নড়াইলে ভাসানী-ন্যাপের কর্মীসভার সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদারের আহ্বান
নড়াইল: সম্প্রতি নড়াইল মহকুমা ন্যাপের সাধারণ কর্মীসভায় কেন্দ্রীয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর সিদ্দিকী প্রধান বক্তা ছিলেন। নড়াইল মহকুমার ন্যাপ সভাপতি অ্যাডভােকেট আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরাে বক্তৃতা করেন ন্যাপের নজরুল আকবর, হেমায়েত উদ্দিন আজিজ, আজিজ মিয়া, সাইদ হাফিজুর রহমান খােকন, অ্যাডভােকেট ফারুক আহমেদ, নুরজালাল, যশাের জেলার ন্যাপ সম্পাদক খালেদুর রহমান টিটো, মােহাম্মদ ইসহাক। ছাত্র সংগঠন থেকে বক্তৃতা করেন আলাে (বিছাই) জাতীয় ছাত্রদল যশাের জেলা শাখার সম্পাদক জনাব আজিজুর রহমান। সভায় মহকুমা ন্যাপ সম্পাদক নুরুল আকবর সাংগঠনিক রিপাের্টে বলেন, সংগঠনের অবস্থার অবনতি সরকারি নির্যাতনের জন্যই হয়েছে। রাজনৈতিক বক্তব্য বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে নিয়ে গেলে সংগঠন জোরদার হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বক্তাগণ বিরােধী দলীয় কর্মীদের উপর সরকারি নির্যাতন ও জুলুমের নিন্দা করেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব ও মওলানা ভাসানীকে লােক বিশ্বাস করতাে। মওলানার প্রতি এখনাে মানুষের বিশ্বাস আছে। ন্যাপের সাচ্চা বিপ্লব সে অবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে পারে বলে বক্তাগণ উল্লেখ করেন। দ্বিধাবিভক্তি সম্পর্কে ন্যাপ নেতা হাফিজুর রহমান বলেন, এটা কিছু লােককে স্ব স্ব দল থেকে বের করে দেয়ার উদ্দেশ্যেই করা হয়নি বরং এর সঙ্গে আদর্শের প্রশ্নটি জড়িত রয়েছে। প্রধান বক্তা আলমগীর সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ এখনাে আধা সমাজতান্ত্রিক দেশ। তিনি সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন, সাম্রাজ্যবাদ এখন নব রূপে বাংলাদেশকে শােষণ করছে। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ সােভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ ভারত সম্প্রসারণবাদ বাংলাদেশের বন্ধুত্বের দাবী করে এদেশকে শােষণ করছে বলে তিনি অভিযােগ করছেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে সােভিয়েত ও ভারতের স্বার্থসিদ্ধি করে ভারত বাংলাদেশের পাট ও পাটশিল্পকে ধ্বংস করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। বর্তমানে ৩টি বিশ্বকে বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ প্রথম বিশ্ব সােভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দ্বিতীয় বিশ্ব এবং আধা উপনিবেশ ও অনুন্নত দেশগুলাে তৃতীয় বিশ্বে পরিগণিত হয়েছে। সােভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ব্রেজনেভ সম্পর্কে তিনি বলেন, ব্রেজনেভ সমাজতন্ত্রের মুখে লাথি মেরে পুঁজিবাদ গড়ছেন। সরকারের প্রতি অভিযােগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের স্বজনপ্রীতির জন্য বিদেশি পুঁজি এদেশে নিয়ােজিত হবে না। গণআন্দোলনের মাধ্যমে অত্যাচারী সরকারের উৎখাত করে দেশে শ্রমিক কৃষকরাজ কায়েম করার জন্য সংগঠনকে সুদৃঢ় করার জন্য আহ্বান জানান। সভায় ভাসানীসহ অন্য রাজবন্দিদের মুক্তি, গণআন্দোলন গড়ে তুলতে, বন্যার্তদের সাহায্য, নড়াইলে পূর্ণ রেশনিং চালু, সরকারি নির্যাতন বন্ধ ও দ্রব্যমূল্য রােধসহ কতিপয় প্রস্তাব গৃহীত হয়।২৮
রেফারেন্স: ৭ আগস্ট ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত