You dont have javascript enabled! Please enable it!

বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রয়ােজনীয় সাহায্যের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আলাপ চলছে

ঢাকা: বাংলাদেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ক্রুগমিশনের রিপাের্ট বাস্তবায়ন করতে ৮ হাজার কোটি টাকা প্রয়ােজন। সরকারের সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়ে এককভাবে এই বিশাল সমস্যার মােকাবিলা খুবই কষ্টকর। তাই প্রয়ােজনীয় সাহায্যের জন্য সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সাথে আলাপ আলােচনা করেছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত বুধবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ কথা প্রকাশ করেন। টাকার অভাবে সরকার যেভাবে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে চান সে ব্যাপারে আলােকপাত করতে গিয়ে আবদুর রব সেরনিয়াবাত বলেন, স্বাধীনতার আগে বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে কোনাে কাজই করা হয়নি। চলতি বছর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পানিসম্পদ উন্নয়নে ৬৫ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছিল কিন্তু বাজেটে মাত্র ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
দেশের বর্তমান ভয়াবহ বন্যা সম্পর্কে পানি সম্পদ মন্ত্রী বলেন, ভারতের আসাম, অরুণাচল অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলােতে বন্যা সৃষ্টি করেছে। খাত এলাকার ছয় লাখ বর্গমাইল এলাকার বন্যার পানি চাঁদপুরের কাছে মাত্র ছয় মাইল নদীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫৫ থেকে ৬০ লাখ কিউসেক পানি প্রতি সেকেন্ড ১৬ ফুট রেটে এই নদী পথে প্রবাহিত হচ্ছে বলে হিসাব করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ১৯টি জেলাই এখন বন্যাকবলিত। প্রতিটি জেলার কোনাে-না-কোনাে এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। ১৪ হাজার বর্গমাইল এলাকার প্রায় সােয়া কোটি মানুষ এখন বন্যার পানিতে ভাসছেন। জনাব সেরনিয়াবাত বলেন, এই নিয়ে এবার তিনবার বন্যা হলাে। আরাে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। ১৯৫৪ সালের বন্যার চাইতে এই বন্যায় যদিও কম এলাকা প্লাবিত হয়েছে, তবুও এর ক্ষয়ক্ষতি সেই বন্যার চাইতে অনেক বেশি ভয়াবহ। তিনি বলেন, এবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ খাতে তার মন্ত্রণালয় ৬৫ কোটি টাকা চেয়েছিল, কিন্তু বাজেটে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ কার্য উন্নয়নের পূর্বশত। জরুরি ভিত্তিতে বন্যা সমস্যার মােকাবেলা করা উচিত এবং সরকারও সে ভিত্তিতেই কাজ করছেন। এ ব্যাপারে দেশের মানুষের স্বেচ্ছাপ্রণােদিত সহযােগিতা অপরিহার্য।
বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার ব্রহ্মপুত্রের ডান পাশে ১৩৫ মাইল, গােমতীর পাড়ে ৪৪ মাইল ও খােয়াই নদীর সাড়ে ১২ মাইল মােট ২৭৫ মাইল এবং শস্য সংরক্ষণে ২৫০ মাইল উপকূল এলাকায় ২০৮৯ মাইল বাঁধ নির্মাণ করেছেন। তার মধ্যে স্বাধীনতার পরে ১৮৮ মাইল বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
তাছাড়াও শহর সংরক্ষণে ৪টি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উপকূল এলাকায় আরাে ৮৮ মাইল ও শহর সংরক্ষণে ২৮টি বাঁধ, ১৫৫ মাইল পানি নিষ্কাশন খাল, ১৮৯টি সুইস গেট নির্মাণ করা হবে বলেও তিনি জানান। মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি আমলে ৫৩৮৫ মাইল বাঁধ, ১৪৮২ মাইল খাল খনন ও ৫১২ মাইল সেতু নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ১৯৬০-৭০ সালে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবার কথা থাকলেও হয়নি। তাই আজ এই দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। জনাব সেরনিয়াবাত বন্যা একটি জাতীয় দুর্যোগ বলে অভিহিত করে জাতীয় সম্পদের সাহায্যে এটার সিংহভাগ মােকাবিলা করার কথা বলেন। তিনি বলেন, এর জন্য বড় রকমের আন্তর্জাতিক সাহায্যের দরকার হলেও এ যাবৎ আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।১০৫

রেফারেন্স: ৩১ জুলাই ১৯৭৪, বাংলার বাণী
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৪, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেণু সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!