শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
‘আসন্ন নির্বাচন হবে স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে গণভোট’- শেখ মুজিবুর রহমান | দ্য ডন | ৮ জুলাই, ১৯৭০ |
শেখ মুজিব বললেন, কোনো শক্তি পাকিস্তান ধ্বংস করতে পারবে না
“ইসলাম বিপন্ন” একটি রাজনৈতিক ভাওতাবাজি
আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু
ঢাকা , জুন ৭:আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান আজ উল্লাসের সাথে ঘোষণা করেছেন যে পাকিস্তান থাকবে এবং এমন কোন শক্তি নাই যে পাকিস্তানকে ধবংস করতে পারে ।
আজ বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে মুষলধারে বৃষ্টির মধ্যে বিশাল এক জনসভায় শেখ বারবার বলেন ইসলাম পাকিস্তানের এই পবিত্র ভূমিতে কখনো বিপদে ছিল না এবং তাদের আক্রমণ করলেন যারা “ইসলাম বিপন্ন” এই ঠুনকো অজুহাতে মায়াকান্না দিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত ।এছাড়াও তিনি বলেন যে অতীতেও ১৯৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তানে নির্বাচনের সময় একটি বিশেষ মহলের মাধ্যমে এই ধরনের হুজুগে গুজব ছড়ানো হয়েছিল যৌথ নির্বাচকমন্ডলী প্রশ্নে , কিন্তু সন্দেহাতীত ভাবে এটা প্রমানিত হয় যে “ইসলাম বিপন্ন” কেবলই ছিল এক রাজনৈতিক চমকবাজি ।
১৯৬৬ সালের ৭ই জুন আইয়ুব শাসনামলে পুলিশের বুলেটে ধরাশায়ী হওয়া কয়েকজন ব্যক্তির স্মরণে আজকের জনসভা আওয়ামীলীগ দ্বারা আয়োজিত হয়। বৈরী আবহাওয়া এবং অঝোর বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও হাজার হাজার উৎসুক জনতা আজকের একমাত্র বক্তা শেখের বক্তব্য শোনার জন্য সভায় বসে ছিল । বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দুরদুরান্ত থেকে মানুষ মিছিল নিয়ে পায়ে হেটে , বাসে , লঞ্চে এবং ট্রেনে করে এসেছিল।তারা ছয় দফা দাবির স্লোগান দিল এবং জয় বাংলা স্লগানে আকাশ বাতাস মুখরিত করল। পশ্চিম পাকিস্তানি আওয়ামীলীগ নেতারা যারা গতকাল সেশ হওয়া সমগ্র পাকিস্তান আওয়ামীলীগের কাউন্সিল সভায় যোগদান করতে এসেছিলেন তারাও মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
শেখ মুজিব আক্ষেপ করেন যে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ভবিষ্যৎ সরকারের পরিকল্পনা তৈরী করার জন্য রেখে দেয়া উচিত এই মর্মে তার দলের দাবি সত্ত্বেও বর্তমান সরকার দ্বারা ঘোষিত হয়েছে । তিনি ঘোষণা করেন যে চতুর্থ পরিকল্পনা বাদ দেয়া হবে এবং পুনরায় করা হবে যখন নির্বাচনের পর নতুন সরকারের অভিষেক ঘটবে ।
আওয়ামীলীগ প্রধান যাকে প্রায়ই বঙ্গবন্ধু (বাংলার বন্ধু ) অভিধায় অভিহিত করা হয় , আজকের জনসভায় বলেন যে আসন্ন নির্বাচন হবে স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে গণভোট – যে জনগণ ছয় দফার ভিত্তিতে স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিল কিনা ।
শেখ আজ থেকে তার দলের নির্বাচনী ক্যম্পেইন ঘোষণা করলেন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলার “মীরজাফরদের” জনগণকে “শেষ” করতে বললেন এবং নির্বাচনের সময় তাদের বাক্স খালি গিয়েছিল এটাদেখাতে বললেন।
<2.118.533>
এজেন্সি প্রতিবেদনের আরও বলা হয়ঃ
আওয়ামীলীগ প্রধান বলেন যে ,সম্প্রতি ঘোষিত চতুর্থ পরিকল্পনা’র বণ্টন থেকে , এটা প্রতীয়মান হয় যে পূর্ব পাকিস্তান তার জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রাপ্য ৫৬ শতাংশ ভাগ পায়নি। “ বণ্টন যদি ঠিকমত না হয় তবে
আপনারা কিভাবে এই বৈষম্য দূর করবেন ?” এই প্রশ্ন উত্থাপন করেন তিনি ।
জনসভায় আরো বলা হয় জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পুনরায় করতে হবে এবং প্রয়োজনে প্রতি ক্ষেত্রে পুনরায় পরিবর্তন করবে যাতে সাংবিধানিক ধারা অনুযায়ী প্রত্যেক ফেডারেল সরকারের পূর্ণ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষমতা দিয়ে বিনিয়োগের কথা বলা হয় ।
সভায় তৃতীয় পরিকল্পনা ব্যয়ে পূর্ব পাকিস্তনের জন্য ১১০০ কোটি রুপি ঘাটতির কথা বলা হয় এবং পূর্বের সব পরিকল্পনা ব্যয়ের ঘাটতি পূরণের জন্য জোরাল ভাবে সুপারিশ করা হয়।এতে বলা হয় যে কোন বার্ষিক পরিকল্পনা যথার্থ হবে না যদি না পূর্বের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হয় ।
শেখ মুজিব মনে করিয়ে দেন যে অতীতে পূর্ব পাকিস্তানকে কীভাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং কীভাবে বিভিন্ন সরকারের দ্বারা জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা বর্ণনা করেন ।
আওয়ামীলীগ প্রধান বলেন যে তার দলের সংগ্রাম হল এমন একটি সমাজ তৈরি করা যা হবে শোষণমুক্ত , শোষণকারী মুক্ত এবং কঠোর পরিশ্রমী কৃষক এবং শ্রমিককে শোষণমুক্ত করা ।
ছয়দফা দাবির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন এটি কোনভাবেই পাকিস্তানের ক্ষতি করবে না । “ ছয়দফা দাবি বাস্তবায়িত হবে এবং পাকিস্তানও থাকবে ” , বজ্রকন্ঠে তিনি বলেন ।
Deep-laid Conspiracy
সুগভীর ষড়যন্ত্র
শেখ মুজিব উল্লেখ করেন যে, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরো অবনতি ঘটছিল এবং দেশের অর্থনীতিকে অসাড় করে দেওয়ার জন্য কলকারখানা গুলো বন্ধ করার এক গভীর ষড়যন্ত্র চলছিল।১৯৫৪ সালের আদমজী জুটমিল দাঙ্গার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানেও জনগণের কাছে ক্ষমতার পূর্ণ স্থানান্তর রোধ করার জন্য নৈরাজ্য ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে অনুরূপ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তিনি আদমজী জুটমিলের সাম্প্রতিক অবসানের কথা উল্লেখ করেন এবং অবিলম্বে পুনরায় চালু করার দাবি জানান।
আওয়ামীলীগ প্রধান বলেন তার দল ক্ষমতায় আসার জন্য উদগ্রীব নয় ,কারণ তারা বিশ্বাস করে ক্ষমতা ছাড়াই মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা যায়। একই সাথে তিনি তার দলের পূর্বের একটি দাবির কথা বলছিলেন যাতে ছিল জনগোষ্ঠীর উপর ভিত্তি করে পশ্চিম পাকিস্তান বিভক্ত করা , যা শেষ পর্যন্ত ফলপ্রসূ হয় ।তিনি তাদের বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পথে সংগ্রামের কথাও উল্লেখ করেন ।
শেখ মুজিব বলেন যে তার দলের সংগ্রাম ছিল দেশে “শ্রমিক এবং কৃষকদের” শাসন প্রতিষ্ঠা করা।তিনি বলেন তাদের ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভুমি রাজস্ব মউকুফের দাবি আংশিক নিরূপিত হয়েছে , যখন এটা জানা গেল যে সরকার ৯ বিঘা পর্যন্ত অনুরূপ মউকুফ অনুমোদন করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন আওয়ামীলীগ এর ইশতেহারে শিল্পকারখানায় শ্রমিকদের হিস্যার ওয়াদা করেছে ।
<2.118.534>
জনসভার এক পর্যায়ে যখন শেখ মুজিব সবাইকে জিগ্যেস করেন যে তার দলের ছয়দফা দাবির ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের বাস্তবায়ন চায় কিনা, যদি তারা শ্রমিক এবং কৃষকদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় , যদি সর্বোপরি তারা মানুষ হিসেব বাচতে চায় , বিপুল জনতা হাত তুলে তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করে।
শেখ তার ভাষায় জামায়াতে ইসলামকে অনুযুক্ত করেন তাদের পূর্ব পাকিস্তান বিরোধী ভুমিকার জন্য এবং ইসলামের নামে দ্বিধাদ্বন্ধ তৈরি করে এই প্রদেশের জনগণকে তাদের বৈধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার চেস্টা করার জন্য ।তিনি দৃঢ়তারসঙ্গে বলেন যে পূর্ব পাকিস্তানে মাওলানা মউদুদী’র দলের লোকেরা ভাড়াটে দালাল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানকে যারা শোষণ করে দৌলত কামিয়েছে তাদের স্বার্থ সিদ্ধি করছে । আওয়ামীলীগ প্রধান আরও সমালোচনা করেন খান আবদুল কাইয়ুম খান , নওয়াবজাদা নাসরুল্লাহ , চৌধুরী মোহাম্মদ আলী এবং আতাউর রহমান খান প্রমুখদের ।এছাড়াও তিনি জনাব নুরুল আমিনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ভূমিকার নিন্দা করেন , ভাষা আন্দোলনের সুনির্দিষ্ট নজির সহ ।
আসন্ন নির্বাচন ছয়দফা দাবির উপর গণভোট হিসেবে গণ্য করা যাবে না , জনাব নুরুল আমিনের এই পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে শেখ মুজিব বলেন, অবিভক্ত ভারতে যখন “জনাব গান্ধী এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতারা ভারত বিভাজনের বিরোধিতা করেছিলেন , মুসলমানরা গণভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানকে বেছে নিয়েছিল ”।
তিনি বলেন যে এই দেশের জনগণ একাই দেশের সংবিধান গঠন করতে পারে এবং একজন ব্যক্তি নির্দেশে গঠিত কোন সংবিধানই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
আওয়ামীলীগ প্রধান তীব্র প্রতিবাদ করে বলেন যে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই “জনগণের পক্ষে সংবিধান গঠন করার একমাত্র উপযুক্ত”।
এই প্রসঙ্গে তিনি অতিসত্বর লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক অর্ডার এর আর্টিকেল ২৫ এবং ২৭ সংশোধন করে সংবিধান প্রণয়নের একমাত্র সর্বোচ্চ সংস্থা হিসেবে সংসদকে প্রতিষ্ঠা করতে আরো একবার প্রেসিডেন্টকে প্ররোচিত করেন।
শেখ মুজিব তদেরকে সতর্ক করেছেন যারা একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেস্তায় লিপ্ত । তিনি বলেন যে জনগণ ভালর জন্য রক্ত বিসর্জন দিতে শিখে নিয়েছে এবং তারা নির্বাচন নস্যাৎ করার সকল অপচেষ্টা রুখে দিবে। “ইতিহাস থেকে শিক্ষা নাও” , তিনি তাদের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন যে নির্বাচন বিরোধী শক্তিরা মিরপুর , মোহাম্মদপুর , পোস্তগোলা , খুলনা এবং অন্যান্য অনেক জায়গায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে । শেখ ঘোষণা করেন যে কারো কাছেই পাকিস্তান ভাঙ্গার ক্ষমতা নেই এবং জনগণই রক্ষা করবে যরা পকিস্তান অর্জন করেছিল । তারা তাদের অবশ্যপ্রাপ্য অধিকার আদায়েও সচেষ্ট হবে , তিনি যোগ করেন ।
শেখ মুজিব শ্রোতাসাধারণকে মনে করিয়ে দেন যে আইয়ুবশাসন ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছিল এবং জনগণকে অসাধারণ ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য । তিনি জনগণকে প্ররোচিত করেন আসন্ন সুবিবেচনাপ্রসূত তাদের ভোটাধিকারের সুবিবেচনাপ্রসূত সদ্ব্যবহার করতে যাতে অতীতে যারা তাদের সাথে বেঈমানি করেছে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয় ।
<2.119.535-536>
শিরোনাম | সূত্র | তারিখ |
ছাত্রলীগ আহূত জরুরী সভার প্রস্তাবাবলী | পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সার্কুলার | ২৩ জুলাই, ১৯৭০ |
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের ২২ এবং ২৩শে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত জরুরী সভার প্রস্তাবাবলী
শোক প্রস্তাবঃ
আফ্রো-এশিয়ার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মহান শিক্ষাগুরু, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদবিরোধী আন্দোলনের পুরোধা, আধুনিক ইন্দোনেশিয়ার জনক “বাংকার্নো”, বৃহৎ শক্তি জোটবহির্ভূত তৃতীয় জোটের জনক, নয়া উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের শিকার ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডঃ আহমদ সুকার্নোর মহাপ্রয়াণে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের অদ্যকার এই সভা গভীর শোক প্রকাশ করিতেছে এবং তাঁহার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করিতেছে।
রাজনৈতিক প্রস্তাবঃ
এই সভা গভীর উদ্বেগের সহিত দেশের রাজনৈতিক অবস্থার ক্রম-অবনতি লক্ষ্য করিতেছে। আগামী সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশবাসী যখন গভীর আগ্রহের সহিত নির্বাচনে সহায়ক সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার আশা করিতেছিল, ঠিক সেই মুহুর্তে সরকার কতৃক ছাত্র, শ্রমিক এবং রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীদের উপর সরকারী নির্যাতন ও নিষ্পেষণের খড়গ নামিয়া আসিয়াছে। ব্যাপকহারে সামরিক আইনের অপপ্রয়োগ ঘটাইয়া ছাত্র-শ্রমিক রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীবৃন্দকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হইতেছে। অধিকার এবং রুটি-রুজির দাবী তুলিয়া শ্রমিক পাইতেছে কারাদণ্ড-বেত্রদণ্ড, গুলি, বেয়নেট; খাদ্য ও কর মওকুফের দাবী তুলিয়া কৃষক পাইতেছে চরম নির্যাতন, মেহনতী জনতা বাঁচার নূন্যতম অধিকার চাহিয়া নিষ্পেষিত হইতেছে। সাম্প্রতিককালে ঢাকায় ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ধর্মঘটজনিত পরিস্থিতি, সিদ্ধিরগঞ্জের পাওয়ার স্টেশনের শ্রমিকদের শাস্তিদান সম্পর্কিত পরিস্থিতি , গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পুরোধা এবং জননেতা এম, এ আজীজের গ্রেফতারজনিত পরিস্থিতি দেশের জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের সঞ্চার করিয়াছে। এই সভা মনে করে যে দেশের ছাত্র-কৃষক-শ্রমিক-মেহনতী জনতা এবং রাজনৈতিক নেতৃ ও কর্মীবৃন্দের উপর এই নির্যাতনে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নীরব দর্শক হইতে পারে না। যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ দেশের আপামর জনগণের উপর যে কোন মহলের চক্রান্তকে নস্যাৎ করিয়া দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় বদ্ধমূল। এবং যেহেতু সরকারী নির্যাতন এই গণতান্ত্রিক সরকার গঠন তথা নির্বাচনের সহায়ক গণতান্ত্রিক পরিবেশ গঠনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
উপরোক্ত কারণে এই সভা সরকারের নিকট আগামী ৩১শে জুলাই, ১৯৭০ তারিখের মধ্যে সর্বপ্রকার নির্যাতনমূলক পথ প্রত্যাহার করিয়া নিম্নলিখিত দাবীগুলি পূরণের জোর দাবী জানাইতেছেঃ
(১) জননেতা এম, এ, আজীজ, মন্টু, সেলিম, হোসেন, বিমলসহ সকল ছাত্র-শ্রমিক-রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হইবে।
(২) সকল ছাটাইকৃত ও সাসপেণ্ডকৃত শ্রমিক বা ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে কাজে পুনর্বহাল করিতে হইতে ও তাহাদের ন্যায্য দাবী মানিয়া লইতে হইবে।
(৩) সকল প্রকার রাজনৈতিক বা ট্রেড ইউনিয়ন কার্যকলাপ সম্পর্কিত গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, খসরুর দণ্ডাদেশসহ সকল দণ্ডাদেশ, মামলা বা নির্যাতনমূলক হয়রানি বন্ধ করিতে হইবে।
(৪) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসমূহ, নটরডেম কলেজ, নবাবপুর স্কুলসহ প্রদেশের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহ অবিলম্বে খুলিতে হইবে।
অন্যথায় পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ নিজেদের পথ বাছিয়া লইবে এবং দেশব্যাপী তুমূল আন্দোলন গড়িয়া তুলিবে।
সাংগঠনিক প্রস্তাবঃ
(১) অদ্যকার এই সভা এই মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে যে, যেহেতু টাঙ্গাইল মহকুমা শাখা জেলায় রূপান্তরিত হইয়াসে সেহেতু বর্তমান মহকুমা শাখাকে স্বীকৃতি না দিয়া জেলা শাখাকে সরাসরি থানা শাখার সাথে যোগাযোগ করিয়া সাংগঠনিক কার্য পরিচালনা করার নির্দেশ প্রদান করিতেছে।
(২) এই সভা বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে স্ব স্ব জেলা ও মহকুমার যে সমস্ত ছাত্রলীগ কর্মী ও সামরিক আইনে সাজাপ্রাপ্ত, হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হইয়াছে তাঁহাদের পূর্ণ নাম, সাজার বিররণসহ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করিতেছে।
(৩) এই সভা যে সমস্ত জেলা এখনো কেন্দ্রীয় সংসদের প্রতিনিধির নাম প্রেরণ করে নাই সে সমস্ত জেলাকে অবিলম্বে নাম প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করিতেছে।
(৪) এই সভা বিভিন্ন জেলা ও মহকুমা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদককে অবিলম্বে ঠিকানা প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করিতেছে।
শাজাহান সিরাজ
সাধারণ সম্পাদক,
পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ।
……শাখার জ্ঞাতার্থে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এম, এ, রশীদ এবং রেজাউল হক মোস্তাক দফতর এবং সহ-দপ্তর সম্পাদক, ছাত্রলীগ।