You dont have javascript enabled! Please enable it! রবীন্দ্র সংগীত বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর বিবৃতি - সংগ্রামের নোটবুক
শিরোনাম সূত্র তারিখ
রবীন্দ্র সংগীত বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর বিবৃতি

দৈনিক ‘পাকিস্থান’

 

২৮জুন, ১৯৬৭

রবীন্দ্র সংগীত বর্জনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মওলানা ভাসানীর বিবৃতি

রেডিও পাকিস্থান হতে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রবেশন সম্পর্কে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি মওলানা ভাসানী গতকাল মঙ্গলবার নিম্নলিখিত দিয়েছেন।

“তথ্যমন্ত্রী জনাব সাহাবুদ্দিন ঘোষনা করেছেন যে, রবীন্দ্র সঙ্গীত ইসলাম ও পাকিস্থানের ঐতিহ্য পরপন্থী বিধায় আর বেতার ও টেলিভিশনের মারফত পরিবেশিত হবে না।“

“ কিছুদিন পূর্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জনাব সবুর খানও রবীন্দ্রনাথা সম্পর্কে অনুরূপ বক্তব্য পেশ করেছিলেন। তাঁদের এই বক্তব্য পাকিস্থান সরকারের মনোভাবেরই প্রকাশ কিনা, ইহাই সরকারের নিকট আমার জিজ্ঞাস্য।“

রবীন্দ্রনাথ তাহার কাব্য,সাহিত্য,ছোটগল্প,প্রবন্ধ, নাটক ও উপন্যাস ও সংগীতের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে নতুন গৌরবে অভিষিক্ত করেছেন।

রবীন্দ্রনাথের অবদান সার্বজনীন।

ইসলাম সত্য ও সুন্দরের জন্ম ঘোষনা করেছেন। এই সত্য ও সুন্দরের পতাতাকে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ।

<২.৫৭.২৯০>

লাহোরে পাকিস্তান কাউন্সিলে হামিদুর রহমান  আরবী হরফে বাংলা ও উর্দু লেখার সুপারিশ করেন

 লাহোর।– সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জনাব হামুদুর রহমান বলেছেন যে দুটো জাতীয় ভাষার জন্যই আরবী চালু করা হলে তা জাতীয় সংহতি জোরদার করার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করতে পারে। গতকাল এখানে পাকিস্থান কাউন্সিলে বাংলা সাহিত্যের ২০ বছর শীর্ষক আলোচনা সভায় ভাষণ দান প্রসঙ্গে তিনি উক্ত মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, আরবীই একমাত্র ভাষা যাকে সাধারণ হরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। বাংলা ভাষা সহজেই আরবী হরফে লেখা যেতে পারে। অপরদিকে উর্দু ভাষাকে আরবী হরফে লেখা হচ্ছে। তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে ব্লেন, কয়েক বছর আগে থেকে হুফে-উল-কোরান নামক একটি বাংলা সাময়িকী আরবী হরফে প্রকাশিত হচ্ছে এবং পূর্ব পাকিস্থানে এই সাময়িকীটি খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিচারপতি হামুদুর রহমান এই জাতীয় সমস্যা সামাধানের উদ্দ্বশ্য তার বাণী পূর্ব পাকিস্থাএর জনসাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য ঢাকা কলেজের অধ্যাপক জনাব শওকত ওসমানের প্রতি আহবান জানান।

তিনি পাকিস্থানের লেখদের প্রতিও সুস্থ ব্যাপারটী চিন্তা করে তাঁদের সাহিত্যে আরবী হরফ ব্যবহার করার জন্য আহবান জানান।

 

<2..58.291-295>

পি ডি এম

পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন

গণতান্ত্রিক ও আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েমের উদ্দেশ্যে

৮ দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে

৫টি বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের

ঐক্যবদ্ধ গণ-আন্দোলন

পি ডি এম-এর অংগদলসমূহঃ

  • পাকিস্তান আওয়ামী লীগ
  • পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাউন্সিল)
  • জামায়াতে ইসলামী, পাকিস্তান
  • পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টি
  • জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এন ডি এফ)

ঘোষণাপত্র

জনগণের অধিকারের উপর বর্তমান শাসন কর্তৃপক্ষের অবিরাম অন্যায় হস্তক্ষেপ ১৯৫৮ সন হইতে অপ্রশমিতভাবে অব্যাহত রহিয়াছে। প্রত্যেক সভ্য দেশে গণ-অধিকার ও ব্যক্তিস্বাধীনতা মৌলিক বলিয়া স্বীকৃত এবং স্বাধীন ও সভ্য সমাজের অস্তিত্বটুকু প্রয়োজনেই তাহা অলংঘ্য ও পবিত্র বলিয়া বিবেচিত। কিন্তু এই দেশে ইহার কোন একটি বিষয়ও দমননীতির হাত হইতে রেহাই পায় নাই।

এই অসহনীয় পরিস্থিতির প্রতিকার, জনগণকে সরকারের ভ্রান্তনীতি ও কুশাসনজনিত দুর্ভোগ হইতে মুক্ত করা এবং জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার বহাল করার উদ্দেশ্যে নিম্নলিখিত রাজনৈতিক দলসমূহ “পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন” নামক একটি সংস্থা গঠন করিবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছে।

পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, পাকিস্তান মুসলীম লীগ (কাউন্সিল), পাকিস্তান, পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান।

এই অংগদলসমূহ উপলব্ধি করিয়াছে যে জনগণের হৃত অধিকার পুনর্বহাল করিবার জন্য দৃঢ়, ইতিবাচক ও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন।

পাকিস্তান আন্দোলনের সর্বসম্মত কর্মসূচী ও ইহার সাংগঠনিক কাঠামো এই ইস্তাহারের সহিত সংযোগ করা হইল।

সর্বসম্মতভাবে গৃহীত এই কর্মসূচী জনগণের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক অধিকারসমূহের নিরাপত্তার জন্য শাসনতান্ত্রিক রক্ষাকবচের ব্যবস্থব করিয়াছে এবং পূর্ব ওপশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বৈষম্য দূরীভূত করিয়া গোটা দেশের সুষম উন্নয়নের নিশ্চয়তা বিধান করিয়াছে।

অংগদলসমূহ জনগণের মৌলিক প্রয়োজন সম্বন্ধেও সম্পূর্ণ সচেতন রহিয়াছে। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে জনগণের বিরাট অংশ আজ পর্যন্ত জীবনধারণের নিম্মতম মানও অর্জন করিতে সক্ষম হয় নাই। অনুগ্রহপুষ্ট অল্প সংখ্যক ভাগ্যবান ব্যতীত মাঠে কর্মরত কৃষক, কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন কর্মক্ষেপে সকলেই চরম ক্লেশ ও দুঃখ-দৈন্যের মধ্যে কালাতিপাত করিতেছে।

অংগদলসমূহের দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় নীতি ও আইন প্রণয়নের মাধ্যমে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার নিশ্চিত করিতে হইলে ঐসব অন্যায় ও অবিচার অবশ্যই দূরীভূত হওয়া উচিত। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিচার নিশ্চিত করিতে হইলে ঐসব অন্যায় ও অবিচার অবিচার অবশ্যই দূরীভূত হওয়া উচিত। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে অবশ্যই এমন ছাঁচে ঢালাই করিতে হইবে যাহাতে সমস্ত নাগরিকের অবাধ কর্মসংস্থান এবং খাদ্য, বস্ত্র, বাসগৃহ, চিকিৎসা ও শিক্ষা ইত্যাদি মৌলিক প্রয়োজন পূরণ হয়।

এই লক্ষ্য অর্জন করিতে হইলে নীতির ফলে সম্পদ ও রাষ্ট্রীয় অর্থ-শক্তি বর্তমানে অল্পসংখ্যক লোকের কুক্ষিগত রহিয়াছে তাহার আমূল পরিবর্তন আবশ্যক। সকলকে সমান সুযোগ প্রদান এবং সম্পদের সম্ভাব্য ব্যাপকতম বন্টনের ব্যবস্থা করা পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের বিঘোষিত উদ্দেশ্যে।

অংগদলসমূহ এই মতও পোষণ করে যে পাকিস্তানের স্বীয় স্বার্থেই আদর্শ ও মতবাদ নির্বিশেষে সকল বিদেশী রাষ্ট্রের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা কর্তব্য এবং এই উদ্দেশ্যে একমাত্র জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন ও জোটনিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অবলম্বন করা উচিত।

পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংগদলসমূহ জাতির এই সর্বসম্মত দাবী সম্পর্কে সচেতন যে একমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্থাপিত সরকার দ্বারাই একমাত্র মৌলিক সমস্যাসমূহের সমাধান হইতে পারে। শুধু এই উপায়ে পাকিস্তানকে শক্তিশালী, সুখী, সুসংহত ও অখন্ড জাতিতে করা যাইতে পারে। পাকিস্তানের জনগণের জন্মগত অধিকার অস্বীকার করিবার যে কোন প্রচেষ্টাই নিশ্চিত রুপে মারাত্মক পরিণাম ডাকিয়া আনিবে।

জনগণের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর ও সামাজিক ন্যায় বিচার নিশ্চিত করিবার উদ্দেশ্যে পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন সকল গণতন্ত্রমনা নাগরিকদের প্রতি এই আন্দোলনের পতাকাতলে সমবেত হইবার জন্য উদাত্ত আহবান জানাইতেছে।

৮ দফা কর্মসূচী

[এক]

শাসনতন্ত্রে নিম্ন-বিধানসমূহের ব্যবস্থা থাকিবেঃ

            (ক) পার্লামেন্টারী পদ্ধতির ফেডারেল সরকার,

            (খ) ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র মোতাবেক প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদে প্রাধান্য,

            (গ) পূর্ণাংগ মৌলিক অধিকার।

            (ঘ) সংবাদপত্রের অবাধ আযাদী ও

            (ঙ) বিচার বিভাগের নিশ্চিত স্বাধীনতা।

[দুই]

ফেডারেল সরকার নিম্ন বিষয়সমূহের উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করিবেনঃ

            (ক) প্রতিরক্ষা (ডিফেন্স)

            (খ) বৈদেশিক আয়

            (গ) মুদ্রা ও কেন্দ্রীয় অর্থ-ব্যবস্থা

            (ঘ) আন্তপ্রাদেশিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য এবং ঐক্যমত্যে নির্ধারিত অন্য যে কোন বিষয়।

[তিন]

            পূর্ব আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম করা হইবে এবং কেন্দ্রীয় বিষয় ছাড়া সরকারের অবিশষ্ট যাবতীয় ক্ষমতা শাসনতন্ত্র মোতাবেক স্থাপিত উভয় আঞ্চলিক সরকারের নিকটই ন্যস্ত থাকিবে।

[চার]

            উভয় প্রদেশের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক বৈষম্য দশ বৎসরের মধ্যে দূর করা পাকিস্তান সরকারের শাসনতান্ত্রিক দায়িত্ব হইবেঃ

            (ক) এই সময়ের মধ্যে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ে ব্যয় এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক ঋণসহ কেন্দ্রীয় সরকারের দেনায় পূর্ব-পাকিস্তানে ব্যয়িত অর্থের আনুপাতিক অংশ আদায়ের পর পূর্ব-পাকিস্তানে অর্জিত সম্পূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা নিরংকুশভাবে এই প্রদেশেই ব্যয় করা হইবে।

            (খ) দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রাদেশিক সরকারদ্বয়ের নিরংকুশ কর্তৃত্বাধীনেই থাকিবে।

            (গ) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হওয়া পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের ক্ষেত্রে পূর্ব-পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন এবং এমন আর্থিক নীতি গ্রহন পূর্ব-পাকিস্তানে করিবেন যাহাতে পূর্ব-পাকিস্তান হইতে মূলধন পাচার সম্পূর্ণ বন্ধ হইয়া যায়। এই উদ্দেশ্যে ব্যাংকের মজুদ অর্থ ও মুনাফা, বীমার প্রিমিয়াম এবং শিল্পের মুনাফা সম্পর্কে যথাসময়ে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করা হইবে।

[পাঁচ]

            (ক) মুদ্রা, বৈদেশিক মুদ্রা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকিং,

            (খ) আমত্মাঃআঞ্চলিক বানিজ্য

            (গ) আমত্মাঃআঞ্চলিক যোগাযোগ

            (ঘ) বৈদেশিক বাণিজ্য।

            উপরোক্ত বিষয়সমূহের প্রত্যেকটি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত এক একটি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হইবে। জাতীয় পরিষদের প্রত্যেক প্রদেশের সদস্যগণ নিজ প্রদেশের জন্য উক্ত বোর্ডসমূহের সদস্যগণ নির্বাচ বৈদেশিক মুদ্রান করিবেন।

[ছয়]

            সুপ্রীম কোর্ট এবং কূটনৈতিক বিভাগসহ কেন্দ্রীয় সরকারের সকল বিভাগ ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমসংখ্যক ব্যক্তি দ্বারা গঠিত হইবে। এই সংখ্যাসাম্য অর্জনের জন্য ভবিষ্যতে এমনভাবে কর্মচারী নিয়োগ করিতে হইবে যাহাতে দশ বৎসরের মধ্যে তাহাদের সংখ্যা উভয় প্রদেশে সমান হইতে পারে।

[সাত]

            প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কার্যকরী সামরিক শক্তি ও সমর-সজ্জার ব্যাপারে উভয় অঞ্চলের মধ্যে সমতা বিধান করা পাকিস্তান সরকারের শাসনতান্ত্রিক দ্বায়িত্ব হইবে। এই উদ্দেশ্যেঃ

            (ক) পূর্ব-পাকিস্তানে সামরিক একাডেমী, অস্ত্র-নির্মান কারখানা, ক্যাডেট কলেজ ও স্কুল স্থাপন করিতে হইবে।

            (খ) দেশরক্ষা বাহিনীর তিনটি বিভাগেই পূর্ব-পাকিস্তান হইতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোক নিয়োগ করিতে হইবে।

            (গ) নৌবাহিনীর সদর দফতর পূর্ব-পাকিস্তানে স্থানান্তরিত করিতে হইবে।

            এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমসংখ্যক সদস্য সম্বলিত একটি ডিফেন্স কাউন্সিল গঠন করা হইবে।

[আট]

            এই ঘোষণায় ‘শাসনতন্ত্র’ শব্দ দ্বারা ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র বুঝায়-যাহা অবিলম্বে জারী করা হইবে। এই শাসনতন্ত্র চালু করিববার ছয় মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশনেই এই কর্মসূচীর দুই হইতে সাত নম্বর দফাসমূহকে শাসনতন্ত্রে সন্নিবেশিত করা হইবে।

            উপরোক্ত লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্তর্ভুক্ত সকল রাজনৈতিক দল ও প্রতিষ্ঠান ঐক্যবদ্ধ এবং পৃথকভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইলেন।

সাংগঠনিক কাঠামো

উপরোক্ত লক্ষ্য অর্জনের এবং অগণতান্ত্রিক মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংগ্রাম করার উদ্দেশ্যে নিম্ম স্বাক্ষরকারী দল ও সংস্থাসমূহ পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে সক্রিয় ঐক্য প্রচেষ্টা ও গণমনে আবেদন সৃষ্টির জন্য একটি কর্মপ্রবণ ঐক্যজোট গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করিয়াছেন। এই আন্দোলন সুপরিচিত গণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালিত হইবে এবং কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোন পদ্ধতি অবলম্বন করিবে না।

            ১। সংশ্লিষ্ট দলের সভাপতি ও চেয়ারম্যানসহ প্রত্যেক অংগদলের ৬ জন করিয়া সদস্য সমন্বয়ে একটি জাতীয় কর্মপরিষদ গঠিত হইবে। এই কর্মপরিষদ সর্বসম্মত কর্মসূচী সম্পর্কে অংগদলসমূহের পক্ষ হইতে প্রতিনিধিত্ব করিবার ও কার্য পরিচালনার পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হইবে। কর্মপরিষদ সর্বসম্মতভাবে অনূর্ধ্ব ৬ জন সদস্য কো-অপট করিতে পারিবে।

            ২। জাতীয় কর্মপরিষদ আপন সদস্যগণের মধ্য হইতে প্রতিবৎসর নিম্ম কর্মকর্তাগণকে নির্বাচন করিবেন। সভাপতি ১ জন, সাধারণ সম্পাদক ১ জন, যুগ্ম সম্পাদক ১ জন, কোষাধ্যক্ষ ১ জন।

            ৩। জাতীয় কর্মপরিষদের অনুরূপ উভয় প্রদেশের জন্য একটি করিয়া আঞ্চলিক কর্মপরিষদ থাকিবে। আঞ্চলিক কর্মপরিষদ আবার জিলা ও নিম্ন পর্যায়ে অনুরূপভাবে কমিটি গঠন করিতে পারিবে। এই শাখাসমূহ উক্ত কর্মসূচী ও জাতীয় কর্মপরিষদের গৃহীত নীতি মানিয়া চলিতে বাধ্য থাকিবে।

            ৪। প্রত্যেক প্রদেশের অন্ততঃ ৫ জন সদস্যসহ ১৫ জন সদস্য দ্বারা জাতীয় কর্মপরিষদের কোরাম গঠিত হইবে।

            ৫। জাতীয় কর্মপরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহন করিবে। অবশ্য সর্বসম্মত কর্মসূচী পরিবর্তন করিতে হইলে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হইবে।

আজ ১৯৬৭ সালের ৩০ শে এপ্রিল ঢাকায় ৫ টি দলের পক্ষ হইতে নিম্ম স্বাক্ষরকারী দস্তখত করিলেনঃ

            ১। জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টঃ নুরুল আমীন, হামিদুল হক চৌধুরী ও আতাউর রহমান খান।

            ২। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কাউন্সিল): মোমতাজ দৌলানা, সাইয়েদ খাজা খায়রুদ্দীন ও তাফাজ্জল আলী।

            ৩। জামাতে ইসলামী পাকিস্তানঃ তোফায়েল মুহম্মদ, মুহম্মদ আব্দুর রহীম ও গোলাম আযম

            ৪। পাকিস্তান আওয়ামী লীগঃ নাছরুল্লাহ খান, আবদুস ছালাম খান ও গোলাম মুহম্মদ খান লুন্দখোর।

            ৫। পাকিস্তান নেযামে ইসলাম পার্টিঃ মুহাম্মদ আলী, ফরীদ আহমদ ও এম. আর. খান।

১৯৭৬ সালের মে মাসে নির্বাচিত

জাতীয় পরিষদের কর্মকর্তাগণ

সভাপতি- নওয়াব জাদা নাছরুল্লাহ খান (আঃ লীগ)

সহসভাপতিদ্বয়-(১) এডভোকেট নাসীম হাসান (নেঃ ইস)

                     (২) সাইয়েদ খাজা খায়রুদ্দীন (মুঃ লীগ)

সাধারন সম্পাদক- জনাব মাহমুদ আলী এম,এন,এ (এন,ডি,এফ)

যুগ্ম সম্পাদক- সাইয়েদ ছিদ্দীকুল হাসান জিলানী (জাঃ ইস)

কোষাধ্যক্ষ- ব্যারিস্টার এম, আনোয়ার (স্বতন্ত্র)

১৯৬৭ সালের আগষ্ঠে নির্বাচিত

পূর্ব পাক আঞ্চলিক কর্মপরিষদের কর্মকর্তাগণ

            সভাপতি- এডভোকেট আবদুস ছালাম খান (আঃ লীগ)

            সহসভাপতিদ্বয়- (১) মাওলানা সাইয়েদ মুছলেহুদ্দীন (নেঃ ইস)

                                    (২) এডভোকেট নওয়াজেশ আহমদ (মুঃ লীগ)

            সাধারণ সম্পাদক- অধ্যাপক গোলাম আযম (জাঃ ইস)

            যুগ্ম সম্পাদক- মাওলানা নুরুজ্জামান (আঃ লীগ)

            কোষাধ্যক্ষ- জনাব এম, আর, খান (নেঃ ইস)

গণতান্ত্রিক শিবিরে ঐক্যের গুরুত্ব

গণতন্ত্রে বিশ্বাসী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই গণতন্ত্র, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, উভয় প্রদেশের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্যের প্রতিকার এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা দাবী করিয়া বিভিন্ন দফা সম্বলিত কর্মসূচী পেশ করিয়াছেন। তন্মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর ৫-দফা, আওয়ামী লীগের ৬-দফা ও মুসলীম লীগের (কাউন্সিল) ৭-দফা উল্লেখযোগ্য। এন-ডি-এফ এবং নেজামে ইসলাম পার্টিও ঐ সব বিষয়ে বলিষ্ঠ দাবী জানাইয়া আসিতেছে।

<২.৫৮.২৯৬-২৯৯>

উপরোক্ত দাবীতে এই সব দল পৃথক পৃথকভাবে যতই আন্দোলন করিতেছে ততই স্বৈরাচারী সরকার এক একটি দলের উপর নির্যাতন চালাইয়া, কর্মী ও নেতাগণকে বিনা বিচারে বন্দী করিয়া, কোন কোন দলকে বে-আইনী ঘোষণা করিয়া একে একে বিরোধী দলসমূহকে দুর্বল করিবার চেষ্টা করিতেছে। ফলে এই সব বিচ্ছিন্ন আন্দোলন দ্বারা ডিক্টেটরী শাসন দিন দিন আরও মজবুত হইবার সুযোগ পাইতেছে।

    এই কথা উপলব্ধি করিয়াই গণতন্ত্রকামী ৫টি বিরোধী দল তাঁহাদের বিভিন্ন-দফা দাবীর ভিত্তিতে “৮ দফা কর্মসূচী” প্রণয়ন করিয়া ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের যাবতীয় অধিকার আদায় করার বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করিয়াছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ব্যতীত মুক্তির কোন পথই যে নাই তাহা সকলেই স্বীকার করিতে বাধ্য।

    এই স্বীকৃতির ফলেই জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদসমূহে বিরোধী দলের সদস্যগণ তাঁহাদের দলীয় কর্মসূচীর বিভিন্নতা সত্ত্বেও একজোট হওয়া অপরিহার্য বলিয়া বিবেচনা করিয়াছেন। যেসব দল আইন সভার ভিতরে ঐক্যবদ্ধ হইতে বাধ্য হইয়াছে তাঁহাদের পক্ষে জনগণের ময়দানে বিভিন্ন থাকাই অস্বাভাবিক। গণতন্ত্রের প্রতি যাহাদের নিষ্ঠা রহিয়াছে তাঁহাদের পক্ষে এই পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক শিবির হইতে বিচ্ছিন্ন থাকা সম্পূর্ণ অসম্ভব।

৮ দফার সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ৮-দফা সকল দলের বিভিন্ন দফার ভিত্তিতে রচিত হইলেও কোন দলেরই সমস্ত দফা ইহাতে সামিল হইতে পারে নাই। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দল এত সব দফা পেশ করিয়াছে সেই উদ্দেশ্যে ৮-দফা দ্বারা পূর্ণ হইবে মনে করিয়াই তাঁহারা সর্বসম্মতভাবে এই নূন্যতম কর্মসূচীর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হইয়াছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর প্রত্যেক দলেরই নিজ দফাসমূহের বাকী অংশের জন্য আন্দোলন করিবার অধিকার রহিল।

    বিভিন্ন দলের দফাসমূহকে বিষয় ভিত্তিতে তিন ভাগে বিভক্ত করা যায়।

        ১। রাজনৈতিক

        ২। সামরিক

        ৩। অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক

রাজনৈতিক বিষয়

    এই কথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের উপরই অন্যান্য সমস্যার সমাধান নির্ভর করে। সামরিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানও রাজনৈতিক পন্থায় করিতে হইবে।

সামাজিক বিষয়

পূর্ব পাকিস্তানকে সামরিক দিক দিয়া স্বয়ংসম্পূর্ণ করিবার জন্য বিভিন্ন দল যত দাবী পেশ করিয়াছে তাহার সবগুলিই ৮-দফা কর্মসূচীর ৪র্থ দফায় শামিল করা হইয়াছে। উপরন্তু এই দফাটিকে আরও কার্যকরী করিবার জন্য ৭ম দফায় ডিফেন্স কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি অতিরিক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে।

অর্থনৈতিক ও আঞ্চলিক বিষয়

    পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন কায়েম, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, সর্বক্ষেত্রে সংখ্যাসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ২য়, ৩য়, ৫ম ও ৬ষ্ঠ দফাসমূহে বাস্তব ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। জাতীয় সংহতি বজায় রাখিয়া ইহার চেয়ে বলিষ্ঠ কোন কর্মসূচী প্রণয়ন সম্ভব কিনা তাহা দেশবাসীর বিবেচ্য।

 

 

৮-দফার বৈশিষ্ট্য

    ১। ২য় দফা হইতে ৮ম দফা পর্যন্ত ৭টি দফায়ই শুধু পূর্ব পাকিস্তানের দাবী সম্বলিত হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দ ইহাতে স্বাক্ষর করায় এই আঞ্চলিক দাবীসমূহ এখন জাতীয় দাবীতে পরিণত হইয়াছে।

    ২। সংখ্যাসাম্য নীতি স্বীকৃতি হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত যেসব কারণে বৈষম্যের প্রতিকার হয় নাই সেই সব কারণ দূর করিবার উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচীতে একটি বিশেষ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তে ন্যস্ত প্রত্যেকটি বিষয়ে সংখ্যাসাম্য নীতি বাস্তবায়িত করাইবার জন্য উভয় প্রদেশের সমান সংখ্যক সদস্যের সমন্বয়ে এক একটি বোর্ডের উপর দায়িত্ব অর্পণ করা হইয়াছে। আরও উল্লেখযোগ্য যে বোর্ডসমূহে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিগণকে জাতীয় পরিষদ পূর্ব পাকিস্তানী সদস্যগণই নির্বাচন করিবেন।

    ৩। পূর্ব পাকিস্তানের দাবীসমূহ লইয়া শুধু পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন হইলে পশ্চিম পাকিস্তানের জনগণ ইহাকে ঐ প্রদেশের বিরুদ্ধে এই প্রদেশের বিদ্বেষ মনে করিতে পারেন। কিন্তু ৮-দফা একটি জাতীয় কর্মসূচীতে পরিণত হওয়ায় পশ্চিম পাকিস্তানেও এই সব দাবীর পক্ষে জনমত সংগ্রহ করা সম্ভব হইবে। এইরূপে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে একই ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ দ্বারা জাতীয় সংহতিকে মজবুত করা যাইবে।

ঐক্যের স্থায়িত্ব

    বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঐক্য সম্পর্কে আজ পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা হইয়াছে তাহাতে এই ধরনের ঐক্যের স্থায়িত্ব সম্পর্কে কোন কোন মহল হইতে সন্দেহ প্রকাশ করা হইয়া থাকে। সেই দিক লক্ষ্য করিয়াই পিডিএম-কে অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বিভিন্ন ত্রুটি হইতে মুক্ত রাখিবার সুব্যবস্থা করা হইয়াছে। যে উদ্দেশ্যে এই ঐক্যজোট গঠিত হইয়াছে তাহা হাসিল না হওয়া পর্যন্ত যাহাতে ঐক্য বজায় থাকে সেই দিকে লক্ষ্য রাখিয়াই নিম্নরূপ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হইয়াছে।

    ১। বিগত সম্মিলিত বিরোধী দলের (কপ) ন্যায় পিডিএম নির্বাচনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় নাই। সম্মিলিতভাবে গণআন্দোলন পরিচালনার উদ্দেশ্যেই পি ডি এমের সৃষ্টি।

    ২। পূর্বে সম্মিলিত দলের (কপ) সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যে কোন অংগদল ‘ভেটো’ প্রয়োগ করিতে পারিত। কিন্তু পিডিএম সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতে পারিবে। অংগদলসমূহের কোন ‘ভেটো’ ক্ষমতা নেই।

    ৩। পূর্বে সম্মিলিত সংস্থায় (কপ) কর্মকর্তাগণ দলীয় ভিত্তিতে নির্ধারিত হইতেন। কিন্তু পি ডি এমের কাঠামোতে একটি সুসংবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ন্যায় গঠন করার ফলে ইহার কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ হইতে নিম্নতম শাখা কমিটি পর্যন্ত সর্বস্তরেই বৎসরে একবার নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে কর্মকর্তা নিযুক্ত হইবেন।

    ৪। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পি ডি এম যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবে তা অংগদলগুলি মানিয়া লইতে বাধ্য থাকিবেন।

দেশবাসীর নিকট আবেদন

    পাক-ভারতের দশ কোটি মুসলমান যে ভোটের সাহায্যে পাকিস্তান কায়েম করিয়াছে, আজ পাকিস্তানে তাঁহারা সেই ভোট হইতেও বঞ্চিত। তাঁহারা শুধু ইংরেজ শাসন হইতে মুক্তিলাভ করাই যথেষ্ট মনে করে নাই- সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের চাপ হইতেও তাঁহারা স্বাধীন হইতে চাহিয়াছিল। ভাগ্যের পরিহাস যে আজ তাঁহারা মৌলিক মানবিক অধিকার হইতেও বঞ্চিত।

    আজ ব্যক্তিস্বাধীনতার অবস্থা অত্যন্ত করুণ। জরুরী অবস্থা অপ্রয়োজনীয়ভাবে চালু রাখা, কথায় কথা ১৪৪ ধারা জারী করা, সভা-সমিতি ও মিছিলের সুযোগ না দেওয়া, বিনা বিচারে আটক রাখা, প্রতিরক্ষা আইনের অপপ্রয়োগ করা, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করা ইত্যাদির ফলে নাগরিক জীবন দুর্বিষহ উঠিয়াছে।

    তদুপরি সর্বস্তরে ব্যাপক দুর্নীতি, খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্য নৈতিকতা ও চরিত্রবিনষ্টকারী কার্যকলাপের অবাধ প্রসার, বেকার সমস্যা, ক্রমবর্ধমান ট্যাক্স ও খাজনার চাপ, শ্রমিক নির্যাতন, ছাত্র দলন, শিক্ষা সংকোচ নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবিস্থার অভাব ইত্যাদি সর্বস্তরে নৈরাশ্যের সৃষ্টি করিয়াছে।

    পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন গোটা দেশবাসী, বিশেষভাবে রাজনীতি সচেতন ব্যক্তিদের নিকট গভীরভাবে উপলব্ধি করিবার জন্য আকুল আবেদন জানাইতেছে যে,-

    (১) জনগণের অন্তর হইতে এই হতাশা দূর করিতে না পারিলে স্বাধীন জাতি হিসাবে টিকিয়া থাকা সম্পূর্ণ অসম্ভব।

    (২) প্রাপ্তবয়স্কদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্ধারিত প্রতিনিধিদের দ্বারা সরকার গঠনই এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ।

    (৩) বর্তমান পরিস্থিতিতে সকল গণতন্ত্রকামী ব্যক্তি ও দলের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ব্যতীত জনগণের ভোটাধিকার আদায় করা কিছুতেই সম্ভব নয়।

    (৪) অতীত অভিজ্ঞতার দ্বারা ইহাই প্রমাণিত হইয়াছে যে একনায়কত্বের পরিবেশে কোন দলের একক প্রচেষ্টা গণতন্ত্র কায়েমের পথকে আরও দুর্গম করিয়া তোলে।

    (৫) পাকিস্তান গণতান্ত্রিক আন্দোলন সর্বশেষ সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং ইহাই বর্তমানে একমাত্র সম্বল। গোটা পাকিস্তানে গণতন্ত্র কায়েম ও পূর্ব পাকিস্তানের দাবী আদায় করিতে হইলে এই আন্দোলনে শরীক হওয়া ব্যতীত অন্য কোন পথই নাই।

পি ডি এমের পতাকাতলে সমবেত হোন

এবং

বলিষ্ঠ কণ্ঠে আওয়াজ তুলুন

গণ-ঐক্য

  • গণতন্ত্রকামী জনতা- এক হও।
  • সকল বিরোধী দল- এক জোট হও।
  • ঐক্য বিরোধী মনোভাব- ত্যাগ কর।
  • জাতির মুক্তির সনদ- আট দফা।
  • পি ডি এমে- শামিল হও।

রাজনৈতিক দাবী

১। জরুরী অবস্থা- প্রত্যাহার কর।

২। গণতন্ত্র- কায়েম কর।

৩। আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসন- দিতে হবে।

৪। মৌলিক অধিকার- বহাল কর।

৫। বিচার ও শাসন বিভাগ- পৃথক কর।

৬। বিনা বিচারে আটকনীতি- বন্ধ কর।

৭। সার্বজনীন ভোটাধিকার- ফিরিয়ে দাও।

৮। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা- স্বীকার কর।

৯। সভা ও মিছিলের- সুযোগ দাও।

১০। স্বৈরাচারী শাসন- চলবে না।

অর্থনৈতিক দাবী

১। আঞ্চলিক বৈষম্য- দূর কর।

২। পুঁজিবাদ- ধ্বংস হোক।

৩। অর্থনৈতিক সুবিচার- কায়েম কর।

৪। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্য- রোধ কর।

৫। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা- চালু কর।

৬। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী- মানতে হবে।

৭। কৃষকদের হক- আদায় কর।

৮। পাটচাষীদের ন্যায্য দাবী- মানতে হবে।

৯। সার্টিফিকেট প্রথা- রহিত কর।

১০। বেকার সমস্যার- সমাধান কর।

অন্যায্য দাবী

১। ইসলাম বিরোধী আইন- বাতিল কর।

২। শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ- বন্ধ কর।

৩। শিক্ষক বেতন- বৃদ্ধি কর।

৪। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা- চালু কর।

৫। অবৈতনিক মাধ্যমিক শিক্ষা- প্রচলন কর।

৬। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে- স্বায়ত্তশাসন চাই।

৭। ছাত্রদের সমস্যা- সমাধান কর।*