বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু
ঢাকা: বাংলাদেশকে সাবেক অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য অংশ দিতে পাকিস্তান। অনিচ্ছুক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অভিযােগ করেছেন। শনিবার ঢাকায় বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাবেক পাকিস্তানের সংখ্যালঘু মানুষের সমস্যার সমাধান হয়নি।
তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা সকল সম্পদ নিয়ে গেছে এবং রেখে গেছে শুধু দেনা। এখন তারা আমাদের সম্পদের অংশ দিতেও অনিচ্ছুক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে দেউলিয়া করে রেখে না। গেলে তিন বছর আগে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে এদেশ আরাে অধিক উল্লেখযােগ্য উন্নতি করতে পারতাে। তবুও এত বাধার মধ্যেও বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ১৯৫ জন পাকিস্তানির বিচারের পরিকল্পনা বাতিল করে বাংলাদেশ যে মহত্ত্ব দেখিয়েছে, ইসলামাবাদের পক্ষ থেকে তার প্রত্যুত্তর পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সকল মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল, এই মর্মে একটি নােট তিনি সাংবাদিকদের দেখান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই নােটটি লিখেছিলেন সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক অধিনায়ক মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এবং এতে লেখা আছে, ‘সবুজ পূর্ব পাকিস্তানকে লাল রং-এ রাঙ্গাতে হবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জনাব জুলফিকার আলী ভুট্টো যখন ঢাকায় আসেন, তখন তিনি এই নােটটি তাকে দেখিয়েছেন। জনাব ভুট্টো তা দেখে শিউরে উঠেছিলেন এবং তা তাঁর প্রতিনিধিদলকে দেখান।
ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, তেল অনুসন্ধানের জন্যে বাংলাদেশ ১০ দিনের মধ্যে কয়েকটি তেল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করবে। তবে তিনি তেল কোম্পানিগুলাের। নাম উল্লেখ করেননি। তিনি আরাে বলেন, বিদেশি দেশগুলাের ওপর আমাদের নির্ভরতার পরিবর্তে দশ বছরের মধ্যে বহু বিদেশি দেশ বাংলাদেশের ওপর নির্ভর করতে শুরু করবে।
তাঁর সরকার বিপুল আন্তর্জাতিক সাহায্য বিতরণ করতে সক্ষম কিনা জানতে চাওয়া হলে শেখ মুজিব বলেন, এ ধরনের দায়িত্ব পালনে তাঁর সরকার সক্ষম। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার। ফলে উদ্ভূত সমস্যাসমূহ সমাধানের জন্য তিনি বন্ধু দেশগুলাের সাহায্য কামান করেন। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কোন দেশের পক্ষ থেকে বাস্তব সাহায্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, অনেকেই মানবিক কারণে এগিয়ে আসবেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার ফলে দেশের সমগ্র উন্নয়ন পরিকল্পনা বানচাল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বন্যার পর দুর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে তাঁর সরকার সব কিছুই করবেন। তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে শস্য উৎপাদনের জন্য জরুরি বীজ বপন কর্মসূচির কাজ শুরু হয়েছে। তবে কোন কোন এলাকায় আগামী জানুয়ারির পূর্বে শস্য উৎপাদন সম্ভব নয় এবং সরকার এলাকার জন্যে খাদ্যশস্য আমদানির ব্যবস্থা করবেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থায়ী প্রকল্প প্রশ্নে জিজ্ঞেস করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সমস্যা সম্পর্কে বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন ও বিশ্ব ব্যাংক পর্যালােচনা করেন।৬৫
রেফারেন্স: ১৯ আগস্ট ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত