যে কদিন জীবিত আছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাবাে: মওলানা ভাসানী
সন্তোষ, টাঙ্গাইল: জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেছেন, ‘জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আল্লাহ ও আল্লাহ প্রেরিত পুরুষ হযরত মুহাম্মদ (স.) এর আদেশ মােতাবেক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাবাে। মওলানা ভাসানী শনিবার সন্তোষ থেকে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন। বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন ভাসানী-ন্যাপের দফতর সম্পাদক। বিবৃতিতে মওলানা ভাসানী বলেন, আমার বয়স ৯৩ বছর। কোনােদিন আপনাদের ছেড়ে চিরকালের জন্য আল্লাহর নির্দেশ মােতাবেক পরলােক গমন করবাে তা একমাত্র আল্লাহপাকই জানেন। যে কদিন জীবিত আছি, আল্লাহ এবং আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হযরত মুহাম্মদের (সঃ) এর আদেশ মােতাবেক অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে যাবাে। আল্লাহ ব্যতীত কারাে নিকট মাথা নত করবাে না। আপনারা দোয়া করবেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যেন ইসলামের আদর্শ থেকে একসুতা পরিমাণ বিচ্যুত না হই। আমার মতাে নগণ্য বৃদ্ধের উপদেশ যদি গ্রহণ করেন তাহলে নিজেরা সর্বপ্রকার পাপ হতে বিরত হন এবং দেশবাসীর নিকট প্রকাশ্যভাবে কোনাে প্রকার দ্বিধা না করে ঘােষণা করুন, আমি পবিত্র ইসলামের আদর্শ ও বিধান অনুযায়ী জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের সকল সম্প্রদায়ের সকল মানুষের কল্যাণ ও শান্তির জন্য সর্ব প্রকারের ত্যাগ বরণ করে জীবনযাত্রা নির্বাহ করবাে। মওলানা ভাসানী বলেন, অন্যায় নিজেরাও করবাে না। রাষ্ট্রের কর্ণধার হয়ে যদি নিজেদের আদর্শ চরিত্র গঠন করতে না পারেন, একমাত্র হালাল রুজি দ্বারা পরিবারবর্গের প্রতিপালনে ব্যবস্থা না করে অসৎ উপায়ে সরকারের ও জনগণের অর্থ আত্মসাৎ করে দেশসেবার নামে আত্ম সেবা করতে থাকেন তাহলে আপনাদের উপদেশ ও শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করবাে না। তিনি বলেন, আল্লাহ বার বার বলেছেন ঐ কথা উপদেশ দিও না যা তােমরা করাে না, নিজেরা আগে আল্লাহর আদেশ বর্ণে বর্ণে মেনে চলুন। ইনশাআল্লাহ দেখতে পাবেন সৎ ও ন্যায়ের পথ অনুসরণ করে সকলে দেশের উন্নতির চেষ্টা করছে। মওলানা ভাসানী বলেন, ‘দমন নীতির দ্বারা কোনােদিন রাষ্ট্রের ও জনগণের কল্যাণ করা সম্ভব হবে না এটা যেরূপ সত্য এবং যারা সরকারের ও জনগণের অর্থ অসৎ উপায়ে গ্রহণ করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়েছে, তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করাও মহাপাপের কাজ হবে। আওয়ামী লীগ, ন্যাপ যেকোনাে দলমতের লােক হােক না কেন, যারা চোরাকারবারী, ঘুষখাের, ক্ষমতা অপব্যবহার ইত্যাদি দোষে দোষী হবে তাদের কঠোর হস্তে দমন করলে কারাে কোন আপত্তি থাকবে না আর যদি দলীয় স্বার্থ ও ঐক্য রক্ষার জন্য রুই কাতলাদের ছেড়ে শুধু চুনুপুঁটিদের জন্য ফায়ারিং স্কোয়াড করা হয়, তাহলে কিছুই হবে না। তা যা হবার তাই হবে।৭২
রেফারেন্স: ২০ জুলাই ১৯৭৪, দৈনিক আজাদ
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত