You dont have javascript enabled! Please enable it!

কেউ যেন অনাহারে না মরে: বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রিলিফ সামগ্রী নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সকলকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেন, কেউ এ কাজ করলে সহ্য করবাে না। বঙ্গবন্ধু শনিবার রংপুর জেলার কুড়িগ্রাম মহকুমার চিলমারিতে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে এ হুঁশিয়ারি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু রংপুর জেলা চিলমারিতে বন্যাদুর্গত অঞ্চলসমূহ পরিদর্শন করার জন্য ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর একটি হেলিকপ্টার করে রংপুর গমন করেন। বঙ্গবন্ধু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ প্রসঙ্গে কেউ যাতে না খেয়ে মরে তার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, টাকার অভাব হবে না— সরকার জনগণের দুর্দশা মােচনের জন্য খাদ্যসহ সকল প্রকার ত্রাণসামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করবে। বঙ্গবন্ধু বলেন, বন্যার্ত জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্য সরকার সম্ভাব্য সকল কিছুই করবে। তিনি বলেন, কৃষকদের বীজ, গরু-বাছুর এবং গৃহনির্মাণে সহায়তার জন্য সরকার আর্থিক সাহায্য ও ঋণ দান করবে। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, বন্যার হাত থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য নদীর কিনারে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় জনগণকে উদ্যোগী হবার জন্য বঙ্গবন্ধু স্থানীয় জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়কে তিনি প্রয়ােজনীয় নির্দেশ দিবেন বলে জানান। তিনি জনগণকে সেচ কাজের জন্য পুরােনাে পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানান। এর আগে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারটি স্থানীয় একটি হাই স্কুল মাঠে নামলে শত শত বন্যাদুর্গত জনসাধারণ তাদের শতছিন্ন ময়লা কাপড় নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানান। বঙ্গবন্ধু জনসাধারণের দুর্দশার কথা নিজ কানে শােনার জন্য সমবেত চিলমারীবাসীর কাছে এগিয়ে যান। বঙ্গবন্ধুকে স্বাগত জানানাের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। চিলমারীতে পৌছাবার পর বঙ্গবন্ধু স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। বঙ্গবন্ধু সংশ্লিষ্ট সকলকে ত্রাণ তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানান। প্রায় ১ ঘণ্টাকাল অবস্থানের পর বঙ্গবন্ধু পুনরায় ঢাকা প্রত্যাবর্তন করেন। এদিকে রংপুরের জেলা কমিশনার জানিয়েছেন, বন্যার ফলে এ জেলার ৭০ হাজার ৩০ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়েছে। এছাড়া ৭৪ হাজার ৮৪০ একর জমির ফসল নতুনভাবে বন্যা দেখা দেয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকার এ জেলায় এই পর্যন্ত ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা গৃহ নির্মাণ বাবদ ৭ লক্ষ টাকা নগদ বরাদ্দ ছাড়াও বিপুল পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন। এছাড়া বীজ সাহায্য বাবদ ৯ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে খাদ্য ত্রাণমন্ত্রী জনাব আবদুল মােমিন, বন, মৎস্য ও পশু বিভাগীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব রিয়াজউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ রেডক্রসের প্রধান গাজী গােলাম মােস্তফাও রংপুর গমন করেন।১৮

রেফারেন্স: ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!