You dont have javascript enabled! Please enable it! রেসকোর্সের সম্বর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান এবং ১১ দফা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য মুজিবের প্রতি আহবান - সংগ্রামের নোটবুক

শিরোনামঃ রেসকোর্সের সম্বর্ধনা সভায় শেখ মুজিবকে “ বঙ্গবন্ধু” উপাধি প্রদান এবং ১১ দফা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য মুজিবের প্রতি আহবান ।

সুত্রঃ দৈনিক পাকিস্তান

তারিখঃ ২৫ ফেব্রুয়ারি , ১৯৬৯

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

গত রবিবার ঢাকা রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক জনসভায় শেখ মুজিবুর রহমান কে “বঙ্গবন্ধু” উপাধিতে ভূষিত করা হয় । সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জনাব তোফায়েল আহমদ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পক্ষ থেকে মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দানের প্রস্তাব করলে সমবেত জনসমুদ্র বিপুল করতালিতে তা সমর্থন করে ।

রেসকোর্সের সম্বর্ধনা সভায় প্রস্তাব

                                                 স্টাফ রিপোর্টার

সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ঐতিহাসিক ১১ – দফা বাস্তবায়নের জন্যে শেখ মুজিবুর রহমান কে সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন । তারা ঘোষনা করেন , ১১ দফা দাবী পূরনের মধ্যেই শহীদদের রক্ত ও নির্যাতিত ছাত্র, শ্রমিক , কৃষক, মধ্যবিত্ত ও মেহনতি জনতার দাবী পূর্ণ হতে পারে । সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ স্বৈরাচারী আইয়ূব সরকারের পদত্যাগ, জনগনের হাতে আশু ক্ষমতা অর্পণ ও বর্তমান শাসনতন্ত্র বাতিল করে ১১ দফার ভিত্তিতে নতুন শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দাবীতে সংগ্রাম গড়ে তোলার আহবান জানানো হয় । সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ছাত্র , শ্রমিক , কৃষক , মধ্যবিত্ত ও মেহনতি মানুষ নির্বিশেষে পূর্ব পাকিস্তানের সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি প্রাণঢালা শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো হয় ।

নিরাপত্তা আইন , প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স , হূলিয়া মামলা প্রত্যাহার এবং ১১ – দফা বাস্তবায়নের দাবীতে আগামী ৪ ঠা মার্চ প্রদেশব্যপী পূর্ণ হরতাল পালনের পূর্ব সিদ্ধান্তের প্রতি সভায় পুনরায় সমর্থন জানানো হয় । সভায় গৃহীত প্রস্তাবে নিরাপত্তা আইন ও প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নিরাপত্তা আইনে জারীকৃত সকল হূলিয়া ও মামলা প্রত্যাহার এবং প্রগ্রেসিভ পেপার্স লিমিটেড কে তার নিজস্ব মালিকের হাতে প্রত্যর্পণের দাবী জানানো হয় । বর্তমান গণুভ্যুত্থানের কারনে জারীকৃত সকল মামলা ও সাজা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয় ।

সভায় গৃহীত আরেক প্রস্তাবে ৪ ঠা মার্চের মধ্যে বনিয়াদী গণতন্ত্রী জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের পদত্যাগের জন্য পুনরায় আহবান জানানো হয় ।

শিরোনাম সূত্র তারিখ
প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান কর্তৃক জনগণের সার্বভৌমত্ব নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী শাসন পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত দৈনিক ইত্তেফাক ১৪ মার্চ, ১৯৬৯

মৌলিক গণতন্ত্র ভিত্তিক স্বৈরাতন্ত্রী ব্যবস্থার প্রবর্তক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক জনগণের সার্বভৌমত্ব স্বীকার

বয়স্ক ভোটাধিকার ভিত্তিক প্রত্যক্ষ নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী শাসন পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত

রাওয়ালপিন্ডি, ১৩, মার্চ-চারদিন একটানাভাবে আলোচনার পর প্রেসিডেন্ট আইয়ুব কর্তৃক বয়স্ক ভোটাধিকার ও পার্লামেন্টারী সরকার প্রতিষ্ঠার দাবী মানিয়া নেওয়ার মধ্য অদ্য সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যকার গোল টেবিল বৈঠকে কোন সিদ্ধান্তে পৌছুতে সক্ষম হয় নাই।

এদিকে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে ঘোষণা করিয়াছেন যে, জনগণের অবশিষ্ঠ দাবী প্রতিষ্ঠার জন্যই আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে।

স্বভাববতই প্রেসিডেন্ট এখন বয়স্ক নির্বাচন ও পার্লামেন্টারী সরকার বিধান শাসনতন্ত্রে সংযোজনের উদ্দেশ্যে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করবেন। প্রেসিডেন্ট তাঁহার বক্তৃতায় শান্তিপূর্ণ ও শাসনতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের ঐতিহ্য সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। গোলটেবিল বৈঠক আলোচনার সমাপ্ত টানিয়া প্রেসিডেন্ট আইয়ুব বলেন, বয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রতিনিধি নির্বাচনের প্রশ্নটি বিলের আকারে পেশের পূর্বে বিচার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। বিষয় ভিত্তিতে অক্ষুন্ন রাখিয়া ফেডারেল পার্লামেন্টারী পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য জাতীয় পরিষদের প্রতি আহবান জানাইতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট বলেন যে, অমীমাংসিত প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সমাধাওন করিলেই সব চাইতে ভাল হইবে।

 

<02.099.450>

 

আইয়ুবেরপত্র

            রাওয়ালপিন্ডি, ২৫শে মার্চঃ গতকল্য (২৪শে মার্চ) প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান প্রধান সেনাপতি জেনারেল এ,এম,ইয়াহিয়া খানের নিকট নিম্নোক্ত পত্র লিখেনঃ

প্রেসিডেন্ট হাউস

২৪শে মার্চ, ১৯৬৯

            প্রিয় জেনারে ইয়াহিয়া,

            অতীব দুঃখের সহিত আমাকে সিদ্ধান্তে আসিতে হইয়াছে যে, দেশের সমুদয় বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা ও নিয়মতান্ত্রিক কর্তৃত্ব সম্পূর্ণ অচল হইয়া পড়িয়াছে। বর্তমানে উদ্বেগজনক মাত্রায় অবস্থার যদি অবনতি ঘটিতে থাকে, তাহা হইলে দেশের অর্থনৈতিক জীবন্ধারা তথা সভ্য জীবনের অস্তিত্ব বজার রাখা সম্পূর্ণ অসম্ভব হইয়া পড়িবে।

            এমতাবস্থায়, ক্ষমতার আসন হইতে নামিয়া যাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর দেখিতেছি না।

            তাই আমি পাকিস্তানের দেশরক্ষা বাহিনীর হস্তে দেশের পূর্ণ কর্তৃত্ব ন্যস্ত করিয়া সাব্যস্ত করিয়াছি; কেননা সামরিক বাহিনীই দেশের আজিকার কর্মক্ষম ও আইনানুগ যন্ত্র।

<02.100.451-454>

পূর্ব বাংলার জনতার নিকট কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটি কর্তৃক স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলার কর্মসূচী পেশ

বিপ্লবী জনতা!

পূর্ব বাংলার কৃষক, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত, ছাত্র, বুদ্ধিজীবী, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, এক কথায় সমগ্র জনগণের জীবন এক সর্বগ্রাসী সংকটের আগুন জ্বালিতেছে। পূর্ব বাংলার জনগনের উপর এক নিষ্ঠুর জাতিগত নিপীড়ন চলিতেছে। সংকটের এই আগুন পূর্ব বাংলার জনতার ধমনীতে ধমনীতে বিদ্রোহের বহ্নিশিখা জ্বালাইয়া দিয়াছে। পূর্ব বাংলা জনগণ আজ মুক্তি চায়। মুক্তি চায় অনাহার, বুভুক্ষা, দুঃখ-দারিদ্র্য, বন্যা, বেকারত্ব ও জাতিগত নিপীড়নের অভিশাপ হইতে। কিন্তু কোন পথে আসিবে তাহাদের মুক্তি? সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ বৃহৎ পুঁজির প্রতিভূ এককেন্দ্রীক স্বৈরাচারী সমরবাদী শাসক গোষ্ঠীকে পূর্ব বাংলার বুক হইতে উচ্ছেদ করিয়া একমাত্র ‘স্বাধীন, সার্বভৌম জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা’ কায়েমের মাধ্যমেই পূর্ব বাংলার শোষিত, বঞ্চিত জন্তার মুক্তি সম্ভব। “স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা” কায়েম করিতে হইলে গ্রাম বাংলায় জোতদার, মহাজন ও শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কৃষকের গেরিলা যুদ্ধ শুরু করিয়া, সামন্তশ্রেণীকে উৎখাতের মাধ্যমে গ্রামঞ্চলে মুক্ত এলাকা গঠনের মাধ্যমে। গ্রামে এইভাবে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে জন্তার সশস্ত্র্য বাহিনী গড়িয়া তুলিতে হইবে, গ্রাম দিয়া শহর ঘেরাও করিতে হইবে এবং শাসক গোষ্ঠীকে চূড়ান্তভাবে উৎখাত করিয়া রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করিতে হইবে। শহরের শ্রমিক, মুটে-মজুর, রিকসাওয়ালা, স্কুটারওয়ালা, বাস্তুহারা, বস্তিবাসী, অফিসের কেরানী, পিয়ন, আর্দালী, দোকানদার, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, ছাত্র ও বুদ্ধিজীবী ও শহরের মধ্যে ব্যতিব্যস্ত করিয়া রাখা, যাহাতে গ্রাম বাংলার কৃষকের গেরিলা যুদ্ধ প্রচন্ড গতিতে অগ্রসর হইয়া যাইতে পারে।

বিপ্লবী সাথীরা!

পূর্বা বাংলার জনতা সেই পথেই আগাইয়া চলিতেছে। ১৯৬৮-৬৯ সালের বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান, গ্রাম বাংলার সিলেটের হাওর করাইয়া, খুলনার বাহিরদিয়ার কৃষি বিপ্লবের অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলি তাহারই নির্ভুল প্রমাণ। শ্যাম্পুর-পোস্তগোলা, খুলনা, সিদ্ধিরগঞ্জ, টঙ্গি, চট্টগ্রাম ও আদমজীতে শ্রমিক শ্রেণী নিজের ও শাসকগোষ্ঠীর রক্তে স্নান করিয়া তাহারই জ্বলন্ত স্বাক্ষর রাখিয়াছে।

আজ তাই “কমিউনিষ্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটির” পক্ষ হইতে আমরা জনতার বিপ্লবী চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা রাখিয়া “স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা” কর্মসূচী আপনাদের নিকট পেশ করিতেছি। আসুন, মহান চীন, ভিয়েতনাম, পশ্চিম বাংলার নকশাবাড়ী, প্যালেস্টাইনের আরবদের মুক্তি সংগ্রাম হইতে শিক্ষা গ্রহণ করিয়া আমরা সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে উক্ত কর্মসূচীকে বাস্তবায়িত করি। আসুন মহান মাও সেতুঙের শিক্ষাকে আমরা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি ও গ্রহণ করি “ বন্দুকের নলই সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস”। জয় আমাদের অনিবার্য। স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা কায়েম হইবেই। *

*এই সংগঠনের নেতৃত্বে ছিলেন কাজী জাফর আহমদ, হায়দার আকবর খান রনো এবং রাশেদ খান মেনন।

পূর্ব বাংলা জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রেকর্মসূচী

জনগণতান্ত্রিক শিক্ষাসংস্কৃতির রূপরেখা

রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাঃ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হইবে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সামান্তবাদ ও আমলা মুৎসুদ্দি বৃহৎপুঁজি বিরোধী শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী ও পেটিবুর্জোয়া শ্রেনীর অন্যান্য অংশ এবং দেশপ্রেমিক জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেনীসমূহের যৌথ একনায়কত্ব-শ্রমিক নেতৃত্বে ইহা পরিচালিত হইবে-ইহা হইবে “পূর্ব বাংলা জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র”।

            রাজনৈতিক কাঠামোঃ রাজনৈতিক কাঠামো গড়িয়া উঠিবে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিয়তার নীতির ভিত্তিতে। রূপরেখা হইবে নিম্নরূপঃ

            (১) কেন্দ্র হইতে একেবারে নিম্নপর্য্যায় পর্য্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোট দ্বারা নির্বাচিত গণপরিষদসমূহ (—————–) থাকিবে যেমন, জাতীয় গণপরিষদ, জিলা গণপরিষদ, থানা গণপরিষদ, ইউনিয়ন গণপরিষদ। জাতীয় গণপরিষদ হইবে, “পূর্ব বাংলা জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের” সর্বোচ্চ সংস্থা এবং ইউনিয়ন গণপরিষদ হইবে নিম্নতর সংস্থা।

            (২) এই গণপরিষদগুলির নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকিবে। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর পুনর্বার নির্বাচনের ব্যবস্থা থাকিবে। তাহা ছাড়া নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যেও নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপসারিত করিয়া নতুন প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার জনগণের থাকিবে।

            (৪) গণপরিষদসমূহে নির্বাচনের ভিত্তি হইবে শ্রেণী ও পেশাভিত্তিক। সকল বিপ্লবী শ্রেণিগুলি যাহাতে তাহাদের সামাজিক অবস্থান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার সমানুপাতিক হারে (———-) প্রতিনিধিত্ব করিতে পারে সেই জন্য নারী, পুরুষ এবং সকল ধর্ম, জাতি, পেশা ও শিক্ষা নির্বিশেষে একটি সত্যিকার সার্বজনীন ও সমভোটাধিকার ব্যবস্থা (———–) প্রবর্তন করা হইবে।

            (৫) এইভাবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে “পূর্ব বাংলা জনগণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের” সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ জাতীয় সরকার গঠিত হইবে। এই জাতীয় সরকারের সহিত নীচের পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারী সংস্থাসমূহের সম্পর্ক হইবে নিম্নরূপঃ (ক) বিভিন্ন নিম্নতর সংস্থাসমূহ তাহাদের নিজেদের স্বার্থে স্বেচ্ছায় জাতীয় সরকারকে যে ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভিত্তিতে প্রদান করিবে, ইহা তাহাই পালন করিবে। (খ) নিম্নতর সংস্থাগুলি কর্তৃক স্বেচ্ছায় প্রদত্ত ক্ষমতা ও দায়িত্বের ভিত্তিতে জাতীয় সরকার যে নির্দ্দেশাবলী প্রদান করিবে, নিম্নতর সংস্থাগুলি তাহা মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিবেঃ ইহাই গণতান্ত্রিক কেন্দ্রীকতার নীতি। গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির মাধ্যমে পরিচালিত একটি সরকারই জনগণের বিভিন্ন বিপ্লবী অংশের মতামতের সার্থক প্রতিনিধিত্ব করিতে পারে এবং বিপ্লবের শত্রুদের সম্পূর্ন কার্য্যকরীভাবে প্রতিহত করিতে পারে। (গ) জাতীয় সরকার ব্যতীত অন্যান্য নিম্নতর সংস্থাগুলির পারষ্পারিক সম্পর্ক ও এই গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হইবে।

গণতান্ত্রিক অধিকারঃ

(১)নারী, পুরুষ এবং সকল ধর্ম, জাতি, বর্ণ, পেশা ও শিক্ষা নির্বিশেষে সকল বিপ্লবী শ্রেণীসমূহের যথা শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, মধ্যবিত্ত, ছোট ও মাঝারী ব্যবসায়ী ও দেশপ্রেমিক জাতীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর সকল রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার থাকিবে। কিন্তু জনগণের শত্রু সাম্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলামুৎসুদ্দি বৃহৎ পুঁজিপতিদের তাহাদের সহযোগী প্রতি বিপ্লবীদের কোন রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার থাকিবে না।

(২) জনগণের বাক-স্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, ট্রেড ইউনিয়ন স্বাধীনতা, প্রদান করা হইবে। কিন্তু কোন অবস্থাতেই সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও আমলা-মুৎসুদ্দি বৃহৎ  পুঁজির পক্ষেও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোন প্রকার বক্তব্য প্রকাশ ও সংগঠিত করিবার অধিকার দেওয়া হইবে না।

(৩) যে সকল ব্যক্তি বিপ্লবের বিরোধিতা করিয়াছিল অথাবা বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছিল অথবা কোন সময়ে জনগণের উপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাইয়াছিল, সেই সকল ব্যক্তিদের সারা জীবনের জন্য অথবা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার কাড়িয়া লওয়া হইবে। অপরাধের তারতম্য বিবেচনা করিয়া তাহাদের সম্পত্তি সম্পূর্ন অথাবা আংশিক বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদন্ড, কারাদন্ড কঠোর পরিশ্রমমূল্ক কাজ করিতে বাধ্য করা প্রভৃতি শাস্তি প্রদান করা হইবে। যাহাদের অপরাধ অপেক্ষাকৃত লঘু তাহাদের কম শাস্তি প্রদান করা হইবে এবং মার্কসবাদী পদ্ধতিতে তাহাতে চরিত্র সংশোধনের ( যেমন জনগণের সাথে মিশিয়া উৎপাদনমূলক শারীরিক পরিশ্রমে বাধ্য করা) প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হইবে। এই সব কিছুই নির্ধারিত হইবে স্থানীয়ভাবে জনগণের নির্ধারিত প্রকাশ গণ-আদালত দ্বারা।

ধর্মীয় স্বাধীনতাঃ

            (১) রাষ্ট্র মানুষের নিজ নিজ ধর্ম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করিবে।

            (২) বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, কিয়াং ইত্যাদি এবং ধর্মীয় গবেষণাগারগুলি যাহাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হইবে পারে সেইজন্যে রাষ্ট্র ইহা তত্বাবধানে পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করিবে এবং তাহা স্থানীয় ভিত্তিতে স্ব স্ব ধর্মের আগ্রহী জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত হইবে।

প্রশাসনিক ও বিচার ব্যবস্থাঃ

            (১) প্রশাসন ও বিচার বিভাগ হইতে আমলাতন্ত্রের সম্পূর্ন উচ্ছেদ সাধন করা হবে।

            (২) সরকার বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ ঐ পর্যায়ের গণপরিষদ কর্তৃক নির্বাচিত হইবে।

            (৩) বর্তমান সকল প্রকারের আইন বাতিল ঘোষণা করিয়া জনগণতান্ত্রিক সমাদ ব্যবস্থার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন প্রণয়ন করা হইবে।

            (৪) বিচার পদ্ধতি হিবে সহজ, সরল ও জনগণের আয়ত্বধীন। বিচারসমূহ অনুষ্ঠিত হইবে প্রকশ্যভাবে ও স্থানীয় জনগণের মতামত সাপেক্ষে।

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাঃ

            (১) জাতীয় সরকারের অধীন সশস্ত্র গণফৌজ থাকিবে-ইহা দেশের ভিতরের ও বাহিরের প্রতি বিপ্লবী আক্রমণকে প্রতিহত করিবে এবং জনগণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের কাজে অংশ গ্রহণ করিবে।

            (২) বিপ্লবের মধ্য দিয়া যে গণফৌজ গড়িয়া উঠিবে, বিপ্লবোত্ত্র যুগে তাহাই রাষ্ট্রীয় গণফৌজ হিসাবে পরিগণিত হইবে। এই গণফৌজ মূলতঃ ভূমিহীন ও গরীব কৃষক ও শ্রমিক যুবকদের লইয়া গড়িয়া উঠিবে।

            (৩) জাতীয় গণপরিষদের এই গণফৌজ পরিচালনার ব্যাপারে পূর্ণ অধিকার থাকিবে।

            (৪) এই সশস্ত্র গণফৌজ ছাড়াও সমগ্র অস্ত্রের শিক্ষা প্রদান করা হইবে এবং গণমিলিশিয়া গঠণ করা হইবে।

            (৫) গণফৌজ সম্পর্কে সমালোচনা ও সুপারিশ করিবার পূর্ণ অধিকার জনগণের থাকিবে।

            (৬) গণফৌজের সদস্যদেরো রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিবার ও নিজস্ব পেশাগত সংগঠন করিবার এবং নির্বাচনের অংশগ্রহণ করিবার অধিকার থাকিবে। গণপরিষদসমূহে তাহাতের প্রতিনিধিত্ব থাকিবে।

            (৭) গণফৌজের বিভিন্ন পদ ও স্তরের সৈনিকদের পারষ্পারিকদের সম্পর্কে হইবে সাথী সুলভ ও ভ্রাতৃত্বমূলক-আমলাতান্ত্রিক নয়।

সংখ্যালঘু জাতিসংক্রান্ত নীতিঃ

            (১) পূর্ব বাংলার বসবাসকারী বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতির পৃথক সত্তাকে স্বীকার করা হইবে। তাহাদের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক বিকাশে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্র উৎসাহ ও সাহায্যদান করিবে। সংখ্যালঘু জাতিসমূহের নিজ নিজ কথ্য ও লিখিত ভাষা ব্যবহারের অধিকার থাকিবে। তাহাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও শিল্পকলা বিকাশের এবং তাহাদের আচার ব্যবহার সঙ্গরক্ষণ বা পরিবর্তনের অধিকার দেওয়া হইবে।

            (২) ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থান হইতে আগত পূর্ব বাংলার স্থায়ীভাবে বসবাসকারী অবাঙ্গালীদের ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশের পূর্ণ অধিকার প্রদান করা হইবে।

            (৪) যে সমস্ত অঞ্চলে সংখ্যালঘু জাতিরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সেই সমস্ত অঞ্চলে তাহাদের পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার দেওয়া হইবে-এই স্বায়ত্ত্বশাসন জনগণতান্ত্রিক পূর্বা বাংলার রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার আওতায় পরিচালিত হইবে।

            (৪) জাতীয় পরিষদ ও জাতীয় সরকারে সংখ্যালঘু জাতিদের প্রতিনিধিত্ব থাকিবে।

 

পররাষ্ট্র নীতিঃ

            (১) শ্রমিক শ্রেনীর আন্তর্জাতিকতাবাদের নীতির ভিত্তিতে সকল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র, বিশেষ করিয়া গণচীনের সহিত বন্ধুত্ব, পারষ্পারিক সৌহার্দ্য ও সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।

            (২) দুনিয়ার সমস্ত নিপীড়িত জনগণ ও নিপীড়িত জাতিসমূহের মুক্তি আন্দোলনকে সক্রিয়ভাবে সকল প্রকার সমর্থন ও সাহায্য প্রদান করা।

            (৩) পরষ্পরের ভূখন্ডের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের মর্য্যাদা রক্ষা করা; পরষ্পরকে আক্রমণ না করা; পরষ্পরের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা; সমানাধিকারের ভিত্তিতে পারষ্পরিক সুযোগ প্রদান ও শান্তি পূর্ণ সহ অবস্থান- এই পঞ্চশীলা নীতির ভিত্তিতে ভিন্ন সামাজিক ব্যবস্থার রাষ্ট্রগুলির সহিত শান্তিপূর্ণ সহযোগিতার জন্য চেষ্টা করা ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী যুদ্ধনীতির সর্বাত্মক বিরোধিতা করা।

            (৪) সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষ করিয়া মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদকে দৃঢ়তার সহিত বিরোধিতা ও প্রতিহত করা।

            (৫) সম্প্রসারণবাদী ভারত ও ইসরাইলসহ সাম্রাজ্যবাদের ক্রীড়ানক রাষ্ট্রসমূহের সর্বাত্মক বিরোধিতা করা।

            (৬) কোন প্রকয়ার সামরিক চুক্তিতে জড়িত না হওয়া; পূর্ব বাংলার মাটিতে কোন প্রকার বিদেশী সাম্রাজ্যবাদী সামরিক অস্তিত্ব না রাখা; সাম্রাজ্যবাদের সহযোগী পূর্বতন এককেন্দ্রীক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সম্পাদিত সকল প্রকার সামরিক ও অসম অর্থনৈতিক চুক্তি বাতিল করা।

            (৭) কোনরূপ রাজনৈতিক শর্ত জড়িত না থাকিলে যে কোন দেশের কারিগরী ও অর্থনৈতিক সাহায্য গ্রহণ করা।

<2.100.455-459>

            জনগণতান্ত্রিক অর্থনীতি রূপরেখাঃ

            সমাজতন্ত্রের অর্থনীতির লক্ষ্যকে সামনে রেখে বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করে জনগণতান্ত্রিক অর্থনীতি বাস্তবায়ন করা হবে। এই জনগণতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করার জন্য সম্পূর্ণ স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ  ও আত্মনির্ভরশীল জাতীয় অর্থনীতি গড়ে তোলা হবে। এর রূপরেখা হবে নিম্নরূপঃ

রাষ্ট্রীয় মালিকানাঃ

 

            (১) সকল সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা, সকল প্রকার সাম্রাজ্যবাদী ঋণ অস্বীকার করা, সাম্রাজ্যবাদী এজেন্টদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

            (২) সকল বৃহৎ পুঁজি, যারা চরিত্র আমলা-মুৎসুদ্দি এবং যা পূর্ব বাংলার ক্ষেতে সম্পূর্ণ বিজাতীয় তা বাজেয়াপ্ত করা।

            (৩) যারা প্রতিবিপ্লবী ও বিপ্লবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবে তাঁদের যাবতীয় সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা।

            (৪) জোতদার, মহাজন, দুর্নীতিবাজ, আমলা ও তাঁদের দালালদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা। (জোতদারের বাজেয়াপ্তিত জমি গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে)

            (৫) সকল ব্যাংক ও বীমা কোম্পানী রাষ্ট্রায়ত্ব  করা হবে এবং রাষ্ট্র নিজেই তা পরিচালনা করবে।

            (৬) সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হবে, মধ্যস্বত্ব প্রথা বিলোপ করে রাষ্ট্র নিজেই এর রক্ষা করবে, বরং নিজের তত্ত্বাবধানে সম্পদ আহরণ করবে।

            (৭) রেলওয়ে, জাহাজ বিমান কোম্পানী, অস্ত্রের কারখানা, বিদ্যুৎ শিল্প ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্প রাষ্ট্রের মালিকানায় থাকবে।

            (৮) যে সকল শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সরকারী বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে আছে, তা পুরোপুরি রাষ্ট্রের মালিকানায় রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে থাকবে।

            (৯) পাটশিল্পকে রাষ্ট্রায়ত্ব করা হবে এবং নিজের মালিকানায় তা পরিচালনা করবে।

কৃষিনীতিঃ

            (১) “খোদ কৃষকের হাতে জমি”এই নীতির ভিত্তিতে ভূমি ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা হবে। বিপ্লবের পর সমস্ত জমি পুনরায় জরিপ করে বর্তমানে জমি রেকর্ড ও খতিয়ানের ব্যাপারে যে সমস্ত ভুলভ্রান্তি রয়েছে রাষ্ট্র তা দূর করার ব্যবস্থা  করবে।

            (২) জোতদারী প্রথার উচ্ছেদ সাধন করা হবে। জোতদার ও তাঁদের দালালদের সমস্ত জমি ও চাষের যন্ত্রপাতি রাষ্ট্র দখল করবে এবং তা বিনামূল্যে ভূমিহীন ও গরীব কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবে।

            (৩) সরকারের সকল খাস জমি রাষ্ট্র দখল করবে এবং গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করবে।

            (৪) কৃষকদের মধ্যে বন্টনকৃত জমির প্রতি তাঁদের স্বত্বাধিকারের স্বীকৃতি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবে।

            (৫) সকল প্রকার বর্গা প্রথা বিলোপসাধন করা হবে। রাষ্ট্রকর্তৃক নির্ধারিত দৈনিক মজুরী দিয়ে ক্ষেতমজুর নিয়োগ করা যাবে। কিন্তু চাষের যন্ত্রপাতি ও কৃষি উৎপাদনে আবশ্যকীয় অন্যান্য সামগ্রী জমির মালিককে বহন করতে হবে।

            (৬) স্থানীয় পরিস্থিতি সাপেক্ষে জমির মালিকদের পরিবার প্রতি সর্বোচ্চ জমি সংরক্ষণের সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ধনী কৃষকদের কাছ থেকে এলাকা অনুযায়ী রাষ্ট্র নির্দিষ্ট উচ্চতম সীমার অতিরিক্ত জমি ক্রয়ের ব্যবস্থা করবে।

            (৭) খাদ্যদ্রব্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যমানের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে ক্ষেতমজুরদের বাঁচার উপযোগী নিম্নতম মজুরী নির্ধারণ করা হবে।

            (৮) অকৃষক বিধবা (এই অকৃষক বিধবা বলতে কোন কৃষক পরিবারের বিধবাকে বুঝাবে না)। শিক্ষক, কুটিরশিল্পী, ছোট দোকানদার প্রবভৃতির হাতে বর্তমানে যে জমি আছে সেই সম্পর্কে জনগণতান্ত্রিক রাষ্টের নীতি হবেঃ

                                    (ক) মুক্ত এলাকায় যদি এদের অবস্থান হয় (যেখানে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বে কৃষকের বিপ্লবী সরকার                         প্রতিষ্ঠিত হয়েছে) সেই এলাকায় অথবা সারা পূর্ব বাংলাব্যাপী জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব সুসম্পন্ন হওয়ার পর                         তাঁদের কাছে থেকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ নিয়ে রষ্ট্র জমি ক্রয় করে নিবে এবং গরীব ও ভূমিহীন কৃষকদের কাছে                বিতরণ করবে। কিন্তু রাষ্ট্র তাদের জীবন ধারণের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান অথবা তারা যে পেশায়                                 নিযুক্ত রয়েছেন তাতে তারা পরিবারের ভরণ-পোষণের উপযোগী আয় যাতে করতে পারেন রাষ্ট্র অবশ্যই তার                         ব্যবস্থা করবে।

                                    (খ) জনগণতান্ত্রিক বিপ্লন সুসম্পন্ন হওয়ার আগে অকৃষক বিধবা, শিক্ষক কুটির শিল্প, ছোট                          দোকানদার, শহরে কার্যরত শ্রমিক, স্বল্পআয়ভোগী ব্যক্তিদের জমি যে অবস্থায় রয়েছে সেই অবস্থাতেই                                  থাকবে। কিন্তু বর্গাপ্রথার মাধ্যমে জমি চাষাবাদ করতে দেওয়া হবে না- উপযুক্ত মজুরী দিয়ে ক্ষেতমজুর                           নিয়োগ করে জমি চাষ করা যাবে।

            (৯) (ক) খাজনা প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপসাধন করা হলে খাজনার পরিবর্তে উৎপাদনের উপর কৃষি আয়কর প্রথা চালু করা হবে। ফসল না হলে অথবা উৎপাদন পর্যাপ্ত পরিমাণে না হলে আয়কর দিতে হবে না। ফসল  উৎপাদনের পর কৃষকদের সাধারণভাবে খাওয়া-পরার পর যা থাকবে, তার উপর আয়কর ধার্য করা হবে। কৃষকদের আয়কর ফসলে নেওয়া হবে। এই আয়কর ধার্য্য করবে মূলতঃ কৃষক প্রতিনিধি সম্বায়ে গঠিত ইউনিয়ন গণপরিষদ।

            (খ) গরীব ও মাঝারি কৃষকের সকল বকেয়া খাজনা ও সুদসহ ঋণ মওকুফ করা হবে।

            (গ) নদী শিকস্তি জমির জন্য কোন আয়কর দিতে হবে না এবং এর উপর কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে না বা নদী-নালা জমি-জমা ও ভিটামাটি হতে উচ্ছেদপ্রাপ্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে।

            (১০) (ক) হাট-বাজার, ঘাট, বন, পাহাড়, বিল প্রভৃতিতে যে ইজারাদারী, মহালদারী ও কন্ট্রাক্ট প্রথা চালু রয়েছে এবং মধ্যস্বত্ব ভোগ করার যে অধিকার বর্তমান ব্যক্তি বিশেষকে দেওয়ার বিধান প্রচলিত রয়েছে তা বিলোপ করা হবে।

            (খ) হাট-বাজারে জনসাধারণের খুচরা বেচা-কেনার উপর তোলা কর বিলুপ্তপ করা হবে। রাষ্ট্র নিজেই তা সংরক্ষণ করবে এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা তা পরিচালনার ব্যবস্থা করবে। হাট-বাজার যথাযথ সংরক্ষণ ও উহার উন্নয়ন সাধনের জন্য পাইকারী ব্যবসায়ের উপর কর ধার্য্য করা হবে।

            (গ) বন, পাহাড়, বিল্, হাওর, নদী সহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ রাষ্ট্রের সম্পত্তি বলে গণ্য হবে। যারা নিজের হাতে শ্রমকাজ করবেন, রাষ্ট্র তাঁদের সামান্য করের বিনিময়ে বন-পাহাড়ে, বাঁশ, ছন, গাছ, কাঠ কাটার এবং বিলে ও জলাশয়ে মাছ ধরার অনুমতি প্রদান করবে।

            (১১) (ক) রাষ্ট্র সকল প্রকার মহাজনী বাতিল করবে। মহাজনদের সকল সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হবে।

            (খ) রাষ্ট্র কৃষকদের প্রয়োজনসাপেক্ষে চাষের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দ্রব্যসামগ্রী যথা গরু, বীজ, সার, আধুনিক চাষের যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য বিনা সুদে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ প্রদান করবে।

            (১২) রাষ্ট্র কৃষকদের জীবনধারনের মানোন্নয়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি ও সামগ্রিক স্বার্থে আধুনিক যান্ত্রিক চাষ ও যৌথ সমবায় প্রথা প্রবর্তনের জন্য তাঁহাদের উৎসাহিত করবে যাতে কৃষকেরা নিজেরা স্বেচ্ছামূলকভাবে এই পদ গ্রহণ করে। কৃষকেরা স্বেছায় যৌথ সমবায় প্রথার রাজী হলে তাঁদের রাষ্ট্রের পক্ষ হতে সস্তা দামে সকল প্রকার সামগ্রী সরবরাহ করা হবে। খাস জমি বন্টনের ব্যাপারে যোউথ সমবায় অংশগ্রহণকারী কৃষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এই সুস্ত যৌথ সমবায় অবশ্যই কৃষকদের নির্বাচিত কমিটি দ্বারা পরিচালিত হবে-রাষ্ট্র এই ব্যাপারে কোন রকমের হস্তক্ষেপ করবে না।

            (১৩) কৃষকদের ফসলের জন্য প্রকৃতির উপর যাতে নির্ভরশীল হয়ে পড়তে না হয় সেইজন্য রাষ্ট্রের পক্ষ হতে আধুনিক জলসেচের ব্যবস্থা করা হবে।

            (১৪) বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নটিকে বিপ্লবোত্তর অবস্থায় রাষ্ট্র প্রথম ও প্রধান বিষন বলে গণ্য করবে। বিশের সকল দেশ বিশেষ করে গণচীনের সাহায্য নিয়ে আমাদের দেশের অফুরন্ত জনশক্তির পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে পূর্ব বাংলার বন্যা সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান করা হবে।

            (১৫) কৃষকেরা তাঁদের অর্থকরী ফসল যেমন পাট, ইক্ষু, তামাক প্রভৃতির ন্যায্য দাম যাতে পাইতে পারে, রাষ্ট্র তার নিশ্চয়তা বিধান করবে। বিশেষ করে কৃষক পাতের ন্যায্য দাম যাতে পেতে পারে সেইজন্য রাষ্ট্র সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পাট ক্রয় করে তাঁদের প্রতিনিধি হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজারে তা প্রদর্শন করবে, পাট কেনাবেচার ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত পূর্ণ মূল্য রাষ্ট্র কৃষককে প্রদান করবে। দেশের শিল্পে ব্যবহার্য্য পাটের মুল্যও নির্ধারিত হবে এই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রাপ্ত পূর্ণ পাটের মূল্যের সাথে সংগতি রেখেই। এইভাবে কৃষকের অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করা হবে।

            (১৬) শিল্পে ব্যবহার্য্য কৃষিপণ্য উৎপাদনের ব্যাপারে রাষ্ট্র সকল রকমের উৎসাহ ও সাহায্য প্রদান করবে।

শিল্পনীতিঃ

            (১) জনগণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের চরিত্র হবে সমাজতান্ত্রিক এবং তা সামগ্রিকভাবে জাতীয় অর্থনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে। কিন্তু জনগণের জীবিকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না এমন বক্তিগণ মালিকানায়া প্রতিষ্ঠিত শিল্প ও পুঁজিবাদী উতপাদনে রাষ্ট্রা বাঁধা প্রদান করবেন না

            (২) রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ও পরিচালনায় মূল ও ভারী শিল্প গড়া হবে।

            (৩) বিদ্যুৎশক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কল-কব্জা নির্মানের ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে।

            (৪) বিলাসদ্রব্য উৎপাদনে নিরুৎসাহ করা হবে।

            (৫) (ক) ক্ষুদ্র শিল্প, যথা- তাঁত ও লবণ শিল্প সংরক্ষণ করার জন্য রাষ্ট্র যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (খ) পূর্ব বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁত ও বয়ন শিল্প যাতে রক্ষা পেতে পারে ও উন্নত শিল্পে পরিণত হতে পারে,

            সেইজন্য রাষ্ট্র তাঁতীদের নিয়ন্ত্রিত স্বল্পমূল্যে সূতা সরবরাহ করবে। (গ) পূর্ব বাংলার লবণশিল্প ও ক্ষুদে লবণ উৎপাদকেরা যাতে রক্ষা পেতে পারে সেইজন্য রাষ্ট্র লবণ কর বাতিল করবে এবং বিদেশ হতে লবণ আমদানী নিষিদ্ধ করবে। লবণ চাষীরা যদি জোতদারের জমিতে লবণ চাষ করে তাহলে উক্ত জোতদারের জমি বাজেয়াপ্ত করে লবণ চাষীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। জোতদার নয় এমন জমির মালিকদের জমিও উপযুক্ত মূল্যে রাষ্ট্র কিনে নিবে এবং লবণ চাষীদের মাঝে বিতরণ করবে। এইভাবে লবণ উৎপাদনের উপযোগী জমির উপর প্রকৃত লবণ চাষীর স্বত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা হবে। লবণ চাষীরা যাতে যৌথ সমবায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে সেইজন্য রাষ্ট্র তাঁদের উৎসাহ প্রদান করবে।

            (৬) বনজ শিল্প সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।।

            (৭) পূর্ব বাংলার খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও উন্নয়নের উপর রাষ্ট্র বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করবে। পূর্ব বাংলার ভূগর্ভে কয়লা, তেল, পেট্রোলিয়াম প্রভৃতি খনিজ সম্পদ আবিষ্কৃত হওয়ার যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে রাষ্ট্র ব্যাপক অনুসন্ধান, পরীক্ষা ও খননকার্য্যের মাধ্যমে তা আহরণের সব রকমের ব্যবস্থা অবলম্বন করবে।

            (৮) নদী-নালা, খাল-হাওর-বিলের দেশ পূর্ব বাংলার মৎস্য শিল্প গড়ে তোলায় জনগণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিশেষভাবে যত্নবান হবে। এই জন্য মাছ ধরা ও মাছ ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যে নৈরাজ্য চলছে তা দূর করা হবে এবং একে পুর্ব বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ ও লাভজনক শিল্পে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্র নিম্নোক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করবেঃ

            (ক) মৎস্য চাষের বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থা অবলম্বন করা হবে। কৃত্রিম উপায়ে মতস্য প্রজননের ব্যবস্থা করা হবে।

            (খ) নতী-নালা, খাল-বিল ও হাওড়ে জেলেদের মাছ ধরা র জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ হতে মাছ ধরার যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী স্বল্পমূল্যে তাদের কাছে সরবরাহ করা হবে “জাল যার জল তার” এই নীতির ভিত্তিতে ইজারাদারী প্রতাহ ও জলকর গ্রহণ প্রত্যাহার করা হবে।

            (গ) বড় বড় নদী, গভীর সমুদ্রে রাষ্ট্র নিজেই সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা মাছ ধরার ব্যবস্থা করবে।

            (ঘ) মৎস্য সুংরক্ষণের জন্য কোলড স্টোরেজ ও দেশী-বিদেশী বাজারে চলালন দেওয়ার জন্য পরিবহণের ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

            (ঙ) আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য যাতে বিদেশে রপ্তানী হতে পারে তার উপর রাষ্ট্র বিশেষ দৃষ্টি প্রদান করবে ও মৎস্য রপ্তানী ব্যবসাকে রাষ্ট্রায়ত্ব করা হবে।

            (৯) বিদ্যুৎ শক্তির উন্নয়ঙ্কল্পে আণবিক প্রকল্প নির্মাণ করা হবে।

            (১০) জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্যাস শিল্পের উন্নয়ন করা হবে।

            (১১) সমস্ত শহর ও গ্রামাঞ্চলকে বৈদ্যুতিকরণ করা হবে।

শ্রমনীতিঃ

            শ্রেণী সংগ্রামের বিকাশের এবং ভবিষ্যৎ সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার নেতা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যকে সামনে রেখে শ্রমনীতি নির্ধারিত হবে। এর রূপরেখা হবেঃ

            (১) রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ও ব্যক্তিগত মালিকানায় পরিচালিত শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন করার পরিপূর্ণ অধিকার থাকবে।

            (২) পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেণীসংগ্রাম পরিচালনা ও ধর্মঘট করার অধিকার থাকবে।

            (৩) উভয় পক্ষের আলাপ আলোচনা ও জনগণতান্ত্রিক সরকারের মধ্যস্থতায় শ্রমিক ও মালিকের মধ্যকার বিরোধগুলো মীমাংস করা হবে।

            (৪) রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পসমুহ শ্রমিক কর্মচারী ও রাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করবে। রাষ্ট্র ও শ্রমিকদের প্রতিনিধি যৌথভাবে শ্রমিকদের স্বার্থ, শিল্পের সম্প্রসারণ ও দেশের সার্বিক স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে শ্রমিকদের বেতন এবং আভ্যন্তরীণ প্রশাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে নীতি নির্ধারণ করবে।

            (৫) সকল শ্রমিকদের জন্য বিনা ভাড়ায় পারিবারিক বাসস্থান, বিনা খরচে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ও বিনা পয়সায় আমোদ-প্রমোদের ব্যবস্থা করা হবে। শ্রমিক কর্মচারীদের সন্তান-সন্ততিদের জন্য রাষ্ট্র বিনা খরচে শিক্ষার ব্যবস্থা করবে। মহিলা শ্রমিকদের জন্য প্রসবকালীন সবেতন ছুটি ও প্রসূতি ভাতার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

            (৬) রোগ-ব্যাধি, কর্মক্ষমতা লোপ, বার্ধক্য ও অবসর গ্রহণকালে শ্রমিক কর্মচারীদের যত্ন, সাহায্য দান ও সামাজিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বৃদ্ধ বয়সে পেনশন, দুর্ঘটনাজনিত ক্ষতিপূরণ ও ভাতা প্রদান করা হবে।

            (৭) খাদ্য দ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যের সাথে সমতা বিধান করে শ্রমিক কর্মচারীদের নিম্নতম মজুরী নির্ধারণ করা হবে। এই নিম্নতম মজুরী এমন হবে যাতে শুধু শ্রমিকেরা নিজেরাই নয়, বরং তাঁদের পরিবার পরিজনসহ সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাত্রা চালাতে পারে।

            (৮) একই সুযোগ সুবিধাসহ বিকল্প কর্মসংস্থান ব্যতীত শ্রমিক ছাঁটাই করা চলবে না। শ্রমিকদের চাকরী হতে বরখাস্ত করা চলবে না, তবে শ্রমিকেরা কোন প্রকার অপরাধ করলে তার জন্য তাঁদের সংশোধনের দায়িত্ব শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন গ্রহণ করবে।

            (৯) ব্যক্তিগত মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত শিল্পের ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক ও কর্মচারীদের অংশ গ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করা হবে।

            (১০) সকল প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ নিম্ন বেতনের ব্যবধান হ্রাস করা হবে। সকল পর্যায়ের সরকারী কর্মচারীদের বেতনের ব্যবধানও হ্রাস করা হবে।

শিল্পে পুঁজিবাদী উৎপাদন প্রসঙ্গেঃ

            (১) রাষ্ট্র ব্যক্তিগত মালিকানায় শিল্প প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা, পুঁজির বিকাশ ও পুঁজিবাদী উৎপাদনের স্বাধীনতা প্রদান করবে, কিন্তু তা যাতে জনগণের জীবন ধারণের ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

            (২) ক্ষুদ্র শিল্প ও হস্ত শিল্প পুনঃনির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে এবং এই উন্নয়নে সাহায্য করার জন্য শিল্প ব্যবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ছোট পুঁজিপতিদের উৎসাহিত করা হবে।

            (৩) এই সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার বহির্ভূত অথবা ঐ পরিকল্পনার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কোন শিকপ বা ব্যবসায়ের অনুমতি দেবে না।

            (৪) দেশীয় উৎপাদনকে উৎসাহ দান ও সংরক্ষণের অনুকূল শুল্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

            (৫) এই সমস্ত শিল্পের  ব্যবস্থাপনায় শ্রমিক ও কর্মচারীদের অংশ গ্রহণের অধিকার সংরক্ষণ করা হবে।

জনসংখ্যার ভিত্তিতে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোটে
শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও সার্বভৌম পার্লামেন্টের যৌথ দায়িত্ব পালনেসক্ষম পরিষদ নির্বাচনের সুপারিশঃ

গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৬ শে মার্চ তাঁহার বেতার ভাষণে ও পরে ১০ ই এপ্রিল সাংবাদিক সম্মেলনে সুষ্পষ্টভাবে ঘোষনা করিয়াছেন , দেশে সামরিক শাসন জারীর পেছনে সামরিক বাহিনীর কোন রাজনৈতিক অভিলাষ নাই বরং প্রত্যক্ষ ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করাই কেবল তাহার সরকারের লক্ষ্য । দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ অনুকূল থাকিলে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে বলিয়া তিনি ঘোষনা করিয়াছেন ।

পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পক্ষ হইতে আমি এবং আমার দলীয় বন্ধুরা মনে করি যে , দেশে যেরূপ স্বাভাবিক অবস্থা বিদ্যমান থাকিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতে পারে বলিয়া ঘোষনা করা হইয়াছিল , দেশে সেইরূপ স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করিতেছে । তাই, আমরা মনে করিতেছি , বিলম্ব না করিয়া শীঘ্রই জনপ্রতিনিধিদের হাতে দেশের শাসন ক্ষমতা অর্পণ করা প্রয়োজন এবং এই জন্য অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া দরকার এবং পূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশে পাকিস্তানের প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুবিধার্থে বিশেষ কোন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা অবলম্বনের বিষয় বিবেচনার জন্যও আমরা সকল দলমত ও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানাইতেছি ।

দেশে বর্তমান কোন গণতান্ত্রিক সরকার নাই; কোন শাসনতন্ত্র নাই- ইহাই বাস্তব অবস্থা । এই অবস্থার হাত হইতে মুক্তি পাইবার জন্য বিভিন্ন মহল হইতে বিভিন্ন প্রস্তাব আসিতেছে । যেমন – ১৯৫৬ সালের সাবেক শাসনতন্ত্র কে পুনর্বহাল করা , ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র কে নির্বাচনের ভিত্তি হিসাবে ধরা । প্রথমবারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ (…) ভোটে শাসনতন্ত্র সংশোধনের অধিকার সহ ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র গ্রহণ করা । তাছাড়া জাতীয় কনভেনশন ও গণভোটের মাধ্যমে শাসনতন্ত্র গ্রহণ করার প্রস্তাব ও উঠিতেছে ।

শাসনতন্ত্র সমস্যা সমাধানের তৈয়ারী (…) ব্যবস্থা হিসাবে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র বর্তমান সময়ে দেশবাসীর নিকট কোন মতেই গ্রহণযোগ্য হইতে পারেনা । কারন ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে পূর্ব পাইস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন নাই , অথচ এই দাবী আদায়ে দেশের জনগণকে দীর্ঘকাল হইতে অত্যাচার সহ্য করিতে হইয়াছে , এমনকি প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হইয়াছে । ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রে পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট ব্যবস্থা কায়েম করা হইয়াছে ।  ইহা দ্বারা সেখানকার জনগনের বিশেষতঃ বেলুচ পাঠান সিন্ধিদের স্বায়ত্বশাসন হরণ করা হইয়াছে । এই শাসনতন্ত্রে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবীকে অস্বীকার করিয়া অগণতান্ত্রিক সংখ্যাসাম্য নীতি কায়েম করা হইয়াছে । ইহা পূর্ব পাকিস্তানের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করিয়াছে ।

১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্রকে নির্বাচনের ভিত্তি হিসাবেও গ্রহণ করা যায় না । কারন ইহাতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা নাই।

১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র গ্রহণের মাধ্যমে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠান করিয়া প্রথমবারের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র সংশোধনের বিষয় যাঁহারা সুপারিশ করিতেছেন , আমরা তাহাদের সঙ্গেও একমত হইতে পারিতেছিনা । কারণ , এইরূপ অধিকার কে কাহাকে দিবে এবং এইরূপ অঙ্গীকার যে রক্ষিত হইবে উহার গ্যারান্টি কোথায় ? উপরন্তু , ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র সম্পর্কে নমনীয় নীতি গ্রহনের ফলে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন , এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নে দেশবাসীকে যে পুনরায় ধোঁকাবাজি দেওয়ার কারসাজি থাকিতে পারে , উহা অতীতের রাজনৈতিক ঘটনাবলী স্বাক্ষ্য দিবে ।

জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে শাসনতন্ত্রের মূলনীতি স্থির করিয়া গণভোটের দ্বারা উহা গ্রহণের যে প্রস্তাব করা হইয়াছে সে বিষয়েও আমরা একমত হইতে পারিতেছি না । কারন , প্রথমতঃ কনভেনশনে সকলের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা নাই । অতীতের ঘটনাই ইহার প্রমান । দ্বিতীয়ত কনভেনশনে অংশগ্রহণকারীগণ সকল বিষয়ে ঐক্যমত হইবেন , তাহা আশা না করাই বাঞ্ছনীয় । ঐক্যমত্য না হইলে নূতন সংকট দেখা দিবে  তৃতীয়ত গণভোটে বিকল্প থাকিবে কিনা এবং থাকিলে কতগুলি বিকল্প থাকিবে উহা স্থির করা দুরুহ ব্যপার । বিকল্পহীন গণভোট যেরুপ অর্থহীন হইবে , অনুরুপভাবে বহূসংখ্যক বিকল্প থাকিলে এমন জটিলতা দেখা দিবে , যাহা পুনরায় সংকট ডাকিয়া আনিবে ।

বিভিন্ন মহলের বিভিন্ন প্রস্তাব গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিয়া আমরা মনে করি , অবিলম্বে সার্বজনীন প্রত্যক্ষ ভোটে জনসংখ্যার ভিত্তিতে এইরুপ পরিষদ নির্বাচন করা দরকার, যাহা একি সঙ্গে সার্বভৌম পার্লামেন্ট ও গণপরিষদের যৌথ দায়িত্ব পালন করিবে । অর্থাৎ দেশ শাসন এবং সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শাসনতন্ত্র  রচনা – এই উভয় দায়িত্বই এই পরিষদ পালন করিবেন ।

অতীতের তিক্ত ও বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতা মরনে রাখিয়া সকলেরই আজ দেশে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে দ্রুত রাষ্ট্রক্ষমতা ফিরাইয়া আনা এবং রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষার কাজে ঐক্যবদ্ধভাবে অগ্রসর হইয়া আসা প্রয়োজন এবং গণপ্রতিনিধিদের হাতেই আস্থার সহিত শাসনতন্ত্র প্রণয়নের দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত ।

এই প্রসঙ্গে এই কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলিয়া রাখা প্রয়োজন মনে করিতেছি যে , পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন, পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবী অস্বীকার করিয়া দেশের শাসনতন্ত্র সমস্যার সমাধান কিছুতেই সম্ভব নয় । এই তিনটি দাবীকে ধামাচাপা দিয়া প্রকৃত সমস্যার সমাধান হইবে না । ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচীতে পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবী পশ্চিম পাকিস্তানের এক ইউনিট বাতিলের দাবী উত্থাপিত হইয়াছে এবং জনগন ১১ দফার জন্য অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়া ইতিহাসে সৃষ্টিকারী গণঅভ্যুত্থান দেশে ঘটাইয়াছে । এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ১১ দফার শাসনতান্ত্রিক দাবীসমূহ ( ১১ দফার ২, ৩ ও ৪ নম্বর দাবী) সহ মোট ৫ টি দাবী গোলটেবিক বৈঠকে উত্থাপন করিয়াছিলাম । আমি ও আমার সহকর্মীগণ মনে করি , ন্যাপ এই সকল দাবী হইতে বিচ্যুত হইবে না এবং এই দাবীগুলি আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিরলস প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইবে ।

আমরা অত্যন্ত দুঃখের সহিত লক্ষ্য করিতেছি, কোন কোন রাজনৈতিক মহল বর্তমান অবস্থার সুযোগ পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন, এক ইউনিট বাতিল ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধিত্বের দাবী ধামাচাপা দিয়া সমস্যার দ্রুত সমধানের নামে কৌশলে ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র স্বীকার করিয়া লইবার জন্য ব্যস্ত হইয়া পরিয়াছেন । তাঁহাদের এই অপচেষ্টা ফলপ্রসু হইবে না  । জনতা সময়ে এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইবে , ইতিহাসে এই স্বাক্ষই বহন করে ।

পরিশেষে আমরা আশু রাজনৈতিক লক্ষ্য হিসাবে জনপ্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর ও শাসনতন্ত্র রচনার জন্য অবিলম্বে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পর্কে সকল গনতান্ত্রিক দলের মধ্যে আলোচনা , সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার আবেদন জানাইতেছি । ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে সর্বদাই জনগন ও দেশের স্বার্থকে স্থান দিবে এবং এই জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রহিয়াছে ।

                                                                                অধ্যাপক মোজাফফর  আহমেদ

                                                                                             (সভাপতি)

পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি

<02.102.468-469>

শিরোনাম- ইয়াহিয়া সরকারের শিক্ষানীতি এবং বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের সমালোচনা করে ছাত্রসমাজের বক্তব্য

সূত্র- ছাত্রসমাজ ( তিনটি বৃহৎ সংগঠন)

তারিখ – আগষ্ট (১৯৬৯)

 

শিক্ষানীতির নামে প্রতিক্রিয়াশীলদের মিথ্যা অপপ্রচার সম্পর্কে ছাত্রসমাজের আবেদন

দ্বিতীয় সামরিক সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতি পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ছাত্রসমাজ সমর্থন করিতে পারেনাই । সামরিক সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি পূর্ব পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ছাত্রসমাজ সমর্থন করিতে পারেনাই । সামরিক সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির সমর্থক ইসলামী ছাত্রসংঘ নামক একটি তথাকথিত ছাত্র প্রতিষ্ঠান ও তাহাদের মুরব্বী জামাতে ইসলাম নামক একটি তথাকথিত ছাত্র প্রতিষ্ঠান এই কারনে ক্ষিপ্ত হইয়া উঠিয়াছে এবং অযথা “ ইসলাম বিপন্ন” প্রভৃতি শ্লোগান তুলিয়া আইয়ূব- মোনায়েম আমলের মতই পুরাতন কায়দায় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রসমাজের বিরুদ্ধে বল্গাহীন অপপ্রচার চালাইতে শুরু করিয়াছেন । এই সকল গোষ্ঠী প্রকাশ্যভাবে উস্কানিমূলক নগ্ন প্রচারণাও চালাইতেছেন এবং জনগনের মধ্যে ধর্মভিত্তিক বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টাও করিতেছেন শিক্ষানীতিকে কেন্দ্র করিয়া ইহাদের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ দেশে বর্তমানে বিরাজমান শান্তিপূর্ণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে নস্যাৎ করিবার অপচেষ্টা ব্যতীত আর কিছুই নয় । এবং ইহার অর্থ হইতেছে নির্বাচন এবং ১১ দফা ভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রভৃতি সম্পর্কে গণতান্ত্রিক মহল ও দেশবাসীর দাবীসমূহ নস্যাৎ করিবার সুযোগ আরো সম্প্রসারিত করা । প্রকৃতপক্ষে বিগত গণঅভ্যুত্থানের সময় হইতেই জামাতে ইসলাম , ইসলামী ছাত্রসংঘ প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলি পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন , এক ইউনিট বাতিল , পূর্ণ গনতন্ত্র কায়েম ও ছাত্র , শ্রমিক , কৃষক মধ্যবিত্তদের ন্যায্য দাবীসমূহ তথা ১১ দফার বিরোধিতা করিয়াছে । এরই পরিপ্রেক্ষিতেই এই সকল গোষ্ঠী বর্তমান সরকারের প্রস্তাবিত শিক্ষানীতির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করিয়া শিক্ষানীতি মতামত প্রদানকারী তথা গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল মহলের বিরুদ্ধে  মিথ্যা অপপ্রচার চালাইতেছে । তাহাদের এই সকল প্রচারণার জন্য দেশের মসজিদসমূহকে তাহারা ব্যবহার করিতেছে । পবিত্র মসজিদকে ইহারা নিজেদের গণবিরোধী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাহাদের রাজনৈতিক আখড়ায় পরিণত করিয়াছে ।

সকলেই এ কথা জানেন যে , সরকার প্রস্তাবিত খসড়া শিক্ষানীতি সম্পর্কে খোলাখুলি মতামত প্রদানের আহবান জানান । এই অভিমত লিখিতভাবে সরকারের নিকট পেশ করা হয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (…) উদ্যোগে বিগত ১২ আগস্ট শিক্ষানীতির উপর একটি আলোচনা সভা (সেমিনার) আহবান করা হয় । এই আলোচনা সভায় যখন ‘ভাষা’ বিষয়ে আলোচনা হইতেছিল , সে সময় ইসলামী ছাত্রসংঘের কতিপয় সদস্য আকস্মিকভাবে গোলযোগ শুরু করে এবং বক্তা ও শ্রোতাদের আক্রমন করে । ফলে সাধারন ছাত্র উদ্যোক্তাদের কেহ আহত হয় । সকলে আলোচনা গৃহ হইতে বাহির হইয়া আসিতে বাধ্য হয় । কিন্তু ইহাতেও ইসলামী ছাত্রসংঘের আক্রমন বন্ধ হয়না । ফলে অনিবারযভাবে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয় । এই সংঘর্ষের অনিবার্য পরিনতি হিসাবে আব্দুল মালেকের জীবনাবসান ঘটে । আমরা মালেকের অকালমৃত্যুতে গভীর  শোক প্রকাশ করিয়াছি এবং শান্তিপূর্ণ আলচনাসভায় গুন্ডাবাজির পশ্চাতে যে একটি সুপরিকল্পিত উদ্দেশ্য রহিয়াছে উহাও উন্মোচন করা প্রয়োজন  মনে করি ।

ইসলামী ছাত্রসংঘ প্রচার করিয়াছে যে , সেমিনারে ইসলাম বিরোধী ভাষন দেয়া হইতেছিল এবং তাদের বক্তৃতাদানের অধিকার দেওয়া হয়নাই । তাহাদের এই প্রচারনা সর্বৈব মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ।

প্রকৃত ঘটনা হইল এই যে , পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি জনাব শামসুদ্দোহা যখন খসড়া শিক্ষানীতির বিভিন্ন ত্রুটি বিচ্যুতি চুলচেরা বিশ্লেষন করিয়া ভাষার বিষয়ে বক্তৃতা করিতেছিলাম সে সময়ই তাহারা আক্রমন করিয়া বসে । সেমিনারে বক্তৃতা করিবার জন্য সেমিনারের সভাপতি জনাব তোফায়েল আহমদর অনুমতি চাহিয়া তাহারা নিরাশ হইয়াছে এইরুপ কোন ঘটনা ঘটেনাই । এই সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রসমূহে এমনকি প্রেস ট্রাস্টের পত্রিকাসমূহেও প্রকাশিত হইয়াছে । প্রকৃতপক্ষে গোলযোগ সৃষ্টিকারী ও আক্রমণকারীগণ আত্মপক্ষ সমর্থন ও বালির বাঁধের পশ্চাতে আত্মরক্ষার জন্যই ইসলাম বিপন্ন ও সেমিনারে বক্তৃতা দানের গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রশ্ন উত্থাপন করিয়াছেন । কিন্তু অন্যদের বক্তৃতার সময় লাঠি ও অন্যান্য অস্ত্র দ্বারা আক্রমন করিতে তাদের বিন্দুমাত্র দ্বিধা হয়নাই । সেমিনারের ঘটনাবলী প্রমান করে যে খসড়া শিক্ষানীতির বিরোধীতা করিবার ফলেই ইসলামী ছাত্রসংঘ তাহাদের রাজনৈতিক মুরব্বীগন গণতান্ত্রিক ছাত্রসমাজের উপর ক্ষিপ্ত হইয়াছে ।

ইহা বর্তমানে সকলেরই জানা আছে যে , পূর্ব  পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক ছাত্র সমাজ কেন খসড়া শিক্ষানীতির বিরোধিতা করিতেছে । আমরা মনে করি যে , প্রস্তাবিত শিক্ষানীতি আমাদের আশা আকাঙ্খার অনুরূপ হয়নাই । এই শিক্ষানীতি কার্যকরী করা হইলে শিক্ষাক্ষেত্রে সংকট বৃদ্ধি পাবে । বর্তমানে যে বৈষম্য রহিয়াছে তা  আরো বৃদ্ধি পাবে । শিক্ষানীতি সম্পর্কে আমাদের অভিমত পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত হইয়াছে , ‘ইসলাম’ ও ‘পাকিস্তানের সংহতি’র বিরোধিতা করার জন্যই আমরা শিক্ষানীতির বিরোধিতা করিতেছি ইহা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রচার বরং আমাদের দাবী হইল দেশের সংহতি রক্ষা ও সেজন্য সকল ভাষাভাষি জাতীয়সমূহের জাতিয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে স্বীকারের মাধ্যমে জাতিগত শোষন ও নিপীড়ন বন্ধ করা । ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষানীতির অর্থ ইসলাম বিরোধিতা নয় , বরং সকল ধর্মাবলম্বীর ধর্মীয় অধিকার রক্ষা করা ও প্রয়োজনমত ধর্মীয় শিক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও চালু রাখা । কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি এই সকল বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবেই ইসলাম বিরোধী হিসাবে মিথ্যা প্রচার করিতেছে । ইহার উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট ।

এই পরিস্থিতিতে আমরা দেশের ছাত্রসমাজ, শিক্ষক, অভিভাবকমণ্ডলী , গণতান্ত্রিক মহল ও সর্বোপরি শ্রমিক , কৃষক মধ্যবিত্ত তথা আপামর জনগণের নিকট আবেদন জানাইতেছি যে , প্রতিক্রিয়াশীলদের উদ্দেশ্যপুর্ণ প্রচারণা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিহত করিতে আগাইয়া আসুন । ছাত্র , শ্রমিক , কৃষক মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবিদের গণতান্ত্রিক ঐক্য প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সকল চক্রান্ত ব্যর্থ করিবে ইহাতে কোন সন্দেহ নাই । অতীতের অভিজ্ঞতাই ইহার প্রমাণ । কিন্তু বর্তমানে সকলকে সতর্ক ও হূশিয়ার থাকিবার জন্য আমরা আহবান জানাইতেছি ।

শামসুদ্দোহা (সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন)

তোফায়েল আহমদ (সভাপতি, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ)

মোস্তফা জামাল হায়দার (সভাপতি,পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন)

নুরুল ইসলাম (সাধারন সম্পাদক,পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন)

আঃসঃমঃ আব্দুর রব ( সাধারন সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র লীগ )

মাহবুবুল্লাহ ( সাধারনব সম্পাদক, পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন)

<2.103.470-474>

শিরোনাম সূত্র তারিখ
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামীলীগ : নীতি ও কর্মসূচী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ১ লা আগষ্ট, ১৯৬৯

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ

নীতি ও কর্মসূচী ঘোষণা

(ম্যানিফেষ্টো)

তাজউদ্দীন আহমদ

সাধারণ সম্পাদক

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।

[১৯৬৪ সনের মার্চ, ১৯৬৬ সনের মার্চ ও ১৯৬৭ সনের আগষ্ট মাসে অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন সমূহ গৃহীত সংসধনীনিচিয় আন্তরভুক্ত করিয়া এই ‘নীতি ও কর্মসূচীর ঘোষণা’ (ম্যানিফেষ্টো) তৃতীয় প্রকাশরুপে পুর্নমুদ্রণ করা হইল।]

ভূমিকা

স্বাধীনতা ও সার্বভৌম পাকিস্তান কায়েম করা হয় এই উদ্দেশ্যে যে, এখানে সুবিচার ও ন্যায়-নীতিভিক্তিক এক নতুন সমাজ ব্যবস্থা গড়িয়া তোলা হইবে-যেখানে জনগনের জীবনযাত্রার সর্বাঙ্গীন মানোন্নয়নের মাধ্যমে এক সুখী, সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল সমাজ গড়িয়া উঠিবে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত করা হয় এই আশায় যে, এখানে দেশের সম্পদ মুষ্টিমেয় কয়েকজনের বা কয়েক গোষ্ঠীর হাতে কেন্দ্রীভূত না হইয়া দেশের সমগ্র জনসাধারণের মধ্যে সমভাবে বণ্টিত হইবে, তাহাদের সর্বাত্মক কল্যাণ ব্যয়িত হইবে। স্বভাবতই আশা করা গিয়াছিল যে, এখানে প্রতিটি নাগরিকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সহজ, সুন্দর ও স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের ন্যুনতম শর্তাবলী পূরণের পরিপূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা হইবে। পাকিস্তানের নাগরিকরা অত্যন্ত ন্যায়সঙ্গতভাবেই আশা করিয়াছিল চিন্তার ও চিন্তাধারা প্রকাশের পূর্ণ ও নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা, পাক স্বাধীনতা, সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা, মুদ্রণ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা এবং মৌলিক স্বাধীনটার পূর্ণ নিশ্চয়তা; আশা করা গিয়াছিল অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার ও জনগনের ভোগের সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা।

কিন্তু দেশবাসী মর্মান্তিকভাবে হতাশ হইয়াছে, তাহাদের আশা পূর্ণ হয় নাই, তাহারা এই সকল মৌলিক অধিকার ভোগের অধিকার পায় নাই। জনগনের এইসব অধিকার ও স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও উপভোগের জন্য হে সুস্পষ্ট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থার প্রয়োজন সেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা ও দেশের কার্যকরী করার সুযোগ দেওয়া হয় নাই। ক্ষমতা লোভী একদল চক্রান্তকারী, এক সংকীর্ণ আমলাতান্ত্রিক গোষ্ঠী এবং স্বার্থ সর্বস্ব একটি সামন্তবাদী ও পুঁজিবাদী শ্রেণী সম্মিলিতভাবে দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলনের প্রতিটি প্রচেষ্টা বাঞ্চাল করিয়া দিয়াছে। এই স্বার্থপর কুচক্রীদলের দেশ ও গন স্বার্থ বিরোধী কার্যকলাপের নজিরের অভাব নাই। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী মরহুম হোস্বন শহীদ সোহরওয়ার্দী সাহেব যখন তাহার স্বল্পকালস্থায়ী প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে এ দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ করিয়াছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁহাকে পদত্যাগ করুতে বাধ্য করা হইয়া ছিল।

এই অশুভ চক্রের তৎপরতার ও প্রাধান্যের ফলেই ন্যায়-নীতি ও ইন্সাফ বিসর্জন দিয়া এবং পাকিস্তানের ঐক্যের মুলে কুঠারাঘাত করিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের এক বিরাট পাহাড় সৃষ্টি করা হইয়াছে, যাহার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামো আজ প্রায় ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে।

            এই দুর্বিষহ অবস্থা হইতে দেশকে রক্ষা করিবার দায়িত্ব আমাদের, -আমাদিগকে এই দায়িত্ব পালন করিতে হইবে। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেব দেশকে এই দুঃসহ অবস্থা হইতে মুক্ত করিবার জন্য অর্থাৎ এ দেশে সত্যিকার গণতন্ত্র কায়েম করিবার জন্য এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ন্যায়বচার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিয়া গিয়াছেন। জেল-জুলুম ও অন্য সমল প্রকার প্রতিবন্ধককে সহ্য ও অগ্রাহ্য করিয়া জন্মবধি আওয়ামী লীগ এই মহান উদ্দেশ্য হাসিল ও বাস্তবায়নের পথ দৃঢ় ও নিরালস সংগ্রাম করিয়া চলিয়াছে। এখানে উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ফলেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অর্থনৈতিক অবিচারের অন্ততঃ কিছুটা মৌখিক স্বীকৃতি সকল মহলই প্রদান করিতে বাধ্য হইয়াছে। কিন্তু ইহা মৌলিক স্বীকৃতি মাত্র, কার্যতঃ সর্বক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাইয়া চালিয়াছে।

            ভৌগোলিক ও অন্যান্য কারণে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবী অবশ্যই যুক্তিপুর্ণ ও গ্রহণযোগ্য। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধকালে এই অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনায় এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত এই অঞ্চলের স্বাভাবিক যোগাযোগ ব্যাপারে যে অসুবিধার সৃষ্টি হইয়াছিল তাহাতে এই অঞ্চলের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের যৌক্তিকতা ও অপরিহার্য্যতা বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে অকাট্যরুপে প্রমাণিত হইয়াছে।

            আমাদের প্রিয় নেতা মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সাহেবের প্রতিষ্ঠাত আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক গণতন্ত্র এবং আঞ্চলিক ও প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম সংগ্রাম চালাইয়া যাইবে, কারণ, ইহাকে পাকিস্তানের সকল জনগনের দাবী এবং ‘জনগণের নির্দেশেই সকল ব্যবস্থার উৎস’।

শাসনতান্ত্রিক আদর্শ

            আওয়ামীলীগ জাতিয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। ইহা অত্যন্ত দৃঢ়তার সহিত বিশ্বাস করে যে, জনগণই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের অধিকারী এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কর্তৃক রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পরিচালিত হইবে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা পরিচালনায় নিয়োজিত সকল ব্যক্তিই তাহাদের নিজ কার্য্যকলাপের জন্য জনসাধারণের নিকট সর্বতোভাবে দায়ী হইবে।

            উল্লিখিত মূল নীতি সমূহের ভিক্তিতে শাসনতন্ত্রের আইন প্রণয়ন, শাসঙ্কার্জ অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও দেশরক্ষা কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ বর্তমানে সর্বাধিক প্রয়োজন। শুধু এই যুক্তিযুক্ত ও বাস্তব ব্যবস্থার মাধ্যমেই পাকিস্তানের সঙ্ঘতি, স্থায়িত্ব, নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি নিশ্চয়তা বিধান সম্ভব বলিয়া আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে।

            রাষ্ট্রে সকল প্রতিনিধিত্ব মূলক প্রতিষ্ঠান প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের সার্বজনীন ও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবে। ধর্ম, বর্ণ। শ্রেনী ও মত নির্বিশেষে নারী-পুরুষ প্রত্যেক নাগরীক ১৮ বৎসর বয়সে ভোটাধিকার নাভ করিবে এবং ২১ বৎসর পূর্ণ হইলে যে কোন ভোটার নির্বাচনে প্রার্থী হইবার অধিকারী হইবে। নির্বাচন স্বাধীনভাবে এবং গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হইবে।

 

মৌলিক অধিকার

ধর্ম,বর্ণ, শ্রেণী, মত ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ও জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদে স্বীকৃত প্রতিটি অধিকারী হইবে। নাগরিকদের ধর্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাস্থ্য, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু জীবনযাপনের অধিকার ও সুযোগ প্রতিষ্ঠিত করিতে হইবে। সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, এবং ন্যায়সঙ্গত ও সহজ উপায়ে জীবিকা অর্জন ব্যবস্থা থাকিতে হইবে।

আইনের চোখে সকল নাগরিক সমান বলিয়া বিবেচিত হইবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকই আইন সঙ্গত সকল অধিকার ও মর্যাদা সমানভাবে ভোগ করিবে। অল্প ব্যয়ে দ্রুত ও সহজ উপায়ে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা করিতে হইবে।

 

ব্যক্তিস্বাধীনতা

পাকিস্তানের প্রতিটি নাগরিককে তাহার সর্বক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হইবে, যাহাতে সে স্বীয় প্রতিভা বিকাশের পূর্ণ সুযোগ লাভ করিতে পারে এবং জাতীয় জীবনের সকল পর্যায়ে স্বীয় সামর্থ্য অনুযায়ী অংশগ্রহণ করিতে পারে ও সমাজের বৃহত্তম কল্যাণে সাধণ করিতে পারে। মতামত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, বই-পুস্তক, সংবাদপত্র ও প্রচারপত্র মুদ্রণ ও প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা, সমবেত হইবার ও সংগঠন করিবার পূর্ণ সাহিনতা এবং দেশের সর্বত্র অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা থাকিতে হইবে, উপযুক্ত ও আইন সঙ্গত কারন ব্যাতীত কাহাকেও গ্রেফতার করা বিনা বিচারে কাহাকেও আটক ক্রাখা চলিবে না

            একমাত্র যুদ্ধকালীন সময় ব্যাতীত অন্য কোন সময়ে এই সকল অধিকার খর্ব করা হইবে না। ‘জরুরী অবস্থার’ অজুহাতে অন্যায়ভাবে কোন নাগরিকের অধিকার খর্ব করা চলিবে না।

            সর্বোপরি আওয়ামী লীগ হিন্দু-মুসলিম, বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী প্রভৃতি সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও আঞ্চলিক বিভেদ ও বিদ্বেষের সম্পূর্ণ বিরোধী। আওয়ামীলীগ ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী ও মত নির্বিশেষে সকল নাগরিক সমান অধিকারে বিশ্বাস, ইহা গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রাথমিক শর্ত।

বিচার বিভাগ

বিচার বিভাগ হইতে সম্পূর্ণরূপে পৃথক থাকিবে। শাসনতন্ত্রে বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা বিধান থাকিবে। বিচার বিভাগের যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা, ও স্বাধীনটার উপযুক্ত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে।

শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাবঃ    

            ইহা পুনরুল্লেখ নিষ্প্রয়োজন যে, আওয়ামী লীগ নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক বিধি-ব্যবস্থায় বিশ্বাসী এবং ইহা প্রতিষ্ঠার জন্য এই সংগঠনের সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালাইয়া যাইবে। এখানে বিশেষভাবে কতিপয় প্রস্তাবের উল্লেখ করা যাইতেছে- যেগুলিকে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে :

  • পাকিস্তান হইবে একটি “ফেডারেশন” বা যুক্তরাষ্ট্র। এই ব্যবস্থা যৌক্তিকতা বা অপরিহার্যতা সম্বন্ধে আলোচনা অবকাশ নাই, ইহা সর্বজন স্বীকৃত সত্য। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান এই উভয় অঞ্চলকে পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দিতে হইবে। সরকার হইবে ‘পার্লামেন্ট’ ধরনের, যাহাতে প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকদের ভোটে প্রত্যক্ষ নির্বাচনের ময়াধ্যমে গঠিত আইন সভা সার্বভৌম। যুক্তরাষ্ট্রীয় আইন সভায় আসন সংখ্যা জন সংখ্যার ভিক্তিতে নির্ধারিত হইবে।

  • যুক্তরাষ্ট্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা দুইটি বিষয়ে সীমাবধ্য থাকিবে, -যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকিবে নিরঙ্কুশ।

  • সমগ্র দেশের জন্য দুইটি পৃথক অবাধে বিনিময় যোগ্য মুদ্রা চালু থাকিবে।

অথবা

  • বিশেষ ব্যবস্থা শর্তাধীনে মুদ্রা ও অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রীয় বিষয় রুপে গৃহীত হইতে পারে। এই ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রীয় কর্তকতাধীন “ষ্টেট ব্যাংক” –এর পরিচালনার অধিনে দুই আঞ্চলে দুইটি “রিজার্ভ ব্যাংক” থাকিবে। এই অঞ্চলিক রিজার্ভ ব্যাংকগুলি আঞ্চলিক সরকারের অর্থনৈতিক ব্যাপারে পরামর্শ দান করিবে এবং যাহাতে এক অঞ্চল হইতে অন্য অঞ্চলে অবাধে অর্থ ও মূলধন পাচার হইতে না পারে তাহার কার্যকরী ব্যবস্থা অবলম্বন করিবে।

  • শাসন সম্বন্ধীয় কার্য নির্বাহের সুবিধার জন্য এবং নানা প্রকার জতিলতা এড়াইবার জন্য কর ও শুল্ক ধার্যের দায়িত্বে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির উপরই ন্যস্ত থাকা বাঞ্ছনীয়। এই ব্যপারে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের কোন ক্ষমতা অর্পণের প্রয়োজন নাই। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির রাজস্বের একটি স্বীকৃতি অংশ শাসনতন্ত্রিক ব্যবস্থানুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের অবশ্য প্রাপ্য হইবে। অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির আয়ের একটি অংশ স্বয়ংক্রিয় নিয়মে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব তহবিলে জমা হইবে।

  • যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রতিটি অঙ্গ রাষ্ট্র বহির্বানিজ্যের পৃথক হিসাবে রক্ষা করিতে এবং বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গ রাষ্ট্রগুলির এখতিয়ারাধীন থাকিবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে বা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলিই মিটাইবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের বৈদেশিক নীতির সহিত রাখিয়া অঙ্গ রাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বানিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্বীয় স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সাম্পাদনের ক্ষমতা দান করিতে হইবে।

  • আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসন তন্ত্রের রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা অঞ্চলের সেনাবাহিনী গথন ও রয়াখার ক্ষমতা দিতে হইবে।

শাসনতন্ত্রে কার্যকরী এবং যথোপযুক্ত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হইবে যাহাতে যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের সামরিক ও বেসামরিক চাকুরিতে উভয় অঞ্চলের লোক সংখ্যা অনুপাতে নিযুক্ত হইতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্তৃত্বাধীন সরকারী, আধা-সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা ও বিভাগ সমউহ এমনভাবে স্থাপন করিতে হইবে এবং যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের ব্যয়, বিনিয়োগ ও নির্মাণকার্য এমন ভাবে পরিচালিত হইবে যাহাতে পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের লোক জনসংখ্যার অনুপারে সমান সুযোগ ও সুবিধা লাভ করিতে পারে।

অর্থনৈতিক আদর্শ

      আওয়ামী লীগের আদর্শ স্বাধীন, শোষণহীন ও শ্রেণীহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমেই বরতমান শোষণ, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্দশার হাত হইতে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব বলিয়া আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে। অর্থনৈতিক ই সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠান কল্পে সমাজতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা আওয়ামীলীগের চুরান্ত লক্ষ্য।

শিল্পঃ

      যুগ যুগ ধরিয়া নির্মম শোঁশোঁের ফলে পাকিস্তান সামগ্রিকভাবে অনুন্নত অবস্থায় রহিয়া গিয়াছে। দেশের মানোন্নয়নের জন্য ইহার প্রাকৃতিক ও কৃষিজ সম্পদের ব্যবহার দ্বারা সুষম ভাবেদেশকে শিল্পায়িত করা আওয়ামী লীগের আশু লক্ষ। শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে কোন প্রকার একচেটিয়া অধিকার স্বীকার করা হইবে না। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান সমুহের মূলধন সরবরাহ ও অন্য সকল ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা হইবে। ভৌগলিক অবস্থা ভুমির পরিমান ও জনসংখ্যা এবং প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে পূর্ব পাকিস্তানকে অধিকতর শিপ্লায়িত করা ব্যাপক পরিকল্পনা অবশ্যই গ্রহন করিতে হইবে।

      মুল, ভারী, ও বৃহৎ শিল্প, যথাঃ খনিজ শিল্প, ইস্পাত শিল্প, সমত শিল্প, বিদ্যুৎ ও রাসায়নিক শিল্প, -জাতীয়করন করিতে হইবে এবং ইহাদের পরিচালনার ভার রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে গঠিত ও পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর নেস্ত করিতে হইবে,

      ব্যাংক, বীমা, গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন ও যোগাযোগ প্রভৃতি প্রত্যক্ষ জনস্বার্থমূলক প্রতিষ্ঠান সমূহ জাতীয়করণ করা হইবে এবং বৈদেশিক বাণিজ্য রাষ্ট্রত্তাধীনে পরিচালিত হইবে।

      পাকিস্তান, বিশেষভাবে পূর্ব পাকিস্তানের মত জনবহুল কৃষি প্রধান দেশে কুটির শিল্প প্রসারের প্রয়োজনীয়তা, উপযোগিতা ও সাফল্য অনস্বীকার্য। সহজ অর্থনীতির খাতিরে কুটির শিল্পকে সর্ব প্রকার সাহায্য ও উৎসাহ প্রদান করিতে হইবে। দেশের সকল অঞ্চলে উহার বহুল প্রসারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। বর্তমানে চলিত ও ক্ষেয়মান কুটির শিল্পকে টিকাইয়া রাখার জন্য সর্ব প্রকার সাহায্য প্রদান ও ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে এবং নুতন ও প্রয়োজনীয় কুটির শিল্পের প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।

কৃষিঃ

      কৃষি উন্নয়নের জন্য যে সকল স্বভাবজাত উৎপাদনের প্রয়োজন পাকিস্তান, বিশেষ ভাবে পূর্ব পাকিস্তান সেই সকল উপাদানে সমৃদ্ধ। কিন্তু স্বভাবজাত প্রাচুর্যের মধ্য এই দেশের কৃষক সমাজ কঠিন দারিদ্রের নিষ্পেষণে জর্জরিত ও মুমূর্ষ। এই বেদনাদায়ক অবস্থার প্রতিকারের জন্য কৃষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত ও সভ্য পর্যায়ে আনয়নের উদ্দেশ্যে এক ব্যাপক ও বহুমুখী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অগৌণ কার্যকরী করিতে হইবে।

      পূর্ব পাকিস্তানের ভুমি প্রাকৃতিক সম্পদে ঐশ্বর্যবান। এই ভুমি আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও ব্যবহারের ব্যবস্থা করিতে হইবে। সমবায় পদ্ধতিতে দেশে যৌথ চাষাবাদের প্রচলন করিতে হইবে। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি কৃষকের জমির পরিমাণ এত অল্প এবং তাহাও এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খন্ডে বিভক্ত যে, সমবায় পদ্ধতিতে চাষাবাদ ব্যতীত এখানে কৃষির উন্নয়নের কোন উপায় নাই। অতিসত্বর দেশের সর্বত্র যৌথ খামার সৃষ্টি করিতে হইবে। কৃষি ব্যাংকের, সমবায় ব্যাংকের এবং অন্যান্য কৃষি ঋণের টাকা ক্রিসকের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বিতরণ না করিয়া সমবায় পদ্ধতিতে পরিচালিত কৃষির জন্য উহা ব্যয় করা উচিত। ইহার ফলে কৃষকদের প্রধান সমস্যার মূলধন সমস্যার সমাধান অনেকাংশে সম্ভব হইবে।

      সমবায় পদ্ধতিতে কৃষি ব্যবস্থার ফলে আধিনিক চাষ ও জলসেচের যন্ত্রপাতি ক্রয়, উন্নত বীজ সংগ্রহ এবং উৎপাদিত ফসলের সংরক্ষণ ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা সহজ হইবে।

      আধুনিক কৃষি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সর্ব প্রকার যন্ত্রপাতি পূর্ব পাকিস্তানে প্রস্তুত করিবার জন্য কারখানা স্থাপন করিতে হইবে। উন্নত ধরনের বীজ সরবরাহের, জমিতে সার প্রদানের ও সেচ ব্যবস্থার এবং গাবাদি পশুর উন্নতির সর্ব প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করিতে হইবে। বিভিন্ন পোকা-মাকড় ও রোগের ফলে শস্যাদির ব্যাপর ক্ষতির উপযুক্ত প্রতিরোধের ব্যবস্থা কার্য্যকরী করিয়া তুলিতে হইবে।

      সরকার কর্তৃক পর্যাপ্ত সংখ্যক আদর্শ খামার প্রচলিত করিয়া কৃষকদিগকে কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষি উন্নয়নের আধুনিক পন্থা প্রদর্শন করিতে হইবে।