৬ আশ্বিন ১৩৭৮ বৃহস্পতিবার ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭১
-মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা অবরুদ্ধ বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের জন্যে নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লন্ডনে অর্থ সংগ্রহের অভিযান চলে।
-ভারতীয় পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতি নির্ধারণ কমিটির চেয়ারম্যান ডি পি ধর মস্কো যাচ্ছে। শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধী ২৮ তারিখে আসন্ন মস্কো যাত্রার অগ্রবর্তী দল হিসেব তিনি যাত্রা করছেন বলে মনে করা হয়।
-মীরেশ্বরাই থানাতে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের অকথ্য অত্যাচারে অনেকের সঙ্গে বি এ ছাত্র বিমল কান্তি সেন শহীদ হয়।
-বাংলাদেশে সরকার মন্ত্রী পরিষদ সচিব জনাব এইচ টি ইমাম পরিকল্পনা কোষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী কাছে দেশের অভ্যন্তরে চাহিদা সংক্রান্ত পরিকল্পনা প্রনয়ণের জন্য এক পত্র দেন। (৩ খঃ পৃ ১৫২)
-The Mukti Bahini is steadily stepping up its operations and is expected to develop Air and Naval wings soon. Necessary funds for the purpose are said to have been already collected in London.(সংবাদপত্র)
-৬ নং সেক্টর উইং কমাণ্ডার এম কে বাশার মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামানকে রংপুর শহরে নিউ সেনাপড়াস্থ বাসভবনে অবস্থানরত কর্নেল এরশাদের (প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি) সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার জন্য যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশ দেন। এই সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে কারমাইকেল কলেজের ছাত্র শিক্ষকদের অতিপ্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মোখতার এলাহী তাঁর দু’জন সাথী সহ রংপুর থেকে বড় বাড়ি এলাকায় পোঁছান। ফেরার পথে সহযাত্রীগণ পালাতে সক্ষম হলেও মোকতার এলাহী ধরা পড়ে এবং পাকসেনারা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নারকীয় নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। পরে জানা যায় মোখতাঁর এলাহী রংপুর পৌঁছে কিন্তু কোন ক্রমেই কর্নেলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। (উত্তর রণাঙ্গনে বিজয় পৃঃ ৯৬)
-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ প্রশ্ন উত্থাপনের জন্য ভারত সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
-জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদানের উদ্দেশ্যের বাংলাদেশ সরকার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নিউইয়র্কে যাত্রা।
-বেনাপোলে ও সাতক্ষীরায় মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ। সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান বাহিনীর ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে।
-পাকসেনারা বিপুল সংখ্যক রাজাকারদের নিয়ে ২৭৪ সীমান্ত চৌকির ২.১০ টায় পৌঁছে যায়। ২৫ মার্চের পর পাক সীমান্ত বাহিনীকে বহু সীমান্ত চৌকি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। জুন মাসের প্রথমে সেগুলো পাকসেনারা দখল করে নেয়। এই সময়ে পাক সরকারের নতুন নির্দেশাবলী পাঠান। এই নির্দেশাবলীর প্রথম ভাগটা ছিল পরিস্থিতি বিশ্লেষণ। সমগ্র আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পাক কর্তৃপক্ষের অভিমত ছিলঃ ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পূর্ব পাকিস্তানের কতকগুলি সীমান্ত অঞ্চল দখল করার চেষ্টা করবে এবং ভারত সরকার সেই দখল করা এলাকায় স্বাধীন বাংলা সরকার নামক বস্তুটিকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সেই তথাকথিত স্বাধীন বাংলা সরকার দেখিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ বাড়াবার চেষ্টা করবে। আমাদের মনে হয়না ভারত সরকার গোটা পূর্ব পাকিস্তান দখল করার পরিকল্পনা নিয়ে নামবে। সে সাহস তারা পাবে না। তারা চাইবে সীমান্তের কাছাকাছি কয়েকটি বড় শহরকে নিয়ে একটা তথাকথিত মুক্ত এলাকা গঠন করতে। এই বিশ্লেষনের ভিত্তিতে ইসলামাবাদ সরকার পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজান। লেঃ জেঃ নিয়াজী এই মাষ্টার প্ল্যান, তৈরী করেন। (১০ খঃ পৃঃ ৭৭২)
Reference:
একাত্তরের দশ মাস – রবীন্দ্রনাথ ত্রিবেদী