্নিবেষ্টনী থেকে পালানোর চেষ্টা করে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। প্রায় ২৫টি ব্লক বুলডোজারের মাধ্যমে গুড়িয়ে দেয়া হয়।”
Clare Hollingsworth কতৃক ঢাকা থেকে প্রেরিত একটি ডাকের মাধ্যমে ৫ই আগস্ট, ১৯৭১ সালে The Daily Telegraph লিখেছে- ” গত চারমাসে সৈন্যদলের কার্যপদ্ধতি খুব সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। যুবকদের দ্রুত বন্দী অবস্থায় ট্রাকে করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিকটতম বন্দিশালায় নিয়ে যাওয়া হয়। বৃদ্ধ নর-নারী পলায়নপর অবস্থায় সৈন্যদের বুলডোজার নিয়ে তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিতে দেখে।” ১লা এপ্রিল ইউ এস সিনেটের এক অধিবেশনে সিনেটর এডওয়ার্ড এম. কেনেডি তার বিবৃতিতে বলেছেন, ” এটি নির্বিচারে হত্যাকাণ্ডের একটি গল্প। প্রতিদিন ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ফাঁসি হচ্ছে এবং প্রতিঘন্টায় হাজার হাজার বেসামরিক ছাত্র-জনতা দুর্দশা ভোগ করছে এবং মৃত্যুবরণ করছে। এটি স্থানচ্যুতি এবং বাস্তুহারা হওয়ার একটি গল্প।” ১১ই মে ইউএস সিনেটে সিনেটর Saxbe তাঁর বক্তৃতায় Doctor Rodhe কে প্রত্যক্ষদর্শী উল্লেখ করে যা বলেছে, তাতে স্পষ্ট হয় যে, পূর্বপাকিস্তানে জঙ্গলের আইন বিরাজমান যেখানে নিরস্ত্র বেসামরিক জনসাধারণকে গণহারে হত্যা করা হচ্ছে, পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে এবনফ হিন্দু নিধন কার্যক্রম দ্রুততার সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
<003.303.809>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে ১৯৭১ সালের জুন মাসে ১১জন প্রিভি কাউন্সিলর সহ বৃটিশ পার্লামেন্টের প্রায় দুই শতাধিক সদস্য এবং ৩০জন সাবেক মন্ত্রীবর্গ নিম্নলিখিত প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেন। ” এই হাউস বিশ্বাস করে যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বৃহৎ মাত্রায় পূর্ববাংলার বেসামরিক নাগরিকদের উপর যে হত্যা এবং নৃশংসতা চালাচ্ছে, তা পাকিস্তান কতৃক স্বাক্ষরিত ‘ইউনাইটেড নেশন্স কনভেনশন অন জেনোসাইড’ এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এবং এটা নিশ্চিত হয় যে পাকিস্তানের সামরিক সরকার পূর্ববাংলার অধিকার বাজেয়াপ্ত করেছে এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের প্রকাশিত গণতান্ত্রিক ইচ্ছাকে গ্রহণ করতে সেচ্ছামূলক অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কাজেই বিশ্বাস করা হয়, আন্তর্জাতিক শান্তি এবং জেনোসাইড কনভেনশন লংঘনের হুমকিস্বরূপ উভয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কতৃক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে এবং আরো বিশ্বাস করা হয়, যতক্ষণ এই আদেশ পূর্ববাংলার মানুষের আত্মসংকল্প প্রকাশের বাহন হিসেবে স্বীকৃতি না পায় ততক্ষণ এই আদেশ বহাল থাকবে।” সপ্তাহব্যাপী ভারতের শরণার্থী শিবিরে সফরের পর ২৬ আগস্ট এডওয়ার্ড কেনেডি আরেকবার বলেন, ” শরণার্থীর বলেছে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দোসরদের নৃশংসতার গল্প; হত্যা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের গল্প। পশ্চিম পাকিস্তানি জেনারেল এবং বিশ্ববাসীর কাছে এটা প্রমাণ করা আবশ্যক , যে বিস্ময়কর সংহার পূর্ববাংলাকে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব গভীর অ স্থায়ী ভাবে পরিবর্তন করেছে।”
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অর্থনৈতিক ধ্বস :- ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কঠোর ব্যবস্থার পর ইয়াহিয়া খান বারবার দাবি করে আসছিলেন যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং অনেকের সন্দেহ – ইয়াহিয়া খান জানেন না যা তিনি অধিষ্ঠিত হয়েছে বলে দাবি করছেন তা আদৌ বাংলাদেশে ঘটছে কিনা। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ” লোকজন বাইরে যেতে সাহস করেনা এবং যার ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যত স্থগিত হয়ে গেছে এবং সাধারণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপেও ভাটা পড়েছে।” ” প্রথমত যে বিষয়টা একজন মানুষকে তাড়িত করে তা হলো- ঢাকা কিংবা গ্রামাঞ্চলের দিকে ভ্রমণের সময় আশেপাশে খুব কম লোকই মনে হবে।” ” অন্ধকারে পরিস্থিতি এখনো অত্যধিক অস্বাভাবিক। অধিকাংশ এলাকায় কারফিউ চলছে। সময় যাই হোক না কেন, মধ্যদুপুরের পর থেকেই রাস্তা ফাঁকা হতে থাকে এবং সম্পূর্ণরূপে অন্ধকার দ্বারা পরিত্যক্ত হয়।” ” প্রায় ৩মাস ধরে সেখানকার কারখানা বা বন্দরে কার্যত পাট, চা অথবা অন্যকোন রপ্তানি মালের আসাযাওয়া নেই এবং বিদেশের বন্দর থেকেও খুব কমই রপ্তানি হত।” ” সড়কপথে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-১০ শতাংশ যানবাহনের চলাচল কোথাও নেই। এবং কিছু মাছ ধরার কার্যক্রম ছাড়া জলপথে নির্জনতা প্রতীয়মান হয়।দেশীয় নৌকা প্রায় দেখাই যায়না।” ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে বিশ্বব্যাংক টিমের এই রিপোর্ট আসা অবধি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি।
<003.293.810>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
টাইম ম্যাগাজিন, ২রা আগস্ট, ১৯৭১ সংখ্যার প্রচ্ছদকাহিনীতে লিখেছে,“পশ্চিমা জগতের মানুষের কাছে এই যুদ্ধকে সরকারিভাবে “দুর্বৃত্ত” দের বিরুদ্ধে অভিযান হিসেবে ভুলভাবে উপস্থাপিত করা হচ্ছে।”
এই যুদ্ধের কোন খবর বিদেশী পত্রিকা মারফত যাতে দেশে না ঢুকতে পারে তার জন্য কড়া সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া যত বেশি সৈন্য মারাত্মকভাবে আহত হয়ে দেশে ফিরে যাচ্ছে, যত তরুণ সামরিক কর্মকর্তার কফিন পাঠানো হচ্ছে, বিরোধিতা আরো বাড়ছে। অর্থনৈতিক আঘাত ইতিমধ্যে টের পাওয়া যাচ্ছে,কারখানাগুলোতে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই হচ্ছে কেননা, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবে কাঁচামাল কেনা যাচ্ছে না।
বলতে গেলে অর্থনীতি পুরোপুরি ধ্বসে পড়েছে। এটা নিশ্চিত করা যায় বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শ পর্যালোচনা করে যেখানে বলা হচ্ছে “যতদিন পর্যন্ত পূর্বপাকিস্তানে মিলিটারি থাকবে এবং বেসামরিক প্রশাসনকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা না করা হবে ততদিন অবস্থা স্বাভাবিক হবে না।“
সৈন্যদের এই ভূমি ত্যাগ
পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সকল খাদ্যভান্ডার হয় লুট করেছে অথবা পুড়িয়ে দিয়েছে এবং কৃষিকাজ এবং খাদ্যউৎপাদনের অনুপস্থিতিতে সম্পুর্ণ পরিস্থিতি বিকট রুপ ধারণ করেছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহের অভাবে সৈন্যরা তাদের টিকে থাকার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।
লন্ডনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার প্যাট্রিক ক্যাটলি, ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল তারিখে লিখেন, “সকল প্লাটুন,কোম্পানী ও ব্যাটালিয়নের অধিনায়কদের তাদের বাহিনীসহ ঢাকা ত্যাগ করার ব্যাপারে আদেশ জারি করা হয়েছে।”
এর থেকে বোঝা যায়,প্রয়োজনীয় সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে এবং সম্ভবত কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সমস্যায় ভুগছে।ব্যাপক সেনা অভিযানে বেয়নেটের মুখে পাকিস্তানী সৈন্যরা যে তাদের খাদ্য যোগাড়ের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তা দিন দিন কঠিন হচ্ছে।
লন্ডনের টাইমস পত্রিকায় ২৪ জুন মাইকেল হর্নসবি লেখেন, “আগামী চারমাসের মধ্যে একটি বড়ধরণের দুর্ভিক্ষ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে যা বছরখানেক চলতে পারে।হাজার হাজার লোক মারা যেতে পারে-ভারতের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে যে পরিমাণ লোক আছে তার চেয়েও বেশি হতে পারে মৃতের সংখ্যা এবং আরো কোটি কোটি লোক অপুষ্টির শিকার হতে পারে।
বেসামরিক প্রশাসন
বাংগালি বেসামরিক ব্যক্তিরা পাকিস্তানী সেনাকে সম্পূর্ণরুপে অসহযোগিতা করার কারণে ইয়াহিয়া খানের সরকার হাজার হাজার পশ্চিম পাকিস্তানীকে আনে প্রশাসন চালানোর জন্য।লন্ডনের “সানডে টাইমস” জুনের ২০ তারিখে লিখেছে “সব হিন্দু এবং আওয়ামী লীগারদের ব্যাঙ্ক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে এবং ৩০০০ পাঞ্জাবী পুলিশকে ঢাকার পাহারার দায়িত্ত্বে আনা হয়েছে।”
জুনের ২৫ তারিখে Schanberg লিখেছে “পাকিস্তানী সেনাবাহিনী অবশ্যই পুরো শহর নিয়ন্ত্রণে রেখেছে ,কিন্তু সরকার যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলছে, সেই স্বাভাবিকতার কোন চিহ্ন নেই।”
<003.293.811>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় ১৩ জুলাই তারিখে Sydney Schanberg লিখেন,-“প্রতিদিন যে একের পর এক পশ্চিম পাকিস্তানী লোকবহর এসে পৌছাচ্ছে তার উদ্দেশ্য সরকারি কাজগুলোতে পূর্ব-পাকিস্তানিদের জায়গায় পশ্চিম পাকিস্তানীদের বসানো। কোন দায়িত্বশীল পদে বাংগালিকে আর বিশ্বাস করা যাচ্ছে না,এমন কি ঢাকা এয়ারপোর্টের ঘাস কাটে যে লোকটি সেও একজন অবাংগালী।
লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ জুলাই এর ১৯ তারিখে লিখেছে-“ঢাকার শেষ কয়েক সপ্তাহের পরিস্থিতি, শহুরে গেরিলা গ্রুপ গুলোর ট্রেনিং ও সাংগঠনিক উন্নতির ফলাফল। পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক দূরে,এই জন্য সামরিক গভর্ণর টিক্কা খান ও তার সহকর্মীরা চেষ্টা করছেন যেন প্রেসিডেন্টের সফর পিছিয়ে যায়।”
এটি উল্লেখ্য যে টিক্কা খানের এই প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ভয়ে বাংলাদেশ সফর করতে সক্ষম হননি।
জনগণের নীতিবোধ
বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনী জনগণের পূর্ণ সমর্থন উপভোগ করছিল, পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাদের ক্রমাগত সন্ত্রাস সৃষ্টি সত্ত্বেও জনগণের নৈতিকতাবোধ অনেক উন্নত ছিল।
Clare Hollingsworth ১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট লন্ডনের ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকায় লিখেন, “যখন পশ্চিম পাকিস্তানী সেনারা ধারে কাছে থাকে না তখন গ্রামের মানুষজন বাংলাদেশের প্রতি সহানুভুতি প্রকাশ করে। কিন্তু কোন পাকিস্তানী সৈন্যকে দেখলে বলে “পাকিস্তান জিন্দাবাদ”।এক গ্রামবাসী বলেছে এটা তাদের জীবন বাচানোর কৌশল।”
দখলদারদের গৃহযুদ্ধের অপ্রপ্রচার
ইয়াহিয়া খানের শ্বেতপত্রে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে ২৫ মার্চ তারিখের পূর্বে বাংগালির হাতে কোন অবাংগালি মারা গেছে তেমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর এই অপ্রপ্রচার কেউ বিশ্বাস করেনি।
অন্যদিকে, এসোসিয়েটেড প্রেস এর প্রতিনিধি Denois Neeld যিনি খবর আদানপ্রদানের নিষিদ্ধ সময়টাতে ঢাকাতে ঘুরে গিয়েছিলেন তিনি ১৯৭১ এর এপ্রিল মাসে লিখেছেন, “পশ্চিম পাকিস্তানের নন বাংগালী অধিবাসীরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে লুটপাট ও খুন করছে। সেনাবাহিনী নিস্ক্রিয় থাকছে অথবা কোন কোন ক্ষেত্রে সরাসরি সহযোগিতা করছে অবাংগালীদের এই ধ্বংসযজ্ঞে।”
১৯৭১ এর ১২ জুলাই লন্ডনের টাইমস পত্রিকা লিখেছে, “ সেনাবাহিনীর তৎপরতার পক্ষে পাকিস্তান সরকার ব্যাপক অপ্রপ্রচার চালিয়েছে এই বলে যে বিহারীদের উপর ব্যাপক গণহত্যা চলেছে এবং পাকিস্তানী সেনারা আসার আগে অবাংগালিদের উপর ব্যাপক আকারে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে।”
এই ব্যাপারটি সহজেই ব্যাখ্যাযোগ্য। পাকিস্তানী সেনাদের দাবি অনুযায়ী এত বড় হত্যাযজ্ঞ চলবে আর পূর্ব পাকিস্তানে ২৬ মার্চ বিতাড়ণের আগ পর্যন্ত অবস্থানরত কোন বিদেশী সাংবাদিকের নজরে এর কোন খবর আসবে না-এটি বিশ্বাসযোগ্য নয়।
শরণার্থীরা কখন ফিরবে?
প্রায় ৮০ লাখ শরণার্থী সীমান্ত অতিক্রম করেছে এবং প্রতিবেশীদেশ ভারতের নানা স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।তারা তীব্র ভয় ও সন্ত্রাসের শিকার হয়ে তাদের বাড়িঘর ত্যাগ করেছে।
<003.293.812>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
তারা শুধু ভয় এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে টিকে থাকার জন্য তাদের ঘর-বাড়ী ত্যাগ করেছে। প্রতিনিয়ত নির্যাতন এবং ত্রাসের রাজত্বে বাস করে যারা বাংলাদেশ ত্যাগ করতে পারেনি তাদের অবস্থাও সঙ্কটজনক।
গত ১৪ই জুন, দ্যা গার্ডিয়ান তাদের একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছে, ‘মৃত্যু, আশ্রয়ের আশা ও ভয় ৪ থেকে ৫ মিলিয়ন রিফিউজিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে ভারতে নিয়ে গেছে। …….. তারা আরও লিখেছে, প্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা ইয়াহিয়ার বেয়নেটের নিচে আছে, তারা সংকীর্ণ, দূর্দশাগ্রস্থ ও প্রায় অনাহারে দিনযাপন করছে।’
২৭ শে জুন, লন্ডনের দ্যা অবজারভার পত্রিকায় কলিন স্মিথ লিখেছেন, ‘যেসব রিফিউজিরা শরনার্থী শিবির থেকে পূর্ব পাকিস্তানে ফিরতে চান, তাদের জন্য সেনাবাহিনী অভ্যর্থনা কেন্দ্র খুলেছে। মি. বট্টমলেই এবং তার দল এমন একটি ক্যাম্প পরিদর্শন করেন এবং ২২ জন বিধ্বস্ত মানুষ দেখতে পান। পাকিস্তানিরা একদিনে ৫০০ মানুষ আশা করছে।’
জুলাই/৭১ এর লন্ডনের দ্যা সানডে টাইমসে মুররে সেইলস লিখেছেন, “পাকিস্তানের মিলিটারি শাসন সম্প্রতি পুনরায় দাবী করেছে যে, দীর্ঘ সামরিক অপারেশনের পর পাকিস্তান দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। …… হাজার হাজার রিফিউজি পালিয়েছে এমন একটি জায়গায় আমি এক সপ্তাহ ছিলাম এবং দেখেছি এ বক্তব্য মিত্যা। প্রকৃতপক্ষে, এমন রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে যেন রিফিউজিরা আর কখনোই ফেরত আসতে না পারে।”
ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দলের সদস্য রেজিনাল্ড প্রেন্টিস বাংলাদেশ ও ভারত সফর করে, ১৬ জুলাই দ্যা স্টেটসম্যান পত্রিকায় লিখেন, “আমরা যেখানেই গিয়েছি, রিফিউজিদের প্রশ্ন করেছি, এবং সব জায়গাতেই একই উত্তর পেয়েছি। আর্মিরা তাদের গ্রামে অথবা তাদের পাশের গ্রামে এসেছিল, মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, অঙ্গচ্ছেদ করা হয়েছে, ঘর বাড়ি ও খামার জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হয়েছে, সৈনিকরা বাঙালিদের (বিশেষ করে হিন্দুদের) মালামাল লুট করেছে অথবা অবাঙালিদের দিয়ে বাঙালিদের মালামাল লুট করাচ্ছে। এসব এখনও ঘটছে, তাই তারা সব ছেড়ে পালিয়ে এসেছে। তারা ফিরতে চায়, কিন্তু যখন তা নিরাপদ হবে, অথবা শেখ সাহেব নিরাপদ বলবেন অথবা যখন আর্মিরা চলে যাবে।”
২১ শে জুলাই লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখেছে রিফিউজিদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয়েই ছিল, “আগরতলা থেকে ১৯ মাইল দূরে এবং বর্ডার থেকে মাত্র ২০ ইয়ার্ড দূরে কানতলা ক্যাম্পে প্রায় ২০,০০০ মুসলিম রিফিউজি রয়েছে। তারা সবাই পূর্ব পাকিস্তানের ভিতরের গ্রাম থেকে এসেছে।”
২১ শে জুলাই ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন লিখেছে, “বিদেশী সাংবাদিকদের একটি দল যারা সম্প্রতি আসাম ও ত্রিপুরার দূরবর্তী অঞ্চল ঘুরে এসেছেন তারা বলেছেন অনেক পূর্ব পাকিস্তানি রিফিউজি তাদের বলেছে পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা মুসলিমদের গ্রাম ও মালামাল লুট হয়েছে এবং মুসলিম নারীরা ধর্ষিত হয়েছে।”
মুক্তি বাহিনী
প্রতিরোধ থেকে বিজয়ঃ
মুক্তি বাহিনী, বাংলাদেশের জনগণের স্বতস্ফূর্ত প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে যার উৎপত্তি সেটি এখন এখন একটি সুসংগঠিত বাহিনী। এটি শক্তি ও আকার, দুটিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে। সবদিক থেকেই এটি নিজেকে সক্ষম মুক্তি বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং নিঃসন্দেহে বিজয় নিয়ে আসছে। মুক্তি বাহিনী জনগনের সমর্থন উপভোগ করছে এবং প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে অধিক সাফল্য অর্জন করছে। বিশ^ ধীরে ধীরে এ সত্যটি অনুধাবন করছে।
<003.293.813>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১৫ ই এপ্রিল দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সিলেট থেকে ফিরে ডেভিড লোসাক লিখেন, “তাদের ক্ষতি অনেক বেশী,অপূরনীয় কিন্তু হাজার হাজার বাঙালীরা তাদের মৃত্যুকে পরোয়া না করে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমি চরম প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তাদের অটল মনোবল লক্ষ্য করেছি এবং তারা যে মৃত্যুর জন্য সবসময় প্রস্তুত সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।”
১৮ ই এপ্রিল লন্ডনের দ্যা সানডে টাইমস লিখে, “পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা অনিবার্য। অখন্ড পাকিস্তানের কাঠামোতে যেটি শুধু অর্থনৈতিক স্বায়ত্বশাসনের আন্দোলন হিসেবে শুরু হয়েছিল সেটি গণহারে পূর্ব পাকিস্তানি নাগরিকদের হত্যার মধ্য দিয়ে এমন এক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে যা আগে বা পরে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান সৃষ্টি করবে। বাংলদেশ এখন শুধু সময়ের ব্যর্পা।”
২০শে জুন লন্ডনের দ্যা সানডে টাইমস লিখেছে, “ঘনঘন গ্রেনেড বিষ্ফোরণ ঢাকাকে প্রকম্পিত করছে, স্পষ্টতই যা মুক্তি ফৌজের কাজ। ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সী বেশীরভাগ তরুণই মুক্তি ফৌজে যোগ দিয়েছে। তাদের মনে সুদূরপ্রসারী ভয় আছে যে, পূর্ব পাকিস্তানে তরুণ হলেই হত্যা করা হবে। তারা এই আশাও ব্যক্ত করেছে যে, তারা হয়ত একদিন স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করতে পারবে।”
২৩ শে জুন মার্টিন উল্লাকট লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান পত্রিকায় লিখেছেন, “শুধু সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নয়, ঢাকার বাইরেও মুক্তিফৌজের গেরিলা দল যাদের ঘাঁটি এখনো প্রদেশের ভিতরে আছে তাদের যুদ্ধের মুখে অরক্ষিত যোগাযোগ ব্যবস্থা অথবা গ্রাম অর্থনীতি রক্ষা করা সেনাবাহিনীর পক্ষে প্রায় অসম্ভব কাজ।”
৬ই জুলাই লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় ক্লেয়ার হলিংওয়ার্থ একটি পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদল যারা মুক্তিফৌজের সাথে সামনাসামনি যুদ্ধ করেছিল তাদের বরাত দিয়ে বলেন, বাংলাদেশী গেরিলাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা দিনদিন বাড়তে থাকায় আর্মড ফোর্সের অবস্থান ক্রমে কঠিন হয়ে যাচ্ছে।” তিনি ঢাকা থেকে ফিরেও একই কথা লিখেন, “এবং গেরিলাদের নিরন্তর চেষ্টা ও সমন্বয় সাধনের ফলে, গেরিলাদের ৫ বছর এমনকি এক দশক লাগলেও বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হবেই; কারণ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে তাদের দেশের জনগনের সর্বময় সমর্থনের ফলেই নির্বাচনে ৯৬% ভোট পড়ে।”
১৩ই জুলাই সিডনি স্ক্যানবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসে লিখেন, কিছুদিন আগেই কুমিল্লার বাইরে গেরিলারা একটি রেলব্রিজ উড়িয়ে দেয়। অস্ত্রধারী গার্ডসহ একটি মেরামতকারী ট্রেন পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। গেরিলারা দিবালোকেই মেরামতকারী ট্রেনের উপর আক্রমণ করে, এক বন্দুকধারীকে হত্যা করে এবং একজনকে জিম্মি করে। ট্রেনটি দ্রুত শহরে ফিরে যায়।”
স্ক্যানবার্গকে ঢাকা থেকে বহিষ্কার করার পর তিনি ১৫ই জুলাই আবার লিখেন, “গেরিলারা (মুক্তিবাহিনী) সম্প্রতি ঢাকার ভিতরে এবং বাইরে বেশ কয়েকটি রেইড দিয়েছে, বিদ্যুৎ সরবরাহ স্টেশনে হামলা চালিয়েছে, অস্ত্র কারখানায় হামলা চালিয়েছে এবং মোটর লঞ্চকে সেনাবাহিনীর গানবোটে রূপান্তর করে এমন একটি প্ল্যান্ট ধ্বংস করেছে। এই সংবাদদাতা আরো জেনেছেন যে, দরিদ্র বাঙালি গ্রামবাসী, দিনে এনে দিনে খায় এমন লোকেরাও প্রকাশ্যে সেনাবাহিনীকে তুচ্ছ করে বিদ্রোহীদের অভিবাদন জানাচ্ছে এবং তাদেরকে সাহায্য করার আশা প্রকাশ করছে।”
<003.308.814>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সিডনি শেনবার্গ নিউইয়র্ক টাইমসে ১৬ জুলাই,১৯৭১ এ লিখেছে,”এখন পর্যন্ত বিশৃঙ্খল বাঙ্গালি হিসেবে প্রেরণা অর্জনে স্বায়ত্তশাসন আন্দোলন প্রতীয়মান হয়।গেরিলারা সম্মুখ যুদ্ধ এড়িয়ে চলছে কিন্তু একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আহত নির্যাতিত হয়েছে।” “সবচেয়ে বড় আক্রমণ হয়েছে সিলেট, কুমিল্লা,নোয়াখালী জেলার পূর্ব সীমান্তে।উল্লেখ্য পরবর্তিতে গেরিলারা ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে ছিন্নকারী গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং রেলসংযোগ অক্ষুন্ন রাখতে সক্ষম হয়েছে।”
ক্লেয়ার হলিংওয়ে ঢাকা থেকে ডাকযোগে লন্ডনের দৈনিক টেলিগ্রাফে ২১ জুলাই লেখেন, ঢাকা বিদ্যুৎহীন কেননা সোমবার নিশিহত্যায় গেরিলারা ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বোমা দিয়ে ধ্বংস করে দেয় একই সময়ে ১৩ জন রক্ষীবাহিনী। আর্মি অভিজ্ঞরা বলেন গেরিলারা জানে ঠিক কোথায় আক্রমণ করলে সর্বোচ্চ ধ্বংস হবে।এটি কয়েকমাস সময় নিবে নতুন ট্রান্সফরমার আমদানি করতে ও ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনা মেরামত করতে।”
দ্যা টাইমসের সংবাদদাতা ২২ জুলাই,লন্ডন থেকে লেখেন,” পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামে নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।বাংলাদেশ মুক্তিফৌজ এর সাথে কিছুদিন অতিবাহিত করার পর, পাকিস্তানি আর্মিদের সহজে যুদ্ধে মানিয়ে নিতে দেখিনি।”
লন্ডনের দৈনিক টেলিগ্রাফ ২২ জুলাই লেখে,”শহরের ভিতরে উচ্চ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অন্তর্ঘাতকেরা এখন ৩ অথবা ৪ জনের ছোট ছোট দল পরিচালনা করছে যাদের বেশ বাঙ্গালি গরিব গ্রাম্যদের মতো।
দ্যা টাইমসের সংবাদদাতা ২৩ জুলাই,লন্ডন থেকে লেখেন,” পূর্ব পাকিস্তান মুক্তিবাহিনী ১৫০০০ এবং ২০০০০ পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্য হত্যার দাবি করে আরো অনেককে মারাত্মকভাবে ঘায়েল করে যেন তারা আহত হয়ে হাসপাতালে ঢলে পড়ে। একটি বিশেষ সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের প্রধান সেনাপতি কর্ণেল এম.এ ওসমানী আমাকে বলেন, পাকিস্তান আর্মি দ্বারা ক্ষয়ক্ষতি ভোগান্তির কথা তাৎক্ষনিকভাবে বলেন।
বিভিন্নভাবে নিয়ে,পূর্বের মুক্তিফৌজের কমান্ডারগণ, আমি খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি যদি তাদের অনুমান ভিন্ন হয়।কিন্তু যদি তারা ঝোঁকের বশে কোনোকিছু চিন্তা করে কর্ণেল ওসমানীর অনুমান সন্দেহাতীত সংরক্ষণশীল।
দৈনিক টেলিগ্রাফে পিটার গিল ২৩ জুলাই লন্ডন থেকে লেখেন, ” বাংলাদেশের গেরিলারা পূর্ব পাকিস্তানের যশোর জেলার ভারত সীমান্তের কাছে ১৫০ বর্গমাইল এলাকা অধিকারে নিয়েছে।”
ক্লেয়ার হলিংওর্থ ২৫ জুলাই সানডে টেলিগ্রাফ, লন্ডন-এ লেখেন,’পাকিস্তান আর্মি গতকাল কয়েক ঘণ্টার জন্য দক্ষিণ ও পশ্চিমের জন্য ঢাকার যানত্যাগ বন্ধ করে দেয়।একজন অধিনায়ক নম্রভাবে ব্যাখ্যা করেন যে, ফতুল্লার রাস্তাটি বন্ধ ছিল কারণ সামনে যুদ্ধ চলছিল।’
“গতকালই রাস্তাগুলো পুনরায় খুলে দেয়ার পর,শুধুমাত্র একটি বড় অসামরিক লরি গোলাগুলির মধ্যে ধ্বংস হয়েছিল,পাকিস্তানি আর্মি ও গেরিলাদের মধ্যে ঠিক কি ঘটেছিল তা স্পষ্টত দূর্বল সাক্ষ্য।গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ফতুল্লা একটি স্থান যা ঢাকায় প্রাপ্য নিম্নবিদ্যুৎ বর্তমান সোমবার থেকে দেখাশোনা জরুরি, যখন শহরের দুটি বড় বড় উপকেন্দ্র বাংলাদেশি গেরিলা দ্বারা ধ্বংস হয়েছে।”
<003.303.815>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
মুরে সাইল ঢাকা থেকে ডাকযোগে ১ আগস্ট, সানডে টাইমসে লেখেন, পি আই এ ফ্লাইটকে উল্লেখ করে ঢাকা এবং করাচির মধ্যে ভারি আর্মি হতাহতদের বহন করা হচ্ছে।” রোগীরা যোদ্ধা,পশ্চিম পাকিস্তানে বাড়ি যাচ্ছে কারণ ঢাকার মিলিটারি হাসপাতাল পরিপূর্ণ। ” সে বলেছিল” গত সপ্তাহে আমার ফ্লাইটে ৬ টা ছিল, দুইজনের পা বোমায় উড়ে যায়,বাকি চারজন গোপন আক্রমণে ধরা পড়ে,শরীরের উপরের দিকে বুলেট বিদ্ধ হয়। মাঝেমাঝে,আমি বলছিলাম,পি আই এ’র প্লেনগুলোর এক-চতুর্থাংশ মারাত্মক জখম জোয়ানে পূর্ণ ছিল।”তিনি আরো লেখেন,” গেরিলারা ইতোমধ্যে ভালো ফলাফল করেছে যা কোনো ভিয়েতকংয়ের করা একটি সংরক্ষিত যুদ্ধে উচ্চ আশাপ্রদ রেকর্ড।”
দ্যা টাইমস,৫ আগস্ট ১৯৭১,লুইস হেরেন থেকে ডাকযোগে প্রাপ্ত লেখে, নির্ভরযোগ্য প্রতিবেদন এটাই আছে যে,মুক্তিবাহিনী অথবা মুক্তিফৌজ সবচেয়ে ভালো কৌশলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থনীতিকে স্থির করার জন্য।
ক্লেয়ার হলিংওর্থ,দৈনিক টেলিগ্রাফে ৫ আগস্ট ১৯৭১ এ লেখেন,পূর্ব পাকিস্তানের খারাপ অবস্থা মুক্তিফৌজের মতো অনুভবনীয় ভাবে বৃদ্ধি পায়,বাংলাদেশের গেরিলারা তাদের অপারেশন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করে।’সেই রাতের বিস্ফারণ তীব্র এবং ঘন হতে থাকে।পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা ক্লান্ত।চার মাসেরও বেশি সময় ধরে তাদের কোনো বিরতি ছিলনা এবং তারা একটি অদ্ভুত পরিবেশে কাজ করছিল।সীমান্তের উপর তারা মুক্তিফৌজের কামানের গোলা এবং অন্যান্য হয়রানির শিকার হয় যে তাদের প্রশিক্ষণের ফলাফল দেখতে শুরু করেছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা : একটি বাস্তবতা
রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তব অস্তিত্ব। বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।মানুষের ইতিহাস এবং অর্থনীতিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্ররর ভিত্তি আছে।
লন্ডনের দ্যা স্পেক্টেটর ১৭ এপ্রিল লিখেছে, রাজনৈতিকভাবে,অর্থনৈতিকভাবে,সামাজিকভাবে পশ্চিম পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শাসন করে যারা উভয় পাকিস্তান শাসন করলেও পূর্ব পাকিস্তান অবহেলিত হয়; এবং অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে,পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালীরা বাংলাদেশ হিসেবে স্বাধীনতা চাইতেই পারে।
পিটার হেজেনহার্শ বাংলাদেশের একটি বিমুক্ত এলাকা থেকে দ্যা টাইমস, ১৯ জুন,লন্ডন-এ ডাকযোগে লেখেন, ” প্রাক্তন পাকিস্তান আর্মি ক্যাপ্টেন অনড় যে,মুক্তিবাহিনী স্বাধীনতার প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক মীমাংসা গ্রহণ করবেনা।২৫ শে মার্চ আর্মিরা যা করেছে তার পরে আর কোনো পিছুটান থাকতে পারেনা।আমরা অনেক প্রাণ হারিয়েছি,এবং আমাদের অনেক মানুষই জানেন না তাদের পরিবারের সাথে কি ঘটেছে। পূর্নাঙ্গ স্বাধীনতার জন্য এটি এখন একটি সংগ্রাম। ”
প্যারিস উচ্চশিক্ষা ইন্সটিটিউট এর পরিচালক, লুইস ডুমেন্ট,৬ আগস্ট লে মন্ডে-তে লেখেন যে,পূর্ব পাকিস্তান ফলতঃ স্বাধীন এবং পাকিস্তান সরকারকে দেয়া সকল সহায়তা বন্ধ করতে ফ্রান্সকে তাড়না দেন, কারণ সরকার তার সংখ্যাধিক্য নাগরিকদের বিরুদ্ধে গিয়ে এর ন্যায্যতা হারিয়েছে।
বৃটিশ সংসদ সদস্য ব্রুস ডগলাস মান,৯ জুন ১৯৭১ সাধারণ কক্ষে বলেন, ” এটা সন্দেহাতীত ভাবে সত্য যে,প্রত্যেক জনগণ ইচ্ছাকৃত ভাবে ধ্বংসাত্মক হয়েছে।তারা তাদের দেশকে সন্ত্রস্ত যুদ্ধকৌশলের দিকে তাড়িত করেছে যার একমাত্র ফলাফল সম্ভব, এবং এটাই বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতা। ”
<003.303.816>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
তিনি আরো বলেন,”২৫ শে মার্চ রাত অবধি এটা আবশ্যক ছিলনা কিন্তু যা করা হয়েছে তার ফলশ্রুতিতে, প্রকৃতভাবে পাকিস্তানের পুনঃসভা বা পুনর্মিলনের প্রশ্নই এখন অর্থহীন। পাকিস্তান মৃত। এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে এবং আমি ভীত যে, আমরা এখনো প্রকৃত খারাপটা দেখিনি।”
” আমি বলছি যে, পাকিস্তান একটি এককে এবং অস্তিত্বে মৃত। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মুক্তির সম্ভাবনার জন্য একমাত্র সমাধান যা সরবরাহ করা হবে,অর্থনৈতিক ভাবে চাপ ও অনুমোদন দ্বারা পশ্চিম পাকস্তান আর্মির উপত বল প্রয়োগ করা।”
কক্ষ প্রতিনিধি জনাব গালাঘার ৩ আগস্ট ১৯৭১ এ একটি বিবৃতিতে বলেন,”পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধের সহ্যক্ষমতা সীমা ছাড়িয়েছে।এই অপ্রিয় শাসনের বিরুদ্ধে কিছু মানুষের বিদ্রোহ জেগে উঠেছে।পাকিস্তান আর্মি এ যুদ্ধ জিততে পারবেনা।যুদ্ধরত আর্মিদের জন্য সেকেলে ঔপনিবেশিক যুদ্ধ,নিজভূমি থেকে অনেক দূরে ৭৫ মিলিয়নের একটি সুবিশাল জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এই আদিম আক্রমণ বেমানান। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা হয়ত রাজনৈতিক পূনর্মিলন ও সন্ধি-আলোচনার মাধ্যমে স্বাধীনতার মীমাংসা অনেকদূর গড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে প্রশ্ন হচ্ছে এই যুদ্ধ কতদূর চলবে?”
<003.294.817>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.294.818>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৩) ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি স্বাক্ষরের পরে এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে “সমগ্র পাকিস্তানের জনগণের সন্তুষ্টির জন্য” রাজনৈতিক সমাধান প্রস্তাব করা হয়।
৪) সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে যদিও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির সামান্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া তার আগের অবস্থানেই অবিচল থাকে। তা সত্বেও ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে রাশিয়ার সামান্য পরিবর্তনই অনেক বড় অর্জন। ভারত রাশিয়াকে দিয়ে এমন কিছু বলাতে সক্ষম হয় যা আগে কখনো রাশিয়া বলেনি। উদাহরণস্বরূপ, আলেক্সেই কাসিগিন বলেন, “পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের তাদের কর্মকান্ডের জন্য এটা অসম্ভব ছিলো যে ৮০ লাখেরও বেশি মানুষকে তাদের মাতৃভূমি, বসতি, সম্পদ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য করা”। [তথ্যসূত্রঃ দা স্ট্যাটসম্যান, পৃষ্ঠা ১, তারিখঃ ২৯.৯.৭১]
পরের দিন কাসিগিন পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক শক্তির প্রতি সহানুভূতি জ্ঞাপন করেন এবং বলেন, “সেখানে জনগণের বিরুদ্ধে যে নৃশংসতা এবং এহেন কর্মকান্ড হয়েছে তাতে তারা রাশিয়ার জনগণের সমর্থন পাবে না”।
যাই হোক, ১৯৭১ সালের ২ এপ্রিল নিকোলাই পদগর্নির জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে করা আবেদনের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়নের পূর্ব বাংলার অবস্থার প্রতি তাদের অবস্থান পূনরায় ব্যক্ত হয়। মূলত তাদের মৌলিক অবস্থান একই ছিল। রাশিয়া চাইছিল বাংলাদেশের সংকটের একটি রাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ সমাধান এবং এমন কোন ছন্দপতনের বিরোধী ছিল যা ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে কোনপ্রকার সামরিক আগ্রাসনের সূত্রপাত করে। পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত মানুষের সন্তুষ্টির জন্য ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি পরবর্তী এক যৌথ বিজ্ঞপ্তিতে রাশিয়া কিছুটা ভারতের পক্ষে গিয়ে এটা বলে যে, “পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের আইনগত সুবিধা এবং যথাযোগ্য অধিকারের প্রতি সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক এবং একই সাথে শরনার্থিদের দ্রুত এবং নিরাপদে নিজ মাতৃভূমিতে সম্মান ও মর্যাদার সাথে ফিরিয়ে আনার দাবি জানায়, এবং এই সমস্যা নিরসনের জন্য একটি রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।”
বিনিময়ে ভারতকেও তাদের পূর্ববর্তী অবস্থান থেকে সরে এসে রাজনৈতিক সমঝোতার ধারনাকেই মেনে নিতে হয়েছিল।
৫) পূর্ব ও পশ্চিম উভয় স্থানেই প্রযুক্তিবিদ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা কাজ করে যাচ্ছিল স্বাভাবিকভাবেই।
এটা বিশ্বাস করা যায় যে, রাশিয়া বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কোনপ্রকার যুদ্ধ বা সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে চায় না। বিগত দশ বছরে তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নীতিমালার মত এই ক্ষেত্রেও একই পন্থা অবলম্বন করে, যে কোনরূপ প্রত্যক্ষ বিরোধ ছাড়াই প্রভাব বিস্তার এবং বিচক্ষন কূটনৈতিক উপায়ে লক্ষ্য অর্জন।
তাই এ পর্যায়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন পাকিস্তানকে একটি একক রাষ্ট্র হিসেবেই দেখতে চাইছিল।
চীনঃ চীন শুরুতে পাকিস্তানিদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে এবং ইয়াহিয়া খানের রাজত্বকে সমর্থন দিয়ে আসলেও এখন এটা ভাবা যায় যে চৈনিক সরকার সতর্ক হয়েছে এবং সম্প্রতি এ বিষয়ে কোন বিবৃতি দিচ্ছে না।
পক্ষান্তরে বাংলাদেশের সংকট নিয়ে চৈনিক সরকারের নীতিতে কিছুটা পরিবর্তন ধীরে ধীরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এশিয়ায় জাপানের সাম্রাজ্যবাদ নীতির বিপত্তির উপর উত্তর ভিয়েতনামের মাসিক সাময়িকী “Hoc Tap” থেকে ১৯৭১ এর ৩৭ নং অনুচ্ছেদ “পিকিং রিভিউ” এ পূনর্মুদ্রিত হয়েছে। এই অনুচ্চছেদের শেষে এই যুগান্তকারী সংগ্রামের
<003.294.819>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
খুবই নগণ্য উল্লেখ পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়, “থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়, ভারত আর পাকিস্তানের জনগণ বীরোচিত যুগান্তকারী সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।“
স্বভাবসুলভগতভাবেই চাইনিজদের এই মন্তব্যে এ বিষয়টা স্পষ্ট যে তারা পাকিস্তান প্রসঙ্গ টানার মাধ্যমে বাংলাদেশে সেই সময়ে চলমান যুদ্ধের কথাই ইঙ্গিত করছে। এই আচরনগত পরিবর্তনের আরো জোরালো ইশারা হলঃ
১) চীন কখনো বাংলাদেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাঙ্গালী জনগণকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারত আক্রমণের জন্য দোষী সাব্যস্ত করে নি।
২) ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ এর ঢাকা প্রতিনিধির রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে পাকিস্তানী জেনারেলরা চাইনিজ সমর্থন হারানোর শঙ্কায় ছিল।
৩) অনিশ্চিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে কে এম কায়সার চৌ এন লাই এর কাছে বাংলাদেশের প্রতি সহমর্মিতামূলক বয়ান দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং চৌ তাকে পাকিস্তানি সাম্রাজ্য থেকে রক্ষা করেছিলেন যেখানে তাঁকে ইসলামাবাদ ডেকে পাঠানো হচ্ছিল অনেক আগে থেকেই।
সেই সময়ে যদিও এই বিষয়গুলো এটা বুঝায় না যে, চীন তখনই বাংলাদেশকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে। বরং, এটাই জানান দেয় যে, চীন নিজেদেরকে মুক্তমনা রেখেছে যাতে করে যথাযথ সময়ে বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে পারে। চীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে চায় নি। তাই তাদের দুটির কোন সম্ভাবনাতেই আপত্তি ছিল নাঃ
১) যুদ্ধকালীন সময় বাড়িয়ে এমন অবস্থায় উপনীত হওয়া যখন আওয়ামী লীগ যুদ্ধের নেতৃত্ব হারাবে এবং তখন তারা বিদ্রোহীদের সাহায্য করতে পারবে।
অথবা,
২) পাকিস্তানি আয়ত্ত্বে ইয়াহিয়া খান এবং আওয়ামী লীগের মাঝখানে সমঝোতা যেখানে আওয়ামী লীগ সর্বস্ব ত্যাগ করবে আর ফলাফল হিসেবে জনপ্রিয়তা হারাবে।
এমতাবস্থায় তারা কেবল সেইসব মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থন দেবার কথাই ভাবতে পেরেছিল যারা তখনো স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবে যা বিপ্লবীদের নেতৃত্বে সংগঠিত হবে।
সুতরাং চীন বেশ কিছু সময় পর্যন্ত পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র হিসেবে থাকুক সেটাই চেয়েছিল।
ভারতঃ বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সমর্থন মূলত পাকিস্তানের প্রতি বৈরিতা থেকে সৃষ্ট। রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং অর্থনৈতিক কারনে ভারত পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানকেই দুর্বল করতে চায়। এটা তাদের গনতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা বা … বাংলাদেশের মানুষের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে নয় বরং আমাদের মানুষের মুক্তির এই সংগ্রামটাকে তুলে ধরার জন্য।
তাই ভারতের বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি ইতিবাচক কোন নীতি ছিল না। যেহেতু পুরো ব্যাপারটাই নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা সেহেতু তারা ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে যথার্থ প্রতিক্রিয়া দেখাতে এবং আমাদের সমর্থনে সুপরিকল্পিত কার্যক্রম চালাতে পারে না। আর যেই নীতি বা পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন, ভারত কখনো একা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিশেষত, ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তির পর ভারত কোন গুরুতর সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রতি অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ২৮ শে জুনের ভাষণের আগ পর্যন্ত ভারতীয় নেতৃবৃন্দ রাজনৈতিক সমঝোতার কথা বলে যাচ্ছিলেন। ভাষণটি শেষ হবার পর নেতৃবৃন্দ গনবিবৃতিতে জানান, এহেন অবস্থায় আর কোন রাজনৈতিক সমাধান সম্ভব নয় যেহেতু জেনারেল ইয়াহিয়া কঠোর পন্থা অবলম্বন করেছেন। এ অবস্থায় ভারতীয় নেতৃবৃন্দ ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তির আগ পর্যন্ত কিছুটা হলেও স্বাধীন বাংলাদেশের সমর্থন জানাচ্ছিল – অন্তত রাজনৈতিক সমঝোতার কথা তুলে নি। কিন্তু ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তির পরপরই তাদের অবস্থান বদলে যায় এবং তারা রাজনৈতিক সমাধানের কথা শুরু করে যা মস্কো হতে যৌথ বিবৃতিতে নিশ্চিত করা হয়।
<003.294.820>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যাই হোক, যদি ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন কে ইতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করে সে ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো যেন বিবেচনা করা হয়:
১) আওয়ামী লীগে অথবা পরবর্তীকালে অন্যান্য আরো প্রগতিশীল দলের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যত ।
২) ভারতের অন্যান্য রাজ্যের উপর একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রভাব। বিশেষ করে অসম্ভব সংগঠিত এবং শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে একটি নিরস্ত্র ও বিশৃঙ্খল জাতির বিজয় ছিনিয়ে আনার বিষয়টি উপমহাদেশের সব রাজ্যের উপর একটি অসাধারণ মানসিক প্রভাব ফেলবে।
৩) পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীদের ভূমিকা এবং ভবিষ্যতে পৃথক, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনের আশংকা ।
৪) ভারতীয় হস্তক্ষেপ ছাড়াই আওয়ামী লীগের অর্জনের স্বাধীনতার প্রত্যাশা।
৫) বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের উপর ভারতীয় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বাধীনতার প্রভাব।
৬) ভারতের হস্তক্ষেপের কারণে উভয় ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রদায়িক প্রভাব।
অতএব, ভারত সরকার এমন চাহিদার প্রভাব বিবেচনা না করেই বাংলাদেশের দিকে সহায়তার হাত বাড়ায় এবং সর্বাত্মক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়, তারা না জানেন। তৎকালীন দিল্লির সরকারের মতে:
(ক) আন্তর্জাতিক মহল থেকে পাকিস্তান কোন প্রকার সমর্থন পাবে না ;
(খ) পাকিস্তান অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসবে ;
(গ) জনতার বিপুল সমর্থন পেয়ে আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব স্বাধিনতা আন্দোলনকে আরও গতিশীল করবে,
(ঘ) পাকিস্তান সরকার শীঘ্রই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টির মীমাংসা করতে সম্মতি প্রকাশ করবে।
ভারত-সোভিয়েত চুক্তি এ ব্যাপারটি দৃশ্যত নিশ্চিত করে যে, ভারত কখনো সুবিধাজনক সময়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে চায়নি । গত ছয় মাসে ভারত সরকারের আচরণ ও মনোভাব বিবেচনা করে নিম্নলিখিত ধারণাগুলো চিহ্নিত করা যায় :
(১) ভারত ততদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়িয়ে যাবে যতদিন না পর্যন্ত সে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারে যেঃ
(ক) সামরিক যুদ্ধে সে পাকিস্তানকে পরাজিত করতে পারবে;
(খ) কোন তৃতীয় দেশের সম্পৃক্ততা থাকবে না;
(গ) যুদ্ধটি খুবই ক্ষণস্থায়ী হবে ( ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সমাপ্ত হবে) ।
আর তাই তারা মুক্তিবাহিনীকে এমন অস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করবে না, যা পাকিস্তানকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে প্রণোদিত করে।
(২) ভারত ততক্ষন পর্যন্ত স্বীকৃতির দেবে না , যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি ইতিবাচক রাজনৈতিক বা সামরিক পদক্ষেপ প্রয়োজনীয় হয়ে ওঠে।
<003.294.821>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(৩) ভারত কোন বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উপর নির্ভরশীল।
(৪) ভারত এই ব্যাপারটি মানতে রাজি নয় যে তাদের হস্তক্ষেপ ব্যতিত (পূর্ববর্তী পেইজে ৪ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখিত) বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব।
(৫) সুতরাং, ভারত এর জন্য নিম্নোক্ত বিকল্প উপায়গুলো লক্ষণীয় –
কিছু যৌক্তিক শর্ত সহকারে এমন একটি রাজনৈতিক বোঝাপড়া তৈরী করা যা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে এবং ভারতে থাকা উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরিয়ে আনার পক্ষে উপযোগী হবে। তবে তাদের ধারণা যদি কোন রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয় ও, তারপরও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে কোন শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকবে না। এই অবস্থায় পাকিস্তান ধীরে ধীরে আরো দূর্বল হয়ে পড়বে, যদিও আওয়ামী লীগ সরকার এর ভারতীয় কোম্পানীগুলোর সাথে ব্যবসা বাণিজ্যের চুক্তি স্বাক্ষর করার স্বাধীনতা থাকবে।
বর্তমান অবস্থা চালিয়ে গেলে এখন পর্যন্ত কিছু স্নায়ুবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের পক্ষে থাকা যে কোন চুক্তি মেনে নিতে বাধ্য কারণ এক্ষেত্রে চাপ, রাজনৈতিক, জলবায়ু এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। একই সময়ে ভারত বাংলাদেশ কে স্বীকৃত প্রদান করতে এবং সেই সাথে সৈন্য এবং সামরিক রসদ দিয়েও সাহায্য করতে ইচ্ছুক।
যদি উপরের উপায়টি অধিক সংখ্যক উদ্বাস্তুর ভরণ পোষণ এবং পাকিস্তান সরকারের অনড় সিদ্ধান্তের কারণে বাস্তবায়ন করা কঠিন হয় তাহলে ভারত সরকার এমন পরিস্থিত তৈরী করতে পারে যার কারণে উদ্বাস্তুদের দেশে ফিরে আসতে বাধ্য করা হবে। ৪০০ উদ্বাস্তু শিবির থেকে একদিনে কমিয়ে ২০০ তে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে প্রশিক্ষণ, ইয়ুথ ক্যাম্পের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হবে।
সাম্প্রদায়িক ও অর্থনৈতিক কারণে উদ্বাস্তু শিবিরগুলোর মধ্যে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, তার কারণেও ভারত সরকার উদ্বাস্তুদের সকল সাহায্য বন্ধ করে দিয়ে তাদের বাংলাদেশে ফেরত যেতে বাধ্য করতে পারে।
অতএব এক্ষেত্রে ভারত সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের স্বীকৃতি প্রদান থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা এবং অন্য সকল বড় দেশগুলো সরাসরি জানিয়েছে তারা পাকিস্তান প্রশাসনের সাথে একটি বোঝাপড়া চায়। সহজ ভাষায়, বিশ্বে কোন দেশই স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে নি।
অতএব, ভারত সহ সকল দেশের উপর নতুন রাষ্ট্র নয় বরং একক পাকিস্তানের অবিচ্ছেদ্য অবস্থার প্রতি সমর্থন প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ছিলো।
যে সকল পরাশক্তি স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে থেকে সহায়তা করার কথা ছিলো তারাই বরং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্বরণ সিং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেন যে,
<003.294.822>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
২৭ সেপ্টেম্বর সামরিক শক্তি এবং নির্বাচিত সংসদ সদস্যের মধ্যে একটি সমঝোতা জরুরী। তিনি পরামর্শ দেন যে সামরিক শক্তির উচিত নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে ভোটে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের সাথে সমঝোতা করে পাকিস্তান আর্মিকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হোক। তার নির্দেশনা ছিলো ইসলামাদ এর সামরিক প্রশাসন কে খুশি করতে হলে সামরিক শক্তি ও নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের মধ্যে সমঝোতা জরুরী।
“দ্বিপক্ষীয় ভাবে সকল সরকারের উচিত নিজেদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা যে কোন মূল্যে অব্যহত রাখা যাতে সামরিক শক্তি তাদের শোষণ বন্ধ করে এবং নির্বাচিত রাজনৈতিক নেতাদের সাথে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় এসে নিজেদের সকল সৈন্য ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়।”
একইভাবে প্যারিসে অনুষ্ঠিত আন্তঃপার্লামেন্ট ইউনিয়ন সম্মেলনে বাংলাদেশের উপর বর্বর আক্রমণের বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাব সোভিয়েত ইউনিয়নের পর্যাপ্ত সমর্থনের অভাবে ব্যর্থ হয়েছিলো। পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতির সমাধান চেয়ে উত্থাপিত অনুচ্ছেদ সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতায় বাতিল করা হয়। এই সমাধানের মূল কথা ছিলো পাকিস্তান সরকারের প্রতি এমন যে, “সকল গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ”, “ভারতে উদ্বাস্তু প্রবেশ বন্ধ করা” এবং “পূর্ব পাকিস্তানে উদ্বাস্তুদের ফিরে আসার মত পরিস্থিতি তৈরী করা।”
অতএব, পাকিস্তান সরকারের মধ্যে সমঝোতায় আসার জন্য একটি আন্তর্জাতিক লক্ষণীয় হচ্ছে। তবে এই সমঝোতার শর্ত ও চুক্তি সমূহ কি হবে তা সম্পর্কে কারো ধারণা নেই। জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এই সমঝোতার মাধ্যমে ইয়াহিয়া খান এবং আওয়ামীলীগ নেতাদের মধ্যে একটি পারস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরী হয়া উচিত, যদিও এর মানে এই নয় যে একটি স্বাধীন দেশ বা স্বাধীন প্রদেশ এর মধ্য দিয়ে জন্ম নিতে পারবে না। যাই হোক, রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারটি নিম্নোক্ত তিন টি বাক্যে আনা সম্ভব –
সম্পূর্ণ স্বাধীন একটি রাষ্ট্র যা এই মুহুর্তে চিন্তার বাইরে।
একটি সমঝোতা যা ৬ দফা বা ৬ দফার কম বৈদেশিক বাণিজ্য নিশ্চিত করবে।
একটি সমঝোতা যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের ক্ষমতা হস্তান্তর করে সকল পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক সৈন্যদেরকে সরিয়ে নেয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে পাকিস্তানের পতাকা অক্ষুণ্ণ থাকে এবং পাকিস্তান একটি যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করবে যার মাধ্যমে পাকিস্তানি জেনারেল দের মান বাঁচবে।
মূল্যায়ণ
বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান এবং ইন্দো সোভিয়েত সুসম্পর্ক ছাড়াও ভারতের কূটনীতিক পরিকল্পনার একটি ভালো দিক রয়েছে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে মনে হয় ভারত একটি স্বাধীন বাংলাদেশ দেখতে ইচ্ছুক যাতে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশ সম্পর্কিত সকল বিষয়ে ভারতের একটি পরিষ্কার প্রভাব থাকে। যদিও সমগ্র বিশ্ব একটি রাজনৈতিক সমঝোতা দেখতে চায়, তবে স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পন্ন যে কেউ বুঝতে পারবে যে স্বাধীনতা অনিবার্য।
<003.294.823>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এটি কেবল মাত্র সময়ের ব্যাপার। অতএব ভারত নিজেদের জন্য সুবিধাজনক অবস্থান থেকেই চায় যে বাংলাদেশ স্বাধীন হোক এবং তার সীমানায় না থেকেও ভারতীয় রাজনৈতিক ইন্ধনের মধ্যে থাকুক।
উপরোক্ত পরিস্থিতির বিচারে, এটি যদি ভারতের মূল লক্ষ্য হয় তবে আশ্চর্যের কিছু হবে না এবং তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি সময়মত সুযোগ খুঁজছে। কারণ যেভাবে সবকিছু এগোচ্ছে তাতে এটি সহজেই অনুমেয়। রাজনৈতিক সমঝোতার ব্যাপারে ভারত নিমরাজি থাকলেও এটি মোটামুটি নিশ্চিত যে এক্ষেত্রে ভারত তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবে না।
ভারত বাংলাদেশ সমস্যায় নিজেদের অপারগতা ও অবস্থান সম্পর্কে সতর্কতা পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করেছে। তবে সমগ্র বিশ্বের সামনে ৯০ লক্ষ উদ্বাস্তুকে থাকা খাওয়ার স্থান প্রদান করে এবং একই সময়ে কোন ধরণের অপ্রয়োজনীয় স্বীকৃতি প্রদান ও সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করে বিশ্ব দরবারে বেশ সুনাম অর্জন করেছে ভারত। রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাবনা মেনে নেয়ার পেছনে মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সবাইকে দেখানো যে ভারত উক্ত সমস্যায় নিজেদের পদক্ষেপ এর ব্যাপারে বেশ সাবধান তবে একইসাথে নিজেদের সুবিধামত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় কালক্ষেপণ। অক্টোবর মাস শেষ হওয়া মাত্রই বাংলাদেশে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর যে কোন ধরণের সামরিক পদক্ষেপ ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যাবে নভেম্বরের মধ্যে। এবং ফেব্রুয়ারীর মধ্যে ভারত নিজের লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ হবে। যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে যায়, ভারত চায় যাতে সেটি তাদের হাত ধরেই আসুক। এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করা জন্য মুক্তিবাহিনী কর্তৃক তৈরী সকল হতাশা, নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং অন্যান্য ক্ষতি এমন একটি পরিস্থিতের তৈরী করবে যার কারণে ভারত সরকার বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে আর বাধা প্রাপ্ত হবে না এবং নিজেদের পছন্দসই সরকার নির্বাচন করতে পারবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্প্রতি মস্কো সফর এর মাধ্যমে সহজেই বোঝা গেছে যে তিনি রাশিয়াকে তার কাছাকাছি রেখে রাশিয়ার হাত ধরে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার ও জনগণের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আসার পরিকল্পনা করতে চান। এটি কোন ছোট অর্জন নয়। এর প্রভাব সরাসরি লক্ষণীয় যে ভারত রাশিয়ার হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য একটি সম্মানজনক রাজনৈতিক সমঝোতা করতে ইচ্ছুক তবে একই সাথে উক্ত সমঝোতা ব্যর্থ হলে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার একটি পথ খোলা রেখেছে। যদি সময়ই প্রমাণ করে যে রাশিয়া সহ সমগ্র্ বিশ্বের চাওয়া সমঝোতা যদি বাস্তবায়িত না হয় তাহলে ভারত একটি সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে সামনে বাড়বে এবং রাশিয়ার ভারতকে সমর্থন দেয়া ব্যতিত আর কিছুই করার থাকবে না। সেইসাথে বাকি বিশ্বও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে না। যদি ভারত একটি দ্রুত বিজয় আনতে পারে তাহলে বিশ্ব হস্তক্ষেপে কোন প্রভাব পড়বে না।
তবে মনে রাখা উচিত আগামী বছরের শুরুতে ভারতের প্রদেশ নির্বাচন শুরু হবে সুতরাং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্বাচনের আগেই একটি সিদ্ধান্তে আসতে চাইবেন। এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে তিনি যদি সফল হন তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতায় বহাল থাকবেন এবং পশ্চিম বাংলার যেসকল প্রদেশে কংগ্রেসের প্রভাব কম সেখানেও নির্বাচনে জয়লাভ করার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে।
<003.294.824>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশ সরকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন
এই সব আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ ও কূটনীতিক পটভূমিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় ? মনে হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো বড় পরিসরে তাদের উৎসাহ ও উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলছে যার প্রভাব পড়ছে সকলের উপরে , তারা সবাই অপেক্ষা করছে কিছু একটা ঘটার । পরিস্থিতি অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল কিন্তু এটা সত্য যে আমরা এমন একটা পরিবেশে আছি যেখানে বিশেষ করে ভারতের উপরে নির্ভর করতেই হচ্ছে ।
আমার মতে বাংলাদেশের এই আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য ভারতের যত্থেষ্ট অবদান আছে । বস্তুতঃ তারা প্রত্যাশার বাইরেও অনেক কিছু করেছে । কেউই প্রত্যাশা করেনি ভারত সত্যিই বাংলাদেশঅকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় । আমাদের নিজস্ব ব্যর্থতা , অসঙ্গতি ও ভাল উদ্যোগের অভাবে যুদ্ধকে আরো বেগবান করতে পারি এমন কাজ করতে পারিনি তাই ভারতেকে পুনরায় ভাবতে হয়েছে এবং তারা নিজেরদের স্বার্থেই তদনুযায়ী পদক্ষেপ নেয় ।
আমাদের কখনোই ভাবা উচিত নয় – আমাদের মোটেও কোন ভূমিকা নেই । বরং আমরা এমন একটা ভূমিকা নিতে পারি যেন সরকার জনগনের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারে যাতে ভারত আমাদের আন্দোলনের দিকে আরো ঝুঁকে । যদি আমরা সার্থকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করতে পারতাম তাহলে আজকের চিত্রটা পুরোপুরি ভিন্ন হত । এখনো সময় আছে , বাংলাদেশ সরকার চাইলে এখনো পদক্ষেপ নিতে পারে যেটা আমাদের জন্য ভাল কিছু বয়ে আনবে। পাকিস্তানের মধ্যে থাকাকালীন সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই যুদ্ধে আমরা নিজেদেরকে বিজয়ী করতে সক্ষম ছিলাম এবং এটাই হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা । বসে থাকা বা অন্যদের কাজ করার জন্য অপেক্ষা না করে আমি যে প্রস্তাবগুলো দিচ্ছি সেগুলো যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করার চেষ্টা কর-
১। সকল রাজনৈতিক নেতা , কর্মী , ছাত্র এবং স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা তৈরী কর যারা কলকাতায় বা কলকাতার কাছাকাছি ও সীমান্ত এলাকায় আছে এবং তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে তালিকাভূক্ত করুন ।
২। গোটা বাংলাদেশকে কয়েকটা গ্রাম নিয়ে ছোট ছোট সামরিক ইউনিটে ভাগ করুন ।
৩। আমাদের গেরিলাদের ভেতর থেকে এমন কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের দায়িত্ব দিন যারা জনসংযোগের কাজ করবে , যার প্রতিটি ইউনিট সাঙ্গগাঠনিক কাঠামোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে । এমনভাবে বাছাই করতে হবে যেন তারা স্থানীয়দের সাথে খুব সহজে মিশে যেতে পারে ।
৪। মিশনে ছোট আকারে জনসংযোগ কার্যালয় রেখে হেডকোয়ার্টার অবশ্যই কলকাতা থেকে স্থানান্তর করতে হবে ।
৫। হেডকোয়ার্টার অবশ্যই সীমান্ত এলাকায় স্থাপন করতে হবে এবং সেখানে প্রতিরক্ষা , যোগাযোগ ও ফিন্যান্স ছাড়া অন্য কোন কার্যালয় থালতে পারবে না । তবে মন্ত্রীসভার সদস্যরা হেডকোয়ার্টারে থাকতে পারবেন যুদ্ধের সমন্বয় সাধনের জন্য ।
যদি এটা কার্যকর করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের অন্দোলনের চিত্র , নেতৃত্বে আমুল পরিবর্তন আসবে । যারা নিজেদের সুবিধানুযায়ী আমাদের সমস্যা সমাধানের কথা চিন্তা করে তাদের সাথে আমাদের অবস্থান ও অন্যান্য সরকার ও ক্ষমতার সম্পর্ক অনেক শক্তিশালী হবে । অর্থাৎ আমাদের সকলের জোর প্রচেষ্টায় যুদ্ধকে সামনের দিকে বেগবান করতে হবে – তাছাড়া আর কিছুই নয় ।
<003.294.825>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এছাড়াও এই আন্দোলনের সাথে আরেকটি কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সংযুক্ত করা উচিত ছিল বাংলাদেশ সরকারের । আমাদের মনে রাখা উচিত আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিজস্ব স্বার্থ ছাড়া আর কিছুই নয় । তাই চীনকে সম্পূর্নভাবে উপেক্ষা করার কোন কারন নেই। আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও নিজস্ব স্বার্থ নিয়ে যখন আমরা চীন , রাশিয়া বা অন্য দেশের সাথে আলাপ করবো তখন অবশ্যই আমাদের আবেগপ্রবণ হওয়া যাবে না । যেহতু আমরা যুদ্ধকে যুদ্ধ হিসাবেই দেখি তাই চীনের লোকদেরকে নিতে আসতে খুবই কৌশলী হতে হবে যেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় এবং অন্য যেকোন দেশের এধরনের সংগ্রামকে চীন যেভাবে সমর্থন করে বাংলাদেশের মানুষের সংগ্রামকেও সমর্থন দিবে ।এটা শুধুই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির স্বাধীনতাই প্রকাশ পায় না বরং সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিবে বিশেষত আমেরিকা , রাশিয়া যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য ইতিবাচক ভুমিকা গ্রহন করতে পারে ।
আমাদের আশু প্রচেষ্টাগুলো হওয়া উচিতঃ
১। নিকটস্থ ঘাঁটি গুলোতে যুদ্ধের সকল প্রকার সরঞ্জাম সরবরাহ সুনিশ্চিত করা ।
২। এখন যতটা সম্ভব স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরন করা ।
<003.295.826>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের পক্ষে দলেদলে মানুষের যোগদান :
১৩ সেপ্টেম্বর একজন পাকিস্তানি কূটনীতিক জনাব মহিউদ্দীন জায়গীরদার দেশটির ফরেন সার্ভিস বন্ধ করে দেন এবং লন্ডনে বাংলাদেশ মিশনে যোগদান করেন ।
জনাব জায়গীরদার ছিলেন প্রধানবিচারপতি এবং মাঝেমাঝে নাইজেরিয়ার লেগোসের পাকিস্তানি মিশনে হাই-কমিশনারের কাজ করতেন ।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন – হিটলার পরবর্তী পশ্চিম বাংলায় সবচেয়ে বেশি মানুষকে নির্যাতিত ও হত্যা করা হয়েছে ।
তিনি বলেন এসব দেখে কোন বিবেকবান মানুষ নিশ্চুপ থাকতে পারে না । তাই মিথ্যা কথা বলে জান্তা সরকারকে সহয়তা করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না ।
সেদিন (১৩ সেপ্টেম্বর) ফিলিপাইনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত জনাব খোররাম পান্নী বাংলাদেশ সরকারের বিরোধীতা করলেন।
বাংলাদেশ ইস্যুতে খোররাম পান্নী ছিলেন রাষ্ট্রদূত পদমর্যাদার প্রথম কূটনীতিক । ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে ম্যানিলাতে তিনি রাষ্ট্রদুত হিসাবে এসেছিলেন এবং ১৯৭১ সালের অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত তার নির্দিষ্ট কোন দায়-দায়িত্ব ছিল না ।
সংবাদ সম্মলনে শেষে জনাব পান্নী বলেন – ফিলিপাইন সরকার আমাকে ম্যানিলায় থেকে যাওয়া ও মিশন শুরু করার জন্য অনুমতি চেয়েছি ।পরে তিনি আমাকে সরকারি বাসভবন থেকে নতুন কোয়ার্টারে স্থানান্তর করে দেন ।
তিনি বলেন – এখন থেকে আমি নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের থেকে নিজেকে অবমুক্ত করলাম যা পাকিস্তান সরকারের অন্তর্ভুক্ত । এটা সম্পর্নরূপে অবৈধ এবং বর্বোরচিত। এখানে জনগণের মতামতের কোন সুযোগ ছিলন্না।এটাকে কোনভাবেই আর পাকিস্তান সরকার বলা যায়না।
পাকিস্তানে আমি জানতাম বাংলাদেশের নির্দোষ পুরুষ ,মহিলা ও শিশুদের মৃতদেহ একটি পাহাড়ের পাদদেশে সমাহিত করা হয়েছে । মৃত্যুযন্ত্রনায় কাতর প্রায় ৮ লাখ রিফিউজিদেরকেও সমাহিত করা হয়েছে যাদেরকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়া হপয়েছিল । এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের কর্তৃক অপহরন ও গন ধর্ষনের স্বীকার হয়েছে তাদেরকেও সমাহিত করা হয়েছে ।
জনাব পান্নীর পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার দায়িত্বে ছিলেন হংকং এর পাকিস্তানি মিশনের প্রধান সর্ব্বোচ্চ পদমর্যাদার পাকিস্তানি কূটনীতিক জনাব মহসিন আলী ।
পান্নীর পদত্যাগের সাথে সাথে পেকিং এ পাকিস্তানি কূটনীতিক সুবিধা ত্যাগ করা একমাত্র বাঙালী অঞ্চলের রাষ্ট্রদূত ছিলেন জনাব কাইছার । তিনি বিশ্বাস করতেন পশ্চিম পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের নির্দেশমত কাজ করার অসম্মতি জানানোর কারনে তাকে পেকিং এর সকল সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে । বস্তুত ক্ষমতাশূন্য করা হয়েছে,এমনকি তাকে হংকং পরিদর্শনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল ।
<003.295.827>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
২৩ সেপ্টেম্বর,নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের এক বাঙালি কর্মকর্তা জনাব এস এম নুরুল হুদা অফিসিয়াল বাসভবনে ছয় মাসের গৃহবন্দীত্বের সাজা থেকে মুক্ত করার জন্য সাহসের সাথে হাইকোর্টের দেয়াল টপকে রেহাই পান। জনাব হুদা(২৭) যাকে কারাজীবন বলে উল্লেখ করেন সেখান থেকে পলায়নের কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ মিশনের সাথে যোগাযোগ করে তার মাতৃভূমি (বাংলাদেশ) এর বৈধ সরকারের নিকট আনুগত্য ঘোষণা করেন।তাকে হাই কমিশনের টেলিফোন এক্সচেঞ্জের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সাংবাদিকের সাথে পরবর্তীকালে সাক্ষাতে বাংলাদেশে তার স্ত্রীর জন্য তার উদ্বেগের কথা জানান।তিনি বলেন,”আমি জানি কোয়ার্টারের অভ্যন্তরে অবস্থানরত দুজন সশস্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানি নিরাপত্তারক্ষীর সাথে অনেকটা লুকোচুরি খেলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।কিন্তু আর কোনো উপায়ও ছিল না,আমি একেবারেই আর সহ্য করতে পারছিলাম না।আপনার কাছে আমার অন্য সহকর্মীদের মুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি।”
তিনি আরো বলেন যে পাকিস্তান হাই কমিশনের বাঙালি কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখা হয়েছে এবং তাদের সবধরণের অপমান-অপদস্থ করা হচ্ছে। ২৮ সেপ্টেম্বর,নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের চার বাঙালি কর্মকর্তা তাদের পরিবার সমেত পক্ষত্যাগ করে বাংলদেশের প্রতি আনুগত্য জানান। সেই চার কর্মকর্তা/স্টাফরা হলেন-জনাব মফিজুর রহমান ;(শ্রুতিলেখক),জনাব একে আজাদ;(উচ্চমান সহকারী),জনাব মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন;(নিম্মমান সহকারী) এবং জনাব গোলাম মোস্তফা;(ডিসপেনসার)। বাংলাদেশ মিশনের এক সংবাদ সম্মেলনে জনাব মফিজুর রহমান বলেন যে যখন তারা অনেক মানুষের ভীড়/মিছিলে জানালেন যে তাদের জোরপূর্বক পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তারা তখন তাদের বাস থেকে নামতে সাহায্য করেন এবং আরেকটি বাসের ব্যবস্থা করেন;যেটা ঐ কর্মকর্তাদের পরিবার সমেত বাংলাদেশ মিশনে পৌঁছে দেয়। জনাব রহমান বলেন যে ১৬জন পশ্চিম পাকিস্তানি নাগরিকের সশস্ত্র প্রহরায় পাকিস্তানি এ্যাম্বাসির মিনিবাস ও মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়িতে তাদের নেয়া হয়েছিল।তারা তাদের পথ আটকানোর চেষ্টা করছিলো কিন্তু জনতার ভীড়ের সামনে তারা সফল হতে পারছিলো না।আধা ঘন্টা অপেক্ষার পর এই পক্ষত্যাগীরা যে আর তাদের সাথে ফিরবেন না-এটা নিশ্চিত করে তারা ফিরে গেল। ১লা অক্টোবরেও নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের ভবন থেকে বাঙালি কর্মকর্তারা পালিয়ে নিজেদের মুক্ত করেন। পিওন জনাব আব্দুল শহীদ(৪০) এ্যাম্বাসির সীমানা প্রাচীর টপকে চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে চলে আসেন। জনাব শহীদ একাদশ বাঙালি কর্মকর্তা হিসেবে পাকিস্তান হাই কমিশনের পক্ষত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য জানান। বিদেশে অবস্থিত অন্যান্য পাকিস্তান হাই কমিশনের আরো তিন বাঙালি কর্মকর্তা;যাতের মধ্যে দুজন সাইফার সহযোগী পক্ষত্যাগ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯ বছর যাবৎ সাইফার সহযোগী হিসেবে জনাব নায়েবুল হুদা যিনি ব্রাসেলস্(বেলজিয়াম) এ্যাম্বাসীতে সর্বশেষ কর্মরত ছিলেন যখন তাকে দ্রুত ইসলামাবাদে বদলীর আদেশ করা হয় তিনি একে বাঙালি কর্মকর্তাদের কবরখানা হিসেবেই বিবেচনা করেন। মাদ্রিদে পাকিস্তান এ্যাম্বাসির সহযোগী কর্মকর্তা জনাব আব্দুল করিম মণ্ডল পক্ষত্যাগের পর বলেন, “বিদেশস্থ পাকিস্তান মিশনের কর্মরত বাঙালিরা সব ধরণের হয়রানী ও অপদস্থতার শিকার হচ্ছেন।আমার কোনো অফিসিয়াল কাজের অনুমতি ছিল না এবং আমাকে চরম অবজ্ঞা করা হতো।” এ্যাম্বাসির এক সাইফার সহযোগী আব্দুল লতিফ বৈরুতে কর্মরত অবস্থায় যখন ইসলামাবাদে বদলীর আদেশ পান তখন পাকিস্তানের সরকারি চাকরি ছেড়ে দেন।তিনি নীরবে বৈরুত ত্যাগ করেন এবং লনাডনে আসেন যেখানে তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তার আনুগত্য ঘোষণা করেন। ………………………………………
<003.295.828>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পাকিস্তান হাই কমিশন কর্তৃক পক্ষত্যাগ বিরোধী প্রতিবাদ: …………………………… ২৯ সেপ্টেম্বর,নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তান হাই কমিশনের চারজন বাঙালি কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পশ্চিম পাকিস্তানে নেয়ার পথে তাদের পালাতে সাহায্য করায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর প্রেরিত একটি নোটে বলা হয় হাই কমিশনের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।পাকিস্তানী কূটনীতিকদের বাংলাদেশ মিশন যোগ দিয়ে আয়োজন করার জন্য যোগসাজশ ও বিশ্বাসঘাতকতা উপাদান থাকার সংশ্লিষ্ট প্রমাণের জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
<003.296.829>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনাঃ
পটভূমি:
পাকিস্তান ছিল তৎকালীন ভারতের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বাধীন পছন্দের ফল, 1945 সালে স্বাধীন নির্বাচন এবং 1947 সালে একটি গণভোটের মাধ্যমে মুসলিমদের মতের প্রকাশ। পাকিস্তানের চাহিদার মুল শেকড় প্রোথিত ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি অন্যায্যতা, বৈষম্য, সমান সুযোগ প্রদানে অস্বীকৃতি, এবং শোষণ। পকিস্তান গঠিত হয়েছিল ২টি অংশ নিয়ে। পুর্ব থেকে পশ্চিমাংশ ভারতের দ্বারা বিচ্ছিন্ন ছিল প্রায় হাজার মাইল দুরত্বে। এটি ছিল একটি স্বপ্ন এবং একটি আদর্শ যার জন্য উভয় অংশের নাগরিকের ত্যাগস্বীকার প্রয়োজন ছিল। স্বাধীনতার সময় উভয় দেশের সম্পদের বন্টন ছিল নিম্নরূপ
পুর্ব | পশ্চিম | |
জনসংখ্যা | ৫৬% | ৪৪% |
দেশজ উৎপাদনের হার | ৫২% | ৪৮% |
কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রের অবস্থান ছিল নিম্নরূপ
পুর্ব | পশ্চিম | |
রাজধানী | নেই | আছে |
সংসদ | নেই | আছে |
সুপ্রিম কোর্ট | নেই | আছে |
সেনাবাহি্নী সদরদপ্তর | নেই | আছে |
নৌবাহি্নী সদরদপ্তর | নেই | আছে |
বিমানবাহি্নী সদরদপ্তর | নেই | আছে |
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সদরদপ্তর | নেই | আছে |
পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের চব্বিশ বছরের অংশীদারিত্বের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চিত্র ছিল নিম্নরূপ
.
পাকিস্তান দুটি অঞ্চলে, পশ্চিম ভারতের হাজার হাজার মাইল দ্বারা পৃথক করা গঠিত.
উভয় অংশে স্বাধীনতা, জনসংখ্যা ও সম্পদ বণ্টনের সময়
দেশ ছিল নিম্নরূপ:
পুর্ব | পশ্চিম | |
প্রধান নির্বাহী (প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি) | ৫ বছর | ১৯ বছর |
সেনাবাহিনী প্রধান | নেই | ২৪ বছর |
সেনাবাহিনী প্রধান | নেই | ২৪ বছর |
সেনাবাহিনী প্রধান | নেই | ২৪ বছর |
অর্থমন্ত্রী | নেই | ২৪ বছর |
পরিকল্পনামন্ত্রী | নেই | ২৪ বছর |
সরকারি বেসামরিক
পদে চাকরি |
২০% | ৮০% |
<003.296.830>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সশস্ত্র বাহিনীতে চাকরি | ৭% | ৯৩% |
লভ্যাংশ খরচ | ২৩% | ৭৭% |
বৈদেশিক সাহায্য বণ্টন | ২৩% | ৭৭% |
বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন | ৫৪.৭% | ৪৫.৩% |
বৈদশিক মুদ্রা খরচ | ৩১.১% | ৬৮.৯% |
উন্নয়ন ব্যয় | ৩২.৫% | ৬৭.৫% |
যে পাঁচ বছর বাঙ্গালীরা ক্ষমতায় ছিল সেসময় বেসামরিক আমলাতন্ত্র আর তাদের রাজনৈতিক সহযোগীরা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করেছিল বাঙ্গালীদের প্রভাবকে নিষ্ক্রিয় করতে। প্রথম বাঙ্গালি প্রধানমন্ত্রী, খাজা নাজিমুদ্দিন ক্ষমতায় আরোহনের পার্লামেন্টের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও পাঞ্জাবী গভর্নর জেনারেল গোলাম মুহাম্মদের হাতে পদচ্যুত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বাঙালি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাঞ্জাবী শাসকশ্রেনীর মুঠোয় বন্দি ছিলেন এবং একের পর এক অসম্মানের পরে শেষ পর্যন্ত ২ বছর পদে থাকার পরে পদচ্যুত হন। শেষ বাঙ্গালী প্রধানমন্ত্রী এইচ এস সোহরাওয়ার্দি প্রধানম্নত্রীত্বের অর্ধেক সময়ের মধ্যেই জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা কর্তৃক ক্ষমতাচ্যুত হন পার্লামেন্টে তার সমর্থন প্রমানের কোন সুযোগ ছাড়াই।
অবশেষে ১৯৫৬ সালে কেন্দ্রীয় সংসদভিত্তিক শাসনব্যাবস্থামুখী সংবিধান প্রণীত হয়। কিন্তু এই সংবিধান ফলপ্রসু হতে পারেনি ইস্কান্দার মির্জা এবং পাঞ্জাবীদের নিয়ন্ত্রিত সেনাবাহিনী এবং আমলাতন্ত্রের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে। নতুন সংবিধানের অধীনে যখন সাধারন নির্বাচনের পরিকল্পনা চলছিল তখনই সেনা অভ্যুথান সংগঠিত হল ১৯৫৮ সালের অক্টবর মাসে। বারো বছরে সামরিক শাসন অবশেষে জনগণের চাপে নতি স্বীকার করে এবং ১৯৭০ এর ডিসেম্বরে সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যার ফলাফল ছিল নিম্নরূপ
পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের আসন
আওয়ামী লীগ | ১৬৭ |
অন্যান্য | ১৪৬ |
মোট | ৩১৩ |
পুর্ব পাকিস্তানের ১৬৯টি আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে শুধু ২টি আসনে অন্যরা জয়লাভ করে। আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং একটি স্থিতিশীল সরকার গঠন এবং শাসনতন্ত্রকে কাঠামো দেয়ার মত অবস্থা লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান সংসদ অধিবেশন ডাকলেন না। যেহেতু বাঙ্গালীরা শেখ মুজিবের নেতৃত্বে জয়লাভ করেছে তাই পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থান্বেষীরা নির্বাচনের ফলাফলকে নস্যাত করার সিধান্ত নেয়। নির্বাচনের পর আরো ২ মাস সংসদ অধিবেশন ছাড়াই পেরিয়ে যাওয়ার পরে ২৫শে মার্চ রাতে নেমে আসে সেনাবাহিনীর পাশবিক আক্রমন।
২৫শে মার্চ ১৯৭১, এবং পরবর্তী সময়
সবরকম প্ররোচনা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েছিল পাকিস্তানের সংকটের একটি শান্তিপুর্ন সমাধানে।
<003.296.831>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.297.832>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তুতকৃত একটি প্রতিবেদন | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২ অক্টোবর,১৯৭১ |
অবস্থান কাগজ
গোপনীয়
নং 4/2
রেফারেন্স সেল
অক্টোবর ২৭,১৯৭১
পররাষ্ট্র মন্ত্রী
বাংলাদেশে-ভারত যৌথ পরিকল্পনার একটি বিশ্লেষণ
ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য যেতে পারেন শুধুমাত্র নিম্নলিখিত তিনটি শর্তে:
(ঝ) ভারতকে পাকিস্তানের বিপক্ষে একটি নিষ্পত্তিমূলক সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের ভোগদখল করতে হবে যেমন হত
দ্রুত তারা তাদের উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়;
(আ) চীনা হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিতে হবে;
(গ) বিশ্ব মতামত নিষ্ক্রিয় করা হবে যাতে একটি অপ্রতিরোধ্য তরঙ্গ
ভারতের নিন্দা ঘটাতে না পারে।
ভারতীয় বিশ্লেষকরা খুব দ্রুত বুঝতে পেরেছিল যে নভেম্বর-ডিসেম্বর, ১৯৭১
একটা সময় ছিল যখন এই সব শর্ত রাখা সঠিক হবে। যখন শীতকালে সেট এবং
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় পর্বতমালা হিমায়িত ঠাকোবে, চীনা হুমকি শূন্যের কাছাকাছি হয়ে যাবে।
সুতরাং এই সময়ে ভারত তার পর্বত বিভাগের কিছু অংশ মুছে ফেলার জন্য সামর্থ ছিল এবং
তাদেরকে পাকিস্তানের বিপক্ষে স্থাপন করাও যেত।মুক্তিবাহিনী যখন পাকিস্তানি সৈন্যের বড় একটা ক্ষতি সাধন করে দিয়েছিল,তখনই এটা নির্ধারিত ছিল যে প্রথম শর্তটি বাস্তবায়ন হতে চলেছে। দ্বিতীয় শর্তটিও পরিষ্কারভাবে জানা।তৃতীয় শর্তের ক্ষেত্রে, বিশ্ব মতামত বাংলাদেশ সমস্যায় এতোটাই বিরক্ত যে,
নিঃসন্দেহে সমস্যা সমাধান করতে কোনো শক্তিশালী সংগঠন নিজেই পদত্যাগ করবেন।
সুতরাং, খুব প্রারম্ভে জুনের শুরু থেকে, ভারতীয় কূটনীতি একটি যুদ্ধ নভেম্বরের আগে ভঙ্গ রোধ করার জন্য একটি জোত কর্ম নিয়োজিত ছিলো। ডিসেম্বর পাকিস্তানের সুবিধাজনক একটি সময়।
ভারত এই বছরের শেষের দিকে পাকিস্তান আক্রমণ করবে যা আমাদের মুক্তির জন্য প্রধান কারণ,
পৃথক্ ভারী সেনা বিল্ড আপ ইত্যাদি প্রমাণ থেকে ..এটা সত্য যে ভারত প্রেক্ষণ একটি সুস্পষ্ট সুদ যে বাংলাদেশ সঙ্কট ভারতীয় দিয়ে শেষ হয়েছে সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত সব পথ শুরু হয় দুর্যোগপূর্ণ ভারত মহাসাগর নিশ্চিত পশ্চিম পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ অপসারণের তদনুযায়ী সুবিধা,বাংলাদেশে কোন ব্যাপক বিশৃঙ্খলার একটি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির দীর্ঘায়িত হতে পারে, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধু হিসাবে নিজেদের ক্ষতি হলেও ভারত স্পষ্টত সাহায্য করতে পছন্দ করেন।
বাংলাদেশ একটি দৃঢ় ও কার্যকর সরকার এবং এক যা বন্ধুত্বপূর্ণ স্থাপন
ভারত. আমরা নিজেদেরকে বাংলাদেশ কিন্তু আমরা ভারতীয় প্রভাব একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পদত্যাগ করতে পারেন
এটা যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করতে হবে. এই ভাবে, উভয়ের স্বার্থ
বাংলাদেশ ও ভারতের পরিবেশিত হবে ..
<003.297.833>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এখন থেকে নভেম্বরের ভারতীয় ডেলিগেটদেরর সঙ্গে এই ডেলিগেটের খেলায় পাকিস্তানের হাতে চার ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
প্রথমতঃ, জাতিসঙ্ঘ যতোক্ষণ এই দ্বন্দ্ব নিজে থেকে কমে আসার অপেক্ষায় রয়েছে তার মধ্যে তারা দ্রুত আক্রমণ চালিয়ে ভারতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল দখল করে ফেলতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা প্রবল এবং এটা এতোই বিপদজনক এক ঝুঁকি, পাকিস্তান মনে হয় না এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করবে।
দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তান চীনের সমর্থনের ইঙ্গিতস্বরূপ বাংলাদেশে চৈনিক সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাসেবী সদস্যদের আনয়নের প্রচেষ্টা চালাতে পারে। মনস্তত্বের যুদ্ধে এটা বেশ সফল হতে পারে, ভারতকে টলিয়ে দিতেও পারে এই পদক্ষেপ। (গুরুত্বপূর্ণ একটা দিক মনে রাখতে হবে, সৈন্য না এলেও, এধরণের একটা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জানতে পারলেই ভারত মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত হতে পারে, সুতরাং উড়িয়ে দেওয়ার মতো বিষয় এটি নয়।)
তৃতীয়তঃ পাকিস্তান আমেরিকার পক্ষ থেকে ইউএস মেরিনের একটি দলকে এই অক্টোবরে বাংলাদেশের মাটিতে প্রেরণের মাধ্যমে তাদের সমর্থনের ইঙ্গিত দেখাতে পারে। এক্ষেত্রেও, নিক্সন মনে হয় না এধরণের এক পদক্ষেপ কেবলমাত্র পাকিস্তানকে সমর্থন প্রদর্শনে নেবেন। তবুও পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছে তাতে এরকম এক মিথ্যাচারের খেলা গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখতে পারে। তারা হয়তো এমন এক আবেদন জানাবে যেটা যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি নাকচ না করে বিবেচনাধীন হিসেবে গ্রহণ করবে।
পাকিস্তানের জন্য চতুর্থ পদ্ধতিটিত হতে পারে মুজিবকে মুক্তি দিয়ে আপোষে আসার চেষ্টা করা। আমাদের সরকার সেক্ষেত্রে চীন সরকারের সমর্থন আদায়ে নিদারুণ প্রচেষ্টা চালাবেন এবং পাকিস্তানের জন্য দ্বিতীয় পদক্ষেপটিকে ব্যর্থ করে দেবেন। একই সাথে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সত্যিকারের ঘটনাগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকেও স্বপক্ষে আনার জন্য তখন কাজ করা যাবে।
যদি পাকিস্তান চতুর্থ সিদ্ধান্তটি নিয়ে থাকে, আমরা আমাদের সর্বোৎকৃষ্ট শর্তগুলো দিয়ে শক্তিশালী এক অবস্থান থেকে দর কষাকষি করতে পারবো। আপোষের একমাত্র সম্ভাবনা থাকবে কেবল যদি পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশের মাটি থেকে তাদের সব সৈন্য প্রত্যাহার করে তবেই। এটা ওরা মেনে নিলে প্রতিদানস্বরূপ পাকিস্তানের মুখ রক্ষার্থে আমরাও কিছু সুবিধা দিতে পারি। তারপর, আগে যেমনটা আলজেরিয়া আর ফ্রান্সের মধ্যে ঘটেছিলো, নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর আমরা পশ্চিম পাকিস্তানি নেতাদের সাথে আলোচনায় বসে স্বাধীনতা ঘোষণা করবো। সে সময় যদি আমাদের মনে হয়, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে কিছু ব্যাপারে পারস্পারিক সম্পর্ক বজায় রাখা যাবে।
আজ, সেজন্য, যেখানে সবগুলো পক্ষ শেষ এবং সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের জন্য নিজেদের বিভিন্ন শক্তিমত্তা জড়ো করছে, বাংলাদেশ সরকারের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত প্রথমতঃ তাদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন এবং দ্বিতীয়তঃ তার সামরিক বাহিনিকে সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী করে তোলায়। সমাপ্তি নিকটে, সন্তুষ্ট হওয়ার মতো অবস্থান থেকে আমরা অনেক দূরে। সত্যিকারের দর কষাকষি শুরু হতে যাচ্ছে যে কোনো সময়, কাজেই এর মধ্যে আমাদের কার্যকারিতা পূর্বের চেয়ে যোগ্যতরভাবে তুলে ধরতে হবে।
<003.298.834>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
আন্তর্জাতিক প্রচার সম্পর্কিত একটি অফিস নোট | পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় | ৩ অক্টোবর,
১৯৭১ |
মউদুদ আহমেদের জন্য
নির্দেশনাঃ ভারতীয় নেতাদের প্রকাশ্য বিবৃতি এবং যৌথ ইস্তেহার সম্পর্কে আপনাকে অবহিত রাখার অনুরোধে নয়া দিল্লিতে আপনার মিশনের আমজাদুল হককে দিল্লিতে সংযুক্ত করা হয়েছে। আপনি তাঁর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন যেহেতু তাকে দ্রূত ও সম্পুর্নভাবে সব জানানো হবে। তাকে ইতোমধ্যেই যোগাযোগের মাধ্যম সম্পর্কে নিশ্চিত করা হয়েছে…………
এ. জি.
৩.১০.৭১
<003.299.835>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম
|
সুত্র
|
তারিখ
|
বাংলাদেশের সপক্ষে আনুগত্য প্রকাশের আরো ঘটনা-অক্টোবর ৩-৭, ১৯৭১
|
এশিয়ান রেকর্ডার,
নভেম্বর ১৯-২৫, ১৯৭১
|
৩-৭ অক্টোবর,
১৯৭১
|
বাংলাদেশে আরো বিদ্রোহ
কাঠমন্ডুতে পাকিস্তানের প্রথম সচিব, জনাব মুস্তাফিজুর রহমান, ৩রা অক্টোবর বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন।
জনাব রহমান একজন ২৯ বছর বয়সী বাঙ্গালি, যিনি বিশেষ আদালতের প্রধানও ছিলেন, তিনি তার বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, তিনি এই ছয় মাসে ‘তার জীবনের সবচেয়ে বাজে মানসিক যন্ত্রনার পর’ এই ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি বলেন, তিনি নেপালের প্রধান মন্ত্রী জনাব কে. এন. বিশ্তকে তার সিদ্ধান্তের কথা জানান, যার কাছে তিনি বাংলাদেশ সরকার স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত এর বিশেষ দূত হিসেবে নেপালে থাকার অনুমতি চান, তিনি নেপালী সরকারের কাছে নেপালে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানি দ্বারা ‘শারীরিক, মানসিক ও বস্তুগত ক্ষতি’ থেকে তার নিজের, পরিবার-স্ত্রী এবং দুই সন্তানের সুরক্ষাও চেয়েছেন।
মন্ত্রী-পরামর্শক এবং নয়া দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের বিশেষ আদালতের প্রধান জনাব হুমায়ুন রাশীদ চৌধুরী ৪ঠা অক্টোবর, বাংলাদেশের প্রতি তার আনুগত্য প্রকাশ করেন।
এক বিবৃতিতে জনাব চৌধুরী বলেন যে, ‘ইতিহাস ইয়াহিয়া খানকে শুধুমাত্র নিরপরাধ মানুষের পৈচাশিক গণহত্যার জন্যই অভিযুক্ত করবে না বরং পাকিস্তানের বিভেদকে উস্কানি দেওয়ার জন্যও দোষারোপ করবে। শেখ মুজিবুর রহমান নয়, তার উচিত ছিল শুধুমাত্র পাকিস্তান না বরং মানবতার বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিপক্ষে চেষ্টা করা।
তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে তাঁর ঘোষনা আসে যে, জনাব ফকরুদ্দিন আহমেদ তার স্ত্রী ও চার সন্তানসহ স্বাধীনতার জন্য হাইকমিশনের সীমানা পেরিয়ে যান।
জনাব চৌধুরী এবং জনাব আহামেদকে নিয়ে তিন কূটনৈতিকসহ পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা বাঙ্গালী কর্মচারীর সংখ্যা এখন ১৩। হাইকমিশনে এখনো ১ জন বাঙ্গালি কূটনৈতিক এবং ১১ জন বাঙ্গালি কর্মচারী আছেন।
হাইকমিশনের উপদেষ্টা জনাব রিয়াজুল করিম ৭ অক্টোবর লন্ডনে বলেন, তিনি ইসলামাদ সরকারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করছেন প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষনা করছেন।
জনাব করিম পরবর্তীতে লন্ডনের বাংলাদেশ মিশনে যোগদান করেন।
<003.300.836>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
শীতবস্ত্র সংগ্রহ সম্পর্কে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ৯ অক্টোবর,
১৯৭১ |
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ মিশন
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলিকাতা-১৭
(অনুমতি নিয়ে কিংবা ছাড়া কপি করা যেতে পারে)
_______________________________________________________________________________
নং. পিআর/৬১. অক্টোবর ৯, ১৯৭১
শীতবস্ত্রের জন্য আবেদন
শীতের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও লক্ষাধিক তৃণমূল দুঃখীদের তীব্র সংগ্রামের জন্য বাংলাদেশে পশমি এবং অন্যান্য শীতকালীন পোশাক দেবার জন্য জোর দিতে হবে। মাতৃভূমিকে স্বাধীন করবার জন্য বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী পশ্চিম পাকিস্তানের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করার কারণ শুধু বাংলাদেশের জন্যই না বরং তা মানবতা এবং স্বাধীনতার জন্য। ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে এবং আসন্ন শীতকালে মুক্তিবাহিনী সদস্যদের রক্ষার জন্য, জনাব এম. হোসেন আলী, ইন্ডিয়াস্থ বাংলাদেশের হাই কমিশনার ফিলানথ্রোপিক অর্গানাইজেশনের কাছে আবেদন করেছেন। উপরি উল্লেখিত
জিনিসপত্র দান করে সাহায্য করার জন্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, উৎপাদন প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতাদের এগিয়ে আসার জন্যে অনুরোধ করেছেন।
৯, সার্কাস এভিনিউ, কলকাতা-১৭’তে অবস্থিত ইন্ডিয়ার বাংলাদেশ হাই কমিশনার দফতরে প্রদত্ত অনুদান আনন্দের সহিত গৃহীত হবে।
<003.302.837>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
নং জনসংযোগ / 64. অক্টোবর ১৩,১৯৭১.
বাংলাদেশ সরকার মুখপাত্রের ‘ ইয়াহিয়ার ব্রডকাস্টের প্রতিক্রিয়া
গত ১২ অক্টোবর, ১৯৭১ এ ইয়াহিয়া খানের সম্প্রচারের ওপর মন্তব্য করার সময়, বাংলাদেশ সরকারের একজন মুখপাত্র মুজিবনগরে আজ বলেন যে ‘ ইয়াহিয়ার এই সম্সপ্ম্প্ররচারিত বক্তব্য পুর্ব পাকিস্তানে তার নিজের হতাশাজনক পরিস্থিতির একটি কোনোরকম ব্যাখ্যা প্রদানের চেষ্টা মাত্র। এই বক্তৃতায় তিনি পুর্ব পাকিস্তানি জনগনের যুদ্ধ মধ্যবর্তি অবস্থার জন্য যে ব্যাথিত সেইটা বরাবরের মতো মেকি ছলনার অনুশিলন করেন। তিনি তাদের আন্দোলনে কে এর পিছনে দায়ী করেন। যদিও এর সাথে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। .তার ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা শুধুমাত্র সারা বিশ্বকে একটা ভাওতা দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। তার ভারতবিদ্বেষি অভিযোগ, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহের একটা অপচেষ্টা মাত্র। তার উদ্দেশ্য ভারতীয়দের সাথে যুদ্ধ নয় ,বরং ৭৫ মিলিয়ন মুক্তিকামি মানুষের বিপক্ষে।
২৮ জুন তার বক্তৃটায় ইয়াহিয়া খান বলেন, চার মাসের মধ্যে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কিন্তু তার গতকালকের সম্প্রচার শুধুমাত্র সামরিকজান্তার নকশায় শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার বিষয়টিই প্রকাশ করে। কিন্তু একজন বাংলাদেশি হিসেবে বলতে পারি তার এই ধরনের পরিকল্পনায় বাংলাদেশের জনগনের সাহায্য সে পাবেনা। তার তথাকথিত ‘সংবিধান’ ও এখানে প্রযোজ্য হবার নয়। তার আসল পরিকল্পনা হলো, তার এইসব অত্যাচার,নীপিড়ন এর উপর প্রলেপ দেওয়া এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলে মানুশকে বুঝ দেওয়া। আর এইসব সে করছে বহির্বিশ্বে নিজের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং তাদের থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবার জন্য।
ইয়াহিয়া খান একবার এই মুক্তিযুদ্ধ কে ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে চালিয়ে যাবার একটা অপচেষ্টা করেছিল। কিন্তু, সারা দুনিয়া জানে যে, এই যুদ্ধ বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের যুদ্ধ যারা ইয়াহিয়া আর তার বাহিনীকে তাদের মাটি থেকে সমুলে উৎপাটন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ভারতের সরকারের এতে কোনো সার্থ নেই।
তার পুরো বক্তব্যই ছিল পুর্ব পাকিস্তানিদের মধ্যে একটা ওয়ার হিস্টিরিয়া তৈরি করা। . তিনি তার সব সমস্যার জন্য ভারতকে দায়ী করেন এবং নিজেকে একজন মিষ্টি যুক্তিবাদি হিসেবে উপ্সথাপন করবার চেষ্টা করেন।. এভাবে তিনি তার নিজের অপরাধের জন্য ভারতকে দায়ি করার চেষ্টা করেন।
<003.302.838>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ইয়াহিয়া খান এইভাবে বাংলাদেশের বাস্তবতার উপেক্ষা করেছে এবং আমাদের যা করার এখনি করতে হবে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনিরা তাদের মাটিকে স্বাধীন করতে ইয়াহিয়ার ভারি অস্ত্র সস্রে সজ্জিত হানাদার বাহিনী উৎখাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই সামরিক জান্তার অস্তিত্ত শেখ মুজিবের মুক্তির পড়েই শেষ। তাদের তিরোধানের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে গ্রহনযোগ্যতা লাভ করতে পারবে।
<003.302.839>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
………………………
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
নিউয়র্কের পরিস্থিতি অবহিত করে পররাষ্ট্র সচিবকে দেয়া একটি চিঠি। | পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় | ১৪ অক্টোবর ,১৯৭১ |
প্রিয় আলম ভাই তারিখ; ১৪/১০/১৯৭১
আপনার ২৮/০৯/৭১ তারিখের চিঠির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১। নিউ ইয়র্ক থেকে ফিরে আসার পর পর চিঠিটি পেয়েছি। আমি ডাঃ নুরুল ইসলাম ,ডঃ মল্লিক এবং জনাব আসাদুল হকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি। এর আগে আমি অধ্যাপক মুজাফফর আহমেদের সাথে কথা হয়েছে।
২।. ডাঃ নুরুল ইসলামকে আপনাকে এবং প্রধানমন্ত্রিকেচিঠি লিখেছেন। এখানে ইতোমধ্যে কিছু কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমরা উপাদান সংগ্রহ করছি। একটি ব্যাংকে আমাদের প্রচুর সম্পদ আছে। রেহমান সোভানের মতে প্রায় আচ বছরের দীর্ঘমেয়াদি সম্পদ আমাদের আছে। পরিকল্পনা এমন জায়গায় বাস্তবায়ন করতে হবে যেখানে কম্পিউটার সুবিধা আছে।
৩। সাইদুজ্জামান (সি এস পি) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়েছে এবং আমাদের একই তথ্য দিয়েছেন। . ইঙ্গিতও রয়েছে যে কানাডা ফ্রান্স এবং ইউ কে ঋণ স্থগিত রাখার বিরোধিতা করছে। . পাক প্রতিনিধিদল “হতাশ” হয়ে ফিরে গেছে। তবে ভিতরের তথ্য এই যে U.S.A. তাদের কিছু ঋন প্রদান স্থগিত রেখেছে ।
৪। . আপনি কি মুহিত, রেহমান ও আমার লেখা “পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সহায়তা” এর কাগজ পেয়েছেন?
৫।. বিশ্ব ব্যাংককে ঢাকাতে একটি মিশন পাঠানো থেকে বিরত করা যায়নি।মিশন সদস্যরা হলেন, R. Picciotto, R Haxma, এবং U Shibusawa ।. তারা যাযেসব জায়গায় ভিজিট করেছেনঃ, (১) খেপুপাড়া (২) ভোলা ও চর লালমোহন, (৩) হাতিয়া, (৪) সন্দ্বীপ,এবং যদি সম্ভব হয় তবে (৫) রামগতি.। তারা এইসব ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন এবং সেনা সহচর ছাড়া ঐ জায়গা থেকে হেলিকপ্টার লাগবে কিনা সে বিষয়ে সাহায্যের কথা বলেছেন এবং এই সুবিধা ১৪ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেয়া হবে।
৬। খুরশীদ আলম পড়াশুনা নিয়ে ব্যাস্ত এবং আমার মনে হ না তিনি একজন সচিব হিসেবে যোগদান করতে ইচ্ছুক।
৭।. আমি আশা করি আপনার কাছে আমার এর আগের চিঠি টি ও আছে। আমি যদি একটি ব্যাংকে অবস্থান করি, তবে তারা আমাকে সরকারি পরামর্শক হিসেবে মেক্সিকোতে পাঁঠিয়ে দিতে পারে, যেটা আমি একদম ই চাচ্ছিনা। শোয়েব আমাকে এইখান থেকে সরানোর চেষ্টা অবশ্যই করবে। তবে আমার ইচ্ছা হলো জার্মান মিশনে অংশ নেয়া কিংবা ডঃঃ নুরুল ইসলামের সাথে থেকে পরিকল্পনা কমিশনে কাজ করা।
শুভেচ্ছা সমেত,
আপনার অনুগত
হারুন
<003.304.840>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠি | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৫ অক্টোবর, ১৯৭১ |
বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত চিঠি, ১৫ই অক্টোবর, ১৯৭১।
(বাংলাদেশ সরকারের সীল)
মুজিবনগর,
১৫ই অক্টোবর, ১৯৭১
মহামান্য,
ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ২৪শে এপ্রিল, ১৯৭১-এ লেখা চিঠির ধারাবাহিকতায় পরবর্তী যোগাযোগ ও ব্যক্তিগত আলোচনার জন্য আমরা এই চিঠি লিখছি । মহামান্য, আপনি অবগত আছেন যে, ১০ই এপ্রিল নির্বাচিত আইনসভা ও প্রাদেশিক প্রধিনিধিদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষিত হয় যারা প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন বাংলাদেশী জনগণের মুখপাত্র । এই ঘোষণা ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ হতে পাকিস্তানী হানাদার সেনাবাহিনী কর্তৃক একতরফা, অবাধে ও পাশবিক হত্যাযজ্ঞ ও অত্যাচারের এবং মানুষের মৌলিক গণতান্ত্রিক ও মানবিক অধিকারের খর্ব করার বিরুদ্ধে রায় ।
২. এটা সবাই জানে যে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক বাংলাদেশের জনগণের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা নির্মম ঔপনিবেশিক অত্যাচার, অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্যের কথা । শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে তাঁদের অধীনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকার ব্যবস্থা গঠন করা হয়, যা আপনাকে ২৪শে এপ্রিল, ১৯৭১-এর চিঠিতে জানানো হয়েছে ।
৩. গত কয়েক বছর ধরে আমাদের জনগণ শান্তিপূর্ণভাবে তাঁদের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অহিংস আন্দোলন করে এসেছে । এমনকি পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠী কর্তৃক জাতীয় সংসদের অধিবেশন অন্যায়ভাবে বন্ধ ঘোষণা করার পরেও আমাদের জনগণ সহিংস আন্দোলনের পথে না গিয়ে, তাঁদের অহিংস আন্দোলনের ধারা অব্যাহত রেখেছে । ২৪শে মার্চ, ১৯৭১ সালের রাত পর্যন্ত পাকিস্তানের সামরিক শাসক গোষ্ঠী তথা-কথিত সমঝোতার কথা বলে তাদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে অন্যায়ভাবে সুযোগ নিয়েছে ।
৪. তাদের পরিকল্পনা বিশ্ববাসীর সামনে চলে আসে যখন তারা অন্যায়ভাবে আমাদের দেশের অসহায়, ঘুমন্ত, নিরপরাধ ও নিরস্ত্র শিশু, নারী ও পুরুষদের উপরে ২৫শে মার্চ কালো রাতে পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ঝাপিয়ে পড়ে । যুবক ও তরুণদের ছাড়াও ছাত্র, কৃষক ও শ্রমিক নেতাদের উপর তারা আলাদা ও বিশেষভাবে টার্গেট করেছিলো । এর ফলে অস্ত্রের সাহায্য নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না ।
৫. ১০ই এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা হওয়ার পর আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আন্দোলন আরও শক্তিশালী ও বেগবান হয়েছে । আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ রক্ষায় ও সাড়ে সাত লক্ষ জনগণের সংগ্রামে সামিল হতে পূর্বের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও অন্যান্য প্যারা-মিলিটারি বাহিনীর প্রায় ৬০,০০০ সদস্য অস্ত্রহাতে নেমে পড়েছে । মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এবং ঔপনিবেশিক নিপীড়ন হতে এদেশের জনগণের রক্ষার্থে তাঁরা শত-সহস্র্য তরুণ-যুবাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ।
<003.304.841>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তি, যা কিনা দেশকে শাসন করেছে, তা ছিল জনবিরোধী। তারা ছিল সামরিক বাহিনী, বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও একচেটিয়া পুঁজিবাদীদের মধ্যকার চক্রান্তের অংশ। এই শক্তি হাতে হাত রেখে একসঙ্গে কাজ করে এবং তারা কখনোই গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিসঞ্চয় করতে দেয় নি। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রসার বন্ধে কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্য এটা ছিল ইচ্ছাকৃত চেষ্টা এবং যখনই এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, এই শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে তা দমনে সফল হয়েছে।
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গন, যখন ইয়াহিয়া খান আইয়ুবের থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তখন দ্বিতীয়বারের মত সংবিধান রহিত করা হল এবং জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেয়া হল। কিন্তু তারপরও জান্তা কর্তৃক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের আইনী কাঠামোও চালু করা হল। জনগণ জেনারেলের কথা বিশ্বাস করল এবং আওয়ামীলীগ, যা কিনা একটি সাংবিধানিক রাজনৈতিক দল, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সামনে এগিয়ে এল। এবছর ডিসেম্বরের ৭ তারিখ হতে জানুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন হল এবং ইয়াহিয়া খানের ভাষায় তা ছিল একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন শেষে আওয়ামীলীগ ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়ী হল। বাংলাদেশের মোট ভোটের ৮৫% পেল এবং ১৬৯ সিটের মধ্যে মাত্র ২টি সিটে পরাজিত হল। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ সিটের মধ্যে ২৮৮ সিটে তারা জয়ী হল। এভাবে আওয়ামীলীগ প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পাশাপাশি জাতীয় পরিষদেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল।
আওয়ামীলীগ এই নির্বাচন লড়েছিল ছয় দফার ভিত্তিতে। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ ২৩ বছর ধরে শোষিত হয়েছে এবং বারে বারে ক্ষমতাসীন চক্রের প্রতারনার স্বীকার হয়েছে, ছয় দফা ছিল তাদের জন্য পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের মধ্যে থেকে একটি কার্যকর স্বায়ত্তশাসনের পন্থা। এটা ছিল বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আশা ছিল, আওয়ামীলীগ সাংবিধানিক উপায়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থের শোষণ থেকে বাঙালি মুক্তি পাবে।
নির্বাচন শেষে জাতীয় পরিষদে সকল দলের নেতাদের নিজেদের মধ্যে এবং পৃথকভাবে প্রত্যেক দল ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংলাপ হয় এবং অবশেষে ৩ মার্চ, ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয়। ইতিমধ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জনাব ভুট্টো অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য সকল পার্টির অধিবেশনে যোগদান প্রতিহত করার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। সিন্ধু ও পাঞ্জাবে নির্বাচনে এগিয়ে থেকে তিনি সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবহার শুরু করেন। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল উমর, রাষ্ট্রপতির প্রধান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল পিযাড়া এবং ইয়াহিয়া খানের অন্যান্য কাছের সহযোগীদের সঙ্গে মিলে জনাব ভুট্টো তার চাপের কৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তার ব্যর্থতা নিশ্চিত এবং জাতীয় পরিষদের পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যরা ঢাকায় অধিবেশনে অংশগ্রহনের জন্য প্লেনের সিট নিয়ে ফেলেছেন, তখন জেনারেল ইয়াহিয়া শুনলেন জনাভ ভুট্টোর কথা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধবাজেরা (সেনাপতিরা?) এক রেডিও বার্তার মাধ্যমে ১ মার্চ, ১৯৭১ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করলেন।
<003.304.842>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘে প্রেরিত বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্পর্কে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২৬ অক্টোবর, ১৯৭১
|
বাংলাদেশ প্রেস বিজ্ঞপ্তি
ভারতস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন
৯, সার্কাস এ্যাভিনিউ
কলিকাতা-১৭
(অনুমতি সাপেক্ষ বা অনুমতি ব্যাতীত এই অংশ পুনঃ মুদ্রণ করা যেতে পারে)
ক্রমিক নম্বরঃ পি. আর/৬৮
মুজিবনগর
অক্টোবর ২৬, ১৯৭১
জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল
বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃতে ১৬-সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশেনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চলমান আন্দোলনের পটভূমি এবং এর মূল উদ্দেশ্য যে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা, সেটা সফলভাবে তুলে ধরে।
প্রতিনিধিদল বিশ্ব সম্প্রদায় কে বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে কি ঘটছে সেই ব্যাপারে অবহিত করে এবং একই সাথে পাকিস্থানের সম্পূর্ণ অনৈতিক এবং অসৎ উদ্দেশ্যপূর্ণ মিথ্যা রাজনৈতিক প্রচারণা প্রতিহত করে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করে এবং তাদেরকে বাংলাদেশের প্রকৃত অবস্থা সমন্ধে অবহিত করে। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এই বৈঠকগুলো জাতিসংঘের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দকে বাংলাদেশের চলমান সংকটের বিভিন্ন দিকগুলো জানতে সাহায্য করে। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অনেক দেশের প্রতিনিধিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বাংলাদেশের অবস্থানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বিশ্ব সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে চলমান সংকটের গভীরতা এবং পাকিস্থান কর্তৃক বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার ভয়াবহ ব্যাপকতা বোঝাতে সফলভাবে সক্ষম হয়। গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, অনেক সদস্য দেশ জাতিসংঘের অধিবেশন পর্বে বাংলাদেশের সংকট নিয়ে বক্তব্য রাখে, যা প্রমান করে যে চলমান এই সংকট পাকিস্থানের অভ্যন্তরীণ কোন বিষয় আর নয়।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দ আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাদের কাছ থেকে অবিশ্বাস্য রকমের সমর্থন পায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের উপস্থিতির কারণের আমেরিকাতে বাংলাদেশের সমর্থনকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ এবং উদ্দীপনা দেখা যায়, তবুও আমেরিকার নিক্সন সরকার পশ্চিম পাকিস্থানের সামরিক জান্তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জারি রাখে। পাকিস্থান বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের জাতিসংঘের আনুকূল্য লাভের চেষ্টাকে প্রতিহত করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশ গ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিনিধি দলগুলোর উপর ভাল রকমের প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হয়।
<003.305.843>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধের সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রী | “বাংলাদেশ”-পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত পত্রিকা | ৩ নভেম্বর, ১৯৭১
|
ভারতের উপর পাকিস্থানের নগ্ন আক্রমণের প্রতি বাংলাদেশের নেতাদের নিন্দা জ্ঞাপন
৭.৫ কোটি বাংলাদেশী জনগণ সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় জনগণের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছে
পাকিস্থান সম্পূর্ণরুপে এককভাবে এবং কোন রকম উস্কানি ছাড়া ৩ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে পাকিস্থানের এই নগ্ন আগ্রাসনের প্রতি সমস্ত শান্তিপ্রিয় মানুষ নিন্দাতে মুখর হয়ে উঠে। বিকাল ৫.৩০ ঘটিকার সময় মিসেস.গান্ধী কলকাতা ব্রিগেডের কুচকাওয়াজ ময়দানের মঞ্চ থেকে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন। প্রায় সেই সময়, পাকিস্থানের বিমান বাহিনী পশ্চিম সেক্টরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবস্থানের উপর বিমান হামলা শুরু করে। একই সাথে পাকিস্থানী গোলন্দাজ বাহিনী দূরপাল্লার কামান হামলাও শুরু করে।
বাংলাদেশী নেতারা ভারতের উপর পাকিস্থানের এই ঘৃণ্য হামলার প্রতি চরম নিন্দা জানায় এবং একইসাথে ভাত্রিসুল্ভ ভারতের উপর বাংলাদেশী জনগণের সম্পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ ভারতের মাটির উপর পাকিস্থানের এই নগ্ন আগ্রাসনের চরম নিন্দা জানান এবং একই সাথে বলেন বাংলাদেশী ৭.৫ কোটি জনগণ তাদের সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়ে ভারতের জনগণকে তাদের মাটি থেকে শত্রুদের সমূলে উৎখাত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুজিবনগরে অবস্থিত খন্দকার মোশতাক এক বিবৃতিতে বলেন তিনি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে মিসেস. ইন্দিরা গান্ধীর গতিশীল নেতৃত্বে সাহসী ভারতীয় সামরিক বাহিনী খুব শীঘ্রই বিজয় এবং সন্মান ছিনিয়ে নিয়ে আসবে সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য।
পূর্ণ বিবৃতিটি নিম্মরূপঃ-
“ভারতের মাটিতে পাকিস্থানের এই রকম কাপুরুষোচিত এবং অবিবেচিত আক্রমণকে নিন্দা জানার মত কোন ভাষা-ই যথেষ্ট না এবং পাকিস্থানের সব সময় প্ররোচনার সত্ত্বেও ভারত তার সাবড়ভোমরত্ত সবসময় শান্তি রক্ষার উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করে গেছে।
ইসলামাবাদের সামরিক জান্তারা তাদের ক্ষমতালিপ্সুতা এবং রক্ততৃষ্ণার জন্য একবার বাঙ্গালী জাতির সক্ষমতা এবং সম্ভবনাকে অবমূল্যায়ন করেছিল। সেই একই বিবেকবর্জিত এবং দেউলিয়া নেতৃত্ব মহান গণতান্ত্রিক দেশ, ভারতবর্ষের ক্ষমতা এবং শক্তিকে অবমূল্যায়ন করার দুঃসাহস দেখায়। কিন্তু এইবার তাদের এই মূর্খতা প্রসূত পদক্ষেপ, তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস এবং বিলুপ্ত করে দিতে পারে। বাংলাদেশের ৭.৫ কোটি ভারতের জনগণের সাথে সম্পূর্ণভাবে একাত্মতা ঘোষনা করে, মানবতা বিরোধী এই শত্রুদের সমূলে উৎপাটন করতে এক সাথে কাজ করে যাবে। যে কোন আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমারা অথবা মুক্তি বাহিনী এই অঙ্গীকার রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।
আমারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে মিসেস. ইন্দিরা গান্ধীর গতিশীল নেতৃত্বে সাহসী ভারতীয় সামরিক বাহিনী সারা বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য খুব শীঘ্রই বিজয় এবং সন্মান ছিনিয়ে নিয়ে আসবে। যুদ্ধবাজ, অত্যাচারী পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী সবসময়-ই পৃথিবীর এই অঞ্চলে শান্তি এবং উন্নতির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও ঔপনিবেশিক চক্র বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে।
<003.303.844>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এই অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর মিরত্তু ফাঁদ আমরা তৈরি করে চলেছি। সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয় যেদিন তাদেরকে কবরের শান্তির স্বাদ দেওয়া হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ এবং পুনঃবাসন মন্ত্রী জনাব এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান বলেন এই যুদ্ধ স্পষ্টতই তথাকথিত পাকিস্থান নামের রাষ্ট্রকে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে মুছে দিবে। তিনি সিন্ধ এবং বেলুচিস্থান নেতাদের প্রতি আহবান জানান তারা পাকিস্থানী সামরিক জান্তাদের নিষ্ঠূর শাসনের খপ্পর থেকে বন্ধনমুক্তির জন্য সর্ব শক্তি দিয়ে আন্দোলন শুরু করে।
জনাব কামরুজ্জামান ঘোষণা করেন যে বাংলাদেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করার জন্য মুক্তিবাহিনী ভারতীয় সৈনিকদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করবে।
ভারতের জনগণ এবং সরকারে প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি, তিনি আরও উল্লেখ করেন শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বোধকরি শুধু এশিয়ার ভিতরে-ই নয়, সারা পৃথিবীর ভিতরে গণতন্ত্র সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উজ্জ্বল পৃষ্ঠপোষক। আর সেই জন্যই বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে মুক্তি বাহিনীকে তিনি সহায়তা প্রদান করেছেন। মন্ত্রী আর বলেন বাংলাদেশের প্রতিটা মানুষ তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।
অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী বলেন যে মুক্তি বাহিনী এবং ভারতীয় সৈনিকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এক নুতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করবে। এই ঘটনাটা ইতিহাসের পাতায় উদাহরণ হয়ে থাকবে। অর্থমন্ত্রী আরও আশা করেন যে ভারত যেমন যুদ্ধকালীন সময়ে মুক্তি বাহিনী কে সাহায্য করছে, যুদ্ধপরবর্তী বাংলাদেশ গোড়তে একই ভাবে সহায়তা করবে।
হাই কমিশনার
ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশনার জনাব এম. হোসেন আলী বলেন “পাকিস্থানের জান্তা কর্তৃক ভারতের বিরুদ্ধে এই হটকারী, অঘোষিত এবং অবিবেচিত পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ ঘোষণা করায় বাংলাদেশ যারপরনায় হতাশ। এটা খুবই অশোভন এবং নগ্ন আগ্রাসন। বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর উত্তোরত্তর সফলতাতে হতাশ হয়ে সামরিক শাসক গোষ্ঠী এখন ভারতের বিরুদ্ধে কাপুরুষোচিত হামলা করেছে যাতে করে সমগ্র উপমহাদেশে যুদ্ধটা ছড়িয়ে দেওয়া যায়। বাংলাদেশের জনগণের কাছে যুদ্ধে হারার লজ্জাকে ঢাকার, এটা তাদের একটা মরিয়া প্রচেষ্টা মাত্র।
এই নগ্ন আগ্রাসন মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন পাকিস্থানি শাসক গোষ্ঠীর পাপের এবং অপরাধের পেয়ালা পরিপূর্ণ করেছে। যদি তারা মনে করে, গনতান্ত্রিক ভারতের শান্তিপ্রিয় ৫৫ কোটি জনগণের শক্তি এবং সামর্থ্যকে ঠেকানোর ক্ষমতা রাখে তবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। আমরা নিশ্চিত যে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর গতিশীল নেতৃত্বে দৃঢ়চেতা ভারতীয় জনগণ পাকিস্তানের এই আগ্রাসনকে সমূলে উৎপাটিত করবে এবং পশ্চিম পাকিস্থানের হটকারী সেনাপতিদের এমন শিক্ষা দিবে যে তারা কখনও ভুলবে না।
<003.306.845>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশঃ একটি প্রতিবেদন | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ৩ নভেম্বর, ১৯৭১
|
জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ
১. চেতনা এবং উদ্দেশ্যঃ মানবজাতির একটা স্বপ্ন হল বিশ্বসংস্থার চরম সভ্য এবং মানবিক চেতনাটি হবে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মুখ্য সমালোচনাঃ
(ক) জাতিসংঘ সংস্থাটি প্রধানত বড় শক্তিধর দেশগুলোর ক্ষমতার রাজনীতির দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এই ক্ষমতার রাজনীতিই সংস্থাটির কার্যকারিতা নির্ধারণ করে।
(খ) সংস্থাটি প্রধানত ক্ষমতাধর দেশগুলোর তর্কবিতর্ক করার জায়গা মাত্র।
(গ) আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদ একজন সাধারণ মানুষের অধিকার, এমনকি মৌলিক অধিকারও সংরক্ষণ করে না।
(ঘ) আন্তর্জাতিক অপরাধ যেমনঃ গণহত্যা এবং যুদ্ধাপরাধের কোন বিচার ব্যবস্থা নাই।
(ঙ) অধিকার নিশ্চিত আছে কিন্তু অধিকার লঙ্ঘিত হলে সেটা তদারকি বা দেখার মত কোন ব্যবস্থা নাই। এমনকি নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘিত হলেও, জাতিসংঘ অসহায়ভাবে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
(চ) জাতিসংঘের কথা আর কাজের ভিতরে বিস্তর ফারাক পরিলক্ষিত হয়।
পরামর্শঃ
(ক) জাতিসংঘকে আরও বাস্তব সম্মত প্রতিষ্ঠান হতে হবে যেখানে “না-ভোট” প্রদান করার ক্ষমতা তুলে নিতে হবে।
(খ) আইন করে জাতিসংঘের ভিতরে ক্ষমতাশীলদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত হওয়াকে অনুৎসাহিত করতে হবে।
(গ) জাতিসংঘকে এমন একটা প্রতিষ্ঠান বিশ্বনীতি নির্ধারণী রাজনীতি থেকে মুক্তবুদ্ধির চর্চা বেশী প্রাধান্য পাবে। এই চেতনাটাকে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে যেন সেটা জাতিসংঘকে সত্যিকারভাবে গণতান্ত্রিক এবং কার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে পরিবর্তন করে।
(ঘ) এমন পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে যেন কারো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে সে প্রকৃত অর্থে বিচার চাইতে পারে।
উপসংহার
জাতিসংঘের এখনও মূল চেতনা এবং উদ্দেশ্য হল আদর্শ বিশ্ব সম্প্রদায়ের স্বপ্ন। আমাদের এখন যা করা উচিত তা হল এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার রাস্তা খুঁজে বের করা। মানবাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে, গত দুই দশকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাতিসংঘ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘ এই ভুমিকা আরও কার্যকরী এবং প্রশংসনীয়ভাবে পালন করতে পারে।
<003.307.846>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পররাষ্ট্র দপ্তর
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর
নভেম্বর ৩,১৯৭১
প্রিয় প্রতিরক্ষা সচিব,
আমি ঘোড়াশাল সার কারখানা সংক্রান্ত একটি নোট সংযুক্ত করছি। এটা মনে হয় যে, মুক্তিবাহিনী কর্তৃক জাপানী বিশেষজ্ঞদের দেওয়া হুমকি কিছুটা প্রভাব ফেলেছে।তাই ঘোড়াশাক কারখানার বিশেষজ্ঞদের হয়রানী বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে প্রাথমিকভাবে তৈরী প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কাজে লাগানো যায়।
সংযুক্ত তথ্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নজরে আনলে কৃতজ্ঞ থাকব।
বিনীত
(এম.আলম)
৩.১১.৭১
জনাব এ. সামাদ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকার
encl:as above
গোপন কপি
নিম্নলিখিত বার্তাটি টোকিও থেকে গৃহিত হয়েছে; “মাসুদ থেকে আলম বাংলাদেশ পররাষ্ট্র সচিব।
সুপারিশ যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনী দ্বারা বর্তমানে আক্রমণ হয় তা স্পষ্ট এবং দ্রুত বাংলাদেশের মুখপাত্র নিশ্চিত,যদি না ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়। ভারতীয় অস্বীকার এখানে প্রকাশিত কিন্তু বাংলাদেশী বিবৃতি প্রয়োজন মনে হচ্ছে।শুভেচ্ছা
<003.307.847>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আমাদের কাছে আরো খবর আছে যে, কিছু সাংবাদিক প্রশ্ন তুলছেন, কেন বর্তমান আক্রমনাত্মক মুক্তি বাহিনী সম্পর্কে মন্তব্য করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
এ. জি.
২৬.১১.৭১
পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়
বাংলাদেশ সরকার
অত্যন্ত জরুরী
নভেম্বর ২৭, ১৯৭১
মেমো নং 281 (3)/FS/MFA/71
কপি পাঠানো হয়েছেঃ
(১) বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা সচিব
(২) বাংলাদেশ সরকারের তথ্য সচিব
(৩) তথ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য ই. পি. ডি.
(এম. আলম)
পররাষ্ট্র সচিব
২৭.১১.৭১
<003.319.848>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির জাতিসংঘ মহাসচিবের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতিসংঘের মহাসচিব উ. থান্টের প্রতি জনাব হোসেন আলী ও তার পরিবারকে উদ্ধারের জন্য জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানিয়েছেন। জনাব হোসেন আলিকে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে এবং তাকে নয়াদিল্লীতে পাকিস্তান হাই কমিশনে বন্দী করে রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের কাছে প্রেরিত একটি টেলিগ্রামে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আহ্বান জানিয়েছেন, যে হিংস্রতা বাংলাদেশের নাগরিকের উপর চালানো হয়েছে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা জ্ঞাপন করা এবং সম্প্রতি এই সহিংসতা অধিকৃত এলাকা থেকে বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের পরিপার্শ্ব গুলোতেও প্রসৃত হয়ে পড়ছে বলেও তিনি জানান। তিনি জনাব হোসেন আলী ও তার পরিবারের মুক্তির আবেদন জানিয়ে মহাসচিবের হস্তক্ষেপ প্রার্থনা করেন। পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত পশ্চিমা কর্মচারীদের দ্বারা বাঙালি কর্মচারীদের যে অমানবিক আচরণের শিকার হতে হয়েছে, রাষ্ট্রপতি তার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়েছেন।
টেলিগ্রামের সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু নিম্নে উল্লেখিত হলো :- ” ভারতের নয়াদিল্লীতে পাকিস্তান হাই কমিশনে কর্মরত ১১জন বাঙালি যারা কার্যত বন্দী অবস্থায় ছিলো, ২নভেম্বর প্রধান বিচারালয় থেকে তেতাল্লিশ জন পরিজন সহ বেরিয়ে আসার সময় পশ্চিমা সৈন্যরা তাদের সিনিয়র অফিসারদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন প্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে; এতে অনেকেই গুরুতর জখম হয়। এমনকি শিশু ও নারীরাও রেহাই পায়নি। আহতদের ক্ষতস্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো এবং অধিকাংশকে জরুরি চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পাকিস্তানের প্রধান বিচারালয়ের বাইরে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের উপর ভেতর থেকে পাথর ও উড়ন্ত মিসাইল নিক্ষেপ করে তাদেরকে কোণঠাসা করে রাখা হয়। বিদেশী টেলিভিশনে এই ঘটনা বহুল প্রচারিত হয়।
জনাব হোসেন আলী নামে একজন বাঙালি কর্মচারীকে অচেতন না হওয়া অবধি নির্দয়ভাবে পেটানো হয় এবং তার স্ত্রী ও তিন কন্যাকে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়; তার নাবালক দুই পুত্র কোনমতে পালিয়ে যায়। বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করায় তার কিশোরী কন্যাকে চটকানো হয় এবং ভেতরে যেতে বাধ্য করা হয়। বিদেশি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিগণ এই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী।জনাব হোসেন আলী পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা বিভাগীয় কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। সম্ভবত ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের সাথে যোগাযোগ থাকায় তার জীবনে বিপদ নেমে আসে।
<003.319.849>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আমি মানবতা এবং ন্যায়বিচারের নামে জরুরি ভিত্তিতে আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি এবং পাকিস্তানি দূত দ্বারা জনাব হোসেন আলী ও তার পরিবারের অন্যায় আটকাদেশ থেকে মুক্তির আবেদন জানাচ্ছি; যদি না ইতোমধ্যে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকে! আমি বিশ্বদরবারেও আকুল আবেদন জানাচ্ছি, বাংলাদেশের নাগরিকদের উপর এই ইচ্ছাকৃত সহিংসতার জন্য পাকিস্তান সরকারকে দোষী সাব্যস্ত করতে। গণহত্যা এবং মানবতার বিরুদ্ধে যে অপরাধ বাংলাদেশে সংঘটিত হয়েছে, তা এখন বিদেশের কূটনৈতিক মিশনের পরিপার্শ্বগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং সার্বজনীন নিন্দা প্রাপ্য হচ্ছে।”
<003.309.850>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সিঙ্গাপুরের কূটনীতিক বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বস্ততা প্রকাশ
একজন ৩৯ বছর বয়সী সিঙ্গাপুরে পাকিস্তান হাইকমিশনের একজন বার্তা সহকারী নভেম্বরের ৮ তারিখে বাংলাদেশের সরকারের সাথে থাকার ব্যপারে বলেন যে তার বাঙালি সহযোগীদের পশ্চিম পাকিস্তান আর্মি দ্বারা গনহত্যার কারনে উনি আর ইসলামাবাদ সামরিক শাসনের অধীনে চাকরি করবেন না।
নিজের স্ত্রী ও তিন সন্তানের সহিত জনাব আলি আহমেদ সংবাদ সংস্থা ও সাংবাদিকদের এবং পাকিস্তান হাই কমিশনের কাছে চিঠি পাঠানোর পর বিমানপথে সিঙ্গাপুর ত্যাগ করে।
জনাব আহমেদ পাকিস্তান মিশনের সাথে ১০ বছর ছিলেন এবং ইসলামাবাদে বদলির নির্দেশে ছিলেন। কিছুদিন আগে এক বাঙালিকে তার বাসা খালি করতে বলা হয় তার পশ্চিম পাকিস্তানি বদলির জন্য, এবং হোটেল ইস্ট এশিয়ায় যান যেখান থেকে তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগ দিতে উপমহাদেশে যান।
যদিও পাকিস্তান মিশনের বাঙালি কর্মীদের জরুরি কাজ থেকে বিরত রাখা হয়। জনাব আহমেদ তার বার্তা সহকারী হবার ক্ষমতার কারনে সিঙ্গাপুর থেকে বিচ্ছুরিত ও আগত সকল গোপন বার্তা সম্বন্ধে জানতেন। যখন অনেক পাকিস্তানি কূটনীতিক তাদের পক্ষে কথা বলছিলেন, তখন জনাব আহমেদ একমাত্র ব্যক্তি যিনি বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বস্ততা প্রকাশ করেন।
আরো মানুষের বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বস্ততা প্রকাশ
নভেম্বরের ২ তারিখ পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মীদের দ্বারা প্রহৃত হওয়ার পর নয়া দিল্লীতে পাকিস্তান হাইকমিশন থেকে পালিয়ে ৪৩ জন নর-নারী ও শিশু মুক্তি পায়। সকলে বাংলাদেশের প্রতি বিশ্বস্ততা প্রকাশ করে।
এই গ্রুপটি ১০ জন পূর্ব পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মী ও তাদের পরিবার নিয়ে গঠিত হয়। প্রহারের কারনে এদের মধ্যে দুইজন আহত হয় এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়।
অনেকের পলায়নের কারনে পাকিস্তান হাই কমিশনে শুধু বাঙালি ছিলেন জনাব হোসাইন আলী পাকিস্তান গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের প্রধান জনাব আব্দুল গনির সহকারী। জনাব হোসাইন আলী তার স্ত্রী,দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান নিয়ে নিজেরাই হাইকমিশন থেকে পালান।
নভেম্বরের ২ তারিখে টোকিওতে জনাব এস এম মাসুদ পাকিস্তান দূতাবাসের সংবাদদূত এবং তার পরিবার এবং তৃতীয় সচিব মুহাম্মদ আব্দুল রহিম বাংলাদেশে প্রতি বিশ্বস্ততা প্রকাশ করেন কারন “আমরা আর ভান করতে পারছি না।”
জনাব মাসুদ ৫৬ বছর বয়সী এবং ছয় সন্তানের পিতা এবং জনাব রহিম(২৯) তারা দুজনেই পূর্ব বাংলার। কুমিল্লার জনাব মাসুদ টোকিওতে ১৯৭০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে চাকরীরত আছেন এবং জনাব রহিম একজন অবিবাহিত পূর্ব বাংলার রাজশাহীর। জনাব রহিম টোকিওতে ১৯৭০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে চাকরীরত আছেন।
<003.309.851>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জনাব মাসউড এবং জনাব রহিম জাপানিজ সাংবাদিকদের বলেন তারা পক্ষত্যাগ করেছিলেন কারন “আমরা পূর্ব বাংলায় পশ্চিম পাকিস্তান সরকারের ভয়াবহ অত্যাচার সহ্য করতে পারছিলেন না।”
নভেম্বরের ২ তারিখ বার্নেতে সুইজারল্যান্ডে পাকিস্তান দূতাবাসের মধ্যম সম্পাদক এবং সাবেক অভি্যোগ বিষয়াবলী জনাব ওয়ালিউর রহমান ঘোষনা করেন যে তিনি পদত্যাগ করেছেন এবং সুইজারল্যান্ডে আশ্রয় চান।
তিনি একটি সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তান সরকারকে পূর্ব পাকিস্তানে ১৫ লক্ষ মানুষ হত্যার জন্য দায়ী করেন।
মিশরের রাজধানী কায়রোতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারালয়ের মুখ্য জনাব ফজলুল করিম অক্টোবরের ২৬ তারিখ লন্ডনে আসেন পাকিস্তান সরকারের শাসনপ্রনালীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে বাংলাদেশের আন্দোলনে অংশ নিতে।
৩১ বছর বয়সী এই কূটনীতিক এক বিবৃতিতে বলেন “পশ্চিম পাকিস্তানের সেনা গুপ্তসভা সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিয়েছে পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে মৌলিক চাহিদাগুলো থেকে বঞ্চিত করতে এবং তাদের চিরস্থায়ীভাবে পরাধীন রাখতে।”
লন্ডন ভিত্তিক আন্দোলনের এক মুখপাত্র বলেন প্রায় ৪০ জন পূর্ব বাঙালি কূটনীতিক বিদেশে তাদের পদ ছেড়ে দেন কারন পাকিস্তানি সেনারা মার্চ মাসে পূর্ব বাংলায় স্থানান্তরিত হন।
<003.310.852>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
<003.311.853>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আজ আমি হতাশ হয়ে আপনাকে লিখছি যা কয়েক সপ্তাহ ধরে আমার চিন্তাকে মেঘাচ্ছন্ন করে রেখেছে।সাত মাসের-ও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যকে সাহায্য করার পর আপনাকে এটা জানানো হয়তো অস্বাভাবিক মনে হতে পারে।কিন্তু আমার কর্তব্যবোধ আমাকে নির্দেশ দিচ্ছে আপনাকে জানাতে যে,কোনো কারণ ছাড়াই আমি মানসিকভাবে নির্যাতিত হচ্ছি।আপনার অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুবিধার্থে আমি নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে বিষয়গুলো তুলে ধরছিঃ
১)মার্চের শেষে ঢাকা ছাড়ি এবং পূর্বদিকে ৩ সপ্তাহ কাটানোর পর ১৯৭১ সালের এপ্রিলের ১৯ তারিখ কলকাতায় আসি।আমি এখানে এসেছি একটি স্বাধীন বাংলাদেশের অঙ্গীকার পূরণে,পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনীর ভয়ে না।আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় শেখ মুজিবুর রহমান-এর বিচারের সময় এবং ১৯৬৯ সালের গোলটেবিল মিটিং বা তারপরেও আমার অবদান সম্পর্কে আপনি,আপনার সহকর্মীরা এবং আওয়ামী লীগ দল অবগত আছেন।
২)বাংলাদেশ সরকারের কার্যনির্বাহকদের মাধ্যমে আমি ফেরার পর থেকেই আমাদের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যপূরণের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছি।শুরুর দিকে শুধুমাত্র বাহ্যিক কার্যকলাপ মিশনের মাধ্যমে পরিচালিত হত। আমি নিজেকে এতে নিযুক্ত করেছি যাতে আমার সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করতে পারি।পরিস্থিতির কারণে,কূটনৈতিক ও জনসংযোগ সদরের জন্য দরকারি যন্ত্রপাতি পর্যাপ্তপরিমাণে ছিল না।যখনই প্রয়োজন,আমি এই ফাঁক কমানোর এবং এই শূন্যস্থান পূরণের চেষ্টা করেছি।আমি চিঠির খসড়া করেছি,বৈদেশিক সংস্থার জন্য নীতিমালা তৈরী করেছি,বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জন্য ব্রিফিং তৈরী করেছি,বিদেশী সংবাদদাতা ও পরিদর্শকদের অবগত করেছি,বাংলাদেশের আন্দোলনের তথ্য ও দলিল সংকলন করেছি এবং বিভিন্ন সময়ে আরো অসংখ্য কাজ করেছি।
৩)আমাদের বৈদেশিক কার্যালয় এবং কূটনীতিক প্রচেষ্টা কে শক্তিশালী করতে বৈদেশিক প্রচারযন্ত্রের উন্নতি সাধনে আমি বিভিন্ন উপলক্ষে বিভিন্ন পরিকল্পনা জমা দিয়েছি।আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সাথে আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব আমাদের এই ঘটনার জন্য সুফল বয়ে এনেছে।যখন-ই আমি কথা বলেছি আমার সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল আমাদের ঘটনার সত্যতা প্রতিপাদ্য করা এবং এই নেতৃত্বের নেপথ্যে আওয়ামীলীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা।জনাব আলম বৈদেশিক সচিবের দায়িত্ব নেয়ার পর আমিও চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করতে এবং তাকে ও বাকি সব মিশনের কাজে সবধরনের সম্ভাব্য সহযোগিতা প্রদান করেছি।এছাড়াও যখনই প্রয়োজন হয়েছে আমি জনাব হোসেইন আলী কে বিভিন্ন বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।আমি আমার সাধ্যের বাইরে গিয়েও অনেক কাজ করেছি শুধুমাত্র আমাদের বিষয়টাকে শক্তিশালী করতে এবং আরও অসংখ্য কাজ করেছি মিশনের জন্য।আমার উপস্থাপনে এই ধারণা বিকশিত হয়েছে এবং এখন তা খুব ভালভাবে কাজ করছে।“বাংলাদেশ” নামে একটি ইংরেজি বুলেটিন এই বিভাগ থেকে প্রত্যেক সপ্তাহে প্রকাশিত হচ্ছে।আমাদের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে এই বিভাগকে আর কার্যকর করতে আমি একটি বিস্তৃত পরিকল্পনা জমা দিয়েছি।
৫) এতদিন ধরে একমুহূর্তের জন্যও এমন হয়নি যে আমার অবদান অপ্রয়োজনীয় বা এই ব্যাপারে বাংলাদেশের জন্য আমার কাজ করার বিষয়ে
<003.311.854>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আমি মনে করেছিলাম আরো কার্যকর ভাবে কাজ করার জন্য পররাষ্ট্র দপ্তরে কাজের বণ্টন করা যায় সেই জন্যে আমার সেটাই করা উচিত।এটা আমাকে আমার দায়িত্ব পালনের সময় আরো সৃজনশীল এবং তৎপর হবার ক্ষেত্রে সহায়তা করতো।এই সময় পররাষ্ট্র সচিব আমাকে জানান যে আমার অবস্থান কে আনুষ্ঠানিক করার ব্যাপারে সমস্যা আছে।এটা শোনার পরে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে আমি প্রথম বারের মত পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করি।তিনি আমার প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন এবং আমার যাবতীয় কাজের জন্য তিনি আমার প্রশংসা করেন কিন্তু তার সাথে বলেন যে আনুষ্ঠানিক ভাবে আমার দায়িত্বে থাকার ব্যাপারে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমস্যা রয়েছে।যদিও তিনি আগের মত স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে আমার কাজ চালু রাখার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন।
(৬) যেহেতু আমার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের জনগণের জন্য কাজ করা সেহেতু আমি পররাষ্ট্র দপ্তরে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি।যদি আমার প্রয়োজন হয় সেজন্য হৃদ্যতার সাথে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমার জন্য সামান্য ভাতার ব্যবস্থা করেছেন।
(৭) যাইহোক এরই মধ্যে বর্হিবিশ্ব প্রকাশনা বিভাগ থেকে আমার দ্বারা সংকলিত ও প্রস্তুতকৃত দুটি বৈ প্রকাশিত হয়।একটির নাম “বাংলাদেশ-সমসাময়িক ঘটনা এবং দলিলপত্র” এবং অন্যটির নাম “বাংলাদেশ-স্বায়ত্ত্বশাসন থেকে স্বাধীনতা” (ওয়ার্ল্ড প্রেস কমেন্ট্রারি)।সহৃদয় প্রকাশনা বিভাগ প্রথমটিতে আমার নাম উল্লেখ করেছেন যদিও প্রকৃতপক্ষে আমি নাম উল্লেখ করার ব্যাপারে রাজি ছিলাম না।
(৮) এই অবস্থাটি অপমানজনক ও অবমাননাকর যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে আমি সেটা মনে করছি না। আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছি যে আমাকে কার্যকর ভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না।সেই সাথে এটা অধিক সংখ্যক বিদেশী সংবাদদাতা ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ ও কাজের ক্ষেত্রে লজ্জাজনক।
(৯) সব সময়ই বিভিন্ন সূত্র থেকে এবং বিশেষত পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে আমাকে জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশের পক্ষে আমার কাজ করার ব্যাপারে আপনার পক্ষ থেকে আপত্তি রয়েছে।এই পরিস্থিতিকে মানুষের পক্ষে অসহ্য এবং রাজনৈতিক ভাবে দুর্ভাগ্যজনক মনে করায় গত সপ্তাহে আমি পুনরায় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলাম।তিনি আমাকে বিষয়টি নিয়ে আপনার ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করার উপদেশ দেন এবং আমাকে আশ্বস্ত করেন যে এই অবাঞ্ছনীয় পরিস্থিতির শুধুমাত্র তখনই পরিবর্তন হবে যখন আপনি এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি আমাকে আরো কার্যকর ভাবে কাজ করতে অনুমতি দেবেন।যখন এই বিষয় নিয়ে আমি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করি তখন তিনি এইসব ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন এবং বিষয়টি নিয়ে আপনার সাথে আলোচনা করতে উপদেশ দেন।
জনাব প্রধানমন্ত্রী,আমি এইখানে সম্পূর্ণরুপে এটা পরিস্কার করতে চাই যে আমার দায়িত্ব নির্ধারিত থাকলে আমি স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে আমার কাজ অব্যাহত রাখতে পারলেই খুশী হব।আমি ইতিমধ্যেই মুক্তিযুদ্ধে সরকারের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে এবং আমাদের সংগ্রামকে আরো ভালো এবং কার্যকর ভাবে উপস্থাপন করার জন্য আমার সীমাবদ্ধ সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার ব্যাপারে আমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছি।
আমি আশা করি আপনি এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।আমি পররাষ্ট্র দপ্তরে বা পরিকল্পনা কমিশনে বা আপনি আমার জন্য উপযুক্ত মনে করেন এমন যে কোন ক্ষেত্রে কাজ চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক।
আপনার বিশ্বস্ত
(মউদুদ আহমেদ)
ব্যারিস্টার-এট-ল
তারিখ.১২/১১/৭১
অনুলিপি পাঠানো হলঃ
১. প্রধানমন্ত্রী
২. ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
৩. পররাষ্ট্র মন্ত্রী
<003.312.855>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় পত্র
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত
প্রতিনিধিদের একটি তালিকা |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ২২ নভেম্বর,
১৯৭১ |
পররাষ্ট্র দফতর
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর
গোপনীয়
নং.বি-৩/১৬/৭১ ২২ নভেম্বর ২২,১৯৭১.
বিজ্ঞপ্তি
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য এবং নির্দেশনার জন্য পূর্ণ ঠিকানা সহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ প্রতিনিধিদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
(আনোয়ারুল করিম চৌধুরী)
বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা.
বিতরনঃ
১.বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সকল মিশনে।
২.গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,মুজিবনগর এর ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এবং ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সহকারীদের।
৩.গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,মুজিবনগর এর সকল মন্ত্রণালয়ের সচিবদের।
৪.সর্বাধিনায়ক,বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনি।
৫.সহ-প্রধান,বাংলাদেশ মুক্তি বাহিনী।
৬.পরিচালক,প্রকাশনা ও তথ্য,বাংলাদেশ সরকার।
৭.দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা,বাংলাদেশ রেডিও
৮.বৈদেশিক প্রকাশনা বিভাগ।
বৈদেশিক মিশনসমূহ
কলকাতা জনাব এম হোসাইন আলী, ফোন: ৪৪-৫২০৮
ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার। ৪৪-০৯৪১
৯.সার্কাস এভিনিউ,
কলকাতা-১৭,ভারত।
নিউ দিল্লী জনাব এইচ.আর.চৌধুরী, ফোন: ৬২-৬৪০৫
বাংলাদেশ প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ মিশন,
সি-১১৯,আনন্দ নিকেতন,
নিউ দিল্লি-২১,ভারত.
<003.312.856>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
লন্ডন জনাব জাস্টিস আবু সাইদ চৌধুরী ফোন: ০১-২২৯-০২৮১
বাংলাদেশের বিশেষ প্রতিনিধি। ০১-২২৯-৫৪৩৫
বাংলাদেশ মিশন, কেবল: বাংলাদেশ
২৪, পামব্রিজ গার্ডেনস. লন্ডন ডব্লিউ২
লন্ডন,ডব্লিউ-২ ইউ.কে
স্টকহোম জনাব এ.রাজ্জাক, ফোন: ৭/০-৬৮-৫৭
বাংলাদেশের প্রতিনিধি.
বাংলাদেশ মিশন.
ডুভহল্মসগ্রান্ড ৩৮.
১২৭৪১ স্কারহোলমেন.
স্টোকহোম.সুইডেন.
নিউ ইয়র্ক জনাব এস.এ.করিম ফোন: (২১২)৬৮৫-৪৫৩০
বাংলাদেশের প্রতিনিধি. (২১২)৭৩৯-০৩৮৮
বাংলাদেশে মিশন.
রুম নং ১০০২ক.
১০ পূর্ব ৩৯তম রাস্তা.নিউ ইয়র্ক ১০০১৬.
নিউ ইয়র্ক. যুক্তরাষ্ট্র.
ওয়াশিংটন জনাব এম.আর.সিদ্দিকি ফোন: ৭৩৭-৯৫৩৮
বাংলাদেশের প্রতিনিধি . ৭৩৭-৯১৯৬
বাংলাদেশ মিশন,
১২২৩ কানেকটিকাট এভিনিউ, কেবল:বাংলাদেশ মিশন
উত্তর-পশ্চিম (ফোর্থ ফ্লোর), ওয়াশিংটন ডি.সি.
ওয়াশিংটন.ডি.সি. ২০০৩৬ যুক্তরাষ্ট্র.
হংকং জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ, ফোন: ৭৬৯৬১০
বাংলাদেশের প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ মিশন,
ফার্স্ট ফ্লোর,
৩১ ব্রড উড রোড,
হ্যাপি ভিউ টেরেস,
হ্যাপি ভ্যালি,হংকং.
মানিলা জনাব কে.কে.পন্নি, ফোন:৮৯-৫৬-২৭
বাংলাদেশ প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ মিশন,
১৩৩৯ কামিয়াস স্ট্রীট,
ডাস মারিনাস ভিলেজ,
মাকাটি রিযাল,
মানিলা,ফিলিপাইন.
<003.312.857>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
কাঠমুন্ডু জনাব এ.এম.মুস্তাফিজুর রহমান,
বাংলাদেশ প্রতিনিধি,
বাংলাদেশ হাউস,
মাহারাজগানি-বানসবাড়ি,
(ব্রহ্মা কটেজের বিপরীতে),
জি.পি.ও. বক্স নং ৭৮৯,
কাঠমুন্ডু,নেপাল.
বার্ন জনাব ওয়ালিয়ুর রহমান, ফোন:৪৪৮২৬৫
বাংলাদেশ প্রতিনিধি,
হেল্ভিটিয়াস্ত্র ২১,
৩০০৫ বার্ন,সুইজারল্যান্ড.
টোকিও জনাব এস এম মাসউদ,
বাংলাদেশ প্রতিনিধি,
১৭,ইছিবাঞ্চ,চিয়দা-কু,
কজিমাছি,
টোকিও,জাপান.
<003.313.858>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে চিঠি।
নভেম্বর ২৩, ১৯৭১
(বাংলাদেশ সরকারের সীল)
মুজিবনগর,
নভেম্বর ২৩, ১৯৭১
মান্যবর,
আপনার ইউরোপ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এর জন্য প্রস্থানের প্রাক্কালে আমরা ১৫ অক্টোবর যে চিঠিটি লিখছি তাতে আপনার সদয় দৃষ্টি আমন্ত্রণ জানাতে পারি কি? আমাদের আশা ছিল যে, পৃথক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এবং তার সরকারের স্বীকৃতির জন্য আমাদের মৌলিক অনুরোধ বিবেচনা থেকে , আমাদের চিঠি আপনাদের কাছে স্বাধীনতার জন্য আমাদের অনুভূতির গভীরতা এবং আমাদের সংগ্রামের বৃদ্ধি ভরবেগ বহনে সহায়তা করবে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যাদের সাথে আপনার দেখা করার কথা ছিল। আমরা আপনার আলোচনা সম্পর্কে যে প্রতিবেদনগুলি পেয়েছিতা আশা তৈরি করেছে যে , রাষ্ট্রনায়ক প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যার সাথে আপনি দেখা করবেন এবং আমাদের অবিসংবাদিত নেতার সহিত পরামর্শক্রমে বাংলাদেশের সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান বিকশিত করতে সক্ষম হবে/ শেখ মুজিবুর রহমান এবং আমাদের ইতিমধ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ।
২. এমনকি যখন আপনি বিদেশে পরিস্থিতির বাস্তবতার বর্ণনা করছিলেন এবং বাংলাদেশের জনগণের পচ্ছন্দমাফিক একটি রাজনৈতিক সমাধান অনুজ্ঞাসূচক অপরিহার্যতায় জোর দেওয়া হয়, আমাদের কাছে নির্দিষ্ট ইঙ্গিতও রয়েছে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক নিয়ম তাদের নীতিতে অবিচল থাকার এবং আমাদের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতা অব্যাহত রয়েছে। ১২ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের বক্তব্যে প্রকাশ পায় যে বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে পশ্চিম পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বর্ধিত কার্যক্রম এবং পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রনায়ক দ্বারা তৈরি প্রস্তাবে তার জনবলকে ফিরিয়ে তাঁকে একটা যৌক্তিক রাজনৈতিক সমাধান প্রতি আহ্বান জানান, আমাদের মূল্যায়ন নিশ্চিত।
৩. বিশেষ করে গত দুই সপ্তাহ ধরে উন্নয়ন পরিষ্কারভাবে দেখায় যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা এই পথ থেকে ফিরে আসতে এবং পরিস্থিতি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলোনা। এদিকে, ভারতে আমাদের দেশের দেশত্যাগ নির্বিঘ্নে চলতে থাকে, যা পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে আমাদের জনগনের উপর অব্যাহত দমনের একটি সরাসরি ফল। পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক জান্তা আমাদের জনগণের নিপীড়ন দ্বারা প্রারব্ধ তথাকথিত নিয়মমাফিক করণ একটি শঠ নীতি দ্বারা সংসর্গী হয়। পরাজিত ও প্রতারক, যারা পূর্ব পাকিস্তানের তথাকথিত বেসামরিক সরকার গঠন করে, একটি দমনমূলক সামরিক আইনের শাসন সার্বজনীনভাবে বাংলাদেশের জনগণের ঘৃণা দ্বারা টেকসই হয। বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানী
সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের নৃশংসতার ত্রাস এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আমাদের মানুষ হত্যা নতুন এবং অকল্পনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। কারফিউ এবং গ্রেপ্তার, ঝলসিত পৃথিবী এবং ভরউন্মূলন সম্পর্কে মধ্যে গত পনেরো দিন ধরে । সমগ্র গ্রাম মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে এবং তাদের জনসংখ্যা অগনিত। পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী অভিনয় করেছে
<003.313.859> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পশ্চিম পাকিস্তানী আর্মি নৃশংসতার এমন ষড়যন্ত্র করেছিল যে বাংলাদেশের লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় ও খাবারের অভাবে রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছে। আমাদের মূল্যায়ন অনুসারে, আনুমানিক পাঁচ মিলিয়ন বাংলাদেশি কোনো সাহায্য কিংবা ত্রাণ ছাড়া এই দুঃখ-ভারাক্রান্ত ও হৃদয় বিদারক অবস্থায় আছে। এছাড়া ১০ মিলিয়ন বাংলাদেশি ইতোমধ্যে ভারতে চলে গিয়েছে এবং দিনকে দিন এই সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পূর্বোক্ত তথ্যাদি আমাদের সন্দেহাতীত উপসংহারে পৌঁছে দিয়েছে যে পাকিস্তানি সামরিক শাসন আমাদের জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে একটি প্রাক-ধ্যানে ও পরিকল্পনায় মগ্ন।
৪. পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকেরা এখনো শেখ মুজিবুর রহমান এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে মধ্যস্থতায় আস্তে অস্বীকার করেছে। এতে করে যে বাংলাদেশের মানুষের সাথে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের মধ্যকার সম্পর্ক খাপ হয়েছে শুধু তাই নয় বরং পাকিস্তানের অন্য অংশের জনগণের সাথে বিচ্ছিন্নতা তৈরী হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানের মানুষ এমন পন্থায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে যে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার জাতীয় আওয়ামী পার্টিকে নিষেধাজ্ঞা জানাতে বাধ্য হয়েছে যারা কিনা এই দুই প্রদেশে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয়েছিল।
৫. এসবকিছুই কেবলমাত্র আমাদের প্রকৃত মূল্যায়নকে নিশ্চিত করে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ কখনোই ইয়াহিয়া খান সহ কিছু সংখ্যক জেনারেল গোষ্ঠীর সমন্বয়ে সৃষ্ট সামরিক শাসনের সাথে জড়িত ছিল না। রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের বিগত মাসের বক্তব্য এবং কার্যক্রম একটি সুস্পষ্ঠ ইঙ্গিত দেয় যে তার লক্ষ্য শুধুমাত্র বাংলাদেশের প্রজাতান্ত্রিক প্রেরণা ধ্বংস করাই নয় বরং তা সমগ্র পাকিস্তানের মানুষের জন্য।
৬. আমাদের ১৫ই অক্টোবরের চিঠিতে আমরা আপনাকে জানিয়েছি যে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম গতিশীলতা পেয়েছে। বাংলাদেশের সমগ্র মানুষের সার্বজনীন সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী আমাদের মাতৃভূমির বিশাল অঞ্চলে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ পেয়েছে। আমরা ১৫ই অক্টোবরের চিঠিতে এটাও জানিয়েছি যে আমরা বাংলাদেশের অর্ধেক অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছি। আমরা আনন্দের সাথে জানাচ্ছি আমাদের কার্যকর অধিক্ষেত্র দেশের দুই-তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে বর্ধিত হয়েছে। আমরা শুধু এসব জায়গা স্বাধীনই করিনি বরং আমাদের কর্তৃপক্ষকে দৃঢ় করেছি এবং আমাদের কর্তৃত্বাধীন এলাকায় ক্রমাগত সক্রিয় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। এমনকি অবশিষ্ট অঞ্চলে জনগণের সহযোগিতায় মুক্তি সংগ্রামীরা পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীকে ধরাশায়ী করেছে এবং তাদেরকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় গণ্ডিভূত করেছে। সময়ের সাথে সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে আমাদের সাফল্যে সেখানকার জনগণকে আমাদের বৈধতা নিয়ে উপলব্ধি করানো গিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকদের একগুঁয়েমি এবং আমাদের মানুষের বিরুদ্ধে তাদের পরিচালিত কার্যক্রম নিরর্থক আশার নির্দেশক হয়েছে যা কিনা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানকে কিছুটা আমোদিত করবে যে তার কাছে বাংলাদেশকে দমন করার জন্য সামান্য কিছু নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। এটি আমাদের মাতৃভূমিকে পূর্ণাঙ্গভাবে স্বাধীন করার লক্ষকে তীক্ষ্ণ করেছে এবং আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে আত্মবিশ্বাসী। আমরা উত্তমভাবে সংগঠিত আছি এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নিয়ম ও সংকল্পবদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালন করছে। মুক্তিবাহিনীর নানান পদমর্যাদা হাজারো দেশপ্রেমিক তরুণ কর্তৃক উচ্ছ্বসিত হচ্ছে , তারা বাংলাদেশের মানুষকে ঔপনিবেশিক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে নিবেদিত। এটা আমাদের স্থির অভিপ্রায় যে শোষণের মুলকে উপরে ফেলবো যা আমাদেরকে আনুমানিক দুই দশক ধরে শোষিত করেছে এবং ২৫শে মার্চের মতো নানান হত্যাকাণ্ডমূলক ঘটনার চূড়ান্ত পরিণতি আসবে। এটি একদল শোষকদের বিরুদ্ধে তাঁদের দাসত্বধীন জাতির সংগ্রাম মাত্র।
<003.313.860> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৭। আমাদের সংগ্রামে যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে আমাদের মহান প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে যে তৎক্ষণাৎ এবং সুস্পষ্ট সমর্থন পাওয়া যাবে সেটা আশার অতীত ছিল। আমাদের ধারণার একটা ভিত্তি ছিল কেননা ১৯৭১ এর ৩১ মার্চ তারিখে ভারতীয় সরকারের পাস করা একটি সুচতুর অনুবন্ধে উল্লেখ ছিল বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক জীবনধারা অর্জনের লক্ষ্যে চালিয়ে যাওয়ায় সমবেদনা জ্ঞাপন করে এবং তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে। ইতোমধ্যে আট মাস পেরিয়ে গেছে, তারপরও না কোন আন্তর্জাতিক চাপ না কোন রাষ্ট্র প্রতিনিধির কৌঁসুলির দ্বারাই পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক রাজত্বকে একমত করানো যাচ্ছিল না বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এরই মধ্যে নির্বাচিত এবং স্বীকৃত নেতাদের সাথে কোন সমঝোতায় আসতে। আমাদের সহ্যশক্তি এবং বাধাও এমনকি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের উপর কোন গঠনমূলক প্রভাব ফেলেনি। অপরদিকে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়ন ছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক রাজত্ব এই ব্যপারটার মূল কারণটাকে বহির্বিশ্বের কাছে আড়াল করতে তৎপর ছিল একে ইন্দো-পাকিস্তানি মতভেদ বলে প্রচার করার মাধ্যমে। এই বিষয়টার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ পরিস্থিতির বাস্তবতার দিকে ঘুরিয়ে আনতে আমাদের সরকারের নিরলস প্রচেষ্টা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। বাংলাদেশের জনগণ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের মধ্যে বিবাদ মেটানোর এ প্রচেষ্টাগুলো ব্যর্থ হয়েছে এবং সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের বিবৃতি এবং কর্মকান্ড থেকে রাজনৈতিক একটি সমধানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে, ভারত যে তার সতর্ক এবং বাধার নীতি মেনে চলবে তাতে আমরা বিস্মিত এবং হতভম্ব হয়েছি।
(৮) বাংলাদেশের মানুষ এই আফ্রো-এশিয়ান এলাকা থেকে সাম্রাজ্যবাদ নির্মূলে ভারতের অগ্রণী ভূমিকা সম্পর্কে অবগত। ভারতের সুকৌশলী প্রচারণা এবং পৃথিবীর অত্যাচারিত মানুষের পক্ষে নিরলস অবস্থান নেয়ার জন্যই প্রথম সারির রাজনৈতিক শক্তি বিসাম্রাজ্যকরনের প্রক্রিয়া দ্রুত করেছিল। তোমাদের সরকার এবং জনগণ সবসময়ই আওয়াজ তুলেছিল যখন মানুষের সম্মান বিপর্যয়ে পড়েছে এবং মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তি যখন বাধা পেয়েছে। তোমাদের স্বাধিনতা আর মুক্তির সংগ্রামে যথাযথ সংগ্রামীদের প্রতি অনবরত সমর্থন বিশ্ববিদিত। অত্যাচারিত এবং মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিতদের মুক্তির ধারক এবং স্বাধীনতার পথে অগ্রগামী নজির এই ভারত। তোমরা গনতন্ত্রের নিয়ম নীতি, ধর্মনিরপেক্ষতা, সামাজিকতা এবং একটি অপক্ষপাতদুষ্ট বিজাতীয় নীতির প্রতি অটল সমর্থন জানিয়ে এসেছ। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং আমাদের দেশের সরকারের পরবর্তী বিবৃতি থেকে থেকে এটা বুঝা যায় যে আমরা সেই একই আদর্শ এবং আকাংক্ষা পোষণ করি। আমাদের রাজ্যনীতির মৌলিক বিষয়গুলো এখানে আবার উল্লেখ করতে চাই – যেমনঃ গনতন্ত্র, সমাজবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং একটি সমবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা যেখানে জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ এবং গোত্রে কোন ভেদাভেদ থাকবে না। আমাদের বৈদেশিক সম্পর্কে আমরা অপক্ষপাতদুষ্ট নীতি, শান্তিপ্রিয় সহাবস্থান এবং সাম্রাজ্যবাদ, স্বাজাতিকতা ও উপনিবেশনের যাবতীয় রূপের প্রতি বিরোধী অবস্থান নিতে বদ্ধ পরিকর। এই আদর্শ এবং নীতির জাতির এহেন পটভূমিতে কেন ভারত আমাদের স্বীকৃতি লাভের আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না তা আমাদের বোধগম্য নয়।
(৯) আরো বাস্তবিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশের জনগণের আতংকের মুখে তোমাদের দেশে আশ্রয় নিয়ে যে বোঝা তোমাদের উপর আরোপিত হচ্ছে তা আমরা বুঝি।
<003.313.861>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
০৯. আরও একটি ব্যবহারিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে আপনাদের দেশের নাগরিকদের মাঝে যে তথ্যটি পৌঁছাতে চাই তা হলো আমাদের নাগরিকরা নিজেদের দেশে সন্ত্রাসবাদের শিকার। আমরা আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষের দুঃশ্চিন্তার বিষয়টি আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চাই। ভারতে অবস্থান করা আমাদের বিপুল সংখ্যক শরণার্থীদের কারণে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক-রাজনৈতিক নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, যা বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের জন্যই দুশ্চিন্তার। আমরা আমাদের দেশে একটি জনপ্রশাসন তৈরি করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি, যাতে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এর পর যারা বর্তমানে আপনাদের দেশে বাধ্য হয়ে বসবাস করছে তাদের যত দ্রুত সম্ভব স্বভূমে ফিরে আসতে পারে। আমরা তাদের পুনর্বাসনের জন্যও একটি ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে করে তারা নীরাপত্তা ও আত্মমর্যাদা নিয়ে নিজেদের বাড়িতে বসবাস করতে পারে। শীতকাল আসিতেছে, এ অবস্থায় ভাবনা আরও একটি দিকে সম্প্রসারণ করা উচিত। শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ও জনসেবার কথা ভেবেও তাদের দ্রুত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো উচিত। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, শরণার্থীদের দেশে ফিরে যেতে আমাদের সরকার সর্বোচ্চ সাংগঠনিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত। প্রয়োজনের সময় আমাদের পাওয়া যায় নি এ কথা যেন বলা না যায়।
১০. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আপনাদের অব্যাহত সমর্থন বিগত আট মাসের সংগ্রামের মাঝে অনেক দুশ্চিন্তা মুক্তিতে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছে, আমরা সে জন্য কৃতজ্ঞ। আপনাদের রাজনৈতিক ও মানসিক সমর্থন অর্জন আমাদের পাথেয়, যা স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের জন্য প্রয়োজনিও বটে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রতিটি ক্ষেত্রকে আমরা শ্রদ্ধা করি, আর একে আরো জোরদার করার মাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যাগুলোকে মোকাবেলা করতে হবে।
১১. আন্তজার্তিক পরিমন্ডলে আপনাদের অব্যাহত সমর্থনের ফলে আমাদের যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে তার জন্য আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে বেগবান করতে ও বিশ্বের বৃহত্তর সমাজের প্রতি আমাদের বার্তা পৌঁছে দিতে এই মুহূর্তে আপনাদের প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক সমর্থন জরুরী। আপনাদের দেয়া সম্মান আমাদের স্বাধীন চলাচল ও অবস্থানে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উপমহাদেশের বর্তমান অবস্থাকে শুধুমাত্র স্থিতিশীলই করবে না, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শান্তি সমৃদ্ধিকে আরো জোরদার করবে। May we, therefore, reiterate the request which we made in our letter of 15th October that you accord immediate recognition to the sovereign People’s, Republic of Bangladesh?
Please accept, Excellency, the assurance of our highest esteem.
(Sd.) SYED NAZRUL ISLAM (Sd.) TAJUDDIN AHMED
মাননীয় ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নয়া দিল্লি
<003.324.862>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
২৭ নভেম্বর ১৯৭১
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রচারণার ধরণ গত সাত দিনে চক্রাকারে বদলে গেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের ভাবনায় ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ স্পষ্ট হয়ে এসেছে যার মাধ্যমে সামনে উঠে এসেছে মুক্তি বাহিনীকে গ্রহণ বিষয়ক বিতর্কও। এখানে আমার প্রধান ও বাস্তব বিষয়টিই প্রধান্য দেয়া উচিত। আমাদের চেষ্টাগুলো আগের তুলনায় আরও বেশী সুনির্দিষ্ট হওয়ায় বাংলাদেশের লড়াইয়ের বিষয়টি বিশ্বের সামনে উঠে এসেছে। এখানে ১শ জনেরও বেশী বিদেশী সংবাদ প্রতিনিধি, আলোকচিত্রি (ফটোগ্রাফারা), টিভি স্টেশনের দল ও সংবাদ সংস্থাগুলো কলকাতায় থেকে এসে যুদ্ধের অবস্থা দেখেছে। আমরা লক্ষ্য হলো তাদেরকে মুক্তিবাহিনীর প্রকৃত কাজের সক্ষমতা দেখানো ও সমস্যার দিকে দৃষ্টি ফেরানো। আবার একই সাথে সব সাংবাদিক একই রকম সংবাদ প্রকাশ করবে এটা ভাবাও বোকামি হবে। অনেকেই ভালোভাবে জানবেও না, আবার অনেকেই আমাদের পক্ষে ঠিকমত লিখবেও না, কেউ আবার কেবল তথ্য সংগ্রহ করবে। আমার অভিজ্ঞতা মতে আমি মনে করি নির্দিষ্ট কোনও দেশের সর্বোচ্চ ছয় থেকে আট জনের একটি দলকে বিশেষ ব্যবস্থায় মুক্তিবাহিনীর কর্মকাণ্ড ও তাদের সফলতা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দেয়া ভালো। নিচে তাদের কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হলো, যারা এখনি মুক্তিবাহিনীর সংবাদ প্রকাশে সক্ষম।
(১) জন পিলজার, প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি, ডেইলি মিরর এবং তার আলোকচিত্রি জন গ্যারেট।
(২) সাইমন ড্রিং, নিউজ উইক যুক্তরাষ্ট্র এবং তার আলোকচিত্রি বব হোয়াইটকার
(৩) জেরার্ড ভেরাটেল্লে, অফ লেও মনডে, ফ্রান্স
(৪) মিস পেনি টুইডার, আলোকচিত্রি, সানডে টাইমস
(৫) ডেভিস সিল, বিবিসি টেলিভিশন দল
(৬) ফ্রান্সিস গ্ল্যাব, সিবিএস টেলিভিশন দল
(৭) দ্যা কানাডিয়ান টেলিভিশন দল
(৮) দ্যা অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন দল
(৯) একটি সুইডিশ টেলিভিশন কর্পোরেশন
<003.315.863>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশ সরকারের মুখপাত্র জানান যে ইয়াহিয়া সরকার মুক্তিবাহিনীর বীরত্ব চাপা দেয়ার জন্য এখন ভারতের আক্রমনের কথা তুলে ধরছে । তিনি উল্লেখ করেন যে মুক্তিবাহিনী একটি বিশাল অংশ সাধীন করে ফেলেছে, বিষেষ করে গ্রামাঞ্চল এখন প্রায় পুরোটাই তাদের আওতায়।
ঢাকা ও মুক্তিবাহিনী গেরিলা দের দখলে চলে আসছিল। সেই মুখপাত্রের মতে ইয়াহিয়া সরকারের মূল লক্ষ্য ছিল সারা দুনিয়ার কাছে মুক্তিবাহিনীর বীরত্তের কাহিনি ধামাচাপা দিয়ে তাদের ভুল ভাবে উপস্থাপন করা।
মুজিবনগর
৩০-১১-৭১
<003.324.864>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ভারতীয় প্রধান্মন্ত্রী কে বাংলাদেশের সরকারের চিঠি
৪ ডিসেম্বর , ১৯৭১
প্রেরক
সৈয়দ নজরুল ইসলাম
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি
ও তাজউদ্দীন আহমেদ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের প্রধানমন্ত্রী
প্রাপক
মাননীয়া ইন্দিরা গান্ধী
ভারতের প্রধানমন্ত্রী , দিল্লী।
মাননীয়া,
৩ ডিসেম্বর আপনাদের দেশে পাকিস্তান সামরিক জান্তার অতর্কিত আক্রমনের কথা শুনে আমরা গভীর ভাবে শোকাহত। সাম্প্রতিককালে ইয়াহিয়া খানের আন্তর্জাতিক চুক্তির বেপরোয়া লঙ্ঘন এটাই চূড়ান্তভাবে প্রমান করে যে তিনি এই উপমহাদেশের দেশগুলোতে অশান্তি, ধ্বংস এবং আর্থ-সামাজিক অস্থিরতার পরিস্থিতি তৈরি করতে চান ।
পশিচম পাকিস্তান সরকারের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে বাঙ্গালীরা তাদের বিরুদ্ধে ৯ মাস সংগ্রাম চালায়। ১৫ অক্টোবর ও ২৩ নভেম্বর আমরা বার্তা পাঠিয়েছিলাম যে সামরিক জান্তা কে পুরাপুরি পরাস্ত না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
ইয়াহিয়া ও তার জেনারেল দেরমাধ্যমে আপনার দেশে যে ধ্বংস সঙ্ঘটিত হয়েছ এখন আমাদের উচিত এই আগ্রাসন দমন করতে কাঁধে কাধ মিলিয়ে এর প্রতিবাদ করা ও স্বাধীনতা লাভের জন্য একজোট হওয়া ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা জানাতে চাই ৩ ডিসেমবর পাকিস্তানী বাহিনি আপনাদের দেশে যে আগ্রাসী হামলা চালিয়েছে , মুক্তিবাহিনী তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রস্তুত। তাই আমি অনুরোধ করতে চাই, আমরা যদি কূটনৈতিক ভাবে একজোট হই তাহলে সহজেই আমাদের কাঙ্ক্ষিত সাধীনতা লাভ করতে পারব ।
<003.324.865>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে বাংলাদেশের মানুষ ও বাংলাদেশ সরকার এই দুর্যোগ ময় পরিস্থিতিতে যেকোনো বিপদেই দুই দেশের পাশে সমানভাবে দাঁড়াবে। আমরা আশাবাদী যে আমাদের এই একতা ইয়াহিয়া বাহিনীর ঘৃণ্য চক্রান্ত কে প্রতিহত করবে ও আমাদের কে একটি আশাব্যাঞ্জক ফলাফল দিবে।
আমরা যেকোন বিপদেই আপনাদের পাশে দাঁড়াব ও পূর্ণ সহযোগিতা করব।
ডিসেমবর ৪। ১৯৭১
<003.317.866>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের প্রেস মুক্তিলাভ
(স্বীকারোক্তি সহ কিংবা ছাড়া পুনর্গঠন করা যেতে পারে )
নং. পি আর/৭৯
কলকাতা
ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্বীকৃতি
নিম্নলিখিত বিবৃতি উনুযায়ী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে ভারত বাংলাদেশের হাই কমিশনার হতে স্বীকৃতি পেয়েছে
অপ্রতিরোধ্য হৃদয় কৃতজ্ঞতার গভীর অনুভূতি দিয়ে ত্বরান্বিত ,আমরা বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের ইতিহাসের আবার এই যুগান্তকারী মুহূর্তের জন্য সরকার ও ভারতের জনগণের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ভারত আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দ্বারা, অঙ্গীকার এবং মানব সভ্যতার, শান্তি ও প্রগতির বর্ধিতকরণ প্রতিশ্রুতি তার আদর্শে মুক্ত করেছে।
এই ঐতিহাসিক দিনে, আমরা অঙ্গীকার করি নিখুঁতভাবে নতুন অর্থনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা নিয়ে আসার জন্য ,যা আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জাতীয় বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। আসুন আশা করি যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন বৃহত্তর এবং বৃহত্তর বোঝার অনন্ত ও শাশ্বত মহিমা থাকবে।The great nation of India and emerging nation of Bangladesh can supplement and complement each other according to their capabilities to put up a monumental example of peaceful co-existence under the principle of panchshill
আমরা বীরত্বপূর্ণ পুরুষ ও মুক্তিবাহিনীর অফিসারদের এবং ভারতীয় বাহিনীকে আমাদের ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন , যারা ইতিহাসের এই নতুন পাতা লিখিয়েছে সুবর্ণ শব্দ হিসেবে কিন্তু কথাগুলো তাদের রক্তে রঞ্জিত। গৌরব তাদের জন্য ।
আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন, বাংলাদেশকে ইসলামাবাদের বর্বর সামরিক জান্তার কারাগার থেকে উদ্ধার করা করতে হবে।রক্ত যদি স্বাধীনতা আনতে পারে , রক্ত তার স্বপ্নের বাংলাদেশকেও ফিরিয়ে দিতে পারে।
স্বাধীন এবং বিশ্বের শান্তিকামী সরকারের কাছে আমাদের ঐকান্তিক আবেদন , অবিলম্বে বাংলাদেশকে গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার স্বীকৃতি উচ্চ গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের ব্যানার আপ অধিষ্ঠিত করতে সাহায্য করা
জয় বাংলা
<003.318.867>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
১৬ই ডিসেম্বরে জাতির উদ্দেশ্যে
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণ |
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
যেন মনুষ্যত্বকে গ্রাস না করে
বাংলার অজেয় ভাইবোনেরা,
আচ্ছালামু আলায়কুম !
রক্তাক্ত একটা ইতিহাসের ক্রান্তিলগ্নে আমরা এসে পৌঁছেছি। বাঙালীর রক্তে গড়া লোহিত-সাগরের অতল তল থেকে একটা নতুন জাতি জন্ম নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। নাম তার বাংলাদেশ। শত সহস্র তরুণের বুকের রক্ত বাংলার শ্যামল মাটির বুকে অমিত ও অজেয় বিক্রমের আলপনা এঁকে দিয়েছে। এ রক্তিম আলপনার পাশাপাশি চলেছে অশ্রুভেজা কান্নার স্রোত। সারা বাংলা আজ অশ্রুসাগরে ভাসছে। কিন্তু সে অশ্রুই শেষ কথা নয়। অশ্রুসাগর পাড়ি দিয়ে এসেছে স্বাধীনতার সূর্য। পূত পবিত্র চিত্তে এ সূর্যকে বরণ করে নিতে হবে হাসিমুখে। আরা আর কাঁদব না।
আজকের কর্তব্য
স্বাধীনতার দুর্জয় সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা বীরের মৃত্যু বরণ করেছেন। মরে তাঁরা অমর হয়েছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি এবং যারা পৃথিবীর হলাহল পান করে মৃত্যুর দিকে এগুচ্ছি তাদের হয়তো দেয়ার মত আর বেশি কিছু নেই। আসন্ন আগামীর হাতে অনাগত ভবিষ্যতের দায় ও দায়িত্ব তুলে দেয়ার প্রতীক্ষায় সত্যনিষ্ঠ হইয়ে অপেক্ষা করাই আমার মতো মানুষের আজকের কর্তব্য।
স্বাধীনতার স্বর্ণফসল
আমাদের মুক্তি সংগ্রামের সুদীর্ঘ ন’টি মাস অতিক্রান্ত হয়েছে। দুর্বিষহ সঙ্কটের মধ্য দিয়ে বাংলার প্রতিটি মানুষ এ দিনগুলো কাটিয়েছেন। পরম করুণাময়ের অপার অনুগ্রহে অচিরেই সেসব নিগ্রহের দিনগুলো দূর হবে আমাদের এ বিশ্বাস আছে। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ অভূতপূর্ব ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। সে স্বাধীনতাকে সুসংহত করার জন্যে চূড়ান্ত সংগ্রাম চলছে। এ সংগ্রাম সাফল্যমন্ডিত হবে সন্দেহাতীতভাবে এ ধারণা আমরা করতে পারি। কিন্তু যেদিন সশস্ত্র সংগ্রাম শেষ হবে আর এক ধরনের সংগ্রাম। সে সংগ্রাম হবে সৃষ্টির সংগ্রাম। যুদ্ধবিধ্বস্ত ক্ষতবিক্ষত একটা দেশকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ওধর্মনিরপেক্ষতা- এ তিনটি বিঘোষিত জাতীয় মৌলনীতির উপর ভিত্তি করে দেশকে পুনগর্ঠন করতে হবে। দেশে একটা নতুন সমাজ কাঠামো ও মূল্যবোধের সৃষ্টি করতে হবে। যে জাতীয় ঐক্য ও সংগঠন আমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে সাফল্যের দিকে এগিয়ে দিয়েছে, সেই একই ঐক্য ও সংগঠন দিয়ে আমাদেরকে স্বাধীনতার স্বর্নফসল ফলাতে হবে এবং বাংলার ঘরে ঘরে সে ফসল পৌঁছে দিতে হবে।
পতাকার পরিবর্তন নয়
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট আমরা একবার স্বাধীন হয়েছিলাম। কিন্তু সে স্বাধীনতা ছিল পতাকার পরিবর্তন। তাই অচিরেই সে স্বাধীনতা হতাশার বালুচরে হারিয়ে গেছে। শোষণের বেদীতে সে স্বাধীনতার অপমৃত্যু ঘটেছে। এই যে মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা সে অভিজ্ঞতার আলোকে আমাদের প্রমাণ করতে হবে, স্বাধীনতার মানে পতাকা পরিবর্তন নয়। রকের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সে স্বাধীনতা সম্পূর্ণ ভিন্নতর প্রতিশ্রুতিবাহী। এ সত্যটাকে ব্যক্তি, সমষ্টি ও সামাজিক ও রাষ্ট্রিয় ব্যবস্থা এবং আচার-আচরণের মাধ্যমে সঠিকভাবে ব্যাপ্ত ও উপস্থাপিত করতে হবে।
<003.318.868>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশের সংগ্রাম ভারত উপমহাদেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বের সব কটি দেশের দুয়ারে করাঘাত করেছে। মুক্তবুদ্ধি বিশ্ববিবেকগোষ্ঠী বাংলার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের আহবানে সাড়া দিয়েছেন। মানবিক মূল্যবোধ, শান্তি ও সভ্যতার বিকাশে বিশ্বাসী সকল বিশ্ব নাগরিক আমাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। সমগ্র বিশ্বের সাংবাদিক সম্প্রদায়, বুদ্ধিজীবী এবং রাষ্ট্র ও জননেতাদের সাগ্রহ সমর্থনের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে পাকিস্থান ঘরোয়া বা আভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে চালিয়ে দিতে বা ছাই চাপা দিতে পারে নি।
গণতন্ত্র হত্যার চেষ্টা
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ আর কারও কাছেই অপরিচিত নয়। কিন্তু বাংলাকে আন্তর্জাতিক জগতে উপস্থাপিত করতে গিয়ে আমরা বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। আমরা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে অনেক দেশ আছে যেখানে জনমত ও গণবিবেক সে দেশের সরকারকে কার্যকরভাবে প্রভাবাম্বিত করতে পারে না। ভূমন্ডলীয় ট্র্যাটেজির স্বার্থে এসব দেশ স্থানীয় জনমতকে নিদারুণভাবে উপেক্ষা করেছে। ফলে সে ধরনের দেশের জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ কিন্তু সরকারগুলোর ব্যবহারে আমরা ক্ষুব্ধ ও দুঃখিত। গভীর ক্ষোভের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করেছি যে। যেসব দেশ গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং হরদম গণতন্ত্র ও মঙ্গলমানসী বিধিবিধানের কথা কপচাচ্ছেন তারাই পাকিস্তানী স্বৈরতন্ত্রের দোসর হিসেবে অনন্তর গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করেছেন বাংলার মাটিতে।
ভিখারির হাত যদি—
দরিদ্র জাতি ও ক্ষুদ্রায়তন দেহের প্রতি অমর্যাদাকর ব্যবহার প্রদর্শন বা সে দেশের ছোট করে দেখার একটা প্রবণতা আমরা কোন কোন বৃহৎ শক্তির মধ্যে লক্ষ্য করেছি। ভিখিরির হাত যদি আমরা প্রসারিত না করি তাহলে দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে যে আমাদের অমর্যাদা করা যায় না, এ কথাটা স্পষ্টভাবে এদের বলে দেবার প্রয়োজন আছে বলে আমার বিশ্বাস। ক্ষমতার মোহে আর সম্পদের দস্তে মানুষের, বিশেষ, করে অনুন্নত অঞ্চলের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তিকে ছোট করে দেখাটা এদের বাতিকে পরিণত হয়েছে। ভিয়েতনাম রণাঙ্গনের অভিজ্ঞতা থেকেও যাদের এ বাতিকের অবসান হয়নি, আশা করি বাংলাদেশের উত্থানের দৃষ্টান্ত দিয়ে তারা তাদের চরিত্র শুধরে নেবেন।
মানুষের শক্তির কাছে–
বিশ্বের কোথাও যদি কোনদিন মানুষের মুক্তি সংগ্রাম বিজয়ী হইয়ে থাকে তবে বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামও বিজয়ী হবে। ইতিহাস এ শিক্ষা ও সিদ্ধান্তই ঘোষণা করেছে। বৃহৎ শক্তি, সাম্রাজ্যবাদ, নয়া সাম্রাজ্যবাদ ও শোধনবাদের অক্ট্রোপাশ ছিঁড়ে আমরা যখন বেরিয়ে এসেছি এখন বালির বাঁধ দিয়ে এ জোয়ারের গতিরোধ করা যাবে না। মুক্তিকামী মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে বৃহৎশক্তির তোয়াক্কা কোনদিন করেনি। আমরাও করি না। যে শক্তি মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত হয় না সে শক্তি পাশব শক্তি। সে পাশব শক্তির বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করছি এবং করব। অতি শক্তিমান দু-এক্টা দেশ তাদের আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন যে, তাদের মন ও মানসকিতা আজ দেউলিয়া হইয়ে পড়েছে। চিন্তাক্ষেত্রে যে ক্লীবত্ব তারা অর্জন করেছে তার পর এদের কাছ থেকে মুক্তিকামী মানুষের আশা করার কিছু নেই। মানুষের সংঘবদ্ধ শক্তির কাছে বল্বান ব্যক্তি বাঁ গোষ্ঠী চিরদিন হার স্বীকার করেছে।
ভোগের লিপ্সার অবসান–
নতুন জাতি হিসেবে যে গণশক্তির আমরা করেছি সে গণশক্তি দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তুলব। ব্যক্তিসত্তাকে ভূলে গিয়ে গোটা জাতির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। অসাধু প্রতিযোগিতা বা দলাদলির মাধ্যমে উচ্চাকাংক্ষার চরিতার্থ করার চিরন্তন অভ্যাস আমাদের পরিত্যাগ করতে হবে। এ ধরনের আকাঙ্কার কাঙালরা অতীতে জাতির সর্বনাশ করেছে। কারণ অসাধু প্রতিযোগিতার দ্বারা তারা সৎ ও চরিত্রবান
<003.318.869>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ব্যক্তিদের কর্মপ্রেরণা ও প্রবুদ্ধিকে প্রতিহত করেছে। আমরা অবশ্যই আশা করব যে, আমরা দেশের তরুণের বুকের উষ্ণ রুধির-ধারা আকাঙ্ক্ষার কাঙালদের ভাসিয়ে নিয়ে গেছে অবলুপ্তির অতল গহবরে। সমগ্র জাতির জন্য আমরা একাত্ম হয়ে কাজ করব এবং জাতীয় সমৃদ্ধির বন্টননামায় আমাদের যা বরাদ্দ থাকবে তাই আমরা ভোগ করব ভোগের লিপ্সার হোক অবসান। ত্যাগের দীপ্তিতে হোক দীপ্তিমান বাংলাদেশের রক্তাক্ত বসুমতি।
ঋণ অপরিশোধ্য
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। বাংলার বাংলার সাড়ে সাত কোটি মুক্তিকামী মানুষ আবেগ –আপ্লুত ও বিনয়াবনত চিত্তে ভারতের এ স্বীকৃতি গ্রহন করেছে। ভারত শুধুমাত্র আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রই নয়, এ ভারত অনন্যসুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী। ভারত একটা শুধু ভূখন্ডই নয়, এটা বিবর্তনশীল মানব সভ্যতার অর্নিবাণ শিখাসম্পন্ন একটা পিলসুজও বটে। আয়তনের বিরাটত্ব, চিন্তার ব্যাপ্তি, আদর্শের দ্যুতি এবং বৈচিত্রের ঐক্যের সমাহার ভারত মুদু একটা দেশ নয়, এটা একটা উপমহাদেশ। বাংলাদেশের নির্যাতিত মানবতার পাশে ভারত যে অনাবিল বলিষ্ঠতা মানুষের জন্যে হৃদয়-নিংড়ানো প্রেম প্রীতি ভালবাসা দিয়ে ভারতবাসীদের ত্যাগ-তিতিক্ষার মর্যাদা দিতে চেষ্টার ত্রুটি করবে না এ বিশ্বাস আমার আছে। মহান ভাতের সৎ প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের উভয় রাষ্ট্রের সরকারও জনগণের মধ্যকার বন্দুত্ব দিন দিন গাঢ়তর হবে বলে আমাদের স্থিরপ্রত্যয় আছে। ভারতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী তার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের দ্বারা ভারতের জীবন দর্শনকে বিশ্বদরবারে নতুন করে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ বলেও আমরা মনে করি।
আর এক বন্ধু
ভারতের পাশাপাশি আমাদের আর এক প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভুটান আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ভুটানের মহারাজা জিগমে দরজি ওয়াংচোক ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের শরণার্থীদের প্রতি যে দরদ প্রদর্শন করেছেন সে সম্পর্কে আমরা ওয়াকিফ রয়েছি। বাংলার মুক্তিযুদ্ধের প্রতি তাঁর সহৃদয় সমর্থনের কথাও আমাদের অজ্ঞাত নয়। মহারাজা, তাঁর সরকার ও তাঁর জনগণের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রস্তুতে আমরা ব্রতী হব এ আশ্বাস আমরা তাদের দিতে পারি।
রুশ সরকার ও জনগণের প্রতি
বৃহৎ শক্তিবর্গের মধ্যে সোভিয়েট রাশিয়া আগাগোড়া যে গণমুখী ভূমিকা পালন করেছে সে ভূমিকা শুধু বাংলাদেশের নয়, মুক্তিকামী সকল মানুষের প্রশংসা অর্জন করেছে। রুশ সরকার আমাদের সমস্যা ও সংগ্রামের প্রতি যে গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন সেজন্য আমরা তাঁদের কাছে অভ্যস্ত কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি যে, রুশ সরকার ও জনগণ আমাদের রক্তাক্ত সংগ্রামকে আরও গভীরভাবে উপলব্ধি করবেন এবং তাঁর ফলশ্রুতি হিসেবে তারা আমাদের সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিও দেবেন।
স্কেন্ডিনেভীয় ও পোলান্ডসহ পূর্ব ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ আমাদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রদর্শন করেছেন। আমাদের সমস্যা, সংকট ও সংগ্রাম সম্পর্কে তাঁরা ও শ্রদ্ধাশীল। আমরা তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা আশা করি, যে। মুক্তিকামী মানুষের সফল সংগ্রামের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে তাঁরাও এগিয়ে আসবেন।
বৃটেন ও ফরাসী ভূমিকিয়া
বৃটেন ও ফরাসী সরকার সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ প্রশ্নে একটা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। আমরা আশা করব যে, নিরপেক্ষতা এটা অর্থহীন কুটনৈতিক অনুশীলন নয়। বৃটেন ও বাংলাদেশের মধ্যকার
<003.318.870>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সম্পর্ক সুপ্রাচীন। আমরা মনে করি, বাঙালী মানসিকতা ও বাংলার ধ্যানধারনার সঙ্গে বৃটেনবাসীর সম্যক পরিচয় আছে। বৃটিশ ভারতে শাসনবর্হিভূত অঞ্চলশ গঠিত পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধবাজ গণতন্ত্রের দুশমনদের মানসকিতাও তাঁদের কাছে পরিচিত। তাই বৃটেন সরকারের পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া দুরূহ নয় বলেই মনে করি।
ফরাসী দেশ সভ্যতার প্রথম গণবিপ্লবের উত্তরাধিকারী। গণসংগ্রামকে উপলব্ধি ও অনুভব করার ব্যাপারে তাঁদের একটা সুপ্রাচীন ঐতিহ্য আছে। ফরাসী বিপ্লবের উত্তরসুরী বাংলাদেশের বিপ্লবকে স্বীকৃতি জানিয়ে ফরাসী সরকার ও জনগণ তাঁদের গণমুখী ভূমিকা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা করা অযৌক্তিক নয়।
পাষাতের রক্ষাকবচ
গণতন্ত্রের পুরোধা বলে প্রচারিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর জনগণতান্ত্রিক বিপল্বের পথিকৃৎ বলে পরিচিত চীন বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের কামনা-বাসনার প্রশ্নে যে সম্পূরক নীতি গ্রহণ করেছেন সে নীতির নিন্দা না করে পারা যায় না। জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে ওয়াশিংটন-পিকিং আঁতাত যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে তাতে বিশ্বের স্বাধীনতাকামী প্রত্যেকটা মানুষ স্তম্ভিত হয়েছে। আত্নস্বার্থ ভূমন্ডলীয় যুদ্ধনীতির খাতিরে এ দুটি পরস্পরবিরোধী শক্তির যে মিতালী হয়েছে। সে মিতালী মানুষের জন কল্যাণে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি না। সুবৃহৎ দুটি শক্তির এই ধরনের মিত্রতা বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য বড় রকমের একটা সর্বনাশ ডেকে আনার আশংকা রয়েছে বললে আত্যুক্তি করা হবে না। মার্কিন প্রশাসনের হাতে গণতন্ত্রের অপমৃত্যু আর মহান চীনে মার্কসবাদ ও লেনিনবাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বরূপের যৌথ অভিব্যক্তি ইয়াহিয়ার মত একটা পাষন্ডের রক্ষাকবচ হইয়ে দাঁড়িয়েছে- এর চাইতে দুঃখের ও ক্ষোভের বিষয় আর কি হতে পারে।
পররাষ্ট্রনীতির রুপরেখা
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম জোতনিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি। আমাদের মত ক্ষুদ্রায়ত্ন এবং উন্নয়য়নকামী দেশকে ভূমন্ডলীয় শক্তি – সংঘাতে জিড়য়ে পড়া থেকে অবশ্যউ বিরত থাকতে হবে। আমরা সর্বপ্রকারের সামরিক জোট বা আঁতাতের বিরুদ্ধে। সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ ও বর্ণবৈষম্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সকল মানুষের প্রতি আমদের সমর্থন থাকবে। কারও প্রতি আমাদের বিদ্ধেষ নেই। সবার জন্যে আমাদের বন্ধুত্বের দুয়ার উন্মুক্ত।
নিষ্ঠুর গ্রহসন দুঃসহ
আওয়ামী লীগ দলের পক্ষ থেকে দলের নেতা এবং স্বাধিন বাংলার জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর নির্বাচনপূর্ব বেতার ও টেলিভিশন ভাষণে ১৯৭০ সালের ২৮ শে নভেম্বর এ পররাষ্ট্রনীতির রুপরেখা জাতির সামনে পেশ করেছিলেন। স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা বাংলার আদরের দলাল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ ইয়াহিয়াচক্রের কারাগারে আবদ্ধ। কি নিদারুণ পারইপার্শ্বিকতায় না বংলার নয়নমণি দুঃসহ দিনগুলো কাটাচ্ছেন। আজ স্বাধীনতার নবীন ঊষাকে তাঁর অনুপস্থিতি শুধুমাত্র ম্লানই করে দেয়নি, তাঁকে ছাড়া স্বাধীনতা আমাদের কাছে নিতান্তই অপূর্ণাঙ্গ, অসম্পূর্ণ। বাংলার পথে-প্রান্তরে, গ্রামে-গঞ্জে, শহর-বন্দরে বঙ্গবন্ধুর অমোঘ বাণী বাঙময় হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি থেকেও আমদের মধ্যে নেই। এ মর্ম-যাতনা দুঃসহ এ নিষ্ঠুর প্রহসন আমরা স্বীকার করে নিতে পারি না।
বিশ্ব দরবারে যেসব কুটিল কূটনীতিক নিরন্তর রাজনীতির দাবার ঘুঁটি চালছেন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি। শেখ মুজিবুর রহমানের মত ক্ষণজন্মা মহাপুরুষকে দানবের গ্রাস থেকে উদ্ধার করে আনার দায়িত্ব বিশ্ববিবেকের। লুমুম্বা হত্যার কুৎসিৎ বিয়োগান্তক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেজন্যে তৎপর হওয়া মানবিক মর্যাদাবোধের সকল বিশ্বাসী নাগরিকদের অবশ্য কর্তব্য। বৃহৎ শক্তিবর্গ ও জাতিসংঘের কাছে আমাদের জোর
<003.318.871>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
দাবী এই যে, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে অবিলম্বে মুক্তি করে তাঁর স্বপ্নরাজ্য বাংলাদেশে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা হোক।
আজকের বিজয়লগ্নে আমি আমাদের মুক্তিবাহিনীর অফিসার ও জোয়ানদের অভিনন্দর জানিচ্ছি। বাংলার ঘরে ঘরে অযুত-লক্ষ যেসব তরুণ স্বাধীনতার পতাককে সমুন্নত রেখেছে তাদের কর্তব্যনিষ্ঠা প্রশংসার্হ। আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সেসব ভারতীয় সেনাধ্যক্ষ ও জোয়ান সংগ্রাম করেছেন তাঁদের কাছে আমরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
বাংলার ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমজীবি আর শিল্পি-সাংবাদিক অকুতোভয় আদর্শনিষ্ঠা গণপ্রতিনিধিরা স্বাধীনতা সংগ্রামকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্যে যে অক্লান্ত প্রিশ্রম করছেন তা অভুতপূর্ব ও স্মরনীয়। দেশে যেসব সরকারী কর্মচারী ও বিদেশে যেসব কুটনীতিক বাংলার সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে সংরামী ঐক্য ঘোষনা করেছিলেন তাঁদের সবাইকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।
যেন মনুষ্যত্বকে গ্রাস না করে
বাংলা আজ জয়ী। বিজয়ের যেমন আছে, তেমনী আছে তার দায়িত্ব। নিরহঙ্কার চিত্তে বিজয়কে আমাদের বরণ করে নিতে হবে। বিজয়ের অহঙ্কার যে আমাদের মনুষ্যত্বকে গ্রাস না করে। আমরা যে অতীত পাপ-পঙ্কিলতার আবেষ্টনী থেকে নতুন সূর্যের কিরোনে অবগাহণ করে সত্যিকারের মানুষ হতে পরি এ কামনাই করি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আমরা শুধু মাত্র আমাদের নয় বিশ্বপাপের মার্জনা চাইব। কবিকণ্ঠের বাণী উদ্বৃত করে আমরা বলব “হে করুণাময় তুমি বিশ্বপাপ মার্জনা কর।“
-জয় বাংলা
<003.319.872>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ভাষণে জনাব এম এ সামাদ, বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিনিধি, বুদাপেস্ট,১৯৭১।
ভদ্রমহিলা এবং মহোদয়গণ,
প্রথমেই বিশ্বের শান্তিকামী জাতির অগাস্ট সম্মেলনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এই সম্মেলনের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সম্মেলনে উপস্থিত প্রতিনিধি দেশগুলোর জনগণের প্রতি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমার শুভেচ্ছা। আমি আমার সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছি এবং বাংলাদেশের কোটি শান্তিকামী মানুষের আশা ও শুভকামনা জ্ঞাপন করছি।
ভদ্রমহিলা এবং মহোদয়গণ, আমরা এখন যুদ্ধে আছি। বাংলাদেশ, যেটি পূর্ব পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিল, আজ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র এবং সাড়ে সাত কোটি মুখ নিয়ে একটি নতুন জাতি। গত দেড় মাস যাবত পত্রপত্রিকা ও অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে আপনারা গণহত্যা ও নৃশংসতার ঘটনা সম্পর্কে শুনেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর বড় অস্ত্রাগার থেকে পাওয়া সেরা অস্ত্রে সুসজ্জিত পশ্চিম পাকিস্তানের সুপ্রশিক্ষিত সেনাবাহিনীর আগ্রাসন প্রতিরোধে আমাদের জনগণ এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, এই অনুষ্ঠানে আমি পুনরায় আপনাদের সেই বাস্তবতা জানানোর সুযোগ পাচ্ছি।
১৯৪০ সালে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের বার্ষিক অধিবেশনে পাশ করা নীতির ভিত্তিতে পাকিস্তানের অস্তিত্বের ভিত স্থাপিত হয়েছে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের নিষ্ঠুরতা থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের মানুষ বহু ত্যাগ স্বীকার করেছে। অনেক রক্ত ঝরেছে, বিসর্জিত হয়েছে বহু প্রাণ, সম্পদ হারিয়েছে কিন্তু অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। ****The aspiration of the people of Bangladesh had its sources from the above-mentioned resolution which guaranteed the creation of a con- federation of autonomous and sovereign states consisting of Muslim majority areas in India
১৪ই অগাস্ট,১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা বাস্তবিক এসেছে কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষমতা ন্যস্ত হয় পশ্চিম পাকিস্তানিদের হাতে। তখন থেকেই শুরু হয় নিপীড়ন ও শোষণ।
যদিও অর্থনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ অধিক জনবহুল অর্থাৎ ৫৬ থেকে ৪৪ শতাংশ আনুপাতিক হার তবুও এটি একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের চাষকৃত সোনালি আঁশ পাট ছিল বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস এবং মোট আয়ের ৭০% গঠিত হয়েছে চা, চর্মদ্রব্য, অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী এবং কাঁচামাল রপ্তানির মাধ্যমে।
কিন্তু এসব আয়ের খুব সামান্যই আমাদের নিজেদের উন্নয়নে ব্যবহৃত হত। যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হত বাংলাদেশের মাধ্যমে, বৃহৎ শিল্প প্রকল্প সমূহ বাস্তবায়িত হত পশ্চিম পাকিস্তানে। পাঞ্জাবের মরুভূমি পরিণত হয়েছে হাজারো সবুজ ছায়াঘেরা স্থানে আর শুষ্ক পাহাড়, রুক্ষ জমি পরিণত হয় বিস্তৃত সমতল সড়কে। দেশভাগপূর্ব ছোট্ট মফস্বল করাচি এশিয়ার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক নগরে পরিনত হয়। বাংলাদেশের সম্পদ ব্যয় করে রুক্ষ ও কঠিন মালভূমি ইসলামাবাদ পরিণত হয় রাজধানীতে।
<003.324.873>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
স্বাধীনতার গত ২৩টি বছর বাংলাদেশের জন্য ছিল শুধুমাত্র শোষণের। বাংলাদেশে বসবাস করা মানুষের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩গুন। জাতীয় বাজেটের ৬০% স্থাপিত হয়েছিল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে যেখানে বড়জোর ১০% প্রতিরক্ষা ব্যয় হত বাংলাদেশে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত ভাবে বাঙালি যুবক দের নেয়া হতনা, সুতরাং অফিসার সহ মোট যোগদান ৭ শতাংশের বেশি হতনা, যেখানে রক্ষীবাহিনীর ৭৮% শুধুমাত্র পাঞ্জাব থেকেই আসত। পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্প যেমন বিখ্যাত ‘টারবেলা’ এবং ‘মাঙ্গলা’ প্রকল্প তৈরি হয়েছে জাতীয় বাজেটের বাইরে থেকে এবং পশ্চিম পাকিস্তানে এরকম শতাধিক প্রকল্পের জন্য মিলিয়ন ডলারের সাহায্য এসেছে এবং শুধুমাত্র সেখানেই বিনিয়োগ হয়েছে। ব্যাংক আমানতের ৯২% নিয়ন্ত্রণ করত পশ্চিম পাকিস্তান এবং পাকিস্তানের মোট মূলধনের ৮৫% ছিল করাচি কেন্দ্রিক। ৮৭% বেসরকারি বিনিয়োগে পশ্চিম পাকিস্তানের ২২টি পরিবারের একাধিপত্য ছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানের যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমী স্বার্থ দ্বারা টিকে ছিল, সেটি প্রতিষ্ঠা করেছে অবিচারের এক অসহনীয় কাঠামো। জাতীয় শিল্প সম্পদের প্রায় ৬০ শতাংশের উপর প্রায় ২ ডজন পরিবারের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তার ব্যাংকিং এর ৮০ শতাংশ সম্পদ ও বীমা সম্পদের ৭৫ শতাংশ, মোট ব্যাংক অগ্রিমের ৮২ শতাংশ মোট হিসাবের মাত্র ৩ শতাংশে কেন্দ্রীভূত হয়। বিশ্বের অন্যতম পশ্চাদপদ কর কাঠামো যেখানে অপরিহার্য পণ্যের উপর অত্যাচারী পরোক্ষ করারোপ করা হয়, সেটি শুধু সাধারণ মানুষকেই কষ্ট দিবে। কর অবকাশ সুবিধা, বোনাস ভাউচার আকারে বিশাল ভর্তুকি, কৃত্রিমভাবে কম সরকারি হারে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান একচ্ছত্র অধিকার বৃদ্ধি ও বন্দী-বিনিময় চুক্তিপত্রে বিশেষ অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
সরকারের মোট রাজস্ব ব্যয়ের মাত্র ১৫ হাজার মিলিয়ন রুপি ব্যয় হত বাংলাদেশে যেখানে ৫০ হাজার মিলিয়ন রুপি পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হত। একই সময়কালে(১৯৬৮ সাল পর্যন্ত) মোট উন্নয়ন ব্যয়ের ৩০,৬০০ মিলিয়ন রুপি খরচ হয়েছে বাংলাদেশে যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে হয়েছে ৬০,০০০ মিলিয়ন রুপি। পশ্চিম পাকিস্তান ১৩ হাজার মিলিয়ন রুপি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিপরীতে ৩০ হাজার মিলিয়ন রুপির পণ্য আমদানি করেছে, এভাবে বাংলাদেশের তুলনায় ৩গুন বেশি আমদানি করেছে পশ্চিম পাকিস্তান।
পশ্চিম পাকিস্তানে ২০ হাজার মিলিয়ন রুপির পণ্য আমদানি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের বৈদেশিক আয়ের ৫ হাজার মিলিয়ন রুপি এর রপ্তানি আয়ে বরাদ্দের ফলে এবং ৮০ শতাংশের বেশি বৈদেশিক সাহায্যের রসিদ কাজে লাগাতে সক্ষম হয়ে।
বাংলাদেশে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পশ্চিম পাকিস্তানের চেয়ে ৫০ থেকে ১০০ গুন বেশি ছিল। ২৫ মার্চ, ১৯৭১ সালের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে মণ প্রতি মোটা চালের দাম গড়ে ৪৫/৫০ রুপি ছিল যেখানে পশ্চিম পাকিস্তানে ছিল ২০/২৫ রুপি করে এবং একইভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের ১৫/২০ রুপির গম বাংলাদেশে ছিল ৩০/৫০ রুপি করে। সেরপ্রতি সরিষার তেল ছিল ৫১ রুপি যখন পশ্চিম পাকিস্তানে তা আড়াই রুপি।
<003.324.874>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
একইভাবে সেই সময় প্রতি তোলা স্বর্ণ করাচিতে ১৩৫/১৪০ রুপি যেখানে বাংলাদেশে ১৬০/১৬৫ রুপি।
১৯৭১ সালের মার্চের পূর্ব পর্যন্ত সরকারি ক্যাডারে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কর্মচারীর আনুমানিক সংখ্যা নিম্নে দেখানো হলঃ
ছক ‘ক’
কর্মকর্তা পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশ
১ম শ্রেণী ৩,৭৬৯ ৮১১
২য় শ্রেণী(গেজেটেড) ৪,৮৮৫ ৮৮৪
২য় শ্রেণী(নন-গেজেটেড) ৫,৫৫১ ১,১৮৪
৩য় শ্রেণী ১,৩৭,৯৭৫ ১৩,৭২৪
গত ২৩ বছর যাবত পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থ দ্বারা বাংলাদেশের জনগণের উপর যে অবিচার নির্যাতন হয় এটি তার সংক্ষিপ্ত হিসাব।
রাজনৈতিক ভাবেও আমরা চরম বশীভূত ছিলাম এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রমনা লোকজন এভাবে থাকাকে ঘৃণা করত। ১৯৪০ সালে যখন উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালানো হয়, বাঙালিরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য প্রতিরোধ ও সংগ্রাম করে। স্বাধীনতার পর ১৯৫৪ সালে প্রথমবারের মত বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ কে ৯৭টি আসন সুরক্ষিত রেখে বিতাড়িত করে। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম সংবিধান বাংলাকে দুটি রাষ্ট্রভাষার একটি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। একযোগে সমগ্র পাকিস্তানে ১৯৫৯ সালের প্রথম ভাগে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্ধারিত হয় কিন্তু তার আগেই ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে আইউব খানের নেতৃত্বে সামরিক জেনারেলরা গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। সংবিধান রহিত হয় ও জাতীয় পরিষদের বিলুপ্তি ঘটে।
সামরিক ও বেসামরিক আমলাতন্ত্র উপেক্ষা ও ষড়যন্ত্র করে এবং ১৯৬২ সালে আইউব একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু করে যার মাধ্যমে তারা তাদের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব চিরস্থায়ী করতে পারে এবং সেই সাথে বাংলাদেশের মানুষ ও সম্পদকে শোষণ করতে পারে। ১৯৬৮ সালের অক্টোবর থেকে ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো এক অভূতপূর্ব গনঅভ্যুত্থানের জন্য শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে এবং দেশ পরিচালনায় অসুবিধা অনুধাবন করে আইউব শেখ মুজিব কে সামরিক হেফাজত থেকে মুক্তি দেয় এবং তার আমন্ত্রণে সব রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ নিয়ে ১৯৬৯ এর ফেব্রুয়ারি-মার্চে রাওয়ালপিন্ডিতে একটি গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শেষে আইউব তার সমাপনী বক্তব্যে যদিও বাংলাদেশের দাবি পাশ কাটিয়ে যান তবে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সংসদীয় ব্যবস্থা এবং অবিলম্বে প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনেরর দাবি মেনে নেন। কিন্তু আবার, গোলটেবিল বৈঠকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করার পরিবর্তে সেই একই গোপন ও বিদ্বেষপূর্ণ কায়েমি স্বার্থ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ আইউব সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চীফ ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
<003.319.875> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ শক্তি, যা কিনা দেশকে শাসন করেছে, তা ছিল জনবিরোধী। তারা ছিল সামরিক বাহিনী, বেসামরিক আমলাতন্ত্র ও একচেটিয়া পুঁজিবাদীদের মধ্যকার চক্রান্তের অংশ। এই শক্তি হাতে হাত রেখে একসঙ্গে কাজ করে এবং তারা কখনোই গণতান্ত্রিক শক্তিকে শক্তিসঞ্চয় করতে দেয় নি। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রসার বন্ধে কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্য এটা ছিল ইচ্ছাকৃত চেষ্টা এবং যখনই এক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, এই শক্তিগুলো একত্রিত হয়ে তা দমনে সফল হয়েছে।
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গন, যখন ইয়াহিয়া খান আইয়ুবের থেকে ক্ষমতা নিয়ে নিলেন, তখন দ্বিতীয়বারের মত সংবিধান রহিত করা হল এবং জাতীয় পরিষদও ভেঙে দেয়া হল। কিন্তু তারপরও জান্তা কর্তৃক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করা হয়েছিল এবং প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে একটি জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের আইনী কাঠামোও চালু করা হল। জনগণ জেনারেলের কথা বিশ্বাস করল এবং আওয়ামীলীগ, যা কিনা একটি সাংবিধানিক রাজনৈতিক দল, তারা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সামনে এগিয়ে এল। এবছর ডিসেম্বরের ৭ তারিখ হতে জানুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত নির্বাচন হল এবং ইয়াহিয়া খানের ভাষায় তা ছিল একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। নির্বাচন শেষে আওয়ামীলীগ ৩১৩ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়ী হল। বাংলাদেশের মোট ভোটের ৮৫% পেল এবং ১৬৯ সিটের মধ্যে মাত্র ২টি সিটে পরাজিত হল। প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০ সিটের মধ্যে ২৮৮ সিটে তারা জয়ী হল। এভাবে আওয়ামীলীগ প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পাশাপাশি জাতীয় পরিষদেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করল।
আওয়ামীলীগ এই নির্বাচন লড়েছিল ছয় দফার ভিত্তিতে। যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ ২৩ বছর ধরে শোষিত হয়েছে এবং বারে বারে ক্ষমতাসীন চক্রের প্রতারনার স্বীকার হয়েছে, ছয় দফা ছিল তাদের জন্য পাকিস্তানের গঠনতন্ত্রের মধ্যে থেকে একটি কার্যকর স্বায়ত্তশাসনের পন্থা। এটা ছিল বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। আশা ছিল, আওয়ামীলীগ সাংবিধানিক উপায়ে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমি স্বার্থের শোষণ থেকে বাঙালি মুক্তি পাবে।
নির্বাচন শেষে জাতীয় পরিষদে সকল দলের নেতাদের নিজেদের মধ্যে এবং পৃথকভাবে প্রত্যেক দল ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে সংলাপ হয় এবং অবশেষে ৩ মার্চ, ১৯৭১ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের দিন ধার্য করা হয়। ইতিমধ্যে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জনাব ভুট্টো অধিবেশন বয়কটের সিদ্ধান্ত নেন এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অন্য সকল পার্টির অধিবেশনে যোগদান প্রতিহত করার জন্য হুমকি দিতে থাকেন। সিন্ধু ও পাঞ্জাবে নির্বাচনে এগিয়ে থেকে তিনি সবচেয়ে অগণতান্ত্রিক ব্যবহার শুরু করেন। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল উমর, রাষ্ট্রপতির প্রধান কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল পিযাড়া এবং ইয়াহিয়া খানের অন্যান্য কাছের সহযোগীদের সঙ্গে মিলে জনাব ভুট্টো তার চাপের কৌশল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু যখন তার ব্যর্থতা নিশ্চিত এবং জাতীয় পরিষদের পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যরা ঢাকায় অধিবেশনে অংশগ্রহনের জন্য প্লেনের সিট নিয়ে ফেলেছেন, তখন জেনারেল ইয়াহিয়া শুনলেন জনাভ ভুট্টোর কথা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধবাজেরা (সেনাপতিরা?) এক রেডিও বার্তার মাধ্যমে ১ মার্চ, ১৯৭১ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য জাতীয় পরিষদ স্থগিত ঘোষণা করলেন।
<003.319.876> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
বাংলাদেশে স্থগিত প্রতিক্রিয়া অনিবার্য এবং স্বতঃস্ফূর্ত ছিল এবং দেশের সর্বত্র মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এই আর্বিটারি এ্যাক্ট বিষয়ে তাদের প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে। মানুষ এখন নিশ্চিত ভাবে অনুভব করছে যে, ইয়াহিয়া সত্যিই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে আগ্রহী নয় এবং সংসদীয় রাজনীতির নামে প্রহসন করছে। জনপ্রিয় একটি মতবাদ অনুভূত যে, বাংলাদেশের অধিকার কখনোই পাকিস্তানের অবকাঠামোতে অনুভূত হবে না। যেখানে ইয়াহিয়া ক্রমেই সমবেত পরিষদে অজ্ঞভাবে নিজের রীট প্রচার করে এবং আহবান জানায় যে, শেখ মুজিবর রহমান পূর্ণ স্বাধিনতার জন্য যেতে পারে।
যাইহোক শেখ মুজিব একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তি চাইছিলো। ৩রা মার্চ একটি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়ে তিনি দখলকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তাদের সুমতি ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তিপূর্ণ মোকাবেলা অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন। এটা ছিলো স্বয়ং ২রা ও ৩রা মার্চে ঠাণ্ডা মাথায় নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপর গুলিবর্ষণ যাতে হাজারের বেশী হতাহতের ঘটনা ঘটে, তার উপর মৌখিক অঙ্গভঙ্গি।
এই আন্দোলন এখন অবশ্যই ইতিহাসের অংশ। কোন স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ভিতরে ১লা হতে ২৫ মার্চ বাহিত হয় নাই। অসহযোগ ছিল পুরোটাই হাইকোর্টের কোন বিচারককে নতুন লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে শপথ পরিচালনার জন্য পাওয়া যায়নি। পুলিশ এবং পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিসসহ সমগ্র বেসামরিক প্রশাসন অফিসে যোগ দিতে অসম্মতি জানায়। মানুষ সেনাবাহিনীকে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।।
অসহযোগ কাজ থেকে নিবৃত্তিকে থামায়নি। বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশ শেখ মুজিবের প্রতি ইতিবাচক সমর্থন দেয় এবং তাঁর নির্দেশে নিজেদের নিয়োজিত করে। এই অবস্থায় আওয়ামীলীগকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সরকার গঠন ছাড়ায় অসহযোগ থাকাকালীন দেশের অর্থনীতি ও প্রশাসন চলমান রাখার স্থায়ী দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়। এই কাজটিকে তারা শুধু জনসাধারণ নয় প্রশাসন এবং ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের শর্তহীন সমর্থন ছিল। শেষোক্ত দুজন আআওয়ামীলীগের নির্দেশনায় এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার একমাত্র অধীনস্ত কতৃপক্ষ হিসেবে গৃহীত।
এই সর্বাঙ্গীণ পরিস্থিতিতেও অর্থনীতি এবং প্রশাসন চালু রাখা হয়েছিল, বাংলাদেশের হঠাৎ অভ্যুদয়ের কারণে শক্তি শূন্যতা তৈরি হওয়ার ভয়ঙ্কর সমস্যা শর্তেও। কোন আনুষ্ঠানিক কতৃপক্ষের অভাব থাকা সত্বেও আওয়ামীলীগ স্বেচ্ছাসেবক পুলিশের সহযোগিতায় আইন-শৃঙখলায় একটি স্তর সৃষ্টি করে যা স্বাভাবিক সময়ের মধ্যেই উন্মিত হয়।
বিক্ষোভে সার্বিক সমর্থন প্রাপ্ত আওয়ামীলীগের এই ঐতিহাসিক অসহযোগ আন্দোলনের মুখে জেনারেল ইয়াহিয়া তার কূটনীতি সংশোধন করে বলে মনে হয়। ৮ মার্চ তিনি এখনো একটি মোকাবেলায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, যখন সে তার উত্তেজক বক্তৃতায় সৃষ্ট সংকটের পূর্ণ দোষ, সংকটের স্থপতি মিঃ ভুট্টোকে না দিয়ে আওয়ামীলীগকে দেয়। এটা মনে হচ্ছিলো যে, ৭ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রত্যাশিত ছিল। ঢাকায় আর্মি সম্পূর্ণ সতর্কবস্থায় রাখা হয়েছে। এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়াকুব খানকে প্রতিস্থাপন করতে উড়ে আসেন জান্তার কঠিন মনোভাব বুঝতে।
<003.319.877> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যাইহোক, শেখ মুজিবুর আরো একবার স্বাধীনতার পক্ষে ব্যাপক জনমত থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক সমঝতার পথ বেছে নিয়েছেন। জাতীয় পরিষদে উপস্থিত থাকার জন্য তাঁর ৪-দফা প্রস্তাব উপস্থাপনে তাকে শুধুমাত্র জনগণের মনোভাবের কথাই চিন্তা করতে হয়নি বরং ইয়াহিয়ার জন্য একটি শান্তিপুর্ণ নিষ্পত্তির সুযোগের পথও খোলা রাখতে হয়েছে।
এখন এটা স্পষ্ট যে, ইয়াহিয়া এবং তাঁর জেনারেলদের কখনই পাকিস্থানের রাজনৈতিক সংকট শান্তিপুর্ণ ভাবে সমাধানের বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না বরং তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে তাদের সামরিক শক্তিকে আরো শক্তিশালী করার জন্য কালক্ষেপন করা। ইয়াহিয়ার ঢাকা সফর শুধুমাত্র তার গণহত্যার পরিকল্পনাকে আড়াল করার জন্য ছিল। এটা এখন পরিষ্কার যে এরকম একটি সংকটের আকষ্মিক পরিকল্পনা সংকটের অনেক আগেই করা হয়েছিল।
এই প্রবঞ্চনামুলক কৌশলের অংশ হিসেবে ইয়াহিয়া মুজিবের সাথে তার আলোচনায় সবচেয়ে বন্ধুত্বপুর্ণ আচরন অবলম্বন করে। ১৬ই মার্চ আলোচনার শুরুর দিকে তিনি যা ঘটেছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং একটি রাজনৈতিক মীমাংসার আন্তরিক ইচ্ছা প্রকাশ করেন। মুজিবের সাথে চুড়ান্ত মিটিংয়ে তাকে আওয়ামী লীগের ৪-দফা প্রস্তাবে জান্তার অবস্থান ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে বলা হয়। তিনি ইঙ্গিত করেন যে, সেখানে কোন গুরুতর অভিযোগ নেই এবং ৪টি দফা সংগঠনকারী উপদেষ্টা দ্বারা একটি অন্তর্বর্তী সংবিধান তৈরী করা যায়।
মুলত যেসব কারনে চুক্তিটি হয়েছিলঃ
(১) সামরিক আইনের উত্থাপন এবং একটি প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণার মাধ্যমে একটি বেসামরিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
(২) প্রদেশ গুলোতে সংখ্যা গরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর
(৩) ইয়াহিয়া রাষ্ট্রপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রনে থাকবেন
(৪) শাসনতন্ত্র চুড়ান্ত করার জন্য জাতীয় পরিষদের পুর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানি সদস্যদের আলাদা আলাদা প্রস্তুতিমুলক বৈঠক।
একবার শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়ার মধ্যে এই চুক্তি নীতিগত ভাবে উত্থাপিত হলে সেখানে শুধুমাত্র অন্তর্বর্তীকালে কেন্দ্রের উচ্চ পর্যায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতার বিষয়টিই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এখানে এটা আবারো যৌথভাবে সমর্থিত হয় যে, ক্ষমতার বন্টন যতদুর সম্ভব জাতীয় পরিষদ সমর্থিত সংবিধান অনুযায়ী হতে হবে যা ছয় দফার ভিত্তিতে নির্মিত হিসেবে ধরা হয়।
যখন আলোচনার সমাপ্তি ঘোষণাও হয়নি তখন ২৫শে মার্চ আনুমানিক রাত ১১টার দিকে ইয়াহিয়া খান একটি বিশ্বাসঘাতকতা মুলক কাজ করেন যার সমতুল্য আর কোন ঘটনা ইতিহাসে নেই। একটি সুপ্রশিক্ষিত ও যন্ত্রসজ্জিত পাকিস্তানি আর্মি ঢাকার নিরীহ ও নিরস্ত্র বেসামরিক জনগণের ওপর ঝাপিয়ে পরে। কোন সতর্কবানী, ঘোষণা, বা কারফিউয়ের নির্দেশ ছাড়াই রাতের অন্ধকারে নিরীহ জনগণকে হত্যার জন্য নির্বিচারে ট্যাংক, মর্টার, কামান, মেশিন গান এবং রকেট ব্যবহার করা হয়। যে প্রধান এলাকাগুলোতে হামলা চালানো হয়েছিল সেগুলো হল রাজারবাগ সদর দপ্তরের পুলিশ ব্যারাক, পিলখানায় পুর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সদর দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের হোষ্টেল এবং শিক্ষকদের কোয়ার্টার, তেজঁগা শিল্প এলাকা, ফেরী ঘাট, ষ্টেশন, রাস্তার পাশের বস্তি, মালিবাগ, মগবাজার, বাবুবাজার, নয়াবাজার ইত্যাদি যেখানেই লোক সমাগম ছিল। প্রথম দুই রাতে ঢাকায় এবং ঢাকার আশেপাশে আনুমানিক ১,০০,০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়। প্রথম রাতে দুইটি দৈনিক পত্রিকার অফিস (দ্যা পিপল এবং ইত্তেফাক) সিল করা হয় ও সম্পুর্ন পুরিয়ে দেওয়া হয় এবং দুই দিন পর আরো একটি বাংলা সংবাদপত্রও (সংবাদ) জালিয়ে দেওয়া হয়।
<003.319.878> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আধুনিক ইতিহাসে বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার মত নজির নেই। সৈন্যরা অধিকাংশই পাঞ্জাবের গোত্র থেকে আগত এবং এরা মানুষ রুপী হলেও আচরনে ছিল পুরাপুরি ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত। তাদের কর্মকান্ড ছিল শুধুই ধ্বংস এবং নিশ্চিহ্নকরন। তারা লুটতরাজ, খুনখারাপি,ধ্বংস এবং ধর্ষন চালাচ্ছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায় ঢুকে দেশের সব প্রখ্যাত বিদ্যানদের হত্যা করেছিল। তারা বেছে বেছে মানব-হিতৈষী শিল্পপতিদের হত্যা করে তাদের অর্থ-সম্পদ লুট করত।
সাতাশ তারিখ সকালে, যখন অবশেষে ৩৩ ঘন্টা পর কার্ফিউ তুলে নেয় হল তখন প্রায় সমস্ত ঢাকাবাসী শহর ছেড়ে পালান শুরু করল এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যে শতকরা ৭৫ থেকে ৮৫ ভাগ মানুষ শহর ছেড়ে চলে গেছিল। তারা এমন আতংক তৈরি করেছিল যে সে মুহুর্তে বাংলাদেশের সব শহর-নগর ছেড়ে মানুষ পালানো শুরু করেছিল। রাজনিতিবিদ, ডাক্তার, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবি ছাত্র ব্যাবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবী সকলে তাদের কর্মক্ষেত্রে ছেড়ে গ্রামে গিয়ে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। ২৫শে মার্চের আগে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব বাঙ্গালী অফিসার বাংলাদেশে অবস্থিত এবং নাগালের মধ্যে ছিলেন তাদের সবাইকে নিরস্ত্র করে পরবর্তীতে পরিবারসহ হত্যা করা হয়েছিল। যশোর এবং কুমিল্লা সেনানিবাসে প্রতিটিতে প্রায় ৩০জন করে বাঙ্গালী অফিসারকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। একইরকমের গণহত্যা প্রায় সবগুলো সেনানিবাসেই সংগঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশে ঢাকা, কুমিল্লা রংপুর যশোর এবং চট্রগ্রামে সেনানিবাস ছিল।
পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরতা এবং সংগঠিত অপরাধসমুহ এধরনের ছোট পরিসরে বলে শেষ করা যাবে না। হাজার হাজার খুন, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগের এমন ঘটনা আমি আপনাদের বলতে পারি ভদ্রমহিলা এবং মহোদয়গণ যাতে আপনারা এখানে বসে তথাকথিত শান্তিসম্মেলন আয়োজন করার জন্য লজ্জাই পাবেন। নদীর অপর পারে অবস্থিত জিঞ্জিরা বাজার ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল, যেখানে প্রায় ২৫০০০ মানুষের বাস। প্রায় ১০ থেকে ১৫ বর্গ কিলোমিটারের এলাকায় আগুন ধরিয়ে তারা প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ হত্যা করেছিল। একই ধরনের কাজ তারা করেছিল শান্তিনগর বাজার, রায়েরবাজার, Bhadhi,শাখারিবাজার, তাতিবাজার, কাপ্তানবাজার, চকবাজার টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায়।শুধু ঢাকা শহরে কাছেই খুন হওয়া মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫০,০০০ ।
কিন্তু বাঙ্গালীরা যুদ্ধের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছিল। ঢাকায় তারা অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়লেও সারা বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই জনগণ নিজেদেরকে মুক্তিবাহিনীতে সগঠিত করেছিল।৩০০০ নিয়মিত সদস্যের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নেতৃত্বে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেল(১৭০০০ সদস্যের আধা সামরিক বাহিনী), পুলিশ(৪০,০০০ সদস্য),আনসার, মুজাহিদ এবং যুবকেরা প্রতিটি জেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। সারা বাংলাদেশে প্রশাসনের ভেঙ্গে পড়ায় এবং ভুখন্ড এবং জনগোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে তারা বুঝতে পেরেছিল তাদের জয়ের হিসাবে ভুল হয়ে গেছে। পশ্চিম পাকিস্তানি জেনারেলরা আরো বেপরোয়া এবং নার্ভাস হয়ে উঠছিল। যেখানেই তারা প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছিল সেখানেই তারা স্যাবার জেটের মাধ্যমে নির্বিচারে গুলি-গোলা বর্ষন করছিল। এছাড়াও হাজার হাজার গ্রাম ও শহর যেখানে বোমা বর্ষন করা হয়েছিল যার মধ্যে চট্রগ্রাম,সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, স্রীমঙ্গল, নরসিংদী ব্রাহ্মনবাড়িয়া, আখাউড়া, কসবা, কুমিল্লা, লাক্সাম, চাঁদপুর, ফেনী, খুলনা, দৌলতপুর, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, কুমারখালি, আলমডাঙ্গা, পাবনা, শাহজাদপুর, রাজশাহী, নবাবগঞ্জ, রংপুর, সান্তাহার, পার্বতীপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, বগুড়া, শেরপুর, ময়মন্সিংহ, টাঙ্গাইল, জামাল্পুর এবং জয়দেবপুর অন্যতম।
<003.319.879> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
হাজার হাজার গ্রামের পাশাপাশি যে সব শহরে ভারী গোলাগুলি ও আকাশ পথে বোমাবর্ষন হয়েছে, সেগুলো হল চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভি বাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া, কসবা, কুমিল্লা, লাক্সাম, চাঁদপুর, ফেনী, খুলনা, দৌলতপুর, কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, কুমারখালি, আলমডাঙ্গা, পাবনা, শাহজাদপুর, রাজশাহি, নবাবগঞ্জ, রংপুর, সান্তাহার, পার্বতীপুর, লালমনির হাট, নীলফামারি, দিনাজপুর, বগুড়া, শেরপুর, ময়মনসিং, টাংগাইল, জ়ামালপুর এবং জয়দেবপুর।
পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যরা যুদ্ধের সবচেয়ে জঘন্য পন্থা অনুসরন করছে। কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সৈন্য পাঠানোর আগে তারা নির্বিচারে বোমাবর্ষন ও আক্রমন চালায়। এতে সাধারন জনগণ ভীত হয়ে পরে এবং তখন তাদের সৈন্যরা তাদের পথে আগাতে শুরু করে। তাদের যাত্রা পথে তারা থেমে যাকে সামনে পায় তাকে হত্যা করে, বাড়িঘর, ব্যাংক, গয়নার দোকান লুট করে, মহিলাদের ধ্বর্ষন করে, খাদ্য শষ্য এবং গবাদি পশু চুরি করে এবং সবশেষে গ্রামগুলো আগুনে জালিয়ে দেয়।
হাসপাতাল ও চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে বোমা হামলা হয়েছে, নার্স এবং সেবিকাদের রোগীর কাছ থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, পাদ্রিদের নির্যাতন করা হয়েছে এবং রাজশাহিতে ধর্মপ্রচারকদের বন্দুকের মুখে সম্প্রচারে বাধ্য করা হয়েছে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একটি বিশাল অংশকে উদবাস্তুতে পরিনত করা হয়েছে এবং গীর্জা ও মসজিদ বন্ধ ও ধ্বংস করার মত বহু ঘটনা ঘটেছে।
যদিও অনেক এলাকায় বোমাবর্ষন হয়েছে তারপরও গত ছয় সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে (প্রায় ১০,০০০)। গেরিলা পদ্ধতিতে তারা শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের ব্যপকভাবে প্রতিরোধেই সমর্থ হচ্ছে না বরং তাদের কে হত্যা বা বিতাড়িত করার মাধ্যমে অনেক শহর এবং এলাকা পুনর্দখলও করছে। তাদের সকল সেনানিবাস ও সামরিক ঘাঁটি বর্তমানে সম্পুর্নরূপে মুক্তিবাহিনী দ্বারা বেষ্টিত এবং তাদের যোগাযোগের একমাত্র পথ হল আকাশ পথে অপসারন। সবগুলো সেতু উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং নদীপথ তাদের জন্য কখনই নিরাপদ না। নিয়োগ ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং যেসব হাজার হাজার যুবক প্রতিদিন অস্ত্র হাতে তুলে নিতে ও তাদের প্রিয় দেশকে রক্ষা করতে আসছে তাদেরকে সংক্ষিপ্ত কিন্তু কার্যকর গেরিলা প্রশিক্ষন দেওয়া হচ্ছে।
ইত্যবসরে বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ তাদের জনগণের জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তি রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব পালন করবেন এবং আমাদের দেশের নতুন রাজধানী মুজিবনগরে সমবেত হবেন। ১৯৭১ এর ১০ই এপ্রিল পারস্পরিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশের জনগণের সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচিত প্রতিনিধি ঘোষনা করা হয় এবং সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশ গঠন করা হয় এবং স্বাধীনতার ঘোষণা নিশ্চিত করা হয় যা ইতমধ্যেই সাড়ে ৭ কোটি বাংলাদেশি জনতার নেতা, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রনীত হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সাথে নিয়ে একটি রাজধানী গঠন করা হয়।
মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানি সৈন্যদের ঠিক ততটুকুই প্রসারিত হতে দিচ্ছে যতটুকুতে তারা তাদের ইচ্ছামত তাদেরকে ঘিরে ফেলতে এবং যুদ্ধে পরাজিত করতে পারবে। সুতরাং পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রন আছে শুধুমাত্র কিছু সেনা শহর বা যেখানে তাদের সামরিক সমাবেশ আছে সেখানে । এমনকি বেশির ভাগ শহর ও ছোট এলাকা যেগুলো এক সময় পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের দখলে ছিল সেগুলো মুক্তিবাহিনী পুনর্দখল করেছে এবং এই প্রক্রিয়া বেশ লম্বা সময় ধরে চলছে। মুক্তিবাহিনী এখন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট এবং যশোর গুলো পুনরুদ্ধারের জন্য লড়ছে এবং এই জায়গা গুলোতে অনবরত যুদ্ধ চলছে।
<003.319.880>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
এই যুদ্ধের সবচেয়ে সংকটময় ও কঠিন দশায় মুক্তিবাহিনী সফলভাবে টিকে ছিল। এটি শুধু ইঙ্গিত করে যে, যে শক্তি তারা জোগাড় করেছে তা সমগ্র জনগণের সমর্থন দ্বারা প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তরুণদের থেকে এত বেশি সাড়া পাওয়া যাচ্ছে যে কখনো কখনো তাদের একত্রে প্রশিক্ষণ ও স্থানসঙ্কুলান দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদল একটি হেরে যাওয়া যুদ্ধ লড়ছে। সাধারণ যুদ্ধ বিদ্যা ধারণা করে যে মনুষ্যোচিত সেনাবাহিনী কিংবা সামরিক বাহিনীর জন্য এটা প্রায় অসম্ভব বাংলাদেশকে আর ধরে রাখা। এই মুহুর্তে তাদের আনুমানিক ৮০০০০ সৈন্য আছে এবং অতিরিক্ত শক্তি দ্বারা তারা সর্বোচ্চ পরবর্তী ৪-৬ সপ্তাহ যেতে পারবে।পশ্চিম পাকিস্তানের বৃহৎ সীমান্ত এলাকার জন্য এই সংখ্যার চেয়ে বেশি তারা যেতে পারবে না।
পশ্চিম পাকিস্তান সেনাদের যুক্তিসঙ্গত অসমভাবনাগুলো নিম্নোক্ত রাশিতে সংক্ষিপ্ত করা যায়ঃ
(ক) সরবরাহ বিশেষ করে খাদ্য রেশন ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানোর জন্য তাদের পর্যাপ্ত প্রদেশ নেই।
(খ) ভারত দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় তাদের পিছু হটার ও বর্তমান কোনো স্থান নেই এবং করাচিও ৩০০০ মেইল দূরে এখন।
(গ) তারা জনগণ থেকে কোনো সমর্থন পাচ্ছে না।
(ঘ) তারা প্রচলিত যুদ্ধবিগ্রহে প্রশিক্ষিত।
(ঙ) পশ্চিম পাকিস্তান শিল্প অর্থপ্রদানে টান লাগিয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ তাদের অর্থনীতিতে এ যুদ্ধের প্রভাব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছে।
(চ) তাদের সীমিত সামরিক জনশক্তি রয়েছে।
যেহেতু দেশের সমগ্র অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং একটি মোট প্রকাশিত হয়েছে, তাই বাংলাদেশের গ্রাম অর্থনীতি একটি বৃহৎ চাপের মধ্যে চলছে। যেহেতু শহরগুলো এখন কম বেশি উদ্বাসিত ,তাই গ্রামগুলোতে জনসংখ্যা বাড়ছে। যেসব গ্রাম পুড়ে গেছে বা বোমাবর্ষিত হয়েছে সেগুলো অকর্ষিত রয়েছে। সরবরাহ সমস্যা প্রায় দুর্ভিক্ষের মত হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোগ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বেকারত্ব তার সর্বোচ্চতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে এবং নিত্য প্রয়োজনগুলো প্রতিদিন ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে । আরো বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ন জিনিস যেমন খাদ্যশস্য,লবণ,কেরোসিন,ম্যাচ,জামাকাপড়, পেট্রোল,ডিজেল, এবং ওষুধ সরবরাহ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যদিও সাহায্যে করার ইচ্ছা পোষন করেছে,এখন পর্যন্ত পণ্য সাহায্য কিংবা কোনো সাহায্য আসে নি। কিছু মৃত শহরকে হিসাবে রেখে বাংলাদেশের গ্রামের সকল মানুষজন বাংলাদেশ সরকারের সাথে অবশিষ্ট রয়েছে এবং এবং এটি তাদের প্রাথমিক দায়িত্ব,জীবন,স্বাধীনতা এবং এই জনগণের সম্পদ রক্ষা করা। তারা শতভাগ বাংলাদেশ সরকারের তদারকি ও যত্নের উপর নির্ভর করে আছে এবং সরকার ও এই সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এই মুহুর্তে অধিকৃত এলাকার নৃশংসতার গল্প পূর্ণ করা হচ্ছে। এই সকল এলাকায় যুদ্ধক্ষয় চলছে। পশ্চিম পাকিস্তান কর্মীগণ বেসামরিক প্রশাসন পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছে, ফ্রন্টিয়ারের সীমান্ত স্কাউটকে পুলিশ ফোর্সের বদলি হিসেবে আনা হয়েছে এবং অবাঙালি স্থানীয় গুন্ডাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে বাঙালিদের এই এলাকায় খুঁজে বের করার জন্য এবং তাদের সম্পদ লুত করতে,যুবাদের হত্যা করতে এবং মহিলাদের ধর্ষণ করতে।
<003.304.881>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদী শক্তি দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থ নিজের পতনের জন্যই তাদেরকে ব্যবহার করেছে এবং যখনই পাকিস্তানে কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন হয়েছে তাকে নস্যাৎ করার জন্য সামরিক বাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে। জাতীয় বাজেটের বাইরেও সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা ভোগ করে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নিজেই কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী হয়ে উঠেছে এবং সীমান্তে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিরোধের পরিবর্তে বারংবার দেশ শাসনের দায়িত্ব তুলে নিয়েছে।
———
সিয়াটো ও সেন্টোর মতন চুক্তি পশ্চিম পাকিস্তানকে এই পথে চালিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। মার্কিন শর্তসাপেক্ষে যুক্তরাষ্ট্র বা চীন থেকে প্রাপ্ত ধারালো ও মারণাস্ত্রের মতন বৈদেশিক সামরিক সহায়তা এখন বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার জন্যই ব্যবহৃত হচ্ছে। দুঃখের বিষয় হল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও চীন থেকে প্রাপ্ত সাহায্য – সহযোগিতাও শুধুমাত্র পশ্চিম পাকিস্তানের একচ্ছত্র পুঁজিপতিদের উন্নয়নে কাজে লেগেছে। পাকিস্তানে মার্কিন সাহায্যের মূল উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় মার্কিন আধিপত্য ধরে রাখার পাশাপাশি পাকিস্তানে শক্তিশালী বুর্জোয়া গোষ্ঠী সৃষ্টি করা যা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সম্পদ শোষণ করে পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ী শ্রেণীকে আরো বিকাশ লাভের জন্য সহায়ক হয়। বাংলাদেশের স্বার্থ বিরুদ্ধেই চালিত সকল শক্তিকেই বিদেশি সাহায্য গত ২৩ বছর ধরে টিকিয়ে রাখতে উৎসাহিত ও সহযোগিতা করেছে। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে নিজের দেশকে রক্ষা করার লক্ষ্যে সক্ষমতা বাড়ানোই যদি বৈদেশিক সাহায্য বিশেষত সামরিক সাহায্যের উদ্দেশ্য হয়, তবে আমেরিকা ও চীনে উৎপাদিত অস্ত্র কেন বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের উপর কেন গর্জে উঠছে?
—–
বাংলাদেশের জনগণ সবসময় মুক্তির জন্য সংগ্রামে বিশ্বাস করেছে। অতীতে তারা আলজেরিয়, ভিয়েতনামী জনগণ ছাড়াও লিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, রোডেশিয়া, কিউবা এবং চীনেরও স্বাধীনতা সংগ্রামকে সমর্থন করেছে। ১৯৫৬ সালে ব্রিটেন যখন মিশর আক্রমণ করেছিল পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক নীতির বিপরীতে গিয়ে বাংলাদেশের জনগণ মিশরকে সমর্থন করেছিল। গত ২৩ বছর ধরে সিয়াটো বা সেন্টোসহ অন্যান্য সামরিক চুক্তি এবং আন্তর্জাতিক শক্তিবলয় থেকে বের হয়ে একটি শান্তিপূর্ণ জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের জন্য আমরা দাবী জানিয়ে আসছি।
——-
আমাদের বর্তমান সংগ্রাম স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম। রাশিয়া, চীন, হাঙ্গেরী, কিউবা কিংবা আলজেরিয়ার জনগণ তাদের নিজস্ব স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে সংগ্রাম করেছে তার সঙ্গে আমাদের সংগ্রামের কোন পার্থক্য নেই। ভিয়েতনামীরা যে সংগ্রাম করছে তা আমাদের সংগ্রামের মতই। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আমাদের সংগ্রাম একই।
——
ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ পশ্চিম পাকিস্তান সরকার ইসলামের নাম ব্যবহার করে মুসলিম দেশসমূহের কাছে আবেদন করছে। সম্মানিত সুধীবৃন্দ, আমি বলতে চাই, মুসলিম বিশ্বের ভাইদের প্রতি, আপনাদের বিবেকের কাছে আমি জিজ্ঞেস করছি, মা কি সন্তান থেকে বঞ্চিত হতে পারে? একটা শিশুকে কি তার মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা যায়? কোন ইসলামের ভিত্তিতে আপনারা রক্তলিপ্সু খুনীদের প্রতি সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেওয়া যায় যারা আমাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে, আমাদের খাদ্যগার লুন্ঠন করছে, ডাক্তার, আইনজীবী, ব্যবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করছে? এটাই কি ইসলাম যার উপর পশ্চিম পাকিস্তানিরা আজ নির্ভর করছে? ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন, ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও মর্মার্থ আপনারা অনুধাবন করুন, প্রকাশ করুন।
<003.319.882>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
ইসলামের নামে পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যরা বাংলাদেশের উপর প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে, পশ্বাচারে এবং অমানবিকভাবে নির্যাতন চালায়। মহিলা ও মহোদয়গণ, আমরা শান্তি আলোচনায় রয়েছি এবং আমরা শান্তির জন্য সংগ্রাম করছি না। পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা এই যুদ্ধে বাংলাদেশে ৭.৫ কোটি মানুষের শান্তি বিঘ্নত হয় নি? পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্য এই যুদ্ধ শুধুমাত্র বাংলাদেশের মানুষের উপর হতে গ্রহণ করা উচিত নয় বরং দক্ষিণ এশিয়ার পুরো শান্তি হুমকির সম্মুখীন।আমরা প্রদর্শন করছি যে আমরা একটি দরিদ্র জাতি। স্থায়ী এই জড়বাদী জগতের মুখে আমরা অসহায়দের মত প্রদর্শিত হয়েছি। ক্ষমতা ব্লক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষমতার রাজনীতি হয়তো ৭.৫ কোটি মানুষের মুল্য খুঁজে না। কিন্তু আমি আপনাকে এবং ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণকে জিজ্ঞাসা করতে পারি, জাতিসংঘের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের উদ্দেশ্য কী? এই কারণে কি এই সংস্থাগুলো যেটির পৃষ্ঠপোষকতা আজকের দিনে করছে? আন্তর্জাতিক সংহতি নৈতিকতা কি? এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নীতি কি?কারণ বড় ক্ষমতার উদ্দেশ্য মামলা করবে না কিংবা পিং পং কূটনীতি বিরক্ত হতে পারে বা কারণটা হতে পারে পেন্টাগন বা মস্কো চোখে ক্ষমতার একটি তথাকথিত ভারসাম্য বিপর্যস্ত হতে পারে, বাংলাদেশের ৭.৫ কোটি মানুষের আজ কষ্ট ভোগ করতে হয়। আমি আপনাকে এবং মহিলা ও মহোদয়গণকে জিজ্ঞাস করছি, এটাই কি শান্তিপ্রিয় জাতির মধ্যে সংহতি? এটাই কি সমাজতান্ত্রিক বিশ্বের যুদ্ধ স্বাধীনতা নৈতিকতা, এটাই কি সমতা ও ন্যায়বিচারের দর্শন যার জন্য ৭.৫ কোটি মানুষ সংগ্রাম করেছে? এবং ভুক্তভোগী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ মানুষগুলো পরিত্যক্ত এবং অবহেলিত এবং অলক্ষিত। আমরা একটি বিজয়ী যুদ্ধে লড়েছি কারণ আমরা যুদ্ধে লড়েছি দন্ডজ্ঞার বাইরে একটি প্রত্যয়ের সাফ এবং সহজবোধ্য উপায়ে। আমরা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য জানি এবং যদি প্রয়োজন পড়ে স্থায়ী বিজয় অর্জনের জন্য আমরা হাজার যুদ্ধে লড়ে যাবো। এই যুদ্ধটা শুধুমাত্র একটা যুদ্ধ নয় এটা ভৌগালিক মুক্তির যুদ্ধ। কিন্তু এটা বাংলাদেশের য ৭৫ কোটি মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য একটি যুদ্ধ হতে হবে। ভদ্র মহিলা ও মহোদয়গণ, আমি এখানে সরকার এবং বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ ম থেকে শান্তি, অভিবাদন এবং সংহতির একটি বার্তা সঙ্গে নিয়ে এসেছি এবং যখন আমি উপস্থাপন করলাম এবং বিশেষ করে মানুষ এবং হাঙ্গেরির সরকার,স্বাগতিক দেশের গভীরতম অভিনন্দন পৌঁছে এই সম্মেলনে। আমার আপনার কাছে আবেদন।আবেদনটি খুবই সাধারণ।আমাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিন,আমাদের সম্মান ও মর্যাদা দিন যা আমদের অবশ্যই হয় প্রাপ্য, জাতি হিসেবে আমাদের আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দিন।
<003.320.883>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
পররাষ্ট্র দপ্তরের জন্য প্রস্তুতকৃত পাকিস্তান সরকারের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কয়েকটি মুল্যায়ন | পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় | ——————–
১৯৭১ |
গণহত্যার জন্য পাকিস্তান দায়ী
আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নিয়মকে সম্পুর্ন উপেক্ষা করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালী হত্যা এবং জালাও পোড়া্ও ‘মিশন’ চলতে থাকল। এই গণহত্যা হিন্দু হোক বা মুসলমান, বৌদ্ধ হোক বা খ্রিস্টান প্রত্যেক ‘বাঙ্গালী’কে অপসারন করার পৈশাচিক নকশার ফল। এর উদ্দেশ্য ছিল এমন একটি জাতিকে ধ্বংস করা যার জনগণ জাতিগত ও বর্নগত ভাবে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সম্পুর্ন আলাদা।
বাঙালিদের ‘দোষ’ ছিল যে, তারা বেঁচে থাকার অধিকার চেয়েছিল। পুর্ব পাকিস্তানের মানুষ এবং এর সম্পদের উপর এ নির্মম অর্থনৈতিক শোষণ করা হচ্ছিল, পাকিস্তানকে একটি একক রাষ্ট্র হিসেবে টিকিয়ে রাখার জন্য পুর্বের মত এখন তা বন্ধের আহ্বান করা হয়েছে। একটি দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ কিছু মুষ্টিমেয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক দ্বারা উপনিবেশিত হয়ে থাকার অনুভুতি আর সহ্য করবে না। এই অনুভুতি দীর্ঘ সময় সহ্য করা কষ্টকর কিন্তু কোন প্রতিকার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না কারন বাঙালীদেরকে জেনেশুনে ক্ষমতায় আসার আসল পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল।
আইয়ুব খানের পতনের পর জেনারেল ইয়াহিয়া খান জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসেন। সারা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন কিন্তু যখন ক্ষমতা হস্তান্তরের ইচ্ছা, আসল পরীক্ষার সম্মুখীন হল, তখন তা একেবারেই ধসে পড়ে। জ. আ. ভুট্টো এবং সামরিক জান্তা কেউই সংখ্যাগরিষ্ঠের গণতন্ত্রের শাসন মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। যখন ইয়াহিয়া খান এবং জাতীয় পরিষদের সংখ্যাগরিষ্ঠের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের মধ্যে আলাপালোচনা চলছিল তখনই হঠাৎ আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত একটি সংগঠিত সেনা বাহিনী নিরস্ত্র এবং নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালায়।তারা এমন একটি জাতিকে ধ্বংস করার জন্য হত্যা, জালাও পোড়াও, ধর্ষন আর লুট করল যারা আর কোন অপমান এবং শোষন সহ্য করতে প্রস্তুত ছিল না।
ইয়াহিয়া খানের ২৬শে মার্চের ভাষন পরিষ্কার ভাবে সেই পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয় যার উপর ভিত্তি করে এই গণহত্যা চালানো হয়েছিল। ‘শেখ মুজিব ও তাঁর দল ছিল পাকিস্তানের শত্রু’ সে জন্য তাদের নির্মুল করতে হবে। ডিসেম্বরের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে তাকালে, যেখানে আওয়ামী লীগ সারে ৭ কোটি পুর্ব পাকিস্তানি জনগণের ১৬৯টির মধ্যে ১৬৭টি আসন পেয়েছিল, দেখা যায় যে এটা খুবই স্পষ্ট ছিল যে সমগ্র জাতি মুজিব সাংবিধানিক উপায়ে যে কর্মসুচি অর্জন করতে চেষ্টা করছিলেন তাকে সমর্থন করেছিল।
সেনাবাহিনী তাই পুরো জাতিকে তাদের লক্ষ্যে পরিনত করে এবং নির্বিচারে হত্যা ও অগ্নিকান্ড চালায়। তারা কিছু নির্বাচিত ব্যক্তির উপর তাদের আক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখেনি বরং জনগণের মধ্য থেকে যেকোন ধরনের বাঙালীয়ানা মনভাব দূর করার জন্য পুরাদমে আক্রমন চালায়। এটা পরিষ্কার ছিল যে পাকিস্তানি আর্মি তাদের নাগালের মধ্যে এমন কাউকে থাকতে দেবে না যে নিজেকে বাঙালী হিসেবে দাবি করে, হোক সে মুসলিম কিংবা হিন্দু।
<003.324.884>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জার্মানিতে হিটলারের জাতীয়-সমাজতান্ত্রিক সরকার আশি লক্ষের ও বেশি মানুষ্কে হত্যা করেছিল। পরবর্তিতে জাতিসংঘ গণহত্যার অপরাধের শাস্তি এবং এর প্রতিরোধের জন্য নীতিমালা গ্রহন করে এবং ধারা-২ এ এটাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেন যে, এমন কোন কাজ, যা একটি জাতি, গোষ্ঠি, বা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে আংশিক বা সম্পুর্নভাবে ধ্বংস করার জন্য হত্যা বা শারীরিক ও মানসিকভাবে গুরুতর ক্ষতির উদ্দেশ্য করা হয়। এই নীতিমালা এই অপরাধকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় শাস্তিযোগ্য হিসেবেও ঘষনা করে এবং এবং এটা শাসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ওপরও প্রয়োগ যোগ্য করে (ধারা-৪)।
এরসাথে মানবাধিকারের সর্বজনীন সঙ্গা এবং জাতিসংঘ সনদ, উভয় দ্বারা স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকারের ধারনা সম্পৃক্ত। যদি মানবতাবিরোধী অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন করে, তাহলে বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কর্মকান্ড জাতিসংঘ এবং এর অঙ্গ সংগঠন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করবে।
বর্তমানে পাকিস্তানি শাসকদের বাংলাদেশে ঘটানো গণহত্যা ছারা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর এতবড় আর কোন গণহত্যা ঘতেনি। নিছক নৃশংস বল প্রয়োগের মাধ্যমে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘দ্বৈত গণহত্যা’ চালাচ্ছে,- এক, বাঙালীদের একটি জাতি হিসেবে নির্মুল করা এবং দুই, হিন্দু সম্প্রদায়কে নির্মুল করা। যে কেউ নিজেকে বাঙালী হিসেবে দাবি করলে, সে মুসলিম হোক আর হিন্দু তাকে গুলি করা হত এবং হিন্দু হলে তাকে বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে মারা হত। সহজ ভাষায় এটা গণহত্যা এবং এটাই এখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী করছে। যদি বিশ্ব বিবেকের কাজ করতে হয় তাহলে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার থেকে বড় আর কোন ইস্যু হতে পারে না। গণহত্যা এমন একটি অপরাধ যার শাস্তি অবশ্যই পাওয়া উচিত।
সংযোজনী ১–জেনোসাইড কনভেনশন.
সংযোজনী ২–বাংলাদেশের ১০ জন প্রত্যক্ষদর্শী শরণার্থীর সাক্ষাতকার যারা সীমান্তপার হয়ে এসেছে।
এই বর্ননাগুলো আলাদা আলাদা চিঠির আকারে আছে যা ইতমধ্যেই জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই জবানবন্দি গুলোর পাশাপাশি জাতীয় পরিষদের কিছু সদস্য যারা নিউ ইয়র্ক যাবেন, তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা লিখবেন এবং সেগুলো ও এর সংগে জমা দিতে হবে।
সংযোজনী ৩
ইংরেজিতে প্রদত্ত দুটি ব্যক্তিগত বিবৃতি। একটি ঢাকা জিঞ্জিরার কলিমউদ্দিন মিয়ার এবং আর একটি ঢাকা মালিবাগের জনাব আব্দুল করিমের। উভয়ই তাদের নিকট আত্বীয়কে হারিয়েছে যখন পাকিস্তানি বাহিনী তাদের চোখের সামনে তাদের গুলি করে।
…………………………………………………..
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সামরিক জান্তা আন্তর্জাতিক আইনের নিম্নলিখিত বিধান লঙ্ঘন করেছে: –
১) যুদ্ধবিগ্রহ আইন। যুদ্ধের আক্রমন থেকে স্বাধারন মানুষের মুক্তির মতবাদ।
২) ১৮৯৯ সালের হেগ কনভেনশন-২ এর ২৩(ছ) ধারা এবং ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশন। এই ধারায় জারি করা হয় ‘শত্রুর সম্পদ ধ্বংস ও আত্মসাৎ করা বিশেষভাবে নিষিদ্ধ, যতক্ষন না সেসব ধ্বংস বা আত্মসাৎ যুদ্ধের জন্য খুব বেশি জরুরী না হয়’।
<003.324.885>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৩) জাতিসংঘ দ্বারা স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার, (ক) প্রস্তাবনায় জাতিসংঘের মূল লক্ষ্য একটি হলো, ‘মৌলিক মানবাধিকার, মর্যাদা এবং ব্যক্তি মানুষের মুল্য, নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার এবং জাতীয় বৃহৎ ও ক্ষুদ্র স্বার্থে বিশ্বাস পুনর্নিশ্চিত করা।
(খ) ধারা ১ এর ২য় অনুচ্ছেদ হল, “সমান অধিকারের নীতি এবং জনগণের আত্ম প্রত্যয়ের ওপর ভিত্তি করে জাতি সমুহের মধ্যে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক গড়ে তোলা”।
(গ) ধারা ১ এর ৩য় অনুচ্ছেদ হল, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অর্জন ………………. মানবাধিকারকে সম্মান এবং জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে মৌলিক স্বাধীনতাকে প্রচার ও উৎসাহিত করার জন্য।
(ঘ) ধারা 3 (খ) সনদ, “স্বাধারন পরিষদের গবেষণা আরম্ভ করা উচিত এবং এ উদ্দেশ্যে সুপারিশ করা উচিত…………….. মানবাধিকারকে উপলব্ধি করার জন্য এবং জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবার মৌলিক স্বাধীনতা্র জন্য”।
(ঙ) ধারা ৫৫(গ) “মানবাধিকার রক্ষায় সার্বজনীন শ্রদ্ধা এবং জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবার মৌলিক স্বাধীনতা্” কে জাতি সংঘের প্রচার করা উচিত।
(চ) ধারা ৫৬ঃ “সকল সদস্য ৫৫ ধারায় উদাত্তভাবে ধার্য করা উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে সংগঠনের সাথে যৌথ এবং পৃথক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অঙ্গীকার করবে”।
(ছ) ধারা ৭৬(গ) “মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সবার মৌলিক স্বাধীনতা্কে উৎসাহিত করা”।
(জ) ধারা ৬৬(২) মানবাধিকার রক্ষা এবং সবার মৌলিক স্বাধীনতা রক্ষার প্রচারের উদ্দেশ্যে সুপারিশের জন্য ECOSOC সরবরাহ করে।
(ঝ) ধারা ৬৮ঃ ECOSOC অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে “কমিশন্ স্থাপন করবে” এবং মানবাধিকারকে উন্নিত করবে।
(ঞ) ধারা ১(২) জনগণের আত্মপ্রত্যয়ের অধিকার।
৪) ডিসেম্বর ১০, ১৯৪৮ এ জাতি সংঘের সাধারন পরিষদ মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষনা প্রচার করে। এটা মানুষের জন্য ম্যাগনা কার্টা।
(ক) ধারা ৩, প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার, “বাচার, স্বাধীনতার এবং ব্যক্তি নিরাপত্তার”।
(খ) ধারা ১৫ উল্লেখ করে প্রতিটি মানুষের একটি জাতির অন্তর্গত হওয়ার অধিকার, অর্থাৎ জাতীয়তার অধিকার।
(গ) ধারা ২১ “সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি হবে জনগণের ইচ্ছা” এবং এই ইচ্ছা “সার্বজনীন এবং সমান ভোটাধিকারের” ভিত্তিতে “মেয়াদি ও প্রকৃত নির্বাচনের” মাধ্যমে প্রকাশিত হবে।
৫) ১৯৬৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর, মানবাধিকার সাধারন পরিষদের আন্তর্জাতিক কনভেনশন মানবাধিকারের দুইটি ধারাকে আন্তর্জাতিক কনভেনশনে রুপান্তর করে এবং কোন আপত্তি ছাড়াই সেগুলো গৃহীত হয় এবং উভয় চুক্তিই স্বাক্ষরের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। পাকিস্তান উভয় চুক্তির সমর্থনেই ভোট দিয়েছিল।
<003.320.886> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
(৬) ১৯৪৮ সালের ডিসেম্বর মাসে “গণহত্যা সম্মেলনে” স্বাক্ষরকারী দেশ সমূহের মাঝে পাকিস্তানও ছিল।
(a) ধারা-২ঃ গণহত্যা মানে হচ্ছে,” কোন গুষ্ঠি দ্বারা ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন নির্দিষ্ট গুষ্ঠি বা সংঘ বা কোন ধর্মীয় গুষ্ঠিকে বা কোন নৃ-গুষ্ঠিকে আংশিক বা পূর্ণ ধ্বংসের উদ্দেশ্যে হত্যা বা শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাত করে বা মানষিকভাবে আহত করে এবং নিয়মিত ইচ্ছাকৃতভাবে লড়াইয়ে জড়িয়ে পরে শারীরিকভাবে ক্ষতি করে জন্মরোধ করে এবং জোর পূর্বক তাদেরকে এক দল থেকে অন্য দল বা ধর্মে স্থানান্তরিত হতে বাধ্য করে তা গণহত্যা বলে বিবেচিত হবে।”
(b) ধারা-৩ঃ শাস্তিযোগ্য অপরাধ; গণহত্যা, গণহত্যার ষড়যন্ত্র, জনগণকে গণহত্যার প্ররোচনা দেয়া, গণহত্যার চেষ্টা করা এবং গণহত্যায় কু-কর্ম করা।
(c) ধারা-৪ঃ ধারা-৩ অনুযায়ী কোন ব্যাক্তি যদি গণহত্যা বা উল্লেখিত কোন একটি অপরাধের সাথে জড়িত থাকে তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি দিতে হবে যদি সে সাংবিধানিক ভাবে কোন পফে থাকে বা সরকারী কর্মকর্তা হয় বা সাধারণ মানুষও হয়।
৭। ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল অনুযায়ী, যুদ্ধের আগে বা পরে কোন সাধারণ জনগণের উপরে খুন, ধ্বংস, নির্বাসন, দাসত্ব এবং অন্যান্য অমানবিক কার্যক্রম করা হলে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলে গণ্য হবে। গণহত্যা সাধারণ সভায় সর্বস্মমতিক্রমে একটি প্রস্তাব পাশ হয় এবং আন্তর্জাতিক আইনের পূনর্ব্যক্ত করে একে ন্যুরেমবাগ ট্রায়াল স্বীকৃতি দেয়া হয়। তাই মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি অপরাধ।
জেনেভা কনভেনশন
৮। ১৯৪৯ সালের জেনেভা সম্মেলনের ধারা-৩। পাকিস্তান ১৯৪৯ এবং ১৯৫১ সালের জেনেভা সম্মেলনকে অনুমোদন দেয়। পাকিস্তান জেনেভা বেসামরিক নিয়মাবলী ধারা ৪৪ এবং ৬৮(২) অনুমোদন করে। ধারা ৩ এর কোন বিশেষ অপরাধের জন্য সংরক্ষিত ছিলনা। ১৯৪৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৪টি জেনেভা সম্মেলনের প্রতিটির জন্য ধারা-৩ গৃহীত হয়। ধারা-৩ হচ্ছেঃ
“স্বশস্ত্র যুদ্ধে যদি আন্তর্জাতিক কোন ব্যাক্তি অংশ নেয় তবে উচ্চ পর্যায়ের চুক্তিবদ্ধ দলের উভয় পক্ষকে নিদেনপক্ষে নিম্নলিখিত নিয়মাবলী মানতে হবেঃ
১। কোন ব্যাক্তি যদি সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নেয়ক বা আত্মসমর্পণকারী সেনা সদস্যও হয় বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা আহত, আটক বা যে কোন একটির কারণ যদি থাকে তবে তার সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিকূল জাতি, বর্ণ, ধর্ম বা বিশ্বাস,লিঙ্গ ভেদ, জন্ম বা অর্থ, বা অন্য কোন মানদন্ডে বিচার করা যাবেনা।পরিশেষে উল্লেক্ষিত ব্যাক্তিদের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কাজগুলা নিষিদ্ধ সবখানে এবং সব সময়ের জন্যঃ
(a) ব্যাক্তিবিশেষে কারো জীবনের উপর নৃশংসতা এবং নির্যাতন।
(b) গুম বা বন্দী রাখা।
<003.320.887>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
গ) ব্যক্তিগত মর্যাদার উপর তীব্র আঘাত, বিশেষত অমর্যাদাকর ও অবমাননাকর আচরণ।
ঘ) সভ্যজাতিসমূহের দ্বারা অপরিহার্য হিসেবে স্বীকৃত বিচারিক সুবিধাদি প্রদান নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিয়মসম্মতভাবে স্থাপিত/গঠিত আদালতের পূর্ববর্তী রায় ব্যতিরেকে বিচার/শাস্তি প্রদান ও রায় কার্যকর করা।
২) আহত ও অসুস্থ ব্যক্তিদেরকে বাছাই করা ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান করা হবে (আন্তর্জাতিক আইনবিষয়ক দলিল ১৯৫০-৫১, নেভাল ওয়ার কলেজ ইউএসএ ভলিউম ৪৭, পৃষ্ঠা ৮২)।
এই শর্তাদি প্রধানত সেইসব গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেক্ষেত্রে সহিংসতার/যুদ্ধাবস্থার কোনো আলামত পরিলক্ষিত হয়নি (ওপেনহাইম ভলিউম ২, পৃষ্ঠা ৩৭০)।
- IX) পাকিস্তান রেডক্রস-এর আন্তর্জাতিক কমিটির সদস্যদেরকে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও অন্যান্য সাহায্য প্রদানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে যেতে অনুমতি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তির নয় এমন সংঘর্ষ তথা গৃহযুদ্ধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের আর্টিকেল/ দফা ৩ এর একটি অনুচ্ছেদে উদ্ধৃত হয়েছে যে, “একটি নিরপেক্ষ মানবতাবাদী সংস্থার, যেমন রেডক্রস, আন্তর্জাতিক কমিটি সংঘর্ষরত পক্ষগুলোকে সেবা বিতরণ করতে পারবে।” রেডক্রস এই নীতির আলোকে সেবা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছিল কিন্তু পাকিস্তান তা অনুমোদন করেনি।
- X) যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেসামরিক জনগণের সুরক্ষার্থে সম্পাদিত চতুর্থ জেনেভা কনভেনশন, ১৯৪৯।
- XI) যুদ্ধ-বিগ্রহের নিয়মনীতি/ বিধি
যুদ্ধ-বিগ্রহের নিয়মনীতির লঙ্ঘনঃ যুদ্ধবন্দি ও যুদ্ধরত নয় এমন ব্যক্তিবর্গের, বেসামরিকদের সুরক্ষার্থে সম্পাদিত হেগ ও জেনেভা কনভেনশন। এক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো সাধারণত সুনির্দিষ্ট সামরিক শর্তাধীন এক ধরণের আনুপাতিকতা। উদ্দেশ্যটা যেমনই বাস্তবসম্মত তেমনই মানবিকঃ নির্বিচারে হত্যা, হৃতমনোবল জনতা, অস্ত্রশস্ত্র ইত্যাদি বেসামরিক ব্যক্তিদেরকে গেরিলা যোদ্ধায় পরিণত করেছিল এবং ক্ষুব্ধ শত্রুপক্ষের হাতে বন্দি সৈন্যদেরকে বিপন্ন করেছিল।
ইউএস আর্মি ফিল্ড ম্যানুয়াল ২৭/১০ (স্থলযুদ্ধের আইন) অনুসারে, “বিবদমান/ যুদ্ধরত পক্ষদেরকে সামরিক উদ্দেশ্য সাধনকল্পে প্রয়োজনীয় নয় এমন যে কোনো ধরণের বা মাত্রার সহিংস কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে এবং মানবতা ও যুদ্ধসম্পর্কিত সৌজন্যের আদর্শের সাথে সঙ্গতি রেখে লড়াই করতে হবে”।
এই বিধিবিধানগুলো পরাজিত শত্রুসৈন্য, আহত ছত্রীসেনা (প্যারাশুট-জাম্পার) ও অন্যান্য অসহায় মানুষকে বুলেট ও বিষসহ নিষিদ্ধ অস্ত্রের প্রয়োগ থেকে রক্ষা করে। নিষিদ্ধ লক্ষ্যবস্তু বলতে (সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত না হওয়ার শর্তে) হাসপাতাল, গীর্জা, জাদুঘর এবং ঊপকূলে অবস্থানরত জেলে-নৌকাগুলোকে বোঝানো হয়। এক্ষেত্রে নির্যাতন, লুটতরাজ ও রাজনৈতিক গুপ্তহত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কেবলমাত্র কমান্ডারদের আদেশক্রমেই অবৈধ শত্রু-আঘাতের প্রত্যাঘাত করা যাবে, তবে আদালতে বিচারব্যতিরেকে শাস্তি দেওয়া যাবে না এমন বেসামরিকদের বিরুদ্ধে কখনোই এটি করা যাবে না।
শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ
১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনে বলা হয়েছে যে, “যেকোনো সক্ষম ব্যক্তি এবং জনতার শক্তি তাদের উদ্দেশ্য নির্বিশেষে নিষিদ্ধ”। এতে আরো বলা হয় যে, “যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনি এমন ব্যক্তিদের সাথে সকল পরিস্থিতিতেই মানবিক আচরণ করা হবে”। এছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে ‘সমষ্টিগত দণ্ড বা শাস্তি’ যেমন গেরিলারা লুকিয়ে থাকতে পারে— এই সন্দেহে কোন গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া। ১৯০৭ সালের হেগ কনভেনশনের মাধ্যমে “অরক্ষিত শহর, গ্রাম, বাসস্থানসমূহে বা ভবনগুলোর উপরে যে কোনো উপায়ে বোমাবর্ষণ নিষিদ্ধ” করা হয়েছে।
<003.324.888>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
জাতিগত বৈষম্য
জাতিগত বৈষম্য, ১৯৬০ সালের সাধারণ পরিষদে ১০৩ (১) নং প্রস্তাব। সাধারণ পরিষদে ঘোষণা করা হয়েছিল যে, “মানবতার সবোর্চ্চ স্বার্থে ধর্মসংক্রান্ত ও তথাগত জাতিগত নিপীড়ন ও বৈষম্যের একটি তাৎক্ষণিক সমাপ্তি টানা দরকার।”
বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্র
XII) বিশ্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাপত্রঃ
অনুচ্ছেদ-১: মানুষ জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং সমমর্যাদা ও সমানাধিকারসম্পন্ন। তাদের বুদ্ধি ও বিবেক আছে; সুতরাং সকলেরই একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্বসুলভ মনোভাব নিয়ে আচরণ করা উচিত।
অনুচ্ছেদ-২
অনুচ্ছেদ-৩
অনুচ্ছেদ-৫: কাউকে নির্যাতন অথবা নিষ্ঠুর, অমানবিক অথবা অবমাননাকর আচরণ অথবা শাস্তিভোগে বাধ্য করা চলবে না।
অনুচ্ছেদ-৭: আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতিরেকে সকলেই সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।
অনুচ্ছেদ-৯: কাউকে খেয়াল-খুশিমত গ্রেফতার, আটক বা নির্বাসন দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না।
অনুচ্ছেদ-১০: প্রত্যেকেই তার অধিকার ও দায়িত্বসমূহ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত যে কোন ফৌজদারী অভিযোগ নিরূপণের জন্য পূর্ণ সমতার ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার-আদালতে ন্যায্যভাবে ও প্রকাশ্যে শুনানী লাভের অধিকার রয়েছে।
অনুচ্ছেদ-১১: (১) কোন দণ্ডযোগ্য অপরাধে অভিযুক্ত হলে প্রত্যেকেরই আত্মপক্ষ সমর্থনের নিশ্চয়তা দেয় এমন গণ-আদালত কর্তৃক আইন অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্দোষ বলে বিবেচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
(২) কাউকেই কোন কাজ বা ত্রুটির জন্য দণ্ডযোগ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা চলবে না, যদি সংঘটনকালে তা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক দণ্ডযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য না হয়ে থাকে।
অনুচ্ছেদ-১৯: প্রত্যেকেরই মতামত সংরক্ষণ এবং প্রকাশের স্বাধীন অধিকার রয়েছে; বিনা হস্তক্ষেপে মতামত পোষণ এবং রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্বিশেষে ও যে কোন উপায়ে ধারণা ও মতামত সন্ধান, গ্রহণ ও জ্ঞাপন করার স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
অনুচ্ছেদ-২১: (১) প্রত্যেকেরই প্রত্যক্ষভাবে অথবা অবাধে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজ দেশের সরকারে অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।
(৩) জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাই হবে সরকারের ক্ষমতার ভিত্তি; এই আকাঙ্ক্ষা বিশ্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নৈমিত্তিকভাবে অনুষ্ঠিত প্রকৃত নির্বাচন দ্বারা ব্যক্ত হবে; এরূপ নির্বাচন গোপন ব্যালট অথবা অনুরূপ অবাধ ভোটদান পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হবে।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান
১. পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পিছু হটার বা পশ্চাদপসরণের কোনো জায়গা নেই। বার্মার (মায়ানমার) সাথে এক চিলতে সীমানা বাদে বাংলাদেশের অবশিষ্ট ভূ-খণ্ড ভারত দ্বারা পরিবেষ্টিত। পালাবার অন্যান্য উপায়ের মধ্যে রয়েছে আকাশপথ ও নৌপথ যেক্ষেত্রে ভারতীয় উপকূল ধরে ৩০০০ মাইলেরও বেশি পথ পাড়ি দিতে হবে। অন্য ভাবে বলতে গেলে, সৈন্যদের পিছিয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, যেটি যে কোন যুদ্ধের ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সুতরাং মনঃস্তাত্ত্বিকভাবে তারা দুর্বল ও মনোবলহীন এবং একারণেই তারা যতটা হওয়ার কথা তার চেয়ে বেশি বেপরোয়া।
<003.324.889>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
২. পাকিস্তানের সাধারণ সৈন্যগণ মূলত সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের মানুষ। একদিকে যেমন এই অঞ্চলের সৈন্যদের মধ্যে বিবাদ ও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে এবং তেমনি অন্যদিকে পাঞ্জাবি সৈন্যরাও শান্তিতে নেই। এমন খবরও পাওয়া গেছে যাতে সমর্থিত হয় যে, অনেকক্ষেত্রে সীমান্ত প্রদেশের এবং বেলুচ সৈন্যরা আমাদের লোকদের সাথে তুলনামূলক কম গুরুতর, এবং কখনো কখনো সহানুভূতিসম্পন্ন, আচরণ করেছে।
৩. পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে বিদ্যমান এই পাঞ্জাবি-অপাঞ্জাবি বিভেদের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করা উচিত।
৪. পাকিস্তান সেনাদেরকে, বিশেষ করে অফিসারদেরকে, মৃত অবস্থায় পাবার চেয়ে একা অবস্থায় আটক করার দিকে গুরুত্বারোপ করা উচিত। মুক্তিবাহিনী ইউনিটগুলোতে এই মর্মে দিকনির্দেশনা প্রদান করা উচিত।
৫. ভাল ব্যবহার এবং শত্রুর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ সবসময়ই স্বাগতিক দেশের আত্মবিশ্বাস ও জয়ের প্রতি সংকল্প পরিস্ফুট করে তোলে। এটা মর্যাদা ও শ্রদ্ধালাভের যোগ্যতা বাড়ায় এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিগ্রহের নিয়মনীতির প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা পালনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে।
৬. পাকিস্তান প্রতিদানপ্রথা অনুসরণ বা বিনিময় করবে এবং হত্যা করার বদলে মুক্তিবাহিনী সদস্যদেরকে বন্দি করার আবশ্যকীয়তা উপলব্ধি করতে পারে,— এই আশায় যে যুদ্ধ শেষে তারা সেই বন্দিদের বিনিময়ে তাদের বন্দি সৈন্যদের ফিরে পাবে।
৭. শেখ মুজিবের মুক্তিদানের ব্যাপারটি সুরক্ষিত করার স্বার্থে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বন্দিদেরকে, বিশেষ করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জিম্মি করা, ব্যবহার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে কর্মরত পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রত্যেকদিন প্রতিবেলার সম্প্রচার-অধিবেশনে একবার করে উর্দুতে একটি ৫-মিনিটের কর্মসূচি সম্প্রচারের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করা হলঃ
১. বেলুচিস্তান, সীমান্ত ও সিন্ধু প্রদেশ থেকে আগত সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য প্রদান।
২. তাদেরকে ব্যাখ্যা করা যে তারা যে মানুষদেরকে হত্যা করছে তাদের শতকরা ৯০ ভাগই মুসলমান এবং তাদেরকে (সৈন্যদেরকে) আসলে পাঞ্জাবিরা ভুলপথে পরিচালিত করছে। এক্ষেত্রে ইসলামের আদর্শ বিবৃত করা যেতে পারে।
৩. বেলুচস্তিান, সীমান্ত ও সিন্ধু প্রদেশের সৈন্যদের এই দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানানো ও তাদের এই উপলব্ধির প্রশংসা করা যে তারাও আসলে পাঞ্জাবিদের দ্বারা সমভাবে শোষিত হচ্ছে এবং পূর্ববঙ্গের যুদ্ধ সম্পর্কে পাঞ্জাবিরা তাদেরকে ভুল বুঝিয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে পূর্ববঙ্গের যুদ্ধটা ছিল ভারতীয়দের বিরুদ্ধে কিন্তু পৌঁছানোমাত্রই তারা আবিষ্কার করেছে যে তারা বাংলাদেশের নিরপরাধ লোকদের সাথে লড়াই করছে।
৪. বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের (সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও পাঞ্জাবের) সহানুভূতি ও সমর্থনের প্রশংসা করা এবং তাদের আর নিজেদেরকে বিভ্রান্ত হতে দেওয়া উচিত নয়— এই উপলব্ধির প্রশংসা করা।
৫. তাদের যে পশ্চাদপসরণের কোনো উপায় নেই, এটা ব্যাখ্যা করা এবং বিশদভাবে তাদের লজিস্টিক উপকরণের তথা রসদের অপ্রতুলতা বিবৃত করা যেতে পারে। তাদের উপলব্ধিতে এই সত্যটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে তারা একটি অচেনা, বিদেশি ভূখণ্ডে লড়াই করছে কিন্তু বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।
<003.324.890>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
৬. তাদেরকে উপলব্ধি করানো যে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই তাদের আত্মসমর্পণ করা এবং মুক্তিবাহিনীর কাছে নতি স্বীকার করা উচিত। সেটা করলে তাদেরকে যুদ্ধবন্দি হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং সেইমত আচরণ করা হবে। তাকে হত্যা করা হবে না, বরং তাকে খাদ্য ও আশ্রয় দেওয়া হবে এবং যুদ্ধ শেষে সে পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরে যাবে নাকি সমানাধিকারসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করবে— তাকে এটা বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
পশ্চিম পাকিস্তান সরকার সম্প্রতি পশ্চিমা বিশ্বে তাদের বিশেষ রাষ্ট্রদূত এবং বেতনভুক্ত এজেন্টদের মাধ্যমে বাংলাদেশের নিরপরাধ মানুষের সাথে তারা যে খুন ও নৃশংস অপরাধ করছে তার যৌক্তিকতা প্রমাণে আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। পাকিস্তান সরকারের অন্যায় ও গণহত্যাকাণ্ডমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বব্যাপী ঘনীভূত হতে শুরু করা জোরালো জনমতের ফলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এখন আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক নানা অজুহাত খুঁজে বের করতে ব্রতী হয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরণের অজুহাত ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু তা সবই শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, উপায়ান্তর না দেখে, বর্তমানে ব্যাপারটিতে ভিন্ন রঙ চড়িয়ে একে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
মুক্তি সংগ্রামের ও স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের এই মহৎ ও পবিত্র উদ্দেশ্যকে এখন সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে দূষিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে যে বাঙালিরা অবাঙালিদেরকে হত্যা করেছে, সুতরাং পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই হস্তক্ষেপ কেবলই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে। এই হীন ও জঘন্য অপপ্রচারের চেয়ে ডাহা মিথ্যা আর কিছুই হতে পারে না। বাংলাদেশ সরকার এতে ক্ষুব্ধ বোধ করছে যে কিছু পশ্চিমা সংবাদপত্রও এমন মনগড়া গল্প ফেনিয়ে পরিবেশন করছে। মে মাসের ২ তারিখের ‘সানডে টাইমসে’ অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের প্রেরিত প্রতিবেদনটি কেবল এমন একটি গল্পের পশ্চিম পাকিস্তানি সংস্করণমাত্র, যা কোনো যুক্তিতেই ধোপে টেকে না। মি. রোজেনব্লম-এর ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে যিনি, সহজেই অনুমেয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আনুকূল্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাংলাদেশ সফর করেন।
নিম্নের ঘটনাসমূহের মাধ্যমে এই অপপ্রচারের জঘন্যতা ও অসারতা টের পাওয়া যায়ঃ
১. আমাদের জানামতে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পূর্বপর্যন্ত একটি সংবাদপত্রেও এমন কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয়নি যে বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে বাঙালিরা একজন অবাঙালিকে হত্যা করেছে।
২. পশ্চিম পাকিস্তানিসহ প্রায় ৪০-৫০ জন বিদেশি সাংবাদিকের কেউই তাঁদের বাংলাদেশে অবস্থান করার সময়ে এই বিষয়ে একটি বাক্যও লেখেননি। এমন কোনো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে থাকলে অবশ্যই তা তাঁদের চোখে পড়ত।
৩. কোনো বিদেশি বা পশ্চিম পাকিস্তানি সাংবাদিক শেখ ও ভুট্টোসহ কোনো নেতাকে একবারের জন্যও কখনো এ ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি কিংবা নেতাদের আয়োজিত ধারাবাহিক সংবাদ সম্মেলনগুলিতে আদৌ এই বিষয়টি উপস্থাপন করেননি।
৪. বিশেষত যদি এটাই এই সামরিক নৃশংসতার কারণ হয়ে থাকবে, তবে ইয়াহিয়া খান কেন তাঁর ২৫শে মার্চের বক্তৃতায় এটি উল্লেখ করেননি? এরকম কোন ঘটনা যদি ঘটেই থাকত, ইয়াহিয়া খান কোনোভাবেই এটিকে আত্মসমর্থনমূলক প্রধান একটি কারণ হিসেবে উপস্থাপন করার সুযোগ হারাতেন না।
৫. পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের আয়োজিত একটি সফরে আমন্ত্রিত হয়ে ছয়জন সাংবাদিক এতে অংশগ্রহণ করেন কিন্তু তাঁদের কেউই কোনো লেখায় এই ছেলেভুলানো যুক্তিটির উল্লেখ করেননি। পক্ষান্তরে ‘অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের’ সংবাদদাতারা ঘন ঘন বাংলাদেশে এসেছেন এবং তাঁদের অন্তত একজন ২৫শে মার্চে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বিতাড়িত হওয়ার আগপর্যন্ত অনেকদিন থেকেই ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু এই বিষয়ে কিছু লেখেননি।
<003.324.891>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
অন্যদিকে শেখ মুজিব তাঁর বক্তৃতা, দিকনির্দেশনা এবং ১লা মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত সংবাদ সম্মেলনগুলোতে খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে বাঙালি এবং অবাঙালি সবাই সমান এবং বাংলাদেশের নাগরিকদের কাছে বিশ্বাসের স্তম্ভ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শেখ মুজিব-প্রদত্ত জাতীতাবাদের সংজ্ঞাটি ছিল এরূপ যে, “সমস্ত মানুষ— বাঙালি, অবাঙালি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ,— বাংলাদেশে বসবাসকারী যে কেউ, তাদের জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি হিসেবে পরিচিত হবে।”
……………………
মি. অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বিভিন্ন এলাকায় আবিষ্কৃত মৃতদেহের সংখ্যা সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানি সৈন্যদের সরবরাহকৃত হিসাব উল্লেখ করতে দ্বিধা করেননি। তিনি অবশ্য নিজে মৃতদেহগুলো দেখেছেন কিনা বা সেগুলো অবাঙালিদের মৃতদেহ হিসেবে যাচাই করেছেন কিনা তা উল্লেখ করেননি। এমনকি তিনি যদি স্বচক্ষে দেখেও থাকেন, মৃতদেহগুলো সম্ভবত ততদিনে পচে গিয়েছিল এবং তাঁদের ভাষাগত পরিচয় নিরূপণের কোনো উপায় ছিল না। তাহলে তিনি কীভাবে বলতে পারেন যে তাঁরা (মৃতরা) অবাঙালি ছিল?
<003.321.892>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোণাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ-ভারত যুদ্ধ সম্পর্কে একটি খতিয়ান | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | —– ১৯৭১
|
গোপনীয়
পজিশন পেপার
———–
ই্ন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধ
এই বছরের মে ও জুন মাসে ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের শঙ্কা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। কিন্তু পরবর্তীতে সেই শঙ্কা কোনো ভাবে নিবারণ করা সম্ভব হয়েছে ১৯৭১ সালের অগাস্টে স্বাক্ষরিত ইন্দো-সোভিয়েত চুক্তি অনুযায়ী।
ইন্দো-রাশিয়ান চুক্তির মৌলিক দিকগুলোয় সংক্ষিপ্ত আকারে নিম্নরূপ:
ভারতে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে, বিশেষ করে নন-কংগ্রেস ও বাম রাজ্যগুলোতে এবং গত ২৪ বছরে তৈরি করা ভারী শিল্প যখন ফলপ্রসূ হতে শুরু করেছে, তখন পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ধরণের কোনো সংঘর্ষে গড়ানোর ইচ্ছে তাদের ছিল না। পাশাপাশি, পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে ইন্দিরা গান্ধী ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারে উল্লেখযোগ্য স্থিতিশীলতা এনেছে এবং সেটি বাধাগ্রস্থ ও বিঘ্নিত করতে দেওয়া যাবে না।
পাকিস্তানের সঙ্গে যে কোনো ধরণের সংঘর্ষ একটি সার্বিক যুদ্ধে রূপ নেবে এবং ভারত সেই ঝুঁকিটা নিতে পারে, যদি পুরোপুরি সুনিশ্চিত হওয়া যায় যে, (ক) এখানে কোনো তৃতীয় পক্ষ জড়াবে না, (খ) পাকিস্তানকে সামরিক ভাবে হারাতে পারবে (গ) যতটা সম্ভব সংক্ষিপ্ত সময়, ৭-১০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে পারবে। ভারতের সমর কৌশল কখনোই উপরে উল্লেখিত তিনটি শর্ত নিয়ে নিশ্চিত হতে পারবে না এবং এই কারণেই সবসময়ই যুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
বাংলাদেশ সঙ্কট নিয়ে ভারতের পর্যালোচনা:
(ক) বাংলাদেশে যুদ্ধ করে পাকিস্তান টিকে থাকতে পারবে না এবং নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না। কিছু সময়ের জন্য যদি নিয়ন্ত্রণে আনতেও পারে, অর্থনীতি কখনও সঠিক পথে ফিরবে না। পাকিস্তান দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়বে এবং কোনেদিনই ভারতের জন্য রাজনৈতিক বা সামরিক হু,কি হয়ে উঠতে পারবে না।
(খ) পাকিস্তানে, বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্তানে আজ হোক বা কাল, সাধারণ ব্যবসায়ী, কৃষক ও শিল্প শ্রমিকদের ওপর অর্থনৈতিক ধসের প্রভাব পড়বেই। রাজনৈতিক উপাদান থেকে উৎসরিত চাপের পাশাপাশি এটিও চাপ সৃষ্টি করবে, যেটি চূড়ান্তভাবে সামরিক শাসকদের সঙ্গ সংঘর্ষের দিকে ধাবিত হবে। এটি একটি মনস্ত্বাত্ত্বিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যখন পাকিস্তানী শাসকরা বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে ইস্যুটি থিতু করবে এবং কেবল তখনই কোনো নিষ্পত্তি হলে সেটি আমাদের পক্ষে আসবে। এই নিষ্পত্তি হয়ত বাংলাদেশের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য।
(গ) অন্যদিকে ভারত কখনোই পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়ানোর কথা ভাবেনি এবং ইন্দো-রাশিয়ান চুক্তিতেই সেটি পরিস্কার ফুটে ওঠে। এই কারণে ভবিষ্যতেও তারা কখনোই এমন কিছু করবে না যেটায় ইন্দো-পাকিস্তান যুদ্ধের শঙ্কা বাড়াবে। এটির তাৎপর্য হলো, এই পর্যায়ে মুক্তিবাহিনীকে ভারত এমন ভাবে অস্ত্রের জোগান দেবে, যেটির ফলে পাকিস্তান বলবে যে ভারত পাকিস্তানে অনুপ্রবেশ করেছে।
<003.321.893>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
মুক্তিবাহিনীর বড় কোনো বিজয় এই পর্যায়ে বিবেচিত হবে পাকিস্তানে ভারতের সশস্ত্র অনুপ্রবেশ হিসেবে।
(ঘ) স্বীকৃতির প্রশ্নটিও তাই উঠছে না। ভারত যদি মুক্তিবাহিনীকে অস্ত্র নিয়ে আরও সহায়ত করতে চায়, সেটি তারা আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ছাড়াই করতে পারে। স্বীকৃতি দেওয়া মানেই তাই সার্বিক পরিমণ্ডলে সহায়তা বেড়ে যাওয়া নয়, যদিও সাধারণ মানুষের ধারণা যে স্বীকৃতি দেওয়া মানেই মুক্তিবাহিনীর প্রতি ভারতের সহায়তা বিশাল আকালে বেড়ে যাওয়া। এজন্যই ভারতের এখনও সময় হয়নি সত্যিকার অর্থেই স্বীকৃতি বা সহায়তা দেওয়ার।
অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপে এবং বিশেষ করে পশ্চিবঙ্গের পরিস্থিতির কারণে, ভরতে কখনও কখনও কংগ্রেস সরকারের কাছে হয়ত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া উপযুক্ত মনে হতে পারে, কিন্তু আগামী ছয় মাসের মধ্যে এলে সেটি স্রেফ একটি কাগুজে স্বীকৃতি হবে।
ভারতের জন্য এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের মূল প্রয়োজন ঠিকই মিটেছে এবং নিকট ভবিষ্যতেও মিটবে। এর মধ্যে তারা একই অবস।তান ধরে রাখবে যেটি এখন চলছে। তারা এমন ভাবে সহায়তা চালিয়ে যাবে যেটায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র গ্রহণ বা মুক্তাঞ্চল হিসেবে কোনো ভূখন্ড স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে বিমান বা গোলন্দাজ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে চোখধাঁধানো কিছু মনে হবে না।
পাকিস্তান সরকারের মূল অবস্থান হলো, ভারতের কারণে তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। সেই কারণেই এটি ইন্দো-পাকিস্তান বিরোধ। তাদের অভিসন্ধি ধরে রাখতে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক এখতিয়ারের নিয়ন্ত্রণে আনতে ইয়াহিয়া সরকার একবার এবং এখনও ভঅরতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে, শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূল্য ইস্যুটি অন্যটি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে।
শঙ্কাটা এখনও আছে। পাকিস্তানের জন্য সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের প্রথম ভাগ হবে আন্তর্জাতিক একটি সংঘর্ষের জন্য জুতসই সময়। এজন্যই তারা এখন পর্যালোচনা করছে, এই সময়টি পেরিয়ে গেছে কি না। বাংলাদেশ নিয়ে কঠোর যে কোনো কিছুই করবে ভারত। রুশ সরকারের কাছ থেকে তারা এটাই খুজেঁ বের করার চেষ্টা করছে। যদি ভরত সরকারের এই ধরণের কোনো পরিকল্পনার তথ্য পাওয়া যায়, পাকিস্তান সরকারও এই সময়ে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে ভয়াবহ রকমের সংঘর্ষের ঝুঁকি নেবে। অন্যদিকে, যদি তারা রুশ সরকারের কাছ থেকে নিশ্চয়তা পায় (যেটি তারা সবসময়ই পাচ্ছে), তাহলে পাকিস্তান সরকারের এরকম কিছু করার সম্ভাবনা নেই।
পর্যালোচনা
বাংলাদেশ সরকারের উচিত স্বীকৃতির চেয়ে অস্ত্র সহায়তা ও সরবরাহে বেশি জোর দেওয়া। কারণ এতদিনে এটা স্পষ্ট হয়ে যাওয়া উচিত যে যুদ্ধ আমাদের জিততে হবে নিজেদেরই। যত দ্রুত জিততে পারি, ততই আমাদের জন্য ভালো এবং এজন্যই যুদ্ধ পরিচালনা ও জয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র নীতি বাংলাদেশ সরকারের গড়ে তুলতে হবে। নিজস্ব শক্তিতেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক এখনকার মতোই জোড়ালো রাখার দাবী জানানোর সময় এসেছে। ভারত আমাদের প্রতি অনেক বেশিই নিবেদিত এবং আমাদের স্বীকৃতি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতেই হবে কেবলমাত্র তখনই, যখন সময় তাদের দিক থেকে উপযুক্ত হবে এবং সেই সময়টা কাছে নিয়ে আসতে আমরা ভূমিকা রাখতে পারি।
<003.322.894>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোণাম | সূত্র | তারিখ |
বিদেশে অবস্থানরত বাঙালীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আবেদন | পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় | —– ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিদেশে বাংলাদেশের নাগরিক ও বন্ধুদের জন্য
মুজিবনগর,
বাংলাদেশ
ভদ্রোমহোদয়গণ,
বাংলাদেশ এখন যুদ্ধে জড়িয়ে। ২৫ মার্চ ১৯৭১ থেকে খুবই প্রশীক্ষিত ও সশস্ত্র পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের স্বাধীনতা সৈনিকেরা প্রতিরোধ গড়েছে এবং লড়াই করছে। তাদের চাওয়া পরিস্কার। বাংলাদেশের প্রতি তাদের ঔপনিবেশিক নীতি তারা চালিয়ে যেতে চায়। আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত করার শেষ মরিয়া প্রচেষ্টায় তারা ধ্বংস, হত্যা ও সংঘর্ষের পথ বেছে নিয়েছে। পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী শত শত গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে, আমাদের সব বড় বড় শিল্প প্রকল্প ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। তারা নির্বিচারে আক্রমণ করেছে এবং বোমা হামলা চালিয়েছে। আমাদর মায়েদের হত্যা করেছে, বোনদের ধর্ষণ করেছে এবং হাজার হাজার অসহায় মানুষকে দেশের বাইরে বিতারিত করেছে। তারা যেখানেই যায়, শিশু ও তরুণদের হত্যা করে, বাড়িঘর, ব্যাংক ও জুয়েলারি লুট করে, খাদ্যশস্য ও পশু চুরি করে এবং সবশেষে কাউকে জীবত না রেখে এলাকার পর এলাকা পরিত্যক্ত করে ছাড়ে।
বাংলাদেশের বীর জনতা যদিও যুদ্ধের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।
২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় গণহত্যার খবর জানার পর ২৪ ঘন্টার মধ্যেই সারা বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
মানব ইতিহাসে এরকম গণহত্যা চালানোর নজীর আর নেই। সেই নৃশংসতার বিশদ এখানে আর উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, কারণ আমরা নিশ্চিত যে বিশ্ব সংবাদমাধ্যম, রেডিও এবং বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা জেনে গেছেন।
এই যুদ্ধে আমাদের সবারই অংশ নিতে হবে। ইংল্যান্ডে হোক বা আমেরিকায়, কিংবা জাপানে, এমনকি আইসল্যান্ডে, প্রতিটি বাঙালিই আমাদের মুক্তিবাহিনীর অংশ। আমরা আশা করি যে যেখানেই যে থাকি, আমরা প্রত্যেকেই সম্ভব যে কোনো ভাবে এই লড়াইয়ে অংশ নেব। অসহায় ও আর্ত ৭৮ মিলিয়র মানুষের জন্য এখন সারা বিশ্বের মনোভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভেতরে যেমন, তেমনি বাইরেও এই যুদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ।
ভদ্রমহোদয়গণ, এই মাটির সাহসী সন্তানেরা যখন শত্রুর আগ্রাসন থেকে এই মাটিকে রক্ষায় কঠিন যুদ্ধক্ষেত্রে লড়ছে, দেশের বাইরে আমাদের নাগরিকরাও সমান অবদান রাখতে পারে যুদ্ধে নিজেদের সম্পৃক্ত করে, জনমত ও বিশ্ব মতামত গঠন করে, সভা-সেমিরার আয়োজন করে, তহবিল সংগহ করে, ত্রাণ ও প্রয়োজনীয় সরবরাহ পাঠিয়ে।
<003.322.895>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
কি করা উচিত:
১. যুদ্ধের ময়দানের ধরণ মতো সংগঠন থেকে এবং দেশে যদি এই ধরণের সংগঠন একটির বেশি থাকে, পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করুন এবং সমন্বিত ফেডারেশন ধরণের সংগঠন গড়ে তুলুন যাতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হওয়া যায় ও যোগাযোগ করা যায়। যদি না অন্যভাবে অবাস্তব মনে হয়,, উপরে উল্লেখিত পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
২. বাংলাদেশের নামে ও ধরণে একটি ব্যাংক হিসাব অবশ্যই খুলতে হবে অন্তত দুজন লোককে পরিচালনা করতে হবে। যোগাযোগের জন্য একটি তার সঙ্কেত থাকতে হবে এবং প্রতিটি কার্যক্রমে একটি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৩. বাংলাদেশের মানুষ আশা করে আপনারা লড়াই চালিয়ে যাবেন এবং বিশ্ব মতামত গঠনে তদবর চালিয়ে যাবেন, বিশেষ করে আমেরিকান ও কানাডিয়ান সংবাদমাধম, রেডিও ও টেলিভিশনে। আপনাদের সংগঠন একটি সংহতি কমিটির পৃষ্ঠপোষণা করতে যারে, যেখানে থাকবে সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি, সংবাদকর্মী, আইনজীবী, শিক্ষক এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের নানা মতের লোকের প্রতিনিধি ও ব্যক্তিত্ব, যারা আপনাদের হয়ে আন্দোলন চালিয়ে নেবে। জাতীসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসহ বিশ্বের সবদেশের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে হবে আপনাদের।
৪. সোভিয়েত রাশিয়া দূতাবাস, ভারতীয় হাই কমিশন ও আমাদেরকে সমর্থন করছে এরকম দেশগুলির সঙ্গে দৈনন্দিন যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে হবে এবং অগ্রগতির খোঁজখবর নিতে হবে।
৫. তদবিরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের ভাবনার খোঁজখবর রাখতে হবে।
৬. পাকিস্তানের সংশ্রব ত্যাগ করার জন্য বাংলাদেশের কূটনীতিকদের চাপ দিতে হবে এবং যেখানেই সম্ভব, বাংলাদেশের মিশন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
৭. গণহত্যা বন্ধে কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য ইয়াহিয়া খান ও তার দোসরদের শাস্তির জন্য ইন্টারন্যাশলনাল কোর্ট অব জাস্টিস-এ পিটিশন দায়ের করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল কমিশন ও জুরিস্টস-এর কাছেও যাওয়া যেতে পারে এবং তাদের সুপারিশ অনুসরণ করা যেতে পারে, ইতিমধ্যেই যা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে।
৮. জাতীসংঘের মানবাধিকার সনদ এবং প্রাসঙ্গিক নানা ফোরামেও এই ধরণের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে হবে। গণহত্যা সনদের সুবিধা নিতে হবে। সমর্থ, অনুপ্রাণিত ও খ্যাতিমান আন্তর্জাতিক জুরিদের সম্পকৃত করতে হবে।
৯. জাতিসংঘের একটি পরিদর্শক দলের ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা উচিত সত্যিকারের অবস্থা বুঝতে।
১০. রোগবালাই ও দুর্ভিক্ষ প্রায় আসন্ন। সংরক্ষিত খাদ্যের বেশির ভাগই সামরিক জান্তা লুট করে নিয়েছে বা বোমা মেরে ধ্বংস করেছে। খাদ্যশস্যের ঘাটতি এখন চরম। লক্ষ লক্ষ লোক এর মধ্যে না খেয়ে আছে। দয়া করে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও অন্যান্য মানবতাবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী পাঠাতে।
১১. সব ধরণের তদবির সামলাতে হবে রাজনৈতিক হাতে সর্বোচ্চ যত্ন ও পরিশীলত ভাবে। মনে রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক আঙিনায় ইতিমধ্যেই আমরা যা অর্জন করেছি, সেসব নস্যাত করতে পারে একটি ভুল পদক্ষেপই। যথোপযুক্ত সময়ে আমাদের দূত পাঠানো হবে এবং প্রয়োজনীয় লিঁয়াজোর জন্য বিশ্ব আপনাদের সঙ্গে যোগযোগ করবে। আমাদের মৌলিক দর্শন হলো, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গেই বিদ্বেষ নয়।” বিশ্বের সব মুক্তিকামী মানুষের সঙ্গে একতা ও বন্ধুত্ব। আমাদের চাওয়া শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও বিশ্ব শান্তি।
<003.322.896>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
১২. ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে নৃশংসতার ব্যাপার আপনারা এরমধ্যেই জেনেছেন। আপনারা যতটা জেনেছেন, সেটিকে আরও গুরুতর করে তুলতে হবে আমাদের। বিশদ জানার জন্য ভারতীয় পত্রিপত্রিকা পড়ুন। বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে বলা হতে পারে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী যেহেতু সব বিদেশী সাংবাদিককে আটকে রেখেছে, একমাত্র উপায় খোলা আছে ভারতীয় ভূখণ্ড দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করা। এভাবে যেসব সংবাদ সংগ্রহ করা হচ্ছে, সেগুলোতে তাই প্রাপ্য গ্রহণযোগ্যতা ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত এবং আমরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, যাতে তারা নিজেরাই দেখতে পারে এখানকার পরিস্থিতি, বাংলাদেশ সরকারের কার্যকারিতা ও স্থিতিশীলতা এবং বিশেষ করে, যে অতুলনীয় মনোবল ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমাদের জনতা বিদেশী বাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে।
১৩. পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনী এখন কেবল সীমাবদ্ধ আছে শহর ও সেনানিবাস এলাকায়। বাকি পুরো বাংলাদেশ মূলত বাংলাদেশ সরকারের কার্যকরি নিয়ন্ত্রণে আছে। গ্রামের নিরীহ ও অসহায় মানুষেরা খাদ্য, আশ্রয় ও নিরাপত্তার জন্য পুরোপুরি নির্ভর করছে বাংলাদেশ সরকারের ওপর। এটি বিশাল পরিসরের কাজ এবং দেশের ভেতরে-বাইরে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
আশু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র:
(ক) মিডিয়াম-ওয়েভ সম্প্রচার ট্রান্সমিটার, যেটি অন্তত ৩০০ মাইল পর্যন্ত কাভার করবে।
(খ) অত্যাধুনিক অস্ত্র ও গোলাবারুদ (সুনির্দিষ্ট হওয়া ও পরিবহনের মাধ্যম জানার জন্য যে দেশে আছেন, সেই দেশে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। এই ধরণের কোনো প্রতিনধির সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা করবেন না)।
(গ) যোগাযোগের জন্য ওয়াকি-টকি ও ওয়ারলেস ট্রান্সমিটার
(ঘ) খাদ্যশস্য
(ঙ) লবণ
(চ) ম্যাচ ও কেরোসিন
(ছ) বস্ত্র (সামরিক ও বেসামিরক উভয়ই)
(জ) ওষুধ ও মেডিকেল যন্ত্রপাতি
(ঝ) পেট্রোল, ডিজেল ও জ্বালানি তেল
(ঞ) অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র
(ট) নগদ অর্থ (স্পষ্ট নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত পাঠানোর প্রয়োজন নেই)
(ঠ) তাবু ও তেরপল
(ড) বুট ও অনান্য পোশাক
১৪. ঐক্য প্রকাশ ও যোগাযোগের জন্য আপাতত ব্যবহার করুন এই ঠিকানা, বাংলাদেশ মিশন, ৯, সার্কাস এ অ্যাভিনিউ, কলকাতা-১৭.
রহমত আলি
(বাংলাদেশ সরকারের জন্য ও পক্ষে)
<003.324.897>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোণাম | সূত্র | তারিখ |
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারী কূটনীতিকদের নামের একটি তালিকা | বাংলাদেশ সরকার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
—– ১৯৭১
|
বিদেশ মিশনে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশকারীদের তালিকা
সিরিয়াল নং নাম পদবি আনগত্য প্রকাশের তারিখ
১. কে. এম. শেহাবুদ্দিন সেকেন্ড সেক্রেটারি ৬ এপ্রিল, ১৯৭১
২. আমজাদুল হক সহকারি প্রেস অ্যাটাচি. ৬ এপ্রিল, ১৯৭১
৩. আব্দুল মাজিদ মিনিস্টেরিয়াল স্টাফ ১২ অগাম্ট, ১৯৭১
৪. আব্দুল করিম ” ”
৫. এস. এম. নুরুল হুদা ” ” ২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
৬. আমজাদ আলি ” ”
৭. মফিজুর রহমান ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
৮. এ. কে. আজাদ স্টেনোগ্রাফার ঐ
৯. গুলাম মুস্তফা ইউ.ডি.সি. ঐ
১০. মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন ডিসপ্ন্সোর ঐ
১১. আব্দুল শহীদ এল.ডি.সি ১ অক্টোবর, ১৯৭১
১২. হুমায়ুন রশিদ চৌধুরি পিয়ন ৪ অক্টোবর, ১৯৭১
১৩. ফরিদউদ্দিন আহমেদ কাউন্সিলর, পি.এ. ৪ অক্টোবর, ১৯৭১
%