You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সুত্র তারিখ
প্রধানমন্ত্রীর ১৮-দফা নির্দেশাবলী। দি স্ট্যাটসম্যান, নয়াদিল্লী। ১৪ মে, ১৯৭১

জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক লিখিত ১৮ দফা নির্দেশাবলি, মে ১৪,১৯৭১

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ কর্তৃক জারিকৃত স্বাধীনতা সংগ্রামের বিস্তারিত জন সম্পৃক্ততার জন্য ১৮দফা নির্দেশাবলী।

তিনি জনগণকে বলেছেন যে, গুজব না শুনতে এবং “জনগণের চুড়ান্ত বিজয়” সম্পর্কে নিঃসন্দেহ থাকতে।

তিনি বলেন: “জনসাধারণকে মনে রাখতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়া ও অপসৃত হওয়া সমান গুরুত্ববাহী। একটি ক্ষেত্র হতে মুক্তিবাহিনীর পশ্চাদপসরণ সাধারণের মনে যেন এই ছাপ না ফেলে যে আমরা দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছেড়ে দিয়েছি।

এই সংগ্রামে, জনসাধারণ দল-মত, ধর্ম বা শ্রেণী-গোত্রে বিভক্ত নয়। “আমরা বাঙ্গালী হিসেবে একতাবদ্ধ হয়েছি, এবং আমাদের শত্রুরাও আমাদের সেই দৃষ্টিতেই দেখে। যখন তারা আমাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, মানুষের ওপর গুলি চালায় বা শহর ধ্বংস করে, আমরা বাঙ্গালী বলেই তারা আক্রমণ করে, আমাদের ধর্ম অথবা রাজনীতি নিয়ে তাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

শত্রুর সঙ্গে কোন বাঙ্গালী কর্মচারী সহযোগী হবেন না; সকল পদবীর কর্মচারীরা বাংলাদেশ সরকারের সঞ্চালনা অনুযায়ী চলবেন। শত্রু দখলকৃত অঞ্চল সমূহে, তারা জনপ্রিয় প্রতিনিধির নির্দেশনায় কাজ করবে এবং পারিপার্শ্বিকতা নির্ভর ছদ্মরূপ ব্যাবহার করবেন।

তাদের দায়িত্ব সমূহ

জনাব আহমেদ বলেন: “সরকারী ও আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ যারা অন্যজায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা তাদের পদে কর্মরত হিসেবে ধরে নেয়া হবে এবং তাদের প্রতি এই আশাবাদ রাখেন যে তারা বাংলাদেশ সরকার এবং মুক্তিফৌজ কে তাদের সাধ্যানুযায়ী সহযোগীতা করবেন।

সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ ও সৈনিকগণ, তারা চাকরীরত বা অবসরে যেভাবেই থাকুন, তারা অবশ্যই নিকটস্থ মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে দায়িত্বে যোগ দিবেন এবং “কোন পরিস্থিতিতেই” নিজেকে শত্রুর দ্বারা অপব্যবহৃত হতে দিতে পারবে না নিজেদের “না শত্রুর প্রতি সহযোগীতা করবেন”।

নির্দেশাবলীতে বলছে, “শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকার ব্যতীত অন্য কারো করাদি, খাজনাদি এবং শুল্কাদি গ্রহণ করার অধিকার নেই। এটা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে একটি পয়সাও শত্রু দ্বারা গ্রহীত হলে তা ব্যবহৃত হবে আপনাদের এবং আপনাদের সন্তানাদিকে হত্যার জন্য। অতএব যে কোন ব্যক্তি শত্রুপক্ষকে কর পরিশোধ করলে বা এই ব্যাপারে সাহায্য করলে তাদের বাংলাদেশ সরকার এর কাছে জাতীয় শত্রু হিসেবে গণ্য হবে এবং তার যথাযোগ্য শাস্তি পাবে।

                                                                                                                                                            <003.017.043>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার কার্যরত কর্মচারীরা “শত্রু সঙ্গে সমবায় করা উচিত নয়, প্রথম সুযোগেই তারা তাদের পরিবহন নিয়ে শত্রুর দখলকৃত এলাকা খালি করে সরে পরা উচিত”। সঠিক মনোযোগ দেয়া উচিত জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পণ্য চাহিদা পুরনের এবং এ ব্যাপারে উৎপাদনন বারাতে মানুষকে দ্বিগুণ উৎসাহিত করা উচিত।” “সাধারণের স্মরণে রাখতে হবে যে, খাদ্য বা পণ্য আমদানি নির্ভর ব্যবস্থা আত্মঘাতী হয়।” বেশী জোর দিতে হবে খামার উৎপাদিত পণ্যের উপর, নির্ভর থাকা উচিত” স্থানীয়ভাবে উপলব্ধ পণ্য ও কুটির শিল্পের উৎপাদনে।” . লক্ষণীয়

নির্দেশনায় বলা হয় যে, “আমাদের জাতীয় সংকটে, আমাদের এক নম্বর শত্রু যারা কালোবাজারী, মুনাফাবাজ, মজুতদার ও চোরাকারবারী করে। তাদের নজরদারিতে রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে গুরুত্বের সঙ্গে মোকাবিলা করা উচিত তাদেরকে।” এতে আরো বলা হয়েছে: আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে অন্য ধরনের অসামাজিক, সাধারণ অপরাধী যারা বিশ্বাসঘাত করেছে। যেহেতু তারা আমাদের চরম শত্রু তাই তাদের চিহ্নিত করতে হবে। একটি ঐক্যবদ্ধ দেশে তারা সাধারণ মানুষকে ধর্মের নামে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা করছে। তারা সত্যিকার অর্থেই পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থ রক্ষার দালাল।

এদিকে, বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে যে, সাবেক জাতীয় পরিষদের সব সদস্যগণ এখন থেকে সংসদ সদস্য বা এম.পি. নামে পরিচিত হবেন এবং সাবেক প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত সদস্যগণকে বিধায়ক বা এম.এল.এ. বলা হবে। আওয়ামী লীগ এর দলীয় সাপ্তাহিক জয়বাংলা হতে প্রকাশিত নির্দেশিকায়, এম.পি.-দের ও এম.এল.এ.দের তাদের নিজ নিজ এলাকায় থাকার এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে সাহায্য করার জন্য তাদের নির্দেশ দিয়েছে। “যদি এটা পালন করা একেবারে অসম্ভব এমন একটি নির্বাচনী এলাকা হয়, তাহলে তিনি নিকটতম মুক্তিবাহিনী ইউনিটে তার কার্যক্ষেত্র স্থানান্তর করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থা তদারক করা উচিত”, মর্মে দলীয় নির্দেশিকায় বলা হয়েছে। . সাংসদ ও বিধায়কদের যারা সীমান্তের ওপারে ভারত চলে গেছে তাদের অবিলম্বে দলীয় নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করা উচিত, আওয়ামী লীগ হাই কমান্ড আদেশ জারী করেছে যারা তরুণ বা মধ্যবয়সী এবং, ভারতে আশ্রয় নিয়েছে অবিলম্বে নিজেদের সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য তালিকাভুক্ত করতে হবে।

“যারা তাদের জীবন বাঁচাতে সীমান্ত ওপারে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে সবসময় এটা মনে রাখা উচিত যে, এটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা মাত্র। তারা চিরস্থায়ী আবাসের জন্য ভারতে যায় নাই।” . মুজিবনগর হতে পিটিআই আরো যোগ করে: জনাব এ.এইচ.এম.কামরুজ্জামান, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী গতকাল “সমস্ত উপলব্ধ সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন” নিশ্চিত করা জন্য একটি লিয়াজোঁ অফিস এর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।

[দ্য স্টেটসম্যান নিউ দিল্লি ১৫ মে, ১৯৭১]

                                                                                                                                                            <003.018.044>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সুত্র তারিখ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথীকটি সাক্ষাৎকারের বিবরন হিন্দুস্থান টাইমস, নয়াদিলী ২০ মে, ১৯৭১

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এর সাক্ষাৎকার বিবরণী

২০ মে, ১৯৭১

” দুর্দান্ত প্রচেষ্টার পরেও পাকিস্তান মিলিটারির গুপ্তসভা বাংলাদেশে তাদের অধীনস্থ এলাকাগুলোর ন্যায়সভা পুনস্থাপনে ব্যর্থ হয় এবং তারা কখনো একাজে সক্ষম হবেও না।” – এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোঃ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এ কথা U.N.O. কে জানান।

” বাংলাদেশের প্রাক্তন সিভিল সার্ভেন্টরা সশস্ত্রবাহিনী কে সমর্থন না করার পণ নেয়। সেনা কার্যকলাপকে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক, একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বসবাস অধিকারের বিরুদ্ধাচারণ হিসেবে গণ্য করতে শুরু করে।”

তিনি জিজ্ঞেস করেন, যদি পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের স্বাভাবিক অবস্থা দাবি করে, তবে কেন আন্তর্জাতিক সংস্থা আর তাদের অংশবিশেষ হতে বাংলাদেশকে বাদ রাখা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃত পরিস্থিতি বর্হিবিশ্ব থেকে লুকানোর জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী মিথ্যা গল্প সাজানো শুরু করে।  “তারা জানত, বাংলাদেশে যদি কোন নিরপেক্ষ সংস্থা অনুমোদন করা হয়, তবে তাদের মিথ্যা প্রচারণা আর সাজানো নকশা উন্মোচিত হয়ে যাবে।”

 পাকিস্তানি প্রজ্ঞাপনের (propaganda) প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন,জাতিগত আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রশমিত করার জন্যে সেনাবাহিনীকে মধ্যস্থতা করতে হয়েছিল; এই মুক্তিযুদ্ধ কোন ধর্মের বিরুদ্ধে ছিল না।

” আমাদের সংগ্রাম ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। ইসলামের নীতি আর শিক্ষাকে অবশ্যই সংরক্ষণ করা হবে। অন্য ধর্মেরও নীতি আর শিক্ষাকে প্রতিপালন করা হবে। আমরা শোষণবঞ্চিত একটি রাষ্ট্র কল্পনা করি। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি সমমাত্রিক আর শ্রেণিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে নারী – পুরুষে ভেদাভেদ থাকবে না, যেখানে মানুষ জাতি- ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে বিবেচিত হবে। “

” যারা বাংলাদেশকে তাদের মাতৃভূমি হিসেবে স্বীকার করে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে জড়িত থাকবে, তারা আমাদের ভাই। আর যারা স্বদেশদ্রোহীর ভূমিকা পালন করবে, তারা যে ধর্মেরই হোক না কেন, আমাদের শত্রু, বাংলাদেশের শত্রু। তারা জনতার আদালতের আসামী (tried by)।”

তিনি বলেন, ” পাকিস্তানিদের সমস্যার একমাত্র সমাধান হল তাদের সৈন্যবাহিনী অপসারণ করে ক্ষমতা বাংলাদেশের জনতার কাছে হস্তান্তর করা। রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক মানদণ্ডের বিচারে বাংলাদেশের বাঙ্গালীরা কখনোই পশ্চিম পাকিস্তানিদের সাথে একটি জাতি গঠন করতে পারত না। “

ইতিহাসে পাকিস্তানি সৈন্যদলের এহেন নৃশংসতার আর কোন সাদৃশ্য মেলেনি। “আমাদের নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করা হয়, নারীসমাজের শালীনতার চূড়ান্ত অবমাননা করা হয়েছিল, ঘর-বাড়ি সব ধ্বংস করে ফেলেছিল। “

                                                                                                                                                            <003.018.045>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

পাকিস্তানি   সশস্ত্রবাহিনীর পরিকল্পনা ছিল,   বাঙ্গালীদের তাদের নিজ মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করা, যেন   তারা বাংলাদেশ পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশবিশেষ, এই মিথ্যাকাহিনী বহাল রাখতে সক্ষম হয়।

বাংলাদেশের মানুষ বীরত্বপূর্ণভাবে তাদের এই প্রচেষ্টা প্রত্যাহত করেছিল এবং প্রত্যাহত করতে থাকে।

আওয়ামী লীগের ইস্তেহারের বর্ণনা অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন শুধুমাত্র জনতাভিত্তিক-ই নয়, বরং সকল দুর্নীতি আর আমলাতন্ত্রের উর্ধে থাকবে বলে ঘোষিত হয়।

———————————-

                                                                                                                                                            <003.019.046>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
নয়াদিল্লীতে প্রেরিত বাংলাদেশের      সংসদীয় দল সম্পর্কিত সংবাদ জয় বাংলা, ২ জুন। ১৯৭১ ২ মে, ১৯৭১

                                  নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী দল

      তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি বাংলাদেশ পার্লামেন্টারী প্রতিনিধিদল গম ২৫শে মে নয়াদিল্লীর উদ্দেশে মুজিবনগর ত্যাগ করেছেন। নয়াদিল্লীতে তাঁরা ভারতীয় পার্লামেন্টের বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের সাথে উত্তর দেশের সাধারণ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন।

     আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা ও প্রদেশিক পরিষদ সদস্য মিঃ ফণীভূষন মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত উক্ত প্রতিনিধি দলের অপর সদস্যদ্বয় হচ্ছেন আওয়ামী লীগের মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদিকা ও জাতীয় পরিষদ সদস্যা বেগম সরোয়ার মোর্শেদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।

     প্রতিনিধি দলটি ভারতের কতিপয় অঙ্গ রাজ্যের রাজধানী সফর করবেন এবং সেসব স্থানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠকে মিলিত হবেন।

     সপ্তাহব্যাপী সফর শেষে তাঁরা মুজিবনগর প্রত্যাবর্তন করবেন এবং বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে সফর সম্পর্কে এক রিপোর্ট পেশ করবেন।

<003.020.047>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সুত্র তারিখ
স্বাধীন বাংলা বেতার হতে প্রচারিত প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি সাক্ষাৎকার দি হিন্দুস্থান টাইমস ২৯ মে, ১৯৭১

স্বাধীন বাংলা কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত জনাব তাজউদ্দিন আহমেদের সাক্ষাৎকারের প্রতিবেদন

মে ২৯, ১৯৭১

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ বলেছেন, যে তিনি বুঝতে ব্যার্থ হয়েছেন যে, কিভাবে বিশ্বের গণতান্ত্রিক সরকারগুলো পাকিস্তানের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন সমর্থন করতে পারে যা কিনা বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার বিপর্যয়কর ছিল। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত :

জনাব আহমেদ, একটি সাক্ষাত্কারে একটি বিদেশী সংবাদদাতাকে জানান, “আমরা পাকিস্তানের জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন এবং যে শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।

জনাব আহমেদ, “আমরা এই দিক সব শান্তিপূর্ণ প্রচেষ্টা করেছেন কিন্তু ইয়াহিয়ার আর্মি, সবচেয়ে নির্লজ্জভাবে বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তখন বাংলাদেশের ৭৫ মিলিয়ন গণতান্ত্রিক বাঙালিদের জন্য স্বাধীনতা ঘোষণা করার কোন বিকল্প ছিল না.

  এদিকে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনার বন্দোবস্ত করেছিলো।

তিনি রেডিও উদ্ধৃতি দিয়ে আওয়ামী লীগ সহ অঙ্গসংগঠন বলেন, “বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আজ সেখানে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই।

এই রাজনৈতিকদল গুলা মন্তব্য করেছিলো, বিষয়টি একটি নিষ্পত্তির জন্য ইয়াহিয়া খানের একজন দূত দ্বারা প্রস্তাব করেছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র।

(হিন্দুস্থান টাইমস, নয়াদিল্লী- ২৯মে ,১৯৭১)

—————————————

<003.021.048>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সুত্র তারিখ
পাকিস্থানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের বক্তৃতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্য প্যট্রিয়ট ৩০ মে, ১৯৭১

ইয়াহিয়ার বিবৃতি, বাংলাদেশের মন্ত্রী জনাব এইচ এম কামরুজ্জামানের মন্তব্য, 30 মে, 1971 সা

30 মে, (UNI, PTI.) পাকিস্তান;  বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী A.H.M. কামরুজ্জামান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কথা কখনও বিশ্বাস করা যাবে না, তিনি বাংলাদেশের কোথাও কোথাও গণহত্যার  আশ্রয় নিয়েছে তারপর আবার আমাদের আলোচনা সময় আমাদের চাহিদা গ্রহণের কথা বলেছেন।

জেনারেল ইয়াহিয়া খান এমনকি 25th মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তার চুক্তি রেডিওর মাধ্যমে ঘোষণা করার অঙ্গীকার করে তার পরিবর্তে তিনি বাংলা জাতি নিশ্চিহ্ন করার জন্যে তার সৈন্যদের আদেশ।

করাচিতে জনাব কামারুজ্জামান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মন্তব্য বিবৃতি জানায় যে তিনি এখনও বেসামরিক শাসনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অভিপ্রেত।আমাদের বাংলাদেশের একটি স্বাভাবিক মানুষের কাছে জেনারাল ইয়াহিয়া খানের নাম অর্থ: এটি একটি রক্তপিপাসু অনুষ্ণশোণিত খুনী, বিশ্ব ইতিহাসের পাকিস্তানের disintegrator সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বাসঘাতক “.যেমন তার কথা, মিষ্টি বা যুক্তিসঙ্গত যাই হোক কিন্তু কখনো বাংলাদেশের জনগণ  তাকে গ্রহণ করা হবে না তারা যুদ্ধ অব্যাহত দ্বারা সঠিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাবেন ।

 এটা অসম্ভব যে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানিদের সঙ্গে একটি সাধারণ ছাদের নিচে বসবাস করতে পারবেন-কারন যারা আমাদের নিরপরাধ শিশু ও মানুষদের হত্যা করেছে, আমাদের নারীদের ধর্ষণ ও আমাদের জাতীয়তাকে নিঃচ্ছিন্ন করেছে।তাই কিভাবে আমরা জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নকশা পূরন করবো যেখানে তার পোষা গুন্ডার দল দ্বারা বাংলা জাতি বিনাশ হয়।

LIE NAILED

জনাব কামারুজ্জামান বলেন,”একত্রে বাস ভিত্তিতে নিছক ভ্রাতৃভাবে একটি পারস্পরিক সম্মতি থাকা উচিত নয় বরং একে অপরের জন্য অন্তর্নিহিত এবং স্পষ্ট সম্মান বোধ করা উচিত। কিন্তু এখন আর এর অস্তিত্ব নেই। “

জেনারেল ইয়াহিয়া খানের বিবৃতিতে উল্লেখ আছে যে আওয়ামী লীগ বিধায়কদের নবনির্বাচিত কিছু  সদস্য আছে যারা কিনা তাদের নীতি ও কর্ম দ্বারা অযোগ্য।জনাব কামারুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তানি শাসকদের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের  কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করার কোন অধিকার নেই যারা জনসংখ্যার তুলনায় ৯৮ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন।

ক্ষমতা-মাতাল পাকিস্তানি প্রতারক যাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য কোন সম্মান নেই তাদের এই সদস্যদের কর্তৃত্বের ওপর বিচার করারও কোন অধিকার নেই।

<003.021.049>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

“আওয়ামী লীগ কথা ভঙ্গ করতো না। আওয়ামী লীগের ভিতর যুদ্ধের ভাব ছিল না, আর না ছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি।

“এখন আমাদের উপর যে যুদ্ধ নিবদ্ধ হয়েছে, আমাদের  সে যুদ্ধ অব্যাহত করতে হবে,

পাকিস্তানিদের আমাদের পুণ্যভূমি থেকে সরিয়ে ফেলা পর্যন্ত।

“ঐ জাতিগুলো যারা শান্তি ও গণতান্ত্রিক নীতি ও মূল্যবোধের অনুশীলন করে তাদের গণতান্ত্রিক শক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করা উচিত যখন হানাদার বাহিনীর হাতে  বাংলাদেশ ধ্বংশের সম্মুখীন।

তারা সত্যিই মহান যারা নিপীড়িত ও দুর্ভাগাদেরপাশে  দাঁড়িছিলেন “

শহীদেরা প্রশংসিত

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে,বাংলাদেশ সরকার ঐ পরিবারগুলির দায়িত্ব গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যারা তাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার  সংগ্রামের জন্যে নিহত, গুরুতর আহত এবং অক্ষম হয়েছে ।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার অনুযায়ী,জনাব কামারুজ্জামান এই মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিলেন এবং গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শহীদদের প্রতি এবং প্রশংসা করেছিলেন মুক্তি বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ ক্রিয়াকলাপকে।

মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল একটা প্রঙ্গাপন মুক্তি পায়,বলা আছে যে, ওই সাহসী সৈন্য ও অফিসারগন, যারা এই ধরনের দৃষ্টান্তমূলক সাহস দেখিয়ে স্থায়ী  অনুপ্রেরণা উৎস্য হয়েছিল বাংলার সরকারের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।

ব্রডকাস্ট বলেন, সরকার প্রশংসা করে এই বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধেঅংশ নেয়া সকল যোদ্ধাদের প্রশংসা করে এবং সকল প্রতিবন্ধী,অক্ষম সৈন্য এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের জন্যেসরকার পদক্ষেপ নেবে

বাঙ্গালী বরখাস্ত

আরেকটি ব্রডকাস্ট প্রকাশ করে যে পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা “বাংলাদেশের এলাকা দখল করে নিয়ে” বাঙালিদের সরকারি চাকরি  ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের  থেকে নিয়মানুগ বর্জন শুরু করেছে।

একটি সম্প্রচার বলেন, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের ১৮০০ কর্মচারীর, ১১০০ কর্মচারী বাঙালি-যাদের সবাইকে ছাটাই করা হয়েছিল।

ব্রডকাস্ট বলেন,  ইতিমধ্যে ৬০০ বাঙালি কর্মচারীকে আরেকটি  জায়গায় বরখাস্তের নোটিশ দিয়ে দেয়া হয়।যাদের এপ্রিল মাসের জন্য বেতন-ভাতা দেওয়া হয়েছিল, তাদের আবার মার্চ জন্য বেতন দেয়া হয়নি যখন  আওয়ামী লীগের ডাকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়েছিল।

সেনা কর্তৃপক্ষ অন্তরালে একটি কমিটি গঠন করে, বাংলাদেশের পাকিস্তান অধিকৃত এলাকা থেকে সরকারি সব বাঙালি কর্মকারীদের নিয়মানুগ বর্জন চালিয়ে যাওয়ার জন্যে।

(পেটট্রিয়ট, নয়াদিল্লি ৩১ মে)

<003.022.050>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
“পাকিস্তানের কাঠামোতে আপোসের কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না”-প্রধানমন্ত্রী জয় বাংলা ২ জুন, ১৯৭১

পাকিস্তানের কাঠামোতে কোন আপোসের প্রশ্নই উঠতে পারে না

-তাজুদ্দিন

“বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ । পাকিস্তানের কাঠামোতে কোন রকম আপোস- মীমাংসার প্রশ্ন উঠতে পারে না ।”

গত রবিবার মুজিব নগর “জয় বাংলা” প্রতিনিধির সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী জনাব তাজুদ্দীন এ ঘোষণা করেন । বহির্বিশ্বে বিভিন্ন মহলে বাংলাদেশ সমস্যার ‘রাজনৈতিক সমাধান’ সম্পর্কে যেসব কথা-বার্তা উঠেছে তৎসম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জনাব তাজুদ্দীন উপরোক্ত ঘোষণা করেন ।

                জনাব তাজুদ্দীন আরও বলেন , ‘যে-কোন মূল্যের বিনিময়ে বাংলাদেশের জনগন তাদের পৃথক সত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষা করবে।’

                বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন , ‘বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর হাতে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগেই যদি তথাকথিত পাকিস্তানের সামরিক জান্তা তাদের খুনী সৈন্যবাহিনীকে বাংলাদেশের মাটি থেকে সরিয়ে নেন , তবে সেটাই হবে তাদের পক্ষে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।’

<003.023.051>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
অল ইন্ডিয়া রেডিও প্রচারিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার দি টাইমস অফ ইন্ডিয়া ৩ জুন, ১৯৭১

 

যেকোনো মুল্যে স্বাধীনতাঃ
তাজুদ্দীন

এএইচ ইন্ডিয়া রেডিওকে দেওয়া জনাব তাজউদ্দীন আহমেদ এর সাক্ষাৎকার এর ওপর প্রতিবেদন

জুন ১৯৭১

 

আজ মুজিবনগরে বাংলাদেশের প্রধনামন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ বলেছেন যে বাংলাদেশ সার্বভৌম ও স্বাধী রাষ্ট্রএবং জনগন যেকোনো মূল্যে এর স্বতন্ত্র ও স্বাধীন সত্বাকে রক্ষা করবে ।

                অল ইন্ডিয়া রেডিওতে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে, জনাব আহমেদ পুনরায় বলেন সবার জন্য বন্ধুত্ব নীতিতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। , যদিও, প্রতিবেশিকিছু রাষ্ট্র  এবং আন্তর্জাতিক  বিভিন্ন শক্তি আমাদের এই দুরাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।

“এছাড়া মাত্র দু’মাস বয়সী একটি রাষ্ট্রের জন্য শক্ত একটি পররাষ্ট্র নীতি দাঁড় করানো সম্ভব না”, এক প্রশ্নের উত্তরে জনাব তাজুদ্দীন এ কথা বলেন । তিনি আরও বলেন , ‘আশাপ্রদ উন্নতি হচ্ছে এবং দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নে এখনি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

                প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন যে, ঢাকায় যদি কোনো সাজানো সরকার‌ গঠনের চেষ্টা করা হয় তা অবশ্যই নস্যাৎ করা হবে কারন “বাংলাদেশের জনগন, যারা তাদের স্বাধীনতা সুনিশ্চিত ও রক্ষা করার জন্য লড়ে যাচ্ছে, তাঁরা খুনী ও দেশদখলকারীদের কোনো জোটকে প্রশ্রয় দেবে না” ।

পাকিস্তান সরকার দাবী করে যে শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং তিনি সেনাবাহিনির সাথে সহযোগিতার জন্য জনগনকে আহবান জানিয়েছেন – এ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জনাব আহমেদ জানানঃ “ আমরা জানিনা পাকিস্তান সরকার ঠিক কোন স্থানে শেখ সাহেবকে আটকাবস্থায় রেখেছে । কিন্তু পাকিস্তান সেনাবাহিনীরর সাথে জনগনকে সহযোগিতা করার যে আহবান সম্পর্কে করা দাবীকে তীব্র ঘৃনার সাথে প্রত্যাখ্যান করা উচিত ।  এই দাবি অযৌক্তিক” ।

জনাব আহমেদ বলেন তার সরকার একটি রাজনৈতিক নিষ্পত্তিতে মধ্যস্ততার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ করেছে । “আমরা প্রত্যেকের জন্য এটা সুস্পষ্ট করতে চাই পাকিস্তানের কাঠামোতে থেকে সমঝোতার কোনো সুযোগই নেই । বাংলাদেশ সার্বভৌম ও স্বাধীন এবং আমরা যেকোনো মূল্যে এর পৃথক ও মুক্ত অস্তিত্বকে রক্ষা করবো।”

বৃহৎ শক্তিদের নীরবতা

বৃহৎ শক্তি , বিশেষত ইউএসএ, যুক্তরাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন এর নীরবতা এবং দ্বিধা প্রসঙ্গে তার সরকারের অভিমত সম্পর্কে প্রশ্ন করলে জনাব তাজউদ্দিন বলেন, আমাদের বর্তমান দূরবস্থা নিয়ে বৃহৎশক্তিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া থাকা সত্বেও “সবার জন্য বন্ধুত্ব”- নীতিতেই আমাদের পররাস্ট্র নীতি পরিচালিত হবে ।

<003.023.052>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তিনি বলেন, তার সরকার কর্তৃক বিদেশে প্রেরিত প্রতিনিধিদের কাজ এসব এলাকায় অনুকূল সুপারিশ তৈরি এবং বাংলাদেশের পক্ষে জনমত গঠন এর ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখছে ।

                তার সরকারের বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে জনাব তাজুদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের সুবৃহৎ গ্রামাঞ্চলগুলোর সাথে সরকার কখনোই যোগাযোগ হারায়নি এবং  দখলকৃত শহর ও নগরগুলোর সাথে স্থানীয়  নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে । আমরা একটি প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করিয়েছি নিয়ন্ত্রনে থাকা এলাকাগুলোর জন্য এবং একইসাথে শত্রুমুক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অভিযানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ব্যবস্থা ।

                বাংলাদেশে বামপন্থীদের কার্যক্রমের প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশন করা হলে জনাব তাজউদ্দিন বলেন , বাংলাদেশে প্রশ্নে বামশক্তিদের সমস্যা সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই । মাত্রই একটি জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে এবং নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর একই সাথে রাজনৈতিক মতবাদ নির্বিশেষে সব মানুষ এবং সমস্ত দেশপ্রেমিক সত্বা বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে একসাথে জেগে উঠেছে ।

                তিনি আরও বলেন , “সংগ্রামী জনতা এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির  মাওলানা ভাসানী এবং ও অন্যান্য দেশপ্রেমিক নেতা এবং সকলেই তাদের সর্বাত্নক সমর্থন জানিয়েছেন এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দাবী করেছেন ।”

(দ্যা টাইমস অফ ইন্ডিয়া, নয়াদিল্লী-জুন ৩, ১৯৭১)

<003.024.053>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

                                        শিরোনাম                 সূত্র             তারিখ
রাজনৈতিক সমাধানের প্রশ্নে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজররুল ইসলাম কর্তৃক ৬ই জুনে পেশকৃত চার দফা প্রস্তাব            জয় বাংলা      ১৮ জুন, ১৯৭১

বাংলার মানুষ আর কোন গোঁজামিলের সামধান গ্রহণ করবে না

                                                                                                                                                 -সৈয়দ নজরুল ইসলাম

      গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত  ৬ই জুন সংগ্রামী বাঙ্গালী জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত এক বেতার ভাষণে বলে, গণ-প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রষ্ট্রপ্রধান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আটক সকল গণ-প্রতিনিধিদের অবিলম্বে মুক্তিদান, বাংলাদেশের মাটি থেকে হানাদারবাহিনী ফিরিয়ে নেয়া, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদান এবং পশ্চিম পাকিস্তানী  শোষকশ্রেনী কর্তৃক এ যাবৎ বাংলাদেশ থেকে অপহৃত ধনসম্পদ ও গত আড়াই মাসের লড়াইয়ে হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের যে ক্ষতি সাধন করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে তা নির্ণয় করে লুন্ঠিত ধন প্রত্যর্পণ ও পূর্ণ ক্ষতিপূড়ণের দ্বারাই কেবল রাজনৈতিক সমাধান আসতে পারে অন্যথায় রাজনৈতিক সমাধানের কোনো প্রশ্নই উঠতে পারে না।

     তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রাজনৈতিক সমাধান বা আপোস মীমাংসা সম্পর্কে যে জল্পনাকল্পনা চলছে সে সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ কোন গোঁজামিলের সমাধান গ্রহন করবে না।

     আমাদের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান বলিষ্ঠ কণ্ঠে ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনদিন সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না। এদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে সকল বাঙালী হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান একসাথে লড়েছেন- বুকের তপ্ত লহু ঢেলে দিয়ে বাংলার মাটি সিক্ত করে তারা এটাই প্রমাণ করেছেন যে, এদেশের প্রতিটি প্রাণ এক্যবদ্ধ, অভিন্ন।

      স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, স্বাধীনতার সংগ্রামে হিন্দু কৃষক জীবন দিয়েছেন, প্রাণ দিয়েছেন মুসলমান কৃষক। মসজিদ পুড়েছে হানাদার দস্যুদের হাতে, পুড়েছে মন্দির গীর্জা আর বৌদ্ধ বিহার  বিধ্বস্ত হয়েছে। বর্ব পাক-সেনারা হত্যা করেছে ডঃ গোবিন্দ দেব, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান, জ্যোতির্ময় গুহু ঠাকুরতা ও ফজলুর রহমানকে। আমরা একসঙ্গে লড়েছি, একই সাথে জয়ী হবো। এবং জয়ী আমরা হবই।

    সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, হানাদার দস্যু ইয়াহিউয়ার বর্বর সৈনিকদের নির্মম অত্যাচার কৃষক-মজদুর, ছাত্র, শিক্ষক, মধ্যবিত্ত আর অসংখ্য মানুষ বাংলার শ্যামল মাটির বুক ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, শত্রুহননের পর মুক্ত স্বদেশে ফিরে আমরা তাঁদের আপন ভিটেমাটিতে প্রতিষ্ঠিত করবই।

     মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের প্রশংসা করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন,  বাংলাদেশ সরকারের সীমত সামর্থ্যের জন্য আপনাদের প্রয়োজন সর্বক্ক্রেত্রে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বিভিন্ন রণাঙ্গনে আপনারা যে উসীম অটল

<003.024.054>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

মনোবলের পরিচয় দিচ্ছেন, তাঁর জন্যে আজ সারা বাঙালী জাতি গর্বিত দেশমাতৃকার বীর সন্তান আপনারা। এ সংগ্রামে আপনাদের যেসব সাথী শহীদ হয়েছেন, যারা পঙ্গু হয়েছেন তাঁদের পরিবারবর্গের রক্ষণাবেক্ষণের পুরো দায়িত্ব আমার সরকার ইতিপূর্বেই গ্রহণ করেছেন।

     তিনি বলেন, মুক্তিবাহিনীর বীর সৈনিকেরা আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন গ্রহণ করুন।

————

<003.025.055>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
শেখ মুজিবের নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের শক্তিশালি রাষ্ট্রবর্গের কাছে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এর আবেদন এশিয়ান রেকর্ডার , আগষ্ট ৬-১২ , ১৯৭১ ১৩ জুন, ১৯৭১

শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা

বিশ্বশক্তির কাছে জনাব তাজউদ্দীন আহমেদের আবেদনঃ

                বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ ১৩ জুন বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের কাছে আবেদন জানিয়েছেন “বাংলাদেশের জনগনের অবিসংবাদিত নেতা” শেখ মুজিবুর রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং মুক্তির জন্য  ।

                স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে এক সম্প্রচারে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ঢাকায় শেখ মুজিব তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে চক্রান্ত করেছিলেন- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের এমন অভিযোগ “এতোটাই অপরিনত যে রীতিমত হাস্যকর”।

                বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে  আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধুমাত্র এই সরকারই আমাদের দেশে বৈধ পরিচয় বহন করে এইজন্য যে এটি এদেশের জনগনের মুক্ত মতপ্রকাশের উপর প্রতিষ্ঠিত । আমাদের জনগন পশ্চিম পাকিস্তান ভিত্তিক ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থা সম্পূর্নরূপে অস্বীকার করেছে এবং এখন তাদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাঁরা যুদ্ধ করছে।”

                “আমাদের সংগ্রামের প্রশ্নে যারা কোনো পক্ষই নেননি কিংবা এই ব্যাপারে নির্লিপ্ত আছে অথবা সরাসরি এর বিরোধিতা করেছেন, আমি তাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে চাই যে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে এবং এদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের দৃঢ়সংকল্প তার সেই স্থান ধরে রাখবে । মানবসম্প্রদায়ের এতো বিরাট অংশকে উপেক্ষা করা কি রাষ্ট্রগুলোর জন্য যৌক্তিক ?” তিনি প্রশ্ন করেন ।

                এক বিশেষ বার্তায় মুসলিম এবং আরব দেশগুলোর জন্য, যারা এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গনহত্যার ব্যাপারে কোনো নিন্দা জানায়নি, তিনি বলেনঃ “তাদের পক্ষে এটা মর্মান্তিক ভুল হবে যদি তারা ভেবে নেয় ইয়াহিয়ার সামরিক দল ইসলামিক অধিকার রক্ষার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের নীরবতা তাই ঔপনিবেশিকতা এবং বর্বরতাকে সমর্থন করছে। ইসলামাবাদকে বস্তুগত সহায়তা দেওয়াটা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে তাদের অবস্থান বোঝায় ।”

                তিনি বলেন , ১১ সপ্তাহ যাবৎ মুক্তিযুদ্ধ চলছে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মনে হতাশার সৃষ্টি করেছে । পশ্চিম পাকিস্তান আর্মির অবিশ্বাস্য পরিমান ক্ষয়ক্ষতিই গেরিলা আক্রমনের সাফল্যের সাক্ষ্য দিচ্ছে । ব্যাপক সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের জমজ-নীতি স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জাতির মনোবল ভাঙতে সফল হয়নি । অপরদিকে হানাদার শত্রুরা নিরাশায় অগোছালো অবস্থায় আছে ।

                জনগন সহযোগিতা করতে প্রত্যাখ্যান করায় যে অর্থনৈতিক সংকটের তৈরী হয়েছে তা সামরিক জান্তা বৈদেশিক সহায়তা ছাড়া নিরসন করতে পারবে না । এটি এখন ১০০ ও ৫০০ রূপীর কাগুজে নোটের মূল্যহ্রাসে পরিনত হয়েছে । এটা শুধুমাত্রঅর্থনৈতিক দিক থেকে তাদের মরিয়া অবস্থার প্রমানই নয় , একই সাথে ইসলামাবাদে তাদের অর্থভান্ডার পূর্ণ করার জন্য জনগনকে তাদের নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার নির্লজ্জ চেষ্টা ।

                তাদের বীরোচিত প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশের জনগনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন , তাদের সংগ্রামের এই নতুন পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা আরও সুসংগঠিত এবং তাদের পদগুলো নতুন সৈন্য দিয়ে ভরে উঠছে ।

—————

<003.026.056>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম। সুত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উত্তরবঙ্গ সফরের রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৬-১৫ জুন, ১৯৭১

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানাব .এইচ.এম. কামারুজ্জামান সাহেবের উত্তরবঙ্গ সফরের রিপোর্ট: হতে ১৫ জুন .

মাননীয় মন্ত্রী মুরশিদাবাদ, মালদা, দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি ও কোচবিহার জেলায় সফরে গেলেন, সঙ্গে জনাব প্রসুন মজুমদার মুক্তিবাহিনীর সহায়ক সমিতি, জনাব খালেক আহমেদ আই.জি. বাংলাদেশ, জনাব আব্দুর রউফ চৌধুরী, এম.পি.এ. (কুষ্টিয়া) অনুষঙ্গী হিসেবে সফরে ছিলেন, প্রতিটি জেলায় যথোপযোগী সংগঠন গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবং বিভিন্ন ট্রানজিট প্রশিক্ষণ ক্যাম্পও পরিদর্শন করতে, ক্যাম্পগুলোর বিভিন্ন সমস্যা সচক্ষে দেখবেন এবং ভিন্ন ভিন্ন এম.পি.এ. ও এম.এন.এ.দের নির্দিষ্ট কার্যক্ষেত্রের দায়িত্ব বণ্টন করবেন।

মুরশিদাবাদ: ৬ষ্ঠ৭ম, ১৫তম। .

ডি.এম., এস.পি. এবং স্থানীয় এম.পি.এ.-দের এবং এম.এন.এ.-দের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বহরমপুর থেকে প্রায় ৩০মাইল শেখপুরা পরিদর্শন। সেখানে অবস্থিত দুটি ক্যাম্প পরস্পর ৬ মাইল দূরত্বে রয়েছে, উপস্থিত জনবল যথাক্রমে ৮৮+৮১ জন। মো: হাদী হলেন সূর্যসেন ভারতী শিবিরের ভারপ্রাপ্ত আর তিতুমীর বি.এস. এর ভারপ্রাপ্ত ডাঃ আলাউদ্দিন, সম্প্রতি উভয়েই ২০০জন পাঠিয়েছেন উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্যে যার ভিতর ১০ জন শারীরিক পরীক্ষায় প্রত্যাখ্যান হয়ে ফেরৎ এসেছে। আবাসন সমস্যা গুরুতর, এজন্য আরও সৈন্য নিয়োগ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। খাদ্য ব্যবস্থা কিন্তু অপ্রতুল হলেও এটি বিস্ময়কর যে এটা নিয়ে ছেলেদের মধ্যে কোন অসন্তোষ নেই। বেশীরভাগ ছাত্রের বয়স ১৬ হতে ২১ বছর। অস্ত্রের অভাবের অভিযোগটি সার্বজনীন। সর্বাধিক ছেলেদের কোন জুতা ও ইউনিফর্ম ছিল না এমনকি গার্ড অব অনার দেবার সময়ও। . জেলার রাজনৈতিক সমন্নয়ক নির্বাচিত করা হয়: জনাব আব্দুস সালামকে। . ফিরতি পথে, ১৫.৬.৭১ তারিখ লালগোলার অপারেশন ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। জনবল ২৫০জন, বেশিরভাগ ইপিআর, ১০ জন M, ১৫ জন A, কমান্ডো ৩১ জন, বিস্ফোরকে ৫০ জন, ৪৯ জন প্রশিক্ষণ এর জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ক্যাম্পটি বেশ ভালো, এর সাথে রয়েছেন ক্যাপ্টেন রশিদ দাপ্তরিক এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন। ডিএম, জনাব অশোক চট্টোপাধ্যায় অবহিত করেন যে ইয়ুথ ক্যাম্প ভবনের কাজ জুনের শেষ নাগাদ শেষ হবে। কাজ ইতিমধ্যে দ্রুত এগোচ্ছে। মালদহ: ৭ম ৮ম, ১৩। সার্কিট হাউজে কর্মী ও নেতাদের সাক্ষাত। জনাব হাফিজ উদ্দিন, এম.এন.এ. হচ্ছেন রাজনৈতিক সমন্বয়ক। মেহেদীপুর ক্যাম্প ডাঃ মায়নুদ্দিন এম.পি.এ.এর অধীনে, আদমপুর জনাব — (হাসনু) এর অধীনে এই সব হচ্ছে অপারেশন ক্যাম্প। এনায়েতপুর ক্যাম্প ডাঃ মেজবাউল হক এম.পি.এ. এর অধীনে। সবল ছাড়া কোন দূর্বল প্রশিক্ষণার্থীর যেনো না হয়, মন্ত্রী ফেরার পথে তাদের পরিদর্শনের সময় নিয়োগক্ষেত্রে যাতে তারা তাকে ভাল ফলাফল দেখাতে পারে। . এ. হান্নান চৌধুরী, পূর্ব দিনাজপুরের জেলা জজ মালদা শহরে অবস্থান করে এবং ভাল কাজ করছেন। মন্ত্রী তাকে কলকাতায় নিতে চাইছিলেন, কলকাতার সরকারী বিচারিক কাজের জন্য সে প্রস্তাবের উত্তরে জানান তিনি যেখানে আছেন সেখানেই থাকতে চান।

<003.026.057>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

১৩.৬.৭১. তারিখ ফেরববার পথে, এনায়েতপুর পরিদর্শন করেন। জনবল ১১০, এম-৩জন, এ-১জন, ইপিআর-১জন এবং বাকি সবাই ছাত্র। এপর্যন্ত ১১১জন প্রশিক্ষণার্থী পাঠিয়েছে। আবাসন ২০০জনের হয়তো ২৫০জন পর্যন্ত বাড়ানো যায়। ডি.এম. সয়াম্ভূ দে আর বি.ডি.ও. খুব সক্রিয়। . মেহেদীপুর অপারেশন ইউনিট (১৬১জন)-৮০জন ইপিআর, ১৯জন প্রশিক্ষিত সি., বাকিরা এ. ও এম.। আবাসন ভাল। বিএসএফ থেকে রেশনের ব্যবস্থা। . সম্প্রতি শুরু করা আদমপুর ইউনিট সীমান্তবর্তী এলাকায় (৪২জন) রয়েছে। সীমান্তের অপর প্রান্তে: ভোলাহাট। . উপরে দুই জেলায় স্থানীয় সংগ্রাম সহায়ক সমিতি অত্যন্ত সহযোগিতা পূর্ণ। .

জলপাইগুড়ি, ৯.৭.৭১

শিলিগুড়িতে ৮ম রাত কাটানোর পর মন্ত্রী মহোদয় সীমান্ত অতিক্রম করে ১০০বর্গ মাইল মুক্তাঞ্চলের মধ্যে যেখানে তেঁতুলিয়া ক্যাম্প অবস্থিত সেখানে যান। ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম ও সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নজরুল। জনবল ২৯২জন, এদের ভিতর কয়েকজন A এবং M বাকিরা ইপিআর এর। মুক্তিবাহিনীর এই সদস্যদের পরিবারদের জন্য আবাসন নির্মাণের কাজ মুক্তাঞ্চলের সীমান্তে শুরু হয়েছে। রেশন স্থানীয় BDM SS দ্বারা সরবরাহকৃত হচ্ছে। ১০০০ রিক্রুটের জন্য আরেকটি ক্যাম্প সীমান্তে নির্মিত হচ্ছে যার রেশন সরবরাহ শিলিগুড়ি BDMSSS. দ্বারা ব্যবস্থা করা হবে। ইপিআর ক্যাম্পের রিক্রুটমেন্ট এর জন্য অবশ্যই আমাদের কাছে জমা হবে। . একই দিনে আমরা তেঁতুলিয়া হতে ফুলবাড়ীতে যাত্রা করা হয় যেখানে নেতা-কর্মীদের এক সভায় ডাকা হয়েছে। উপরন্তু জনাব এস ইসলাম এর দায়িত্ব জনাব মাসরাফ হোসেইন, এম.এন.এ. কে দেওয়া হয়েছিল সমন্নয়ক (শিলিগুড়ি) হিসেবে এবং জনাব কামরুদ্দীন মুখতার এম.পি.এ. কে জলপাইগুড়িতে ছাত্রলীগের নেতা রউফ সাহায্য করতে অনুরোধ করা হয়েছে। . যেহেতু কিছু মানুষের খতমের সম্পর্কে বিতর্ক ছিল, তাদের গুপ্তচর বলে মনে করা হয়, অত:পর এটা নির্দেশ দেয়া হয় যে এম.পি.এ. এবং এম.এন.এ.-দের পরিষদ দ্বারা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে প্রস্তুত একটি তালিকা করে ব্যবস্থা নিতে। আমরা জলপাইগুড়ি শহরে গেলাম কিন্তু বৃষ্টি আমাদের চলাচল আটকে দিলো। .

কুচবিহার, ৯.৬.৭১

দেওয়ানগঞ্জ শিবির পরিদর্শন করা হয়। প্রায় ১০০ জন ছাত্র খোলা আকাশে তাঁবুর মধ্যে থাকে, নিকটতম নির্মাণাধীন এলাকা ৬মাইল দূরত্বে, খাদ্য সঙ্কট প্রকট, চাপাচাপি করে থাকবার ব্যবস্থা, কিন্তু এসব সত্বেও শিক্ষার্থীদের নৈতিক মনোবল খুব প্রখর। . ১০.৬.৭১ তারিখ, কোচবিহার শহরে অবস্থিত সংখ্যায় প্রায় ২১০জন জনবলের একটা গুদামঘর যার বায়ু চলাচলের অবস্থা খারাপ এমন একটি ক্যাম্প পরিদর্শন কারা হয়। স্থানীয় সংগ্রাম সহায়ক সমিতির দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেনা কারন BDMSSS এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্বীকৃতি দেয়নাই। এ উৎস হতে কোনপ্রকার সাহায্য নেই, থাকার ব্যবস্থা অমানবিক, খাদ্য সংকট প্রকট, যথেষ্ট খালী জায়গা রয়েছে। ক্যাম্প ভারপ্রাপ্তঃ . এক সংগঠন সেখানে লিবারেশন কাউন্সিল নামে চলছে। তাদের রাজনৈতিক সমন্নয়ক মতিউর রহমান।. কোচবিহার ব্যবসায়ী সমিতি ও সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে।. ৮ থেকে ১১ তারিখ আমাদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী অরুন মৈত্র আমাদের সঙ্গে ছিলেন। . পরবর্তী পরিদর্শন করলাম সাহেবগঞ্জ অপারেটিং ইউনিট, জনবল ৮০০জন, আমরা পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস কর্মী শ্রী রাজেন চট্টোপাধ্যায় এর সাথে সমস্যাদি নিয়ে আলোচনা করলাম। তিনি অন্যায্য সীমান্ত-বানিজ্যের সংবাদ দিলেন। তিনি এছাড়াও সংবাদ দিলেন যে ৬জন ছেলেকে শক্তি প্রদর্শন করে বাধ্য করা হয়েছে কোচবিহার টাউন ক্যাম্প ছেড়ে সীমান্তের ওপার চলে যেতে।

<003.026.058>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

সাহিবগঞ্জের ভিতরে বি এস এফ এর ভারপ্রাপ্ত মেজর নাজেশ মাত্র ৫০০ জনের পচা রেশন সরবরাহ করেছেন।এইগুলো দিয়ে ৮০০ জন এর খাবার চাহিদা নির্বাহ করা অত্যন্ত কষ্টকর।সশস্ত্র বাহিনীর টাকা জমা রাখার জন্য প্রত্যেক ইউনিটে একটি করে বাংলাদেশ ব্যাংক খোলার জন্য মেজর পরামর্শ দিয়েছেন।তাদের একজন চিকিৎসকও প্রয়োজন।একজন চিকিৎসক সহকারী ইতিমধ্যেই সেখানে আছেন তাকে নিয়োগ দেয়া উচিত। প্রয়োজনীয় দ্রব্যের তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল।

১০-৬-৭১ মাড়ওয়ারির গুড্ডিতে রাত্রীকালীন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল,এটি বাংলাদেশীদের কাছে এখন কারিয়ালা নামে পরিচিত।বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন এলাকার নেতৃবৃন্দ যথারীতি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা মন্ত্রীর সাথে আলাদা ভাবে কাল সকালে সাক্ষাৎ করবেন।১১ তারিখ রাত শিলিগুরিতে থাকা হবে।

দিনাজপুর, ১২জুন-১৩জুন

ইসলামপুর ১২ তারিখে আমরা যে ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেছিলাম সেটি একটি বিভিন্ন বাহিনী-ছাত্রদের সমন্বয়ে তৈরি একটি ক্যাম্প।এ.এম. ই পি আর-১০০ এবং এস-১০০।.  Camp  in  Charge Fazlul  Mia  finds  his  authority  questioned  by  the  BSF-EPR clique. সে ক্যাম্প এলাকায় থাকতে ভয় পাচ্ছে। প্রশিক্ষনার্থীরা তাদের গরু চড়াতে হয় বলে অভিযোগ করেছে। রান্নাঘর ক্যাম্প থেকে আধামাইল দূরে অবস্থিত।. Money inflow from across the border reported . কিন্তু সেখানে তাদের লোকবল ৫০০ এর বেশি বাড়ানোর বিধান রয়েছে।

একই দিনে রায়গঞ্জ (মালোনি) পরিদর্শন করা হয়েছিল, যেখানে ১ মাইল দূরত্বে দুটি ক্যাম্প আছে।আজিজুর রহমান দুটি ক্যাম্পেরই দায়িত্বে আছেন যার অপারেশন ক্যাম্প এর জন্য  এম ৫৪, ই পি আর ৬১ এবং টি এস ১০ বন্দোবস্ত করা হয়েছে এবং অন্যটির জন্য  এস ১২৫ যেটি অধিকাইংশই হিন্দু কলেজ ছাত্র (৬০%) দ্বারা ছোট একটি স্থানে গঠন করা হয়েছে।

১৩-৬-৭১ তারিখে আমরা কুরমাইল ক্যাম্প পরিদর্শন করেছিলাম যেটি সম্ভবত আমাদের দেখা সেরা ক্যাম্প।এর যোদ্ধা সংখ্যা ৭০০ জন।এর মধ্যে প্রায় ৪০০ জন গার্ড অফ অর্নারে অংশ নিয়েছিল এবং প্রচন্ড বৃষ্টিতে ভিজেও তারা মন্ত্রী উৎসাহ মূলক ভাষন শুনেছিল।ইতিমধ্যেই ১০০০ জনকে তাদের প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো হয়েছে।(২২৮+৩০০+৪০০)।প্রশিক্ষক ই পি আর।তাদের কোন রেশনে ছিল না অন্য জায়গা থেকে চাল এনেছিল।অপারেশন এখান থেকে পরিচালিত হচ্ছে।রাইফেল ৭-৮ শত।ক্যাপ্টেন বিস্ফোরক প্রশিক্ষক।একই সাথে  প্রধান প্রশিক্ষক।ক্যাম্পের দায়িত্ব প্রাপ্ত অধ্যাপক আবু সাইদ অত্যন্ত কার্যকর ভুমিকা রাখছেন।

কুরমাইল হতে ৭ মাইল দূরে বাঙ্গালীপুর অবস্থিত।এখানে আমরা দেখেছিলাম ১৪৩,৭৩ জন কাইগঞ্জ সেনা ক্যাম্প থেকে যোগদান করছে।আরো ৮৯ জন শীঘ্রই ফিরে আসবে।তাদের কাছে ৪ টি গ্রেনেড,১৬ টি রাইফেল এবং ৩ টি স্টেন গান আছে।মোঃ জ্বলিল ক্যাম্পের দায়ীত্বে।তারা তাদের চাহিদাপত্র জমা দিয়েছিল।

উল্লেখিত ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন এর অভিজ্ঞতা থেকে একটি মোটামুটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে। যেখানে বাহিনী এবং ছাত্রদের আলাদা করে রাখা হয়েছে সেখান থেকে ভালো একটি ফলাফল দেখা যাচ্ছে।
নিম্নোক্ত পরামর্শগুলো পরিদর্শনের অভিজ্ঞতার আলোকে দেয়া হয়েছে

১- ই পি আর , বি এস এফ এবং ছাত্রদের ক্যাম্পগুলো আলাদা করে রাখা উচিত।

২- দ্রুততর সময়ের মধ্যে একটি ইউনিফর্ম এবং ভালো রেশন প্রশিক্ষনার্থিদের দেয়া উচিত।

৩-কুচবিহার নিয়ে বিডিএমএসএস সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।ঐ জেলার বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে দ্রুত কার্যকর ব্যাবস্থা নেয়ার আহব্বান করা হচ্ছে।

পশ্চিম বঙ্গে অবস্থিত ট্রানজিট প্রশিক্ষন ক্যাম্প নিয়ে প্রতিবেদন

ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের পরিচালনা ইউনিট সহ ট্রানজিট ক্যাম্পের মোট সংখ্যা ৪০ এর বেশি হবে না। এর মধ্যে বেশিরভাগের সেনা সংখ্যা

<003.026.059>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

২০০,যদিও এর কোন কোনটিতে আবাসস্থল এর অপ্রতুলতা, রেশনের সহজলভ্যতার উপর বিধিনিষেধ আরোপের কারনে সেনা সংখ্যা অনেক কম আছে।প্রশিক্ষনার্থী সহ যাদের উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো হয়েছে এর সংখ্যা অনেক বেশি হবে, এর মধ্যে একটি ক্যাম্পে ১৭০০ এর বেশি আছে ( কুরমাইল,দিনাজপুর) এই মুহুর্তে প্রাপ্ত মোট প্রশিক্ষনার্থীর সংখ্যা হবে প্রায় ১০০০০ কাছাকাছি বা ১০০০০।

আমাদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা থেকে(আই.ই প্রসুন মজুমদারের উত্তর বংগের প্রতিবেদন,আমাদের এবং আর.কারলেকারস ২৪ পরগনার অভিজ্ঞতা এবং আমিনুল ইসলাম এর সাথে আমাদের নদীয়া যাবার অভিজ্ঞতা)এটা প্রমানিত যে  প্রশিক্ষন ক্যাম্পগুলো রয়েছে তাতে কোন কার্যকর প্রশিক্ষন বা আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। In the name of screening the Awami League M.P.A. and M.N.A.s indulge in many vices, fully over the students and if caught at it try to back each other।সেখানে বনগাও সেক্টরের তলিখোলা ক্যাম্প থেকে ৭৫ জন ছেলে বহিস্কার,অথবা কুচবিহার শহরের ক্যাম্প থেকে ৬ জন ছেলে বহিস্কারের কোন যথাযথ প্রতিবেদন নেই।উপরন্তু নদীয়াতে অবস্থিত প্রগতিশীল আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগ এবং ন্যাপের কর্মীদের আলাদা ক্যাম্পগুলোতে হুমকির খবর রয়েছে।

এখন পর্যন্ত রেশনের মান খুব ধীরগতিতে উন্নিত হচ্ছে, সে তুলনায় বিডিএমএসএস কতৃক অতিরিক্ত টাকা দেয়ার ঘটনা রয়েছে,যা ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ব্যাক্তির কাছে সঞ্চিত রয়েছে।তারা শুধু জনপ্রতি জমাখরচের হিসেব প্রদান করে,নানা কারনে তারা ক্যাম্পে থাকেন না এবং এদের সাক্ষাৎ পাওয়া খুব কঠিন বিষয় যে কারনে বেশিরভাগ দিনই ক্যাম্পের চলতি দায়িত্বে থাকা নেতার শিফট ব্যাবস্থা চালু করতে হয়।যখন তারা,তাদের বন্ধু অথবা আমরা ক্যাম্প পরিদর্শনে যাই আমরা চা এবং বিস্কুট দ্বারা আপ্যায়িত হই যা এই টাকা থেকেই আসে।ইউনিফর্ম উন্নতমানের রেশন এর অপরিহার্যতা,আলাদা আবাসস্থল এবং ক্যাম্পে আগত দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে এখন গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

ক্যাম্পে খাবার নেবার সময় বেশিরভাগ নেতা তাদের থালা পরিস্কার করেন না,তারা যে কোন ধরনের হাতের কাজ করতে অস্বিকৃতি জানান, রিলিফের মালামাল এবং তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অভিযোগ রয়েছে।ছেলেদের কেবল তাদের দ্বারা সকল কাজ করতে বাধ্যই করান হয় না, তাদের দিয়ে সমস্ত সীমন্ত জুড়ে গরু চড়ানোর মত উদ্ভট কাজও করান হয়।যথোপযুক্ত প্রাথমিক রাজনৈতিক জ্ঞান  এবং ক্যাম্পে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করার মত গভীর অনুধাবনযোগ্য বিবৃতির অভাব রয়েছে।

এই কঠিন সময়ে কেউ ভুল থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না।এত বাধা বিপত্তির মধ্যেও যে সকল লোক সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল এবং ভুলগুলো বুঝতে পেরেছিল তাদের এইগুলো নিয়ে আলোচনা করার আগ্রহকে আবদ্ধ করা হয়েছে।.  Instances  of  harm done  by  strong  attachment  to  a  locality  or  sentimental attachment to places are very commonly heard nevertheless .তাদের এই ধরনের মনোভাব উপেক্ষা করে  যুদ্ধ করার মানসিকতা বাহিনীর মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন।২০ শতাংশ বা তার বেশি হিন্দু নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন যদি তারা ফিরে যায়।.  This  means  recruitment  of  Scheduled castes and NAP students since militant Hindus belong to one or the other  সব জায়গাতেই বি এস এফ এবং ই পি আর কে ছাত্রদের থেকে আলাদা করে রাখা উচিত। বি এস এফ কে সড়ানোর পরামর্শ অনেক জায়গা থেকে এসেছেঃসম্প্রতি মুর্শিদাবাদ থেকে  সড়ানোর বিষয়টি বেশ ভালো হয়েছিল।দিনাজপুরে মধ্যে ইসলামপুর (ঠাকুবাড়ি) ক্যাম্পের কাছে ক্যাপ্টেন সুভাষ এর বিষয় এ ধরনের একটি ঘটনা।

<003.027.060>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসী, সরকারী চাকুরিরত, বাংলাদেশের বেতন সংক্রান্ত চিঠি  বাংলাদেশ সরকার, অর্থদফতর ১৮ জুন, ১৯৭১

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অর্থ বিভাগ

নথি. নং.                                                                                                                                                                 তারিখ – ১৮জুন, ১৯৭১

প্রতি,

আঞ্চলিক প্রশাসক,

বিষয়: বেতন ভাতা এবং এককালীন অনুদান প্রদান ।

এটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে সব বিভাগের শিক্ষকদের এককালীন ৫০/= (পঞ্চাশ) রুপী অনুদান প্রদান করা হবে। তাদের নিজ নিজ প্রতিটি আঞ্চলিক সদর দফতর হতে, যথাঃ কৃষ্ণনগর, বালুরঘাট, কুচবিহার এবং আগরতলা। আঞ্চলিক প্রশাসকরা তাই তাদের আওতাভুক্ত এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষকগণের সাথে থাকা জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে, প্রতিটি জীবনবৃত্তান্তের জন্য নথি তৈরি করবেন এবং প্রতিটি জীবনবৃত্তান্ত ও রসিদ বিভাগীয় সাধারণ প্রশাসন কার্যালয়ে পাঠাবেন। এই নথি প্রাপ্তির উপর কিছু শিক্ষক প্রতিনিধিদের আঞ্চলিক সদর দফতর যেতে হবে এবং এই কার্যালয় হতে তাদের যোগ্যতানুযায়ী বেতন পরিশোধিত হবে।

সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বেতন প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে আঞ্চলিক প্রশাসকগণ পুলিশ সদস্য, ডাক্তার এবং সব বিভাগের শিক্ষকদের ছাড়া অন্য কর্মকর্তাদের তাদের জীবনবৃত্তান্তে দেওয়া বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী নিজ নিজ আওতাভুক্ত অঞ্চলের মধ্যে বসবাসকারীদের নথি প্রস্তুত করবে কার্যালয়ে থাকা জীবন বৃত্তান্তনুযায়ী, তাদের দুইটি শ্রেণীতে ভাগ করে অর্থ বিভাগ, আঞ্চলিক প্রশাসক দ্বারা যাদের কর্মস্থল কার্যকরভাবে নির্ধারিত হয়েছে এবং  যাদের কর্মস্থল এখনো নির্ধারিত হয়নি। নিম্নলিখিত হারে মন্ত্রীপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তাদের বেতন ধার্য করেছে অর্থ বিভাগঃ-

(১) যাদের কর্মস্থল কার্যকরভাবে নির্ধারিত সেসব কর্মকর্তাদের জন্য :

(ক) ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনের ৭৫% হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০০/= রুপী বেতন বাবদ প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে।

(খ) ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনের ৮০% হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০০/= রুপী বেতন বাবদ প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে।

(গ) ৩য় শ্রেণীর এবং ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তারা পূর্ণ বেতন পাবে সর্বোচ্চ ১০০/= রুপী প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে।

(২) যাদের কর্মস্থল অনির্ধারিত সেসব কর্মকর্তাদের জন্য:-

ক) ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনের ৩৭% হিসেবে সর্বোচ্চ ২৫০/= রুপী বেতন বাবদ প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে।

(খ) ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনে ৪০% হিসেবে সর্বোচ্চ ২০০/= রুপী বেতন বাবদ প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে। .

<003.027.061>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

(গ) ৩য় শ্রেণীর ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতনের ৫০% হিসেবে সর্বোচ্চ ১৫০/= রুপী প্রতি মাসে পরিশোধিত হবে। . অতএব, আপনাকে নথি প্রস্তুত করতে অনুরোধ করা যাচ্ছে,

(১) নির্ধারিত আপনার আওতাভুক্ত এলাকায় দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের জন্য।

(ক) আপনার আওতাভুক্ত এলাকায় জীবনবৃত্তান্তনুযায়ী জুন মাস ১৯৭১সাল হইতে অবস্থানকারি কর্মকর্তা, যাদের কার্য অনির্ধারিত রয়েছে তাদেরও নথি প্রস্তুত করতে বলা যাচ্ছে।

আপনাকে আরো অনুরোধ করা হচ্ছে যে, সকল বিভাগের শিক্ষকদের আনুপাতিক হারে ৫০/= রুপী এককালীন অনুদান হিসেবে জীবনবৃত্তান্ত প্রতি নথি প্রস্তুত করে একই বিভাগে পাঠাতে, যাতে যতো শীঘ্র সম্ভব এখান থেকে ব্যবস্থা নেয়া যায় ।

স্বাক্ষর/…কে. এ. জামান সচিব

অর্থ বিভাগ তারিখ

১৮.৬.৭১

প্রতিলিপি প্রেরনঃ      (১) সচিব, সাধারণ প্রশাসন বিভাগঃ তথ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য,

(২) ও.এস.ডিঃ পুলিশ সদস্যদের নথিভুক্ত করতে অনুরোধ সহকারে,

(৩) সচিব, কারিগরি পর্ষদঃ তথ্য ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য,

(৪) সদস্য, স্বাস্থ্য সেবাখাতঃ তথ্যের জন্য। .

স্বাক্ষর/……কে.এ.জামান

সচিব

অর্থ বিভাগ

<003.028.062>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীপরিষদ সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার,কেবিনেট ডিভিশন ২২,২৩ ও ২৪ জুন,৭১

 

গোপনীয়

মন্ত্রীসভার মিনিট এবং সিদ্ধান্তের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২২/০৬/৭১ তারিখে সকাল ১০ টায়

মন্ত্রীসভার সকল সদস্যগণ এবং সি-ইন-সি উপস্থিত ছিলেন।মন্ত্রীপরিষদ নিম্নলিখিত সমস্যাসমূহ উল্লেখ করেছিলেনঃ

১। বেসরকারী সশস্ত্র কর্মীদের দ্বারা নিজস্ব শত্রু মোকাবেলা করার প্রচেষ্টা করা।

২। বিভিন্ন বিভাগের দ্বারা পরস্পরবিরোধী আদেশ ইস্যু যা ছিল মন্ত্রীপরিষদ সিদ্ধান্ত পরিপন্থী এবং প্রতিরক্ষা স্বার্থসংশ্লিষ্ট অবমাননাকর;

৩। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনে, বিশেষ করে নির্বাচন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য পালনে ব্যর্থ এবং প্রশিক্ষণার্থীর স্ক্রীনিং যা প্রশিক্ষণার্থীদের অনুপ্রবেশ দ্বারা অনুমতি’ এবং প্রশিক্ষণার্থীর স্ক্রিনিং যা শত্রু দ্বারা প্রশিক্ষণার্থীরা ‘পদমর্যাদার অনুপ্রবেশের অনুমতি এজেন্ট;

৪। যুব শিবির সংস্থার কো-অর্ডিনেশন এবং সমস্যার উদ্ভূত ব্যক্তিগত এবং বিচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা যেমন শিবির সংগঠিত করতে।

মন্ত্রীপরিষদ  যুব  শিবির  প্রকল্প অনুমোদন করেছেন।

মন্ত্রীপরিষদ আবার দেখা করেছেন বিকেল ৬টায়।

কোন আলোচনা সংগঠিত হয়নি।

                                                                                                        মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

সি-ইন-সি প্রেসিডেন্ট এবং মন্ত্রীবর্গ ও এডিসি পাস করার জন্য কপি করুন।

                                                                                                        মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

গোপনীয়

মিনিট এবং মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২৩/০৬/৭১ এর সকাল ১০টার দিকে।

মন্ত্রীপরিষদ উপস্থাপনের আগে যুব ক্যাম্প স্কিম প্রকল্প হাতে নেয়।প্রকল্পটি নির্দিষ্ট পরিবর্তন করে অনুমোদন করা হয়।

মন্ত্রীপরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে জাতীয় ও প্রাদেশিক সদস্যদের সমাহারগুলি তাদের আন্দোলন এবং ক্ষুদে খরচের জন্য ৫০.০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে যা ১/৫/৭১ থেকে কার্যকর।

                                               মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

<003.028.063>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

অনুলিপি

           প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের AU PSs থেকে,

          ADC থেকে সি-ইন-সি,

           মহাপরিচালক,যুব ক্যাম্প।

                                           মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

গোপনীয়

মন্ত্রী সভার মিনিটস ANI)সিদ্ধান্ত অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় ২৪/০৬/৭১ এর সকাল ১০ টার দিকে।

মন্ত্রীপরিষদ জোনাল প্রশাসন বোর্ডের সামনে প্রকল্পটি তুলে ধরার আগে আলোচনা করেন।নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো সম্মানের সহিত স্কিমে নেয়া হয়েছেঃ

১। জোনাল প্রশাসনিক স্থাপনার অনুমোদন দেওয়া হয়;

২। নির্বাচিত জোন বসবাসকারী প্রতিনিধিদের প্রতিটি জোনের একটি জোনাল প্রশাসনিক পরিষদ গঠিত হবে।

৩। জোনাল প্রশাসনিক কাউন্সিলের মন্ত্রীপরিষদ নীতি নির্দেশনা সব বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে; এবং,

৪। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের সদস্যদের মধ্যে একজন নির্বাচিত হবে এবং জোনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এর সদস্য-সচিব হিসেবে কাজ করবে।

  এছাড়াও মন্ত্রীপরিষদ নিম্নলিখিত সদস্যদের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির যুদ্ধ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেনঃ

১। সৈয়দ নজরুল ইসলাম,অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি।

২। জনাব তাজউদ্দিন আহমেদ, পি.এম.

৩। খন্দকার মোশতাক আহমেদ,পররাষ্ট্র মন্ত্রী

৪। জনাব পানি মজুমদার, এম.পি.এ

৫। জনাব এম.আর. সিদ্দিকী, এম.এন.এ

                                                                                                                                                           মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

প্রেসিডেন্ট ও মন্ত্রীদের সব PSs কপি করুন।

 জনাব পানি মজুমদার,এম.পি.এ

 জনাব এম.আর. সিদ্দিকী,এম.এন.এ

                                                                                                                                            মন্ত্রীপরিষদ সচিব।

<003.029.064>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির বেতার ভাষন দি স্টেটস্ম্যান- নয়াদিল্লী ৩০ জুন, ১৯৭১

ইয়াহিয়া রণক্ষেত্রে জবাব পাবে

সৈয়দ নজরুল ইসলাম,বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির বেতারবার্তা

৩০ জুন, ১৯৭১

পিটিআই রিপোর্ট করেছে, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বলেছেন যে মুক্তিযোদ্ধারা ইয়াহিয়া খানের উদ্ধত বেতার বার্তার যথোপযুক্ত জবাব রণক্ষেত্রেই দিবে। রেডিও বাংলাদেশের অনুসারে,ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি এক বিবৃতিতে বলেছেন যে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য গম্ভীরভাবে বিবেচনা করার যোগ্যতা রাখে না। প্রায় সাড়ে সাত কোটি মুক্তিযোদ্ধা তার “ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা” ভরা বক্তব্য শুনেছে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেছেন:”আমরা বর্তমানে একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে অবস্থান করছি। যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা আমাদের ভূমি হতে প্রত্যেক বিদেশী সৈন্যদের নিশ্চিহ্ন না করবো ততক্ষণ আমরা বিশ্রাম করবো না”।

নিষ্ঠুর রসিকতা

কূটনীতিজ্ঞ ব্যক্তির বিশেষ প্রতিনিধি অনুসারে, বাংলাদেশের ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ওয়ালী-মুজাফ্ফর দ্বারা চালিত) বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি জনগণের উপর রচনা করা রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের শাসনতান্ত্রিক পরিকল্পনাকে নিষ্ঠুর রসিকতা হিসেবে বর্ণনা করেছে”।

(কূটনীতিজ্ঞ ব্যক্তি, নয়া দিল্লী- ২ জুলাই,১৯৭১)

<003.030.065>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
যুবশিবির প্রদত্ত বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর একটি ভাষন বাংলাদেশ সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় জুলাই ১৯৭১

প্রিয় তরুণ ভাইগণ, আজ তোমাদের দেখে আমি গর্বিত এবং আনন্দিত। আমি জানি তোমাদের অভিভাবকদের অনেকে তাদের শেষ সহায় আলিঙ্গন করে তোমাদের উচ্চতর শিক্ষা প্রদানের জন্য চেষ্টা করছিল,যাতে তোমরা তোমাদের জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ভবিষ্যতে তাদের তাদের অবলম্বন হতে পারো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের দরুন  নিজের মাতৃভূমির সম্মান রক্ষার দায়িত্ব তোমাদের উপর এসেছে।মাতৃভুমির গরিমা সমুন্নত রাখতে স্কুল এবং কলেজ ত্যাগ করে অস্ত্র হাতে নিতে তোমরা বাধ্য হয়েছ। আমাদের প্রিয় মা বোনদের উপর আরোপিত ইয়াহিয়ার পাঞ্জাব সেনাদের অনির্বচনীয় লজ্জা এবং অত্যাচার হতে রক্ষার্থে আমাদের দায়িত্ব নেওয়া উচিত।

 এ মর্মে, ,আমি আমার তরুণ ছাত্র বন্ধু যারা বর্তমানে পরীক্ষার মতো তুলনামুলক সামান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অংশগ্রহণপ্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। আমার শিক্ষার্থী বন্ধুরা জানতো যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ পূর্বনির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যবস্থা নিতে যথেষ্ট সম্মত হয়েছেন। আমি এটা জেনে গর্বিত যে,আমাদের কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন নিয়ে আমার কাছে অবতীর্ণ হয়নি, অপরদিকে তাদের সকলে অভিন্ন অনুরোধ নিয়ে এসেছিল যাতে আমাদের দেশের এই সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব তাদের আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হোক। আমাদের নিরপরাধ ভাই এবং বোনেরা যে অবর্ণনীয় পাশবিকতার শিকার হয়েছেন, যার ফলস্বরূপ দশ লক্ষেরও বেশি মানুষের নাশ,অগণিত মা-বোনদের সম্ভ্রম ইত্যাদি,  পাশবিকতার প্রতিরোধ হিসেবে তোমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞসংকল্পের  দ্বারা এমনভাবে প্রতিরোধ করছ,যা পাঞ্জাবী সেনা দ্বারা কখনও প্রতিহত করা সম্ভব হবে না। আমরা জানি যে কতটা কষ্ট এবং অসুবিধার মধ্য দিয়ে তোমরা সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছ। তোমরাও জানো আমাদের সম্পদ কতটা সীমিত; কিন্তু যাই হোক না কেন, যতটুকু অর্থ আমরা সংগ্রহ করতে পারি,তার সম্পূর্ণটাই তোমাদের জন্য ব্যয় হবে। এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত। কারণ আমরা জানি যে তোমরাই দেশকে মুক্ত করবে এবং লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত উদ্বাস্তুদের সম্মানের সাথে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে,এই উপায়ে সীমান্ত জুড়ে আশ্রয়প্রার্থী অগণিত মানুষের জন্য আমরা সর্বোচ্চটাই করতে থাকবো,এবং বর্ধিত আতিথেয়তায় প্রচন্ডভাবে ভারাক্রান্ত দেশটিকেও সাহায্য করবো। আমরা ভারতের জনগণের উপর কৃতজ্ঞ, ভারত সরকার আমাদের যেভাবে সাহায্য করেছে তা নজিরবিহীন।তাদের সরকারের সক্রিয় সহানুভূতি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।

<003.030.066>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তবুও আমাদের মনে রাখতে হবে, ৬ বা ৭ মিলিয়ন শরণার্থীর ভার বহন একটি দেশের জন্য কতটা কঠিন। অনেকের কাছে এমনও মনে হতে পারে যে, হয়তো এ যুদ্ধের জন্যে অনেকাংশে আমরাও দায়ী। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, এরজন্য আমরা বিন্দুমাত্র দায়ী নই। ইয়াহিয়া খানের বিশ্বাসঘাতকতাই আমাদের ওপর এ যুদ্ধ নিয়ে এসেছে। আমাদের ৬-দফা দাবির ভিত্তিতে, ২৪শে মার্চের এক সভায় আমরা এক প্রকার সমঝোতায় পৌঁছুই; ইয়াহিয়া তাতে সইও করেছিলেন। ২৫শে মার্চ রাতে তিনি তা প্রচার করবেন এরূপ সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছিলো। ২৫শে মার্চ, হঠাৎ করেই স্পেশাল বিমানে তিনি করাচি চলে যান আর এই দিকে রাতের আঁধারে আমাদের সাধারণ ছাত্র, পুলিশ, ই.পি.আর, বস্তিবাসিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে খানসেনারা। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতার আর কোন উদাহরণ নেই।ইয়াহিয়া একজন বিশ্বাসঘাতক। বাঙালী যেন আর কখনো মাথা উঁচু করে দাড়াতে না পারে,সেটা নিশ্চিত করাই ছিলো এ অমানবিক বর্বরোচিত আক্রমণের উদ্দেশ্য। ভায়েরা,! এই নরখাদকদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা সর্বদা মনে রাখবেন। ১৬-৩০ বছর বয়সী কোন যুবককে তারা বাঁচতে দেবে না, এবং এ বয়সী মেয়েরাও তাদের লক্ষবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এমনকি এখনো তারা সহস্র নগ্ন যবতীদের সীমান্তে প্রেরণ করছে। আমাদের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে।স্বাধীন বাঙালী জাতি হিসেবে গর্বভরে আমাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, স্বাধীনতা কখনো উপহার হিসেবে আসে না, তা অর্জন করে নিতে হয়। আমরা যদি মনে করি, অন্য কেউ আমাদের স্বাধীনতা এনে দেবে, তবে তা হবে প্রচন্ড বোকামী। স্বাধীনতার এ যুদ্ধ আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। অনেকেই হয়তো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে, তবে এ যুদ্ধ আমার তোমারই লড়তে হবে।

আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আমাদের জয়লাভ সম্পর্কে কারো যদি বিন্দুমাত্র কোন দ্বিধা থাকে, তবে আমি তাকে বলছি একথা মাথায় রাখতে, এ যুদ্ধে সাড়ে ৭ কোটি বাঙালী তোমার সাথে আছে। বিশাল পৃথিবীতে বাঙালীর অস্তিত্ব রক্ষার এই লড়াই এর প্রতিটি সৈনিক, প্রতিটি মুক্তিযোদ্ধার নাম ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা থাকবে। আমাদের চোখের সামনে তা রক্ত দিয়ে লিখে দিয়েছে ছোট্ট ভিয়েতনাম। সে আজ আর তুচ্ছ নয়, অসীম ক্ষমতার দাপটে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে সংকটময় সময় তারই আঘাতে। ভিয়েতনামের জয় সুনিশ্চিত; আমাদের ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম ঘটবে না। আপনারা নিশ্চয়ই আলজেরিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে জানেন। প্রবল বাধা- বিপত্তির মাঝেও তারা তাদের প্রবাসি সরকারের অধীনে এক শক্তিশালী মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলে এবং সাম্রাজ্যবাদ থেকে নিজ মাতৃভূমিকে মুক্ত করে। আমাদের মনে রাখতে হবে, ১৯৪৭ এ আমরা যে ভুল করেছিলাম, তা শুধরবার জন্য এ যুদ্ধ লড়তেই হবে। আমাদের প্রথম ও প্রধান পরিচয় আমরা বাঙালী। ধর্ম আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ধর্ম দিয়ে কখনোই কোন জাতিকে মাপা যায় না। দেশ পরিচালনায়ও ধর্মের অবদান খুব সামান্যই। কোন দেশের পরিচয় গড়ে ওঠে তার ভৌগলিক অবস্থান, তার ভাষা, সংস্কৃতি ৬৭ আর পারিপার্শ্বিক রাষ্ট্রসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে। এরপরেই আসে ধর্ম, ব্যক্তিগত বিশ্বাসের প্রেক্ষাপটে। আমরা সকল ধর্মের সমান অধিকারে বিশ্বাসী। ঠিক যেমনি একজন মুসলিমের মসজিদে যাবার অধিকার আছে, তেমনি একজন হিন্দুর মন্দিরে যাবার, খ্রিষ্টানের চার্চে যাবার অধিকার আছে। একইভাবে, প্রত্যেকেরই তার নিজ নিজ ধর্ম- কর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। জাত্যবর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক একই অধিকার ভোগ করবে।

<003.031.067>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

আমরা পাকিস্তানকে দু’ভাগে ভাগ করতে চাইনি, কিন্তু পাঞ্জাবী শাসকেরা আমাদেরকে তাদের কলোনিতে পরিণত করতে চাইলো, আমাদের স্বাতন্ত্র্য মুছে দিতে চাইলো এবং এসবই বর্তমান পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। আপনারা শপথ নিয়েছেন এর সমাপ্তি ঘটাবার। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা অতি শীঘ্রই পাকিস্তানী বাহিনীকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত করতে পারবো এবং দেশকে স্বাধীন করবো। আমাদের এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেখানে কোন নির্যাতন থাকবে না, থাকবে না ধনী-গরিবের ভেদাভেদ, বড়- ছোটর বৈষম্য, বরং থাকবে কেবল এক জাতি, মানুষ। আমাদের অর্থনীতির ভিত্তি হবে সমাজতন্ত্র। সবশেষে, সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের অবগত করতে চাই যে, দেশের ভবিষ্যত সেনাবাহিনীর আপনারাই হবেন ভিত্তি। যারা এ যুদ্ধে অসাধারণ নৈপূণ্য প্রদর্শন করবে, নিজেদের সর্বোত্তম যোদ্ধা হিসেবে প্রমাণ করতে পারবে , তারাই ভবিষ্যত সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবে। নেতৃত্ব যেনতেনভাবে পাওয়া যায় না। এটিও অর্জন করে নিতে হয়। সুতরাং, যারা নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করতে পারবে, নেতৃত্ব তারাই পাবে। যদি আমরা কেবল দর্শক হয়ে পড়ি, যদি আমরা নেতারা আপনাদের কষ্টে কষ্ট না লাই, আপনাদের ব্যথায় ব্যাথিত না হই, যদি আমরা আরাম আর নেতৃত্বের স্বপ্নে বিভোর হই, তবে অবশ্যই আপনারা আমাদের সরিয়ে দেবেন। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নাম ভুক্তি নেবে, তাদের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব সরকার নেবে। শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে স্থায়ীভাবে পঙ্গু ব্যাক্তিবর্গের পরিবারের নিরাপত্তা আর সামগ্রিক দায়দায়িত্বও সরকার গ্রহণ করবে। আমরা আরোও সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যুদ্ধে অসামান্য সাহসিকতা প্রদর্শনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশেষ সম্মাননার ব্যবস্থা করা হবে। ইতোমধ্যে আমাদের কর্মসূচিসমূহ সুশৃঙখল ও নিয়মিত হয়ে উঠেছে। তথাপি, প্রশিক্ষণকালীন সময়ে স্বেচ্ছায় আপনারা যে কষ্ট ও ত্যাগ স্বিকার করেছেন, তা লাঘব করবার চেষ্টায় আমরা আমাদের যৎসামান্য রেশনকে যতটুকু সম্ভব পূর্ণাঙ্গ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন করার চেষ্টা করবো। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, আপনারাই আমাদের প্রধান বাহিনী এবং সর্বশেষ শক্তি।

জয় বাংলা

আ.হ.ম.কামরুজ্জামান

<003.031.068>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
সামরিক বিজয়ই স্মস্যার একমাত্র সমাধান, প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদের ঘোষনা, ১৫ ই জুলাই এশিয়ান রেকর্ডার সেপ্টেম্বর ৩-৯, ১৯৭১ ১৫ জুলাই, ১৯৭১

সামরিক বিজয়ই সমস্যার একমাত্র সমাধানঃ ১৯৭১ সালের ১৫ই জুলাই তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ঘোষণা করেন যে, “সামরিক বিজয়ই সমস্যার একমাত্র সমাধান।”

বাংলাদেশ থেকে প্রচারিত ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা দ্য পিপল এ বলা হয় যে, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামীলীগের সদস্যবৃন্দ এক সভায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক যুদ্ধের শপথ গ্রহণ করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয় যে, বাংলাদেশের কোন এক স্থানে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় জাতীয় পরিষদের ১১০জন ও প্রাদেশিক পরিষদের ২০০জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

শপথে বলা হয় যে, শুধু স্থলেই নয়, প্রয়োজনে আকাশ ও জলপথেও শত্রুদের ব্যতিব্যস্ত রাখা হবে ও বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীনতাকে সুুরক্ষিত করতে শত্রুকে চূড়ান্তভাবে পরাজিত করা হবে।

বিমান ও নৌবাহিনীর সংযোজনের তাৎপর্য বিচারে মুক্তিফৌজের নাম পরিবর্তন করে মুক্তিবাহিনী রাখার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ইতোমধ্যে মুক্তিফৌজের সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ বিশ হাজার (১,২০,০০০) ছাড়িয়ে গিয়েছে যার মধ্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও আঞ্চলিক পুলিশবাহিনীর সদস্য চল্লিশ হাজার এবং স্বেচ্ছাসেবক আশি হাজার।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক বাঙালি কর্মকর্তা পাকিস্তান আর্মি ত্যাগ করে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মুক্তিফৌজকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

মুক্তিফৌজ নিয়ন্ত্রণাধীন পূর্ব বাংলার কিছু অঞ্চলে ব্যাপক সফর থেকে ফিরে এসএসপি নেতা সদাশিব বাগাইতকার ২৮জুলাই তারিখে ভারতের পুনায় মুক্তিফৌজের শক্তি ও সক্ষমতার এই খসড়া হিসাব তুলে ধরেন।

বাগাইতকারের ভাষ্য অনুযায়ী এই বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক যোদ্ধারা আসলে ছাত্র, যুবশ্রমিক ও কৃষক। হাতিয়ার ও কৌশল ব্যবহার করে এদেরকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে বিশেষত গেরিলাযুদ্ধ করার জন্য।

তিনি আরো জানান যে, স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য মুক্তিফৌজের ২৪টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু রয়েছে।

——————–

<003.032.069>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেরশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ সভার কার্যবিবরনী ও সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ সরকার, কেবিনেট ডিভিশন ১৭, ১৮ জুলাই, ১৯৭১

মন্ত্রিপরিষদ সভার কার্যবিবরণী সিদ্ধান্ত

১৭.০৭.১৯৭১  বিকাল ৫:৩০ ঘটিকা

মন্ত্রিসভার সকল সদস্য ও কমান্ডার ইন চিফ (সিইনসি) সভায় উপস্থিত ছিলেন ।

সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, এখন থেকে প্রতি সোম ও শুক্রবারে মন্ত্রীসভার বৈঠক নিয়মিত অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবারের বৈঠকে মূলত প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

১০জুলাই থেকে ১৫জুলাই পর্যন্ত সেক্টর কমান্ডারদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এক সভার সূত্রের ভিত্তিতে কমান্ডার ইন চিফ যে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করেন, সেটার উপর মন্ত্রীসভা সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেন।

সরকারের প্রচারণা সংক্রান্ত বিষয়গুলি বিশেযভাবে আলোচিত হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, বেতার, সংবাদপত্র, সরকারি বিলিপত্র, চলচিত্রের মত সচিত্র প্রচারনা এবং লেখালেখির উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

আঞ্চলিক প্রশাসনিক কাঠামোকে পর্যালোচনা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, ৫টি জোনের পরিবর্তে ৮টি জোনে প্রশাসনিক কাঠামোকে পুনর্বিন্যাস করা হবে এবং পূর্বাঞ্চলীয় জোনকে নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী ভাগ করার সুযোগ দেওয়া হবে ।

আরো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, গণপরিবহনের জন্য সরকার যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন যানবাহন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়, তবে ঐসকল যানবাহনের মালিকদেরকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে।

ট্রেড এন্ড কমার্স প্রমোশন বোর্ড স্থাপনের প্রকল্প সভায় অনুমোদিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

অনুলিপিঃ রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীগণের সকল ব্যক্তিগত সচিব।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

মন্ত্রীপরিষদ সভার কার্যবিবরণী ও সিদ্ধান্ত

১৮.০৭.১৯৭১

নিম্নবর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হলঃ

১/ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়াদি দেখাশুনার বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য অধ্যাপক রেহমান সোবহানকে বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ওয়াশিংটন সদরদপ্তরে জনাব এম. আর. সিদ্দিকী, এম. এন. এ. কে দূত হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়।

মন্ত্রীপরিষদ সচিব

অনুলিপিঃ

রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীদের সকল ব্যক্তিগত সচিব।

অধ্যাপক রেহমান সোবহান

জনাব এম. আর. সিদ্দিকী, এম. এন. এ.

মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

—————————

<003.033.070>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

শিরোনাম সূত্র তারিখ
বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন আর্থিক বিধিমালা ও বাজেট বিবরণী – প্রচার, প্রকাশনা, তথ্য ও বেতার মন্তনালয়ের ৬ মাসের খসড়া বাজেট বাংলাদেশ সরকার, অর্থ মন্ত্রনালয় ১৪ জুলাই, ১৯৭১

 

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

অর্থ মন্ত্রনালয়

তাং- ১৯ ই জুলাই ১৯৭১ ইং

স্বারক নং – অর্থ / ২৯(১২)

বরাবর   ১, মাননীয় রাষ্টপতির ব্যক্তিগত সচিব

২, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব

৩, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগীয় সচিব

৪, সাধারন প্রশাসন বিভাগীয় সচিব

৫, অর্থ বিভাগীয় সচিব

৬, বৈদেশীক নীতিবিভাগীয় সচিব

৭, স্বরাষ্ট নীতি বিভাগীয় সচিব

৮, শিক্ষা বিভাগীয় সচিব

৯, ত্রাণ কমিশনার সচিব

১০, পরিচালক যুব ক্যাম্প

১১, সমস্ত বিভাগীয় প্রশাসন

১২, তথ্য ও জনসংযোগ সচিব

আপনাদের সুবিধার্তে শর্তপূর্ণ অর্থিক ব্যয়ের নিয়ামবলী এখানে সংযুক্ত করা হল।

(কে.এ জামান)

অর্থ সচিব

শর্তপূর্ণ আর্থিক নিয়ামাবলী

১) অগ্রীম বাজেট মন্ত্রী পরিষদ কর্তৃক ও মাননীয় রাষ্ট্রপতি দ্বারা অনুমদিত হতে হবে।

২) মাননীয় রাষ্ট্রপতির অনুমতি প্রাপ্ত মন্ত্রী সভা দ্বারা গৃহিত বাজেটে নতুন করে কোন ব্যয় সংযুক্ত করা যাবে না।

৩) পাশকৃত বাজেটর মুল ব্যয়গুলি বন্টনের সময় পূর্বের মন্ত্রী সভা দ্বারা গৃহিত কোন সম্পূরক বাজেটকে অতিক্রম করতে পারবে না।

৪) (ক) প্রত্যেক মুল ব্যয়গুল উপমূলে বন্টন করতে পারবে

(খ) পূর্বের অনুমদিত ছাড়া মন্ত্রী সভায় গৃহিত অনুমদিত বিষয়ের এক উপমূল থেকে অন্য উপমূলে পুনরায় উপযুক্ত বলে প্রদান করা যাবে না।

<003.033.071>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

গ) যেখানে ব্লক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, উত্তোলনকারী ও নির্বাহী কর্মকর্তা উপ-প্রধানের নিকট বিস্তারিত হিসাব জমা দিবেন।

৫। বিভাগীয় প্রধান/ চেয়ারম্যান, জোনাল কাউন্সিল এবং নির্বাহী মণ্ডলী হবেন উত্তোলনকারী ও নির্বাহী কর্মকর্তা।

৬। ফান্ড মাসিক হারে প্রদেয় হবে এবং মাসিক ব্যয়ের বিবৃতি অর্থ বিভাগে জমা না দিলে কোন ফান্ড প্রদেয় হবেনা। বৈদেশিক মিশনের ক্ষেত্রে বিস্তারিত বিবৃতি ধর্তব্য নয়।

৭। ক) ফান্ড উত্তোলনের পূর্বেই বিল উত্থাপন করতে হবে।

    খ) ফান্ড ব্যবহারের অনতিবিলম্বে ভাউচার জমা দিতে হবে।

    গ) অব্যয়িত অর্থ পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে জ্ঞাপন করতে হবে।

     ঘ) পরিদর্শনের জন্য রিসিপ্ট ও ব্যয় সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

৮। ক) উত্তোলনকারী ও নির্বাহী কর্মকর্তাগণ যথাযথ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দায়বদ্ধ থাকবে।

     খ) উত্তোলনকারী ও নির্বাহী কর্মকর্তাগণকে সাহায্যের জন্য হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন অর্থ বিভাগ।

৯। যথাযথ অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণে সব বিভাগ ও এজেন্সির সমস্ত হিসাব নিরীক্ষণে অর্থ বিভাগ নিরীক্ষক নিয়োগ করবেন।

১০। ক) কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে অর্থ শাখার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তার নিকট সমস্ত বিল উত্থাপন করা হবে।

খ) সমস্ত বিভাগ ও এজেন্সির জন্য কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে একজন কেন্দ্রীয় প্রদান কর্মকর্তা থাকবে। সেখানে সব বিভাগের বিল উত্থাপন করা হবে এবং কেন্দ্রীয় প্রদান অফিস থেকে সব অর্থ প্রদান করা হবে।

গ) বাংলাদেশ সরকারের সমস্ত ফান্ড সরকারের নামে বা ক্যাবিনেট অনুমোদিত ব্যক্তির নামে ব্যাংকে রাখা হবে অথবা কেন্দ্রীয় ট্রেজারিতে অবস্থিত ভল্টে সংরক্ষিত থাকবে। সরকার নির্ধারিত ট্রেজারি বিধিতে সমস্ত হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। সরকার অনুমোদিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কেউ ফান্ড সামলাতে বা পরিচালনা করতে পারবে না।

এসডি/(কে, এ, জামান)

অর্থসচিব

বাজেটের ব্যাখ্যামূলক টীকা

অত্যন্ত অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের বাজেট প্রস্তুত করতে হচ্ছে। আমরা একটি স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যস্থ বিরাজ করছি। পশ্চিম

<003.033.072>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের জনগনের জীবন ও সম্পদের ভায়াবহ ক্ষতি সাধন করেছে। জনগনের অর্থনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে এবং দেশ আজ তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে। দুর্ভিক্ষ আসন্ন। আমাদের প্রথম এবং প্রধান কাজ হচ্ছে যত শীঘ্র সম্ভব দেশকে স্বাধীন করা। সেইসাথে, আমাদেরকে দুর্ভিক্ষ তাড়াতে বন্ধুবৎসল দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক এজেন্সিদের তালিকা তৈরি করে জানাতে হবে (Simultaneously, we should initiate action to enlist the of friendly countries and international agencies to ward off the imminent famine)

আমরদের এখন  স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতে বাজেট তৈরি করতে  হচ্ছে। যেটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করবে। বাজেট জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর,১৯৭১- এই তিন মাস সময়ের জন্য তৈরি করা হয়েছে। এই আশায় এটা করা হয়েছে যে আমরা এই সময়ের মধ্যেই দেশকে স্বাধীন করতে পারব। অধিকাংশ সংগঠন সম্প্রতি স্থাপিত হয়েছে অথবা স্থাপিত হচ্ছে বিধায় বাজেট বরাদ্দ তৈরি করা হয়েছে কোন বাস্তব (নিরীক্ষা) ব্যতিরেকে। গত তিন মাসে আমরা বিশেষ বরাদ্দের ভিত্তিতে কিছু ব্যয় করেছি। অনেক বিভাগকে আমরা ৩০ জুনের মধ্যে তাদের বাজেট বরাদ্দ পাঠাতে অনুরোধ করলেও তারা পাঠায়নি। ফলে,আমরা বাজেট নির্ধারণে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। হতে পারে বিভাগগুলো এখনও কাঠামো ভিত্তিক গঠন ও নীতিনির্ধারণ ঠিক করে উঠতে পারেনি তাই আমরা যে করেই হোক সেইসব বিভাগের জন্য ব্লক সরবরাহ বিধান রেখেছি। তাদের ব্যয় সংঘটন ব্লক সরবরাহ বিধানেও যে করেই হোক বরাদ্দ হবে না যতক্ষণ না তারা তাদের নীতিনির্ধারণী পরিকল্পনা এবং কাঠামো ভিত্তিক গঠন পাঠিয়ে দেয় সেগুলোকে আমাদের পরীক্ষণ ও সম্মতিতে যথাযথ ন্যায়সঙ্গতভাবে অধিগত করব। আমাদের রাজস্ব উৎস সীমিত এবং অপ্রতুল এবং সেই প্রেক্ষিতেই আমরা চেষ্টা করেছি অধিক্ষিপ্ত ব্যয়কে সর্বনিম্ন রাখতে। তাই বলে এতে এটা বুঝায় না যে প্রয়োজনের সময়ে আমরা উৎস গুলো সহজলভ্য(mobilize) করতে পারব না। আমরা ইতোমধ্যেই প্রবাসী বাঙালি এবং বন্ধুবৎসল দেশগুলো থেকে খুব ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে আমরা আমাদের দেশকে স্বাধীনের মূল লক্ষ্য অর্জনে প্রয়োজনীয় উৎসগুলো সহজলভ্য করে তুলতে পারব। যে করেই হোক, আমরা সরকারের বর্তমান উৎসের অবস্থান কেবিনেটকে অবগত রাখব। আমরা সক্ষম হয়েছি ৳১১,২২,৮০,৩৭৮.০০ পরিমাণ জোগাড়(mobilize) করতে যা আনা হয়েছে বিভিন্ন ট্রেজারি এবং বাংলাদেশী ব্যাংক থেকে। এটা যে করেই হোক, কিছুটা সময় নিয়েছে আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরের কিছু কারনে। ফলাফল স্বরূপ আমরা ৪০% থেকে ৫০% ক্ষতিতে আছি মুদ্রারহিতকরণের কারনে। আমাদের এখনও আরও দুইটি জায়গা থেকে প্রায় ৳২,০০,০০০,০০(দুই কোটি) পরিমাণ ফান্ড পেতে হবে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিমাণের মধ্যে আমরা রূপান্তরের জন্য জোগাড় করেছি ৳৪,২৩,৩৮,৭৫০.০০। আমরা আরও চেষ্টা করছি বিভিন্ন জায়গার মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আসা কিছু পণ্যদ্রব্য যেমন পাট, সার, চা, চাল ইত্যাদি বিক্রি করে কিছু ফান্ড জোগাড় করতে। এতে ভারত সরকারের কার্যকরী সাহায্য ও সহযোগিতা লাগবে এবং আমাদের এম,এন,এ, এবং এম,পি,এ, দেরও। এখন পর্যন্ত বিক্রয়রত পাটের মধ্যে আমরা পেয়েছি প্রায় ৳১,০০,০০০.০০(১লক্ষ)। আমরা আশা করছি অন্যান্য পণ্যদ্রব্যের বিক্রি থেকে আরও কয়েক লক্ষ আসবে। ৳২,১৫,৬৪,০৫১.৭৫ অধিক্ষিপ্ত ব্যয়ের বাজেট তৈরি করা হয়েছে তিন মাসের জন্য।

<003.033.073>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

এটাকে এক বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে অনুমান করে সর্বমোট অর্থনৈতিক দায় হবে ৳৮,৬২,৪৮,২০৪.০০। এটার বিপরীতে আমরা প্রাপ্তি অধিক্ষেপ করেছি ৳৭,৭৪,১৮,৯৯৮.০০। তবে,এতে ঘাটতি হবে ৳৮৮,২৯,২০৬.০০।

আমরা একটি জরুরী অবস্থা পার করছি। তাই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের জন্য করা সিকি পরিমাণ কোন প্রচেষ্টাকে অন্ধের মত বাঁধাধরা নিয়মকানুন এবং খুঁটিনাটি কার্যপ্রণালী অনুসরণ করে দমন করতে মনস্থ করি নি কিন্তু একই সময়ে আমরা চেষ্টা করব প্রাপ্তি ও ব্যায়ের যথাযথ হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ করতে ন্যূনতম অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে।যেহেতু আমাদের উৎস সীমিত, আমরা চেষ্টা করব সর্বোচ্চ ফলাফল লাভে যথাসম্ভব সর্বোত্তম পন্থায় সেগুলো সদব্যাবহার করতে।

এক নজরে বাজেট

প্রাপ্তি ও ব্যয়ের সারসংক্ষেপ

প্রাপ্তি

হিসাব নং ১

(নিজস্ব উৎস)

(ক) পাকিস্তানি মুদ্রাঃ

ইতোমধ্যে প্রাপ্ত                              ৳১১,২২,৮০,৩৭৮.০০

প্রত্যাশিত৳                                                ২,০০,০০,০০০.০০                         ৳১৩,২২,৮০,৩৭৮.০০

৫০% এর কম

(মুদ্রারহিতকরনের                                          ৳৬,৬১,৪০,১৮৯.০০

কারনে ক্ষতি)                                                ৳৪,২৩,৩৮,৭৫০.০০                                 ৳১০,৮৪,৭৮,৯৩৯.০০

কম রূপান্তরিত                                                                                             ৳ ২,৩৮,০১,৪৩৯.০০

(খ) ভারতীয় মুদ্রা

(রূপান্তরিত)

হিসাব নং ২                                        ৩,২৬,১২,৫৫৮.০০ টাকা

(লেনদেন হিসাব)

১। পাট,

     চা, সার, চাল ইত্যাদি বিক্রি           ৳১০,০০,০০০.০০

হিসাব নং

৩ ৳ ৫০,০৫,০০১.০০

(সরকারী অনুদান ও অনুদান)                            ৳২,০০,০০,০০০.০০                           ৳৬,৩৬,১৭,৫৫৯.০০

১। ইতোমধ্যে প্রাপ্ত

প্রত্যাশিত

ব্যয়

১। রাষ্ট্রপতির দপ্তর                                             ৳৫২,৩১৬.০০

২। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীবর্গ                      ৳৩৮,৪০০.০০

<003.033.074>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

৩. মন্ত্রীপরিষদ বিভাজন –                                                             ৬৫,৬৫০.০০ টাকা

৪. সাধারণ প্রশাসন মন্ত্রণালয় –                                                     ৩,৬৯,৪০০.৭৫ টাকা

৫. প্রশাসনিক অঞ্চল –                                                                      ৫,২২,৫৮৩.০০ টাকা

(উপ অঞ্চল সহ) –                                                                             ৪৩,৭০২.০০ টাকা

৬. আর্থিক ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয় –                               ২,১৩,০০০.০০ টাকা

৭. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় –                                                                        ১০,০৯,৭৫০.০০ টাকা

৮. ত্রাণ মন্ত্রণালয় –                                                                               ৩,০০,০০০.০০ টাকা

৯. শিক্ষা মন্ত্রণালয় –                                                                             ১,৫০,০০০.০০ টাকা

১০. তথ্য ও প্রচার –                                                                                        ৬,০০,০০০.০০ টাকা

(সম্প্রচার সহ)

১১. বৈদেশিক সম্পর্ক –                                                                 ২,৫০,০০০.০০ টাকা

১২. স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় –                                                                  ৩,২০,২৫০.০০ টাকা

১৩. আইন এবং সংসদীয় ব্যাপার –                                           ৬,৯৭,০০০.০০ টাকা

১৪. অনিশ্চিত ঘটনা –                                                              ১,৩৭,০০,০০০.০০ টাকা

১৫. যুব শিবির –                                                                           ১০,০০,০০০.০০ টাকা

১৬. প্রতিরক্ষা –                                                                         ১,৯৩,৩২,০৫১.৭৫ টাকা

মোট (তিন মাসের জন্য)

এক বছরের মোট আনুমানিক ব্যয় –                                     ৭,৭৩,২৮,২০৭.০০ টাকা

তিন মাসের একীকৃত বাজেটের অনুমান জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর,১৯৭১

পরিকল্পনা- ১

রাষ্ট্রপতির সচিবালয়                                                                           তিন মাসের জন্য জুলাই থেকে ডিসেম্বর, ১৯৭১

১. বেতন এবং ভাতা                                                                            – ২১,৮১৬.০০ টাকা

২. রাষ্ট্রপতির বাসা ভাড়া                                                    – ৩,০০০.০০ টাকা

(@ ১০০০x৩)

৩. রাষ্ট্রপতির T.A.D.A ইত্যাদি                                         – ৩,০০০.০০ টাকা

(@ ১.০০০x৩)

৪. রাষ্ট্রপতির ব্যয়নিয়ন্ত্রক ভাতা                       – ১,৫০০.০০ টাকা

(@ ৫০০x৩)

<003.033.075>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

৫. দৈনিক সংবাদপত্র, সাময়িক পত্র                                    – ৩,০০০.০০ টাকা

ক্রয় করা এবং যানবাহনের মেরামত ও

রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি সাপেক্ষ ব্যয়

(@ ১,০০০x৩)

৬. চুক্তি বা সন্ধির খসড়া সংক্রান্ত                                     – ১০.০০০.০০ টাকা (ব্যাপার)

বিশেষ ব্যক্তিবর্গের

জন্য বিনোদন ইত্যাদি

৭. রাষ্ট্রপতির বিচক্ষণতার নিকট                                                      – ৫,০০.০০ টাকা

     ন্যস্ত অর্থ

৮. জরুরি প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষিত                                              – ৫,০০.০০ টাকা

_____________________

মোট.                                                                                               ৫২,৩১৬.০০ টাকা

পরিকল্পনা

ক. প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীঃ

১. বেতন ও ভাতা                                                                                – ১৫,৩০০.০০ টাকা

২. মন্ত্রীদের বাসা ভাড়া                                                        – ৫,১০০.০০ টাকা

৩. মন্ত্রীদের T.A.                                                                   – ৯,০০০.০০ টাকা

৪. মন্ত্রীদের ব্যয়নিয়ন্ত্রক ভাতা                            ৪,০০০.০০ টাকা

৫. মন্ত্রীদের বিচক্ষণতার উপর ন্যস্ত

তহবিল            ৫,০০০.০০ টাকা

______________________

মোট                                                                                       – ৩৮,৪০০.০০ টাকা

খ. মন্ত্রিসভা বিভাজন                                                           – ২০,৪০০.০০ টাকা

১. বেতন ও ভাতা                                                                                – ১২,৭০০.০০ টাকা

২. বাসা ভাড়া, চিকিৎসা ভাতা                                                          – ৫,০০০.০০ টাকা

    বহন ইত্যাদি

৩. যানবাহনের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ                      ১,০৫০.০০ টাকা

৪. টেলিফোন ও বিদ্যুৎ                                                         – ৬,০০০.০০ টাকা

৫. বিবিধ                                                                                               – ১২,০০০.০০ টাকা

৬. জরুরি প্রয়োজনের জন্য সংরক্ষিত                              – ৩,০০০.০০ টাকা

৭. স্টেশনারি                                                                         –             ১,৫০০.০০ টাকা

৮. P&T                                                                                                 – ৩,০০০.০০ টাকা

৯. ট্রাঙ্ক কল                                                                           – ৬৫,৬৫০.০০ টাকা

______________________

মোট                                                                                                 – ১,০৪,০৫০.০০ টাকা

<003.033.076>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তফসিল-৫

সাধারণ প্রশাসন বিভাগঃ

১)বেতন ও ভাতা                                                                 —                                             ৩৩,৬০০.৭৫/=

২)ডাক মাসুল ও টেলিগ্রাম                                   —                                             ৩,৮০০.০০/=

৩)যানবাহন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত                             —                             ৫,০০০.০০/=

৪)মনিহারি দ্রব্যাদি                                                               —                                             ৬,০০০.০০/=

৫)যাতায়াত খরচ                                                 —                                             ৪,৫০০.০০/=

৬)বিবিধ সম্ভাব্য খরচ                                                        —                             ১,৫০০.০০/=

৭)৫টি মুদ্রলিখন যন্ত্র ক্রয়                                    —                             ১৫,০০০.০০/=

৮)সরকারী করমচারীদের

জীবনভাতা(ব্লক বিধান)                                     —                                             ৩,০০,০০০.০০/=

———————————-

 মোট                                                                                                                      ৩৬৯৪০০০.৭৫/=৩৬৯৪০০০.৭৫/=

খ)প্রশাসনিক অঞ্চল(সহকারী অফিস সহ):

১) বেতন ও ভাতা                                                                                                ৪,০৯,০৯৮.০০/=

২)মনিহারি দ্রব্যাদি                                                                                               ১,৫০০.০০/=

৩)ডাকমাসুল ও টেলিযোগাযোগ                                                       ৪,৫০০.০০/=

৪)আঞ্চলিক অফিসের বাড়ি ভাড়া                                                     ৬,০০০.০০/=

৫)যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত খরচ                                ৫,০০০.০০/=

৬)যাতায়াত খরচ                                                                                                ৭,৫০০.০০/=

৭)সামনের মাসের নিয়োগের জন্য সঞ্চিত                         ১০,০০০.০০/=

৮)উত্তর অঞ্চলের এপ্রিল ও মে মাসের বকেয়া                 ৩,৯৮৫.০০/=

৯)সাহকারী আঞ্চলিক অফিস                                                            ৭৫,০০০.০০/=

————————————

                               মোট                                                                        ৫,২২,৫৮৩.০০=                 ,২২.৫৮৩.০০/=

                              মোট (ক এবং খ)…                                                              ৮,৯১,৯৮৩.৭৫/=

তফসিল-৪

অর্থনৈতিক বিভাগঃ

১)বেতন ও ভাতা                                                                                 ১৮,৭০২.০০/=

২)আকস্মিক খরচ                                                                                                ১৫,০০০.০০/=

৩)জরুরি প্রয়োজনের জন্য সঞ্চয়                                                      ১০,০০০.০০/=

                              মোট                                                                                         ৪৩,৭০২.০০/=

<003.033.077>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তফসিল-৫

স্বাস্থ্য বিভাগঃ

১। বেতন ও ভাতা                                                                                               ১৮,০০০.০০

২। সংস্থাপন ও আকস্মিক ঘটনা                                                        ৭,৫০০.০০

৩। যোগাযোগ খরচ                                                                                            ৩,০০০.০০

৪। বাড়ি ভাড়া                                                                                                   ৪,৫০০.০০

৫। অস্তিত্ব ভাতা                                                                                   ,৮০,০০০.০০

মোট                                                                   ২,১৩,০০০.০০

তফসিল-৬

ত্রাণ বিভাগঃ

১। বেতন ও ভাতা                                                                                               ৯,৭৫০.০০

২। ত্রাণ অপারেশন জন্য ব্লক বিধান                                  ১০,০০,০০০.০০

মোট                                                  ১০,০৯,৭৫০.০০

তফসিল-৭ (ব্লক বিধান)

১। শিক্ষা বিভাগ                                                                                   ৩,০০,০০০.০০

২। তথ্য ও প্রকাশনা                                                                                             ১,৫০,০০০.০০

৩। বৈদেশিকনীতি                                                                                               ৬,০০,০০০.০০

৪। দেশীয়ব্যাপার                                                                                 ২,৫০,০০০.০০

৫। প্রতিরক্ষা                                                                                         ১০,০০,০০০.০০

মোট                                                                  ২৩,০০,০০০.০০

তফসিল-৮

আইন ও সংসদ বিষয়কঃ

১। MNAs&MPAs এর বেতন

(২০০*৪৫০*৩)                                                                                    ২,৭০,০০০.০০

২। জোনাল এর সাপেক্ষে প্রশাসনিক

কাউন্সিলেরব্যয় (৫ জোন)                                                                  ৫০,২৫০.০০

মোট                                       ৩,২০,২৫০.০০

তফসিল-৯

পরবর্তী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের

নিয়োগের বিধানঃ

১। বেতন ও ভাতা (ব্লকবিধান)                                                         ৫,৫৫,০০০.০০

২। অন্যান্য খরচ                                                                                  ,৪২,০০০.০০

মোট                                                  ৬,৯৭,০০০.০০

<003.033.078>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

তফসিল ১০

যুব ক্যাম্পঃ

১। খরচ (প্রতিদিন জনপ্রতি ২ টাকা হারে ৭৫

ক্যাম্পে ১০০০ যুবকের ৩ মাসের ব্যয়)                                                            ১,৩৫,০০,০০০.০০

২। বেতন ও ভাতা (ব্লকবিধান)                                                                          ১,০০,০০০.০০

৩। বিবিধ                                                                                                                         ,০০,০০০.০০

মোট                                                            ১,৩৭,০০,০০০.০০

জুলাই- সেপ্টেম্বর , ১৯৭১ একত্রীকৃত বাজেট

তফসিল  ১                            ৫২,৩১৬.০০

২                                             ১,০৪,০৫০.০০

৩                                            ৮,৯১,৯৩৩.৭৫

৪                                             ৪৩,৭০২.০০

৫                                             ২,১৩,০০০.০০

৬                                            ১০,০৯,৭৫০.০০

৭                                             ২৩,০০,০০০.০০

৮                                            ৩,২০,২৫০.০০

৯                                             ৬,৯৭,০০০.০০

১০                                          ,৩৭,০০,০০০.০০

মোট                                       ২,১৩,৩২,০৫১.৭৫

(দুই কোটি তের লক্ষ বত্রিশ হাজার একান্ন রুপি পঁচাত্তর পয়সা)

সংযোজনী

জুলাইসেপ্টেম্বর , ১৯৭১সূচি১বিস্তারিত বাজেট

ক)

১। রাষ্ট্রপতির (স্থানাপন্ন)বেতন                                         ২,০০০.০০x৩                                      ৬,০০০.০০

২। রাষ্ট্রপতির পি.এস. এর বেতন                                      ৫০০.০০x৩                                          ১,৫০০.০০

৩। এ.ডি.সি.                                                                                   ৫০০.০০x৩                                 ১,৫০০.০০

৪। স্টাফ অফিসার (৩)                                                   ৫০০.০০x৩x৩                                         ৪,৫০০.০০

<003.033.079>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

  ৫. সহকারী স্টাফ অফিসার                                                              ৪০০x৩ = ১২০০.০০ রুপি

  ৬. তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী (৭)                                                         ১৮৭২x৩ = ৫৬১৬.০০ রুপি

  ৭. পঞ্চম শ্রেণীর কর্মচারী (৩)                                           ৫০০x৩ = ১৫০০.০০ রুপি

                                                                     মোট =                               ২১৮১৬.০০ রুপি

(বি)১. রাষ্ট্রপতির বাড়ি ভাড়া                                                                               ১০০০x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

   ২. রাষ্ট্রপতির ভ্রমণ ভাতা এবং মহার্ঘ ভাতা ইত্যাদি                   ১০০০x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

   ৩. রাষ্ট্রপতির সম্পূরক ভাতা                                                         ৫০০x৩ = ১৫০০.০০ রুপি

   ৪. যানবাহন কেনার শর্তসাপেক্ষ খরচ ইত্যাদি                                             ১০০০x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

   ৫. ভিআইপিদের প্রোটোকল এবং আতিথেয়তা ইত্যাদি                                = ১০০০০.০০ রুপি

   ৬. Amount placed at the discretion president           =                                     ৫০০০.০০ রুপি

    ৭. জরুরী কাজের জন্য সংরক্ষণ                                                                    = ৫০০০.০০ রুপি

                                                       ————————————————–

                                                                                                                =       ৩০৫০০.০০ রুপি

                                                       ————————————————–

                                                                                   সর্বমোট               ৫২৩১৬.০০ রুপি

সংযোজনী

(এ) ১৯৭১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর এর বিস্তারিত বাজেট – তফসিল ২

১. প্রধানমন্ত্রীর বেতন                                                                       ১৫০০x৩  = ৪৫০০.০০ রুপি

২. মন্ত্রীর বেতন                                                                                         ১২০০x৩x৩ = ১০৮০০.০০ রুপি

৩. প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি ভাড়া                                                               ৫০০x৩ = ১৫০০.০০ রুপি

৪. মন্ত্রীদের বাড়ি ভাড়া                                                          ৪০০x৩x৩ = ৩৬০০.০০ রুপি

৫. মন্ত্রীদের ভ্রমণ ভাতা                                                                 ৩০০০x৩ = ৯০০০.০০ রুপি

৬. প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীদের সম্পূরক ভাতা                                                   ৪০০০.০০ রুপি

৭. Fund placed at the discretion of Prime Minister & Other Ministers ৫০০০.০০ রুপি

                                                                                                                ———————————————————

                                                                                                                              ৩৮৪০০.০০ রুপি

(বি) মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ

১. দুইজন প্রথম শ্রেণী অফিসারের বেতন                                     ৫০০x৪x৩ = ৬০০০.০০ রুপি

—————————————————————————————————————————————

<003.033.080>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

২. আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণী অফিসারের বেতন                              ৫০০x৩x৩ = ৬০০০.০০ রুপি

৩. চারজন তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারীর বেতন                                       ২৫০x৪x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

৪. আটজন আজ্ঞাবাহকের বেতন (প্রতি মন্ত্রীর দুইজন করে)        ১০০x৮x৩ = ২৪০০.০০ রুপি

৫. দুইজন অফিস চাপরাসির বেতন                                                  ১০০x২x৩ = ৬০০.০০ রুপি

৬. চারজন গাড়ি চালকের বেতন (প্রতি মন্ত্রীর একজন করে)           ২০০x৪x৩ = ২৪০০.০০ রুপি

                                                                                                   সর্বমোট ২০৪০০.০০  রুপি

(সি) শর্তসাপেক্ষ খরচ

১. বাড়ি ভাড়া এবং ভাতা                                                                                                   ১২৭০০.০০ রুপি

২. যানবাহন মেরামত এবং রক্ষণাবেক্ষণ                                         ২০০০x৩ = ৬০০০.০০ রুপি

৩. টেলিফোন এবং বিদ্যুৎ                                                                                   ৩৫০x৩ = ১০৫০.০০ রুপি

৪. বিবিধ                                                                                                 ২০০০x৩ = ৬০০০.০০ রুপি

৫. ষ্টেশনারী                                                                                            ১০০০x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

৬. পিএন্ডটি                                                                                                           ৫০০x৩ = ১৫০০.০০ রুপি

৭. ট্র্যাঙ্ক কল                                                                                           ১০০০x৩ = ৩০০০.০০ রুপি

৮. জরুরী কাজের জন্য সংরক্ষণ                                                                                          ৩০০০.০০ রুপি

                                                                                                                                        ১২০০০.০০ রুপি

                                                                                                                                    ———————

                                                                                                                                      ৪৫২৫০.০০ রুপি

                                                                                                 —————————————————————-

                                                                   সর্বমোট এ+বি+সি                    = ১০৪০৫০.০০     রুপি

সংযোজনী

১৯৭১ সালের জুলাইসেপ্টেম্বর এর বিস্তারিত বাজেটতফসিল

 

(এ) সাধারণ প্রশাসনিক বিভাগ

১. প্রথম শ্রেণী অফিসারের বেতন (১০)                            ৪৮০৭.৫০x৩ = ১৪৪২২.০০ রুপি

২. তৃতীয় শ্রেণী কর্মচারীর বেতন (১৮)                                           ৪৭২৮.০৮x৩ = ১৪১৮৮.২৫ রুপি

৩. চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীর বেতন (১৩)                          ১৬৬৪.০০x৩ = ৪৯৯২.০০ রুপি

                                                                                                                                 —————————————–

                                                                                                                                      = ৩৩৬০০.২৫ রুপি

(বি) শর্তসাপেক্ষ খরচ

১. ডাকমাশুল এবং টেলিগ্রাম                                                                                               ৩৮০০.০০ রুপি

২. ষ্টেশনারী                                                                                                           ২০০০x৩ = ৬০০০.০০ রুপি

৩. বিবিধ এবং যানবাহন মেরামত                                                                          ৫০০০.০০ রুপি

৪. ভ্রমণ খরচ                                                                                                           ১৫০০x৩ = ৪৫০০.০০ রুপি

৫. বিবিধ শর্তসাপেক্ষ খরচ                                                                 ৫০০x৩ = ১৫০০.০০ রুপি

৬. পাঁচটা টাইপরাইটার কেনার বিধান                                                            ৫০০০x৩ = ১৫০০০.০০ রুপি

৭. সরকারী কর্মচারীদের অস্তিত্ব ভাতা (ব্লক বিধান)                                                                        ৩০০০০০.০০ রুপি

                                                                                                ————————————————————

                                                                                                                                            = ৩৩৬৮০০.০০  রুপি

                                                                                                                 ——————————————————

                                                                                                                                সর্বমোট = ৩৬৯৪০০.০০ রুপি

<003.033.081>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

সংযোজনী

১. কেন্দ্রীয় এলাকা

ক) প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতন                            ৯৫০৮ X ৩=রুপি       ২৮,৫২৪.০০

খ) দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতন                              ৫৩৭৫ X ৩=রুপি       ১৫,৯৭৫.০০

গ) তৃতীয় শ্রেণীর চাকুরেজীবিদের বেতন                                        ১০৪৮৩ X ৩=রুপি      ৩১,৪৪৯.০০

ঘ) চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরেজীবিদের বেতন                                           ১৯৩ X ৩=রুপি                 ৫৭৯.০০

২. উত্তর এলাকা

ক) প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতন                           ৮৭০০ X ৩=রুপি              ২৫,১৩০.০০

খ) দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তাদের বেতন                              ৫০০০ X ৩=রুপি              ১৫,০০০.০০

গ) তৃতীয় শ্রেণীর চাকুরেজীবিদের বেতন                                        ৪৬৫৭ X ৩=রুপি              ১৩,৯৭১.০০

ঘ) চতুর্থ শ্রেণীর চাকুরেজীবিদের বেতন                                           ১৫০০ X ৩=রুপি                ৪,৫০০.০০

৩. দক্ষিণ পশ্চিম এলাকা                                                                                                                     ১,০৫,০০০.০০

৪.  পূর্বাঞ্চল এলাকা                                                                                          ৬৯,০০০.০০                                                                                                                                                                                                 ৬৯০০০.০০

৫. উত্তর পূর্ব এলাকা

৬. নিয়োগের জন্যে বরাদ্দ                                                                   ১০০০০ X ৩=রুপি             ৩০,০০০.০

                                                                                                                                                                ৪,০৯,০৯৮.০০

শর্তসূচক ব্যয়

১. স্টেশনারী                                                                                         ৫০০ X ৩=রূপি                  ১,৫০০.০০

২.পি এন্ড টি                                                                                           ১,৫০০ X ৩=রুপি           ৪,৫০০.০০

৩.আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ঘর ভাড়া             ২,০০০ X ৩=রুপি          ৬,০০০.০০

৪. গাড়ির সারাই ও ভরণপোষণ                                                                                                          ৫,০০০.০০

৫. ভ্রমণ খরচ                                                                                        ২,৫০০ X ৩= রুপি         ৭,৫০০.০০

৬. জরুরী মূহুর্তের জন্যে সংরক্ষিত                                                                                                                  ১০,০০০.০০

৭.উত্তরাঞ্চলের ১৯৭১ সনের এপ্রিল ও মে মাসের বকেয়া                                                                               ৩৯৮৫.০০

৮. উপ-অঞ্চল কর্মকর্তারা                                                   ২৫,০০০ X ৩=রুপি        ৭৫,০০০.০০

                                                                                                                                                  রুপি=               ১,১৩,৪৮৫.০০

                                                                                                                                                সর্বমোট= ৫,২২,৫৮৩.০০

সংযোজনী

উপ-অঞ্চল কর্মকর্তা

১. উপ-অঞ্চল পরিচালকদের বেতন                                                                                                   ৫০০.০০

২. উর্ধ্বতন পরিচালকদের বেতন                                                                                                                      ৪০০.০০

৩.  স্টেনোগ্রাফারের বেতন                                                                                                                                 ২৫০.০০

<003.033.082>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

৮/ পরিবহন                                                                                                                                         ৩০০.০০

৯/ অফিস ভাড়া                                                                                                               ২০০.০০

১০টি সাব জোনাল অফিসের জন্য তিনটি                          ২৫০০.০০

(প্রতি জোনে দুইটি করে)

তিন মাসের খরচ হবে :

                                                       ২৫০০x১০x৩ রুপি                                     ৭৫০০০.০০ রুপি

পরিশিষ্টVI

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

১/ কর্মচারীদের বেতন

@ প্রতিমাসে ৬০০০.০০ রুপি x ৩                                                                                                    ১৮০০০.০০

(মেডিক্যাল, প্যারামেডিকেল ও নন মেডিকেল কর্মচারী বুঝানো হয়েছে)

২/ স্থাপনা ও আকস্মিক ঘটনাবলী ভাতা

@ প্রতিমাসে ২৫০০.০০ রুপি x ৩                                                                                     ৭৫০০.০০

৩/  পরিবহন ও যানবাহন রক্ষনাবেক্ষন খরচ                                                      ৩০০০.০০

@ ১০০০

৪/ অফিস ও মেডিকেল স্টোরের জন্য গোডাউন ভাড়া বাবদ

                                                                 ৪৫০০.০০

@ ১৫০০.০০ x ৩

৫/ বিভিন্ন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (মেডিক্যাল, প্যারামেডিকেল ও

নন মেডিকেল কর্মচারী) সরকারি কর্মচারীদের জন্য সরকারি

নিয়ম অনুযায়ী ভরণপোষণ ভাতা ও বেতন

৩০০ লোকের জন্য জনপ্রতি ২০০ রুপি করে মোট ৩০০.০০x২০০

                                                                                                 =    ৬০,০০০.০০ x ৩           ১,৮০,০০০.০০

 ( খরচ বাঁচানোর জন্য তিনজন স্টাফ কে প্রতিনিধি

করে অন্যত্র পাঠানোর প্রয়াস করা হয়েছিল। তবে তারা

ফেরত আসলে তাদের দায় আবার সংস্থার উপরেই বর্তাবে।

তাই বাজেটের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শর্ত আরোপকরা উচিত)

                                                                                                                                 মোট ২,১৩,০০০.০০

পরিশিষ্টVII

ত্রান অধিদপ্তর .

১/ রিলিফ কমিশনারের বেতন                                                                                    ৫০০x৩ = ১,৫০০

২/ ডেপুটি রিলিফ কমিশনারের বেতন                                                                             ৫০০ x ৩= ১,৫০০

৩/ স্টাফ অফিসারের বেতন                                                                                              ৫০০x৩ = ১,৫০০

৪/ দুইজন এসিস্ট্যান্টের বেতন                                                                           ৩০০x২x৩ = ১,৮০০

৫/ একজন একাউন্টেন্টের বেতন                                                                       ৩০০ x ৩ = ৯০০

৬/ স্টেনোর বেতন                                                                                                              ৩০০x৩ = ৯০০

৭/ টাইপিস্টের বেতন                                                                                                           ২৫০x৩ = ৭৫০

<003.033.083>

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রঃ তৃতীয় খন্ড

৮। দুই এম এল এস এস এর জন্য খরচ                                                    ১৫০ C ৩ = রুপি ৯০০

৯। রিলিফ অফিসের জন্য ব্লক বিধান 10,000.00 C                                          রুপি ৩০০০০০০

                                                                                                                             …………………………………

                                                                                                               মোট= রুপি  ৩০,০৯,৭৫০

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

প্রেস , প্রচার ও তথ্য সম্প্রচার দপ্তর

১। বেতন                                                                                                                          রুপি ১৭, ৭৭০

    টেপ @ 20 প্রতি মাসে

২। রুপি @ ৭৫/- প্রতি মাসে                                                                                              রুপি ১৫০০

৩। সংবাদপত্র বিল                                                                                                             রুপি ১০০

৪। ক্যাজুয়াল শিল্পী অন্তর্ভুক্ত না                                                                                                  রুপি ১০০০

৫। আসবাবপত্র ভাড়া                                                                                                       রুপি ২৫০

৬। যন্ত্র ক্রয়                                                                                                                  রুপি ১,৫০০

৭। স্টেশনারি                                                                                                                       রুপি ৩০০

৮। রক্ষণাবেক্ষণ/ জীপ                                                                                                    রুপি ১,৫০০

৯। বিবিধ ও জরুরী রিজার্ভ যেমন থার্ড ট্রান্সমিশন                                                                       রুপি ৩৫০০০ প্রতি মাসে

     বাড়ি ভাড়া, ড্রামা উৎপাদন,সম্প্রচার ঘন্টা বৃদ্ধি এবং

     অন্য কোন খরচ

ছয় মাসের ব্যয়ের টাকা রুপি ৩৫০০০ C ৬                                                                 রুপি ২,১০,০০০

( রুপিতে দুই লাখ দশ হাজার শুধুমাত্র)

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!