ধান-বিজ্ঞানীদের সাথে বঙ্গবন্ধুর আলােচনা
ঢাকা: গভীর পানিতে ধান উৎপাদন বাড়ানাের উদ্দেশ্যে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের ধান বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক ভিত্তিতে যৌথ উদ্যোগ নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরােপ করেন। শনিবার বিভিন্ন দেশের ৩০ জন ধান গবেষণা বিজ্ঞানী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে গণভবনে সাক্ষাৎ করলে তিনি উপরােক্ত অভিমত জ্ঞাপন করেন। গভীর পানির ধান বৃদ্ধির ব্যবস্থা বাস্তবায়িত হলে আগামী দুই বছরে বাংলাদেশের ৫০ লক্ষ একর নিচু জমিতে বার্ষিক অতিরিক্ত আরাে ৫ কোটি মণ ধান বেশি উৎপাদিত হবে। ক্রমান্বয়ে এই উৎপাদন ১০ গুণ বাড়ানাে যাবে। বর্তমানে ফরিদপুর, বরিশাল, সিলেট ও পাবনায় প্রধানত গভীর পানিতে ধান উৎপাদিত হয়। এছাড়া দেশের সব জেলাতেই গভীর পানির ধান উৎপাদন হয়। বর্তমানে একরপ্রতি মাত্র ১০ মণ ধান উৎপাদিত হয়। উৎকৃষ্ট জাতের ধানের বীজ বপন করলে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা যাবে। আগামী ২ বছরের মধ্যে উৎপাদন অন্তত দ্বিগুণ বাড়ানাে যাবে। ধান-বিজ্ঞানী গণভবনে বঙ্গবন্ধুর সাথে বাংলাদেশের গভীর পানির ধান উৎপাদন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আলােচনা করেন। বিভিন্ন দেশের ধান-বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন উন্নত জাতের ধানের বীজ আবিষ্কারে চেষ্টা করছেন। ইরি ধানের আবিষ্কারক ড. বিচেল বিজ্ঞানীদের সাথে আলােচনায় অংশগ্রহণ করেন। ভারতের কেন্দ্রীয় ধান গবেষণাগারের ডিরেক্ট ড. এস ওয়াই পদ্মনাভব বলেন যে, তারা বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বে মােহিত হয়েছেন। তিনি গভীর পানিতে ধান উৎপাদনের বিষয় উল্লেখ করেন। বঙ্গবন্ধু তার বাল্যকালের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে গভীর পানিতে ধান উৎপাদনকারী চাষীদের অবস্থার বিবরণ দেন। বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর ড. আমিনুল ইসলাম অন্যান্য দেশের ধান গবেষণা কেন্দ্রসমূহের সহযােগিতায় উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন করার বিষয়টি উল্লেখ করেন। বিজ্ঞানীদের সাথে জনাব আবদুস সামাদ ও আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা ছিলেন। উল্লেখযােগ্য যে, বাংলাদেশে দশ কোটি বিশ লাখ একর জমিতে এক কোটি চল্লিশ লাখ টন চাল উৎপাদন হয়। উন্নত জাতের বীজ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে এই উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়ানাে যাবে। তখন দেশ যে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে তা নয় দেশে তখন খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থকবে।৮২
রেফারেন্স: ২৪ আগস্ট ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত