মুক্তিযোদ্ধা ’৭১—’৮৪ লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী নূর-উজ-জামান
সাপ্তাহিক বিচিত্রা | ১৪ ডিসেম্বর ১৯৮৪
আমরা ১৯৭১ সালের সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধ করেছি শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ধ্যান-ধারণা যাই থাকুক না কেন, বিশাল জনগোষ্ঠীর স্বপ্ন ছিল সব ধরনের শোষণ থেকে মুক্তি, এবং সেই মুক্তির লক্ষ্যেই জনসাধারণ স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন এবং স্বীকার করেছেন সীমাহীন আত্মত্যাগ। পাক-ভারত বিভক্তির পরই এই অঞ্চলের জনসাধারণ পশ্চিম পাকিস্তানী কায়েমী স্বার্থবাদীদের ষড়যন্ত্র ও শোষণের হাত থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিভিন্ন আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পর সেই আন্দোলন বিভিন্নভাবে দানা বেঁধে ষাটের দশকের শেষের দিকে একটা বিশিষ্ট পর্যায় উন্নীত হয়। গণ-অভ্যূত্থানের প্রাক-পরিবেশে এদেশে যেসব ঘেরাও আন্দোলন সংঘটিত হয় তার মাধ্যমে কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষ লক্ষ্য করেন যে, আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় সম্ভব। বস্তুতঃ ঘেরাও আন্দোলনের সাফল্যই পরবর্তীকালে গণ-অভ্যূত্থানও স্বাধীনতাযুদ্ধের ভিত রচনা করে, যদিও সে আন্দোলন পরে বুর্জোয়া সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে চলে যায়। আওয়ামী লীগের ছয় দফাও ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন হয় এক দফায়—অর্থাৎ স্বাধীনতার দাবীতে।
সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধে বিজয়ের পর স্বাধীনতার অঙ্গীকার ও লক্ষ্য শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার পথ ব্যর্থ আওয়ামী লীগ শাসকদের হাতে কিভাবে রুদ্ধ ও বিপথগামী হয় একথা আমরা সবাই জানি। আওয়ামী লীগের ব্যর্থতা, দমননীতি, গণবিরোধী ভূমিকা দেশে নতুন করে সামরিক শাসনের পথকে প্রশস্থ করে।
বস্তুতঃ জিয়ার আমল থেকেই দেশে স্বাধীনতার অঙ্গীকার বিরোধী ধারার সূচনা ঘটে। অথচ আজ আমরা অনেকে জিয়ার আমলকে স্থিতিশীল ও সঠিক সময় বলে ভ্রান্তভাবে চিহ্নিত করে থাকি। অথচ জিয়ার আমলে দেশ ও জাতির যে চরম সর্বনাশ ঘটেছে তার তুলনা বিরল এবং আজকে আমরা যে পরিস্থিতির জের বয়ে চলেছি তার সৃষ্টিকর্তা ছিলেন জিয়াউর রহমান।
স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদের সম্মুখীন করে গেছেন জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তার আমলে তারই ছত্রছায়ায় পুনর্গঠিত হয়ে শক্তি সঞ্চয় করেছে। জিয়াউর রহমান কর্নেল তাহেরসহ শত শত মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা বিচারে কিংবা বিচারের নামে প্রহসনের মাধ্যমে ফাঁসি দিয়েছেন। ক্ষমতায় তিনি মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনগণকে তিনি চরম লাঞ্ছনার মুখে নিক্ষেপ করেছেন। তার আমলেই পাকিস্তানীরা ফিরে পেয়েছে পরিত্যক্ত সম্পত্তি যা তারা বিক্রি করে দিয়ে আবার চলে গেছে পাকিস্তানে। জিয়ার আমলে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন হয়েছে সবচেয়ে কম। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স করে যে টাকা খরচ করেছেন তা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক কাজেই আসেনি; পরন্তু সেই কমপ্লেক্সের কর্তা তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তার ও মন্ত্রী হালিম চৌধুরী কমপ্লেক্সের টাকার হিসেব আজও দিতে পারবেন কিনা সন্দেহ।
জিয়া আত্মস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে স্থলে রাজনীতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোকে ভেঙে যে কলঙ্ক অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন তার জের জাতি আজো বইছে এবং আজকের সামরিক সরকার ও ভবিষ্যৎ সামরিক সরকারের জন্য এই অপধারা অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। জিয়া নিজে দল গঠন করেছিলেন রাজনৈতিক টাউট, রাজাকার-আলবদর, সুবিধাবাদী ও ক্ষমতালোভীদের নিয়ে এবং অন্যদলকে ভেঙেছেন তার ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার উদ্দেশ্যে। জিয়ার পুরো অবস্থানটাই ছিল ভ্রান্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত।
জিয়ার আমলেই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এদেশে তাদের ভিতকে নবতর রূপে সংগঠিত করে স্বাধীনতার পক্ষের জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করার সুযোগ পায়। প্রশাসনে পুনরায় মার্কিন সমর্থক আমলারা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে। বলতে গেলে সাম্রাজ্যবাদীদের পুনঃশক্তি সঞ্চয়ই এদেশে স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দলও ধর্ম-ব্যবসায়ীদের উত্থানে সাহায্য করে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, জামাতে ইসলামীর নতুন কর্তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে চ্যালেঞ্জ করে একাত্তরে ভুল করেনি বলে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে সারা জাতির স্বাধীনতার চেতনা ও মর্যাদাকে আঘাত করে।
দেশের অর্থনীতিকে জিয়াউর রহমান দেউলিয়ার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। পাকিস্তানী আমলের মডেলে তিনিও দেশে গড়ে তুলেছিলেন ভিত্তিহীন ফানুস অর্থনীতি।
জিয়ার আমলের প্রথম থেকে বেশ কয়েক বছর পর্যন্ত আওয়ামী লীগসহ কোন দলেরই কার্যকরী কোন ভূমিকা ছিল না। জিয়াকে চ্যালেঞ্জ করার মতো শক্তি ছিল না কারোই। জাতীয়ভাবে জিয়াকে প্রথম চ্যালেঞ্জ করেছিলেন একমাত্র মুক্তিযোদ্ধারা। ১৯৮১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয় আন্দোলন গড়ে তোলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সমর্থনে সারাদেশের বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শহরে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। উল্লেখ্য তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত দশ দলীয় জোট সন্ত্রাস কায়েম করেও কোন সফল হরতাল পালন করতে পারেনি। এ অবস্থায় দেশের জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন আন্দোলনে শরীক হয়েছেন এবং স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধারা আন্দোলন পরিচালনা করছিলেন সাত দফার ভিত্তিতে। তাদের দফাগুলো ছিলো—
(এক) জামায়াতে ইসলামী ও তার সমস্ত প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অঙ্গ সংগঠনসমূহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। এবং এই সকল সংগঠনের সকল প্রকার তৎপরতা প্রতিহত ও বানচাল করার জন্য জনগণ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
(দুই) জাতির জানি দুশমন গোলাম আজমসহ সকল চিহ্নিত রাজাকার-আলবদর ও স্বাধীনতার শত্রু প্রশাসনের অভ্যন্তরে বা বাইরে যেখানেই অবস্থান করুক না কেন—দেশদ্রোহীতার অপরাধে শাস্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় তাদেরকে গণআদালতে বিচারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
(তিন) মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা, বিনাশর্তে প্রত্যাহার করতে হবে।
(চার) পরিত্যক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান, সম্পত্তি ও ব্যবসা স্বনামে বেনামে লেনদেন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে এবং অর্থ ও সম্পত্তি পাচারকারী পাকিস্তানী অনুচরদের শাস্তি প্রদান করতে হবে।
(পাঁচ) প্রশাসনের সর্বস্তর থেকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষঘোর ও জনগণের সম্পত্তি আত্মসাৎকারীদের বরখাস্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।
সমাজ থেকে টাউট, ফড়িয়া ও চোরাচালানীদের উচ্ছেদ করতে হবে।
(ছয়) দ্রব্যমূল্যকে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পলিসিকে পাল্টিয়ে নতুন অর্থনৈতিক পলিসি গ্রহণ করতে হবে।
(সাত) বেরুবাড়ী, দক্ষিণ তালপট্টি (পূর্বাশা) ও গঙ্গার পানির ওপর আমাদের সার্বভৌম অধিকার যে কোন মূল্যে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে বিদেশী আগ্রাসনকে প্রতিহত করার জন্য জনগণকে সামরিক দিক দিয়ে সংগঠিত, সজ্জিত ও প্রস্তুত করে তুলতে হবে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃত্বে পরিচালিত তৎকালীন আন্দোলনে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধা আপন রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করে সাত দফার ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। আন্দোলনের বিশেষ পর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক ও ছাত্রসমাজ অকুন্ঠ সমর্থন জানায় যা কোন সংগঠনের প্রতি জনসাধারণের আস্থা থাকলেই সম্ভব। আন্দোলনের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৮১ সালের ১৬ই মে সারাদেশব্যাপী হরতাল আহ্বান করেন। এই হরতালের প্রতিও স্বাধীনতা পক্ষের বিভিন্ন সংগঠন ও জনসাধারণ অকুন্ঠ সমর্থন জানান। জিয়াউর রহমান তখন পিছু হটতে বাধ্য হন। এই হরতাল প্রতিহত করার জন্য জিয়া তখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ তথা দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে করজোড়ে এক মাসের সময় চান। জিয়া তাৎক্ষণিকভাবে তখন মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী পরীক্ষাকরণ ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি ন্যাশনাল কমিটি গঠন করেন। এর চেয়ারম্যান করা হয় তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী মেজর জেনারেল মাজেদুল হক। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নেতৃবৃন্দ তখন হরতাল একমাস পিছিয়ে ১৬ই জুন তারিখ নির্ধারণ করেন। জিয়া তখন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি রাজনৈতিক ও সাংবিধানিকভাবে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে কিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা যাচাই করে দেখবেন। কিন্তু এর কিছুদিন পরই তিনি নিহত হন। শাসন ক্ষমতায় মুক্তিযোদ্ধা বিদ্বেষী ও স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষের প্রাধান্য আরো বৃদ্ধি পায়।
১৯৮০—৮১ সালে আমরা যে সাত দফা উত্থাপন করেছিলাম তার মূল সুর ছিলো সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন। সেই সাত দফা আজ এক দফা অর্থাৎ সমাজ পরিবর্তনের দফায় পরিণত হয়েছে। গত ১৪ অক্টোবর প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো যে ২১ দফা উত্থাপন করেছে তার মূল সুরও সমাজ পরিবর্তন অর্থাৎ ’৭১ সালের সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
আমরা জানি ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের চরম মুহূর্তেও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধের কোন প্রস্তুতি ছিল না। কেউ কেউ অসহযোগ আন্দোলন দিয়ে ট্যাংক—মেশিনগান ঠেকাবার অবাস্তব দম্ভও করেছেন। ২৫শে মার্চে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আঘাত করলে তারা যে যেভাবে পারেন ছিটকে দেশ থেকে বেরিয়ে ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এমনকি ভারতে গিয়ে ও তারা নিরাপদ বোধ করছিলেন না। তারা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার গঠনেও রাজী ছিলেন না। এপ্রিল মাসে যে সরকার গঠিত হয়েছিল তা মুক্তিযোদ্ধাদের হুমকির জন্যই হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন আরো বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগাররা সরকার গঠন না করলে তারাই সামরিক সরকার গঠন করবেন। প্রগতিশীল বিদেশী সাংবাদিকরাও তখন অন্যান্য দেশের বিপ্লবী অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে আওয়ামী লীগারদের সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিলেন। পরন্তু দেশের মানুষের আর্তনাদ ছিল সরকার গঠনের পক্ষে যা উপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। এরপর নেতারা সরকার গঠনে বাধ্য হলেও সরকারে নিজেদের নাম ঘোষণায় তারা অনিচ্ছুক ছিলেন এই যুক্তিতে যে, এতে বাংলাদেশের ভেতরে তাদের পরিবার পরিজন বা আত্মীয়-স্বজন পাকবাহিনীর অত্যাচারের মুখোমুখি হতে পারে। অথচ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাদের পরিবার-পরিজনের নিরাপত্তার কথা মোটেও ভাবেননি। সরকার গঠনের আগে অনেকে কান্নাকাটিও করেছিলেন সেদিন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল চাপে এবং তাজউদ্দিনের পরামর্শে তারা বাধ্য হয়েছিলেন শেষ পর্যন্ত। অথচ স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগারদের হাতেই মুক্তিযোদ্ধারা নিগৃহীত হয়েছেন ফায়দা লুটেছে সেই সব ভীরু নেতা ও তাদের চেলা-চামুন্ডারা। সশস্ত্র স্বাধীনতার যুদ্ধে আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচেষ্টা একাত্ম ছিল না, মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল দলমত নির্বিশেষে।
স্বাধীনতার অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বা মুক্তিযুদ্ধে অসমাপ্ত অধ্যায় সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সাত দফার আন্দোলনের মাধ্যমে যে ধারার সূচনা করেছিলেন ১৯৮৪ সালে এসে তা এক দফায় পরিণত হয়েছে, আর সেই এক দফা হচ্ছে সব ধরনের স্বৈরাচারী শাসক ও শোষকদের উৎখাত করে সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষের মনে আজ চরম ক্ষোভ। কোটি কোটি মানুষের মনে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের প্রত্যয় বিরাজ করছে। দেশের ছাত্র-শ্রমিক ও কৃষকদের মনে আপোসহীন সংগ্রামের প্রস্তুতি। এই মুহূর্তে আমরা অভাব লক্ষ্য করছি শুধু সৎ ও সঠিক নেতৃত্বের। তবে আমরা আশাবাদী যে, সময়ের নিরিখে বাস্তবতার প্রয়োজনে সঠিক রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব গড়ে উঠবেই। ১৯৭১-এর শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ভৌগোলিক স্বাধীনতার গন্ডি পেরিয়ে অবশ্যই আরেক ধাপ অগ্রসর হবে। এবং এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার অবলুপ্তির মাধ্যমে নির্বিশেষে মানুষের কল্যাণকামী শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত জনগণের সংগ্রাম অব্যাহতভাবেই চলবে—কারণ এটাই ছিল রক্ষক্ষয়ী স্বাধীনতাযুদ্ধের স্বপ্ন।
০০০