You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
তথ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পর্কে তথ্য সচিব কতৃক প্রতিরক্ষা সচিবকে লিখিত একটি চিঠি

বাংলদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

২৯ নভেম্বর , ১৯৭১

জয় বাংলা                                                                                                                                     তথ্য, প্রচার ও বেতার দফতর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর

ডিও নম্বরঃ পিআইপিবি                                                                                                                              ২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

প্রেরকঃ   জনাব এ এইচ খান

সচিব, বাংলাদেশ সরকার

সংবাদ, তথ্য, সম্প্রচার ও প্রচার মন্ত্রণালয়

আমার প্রিয় সামাদ,

আপনার মন্ত্রণালয়ের ডিও লেটার নম্বর সি-০০১/১৭০ তারিখ ২৩/২৪.১১.১৯৭১ এর দিকে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আমি এতদসঙ্গে জনাব আলমগীর কবিরের ২৭/১১/৭১ তারিখের চিঠির একটি কপি সংযুক্তি করছি।  এই চিঠিটির আর ব্যখ্যার প্রয়োজন নেই। এই রিপোর্ট আমার আর কোনো কিছু যোগ করার মত নেই। জনাব বাদশা এর চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবেদনশীল বিষয়ে বিরাজমান কর্মপদ্ধতিকে বাতিল করে দেবার আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এর সাথে কোনোরূপ যোগাযোগ করা হয় নি। উপরন্তু, এটা প্রতীয়মান হয় যে বহিঃপ্রচার বিভাগ এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে যা এমন অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যে দায়ী।

 তাই আমি সুপারিশ করতে চাই যে, অতীত ঘটনার জন্য কে দায়ী তা শনাক্ত করার চেষ্টার পেছনে নিজেদের শক্তি খরচ না করে একত্রে বসে এরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে একটি উপযোগী কর্মপদ্ধতি গ্রহণ করাটাই অধিকতর ফলপ্রসূ হবে।

আন্তরিকতার সাথে

(এ এইচ খান)

জনাব সামাদ

প্রতিরক্ষা সচিব
বাংলাদেশ সরকার

আসল কপি

জনাব এ এইচ খান, সচিব,

সংবাদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সরকার

রেফারেন্স: ডিও নম্বর. পিআইপিবি, ২৫ নভেম্বর ১৯৭১

জনাব,

আপনার চিঠি আমাকে একইসাথে ব্যথিত এবং বিস্মিত করেছে। কারণ যেসকল ঘটনা ঘটেছে বলে আপনার কাছে খবর পৌঁছানো হয়েছে সেগুলো আংশিক সত্য এবং ডাহা মিথ্যার এক মিশ্রণ বৈ অন্য কিছু নয়।

<003.124.253>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমি বিস্মিত যে এরকম অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে কিভাবে আনা যায়, যখন সংশ্লিষ্ট ‘প্রতিবেদক’ কলকাতায় আমার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারতেন। অন্যকিছুর জন্য না হোক, অন্তত খবরটির সত্যতা নিরূপনের জন্য হলেও। এতে আধিকারিক কর্তৃপক্ষের অমার্জনীয় অপব্যবহার নিশ্চিতভাবেই ফুটে ওঠে- যা সেসব কশাঘাতের একটি যাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষ রক্তের মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

সত্যিটা এখানে তুলে ধরলাম। দেশে ও দেশের বাইরে কমপক্ষে প্রায় ১২ বছর ধরে আমি পেশাদার সাংবাদিক। সেই সুবাদেই অনেক বিদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে আমার জানাশোনা আছে। প্যারিসের ম্যাচ অ্যান্ড ল’এক্সপ্রেসের পিটার কারমাইকেল তেমনই একজন। এই মাসের প্রথম সপ্তাহের কোনো একটা সময়ে কলকাতায় অনেকটা ঘটনাক্রমেই পিটারের সঙ্গে আমার দেখা হয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তাহেরুদ্দিন ঠাকুরের সঙ্গে যথাযথ পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আমার সহায়তা কামনা করেন। মুক্তিবাহিনী নিয়ে একটি সচিত্র প্রতিবেদন করতে আগ্রহী তিনি, যাদের প্রতি হঠাৎ করেই পশ্চিমা গণমাধ্যম তুমুল আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমি সেটাই করেছি। মি. ঠাকুর পিটাররকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তাকে ভারতীয় ছাড়পত্র পাইয়ে দিতে তিনি চেষ্টা করবেন। তিনি এটাও বলেছিলেন যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কোনো আপত্তি না থাকলে বাংলাদেশ সরকার খুশিমনেই তাকে কোনো একটি মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প পরিদর্শনে পাঠাবে। তবে তিনি আমাকে গোপনে বলেন যে, বিশেষ ধরণের আগাম ছাড়পত্র ছাড়া কোনো বিদেশীকে এ ধরণের অনুমোদন না দিতে বাংলাদেশ সরকারকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গোপন সংবাদ পাঠিয়েছে।  এ ব্যাপারে আমার এতটুকুই জানা ছিল।

নভেম্বরে দ্বিতীয় সপ্তাহে রেডিও বাংলাদেশের অনুষ্ঠানের কিছু কাজে এক দিনের জন্য আমি মেজর জলিলের সেক্টরে গিয়েছিলাম। বাবুল চৌধুরির তত্ত্বাবধানে জহির রায়হানের একটি ফিল্ম ইউনিটের সাথে আমি গিয়েছিলাম, যারা আপনার মন্ত্রণালয়ের জন্য তৈরী হচ্ছে এমন কিছু চলচ্চিত্রের শুটিংয়ের জন্য সেখানে যায়। টাকিতে হুট করেই পিটারের সঙ্গে আমার দেখা। মনে হলো টাকিতে তিনি মোটেও আগন্তুক নন বরং আগেও বেশকবার এসেছেন। তিনি আমাকে বলেন যে বাংলাদেশে প্রবেশ করবার সম্পূর্ণ ভারতীয় ছাড়পত্র তার আছে এবং ওই কাজের জন্যই তিনি মেজর জলিলের সঙ্গে দেখা হওয়ার অপক্ষায় ছিলেন। মেজর জলিলের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমি তাকে বলি যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ফটোগ্রাফার আপনার সঙ্গে দেখা করতে বাইরে অপেক্ষা করছে। মেজর জলিল তাৎক্ষনিক তাকে ভেতরে ডেকে নেন। তাদের মধ্যে কি আলোচনা হয়েছে সেটা আমার মাথা ঘামানোর বিষয় নয়। অবশ্যই আলোচনার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। মুক্তি বাহিনী যে সত্যিই আছে এবং তারা পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদারদের বিতাড়িত করার সামর্থ্য রাখে, সেটা পশ্চিমা দুনিয়াকে জানানোর প্রয়োজনীয়তা পিটার মেজর জলিলকে বোঝাতে সক্ষম হন। তখন মেজর জলিল জিজ্ঞেস করেন পিটারের ভারতীয় ছাড়পত্র আছে কিনা। পিটার হ্যাঁ-সূচক জবাব দেন। এরপর মেজর জলিল তাকে কাছেরই এক মুক্তি বাহিনী ক্যাম্পের ছবি নেবার অনুমতি দেন। পরদিন একটি অগ্রবর্তী ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়ে কিছু লড়াই দেখানোর প্রতিশ্রুতিও তিনি তাকে দেন। এরপর মেজর জলিল তার একজন অফিসারের তত্ত্বাবধানে পিটারকে সেই ক্যাম্পে পাঠান। তিনি ক্যাপ্টেন হুদাকে বাংলাদেশের প্রায় চার মাইল ভেতরের অগ্রবর্তী ঘাঁটি অব্দি পিটারকে সঙ্গ দিতেও নির্দেশ দেন। কাকতালীয় ব্যাপার হল আমাদের কাজটাও ছিল ঐ একই ক্যাম্পে। প্রায় একটা পর্যন্ত আমি সেখানে কাজ করি। তারপর আরেকটি ক্যাম্পে চলে যাই। পরে বিকেলে আমি আমার জিনিসপত্র নেবার জন্য প্রথম ক্যাম্পে আসি, কারণ সেদিনই আমার কলকাতায় ফেরার কথা। আমি দেখলাম ক্যাম্প কমান্ডারের সঙ্গে পিটারের বেশ জমে গেছে। সে বললো, প্রথম দিনের কাজে সে খুবই খুশি। তবে একই দিনে বাংলাদেশে ঢুকতে সে খুবই আগহী ছিল। আমি যখন কলকাতার উদ্দেশে রওনা হলাম তখন সে ক্যাপ্টেন হুদার জন্য অপেক্ষা করছে, যিনি তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যাবেন। বাবুল চৌধুরি পিটারকে একদমই চিনতেন না। তিনি সে রাতেই কিছু টুকটাক কাজ সেরে নেওয়ার জন্য বশিরহাটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, ফিরবেন পরদিন সকালে।

<003.124.254>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

দুই দিন পর টাকি থেকে ফিরে বাবুল প্রতিবেদন দেয় যে, পরদিন কিছু বিদেশী সাংবাদিককে নিয়ে একই সদরদপ্তরে যান জনাব বাদশা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমিনুল হক বাদশা) এবং পিটারকে সেখানে দেখে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান কারণ বাদশার সাহায্য ছাড়াই সে ওখানে গিয়েছে। যাইহোক, পিটারকে তিনি তার দলভুক্ত করে নেন এবং ‘মুক্তাঞ্চলে’ তাদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেন।

এখন সত্যিটা হলো এসবই একজন সেক্টর কমান্ডারের ওপরই নির্ভর করে। তিনি অনুমতি না দিলে পিটার ক্যাম্পের ধারেকাছে যেতে পারত না। আমি যতদূর জানি মেজর জলিল একজন অভিজ্ঞ অফিসার এবং তিনি পরিষ্কারভাবেই জানতেন এখানে ঝুঁকি কতটা। তিনি পিটারকে বলেছিলেন যে ক্যাম্পটি সীমানা অঞ্চলে অবস্থিত তবে পুরোপুরি বাংলাদেশের মাটিতে নয়। পিটার তাকে একজন পেশাদার হিসেবে প্রতিশ্রতি দিয়েছিল যে সত্যিটা বাইরের দুনিয়ায় ফাঁস করবে না। মেজর জলিল তাকে বিশ্বাস করেছিলেন কারণ তিনি জানতেন খ্যাতিমান পশ্চিমা সাংবাদিকরা পেশাদারী নৈতিকতার অংশ হিসেবেই কথা দিয়ে কথার বরখেলাপ করেন না এবং বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে এটা তাদের সাফল্যেরও অন্যতম কারণ। প্রায় সব বিদেশী সাংবাদিকই জানেন বাংলাদেশ সরকারের সদরদপ্তরগুলো কাদের মাটিতে অবস্থিত। কিন্তু তারা কখনোই সত্যিটা ফাঁস করেননি। আমার তো মনে হয় প্রায় সব বিদেশী সাংবাদিক একদম পুঙ্খনাপুঙ্খভাবে জানেন এই মুহূর্তে আমাদের কতগুলো শক্তিশালী ট্রেনিং ক্যাম্প আছে এবং সেসব কোথাকার মাটিতে অবস্থিত। কিন্তু তারা সস্তা সত্য উন্মোচনের পথে যান নি এবং সেই কারণেই যুদ্ধের সাতমাস পার হবার পরেও মুজিবনগরের সত্যিকার অবস্থান এখনো অনুমান করা যায়নি। ‘ভারতীয় মাটি’ বলে বাড়িয়ে বলবার এই প্রদর্শনী বরং সন্দেহজনক এবং গুরুগম্ভীর হওয়া সম্ভবপর বলে মনে হয় না।

সুতরাং অভিযোগের জবাবে আশা করি আমি এটা বোঝাতে সমর্থ হয়েছি যে পিটার কারমাইকেলকে কোনো মুক্তি বাহিনী প্রশিক্ষণ শিবিরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা বা আগ্রহ, কোনোটাই আমার ছিল না। দ্বিতীয়ত পিটার এক রাতের বেশি ক্যাম্পে থাকতে পারে নি কারণ দ্বিতীয় দিন আমিনুল হক বাদশার সঙ্গে তার দেখা হয়েছিল। আর যদি আগের পরিকল্পনা মোতাবেক তাকে অগ্রবর্তী ঘাটিতে নিয়ে যাওয়া হয়ে থাকে তাহলে সে এক রাতও সেই ক্যাম্পে ছিল না।

এটা বিস্ময়কর যে এই তথাকথিত ‘প্রতিবেদক’ এতগুলো মিথ্যা একটি সরকারী বিভাগকে জানানোর পরে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেসব নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি, এইক্ষেত্রে যা আমি, তার সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রকৃত সত্যটা জানবার চেষ্টা না করেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টা নিয়ে এগোবার সিদ্ধান্ত নেয়। এরূপ মনোভাব অতিশয় দুঃখজনক। হয় সরকারী কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত ভাবে অপব্যবহার ও অপদস্থ করা হচ্ছে অথবা যেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি খুব ঝামেলা সহ্য করে এসকল মিথ্যা জোগাড় করেছে সরকার তাকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করছে। আন্তর্জাতিক আঙিনায় আমি আছি-সবসময়ের মতো। বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের জন্যে শুরু থেকেই নি:শর্তভাবে আমি নিজেকে ঢেলে দিয়েছি। এ দুটির প্রতিই আমার নিষ্ঠাকে আমি ভালোবাসি ও হৃদয়ে লালন করি। সরকার ও মানুষের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা দেয় নি এমন কিছু লোক যখন আমার প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঠুনকো অজুহাতের আশ্রয় নেয়, তখন সেটি আমাকে প্রচণ্ডভাবে আহত করে। আমি আশা করব এই ধরণের কলঙ্ক লেপনের ঘৃণ্য প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে আপনারা তাকে চিরতরে শেষ করে দেবেন।

পরিশেষে আমি জানিয়ে রাখতে চাই যে গত সপ্তাহে ল’এক্সপ্রেসে মুক্তি বাহিনীর ওপর সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করে পিটার কারমাইকেল আমাদের বেশ ভালই উপকারে এসেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন সে অন্য একটি ব্যাপার নিয়ে ক্ষুব্ধ। আপাতদৃষ্টিতে জনাব বাদশা সিবিসির পিটার জেনিংসকে বলেছেন যে তিনি পিটার কারমাইকেলকে পাকিস্তানী চর বলে সন্দেহ করেন। জনাব জেনিংস মনে

<003.124.255>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

করেছিলেন বিষয়টা পিটারকে জানানো তার কর্তব্য কারণ এই দোষারোপ এত বড় আকারের ছিল যা পশ্চিমা সাংবাদিকদের সমগ্র সম্প্রদায়কে প্রভাবিত করতে পারে। পিটার আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি বিষয়টি শুধুমাত্র বাংলাদেশ এবং ভারতীয় সরকার পর্যায়ে না বরং আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংঘের সামনেও আনতে যাচ্ছেন। অসার মন্তব্য হলেও মনে হচ্ছে আমরা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে কিছু প্রতিকূল প্রচারের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। সম্ভবত ‘প্রতিবেদক’ এর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আপনি এ ব্যাপারে অবগত করতে পারবেন।

আপনার বিশ্বস্ত

আলমগীর কবির

কর্মসূচি সংগঠক,

রেডিও বাংলাদেশ।

<003.125.256>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
রণক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনীর ভুমিকায় প্রচার সম্পর্কে তথ্য সচিবের একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

তথ্য মন্ত্রণালয়

২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

জয় বাংলা                                                                                                                                     তথ্য, প্রচার ও বেতার দফতর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর

ডি.ও. নং. পিআইবিপি/৬৪।, তারিখ ২৯শে নভেম্বর, ১৯৭১

প্রেরক:- জনাব এ.এইচ. খান,

সচিব, বাংলাদেশ সরকার,

তথ্য, প্রচার ও বেতার দফতর।

আমার প্রিয় সামাদ,

আপনি অবগত আছেন যে পাকিস্তানীরা বিশ্বকে বুঝানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত তাদের সেনা প্রেরণ করেছে এবং তারাই বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মূল যুদ্ধ করছে। এই অপপ্রচারের উদ্দেশ্য দুটি-প্রথমত,ইন্দো-পাক বিরোধের দিকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দিয়ে প্রকৃত ইস্যু বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের নজর সরিয়ে নেবার চেষ্টা করা করার জন্য এবং দ্বিতীয়ত, মুক্তিবাহিনীর সাফল্যকে ছোট করে দেখানো। ভারত এই অভিযোগ অটলভাবে খণ্ডন করেছে। তারপরেও আমি মনে করি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক চালানো যুদ্ধে ভারতীয় সেনাদের সম্পৃক্ততা বাংলাদেশ সরকারের খোলাখুলিভাবে প্রত্যাখ্যান করা উচিত।

যেহেতু এটি একটি জরুরী বিষয়, তাই আমি সুপারিশ করছি যে আপনি অবিলম্বে আপনার অভিমত প্রদান করুন যাতে আমরা বেতারযোগে পাকিস্তানীদের অপপ্রচার বিফল করে দিতে পারি।

একান্তই আপনার,

(এ. এইচ. খান)

জনাব এ.সামাদ,

প্রতিরক্ষা সচিব,

বাংলাদেশ সরকার।

<003.126.257>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
রণক্ষেত্রে সংবাদদাতা নিয়োগ সম্পর্কে প্রতিরক্ষা সচিবের একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়

সংকেত

ডি টি জি ২৯-১১০০ ঘণ্টা

প্রেরক:   এইচকিউ ইষ্টকম জিএস (এক্স)

প্রাপক:    সকল সেক্টর (ব্র্যাভো সেক্টর ব্যতিরেকে)

ডিইএফ/১৮৩

স্বরাষ্ট্রসচিব হতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাত নম্বর সেক্টর ব্যতীত সকল সেক্টর কমান্ডারের নিকট(।) যুদ্ধ প্রতিবেদক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে আপনাদের সেক্টরে পূর্বে নিযুক্ত যুদ্ধ প্রতিবেদকগণ এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন প্রেরণ করেননি(।) অনুগ্রহ করে তাদের সচল করুন।

স্বরাষ্ট্র সচিব

ফাইল নং. আই-০০৪

তারিখ-২৯ নভেম্বর, ১৯৭১

<003.127.258>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের দপ্তরসমূহ এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা  সম্পর্কে কেবিনেট সচিবের একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

৩০ নভেম্বর, ১৯৭১

মন্ত্রীসভার ইচ্ছানুসারে আমাদের ভিআইপিদের এবং লিঁয়াজো কর্মকর্তাদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে আমি একেআরকে অনুরোধ করেছি। কিছুদিন আগে এবং গতকালও আমি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা করেছি। নিম্নলিখিত পরামর্শগুলো উত্থাপিত হয়েছে:

ক)           স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভবন এবং আমাদের প্রধান লিঁয়াজো কার্যালয়(নতুন ভবন) এর নিরাপত্তার ব্যাপারে এটি প্রস্তাবিত হয়েছে যে যেসকল কর্মচারীর অফিসে উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন তাদের ছবিসহ পরিচয়পত্র বহন করতে হবে। সেখানে আমাদের নিজস্ব কর্মচারী দ্বারা বিশেষ পরীক্ষণও করা হবে।

পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে নতুন ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং ভিআইপিদের সেখানে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া অনুচিত।

নতুন ভবনে সার্বক্ষণিক পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরানো ভবনে বর্তমানে চলমান কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

খ)            ভিআইপিদের বাসস্থান: প্রত্যেক বাসভবনের প্রবেশদ্বারে সাদা পোষাকের নিরাপত্তারক্ষী নিয়োজিত করা হচ্ছে। অনুরোধ করা যাচ্ছে যে যাতে সাক্ষাৎকার যথাসম্ভব যেন শুধু পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

গ)            ভিআইপি ব্যক্তিদের নিরাপত্তা:

  1. I) সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী প্রদান করা হচ্ছে।
  2. ii) পরামর্শ দেয়া হয়েছে যেন পূর্ববর্তী ঘোষণা ব্যতীত ভিআইপিরা বাইরে বের না হন। প্রহরী গাড়ীর ব্যবস্থা রাখতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাকে বলা হয়েছে যে আপাতত চারটি স্থানীয় গাড়ীর ব্যবস্থা হয়েছে-দুটি ভিআইপিদের জন্য এবং দুটি প্রহরীর দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে। এই লক্ষ্যে অনুগ্রহ করে সদরের অভ্যন্তরের এলাকাও নিয়ন্ত্রণ করা হোক।

iii) ভিআইপিদের চলাফেরার জন্য বিদেশী গাড়ী ব্যবহার পরিহার করা উচিত।

ছত্রভঙ্গ পরিকল্পনা:

আমাকে বলা হয়েছে যে এটি প্রণীত হচ্ছে। কিন্তু এটি জায়গার প্রাপ্যতার উপর নির্ভর করে।

আমাদের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষীদের অস্ত্র:

পরামর্শ এসেছে যে নিরাপত্তা প্রদানের দায়িত্ব স্থানীয় সংস্থার উপরই ন্যাস্ত থাকবে এবং তারা সবধরনের প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করছে। স্থানীয় সংস্থার সম্পূরক হিসেবে আমাদের নিরাপত্তারক্ষীরা থাকবে। তাদের অস্ত্র বহনের প্রয়োজন নেই। এরূপ চিন্তাধারাই আমার কাছে পৌঁছেছে।

<003.127.259>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

গতকাল অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার অধিবেশনে আমি উপরোল্লিখিত অগ্রগতি এবং প্রাপ্ত পরামর্শসমূহ সম্পর্কে মন্ত্রীসভাকে অবহিত করেছি।

সম্পর্কিত মানুষদের সাথে যোগাযোগ করে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করবার জন্যে আমি স্বরাষ্ট্রসচিবকে অনুরোধ করব। সাপ্র বিভাগের সচিব পরিচয়পত্রের প্রকাশ ত্বরান্বিত করবেন।

বেসামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা:

এটিও অনুরোধ করা হয়েছে যাতে বিমান আক্রমণের সময়কালে আশ্রয়স্থল হিসেবে দুটি স্থান সংরক্ষণ করা হয়-  (I) ভিআইপিদের বাসভবনে, (ii) নতুন কার্যালয়ে। এও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যেন আমাদের ভবনসমূহের গ্লাস বিবরণ অনুযায়ী কাগজ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।

স্বাক্ষর

মন্ত্রীসভা সচিব।

১.১১.৭১

টপ সিক্রেট

নং. ৪১৫(২)/মন্ত্রীসভা। তারিখ ২.১২.৭১

কপিঃ    ১. কার্যালয় ভবনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ সহ প্রতীরক্ষা সচিবকে

২.মূল কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরিচয়পত্রের প্রকাশ ত্বরান্বিতকরণের অনুরোধ সহ সচিব, সাপ্র বিভাগকে

স্বাক্ষর

(এইচ. টি. ইমাম)

মন্ত্রীসভা সচিব

<003.128.260>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্তাঞ্চলে বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদ সভার কার্যবিবরনী ও সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

৩০ নভেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়

মঙ্গলবার, ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মুলতবি হওয়া মন্ত্রীসভার সভার কার্যবিবরণী ও গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ

বিষয়সূচি নং. ২                                                                                                                                                                  বিবিধ

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সভাপতিত্ব করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যতীত প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রীসভার সকল সদস্য উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ আমন্ত্রণে প্রতিরক্ষা সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

নভেম্বর ২২, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় “মুক্ত বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনিক গঠন” বিষয়ে গৃহীত কার্যবিবরণী এবং সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে মন্ত্রীসভা খুশিমনে নিশ্চয়তা প্রদান করেন। এ ব্যাপারে উল্লেখ করা হয় যে উপ-কমিটির সচিবগণের সাথে পরিকল্পনা কমিশনকে দেওয়া কিছুসংখ্যক শর্তাবলী সমাপতিত হয় এবং সেহেতু এই দুটির মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দুটি বিকল্প সমাধান ছিল। হয় সচিবদের উপ- কমিটি তাদের সুপারিশ প্রস্তুত করে পরিকল্পনা সেলের সাথে পরামর্শ করে মন্ত্রীসভায় দাখিল করতে পারে অথবা এই দুই অংশ (পরিকল্পনা সেল এবং সচিবদের উপ-কমিটি) পৃথকভাবে তাদের প্রাপ্ত তথ্য ও সুপারিশসমূহ উপস্থাপন করতে পারে।

 সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে সচিবদের উপ-কমিটি তাদের প্রতিবেদন সরাসরি মন্ত্রীসভায় উপস্থাপন করবে এবং পরিকল্পনা সেলও পৃথকভাবে একই কাজ করবে যাতে প্রতিবেদন এবং সুপারিশের দুটি আলাদা সেট মন্ত্রীসভার হাতে আসে।

স্বাক্ষর

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

৩০.১১.৭১

তারিখ ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১।

স্মারকলিপি নং (৫)/মন্ত্রীসভা

প্রেরণ করা হবে:

১.জনাব এ.এফ.এম.এ. ফাতেহ,

২.সচিব, প্রতিরক্ষা,

৩.সচিব, স্বরাষ্ট্র,

৪.সচিব, অর্থ,

৫.সচিব, সাপ্র বিভাগ।

(এইচ.টি. ইমাম)

(মন্ত্রীসভা সচিব)

৩০.১১.৭১

<003.128.261>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সাড়ে ৭ কোটি মানুষের সর্বোত্তম আকাঙ্খার চুম্বক রূপের বহিঃপ্রকাশ। এটি একটি অনন্য আন্দোলন এই অর্থে যে এটি শুধুমাত্র উপনিবেশবাদই দূর করতে চায় নি বরং এর লক্ষ্য ছিল এমন একটি সম্প্রদায় গঠন করা যেটি কিনা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক মুক্তি প্রদান করবে।

স্বাধীন অঞ্চলগুলোতে বেসামরিক শাসনের পুনর্গঠন মুক্তিযুদ্ধের এমনই একটি অংশ ছিল।

এই মুহূর্তে সমগ্র জাতি  হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করার দুর্দান্ত প্রচেষ্টায় মগ্ন। প্রশাসনের তাৎক্ষণিক কর্তব্যসমূহের একটি বিশেষ প্রকৃতি আছে এবং তাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মোকাবিলা করতে হবে।

সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করা যায়ঃ

(১) যে সকল এলাকা স্বাধীন হয়েছে এবং মুক্তিবাহিনীর সক্রিয় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে।

(২)যে সকল এলাকার স্বাধীন হবার প্রক্রিয়াধীন।

(৩) শত্রু অধিকৃত এলাকা।

() মুক্ত/ স্বাধীন এলাকাসমূহঃ

স্বাধীন এলাকাগুলোতে প্রশাসনের মূল উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নে দেওয়া হলঃ-

১। আইন-শৃঙ্খলার রক্ষণাবেক্ষণ

২। বেসামরিক প্রতিরক্ষা

৩। উদ্বাস্তুদের জন্য ত্রাণ

৪। রোগ প্রতিরোধের উপর জোরপ্রদানপূর্বক স্বাস্থ্য (উৎসের অপ্রতুলতা বিচার করলে দেখা যায় রোগ নিরাময়কারী ব্যবস্থায় যথেষ্ট সম্পদের সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভবত সম্ভবপর হবে না)

৫। প্রয়োজনীয় ভোক্তা সামগ্রী যেগুলো এই এলাকায় দুষ্প্রাপ্য , সেগুলোর আমদানি

৬। প্রয়োজনীয় কৃষিদ্রব্যের যোগান, যেমন- বীজ এবং সার

৭। যতদূর সম্ভব যোগাযোগ প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠা

৮। গণ-সম্পর্ক

উপরোক্ত অবস্থা বিবেচনায় নিম্নে বর্ণিত কর্মকর্তাদের মুক্তাঞ্চলগুলোতে নিযুক্ত করা যায়ঃ-

উপাধি  দায়িত্ব
১। থানা ম্যাজিস্ট্রেট

আইন-শৃঙ্খলা , বেসামরিক প্রতিরক্ষা, প্রচার এবং সার্বিক সমন্বয়।

 

২। সি.ও. (ডেভ.) / বিশেষ

ত্রাণ কর্মকর্তা

ত্রাণ।

৩। সি.ও. (ডেভ.) / থানা

খাদ্য কর্মকর্তা

 

ভোক্তা সামগ্রীর যোগান দেওয়া।

 

 

 

<003.128.262>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

 

 

৪। ও.সি. আইন-শৃঙ্খলা।
৫। থানা পরিদর্শক / সহকারী প্রকৌশলী যোগাযোগ পুনঃপ্রচলন
৬।  থানা কৃষি কর্মকর্তা / টি.এস.ও. /টি.আই. কৃষি সামগ্রীর যোগান দেওয়া।
৭। থানা চিকিৎসা কর্মকর্তা স্বাস্থ্য

 

 

 

 

 

এই কর্মকর্তাদের নির্বাচনে নিম্নোক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারেঃ

১। স্বাধীনতার পূর্বে যেসব কর্মকর্তা থানায় নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন তারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাবেন যতক্ষণ না পর্যন্ত আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক কেউ হানাদারদের সহযোগী হিসেবে ঘোষিত হচ্ছেন।

২। যদি স্বাধীন এলাকাগুলোতে প্রশাসন কর্মীদের কোন উদ্বৃত্ত থাকে, তারা তাদের দায়িত্ব মুক্তিপূর্বক থানা ম্যাজিস্ট্রেটকে সহযোগীতা করবে।

৩। কোন থানায় কর্মকর্তাদের অভাব দেখা গেলে কেন্দ্রীয় সরকারের অতিরিক্ত লোকবল থেকে সেখানে কর্মকর্তা পাঠানো হবে।

আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক থানা পর্যায়ে কার্যক্রম চালিত হবে। আঞ্চলিক পরিষদ এর নিয়মাবলি হবে নিম্নরূপঃ-

১। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন কিন্তু এই কমিটিসমূহ উদ্বাস্তুদের সম্পত্তি বিষয়ক কোন বিরোধে অংশগ্রহণ করবে না। যতদিন না পুরো দেশ স্বাধীন হবে ততদিন পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনে নিরুৎসাহিত করা হবে।

২। নিপীড়িত মানুষদের অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুতি, ত্রাণসামগ্রীর পরিমাণ ধার্যকরণ এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোর মাধ্যমে প্রকৃত বণ্টনের প্রস্তুতি।

৩। প্রয়োজনীয় আমদানি দ্রব্যসামগ্রীর চাহিদা মূল্যায়ন।

৪। কৃষি দ্রব্যসামগ্রীর আমদানি এবং যোগান।

৫। ত্রাণ এবং অন্যান্য গঠনমূলক কর্মকাণ্ড।

ছোটখাট পরিকল্পনাগুলো ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিগুলোই সম্পন্ন করতে পারে কিন্তু বড় পরিকল্পনাসমূহ আঞ্চলিক পরিষদের সভাপতির তত্ত্বাবধানে আঞ্চলিক প্রকৌশলীকেই গ্রহণ করতে হবে।

৬। প্রচারণা।

() যে অঞ্চলসমূহ স্বাধীনতা লাভের প্রক্রিয়াধীন রয়েছেঃ

এরকম এলাকাগুলোতে প্রশাসনের প্রধান কাজ হল সেনা কর্মকাণ্ডে বেসামরিক সহায়তা প্রদান। এই সময়ে এরকম একটি কাজ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে অর্পণ করাই সর্বোত্তম। তদুপরি, যুদ্ধের অত্যাবশ্যক বিষয়াদি জায়গা এবং সময়ভেদে পরিবর্তিত হতে থাকে। তাই আঞ্চলিক পরিষদকে এরকম অঞ্চলগুলোতে তাৎক্ষণিক প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ। তারা যেসকল সরকারী কর্মকর্তাদের ইতোমধ্যেই আঞ্চলিক প্রশাসনিক গঠনে নিযুক্ত করা হয়েছে তাদের সেবা কাজে লাগাবে।

ইউ.ও. নং ৪০৪ (৪), মন্ত্রীসভা, তারিখ ৩০-১১-৭১

<003.129.263>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পঙ্গু যোদ্ধাদের জন্য স্বাস্থ্যনিবাস প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক জোনাল কাউন্সিলে প্রেরিত একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

নং- সি- ০০২/১৯৭(৪)                                                                                                                             তারিখঃ ১-১২-৭১

জনাব এম. এ. রউফ চৌধুরী,

সভাপতি,

আঞ্চলিক পরিষদ, দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১

কৃষ্ণনগর।

স্মারকলিপি নং সি- ০০২/১.৭৩ তাং ২৪-১১-৭১ এর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনার সেক্টরের বিকলাঙ্গ সৈনিকদের জন্য প্রস্তাবিত আরোগ্যলাভের স্থান নির্বাচনে যতদ্রুত সম্ভব আপনার মতামত আমাদের নিকটে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করতে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

– (আকবর আলী খান)

উপ-সচিব,

প্রতিরক্ষা।

নং- সি- ০০২/                                                                                                                                                       তারিখ

আঞ্চলিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা, দক্ষিণ-পশ্চিম জোন-১, কৃষ্ণনগর এর নিকট প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্যে অনুলিপি প্রদান করা হল।

উপ-সচিব,

প্রতিরক্ষা।

<003.130.264>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো সম্পর্কে উপ-পরিষদের বৈঠক সংক্রান্ত চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

২৬ নভেম্বর , ১৯৭১ এ অনুষ্ঠিত উপকমিটির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিম্নবর্ণিত নির্দেশনা অনুযায়ী কাগজপত্র প্রস্তুত করা হবে এবং উপকমিটির পরবর্তী বৈঠকে তা আলোচিত হবেঃ

১। রাজনৈতিক নির্দেশ – জনাব এ. এফ. এম. ফতেহ (সভাপতি)

২। পুলিশ যন্ত্রপাতির পুনরুদ্ধার – স্বরাষ্ট্র সচিব

৩। শত্রুপক্ষের সম্পত্তি নিষ্পত্তি এবং উদ্বাস্তু মানুষদের সম্পত্তির পুনরুদ্ধার বিষয়ক আইন – জনাব আকবর আলী খান

৪। সৈন্যবাহিনীর বেসামরিক যোগাযোগ, এফ. এফ এবং মুক্তিবাহিনীর সদস্যগণের আত্মীকরণ – প্রতিরক্ষা সচিব

৫। হানাদারদের সহযোগীদের ব্যবস্থাকরণ এবং বেসামরিক কর্মচারীদের সেবা প্রদান – মন্ত্রীসভা সচিব এবং প্রতিরক্ষা সচিব

৬। সরকারী চাকরির জন্যে কমিশন, সরকারী চাকুরেদের নিয়োগ, নির্দিষ্ট স্থানে নিযুক্তি, বদলি ইত্যাদি – সচিব,  মন্ত্রিসভা

৭। মূলোৎপাটিত মানুষদের ত্রাণ এবং পুনর্বাসন – ডঃ মোশারফ হোসেইন , সদস্য, পরিকল্পনা

৮। অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এর সাথে জড়িত সমস্যাবলি – ডঃ মোশারফ হোসেইন , সদস্য, পরিকল্পনা

৯। উপায় এবং পথ সমূহ –  অর্থ সচিব

১০। বেসামরিক প্রশাসন গঠন – অর্থ সচিব

এগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত আমরা অর্থ সচিবের কাছ থেকে ২টি দলিল গ্রহণ করেছি , যা কিনা ইতোমধ্যেই সদস্যদের মাঝে সঞ্চালিত করা হয়েছে। এর আগে স্বরাষ্ট্র সচিব আইন-শৃঙ্খলার উপর একটি বিস্তীর্ণ দলিল উপস্থাপন করেছিলেন যা উপ-কমিটির প্রথম বৈঠকে আলোচিত হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র সচিবকে নির্দিষ্ট সুপারিশ সহ পুলিশ প্রশাসনের উপর আরেকটি দলিল প্রস্তুত করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।

অন্যান্য দলিলসমূহও আগামী দুই-একদিনের মধ্যেই তৈরী হয়ে যাবে, তেমনটাই আমাদের কাম্য। আমি সকল সদস্যদের অনুরোধ জানাচ্ছি শুক্রবারের মাঝে দলিল সম্পূর্ণ করে আমাকে অথবা সভাপতি (জনাব এ. এফ. এম. ফতেহ)  এর কাছে প্রেরণ করবার জন্যে, যেন শুক্রবার বিকেল থেকেই উপকমিটি আবার তার আলোচনা শুরু করতে পারে।

এখানে উল্লেখ করা যায় যে গতকালের বৈঠকে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, সচিবদের উপ-কমিটি এবং পরিকল্পনা সেল পৃথক পৃথকভাবে তাদের প্রতিবেদনসমূহ মন্ত্রিসভার কাছে দাখিল করবে।

<003.130.265>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

যেহেতু আমাদের অন্যান্য সহকর্মীরা; বিশেষত স্বাস্থ্য সচিব , কৃষি সচিব এবং তথ্য সচিব কিছু সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন তাই আমি সভাপতির কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে হয় তাদের বৈঠকে অংশগ্রহণ করবার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানো হোক অথবা তাদের সাথে আলোচনায় বসা হোক। বর্তমান পর্যায়ে আমাদের কাজের সাথে বাংলাদেশ বাহিনীর ডি.সি.ও.এস. এরাও সংযুক্ত হতে পারেন।

ইউ.ও. নং ৪১৩/ মন্ত্রিসভা                                                                                                                     (এইচ. টি. ইমাম)

তারিখ ১-১২-৭১                                                                                                                                       মন্ত্রিসভা সচিব,

                                                                                                                                                                   ১-১২-৭১।

সভাপতি,

সচিবদের উপকমিটি

বেসামরিক প্রশাসন গঠনের উপর (জনাব এ. এফ. এম. ফতেহ)

স্মারকলিপি নং – ৪১৩(৬) /  মন্ত্রিসভা                                              তারিখ ১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

অনুলিপির প্রাপকগণঃ-

১। প্রতিরক্ষা সচিব

২। অর্থ সচিব

৩। স্বরাষ্ট্র সচিব

৪। সচিব সা.প্র.

৫। ডঃ মোশারফ হোসেইন , সদস্য, পরিকল্পনা

৬। জনাব আকবর আলী খান, উপসচিব, প্রতিরক্ষা

(এইচ. টি. ইমাম)

মন্ত্রিসভা সচিব,

১-১২-৭১।

<003.131.266>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বিদেশ গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের ছাড়পত্র সম্পর্কে প্রতিরক্ষা সচিব কর্তৃক স্বরাষ্ট্র সচিবকে লিখিত একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

জরুরি

গোপনীয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

নং- ৭-০০৭/২০১(৩)                                                                                                                                                      তারিখঃ ২/১২/১৯৭১

বরাবর

সচিব

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বিষয়ঃ বিদেশে গমনেচ্ছু বাংলাদেশীদের ছাড়পত্র প্রসঙ্গে

উল্লেখঃ স্মারকলিপি নং- এইচ ডি/২৪/৩৩০/১, তারিখঃ ৮/১০/৭১

            সাধারণ নিয়মানুযায়ী ছাড়পত্রের আবেদনগুলো এই মন্ত্রণালয়ে পাঠাবার প্রয়োজন নেই কারণ প্রার্থীদের পূর্ব ইতিহাস পরীক্ষা করার জন্য কোন পদ্ধতি আমাদের হাতে নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজেই এ ধরণের ঘটনা সামলাতে সক্ষম।

নিম্নবর্ণিত বিধিমালা পালনের পরামর্শ দেওয়া হলঃ দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত এগুলোর বৈধতা থাকবে।

১।           বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কোন গেরিলাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

২।           চরমভাবে মর্মভেদী এবং বাধ্যকারী কারণ ছাড়া ৪৫ বছর বয়সের নিচের কোন প্রাক্তন সশস্ত্র কর্মকর্তা অথবা বিশ বছর বয়সের উপরের কোন যুবককে সাধারণভাবে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না।

উপরোক্ত স্মারকের সাথে আপনার প্রেরিত দলিলাদি এক্ষণে ফেরত দেওয়া হল।

প্রতিরক্ষা সচিব

<003.132.267>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্ত এলাকায় বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠার অনুরোধ জানিয়ে প্রতিরক্ষা সচিবের একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১

সর্বাধিক গোপনীয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়

নং- ২০২(৩)                                                                                                                                          তারিখ-৩/১২/১৯৭১

বরাবর

জনাব নুরুল কাদের খান

সচিব, সাধারণ প্রশাসন

জনাব এ খালেক

সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জনাব কে এ জামান

সচিব, অর্থ

নিম্নে উল্লেখিত স্থানসমূহে অতিসত্বর বেসামরিক প্রশাসন স্থাপন করতে অনুরোধ করা যাচ্ছেঃ

১।           ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর জেলা

২।         শমশের নগর, জাকিগঞ্জ এবং দুয়ারাবাজার, সিলেট জেলা

৩।          ভুরুঙ্গামারি, রংপুর জেলা

৪।           পরশুরাম, নোয়াখালি জেলা

৫।           কালিগঞ্জ, খুলনা জেলা

এটি জানা গেছে যে খুলনা জেলার জীবননগর এবং যশোর জেলার চৌগাছায় ইতোমধ্যেই বেসামরিক প্রশাসন স্থাপিত হয়েছে।

এ সামাদ

(প্রতিরক্ষা সচিব)

<003.133.268>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন কর্তৃক প্রত্যন্ত সীমান্ত ও মুক্ত এলাকায় অবস্থিত ধন-সম্পত্তির সংরক্ষন ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদন

বাংলাদেশ সরকার

বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন

৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১

ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বাংলাদেশ ওভারসীজ ট্রেড মিশন

২২৫-সি, লোয়ার সার্কুলার রোড, ৫ম তলা

কলকাতা-২০

ক্যাবলঃ বাংলাট্রেড

ফোনঃ ৪৪-৮৮০৬ (সৌজন্যমূলক)

ডিসেম্বর ৬, ১৯৭১

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর,

প্রিয় মহোদয়,

            আমি বিনীতভাবে এখানে সীমান্ত ও মুক্ত এলাকার অর্থনীতি ও বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদের গবেষণার সমন্বিত বিবরণ পেশ করতে চাই। এই বিবরণটি বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণে তাদের সাথে  বৈঠক শেষে তৈরি করা হয়েছে।

            এই বিবরণটি সরকারের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নীতি নির্ধারণ এবং পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হতে পারে।

            আপনার অসীম দয়া হবে যদি আপনি কলকাতায় বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন চালনার প্রস্তাব পর্যালোচনা করে দেখেন যার মাধ্যমে বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের সাথে যোগাযোগ করার কাজও আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচালনা করা হবে। অতএব, এই মিশন যা বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষার্থে আয়োজন করা হয়েছে তার জন্য আমাদের সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।

                                                                                                                        ধন্যবাদান্তে

                                                                                    আপনার বিশ্বস্ত

                                                                                                (মুস্তফা সারওয়ার)

                                                                                                            সদস্য

ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড

                                                                                                বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন

বাংলাদেশ সরকার

<003.133.269>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

চরম গোপনীয়                                                                    প্রেরকঃ মুস্তাফা সারোয়ার

                                                                   সদস্যঃ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ,                                                                             ব্যবসা, বাণিজ্য ও শিল্প বোর্ড, বাংলাদেশ সরকার। বাংলাদেশ                                                                                                                     বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন, ২২৫/সি লোয়ার সার্কুলার রোড, কলকাতা-২০।

বিষয়ঃ বিএসএফ এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক শেষে এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করা হয়েছে যার বিষয় বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদসমূহ যেসব কোন যথাযথ যত্ন ছাড়াই পড়ে আছে ও মানবিক দুর্যোগ ঘটাতে পারে এমন অননুমোদিত বাণিজ্য কার্যক্রম এবং মুনাফালোভীদের নিয়ন্ত্রণ করবার পরামর্শ সাথে বাণিজ্য, সরকারি আয় এবং প্রাদেশিক ব্যাংক।

            বিএসএফ এর ঊচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলাদা আলাদা নিমন্ত্রণের ভিত্তিতে অধ্যক্ষ মোজাফফর আহমেদ, চেয়ারম্যান, পরিকল্পনা কমিশন এবং নিম্নসাক্ষরকারী তাদের অফিসে গিয়েছিলেন এবং সীমান্ত এলাকায় বেআইনি বাণিজ্য বিষয়ে মতামত আদানপ্রদান করেছেন। যেহেতু বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশ ও তার প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতের স্বার্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ তাই নিম্নসাক্ষরকারী তথ্য উন্মোচন এবং সরকারের প্রয়োজনীয় নীতিসমূহ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছে। বাংলাদেশে সৃষ্ট দুর্যোগ এবং বাংলাদেশের প্রতি তার প্রতিবেশি রাষ্ট্রের আন্তরিক ঔদার্যের সুযোগ নিয়ে যেসব মুনাফালোভীরা এবং কালোবাজারীরা অর্থের পাহাড় বানাবার অভ্যাস সৃষ্টি করেছেন তাদের নির্মূলের উদ্দেশ্যে নীতি প্রণয়ন করা উচিত।

সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ এর চলমান বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্য দখলের অভিযান সম্পর্কে

            প্রতিবেদন মোতাবেক দেখা গেছে যে সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ অথবা শুল্ক বিভাগের কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের মাধ্যমে আনীত পণ্যদ্রব্যের দখল নেয়া হচ্ছে। আরো জানা গেছে যে এইসব পণ্যদ্রব্যের উপর শুল্ক এবং কর সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিশাল পরিমাণ পণ্য এসব কারণে অপব্যবহারের স্বীকার হচ্ছে। পণ্যসমূহ বাংলাদেশের সরকারের নিকট বিমুক্ত করা উচিত।

প্রতিবেদন এবং পরামর্শ

(১) যেহেতু বাংলাদেশের বড় সংখ্যক জনগণ সীমান্তের এই প্রান্ত অতিক্রম করছে সুতরাং ভারতীয় সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া উচিত যেন তারা যেন বাংলাদেশিদের যেকোন বাংলাদেশি পণ্যদ্রব্য যেমন পাট, চা, চামড়া ও চর্মজাত দ্রব্য, সবজি, তামাক, যন্ত্রপাতি, মাছ, চলচ্চিত্র, নিয়মিত ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খাদ্য-শস্য, গবাদিপশু ইত্যাদি কোন ধরনের আপত্তি এবং অসুবিধা ছাড়া বহন করতে অনুমতি দেয়। এই বিষয়টি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা পারষ্পরিক বাণিজ্যের ওপর আয়োজিত বৈঠকের সময়েও নিশ্চিত করা হয়েছে।

(২) বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদের বাণিজ্য বোর্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যদ্রব্যের বিদ্যমান ব্যবসায়ীদের জন্য বৈধ নথি প্রণয়নের মাধ্যমে একটি আইনগত বৈধ বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে যেন বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব মেনেই বাংলাদেশের সকল রপ্তানী পণ্যদ্রব্য আইনানুগভাবে রপ্তানী হতে পারে। এই ব্যাপারটি অনুমোদিত ব্যবসায়ীদের আলাদা করবে এবং অননুমোদিত ব্যবসায়ী ও গুপ্তচরদের চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।

<003.133.270>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

গুপ্তচরবৃত্তিতে জড়িত অননুমোদিত ডিলার এবং ব্যক্তিদের অপসারিত করতে সাহায্য করবে। (৩) বাংলাদেশ সরকারের লাইসেন্সধারীদের সম্নান দিতে এবং তাদের উক্ত সরবরাহ প্রদান, বাধা অথবা বাধা এবং বাধাহীনভাবে করমুক্তিতে whatsoever বি. এস. এফ কর্মকর্তাগণদের পরামর্শ দেওয়স হয়েছে। (৪) সীমান্ত বলয়ে শুধুমাত্র অনুমোদিত ডিলার যাদের বাংলাদেশ সরকার দ্বারা লাইসেন্স ইস্যুকৃত হবে তারা এম. বি./বি.এস.এফ এবং অন্যান্য সকল সম্পর্কযুক্ত প্রতিষ্ঠান দ্বারা ব্যবসা চালানোর অনুমিত দেওয়া হবে। লাইসেন্সের নমুনা কপি প্রত্যেক সীমান্ত চেক পোস্টের সম্পর্কিত তথ্য ও পথ প্রদর্শনের জন্য রাখা হবে। (৫) সেখানে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক লেনদেনের লাইসেন্স এবং বৈধ কাগজপত্র প্রবর্তনের সাথে পণ্যের নিয়মতান্ত্রিক এবং বৈধ লেনদেন থাকবে শুধুমাত্র সেই মানুষজনের যারা সীমান্ত এলাকায় এমন লেনদেন কার্যক্রমে জড়িত আছে। এমন লাইসেন্স কঠোরভাবে বিশ্লেষণ করে এবং তদারকি করে স্থানীয় বাংলাদেশের ককর্মকর্তা, এমএনএ/এমপিএ অঅথবা জননেতাগণ যারা বি.এস.এফ এবং নিজনিজ সীমান্ত এলাকায় নিযুক্ত কর্তৃপক্ষের সাথে সংযুক্ত তাদের দ্বারা ইস্যু হবে। বিদ্যমান নেতা ব্যতীত অন্যান্য ব্যক্তি এমন বৈধ কাগজপত্র/লাইসেন্স দিয়ে ইস্যু হবেন না। প্রত্যেক সীমান্ত এলাকায় সকল বাংলাদেশী পণ্য এক জায়গায় রাখা হবে(যদি সহজলভ্য থাকে) এবং সরকারি কর্মকর্তা এবং কর্মী দ্বারা প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর বাণিজ্যিক পণ্য যেমন পাট, খাদ্যশস্য, ওষুধ, তামাক, চামড়া হতে সামান্য কর রেখেবিন্যস্ত করা যেতে পারে। সীমান্ত এলাকায় সহজলভ্য এমএনএ/এমপিএ এবং কর্মীদের মধ্যে ২ ব্যক্তিকে উক্ত কাজ তদারকি করার জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে যারা কঠোরভাবে তত্ত্বাবধান করবে এবং সততা এবং নিষ্ঠার সাথে তাদের কাজ সম্পাদন করবে যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে লোকবলের রোল মডেল হবে। (৬) অস্বাভাবিক উপায়ে লাভ করা, সরবরাহ ধরে রাখা, কালোবাজারি এবং যেকোনো অন্য কার্যক্রম at the cost of বাংলাদেশ tragedy and due to sincere feelings over this side by any person or persons সরকার এবং জনগণ দ্বারা অপসারিত করতে হবে। রিপোর্ট করা হয়েছে যে কিছু পাচারকারী ভাল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশী পেটেন্টের ওষুধ এবং অন্যান্য পণ্য নিয়ে আসতেছে। ভারতের অনেক অভ্যন্তরে যেমন মাদ্রাজ, মহারাষ্ট্র প্রভৃতিতে স্থানীয় পাচারকারী দ্বারা এসব পণ্যের সরবরাহ সম্পর্কে আরো রিপোর্ট রয়েছে যা ভারতের স্বার্থবিরোধী। প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য। সেখানে কে.তেল, ম্যাচ, চিনি, লবণ, ডাল, আটা, ময়দা, সাবান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের অসাধারণ চাহিদা রয়েছে যা ভারতের সরবরাহকারীদের হতে আমদানি করার অনুমিত দেওয়া হবে। এই সরবরাহকারীরা কলকাতায় বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন থেকে বিস্তারিত ও বৈধ কাগজপত্র পাবে। সকল বাণিজ্যিক পণ্যের রপ্তানি যেমন পাট, চামড়া ও চামড়াজাত, খাদ্যশস্য(যদি থাকে), তামাক, চা, যন্ত্রপাতি & catties রপ্তানিতে বাংলাদেশ সরকার royalty অনুভব করেছে। বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পণ্য আমদানিতে কর অথবা royalty ধার্য করতে পারে।

<003.133.271>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

এরূপে প্রাপ্ত রয়্যালটি বা করের সবটুকুই বাংলাদেশের আওতায় আসবে। বর্তমানে বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে স্বার্থ ও অন্যান্য সকল সংশ্লিষ্ট বিষয় বিবেচনা করছে।

বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন এর প্রয়োজনীয়তা

ইউ.এস.এস. আর, রোমানিয়া প্রভৃতির মত

ভারত ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে দীর্ঘ বাণিজ্য সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে, এবং বিশেষভাবে জরুরি সময়ে এই ধরনের একটি মিশন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত স্বার্থ দেখাশোনা করার জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজন হয় :

১/ যেহেতু আমাদের সরকার মুজিবনগর থেকে বৈদেশিক পক্ষগুলোর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে এবং কোনো বাণিজ্য চুক্তি বা ক্রয়-বিক্রয় চূড়ান্ত করতে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওইসব দেশের সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত পারছে না, এই বাণিজ্য মিশন বিদেশে বাংলাদেশের ব্যবসা ও বাণিজ্যের বিষয়গুলো দেখভাল করতে পারে।

২/ যেহেতু ভারত সরকার পূর্ণ কূটনৈতিক মর্যাদার সঙ্গে আমাদের বাংলাদেশ মিশনের কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন , এই বাণিজ্য মিশন ভারত এবং অন্যান্য সব বন্ধুপ্রতিম দেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে তাদের বাণিজ্যিক স্বীকৃতি প্রাপ্তির জন্যও কাজ করতে পারে।

৩/ বাণিজ্যিক চিঠিপত্রের মাধ্যমে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে, পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে খোঁজখবর প্রাপ্তির জন্য । বিদেশে পাট, চা, তামাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যদ্রব্য, যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য প্রস্তাব প্রাপ্তির মাধ্যমে বিদেশে সরকারের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থ দেখাশোনার জন্যে; যেখানে সমন্বয়, যোগাযোগ , সঠিক ব্যবহার ও দরদামের অভাবে এদের অনেকগুলোই সঠিক বাজার মূল্য পেতে পারত না ।

৪/ পাট এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্য সম্পর্কে সময়ে সময়ে আগ্রহী দেশগুলোর কাছে তথ্য প্রদান যেহেতু এই ধরনের তথ্যের অভাবে তাদের কেউ কেউ আস্থা হারাচ্ছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও উন্নয়ন সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছে। অন্যথায় এমন কোন প্রচার সম্ভব নয় যা জরুরি অবস্থায় রাজনৈতিক স্বীকৃতি পেতেও সহায়ক হতে পারে। যদি আমরা বিদেশী দেশগুলোর এই ধরনের আস্থা হারিয়ে ফেলি তবে স্বাধীনতার পর অর্থনীতি মারাত্মক সমস্যার মোকাবেলা করবে।

৫/ বিদ্যমান বাণিজ্য কার্যক্রম ও চাহিদার প্রেক্ষাপটে বাণিজ্য কর্মসূচি চালু করতে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন এবং স্বাধীনতা পরবর্তী ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণয়নে, যা আমাদের পরিকল্পনা সেলের কার্যক্রমে সাহায্য করবে। কারণ তারা এই বাণিজ্য মিশন কর্তৃক কৃত সুনির্দিষ্ট তারিখভিত্তিক সংগ্রহ লাভ করবে।

 ৬/ এই বাণিজ্য মিশন ঢাকা/কলকাতায় “ইউএসএসআর এবং রোমানিয়া , চেকোস্লোভাকিয়া ইত্যাদির বাণিজ্য চিত্র” এর মত অথবা ঢাকায় “যুগোস্লোভিয়ার আন্তঃ রপ্তানি” এর মত কাজ করতে পারে। এখানে আরো উল্লেখ করা যায় যে পূর্ব জার্মানি, চীন, কিউবা, উত্তর ভিয়েতনাম স্বীকৃতি ছাড়াই স্বীকৃতি লাভের জন্যে পরিচিতিদের মধ্যে নিজেদের অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে তাদের বাণিজ্য সম্পর্ক শুরু করে।

<003.133.272>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

বাংলাদেশের মূল্যবান সম্পদসমূহ যা ইতোমধ্যেই আমাদের দখলে রয়েছে

বাংলাদেশের বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদ সীমান্ত পার হয়ে এই পাশে চলে এসেছে। নীচে এদের কিছু অংশ তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের এসকল সম্পদ সঠিক যত্ন এবং নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক। কিন্তু সরকার থেকে কোনো দায়িত্ব বা উদ্বেগ নেই এইসব মূল্যবান সম্পদ সম্পর্কে। বাণিজ্য বোর্ডের কোনো প্রচেষ্টাই গ্রহণ করছে না, যদিও আমরা মন্ত্রণালয় দ্বারা এর দায়িত্বপ্রাপ্ত। এই নীতি বন্ধ করা অথবা অন্য কোন নীতি গ্রহণ করার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। অন্যথায় এসব সম্পদয়ের অনেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত, নষ্ট বা চুরির স্বীকার হবে। সমন্বয় এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভাবে এসব সম্পদ পরে আছে। এসব সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ৩ কোটি রূপি হবে। এ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন।

মোটর গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহন

বাংলাদেশের অনেক যানবাহন অযত্নে অলসভাবে পরে আছে। পরিবহন পুল সব অঞ্চল এবং সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশের সকল যানবাহনের সমন্বিত তালিকাভুক্তির ব্যবস্থা করতে পারে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের উচিৎ বাংলাদেশের প্রতিটি যানবাহনের হিসাব রাখা কারণ সেসব বাংলাদেশ সরকারেরই সম্পত্তি। সকল যানবাহনের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ এবং তাদের সঠিক বীমার ব্যবস্থা করা উচিত। জানা যায় ৫০/৬০টি  যানবাহন কৃষ্ণনগর এলাকায় পড়ে রয়েছে। সম্ভব হলে সরকারী আয় বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্যিক যানবাহন বাংলাদেশ পরিবহন পুল কর্তৃক ভাড়ায় খাটানো যেতে পারে ।

কিছু সম্পত্তির বিবরণ

চুনাপাথর মেশিনারিজ প্ল্যান্ট, টাকেরঘাট: একটি বৃহৎ চুনাপাথর খনির মেশিনারি প্ল্যান্ট বিদেশী বংশোদ্ভুত খোলা বাক্সে এই পাশে এসেছে। এমন যন্ত্রপাতির তালিকা আলাদা আলাদাভাবে পাওয়া যায়।

সমগ্র প্ল্যান্ট এর মূল্যমান ২ কোটি  রুপি এরও অধিক বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে।  যেহেতু প্ল্যান্টটি একটি মূল্যস্ফীতি বিহীন মুদ্রায়, অর্থাৎ ১১.৪০ রূপিতে ১ পাউন্ড হিসেবে আমদানি করা হয়েছিল অতএব এর স্থানীয় বাজার মূল্য এর থেকে অনেক বেশিই হবে।

ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরী, এম.এন.এ এবং জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. বর্ণনামূলক তালিকার বিস্তারিত আদায় করতে ঘটনাস্থলে অনেক দিন ব্যয় করে খুবই উচুঁদরের কাজ করেছেন। অন্যথায় এতটা বিস্তারিত বিবরণ প্রাপ্তি অসম্ভব হত। ব্যারিস্টার চৌধুরী সেখানে খুবই প্রভাবশালী এবং বিএসএফের সাথে তাঁর সুসম্পর্ক রয়েছে। অতএব, ব্যারিস্টার চৌধুরী এবং জনাব খানের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা কাজে লাগানো যেতে পারে। এটা লক্ষনীয় যে অর্থমন্ত্রণালয় জনাব শহীদ আলী খানের কাজের ফলে উপকৃত হয়েছে যিনি হীরার সরঞ্জামের একটি বাক্স এবং এক প্রকার মেশিন, সাথে মেশিনারি প্ল্যান্টের বিস্তারিত বিবরণ সঙ্গে এনেছেন।

মন্তব্য:    আমরা যদি এসব মেশিনারিজ এর সর্বোচ্চ মূল্য পেতে চাই তাহলে আমার মনে হয় আমাদের উচিৎ একটি প্রকৌশল কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ করা। তারা এসব মেশিনারিজ মূল্যায়ন করে তাদের প্রকৃত মূল্য সম্পর্কে আমাদের অবহিত করবে। তারপরেই কেবল আমরা আগ্রহী দল/পক্ষগুলোর সঙ্গে দর কষাকষি শুরু করতে পারব। কিন্তু “যুদ্ধের গন্ধ” যেহেতু বিরাজমান তাই আমরা “যেমনভাবে যেখানে আছে” এটার উপর ভিত্তি করে অনতিবিলম্বে  তাদের বিক্রি করে দিতে পারি। পরিস্থিতিও সেই একই ইঙ্গিত দিচ্ছে।  সিদ্ধান্ত নেবার আগে সর্বোচ্চ মূল্য পাবার আশায় প্রকৃত

<003.133.273>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আগ্রহী পক্ষগুলোর সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করা যেতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী তেমনটাই মনে করেন।

যদি এখানে এইসব মেশিনারিজ আনা সম্ভব হয় বা পরিদর্শন দল পাঠানো যায় তবে তাদের যুক্তিসঙ্গত মূল্যায়ন করা সম্ভব। প্ল্যান্টের পণ্যসামগ্রীর তালিকা ১০ রুপীর বিনিময়ে বোর্ড কার্যালয়ে পাওয়া যাচ্ছে। জনাব জহিরুল কাইয়ুম এম.এন.এ, অধ্যক্ষ হামিদুর রহমান এম.পি.এ., ব্যারিস্টার এম চৌধুরী, এম.এন.এ., জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. এবং জনাব আকরাম সিদ্দিকী প্রমুখ তাদের পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।

এপাশে নিয়ে আসা অন্যান্য জিনিসের বিস্তারিত তালিকাসমূহ

সাথে চুনাপাথর মাইনিং প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি

অন্যান্য বিবিধ ইস্পাতের উপকরণ যা ইতিমধ্যে সীমান্ত পাড় করে এই দিকে নিয়ে আসা হয়েছে তাদের নীচে তালিকাভুক্ত করা হলো:

ক্রমিক নং                    পণ্যের নাম                       পণ্যের বিবরণ                                       পরিমাণ

১                    রেল                                  ৪০ পাউন্ড, ৩০ পাউন্ড, ২০ পাউন্ড, ১৫ পাউন্ড        ৫০,০০০ আর.এফ.টি.

২                           সিআই শিট                       নতুন ৮’ দৈর্ঘ্য                                                    ১,৫৪৩ আর.এফ.টি.

২২ গেজ ইউ.এস. মেইড                                   ১২৫০ আর.এফ.টি.

৩                          জিআই পাইপ                      ২.৫”, ১.৫”, ১” এবং০.৫”                                   ৬০০০ আর.এফ.টি.

৪                           সিলিং ফ্যান                         ৪৮” জিইসি                                                        ৮০টি

৫                           টেবিল ফ্যান                        ডিলাক্স                                                                   ১৬টি

৬                          আয়রন শিট                        গডরি এর তৈরী, মাঝারি আকারের                        ১টি

৭                             এমএস রড                          বিভিন্ন আকার এমএস রড                                          ১৭০ হতে ১৭৫ টন

(আনুমানিক)

ভালো দাম পাওয়া সম্ভব হবে যদি সব পণ্য একটি নামকরা পরিবহন ঠিকাদারের মাধ্যমে কলকাতায় এনে গুদামে মধ্যে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়। কিছু ক্রেতা এখানে পণ্যের প্রাপ্তিতে নগদ অর্থ পরিশোধের প্রস্তাব করেছেন।

টাকেরঘাটের চুনাপাথর খনি প্রকল্পের ট্রাক্টর ও যানবাহনের বিশদ তালিকা

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                          পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ

১                           ইস্যুজু                                     ৫ টনের ডিজেল ট্রাক, মডেল ডিএ

৭২০, ৬ সিলিন্ডার, জাপানে তৈরি                  ২টি

২                           শেভ্রোলেট                               ৫ টনের ডিজেল ট্রাক , ৩ সিলিন্ডার,

মডেল নং ৬০                                                  ১টি

৩                            টয়োটা                                    ৪ হুইল জীপ মডেল ৪০৩,

৬ সিলিন্ডার, ১৩৫ টাইপ                                                ১টি

৪                           মসি ফার্গুসন                       ট্রাক্টর এফএফ ৩৫, মডেল এইচপি, এইচপি ৩৫,        —

৩ সিলিন্ডার।

<003.133.274>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                          পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ

৫                    সোলারাস                                 মডেল এমটি ৩.৫০, ৪ সিলিন্ডার,

ডিজেল এমপি ৫০, ১০০০ আরপিএম,

ইউ.এস.এস.আর. নির্মিত                           ৫টি

৬                    ট্র্যাক্টর ট্রেলার                         ডক্কি নির্মিত

৫ সিলিন্ডার, ডিজেল মডেল ১৫০০                      ১৩টি

৭                     ট্রাক                              যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত,                                               ৫টনের

(ইন্টারন্যাশনাল

ট্রাক)

৮                     ফোর্ড ট্রাক                    এফ ৬৮২, মডেল এইচপি ১০৪, ৬ সিলিন্ডার,

আরপিএম ২৫০০ ডিজেল, ইউ.এস.এ. নির্মিত        ১টি(৫টনের),

১টি(৩টনের)

বাংলাদেশ সরকারকে উপরে উল্লেখিত বিষয়াদির ব্যাপারে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ড্রিলিং কাজের জন্য ব্যবহার্য ডায়মন্ড সরঞ্জাম

জনাব শহীদ আলী খান, এম.পি.এ. ডায়মন্ডের সরঞ্জামের একটি বাক্স এনেছেন যা এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে রক্ষিত আছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত কর্মকর্তারা এই সরঞ্জামের মূল্যায়ন করেছেন ৩০/৪০,০০০ রুপী, যা নিচে বর্ণিত আছে। কিন্তু আমাদের এই পণ্যের মূল্য সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। এখন মন্ত্রণালয়ের সরবরাহকৃত নমুনা দ্বারা সঠিক মূল্য নির্ণয় করা হচ্ছে ।

স্পিড বোট, ইঞ্জিন ও অন্যান্য উপকরণ যা প্রতিরক্ষা

বিভাগের প্রয়োজনীয় তবে এখন টাকেরঘাট চুনাপাথর খনি প্রকল্পের অধীনে আছে সেসবের তালিকা

ক্রমিক নং                         পণ্যের নাম                                      পণ্যের বিবরণ                                                    পরিমাণ

১                      ওয়েস্ট বেন্ড আউটবোর্ড মোটর                        মডেল ২০ এইচ পি, ২ সিলিন্ডার                         ৮টি

২                     জনসন আউটবোর্ড মোটর                     মডেল ২০ এইচপি, ২ সিলিন্ডার                           ৬টি

মডেল-আইএস এইচপি                             ২টি

৩                    ইয়ামাহা আউটবোর্ড মোটর.(কে ওয়েল)  মডেল ১৫ এইচ পি                                          ৪টি

৪                     উপরোক্ত যন্ত্রাদির যন্ত্রাংশ                                                                                                            —

৫                      রিমোট কন্ট্রোল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র

সঙ্গে স্পিড বোট ফাইবার গ্লাস কাঠামো                                                                        ১টি

৬                    অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো               বড় সাইজের                                         ১টি

৭                     অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো               —–                                                       ২টি

৮                   ই পি আর ওয়্যারলেস সেট                   বড় আকার                                           ১টি

৯                      ই পি আর মোবাইল ওয়্যারলেস সেট    ছোট আকার                                         ৩টি

১০                  পুলিশ ওয়্যারলেস সেট               —                                                         ১টি

১১                  ওয়্যারলেস সেট                          ১০ ওয়াট, উপগ্রহ টাইপ

টিআরসি-১ এসএফ-২ ভিএইচএফ,

রেডিও সরঞ্জাম ৩৩৩৯, ১০০১,

১০০২, ১০০০, ১০৭৯, ১০৭৮, ১০৭৭,

১০৭০, ১০৭৫, ১০৭৪, ১০৭৩ এবং ১০৭২                       ৬টি

<003.133.275>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

দ্রষ্টব্য: এই সকল ওয়্যারলেস সেট এখন ভারতীয় সেনা বাহিনীর কাছে রয়েছে যেগুলো নিম্নলিখিত স্থান থেকে উদ্ধারকৃত হয়

(১) শোলা চৌকী, (২) চিড়াই চৌকী (৩) মারকুরি চৌকী, (৪) খালিয়াঝুড়িয়া চৌকী

১২                          সিমেন্ট                                                   এবিসি                                                                    ১০০ ব্যাগ

১৩                       টেলিভিশন সেট                                  ২৩ ইঞ্চি                                                                 ১টি

১৪                          রেফ্রিজারেটর                                                                                                                       ৬ সিএফটি

১৫                        বিষ্ফোরক সমূহ

বারুদ                                                                                                                                     ১৫৫ এমডিএস

জেলিগনেট                                                                                                                            ২,০০০ পাউন্ড

উপরে উল্লেখিত পণ্য সামগ্রীর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এটা দেখাশোনা করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। এটা জানা যায়নি যে এই বিষয়টি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোচরীভূত করা হয়েছে কিনা। তাহলে ব্যারিস্টার মুন্তাকিম চৌধুরী, এম এন এ এবং জনাব শহীদ আলী খান, এম পি এসব সম্পদ দেখাশোনার অনুমতি লাভ করতে পারেন যেহেতু তারা এসব ক্ষেত্রে অসাধারণ উপদেশ দিয়েছেন এবং এই বিষয় মোকাবেলায় তারাই উপযুক্ত ব্যক্তি বলে প্রতীয়মান হয়।

পাট                       (১) ১৯৭১-৭২ সালের বাংলাদেশী ফসল                                    ৫০/৫৫ লক্ষ বেল (আনুমানিক)

পরিসংখ্যান         (২) গতবছরের উদ্বৃত্ত                                                    ১৫লক্ষ বেল (আনুমানিক)

………………………………………………………..

মোট =                                 ৬৫লাখ বেল।

নভেম্বর, ১৯৭০-এর সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়

দরুণ অনেক রেল ওয়াগন এবং বিশেষ করে ভাণ্ডার

যশোর, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী এবং

বগুড়া ইত্যাদির মত উত্তরবঙ্গের জেলা থেকে সরাতে

পারা যায় নি।

(৩) বাংলাদেশের মিলগুলোতে প্রয়োজন                                       আনুমানিক প্রায় ৩০ লক্ষ বেল

(৪) বাংলাদেশ হতে কাঁচা পাটের বিশ্ব বাজারের চাহিদা                    আনুমানিক প্রায় ৩৫ লক্ষ বেল

বাংলাদেশের পাটকল ও রপ্তানির বর্তমান অবস্থান

আমেরিকার অ্যাসোসিয়েট প্রেসের সংবাদদাতা মিস্টার আর্নল্ড জেইথিন যিনি ঢাকায় পাট বোর্ড পরিদর্শন করেছেন আমাকে যা জানান এবং আমাদের অফিসে তার যে নোট দেখান তা নিম্নরূপ-

সব মিলিয়ে ৬৪টি পাটকল বাংলাদেশে কাজ করছে। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বরে উৎপাদিত চালানের পরিমাণ…… ২৬,৩৪৭ টন যেখানে ১৯৭০ সালের সেপ্টেম্বর মাসের পরিমাণ ছিল … ৫২,৬২৭টন।

এ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের পাটকলগুলোতে এখন উৎপাদন প্রায় ৫০% কম হচ্ছে।

<003.133.276>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমেরিকার ‘এসোসিয়েট প্রেস’ এর নিজস্ব প্রতিবেদকের কাছ থেকে কাঁচা পাট বিষয়ে নিচের পরিসংখ্যানটি পাওয়া যায়-

বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানি
সেপ্টেম্বর ১৯৭১ এ বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের চালান ১,৬৫,০৬৬ বেল
সেপ্টেম্বর ১৯৭০ এ বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটের চালান ২,২৬,১৭৪ বেল

সামুদ্রিক জাহাজগুলোর ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী সমস্যা সৃষ্টি করার আগে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের চালান খারাপ ছিল না।

এই প্রতিবেদকের কাছ থেকে আরো জানা যায় যে মুক্তিবাহিনী কর্তৃক দুটি বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তিনি যখন গত সপ্তাহে পাট বোর্ড, পি. জে. এ. এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করেন তারা তখন উদ্বিগ্ন এবং বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। তারা ধারনা করেছিলেন চালানের এই ক্ষতির ফলে বৈদেশিক পাট শিল্পে মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়বে যার ফলে পাটজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠান কৃত্রিম আঁশ শিল্পের দিকে মোড় নিতে পারে। ইতোমধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান রূপান্তরিত হয়েও গেছে। আমি জেনেছি যে বাংলাদেশ অনেক বৈদেশিক অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি।

মুক্তাঞ্চল এবং সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসা কাঁচা পাটের আনুমানিক পরিমান

আমরা আশা করছি এই অংশে কমপক্ষে ৭/৮ লাখ বেল পাওয়া যাবে। এরমধ্যে থেকে যদি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ বেল রপ্তানি করা যায় তাহলে ভারত এবং বাংলাদেশ সরকার সর্বনিম্ন মূল্য মাত্রা বজায় রাখতে পারবে। তা না হলে মারাত্মক আশঙ্কা রয়েছে যে সর্বনিম্ন মূল্য আরও কমে যাবে এবং আন্তর্জাতিক পাট শিল্পগুলো কৃত্রিম আঁশ শিল্পে রূপান্তরিত হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি হবে যা আলাদাভাবে উল্ল্যেখ করা হয়েছে।

ভারতের পাট রপ্তানি

ভারত সরকারের বিনিময় এবং লাইসেন্সের অধীনে রাশিয়ায় অল্প পরিমানে রপ্তানি করা ছাড়া আর কোন আন্তর্জাতিক বাজারে ভারত কাঁচা পাট রপ্তানি করেনা।

বাংলাদেশি পাটের উচ্চতর সাদা এবং তোশা গুনের জন্য ভারতও যথেষ্ট পরিমানে লাভবান হবে।

ভারত এমনকি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়ও ২-৩ লাখ বেল বাংলাদেশি পাট পেত।

ভারতের পরিমান
১৯৪৭ সালে ভারতের ফসল ১৬ লাখ বেল
১৯৭১ সালে ভারতের ফসল ৭০/৭৫ লাখ বেল

বিশ্ববাজারে কাঁচাপাটের চাহিদা ও যোগান

                প্রথম, পাটকলগুলোতে ভারতের উৎপাদন                                                  ৭০/৭৫ লাখ বেল, অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাদ দিয়ে

 

<003.133.277>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

দ্বিতীয়, বাংলাদেশ                                                                   ৩০ লাখ বেল

            তৃতীয়, ইউকে                                                                              লাখ বেল

            চতুর্থ, বেলজিয়াম                                                                    লাখ বেল

            পঞ্চম, ফ্রান্স                                                                                 লাখ বেল

            অন্যান্য দেশ                                                                                ৮০ লাখ বেল

 

বৈদেশিক চুক্তির ব্যাপারে দখল হওয়া দেশের অবস্থা

 

২৫শে মার্চের পরে বাংলাদেশের পাট রপ্তানিকারক ও মিলমালিকেরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক পুরাতন চুক্তি এখনো অনিষ্পত্ত অবস্থায় রয়েছে এবং কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানির আন্তর্জাতিক অঙ্গিকারনামা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। প্রায় সকল রপ্তানীমুখি পাটকল অনেকদিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। সেনাবাহিনীর নির্দেশনায় বর্তমানে ৪০% থেকে ৫০% উৎপাদন ক্ষমতায় সেগুলো চালু করা হয়েছে। অধিকাংশ দক্ষ শ্রমিকেরা ছিল নোয়াখালী অঞ্চলের যাদের সংখ্যা এখন অতি নগন্য। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সব রপ্তানীমুখি পাটকল ৫০%-৬০% লোকসানের মুখে পড়ে কারণ উৎপাদন খরচ হিসেব করা হয় তিন শিফটের উৎপাদন ও পণ্য বিক্রির উপর অতিরিক্ত অর্থ প্রদানকে একত্রে ধরে। এই অতিরিক্ত অর্থের ভাউচার বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে চালান এবং মূল্যপরিশোধের কেবল ৪৫ দিনের মধ্যেই পাওয়া যায়। তাই প্রায় ৪০% খরচ সর্বদা হিসেবের বাইরে খরচ হিসাবে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত রপ্তানিকারকেরা মূল্য পরিশোধের ও লভ্যাংশের রশিদ পাচ্ছেন। প্রায় ৫০% খরচ অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে এবং লভ্যাংশের রশিদ পাবার আগ পর্যন্ত তাদের মেটানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশের অধিকাংশ পাটকলগুলো ব্যাংক থেকে মূলধন পাচ্ছে না। বেশিরভাগই ক্যাশ ক্রেডিট লিমিট কমানোর জন্য চাপের মধ্যে রয়েছে। একই সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যাংকগুলো তাদের বিনিয়োগের টাকা উঠানোর জন্য যে কোন মূল্যে তাদের মজুত মাল বিক্রি করে দিচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কোন কাঁচা পাট রপ্তানিকারক বা মিলমালিক নতুন চুক্তি করতে সাহস করছে না। (ক) ব্যবস্থাপনা (খ) ব্যাংক মূলধন (গ) শ্রমিক (ঘ) উৎপাদন নেমে যাওয়া (ঙ) যোগাযোগ এবং (চ) কাঁচা পাটের অভাবে তারা কোন নতুন চুক্তিতে আগ্রহী হচ্ছে না।

বিদেশী ক্রেতারা পণ্যের চালানের পর আগ্রহ দেখায়। পণ্যের দাম ৪০%-৫০% বেড়ে যায় যখন পণ্য সামুদ্রিক মালবাহী জাহাজে থাকে। এসব অবস্থায় বিদেশী ক্রেতারা উদ্বেগের সাথে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট রপ্তানির দিকে চেয়ে আছে। কিছু বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশের সাথে এমনকি ১/২ লক্ষ বেলের চুক্তির জন্যও প্রস্তুত। তার ইতোমধ্যে অধিকৃত দেশ থেকে আমদানি কমিয়ে দিয়েছে এবং বাংলাদেশি পাট আমদানীর জন্য যেকোনো সহায়তা দিতে আগ্রহী।

সীমান্তে পাটের বাণিজ্যের জন্য বাংলাদেশের প্রস্তাব

 

বিষয়টা সমাধানের জন্য অর্থ সচিব ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন। সরাসরি ক্রয়ের জন্য অর্থ সচিবকে একটি নতুন কর্মপরিকল্পনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা লেনদেনের ব্যাপারে আমরা জড়াতে চাচ্ছিলাম না বলে যতক্ষণ না রপ্তানির বিষয়ে পরিস্কার সিদ্ধান্ত হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত সরাসরি বাণিজ্যে আমরা আগ্রহী ছিলাম না। কিছু সত্যিকারের আন্তরিক পক্ষ ক্যাশ টাকা দিয়ে আমাদের পাট কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এমনকি বাংলাদেশ সরকারকে সম্মানী হিসেবে লভ্যাংশ বা কমিশনও দিবে। তারা তাদের নিজস্ব চুক্তি, মূলধন, গুদামঘর, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি নিয়ে সীমান্তে তাদের ক্রয় শুরু করবে। বাংলাদেশের পাট আহরণের জন্য তারা শুধুমাত্র আমাদের সম্মানী পরিশোধ করবে। অনুমতি প্রাপ্তরা আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়কে জড়িত না করেই তাদের সরাসরি পাট বিক্রি করতে পারবে। পাটের এ বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে সীমান্ত এলাকাকে ৬/৭টি বিশেষ অঞ্চলে ভাগ করা যেতে পারে। সম্মানীর ভিত্তিতে তাদের ক্রয়কারী

<003.133.278>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

দালাল হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালানোর আগে অগ্রিম হিসেবে কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রাখতে বলা যেতে পারে।

পাট রপ্তানির ব্যাপারে প্রস্তাবনা এবং জনাব ডি. পি. ধরের সাথে সাক্ষাৎ

ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বাণিজ্য মিশনের নামে ইংল্যান্ড ও জার্মানীতে আমরা প্রায় ৪,৫০,০০০ পাউন্ডের অফিসিয়াল চুক্তি করি যার ভবিষ্যৎ এখন কর্তৃপক্ষের অনুমতির উপর নির্ভরশীল। রপ্তানির জন্য ৫০/৭৫,০০০ বেল পাট বাংলাদেশ সরকারের জন্য সবসময়েই প্রাপ্য যা আসবে বর্তমানে কর্মরত দালালদের মাধ্যমে।

দিল্লিতে জনাব ডি. পি. ধরের সাথে সাক্ষাতে জনাব ধর বাণিজ্য পরিষদের সভাপতিকে জোর দিয়ে বলেন অতিদ্রুত ভারতের প্রাদেশিক বাণিজ্য সমিতির সাথে লভ্যাংশ বিনিময়ের ভিত্তিতে স্থানীয় ব্যবসা শুরু করতে। তিনি রপ্তানির জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন। ভবিষ্যতে উনাদের সরকার কর্তৃক কাচাঁ পাট রপ্তানির সম্ভাবনাও তিনি মাথায় রাখতে বলেন। জনাব ডি. পি. ধরের অনুরোধে আমরা জনাব স্বামিনাথান আই. সি. এস. এর সাথে দেখা করি যিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে অর্থনৈতিক দিকে সহায়তা প্রদান করে থাকেন। জনাব স্বামিনাথান খুব সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং তিনি বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কাচাঁ পাট রপ্তানির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সম্প্রতি ‘স্টেটসম্যান’ সহ কিছু ভারতীয় সংবাদপত্রে প্রকাশ পায় – রপ্তানির জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পাট আসছে। প্রায় ৬/৭ লক্ষ বেল পাট ভারতে চলে আসবে। ভারতীয় পাটকলগুলোর ৬ লক্ষ বেল উৎপাদনের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মোট পরিমানের শুধু মাত্র ১০% অথবা ৫০,০০০ বেলের একটি ছোট চালান রপ্তানির জন্য আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কে আশ্বস্ত করতে পারি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আশ্বস্ত করতে আমাদের হাতে নিম্নে লিখিত রাজনৈতিক ও যুক্তিবাদী বিষয়গুলো আছে-

(ক) ভারতের মাধ্যমে পাট রপ্তানিতে ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে যে সমস্যা তা তারা ভেবে দেখবে যেহেতু ইতোমধ্যে তারা উদ্বাস্তুদের দ্বায়িত্ব নিয়েছে এবং সকল প্রকার বস্তুগত সহায়তা প্রদান করছে। বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে জাতিসংঘ ও অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পত্থ থেকে সরকারী ভ্রমণসমূহও তাদের সাহায্যে পরচালিত হচ্ছে।

(খ) সঠিক মূল্য পেলে বাংলাদেশের পাট চাষিরা প্রচন্ড উৎসাহী হবে এদিকে আরো পাট আনতে। তারা একই সাথে পাকিস্তানী অর্থনীতিকে চালান দেয়া বন্ধ রাখবে।

(গ) বাংলাদেশের নামে পাট রপ্তানির মাধ্যমে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশ সরকারের অস্তিত্ব এক স্বীকৃত বিষয় হবে।

(ঘ) কাচাঁ পাট রপ্তানির ফলে বিশ্বের পাট আমদানীকারকেরা পাকিস্তান থেকে আমদানি কমাতে পারবে এবং বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বাণিজ্য সমঝোতায় এগিয়ে আসবে।

(ঙ) আমরা যদি সরবরাহের অভাবে এসব বড় প্রতিষ্ঠিত বাজার হারাই তবে বাংলাদেশ সরকার এমনকি স্বাধীনতার পরেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চরম সমস্যার সম্মুখীন হবে। এই বিশ্বাস অল্প পরিমাণ সরবরাহের মাধ্যমেই সৃষ্টি করা যাবে।

(চ) যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু বাংলাদেশের পাট রপ্তানি হচ্ছে ভারতের পাটকলগুলো পর্যাপ্ত যোগান ও কম উৎপাদনের জন্য পাটের সর্বনিম্ন দাম বজায় রাখতে পারবে না। এ বিষয়ে ভারতীয় দৈনিকগুলোর মন্তব্যসমূহ দ্রষ্টব্য।

<003.133.279>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

(ছ) যখন ভালো মানের কাঁচা পাটের সরবরাহের অভাবে অন্যান্য দেশের পাটকলগুলো সমস্যায় পড়বে, উন্নতমানের কাঁচা পাটের অভাবে পাটজাত পণ্যের বিশ্ববাজারে মন্দা নামবে ।

(জ) পাট শিল্পগুলোর পরিবর্তিত হয়ে কৃত্রিম পণ্যমুখী হবার ঝোঁক সৃষ্টির মারাত্নক সম্ভবনা আছে যা ভারতসহ বিশ্বব্যাপী পাটশিল্পের জন্য সহায়ক হবে না ।

(ঝ) ভারতের আন্তরিকতা ও সততা পাকিস্তানসহ বিশ্বব্যাপি প্রতিষ্ঠিত হবে যে, সোনালি আঁশ হস্তগত করার কোনো ইচ্ছেই ভারতের নেই। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সম্মত করার জন্য আমাদের আলোচনা হবে উভয়পক্ষের স্বার্থ ও লাভের উদ্দেশ্যে।

বাতিলকৃত টাকাঃ সকল নোট বিক্রি করবার সুবিধাজনক সুযোগ

            ৭৫ ডলার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্যে বাতিলকৃত সকল ‘১০০ রূপীর নোট’ বিক্রি করবার একটি সুবিধাজনক সুযোগ এসেছে যার ফলে প্রতি ১০০০ রূপীর আনুষ্ঠানিক হার দাঁড়ায় ৫৬২/৫০ রূপী (@৭.৫০ রূপী)  , যেখানে ভারতীয় বাজারে আমরা পাচ্ছি প্রতি ১০০ রূপীতে ৩৫/৪০ রূপী যা ভারতীয় মূদ্রায় ৩৫০/৪০০ রূপী দাঁড়ায় । ভারতীয় কর্তৃপক্ষের থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পরে অর্থ মন্ত্রণালয় তা বিশ্ববাজারে যাচাই করতে পারবে এবং সকল নিরীক্ষণ শেষে সম্মত হতে পারবে । এই চুক্তির ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে বাংলাদেশ সরকার তা থেকে বড়মাত্রায় লাভবান হবে। যদি এই চুক্তির বিষয়ে আমরা সফল হতে পারি তাহলে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ আরেকটি বাধার সম্মুখীন হবে। আমি এই বিষয়ে তথ্য পেয়েছি যে কিছু বৈদেশিক ব্যাংক কিছু পুঁজিবাদী অথবা কুয়েতি শেখদের পক্ষ থেকে কল্পিত হিসাবের ঘোষণা দিয়েছে অথবা মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের একটি লেনদেনের সম্ভবনা রয়েছে। সুইজারল্যান্ডের একটি ব্যাংক বেচাকেনায়  আগ্রহী ।

ধানঃ

            শিলং এলাকায় আমাদের বোর্ড সদস্য ব্যারিস্টার জনাব মোনতাকিম চৌধুরী, এমএনএ জানিয়েছেন যে শিলং এলাকায় উন্নতমানের ধান আসছে এবং তা খুব সস্তা দামে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ টন পরিমান খাদ্যসংকট থাকায় ধান রপ্তানিতে আমরা সমর্থন দিতে পারি না। কিন্তু একান্তই বাধ্য অবস্থা হলে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের এক্ষেত্রে ন্যায্য দাম পাওয়া উচিত।

চাঃ

            চায়ের অত্যধিক চাহিদা রয়েছে। অনেকে নিয়মিত আমাদের অফিসে আসছেন এবং অবিলম্বে নগদ মূল্যে যেকোনো পরিমাণের চা কিনতে চাচ্ছেন। তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো সময় আমরা ভালো দামে যে কোনো পরিমাণের চা বিক্রি করতে পারি। চায়ের ভান্ডারের কী হয়েছে সে সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। আমাদের চায়ের সংগ্রহ আছে কি না সেই বিষয়ে জানার জন্য যথাযথ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সাধারণভাবে জানা যায় যে বাংলাদেশ ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড চা উৎপাদন করত। এখন চা উৎপাদন মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।  আরও বেশী পরিমানে চা নিয়ে আসার ভালো সম্ভবনা রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আঞ্চলিক কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে আরও গঠনমূলক পদক্ষেপ নিতে পারে। নিজেরা ৬০০০ মিলিয়ন পাউন্ড চা উৎপাদন করা সত্ত্বেও ভারতে চায়ের ভালো চাহিদা রয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশের সুপরিচিত চা বাগান মালিক জনাব জহিরূল কাইয়ুম এমএনএ –কে তার পরামর্শ দানের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

তামাকঃ

            এই অংশে কী পরিমাণে তামাক আসছে তা জানার জন্য যথাযথ কোনো ব্যবস্থা এখনো পর্যন্ত নেই। আমি জানি যে চাংড়াবান্ধায় ১০০০ মণ পরিমাণ উপস্থিত রয়েছে। তামাক উৎপাদনে পাটগ্রাম এগিয়ে রয়েছে এবং বিপুল পরিমান তামাক খুব ভালো দামে রপ্তানি করা যেতে পারে। একই কারণে আগ্রহী অনেকে অফিসে আসছেন। কিন্তু সমন্বয়ের অভাবে এই বিষয়ে এই এলাকায় আমাদের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আমরা তাদেরকে আমাদের ভান্ডারের ব্যাপারে কোনো বিশদ খবর দিতে পারছি না। তামাক ব্যবসায় খুব ভালো সম্ভবনা রয়েছে ।

<003.133.280>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যঃ

            আমি ভারতীয় রাজ্য বাণিজ্য সংস্থার সাথে আলোচনা করেছি যারা ক্রয় করতে অত্যধিক আগ্রহী। আমি জানি বাংলাদেশের কেউ কেউ এই ব্যবসা শুরু করেছে। শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও তেতুলিয়ায় বিপুল পরিমানে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য আসছে। নিম্নস্বাক্ষরকারীর সাথে স্থানীয় এমএনএ এবং এমপিএ-দের আলোচনা হয়েছে যারা শুল্ক ও কর কিংবা ব্যবসায়ীদের থেকে রপ্তানি ব্যবসার ক্ষেত্রে অন্য যেকোনো আয় আদায়ের ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন। এইসকল দ্রব্যের জন্য লাইসেন্স ইস্যু করার মাধ্যমে আমরা এই ব্যাপারে আমাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারি ।

চলচ্চিত্রঃ

            এই বাণিজ্য মিশন লন্ডন থেকে একটি বৈদেশিক প্রস্তাব পেয়েছে যারা বৈদেশিক মুদ্রায় ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেবার প্রস্তাবসহ বাংলাদেশি চলচ্চিত্র জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’ ক্রয় করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চয়তা দিয়েছে। বিদেশী দেশগুলোতে এই ব্যবসার ভালো সম্ভবনা রয়েছে। চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান জনাব এ খায়ের এমএনএ এর তত্ত্বাবধানে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই বিভাগ চলচ্চিত্র তৈরী ও ব্যবসার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু এই বাংলাদেশ বৈদেশিক বাণিজ্য মিশন বৈদেশিক দেশগুলোর সাথে দর কষাকষি করে সর্বোচ্চ দর পেতে পারে এবং বিদেশে বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের বাণজ্যিক চাহিদার ব্যাপারটি দেখাশোনা করতে পারে যা জনাব এ খায়ের , এমএনএ – কে বাইরের দেশগুলোতে চলচ্চিত্র-বাণিজ্য চালাতে সাহায্য করবে। ভারতীয় অর্থায়নে যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রামের ওপর একটি চলচ্চিত্র তৈরীর প্রস্তাবনা রয়েছে। এই প্রস্তাবনাগুলোকে গ্রহণ ও নিরীক্ষণ শেষে বাংলাদেশ সরকারের কাছে পৌঁছাবার পথ করে দিতে হবে। যদি কোনো বাণিজ্য চুক্তির দরকার হয় তবে চলচ্চিত্র বিভাগ সে দায়িত্ব পালন করবে। বিদেশে চলচ্চিত্র ব্যবসার সাথে জড়িত হলে চলচ্চিত্র বিভাগের সুপারিশে বিদেশে চলচ্চিত্র বাণিজ্য চালাবার বৈধতার কাগজপত্র কিংবা লাইসেন্স বোর্ড থেকে ইস্যু করা যেতে পারে।

            প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে আরও কিছু বাংলাদেশি চলচ্চিত্র আনা হয়েছে , যেগুলো চলচ্চিত্র বিভাগ সংগ্রহ করে জমা রাখবে এবং বাংলাদেশ বাণিজ্য মিশনের সহয়তায় বিদেশি দেশগুলোর সাথে সর্বোচ্চ দর কষাকষিতে অংশগ্রহণ করবে।

কর্পূরঃ 

            আমাদের মুক্তি বাহিনী সুন্দরবন এলাকায় শ্যামনগর পুলিশ স্টেশন থেকে আনুমানিক ৪০ প্যাকেট জাপানী কর্পূর এবং ১২ মণ ধূপ দখল করেছে। এসকল মালামালের মালিক জনাব উপেন্দ্র নাথ শিকদার বলেছেন, মালামালের মূল্য আনুমানিক ৩০/৩৫ হাজার রূপী।  বাংলাদেশ সরকারের উচিত একই দামে এই মালামাল বিক্রি করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া, অন্যথায় সমস্ত মালামাল নষ্ট হয়ে যাবে ।

ঔষধঃ

            বাংলাদেশে ঔষধ সামগ্রীর যথেষ্ট যাহিদা রয়েছে যেখানে আমরা সম্ভব হলে সম্মানীর বিনিময়ে ঔষধ আনার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের বৈধ লাইসেন্স ইস্যু করতে পারি।

<003.133.281>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

মুদি পণ্যঃ

এই ট্রেড মিশনের মাধ্যমে বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত লাইসেন্স দ্বারা সংশ্লিষ্ট বৈদেশিক রাষ্ট্রের বিধি নিষেধ মেনে রয়্যালটি ও কমিশন ভিত্তিক মুদি পণ্যের আমদানি ও রপ্তানির অনুমোদন প্রদান করা যেতে পারে।

চারু ও কারুকলাঃ

বাংলাদেশ সরকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী জনাব কামরুল হাসানকে প্রধান করে একটি চারু ও নকশা বিভাগ চালু করেছে। তারা খুব ভাল কাজ করছে বিশেষ করে পোস্টার, নকশা ও মনোগ্রাম অঙ্কন ইত্যাদিতে।  বোঝা যায় যে, সরকারও তাদের আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে উৎসাহী। বাংলাদেশের চারু ও কলা হিসেবে তাদের কাজ বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিলে চিত্রশিল্পীরা উৎসাহিত হবে। বাংলাদেশ মিশনের প্রদর্শনী কক্ষে এসব শিল্পকলা প্রদর্শনীর আয়োজন করা যেতে পারে যা বিদেশীদের কাছে আকর্ষণীয় হিসেবে ধরা দেবে। বিক্রয়লদ্ধ অর্থ বাংলাদেশ সরকারের নিকট জমা দেয়া যেতে পারে।

আলোকচিত্রঃ

বাংলাদেশের আলোকচিত্র গুলো তত্ত্বাবধানের জন্য দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ। কোন আলোকচিত্রী বা অন্য কেউ বাংলাদেশের কোন আলোকচিত্র বিক্রি করতে পারবে না। সরকার বা বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের উচিৎ যেকোনো বাংলাদেশী আলোকচিত্র বিক্রয়ের ব্যপারে ওয়াকিবহাল থাকা। সারা দুনিয়াব্যপী এসব আলোকচিত্রের অভাবনীয় চাহিদা রয়েছে। বাণিজ্য মিশন বাংলাদেশের সংবাদ ও তথ্য দপ্তরের পরিচালকের সাথে মিলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এগুলো বিক্রি করার ব্যবস্থা করতে পারে এবং বিক্রয়লদ্ধ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিতে পারে। সরকার ক্যামেরা কেনার অর্থ সাহায্য দিয়েছে। তাছাড়া আলোকচিত্রশিল্পীদের দেখাশোনাও সরকার করছে। সরকারি আয়ের জন্য প্রচেষ্টা নেয়া যেতে পারে।

সংবাদপত্রঃ

জানা যায় যে, বহু সংবাদপত্র সরকারের অজান্তেই প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ব্যপারে দেখাশোনার জন্য কাউকে দায়িত্ব অর্পণ করা যায়। আরও জানা গেছে যে, কিছু অসাধু ব্যক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নামে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া নিউজপ্রিন্ট দিয়ে ব্যবসা করছে। তথাকথিত সাময়িকী ও সাপ্তাহিক প্রকাশকদের এইসব অবৈধ ব্যবসা আমাদের জাতীয় মর্যাদার অপরিসীম ক্ষতি করছে।

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকঃ

যদি আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে বিলম্ব হয়, তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি বিপুল সংখ্যক লেনদেন ও অন্যান্য আর্থিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে একটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অধ্যাদেশ জারির সিদ্ধান্ত বিবেচনা করতে পারেন। তাছাড়া ভারত ও অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক স্বীকৃতি অর্জিত হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গঠনের প্রয়োজন হতে পারে। রাজনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো স্থানীয় ব্যাংকের অনুমোদিত শাখাকে প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, যারা নিরাপত্তা সহকারে আমাদের নগদ লেনদেন এবং আমানত জমা রাখার জন্য ব্যবস্থা করতে পারবে। এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পুরো পৃথিবী জুড়ে অর্থ সংগ্রহ ও লেনদেন করার অপরিমেয় সুযোগ করে দিবে।

আমি ইংল্যান্ড ও অন্যান্য দেশে অবস্থানরত আমার অর্থনীতিবিদ বন্ধু ও বিশেষজ্ঞগণের কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছি যারা বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্কের কারনে

<003.133.282>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

রুপির বিপক্ষে সর্বোচ্চ পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আনতে সক্ষম। অসংখ্য সিলেটবাসি বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। প্রয়োজন হলে আমি এই পরিকল্পনার আরও বিস্তারিত বিবরণ প্রদান করব। তাছাড়া সম্মুখ সাক্ষাতে আমি এ ব্যপারে আরও বিস্তারিত তথ্য দিব।

বিপুল স্থাপনা ব্যয়!

সৌভাগ্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের নিকট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আর্থিক সম্পদ রয়েছে। তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহের গুরু দায়িত্ব নিয়েছে। সরকার বিশাল যুদ্ধ ব্যয়, কূটনৈতিক স্থাপনা বজায় রাখা, বেতার সম্প্রচার, সমগ্র বিশ্ব জুড়ে প্রচার প্রচারণা চালানো এবং বেসামরিক প্রশাসন চালানোর মত বিপুল ব্যয়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলো গ্রহণ করেছে।

তবে সরকারের উচিৎ প্রশাসনকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে জনশক্তির পুরোটা ব্যবহার করে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া। সেইসাথে বেসামরিক প্রশাসন চালানোর বিপুল ব্যয় যেখানে যতটুকু সম্ভব কমানো উচিৎ। জানা গিয়েছে যে, সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জন্য ভাল কর্মদক্ষতা জরুরি। আরও জানা গিয়েছে যে, শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর এলাকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ৭০,০০০ রুপী বেতন দেয়া হয়। অথচ এই খরচের ৩০% দিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক কর্মীদের ব্যয় নির্বাহ করা যেত।

রাজনৈতিক কর্মীঃ

লক্ষণীয় যে রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের পরিচ্ছন্ন হৃদয় ও অতীতের সুদীর্ঘ দুঃখভোগ, কারাভোগ ও নির্যাতন ভোগের মাধ্যমে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক চেতনার কারণে স্বাধীনতা আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ; এবং তারাই পাক বাহিনীর অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু। তারা নিজেদের সর্বাপেক্ষা নিবেদিত প্রাণ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করেছে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, তারা দেখছে যে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা পাকিস্তান সময়ের মত এখনো তাদের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। বলা হচ্ছে যে, রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এই একই রকম ব্যবহার বজায় রাখার জন্য লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্ত প্রবাহিত হয়নি। রাজনৈতিক কর্মীদের প্রতি যথোপযুক্ত শ্রদ্ধা ও অগ্রাধিকার দান বিরল ঘটনা, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝি, হতাশা ও অনাস্থা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দর্শন পরিবর্তন হওয়া উচিৎঃ

পুরনো দেশ পাকিস্তানের মৃত্যু হয়েছে। তাই, বাংলাদেশের প্রতিটি নরনারীর উচিৎ তাদের পুরনো দর্শনের পরিবর্তন করা। প্রত্যেক কর্মকর্তা, জননেতা, কর্মী প্রভৃতি সবার উচিৎ তাদের পুরনো অভ্যাসের পরিবর্তন করা। নতুন দেশ ও জাতির জন্য নতুন লক্ষ্য নির্ধারণে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা জরুরি। স্বাধীনতার বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি নরনারীর উচিৎ এই জরুরী অবস্থায় সরকারের নেতৃত্বে সক্রিয়ভাবে ও সততার সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করা।

স্বল্পমেয়াদী চিন্তা ভাবনা পরিহার করা উচিৎঃ

অনেক বাঙালী জনতা, শ্রমিক ও জননেতা ডিসেম্বর বা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরে যেতে বদ্ধপরিকর। তবে আমাদের মধ্যে কম সংখ্যকই বাড়ি ফিরে যাওয়ার চিন্তার পাশাপাশি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ ও নতুন সমাজের ভবিষ্যৎ আর্থ-সামাজিক কাঠামো বিনির্মাণে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার এ ব্যপারে সচেতন, তাই দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে

<003.133.283>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আরও সক্রিয় ও ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ জয়ের জন্য সর্বাত্বক প্রচেষ্টা ও সহায়তা দেয়া এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইসাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরকারী আয় অর্জনের জন্য আমাদের দিবারাত্রি কঠোর পরিশ্রম করা উচিৎ এবং একীভূত প্রচেষ্টা নেয়া উচিৎ যাতে আমরা এই নতুন সমাজকে দীর্ঘমেয়াদী নীতি এবং ভবিষ্যৎ অর্থনীতি এনে দিতে পারি যেখানে স্বাধীনতার পর ভয়াবহ সঙ্কট ও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

অতএব, আওয়ামী লীগের জাতীয়তাবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দর্শন ও নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান থেকে শুরু করে ভবিষ্যৎ অর্থনীতি পর্যন্ত বাণিজ্য কর্মকাণ্ড নির্ধারণে সরকারী যন্ত্র হিসেবে বাণিজ্য মিশনের স্থাপনা নিতান্তই প্রয়োজনীয়।

তারিখঃ ৩০ নভেম্বর, ১৯৭১

(মুস্তাফা সারওয়ার)

<003.134.284>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
মুক্ত এলাকায় অবস্থিত দেশের সম্পদ সংরক্ষণ সম্পর্কে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির নির্দেশ

বাংলাদেশ সরকার

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়

২ ডিসেম্বর, ১৯৭১

গোপন

রাষ্ট্রপতির কার্যালয়

বরাবর

কমান্ডার ইন চিফ

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

                বিষয়ঃ বাংলাদেশের স্বাধীন অঞ্চলগুলোর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির নিরাপদ রক্ষণাবেক্ষণ

                আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সামনে বাড়ছেন, হানাদার বাহিনী পিছু হটছে এবং এমতাবস্থায় সেক্টর কমান্ডার, সাব-সেক্টর কমান্ডার ও ক্রমানুসারে অন্যান্য অফিসারের প্রতি স্পষ্ট নির্দেশনার প্রয়োজন যেন শত্রুমুক্ত এলাকাসমূহের সকল স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ও শস্যক্ষেত্রের নিরাপত্তা প্রদান করা হয় এবং কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র মাফিক বৈধ মালিকের কাছে তা ফিরিয়ে দেয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, এটি অবশ্যই জনপ্রশাসনের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব হবে এবং শীঘ্রই এ বিষয়ে তাদের নির্দেশনা দেয়া হবে। এর মধ্যবর্তী সময়ে মুক্ত অঞ্চলের সকল সম্পত্তি রক্ষার্থে সশস্ত্রবাহিনীকে জনপ্রশাসনকে সব ধরণের সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।

২। আমাকে জননেতাগণ জানিয়েছেন সুন্দরি গাছের গুঁড়ি ও গোলপাতা সুন্দরবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ এবং এর সঙ্গে আমাদের জাতীয় স্বার্থ জড়িত। এদের ধ্বংস পরিহারে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে সেক্টর কমান্ডারদের প্রতি লিখিতভাবে নির্দেশনা দেবার জন্য সুপারিশ করছি।

(সৈয়দ নজরুল ইসলাম)

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

মেমো নং PS/SEC/VI 1/243 (1)

তারিখঃ ২রা ডিসেম্বর

প্রতিলিপি প্রতিরক্ষা বাহিনীর দায়িত্বরত মন্ত্রীর প্রতি প্রয়োজনীয় তথ্য ও ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাঠানো হল

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

<003.135.285>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী মহাসচিব নিয়োগ সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়

৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে

আলোচনা থেকে গৃহীত সিদ্ধান্তসমুহ

সিদ্ধান্ত নেয়া হল যে এখনকার জন্য সরকারের তরফ থেকে একজন অস্থায়ী সেক্রেটারি জেনারেল নিযুক্ত করা হবে এবং নিয়োগ হবে নিছকই অস্থায়ী। মন্ত্রীসভা জনাব রুহুল কুদ্দুসকে এই পদের জন্য নির্বাচিত করেছে এবং তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্ধারিত পদে নিযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

মেমো নং- ……/ক্যাব.তারিখঃ ৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১

প্রতিলিপিঃ

                ১। ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির ব্যক্তিগত সচিব

                ২। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব

                ৩। অর্থমন্ত্রির ব্যক্তিগত সচিব

                ৪। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব

                ৫। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব

                ৬। জনাব রুহুল কুদ্দুস

                ৭। সকল সচিবগণ

৮। সচিব, জিএ ডিপার্টমেন্ট, প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক স্থান ও স্টাফ প্রদান করে অস্থায়ী সেক্রেটারি জেনারেলকে সহযোগিতা করার অনুরোধ সাপেক্ষে। সেক্রেটারি জেনারেলের কার্যালয় হবে প্রধানমন্ত্রীর অফিস বিল্ডিংএ।

(এইচ টি ইমাম)

মন্ত্রীপরিষদ সচিব

০৭.১২.১৯৭১

<003.136.286>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তারিখ সুত্র শিরোনাম
৭ডিসেম্বর,১৯৭১ বাংলাদেশ সরকার জাতির উদ্দেশ্যে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভাষণ

সংগ্রামের শেষ প্রহরে নতুন অগ্নিশপথ

আমার প্রিয়দেশবাসী ভাইবোনেরা,

     সংগ্রামময় , অমারাত্রির শেষমত প্রহর আমরা অতিক্রম করে এসেছি । স্বাধীনতার সূর্যাভাসে বাংলাদেশের দিকবিদিক আজ উদ্ভাসিত। স্বাধীনতার এই সূর্যসকালে আপনারা আমার অভিনন্দন ও সুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। আজ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের পাতায় লিখিত হল আর একটি স্মরণোজ্জ্বল দিন।

      গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক ন্যায্য স্বীকৃতি দিয়েছেন আমাদের প্রতিবেশী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতবর্ষ। বাংলাদেশের মাটিতে যে নির্মমতম গণহত্যা অনুষ্ঠিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে  বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার জন্য মহান ভারতের প্রধানমন্ত্রী ওই দীর্ঘ আট মাসব্যাপী যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তার জন্য আমি   গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও  বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের তরফ থেকে তাঁকে ও ভারতবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

      মিত্র রাষ্ট্র ভারতের সৈন্য বাহিনীর জোয়ানরা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদার শত্রুদেরকে নির্মূল করার আজ যুদ্ধ করে চলেছে । আর এই ভাবেই দুই দেশের জনগণের মধ্যে যে অটুট বন্ধুত্ব রচিত হচ্ছে তা রক্ত দিয়ে  লেখা। মিত্র রাষ্ট্র ভারতের জোয়ানদেরকে আমি বাংলাদেশের জনগণের তরফ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

বাঙ্গালির শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস

       প্রায় সাড়ে আট মাস হতে চললো , আমরা এ মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে এসেছি।এই সংগ্রামের ইতিহাস, জয়ের ইতিহাস , শত্রুকে উপর্যুপরি আঘাত হানার ইতিহাস, বাঙ্গালির শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস , শত্রুদের পর্যায়ক্রমে পরাজয়ের ইতিহাস। এ ইতিহাসে যাঁরা লিখেছেন , বাংলার সেই কোটি কোটি জনসাধারণ ,যাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষা এ ইতিহাস লিখায় সাহায্য করেছে , তাদের সবাইকে আমি সংগ্রামী সালাম জানাই। বাংলার বীর সন্তানেরা যাঁরা অস্ত্র ধারণ করে হানাদার দস্যুকে আঘাত হেনেছেন, সেই মুক্তিবাহিনীর , বীর সৈন্যদেরকে আমি আজকের দিনে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

       আজকের দিনে স্মরণ করি সেই সমস্থ বীর শহীদদেরকে যাঁদের রক্তে বাংলার শ্যামল প্রান্তর লাল হয়েছে , আর যাঁদের বীরত্বের ইতিহাস বাঙ্গালি জাতির জন্য এক গৌরবময় অধ্যায় করে গিয়েছে।

       বন্ধুরা আমার , রক্তের আখরে , এই সংগ্রামের ইতিহাসের সাফল্যের এ ক্লান্তিলগ্নে আজ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি বাঙ্গালী জাতির পিতা জনাব শেখ মুজিবুর রহমান কে। স্বাধীনতার এ ঊষালগ্নে আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই। বর্বর জঙ্গিশাহির কারাগারে আজ তিনি আবদ্ধ। আমার জানিনা অন্ধকার কারাগারে কি দুঃসহ জীবন তিনি যাপন করছেন। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের বীর মুক্তিবাহিনী , আমরা সবাই যাঁর আদর্শে অনুপ্রানিত, আর যাঁর আদর্শকে রুপ দেওয়ার জন্য আজকের এই সংগ্রাম চলছে এবং চলবে – সেই মহান নেতাকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমার চেষ্টা করছি এবং করে যাবো। যে হানাদার দস্যুরা বাংলার নয়নমণিকে আজও আবদ্ধ রেখেছেন , তাদের কাছে আমি বলতে চাই , সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীর দুর্জয় সাহস আর প্রতিজ্ঞা যেমন অস্ত্রের ভাষায় রুদ্ধ করা যায়নি , তেমনি করে বাংলার অবিসংবাদিত নেতাকে কারাগারে রেখেও তারা নিস্তার পাবেন না।

<003.136.287>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

প্রিয় দেশবাসীর কাছে আমি , আমার সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস দিচ্ছি, বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য চেষ্টা করেছি , সেই চেষ্টা চালিয়ে যাবো।কেননা আমরা মনে করি , বঙ্গবন্ধুকে ফেরত না পেলে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই স্বাধীনতার আনন্দ উপভোগ করা সম্ভবপর হবেনা।

বিভিন্ন দেশের প্রতি আবেদন

  বন্ধুরা আমার , আজকের এই দিনে ভারতবর্ষ যখন আমাদেরকে স্বীকৃতি দিয়ে সারা পৃথিবীর সামনে সাড়ে সাত কোটি মানুষের ইচ্ছাকে পূরণ করেছে, সেই দিনে আমি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে আবেদন করবো, আপনারা স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সত্তাকে স্বীকৃতি করে দিন। স্বাধীনতা ও গনতন্ত্রের যে মূল্যবোধ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীতে মানুষের অগ্রগতিকে সাহায্য করেছে , সেই স্বাধীনতার ও গনতন্ত্রের মূল্যবোধে যদি কারো কোনো আস্থা থাকে , আজকে তাঁদের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান , দ্বিধা না করে স্বাধীন বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিয়ে গনতন্ত্র ও স্বাধীনতার মর্যাদাকে রক্ষা করুন।

  বন্ধুরা আমার , আর বিশ্বাস , ভারতবর্ষের  দৃষ্টান্ত অনুসরন করে অচিরেই পৃথিবীর আরও দেশ আমাদেরকে স্বীকৃতি দেবেন। পৃথিবীর যে সমস্ত বৃহৎ রাষ্ট্র আজকে রাজনীতির আর জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে নিতে পারছেন না , তাঁদের ভুমিকা ভবিষ্যৎ কালের বংশধররেরা কোনো দিনই ভুলবেন না। পৃথিবীর সকল দেশের শান্তিকামী মানুষের জন্য আমার দেশের জনগণের ভালবাসার কথা আমি আবার ঘোষণা করছি। কিন্তু যারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থে আজকে ক্ষমতায় মদমত্ত হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বানচাল করার জন্য এখনো ক্ষীণ ও দুর্বল প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, সে সমস্ত রাষ্ট্র আজও একজন অত্যাচারী ক্ষয়িঞষু একনায়ককে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন- সেই সমস্ত বৃহৎ রাষ্ট্রের কাছে আমি এখনো আবেদন করবো, আপনারা আপনাদের নীতি পরিবর্তন করুন , বাস্তবকে সিকারকরে নিন স্বাধীন বাংলাদেশের সত্তাকে আপনারা উপেক্ষা করতে পারেন নাই , ভবিষ্যতেও  পারবেন না

     বন্ধুরা আমার , স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়েছে , আজকে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটে যাচ্ছে ।আমাদের মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিবাহিনীর জোয়ানরা , মুক্তিবাহিনীর নৌ-বিভাগের দুর্ধর্ষ নাবিকেরা, মুক্তিবাহিনীর অসম সাহসী বৈমানিকেরা আজকে শত্রুকে আঘাত হানতে হানতে পিছু হটিয়ে দিচ্ছেন ।শুধুমাত্র কয়েকটি বড় বড় ক্যান্টনমেন্টে আজকে তারা আবদ্ধ।

আর বেশি দেরি নাই

প্রিয় দেশবাসী ভাইয়েরা, আপনারা বিশ্বাস করুন , আর বেশি দেরি নাই , যেদিন মিত্র বাহিনীর সহায়তায় আপনাদের মুক্তিবাহিনি ইয়াহিয়া খানের নৃশংস সৈন্য বাহিনীকে বাংলার মাটি থেকে সমূলে উৎখাত করবে।

           তাই আমি দেশবাসীর কাছে আবেদন করবো, শেষ আর চরম আঘাত হানার জন্য যখন আমাদের মুক্তিবাহিনী , আমাদের মিত্রবাহিনীর সহায়তায় জোরকদমে এগিয়ে চলেছে , তখন আপনারা তাঁদের প্রতি যে সহানুভূতি , সাহায্য বিগত আট মাস দেখিয়েছেন , সেই সহানুভূতি এবং সাহায্য দিয়ে শেষ বিজয়ের মুহুর্তটিকে ত্বরান্বিত করুন।

           বন্ধুরা আমার , প্রিয় দেশবাসী ভাইয়েরা আমার ,আজকে বাংলাদেশের গোটা কয়েক জায়গা ছাড়া বাকি অঞ্চল মুক্ত । এই সমস্ত মুক্তাঞ্চলে স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করা হচ্ছে, মুক্তাঞ্চলে মারা সরকারের তরফ থেকে যে শাসন ব্যাবস্থা কায়েম করা হচ্ছে , আমি আনন্দিত যে সেই শাসন ব্যাবস্থায় পরিপূর্নভাবে মুক্তাঞ্চলের জনগণের সাহায্য এবং সহযোগিতা আমরা পাচ্ছি।

           বন্ধুরা আমার ,অচিরেই সারা বাংলাদেশ জুড়ে  গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শাসন ব্যাবস্থা কায়েম হতে চলেছে। দীর্ঘ তেইশ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন এবং গত আট মাসে শত্রুদের নির্বিচার স্বেচ্চাচারিতার ফলে বাংলাদেশের শাসন কাঠামো ও অর্থনৈতিক  অবস্থা সাংঘাতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে। এর অপরিহার্য পুনর্গঠনের দায়িত্ব আমাদের সকলের উপর রয়েছে।

<003.136.288>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

 

বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যাবস্থা পুনর্বিন্যাসের দায়িত্ব আমাদের সরকারের সঙ্গে সঙ্গে দেশবাসী সবাইকে নিতে হবে। যে অটুট মনোবল ও অতুলনীয় বীরত্ব দিয়ে দেশকে আপনারা শত্রুমুক্ত করে চলেছেন ইতিহাসে তা অনন্য ঘটনা হিসেবে স্থান পাবে। সেই মনোবল এবং উদ্যমকে এখন দেশ গঠনের কাজে নিয়োগ করতে হবে। এক দিকে যেমন শেষ শত্রুটি নিধন না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম সংগ্রাম করে যেতে হবে, অন্যদিকে তেমনি স্বর্ণপ্রসবিনী বাংলা হৃদ সৌন্দর্য ও সম্পদের পুনরুদ্ধারের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

                  বাংলাদেশ সরকারের মৌলিক নীতি

        স্বাধীন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের আমার সরকারের মোউলিক নীতি ইতিপূর্বেই ঘোষণা করা হয়েছে।ধর্মনিরপেক্ষতা , গনতন্ত্র আর সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের সুখী ও সমৃদ্ধিশালী বাংলা গঠন করতে হবে।

        স্বাধীন বাংলাদেশে  মানুষে মানুষে কোনও প্রভেদ থাকবে না। হিন্দু, মুসলমান , বৌদ্ধ , খৃষ্টান, যে যে ধর্মেই হোন না কেন , তাঁদের ব্যাক্তিগত আর সামাজিক জীবনে পরিপূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্রীয় জীবনে গণতন্ত্রের মূল আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই ভবিষ্যতের সুখী আর সমৃদ্ধশালী বাংলা আমরা গড়ে তুলবো।

        গনতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার স্বীকৃত হবে। প্রত্যেক নাগরিককে গনতান্ত্রিক বাংলাদেশে তার রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগের পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়া হবে।

        জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই ভবিষ্যতে বাংলাদেশের দায়িত্ব , স্বাধীনতা আর অগ্রগতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

        বন্ধুরা আমার , আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই হবে ভবিষ্যৎ গনতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য। তাই দেশবাসী ভাইদের কাছে আমি আবেদন করছি , সরকারের তরফ থেকে আইনের শাসন প্রবর্তন করে যুদ্ধবিধ্বস্ত সোনার বাংলার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবার জন্য সরকার যে পদক্ষেপ গুলি নেবেন, আপনারা এই পদক্ষেপে সরকারকে এবং সহযোগিতা করবেন।

         দেশবাসী ভাইদের কাছে আরো আবেদন করব, নিজের হাতে আপনারা আইনের ভার তুলে নিবেন না। আপনারা শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য নিজ নিজ এলাকায় নিজের দায়িত্ব গ্রহণ করুন। মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা এবং আমার সরকারের নিয়োজিত  কর্মচারীরা আপনাদেরকে পরিপূর্ণভাবে সাহায্য করবে।

         বন্ধু আমার , তেইশ বছরের শোষণে বাংলাদেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছে পশ্চিমা পুঁজিপতিরা। বাংলার সম্পদকে লুণ্ঠন করে তেইশ বছরে সোনার বাংলাকে শ্মশান করেছে। নৃশংস সেনাবাহিনী আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড , অনেক সিল্প-কারখানাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিপর্যস্ত এ অর্থনীতিকে সম্বল করে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য  অর্থনৈতিক স্বাধীনতা আর মুক্তি আনার শপথ নিয়েছে। আমার সরকারের তরফ থেকে আমি বলিষ্ঠ ভাবে ঘোষণা করতে চাই যে , একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কায়েমের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের সকল শ্রেণীর সকল স্তরের মানুষের জন্য অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের প্রচেষ্টা আমরা চালিয়ে যাবো । আমরা এমন একটা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করবো , যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান দূর হবে- যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিটি কৃষক শ্রমিক মধ্যবিত্ত মানুষ তার জীবন ধারণের পরিপূর্ণ সুযোগ পাবে।

          কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের কোনো সরকারের পক্ষেই কোন অর্থনৈতিক পরিকল্পনা কার্যকরী করা সম্ভবপর হয় না যদি না দেশবাসীর পরিপূর্ণ সমর্থন পাওয়া যায় ।

<003.136.289>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমার সরকার অচিরেই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মুল বিষয়গুলো দেশবাসির সামনে প্রকাশ করবেন।আমি দেশবাসী ভাইদের কাছে আবেদন জানাই,সরকারের এই প্রচেষ্টায় আপনারা পুরিপুর্নভাবে সাহায্য ও সহযোগিতা করবেন।

বন্ধুরা,বহু দুঃখ ,বহু কষ্ট আমরা করেছি। বহু রক্ত আমরা দিয়েছি,বহু মায়ের বুক খালি হয়েছে,বাংলার বহু নারী তার ইজ্জত খুইয়েছে স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য।যে স্বাধীনতা আজকে অর্জিত হতে চলছে,সেই স্বাধীনতাকে স্থায়ীভাবে আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য ফলপ্রসূ করার মহান দায়িত্ব দেশবাসী সবাইকে নিতে হবে।

তাই দেশবাসী ভাইবোনেরা, স্বাধীনতার সংগ্রাম সমাপ্তি হলেই আপনার আমার সংগ্রাম সমাপ্তি হবে এ যেন আপনারা না ভাবেন।দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন,গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মতোই দৃঢ় মনোবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমাদের কাজ করে যেতে হবে।

                             নতুন সংগ্রামের আহবান

প্রিয় দেশবাসী ভাইবোনেরা,অর্থনৈতিক,সামাজিক ,সাংস্কৃতিক সংগ্রামের এই আহবান আজকে আমি আপনাদেরকে জানাচ্ছি। আমি আশা করি ,স্বাধীনতা সংগ্রামে যেভাবে আপনারা বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছেন,আগামী দিনের সুখী সমৃদ্ধিশালী বাংলা গঠনের সংগ্রামে তেমনিভাবেই আপনারা সাড়া দিবেন।আমার যে সমস্ত প্রিয় দেশবাসী নৃশংস হানাদার দ্বারা বিতাড়িত হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়ে বাধ্য হয়েছেন নৃশংস হানাদার নৈস্য দ্বারা বিতাড়িত কথা বলতে চাই।

ইতিহাসের নজিরবিহিন এই দুর্নিপাকের মোকাবিলা করেছেন আপনারা,দুর্নিবার সাহস ও তিতিক্ষার সাথে।এর জন্য শুধু আমাদের নয়, সারা বিশ্বের সহানুভূতি আপনাদের জন্য আজ উম্মুখ।

আমি স্থিরবিশ্বাসী যে আপনাদের দুঃখের দীর্ঘরাত্রী প্রায় ফুরিয়ে এল,অতী শ্রীগই আপনারা আপনাদের প্রিয় মাতৃভুমিতে সসম্মানে ফিরে আসতে পারেন।বাংলাদেশ সরকার আপনাদের নিরাপদে দেশে ফিরে আসা এবং পুনর্বাসনের সব দায়িত্ব সানন্দে নিয়েছেন।

প্রিয় দেশবাসী ভাইয়েরা ,আজকের এই দিনে আপনাদের তরফ থেকে সারা পৃথিবীর ছোট বড় সকল রাষ্ট্রকে আমি জানিয়ে দিতে চাই যে,আমার সরকারের পররাষ্ট্রনীতি হবে –জোট নিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি।এই জোট নিরপেক্ষ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে বিশ্বের সকল শান্তিকামী দেশ আর শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে আমরা সহ অবস্থানের নীতিতে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে চাই।

আমরা সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদ এবং উপনিবেশবাদের বিরোধী। পৃথিবীর যেখানের মানুষ গণতন্ত্র আর স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করবে,আমরা সেই সমস্থ সংগ্রামী মানুষকে সমর্থন ও সহযোগিতা করবো।

প্রিয় দেশবাসী ভাই ও বোনেরা,এই মহান আদর্শকে রুপ দেওয়ার জন্য আমাদের আজ এই চরমলগ্নে নতুন করে অগ্নিশপথ নিতে হবে।বীর মুক্তিবাহিনীর জোয়ানরা,বাংলার সংগ্রামী ছাত্র ও তরুণেরা,দেশমাতৃকাকে শত্রুর কবল মুক্ত করার জন্য তোমরা বীরত্বের সাথে সংগ্রাম করেছ।

                    শত্রুর উপর শেষ আঘাত

বীর মুক্তিবাহিনীর ভাইয়েরা,সংগ্রামের এই শেষ মুহুর্তে তোমাদের কাছে আমি উদাত্ত আহবান জানাবো,জোর কদমে তোমরা এগিয়ে চলো।

<003.136.290>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমাদের মিত্রবাহিনীর ভাইয়েরা,আমাদের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই তাদের বুকের তাজা রক্ত বাংলার শ্যামল মাটিতে ঢেলে দিচ্ছেন।তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর শেষ দুর্গগুলোর উপর প্রচন্ড আঘাত আনতে হবে।আঘাতের পর আঘাত করে শত্রুর দুর্গগুলিকে চুর্ণ করে দাও।

আজকে তোমাদের একটি দুর্জয় শপথ হোক- সেই শপথ ঢাকা চলো।ঢাকার বুকে বাংলাদেশের স্বাধীন পতাকা উড্ডিন করো।

আমি আল্লাহতালার কাছে মোনাজাত করছি। বাংলার দুর্জয় বীরেরা,তোমাদের চরম সাফল্য নিকটবর্তী হোক।

প্রিয় দেশবাসী ভাইবোনেরা, সংগ্রামের এই শেষ মুর্হুতে আপনারা ও মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শেষ চেষ্টায় শরিক হোন।আপনাদের কাছে আমার এই আকুল আবেদন।ইনশাআল্লাহ আমাদের সুনিশ্চিত সাফল্য আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি।

আল্লাহর মেহেরবানীতে,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঢাকার বুকে প্রতিষ্ঠিত হবে ।বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পুরন হবে।

                  শেখ মুজিবুর রহমান –জিন্দাবাদ

                  বাংলার সংগ্রামী জনতা- জিন্দাবাদ

                  বাংলার মুক্তিবাহিনী – জিন্দাবাদ

                                 জয় বাংলা

<003.137.291>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মালীকানাহীন সম্পত্তি সংরক্ষণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীর নির্দেশাবলী

বাংলাদেশ সরকার

অর্থ মন্ত্রণালয়

৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১

অনুলিপি

মেমো নং-

তারিখঃ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১

আদেশ

এটা রিপোর্ট করা হয়েছিল যে বাংলাদেশে ভিতরে অনেক লোকই তাদের অস্থাবর সম্পতি যুদ্ধের কারনে বিভিন্ন স্থানে রেখে এসেছেন। এই সকল সম্পত্তির কিছু মালিক দালাল অথবা রাস্ট্রের শত্রুদের হতে পারে।

এ ধরনের সম্পত্তি যেগুলো অবহেলিত অবস্থায় আছে তা সংরক্ষণের জন্য আঞ্চলিক কাউন্সিল,সেক্টর অথবা সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল কতৃপক্ষের অধীনে নেয়া যেতে পারে।

এই সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিকদের কাছে ফিরিয়ে দেবার বিষয়ে পরে বিবেচনা করা হবে

এম মনসুর আলী

দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী

অর্থ,ব্যাবসা এবং বানিজ্য

মেমো নং- এফএম/৭৬(২/৭১

প্রতিলিপিঃ

১। অর্থ,ব্যাবসা এবং বানিজ্য সচিব

২। প্রতিরক্ষা সচিব। সেক্টর ও সাব সেক্টর কমান্ডারদের অবহিত করার জন্য

৩। জনপ্রশাসন সচিব। আঞ্চলিক কাউন্সিলকে অবহিত করার জন্য

৪। তথ্য ও যোগাযোগ সচিব। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ,ব্যাবসা এবং বানিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত বেতারের মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করার জন্য।

এম মনসুর আলী

০৮.১২.১৯৭১

দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী

অর্থ,ব্যাবসা এবং বানিজ্য

মেমো নং-২৩২ তারিখঃ ১৫/১২/৭১

অনুলিপি দেয়া হল ডি সি ও এস এর পক্ষে তথ্য এবং একই তথ্য সেক্টর কমান্ডর বরাবর দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য প্রেরন করা হল।

প্রতিরক্ষা সচিব

<003.138.292>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জাতীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ-এর ভাষন

বাংলাদেশ সরকার

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়

৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১

চলুন সোনার বাংলা গড়ি

আমার প্রিয় দেশবাসি এবং সহযোদ্ধাগন,

পাকিস্তানী জেনারেলরা উপমহাদেশকে একটি ভয়াবহ যুদ্ধে নিমগ্ন করেছে। গত কয়েক মাস ধরেই এটা পরিষ্কার যে তারা তাদের বোকামি ও পাপের শাস্তিস্বরূপ এরকম একটা সমাপ্তির আশাতেই ছিল।

ভারতের প্রতি আগ্রাসন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ভারত উষ্ণ হৃদয়েই বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের যুদ্ধে সমর্থন দিয়েছে।

দুই দেশের শত্রু থেকে সৃষ্ট বিপদ পূর্বের থেকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষকে পুর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় আরো কাছে নিয়ে এসেছে। আমাদের যোদ্ধারা এখন ভারতের যোদ্ধাদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে এবং তাদের রক্ত আমাদের রক্তের সাথে আমাদের মাটিতে মিশে যাচ্ছে। এই ছাপ দুই দেশের মানুষের মধ্যে বন্ধন এটে দিচ্ছে যা বন্ধুত্বের জন্য নির্ধারিত।

ভারতের জনগন সবসময় আমাদের তাদের হৃদয় দিয়ে স্বীকৃতি দিত এবং এখন তাদের সরকারও আনুষ্ঠানিক ভাবে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা যারা আমাদের স্বাধীনতার জন্য শহীদ হয়েছেন তাদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রদত্ত শ্রদ্ধা এবং বাংলাদেশের সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য,তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য একটি বিজয় এবং মুক্তিবাহিনী যাদের চেষ্টা,আত্মত্যাগ এবং তাদের অজেয় একতাবোধ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে এই কূটনৈতিক স্বীকৃতি জয় করেছে। এটা ভারতের মানুষের জন্যও একটি বিজয় যাদের ঐকান্তিক চেষ্টা ছিল বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য। প্রকৃতপক্ষে এটিই বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের জন্যই একটি চমৎকার সময়।

বিশ্বের সবথেকে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতেরই উচিত ছিল সবার আগে স্বাধীন রাষ্ট্রের কাতারে বাংলাদেশকে আমন্ত্রন জানানো। স্বাধীনতা ও মানবিকতার প্রতি তার অঙ্গিকার, ১ কোটি উদ্বাস্তু বাঙ্গালিকে সহায়তা প্রদান এবং তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় যুদ্ধে সাহায্য করা এগুলো সবই আমাদের ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ভারতের এমন সাহসী সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই, একই সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারত সরকার, ভারতীয় সংসদের সদস্যবৃন্দ এবং ভারতের সাধারণ জনগণ যাদের সাহায্যে আমাদের রাস্ত্রসত্ত্বা স্থায়ী হয়েছে তাদের সকলকে জানাই অসংখ্য ধন্যবাদ। শ্রীমতী গান্ধীর দুরদর্শিতা ও দক্ষ রাষ্ট্রপরিচালনার গুণের কাছে বাংলাদেশ চিরঋণী হয়ে থাকল। ভারতের পরে ভুটানও আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এজন্য আমরা তাদের রাজার প্রতিও কৃতজ্ঞ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতিদান একটা বিরাট ব্যাপার। যতদিন পর্যন্ত আমাদের সাথে ভারতের সম্পর্কের বিষয় থাকবে, ততদিন পর্যন্ত এই সম্পর্কের ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও বন্ধুত্ব। যুদ্ধের ভয়াবহ সময়ে আমরা ভারতের সাথে যে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি তা ভাল ফলই বয়ে আনবে এবং আমি নিশ্চিত এটা আমাদের দুই দেশের জন্যই সুসংবাদ বয়ে আনবে।

<003.138.293>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

সত্যিকার অর্থে বাঙ্গালিদের জয়ের আনন্দ আসলে বিষাদে পুর্ণ। বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মুহুর্তে শত্রুর হাতে বন্দি,যখন বাংলাদেশ,তার স্বপ্ন,আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু,জনগনের দূরে অথবা কাছে যেখানেই থাকুক না কেন,সে সবসময় তাদের হৃদয়ে থাকে। সে চেতনার প্রতীক,যা আমাদের জন্য অতীতকে পরিবর্তন করে দিয়েছে এবং এবং ইতিহাসের একটি অংশ যা ভবিষ্যতে এই জাতিকে আরো প্রতিষ্ঠিত করবে। এবং এটা সত্যি যে এখন থেকে তার অনুপস্থিতি আমাদের জন্য বেদনাদায়ক।

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়কে প্রত্যেক প্রগ্রতিশীল দেশ থেকেই স্বাগত জানান উচিত। নতুন রাষ্ট্র প্রতিনিধিত্ব করছে শান্তিপূর্ন সহবস্থান,আন্তর্জাতিক জোট নিরপেক্ষতা এবং সকল ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবিরোধী এবং এটি গণতন্ত্র এবং একটি অসাম্প্রদায়িক এবং সমাজতান্ত্রীক রাষ্ট্র গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি সমস্ত জাতিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ভারত এবং ভুটানকে অনুসরন করবার জন্য এবং ৭৫ মিলিয়ন মানুষের বাস্তবতা মেনে নেবার জন্য।

পশ্চিম পাকিস্তান সরকার শত্রুদের কড়াল গ্রাসে পূর্ণ এই ধারনা তারা সামনে নিয়ে আসছে। অন্যায়ের শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তার সমর্থকদের নেয়া পদক্ষেপ প্রায় ব্যার্থ হচ্ছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশে  সংঘাতের কারনের গভীরে না গিয়েই এই উপমহাদেশে যুদ্ধ বিরতীর জন্য আমেরিকার সমাধানমুলক আহব্বান আমেরিকার অন্ধত্ব এবং নষ্টামির উদাহরণ। সঠিক বিচারে ব্যার্থ হবার জন্য চীনও একই অপরাধী। বাংলাদেশের মানুষ সোভিয়েত ভেটোর জন্য কৃতজ্ঞ।

আমরা বাংলাদেশের মধ্যে ইতিহাসের দেয়া অসম্পূর্ণ কাজ গুলো অবশ্যই শেষ করতে হবে এবং উন্মত্ত সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দেয়া একটি ফেসিস্ট রাস্ট্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকতে হবে। শত্রুর শেষ ঘন্টা বাজার সময় খুব দ্রুত আসছে। সে সকল জায়গা থেকে পশ্চাদপসরন করছে এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর আঘাতের মধ্যে ঘূর্নিপাক খাচ্ছে। সময় এখন বাঙ্গালিদের পক্ষে এবং দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জেগে ওঠার এবং চরম আঘাত করার এটাই সময়।তাদের অবশ্যই মুক্তিকারীদের সম্ভব্য সকল ক্ষেত্রে সহযগিতা করা উচিত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনকে সহযগিতা করা উচিত। এটা বাংলাদেশের  কাউকে বলতে দিয়েন না,তার জীবনের অবস্থান যাই হোক না কেন, যখন ডাক এসেছিল তখন সে ব্যার্থ হয়েছিল।

আমি শত্রু সৈনিক এবং রাজাকারদের আহব্বান করছি তাদের অস্ত্র জমা দিতে এবং আত্মসমর্পন করার জন্য। তারা এখনো এই আহবান মেনে নিয়ে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। আমি বাংলাদেশের নাগরিকদের আহবান করছি আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নেবার প্রলোভন এড়িয়ে যাবার জন্য। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আইন অনুযায়ী অপরাধিকে শাস্তি দেয়া  রাষ্ট্রের একটি বিশেষ ক্ষমতা। যদি বাংলাদেশের একটি নাগরিকও তার ভাষা কিংবা গোত্রের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ বা আঘাত প্রাপ্ত হয় তাহলে এটি হবে এই জাতির মূল আদর্শ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

বাংলাদেশ দীর্ঘ সময় তার বুকে  দখলদারী বাহিনীর একে দেয়া ক্ষত বহন করবে,কিন্তু সেখানে একটি স্বস্তি এবং উল্লাসের বিষয় হল আক্রমণকারীরা শেষ হয়ে আসছে,বাংলাদেশ সম্পূর্ন স্বাধীন হতে যাচ্ছে,এবং তার আশ্রয়হীন আহত শিশুরা শীঘ্রই দুঃখ এবং নির্বাসন শেষে ঘরে ফিরবে।

<003.138.294>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমরা যেমন যুদ্ধ জিতেছি,তেমনি আমাদের অবশ্যই শান্তি জয়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।“সোনার বাংলা”র ভিত্তি একটি নৃশংস যুদ্ধের ধ্বংসাবশের উপরেই স্থাপিত হবে,এবং প্রত্যেক পুত্র এবং কন্যাদের অবশ্যই বিনির্মান এবং উন্নয়নের এই উল্লাসজনক এবং নতজানু কাজে অংশ নেয়া উচিত। এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর মাধ্যমে কেবল মাত্র শেষ হবে যখন গনতান্ত্রিক,সমাজতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শ মানুষ পরিপূর্নভাবে উপলব্ধি করতে পারবে।

জয় বাংলা

জাতির উদ্দেশ্য জনাব তাজউদ্দীন আহমেদে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর প্রধানমন্ত্রী

সম্প্রচার ডিসেম্ব্র৮,১৯৭১

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় কতৃক প্রকাশিত এবং প্রচারিত।

<003.139.295>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

 

             শিরোনাম                    সূত্র         তারিখ

   মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের

কার্যবিবরণীর অংশ

     বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

    ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১

                                                                  অবিলম্বে

১০/১২/৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার মিটিং এ গৃহীত সিদ্ধান্তের সারাংশ

 

বিবিধ বিষয়সূচি নং ২

মন্ত্রিসভা সানন্দে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে ভারত সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যাংকে বাংলাদেশ সরকারের নামে যে সকল তহবিল ব্যাক্তি মালিকানায় আছে, তা অতিসত্ত্বর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নামে পরিবর্তন করতে বলা হচ্ছে।

স্মারকলিপি নং….(১২)/ক্যাব

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি

তারিখঃ……ডিসেম্বর, ১৯৭১

অনুলিপি পাঠানো হয়েছে :

১) প্রধানমন্ত্রী

২) পররাষ্ট্রমন্ত্রী

৩) অর্থমন্ত্রী

৪) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

৫) পররাষ্ট্র সচিব

৬) প্রতিরক্ষা সচিব

৭) অর্থ সচিব

৮) স্বরাষ্ট্র সচিব

৯) জনপ্রশাসন সচিব

১০) স্বাস্থ্য সচিব

১১) কৃষি সচিব

১২) তথ্য ও প্রচার সচিব

(এইচ.টি.ইমাম)

মন্ত্রীপরিষদ সচিব

<003.140.296>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
দখলীকৃত বাংলাদেশে কর্মরত সরকারী কর্মচারীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের নীতিমালা প্রচারের জন্য তথ্য সচিবকে লিখিত কেবিনেট সচিবের একটি চিঠি

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১

অবিলম্বে কার্যকর

বাংলাদেশ মন্ত্রীপরিষদ সচিবালয়

মেমো নং : ক্যাব/৪৪৬

তারিখ : ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১

প্রতি

জনাব আনোয়ারুল হক খান

সচিব তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

গত ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১, রোজ শুক্রবারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের বৈঠকে নিম্নোলিখিত সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করা হয়েছে, যা যত দ্রুত ও সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য আপনার প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করা প্রয়োজন।

সরকার এই বিষয়ে সচেতন আছে যে, যারা চাপ বা হুমকির মুখে নিজের চাকরিতে অব্যহতি দেননি তাদেরকে কোনও শাস্তির বা আইনের মুখোমুখি করা হবে না।

সকল সরকারি চাকরিজীবী যারা শত্রু শিবিরে কাজ না করার লক্ষ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে দেশেই অবস্থান করছে, মুক্তাঞ্চলে সরকারি কর্মতৎপরতা চালু রাখতে বাংলাদেশ সরকার তাদেরকে স্ব স্ব পদে বহাল রাখবে। এবং তাদেরকে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনও কর্মকর্তার যে পদ থাকবে যুদ্ধের পর পরবর্তি নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাকে তার পদে কাজ করার জন্য বলা হচ্ছে। যদি বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনায় বিশেষ কোনও পদে পদায়ন করা হয় তাকেও পরবর্তি নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত একই দায়িত্ব পালন করতে বলা হচ্ছে।

যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি নিজের পদ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে তাদেরকে ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর আগের পদে ফিরে যেতে বলা হয়েছে, যদি না সরকার তাঁকে অন্য কোন উদ্দেশ্যে সেখানে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকে। পরবর্তি নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।

(এইচ টি ইমাম)

মন্ত্রীপরিষদ সচিব

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

<003.140.297>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

ক্রমিক ৪৪৬(৫)/ক্যাব

উপযুক্ত কার্যক্রমের জন্য প্রতিলিপি দেয়া হইলো :

১. ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

২. চেয়ারম্যান, বেসামরিক প্রশাসন সচিবালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

৩. পুলিশ মহা পরিদর্শক

৪. অর্থ সচিব

৫. সচিব. সাধারণ প্রশাসন শাখা

<003.141.298>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের পলিশের ডিরেক্টর জেনারেল- এর অধীন কর্মকর্তাদের তালিকা

বাংলাদেশ সরকার

পুলিশের ডিরেক্ট জেনারেলের দপ্তর

১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১

পুলিশ মহাপরিচালকের দপ্তর

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

মুজিবনগর

 

স্মারক নং..                                                                                                                                         তারিখ……………

প্রতি

মাননীয় সচিব মহোদয়,

সংস্থাপন বিভাগ,

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, মুজিবনগর।

     প্রসঙ্গঃ আপনার স্মারক নাম্বার গ/৩১৬৫ (৬) তারিখ-১৩-১২-১৯৭১।

     প্রসঙ্গে বর্ণিত আপনার স্মারকে উল্লেখিত চাহিদামত এই ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তাদের তালিকা এখানে সংযুক্ত করা হল।

(এ. খালেক)

পুলিশ মহাপরিচালক

বাংলাদেশ

স্মারক নং..

তারিখ ১৪-১২-১৯৭১

প্রতিলিপি দেয়া হলঃ

 

 

পুলিশ কর্মকর্তাদের জেলাভিত্তিক কর্মস্থলের একটি তালিকা সহ।

১) মাননীয় সচিব, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক বাংলাদেশ সরকার
২) মাননীয় সচিব, অর্থ বিভাগ
৩) মাননীয় সচিব, প্রতিরক্ষা
৪) মাননীয় রাষ্ট্রপতির পি.এস
৫) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পি.এস
৬) মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পি.এস

(এ. খালেক)

পুলিশ মহাপরিচালক,

বাংলাদেশ

<003.141.299>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

নিম্নবর্ণিত পুলিশ কর্মকর্তাগণ পাশে বর্ণিত জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত হয়েছেনঃ

১) জনাব এম.আই.তালুকদার (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)                                       চট্টগ্রাম

২) জনাব বিমলেশ্বর দেওয়ান (পুলিশ সুপার)                                                           পার্বত্য চট্টগ্রাম

৩) জনাব ত্রিপুরা কান্তি চাকমা (সহকারী পুলিশ সুপার)                                    নোয়াখালী

৪) জনাব এ.এইচ.মাজহারুল হান্নান (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)                          সিলেট

৫) জনাব চিনা বিনোদ দাস (সহকারী পুলিশ সুপার)                                         কুমিল্লা

৬) জনাব এ.কে.আর.কিউ.এ. মুত্তালেব (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)                        ময়মনসিংহ

৭) জনাব ইন্দ্রজিত ঘোষ (সহকারী পুলিশ সুপার)                                                                টাঙ্গাইল

৮) জনাব সুলামার কর্মকার (সহকারী পুলিশ সুপার)                                          ফরিদপুর

৯) জনাব ক্যাপ্টেন মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)       ঢাকা

১০) জনাব এম.এ.সামাদ (সহকারী পুলিশ সুপার)                                                   রাজশাহী

১১) জনাব রফিকুল হোসেন (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)                                          দিনাজপুর

১২) জনাব মোহাম্মাদ আফসার উদ্দিন (সহকারী পুলিশ সুপার)                     রংপুর

১৩) জনাব সিদ্দিক হোসেন (সহকারী পুলিশ সুপার)                                                           বগুড়া

১৪) জনাব মাজেদুর রহমান (সহকারী পুলিশ সুপার)                                          পাবনা

১৫) জনাব পঙ্কজ ভূষণ মিত্র (অতিরিক্ত পুলিশ সুপার)                                     খুলনা

১৬) জনাব মোহাম্মাদ আবুল হাশেম মিয়া (সহকারী পুলিশ সুপার)                             যশোর

১৭) জনাব এস.জে.এ. নুর এনায়েত (সহকারী পুলিশ সুপার)                              কুষ্টিয়া

১৮) জনাব এ.কে. চাঁদ মিয়া (সহকারী পুলিশ সুপার)                                          বাকেরগঞ্জ

১৯) জনাব আতাউর রহমান খান (সহকারী পুলিশ সুপার)                                             পটুয়াখালী

২০) জনাব দুর্গাদাস লাহিড়ী (সহকারী পুলিশ সুপার)                                        পুলিশ একাডেমী

২১) জনাব তমিজুদ্দিন আহমেদ (সহকারী পুলিশ সুপার)                                    সৈয়দপুর রেলওয়ে জেলা

২২) জনাব মোহাম্মাদ ইব্রাহিম (সহকারী পুলিশ সুপার)                                      চট্টগ্রাম রেলওয়ে জেলা

(এ. খালেক)

পুলিশ মহাপরিচালক,

বাংলাদেশ।

<003.142.300>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশে বিদেশী কর্মকর্তা নিয়োগ সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদ সভার কার্যবিবরণী

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

 

গোপনীয়

অতীব জরুরী

১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখের মন্ত্রীসভার বৈঠকের নথি ও সিদ্ধান্ত থেকে সংকলিত

বিবিধ

ক. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনে কর্মকর্তা নিয়োগ ও কর্মস্থল নির্ধারণ সংক্রান্ত সাম্প্রতিক সংবাদ প্রতিবেদন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীসভার দৃষ্টিগোচর করা হয়েছে। এতদসংক্রান্ত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, যিনি প্রশাসনিক বিষয়ে সরকারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন, এ বিষয়ে সরকারের নীতি স্পষ্ট করে একটি বিবৃতি প্রদান করবেন। এটা অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, যদি সরকারের নিকট পাওয়া না যায়, তবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অবিলম্বে বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ কর্মী উপদেষ্টা হিসেবে আনবে। সন্দেহ নিরসনের লক্ষ্যে আরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত সরকারী কর্মকর্তাদের কর্মস্থল নির্ধারণের সময় তাদের নাম, পূর্বের কর্মস্থল ও বর্তমান কার্যভার পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করতে হবে।

খ. সকল নিয়োগপত্রের অনুলিপি আঞ্চলিক কাউন্সিলেও পাঠাতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মচারীদের সকল বদলি/কর্মস্থল নির্ধারণী আদেশ কাউন্সিলে জানাতে হবে।

গ. তাছাড়া মন্ত্রীপরিষদ প্রবেশ অনুমতিপত্রের ব্যপারেও বিবেচনা করেছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ভারত সরকারের জারীকৃত প্রবেশ অনুমতিপত্র ঐ সরকারের ……… অনুমতি হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশ দূতাবাস এই অনুমতির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ অনুমতিপত্র জারী করবে।

স্বাক্ষরঃ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি

তারিখঃ ১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

স্মারক নং …………(১০১/ক্যাব).

______________

<003.143.301>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
দখলদার বাহিনীর সহযোগীদের বিচার সম্পর্কে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকের কার্য বিবরণী

বাংলাদেশ সরকার

কেবিনেট ডিভিশন

১৫ ডিসেম্বর, ১৯৭১

গোপনীয়
সর্বশেষ

ডিসেম্বর ১৩, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত “সহযোগীদের বিচার” এবং “সরকারি, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের স্ক্রীনিং” বিষয়ে কেবিনেট মিটিংয়ে গৃহিত সিদ্ধান্তসমূহের সারসংক্ষেপ সংযোজনীতে রয়েছে । এটি অনুকূল তথ্য এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের জন্য প্রযোজ্য ।

এইচটি ইমাম

মন্ত্রীপরিষদ সচিব

১৫.১২.১৯৭১

ইউ ও নং (৯)/ ক্যাব তারিখ ১৫.১২.১৯৭১

১। ভারপ্রাপ্ত সচিব – সাধারণ

২। সচিব, পররাষ্ট্র

৩। সচিব, প্রতিরক্ষা

৪। সচিব, সাধারণ সভা

৫। সচিব, স্বরাষ্ট্র / মহাপরিচালক, পুলিশ

৬। সচিব, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক

৭। সচিব, অর্থ

৮। সচিব, তথ্য ও প্রচারণা

৯। সচিব, কৃষি

ডিসেম্বর ১৩, ১৯৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত কেবিনেট মিটিংয়ে গৃহিত সিদ্ধান্তসমূহের সারসংক্ষেপ

বিষয় নং ২ – সহযোগীদের বিচারকাজ

মন্ত্রীসভা ‘সহযোগীদের বিচারকাজ’ বিষয়ের সারসংক্ষেপ বিবেচনা করেছে এবং আলোচনা সাপেক্ষে নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহন করেছেঃ

ক। এই মর্মে একটি ঘোষণা অবিলম্বে দেওয়া উচিত যে সহযোগীদের বিচার কাজের জন্য একটি বিচার-ব্যবস্থা অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং বিচারকাজ হওয়া পর্যন্ত সব সহযোগীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।

খ। ‘সহযোগীদের বিচারকাজ’ বিষয়ের সারসংক্ষেপে সচিব কমিটির দ্বারা পেশকৃত, নিম্নলিখিত সুপারিশগুলো গৃহিত হয়েছেঃ

<003.143.302>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

ক/ বিভিন্ন ধরণের সহযোগীদের জন্য ট্রাইবুনাল গঠিত হবে।

                খ/ বেতার এবং অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দিতে হবে যে, গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অধীনস্ত স্থানীয় সরকার,  বিচারাধীন ট্রায়ালের জন্য সকল সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতার ও নিরাপত্তা হেফাজতের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছে ।

গ/ ‘সহযোগীদের বিচারকাজ’ – বিষয়টি জুরি এবং আইন বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি দ্বারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুঙ্খানুপুংখভাবে পরীক্ষা করতে হবে – যারা সরকারকে সহায়তা করবেন, বিশেষত নিম্নলিখিত বিষয়গুলোতেঃ

১/ সচিবদের কমিটি কর্তৃক মন্ত্রিসভায় পেশকৃত সুপারিশের আইনিরূপ দেওয়ার জন্য নতুন আইন খসড়া করতে হবে নাকি প্রচলিত আইনের কাঠামোতেই তা করা হবে। যদি সহযোগীদের বিচারের আইন, প্রচলিত আইন/আইনসঅমূহের কাঠামোতে করা হয়, তবে তা কিভাবে এপ্রিল ১০, ১৯৭১ তারিখের স্বাধীনতা ঘোষনার আইন অধ্যাদেশ এবং এপ্রিল ১০ , ১৯৭১ তারিখের ধারাবাহিক আইন অধ্যাদেশ এর সাথে এটি সেখানে সমন্বিত হবে?

                ২/ সহযোগীদের অপরাধ কি যথাযথভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে নাকি রাষ্ট্রবিরোধী যুদ্ধ, রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা,লুণ্ঠন অগ্নিসংযোগ এসব বিষয়ক প্রচলিত আইনের দ্বারাই নিরূপণ করা যাবে?

                ৩/ ট্রাইবুনাল কিংবা বিশেষ আদালতের গঠন কি রকম হবে ?

                ৪/ কি ধরনের ব্যক্তিদের বিচার করা হবে?

                ৫/ সাদৃস্যপূর্ণ কোন ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনা করা হবে এবং আইনি কাঠামোয় আনা হবে?

                ঘ। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক জুরি এবং আইন বিশেষজ্ঞদের কমিটি অবিলম্বে গঠিত হবে এবং পরবর্তী প্রয়োজনীয় উদ্দ্যোগ উক্ত মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহিত হবে। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়  প্রয়োজন হলে ভারত সরকারের আইন বিশেষজ্ঞদের সাহায্য চাইতে পারে।

বিষয় নং – ৩:-  সরকারি, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের বাছাইকরণ

মন্ত্রীসভা ‘সরকারি, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মচারীদের বাছাই’ বিষয়ের সারসংক্ষেপ বিবেচনা করেছে। সারসংক্ষেপে থাকা সুপারিশসমূহ কিছু সংশোধনীসহ গৃহিত হয়েছে । এই বিষয়ে সংশোধনীসহ সিদ্ধান্তসমূহ নিম্নরূপঃ

                ১। নিম্নবর্ণিত ভাবে স্ক্রিনিং কমিটি গঠন করা হবেঃ

                ক/ বাছাই কমিটি কঃ ২০০০টাকা বা তদুর্ধ উপার্জন করা সকল ব্যক্তির জন্য ।

                খ/ বাছাই কমিটি খঃ ৭৫০টাকা থেকে অনূর্ধ ২০০০ টাকা উপার্জন করা সকল ব্যক্তির জন্য ।

<003.143.303>

গ. বাছাই কমিটি গ ও ঘঃ ক ও খ এর আওতাভুক্ত ব্যাক্তিরা সহ ৩৫০-৭৫০ টাকা আয় করা ব্যক্তি বাদে সকল প্রথম শ্রেণীর  কর্মকর্তা।

ঘ. বাছাই কমিটি ঙঃ গ ও ঘ এর অধীনে নয় এরকম সকল দ্বিতীয় শ্রেণীর (গেজেটেড) সরকারি কর্মকর্তা এবং

ঙ. নন-গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা এবং আধা-সরকারী ও সমমানের পদে স্বায়ত্তশাসিত কর্মচারীদের জেলা পর্যায়ে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত করা বাছাই কমিটি দ্বারা বাছাই করা হবে।

২) বাছাই কমিটি “সরকারি কর্মচারীদের দক্ষতা ও শৃঙ্খলার বিধিমালা 1961” অনুসারে যে কাউকে পুরস্কৃত বা শাস্তিদানের অধিকার রাখবে। অপরাধের গুরুত্ব প্রতিটি নির্ধারিত মামলার উল্লেখিত তথ্য দ্বারা নির্ধারিত হবে।

৩) বাছাই কমিটির নিম্নলিখিত গঠনপ্রণালী থাকবে

বাছাই কমিটি কঃ

(ক) একজন চেয়ারম্যান থাকবেন যিনি বা হাইকোর্ট বা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারক ছিলেন বা আছেন,

(খ) বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য ও

(গ) এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি।

বাছাই কমিটি খঃ

(ক) কেন্দ্রীয় সরকারের একজন সচিব যিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সমতুল্য,

(খ) এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং

(গ) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড / হেড পদমর্যাদার এক শিক্ষাবিদ।

স্ক্রিনিং কমিটি গ ও ঘঃ

(ক) চেয়ারম্যান হিসেবে একজন জেলা জজ.

(খ) এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং

(গ) বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র।

স্ক্রিনিং কমিটির ঙঃ

(ক) চেয়ারম্যান হিসেবে একজন সাব-জজ.

(খ) এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং

(গ) একটি কলেজের এক অধ্যক্ষ অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রভাষক।

৪) স্ক্রীনিং কমিটি তার অনুমোদনের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে তাদের রিপোর্ট এবং তথ্যও জমা দিবে।

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!