You dont have javascript enabled! Please enable it!

যারা রিলিফ নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: বঙ্গবন্ধু

সিলেট: প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যারা ত্রাণ সমাগ্রী নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, সরকারের দেয়া ত্রাণসামগ্রী যাতে করে অভাব ও দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌছায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
বাসস জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু আজ ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার অব্যবহিত পরেই বিমান বন্দর ভবনে জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় জেলা কর্মকর্তা এবং রেডক্রস প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে উপরােক্ত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বঙ্গবন্ধু সিলেটে ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযান সমন্বয় ও তদারক করার জন্য কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদকে নিয়ােগ করেছেন। জনাব সামাদ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকা থেকে সিলেট যান। তিনি তার নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য কিছুদিন এখানে থাকবেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী কিছুদিন পর জনাব সামাদের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
বৈঠকে বঙ্গবন্ধু বলেন, নজিরবিহীন বন্যার ফলে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সকলের যৌথ প্রচেষ্টায়ই মােকাবিলা করা সম্ভব। বন্যার জল কমে যাওয়ার সাথে সাথেই যাতে কৃষকরা নতুন করে চাষ শুরু করতে পারে, সেজন্য আগামী ১৫ আগস্টের মধ্যে বীজ ও চারার ব্যবস্থা করার জন্য বঙ্গবন্ধু জেলা কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছেন যে, কৃষকরা যাতে বীজ ও চারা সংগ্রহ করতে পারে সে জন্য সরকার সম্ভাব্য সব কিছু করবে। বন্যা দুর্গত মানুষের দুর্দশা লাঘবের জন্য সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে যে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে প্রধানমন্ত্রী তা বর্ণনা করেন।
দূর-দূরান্ত এবং মারাত্মকভাবে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌছানাের জন্য সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তিনি সেনাবাহিনী, বিডিআর ও রক্ষীবাহিনীর প্রতি নির্দেশ দেন। অর্থমন্ত্রী জনাব তাজউদ্দীন আহমদ, কৃষিমন্ত্রী জনাব আবদুস সামাদ, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব জনাব তােফায়েল আহমদ, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী এবং বাংলাদেশ রেডক্রসের চেয়ারম্যান গাজী গােলাম মােস্তফা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একই স্থানে জাতীয় সংসদ সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাসমূহের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন।
তাজউদ্দীন আহম্মেদ: এখানে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দানকালে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বলেন, বর্তমান বন্যার ফলে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও অন্যান্য স্থানে যে ক্ষতি হয়েছে বঙ্গবন্ধু তা ব্যক্তিগতভাবে দেখেছেন। বন্যার ফলে ব্যাপক এবং ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্য সরকার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এর আগেই মােট ১৯টি জেলার মধ্যে ১৭টি বন্যাকবলিত হয় এবং আজ বাকী দুটো জেলাও বন্যার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, গত এপ্রিলের বন্যায় কুমিল্লা, সিলেট ও অন্যান্য স্থানের ইরি বােরাে এবং আউশ বিনষ্ট হয়েছে। এবারের বন্যা আমন, আউশ ও অন্যান্য ফসল নষ্ট করেছে। বিভিন্ন বছরের খাদ্য আমদানির পরিমাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্যা আমাদের অর্থনীতির উপর চরম আঘাত এনেছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন যে, যদি আর প্রচণ্ড বৃষ্টি না হয় তবে কৃষকরা ১৫ দিনের মধ্যে আবার নতুন করে চাষ করতে পারবেন।১৩

রেফারেন্স: ৪ আগস্ট ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!