You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজশাহীতে মুক্তিযুদ্ধ
মেজর রফিকুল ইসলাম, পিএসসি (অবসরপ্রাপ্ত)

তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুজে জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
ছাত্রাবাস, বস্তি, উজাড় হলো, রিকয়েললেস রাইফেল
আর মেশিনগান খই ফোটালো যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে বলে বিধ্বস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটায়
ভগ্নস্তুপে দাঁড়িয়ে—একটানা আর্তনাদ
করলো একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিলো পিতা-মাতার
লাশের ওপর।
–শামসুর রাহমানের কবিতা থেকে

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক পটভূমির ও ঐতিহাসিক অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের বিশ্লেষণে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ কোন আকস্মিক ঘটনা বা বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধ ছিলো না। একটি আধা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থা থেকে শোষিত জনপদের সর্বাত্মক সংগ্রাম ইতিহাসের ধারাক্রমে অনিবার্য হয়ে উঠেছিলো। ইতিহাসের জঘন্যতম বিশ্বাসঘাতক ইয়াহিয়া খান ২৫শে মার্চের কালোরাতে বাঙালী জাতিকে পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য গণহত্যার আদেশ দিয়ে ঢাকা ত্যাগ করলো—আর কুখ্যাত টিক্কা খান বর্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিলো এই বলে—
Kill the Bengalies rape their women; loot their valuables and burn their proparties.
‘বাঙালাদের হত্যা করো—তাদের মেয়েদের ধর্ষণ করো—তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করো এবং তাদের ঘর-বাড়ি সহায় সম্পত্তি জ্বালিয়ে দাও।’ এই অঘোষিত যুদ্ধে সকল স্তরের জনগণ স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত শহীদ তিতুমী, সূর্যসেন ও বাঘা যতীনের উত্তরসূরী বংশধর, লক্ষ লক্ষ মৃত্যুঞ্জয়ী তরুণ দুর্জয় আক্রোশে রুখে দাঁড়ালো—বাংলাদেশের শহরে বন্দরে গ্রামে গঞ্জে গড়ে উঠলো সশস্ত্র প্রতিরোধ।
জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী এলাকার সাহসী জনগণের নির্ভীক ভূমিকা স্মরণীয় হয়ে আছে। জাতির এই মহাদুর্যোগময় দিনে রাজশাহীতে অবস্থানরত বাঙালী সৈনিকেরা, রাজশাহীর বুদ্ধিজীবীগণ, শিক্ষকবৃন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্ররা ও কৃষক শ্রমিক ও মেহনতি মানুষ অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে।
রাজশাহী শহরে ইপিআর (বর্তমানে বিডিআর) সেক্টর সদর দফতর অবস্থিত ছিলো। সেক্টর সদর দফতরে সেক্টর কমান্ডার, এ্যাডজুটেন্ট, সুবেদার মেজর, সবাই ছিলো পশ্চিম পাকিস্তানী।
একাত্তরের ২৫ মার্চে সেক্টর সদর দফতরে সৈন্য সংখ্যা ছিলো দুইটি নিয়মিত প্লাটুন, একটি সাপোর্ট প্লাটুন ও অফিসে নিয়োজিত বাইরে থেকে আসা কিছু সৈন্য। এই সেক্টরের ৬ নং উইং অবস্থিত ছিলো চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবং ৭ নং উইং ছিলো নওগাঁয়ে।
রাজশাহীতে উপশহর এলাকায় পাকবাহিনীর সেনানিবাস ছিলো। এখানে ২৫তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের সৈন্যরা অবস্থান করছিলো। কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাফকাত বেলুচ হজব্রত পালন করতে গিয়েছিলেন। ২৫শে মার্চ সন্ধ্যায় দেশে ফিরলে হেলিকপ্টারে চড়ে তিনি রাজশাহী আসেন। বাঙালী হত্যায় একমত না হওয়ায় তাকে পরে সেনাবাহিনী থেকে অবসর দেয়া হয়। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলো। কোয়ার্টার গার্ড ও অন্যান্য স্থানে বাঙালী সৈনিকদের সরিয়ে অবাঙালীদের নিয়োগ করা হলো। শুধুমাত্র অবাঙালী সৈনিকদের অস্ত্র দেয়া হলে আর বাঙালী সৈনিকদের নিরস্ত্র রাখা হলো। ২৫শে মার্চ রাতে সেনাবাহিনী রাজশাহী শহরে টহল দিতে শুরু করলো। ২৬শে মার্চ পুলিশ ছাত্র-জনতা মিলে রাস্তায় বেরিকেড দিতে শুরু করলো। কিছু সংখ্যক ইপিআর বাঙালী সৈন্য বেসামরিক পোশাকে উত্তাল জনতার সাথে মিশে গেল এবং বাকি বাঙালী সৈন্যরা সদর দফতরে ব্ন্দী হলো।
২৬ মার্চ সন্ধ্যায় পাক-সৈন্যরা পুলিশ লাইনের কাছে গিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। বাঙালী পুলিশেরা পুলিশ লাইনের ভেতর থেকে পাল্টা গুলি ছুঁড়লে উভয়পক্ষের গোলাগুলি শুরু হয় এবং বেশ কয়েকজন নিরীহ ব্যক্তি নিহত হয়। পুলিশেরা বিক্ষিপ্তভাবে সারারাত গুলি চালায় পাকসেনারা অগ্রসর না হয়ে উপশহরে ফিরে যায়। ২৭শে মার্চ সকালে পাকবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা পরিলক্ষিত হলো। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সারা শহর টহল দিতে থাকে। ইপিআর সেক্টরের বিভিন্ন স্থানেও পুলিশ লাইনের সামনে পাকসেনারা প্রতিরক্ষা অবস্থান তৈরি করতে শুরু করলো। পুলিশ লাইনে পুলিশবাহিনী বিভিন্ন স্থানে বাঙ্কার করে নিজেদের অস্ত্র নিয়ে আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিলো।
২৭শে মার্চ রাজশাহী পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় যে কেউ কাউকে আক্রমণ করবে না। কিন্তু পাকসেনারা আপোস ভঙ্গ করে ২৭ মার্চ দুপুরে পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। রাজশাহীর জেলা প্রশাসক নওগাঁও অবস্থানরত ইপিআর উইং-এর সহকারী উইং কমান্ডার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও অন্যান্য বাঙালী ইপিআর সৈনিকদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সচেষ্ট হন। ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার) এক সাক্ষাৎকারে বলেন :-
‘২৭শে মার্চ পুলিশের ওয়্যারলেসে রাজশাহীর ডিসি আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলেন। তার সঙ্গে কথা হলো, তিনি বললেন, রাজশাহী পুলিশ লাইনের চতুর্দিকে পাকসেনারা ঘেরাও করে আছে এবং পুলিশের আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউই আত্মসমর্পণ করতে রাজী নয়। আমি এবং এসপি পুলিশ বাহিনীর সাথে আছি। যদি সম্ভব হয় ইপিআর বাহিনীকে আমাদের সাহায্যে পাঠান। আর আধ-ঘন্টার মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে সেনাবাহিনী পুলিশ লাইনের ওপর আক্রমণ চালাবে।’ কথা শেষ হওয়ার আগেই রাজশাহীর জেলা প্রশাসক রিসিভার ছেড়ে দেন। অনুমান করা যায়—ঠিক সেই সময়েই পাকবাহিনী পুলিশ লাইন আক্রমণ করে। নওগাঁ থেকে রাজশাহী প্রায় ৬০ মাইল কাঁচা রাস্তা আধ-ঘন্টায় অতিক্রম করে পুলিশ বাহিনীর সাহায্যে আসা সম্ভব হয়নি।
পাকসেনার সাথে পুলিশ লাইনের একই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ প্রায় তিন ঘন্টা স্থায়ী হয়। পাকবাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণের মুখে পুলিশ বাহিনী টিকে থাকতে পারেনি। বহু পুলিশ নিহত হয়। যারা প্রাণে বাঁচতে পেরেছিলো তারা নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ লাইন পাকসেনারা দখল করে নেয়।
২৭শে মার্চ সন্ধ্যায় ইপিআর সেক্টর সদর দফতরের সমস্ত অবাঙালী সৈন্যরা যাবতীয় অস্ত্র-গোলাবারুদসহ উপশহরের সামরিক ছাউনিতে চলে যায়। সেক্টর সদর দফতরের অস্ত্রাগার থেকে সকল অস্ত্রও তারা নিয়ে যায়। অবাঙালী ইপিআরদের অনুপস্থিতিতে বাঙালী ইপিআর সৈনিকেরা সামান্য যা অস্ত্র ছিলো সেগুলো হস্তগত করে। এই সময় পাকসেনারা আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে। পাকসেনারা সেদিনই রাজশাহী বেতার কেন্দ্র ও সেক্টর অস্ত্রাগারে আগুন লাগিয়ে সেক্টর সদর দফতরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়। বাঙালী ইপিআর সৈনিকেরা পরবর্তীকালে নওগাঁ নবাবগঞ্জে অবস্থিত বাঙালী ইপিআর সৈনিকদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রাজশাহী উপশহরে অবস্থিত পাকসেনাদের ছাউনি আক্রমণ করে।
পাবনা থেকে পলায়নরত ২৫তম পাঞ্জাব রেজিমেন্টের আনুমানিক ১০০ জনের মতো সৈন্য পাকিস্তানী অফিসার মেজর আসলাম এবং ক্যাপ্টেন ইসাহাকের নেতৃত্বে রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। ২৯শে মার্চ গোপালপুরে তাদেরকে মুক্তিযোদ্ধারা এ্যাম্বুশ করে। সারদা থেকে ক্যাপ্টেন রশীদের বাহিনী এবং নওগাঁ থেকে অগ্রসরমান ইপিআর সৈনিকেরা পাকসেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মেজর আসলাম ও ক্যাপ্টেন ইসাহাকসহ ৫০ জন পাক-সৈন্যরা নিহত হয় অপর পক্ষে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নওগাঁতে ইপিআর-এর ৭ নং উইং-এর সদর দফতরে মেজর নাজমুল হক (বাঙালী) উইং কমান্ডার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সহকারী উইং কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী (বাঙালী)। ক্যাপ্টেন নবীদ নামে একজন পাঞ্জাব অফিসারও এখানে কর্মরত ছিলো। পাঁচটি কোম্পানী ও একটি সাপোর্ট প্লাটুনের সমন্বয়ে গঠিত এই উইংটি যুগান্তরকারী ভূমিকা পালন করে। পাঁচবিবি থানার কুড়িয়াতে একটি কোম্পানী, রাজশাহী জেলার খনজনপুর ও চারঘাটে একটি করে কোম্পানী, জলকরা পুলডাঙ্গা, এং মনা কষা ও গোদাগাড়ী এলাকায় একটি করে কোম্পানী অবস্থান করছিলো।
ক্যাপ্টেন গিয়াস মেজর নাজমুল হকের সঙ্গে পরামর্শ করে অস্ত্রাগার থেকে অবাঙালীদের সরিয়ে বাঙালী সৈনিকদের নিয়োগ করলেন। ২৩ মার্চ রোহনপুর থেকেই এই এলাকায় সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু হয়। এইদিন রাতে পাকবাহিনীর অবাঙালী ক্যাপ্টেন গোয়েন্দা অফিসার কিছু পাকসেনাসহ রোহনপুর ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হলে বাঙালী ইপিআর সৈন্যরা গুলি করতে শুরু করে। সম্ভবতঃ আসন্ন আক্রমণের আশংকায় বাঙালী সৈনিকেরা গুলি ছুঁড়ে। পরদিন এই ঘটনা তদন্ত করতে গেলে তদন্তকারী অফিসার নিহত হয়।
এই আকস্মিক সংঘর্ষের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সীমান্ত এলাকায় নিয়োজিত ইপিআর সৈনিকেরা সতর্ক হয়ে যায়। ২৫ মার্চ পাকবাহিনীর পিলখানা, রাজারবাগ ও বিভিন্ন স্থানের আক্রমণের খবর ২৬ মার্চ সকালের মধ্যেই নওগাঁয় অবস্থিত ইপিআর বাহিনী জানতে পারে। ২৬ মার্চ সকালে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নওগাঁয় ইপিআর-এর অস্ত্রাগার স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ইপিআর-এর বাঙালী সৈনিকেরা যথাযোগ্য মর্যাদায় এই নতুন পতাকাকে অভিবাদন জানায়।
আকস্মিকভাবে অবাঙালী কলোনী থেকে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে উইং সদর দফতরের দিকে গুলি আসে। এই গুলির ফলে বাঙালী সৈনিকেরা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। মেজর নাজমুল হক ও ক্যাপ্টেন গিয়াস মানসিক দিক দিয়ে প্রস্তুত ছিলেন এবং সময়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এই ঘটনার পর তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলো। উইং সদর দফতরে অপারেশনাল হেড কোয়ার্টার স্থাপন করে ২৪ ঘন্টা ওয়্যারলেস খোলা রেখে ১৭টি ইপিআর উইং-এর খবর মনিটর করার ব্যবস্থা করা হলো। ছাত্র কৃষক শ্রমিক জনতার মধ্যে থেকে মুক্তিবাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত হলো এবং আওয়ামী লীগ নেতা জনাব বরকতুল্লাহ ও আবদুল জলিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো।
অবিলম্বে সদর দফতরের চারিদিকে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত ৬ নং উইং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও সীমিত অস্ত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৮ মার্চ ইপিআর বাহিনীর একটি কোম্পানী ছাত্র কর্তৃক শ্রমিক জনতার সমন্বয়ে গঠিত মুক্তিবাহিনী বগুড়া অভিমুখে অগ্রসর হয়। একই সময়ে অপর একটি ইপিআর কোম্পানী নাটোর রোড হয়ে সারদা ক্যাডেট কলেজের এ্যাডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন রশীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে রংপুর-রাজশাহী সড়ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই বাহিনী ক্যাপ্টেন রশীদের নেতৃত্বে ঢাকা ও রংপুর থেকে আগত পাকসেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ক্যাপ্টেন রশীদ পুঠিয়া-নন্দনগাছী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পাবনা-রাজশাহী সড়ক এবং ঈশ্বরদী-রাজশাহী ট্রাফিক পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করেন।
২৮ মার্চ সকালে ক্যাপ্টেন গিয়াস তার সৈন্যদের নিয়ে বগুড়া অভিমুখে অগ্রসর হন। নানা প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে বিকেলে এই বাহিনী বগুড়া পৌঁছায়। জনমানবহীন বগুড়া শহরকে একটি ভৌতিক শহর বলে মনে হচ্ছিলো। ক্যাপ্টেন গিয়াস পুলিশ লাইনে অবস্থান নেন। এই সময় পুলিশ লাইনে আনুমানিক ২০০ পুলিশ ও একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর ছিলেন। পুলিশবাহিনী যোগ দেয়ায় ক্যাপ্টেন গিয়াসের বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি হয়। পুলিশের সদস্যদের কাছ থেকে পাকবাহিনীর অবস্থান ও গতিবিধি সম্পর্কে ক্যাপ্টেন গিয়াস জানতে পারেন। এই সময় পাকবাহিনীর আর্টিলারী রেজিমেন্টের ৬০ জন সৈন্য এবং এ্যামুনিশন ড্রাম্ব রক্ষার জন্য একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৫ জন পাকসেনা ছিলো।
২৯/৩০ মার্চ রাতে ক্যাপ্টেন গিয়াস পাকবাহিনীদের এ্যাম্বুশ করে। পাকসেনা গ্রাম এলাকা থেকে জোর করে খাবার সংগ্রহ করে ফিরছিলো। এই এ্যাম্বুশে ২৩ জন পাকসেনা নিহত হয়। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা বারুদ মুক্তিযোদ্ধারা দখল করে নেয়। বাকী পাকসেনারা রংপুরের দিকে পালিয়ে যায়। এই বিজয়ে মুক্তিবাহিনীর মনোবল বেড়ে যায়। এই অপারেশনের পর ক্যাপ্টেন গিয়াস নওগাঁ ফিরে যান। এদিকে ৩০ মার্চ আড়ানী রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পাবনা থেকে পলায়নপর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। অপরদিকে ক্যাপ্টেন রশীদ রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হতে থাকেন এবং ক্যাপ্টেন গিয়াস চাঁপাইনবাবগঞ্জে ইপিআরদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় অবাঙালী সৈনিকেরা পরিবারসহ রাজশাহী রওয়ানা হলে বাঙালী ইপিআর সৈন্যদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এবং অবাঙালী সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ৩০ মার্চ গোদাগাড়ীতে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীর উপরে জঙ্গী বিমান হামলা চালায়। পাকসেনারা এই বাঙালী ইপিআরদের এই অবস্থানের উপরে সর্বাত্মক আক্রমণ চালায় আক্রমণ শেষে পাকসেনারা রাজশাহী ফিরে যায়।
৩১ মার্চ ক্যাপ্টেন গিয়াস এই বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হন। কানাইডাঙ্গা নামক স্থানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হয়। ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে ইপিআর, আনসার, ছাত্র, পুলিশ জনতা মিলে প্রায় ১০০০ সৈন্য এবং নওগাঁ থেকে সারদা হয়ে প্রায় ১০০০ সৈন্য ২ এপ্রিলের মধ্যে রাজশাহী শহর উপকন্ঠে সমবেত হয়। সারদা থেকে আগত ক্যাপ্টেন রশীদ তার বাহিনী নিয়ে পূর্ব দিকে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিলেন। উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রতিরক্ষা ব্যুহ রচনা করে ক্যাপ্টেন গিয়াস দক্ষিণ দিকে ডিফেন্স নিলেন। তিন দিক থেকে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা ছিলো মূল বাহিনী দক্ষিণ দিক থেকে তীব্রগতিতে শত্রুর প্রতিরক্ষা ভেদ করে শহর দখল করবে এই সময় ভারতীয় বিএসএফ বাহিনীর সঙ্গে ক্যাপ্টেন গিয়াসের যোগাযোগ হয় কিন্তু কোন সাহায্য পাওয়া যায়নি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ছটায় মুক্তিবাহিনী প্রবলবেগে পাকসেনাদের ওপর আক্রমণ করে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের মুখে পাকসেনারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। চার ঘন্টা স্থায়ী এই যুদ্ধের শেষে পাকসেনারা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে রাজশাহী উপশহরের সামরিক ছাউনিতে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনী রাজশাহী শহর দখল করে উপশহরস্থ পাকসেনাদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলে। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত হয়। রাজশাহী শহর বিজয়ে জনতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের মনে সৃষ্টি হয় অদম্য সাহস ও উদ্দীপনা।
পাক সেনারা উপশহর ছাউনির চারিদিকে মাইন পুঁতে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র চারিদিকে বসিয়ে প্রতিরক্ষা সুদৃঢ় করে। এই সময় ৩০০ পাক সেনা এখানে ১০ এপ্রিল মুক্তিবাহিনী পাক অবস্থানের ৪০০ গজের মধ্যে চলে আসে। এই সময় একটি পাকিস্তানী ব্রিগেড স্থলপথে ঢাকা থেকে নগরবাড়ী হয়ে রাজশাহী ও কুষ্টিয়া আসার চেষ্টা করে। পাকবাহিনী সকল বাধা অগ্রাহ্য করে নগরবাড়ী ঘাটে নেমে দ্রুত রাজশাহী ও কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এই বিপুলসংখ্যক পাকসেনার আগমন সংবাদে মুক্তিযোদ্ধারা দুশ্চিন্তায় পড়ে। এছাড়া পাকবাহিনী রাজশাহীর বেসামরিক অবাঙালীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে আর অগ্রসর হতে পারেনি।
১১ এপ্রিল রাজশাহী থেকে মুক্তিবাহিনীর ২টি কোম্পানী নগরবাড়ীর দিকে পাকসেনার গতিরোধ করার জন্য অগ্রসর হয়। মুলাডুলিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের এক সংঘর্ষ হয় কিন্তু পাকবাহিনীর প্রবল আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনী পিছনে সরে আসে। ১২ এপ্রিল ক্যাপ্টেন গিয়াস এক কোম্পানী সৈন্য নিয়ে পাবনার দিকে অগ্রসর হয়। মাত্র ১০ মাইল অতিক্রম করার পর ক্যাপ্টেন গিয়া পাকসেনার মুখোমুখি হন। মুক্তিবাহিনী রাজশাহী ও সারদা রোডের মোড়ে ডিফেন্স নেয়। ঐদিন পাকসেনারা প্রবলভাবে আক্রমণ করে এবং সারারাত ধরে প্রবল যু্দ্ধ চলে। এই যুদ্ধে সারদা ক্যাডেট কলেজে অধ্যাপক এ, বি, সিদ্দিক ও বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকসেনারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রতিরক্ষা অবস্থান নেয় এবং রাজশাহী শহরের উপরে গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এই সময় অবিরাম বিমান হামলা চালানো হয়।
১৪ এপ্রিল পাকসেনারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধাদের মূল দলটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে সরে যেতে থাকে। ক্যাপ্টেন গিয়াস গোদাগাড়ীতে ৩০০ সৈন্য নিয়ে প্রতিরক্ষা নেন। রাজশাহী শহর পাকবাহিনী দখল করে নেয়। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী একই সঙ্গে গোদাগাড়ী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের ওপর ব্যাপক হামলা চালায়। বিমান হামলা যুগবৎ অব্যাহত থাকে।
২১ এপ্রিল পাকসেনারা নবাবগঞ্জ দখল করে নেয়। ক্যাপ্টেন গিয়াস তার বাহিনী নিয়ে পদ্মা নদীর চরে আশ্রয় নেয়। ক্যাপ্টেন রশীদ চারঘাট এলাকা থেকে তার দল নিয়ে পদ্মা নদী অতিক্রম করে ভারত সীমান্তে আশ্রয় নেন।
পরবর্তীকালে দিনাজপুর জেলার দক্ষিণাঞ্চল, রাজশাহী, পাবনা ও বগুড়া জেলা নিয়ে গঠিত হয় সাত নম্বর সেক্টর। লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। এই এলাকাকে নিম্নলিখিতভাবে ন’টি সাব সেক্টরে বিভক্ত করা হয় :
এক : লালগোলা সাব সেক্টর : মেজর গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার) সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
দুই : মেহেদীপুর সাব সেক্টর : বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
তিন : হামজাপুর সাব সেক্টর : ক্যাপ্টেন ইদ্রিস সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
চার : ভোলাহাট সাব সেক্টর : লেফটেন্যান্ট রফিকুল ইসলাম (বর্তমান নিবন্ধের লেখক) সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
পাঁচ : মালন সাব সেক্টর : একজন সুবেদার সাব সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন।
ছয় : লেখাপড়া সাব সেক্টর : মেজর রশীদ সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
সাত : তপন সাব সেক্টর : একজন সুবেদারের নেতৃত্বে এই সাব সেক্টরে যুদ্ধ পরিচালিত হয়।
আট : ঠোকরাবাড়ি সাব সেক্টর : সুবেদার মোয়াজ্জেম সাব সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
নয় : আঙ্গিনাবাদ সাব সেক্টর : একজন সুবেদার এই সাব সেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন।

অপরদিকে এপ্রিল মাসে যখন ১৬ ডিভিশনকে বিদ্রোহ দমন করতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আনা হয় তখন থেকেই মেজর জেনারেল নজর হোসেন শাহ এখানে নিয়োজিত ছিলেন। ১৬ ডিভিশনকে নিম্নলিখিতভাবে নিয়োজিত রাখা হয় :-
এক : হিলিতে চতুর্থ ফ্রটিয়ার ফোর্স, সদর দফতর ২৫ ব্রিগেট বগুড়াতে অবস্থিত ছিলো। ব্রিগেডিয়ার তেমামোল-এর অধিনায়ক ছিলেন।
দুই : ২৩ ব্রিগেড। অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার আনসারী। সদর দফতর ছিলো রংপুরে।
তিন : ৩৪ ব্রিগেড : অধিনায়ক ছিলেন ব্রিগেডিয়ার নাঈম। সদর দফতর ছিলো নাটোরে।
চার : সেপ্টেম্বরে গঠিত অস্থায়ী ব্রিগেড পদ্মা নদীপথে আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য অবস্থিত ছিলো রাজশাহীতে।
পাঁচ : ২৯ ক্যাভালরির ট্যাঙ্কবহর এই তিন ব্রিগেড ভাগ করে দেয়া হয়। বোদা ঠাকুরগাঁ রোডে এক স্কোয়াড্রন, নওগাঁতে (বালুরঘাট সীমান্তে) এক স্কোয়াড্রন এবং হার্ডিঞ্জ ব্রীজ সন্নিকটে স্কোয়াড্রন ট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হয়।
চূড়ান্ত যুদ্ধে মেজর গিয়াসের নেতৃত্বে লালগোলা সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা রাজশাহীর দিকে অগ্রসর হয়। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ১০ ডিসেম্ব বারঘরিয়া এলাকায় মহানন্দা নদী অতিক্রম করে নবাবগঞ্জ আক্রমণ করেন। ১৩ ডিসেম্বর বারঘরিয়া এলাকা দিয়ে মহানন্দা নদী অতিক্রম করে ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর পাক বাহিনীর ওপর প্রচন্ড আক্রমণ করেন। শত্রুর প্রতিটি বাঙ্কার চার্জ করার সময় আকস্মিকভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের নাম অনুসারে নবাবগঞ্জের নাম করা হয় জাহাঙ্গীরাবাদ। ৩রা ডিসেম্বর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হলে শাহপুরের বাঁশবনের মধ্যে বসে যিনি আমাদেরকে ভারতীয় সেনাবাহিনী যুদ্ধের পরে বাংলাদেশ ছেড়ে না দেলে যুদ্ধ করার জন্য বেঁচে থাকতে উপদেশ দিয়েছিলেন—নিয়তির নির্মম পরিহাসে তিনি শহীদ হলেন আর আমরা বেঁচে রইলাম। এই বীর সন্তানকে ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গনে সমাহিত করা হয়।
একটি দুর্ধর্ষ মুক্তিযোদ্ধার দল লেফটেন্যান্ট রফিকের (বর্তমান নিবন্ধের লেখক) নেতৃত্বে মহানন্দা অতিক্রম করে রোহনপুর, আমানুরা, নাচোল, নবাবগঞ্জ রেখা বরাবর অগ্রসর হয়। অন্য একটি দল লেফটেন্যান্ট রশীদের নেতৃত্বে গোমস্তাপুর হয়ে নবাব অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। ‘তপন ও হামজা’ সাব সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে বগুড়া দখল করে দিনাজপুরের দিকে রাজশাহী আক্রমণ করে এবং মেজর রশীদ পাবনা অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। লেফটেন্যান্ট রশীদ গোমস্তাপুর হয়ে আমানুরার পথে এবং লেফটেন্যান্ট রফিক রোহনপুর, নাচোল, আমানুরা হয়ে নবাবগঞ্জের পথে অগ্রসর হয়।
পাকিস্তানী পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজীর আত্মসমর্পণের নির্দেশ দানের পরে ১৬ ডিভিশনের সদর দফতর নাটোরে স্থানান্তরিত হয় ১৬ ডিসেম্বর সকালে। ১৭ই ডিসেম্বর বেলা ১১টায় নাটোরে সম্মিলিত বাহিনীর কাছে পরাজিত পাকসেনারা আত্মসমর্পণ করে। রাজশাহী সার্কিট হাউজে মেজর গিয়াস সদর দফতর স্থাপন করে বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা শুরু করেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের উদ্ভবে এই বিশাল এলাকার জনপদ প্রচন্ড বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে। এইদিন বিকেল চারটার সময় রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে এক বিশাল জনসমাবেশে মুক্তিবাহিনীকে গণসম্বর্ধনা দেয়া হয়। রাজশাহী শহর এক বিজয় মিছিলের শহরে পরিণত হয়। মেজর গিয়াস এই সম্বর্ধনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে আত্মাবলী দিতে হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অংক বিভাগের প্রধান ডঃ হাবিবুর রহমান, সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক কাইউম, প্রখ্যাত আইনজীবী বীরেন সরকার ও রাজশাহীর অনেকেই স্বাধীনতার বলী হতে হয়েছিল। এক চিরন্তন শোষিত জনপদের মুক্তির মহাসংগ্রামে এইসব শহীদের হাড়ের পলিমাটির ওপরেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে আজকের স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ।
০০০

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!