৩০ ভাদ্র ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
এ সপ্তাহে মুক্তিবাহিনীর সাথে হানাদার সেনাদের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে রাজাকার সহ প্রায় ২০০ পাকিস্তানী সৈন্য খতম হয়। কুমিল্লা জেলার শত্রু পক্ষের ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ বাঙ্কার মুক্তিযোদ্ধারা উড়িয়ে দেয় এবং প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে। মুক্তিবাহিনী গ্রামাঞ্চলে হানাদার বাহিনীর সরবরাহ লাইন সাফল্যের সঙ্গে বানচাল করে দেয়।
-পি ডিপি নেতা নূরুল আমীন দেশ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন।
-‘ষ্টেটসম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশঃ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অপরাধে ন্যাপ (ভাসানী) সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানকের দল থেকে বহিস্কার করা হয়। মওলানা ভাসানীর সভাপতিত্বে ন্যাপ কার্যকরী কমিটির দুইদিনব্যাপী বৈঠকে গৃহিত প্রস্তাবে এই ঘোষণা দেয়া হয়।
-ভারত সরকারের পররাষ্ট্র দফতরের নীতি নিদ্ধারণ কমিটির সভাপতি, বিশেষ প্রতিনিধি শ্রী দূর্গা প্রসাদ ধর (ডি পি ধর) তিন দিনের আলোচনা করেন। বাংলাদেশ মন্ত্রী সভার সদস্যদের সঙ্গে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল প্রেরণের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন বলে জানা যায়।
-পাকবাহিনীর ‘কাফের নিধন’ কর্মসূচী জোরদার হওয়ার ভারতে শরণার্থী সংখ্যা প্রায় আশি লক্ষ অতিক্রম করে।
-Pakistan democratic Party led by Nurul Amin demanded early restoration of democracy in the country. (সংবাদপত্র)
-৪নং সেক্টরের কম্যাণ্ডার মেজ্র চিত্তরঞ্জন দত্তের নেতৃত্বাধীন মুক্তিবাহিনী লাটু বড়লেখা, ফেণ্ডুগঞ্জ পর্যন্ত পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকে। ইতিমধ্যে মুক্তিযোদ্ধ কম্যাণ্ডার (জালালপুর সাব-সেক্টরে) মাহমুদুর রব সাদী তাঁর নেতৃত্বধীন মুক্তিবাহিনী নিয়ে লুবাছড়া চা বাগান আক্রমণ চালায় এবং দু’দিন তুমুল যুদ্ধের পর পুরো লুবাছড়া-কাড়াবালা
মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। উল্লেখ্য, লুবছড়া স্বাধীনতা লাভ পর্যন্ত মুক্ত ছিল। মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত এই লুবাছড়া থেকেই তাঁর নেতৃত্বাধীন ৪নং সেক্টরের আক্রমণের পরিকল্পনা করতেন। এই সেক্টরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেনঃ খাজা নিজামউদ্দন, রফিক উদ্দিন, মোহাম্মদ শাহাবউদ্দিন, আশরাফুল হক, মাহমুদুর রব, আতিকুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন। (১০ খণ্ড পৃঃ ৩৪১)
-ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের নীতিনির্ধারন কমিটির সভাপতি শ্রী দূর্গাপ্রসাদ ধর (ডিপি ধর) মুজিবনগরে বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বাংলাদেশের প্রতিনিধি প্রেরণের ব্যাপারে আলোচনা করেন।
কুষ্টিয়ার বাবলচড়া ইউনিয়ন শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান তাঁর অধীনে ২২ জন রাজাকারকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিবাহিনীর হাতে আত্নসমর্পন করে। তাদের রসদসহ রাইফেল, হালকা মেশিনগান, শর্টগান, ষ্টেনগান প্রভৃতি অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। উল্লেখ্য, এধরনের কয়েকটি রাজাকার দল মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা দেয়। খুলনা জেলারই ৬০জন দলত্যাগী রাজাকার অস্ত্রশস্ত্র সমেত মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্নসমর্পণ করে।
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী