শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদের সভার কার্যবিবরণী | বাংলাদেশ সরকার কেবিনেট ডিভিশন | ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গোপনীয়
ডিসেম্বর ১৫, ১৯৭১
১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে হয়ে যাওয়া ‘জনপ্রশাসন পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক মন্ত্রিসভার বৈঠকের প্রাসঙ্গিক আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত এবং এ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ও সমস্যা সমাধানের জন্য সম্ভাব্য পন্থা এখানে সংযুক্ত করা হল।
(এইচ টি ইমাম)
কেবিনেট সহকারী
মেমো নং.৪৬৯(৫)\ক্যাব তারিখঃ ১৬/১২/৭১.
প্রাপক ১) প্রতিরক্ষা সচিব
২) পররাষ্ট্র সচিব
৩) স্বাস্থ্য সচিব
৪) কৃষি সচিব
৫) বাণিজ্য সচিব
গোপনীয়
১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, রোজ শুক্রবার ‘জনপ্রশাসন পুনরুদ্ধার’ শিরোনামে
সংগঠিত কেবিনেট মিটিং এর সিদ্ধান্তসমূহ
স্বাধীনতার প্রাক্কালে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান কাজ হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ ও অপরিহার্য চাহিদার যোগানের ব্যবস্থা করা। এটা অর্জনের জন্য বেসামরিক প্রশাসন সংস্কার এবং তা অবিলম্বে পুনরুদ্ধার করা প্রয়োজন।
২. সমস্ত বিষয়গুলি বিবেচনায় রেখে,এটা মনে হচ্ছে যে জেলা পর্যায়ে বা নিচের দিকে প্রশাসনিক কাঠামোতে বিদ্যমান ব্যক্তিদেরকে রেখে দেয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ নেই। সরকার নিম্নলিখিত মর্মে অবিলম্বে বিবৃতি তৈরি করবেঃ
(ক) সরকারের হেডকোয়ার্টার ঢাকায় প্রতিস্থাপনের দুই মাসের মধ্যে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে এবং প্রশাসনিক কাঠামো অনুযায়ী সংস্কার আইন খসড়ার মূলনীতিগুলো সঠিক সময়ে নির্ধারিত হবে।
(খ) দেশপ্রেমহীন কর্মকর্তাদের অপসারণ করা বা শাস্তি দানের জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন স্ক্রিনিং কমিটি গঠিত হবে। যারা সক্রিয়ভাবে শত্রুর সহযোগিতা করছে,তাদেরকে বিচারের জন্য আইনের আওতায় আনা হবে। সেই বিচারে কোনো ছাড় থাকবে না।
<003.144.305>
গ)সরকার সচেতন ছিলো যে,অনেক সরকারি কর্মচারীরা সংযমী ছিলেন এবং এটা নিশ্চিত ছিল আইন অনুযায়ী ন্যায্য বিচার ছাড়া কাউকে দণ্ডিত করা হবে না।
(ঘ)যেসব সরকারি আমলা শত্রু দখলদারিত্বের সময় নিজ নিজ পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন,তাদের উচিত এলাকাগুলো বিমুক্ত হবার সাথে সাথেই স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে স্ব স্ব পদে ফিরে আসা। ২৫ মার্চ ১৯৭১ তারিখের পর নিযুক্ত ব্যক্তিগণ একই জায়গা থেকে বিশেষ ডিউটির অফিসার হিসেবে প্রত্যাবর্তন করবেন। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যে পদে কর্মরত ছিলেন,তারা স্বীয় পদেই বহাল থাকবে এবং পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করবে।
সর্বোপরি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত এইসব পদে নিয়োগ দেয়া অফিসারেরা বহাল থাকবেন এবং বর্তমান সরকারের মনোনীত কর্মকর্তারা পরবর্তী নির্দেশ আসা পর্যন্ত স্পেশাল ডিউটির অফিসার হয়ে থাকবেন।
(ঙ)যেসব সরকারি কর্মকর্তারা স্বীয় পদে বহাল ছিলো এবং বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোতে চলে গিয়েছিল, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অন্য কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য তাদেরকে নিয়োগ না দিলে তাদের উচিত হবে নিকটস্থ সরকারি প্রশাসনের নিকট যোগাযোগ করা যাতে তারা আগের তথ্য জমা দিয়ে স্বীয় পদে ফিরতে পারবেন। পরবর্তী নির্দেশ আসার আগ পর্যন্ত এসব পদে বহাল থাকা বর্তমান অফিসারগন বিশেস ডিউটির অফিসার হিসেবে থাকবেন।
(চ)স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বর্তমানে নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তাদের একটি তালিকা করবে যেখানে তাদের পূর্ববর্তী পদের কোনো উল্লেখ থাকবে না।
৩. স্থানীয় প্রশাসনের ২(চ)অনুচ্ছেদের আওতায় করা ব্যক্তিবর্গের তালিকা প্রধান কার্যালয়ে পাওয়া যাচ্ছে। যতই বাধা আসুক সকল প্রত্যন্ত এলাকার জন্য থানা ইউনিট গঠন করা হবে। ইউনিটের গঠন হবে নিম্নরূপ :
উপাধি | কাজকর্ম |
১। থানা ম্যাজ্রস্ট্রেট | আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়ন ও সমন্বয় সাধন |
২। বিশেষ ত্রাণ কর্মকর্তা | ত্রাণ ও পুনর্বাসন |
৩। থানা খাদ্য অফিসার | প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ |
৪। ওসি | আইনের যথাযথ প্রয়োগ |
৫। থানা পরিদর্শক\সহকারী ইঞ্জিনিয়ার | যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার |
৬। থানা কৃষি অফিসার\টিসিও\টিআই | কৃষিজ পণ্যের সরবরাহ |
৭। থানা মেডিকেল অফিসার | স্বাস্থ্যসেবা |
আইন ও শৃঙ্খলা, পুনর্বাসন, নিত্যপণ্যের ও পুন: প্রতিষ্ঠা এবং পরিসেবার রক্ষণাবেক্ষণ ও সরবরাহ কার্যক্রম ঠিক রাখতে থানা ম্যাজেস্ট্রেট জরুরি প্রোয়োজনে পর্যাপ্ত কর্মী নিযুক্ত করার আইনগত ক্ষমতার অধিকারী হবেন।
<003.144.306>
তিনি হবেন থানা পর্যায়ের আর্থিক নিয়ন্ত্রক। আর্থিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে তিনি তার অধীনস্থ কর্মকর্তাদের বেতন সহ অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাব্য খরচের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যয়ের হিসেব করতে হবে। সিও (উন্নয়ন) বিশেষ ত্রাণ অফিসার কাজ করবেন।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজ ও ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে সচিব নিয়োগ ও জন প্রশাসন কাঠামো তৈরি করা হবে।
৪. অনুচ্ছেদ ৩ এর অধীন প্রতিটি থানা ইউনিটকে তাদের কাজে নামার আগেই এক মাসের বেতন ও ভাতা দিয়ে দেয়া হবে। রাজস্ব কর্মকর্তাকে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার টাকা অগ্রিম প্রদান করা হবে।
বাংলাদেশের জন প্রশাসন ব্যবস্থাকে পুনরায় নিয়ন্ত্রনে আনার জন্য মন্ত্রিসভা নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহন করতে পেরে তারা খুবই সন্তুষ্ট
(ক) জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট,পুলিশ সুপার সব ১৯ টি জেলায় পোস্ট করা হবে। অন্যান্য কর্মকর্তাদের প্রয়োজনবোধে পোস্ট করা হবে।
পৌর / টাউন কমিটি ও গ্রাম প্রশাসন সংক্রান্ত নিম্নলিখিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে:
(খ) পৌর ও টাউন কমিটি কাজ শুরু করার উদ্দেশ্যে কিছু সময়ের জন্য সরকার কর্তৃক প্রশাসক নিযুক্ত করা হবে। সরকার কর্তৃক উপযুক্ত কমিটি নিয়োগ পাবার আগ পর্যন্ত এই প্রশাসকগণ দায়িত্বে থাকবেন। যথাসময়ে কমিটি প্রদান করা হবে।
(গ) আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং গ্রাম পর্যায়ে মৌলিক চাহিদার বিধানের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত নিযুক্ত থাকবে। তাদের সাহায্য করবে ‘গ্রাম রক্ষী বাহিনী’।
(ঘ) মন্ত্রিপরিষদ বেশ আগ্রহের সাথে খেয়াল করেছে যে প্রশাসনের যত বেশি সম্ভব স্তরে জনপ্রতিনিধি যুক্ত করা উচিত। বিশেষ প্রয়োজন যেমন ত্রাণ ও পুনর্বাসন, আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সময়ে এদের সাথে যোগাযোগ করা হবে। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদে একটি লেখা জমা দিবেন এ সিদ্ধান্ত আগেই নেয়া হয়েছিল।
স্বাঃ
– ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
<003.145.307>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ভারতীয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা সম্পর্কিত অস্থায়ী মহাসচিবের সার্কুলার |
বাংলাদেশ সরকার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দপ্তর |
১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
বিজ্ঞপ্তি
১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১
সকল বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার সচিবগণকে আমাকে সে সকল কর্মকর্তাদের নাম ও উপাধি পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হলো যারা তাদের অধীনে ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রেরণ করা হবে। গুরুত্বের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণসহ তালিকা আমার সাথে যোগাযোগ করে ঠিক করার জন্য অনুরোধ করা হল।
(আর কুদ্দুস)
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব.
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
১৫/১২/১৯৭১
নং ৪৫৪ (৯)/ …………..:
১। প্রতিরক্ষা সচিব
২। পররাষ্ট্র সচিব
৩। অর্থসচিব
৪। মন্ত্রিপরিষদ সচিব,
৫। সচিব, GA, ডিপার্টমেন্ট.
৬। স্বরাষ্ট্র সচিব,
৭। স্বাস্থ্য সচিব,
৮। তথ্য ও সম্প্রচার সচিব,
৯। কৃষি সচিব
<003.146.308>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
মন্ত্রী পরিষদের অনুষ্ঠিতব্য একটি সভার বিজ্ঞপ্তি |
বাংলাদেশ সরকার কেবিনেট ডিভিশন |
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গোপনীয়
অবিলম্বে কার্যকর
মন্ত্রিসভার বৈঠক
বিজ্ঞপ্তি
প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুসারে আগামী ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১, শনিবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো আলোচনা হবে।
নং | বিষয় | পৃষ্ঠপোষক |
৬ | গণবাহিনীর সদস্যদের জাতীয় বাহিনীতে অন্তর্ভুক্তি | প্রধানমন্ত্রী |
৭ | সকারি চাকরিজীবীদের পুনঃনিয়োগ | জনপ্রশাসন সচিব |
এইচ টি ইমাম
মন্ত্রি পরিষদ সচিব
১৬/১২/১৯৭১
নং- ৪৭২(৩)/ক্যাবিনেট। তারিখ ডিসেম্বর ১৬, ১৯৭১
প্রাপকঃ ১। প্রতিরক্ষা সচিব (শুধু ৬নং এজেন্ডার জন্য)
২। জনপ্রশাসন সচিব (শুধু ৭ নং এজেন্ডার জন্য)
<003.147.309>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জেলা প্রশাসকদের আশু কর্তব্য সম্পর্কিত সংস্থাপন বিভাগীয় সচিবের চিঠি | বাংলাদেশ সরকার সংস্থাপন বিভাগ | ১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১ |
বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার সংস্থাপন বিভাগ
তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১
মেমো নং সং বি ভি ৩১৭৯ (১৯)
প্রেরকঃ মোঃ নুরুল কাদের
সচিব,সংস্থাপন বিভাগ
প্রাপকঃ জেলা প্রশাসক
বিষয়: জেলা প্রশাসকদের জন্য তাৎক্ষণিক কর্ম
১। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগ দেয়া বেসামরিক প্রশাসকরা তাদের পদের করণে একটি বিশাল কাজের চাপের সম্মুখীন হবে। যুদ্ধের সময়ে শত্রু বাহিনীর সঙ্গে দেশের সমগ্র প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙ্গে পরেছে যা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করার আগেই পুনরুদ্ধার করতে হবে। ইতিবাচক দিক হচ্ছে জনসাধারণের মাঝে ব্যপক উদ্যম দেখা যাচ্ছে যাকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং দ্রুত পুনর্গঠনের দিকে কাজে লাগাতে হবে। প্রশাসকদের এই অবস্থা বজায় রাখতে হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য শ্রেণীর জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
২। অন্যান্য কাজগুলো মধ্যে নিম্নলিখিত গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
ক) আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠাঃ স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা সহ অন্যান্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরেছে। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব হিসাবে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। এজন্য ম্যাজিস্ট্রেসি ও পুলিশকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বৈধ কর্তৃপক্ষ হিসেবে তাদের আগের অবস্থানে ফেরত পাঠানো হবে।
(অ) প্রতিটি থানায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া ও নজর রাখা যে এসপি পর্যাপ্ত জনবল মোতায়েন করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে কিনা।
(আ) সহযোগী এবং অপরাধীদের দণ্ডদান প্রক্রিয়া অল্পের মধ্যে শেষ করতে হবে। এজন্য নির্বাচিত প্রতিনিধি, রাজনৈতিক কর্মী, মুক্তিযোদ্ধাদের এবং সাধারণভাবে মানুষের পূর্ণ সমর্থন লাভ করতে হবে। এটি রাজাকারদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করার কাজেও প্রয়োজন হবে।
খ) সরকার পুনরায় কার্যকরীকরণঃ সরকার ইতিমধ্যে একটি ঘোষণার মাধ্যমে সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের স্বীয় পদে ফিরে আসতে অনুরোধ করেছেন। যারা প্রকাশ্যে শত্রু বাহিনীকে সাহায্য করেছেন তারা ব্যতীত অন্যরা খুব বেশি প্রশ্ন বা বাছাইয়ের মুখে পরবেন না। এই কাজের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নেয়া হবে
<003.147.310>
(অ) সব কর্মীদের তাদের কাজ ফিরে যাওয়ার জন্য সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘোষণা দেয়া হবে। ফিরে আসার পর তারা আপনাকে তাদের পুনরায় যোগদান সম্পর্কে জানাবে।
(আ) যারা প্রকাশ্যে শত্রু সঙ্গে সহযোগিতা করেছে তাদের হেফাজতে নেয়া হবে। এজন্য আপনি স্থানীয় মানুষের আলোচনার পর আপনার বিচার করবেন।
(ই) বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিয়োগ যেখানেই হোক, তা দখলদার সরকার কর্তৃক প্রণীত আদেশ রহিত করবে। যেসব পদ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পূরণ করা হয়েছে তা বলবত থাকবে। এই পদে দখলদার সরকার দ্বারা নিযুক্ত ব্যক্তি স্পেশাল ডিউটি অফিসার হিসেবে থাকবেন।
(ঈ) যারা স্বীয় পদ ছেড়ে গিয়েছিলেন কিন্তু বাংলাদেশ সরকার অধীনে পুনরায় চাকরি পাননি তাদের আগের পদে পুনরায় শুরু করতে বলা হয়েছে। হানাদার বাহিনী দ্বারা এই পদে করা নিয়োগ গুলো বাতিল করা হয়েছে। এইরকম কর্মচারীরা পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত স্পেশাল ডিউটি উপর অফিসার্স থাকবে।
(উ) যারা তাদের পদ ছেড়ে দিয়েছিলেন এবং দখলদার সরকারের সেবা করা থেকে থেকে বিরত ছিল তাদেরকে তাদের অফিসে জয়েন করতে বলা হয়েছে। এবং বাকিরা স্পেশাল ডিউটি অফিসার হিসেবে থাকবেন।
গ) অর্থনৈতিক জীবন পুনর্নির্মাণঃ স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম যত দ্রুত সম্ভব পুনরুদ্ধার করা অপরিহার্য। একই সাথে ব্যাংক সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের দায় ও সম্পদ সহ শত্রুপক্ষ ও রাজাকারদের রেখে যাওয়া সম্পদের একটা সঠিক ধারণা থাকা দরকার। এসকল সম্পদ যেন লুট বা ধ্বংস না হয়ে যায় সেজন্য অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গুলো নেয়া উচিত
(অ) পরবর্তি নির্দেশ দেবার আগ পর্যন্ত সকল ব্যাংক ও কোষাগারকে সমস্ত লেনদেন স্থগিত রাখবে। নগদ টাকা, সোনা সহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিস ব্যাংকে যাচাই বাছাইয়ের আগ পর্যন্ত জমা থাকবে এবং পর্যাপ্ত প্রহরা মোতায়েন করে এগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যাচাইয়ের প্রতিবেদন কোন বিলম্ব ছাড়াই সরকারের নিকট পাঠাবে।
(আ) শত্রুপক্ষের ও পলাতক রাজাকারদের শিল্প প্রতিষ্ঠান,কলকারখানা,দোকানপাট সিল করে দেয়া হবে। দরকার মনে করলে শর্ত সাপেক্ষে জেলা প্রশাসক যথাযথ পরিচালক নিযুক্ত করে উপরোক্ত যেকোনো স্থাপনা চালু করতে পারবে। অন্যান্য স্থাপনাগুলোর ক্ষেত্রে কর্মচারীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হচ্ছে যাতে সরকারি নির্দেশনা পাওয়া মাত্র তারা কাজে যোগ দিতে পারে।
(ই) অন্যান্য সমস্ত কারখানা ও দোকানপাট পুনরায় যত দ্রুত সম্ভব খোলার জন্য জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। হাসপাতাল,ডাক্তার খানা,পৌর পরিষেবা ইত্যাদি অবিলম্বে পুনরায় শুরু করা উচিত।
(ঈ) পাওয়ার পাম্পের মাধ্যমে সেচ কাজে সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
<003.147.311>
(ঘ) যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠাঃ
যোগাযোগ ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠা অগ্রাধিকার পাবার মত একটি বিষয়। এটা ছাড়া সরকারের অন্যান্য সকল কার্যক্রম বিফলে যাবে। অনুগ্রহ করে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার অনুরোধ রইলঃ
(অ) সকল টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ সেবা পুনরুজ্জীবিত করা উচিত। ডাক ও কুরিয়ারকেও যথযথ উপায়ে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও আপনার উচিত যখনই সম্ভব সশস্ত্র বাহিনীর বেতার ব্যবস্থার সদ্ব্যবহার করা।
(আ) সড়ক ও রেল যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করতে হবে। এজন্য এই বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে এবং যা কিছু সম্ভব পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়াও এ বিষয়ে আপনার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করতে হবে।
(ই) নদীপথে যোগাযোগের উপর জোর দিতে হবে।
(ঙ) ত্রাণ ও পুনর্বাসনঃ ত্রাণ সরবরাহ ও উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার কৌশল সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। এটা ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব না হলেও কঠিন হবে। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ সমূহ নেয়া উচিতঃ
(অ) উদ্বাস্তু এবং বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের দেখাশোনা করার জন্য থানা পর্যায়ে মনোনীত ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়া হবে।
(আ) সরকারি খাদ্য গুদামে খাদ্য শস্যের পরিমান যাচাই করে দেখতে হবে।
(ই) শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে এবং একটি সুশৃঙ্খল পদ্ধতিতে নিজ নিজ ঘরে ফিরে যেতে জনসাধারণকে অনুরোধ করতে হবে।
(ঈ) এই বিষয়ে বিশদ আদেশ শীঘ্রই সরকার দ্বারা জারি করা হবে। এই সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরণের সহায়তা দেওয়া যেতে পারে।
(চ) জরুরী সরবরাহঃ খাদ্য,কেরোসিন,লবণ,চিনি,সরিষার তেল সহ অপরিহার্য অনেক জিনিসের সরবরাহে অনেক ঘাটতি হতে পারে। সরকার এই সমস্যাকে বেশ ভাল ভাবেই বিবেচনা করছে। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে
(অ) এইসব পণ্যের বিদ্যমান মজুদের সঠিক তথ্য দরকার যাতে সঠিক বিতরণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।
(আ) মজুদদারী এবং কালোবাজারি প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা
(ই) আগামী তিন মাসের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য সরকারকে জানানো উচিত।
সর্বশেষে আমি নির্বাচিত প্রতিনিধি,রাজনৈতিক কর্মী,মুক্তিযোদ্ধা এবং জনসাধারণের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতার সঙ্গে কাজ করার জন্য জোর দিচ্ছি। আপনার সামনে যে কাজ তা আসলেই বিশাল মাপের এবং এটা সম্পন্ন করার জন্য সকল স্তরের মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।
সব দিকের খবর সম্বলিত একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন খুব দ্রুতই সরকারের নিকট পাঠাতে হবে। এবং খুব শীঘ্রই পুর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
(এম. নুরুল কাদের)
<003.147.312>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
মেমো নং বিডি / ৩১৭৯ (১৯)/১ (২৩)
তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১
অনুলিপিঃ
- চেয়ারম্যান, ট্রেড, কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর বোর্ড.
- চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা সেল.
- প্রতিরক্ষা সচিব
- পুলিশ কমিশনার
- ত্রাণ কমিশনার.
- প্রধান প্রকৌশলী.
- স্পেশাল অফিসার-ইন-চার্জ, পি & টি বিভাগ
- রাষ্ট্রপতির পার্সোনাল সেক্রেটারি
- প্রধানমন্ত্রীর পার্সোনাল সেক্রেটারি
- দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর পার্সোনাল সেক্রেটারি
- এ ডি সি সি-ইন-সি.
তথ্যের জন্য.
(কে আহমেদ)
উপ-সচিব
সংস্থাপন বিভাগ
<003.148.313>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
তারিখ | সুত্র | শিরোনাম |
১৬ ই ডিসেম্বর,১৯৭১ | বাংলাদেশ সরকারের রাস্ট্রপ্রতির কার্যালয় | জাতির উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাস্ট্রপ্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাষণ |
সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ গড়তে হবে।
আমার প্রিয় দেশবাসি,
আপনারা আমার সংগ্রামী সালাম নিবেন।
আজ পশ্চিম পাকিস্তান দখলদার বাহিনী ঢাকায় সম্মলিত বাহিনির অধিনায়কের কাছে বিনাশর্তে আত্মসমর্পন করেছে।গত ২৫শে মার্চ বিভিষীকাময় রাতে যে জাতিয় দুর্যোগের বীভৎসতা শুরু হয়েছিল,এই সাথে সমাপ্তি হলো সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়ের।এই দীর্ঘ নমাসে দখলদার বাহিনির কলঙ্কিত হাতে আমার প্রিয় দেশবাসিরা অনেকে অমূল্য জীবনদান করেছেন।আজ রাতে, তাঁদের সৃতিকে আমি যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে স্বরন করছি এবং তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কাছে আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছি। মাতৃভূমিকে মুক্ত করার সংগ্রামে আমাদের যেসব মুক্তিযোদ্ধা আত্মদান করেছেন,শহীদ হয়েছেন ,আজকের এই রাতে তাঁদের ও স্বরন করি।তাঁরা আজ আমাদের প্রতিটি দেশবাসির হৃদয়ে অমর।তাঁদের এই অপুর্ব আত্মবলিদান অনাদি অনন্তকাল ধরে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের যোগাবে অনুপ্রেরণা,করবে উদ্ধুদ্ধ।বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামি মানুষের জন্য তাঁদের সৃতি হয়ে থাকবে অনুপ্রেরণার উৎস।আমি আজ রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আবার স্বরন করছি।তিনি আজ ও পাকিস্তানের কোন এক অন্ধ কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে দিনাতিপাত করছেন।আসুন, আজ আমরা আমাদের প্রিয়তম নেতাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবার দৃঢ় সংকল্পকে বলিষ্ঠ শপথের আগুনে আরেকবার ঝলসে নিই।স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ এক বাস্তব সত্য।আগামি কদিনের মধ্যেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় বসবে।দেশ আজ ও নিশংস ও নির্মম শত্রুর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত।রক্ত ঝরছে এর বুকের সেই রক্তচিহ্ন থেকে।তাই এ জাতির ভবিষ্যৎকে নবরূপ দান করতে হবে আমাদের। নতুন করে গোড়ে তোলবার দায়িত্ব এই সরকারের।
সরকারের সামনে রয়েছে অনেক কাজ।কিন্তু আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস আল্লহর অশেষ কৃপায় সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সব বাধাই আমরা সফলতার সঙ্গে অতিক্রম করতে সক্ষম হবো।এই মুহুর্তে দেশবাসির কাছে আমার আবেদন শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে এই গৌববোজ্জ্বল ক্ষণটিকে যথাযত মর্যাদা ও শান্তভাবে গ্রহন করুন এবং সুখি ও সমৃদ্ধিশালী একটি সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত আমাদের সরকারের যাবতীয় কর্মপন্থার প্রতি সর্বাত্মাক সহযোগিতা করুন।আমাদের মহান প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারত গত নমাস ধরে আমাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য এই সুবাদে আমি নিজের,আমার সরকারের এবং বাংলাদেশের জনগনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।আমাদের আরেকটি প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভুটান আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে যে সাহস ও দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আমাদের মুক্তি সংগ্রামের প্রতি সমর্থন দানের জন্য আমি সোভিয়াত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র,পোল্যান্ড ও অন্যান্য দেশের নেতৃবৃন্দ,জনগন ও সরকারের প্রতিও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করি।গত নমাস ধরে মুক্তিবাহীনির বীর মুক্তিযোদ্ধারা মাতৃভূমির মুক্তির জন্য যে স্বরনীয় শৌর্য ও দুরতিক্রম্য বীরত্বের প্রমান দিয়েছেন আমি তার জন্য দেশবাসির পক্ষ থেকে তাঁদের অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য আমাদের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের মিত্রবাহীনির যেসব সৈনিকেরা অসীম বীরত্বের সঙ্গে লড়েছেন আমি তাঁদের ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন জানাচ্ছি।
<003.148.314>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
সবশেষে আমি দেশবাসীকে দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ও অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে আমাদের মদত দেবার জন্য অসীম কারণিক আল্লাহ্তালার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আমি,মুসলমান,হিন্দু ,বৌদ্ধ খৃষ্টান সহ সব দেশবাসীকে আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপনের জন্য ও একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ গঠনে আল্লাহয় সাহায্য ও নির্দেশ কামনা করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
জয় বাংলা
<003.149.315>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
যশোরের ডেপুটি কমিশনার কর্তৃক প্রশাসন বিভাগের সচিবের কাছে প্রদত্ত বেসমরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার রিপোর্ট |
বাংলাদেশ সরকার যশোরের ডেপুটি কমিশনারের দপ্তর |
১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সহকারী কমিশনারের কার্যালয়,
যশোর।
মেমো নং……
তারিখঃ ১৭.১২.৭১
প্রেরকঃ জনাব ওয়ালিউল ইসলাম
জেলা প্রশাসক,যশোর।
প্রাপকঃ সচিব
প্রশাসন বিভাগ,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার,মুজিবনগর।
নিম্নস্বাক্ষরিত আদেশটিতে থানা পর্যায় পর্যন্ত প্রশাসন গঠনের রূপরেখা দেয়া আছে। বর্তমান উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিজ এলাকার ও.এস.ডি. প্রসাশন হিসেবে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। নড়াইলের উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। সেকেন্ড অফিসারকে ভারপ্রাপ্ত ও.এস.ডি. প্রশাসন হবার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। ২০টি থানার ১৮টি তেই পুলিশ কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ১৩টি থানায় সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) ইতিমধ্যে যোগ দিয়েছেন এবং যদি সোমবার নাগাদ বিদ্যমান কর্মকর্তারা যোগ না দেন তবে বাকি থানাগুলোয় সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন)নিয়োগ দেয়া হবে। ঐসব থানায় সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন)এর স্থলে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) ভারপ্রাপ্ত হবেন। কর্মকর্তাদের যারা বাংলাদেশ সরকারে যোগদান করার প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাদের একটি তালিকা যুক্ত করা হল।
উপ-বিভাগীয় পর্যায়ে নতুন উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তা নিয়োগ দেবার অনুরোধ করা হচ্ছে, যেহেতু পুরনো উপ-বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সুস্পষ্ট কারণেই সহজভাবে কাজ করা কঠিন হবে।
জেলা প্রশাসক, যশোর
১৭.১২.৭১
<003.150.316>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর তাজউদ্দিন আহমদের ভাষণ | বাংলাদেশ সরকার তথ্য মন্ত্রণালয় | ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ |
স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে
দেশবাসী সংগ্রামী ভাইবোনেরা,
বাংলাদেশে দখলদার বাহিনী আত্মসমর্পন করেছে।সাড়ে সাত কোটি মানুষের মুক্তিসংগ্রাম আজ সাফল্যের তোরণে উপণীত হয়েছে।
গতকাল বিকেল পাঁচটা এক মিনিটে সম্মিলিত ভারতীয় সৈন্য বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খাঁর নিযুক্ত “খ” অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজি তার অধীনস্থ পাকিস্তানি স্থল,বিমান ও নৌবাহিনী ,আধা সামরিক ও বেসামরিক সশস্ত্র বাহিনীসহ বিনা শর্তে আত্মসমর্পন করেছেন।
পঁচিশে মার্চ বাংলাদেশের জনসাধারণের যে দুঃস্বপ্নের রাত্রী শুরু হয়েছিল,এতদিনে তার অবসান হল।বাংলাদেশে আমাদের নিজেদের কর্তৃত্ব পুর্নরুপে প্রতিষ্ঠিত হল।এত অল্প সময়ে বোধহয় আর কোন জাতির স্বাধীনতার সংগ্রাম সফল হয়নি।স্বাধীনতার জন্য এত মূল্য ও বোধহয় আর কোন জাতি দেয়নি।
আজকের বিজয়,বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের বিজয়,ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর বিজয়,সত্য,ন্যায় ও গনতন্রের বিজয়।
আমরা যারা আজ স্বাধীনতার সুর্যোদয় দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছি,আসুন শ্রদ্ধ্যাপ্লুত হৃদয়ে,কৃতজ্ঞচিত্তে স্বরণ করি সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে, যারা নিজেদের উতসর্গ করেছেন সকলের জন্য।
পাকিস্তানের সামরিক চক্র চেয়েছিল বর্বর শক্তি দিয়ে বাংলাদেশের জনগনকে দমন করে রাখতে।হানাদারেরা দেশের মানুষকে হত্যা করেছে,পঙ্গু করেছে,ঘরবাড়ি জ্বালিয়েছে,আমাদের জাতিয় সম্পদ ধ্বংস করেছে।এই দুঃসময়ে আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ভারত।আর তাই পাকিস্তানি সমর নায়কদের আক্রোশ গিয়ে পোড়ে ভারতের উপর।বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধকে তারা রূপান্তরিত করে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে।পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতীয় সেনারা পাকিস্তানি আক্রমন পতিহত করেছেন।আর পুর্ব রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলিতভাবে সংগ্রাম করে তাঁরা মাত্র বারোদিনের যুদ্ধে দখলদার সেনাদেরকে আত্মসমর্পনে বাধ্য করেছেন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিপর্যয় এত দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হতে পারল ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনির সর্বাধ্যক্ষ জেনারেল মানেকশার নেতৃত্বে এবং সম্মিলিত বাহিনীর অধ্যক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরার নিপুণ রণকৌশলে।এই দুই সেনাপতির কাছে এবং ভারতের স্থল,নৌ ও বিমানবাহিনীর কাছে আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
আমাদের সাফল্যে এই মুহুর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্ধিরা গান্ধীর কাছে বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধাবনিতা গভির কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে।তিনি যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকার ও নেতাদের কাছে আমাদের ন্যায় সঙ্গত সংগ্রামের ব্যাখা দিয়েছেন এবং যেভাবে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীর দায়িত্ব গ্রহন করেছেন,ইতিহাসে তার নজির নেই। আমাদের সংগ্রামের ফলে ভারতের জনসাধারণের যে বিপুল ভার বহন করতে হয়েছে সে বিষয়ে ও আমরা সচেতন।তাদের এই কষ্ট স্বীকার সার্থক হয়েছে। শরণার্থীরা এখন মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যেকে নিজের ঘরে ফিরে আসবেন।
<003.150.317>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
আমাদের সংগ্রামের প্রতি দৃড়তাপুর্ন সমর্থন দানের জন্য বাংলাদেশের মানুষ সোভিয়াত ইউনিয়নের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।পোল্যান্ড এবং অন্য যেসব দেশ আমাদের ন্যায্য সংগ্রামকে সমর্থন করেছে,তাদের কাছে ও আমরা কৃতজ্ঞ।
আমরা একথা ও ভুলিনি যে,পৃথিবীর বিভিন দেশের জনগন,সংবাদপত্র,বেতার ও টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য আমাদের সংগ্রামকে যথার্থরুপে তুলে ধরে এই সংগ্রাম সফল করতে সাহায্য করেছেন।
দেশবাসী ভাইবোনেরা,
বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষ হয়েছে,কিন্তু আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি।আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন ও শত্রুর কারাগারে।পাকিস্তানি শাসকদের আমি আহবান জানাচ্ছি তাঁরা শেষ মুহুর্তের অন্ততঃ শুভবুদ্ধির পরিচয় দিন,বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করুন।এই দাবী মেনে নেওয়ার সুফল সম্পর্কে পাকিস্তানকে অবহিত করাও তার বন্ধুদের কর্তব্য বলে আমি মনে করি ।
বন্ধুগন,
বাংলাদেশের স্বাধীনতা এলো এক রক্তাপ্লুত ভূমিতে,এক ধ্বংসস্তুপের মধ্যে।জনগণের আশা ও আকাংখা অনুযায়ী এই দেশকে নতুন করে গড়ে তোলার দায়িত্ব এখন আমাদের সামনে।দেশের দ্রুত পুনর্গঠনের কাজে আমরা ভারতের সহযোগিতা ও সাহায্য কামনা করবো।শুধু পুনঃনির্মাণ নয়- নতুন সমাজ গঠনের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।সংগ্রামের কালে সমগ্র জাতির যে ঐক্য ও আত্মত্যাগের পরিচয় আমরা দিয়েছি,সে ঐক্য ও ত্যাগের মনোভাব অটুট রাখতে হবে।তবেই গণতান্ত্রিক ,ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের ভিত্তি দৃঢ় হবে।সেই নতুন আলো পথে আমরা আজ যাত্রা করলাম।
জয় বাংলা
<003.150.318>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
পরবর্তী দলিলসমূহের তারিখ নির্ধারন করা সম্ভব হয়নি,
ফলে সেগুলি সন্নিবেশের ক্ষেত্রে কালানুক্রম পদ্ধতি ব্যাহত হয়েছে।
দলিলসমূহের কালপর্যায় ২৬শে মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর,১৯৭১
<003.151.319>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রবাশী বাংলাদেশীদের জন্য বাংলাদেশ সরকারের ঘটনাবলীর ব্যাখ্যা (লিফলেট) |
বাংলাদেশ সরকার প্রচার দপ্তর |
……………. ১৯৭১ |
প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশের মিত্রদের উদ্দেশ্যে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
মুজিবনগর
বাংলাদেশ
সুধী,
বাংলাদেশ যুদ্ধরত। ২৫শে মার্চ, ১৯৭১ থেকে বাংলার মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী হানাদার সেনার বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সেনা যথেষ্ট দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও আমাদের মুক্তিবাহিনীর সামনে তারা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে। পাকিস্তানের উদ্দেশ্য এখানে পরিষ্কার। বাংলাদেশ নিয়ে তাদের যে ঔপনিবেশিক অভিসন্ধি সেটাকেই তারা বহাল রাখতে চাচ্ছে। বাংলাদেশিদের কাছ থেকে তারা জীবন ছিনিয়ে নিতে চায়, বেঁচে থাকার অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায়। তাই এখন মরিয়া হয়ে তারা ধ্বংস, হত্যা আর রক্তক্ষয়ের পন্থা বেছে নিয়েছে। পশিম পাকিস্তানী সেনারা শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে, লাখ লাখ মানুষ হত্যা করেছে, ধ্বংস করেছে বাংলাদেশি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনা। ওদের বোমার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। আমাদের মায়েরা জীবন দিয়েছে পাকসেনার হাতে, ধর্ষিত হয়েছে আমাদের বোনেরা, দেশছাড়া হয়েছে হাজার হাজার অসহায় পরিবার। পাকিস্তানের বিভীষিকাময় সেনাদল শিশুদের হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে ঘরবাড়ি, ছিনিয়ে নিয়েছে ফসল আর গবাদি পশু। ওদের অত্যাচার থেকে কোনো বাংলাদেশি নিরাপদ নয়।
কিন্তু বাংলাদেশের বীর জনতা এই অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করছে না। তারা রুখে দাঁড়িয়েছে, চালিয়ে যাচ্ছে সংগ্রাম। ২৫শে মার্চের হত্যাযজ্ঞের খবর শোনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে দলে দলে মানুষ মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।
মানবসমাজের ইতিহাসে এমন গণহত্যার নজির আর দেখা যায় না। এখানে সে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের বিশদ বিবরণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কারণ ইতিমধ্যে বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যমগুলোর সাহায্যে, বিশেষ করে ভারতীয় সংবাদপত্রের সাহায্যে সে খবর আপনাদের কাছে পৌঁছে গেছে বলেই বিশ্বাস করি।
এ যুদ্ধ আমাদের সবার। প্রত্যেক বাংলাদেশি, তার অবস্থান ইংল্যান্ডে হোক বা আমেরিকাতে হোক বা জাপানে হোক, একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমরা আবেদন করছি আপনার হাতের কাছে যা আছে, আপনার যতোটুকু সামর্থ্য আছে তাই নিয়ে এ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। বিশ্বজুড়ে মানুষের সমর্থন অসহায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশের মাটিতে এ যুদ্ধ যতোটা গুরুত্বপূর্ণ, দেশের বাইরেও ঠিক ততোটাই।
সুধী, আমাদের দেশের সন্তানেরা এখন স্বাধীনতার জন্য নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে লড়ে যাচ্ছে। আপনারা যারা দেশের বাইরে আছেন, তারা নিজেদেরকে মুক্তিযোদ্ধা ফ্রন্ট হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করে, মিটিং বা সেমিনারের মাধ্যমে যুদ্ধের খবর ছড়িয়ে আর রিলিফ-এর জন্য অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারেন।
<003.151.320>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
কী করতে হবে?
১. বাংলাদেশ লিবারেশন/মুক্তি ফ্রন্টের মতো সংগঠন তৈরি করুন। যদি দেশে এমন একাধিক সংগঠন থেকে থাকে, তাহলে তাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে একটি বড় ফেডারেশন-এর মতো সংগঠন তৈরি করতে হবে। যদি একান্তই অসম্ভব না হয় তাহলে সবসময় উপরোক্ত পন্থা অনুসরণের অনুরোধ করা হচ্ছে।
২. বাংলাদেশের নিয়মানুযায়ী একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। অ্যাকাউন্টটির দায়িত্বে যেন কমপক্ষে দুইজন মানুষ থাকেন। যোগাযোগ করার জন্য একটি কেবল কোডের দরকার পড়বে আর প্রতি যোগাযোগের জন্য একটি স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে।
৩. বিশ্বজুড়ে যে জনমত, বিশেষ করে আমেরিকান এবং কানাডিয়ান সংবাদপত্রে প্রকাশিত মতামত বাংলাদেশকে সমর্থন করলে বাংলাদেশের জনগণের খুবই উপকার হবে। এ উদ্দেশ্যে আপনার সহায়তা একান্তভাবে কাম্য। আপনার সংগঠন থেকে পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক-শিক্ষিকা বা উকিল সহ অন্যান্য পেশা থেকে মানুষ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করুন। চাইলে দেশীয় সদস্যের সাথে অন্যান্য জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যরাও এ কমিটিতে যোগদান করতে পারেন, যারা আপনার অনুপস্থিতিতে এই আন্দোলনকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন। বিশ্বজুড়ে অন্যান্য যেসব সংগঠন আপনাদের সাহায্য করতে পারে, বিশেষ করে জাতিসংঘ, তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে।
৪. সোভিয়েত ইউনিয়নের দূতাবাস, ভারতীয় হাই কমিশন সহ বাংলাদেশের অন্যান মিত্র দেশের দূতাবাসের সাথে আপনাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখার ও সম্পর্ক আরও উন্নত করার অনুরোধ করা হচ্ছে।
৫. আপনার লবিং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের মনোভাব যাচাই করে দেখার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
৬. বাংলাদেশী কূটনীতিবিদদের পাকিস্তান থেকে আলাদা হবার বিষয়ে সমর্থন ও প্ররোচিত করুন আর যেখানে সম্ভব সেখানে স্বাধীন বাংলার মিশন প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সেই দেশের সাহায্য নিন।
৭. গণহত্যা থামানো ও মানবতার বিরুদ্ধে গিয়ে বাঙ্গালিদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালানোর জন্য ইয়াহিয়া খান এবং তার দোসরদের যথাযথ বিচার চাইতে হলে আপনাকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করতে হবে। ইন্টারন্যাশনাল জুরি কমিশনের সদস্যদের সাথে দেখা করে তাদেরকে গণহত্যার ব্যাপারে খুলে বললেও উপকার হতে পারে।
৮. জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ ও এর সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য ফোরামের নীতির সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। গণহত্যা প্রতিরোধে জাতিসংঘের যে সনদ আছে সেটাও আপনার কাজে সহায়তা করবে। শিক্ষিত, দায়িত্বশীল ও অনুপ্রাণিত আন্তজার্তিক জুরি সদস্যদের সাথে কথা বলুন।
৯. আপনাদের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতিসংঘ থেকে একটি দল বাংলাদেশে পরিদর্শনের জন্য আসতে পারে।
১০. বাংলাদেশে অসুখ এবং দুর্ভিক্ষের প্রকোপ বেড়ে যাওয়া প্রকট সম্ভাবনা আছে। পাক হানাদার সেনা বেশিরভাগ মজুদ করা ফসল বা শস্যক্ষেত্র লুটে নিয়েছে কিংবা বোমার আঘাতে ধ্বংস করে দিয়েছে। এ কারণে দেশে খাদ্যের ভয়ংকর অভাব দেখা দিয়েছে। লাখ লাখ মানুষ ইতিমধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে আছে। দয়া করে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাথে যোগাযোগ করুন ও ত্রাণ পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।
১১. সবধরনের তদবিরের দায়িত্ব অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদের দ্বারা অত্যন্ত সতর্কতা ও কৌশলের সাথে চালাতে হবে। মনে রাখতে হবে যে সামান্য একটি মাত্র ভুলেও আমাদের বিশ্বমঞ্চে এতোদিনের অগ্রযাত্রার ক্ষতি হতে পারে।
<003.151.321>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
যথাসময়ে আমাদের প্রতিনিধি পাঠানো হবে এবং সে মৈত্রী স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে আপনাকে সাহায্য করবে। আমাদের মূলনীতি হচ্ছে “কারও সাথে শত্রুতা নয়, সবার সাথে বন্ধুত্ব।” সারা বিশ্বের স্বাধীনতাপ্রেমী মানুষের সাথে আমরা বন্ধুত্ব ও সৌহার্দ্যের সম্পর্ক স্থাপন করতে চাই। আমরা বিশ্বজুড়ে শান্তি দেখতে চাই।
১২. যেহেতু ভারতীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে আপনি ইতিমধ্যে দেশে ঘটে যাওয়া রক্তক্ষয় আর ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে জানতে পেরেছেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত বলার প্রয়োজন মনে করছি না। বিদেশী সংবাদমাধ্যমগুলোকে একটা খবর হয়তো জানানো প্রয়োজনঃ পাকিস্তানীরা কোনো বিদেশী সাংবাদিককে দেশে থাকতে দিচ্ছে না। বাংলাদেশে ঢোকার এখন একটাই পথ আছে, ভারতের সীমানা পার করে। এভাবে সংবাদ সংগ্রহ করা কষ্টকর হলেও তা-ই হবে সত্য সাংবাদিকতা, আর আমরা যেভাবে সম্ভব এ ধরনের সাংবাদিকতাকে সমর্থন করবো। আমরা ব্রিটিশ সাংবাদিকদের দেশে আসার আবেদন জানাচ্ছি। যেন তারা নিজ চোখে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশ সরকারের অবস্থা দেখতে পারে। বিশেষ করে দেশের মানুষ যে উদ্যম ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে লড়ছে তা তাদের জানা খুবই জরুরি বলে মনে করি।
১৩. পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাদল শুধু শহরাঞ্চল আর ক্যান্টনমেন্টগুলো দখল করতে পেরেছে। বাংলাদেশের বাকি সব অঞ্চল বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণে। এই অঞ্চলগুলোর নিষ্পাপ, অসহায় মানুষেরা তাদের খাদ্য, বাসস্থান আর নিরাপত্তার জন্য সরকারের ওপরই নির্ভর করছে। এই বিশাল কাজে আমাদের দেশে থাকা বা প্রবাসী প্রত্যেক বাংলাদেশির সাহায্য দরকার।
অতিপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিঃ
- কমপক্ষে ৩০০ মাইল রেঞ্জের মিডিয়াম ওয়েভ ব্রডক্যাস্ট ট্রান্সমিটার
- আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং গোলাবারুদ (নির্দিষ্ট তথ্য ও সরবরাহের উপায় জানতে আপনার দেশে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করুন। প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করার আগে এ বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা করবেন না।)
- যুদ্ধকালীন যোগাযোগের জন্য ওয়াকি-টকি আর ওয়্যারলেস ট্রান্সমিটার
- খাদ্যশস্য
- লবণ
- দেশলাই ও কেরোসিন
- পোশাক (সামরিক এবং বেসামরিক)
- ঔষধ এবং অন্যান্য মেডিক্যাল সাপ্লাই
- পেট্রোল, ডিজেল ও অন্যান্য জ্বালানি
- অন্যান্য অপরিহার্য সরঞ্জাম
- নগদ টাকা (স্পষ্ট নির্দেশনা পাবার আগে নয়)
- তাবু এবং তেরপল
- বুট
১৪. অন্যান্য তথ্যের জন্য নিম্নোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুনঃ
বাংলাদেশ মিশন, ৯, সার্কাস অ্যাভিনিউ, কলকাতা-১৭
স্বাক্ষরঃ রহমত আলি
(বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে)
<003.152.322>
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
“বাংলার বাণী”- একটি লিফলেট | বাংলাদেশ সরকার,প্রচার দপ্তর | …………১৯৭১ |
বাংলার বাণী
বাংলার নির্যাতিত,নিপিরিত,মুক্তিপাগল সংগ্রামী ভাইয়েরা-
বাঙালী জাতি আজ এক চরম অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন। তথাকথিত পশ্চিমা বেনিয়া গোষ্ঠী শেষবারের মত বাঙালী জাতির উপর চরম আঘাত হেনেছে। তারা চায় বাঙালী জাতিকে চিরতরে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে উঠিয়ে দিতে বাঙালীর অপরাধ তারা আর শোষিত হতে চায় না। ইসলামের নামে মিথ্যে প্রহসন দিয়ে, তাই বলে চব্বিশটি বছর বাংলাদেশকে শোষণ করেছে। সাধিনতা-উত্তরকাল থেকে আমাদের উপর চলেছে শাসন আর শোষণের যাঁতাকল। ১৯৫২ সালে মায়ের ভাষার জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি, পর্যায়ক্রমে ‘৬২সাল, ‘৬৬সাল, ‘৬৯সাল এ দেশে “লাল রক্তের” ইতিহাস হয়ে রয়েছে। কত মা তার পুত্রকে, কত বোন তার ভাইকে, কত স্ত্রী তার স্বামীকে হারিয়েছে। শহীদের আত্মা আজ বাঙলার পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তাই বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষ আজ একতাবদ্ধ। তারা হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছে। পৃথিবীর কোন শক্তিই তাদের আজ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। শহীদের অতৃপ্ত আত্মাকে তারা তৃপ্ত করবেই। বঙ্গবন্ধু বলেছেন, “রক্ত যখন দিয়েছি-আর রক্ত দেব,এদেশকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ”। ইতিহাস কখনও মিথ্যে হতে পারে না। আজ জাগরিত বাংলার মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুহস আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ-বাংলাকে শাসন ও শোষণমুক্ত গণপ্রজাতান্ত্রিক “বাংলাদেশ” রুপে প্রতিষ্ঠা করবেই।
সতর্কবাণী
(এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারী যারা সব সময় বাংলার সাথে বেঈমানি করেছে, তাদের কাছ থেকে সাবধান)
(১) মুসলিম লীগ ও জামায়েতের দালালদের কথায় কর্ণপাত করবেন না। মনে রাখবেন-তারা আমাদের বড় শত্রু
(২)অবাঙালি বা অপরিচিত লোকের কাছে গোপন তথ্য প্রকাশ করবেন না।
(৩) ঢাকা বেতারের গায়েবী আওয়াজে বিশ্বাস করবেন না।
নির্দেশ
(১) পশ্চিমা পশুদের খতম করার আগে নিজেদের বিসশাসঘাতকদের খতম করুন।
(২) পশ্চিমা এবং চীনের দ্রব্য-সামগ্রী ব্যাবহার বর্জন করুন।
(৩) অবাঙালীদের দোকানে যাতায়াত বন্ধ করুন।
(৪) বাংলার সাথে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে তাদের নাম তাকিলাভুক্ত করুন এবং নিকটস্ত ‘মুক্তিবাহিনী’ কে প্রদান করুন।
(৫) সরকারি কর্মচারী যারা আছেন তারা কাজে যোগদান থেকে বিরত থাকুন।
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম-
এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম”
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান
জয় বাংলা