You dont have javascript enabled! Please enable it! পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ বই বাতিলের দাবীতে ছাত্র জমায়েত - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
‘পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি’ বই বাতিলের দাবীতে ছাত্র জমায়েত স্কুলছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ৫ আগস্ট, ১৯৭০

পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টিবই বাতিল ও শিক্ষা সমস্যা সমাধানের দাবীতে ৬ই আগস্ট বৃহস্পতিবার বালা ১১টায় শহীদ মিনারে ছাত্র জমায়েত

সংগ্রামী ভাই-বোনেরা,

দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের দেশের ছাত্রসমাজ শিক্ষাজীবনের সংকট দূর করে একটি সার্বজনীন সুলভ, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও বৈজ্ঞানিক শিক্ষাব্যবস্থার দাবীতে সংগ্রাম করছে। কিন্তু স্বাধীনতার ২৩ বৎসর পরও আমাদের ন্যায্য দাবী পদদলিত। আজ পর্যন্ত কোন সরকারই শিক্ষা ব্যবস্থা সমস্যার সমাধান করে নাই, উপরন্তু বিভিন্ন সময়ে নতুন নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। শিক্ষার বিস্তারের জন্য ছাত্রসমাজ ছাত্রদের উপর থেকে সিলেবাসের বোঝা কমিয়ে একটি বৈজ্ঞানিক সিলেবাস প্রবর্তনের দাবী জানিয়েছে। কিন্তু কোন সরকারই আমাদের কথায় কান দেয় নাই, বরং সিলেবাসের বোঝা দিন দিন অবৈজ্ঞানিকভাবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সম্প্রতি স্কুলের নবম ও দশম শ্রেণীর ছাত্রদের উপর “পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” বইটি চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। সিলেবাসের এই নতুন বোঝার দ্বারা সুকৌশলে শিক্ষার বিস্তারকে রোধ করার প্রচেষ্টা চালান হচ্ছে। অন্য দিকে এই বই-এ আন্তভূর্ক্ত বিভিন্ন সাপ্রদায়িক ও বিকৃত তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ছাত্র সমাজকে সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। মুখে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টিচাপিয়ে দেওয়ার জন্য বিজ্ঞান ছাত্রদের প্র্যাকটিক্যাল শিক্ষার সময় ও সুযোগ সীমিত করে দিয়েছে। সরকারের এই তোগলোক নীতির ফলে সমস্ত দেশের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবনে এক চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ছাত্রদের স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভের ফলে সরকার এই বই- এর দ্বিতীয় অংশ বাতিল করলেও আজও ছাত্রদের মাথায় বাধ্যতামূলকভাবে চাপিয়ে রেখেছে এই বই-এর প্রথম অংশটি।

এ ছাড়াও, ভর্তি সমস্যা, পর্যাপ্ত স্কুল কলেজের অভাব, জগন্নাথ কলেজসহ প্রদেশের বিভিন্ন কলেজকে প্রাদেশিকীকরণজনিত সমস্যা, হল-হোস্টেলের অভাব, ডাইনিং হল সমস্যা, অতিরিক্ত ফুডচার্জ প্রভৃতি বিবিধ সমস্যা ছাত্রদের শিক্ষাজীবনে সংকট করে চলেছে। শিক্ষাজীবনের এই সংকট দূর করার জন্য এবং গণমুখী শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ছাত্রসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে দুর্বার সংগ্রামের পথে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ছাড়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় না। আসুন, শিক্ষার সংকট মোচনের জন্য, গণমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য এবং “পাকিস্তান দেশ ও কৃষ্টি” বই বাতিল করার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামের পথে অগ্রসর হই।

বন্ধুগণ,

তাই আসুন আগামী ৬ই আগস্ট বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জমায়েত ও বিক্ষোভ মিছিলকে সাফল্যমন্ডিত করিয়া তুলি।

স্কুলছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কতৃক আহূত

                                              ও

পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন সমর্থিত।

<2.122.544-545>

ডিসেম্বরে পেছালো নির্বাচনঃ

কারন বন্যা

 

ঢাকা, আগস্ট১৫:

পূর্ব পাকিস্তানের নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, আজ প্রেসিডেন্ট জেনারেল এ এম ইয়াহিয়া খান ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিতব্য দেশব্যাপী সাধারণ নির্বাচন আগামী ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেছেন।জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের নতুন তারিখ ৭ ডিসেম্বর এবং প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন ১৯ ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট তার এক বক্তব্যে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্তকে পূর্ব পাকিস্তানের নজিরবিহীন বন্যা পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে উদ্ভুত নানা বিষয় “অতীব সতর্ক বিবেচনার পর” গৃহীত বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচন পাকিস্তানের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এ জন্য নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়। অবস্থাদৃষ্টে, নির্বাচন স্থগিত করা ব্যাতিরেকে এটা নিশ্চিত করা সম্ভবপর ছিল না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন, নির্বাচনকাজ পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল অংশ এখন বন্যা ত্রান কাজের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পুরোপুরি ব্যাস্ত থাকবে এবং বাস্তবিকপক্ষেই প্রাদেশিক সরকারের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ের সবাই মাসব্যাপী ত্রাণকাজ পরিচালনায় সম্পৃক্ত থাকবে।কাজেই, প্রশ্ন ছিল ত্রাণকাজ ও নির্বাচনকাজ এদু’য়ের মধ্যে অপেক্ষাকৃত জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বেছে নেয়ার। প্রেসিডেন্ট জানান যে, সিদ্ধান্ত গ্রহনের সময় সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষের দুর্দশা লাঘবের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে তার বিন্দুমাত্র দ্বিধা কাজ করে নি। বন্যার পানি হয়তো অচিরেই নেমে যেতে শুরু করবে কিন্তু সেপ্টেম্বরে ২য় বারের মতো বন্যার সম্ভাবনা থেকেই যাবে। এহেন অনিশ্চয়তাময় পরিস্থিতিতে ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হবে কিনা, তা ধারনা করাও অসম্ভব ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।এমতাবস্থায়, জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ন্যূনতম প্রতিবন্ধকতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারিখ এভাবে পেছানো আবশ্যক হয়ে পড়েছিলো।

পূর্বনির্ধারিত তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানে অসুবিধা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া বলেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে বাস্তবিকপক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত অংশকে ব্যাবহার করতে হবে। বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন কাজ করতে হবে। সাব-ডিভিশনাল অফিসার ও সার্কেল অফিসারদের রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনী কেন্দ্র স্থাপন সহ প্রয়োজনীয় নানা পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে। কিন্তু যে অংশ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করার কথা, তারা বর্তমানে খাদ্য ও ত্রাণ প্রদানের অতীব গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। প্রেসিডেন্ট আরও বলেন যে, জনসাধারণের একটি বিশাল অংশকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে হবে। এটাও নিশ্চিত নয় যে তারা নির্ধারিত দিনে ভোটদানের জন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় উপস্থিত হতে পারবে কিনা। ব্যাপক মহামারীর প্রাদুর্ভাবের সম্ভাবনা বিশাল এবং এটা যাতে ছড়িয়ে না পরে সেজন্য সবকিছু করা হবে। এসবকিছু করতে গেলে ৫ অক্টোবর নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যায়।