শিরোনামঃ ভুট্টোর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে
শেখ মুজিবের বক্তব্য।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তেফাক
তারিখঃ ১৬, ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১
আগুন লইয়া খেলিবেন নাগণতান্ত্রিক রায় নস্যাৎকামীদের প্রতি আওয়ামী লীগ প্রধানের হুশিয়ারীজাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগ পার্লামেন্টারী পার্টিসমূহের যৌথঅধিবেশনে এক নীতিনির্ধারণী ভাষণ দানকালে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুররহমান ফ্যাসিষ্ট পন্থা পরিহার করে গণতন্ত্রসম্মত পদ্ধতিতে সংখ্যাগুরুশাসন মেনে নিয়ে দেশের ঐক্য ও সংগতি বজায় রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলেরপ্রতি আহবান জানান।জনগনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ব্যবস্থা বানচাল করার উদ্দেশ্যে তৎপর গণতান্ত্রিক রায়নস্যাৎকারীদের প্রতি আগুন লইয়া খেলা হইতে বিরত থাকার জন্য তিনি কঠোরহুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, আমার ও ৬-দফার মোকাবিলার জন্য সমগ্র পশ্চিমপাকিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করার চক্রান্ত চলছে। জনগনের দেয়া অধিকারের বলে৬-দফার ভিত্তিতেই শাসনতন্ত্র রচিত হবে। সাতকোটি বাঙালীদের বুকের উপরমেশিনগান বসিয়েও কেহ ঠেকাতে পারবে না।
<2.154.641>
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
জাতীয় পরিষদে যোগদানের আহবান জানিয়ে নূরুল আমিনসহ উভয় অংশের নেতৃবৃন্দ | পাকিস্তান অবজারভার | ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ |
জাতীয় পরিষদেআসুন: সকলের প্রতি নুরুল আমিনেরআহ্বান
ভুট্টোর পক্ষাবলম্বনের নিন্দা
১৯৭১ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারিতে জনাবনুরুলআমিনএবংদুই অংশেরঅন্যান্যরাজনৈতিকনেতাদের বিবৃতি।
মঙ্গলবার পাকিস্তান ডেমোক্রেটিকপার্টির সভাপতি জনাবনুরুলআমিনজাতীয় পরিষদেরঅধিবেশনে যোগ দিয়ে কায়েদ-ই-আজমের প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান প্রণয়নকরতে দেশেরদুই অংশেরনির্বাচিত প্রতিনিধিদের আহবান করেছেন।
জনাবভুট্টোরপেশোয়ারেরবিবৃতির উপর এপিপিকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় জনাবনুরুলআমিন জানান; এটা দু:খজনকযেদুইসংখ্যাগরিষ্ঠদলের নেতা শেখ মুজিবএবংজেড এ ভুট্টো ঢাকায়সাম্প্রতিকআলোচনায়সংবিধানেরবিস্তৃতনীতির উপরআপোষেআসতেব্যর্থ হয়েছে, যদিও আলোচনা সঠিক ভাবে এগুচ্ছে বলেই সংবাদপত্রের প্রতিবেদন গুলো জনগণকে জানাচ্ছিল।
জনাবভুট্টোর জাতীয় পরিষদেরআসন্নঅধিবেশনে যোগ না দেবার সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র হঠকারী ও নোংরাই ছিল না, তা ক্ষমতারপ্রাথমিকস্থানান্তরের ভবিষ্যত নিয়েওজনগনের মধ্যেসন্দেহসৃষ্টিকরতেথাকে। তার দলেরলোকেদেরপূর্ব পাকিস্তানেদ্বিগুণজিম্মি হবার কল্পিতঅজুহাত ছিলঅত্যন্তআপত্তিকর।
“এটা এইঅঞ্চলের জনগণেরউপর একটি অযৌক্তিকঅপবাদ, পিপিপিচেয়ারম্যানএরমনোভাব, কম করে বললেও খুবই দুঃখজনক।”
লাহোর থেকে একটিবার্তায়যোগ করা হয়েছে: মঙ্গলবার জামায়াতেইসলামীর আমীর মাওলানা সৈয়দআবুলআলা মওদুদী জাতীয় পরিষদেরবাইরেসাংবিধানিকসমস্যারসমাধানের চেষ্টাকে অবৈধ বলে বর্ণনা করছেন এবং অধিবেশনে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন এবং এইভাবেএই সন্ধিক্ষণেএকটিসাংবিধানিকঅচলাবস্থাতৈরি হচ্ছে।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেমওদুদীবলেন, ঠিক হতো যদি ক্ষিপ্ত মনোভাব ত্যাগ করে জনগণের ভোটে নিবাচিত সকল প্রতিনিধিরা অধিবেশনে অংশ নিতো।
সকল ছোট ও বড় দলগুলোর মধ্যে যারা সংখ্যালঘু (সংসদে)তারা তাদের সংবিধানের জন্য তাদের নিজস্ব খসড়া উপস্থাপন করা উচিত নয়। একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দল তার খসড়া উপস্থাপন করবে এবং খসড়ার সকল অংশ হবে রাষ্ট্রেরইসলামীচরিত্রেরসাথেসাদৃশ্য রেখে। দেশেরসংহতি, গণতান্ত্রিক নীতি, সবঅঞ্চলে সম ও মৌলিকঅধিকার এবং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারগ্রহণ করা হবে এবং এই নীতিগুলোর পরিপন্থী অন্য সকল উপাদান অত্যন্ত জোরালো ও শক্তিশালীভাবে বিরোধিতা করা উচিত।
<2.154.642>
এবং যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলতারসংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চায়, তাহলে এটা পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, যদি এধরণের সংবিধান পাশও হয়, তা সফল হবে না আর সংখ্যাগরিষ্ঠ দলসেইফলাফলের জন্যসম্পূর্ণরূপেদায়ী থাকবে।
তিনি বলেন, বর্তমানেরজটিল পরিস্থিতি ১৯৬৮ সালের শেষের দিকথেকে ভোটের দিন পর্যন্ত সংঘটিতধারাবাহিকভুলেরফলাফল। এখনি সঠিক কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দেশের অস্তিত্ব ঝুঁকির মুখে পরার সম্ভবনা রয়েছে।
আতাউর রহমান
পাকিস্তান ন্যাশনাললীগেরপ্রধান, জনাব আতাউর রহমানখানজনাবভুট্টোরস্ট্যান্ডকে দেশবিভক্ত করারপদক্ষেপ (ষড়যন্ত্র)বলে অভিহিত করেন।
জনাবভুট্টোরজাতীয় পরিষদেরঅধিবেশনে যোগ দেওয়াএবংসংবিধানের ওপরআলোচনায় অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। যদি তারপ্রচেষ্টাব্যর্থ হতো, শুধুমাত্রতখন জনাবভুট্টোএই ধরনের একটি সিদ্ধান্তনিতে পারতেন, জনাব আতাউর রহমানখানবলেন।
সালাম খান
পূর্বপাকিস্তানপিডিপিরসাবেকপ্রেসিডেন্টজনাবআবদুস সালাম খান মনে করেন,জনাব ভুট্টোর জাতীয় পরিষদেরঅধিবেশনে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি বলেন, জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরেরউদ্দেশ্যেএবংএকটিসংবিধান প্রণয়নেরজন্যআসন্নজাতীয়পরিষদের অধিবেশনে জনাব ভুট্টো ও তার দলের নির্বাচিত সদস্যদের অংশগ্রহন হবে একটি বিজ্ঞ সিদ্ধান্ত।
……………
<2.155.643>
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
৬ দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র অনুমোদনের বিপক্ষে জনাব ভুট্টোর মন্তব্য | দ্য ডন | ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ |
আওয়ামী লীগের সঙ্গেআপসের কোন অবকাশ নেই
পাকিস্তান পিপলসপার্টি“হুকুমের” সংবিধান অনুমোদন করবে না,
১৯৭১ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারিকরাচিতেজনাবজুলফিকার আলী ভুট্টোরবিবৃতি
পাকিস্তান পিপলস পার্টিরচেয়ারম্যান জনাবজুলফিকার আলী ভুট্টো গতকাল পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, যদি দেশেরজন্যএকটি”টেকসই” সংবিধানপ্রণীতকরতেহয় তাহলে “এতে আমাদের সকলের হাত থাকতে হবে”।
করাচিতেদলের কেন্দ্রীয়কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদসম্মেলনে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে” ৩রা মার্চ থেকেঢাকায়শুরু হওয়াজাতীয় পরিষদেরঅধিবেশনে পিপলস পার্টির যোগ দেওয়া অর্থহীন।
তিনি বলেন, যেই সংবিধানে পিপিপির জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের বলার অধিকার নেই, শুধু মাত্র সেই সংবিধান অনুমোদনের জন্য তারা ঢাকায় যেতে পারেনা। তিনি বলেন যে পাকিস্তানেরপ্রতি ভারতেরবিবাদমানমনোভাবপশ্চিম পাকিস্তানেএকটি অস্বাভাবিকপরিস্থিতির সৃষ্টিকরেছে। লাহোরসীমান্তেও তৎসংলগ্নএলাকায় ভারতীয়সেনাদলের গতিবিধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষেএকটি”শক্তিশালী অবস্থান” নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতের রাজনৈতিকদলগুলো পরস্পরকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। মিস্টার ভুট্টো বলেন অতীতে এই ধরনের পরিস্থিতি ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের সুচনা করেছে। পরিস্থিতি শুধুমাত্র অভ্যন্তরেই সংকটপূর্ণ ছিল না বাহিরের দক্ষিণপূর্ব এশিয়ারউত্তেজনাও বিবেচনায় আনতে হবে, বিশেষকরে লাওস।
এইপরিস্থিতির আলোকেজনাবভুট্টোবলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দলেরনির্বাচিত ৮৫জন সদস্যের ঢাকায় যাত্রাএকটিসহজ ব্যাপারছিল না, বিশেষ করেদলেরনির্দিষ্টমতামতেরপরিপ্রেক্ষিতে। এই অবস্থায় দলের সদস্যদেরপ্রথমদায়িত্বতাদেরজনগনের সাথে থাকা, তিনি বলেন।
জনাবভুট্টোবলেন আজকেরমূল অবস্থানছিলযে, আওয়ামীলীগের বিবৃতি অনুযায়ীতারাছয়দফা কর্মসূচিতেকোন আপসকরবে না এবং সেটা ছিল তাদের “শেষ কথা ও সর্বশেষ অবস্থান”। তিনিবলেন, বাস্তবে, পতন অবশ্যম্ভাবী জেনেও পাকিস্তান পিপলস পার্টি অনেকদূর অতিক্রম করেছে।
তিনিবলেন, পার্টিশিক্ষার্থীদেরসবদাবিমেনে নিয়েছিল। এগারো দফার মধ্যে দশটি গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের এগারতম দফাটিই স্বয়ং ছয়দফা, তিনি যোগ করেন।
তিনি বলেনপিপলসপার্টিখুবশুরুতেইবলেছে যে,কোন মতামত সংবিধানের সাথে সমন্বিত না হলে তা সরিয়ে পদক্ষেপনেয়া হবে।
*******
<2.155.644>
জনাব ভুট্টোবলেন, তার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গেবোঝাপড়া ও কিছু পূর্বসম্মত মিমাংসা করার জন্যসর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু, এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও আলোচনার কোনো জায়গা নেই, তিনি যোগ করেন।
জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের সিদ্ধান্তে যারা আপত্তি জানিয়েছেন এবং পিপিপি সদস্যদের অধিবেশনে সাংবিধানিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করা উচিত বলে মনে করেন, পিপিপি নেতা তাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন যে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই ধরনের আলোচনা অধিবেশনে হত। সব সদস্যরা একসাথে সমর্থন জানাতো। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ছয়দফার উপর কঠোরভাবে টিকে থাকার ভাষণ দিচ্ছে ও তার উপর শপথ নিচ্ছে এবং বারবার শুধুমাত্র পার্টির ছয় দফা কর্মসূচির আওতায় শাসনতন্ত্র গঠনের অভিপ্রায় প্রকাশ করছে। তারা তার সঙ্গে আলোচনা করার সময়ওএ বিষয়ে তাদের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে প্রকাশ করছে।
এই পরিস্থিতিতে জনাব ভুট্টো বলেন, যদি পিপিপি সদস্যদরা ঢাকায় অধিবেশনে যোগ দিতে যেতেন এবং আওয়ামী লীগের সংবিধান অনুমোদন না করতেন তাহলে পূর্ব পাকিস্তানে কেন এসেছেন? এই মর্মে আওয়ামীলীগের কাছে থেকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতেন। “তারা কি আগে থেকেই সংবিধানের বিষয়ে আওয়ামীলীগের মতামত ও অভিপ্রায় জানেনা?”
এই পরিস্থিতিতে জনাব ভুট্টো বলেন,জাতীয় পরিষদের অধিবেশন একটি “কসাইখানায়” পরিণত হতো। এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
*******
আওয়ামীলীগের ছয়দফা প্রসঙ্গে জনাব ভুট্টো বলেন,বিদেশী বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের সংক্রান্ত বিষয়টি “সবচেয়ে কঠিন” ছিল।
*******
একটি প্রশ্নে জনাব ভুট্টো বলেন, পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত তার বিরুদ্ধে গিয়ে দলের সদস্যদের পদত্যাগ করা নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন না। এখনি পশ্চিম পাকিস্তানের ৮৫টই সিট খালি করে সেখানে উপনির্বাচন দিন, “সবগুলোই আমরা পুনরোদ্ধার করবো” তিনি বলেন।
১৯৬৯ সালের আইউব শাসনামলের সাথে এখনকার পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত, তাদের মধ্যে কোন সামঞ্জস্য ছিল কিনা এই প্রশ্নে; জনাব ভুট্টো বলেন, এখানে এক হবার মত কিছু উপাদান ছিল। অবশ্য তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আগের উপলক্ষ থেকে অনেক ভিন্ন ছিল। “গোল-টেবিল বৈঠকে, বাছাই করার মত কিছু উপাদান ছিল কিন্তু জাতীয় পরিষদে জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছিল।
পরিষদের অধিবেশনে যোগ না দেবার তার দলের যে সিদ্ধান্ত তা বর্তমান শাসকদের আশীর্বাদপুষ্ট বলে তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন “পর্দার অন্তরালে” তার (ভুট্টো) এবং অন্য কারো মধ্যে চুক্তির কোন প্রশ্নই ছিল না। তবে তিনি বলেন, সেটা আওয়ামীলীগ যারা প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার জাতীয় পরিষদের অধিবেশন ডাকার প্রশংসা করেছে।
……………………………
<2.156.645>
শিরোনাম | সুত্র | তারিখ |
বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলনকে কোন শক্তিই থামাতে পারবেন না বলে শেখ মুজিবের ঘোষণা | মর্নিং নিউজ | ১৮ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৭১ |
কোন শক্তিই আর বাঙ্গালীকে দাবায়া রাখতে পারবে না
১৭ই ফেব্রুয়ারী ১৯৭১ এ ঢাকায় শেখ মুজিবের বিবৃতি
আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান গতকাল শহীদ দিবসের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ছাত্র, চাকুরীজীবী সহ বাংলাদেশের মানুষ “শিখে গেছে কিভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে হয় এবং পৃথিবীর কোন শক্তিই আর তাদের অধীন করে রাখতে পারবেনা।
গতকাল সন্ধ্যায় ইঞ্জিনিয়ার ইন্সটিটিউটে ঢাকা নগর আওয়ামীলীগ কর্তৃক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদের স্মরনে আয়োজিত স্মরণসভায় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দেন।
আওয়ামীলীগ প্রধান, যিনি উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন; বলেন, আমাদের শহীদদের রক্ত আমাদের একতাবদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল এবং আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সচেতন হতে শিখিয়েছে। জীবন উৎসর্গ করতে না শিখলে কোন জাতি সফল হতে পারে না।
১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস স্মরণ করে শেখ মুজিব বলেন, এটা নিছক একটি ভাষা আন্দোলন ছিল না। এদেশের সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা আদায়ের প্রশ্নও এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বাঙালিদের এই সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা উপলব্ধি করতে সক্ষম হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। কেউ এমনকি বন্দুক দিয়েও তা বন্ধ করতে পারবে না, তিনি মনে করিয়ে দিলেন। কখনো ভুলবো না
তার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, যতদিন বাঙালি বেঁচে থাকবে ততদিন বাংলার সংস্কৃতি অব্যাহত থাকবে। “২১শে ফেব্রুয়ারি আমরা কখনো ভুলবো না”।
শহীদদের রক্ত যেন বৃথা যেতে না পারে, সে ব্যাপারে সচেতন হবার জন্য তিনি (আওয়ামী লীগ প্রধান) জনগণকে আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এএইচএম কামরুজ্জামান সহ আওয়ামীলীগের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ, যারা ঢাকায় উপস্থিত ছিলেন।
……………………………
<2.157.646-648>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার আহবানে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন | বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন | ২১ ফেব্রুয়ারি,১৯৭১ |
একাত্তরে একুশের ডাক
সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের পতাকা উর্ধে তুলিয়া ধরুন,স্বাধীন গনতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা
কায়েম করুন
বাংলা ভাষার উপর আক্রমণঃ
০ পূর্ব বাংলার বাঙালি জাতির জাতিসত্তা বিকাশকে রুদ্ধ করিবার জন্য পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সাম্রাজ্যবাদ,সামন্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি পুঁজির শোষণমূলক শাসনব্যবস্থার জাতীয় নিপীড়ন নীতির নগ্ন বহিঃপ্রকাশ।
ভাষা আন্দোলনঃ
- শোষক শ্রেণীর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণের প্রথম সচেতন ও বলিষ্ঠ প্রতিবাদ।
- বায়ান্ন-এর একুশ সেই প্রতিবাদের সক্রিয় ও সংগ্রামী রূপান্তর।
- এইদিনে জনতার সচেতন অংশ হিসাবে পূর্ব বাংলার ছাত্রসমাজ শোষকশ্রেণীর দালালদের আত্মসমর্পন ও আপোষকামী নীতির বেড়াজাল ছিন্ন করিয়া তুলিয়া ধরে সংগ্রামের পতাকা।
- নিজেদের নিয়োজিত করে শাসকগোষ্ঠী পরিচালিত সকল নির্যাতনের প্রত্যক্ষ মোকাবেলায়।
- হাসিমুখে মৃত্যুকে বরণ করিয়া সৃষ্টি করে জনগণের স্বার্থে আত্মবলিদানের মহান ঐতিহ্য।
বায়ান্ন-এর একুশ পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী দিন কিন্তু একাত্তরে আজওঃ
০ আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদ-সামন্তবাদ-আমলামুৎসুদ্দি পুঁজির স্বৈরাচারী এককেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পূর্ব বাংলার উপর নিষ্ঠুর জাতিগত নিপীড়ন অব্যাহত।
০ রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে “কাগুজে” “লোকভোলানো” অধিকারের শ্রুতিমধুর প্রতিশ্রুতির সোচ্চার ঘোষণা করা হইলেও বাস্তবে উহা “একজাতিতত্ত্ব” “রাষ্ট্রীয় সংহতি ও অখন্ডতার” বস্তাপচা বুলির বেড়াজালে আবদ্ধ।
০ বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি পরিপূর্ণ মর্যাদা পায় নাই। প্রতিমুহূর্তে তাহা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আক্রমণের সম্মুখীন।
০ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছাসের ১৫ লাখ বাঙালী নির্মম মৃত্যুবরণ করিয়াও পাইয়াছে নিষ্ঠুর উপেক্ষা ও অবমাননা।
০ আধা-ঔপনিবেশিক,আধা-সামন্তবাদী সমাজ ব্যবস্থায় কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত তথা গোটা বাঙালী জাতি পরিপূর্ণ ধ্বংসের মুখে।
০ জেলখানাগুলো রাজবন্দীতে ভরপুর।হুলিয়া মামলার বেড়াজালে অনেকে আবদ্ধ।জেল-গুলি-বেয়নেট আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী।
০ আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ চক্রান্ত পূর্ব বাংলার গভীরতর হইয়াছে।
আর অন্যদিকেঃ
০ বিগত নির্বাচনের পূর্ব বাঙালি জাতির বিভিন্ন শ্রেণী তাহার শ্রেণীগত মুক্তি ও স্বাধীনতার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা লইয়া যে “জয় বাংলা” ধ্বনির পিছনে সমবেত হইয়াছিল নির্বাচনোত্তরকালে বাঙালী ধনিক শ্রেণীর প্রতিনিধিরা শ্রেণীগত দুর্বলতা ও আপোষমুখী মনোভাব লইয়া সেই “জয় বাংলা” শ্লোগানকে “জয় পাকিস্তান” শ্লোগানে পরিণত করিতে চাহিতেছে।
০ পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির পতাকাবাহীদের ও সেই উদ্দেশ্যে পরিচালিত শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি জনতার বিপ্লবি সংগ্রামকে দমননীতির যাঁতাকলে নিস্পিষ্ট করিতে চাহিতেছে।
একাত্তরে একুশেতে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম নবতর সমস্যার সম্মুখীন
কেন এই ব্যর্থতাঃ
০ কারণ জনগণের সংগ্রামের মধ্যে ঢুকাইয়া দেওয়া শোষকশ্রেণীর রং-বেরং এর দালালরা পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির মূল প্রশ্ন শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী জনতার উপর শ্রেণী শোষন অবসানের প্রশ্নকে বারবার বাদ দিয়া গিয়াছে।
০ ভাষা আন্দোলন হইতে শুরু করিয়া বিভিন্ন গণ আন্দোলনকে ব্যবহার করা হইয়াছে মুষ্টিমেয় ধনিকশ্রেণীর লাভের ভান্ডার পূরণের জন্য ভোটের রাজনীতি,মন্ত্রীত্ব ও পার্লামেন্টের মাধ্যমে ক্ষমতার ভাগ বাটোয়ারার বাহন হিসাবে।
০ আর তাই সত্যিকার দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ নয়,শ্রমিক-কৃষক মেহনতী জনতার শ্রেণী সংগ্রাম বিচ্যুত বিকৃত ধাপ্পা পূর্ণ “জাতীয়তাবাদী” শ্লোগানে করিয়াছে জনগণকে বিভ্রান্ত।
০ শোষণব্যবস্থা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের বিরূদ্ধতা করিয়া তথাকথিত শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম ও নিয়মতান্ত্রিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ রাখিয়াছে জনগণের বিপ্লবী চেতনা।
পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তির সংগ্রাম বারংবার মিথ্যা রাজনীতির আবর্তে নিক্ষিপ্ত হইয়াছে।
একাত্তরে মহান একুশেতেঃ
০ পূর্ব বাংলার মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিতে হইবে যে,বাংলা ভাষার পরিপূর্ণ মর্যাদা লাভ তথা পূর্ব বাংলার উপর পরিচালিত নিষ্ঠুর শাসন ও শোষণের অবসান হইতে পারে একমাত্র জনগণের বৃহত্তর অংশ কৃষকের মুক্তির পতাকাকে দৃড়ভাবে উর্ধ্বে তুলিয়া ধরিয়া।
০ এই মুক্তি আসিতে পারে ভোটের রাজনীতি,মন্ত্রীত্বের লড়াই বা তথাকথিত আইনসভার “শাসনতন্ত্র” রচনা করিয়া নয়,শ্রমিকশ্রেণীর বিপ্লবী পার্টির নেতৃত্বে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের মাধ্যমে।
০ গ্রামাঞ্চলে কৃষকের শ্রেণীসংগ্রাম ও সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে সামন্তবাদী,জোতদারী,মহাজনী ব্যবস্থার উচ্ছেদসাধন ও শ্রমিকশ্রেণির নেতৃত্বে কৃষকের বিপ্লবী কর্তৃত্ব কায়েম করিয়া।
০ উহার পাশাপাশি শহরাঞ্চলে বিপ্লবী গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করিয়া।
০ মুক্ত গ্রামাঞ্চল দ্বারা শহর ঘেরাও ও অধিকার এবং সর্বোপরি সারা পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করিয়া।
আর এই লড়াই হইবে সশস্ত্র জনযুদ্ধের মহান বিপ্লবী পথে
এবার একুশে তাই শহিদদের স্মরণের সাথে সাথে সশস্ত্র কৃষি বিপ্লবের পতাকা উর্ধ্বে তুলিয়া ধরি।স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েমের শপথ গ্রহণ করি। |
পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন
<02.158.649-651>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার আহবানে বাংলা ছাত্রলীগ | বাংলা ছাত্রলীগ | ২১ ফেব্রুয়ারী,১৯৭১ |
‘স্বাধীন সার্বভৌম গণ-বাংলা’ কায়েম করো
মহান ৮ই ফাল্গুন(২১শে ফেব্রুয়ারী) উপলক্ষে
বাংলা ছাত্রলীগ এর ডাক
অতীতের সংগ্রামী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মহান ৮ই ফাল্গুন আবার আমাদের দ্বারা সমাগত।৮ই ফাল্গুন আমাদের জাতীয় জীবন ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ক্রান্তিলগ্ন।বরকত,সালাম,রফিক,জব্বার,রফিক,সালাউদ্দিন এমনি একদল অমিততেজা দুঃসাহসী যুবক বুকের তাজা খুনের বদলে রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি ও মর্যাদা সুনিশ্চিত করেছেন,আজ থেকে ১৯ বছর আগে এমনি এক রক্তক্ষরা ফাল্গুনে।সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার্থে এমনি আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত আর নেই।
সেই সুমহান ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার নিয়ে বাংলার ছাত্রসমাজ প্রতি বছরই এক স্মরণীয় দিনটিতে সবাক হয়ে ওঠে।শপথ নেয় দুঃসাহসের ।বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করে,আমরা বরকতের ভাই-আমরা সালামের ভাই।
কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলাকে সেই ইপ্সিত মর্যাদার আসনে সমাসীন করতে পেরেছি কি আমরা?৮ই ফাল্গুনের আনুষ্ঠানিক আতিশয্যের আড়ালে আমাদের অক্ষমতার,আমাদের ব্যর্থতার,আমাদের হীনমন্যতার যে কুৎসিত চিত্র মুখাবাদান করছে,তাকে উপেক্ষা করে এই আত্মপ্রবঞ্চনা আর কতকাল আমরা চালিয়ে যাবো?
ভাষা আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ের দুই দুইটি দশকেও আমরা আজো জীবনের সর্বস্তরে বাংলা চালু করতে পারি নি।এর চিতে লজ্জার বিষয় আর কি হতে পারে?
কিন্তু তার চাইতেও পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে,ভাষা আন্দোলনকে আমরা যেন কেবল বাংলা হরফে ব্যবহারেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি।আমরা ভুলে গেছি যে, বাংলা ভাষার উপর কায়েমী স্বার্থের হামলা ছিল মূলতঃ বাংলার সংস্কৃতি ও বাংগালী জাতির স্বাধীকার বিলুপ্তির বৃহত্তর ষড়যন্ত্রেরই একটি অংশ।
’৬৯ এর গণআন্দোলন ও ’৭০ এর নির্বাচনের আলোকে আজ সমগ্র জগতের কাছে বাংগালী জাতির স্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার চিরন্তন আকুতি পরিষ্কার হয়ে পড়েছে।এই পটভূমিতে ৮ই ফাল্গুন আজ বাঙালীর সামগ্রিক অধিকার তথা ‘জাতীয়তাবাদী, স্বাধীন, সার্বভৌম গণ-বাংলা’ গঠনের নবতর সংগ্রামের ডাক দিচ্ছে।
বাংলা ছাত্রলীগ সেই সংগ্রামেরই দৃপ্ত সারথী।বাংলার প্রতিতি ছাত্রছাত্রি সেই সংগ্রামের নিরভীক সোইনিক।তাই এবারকার ৮ই ফাল্গুনে আমাদের কন্ঠের তূর্যে ধ্বনিত হোক সেই অভয় মন্ত্রঃ জয় স্বাধীন বাংলা।
বরকত,সালাম,রফিক,জব্বার,সালাউদ্দীনের আত্মাকে সাক্ষী রেখে আমাদের দ্যর্থহীন ঘোষণা-
(১)অবিলম্বে সরকারী অফিস-আদালতে বাংলার মাধ্যমে কার্যনির্বাহের ব্যবস্থা কর,অন্যথায় বিদেশী ভাষা সংরক্ষণের যাদুঘরে,সরকারি অফিস-আদালতগুলো আমরা নিশ্চিহ্ন করে দেবো।
(২)ব্যবসায়ীক ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির নিকট আমাদের দাবী,কেবল সাইনবোর্ড পালটে গেলেই চলবে না,পরিপূর্ণভাবে বাংলার ব্যবহারে মন দিতে হবে; অন্যথায় তাদের এই মনোভাবকে আমরা বাংলার জনগণকে প্রতারণার প্রচেষ্টা হিসাবে ধরে নেবো।
(৩)শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলার মাধ্যমে সর্বস্তরে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র,সার্টিফিকেট ইত্যাদি এ বছর থেকেই বাংলা ব্যবহার করতে হবে।প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাও বাংলায় নিতে হবে।আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এ ব্যপারে যে কোন প্রকার শৈথিল্যের পরিণতি হবে ভয়াবহ।
(৪)আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য অটুট রেখে বাংলার সহজাত সংস্কৃতির বিকাশে মন দিতে হবে,বিদেশী ও পশ্চিম পাকিস্তানী পর্ণগ্রাফিক পুস্তক ও সিনেমার আমদানী বন্ধ করতে হবে।বাংলার মানুষ এ ব্যাপারে আর কোন দ্বিতীয় চিন্তার সুযোগ দিতে রাজী নয়।
(৫)আমাদের সর্বশেষ, কিন্তু সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দাবী-
শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের ও বিভিন্ন মানের বিদ্যায়তনগুলোকে একই মানে আনতে হবে।অর্থাৎ কিন্ডারগারটেন,মিশনারী,মন্টেশ্বরী,পাবলিক স্কুল,মডেল স্কুল ইত্যাদি সুবিধাভোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিলোপ ঘটিয়ে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সমপর্যায়ে এনে শ্রেণীহীন,সার্বজনীন ও গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশেষ সুবিধাভোগী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে ধ্বংস করে দেওয়ার ব্যাপারে জাগ্রত ছাত্র সমাজকে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ঘোষণা করতে হবে।
আল মুজাহিদ মোশাররফ হোসেন
সভাপতি সাধারণ সম্পাদক
বাংলা ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদ
এবারের ৮ই ফাল্গুন উপলক্ষে বাংলা ছাত্রলীগের কর্মসূচীঃ-
১৮ই মাঘ(১লা ফেব্রুয়ারী)ঃ বস্তী এলাকায় নিরক্ষর ছেলেমেয়েদের মধ্যে লেখাপড়ার জন্য বই,খাতা,পেন্সিল,শ্লেট বিতরণ।
২০ই মাঘ(৩রা ফেব্রুয়ারী)ঃ দেয়াললিপি,পোস্টার ও প্রচারপত্র বিলি।
২২ই মাঘ(৫ই ফেব্রুয়ারী)ঃ নিরক্ষর নাগরিকদের মধ্যে ভ্রাময়মাণ অবস্থায় অক্ষরজ্ঞান প্রদান।
২৬শে মাঘ(৯ই ফেব্রুয়ারী)ঃ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামফলক বাংলায় করার প্রচার অভিযান।
২৭শে মাঘ(১০ই ফেব্রুয়ারী)ঃ এবছর থেকেই শিক্ষার মাধ্যম বাংলায় করার জন্য শিক্ষা বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি পেশ।
৩০শে মাঘ(১৩ই ফেব্রুয়ারী)ঃঅফিস আদালতের নথিপত্র বাংলায় প্রবর্তন করার অভিযান।
১লা ফাল্গুন(১৪ই ফেব্রুয়ারী)ঃ বিকেল ৪ টায় রমনা পার্কে আলোচনা সভা ও গণমুখী সাহিত্যানুষ্ঠান ও গণসংগীতের আসর।
৩রা ফাল্গুন(১৮ই ফেব্রুয়ারী)ঃরাস্তার মোড়ে মোড়ে শিক্ষামূলক দেওয়াল পত্রিকা প্রকাশ।
৪ঠা ফাল্গুন(১৭ই ফেব্রুয়ারী)ঃ খন্ড মিছিল ও পথসভা।
৫ই ফাল্গুন(১৮ই ফেব্রুয়ারী)ঃমধুর ক্যান্টিনে সংগীত মিছিল।
৬ই ফাল্গুন(১৯ই ফেব্রুয়ারী)ঃ সন্ধ্যায় সংগীত মিছিল।
৭ই ফাল্গুন(২০শে ফেব্রুয়ারী)ঃ বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে বিকাল ৩-৩০ মিনিটে ছাত্র গণজমায়েত।
৮ই ফাল্গুন(২১শে ফেব্রুয়ারী)ঃ ভোর পাঁচটায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারী ও বেসরকারী ভবন এবং সংগঠনের কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন,প্রভাত ফেরী,ভোর ৬ টায় শহীদানদের মাজার জিয়ারত এবং কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও শপথ গ্রহণ।বিকাল ৩ টায় ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে বিরাট ছাত্রজনসভা ও সন্ধ্যায় গণ-সংগীতের আসর।
<02.159.652>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
শাসনতন্ত্র সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের ১৪-দফা দাবী | পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন | ২১ ফেব্রুয়ারী,১৯৭১ |
শাসনতন্ত্র সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের দাবী
গণস্বার্থ ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র কায়েম করুন
সংগ্রামী ভাই ও বোনেরা,
রক্তক্ষয়ী গণ-সংগ্রামের ফলে পাকিস্তানে প্রথমবারের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠীত হইয়াছে। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়া বর্তমানে প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু হিসাবে শাসন্তন্ত্রের ইস্যু সামনে আসিয়াছে।এই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন জনগণের স্বার্থে একটি পূর্ণ গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র কায়েমের জন্য সংগ্রাম করা বর্তমান মুহূর্তে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দেশপ্রেমিক কর্তব্য বলিয়া বিবেচনা করিতেছে।শাসনতন্ত্র সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের দাবি ছাত্র জনতার মধ্যে জনপ্রিয় করা ও উহা ব্যাখ্যা করা এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিকট উহা উপস্থিত করা সকল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীর কর্তব্য বলিয়া এই কাউন্সিল ঘোষণা করিতেছে।
শাসনতন্ত্র সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন মনে করে যে,পাকিস্তানের শাসনতান্ত্রিক সমস্যা স্থায়ী এবং গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানসম্মত সমাধান হওয়া প্রয়োজন।
তাই একটি বিজ্ঞানসম্মত,গণতান্ত্রিক ও জনগণের আশা-আকাংখার অনুরূপ শাসনতন্ত্র কায়েমের দাবীতে ছাত্রসমাজ সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হইবার জন্য এই কাউন্সিল আহবান জানাইতেছে।এই পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন শাসনতন্ত্র সুনির্দিষ্ট দাবি উত্থাপন করিতেছে।
এই কাউন্সিল গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র কায়েমের জন্য তীব্র গণসংগ্রাম গড়িয়া তোলার আহবান জানাইতেছে।
গণতান্ত্রিক শাসনতন্র রচনার পথ বাধাহীন করার জন্য এই কাউন্সিল LFO-র বিরুদ্ধে সংগ্রামের আহবান জানাইতেছে।
শাসনতন্ত্র সম্পর্কে দাবী
১। পাকিস্তানে কেন্দ্রে ও প্রদেশসমূহে ১৮ বৎসর বয়স্ক সকল নরনারীর প্রত্যক্ষ ভোতে নির্বাচিত পার্লামেন্টারী পদ্ধতির সরকার গঠন করতে হইবে।প্রতি ৪ বছর অন্তর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠান করিতে হইবে।
পার্লামেন্ট হইবে সম্পূর্ণ সার্বভৌম।দেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রাদেশিক গভর্ণরগণ হইবেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধানমাত্র।
২।পার্লামেন্টের উপর জনগণের প্রত্যক্ষ অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করিতে হইবে।এইজন্য প্রয়োজনমত নির্বাচিত সদস্যদের ফিরাইয়া আনার অধিকার জনগণের হাতে দিতে হইবে।
৩।জাতি-ধর্ম-বর্ণ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের চোখে সকল নাগরিকের সমান অধিকার দিতে হইবে।সকল ধর্মের স্বাধীনতা ও নাগরিকদের নিজ নিজ বিবেক অনুযায়ী ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হইবে।ধর্মের ব্যাপারে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ চলিবে না,তবে যে কোনরূপ সাম্প্রদায়ীকতা প্রচার বেআইনি করিতে হইবে।রাষ্ট্র হইবে ধর্মনিরপেক্ষ গণোতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র।
.160.655
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
প্রদেশিক গভর্নর ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বিশেষ বৈঠক | দৈনিক সংগ্রাম | ২৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ |
পিণ্ডিতে বিশেষ বৈঠক
রাওয়ালপিন্ডি, ২২শে ফেব্রুয়ারী (পিপাআই),- প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ এম. ইয়াহিয়া খান আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রেসিডেন্ট ভবনে সকল প্রদেশের গভর্নর ও সামরিক আইন প্রশাসকদের এক বিশেষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সরকারী সূত্রে একথা জানানো হয়েছে।
এই বিশেষ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে সহকারী প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল আবদুল হামিদ খান এবং প্রেসিডেন্টের প্রধান স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জি. এম. পীরজাদা উপস্থিত ছিলেন।
সরকারী ঘোষণায় আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু বলা না হলেও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্ত্রী পরিষদ বাতিল
রাওয়ালপিন্ডি, ২২শে ফেব্রুয়ারী (এপিপি/পিপিআই)- দেশের বর্তমান পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান আজ সোমবার সকাল থেকে মন্ত্রীপরিষদ বাতিল করে দিয়েছেন বলে গতকাল সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কেবিনেট সেক্রেটারিয়েট (কেবিনেট ডিভিশন) থেকে প্রচারিত এক ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিক্রিয়া
পিপলস পার্টির মুখপাত্র এবং জাতীয় পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্য জনাব আবদুল হাফিজ পীরজাদা গতরাতে বলেন, তাঁর দলের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করা হয়েছে।
পিপিআই পরিবেশিত এক খবরে প্রকাশ, বাতিল মন্ত্রীপরিষদের সদস্যরা তাদের নিজ নিজ শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার পূর্বে রাজধানীতে কয়েকদিন অবস্থান করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সাবেক মন্ত্রীদের কেউ আজ অফিসে যাননি। তাঁরা নিজ বাসভবনে অবস্থান করেন এবং মালপত্র গোছানোর ব্যাপারে ব্যস্ত ছিলেন।
…………………
<2.161.656-657>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
তৎকালীন রাজনৈতিক অবস্থার উপর পূর্ব পাকিস্তান কনিউনিস্ট পার্টির প্রস্তাব | পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি | ২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭১ |
রাজনৈতিক প্রস্তাব
নির্বাচনের গণরায় কার্যকরী করার প্রশ্নে আমাদের কর্তব্য
১। পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের পর জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অবিলম্বে বসিবে ইহাই সকল জনগণ আশা করিয়াছেন। এবং জনগণ ইহাও আশা করিয়াছেন যে, ঐ অধিবেশনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র রচিত হইবে, পার্লামেন্টারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হইবে এবং গণ-প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে দেশের শাসনভার হস্তান্তরিত হইবে। বিলম্বে হইলেও ৩রা মার্চ পরিষদের যে অধিবেশন আহবান করা হইয়াছে তাহা অনুষ্ঠিত হউক ইহাও জনগণের আশা। এই অধিবেশনে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নূন্যতম ভাবে ৬-দফা ও ১১-দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচিত হউক ইহাও আজ পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের দাবী।
২। কিন্তু জনগণের ঐসব আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে শাসকগোষ্ঠী ও দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল যাহারা পূর্বাপর গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের বিরোধিতা করিয়া আসিয়াছে তাহারাই আজ কতকগুলি চক্রান্ত করিতেছে। প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির নয়া নেতা পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ভুট্টোর বর্তমান ভূমিকার মাধ্যমে এই চক্রান্ত প্রকাশ পাইতেছে। ভুট্টো নানা প্রকার গণতন্ত্রবিরোধী ও অযৌক্তিক কথা তুলিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিভেদ ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করিতেছে। ক্ষমতাসীন শাসকচক্রের ভূমিকাও এক্ষেত্রে অনিশ্চিত থাকিয়া যাইতেছে।
৩। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিবে কি বসিবে না, গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণীত হইবে কি হইবে না, প্রণীত হইলে উহা প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাভ করিবে কি করিবে না এবং জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরিত হইবে কি হইবে না- এই সমস্ত বিষয়ে একটা গভীর অনিশ্চয়তা বিরাজ করিতেছে। অন্যদিকে কিছু উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদী তথাকথিত স্বাধীন পূর্ব বাংলার নামে অবাঙ্গালীবিরোধী জিগির তুলিয়া এবং মওলানা ভাসানী স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়াজ তুলিয়া জনগণের মনে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণবিরোধী মনোভাব গড়িয়া তুলিয়া অবস্থাকে আরও জটিল ও ঘোরালো করিয়া তুলিতেছে।
৪। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা দাবী করিতেছে যে, জনগণের উপরোক্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন ও নির্বাচনে জনগণের রায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্ট কর্তৃক ঘোষিত ৩রা মার্চ তারিখে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসিতেই হইবে এবং উহার কোরাম পূর্ণ হইলেই ঐ বৈঠককে আইনসিদ্ধ বলিয়া গণ্য করিতে হইবে। জাতীয় পরিষদের এই বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হউক। এক্ষেত্রে আমরা দাবী করি যে, পাকিস্তানের জাতিসমূহের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃতি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকারের স্বীকৃতি সম্বলিত গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা হউক। এই পরিষদ যে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করিবে প্রেসিডেন্টকে তাহাই অনুমোদন করিতে হইবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করিতে হইবে।
৫। কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তে পরিষদের অধিবেশন যদি না বসে, যদি শাসনতন্ত্রে প্রণয়ন করিতে না দেওয়া হয়, যদি গৃহীত শাসনতন্ত্রে প্রেসিডেন্ট সম্মতি প্রদান না করেন বা কোন না কোনভাবে গৃহীত শাসনতন্ত্র নস্যাৎ করা হয়, তথা যদি জনসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও নির্বাচনের গণরায়কে বানচাল করা হয় তাহা হইলে পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির জনগণকে সমগ্রভাবে ও নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনের রায়ের মর্যাদা রক্ষার জন্য তথা গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের দাবী প্রতিষ্ঠানের জন্য সংগ্রামের আহবান জানাইতে হইবে। সারা পাকিস্তানে এই সংগ্রামের ফলে পাকিস্তানের জন্য একটা গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবী অর্জিত হইতে পারে- এরূপ সম্ভাবনা আছে।
বর্তমানে নির্বাচনের রায়কে কার্যকরী করিতে না দেওয়া হইলে পূর্ব বাংলায় আন্দোলন এই অঞ্চলে একটা পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে যাইতে পারে। পূর্ব বাংলার বুর্জোয়া জাতীয়বাদীরা জনগণের এই সংগ্রামকে অবাঙ্গালী জনগণবিরোধী খাতে প্রবাহিত করিতে প্রয়াসী হইতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বাংলায় আমাদের কর্তৃব্য হইবে, বাঙ্গালীদের জাতীয় আত্মনিয়ন্ত্রণের নীতি অনুসারে জনগণের এই সংগ্রামে আমাদের শরীক থাকা এবং ঐ নীতির ভিত্তিতে সমস্ত গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করিয়া এই সংগ্রামকে সঠিক গণতান্ত্রিক পথে পরিচালিত করিতে প্রচেষ্টা করা। এই ক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার জনগণকে বুঝাইতে হইবে যে, এই সংগ্রাম পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির জনগণ ও অবাঙ্গালী জনগণের বিরুদ্ধে নয়। বরং ইহা পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণের সমশত্রুসাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এবং এই সংগ্রাম সারা পাকিস্তানের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতির জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অঙ্গ। এই সংগ্রামে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের সহযোগিতা ও সমর্থন চাই এবং তাহাদের জাতীয় অধিকার ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম আমরা সমর্থন করি। এই সংগ্রামের সফলতার জন্য উগ্র বাঙ্গালী জাতীয়বাদের অবাঙ্গালী জনগণ বিরোধী পাকিস্তানের জনগণ বিরোধী জিগিরের মুখোশও আমাদের খুলিয়া দিতে হইবে।
পরিশেষে আমাদের অবশ্যই মনে রাখিতে হইবে যে, এই সংগ্রাম জাতীয় গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সম্মুখে রাখিয়া আমাদের প্রচেষ্টা হইবে এবং সংগ্রামকে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুঁজির তথ্য দেশী-বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীলদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে পরিচালিত করা।
৬। আমাদের উপরোক্ত বক্তব্য জনসাধারণের সম্মুখে পূর্ণভাবে উপস্থিত করিতে হইবে। *[1]