You dont have javascript enabled! Please enable it!
শিরোনাম সূত্র তারিখ
মওলানা ভাসানী কর্তৃক আইয়ুব খান প্রস্তাবিত গোল টেবিল বৈঠকের বিরোধিতা এবং ১১-দফা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহবান দৈনিক সংবাদ ৮ ফেব্রুয়ারী ১৯৬৯

১১দফা ও ১৪ইর হরতালের প্রতি ভাসানীর সমর্থন

প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকের বিরোধিতা

গতকাল (শুক্রবার) অপরাহ্নে ৪৬, কাপ্তান বাজারস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ভাসানীপন্থী ‘ন্যাপ’ কর্মীদের এক সভায় বক্তৃতা প্রদান প্রসঙ্গে পার্টির সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী আহূত হরতালের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। তিনি উক্ত দিবসের হরতালকে সফল করার জন্য পার্টির প্রতিটি কর্মীর প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন এবং ১১-দফা দাবীতে উক্ত হরতাল পালন এবং উক্ত দিবসে ১১-দফা দাবিতে মিছিল করার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান । পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান গনসংগ্রামকে তিনি অব্যাহত রাখার উপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন যে, সাম্রাজ্যবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদ এ সামন্তবাদী শক্তিসমূহ আজ তাহাদের স্বার্থরক্ষা আইয়ুবের আমলাশাহীর ত্রিশঙ্কু অবস্থায় বিপর্যস্ত বোধ করিতেছে এবং পরিত্রাণের জন্য মরিয়া হইয়া আপোষের পথ খুজিতেছে । তিনি এই মুহূর্তে যে কোন আপোষ জনগণের জন্য আত্মহত্যার শামিল হইবে বলিয়া মনে করেন। তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থানের যে শক্তির বলে আজ এই সরকার নিস্তেজ হইয়া পড়িয়াছে, সেই শক্তির চাপ অব্যাহত রাখিয়াই আজ ইহাকে খতম করিতে হইবে।

  তিনি আরও বলেন যে, সংগ্রামের পথেই আজ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, পশ্চিম পাকিস্তানের এই ইউনিট বাতিলের দাবী এবং যে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকেরা বুকের রক্ত দিয়া এই গনসংগ্রাম গড়িয়া তুলিয়াছে এবং আইয়ুবের ভিত টলাইয়া দিয়াছে তাহাদের দাবীসমূহ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে।

  তিনি প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠকের বিরোধিতা করেন এবং বলেন যে আসন্ন গোল টেবিল বৈঠকে যোগ দিয়া স্বায়ত্তশাসনের ও ছাত্র, শ্রমিক, কৃষকের দাবী আদায় করা সম্ভব হইবে না।

  তিনি বর্তমান সংগ্রামের গতিবেগকে তীব্রতর করার প্রতি এবং সকল অন্যায় আইনকে অমান্য করিয়া আরও আত্মত্যাগের মাধ্যমে চূড়ান্ত মুক্তির পথ রচনা করার জন্য কর্মী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানান ।

  মওলানা সাহেব ছাত্রদের মহান আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত অনুপ্রাণিত হইয়া অভিভাবক ও কর্মীদের প্রতি মুক্তির জন্য প্রাণপাত করার মনোভাব গড়ে তোলার আহ্বান জানান। উত্তরণের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে তাঁহার দল ১৯৬৬ সালের জুন মাসে যে ১৪-দফা দাবী গ্রহণ করিয়াছিল তাহা ছাত্রসমাজের ১১-দফা দাবীর অনুরুপ।

  মওলানা সাহেব টাঙ্গাইল ও হাজীগঞ্জের সাম্প্রতিক গুলিবর্ষণের ঘটনাসহ সকল স্থানের গুলি বর্ষণের ও ছাত্র গণহত্যার প্রতিবাদ জানান এবং শহীদদের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে সর্বস্ব পণ করার জন্য কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

<02.089.430-432>

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পল্টনের জনসমুদ্রে গৃহীত ছাত্রসমাজের প্রস্তাবাবলী দৈনিক পাকিস্তান ৯ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

 

পল্টনে জনতার মহাসমুদ্রে সংগ্রামী ছাত্রসমাজের

                                                শপথনামা

সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে গত রবিবার ঢাকার পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক জনসমাবেশে গণমন উৎসারিত এক শপথধ্বনি কেবল বার বার আকাশ বাতাস মুখরিত করিয়া তোলে। সেই ধ্বনি ছিল ‘ডাঙ্গা আর গুলি জনতার হৃদয়বানী স্তব্ধ করিতে পারিবে না। মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে নির্যাতনের পথে দাবাইয়া দেওয়া যাইবে না’। এই শপথনামা ছাত্রসমাজ জনতার পক্ষ হইতে জনতারই মহাসমুদ্রে উত্থাপন করিয়ানে অঙ্গীকারের দৃপ্ত আশ্বাসে।

 

দৈনিক সংবাদ, ফেব্রুয়ারী ১০, ১৯৬৯

 গত (৯ই ফেব্রুয়ারী) সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত পল্টনের জনসভায় প্রস্তাবাবলীঃ

শোক প্রস্তাব

অদ্যকার এই মহতী সমাবেশ গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করিতেছে, শহীদ আসাদ, মতিউর, মিলন, আলমগীরসহ অন্যান্য বীর শহীদানের মহান স্মৃতি-যাহারা এদেশ হইতে স্বৈরাচারী ও একনায়কত্বের উচ্ছেদ করিয়া ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবী তথা সর্বশ্রেনীর গনতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ছাত্রসমাজের ১-দফার সংগ্রামের আত্মাহুতি দিয়াছেন। এই মহতী সমাবেশ অমর শহীদানের প্রতি গভীরতম শ্রদ্ধা জানাইবার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় ঘোষণা করিতেছে যে, শাসক গোষ্ঠীর নিষ্ঠুর ও তীব্র আক্রমণে দেশবাসী ও ছাত্র সমাজ ভীত না হইয়া যে কোন মূল্যের বিনিময়ে গণতান্ত্রিক গণঅভ্যুত্থানের মহান পতাকা উড্ডীন রাখিবেই। গণঅভ্যুত্থানের শহীদবর্গের জন্য এই মহতী সমাবেশ সারা দেশ বিশেষতঃ সমগ্র পূর্ব বাংলার সকল জনগণের পক্ষ হইতে অন্তরের গভীর শোক প্রকাশ করিতেছে ।

 

শপথ প্রস্তাব

  অদ্যকার এই মহতী সমাবেশ সমস্ত পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী ছাত্র জনগণের পক্ষ বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করিতেছে যে, শতাধিক শহীদের রক্তে রঞ্জিত সমগ্র পাকিস্তানের বিশেষতঃ পূর্ব পাকিস্তানের সকল জনগণের মহান গণতান্ত্রিক অভ্যুত্থানকে যে কোন ত্যাগ ও মূল্যের বিনিময়ে অগ্রসর করিয়া লওলা হইবে। জনগণের সকল গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করিয়া সামরিক শাসনের ছত্রছায়ায় সাম্রজ্যবাদ, সামন্তবাদ, একচেটিয়া পুঁজিবাদীদের স্বার্থে জনগণের ওপর নিরঙ্কুশ শোষণ নির্যাতন এবং পূর্ব পশ্চিম পাকিস্তানের সরহাদ, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে সিন্ধু, বেলুচিস্তানের জনগণকে দমন ও নিপীড়ন চালাইবার জন্য দেশে যে অত্যাচার, স্বৈরাচারী ও একনায়কত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম হইয়াছিল উহার চির অবসান ও উচ্ছেদ না ঘটা পর্যন্ত ছাত্র জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবেই। এই সমাবেশ ঘোষণা করিতেছে যে, স্বৈরাচারী একনায়কত্ববাদী আইয়ুব সরকারের অবসান ঘটাইয়া অবিলম্বে সারা পাকিস্তানের সকল জনগণের পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার কায়েম তথা প্রত্যক্ষ ও সার্বজনীন ভোটে পার্লামেন্টারী ফেডারেল সরকার কায়েম, সকল রাজবন্দীর মুক্তি, জরুরী আইন প্রত্যাহার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা, ব্যাক্তি স্বাধীনতা কায়েম, সকল দমনমূলক আইন প্রত্যাহার করিয়া ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্ত বুদ্ধিজীবি, ব্যবসায়ী প্রভৃতি সর্বশ্রেণীর জনগণের প্রাণের দাবী ও মুক্তির পথ ১১-দফা কায়েম না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত থাকিবে। আজিকার এই সমাবেশ বর্তমানে স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ঘটাইয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের সংগ্রাম চালাইবার শপথ গ্রহণ করিতেছে।

 

রাজনৈতিক প্রস্তাব

  এই মহতী সমাবেশ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গভীর বিবেচনার পরে এই অভিমত ব্যক্ত করিতেছে যে, দেশের বর্তমান সংগ্রাম ও গনঅভ্যুত্থানের ফলেই আজ শাসকগোষ্ঠী জনগণ হইতে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল হইয়া পড়িয়াছে। জনগণের অভ্যুত্থান দমনের ক্ষমতা আজ সরকারের নাই। কেননা সমগ্র দেশবাসী আজ জীবন দিতে ঐক্যবদ্ধ ও প্রস্তুত রহিয়াছেন। এই অবস্থার শাসক গোষ্ঠী গণদাবীর নিকট নতি স্বীকার করিয়া স্বৈরাচারী সরকারী কর্মকর্তাগণ কর্তৃক একদা দেশের বিকৃত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহিত গোল টেবিল আলোচনায় বসিবার প্রস্তাব উত্থাপন করিয়াছে। সরকার জরুরী আইন তুলিয়া দিতেও বাধ্য হইতেছেন। ইহা গনসংগ্রামের বিজয় এবং এইভাবেই আজ স্বৈরাচারী শাসন ধ্বসিয়া পড়িতে শুরু করিয়াছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হইতে হইবে। জনগণকে পূর্ণ ঐক্য ও সংগ্রাম মজবুত এবং অব্যাহত রাখিতে হইবে। এই জন্য আমরা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হইতে আহ্বান জানাইতেছি। কেননা রাজনৈতিক দলসমূহের ঐক্য গনসংগ্রামের আরও শক্তি যোগাইবে ও স্বৈরাচারের উচ্ছেদ তুরান্বিত করিবে এবং ছাত্র সমাজের ১১-দফা প্রতিষ্ঠা সম্ভব হইবে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের আন্দোলনের ঐক্য রক্ষার্থে এই সমাবেশ গভীর আরোপ করিতেছে।

 

গোলটেবিল বৈঠকের পূর্বশর্ত

এই সমাবেশ আরও ঘোষণা করিতেছে যে, আরও দাবী আদায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিরোধী দলীয় নেতৃবর্গকে গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হইতে দেওয়া  হইবে না। এই জন্য অবিলম্বে (ক) জরুরী আইনে আটক সকল রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি তুরান্বিত করিতে হইবে। (খ) অবিলম্বে শেখ মুজিব, ওয়ালী খান, মনিসিংহ, তাজউদ্দীন, আব্দুল জব্বারসহ সকল নেতাকে মুক্তি দিতে হইবে। কেননা তাঁহারাই জনগণের দাবী প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কারারুদ্ধ হইয়াছে; (গ) নিরাপত্তা আইনে আটক সকল রাজবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। নিরাপত্তা বন্দীদের পক্ষে বাবু মহথ দে, সন্তোষ ব্যানার্জি গত ১০ বৎসর যাবৎ একটানা (সামরিক শাসনের সময় হইতে) নিরাপত্তা আইনে বন্দী রহিয়াছেন; (ঘ) দেশরক্ষা আইনে আটক ও রাজনৈতিক কারনে সাজাপ্রাপ্ত বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, রাশেদ খান মেমন ও মাহবুবুল হক দোলনসহ সকল ছাত্রবন্দীকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হইবে। (ঙ) আগরতলা মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলাসহ সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করিতে হইবে; (চ) শ্রী খোকা (পৃঃ৫) রায়, সুখেন্দু দস্তিদার, অনিল মুখার্জী, মোঃ ফরহাদ, কাজী জাফর আহমেদ, নাসিম আলী, ফয়েজ উদ্দীন, আবদুস সাত্তার, সুনেন্দু কানুনগো, বরুণ রায় প্রমুখ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপর হইতে হুলিয়া ও গ্রেফতারী পরোয়ানা অবিলম্বে প্রত্যাহার করিতে হইবে। (ছ) সংবাদপত্রের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চয়তা দিতে হইবে। দেশ হইতে সকল দমনমূলক ব্যবস্থা ও সংখ্যালঘু অর্ডিন্যান্সসহ সকল কালাকানুন অবিলম্বে বাতিলের ব্যবস্থা করিতে হইবে। (জ) সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহীদ ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হইবে এবং গুলিবর্ষণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ঘোষণা করিতে হইবে। (ঝ) ছাত্রসমাজের শিক্ষা দাবী তথা ১১-দফার ১নং দাবী অবিলম্বে পূরণের ব্যবস্থা করিতে হইবে। (ঞ) শ্রমিক-কৃষক-চাকুরিজীবিদের বেতন বৃদ্ধিসহ সকল জরুরী দাবীসমূহ পূরন করিতে হইবে। এই সমাবেশ এই আশু পূরণের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালাইয়া যাইবার ঘোষণা করিতেছে।

অন্যান্য প্রস্তাব

 পূর্ব বাংলার জনগণের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মহান দিবস শহীদানের রক্তস্মৃতি বিজড়িত ২১শে ফেব্রুয়ারীতে সমাগত। এই দিবসকে পূর্ব পাকিস্তানে সরকারী ছুটি ঘোষণার জন্য এই সমাবেশ জোর দাবী করিতেছি। অন্যথায় জাতীয় ছুটি দিবস হিসাবে ইহাকে উদযাপন করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আবেদন জানাইতেছে।

  ২১শে ফেব্রুয়ারী সূর্যোদয় হইতে মধ্যাহ্ন (১২টা পর্যন্ত) সকল যানবাহনের চাকা বন্ধ রাখার এবং অফিস-আদালত, হাট-বাজার, দোকান-পাট সকল কিছু সূর্যাস্ত পর্যন্ত বন্ধ রাখার জন্য সর্বসাধারণের প্রতি অনুরোধ করা হইতেছে। ঐদিন সকল স্থানে কালো পতাকা উত্তলন এবং ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠানের জন্যও আহ্বান জানান হইয়াছে।

অফিসারদের শাস্তি ও নিহত পরিবারবর্গের ক্ষতিপূরণ

  সাম্প্রতিক আন্দোলনে ছাত্রশিক্ষক-শ্রমিক-কৃষক-কর্মচারী সাধারণ নাগরিক নারী ও কিশোরদের উপর অকথ্য নির্যাতন অশোভন আচরণের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট অফিসারদের শাস্তি প্রদান করিতে হইবে।

  এই সভা পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের পদত্যাগ দাবী করিতেছে।

 

নাম পরিবর্তন

এই সভা আইয়ুব নগরের নাম শেরে বাংলা নগর, আইয়ুব গেট শহীদ আসাদুজ্জামান গেট এবং আইয়ুব চিলড্রেনস পার্কের নাম শহীদ মতিউর রহমান পার্ক রাখার প্রস্তাব করিতেছে।

২৪শে জানুয়ারী ১১দফা দিবস

এই সভা প্রতি বৎসর ২৪শে জানুয়ারি ১১-দফা দিবস হিসাবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছে।

  এই সভা আইয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থার প্রতীকস্বরূপ সকল বিরোধী মনোভাবাপন্ন মৌলিক গণতন্ত্রী, এম, এন, এ ও এম, পি, এ-দের পদত্যাগ করার আহ্বান জানাইতেছেন।

 

শিরোনাম সূত্র তারিখ
আগরতলা মামলার আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যু দৈনিক ইত্তেফাক ১৬ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

 

ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট

জহুরুল হকের মৃত্যু

গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সামরিক হাস্পাতালে

শেষ নিশ্বাস ত্যাগ

ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের অবস্থার

ক্রমোন্নতির সংবাদ

 

  গভীর রাত্রে পি, পি, আই পরিবেশিত এক খবরে বলা হয়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী গুলীবিদ্ধ সার্জেন্ট জহুরুল হক শনিবার রাত্র ৯.৫০ মিনিটে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কম্বাইন্ড মিলিটারী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহে … রাজেউন)। ১৪শ ডিভিশন হেড কোয়ার্টারের এক প্রেস রিলিজে এই তথ্য প্রকাশ করিয়া আরও বলা হয় যে সার্জেন্ট জহুরুল হকের প্রাণ রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো সত্ত্বেও তাহাকে বাঁচানো সম্ভব হয় নাই।

  প্রেস রিলিজে আরও বলা হয় যে, গতকাল ষড়যন্ত্র মামলার গুলিবিদ্ধ অপর আসামী ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হকের অবস্থার ক্রমোন্নতি পরিলক্ষিত হইতেছে।

<02.091.434>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পল্টনের জনসভায় মওলানা ভাসানীর চরমপত্র দৈনিক ১৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

পল্টনের জনসভায়

ভাসানীর চরমপত্র

গতকাল (রবিবার) বিকালে পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ঘোষণা করেন যে, আগামী ২ মাসের মধ্যে সরকার ছাত্রসমাজের তথা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারণের প্রাণের দাবী ১১-দফা মানিয়া না লইলে, জনসাধারণ খাজনা ও ট্যাক্স বন্ধ করিবে। তিনি ঘোষণা করেন যে, নিয়মতান্ত্রিক ও অহিংস আন্দোলনের দিন শেষ হইয়াছে। এখন অনিয়মতান্ত্রিক ও সহিংস আন্দোলন শুরু হইবে। মওলানা ভাসানী প্রস্তাবিত গোলটেবিল বৈঠক সম্পর্কে ডাক নেতাদের উদ্দেশ্য করিয়া বলেন যে, বর্তমান গোলটেবিল বৈঠকের মারফত যেমন পাক-ভারত উপমহাদেশ স্বাধীন হইতে পারে নাই, ঠিক তেমনি বর্তমান গোলটেবিল বৈঠকেও জনসাধারণের দাবী আদায় সম্ভব নয়।

………………

<02.092.435>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
জনগণের দাবীতে ২১শে ফেব্রুয়ারী শহীদ দিবসকে সরকারী ছুটি হিসেবে ঘোষণা দৈনিক ইত্তেফাক ১৭ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

২১শে ফেব্রুয়ারী সরকারী ছুটি

    পূর্ব পাকিস্তান সরকার আগামী ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী সরকারী ছুটি দিবসরুপে ঘোষণা করেছেন।

    ৫২ সনের অমর বাংলা ভাষা আন্দোলনের বীর শহীদের স্মরণে একুশে ফেব্রুয়ারীকে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ অবিলম্বে শহীদ দিবসরুপে ঘোষণার দাবী জানিয়েছিলেন। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা একুশে ফেব্রুয়ারীকে ছুটি দিবস ঘোষণা করেছিলেন এবং সামরিক আইন জারীর পরের দিন এই ছুটি বাতিল হয়ে যায়।

শিক্ষাবিদের অভিমত

    মাতৃভাষার মাধ্যম ছাড়া জাতীয় চেতনার বিকাশ সম্ভব নয়। জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মাতৃভাষার মর্যাদা সম্পর্কে যে অভূতপূর্ব সচেতনতা দেখা দিয়েছে তা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম অবদান। ২১শে ফেব্রুয়ারীর তাৎপর্য সম্পর্কে উক্ত মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল হাই। গত বৃহস্পতিবার এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের রীডার ১৯৫২ এর ভাসগা আন্দোলনে কারাভোগী বিশিষ্ট সাহিত্যিক অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী বলেন, ১৯৬৯ সালে ২১শে ফেব্রুয়ারীর সরকারীভাবে শহীদ দিবসের মর্যাদা লাভের মধ্যে সাম্প্রতিকতম তাৎপর্য নিহিত। …… ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ডঃ আহমদ শরীফ বলেন, ঐতিহ্য যে প্রেরণার উৎস, একুশে ফেব্রুয়ারীর পালনের এ বছরের তোড়জোড়-এর প্রকাশ্য প্রমাণ।

<02.093.436-437>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
রাজশাহীতে গুলি ও সান্ধ্য আইনঃ ডাঃ শামসুজ্জোহাসহ ৬ জন হতাহত দৈনিক ইত্তেফাক ১৯ ফেরুয়ারী, ১৯৬৯

রাজশাহীতে গুলি ও সান্ধ্য আইন

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোর ডঃ সামসুজ্জোহাসহ

২ জন নিহতঃ ৪ জন আহত

    বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করার জন্য রাত্রি সাড়ে ১০টায় সৈন্য তলব করা হয়। রাত্রি ১১-৩০ মিনিটের সময় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

    ১৮ই ফেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা লংঘন করিয়া মিছিল বাহির করা হয় এবং জনতা সেনাবাহিনীর একখানা গাড়ি ঘিরিয়া ফেলে। ছাত্ররা গাড়ীখানার উপর প্রবল ইট-পাটকেল ছোড়ে। ইহা দেখিয়া ছাত্রদের বুঝাইয়া ক্যাম্পাসে ফেরত দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর বাহির হইয়া আসেন। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও কিছু জনতা টহলদার বাহিনীর কমান্ডারকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। লেফটেন্যান্ট এই সময় গুলিবর্ষণ করে। ফলে প্রোক্টরের দেখে বুলেট বিদ্ধ হয় এবং পরে তিনি উক্ত স্থানে মারা যান।

    এছাড়াও গুলিতে এক ব্যক্তি নিহত এবং দুই ব্যক্তি আহত হয়। অপরাহ্ন ২-৩০ মিনিট হইতে রাজশাহীতে সান্ধ্য আইন জারী করা হয়। এ.পি.পি

আহতদের তালিকায় তিনজন

অধ্যাপক

    গুলিবর্ষণে ছাত্র ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন অধ্যাপক গুরুতর রকমে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তাহারা হইলেন-

(১) প্রফেসর খালেদ।

(২) ডঃ কাজিমউদ্দিন মোল্লা।

(৩) ডঃ কাজী আবদুল মান্নান।

প্রেসিডেন্টের নিকট জরুরী তারবার্তা

    গতকাল্য (মঙ্গলবার) রাত্র সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা নগরী আকস্মিকভাবে চরম বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়ে এবং বিভিন্ন এলাকায় সামরিক বাহিনীর গুলিবর্ষণ, বেয়নেট চার্জ ইত্যাদির ফলে যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয় উহার ভয়াল বর্ণনা দান করিয়া জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব শাহ আজিজুর রহমান এবং জনাব আসাদুজ্জামান খান প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খানের নিকট জরুরী তারবার্তা প্রেরণ করিয়াছেন বলিয়া শাহ আজিজুর রহমান জানাইয়াছেন।

    সান্ধ্য আইনের স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া ঢাকা নগরীর প্রচণ্ড বিস্ফোরণঃ

     ছাত্র-জনতার আকস্মিক বিক্ষোভ মিছিলের দৃপ্ত পদভারে সমগ্র শহর প্রকম্পিত।

গত রাত্রে রাজধানী ঢাকা নগরীতে অকস্মাৎ সান্ধ্য আইনের কঠিন শৃংখল এবং টহলদানকারী সামরিক বাহিনীর সকল প্রতিরোধ ছিন্নভিন্ন করিয়া হাজার হাজার ছাত্র-জনতা আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের মত পথে নামিয়া আসে এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও ‘আগরতলা’ ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবীতে প্রচণ্ড বিক্ষোভ ফাটিয়া পড়ে।

    এই অবস্থার মধ্যে আজ সকাল সাতটা হইতে বৈকাল ৫টা পর্যন্ত সান্ধ্য আইনের যে বিরতি ঘোষণা করা হইয়াছিল, তাহা অকস্মাৎ প্রত্যাহার করা হয় এবং কোনরূপ বিরতি ছাড়াই পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার জন্য সান্ধ্য আইন জারি করা হয়।

    খোঁজ লইয়া জানা যায়, গতকল্য রাজশাহীতে জনৈক অধ্যাপকের হত্যা এবং সান্ধ্য আইন জারির খবর এখানকার ছাত্র ও সর্বশ্রেণীর নাগরিকের মনে প্রবল অসন্তোষের সঞ্চার করে। তদুপরি গতকালকার সংবাদপত্রে আগরতলার ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তি সম্পর্কে আশাবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেও শেখ সাহেব গোল টেবিল বৈঠকে যোগদানের উদ্দেশ্যে গতকাল ঢাকা ত্যাগ না করায় ছাত্র-জনমনে এই বিশ্বাস দানা বাঁধিয়া উঠে যে, শেখ সাহেবের মুক্তির ব্যাপারে সরকার আন্তরিক নহেন। বর্তমান প্রচণ্ড গণজাগরণের পটভূমিতে উপরোক্ত ঘটনা ছাত্র-জনতাকে ক্ষিপ্ত করিয়া তোলে এবং তাহারা সান্ধ্য আইনের অনুশাসন উপেক্ষা করিয়া দাবী দাওয়ার প্রতিধ্বনি করার জন্য অকস্মাৎ রাস্তায় নামিয়া আসে।

    কোন রকম পূর্ব ঘোষণা বা পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই একই সঙ্গে শহরের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত এইভাবে ছাত্র-জনতাকে রাস্তায় বাহির হইতে দেখিয়া সকলেই বিস্মিত হয়। রাত্রি ৮টার পর হইতে মধ্য রাত্রি পার হইয়া যাওয়া পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে সমানে বিক্ষোভ চলিতে থাকে।

    সামরিক বাহিনীর গাড়ির শব্দ এবং বিক্ষিপ্তভাবে বন্দুকের গুলির আওয়াজ পরিবেশকে আতঙ্কগ্রস্ত করিয়া তোলে।

    ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে অভিযোগ করা হয় যে, হাসপাতালের একটি এম্বুলেন্স আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়িয়া থাকা লোকজন বা মৃতদেহ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার চেষ্টা করিলে টহলদানকারী সশস্ত্র বাহিনী বাধা প্রদান করে।

    হাসপাতালে বুলেটবিদ্ধ ৩ ব্যক্তিকে ভর্তি করা হয় এবং রাত্রি ২টার পর এম্বুলেন্সের জন্য হাসপাতালের সামনে টেলিফোন আসিতে থাকে।

<02.094.438>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
তথাকথিত আগরতলা মামলা প্রত্যাহৃতঃ মুজিবসহ সকল অভিযুক্তদের মুক্তিলাভ দৈনিক পাকিস্তান ২২ ফেব্রুয়ারী, ১৯৬৯

মুজিবের মুক্তিঃ তথাকথিত আগরতলা মামলা প্রত্যাহার

    তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করার ফলে শেখ মুজিবুর রহমানসহ অভিযুক্ত সকল ব্যক্তি মুক্তিলাভ করেছেন। প্রেসিডেন্ট আইয়ুব “আগরতলা মামলা” সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স বাতিল করে দিয়েছেন। শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমানে তার ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে অবস্থান করছেন। বেলা দেড়টায় এই খবর পাওয়া যায়।

    ১৯৬৮ সালের ফৌজদারী আইন সংশোধনী (বিশেষ ট্রাইবুন্যাল) অর্ডিন্যান্সের ৪ ধারা অনুযায়ী ১৯৬৮ সালের ২১শে এপ্রিলের বিজ্ঞপ্তি নং এম. আর. ও ৫৯ (আর)/৬৮ বলে বিশেষ ট্রাইবুন্যালে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের মামলা শুরু হয়।

    ১৯৬৮ সালের জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে এই মামলার শুনানী শুরু হয় এবং ১৯৬৯ সালের ২৭শে জানুয়ারী শুনানী শেষ হয়।

<2.095.439-441>
শিরোনাম – রেসকোর্সর সম্বর্ধনা সভার মুজিব কর্তৃক জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব দাবী

সূত্র – দৈনিক পাকিস্তান

তারিখ – ২৪ ফেব্রুয়ারি , ১৯৬৯

ঢাকার ইতিহাসে বৃহত্তম জনসভাঃ সংখ্যাসাম্য নয়জনসংখ্যার ভিত্তিতে

প্রতিনিধিত্ব চাই

রেসকোর্সের গনসম্বর্ধনায় শেখ মুজিব

(স্টাফ রিপোর্টার)

গতকাল রবিবার রমনা রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষ লোকের এক বিশাল জনসমুদ্রের মাঝে দাঁড়িয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন , আমি ছাত্রদের ১১ দফা শুধু সমর্থন ই করিনা এর জন্য আন্দোলন করে আমি পুনরায় কারাবরন করতে রাজী আছি । ……

জনাব শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষনা করেন যে কোনমতেই তাঁর দল সংখ্যাসাম্য মেনে নেবে না । সংখ্যাসাম্য যারা মানবে পূর্ব পাকিস্তানে তাদের ঠাই নেই । …… সংখ্যাসাম্যের নামে পূর্ব পাকিস্তানকে ঠকান হয়েছে ।

তিনি সর্বস্তরে ও পর্যায়ে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব দাবী করেন ।

সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হতে রেসকোর্স ময়দানে প্রদত্ত গনসম্বর্ধনায় শেখ মুজিবুর রহমান ভাষন দিচ্ছিলেন ।

তথাকথিত আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার শেষে মুক্তির পর গতকালই তিনি প্রথম জনসভায় ভাষন দেন ।

এই গনসম্বর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জনাব তোফায়েল আহমদ । সভায় রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান মামলায় অভিযুক্ত জনাব কে, এম , এস, রহমান সি,এস,পি, লিডিং সিম্যান জনাব সুলতানউদ্দিন , ষ্টয়ার্ড মুজিবর রহমান , জনাব এ, বি , খুরশীদ ও জনাব আলী রেজাসহ অন্যান্য অনেকে উপস্থিত ছিলেন ।

শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, আমি রাওয়ালপিন্ডি যাব এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জনগনের পক্ষ হতে তাদের দাবী তুলে ধরব । দেশ আমরা কারুর কাছে বিকিয়ে দেইনি । আমার ছয় দফার সাথে আমার দল ও জনগন আছে ।

ছাত্রদের আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন আপ্নারা নিশ্চিন্ত থাকুন । আমি যদি এদেশের মুক্তি আনতে ও জনগনের দাবী আদায় করতে না পারি তবে আন্দোলন করে আবার কারাগারে যাব ।

আওয়ামী লীগ প্রধান শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবহেলার উল্লেখ করে সকল ক্ষেত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্ব আদায়ের কথা বলেন । তিনি বলেন আমি সংখ্যা সাম্য মানি না ।

শেখ মুজিব বলেন ,জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে । বর্তমান শাসনতন্ত্র বাতিল করা হবে না সংশোধন করা হবে পার্লামেন্ট ই তা নির্ধারণ করবে।

পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন , এক ইউনিট ভেঙ্গে ফেলার জন্য সেখানে একটা দাবি উঠেছে । তারা এক ইউনিট চায় না ।

তিনি বলেন , এ ব্যপারে পশ্চিম পাকিস্তানের জনসাধারনের ভোট নেয়া হোক তারা যদি এক ইউনিট না চায় তবে তা ভেঙ্গে দিতে হবে । এক ইউনিট ভেঙ্গে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের প্রদেশগুলোকেও স্বায়ত্বশাসন প্রদানের তিনি দাবী জানান ।

শেখ মুজিব বলেন , পশ্চিম পাকিস্তানে প্রদেশগুলো নিয়ে একটা ফেডারেশন গঠন করতে হবে । জনমতের বিরুদ্ধে কোন কিছু চালিয়ে দেয়া চলবে না ।

চাকুরী , অর্থনীতি , শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন , রাজধানী পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত । ফলে সেখানকার লোক সব্রকম সুবিধা পাচ্ছে । দেশের মোট জনসংখ্যার শতকরা ৫৫ জন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী হউয়া সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারে বিভিন্ন চাকুরীতে পূর্ব পাকিস্তানীয় সংখ্যা শতকরা দশজনের কম । কেন্দ্রীয় সরকারের সকল অফিস আদালত শুধু রাজধানীতে ।তাই ব্যবসা বানিজ্যও সেখানে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । ফলে এই প্রদেশে মূলধন গড়ে উঠছে না ।

দেশরক্ষা খাতের ব্যয় সম্পর্কে তিনি বলেন এই খাতের শতকরা আশি ভাগ অর্থই পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যয় হয় । কারণ সামরিক সদর দফতর সেখানে অবস্থিত । তিনি বলেন পশ্চিম পাকিস্তানের মজলুম এবং পূর্ব পাকিস্তানের জনগনের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নাই । ……

১৯৬৫ সালে ভারতের সাথে সংঘর্ষের সময় পূর্ব পাকিস্তানের অসহায় অবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন , এই অবস্থার অবসানের জন্যই লাহরে জাতীয় সম্মেলনে আমি দলের পক্ষ হতে ৬ – দফা দাবী পেশ করেছিলাম । তাতে আমাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী আখ্যা দেয়া হয়েছিল । আমরা দেশের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন । আমরা কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব? আমরা চাই ন্যায্য অধিকার । …

তিনি বলেন , গুটিকয়েক ব্যবসায়ী , শিল্পপতি ও আমলার জন্য আমরা পাকিস্তান অর্জনের সংগ্রাম করিনি । এ দেশের চাষী , মজুর , ছাত্র সকল মানুষের বাঁচার জন্য সংগ্রাম করেছিলাম । কিন্তু জালেমের পর জালেম এসেছে দেশে শাসন ক্ষমতায় । জনগন মুক্তি পায়নি । (?) ( লাইন মিসিং)
জগন্নাথ কলেজ সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রভিন্সিয়ালাইজড করার তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন এদেশের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করার জন্যই সরকার এই ব্যবস্থা নিয়েছে।

কারখানার মালিকদের তিনি শ্রমিকের মুনাফার ভোগ প্রদানের আহবান জানান । তিনি বলেন , মালিকরা সব মুনাফ লুটেপুটে খেলে এমন দিন আসবে যখন কলকারখানা সবই বাজেয়াপ্ত হয়ে যাবে । শ্রমিক নির্যাতনের তিনি নিন্দা করেন ।

রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচারে সরকারী নীতির তিনি তীব্র সমালোচনা করেন । বেতার কেন্দ্রসনূহকে তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন রবীন্দ্রনাথ বাংলার মানুষের কবি । তার গান রেডিওতে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে ।

শান্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ হতে পারে এরূপ কাজ হতে বিরত থাকার জন্য তিনি জনগণকে অনুরোধ জানান এবং সরকার কে উস্কানিমূলক কাজ হতে বিরত থাকতে বলেন । এ প্রসঙ্গে তিনি শহরের প্রতি মহল্লায় এবং মহকুমা ও জেলায় সংগ্রাম সমিতি গঠনের জন্য আহবান জানান ।

শত্রুর খপ্পরে না পরার জন্য তিনি সকলকে সতর্ক করে দেন । স্যান্ধ্য আইন ও সামরিক বাহিনী প্রত্যাহারের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানান । তিনি বলেন , আমাদের সংগ্রাম কমিটি মহল্লায় শান্তি বজায় রাখেন ।

শেখ মুজিব বলেন , পূর্ব বাংলায় হিন্দু , মুসলমান , বিহারী ও সকলেই আমরা শান্তিতে একত্রে বসবাস করব ।

পরিশেষে তিনি বলেন , বাংলার মাটিকে আমি ভালবাসি । বাংলার মাটিও আমাকে ভালবাসে । ১১ – দফার জিন্দাবাদ ধ্বনি দিয়ে তিনি তাঁর ৫০ মিনিট স্থায়ী বক্তৃতা শেষ করেন ।

                                            …………

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!