You dont have javascript enabled! Please enable it!

ওয়াশিংটনে বঙ্গবন্ধু-ফোর্ড শীর্ষ বৈঠকে ফলপ্রসূ আলােচনা

ওয়াশিংটন: প্রেসিডেন্ট ফোর্ড ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হােয়াইট হাউসে ৪৫ মিনিট ব্যাপী এক বৈঠকে মিলিত হন। ১৯৭২ সালে মার্কিন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হ্বার পর থেকে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে এটাই প্রথম বৈঠক। হােয়াইট হাউস থেকে বলা হয় যে, দুই নেতা দু’দেশের সম্পর্ক ও পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলােচনা করায় ‘এক উত্তম সুযােগ লাভ করেন। জনৈক মার্কিন মুখপাত্র বলেন যে, মি. ফোর্ড বাংলাদেশের সঙ্গে অব্যাহত উত্তম সম্পর্ক রক্ষার ব্যাপারে আমাদের আগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশের চাহিদার প্রতি প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের সহানুভূতির আশ্বাস দিয়েছেন এবং বাংলাদেশের মারাত্মক অভাবের মােকাবিলায় সাধ্যমত সাহায্য দানের ব্যাপারে আমাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা হয় যে, উভয় নেতা বাংলাদেশে মার্কিন অর্থনৈতিক সাহায্যের বিষয়টি পর্যালােচনা করেন। এর মধ্যে ঢাকায় বর্তমানে একটি চুক্তি সম্পাদনের ব্যাপারে যে আলােচনা চলছে তা পর্যালােচনা করা হয়। এ আলােচনাধীন চুক্তিটির অধীনে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশে দুর্দিনে দেড় লক্ষ টন খাদ্যশস্য সরবরাহ করা হবে। প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীকে জানান যে, বাংলাদেশের বর্তমান জরুরি সাহায্যের আবেদনে সাড়া দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য আরাে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বরাদ্দ করার আশা পােষণ করছে। বৈঠকে আর যারা যােগদান করেন তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জনাব হােসেন আলী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জনাব কামাল হােসেন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ব্রেন্ট স্কোফট। গতমাসে বাংলাদেশের জাতিসংঘভুক্তির পর পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু যুক্তরাষ্ট্র আগমন করেন। বঙ্গবন্ধু-ফোর্ড বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ব্লেয়ার হাউসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হােসেন বলেন যে, বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ফোর্ড ‘বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাপূর্ণ আলােচনায় মিলিত হন এবং আলােচনায় উভয় পক্ষেই বিরাট সমঝােতা পরিলক্ষিত হয়। তিনি বলেন, তার দেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে দৃঢ় ও সন্তোষজনক’ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে বঙ্গবন্ধু ও প্রেসিডেন্ট ফোর্ড দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উপমহাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিকতর সাহায্য, সহযােগিতার সম্ভাবনার আলােকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পর্যালােচনা করেন। ড. কামাল হােসেন বলেন, প্রেসিডেন্ট ফোর্ড বাংলাদেশের বিপুল সমস্যা ও তার গুরুত্ব সম্পর্কে গভীর সহানুভূতি ও যথেষ্ট সমঝােতার মনােভাব ব্যক্ত করেন। আমরা প্রেসিডেন্টের আশ্বাস বাণীর প্রশংসা করছি। তিনি আশ্বাস দিচ্ছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সাহায্য কাঠামাের আওতায় বাংলাদেশের সাহায্য ‘সম্ভব সবকিছু করবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন যে, খাদ্য সরবরাহ দায় পরিষদ সংক্রান্ত সাহায্য এবং সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচিসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামগ্রিক প্রয়ােজনের কথা যুক্তরাষ্ট্রকে জানান। তিনি বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র চলতি ৩ মাসের জন্য দেড় লক্ষ টন খাদ্যশস্য প্রদানের প্রতিশ্রুতির আভাস দিয়েছে, এর মধ্যে ১ লক্ষ টন গম ও ৫০ হাজার টন চাল রয়েছে। ড. হােসেন নিউইয়র্কে সােমবার বঙ্গবন্ধু ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কিসিঞ্জারের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলােচনার কথা উল্লেখ করেন। এবং বলেন যে, ড. কিসিঞ্জার আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশসহ উপমহাদেশ সফর করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।৫

রেফারেন্স: ২ অক্টোবর ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!